hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রাফ‘উল মালাম সম্মানিত ঈমামগণের সমালোচনার জবাব

লেখকঃ শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবন আবদুল হালীম ইবন তাইমিয়্যাহ

৪০
দ্বিতীয় মত
অপরপক্ষে সালাফে সালেহীন এবং অধিকাংশ ফকীহের মতে, এসব হাদীসে যে শাস্তির উল্লেখ রয়েছে, তা ধমকির ব্যাপারেও যথার্থ দলীল হিসেবে গৃহীত হবে। কেননা সাহাবীগণ এবং পরবর্তী সময় তাবে‘ঈগণ সর্বদাই এসব হাদীস দ্বারা আমল প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে শাস্তির বিধানও প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং যারা এ ধরণের আমল করবে তাদের ওপর মোটামুটিভাবে [অর্থাৎ বিস্তারিত কিছু নির্ধারণ না করে যেভাবে ধমক এসেছে, সেভাবেই ধমকটিকে রেখে দেওয়া। সেটির ব্যাপারে ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে না যাওয়া। [সম্পাদক]] শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার কথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তাদের হাদীস ও ফাতওয়ায় এ মত ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে আছে।

এটা এ জন্য যে, শাস্তির ধমকিও শরী‘আতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। আর শরী‘আতের হুকুম কখনও প্রকাশ্য দলীল-প্রমাণাদির মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়, আবার কখনও অকাট্য দলীল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। কেননা শাস্তির ধমকির ব্যাপারে পূর্ণ দৃঢ় প্রত্যয় অর্জন উদ্দেশ্য নয়, বরং এমন বিশ্বাসই যথেষ্ট দৃঢ় প্রত্যয় আসে অথবা যাতে প্রধান্যপূর্ণ ধারণা লাভ হয়। আর আমল সম্পর্কিত হুকুমের বেলায়ও একই অবস্থা চাওয়া হয়ে থাকে [সুতরাং ‘আহকামে আমলিয়া’ বা কার্যগত আমলের ক্ষেত্রে যেমন খবরে ওয়াহেদ দ্বারা দলীল পেশ করে সেটা দ্বারাই বিধান প্রযোজ্য হয়, তেমনি ধমকিগত আমলের ক্ষেত্রেই একই অবস্থা হবে। সেখানে কোনো পার্থক্য করা যাবে না। তাই এটা বলা যায় যে, কোনো শাস্তির ধমক যদি খবরে ওয়াহেদের মাধ্যমে আসে, তবে হাদীস বিশুদ্ধ প্রমাণিত হলে মৌলিকভাবে সেই কাজটি যেমন হারাম বলে ধর্তব্য হবে, তেমনি যে এ কাজ করবে তার ওপর সেই ধমকিও আরোপিত হবে। [সম্পাদক]]।

মানুষের এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ এটি হারাম করেছেন এবং ঐ হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সংক্ষিপ্ত ভীতি প্রদর্শণ করেছেন; আর এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ এটা হারাম করেছেন এবং তার জন্য নির্দিষ্ট শাস্তির ওয়াদা করেছেন, এই উভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা উভয়টিই (কোনো কিছু হারাম করা ও অনির্ধারিত শাস্তির ওয়াদা এবং কোনো কিছু হারাম করা কিংবা তার ওপর নির্ধারিত শাস্তির ওয়াদা করা) আল্লাহর পক্ষ হতে খবর হিসেবে প্র্রদত্ত। সুতরাং শর্তমুক্ত দলীল দ্বারা প্রথম ব্যাপারে খবর দেওয়া যেমন জায়েয, তেমনিভাবে দ্বিতীয়টির ব্যাপারেও খবর দেওয়া জায়েয। বরং যদি কেউ বলে: শাস্তির ব্যাপারে ধমকি যেখানে এসেছে সেটার ওপর আমল করাই অধিক যুক্তপূর্ণ, তাহলে তার কথা বিশুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে। আর এ জন্যই আলিমগণ তারগীব (আগ্রহ সৃষ্টিকারী) ও তারহীব (সাবধানকারী) হাদীসের সনদের ব্যাপারে যে রকম ছাড় দেন, বিধি-বিধান সংক্রান্ত হাদীসের ক্ষেত্রে সেরকম ছাড় দেন না। কেননা শাস্তির ধমকি থাকার বিশ্বাস মানব প্রবৃত্তিকে সে কাজ থেকে বিরত রাখে।

তারপর যদি হাদীসে বর্ণিত শাস্তিটির ধমকি বাস্তবে পরিণত হয়, তবে লোকটি (ভয় করে সে কাজ না করার কারণে) বেঁচে গেল। আর যদি শাস্তির ধমকি বাস্তবে না ঘটে, বরং দেখা গেল যে, ঐ কাজের পরিণতি হিসেবে যে শাস্তি দেওয়ার কথা ছিল সেটা না দিয়ে তাকে হালকা শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তাহলে তার যে বিশ্বাস ছিল যে এ কাজ করলে বেশি শাস্তি ভোগ করতে হবে, সেটা লোকটির কোনো ক্ষতি করল না; যখন সে কাজটিকে ক্ষতিকর মনে করে পরিত্যাগ করবে। কারণ, যদি বিশ্বাস করে যে এর দ্বারা শাস্তি কম হবে, তাহলেও তা ভুল সাব্যস্ত হতে পারে, অনুরূপভাবে যদি হাদীসের বাড়তি ধমকির ব্যাপারে যদি হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বিশ্বাস করল না তাও তো ভুল প্রমাণিত হতে পারে [সুতরাং সবচেয়ে সাবধানতার কথা হচ্ছে এটা বিশ্বাস করা যে, যে কাজের মধ্যে শাস্তির ধমক এসেছে সে কাজটি হারাম এবং যে শাস্তির ধমক সংক্ষিপ্তভাবে এসেছে সেটাকে সেভাবেই বিশ্বাস করা যে এর দ্বারা শাস্তি হবে। এর মাধ্যমে হাদীসের ওপর আমল করা হয়ে যাবে। তার বিপরীতটি হলেই তো সমস্যা। যেমন, বিশ্বাস করা হলো যে, শাস্তির ধমকি আসার কারণে কাজটি হারাম হলেও কাজটির কারণে শাস্তি দেওয়া হবে না, তাহলে যদি শেষে প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ এর জন্য আসলেই শাস্তি রেখেছেন তাহলে কী অবস্থা হবে! [সম্পাদক]]।

অতঃপর শাস্তি সম্পর্কিত এই ভুল ধারণা অর্থাৎ কাজের পরিণামে আসল শাস্তি কম ধারণা করা কিংবা শাস্তির ধমকির বিষয়ে হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বিশ্বাস না করলে, কাজটি তার কাছে হাল্কা মনে হতে পারে ফলে সে ঐ কাজে লিপ্ত হতে পারে। তারপর যদি বাড়তি শাস্তি সাব্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে সে অধিকতর শাস্তির সম্মুখীন হবে। অথবা সে শাস্তি পাওয়ার একটি কারণ তার মধ্যে বিদ্যমান তা বলা যাবে।

সুতরাং শাস্তি সম্পর্কিত এ ভুল উভয় অবস্থাতেই (শাস্তি প্রযোজ্য হওয়ার ওপর বিশ্বাস রাখা এবং বিশ্বাস না রাখা) সার্বিকভাবে সমান। তবে শাস্তি প্রযোজ্য হওয়ার বিশ্বাস রাখা আজাব (শাস্তি) হতে পরিত্রাণের বেশি নিকটবর্তী। তাই এ অবস্থাটিই অধিকতর শ্রেয়।

আর এ নীতির ওপর ভিত্তি করেই অধিকাংশ আলিম হারামের দলীলটিকে হালালের দলীলের ওপর প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এবং তার ওপর ভিত্তি করেই বহু ফিকহ শাস্ত্রবিদ শরী‘আতের আহকামের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতেন।

আর কোনো কাজ সম্পাদনে ‘ইহতিয়াত্ব’ তথা ‘সাবধানতা অবলম্বন’ এর বিষয়টি মৌলিকভাবে যে ভালো, এ ব্যাপারে বিবেকবান প্রায় সবাই একমত।

অতঃপর যদি কোনো ব্যক্তির মনে ‘শাস্তিতে পতিত না হওয়ার’ মধ্যে ভুল করার বিশ্বাসটি ও তার বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ ‘শাস্তিতে পতিত হওয়ার’ মধ্যে ভুল করার বিশ্বাসকে দাড় করানো যায়, তবে তার বিশ্বাসের পক্ষে যে দলীল রয়েছে এবং তার বিশ্বাসের কারণে নাজাত পাওয়া সংক্রান্ত দলীল দু’টি কোনো প্রকার বিরোধিতা থেকে মুক্ত থাকবে [অর্থাৎ প্রথমোক্ত দলীল দু’টি পরস্পর বিরোধী হয়ে বাদ পড়লেও পরবর্তী দু’টো দলীল বিরোধিতা থেকে মুক্ত থাকার কারণে সেটার উপর আমল করা বাধ্য করে। সুতরাং এসব মৌলিক শাস্তির ধমকিযুক্ত হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী শাস্তিতে পতিত হওয়ার যে মতটি অধিকাংশ সত্যনিষ্ঠ আলিমগণ গ্রহণ করেছেন, তা সাব্যস্ত হয়ে গেল।]।

কোনো লোকের এরূপ বলা ঠিক হবে না যে, শাস্তির জন্য অকাট্য দলীল না থাকা শাস্তি প্রযোজ্য না হওয়ার প্রমাণ; যেমন, কুরআনের অতিরিক্ত কিরা’আতের জন্য খবর-ই-মোতাওয়াতের না থাকা ঐ কিরা’আতগুলো শুদ্ধ না হওয়ার দলীল। কথকের এই কথা ঠিক নয়। কেননা (কোনো সুনির্দিষ্ট) দলীল না থাকা দলীলকৃত বস্তু না থাকা বুঝায় না।

যে ব্যক্তি ইলম তথা আকীদা বিষয়ক কাজে সেটার অস্তিত্বের পক্ষে অকাট্য দলীল না থাকার কারণে ঐ বস্তুকে অস্তিত্বহীন বলে সিদ্ধান্ত নেয়, যেমনটি একদল মুতাকাল্লিমের অনুসৃত পথ, সে ব্যক্তি এ সিদ্ধান্তে সুস্পষ্টভাবে ভুল করল।

কিন্তু যখন আমরা জানতে পারি, কোনো বস্তুর অস্তিত্ব এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে যে, অনিবার্যভাবে তার দলীল পাওয়া যাবে, তারপর যখন জানলাম যে, দলীল নেই, অতএব আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব যে, বস্তুটিও অস্তিত্বহীন। কেননা অনিবার্যকারী না থাকাটাই অনিবার্যিত বস্তু না থাকার প্রমাণ।

আর আমরা এও জানতে পেরেছি যে, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর দীনকে আমাদের কাছে বর্ণিত ও প্রচার-প্রসার হয়ে আসার পক্ষে যথেষ্ট কারণসমূহ রয়েছে। কেননা মুসলিমদের জন্য মানুষের কাছে সাধারণ দলীল হিসেবে পৌঁছে যাওয়া প্রয়োজন এমন কিছু গোপন করা কোনোভাবেই বৈধ নয়। সুতরাং (উদাহরণ হিসেবে) যখন আমাদের কাছে ষষ্ঠ সালাত হিসেবে সাধারণভাবে কোনো কিছু বর্ণিত হয়ে আসে নি, অনুরূপভাবে (সুনির্দিষ্ট সূরার বাইরে) অন্য কোনো সূরার কথা বর্ণিত হয় নি, তখন আমরা দৃঢ়ভাবে জানতে পারলাম যে, ইসলামে ছয় ওয়াক্ত ফরয সালাতও নেই এবং কুরআনে বর্ণিত সূরা ছাড়া অন্য কোনো সূরাও নেই।

কিন্তু শাস্তি প্রযোজ্য অধ্যায়টি এই অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা প্রত্যেক কাজের শাস্তির বর্ণনা আমাদের কাছে ধারাবাহিকভাবে ও মোতাওয়াতের বিশুদ্ধভাবে পৌঁছবে, তা যেমন জরুরী নয়, তেমনিভাবে সে কাজের ওপর নির্ধারিত শাস্তির হুকুমটিও ধারাবাহিক ও মোতাওয়াতের হওয়া শর্ত নয়।

উল্লিখিত বর্ণনায় বুঝা গেল, যে সমস্ত হাদীস শাস্তির ইংগিতবহ, তাতে আমল করা ওয়াজিব। সুতরাং বিশ্বাস করতে হবে যে, ঐ কাজের আমলকারীকে ঐ শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু শাস্তি প্রযোজ্য হবার জন্য কতকগুলো শর্ত রয়েছে, আরও রয়েছে কিছু প্রতিবন্ধকতা [মোটকথা, যখনই কোনো ব্যাপারে ধমকিসূচক হাদীস পাওয়া যাবে, তখন সে কাজটি হারাম হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত। তবে যে ধমকিটি এসেছে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যার মতে তা যদি খবরে ওয়াহেদ দ্বারাও হয়, তবুও সেটাকে ধমকিতে পতিত হওয়ার উপর মৌলিকভাবে প্রমাণবহ মনে করতে হবে। হ্যাঁ, হয়ত ধমকিতে পতিত হওয়ার কোনো শর্ত পূরণ না হওয়া বা প্রতিবন্ধকতা থাকা জনিত কারণে সেটা কখনও কখনও ব্যক্তির ওপর প্রযোজ্য হতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। [সম্পাদক]]।

এই নীতিটি কতগুলো উদাহরণের মাধ্যমে ব্যক্ত করা যায়:

১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুদ্ধ বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে:

«لَعَنَ اللَّهُ آكِلَ الرِّبَا، وَمُوكِلَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَكَاتِبَهُ»

“সুদখোর, সুদদাতা, স্বাক্ষীদ্বয় ও এর লেখকের ওপর আল্লাহ লা‘নত করেছেন” [মুসনাদে আহমাদ, ১/৪০২। তবে মূল হাদীসটি অন্য শব্দে ইমাম মুসলিম, তিরমিযী ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। সেখানে ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন’ এভাবে এসেছে। [সম্পাদক]]।

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আরও বিভিন্ন পন্থায় বর্ণিত আছে: তিনি ঐ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে, এক ছা’ এর পরিবর্তে দুই ছা’ খাদ্য নগদ বিক্রি করেছিল,

«أَوَّهْ عَيْنُ الرِّبَا»

‘হায় হায়, এতো সুদই’। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯৪। তবে শব্দ মুসলিমের। অর্থাৎ সম বস্তুর বিনিময় বাকীতে অথবা অতিরিক্ত পরিমানের মাধ্যমে সম্পন্ন হলে তা সুদ হবে, নগদ হলে সুদ হবে না।] তাছাড়া তিনি এও বলেছেন:

«البُرُّ بِالْبُرِّ رِبًا إِلَّا هَاءَ وَهَاءَ»

“গমের পরিবর্তে গম নগদ মূল্য ছাড়া সুদের পর্যায়ভুক্ত” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৮৬।]।

উল্লিখিত হাদীস সুদের উভয় প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। একটি হচ্ছে, সমগোত্রীয় বস্তুর বিনিময়ে বেশি প্রদানজনিত সুদ। অন্যটি হচ্ছে, বাকী বিক্রয় করে পরে দাম বাড়িয়ে নেওয়া সংক্রান্ত সুদ।

তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: إِنَّمَا الرِّبَا فِي النَّسِيئَةِ “সুদ হলো বাকী বিক্রয়ের (পর সময়ের কারণে পরবর্তীতে অর্থ বাড়িয়ে দেওয়ার) মধ্যে” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯৬। তবে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে যে, বর্ণনাকারী হাদীসের একটি অংশ শুনেছেন। এর দ্বারা সমগোত্রীয় অতিরিক্ত আদান-প্র্রদান জনিত সুদকে অস্বীকার করা হয় নি। [সম্পাদক]], যাদের কাছে এ হাদীস পৌঁছেছে, তারা এক সা‘ এর পরিবর্তে দুই ছা‘ এর নগদ বিক্রয়কে হালাল মনে করতেন। এই রায় হলো ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তার সংগীগণের, আবুস শা‘ছা‘, ‘আতা, তাউস, সা‘ঈদ ইবন জুবাইর, ইকরামা ও অন্যান্যগণ। যারা ইলম ও ‘আমলে মুসলিম জাতির গৌরব ছিলেন। এখন কারও জন্য একথা বলা জায়েয হবে না যে, উল্লিখিত সাহাবী ও তাদের অনুসারীগণ, সুদ সম্পর্কিত হাদীসে সুদখোরদের পর্যায়ভুক্ত ও অভিশপ্ত। কেননা তারা উল্লিখিত ফাতওয়া দিয়েছিলেন মোটামুটিভাবে একটি গ্রহণযোগ্য তাবিল তথা ব্যাখার ওপর ভিত্তি করে।

২. অন্য একটি উদাহরণ এই যে, মদীনার কতিপয় আলিম হতে স্ত্রীর পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাসের কথা বর্ণিত আছে। অথচ সুনান-ই- আবু দাউদে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«مَنْ أَتَى امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ»

“যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পিছনের রাস্তা দিয়ে যৌন সহবাস করে, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ বস্তুকে অস্বীকার করল) [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯০৪; (সংক্ষেপিত); তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৩৯; মুসনাদে আহমাদ ২/৪৭৬।]।” কিন্তু কারও পক্ষে কী এটা বলা সমীচীন হবে যে, ঐ (মদীনার) আলিমগণের অমুক কিংবা অমুক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ বস্তুর সাথে কুফুরী করেছে? [অর্থাৎ মদীনাবাসীদের মধ্যে যে সব আলেম তা করেছে বলে কেউ কেউ বর্ণনা করে থাকেন, তাদেরকে সে ধমকির অন্তর্গত কাফির বলার সুযোগ নেই। কারণ, তাদের কাছে হয়ত সে হাদীস পৌঁছে নি। কিন্তু যারা এ কাজ করবে, তারা হারাম করেছে বলে ধর্তব্য হবে এবং মৌলিকভাবে ধমকির আওতায় পড়বে।]

৩. এভাবে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে,

«لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الخَمْرِ عَشَرَةً : عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا ...» الحديث .

“তিনি শরাবের ব্যাপারে দশ ব্যক্তিকে লা‘নত (অভিশাপ) করেছেন। তাতে মদ প্রস্তুতকারী, প্রস্তুতে সাহায্যকারী ও পানকারী ... ইত্যাদি সকল প্রকার লোকই শামিল” [মুসনাদে ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী।]।

আরও বিভিন্ন পন্থায় বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ»

“এমন পানীয় যাতে নেশা আসে, সেটাই হারাম” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০০১।]।

তিনি আরও বলেন,

«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ»

“প্রত্যেক নেশাযুক্ত বস্তুই মদ” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০০৩।]।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মিম্বরে মুহাজিরীন ও আনসারদের মধ্যে খুৎবা দিতে গিয়ে বলেন:

«وَالْخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ»

“যে বস্তু বিবেককে আচ্ছন্ন করে, তাই মদ”। আর আল্লাহ মদ হারাম হবার আয়াত নাযিল করেন। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময়কার অবস্থা ছিল এই যে, তৎকালে মদীনায় মদ পান করা হতো, তবে তাদের সে মদ ফাদীখ বা কাঁচা-পাকা খেজুর দিয়েই কেবল তৈরি হতো। আঙ্গুরের রসের শরাব তৈরির কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।

অথচ মুসলিম জাতির মধ্যে ইলম ও ‘আমলের ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ কতিপয় কুফাবাসী এ বিশ্বাস পোষণ করতেন যে, আঙ্গুর ব্যতীত মদ হয় না। আর খেজুর ও আঙ্গুর ব্যতীত অন্যান্য ফলের রস নেশা পরিমান না হলে হারাম হবে না। তারা হালাল ধারণা করে সেটা পানও করতেন। এতদসত্ত্বেও, বলা যাবে না যে, ঐসব লোকরা হাদীসে বর্ণিত শাস্তির ধমকির অন্তর্ভুক্ত। কেননা তাদের ওযর ছিল এবং তারা তাবীল বা ব্যাখ্যা করে তা করেছে অথবা তাদের অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতাও থাকতে পারে।

তাছাড়া এও বলা উচিৎ নয় যে, তারা যে মদ পান করেছে তা সে মদের অন্তর্ভুক্ত নয় যার পানকারীকে অভিশপ্ত বলা হয়েছে। কেননা (মদ হারামের ব্যাপারে) সাধারণ যে নির্দেশনা এসেছে (তারা তা’বীল করে যা পান করেছে) তা সেগুলোকেও সমভাবে শামিল করে। আর এটাও জানা যে, তখনকার দিনে মদীনায় আঙ্গুরের মদ তৈরি হতো না।

৪. তদ্রূপ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ বিক্রেতাকে অভিশাপ দেন। এতদসত্ত্বেও কোনো কোনো সাহাবী মদ বিক্রয় করেছেন। এ সংবাদ উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে পৌঁছলে তিনি রাগান্নিত হয়ে বললেন, ‘অমুককে আল্লাহ ধ্বংস করুন, সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«قَاتَلَ اللَّهُ اليَهُودَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُومُ، فَجَمَلُوهَا فَبَاعُوهَا» وَأَكَلُوا أَثْمَانَهَا

“ইয়াহূদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা গুলিয়ে বিক্রি করতো” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৮২।] ও “তার মূল্য ভোগ করতো” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৮৩।]।

মদ বিক্রেতা সাহাবীর জানা ছিল না যে, সেটা বিক্রি করা হারাম। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ সাহাবীর এ বিষয়টি যে অজানা তা জানা সত্ত্বেও ঐ কাজের শাস্তি সম্পর্কে অবহিত করা থেকে পিছপা হন নি। যাতে করে সে সাহাবী ও অন্যান্যরা যখন তা জানবে তখন তা থেকে বেঁচে থাকতে পারে।

৫. তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুরের রস নিংড়ানো ব্যক্তি এবং যার জন্য রস নিংড়ানো হয়, উভয়কেই লা‘নত করেছেন। অথচ বহু সংখ্যক ফকীহ্‌ অন্যের জন্য আঙ্গুরের রস নিংড়ানো জায়েয মনে করেন, যদিও ঐ ব্যক্তি জানে যে, ঐ রস দিয়ে মদ তৈরি করা হবে।

হাদীসের ‘নস’ দ্বারা এটা সহজেই বোঝা যায় যে, হাদীসটি রস নিংড়ানো ব্যক্তির অভিশপ্ত হওয়ার ব্যাপারে অকাট্য দলীল, যদিও ঐ কর্মে লিপ্ত ব্যক্তির ওপর হুকুমটি (অভিশপ্ত হওয়ার বিষয়টি) বর্তাবে না। কারণ, সেখানে এ হুকুম দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে (আর তা হচ্ছে, সে বিধান সম্পর্কে না জানা)।

৬. অনুরূপভাবে বিভিন্ন সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরচুলাধারীনি স্ত্রীলোক এবং যে অন্যের জন্য পরচুলা তৈরি করে, উভয়কে অভিশাপ দিয়েছেন। অথচ কতিপয় ফকীহ্‌র মতে এ কাজ শুধু মাকরূহ।

৭. তদ্রূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الَّذِي يَشْرَبُ فِي آنِيَةِ الْفِضَّةِ، إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ»

“যারা রৌপ্যের পাত্রে পানি পান করে, তারা নিজেদের পেটের মধ্যে জাহান্নামের আগুন সশব্দে প্রবেশ করায়” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৬৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪১৩; মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০৬। তবে শব্দ ইমাম আহমাদের।]। এতদসত্ত্বেও কোনো কোনো ফকীহ এটাকে মাকরূহ তানজিহ মনে করেন।

৮. রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«إِذَا التَقَى المُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالقَاتِلُ وَالمَقْتُولُ فِي النَّارِ»

“যখন দুই মুসলিম তাদের তরবারী নিয়ে একে অন্যের সামনাসামনি হয়, তখন ঘাতক ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামে যাবে” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৮৮।]।

না হক মুমিনদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে উল্লিখিত হাদীসের আমল করা ওয়াজিব। এতদসত্ত্বেও, আমরা জানি যে, উষ্ট্র যুদ্ধে এবং সিফফীন যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীগণ জাহান্নামবাসী নন। কেননা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ব্যাপারে তাদের ওযর এবং ভিন্ন ব্যাখ্যা ছিল। এছাড়াও তারা এমন সব সৎ কাজ করেছিলেন, যা তাদের জাহান্নামের প্রবেশের পথে প্রতিবন্ধক হিসাবে দাঁড়িয়েছিল।

৯. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহীহ হাদীসে বলেছেন:

«ثَلاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا يُزَكِّيهِمْ وَلا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيم، رجل على فضل مَاء يمنعه من ابْن السَّبِيل، فيقول الله له : اليوم أمنعك فضلي، كما منعتَ فضل ما لم تعمل يداك، رجلٌ بَايع إِمَامًا لايبايعه إِلا لِدُنْيَا فَإِنْ أَعْطَاهُ مِنْهَا رَضِيَ وَإِنْ لَمْ يُعْطِهِ سَخَطَ وَرَجُلٌ حلف على سِلْعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ كاذباً، لقد أعطي بها أكثر مما أعطي»

“আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তিন শ্রেনীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে গুনাহ হতে পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্য ভীষণ শাস্তি অবধারিত রয়েছে। যে ব্যক্তি পথিককে অতিরিক্ত পানি দিতে অসম্মতি জানায় কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন-আজ আমি তোমাকে আমার করুনা ও রহমত হতে বঞ্চিত রাখব, যেমন ভাবে তুমি মানুষকে অতিরিক্ত পানি হতে বঞ্চিত করতে, যা তোমার শ্রমলব্ধ নয়। দ্বিতীয় ব্যক্তি শুধু পার্থিব স্বার্থের জন্য ইমামের হাতে আনুগত্যের বাই‘আত বা বশ্যতা স্বীকার করে, তাকে কিছু দেওয়া হলে খুশী হয়, আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। তৃতীয় ব্যক্তি তার মাল অতিরিক্ত দামে বিক্রয় করার জন্য আছরের পর মিথ্যা শপথ করে যে, ইতোপূর্বে তার মালের বেশি দাম বলা হয়েছিল।” [মুসনাদে আহমাদ, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম। তবে উপরোক্ত হাদীসের শব্দ কয়েকটি বর্ণনা থেকে চয়নকৃত। [সম্পাদক]]

উক্ত হাদীসের অতিরিক্ত পানি দান করতে অসম্মতি জানালে ভীষণ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলে ধমকি দেওয়া হয়েছে। এতদসত্ত্বেও একদল আলিম অতিরিক্ত পানি দিতে নিষেধ করাকে জায়েয মনে করেন।

কিন্তু হাদীসের দলীল অনুসারে, ঐ কাজ আমাদেরকে হারামই বলতে হবে। এতদসত্ত্বেও, যে ঐ কাজ জায়েয মনে করে, তার ওপর শাস্তির ধমকি প্রযোজ্য হবে না। কেননা তাবীল তথা ভিন্ন ব্যাখ্যার কারণে তার ওযর কবুল করতে হবে।

১০. অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لَعَنَ اللَّهُ الْمُحَلِّلَ، وَالْمُحَلَّلَ لَهُ»

“যে ব্যক্তি অন্য কারও জন্য হালাল করার নিয়তে কোন স্ত্রীলোককে বিয়ে করে, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির ওপর অভিশাপ দেন। আর যে ব্যক্তির জন্য ঐ স্ত্রী লোকটিকে হালাল করা হয়, তার ওপরও আল্লাহর লা‘নত বা অভিশাপ” [আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৭৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৯৩৬।]। এটা একটি সহীহ হাদীস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন বর্ণনায় এবং সাহাবীগণ হতেও এরূপ বর্ণিত আছে। এতদসত্ত্বেও, কতিপয় আলিম হালাল করার জন্য এ বিয়ে নিঃশর্তভাবে সহীহ বলে থাকেন।

আবার কেউ ঐ প্রকার বিয়ে এই শর্তে জায়েয রাখেন, যদি বিয়ের ‘আকদ’ এর সময় কোন প্রকার শর্ত না করা হয়। তাদের এই কথার পেছনে বহু বিখ্যাত ওযর আছে।

কেননা প্রথম দলটি (যারা হীলা বিয়ে নিঃশর্তভাবে সহীহ বলে থাকেন), তাদের মূলনীতির কিয়াস হচ্ছে, শর্তের কারণে বিয়ে-বন্ধন বাতিল হয় না; যেমনিভাবে আকদ তথা বিনিময় চুক্তির কোনো একটি অজানা থাকলেও সে চুক্তি বাতিল হয় না।

পক্ষান্তরে দ্বিতীয় দলটি, (যারা আকদের সময় শর্ত না করা হলে এ বিয়ে সহীহ বলে থাকেন) তাদের মূলনীতির কিয়াস হচ্ছে, শর্তমুক্ত কোনো আকদ কখনও আকদের বিধান পরিবর্তন করে না।

বস্তুতঃ (যারা এ বিয়ে বিশুদ্ধ বলেন), তাদের কাছে হারাম সম্পর্কিত হাদীস পৌঁছে নি। কেননা তাদের পুরাতন কিতাবসমূহে ঐ হাদীস নেই। এটিই হচ্ছে প্রকাশ্য কথা।

হ্যাঁ, যদি তাদের কাছে এ হাদীস পৌঁছত, তা হলে অবশ্যই তারা ঐ হাদীস তাদের কিতাবে লিপিবদ্ধ করতেন এবং এ হাদীসকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করতেন অথবা ঐ হাদীসের জবাব দিতেন। আবার এটাও সম্ভব হতে পারে যে, তাদের কাছে হাদীসটি পৌঁছেছে, কিন্তু তারা তার তাবিল করেছেন। অথবা উক্ত হাদীসকে মনসূখ বা রহিত বলে বিশ্বাস করেছেন। আবার এও সম্ভব হতে পারে যে, এই হাদীসের বিপক্ষে বিপরীতে দাঁড়ানোর মত তাদের নিকট অন্য কিছু ছিল।

উল্লিখিত বর্ণনায় এটি প্রতীয়মাণ হয় যে, উল্লিখিত লোকগণ হাদীসে বর্ণিত শাস্তির সম্মুখীন হবে না, যদিও তারা উল্লিখিত কোনো কারণে ‘তাহলীল’ (অন্য কারও জন্য স্ত্রী হালাল) করার কাজটি জায়েয বিশ্বাসে করে থাকে।

অবশ্য আমাদের এটা বলতেই হবে যে, উক্ত ‘তাহলীল’ বা হালাল করাই শাস্তির কারণ, যদিও শর্তের অভাবে অথবা প্রতিবন্ধকতার ফলে কোনো কোনো লোকের ওপর এই শাস্তি প্রযোজ্য হয় না।

১১. এরূপভাবে মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু জিয়াদ ইবন আবিহকে নিজের (বংশের) সাথে সম্পৃক্ত করেন; যদিও প্রকৃতপক্ষে এই জিয়াদ হারিস ইবন কালদাহ এর বিছানায় জন্মগ্রহণ করেন। কেননা আবু সুফিয়ান বলতেন: জিয়াদ আমার বীর্যে জন্মলাভ করেছে। অথচ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، وَهُوَ يَعْلَمُ أنه غير أبيه، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ»

“যে ব্যক্তি নিজেকে পিতা ব্যতীত অন্য কারও সন্তান বলে সম্পর্কযু্ক্ত করে; অথচ সে জানে যে, এ লোকটি তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৩; মুসনাদে আহমাদ ১/১৭৯।]।

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«َمَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، أَوِ تولى غَيْرِ مَوَالِيهِ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا، وَلَا عَدْلًا»

“যে ব্যক্তি অপরকে পিতা বলে দাবী করে অথবা নিজের মুনিব থাকা সত্বেও অন্য মুনিবের বশ্যতা স্বীকার করে, তার ওপর আল্লাহ, মালাইকা ও সকল মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তার কোনো ফরয ও নফল ইবাদত কিছুই কবুল করবেন না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭০; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৮৭; শব্দ ইমাম আহমাদের।] এটি একটি বিশুদ্ধ হাদীস। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বিধান দিয়েছেন যে, ‘সন্তান ঐ ব্যক্তির প্রাপ্য, যার বিছানায় (অর্থাৎ যার স্ত্রী বা ক্রীতদাসীর পেটে ঐ সন্তান ভুমিষ্ট হয়েছে)। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইজমা‘ তথা ঐকমত্যের বিধানের অন্তর্ভুক্ত।

এতে করে আমরা বুঝি যে, যে ব্যক্তি তার পিতা (যার ঘরে সে জন্মেছে তাকে) ছাড়া অন্যকে পিতা বলে স্বীকার করে, সে ঐ হাদীসে উল্লিখিত শাস্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এতদসত্ত্বেও, আমরা নির্দিষ্ট কোনো সাধারণ ব্যক্তিকে এজন্য দায়ী করতে পারি না। সাহাবীদেরকে অভিযুক্ত করাতো দূরের কথা। অর্থাৎ সাহাবীদের কাউকেও বলা যাবে না যে, তিনি এই শাস্তির যোগ্য। কেননা সম্ভবতঃ রাসূলুল্লাহ্‌র সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফয়সালা, “আল-ওয়ালাদু লিল ফিরাশ” অর্থাৎ ‘সন্তান যার স্ত্রীর পেটে হয়েছে, তারই প্রাপ্য’ এটি তাদের কাছে পৌঁছে নি। বরং তারা বিশ্বাস করছিল যে, সন্তান ঐ ব্যক্তিরই হবে যে তার মাকে গর্ভে প্রদান করেছে, আরও বিশ্বাস করেছে যে, আবু সুফিয়ানই তো উম্মে যিয়াদ সুমাইয়ার গর্ভে বীর্য প্রদান করে সেটার জন্ম দিয়েছে।

এই বিধান অনেক লোকের কাছেই অজানা থাকতে পারে। বিশেষ করে, হাদীস সংকলনের প্রসার লাভের পূর্বে বেশির ভাগ লোক এই বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। তাছাড়া এও হতে পারে যে, ইসলামের পুর্ব যুগে সন্তান ঐ ব্যক্তিরই প্রাপ্য ছিল, যার বীর্যে সে জন্মলাভ করেছে। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাও থাকতে পারে যা ঐ কাজের শাস্তি প্রয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যেমন, তিনি এমন কতিপয় নেক কাজ করেছেন, যার ফলে ঐ গুনাহ মুছে গেছে। ইত্যাদি।

এ এক প্রশস্ত বিভাগ। কেননা যে সব বিষয় কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা হারাম করা হয়েছে, অথচ কতিপয় আলিম তাকে হালাল মনে করেন সে সবই এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, হয় তাদের কাছে হারামের দলীল পৌঁছে নি, ফলে তারা সেগুলোকে হালাম মনে করেছেন অথবা তাদের কাছে সেসব দলীল পৌঁছেছে, কিন্তু সেটার বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো এমন দলীল তাদের কাছে ছিল যা (তাদের নিকট) সে (হারামের) দলীলের ওপর প্রাধান্য লাভ করেছে। অবশ্য তারা এটা তাদের জ্ঞান ও বিবেকের দ্বারা ইজতিহাদের মাধ্যমেই করেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন