hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মন দিয়ে নামায পড়ার উপায়

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩১
সানা পড়া
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকবীর বলার পর কিরাআত শুরু করার আগে কিছু সময় নিরব থাকতেন। এ সময় তিনি সানা পড়তেন। তিনি একেক সময় একেকটি সানা পাঠ করতেন। নিম্নে সেসব সানাগুলো উল্লেখ করা হলো :

১. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি তাকবীর বলার পর কিরাআত আরম্ভ করার আগে কিছু সময় চুপ থাকেন, এ সময় আপনি কী পড়েন? তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এ দু‘আ পড়ি :

اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-’ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইয়ুনাক্বক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগ্সিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াছছালজি ওয়াল বারাদ।

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! بَاعِدْ দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও بَيْنِيْ আমার (মধ্যে), وَبَيْنَ خَطَايَايَ এবং আমার গোনাহের মধ্যে, كَمَا بَاعَدْتَّ যেভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো, بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! نَقِّنِيْ আমাকে পবিত্র করে নাও, مِنَ الْخَطَايَا গোনাহসমূহ থেকে, كَمَا يُنَقَّى যেভাবে পবিত্র করা হয়, اَلثَّوْبُ الْاَبْيَضُ সাদা কাপড়, مِنَ الدَّنَسِ ময়লা থেকে। اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ হে আল্লাহ! তুমি ধুয়ে দাও, خَطَايَايَ আমার গোনাহসমূহ, بِالْمَاءِ পানি দিয়ে, وَالثَّلْجِ বরফ দিয়ে, وَالْبَرَدِ ও শিশির দিয়ে।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার গোনাহগুলোর মধ্যে এমন ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেরূপ ব্যবধান সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করে দাও যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৪, সহীহ মুসলিম, হা/ ১৩৮২।]

২. আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করলে এ দু‘আ পড়তেন :

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা, ওয়াতা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলা-হা গাইরুক।

শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ وَبِحَمْدِكَ আপনার প্রশংসার সাথে। وَتَبَارَكَ বড়ই বরকতময়, اِسْمُكَ আপনার নাম। وَتَعَالٰى (সকলের) উপর, جَدُّكَ আপনার মর্যাদা, وَلَا اِلٰهَ আর কোন মাবুদ নেই, غَيْرُكَ আপনি ছাড়া।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার মর্যাদা সকলের উপর। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। [তিরমিযী, হা/২৪২; আবু দাঊদ, হা/৭৭৫।]

৩. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন।

وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ - قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، - لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ، وَاهْدِنِىْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لِاَحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ، اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ

উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন। লা-শারীকালাহূ ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযানবী। ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ। ইন্নাহূ লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক। লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়্যিআহা লা-ইয়াসরিফু ‘আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহূ ফী ইয়াদাইক। ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইক, আনা বিকা ওয়া ইলাইকা তাবারাকতা ওয়া তা‘আলাইত। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।

শাব্দিক অর্থ : وَجَّهْتُ আমি মুখ ফিরালাম وَجْهِيَ আমার মুখ لِلَّذِيْ ঐ সত্তার দিকে, فَطَرَ যিনি সৃষ্টি করেছেন السَّمَاوَاتِ আসমানসমূহ وَالْاَرْضَ ও জমিন حَنِيْفًا একনিষ্ঠভাবে; وَّمَا اَنَا আর আমি অন্তর্ভুক্ত নই مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ মুশরিকদের। قُلْ বলো, اِنَّ صَلَاتِيْ নিশ্চয় আমার নামায, وَنُسُكِيْ আমার কুরবানী, وَمَحْيَايَ আমার জীবন, وَمَمَاتِيْ আমার মরণ لِلّٰهِ ঐ আল্লাহর জন্য رَبِّ الْعَالَمِيْنَ যিনি সারাবিশ্বের পালনকর্তা। لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ আর আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ الْمَلِكُ তুমিই বাদশাহ, لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। اَنْتَ رَبِّىْ তুমি আমার রব وَاَنَا عَبْدُكَ এবং আমি তোমার দাস। ظَلَمْتُ আমি অনেক অন্যায় করেছি نَفْسِىْ নিজের উপর وَاعْتَرَفْتُ এবং আমি স্বীকৃতি দিচ্ছি بِذَنْبِىْ আমার পাপের। فَاغْفِرْ لِىْ সুতরাং তুমি আমার জন্য ক্ষমা করে দাও ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا আমার সকল গোনাহ। اِنَّهٗ প্রকৃতপক্ষে لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاهْدِنِىْ আর তুমি আমাকে দান করো لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ সবচেয়ে উত্তম চরিত্র। لَا يَهْدِىْ কেননা আর কেউ দান করতে পারে না لِاَحْسَنِهَا উত্তম চরিত্র اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। وَاصْرِفْ আর তুমি বাঁচিয়ে রাখো عَنِّىْ আমার হতে سَيِّئَهَا খারাপ চরিত্রকে। لَا يَصْرِفُ কেননা কেউ বাঁচিয়ে রাখতে পারে না سَيِّئَهَا মন্দ চরিত্র থেকে اِلَّا اَنْتَ তুমি ছাড়া। لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ (হে আল্লাহ!) আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাজির। وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ সকল কল্যাণ فِىْ يَدَيْكَ তোমারই হাতে। وَالشَّرُّ অমঙ্গল لَيْسَ اِلَيْكَ তোমার দিক থেকে নয়। اَنَا بِكَ আমি তোমার সাহায্যে وَاِلَيْكَ এবং তোমার দিকেই (মনোনিবেশ) করি। تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ (হে আল্লাহ!) তুমি বরকতময় এবং মহান। اَسْتَغْفِرُكَ আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি।

অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আর তুমি আমাকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দান করো। কেননা উত্তম চরিত্র তুমি ছাড়া আর কেউ দান করতে পারে না। আর তুমি আমাকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখো। কেননা তুমি ছাড়া কেউ মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাজির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। অমঙ্গল তোমার দিক থেকে নয়। আমি তোমার সাহায্যে এবং তোমার দিকেই মনোনিবেশ করি। হে আল্লাহ! তুমি বরকতময় এবং মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে আসছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; আবু দাউদ, হা/৭৬০; তিরমিযী, হা/৩৪২১; নাসাঈ, হা/৮৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৭১; মিশকাত, হা/৮১৩।]

এবার মনোযোগ দিয়ে একটু লক্ষ্য করি, আমরা এখানে কী পড়লাম! আমি যখন বললাম, وَجَّهْتُ وَجْهِيَ ‘‘আমি আল্লাহমুখী হলাম’’ তখন যদি আমার অন্তর আল্লাহমুখী না থাকে, তবে আমার এ কথাটি সম্পূর্ণ সত্য হলো না। আর নামাযের শুরুতে এ রকম হলে পরবর্তী অবস্থা কেমন হবে?

আমি যখন বললাম, وَمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‘‘আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’’ তখন আমাকে গোপন শির্ক থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। আর তা হলো আমার নামায লোক দেখানোর জন্য হবে না, কারো প্রশংসা পাওয়ার জন্য হবে না। কারণ এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত করে মানুষের প্রশংসা কামনা করত। তার ব্যাপারে কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয় :

﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾

যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহ্ফ- ১১০)

আমি যখন বলব وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‘‘আমি মুসলিমদের একজন’’ তখন নবী ﷺ এর এ হাদীসটি আমার উপর প্রযোজ্য হচ্ছে কি না তা চিন্তা করতে হবে, তিনি বলেছেন, ‘‘মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার হাত ও জিহবা থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’’ [সহীহ বুখারী, হা/১০, ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৭১।]

এখন যদি আমি হাত অথবা মুখ দ্বারা কোন মুসলিমকে কষ্ট দেই অথবা তার কোন ক্ষতি করি তবে ‘আমি মুসলিম’ এ কথাটি সত্য হবে না ।

আমরা আরো বলি وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘‘আমার জীবন এবং আমার মরণ সবই আল্লাহর জন্য।’’ একটু লক্ষ্য করুন! আমরা কী কথা বলেছি। ‘আমার সারাটি জীবন আল্লাহর জন্য’ এ কথাটি ঐ ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হবে, যে মনে করবে যে, আমার হাত, পা, চক্ষু ও কান এগুলো আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমানত রেখেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন মুহূর্তে এগুলো ছিনিয়ে নিতে পারেন। তিনি আমাকে একটি জীবন দিয়েছেন; যদি ইচ্ছা করেন তবে যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু দিয়ে আমার দুনিয়ার জীবনটা শেষ করে দিতে পারেন। অতএব তিনি যখন আমাকে সুস্থ রেখেছেন, সময় দিয়েছেন তখন আমার এ জীবনটি তাঁর মর্জি অনুযায়ী ব্যয় করা উচিত। আমি গোটা জীবনে যা কিছু করব সবকিছুর উদ্দেশ্য হবে একটাই, আর তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখন আমার গোটা জীবনটা আল্লাহর জন্য কীভাবে করা যায় তা নিয়ে একটু ভাবতে হবে।

১। আমি জ্ঞানার্জন করব এ উদ্দেশ্যে নয় যে, আমি বুযুর্গ হব। মানুষ আমাকে আগে সালাম দেবে, হাদিয়া উপঢৌকন পাঠাবে; বরং এর উদ্দেশ্য হবে আমি জ্ঞানার্জন করে আমার দক্ষতা বৃদ্ধি করব, ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিজে আমল করব এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেব। এতে আমার শিক্ষাজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।

২। আমার রুযী-উপার্জন কেবল নিজের জন্য হবে না। এতটুকু তো পশু-পাখিরাও করে থাকে। আমি উপার্জন করব নিজের এবং নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এবং দরিদ্র মানুষের সাহায্য করে, দান-সাদাকা করে সওয়াব অর্জনের জন্য। আমি চাকুরী করব কেবল দায়িত্ব আদায় ও বেতন উদ্ধার করার জন্য নয়। উদ্দেশ্য থাকবে আমার এ কাজ দ্বারা জনগণ উপকৃত হবে। জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে এ উদ্দেশ্যে যে, এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করবে, তারা দেশের জন্য বোঝা না হয়ে সম্পদ হয়ে গড়ে উঠবে। এতে আমার ব্যবসায় ও চাকুরী এক কথায় গোটা কর্মজীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।

৩। বিয়ে-শাদি করব কেবল মনের চাহিদা পূর্ণ করার জন্য নয়। এ চাহিদা পশুরাও পূর্ণ করে; কিন্তু মানুষ অন্যান্য জীবের মতো নয়; তার রয়েছে বিশেষ সম্মান, বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিয়ে করতে হবে এজন্য যে, এতে আমার চরিত্র ও সতিত্বের হেফাযত হবে। পারিবারিক সুখ-শান্তি অর্জিত হবে। এতে আমার বৈবাহিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।

৪। আমার ভালোবাসা কেবল আমার পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র এদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমার ভালোবাসা হবে সকলের জন্য ব্যাপক। আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করব- আমার অপর মুসলিম ভাই-বোনদের জন্যও তা পছন্দ করব। আর আমি নিজের জন্য যা পছন্দ করি না অন্যদের জন্যও তা পছন্দ করব না। আমি অন্যের দুঃখে দুঃখী হব, বিপদের সময় তার পাশে দাঁড়াব। এজন্যই তো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾

তোমরাই উত্তম জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজ হতে বাধা প্রদান করবে। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩)

৫। রাজনীতি করব শুধু নেতা হওয়ার জন্য নয় এবং দলের কাছ থেকে নিজের সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য নয়। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ যে পদ্ধতিতে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে নিয়মে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা করতে হবে। এতে আমার রাজনৈতিক জীবনটা আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে।

এভাবে নামায মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন সৃষ্টি করে। শুয়াইব (আঃ) তার জাতিকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে তাঁর গোলামী করার দাওয়াত দিলেন, তখন জাতির লোকেরা বলল,

﴿يَا شُعَيْبُ اَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِيْۤ اَمْوَالِنَا مَا نَشَآءُ اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِيْمُ الرَّشِيْدُ﴾

হে শুয়াইব! তোমার নামায কি তোমাকে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা যার ইবাদাত করত আমরা তা ছেড়ে দেব? আর আমাদের ধন-সম্পদ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করতে পারব না? (সূরা হূদ- ৮৭)

এ থেকে বুঝা গেল যে, নামায মানুষের গোটা জীবনকে ইসলামের দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালনে অভ্যস্ত করে।

এখন নামাযের শুরুতেই যদি মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আকীদা-বিশ্বাসের এ বিরাট প্রশিক্ষণ হয়, তাহলে গোটা নামায তাকে কেমন মানুষ তৈরি করে ছাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন