মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আল্লাহর ওলী হওয়ার জন্যে এমন কোন শর্ত নেই যে তিনি নিষ্পাপ হবেন, তার কোন ভুল হবে না কোন ত্রুটি হবে না বা তার দ্বারা গুনাহর কাজ সংঘটিত হবে না। হতে পারে আল্লাহর কোন বিধান তিনি জানেন না। হতে পারে দ্বীনের কোন বিষয়ে তিনি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন, ফলে ধারণা করছেন যে এটা আল্লাহ্র আদেশ বা ওটা তাঁর নিষেধ; কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত। হতে পারে তার মাধ্যমে আশ্চর্য কোন ঘটনা ঘটে গেছে আর তিনি ধরে নিয়েছেন এটা কারামাতে আউলিয়া; অথচ জ্ঞানে ত্রুটি থাকার কারণে হয়তো শয়তান তাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু তিনি বুঝতেই পারছেন না যে, এটা শয়তানের পক্ষ থেকে। অবশ্য এ সমস্ত কারণে তিনি আল্লাহর বেলায়াত বা ওলীর মর্যাদা থেকে বের হয়ে যাবেন না। কেননা ভুল-ত্রুটির গুনাহ আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ঐ সমস্ত ক্ষেত্রে আল্লাহ্ শিখিয়ে দিয়েছেনঃ
رَبَّنَا لا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا “
হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা যদি ভুলে যাই অথবা ভুল করে ফেলি তবে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। (সূরা বাকারাঃ ২৮৬)
এই জন্যে যেহেতু আল্লাহর ওলীর ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেহেতু তার যাবতীয় কথাকে মেনে নেয়া বা নির্ভুল মনে করা জায়েয নেই। কারণ নির্ভুল মনে করলে তাকে নবীর আসনে বসিয়ে দেয়া হল। অনুরূপভাবে কোন ওলীর জন্যে জায়েয নেই যে, তার অন্তরে কোন বিষয়ের উৎপত্তি হলেই যেন তার উপর তিনি ভরসা না করেন যতক্ষণ বিষয়টিকে শরীয়তের সাথে মিলিয়ে না নিবেন। চাই উক্ত বিষয় কোন এলহাম হোক বা গায়েবী আওয়াজ হোক বা কোন কারামত হোক। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শরীয়তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তিনি তা গ্রহণ করবেন, অন্যথা প্রত্যাখ্যান করবেন।
আমরা জানি ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ওলীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর ফযীলত অতুলনীয়। তিনি অনেক ক্ষেত্রে যে মত পোষণ করেছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এলহামকৃত ছিল। [. যেমন বদর যুদ্ধের বন্দীদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবু বকর মত পোষণ করেছিলেন মুক্তিপণ নিয়ে বন্দীদেরকে ছেড়ে দেয়া। আর ওমার (রাঃ) তাঁদের বিপরীত মত পোষণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বন্দীদেরকে হত্যা করে ফেলতে। অথচ ওমার (রাঃ)এরর মতই সঠিক ছিল। এজন্যে তাঁর সমর্থনে আয়াতও নাযিল হয়। দেখুন সূরা আনফালের ৬৭-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর। ঘটনা বর্ণিত হয়েছে মুসনাদে আহমাদে ও তিরমিযীতে মানাকেব অধ্যায়ে।] এজন্যে তাঁর সমর্থনে কুরআনে অনেক আয়াতও নাযিল হয়েছে; বরং তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্বাক্ষ্য অনুযায়ী এলহামকৃত ব্যক্তি ছিলেন। [. নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমাদের পূর্ব জাতির মধ্যে এমন কিছু লোক ছিল যাদের কাছে এলহাম হত, আমার উম্মতের মধ্যে এরকম কেউ থাকলে ওমার তাদের অন্যতম।’’ (বুখারীতে ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়ে ও মুসলিমে ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে)] আল্লাহর পক্ষ থেকে (ঐশী নির্দেশে) তাঁর অন্তরে যে কথার সৃষ্টি হত, তা সত্যে পরিণত হত। তাঁর সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার পর কেউ নবী হলে ওমার নবী হত। কিন্তু আমার পর কোন নবী নেই। [. উক্ববা বিন আমের (রাঃ) থেকে তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, হাদীছটি হাসান, দ্রঃ মেশকাত হা/ ৬০৩৮]
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ হে ওমার! শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, তুমি এমন ব্যক্তি শয়তান তোমাকে কোন রাস্তায় চলতে দেখলে সে অন্য রাস্তা দিয়ে যায়। [. সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস থেকে বুখারী ও মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।]
অথচ তাঁর কাছ থেকেও ভুল প্রকাশিত হয়েছে। যদিও তিনি নিজ ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন না বা তিনি নিজের মতকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেননি। তিনি নিজে কখনো দাবী করে বলেননি যে, আমি এলহামকৃত ব্যক্তি; বরং তিনি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিধানের সামনে মস্তক অবনত করে তাঁদের কথা নিঃশর্তভাবে মেনে নিয়েছেন।
যেমন হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে সন্ধির শর্তগুলো বাহ্যিকভাবে অপমান জনক হওয়ার কারণে তিনি কিছুতেই তা গ্রহণ করতে পারছিলেন না। এজন্য তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সামনে প্রকাশ্য প্রতিবাদও করেছেন। নবীজী তাঁর কথাকে গ্রাহ্য না করলে তিনি একই প্রতিবাদ আবু কবর (রাঃ)এর সামনেও পেশ করছেন। কিন্তু আবু বকরও তাঁর কথায় আমল দেননি। পরবর্তীতে ওমার যখন বুঝলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন এবং ঐ প্রতিবাদকে গুনাহের কাজ মনে করে তা থেকে তওবা করলেন এবং অনেকগুলো নেক কাজ করলেন যেন আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেন। [. এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বুখারীতে শর্ত অধ্যায়ে ও মুসলিমে জিহাদ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।]
আরেকটি উদাহরণ নবীজী ইন্তেকাল করলে ওমার (রাঃ) তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। বরং তিনি উদ্দ্যত তরবারী হাতে বলেছিলেন, যে বলবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যু বরণ করেছে তাকে আমি দ্বিখন্ডিত করে দিব। নির্ভিক সৈনিক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যোগ্য উত্তরসূরী আবু বকর (রাঃ) তাঁর হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে বলেছিলেন, ওমার! তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? আবু বকর (রাঃ) মেম্বারে আরোহণ করে বললেন, জেনে রাখ! যারা মুহাম্মাদের ইবাদত করত, মুহাম্মাদ মৃত্যু বরণ করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত কর, আল্লাহ্ চিরঞ্জিব চিরস্থায়ী তিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না। আর তিনি তেলাওয়াত করলেন আল্লাহর কুরআনঃ
মুহাম্মাদ তো আল্লাহর রাসূল ছাড়া অন্য কিছু নন, তাঁর পূর্বে সমস্ত রাসূল গত হয়েছে। তিনি যদি মৃত্যু বরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা কি দ্বীন পরিত্যাগ করবে?চ (সূরা আল ঈমরানঃ ১৪৪) এই আয়াত শুনে ওমার (রাঃ)এর চেতনা ফিরে এল। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। [. ঘটনাটি বিস্তারিত দেখুন সহীহ ইবনে মাজাহ হা/১৬২৭। আর্ রাহীকুল মাখতুম- সফীউর রহমান মুবারকপুরী প্রণীত রাসূল (সাঃ)এর অনুপম জীবনী গ্রন্থ। (বাংলায় অনূদিত)]
সাহাবায়ে কেরামের অনেকের ক্ষেত্রে এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, কিন্তু কখনই তারা নিজেদের মতকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেননি বা প্রকাশ্য শরীয়তের খেলাফ কোন কাজ করে বলেননি যে বাতেনীভাবে এটা ঠিক আছে, অথবা তাঁরা আধ্যাত্মিকতা বা মারেফত শিক্ষা দেয়ার নাম করে লোকদেরকে পরকালে তাদের উসীলায় পার হওয়ার দাওয়াত দেননি বা এ উদ্দেশ্যে কাউকে মুরীদ করেননি। অথচ তাঁরা ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ওলী। যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। কেননা ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেনঃ দুনিয়ার সকল মানুষের কথা গ্রহণযোগ্যও হতে পারে প্রত্যাখ্যাতও হতে পারে, কিন্তু একমাত্র রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সকল কথা গ্রহণযোগ্য। [. মিনহাজ সুন্নাহ নববিয়্যাহ- ইবনে তাইমিয়াঃ ৩/৫০৩ পৃঃ।]
অতএব প্রকাশ্য শরীয়তের খেলাফ কাজ করেও যদি কোন অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ হয়েও যায়, তবে তা দ্বারা প্রমাণ হবে না যে সে আল্লাহর ওলী। কেননা ইমাম শাফেঈ, জুনাইদ বাগদাদী, আবু ইয়াযীদ বোস্তামী (রহঃ) প্রমূখ মনিষীগণ বলেছেন, যদি দেখ যে কোন লোক পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, অথবা বাতাসে উড়ে যাচ্ছে, তাকে দেখে ধোকায় পড়বে না, যতক্ষণ বাহ্যিকভাবে তার মধ্যে শরীয়তের আদেশ-নিষেধের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পূর্ণ অনুসরণ না পাওয়া যাবে। [. ওলী সংক্রান্ত এই আলোচনাগুলোর অধিকাংশই ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) প্রণীত ‘আল্ ফুরকান বায়না আউলিয়াইর্ রহমান ওয়া আউলিয়াইশ্ শায়তান’ নামক গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে।]
তাহলে কিভাবে চরমোনাই পীর সাহেব বলতে পারেনঃ শরীয়তের কামেল পীর সাহেব যদি এমন কোন হুকুম দেন, যাহা প্রকাশ্যে শরীয়তের খেলাফ হয়, তবুও তুমি তাহা নিরাপত্তিতে আদায় করিবে। কেননা, তিনি রাস্তা সব তৈরী করিয়াছেন। তিনি তাহার উঁচু-নীচু অর্থাৎ ভাল-মন্দ সব চিনেন, কম বুঝের দরুণ জাহেরাভাবে যদিও তুমি উহা শরীয়তের খেলাফ দেখ কিন্তু মূলে খেলাফ নহে।? (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহীঃ ৪১ পৃষ্ঠা)
সুবহানাল্লাহ্! কেন? উনি কি আলাদা কোন নবীর কাছ থেকে শরীয়ত শিখেছেন বা আলাদা কোন প্রভুর কাছ থেকে শরীয়ত পেয়েছেন যে, সাধারণ আলেমগণ যে কাজকে শরীয়তের প্রকাশ্য খেলাফ বলেন; অথচ তিনি গোপনে তা সঠিক-শুদ্ধ পেলেন? আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
আল্লাহর নাফরমানী করে কোন মানুষের আনুগত্য করা যাবে না, আনুগত্য শুধু শরীয়ত সম্মত ভাল কাজে করতে হবে। [. বুখারী ও মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ। শায়খ আলবানী সিলসিলা সহীহা গ্রন্থে (১ম খন্ড ১৮০ পৃষ্ঠা, হাদীছ নং/১৮১) বলেনঃ উক্ত হাদীছটির প্রেক্ষাপট হচ্ছে, কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করে জনৈক লোককে তাদের আমীর নিযুক্ত করেন। ঐ আমীর অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে তার বাহিনীকে বলেন, তোমরা আগুনে প্রবেশ কর। তখন তাদের মধ্যে একদল লোক আগুনে প্রবেশ করার ইচ্ছা করল। (যেহেতু আমীরের কথা মেনে চলার নির্দেশ আছে) কিন্তু আরেক দল বলল, আমরা তো আগুন থেকেই বাঁচতে চাচ্ছি। (তাহলে কিভাবে এখন আগুনে প্রবশ করব?) পরবর্তীতে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট উল্লেখ করা হল। যারা প্রবেশ করতে চেয়েছিল তিনি তাদেরকে বললেনঃ ‘‘তোমরা আগুনে প্রবেশ করলে কিয়ামত পর্যন্ত সেই আগুনের মধ্যেই অবস্থান করতে।’’ আর অপর দলটিকে তিনি ভাল কথা বললেন। তারপর বললেনঃ ‘‘আল্লাহর নাফরমানী করে কোন মানুষের আনুগত্য করা যাবে না, আনুগত্য শুধু শরীয়ত সম্মত ভাল কাজে করতে হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)শায়খ আলবানী বলেনঃ এ হাদীছটি থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ্ তাবারাক ওয়া তা’আলার নাফরমানী করে কোন ব্যক্তির আনুগত্য করা চলবে না, চাই সে কোন বাদশাহ্ বা আমীর হোক অথবা আলেম হোক বা ওলী-পীর বা শায়খ হোক। এ হাদীছ দ্বারা কয়েকটি দলের বিভ্রান্তি সহজেই অবগত হওয়া যায়ঃপ্রথম দলঃ পীর ও সুফী-সাধকদের অনুসরীরা। তারা তাদের পীর-শায়খদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে। যদিও পীর তাদেরকে প্রকাশ্য শরীয়তের খেলাফ আদেশ করেন। এই কারণে যে, বিষয়টি মুরীদের নযরে প্রকাশ্য শরীয়তের খেলাফ হলেও মূলতঃ তা নয়। কেননা পীর সাহেব যা দেখেন ও জানেন মুরীদ তা জানে না ও দেখে না। আমি এরকম জনৈক শায়খকে জানি, যিনি নিজেকে পীর-মুর্শিদ বলে দাবী করেন। তিনি একদা কোন এক মসজিদে মুরীদদের সামনে বয়ান করতে গিয়ে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। ঘটনাটির সারসংক্ষেপ এরকমঃ জনৈক সুফী-সাধক (মারেফতের কামেল পীর) তার এক মুরীদকে আদেশ করেন, আজ রাতে তুমি তোমার পিতাকে তোমার মায়ের পাশে শায়িত অবস্থায় পাবে, তাকে হত্যা করে আসবে। আদেশমত মুরীদ তার পিতাকে হত্যা করে। অতঃপর পীরের আদেশ বাস্তবায়ন করতে পেরে, পীরের কাছে খুশি হয়ে উপস্থিত হয়। তখন পীর সাহেব তার দিকে স্নেহের নযরে তাকিয়ে বলেনঃ তুমি কি মনে কর প্রকৃতপক্ষে তোমার পিতাকে হত্যা করছো? যাকে তুমি হত্যা করেছো, সে তোমার মায়ের শয্যা সঙ্গী (ব্যভিচারী)। তোমার প্রকৃত পিতা যিনি তিনি তো অনুপস্থিত।শায়খ আলবনী বলেনঃ ঘটনাটি যে বাতিল ও মিথ্যা তাতে কোন সন্দেহ নেই কেননাঃপ্রথমতঃ ঐ ব্যক্তি ব্যভিচারী হলে তার উপর দন্ডবিধি প্রয়োগ করার অধিকার পীর সাহেবের নেই। এই অধিকার হচ্ছে একমাত্র দেশের শাসনকর্তার বা তার প্রতিনিধির।দ্বিতীয়তঃ যদি হত্যাই করতে হয়, তবে পুরুষটিকে শুধু কেন? মহিলাটিকেও তো হত্যা করা উচিত। উভয়েই একসমান অপরাধী।তৃতীয়তঃ বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি হচ্ছে প্রস্তরাঘাতে তাকে হত্যা করা। অন্য কোনভাবে নয়।অতএব ঐ পীর যে কয়েক দিক থেকে শরীয়তের খেলাফ কাজ করেছেন তা সুস্পষ্ট।দ্বিতীয় দলঃ মুকাল্লেদগণ। যারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কথার চাইতে মাযহাবের কথাকে অগ্রগণ্য মনে করে। অথচ মাযহাবের অনেক কথা সুস্পষ্ট হাদীছ বিরোধী। যেমন কাউকে বলা হল, ফজরের ফরয নামায চলাবস্থায় সুন্নাত নামায পড়বে না। কেননা এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। তখন মুকাল্লেদ একথা মানবে না, বলবে আমাদের মাযহাবে এরূপ করা জায়েয। যদি কোন মুকাল্লিদকে বলেন, হিল্লা বিবাহ বাতিল। কেননা এরূপ যে করে তাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা’নত (অভিশাপ) করেছেন। তখন আপনাকে বলবে, আমাদের মাযহাবে এটা জায়েয। এভাবে হাজার হাজার মাসআলায় মুকাল্লিদগণ সহীহ্ হাদীছের বিরোধিতা করে থাকে। তৃতীয় দলঃ যারা নেতৃবৃন্দ ও শাসকদের অনুসরণ করে। শরীয়তের প্রকাশ্য খেলাফ বিধান রচনা করলেও তারা তার অনুসরণ করে থাকে। যেমন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা অনুরূপ অন্যান্য প্রকাশ্য শরীয়তবিরোধী মতবাদ সমূহ। তাদের মধ্যে নিকৃষ্ট ওরা, যারা ঐ মতবাদগুলোকে ইসলামের সাথে সামঞ্জস্য প্রদানের ব্যর্থ অপচেষ্টা চালায়। বর্তমান যুগে পান্ডিত্য ও জ্ঞানের দাবীদার অনেক লোক এই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে তাদের দ্বারা সাধারণ জনগোষ্ঠি ধোকায় পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ আলেমদের মতানুযায়ী এসমস্ত লোক এবং তাদের অনুসারীদের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি প্রজোয্যঃ আল্লাহ্ বলেনঃ اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ ‘‘ওরা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিতদেরকে এবং দরবেশদেরকে ‘রব’ হিসেবে গ্রহণ করেছে।’’ (সূরা তাওবাঃ ৩১)]
তিনিই (চরমোনাই পীর) আবার লিখেছেনঃ কোন পীর সাহেব যদি মেয়েলোককে সম্মুখে যাইতে বলে, বা তাহার সঙ্গে কথা বলিতে চাহে, তবে মনে করিবেন, এই ব্যক্তি পীর নহেন বরং দাজ্জাল। (ভেদে মা'রেফতঃ ৫৬ পৃঃ)
কেন? ইনি দাজ্জাল হবেন কেন? মেয়েলোককে সম্মুখে যেতে বলা জাহেরীভাবে শরীয়তের খেলাফ হলেই বা কি, পীরের কাছে তো মূলে খেলাফ নয়, কারণ উনি তো ভাল-মন্দ বুঝেন, তাই তার উপর খারাপ ধারণা পোষণ করা ঠিক হবে কি? নাকি আপনাদের কাছ থেকে উনি কামেল হওয়ার সনদ নিয়ে শরীয়তের জাহেরী খেলাফ হুকুম দিলে সেটাতে আপত্তি করা যাবে না? কিন্তু সে সনদ না পেলে তার জাহেরী শরীয়তের খেলাফ আদেশে আপত্তি করা যাবে? আশ্চর্য আপনাদের বিচার!
মূল কথা হচ্ছে পীর সাহেব কামেল হোন বা নাকেস হোন তার প্রকাশ্য শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশই গ্রহণ করা যাবে না- আমল করা যাবে না। এরকম আদেশ এলেই সাথে সাথে তাতে আপত্তি জানাতে হবে এবং তার বিরোধীতা করতে হবে। অতএব পীর সাহেবের পরের উক্তি অনুযায়ী আগের উক্তি বাতিল প্রমাণিত হল।
আরো বাতিল প্রমাণিত হল যে, প্রকাশ্যে শরীয়তের খেলাফ কাজ করে বা আদেশ করে কেউ আল্লাহর ওলী হতে পারে না এবং তার দ্বারা কোন কারামত ঘটে গেলে সেটা যে শয়তানের কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেমন তাবরিজী সাহেবের বেলায় (চরমোনাই পীর সাহেবের বর্ণনা অনুযায়ী) ঘটেছে। যেমন গঙ্গুহী সাহেব কর্তৃক জনৈক বৃদ্ধের হারানো ছেলেকে নিজ দরবারে বসেই মোরাকাবার মাধ্যমে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে ঘটেছে। প্রকৃত পক্ষে তাবরিজী সাহেব মৃতকে জীবিত করেননি; বরং শয়তান ঐ ছেলের আকৃতী ধারণ করে তাকে বিভ্রান্ত করেছে। এমনিভাবে জিন-শয়তান ঐ হারানো ছেলের আকৃতি ধারণ করে বৃদ্ধের বাড়ীতে উপস্থিত হয়েছে। অনুরূপভাবে ভক্তির আতিশয্যে এবং গঙ্গুহী সাহেবের উপর অগাধ বিশ্বাস থাকার কারণে মোহতামিম সাহেব তার পীর গঙ্গুহী সাহেবকে জাহাজ উদ্ধারকারী হিসেবে দেখেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি যা দেখেছেন তা ছিল শয়তান। তাকে বিভ্রান্ত করার জন্য গঙ্গুহী সাহেবের আকৃতিতে উদ্ধারকারী হিসেবে তন্দ্রার ভিতরে সে উপস্থিত হয়েছে।
অনুরূপভাবে গঙ্গুহী সাহেবের শরীরের ৩৬০টি জোড়া সব পৃথকভাবে হুজরার মধ্যেই ছড়াইয়া পড়িয়া রহিয়াছে। সমস্ত শরীর মাথা হইতে আরম্ভ করিয়া হাত-পায়ের প্রত্যেকটি জোড়া হইতে আল্লাহু যেকের বাহির হইতেছে। (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহীঃ ৫৯ পৃঃ) কথাগুলোও মিথ্যা এবং কোন আল্লাহর ওলীর কাজ নয় বা কোন কারামতীও নয়। এ ধরণের অবস্থা যাদু ছাড়া অন্যভাবে সম্ভব নয়। কেননা একাজ সম্পূর্ণ শরীয়তের খেলাফ। শরীয়তের খেলাফ কাজ কখনো কারামতী হতে পারে না। এ ধরণের যিকিরের নযীর শরীয়তে মুহাম্মাদীতে নাই। সুতরাং তা বাতিল ও বানোয়াট কথা। তাছাড়া শুধুমাত্র ওআল্লাহু শব্দ উচ্চারণ করা কোন যিকির নয়; বরং অনর্থক কাজ। কুরআনে এর কোন দলীল নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ), তাবেঈন, সম্মানিত চার ইমাম, মুহাদ্দেছীনে কেরাম (রহঃ) কেউ এরকম শুধু ওআল্লাহু শব্দ উচ্চারণ করে যিকির করেছেন তার কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং নিঃসন্দেহে তা বিদআত বা গুমরাহী। আর বিদআত করে কোন ব্যক্তি আল্লাহর ওলী হতে পারে না। যদিও তার দ্বারা কোন আশ্চর্য ঘটনা প্রকাশ হয়ে যায়, তবে তা যে শয়তানের পক্ষ থেকে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
একইভাবে মঈনুউদ্দীন চিশতী কোন সময় আঘাত পাইলে তাহার শরীর মোবারক হইতে যে রক্ত বাহির হইত, তাহা জমিনে পড়া মাত্র কালেমায়ে তৈয়েবার নক্সা হইয়া যাইত। (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহীঃ ৫৩ পৃঃ) চরমোনাই পীরের এই কথাটিও ভ্রান্ত ও শরীয়ত বিরোধী হওয়ার কারণে বাতিল এবং তা কারামতের অন্তর্ভূক্ত নয়। কারণ তায়েফে আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শরীর মোবারক থেকে রক্ত বের হয়েছে কিন্তু তা দ্বারা কালেমার নক্সা তৈরী হয়নি। তাছাড়া শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লে তা নাপাক, ওযু ভঙ্গের একটি কারণ। [. বিষয়টি মতবিরোধর্পূণ। হানাফী মাযহাব মতে শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য মাযহাবে এটা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য নয়। (আল্লাহ্ই সঠিক জ্ঞান রাখেন)] এই অপবিত্র বস্তু দ্বারা পবিত্র কালেমা লিখা হয়ে যাওয়া শরীয়ত বিরোধী কথা। এই কারণে তা পরিত্যাজ্য।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/37/49
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।