hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শিরক

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৪৯
জাহেলী যুগের শিরক ও বর্তমান সমাজে প্রচলিত শিরকের তুলনামূলক আলোচনা
জাহেলী যুগের মানুষের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের সাথে বর্তমান বাংলাদেশের মুসলিমদের কী পরিমাণ মিল বা অমিল রয়েছে, তা সর্ব সাধারণের নিকট যেন সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়, সেজন্য নিম্নে উভয় সময়ের শিরকী কর্মকান্ডের একটি তুলনামূলক বর্ণনা প্রদান করা হলো :

১. জাহেলী যুগের লোকেরা কাহিনী বা গণকদের দ্বারা ভাগ্য জানার চেষ্টা করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম গণক, টিয়া পাখি ও বানরের মাধ্যমে ভাগ্য জানার চেষ্টা করে।

২. জাহেলী যুগের লোকেরা আররাফ বা ভবিষ্যদ্বাণীকারকদের গায়েব সম্পর্কীয় কথায় বিশ্বাস করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম জিন সাধকদের গায়েব সম্পর্কীয় কথায় বিশ্বাস করে। তারা আরো মনে করে যে, নবী ও ওলীগণ গায়েব জানেন।

৩. জাহেলী যুগের লোকেরা পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের মঙ্গল ও অমঙ্গল জানার চেষ্টা করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম টিয়া পাখি ও বানরের সাহায্যে ভাগ্য জানার চেষ্টা করে।

৪. জাহেলী যুগের লোকেরা ওয়াদ, সুয়া‘আ, ইয়াগুস ইত্যাদি নামে নির্মিত মূর্তিসমূহ প্রয়োজন পূরণ করতে পারে বলে বিশ্বাস করত। আর বর্তমান সময়ের মুসলিমরা ওলীগণ বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করে।

৫. জাহেলী যুগের লোকেরা বিশ্বাস করত যে, দেবতারা ইহকালীন কল্যাণার্জন ও অকল্যাণ দূর করতে পারে। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীদের মধ্যকার গাউছ ও কুতুবগণ দুনিয়া পরিচালনা করেন এবং মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করে।

৬. জাহেলী যুগের লোকেরা ওলী ও ফেরেশতাদের নামে নির্মিত মূর্তি ও দেবতাসমূহ আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য শাফাআত করতে পারে বলে বিশ্বাস করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীগণ নিজস্ব মর্যাদায় আল্লাহর কোন পূর্বানুমতি ব্যতীত তাদের ভক্তদের জন্য শাফাআত করে তাদেরকে মুক্তি দিতে পারবেন বলে বিশ্বাস করে।

৭. জাহেলী যুগের লোকেরা মালাইকা/ফেরেশতা ও ওলীদের নামে নির্মিত দেবতাদের/উপাস্যদের সাধারণ মানুষদের জন্য আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়ার ওসীলা/মাধ্যম হিসেবে মনে করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম মৃত ওলীদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়ার ওসীলা/মাধ্যম মনে করে। তারা আরো বিশ্বাস করে যে, মৃত ওলীগণ ভক্তদের সমস্যার সমাধানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

৮. জাহেলী যুগের লোকেরা ‘উয্যা’ ও ‘যাতে আনওয়াত’ নামের গাছ সর্বস্ব দেবতা যুদ্ধে বরকত ও বিজয় এনে দিত বলে বিশ্বাস করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীদের কবরের/মাজারের উপর অথবা পার্শ্ববর্তী স্থানে উৎপন্ন বা লাগানো গাছের শিকড়, ফল ও পাতার মাধ্যমে বরকত ও বিবিধ কল্যাণ লাভ করা যায় বলে মনে করে। তারা কবরের/মাজারের পুকুর ও কূপের পানি পান করে এবং মাছ, কচ্ছপ ও কুমীরকে খাবার দিয়ে রোগ মুক্তি ও বরকত কামনা করে।

৯. জাহেলী যুগের লোকেরা উপত্যকার জিন সর্দারের নিকট আশ্রয় কামনা করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম কাঠ ও মধু সংগ্রহকারীদের দ্বারা জঙ্গলের জিন ও হিংস্র প্রাণীর অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য জঙ্গলের জিন সর্দারের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে। বিল ও জলাশয়ের মাছ ধরার জন্য পানি সেচের পূর্বে ‘কাল’ নামক জিনকে শিরনী দিয়ে সন্তুষ্ট করে।

১০. জাহেলী যুগের লোকেরা পৃথিবীর ঘটনা প্রবাহের উপর তারকা ও নক্ষত্রের প্রভাবে বিশ্বাস করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম মানুষের ভাগ্যের উপর গ্রহ ও তারকার প্রভাবে বিশ্বাস করে।

১১. জাহেলী যুগের লোকেরা গোত্রীয় নেতাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী গোত্র শাসন করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম মানবরচিত বিধানের আলোকে দেশ শাসন করে। আল্লাহর পরিবর্তে দেশের জনগণকে ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমে সর্বময় ক্ষমতার মালিক মনে করে।

১২. জাহেলী যুগের লোকেরা দাদ ও প্লেগ রোগকে নিজ থেকে সংক্রামক রোগ বলে বিশ্বাস করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম কলেরা, বসন্ত, দাদ, এজমা, যক্ষা, প্লেগ ও এইডস রোগকে নিজ থেকে সংক্রামক রোগ বলে মনে করে।

১৩. জাহেলী যুগের লোকেরা দেবতাদের দিকে মুখ করে দু‘আ করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম দু‘আ গৃহীত হওয়ার জন্য মুরশিদ, পীর ও ওলীদের কবরের/মাজারের দিকে মুখ করে দু‘আ করে।

১৪. জাহেলী যুগের লোকেরা, ছোট ছোট ব্যাপারে দেবতারা সাহায্য করতে পারে- এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাদের নিকট তা কামনা করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম মৃত ওলীগণ সাহায্য করতে পারেন মনে করে তাদের নিকট সাহায্য চায়।

১৫. জাহেলী যুগের লোকেরা ওলীদের মূর্তির সামনে বিনয়ের সাথে দাঁড়াত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীদের কবর ও পীরের সামনে বিনয়ের সাথে দাঁড়ায়।

১৬. জাহেলী যুগের লোকেরা ভাল-মন্দ সর্বাবস্থায় মূর্তির নিকট সাহায্য চাইত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীদের নিকট সাহায্য কামনা করে।

১৭. জাহেলী যুগের লোকেরা ওয়াদ, সুয়া‘আ ইত্যাদি ওলীগণের প্রথমত কবর এবং পরে তাদের মূর্তির সামনে অবস্থান গ্রহণ করে আল্লাহর উপাসনায় মনোযোগ দিত ও তার নিকটবর্তী হতে চাইত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীদের কবরে অবস্থান গ্রহণ করে তাদের বাতেনী ফয়েয হাসিল করতে চায় এবং তাদের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে চায়।

১৮. জাহেলী যুগের লোকেরা চাঁদ ও সূর্যকে সেজদা করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম পীর/ওলীদের কবরে/মাজারে সেজদা করে।

১৯. জাহেলী যুগের লোকেরা বিপদাপদ দূর করার জন্য দেবতাদের উদ্দেশ্যে নযর-নিয়াজ ও মান্নত করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ওলীদের কবরে মান্নত করে।

২০. জাহেলী যুগের লোকেরা দেবতাদেরকে আল্লাহর চেয়ে অধিক ভালোবাসত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম আল্লাহর হুকুমের উপরে পীরের হুকুমকে প্রাধান্য দেয়।

২১. জাহেলী যুগের লোকেরা দেবতাদের নিকট প্রয়োজন পেশ করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীদের নিকট প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়ার জন্য আবেদন করে।

২২. জাহেলী যুগের লোকেরা উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দেবতাদের উপর ভরসা করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ওলীদের উপর ভরসা করে।

২৩. জাহেলী যুগের লোকেরা ধর্ম যাজকদেরকে হারাম ও হালাল নির্ধারণকারী বানিয়ে নিত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম শরীয়ত পালনের ক্ষেত্রে সহীহ হাদীসের উপর পীর ও নিজস্ব মাযহাবের মতামতকে প্রাধান্য দেয়।

২৪. জাহেলী যুগের লোকেরা দেবতাদের সাথে সম্পর্কিত কথিত বরকতপূর্ণ স্থানসমূহ যিয়ারত করতে যেত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীদের কবর ও তাঁদের সাথে সম্পর্কিত স্থানসমূহ দূর-দূরান্ত থেকে যিয়ারত করতে যায়।

২৫. জাহেলী যুগের লোকেরা দেবতাদের মূর্তির গায়ে হাত বুলিয়ে বরকত হাসিল করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম ওলীদের কবর/মাজার, কবরের দেয়াল, গিলাফ ও তাদের স্মৃতিসমূহ স্পর্শ করে বরকত হাসিল করে।

২৬. জাহেলী যুগের লোকেরা দেবতা ও বাপ-দাদার নামে শপথ গ্রহণ করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম আগুন, পানি, মাটি, বিদ্যা ইত্যাদির নামে শপথ করে।

২৭. জাহেলী যুগের লোকেরা দেবতাদের নামের সাথে মিলিয়ে সন্তানাদির নাম রাখত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম কোন ওলীর নামের সাথে মিলিয়ে সন্তানাদির নাম রাখে।

২৮. জাহেলী যুগের লোকেরা বরকত হাসিলের জন্য সন্তানদেরকে দেবতাদের কাছে নিয়ে যেত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম বরকত লাভ ও রোগ মুক্তির জন্য সন্তানদেরকে ওলীদের কবরে নিয়ে যায়।

২৯. জাহেলী যুগের লোকেরা শিরকী পন্থায় অসুখ নিবারণের জন্য চেষ্টা করত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্রের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করে।

৩০. জাহেলী যুগের লোকেরা চোখের কুদৃষ্টি থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য গলায় ঝিনুক থেকে আহরিত মালা পরাত। আর বর্তমান সময়ের অনেক মুসলিম কারো চোখ লাগা থেকে শিশুদেরকে রক্ষার জন্য তাদের গলায় মাছের হাড়, শামুক ইত্যাদি ঝুলিয়ে রাখে।

উপরোক্ত তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে এ কথা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয় যে, জাহেলী যুগের মুশরিকদের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের সাথে আমাদের দেশের অনেক মুসলিমদের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের যথেষ্ট মিল রয়েছে। তাদের মধ্যে এমনও অনেক শিরকী কর্ম রয়েছে, যা জাহেলী যুগের মুশরিকদের মধ্যে ছিল না। জাহেলী যুগের লোকেরা নৌকা যোগে কোথাও যাওয়ার প্রাক্কালে ঝড় ও তুফানের কবলে পতিত হলে তারা বিপদ থেকে মুক্তির জন্য একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকেই স্মরণ করে তাঁকে আহবান করত বলে কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে। [ সূরা ইউনুস ১০:২২ ]

অথচ দেখা যায়, বর্তমানে অনেক মুসলিম রয়েছে যারা অনুরূপ বিপদে পতিত হলে সাহায্যের জন্য একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলাকে আহবান না করে ওলীদেরকে সাহায্যের জন্য আহবান করে থাকে। এতে প্রমাণিত হয় যে, জাহেলী যুগের লোকেরা যতটুকু শয়তানের শিকারে পরিণত হয়েছিল আমাদের দেশের অনেক নামধারী মুসলিম এর চেয়েও মারাত্মকভাবে তার শিকারে পরিণত হয়েছে। [শিরক কী ও কেন? ড. মুহাম্মাদ মুযযাম্মিল আলী। ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৯-২৭২ (ঈষৎ পরিমার্জিত)]

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন