HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
মন দিয়ে নামায পড়ার উপায়
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
‘মন দিয়ে নামায পড়ার উপায়’ বইটির তৃতীয় সংস্করণ বের করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
ইসলামের মূল পাঁচটি সত্মম্ভের মধ্যে ঈমানের পরেই নামাযের স্থান। আর নামায আল্লাহর স্মরণেই আদায় করতে হয়। সূরা ত্বা-হার ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
‘‘আমার স্মরণেই নামায কায়েম কর।’’
কিন্তু নামাযে দাঁড়ালে মন এদিক সেদিক চলে যায় এবং নানা বিষয় মনে পড়তে থাকে। এটা নামাযীদের একটি স্থায়ী সমস্যা। বহু চেষ্টা ও অনুসন্ধানের পর বিভিন্ন কিতাবাদিতে এ বিষয়ে যেসব আলোচনা পেয়েছি তার সারাংশ বাংলাভাষায় পাঠকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মনোযোগ দিয়ে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে বইটি যথেষ্ট সহায়ক হবে। ইনশা-আল্লাহ!
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সবাইকে যেন আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ খেদমতকে আমাদের সকলের নাজাতের অসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
০১৯১২-১৭৫৩৯৬
‘মন দিয়ে নামায পড়ার উপায়’ বইটির তৃতীয় সংস্করণ বের করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
ইসলামের মূল পাঁচটি সত্মম্ভের মধ্যে ঈমানের পরেই নামাযের স্থান। আর নামায আল্লাহর স্মরণেই আদায় করতে হয়। সূরা ত্বা-হার ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ
‘‘আমার স্মরণেই নামায কায়েম কর।’’
কিন্তু নামাযে দাঁড়ালে মন এদিক সেদিক চলে যায় এবং নানা বিষয় মনে পড়তে থাকে। এটা নামাযীদের একটি স্থায়ী সমস্যা। বহু চেষ্টা ও অনুসন্ধানের পর বিভিন্ন কিতাবাদিতে এ বিষয়ে যেসব আলোচনা পেয়েছি তার সারাংশ বাংলাভাষায় পাঠকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মনোযোগ দিয়ে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে বইটি যথেষ্ট সহায়ক হবে। ইনশা-আল্লাহ!
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সবাইকে যেন আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ খেদমতকে আমাদের সকলের নাজাতের অসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
০১৯১২-১৭৫৩৯৬
নামায সর্বকালীন ইবাদাত :
নামায এবং যাকাত সকল নবীর যুগে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হিসেবে স্বীকৃত ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِ ﴾
আমি ওহীর মাধ্যমে সকল নবীদেরকে ভালো কাজ করার, নামায কায়েম করার ও যাকাত আদায় করার আদেশ করেছি। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
ইসমাঈল (আঃ) তাঁর পরিবারকে নামাযের দাওয়াত দিতেন :
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا ‐ - وَكَانَ يَأْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا﴾
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা! তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। তিনি তার পরিবার-পরিজনকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন; আর তিনি ছিলেন তার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা মারইয়াম- ৫৪, ৫৫)
মূসা (আঃ) কে নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
﴿وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحٰى ‐ - اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ﴾
আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। অতএব যে ওহী তোমার নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩, ১৪)
লুকমান (আঃ) তাঁর ছেলেকে নামাযের অসীয়ত করেছিলেন :
﴿يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ﴾
হে আমার ছেলে! নামায কায়েম করো, সৎ কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুকমান- ১৭)
মারইয়াম (আঃ) কেও নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
﴿يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, আমাকে সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪৩)
ঈসা (আঃ) সারা জীবন নামাযের জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন :
﴿قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا- وَّجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا﴾
ঈসা বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকিনা কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন আমি বেঁচে থাকব ততদিন তিনি আমাকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ৩১)
বনী ইসরাঈল ও আহলে কিতাবের প্রতিও নামাযের নির্দেশ ছিল :
﴿وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِي الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ﴾
আর যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করবে না। পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে), আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং নামায কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে; তারপরও তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে আর তোমরা ছিলে বিমুখ। (সূরা বাকারা- ৮৩)
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর উম্মতের উপরও নামাযের বিধান দেয়া হয়েছে :
﴿وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথমাংশে নামায কায়েম করো। অবশ্যই সৎকর্ম পাপকর্মকে মিটিয়ে দেয়। এটা উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।
(সূরা হূদ- ১১৪)
মহিলাদেরকেও পৃথকভাবে নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছে :
﴿وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ﴾
আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং পূর্বের অন্ধকার যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না; তোমরা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
উপরের এসব কুরআনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে যে, নামায সর্বযুগে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদাত ছিল।
সত্যিকার মুমিনের পরিচয় হলো নামায কায়েম করা :
﴿اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ -‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ﴾
যারা নামায কায়েম করে এবং আল্লাহর দেয়া রিযিক হতে কিছু অংশ (আল্লাহর পথে) খরচ করে, তারাই সত্যিকার ঈমানদার। তাদের রবের নিকট তাদের জন্য অনেক মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা রয়েছে।
(সূরা আনফাল- ৩, ৪)
নামায ও ঈমানের সম্পর্ক একেবারে কাছাকাছি :
﴿فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى﴾
সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং নামাযও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা কিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
মহান আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে ‘‘সে বিশ্বাস করেনি এবং নামাযও আদায় করেনি’’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- নামায আদায় করা। ইসলামের অন্যান্য ফরয কাজ যেমন যাকাত, হজ্জ ও রোযা ইত্যাদি বছরে একবার পালন করতে হয়; কিন্তু নামায প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করতে হয়। ঈমান আনার পর কিছু সময় যেতে না যেতেই নামাযের সময় এসে যায়। তখনই যাচাই হয়ে যায় ব্যক্তির ঈমান আনা সত্য কি না। যদি সে নামায আদায় করে তাহলে বুঝা যাবে যে, সে সত্যিই ঈমান এনেছে। আর যদি নামায আদায় না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। সুতরাং মুমিনকে অবশ্যই নামায আদায়কারী হতে হবে।
নামায আল্লাহর সাহায্য লাভের উপায় :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা- ১৫৩)
সকল কাজেই আমরা আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী। আর সে সাহায্য লাভের মাধ্যম হলো ধৈর্য ও নামায।
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর অভ্যাস ছিল- তিনি যখনই কোন সমস্যায় পড়তেন তখনই নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। [আবু দাঊদ, হা/১৩২১; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৯১৩; জামেউস সগীর, হা/৮৮৩২; মিশকাত, হা/১৩২৫।]
নামাযের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :
﴿وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ‐ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ﴾
(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)
আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা তাঁকে নানা ধরনের কষ্ট দিত। তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত। এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমন অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও নামাযে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন।
নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
﴿كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ﴾
কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক- ১৯)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় যখন সে সিজদার মধ্যে থাকে। অতএব তোমরা বেশি বেশি দু‘আ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১১; আবু দাউদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯২৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৭; মিশকাত, হা/৮৯৪।]
নামাযের মাধ্যমে রুযীতে বরকত হয় :
﴿وَأْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْاَ لُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى﴾
আর তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে নামাযের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, রিযিক আমিই দেব। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে কেন্দ্র করে তাঁর বান্দাদেরকে ইবাদাতের দিকে উৎসাহিত করেছেন। আর বান্দা যখন নামায ও ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করে, তখন তার রুযী-রোযগারের ব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলা সহজ করে দেন।
নামায শরীয়তের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :
সূরা মু’মিনূন এর শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে নামাযের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে নামাযের কথা। সূরা মা‘আরিজের ২২-৩৪ আয়াত পর্যন্ত একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে নামায কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
নামায মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে :
﴿اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ﴾
ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে, তা পাঠ করো এবং নামায কায়েম করো। নিশ্চয় নামায মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
নিয়মিত সুন্দরভাবে নামায আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। নামাযের চাহিদাও এটাই। আর নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার লক্ষণ হলো পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা। সুতরাং যদি কেউ জানতে চায় যে, তার নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কি না, তাহলে তার লক্ষ্য করা উচিত যে, তার নামায তাকে কতটুকু পাপ কাজ থেকে দূরে রেখেছে। যদি দেখা যায় যে, সে নামাযের ফলে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে তার নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।
নামায আদায়করীরাই ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করবে :
﴿قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى﴾
নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে অতঃপর নামায আদায় করেছে। (সূরা আলা- ১৪, ১৫)
নামায এবং যাকাত সকল নবীর যুগে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হিসেবে স্বীকৃত ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَوْحَيْنَاۤ اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَاِقَامَ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءَ الزَّكَاةِ ﴾
আমি ওহীর মাধ্যমে সকল নবীদেরকে ভালো কাজ করার, নামায কায়েম করার ও যাকাত আদায় করার আদেশ করেছি। (সূরা আম্বিয়া- ৭৩)
ইসমাঈল (আঃ) তাঁর পরিবারকে নামাযের দাওয়াত দিতেন :
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ اِسْمَاعِيْلَ اِنَّهٗ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُوْلًا نَّبِيًّا ‐ - وَكَانَ يَأْمُرُ اَهْلَهٗ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهٖ مَرْضِيًّا﴾
স্মরণ করো, এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা! তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যবাদী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী। তিনি তার পরিবার-পরিজনকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন; আর তিনি ছিলেন তার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা মারইয়াম- ৫৪, ৫৫)
মূসা (আঃ) কে নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
﴿وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوْحٰى ‐ - اِنَّنِيْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدْنِيْ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِيْ﴾
আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। অতএব যে ওহী তোমার নিকট প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন সত্যিকার ইলাহ্ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম করো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩, ১৪)
লুকমান (আঃ) তাঁর ছেলেকে নামাযের অসীয়ত করেছিলেন :
﴿يَا بُنَيَّ اَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلٰى مَاۤ اَصَابَكَ اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ﴾
হে আমার ছেলে! নামায কায়েম করো, সৎ কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লুকমান- ১৭)
মারইয়াম (আঃ) কেও নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল :
﴿يَا مَرْيَمُ اقْنُتِيْ لِرَبِّكِ وَاسْجُدِيْ وَارْكَعِيْ مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
হে মারইয়াম! তুমি তোমার রবের অনুগত হও, আমাকে সিজদা করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো। (সূরা আলে ইমরান- ৪৩)
ঈসা (আঃ) সারা জীবন নামাযের জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন :
﴿قَالَ اِنِّيْ عَبْدُ اللهِ اٰتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا- وَّجَعَلَنِيْ مُبَارَكًا اَيْنَ مَا كُنْتُ وَاَوْصَانِيْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا﴾
ঈসা বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকিনা কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন আমি বেঁচে থাকব ততদিন তিনি আমাকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা মারইয়াম- ৩১)
বনী ইসরাঈল ও আহলে কিতাবের প্রতিও নামাযের নির্দেশ ছিল :
﴿وَاِذْ اَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّذِي الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ اِلَّا قَلِيْلًا مِّنْكُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَ﴾
আর যখন আমি বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করবে না। পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে), আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং নামায কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে; তারপরও তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে আর তোমরা ছিলে বিমুখ। (সূরা বাকারা- ৮৩)
মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর উম্মতের উপরও নামাযের বিধান দেয়া হয়েছে :
﴿وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথমাংশে নামায কায়েম করো। অবশ্যই সৎকর্ম পাপকর্মকে মিটিয়ে দেয়। এটা উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।
(সূরা হূদ- ১১৪)
মহিলাদেরকেও পৃথকভাবে নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছে :
﴿وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى وَاَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَاٰتِيْنَ الزَّكَاةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ﴾
আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং পূর্বের অন্ধকার যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না; তোমরা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। (সূরা আহযাব- ৩৩)
উপরের এসব কুরআনিক তত্ত্বের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে যে, নামায সর্বযুগে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদাত ছিল।
সত্যিকার মুমিনের পরিচয় হলো নামায কায়েম করা :
﴿اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ -‐ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ﴾
যারা নামায কায়েম করে এবং আল্লাহর দেয়া রিযিক হতে কিছু অংশ (আল্লাহর পথে) খরচ করে, তারাই সত্যিকার ঈমানদার। তাদের রবের নিকট তাদের জন্য অনেক মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা রয়েছে।
(সূরা আনফাল- ৩, ৪)
নামায ও ঈমানের সম্পর্ক একেবারে কাছাকাছি :
﴿فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى ‐ - وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى﴾
সে (জাহান্নামী) লোকটি বিশ্বাস করেনি এবং নামাযও আদায় করেনি; বরং সে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (সূরা কিয়ামাহ- ৩১, ৩২)
মহান আল্লাহর এ বাণীর মধ্যে ‘‘সে বিশ্বাস করেনি এবং নামাযও আদায় করেনি’’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর তার প্রাথমিক জরুরি কাজ হলো- নামায আদায় করা। ইসলামের অন্যান্য ফরয কাজ যেমন যাকাত, হজ্জ ও রোযা ইত্যাদি বছরে একবার পালন করতে হয়; কিন্তু নামায প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করতে হয়। ঈমান আনার পর কিছু সময় যেতে না যেতেই নামাযের সময় এসে যায়। তখনই যাচাই হয়ে যায় ব্যক্তির ঈমান আনা সত্য কি না। যদি সে নামায আদায় করে তাহলে বুঝা যাবে যে, সে সত্যিই ঈমান এনেছে। আর যদি নামায আদায় না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে সে কেবল মুখে কালিমা পড়েছে, মনে-প্রাণে পড়েনি এবং পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করেনি। সুতরাং মুমিনকে অবশ্যই নামায আদায়কারী হতে হবে।
নামায আল্লাহর সাহায্য লাভের উপায় :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা- ১৫৩)
সকল কাজেই আমরা আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী। আর সে সাহায্য লাভের মাধ্যম হলো ধৈর্য ও নামায।
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর অভ্যাস ছিল- তিনি যখনই কোন সমস্যায় পড়তেন তখনই নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। [আবু দাঊদ, হা/১৩২১; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৯১৩; জামেউস সগীর, হা/৮৮৩২; মিশকাত, হা/১৩২৫।]
নামাযের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় :
﴿وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ يَضِيْقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُوْلُوْنَ ‐ - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّاجِدِيْنَ﴾
(হে নবী!) আমি অবশ্যই জানি যে, তারা (তোমার বিরোধীরা) যা বলছে, তাতে তোমার মন সংকীর্ণ হয়ে যায়। অতএব তুমি প্রশংসার সাথে তোমার রবের তাসবীহ পাঠ করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (সূরা হিজর- ৯৭, ৯৮)
আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতেন, তখন বিরোধীরা তাঁকে নানা ধরনের কষ্ট দিত। তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের বিদ্রূপ করত, আজে-বাজে কথা বলত। এতে নবী ﷺ মানসিক অশান্তিতে ভোগতেন। এমন অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে প্রশান্তি লাভের উপায় হিসেবে তাসবীহ পাঠ করার ও নামাযে মশগুল হওয়ার নির্দেশ দিলেন।
নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় :
﴿كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ﴾
কখনো নয়! তুমি তার (কাফিরের) অনুসরণ করো না। তুমি সিজদা করো এবং (আল্লাহর) নৈকট্য অর্জন করো। (সূরা আলাক- ১৯)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় যখন সে সিজদার মধ্যে থাকে। অতএব তোমরা বেশি বেশি দু‘আ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১১; আবু দাউদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯২৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৭; মিশকাত, হা/৮৯৪।]
নামাযের মাধ্যমে রুযীতে বরকত হয় :
﴿وَأْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْاَ لُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰى﴾
আর তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে নামাযের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও এর উপর অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না, রিযিক আমিই দেব। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে কেন্দ্র করে তাঁর বান্দাদেরকে ইবাদাতের দিকে উৎসাহিত করেছেন। আর বান্দা যখন নামায ও ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করে, তখন তার রুযী-রোযগারের ব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলা সহজ করে দেন।
নামায শরীয়তের অন্যান্য হুকুম পালনে সাহায্য করে :
সূরা মু’মিনূন এর শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বেশ কয়েকটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। এতে শুরুতেই এসেছে নামাযের কথা আবার শেষেও বলা হয়েছে নামাযের কথা। সূরা মা‘আরিজের ২২-৩৪ আয়াত পর্যন্ত একই ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে অতি সহজেই এটা বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দা যদি সঠিকভাবে নামায কায়েম করতে পারে, তাহলে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
নামায মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে :
﴿اُتْلُ مَاۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَاَقِمِ الصَّلَاةَ اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ﴾
ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে, তা পাঠ করো এবং নামায কায়েম করো। নিশ্চয় নামায মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে রাখে। (সূরা আনকাবূত- ৪৫)
নিয়মিত সুন্দরভাবে নামায আদায় করলে শরীর ও মন পবিত্র থাকে, তখন ভালো কাজের দিকে মন আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। নামাযের চাহিদাও এটাই। আর নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার লক্ষণ হলো পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা। সুতরাং যদি কেউ জানতে চায় যে, তার নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কি না, তাহলে তার লক্ষ্য করা উচিত যে, তার নামায তাকে কতটুকু পাপ কাজ থেকে দূরে রেখেছে। যদি দেখা যায় যে, সে নামাযের ফলে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে তার নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।
নামায আদায়করীরাই ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করবে :
﴿قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّٰى ‐ - وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰى﴾
নিশ্চয় সফলতা লাভ করেছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে এবং তার মালিকের নাম স্মরণ করেছে অতঃপর নামায আদায় করেছে। (সূরা আলা- ১৪, ১৫)
নামায ইসলামের দ্বিতীয় মূল স্তম্ভ :
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- (১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ্জ পালন করা এবং (৫) রমাযান মাসে রোযা রাখা। [সহীহ বুখারী, হা/৮, সহীহ মুসলিম, হা/১২১; তিরমিযী, হা/২৬০৯; নাসাঈ, হা/৫০০১।]
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে :
হুরাইছ ইবনে কাবীছা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মদিনায় আগমন করলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে একজন উত্তম সঙ্গী দান করুন। অতঃপর আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বসলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছি যে, তিনি যেন আমাকে উত্তম সঙ্গী দান করেন। সুতরাং আপনি এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনি নবী ﷺ হতে শুনেছেন। আমি আশা রাখি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন। এরপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে নামাযের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার নামায সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার নামায সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয নামাযের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল নামায আছে কি না, যদি থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী হা/৪১৩, নাসাঈ, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
নামায জান্নাত লাভের উপায় :
আবু উমামা আল বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করো, (রমাযান) মাসের রোযা রাখো, সম্পদের যাকাত আদায় করো এবং তোমাদের আমীরের আনুগত্য করো; তাহলে তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২১৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯; তিরমিযী, হা/৬১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৬৭।]
নামায কিয়ামতের দিন নূর ও নাজাতের দলীল হবে :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী ﷺ নামাযের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, মুক্তির দলীল ও নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন জ্যোতি, মুক্তির দলীল এবং নাজাতের জন্য কোন অসীলা থাকবে না। আর সে কিয়ামতের দিন কারুন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৩১।]
নামায সর্বোত্তম ইবাদাত :
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা (দ্বীনের উপর) অটল থাকো, অবশ্য তোমরা সকল কাজে ঠিক থাকতে পারবে না। তবে জেনে রেখো! তোমাদের সকল কাজের মধ্যে নামায হচ্ছে সর্বোত্তম। (সুতরাং নামায সঠিকভাবে আদায় করবে) আর মুমিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ অযুর নিয়ম রক্ষা করে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৩৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৪৭; মু‘জামুল আওসাত, হা/৭০১৯; দারেমী, হা/৬৮১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৯৭; মিশকাত, হা/২৯২।]
নামায আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ইবাদাত :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম- কোন্ কাজ আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক প্রিয়? তিনি উত্তরে বললেন, যথাসময়ে নামায আদায় করা। আমি বললাম, তারপর কোন্ কাজ? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। পুনরায় আমি বললাম, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমাকে এ কথাগুলো বললেন। আমি যদি আরো অধিক জিজ্ঞেস করতাম, তাহলে তিনি আমাকে আরো অধিক বলতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৭, ৫৯৭০; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৪; নাসাঈ, হা/৬১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮৯০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৯৭।]
নামায ত্যাগ না করার জন্য নবী ﷺ এর উপদেশ :
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে উপদেশ দিয়েছেন,
১. তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খন্ডবিখন্ড করা হয় অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।
২. ইচ্ছা করে ফরয নামায ত্যাগ করবে না। যে ইচ্ছা করে নামায ত্যাগ করবে, তার থেকে ইসলামের নিরাপত্তা উঠে যাবে।
৩. মদ্যপান করবে না, এটি সমস্ত মন্দের চাবিকাঠি। [ইবনে মাজাহ, হা/৪০৩৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/১৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৭; মিশকাত, হা/৫৮০।]
মাঠে-ঘাটে নামায আদায়কারীর ফযীলত :
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমার রব খুশি হন সেই ছাগল-ভেড়ার রাখালের প্রতি, যে একাকী পাহাড়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে আযান দেয় এবং নামায পড়ে। তখন আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলেন, তোমরা আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য করো! সে আযান দেয় ও নামায কায়েম করে। সে আমার শাস্তিকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষী থাকো! আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম। [আবু দাঊদ, হা/১২০৫, নাসাঈ, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৭৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬০; জামেউস সগীর, হা/১৪০৬২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪১।]
সন্তানদেরকে নামাযে অভ্যস্ত করার কঠোর নির্দেশ :
﴿وَأْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا﴾
তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে নামাযের নির্দেশ দাও এবং নিজেও এর উপর অনড় থাকো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
সাবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের সন্তানরা যখন সাত বৎসরে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নামাযের জন্য আদেশ করবে আর তাদের বয়স যখন দশ বৎসরে পৌঁছবে, তখন নামায না পড়লে তাদেরকে প্রহার করবে। [আবু দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
উক্ত আয়াত এবং হাদীসের মাধ্যমে পরিবার প্রধানকে পরিবারের সবাইকে নামাযে অভ্যস্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবারের দায়িত্বশীলরা অবশ্যই গোনাহগার হবেন। মুক্তির জন্য কেবল নিজের আমলই যথেষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা সাবধান হও! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেককেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল। সুতরাং তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর পুরুষও তার পরিবারের দায়িত্বশীল। সুতরাং তাকেও এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রীও তার স্বামীর পরিবার এবং সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। ঐ দিন তার এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এমনকি কোন ব্যক্তির গোলাম বা দাস তার প্রভুর সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকেও ঐ দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অতএব সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর এ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮২৮; আবু দাউদ, হা/২৯৩০; তিরমিযী, হা/১৭০৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/২০৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৮৩; মিশকাত, হা/৩৬৮৫।]
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- (১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ্জ পালন করা এবং (৫) রমাযান মাসে রোযা রাখা। [সহীহ বুখারী, হা/৮, সহীহ মুসলিম, হা/১২১; তিরমিযী, হা/২৬০৯; নাসাঈ, হা/৫০০১।]
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে :
হুরাইছ ইবনে কাবীছা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মদিনায় আগমন করলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে একজন উত্তম সঙ্গী দান করুন। অতঃপর আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বসলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছি যে, তিনি যেন আমাকে উত্তম সঙ্গী দান করেন। সুতরাং আপনি এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনি নবী ﷺ হতে শুনেছেন। আমি আশা রাখি আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন। এরপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে নামাযের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার নামায সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার নামায সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয নামাযের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল নামায আছে কি না, যদি থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী হা/৪১৩, নাসাঈ, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
নামায জান্নাত লাভের উপায় :
আবু উমামা আল বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদাত করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করো, (রমাযান) মাসের রোযা রাখো, সম্পদের যাকাত আদায় করো এবং তোমাদের আমীরের আনুগত্য করো; তাহলে তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২১৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯; তিরমিযী, হা/৬১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৬৭।]
নামায কিয়ামতের দিন নূর ও নাজাতের দলীল হবে :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী ﷺ নামাযের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, মুক্তির দলীল ও নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি এটাকে হেফাযত করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন জ্যোতি, মুক্তির দলীল এবং নাজাতের জন্য কোন অসীলা থাকবে না। আর সে কিয়ামতের দিন কারুন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৩১।]
নামায সর্বোত্তম ইবাদাত :
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা (দ্বীনের উপর) অটল থাকো, অবশ্য তোমরা সকল কাজে ঠিক থাকতে পারবে না। তবে জেনে রেখো! তোমাদের সকল কাজের মধ্যে নামায হচ্ছে সর্বোত্তম। (সুতরাং নামায সঠিকভাবে আদায় করবে) আর মুমিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ অযুর নিয়ম রক্ষা করে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৩৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৪৭; মু‘জামুল আওসাত, হা/৭০১৯; দারেমী, হা/৬৮১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৯৭; মিশকাত, হা/২৯২।]
নামায আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ইবাদাত :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম- কোন্ কাজ আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক প্রিয়? তিনি উত্তরে বললেন, যথাসময়ে নামায আদায় করা। আমি বললাম, তারপর কোন্ কাজ? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। পুনরায় আমি বললাম, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমাকে এ কথাগুলো বললেন। আমি যদি আরো অধিক জিজ্ঞেস করতাম, তাহলে তিনি আমাকে আরো অধিক বলতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৭, ৫৯৭০; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৪; নাসাঈ, হা/৬১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮৯০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৯৭।]
নামায ত্যাগ না করার জন্য নবী ﷺ এর উপদেশ :
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে উপদেশ দিয়েছেন,
১. তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খন্ডবিখন্ড করা হয় অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।
২. ইচ্ছা করে ফরয নামায ত্যাগ করবে না। যে ইচ্ছা করে নামায ত্যাগ করবে, তার থেকে ইসলামের নিরাপত্তা উঠে যাবে।
৩. মদ্যপান করবে না, এটি সমস্ত মন্দের চাবিকাঠি। [ইবনে মাজাহ, হা/৪০৩৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/১৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৭; মিশকাত, হা/৫৮০।]
মাঠে-ঘাটে নামায আদায়কারীর ফযীলত :
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমার রব খুশি হন সেই ছাগল-ভেড়ার রাখালের প্রতি, যে একাকী পাহাড়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে আযান দেয় এবং নামায পড়ে। তখন আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলেন, তোমরা আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য করো! সে আযান দেয় ও নামায কায়েম করে। সে আমার শাস্তিকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষী থাকো! আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম। [আবু দাঊদ, হা/১২০৫, নাসাঈ, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৭৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬০; জামেউস সগীর, হা/১৪০৬২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪১।]
সন্তানদেরকে নামাযে অভ্যস্ত করার কঠোর নির্দেশ :
﴿وَأْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا﴾
তুমি তোমার পরিবার-পরিজনকে নামাযের নির্দেশ দাও এবং নিজেও এর উপর অনড় থাকো। (সূরা ত্বা-হা- ১৩২)
সাবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের সন্তানরা যখন সাত বৎসরে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নামাযের জন্য আদেশ করবে আর তাদের বয়স যখন দশ বৎসরে পৌঁছবে, তখন নামায না পড়লে তাদেরকে প্রহার করবে। [আবু দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
উক্ত আয়াত এবং হাদীসের মাধ্যমে পরিবার প্রধানকে পরিবারের সবাইকে নামাযে অভ্যস্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবারের দায়িত্বশীলরা অবশ্যই গোনাহগার হবেন। মুক্তির জন্য কেবল নিজের আমলই যথেষ্ট নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা সাবধান হও! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেককেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল। সুতরাং তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর পুরুষও তার পরিবারের দায়িত্বশীল। সুতরাং তাকেও এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রীও তার স্বামীর পরিবার এবং সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। ঐ দিন তার এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এমনকি কোন ব্যক্তির গোলাম বা দাস তার প্রভুর সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকেও ঐ দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অতএব সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর এ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮২৮; আবু দাউদ, হা/২৯৩০; তিরমিযী, হা/১৭০৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/২০৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৮৩; মিশকাত, হা/৩৬৮৫।]
নামায গোনাহের কাফফারা স্বরূপ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমু‘আ হতে অপর জুমু‘আর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের কাফ্ফারা হয়ে যায়, যদি কবীরা গোনাহসমূহ হতে বেঁচে থাকা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৪৮৬।]
পানি যেমন ময়লা দূর করে, নামায তেমন গোনাহ মিটিয়ে দেয় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে এবং সে ঐ নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীরা বললেন, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, নামাযের উদাহরণও অনুরূপ। নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৮, সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৪; তিরমিযী, হা/২৮৬৮; নাসাঈ, হা/৪৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৬; দারেমী, হা/১২২১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৫২; মিশকাত, হা/৫৬৫।]
গাছের শুকনো পাতার ন্যায় নামায আদায়কারীর গোনাহ ঝরে পড়ে :
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একদিন শীতকালে বাইরে বের হলেন। তখন গাছের (শুকনো) পাতা ঝরছিল। এ সময় তিনি গাছ হতে দুটি ডাল ভেঙ্গে নিলেন। এতে পাতাগুলো আরো অধিক ঝরতে লাগল। তখন নবী ﷺ বললেন, হে আবু যর! আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় মুসলিম বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নামায আদায় করে, তখন তার গোনাহসমূহ ঐভাবে ঝরতে থাকে যেভাবে এই পাতাগুলো ঝরছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৯৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৪; মিশকাত, হা/৫৭৬।]
নামাযের মাধ্যমে গোনাহ মাফ হওয়ার দৃষ্টান্ত :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি কোন একজন অপরিচিতা নারীকে চুম্বন করে ফেলে। তারপর সে নবী ﷺ এর কাছে এসে তার কৃতকর্মের কথা জানায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করলেন,
﴿اَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
আর তুমি দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে নামায কায়েম করো; নিশ্চয় সৎকর্ম পাপকর্মকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটি একটি মহা উপদেশ। (সূরা হূদ- ১১৪)
এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এ উপহার কি শুধু আমার জন্য? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমার উম্মতের সকলের জন্য। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৬, সহীহ মুসলিম, হা/৭১৭৭; তিরমিযী, হা/৩১১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৫৩; দারেমী, হা/৪৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৯৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৯; মিশকাত, হা/৫৭৫।]
এ হাদীসে যার কথা বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন একজন ঈমানদার লোক। স্বেচ্ছায় তিনি কোন পাপ কাজ করতেন না। তারপরও মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক প্রবৃত্তির তাড়নায় একদিন পথিমধ্যে একটি পাপকর্ম করে ফেলেন। এ পাপকর্ম ঘটে যাওয়ার পর তার অনুভূতি ফিরে এলো। তিনি তীব্র অনুশোচনা করতে লাগলেন। আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার উপায় বের করার আশায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে বললেন, আমি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আমাকে শাস্তি দিন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার পাপের বিবরণ শুনে সূরা হুদের এ আয়াতটি পাঠ করে শোনালেন। আয়াতের মধ্যে মুমিন ব্যক্তিকে দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায কায়েমের হুকুম দেয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, ‘‘নিশ্চয় সৎকর্ম পাপকে মিটিয়ে দেয়।’’ এ কথা শোনার পর তার মনে শান্তি ফিরে এল এবং উদ্বেগ দূর হয়ে গেল।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি আসলো এবং বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ (শাস্তিযোগ্য অপরাধ) করে ফেলেছি, সুতরাং আমার উপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। এ সময় নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেল। নবী করীম ﷺ যখন নামায শেষ করলেন, তখন সে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ এর কাজ করে ফেলেছি। আমার প্রতি আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামায আদায় করনি? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭১৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১১; মিশকাত, হা/৫৬৭।]
এসব হাদীস দ্বারা এটা পরিমাপ করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীগণকে কত উঁচু মানের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যার ফলে তারা কোন পাপকাজ করে ফেললে অস্থির হয়ে যেতেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমু‘আ হতে অপর জুমু‘আর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের কাফ্ফারা হয়ে যায়, যদি কবীরা গোনাহসমূহ হতে বেঁচে থাকা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৪৮৬।]
পানি যেমন ময়লা দূর করে, নামায তেমন গোনাহ মিটিয়ে দেয় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে এবং সে ঐ নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীরা বললেন, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, নামাযের উদাহরণও অনুরূপ। নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৮, সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৪; তিরমিযী, হা/২৮৬৮; নাসাঈ, হা/৪৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৬; দারেমী, হা/১২২১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৫২; মিশকাত, হা/৫৬৫।]
গাছের শুকনো পাতার ন্যায় নামায আদায়কারীর গোনাহ ঝরে পড়ে :
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একদিন শীতকালে বাইরে বের হলেন। তখন গাছের (শুকনো) পাতা ঝরছিল। এ সময় তিনি গাছ হতে দুটি ডাল ভেঙ্গে নিলেন। এতে পাতাগুলো আরো অধিক ঝরতে লাগল। তখন নবী ﷺ বললেন, হে আবু যর! আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় মুসলিম বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নামায আদায় করে, তখন তার গোনাহসমূহ ঐভাবে ঝরতে থাকে যেভাবে এই পাতাগুলো ঝরছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৯৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৪; মিশকাত, হা/৫৭৬।]
নামাযের মাধ্যমে গোনাহ মাফ হওয়ার দৃষ্টান্ত :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি কোন একজন অপরিচিতা নারীকে চুম্বন করে ফেলে। তারপর সে নবী ﷺ এর কাছে এসে তার কৃতকর্মের কথা জানায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করলেন,
﴿اَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
আর তুমি দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে নামায কায়েম করো; নিশ্চয় সৎকর্ম পাপকর্মকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটি একটি মহা উপদেশ। (সূরা হূদ- ১১৪)
এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এ উপহার কি শুধু আমার জন্য? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমার উম্মতের সকলের জন্য। [সহীহ বুখারী, হা/৫২৬, সহীহ মুসলিম, হা/৭১৭৭; তিরমিযী, হা/৩১১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৫৩; দারেমী, হা/৪৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৯৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৯; মিশকাত, হা/৫৭৫।]
এ হাদীসে যার কথা বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন একজন ঈমানদার লোক। স্বেচ্ছায় তিনি কোন পাপ কাজ করতেন না। তারপরও মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক প্রবৃত্তির তাড়নায় একদিন পথিমধ্যে একটি পাপকর্ম করে ফেলেন। এ পাপকর্ম ঘটে যাওয়ার পর তার অনুভূতি ফিরে এলো। তিনি তীব্র অনুশোচনা করতে লাগলেন। আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার উপায় বের করার আশায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে বললেন, আমি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আমাকে শাস্তি দিন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার পাপের বিবরণ শুনে সূরা হুদের এ আয়াতটি পাঠ করে শোনালেন। আয়াতের মধ্যে মুমিন ব্যক্তিকে দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায কায়েমের হুকুম দেয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, ‘‘নিশ্চয় সৎকর্ম পাপকে মিটিয়ে দেয়।’’ এ কথা শোনার পর তার মনে শান্তি ফিরে এল এবং উদ্বেগ দূর হয়ে গেল।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি আসলো এবং বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ (শাস্তিযোগ্য অপরাধ) করে ফেলেছি, সুতরাং আমার উপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। এ সময় নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেল। নবী করীম ﷺ যখন নামায শেষ করলেন, তখন সে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ এর কাজ করে ফেলেছি। আমার প্রতি আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে নামায আদায় করনি? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭১৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১১; মিশকাত, হা/৫৬৭।]
এসব হাদীস দ্বারা এটা পরিমাপ করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীগণকে কত উঁচু মানের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যার ফলে তারা কোন পাপকাজ করে ফেললে অস্থির হয়ে যেতেন।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও নামাযের অফুরন্ত কল্যাণ ও উপকারিতা রয়েছে যা পবিত্রতা, দাঁড়ানো, রুকূ, সিজদা ও বৈঠক থেকে আমরা পেয়ে থাকি। ডাঃ মুহাম্মাদ তারেক মাহমুদ (মাসিক কাবার পথে, জুন ১৯৯৮) উল্লেখ করেন : নামায হলো এক উত্তম শরীর চর্চা। অলসতা ও বিষণ্ণতায় শুধুমাত্র নামাযই এমন এক ব্যায়াম, যদি একে সার্বিক পদ্ধতিতে আদায় করা হয়, তাহলে এর দ্বারা ইহকালীন সকল ব্যথার উপশম সম্ভব। নামাযের ব্যায়াম যেমনিভাবে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ; যেমন- হৃৎপিন্ড, যকৃত, মূত্রাশয়, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, নাড়ীভুঁড়ি, পাকস্থলী, মেরুদন্ড, গর্দান, সীনা ও সর্বপ্রকার Glands (দেহের রসগ্রন্থি) আবর্তিত করে শরীরকে সুঠাম ও সৌন্দর্যমন্ডিত করে।
জনৈক ব্যক্তি (এ.আর.কমর) তার ইউরোপের ভ্রমণ কাহিনীতে লিখেছেন : একদিন আমি নামায আদায় করছিলাম। আমার নামায শেষ হলে এক অমুসলিম বিশেষজ্ঞ আমাকে বলতে লাগল ‘‘ব্যায়ামের এ পদ্ধতি আমার বইয়ে লিখেছি এবং উল্লেখ করেছি যে, যে ব্যক্তি এ পদ্ধতিতে ব্যায়াম করবে, সে কখনো দীর্ঘ মেয়াদী মারাত্মক ও জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না।’’ তার মন্তব্য শুনে আমি বললাম ‘‘আরে! আমি আপনার পুস্তক এখনো পড়িনি; আমি একজন মুসলিম, আমার ইসলাম এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি দৈনিক পাঁচবার এরকম করে থাকি।’’ একথা নতেই ইংরেজ ব্যক্তি আমার কাছ থেকে ইসলামী জ্ঞান সম্বন্ধে ধারণা নিতে লাগল।
পাকিস্তানের একজন হৃদপিন্ডের রোগী স্বীয় রোগের চিকিৎসার জন্য অবশেষে যখন অস্ট্রেলিয়া গিয়ে পৌঁছলেন, তখন সেখানকার একজন হৃদপিন্ড বিশেষজ্ঞ তাকে পূর্ণ পরিদর্শনের পর তার জন্য কিছু ঔষধ ও একটি ব্যায়াম নির্ধারণ করে দিয়ে বললেন, আপনি আমার ফিজিও ওয়ার্ডে আটদিন পর্যন্ত উক্ত ব্যায়াম করবেন। তাকে ব্যায়াম করানোর পর দেখা গেল, তা ছিল এক পূর্ণাঙ্গ নামায। রোগী ব্যায়ামটাকে সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করতে লাগল। ডাক্তার বললেন, আপনি আমার প্রথম রোগী, যিনি এত দ্রুত আমার এ ব্যায়ামটা শিখে উত্তমভাবে আদায় করতে পেরেছেন। এ কথা শুনে রোগী বলল, ‘‘আমি হচ্ছি একজন মুসলিম, আর এ পদ্ধতি হলো আমাদের পূর্ণাঙ্গ নামায।
[সূত্র : ইসলামী জীবন-বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান]
জনৈক ব্যক্তি (এ.আর.কমর) তার ইউরোপের ভ্রমণ কাহিনীতে লিখেছেন : একদিন আমি নামায আদায় করছিলাম। আমার নামায শেষ হলে এক অমুসলিম বিশেষজ্ঞ আমাকে বলতে লাগল ‘‘ব্যায়ামের এ পদ্ধতি আমার বইয়ে লিখেছি এবং উল্লেখ করেছি যে, যে ব্যক্তি এ পদ্ধতিতে ব্যায়াম করবে, সে কখনো দীর্ঘ মেয়াদী মারাত্মক ও জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না।’’ তার মন্তব্য শুনে আমি বললাম ‘‘আরে! আমি আপনার পুস্তক এখনো পড়িনি; আমি একজন মুসলিম, আমার ইসলাম এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি দৈনিক পাঁচবার এরকম করে থাকি।’’ একথা নতেই ইংরেজ ব্যক্তি আমার কাছ থেকে ইসলামী জ্ঞান সম্বন্ধে ধারণা নিতে লাগল।
পাকিস্তানের একজন হৃদপিন্ডের রোগী স্বীয় রোগের চিকিৎসার জন্য অবশেষে যখন অস্ট্রেলিয়া গিয়ে পৌঁছলেন, তখন সেখানকার একজন হৃদপিন্ড বিশেষজ্ঞ তাকে পূর্ণ পরিদর্শনের পর তার জন্য কিছু ঔষধ ও একটি ব্যায়াম নির্ধারণ করে দিয়ে বললেন, আপনি আমার ফিজিও ওয়ার্ডে আটদিন পর্যন্ত উক্ত ব্যায়াম করবেন। তাকে ব্যায়াম করানোর পর দেখা গেল, তা ছিল এক পূর্ণাঙ্গ নামায। রোগী ব্যায়ামটাকে সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করতে লাগল। ডাক্তার বললেন, আপনি আমার প্রথম রোগী, যিনি এত দ্রুত আমার এ ব্যায়ামটা শিখে উত্তমভাবে আদায় করতে পেরেছেন। এ কথা শুনে রোগী বলল, ‘‘আমি হচ্ছি একজন মুসলিম, আর এ পদ্ধতি হলো আমাদের পূর্ণাঙ্গ নামায।
[সূত্র : ইসলামী জীবন-বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান]
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অযুর অনেক কল্যাণ ও উপকারিতা রয়েছে। যেমন :
অযুর শুরুতে হাত ধৌত করা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শিক্ষানুযায়ী অযুর শুরুতে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধৌত করতে হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বর্ণনা করেছেন যে, হাতে সাধারণত ময়লা ও জীবাণু থাকে। মুখে পানি দেয়ার পূর্বে যদি ভালো করে তা পরিষ্কার করা হয়, তাহলে সে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে না।
মিসওয়াক করা : দন্ত রোগের ডাক্তারগণ বলেন, দন্ত রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যাংশ। এর মাধ্যমে জীবাণু তার বংশ বিস্তার করে দাঁত ও দাঁতের মাড়ীর চরম ক্ষতি সাধন করে। শুধু তাই নয়; বরং থুথুর সাহায্যে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি করে। আমরা মুসলিম, আমাদের কাছে রয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বের মহানবীর শিক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে দ্বীন-দুনিয়ার কামিয়াবী। রাসূল ﷺ নামাযের পূর্বে অযুর সময়, ঘুম থেকে উঠে, বাড়িতে প্রবেশের সময়, দিনের প্রথম ও শেষ ভাগে, আহারের আগে ও পরে মিসওয়াক ব্যবহার করতেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই রাসূল ﷺ বলেছেন, আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের পূর্বে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘প্রত্যেক অযুর পূর্বে।’ [বুখারী হা/৮৮৭, মুসলিম হা/৬১২।]
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্ণনা করছে যে, গড়গড়া করে কুলি করার মাধ্যমে টনসিলসহ গলার অসংখ্য রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নাক মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাসূল ﷺ এর শিক্ষানুযায়ী নাক পরিষ্কার করলে স্থায়ী সর্দি, কিংবা নাকে মারাত্মক ব্যাধি পরিলক্ষিত হয় না।
শাইখ আঃ মাজীদ জান্দানী উল্লেখ করেন : জনৈক মিসরী মহিলা ডাক্তার মিসরের একটি এলাকায় জরিপ চালিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেন যে, মুসল্লী ব্যক্তিদের মাঝে নাকে মারাত্মক ব্যাধি দেখা যায় না।
American council for beauty সংস্থার সম্মানিত সদস্য লেডী হীচার বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন প্রকার রাসায়নিক লোশন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তারা ইসলামী পন্থায় অযু দ্বারা চেহারার যাবতীয় রোগ থেকে রক্ষা পায়।
জনৈক ইউরোপীয় ডাক্তার একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল (Eye-Water-Health) ‘‘চক্ষু-পানি-সুস্থতা’’। উক্ত প্রবন্ধে তিনি এ কথার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন যে, নিজের চক্ষুকে দিনে কয়েকবার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে; নতুবা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। অথচ ইসলাম এমনসব বিধিবিধান নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সর্বযুগের মানব জাতির সুস্থতাসহ সার্বিক কল্যাণ।
অযুর শুরুতে হাত ধৌত করা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শিক্ষানুযায়ী অযুর শুরুতে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধৌত করতে হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বর্ণনা করেছেন যে, হাতে সাধারণত ময়লা ও জীবাণু থাকে। মুখে পানি দেয়ার পূর্বে যদি ভালো করে তা পরিষ্কার করা হয়, তাহলে সে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে না।
মিসওয়াক করা : দন্ত রোগের ডাক্তারগণ বলেন, দন্ত রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যাংশ। এর মাধ্যমে জীবাণু তার বংশ বিস্তার করে দাঁত ও দাঁতের মাড়ীর চরম ক্ষতি সাধন করে। শুধু তাই নয়; বরং থুথুর সাহায্যে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি করে। আমরা মুসলিম, আমাদের কাছে রয়েছে চৌদ্দশত বছর পূর্বের মহানবীর শিক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে দ্বীন-দুনিয়ার কামিয়াবী। রাসূল ﷺ নামাযের পূর্বে অযুর সময়, ঘুম থেকে উঠে, বাড়িতে প্রবেশের সময়, দিনের প্রথম ও শেষ ভাগে, আহারের আগে ও পরে মিসওয়াক ব্যবহার করতেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই রাসূল ﷺ বলেছেন, আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের পূর্বে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘প্রত্যেক অযুর পূর্বে।’ [বুখারী হা/৮৮৭, মুসলিম হা/৬১২।]
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্ণনা করছে যে, গড়গড়া করে কুলি করার মাধ্যমে টনসিলসহ গলার অসংখ্য রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নাক মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাসূল ﷺ এর শিক্ষানুযায়ী নাক পরিষ্কার করলে স্থায়ী সর্দি, কিংবা নাকে মারাত্মক ব্যাধি পরিলক্ষিত হয় না।
শাইখ আঃ মাজীদ জান্দানী উল্লেখ করেন : জনৈক মিসরী মহিলা ডাক্তার মিসরের একটি এলাকায় জরিপ চালিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেন যে, মুসল্লী ব্যক্তিদের মাঝে নাকে মারাত্মক ব্যাধি দেখা যায় না।
American council for beauty সংস্থার সম্মানিত সদস্য লেডী হীচার বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন প্রকার রাসায়নিক লোশন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তারা ইসলামী পন্থায় অযু দ্বারা চেহারার যাবতীয় রোগ থেকে রক্ষা পায়।
জনৈক ইউরোপীয় ডাক্তার একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল (Eye-Water-Health) ‘‘চক্ষু-পানি-সুস্থতা’’। উক্ত প্রবন্ধে তিনি এ কথার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন যে, নিজের চক্ষুকে দিনে কয়েকবার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে; নতুবা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। অথচ ইসলাম এমনসব বিধিবিধান নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সর্বযুগের মানব জাতির সুস্থতাসহ সার্বিক কল্যাণ।
মানুষ জড় বস্তুর মতো এক স্থানে স্থির থাকতে পারে না। প্রকৃতির নিয়মেই তাকে নড়াচড়া করতে হয়। মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নড়াচড়ার মধ্যেই নিহিত। এটা না হলে শরীরে নানা রোগ-ব্যাধি জন্ম নেয়। আর এ নড়াচড়া বারবার হওয়াই বাঞ্ছণীয়। এর বাস্তব নমুনা আমরা নামায থেকে পাই। ইসলাম সারা দিনের নামাযকে একত্রে আদায় করার নির্দেশ না দিয়ে, পাঁচটি সময়ে তা ভাগ করে দিয়েছে। অন্যদিকে এ ধারণা দেয়া হয়েছে যে, বান্দা একবার আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করেই ভুলে যাবে না; বরং কিছুক্ষণ পর পর আল্লাহর স্মরণকে তাজা করে নেবে। যাতে সে তার দৈনন্দিন যাবতীয় কাজকর্ম আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী পালন করতে পারে।
১. নামায ছেড়ে দেয়া কুফরী কাজ :
যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না সে যদি নামাযকে অস্বীকারপূর্বক এমনটি করে থাকে তাহলে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যাবে। এতে কারো দ্বিমত নেই। আর নামায ফরয হওয়াকে স্বীকৃতি দানের পর যদি কেউ নামায আদায় না করে তাহলেও সে আমলগতভাবে কুফরী কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
যদি তারা তওবা করে, নামায আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তওবা- ৫)
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ﴾
যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। (সূরা তওবা- ১১)
এ দুটি আয়াতে নামায কায়েম এবং যাকাত আদায় করাকে নিরাপত্তা এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মানদন্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না সে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়।
কুফর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয় হচ্ছে নামায :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো নামায আদায় না করা। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭৩০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৩।]
অর্থাৎ নামায ত্যাগ করলে তার কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার আর বিলম্ব থাকে না। নামায হলো তার ঈমানের জন্য প্রাচীরস্বরূপ।
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বৃষ্টির দিনে নামাযে তৎপর থাকো। কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত নামায ত্যাগ করল সে কুফরী করল। [সহীহ ইবনে হিববান হা/১৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৮।]
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো নামায। সুতরাং যে নামায ত্যাগ করল, সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; নাসাঈ, হা/৪৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৪; দার কুতনী, হা/১৭৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৭৪।]
২. সাহাবীরা নামায ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন :
আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব আল উক্বাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ নামায ত্যাগ করা ব্যতীত অন্য কিছুকে কুফরী মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মিশকাত, হা/৫৭৯; রিয়াযুস সালিহীন, হা/৪৭০; জামেউল উসূল ফিল আহাদীস, হা/৩২৬৫।]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ ، قَالَ : لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا صَلَاةَ لَهٗ
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যার নামায নেই তার ঈমান নেই। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭৫।]
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না, তার নিজেকে মুমিন বলে দাবি করা শোভা পায় না।
৩. নামায ত্যাগকারীর মুক্তি পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই :
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অযু করবে, সময়মতো নামায আদায় করবে, নামাযের রুকূসমূহ পূর্ণ করবে এবং তাতে বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি এমনটি করবে না তার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি তাকে ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [আবু দাউদ, হা/৪২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৫৬; মু‘জামুল আওসাত, হা/৯৩১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০০; মিশকাত, হা/৫৭০।]
৪. কিয়ামতের দিন বে-নামাযীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾
আর তাদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও। অর্থাৎ নামায আদায় করো, তখন তারা মাথা নত করে না। কিয়ামতের দিন এ সকল মিথ্যুকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। (সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
৫. কিয়ামতের দিন বে-নামাযীর নূর ও নাজাতের দলীল থাকবে না :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায আদায় করা সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে এটা তার জন্য নূর ও দলীল হবে। আর কিয়ামতের দিন তার জন্য নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না অর্থাৎ নামায আদায় করবে না তার জন্য কোন নূর ও দলীল থাকবে না এবং তার জন্য কোন নাজাতের উপায়ও থাকবে না। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬; দারেমী, হা/২৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৫৬৫।]
৬. নামায ত্যাগকারীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরদের সাথে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বে-নামাযী কিয়ামতের দিন কারুন, হামান, ফিরাউন এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭... ঐ।]
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, নামায ত্যাগকারীর হাশর হবে ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফ- এদের সাথে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, এসব ব্যক্তি বড় বড় কাফির ছিল। এমনকি এরা কাফির মুশরিকদের নেতা ছিল।
৭. নামায ত্যাগকারীরা জাহান্নামে যাবে :
﴿فِيْ جَنَّاتٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ - عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ - مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ - قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ﴾
আল্লাহর নেক বান্দারা যখন জান্নাতে চলে যাবেন, তখন জাহান্নামীদের সম্পর্কে তারা কথাবার্তা বলবেন। জান্নাতীরা অপরাধীদেরকে জিজ্ঞেস করবেন কোন্ জিনিস তোমাদেরকে এ ভয়ানক জাহান্নামে পৌঁছাল? জাহান্নামীরা উত্তর দেবে, আমরা দুনিয়াতে নামায আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।
(সূরা মুদ্দাস্সির : ৪০-৪৩)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে নামায না পড়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, নামায ছাড়ার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া পরস্পরকে দেখতে পারবে এবং কথা বলতে পারবে। উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও সূরা আরাফের ৪৪-৫০ এবং সূরা আস্সাফ্ফাত এর ৫০-৫৭ আয়াতেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না সে যদি নামাযকে অস্বীকারপূর্বক এমনটি করে থাকে তাহলে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যাবে। এতে কারো দ্বিমত নেই। আর নামায ফরয হওয়াকে স্বীকৃতি দানের পর যদি কেউ নামায আদায় না করে তাহলেও সে আমলগতভাবে কুফরী কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُمْ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
যদি তারা তওবা করে, নামায আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তওবা- ৫)
﴿فَاِنْ تَابُوْا وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاٰتَوُا الزَّكَاةَ فَاِخْوَانُكُمْ فِى الدِّيْنِ﴾
যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। (সূরা তওবা- ১১)
এ দুটি আয়াতে নামায কায়েম এবং যাকাত আদায় করাকে নিরাপত্তা এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মানদন্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না সে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়।
কুফর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয় হচ্ছে নামায :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হলো নামায আদায় না করা। [সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭৩০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৩।]
অর্থাৎ নামায ত্যাগ করলে তার কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার আর বিলম্ব থাকে না। নামায হলো তার ঈমানের জন্য প্রাচীরস্বরূপ।
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বৃষ্টির দিনে নামাযে তৎপর থাকো। কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত নামায ত্যাগ করল সে কুফরী করল। [সহীহ ইবনে হিববান হা/১৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৮।]
বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো নামায। সুতরাং যে নামায ত্যাগ করল, সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; নাসাঈ, হা/৪৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৪; দার কুতনী, হা/১৭৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৭৪।]
২. সাহাবীরা নামায ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন :
আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব আল উক্বাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ নামায ত্যাগ করা ব্যতীত অন্য কিছুকে কুফরী মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মিশকাত, হা/৫৭৯; রিয়াযুস সালিহীন, হা/৪৭০; জামেউল উসূল ফিল আহাদীস, হা/৩২৬৫।]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ ، قَالَ : لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا صَلَاةَ لَهٗ
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যার নামায নেই তার ঈমান নেই। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭৫।]
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না, তার নিজেকে মুমিন বলে দাবি করা শোভা পায় না।
৩. নামায ত্যাগকারীর মুক্তি পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই :
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অযু করবে, সময়মতো নামায আদায় করবে, নামাযের রুকূসমূহ পূর্ণ করবে এবং তাতে বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি এমনটি করবে না তার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি তাকে ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [আবু দাউদ, হা/৪২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৫৬; মু‘জামুল আওসাত, হা/৯৩১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০০; মিশকাত, হা/৫৭০।]
৪. কিয়ামতের দিন বে-নামাযীকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে :
﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا لَا يَرْكَعُوْنَ ‐ - وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ﴾
আর তাদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর সামনে নত হও। অর্থাৎ নামায আদায় করো, তখন তারা মাথা নত করে না। কিয়ামতের দিন এ সকল মিথ্যুকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। (সূরা মুরসালাত- ৪৮, ৪৯)
৫. কিয়ামতের দিন বে-নামাযীর নূর ও নাজাতের দলীল থাকবে না :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায আদায় করা সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে এটা তার জন্য নূর ও দলীল হবে। আর কিয়ামতের দিন তার জন্য নাজাতের অসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না অর্থাৎ নামায আদায় করবে না তার জন্য কোন নূর ও দলীল থাকবে না এবং তার জন্য কোন নাজাতের উপায়ও থাকবে না। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭৬; দারেমী, হা/২৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৫৬৫।]
৬. নামায ত্যাগকারীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরদের সাথে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বে-নামাযী কিয়ামতের দিন কারুন, হামান, ফিরাউন এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৭... ঐ।]
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, নামায ত্যাগকারীর হাশর হবে ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফ- এদের সাথে। আর এ কথা স্পষ্ট যে, এসব ব্যক্তি বড় বড় কাফির ছিল। এমনকি এরা কাফির মুশরিকদের নেতা ছিল।
৭. নামায ত্যাগকারীরা জাহান্নামে যাবে :
﴿فِيْ جَنَّاتٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ - عَنِ الْمُجْرِمِيْنَ ‐ - مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ ‐ - قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ﴾
আল্লাহর নেক বান্দারা যখন জান্নাতে চলে যাবেন, তখন জাহান্নামীদের সম্পর্কে তারা কথাবার্তা বলবেন। জান্নাতীরা অপরাধীদেরকে জিজ্ঞেস করবেন কোন্ জিনিস তোমাদেরকে এ ভয়ানক জাহান্নামে পৌঁছাল? জাহান্নামীরা উত্তর দেবে, আমরা দুনিয়াতে নামায আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।
(সূরা মুদ্দাস্সির : ৪০-৪৩)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে নামায না পড়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, নামায ছাড়ার কারণে মানুষকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া পরস্পরকে দেখতে পারবে এবং কথা বলতে পারবে। উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও সূরা আরাফের ৪৪-৫০ এবং সূরা আস্সাফ্ফাত এর ৫০-৫৭ আয়াতেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
মুনাফিকরা নামাযে গাফলতি করে :
﴿اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا﴾
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন, তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা মানুষকে দেখাতে চায়। মূলত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
তারা লোক দেখানো নামায আদায় করে :
﴿فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ﴾
ঐ সকল নামায আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে গাফিল, যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। আর তারা তুচ্ছ জিনিসও কাউকে দিতে চায় না। (সূরা মাউন : ৪-৭)
উল্লেখিত আয়াতসমূহে মুনাফিকদের নামাযের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হলো :
১। তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক থাকে না এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২। তারা নামাযের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। নামাযের মধ্যে কী পড়ছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের নামাযে মনোযোগ থাকে না।
৩। তারা নামাযের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে নামাযের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়। তাদের নামাযে স্থিরতা থাকে না।
৪। তাদের নামাযে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো নামায আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে নামায আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের নামাযের উদ্দেশ্য।
এশা ও ফজরের নামাযে উপস্থিত হতে তাদের বেশি কষ্ট হয় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে ভারী নামায হচ্ছে এশা ও ফজরের নামায। যদি তারা জানত যে, এ দুটির মধ্যে কি পরিমাণ ফযীলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই উক্ত নামাযদ্বয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১০২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৯৮।]
তারা নামাযকে নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে দেয় :
আলা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি একদিন আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর বসরায় অবস্থিত বাড়িতে গেলেন। আর সে বাড়িটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনে আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যোহরের নামায আদায় করেছেন। আলা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমরা তাঁর (আনাস ইবনে মালিকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আসরের নামায আদায় করেছ? আমরা জবাবে বললাম, আমরা এইমাত্র যোহরের নামায আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যাও- আসরের নামায আদায় করে আসো। এরপর আমরা গিয়ে আসরের নামায আদায় করে তার কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন- ঐ নামায হলো মুনাফিকের নামায, যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে। আর যখন তা প্রায় অস্ত হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে ৪ বার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৫১৪; আবু দাউদ, হা/৪১৩; তিরমিযী, হা/১৬০; নাসাঈ, হা/৫১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০১৮।]
﴿اِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَاِذَا قَامُوْاۤ اِلَى الصَّلَاةِ قَامُوْا كُسَالٰى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللهَ اِلَّا قَلِيْلًا﴾
নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করছে; মূলত আল্লাহই তাদেরকে প্রতারণায় ফেলে দিচ্ছেন, তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা মানুষকে দেখাতে চায়। মূলত তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা- ১৪২)
তারা লোক দেখানো নামায আদায় করে :
﴿فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ﴾
ঐ সকল নামায আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে গাফিল, যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে। আর তারা তুচ্ছ জিনিসও কাউকে দিতে চায় না। (সূরা মাউন : ৪-৭)
উল্লেখিত আয়াতসমূহে মুনাফিকদের নামাযের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হলো :
১। তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তাদের ঈমান, নিয়ত কিছুই সঠিক থাকে না এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে না।
২। তারা নামাযের মধ্যে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। নামাযের মধ্যে কী পড়ছে তা কিছুই বুঝে না। তাদের নামাযে মনোযোগ থাকে না।
৩। তারা নামাযের আরকান-আহকাম, রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে না; বরং কাকের মতো কয়েকটা ঠোকর মেরে নামাযের দায় থেকে মুক্ত হতে চায়। তাদের নামাযে স্থিরতা থাকে না।
৪। তাদের নামাযে ইখলাস থাকে না, তারা লোক দেখানো নামায আদায় করে। মানুষের সামনে নিজেদেরকে নামায আদায়কারী হিসেবে তুলে ধরাই হলো তাদের নামাযের উদ্দেশ্য।
এশা ও ফজরের নামাযে উপস্থিত হতে তাদের বেশি কষ্ট হয় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে ভারী নামায হচ্ছে এশা ও ফজরের নামায। যদি তারা জানত যে, এ দুটির মধ্যে কি পরিমাণ ফযীলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই উক্ত নামাযদ্বয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১০২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৯৮।]
তারা নামাযকে নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে দেয় :
আলা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি একদিন আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর বসরায় অবস্থিত বাড়িতে গেলেন। আর সে বাড়িটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনে আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যোহরের নামায আদায় করেছেন। আলা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমরা তাঁর (আনাস ইবনে মালিকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আসরের নামায আদায় করেছ? আমরা জবাবে বললাম, আমরা এইমাত্র যোহরের নামায আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যাও- আসরের নামায আদায় করে আসো। এরপর আমরা গিয়ে আসরের নামায আদায় করে তার কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন- ঐ নামায হলো মুনাফিকের নামায, যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে। আর যখন তা প্রায় অস্ত হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে ৪ বার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৩, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৫১৪; আবু দাউদ, হা/৪১৩; তিরমিযী, হা/১৬০; নাসাঈ, হা/৫১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০১৮।]
প্রত্যেকটি কাজ করার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর নামায ফরয করেছেন এবং মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে তা আদায় করতে বলেছেন। বিশেষ কল্যাণ ও উপকারিতার দিকে লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ তা‘আলা এ বিধান দিয়েছেন। নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীরা জামাআতে নামায কায়েম করতেন। আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীদের প্রশংসা করে বলেন,
﴿فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ ‐ - رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ﴾
যেসকল ঘরকে আল্লাহ তা‘আলা সমুন্নত করার এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এমনসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত আদায় করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা ভয় করে এমন একটি দিনকে যে দিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উলটপালট (বিপর্যস্ত) হয়ে যাবে। অর্থাৎ কিয়ামতের কঠিন দিনকে। (সূরা নূর- ৩৬, ৩৭)
জামাআতে নামায আদায়ের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। সবাই মসজিদে গিয়ে একত্র হয় এবং একে অপরকে দেখতে পায়। পরস্পরের খবরাখবর জানতে পারে। এর ফলে সাম্যের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। সাদা-কালো, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, উঁচু-নীচু সবাই একই কাতারে দাঁড়ায়। জামাআতে নামায পড়লে নামায কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং নামাযে ভুলত্রুটি কম হয়। অনেক সময় নামাযের পরে দ্বীনী আলোচনা হয়, এতে করে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। এছাড়াও দুনিয়া-আখিরাতের অগণিত কল্যাণ রয়েছে জামাআতে নামায আদায়ের মধ্যে। জামাআতে নামায আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো; অর্থাৎ জামাআতে নামায আদায় করো। (সূরা বাকারা- ৪৩)
যুদ্ধের সময়ও জামাআতে নামায আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ﴾
(হে নবী!) তুমি যখন (জিহাদের ময়দানে) তোমার সাথিদের সাথে থাকবে এবং তাদের জন্য নামায কায়েম করবে, তখন তাদের একটি দল যেন তোমার সাথে দাঁড়ায়। (সূরা নিসা- ১০২)
এ আয়াতে যুদ্ধের সময়ও জামাআতে নামায আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন চিন্তা করুন, যুদ্ধের সময়ও জামাআতে নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকলে, অন্য সময় তা আরো কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
﴿فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ ‐ - رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ﴾
যেসকল ঘরকে আল্লাহ তা‘আলা সমুন্নত করার এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এমনসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত আদায় করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। তারা ভয় করে এমন একটি দিনকে যে দিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উলটপালট (বিপর্যস্ত) হয়ে যাবে। অর্থাৎ কিয়ামতের কঠিন দিনকে। (সূরা নূর- ৩৬, ৩৭)
জামাআতে নামায আদায়ের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। সবাই মসজিদে গিয়ে একত্র হয় এবং একে অপরকে দেখতে পায়। পরস্পরের খবরাখবর জানতে পারে। এর ফলে সাম্যের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। সাদা-কালো, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, উঁচু-নীচু সবাই একই কাতারে দাঁড়ায়। জামাআতে নামায পড়লে নামায কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং নামাযে ভুলত্রুটি কম হয়। অনেক সময় নামাযের পরে দ্বীনী আলোচনা হয়, এতে করে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। এছাড়াও দুনিয়া-আখিরাতের অগণিত কল্যাণ রয়েছে জামাআতে নামায আদায়ের মধ্যে। জামাআতে নামায আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ﴾
তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো; অর্থাৎ জামাআতে নামায আদায় করো। (সূরা বাকারা- ৪৩)
যুদ্ধের সময়ও জামাআতে নামায আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَاِذَا كُنْتَ فِيْهِمْ فَاَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ مَّعَكَ﴾
(হে নবী!) তুমি যখন (জিহাদের ময়দানে) তোমার সাথিদের সাথে থাকবে এবং তাদের জন্য নামায কায়েম করবে, তখন তাদের একটি দল যেন তোমার সাথে দাঁড়ায়। (সূরা নিসা- ১০২)
এ আয়াতে যুদ্ধের সময়ও জামাআতে নামায আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন চিন্তা করুন, যুদ্ধের সময়ও জামাআতে নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকলে, অন্য সময় তা আরো কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
১. জামাআত বর্জনকারীরা কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত হবে :
﴿يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ - وَّقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ﴾
যেদিন পায়ের গোছা প্রকাশ পাবে (কিয়ামতের কঠিন মুসীবত আসবে) এবং মানুষকে সিজদা করার জন্য ডাকা হবে, তখন তারা সিজদা করতে পারবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত হয়ে যাবে, অপমান তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। কারণ দুনিয়াতে তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো; কিন্তু তারা নিরাপদ থাকা সত্ত্বেও সাড়া দিত না। (সূরা কালাম- ৪২, ৪৩)
মুফাসসিরীনে কেরাম বলেছেন, (হাশরের ময়দানে) আল্লাহর সকল সৃষ্টি তাকে সিজদা করবে; কিন্তু কাফির এবং মুনাফিকরা সিজদা করতে পারবে না। তারা সিজদা করতে ইচ্ছা করবে কিন্তু সক্ষম হবে না। কেননা সেদিন তাদের মেরুদন্ড কাঠের মতো শক্ত হয়ে যাবে, সুতরাং তা সিজদার জন্য ঝুঁকতে পারবে না। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, ৭/২৮৯।]
২. জামাআত বর্জনকারীদের প্রতি নবীর ক্ষোভ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি ইচ্ছা করছি, জ্বালানী কাঠ একত্র করার আদেশ করব। তারপর আদেশ করব যাতে নামাযের জন্য আযান দেয়া হয়। তারপর কোন ব্যক্তিকে আদেশ করব, সে যেন লোকদের ইমামতি করে। তারপর আমি বাড়িতে অবস্থানকারী ঐ সকল লোকের কাছে যাব (যারা জামাআতে হাজির হয়নি)। তারপর তাদের ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেব। সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তাদের কেউ এ কথা জানত যে, সে হাড্ডির সাথে সংযুক্ত মোটাতাজা মজাদার গোশত পাবে, অথবা বকরীর উত্তম দুটি খুর পাবে, তাহলে তারা অবশ্যই এশার নামাযের জামাআতে হাজির হতো। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/২৯০; সহীহ বুখারী, হা/৬৪৪; মুসলিম, হা/১৫১৩; আবু দাউদ, হা/৫৪৮; নাসাঈ, হা/৮৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪১৯৬।]
একজন রহমতের নবী হয়েও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। জামাআতে নামায আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না হলে নবী ﷺ এরকম ইচ্ছা পোষণ করতেন না। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, একজন মানুষের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে যত ক্ষতি হয়; তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জামাআতের সাথে নামায না আদায় করার কারণে।
আফসোস এ যুগের মুসলিমদের জন্য, যারা জামাআতে নামায আদায় করাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং যারা অনুধাবন করতে পারছে না যে, তারা জামাআত ছেড়ে কতটুকু ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
৩. অন্ধকেও ছাড় দেয়া হয়নি :
আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী ﷺ কে প্রশ্ন করলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন অন্ধ ব্যক্তি। আমি বাড়িতে অবস্থান করি। আমার এমন কোন লোক নেই যে, আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। অতএব আমার জন্য এমন কোন ছাড় আছে কি যে, আমি আমার বাড়িতেই নামায আদায় করতে পারব? তখন তিনি বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাহলে আমি তোমার জন্য কোন ছাড় দিতে পারছি না। [আবু দাউদ, হা/৫৫২; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯০৩।]
নবী ﷺ এর এ বাণী শোনার পর সাহাবীরা যেভাবেই হোক মসজিদে এসে উপস্থিত হতেন এবং জামাআতে নামায পড়তেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অন্ধ লোককেও বাড়িতে নামায আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। এখন যারা সুস্থ্য, দেখতে পায়, চলতে পারে তারা কীভাবে বাড়িতে নামায আদায় করতে পারে?
৪. ওজর ছাড়া জামাআত ত্যাগ করা যাবে না :
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে কোন ওজর ব্যতীত মসজিদে না গিয়ে একাকী নামায আদায় করে, তার এ নামায গ্রহণযোগ্য হবে না। লোকেরা বলল, ওজর বলতে কী বুঝায়? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ভয় ও রোগ। [আবু দাঊদ, হা/৫৫১; দার কুতনী, হা/১৫৫৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৯৬; সুনানে বায়হাকী, হা/৪৮২৬।]
ভয় অর্থ হলো প্রাণের ভয়। দুশমন, হিংস্র জন্তু অথবা বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছুর কারণে এ ভয় হতে পারে। আর রোগের অর্থ হলো এমন রোগ, যে রোগের কারণে মসজিদ পর্যন্ত যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৫. একাকী নামায আদায়কারীর উপর শয়তান চেপে বসে :
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন গ্রাম বা জনপদে যদি তিনজন লোক থাকে এবং সেখানে জামাআতের সাথে নামায কায়েম না হয়, তবে বুঝতে হবে যে, তাদের উপর শয়তানের আধিপত্য রয়েছে। অতএব তোমরা জামাআতকে আঁকড়ে ধরো। কারণ নেকড়ে বাঘ বিচ্ছিন্ন মেষকেই শিকার করে থাকে। [আবু দাঊদ, হা/৫৪৭; নাসাঈ, হা/৮৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৫৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১০১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৫; মিশকাত, হা/১০৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪২৭।]
৬. জামাআত বর্জনকারীরা পথভ্রষ্ট ও মুনাফিক :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল কিয়ামতের দিন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে, সে যেন ঐ নামাযের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেসব নামাযের জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়াতের পথ বর্ণনা করেছেন। আর জামাআতে নামায আদায় করাও হেদায়াতের একটি পথ। সুতরাং যদি তোমরা জামাআতে উপস্থিত না হয়ে বাড়িতে নামায আদায় করে থাক, যেভাবে পেছনে থাকা লোকেরা তাদের বাড়িতে নামায আদায় করে নেয়, তাহলে তোমরা হেদায়াতের পথ হারিয়ে ফেলবে। আর এভাবে যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ কর, তাহলে অবশ্যই হেদায়াতের পথ হারিয়ে ফেলবে।
কোন ব্যক্তি যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (নামায আদায় করার জন্য) কোন একটি মসজিদে উপস্থিত হয় তাহলে মসজিদে যেতে সে যতবার পদক্ষেপ ফেলবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং একটি করে পাপ মোচন করে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমরা মনে করি যার মুনাফিকী সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক ছাড়া কেউ-ই জামাআতে নামায আদায় করা ছেড়ে দিত না। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় এমন ব্যক্তিও জামাআতে উপস্থিত হতো, যাকে দু’জন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে এনে নামাযের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫২০; নাসাঈ, হা/৪৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯৩৬; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯৮৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০৪; মিশকাত, হা/১০৭২।]
﴿يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّيُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ‐ - خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ - وَّقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُوْنَ﴾
যেদিন পায়ের গোছা প্রকাশ পাবে (কিয়ামতের কঠিন মুসীবত আসবে) এবং মানুষকে সিজদা করার জন্য ডাকা হবে, তখন তারা সিজদা করতে পারবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত হয়ে যাবে, অপমান তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। কারণ দুনিয়াতে তাদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হতো; কিন্তু তারা নিরাপদ থাকা সত্ত্বেও সাড়া দিত না। (সূরা কালাম- ৪২, ৪৩)
মুফাসসিরীনে কেরাম বলেছেন, (হাশরের ময়দানে) আল্লাহর সকল সৃষ্টি তাকে সিজদা করবে; কিন্তু কাফির এবং মুনাফিকরা সিজদা করতে পারবে না। তারা সিজদা করতে ইচ্ছা করবে কিন্তু সক্ষম হবে না। কেননা সেদিন তাদের মেরুদন্ড কাঠের মতো শক্ত হয়ে যাবে, সুতরাং তা সিজদার জন্য ঝুঁকতে পারবে না। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, ৭/২৮৯।]
২. জামাআত বর্জনকারীদের প্রতি নবীর ক্ষোভ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি ইচ্ছা করছি, জ্বালানী কাঠ একত্র করার আদেশ করব। তারপর আদেশ করব যাতে নামাযের জন্য আযান দেয়া হয়। তারপর কোন ব্যক্তিকে আদেশ করব, সে যেন লোকদের ইমামতি করে। তারপর আমি বাড়িতে অবস্থানকারী ঐ সকল লোকের কাছে যাব (যারা জামাআতে হাজির হয়নি)। তারপর তাদের ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেব। সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তাদের কেউ এ কথা জানত যে, সে হাড্ডির সাথে সংযুক্ত মোটাতাজা মজাদার গোশত পাবে, অথবা বকরীর উত্তম দুটি খুর পাবে, তাহলে তারা অবশ্যই এশার নামাযের জামাআতে হাজির হতো। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/২৯০; সহীহ বুখারী, হা/৬৪৪; মুসলিম, হা/১৫১৩; আবু দাউদ, হা/৫৪৮; নাসাঈ, হা/৮৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪১৯৬।]
একজন রহমতের নবী হয়েও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। জামাআতে নামায আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না হলে নবী ﷺ এরকম ইচ্ছা পোষণ করতেন না। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, একজন মানুষের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে যত ক্ষতি হয়; তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জামাআতের সাথে নামায না আদায় করার কারণে।
আফসোস এ যুগের মুসলিমদের জন্য, যারা জামাআতে নামায আদায় করাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং যারা অনুধাবন করতে পারছে না যে, তারা জামাআত ছেড়ে কতটুকু ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
৩. অন্ধকেও ছাড় দেয়া হয়নি :
আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী ﷺ কে প্রশ্ন করলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন অন্ধ ব্যক্তি। আমি বাড়িতে অবস্থান করি। আমার এমন কোন লোক নেই যে, আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। অতএব আমার জন্য এমন কোন ছাড় আছে কি যে, আমি আমার বাড়িতেই নামায আদায় করতে পারব? তখন তিনি বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাহলে আমি তোমার জন্য কোন ছাড় দিতে পারছি না। [আবু দাউদ, হা/৫৫২; ইবনে মাজাহ, হা/৭৯২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯০৩।]
নবী ﷺ এর এ বাণী শোনার পর সাহাবীরা যেভাবেই হোক মসজিদে এসে উপস্থিত হতেন এবং জামাআতে নামায পড়তেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অন্ধ লোককেও বাড়িতে নামায আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। এখন যারা সুস্থ্য, দেখতে পায়, চলতে পারে তারা কীভাবে বাড়িতে নামায আদায় করতে পারে?
৪. ওজর ছাড়া জামাআত ত্যাগ করা যাবে না :
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে কোন ওজর ব্যতীত মসজিদে না গিয়ে একাকী নামায আদায় করে, তার এ নামায গ্রহণযোগ্য হবে না। লোকেরা বলল, ওজর বলতে কী বুঝায়? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ভয় ও রোগ। [আবু দাঊদ, হা/৫৫১; দার কুতনী, হা/১৫৫৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৯৬; সুনানে বায়হাকী, হা/৪৮২৬।]
ভয় অর্থ হলো প্রাণের ভয়। দুশমন, হিংস্র জন্তু অথবা বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছুর কারণে এ ভয় হতে পারে। আর রোগের অর্থ হলো এমন রোগ, যে রোগের কারণে মসজিদ পর্যন্ত যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৫. একাকী নামায আদায়কারীর উপর শয়তান চেপে বসে :
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন গ্রাম বা জনপদে যদি তিনজন লোক থাকে এবং সেখানে জামাআতের সাথে নামায কায়েম না হয়, তবে বুঝতে হবে যে, তাদের উপর শয়তানের আধিপত্য রয়েছে। অতএব তোমরা জামাআতকে আঁকড়ে ধরো। কারণ নেকড়ে বাঘ বিচ্ছিন্ন মেষকেই শিকার করে থাকে। [আবু দাঊদ, হা/৫৪৭; নাসাঈ, হা/৮৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৫৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১০১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৫; মিশকাত, হা/১০৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪২৭।]
৬. জামাআত বর্জনকারীরা পথভ্রষ্ট ও মুনাফিক :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল কিয়ামতের দিন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে, সে যেন ঐ নামাযের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেসব নামাযের জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়াতের পথ বর্ণনা করেছেন। আর জামাআতে নামায আদায় করাও হেদায়াতের একটি পথ। সুতরাং যদি তোমরা জামাআতে উপস্থিত না হয়ে বাড়িতে নামায আদায় করে থাক, যেভাবে পেছনে থাকা লোকেরা তাদের বাড়িতে নামায আদায় করে নেয়, তাহলে তোমরা হেদায়াতের পথ হারিয়ে ফেলবে। আর এভাবে যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ কর, তাহলে অবশ্যই হেদায়াতের পথ হারিয়ে ফেলবে।
কোন ব্যক্তি যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (নামায আদায় করার জন্য) কোন একটি মসজিদে উপস্থিত হয় তাহলে মসজিদে যেতে সে যতবার পদক্ষেপ ফেলবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং একটি করে পাপ মোচন করে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমরা মনে করি যার মুনাফিকী সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক ছাড়া কেউ-ই জামাআতে নামায আদায় করা ছেড়ে দিত না। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় এমন ব্যক্তিও জামাআতে উপস্থিত হতো, যাকে দু’জন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে এনে নামাযের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫২০; নাসাঈ, হা/৪৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৭৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯৩৬; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯৮৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪০৪; মিশকাত, হা/১০৭২।]
১. জামাআতে নামায আদায়ের সওয়াব অনেক বেশি :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একাকী নামায আদায় করার চেয়ে জামাআতে নামায আদায় করার সওয়াব ২৭ গুণ বেশি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬১০; ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৭১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৬১৮।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, জামাআতে নামায আদায়ের ফযীলত একাকী নামায আদায়ের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। আর রাত ও দিনের ফেরেশতাগণ ফজরের নামাযের সময় মিলিত হয়ে থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) আরো বলতেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াত পাঠ করতে পার। ‘‘আর ফজরের নামাযে কুরআন পাঠ (করলে), নিশ্চয় এতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হয়।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৫১।]
২. যত বেশি দূর থেকে আসবে তত বেশি সওয়াব হবে :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনু সালিমা গোত্রের লোকেরা (মদিনার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে) মসজিদে নববীর কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনার ঐ এলাকা পরিত্যাগ করা অপছন্দ করলেন। ফলে তিনি বনু সালিমার লোকদেরকে বললেন, হে বনু সালিমা! তোমরা কি মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের পদচারণার অর্থাৎ পায়ে হেঁটে আসার সওয়াব কামনা করো না? এরপর বনু সালিমা তাদের স্থানে অবস্থান করল। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৭৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৯৬।]
৩. প্রত্যেক কদমে গোনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঘরে অথবা বাজারে (একা একা) নামায আদায়ের চেয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা তোমাদের কেউ যখন অযু করে এবং ভালোভাবে অযু করে, তারপর শুধু নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে, তাহলে সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যত কদম হাঁটবে, প্রত্যেক কদমের পরিবর্তে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযে আছে বলেই গণ্য হবে। আর যতক্ষণ সে অযু অবস্থায় নামায আদায়ের স্থানে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ (তার জন্য) এ বলে দু‘আ করতে থাকে- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহম করো।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৩৮; আবু দাউদ, হা/৫৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২৪; জামেউস সগীর, হা/৭২৭১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৯৭; মিশকাত, হা/৭০২।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মানুষের) শরীরের প্রতি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে সাদাকা ওয়াজিব হয়। কোন ব্যক্তিকে তার সওয়ারীর উপর আরোহণ করতে সাহায্য করা অথবা তার মালপত্র উঠিয়ে দেয়া সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। আর উত্তম কথা বলা এবং নামাযের উদ্দেশ্যে যাতায়াতের প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। পথিককে পথ দেখিয়ে দেয়াও সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৯১; সহীহ মুসলিম, হা/২৩৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১৬৮।]
৪. মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মাদারীতে থাকে :
আবু উমামা আল বাহিলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিন ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছেন।
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে বের হয়েছে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে সওয়াব ও গনীমত সহকারে ফিরিয়ে আনেন।
(২) যে ব্যক্তি মসজিদে গমন করেছে অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে অথবা সওয়াব নিয়ে ফিরে এসেছে।
(৩) যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করেছে সেও আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। [আবু দাঊদ, হা/২৪৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪০০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৯৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২১; মিশকাত, হা/৭২৭।]
৫. মসজিদে গেলে ফেরেশতাদের দু‘আ পাওয়া যায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যতক্ষণ নামায আদায়ের পর স্বস্থানে অযু অবস্থায় অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ ব্যক্তির জন্য এভাবে দু‘আ করতে থাকেন- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো এবং তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ করো।’’ [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৩৮০; সহীহ বুখারী, হা/৪৪৫; আবু দাউদ, হা/৪৬৯; নাসাঈ, হা/৭৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৫৩; জামেউস সগীর, হা/১১৬৭৩।]
৬. মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম স্থান :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান হলো মসজিদসমূহ এবং সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য স্থান হলো বাজারসমূহ। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১২৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬০০; জামেউস সগীর, হা/১৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৪; মিশকাত, হা/৬৯৬।]
৭. সকাল-বিকাল মসজিদে যাওয়ার বিশেষ পুরস্কার :
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল বিকাল মসজিদে যাবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার প্রত্যেক বারের আসা-যাওয়ার পরিবর্তে জান্নাতে একটি করে মেহমানদারী (আপ্যায়ন) প্রস্তুত করে রাখবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬২; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৬১৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৯৬; জমেউস সগীর, হা/১১৩৪৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৪; মিশকাত, হা/৬৯৮।]
৮. অন্ধকারে মসজিদে গমনকারীদেরকে নূর দেয়া হবে :
বুরাইদা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যারা অন্ধকারে মসজিদে যায়, তাদেরকে কিয়ামতের দিনের পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। [তিরমিযী, হা/২২৩; আবু দাঊদ, হা/৫৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৭৮১; ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৫; মিশকাত, হা/৭২১।]
৯. ফজর ও এশার জামাআতের বিশেষ ফযীলত :
উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামায জামাআতে পড়ল সে যেন অর্ধরাত্রি নামায পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত্রি নামায আদায় করল। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫২৩; আবু দাউদ, হা/৫৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৬০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪১৫; মিশকাত, হা/৬৩০।]
১০. প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর ফযীলত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি লোকেরা জানত যে, আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারে নামায আদায়ের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা লটারী করে হলেও উক্ত আমলগুলো করত। আর যদি তারা জানত যে, আগে নামাযে যাওয়ার মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তাহলে তারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আগে যাওয়ার চেষ্টা করত। আর যদি লোকেরা জানত যে, এশা ও ফজরের জামাআতের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে অর্থাৎ হাত ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে হলেও মসজিদে যেত। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৪৯; সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১০০৯; নাসাঈ, হা/৫৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৯; জামেউস সগীর, হা/৯৪৭০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩১; মিশকাত, হা/৬২৮।]
১১. জামাআতে নামায আদায়কারীরা হাশরের দিন আল্লাহর ছায়ায় স্থান পাবে :
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না :
১। ন্যায়পরায়ণ শাসক।
২। সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদাতের মধ্য দিয়ে বড় হয়।
৩। সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। যখন সে বেরিয়ে আসে তখন পুনরায় মসজিদে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
৪। সেই দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তারা একত্রিত হয় এবং পৃথক হয়।
৫। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দু’চোখে অশ্রু বিসর্জন দেয় অর্থাৎ কান্না করে।
৬। সেই ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (খারাপ কাজের জন্য) আহবান করে; কিন্তু সে বলে, ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’।
৭। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে, এমনকি তার বাম হাত জানে না তার ডান হাত কী দান করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৬; মিশকাত, হা/৭০১।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একাকী নামায আদায় করার চেয়ে জামাআতে নামায আদায় করার সওয়াব ২৭ গুণ বেশি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬১০; ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৭১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৬১৮।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, জামাআতে নামায আদায়ের ফযীলত একাকী নামায আদায়ের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। আর রাত ও দিনের ফেরেশতাগণ ফজরের নামাযের সময় মিলিত হয়ে থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) আরো বলতেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াত পাঠ করতে পার। ‘‘আর ফজরের নামাযে কুরআন পাঠ (করলে), নিশ্চয় এতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হয়।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬০১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৫১।]
২. যত বেশি দূর থেকে আসবে তত বেশি সওয়াব হবে :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনু সালিমা গোত্রের লোকেরা (মদিনার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে) মসজিদে নববীর কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনার ঐ এলাকা পরিত্যাগ করা অপছন্দ করলেন। ফলে তিনি বনু সালিমার লোকদেরকে বললেন, হে বনু সালিমা! তোমরা কি মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের পদচারণার অর্থাৎ পায়ে হেঁটে আসার সওয়াব কামনা করো না? এরপর বনু সালিমা তাদের স্থানে অবস্থান করল। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৭৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৯৬।]
৩. প্রত্যেক কদমে গোনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঘরে অথবা বাজারে (একা একা) নামায আদায়ের চেয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা তোমাদের কেউ যখন অযু করে এবং ভালোভাবে অযু করে, তারপর শুধু নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে, তাহলে সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যত কদম হাঁটবে, প্রত্যেক কদমের পরিবর্তে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযে আছে বলেই গণ্য হবে। আর যতক্ষণ সে অযু অবস্থায় নামায আদায়ের স্থানে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ (তার জন্য) এ বলে দু‘আ করতে থাকে- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহম করো।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৩৮; আবু দাউদ, হা/৫৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২৪; জামেউস সগীর, হা/৭২৭১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৯৭; মিশকাত, হা/৭০২।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মানুষের) শরীরের প্রতি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে সাদাকা ওয়াজিব হয়। কোন ব্যক্তিকে তার সওয়ারীর উপর আরোহণ করতে সাহায্য করা অথবা তার মালপত্র উঠিয়ে দেয়া সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। আর উত্তম কথা বলা এবং নামাযের উদ্দেশ্যে যাতায়াতের প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়। পথিককে পথ দেখিয়ে দেয়াও সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৯১; সহীহ মুসলিম, হা/২৩৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১৬৮।]
৪. মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মাদারীতে থাকে :
আবু উমামা আল বাহিলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিন ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছেন।
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে বের হয়েছে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান অথবা তাকে সওয়াব ও গনীমত সহকারে ফিরিয়ে আনেন।
(২) যে ব্যক্তি মসজিদে গমন করেছে অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে অথবা সওয়াব নিয়ে ফিরে এসেছে।
(৩) যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করেছে সেও আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। [আবু দাঊদ, হা/২৪৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪০০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৯৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২১; মিশকাত, হা/৭২৭।]
৫. মসজিদে গেলে ফেরেশতাদের দু‘আ পাওয়া যায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যতক্ষণ নামায আদায়ের পর স্বস্থানে অযু অবস্থায় অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ ব্যক্তির জন্য এভাবে দু‘আ করতে থাকেন- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো এবং তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ করো।’’ [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৩৮০; সহীহ বুখারী, হা/৪৪৫; আবু দাউদ, হা/৪৬৯; নাসাঈ, হা/৭৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৫৩; জামেউস সগীর, হা/১১৬৭৩।]
৬. মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম স্থান :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান হলো মসজিদসমূহ এবং সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য স্থান হলো বাজারসমূহ। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১২৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬০০; জামেউস সগীর, হা/১৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৪; মিশকাত, হা/৬৯৬।]
৭. সকাল-বিকাল মসজিদে যাওয়ার বিশেষ পুরস্কার :
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল বিকাল মসজিদে যাবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার প্রত্যেক বারের আসা-যাওয়ার পরিবর্তে জান্নাতে একটি করে মেহমানদারী (আপ্যায়ন) প্রস্তুত করে রাখবেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬২; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৬১৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৯৬; জমেউস সগীর, হা/১১৩৪৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৪; মিশকাত, হা/৬৯৮।]
৮. অন্ধকারে মসজিদে গমনকারীদেরকে নূর দেয়া হবে :
বুরাইদা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যারা অন্ধকারে মসজিদে যায়, তাদেরকে কিয়ামতের দিনের পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। [তিরমিযী, হা/২২৩; আবু দাঊদ, হা/৫৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৭৮১; ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৫; মিশকাত, হা/৭২১।]
৯. ফজর ও এশার জামাআতের বিশেষ ফযীলত :
উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামায জামাআতে পড়ল সে যেন অর্ধরাত্রি নামায পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত্রি নামায আদায় করল। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫২৩; আবু দাউদ, হা/৫৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৪৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০৬০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪১৫; মিশকাত, হা/৬৩০।]
১০. প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর ফযীলত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি লোকেরা জানত যে, আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারে নামায আদায়ের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা লটারী করে হলেও উক্ত আমলগুলো করত। আর যদি তারা জানত যে, আগে নামাযে যাওয়ার মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তাহলে তারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আগে যাওয়ার চেষ্টা করত। আর যদি লোকেরা জানত যে, এশা ও ফজরের জামাআতের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে অর্থাৎ হাত ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে হলেও মসজিদে যেত। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৪৯; সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১০০৯; নাসাঈ, হা/৫৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৫৯; জামেউস সগীর, হা/৯৪৭০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩১; মিশকাত, হা/৬২৮।]
১১. জামাআতে নামায আদায়কারীরা হাশরের দিন আল্লাহর ছায়ায় স্থান পাবে :
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না :
১। ন্যায়পরায়ণ শাসক।
২। সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদাতের মধ্য দিয়ে বড় হয়।
৩। সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। যখন সে বেরিয়ে আসে তখন পুনরায় মসজিদে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
৪। সেই দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তারা একত্রিত হয় এবং পৃথক হয়।
৫। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দু’চোখে অশ্রু বিসর্জন দেয় অর্থাৎ কান্না করে।
৬। সেই ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (খারাপ কাজের জন্য) আহবান করে; কিন্তু সে বলে, ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’।
৭। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে, এমনকি তার বাম হাত জানে না তার ডান হাত কী দান করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৬; মিশকাত, হা/৭০১।]
কুরআন এবং হাদীসে আমাদেরকে নামায কায়েম করতে বলা হয়েছে। সুতরাং নামায আদায় করাই যথেষ্ট নয়; নামায কায়েম করা জরুরি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ﴾
তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক, তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক এবং সাহায্যকারী! (সূরা হজ্জ- ৭৮)
নামায কায়েম হবে তখন, যখন নামায আদায়কারী বাহ্যিকভাবে নামাযের যাবতীয় আরকান-আহকাম, ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত ইত্যাদি পালন করবে এবং তার আধ্যাত্মিক বিষয়াবলি প্রতিষ্ঠা করে মনোযোগ সহকারে নামায আদায় করবে। নিজের নামায তো আদায় করবেই- সেই সাথে নিজের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র নামায প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। যাতে মুসলিমদের মধ্যে কেউ নামায ত্যাগকারী না থাকে। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, তাঁর হুকুম পালনার্থে, তাঁর প্রতি বিশেষ অনুরাগ, ভক্তি ও প্রেম প্রকাশার্থে, তাঁর নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জনের আশায়, তাঁর আযাবের ভয়ে এবং তাঁর সওয়াব ও ক্ষমার প্রত্যাশায় নামায পড়তে হবে। তখনই সেই নামায সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনবে এবং নামায আদায়কারীকে পাপ ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখবে।
﴿فَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ﴾
তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক, তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক এবং সাহায্যকারী! (সূরা হজ্জ- ৭৮)
নামায কায়েম হবে তখন, যখন নামায আদায়কারী বাহ্যিকভাবে নামাযের যাবতীয় আরকান-আহকাম, ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত ইত্যাদি পালন করবে এবং তার আধ্যাত্মিক বিষয়াবলি প্রতিষ্ঠা করে মনোযোগ সহকারে নামায আদায় করবে। নিজের নামায তো আদায় করবেই- সেই সাথে নিজের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র নামায প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। যাতে মুসলিমদের মধ্যে কেউ নামায ত্যাগকারী না থাকে। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, তাঁর হুকুম পালনার্থে, তাঁর প্রতি বিশেষ অনুরাগ, ভক্তি ও প্রেম প্রকাশার্থে, তাঁর নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জনের আশায়, তাঁর আযাবের ভয়ে এবং তাঁর সওয়াব ও ক্ষমার প্রত্যাশায় নামায পড়তে হবে। তখনই সেই নামায সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনবে এবং নামায আদায়কারীকে পাপ ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখবে।
নামাযে মনোযোগ দেয়া অর্থাৎ খুশু ও খুযূর সাথে নামায আদায় করা এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, এটা না থাকলে নামাযটা প্রাণহীন দেহের মতো হয়ে যায়। নামায হলো বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যে মুনাজাত বা গোপন কথোপকথন। নামাযে আমি আল্লাহর কাছে কী আবেদন করলাম আর আল্লাহ আমাকে কী বললেন তা বুঝে বুঝে নামায আদায় করাই হলো নামাযের প্রাণশক্তি। নামাযের বাহ্যিক কাঠামোর সাথে প্রাণের সংযোগ না থাকলে সেই নামায যথার্থ হয় না। আর নামাযের বাহ্যিক কাঠামোর সাথে প্রাণের সংযোগ দিতে হলে ‘হুজূরে ক্বল্ব’ তথা মনের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। মন উপস্থিত রেখে একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করাই নামাযের মূল বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ - اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ﴾
মুমিনগণ অবশ্যই সফলকাম হয়েছে; যারা নিজেদের নামাযে বিনয়ী। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
হাদীসে এসেছে- আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় কোন ব্যক্তি নামায সমাপ্ত করে, কিন্তু তার জন্য ১০ ভাগের ১ ভাগ, ৯ ভাগের ১ ভাগ, ৮ ভাগের ১ ভাগ, ৭ ভাগের ১ ভাগ, ৬ ভাগের ১ ভাগ, ৫ ভাগের ১ ভাগ, ৪ ভাগের ১ ভাগ, ৩ ভাগের ১ ভাগ অথবা ২ ভাগের ১ ভাগ মাত্র লিপিবদ্ধ হয়। [আবু দাঊদ, হা/৭৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯১৪; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৬১৫; জামেউস সগীর, হা/২৫০৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৩৭।]
সুতরাং যার নামায যত বেশি নবী ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী হবে তার নামায তত বেশি পূর্ণাঙ্গ ও বিশুদ্ধ হবে। অন্যথায় সেই কমতি অনুসারে সওয়াবও কম হতে থাকবে।
﴿قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‐ - اَلَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ﴾
মুমিনগণ অবশ্যই সফলকাম হয়েছে; যারা নিজেদের নামাযে বিনয়ী। (সূরা মু’মিনূন- ১, ২)
হাদীসে এসেছে- আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় কোন ব্যক্তি নামায সমাপ্ত করে, কিন্তু তার জন্য ১০ ভাগের ১ ভাগ, ৯ ভাগের ১ ভাগ, ৮ ভাগের ১ ভাগ, ৭ ভাগের ১ ভাগ, ৬ ভাগের ১ ভাগ, ৫ ভাগের ১ ভাগ, ৪ ভাগের ১ ভাগ, ৩ ভাগের ১ ভাগ অথবা ২ ভাগের ১ ভাগ মাত্র লিপিবদ্ধ হয়। [আবু দাঊদ, হা/৭৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯১৪; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৬১৫; জামেউস সগীর, হা/২৫০৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৩৭।]
সুতরাং যার নামায যত বেশি নবী ﷺ এর সুন্নাহ অনুযায়ী হবে তার নামায তত বেশি পূর্ণাঙ্গ ও বিশুদ্ধ হবে। অন্যথায় সেই কমতি অনুসারে সওয়াবও কম হতে থাকবে।
নামাযের মধ্যে বান্দার মন কোথা হতে কোথায় বিচরণ করে নামায আদায়কারী তা টেরও পায় না। তার কারণ হলো মানব মন কল্পনার রাজ্যে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে অভ্যস্ত। মনকে গভীর মনোযোগের সাথে কোন কাজে নিয়োজিত না রাখলে তা স্থির থাকে না। তাছাড়া শয়তান মানুষের চিরশত্রু, সে বান্দার নামায নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়। হাদীসে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন নামাযের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায় যাতে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে পুনরায় ফিরে আসে, পরে যখন ইকামত হয় তখন আবার পালিয়ে যায়। ইকামত শেষ হলে পুনরায় ফিরে আসে এবং বান্দার মনে নানা সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে বলতে থাকে- ‘‘এটা মনে করো, ঐটা মনে করো’’ অথচ এ সকল বিষয় নামাযে দাঁড়ানোর আগে মনে ছিল না, শেষ পর্যন্ত বান্দা কত রাক‘আত নামায আদায় করেছে তাও মনে থাকে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৫২; সহীহ বুখারী, হা/৬০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; আবু দাউদ, হা/৫১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪০; মিশকাত, হা/৬৫৫।]
عَنْ عُثْمَانَ بْنَ اَبِى الْعَاصِ اَتَى النَّبِىَّ - - فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِىْ وَبَيْنَ صَلَاتِىْ وَقِرَاءَتِىْ يَلْبِسُهَا عَلَىَّ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ -: ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهٗ خِنْزِبٌ فَاِذَا اَحْسَسْتَهٗ فَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلٰى يَسَارِكَ ثَلَاثًا ‐ قَالَ فَفَعَلْتُ ذٰلِكَ فَاَذْهَبَهُ اللهُ عَنِّىْ
উসমান বিন আবুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার নামায এবং কিরাআতের মাঝে গোলমাল সৃষ্টি করে। (বাঁচার উপায় কী?) নবী বললেন, ওটা হলো ‘খিনযাব’ নামক শয়তান। তুমি ঐরূপ অনুভব করলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তোমার বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলবে।’’ উসমান (রাঃ) বলেন, এরূপ করাতে আল্লাহ আমার নিকট থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করে দেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯২৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫১৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮২৮৩; মিশকাত, হা/৭৭।]
অতএব মনের স্বাধীন বিচরণ এবং শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে নামাযে মনোযোগ আসে না। তবে নামাযে মনকে আঁকড়ে ধরে রাখা একেবারে অসম্ভব কিছু নয়। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ ‐ - اَلَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلَاقُوْ رَبِّهِمْ وَاَنَّهُمْ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ﴾
তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর এটি কষ্টকর কাজ, তবে যারা বিনয়ী তাদের জন্য কঠিন নয়। (বিনয়ী তারা) যারা এ কথা মনে করে যে, তাদের রবের সাথে তাদের সাক্ষাৎ করতে হবে এবং তার দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাকারা- ৪৫, ৪৬)
সুতরাং এ রোগের ঔষধ অনুযায়ী যারা খুশু-খুযূ ও মনের স্থিরতার সাথে নামায আদায় করে এবং এ জন্য কিছুটা চেষ্টা সাধনা করে তাদের পক্ষে নামাযে মনকে আটকিয়ে রাখা সম্ভব। মানুষের মন একসাথে দুটি কাজ করতে পারে না, একটি কাজ করলে সে অন্যটি ছাড়তে বাধ্য। তাই নামাযে দাঁড়ালে তাকে একটি কাজ করতে হবে। আর সে কাজ হলো নামায আদায়কারী নামাযের মধ্যে যা কিছু পড়বে- মন তা বুঝবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন নামাযের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায় যাতে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে পুনরায় ফিরে আসে, পরে যখন ইকামত হয় তখন আবার পালিয়ে যায়। ইকামত শেষ হলে পুনরায় ফিরে আসে এবং বান্দার মনে নানা সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে বলতে থাকে- ‘‘এটা মনে করো, ঐটা মনে করো’’ অথচ এ সকল বিষয় নামাযে দাঁড়ানোর আগে মনে ছিল না, শেষ পর্যন্ত বান্দা কত রাক‘আত নামায আদায় করেছে তাও মনে থাকে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৫২; সহীহ বুখারী, হা/৬০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; আবু দাউদ, হা/৫১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪০; মিশকাত, হা/৬৫৫।]
عَنْ عُثْمَانَ بْنَ اَبِى الْعَاصِ اَتَى النَّبِىَّ - - فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِىْ وَبَيْنَ صَلَاتِىْ وَقِرَاءَتِىْ يَلْبِسُهَا عَلَىَّ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ -: ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهٗ خِنْزِبٌ فَاِذَا اَحْسَسْتَهٗ فَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلٰى يَسَارِكَ ثَلَاثًا ‐ قَالَ فَفَعَلْتُ ذٰلِكَ فَاَذْهَبَهُ اللهُ عَنِّىْ
উসমান বিন আবুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার নামায এবং কিরাআতের মাঝে গোলমাল সৃষ্টি করে। (বাঁচার উপায় কী?) নবী বললেন, ওটা হলো ‘খিনযাব’ নামক শয়তান। তুমি ঐরূপ অনুভব করলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তোমার বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলবে।’’ উসমান (রাঃ) বলেন, এরূপ করাতে আল্লাহ আমার নিকট থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করে দেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৮৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯২৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫১৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮২৮৩; মিশকাত, হা/৭৭।]
অতএব মনের স্বাধীন বিচরণ এবং শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে নামাযে মনোযোগ আসে না। তবে নামাযে মনকে আঁকড়ে ধরে রাখা একেবারে অসম্ভব কিছু নয়। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ ‐ - اَلَّذِيْنَ يَظُنُّوْنَ اَنَّهُمْ مُّلَاقُوْ رَبِّهِمْ وَاَنَّهُمْ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ﴾
তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর এটি কষ্টকর কাজ, তবে যারা বিনয়ী তাদের জন্য কঠিন নয়। (বিনয়ী তারা) যারা এ কথা মনে করে যে, তাদের রবের সাথে তাদের সাক্ষাৎ করতে হবে এবং তার দিকেই ফিরে যেতে হবে। (সূরা বাকারা- ৪৫, ৪৬)
সুতরাং এ রোগের ঔষধ অনুযায়ী যারা খুশু-খুযূ ও মনের স্থিরতার সাথে নামায আদায় করে এবং এ জন্য কিছুটা চেষ্টা সাধনা করে তাদের পক্ষে নামাযে মনকে আটকিয়ে রাখা সম্ভব। মানুষের মন একসাথে দুটি কাজ করতে পারে না, একটি কাজ করলে সে অন্যটি ছাড়তে বাধ্য। তাই নামাযে দাঁড়ালে তাকে একটি কাজ করতে হবে। আর সে কাজ হলো নামায আদায়কারী নামাযের মধ্যে যা কিছু পড়বে- মন তা বুঝবে।
প্রথমে লক্ষ্য করুন আযানের দিকে। যখন নামাযের সময় হয়, তখন প্রত্যেক মসজিদে মুয়াজ্জিন কী কথাগুলো উচ্চারণ করেন? বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়- ‘আল্লাহু আকবার’ ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়)। আল্লাহ যখন বড় তখন তার তাওহীদের ঘোষণা দেয়া হয় এভাবে- ‘আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (আমি সাক্ষ্য দিচিছ যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই)। তারপর নবী ﷺ এর রিসালাতের ঘোষণা দেয়া হয়- ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল)। তারপর কত সুন্দরভাবে মানুষকে নামাযের দিকে ডাকা হয়! ‘হাইয়া আলাস সালাহ্’ (নামাযের দিকে আসো)। তারপর মানুষকে সফলতার দিকে আহবান করা হয়- ‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ’ (কল্যাণের দিকে আসো)। সবশেষে আবার আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা দিয়ে এ আহবান শেষ করা হয়।
প্রত্যেক মানুষ জীবনে সফলতা চায়। আর এ সফলতা অর্জনের জন্যই সারাজীবন সাধনা করে। এ আহবানের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, ‘সফলতার দিকে আসো’। এজন্য যাদের ঈমান আছে এবং যারা প্রকৃত সফলতা লাভ করতে চায়, তারা এ ডাক শুনে আর থেমে থাকতে পারে না। অফিসার অফিসে থাকতে পারে না, দোকানদার দোকানে বসে থাকতে পারে না, কাজের লোক আর কাজ করতে পারে না। পুরুষেরা ছুটে চলে মসজিদের পানে, আর মহিলারা চলে যায় নামাযের স্বস্থানে। কারণ তারা জানে যে, এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আল্লাহ সবচেয়ে বড়’ তাঁর সামনে গিয়ে আমাকে হাজিরা দিতে হবে। আমি যদি এখন কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকি, তবে আমার কাজকে বড় বানিয়ে নিলাম, এটা কোন মুমিনের কাজ হতে পারে না।
আযানের জবাব দেয়া ও দু‘আ পড়ার ফযীলত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। এমন সময় নামাযের ওয়াক্ত হলে বিলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিলেন। আযান শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে আযানের শব্দগুলো বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [নাসাঈ, হা/৬৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৬; মিশকাত, হা/৬৭৬।]
উল্লেখ্য যে, ‘হাইয়া ‘আলাস সালাহ্’ এবং ‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্’ এর স্থলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্’- বলতে হয়। [নাসাঈ, হা/৬৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫।]
আযান শোনার পর দরূদ ও দু‘আ পড়ার ফযীলত :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে অসীলা প্রার্থনা করো। কেননা, অসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য (আমার) শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩২৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫০; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
আযান শোনার পর দু‘আ :
১. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শোনার পর নিচের দু‘আ পড়বে, তার জন্য শাফা‘আত করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে যাবে :
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা নিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّ তুমিই রব هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ এই পরিপূর্ণ আহবানের وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের। اٰتِ مُحَمَّدَنِ মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করো اَلْوَسِيْلَةَ অসীলা নামক স্থান وَالْفَضِيْلَةَ এবং মর্যাদা। وَابْعَثْهُ আর তাকে অধিষ্ঠিত করো مَقَامًا مَّحْمُوْدًا সেই প্রশংসিত স্থানে اَلَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই রব। মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করো অসীলা নামক স্থান ও মর্যাদা। আর তাকে অধিষ্ঠিত কর সেই প্রশংসিত স্থানে যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৪; আবু দাউদ, হা/৫২৯; তিরমিযী, হা/২১১; ইবনে মাজাহ, হা/৭২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৫৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৩; মিশকাত, হা/৬৫৯।]
২. সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনার পর নিচের দু‘আটি পাঠ করবে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারাসূলুহ, রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলাও ওয়া বিল ইসলা-মি দ্বীনা।
শাব্দিক অর্থ : أَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, أَنْ لَّا إِلٰهَ কোন মাবুদ নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَأَنَّ مُحَمَّدًا এবং মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল। رَضِيْتُ আমি সন্তুষ্ট হয়েছি بِاللهِ رَبًّا আল্লাহকে রব হিসেবে, وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহকে রব, মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৭; আবু দাউদ, হা/৫২৫; তিরমিযী, হা/২১০।]
প্রত্যেক মানুষ জীবনে সফলতা চায়। আর এ সফলতা অর্জনের জন্যই সারাজীবন সাধনা করে। এ আহবানের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, ‘সফলতার দিকে আসো’। এজন্য যাদের ঈমান আছে এবং যারা প্রকৃত সফলতা লাভ করতে চায়, তারা এ ডাক শুনে আর থেমে থাকতে পারে না। অফিসার অফিসে থাকতে পারে না, দোকানদার দোকানে বসে থাকতে পারে না, কাজের লোক আর কাজ করতে পারে না। পুরুষেরা ছুটে চলে মসজিদের পানে, আর মহিলারা চলে যায় নামাযের স্বস্থানে। কারণ তারা জানে যে, এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আল্লাহ সবচেয়ে বড়’ তাঁর সামনে গিয়ে আমাকে হাজিরা দিতে হবে। আমি যদি এখন কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকি, তবে আমার কাজকে বড় বানিয়ে নিলাম, এটা কোন মুমিনের কাজ হতে পারে না।
আযানের জবাব দেয়া ও দু‘আ পড়ার ফযীলত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। এমন সময় নামাযের ওয়াক্ত হলে বিলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিলেন। আযান শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে আযানের শব্দগুলো বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [নাসাঈ, হা/৬৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৬; মিশকাত, হা/৬৭৬।]
উল্লেখ্য যে, ‘হাইয়া ‘আলাস সালাহ্’ এবং ‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্’ এর স্থলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্’- বলতে হয়। [নাসাঈ, হা/৬৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫।]
আযান শোনার পর দরূদ ও দু‘আ পড়ার ফযীলত :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে অসীলা প্রার্থনা করো। কেননা, অসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য (আমার) শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩২৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫০; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
আযান শোনার পর দু‘আ :
১. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শোনার পর নিচের দু‘আ পড়বে, তার জন্য শাফা‘আত করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে যাবে :
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা নিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّ তুমিই রব هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ এই পরিপূর্ণ আহবানের وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের। اٰتِ مُحَمَّدَنِ মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করো اَلْوَسِيْلَةَ অসীলা নামক স্থান وَالْفَضِيْلَةَ এবং মর্যাদা। وَابْعَثْهُ আর তাকে অধিষ্ঠিত করো مَقَامًا مَّحْمُوْدًا সেই প্রশংসিত স্থানে اَلَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই রব। মুহাম্মাদ ﷺ কে দান করো অসীলা নামক স্থান ও মর্যাদা। আর তাকে অধিষ্ঠিত কর সেই প্রশংসিত স্থানে যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৪; আবু দাউদ, হা/৫২৯; তিরমিযী, হা/২১১; ইবনে মাজাহ, হা/৭২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৫৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৩; মিশকাত, হা/৬৫৯।]
২. সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনার পর নিচের দু‘আটি পাঠ করবে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারাসূলুহ, রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলাও ওয়া বিল ইসলা-মি দ্বীনা।
শাব্দিক অর্থ : أَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, أَنْ لَّا إِلٰهَ কোন মাবুদ নেই إِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَأَنَّ مُحَمَّدًا এবং মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল। رَضِيْتُ আমি সন্তুষ্ট হয়েছি بِاللهِ رَبًّا আল্লাহকে রব হিসেবে, وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহকে রব, মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৭; আবু দাউদ, হা/৫২৫; তিরমিযী, হা/২১০।]
উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করা নামাযে মনোযোগ তৈরির সহায়ক। এমনকি তা নামায কবুলের শর্ত। রাসূল ﷺ বলেছেন, পবিত্রতা নামাযের চাবিকাঠি। পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত নামায কবুল হয় না। জানা প্রয়োজন যে, পবিত্রতা দু’প্রকার। একটি হলো আত্মিক পবিত্রতা, অপরটি হলো শারীরিক পবিত্রতা।
আত্মিক পবিত্রতা : আত্মার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধমূলক কার্যাবলি হতে আত্মাকে মুক্ত করার মাধ্যমে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। যেমন : সন্দেহ, মুনাফিকী, শির্ক, রিয়া, অহংকার, হিংসা, শত্রুতা, কৃপণতা, বিদআতী ও কুফরী আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করা ইত্যাদি।
শারীরিক পবিত্রতাঃ বাহ্যিক নাপাকী হতে শরীরকে পবিত্র করার মাধ্যমে শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। নাপাকী দু’প্রকার :
ছোট নাপাকী : যেসব কারণে অযু করা ফরয হয়।
বড় নাপাকী : যেসব কারণে গোসল করা ফরয হয়। আর অযু ও গোসল উভয়ের অপারগতায় তায়াম্মুম করতে হয়।
আত্মিক পবিত্রতা : আত্মার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধমূলক কার্যাবলি হতে আত্মাকে মুক্ত করার মাধ্যমে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। যেমন : সন্দেহ, মুনাফিকী, শির্ক, রিয়া, অহংকার, হিংসা, শত্রুতা, কৃপণতা, বিদআতী ও কুফরী আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করা ইত্যাদি।
শারীরিক পবিত্রতাঃ বাহ্যিক নাপাকী হতে শরীরকে পবিত্র করার মাধ্যমে শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। নাপাকী দু’প্রকার :
ছোট নাপাকী : যেসব কারণে অযু করা ফরয হয়।
বড় নাপাকী : যেসব কারণে গোসল করা ফরয হয়। আর অযু ও গোসল উভয়ের অপারগতায় তায়াম্মুম করতে হয়।
নিম্নোক্ত কারণে গোসল ফরয হয় :
১. বীর্যপাত হলে :
নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন ঘুমের অবস্থায় হোক অথবা জাগ্রত অবস্থায় হোক যে কোন অবস্থায় বীর্যপাত হলে তাকে গোসল করতে হবে। হাদীসে এসেছে,
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় পানির পরিবর্তে পানি। অর্থাৎ বীর্যপাত হলে গোসল করতে হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৮০২; আবু দাউদ, হা/২১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৬১।]
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা উম্মে সুলাইম এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। (আমার প্রশ্ন হচ্ছে) মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলেও কি তাদেরকে গোসল করতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ- যখন সে পানি দেখতে পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬২১; মিশকাত, হা/৪৩৩।]
২. স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলে :
স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। চাই বীর্যপাত হোক অথবা না হোক। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন কেউ তার স্ত্রীর উপর বসে অতঃপর দুই লজ্জাস্থান মিলিত হয় তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৮১২; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১০২।]
৩. মেয়েদের হায়েয ও নিফাস শেষ হলে :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِؕ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَۚ فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ﴾
(হে নবী!) তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা খুবই কষ্টদায়ক। সুতরাং তোমরা হায়েযের সময় সহবাস করা থেকে দূরে থাকো। তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করো না। আর যখন তারা পবিত্র হয়ে যায়, তখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাদের সাথে মেলামেশা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বন কারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা- ২২২)
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হায়েয থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি হায়েয থেকে কীভাবে পবিত্রতার গোসল করতে হবে সে সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, প্রথমে সুগন্ধি (মিশক) মিশ্রিত তুলা অথবা পশমী কাপড়ের একটি টুকরা লও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করো। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৪; নাসাঈ, হা/২৫১; মিশকাত, হা/৪৩৭।]
১. বীর্যপাত হলে :
নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন ঘুমের অবস্থায় হোক অথবা জাগ্রত অবস্থায় হোক যে কোন অবস্থায় বীর্যপাত হলে তাকে গোসল করতে হবে। হাদীসে এসেছে,
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় পানির পরিবর্তে পানি। অর্থাৎ বীর্যপাত হলে গোসল করতে হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৮০২; আবু দাউদ, হা/২১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৬১।]
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা উম্মে সুলাইম এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। (আমার প্রশ্ন হচ্ছে) মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলেও কি তাদেরকে গোসল করতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ- যখন সে পানি দেখতে পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬২১; মিশকাত, হা/৪৩৩।]
২. স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলে :
স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। চাই বীর্যপাত হোক অথবা না হোক। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন কেউ তার স্ত্রীর উপর বসে অতঃপর দুই লজ্জাস্থান মিলিত হয় তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৮১২; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১০২।]
৩. মেয়েদের হায়েয ও নিফাস শেষ হলে :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسْاَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِؕ قُلْ هُوَ اَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَآءَ فِى الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَۚ فَاِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللهُؕ اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ﴾
(হে নবী!) তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা খুবই কষ্টদায়ক। সুতরাং তোমরা হায়েযের সময় সহবাস করা থেকে দূরে থাকো। তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে মেলামেশা করো না। আর যখন তারা পবিত্র হয়ে যায়, তখন তোমরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাদের সাথে মেলামেশা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বন কারীদেরকেও ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা- ২২২)
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হায়েয থেকে পবিত্রতার গোসল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি হায়েয থেকে কীভাবে পবিত্রতার গোসল করতে হবে সে সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, প্রথমে সুগন্ধি (মিশক) মিশ্রিত তুলা অথবা পশমী কাপড়ের একটি টুকরা লও। তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করো। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৪; নাসাঈ, হা/২৫১; মিশকাত, হা/৪৩৭।]
গোসল করার সময় প্রথমে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করতে হবে। তারপর লজ্জাস্থান পরিষ্কার করতে হবে। অতঃপর দু’পা ব্যতীত নামাযের অযুর ন্যায় অযু করতে হবে। পরে মাথায় তিন বার পানি ঢেলে সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করতে হবে, যাতে শরীরের কোন জায়গা শুকনো না থাকে। সব শেষে দু’পা ধৌত করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৮; আবু দাউদ, হা/২৪২।]
পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে। মহিলাদের চুলের খোপা খোলা জরুরি নয়, বরং চুলের গোড়া ভিজালেই যথেষ্ট হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪৬; মিশকাত হা/৪৩৮।]
পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে। মহিলাদের চুলের খোপা খোলা জরুরি নয়, বরং চুলের গোড়া ভিজালেই যথেষ্ট হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪৬; মিশকাত হা/৪৩৮।]
১. অযুর মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়:
আবদুল্লাহ ইবনে সুনাবিহী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন মুমিন বান্দা অযু করে, অতঃপর যখন সে কুলি করে তখন কুলি করার সাথে সাথে তার মুখের গোনাহসমূহ বের হয়ে যায়। যখন সে নাক পরিষ্কার করে তখন তার নাক থেকে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়। যখন সে তার চেহারা ধৌত করে তখন চেহারা থেকে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার চোখের ভেতরের গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার হাত ধৌত করে তখন তার হাত হতেও সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার নখের নিচে লুকিয়ে থাকা গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। অতঃপর সে যখন মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথা হতে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার কান হতেও গোনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা ধৌত করে তখন তার দু’পা হতে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার পায়ের নখের নিচে থাকা গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তারপর সে যখন পায়ে হেটে মসজিদে যায় এবং নামায আদায় করে তখন সে গোনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নামায আদায় করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬১; নাসাঈ, হা/১০৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৫৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৩৫; মিশকাত, হা/২৯৭।]
২. অযুর মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন কোন কাজ সম্পর্কে জানাব না, যা করলে আল্লাহ তা‘আলা (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন, (১) অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে অযু করা, (২) মসজিদে আসার জন্য বেশি পদচারণা করা এবং (৩) এক নামাযের পর অন্য নামাযের জন্য অপেক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৩৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০; তিরমিযী, হা/৫১; নাসাঈ, হা/১৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০০৮।]
‘সীমান্ত প্রহরা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কোন ব্যক্তি ইসলামের উপর অটল থাকা এবং ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে সর্বদা প্রসত্মুত থাকা এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়া।
৩. এর দ্বারা হাশরের ময়দানে উম্মতকে পৃথক করা হবে :
নু‘আইম আল মুজমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে মসজিদের ছাদে উঠি। তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) অযু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতদেরকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের অযুর অঙ্গসমূহ উজ্জ্বল থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তাদের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সক্ষম সে যেন তা বাড়িয়ে নেয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯০৮৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৬; মিশকাত, হা/২৯০।]
আবদুল্লাহ ইবনে সুনাবিহী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন মুমিন বান্দা অযু করে, অতঃপর যখন সে কুলি করে তখন কুলি করার সাথে সাথে তার মুখের গোনাহসমূহ বের হয়ে যায়। যখন সে নাক পরিষ্কার করে তখন তার নাক থেকে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়। যখন সে তার চেহারা ধৌত করে তখন চেহারা থেকে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার চোখের ভেতরের গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার হাত ধৌত করে তখন তার হাত হতেও সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার নখের নিচে লুকিয়ে থাকা গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। অতঃপর সে যখন মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথা হতে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার কান হতেও গোনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা ধৌত করে তখন তার দু’পা হতে সকল গোনাহ বের হয়ে যায়; এমনকি তার পায়ের নখের নিচে থাকা গোনাহসমূহও বের হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তারপর সে যখন পায়ে হেটে মসজিদে যায় এবং নামায আদায় করে তখন সে গোনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নামায আদায় করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৬১; নাসাঈ, হা/১০৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৫৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৩৫; মিশকাত, হা/২৯৭।]
২. অযুর মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন কোন কাজ সম্পর্কে জানাব না, যা করলে আল্লাহ তা‘আলা (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন, (১) অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে অযু করা, (২) মসজিদে আসার জন্য বেশি পদচারণা করা এবং (৩) এক নামাযের পর অন্য নামাযের জন্য অপেক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৩৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০; তিরমিযী, হা/৫১; নাসাঈ, হা/১৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০০৮।]
‘সীমান্ত প্রহরা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কোন ব্যক্তি ইসলামের উপর অটল থাকা এবং ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে সর্বদা প্রসত্মুত থাকা এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়া।
৩. এর দ্বারা হাশরের ময়দানে উম্মতকে পৃথক করা হবে :
নু‘আইম আল মুজমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে মসজিদের ছাদে উঠি। তখন আবু হুরায়রা (রাঃ) অযু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতদেরকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের অযুর অঙ্গসমূহ উজ্জ্বল থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তাদের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সক্ষম সে যেন তা বাড়িয়ে নেয়। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯০৮৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৬; মিশকাত, হা/২৯০।]
অযুর ফরয ৪টি। তা হলো :
(১) মুখমন্ডল ধৌত করা।
(২) দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
(৩) মাথা মাসাহ করা।
(৪) দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
(১) মুখমন্ডল ধৌত করা।
(২) দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
(৩) মাথা মাসাহ করা।
(৪) দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَيْنِ ﴾
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে। (সূরা মায়েদা- ৬)
অযু সংক্রান্ত হাদীসগুলো একত্রিত করলে অযু করার নিয়ম নিম্নরূপে প্রতিফলিত হয় :
(১) প্রথমে মনে মনে অযুর নিয়ত করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১; আবু দাউদ, হা/২২০৩; মিশকাত, হা/১।]
নিয়তের স্থান হলো ক্বলব বা অন্তর। সুতরাং নিয়ত মুখে পাঠ করা শরীয়তসম্মত নয়। অযুকারী নিয়তের সময় সাধারণভাবে মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের সংকল্প করবে। আর এটাই তার জন্য নিয়ত হিসেবে সাব্যসত্ম হবে।
(২) তারপর بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলবে। [তিরমিযী, হা/২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৭; আবু দাউদ, হা/১০২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১০৬০।]
(৩) তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে এবং আঙ্গুলসমূহ খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৪৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৬৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত হা/৪০৫।]
(৪) তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করতে হবে এবং পরে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে নাক ঝাড়তে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] তবে সিয়ামরত অবস্থায় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
(৫) তারপর কপালের গোড়া থেকে দু’কানের লতি হয়ে থুতনীর নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করতে হবে এবং দাড়ি খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত, হা/৪০৫।] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুতনীর নিচে দিতে হবে। [আবু দাউদ হা/১৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৫; মিশকাত, হা/৪০৮।]
(৬) তারপর প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১০০; সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০।]
(৭) তারপর পানি নিয়ে দু’হাতের ভিজা আঙ্গুলগুলো মাথার সম্মুখ হতে পেছনে ও পেছন হতে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪।] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতরের অংশ ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পেছনের অংশ মাসাহ করতে হবে। [নাসাঈ হা/১০২; মিশকাত হা/৪১৩।]
(৮) তারপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] এবং বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭।]
১১. অযু করার পর দু‘আ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে অযু করবে এবং নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে। ফলে সে যেকোন দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করতে পারবে।
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَه ، وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহূ ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদহূ ওয়ারাসূলুহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত, وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَاَشْهَدُ এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, أَنَّ مُحَمَّدًا নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ ও রাসূল।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ মুসলিম, হা/ ৫৭৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৫০; বায়হাকী, হা/৩৩৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪; মিশকাত, হা/২৮৯।]
উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু করবে এবং উত্তমভাবে অযু করবে তারপর নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেয়া হবে। অতঃপর সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। [নাসাঈ, হা/১৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪০১।]
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ‐ اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহূ ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়ারাসূলুহ্। আল্লা-হুম্মাজ‘আল্নী মিনাত্তাওয়া-বীনা, ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল্ মুতাত্বাহ্হিরীন।
শাব্দিক অর্থ : اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত, وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَاَشْهَدُ এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, أَنَّ مُحَمَّدًا নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ ও রাসূল। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اجْعَلْنِىْ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন مِنَ التَّوَّابِيْنَ তওবাকারীদের وَاجْعَلْنِىْ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [তিরমিযী, হা/৫৫; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৮৯৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪।]
(১) প্রথমে মনে মনে অযুর নিয়ত করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১; আবু দাউদ, হা/২২০৩; মিশকাত, হা/১।]
নিয়তের স্থান হলো ক্বলব বা অন্তর। সুতরাং নিয়ত মুখে পাঠ করা শরীয়তসম্মত নয়। অযুকারী নিয়তের সময় সাধারণভাবে মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের সংকল্প করবে। আর এটাই তার জন্য নিয়ত হিসেবে সাব্যসত্ম হবে।
(২) তারপর بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলবে। [তিরমিযী, হা/২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৭; আবু দাউদ, হা/১০২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১০৬০।]
(৩) তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে এবং আঙ্গুলসমূহ খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৪৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৬৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত হা/৪০৫।]
(৪) তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করতে হবে এবং পরে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে নাক ঝাড়তে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] তবে সিয়ামরত অবস্থায় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
(৫) তারপর কপালের গোড়া থেকে দু’কানের লতি হয়ে থুতনীর নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করতে হবে এবং দাড়ি খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত, হা/৪০৫।] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুতনীর নিচে দিতে হবে। [আবু দাউদ হা/১৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৫; মিশকাত, হা/৪০৮।]
(৬) তারপর প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১০০; সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০।]
(৭) তারপর পানি নিয়ে দু’হাতের ভিজা আঙ্গুলগুলো মাথার সম্মুখ হতে পেছনে ও পেছন হতে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪।] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতরের অংশ ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পেছনের অংশ মাসাহ করতে হবে। [নাসাঈ হা/১০২; মিশকাত হা/৪১৩।]
(৮) তারপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] এবং বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে হবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭।]
১১. অযু করার পর দু‘আ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে অযু করবে এবং নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে। ফলে সে যেকোন দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করতে পারবে।
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَه ، وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহূ ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদহূ ওয়ারাসূলুহ্।
শাব্দিক অর্থ : اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত, وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَاَشْهَدُ এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, أَنَّ مُحَمَّدًا নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ ও রাসূল।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ মুসলিম, হা/ ৫৭৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৫০; বায়হাকী, হা/৩৩৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪; মিশকাত, হা/২৮৯।]
উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু করবে এবং উত্তমভাবে অযু করবে তারপর নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেয়া হবে। অতঃপর সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। [নাসাঈ, হা/১৪৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪০১।]
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ‐ اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহূ ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়ারাসূলুহ্। আল্লা-হুম্মাজ‘আল্নী মিনাত্তাওয়া-বীনা, ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল্ মুতাত্বাহ্হিরীন।
শাব্দিক অর্থ : اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত, وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই وَاَشْهَدُ এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, أَنَّ مُحَمَّدًا নিশ্চয় মুহাম্মাদ ﷺ عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা وَرَسُوْلُهٗ ও রাসূল। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اجْعَلْنِىْ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন مِنَ التَّوَّابِيْنَ তওবাকারীদের وَاجْعَلْنِىْ আমাকে অন্তর্ভুক্ত করুন مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [তিরমিযী, হা/৫৫; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৮৯৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪।]
اَلتَّيَمُّمُ (তায়াম্মুম) এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা।
আর পারিভাষিক অর্থে পানি না পাওয়া গেলে অযু বা গোসলের পরিবর্তে পবিত্র মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে তায়াম্মুম বলে।
এটা উম্মতে মুহাম্মাদীর বিশেষত্ব। মহান আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি বিশেষ অনুগ্রহস্বরূপ তায়াম্মুমের বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُ - مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ﴾
যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক কিংবা (প্রস্রাব) পায়খানা ও স্ত্রী মিলনের পর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সকল মানুষের উপর আমাদেরকে ৩ টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। সেগুলো হলো :
১. আমাদের নামাযে দাঁড়ানোর কাতার করা হয়েছে ফেরেশতাদের কাতারের মতো।
২. পৃথিবীর সমস্ত জমিন আমাদের জন্য নামাযের স্থান করে দেয়া হয়েছে।
৩. যখন আমরা পানি পাব না তখন মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১১৯৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৬৪; বায়হাকী, হা/১০০১; মিশকাত, হা/৫২৬।]
অপর হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অন্য বর্ণনায় আমার উম্মতকে অন্যান্য সকল উম্মতের উপর চারটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর তা হলো :
১. আমাকে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য প্রেরণ করেছেন।
২. পৃথিবীর সমস্ত জমিন আমার এবং আমার উম্মতের জন্য মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি যেখানেই নামাযের সময় পাবে সে স্থানই তার জন্য মসজিদ ও পবিত্রতার মাধ্যম হবে।
৩. ভয় দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। এক মাসের দূরত্বে থেকেও শত্রুরা আমাকে ভয় করে।
৪. গনীমতের মালকে আমার জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯০; বায়হাকী, হা/৯৯৯।]
যেসব কারণে তায়াম্মুম করা যাবে :
নিম্নোক্ত কারণে তায়াম্মুম করা যাবে :
(১) যদি পবিত্র পানি না পাওয়া যায়।
(২) পানি পেতে গেলে যদি নামায কাযা হওয়ার ভয় থাকে।
(৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে।
(৪) পানি ব্যবহারে যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে। [সূরা মায়েদা- ৬; মিশকাত, হা/৫২৭, ৫৩০।]
আর পারিভাষিক অর্থে পানি না পাওয়া গেলে অযু বা গোসলের পরিবর্তে পবিত্র মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে তায়াম্মুম বলে।
এটা উম্মতে মুহাম্মাদীর বিশেষত্ব। মহান আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি বিশেষ অনুগ্রহস্বরূপ তায়াম্মুমের বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿وَاِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَاَيْدِيْكُمْ مِّنْهُ - مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلٰكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ﴾
যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক কিংবা (প্রস্রাব) পায়খানা ও স্ত্রী মিলনের পর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসাহ করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা- ৬)
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সকল মানুষের উপর আমাদেরকে ৩ টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। সেগুলো হলো :
১. আমাদের নামাযে দাঁড়ানোর কাতার করা হয়েছে ফেরেশতাদের কাতারের মতো।
২. পৃথিবীর সমস্ত জমিন আমাদের জন্য নামাযের স্থান করে দেয়া হয়েছে।
৩. যখন আমরা পানি পাব না তখন মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১১৯৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৬৪; বায়হাকী, হা/১০০১; মিশকাত, হা/৫২৬।]
অপর হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অন্য বর্ণনায় আমার উম্মতকে অন্যান্য সকল উম্মতের উপর চারটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর তা হলো :
১. আমাকে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য প্রেরণ করেছেন।
২. পৃথিবীর সমস্ত জমিন আমার এবং আমার উম্মতের জন্য মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি যেখানেই নামাযের সময় পাবে সে স্থানই তার জন্য মসজিদ ও পবিত্রতার মাধ্যম হবে।
৩. ভয় দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। এক মাসের দূরত্বে থেকেও শত্রুরা আমাকে ভয় করে।
৪. গনীমতের মালকে আমার জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯০; বায়হাকী, হা/৯৯৯।]
যেসব কারণে তায়াম্মুম করা যাবে :
নিম্নোক্ত কারণে তায়াম্মুম করা যাবে :
(১) যদি পবিত্র পানি না পাওয়া যায়।
(২) পানি পেতে গেলে যদি নামায কাযা হওয়ার ভয় থাকে।
(৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে।
(৪) পানি ব্যবহারে যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে। [সূরা মায়েদা- ৬; মিশকাত, হা/৫২৭, ৫৩০।]
১. প্রথমে নিয়ত করতে হবে এবং বিসমিল্লাহ বলতে হবে।
২. দু’হাত মাটিতে বা বালিতে বা দেয়ালে বা ধূলামিশ্রিত পাথরের উপর মারতে হবে; এরপর ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে নিতে হবে।
৩. এরপর উভয় হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল মাসাহ করতে হবে।
৪. এরপর বাম হাত দিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মাসাহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
فَضَرَبَ النَّبِيُّ بِكَفَّيْهِ الْأَرْضَ وَنَفَخَ فِيْهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهٗ وَكَفَّيْهِ
নবী ﷺ দু’হাত মাটিতে মারলেন এবং দু’হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৮; ইবনে মাজাহ, হা/৫৬৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে যে, তোমরা দু’হাত মাটিতে মেরে ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে নিবে, তারপর উভয় হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৫; আবু দাউদ, হা/৩২৪।]
২. দু’হাত মাটিতে বা বালিতে বা দেয়ালে বা ধূলামিশ্রিত পাথরের উপর মারতে হবে; এরপর ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে নিতে হবে।
৩. এরপর উভয় হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল মাসাহ করতে হবে।
৪. এরপর বাম হাত দিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মাসাহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তায়াম্মুম সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
فَضَرَبَ النَّبِيُّ بِكَفَّيْهِ الْأَرْضَ وَنَفَخَ فِيْهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهٗ وَكَفَّيْهِ
নবী ﷺ দু’হাত মাটিতে মারলেন এবং দু’হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৮; ইবনে মাজাহ, হা/৫৬৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে যে, তোমরা দু’হাত মাটিতে মেরে ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে নিবে, তারপর উভয় হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৫; আবু দাউদ, হা/৩২৪।]
১. নামায আরম্ভ করার সময় একান্ত প্রয়োজনীয় কোন কাজ থাকলে তা আগে সেরে নেয়া ভালো, তাহলে নামাযের মধ্যে সেদিকে মন যাবে না। এজন্য শরীয়তের নির্দেশ হলো, কারো যদি বেশি ক্ষুধা লাগে আর খানা তৈরি হয়ে যায় অথবা প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হয়, তবে আগে এসব কাজ সেরে নিতে হবে। তার কারণ হলো, বান্দা একটি অবসর মন নিয়ে নামায শুরু করবে, তাহলেই সে নামাযের হক আদায় করতে পারবে।
২. হাট-বাজারে বা সফরে থাকলে সাথের জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে, যাতে এসব হারানোর চিন্তায় না পড়তে হয়।
৩. উঠা-বসা কষ্টকর হয় এমন টাইট-ফিট পোশাক পরে নামায আদায় করা উচিৎ নয়। নামাযরত অবস্থায় পোশাক যাতে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নতুবা নামাযে মন থাকার পরিবর্তে পোশাক ঠিক করার দিকে মন থাকবে।
৪. মহিলাদেরকে নামায আদায়কারী হওয়ার সাথে সাথে পর্দাশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ বেপর্দা মহিলারা যখন মাথায় কাপড় পরে নামায আদায় করে তখন তারা তাড়াতাড়ি নামায শেষ করে চাদর খুলতে চেষ্টা করে। এজন্য নামাযে মন বসে না।
৫. নামাযের সময় ঘুম এলে যথাসম্ভব তা দূর করে নামায আদায় করতে হবে।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যদি নামাযে ঝিমাতে থাকে, তবে সে যেন শুয়ে পড়ে, যাতে তার নিদ্রার ভাব কেটে যায়। নতুবা যখন কেউ ঝিমানো অবস্থায় নামায আদায় করবে তখন সে অজ্ঞতাবশত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসতে পারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/২৫৭; সহীহ বুখারী, হা/২১২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৭১; আবু দাউদ, হা/১৩১২; তিরমিযী, হা/৩৫৫; ইবনে মাজাহ হা/১৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩৩২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯০৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০৭৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৪১; মিশকাত, হা/১২৪৫।]
আনাস (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ নামাযে ঝিমাতে থাকবে তখন সে যেন ঘুমিয়ে নেয়। যতক্ষণ না সে যা পড়ছে তা বুঝতে পারে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৪২।]
অবশ্য এমন ঘুম বৈধ নয়, যার ফলে নামাযের সময় পার হয়ে যায়।
৬. যথা সম্ভব নিরব জায়গায় নামায আদায় করা উচিত, কোন বড় জায়গায় নামায আদায় করতে হলে সামনে সুতরা/লাঠি বা অন্য কিছু রেখে অথবা খুঁটি/দেয়ালের কাছাকাছি গিয়ে নামায শুরু করা আবশ্যক। এতে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৭. এমন কোন জিনিস সামনে রেখে নামাযে দাঁড়ানো ঠিক নয় যার দিকে মনোযোগ চলে যায়।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) এর একখানা হালকা পাতলা পশমী রঙ্গিন নকশাওয়ালা পর্দার কাপড় ছিল, যা দ্বারা তিনি হুজরার এক কিনারায় পর্দা করেছিলেন। নবী ﷺ তাঁকে বললেন, তোমার এ পর্দা আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও। কেননা তার নকশাগুলো নামাযে বার বার আমার সামনে পড়ে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৫৩; মিশকাত, হা/৭৫৮।]
৮. খুব তাড়াহুড়া না করে ধীর-স্থিরভাবে নামায আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রুকনের হক আদায় করতে হবে। দুনিয়ার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা কতইনা মনোযোগ দিয়ে করি, কত সময় এতে ব্যয় করি আর নামাযের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজকে খুব তাড়াহুড়া করে শেষ করে দেব- এটা কি ঠিক হবে?
৯. নামাযের কারণে কাজে যে বিরতি দেব তাতে ক্ষতি হয়ে গেল মনে করব না বরং মনে করব- আমি যদি নামাযের জন্য সময় ব্যয় করি, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আমার সকল কাজে বরকত দেবেন। সময় আমাকে আল্লাহই দিয়েছেন; সুতরাং যিনি সময় দিয়েছেন, তাঁর কাজে সময় ব্যয় না করলে আর কোথায় করব?
১০. নামাযের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথা স্মরণ করে নামাযে দাঁড়াব। চিন্তা করব যে, এ নামায আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য এক বিরাট নিয়ামত। এর দ্বারা আমি আমার মালিকের নৈকট্য লাভ করব এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলব। সুন্দর করে নামায আদায় করতে পারলে এর সওয়াব আমি নিজেই পাব। আর একে নষ্ট করলে আমাকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
১১. নামাযে দাঁড়িয়ে খেয়াল করব আমি একজন অপরাধী- ক্ষমা নিতে এসেছি। আমি অসহায়- সাহায্য প্রার্থনা করছি। আমি পীড়িত- নিরাপত্তা ও নিরাময়ের ভিখারী, রুযীহীন- রুযীর ভিখারী। এসব ভিক্ষা আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে পাব না। তাই তো আমি প্রত্যেক রাক‘আতে বলে থাকি, আমরা কেবল তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতিহা- ৪)
১২. নামায হবে আমার চক্ষু শীতলকারী, মন প্রশান্তকারী, সকল প্রকার ব্যথা ও বেদনার উপশমকারী।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আমার নিকট নারী ও সুগন্ধীকে পছন্দনীয় করা হয়েছে। আর নামাযকে আমার চক্ষু শীতলতার কারণ বানানো হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩১৫; নাসাঈ, হা/৩৯৩৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৮৭৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৬৭৬; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩২৪৮; মু‘জামুল আওসাত, হা/৫২০৩; মিশকাত, হা/৫২৬১।]
সালিম ইবনে আবু যা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, হে বিলাল! নামাযের ইকামতের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্তি দাও। [আবু দাউদ, হা/৪৯৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩১৩৭।]
১৩. আমি আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্ব করছি। এই দাসত্ব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা আমি জানি না। সুতরাং নিজের ত্রুটি স্বীকার করে মনকে ভীতি দ্বারা পরিপূর্ণ রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন-
﴿وَالَّذِيْنَ يُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّقُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰى رَبِّهِمْ رَاجِعُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ يُسَارِعُوْنَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُوْنَ﴾
যারা তাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে ভয়ের সাথে দান করে তারাই দ্রুত কল্যাণকর কাজ সম্পাদন করে এবং তারা এতে অগ্রগামী হয়। (সূরা মু’মিনূন- ৬০, ৬১)
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, ওরা কি তারা, যারা মদ খায়, চুরি করে এবং ব্যভিচার করে? নবী ﷺ বললেন, না- হে সিদ্দীকের কন্যা! বরং (আল্লাহ এখানে তাদের কথা বলেছেন) যারা রোযা রাখে, নামায আদায় করে এবং দান-খয়রাত করে, কিমুত এসব কবুল হচ্ছে কি না- এ ভয়ে তারা ভীত থাকে। [তিরমিযী, হা/৩১৭৫; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৪৮৬; মিশকাত, হা/৫৩৫০।]
আমাদের আরো ভয় করতে হবে যে, আমরা যতই ইবাদাত করি না কেন, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। জান্নাতের মূল্য তো অবশ্যই নয়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ তার কাজের দ্বারা মুক্তি পাবে না। লোকেরা বলল, আপনিও (আপনার কাজের দ্বারা মুক্তি) পাবেন না? তিনি বললেন, না- আমিও না। তবে আল্লাহ তাঁর রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে রেখেছেন। সুতরাং সঠিক এবং কর্তব্যনিষ্ঠভাবে কাজ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো, সকাল-বিকাল এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর ইবাদাত করো। (এসব কাজে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, মধ্যমপন্থাই তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭২৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৪৩০; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৬১; মিশকাত, হা/২৩৭১।]
১৪. নামাযে যখন দাঁড়াব তখন অবস্থাটা এমন হবে যে, কোন গোলাম তার মালিকের সাথে বেআদবী করে পলায়ন করেছিল। অন্য কোথাও আশ্রয় না পেয়ে আবার তার মালিকের কাছে লজ্জিত অবস্থায় ফিরে আসলো এবং নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে লাগল। একজন মিসকীনের মতো নিজের ভুলের ক্ষমার জন্য আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে মনে ধারণা করতে হবে যে, আমি আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়েছি। আমি আমার আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি, আর এতটুকু সম্ভব না হলে এ কথা অবশ্যই মনের মধ্যে গেঁথে রাখতে হবে যে, আল্লাহ সকল সৃষ্টির প্রতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখছেন। তিনি আমার সবকিছু দেখছেন, আমার নামায আদায় করা দেখছেন। বান্দার কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। আমি নামাযের মধ্যে যা কিছু করব ও পড়ব তিনি তা দেখবেন ও শুনবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহসানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন,
اَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَاَنَّكَ تَرَاهُ فَاِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَاِنَّهٗ يَرَاكَ
তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করো, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে অন্তত এ ধারণা রাখো যে, নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১০২; আবু দাউদ, হা/৪৬৯৭; তিরমিযী, হা/২৬১০; নাসাঈ, হা/৪৯৯০; ইবনে মাজাহ, হা/৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৭২; মিশকাত, হা/২।]
১৫. নামাযে দাঁড়ালে মনে করতে হবে যে, আমি আল্লাহর সাথে একান্ত নিরালায় আলাপ করছি। সুতরাং কারো সাথে কানে-কানে কথা বলার সময় মন ও খেয়াল কি অন্য দিকে থাকতে পারে?
বায়াযী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকদের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আর তখন লোকেরা নামায আদায় করছিল এবং উচ্চ আওয়াজে কিরাআত পাঠ করছিল। তখন তিনি বললেন, অবশ্যই নামায আদায়কারী তার প্রভুর সাথে নির্জনে আলাপ করে। সুতরাং তার লক্ষ্য করা উচিত- সে নির্জনে কী আলাপ করে? আর তোমরা কুরআন তিলাওয়াতের সময় একে অপরের উপর আওয়াজকে উচ্চ করো না। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/২১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০৪৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮০৩৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬০৩; মিশকাত, হা/৮৫৬।]
১৬. নামাযে দাঁড়িয়ে ধরে নেব যে, এটা আমার জীবনের শেষ নামায। এরপর হয়তো আর নামাযের সুযোগ পাব না। যেন আমি আমার প্রিয়তমের নিকট থেকে বিদায়কালে শেষ সাক্ষাৎ করছি, শেষ কথা বলছি ও শেষ আবেদন জানিয়ে নিচ্ছি। এমন মুহূর্তে মন কি অন্য দিকে যেতে পারে?
আবু আইয়ূব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন শেষ নামায আদায়ের ন্যায় নামায পড়বে। এমন কথা বলো না, যা বললে ক্ষমা চাইতে হয়। আর লোকদের হাতে যা আছে তা থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাশ হয়ে যাও। [ইবনে মাজাহ, হা/৪১৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৫৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০১; মিশকাত, হা/৫২২৬।]
১৭. নামাযে দাঁড়িয়ে মনে করব, আমাকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে এবং ফিরে যেতে হবে সেই মহান বাদশার নিকট, যাঁর সামনে আমি দন্ডায়মান হয়েছি। তাঁর কাছে সকল কাজের হিসাবও দিতে হবে।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তুমি নামাযে মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ মানুষ যখন তার নামাযে মৃত্যুকে স্মরণ করে, তখন যথার্থই সে তার নামাযকে সুন্দর করে। আর তুমি ঐ ব্যক্তির ন্যায় নামায আদায় করো, যে ধারণা করে যে, সে আর নামায আদায় করার সুযোগ পাবে না। আর তুমি এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকবে, যা করার পর তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হয়। [জামেউস সগীর, হা/৮৫১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪২১।]
এ সকল উপদেশ মেনে চললে ইনশা-আল্লাহ নামাযে রূহ আসবে এবং তা কায়েম হবে, আর এ নামাযই হবে নামায আদায়কারীকে মন্দ কাজ হতে বিরতকারী।
২. হাট-বাজারে বা সফরে থাকলে সাথের জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে, যাতে এসব হারানোর চিন্তায় না পড়তে হয়।
৩. উঠা-বসা কষ্টকর হয় এমন টাইট-ফিট পোশাক পরে নামায আদায় করা উচিৎ নয়। নামাযরত অবস্থায় পোশাক যাতে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নতুবা নামাযে মন থাকার পরিবর্তে পোশাক ঠিক করার দিকে মন থাকবে।
৪. মহিলাদেরকে নামায আদায়কারী হওয়ার সাথে সাথে পর্দাশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ বেপর্দা মহিলারা যখন মাথায় কাপড় পরে নামায আদায় করে তখন তারা তাড়াতাড়ি নামায শেষ করে চাদর খুলতে চেষ্টা করে। এজন্য নামাযে মন বসে না।
৫. নামাযের সময় ঘুম এলে যথাসম্ভব তা দূর করে নামায আদায় করতে হবে।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যদি নামাযে ঝিমাতে থাকে, তবে সে যেন শুয়ে পড়ে, যাতে তার নিদ্রার ভাব কেটে যায়। নতুবা যখন কেউ ঝিমানো অবস্থায় নামায আদায় করবে তখন সে অজ্ঞতাবশত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসতে পারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/২৫৭; সহীহ বুখারী, হা/২১২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৭১; আবু দাউদ, হা/১৩১২; তিরমিযী, হা/৩৫৫; ইবনে মাজাহ হা/১৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩৩২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৯০৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০৭৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৪১; মিশকাত, হা/১২৪৫।]
আনাস (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ নামাযে ঝিমাতে থাকবে তখন সে যেন ঘুমিয়ে নেয়। যতক্ষণ না সে যা পড়ছে তা বুঝতে পারে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৪২।]
অবশ্য এমন ঘুম বৈধ নয়, যার ফলে নামাযের সময় পার হয়ে যায়।
৬. যথা সম্ভব নিরব জায়গায় নামায আদায় করা উচিত, কোন বড় জায়গায় নামায আদায় করতে হলে সামনে সুতরা/লাঠি বা অন্য কিছু রেখে অথবা খুঁটি/দেয়ালের কাছাকাছি গিয়ে নামায শুরু করা আবশ্যক। এতে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৭. এমন কোন জিনিস সামনে রেখে নামাযে দাঁড়ানো ঠিক নয় যার দিকে মনোযোগ চলে যায়।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) এর একখানা হালকা পাতলা পশমী রঙ্গিন নকশাওয়ালা পর্দার কাপড় ছিল, যা দ্বারা তিনি হুজরার এক কিনারায় পর্দা করেছিলেন। নবী ﷺ তাঁকে বললেন, তোমার এ পর্দা আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও। কেননা তার নকশাগুলো নামাযে বার বার আমার সামনে পড়ে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৫৩; মিশকাত, হা/৭৫৮।]
৮. খুব তাড়াহুড়া না করে ধীর-স্থিরভাবে নামায আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রুকনের হক আদায় করতে হবে। দুনিয়ার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা কতইনা মনোযোগ দিয়ে করি, কত সময় এতে ব্যয় করি আর নামাযের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজকে খুব তাড়াহুড়া করে শেষ করে দেব- এটা কি ঠিক হবে?
৯. নামাযের কারণে কাজে যে বিরতি দেব তাতে ক্ষতি হয়ে গেল মনে করব না বরং মনে করব- আমি যদি নামাযের জন্য সময় ব্যয় করি, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আমার সকল কাজে বরকত দেবেন। সময় আমাকে আল্লাহই দিয়েছেন; সুতরাং যিনি সময় দিয়েছেন, তাঁর কাজে সময় ব্যয় না করলে আর কোথায় করব?
১০. নামাযের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথা স্মরণ করে নামাযে দাঁড়াব। চিন্তা করব যে, এ নামায আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য এক বিরাট নিয়ামত। এর দ্বারা আমি আমার মালিকের নৈকট্য লাভ করব এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলব। সুন্দর করে নামায আদায় করতে পারলে এর সওয়াব আমি নিজেই পাব। আর একে নষ্ট করলে আমাকেই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
১১. নামাযে দাঁড়িয়ে খেয়াল করব আমি একজন অপরাধী- ক্ষমা নিতে এসেছি। আমি অসহায়- সাহায্য প্রার্থনা করছি। আমি পীড়িত- নিরাপত্তা ও নিরাময়ের ভিখারী, রুযীহীন- রুযীর ভিখারী। এসব ভিক্ষা আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে পাব না। তাই তো আমি প্রত্যেক রাক‘আতে বলে থাকি, আমরা কেবল তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। (সূরা ফাতিহা- ৪)
১২. নামায হবে আমার চক্ষু শীতলকারী, মন প্রশান্তকারী, সকল প্রকার ব্যথা ও বেদনার উপশমকারী।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আমার নিকট নারী ও সুগন্ধীকে পছন্দনীয় করা হয়েছে। আর নামাযকে আমার চক্ষু শীতলতার কারণ বানানো হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩১৫; নাসাঈ, হা/৩৯৩৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৮৭৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৬৭৬; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩২৪৮; মু‘জামুল আওসাত, হা/৫২০৩; মিশকাত, হা/৫২৬১।]
সালিম ইবনে আবু যা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, হে বিলাল! নামাযের ইকামতের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্তি দাও। [আবু দাউদ, হা/৪৯৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩১৩৭।]
১৩. আমি আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্ব করছি। এই দাসত্ব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা আমি জানি না। সুতরাং নিজের ত্রুটি স্বীকার করে মনকে ভীতি দ্বারা পরিপূর্ণ রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন-
﴿وَالَّذِيْنَ يُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّقُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰى رَبِّهِمْ رَاجِعُوْنَ ‐ اُولٰٓئِكَ يُسَارِعُوْنَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُوْنَ﴾
যারা তাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাবে এই বিশ্বাসে ভয়ের সাথে দান করে তারাই দ্রুত কল্যাণকর কাজ সম্পাদন করে এবং তারা এতে অগ্রগামী হয়। (সূরা মু’মিনূন- ৬০, ৬১)
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, ওরা কি তারা, যারা মদ খায়, চুরি করে এবং ব্যভিচার করে? নবী ﷺ বললেন, না- হে সিদ্দীকের কন্যা! বরং (আল্লাহ এখানে তাদের কথা বলেছেন) যারা রোযা রাখে, নামায আদায় করে এবং দান-খয়রাত করে, কিমুত এসব কবুল হচ্ছে কি না- এ ভয়ে তারা ভীত থাকে। [তিরমিযী, হা/৩১৭৫; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৪৮৬; মিশকাত, হা/৫৩৫০।]
আমাদের আরো ভয় করতে হবে যে, আমরা যতই ইবাদাত করি না কেন, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। জান্নাতের মূল্য তো অবশ্যই নয়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ তার কাজের দ্বারা মুক্তি পাবে না। লোকেরা বলল, আপনিও (আপনার কাজের দ্বারা মুক্তি) পাবেন না? তিনি বললেন, না- আমিও না। তবে আল্লাহ তাঁর রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে রেখেছেন। সুতরাং সঠিক এবং কর্তব্যনিষ্ঠভাবে কাজ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো, সকাল-বিকাল এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর ইবাদাত করো। (এসব কাজে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, মধ্যমপন্থাই তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হা/৭২৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৪৩০; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৬১; মিশকাত, হা/২৩৭১।]
১৪. নামাযে যখন দাঁড়াব তখন অবস্থাটা এমন হবে যে, কোন গোলাম তার মালিকের সাথে বেআদবী করে পলায়ন করেছিল। অন্য কোথাও আশ্রয় না পেয়ে আবার তার মালিকের কাছে লজ্জিত অবস্থায় ফিরে আসলো এবং নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে লাগল। একজন মিসকীনের মতো নিজের ভুলের ক্ষমার জন্য আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। মনে মনে ধারণা করতে হবে যে, আমি আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়েছি। আমি আমার আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি, আর এতটুকু সম্ভব না হলে এ কথা অবশ্যই মনের মধ্যে গেঁথে রাখতে হবে যে, আল্লাহ সকল সৃষ্টির প্রতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখছেন। তিনি আমার সবকিছু দেখছেন, আমার নামায আদায় করা দেখছেন। বান্দার কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। আমি নামাযের মধ্যে যা কিছু করব ও পড়ব তিনি তা দেখবেন ও শুনবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহসানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন,
اَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَاَنَّكَ تَرَاهُ فَاِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَاِنَّهٗ يَرَاكَ
তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করো, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে অন্তত এ ধারণা রাখো যে, নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১০২; আবু দাউদ, হা/৪৬৯৭; তিরমিযী, হা/২৬১০; নাসাঈ, হা/৪৯৯০; ইবনে মাজাহ, হা/৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৭২; মিশকাত, হা/২।]
১৫. নামাযে দাঁড়ালে মনে করতে হবে যে, আমি আল্লাহর সাথে একান্ত নিরালায় আলাপ করছি। সুতরাং কারো সাথে কানে-কানে কথা বলার সময় মন ও খেয়াল কি অন্য দিকে থাকতে পারে?
বায়াযী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকদের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আর তখন লোকেরা নামায আদায় করছিল এবং উচ্চ আওয়াজে কিরাআত পাঠ করছিল। তখন তিনি বললেন, অবশ্যই নামায আদায়কারী তার প্রভুর সাথে নির্জনে আলাপ করে। সুতরাং তার লক্ষ্য করা উচিত- সে নির্জনে কী আলাপ করে? আর তোমরা কুরআন তিলাওয়াতের সময় একে অপরের উপর আওয়াজকে উচ্চ করো না। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/২১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০৪৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮০৩৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬০৩; মিশকাত, হা/৮৫৬।]
১৬. নামাযে দাঁড়িয়ে ধরে নেব যে, এটা আমার জীবনের শেষ নামায। এরপর হয়তো আর নামাযের সুযোগ পাব না। যেন আমি আমার প্রিয়তমের নিকট থেকে বিদায়কালে শেষ সাক্ষাৎ করছি, শেষ কথা বলছি ও শেষ আবেদন জানিয়ে নিচ্ছি। এমন মুহূর্তে মন কি অন্য দিকে যেতে পারে?
আবু আইয়ূব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে তখন শেষ নামায আদায়ের ন্যায় নামায পড়বে। এমন কথা বলো না, যা বললে ক্ষমা চাইতে হয়। আর লোকদের হাতে যা আছে তা থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাশ হয়ে যাও। [ইবনে মাজাহ, হা/৪১৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৫৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪০১; মিশকাত, হা/৫২২৬।]
১৭. নামাযে দাঁড়িয়ে মনে করব, আমাকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে এবং ফিরে যেতে হবে সেই মহান বাদশার নিকট, যাঁর সামনে আমি দন্ডায়মান হয়েছি। তাঁর কাছে সকল কাজের হিসাবও দিতে হবে।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তুমি নামাযে মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ মানুষ যখন তার নামাযে মৃত্যুকে স্মরণ করে, তখন যথার্থই সে তার নামাযকে সুন্দর করে। আর তুমি ঐ ব্যক্তির ন্যায় নামায আদায় করো, যে ধারণা করে যে, সে আর নামায আদায় করার সুযোগ পাবে না। আর তুমি এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকবে, যা করার পর তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হয়। [জামেউস সগীর, হা/৮৫১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪২১।]
এ সকল উপদেশ মেনে চললে ইনশা-আল্লাহ নামাযে রূহ আসবে এবং তা কায়েম হবে, আর এ নামাযই হবে নামায আদায়কারীকে মন্দ কাজ হতে বিরতকারী।
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ এর সাহাবীদের ইবাদাতের আগ্রহ বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, একদা আমরা নবী ﷺ এর সাথে এক যুদ্ধে বের হলাম। অভিযানের এক পর্যায়ে মুসলিমদের এক ব্যক্তি এক মুশরিক মহিলাকে হত্যা করে ফেললে তার স্বামী প্রতিজ্ঞা করল যে, মুহাম্মাদের সঙ্গীদের মধ্যে কারো রক্তপাত না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হবে না। এ সংকল্প নিয়ে সে সাহাবীদের খুঁজে বের হলো। এদিকে নবী ﷺ এক মঞ্জিলে বিশ্রাম নিতে অবতরণ করলেন এবং বললেন, কে আমাদের (নিরাপত্তার) জন্য পাহারা দেবে? তখন মুহাজিরদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি এবং আনসারদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি পাহারা দিতে প্রস্তুত হলেন। তাদেরকে নবী ﷺ বললেন, তোমরা এই উপত্যাকার মুখে অবস্থান করো। অতঃপর তারা দু’জন যখন উপত্যকার মুখে পৌঁছলেন, তখন মুহাজির (বিশ্রামের জন্য) শয়ন করলেন এবং আনসার উঠে নামায পড়তে শুরু করলেন। এমতাবস্থায় উক্ত মুশরিক লোকটি কাছাকাছি এসে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করল, তিনি সালাতেই মশগুল থাকলেন। এভাবে পরপর তিনটি তীর খেয়েও তিনি নামায সম্পন্ন করলেন। অতঃপর যখন তার সঙ্গী মুহাজির জেগে উঠলেন তখন মুশরিকটি পালিয়ে গেল। এরপর আনসার সাহাবীর রক্তাক্ত দেহের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, সুবহানাল্লাহ! প্রথম বার যখন তীর মারল তখনই আমাকে জাগিয়ে দাওনি কেন? তিনি উত্তরে বললেন,
كُنْتُ فِي سُورَةٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ قَدِ افْتَتَحْتُهَا اُصَلِّي بِهَا ، فَكَرِهْتُ اَنْ اَقْطَعَهَا
আমি একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা শেষ না করে ছাড়তে পছন্দ করলাম না! [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৯৬; দার কুতনী, হা/৭৬৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৮১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৫৭।]
বিখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সীরীন (রহ.) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন আল্লাহর ভয়ে তাঁর চেহারা শুকিয়ে যেত। [কিতাবুস সালাত অমায়্যালমাযু ফীহা ২০ পৃঃ।]
ইবনে যুবায়ের (রহ.) যখন সিজদা দিতেন তখন চড়ুই পাখিরা তার পিঠে নেমে আসতো এবং তারা মনে করতে যে, এটা কোন দেয়ালের খুঁটি। [সিফাতুস সাফআহ ২/৩২২।]
উক্ত বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে যে, সাধ্যমতো একনিষ্ঠভাবে নামায আদায় করতে হবে। সেজন্য নামাযের নিয়মকানুন ভালো করে শিখতে হবে এবং সূরা ও দু‘আগুলোর অর্থও জানার চেষ্টা করতে হবে।
বর্তমান যুগের অধিকাংশ নামায আদায়কারীর নামায সঠিক হয় না। যার কারণে এর ফলাফলও দেখতে পাওয়া যায় না। মুরগীর খাবার খাওয়ার মতো নামায আদায় করলে নামাযের সুফল পাওয়া যাবে না। তাই ধীরে-সুস্থে, ভীত ও বিনয়চিত্তে খুশু-খুযূ সহকারে নামায আদায় করতে হবে।
كُنْتُ فِي سُورَةٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ قَدِ افْتَتَحْتُهَا اُصَلِّي بِهَا ، فَكَرِهْتُ اَنْ اَقْطَعَهَا
আমি একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা শেষ না করে ছাড়তে পছন্দ করলাম না! [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৯৬; দার কুতনী, হা/৭৬৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৮১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৫৭।]
বিখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সীরীন (রহ.) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন আল্লাহর ভয়ে তাঁর চেহারা শুকিয়ে যেত। [কিতাবুস সালাত অমায়্যালমাযু ফীহা ২০ পৃঃ।]
ইবনে যুবায়ের (রহ.) যখন সিজদা দিতেন তখন চড়ুই পাখিরা তার পিঠে নেমে আসতো এবং তারা মনে করতে যে, এটা কোন দেয়ালের খুঁটি। [সিফাতুস সাফআহ ২/৩২২।]
উক্ত বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে যে, সাধ্যমতো একনিষ্ঠভাবে নামায আদায় করতে হবে। সেজন্য নামাযের নিয়মকানুন ভালো করে শিখতে হবে এবং সূরা ও দু‘আগুলোর অর্থও জানার চেষ্টা করতে হবে।
বর্তমান যুগের অধিকাংশ নামায আদায়কারীর নামায সঠিক হয় না। যার কারণে এর ফলাফলও দেখতে পাওয়া যায় না। মুরগীর খাবার খাওয়ার মতো নামায আদায় করলে নামাযের সুফল পাওয়া যাবে না। তাই ধীরে-সুস্থে, ভীত ও বিনয়চিত্তে খুশু-খুযূ সহকারে নামায আদায় করতে হবে।
নামাযে মনোযোগ তৈরি করার জন্য নামাযে যা পড়া হয় তার অর্থ জানা একান্ত প্রয়োজন। অর্থ জানা থাকলে যখন যা পড়া হবে তখন তার অর্থের দিকে মনোযোগ দেয়া সহজ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তোমরা যা বলছ তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা-৪৩)
কোন বাক্যের অর্থ বুঝার জন্য সেই ভাষা জানা আবশ্যক। আমরা নামাযের দু‘আ কালাম আরবি ভাষায় পাঠ করি কিন্তু অধিকাংশই আরবি ভাষা জানি না; অথচ নবী ﷺ এর ভাষা আরবি, কুরআন-হাদীসের ভাষা আরবি এবং জান্নাতীদের ভাষাও হবে আরবি। তাই আমাদের আরবি ভাষা শিক্ষা করা উচিত। মনে রাখার জন্য শাব্দিক অর্থ জানা প্রয়োজন। শাব্দিক অর্থ জানা থাকলে পড়ার সময় মজা পাওয়া যায়। সেজন্য এ বইয়ে নামাযের প্রয়োজনীয় সূরা ও দু‘আসমূহের শাব্দিক অনুবাদও দেয়া হয়েছে।
নামায সম্পন্ন করার পর যদি জানতে পারে যে, কিবলা অন্য দিকে ছিল তবুও নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়বার পড়তে হবে না। [তিরমিযী, হা/৩৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১০২০; দার কুতনী, হা/১০৬৫।]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَاَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তোমরা যা বলছ তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা-৪৩)
কোন বাক্যের অর্থ বুঝার জন্য সেই ভাষা জানা আবশ্যক। আমরা নামাযের দু‘আ কালাম আরবি ভাষায় পাঠ করি কিন্তু অধিকাংশই আরবি ভাষা জানি না; অথচ নবী ﷺ এর ভাষা আরবি, কুরআন-হাদীসের ভাষা আরবি এবং জান্নাতীদের ভাষাও হবে আরবি। তাই আমাদের আরবি ভাষা শিক্ষা করা উচিত। মনে রাখার জন্য শাব্দিক অর্থ জানা প্রয়োজন। শাব্দিক অর্থ জানা থাকলে পড়ার সময় মজা পাওয়া যায়। সেজন্য এ বইয়ে নামাযের প্রয়োজনীয় সূরা ও দু‘আসমূহের শাব্দিক অনুবাদও দেয়া হয়েছে।
নামায সম্পন্ন করার পর যদি জানতে পারে যে, কিবলা অন্য দিকে ছিল তবুও নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয়বার পড়তে হবে না। [তিরমিযী, হা/৩৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১০২০; দার কুতনী, হা/১০৬৫।]
তাকবীরে তাহরীমা নামাযের ফরয বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। সিজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি রেখে ( اَللهُ اَكْبَرُ ) ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে তাকবীরে তাহরীমা বলতে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নামাযের চাবিকাঠি হলো পবিত্রতা (গোসল-অযু), (নামাযে প্রবেশ করে পার্থিব কর্ম ও কথাবার্তা ইত্যাদি) হারাম করার শব্দ হলো তাকবীর। আর (নামায শেষ করে সেসব) হালাল করার শব্দ হলো সালাম। [আবু দাউদ, হা/৬১; তিরমিযী, হা/৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকবীর বলার পর কিরাআত শুরু করার আগে কিছু সময় নিরব থাকতেন। এ সময় তিনি সানা পড়তেন। তিনি একেক সময় একেকটি সানা পাঠ করতেন। নিম্নে সেসব সানাগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি তাকবীর বলার পর কিরাআত আরম্ভ করার আগে কিছু সময় চুপ থাকেন, এ সময় আপনি কী পড়েন? তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এ দু‘আ পড়ি :
اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ‐ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ ‐ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-’ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইয়ুনাক্বক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াছছালজি ওয়াল বারাদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! بَاعِدْ দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও بَيْنِيْ আমার (মধ্যে), وَبَيْنَ خَطَايَايَ এবং আমার গোনাহের মধ্যে, كَمَا بَاعَدْتَّ যেভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো, بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! نَقِّنِيْ আমাকে পবিত্র করে নাও, مِنَ الْخَطَايَا গোনাহসমূহ থেকে, كَمَا يُنَقَّى যেভাবে পবিত্র করা হয়, اَلثَّوْبُ الْاَبْيَضُ সাদা কাপড়, مِنَ الدَّنَسِ ময়লা থেকে। اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ হে আল্লাহ! তুমি ধুয়ে দাও, خَطَايَايَ আমার গোনাহসমূহ, بِالْمَاءِ পানি দিয়ে, وَالثَّلْجِ বরফ দিয়ে, وَالْبَرَدِ ও শিশির দিয়ে।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার গোনাহগুলোর মধ্যে এমন ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেরূপ ব্যবধান সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করে দাও যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৪, সহীহ মুসলিম, হা/ ১৩৮২।]
২. আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করলে এ দু‘আ পড়তেন :
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা, ওয়াতা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলা-হা গাইরুক।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ وَبِحَمْدِكَ আপনার প্রশংসার সাথে। وَتَبَارَكَ বড়ই বরকতময়, اِسْمُكَ আপনার নাম। وَتَعَالٰى (সকলের) উপর, جَدُّكَ আপনার মর্যাদা, وَلَا اِلٰهَ আর কোন মাবুদ নেই, غَيْرُكَ আপনি ছাড়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার মর্যাদা সকলের উপর। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। [তিরমিযী, হা/২৪২; আবু দাঊদ, হা/৭৭৫।]
৩. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন।
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ - قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، - لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ، وَاهْدِنِىْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لِاَحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ، اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন। লা-শারীকালাহূ ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযানবী। ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ। ইন্নাহূ লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক। লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়্যিআহা লা-ইয়াসরিফু ‘আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহূ ফী ইয়াদাইক। ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইক, আনা বিকা ওয়া ইলাইকা তাবারাকতা ওয়া তা‘আলাইত। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
শাব্দিক অর্থ : وَجَّهْتُ আমি মুখ ফিরালাম وَجْهِيَ আমার মুখ لِلَّذِيْ ঐ সত্তার দিকে, فَطَرَ যিনি সৃষ্টি করেছেন السَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضَ ও জমিন حَنِيْفًا একনিষ্ঠভাবে; وَّمَا اَنَا আর আমি অন্তর্ভুক্ত নই مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের। قُلْ বলো, اِنَّ صَلَاتِيْ নিশ্চয় আমার নামায, وَنُسُكِيْ আমার কুরবানী, وَمَحْيَايَ আমার জীবন, وَمَمَاتِيْ আমার মরণ لِلّٰهِ ঐ আল্লাহর জন্য رَبِّ الْعَالَمِيْنَ যিনি সারাবিশ্বের পালনকর্তা। لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ আর আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ الْمَلِكُ তুমিই বাদশাহ, لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। اَنْتَ رَبِّىْ তুমি আমার রব وَاَنَا عَبْدُكَ এবং আমি তোমার দাস। ظَلَمْتُ আমি অনেক অন্যায় করেছি نَفْسِىْ নিজের উপর وَاعْتَرَفْتُ এবং আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি بِذَنْبِىْ আমার পাপের। فَاغْفِرْ لِىْ সুতরাং তুমি আমার জন্য ক্ষমা করে দাও ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا আমার সকল গোনাহ। اِنَّهٗ প্রকৃতপক্ষে لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاهْدِنِىْ আর তুমি আমাকে দান করো لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ সবচেয়ে উত্তম চরিত্র। لَا يَهْدِىْ কেননা আর কেউ দান করতে পারে না لِاَحْسَنِهَا উত্তম চরিত্র اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاصْرِفْ আর তুমি বাঁচিয়ে রাখো عَنِّىْ আমার হতে سَيِّئَهَا খারাপ চরিত্রকে। لَا يَصْرِفُ কেননা কেউ বাঁচিয়ে রাখতে পারে না سَيِّئَهَا মন্দ চরিত্র থেকে اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ (হে আল্লাহ!) আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাজির। وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ সকল কল্যাণ فِىْ يَدَيْكَ তোমারই হাতে। وَالشَّرُّ অমঙ্গল لَيْسَ اِلَيْكَ তোমার দিক থেকে নয়। اَنَا بِكَ আমি তোমার সাহায্যে وَاِلَيْكَ এবং তোমার দিকেই (মনোনিবেশ) করি। تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ (হে আল্লাহ!) তুমি বরকতময় এবং মহান। اَسْتَغْفِرُكَ আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি।
অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আর তুমি আমাকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দান করো। কেননা উত্তম চরিত্র তুমি ছাড়া আর কেউ দান করতে পারে না। আর তুমি আমাকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখো। কেননা তুমি ছাড়া কেউ মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাজির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। অমঙ্গল তোমার দিক থেকে নয়। আমি তোমার সাহায্যে এবং তোমার দিকেই মনোনিবেশ করি। হে আল্লাহ! তুমি বরকতময় এবং মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭১; মিশকাত, হা/৮১৩।]
এবার মনোযোগ দিয়ে একটু লক্ষ্য করি, আমরা এখানে কী পড়লাম! আমি যখন বললাম, وَجَّهْتُ وَجْهِيَ ‘‘আমি আল্লাহমুখী হলাম’’ তখন যদি আমার অন্তর আল্লাহমুখী না থাকে, তবে আমার এ কথাটি সম্পূর্ণ সত্য হলো না। আর নামাযের শুরুতে এ রকম হলে পরবর্তী অবস্থা কেমন হবে?
আমি যখন বললাম, وَمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‘‘আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’’ তখন আমাকে গোপন শির্ক থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। আর তা হলো আমার নামায লোক দেখানোর জন্য হবে না, কারো প্রশংসা পাওয়ার জন্য হবে না। কারণ এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত করে মানুষের প্রশংসা কামনা করত। তার ব্যাপারে কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় :
﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾
যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহ্ফ- ১১০)
আমি যখন বলব وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‘‘আমি মুসলিমদের একজন’’ তখন নবী ﷺ এর এ হাদীসটি আমার উপর প্রযোজ্য হচ্ছে কি না তা চিন্তা করতে হবে, তিনি বলেছেন, ‘‘মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার হাত ও জিহবা থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’’ [সহীহ বুখারী, হা/১০, ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৭১।]
এখন যদি আমি হাত অথবা মুখ দ্বারা কোন মুসলিমকে কষ্ট দেই অথবা তার কোন ক্ষতি করি তবে ‘আমি মুসলিম’ এ কথাটি সত্য হবে না ।
আমরা আরো বলি وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘‘আমার জীবন এবং আমার মরণ সবই আল্লাহর জন্য।’’ একটু লক্ষ্য করুন! আমরা কী কথা বলেছি। ‘আমার সারাটি জীবন আল্লাহর জন্য’ এ কথাটি ঐ ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হবে, যে মনে করবে যে, আমার হাত, পা, চক্ষু ও কান এগুলো আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমানত রেখেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন মুহূর্তে এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন। তিনি আমাকে একটি জীবন দিয়েছেন; যদি ইচ্ছা করেন তবে যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু দিয়ে আমার দুনিয়ার জীবনটা শেষ করে দিতে পারেন। অতএব তিনি যখন আমাকে সুস্থ রেখেছেন, সময় দিয়েছেন তখন আমার এ জীবনটি তাঁর মর্জি অনুযায়ী ব্যয় করা উচিত। আমি গোটা জীবনে যা কিছু করব সবকিছুর উদ্দেশ্য হবে একটাই, আর তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখন আমার গোটা জীবনটা আল্লাহর জন্য কীভাবে করা যায় তা নিয়ে একটু ভাবতে হবে।
১। আমি জ্ঞানার্জন করব এ উদ্দেশ্যে নয় যে, আমি বুযুর্গ হব। মানুষ আমাকে আগে সালাম দেবে, হাদিয়া উপঢৌকন পাঠাবে; বরং এর উদ্দেশ্য হবে আমি জ্ঞানার্জন করে আমার দক্ষতা বৃদ্ধি করব, ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিজে আমল করব এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেব। এতে আমার শিক্ষাজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
২। আমার রুযী-উপার্জন কেবল নিজের জন্য হবে না। এতটুকু তো পশু-পাখিরাও করে থাকে। আমি উপার্জন করব নিজের এবং নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এবং দরিদ্র মানুষের সাহায্য করে, দান-সাদাকা করে সওয়াব অর্জনের জন্য। আমি চাকুরী করব কেবল দায়িত্ব আদায় ও বেতন উদ্ধার করার জন্য নয়। উদ্দেশ্য থাকবে আমার এ কাজ দ্বারা জনগণ উপকৃত হবে। জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে এ উদ্দেশ্যে যে, এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করবে, তারা দেশের জন্য বোঝা না হয়ে সম্পদ হয়ে গড়ে উঠবে। এতে আমার ব্যবসায় ও চাকুরী এক কথায় গোটা কর্মজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
৩। বিয়ে-শাদি করব কেবল মনের চাহিদা পূর্ণ করার জন্য নয়। এ চাহিদা পশুরাও পূর্ণ করে; কিন্তু মানুষ অন্যান্য জীবের মতো নয়; তার রয়েছে বিশেষ সম্মান, বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিয়ে করতে হবে এজন্য যে, এতে আমার চরিত্র ও সতিত্বের হেফাযত হবে। পারিবারিক সুখ-শান্তি অর্জিত হবে। এতে আমার বৈবাহিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
৪। আমার ভালোবাসা কেবল আমার পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র এদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমার ভালোবাসা হবে সকলের জন্য ব্যাপক। আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করব- আমার অপর মুসলিম ভাই-বোনদের জন্যও তা পছন্দ করব। আর আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করি না অন্যদের জন্যও তা পছন্দ করব না। আমি অন্যের দুঃখে দুঃখী হব, বিপদের সময় তার পাশে দাঁড়াব। এজন্যই তো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾
তোমরাই উত্তম জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজ হতে বাধা প্রদান করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
৫। রাজনীতি করব শুধু নেতা হওয়ার জন্য নয় এবং দলের কাছ থেকে নিজের সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য নয়। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ যে পদ্ধতিতে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে নিয়মে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা করতে হবে। এতে আমার রাজনৈতিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
এভাবে নামায মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন সৃষ্টি করে। শুয়াইব (আঃ) তার জাতিকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে তাঁর গোলামী করার দাওয়াত দিলেন, তখন জাতির লোকেরা বলল,
﴿يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِيْۤ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ﴾
হে শুয়াইব! তোমার নামায কি তোমাকে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা যার ইবাদাত করত আমরা তা ছেড়ে দেব? আর আমাদের ধন-সম্পদ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করতে পারব না? (সূরা হূদ- ৮৭)
এ থেকে বুঝা গেল যে, নামায মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে।
এখন নামাযের শুরুতেই যদি মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আকীদা-বিশ্বাসের এ বিরাট প্রশিক্ষণ হয়, তাহলে গোটা নামায তাকে কেমন মানুষ তৈরি করে ছাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি তাকবীর বলার পর কিরাআত আরম্ভ করার আগে কিছু সময় চুপ থাকেন, এ সময় আপনি কী পড়েন? তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এ দু‘আ পড়ি :
اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ‐ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ ‐ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-’ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইয়ুনাক্বক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াছছালজি ওয়াল বারাদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! بَاعِدْ দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও بَيْنِيْ আমার (মধ্যে), وَبَيْنَ خَطَايَايَ এবং আমার গোনাহের মধ্যে, كَمَا بَاعَدْتَّ যেভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো, بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! نَقِّنِيْ আমাকে পবিত্র করে নাও, مِنَ الْخَطَايَا গোনাহসমূহ থেকে, كَمَا يُنَقَّى যেভাবে পবিত্র করা হয়, اَلثَّوْبُ الْاَبْيَضُ সাদা কাপড়, مِنَ الدَّنَسِ ময়লা থেকে। اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ হে আল্লাহ! তুমি ধুয়ে দাও, خَطَايَايَ আমার গোনাহসমূহ, بِالْمَاءِ পানি দিয়ে, وَالثَّلْجِ বরফ দিয়ে, وَالْبَرَدِ ও শিশির দিয়ে।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার গোনাহগুলোর মধ্যে এমন ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেরূপ ব্যবধান সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করে দাও যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৪, সহীহ মুসলিম, হা/ ১৩৮২।]
২. আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করলে এ দু‘আ পড়তেন :
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা, ওয়াতা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলা-হা গাইরুক।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ وَبِحَمْدِكَ আপনার প্রশংসার সাথে। وَتَبَارَكَ বড়ই বরকতময়, اِسْمُكَ আপনার নাম। وَتَعَالٰى (সকলের) উপর, جَدُّكَ আপনার মর্যাদা, وَلَا اِلٰهَ আর কোন মাবুদ নেই, غَيْرُكَ আপনি ছাড়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার মর্যাদা সকলের উপর। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। [তিরমিযী, হা/২৪২; আবু দাঊদ, হা/৭৭৫।]
৩. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন।
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ - قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، - لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ، وَاهْدِنِىْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لِاَحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ، اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন। লা-শারীকালাহূ ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযানবী। ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ। ইন্নাহূ লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক। লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়্যিআহা লা-ইয়াসরিফু ‘আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহূ ফী ইয়াদাইক। ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইক, আনা বিকা ওয়া ইলাইকা তাবারাকতা ওয়া তা‘আলাইত। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
শাব্দিক অর্থ : وَجَّهْتُ আমি মুখ ফিরালাম وَجْهِيَ আমার মুখ لِلَّذِيْ ঐ সত্তার দিকে, فَطَرَ যিনি সৃষ্টি করেছেন السَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضَ ও জমিন حَنِيْفًا একনিষ্ঠভাবে; وَّمَا اَنَا আর আমি অন্তর্ভুক্ত নই مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের। قُلْ বলো, اِنَّ صَلَاتِيْ নিশ্চয় আমার নামায, وَنُسُكِيْ আমার কুরবানী, وَمَحْيَايَ আমার জীবন, وَمَمَاتِيْ আমার মরণ لِلّٰهِ ঐ আল্লাহর জন্য رَبِّ الْعَالَمِيْنَ যিনি সারাবিশ্বের পালনকর্তা। لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ আর আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ الْمَلِكُ তুমিই বাদশাহ, لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। اَنْتَ رَبِّىْ তুমি আমার রব وَاَنَا عَبْدُكَ এবং আমি তোমার দাস। ظَلَمْتُ আমি অনেক অন্যায় করেছি نَفْسِىْ নিজের উপর وَاعْتَرَفْتُ এবং আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি بِذَنْبِىْ আমার পাপের। فَاغْفِرْ لِىْ সুতরাং তুমি আমার জন্য ক্ষমা করে দাও ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا আমার সকল গোনাহ। اِنَّهٗ প্রকৃতপক্ষে لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاهْدِنِىْ আর তুমি আমাকে দান করো لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ সবচেয়ে উত্তম চরিত্র। لَا يَهْدِىْ কেননা আর কেউ দান করতে পারে না لِاَحْسَنِهَا উত্তম চরিত্র اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاصْرِفْ আর তুমি বাঁচিয়ে রাখো عَنِّىْ আমার হতে سَيِّئَهَا খারাপ চরিত্রকে। لَا يَصْرِفُ কেননা কেউ বাঁচিয়ে রাখতে পারে না سَيِّئَهَا মন্দ চরিত্র থেকে اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ (হে আল্লাহ!) আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাজির। وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ সকল কল্যাণ فِىْ يَدَيْكَ তোমারই হাতে। وَالشَّرُّ অমঙ্গল لَيْسَ اِلَيْكَ তোমার দিক থেকে নয়। اَنَا بِكَ আমি তোমার সাহায্যে وَاِلَيْكَ এবং তোমার দিকেই (মনোনিবেশ) করি। تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ (হে আল্লাহ!) তুমি বরকতময় এবং মহান। اَسْتَغْفِرُكَ আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি।
অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আর তুমি আমাকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দান করো। কেননা উত্তম চরিত্র তুমি ছাড়া আর কেউ দান করতে পারে না। আর তুমি আমাকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখো। কেননা তুমি ছাড়া কেউ মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাজির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। অমঙ্গল তোমার দিক থেকে নয়। আমি তোমার সাহায্যে এবং তোমার দিকেই মনোনিবেশ করি। হে আল্লাহ! তুমি বরকতময় এবং মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭১; মিশকাত, হা/৮১৩।]
এবার মনোযোগ দিয়ে একটু লক্ষ্য করি, আমরা এখানে কী পড়লাম! আমি যখন বললাম, وَجَّهْتُ وَجْهِيَ ‘‘আমি আল্লাহমুখী হলাম’’ তখন যদি আমার অন্তর আল্লাহমুখী না থাকে, তবে আমার এ কথাটি সম্পূর্ণ সত্য হলো না। আর নামাযের শুরুতে এ রকম হলে পরবর্তী অবস্থা কেমন হবে?
আমি যখন বললাম, وَمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‘‘আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’’ তখন আমাকে গোপন শির্ক থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। আর তা হলো আমার নামায লোক দেখানোর জন্য হবে না, কারো প্রশংসা পাওয়ার জন্য হবে না। কারণ এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত করে মানুষের প্রশংসা কামনা করত। তার ব্যাপারে কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় :
﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾
যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহ্ফ- ১১০)
আমি যখন বলব وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‘‘আমি মুসলিমদের একজন’’ তখন নবী ﷺ এর এ হাদীসটি আমার উপর প্রযোজ্য হচ্ছে কি না তা চিন্তা করতে হবে, তিনি বলেছেন, ‘‘মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার হাত ও জিহবা থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’’ [সহীহ বুখারী, হা/১০, ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৭১।]
এখন যদি আমি হাত অথবা মুখ দ্বারা কোন মুসলিমকে কষ্ট দেই অথবা তার কোন ক্ষতি করি তবে ‘আমি মুসলিম’ এ কথাটি সত্য হবে না ।
আমরা আরো বলি وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘‘আমার জীবন এবং আমার মরণ সবই আল্লাহর জন্য।’’ একটু লক্ষ্য করুন! আমরা কী কথা বলেছি। ‘আমার সারাটি জীবন আল্লাহর জন্য’ এ কথাটি ঐ ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হবে, যে মনে করবে যে, আমার হাত, পা, চক্ষু ও কান এগুলো আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমানত রেখেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন মুহূর্তে এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন। তিনি আমাকে একটি জীবন দিয়েছেন; যদি ইচ্ছা করেন তবে যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু দিয়ে আমার দুনিয়ার জীবনটা শেষ করে দিতে পারেন। অতএব তিনি যখন আমাকে সুস্থ রেখেছেন, সময় দিয়েছেন তখন আমার এ জীবনটি তাঁর মর্জি অনুযায়ী ব্যয় করা উচিত। আমি গোটা জীবনে যা কিছু করব সবকিছুর উদ্দেশ্য হবে একটাই, আর তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখন আমার গোটা জীবনটা আল্লাহর জন্য কীভাবে করা যায় তা নিয়ে একটু ভাবতে হবে।
১। আমি জ্ঞানার্জন করব এ উদ্দেশ্যে নয় যে, আমি বুযুর্গ হব। মানুষ আমাকে আগে সালাম দেবে, হাদিয়া উপঢৌকন পাঠাবে; বরং এর উদ্দেশ্য হবে আমি জ্ঞানার্জন করে আমার দক্ষতা বৃদ্ধি করব, ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিজে আমল করব এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেব। এতে আমার শিক্ষাজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
২। আমার রুযী-উপার্জন কেবল নিজের জন্য হবে না। এতটুকু তো পশু-পাখিরাও করে থাকে। আমি উপার্জন করব নিজের এবং নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এবং দরিদ্র মানুষের সাহায্য করে, দান-সাদাকা করে সওয়াব অর্জনের জন্য। আমি চাকুরী করব কেবল দায়িত্ব আদায় ও বেতন উদ্ধার করার জন্য নয়। উদ্দেশ্য থাকবে আমার এ কাজ দ্বারা জনগণ উপকৃত হবে। জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে এ উদ্দেশ্যে যে, এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করবে, তারা দেশের জন্য বোঝা না হয়ে সম্পদ হয়ে গড়ে উঠবে। এতে আমার ব্যবসায় ও চাকুরী এক কথায় গোটা কর্মজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
৩। বিয়ে-শাদি করব কেবল মনের চাহিদা পূর্ণ করার জন্য নয়। এ চাহিদা পশুরাও পূর্ণ করে; কিন্তু মানুষ অন্যান্য জীবের মতো নয়; তার রয়েছে বিশেষ সম্মান, বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিয়ে করতে হবে এজন্য যে, এতে আমার চরিত্র ও সতিত্বের হেফাযত হবে। পারিবারিক সুখ-শান্তি অর্জিত হবে। এতে আমার বৈবাহিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
৪। আমার ভালোবাসা কেবল আমার পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র এদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমার ভালোবাসা হবে সকলের জন্য ব্যাপক। আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করব- আমার অপর মুসলিম ভাই-বোনদের জন্যও তা পছন্দ করব। আর আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করি না অন্যদের জন্যও তা পছন্দ করব না। আমি অন্যের দুঃখে দুঃখী হব, বিপদের সময় তার পাশে দাঁড়াব। এজন্যই তো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾
তোমরাই উত্তম জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজ হতে বাধা প্রদান করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)
৫। রাজনীতি করব শুধু নেতা হওয়ার জন্য নয় এবং দলের কাছ থেকে নিজের সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য নয়। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ যে পদ্ধতিতে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে নিয়মে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা করতে হবে। এতে আমার রাজনৈতিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।
এভাবে নামায মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন সৃষ্টি করে। শুয়াইব (আঃ) তার জাতিকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে তাঁর গোলামী করার দাওয়াত দিলেন, তখন জাতির লোকেরা বলল,
﴿يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِيْۤ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ﴾
হে শুয়াইব! তোমার নামায কি তোমাকে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা যার ইবাদাত করত আমরা তা ছেড়ে দেব? আর আমাদের ধন-সম্পদ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করতে পারব না? (সূরা হূদ- ৮৭)
এ থেকে বুঝা গেল যে, নামায মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে।
এখন নামাযের শুরুতেই যদি মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আকীদা-বিশ্বাসের এ বিরাট প্রশিক্ষণ হয়, তাহলে গোটা নামায তাকে কেমন মানুষ তৈরি করে ছাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
নামায মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। বিশেষ করে বান্দা সিজদায় গেলে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর নিকটবর্তী হয়। শয়তান এটা সহ্য করতে পারে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে তাকে সম্মানিত করার জন্য ফেরেশতা ও জিনদেরকে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শয়তান এতে রাজী হয়নি। এই একটি সিজদার হুকুম অস্বীকার করার কারণে আল্লাহ তাকে তাড়িয়ে দেন এবং চির জাহান্নামী করে দেন। এখন মানুষকে নামাযে দেখলে শয়তানের হিংসা বেড়ে যায়। বান্দা আল্লাহকে সিজদা করুক- এটা সে চায় না। তাছাড়া বান্দার নামায নষ্ট করার জন্য সে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়ে বলে, ‘‘এটা মনে করো, ওটা মনে করো’’। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৫২।] এজন্য আল্লাহ তা‘আলা শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার আদেশ দিয়ে বলেন,
﴿فَاِذَا قَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
তুমি যখন কুরআন পড়, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। (সূরা নাহল- ৯৮)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন বাক্যের মাধ্যমে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতেন। যেমন-
اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
উচ্চারণ : আঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্ শাইত্বানির রাজীম।
শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই, بِاللهِ আল্লাহর কাছে, مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে।
অর্থ : আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাযের মধ্যে নিম্নের বাক্যের মাধ্যমে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতেন।
أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ هَمْزِهٖ وَنَفْخِهٖ وَنَفْثِهٖ
উচ্চারণ : আঊযু বিল্লা-হিস সামী‘ইল ‘আলীমি মিনাশ্ শায়ত্বা-নির রাজীম, মিন হাম্যিহী ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী।
শাব্দিক অর্থ : أَعُوْذُ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِاللهِ আল্লাহর নিকট السَّمِيْعِ যিনি সবকিছু শ্রবণ করেন الْعَلِيْمِ সবকিছু জানেন مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে مِنْ هَمْزِهٖ তার কুমন্ত্রণা হতে, وَنَفْخِهٖ তার ফুঁৎকার হতে وَنَفْثِهٖ এবং তার প্ররোচনা হতে।
অর্থ : আমি সর্বজ্ঞ ও সর্বশ্রোতা আল্লাহর নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা, ফুঁৎকার ও প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাউদ, হা/৭৭৫; তিরমিযী, হা/২৪২; ইবনে মাজাহ, হা/৮০৭; মিশকাত, হা/১২১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭৯; দার কুতনী, হা/১১৫৪; বায়হাকী, হা/২১৮৫।]
মনে রাখতে হবে যে, শয়তান থেকে বাঁচতে হলে কেবল ‘আঊযুবিল্লাহ’ মুখে পড়াই যথেষ্ট নয়। যেসকল কাজকর্মে শয়তান খুশি হয়, সেসব কাজকর্মও ছাড়তে হবে এবং আল্লাহর পছন্দনীয় কাজসমূহ পালন করতে হবে। যেমন- একজন লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে সামনে তার দুশমন উপস্থিত হলো যে তাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এখন যদি লোকটি না পালায় ঐ স্থানে থেকে বলে, ‘‘আমি আশ্রয় চাই’’ তবে সে বাঁচতে পারবে না। তাই শয়তান যেসব কাজের নির্দেশ দেয় তা করতে নেই। আর শয়তান যেদিকে ডাকবে সেদিকে যেতে নেই। এটা করতে পারলেই ‘‘আঊযুবিল্লাহ’’ পড়া সার্থক হবে।
﴿فَاِذَا قَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ﴾
তুমি যখন কুরআন পড়, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। (সূরা নাহল- ৯৮)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন বাক্যের মাধ্যমে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতেন। যেমন-
اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
উচ্চারণ : আঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্ শাইত্বানির রাজীম।
শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই, بِاللهِ আল্লাহর কাছে, مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে।
অর্থ : আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাযের মধ্যে নিম্নের বাক্যের মাধ্যমে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতেন।
أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ هَمْزِهٖ وَنَفْخِهٖ وَنَفْثِهٖ
উচ্চারণ : আঊযু বিল্লা-হিস সামী‘ইল ‘আলীমি মিনাশ্ শায়ত্বা-নির রাজীম, মিন হাম্যিহী ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী।
শাব্দিক অর্থ : أَعُوْذُ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِاللهِ আল্লাহর নিকট السَّمِيْعِ যিনি সবকিছু শ্রবণ করেন الْعَلِيْمِ সবকিছু জানেন مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে مِنْ هَمْزِهٖ তার কুমন্ত্রণা হতে, وَنَفْخِهٖ তার ফুঁৎকার হতে وَنَفْثِهٖ এবং তার প্ররোচনা হতে।
অর্থ : আমি সর্বজ্ঞ ও সর্বশ্রোতা আল্লাহর নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা, ফুঁৎকার ও প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাউদ, হা/৭৭৫; তিরমিযী, হা/২৪২; ইবনে মাজাহ, হা/৮০৭; মিশকাত, হা/১২১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭৯; দার কুতনী, হা/১১৫৪; বায়হাকী, হা/২১৮৫।]
মনে রাখতে হবে যে, শয়তান থেকে বাঁচতে হলে কেবল ‘আঊযুবিল্লাহ’ মুখে পড়াই যথেষ্ট নয়। যেসকল কাজকর্মে শয়তান খুশি হয়, সেসব কাজকর্মও ছাড়তে হবে এবং আল্লাহর পছন্দনীয় কাজসমূহ পালন করতে হবে। যেমন- একজন লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে সামনে তার দুশমন উপস্থিত হলো যে তাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এখন যদি লোকটি না পালায় ঐ স্থানে থেকে বলে, ‘‘আমি আশ্রয় চাই’’ তবে সে বাঁচতে পারবে না। তাই শয়তান যেসব কাজের নির্দেশ দেয় তা করতে নেই। আর শয়তান যেদিকে ডাকবে সেদিকে যেতে নেই। এটা করতে পারলেই ‘‘আঊযুবিল্লাহ’’ পড়া সার্থক হবে।
জাহেলী যুগে আরবের মুশরিকরা প্রত্যেক কাজ তাদের দেব-দেবীর নামে শুরু করত। এ প্রথা রহিত করার জন্য ওহী নাযিলের শুরুতেই বলা হয়েছে,
﴿اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ﴾
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক- ১)
তাই প্রথমে আল্লাহর নামে পড়া শুরু করতে হয়। কারণ সকল কাজই তাঁর সাহায্য ও করুণা দ্বারা সমাপ্ত হয়। তাই আঊযুবিল্লাহ পাঠ করার পর বলতে হয়,
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমানির রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ اللهِ (শুরু করছি) আল্লাহর নামে, اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময়, اَلرَّحِيْمِ অতি দয়ালু।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।
﴿اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ﴾
পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক- ১)
তাই প্রথমে আল্লাহর নামে পড়া শুরু করতে হয়। কারণ সকল কাজই তাঁর সাহায্য ও করুণা দ্বারা সমাপ্ত হয়। তাই আঊযুবিল্লাহ পাঠ করার পর বলতে হয়,
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমানির রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ اللهِ (শুরু করছি) আল্লাহর নামে, اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময়, اَلرَّحِيْمِ অতি দয়ালু।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।
সকল নামাযের প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক। কোন নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করা না হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেসকল নামাযে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পড়তে হয় যেমন মাগরিব, এশা ও ফজর- সেসকল নামাযে ইমাম সূরা ফাতিহা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করবেন। আর মুক্তাদীগণ তা নীরবে পাঠ করবে। বাকি সকল অবস্থাতেই ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ই নিচু স্বরে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার কোন নামাযই হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৯০০; আবু দাউদ, হা/৮২২; তিরমিযী, হা/২৪৭; নাসাঈ, হা/৯১০; ইবনে মাজাহ, হা/৮৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৬; দার কুতনী, হা/১২২৫; বায়হাকী, হা/২১৯৩; মিশকাত, হা/৮২২।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ قَالَ أُمِرْنَا أَنْ نَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَمَا تَيَسَّرَ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আদিষ্ট হয়েছিলাম- যেন আমরা সূরা ফাতিহা পাঠ করি এবং (কুরআন থেকে) যা সহজ মনে হয় (তা পাঠ করি)। [আবু দাউদ, হা/৮১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১০১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৯০।]
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার কোন নামাযই হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৯০০; আবু দাউদ, হা/৮২২; তিরমিযী, হা/২৪৭; নাসাঈ, হা/৯১০; ইবনে মাজাহ, হা/৮৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৬; দার কুতনী, হা/১২২৫; বায়হাকী, হা/২১৯৩; মিশকাত, হা/৮২২।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ قَالَ أُمِرْنَا أَنْ نَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَمَا تَيَسَّرَ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আদিষ্ট হয়েছিলাম- যেন আমরা সূরা ফাতিহা পাঠ করি এবং (কুরআন থেকে) যা সহজ মনে হয় (তা পাঠ করি)। [আবু দাউদ, হা/৮১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১০১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৯০।]
সূরা ফাতিহা হলো কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এ সূরাটি মূলত একটি দু‘আ। তাই এ সূরার অপর একটি নাম হচ্ছে سُوْرَةُ الدُّعَاءِ অর্থাৎ দু‘আর সূরা। আর নামাযটাও মূলত দু‘আ ও মুনাজাত, এজন্য নামাযের প্রত্যেক রাক‘আতে এ সূরাটি পড়তে হয়।
আল্লাহর কাছে মুনাজাত করার আদব হলো- প্রথমে তাঁর গুণগান ও প্রশংসা করা, তারপর নিজের প্রয়োজনের কথা বলা। তাই এ সূরাটি আরম্ভ হয়েছে আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে। যেমন-
﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ﴾
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজাহানের (রব) পালনকর্তা।
‘রব’ বলতে ঐ সত্তাকে বুঝায়, যিনি কোন জিনিসকে তার মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখে পর্যায়ক্রমে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেন। ‘আ-লামীন’ অর্থ বিশ্বজগত, এ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি কেবল কোন বিশেষ জিনিস, প্রাণী বা দেশের রব নন। আমরা যা দেখি এবং যা দেখি না, গোটা বিশ্বে যা কিছু আছে, তিনি হলেন সবকিছুর মালিক, প্রতিপালক, ও ব্যবস্থাপক। আমি যখন মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছিলাম, তখন আমার অবস্থা বড়ই নাজুক ছিল। তিনি আমাকে ধীরে ধীরে জ্ঞান-বুদ্ধি ও শারীরিক দিক দিয়ে উন্নত করেছেন, তাই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তিনিই হতে পারেন। এজন্য অন্তর দিয়েই তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে হয়।
আল্লাহ শুধুমাত্র রবই নন তিনি হলেন-
﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾
বড়ই মেহেরবান, অশেষ দয়াময়।
আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে আমরা ডুবে আছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা আমার নিয়ামত গণনা শুরু করলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না।’’ (সূরা নাহ্ল- ১৮)
যেসকল নিয়ামত একান্ত প্রয়োজনীয়, তা তিনি এত ব্যাপক করে দিয়েছেন যে, এর কোন অভাব হয় না। যেমন- সূর্যের আলো, পানি, বাতাস ও আগুন। তিনি এসবের কোন বিনিময় কারও কাছ থেকে নেন না; কেবল নিজ দয়া ও অনুগ্রহের গুণে এসব নিয়ামত দান করে যাচ্ছেন। সবকিছু বাদ দিয়ে আমরা যদি কেবল আমাদের শরীরটার দিকে তাকাই, তবে মনে হবে- এটি যেন নিয়ামতের একটি জগত। চিকিৎসাবিদরা বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের শরীরে পাঁচ হাজার প্রকারের উপাদান রেখেছেন। মানুষের চুলগুলো উদ্ভিদের মতো, হাড়গুলো পাহাড়ের মতো, রক্ত চলাচলকারী শিরাগুলো নদী-নালার মতো। মানুষের শরীরে তিন শতাধিক জোড়া রয়েছে। গড়ে ৬০ থেকে ৭০ বৎসর পর্যন্ত মানুষ এগুলো নাড়াচাড়া করে তবুও এগুলো ক্ষয় হয় না, কোন মেরামতেরও প্রয়োজন হয় না। আখিরাতে আল্লাহর রহমত কেবল মুসলিমরা পাবে; কিন্তু এ দুনিয়াতে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে- কাফির, মুশরিক ও জীবজন্তু সবাই প্রাপ্ত হয়। সবাইকে তিনি রিযিক দেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেন। এখন আমাদের চিন্তা করা উচিত তিনি কেমন রহমান, কেমন রহীম।
পরের আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ﴾
অর্থাৎ তিনি বিচার দিনের মালিক।
এ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করে তার সঠিক বিচার ও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে একটি দিন আসছে। এর নাম হলো কিয়ামতের দিন। সে দিনের একমাত্র বিচারক হবেন আল্লাহ তা‘আলা। আর তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন না। যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তিনি নিয়ামতে ভরা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা পাপকাজ করে অপরাধী হয়েছে, তাদেরকে তিনি জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করবেন। সে দিনের সকল ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই হাতে থাকবে। দুনিয়ার কোন রাজা-বাদশার কর্তৃত্ব সেখানে থাকবে না। পরের আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ﴾
হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।
যে আল্লাহ অতীত হতে সবকিছুর লালন-পালন করে আসছেন, বর্তমানেও যার অশেষ রহমত ও দয়া সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে, মৃত্যুর পর আবার যার কাছে ফিরে যেতে হবে, তিনিই একমাত্র ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন।
গোটা কুরআনের সারমর্ম হলো- সূরা ফাতিহা। আর সূরা ফাতিহার সারমর্ম হলো- এ আয়াত। ইখলাসের সাথে আল্লাহর দাসত্ব করা এবং সকল কাজকর্মে তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়া- এটাই হলো তাওহীদের মূলকথা। ‘ইয়্যাকা না’বুদু’ বলার পর আবার ‘ওয়া ইয়্যাকা নাসতা‘ঈন’ এজন্য বলি যে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন মানুষ ভালো কাজ করতে পারে না। যেহেতু তিনি আমাকে নামাযের মতো এত মহান এক ইবাদাত পালনের তাওফীক দিয়েছেন, আমাকে তাঁর খাদিম হিসেবে নির্বাচন করেছেন, এজন্য আমি তাঁরই সাহায্য কামনা করছি; যাতে তিনি এমনভাবে আমাকে আমল করার তাওফীক দান করেন, যেভাবে আমল করলে তাঁর কাছে কবুল হয় এবং দুনিয়া-আখিরাতে এর ফলাফল আমি পাই। প্রতিটি কাজেই আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। আর তিনিই প্রকৃত সাহায্যকারী, অন্য কেউ নয়।
তারপর বলা হয়েছে,
﴿اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ - صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ﴾
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখিয়ে দিন। তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন। আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
মানুষের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার যা কিছু আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো- ‘সিরাতে মুস্তাক্বীম’ অর্থাৎ সৎপথের সন্ধান পাওয়া। আমরা আল্লাহর গুণগান গেয়ে আমাদের সেই সবচেয়ে বড় দু‘আটি আল্লাহর দরবারে পেশ করি। সেই পথ কোন্টি, তা ব্যাখ্যা করে বলি তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তারা হলেন নবী, সিদ্দীক, শুহাদা ও সালিহীনগণ। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন। আর তারা হলো- ঐ সকল লোক, যারা দ্বীনের বিধিবিধান জেনে বুঝেও পালন করে না, নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করতেও তারা পরওয়া করে না। ইয়াহুদিদের অভ্যাস এমনই ছিল।
আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা ঐ সকল লোক যাদের ধর্মীয় জ্ঞান না থাকাতে, না বুঝে ভুল পথের অনুসারী হয়েছে। এতে তারা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়িও করেছে। নাসারাদের এরকম অভ্যাস ছিল। সুতরাং আমরা আপনার কাছে এমন সহজ-সরল পথ চাই, যার মধ্যে না আছে কোন বাড়াবাড়ি, আর না আছে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি।
যারা এভাবে সূরা ফাতিহা বুঝে বুঝে পড়বে, তাদের ব্যাপারে নিচের হাদীসে কুদ্সীটি প্রযোজ্য হবে-
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায আদায় করল কিন্তু তাতে উম্মুল কিতাব তথা সূরা ফাতিহা পাঠ করল না তার নামায ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গেল এবং পূর্ণাঙ্গ হলো না। এ কথা তিনি তিনবার বললেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা যখন ইমামের পেছনে নামায আদায় করব তখন কী করব? তিনি বললেন, তোমরা চুপে চুপে তা পড়ে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি নামাযকে অর্থাৎ সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। বান্দা যখন বলে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, حَمِدَنِىْ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। আবার যখন বলে اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু। তখন আল্লাহ বলেন اَثْنٰى عَلَىَّ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। আবার যখন বলে مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন مَجَّدَنِىْ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বর্ণনা করেছে। আবার বান্দা যখন বলে اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। তখন আল্লাহ বলেন هٰذَا بَيْنِىْ وَبَيْنَ عَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَاَلَ এ কথাটি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। অর্থাৎ ইবাদাত আমার জন্য আর সাহায্য আমার বান্দার জন্য- আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। আর বান্দা যখন বলে اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনার গযব পড়েছে এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ বলেন هٰذَا لِعَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَاَلَ এটা আমার বান্দার, আর আমার বান্দা আমার কাছে যা চাইবে আমি তাকে তা দান করব। [সহীহ মুসলিম, হা/৯০৪; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৮৮; আবু দাউদ, হা/৮২১; তিরমিযী, হা/২৯৫৩; নাসাঈ, হা/৯০৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৮৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫০২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৪; দার কুতনী, হা/১১৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৫৫; মিশকাত, হা/৮২৩।]
আল্লাহর কাছে মুনাজাত করার আদব হলো- প্রথমে তাঁর গুণগান ও প্রশংসা করা, তারপর নিজের প্রয়োজনের কথা বলা। তাই এ সূরাটি আরম্ভ হয়েছে আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে। যেমন-
﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ﴾
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজাহানের (রব) পালনকর্তা।
‘রব’ বলতে ঐ সত্তাকে বুঝায়, যিনি কোন জিনিসকে তার মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি রেখে পর্যায়ক্রমে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেন। ‘আ-লামীন’ অর্থ বিশ্বজগত, এ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি কেবল কোন বিশেষ জিনিস, প্রাণী বা দেশের রব নন। আমরা যা দেখি এবং যা দেখি না, গোটা বিশ্বে যা কিছু আছে, তিনি হলেন সবকিছুর মালিক, প্রতিপালক, ও ব্যবস্থাপক। আমি যখন মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছিলাম, তখন আমার অবস্থা বড়ই নাজুক ছিল। তিনি আমাকে ধীরে ধীরে জ্ঞান-বুদ্ধি ও শারীরিক দিক দিয়ে উন্নত করেছেন, তাই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তিনিই হতে পারেন। এজন্য অন্তর দিয়েই তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে হয়।
আল্লাহ শুধুমাত্র রবই নন তিনি হলেন-
﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾
বড়ই মেহেরবান, অশেষ দয়াময়।
আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে আমরা ডুবে আছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা আমার নিয়ামত গণনা শুরু করলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না।’’ (সূরা নাহ্ল- ১৮)
যেসকল নিয়ামত একান্ত প্রয়োজনীয়, তা তিনি এত ব্যাপক করে দিয়েছেন যে, এর কোন অভাব হয় না। যেমন- সূর্যের আলো, পানি, বাতাস ও আগুন। তিনি এসবের কোন বিনিময় কারও কাছ থেকে নেন না; কেবল নিজ দয়া ও অনুগ্রহের গুণে এসব নিয়ামত দান করে যাচ্ছেন। সবকিছু বাদ দিয়ে আমরা যদি কেবল আমাদের শরীরটার দিকে তাকাই, তবে মনে হবে- এটি যেন নিয়ামতের একটি জগত। চিকিৎসাবিদরা বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের শরীরে পাঁচ হাজার প্রকারের উপাদান রেখেছেন। মানুষের চুলগুলো উদ্ভিদের মতো, হাড়গুলো পাহাড়ের মতো, রক্ত চলাচলকারী শিরাগুলো নদী-নালার মতো। মানুষের শরীরে তিন শতাধিক জোড়া রয়েছে। গড়ে ৬০ থেকে ৭০ বৎসর পর্যন্ত মানুষ এগুলো নাড়াচাড়া করে তবুও এগুলো ক্ষয় হয় না, কোন মেরামতেরও প্রয়োজন হয় না। আখিরাতে আল্লাহর রহমত কেবল মুসলিমরা পাবে; কিন্তু এ দুনিয়াতে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে- কাফির, মুশরিক ও জীবজন্তু সবাই প্রাপ্ত হয়। সবাইকে তিনি রিযিক দেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করেন। এখন আমাদের চিন্তা করা উচিত তিনি কেমন রহমান, কেমন রহীম।
পরের আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ ﴾
অর্থাৎ তিনি বিচার দিনের মালিক।
এ দুনিয়াতে মানুষ যা কিছু করে তার সঠিক বিচার ও পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার জন্য আমাদের সামনে একটি দিন আসছে। এর নাম হলো কিয়ামতের দিন। সে দিনের একমাত্র বিচারক হবেন আল্লাহ তা‘আলা। আর তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন না। যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তিনি নিয়ামতে ভরা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা পাপকাজ করে অপরাধী হয়েছে, তাদেরকে তিনি জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করবেন। সে দিনের সকল ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই হাতে থাকবে। দুনিয়ার কোন রাজা-বাদশার কর্তৃত্ব সেখানে থাকবে না। পরের আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ﴾
হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।
যে আল্লাহ অতীত হতে সবকিছুর লালন-পালন করে আসছেন, বর্তমানেও যার অশেষ রহমত ও দয়া সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে, মৃত্যুর পর আবার যার কাছে ফিরে যেতে হবে, তিনিই একমাত্র ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন।
গোটা কুরআনের সারমর্ম হলো- সূরা ফাতিহা। আর সূরা ফাতিহার সারমর্ম হলো- এ আয়াত। ইখলাসের সাথে আল্লাহর দাসত্ব করা এবং সকল কাজকর্মে তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়া- এটাই হলো তাওহীদের মূলকথা। ‘ইয়্যাকা না’বুদু’ বলার পর আবার ‘ওয়া ইয়্যাকা নাসতা‘ঈন’ এজন্য বলি যে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন মানুষ ভালো কাজ করতে পারে না। যেহেতু তিনি আমাকে নামাযের মতো এত মহান এক ইবাদাত পালনের তাওফীক দিয়েছেন, আমাকে তাঁর খাদিম হিসেবে নির্বাচন করেছেন, এজন্য আমি তাঁরই সাহায্য কামনা করছি; যাতে তিনি এমনভাবে আমাকে আমল করার তাওফীক দান করেন, যেভাবে আমল করলে তাঁর কাছে কবুল হয় এবং দুনিয়া-আখিরাতে এর ফলাফল আমি পাই। প্রতিটি কাজেই আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। আর তিনিই প্রকৃত সাহায্যকারী, অন্য কেউ নয়।
তারপর বলা হয়েছে,
﴿اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ - صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ﴾
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখিয়ে দিন। তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন। আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
মানুষের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার যা কিছু আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো- ‘সিরাতে মুস্তাক্বীম’ অর্থাৎ সৎপথের সন্ধান পাওয়া। আমরা আল্লাহর গুণগান গেয়ে আমাদের সেই সবচেয়ে বড় দু‘আটি আল্লাহর দরবারে পেশ করি। সেই পথ কোন্টি, তা ব্যাখ্যা করে বলি তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন। তারা হলেন নবী, সিদ্দীক, শুহাদা ও সালিহীনগণ। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনি রাগান্বিত হয়েছেন। আর তারা হলো- ঐ সকল লোক, যারা দ্বীনের বিধিবিধান জেনে বুঝেও পালন করে না, নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করতেও তারা পরওয়া করে না। ইয়াহুদিদের অভ্যাস এমনই ছিল।
আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা ঐ সকল লোক যাদের ধর্মীয় জ্ঞান না থাকাতে, না বুঝে ভুল পথের অনুসারী হয়েছে। এতে তারা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়িও করেছে। নাসারাদের এরকম অভ্যাস ছিল। সুতরাং আমরা আপনার কাছে এমন সহজ-সরল পথ চাই, যার মধ্যে না আছে কোন বাড়াবাড়ি, আর না আছে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি।
যারা এভাবে সূরা ফাতিহা বুঝে বুঝে পড়বে, তাদের ব্যাপারে নিচের হাদীসে কুদ্সীটি প্রযোজ্য হবে-
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নামায আদায় করল কিন্তু তাতে উম্মুল কিতাব তথা সূরা ফাতিহা পাঠ করল না তার নামায ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গেল এবং পূর্ণাঙ্গ হলো না। এ কথা তিনি তিনবার বললেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা যখন ইমামের পেছনে নামায আদায় করব তখন কী করব? তিনি বললেন, তোমরা চুপে চুপে তা পড়ে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি নামাযকে অর্থাৎ সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। বান্দা যখন বলে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, حَمِدَنِىْ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। আবার যখন বলে اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু। তখন আল্লাহ বলেন اَثْنٰى عَلَىَّ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। আবার যখন বলে مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন مَجَّدَنِىْ عَبْدِىْ আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বর্ণনা করেছে। আবার বান্দা যখন বলে اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। তখন আল্লাহ বলেন هٰذَا بَيْنِىْ وَبَيْنَ عَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَاَلَ এ কথাটি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। অর্থাৎ ইবাদাত আমার জন্য আর সাহায্য আমার বান্দার জন্য- আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। আর বান্দা যখন বলে اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনার গযব পড়েছে এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ বলেন هٰذَا لِعَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَاَلَ এটা আমার বান্দার, আর আমার বান্দা আমার কাছে যা চাইবে আমি তাকে তা দান করব। [সহীহ মুসলিম, হা/৯০৪; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৮৮; আবু দাউদ, হা/৮২১; তিরমিযী, হা/২৯৫৩; নাসাঈ, হা/৯০৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৮৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫০২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৪; দার কুতনী, হা/১১৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৫৫; মিশকাত, হা/৮২৩।]
اٰمِيْن শব্দের অর্থ হচ্ছে, اَللّٰهُمَّ اسْتَجِبْ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি কবুল করো।
আমীনের শব্দ শুনে ইয়াহুদিরা হিংসা করে :
আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইয়াহুদিরা তোমাদের অন্য কোন বিষয়ে এত বেশি হিংসা করে না যতটকু হিংসা করে তোমাদের সালাম ও আমীন বলার কারণে। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৫৬; জামেউস সগীর, হা/১০৫৫০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫১৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/৯৮৮।]
আমীন বললে গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল্ মাগ্যূবি ‘আলাইহিম্ ওয়ালায্যো-ল্লীন’ বলেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। (কারণ তখন ফেরেশতারা ‘আমীন’ বলে থাকেন।) আর যার ‘আমীন’ বলা ফেরেশতাদের ‘আমীন’ বলার সাথে মিলে যাবে, তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮২, সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৭; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৯৫; আবু দাউদ, হা/৯৩৬; নাসাঈ, হা/৯২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৮৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮০৪; দারেমী, হা/১২৪৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫১৪; মিশকাত, হা/৮২৫।]
আমীনের শব্দ শুনে ইয়াহুদিরা হিংসা করে :
আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইয়াহুদিরা তোমাদের অন্য কোন বিষয়ে এত বেশি হিংসা করে না যতটকু হিংসা করে তোমাদের সালাম ও আমীন বলার কারণে। [ইবনে মাজাহ, হা/৮৫৬; জামেউস সগীর, হা/১০৫৫০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫১৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/৯৮৮।]
আমীন বললে গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল্ মাগ্যূবি ‘আলাইহিম্ ওয়ালায্যো-ল্লীন’ বলেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। (কারণ তখন ফেরেশতারা ‘আমীন’ বলে থাকেন।) আর যার ‘আমীন’ বলা ফেরেশতাদের ‘আমীন’ বলার সাথে মিলে যাবে, তার পেছনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮২, সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৭; মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৯৫; আবু দাউদ, হা/৯৩৬; নাসাঈ, হা/৯২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৮৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮০৪; দারেমী, হা/১২৪৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫১৪; মিশকাত, হা/৮২৫।]
সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ অন্য একটি সূরা বা কুরআনের কিছু আয়াত পাঠ করতেন। যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পাঠ করতেন। আর শেষ রাক‘আতসমূহে সূরা ফাতিহার সাথে কখনো অন্য সূরা মিলাতেন আবার কখনো মিলাতেন না। [সহীহ মুসলিম; হা/১০৪২; আবু দাউদ, হা/৮০৩; নাসাঈ, হা/৪৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৫৮।]
যেহরী নামাযের প্রথম দু’রাক‘আতে ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর যে কোন সূরা পাঠ করবেন। মুক্তাদীরা সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর আর কিছুই না পড়ে ইমামের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে।
আবু কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য দুটি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। অনুরূপভাবে আসরেও করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৬; মিশকাত হা/৮২৮।]
প্রত্যেক সূরা পাঠ করার পূর্বে ‘‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’’ বলা সুন্নাত। কেননা এটা এক সূরাকে অপর সূরা থেকে পৃথক করে। [আবু দাউদ, হা/৭৮৮; বায়হাকী, হা/২২০৮; মিশকাত, হা/২২১৮।]
যেহরী নামাযের প্রথম দু’রাক‘আতে ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর যে কোন সূরা পাঠ করবেন। মুক্তাদীরা সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর আর কিছুই না পড়ে ইমামের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে।
আবু কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য দুটি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। অনুরূপভাবে আসরেও করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৬; মিশকাত হা/৮২৮।]
প্রত্যেক সূরা পাঠ করার পূর্বে ‘‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’’ বলা সুন্নাত। কেননা এটা এক সূরাকে অপর সূরা থেকে পৃথক করে। [আবু দাউদ, হা/৭৮৮; বায়হাকী, হা/২২০৮; মিশকাত, হা/২২১৮।]
আমরা সূরা ফাতিহার মধ্যে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করেছিলাম, হে আল্লাহ! আমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিন। এখন মনে করি যে, আল্লাহ আমাদের সে মুনাজাত কবুল করেছেন এবং সৎ পথ কোন্টি তা জানার জন্য তিনি আমাদেরকে কুরআন মাজীদ উপহার দিয়েছেন।
এবার তিনি যেন বলছেন, হে আমার বান্দা! তোমার দু‘আ আমি মঞ্জুর করে এ ৩০ পারা কুরআন তোমার কাছে দিয়েছি। এখন সূরা ফাতিহা থেকে নিয়ে সূরা নাস পর্যন্ত পূর্ণ কুরআনে আমি কী বললাম তা পড়ো এবং বুঝো; এটা বুঝে পড়লে কোন্টি সত্য, কোন্টি মিথ্যা, কোন্টি হক, কোন্টি বাতিল এবং কোন্টি তোমার জন্য ভালো, কোন্টি তোমার জন্য মন্দ তা তুমি ভালো করে জানতে পারবে। আমার এ বাণীসমূহ তোমাকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসবে। এ কুরআন হলো হেদায়াতের কিতাব,
﴿يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ﴾
এটা মানুষকে সঠিক এবং সোজা পথ দেখায়। (সূরা আহকাফ- ৩০)
﴿ اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ﴾
নিশ্চয় এ কুরআন নির্ভুল ও সোজা পথটি দেখায়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯)
অতএব আমরা কুরআন থেকে যা কিছু পড়ব তার হক আদায় করতে হবে। কুরআনের একটি আয়াতও এমন নেই; যাতে শিক্ষণীয় কিছু নেই। এখন প্রশ্ন হলো, কুরআনের হক আমরা কীভাবে আদায় করব? হক আদায়ের নিয়ম হলো :
১। যেখানে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিয়ামত দানের ওয়াদা দিয়েছেন আমরা তা পাওয়ার আশা করব।
২। যেখানে শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন, আমরা সে শাস্তিকে ভয় করব।
৩। যেখানে কিছু করার আদেশ দিয়েছেন আমরা তা পালন করব।
৪। যেখানে কিছু করতে নিষেধ করেছেন আমরা তা করব না।
৫। যেখানে তিনি উপদেশ দিয়েছেন আমরা সে উপদেশ গ্রহণ করব।
৬। যেখানে তিনি নবী-রাসূলদের কিস্সা-কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আমরা এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব এবং আমাদের ঈমানকে আরো মজবুত করব।
এবার তিনি যেন বলছেন, হে আমার বান্দা! তোমার দু‘আ আমি মঞ্জুর করে এ ৩০ পারা কুরআন তোমার কাছে দিয়েছি। এখন সূরা ফাতিহা থেকে নিয়ে সূরা নাস পর্যন্ত পূর্ণ কুরআনে আমি কী বললাম তা পড়ো এবং বুঝো; এটা বুঝে পড়লে কোন্টি সত্য, কোন্টি মিথ্যা, কোন্টি হক, কোন্টি বাতিল এবং কোন্টি তোমার জন্য ভালো, কোন্টি তোমার জন্য মন্দ তা তুমি ভালো করে জানতে পারবে। আমার এ বাণীসমূহ তোমাকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসবে। এ কুরআন হলো হেদায়াতের কিতাব,
﴿يَهْدِيْۤ اِلَى الْحَقِّ وَاِلٰى طَرِيْقٍ مُّسْتَقِيْمٍ﴾
এটা মানুষকে সঠিক এবং সোজা পথ দেখায়। (সূরা আহকাফ- ৩০)
﴿ اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ﴾
নিশ্চয় এ কুরআন নির্ভুল ও সোজা পথটি দেখায়। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৯)
অতএব আমরা কুরআন থেকে যা কিছু পড়ব তার হক আদায় করতে হবে। কুরআনের একটি আয়াতও এমন নেই; যাতে শিক্ষণীয় কিছু নেই। এখন প্রশ্ন হলো, কুরআনের হক আমরা কীভাবে আদায় করব? হক আদায়ের নিয়ম হলো :
১। যেখানে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিয়ামত দানের ওয়াদা দিয়েছেন আমরা তা পাওয়ার আশা করব।
২। যেখানে শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন, আমরা সে শাস্তিকে ভয় করব।
৩। যেখানে কিছু করার আদেশ দিয়েছেন আমরা তা পালন করব।
৪। যেখানে কিছু করতে নিষেধ করেছেন আমরা তা করব না।
৫। যেখানে তিনি উপদেশ দিয়েছেন আমরা সে উপদেশ গ্রহণ করব।
৬। যেখানে তিনি নবী-রাসূলদের কিস্সা-কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আমরা এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব এবং আমাদের ঈমানকে আরো মজবুত করব।
প্রিয় ভাই-বোনেরা! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি রহম করুন। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন অনেক লোক ছিলেন, যারা কুরআন পড়ে বা শুনে খুবই প্রভাবিত হতেন। যারা কুরআনের মর্ম বুঝে তিলাওয়াত করেন বা শুনেন তাদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তা একটু লক্ষ্য করি।
(১) যুবায়ের ইবনে মুত্‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুসলিম হওয়ার আগে বদরের যুদ্ধে বন্দীদের ব্যাপারে আলোচনার জন্য মদিনায় গিয়ে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন সূরা তূর দিয়ে মাগরিবের নামায আদায় করছিলেন। এমনকি বাহির থেকে কিরাআতের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তিনি যখন এ আয়াত পড়লেন,
﴿اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ ‐ - مَا لَهٗ مِنْ دَافِعٍ﴾
তোমার পালনকর্তার আযাব অবশ্যই আসবে; একে কেউ ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। (সূরা তূর- ৭, ৮)
তখন আমি এমন ভয় পেলাম, যেন আমার অন্তর ফেটে যাচ্ছে; আমি সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করলাম। তখন আমার মনে হচ্ছিল যেন এ স্থান ত্যাগ করার আগেই আমি আল্লাহর আযাবে গ্রেফতার হয়ে যাব। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৮১; মুজামুস সগীর, হা/১১৪১; কিতাবুল আমওয়াল, হা/৩০২; মা‘রেফাতুস সুন্নাহ ওয়াল আছার, হা/১২৯৯।]
(২) আলী ইবনে ফুযাইল নরম মনের একজন যুবক ছিলেন। তার সামনে জান্নাত, জাহান্নাম, মৃত্যু ও কবরের আলোচনা হলে তিনি কান্না শুরু করতেন। তার পিতা এক মসজিদে ইমামতি করতেন। পিতা যখন জানতেন, তার ছেলে নামাযে উপস্থিত, তখন তিনি হৃদয় বিদারক কোন সূরা বা আয়াত পড়তেন না। একদিন ছেলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও পিতা তাকে অনুপস্থিত মনে করে নামাযে সূরা মু’মিনূন তিলাওয়াত শুরু করলেন। যখন তিনি এ আয়াতগুলোতে পৌঁছলেন,
﴿اَلَمْ تَكُنْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ ‐ - قَالُوْا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَآلِّيْنَ ‐ - رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظَالِمُوْنَ ‐ - قَالَ اخْسَئُوْا فِيْهَا وَلَا تُكَلِّمُوْنِ ‐ - اِنَّهٗ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْ عِبَادِيْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ ‐ - فَاتَّخَذْتُمُوْهُمْ سِخْرِيًّا حَتّٰۤىۤ اَنْسَوْكُمْ ذِكْرِيْ وَكُنْتُمْ مِّنْهُمْ تَضْحَكُوْنَ ‐ - اِنِّيْ جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوْاۤ اَنَّهُمْ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ﴾
তখন আলী বেহুশ হয়ে পড়লেন। পরে লোকেরা তার মাথায় পানি দিলে তার হুশ ফিরে আসে। [কিতাবুত্ তাও্ওয়াবীন লিইবনে কুদাম।]
আয়াতগুলোর সারমর্ম হলো, অপরাধীরা জাহান্নামে চলে যাওয়ার পর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদেরকে কেউ আমার আয়াত পড়ে শোনায়নি? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে। তখন তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের দুর্গতি আমাদের উপর প্রবল হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম। এখন আমাদের আবার দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিন। আমরা যদি আবার আপনার নাফরমানী করি, তবে আমরা গোনাহগার হব। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা এখানে পড়ে থাকো। আমার সাথে কোন কথা বলো না। আমার বান্দাদের একটি দল দুনিয়াতে আমার উপর ঈমান আনত এবং বলত, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আর আপনিই উত্তম রহমত বর্ষণকারী’’। তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে, এমনকি তোমরা আমার স্মরণ থেকে বিমুখ ছিলে। আজ আমি তাদেরকে তাদের সবরের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছি। কারণ তারাই সফলকাম। (সূরা মু’মিনূন : ১০৫-১১১)
(৩) মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির (রহ.) মৃত্যুর সময় খুবই হা-হুতাশ করছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এমন করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতকে ভয় করছি সেটি হলো,
﴿وَلَوْ اَنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا فِي الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لَافْتَدَوْا بِه مِنْ سُوْٓءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَبَدَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ﴾
যদি গোনাহগারদের কাছে পৃথিবীর সবকিছু থাকে এবং তার সাথে আরো অনুরূপ থাকে, তবে কিয়ামতের দিন সবকিছুই মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চাইবে। আর তারা এমন শাস্তির সম্মুখীন হবে যা কল্পনাও করেনি অথবা তাদের সামনে এমন গোনাহ প্রকাশ পাবে যাকে তারা গোনাহ মনে করেনি।
(সূরা যুমার- ৪৭)
এখন আমার ভয় হচ্ছে, আমার সামনে এমন গোনাহ প্রকাশ পেতে পারে যা আমি হিসাব করিনি। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর- ৬/২৯৩।]
তারতীলের সাথে কুরআন পাঠ করতে হবে :
মহান আল্লাহ তা‘আলা তারতীলের সাথে কুরআন পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাজভীদের নিয়মাবলি আদায় করে সুন্দর করে পড়াকে তারতীল বলা হয়। তবে বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করে এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়াই হলো আসল তারতীল। হাসান বসরী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا﴾
তুমি তারতীলসহ কুরআন পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিটি আয়াতকে পৃথক করে অর্থের দিকে মনোনিবেশ করে পাঠ করাই হচ্ছে এ তারতীলের উদ্দেশ্য। [তাফসীরে সীরাজুম মুনীর- ৩/১৩।]
(১) যুবায়ের ইবনে মুত্‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুসলিম হওয়ার আগে বদরের যুদ্ধে বন্দীদের ব্যাপারে আলোচনার জন্য মদিনায় গিয়ে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন সূরা তূর দিয়ে মাগরিবের নামায আদায় করছিলেন। এমনকি বাহির থেকে কিরাআতের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তিনি যখন এ আয়াত পড়লেন,
﴿اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ ‐ - مَا لَهٗ مِنْ دَافِعٍ﴾
তোমার পালনকর্তার আযাব অবশ্যই আসবে; একে কেউ ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। (সূরা তূর- ৭, ৮)
তখন আমি এমন ভয় পেলাম, যেন আমার অন্তর ফেটে যাচ্ছে; আমি সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করলাম। তখন আমার মনে হচ্ছিল যেন এ স্থান ত্যাগ করার আগেই আমি আল্লাহর আযাবে গ্রেফতার হয়ে যাব। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৮১; মুজামুস সগীর, হা/১১৪১; কিতাবুল আমওয়াল, হা/৩০২; মা‘রেফাতুস সুন্নাহ ওয়াল আছার, হা/১২৯৯।]
(২) আলী ইবনে ফুযাইল নরম মনের একজন যুবক ছিলেন। তার সামনে জান্নাত, জাহান্নাম, মৃত্যু ও কবরের আলোচনা হলে তিনি কান্না শুরু করতেন। তার পিতা এক মসজিদে ইমামতি করতেন। পিতা যখন জানতেন, তার ছেলে নামাযে উপস্থিত, তখন তিনি হৃদয় বিদারক কোন সূরা বা আয়াত পড়তেন না। একদিন ছেলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও পিতা তাকে অনুপস্থিত মনে করে নামাযে সূরা মু’মিনূন তিলাওয়াত শুরু করলেন। যখন তিনি এ আয়াতগুলোতে পৌঁছলেন,
﴿اَلَمْ تَكُنْ اٰيَاتِيْ تُتْلٰى عَلَيْكُمْ فَكُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُوْنَ ‐ - قَالُوْا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَآلِّيْنَ ‐ - رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْهَا فَاِنْ عُدْنَا فَاِنَّا ظَالِمُوْنَ ‐ - قَالَ اخْسَئُوْا فِيْهَا وَلَا تُكَلِّمُوْنِ ‐ - اِنَّهٗ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْ عِبَادِيْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ ‐ - فَاتَّخَذْتُمُوْهُمْ سِخْرِيًّا حَتّٰۤىۤ اَنْسَوْكُمْ ذِكْرِيْ وَكُنْتُمْ مِّنْهُمْ تَضْحَكُوْنَ ‐ - اِنِّيْ جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوْاۤ اَنَّهُمْ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ﴾
তখন আলী বেহুশ হয়ে পড়লেন। পরে লোকেরা তার মাথায় পানি দিলে তার হুশ ফিরে আসে। [কিতাবুত্ তাও্ওয়াবীন লিইবনে কুদাম।]
আয়াতগুলোর সারমর্ম হলো, অপরাধীরা জাহান্নামে চলে যাওয়ার পর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদেরকে কেউ আমার আয়াত পড়ে শোনায়নি? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে। তখন তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের দুর্গতি আমাদের উপর প্রবল হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম। এখন আমাদের আবার দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিন। আমরা যদি আবার আপনার নাফরমানী করি, তবে আমরা গোনাহগার হব। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা এখানে পড়ে থাকো। আমার সাথে কোন কথা বলো না। আমার বান্দাদের একটি দল দুনিয়াতে আমার উপর ঈমান আনত এবং বলত, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আর আপনিই উত্তম রহমত বর্ষণকারী’’। তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে, এমনকি তোমরা আমার স্মরণ থেকে বিমুখ ছিলে। আজ আমি তাদেরকে তাদের সবরের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছি। কারণ তারাই সফলকাম। (সূরা মু’মিনূন : ১০৫-১১১)
(৩) মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির (রহ.) মৃত্যুর সময় খুবই হা-হুতাশ করছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এমন করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াতকে ভয় করছি সেটি হলো,
﴿وَلَوْ اَنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا فِي الْاَرْضِ جَمِيْعًا وَّمِثْلَهٗ مَعَهٗ لَافْتَدَوْا بِه مِنْ سُوْٓءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَبَدَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ﴾
যদি গোনাহগারদের কাছে পৃথিবীর সবকিছু থাকে এবং তার সাথে আরো অনুরূপ থাকে, তবে কিয়ামতের দিন সবকিছুই মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চাইবে। আর তারা এমন শাস্তির সম্মুখীন হবে যা কল্পনাও করেনি অথবা তাদের সামনে এমন গোনাহ প্রকাশ পাবে যাকে তারা গোনাহ মনে করেনি।
(সূরা যুমার- ৪৭)
এখন আমার ভয় হচ্ছে, আমার সামনে এমন গোনাহ প্রকাশ পেতে পারে যা আমি হিসাব করিনি। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর- ৬/২৯৩।]
তারতীলের সাথে কুরআন পাঠ করতে হবে :
মহান আল্লাহ তা‘আলা তারতীলের সাথে কুরআন পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাজভীদের নিয়মাবলি আদায় করে সুন্দর করে পড়াকে তারতীল বলা হয়। তবে বিশুদ্ধ উচ্চারণসহ শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করে এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়াই হলো আসল তারতীল। হাসান বসরী (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلًا﴾
তুমি তারতীলসহ কুরআন পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ৪)
এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিটি আয়াতকে পৃথক করে অর্থের দিকে মনোনিবেশ করে পাঠ করাই হচ্ছে এ তারতীলের উদ্দেশ্য। [তাফসীরে সীরাজুম মুনীর- ৩/১৩।]
কিরাআত পড়া শেষ হলে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে রুকূতে যেতে হবে। কোমর, পিঠ ও মাথা বরাবর থাকবে এবং হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে হাঁটু ধরতে হবে। তারপর রুকূতে গিয়ে কিছু সময় থামতে হবে। মাথা একটু ঝুঁকানোর পরেই তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে গেলে রুকূর হক আদায় হবে না।
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হলো সে ব্যক্তি, যে নামাযের মধ্যে চুরি করে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নামাযের মধ্যে আবার চুরি হয় কীভাবে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে নামাযের রুকূ এবং সিজদা পরিপূর্ণভাবে করে না সে নামাযের মধ্যে চুরি করে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬৬০; মু‘জামুস সগীর, হা/৩৩৫; জামেউস সগীর, হা/৯৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২৫।]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেই নামায আদায়কারীর নামায যথেষ্ট নয়, যে রুকূ ও সিজদা হতে পিঠ সোজা করে না। [আবু দাউদ, হা/৮৫৫; তিরমিযী, হা/২৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৮২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২২; জামেউস সগীর, হা/১৩১৮০; মিশকাত, হা/৮৭৮।]
কারো সামনে মাথা নত করার অর্থ হলো নিজেকে ছোট মনে করে তাকে সম্মানিত করা। পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদেরকে সম্মান দেয়ার জন্য তাদের প্রজারা মাথা নত করে থাকে। কিন্তু মুসলিমরা একমাত্র আল্লাহর সামনে মাথা নত করে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাথা নত করে সম্মান দেয়া ইসলামে জায়েয নেই। রুকূর মূল বিষয় হচ্ছে আল্লাহকে সম্মান দেয়া।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা রুকূর মধ্যে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো এবং সিজদার মধ্যে অধিক হারে দু‘আয় মনোনিবেশ করো। আশা করা যায় তোমাদের দু‘আ কবুল হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১১০২; আবু দাউদ, হা/৮৭৬; নাসাঈ, হা/১০৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬০৪৫; দারেমী, হা/১৩৬৪; জমেউস সগীর, হা/৪৫১২; মিশকাত, হা/৮৭৩।]
আমরা রুকূ দিয়ে এটা প্রকাশ করি যে, হে আল্লাহ! আমি আপনার এক নগণ্য বান্দা। আপনি হলেন মহান। তাই আমি এতক্ষণ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এখন দাসত্বের আরো এক ধাপ এগিয়ে আমার মাথাকে আপনার সামনে নত করে দিলাম। তাসবীহ পড়ে মুখের দ্বারাও এ স্বীকৃতি দিচ্ছি।
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় ﴿فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ﴾ অর্থাৎ আপনার মহান প্রভুর নামে তাসবীহ পাঠ করুন। [সূরা ওয়াকিয়া- ৯৬।] তখন নবী ﷺ বললেন, এ তাসবীহটাকে তোমরা রুকূর তাসবীহ বানিয়ে নাও। অতঃপর যখন নাযিল হয় ﴿سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلٰى﴾ অর্থাৎ আপনার সুউচ্চ মর্যাদাবান প্রতিপালকের নামে তাসবীহ পাঠ করুন। তখন নবী ﷺ বললেন, এ তাসবীহটাকে তোমরা সিজদার তাসবীহ বানিয়ে নাও। [আবু দাউদ, হা/৮৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮১৮;মিশকাত, হা/৮৭৯।]
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হলো সে ব্যক্তি, যে নামাযের মধ্যে চুরি করে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নামাযের মধ্যে আবার চুরি হয় কীভাবে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে নামাযের রুকূ এবং সিজদা পরিপূর্ণভাবে করে না সে নামাযের মধ্যে চুরি করে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬৬০; মু‘জামুস সগীর, হা/৩৩৫; জামেউস সগীর, হা/৯৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২৫।]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সেই নামায আদায়কারীর নামায যথেষ্ট নয়, যে রুকূ ও সিজদা হতে পিঠ সোজা করে না। [আবু দাউদ, হা/৮৫৫; তিরমিযী, হা/২৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৮২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫২২; জামেউস সগীর, হা/১৩১৮০; মিশকাত, হা/৮৭৮।]
কারো সামনে মাথা নত করার অর্থ হলো নিজেকে ছোট মনে করে তাকে সম্মানিত করা। পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদেরকে সম্মান দেয়ার জন্য তাদের প্রজারা মাথা নত করে থাকে। কিন্তু মুসলিমরা একমাত্র আল্লাহর সামনে মাথা নত করে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাথা নত করে সম্মান দেয়া ইসলামে জায়েয নেই। রুকূর মূল বিষয় হচ্ছে আল্লাহকে সম্মান দেয়া।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা রুকূর মধ্যে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো এবং সিজদার মধ্যে অধিক হারে দু‘আয় মনোনিবেশ করো। আশা করা যায় তোমাদের দু‘আ কবুল হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১১০২; আবু দাউদ, হা/৮৭৬; নাসাঈ, হা/১০৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬০৪৫; দারেমী, হা/১৩৬৪; জমেউস সগীর, হা/৪৫১২; মিশকাত, হা/৮৭৩।]
আমরা রুকূ দিয়ে এটা প্রকাশ করি যে, হে আল্লাহ! আমি আপনার এক নগণ্য বান্দা। আপনি হলেন মহান। তাই আমি এতক্ষণ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এখন দাসত্বের আরো এক ধাপ এগিয়ে আমার মাথাকে আপনার সামনে নত করে দিলাম। তাসবীহ পড়ে মুখের দ্বারাও এ স্বীকৃতি দিচ্ছি।
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় ﴿فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ﴾ অর্থাৎ আপনার মহান প্রভুর নামে তাসবীহ পাঠ করুন। [সূরা ওয়াকিয়া- ৯৬।] তখন নবী ﷺ বললেন, এ তাসবীহটাকে তোমরা রুকূর তাসবীহ বানিয়ে নাও। অতঃপর যখন নাযিল হয় ﴿سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلٰى﴾ অর্থাৎ আপনার সুউচ্চ মর্যাদাবান প্রতিপালকের নামে তাসবীহ পাঠ করুন। তখন নবী ﷺ বললেন, এ তাসবীহটাকে তোমরা সিজদার তাসবীহ বানিয়ে নাও। [আবু দাউদ, হা/৮৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮১৮;মিশকাত, হা/৮৭৯।]
নবী ﷺ রুকূ অবস্থায় যেসব দু‘আ পাঠ করতেন সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১। হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে নামায আদায় করেন। আর তখন তিনি রুকূতে এ দু‘আ পাঠ করেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ
উচ্চারণ : সুব্হা-না রাবিবয়াল ‘আযীম।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْعَظِيْمِ আমার মহান প্রভুর।
অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি (তিনবার)। [আবু দাঊদ, হা/৮৭১; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫০; তিরমিযী, হা/২৬১; নাসাঈ, হা/১০০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৮৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৯২৩।]
২। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ বেশি করে রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন,
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালক وَبِحَمْدِكَ এবং তোমার প্রশংসার সাথে, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]
৩। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন,
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ
উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ।
শাব্দিক অর্থ : سُبُّوْحٌ (আল্লাহ) পবিত্র, قُدُّوْسٌ ত্রুটিমুক্ত, رَبُّ তিনি রব الْمَلَائِكَةِ ফেরেশতাদের وَ الْرُّوْحِ এবং রুহ তথা জিবরাঈল (আঃ) এরও (রব)।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত; তিনি জিবরাঈল (আঃ) সহ সকল ফেরেশতার রব। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]
৪। আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর সাথে নামাযে দাঁড়ালাম। সে নামাযে তিনি সূরা বাকারা পড়ার পরিমাণ সময় রুকূর মধ্যে ছিলেন। এ সময় তিনি এ তাসবীহ পাঠ করেন,
سُبْحَانَ ذِى الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ
উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি ذِى (সেই মহান সত্তার) যিনি মালিক الْجَبَرُوْتِ প্রতাপের, وَالْمَلَكُوْتِ রাজত্বের, وَالْكِبْرِيَاءِ বড়ত্বের وَالْعَظْمَةِ ও মহত্বের ।
অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার যিনি প্রতাপশালী, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্বের মালিক। [আবু দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসাঈ, হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]
৫। আলী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ যখন রুকূতে যেতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন,
اَللّٰهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَ لَكَ اَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِىْ وَ بَصَرِىْ وَ مُخِّىْ وَ عَظْمِىْ وَ عَصَبِىْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশা‘আ লাকা সাম্য়ী ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্খী ওয়া ‘আয্মী ওয়া ‘আসাবী।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَكَ رَكَعْتُ আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, وَبِكَ اٰمَنْتُ আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, وَ لَكَ اَسْلَمْتُ আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। خَشَعَ لَكَ আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে سَمْعِىْ আমার কান, وَبَصَرِىْ আমার চোখ, وَمُخِّىْ আমার মগজ, وَعَظْمِىْ আমার হাড় وَعَصَبِىْ এবং আমার শিরা-উপশিরা ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং শিরা-উপশিরা সবই আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১০৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯০১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৭৪; দার কুতনী, হা/১২৯৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৫২; সুনানে সুগরা লি বায়হাকী, হা/২৬৭।]
১। হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে নামায আদায় করেন। আর তখন তিনি রুকূতে এ দু‘আ পাঠ করেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ
উচ্চারণ : সুব্হা-না রাবিবয়াল ‘আযীম।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْعَظِيْمِ আমার মহান প্রভুর।
অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি (তিনবার)। [আবু দাঊদ, হা/৮৭১; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫০; তিরমিযী, হা/২৬১; নাসাঈ, হা/১০০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৮৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৯২৩।]
২। আয়েশা (রাঃ) বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ বেশি করে রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন,
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালক وَبِحَمْدِكَ এবং তোমার প্রশংসার সাথে, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]
৩। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ রুকূ ও সিজদার মধ্যে এ দু‘আ পড়তেন,
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ
উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ।
শাব্দিক অর্থ : سُبُّوْحٌ (আল্লাহ) পবিত্র, قُدُّوْسٌ ত্রুটিমুক্ত, رَبُّ তিনি রব الْمَلَائِكَةِ ফেরেশতাদের وَ الْرُّوْحِ এবং রুহ তথা জিবরাঈল (আঃ) এরও (রব)।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত; তিনি জিবরাঈল (আঃ) সহ সকল ফেরেশতার রব। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]
৪। আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর সাথে নামাযে দাঁড়ালাম। সে নামাযে তিনি সূরা বাকারা পড়ার পরিমাণ সময় রুকূর মধ্যে ছিলেন। এ সময় তিনি এ তাসবীহ পাঠ করেন,
سُبْحَانَ ذِى الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ
উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি।
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি ذِى (সেই মহান সত্তার) যিনি মালিক الْجَبَرُوْتِ প্রতাপের, وَالْمَلَكُوْتِ রাজত্বের, وَالْكِبْرِيَاءِ বড়ত্বের وَالْعَظْمَةِ ও মহত্বের ।
অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার যিনি প্রতাপশালী, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্বের মালিক। [আবু দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসাঈ, হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]
৫। আলী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ যখন রুকূতে যেতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন,
اَللّٰهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَ لَكَ اَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِىْ وَ بَصَرِىْ وَ مُخِّىْ وَ عَظْمِىْ وَ عَصَبِىْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশা‘আ লাকা সাম্য়ী ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্খী ওয়া ‘আয্মী ওয়া ‘আসাবী।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَكَ رَكَعْتُ আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, وَبِكَ اٰمَنْتُ আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, وَ لَكَ اَسْلَمْتُ আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। خَشَعَ لَكَ আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে سَمْعِىْ আমার কান, وَبَصَرِىْ আমার চোখ, وَمُخِّىْ আমার মগজ, وَعَظْمِىْ আমার হাড় وَعَصَبِىْ এবং আমার শিরা-উপশিরা ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রুকূ করছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং শিরা-উপশিরা সবই আপনার জন্য বিনয় প্রকাশ করছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১০৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯০১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৭৪; দার কুতনী, হা/১২৯৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৫২; সুনানে সুগরা লি বায়হাকী, হা/২৬৭।]
রুকূ হতে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর নাম কাওমা। পিঠ সোজা করে না দাঁড়িয়ে মাথা সামান্য উপরে তুলে সিজদায় চলে গেলে নামাযের ওয়াজিব তরক হবে, তাই ভালোভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর সিজদা, রুকূ ও দু’সিজদার মাঝখানে বসা প্রায় সমান (সময়ের) হতো। [সহীহ বুখারী, হা/৮২০; আবু দাউদ, হা/৮৫২।]
রুকূ হতে উঠার সময় নবী ﷺ বলতেন,
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ
উচ্চারণ : সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্।
শাব্দিক অর্থ : سَمِعَ اللهُ আল্লাহ শোনেন, لِمَنْ حَمِدَهٗ যে তার প্রশংসা করে (তার কথা)।
অর্থ : আল্লাহ সে ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তাঁর প্রশংসা করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯১।]
বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর সিজদা, রুকূ ও দু’সিজদার মাঝখানে বসা প্রায় সমান (সময়ের) হতো। [সহীহ বুখারী, হা/৮২০; আবু দাউদ, হা/৮৫২।]
রুকূ হতে উঠার সময় নবী ﷺ বলতেন,
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ
উচ্চারণ : সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্।
শাব্দিক অর্থ : سَمِعَ اللهُ আল্লাহ শোনেন, لِمَنْ حَمِدَهٗ যে তার প্রশংসা করে (তার কথা)।
অর্থ : আল্লাহ সে ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তাঁর প্রশংসা করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯১।]
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : রাববানা লাকাল হামদ।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের রব! لَكَ আপনার জন্যই الْحَمْدُ সকল প্রশংসা।
অর্থ : হে আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা।
উল্লেখ্য যে, অন্য বর্ণনায় رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ এর স্থলে رَبَّنَا وَ لَكَ الْحَمْدُ বাক্যটি উল্লেখ করা হয়েছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৬৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৮।]
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ
উচ্চারণ : রাববানা ওয়ালাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ্।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের প্রভু, وَلَكَ الْحَمْدُ তোমার জন্য সকল প্রশংসা, حَمْدًا এমন প্রশংসা যা, كَثِيْرًا অনেক, طَيِّبًا পবিত্র, مُبَارَكًا فِيْهِ যাতে রয়েছে বরকত।
অর্থ : হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আর তা এত অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতপূর্ণ।
রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার নবী ﷺ এর পেছনে নামায আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকূ থেকে দাঁড়ালেন, তখন পেছন থেকে এক ব্যক্তি উপরের দু‘আটি পাঠ করল। অতঃপর নামায শেষ হলে নবী ﷺ বললেন, একটু আগে এ কথাগুলো কে বলেছে? তখন ঐ লোকটি বলল, আমি বলেছি। এবার নবী ﷺ বললেন, আমি ৩০ জনেরও অধিক ফেরেশতাকে দেখেছি তারা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছেন যে, কে কার আগে এর সওয়াব লিখবেন এবং আল্লাহর কাছে নিয়ে পৌঁছাবেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪৯৩; সহীহ বুখারী, হা/৭৯৯; আবু দাউদ, হা/৭৭০।]
উচ্চারণ : রাববানা লাকাল হামদ।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের রব! لَكَ আপনার জন্যই الْحَمْدُ সকল প্রশংসা।
অর্থ : হে আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা।
উল্লেখ্য যে, অন্য বর্ণনায় رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ এর স্থলে رَبَّنَا وَ لَكَ الْحَمْدُ বাক্যটি উল্লেখ করা হয়েছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৩; সহীহ বুখারী, হা/৬৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪৮।]
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ
উচ্চারণ : রাববানা ওয়ালাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ্।
শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের প্রভু, وَلَكَ الْحَمْدُ তোমার জন্য সকল প্রশংসা, حَمْدًا এমন প্রশংসা যা, كَثِيْرًا অনেক, طَيِّبًا পবিত্র, مُبَارَكًا فِيْهِ যাতে রয়েছে বরকত।
অর্থ : হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আর তা এত অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতপূর্ণ।
রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার নবী ﷺ এর পেছনে নামায আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকূ থেকে দাঁড়ালেন, তখন পেছন থেকে এক ব্যক্তি উপরের দু‘আটি পাঠ করল। অতঃপর নামায শেষ হলে নবী ﷺ বললেন, একটু আগে এ কথাগুলো কে বলেছে? তখন ঐ লোকটি বলল, আমি বলেছি। এবার নবী ﷺ বললেন, আমি ৩০ জনেরও অধিক ফেরেশতাকে দেখেছি তারা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছেন যে, কে কার আগে এর সওয়াব লিখবেন এবং আল্লাহর কাছে নিয়ে পৌঁছাবেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪৯৩; সহীহ বুখারী, হা/৭৯৯; আবু দাউদ, হা/৭৭০।]
সিজদার অর্থ ইবাদাতের উদ্দেশ্যে চেহারা মাটিতে রাখা। রুকূ হতে ওঠে কাওমার দু‘আ শেষে اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) বলে সিজদায় যেতে হবে। নাক, কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগসহ মোট ৭টি অঙ্গ মাটিতে লাগিয়ে সিজদা করবে। সিজদার সময় হাত দুটি কিবলামুখী করে মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে এবং কনুই ও বগল থেকে ফাঁক রাখবে। হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দেবে না। সিজদায় দু’কনুই উঁচু করে রাখবে এবং কোনভাবেই দু’হাত কুকুরের মতো মাটিতে বিছিয়ে দেয়া যাবে না। সিজদার সময় উভয় পায়ের আঙ্গুলি কিবলার দিকে রাখবে। দু’পায়ের গোড়ালী একত্রে মিলিয়ে রাখবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বান্দা যখন সিজদা করে, তখন তার সঙ্গে তার সাতটি অঙ্গ সিজদা করে, তার মুখমন্ডল, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং দু’পায়ের অগ্রভাগ। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২৮; আবু দাউদ, হা/৮৯১; তিরমিযী, হা/২৭২; নাসাঈ, হা/১০৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৫।]
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সিজদায় স্থিরতা অবলম্বন করো এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে কুকুরের মতো না বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; নাসাঈ, হা/১১১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৭০; বায়হাকী, হা/২৫৩১; জামেউস সগীর, হা/১৯২২; মিশকাত, হা/৮৮৮।]
সিজদার মধ্যে স্থিরতা অবলম্বন করা :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমরা সিজদার মধ্যে তা‘দীল করো। অর্থাৎ ধীরস্থিরভাবে সিজদা করো। তোমাদের মধ্যে কোন লোক যেন সিজদায় তার বাহুদ্বয় কুকুরের বাহুদ্বয়ের মতো (মাটিতে) বিছিয়ে না দেয়। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; তিরমিযী, হা/২৭৬।]
সিজদা হলো দাসত্ব প্রকাশের সর্বোচ্চ স্তর। বান্দা যতবেশি সিজদা দিতে থাকে, ততবেশি সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ﴾
তুমি সিজদা করো এবং আমার নিকটবর্তী হও। (সূরা আলাক- ১৯)
সিজদার স্বরূপ :
আমরা সিজদায় গিয়ে এটা প্রকাশ করি যে, হে আল্লাহ! আপনার কুদরতের সামনে আমি একেবারে তুচ্ছ। গর্ব-অহংকার করার মতো আমার কিছুই নেই। আমি রুকূতে থাকতে আপনার সামনে মাথা নত করেছিলাম। এখন আমি গোলামীর আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে আমার শরীরের সবচেয়ে সম্মানিত অঙ্গ কপালকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলাম। আমার পা, হাঁটু, হাত, নাক ও কপাল আপনাকে সিজদা করছে। আমি নিজেকে আপনার মাহাত্ম্যের সামনে বিলীন করে দিলাম। কারণ আপনি হলেন মহান বাদশা, আমার সৃষ্টিকর্তা ও মালিক।
সিজদার গুরুত্ব :
সিজদা নামাযের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বাদ গেলে উক্ত নামায বাতিল হয়ে যায়। এর মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমার উচিত আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা করা। কেননা তুমি যখন একটি সিজদা করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৩১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৫; মিশকাত, হা/৮৯৭।]
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهٖ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
অর্থাৎ সিজদা অবস্থায় বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় অধিক দু‘আ করবে। [সহীহ মুসলিম হা/৯৭০; আবু দাউদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৮; বায়হাকী, হা/২৫১৭; মিশকাত, হা/৮৯৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, বান্দা যখন সিজদা করে, তখন তার সঙ্গে তার সাতটি অঙ্গ সিজদা করে, তার মুখমন্ডল, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং দু’পায়ের অগ্রভাগ। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২৮; আবু দাউদ, হা/৮৯১; তিরমিযী, হা/২৭২; নাসাঈ, হা/১০৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৮৫।]
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সিজদায় স্থিরতা অবলম্বন করো এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে কুকুরের মতো না বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; নাসাঈ, হা/১১১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৭০; বায়হাকী, হা/২৫৩১; জামেউস সগীর, হা/১৯২২; মিশকাত, হা/৮৮৮।]
সিজদার মধ্যে স্থিরতা অবলম্বন করা :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমরা সিজদার মধ্যে তা‘দীল করো। অর্থাৎ ধীরস্থিরভাবে সিজদা করো। তোমাদের মধ্যে কোন লোক যেন সিজদায় তার বাহুদ্বয় কুকুরের বাহুদ্বয়ের মতো (মাটিতে) বিছিয়ে না দেয়। [সহীহ বুখারী, হা/৮২২; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩০; তিরমিযী, হা/২৭৬।]
সিজদা হলো দাসত্ব প্রকাশের সর্বোচ্চ স্তর। বান্দা যতবেশি সিজদা দিতে থাকে, ততবেশি সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ﴾
তুমি সিজদা করো এবং আমার নিকটবর্তী হও। (সূরা আলাক- ১৯)
সিজদার স্বরূপ :
আমরা সিজদায় গিয়ে এটা প্রকাশ করি যে, হে আল্লাহ! আপনার কুদরতের সামনে আমি একেবারে তুচ্ছ। গর্ব-অহংকার করার মতো আমার কিছুই নেই। আমি রুকূতে থাকতে আপনার সামনে মাথা নত করেছিলাম। এখন আমি গোলামীর আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে আমার শরীরের সবচেয়ে সম্মানিত অঙ্গ কপালকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলাম। আমার পা, হাঁটু, হাত, নাক ও কপাল আপনাকে সিজদা করছে। আমি নিজেকে আপনার মাহাত্ম্যের সামনে বিলীন করে দিলাম। কারণ আপনি হলেন মহান বাদশা, আমার সৃষ্টিকর্তা ও মালিক।
সিজদার গুরুত্ব :
সিজদা নামাযের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বাদ গেলে উক্ত নামায বাতিল হয়ে যায়। এর মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমার উচিত আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা করা। কেননা তুমি যখন একটি সিজদা করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৩১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৮৫; মিশকাত, হা/৮৯৭।]
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهٖ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ
অর্থাৎ সিজদা অবস্থায় বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় অধিক দু‘আ করবে। [সহীহ মুসলিম হা/৯৭০; আবু দাউদ, হা/৮৭৫; নাসাঈ, হা/১১৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৮; বায়হাকী, হা/২৫১৭; মিশকাত, হা/৮৯৩।]
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى (১)
উচ্চারণ : সুবহা-না রাবিবয়াল আ‘লা (তিন বার)। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; তিরমিযী, হা/২৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯০।]
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْاَعْلٰى আমার মহান রবের।
অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
(২) اَللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهٗ وَشَقَّ سَمْعَهٗ وَبَصَرَهٗ تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাত্তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজ্হীয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহূ ওয়া বাসারাহূ, তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লিকীন।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمّ হে আল্লাহ! لَكَ আপনার জন্য سَجَدْتُّ আমি সিজদা করছি। وَبِكَ আপনার প্রতি اٰمَنْتُ আমি ঈমান এনেছি وَلَكَ اَسْلَمْتُ এবং আমি আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। سَجَدَ সিজদা করছে وَجْهِىَ আমার চেহারা لِلَّذِىْ ঐ সত্তাকে যিনি خَلَقَهٗ তাকে সৃষ্টি করেছেন وَشَقَّ এবং তাতে স্থাপন করেছেন سَمْعَهٗ তার কান ও وَبَصَرَهٗ তার চক্ষু । تَبَارَكَ اللهُ বরকতময় সেই মহান সত্তা, اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার চেহারা সিজদা করছে ঐ সত্তাকে- যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। বরকতময় সেই মহান সত্তা, যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১১২৬; ইবনে মাজাহ, হা/১০৫৪।]
(৩) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذَنْۢبِىْ كُلَّهٗ دِقَّهٗ وَجِلَّهٗ وَاَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ وَعَلَانِيَّتَهٗ وَسِرَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফির্লী যাম্বী কুল্লাহূ দিক্কাহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা-নিয়্যাতাহূ ওয়া সিররাহূ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اغْفِرْ لِىْ আমাকে ক্ষমা করে দাও ذَنْبِىْ كُلَّهٗ আমার সকল প্রকার গোনাহ دِقَّهٗ ছোট গোনাহ, وَجِلَّهٗ বড় গোনাহ وَاَوَّلَهٗ আগের গোনাহ وَاٰخِرَهٗ পরের গোনাহ, وَعَلَانِيَّتَهٗ প্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ وَسِرَّهٗ এবং অপ্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার ছোট-বড়, আগের-পরের, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার গোনাহ ক্ষমা করে দিন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১২; আবু দাউদ, হা/৮৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৭২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৩১।]
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ (৪)
উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]
(৫) سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ
উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]
(৬) سُبْحَانَ ذِىْ الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ
উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি। [আবু দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসাঈ, হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]
উচ্চারণ : সুবহা-না রাবিবয়াল আ‘লা (তিন বার)। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; তিরমিযী, হা/২৬১; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯০।]
শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْاَعْلٰى আমার মহান রবের।
অর্থ : আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
(২) اَللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَهٗ وَشَقَّ سَمْعَهٗ وَبَصَرَهٗ تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাত্তু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজ্হীয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহূ ওয়া বাসারাহূ, তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লিকীন।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمّ হে আল্লাহ! لَكَ আপনার জন্য سَجَدْتُّ আমি সিজদা করছি। وَبِكَ আপনার প্রতি اٰمَنْتُ আমি ঈমান এনেছি وَلَكَ اَسْلَمْتُ এবং আমি আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। سَجَدَ সিজদা করছে وَجْهِىَ আমার চেহারা لِلَّذِىْ ঐ সত্তাকে যিনি خَلَقَهٗ তাকে সৃষ্টি করেছেন وَشَقَّ এবং তাতে স্থাপন করেছেন سَمْعَهٗ তার কান ও وَبَصَرَهٗ তার চক্ষু । تَبَارَكَ اللهُ বরকতময় সেই মহান সত্তা, اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার চেহারা সিজদা করছে ঐ সত্তাকে- যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। বরকতময় সেই মহান সত্তা, যিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/১১২৬; ইবনে মাজাহ, হা/১০৫৪।]
(৩) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذَنْۢبِىْ كُلَّهٗ دِقَّهٗ وَجِلَّهٗ وَاَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ وَعَلَانِيَّتَهٗ وَسِرَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফির্লী যাম্বী কুল্লাহূ দিক্কাহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা-নিয়্যাতাহূ ওয়া সিররাহূ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اغْفِرْ لِىْ আমাকে ক্ষমা করে দাও ذَنْبِىْ كُلَّهٗ আমার সকল প্রকার গোনাহ دِقَّهٗ ছোট গোনাহ, وَجِلَّهٗ বড় গোনাহ وَاَوَّلَهٗ আগের গোনাহ وَاٰخِرَهٗ পরের গোনাহ, وَعَلَانِيَّتَهٗ প্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ وَسِرَّهٗ এবং অপ্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার ছোট-বড়, আগের-পরের, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার গোনাহ ক্ষমা করে দিন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১২; আবু দাউদ, হা/৮৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬৭২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৩১।]
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ (৪)
উচ্চারণ : সুব্হা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী। [সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; আবু দাউদ, হা/৮৭৭; নাসাঈ, হা/১১২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৫।]
(৫) سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ
উচ্চারণ : সুববূহুন কুদ্দূসুন, রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ। [সহীহ মুসলিম, হা/১১১৯; আবু দাউদ, হা/৮৭২; নাসাঈ, হা/১০৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১০৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৮৯৯; দার কুতনী, হা/১৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৩।]
(৬) سُبْحَانَ ذِىْ الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ
উচ্চারণ : সুব্হানা যিল্ যাবারূতি ওয়াল্ মালাকূতি ওয়াল্ কিব্রিয়াই ওয়াল্ ‘আয্মাতি। [আবু দাঊদ, হা/৮৭৩, নাসাঈ, হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/২৭৫০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৪৫০।]
দু’সিজদার মধ্যখানে একবার বসতে হয়, একে জলসা বলা হয়। সোজা হয়ে বসা ওয়াজিব। এ সময় ডান পা খাড়া রেখে বাম পা মাটিতে বিছিয়ে উহার উপর বসতে হয়। যথাসম্ভব আঙ্গুলের মাথা কিবলার দিকে রাখতে হয়। হাতের আঙ্গুল স্বাভাবিকভাবে হাঁটুর উপর রাখতে হয়। এ সময় হাদীসে বর্ণিত দু‘আ পড়া সুন্নাত। অনেক ইমাম এক সিজদা দিয়ে এত তাড়াতাড়ি অপর সিজদায় চলে যান যে, কোন দু‘আ পড়ার সুযোগই থাকে না। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ যতক্ষণ সিজদায় থাকতেন ততক্ষণ দু’সিজদার মধ্যখানে বসতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮২০; আবু দাউদ, হা/৮৫২।]
দু’সিজদার মধ্যখানের দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া‘আ-ফিনী ওয়ার যুক্বনী।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, وَارْحَمْنِيْ আমার প্রতি দয়া করুন, وَاهْدِنِيْ আর আমাকে সঠিক পথ দেখান, وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপদ রাখুন, وَارْزُقْنِيْ এবং আমাকে রিযিক দান করুন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। [আবু দাউদ, হা/৮৫০; তিরমিযী, হা/২৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৬৪; বায়হাকী, হা/২৫৮৪; মিশকাত, হা/৯০০।]
(২) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : রাবিবগ ফিরলী, রাবিবগ ফিরলী ।
শাব্দিক অর্থ : رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন। رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; নাসাঈ, হা/১০৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪২৩; বায়হাকী, হা/২৫৮২; মিশকাত, হা/১২০০।]
এবার দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর- এভাবেই আল্লাহর ধ্যান ও খেয়ালে বাকি রাক‘আতগুলোও পড়তে হবে।
দু’সিজদার মধ্যখানের দু‘আ :
(১) اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া‘আ-ফিনী ওয়ার যুক্বনী।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, وَارْحَمْنِيْ আমার প্রতি দয়া করুন, وَاهْدِنِيْ আর আমাকে সঠিক পথ দেখান, وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপদ রাখুন, وَارْزُقْنِيْ এবং আমাকে রিযিক দান করুন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। [আবু দাউদ, হা/৮৫০; তিরমিযী, হা/২৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮৯৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৯৬৪; বায়হাকী, হা/২৫৮৪; মিশকাত, হা/৯০০।]
(২) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ : রাবিবগ ফিরলী, রাবিবগ ফিরলী ।
শাব্দিক অর্থ : رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন। رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; নাসাঈ, হা/১০৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪২৩; বায়হাকী, হা/২৫৮২; মিশকাত, হা/১২০০।]
এবার দ্বিতীয় সিজদা দেয়ার পর- এভাবেই আল্লাহর ধ্যান ও খেয়ালে বাকি রাক‘আতগুলোও পড়তে হবে।
اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্ব ত্বায়্যিবা-ত, আসসালামু ‘আলাইকা আয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়াবারাকা-তুহ। আসসালা-মু ‘আলাইনা ওয়া‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়ারাসূলুহ।
শাব্দিক অর্থ : اَلتَّحِيَّاتُ সকল সম্মান, لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য, وَالصَّلَوَاتُ সকল প্রার্থনা, وَالطَّيِّبَاتُ সকল পবিত্র বাণীসমূহ (সবই আল্লাহর জন্য), اَلسَّلَامُ শামিত্ম, عَلَيْكَ আপনার প্রতি (বর্ষিত হোক), اَيُّهَا النَّبِىُّ হে নবী! وَرَحْمَةُ اللهِ এবং আল্লাহর রহমত, وَبَرَكَاتُهٗ এবং তাঁর বরকত (আপনার উপর বর্ষিত হোক), اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপর, وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ আর আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর, اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া, وَاَشْهَدُ আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, اَنَّ مُحَمَّدًا অবশ্যই মুহাম্মাদ, عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা, وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল।
অর্থ : (আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, নামায ও পবিত্র বাক্যসমূহ আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপরও শান্তি অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪; তিরমিযী, হা/২৮৯; নাসাঈ, হা/১১৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৯; মিশকাত, হা/৯০৯; আবু দাউদ, হা/৯৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০০৬; ।]
তাশাহ্হুদ পড়ার সময় বিনয়ের সাথে বসে প্রথমে আল্লাহর গুণগান করতে হয় এভাবে اَلتَّحِيَّاتُ للهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ‘‘(আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, নামায ও পবিত্র বাক্যসমূহ সবই আল্লাহর জন্য।’’ এরপর নবী ﷺ এর কথা স্মরণ করে তাঁর প্রতি সালাম জানাই এভাবে اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ ‘‘হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি (বর্ষিত হোক), আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক।’’ এরপর আমরা নিজেদের প্রতি এবং সকল সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রতি সালাম পেশ করি : اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ ‘‘শান্তি নাযিল হোক আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের প্রতি।’’ নবী ﷺ বলেন, এ দু‘আ আসমান ও জমিনে যত নেক বান্দা আছেন, সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪।]
তারপর আমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও নবী ﷺ এর নবুওতের স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের ঈমানকে তাজা করি - اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচিছ যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’
উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্ব ত্বায়্যিবা-ত, আসসালামু ‘আলাইকা আয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়াবারাকা-তুহ। আসসালা-মু ‘আলাইনা ওয়া‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লিহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়ারাসূলুহ।
শাব্দিক অর্থ : اَلتَّحِيَّاتُ সকল সম্মান, لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য, وَالصَّلَوَاتُ সকল প্রার্থনা, وَالطَّيِّبَاتُ সকল পবিত্র বাণীসমূহ (সবই আল্লাহর জন্য), اَلسَّلَامُ শামিত্ম, عَلَيْكَ আপনার প্রতি (বর্ষিত হোক), اَيُّهَا النَّبِىُّ হে নবী! وَرَحْمَةُ اللهِ এবং আল্লাহর রহমত, وَبَرَكَاتُهٗ এবং তাঁর বরকত (আপনার উপর বর্ষিত হোক), اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপর, وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ আর আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর, اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া, وَاَشْهَدُ আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, اَنَّ مُحَمَّدًا অবশ্যই মুহাম্মাদ, عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা, وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল।
অর্থ : (আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, নামায ও পবিত্র বাক্যসমূহ আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপরও শান্তি অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪; তিরমিযী, হা/২৮৯; নাসাঈ, হা/১১৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৮৯৯; মিশকাত, হা/৯০৯; আবু দাউদ, হা/৯৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০০৬; ।]
তাশাহ্হুদ পড়ার সময় বিনয়ের সাথে বসে প্রথমে আল্লাহর গুণগান করতে হয় এভাবে اَلتَّحِيَّاتُ للهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ‘‘(আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, নামায ও পবিত্র বাক্যসমূহ সবই আল্লাহর জন্য।’’ এরপর নবী ﷺ এর কথা স্মরণ করে তাঁর প্রতি সালাম জানাই এভাবে اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ ‘‘হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি (বর্ষিত হোক), আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক।’’ এরপর আমরা নিজেদের প্রতি এবং সকল সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রতি সালাম পেশ করি : اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ ‘‘শান্তি নাযিল হোক আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের প্রতি।’’ নবী ﷺ বলেন, এ দু‘আ আসমান ও জমিনে যত নেক বান্দা আছেন, সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৪।]
তারপর আমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও নবী ﷺ এর নবুওতের স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের ঈমানকে তাজা করি - اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচিছ যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’
তাশাহ্হুদ হলো জীবন পরিচালনা করার নীতি নির্ধারণী ঘোষণা এবং এ নীতি অনুযায়ী চলার প্রকাশ্য ওয়াদা। যার মর্মার্থ হলো, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে সবসময় আল্লাহকে একমাত্র হুকুমকর্তা ও মনীব মেনে চলব এবং আল্লাহর হুকুমের বিরোধী কারো হুকুম মানব না। আর মুহাম্মাদ ﷺ কে একমাত্র আদর্শ নেতা হিসেবে মেনে নেব এবং তাঁর আদর্শ ছাড়া অন্য কারো আদর্শের অনুসরণ করব না।
এ জন্যই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতে আদায় করার হুকুম দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার জীবন শুরু হবে ফজরের নামায দিয়ে এবং শেষ হবে এশার নামায দিয়ে। মধ্যখানে আরো ৩ বার সকল কাজকর্ম মুলতবী রেখে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। ২৪ ঘণ্টার রুটিন নামায দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। কাজের জন্য নামাযকে মুলতবী করা যাবে না; বরং নামাযের জন্যই কাজকে মুলতবী রাখতে হবে।
বান্দা যতক্ষণ নামাযে থাকবে ততক্ষণ তার সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মন-মগজকে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী ব্যবহার করবে। নামাযে নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কিছু বলা ও করা যাবে না। এভাবেই নামাযের মাধ্যমে দেহ ও মনকে সর্বত্র আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ব্যবহার করার যোগ্যতা তৈরি করতে হবে।
এ জন্যই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতে আদায় করার হুকুম দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার জীবন শুরু হবে ফজরের নামায দিয়ে এবং শেষ হবে এশার নামায দিয়ে। মধ্যখানে আরো ৩ বার সকল কাজকর্ম মুলতবী রেখে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। ২৪ ঘণ্টার রুটিন নামায দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। কাজের জন্য নামাযকে মুলতবী করা যাবে না; বরং নামাযের জন্যই কাজকে মুলতবী রাখতে হবে।
বান্দা যতক্ষণ নামাযে থাকবে ততক্ষণ তার সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মন-মগজকে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী ব্যবহার করবে। নামাযে নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কিছু বলা ও করা যাবে না। এভাবেই নামাযের মাধ্যমে দেহ ও মনকে সর্বত্র আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ব্যবহার করার যোগ্যতা তৈরি করতে হবে।
দরূদের গুরুত্ব ও ফযীলত :
নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়ার পর আমরা দরূদ পড়ি। দরূদ পড়ার সময় এ নিয়তে দরূদ পড়তে হবে যে, আমার এ দরূদ নবী ﷺ এর কাছে পৌঁছানো হবে এবং এ দরূদের সওয়াব আমি নিজে পাব। নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৪৮৪; জামেউস সগীর, হা/৬১৫; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২০১৮; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়ার পর আমরা দরূদ পড়ি। দরূদ পড়ার সময় এ নিয়তে দরূদ পড়তে হবে যে, আমার এ দরূদ নবী ﷺ এর কাছে পৌঁছানো হবে এবং এ দরূদের সওয়াব আমি নিজে পাব। নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৪৮৪; জামেউস সগীর, হা/৬১৫; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২০১৮; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) বলেন, আমরা নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার এবং আপনার পরিবারের প্রতি কীভাবে দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, এভাবে পড়বে,
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ ‐ - اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ صَلِّ হে আল্লাহ! আপনি রহমত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا صَلَّيْتَ যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর, اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি, حَمِيْدٌ প্রশংসিত, مَّجِيْدٌ মহিমান্বিত, اَللّٰهُمَّ بَارِكْ হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا بَارَكْتَ যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর। اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের প্রতি রহমত নাযিল করুন, যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন, যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮।]
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ ‐ - اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ صَلِّ হে আল্লাহ! আপনি রহমত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا صَلَّيْتَ যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর, اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি, حَمِيْدٌ প্রশংসিত, مَّجِيْدٌ মহিমান্বিত, اَللّٰهُمَّ بَارِكْ হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا بَارَكْتَ যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর। اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের প্রতি রহমত নাযিল করুন, যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন, যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তাশাহ্হুদ শেষ হলে তোমরা তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী দু‘আ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৯২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬২২; সুনানুস সগীর লিল বায়হাকী, হা/৩৩৯; শারহুল মা‘আনী, হা/১৪১৭।] নিম্নে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাশাহ্হুদের পর যেসব দু‘আ পাঠ করতেন সেগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (তাশাহ্হুদের পর) এ দু‘আ পাঠ করতেন,
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ‐ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাব্র, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়ালমামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল মা’ছামি ওয়াল মাগরাম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি, اَعُوْذُ بِكَ আপনার কাছে আশ্রয় চাই, مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ জাহান্নামের শাস্তি হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ আশ্রয় চাই মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ আর আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই, مِنَ الْمَأْثَمِ পাপ থেকে, وَالْمَغْرَمِ এবং ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণ হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাউদ, হা/৮৮০; নাসাঈ, হা/১৩০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬২২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৫২; বায়হাকী, হা/২৭০১; মিশকাত, হা/৯৩৯।]
২. আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি দু‘আ শিক্ষা দিন, যা আমি নামাযের মধ্যে পাঠ করতে পারব। তখন তিনি বললেন, তুমি এ দু‘আ পাঠ করবে,
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরাও ওয়ালা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগ্ফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি, ظَلَمْتُ অন্যায় করেছি, نَفْسِيْ আমার নিজের উপর, ظُلْمًا كَثِيْرًا অনেক অন্যায়, وَّ لَا يَغْفِرُ আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না, اَلذُّنُوْبَ গোনাহসমূহ, اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া, فَاغْفِرْ لِيْ অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন, مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ নিজ ক্ষমা দ্বারা, وَارْحَمْنِيْ আর আমার উপর দয়া করুন, اِنَّكَ اَنْتَ নিশ্চয় আপনি, اَلْغَفُوْرُ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, اَلرَّحِيْمُ অত্যন্ত দয়ালু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং তুমি নিজ ক্ষমা দ্বারা আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩৪; তিরমিযী, হা/৩৫৩১; নাসাঈ, হা/১৩০২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৪৬।]
১. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (তাশাহ্হুদের পর) এ দু‘আ পাঠ করতেন,
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ‐ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাব্র, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, ওয়া আঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়ালমামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল মা’ছামি ওয়াল মাগরাম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি, اَعُوْذُ بِكَ আপনার কাছে আশ্রয় চাই, مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ জাহান্নামের শাস্তি হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ আশ্রয় চাই মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ আর আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই, مِنَ الْمَأْثَمِ পাপ থেকে, وَالْمَغْرَمِ এবং ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণ হতে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩২; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৫৩; আবু দাউদ, হা/৮৮০; নাসাঈ, হা/১৩০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬২২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৫২; বায়হাকী, হা/২৭০১; মিশকাত, হা/৯৩৯।]
২. আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি দু‘আ শিক্ষা দিন, যা আমি নামাযের মধ্যে পাঠ করতে পারব। তখন তিনি বললেন, তুমি এ দু‘আ পাঠ করবে,
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরাও ওয়ালা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগ্ফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি, ظَلَمْتُ অন্যায় করেছি, نَفْسِيْ আমার নিজের উপর, ظُلْمًا كَثِيْرًا অনেক অন্যায়, وَّ لَا يَغْفِرُ আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না, اَلذُّنُوْبَ গোনাহসমূহ, اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া, فَاغْفِرْ لِيْ অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন, مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ নিজ ক্ষমা দ্বারা, وَارْحَمْنِيْ আর আমার উপর দয়া করুন, اِنَّكَ اَنْتَ নিশ্চয় আপনি, اَلْغَفُوْرُ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, اَلرَّحِيْمُ অত্যন্ত দয়ালু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং তুমি নিজ ক্ষমা দ্বারা আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। [সহীহ বুখারী, হা/৮৩৪; তিরমিযী, হা/৩৫৩১; নাসাঈ, হা/১৩০২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮৪৬।]
নামাযের সর্বশেষ স্তর হলো সালাম। তাশাহ্হুদ, দরূদ এবং অন্যান্য দু‘আসমূহ পড়ার পর প্রথমে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে হবে, ‘‘আস্সালা-মু ‘আলাইকুম্ ওয়া রাহ্মাতুল্লা-হ’’। এরপর বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে অনুরূপ বলতে হবে। এই সালাম ফিরানোর মধ্য দিয়েই নামায শেষ হয়। নামায শুরু হয় ‘‘ আল্লা-হু আকবার’’ অর্থাৎ আল্লাহর মহিমা ঘোষণার মাধ্যমে আর শেষ হয় ‘‘রাহমাতুল্লাহ’’ অর্থাৎ আল্লাহর অনুগ্রহ কামনার মধ্য দিয়ে।
ডান-বামের মুসল্লি এবং ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে এ সালাম দিতে হয়। ইমাম সাহেব মুক্তাদীদের উদ্দেশ্য করে আর মুক্তাদীরা ইমামের সালামের জবাব হিসেবে সালাম দিবেন। আর একাকী নামায আদায়কারী ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন।
ডান-বামের মুসল্লি এবং ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে এ সালাম দিতে হয়। ইমাম সাহেব মুক্তাদীদের উদ্দেশ্য করে আর মুক্তাদীরা ইমামের সালামের জবাব হিসেবে সালাম দিবেন। আর একাকী নামায আদায়কারী ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন।
ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর নবী ﷺ যেসব দু‘আ পাঠ করতেন তা হাদীসের সকল কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। সেই দু‘আগুলো বাদ দিয়ে প্রচলিত মুনাজাত করার কারণে অনেকেই ঐ দু‘আগুলো শিখেন না বা আমল করেন না। এজন্য উচিত হলো সালাম ফিরানোর পর হাদীসে বর্ণিত ঐ দু‘আগুলো এককভাবে পাঠ করা। দু‘আগুলো নিম্নরূপ :
(১) একবার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) বলা :
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাকবীর শুনে বুঝতাম যে, নবী ﷺ এর নামায শেষ হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩২।]
(২) তিনবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : আসতাগ্ফিরুল্লা-হ।
শাব্দিক অর্থ : اَسْتَغْفِرُ আমি ক্ষমা চাই اللهَ আল্লাহর কাছে।
অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; তিরমিযী, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৬১; নাসাঈ, হা/১৩৩৭।]
(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্যালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ السَّلَامُ আপনি শান্তি, - وَمِنْكَ السَّلَامُ আপনার থেকেই শান্তি আসে। تَبَارَكْتَ আপনি বরকতময় يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী!।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়।
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায শেষ করে তিনবার ইসতিগ্ফার করতেন এবং আল্লা-হুম্মা আনতাস সালাম.... এ দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭; তিরমিযী, হা/৩০০;।]
(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুস্ সানা-উলহাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। لَا حَوْلَ কোন ক্ষমতা নেই وَلَاقُوَّةَ এবং কোন শক্তিও নেই اِلَّا بِاللهِ আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত। لَا اِلٰهَ আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত। وَ لَا نَعْبُدُ আমরা আর কারো ইবাদাত করি না اِلَّا اِيَّاهُ আল্লাহ ছাড়া। لَهُ النِّعْمَةُ সকল নিয়ামত তাঁরই وَلَهُ الْفَضْلُ সকল অনুগ্রহ তাঁরই এবং وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
আবু যুবায়ের (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযে সালাম ফিরানোর পর এ দু‘আটি পাঠ করতেন। তিনি (ইবনে যুবায়ের) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের পর কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০।]
(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَا مَانِعَ বাধা দেয়ার কেউ নেই لِمَا اَعْطَيْتَ তুমি যা দিতে চাও তা وَلَا مُعْطِيَ এবং তা দেয়ারও কেউ নেই لِمَا مَنَعْتَ যা তুমি বাধা দাও। وَلَا يَنْفَعُ প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই ذَا الْجَدِّ প্রচেষ্টাকারীর مِنْكَ الْجَدُّ তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং তুমি যা বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই।
মুগীরা ইবনে শু‘বার কাতিব (সেক্রেটারী) ওয়ার্রাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনে শু‘বা আমাকে দিয়ে মু‘আবিয়াকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি লিখালেন যে, নবী ﷺ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/১৫০৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪১।]
(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعِنِّيْ আমাকে সাহায্য করো عَلٰى ذِكْرِكَ তোমার যিকিরের ক্ষেত্রে, وَشُكْرِكَ তোমার শুকরিয়া আদায় করার ক্ষেত্রে وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো।
মু‘আয (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। তখন মু‘আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার,
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তার কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ সমস্ত রাজত্ব তার জন্য وَلَهُ الْحَمْدُ এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। وَهُوَ আর তিনি عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ সবকিছুর উপর قَدِيْرٌ ক্ষমতাবান।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) ও ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু........ এ দু‘আটি পড়ে একশ বার পূর্ণ করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০১।]
(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
﴿اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
উচ্চারণ : আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূম। লা-তা’খুযুহূ সিনাতুঁ ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরয্। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা- বিইয্নিহ, ইয়া‘লামু মা- বাইনা আইদীহিম ওয়া মা-খাল্ফাহুম। ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশায়ইম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা- বিমা-শা-আ ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরয্, ওয়ালা-ইয়াউদুহূ হিফ্যুহুমা- ওয়া হুয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللهُ আল্লাহ তিনি, لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। اَلْحَيُّ যিনি চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ ও চিরস্থায়ী। لَا تَأْخُذُه তাঁকে গ্রাস করতে পারে না سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোন কিছুই। لَهٗ সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন مَا فِي السَّمَاوَاتِ যা কিছু আছে আসমানসমূহে وَمَا فِي الْاَرْضِ ও যা কিছু আছে জমিনে। مَنْ ذَا الَّذِيْ এমন কে আছে, যে يَشْفَعُ সুপারিশ করতে পারে عِنْدَهٗ তাঁর নিকট اِلَّا بِاِذْنِه তাঁর হুকুম ব্যতীত? يَعْلَمُ তিনি জানেন مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ যা কিছু আছে তাদের সম্মুখে وَمَا خَلْفَهُمْ ও যা কিছু আছে তাদের পেছনে। وَلَا يُحِيْطُوْنَ তারা আয়ত্ব করতে পারে না بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه তাঁর জ্ঞান হতে কোন কিছুই اِلَّا بِمَا شَآءَ তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। وَسِعَ বেষ্টন করে আছে كُرْسِيُّهُ তার সিংহাসন اَلسَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ আসমানসমূহ ও জমিনকে। وَلَا يَئُوْدُهٗ আর তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না حِفْظُهُمَا সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। وَهُوَ আর তিনি اَلْعَلِيُّ সর্বোচ্চ اَلْعَظِيْمُ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাকারা- ২৫৫)
অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞান হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাকারা- ২৫৫)
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।]
(১) একবার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) বলা :
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাকবীর শুনে বুঝতাম যে, নবী ﷺ এর নামায শেষ হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩২।]
(২) তিনবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : আসতাগ্ফিরুল্লা-হ।
শাব্দিক অর্থ : اَسْتَغْفِرُ আমি ক্ষমা চাই اللهَ আল্লাহর কাছে।
অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; তিরমিযী, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৬১; নাসাঈ, হা/১৩৩৭।]
(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্যালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ السَّلَامُ আপনি শান্তি, - وَمِنْكَ السَّلَامُ আপনার থেকেই শান্তি আসে। تَبَارَكْتَ আপনি বরকতময় يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী!।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়।
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায শেষ করে তিনবার ইসতিগ্ফার করতেন এবং আল্লা-হুম্মা আনতাস সালাম.... এ দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭; তিরমিযী, হা/৩০০;।]
(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুস্ সানা-উলহাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। لَا حَوْلَ কোন ক্ষমতা নেই وَلَاقُوَّةَ এবং কোন শক্তিও নেই اِلَّا بِاللهِ আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত। لَا اِلٰهَ আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত। وَ لَا نَعْبُدُ আমরা আর কারো ইবাদাত করি না اِلَّا اِيَّاهُ আল্লাহ ছাড়া। لَهُ النِّعْمَةُ সকল নিয়ামত তাঁরই وَلَهُ الْفَضْلُ সকল অনুগ্রহ তাঁরই এবং وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
আবু যুবায়ের (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযে সালাম ফিরানোর পর এ দু‘আটি পাঠ করতেন। তিনি (ইবনে যুবায়ের) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের পর কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০।]
(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَا مَانِعَ বাধা দেয়ার কেউ নেই لِمَا اَعْطَيْتَ তুমি যা দিতে চাও তা وَلَا مُعْطِيَ এবং তা দেয়ারও কেউ নেই لِمَا مَنَعْتَ যা তুমি বাধা দাও। وَلَا يَنْفَعُ প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই ذَا الْجَدِّ প্রচেষ্টাকারীর مِنْكَ الْجَدُّ তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং তুমি যা বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই।
মুগীরা ইবনে শু‘বার কাতিব (সেক্রেটারী) ওয়ার্রাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনে শু‘বা আমাকে দিয়ে মু‘আবিয়াকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি লিখালেন যে, নবী ﷺ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/১৫০৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪১।]
(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعِنِّيْ আমাকে সাহায্য করো عَلٰى ذِكْرِكَ তোমার যিকিরের ক্ষেত্রে, وَشُكْرِكَ তোমার শুকরিয়া আদায় করার ক্ষেত্রে وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো।
মু‘আয (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। তখন মু‘আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার,
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর।
শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তার কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ সমস্ত রাজত্ব তার জন্য وَلَهُ الْحَمْدُ এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। وَهُوَ আর তিনি عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ সবকিছুর উপর قَدِيْرٌ ক্ষমতাবান।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) ও ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু........ এ দু‘আটি পড়ে একশ বার পূর্ণ করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০১।]
(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
﴿اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
উচ্চারণ : আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূম। লা-তা’খুযুহূ সিনাতুঁ ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরয্। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা- বিইয্নিহ, ইয়া‘লামু মা- বাইনা আইদীহিম ওয়া মা-খাল্ফাহুম। ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশায়ইম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা- বিমা-শা-আ ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরয্, ওয়ালা-ইয়াউদুহূ হিফ্যুহুমা- ওয়া হুয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
শাব্দিক অর্থ : اَللهُ আল্লাহ তিনি, لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। اَلْحَيُّ যিনি চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ ও চিরস্থায়ী। لَا تَأْخُذُه তাঁকে গ্রাস করতে পারে না سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোন কিছুই। لَهٗ সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন مَا فِي السَّمَاوَاتِ যা কিছু আছে আসমানসমূহে وَمَا فِي الْاَرْضِ ও যা কিছু আছে জমিনে। مَنْ ذَا الَّذِيْ এমন কে আছে, যে يَشْفَعُ সুপারিশ করতে পারে عِنْدَهٗ তাঁর নিকট اِلَّا بِاِذْنِه তাঁর হুকুম ব্যতীত? يَعْلَمُ তিনি জানেন مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ যা কিছু আছে তাদের সম্মুখে وَمَا خَلْفَهُمْ ও যা কিছু আছে তাদের পেছনে। وَلَا يُحِيْطُوْنَ তারা আয়ত্ব করতে পারে না بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه তাঁর জ্ঞান হতে কোন কিছুই اِلَّا بِمَا شَآءَ তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। وَسِعَ বেষ্টন করে আছে كُرْسِيُّهُ তার সিংহাসন اَلسَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ আসমানসমূহ ও জমিনকে। وَلَا يَئُوْدُهٗ আর তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না حِفْظُهُمَا সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। وَهُوَ আর তিনি اَلْعَلِيُّ সর্বোচ্চ اَلْعَظِيْمُ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাকারা- ২৫৫)
অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞান হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাকারা- ২৫৫)
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।]
ফরজ নামাযের আগে ও পরে নবী ﷺ সর্বদা ১২ (বার) রাকআত সুন্নাত পড়তেন। এ নামাযকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলে। এ নামাযের অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণিত আছে।
উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল ﷺ কে বলতে শুনেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয নামায ব্যতীত বার রাকআত নামায আদায় করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৯; আবু দাউদ, হা/১২৫২; তিরমিযী, হা/৪১৫৮; নাসাঈ, হা/১৭৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮১১; বায়হাকী, হা/৪২৬৩।]
এ বার রাকআত নামায হচ্ছে : ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে দু’রাকআত, যোহরের পূর্বে চার রাকআত ও পরে দু’রাকআত, মাগরিবের পরে দু’রাকআত এবং এশার পরে দু’রাকআত।
উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল ﷺ কে বলতে শুনেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয নামায ব্যতীত বার রাকআত নামায আদায় করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৯; আবু দাউদ, হা/১২৫২; তিরমিযী, হা/৪১৫৮; নাসাঈ, হা/১৭৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮১১; বায়হাকী, হা/৪২৬৩।]
এ বার রাকআত নামায হচ্ছে : ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে দু’রাকআত, যোহরের পূর্বে চার রাকআত ও পরে দু’রাকআত, মাগরিবের পরে দু’রাকআত এবং এশার পরে দু’রাকআত।
তাহাজ্জুদ নামাযের অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে। কুরআন মাজীদে ফরয নামাযের পর সবচেয়ে বেশি তাহাজ্জুদ নামাযের আলোচনা এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাহাজ্জুদ নামাযের নির্দেশ প্রদান করে বলেন,
﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَۗ عَسٰىۤ اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا﴾
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদারত অবস্থায় রাত কাটায় :
﴿وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا﴾
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
﴿اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ﴾
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল, (আল্লাহর পথে) দানকারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
﴿تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍۚ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
তাদের দেহ বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না যে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সূরা সাজদা- ১৬, ১৭)
﴿اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত : ১৫-১৮)
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হলো মধ্য রাতের নামায :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম নামায কোন্টি এবং রমাযান মাসের সিয়ামের পর সবচেয়ে উত্তম সিয়াম কোন্টি? উত্তরে তিনি বলেন, ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হলো মধ্য রাতের নামায। আর রমাযান মাসের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০১৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৪।]
রাতে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে শয়তানের গিঁঠ খুলে যায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনে তিনটি গিঁঠ দেয়। প্রতিটি গিঁঠে সে এই বলে চাপড়ায়- তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, একটি গিঁঠ খুলে যায়। পরে অযু করলে আরো একটি গিঁঠ খুলে যায়। অতঃপর নামায আদায় করলে আরো একটি গিঁঠ খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষতা ও আলস্য সহকারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪২৪; সহীহ বুখারী, হা/১১৪২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৫; আবু দাউদ, হা/১৩০৮; নাসাঈ, হা/১৬০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৩২৯; মিশকাত, হা/১২১৯।]
পূর্ববর্তী সকল নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল তাহাজ্জুদের নামায পড়া :
আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা তাহাজ্জুদ নামায আদায়ে অভ্যাসী হও। কারণ তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল, এটা তোমাদের প্রভুর নৈকট্য লাভের উপায়, পাপ মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বিরতকারী আমল। [তিরমিযী, হা/৩৫৪৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৫।]
নবী ﷺ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রিকালীন নামাযে এত দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পদযুগল বা পায়ের গোছা ফুলে যেত। একদা আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম- কেন আপনি এতক্ষণ ধরে নামায আদায় করছেন, অথচ আপনার পেছনের এবং সামনের সব গোনাহ তো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, তাই বলে কি আমি একজন শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩০২-০৪; তিরমিযী, হা/৪১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮৮; মিশকাত, হা/১২২০।]
বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগের এবং পরের সব গোনাহ আল্লাহ রাববুল আলামীন ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারপরও তিনি আবাসে-প্রবাসে কখনই তাহাজ্জুদ নামায আদায় থেকে বিরত থাকেননি। যদি কখনো কোন কারণে রাত্রে এ নামায বাদ পড়ত, তাহলে তিনি তা দিনের বেলা কাযা আদায় করে নিতেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসকল মুসলিম তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হয়, তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় না। সুতরাং নৈরাশ্য রোগের অন্যতম চিকিৎসা হলো তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হওয়া। উক্ত সময় যিকির-আযকার করা, নামায আদায় করা, কুরআন বুঝে বুঝে পড়া, জ্ঞান চর্চা করা ইত্যাদি আমলসমূহের মধ্যে কত যে উপকার ও বরকত রয়েছে তা বাস্তবে আমল না করা পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারবে না।
﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَۗ عَسٰىۤ اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا﴾
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদারত অবস্থায় রাত কাটায় :
﴿وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا﴾
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ :
﴿اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَارِ﴾
তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল, (আল্লাহর পথে) দানকারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৭)
﴿تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ ‐ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍۚ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
তাদের দেহ বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না যে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সূরা সাজদা- ১৬, ১৭)
﴿اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত : ১৫-১৮)
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হলো মধ্য রাতের নামায :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম নামায কোন্টি এবং রমাযান মাসের সিয়ামের পর সবচেয়ে উত্তম সিয়াম কোন্টি? উত্তরে তিনি বলেন, ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হলো মধ্য রাতের নামায। আর রমাযান মাসের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০১৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৪।]
রাতে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে শয়তানের গিঁঠ খুলে যায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পেছনে তিনটি গিঁঠ দেয়। প্রতিটি গিঁঠে সে এই বলে চাপড়ায়- তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে, একটি গিঁঠ খুলে যায়। পরে অযু করলে আরো একটি গিঁঠ খুলে যায়। অতঃপর নামায আদায় করলে আরো একটি গিঁঠ খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষতা ও আলস্য সহকারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪২৪; সহীহ বুখারী, হা/১১৪২; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৫; আবু দাউদ, হা/১৩০৮; নাসাঈ, হা/১৬০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৩২৯; মিশকাত, হা/১২১৯।]
পূর্ববর্তী সকল নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল তাহাজ্জুদের নামায পড়া :
আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা তাহাজ্জুদ নামায আদায়ে অভ্যাসী হও। কারণ তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল, এটা তোমাদের প্রভুর নৈকট্য লাভের উপায়, পাপ মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বিরতকারী আমল। [তিরমিযী, হা/৩৫৪৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৫।]
নবী ﷺ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রিকালীন নামাযে এত দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পদযুগল বা পায়ের গোছা ফুলে যেত। একদা আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম- কেন আপনি এতক্ষণ ধরে নামায আদায় করছেন, অথচ আপনার পেছনের এবং সামনের সব গোনাহ তো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, তাই বলে কি আমি একজন শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩০২-০৪; তিরমিযী, হা/৪১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮৮; মিশকাত, হা/১২২০।]
বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগের এবং পরের সব গোনাহ আল্লাহ রাববুল আলামীন ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারপরও তিনি আবাসে-প্রবাসে কখনই তাহাজ্জুদ নামায আদায় থেকে বিরত থাকেননি। যদি কখনো কোন কারণে রাত্রে এ নামায বাদ পড়ত, তাহলে তিনি তা দিনের বেলা কাযা আদায় করে নিতেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসকল মুসলিম তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হয়, তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় না। সুতরাং নৈরাশ্য রোগের অন্যতম চিকিৎসা হলো তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হওয়া। উক্ত সময় যিকির-আযকার করা, নামায আদায় করা, কুরআন বুঝে বুঝে পড়া, জ্ঞান চর্চা করা ইত্যাদি আমলসমূহের মধ্যে কত যে উপকার ও বরকত রয়েছে তা বাস্তবে আমল না করা পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারবে না।
বিতরের নামায আদায় করার জন্য অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ বেজোড়, তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন; সুতরাং হে আহলে কুরআন! তোমরা বিতরের নামায আদায় করো। [আবু দাউদ, হা/১৪১৮; তিরমিযী, হা/৪৫৩; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৪; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১০৬৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭১; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৮৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১১১৮; বায়হাকী, হা/৪২৪২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৯৪; মিশকাত, হা/১২৬৬।]
বিতর অর্থ বেজোড়। এশার নামাযের পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এ নামাযের সময়। যাদের তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস আছে তাদের জন্য তাহাজ্জুদের পরে বিতরের নামায পড়া উত্তম।
বিতরের নামাযে শেষ রাকা’আতে দু‘আয়ে কুনূত পড়তে হয়।
বিতর অর্থ বেজোড়। এশার নামাযের পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এ নামাযের সময়। যাদের তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস আছে তাদের জন্য তাহাজ্জুদের পরে বিতরের নামায পড়া উত্তম।
বিতরের নামাযে শেষ রাকা’আতে দু‘আয়ে কুনূত পড়তে হয়।
(১) اَللّٰهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ ‐ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ ‐ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ ‐ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أعْطَيْتَ ‐ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ ‐ إنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ ‐ وَإنَّه لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ ‐ وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ ‐ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ ‐ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ ‐ وَ صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদাইত, ওয়া ‘আফিনী ফীমান্ ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিক্লী ফীমা আ‘ত্বাইত, ওয়াক্বিনী শার্রা মা কাযাইত, ইন্নাকা তাক্যী ওয়ালা ইয়ুক্যা ‘আলাইক, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাঁও ওয়ালাইত, ওয়ালা ইয়াইয্যু মান ‘আদাইত, তাবা-রাকতা রাববানা ওয়া তা‘আলাইত, নাসতাগফিরুকা ওয়ানাতূবু ইলাইক, ওয়া সাল্লাল্লা-হু ‘আলান নাবিয়্যি।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِهْدِنِيْ আমাকে হেদায়াত দান করুন فِيْمَنْ هَدَيْتَ যাদেরকে হেদায়াত দিয়েছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপত্তা দিন فِيْمَنْ عَافَيْتَ যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। وَتَوَلَّنِيْ আর আমাকে সাহায্য করুন فِيْمَنْ تَوَلَيْتَ যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। وَبَارِكْ لِيْ আমাকে বরকত দিন فِيْمَا أَعْطَيْتَ যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে। وَقِنِيْ আর আমাকে রক্ষা করুন شَرَّ مَا قَضَيْتَ আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে, إنَّكَ تَقْضِيْ নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ আপনার উপর কারো নির্দেশ জারী হয় না। وَإنَّهٗ لَا يَذِلُّ ঐ ব্যক্তি কখনো অপমানিত হয় না مَنْ وَّالَيْتَ আপনি যাকে সহায়তা দিয়েছেন। وَلَا يَعِزُّ আর ঐ ব্যক্তি কখনো সম্মান পায় না مَنْ عَادَيْتَ আপনি যাকে ত্যাগ করেছেন। تَبَارَكْتَ رَبَّنَا হে আমাদের মালিক! আপনি বরকতময় وَتَعَالَيْتَ আর আপনি মহান, نَسْتَغْفِرُكَ আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই, وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ আর আপনার দিকেই ফিরে আসি, وَ صَلَّى اللهُ আল্লাহ রহমত নাযিল করুন عَلَى النَّبِىِّ নবীর প্রতি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান করুন, যাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে নিরাপত্তা দিন, যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। আর আমাকে সাহায্য করুন, যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে বরকত দিন। আর আমাকে রক্ষা করুন আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে। নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, আপনার উপর কারো নির্দেশ জারী হয় না। আপনি যার সহায় সে কখনো অপমানিত হয় না। আর আপনি যাকে ত্যাগ করেন সে কখনো সম্মান পায় না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি বরকতময় আর আপনি মহান, আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই। আর আমরা আপনার দিকেই ফিরে আসি, আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাযিল করুন।
ইমাম হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এ কয়েকটি বাক্য শিখিয়েছেন- যা আমি বিতরের কুনূতে পড়ি। [আবু দাউদ, হা/১৪২৭; নাসাঈ, হা/১৭৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৭৮।]
(২) اَللّٰهُمَّ إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَانَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ - اَللّٰهُمَّ إيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَإلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْا رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ إنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস্তা‘ইনুকা, ওয়া নাস্ তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা, ওয়া নাতা ওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়ানুছ্নী ‘আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাক্ফুরুকা, ওয়া নাখলাউ ওয়া নাত্রুকু মাইয়াফজুরুকা, আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়ালাকা নুসাল্লী, ওয়ানাস্জুদু ওয়া ইলাইকা নাস্আ‘ ওয়া নাহ্ফিদু ওয়ানার্জূ রাহমাতাকা ওয়া নাখ্শা ‘আযা-বাকা, ইন্না ‘আযা-বাকা বিল্কুফ্ফা-রি মুলহিক্ব।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ আমরা আপনার সাহায্য চাই, وَ نَسْتَغْفِرُكَ আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, وَنُؤْمِنُ بِكَ আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ আপনার উপর ভরসা করি, وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ আর আপনার উত্তম গুণগান করি, وَنَشْكُرُكَ আপনার শুকরিয়া আদায় করি, وَلَانَكْفُرُكَ আপনাকে অস্বীকার করি না, وَنَخْلَعُ আমরা ত্যাগ করি وَنَتْرُكُ এবং বর্জন করে চলি مَنْ يَّفْجُرُكَ যে আপনার নাফরমানী করে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إيَّاكَ نَعْبُدُ আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, وَلَكَ نُصَلِّىْ আপনার জন্যই নামায পড়ি, وَنَسْجُدُ আপনাকেই সিজদা করি, وَإلَيْكَ نَسْعٰى আর আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই, وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْا আর আমরা আশা রাখি رَحْمَتَكَ আপনার রহমতের, وَنَخْشٰى আর আমরা ভয় করি عَذَابَكَ আপনার আযাবকে, إنَّ عَذَابَكَ নিশ্চয় আপনার আযাব بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ কাফিরদের জন্য অবধারিত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার সাহায্য চাই, আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, আপনার উপর ভরসা করি, আর আপনার উত্তম গুণগান বর্ণনা করি, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আপনার অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করি না। যে আপনার নাফরমানী করে (গোনাহের কাজ করে) আমরা তাকে ত্যাগ করি ও বর্জন করে চলি। হে আল্লাহ! আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, আপনার জন্যই নামায পড়ি, আপনাকেই সিজদা করি এবং আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই। আর আমরা আপনার রহমতের আশা রাখি, আর আপনার আযাবকে ভয় করি, নিশ্চয় আপনার আযাব কাফিরদের জন্য অবধারিত। [তাবারানী, হা/৭৫০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৯৭০; শারহু মা‘আনিল আছার, হা/১৪৭৫।]
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদাইত, ওয়া ‘আফিনী ফীমান্ ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিক্লী ফীমা আ‘ত্বাইত, ওয়াক্বিনী শার্রা মা কাযাইত, ইন্নাকা তাক্যী ওয়ালা ইয়ুক্যা ‘আলাইক, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাঁও ওয়ালাইত, ওয়ালা ইয়াইয্যু মান ‘আদাইত, তাবা-রাকতা রাববানা ওয়া তা‘আলাইত, নাসতাগফিরুকা ওয়ানাতূবু ইলাইক, ওয়া সাল্লাল্লা-হু ‘আলান নাবিয়্যি।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِهْدِنِيْ আমাকে হেদায়াত দান করুন فِيْمَنْ هَدَيْتَ যাদেরকে হেদায়াত দিয়েছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপত্তা দিন فِيْمَنْ عَافَيْتَ যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। وَتَوَلَّنِيْ আর আমাকে সাহায্য করুন فِيْمَنْ تَوَلَيْتَ যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। وَبَارِكْ لِيْ আমাকে বরকত দিন فِيْمَا أَعْطَيْتَ যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে। وَقِنِيْ আর আমাকে রক্ষা করুন شَرَّ مَا قَضَيْتَ আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে, إنَّكَ تَقْضِيْ নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ আপনার উপর কারো নির্দেশ জারী হয় না। وَإنَّهٗ لَا يَذِلُّ ঐ ব্যক্তি কখনো অপমানিত হয় না مَنْ وَّالَيْتَ আপনি যাকে সহায়তা দিয়েছেন। وَلَا يَعِزُّ আর ঐ ব্যক্তি কখনো সম্মান পায় না مَنْ عَادَيْتَ আপনি যাকে ত্যাগ করেছেন। تَبَارَكْتَ رَبَّنَا হে আমাদের মালিক! আপনি বরকতময় وَتَعَالَيْتَ আর আপনি মহান, نَسْتَغْفِرُكَ আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই, وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ আর আপনার দিকেই ফিরে আসি, وَ صَلَّى اللهُ আল্লাহ রহমত নাযিল করুন عَلَى النَّبِىِّ নবীর প্রতি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান করুন, যাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে নিরাপত্তা দিন, যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। আর আমাকে সাহায্য করুন, যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে মিলিয়ে। আমাকে যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে বরকত দিন। আর আমাকে রক্ষা করুন আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে। নিশ্চয় আপনার আইনই চূড়ান্ত, আপনার উপর কারো নির্দেশ জারী হয় না। আপনি যার সহায় সে কখনো অপমানিত হয় না। আর আপনি যাকে ত্যাগ করেন সে কখনো সম্মান পায় না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি বরকতময় আর আপনি মহান, আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই। আর আমরা আপনার দিকেই ফিরে আসি, আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাযিল করুন।
ইমাম হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এ কয়েকটি বাক্য শিখিয়েছেন- যা আমি বিতরের কুনূতে পড়ি। [আবু দাউদ, হা/১৪২৭; নাসাঈ, হা/১৭৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/১১৭৮।]
(২) اَللّٰهُمَّ إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَانَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ - اَللّٰهُمَّ إيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَإلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْا رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ إنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস্তা‘ইনুকা, ওয়া নাস্ তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা, ওয়া নাতা ওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়ানুছ্নী ‘আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাক্ফুরুকা, ওয়া নাখলাউ ওয়া নাত্রুকু মাইয়াফজুরুকা, আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়ালাকা নুসাল্লী, ওয়ানাস্জুদু ওয়া ইলাইকা নাস্আ‘ ওয়া নাহ্ফিদু ওয়ানার্জূ রাহমাতাকা ওয়া নাখ্শা ‘আযা-বাকা, ইন্না ‘আযা-বাকা বিল্কুফ্ফা-রি মুলহিক্ব।
শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ আমরা আপনার সাহায্য চাই, وَ نَسْتَغْفِرُكَ আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, وَنُؤْمِنُ بِكَ আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ আপনার উপর ভরসা করি, وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ আর আপনার উত্তম গুণগান করি, وَنَشْكُرُكَ আপনার শুকরিয়া আদায় করি, وَلَانَكْفُرُكَ আপনাকে অস্বীকার করি না, وَنَخْلَعُ আমরা ত্যাগ করি وَنَتْرُكُ এবং বর্জন করে চলি مَنْ يَّفْجُرُكَ যে আপনার নাফরমানী করে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إيَّاكَ نَعْبُدُ আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, وَلَكَ نُصَلِّىْ আপনার জন্যই নামায পড়ি, وَنَسْجُدُ আপনাকেই সিজদা করি, وَإلَيْكَ نَسْعٰى আর আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই, وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْا আর আমরা আশা রাখি رَحْمَتَكَ আপনার রহমতের, وَنَخْشٰى আর আমরা ভয় করি عَذَابَكَ আপনার আযাবকে, إنَّ عَذَابَكَ নিশ্চয় আপনার আযাব بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ কাফিরদের জন্য অবধারিত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার সাহায্য চাই, আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, আপনার উপর ভরসা করি, আর আপনার উত্তম গুণগান বর্ণনা করি, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আপনার অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করি না। যে আপনার নাফরমানী করে (গোনাহের কাজ করে) আমরা তাকে ত্যাগ করি ও বর্জন করে চলি। হে আল্লাহ! আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, আপনার জন্যই নামায পড়ি, আপনাকেই সিজদা করি এবং আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই। আর আমরা আপনার রহমতের আশা রাখি, আর আপনার আযাবকে ভয় করি, নিশ্চয় আপনার আযাব কাফিরদের জন্য অবধারিত। [তাবারানী, হা/৭৫০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৯৭০; শারহু মা‘আনিল আছার, হা/১৪৭৫।]
সালাতুয যোহাকে ইশরাক বা চাশতের নামাযও বলা হয়। اِشْرَاقٌ (ইশরাক) অর্থ চমকিত হওয়া। আর ضُحٰى (যোহা) অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এ নামায সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে তাকে ইশরাকের নামায বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে চাশতের নামায বলা হয়।
সালাতুয যোহার গুরুত্ব ও ফযীলত :
এ নামাযের অনেক ফযীলত রয়েছে। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের নামায আদায় করার পর সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত যিকিরে লিপ্ত থাকবে এবং সূর্য আলোকিত হলে দু’রাক‘আত নামায আদায় করবে, আল্লাহ তাকে একটি পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সওয়াব দান করবেন। [তিরমিযী, হা/৫৮৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১২৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪০৩।]
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর সাদাকা ওয়াজিব। আর প্রত্যেকবার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল-হামদুলিল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা একটি সাদাকা, উত্তম কাজের নির্দেশ দেয়া একটি সাদাকা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাও একটি সাদাকা। আর এই সবকিছুর জন্য চাশতের দু’রাক‘আত নামাযই যথেষ্ঠ হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৪; আবু দাউদ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫১৩।]
সালাতুয যোহা কত রাক‘আত :
সালাতুয যোহা ২ থেকে ১২ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত নামায পড়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭৬; আবু দাউদ, হা/১২৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৩; মিশকাত, হা/১৩০৯।] এ নামাযে প্রতি দু’রাক‘আত পর পর সালাম ফিরানো উত্তম, তবে কেউ ইচ্ছা করলে প্রতি চার রাক‘আত পরও সালাম ফিরাতে পারে।
সালাতুয যোহার গুরুত্ব ও ফযীলত :
এ নামাযের অনেক ফযীলত রয়েছে। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের নামায আদায় করার পর সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত যিকিরে লিপ্ত থাকবে এবং সূর্য আলোকিত হলে দু’রাক‘আত নামায আদায় করবে, আল্লাহ তাকে একটি পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সওয়াব দান করবেন। [তিরমিযী, হা/৫৮৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১২৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪০৩।]
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর সাদাকা ওয়াজিব। আর প্রত্যেকবার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল-হামদুলিল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা একটি সাদাকা, উত্তম কাজের নির্দেশ দেয়া একটি সাদাকা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাও একটি সাদাকা। আর এই সবকিছুর জন্য চাশতের দু’রাক‘আত নামাযই যথেষ্ঠ হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৪; আবু দাউদ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫১৩।]
সালাতুয যোহা কত রাক‘আত :
সালাতুয যোহা ২ থেকে ১২ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত নামায পড়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭৬; আবু দাউদ, হা/১২৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৩; মিশকাত, হা/১৩০৯।] এ নামাযে প্রতি দু’রাক‘আত পর পর সালাম ফিরানো উত্তম, তবে কেউ ইচ্ছা করলে প্রতি চার রাক‘আত পরও সালাম ফিরাতে পারে।
তাহিয়্যা শব্দের অর্থ হচ্ছে উপঢৌকন। অযু করার পর অযুর উপহার হিসেবে দু’রাক‘আত নামায আদায় করাকে তাহিয়্যাতুল অযু বলে। এ নামাযের অনেক ফযীলত রয়েছে। এ আমলের প্রতিদানস্বরূপ রাসূলুল্লাহ ﷺ জান্নাতে বিলাল (রাঃ) এর পায়ের শব্দ শুনতে পান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন ফজরের নামাযের পর বিলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বিলাল! ইসলামের মধ্যে তোমার এমন কী আমল আছে, যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার (চলাচলের) শব্দ পেয়েছি। বিলাল (রাঃ) বললেন, আমি তেমন কোন আমল করিনি যার আশা করতে পারি; তবে দিনে বা রাতে যখনই অযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফীক দেন নফল নামায আদায় করি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৬।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন ফজরের নামাযের পর বিলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বিলাল! ইসলামের মধ্যে তোমার এমন কী আমল আছে, যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার (চলাচলের) শব্দ পেয়েছি। বিলাল (রাঃ) বললেন, আমি তেমন কোন আমল করিনি যার আশা করতে পারি; তবে দিনে বা রাতে যখনই অযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফীক দেন নফল নামায আদায় করি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৬।]
প্রত্যেক নামায আদায়কারীই নামাযের মধ্যে কুরআনের শেষ দিকের ছোট ছোট সূরাগুলো পড়ে থাকেন। সূরা পড়ার সময় নামাযে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য সূরাগুলোর অর্থ ও মৌলিক শিক্ষা জানা থাকা একান্ত প্রয়োজন। এ প্রয়োজন পূরণের জন্য এখানে কুরআনের শেষ দশটি সূরার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো :
নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট : এ সূরাটি মুহাম্মাদ ﷺ এর মক্কী জীবনের প্রথম দিকে নাযিল হয়েছে। মুহাম্মাদ ﷺ ইসলামের দাওয়াত দেয়া আরম্ভ করলে মক্কার কাফির ও মুশরিকরা নবী ﷺ এর বিরোধিতা শুরু করে দেয়। তারা নবী ﷺ এর মিশনকে বন্ধ করার জন্য নানা ধরনের কৌশল ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। এ কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য এ সূরাটি নাযিল করেন।
সূরার আলোচ্য বিষয় : নবী ﷺ এর জন্মের বছর ইয়ামানের খ্রিস্টান বাদশা আবরাহা বিশাল হস্তী বাহিনী নিয়ে কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য মক্কার দিকে আসে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অসীম শক্তি দিয়ে এ বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি সংক্ষেপে অত্র সূরায় আলোচনা করা হয়েছে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) আলাম্তারা কাইফা ফা‘আলা রাববুকা বিআস হা-বিল্ফীল। (২) আলাম্ ইয়াজ্‘আল্ কাইদাহুম্ ফী তায্ লীল। (৩) ওয়া আরসালা ‘আলাইহিম্ ত্বাইরান্ আবা-বীল। (৪) তারমীহিম্ বিহিজা-রাতিম্ মিন সিজ্জীল। (৫) ফাজা‘আলাহুম কা‘আস্ফিম্ মা’কূল।
শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ اللهِ (শুরু করছি) আল্লাহর নামে, اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময়, اَلرَّحِيْمِ অতি দয়ালু। اَلَمْ تَرَ তুমি কি দেখনি, كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ তোমার প্রতিপালক কী রকম ব্যবহার করেছেন بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ হাতিওয়ালাদের সাথে? اَلَمْ يَجْعَلْ তিনি কি করে দেননি كَيْدَهُمْ তাদের ষড়যন্ত্রসমূহকে فِيْ تَضْلِيْلٍ নস্যাৎ? وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ এবং তিনি তাদের উপর পাঠিয়েছেন طَيْرًا اَبَابِيْلَ আবাবীল পাখি। تَرْمِيْهِمْ তারা নিক্ষেপ করেছিল بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ পাথরের টুকরা। فَجَعَلَهُمْ অতঃপর তিনি তাদেরকে করে দিলেন كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. তুমি কি দেখনি, তোমার রব (কাবাঘর ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কী রকম ব্যবহার করেছেন? ২. তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেননি? ৩. এবং তিনি তাদের উপর আবাবীল নামক (ঝাঁকে-ঝাঁকে) পাখি পাঠিয়েছেন। ৪. ঐ পাখিগুলো সেই সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করেছিল। ৫. অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো করে দিলেন।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) এ সূরাটি নাযিল করে নবী ﷺ কে এ মর্মে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, তোমার বিরোধীরা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করছে, এতে তারা সফল হতে পারবে না; বরং শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে।
(২) অপর দিকে ইসলাম বিরোধীদেরকে এ মর্মে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, তোমরা নবী ﷺ এর সাথে যতই ষড়যন্ত্র কর না কেন, তোমরা সফল হতে পারবে না। লক্ষ্য করে দেখো! ইতিপূর্বে আবরাহার বাহিনী কাবাঘর ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে সফল হতে পারেনি।
(৩) এ সূরা থেকে আজও আমরা এ শিক্ষা নিতে পারি যে, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা যতই শক্তির অধিকারী হোক না কেন, একদিন তারা পরাজিত হবেই। আর ইসলামপন্থীরাই একদিন বিজয়ী হবে, কারণ তাদের সাথে রয়েছে আল্লাহর সাহায্য নামের এমন এক শক্তি, যা এসে গেলে সারা পৃথিবী একজোট হলেও তা ঠেকাতে পারবে না। যেমন আহযাবের যুদ্ধে গোটা আরবের সকল ইসলাম বিরোধী শক্তি একজোট হয়েও ইসলামের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
সূরার আলোচ্য বিষয় : নবী ﷺ এর জন্মের বছর ইয়ামানের খ্রিস্টান বাদশা আবরাহা বিশাল হস্তী বাহিনী নিয়ে কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য মক্কার দিকে আসে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অসীম শক্তি দিয়ে এ বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি সংক্ষেপে অত্র সূরায় আলোচনা করা হয়েছে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ ‐ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ ‐ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ ‐ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ ‐ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) আলাম্তারা কাইফা ফা‘আলা রাববুকা বিআস হা-বিল্ফীল। (২) আলাম্ ইয়াজ্‘আল্ কাইদাহুম্ ফী তায্ লীল। (৩) ওয়া আরসালা ‘আলাইহিম্ ত্বাইরান্ আবা-বীল। (৪) তারমীহিম্ বিহিজা-রাতিম্ মিন সিজ্জীল। (৫) ফাজা‘আলাহুম কা‘আস্ফিম্ মা’কূল।
শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ اللهِ (শুরু করছি) আল্লাহর নামে, اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময়, اَلرَّحِيْمِ অতি দয়ালু। اَلَمْ تَرَ তুমি কি দেখনি, كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ তোমার প্রতিপালক কী রকম ব্যবহার করেছেন بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ হাতিওয়ালাদের সাথে? اَلَمْ يَجْعَلْ তিনি কি করে দেননি كَيْدَهُمْ তাদের ষড়যন্ত্রসমূহকে فِيْ تَضْلِيْلٍ নস্যাৎ? وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ এবং তিনি তাদের উপর পাঠিয়েছেন طَيْرًا اَبَابِيْلَ আবাবীল পাখি। تَرْمِيْهِمْ তারা নিক্ষেপ করেছিল بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ পাথরের টুকরা। فَجَعَلَهُمْ অতঃপর তিনি তাদেরকে করে দিলেন كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. তুমি কি দেখনি, তোমার রব (কাবাঘর ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কী রকম ব্যবহার করেছেন? ২. তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেননি? ৩. এবং তিনি তাদের উপর আবাবীল নামক (ঝাঁকে-ঝাঁকে) পাখি পাঠিয়েছেন। ৪. ঐ পাখিগুলো সেই সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করেছিল। ৫. অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো করে দিলেন।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) এ সূরাটি নাযিল করে নবী ﷺ কে এ মর্মে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, তোমার বিরোধীরা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করছে, এতে তারা সফল হতে পারবে না; বরং শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে।
(২) অপর দিকে ইসলাম বিরোধীদেরকে এ মর্মে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, তোমরা নবী ﷺ এর সাথে যতই ষড়যন্ত্র কর না কেন, তোমরা সফল হতে পারবে না। লক্ষ্য করে দেখো! ইতিপূর্বে আবরাহার বাহিনী কাবাঘর ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে সফল হতে পারেনি।
(৩) এ সূরা থেকে আজও আমরা এ শিক্ষা নিতে পারি যে, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা যতই শক্তির অধিকারী হোক না কেন, একদিন তারা পরাজিত হবেই। আর ইসলামপন্থীরাই একদিন বিজয়ী হবে, কারণ তাদের সাথে রয়েছে আল্লাহর সাহায্য নামের এমন এক শক্তি, যা এসে গেলে সারা পৃথিবী একজোট হলেও তা ঠেকাতে পারবে না। যেমন আহযাবের যুদ্ধে গোটা আরবের সকল ইসলাম বিরোধী শক্তি একজোট হয়েও ইসলামের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
নাযিলের প্রেক্ষাপট ও আলোচ্য বিষয় :
এ সূরাটিও নবীর মক্কী জীবনের প্রথম দিকের একটি সূরা। মক্কার একটি বিখ্যাত গোত্রের নাম ‘কুরাইশ’। আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশ বংশকে বিশেষ কিছু নিয়ামত দিয়ে গুণান্বিত করেছিলেন। যেমন- মুহাম্মাদ ﷺ এ গোত্রেই জন্মগ্রহণ করেন, এ গোত্রের লোকেরাই হাজীদেরকে পানি পান করানোর সৌভাগ্য লাভ করেছিল, হস্তী বাহিনীর উপর তারা বিজয়ী হয়েছিল, আরবে যখন জান-মালের কোন নিরাপত্তা ছিল না, তখন কাবাঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে তাদের বিশেষ সম্মান ছিল, তারা নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারত। তাদের প্রতি আল্লাহর এত অনুগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তাদেরই বংশে জন্ম নেয়া নবী ﷺ যখন দ্বীনের দাওয়াত দিতে লাগলেন, তখন তারা নবী ﷺ এর সহযোগিতা করার পরিবর্তে তাঁর বিরোধিতা শুরু করে দিল- এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এ সূরা নাযিল করে তাদেরকে উপদেশ দিলেন যে, দেখো! আমার কতইনা অনুগ্রহ তোমরা ভোগ করছ। নিরাপদে ব্যবসা পরিচালনা করছ। সুতরাং যে কাবাঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে তোমাদের এত সম্মান এবং তোমরা যেজন্য গর্ববোধ করে থাক সেই কাবার মালিকের ইবাদাত করাই তোমাদের কর্তব্য। তাই আমার নবীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা তোমাদের জন্য মোটেই সমীচীন নয়।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ لِاِيْلَافِ قُرَيْشٍ ‐ اِيْلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ ‐ فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ ‐ اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ وَّاٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) লিইলা-ফি কুরাইশ, (২) ইলা-ফিহিম রিহ্লাতাশ্ শিতা-ই ওয়াস্ সায়ীফ, (৩) ফালইয়া‘বুদূ রাববাহাযাল্ বাইত, (৪) আল্লাযী আত্ব‘আমাহুম্ মিন্ জূ‘য়িওঁ ওয়া আ-মানাহুম মিন খাওফ।
শাব্দিক অর্থ : لِاِيْلَافِ অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে قُرَيْشٍ কুরাইশদের। اِيْلَافِهِمْ তাদের অনুকূল হওয়ার কারণে رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। فَلْيَعْبُدُوْا অতএব তাদের ইবাদাত করা উচিত رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ এ ঘরের মালিকেরই। اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ যিনি তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন مِّنْ جُوْعٍ ক্ষুধার্ত অবস্থায় وَاٰمَنَهُمْ এবং যিনি তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন مِّنْ خَوْفٍ ভয়-ভীতি থেকে।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।কুরাইশদের অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে। ২. অনুকূল হওয়ার কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। ৩. অতএব তাদের এ ঘরের মালিকেরই ইবাদাত করা উচিত। ৪. যিনি ক্ষুধায় তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন এবং তাদেরকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) সত্যকে জানার পরও সত্যের বিরোধিতা করাটা উচিত নয়।
(২) যার প্রতি আল্লাহর নিয়ামত যতবেশি হবে, তার ততবেশি শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আর শুকরিয়া আদায় করতে হবে আল্লাহর হুকুম পালন ও ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে।
(৩) যে আন্তরিকতার সহিত আল্লাহর ইবাদাত করবে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। আর যে আল্লাহর দাসত্ব থেকে দূরে থাকবে, সে উভয় জগতের শান্তি ও নিরাপত্তা হারাবে।
এ সূরাটিও নবীর মক্কী জীবনের প্রথম দিকের একটি সূরা। মক্কার একটি বিখ্যাত গোত্রের নাম ‘কুরাইশ’। আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশ বংশকে বিশেষ কিছু নিয়ামত দিয়ে গুণান্বিত করেছিলেন। যেমন- মুহাম্মাদ ﷺ এ গোত্রেই জন্মগ্রহণ করেন, এ গোত্রের লোকেরাই হাজীদেরকে পানি পান করানোর সৌভাগ্য লাভ করেছিল, হস্তী বাহিনীর উপর তারা বিজয়ী হয়েছিল, আরবে যখন জান-মালের কোন নিরাপত্তা ছিল না, তখন কাবাঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে তাদের বিশেষ সম্মান ছিল, তারা নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারত। তাদের প্রতি আল্লাহর এত অনুগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তাদেরই বংশে জন্ম নেয়া নবী ﷺ যখন দ্বীনের দাওয়াত দিতে লাগলেন, তখন তারা নবী ﷺ এর সহযোগিতা করার পরিবর্তে তাঁর বিরোধিতা শুরু করে দিল- এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এ সূরা নাযিল করে তাদেরকে উপদেশ দিলেন যে, দেখো! আমার কতইনা অনুগ্রহ তোমরা ভোগ করছ। নিরাপদে ব্যবসা পরিচালনা করছ। সুতরাং যে কাবাঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে তোমাদের এত সম্মান এবং তোমরা যেজন্য গর্ববোধ করে থাক সেই কাবার মালিকের ইবাদাত করাই তোমাদের কর্তব্য। তাই আমার নবীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা তোমাদের জন্য মোটেই সমীচীন নয়।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ لِاِيْلَافِ قُرَيْشٍ ‐ اِيْلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ ‐ فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ ‐ اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ وَّاٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) লিইলা-ফি কুরাইশ, (২) ইলা-ফিহিম রিহ্লাতাশ্ শিতা-ই ওয়াস্ সায়ীফ, (৩) ফালইয়া‘বুদূ রাববাহাযাল্ বাইত, (৪) আল্লাযী আত্ব‘আমাহুম্ মিন্ জূ‘য়িওঁ ওয়া আ-মানাহুম মিন খাওফ।
শাব্দিক অর্থ : لِاِيْلَافِ অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে قُرَيْشٍ কুরাইশদের। اِيْلَافِهِمْ তাদের অনুকূল হওয়ার কারণে رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। فَلْيَعْبُدُوْا অতএব তাদের ইবাদাত করা উচিত رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ এ ঘরের মালিকেরই। اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ যিনি তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন مِّنْ جُوْعٍ ক্ষুধার্ত অবস্থায় وَاٰمَنَهُمْ এবং যিনি তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন مِّنْ خَوْفٍ ভয়-ভীতি থেকে।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।কুরাইশদের অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে। ২. অনুকূল হওয়ার কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। ৩. অতএব তাদের এ ঘরের মালিকেরই ইবাদাত করা উচিত। ৪. যিনি ক্ষুধায় তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন এবং তাদেরকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) সত্যকে জানার পরও সত্যের বিরোধিতা করাটা উচিত নয়।
(২) যার প্রতি আল্লাহর নিয়ামত যতবেশি হবে, তার ততবেশি শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আর শুকরিয়া আদায় করতে হবে আল্লাহর হুকুম পালন ও ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে।
(৩) যে আন্তরিকতার সহিত আল্লাহর ইবাদাত করবে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। আর যে আল্লাহর দাসত্ব থেকে দূরে থাকবে, সে উভয় জগতের শান্তি ও নিরাপত্তা হারাবে।
শানে নুযূল : মক্কার কাফিররা পরকাল বিশ্বাস করত না। আবু জাহেল, আবু সুফিয়ান, আস ইবনে ওয়াইল এ জাতীয় বড় বড় কাফিররা এতীমের হক আদায় করত না, গরীব-মিসকীনদেরকে দান করত না। তাদের এ সকল অভ্যাসের নিন্দা করে আল্লাহ তা‘আলা প্রথম তিনটি আয়াত নাযিল করেন। আর মদিনায় মুনাফিকী স্বভাবের কিছু লোক ছিল- তারা লোক দেখানো ইবাদাত করত, নামাযে অবহেলা করত, তাদেরকে সতর্ক করে শেষ চারটি আয়াত নাযিল হয়। [আসবাবুন নুযুল, আবুল হাসান, ১/৪৫৬।]
সূরা মাউনের আলোচ্য বিষয় : আখিরাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়ে দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে- এ বিশ্বাস যাদের নেই তারা যে কেমন খারাপ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে এ সূরায় সে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং মুনাফিকী আচরণকারীদেরকে সতর্ক করে শাস্তির বাণী শোনানো হয়েছে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ‐ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ ‐ وَلَا يَحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ ‐ فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) আরাআইতাল্লাযী ইউকায্যিবু বিদ্দীন, (২) ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদুও্‘উল ইয়াতীম, (৩) ওয়ালা ইয়াহুয্যু ‘আলা ত্ব‘আ-মিল মিসকীন, (৪) ফাওয়াইলুল লিল মুসাল্লীন, (৫) আল্লাযীনা হুম ‘আন্ সালাতিহিম্ সা-হূন, (৬) আল্লাযীনাহুম ইউরা-উন, (৭) ওয়াইয়াম্না‘উনাল্ মা-‘উন।
শাব্দিক অর্থ : اَرَاَيْتَ তুমি কি তাকে দেখনি اَلَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে? فَذٰلِكَ এ তো হচ্ছে সেই ব্যক্তি, اَلَّذِيْ يَدُعُّ যে গলা ধাক্কা দেয় اَلْيَتِيْمَ এতীমকে। وَلَا يَحُضُّ সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না عَلٰى طَعَامِ খাবার দিতে اَلْمِسْكِيْنِ মিসকীনদেরকে। فَوَيْلٌ (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে لِّلْمُصَلِّيْنَ সেসব নামায আদায়কারীদের জন্য। اَلَّذِيْنَ هُمْ যারা عَنْ صَلَاتِهِمْ নিজেদের নামায থেকে سَاهُوْنَ উদাসীন থাকে। الَّذِيْنَ هُمْ যারা يُرَآءُوْنَ (যাবতীয় কাজকর্ম শুধু) প্রদর্শনীর জন্যই করে। وَيَمْنَعُوْنَ এবং তারা বিরত থাকে اَلْمَاعُوْنَ ছোটখাটো জিনিসপত্র (সাহায্য দেয়া) দেয়া থেকে।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. তুমি কি সে ব্যক্তির কথা (কখনো) ভেবে দেখেছ! যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে। ২. সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে (নিরীহ) এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়, ৩. মিসকীনদের খাবার দিতে কখনো সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না, ৪. (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে সেসব নামায আদায়কারীদের জন্য। ৫. যারা নিজেদের নামায থেকে উদাসীন থাকে। ৬. তারা যাবতীয় কাজকর্ম শুধু প্রদর্শনীর জন্যই করে। ৭. এবং ছোটখাটো জিনিস পর্যন্ত (অন্যদেরকে) দেয়া থেকে বিরত থাকে।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) আখিরাতের হিসাব-নিকাশের বিশ্বাস এবং ভয় সকলেরই থাকতে হবে; নতুবা মানুষের চরিত্র সংশোধন হবে না।
(২) এতীমের হক আদায় করা অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। গরীবদের হক আদায় করতে হবে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। এ কাজে একে অপরকে উৎসাহিত করতে হবে।
(৩) ইবাদাতের ক্ষেত্রে লোক দেখানো মনোভাব ও মুনাফিকী আচরণ পরিহার করতে হবে।
(৪) কৃপণতার অভ্যাস দূর করতে হবে। যাকাত, উশর ও ফিতরা এসব আদায় করতেই হবে- এছাড়াও মানবতার খাতিরে পরস্পরের মধ্যে যেসকল জিনিস আদান-প্রদান করতে হয় বা যেসব সহযোগিতা করতে হয় তাতেও সংকীর্ণমনা হওয়া উচিত নয়।
সূরা মাউনের আলোচ্য বিষয় : আখিরাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়ে দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে- এ বিশ্বাস যাদের নেই তারা যে কেমন খারাপ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে এ সূরায় সে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং মুনাফিকী আচরণকারীদেরকে সতর্ক করে শাস্তির বাণী শোনানো হয়েছে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ ‐ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ ‐ وَلَا يَحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ ‐ فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ ‐ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) আরাআইতাল্লাযী ইউকায্যিবু বিদ্দীন, (২) ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদুও্‘উল ইয়াতীম, (৩) ওয়ালা ইয়াহুয্যু ‘আলা ত্ব‘আ-মিল মিসকীন, (৪) ফাওয়াইলুল লিল মুসাল্লীন, (৫) আল্লাযীনা হুম ‘আন্ সালাতিহিম্ সা-হূন, (৬) আল্লাযীনাহুম ইউরা-উন, (৭) ওয়াইয়াম্না‘উনাল্ মা-‘উন।
শাব্দিক অর্থ : اَرَاَيْتَ তুমি কি তাকে দেখনি اَلَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে? فَذٰلِكَ এ তো হচ্ছে সেই ব্যক্তি, اَلَّذِيْ يَدُعُّ যে গলা ধাক্কা দেয় اَلْيَتِيْمَ এতীমকে। وَلَا يَحُضُّ সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না عَلٰى طَعَامِ খাবার দিতে اَلْمِسْكِيْنِ মিসকীনদেরকে। فَوَيْلٌ (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে لِّلْمُصَلِّيْنَ সেসব নামায আদায়কারীদের জন্য। اَلَّذِيْنَ هُمْ যারা عَنْ صَلَاتِهِمْ নিজেদের নামায থেকে سَاهُوْنَ উদাসীন থাকে। الَّذِيْنَ هُمْ যারা يُرَآءُوْنَ (যাবতীয় কাজকর্ম শুধু) প্রদর্শনীর জন্যই করে। وَيَمْنَعُوْنَ এবং তারা বিরত থাকে اَلْمَاعُوْنَ ছোটখাটো জিনিসপত্র (সাহায্য দেয়া) দেয়া থেকে।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. তুমি কি সে ব্যক্তির কথা (কখনো) ভেবে দেখেছ! যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে। ২. সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে (নিরীহ) এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়, ৩. মিসকীনদের খাবার দিতে কখনো সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না, ৪. (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে সেসব নামায আদায়কারীদের জন্য। ৫. যারা নিজেদের নামায থেকে উদাসীন থাকে। ৬. তারা যাবতীয় কাজকর্ম শুধু প্রদর্শনীর জন্যই করে। ৭. এবং ছোটখাটো জিনিস পর্যন্ত (অন্যদেরকে) দেয়া থেকে বিরত থাকে।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) আখিরাতের হিসাব-নিকাশের বিশ্বাস এবং ভয় সকলেরই থাকতে হবে; নতুবা মানুষের চরিত্র সংশোধন হবে না।
(২) এতীমের হক আদায় করা অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। গরীবদের হক আদায় করতে হবে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। এ কাজে একে অপরকে উৎসাহিত করতে হবে।
(৩) ইবাদাতের ক্ষেত্রে লোক দেখানো মনোভাব ও মুনাফিকী আচরণ পরিহার করতে হবে।
(৪) কৃপণতার অভ্যাস দূর করতে হবে। যাকাত, উশর ও ফিতরা এসব আদায় করতেই হবে- এছাড়াও মানবতার খাতিরে পরস্পরের মধ্যে যেসকল জিনিস আদান-প্রদান করতে হয় বা যেসব সহযোগিতা করতে হয় তাতেও সংকীর্ণমনা হওয়া উচিত নয়।
শানে নুযূল : নবী ﷺ এর সকল পুত্র সন্তান ছোটকালেই মারা যায়। এতে কুরাইশ বংশের লোকেরা বলাবলি করতে লাগল - بَتِرَ مُحَمَّدٌ মুহাম্মাদ লেজকাটা (নির্বংশ) হয়ে গেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন। [ইবনে কাসীর, অত্র সূরা তাফসীরে দৃষ্টব্য।] অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী ﷺ এর পুত্র ইব্রাহীম মারা গেলে মক্কার মুশরিকরা একে অপরকে বলাবলি করতে লাগল, মুহাম্মাদ লেজকাটা হয়ে গেছে। মুশরিকদের এসকল অশালীন উক্তির কারণে নবী ﷺ কষ্ট পেতেন। যেখানে বিপদের সময় নিজের আত্মীয়-স্বজন পাশে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে তারাই তাঁর কষ্টকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। এ বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সূরা কাউসার নাযিল করে নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দিলেন। [আসবাবুন নুযুল, আবুল হাসান, ১/৪৫৭।]
সূরার আলোচ্য বিষয় : এ সূরায় নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে যে, আমি আপনাকে অনেক নিয়ামত দান করেছি। তাই আপনি বিরোধীদের কথায় দুঃখিত হবেন না। আপনি নামায ও ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করুন। পরিশেষে তারাই হবে লেজকাটা।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ‐ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‐ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) ইন্না আ‘ত্বাইনা কাল্ কাওসার (২) ফাসাল্লি লিরাবিবকা ওয়ান্হার (৩) ইন্না শা-নিআকা হুয়াল্ আবতার।
শাব্দিক অর্থ : اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে দান করেছি اَلْكَوْثَرَ কাওসার। فَصَلِّ অতএব তুমি নামায কায়েম করো لِرَبِّكَ তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে وَانْحَرْ এবং কুরবানী করো। اِنَّ شَانِئَكَ নিশ্চয় তোমার নিন্দাকারীরাই হবে هُوَ الْاَبْتَرُ শিকড়-কাটা (অসহায়)।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে (নিয়ামতের ভান্ডার) কাওসার দান করেছি। ২. অতএব, (আমার স্মরণের জন্য) তুমি নামায কায়েম করো এবং (আমারই উদ্দেশ্যে) কুরবানী করো। ৩. নিশ্চয় (পরিশেষে) তোমার নিন্দাকারীরাই হবে লেজকাটা (অসহায়)।
সূরার হেদায়াত ও শিক্ষা :
(১) সকল ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে হবে।
(২) ইসলামের শত্রুদের আজে-বাজে কথায় ব্যথিত না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা ও অসীম সাহস নিয়ে দ্বীন প্রচারের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
(৩) যারা শত্রুতা করবে এর পরিণাম তারাই ভোগ করবে, কেননা যে খারাপ চক্রান্ত করে সেই চক্রান্তের জালে তাকেই পড়তে হয়। [সূরা ফাতির- ৪৩।]
সূরার আলোচ্য বিষয় : এ সূরায় নবী ﷺ কে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে যে, আমি আপনাকে অনেক নিয়ামত দান করেছি। তাই আপনি বিরোধীদের কথায় দুঃখিত হবেন না। আপনি নামায ও ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করুন। পরিশেষে তারাই হবে লেজকাটা।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ‐ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‐ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) ইন্না আ‘ত্বাইনা কাল্ কাওসার (২) ফাসাল্লি লিরাবিবকা ওয়ান্হার (৩) ইন্না শা-নিআকা হুয়াল্ আবতার।
শাব্দিক অর্থ : اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে দান করেছি اَلْكَوْثَرَ কাওসার। فَصَلِّ অতএব তুমি নামায কায়েম করো لِرَبِّكَ তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে وَانْحَرْ এবং কুরবানী করো। اِنَّ شَانِئَكَ নিশ্চয় তোমার নিন্দাকারীরাই হবে هُوَ الْاَبْتَرُ শিকড়-কাটা (অসহায়)।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে (নিয়ামতের ভান্ডার) কাওসার দান করেছি। ২. অতএব, (আমার স্মরণের জন্য) তুমি নামায কায়েম করো এবং (আমারই উদ্দেশ্যে) কুরবানী করো। ৩. নিশ্চয় (পরিশেষে) তোমার নিন্দাকারীরাই হবে লেজকাটা (অসহায়)।
সূরার হেদায়াত ও শিক্ষা :
(১) সকল ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে হবে।
(২) ইসলামের শত্রুদের আজে-বাজে কথায় ব্যথিত না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা ও অসীম সাহস নিয়ে দ্বীন প্রচারের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
(৩) যারা শত্রুতা করবে এর পরিণাম তারাই ভোগ করবে, কেননা যে খারাপ চক্রান্ত করে সেই চক্রান্তের জালে তাকেই পড়তে হয়। [সূরা ফাতির- ৪৩।]
ফযীলত : এ সূরাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা। এর বিশেষ কিছু ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :
১। রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাতে এবং মাগরিবের দু’রাক‘আত সুন্নাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৮।]
২। হাদীসে এসেছে, সূরা কাফিরূন কুরআনের এক চতুর্থাংশের মর্যাদা রাখে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫১০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০৭৮।]
শানে নুযূল : নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন মক্কার কাফির ও মুশরিকরা তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য নানা ধরনের প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হতো।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আমরা আপনাকে এত বেশি পরিমাণ ধনসম্পদ দেব যার ফলে আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে যাবেন। যে মেয়েটিকে আপনি পছন্দ করবেন তার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দেব। আমরা আপনাকে নেতা বানিয়ে আপনার পেছনে চলতে প্রস্তুত। আপনি শুধু আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন, তা হচ্ছে আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আরেকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনারও লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কী? তারা বলল, একবছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং একবছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদাত করব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, থামো! আমি দেখি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কী হুকুম আসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন এবং তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। [আসবাবুন নুযুল, আবুল হাসান, ১/৪৫৮।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ ‐ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ ইয়া আইয়ুহাল কা-ফিরূন, (২) লা- আ‘বুদু মা- তা‘বুদূন, (৩) ওয়ালা আন্তুম ‘আবিদূনা মা আ‘বুদ, (৪) ওয়ালা আনা ‘আবিদুমমা ‘আবাত্তুম, (৫) ওয়ালা আনতুম ‘আবিদূনা মা আ‘বুদ, (৬) লাকুম দ্বী-নুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন।
শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী!) তুমি বলে দাও, يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ হে কাফিররা! لَاۤ اَعْبُدُ আমি তাদের ইবাদাত করি না مَا تَعْبُدُوْنَ তোমরা যাদের ইবাদাত কর। وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ যার ইবাদাত আমি করি। وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই - مَّا عَبَدْتُمْ যাদের ইবাদাত তোমরা কর। وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ যার ইবাদাত আমি করি। لَكُمْ دِيْنُكُمْ তোমাদের পথ তোমাদের জন্য - وَلِيَ دِيْنِ আর আমার পথ আমার জন্য।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! ২. আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৪. এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই- যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও আমি যার ইবাদাত করি। ৬. (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য- আর আমার দ্বীন আমার জন্য।
সূরার শিক্ষা ও মূল বিষয় : এ সূরায় এ কথাই বলা হয়েছে যে, ইসলাম ও কুফর এবং শির্ক ও তাওহীদ কোন দিনই এক সঙ্গে চলতে পারে না। একটি অপরটির বিপরীত। তাওহীদের মূল দাবি হলো শির্কের নিন্দা করা। যে আল্লাহর ইবাদাত করতে চায় সে অন্য কারো ইবাদাত করতে পারবে না। মুসলিমদেরকে চলতে হবে আল্লাহর দেয়া বিধানের উপর। আর অমুসলিম ও মুশরিকরা চলে তাদের মনগড়া মতবাদের উপর।
১। রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাতে এবং মাগরিবের দু’রাক‘আত সুন্নাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৮।]
২। হাদীসে এসেছে, সূরা কাফিরূন কুরআনের এক চতুর্থাংশের মর্যাদা রাখে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫১০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০৭৮।]
শানে নুযূল : নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন মক্কার কাফির ও মুশরিকরা তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য নানা ধরনের প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হতো।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আমরা আপনাকে এত বেশি পরিমাণ ধনসম্পদ দেব যার ফলে আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে যাবেন। যে মেয়েটিকে আপনি পছন্দ করবেন তার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দেব। আমরা আপনাকে নেতা বানিয়ে আপনার পেছনে চলতে প্রস্তুত। আপনি শুধু আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন, তা হচ্ছে আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আরেকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনারও লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কী? তারা বলল, একবছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং একবছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদাত করব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, থামো! আমি দেখি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কী হুকুম আসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি নাযিল করেন এবং তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। [আসবাবুন নুযুল, আবুল হাসান, ১/৪৫৮।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ ‐ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ ইয়া আইয়ুহাল কা-ফিরূন, (২) লা- আ‘বুদু মা- তা‘বুদূন, (৩) ওয়ালা আন্তুম ‘আবিদূনা মা আ‘বুদ, (৪) ওয়ালা আনা ‘আবিদুমমা ‘আবাত্তুম, (৫) ওয়ালা আনতুম ‘আবিদূনা মা আ‘বুদ, (৬) লাকুম দ্বী-নুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন।
শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী!) তুমি বলে দাও, يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ হে কাফিররা! لَاۤ اَعْبُدُ আমি তাদের ইবাদাত করি না مَا تَعْبُدُوْنَ তোমরা যাদের ইবাদাত কর। وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ যার ইবাদাত আমি করি। وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই - مَّا عَبَدْتُمْ যাদের ইবাদাত তোমরা কর। وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ যার ইবাদাত আমি করি। لَكُمْ دِيْنُكُمْ তোমাদের পথ তোমাদের জন্য - وَلِيَ دِيْنِ আর আমার পথ আমার জন্য।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! ২. আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৪. এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই- যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও আমি যার ইবাদাত করি। ৬. (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য- আর আমার দ্বীন আমার জন্য।
সূরার শিক্ষা ও মূল বিষয় : এ সূরায় এ কথাই বলা হয়েছে যে, ইসলাম ও কুফর এবং শির্ক ও তাওহীদ কোন দিনই এক সঙ্গে চলতে পারে না। একটি অপরটির বিপরীত। তাওহীদের মূল দাবি হলো শির্কের নিন্দা করা। যে আল্লাহর ইবাদাত করতে চায় সে অন্য কারো ইবাদাত করতে পারবে না। মুসলিমদেরকে চলতে হবে আল্লাহর দেয়া বিধানের উপর। আর অমুসলিম ও মুশরিকরা চলে তাদের মনগড়া মতবাদের উপর।
নাযিলের সময়কাল : পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে নাযিলকৃত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে এটি। এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের কিছু দিন পূর্বে নাযিল হয়। ইবনে আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেন এটি কুরআনের সর্বশেষ সূরা। এর পরে আর কোন পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়নি। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭৩১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৫৮৮।]
সূরার শানে নুযূল ও আলোচ্য বিষয় : মহান আল্লাহ বিশ্বনবী ﷺ কে যে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন, নবী ﷺ নিষ্ঠার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের বিজয় শুরু হতে লাগল। মক্কা বিজয়ের ফলে সমগ্র মক্কা ইসলামের দখলে আসলো। আগে মানুষ একা একা ইসলামে দাখিল হতো- এখন তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাষ্ট্র প্রধান হলেন। লক্ষ লক্ষ সাহাবীকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজ্জ পালন করলেন। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে পূর্ণতায় পৌঁছে দিলেন।
এবার আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন, ঠিক এমন সময় তিনি এ সূরাটি নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের বিজয় হলে তারা উৎসব পালন করে, আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত হয়ে যায়; আর আপনার ব্যাপার কিন্তু আলাদা। আমি আপনাকে বিজয় দিয়েছি, এখন আপনি আমার প্রশংসা করুন- আর আমার কাছে ইস্তিগফার করুন।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ ‐ وَرَاَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ اَفْوَاجًا ‐ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) ইযা জা-আ নাস্রুল্লাহি ওয়াল্ ফাত্হু, (২) ওয়ারা আইতান্নাসা ইয়াদ্খুলূনা ফী দ্বীনিল্লাহি আফ্ওয়াজা, (৩) ফাসাব্বিহ বিহাম্দি রাবিবকা ওয়াস্তাগ্ফিরহু ইন্নাহূ কানা তাও্ওয়াবা।
শাব্দিক অর্থ : اِذَا جَآءَ যখন আসবে نَصْرُ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য وَالْفَتْحُ ও বিজয় । وَرَاَيْتَ النَّاسَ তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, يَدْخُلُوْنَ তারা প্রবেশ করছে فِيْ دِيْنِ اللهِ আল্লাহর দ্বীনে اَفْوَاجًا দলে দলে। فَسَبِّحْ অতএব তুমি তাসবীহ পাঠ করো بِحَمْدِ প্রশংসার সাথে رَبِّكَ তোমার মালিকের وَاسْتَغْفِرْهُ এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; اِنَّهٗ অবশ্যই তিনি كَانَ تَوَّابًا তওবা কবুলকারী।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে। ২. তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। ৩. অতঃপর তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা করো এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; অবশ্যই তিনি তওবা কবুলকারী।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) সফলতা ও বিজয় শুধুমাত্র শক্তি ও জনবলের মাধ্যমে অর্জিত হয় না; বরং আল্লাহর সাহায্য দ্বারাই অর্জিত হয়।
(২) আল্লাহ কোন বান্দাকে নিয়ামত দান করলে সেজন্য গর্বিত না হয়ে বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
(৩) কোন ব্যক্তি ইসলামের যত বড় খেদমতই করুক না কেন- এজন্য তার পক্ষে গর্ব করা উচিত নয়; বরং একে আল্লাহর অনুগ্রহ জেনে তাঁর কাছে নত হয়ে থাকা ও তাঁর শুকরিয়া আদায় করাই ইসলামের শিক্ষা।
(৪) এ সূরা নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ রুকূ ও সিজদায় ‘‘সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহাম্দিকা আল্লা-হুম্মাগ্ ফিরলী’’ বেশি বেশি পড়তেন। আমরাও এ দু‘আটির উপর আমল করব। [সহীহ বুখারী, হা/৮১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; নাসাঈ, হা/১০৪৭।]
সূরার শানে নুযূল ও আলোচ্য বিষয় : মহান আল্লাহ বিশ্বনবী ﷺ কে যে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন, নবী ﷺ নিষ্ঠার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের বিজয় শুরু হতে লাগল। মক্কা বিজয়ের ফলে সমগ্র মক্কা ইসলামের দখলে আসলো। আগে মানুষ একা একা ইসলামে দাখিল হতো- এখন তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাষ্ট্র প্রধান হলেন। লক্ষ লক্ষ সাহাবীকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজ্জ পালন করলেন। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে পূর্ণতায় পৌঁছে দিলেন।
এবার আল্লাহ তা‘আলা নবী ﷺ কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন, ঠিক এমন সময় তিনি এ সূরাটি নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের বিজয় হলে তারা উৎসব পালন করে, আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত হয়ে যায়; আর আপনার ব্যাপার কিন্তু আলাদা। আমি আপনাকে বিজয় দিয়েছি, এখন আপনি আমার প্রশংসা করুন- আর আমার কাছে ইস্তিগফার করুন।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ ‐ وَرَاَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ اَفْوَاجًا ‐ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) ইযা জা-আ নাস্রুল্লাহি ওয়াল্ ফাত্হু, (২) ওয়ারা আইতান্নাসা ইয়াদ্খুলূনা ফী দ্বীনিল্লাহি আফ্ওয়াজা, (৩) ফাসাব্বিহ বিহাম্দি রাবিবকা ওয়াস্তাগ্ফিরহু ইন্নাহূ কানা তাও্ওয়াবা।
শাব্দিক অর্থ : اِذَا جَآءَ যখন আসবে نَصْرُ اللهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য وَالْفَتْحُ ও বিজয় । وَرَاَيْتَ النَّاسَ তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, يَدْخُلُوْنَ তারা প্রবেশ করছে فِيْ دِيْنِ اللهِ আল্লাহর দ্বীনে اَفْوَاجًا দলে দলে। فَسَبِّحْ অতএব তুমি তাসবীহ পাঠ করো بِحَمْدِ প্রশংসার সাথে رَبِّكَ তোমার মালিকের وَاسْتَغْفِرْهُ এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; اِنَّهٗ অবশ্যই তিনি كَانَ تَوَّابًا তওবা কবুলকারী।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে। ২. তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। ৩. অতঃপর তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা করো এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; অবশ্যই তিনি তওবা কবুলকারী।
সূরার মৌলিক শিক্ষা :
(১) সফলতা ও বিজয় শুধুমাত্র শক্তি ও জনবলের মাধ্যমে অর্জিত হয় না; বরং আল্লাহর সাহায্য দ্বারাই অর্জিত হয়।
(২) আল্লাহ কোন বান্দাকে নিয়ামত দান করলে সেজন্য গর্বিত না হয়ে বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
(৩) কোন ব্যক্তি ইসলামের যত বড় খেদমতই করুক না কেন- এজন্য তার পক্ষে গর্ব করা উচিত নয়; বরং একে আল্লাহর অনুগ্রহ জেনে তাঁর কাছে নত হয়ে থাকা ও তাঁর শুকরিয়া আদায় করাই ইসলামের শিক্ষা।
(৪) এ সূরা নাযিল হওয়ার পর নবী ﷺ রুকূ ও সিজদায় ‘‘সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়াবিহাম্দিকা আল্লা-হুম্মাগ্ ফিরলী’’ বেশি বেশি পড়তেন। আমরাও এ দু‘আটির উপর আমল করব। [সহীহ বুখারী, হা/৮১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩; নাসাঈ, হা/১০৪৭।]
শানে নুযূল : এ সূরাটি নবুওয়াতের প্রথম দিকে মক্কায় অবতীর্ণ হয়। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ এর প্রতি যখন এ আয়াত নাযিল হয়-
﴿وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ﴾
আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখান। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)
তখন মহানবী ﷺ সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে চিৎকার করে বলেন, صَبَاحَاهْ يَا (হায়রে সকাল বেলার বিপদ!) সে সময় আরবের নিয়ম ছিল কোন গোত্রের উপর আক্রমণের ভয় হলে লোকেরা সকালে পাহাড়ে উঠে এ রকম চিৎকার দিত। এতে সবাই একস্থানে সমবেত হয়ে যেত।
নবীর এ শব্দ শুনে তারা পাহাড়ের পাশে এসে জমা হলে নবী ﷺ বললেন, হে বনু হাশেম! হে বনু আবদুল মুত্তালিব! হে অমুক...! আমি যদি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেই যে, পাহাড়ের ঐ পাশে এক শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য এসেছে তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি? তারা বলল, করব। কারণ আমরা তোমাকে কোনদিন মিথ্যা বলতে শুনিনি। এরপর নবী ﷺ বললেন,
فَاِنِّىْ نَذِيْرٌ لَّكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٌ
তাহলে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি, আগামীতে কঠিন আযাব আসছে (তোমাদের শির্ক ও কুফ্রের কারণে)।
তখন আবু লাহাব বলে উঠল, তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কি এ জন্য আমাদেরকে ডেকেছিলে? [সহীহ বুখারী, হা/৪৮০১; তিরমিযী, হা/৩৩৬৩।] এপ্রসঙ্গে সূরাটি নাযিল হয়।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‐ مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ ‐ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ‐ وَّامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‐ فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) তাব্বাত্ ইয়াদা আবী লাহাবিওঁ ওয়া তাববা, (২) মা আগ্না-আন্হু মা-লুহূ ওয়ামা-কাসাব, (৩) সাইয়াস্লা না-রান্ যা-তা লাহাব, (৪) ওয়াম্রাআতুহূ হাম্মা-লাতাল হাত্বাব, (৫) ফী জীদিহা হাব্লুম মিম্ মাসাদ।
শাব্দিক অর্থ : تَبَّتْ ধ্বংস হয়ে যাক يَدَا দু’হাতই اَبِيْ لَهَبٍ আবু লাহাবের, وَّتَبَّ সে নিজেও। مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ তার কোন কাজে আসেনি مَالُهٗ তার ধনসম্পদ وَمَا كَسَبَ ও যা সে আয়-উপার্জন করেছিল। سَيَصْلٰى অচিরেই সে প্রবেশ করবে نَارًا আগুনে ذَاتَ لَهَبٍ যা লেলিহান শিখা বিশিষ্ট। وَّامْرَاَتُهٗ সাথে থাকবে তার স্ত্রীও حَمَّالَةَ যে বহন করত اَلْحَطَبِ কাঠের বোঝা। فِيْ جِيْدِهَا তার গলায় থাকবে حَبْلٌ রশি مِّنْ مَّسَدٍ খেজুর পাতার পাকানো।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. আবু লাহাবের (দুনিয়া-আখিরাতে) দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক, ধবংস হয়ে যাক সে নিজেও। ২. তার ধনসম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। ৩. অচিরেই সে লেলিহান শিখা বিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। ৪. সাথে থাকবে জ্বালানি কাঠের বোঝা বহনকারিণী তার স্ত্রীও। ৫. (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়িয়ে আছে।
সূরা লাহাবের হেদায়াত ও মৌলিক শিক্ষা :
(১) ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে দুশমনি করার পরিণাম হলো উভয় জগতে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।
(২) মাল আর সন্তান কোন কাজে আসবে না- যদি এসব আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজে ব্যবহার না করা হয়।
(৩) পাপ কাজে যারা একে অন্যের সহযোগী হয় কিয়ামতের দিন তাদের সকলকে একত্র করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
(৪) নিজের ঈমান ও আমল না থাকলে হাশরের দিনে আত্মীয়স্বজন কোন উপকারে আসবে না।
(৫) যারাই এ পৃথিবীতে ইসলামের বিরোধিতা করেছে, তারা কেউই এ দুনিয়া থেকে সম্মানে বিদায় নিতে পারেনি। ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না, আর পরকালের শাস্তি তো আছেই।
﴿وَاَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ﴾
আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখান। (সূরা শু‘আরা- ২১৪)
তখন মহানবী ﷺ সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে চিৎকার করে বলেন, صَبَاحَاهْ يَا (হায়রে সকাল বেলার বিপদ!) সে সময় আরবের নিয়ম ছিল কোন গোত্রের উপর আক্রমণের ভয় হলে লোকেরা সকালে পাহাড়ে উঠে এ রকম চিৎকার দিত। এতে সবাই একস্থানে সমবেত হয়ে যেত।
নবীর এ শব্দ শুনে তারা পাহাড়ের পাশে এসে জমা হলে নবী ﷺ বললেন, হে বনু হাশেম! হে বনু আবদুল মুত্তালিব! হে অমুক...! আমি যদি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেই যে, পাহাড়ের ঐ পাশে এক শত্রু বাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য এসেছে তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি? তারা বলল, করব। কারণ আমরা তোমাকে কোনদিন মিথ্যা বলতে শুনিনি। এরপর নবী ﷺ বললেন,
فَاِنِّىْ نَذِيْرٌ لَّكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٌ
তাহলে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি, আগামীতে কঠিন আযাব আসছে (তোমাদের শির্ক ও কুফ্রের কারণে)।
তখন আবু লাহাব বলে উঠল, তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কি এ জন্য আমাদেরকে ডেকেছিলে? [সহীহ বুখারী, হা/৪৮০১; তিরমিযী, হা/৩৩৬৩।] এপ্রসঙ্গে সূরাটি নাযিল হয়।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ ‐ مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ ‐ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ‐ وَّامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‐ فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) তাব্বাত্ ইয়াদা আবী লাহাবিওঁ ওয়া তাববা, (২) মা আগ্না-আন্হু মা-লুহূ ওয়ামা-কাসাব, (৩) সাইয়াস্লা না-রান্ যা-তা লাহাব, (৪) ওয়াম্রাআতুহূ হাম্মা-লাতাল হাত্বাব, (৫) ফী জীদিহা হাব্লুম মিম্ মাসাদ।
শাব্দিক অর্থ : تَبَّتْ ধ্বংস হয়ে যাক يَدَا দু’হাতই اَبِيْ لَهَبٍ আবু লাহাবের, وَّتَبَّ সে নিজেও। مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ তার কোন কাজে আসেনি مَالُهٗ তার ধনসম্পদ وَمَا كَسَبَ ও যা সে আয়-উপার্জন করেছিল। سَيَصْلٰى অচিরেই সে প্রবেশ করবে نَارًا আগুনে ذَاتَ لَهَبٍ যা লেলিহান শিখা বিশিষ্ট। وَّامْرَاَتُهٗ সাথে থাকবে তার স্ত্রীও حَمَّالَةَ যে বহন করত اَلْحَطَبِ কাঠের বোঝা। فِيْ جِيْدِهَا তার গলায় থাকবে حَبْلٌ রশি مِّنْ مَّسَدٍ খেজুর পাতার পাকানো।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. আবু লাহাবের (দুনিয়া-আখিরাতে) দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক, ধবংস হয়ে যাক সে নিজেও। ২. তার ধনসম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। ৩. অচিরেই সে লেলিহান শিখা বিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। ৪. সাথে থাকবে জ্বালানি কাঠের বোঝা বহনকারিণী তার স্ত্রীও। ৫. (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়িয়ে আছে।
সূরা লাহাবের হেদায়াত ও মৌলিক শিক্ষা :
(১) ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে দুশমনি করার পরিণাম হলো উভয় জগতে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।
(২) মাল আর সন্তান কোন কাজে আসবে না- যদি এসব আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজে ব্যবহার না করা হয়।
(৩) পাপ কাজে যারা একে অন্যের সহযোগী হয় কিয়ামতের দিন তাদের সকলকে একত্র করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
(৪) নিজের ঈমান ও আমল না থাকলে হাশরের দিনে আত্মীয়স্বজন কোন উপকারে আসবে না।
(৫) যারাই এ পৃথিবীতে ইসলামের বিরোধিতা করেছে, তারা কেউই এ দুনিয়া থেকে সম্মানে বিদায় নিতে পারেনি। ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না, আর পরকালের শাস্তি তো আছেই।
নামকরণ : পবিত্র কুরআনের সূরাসমূহের নাম সাধারণত উক্ত সূরার কোন একটি শব্দ হতে নির্বাচন করা হয়, কিন্তু এ সূরাটি এর ব্যতিক্রম। اِخْلَاصٌ শব্দটি সূরার মধ্যে নেই। এ নাম দেয়া হয়েছে- কেবল সূরায় আলোচিত বিষয়বস্তুর দিকে লক্ষ্য করে। ‘ইখলাস’ অর্থ- একনিষ্ঠ, খালিস। এ সূরায় একনিষ্ঠ ও নির্ভেজাল তাওহীদের কথা আলোচিত হয়েছে। তাই এর নাম দেয়া হয়েছে সূরা ইখলাস।
শানে নুযূল : উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আপনার রবের বংশ-পরিচয় আমাদেরকে জানান। এ কথার উত্তরে সূরাটি নাযিল হয়। [তিরমিযী, হা/৩৩৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১২৫৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৯৮৭।]
সূরা ইখলাসের বিশেষ গুরুত্ব ও ফযীলত :
পবিত্র কুরআনের মূল আলোচনার বিষয় হলো তিনটি, তাওহীদ, রিসালাত এবং আখিরাত। আর এ সূরায় ইসলামের মৌলিক আকীদা তাওহীদকে খুবই স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য নবী ﷺ এ সূরাটির বহুল প্রচার কামনা করতেন। প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে যেন এর বিষয়বস্তু গেঁথে যায়, এজন্য তিনি এ সূরা তিলাওয়াতের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এ সূরাকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলেছেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে রাত্রে বার বার সূরা ইখলাস পড়তে শুনলেন। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন সে ঘটনাটি নবী ﷺ কে জানালেন। সম্ভবত তিনি এ আমলকে হালকা মনে করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় এ সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪৮৫; সহীহ বুখারী, হা/৫০১৩; আবু দাউদ, হা/১৪৬৩; তিরমিযী, হা/৯৯৫।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই কি রাত্রে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে পারবে না? সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার এ ক্ষমতা আছে? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, জেনে রেখো, সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৯২২।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এক সাহাবীকে সফরে পাঠিয়েছিলেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আত সূরা ইখলাস দ্বারা শেষ করতেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এ সূরাতে রহমানের গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। তাই এ সূরাটি পাঠ করা আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালোবাসেন। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৯২৬; নাসাঈ, হা/৯৯৩।]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক আনসারী সাহাবী মসজিদে কুবায় ইমামতি করতেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ইখলাস পড়তেন। তারপর অন্য সূরা পড়তেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এভাবে পড়েন কেন? তিনি বললেন, এ সূরাটিকে আমি খুব ভালোবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, এ সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৪; তিরমিযী, হা/২৯০১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৩৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৯৪; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩১৯৪।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا اَحَدٌ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ, (২) আল্লা-হুস্সামাদ, (৩) লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়ালাম্ ইউলাদ্, (৪) ওয়ালাম্ ইয়াকুল্লাহূ কুফুওয়ান্ আহাদ।
শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, هُوَ اللهُ তিনি আল্লাহ, اَحَدٌ এক ও একক। اَللهُ আল্লাহ اَلصَّمَدُ অমুখাপেক্ষী। لَمْ يَلِدْ তিনি কাউকে জন্ম দেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ আর তাঁর জন্য নেই كُفُوًا اَحَدٌ কোন সমতুল্য।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ এক ও একক। ২. তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। ৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। ৪. আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ নেই।
সূরা ইখলাসের মৌলিক শিক্ষা :
(১) আল্লাহ অতুলনীয়, তাঁর উপর ঈমান আনতে হলে তাঁর গুণাবলি দেখেই ঈমান আনতে হবে। তাঁর গুণাবলিই তাঁর পরিচয় বহন করে। তাঁর সত্তা বা গড়ন-গঠন সম্পর্কে চিন্তা করতে নেই।
(২) মানুষের স্রষ্টা ও পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তাই আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদাত করাই মানুষের কর্তব্য।
(৩) আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনিই আইন রচনা করেন এবং হুকুম জারি করেন। এজন্য আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে মানুষের তৈরি করা আইনের অনুসরণ করা শির্কের পর্যায়ে পড়ে।
(৪) শির্কের সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করে, খাঁটিভাবে তাওহীদবাদী হতে হবে- এটাই ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর।
শানে নুযূল : উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলল, আপনার রবের বংশ-পরিচয় আমাদেরকে জানান। এ কথার উত্তরে সূরাটি নাযিল হয়। [তিরমিযী, হা/৩৩৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১২৫৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৯৮৭।]
সূরা ইখলাসের বিশেষ গুরুত্ব ও ফযীলত :
পবিত্র কুরআনের মূল আলোচনার বিষয় হলো তিনটি, তাওহীদ, রিসালাত এবং আখিরাত। আর এ সূরায় ইসলামের মৌলিক আকীদা তাওহীদকে খুবই স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য নবী ﷺ এ সূরাটির বহুল প্রচার কামনা করতেন। প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে যেন এর বিষয়বস্তু গেঁথে যায়, এজন্য তিনি এ সূরা তিলাওয়াতের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এ সূরাকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলেছেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে রাত্রে বার বার সূরা ইখলাস পড়তে শুনলেন। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন সে ঘটনাটি নবী ﷺ কে জানালেন। সম্ভবত তিনি এ আমলকে হালকা মনে করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় এ সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/৪৮৫; সহীহ বুখারী, হা/৫০১৩; আবু দাউদ, হা/১৪৬৩; তিরমিযী, হা/৯৯৫।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই কি রাত্রে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে পারবে না? সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার এ ক্ষমতা আছে? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, জেনে রেখো, সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৯২২।]
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এক সাহাবীকে সফরে পাঠিয়েছিলেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আত সূরা ইখলাস দ্বারা শেষ করতেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এ সূরাতে রহমানের গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। তাই এ সূরাটি পাঠ করা আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালোবাসেন। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৯২৬; নাসাঈ, হা/৯৯৩।]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক আনসারী সাহাবী মসজিদে কুবায় ইমামতি করতেন। তিনি প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ইখলাস পড়তেন। তারপর অন্য সূরা পড়তেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এভাবে পড়েন কেন? তিনি বললেন, এ সূরাটিকে আমি খুব ভালোবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, এ সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৭৪; তিরমিযী, হা/২৯০১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৫৩৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৯৪; মুস্তাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩১৯৪।]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا اَحَدٌ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ হুওয়াল্লা-হু আহাদ, (২) আল্লা-হুস্সামাদ, (৩) লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়ালাম্ ইউলাদ্, (৪) ওয়ালাম্ ইয়াকুল্লাহূ কুফুওয়ান্ আহাদ।
শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, هُوَ اللهُ তিনি আল্লাহ, اَحَدٌ এক ও একক। اَللهُ আল্লাহ اَلصَّمَدُ অমুখাপেক্ষী। لَمْ يَلِدْ তিনি কাউকে জন্ম দেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ আর তাঁর জন্য নেই كُفُوًا اَحَدٌ কোন সমতুল্য।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে মুহাম্মাদ) আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ এক ও একক। ২. তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। ৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। ৪. আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ নেই।
সূরা ইখলাসের মৌলিক শিক্ষা :
(১) আল্লাহ অতুলনীয়, তাঁর উপর ঈমান আনতে হলে তাঁর গুণাবলি দেখেই ঈমান আনতে হবে। তাঁর গুণাবলিই তাঁর পরিচয় বহন করে। তাঁর সত্তা বা গড়ন-গঠন সম্পর্কে চিন্তা করতে নেই।
(২) মানুষের স্রষ্টা ও পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তাই আন্তরিকতা ও ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদাত করাই মানুষের কর্তব্য।
(৩) আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনিই আইন রচনা করেন এবং হুকুম জারি করেন। এজন্য আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে মানুষের তৈরি করা আইনের অনুসরণ করা শির্কের পর্যায়ে পড়ে।
(৪) শির্কের সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করে, খাঁটিভাবে তাওহীদবাদী হতে হবে- এটাই ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর।
সূরাদ্বয়ের ফযীলত : আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ যখন বিছানায় আগমন করতেন, তখন দু’হাত একত্র করে ফুঁক দিয়ে প্রথমে মাথা, পরে মুখমন্ডল এবং যতটুকু সম্ভব হয় সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে নিতেন এবং সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৫।]
উক্ববা ইবনে আমির (রাঃ) বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমি তাঁর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনরা কীভাবে মুক্তি পাবে? নবী ﷺ বললেন, হে উক্ববা! তুমি জিহবাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। বেশি সময় তোমার ঘরে অবস্থান করবে (পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য)। আর তোমার গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করবে। পরে নবী ﷺ আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তিনি আমার হাত ধরে বললেন, হে উক্ববা! আমি কি তোমাকে উত্তম তিনটি সূরার নাম বলব? যা তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন সব কিতাবে রয়েছে? আমি বললাম, বলুন! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! এরপর তিনি ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা আমাকে পড়ালেন। তারপর বললেন, হে উক্ববা! এগুলো ভুলে যেও না এবং তুমি রাতে এগুলো না পড়ে নিদ্রা যেও না। এরপর হতে আমি এগুলো ভুলিনি এবং এগুলো না পড়ে আমি কোন দিন ঘুমাইনি।
এরপর আমি পুনরায় নবীর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। নবীর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন আমলের কথা বলে দিন। তিনি বললেন, হে উক্ববা! যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথেও সম্পর্ক রাখবে। যে তোমাকে কিছু দেয় না, তুমি তাকেও দিবে। আর যে তোমার উপর অত্যাচার করবে, তুমি তাকে এড়িয়ে চলবে। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৭২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭২৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৯১।]
সূরা ফালাক ও নাস এর শানে নুযূল :
আল্লাহর নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত শুরু করলেন, তখন কাফির ও মুশরিকরা সবাই তাঁর শত্রু হয়ে গেল। এ কাজ বন্ধ করার জন্য প্রথমে তারা নবী ﷺ এর সাথে সন্ধির প্রস্তাব দিল। তখন সূরা কাফিরূন নাযিল করে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শির্ক ও তাওহীদ, ইসলাম ও কুফর একসাথে চলতে পারে না। এতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা নবী ﷺ কে হত্যা করার জন্য গোপনে পরামর্শ করতে লাগল। নবী ﷺ এর বংশের মুসলিমরা যাতে হত্যাকারীকে চিনতে না পারে সেজন্য তারা রাত্রে নবী ﷺ কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ সময় তারা নবী ﷺ এর উপর যাদু করারও চেষ্টা করল- যাতে তিনি যাদুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অথবা অসুস্থ হয়ে যান অথবা পাগল হয়ে যান। মানুষ শয়তান আর জিন শয়তান চতুর্দিক হতে উঠে পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে লাগল কীভাবে তাঁকে এবং তাঁর আদর্শকে উৎখাত করা যায়। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলা এ দুটি সূরা নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, এ অবস্থায় আপনি একমাত্র আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন, তাঁরই কাছে আশ্রয় চান। তিনিই আপনার হেফাযতকারী।
বিপদের কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাওয়া পূর্ববর্তী নবীদেরও নিয়ম ছিল। ফিরাউন যখন মূসা (আঃ) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল, তখন মূসা (আঃ) বললেন, যারা বিচার দিবসকে বিশ্বাস করে না, সেসকল ঔদ্ধত্য ব্যক্তি হতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের শরণাপন্ন হচ্ছি। [সূরা মু’মিন- ২৭।]
নবী ﷺ এর উপর যাদুর ঘটনা : হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মহানবী ﷺ যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খাইবার হতে একদল ইয়াহুদি মদিনায় আগমন করে বিখ্যাত যাদুকর লাবীদের সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা বলল, আমরা মুহাম্মাদকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার যাদু করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তাতে সফল হতে পারিনি। আমরা তোমাকে তিনটি আশরাফি (স্বর্ণমূদ্রা) দিচ্ছি, তুমি তার উপর খুব শক্ত আকারের যাদু করো। এ সময় এক ইয়াহুদি ছেলে মহানবী ﷺ এর খাদিম ছিল। তারা তার সাথে যোগাযোগ করে নবী ﷺ এর চিরুনির একটি অংশ সংগ্রহ করে নিল, যাতে নবী ﷺ এর চুল লাগানো ছিল। লাবীদ, অন্য বর্ণনায় তার যাদুকর বোন এ চিরুনি ও চুলের সঙ্গে এগার গিরা বিশিষ্ট এক গাছি সূতা ও সুচ বিশিষ্ট একটি মোমের পুতলিসহ খেজুর গাছের ছড়ার আবরণে রেখে যারওয়ান কূপের নিচে একটি পাথরের তলায় চাপা দিয়ে রেখেছিল।
নবী ﷺ এর উপর এ যাদুর প্রভাব পড়ল, তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুসনাদে আহমাদে আছে নবীর এ অসুস্থতা ছয় মাস পর্যন্ত চলছিল। অবশেষে নবী ﷺ আয়েশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করে আল্লাহর দরবারে পর পর দু‘আ করলেন। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? নবী ﷺ বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, দু’জন ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে একজন আমার মাথার দিকে ও অপরজন পায়ের দিকে বসলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? অপরজন উত্তর দিলেন, এর উপর যাদু করা হয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কে যাদু করেছে? বলা হলো লাবীদ। জিজ্ঞেস করা হলো, কিসে? বলা হলো- চিরুনি ও চুলে একটি পুরুষ খেজুর গাছের আবরণের মধ্যে। বলা হলো কোথায়? উত্তর হলো, যারওয়ান কূপের তলায় পাথরের নিচে। বলা হলো, এখন কী করা যায়? উত্তর হলো, পানি শুকিয়ে তা বের করতে হবে।
নবী ﷺ কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে কূপে গেলেন। পানি শুকিয়ে জিনিসটা বের করলেন, জিবরাঈল এসে নবী ﷺ কে বললেন, আপনি ফালাক ও নাস সূরা দুটি পড়ুন। নবী ﷺ একটি করে আয়াত পড়তে লাগলেন- এতে একেকটি গিরা খুলতে লাগল, এভাবে এগারটি আয়াত পড়া শেষ করলেন।
এতে এগারটি গিরা খুলে গেল এবং সকল সুচ পুতলি হতে বের হয়ে গেল। এবার নবী ﷺ এর শরীরে শক্তি ফিরে আসলো এবং তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। মনে হলো যেন আট-সাট করে বেঁধে রাখা একজন মানুষকে এই মাত্র ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অতঃপর নবী ﷺ লাবীদকে ডেকে এনে কৈফিয়ত চাইলে সে তার দোষ স্বীকার করে নিল। ফলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কারণ নবী ﷺ ব্যক্তিগত কারণে কখনো কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। তখন কোন কোন সাহাবী বলেছিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমরা এ খবীসকে হত্যা করব না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করে দিয়েছেন- আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না। [তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা নাস ও ফালাকের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
সূরা ফালাক ও নাস এর মূল আলোচ্য বিষয় :
এ দুনিয়ায় মানুষের অসংখ্য শত্রু রয়েছে। জিন-ইনসান ছাড়া অনেক জীবজমত্মুও মানুষের ক্ষতি করে থাকে। তবে প্রত্যেক মুমিন বান্দার এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের লাভ-ক্ষতি আল্লাহর হাতে। তার হুকুম ব্যতীত কেউ কারো অণু পরিমাণ লাভ-ক্ষতি করতে পারে না। আর এ সূরা দুটিতে এ কথাই বলা হয়েছে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদাপদ হতে বাঁচার জন্য নিজেকে আল্লাহর আশ্রয়ে দিয়ে দিতে হবে এবং আমলের মাধ্যমে তাঁর আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‐ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ‐ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ ‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল আ‘ঊযু বিরাবিবল্ ফালাক্ব, (২) মিনশার্রি মা খালাক্ব, (৩) ওয়ামিন শার্রি গা-সিক্বিন ইযা-ওয়াক্বাব, (৪) ওয়ামিন শার্রিন্ নাফ্ফা-সা-তি ফিল্‘উক্বাদ, (৫) ওয়ামিন শার্রি হা-সিদিন্ ইযা-হাসাদ।
শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ الْفَلَقِ উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে। مِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে مَا خَلَقَ যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। وَمِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে غَاسِقٍ যা রাতের অন্ধকারে সংঘটিত হয়, اِذَا وَقَبَ (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। وَمِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে اَلنَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের। وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও اِذَا حَسَدَ যখন সে হিংসা করে।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। ২. (আশ্রয় চাই) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে ৩. আমি আশ্রয় চাই রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। ৪. (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। ৫. (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ‐ مَلِكِ النَّاسِ ‐ اِلٰهِ النَّاسِ ‐ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ‐ اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ ‐ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ আ‘ঊযু বিরাবিবন্ না-স, (২) মালিকিন্ না-স, (৩) ইলা-হিন্ না-স, (৪) মিন শার্রিল্ ওয়াসওয়া-সিল্ খান্না-স, (৫) আল্লাযী ইউওয়াসওয়িসু ফী সুদূরিন্না-স, (৬) মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।
শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ النَّاسِ মানুষের প্রতিপালকের কাছে। مَلِكِ النَّاسِ (আশ্রয় চাই) মানুষের প্রকৃত মালিকের কাছে। اِلٰهِ النَّاسِ (আশ্রয় চাই) মানুষের একমাত্র মাবুদের কাছে। مِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই) অনিষ্ট থেকে اَلْوَسْوَاسِ কুমন্ত্রণার, اَلْخَنَّاسِ কুমন্ত্রণাদানকারীর। اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ যে কুমন্ত্রণা দেয় فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ মানুষের অন্তরে। مِنَ الْجِنَّةِ জিনদের মধ্য থেকে হোক وَالنَّاسِ বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের মালিকের কাছে। ২. আশ্রয় চাই মানুষের প্রকৃত বাদশাহের কাছে। ৩. আশ্রয় চাই মানুষের একমাত্র মাবুদের কাছে। ৪. আশ্রয় চাই কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে প্ররোচনা দিয়েই শরীর ঢাকা দেয়। ৫. যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। ৬. জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
সূরা ফালাক ও নাস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা :
১. যাদুর প্রভাব সত্য এবং তা মানুষের উপর আছর করতে পারে।
২. যাদু করে কারো ক্ষতি করা সুস্পষ্ট কুফরী এবং কবীরা গোনাহ।
৩. কারো উপর যাদুর প্রভাব পড়লে এ দুটি সূরা বেশি করে পড়া উচিত।
৪. বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ফকীর ও মাজারের আশ্রয় না নিয়ে আল্লাহর আশ্রয় নিতে হবে। নবী ﷺ এর মাধ্যমে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর নিকট হতে কেউ খালি হাতে ফিরে না।
৫. সত্যিকার অর্থে যারা ইসলামের দাওয়াত দেন, তাদের দুশমন অতীতে যেমন ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
৬. ইসলামের স্বার্থ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে, দুশমন থেকে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং তার প্রতি ক্ষমা ও উদারতার নীতি অবলম্বন করা উচিত। নবী ﷺ এমন আচরণ করতেন, তাঁর উদার মনোভাব দেখে লোকেরা সবচেয়ে বেশি ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হতো।
৭. হিংসা খুবই খারাপ জিনিস, এটা মানুষের নেকীকে ধ্বংস করে দেয়। এজন্য হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী হওয়া মুমিনের কর্তব্য।
৮. শয়তান যেমন মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। কিছু মানুষও তেমনিভাবে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। এজন্য যখনই দেখা যাবে যে, কোন মানুষ আমাকে ভালো কাজ থেকে দূরে রাখছে এবং খারাপ কাজের দিকে আকৃষ্ট করছে বা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে, তখনই বুঝতে হবে যে, এ লোকটি শয়তানের সহযোগী হয়ে আমার কাছে এসেছে। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
উক্ববা ইবনে আমির (রাঃ) বলেন, আমি নবী ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমি তাঁর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনরা কীভাবে মুক্তি পাবে? নবী ﷺ বললেন, হে উক্ববা! তুমি জিহবাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। বেশি সময় তোমার ঘরে অবস্থান করবে (পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য)। আর তোমার গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করবে। পরে নবী ﷺ আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তিনি আমার হাত ধরে বললেন, হে উক্ববা! আমি কি তোমাকে উত্তম তিনটি সূরার নাম বলব? যা তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন সব কিতাবে রয়েছে? আমি বললাম, বলুন! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! এরপর তিনি ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা আমাকে পড়ালেন। তারপর বললেন, হে উক্ববা! এগুলো ভুলে যেও না এবং তুমি রাতে এগুলো না পড়ে নিদ্রা যেও না। এরপর হতে আমি এগুলো ভুলিনি এবং এগুলো না পড়ে আমি কোন দিন ঘুমাইনি।
এরপর আমি পুনরায় নবীর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। নবীর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন আমলের কথা বলে দিন। তিনি বললেন, হে উক্ববা! যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথেও সম্পর্ক রাখবে। যে তোমাকে কিছু দেয় না, তুমি তাকেও দিবে। আর যে তোমার উপর অত্যাচার করবে, তুমি তাকে এড়িয়ে চলবে। [সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৭২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭২৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৯১।]
সূরা ফালাক ও নাস এর শানে নুযূল :
আল্লাহর নবী ﷺ যখন ইসলামের দাওয়াত শুরু করলেন, তখন কাফির ও মুশরিকরা সবাই তাঁর শত্রু হয়ে গেল। এ কাজ বন্ধ করার জন্য প্রথমে তারা নবী ﷺ এর সাথে সন্ধির প্রস্তাব দিল। তখন সূরা কাফিরূন নাযিল করে জানিয়ে দেয়া হলো যে, শির্ক ও তাওহীদ, ইসলাম ও কুফর একসাথে চলতে পারে না। এতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা নবী ﷺ কে হত্যা করার জন্য গোপনে পরামর্শ করতে লাগল। নবী ﷺ এর বংশের মুসলিমরা যাতে হত্যাকারীকে চিনতে না পারে সেজন্য তারা রাত্রে নবী ﷺ কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ সময় তারা নবী ﷺ এর উপর যাদু করারও চেষ্টা করল- যাতে তিনি যাদুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অথবা অসুস্থ হয়ে যান অথবা পাগল হয়ে যান। মানুষ শয়তান আর জিন শয়তান চতুর্দিক হতে উঠে পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে লাগল কীভাবে তাঁকে এবং তাঁর আদর্শকে উৎখাত করা যায়। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলা এ দুটি সূরা নাযিল করে নবী ﷺ কে বলে দিলেন যে, এ অবস্থায় আপনি একমাত্র আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন, তাঁরই কাছে আশ্রয় চান। তিনিই আপনার হেফাযতকারী।
বিপদের কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাওয়া পূর্ববর্তী নবীদেরও নিয়ম ছিল। ফিরাউন যখন মূসা (আঃ) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল, তখন মূসা (আঃ) বললেন, যারা বিচার দিবসকে বিশ্বাস করে না, সেসকল ঔদ্ধত্য ব্যক্তি হতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের শরণাপন্ন হচ্ছি। [সূরা মু’মিন- ২৭।]
নবী ﷺ এর উপর যাদুর ঘটনা : হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মহানবী ﷺ যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খাইবার হতে একদল ইয়াহুদি মদিনায় আগমন করে বিখ্যাত যাদুকর লাবীদের সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা বলল, আমরা মুহাম্মাদকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার যাদু করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তাতে সফল হতে পারিনি। আমরা তোমাকে তিনটি আশরাফি (স্বর্ণমূদ্রা) দিচ্ছি, তুমি তার উপর খুব শক্ত আকারের যাদু করো। এ সময় এক ইয়াহুদি ছেলে মহানবী ﷺ এর খাদিম ছিল। তারা তার সাথে যোগাযোগ করে নবী ﷺ এর চিরুনির একটি অংশ সংগ্রহ করে নিল, যাতে নবী ﷺ এর চুল লাগানো ছিল। লাবীদ, অন্য বর্ণনায় তার যাদুকর বোন এ চিরুনি ও চুলের সঙ্গে এগার গিরা বিশিষ্ট এক গাছি সূতা ও সুচ বিশিষ্ট একটি মোমের পুতলিসহ খেজুর গাছের ছড়ার আবরণে রেখে যারওয়ান কূপের নিচে একটি পাথরের তলায় চাপা দিয়ে রেখেছিল।
নবী ﷺ এর উপর এ যাদুর প্রভাব পড়ল, তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুসনাদে আহমাদে আছে নবীর এ অসুস্থতা ছয় মাস পর্যন্ত চলছিল। অবশেষে নবী ﷺ আয়েশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করে আল্লাহর দরবারে পর পর দু‘আ করলেন। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে আয়েশা (রাঃ) কে বললেন, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? নবী ﷺ বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, দু’জন ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে একজন আমার মাথার দিকে ও অপরজন পায়ের দিকে বসলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? অপরজন উত্তর দিলেন, এর উপর যাদু করা হয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কে যাদু করেছে? বলা হলো লাবীদ। জিজ্ঞেস করা হলো, কিসে? বলা হলো- চিরুনি ও চুলে একটি পুরুষ খেজুর গাছের আবরণের মধ্যে। বলা হলো কোথায়? উত্তর হলো, যারওয়ান কূপের তলায় পাথরের নিচে। বলা হলো, এখন কী করা যায়? উত্তর হলো, পানি শুকিয়ে তা বের করতে হবে।
নবী ﷺ কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে কূপে গেলেন। পানি শুকিয়ে জিনিসটা বের করলেন, জিবরাঈল এসে নবী ﷺ কে বললেন, আপনি ফালাক ও নাস সূরা দুটি পড়ুন। নবী ﷺ একটি করে আয়াত পড়তে লাগলেন- এতে একেকটি গিরা খুলতে লাগল, এভাবে এগারটি আয়াত পড়া শেষ করলেন।
এতে এগারটি গিরা খুলে গেল এবং সকল সুচ পুতলি হতে বের হয়ে গেল। এবার নবী ﷺ এর শরীরে শক্তি ফিরে আসলো এবং তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। মনে হলো যেন আট-সাট করে বেঁধে রাখা একজন মানুষকে এই মাত্র ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অতঃপর নবী ﷺ লাবীদকে ডেকে এনে কৈফিয়ত চাইলে সে তার দোষ স্বীকার করে নিল। ফলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কারণ নবী ﷺ ব্যক্তিগত কারণে কখনো কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। তখন কোন কোন সাহাবী বলেছিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমরা এ খবীসকে হত্যা করব না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করে দিয়েছেন- আমি কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না। [তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা নাস ও ফালাকের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
সূরা ফালাক ও নাস এর মূল আলোচ্য বিষয় :
এ দুনিয়ায় মানুষের অসংখ্য শত্রু রয়েছে। জিন-ইনসান ছাড়া অনেক জীবজমত্মুও মানুষের ক্ষতি করে থাকে। তবে প্রত্যেক মুমিন বান্দার এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের লাভ-ক্ষতি আল্লাহর হাতে। তার হুকুম ব্যতীত কেউ কারো অণু পরিমাণ লাভ-ক্ষতি করতে পারে না। আর এ সূরা দুটিতে এ কথাই বলা হয়েছে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদাপদ হতে বাঁচার জন্য নিজেকে আল্লাহর আশ্রয়ে দিয়ে দিতে হবে এবং আমলের মাধ্যমে তাঁর আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‐ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ‐ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ ‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল আ‘ঊযু বিরাবিবল্ ফালাক্ব, (২) মিনশার্রি মা খালাক্ব, (৩) ওয়ামিন শার্রি গা-সিক্বিন ইযা-ওয়াক্বাব, (৪) ওয়ামিন শার্রিন্ নাফ্ফা-সা-তি ফিল্‘উক্বাদ, (৫) ওয়ামিন শার্রি হা-সিদিন্ ইযা-হাসাদ।
শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ الْفَلَقِ উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে। مِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে مَا خَلَقَ যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। وَمِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে غَاسِقٍ যা রাতের অন্ধকারে সংঘটিত হয়, اِذَا وَقَبَ (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। وَمِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই তার) অনিষ্ট থেকে اَلنَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের। وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও اِذَا حَسَدَ যখন সে হিংসা করে।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। ২. (আশ্রয় চাই) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে ৩. আমি আশ্রয় চাই রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। ৪. (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। ৫. (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ‐ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ‐ مَلِكِ النَّاسِ ‐ اِلٰهِ النَّاسِ ‐ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ‐ اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ ‐ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম- (১) কুল্ আ‘ঊযু বিরাবিবন্ না-স, (২) মালিকিন্ না-স, (৩) ইলা-হিন্ না-স, (৪) মিন শার্রিল্ ওয়াসওয়া-সিল্ খান্না-স, (৫) আল্লাযী ইউওয়াসওয়িসু ফী সুদূরিন্না-স, (৬) মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।
শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ النَّاسِ মানুষের প্রতিপালকের কাছে। مَلِكِ النَّاسِ (আশ্রয় চাই) মানুষের প্রকৃত মালিকের কাছে। اِلٰهِ النَّاسِ (আশ্রয় চাই) মানুষের একমাত্র মাবুদের কাছে। مِنْ شَرِّ (আশ্রয় চাই) অনিষ্ট থেকে اَلْوَسْوَاسِ কুমন্ত্রণার, اَلْخَنَّاسِ কুমন্ত্রণাদানকারীর। اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ যে কুমন্ত্রণা দেয় فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ মানুষের অন্তরে। مِنَ الْجِنَّةِ জিনদের মধ্য থেকে হোক وَالنَّاسِ বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের মালিকের কাছে। ২. আশ্রয় চাই মানুষের প্রকৃত বাদশাহের কাছে। ৩. আশ্রয় চাই মানুষের একমাত্র মাবুদের কাছে। ৪. আশ্রয় চাই কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে প্ররোচনা দিয়েই শরীর ঢাকা দেয়। ৫. যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। ৬. জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।
সূরা ফালাক ও নাস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা :
১. যাদুর প্রভাব সত্য এবং তা মানুষের উপর আছর করতে পারে।
২. যাদু করে কারো ক্ষতি করা সুস্পষ্ট কুফরী এবং কবীরা গোনাহ।
৩. কারো উপর যাদুর প্রভাব পড়লে এ দুটি সূরা বেশি করে পড়া উচিত।
৪. বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ফকীর ও মাজারের আশ্রয় না নিয়ে আল্লাহর আশ্রয় নিতে হবে। নবী ﷺ এর মাধ্যমে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর নিকট হতে কেউ খালি হাতে ফিরে না।
৫. সত্যিকার অর্থে যারা ইসলামের দাওয়াত দেন, তাদের দুশমন অতীতে যেমন ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
৬. ইসলামের স্বার্থ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে, দুশমন থেকে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং তার প্রতি ক্ষমা ও উদারতার নীতি অবলম্বন করা উচিত। নবী ﷺ এমন আচরণ করতেন, তাঁর উদার মনোভাব দেখে লোকেরা সবচেয়ে বেশি ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হতো।
৭. হিংসা খুবই খারাপ জিনিস, এটা মানুষের নেকীকে ধ্বংস করে দেয়। এজন্য হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী হওয়া মুমিনের কর্তব্য।
৮. শয়তান যেমন মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। কিছু মানুষও তেমনিভাবে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। এজন্য যখনই দেখা যাবে যে, কোন মানুষ আমাকে ভালো কাজ থেকে দূরে রাখছে এবং খারাপ কাজের দিকে আকৃষ্ট করছে বা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে, তখনই বুঝতে হবে যে, এ লোকটি শয়তানের সহযোগী হয়ে আমার কাছে এসেছে। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ মুসলিম নামায ছেড়ে দিয়েছে এবং এটাকে একটি বোঝা মনে করছে। তাদেরকে নামায পড়তে বললে তারা নানা অযুহাত পেশ করে থাকে। শয়তানের শিখানো নানা অভিযোগ তুলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নামাযকে অবহেলা করছে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে যতটুকু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন, সেটাকে একটু কাজে লাগান এবং নিচের বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে কিছুটা ভাবুন।
১. নামায কি কোন বোঝা, যা আপনার উপর কেউ চাপিয়ে দিয়েছে?
২. নামায কি সময় নষ্টকারী কোন জিনিস?
৩. নামায কি কোন রাজনৈতিক শাসকের আইন?
৪. নামায কি সাধারণ ব্যাপার যে, মন চাইলে পড়বেন নতুবা পড়বেন না?
৫. আল্লাহ কি বান্দার নামাযের মুখাপেক্ষী?
এ সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করতে পারলে শয়তানের প্রতারণার জাল থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। নতুবা শয়তানের প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জীবন ঘড়িতে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে। তখন আর আফসোস করেও কোন লাভ হবে না।
একে একে উত্তর নিন :
১. না, হে ভাই-বোনেরা! নামায কোন বোঝা নয়, এটা আপনার কাছে রাখা আল্লাহ তা‘আলার একটি আমানত। আপনি এই আমানতকে হেফাযত করলে তিনি আপনাকে একটি বিরাট পুরস্কার দেবেন।
দেখুন! যে যাকে ভালোবাসে, সে তাকে সম্মান করে। তাই আল্লাহ তা‘আলাকে যদি কেউ সত্যিই ভালোবাসে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর হুকুম পালন করবে। আমরা দেখি, প্রত্যেক ধর্মের লোক তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মেনে চলে, আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসকে তারা পূজা করে। হাতে বানানো মূর্তির ইবাদাত করে; অথচ এগুলো রিযিক দিতে পারে না, জীবন দিতে পারে না। কোন লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না, দু‘আ কবুল করতে পারে না, অভাব পূরণ করতে পারে না, তারপরও তারা এগুলোর উপাসনা করে। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এখন কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে অথচ ইসলামের বিধান মানবে না; এ ধরনের আচরণ মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট নয় কি?
লক্ষ্য করুন! কোন মানুষ যদি আপনাকে খুব ক্ষুধার সময় একটু খাবার দেয় বা পিপাসার সময় এক গ্লাস পানি দেয় অথবা আপনি পথ হারিয়ে গেছেন, কেউ যদি আপনাকে পথ দেখিয়ে দেয়, তাহলে আপনি কি তার শুকরিয়া আদায় করবেন না? অবশ্যই করবেন। তাহলে আল্লাহর চেয়ে বেশি অনুগ্রহকারী আপনার জন্য আর কে আছে? যে আল্লাহ আপনাকে মায়ের পেটে থাকতেই রিযিক দিলেন, এখনো দিচ্ছেন, যার আলো-বাতাস ও পানির উপর আপনার জীবন নির্ভরশীল, যিনি জ্ঞান-বুদ্ধি দিলেন, সুস্বাস্থ্য দিলেন, সঠিক পথের সন্ধান দিলেন, অসুখ হলে বা বিপদে পড়লে আপনি যাকে ডাকেন এবং যিনি বান্দার দু‘আ কবুল করেন, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা কি কর্তব্য নয়?
২. নামায সময় নষ্টকারী কোন জিনিস নয়। কোন মানুষ যখন অনবরত কাজ করতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ক্লান্তি আসে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময়মতো নামাযটা আদায় করে নিলে, শারীরিক পবিত্রতা ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। পরে নতুন উদ্যমে সতেজভাবে আবার কাজ শুরু করা যায় এবং কাজের মধ্যে বরকত পাওয়া যায়।
দেখুন, আপনি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে একটি কাজ শুরু করেছেন এমন সময় হঠাৎ করে আপনার শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে বা কাজের হাতিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের সাহায্যে কোন কাজ করছেন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন কাজ বন্ধ থাকে। আপনি যানবাহনে ভ্রমণ করছেন রাস্তায় যানজট লেগে যায়, কখনো গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, আবার কোন সময় দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন পর্যন্ত বিনাশ হয়ে যায়- এসব কারণে এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে নামাযের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সম্পন্ন করতে সামান্য সময় ব্যয় হলে কোন মুসলিম কী করে বলতে পারে যে, নামায পড়লে সময় নষ্ট হয়ে যাবে?
৩. নামায দুনিয়ার কোন শাসনকর্তার আইন নয়। আপনি যেহেতু কালিমা পড়ে ঈমান এনেছেন এবং ইসলামকে আপনার জীবনবিধান হিসেবে মেনে নিয়েছেন, তখন স্বেচ্ছায় আনন্দের সাথে আপনি ইসলামের বিধান পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর নামায হলো ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। এই নামাযই মুমিনকে কাফিরদের থেকে পৃথক করে।
একটু ভাবুন, কেউ যদি দেশীয় আইনে কোন অপরাধ করে এবং তাকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে ঐ লোকটির মধ্যে কতইনা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে, পুলিশ তাকে ধরে জেলখানায় পাঠাবে এই ভয়ে সে পালিয়ে বেড়ায়। দুনিয়ার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে নামায না পড়ার কারণে আপনি হাশরের দিন আল্লাহর আদালতে আসামী হবেন এই ভয় কি আপনার মনের মধ্যে একটুও নাড়া দেয় না? আপনি কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাদ পড়ে যাবেন বলে মনে করছেন? আপনি কি আল্লাহর শাস্তিকে হালকা মনে করেন? উত্তর যদি না হয়, তাহলে নামায না পড়ার মতো অপরাধ আপনি কেন করছেন?
৪. নামায কোন সাধারণ কাজ নয় যা আপনি করতেও পারেন, ছাড়তেও পারেন। বরং নামায হলো প্রত্যেক নর-নারীর উপর আল্লাহর দেয়া একটি ফরয বিধান। এটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে আদায় করতেই হবে। নামায নষ্ট করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর এটা আদায় করলে বিরাট পুরস্কার অর্জিত হবে।
৫. আমাদের নামায দিয়ে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। সারা দুনিয়ার মানুষ যদি কাফির হয়ে যায় তবুও আল্লাহর মর্যাদা একটুও কমবে না। আর সবাই যদি মুত্তাকী ও ভালো মানুষ হয়ে যায় এতেও আল্লাহর মর্যাদা বাড়বে না। বান্দা ইবাদাত করলে সে নিজেই এর উপকার ভোগ করবে। তাছাড়া নামায আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আত্মাকে সতেজ রাখার জন্য তেমন নামাযের প্রয়োজন। নামাযের মাধ্যমে যে পরিমাণ আত্মতৃপ্তি লাভ হয়, তা অন্য কোন উপায়ে অর্জিত হয় না। এখনই পরীক্ষা করে দেখুন- আপনি বিপদে আছেন, নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, আপনার মনে অশান্তি বিরাজ করছে। উঠুন! সুন্দর করে অযু করে দু’রাক‘আত নামায আদায় করে বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করুন। আর নিজের সমস্যা, দুঃখ-বেদনা আল্লাহর কাছে বলুন! দেখবেন আপনার মনে কত যে প্রশান্তি বিরাজ করবে, তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। তাইতো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ﴾
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর স্মরণেই তো অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা রা‘দ- ২৮)
হে ভাই-বোনেরা! দয়া করে আর নামায ছাড়বেন না।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে যতটুকু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন, সেটাকে একটু কাজে লাগান এবং নিচের বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে কিছুটা ভাবুন।
১. নামায কি কোন বোঝা, যা আপনার উপর কেউ চাপিয়ে দিয়েছে?
২. নামায কি সময় নষ্টকারী কোন জিনিস?
৩. নামায কি কোন রাজনৈতিক শাসকের আইন?
৪. নামায কি সাধারণ ব্যাপার যে, মন চাইলে পড়বেন নতুবা পড়বেন না?
৫. আল্লাহ কি বান্দার নামাযের মুখাপেক্ষী?
এ সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করতে পারলে শয়তানের প্রতারণার জাল থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। নতুবা শয়তানের প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জীবন ঘড়িতে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে। তখন আর আফসোস করেও কোন লাভ হবে না।
একে একে উত্তর নিন :
১. না, হে ভাই-বোনেরা! নামায কোন বোঝা নয়, এটা আপনার কাছে রাখা আল্লাহ তা‘আলার একটি আমানত। আপনি এই আমানতকে হেফাযত করলে তিনি আপনাকে একটি বিরাট পুরস্কার দেবেন।
দেখুন! যে যাকে ভালোবাসে, সে তাকে সম্মান করে। তাই আল্লাহ তা‘আলাকে যদি কেউ সত্যিই ভালোবাসে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর হুকুম পালন করবে। আমরা দেখি, প্রত্যেক ধর্মের লোক তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মেনে চলে, আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসকে তারা পূজা করে। হাতে বানানো মূর্তির ইবাদাত করে; অথচ এগুলো রিযিক দিতে পারে না, জীবন দিতে পারে না। কোন লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না, দু‘আ কবুল করতে পারে না, অভাব পূরণ করতে পারে না, তারপরও তারা এগুলোর উপাসনা করে। অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এখন কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে অথচ ইসলামের বিধান মানবে না; এ ধরনের আচরণ মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট নয় কি?
লক্ষ্য করুন! কোন মানুষ যদি আপনাকে খুব ক্ষুধার সময় একটু খাবার দেয় বা পিপাসার সময় এক গ্লাস পানি দেয় অথবা আপনি পথ হারিয়ে গেছেন, কেউ যদি আপনাকে পথ দেখিয়ে দেয়, তাহলে আপনি কি তার শুকরিয়া আদায় করবেন না? অবশ্যই করবেন। তাহলে আল্লাহর চেয়ে বেশি অনুগ্রহকারী আপনার জন্য আর কে আছে? যে আল্লাহ আপনাকে মায়ের পেটে থাকতেই রিযিক দিলেন, এখনো দিচ্ছেন, যার আলো-বাতাস ও পানির উপর আপনার জীবন নির্ভরশীল, যিনি জ্ঞান-বুদ্ধি দিলেন, সুস্বাস্থ্য দিলেন, সঠিক পথের সন্ধান দিলেন, অসুখ হলে বা বিপদে পড়লে আপনি যাকে ডাকেন এবং যিনি বান্দার দু‘আ কবুল করেন, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা কি কর্তব্য নয়?
২. নামায সময় নষ্টকারী কোন জিনিস নয়। কোন মানুষ যখন অনবরত কাজ করতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ক্লান্তি আসে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময়মতো নামাযটা আদায় করে নিলে, শারীরিক পবিত্রতা ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। পরে নতুন উদ্যমে সতেজভাবে আবার কাজ শুরু করা যায় এবং কাজের মধ্যে বরকত পাওয়া যায়।
দেখুন, আপনি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে একটি কাজ শুরু করেছেন এমন সময় হঠাৎ করে আপনার শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে বা কাজের হাতিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের সাহায্যে কোন কাজ করছেন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন কাজ বন্ধ থাকে। আপনি যানবাহনে ভ্রমণ করছেন রাস্তায় যানজট লেগে যায়, কখনো গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, আবার কোন সময় দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন পর্যন্ত বিনাশ হয়ে যায়- এসব কারণে এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে নামাযের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সম্পন্ন করতে সামান্য সময় ব্যয় হলে কোন মুসলিম কী করে বলতে পারে যে, নামায পড়লে সময় নষ্ট হয়ে যাবে?
৩. নামায দুনিয়ার কোন শাসনকর্তার আইন নয়। আপনি যেহেতু কালিমা পড়ে ঈমান এনেছেন এবং ইসলামকে আপনার জীবনবিধান হিসেবে মেনে নিয়েছেন, তখন স্বেচ্ছায় আনন্দের সাথে আপনি ইসলামের বিধান পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর নামায হলো ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। এই নামাযই মুমিনকে কাফিরদের থেকে পৃথক করে।
একটু ভাবুন, কেউ যদি দেশীয় আইনে কোন অপরাধ করে এবং তাকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে ঐ লোকটির মধ্যে কতইনা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করে, পুলিশ তাকে ধরে জেলখানায় পাঠাবে এই ভয়ে সে পালিয়ে বেড়ায়। দুনিয়ার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে নামায না পড়ার কারণে আপনি হাশরের দিন আল্লাহর আদালতে আসামী হবেন এই ভয় কি আপনার মনের মধ্যে একটুও নাড়া দেয় না? আপনি কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাদ পড়ে যাবেন বলে মনে করছেন? আপনি কি আল্লাহর শাস্তিকে হালকা মনে করেন? উত্তর যদি না হয়, তাহলে নামায না পড়ার মতো অপরাধ আপনি কেন করছেন?
৪. নামায কোন সাধারণ কাজ নয় যা আপনি করতেও পারেন, ছাড়তেও পারেন। বরং নামায হলো প্রত্যেক নর-নারীর উপর আল্লাহর দেয়া একটি ফরয বিধান। এটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে আদায় করতেই হবে। নামায নষ্ট করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর এটা আদায় করলে বিরাট পুরস্কার অর্জিত হবে।
৫. আমাদের নামায দিয়ে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। সারা দুনিয়ার মানুষ যদি কাফির হয়ে যায় তবুও আল্লাহর মর্যাদা একটুও কমবে না। আর সবাই যদি মুত্তাকী ও ভালো মানুষ হয়ে যায় এতেও আল্লাহর মর্যাদা বাড়বে না। বান্দা ইবাদাত করলে সে নিজেই এর উপকার ভোগ করবে। তাছাড়া নামায আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আত্মাকে সতেজ রাখার জন্য তেমন নামাযের প্রয়োজন। নামাযের মাধ্যমে যে পরিমাণ আত্মতৃপ্তি লাভ হয়, তা অন্য কোন উপায়ে অর্জিত হয় না। এখনই পরীক্ষা করে দেখুন- আপনি বিপদে আছেন, নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, আপনার মনে অশান্তি বিরাজ করছে। উঠুন! সুন্দর করে অযু করে দু’রাক‘আত নামায আদায় করে বসে বসে আল্লাহকে স্মরণ করুন। আর নিজের সমস্যা, দুঃখ-বেদনা আল্লাহর কাছে বলুন! দেখবেন আপনার মনে কত যে প্রশান্তি বিরাজ করবে, তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। তাইতো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوْبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِؕ اَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ﴾
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর স্মরণেই তো অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা রা‘দ- ২৮)
হে ভাই-বোনেরা! দয়া করে আর নামায ছাড়বেন না।
আপনি যদি মুসলিম হওয়ার ব্যাপারে সত্যবাদী হতে চান এবং নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে চান তাহলে নামায পড়ুন।
আপনি যদি ভদ্র, চরিত্রবান ও নিয়মানুবর্তী হতে চান তাহলে নামায পড়ুন, নামায আপনাকে এসকল গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করবে।
আপনার মাতা-পিতাকে যদি আপনি ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যদি আপনার দরদ থাকে তাহলে আপনি নামায পড়ুন। এতে তারা খুশি হবেন এবং তাদের ব্যাপারে আপনার দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে।
আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি নামায পড়ুন। এতে তারাও নামায আদায়কারী হবে। আপনি নিজেই যদি নামায না পড়েন তাহলে তারা শিখবে কীভাবে? দুনিয়ার অগ্নিকুন্ডে আপনার সন্তানকে ফেলে দিতে চান না, তাহলে জাহান্নামের আগুনে তাদেরকে কেন ফেলতে চান? নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘সাত বৎসর হলেই সন্তানকে নামায শিখাও। আর দশ বৎসর হয়ে গেলে নামায না পড়লে তাদেরকে প্রহার করো।’’ [আবু দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে চান, তবে দু’জনেই নামায পড়ুন, এতে আপনাদের মধ্যে মায়া-মহববত আরো বেশি হবে। আপনাদের আনন্দ হবে পুতঃপবিত্র।
আপনি যদি দেশপ্রেমিক হতে চান, তাহলে নামায পড়ুন। কারণ নামায ছেড়ে দেয়া কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ করলে আল্লাহর গযব, বিপদ-আপদ নেমে আসে, এতে দেশ ও জাতি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনি যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাহলে নামায পড়ুন। কারণ যে যাকে ভালোবাসে, সে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ও কথা বলতে পছন্দ করে। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ার ও তার কাছে মুনাজাত করার সুবর্ণ সুযোগ ও মাধ্যম হলো নামায।
একদিন আপনাকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে এ বিশ্বাস যদি আপনার থাকে, তাহলে কোনভাবেই নামায ছাড়বেন না। কারণ আল্লাহর আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা হবে নামায পড়েছ কি না। এই জায়গায় পাস করলে সবখানেই পাস করতে পারবেন আর নামাযের প্রশ্নে ফেল করলে আর কোথাও পাস করার আশা নেই।
জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনকে যদি আপনি ভয় করেন, তাহলে নামায আদায় করুন। কারণ আমরা সূর্যের প্রখর তাপটুকু সহ্য করতে পারি না। আর জাহান্নামের আগুন যা হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি শক্তিশালী, সে আগুন আমরা কীভাবে সহ্য করব।
আপনার নিজের প্রতি যদি দরদ ও মায়া থাকে, তাহলে নামায ছাড়বেন না। কারণ আমরা দুনিয়ায় নিজেদেরকে কোন হালকা শাস্তির সম্মুখীন করতে চাই না, তাহলে নামায না পড়ে নিজেদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেব কেন?
শয়তান যেসকল ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তিতে ফেলে মানুষকে নামায থেকে বিরত রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
অনেকে বলে, শুধু নামাযটা পড়ি না তবে আমার ঈমান ঠিক আছে। দেখুন, এ ধারণাটা কুরআন ও হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কুরআন-হাদীস বলেছে নামায আদায় করাটা ঈমানের পরিচয়, আর না পড়া কুফর ও মুনাফিকীর পরিচয়। এখন নামায ছাড়া ঈমান ঠিক থাকে কী করে?
কেউ কেউ এমন রয়েছে যারা বলে, নামাযের কী দরকার? অন্তর ঠিক থাকলে এবং পরের মাল না খেলেই চলবে। দেখুন, অন্যায়ভাবে পরের মাল খাওয়া একটি অপরাধ, আর নামায না পড়া আরেকটি অপরাধ। এখন আপনি একটি অপরাধ করলেন না, ভালো কথা। কিন্তু নামায না পড়লে যে আপনি অপরাধী হবেন না এ ধারণা সঠিক নয়। নামায পড়লেই আপনি নামায বর্জনের অপরাধ থেকে মুক্তি পাবেন, অন্যভাবে নয়।
অনেকের ধারণা, কোন পীরের কাছে মুরিদ হলেই চলবে। তিনিই জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। দেখুন! কোন হক্কানী পীর তাঁর মুরিদকে বলবেন না যে, তোমার নামায পড়তে হবে না। কারণ সত্যিকার পীর হলেন তারা, যারা মানুষকে আল্লাহর বিধান পালনে উৎসাহিত করেন। তাছাড়া হাশরের দিন পীর সাহেব নিজেই নিজের মুক্তির জন্য ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী করতে থাকবেন। তিনি আপনাকে বাঁচাবেন কী করে? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারও ব্যাপারে কোন কথাই বলতে পারবে না। তাই পীরের উপর ভরসা না করে নেক আমলের মাধ্যমে মুক্তির পথ তৈরি করুন, এটাই সঠিক পন্থা। নামায ছাড়লে কেউই বাঁচতে পারবে না।
কোন নামায আদায়কারী ব্যক্তি যদি গোনাহের কাজ করে, তবে এটা দেখে অনেকে বলে যে, নামায পড়ে কী লাভ হবে? অমুককে দেখি নামায পড়ে; অথচ সে এই এই খারাপ কাজ করছে। দেখুন! একজন যদি নামায পড়েও মন্দ কাজ করে তবে হতে পারে নামাযের বরকতে সে মন্দ কাজ ছেড়ে দিবে অথবা আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যার নামায নেই তার ক্ষমা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া একজনের পাপের ফলে আরেকজন দায়ী হবে না। আপনি নামায না পড়লে সে হিসাব আপনাকেই দিতে হবে। আপনার কবরে আপনাকেই শোয়ানো হবে, অন্যকে নয়। তাই একজন ভুল পথে গেলে আমিও ভুল পথে যাব- এটা কি ঠিক হবে?
এমন অনেক লোক আছে যারা কিছু দিন নামায পড়ে, এরপর আবার নামায ছেড়ে দেয়, আর ভাবে কয়েকদিন নামায পড়ে তো কিছুই পেলাম না। দেখুন! এ দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র, বান্দা এখানে যা আমল করবে আখিরাতে এর ফল পাবে। দুনিয়াতে বাঁচতে হলে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আখিরাতে সুখ পেতে হলে তেমনই ঈমান ও আমলের প্রয়োজন। তাই দুনিয়াতে কিছু পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়, আখিরাতের মুক্তির জন্য সর্বদা নামায পড়তে হবে।
অনেকে যৌবনকালে ইবাদাত করতে রাজী নন, তারা বৃদ্ধ বয়সকে ইবাদাতের জন্য বাছাই করেন। লক্ষ্য করুন! আপনি যেদিন থেকে বালেগ হয়েছেন সেদিন থেকেই ইসলামের বিধিবিধান পালন করা আপনার উপর ফরয হয়ে গেছে। আর যৌবনকালের ইবাদাত বেশি মর্যাদাপূর্ণ এবং আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। দুনিয়ায় কারো চাকুরী ঠিক হয়ে গেলে সে তো বলে না যে, ‘আমি বৃদ্ধ হলে চাকুরী করব’ তাহলে আপনি আখিরাতের কাজকে কেন পিছিয়ে রাখবেন? তাছাড়া আপনিতো জানেন না, যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর ফেরেশতা এসে উপস্থিত হয়ে যেতে পারে।
নামায নষ্ট না করার জন্য আল্লাহ কতইনা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। এজন্য যতক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষের হুশ-বুদ্ধি ঠিক আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে নামায পড়তেই হবে। বিশেষ কোন অসুবিধার কারণে নামায ছুটে গেলে কাযা পড়ে নেবেন। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে নামাযের সময় চলে গেলে জাগ্রত হওয়ার পরেই তা পড়ে নিন, তাহলে আপনি এই গোনাহের শাস্তি থেকে বেঁচে যাবেন।
আপনি অসুস্থ, দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারছেন না, তখন আপনি বসে নামায পড়তে পারবেন। বসাও যদি আপনার জন্য কষ্টকর হয়, তবে শুয়ে নামায পড়তে পারবেন। যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই নামায আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
পরিধানের কাপড় পাক রাখবেন। প্রস্রাব-পায়খানার পর পানি বা ঢিলা অথবা টিসু যেটি আপনার হাতের কাছে পান ব্যবহার করুন, এতে কাপড় নাপাক হবে না। গোসল ফরয হওয়ার কোন কারণ না ঘটলে যতই কাজকর্ম করেন না কেন কেবল অযু করেই নামায পড়তে পারবেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কেন আমরা নামায পড়ব না। আসলে ইসলামের বিধান পালন করা কঠিন কিছু নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।
(সূরা বাকারা- ১৮৫)
আমরা আল্লাহর হুকুম পালন করি না বলেই তা কঠিন মনে হয়। তাই আসুন! আমরা সবাই মিলে ইসলামের বিধান মেনে চলি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, এতে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা কল্যাণ লাভ করতে পারব, ইনশা-আল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে আপনার দ্বীন মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
আপনি যদি ভদ্র, চরিত্রবান ও নিয়মানুবর্তী হতে চান তাহলে নামায পড়ুন, নামায আপনাকে এসকল গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করবে।
আপনার মাতা-পিতাকে যদি আপনি ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যদি আপনার দরদ থাকে তাহলে আপনি নামায পড়ুন। এতে তারা খুশি হবেন এবং তাদের ব্যাপারে আপনার দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে।
আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি নামায পড়ুন। এতে তারাও নামায আদায়কারী হবে। আপনি নিজেই যদি নামায না পড়েন তাহলে তারা শিখবে কীভাবে? দুনিয়ার অগ্নিকুন্ডে আপনার সন্তানকে ফেলে দিতে চান না, তাহলে জাহান্নামের আগুনে তাদেরকে কেন ফেলতে চান? নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘সাত বৎসর হলেই সন্তানকে নামায শিখাও। আর দশ বৎসর হয়ে গেলে নামায না পড়লে তাদেরকে প্রহার করো।’’ [আবু দাঊদ, হা/৪৯৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৩৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৫০২; জামেউস সগীর, হা/১০৮০৬।]
স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে চান, তবে দু’জনেই নামায পড়ুন, এতে আপনাদের মধ্যে মায়া-মহববত আরো বেশি হবে। আপনাদের আনন্দ হবে পুতঃপবিত্র।
আপনি যদি দেশপ্রেমিক হতে চান, তাহলে নামায পড়ুন। কারণ নামায ছেড়ে দেয়া কবীরা গোনাহ। আর কবীরা গোনাহ করলে আল্লাহর গযব, বিপদ-আপদ নেমে আসে, এতে দেশ ও জাতি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনি যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাহলে নামায পড়ুন। কারণ যে যাকে ভালোবাসে, সে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে ও কথা বলতে পছন্দ করে। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ার ও তার কাছে মুনাজাত করার সুবর্ণ সুযোগ ও মাধ্যম হলো নামায।
একদিন আপনাকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে এ বিশ্বাস যদি আপনার থাকে, তাহলে কোনভাবেই নামায ছাড়বেন না। কারণ আল্লাহর আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা হবে নামায পড়েছ কি না। এই জায়গায় পাস করলে সবখানেই পাস করতে পারবেন আর নামাযের প্রশ্নে ফেল করলে আর কোথাও পাস করার আশা নেই।
জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনকে যদি আপনি ভয় করেন, তাহলে নামায আদায় করুন। কারণ আমরা সূর্যের প্রখর তাপটুকু সহ্য করতে পারি না। আর জাহান্নামের আগুন যা হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি শক্তিশালী, সে আগুন আমরা কীভাবে সহ্য করব।
আপনার নিজের প্রতি যদি দরদ ও মায়া থাকে, তাহলে নামায ছাড়বেন না। কারণ আমরা দুনিয়ায় নিজেদেরকে কোন হালকা শাস্তির সম্মুখীন করতে চাই না, তাহলে নামায না পড়ে নিজেদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেব কেন?
শয়তান যেসকল ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তিতে ফেলে মানুষকে নামায থেকে বিরত রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
অনেকে বলে, শুধু নামাযটা পড়ি না তবে আমার ঈমান ঠিক আছে। দেখুন, এ ধারণাটা কুরআন ও হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কুরআন-হাদীস বলেছে নামায আদায় করাটা ঈমানের পরিচয়, আর না পড়া কুফর ও মুনাফিকীর পরিচয়। এখন নামায ছাড়া ঈমান ঠিক থাকে কী করে?
কেউ কেউ এমন রয়েছে যারা বলে, নামাযের কী দরকার? অন্তর ঠিক থাকলে এবং পরের মাল না খেলেই চলবে। দেখুন, অন্যায়ভাবে পরের মাল খাওয়া একটি অপরাধ, আর নামায না পড়া আরেকটি অপরাধ। এখন আপনি একটি অপরাধ করলেন না, ভালো কথা। কিন্তু নামায না পড়লে যে আপনি অপরাধী হবেন না এ ধারণা সঠিক নয়। নামায পড়লেই আপনি নামায বর্জনের অপরাধ থেকে মুক্তি পাবেন, অন্যভাবে নয়।
অনেকের ধারণা, কোন পীরের কাছে মুরিদ হলেই চলবে। তিনিই জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। দেখুন! কোন হক্কানী পীর তাঁর মুরিদকে বলবেন না যে, তোমার নামায পড়তে হবে না। কারণ সত্যিকার পীর হলেন তারা, যারা মানুষকে আল্লাহর বিধান পালনে উৎসাহিত করেন। তাছাড়া হাশরের দিন পীর সাহেব নিজেই নিজের মুক্তির জন্য ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী করতে থাকবেন। তিনি আপনাকে বাঁচাবেন কী করে? আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারও ব্যাপারে কোন কথাই বলতে পারবে না। তাই পীরের উপর ভরসা না করে নেক আমলের মাধ্যমে মুক্তির পথ তৈরি করুন, এটাই সঠিক পন্থা। নামায ছাড়লে কেউই বাঁচতে পারবে না।
কোন নামায আদায়কারী ব্যক্তি যদি গোনাহের কাজ করে, তবে এটা দেখে অনেকে বলে যে, নামায পড়ে কী লাভ হবে? অমুককে দেখি নামায পড়ে; অথচ সে এই এই খারাপ কাজ করছে। দেখুন! একজন যদি নামায পড়েও মন্দ কাজ করে তবে হতে পারে নামাযের বরকতে সে মন্দ কাজ ছেড়ে দিবে অথবা আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যার নামায নেই তার ক্ষমা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া একজনের পাপের ফলে আরেকজন দায়ী হবে না। আপনি নামায না পড়লে সে হিসাব আপনাকেই দিতে হবে। আপনার কবরে আপনাকেই শোয়ানো হবে, অন্যকে নয়। তাই একজন ভুল পথে গেলে আমিও ভুল পথে যাব- এটা কি ঠিক হবে?
এমন অনেক লোক আছে যারা কিছু দিন নামায পড়ে, এরপর আবার নামায ছেড়ে দেয়, আর ভাবে কয়েকদিন নামায পড়ে তো কিছুই পেলাম না। দেখুন! এ দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র, বান্দা এখানে যা আমল করবে আখিরাতে এর ফল পাবে। দুনিয়াতে বাঁচতে হলে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, আখিরাতে সুখ পেতে হলে তেমনই ঈমান ও আমলের প্রয়োজন। তাই দুনিয়াতে কিছু পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়, আখিরাতের মুক্তির জন্য সর্বদা নামায পড়তে হবে।
অনেকে যৌবনকালে ইবাদাত করতে রাজী নন, তারা বৃদ্ধ বয়সকে ইবাদাতের জন্য বাছাই করেন। লক্ষ্য করুন! আপনি যেদিন থেকে বালেগ হয়েছেন সেদিন থেকেই ইসলামের বিধিবিধান পালন করা আপনার উপর ফরয হয়ে গেছে। আর যৌবনকালের ইবাদাত বেশি মর্যাদাপূর্ণ এবং আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। দুনিয়ায় কারো চাকুরী ঠিক হয়ে গেলে সে তো বলে না যে, ‘আমি বৃদ্ধ হলে চাকুরী করব’ তাহলে আপনি আখিরাতের কাজকে কেন পিছিয়ে রাখবেন? তাছাড়া আপনিতো জানেন না, যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর ফেরেশতা এসে উপস্থিত হয়ে যেতে পারে।
নামায নষ্ট না করার জন্য আল্লাহ কতইনা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। এজন্য যতক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষের হুশ-বুদ্ধি ঠিক আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে নামায পড়তেই হবে। বিশেষ কোন অসুবিধার কারণে নামায ছুটে গেলে কাযা পড়ে নেবেন। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে নামাযের সময় চলে গেলে জাগ্রত হওয়ার পরেই তা পড়ে নিন, তাহলে আপনি এই গোনাহের শাস্তি থেকে বেঁচে যাবেন।
আপনি অসুস্থ, দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারছেন না, তখন আপনি বসে নামায পড়তে পারবেন। বসাও যদি আপনার জন্য কষ্টকর হয়, তবে শুয়ে নামায পড়তে পারবেন। যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই নামায আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
পরিধানের কাপড় পাক রাখবেন। প্রস্রাব-পায়খানার পর পানি বা ঢিলা অথবা টিসু যেটি আপনার হাতের কাছে পান ব্যবহার করুন, এতে কাপড় নাপাক হবে না। গোসল ফরয হওয়ার কোন কারণ না ঘটলে যতই কাজকর্ম করেন না কেন কেবল অযু করেই নামায পড়তে পারবেন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কেন আমরা নামায পড়ব না। আসলে ইসলামের বিধান পালন করা কঠিন কিছু নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يُرِيْدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।
(সূরা বাকারা- ১৮৫)
আমরা আল্লাহর হুকুম পালন করি না বলেই তা কঠিন মনে হয়। তাই আসুন! আমরা সবাই মিলে ইসলামের বিধান মেনে চলি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, এতে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা কল্যাণ লাভ করতে পারব, ইনশা-আল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে আপনার দ্বীন মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
﴿رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآءِ﴾
উচ্চারণ : রাবিবজ্ ‘আল্নী মুক্বীমাস্ সালা-তি ওয়ামিন যুর্রিয়্যাতী, রাববানা ওয়া তাক্বাববাল দু‘আ।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও নামায আদায়কারী বানাও। হে আমাদের রব! আপনি দু‘আ কবুল করুন। (সূরা ইব্রাহীম- ৪০)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ - وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
উচ্চারণ : রাবিবজ্ ‘আল্নী মুক্বীমাস্ সালা-তি ওয়ামিন যুর্রিয়্যাতী, রাববানা ওয়া তাক্বাববাল দু‘আ।
অর্থ : হে আমার রব! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও নামায আদায়কারী বানাও। হে আমাদের রব! আপনি দু‘আ কবুল করুন। (সূরা ইব্রাহীম- ৪০)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ - وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন