hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষেপিত ইযহারুল হক্ক

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আহমদ আব্দুল কাদির মালকাবী

৬১
৩. ১. ৩. ২. বাইবেল ও কুরআনের বৈপরীত্য
পাদরিগণ উত্থাপিত দ্বিতীয় আপত্তিতে তাঁরা বলেন: ‘‘অনেক স্থানে কুরআনের বক্তব্য পুরাতন ও নতুন নিয়মের বক্তব্যের বিরোধী, কাজেই কুরআন ঈশ্বরের বাণী হতে পারে না।’’

আপত্তির পর্যালোচনা ও বিভ্রান্তির অপনোদন:

(ক) ইতোপূর্বে আমরা নিশ্চিতরূপে জেনেছি যে, পুরাতন ও নতুন নিয়মের এ সকল পুস্তক যে সকল ভাববাদী বা লেখকের নামে প্রচলিত সে সকল ভাববাদী বা লেখক থেকে অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় পুস্তকগুলি বর্ণিত ও প্রচারিত হয় নি। কাজেই এ সকল ভাববাদী বা লেখক যে সত্যিই এগুলি রচনা করেছেন তার কোনো প্রমাণ নেই। এ সকল পুস্তকের মধ্যে অনেক অনেক স্থানে বৈপরীত্য ও স্ববিরোধিতা রয়েছে এবং এগুলি অগণিত ভুলভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। এ কারণে বাইবেল দিয়ে কুরআন যাচাই করার কোনো উপায় নেই। কুরআনে যদি এ সকল পুস্তকের বিপরীত বা অতিরিক্ত কোনো তথ্য থাকে তাতে কুরআনের অগ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হয় না, বরং এতে প্রমাণিত হয় যে বাইবেলের গ্রন্থাদিতে এ বিষয়ে কুরআন বিরোধী যে তথ্য রয়েছে তা মিথ্যা, ভুল বা বিকৃত। বাইবেলের পুস্তকাদিতে উল্লিখিত বা ইয়াহূদী-খৃস্টানদের মধ্যে প্রচলিত তথ্য ও বিশ্বাসের বিভ্রান্তি ধরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই কুরআনে এ সকল তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

এভাবে আমরা দেখছি যে, কুরআনের মধ্যে বিদ্যমান বাইবেল বিরোধী তথ্যাদি দেখে কোনোভাবেই কল্পনা করার অবকাশ নেই যে, ভুলক্রমে বুঝি এই তথ্য কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। বরং এ সকল তথ্য কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে বাইবেলের বিভ্রান্তি প্রমাণ করার জন্য।

(খ) পাদরিগণের দাবি অনুসারে কুরআনের সাথে বাইবেলের পুস্তকাদির বৈপরীত্য তিন প্রকারের (১) রহিত বিধানাবলি সম্পর্কিত, (২) এমন কিছু বিষয় যেগুলি কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু বাইবেলের পুরাতন বা নতুন নিয়মের কোনো পুস্তকে নেই এবং (৩) এমন কিছু বিষয় যা কুরআনে ও বাইবেলে রয়েছে, কিন্তু এগুলির বিষয়ে কুরআনের বর্ণনা বাইবেলের বর্ণনার বিপরীত। এ তিন প্রকার বৈপরীত্যই পুরাতন ও নতুন নিয়মের মধ্যে বিদ্যমান। কাজেই এগুলির কোনোটিকেই কুরআনের ত্রুটি হিসেবে নির্দেশ করার অধিকার পাদরিগণের নেই।

প্রথমত, প্রথম অধ্যায়ের চতুর্থ পরিচ্ছেদে পাঠক দেখেছেন যে, রহিতকরণ শুধু কুরআনের বৈশিষ্ট্য নয়, বরং বাইবেলের মধ্যেও তা বিদ্যমান। কাজেই কুরআন যদি পূর্ববর্তী ধর্মের কিছু বিধান রহিত করে তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। পাঠক দেখেছেন যে, পুরাতন নিয়মের অনেক বিধান নতুন নিয়মে রহিত করা হয়েছে। কাজেই কোনো বুদ্ধিমান খৃস্টান নতুন বা পুরাতন নিয়মের কোনো বিধান রহিত করার কারণে কুরআনকে দোষ দিতে পারেন না। তাহলে তো প্রমাণিত হবে যে, নতুন নিয়মের পুস্তকাবলি ‘ঈশ্বরের বাণী’ নয়; কারণ তা পুরাতন নিয়মের বিধানাবলি রহিত করেছে। ইযহারুল হক্ক গ্রন্থের প্রণেতা আল্লামা শাইখ রাহমাতুল্লাহর সাথে প্রকাশ্য বিতর্কে পাদরি ড. ফান্ডার স্বীকার করেন যে, তাওরাত ও ইঞ্চিলের মধ্যে নাসখ বা রহিতকরণ বিদ্যমান। কিন্তু বিতর্কের আগে তিনি তাওরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে নাসখ বা রহিতকরণের বিদ্যমানতা কঠিনভাবে অস্বীকার করতেন।

দ্বিতীয়ত, বাইবেলে উল্লেখ করা নেই এরূপ কোনো তথ্য কুরআনে বিদ্যমান থাকলে তা কুরআনের কোনো ত্রুটি বলে গণ্য করা খৃস্টানদের পক্ষে সম্ভব নয়। পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থে নেই এরূপ তথ্য পরবর্তী ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ করা যদি পরবর্তী গ্রন্থের ত্রুটি বলে গণ্য করা হয় তবে তাতে নতুন নিয়ম ত্রুটিপূর্ণ বলে গণ্য হবে; কারণ বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তকাদিতে উল্লেখ করা নেই এরূপ অনেক তথ্য নতুন নিয়মের পুস্তকাদিতে বিদ্যমান রয়েছে। [বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তকাদিতে উল্লেখ করা নেই এরূপ অনেক তথ্য নতুন নিয়মের পুস্তকাদিতে বিদ্যমান রয়েছে। আবার পুরাতন নিয়মের পূববর্তী পুস্তকে উল্লেখ নেই এমন অনেক তথ্য পরবর্তী পুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার নতুন নিয়মের সুসমাচারগুলিতে উল্লেখ নেই এমন অনেক তথ্য প্রেরিতগণের পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।] এখানে সামান্য কয়েকটি নমুনা পেশ করা হচ্ছে:

(১) যিহূদার পত্রের ৯ আয়াতে বলা হয়েছে: ‘‘কিন্তু প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল যখন মোশির দেহের বিষয়ে দিয়াবলের সহিত বাদানুবাদ করিলেন, তখন নিন্দাযুক্ত নিষ্পত্তি করিতে সাহস করিলেন না, কিন্তু কহিলেন, প্রভু তোমাকে ভৎর্সনা করুন।’’

মোশির দেহের বিষয়ে মীখায়েলের সাথে দিয়াবলের এই বাদানুবাদের কথা পুরাতন নিয়মের কোনো পুস্তকেই উল্লেখ নেই।

(২) ইব্রীয় ১২/২১ শ্লোকটি নিম্নরূপ: ‘‘এবং সেই দর্শন এমন ভয়ঙ্কর ছিল যে, মোশি কহিলেন, ‘আমি নিতানতই ভীত ও কম্পিত হইতেছি’’।

এখানে পৌল মোশি, তাঁর সিনয় পর্বতে গমন ও তথায় মেঘগর্জন, বিদ্যুৎ ইত্যাদি দর্শনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যাত্রাপুস্তকের ১৯ অধ্যয়ে [যাত্রাপুস্তক ১৯/১৪-২৫।]। কিন্ত সেখানে বা পুরাতন নিয়মের কোথাও মোশির এ কথা উল্লেখ করা হয় নি। ‘‘মোশি কহিলেন, ‘আমি নিতানতই ভীত ও কম্পিত হইতেছি’’-এ কথা কোথাও নেই।

(৩) ২ তিমথীয় ৩/৮: ‘‘আর যান্নি ও যামিব্র যেমন মোশির প্রতিরোধ করিয়াছিল, তদ্রূপ ইহারা সত্যের প্রতিরোধ করিতেছে।’’

ফরৌণের মন্ত্রবেত্তাগণ কর্তৃক মোশির প্রতিরোধের ঘটনা বিস্তারিত যাত্রাপুস্তকের ৭ম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এই দুটি নামের উল্লেখ সেখানে নেই। যাত্রা পুস্তকের অন্য কোনো অধ্যায়ে বা পুরাতন নিয়মের অন্য কোনো পুস্তকের কোথাও এই নাম দুটির অস্তিত্ব নেই।

(৪) ১ করিন্থীয় ১৫/৬ শ্লোকে যীশুর কবর থেকে পুনরুত্থানের পরে বিভিন্ন শিষ্যকে সাক্ষাত দানের বিষয়ে বলা হয়েছে: ‘‘তাহার পরে একেবারে পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন, তাহাদের অধিকাংশ লোক অদ্যাপি বর্তমান রহিয়াছে, কিন্তু কেহ কেহ নিদ্রাগত হইয়াছে।’’

সুসমাচার চতুষ্ঠয়ে এবং প্রেরিতদের কার্যবিবরণের কোথাও এ পাঁচশতাধিক শিষ্যকে দেখা দেওয়ার বিষয়ের উল্লেখ নেই। এ সকল বিষয় বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করার বিষয়ে লূকের আগ্রহ ও উদ্দীপনা ছিল সবচেয়ে বেশি। অথচ তিনিও এ বিষয়ে কিছুই লিখেন নি।

(৫) নতুন নিয়মের সুসমাচারগুলিতে স্বর্গ, নরক, পুনরুত্থান, বিচার, কর্মের প্রতিদান ইত্যাদির কথা সংক্ষেপে হলেও উল্লেখ করা হয়েছে [মথি ৫/২২, ১০/২৮, ২৩/১৫, ২৫/৪৬; মার্ক ৯/৪৩-৪৪; লূক ২৩/৪৩...।]। কিন্তু মোশির পাঁচটি পুস্তকে (Torah or Pentateuch) এ সকল বিষয়ের কোনোরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় না। বরং সেগুলিতে শুধু জাগতিক লাভক্ষতির বিষয়ই উল্লেখ করা হয়েছে, পরকাল বা স্বর্গ-নরকের কথা কিছুই নেই। ঈশ্বর সদাপ্রভুর নির্দেশ যারা পালন করবে তাদের পৃথিবীতে কত প্রকারের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে এবং যারা ঈশ্বরের নির্দেশ না মানবে পার্থিব জীবনে তাদের কি কি শাস্তি বা কষ্ট দেওয়া হবে সেগুলিই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে।

(৬) মথিলিখিত সুসমাচারের ১ম অধ্যায়ে যীশু খৃস্টের বংশাবলি পত্রে সরুববাবিলের পরে- সরুববাবিল ও যোষেফ-এর মধ্যে- নয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছ; যাদের কারো কোনোরূপ উল্লেখ পুরাতন নিয়মের কোথাও নেই। [সরুববাবিল ও যোষেফ-এর মধ্যে নয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছ। তারা হলেন: অবীহূদ, ইলীয়াকীম, আসোর, সাদোক, আখীম, ইলীহূদ, ইলিয়াসর, মত্তন ও যাকোব। এদের কারো কোনোরূপ উল্লেখ পুরাতন নিয়মের কোথাও নেই।]

এরূপ আরো অগণিত উদাহরণ বাইবেলের পুস্তকাদিতে রয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থে নেই এমন কোনো তথ্য পরবর্তী ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ করা হলে তা কখনোই পরবর্তী গ্রন্থের ঐশ্বরিকত্বের দাবি মিথ্যা বলে প্রমাণ করে না। তাই যদি হয়, তবে প্রমাণিত হবে যে, ইঞ্জিল বা সুসমাচারগুলি মিথ্যা, কারণ এতে অনেক কথা আছে যা তোরাহ বা পুরাতন নিয়মের অন্য কোনো পুস্তকে নেই। বস্তুত, পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থে সবকিছুই উল্লেখ থাকা জরুরী নয়।

তৃতীয়ত, কুরআনের মধ্যে বাইবেলের পুস্তকাবলিতে উল্লিখিত তথ্যাদির বিপরীত বা বিরোধী তথ্য উল্লেখ করার কারণে কুরআনের প্রামাণ্যতা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ খৃস্টানদের নেই; কারণ এ জাতীয় বৈপরীত্য ও বিরোধিতা বাইবেলের মধ্যেই বিদ্যমান। এরূপ বৈপরীত্য ও বিরোধিতা বিদ্যমান রয়েছে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের এক পুস্তকের সাথে অন্য পুস্তকের, নতুন নিয়মের এক পুস্তকের সাথে অন্য পুস্তকের এবং নতুন নিয়মের সাথে পুরাতন নিয়মের। প্রথম অধ্যায়ে পাঠক কিছু নমুনা দেখেছেন। তোরাহ-এর তিন সংস্করণ বা পাণ্ডুলিপি, অর্থাৎ হিব্রু, গ্রীক ও শমরীয় সংস্করণের মধ্যেও অনুরূপ কঠিন বৈপরীত্য ও বিরোধিতা রয়েছে। অনুরূপভাবে নতুন নিয়মের চার সুসমাচার: মথি, মার্ক, লূক ও যোহনের বর্ণণার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক বৈপরীত্য। সামান্য ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ের বর্ণনায় একেকজন একেক রকম বর্ণনা দিয়েছেন, যেগুলি অনেক সময় সাংঘর্ষিক।

খৃস্টান ধর্মগুরু ও প্রচারকগণ নিজেদের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বিদ্যমান অগণিত ব্যাখ্যাতীত বৈপরীত, অসামঞ্জস্য, ভুলভ্রান্তি দেখেও দেখেন না, কিন্তু সাধারণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করতে কুরআন কারীমের বিষয়ে এ আপত্তি উত্থাপন করেন। আর প্রকৃত সত্য হলো, বাইবেলের পুরাতন বা নতুন নিয়মের কোনো তথ্যের সাথে কুরআনের কোনো তথ্যের বৈপরীত্যের কারণে কুরআনের ঐশ্বরিকতব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই; কারণ কুরআন সম্পূর্ণ পৃথক স্বয়ংসম্পূর্ণ আসমানী পুস্তক যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে। উপরন্তু বাইবেলের বিপরীতে কুরআন যে সকল তথ্য প্রদান করেছে তা কুরআনের সত্যতা ও বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান বিকৃতির অন্যতম প্রমাণ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন