মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন সমস্ত জাহানের একমাত্র স্রষ্টা। তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে এই পৃথিবীতে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তাঁর এই খেলাফত যথাযথ বাস্তাবায়ন করার জন্য পরিপূর্ণ জ্ঞান দান করেছেন এবং তার জন্য সম্ভব্য সব কিছু ব্যবস্থা করেছেন। তবে শর্ত হলো আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
মানব জাতির সৃষ্টির ইচ্ছা সম্পর্কে তিনি বলেন:
وماخلقت الجن والإنس إلا ليعبدون ( سورة الذاريات ৫৬)
‘‘একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি।’’ (সুরা যারিয়াত ৫১ঃ৫৬)
মানুষ যখন এই চোখ ধাঁধানো চাকচিক্যময় পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদতের কথা ভুলে গিয়ে শয়তানের কুমন্ত্রনায় পথ ভ্রষ্ট হতে থাকে তখন সৃষ্টিকর্তা স্বীয় দয়া ও করুণায় তাদের হিদায়েতের জন্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেন।
কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি যখন কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায় অথবা দলের কাছে কোন দূত প্রেরণ করেন, তখন এমন কিছু আলামত তার সাথে পাঠান যাতে তারা আশ্বস্ত হতে পারে যে, সে সত্যিই তার পক্ষ থেকে এসেছে। কোন ব্যক্তি যদি তার সংবাদ বাহকের সত্যতা ও তার পরিচয়ের জন্য আলামত নির্ধারণ করতে পারে আর যিনি আহকামুল হাকিমীন তিনি কি তার স্বীয় নবী ও রাসূলগণের পরিচয়ের জন্য আলামত নির্ধারণ করবেন না?
পৃথিবী সৃষ্টি থেকে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর ইবাদতের সঠিক পরিচয় তুলে ধরার জন্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। প্রত্যেক নবীকে দুটি জিনিস দিয়ে পাঠিয়েছেন (এক) কিতাব, যাতে রয়েছে আকীদা বা বিশ্বাসের ইলম ও শরীয়তের ইলম (দুই) বুরহান বা মুজেযা যা রাসূলগণের হাত দিয়ে এমন কিছু আলামত প্রকাশ পায়, যা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্য। সৃষ্ট জগতের কেউ অনুরূপ করতে পারে না। অতপর তারা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে জানতে পারে যে, এটা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে অসম্ভব। আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রত্যেক যুগের নবী রাসূলকে সে যুগের জনগনের সাধারণ প্রবনতা অনুপাতে মুজিযা দান করেছেন। ঈসা আ. এর যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান চরম উন্নতির শিখরে উপণীত হয়েছিল। তাকে মুজিযা দেয়া হয়েছিল মৃত্যুকে জীবিত করা, জন্মান্ধকে দৃষ্টি সম্পন্ন করা এবং কুষ্ঠ রোগাগ্রস্থকে সুন্থ করা। মুসা (আ.) কে যত মু’জিযা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে লাঠিকে সাপে পরিণত করা এবং হাতকে বগলের ভিতর থেকে বের করে শুভ্র করা ছিল প্রধান। যেহেতু সেই যুগে যাদু মন্ত্রের বহুল প্রচলন ও প্রচুর প্রভাব ছিল। এমন ভাবেই ইব্রাহিম (আঃ) আগুন থেকে বেরিয়ে আসা, সালেহ (আঃ) এর মু’জিযা পাহাড় থেকে গর্ভবতী উটনী বের হয়ে আসা, ইত্যাদি। আর এই সমস্ত মু’জিযা ছিল স্থান কাল পত্র ভেদে সাময়িক। যেহেতু তারা এসেছিলেন কোন এক সম্প্রদায়ের জন্য, কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে এবং কোন এক সীমিত সময়ের জন্য। তাই তাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সাথে সাথে তাদের মু’জিযাগুলোর সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু আমাদের নবী হলেন শ্রেষ্ঠ নবী এবং শেষ নবী, তাঁর পর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী আসবেন না। তিনি কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের নবী ছিলেন না। তিনি নির্ধারিত কোন স্থানের জন্য সীমিত ছিলেন না। তিনি ছিলেন সমস্ত জাহানের নবী। তাই মহান আল্লাহ তাঁকে দুই প্রকারের মু’জিযা দান করেছিলেন। এক সমসাময়িক মুজিযা যেমন রাসূল (স.) এর আঙুল থেকে পানি ঝরনা ধরা প্রবাহিত হওয়া।
জাবের বিন আল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
হুদায়বিয়ার দিনে মানুষের পানি শেষ হয়ে পিপাসার্ত হয়ে ছিল। আর নবী করীম সা. হাতে একটি মাত্র ছোট পানির পাত্র ছিল। মানুষেরা পানি নেয়ার জন্য নবী করীম সা. এর কাছে দ্রুত গমন করলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বললঃ আমাদের কাছে খাওয়া ও ওজু করার কোন পানি নেই। অতপর রাসূল সা. স্বীয় হাত পানির পাত্রটির মধ্যে রাখলেন। আর ঝরনা ধরার ন্যায় পানি তার আঙুল থেকে প্রবাহিত হয়েছিল। আমরা সবাই পানি পান করলাম ও ওজু করলাম। এক প্রশ্নের উত্তরে বর্ণনাকারী বর্ণনা করলেন যে, আমরা ছিলাম ১৫০০ জন। এমন কি আমরা যদি এক লাখ হতাম, তারপর সেই পানি আমাদের যথেষ্ট হত। (বুখারী) এমনভাবে অল্প খানা বেশী হওয়া, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া, মেরাজে গমন ইত্যাদি ছিল রাসূল সা. এর সমসাময়িক মুজিযা।
(দুই) চিরন্তন মুজিযাঃ আল্লাহ তা’আলার প্রিয় বান্দা শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠও চিরন্তন মুজিযা হিসেবে আল-কুরআনকে নির্বাচন করেছেন। আল-কুরআনের অলৌকিকতা চিরস্থায়ী, সব সময়, সর্ব যুগেই। এমন কি কিয়ামত পর্যন্ত এই কিতাব মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী আসবেন না, তাই তাঁর নবুয়তের দাবি ও দাওয়াতের সঠিকতার প্রমাণ হিসেবে বিদ্যমান। বর্তমানে মানুষ পবিত্র কুরআনের মাঝে ধারাবাহিকভাবে নিত্য নতুন অলৌকিকতার সন্ধান পাচ্ছে, যার কোন শেষ নেই। এই কুরআনের রয়েছে বর্ণনা নৈপুণ্য, পরিধি নিরূপণ, অতি অল্পে বিশাল বর্ণনা, অপরূপ প্রকাশ ভঙ্গি, অতি উচ্চাঙ্গের উপমা, ভাবের গাম্ভির্য, অর্থের বিশুদ্ধতা, চিত্তাকর্ষক সু-বিশাল সাবলীল গাঁথুনি। এই কালজয়ী গ্রন্থে যেমন রয়েছে জ্ঞানের প্রসার, যুক্তির দৃঢ়তা ও তথ্যের নির্ভুলতা, তেমনি রয়েছে সমগ্র সৃষ্টির সর্বকালের প্রয়োজন এবং মানব জীবনের প্রত্যেক দিকের পরিপূর্ণ আলোচনা। বিশ্ব পরিচালনায় সুন্দরতম নিয়ম এবং ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবন থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের নির্ভুল বিধান। এ ছাড়াও রয়েছে জীব বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান সহ সব ধরনের জ্ঞানের সমারোহ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
ما فرطنا في الكتاب من شيئ ( سورة الأنعام ৩৮)
‘‘এই কিতাবে কোন কিছু বাদ দেয়া হয়নি।’’ (সুরা আনআম ৩৮)
এটা সবার কাছে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, যারাই কুরআনের সামনে দাঁড়িয়েছে তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, এটা এমন একটা কিতাব যা পৃথিবীর সকল কিতাব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী। সে সম্পর্কে মহানবী (স.) বলেনঃ এটা আল্লাহর কিতাব যাতে রয়েছে তোমাদের পূর্বে যারা ছিল আদম আঃ এর যুগ থেকে নিয়ে রাসূল (স.) এর প্রেরণ পর্যন্ত সকল উম্মত, নবী ও রাসূলগণের সংবাদ। এই কুরআনের মধ্যে আরও রয়েছে রাসূল (স.) এর পরে যা আসবে তার খবর। তন্মধ্যে-রয়েছে আখেরি জমানার খবর, কিয়ামতের খবর, হাসরের খবর, জান্নাতের খবর ও জাহান্নামের খবর। এতে তোমাদের সব ধরনের বিচার ফয়ছালা রয়েছে। এটি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। তা কখনই দুর্বল নয় যে ব্যক্তি অহংকার বশত এটা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করেন। আর যে ব্যক্তি কুরআন ছাড়া অন্য কোথাও হেদায়েত অন্বেষণ করে, আল্লাহ তাকে পথ ভ্রষ্ট করেন। এই কুরআন হচ্ছে আল্লাহর সুদৃঢ় রশি, জ্ঞান গর্ব জিকর, সরল সঠিক পথ, যার দ্বারা কোন প্রবৃত্তি বাঁকা পথে চলে না। কোন ভাষা সেখানে সংমিশ্রণ হয় না। বিজ্ঞানীগণের চাহিদা এর মাধ্যমে পরিসমাপ্তি হয় না, অতিরিক্ত উত্তরের সৃষ্টি হয় না। এবং তার অলৌকিকতা শেষ হয় না। (তিরমিজী)
হ্যাঁ কুরআন কোন স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, সৌর বিজ্ঞান এবং অন্য কোন বিজ্ঞানের কিতাব হিসেবে অবতীর্ণ হয়নি ঠিক, তবে এই কুরআন হচ্ছে মানব জাতির সার্বিক জীবন ব্যবস্থা ও চলার পথ হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেখানে সব ধরনের জ্ঞানের সমাবেশ ঘটেছে এবং প্রত্যেকটার উদাহরণ পেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ولقد صرفنا في هذا القرآن للناس من كل مثل , وكان الإنسان أكثر شيء جدلا ( سورة الكهف ৫৪)
আমি মানুষের জন্য এই কুরআনে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বিশদ ভাবে বর্ণনা করেছি। (সূরা কাহাফ ৫৪)
অপর দিকে মহান স্রষ্টা এই কুরআনকে জ্ঞান ভান্ডার হিসেবে অবতীর্ণ করেছেন। আর তাতে মানব জাতিকে সকল বিষয় ও বস্ত্ত সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। কেননা এ সৃষ্টি জগৎ যেন এক মহান প্রজ্ঞাময় ও বিজ্ঞানময় স্রষ্টার সূনিপূণ সৃষ্টি কৌশলির বিজ্ঞান মেলা। আল্লাহর বাণী বাস্তবায়নার্থে প্রতিদিন সৌরজগৎ ও মানব জীবনের মধ্যে নিত্য নতুন আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন প্রকাশ পাচ্ছে। আর কেনইবা তা প্রকাশ পাবে না, যেহেতু তিনি বলেছেন:
سنريهم آياتنا في الآفاق وفي أنفسهم حتي يتبين لهم أنه الحق ( سورة فصلت ৫৩)
আমি শীঘ্র তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখিয়ে দিব বিশ্বজগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে, ফলে তাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে এটাই সত্য। (সূরা ফুচ্ছিলাত- ৫৩)।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কুরআন ও সুন্নাহর বৈজ্ঞানিক আলোচনা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। এবং ইসলামের প্রতি আহবানের মাধ্যম সমূহের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী পন্থায় পরিণত হয়েছে।
তাই চলছে সাধনা ও গবেষণার জগতে এক বিস্ময়কর জাগরণ। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের ফলে কুরআনের যথার্থতা ও সত্যতা শুধু স্বীকারই নয় বরং আজ তা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও তথ্যের উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এমন কি কুরআনের বিভিন্ন আয়াত জ্ঞান বিজ্ঞানের রাস্তা বর্ণনা করেছে। তাই শত শত বিজ্ঞানী ফিরে আসতে শুরু করেছে ইসলামের ছায়া তলে। ঈমান এনেছে মহান স্রষ্টার প্রতি। স্বীকার করছে আলকুরআন নিঃসন্দেহে আর বাণী এবং মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁরই প্রেরিত রাসূল। অবস্থা বেহাল দেখে বর্তমানে ইহুদি খ্রিস্টান সহ অমুসলিমরা বিভিন্ন পন্থায় ইসলামের প্রতি আঘাত হানতে শুরু করেছে। রাসূল (সা.) এর সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা আল্লাহর রাসূলের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অতীতেও এ ষড়যন্ত্র হয়েছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন ১৪০০ বছরের বেশী হয়ে যাচ্ছে, অথচ এখনও শক্তিশালী হচ্ছে এবং ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে। এবং এমন দরিদ্র ও মূর্খ পরিবেশে লালিত পালিত হয়েছেন যারা অগ্রগতি ও আধুনিকতা জানত না। আর তিনি লেখা-পড়াও জানতেন না। তিনি ছিলেন উম্মি, তিনি কোন স্কুল মাদ্রাসায় লেখা পড়া করেননি। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বেরিয়ে আসেননি। অতঃপর তিনি সূক্ষ্ম, অতি আশ্চর্য নিয়মনীতি, আইন-কানুন নিয়ে এসেছেন যা দিয়ে পৃথিবী পরিচালনা করেছেন, এবং যা দিয়ে মানবতা উপকৃত হয়েছে। তাঁর অনুসারীগণ সারা দুনিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন, আর তাতেই ছিল মানব জাতির সমস্ত কল্যাণ। আর তাতে ছিল আদল, ইনসাফ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও চারিত্রিক উন্নতি। এমন কি তারা সুমহান উচ্চ আসনে উপনীত হয়েছিলেন। অতএব এটা কি জ্ঞানের কথা হতে পারে যে, তিনি তাঁর নিজের থেকে দ্বীন ধর্ম নিয়ে এসেছেন? না, বরং এ হলো আসমান থেকে অবতীর্ণ ওহি। আবূ সুফিয়ান ছিল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব চেয়ে বড় দুশমন ও শত্রু, এমন কি সে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারপর আল্লাহ তাকে ইসলামের দিকে হিদায়েত করেছেন। তিনি বললেনঃ আমি ঐ সময় অতিবাহিত করেছি যে সময় আমার ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝে সন্ধির কথাবার্তা চলছিল। তিনি বলেনঃ আমি যে সময় শামে ছিলাম সেই সময় রোমের বাদশাহ হেরাকালের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে একটি পত্র নিয়ে আসল। অতঃপর হেরাকাল বললেনঃ যে মানুষটি নিজেকে নবী বলে ধারণা করছে সেই ব্যক্তির সম্প্রদায়ের কেউ কি এখানে আছে? তারা বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কুরাইশের সেই দলের মধ্য থেকে আমাকে ডাকা হলো। তারপর আমরা হেরাকালের দরবারে প্রবেশ করলাম। তার সামনে আমাদেরকে বসানো হলো। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে ধারণা করছে সেই ব্যক্তির বংশের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকটতম কে? আবূ সুফিয়ান বললেনঃ আমি। তারপর আমাকে তার কাছাকাছি বসাল, আর আমার সাথিদেরকে আমার পিছনে বসাল। তার দোভাষীকে ডাকা হলো। অতঃপর তিনি তাকে বললেনঃ তুমি তাদেরকে বলো, আমি তাকে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করব যে নিজেকে নবী বলে ধারণা করে ও বলে। আবূ সুফিয়ান বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমার উপর মিথ্যার প্রভাবের যদি ভয় না থাকতো তাহলে অবশ্যই মিথ্যা বলতাম। তারপর তিনি তার দোভাষীকে বললেনঃ তুমি তাকে জিজ্ঞেস কর, তোমাদের মধ্যে তিনি কেমন বংশের? আমি বললামঃ আমাদের মাঝে তিনি উচ্চ বংশওয়ালা।
তিনি বললেনঃ তার বাপ-দাদার মধ্যে কেউ কি বাদশাহ ছিল?
আমি বললামঃ না!
তিনি বললেনঃ তিনি যা বলছেন তা বলার পূর্বে তোমরা কি তাকে মিথ্যার অপবাদ দিতে?
আমি বললামঃ না!
তিনি বললেনঃ তোমাদের মাঝ থেকে যারা তার অনুসরণ করছে তারা কি সম্ভ্রান্ত লোকেরা অথবা দুর্বল লোকেরা?
আমি বললামঃ বরং দুর্বলেরা।
তিনি বললেনঃ বরং দুর্বলেরা।
তিনি বললেনঃ তারা কি বেশী হচ্ছে, না কমছে?
আমি বললামঃ না বরং তারা বেশী হচ্ছে।
তিনি বললেনঃ তাঁর দ্বীন থেকে তার প্রতি রাগান্বিত হয়ে তাদের মধ্যে থেকে কেউ কি মুরতাদ হয়ে ফিরে এসেছে?
আমি বললামঃ না।
তিনি বললেনঃ তোমাদের যুদ্ধ তার সাথে কেমন ছিল?
আমি বললামঃ কখনও তিনি জয়ী হয়েছেন এবং কখনও আমরাও বিজয় লাভ করছি।
তিনি বললেনঃ তিনি কি প্রতারণা করেন?
আমি বললামঃ না, তবে আমরা তার সাথে সন্ধি করতে যাচ্ছি। জানি না এ ব্যাপারে তিনি কি করবেন।
তিনি বললেনঃ এমন কথা তার পূর্বে কি কেউ বলেছে ?
আমি বললামঃ না।
তিনি তার দোভাষীকে বললেনঃ আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি তার বংশের ব্যাপারে। অতঃপর আমি ধারণা করেছি যে, তোমাদের মাঝে তিনি সম্ভ্রান্ত বংশের। আর এমনভাবেই রাসূলগণ প্রেরিত হন তাদের সম্ভ্রান্ত বংশের মধ্য থেকে। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিঃ তার বাপ-দাদার মধ্যে কি কোন বাদশাহ ছিল? আমি ধারণা করেছি যে, ছিল না। অতঃপর আমি বললামঃ যদি তার বাপ-দাদার মধ্যে কোন বাদশাহ থাকতো তাহলে বলতাম, লোকটি তার বাপ-দাদার রাজত্ব কামনা করছে। আমি তোমাকে তার অনুসারীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি যে, তারা কি দুর্বল, না সম্মানিত ব্যক্তি? অতঃপর তুমি বলেছ, তারা হলো দুর্বল। আর দুর্বলরাই হচ্ছে রাসূলগণের অনুসারী। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি, তোমরা কি তাকে এমন কথা বলার পূর্বে মিথ্যা বলতে দেখেছিলে? অতঃপর ধারণা করেছি যে, না। অতঃপর অবগত হয়েছি যে, যে ব্যক্তি মানুষের কাছে মিথ্যা দাবি করে না সে কখনও আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলতে পারে না। এরপর আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তাদের মধ্যে কেউ কি তার প্রতি রাগ করে তার ধর্ম থেকে ফিরে এসেছে?
অতঃপর আমি ধারণা করেছি যে, না। আর এমনটাই হচ্ছে ঈমান, যদি তা হৃদয়ের পর্দায় মিশে যায়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি, তারা কি সংখ্যায় বেশী হচ্ছে, না কমে যাচ্ছে? আর আমি ধারণা করেছি যে, তারা সংখ্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এমনটাই হবে ঈমান পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, তোমরা তার সাথে যুদ্ধ করেছ। আর যুদ্ধটা হবে তোমাদের ও তার মাঝে এমনভাবে যে তিনি তোমাদের উপর বিজয়ী হয়েছেন এবং তোমরাও তার উপর বিজয়ী হয়েছ। আর এমন ভাবেই রাসূলগণ পরীক্ষিত হন। সবশেষে শেষ ফল তাদেরই পক্ষে হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, তিনি কি প্রতারণা করেন? অতঃপর আমি ধারণা করেছি যে, তিনি প্রতারণা করেন না। আর রাসূলগণ এমন ভাবেই ধোঁকা বা প্রতারণা করেন না। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, তার পূর্বে কেউ কি এমন কথা বলেছে? অতঃপর আমি ধারণা করেছি যে, না। তারপর আমি বলেছি যে, তার পূর্বে বলেছে এবং তিনিও বলছেন। তিনি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ করেন? তুমি বলেছ যে, তিনি বলেনঃ তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করনা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা যা বলেছে তা ছেড়ে দাও। এবং আমাদেরকে সালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, দান-সাদ্কা করা, পবিত্র থাকা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার আদেশ করেন।
তারপর তিনি বললেনঃ তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য বলে থাক তাহলে নিশ্চয়ই তিনি হচ্ছেন নবী। আর আমি জেনে নিলাম যে, তিনি আবির্ভাব হয়েছেন। আর এমন ধারণা আমি তোমাদের থেকে করিনি। আমি যদি জানতে পারতাম তাহলে অবশ্যই তার প্রতি একনিষ্ঠ হতাম এবং অবশ্যই তার দর্শন আমি ভালোবাসতাম। আমি যদি তার কাছে থাকতাম তাহলে অবশ্যই তার কদম দু’টি ধৌত করতাম, আর তার রাজত্ব আমার পায়ের নিচ পর্যন্ত পৌঁছে যেত।
তিনি বললেনঃ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পত্রটি আনতে বললেন, অতঃপর পাঠ করলেন। আর তাতে লেখা ছিলঃ
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে রোমের বাদশাহ হেরাকালের প্রতি। যারা হিদায়েত অনুসরণ করে তাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমি তোমাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ কর, নিরাপদে থাকবে এবং আল্লাহ তোমাকে দুই বার প্রতিদান প্রদান করবেন। আর যদি তুমি পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর তাহলে তোমার উপর সমস্ত আবিসিনিয়ার গুনার ভার পতিত হবে।
হে আহলে কিতাব। আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে যে বাক্য সাদৃশ্য রয়েছে তার দিকে ফিরে এসো, যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত না করি এবং তাঁর সাথে কোন অংশী স্থাপন না করি এবং আল্লাহকে পরিত্যাগ করে আমরা পরস্পর কাউকে রব রূপে গ্রহণ না করি। অতঃপর যদি তারা ফিরে যায় তাহলে বলঃ সাক্ষী থেকো যে, আমরা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী। (সূরা আল ইমরান, ৩ঃ ৬৪ আয়াত)।
আবূ সুফিয়ান বললেনঃ তিনি যা বলার বললেন এবং পত্রটি পড়া শেষ করলেন। তখন তার কাছে আওয়াজ বেশী ও বড় হলো, আর আমরা বের হয়ে আসলাম। অতঃপর আমি আমার সাথিদেরকে বললামঃ লোকটি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান বৃদ্ধি পেয়েছে, আর তাকে বনী আসফারের বাদশাহ অর্থাৎ রোমের বাদশাহ ভয় করছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফিররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসূলকে হিদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।’ (সূরা তাওবাহ, ৯ঃ৩২ ও ৩৩ আয়াত)।
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ
يريدون ليطفئوا نور الله بأفواههم والله متم نوره ولو كره الكافرون ( سورة الصف ৮)
তারা আল্লাহর নূর ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ তার নূর পরিপূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন যদিও কাফেরেরা তা অপছন্দ করে। (সূরা ছাফ্ ৮)
অতএব (ওহে মুসলিম জাতি) তোমরা নিরাশ হয়োনা ও বিষণ্ণ হয়োনা এবং যদি তোমরা মূমিন হও তাহলেই তোমরা বিজয়ী হবে। (সূরা আল ইমরান) ১৩৯
ইসলাম সত্য ধর্ম যা প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত সত্যের সাথে মিলে যায়। সর্বাবস্থায় সত্যকে সহযোগিতা করে, সর্বাবস্থানে সত্যকে সংরক্ষণ করে। ইসলাম জ্ঞান বিজ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত। এমনকি আল্লাহ তাঁর পরিচয় জ্ঞান বিজ্ঞানের মাধ্যমে গ্রহণের উৎসাহ প্রদান করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فاعلم أنه لا إله إلا الله ( سورة محمد ১৯)
সুতরাং ইল্ম গ্রহণ কর, যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই্ (সূরা মুহাম্মাদ-১৯)
বস্ত্তবাদের জ্ঞান লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাক্ষ্যর বিপরীত নয়। বরং এই সাক্ষ্যটিকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের মাধ্যমে গভীর ভাবে সুদৃঢ় করে। বস্ত্তবাদের জ্ঞান সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করছে যে, আল কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য গ্রন্থ। সব জ্ঞানের ঊর্ধ্বে হলো কুরআনের জ্ঞান। আলকুরআন গবেষকদের গবেষণার পূর্বেই সব কিছুর বর্ণনা দিয়েছে, এই কুরআনের জ্ঞান পৃথিবীর বুকে প্রকৃত তথ্যের বর্ণনা চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি সত্যসহ-এ কুরআন নাজিল করেছি এবং সত্যসহ নাজিল হয়েছে। (সূরা ইসরা ১০৫)
আল্লাহ রাববুল আলামীন সত্যও শান্তির পথে সঠিক ভাবে চলার জন্য এ যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্বনবীর মাধ্যমে আল্ কুরআনকে সরাসরি মানব জাতির সামনে পেশ করেছেন। সেই সাথে মানুষকে ভালমন্দ বিচার করার ক্ষমতা দান করেছেন। সেই বুদ্ধি ও বিবেকের সহায়তার ঐশী বাণী সমূহের যথার্থ অনুধাবন এবং সেই অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করতে পারলেই একজন মানব সন্তান প্রকৃত মানব হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হবে। আর এ সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে কেবল বিভ্রান্তির নাগপাশ থেকে বেরিয়ে এসে ইহকালীন ও পরকালীন চূড়ান্ত লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব। স্বয়ং নবী করীম (সা.) এর উপর নাজিলকৃত আল কুরআন হল চিরন্তন ভাবে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ও সর্বোত্তম জীবন বিধান। ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি ও চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আল্ কুরআন ও রাসূল (আঃ) এর আদর্শ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন ব্যতীত আর কোন বিকল্প নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/482/44
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।