মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
উপরের আলোচনায় আমরা ইয়াহূদী ও খৃস্টানগণের হাদীস নির্ভরতা বা মৌখিক বর্ণনার (tradition) উপর নির্ভরতার বিষয়ে জানতে পারলাম। এখন পাঠক চিন্তা করুন! যারা ১৭০০ বৎসর যাবৎ মৌখিকভাবে প্রচারিত বিষয়কে লিখিত তাওরাতের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বাস করেন এবং যারা তিন-চার শত বৎসর যাবৎ মুখে মুখে প্রচারিত ও বর্ণিত বিষয়াবলিকে লিখিত ইঞ্জিলের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বাস করেন এবং যারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল ভিত্তি এরূপ বর্ণনার উপর স্থাপন করেন তাদের পক্ষে কি মুসলিমদের হাদীসের বিষয়ে কোনো আপত্তি উত্থাপন করা চলে?
বিশেষত সাহাবীগণের যুগ থেকে মুসলিম উম্মাহ হাদীস বর্ণনা, মুখস্থকরণ, লিপিবদ্ধকরণ ও সংরক্ষণে বিশেষ সতর্কতা ও বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা অবলম্বন করেছেন। এ বিষয়ে মুসলিমগণ অত্যন্ত কড়াকড়ি আরোপ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমরা আমার হাদীস বর্ণনা করা থেকে সতর্ক ও সাবধান থাকবে, শুধুমাত্র যা তোমরা নিশ্চিতরূপে জান তা ছাড়া কিছু বলবে না। কারণ, যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা বলবে তার আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।’’
এই হাদীসটি ইসলামী পরিভাষায় ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের। যে হাদীস বহুসংখ্যক সাহাবী থেকে বহুসংখ্যক তাবিয়ী বর্ণনা করেছেন এবং এভাবে অগণিত সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তাকে ‘মুতাওয়াতির’ বলা হয়। এই হাদীসটি ৬২ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত। এদের মধ্যে ১০ জন প্রসিদ্ধ সাহাবী রয়েছেন যাঁদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের বিশেষ সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
এ কারণে প্রথম প্রজন্ম থেকেই ‘হাদীস’ বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী ও শিক্ষা গ্রহণ ও মুখস্থ করার বিষয়ে মুসলিমগণ অত্যন্ত আগ্রহ ও সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। সকল যুগেই কুরআনের বিষয়ে মুসলিমদের আগ্রহ-উদ্দীপনা যেমন বাইবেলের বিষয়ে খৃস্টানদের আগ্রহ-উদ্দীপনা চেয়ে অনেক বেশি, ঠিক তেমনি সকল যুগেই হাদীসের বিষয়েও মুসলিমদের আগ্রহ-উদ্দীপনা খৃস্টধর্মীয় হাদীসের বিষয়ে খৃস্টানদের আগ্রহ-উদ্দীপনার চেয়ে অনেক বেশি।
সাহাবীগণ বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচরগণ তাঁর মৌখিক নির্দেশাবলি, শিক্ষা, আচরণ ও উপদেশাবলি বিশুদ্ধভাবে মুখস্থ করেছেন ও প্রচার করেছেন, কেউ কেউ কিছু বিষয় লিখেও রেখেছেন, তবে তাঁরা তাঁদের যুগে সেগুলি গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন নি। এর অন্যতম কারণ ছিল কুরআনের বিশুদ্ধ সংরক্ষণ; যেন লিখিত কোনো হাদীসকে কেউ ভুলক্রমে কুরআনের অংশ মনে করে বিভ্রান্ত না হয়।
তাবিয়ীগণ, অর্থাৎ সাহাবীগণের শিষ্যগণ বা দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলিমগণ হাদীসসমূহ গ্রন্থাকারে সংকলন শুরু করেন। তাঁরা প্রাথমিকভাবে তথ্যসূত্র ও বর্ণনাকারীর পরিচয়সহ তাঁদের সমসাময়িক সাহাবীগণ ও দ্বিতীয় প্রজন্মের তাবিয়ীগণ থেকে ‘হাদীস’ সংগ্রহ ও সংকলন করেন। কিন্তু তারা সংকলিত হাদীস কোনোরূপ বিষয় বিন্যাস করে সাজান নি। তৃতীয় প্রজন্মের মানুষেরা এ সকল হাদীস বিষয়ভিত্তিক বিন্যাসের মাধ্যমে সংকলন করেন।
হাদীস সংকলন, যাচাই ও বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে মুহাদ্দিসগণ অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেন। ‘আসমাউর রিজাল’ বা বর্ণনাকারীগণের নাম-পরিচয়’ নামে হাদীস-বিজ্ঞানের পৃথক শাখায় (প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রন্থে) তারা সকল বর্ণনাকারীর পরিচয়, তার ধার্মিকতা, হাদীস বর্ণনায় তার নির্ভুলতার অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে সকল তথ্য সংকলন করেছেন। [দ্বিতীয় প্রজন্ম বা তাবিয়গণের যুগ থেকে হাদীস শিক্ষা ও সংকলনে মুসলিম আলিমগণ বা মুহাদ্দিসগণ যাচাই ও নিরীক্ষা পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। এক্ষেত্রে তাঁদের কার্যপদ্ধতি ছিল নিম্নরূপ: (১) সংগ্রহ, (২) ব্যক্তি যাচাই, (৩) তথ্য যাচাই ও (৪) সংকলন। প্রথম পর্যায়ে তাঁরা মুসলিম বিশ্বের সকল শহর ও গ্রামে পরিভ্রমন করে তারা বর্ণনাকারী ব্যক্তি ও তার শিক্ষকদের নামসহ ‘হাদীস’ সংগ্রহ করতেন। বর্ণনাকারী ব্যক্তি ও তার শিক্ষকদের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিশ্বস্ততা যাচাই করতেন। এরপর সংগৃহীত সকল ‘হাদীস’ তুলনামূলক নিরীক্ষার মাধ্যমে তথ্য যাচাই করতেন। যেমন কুফার একব্যক্তি একটি হাদীস বলেছেন এবং দামেশকের একব্যক্তি একটি হাদীস বলেছেন। তারা উভয় বর্ণনার তুলনার মাধ্যমে বর্ণনার নির্ভুলতা যাচাই করতেন, ঠিক যেভাবে ক্রস-একজামিনের মাধ্যমে কোর্টে প্রদত্ত তথ্য ও সাক্ষ্য যাচাই করেন আইনজীবি ও বিচারকগণ। এই প্রক্রিয়ার সংগৃহীত সকল হাদীস ও ব্যক্তি সম্পর্কীয় তথ্যাদি তারা গ্রন্থাকারে সংকলন করেছেন। অনেকে সংগৃহীত সকল হাদীস সনদ বা বর্ণনাকারীগণের পরিচয়-সহ সংকলন করেছেন। অনেকে যাচাই বাছাইয়ে বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হাদীসগুলিই সংকলন করেছেন। এছাড়া পৃথক গ্রন্থে বর্ণনাকারীদের পরিচয় এবং তাদের দেওয়া তথ্যের সাথে অন্যদের দেওয়া তথ্যের তুলনার মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যাদি সংকলন করেছেন। এভাবে রিজাল বিষয়ক গ্রন্থাদিতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জন্ম, মৃত্যু, জীবন, কর্ম, তাদের বর্ণিত হাদীসের পরিসংখ্যান, তাদের বর্ণনার নির্ভুলতার মান ইত্যাদি বিষয়ক তথ্যাদি সংকলন করা হয়েছে। অন্য কোনো ধর্মের অনুসারীরা ধর্মীয় তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এর শতভাগের একভাগ সতর্কতা, বস্ত্তনিষ্ঠা ও নিরীক্ষার প্রমাণ দেখাতে পারেন নি।] ‘সহীহ’ হাদীসের সংকলনগণ প্রত্যেকটি হাদীস সনদ বা বর্ণনাকারীদের নামধাম-সহ সংকলন করেছেন। গ্রন্থকার থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত কতজন বর্ণনাকারীর মাধ্যমে তিনি হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন তা উল্লেখ করা হয়েছে। বুখারী সংকলিত হাদীস গ্রন্থের অনেক হাদীসই ‘তিনব্যক্তির বর্ণিত’, অর্থাৎ ইমাম বুখারী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাঝে মাত্র তিন ব্যক্তি রয়েছেন। [তাবিয়ীগণ বা দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকেই মুহাদ্দিসগণ লিখিত পাণ্ডুলিপির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতেন। তারা হাদীস শুনতেন এবং লিখতেন। শিক্ষাদানের সময় লিখিত পাণ্ডুলিপি ও মৌখিক পাঠ উভয়ের সমন্বয়ে শিক্ষা দিতেন। শুধু লিখিত পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করে তা থেকে হাদীস শিক্ষা তারা অনুমোদন করতেন না। কারণ এতে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পাণ্ডুলিপির অনুলিপিকরণে বা পঠে ভুল হতে পারে। এ কারণে তারা হাদীস বর্ণনার সময় ‘হাদ্দাসানা’ বা আমাদেরকে বলেছেন কথাটি বলতেন। হাদ্দাসানা অর্থ শুধু মৌখিক বর্ণনা নয়, বরং পাণ্ডুলিপি সামনে রেখে মৌখিক পাঠ শ্রবণ। বিস্তারিত প্রমাণাদির জন্য দেখুন. ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াতি (ঝিনাইদহ, আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স, ২য় প্রকাশ, ২০০৬) পৃ. ৮৪-৯৬।]
বিশুদ্ধ বা সহীহ হাদীস [মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যে হাদীসের মধ্যে ৫টি শর্ত পূরণ হয়েছে তাকে সহীহ হাদীস বলা হয়: (১) ‘আদালত’: হাদীসের সকল রাবী (বর্ণনাকারী) পরিপূর্ণ সৎ ও বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত, (২) ‘যাবত’: তুলনামূলক নিরীক্ষার মাধ্যমে সকল রাবীর ‘নির্ভুল বর্ণনার ক্ষমতা’ পূর্ণরূপে বিদ্যমান বলে প্রমাণিত, (৩)‘ইত্তিসাল’: সনদের প্রত্যেক রাবী তাঁর ঊর্ধ্বতন রাবী থেকে স্বকর্ণে হাদীসটি শুনেছেন বলে প্রমাণিত, (৪) ‘শুযূয মুক্তি’: হাদীসটি অন্যান্য প্রামাণ্য বর্ণনার বিপরীত নয় বলে প্রমাণিত এবং (৫) ‘ইল্লাত মুক্তি’: হাদীসটির মধ্যে সুক্ষ্ম কোনো সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি নেই বলে প্রমাণিত। প্রথম তিনটি শর্ত সনদ কেন্দ্রিক ও শেষের দুইটি শর্ত মূলত অর্থ কেন্দ্রিক। সাধারণভাবে বলা যায় যে, প্রদত্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদির বিষয়ে যতটুকু নিশ্চয়তা অনুভব করলে একজন বিচারক মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিতে পারেন, বর্ণিত হাদীসটি সত্যিই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন বলে অনুরূপভাবে নিশ্চিত হতে পারলে মুহাদ্দিসগণ তাকে ‘‘সহীহ’’ বা বিশুদ্ধ হাদীস বলে গণ্য করেন। বিস্তারিত দেখুন: ইরাকী, আত-তাকয়ীদ, পৃ: ২৩-২৫; ফাতহুল মুগীস, পৃ: ৭-৮; সাখাবী, ফাতহুল মুগীস ১/২৫-৩১; সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/৬৩-৭৪; মাহমূদ তাহ্হান, তাইসীরু মুসতালাহিল হাদীস, পৃ. ৩৪-৩৬, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াতি, পৃ. ৫৬-১২৩।] তিন প্রকারের: (১) মুতাওয়াতির (অতি প্রসিদ্ধ), (২) মাশহূর (প্রসিদ্ধ) ও (৩) খাবারুল ওয়াহিদ (একক বর্ণনা)। [প্রকৃত সত্য হলো, মুসলিম উম্মাহর নিকট সংরক্ষিত ‘হাদীস’ ইহূদী খৃস্টানদের নিকট সংরক্ষিত বাইবেলের সাথেই তুলনীয়। বরং ‘হাদীসের’ বিশুদ্ধতা’ বাইবেলের বিশুদ্ধতার চেয়েও অধিক প্রমাণিত ও সুস্পষ্ট। শুধু নতুন নিয়মের সাথে তুলনা করলে যে কোনো খৃস্টান গবেষককেও স্বীকার করতে হবে যে, মাকলিখিত সুসমাচার ও লূকলিখিত সুসমাচারের বিশুদ্ধতা স্বীকার করলে হাদীসের বিশুদ্ধতা স্বীকার করা ছাড়া উপায় থাকে না। এই দুই সমাচারের লেখক যীশুর প্রেরিতদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তারা পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ। যীশুর তিরোধানের প্রায় শতবৎসর পরে মৌখিক বর্ণনার ভিত্তিতে এগুলি সংকলন করেছেন। হাদীসও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মৃত্যুর শতবর্ষ পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের মানুষেরা গ্রন্থাকারে সংকলন করেছেন। তবে বিশুদ্ধতা ও নির্ভরযোগ্যতার মাপকাঠিতে এই দুই সুসমাচারের সাথে হাদীসের কিছু পার্থক্য রয়েছে: প্রথমত, মার্ক ও লূক কার নিকট থেকে শুনে তা সংকলন করেছেন তা উল্লেখ করেন নি। তারা সব কথা যে যীশুর শিষ্যদের থেকে শুনেছেন তা মনে করার কোনো কারণ নেই। তাদের মত দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেকের নিকট থেকেও তারা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বাহ্যত বুঝা যায় যে, লোকমুখে যা কিছু প্রচলিত হয়েছে, নির্বিচারে বা বিবেকবুদ্ধির বিচারের মাধ্যমে তারা তা গ্রহণ করেছেন। বর্ণনাকারীর বর্ণনার সত্যতা, বিশুদ্ধতা বা বিশ্বস্ততা যাচাই করেন নি। পক্ষান্তরে হাদীসের ক্ষেত্রে প্রতিটি হাদীস পৃথকভাবে কার নিকট থেকে শ্রবণ করা তা উল্লেখ করা হয়েছে। এখনো যে কোনো গবেষক যাচাই করতে পারবেন যে, কোন ঘটনা কত জন সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত কতগুলি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে...। দ্বিতীয়ত, মার্ক ও লূক তাদের গ্রন্থদ্বয় সংকলন করার পরে এগুলির কি অবস্থা ছিল তা মোটেও জানা যায় না। প্রায় ২০০ বৎসর এগুলির হালহকিকত কিছুই জানা যায় না। তাঁদের নিকট থেকে কে বা কারা গ্রন্থদুটি গ্রহণ করেছিল? তারা কি লিখিত পুস্তক নিয়ে গিয়েছিল না পুরো বই লেখকের নিকট পড়ে বুঝে নিয়ে গিয়েছিল? তাদের নিকট থেকে কে বা কারা পুস্তকগুলি গ্রহণ করেছিল? কিছুই জানা যায় না। পক্ষান্তরে হাদীসের ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত প্রমাণিত ও সুস্পষ্ট। তৃতীয়ত, খৃস্টানগণ তাদের ধর্মগ্রন্থের অনুলিপিকরণে শুধু লিখিত পাণ্ডুলিপির উপর নির্ভর করেছেন। এতে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছকৃত ভুলভ্রান্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যেগুলিকে তারা erratum ও Various readings বলে অভিহিত করেন বলে আমরা দেখেছি। পক্ষান্তরে মুহাদ্দিসগণ কখনোই শুধু লিখিত পাণ্ডুলিপির উপর নির্ভর করেন নি। সর্বদা লিখিত পাণ্ডুলিপি মূল লেখকের নিকট পড়ে অথবা তার মুখ থেকে শুনে নেওয়া ছাড়া কোনো হাদীসের বর্ণনা তারা গ্রহণ করতেন না। ইহূদী ও খৃস্টান ধর্মের মৌখিক বর্ণনা বা হাদীসের সাথে ইসলাম ধর্মের ‘হাদীসে’-র মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ইহূদী-খৃস্টান ধর্মের ট্রেডিশন বা মৌখিক বর্ণনা হাজার বছর ধরে মুখে মুখে বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে মুসলমানদের হাদীস মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর তিরোধানের দুই শতাব্দীর মধ্যে সংকলিত হয়েছে। ইহূদী-খৃস্টানগণের মৌখিক বর্ণনার কোনোরূপ সূত্র, বা তথ্য নির্দেশনা নেই। কে, কবে, কখন, কার নিকট থেকে কথাটি শুনেছেন, কে বলেছেন, তিনি কেমন মানুষ ছিলেন ইত্যাদি কিছুই জানা যায় না। এজন্য ভিত্তিহীন মিথ্যা, কাল্পনিক কাহিনী ও ধর্মীয় নির্দেশনা সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। কোন্টি বিশুদ্ধ ও কোন্টি বানোয়াট তা বিচার করার কোনো পথ নেই। পক্ষান্তরে ইসলাম ধর্মে প্রতিটি হাদীসের তথ্য সূত্র সংরক্ষিত রয়েছে। প্রত্যেক পর্যায়ে কজন ব্যক্তি তা বর্ণনা করেছেন, তা মুতাওয়াতির, মাশহূর না একক বর্ণনা তা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোপরি সবকিছই ডকুমেন্টারী, কোনো কিছুই কোনো ধর্মগুরু বা পন্ডিতের ব্যক্তিগত রুচি বা মতের উপর নির্ভরশীল নয়।। ইহূদী-খৃস্টান ধর্মে মূল ধর্মগ্রন্থকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় নি, বরং ট্রেডিশন বা হাদীসকেই ধর্মের মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তির মূল মন্ত্রটিও নাকি ধর্মগ্রন্থে নেই। পক্ষান্তরে ইসলামে কুরআনকেই ধর্মবিশ্বাসের মূল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ধর্মীয় আচার-আচরণ ও রীতি-নীতির ব্যাবহারিক ব্যাখ্যার জন্য হাদীস।]
পাদরিগণ বলেন: ‘‘হাদীস সংকলকগণ এরূপ বর্ণনার অর্ধেকই অগ্রহণযোগ্যতার কারণে বাতিল করে দিয়েছেন।’’
তাদের এ কথা ভুল। কারণ হাদীস সংকলক বা মুহাদ্দিসগণ কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস বাতিল করেন নি। তবে তারা সূত্র বিহীন দুর্বল বা অনির্ভরযোগ্য হাদীস প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর ‘দুর্বল’ বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। [খৃস্টান ধর্মগুরুগণও লিখিত সুসমাচার ও পত্র এবং মৌখিক বর্ণনার মধ্যে যাচাইয়ের চেষ্টা করেছেন এবং অনির্ভরযোগ্য বলে অনেক কিছু বাদ দিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর হাদীসের বিশুদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিচার পদ্ধতি এবং খৃস্টানদের সুসমাচার ও পত্রাবলির বিশুদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিচার পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, খৃস্টান পন্ডিতগণ একান্তই মন-মর্জির উপরে নির্ভর করে কোনোটি সঠিক বলে গ্রহণ করেছেন এবং কোনোটি বাতিল বা মিথ্যা বলে গণ্য করেছেন। একে তারা ‘অর্থ বিচার’ বা ‘অর্থগত সমালোচনা’ বলে দাবি করেন। অমুক ‘সুসমাচার’, ‘পু্স্তকটি’ বা ‘পত্রটি’র অর্থ গ্রহণযোগ্য নয়, অর্থাৎ আমার পছন্দ বা মতের সাথে মিলে না, কাজেই তা বাতিল এবং অমুক সুসমাচার, পুস্তক বা পত্রটি অর্থ সঠিক কাজেই তা সঠিক। পক্ষান্তরে মুসলিম মুহাদ্দিসগণ প্রতিটি ‘হাদীস’ প্রথমে সূত্রগত নিরীক্ষা করেছেন এবং এরপর অর্থগত নিরীক্ষা করেছেন। প্রথমেই তাঁরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও বস্ত্তনিষ্ঠভাবে ‘বক্তব্য’টির সূত্র বিচার করেছেন। বক্তব্যটি কে বর্ণনা করেছেন? তিনি কার নিকট থেকে শুনেছেন? অন্য কেউ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন কিনা? বর্ণনাকারীর সকল বর্ণনার তুলনামূলক নিরীক্ষায় তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে কিনা? ইত্যাদি বিষয় তারা প্রথমে যাচাই করেছেন। যাচাইয়ে যদি বক্তব্যটির বিশুদ্ধতা প্রমাণিত না হয়, তবে তার অর্থ যত সুন্দর বা পছন্দসই হোক তারা তা গ্রহণ করেন নি। আর যাচাইয়ে যদি তার বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয় তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা তার অর্থ বিচার করেছেন। দ্বিতীয়ত, মুহাদ্দিসগণ বিশুদ্ধ, দুর্বল বা মিথ্যা কোনো বর্ণনাই মুছে ফেলেন নি। সকল বর্ণনাই তারা সনদসহ সংকলন ও সংরক্ষণ করেছেন। কেউ কেউ শুধু বিশুদ্ধ হাদীস পৃথকভাবে সংকলন করেছেন, তবে কেউই দুর্বল বা মিথ্যা বর্ণনার ‘অস্তিত্বের অধিকার’ অস্বীকার করেন নি। পক্ষান্তরে খৃস্টান ধর্মগুরুগণ তাদের মন-মর্জি বা মতামতের বাইরে সকল বর্ণনার অস্তিত্বের অধিকার অস্বীকার করেছেন। সবকিছু পুড়িয়ে ফেলেছেন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের পুড়িয়েছেন, হত্যা করেছেন বা অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছেন। তৃতীয়ত, মুহাদ্দিসগণ প্রাসঙ্গিক সকল তথ্য সংরক্ষণ করেছেন। ফলে বর্তমান যুগেও যে কোনো হাদীসের বিষয়ে মুহাদ্দিসদের মতামত পুনরালোচনার সুযোগ রয়েছে। পক্ষান্তরে খৃস্টান ধর্মগুরুগণ প্রাসঙ্গিক সকল তথ্যও বিনষ্ট করেছেন। ফলে বর্তমানে তাদের সিদ্ধান্তগুলি পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। কিসের ভিত্তিতে তারা নতুন নিয়মের পুস্তক ও পত্রগুলি গ্রহণ করলেন এবং অন্যান্য অগণিত সুসমাচার বা পত্র বাতিল করলেন তার কোনো তথ্য সংরক্ষিত নেই।]
উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখছি যে, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিশুদ্ধ সনদে সংরক্ষিত সহীহ হাদীসের বিষয়ে যে আপত্তি পাদরিগণ উত্থাপন করেন তা একেবারেই ভিত্তিহীন অপপ্রচার মাত্র।
খৃস্টান সম্প্রদায়ের অবস্থা ব্যাখ্যায় এখানে প্রসঙ্গত আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। জন মিলনার ১৮৩৮ খৃস্টাব্দে মুদ্রিত তার পুস্তকে লিখেছেন: ‘‘বর্তমান সময়ের কিছু দিন আগে, জোয়ানা সুয়াতকূট [আল্লামা রাহমাতুল্লাহ কিরানবীর মূল ‘‘ইযহারুল হক্ক’’ গ্রন্থে এ মহিলার নাম এভাবেই লেখা হয়েছে। ‘‘মুখতাসারু ইযহারিল হাক্ক’’-এর প্রণেতা প্রফেসর ড. মালকাবী লিখেছেন যে, এ মহিলার নাম জোয়ান ডি আর্ক (Jeanne d’Arc) বা ইংরেজিতে (Joan of Arc), যিনি ওরলিন্স-এর কুমারী (the Maid of Orléans) বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৪১২ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। জোয়ান ডি আর্ক অতিপ্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব। তিনি ফ্রান্স-ইংল্যান্ড যুদ্ধে ফ্রান্সের জাতীয় বীরে পরিণত হন। ইউরোপের প্রচলিত ইতিহাসে তাঁর বিষয়ে এ ঘটনা পাওয়া যায় না।] নামক এক মহিলা দাবি করেন যে, আমিই সেই নারী যার বিষয়ে আদিপুস্তকের ৩য় অধ্যায়ের ১৫ আয়াতে ঈশ্বর বলেছেন: ‘‘সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে (it shall bruise thy head)’’, আমার বিষয়েই প্রকাশিত বাক্যের ১২ অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘‘১ আর স্বর্গমধ্যে এক মহৎ চিহ্ন দেখা গেল। এক জন স্ত্রীলোক ছিল, সূর্য তাহার পরিচ্ছদ, ও চন্দ্র তাহার পদতলে, এবং তাহার মস্তকের উপরে দ্বাদশ তারার এক মুকুট। ২ সে গর্ভবতী, আর ব্যথিত হইয়া চেঁচাইতেছে, সনতান প্রসবের জন্য ব্যথা খাইতেছে’’, এবং আমি স্বয়ং যীশুর দ্বারা গর্ভবতী হয়েছি। অনেক খৃস্টান এই মহিলার অনুগামী হন। উক্ত নারীর যীশুকর্তৃক গর্ভবতী হওয়ার কারণে তাঁর অনুগামী খৃস্টানগণ অত্যন্ত আনন্দিত ও উল্লসিত হন। এ স্বর্গীয় শিশুকে অভ্যর্থনা করতে তারা স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার ও উপহারাদি তৈরি করেন।
আল্লামা রাহমাতুল্লাহ কিরানবী এ ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, জন মিলনারের বর্ণনা থেকে আমরা কিছু বিষয় জানতে পারলাম না। উক্ত পবিত্র মহাসৌভাগ্যবান পুত্রও কি পিতার মত ঈশ্বরত্বের মর্যাদা লাভ করেছিলেন কি না? যদি তা করে থাকেন, তবে এতে তার অনুসারীদের ধর্ম বিশ্বাস কি ‘ত্রিত্ব’ থেকে ‘চারত্বে’ রূপান্তরিত হয়েছিল কি না? এছাড়া ‘পিতা ঈশ্বর’ (God the Father) এর উপাধি পরিবর্তন করে ‘দাদা ঈশ্বর’ করা হয়েছিল কি না?
তাহলে পাদরি মহোদয়দের সমগোত্রীয় ও স্ব-সম্প্রদায়ের মানুষদের কুসংস্কারের মাত্রা দেখুন! যাদের জ্ঞান-বুদ্ধির এ অবস্থা তাদের কি অধিকার আছে ইসলাম, ইসলামের পবিত্র-পুস্তক ও ইসলামের মহান রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে কটুক্তি করার?
হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে ঈমান ও সুপথে পরিচালিত করুন এবং বিভ্রান্তি ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করুন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/612/70
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।