HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
হালাল রিযিকের সন্ধানে
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
হালাল রিযিকের সন্ধানে
রিযিক বৃদ্ধির আমল, উপার্জনের বিধিবিধান ও হালাল উপার্জনের
শর্তাবলির আলোচনা সম্বলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব।
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০।
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
রিযিক বৃদ্ধির আমল, উপার্জনের বিধিবিধান ও হালাল উপার্জনের
শর্তাবলির আলোচনা সম্বলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব।
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
আরবি প্রভাষক
আলহাজ্জ মোহাম্মদ ইউসুফ মেমোরিয়াল দারুল হাদীস মাদরাসা
৮-৯ লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, ঢাকা- ১১০০।
সম্পাদনা
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
‘‘হালাল রিযিকের সন্ধানে’’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে আল্লাহ তা‘আলার অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। সেই সাথে তিনি মানুষের অনেক মৌলিক চাহিদাও সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এসব চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণ করা ছাড়া মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। শরীর ঢাকার জন্য ও শীতের তীব্রতা থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য পোশাকের প্রয়োজন। থাকার জন্য বাসস্থানের প্রয়োজন। সুস্থ হওয়ার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।
মানুষের এসব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হলে, তাকে অবশ্যই অর্থ উপার্জন করতে হয়। সেই অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার অনেক বিধিবিধান রয়েছে। যারা এসব বিধিবিধান পালন করে উপার্জন করবে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হবে। আর যারা দুনিয়ার প্রয়োজন পূর্ণ করতে গিয়ে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করবে, তারা ক্ষতিগ্রসত্ম হবে।
আসলে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে এ পৃথিবীতে পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছেন। এজন্য তিনি মানুষের উপর কিছু বিধিবিধান দিয়েছেন, যাতে করে এর মাধ্যমে তিনি জেনে নিতে পারেন যে, কে তার এসব বিধান মানে এবং কে মানে না। অতএব রোজী-রোযগার করার ক্ষেত্রে এবং খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নায় যেসব বিধান রয়েছে, তা জানা এবং বাসত্মবায়ন করা একজন মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
এ বইটিতে উপার্জন সংক্রামত্ম বিভিন্ন দিক; বিশেষ করে উপার্জন হালাল ও হারাম হওয়ার দিকসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি মুসলিম ভাই ও বোনেরা বইটি পড়ে উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ। আমরা উপার্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানগুলো জেনে এর উপর আমল করার চেষ্টা করব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সেই তাওফীক দান করুন। আ-মীন
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সবাইকে যেন আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ খেদমতকে আমাদের সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন। আ-মীন
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
মোবা : ০১৯১২-১৭৫৩৯৬
ঢাকা- ০১/১২/২০১৫ ইং
‘‘হালাল রিযিকের সন্ধানে’’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে আল্লাহ তা‘আলার অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। সেই সাথে তিনি মানুষের অনেক মৌলিক চাহিদাও সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এসব চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণ করা ছাড়া মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। শরীর ঢাকার জন্য ও শীতের তীব্রতা থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য পোশাকের প্রয়োজন। থাকার জন্য বাসস্থানের প্রয়োজন। সুস্থ হওয়ার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।
মানুষের এসব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হলে, তাকে অবশ্যই অর্থ উপার্জন করতে হয়। সেই অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার অনেক বিধিবিধান রয়েছে। যারা এসব বিধিবিধান পালন করে উপার্জন করবে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হবে। আর যারা দুনিয়ার প্রয়োজন পূর্ণ করতে গিয়ে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করবে, তারা ক্ষতিগ্রসত্ম হবে।
আসলে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে এ পৃথিবীতে পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছেন। এজন্য তিনি মানুষের উপর কিছু বিধিবিধান দিয়েছেন, যাতে করে এর মাধ্যমে তিনি জেনে নিতে পারেন যে, কে তার এসব বিধান মানে এবং কে মানে না। অতএব রোজী-রোযগার করার ক্ষেত্রে এবং খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নায় যেসব বিধান রয়েছে, তা জানা এবং বাসত্মবায়ন করা একজন মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
এ বইটিতে উপার্জন সংক্রামত্ম বিভিন্ন দিক; বিশেষ করে উপার্জন হালাল ও হারাম হওয়ার দিকসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি মুসলিম ভাই ও বোনেরা বইটি পড়ে উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ। আমরা উপার্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানগুলো জেনে এর উপর আমল করার চেষ্টা করব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সেই তাওফীক দান করুন। আ-মীন
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সবাইকে যেন আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ খেদমতকে আমাদের সকলের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন। আ-মীন
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
মোবা : ০১৯১২-১৭৫৩৯৬
ঢাকা- ০১/১২/২০১৫ ইং
আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে মানুষকে পরীক্ষা করেন। এজন্য তিনি তাদের রিযিকের হ্রাস-বৃদ্ধি করে থাকেন। কাউকে বেশি রিযিক দেন আবার কাউকে কম রিযিক দেন। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা হলেন রিযিকের মালিক, তাই তিনি যাকে চান তার রিযিক বাড়িয়ে দিতে পারেন। কুরআন ও হাদীসে এমন কিছু আমলের উল্লেখ পাওয়া যায় যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন বান্দার রিযিক বৃদ্ধি করেন। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
তাকওয়া অর্জন করলে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন বান্দার রিযিক বৃদ্ধি করে দেন। তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা। রিযিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং হালাল উপার্জনের দিকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا ‐ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ﴾
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার উপায় বের করে দেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে এমন দিক হতে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সূরা তালাক্ব- ২, ৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ﴾
যদি সকল জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
﴿وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا ‐ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ﴾
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার উপায় বের করে দেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে এমন দিক হতে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সূরা তালাক্ব- ২, ৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ﴾
যদি সকল জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
অধিক পরিমাণে ইসেত্মগফার করলে এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে রিযিক বাড়ে। বান্দা যখন কোন অপরাধ করে, অতঃপর আল্লাহর দিকে ফিরে এসে একনিষ্ঠতার সাথে তওবা করে তখন তিনি খুবই খুশি হন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ (আঃ) এর ঘটনা তুলে ধরে পবিত্র কুরআনে বলেন,
﴿فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا – يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا – وَيُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَّيَجْعَلْ لَّكُمْ اَنْهَارًا﴾
অতঃপর আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টিবর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে। আর তোমাদের জন্য বাগানসমূহ তৈরি করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদী–নালা। (সূরা নূহ, ১০-১২)
﴿فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْؕ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا – يُرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا – وَيُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَّيَجْعَلْ لَّكُمْ اَنْهَارًا﴾
অতঃপর আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টিবর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে। আর তোমাদের জন্য বাগানসমূহ তৈরি করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদী–নালা। (সূরা নূহ, ১০-১২)
ইসলামে আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যমত্ম সওয়াবের কাজ। আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিযিক বাড়ে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ سَرَّه أَنْ يُبْسَطَ لَه رِزْقُه أَوْ يُنْسَأَ لَه فِيْ أَثَرِه فَلْيَصِلْ رَحِمَه
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিযিক প্রশসত্ম করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। [সহীহ বুখারী, হা/২০৬৭; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৮৭; আবু দাউদ, হা/১৬৯৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৩৬৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫২০।]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ سَرَّه أَنْ يُبْسَطَ لَه رِزْقُه أَوْ يُنْسَأَ لَه فِيْ أَثَرِه فَلْيَصِلْ رَحِمَه
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিযিক প্রশসত্ম করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। [সহীহ বুখারী, হা/২০৬৭; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৮৭; আবু দাউদ, হা/১৬৯৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৩৬৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫২০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করা অত্যমত্ম ফযীলতপূর্ণ একটি কাজ। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠের মাধ্যমেও রিযিকে প্রশসত্মতা আসে। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ أُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِيْ ؟ فَقَالَ : مَا شِئْتَ . قَالَ : قُلْتُ : الرُّبُعَ ، قَالَ : مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قُلْتُ : النِّصْفَ ، قَالَ : مَا شِئْتَ ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ، قَالَ : قُلْتُ : فَالثُّلُثَيْنِ ، قَالَ : مَا شِئْتَ ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ، قُلْتُ : أَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِيْ كُلَّهَا قَالَ : إِذًا تُكْفٰى هَمَّكَ ، وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই। অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে। [তিরমিযী, হা/২৪৫৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৭০; মিশকাত, হা/৯২৯।]
এখানে ‘‘প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে’’ এর অর্থ হলো রিযিক আহরণে বরকত দান করা হবে।
عَنِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ أُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِيْ ؟ فَقَالَ : مَا شِئْتَ . قَالَ : قُلْتُ : الرُّبُعَ ، قَالَ : مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قُلْتُ : النِّصْفَ ، قَالَ : مَا شِئْتَ ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ، قَالَ : قُلْتُ : فَالثُّلُثَيْنِ ، قَالَ : مَا شِئْتَ ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ، قُلْتُ : أَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِيْ كُلَّهَا قَالَ : إِذًا تُكْفٰى هَمَّكَ ، وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই। অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে। [তিরমিযী, হা/২৪৫৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৭০; মিশকাত, হা/৯২৯।]
এখানে ‘‘প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে’’ এর অর্থ হলো রিযিক আহরণে বরকত দান করা হবে।
কেউ যদি আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাহলে তিনি তার প্রতি সমত্মুষ্ট হয়ে যান এবং সে যা ব্যয় করেছিল তিনি তাকে তার চেয়েও বেশি দান করেন। আল্লাহর রাসত্মায় কেউ ব্যয় করলে বা দান করলে তা বিফলে যায় না এবং সে সম্পদ ফুরায় না। বরং তা বাড়তেই থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ إِنَّ رَبِّيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه وَيَقْدِرُ لَه وَمَاۤ أَنْفَقْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُه وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ﴾
বলো, আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন। আর তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা সাবা- ৩৯)
﴿قُلْ إِنَّ رَبِّيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِه وَيَقْدِرُ لَه وَمَاۤ أَنْفَقْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُه وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ﴾
বলো, আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন। আর তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (সূরা সাবা- ৩৯)
হজ্জ ও উমরা পাপ মোচনের অন্যতম মাধ্যম। যারা বারবার হজ্জ ও উমরা পালন করার মাধ্যমে নিজেদেরকে আল্লাহর পথে নিযুক্ত রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তাদের রিযিকও বৃদ্ধি করে দিবেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةُ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বারবার হজ্জ ও উমরা করতে থাকো। কেননা এ দুটি আমল অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমনিভাবে কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রূপার ময়লাকে দূর করে দেয়। আর একটি কবুলকৃত হজ্জের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। [তিরমিযী, হা/৮১০; নাসাঈ, হা/২৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৬৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৫১২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬৯৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০২৫২; জামেউস সগীর, হা/৫২১২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১৩৩; মিশকাত, হা/২৫২৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةُ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বারবার হজ্জ ও উমরা করতে থাকো। কেননা এ দুটি আমল অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমনিভাবে কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রূপার ময়লাকে দূর করে দেয়। আর একটি কবুলকৃত হজ্জের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। [তিরমিযী, হা/৮১০; নাসাঈ, হা/২৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৬৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৫১২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬৯৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০২৫২; জামেউস সগীর, হা/৫২১২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১৩৩; মিশকাত, হা/২৫২৪।]
সমাজে অনেক দুর্বল ও অসহায় মানুষ বসবাস করে। তাদেরকে সহযোগিতা করা একটি উত্তম কাজ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাদের রিযিক বৃদ্ধি করে থাকেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ رَأٰى سَعْدٌ أَنَّ لَه فَضْلًا عَلٰى مَنْ دُوْنَه فَقَالَ النَّبِيُّ هَلْ تُنْصَرُوْنَ وَتُرْزَقُوْنَ إِلَّا بِضُعَفَائِكُمْ
মুস‘আব ইবনে সা‘দ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা‘দ (রাঃ) এর ধারণা ছিল যে, অন্যদের তুলনায় তাঁর মর্যাদা অধিক। অতঃপর নবী ﷺ বললেন, তোমরা তোমাদের দুর্বল ও অসহায়দের কারণেই সাহায্য ও রিযিকপ্রাপ্ত হয়ে থাক। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৯৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৬১; জামেউস সগীর, হা/১২৯৯১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২০৫; মিশকাত, হা/৫২৩২।]
عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ رَأٰى سَعْدٌ أَنَّ لَه فَضْلًا عَلٰى مَنْ دُوْنَه فَقَالَ النَّبِيُّ هَلْ تُنْصَرُوْنَ وَتُرْزَقُوْنَ إِلَّا بِضُعَفَائِكُمْ
মুস‘আব ইবনে সা‘দ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা‘দ (রাঃ) এর ধারণা ছিল যে, অন্যদের তুলনায় তাঁর মর্যাদা অধিক। অতঃপর নবী ﷺ বললেন, তোমরা তোমাদের দুর্বল ও অসহায়দের কারণেই সাহায্য ও রিযিকপ্রাপ্ত হয়ে থাক। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৯৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৬১; জামেউস সগীর, হা/১২৯৯১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২০৫; মিশকাত, হা/৫২৩২।]
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দ্বীনের উপর সর্বদা অটল থাকা এবং বেশি বেশি নেকীর কাজ করা ইত্যাদি এসব কাজের মাধ্যমেও রিযিক প্রশসত্ম হয়। বান্দা আল্লাহর দিকে যত বেশি মনোনিবেশ করবে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি ততবেশি মনোনিবেশ করবেন। সুতরাং বান্দা যদি দুনিয়ার ঝামেলা পরিত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন থাকে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে দেন এবং তার অভাব দূর করে দেন। হাদীসে কুদসীতে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : يَقُوْلُ اللهُ سُبْحَانَه : يَا ابْنَ اٰدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِيْ أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى ، وَأَسُدَّ فَقْرَكَ ، وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ ، مَلَأْتُ صَدْرَكَ شُغْلًا ، وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে আদম সমত্মান! আমার ইবাদাতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অমত্মরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্রতা ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যসত্মতায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না। [তিরমিযী, হা/২৪৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/৪১০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৮১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩৬৫৭; জামেউস সগীর, হা/২৭৯৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৩৫৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৬৬; মিশকাত, হা/৫১৭২।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : يَقُوْلُ اللهُ سُبْحَانَه : يَا ابْنَ اٰدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِيْ أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى ، وَأَسُدَّ فَقْرَكَ ، وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ ، مَلَأْتُ صَدْرَكَ شُغْلًا ، وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে আদম সমত্মান! আমার ইবাদাতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অমত্মরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্রতা ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যসত্মতায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না। [তিরমিযী, হা/২৪৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/৪১০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৮১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৩৬৫৭; জামেউস সগীর, হা/২৭৯৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৩৫৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৬৬; মিশকাত, হা/৫১৭২।]
কেউ যদি কেবল আল্লাহর সমত্মুষ্টির উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব নিয়ে নেন। আল্লাহর সমত্মুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করার মাধ্যমেও রিযিকে প্রশসত্মতা আসে। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
﴿وَمَنْ يُّهَاجِرْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيْرًا وَّسَعَةً وَّمَنْ يَّخْرُجْ مِنْ ۢبَيْتِه مُهَاجِرًا إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُه عَلَى اللهِ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে দুনিয়াতে অনেক আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর থেকে মুহাজির হয়ে বের হবে, তারপর সে যদি মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তার পুরস্কারের ভার আল্লাহর উপর বর্তাবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১০০)
﴿وَمَنْ يُّهَاجِرْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيْرًا وَّسَعَةً وَّمَنْ يَّخْرُجْ مِنْ ۢبَيْتِه مُهَاجِرًا إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُه عَلَى اللهِ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে দুনিয়াতে অনেক আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর থেকে মুহাজির হয়ে বের হবে, তারপর সে যদি মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তার পুরস্কারের ভার আল্লাহর উপর বর্তাবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ১০০)
আল্লাহর পথে জিহাদ করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিজয় দান করার মাধ্যমে অনেক গনীমত লাভের সুযোগ করে দেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ جُعِلَ رِزْقِيْ تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِيْ وَجُعِلَ الذِّلَّةُ وَالصَّغَارُ عَلٰى مَنْ خَالَفَ أَمْرِيْ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার রিযিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। আর যে ব্যক্তি আমার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে অপমান ও লাঞ্ছনা। [সহীহ বুখারী, মু‘আল্লাক সূত্রে বল্লম সম্পর্কে বর্ণনা অধ্যায়, ৪/৪৯ পৃঃ ; জামেউস সগীর, হা/৫১৪২।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ جُعِلَ رِزْقِيْ تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِيْ وَجُعِلَ الذِّلَّةُ وَالصَّغَارُ عَلٰى مَنْ خَالَفَ أَمْرِيْ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার রিযিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। আর যে ব্যক্তি আমার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে অপমান ও লাঞ্ছনা। [সহীহ বুখারী, মু‘আল্লাক সূত্রে বল্লম সম্পর্কে বর্ণনা অধ্যায়, ৪/৪৯ পৃঃ ; জামেউস সগীর, হা/৫১৪২।]
শুকরিয়া আদায় করার ফলে নিয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন আমরা যদি সেগুলোর শুকরিয়া আদায় করি তাহলে তিনি আমাদের প্রতি সমত্মুষ্ট হয়ে যান এবং আমাদের রিযিক বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ﴾
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন- যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে রিযিক অধিক বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয় আমার শাস্তি অনেক কঠোর। (সূরা ইবরাহীম– ৭)
﴿وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ﴾
স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন- যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে রিযিক অধিক বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয় আমার শাস্তি অনেক কঠোর। (সূরা ইবরাহীম– ৭)
বিবাহ করার মাধ্যমেও রিযিক বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এবং মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তার জন্য বরাদ্দ রিযিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَنْكِحُوا الْاَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَاِمَآئِكُمْؕ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ﴾
তোমাদের মধ্যে যাদের স্ত্রী নেই তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো। যদি তারা অভাবী হয়, (তাহলে) আল্লাহ (অচিরেই) তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩২)
﴿وَاَنْكِحُوا الْاَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَاِمَآئِكُمْؕ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ﴾
তোমাদের মধ্যে যাদের স্ত্রী নেই তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো। যদি তারা অভাবী হয়, (তাহলে) আল্লাহ (অচিরেই) তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩২)
আল্লাহ তা‘আলাই রিযিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। তাই রিযিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। তিনি বান্দার দু‘আ কবুল করেন এবং তাদেরকে সচ্ছলতা দান করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِۤيْ اَسْتَجِبْ لَكُمْ﴾
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সূরা মু’মিন- ৬০)
হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُه وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللهِ أَوْشَكَ اللهُ لَه بِالْغِنٰى إِمَّا بِمَوْتٍ عَاجِلٍ أَوْ غِنًى عَاجِلٍ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতঃপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরীকরণে মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়), তবে তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয় এবং এর প্রতিকারের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়, আল্লাহ তাকে হয়তো মৃত্যুর মাধ্যমে অথবা সম্পদের মাধ্যমে ধনী করে দেবেন। [আবু দাউদ, হা/১৬৪৭; তিরমিযী, হা/২৩২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮৬৯; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৩১৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৮১২২; জামেউস সগীর, হা/১০৯৮৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৮৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮৩৮; মিশকাত, হা/১৮৫২।]
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِۤيْ اَسْتَجِبْ لَكُمْ﴾
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সূরা মু’মিন- ৬০)
হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُه وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللهِ أَوْشَكَ اللهُ لَه بِالْغِنٰى إِمَّا بِمَوْتٍ عَاجِلٍ أَوْ غِنًى عَاجِلٍ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতঃপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরীকরণে মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়), তবে তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয় এবং এর প্রতিকারের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়, আল্লাহ তাকে হয়তো মৃত্যুর মাধ্যমে অথবা সম্পদের মাধ্যমে ধনী করে দেবেন। [আবু দাউদ, হা/১৬৪৭; তিরমিযী, হা/২৩২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮৬৯; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৩১৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৮১২২; জামেউস সগীর, হা/১০৯৮৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৮৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮৩৮; মিশকাত, হা/১৮৫২।]
তাওয়াক্কুল হচ্ছে আল্লাহর উপর ভরসা করা। রিযিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বান্দাকে অবশ্যই আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ فَهُوَ حَسْبُهٗؕ اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهٖؕ قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কার্যাবলি পূরণ করে দেবেন; আর আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রা স্থির করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ৩)
যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং তার আনুগত্য করবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং কল্পনাতীত স্থান থেকে তার রিযিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হবে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- لَوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِه لَرُزِقْتُمْ كَمَا تُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوْ خِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا
উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি তোমরা আল্লাহর উপর যথাযথ ভরসা কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিযিক দান করবেন, যেরূপ রিযিক তিনি পাখিকে দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয় এবং দিন শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে। [তিরমিযী, হা/২৩৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৪০; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/৫১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৮০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২৪৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১০৮; মিশকাত, হা/৫২৯৯।]
﴿وَمَنْ يَّتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ فَهُوَ حَسْبُهٗؕ اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهٖؕ قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا﴾
যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কার্যাবলি পূরণ করে দেবেন; আর আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রা স্থির করে রেখেছেন। (সূরা তালাক্ব- ৩)
যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং তার আনুগত্য করবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং কল্পনাতীত স্থান থেকে তার রিযিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হবে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- لَوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِه لَرُزِقْتُمْ كَمَا تُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوْ خِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا
উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি তোমরা আল্লাহর উপর যথাযথ ভরসা কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিযিক দান করবেন, যেরূপ রিযিক তিনি পাখিকে দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয় এবং দিন শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে। [তিরমিযী, হা/২৩৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৪০; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/৫১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৮০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২৪৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১০৮; মিশকাত, হা/৫২৯৯।]
নিম্নসত্মরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দেয়া :
নিজের তাকদীরে লিপিবদ্ধ রিযিকের উপর সমত্মুষ্ট থাকার জন্য সর্বদা অপেক্ষাকৃত নিচের সত্মরের লোকদের দিকে তাকাতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- اُنْظُرُوْا إِلٰى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَا تَنْظُرُوْا إِلٰى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوْا نِعْمَةَ اللهِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দাও এবং তোমাদের চেয়ে উঁচু স্তরের লোকদের দিকে দৃষ্টি দিয়ো না। কেননা আল্লাহর নিয়ামতকে তুচ্ছ না ভাবার এটাই উত্তমপন্থা। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০২৫১।]
ইমাম ইবনে জারির বলেছেন, এ হাদীসে সব ধরনের কল্যাণের কথা রয়েছে। কারণ মানুষ যখন দুনিয়াবী বিষয়ে তার উপরের (সত্মরের লোকদের) দিকে তাকায়, তখন সে তার ন্যায় নিয়ামত প্রত্যাশা করে। আর তার নিকট রক্ষিত আল্লাহর নিয়ামতকে সে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে। আরো অধিক কামনা করে তার সমকক্ষ বা নিকটবর্তী হওয়ার জন্য। আর এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি। আর যদি দুনিয়াবী বিষয়ে তার নিচের (সত্মরের লোকদের) দিকে তাকায়, তখন তার সামনে আল্লাহর নিয়ামত প্রকাশিত হবে, ফলে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে, বিনয়ী হবে ও কল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করবে। [জালালুদ্দীন সুয়ূতী, আদ-দীবাজু ‘আলাল মুসলিম, ৬/২৭৬ পৃঃ।]
সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা :
বর্তমানে প্রায় সকলের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, সচ্ছলতা সম্মানের প্রতীক এবং অসচ্ছলতা অসম্মানের প্রতিক। সুতরাং আমরা যাকে সচ্ছল হিসেবে দেখতে পাই তার ব্যাপারে ভালো ধারণা পোষণ করে থাকি এবং যাকে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল হিসেবে দেখতে পাই তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করে থাকি। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে বাসত্মবতা হচ্ছে এর বিপরীত। কেননা কাউকে সচ্ছলতা দান করা বা না করাটা আল্লাহর একটি পরীক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে যাকে ইচ্ছা পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاَمَّا الْاِنْسَانُ اِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهٗ فَاَكْرَمَهٗ وَنَعَّمَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّيْۤ اَكْرَمَنِ – وَاَمَّاۤ اِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّۤيْ اَهَانَنِ﴾
মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন এবং সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন তখন সে বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন। আবার যখন তাকে পরীক্ষা করেন এবং রিযিক সঙ্কুচিত করে দেন তখন সে বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে তুচ্ছ করেছেন। (সূরা ফাজর- ১৫, ১৬)
আল্লাহর সিদ্ধামেত্মর ব্যাপারে সমত্মুষ্ট থাকা :
আল্লাহই একমাত্র রিযিকের মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে অধিকহারে রিযিক দিয়ে থাকেন; আবার যাকে ইচ্ছা তার রিযিক হ্রাস করে থাকেন। সুতরাং কারো অধিক রিযিক দেখে এটা মনে করা যাবে না, তাকে এতো এতো রিযিক দেয়া হলো, তাহলে আমাকে কেন দেয়া হলো না অথবা একজন ধনী লোককে যেরূপ রিযিক দেয়া হয়েছে সেরূপ আমাকে দেয়া হলো না কেন। বরং এটা মনে করতে হবে যে, আল্লাহ আমাকে যতটুকু রিযিক দিয়েছেন সেটা হচ্ছে তাঁর অনুগ্রহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهٖ لَبَغَوْا فِى الْاَ رْضِ وَلٰكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَآءُۚ اِنَّهٗ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ﴾
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিযিক বাড়িয়ে দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী পরিমাণ মতো দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা শূরা- ২৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ঐ ব্যক্তি প্রকৃত সফল, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পরিব্যাপ্ত পরিমাণ রিযিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৪৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৮১২১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১৪৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮২৯; মিশকাত, হা/৫১৬৫।]
রিযিক বণ্টনের অধিকার আল্লাহর- এ বিশ্বাস রাখা :
আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সবকিছুর ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যার উপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রাণীর রিযিক বণ্টনের উপরও একটি ভারসাম্য তৈরি করে দিয়েছেন, যার উপর ভিত্তি করে তাদের জীবন নির্বাহ হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ﴾
আমিই তাদেরকে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপর থেকে সেবা নিতে পারে। আর তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের রহমত খুবই উৎকৃষ্ট। (সূরা যুখরুফ- ৩১, ৩২)
পরকালের জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়া :
পার্থিব জীবন মানুষকে আল্লাহ থেকে বিমুখ করে দেয়। তাই পার্থিব জীবনের উপর পরকালকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং পরকালের নিয়ামতের প্রতি আকৃষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى﴾
কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। অথচ আখিরাতের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা আলা- ১৬, ১৭)
নিজের তাকদীরে লিপিবদ্ধ রিযিকের উপর সমত্মুষ্ট থাকার জন্য সর্বদা অপেক্ষাকৃত নিচের সত্মরের লোকদের দিকে তাকাতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- اُنْظُرُوْا إِلٰى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَا تَنْظُرُوْا إِلٰى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوْا نِعْمَةَ اللهِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দাও এবং তোমাদের চেয়ে উঁচু স্তরের লোকদের দিকে দৃষ্টি দিয়ো না। কেননা আল্লাহর নিয়ামতকে তুচ্ছ না ভাবার এটাই উত্তমপন্থা। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০২৫১।]
ইমাম ইবনে জারির বলেছেন, এ হাদীসে সব ধরনের কল্যাণের কথা রয়েছে। কারণ মানুষ যখন দুনিয়াবী বিষয়ে তার উপরের (সত্মরের লোকদের) দিকে তাকায়, তখন সে তার ন্যায় নিয়ামত প্রত্যাশা করে। আর তার নিকট রক্ষিত আল্লাহর নিয়ামতকে সে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে। আরো অধিক কামনা করে তার সমকক্ষ বা নিকটবর্তী হওয়ার জন্য। আর এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি। আর যদি দুনিয়াবী বিষয়ে তার নিচের (সত্মরের লোকদের) দিকে তাকায়, তখন তার সামনে আল্লাহর নিয়ামত প্রকাশিত হবে, ফলে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে, বিনয়ী হবে ও কল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করবে। [জালালুদ্দীন সুয়ূতী, আদ-দীবাজু ‘আলাল মুসলিম, ৬/২৭৬ পৃঃ।]
সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা :
বর্তমানে প্রায় সকলের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, সচ্ছলতা সম্মানের প্রতীক এবং অসচ্ছলতা অসম্মানের প্রতিক। সুতরাং আমরা যাকে সচ্ছল হিসেবে দেখতে পাই তার ব্যাপারে ভালো ধারণা পোষণ করে থাকি এবং যাকে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল হিসেবে দেখতে পাই তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করে থাকি। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে বাসত্মবতা হচ্ছে এর বিপরীত। কেননা কাউকে সচ্ছলতা দান করা বা না করাটা আল্লাহর একটি পরীক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে যাকে ইচ্ছা পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاَمَّا الْاِنْسَانُ اِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهٗ فَاَكْرَمَهٗ وَنَعَّمَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّيْۤ اَكْرَمَنِ – وَاَمَّاۤ اِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهٗ فَيَقُوْلُ رَبِّۤيْ اَهَانَنِ﴾
মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন এবং সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন তখন সে বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন। আবার যখন তাকে পরীক্ষা করেন এবং রিযিক সঙ্কুচিত করে দেন তখন সে বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে তুচ্ছ করেছেন। (সূরা ফাজর- ১৫, ১৬)
আল্লাহর সিদ্ধামেত্মর ব্যাপারে সমত্মুষ্ট থাকা :
আল্লাহই একমাত্র রিযিকের মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে অধিকহারে রিযিক দিয়ে থাকেন; আবার যাকে ইচ্ছা তার রিযিক হ্রাস করে থাকেন। সুতরাং কারো অধিক রিযিক দেখে এটা মনে করা যাবে না, তাকে এতো এতো রিযিক দেয়া হলো, তাহলে আমাকে কেন দেয়া হলো না অথবা একজন ধনী লোককে যেরূপ রিযিক দেয়া হয়েছে সেরূপ আমাকে দেয়া হলো না কেন। বরং এটা মনে করতে হবে যে, আল্লাহ আমাকে যতটুকু রিযিক দিয়েছেন সেটা হচ্ছে তাঁর অনুগ্রহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهٖ لَبَغَوْا فِى الْاَ رْضِ وَلٰكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَآءُۚ اِنَّهٗ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرٌ ۢبَصِيْرٌ﴾
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিযিক বাড়িয়ে দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী পরিমাণ মতো দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং দেখেন। (সূরা শূরা- ২৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ঐ ব্যক্তি প্রকৃত সফল, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পরিব্যাপ্ত পরিমাণ রিযিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৪৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৭২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৮১২১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১৪৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮২৯; মিশকাত, হা/৫১৬৫।]
রিযিক বণ্টনের অধিকার আল্লাহর- এ বিশ্বাস রাখা :
আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সবকিছুর ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যার উপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রাণীর রিযিক বণ্টনের উপরও একটি ভারসাম্য তৈরি করে দিয়েছেন, যার উপর ভিত্তি করে তাদের জীবন নির্বাহ হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّاؕ وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ﴾
আমিই তাদেরকে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরজনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপর থেকে সেবা নিতে পারে। আর তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের রহমত খুবই উৎকৃষ্ট। (সূরা যুখরুফ- ৩১, ৩২)
পরকালের জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়া :
পার্থিব জীবন মানুষকে আল্লাহ থেকে বিমুখ করে দেয়। তাই পার্থিব জীবনের উপর পরকালকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং পরকালের নিয়ামতের প্রতি আকৃষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿بَلْ تُؤْثِرُوْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‐ وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ وَّاَبْقٰى﴾
কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক। অথচ আখিরাতের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা আলা- ১৬, ১৭)
হালাল ও হারামের ক্ষেত্রে ইসলামের একটি মূলনীতি হচ্ছে প্রত্যেক বসত্মুই হালাল, যতক্ষণ না তা হারাম হওয়ার পক্ষে কোন দলীল পাওয়া যায়। সুতরাং যে কোন বসত্মুই প্রাথমিকভাবে হালাল হিসেবে ধরে নিতে হবে। অতঃপর যদি সেটা হারাম হওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে সেটা হারাম হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا﴾
তিনি সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের (কল্যাণের) জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৯
﴿وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ﴾
তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
﴿هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا﴾
তিনি সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের (কল্যাণের) জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারা- ২৯
﴿وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ﴾
তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ- ৩১)
শরীয়তের সকল ধরনের বিধিবিধান প্রণয়নের মালিক একমাত্র আল্লাহ। সুতরাং কোন্টা হালাল এবং কোন্টা হারাম- এসব সিদ্ধামত্ম দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ ؗ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ﴾
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই; আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
(সূরা ক্বাসাস- ৭০)
﴿اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ﴾
কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহরই। তিনি সত্য বিবৃত করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বর্র্র্শ্রেষ্ঠ। (সূরা আন‘আম- ৫৭)
﴿قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللهِ الَّتِيْۤ اَخْرَجَ لِعِبَادِهٖ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِؕ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِ﴾
বলো, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, কে তা হারাম করেছে? বলো, এগুলো পার্থিব জীবনে (জীবিকাস্বরূপ) মুমিনদের জন্য দেয়া হয়েছে। আর কিয়ামতের দিন (এগুলো) কেবল তাদের জন্যই নির্দিষ্ট। (সূরা আ‘রাফ- ৩২)
আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত শোভা-সৌন্দর্য এবং সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস তাঁর বান্দাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এখন যদি কোন ধর্ম বা নৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা এগুলোকে হারাম অথবা আত্মিক উন্নতির প্রতিবন্ধক বলে গণ্য করে তাহলে বুঝতে হবে যে, সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসেনি। হালাল জীবিকা থেকে বঞ্চিত থাকা আল্লাহর কাছে প্রিয় নয়। বরং তাঁর দেয়া উত্তম পোশাক পরিধান করলে এবং পবিত্র ও হালাল খাবার ভক্ষণ করলেই তিনি বেশি খুশি হন। কেননা এসব নিয়ামত আল্লাহ ভোগ করার জন্যই দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ যখন হালালকে হারাম করা বা হারামকে হালাল করার মাধ্যমে তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে, তখনই তিনি অসন্তুষ্ট হন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلَالٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ﴾
তোমরা তোমাদের জিহবা দ্বারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে (এ কথা) বলো না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে, তারা সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১১৬)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ يَتْرُكُوْنَ أَشْيَاءَ تَقَذُّرًا فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيْ كِتَابِه وَبَيَّنَ حَلَالَه وَحَرَامَه فَمَا أَحَلَّ فَهُوَ حَلَالٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَفْوٌ ثُمَّ تَلَا هٰذِهِ الْاٰيَةَ ﴿قُلْ لَّاۤ أَجِدُ فِيْ مَاۤ أُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَّطْعَمُه إِلَّاۤ أَنْ يَّكُوْنَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ﴾
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহেলী যুগের লোকেরা অপবিত্র মনে করে অনেকগুলো জিনিস ছেড়ে দিত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাব নাযিল করলেন এবং হালাল ও হারাম বর্ণনা করে দিলেন। সুতরাং আল্লাহ যা হালাল করেছেন তাই হালাল এবং তিনি যা হারাম করেছেন তাই হারাম। আর যেসব ব্যাপারে তিনি নীরবতা অবলম্বন করেছেন, তা হচ্ছে তোমাদের জন্য ক্ষমা। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেছেন- বলো, যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাইনি কোন ভক্ষণকারীর জন্য যা সে ভক্ষণ করে; তবে মৃত, প্রবাহিত রক্ত এবং শূকরের মাংস ব্যতীত- (সূরা আন‘আম- ১৪৫)। [আবু দাউদ, হা/৩৮০২; বায়হাকী, হা/১৯৫০৬; মিশকাত, হা/৪১৪৬।]
হালালকে হারাম করা মারাত্মক অপরাধ :
হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল করা মারাত্মক অপরাধ। কেননা এটা আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করার শামিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحَرِّمُوْا طَيِّبَاتِ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব পবিত্র বস্তুকে হালাল করে দিয়েছেন, সেগুলোকে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা- ৮৭)
﴿وَهُوَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْحَمْدُ فِى الْاُوْلٰى وَالْاٰخِرَةِ ؗ وَلَهُ الْحُكْمُ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ﴾
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই; আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
(সূরা ক্বাসাস- ৭০)
﴿اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِيْنَ﴾
কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহরই। তিনি সত্য বিবৃত করেন; আর ফায়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বর্র্র্শ্রেষ্ঠ। (সূরা আন‘আম- ৫৭)
﴿قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللهِ الَّتِيْۤ اَخْرَجَ لِعِبَادِهٖ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِؕ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَّوْمَ الْقِيَامَةِ﴾
বলো, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, কে তা হারাম করেছে? বলো, এগুলো পার্থিব জীবনে (জীবিকাস্বরূপ) মুমিনদের জন্য দেয়া হয়েছে। আর কিয়ামতের দিন (এগুলো) কেবল তাদের জন্যই নির্দিষ্ট। (সূরা আ‘রাফ- ৩২)
আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত শোভা-সৌন্দর্য এবং সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস তাঁর বান্দাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এখন যদি কোন ধর্ম বা নৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা এগুলোকে হারাম অথবা আত্মিক উন্নতির প্রতিবন্ধক বলে গণ্য করে তাহলে বুঝতে হবে যে, সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসেনি। হালাল জীবিকা থেকে বঞ্চিত থাকা আল্লাহর কাছে প্রিয় নয়। বরং তাঁর দেয়া উত্তম পোশাক পরিধান করলে এবং পবিত্র ও হালাল খাবার ভক্ষণ করলেই তিনি বেশি খুশি হন। কেননা এসব নিয়ামত আল্লাহ ভোগ করার জন্যই দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ যখন হালালকে হারাম করা বা হারামকে হালাল করার মাধ্যমে তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে, তখনই তিনি অসন্তুষ্ট হন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلَالٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ الْكَذِبَؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ﴾
তোমরা তোমাদের জিহবা দ্বারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে (এ কথা) বলো না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে, তারা সফলকাম হতে পারবে না। (সূরা নাহল- ১১৬)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ يَتْرُكُوْنَ أَشْيَاءَ تَقَذُّرًا فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيْ كِتَابِه وَبَيَّنَ حَلَالَه وَحَرَامَه فَمَا أَحَلَّ فَهُوَ حَلَالٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَفْوٌ ثُمَّ تَلَا هٰذِهِ الْاٰيَةَ ﴿قُلْ لَّاۤ أَجِدُ فِيْ مَاۤ أُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَّطْعَمُه إِلَّاۤ أَنْ يَّكُوْنَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ﴾
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহেলী যুগের লোকেরা অপবিত্র মনে করে অনেকগুলো জিনিস ছেড়ে দিত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাব নাযিল করলেন এবং হালাল ও হারাম বর্ণনা করে দিলেন। সুতরাং আল্লাহ যা হালাল করেছেন তাই হালাল এবং তিনি যা হারাম করেছেন তাই হারাম। আর যেসব ব্যাপারে তিনি নীরবতা অবলম্বন করেছেন, তা হচ্ছে তোমাদের জন্য ক্ষমা। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেছেন- বলো, যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাইনি কোন ভক্ষণকারীর জন্য যা সে ভক্ষণ করে; তবে মৃত, প্রবাহিত রক্ত এবং শূকরের মাংস ব্যতীত- (সূরা আন‘আম- ১৪৫)। [আবু দাউদ, হা/৩৮০২; বায়হাকী, হা/১৯৫০৬; মিশকাত, হা/৪১৪৬।]
হালালকে হারাম করা মারাত্মক অপরাধ :
হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল করা মারাত্মক অপরাধ। কেননা এটা আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করার শামিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحَرِّمُوْا طَيِّبَاتِ مَاۤ اَحَلَّ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব পবিত্র বস্তুকে হালাল করে দিয়েছেন, সেগুলোকে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা- ৮৭)
শরীয়তে কিছু খাদ্য ও পানীয়কে হারাম করে দেয়া হয়েছে। এগুলো হারাম করার অনেক কারণ রয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন। কারণ বান্দার কল্যাণ কিসে এবং অকল্যাণ কিসে তা আল্লাহর চেয়ে বেশি আর কেউ জানতে পারে না। তবে কিছু খাদ্য ও পানীয়কে হারাম করার কারণ যতটুকু জানা যায় তা হলো :
১. মানুষের জ্ঞান অথবা শরীরের ক্ষতির কারণ হওয়া :
মানুষের শরীর ও জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। এর হেফাযত করা বান্দার দায়িত্ব। তাই যেসব কাজ করলে বা যেসব খাদ্য খেলে মানুষের শরীরের ও জ্ঞানের ক্ষতি সাধিত হয়, তা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا﴾
আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
২. নেশা সৃষ্টি হওয়া :
যেসব জিনিস খেলে বা পান করলে নেশা সৃষ্টি হয় তা হারাম করা হয়েছে। কেননা নেশা মানুষের জ্ঞানকে বিকৃত করে দেয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : مَا أَسْكَرَ كَثِيْرُه فَقَلِيْلُه حَرَامٌ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে জিনিস অধিক পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিমাণও হারাম। [আবু দাউদ, হা/৩৬৮৩; তিরমিযী, হা/১৮৬৫; নাসাঈ, হা/৬৫০৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৯৩; মিশকাত, হা/৩৬৪৫।]
৩. অপবিত্র হওয়া :
কিছু কিছু জিনিস অপবিত্র ও নাপাক হওয়ার কারণে হারাম করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জন্য কেবল পাক-পবিত্র জিনিসই হালাল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ ﴾
তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল করে দিয়েছেন আর অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম করে দিয়েছেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
৪. উপার্জনের পদ্ধতি হারাম হওয়া :
কোন হালাল জিনিস হারাম পন্থায় উপার্জন করার কারণে তা হারাম হয়ে যায়। যেমন- সুদ, ঘুষ, জুয়া, ধোঁকা, প্রতারণা, চোরাচালান, ওজন ও পরিমাপে কম দেয়া, মালে ভেজাল মেশানো, জবরদখল, লুণ্ঠণ, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আত্মসাৎ ও খিয়ানত ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টিতে ব্যবসা করা বৈধ। (সূরা নিসা- ২৯)
১. মানুষের জ্ঞান অথবা শরীরের ক্ষতির কারণ হওয়া :
মানুষের শরীর ও জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। এর হেফাযত করা বান্দার দায়িত্ব। তাই যেসব কাজ করলে বা যেসব খাদ্য খেলে মানুষের শরীরের ও জ্ঞানের ক্ষতি সাধিত হয়, তা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا﴾
আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
২. নেশা সৃষ্টি হওয়া :
যেসব জিনিস খেলে বা পান করলে নেশা সৃষ্টি হয় তা হারাম করা হয়েছে। কেননা নেশা মানুষের জ্ঞানকে বিকৃত করে দেয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : مَا أَسْكَرَ كَثِيْرُه فَقَلِيْلُه حَرَامٌ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে জিনিস অধিক পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিমাণও হারাম। [আবু দাউদ, হা/৩৬৮৩; তিরমিযী, হা/১৮৬৫; নাসাঈ, হা/৬৫০৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৯৩; মিশকাত, হা/৩৬৪৫।]
৩. অপবিত্র হওয়া :
কিছু কিছু জিনিস অপবিত্র ও নাপাক হওয়ার কারণে হারাম করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জন্য কেবল পাক-পবিত্র জিনিসই হালাল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ ﴾
তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল করে দিয়েছেন আর অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম করে দিয়েছেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
৪. উপার্জনের পদ্ধতি হারাম হওয়া :
কোন হালাল জিনিস হারাম পন্থায় উপার্জন করার কারণে তা হারাম হয়ে যায়। যেমন- সুদ, ঘুষ, জুয়া, ধোঁকা, প্রতারণা, চোরাচালান, ওজন ও পরিমাপে কম দেয়া, মালে ভেজাল মেশানো, জবরদখল, লুণ্ঠণ, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আত্মসাৎ ও খিয়ানত ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টিতে ব্যবসা করা বৈধ। (সূরা নিসা- ২৯)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য যেসব খাদ্য ভক্ষণ করার অনুমোদন দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে যেসব খাদ্য উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় সেগুলো হচ্ছে নিরামিষ জাতীয় খাবার। যেমন- শাক-সবজি, চাল, ডাল, গম ইত্যাদি। আর যেসব খাবার বিভিন্ন ধরনের প্রাণী থেকে পাওয়া যায় সেগুলো আমিষ জাতীয় খাবার। যেমন- গোশত, ডিম, মাছ, চর্বি, দুধ, দই ইত্যাদি।
ইসলাম এ জাতীয় খাবারের ব্যাপারে বৈধতা দিয়েছে। তবে কিছু কিছু ব্যাপারে বিধি-নিষেধ রয়েছে। যেমন-
ক্ষতিকর জিনিস খাওয়া যাবে না :
যেসব জিনিস খাওয়া মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো খাওয়া যাবে না।
ভালো খাদ্যকে ক্ষতিকর খাবার বানিয়ে খাওয়া যাবে না :
অনেক হালাল খাবার রয়েছে যা দ্বারা হারাম বা ক্ষতিকর খাবার তৈরি করে তা খাওয়া বা পান করা হয়। এগুলো খাওয়া বা পান করাও হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيْلِ وَالْاَعْنَابِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْهُ سَكَرًا وَّرِزْقًا حَسَنًا اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ﴾
তোমরা খেজুর বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক; এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৭)
ফলের রসে এমন উপাদান রয়েছে যা মানুষের জন্য খাদ্যে পরিণত হতে পারে; আবার এমন উপাদানও আছে, যা পরে মাদক দ্রব্যে পরিণত হয়। এখন অনেক মানুষ এ উৎসটি থেকে হালাল খাদ্য গ্রহণ করার পরিবর্তে বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি বিনষ্টকারী মদ বা অন্য উপায়ে হারাম খাদ্যে পরিণত করে তারপর তা খায় বা পান করে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَّاۤ أَنْزَلَ اللهُ لَكُمْ مِّنْ رِّزْقٍ فَجَعَلْتُمْ مِّنْهُ حَرَامًا وَّحَلَالًا قُلِ اللهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللهِ تَفْتَرُوْنَ﴾
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ সে সম্পর্কে যে- আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তার মধ্য থেকে তোমরা কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ? বলো, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছ? (সূরা ইউনুস- ৫৯)
নেশা সৃষ্টিকারী বসত্মু খাওয়া যাবে না :
ইসলামে সর্বপ্রকার নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম করা হয়েছে, তা যে কোন নামেই হোক না কেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ الله عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ : كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ وَمَا أَسْكَرَ مِنْهُ الْفَرْقُ فَمِلْءُ الْكَفِّ مِنْهُ حَرَامٌ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, সর্বপ্রকার নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম। আর যে জিনিস এক ফারাক পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি করে, তা হাতের অঞ্জলি পরিমাণ ব্যবহার করাও হারাম। [আবু দাউদ, হা/৩৬৮৯; তিরমিযী, হা/১৮৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৭৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৩৮৩; মিশকাত, হা/৩৬৪৬।]
اَلْفَرْقُ (ফারাক) মদীনার একটি পরিমাপ বিশেষ, যার পরিমাণ ৩ সা‘ এর সমান। এক সা‘ আমাদের দেশীয় হিসেবে প্রায় সাড়ে তিন সের। তবে এখানে ফারাক দ্বারা অনেক বেশি পরিমাণ উদ্দেশ্য।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ نَبِىَّ اللهِ - - نَهٰى عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوْبَةِ وَالْغُبَيْرَاءِ وَقَالَ : كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মদ, জুয়া, কূবা ও গোবায়রা প্রভৃতিকে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, নেশা সৃষ্টিকারী প্রত্যেক জিনিসই হারাম। [আবু দাউদ, হা/৩৬৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২৫; বায়হাকী, হা/২০৭৮১; মিশকাত, হা/৩৬৫২।]
কূবা বলা হয় দাবা খেলা অথবা তবলা বাজানোকে। আর গোবায়রা হচ্ছে, এক প্রকার মদ। হাবশার লোকেরা গম হতে তা প্রসত্মুত করত।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ عَنِ الْبِتْعِ وَهُوَ شَرَابُ الْعَسَلِ، وَكَانَ أَهْلُ الْيَمَنِ يَشْرَبُوْنَه فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বিত‘ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। আর এটি হলো মধু থেকে তৈরি এক প্রকার মদ, যা ইয়ামানবাসীরা পান করত। রাসূলুল্লাহ ﷺ উত্তর দিলেন, নেশা সৃষ্টিকারী যে কোন পানীয় হারাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৪০; সহীহ বুখারী, হা/৫৫৮৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৩০; আবু দাউদ, হা/৩৬৮৩; তিরমিযী, হা/১৮৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৮৬।]
ক্ষতিকর জিনিস খাওয়া যাবে না :
যেসব জিনিস খাওয়া মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো খাওয়া যাবে না।
ভালো খাদ্যকে ক্ষতিকর খাবার বানিয়ে খাওয়া যাবে না :
অনেক হালাল খাবার রয়েছে যা দ্বারা হারাম বা ক্ষতিকর খাবার তৈরি করে তা খাওয়া বা পান করা হয়। এগুলো খাওয়া বা পান করাও হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيْلِ وَالْاَعْنَابِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْهُ سَكَرًا وَّرِزْقًا حَسَنًا اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ﴾
তোমরা খেজুর বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক; এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (সূরা নাহল- ৬৭)
ফলের রসে এমন উপাদান রয়েছে যা মানুষের জন্য খাদ্যে পরিণত হতে পারে; আবার এমন উপাদানও আছে, যা পরে মাদক দ্রব্যে পরিণত হয়। এখন অনেক মানুষ এ উৎসটি থেকে হালাল খাদ্য গ্রহণ করার পরিবর্তে বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি বিনষ্টকারী মদ বা অন্য উপায়ে হারাম খাদ্যে পরিণত করে তারপর তা খায় বা পান করে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَّاۤ أَنْزَلَ اللهُ لَكُمْ مِّنْ رِّزْقٍ فَجَعَلْتُمْ مِّنْهُ حَرَامًا وَّحَلَالًا قُلِ اللهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَى اللهِ تَفْتَرُوْنَ﴾
বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ সে সম্পর্কে যে- আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তার মধ্য থেকে তোমরা কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ? বলো, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছ? (সূরা ইউনুস- ৫৯)
নেশা সৃষ্টিকারী বসত্মু খাওয়া যাবে না :
ইসলামে সর্বপ্রকার নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম করা হয়েছে, তা যে কোন নামেই হোক না কেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ الله عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ : كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ وَمَا أَسْكَرَ مِنْهُ الْفَرْقُ فَمِلْءُ الْكَفِّ مِنْهُ حَرَامٌ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, সর্বপ্রকার নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম। আর যে জিনিস এক ফারাক পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি করে, তা হাতের অঞ্জলি পরিমাণ ব্যবহার করাও হারাম। [আবু দাউদ, হা/৩৬৮৯; তিরমিযী, হা/১৮৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৭৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৩৮৩; মিশকাত, হা/৩৬৪৬।]
اَلْفَرْقُ (ফারাক) মদীনার একটি পরিমাপ বিশেষ, যার পরিমাণ ৩ সা‘ এর সমান। এক সা‘ আমাদের দেশীয় হিসেবে প্রায় সাড়ে তিন সের। তবে এখানে ফারাক দ্বারা অনেক বেশি পরিমাণ উদ্দেশ্য।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ نَبِىَّ اللهِ - - نَهٰى عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوْبَةِ وَالْغُبَيْرَاءِ وَقَالَ : كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মদ, জুয়া, কূবা ও গোবায়রা প্রভৃতিকে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, নেশা সৃষ্টিকারী প্রত্যেক জিনিসই হারাম। [আবু দাউদ, হা/৩৬৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২৫; বায়হাকী, হা/২০৭৮১; মিশকাত, হা/৩৬৫২।]
কূবা বলা হয় দাবা খেলা অথবা তবলা বাজানোকে। আর গোবায়রা হচ্ছে, এক প্রকার মদ। হাবশার লোকেরা গম হতে তা প্রসত্মুত করত।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ عَنِ الْبِتْعِ وَهُوَ شَرَابُ الْعَسَلِ، وَكَانَ أَهْلُ الْيَمَنِ يَشْرَبُوْنَه فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বিত‘ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। আর এটি হলো মধু থেকে তৈরি এক প্রকার মদ, যা ইয়ামানবাসীরা পান করত। রাসূলুল্লাহ ﷺ উত্তর দিলেন, নেশা সৃষ্টিকারী যে কোন পানীয় হারাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৪০; সহীহ বুখারী, হা/৫৫৮৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৩০; আবু দাউদ, হা/৩৬৮৩; তিরমিযী, হা/১৮৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৮৬।]
পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে। এসবের মধ্যে অনেক প্রাণীকে আল্লাহ হালাল করেছেন, আবার কতক প্রাণীকে হারাম করেছেন। কী কী জিনিস হারাম করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ﴾
অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিসত্মারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন। (সূরা আন‘আম- ১১৯)
﴿وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ﴾
অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিসত্মারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন। (সূরা আন‘আম- ১১৯)
কতিপয় হারাম প্রাণীর বিবরণ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَاۤ أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِه وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوْذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَاۤ أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلَامِ ذٰلِكُمْ فِسْقُ ﴾
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে-
১. মৃত জন্তু,
২. (প্রবাহিত) রক্ত,
৩. শূকরের মাংস,
৪. আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে উৎসর্গকৃত জন্তু,
৫. শ্বাসরোধে মৃত জন্তু,
৬. প্রহারের আঘাতে মৃত পশু,
৭. উঁচু স্থান থেকে পড়ে মৃত জন্তু,
৮. (কোন প্রাণীর) শিঙের আঘাতে মৃত জন্তু,
৯. হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু; তবে (জীবিত থাকতে) যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া,
১০. মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া জন্তু,
১১. ভাগ্য নির্ণয়কারী শর দ্বারা বণ্টনকৃত জন্তু, এসব পাপকাজ। (সূরা মায়েদা- ৩)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ لَّاۤ أَجِدُ فِيْ مَاۤ أُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَّطْعَمُهٗۤ إِلَّاۤ أَنْ يَّكُوْنَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ فَإِنَّهٗ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِه فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
বলো, যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাইনি কোন ভক্ষণকারীর জন্য যা সে ভক্ষণ করে; তবে মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত এবং শূকরের মাংস ব্যতীত, কেননা এগুলো অবশ্যই অপবিত্র, অথবা এমন অবৈধ জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা হয়েছে। তবে কেউ অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালঙ্ঘন না করে নিরুপায় হয়ে যদি তা খায় তবে তোমার প্রতিপালক তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আন‘আম- ১৪৫)
খবিস ও নাপাক প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না :
যেসব প্রাণী খবিস ও নাপাক হিসেবে পরিচিত সেসব প্রাণী খাওয়াও বৈধ নয়। যেমন- ইঁদুর, বিছা, শজারু, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, শকূন ইত্যাদি। যেহেতু এগুলোর খাদ্য অধিকাংশই নাপাক। তাই এসকল প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ ﴾
তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল করে দিয়েছেন; আর অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম করে দিয়েছেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
ধারালো দাঁত ও নখবিশিষ্ট হিংস্র প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না :
যেসব প্রাণীর ধারালো দাঁত অথবা নখ রয়েছে, যা দ্বারা সে শিকার করে থাকে, সেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম। কেননা সেগুলো হিংস্র প্রাণীর অমত্মর্ভুক্ত। যেমন- বাঘ, সিংহ, বাজ, চিল, ঈগল, পেঁচা ইত্যাদি। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - قَالَ كُلُّ ذِىْ نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ فَأَكْلُه حَرَامٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, ধারালো দাঁতবিশিষ্ট যত হিংস্র প্রাণী রয়েছে, সেগুলো খাওয়া হারাম। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৩০; সহীহ মুসলিম, হা/৫০৯৭।]
থাবা বা পাঞ্জা দিয়ে ভক্ষণকারী প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না :
যেসব প্রাণী থাবা দিয়ে বা পাঞ্জা দিয়ে ভক্ষণ করে থাকে, সেসব প্রাণী খাওয়া বৈধ নয়। কেননা এভাবে খাওয়ার দ্বারা সেসব প্রাণী হিংস্রতার প্রমাণ বহন করে। যেমন- ঈগল, বাজ, পেঁচা, বাঘ ইত্যাদি। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - عَنْ كُلِّ ذِىْ نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ وَعَنْ كُلِّ ذِىْ مِخْلَبٍ مِنَ الطَّيْرِ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র জমত্মু ও থাবা বিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১০৩; আবু দাউদ, হা/৩৮০৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৩৪।]
গৃহপালিত গাধা খাওয়া যাবে না :
রাসূলুল্লাহ ﷺ যেসব প্রাণী খাওয়ার ব্যাপারে সরাসরি নিষেধাজ্ঞারোপ করেছেন সেসব প্রাণী খাওয়া বৈধ নয়। যেমন- গৃহপালিত গাধা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ يَوْمَ خَيْبَرَ عَنْ لُحُوْمِ الْحُمُرِ وَرَخَّصَ فِي الْخَيْلِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন। আর সে দিনটি ছিল খায়বারের দিন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২১৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫১৩৪; আবু দাউদ, হা/৩৭৯০; নাসাঈ, হা/৪৩২৬।]
﴿حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَاۤ أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِه وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوْذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيْحَةُ وَمَاۤ أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلَامِ ذٰلِكُمْ فِسْقُ ﴾
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে-
১. মৃত জন্তু,
২. (প্রবাহিত) রক্ত,
৩. শূকরের মাংস,
৪. আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে উৎসর্গকৃত জন্তু,
৫. শ্বাসরোধে মৃত জন্তু,
৬. প্রহারের আঘাতে মৃত পশু,
৭. উঁচু স্থান থেকে পড়ে মৃত জন্তু,
৮. (কোন প্রাণীর) শিঙের আঘাতে মৃত জন্তু,
৯. হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু; তবে (জীবিত থাকতে) যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ছাড়া,
১০. মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া জন্তু,
১১. ভাগ্য নির্ণয়কারী শর দ্বারা বণ্টনকৃত জন্তু, এসব পাপকাজ। (সূরা মায়েদা- ৩)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ لَّاۤ أَجِدُ فِيْ مَاۤ أُوْحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَّطْعَمُهٗۤ إِلَّاۤ أَنْ يَّكُوْنَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ فَإِنَّهٗ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِه فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
বলো, যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাইনি কোন ভক্ষণকারীর জন্য যা সে ভক্ষণ করে; তবে মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত এবং শূকরের মাংস ব্যতীত, কেননা এগুলো অবশ্যই অপবিত্র, অথবা এমন অবৈধ জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা হয়েছে। তবে কেউ অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালঙ্ঘন না করে নিরুপায় হয়ে যদি তা খায় তবে তোমার প্রতিপালক তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আন‘আম- ১৪৫)
খবিস ও নাপাক প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না :
যেসব প্রাণী খবিস ও নাপাক হিসেবে পরিচিত সেসব প্রাণী খাওয়াও বৈধ নয়। যেমন- ইঁদুর, বিছা, শজারু, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, শকূন ইত্যাদি। যেহেতু এগুলোর খাদ্য অধিকাংশই নাপাক। তাই এসকল প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ ﴾
তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহকে হালাল করে দিয়েছেন; আর অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম করে দিয়েছেন। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৭)
ধারালো দাঁত ও নখবিশিষ্ট হিংস্র প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না :
যেসব প্রাণীর ধারালো দাঁত অথবা নখ রয়েছে, যা দ্বারা সে শিকার করে থাকে, সেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম। কেননা সেগুলো হিংস্র প্রাণীর অমত্মর্ভুক্ত। যেমন- বাঘ, সিংহ, বাজ, চিল, ঈগল, পেঁচা ইত্যাদি। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - قَالَ كُلُّ ذِىْ نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ فَأَكْلُه حَرَامٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, ধারালো দাঁতবিশিষ্ট যত হিংস্র প্রাণী রয়েছে, সেগুলো খাওয়া হারাম। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৩০; সহীহ মুসলিম, হা/৫০৯৭।]
থাবা বা পাঞ্জা দিয়ে ভক্ষণকারী প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না :
যেসব প্রাণী থাবা দিয়ে বা পাঞ্জা দিয়ে ভক্ষণ করে থাকে, সেসব প্রাণী খাওয়া বৈধ নয়। কেননা এভাবে খাওয়ার দ্বারা সেসব প্রাণী হিংস্রতার প্রমাণ বহন করে। যেমন- ঈগল, বাজ, পেঁচা, বাঘ ইত্যাদি। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - عَنْ كُلِّ ذِىْ نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ وَعَنْ كُلِّ ذِىْ مِخْلَبٍ مِنَ الطَّيْرِ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র জমত্মু ও থাবা বিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১০৩; আবু দাউদ, হা/৩৮০৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৩৪।]
গৃহপালিত গাধা খাওয়া যাবে না :
রাসূলুল্লাহ ﷺ যেসব প্রাণী খাওয়ার ব্যাপারে সরাসরি নিষেধাজ্ঞারোপ করেছেন সেসব প্রাণী খাওয়া বৈধ নয়। যেমন- গৃহপালিত গাধা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ يَوْمَ خَيْبَرَ عَنْ لُحُوْمِ الْحُمُرِ وَرَخَّصَ فِي الْخَيْلِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন। আর সে দিনটি ছিল খায়বারের দিন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২১৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫১৩৪; আবু দাউদ, হা/৩৭৯০; নাসাঈ, হা/৪৩২৬।]
হালাল সব ক্ষেত্রেই হালাল এবং হারাম সব ক্ষেত্রেই হারাম। তবে একটি ক্ষেত্র রয়েছে যখন হারাম জিনিসও সাময়িকভাবে হালাল হয়ে যায়। আর সেটি হচ্ছে, প্রয়োজন। যেমন- কোন ব্যক্তি এমন পরিস্থিতিতে পতিত হলো যে, হারাম ব্যতীত তার আর অন্য কোন কিছু গ্রহণ করার সুযোগ নেই এবং তার জীবনও হুমকির মুখে, এ ক্ষেত্রে সে হারাম জিনিস গ্রহণ করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, সেটা যেন সীমালঙ্ঘনমূলক অতিরিক্ত গ্রহণ করা না হয়। বরং জীবন ধারণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
তবে কেউ যদি এগুলো অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালঙ্ঘন না করে নিরুপায় হয়ে খায়, তাহলে নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা আন‘আম- ১৪৫)
﴿فَمَنِ اضْطُرَّ فِيْ مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ فَإِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
তবে কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তখন আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা মায়েদা- ৩)
﴿فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَاۤ إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
কিন্তু যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে পড়ে সে অবস্থায় সে অবাধ্য নয় এবং সীমালঙ্ঘনকারীও নয়, তার জন্য পাপ নেই (অর্থাৎ জীবন রক্ষার্থে খেতে পারে) এবং নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১৭৩)
﴿ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
তবে কেউ যদি এগুলো অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালঙ্ঘন না করে নিরুপায় হয়ে খায়, তাহলে নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা আন‘আম- ১৪৫)
﴿فَمَنِ اضْطُرَّ فِيْ مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ فَإِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
তবে কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তখন আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা মায়েদা- ৩)
﴿فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَاۤ إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
কিন্তু যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে পড়ে সে অবস্থায় সে অবাধ্য নয় এবং সীমালঙ্ঘনকারীও নয়, তার জন্য পাপ নেই (অর্থাৎ জীবন রক্ষার্থে খেতে পারে) এবং নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। (সূরা বাক্বারা- ১৭৩)
যেসব প্রাণী পানিতে বসবাস করে সেগুলো সামুদ্রিক প্রাণীর অমত্মর্ভুক্ত। এসব প্রাণী খাওয়া হালাল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُه مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ﴾
তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে- যাতে করে তোমরা এবং পর্যটকরা ভোগ করতে পার। (সূরা মায়েদা- ৯৬)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا﴾
তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যেন তোমরা তা হতে তাজা গোশত (অর্থাৎ মাছ) আহার করতে পার। (সূরা নাহল- ১৪)
মাছ মরে গেলেও তা খাওয়া হালাল :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِىَّ - - فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا نَرْكَبُ الْبَحْرَ وَنَحْمِلُ مَعَنَا الْقَلِيْلَ مِنَ الْمَاءِ فَإِنْ تَوَضَّأْنَا بِه عَطِشْنَا أَفَنَتَوَضَّأُ بِمَاءِ الْبَحْرِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : هُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করল যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্রে যাতায়াত করে থাকি। তখন আমরা সীমিত পরিমাণ পানি সাথে করে নিয়ে যাই। সুতরাং এটা দ্বারা যদি ওযু করি তাহলে আমরা সবাই পিপাসার্ত হয়ে যাব। কাজেই আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে ওযু করতে পারব? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এর পানি পবিত্র এবং এর মৃত বসত্মু হালাল। [আবু দাউদ, হা/৮৩; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪১; তিরমিযী, হা/৬৯; নাসাঈ, হা/৫৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৩২; জামেউস সগীর, হা/১৩০০৪; মিশকাত, হা/৪৭৯।]
﴿أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُه مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ﴾
তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে- যাতে করে তোমরা এবং পর্যটকরা ভোগ করতে পার। (সূরা মায়েদা- ৯৬)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا﴾
তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যেন তোমরা তা হতে তাজা গোশত (অর্থাৎ মাছ) আহার করতে পার। (সূরা নাহল- ১৪)
মাছ মরে গেলেও তা খাওয়া হালাল :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِىَّ - - فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا نَرْكَبُ الْبَحْرَ وَنَحْمِلُ مَعَنَا الْقَلِيْلَ مِنَ الْمَاءِ فَإِنْ تَوَضَّأْنَا بِه عَطِشْنَا أَفَنَتَوَضَّأُ بِمَاءِ الْبَحْرِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : هُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করল যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্রে যাতায়াত করে থাকি। তখন আমরা সীমিত পরিমাণ পানি সাথে করে নিয়ে যাই। সুতরাং এটা দ্বারা যদি ওযু করি তাহলে আমরা সবাই পিপাসার্ত হয়ে যাব। কাজেই আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে ওযু করতে পারব? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এর পানি পবিত্র এবং এর মৃত বসত্মু হালাল। [আবু দাউদ, হা/৮৩; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪১; তিরমিযী, হা/৬৯; নাসাঈ, হা/৫৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৩২; জামেউস সগীর, হা/১৩০০৪; মিশকাত, হা/৪৭৯।]
আল্লাহ তা‘আলা স্থলভাগের যেসব প্রাণী মানবজাতির জন্য হালাল ঘোষণা করেছেন সেগুলো খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে যবেহ করা অথবা শিকার করা। সুতরাং যদি কোন প্রাণী এমনি এমনিই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে প্রাণী খাওয়া হারাম। তবে এ ব্যাপারে দুটি প্রাণীর ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো মাছ এবং টিড্ডি। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : أُحِلَّتْ لَنَا مَيْتَتَانِ : الْحُوْتُ وَالْجَرَادُ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের জন্য দুই প্রকার মৃত প্রাণী হালাল করা হয়েছে। একটি হচ্ছে মাছ এবং অপরটি হচ্ছে টিড্ডি। [ইবনে মাজাহ, হা/৩২১৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮০৩; জামেউস সগীর, হা/২১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১১৮; মিশকাত, হা/৪২৩২।]
পশু জীবিত থাকাবস্থায় তার দেহ থেকে কেটে নেয়া অংশ হারাম :
পশু জীবিত থাকা অবস্থায় তার দেহ থেকে কেটে নেয়া গোশত হারাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ وَاقِدٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ - مَا قُطِعَ مِنَ الْبَهِيْمَةِ وَهِىَ حَيَّةٌ فَهِىَ مَيْتَةٌ
আবু ওয়াকিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পশু জীবিত থাকতে যে অংশ কেটে নেয়া হয়, তা মৃত (পশুর মাংস) এর সমান। [আবু দাউদ, হা/২৮৬০; তিরমিযী, হা/১৪৮০; ইবনে মাজাহ, হা/৩২১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৯৫৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : أُحِلَّتْ لَنَا مَيْتَتَانِ : الْحُوْتُ وَالْجَرَادُ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের জন্য দুই প্রকার মৃত প্রাণী হালাল করা হয়েছে। একটি হচ্ছে মাছ এবং অপরটি হচ্ছে টিড্ডি। [ইবনে মাজাহ, হা/৩২১৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮০৩; জামেউস সগীর, হা/২১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১১৮; মিশকাত, হা/৪২৩২।]
পশু জীবিত থাকাবস্থায় তার দেহ থেকে কেটে নেয়া অংশ হারাম :
পশু জীবিত থাকা অবস্থায় তার দেহ থেকে কেটে নেয়া গোশত হারাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ وَاقِدٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ - مَا قُطِعَ مِنَ الْبَهِيْمَةِ وَهِىَ حَيَّةٌ فَهِىَ مَيْتَةٌ
আবু ওয়াকিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পশু জীবিত থাকতে যে অংশ কেটে নেয়া হয়, তা মৃত (পশুর মাংস) এর সমান। [আবু দাউদ, হা/২৮৬০; তিরমিযী, হা/১৪৮০; ইবনে মাজাহ, হা/৩২১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৯৫৪।]
কোন হালাল প্রাণী কেবল যবেহ করলেই সেটা খাওয়া বৈধ হবে না। বরং এর জন্য শর্ত হচ্ছে, যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ উচ্চারণ করাই যথেষ্ট হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَأْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ﴾
যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তোমরা তার কিছুই খেয়ো না; নিশ্চয় তা পাপকাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
অতএব যেসব প্রাণী আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করা হয় অথবা অন্য কারো সমত্মুষ্টির উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়, সেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। যেমন- বিভিন্ন মাযারে দানকৃত প্রাণী, পীর-দরবেশদের নামে যবেহকৃত প্রাণী, কোন দেবতাকে সমত্মুষ্ট করার জন্য যবেহকৃত প্রাণী ইত্যাদি।
﴿وَلَا تَأْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ﴾
যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তোমরা তার কিছুই খেয়ো না; নিশ্চয় তা পাপকাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
অতএব যেসব প্রাণী আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করা হয় অথবা অন্য কারো সমত্মুষ্টির উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়, সেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। যেমন- বিভিন্ন মাযারে দানকৃত প্রাণী, পীর-দরবেশদের নামে যবেহকৃত প্রাণী, কোন দেবতাকে সমত্মুষ্ট করার জন্য যবেহকৃত প্রাণী ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা যাদের উপর কিতাব নাযিল করেছিলেন তাদেরকে আহলে কিতাব বলা হয়। মূলত ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরাই আহলে কিতাবের অমত্মর্ভুক্ত। তাদের যবেহকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَطَعَامُ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ۪ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْ﴾
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যদ্রব্যও তাদের জন্য হালাল। (সূরা মায়েদা- ৫)
তবে যদি জানা যায় যে, তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেমন ঈসা (আঃ) এর নামে অথবা কোন মূর্তির নামে কোন জমত্মু যবেহ করেছে, তাহলে তা খাওয়া যাবে না। যেহেতু এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
﴿وَطَعَامُ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ۪ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْ﴾
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যদ্রব্যও তাদের জন্য হালাল। (সূরা মায়েদা- ৫)
তবে যদি জানা যায় যে, তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেমন ঈসা (আঃ) এর নামে অথবা কোন মূর্তির নামে কোন জমত্মু যবেহ করেছে, তাহলে তা খাওয়া যাবে না। যেহেতু এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যদি কোন প্রাণী যবেহ করা হয়, তারপর তার পেটে কোন বাচ্চা পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত পশুর যবেহ-ই বাচ্চার যবেহ হিসেবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ ذَكَاةُ الْجَنِيْنِ ذَكَاةُ أُمِّه
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, গর্ভস্থ বাচ্চার যবেহ হলো তার মাকে যবেহ করা। [তিরমিযী, হা/১৪৭৬; আবু দাউদ, হা/২৮৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৩১৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩৬১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৮৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪১১৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১২০৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১০৯; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/২৬৫৩; মিশকাত, হা/৪০৯১।]
তবে মাকে যবেহ করার পর বাচ্চাটি যদি জীবিত বের হয় তাহলে তাকেও যবেহ করতে হবে। [মাজমাউল ফাতাওয়া, ২৬/৩০৭।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ ذَكَاةُ الْجَنِيْنِ ذَكَاةُ أُمِّه
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, গর্ভস্থ বাচ্চার যবেহ হলো তার মাকে যবেহ করা। [তিরমিযী, হা/১৪৭৬; আবু দাউদ, হা/২৮৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৩১৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩৬১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৮৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪১১৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১২০৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১০৯; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/২৬৫৩; মিশকাত, হা/৪০৯১।]
তবে মাকে যবেহ করার পর বাচ্চাটি যদি জীবিত বের হয় তাহলে তাকেও যবেহ করতে হবে। [মাজমাউল ফাতাওয়া, ২৬/৩০৭।]
সাধারণত যেসব প্রাণী আকাশে বা বনে বসবাস করে সেগুলোক অন্যান্য প্রাণীর মতো ধরে যবেহ করা সম্ভব হয় না। আর এ কারণেই সেসব প্রাণীকে শিকার করতে হয়। ইসলাম এসব শিকারকৃত প্রাণীকে খাওয়ার বৈধতা দিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন-
১. শিকারকৃত প্রাণী জীবিত নিয়ে আসা সম্ভব হলে স্বাভাবিকভাবে যবেহ করার মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করতে হবে।
২. কোন প্রাণী দিয়ে শিকার করতে হলে সে প্রাণীকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।
৩. প্রাণী যদি নিজের জন্য শিকার করে তাহলে সেটা খাওয়া যাবে না; কিন্তু যদি মালিকের জন্য শিকার করে আনে তাহলে সেটা খাওয়া যাবে। আর এটা এভাবে বুঝে নিতে হবে যে, যদি শিকারী প্রাণীটি শিকারকৃত প্রাণী থেকে কোন কিছু না খায়, তাহলে সেটা মালিকের জন্য। কিন্তু যদি শিকারী প্রাণীটি শিকারকৃত প্রাণী থেকে কোন কিছু খেয়ে নেয়, তাহলে সেটা তার নিজের জন্য।
৪. শিকারী প্রাণী প্রেরণ করার সময় আল্লাহর নাম নিতে হবে তথা বিসমিল্লাহ বলতে হবে।
৫. শিকার করার জন্য তীর অথবা বন্দুক ব্যবহার করলে তীর অথবা গুলি ছুড়ার সময়ও আল্লাহর নাম নিতে হবে।
৬. শিকারের জন্য এমন অস্ত্র অথবা মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে, যা দ্বারা রক্ত প্রবাহিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَسْأَلُوْنَكَ مَاذَاۤ أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ وَمَا عَلَّمْتُمْ مِّنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِيْنَ تُعَلِّمُوْنَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللهُ فَكُلُوْا مِمَّاۤ أَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ﴾
লোকেরা তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী কী হালাল করা হয়েছে? বলো, সমস্ত ভালো জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এবং শিকারী পশু-পাখি যাদেরকে তোমরা শিকার শিক্ষা দিয়েছ যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, তারা যা তোমাদের জন্য ধরে আনে তা ভক্ষণ করবে এবং এতে আল্লাহর নাম নিবে আর আল্লাহকে ভয় করবে; নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। (সূরা মায়েদা- ৪)
عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِذَا أَرْسَلْتَ كَلْبَكَ وَسَمَّيْتَ فَأَمْسَكَ وَقَتَلَ فَكُلْ وَإِنْ أَكَلَ فَلَا تَأْكُلْ فَإِنَّمَا أَمْسَكَ عَلٰى نَفْسِه وَإِذَا خَالَطَ كِلَابًا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهَا فَأَمْسَكْنَ وَقَتَلْنَ فَلَا تَأْكُلْ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِيْ أَيُّهَا قَتَلَ وَإِنْ رَمَيْتَ الصَّيْدَ فَوَجَدْتَه بَعْدَ يَوْمٍ ، أَوْ يَوْمَيْنِ لَيْسَ بِه إِلَّا أَثَرُ سَهْمِكَ فَكُلْ وَإِنْ وَقَعَ فِي الْمَاءِ فَلَا تَأْكُلْ .
আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন তুমি তোমার কুকুরকে প্রেরণ করবে এবং বিসমিল্লাহ বলবে, অতঃপর তোমার জন্য নিয়ে আসবে, তুমি তা থেকে খাও। আর যদি সে খেয়ে ফেলে তবে খেয়ো না। আর যদি তার সাথে এমন কুকুর মিশে যায়, যার উপর বিসমিল্লাহ বলা হয়নি। অতঃপর তোমার জন্য কোন কিছু হত্যা করে নিয়ে আসে, তবে তুমি তা আহার করো না। কেননা তুমি জানতে পার না যে, সেটা কোন্টি হত্যা করেছে। আর যদি তুমি কোন শিকারের উপর তীর নিক্ষেপ কর, তারপর এক অথবা দুই দিন পর খুঁজে পাও এবং তার মধ্যে তোমার নিক্ষেপিত তীর ব্যতীত অন্য কোন কিছু না পাও, তাহলে তা খাও; তবে যদি তা পানিতে পড়ে যায়, তাহলে তা খেয়ো না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২৮৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৭৯৫।]
১. শিকারকৃত প্রাণী জীবিত নিয়ে আসা সম্ভব হলে স্বাভাবিকভাবে যবেহ করার মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করতে হবে।
২. কোন প্রাণী দিয়ে শিকার করতে হলে সে প্রাণীকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।
৩. প্রাণী যদি নিজের জন্য শিকার করে তাহলে সেটা খাওয়া যাবে না; কিন্তু যদি মালিকের জন্য শিকার করে আনে তাহলে সেটা খাওয়া যাবে। আর এটা এভাবে বুঝে নিতে হবে যে, যদি শিকারী প্রাণীটি শিকারকৃত প্রাণী থেকে কোন কিছু না খায়, তাহলে সেটা মালিকের জন্য। কিন্তু যদি শিকারী প্রাণীটি শিকারকৃত প্রাণী থেকে কোন কিছু খেয়ে নেয়, তাহলে সেটা তার নিজের জন্য।
৪. শিকারী প্রাণী প্রেরণ করার সময় আল্লাহর নাম নিতে হবে তথা বিসমিল্লাহ বলতে হবে।
৫. শিকার করার জন্য তীর অথবা বন্দুক ব্যবহার করলে তীর অথবা গুলি ছুড়ার সময়ও আল্লাহর নাম নিতে হবে।
৬. শিকারের জন্য এমন অস্ত্র অথবা মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে, যা দ্বারা রক্ত প্রবাহিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَسْأَلُوْنَكَ مَاذَاۤ أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ وَمَا عَلَّمْتُمْ مِّنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِيْنَ تُعَلِّمُوْنَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللهُ فَكُلُوْا مِمَّاۤ أَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ﴾
লোকেরা তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী কী হালাল করা হয়েছে? বলো, সমস্ত ভালো জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এবং শিকারী পশু-পাখি যাদেরকে তোমরা শিকার শিক্ষা দিয়েছ যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, তারা যা তোমাদের জন্য ধরে আনে তা ভক্ষণ করবে এবং এতে আল্লাহর নাম নিবে আর আল্লাহকে ভয় করবে; নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। (সূরা মায়েদা- ৪)
عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِذَا أَرْسَلْتَ كَلْبَكَ وَسَمَّيْتَ فَأَمْسَكَ وَقَتَلَ فَكُلْ وَإِنْ أَكَلَ فَلَا تَأْكُلْ فَإِنَّمَا أَمْسَكَ عَلٰى نَفْسِه وَإِذَا خَالَطَ كِلَابًا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهَا فَأَمْسَكْنَ وَقَتَلْنَ فَلَا تَأْكُلْ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِيْ أَيُّهَا قَتَلَ وَإِنْ رَمَيْتَ الصَّيْدَ فَوَجَدْتَه بَعْدَ يَوْمٍ ، أَوْ يَوْمَيْنِ لَيْسَ بِه إِلَّا أَثَرُ سَهْمِكَ فَكُلْ وَإِنْ وَقَعَ فِي الْمَاءِ فَلَا تَأْكُلْ .
আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন তুমি তোমার কুকুরকে প্রেরণ করবে এবং বিসমিল্লাহ বলবে, অতঃপর তোমার জন্য নিয়ে আসবে, তুমি তা থেকে খাও। আর যদি সে খেয়ে ফেলে তবে খেয়ো না। আর যদি তার সাথে এমন কুকুর মিশে যায়, যার উপর বিসমিল্লাহ বলা হয়নি। অতঃপর তোমার জন্য কোন কিছু হত্যা করে নিয়ে আসে, তবে তুমি তা আহার করো না। কেননা তুমি জানতে পার না যে, সেটা কোন্টি হত্যা করেছে। আর যদি তুমি কোন শিকারের উপর তীর নিক্ষেপ কর, তারপর এক অথবা দুই দিন পর খুঁজে পাও এবং তার মধ্যে তোমার নিক্ষেপিত তীর ব্যতীত অন্য কোন কিছু না পাও, তাহলে তা খাও; তবে যদি তা পানিতে পড়ে যায়, তাহলে তা খেয়ো না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২৮৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৭৯৫।]
উট ছাড়া বাকি যে কোন প্রাণী যেমন- গরু, বকরি ও দুম্বা-ভেড়া-খাসী ইত্যাদি জমত্মুকে বাম কাতে শুয়ে ফেলে যবেহ করতে হবে। নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী জমত্মুটির পা-গুলো বেঁধে নেবে। প্রয়োজনে যে যবেহ করবে সে তার এক পা দিয়ে জমত্মুটির পাঁজর চেপে ধরতে পারবেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : ضَحَّى النَّبِيُّ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ، فَرَأَيْتُهٗ وَاضِعًا قَدَمَهٗ عَلٰى صِفَاحِهِمَا يُسَمِّيْ وَيُكَبِّرُ، فَذَبَحَهُمَا بِيَدِه .
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ দু’টি ধূসর বর্ণের দুম্বা (নিজ হাতে) যবেহ করলেন। আমি দেখেছি, তিনি তাঁর এক পা দিয়ে দুম্বার পাঁজর দাবিয়ে রেখে আল্লাহর নাম নিয়ে তাকবীর পাঠ করলেন অর্থাৎ ‘বিসমিল্লা-হি আল্লা-হু আকবার’ বললেন। অতঃপর দুম্বা দু’টি নিজ হাতেই যবেহ করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫২০০; ইবনে মাজাহ, হা/৩১২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯১৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৮৯৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৫২০; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৬২৩৬।]
উটকে দাঁড়ানো অবস্থায় যবেহ করতে হবে :
উটকে দাঁড় করিয়ে যবেহ করতে হবে। তার একটি পা বেঁধে দিতে হবে। তারপর কণ্ঠনালীতে সজোরে আঘাত করতে হবে। অতঃপর সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে উট মাটিতে পড়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّ﴾
আমি তোমাদের জন্য উটকে বানিয়েছি আল্লাহর নিদর্শন, তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। (সূরা হাজ্জ- ৩৬)
তাছাড়া হাদীসেও দাঁড় করিয়ে যবেহ করার কথা বলা হয়েছে। যেমন-
عَنِ زِيَادِ بْنِ جُبَيْرٍ، قَالَ رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَتٰى عَلٰى رَجُلٍ، قَدْ أَنَاخَ بَدَنَتَهٗ يَنْحَرُهَا، قَالَ ابْعَثْهَا قِيَامًا مُقَيَّدَةً، سُنَّةَ مُحَمَّدٍ
যিয়াদ ইবনে জুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রাঃ)-কে এক লোকের নিকট উপস্থিত হতে দেখেছি, যে তার উটকে কুরবানী করার জন্য বসিয়েছিল। তিনি তাকে বললেন, দাঁড় করিয়ে (পা) বেঁধে কুরবানী করো। এটিই মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নত। [সহীহ বুখারী, হা/১৭১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬২৩৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৮৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৯০৩; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১১৫০; মিশকাত, হা/২৬৩৭।]
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : ضَحَّى النَّبِيُّ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ، فَرَأَيْتُهٗ وَاضِعًا قَدَمَهٗ عَلٰى صِفَاحِهِمَا يُسَمِّيْ وَيُكَبِّرُ، فَذَبَحَهُمَا بِيَدِه .
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ দু’টি ধূসর বর্ণের দুম্বা (নিজ হাতে) যবেহ করলেন। আমি দেখেছি, তিনি তাঁর এক পা দিয়ে দুম্বার পাঁজর দাবিয়ে রেখে আল্লাহর নাম নিয়ে তাকবীর পাঠ করলেন অর্থাৎ ‘বিসমিল্লা-হি আল্লা-হু আকবার’ বললেন। অতঃপর দুম্বা দু’টি নিজ হাতেই যবেহ করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫২০০; ইবনে মাজাহ, হা/৩১২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯১৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৮৯৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৫২০; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৬২৩৬।]
উটকে দাঁড়ানো অবস্থায় যবেহ করতে হবে :
উটকে দাঁড় করিয়ে যবেহ করতে হবে। তার একটি পা বেঁধে দিতে হবে। তারপর কণ্ঠনালীতে সজোরে আঘাত করতে হবে। অতঃপর সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে উট মাটিতে পড়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآئِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌۗ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّ﴾
আমি তোমাদের জন্য উটকে বানিয়েছি আল্লাহর নিদর্শন, তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ। সুতরাং তোমরা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। (সূরা হাজ্জ- ৩৬)
তাছাড়া হাদীসেও দাঁড় করিয়ে যবেহ করার কথা বলা হয়েছে। যেমন-
عَنِ زِيَادِ بْنِ جُبَيْرٍ، قَالَ رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَتٰى عَلٰى رَجُلٍ، قَدْ أَنَاخَ بَدَنَتَهٗ يَنْحَرُهَا، قَالَ ابْعَثْهَا قِيَامًا مُقَيَّدَةً، سُنَّةَ مُحَمَّدٍ
যিয়াদ ইবনে জুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রাঃ)-কে এক লোকের নিকট উপস্থিত হতে দেখেছি, যে তার উটকে কুরবানী করার জন্য বসিয়েছিল। তিনি তাকে বললেন, দাঁড় করিয়ে (পা) বেঁধে কুরবানী করো। এটিই মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নত। [সহীহ বুখারী, হা/১৭১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬২৩৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৮৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৯০৩; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১১৫০; মিশকাত, হা/২৬৩৭।]
পশু যবেহ করার পূর্বে যা দ্বারা যবেহ করা হবে সে অস্ত্রটি ভালো করে শান করে নেয়া উচিত- যাতে করে পশুর কষ্ট না হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ ، فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ ، فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهٗ ، وَلْيُرِحْ ذَبِيْحَتَهٗ
শাদ্দাদ বিন আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জিনিসের প্রতি সুন্দর ব্যবহার অপরিহার্য করেছেন। অতএব যখন তোমরা হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে হত্যা করবে এবং যখন তোমরা যবেহ করবে তখন সুন্দরভাবে যবেহ করবে। আর তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার ছুরিটা শান দিয়ে নেয় এবং যবেহকৃত জমত্মুকে আরাম দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩১৭০; জামেউস সগীর, হা/২৬৭৬; আবু দাউদ, হা/২৮১৭; তিরমিযী, হা/১৪০৯; নাসাঈ, হা/৪৪০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৫৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৮৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৪৬৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬৫০২; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৬২২৯;মিশকাত, হা/৪০৭৩।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : أَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ بِحَدِّ الشِّفَارِ وَأَنْ تُوَارٰى عَنِ الْبَهَائِمِ وَقَالَ : إِذَا ذَبَحَ أَحَدُكُمْ فَلْيُجْهِزْ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছুরি শান দেয়ার এবং অপর পশু থেকে আড়াল করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি এও বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যখন যবেহ করবে তখন সে যেন খুব তাড়াতাড়ি যবেহ করে। [ইবনে মাজাহ, হা/৩১৭২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৯৬১৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩১৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৮৬৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৯১।]
অতএব পশুকে শোয়ানোর আগে তার অগোচরে খুব ভালো করে ছুরিটা শান দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যবেহ করতে হবে। আর এ সময় যত কম কষ্ট দিয়ে যবেহ করা যায় তার চেষ্টা করতে হবে।
عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ ، فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ ، فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهٗ ، وَلْيُرِحْ ذَبِيْحَتَهٗ
শাদ্দাদ বিন আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জিনিসের প্রতি সুন্দর ব্যবহার অপরিহার্য করেছেন। অতএব যখন তোমরা হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে হত্যা করবে এবং যখন তোমরা যবেহ করবে তখন সুন্দরভাবে যবেহ করবে। আর তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার ছুরিটা শান দিয়ে নেয় এবং যবেহকৃত জমত্মুকে আরাম দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩১৭০; জামেউস সগীর, হা/২৬৭৬; আবু দাউদ, হা/২৮১৭; তিরমিযী, হা/১৪০৯; নাসাঈ, হা/৪৪০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৫৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৮৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৪৬৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬৫০২; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৬২২৯;মিশকাত, হা/৪০৭৩।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : أَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ بِحَدِّ الشِّفَارِ وَأَنْ تُوَارٰى عَنِ الْبَهَائِمِ وَقَالَ : إِذَا ذَبَحَ أَحَدُكُمْ فَلْيُجْهِزْ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছুরি শান দেয়ার এবং অপর পশু থেকে আড়াল করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি এও বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যখন যবেহ করবে তখন সে যেন খুব তাড়াতাড়ি যবেহ করে। [ইবনে মাজাহ, হা/৩১৭২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৯৬১৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩১৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৮৬৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৯১।]
অতএব পশুকে শোয়ানোর আগে তার অগোচরে খুব ভালো করে ছুরিটা শান দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যবেহ করতে হবে। আর এ সময় যত কম কষ্ট দিয়ে যবেহ করা যায় তার চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ اِنْ كُنْتُمْ بِاٰيَاتِهٖ مُؤْمِنِيْنَ﴾
অতএব যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তা হতে আহার করো, যদি তোমরা তাঁর আয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা আন‘আম- ১১৮)
অপর আয়াতে তিনি বলেন,
﴿وَلَا تَاْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ﴾
আর যাতে আল্লাহর নাম নেয়া না হয়, তোমরা তা হতে আহার করো না। কেননা নিশ্চয় এটা ফাসেকী কাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
উপরোক্ত আয়াত দুটি দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, যে পশু আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে যবেহ করা হয়, তা হালাল নয়। আর এটিই যে কোন ধরনের হালাল প্রাণী যবেহ করার মূলনীতি। পশু যবেহ করার সময় নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করা আবশ্যক :
بِاسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি আল্লাহর নামে (যবেহ করতে) শুরু করছি এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫২০২।]
﴿فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ اِنْ كُنْتُمْ بِاٰيَاتِهٖ مُؤْمِنِيْنَ﴾
অতএব যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তা হতে আহার করো, যদি তোমরা তাঁর আয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। (সূরা আন‘আম- ১১৮)
অপর আয়াতে তিনি বলেন,
﴿وَلَا تَاْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَاِنَّهٗ لَفِسْقٌ﴾
আর যাতে আল্লাহর নাম নেয়া না হয়, তোমরা তা হতে আহার করো না। কেননা নিশ্চয় এটা ফাসেকী কাজ। (সূরা আন‘আম- ১২১)
উপরোক্ত আয়াত দুটি দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, যে পশু আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে যবেহ করা হয়, তা হালাল নয়। আর এটিই যে কোন ধরনের হালাল প্রাণী যবেহ করার মূলনীতি। পশু যবেহ করার সময় নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করা আবশ্যক :
بِاسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ : আমি আল্লাহর নামে (যবেহ করতে) শুরু করছি এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫২০২।]
প্রত্যেক পশুর গলায় ৪টি নালী আছে। তা হলো, ১. শ্বাসপ্রশ্বাস নালী, ২. পানাহার নালী, যা হুলকুমের নিচে থাকে। ৩. ও ৪. গর্দানের পাতের মধ্যে দুটি শিরা, এ দুটিতে রক্ত চলাচল করে। এ ৪টি রগ কাটলেই যবেহ হয়ে যাবে।
কিন্তু প্রাণী যদি যবেহের সময় দড়ি ছিঁড়ে পালায় এবং যবেহকারীর আয়ত্তের বাইরে চলে যায়, তাহলে বর্শা, তীর, ছোরা ইত্যাদি যে কোন অস্ত্র দ্বারা আল্লাহর নাম নিয়ে আঘাত করার মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করলেই যথেষ্ট হবে।
কিন্তু প্রাণী যদি যবেহের সময় দড়ি ছিঁড়ে পালায় এবং যবেহকারীর আয়ত্তের বাইরে চলে যায়, তাহলে বর্শা, তীর, ছোরা ইত্যাদি যে কোন অস্ত্র দ্বারা আল্লাহর নাম নিয়ে আঘাত করার মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করলেই যথেষ্ট হবে।
মাথা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। কিন্তু যদি কখনো অনিচ্ছা সত্ত্বেও এমনটি ঘটে যায়, তাহলে তার গোশত খাওয়া যাবে।
হাঁস-মুরগী যবেহ করার সময় গলায় ছুরি চালানোর পর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়া ঠিক নয়। কেননা প্রাণীকে অতিরিক্ত কষ্ট দেয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রাণীকে আরাম দিয়ে যবেহ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩১৭০; জামেউস সগীর, হা/২৬৭৬; আবু দাউদ, হা/২৮১৭; তিরমিযী, হা/১৪০৯; নাসাঈ, হা/৪৪০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৫৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৮৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৪৬৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬৫০২; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৬২২৯; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৬৯৭০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৮৬০৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৮৯; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/২৪৭৬; মিশকাত, হা/৪০৭৩।]
হাঁস-মুরগী যবেহ করার সময় গলায় ছুরি চালানোর পর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়া ঠিক নয়। কেননা প্রাণীকে অতিরিক্ত কষ্ট দেয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রাণীকে আরাম দিয়ে যবেহ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫১৬৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩১৭০; জামেউস সগীর, হা/২৬৭৬; আবু দাউদ, হা/২৮১৭; তিরমিযী, হা/১৪০৯; নাসাঈ, হা/৪৪০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৫৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৮৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৪৬৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৬৫০২; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৬২২৯; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৬৯৭০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৮৬০৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৮৯; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/২৪৭৬; মিশকাত, হা/৪০৭৩।]
উপার্জন শব্দটির অর্থ হচ্ছে, আয়, রোযগার, কামাই, সংগ্রহ, অর্জন ইত্যাদি। আরবিতে বলা হয় اَلْكَسْبُ এবং ইংরেজীতে বলা হয় Income। হালাল উপার্জন বলতে ঐসব উপার্জনকে বুঝানো হয়, যা শরীয়ত কর্তৃক ঘোষিত বৈধ পন্থায় অর্জিত হয়। আর হারাম উপার্জন বলতে ঐসব উপার্জনকে বুঝানো হয়, যা শরীয়ত কর্তৃক ঘোষিত অবৈধ পন্থায় অর্জিত হয়।
ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। যারা হালাল উপার্জন না করে বিভিন্ন হারাম পদ্ধতিতে উপার্জন করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রসত্ম হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَسْتَبْطِئُوا الرِّزْقَ فَإِنَّه لَنْ يَمُوْتَ الْعَبْدُ حَتّٰى يَبْلُغَه اٰخِرُ رِزْقٍ هُوَ لَه ، فَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা রিযিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করো না। কেননা পৃথিবীতে কোন বান্দাই তার ভাগ্যে নির্ধারিত সর্বশেষ রিযিক অর্জন না করা পর্যমত্ম মৃত্যুবরণ করবে না। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩২৩৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬০৭।]
আল্লাহ তা‘আলা সকলের রিযিক বণ্টন করে দিয়েছেন :
﴿نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا﴾
আমিই তাদের মধ্যে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি।
(সূরা যুখরুফ- ৩২)
যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা সকলের রিযিক বণ্টন করে দিয়েছেন। সুতরাং সকলেই কোন না কোনভাবে সে রিযিক প্রাপ্ত হবেই। কাজেই এ ক্ষেত্রে হারাম পন্থা অবলম্বন করা মোটেও ঠিক হবে না। বরং সর্বদা স্বাভাবিকতা অবলম্বন করে আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে হালাল পন্থায় তা উপার্জন করতে হবে।
হালাল বসত্মু হতে খাওয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
﴿فَكُلُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلَالًا طَيِّبًا۪ وَاشْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ﴾
আল্লাহ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছেন তোমরা তা হতে আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা নাহল- ১১৪)
পূর্ববর্তী উম্মতের উপরও এই নির্দেশ ছিল :
﴿يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ قَدْ اَنْجَيْنَاكُمْ مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَوَاعَدْنَاكُمْ جَانِبَ الطُّوْرِ الْاَيْمَنَ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوٰى ‐ كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلَا تَطْغَوْا فِيْهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِيْۚ وَمَنْ يَّحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِيْ فَقَدْ هَوٰى﴾
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে শত্রু হতে উদ্ধার করেছিলাম এবং তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আর তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করেছিলাম; (অতঃপর বলেছিলাম) তোমাদেরকে রিযিক হিসেবে যা দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ আহার করো এবং এ বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করো না, নতুবা তোমাদের ওপর আমার ক্রোধ অবধারিত হয়ে যাবে। আর যার ওপর আমার ক্রোধ অবধারিত হয়, সে ধ্বংস হয়ে যায়। (সূরা ত্বা-হা- ৮০, ৮১)
হালাল উপার্জনের জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
﴿فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ﴾
আর তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো।
(সূরা জুমু‘আ- ১০)
হালাল উপার্জনের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ :
عَنْ جَابِرِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : ... ، فَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ : أَخَذِ الْحَلَالِ وَتَرَكِ الْحَرَامِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। হালাল উপায় গ্রহণ করো এবং হারাম উপায় বর্জন করো। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩২৩৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬০৭।]
হালাল ভক্ষণের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ :
عَنْ طَرِيْفٍ أَبِيْ تَمِيْمَةَ .... فَقَالَ إِنَّ أَوَّلَ مَا يُنْتِنُ مِنَ الْإِنْسَانِ بَطْنُه فَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يَأْكُلَ إِلَّا طَيِّبًا فَلْيَفْعَلْ وَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يُحَالَ بَيْنَه وَبَيْنَ الْجَنَّةِ بِمِلْءِ كَفِّه مِنْ دَمٍ أَهْرَاقَه فَلْيَفْعَلْ
তারীফ আবু তামীমা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, (কবরে) সর্বপ্রথম মানুষের পেট পঁচে বা গলে যাবে। অতএব যে ব্যক্তি পবিত্র বস্তু আহার করতে সক্ষম, সে যেন তা-ই আহার করে। আর যে ব্যক্তি তার ও জান্নাতের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রক্তপাত থেকে (মানুষ হত্যা করা থেকে) মুক্ত থাকতে সক্ষম, সে যেন তা-ই করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৫২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৩৬৯; মিশকাত, হা/৫৩২৭।]
কিয়ামতের দিন প্রত্যেকের উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে :
عَنْ أَبِىْ بَرْزَةَ الْأَسْلَمِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : لَا تَزُوْلُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتّٰى يُسْأَلَ عَنْ عُمْرِه فِيْمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِه فِيْمَا فَعَلَ وَعَنْ مَالِه مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَه وَفِيْمَا أَنْفَقَه وَعَنْ جِسْمِه فِيْمَا أَبْلَاهُ
আবু বারযা আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন কোন বান্দার পদযুগল ততক্ষণ পর্যমত্ম সরবে না, যতক্ষণ না তাকে তার আয়ু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, সে তার আয়ু কীভাবে অতিবাহিত করেছে। আর তার ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে তাতে কতটুকু আমল করেছে। অতঃপর তাকে তার ধনসম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে তা কোন্ উপায়ে উপার্জন করেছেন এবং কোন্ পথে ব্যয় করেছে। আর তার দেহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে তা কোন্ কাজে নষ্ট করেছে। [তিরমিযী, হা/২৪১৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৪৩৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬৫৩৩; সুনানে দারেমী, হা/৫৩৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১২৬।]
হালাল উপার্জন ইবাদাত কবুলের পূর্বশর্ত :
মানুষ উপার্জনের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। অতঃপর সে ঐ উপার্জিত সম্পদ থেকেই খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং কেউ যদি হালাল পন্থায় উপার্জন করে তাহলে তার শরীর ও হৃদয় সব কিছু পবিত্র থাকে। কিন্তু কেউ যদি হারাম পন্থায় উপার্জন করে অথবা হারাম বসত্মু ভক্ষণ করে, তাহলে সে আল্লাহর একজন অবাধ্য বান্দায় পরিণত হয়। এমতাবস্থায় তওবা করা ছাড়া তার কোন ইবাদাত আল্লাহ তা‘আলা কবুল করবেন না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ ﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ﴾ وَقَالَ ﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ﴾ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হে লোক সকল! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র বসত্মু ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলদেরকে যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে আহার করো এবং সৎকর্ম করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি অবহিত’’- (সূরা মু’মিনূন- ৫১)। তিনি আরো বলেছেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের যেসব পবিত্র জিনিস রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা থেকে আহার করো’’- (সূরা বাক্বারা- ১৭২)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধুসরিত মলিন কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু‘আ তিনি কী করে কবুল করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৩৯৩; তিরমিযী, হা/২৯৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৬২১; সুনানে দারেমী, হা/২৭১৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০২৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/১১১৮; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ, হা/১৯৯; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/২০০৯; জামেউস সগীর, হা/৫৬১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭১৭; মিশকাত, হা/২৭৬০।]
অতএব যারা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, সাদাকা ইত্যাদি আমলসমূহ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে করে এবং এসব কবুল হওয়ার আশা পোষণ করে, তাদের উচিত হলো হালাল উপার্জনের দিকে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করা। নতুবা আখিরাতে পাহাড়সম ভালো আমল নিয়ে আসলেও হালাল উপার্জনের অনুপস্থিতিতে সেগুলো একেবারেই ব্যর্থ হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করে থাকেন।
হালাল উপার্জনের উপায় হচ্ছে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত :
সামান্য হলেও হালাল উপার্জন করার সুযোগ বা যোগ্যতা লাভ করা আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম নিয়ামত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : أَرْبَعٌ إِذَا كَانَ فِيْكَ لَا يَضُرُّكُ مَا فَاتِكَ مِنَ الدُّنْيَا : حَفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيْثٍ وَحُسْنُ خَلِيْقَةٍ وَعِفَّةُ طُعْمَةٍ .
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, চারটি জিনিস যখন তোমার মধ্যে পাওয়া যাবে তখন দুনিয়ার অন্য সবকিছু না হলেও কিছু যায় আসে না। তা হলো- আমানতের সংরক্ষণ, সত্য কথা বলা, সুন্দর চরিত্র, হালাল উপার্জনে খাদ্য গ্রহণ করা। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৮৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭১৮; মিশকাত, হা/৫২২২।]
হালাল উপার্জন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত :
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটি শুধুমাত্র নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামে রয়েছে জীবন ধারণের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে নির্দেশনা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হালাল উপায়ে উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণও একটি ইবাদাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوْهُ وَاشْكُرُوْا لَهٗۤ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ﴾
অতএব তোমরা আল্লাহর কাছে রিযিক অনুসন্ধান করো, তার ইবাদাত করো এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তিত করা হবে। (সূরা আনকাবূত- ১৭)
হালাল উপার্জন জান্নাত লাভের উপায় :
হালাল পন্থায় উপার্জনকারী পরকালে জান্নাত লাভ করবে। আর অবৈধ পন্থায় উপার্জনকারী ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে সম্পদের পাহাড় গড়লেও পরকালীন জীবনে তার জন্য ভয়াবহ আযাব ও শাসিত্ম অপেক্ষা করছে।
হালাল উপার্জনের মধ্যে বরকত হয় :
উপার্জনে বরকত লাভ করতে হলে শুধুমাত্র হালাল পন্থায় উপার্জন করতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কেবল বৈধ উপার্জনেই বরকত দিয়ে থাকেন এবং যাবতীয় অবৈধ উপার্জনে বরকত নষ্ট করে দেন। আর তিনিই তো একমাত্র বরকত দানের মালিক। হাদীসে এসেছে,
1472 عَنْ حَكِيْمِ بْنِ حِزَامٍ قَالَ : سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ فَأَعْطَانِيْ ثُمَّ سَأَلْتُه فَأَعْطَانِيْ ثُمَّ سَأَلْتُه فَأَعْطَانِيْ ثُمَّ قَالَ : يَا حَكِيْمُ إِنَّ هٰذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ فَمَنْ أَخَذَه بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُوْرِكَ لَه فِيْهِ وَمَنْ أَخَذَه بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَه فِيْهِ وَكَانَ كَالَّذِيْ يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلٰى قَالَ حَكِيْمٌ : فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَرْزَأُ أَحَدًا بَعْدَكَ شَيْئًا حَتّٰى أُفَارِقَ الدُّنْيَا فَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ يَدْعُوْ حَكِيْمًا إِلَى الْعَطَاءِ فَيَأْبٰى أَنْ يَقْبَلَه مِنْهُ ثُمَّ إِنَّ عُمَرَ دَعَاهُ لِيُعْطِيَه فَأَبٰى أَنْ يَقْبَلَ مِنْهُ شَيْئًا فَقَالَ ( عُمَرُ ) : إِنِّيْ أُشْهِدُكُمْ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ عَلٰى حَكِيْمٍ أَنِّيْ أَعْرِضُ عَلَيْهِ حَقَّه مِنْ هٰذَا الْفَىْءِ فَيَأْبٰى أَنْ يَأْخُذَه فَلَمْ يَرْزَأْ حَكِيْمٌ أَحَدًا مِنَ النَّاسِ بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ حَتّٰى تُوُفِّيَ
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কিছু চাইলাম, ফলে তিনি আমাকে কিছু দান করলেন। আমি আবার তাঁর কাছে কিছু চাইলাম, ফলে তিনি আবার আমাকে দিলেন। আমি আবারও তাঁর কাছে কিছু চাইলাম, তিনি (এবারও) আমাকে কিছু দান করলেন এবং বললেন- হে হাকীম! এ মাল আকর্ষণীয় ও সুমিষ্ট। যে এটা নির্লোভে নেয় সে এতে বরকত লাভ করে। কিন্তু যে এটা লোভাতুর মনে গ্রহণ করে সে এতে বরকত পায় না এবং সে ঐ লোকের মতো যে আহার করতে থাকে অথচ তৃপ্ত হয় না। উপরের (দাতার) হাত নিচের (ভিক্ষুকের) হাতের চেয়ে উত্তম। হাকীম (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ প্রভুর শপথ যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন! আমি এ পৃথিবী হতে বিদায় হওয়া পর্যন্ত আপনার পরে আর কারো কাছ থেকে কোন কিছু নেব না। পরবর্তীকালে আবু বকর (রাঃ) হাকীম (রাঃ)-কে দান নেয়ার জন্য ডাকতেন। কিন্তু তিনি তাঁর নিকট হতে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর উমর (রাঃ)-ও তাকে দান গ্রহণ করার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে মুসলিম সমাজ! আমি হাকীমের ব্যাপারে তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, এ গনীমতের মাল হতে তার প্রাপ্য আমি তাকে দান করছি, কিন্তু সে তা নিতে অস্বীকার করছে। এভাবে হাকীম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পর মৃত্যু পর্যমত্ম কারো নিকট হতে কোন কিছু নেননি। [সহীহ বুখারী, হা/১৪২৭; সহীহ মুসলিম, হা/২৪৩৪; নাসাঈ, হা/২৫৩১।]
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَسْتَبْطِئُوا الرِّزْقَ فَإِنَّه لَنْ يَمُوْتَ الْعَبْدُ حَتّٰى يَبْلُغَه اٰخِرُ رِزْقٍ هُوَ لَه ، فَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা রিযিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করো না। কেননা পৃথিবীতে কোন বান্দাই তার ভাগ্যে নির্ধারিত সর্বশেষ রিযিক অর্জন না করা পর্যমত্ম মৃত্যুবরণ করবে না। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩২৩৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬০৭।]
আল্লাহ তা‘আলা সকলের রিযিক বণ্টন করে দিয়েছেন :
﴿نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا﴾
আমিই তাদের মধ্যে তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি।
(সূরা যুখরুফ- ৩২)
যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা সকলের রিযিক বণ্টন করে দিয়েছেন। সুতরাং সকলেই কোন না কোনভাবে সে রিযিক প্রাপ্ত হবেই। কাজেই এ ক্ষেত্রে হারাম পন্থা অবলম্বন করা মোটেও ঠিক হবে না। বরং সর্বদা স্বাভাবিকতা অবলম্বন করে আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে হালাল পন্থায় তা উপার্জন করতে হবে।
হালাল বসত্মু হতে খাওয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
﴿فَكُلُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلَالًا طَيِّبًا۪ وَاشْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ﴾
আল্লাহ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা কিছু রিযিক হিসেবে দান করেছেন তোমরা তা হতে আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা নাহল- ১১৪)
পূর্ববর্তী উম্মতের উপরও এই নির্দেশ ছিল :
﴿يَا بَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ قَدْ اَنْجَيْنَاكُمْ مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَوَاعَدْنَاكُمْ جَانِبَ الطُّوْرِ الْاَيْمَنَ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوٰى ‐ كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلَا تَطْغَوْا فِيْهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِيْۚ وَمَنْ يَّحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِيْ فَقَدْ هَوٰى﴾
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে শত্রু হতে উদ্ধার করেছিলাম এবং তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আর তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করেছিলাম; (অতঃপর বলেছিলাম) তোমাদেরকে রিযিক হিসেবে যা দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ আহার করো এবং এ বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করো না, নতুবা তোমাদের ওপর আমার ক্রোধ অবধারিত হয়ে যাবে। আর যার ওপর আমার ক্রোধ অবধারিত হয়, সে ধ্বংস হয়ে যায়। (সূরা ত্বা-হা- ৮০, ৮১)
হালাল উপার্জনের জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
﴿فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ﴾
আর তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো।
(সূরা জুমু‘আ- ১০)
হালাল উপার্জনের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ :
عَنْ جَابِرِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : ... ، فَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ : أَخَذِ الْحَلَالِ وَتَرَكِ الْحَرَامِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। হালাল উপায় গ্রহণ করো এবং হারাম উপায় বর্জন করো। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩২৩৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬০৭।]
হালাল ভক্ষণের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ :
عَنْ طَرِيْفٍ أَبِيْ تَمِيْمَةَ .... فَقَالَ إِنَّ أَوَّلَ مَا يُنْتِنُ مِنَ الْإِنْسَانِ بَطْنُه فَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يَأْكُلَ إِلَّا طَيِّبًا فَلْيَفْعَلْ وَمَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يُحَالَ بَيْنَه وَبَيْنَ الْجَنَّةِ بِمِلْءِ كَفِّه مِنْ دَمٍ أَهْرَاقَه فَلْيَفْعَلْ
তারীফ আবু তামীমা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, (কবরে) সর্বপ্রথম মানুষের পেট পঁচে বা গলে যাবে। অতএব যে ব্যক্তি পবিত্র বস্তু আহার করতে সক্ষম, সে যেন তা-ই আহার করে। আর যে ব্যক্তি তার ও জান্নাতের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রক্তপাত থেকে (মানুষ হত্যা করা থেকে) মুক্ত থাকতে সক্ষম, সে যেন তা-ই করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৫২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৩৬৯; মিশকাত, হা/৫৩২৭।]
কিয়ামতের দিন প্রত্যেকের উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে :
عَنْ أَبِىْ بَرْزَةَ الْأَسْلَمِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : لَا تَزُوْلُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتّٰى يُسْأَلَ عَنْ عُمْرِه فِيْمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِه فِيْمَا فَعَلَ وَعَنْ مَالِه مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَه وَفِيْمَا أَنْفَقَه وَعَنْ جِسْمِه فِيْمَا أَبْلَاهُ
আবু বারযা আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন কোন বান্দার পদযুগল ততক্ষণ পর্যমত্ম সরবে না, যতক্ষণ না তাকে তার আয়ু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, সে তার আয়ু কীভাবে অতিবাহিত করেছে। আর তার ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে তাতে কতটুকু আমল করেছে। অতঃপর তাকে তার ধনসম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে তা কোন্ উপায়ে উপার্জন করেছেন এবং কোন্ পথে ব্যয় করেছে। আর তার দেহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে তা কোন্ কাজে নষ্ট করেছে। [তিরমিযী, হা/২৪১৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৪৩৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬৫৩৩; সুনানে দারেমী, হা/৫৩৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১২৬।]
হালাল উপার্জন ইবাদাত কবুলের পূর্বশর্ত :
মানুষ উপার্জনের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। অতঃপর সে ঐ উপার্জিত সম্পদ থেকেই খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং কেউ যদি হালাল পন্থায় উপার্জন করে তাহলে তার শরীর ও হৃদয় সব কিছু পবিত্র থাকে। কিন্তু কেউ যদি হারাম পন্থায় উপার্জন করে অথবা হারাম বসত্মু ভক্ষণ করে, তাহলে সে আল্লাহর একজন অবাধ্য বান্দায় পরিণত হয়। এমতাবস্থায় তওবা করা ছাড়া তার কোন ইবাদাত আল্লাহ তা‘আলা কবুল করবেন না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ ﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ﴾ وَقَالَ ﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ﴾ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হে লোক সকল! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র বসত্মু ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলদেরকে যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে আহার করো এবং সৎকর্ম করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি অবহিত’’- (সূরা মু’মিনূন- ৫১)। তিনি আরো বলেছেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের যেসব পবিত্র জিনিস রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা থেকে আহার করো’’- (সূরা বাক্বারা- ১৭২)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধুসরিত মলিন কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু‘আ তিনি কী করে কবুল করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৩৯৩; তিরমিযী, হা/২৯৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৬২১; সুনানে দারেমী, হা/২৭১৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০২৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/১১১৮; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ, হা/১৯৯; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/২০০৯; জামেউস সগীর, হা/৫৬১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭১৭; মিশকাত, হা/২৭৬০।]
অতএব যারা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, সাদাকা ইত্যাদি আমলসমূহ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে করে এবং এসব কবুল হওয়ার আশা পোষণ করে, তাদের উচিত হলো হালাল উপার্জনের দিকে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করা। নতুবা আখিরাতে পাহাড়সম ভালো আমল নিয়ে আসলেও হালাল উপার্জনের অনুপস্থিতিতে সেগুলো একেবারেই ব্যর্থ হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করে থাকেন।
হালাল উপার্জনের উপায় হচ্ছে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত :
সামান্য হলেও হালাল উপার্জন করার সুযোগ বা যোগ্যতা লাভ করা আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম নিয়ামত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : أَرْبَعٌ إِذَا كَانَ فِيْكَ لَا يَضُرُّكُ مَا فَاتِكَ مِنَ الدُّنْيَا : حَفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيْثٍ وَحُسْنُ خَلِيْقَةٍ وَعِفَّةُ طُعْمَةٍ .
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, চারটি জিনিস যখন তোমার মধ্যে পাওয়া যাবে তখন দুনিয়ার অন্য সবকিছু না হলেও কিছু যায় আসে না। তা হলো- আমানতের সংরক্ষণ, সত্য কথা বলা, সুন্দর চরিত্র, হালাল উপার্জনে খাদ্য গ্রহণ করা। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৮৭৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭১৮; মিশকাত, হা/৫২২২।]
হালাল উপার্জন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত :
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটি শুধুমাত্র নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামে রয়েছে জীবন ধারণের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে নির্দেশনা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হালাল উপায়ে উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণও একটি ইবাদাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوْهُ وَاشْكُرُوْا لَهٗۤ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ﴾
অতএব তোমরা আল্লাহর কাছে রিযিক অনুসন্ধান করো, তার ইবাদাত করো এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তিত করা হবে। (সূরা আনকাবূত- ১৭)
হালাল উপার্জন জান্নাত লাভের উপায় :
হালাল পন্থায় উপার্জনকারী পরকালে জান্নাত লাভ করবে। আর অবৈধ পন্থায় উপার্জনকারী ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে সম্পদের পাহাড় গড়লেও পরকালীন জীবনে তার জন্য ভয়াবহ আযাব ও শাসিত্ম অপেক্ষা করছে।
হালাল উপার্জনের মধ্যে বরকত হয় :
উপার্জনে বরকত লাভ করতে হলে শুধুমাত্র হালাল পন্থায় উপার্জন করতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কেবল বৈধ উপার্জনেই বরকত দিয়ে থাকেন এবং যাবতীয় অবৈধ উপার্জনে বরকত নষ্ট করে দেন। আর তিনিই তো একমাত্র বরকত দানের মালিক। হাদীসে এসেছে,
1472 عَنْ حَكِيْمِ بْنِ حِزَامٍ قَالَ : سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ فَأَعْطَانِيْ ثُمَّ سَأَلْتُه فَأَعْطَانِيْ ثُمَّ سَأَلْتُه فَأَعْطَانِيْ ثُمَّ قَالَ : يَا حَكِيْمُ إِنَّ هٰذَا الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ فَمَنْ أَخَذَه بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُوْرِكَ لَه فِيْهِ وَمَنْ أَخَذَه بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَه فِيْهِ وَكَانَ كَالَّذِيْ يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلٰى قَالَ حَكِيْمٌ : فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَرْزَأُ أَحَدًا بَعْدَكَ شَيْئًا حَتّٰى أُفَارِقَ الدُّنْيَا فَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ يَدْعُوْ حَكِيْمًا إِلَى الْعَطَاءِ فَيَأْبٰى أَنْ يَقْبَلَه مِنْهُ ثُمَّ إِنَّ عُمَرَ دَعَاهُ لِيُعْطِيَه فَأَبٰى أَنْ يَقْبَلَ مِنْهُ شَيْئًا فَقَالَ ( عُمَرُ ) : إِنِّيْ أُشْهِدُكُمْ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ عَلٰى حَكِيْمٍ أَنِّيْ أَعْرِضُ عَلَيْهِ حَقَّه مِنْ هٰذَا الْفَىْءِ فَيَأْبٰى أَنْ يَأْخُذَه فَلَمْ يَرْزَأْ حَكِيْمٌ أَحَدًا مِنَ النَّاسِ بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ حَتّٰى تُوُفِّيَ
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কিছু চাইলাম, ফলে তিনি আমাকে কিছু দান করলেন। আমি আবার তাঁর কাছে কিছু চাইলাম, ফলে তিনি আবার আমাকে দিলেন। আমি আবারও তাঁর কাছে কিছু চাইলাম, তিনি (এবারও) আমাকে কিছু দান করলেন এবং বললেন- হে হাকীম! এ মাল আকর্ষণীয় ও সুমিষ্ট। যে এটা নির্লোভে নেয় সে এতে বরকত লাভ করে। কিন্তু যে এটা লোভাতুর মনে গ্রহণ করে সে এতে বরকত পায় না এবং সে ঐ লোকের মতো যে আহার করতে থাকে অথচ তৃপ্ত হয় না। উপরের (দাতার) হাত নিচের (ভিক্ষুকের) হাতের চেয়ে উত্তম। হাকীম (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ প্রভুর শপথ যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন! আমি এ পৃথিবী হতে বিদায় হওয়া পর্যন্ত আপনার পরে আর কারো কাছ থেকে কোন কিছু নেব না। পরবর্তীকালে আবু বকর (রাঃ) হাকীম (রাঃ)-কে দান নেয়ার জন্য ডাকতেন। কিন্তু তিনি তাঁর নিকট হতে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর উমর (রাঃ)-ও তাকে দান গ্রহণ করার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে মুসলিম সমাজ! আমি হাকীমের ব্যাপারে তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, এ গনীমতের মাল হতে তার প্রাপ্য আমি তাকে দান করছি, কিন্তু সে তা নিতে অস্বীকার করছে। এভাবে হাকীম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পর মৃত্যু পর্যমত্ম কারো নিকট হতে কোন কিছু নেননি। [সহীহ বুখারী, হা/১৪২৭; সহীহ মুসলিম, হা/২৪৩৪; নাসাঈ, হা/২৫৩১।]
হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর নির্দেশ :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টিতে ব্যবসা করা বৈধ। আর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
হারাম পন্থায় অর্জিত অনেক সম্পদের চেয়ে হালাল পন্থায় অর্জিত সামান্য সম্পদও উত্তম :
﴿قُلْ لَّا يَسْتَوِى الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ اَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِۚ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
বলো, মন্দ ও ভালো সমান নয়, যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ! আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ১০০)
অত্র আয়াতে ভালো-মন্দ তথা হালাল-হারামকে মর্যাদার মানদন্ডে পরিমাপ করে দেখানো হয়েছে। এখানে এ কথা অনুধাবন করানো হয়েছে যে, হারাম জিনিস বা হারাম পন্থায় অর্জিত জিনিস যত বেশি চাকচিক্যময় ও আকর্ষণীয় হোক না কেন, সেটা বিন্দু পরিমাণ হালাল জিনিসের তুলনায় ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া আবর্জনার মতো। কেননা এ চাকচিক্য কেবল পার্থিব জীবনের মধ্যে সীমিত; আর আখিরাতে এর কোন স্থান নেই। কোন ব্যক্তি যদি দুনিয়াতে এক টাকাও হালাল পন্থায় উপার্জন করে, তাহলে সেটাই আখিরাতে তার জন্য কাজে লাগবে; আর যদি কোন ব্যক্তি হারাম পন্থায় উপার্জন করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে, তাহলেও কিয়ামতের দিন তার সমসত্ম সম্পদ ধুলার মতো উড়ে গিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাবে। এর সামান্য পরিমাণ অংশও তার কোন কাজে আসবে না।
হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই না করা কাফেরদের কাজ :
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَتَمَتَّعُوْنَ وَيَأْكُلُوْنَ كَمَا تَأْكُلُ الْاَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ﴾
আর যারা কুফরী করেছে তারা দুনিয়ায় কিছু দিনের স্বাদ ভোগ করছে ও চতুষ্পদ জন্তুদের মতো খাওয়া-দাওয়া করছে। তবে জাহান্নামই হলো তাদের ঠিকানা। (সূরা মুহাম্মাদ- ১২)
আবু বকর (রাঃ) এর সতর্কতা :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ لِأَبِيْ بَكْرٍ غُلَامٌ يُخْرِجُ لَهُ الْخَرَاجَ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ يَأْكُلُ مِنْ خَرَاجِه فَجَاءَ يَوْمًا بِشَيْءٍ فَأَكَلَ مِنْهُ أَبُوْ بَكْرٍ فَقَالَ لَهُ الْغُلَامُ تَدْرِيْ مَا هٰذَا فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ وَمَا هُوَ قَالَ : كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لِإِنْسَانٍ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الْكِهَانَةَ إِلَّا أَنِّيْ خَدَعْتُهٗ فَلَقِيَنِيْ فَأَعْطَانِيْ بِذٰلِكَ فَهٰذَا الَّذِيْ أَكَلْتَ مِنْهُ فَأَدْخَلَ أَبُوْ بَكْرٍ يَدَهٗ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِيْ بَطْنِه
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) এর একটা গোলাম ছিল, যে তাঁকে কিছু কর প্রদান করত। আর আবু বকর (রাঃ) তার কর হতে খাবার গ্রহণ করতেন। একদিন গোলামটি কিছু জিনিস নিয়ে এলো; অতঃপর আবু বকর (রাঃ) তা থেকে কিছু আহার করলেন। তখন গোলামটি তাঁকে বলল, আপনি কি জানেন এটা কী (যা আপনি খেলেন)? আবু বকর (রাঃ) বললেন, সেটা কী ছিল? গোলামটি বলল, জাহেলী যুগে আমি এক লোকের ভাগ্য গণনা করেছিলাম। অথচ আমি ভালোভাবে ভাগ্য গণনা করতে জানতাম না; বরং আমি তাকে প্রতারিত করেছিলাম মাত্র। আজ সে লোকটি আমার সাথে দেখা করে আমাকে ঐ কাজের মূল্য প্রদান করল। আর এটাই হচ্ছে সে জিনিস, যা থেকে আপনি খেলেন। অতঃপর আবু বকর (রাঃ) নিজের হাত মুখে প্রবেশ করে বমি করে পেটের সব কিছু বের করে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮৪২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৮৬০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৩৮; মিশকাত, হা/২৭৮৬।]
আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার শামিল :
কোন্টি হালাল এবং কোন্টি হারাম আল্লাহ তা‘আলা তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি কেবল হালাল পথে উপার্জন করতে, হালাল বসত্মু ভক্ষণ করতে এবং হারাম বিষয়সমূহ থেকে দূরে থাকতে আদেশ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি উপার্জনের ক্ষেত্রে এবং আহার করার ক্ষেত্রে হারাম পথ বেছে নিল, সে যেন আল্লাহর নির্দেশকেই অমান্য করল এবং নিজেকে শাসিত্মর যোগ্য করে নিল। এজন্য অপবিত্র ও হারাম বস্তু খাওয়ার জন্য শয়তান প্ররোচনা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًاؗ وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوُّ مُّبِيْنٌ﴾
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৮)
শেষ যমানায় মানুষ হারামের দিকে ঝুঁকে পড়বে :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يُبَالِي الْمَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلَالِ أَمْ مِنَ الْحَرَامِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, মানুষের সামনে এমন একটি যুগ উপস্থিত হবে, যখন কোন লোক যা থেকে (সম্পদ) আয় করছে সেটা হালাল বা হারাম কি না এর পরোয়া করবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৭২৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০৫; সুনানে দারেমী, হা/২৫৩৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৩৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫১৭৭; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/২৮৪১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭২২; মিশকাত, হা/২৭৬১।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِّنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوْاۤ اَنْفُسَكُمْؕ اِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে তোমাদের পরস্পরের সন্তুষ্টিতে ব্যবসা করা বৈধ। আর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)
হারাম পন্থায় অর্জিত অনেক সম্পদের চেয়ে হালাল পন্থায় অর্জিত সামান্য সম্পদও উত্তম :
﴿قُلْ لَّا يَسْتَوِى الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ اَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِۚ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ اُولِى الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
বলো, মন্দ ও ভালো সমান নয়, যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ! আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ১০০)
অত্র আয়াতে ভালো-মন্দ তথা হালাল-হারামকে মর্যাদার মানদন্ডে পরিমাপ করে দেখানো হয়েছে। এখানে এ কথা অনুধাবন করানো হয়েছে যে, হারাম জিনিস বা হারাম পন্থায় অর্জিত জিনিস যত বেশি চাকচিক্যময় ও আকর্ষণীয় হোক না কেন, সেটা বিন্দু পরিমাণ হালাল জিনিসের তুলনায় ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া আবর্জনার মতো। কেননা এ চাকচিক্য কেবল পার্থিব জীবনের মধ্যে সীমিত; আর আখিরাতে এর কোন স্থান নেই। কোন ব্যক্তি যদি দুনিয়াতে এক টাকাও হালাল পন্থায় উপার্জন করে, তাহলে সেটাই আখিরাতে তার জন্য কাজে লাগবে; আর যদি কোন ব্যক্তি হারাম পন্থায় উপার্জন করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে, তাহলেও কিয়ামতের দিন তার সমসত্ম সম্পদ ধুলার মতো উড়ে গিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাবে। এর সামান্য পরিমাণ অংশও তার কোন কাজে আসবে না।
হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই না করা কাফেরদের কাজ :
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَتَمَتَّعُوْنَ وَيَأْكُلُوْنَ كَمَا تَأْكُلُ الْاَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ﴾
আর যারা কুফরী করেছে তারা দুনিয়ায় কিছু দিনের স্বাদ ভোগ করছে ও চতুষ্পদ জন্তুদের মতো খাওয়া-দাওয়া করছে। তবে জাহান্নামই হলো তাদের ঠিকানা। (সূরা মুহাম্মাদ- ১২)
আবু বকর (রাঃ) এর সতর্কতা :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ لِأَبِيْ بَكْرٍ غُلَامٌ يُخْرِجُ لَهُ الْخَرَاجَ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ يَأْكُلُ مِنْ خَرَاجِه فَجَاءَ يَوْمًا بِشَيْءٍ فَأَكَلَ مِنْهُ أَبُوْ بَكْرٍ فَقَالَ لَهُ الْغُلَامُ تَدْرِيْ مَا هٰذَا فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ وَمَا هُوَ قَالَ : كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لِإِنْسَانٍ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الْكِهَانَةَ إِلَّا أَنِّيْ خَدَعْتُهٗ فَلَقِيَنِيْ فَأَعْطَانِيْ بِذٰلِكَ فَهٰذَا الَّذِيْ أَكَلْتَ مِنْهُ فَأَدْخَلَ أَبُوْ بَكْرٍ يَدَهٗ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِيْ بَطْنِه
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) এর একটা গোলাম ছিল, যে তাঁকে কিছু কর প্রদান করত। আর আবু বকর (রাঃ) তার কর হতে খাবার গ্রহণ করতেন। একদিন গোলামটি কিছু জিনিস নিয়ে এলো; অতঃপর আবু বকর (রাঃ) তা থেকে কিছু আহার করলেন। তখন গোলামটি তাঁকে বলল, আপনি কি জানেন এটা কী (যা আপনি খেলেন)? আবু বকর (রাঃ) বললেন, সেটা কী ছিল? গোলামটি বলল, জাহেলী যুগে আমি এক লোকের ভাগ্য গণনা করেছিলাম। অথচ আমি ভালোভাবে ভাগ্য গণনা করতে জানতাম না; বরং আমি তাকে প্রতারিত করেছিলাম মাত্র। আজ সে লোকটি আমার সাথে দেখা করে আমাকে ঐ কাজের মূল্য প্রদান করল। আর এটাই হচ্ছে সে জিনিস, যা থেকে আপনি খেলেন। অতঃপর আবু বকর (রাঃ) নিজের হাত মুখে প্রবেশ করে বমি করে পেটের সব কিছু বের করে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮৪২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৮৬০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৩৮; মিশকাত, হা/২৭৮৬।]
আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার শামিল :
কোন্টি হালাল এবং কোন্টি হারাম আল্লাহ তা‘আলা তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি কেবল হালাল পথে উপার্জন করতে, হালাল বসত্মু ভক্ষণ করতে এবং হারাম বিষয়সমূহ থেকে দূরে থাকতে আদেশ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি উপার্জনের ক্ষেত্রে এবং আহার করার ক্ষেত্রে হারাম পথ বেছে নিল, সে যেন আল্লাহর নির্দেশকেই অমান্য করল এবং নিজেকে শাসিত্মর যোগ্য করে নিল। এজন্য অপবিত্র ও হারাম বস্তু খাওয়ার জন্য শয়তান প্ররোচনা দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًاؗ وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوُّ مُّبِيْنٌ﴾
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাক্বারা- ১৬৮)
শেষ যমানায় মানুষ হারামের দিকে ঝুঁকে পড়বে :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يُبَالِي الْمَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلَالِ أَمْ مِنَ الْحَرَامِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, মানুষের সামনে এমন একটি যুগ উপস্থিত হবে, যখন কোন লোক যা থেকে (সম্পদ) আয় করছে সেটা হালাল বা হারাম কি না এর পরোয়া করবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২০৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৭২৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০৫; সুনানে দারেমী, হা/২৫৩৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৩৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫১৭৭; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/২৮৪১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭২২; মিশকাত, হা/২৭৬১।]
হারাম উপার্জনকারীর দু‘আ কবুল হয় না :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ ... ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُه حَرَامٌ وَمَشْرَبُه حَرَامٌ وَمَلْبَسُه حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধুলোয় মলিন শরীর; সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হয়েছে। সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৩৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/২০০৯।]
হারাম উপার্জনকারীর ইবাদাত কবুল হয় না :
যেহেতু হালাল উপার্জন করা এবং হালাল ভক্ষণ করা ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। সুতরাং হারাম পন্থায় উপার্জনকারী অথবা হারাম বসত্মু ভক্ষণকারীর কোন ইবাদাত আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ﴾
হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি। (সূরা মু’মিনূন- ৫১)
হারাম উপার্জনের সাদাকাও কবুল হয় না :
সাদাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এর মাধ্যমে বান্দা অনেক নেকী অর্জন করে থাকে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ থেকে সাদাকা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সাদাকা কবুল করেন না। বরং এর মাধ্যমে উল্টা গুনাহগার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা এটা আল্লাহর সাথে ঠাট্টা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি এমন যে, আল্লাহ তা‘আলা হারাম উপার্জন করতে নিষেধ করলেন, আর কেউ তাঁর অবাধ্য হয়ে সেই পন্থায় উপার্জন করে তাঁকেই উপহার দিল! হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنَ عُمَرَ قَالَ اِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না; আর হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের সাদাকা কবুল হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৬৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭০৫।]
হারাম মালে বরকত হয় না, আর তা হলো জাহান্নামের পুঁজি :
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا اِيْمَانَ لِمَنْ لَا اَمَانَةَ لَهٗ، وَلَا دِيْنَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهٗ، وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهٖ، لَا يَسْتَقِيْمُ دِيْنَ عَبْدٍ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهٗ، وَلَا يَسْتَقِيْمُ لِسَانُهٗ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهٗ وَلَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ، قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الْبَوَائِقُ؟ قَالَ : غَشْمُهٗ وَظُلْمُهٗ، وَاَيُّمَا رَجُلٍ اَصَابَ مَالًا مِنْ غَيْرِ حِلِّهٖ، وَاَنْفَقَ مِنْهُ، لَمْ يُبَارَكْ لَهٗ فِيْهِ، وَاِنْ تَصَدَّقَ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ، وَمَا بَقِيَ فَزَادُهٗ اِلَى النَّارِ، اِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ، وَلٰكِنَّ الطَّيِّبَ يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ .
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই এবং ঐ ব্যক্তির দ্বীনদারী নেই যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোন ব্যক্তির দ্বীন সঠিক হবে না, যতক্ষণ না সে তার জিহবাকে সঠিক করবে অর্থাৎ জবানকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আর কোন ব্যক্তির জবান সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হবে। ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার অত্যাচার থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। কোন বান্দা হারাম বা অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে খরচ করলে তাতে বরকত হবে না। যদি সে তা থেকে দান করে তবে তা কবুল হবে না। সে সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পুঁজি হবে। মন্দের দ্বারা মন্দ কাটে না (অর্থাৎ হারাম মাল দান করলে গুনাহ মাফ হয় না)। কিন্তু ভালো দ্বারা মন্দ কেটে যায় (অর্থাৎ হালাল মাল দান করলে গুনাহ মাফ করা হয়)। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৪০১।]
হারাম উপার্জন জান্নাতে যাওয়ার প্রতিবন্ধক :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يَا كَعْبُ بْنَ عُجْرَةَ إِنَّه لَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হে কা‘ব ইবনে উজরা! সে মাংস কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যা হারাম সম্পদ দিয়ে গঠিত হয়েছে। [মুসনাদে দারেমী, হা/২৮১৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৬৪০।]
হারাম উপার্জনকারীদের জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত স্থান :
عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ -- ....... يَا كَعْبُ بْنَ عُجْرَةَ إِنَّهٗ لَا يَرْبُوْ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلَّا كَانَتِ النَّارُ أَوْلٰى بِه
কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে কা‘ব ইবনে উজরা! যে দেহের গোশত হারাম সম্পদ দিয়ে গঠিত, তার জন্য জাহান্নামই সমীচীন। [তিরমিযী, হা/৬১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭২৯।]
ব্যবসায় হারাম পন্থা অবলম্বনকারী পাপী অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে :
عَنْ رِفَاعَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِنَّ التُّجَّارَ يُحْشَرُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فُجَّارًا إِلَّا مَنِ اتَّقٰى وَبَرَّ وَصَدَقَ
রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা পাপী অবস্থায় হাজির হবে। তবে যারা মুত্তাকী, নেককার এবং সত্যবাদী তারা ব্যতীত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৪১১; ইবনে মাজাহ, হা/২১৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯১০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭১৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৪৪; সুনানে দারেমী, হা/২৫৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৫০৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৫৮; মিশকাত, হা/২৭৯৯।]
হারাম পন্থায় জমি দখলকারীর পরিণাম :
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ أَنَّه خَاصَمَتْهُ أَرْوٰى فِيْ حَقٍّ زَعَمَتْ أَنَّهُ انْتَقَصَه لَهَا إِلٰى مَرْوَانَ فَقَال سَعِيْدٌ أَنَا أَنْتَقِصُ مِنْ حَقِّهَا شَيْئًا أَشْهَدُ لَسَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا فَإِنَّه يُطَوَّقُه يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ أَرَضِيْنَ
সাঈদ ইবনে যাইদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল (রাঃ) হতে বর্ণিত। ‘আরওয়া’ নামে এক স্ত্রীলোক তার ধারণা মতে অভিযোগ আনে যে, সাঈদ জমি বিষয়ে তার হক বিনষ্ট করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রীলোকটি মারওয়ানের কাছে মামলা দায়ের করে। (তা শুনে) সাঈদ বলেন, স্ত্রী লোকটির সামান্য হকও কি আমি নষ্ট করতে পারি? আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, যে লোক (অপরের) এক বিঘত জমিনও জোর-যুলুম করে আত্মসাৎ করল, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিনের শিকল তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৬১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৪৪৮; মিশকাত, হা/২৯৩৮।]
عَنْ سَالِمٍ ، عَنْ أَبِيْهِ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : مَنْ أَخَذَ مِنَ الْاَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّه خُسِفَ بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلٰى سَبْعِ أَرَضِيْنَ
সালিম (রাঃ) থেকে তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যে লোক অন্যায়ভাবে সামান্য কিছু মাটিও কেড়ে নিবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক মাটির নিচ পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৫৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৬৬; জামেউস সগীর, হা/১০৯২৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৬৭; মিশকাত, হা/২৯৫৮।]
عَنْ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ الثَّقَفِيَّ يَقُوْلُ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ أَخَذَ أَرْضًا بِغَيْرِ حَقِّهَا كُلِّفَ أَنْ يَحْمِلَ تُرَابَهَا إِلَى الْمَحْشَرِ
ই‘আলা ইবনে মুররা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো কোন জমি দখল করবে, তাকে এর মাটি (মাথায় করে) হাশরের মাঠে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৫৯৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৪৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৪২; মিশকাত, হা/২৯৫৯।]
عَنْ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : أَيُّمَا رَجُلٍ ظَلَمَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ كَلَّفَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَحْفِرَه حَتّٰى يَبْلُغَ اٰخِرَ سَبْعِ أَرَضِيْنَ ثُمَّ يُطَوَّقَه إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ حَتّٰى يُقْضٰى بَيْنَ النَّاسِ .
ই‘আলা ইবনে মুররা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দখল করে, তাকে আল্লাহ তা সাত তবকের শেষ পর্যমত্ম খুড়তে বাধ্য করবেন। অতঃপর তার গলায় এর শিকলরূপে পরিয়ে দেয়া হবে, যতক্ষণ না মানুষের বিচার শেষ হয়। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৬৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮১৪৬; জামেউস সগীর, হা/৪৪৮৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৪০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৬৮; মিশকাত, হা/২৯৬০।]
চুরি করার পরিণাম :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ....... وَحَتّٰى رَأَيْتُ فِيْهَا صَاحِبَ الْمِحْجَنِ يَجُرُّ قُصْبَه فِى النَّارِ كَانَ يَسْرِقُ الْحَاجَّ بِمِحْجَنِه فَإِنْ فُطِنَ لَه قَالَ إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِىْ . وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ ذَهَبَ بِه
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে সূর্যগ্রহণ লেগেছিল। (তখন তিনি সূর্যগ্রহণের নামায শেষ করে ভাষণ দানকালে বলেন) অবশেষে আমি জাহান্নামের মধ্যে লৌহশলাকাধারীকে দেখলাম, সে জাহান্নামের মধ্যে নিজের নাড়ীভুঁড়ি টানছে। এ ব্যক্তি নিজ লাঠি দ্বারা হজ্জ যাত্রীদের মালপত্র চুরি করত। এরপর যদি ধরা পড়ে যেত তখন বলত, আহ! আমার লাঠির সাথে লেগে গেছে। আর কেউ অসাবধান থাকলে তা নিয়ে যেত। [সহীহ মুসলিম, হা/২১৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪৫৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৫৪৮; জামেউস সগীর, হা/১৩৮২৪; মিশকাত, হা/২৯৪২।]
হারাম পন্থায় উপার্জন করার জন্য বনী ইসরাঈলদের প্রতি আল্লাহর শাসিত্ম :
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ كَثِيْرًا ‐ وَاَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَاَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا﴾
ইয়াহুদিদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনমূলক আচরণের কারণে এমন অনেক পবিত্র জিনিসও আমি তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছিলাম, যা তাদের জন্য পূর্বে হালাল ছিল। এটা এজন্য যে, এরা অনেক মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রেখেছে। তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ তাদেরকে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তারা অন্যের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে (ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে) গ্রাস করে নিত। সুতরাং আমি এসব কাফেরদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৬০, ১৬১)
সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে হারাম উপার্জনের প্রভাব :
ব্যক্তি ও সমাজের ওপর হারাম উপার্জনের প্রভাব খুবই মারাত্মক। হারাম উপার্জনের ফলে মানবজীবনের সব ধরনের বরকত ছিনিয়ে নেয়া হয়। রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। যুলুম, অন্যায়, প্রতিহিংসা ও রেষারেষির সয়লাব ঘটে। যারা হারাম খায়, পরিবার-পরিজন, ছেলে-সন্তানদের হারাম অর্থে লালনপালন করে, তারা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হয়। অথচ পরিবারকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা ফরয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে ঐ অগ্নি হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম- ৬)
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ ... ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُه حَرَامٌ وَمَشْرَبُه حَرَامٌ وَمَلْبَسُه حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধুলোয় মলিন শরীর; সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হয়েছে। সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৩৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/২০০৯।]
হারাম উপার্জনকারীর ইবাদাত কবুল হয় না :
যেহেতু হালাল উপার্জন করা এবং হালাল ভক্ষণ করা ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। সুতরাং হারাম পন্থায় উপার্জনকারী অথবা হারাম বসত্মু ভক্ষণকারীর কোন ইবাদাত আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ﴾
হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি। (সূরা মু’মিনূন- ৫১)
হারাম উপার্জনের সাদাকাও কবুল হয় না :
সাদাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এর মাধ্যমে বান্দা অনেক নেকী অর্জন করে থাকে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ থেকে সাদাকা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সাদাকা কবুল করেন না। বরং এর মাধ্যমে উল্টা গুনাহগার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা এটা আল্লাহর সাথে ঠাট্টা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি এমন যে, আল্লাহ তা‘আলা হারাম উপার্জন করতে নিষেধ করলেন, আর কেউ তাঁর অবাধ্য হয়ে সেই পন্থায় উপার্জন করে তাঁকেই উপহার দিল! হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنَ عُمَرَ قَالَ اِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না; আর হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের সাদাকা কবুল হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৬৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭০৫।]
হারাম মালে বরকত হয় না, আর তা হলো জাহান্নামের পুঁজি :
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا اِيْمَانَ لِمَنْ لَا اَمَانَةَ لَهٗ، وَلَا دِيْنَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهٗ، وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهٖ، لَا يَسْتَقِيْمُ دِيْنَ عَبْدٍ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهٗ، وَلَا يَسْتَقِيْمُ لِسَانُهٗ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهٗ وَلَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ، قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الْبَوَائِقُ؟ قَالَ : غَشْمُهٗ وَظُلْمُهٗ، وَاَيُّمَا رَجُلٍ اَصَابَ مَالًا مِنْ غَيْرِ حِلِّهٖ، وَاَنْفَقَ مِنْهُ، لَمْ يُبَارَكْ لَهٗ فِيْهِ، وَاِنْ تَصَدَّقَ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ، وَمَا بَقِيَ فَزَادُهٗ اِلَى النَّارِ، اِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ، وَلٰكِنَّ الطَّيِّبَ يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ .
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই এবং ঐ ব্যক্তির দ্বীনদারী নেই যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোন ব্যক্তির দ্বীন সঠিক হবে না, যতক্ষণ না সে তার জিহবাকে সঠিক করবে অর্থাৎ জবানকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আর কোন ব্যক্তির জবান সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হবে। ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার অত্যাচার থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। কোন বান্দা হারাম বা অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে খরচ করলে তাতে বরকত হবে না। যদি সে তা থেকে দান করে তবে তা কবুল হবে না। সে সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পুঁজি হবে। মন্দের দ্বারা মন্দ কাটে না (অর্থাৎ হারাম মাল দান করলে গুনাহ মাফ হয় না)। কিন্তু ভালো দ্বারা মন্দ কেটে যায় (অর্থাৎ হালাল মাল দান করলে গুনাহ মাফ করা হয়)। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৪০১।]
হারাম উপার্জন জান্নাতে যাওয়ার প্রতিবন্ধক :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يَا كَعْبُ بْنَ عُجْرَةَ إِنَّه لَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হে কা‘ব ইবনে উজরা! সে মাংস কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যা হারাম সম্পদ দিয়ে গঠিত হয়েছে। [মুসনাদে দারেমী, হা/২৮১৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৬৪০।]
হারাম উপার্জনকারীদের জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত স্থান :
عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ -- ....... يَا كَعْبُ بْنَ عُجْرَةَ إِنَّهٗ لَا يَرْبُوْ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلَّا كَانَتِ النَّارُ أَوْلٰى بِه
কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে কা‘ব ইবনে উজরা! যে দেহের গোশত হারাম সম্পদ দিয়ে গঠিত, তার জন্য জাহান্নামই সমীচীন। [তিরমিযী, হা/৬১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭২৩; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭২৯।]
ব্যবসায় হারাম পন্থা অবলম্বনকারী পাপী অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে :
عَنْ رِفَاعَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِنَّ التُّجَّارَ يُحْشَرُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فُجَّارًا إِلَّا مَنِ اتَّقٰى وَبَرَّ وَصَدَقَ
রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা পাপী অবস্থায় হাজির হবে। তবে যারা মুত্তাকী, নেককার এবং সত্যবাদী তারা ব্যতীত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৪১১; ইবনে মাজাহ, হা/২১৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯১০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭১৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৪৪; সুনানে দারেমী, হা/২৫৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৫০৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৫৮; মিশকাত, হা/২৭৯৯।]
হারাম পন্থায় জমি দখলকারীর পরিণাম :
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ أَنَّه خَاصَمَتْهُ أَرْوٰى فِيْ حَقٍّ زَعَمَتْ أَنَّهُ انْتَقَصَه لَهَا إِلٰى مَرْوَانَ فَقَال سَعِيْدٌ أَنَا أَنْتَقِصُ مِنْ حَقِّهَا شَيْئًا أَشْهَدُ لَسَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا فَإِنَّه يُطَوَّقُه يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ أَرَضِيْنَ
সাঈদ ইবনে যাইদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল (রাঃ) হতে বর্ণিত। ‘আরওয়া’ নামে এক স্ত্রীলোক তার ধারণা মতে অভিযোগ আনে যে, সাঈদ জমি বিষয়ে তার হক বিনষ্ট করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রীলোকটি মারওয়ানের কাছে মামলা দায়ের করে। (তা শুনে) সাঈদ বলেন, স্ত্রী লোকটির সামান্য হকও কি আমি নষ্ট করতে পারি? আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, যে লোক (অপরের) এক বিঘত জমিনও জোর-যুলুম করে আত্মসাৎ করল, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিনের শিকল তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩১৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৬১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৪৪৮; মিশকাত, হা/২৯৩৮।]
عَنْ سَالِمٍ ، عَنْ أَبِيْهِ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : مَنْ أَخَذَ مِنَ الْاَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّه خُسِفَ بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلٰى سَبْعِ أَرَضِيْنَ
সালিম (রাঃ) থেকে তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যে লোক অন্যায়ভাবে সামান্য কিছু মাটিও কেড়ে নিবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক মাটির নিচ পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৫৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৬৬; জামেউস সগীর, হা/১০৯২৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৬৭; মিশকাত, হা/২৯৫৮।]
عَنْ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ الثَّقَفِيَّ يَقُوْلُ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ أَخَذَ أَرْضًا بِغَيْرِ حَقِّهَا كُلِّفَ أَنْ يَحْمِلَ تُرَابَهَا إِلَى الْمَحْشَرِ
ই‘আলা ইবনে মুররা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো কোন জমি দখল করবে, তাকে এর মাটি (মাথায় করে) হাশরের মাঠে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৫৯৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৪৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৪২; মিশকাত, হা/২৯৫৯।]
عَنْ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : أَيُّمَا رَجُلٍ ظَلَمَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ كَلَّفَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَحْفِرَه حَتّٰى يَبْلُغَ اٰخِرَ سَبْعِ أَرَضِيْنَ ثُمَّ يُطَوَّقَه إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ حَتّٰى يُقْضٰى بَيْنَ النَّاسِ .
ই‘আলা ইবনে মুররা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দখল করে, তাকে আল্লাহ তা সাত তবকের শেষ পর্যমত্ম খুড়তে বাধ্য করবেন। অতঃপর তার গলায় এর শিকলরূপে পরিয়ে দেয়া হবে, যতক্ষণ না মানুষের বিচার শেষ হয়। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৬৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮১৪৬; জামেউস সগীর, হা/৪৪৮৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৪০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৬৮; মিশকাত, হা/২৯৬০।]
চুরি করার পরিণাম :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ....... وَحَتّٰى رَأَيْتُ فِيْهَا صَاحِبَ الْمِحْجَنِ يَجُرُّ قُصْبَه فِى النَّارِ كَانَ يَسْرِقُ الْحَاجَّ بِمِحْجَنِه فَإِنْ فُطِنَ لَه قَالَ إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِىْ . وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ ذَهَبَ بِه
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে সূর্যগ্রহণ লেগেছিল। (তখন তিনি সূর্যগ্রহণের নামায শেষ করে ভাষণ দানকালে বলেন) অবশেষে আমি জাহান্নামের মধ্যে লৌহশলাকাধারীকে দেখলাম, সে জাহান্নামের মধ্যে নিজের নাড়ীভুঁড়ি টানছে। এ ব্যক্তি নিজ লাঠি দ্বারা হজ্জ যাত্রীদের মালপত্র চুরি করত। এরপর যদি ধরা পড়ে যেত তখন বলত, আহ! আমার লাঠির সাথে লেগে গেছে। আর কেউ অসাবধান থাকলে তা নিয়ে যেত। [সহীহ মুসলিম, হা/২১৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪৫৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৫৪৮; জামেউস সগীর, হা/১৩৮২৪; মিশকাত, হা/২৯৪২।]
হারাম পন্থায় উপার্জন করার জন্য বনী ইসরাঈলদের প্রতি আল্লাহর শাসিত্ম :
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ كَثِيْرًا ‐ وَاَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَاَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِؕ وَاَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِيْمًا﴾
ইয়াহুদিদের বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনমূলক আচরণের কারণে এমন অনেক পবিত্র জিনিসও আমি তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছিলাম, যা তাদের জন্য পূর্বে হালাল ছিল। এটা এজন্য যে, এরা অনেক মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রেখেছে। তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ তাদেরকে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তারা অন্যের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে (ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে) গ্রাস করে নিত। সুতরাং আমি এসব কাফেরদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছি। (সূরা নিসা- ১৬০, ১৬১)
সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে হারাম উপার্জনের প্রভাব :
ব্যক্তি ও সমাজের ওপর হারাম উপার্জনের প্রভাব খুবই মারাত্মক। হারাম উপার্জনের ফলে মানবজীবনের সব ধরনের বরকত ছিনিয়ে নেয়া হয়। রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। যুলুম, অন্যায়, প্রতিহিংসা ও রেষারেষির সয়লাব ঘটে। যারা হারাম খায়, পরিবার-পরিজন, ছেলে-সন্তানদের হারাম অর্থে লালনপালন করে, তারা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হয়। অথচ পরিবারকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা ফরয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْاۤ اَنْفُسَكُمْ وَاَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে ঐ অগ্নি হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম- ৬)
১. যেসব কাজ কুরআন ও হাদীসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তার মাধ্যমে উপার্জন করা। যেমন- চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, জালিয়াতী ইত্যাদি।
২. যেসব খাদ্য খাওয়া কুরআন ও হাদীসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোর আদান-প্রদানের মাধ্যমে উপার্জন করা। যেমন- মদ, শূকর ইত্যাদির ব্যবসা করা।
৩. যেসব বসত্মু বিক্রি করতে কুরআন ও হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে, সেগুলো বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা। যেমন- কুকুর অথবা বিড়াল বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা।
৪. যেসব ব্যবসার মাধ্যমে মানুষ ক্ষতিগ্রসত্ম হয় সেসব ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন করা। যেমন- সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করা, ইসলাম বিদ্বেষী বই প্রকাশ-প্রচার, বিতরণ ও বিক্রি করা ইত্যাদি।
৫. যেসব কাজ আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে সেসব কাজের মাধ্যমে উপার্জন করা।
২. যেসব খাদ্য খাওয়া কুরআন ও হাদীসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোর আদান-প্রদানের মাধ্যমে উপার্জন করা। যেমন- মদ, শূকর ইত্যাদির ব্যবসা করা।
৩. যেসব বসত্মু বিক্রি করতে কুরআন ও হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে, সেগুলো বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা। যেমন- কুকুর অথবা বিড়াল বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা।
৪. যেসব ব্যবসার মাধ্যমে মানুষ ক্ষতিগ্রসত্ম হয় সেসব ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন করা। যেমন- সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করা, ইসলাম বিদ্বেষী বই প্রকাশ-প্রচার, বিতরণ ও বিক্রি করা ইত্যাদি।
৫. যেসব কাজ আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে সেসব কাজের মাধ্যমে উপার্জন করা।
অনেক উপার্জন রয়েছে যা সরাসরি হারামের অমত্মর্ভুক্ত। অথচ মানুষ এসব হারাম পন্থা অবলম্বন করে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু একজন মুসলিম কোনভাবেই এসব হারাম পন্থা অবলম্বন করতে পারে না। তাই যেসব উপার্জন হারাম তা জানা এবং তা থেকে দূরে থাকা আমাদের সকলের কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হারাম কামাই থেকে হেফাযত করুন, আ-মীন! যেসব উপার্জন হারাম তার কিছু নিচে তুলে ধরা হলো :
সম্পদের মালিককে কোন কিছু না জানিয়ে তা থেকে কোন কিছু নিজের অংশে নিয়ে নেয়াকে চুরি বলা হয়। এর মাধ্যমে উপার্জিত সকল প্রকার সম্পদ হারাম। এটা একটি মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ﴾
যে পুরুষ এবং যে নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৩৮)
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُه وَيَسْرِقُ الْحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা সে চোরের প্রতি অভিশম্পাত করেন, যে শিরস্ত্রাণ চুরি করে এবং তার হাত কাটা হয়। আর যে রশি চুরি করে এবং সেজন্যও তার হাত কাটা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫০৩; নাসাঈ, হা/৪৮৭৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৫৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৭৪৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৬১৪; জামেউস সগীর, হা/৯২২৮; মিশকাত, হা/৩৫৯২।]
﴿وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْاۤ اَيْدِيَهُمَا جَزَآءً ۢبِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِؕ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ﴾
যে পুরুষ এবং যে নারী চুরি করে তাদের কর্মফলের শাস্তি হিসেবে তাদের হাত কেটে দাও, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দন্ড। আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা মায়েদা- ৩৮)
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُه وَيَسْرِقُ الْحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা সে চোরের প্রতি অভিশম্পাত করেন, যে শিরস্ত্রাণ চুরি করে এবং তার হাত কাটা হয়। আর যে রশি চুরি করে এবং সেজন্যও তার হাত কাটা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫০৩; নাসাঈ, হা/৪৮৭৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৫৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৭৪৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৬১৪; জামেউস সগীর, হা/৯২২৮; মিশকাত, হা/৩৫৯২।]
প্রকাশ্যে কারো কাছ থেকে জোর করে অথবা ভয় দেখিয়ে কোন কিছু লুটপাট করে নেয়াকে ডাকাতি বলা হয়। এ কাজ করা হারাম এবং এর মাধ্যমে উপার্জিত সকল সম্পত্তিও হারাম। কেননা হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَزِيْدِ عَنِ النَّبِيِّ أَنَّه نَهٰى عَنِ النُّهْبَةِ وَالْمُثْلَةِ
আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ লুটতরাজ এবং অঙ্গহানি করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫১৬; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/৪৭৭; জামেউস সগীর, হা/১২৮৭৪; মিশকাত, হা/২৯৪১।]
এদের শাসিত্ম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ﴾
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, (তাদের শাস্তি হলো) তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা হলো তাদের জন্য পৃথিবীতে অপমান; কিন্তু পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَزِيْدِ عَنِ النَّبِيِّ أَنَّه نَهٰى عَنِ النُّهْبَةِ وَالْمُثْلَةِ
আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ লুটতরাজ এবং অঙ্গহানি করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫১৬; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/৪৭৭; জামেউস সগীর, হা/১২৮৭৪; মিশকাত, হা/২৯৪১।]
এদের শাসিত্ম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا جَزَآءُ الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا اَنْ يُّقَتَّلُوْاۤ اَوْ يُصَلَّبُوْاۤ اَوْ تُقَطَّعَ اَيْدِيْهِمْ وَاَرْجُلُهُمْ مِّنْ خِلَافٍ اَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْاَرْضِؕ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِى الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ﴾
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে লড়াই করে এবং পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, (তাদের শাস্তি হলো) তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা হলো তাদের জন্য পৃথিবীতে অপমান; কিন্তু পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। (সূরা মায়েদা- ৩৩)
মানুষকে ধোঁকা দেয়া, তাদের সাথে প্রতারণা করা একটি মারাত্মক অপরাধ। আর ফাঁকিবাজি করাও এক ধরনের ধোঁকা বা প্রতারণার অমত্মর্ভুক্ত। ইসলাম যে কোন ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করে দিয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - مَرَّ عَلٰى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَه فِيْهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُه بَلَلًا فَقَالَ مَا هٰذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : أَفَلَا جَعَلْتَه فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّىْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদ্য শস্যের একটি সত্মূপের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করলেন। অতঃপর তিনি সত্মূপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন। ফলে তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো ভিজে গেল। তিনি বললেন, হে সত্মূপের মালিক! এ কী ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। অতঃপর তিনি বললেন, সেগুলো তুমি সত্মূপের উপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারত। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/২৯৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯০৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১২০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৬৫; মিশকাত, হা/২৮৬০।]
অতএব উপার্জন করার সময় পণ্যের মাধ্যমে হোক অথবা পদ্ধতির মাধ্যমে হোক ইচ্ছাকৃতভাবে কোন প্রকার ধোঁকা বা প্রতারণা করলে সে উপার্জন হারাম হিসেবে বিবেচিত হবে।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - مَرَّ عَلٰى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَه فِيْهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُه بَلَلًا فَقَالَ مَا هٰذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : أَفَلَا جَعَلْتَه فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّىْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদ্য শস্যের একটি সত্মূপের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করলেন। অতঃপর তিনি সত্মূপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন। ফলে তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো ভিজে গেল। তিনি বললেন, হে সত্মূপের মালিক! এ কী ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। অতঃপর তিনি বললেন, সেগুলো তুমি সত্মূপের উপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারত। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/২৯৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯০৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১২০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৬৫; মিশকাত, হা/২৮৬০।]
অতএব উপার্জন করার সময় পণ্যের মাধ্যমে হোক অথবা পদ্ধতির মাধ্যমে হোক ইচ্ছাকৃতভাবে কোন প্রকার ধোঁকা বা প্রতারণা করলে সে উপার্জন হারাম হিসেবে বিবেচিত হবে।
সময় ও পরিমাণ নির্ধারণ করে মূলধনের উপর অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করার নাম হচ্ছে সুদ। ইসলাম সুদকে এবং এর সাথে সম্পৃক্ত সকল প্রকার লেনদেনকে হারাম ঘোষণা করেছে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً۪ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ (চক্র বৃদ্ধিহারে) সুদ ভক্ষণ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সুফলপ্রাপ্ত হও।
(সূরা আলে ইমরান- ১৩০)
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া অংশ বর্জন করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা বাক্বারা- ২৭৮)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ حَنْظَلَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلَاثِيْنَ زَنْيَةً
আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে-শুনে সুদের একটি মাত্র রৌপ্যমুদ্রাও খায়, তার গুনাহ ৩৬ বার যিনা করার চেয়েও বেশি। [মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৩৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০০৭; দার কুতনী, হা/২৮৪৩; জামেউস সগীর, হা/৫৬৮৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৩৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৫৫; মিশকাত, হা/২৮২৫।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلرِّبَا سَبْعُوْنَ حُوْبًا ، أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সুদের ৭০ প্রকার গুনাহ রয়েছে। তার মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি তার মাতাকে বিবাহ করার সমপরিমাণ। [ইবনে মাজাহ, হা/২২৭৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২২৫৯; জামেউস সগীর, হা/৫৮৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৪৩৭; মিশকাত, হা/২৮২৬।]
অতএব সুদ যে কত বড় অপরাধ সেটা উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো দ্বারা অনুমেয়। সুতরাং সুদী লেনদেন এবং এর সাথে সম্পৃক্ত সকল প্রকার উপার্জন হারাম।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً۪ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ (চক্র বৃদ্ধিহারে) সুদ ভক্ষণ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সুফলপ্রাপ্ত হও।
(সূরা আলে ইমরান- ১৩০)
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া অংশ বর্জন করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা বাক্বারা- ২৭৮)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ حَنْظَلَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلَاثِيْنَ زَنْيَةً
আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে-শুনে সুদের একটি মাত্র রৌপ্যমুদ্রাও খায়, তার গুনাহ ৩৬ বার যিনা করার চেয়েও বেশি। [মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৩৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০০৭; দার কুতনী, হা/২৮৪৩; জামেউস সগীর, হা/৫৬৮৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৩৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৫৫; মিশকাত, হা/২৮২৫।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلرِّبَا سَبْعُوْنَ حُوْبًا ، أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সুদের ৭০ প্রকার গুনাহ রয়েছে। তার মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি তার মাতাকে বিবাহ করার সমপরিমাণ। [ইবনে মাজাহ, হা/২২৭৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২২৫৯; জামেউস সগীর, হা/৫৮৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৪৩৭; মিশকাত, হা/২৮২৬।]
অতএব সুদ যে কত বড় অপরাধ সেটা উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো দ্বারা অনুমেয়। সুতরাং সুদী লেনদেন এবং এর সাথে সম্পৃক্ত সকল প্রকার উপার্জন হারাম।
ইসলামে সুদ গ্রহণ করা এবং সুদী কারবারে সহযোগিতা করা স্পষ্টভাবে হারাম। সুতরাং সুদী ব্যাংক ও বীমাগুলোতে চাকুরি করলে তাদের সহযোগিতা করা হয়, কাজেই এসব চাকুরি করা হারাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ - - اٰكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهٗ وَكَاتِبَهٗ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ লানত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও তার সাক্ষী দু’জনের উপর। অতঃপর বললেন, এরা সবাই সমান। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৭৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৮৪৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৭৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৩৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৪৭; মিশকাত, হা/২৮০৭।]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ - - اٰكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهٗ وَكَاتِبَهٗ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ লানত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও তার সাক্ষী দু’জনের উপর। অতঃপর বললেন, এরা সবাই সমান। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৭৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৮৪৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৭৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৩৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৪৭; মিশকাত, হা/২৮০৭।]
যেসব জিনিস নেশা সৃষ্টি করে এমন প্রত্যেক বসত্মু ভক্ষণ করা এবং এর মাধ্যমে যে কোন ধরনের উপকার লাভ করা হারাম। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর সাথে সম্পৃক্ত সকল প্রকার লোকের উপর লানত করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - لَعَنَ اللهُ الْخَمْرَ وَشَارِبَهَا وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَمُبْتَاعَهَا وَعَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মদের উপর, মদ পানকারীর উপর, যে মদ পান করায় তার উপর, মদ বিক্রেতার উপর, মদ ক্রেতার উপর, মদ প্রসত্মুতকারীর উপর, মদের ব্যাপারে সাহায্যকারীর উপর, মদ বহনকারীর উপর এবং যার প্রতি বহন করা হয় তার উপর লানত করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৩৬৭৬; তিরমিযী, হা/১২৯৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭১৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৬০১; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৫৮৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৭৯৮; সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, হা/৮১৬; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/২৩৮৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩৫৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২০৪৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫১৯৫; মিশকাত, হা/২৭৭৭।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : مَا أَسْكَرَ كَثِيرُه فَقَلِيْلُه حَرَامٌ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে জিনিস অধিক পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিমাণও হারাম। [আবু দাউদ, হা/৩৬৮৩; তিরমিযী, হা/১৮৬৫; নাসাঈ, হা/৬৫০৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৯৩; মিশকাত, হা/৩৬৪৫।]
যেহেতু নেশা জাতীয় সকল প্রকার দ্রব্যই হারাম, সুতরাং এটাকে হালাল করার জন্য যত প্রকার কৌশল অবলম্বন করা হোক না কেন তবুও সেটা হারাম হিসেবেই সাব্যসত্ম হবে এবং এর মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদও হারাম হিসেবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ : بَلَغَ عُمَرَ أَنَّ فُلَانًا بَاعَ خَمْرًا فَقَالَ قَاتَلَ اللهُ فُلَانًا أَلَمْ يَعْلَمْ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : قَاتَلَ اللهُ الْيَهُوْدَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمُ فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছল যে, অমুক ব্যক্তি মদ বিক্রি করে। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন! সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদিদের ধ্বংস করুন! তাদের জন্য চর্বি খাওয়া হারাম করা হয়েছিল, তবুও তারা তা গলিয়ে বিক্রি করত। [সহীহ বুখারী, হা/২২২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৩৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭০; মুসনাদুল বাযযার, হা/১০৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৩৬৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৩৫২; সুনানে দারেমী, হা/২১০৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৫৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৪৮৫৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২০৩৫; মিশকাত, হা/২৭৬৭।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ الَّذِيْ حَرَّمَ شُرْبَهَا حَرَّمَ بَيْعَهَا
যিনি (আল্লাহ) মদ পান করা হারাম করেছেন তিনি এর বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৪৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪১২৮; নাসাঈ, হা/৪৬৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৪২।]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ - - فِى الْخَمْرِ عَشَرَةً عَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَشَارِبَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَاٰكِلَ ثَمَنِهَا وَالْمُشْتَرِىَ لَهَا وَالْمُشْتَرَاةَ لَهٗ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মদের সাথে সংশ্লিষ্ট ১০ প্রকার লোকের উপর লানত করেছেন। তারা হলো-
(১) যে মদ তৈরি করে,
(২) যে মদ তৈরির কাজে সহযোগিতা করে,
(৩) যে মদ পান করে,
(৪) যে মদ বহন করে,
(৫) যার দিকে মদ বহন করা হয়,
(৬) যে মদ পান করায়,
(৭) যে মদ বিক্রি করে,
(৮) যে তার মূল্য ভোগ করে,
(৯) যে মদ ক্রয় করে এবং
(১০) যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। [তিরমিযী, হা/১২৯৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৮১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩৫৭; মিশকাত, হা/২৭৭৬।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - لَعَنَ اللهُ الْخَمْرَ وَشَارِبَهَا وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَمُبْتَاعَهَا وَعَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মদের উপর, মদ পানকারীর উপর, যে মদ পান করায় তার উপর, মদ বিক্রেতার উপর, মদ ক্রেতার উপর, মদ প্রসত্মুতকারীর উপর, মদের ব্যাপারে সাহায্যকারীর উপর, মদ বহনকারীর উপর এবং যার প্রতি বহন করা হয় তার উপর লানত করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৩৬৭৬; তিরমিযী, হা/১২৯৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭১৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৬০১; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৫৮৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৭৯৮; সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, হা/৮১৬; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/২৩৮৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩৫৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২০৪৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫১৯৫; মিশকাত, হা/২৭৭৭।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : مَا أَسْكَرَ كَثِيرُه فَقَلِيْلُه حَرَامٌ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে জিনিস অধিক পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিমাণও হারাম। [আবু দাউদ, হা/৩৬৮৩; তিরমিযী, হা/১৮৬৫; নাসাঈ, হা/৬৫০৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৯৩; মিশকাত, হা/৩৬৪৫।]
যেহেতু নেশা জাতীয় সকল প্রকার দ্রব্যই হারাম, সুতরাং এটাকে হালাল করার জন্য যত প্রকার কৌশল অবলম্বন করা হোক না কেন তবুও সেটা হারাম হিসেবেই সাব্যসত্ম হবে এবং এর মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদও হারাম হিসেবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ : بَلَغَ عُمَرَ أَنَّ فُلَانًا بَاعَ خَمْرًا فَقَالَ قَاتَلَ اللهُ فُلَانًا أَلَمْ يَعْلَمْ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : قَاتَلَ اللهُ الْيَهُوْدَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمُ فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছল যে, অমুক ব্যক্তি মদ বিক্রি করে। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন! সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদিদের ধ্বংস করুন! তাদের জন্য চর্বি খাওয়া হারাম করা হয়েছিল, তবুও তারা তা গলিয়ে বিক্রি করত। [সহীহ বুখারী, হা/২২২৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৩৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭০; মুসনাদুল বাযযার, হা/১০৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৩৬৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৩৫২; সুনানে দারেমী, হা/২১০৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৫৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৪৮৫৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২০৩৫; মিশকাত, হা/২৭৬৭।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ الَّذِيْ حَرَّمَ شُرْبَهَا حَرَّمَ بَيْعَهَا
যিনি (আল্লাহ) মদ পান করা হারাম করেছেন তিনি এর বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৪৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪১২৮; নাসাঈ, হা/৪৬৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৪২।]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ - - فِى الْخَمْرِ عَشَرَةً عَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَشَارِبَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَاٰكِلَ ثَمَنِهَا وَالْمُشْتَرِىَ لَهَا وَالْمُشْتَرَاةَ لَهٗ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মদের সাথে সংশ্লিষ্ট ১০ প্রকার লোকের উপর লানত করেছেন। তারা হলো-
(১) যে মদ তৈরি করে,
(২) যে মদ তৈরির কাজে সহযোগিতা করে,
(৩) যে মদ পান করে,
(৪) যে মদ বহন করে,
(৫) যার দিকে মদ বহন করা হয়,
(৬) যে মদ পান করায়,
(৭) যে মদ বিক্রি করে,
(৮) যে তার মূল্য ভোগ করে,
(৯) যে মদ ক্রয় করে এবং
(১০) যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। [তিরমিযী, হা/১২৯৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৮১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩৫৭; মিশকাত, হা/২৭৭৬।]
জুয়া ও লটারী ধোঁকা ও প্রতারণার অমত্মর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে এক পক্ষ যেমন লাভবান হয়, তেমনি অপর পক্ষ ক্ষতিগ্রসত্ম হয়। ফলে ইসলাম এগুলোকে সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ‐ اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার দেবী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর (তীর) ইত্যাদি ঘৃণ্যবস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায় করা হতে বাধা প্রদান করতে চায়। অতঃপর তোমরা কি বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯০, ৯১)
সুতরাং যেসব কাজ জুয়া ও লটারীর অমত্মর্ভুক্ত তা হলো- যে কোন ধরনের খেলার মাধ্যমে বাজি ধরে উপার্জন করা, রাসত্মায় রাসত্মায় লোভনীয় পুরস্কারের অফার দিয়ে লটারীর টিকেট বিক্রি করা, এতে অংশগ্রহণ করা এবং এর পুরস্কার গ্রহণ করা অথবা এগুলোর উপর ভিত্তি করে যে কোন ধরনের ব্যবসা করা ইত্যাদি।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْاَنْصَابُ وَالْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ‐ اِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ فِى الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِۚ فَهَلْ اَنْتُمْ مُّنْتَهُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার দেবী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর (তীর) ইত্যাদি ঘৃণ্যবস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত আদায় করা হতে বাধা প্রদান করতে চায়। অতঃপর তোমরা কি বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদা- ৯০, ৯১)
সুতরাং যেসব কাজ জুয়া ও লটারীর অমত্মর্ভুক্ত তা হলো- যে কোন ধরনের খেলার মাধ্যমে বাজি ধরে উপার্জন করা, রাসত্মায় রাসত্মায় লোভনীয় পুরস্কারের অফার দিয়ে লটারীর টিকেট বিক্রি করা, এতে অংশগ্রহণ করা এবং এর পুরস্কার গ্রহণ করা অথবা এগুলোর উপর ভিত্তি করে যে কোন ধরনের ব্যবসা করা ইত্যাদি।
কারো পক্ষে রায় প্রদানের জন্য কিংবা কোন স্বার্থ হাসিল করার জন্য যা গ্রহণ করা হয় এবং প্রদান করা হয় তা হচ্ছে ঘুষ। ইসলাম এটাকে হারাম ঘোষণা করেছে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
﴿وَلَا تَاْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে মানুষের মালের কিছু অংশ খেতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৮)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ - - الرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারী উভয়কেই অভিশাপ করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৩৫৮২; তিরমিযী, হা/১৩৩৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৩১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০৭৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২১১; মিশকাত, হা/৩৭৫৩।]
তাছাড়া যে কাজ করা মানুষের কর্তব্য, সে কাজের বিনিময়ে অতিরিক্ত কোন কিছু গ্রহণ করা অথবা যে কাজ করা অন্যায়, সেটা করে দেয়ার মাধ্যমে কোন বিনিময় গ্রহণ করা অথবা সত্যকে ঢাকার জন্য যে কোন কিছুর বিনিময় গ্রহণ করা হারাম। সুতরাং এর মাধ্যমে উপার্জিত সকল প্রকার বসত্মুই হারাম বসত্মু হিসেবে গণ্য হবে।
কোন নেতা, উচ্চ পদস্থ অফিসার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইত্যাদি কাউকে কোন কাজ আদায়ের জন্য কোন প্রকার হাদিয়া বা উপঢৌকন দেওয়াও হারাম। কেননা এটাও ঘুষের অমত্মর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ اِسْتَعْمَلَ رَسُوْلُ اللهِ رَجُلًا عَلٰى صَدَقَاتِ بَنِيْ سُلَيْمٍ يُدْعَى ابْنَ اللُّتَبِيَّةِ فَلَمَّا جَاءَ حَاسَبَه قَالَ هٰذَا مَالُكُمْ وَهٰذَا هَدِيَّةٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ فَهَلَّا جَلَسْتَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْكَ وَأُمِّكَ حَتّٰى تَأْتِيَكَ هَدِيَّتُكَ إِنْ كُنْتَ صَادِقًا ثُمَّ خَطَبَنَا فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنٰى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّيْ أَسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ مِنْكُمْ عَلَى الْعَمَلِ مِمَّا وَلَّانِيَ اللهُ فَيَأْتِيْ فَيَقُوْلُ هٰذَا مَالُكُمْ وَهٰذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِيْ أَفَلَا جَلَسَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْهِ وَأُمِّه حَتّٰى تَأْتِيَه هَدِيَّتُه وَاللهِ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّه إِلَّا لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُه يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَلَأَعْرِفَنَّ أَحَدًا مِنْكُمْ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُ بَعِيْرًا لَه رُغَاءٌ ، أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ ، أَوْ شَاةً تَيْعَرُ ثُمَّ رَفَعَ يَدَه حَتّٰى رُئِيَ بَيَاضُ إِبْطِه يَقُوْلُ اللّٰهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ بَصْرَ عَيْنِيْ وَسَمْعَ أُذُنِيْ
আবু হুমাইদ সা‘ইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে লুতবীয়া নামক এক ব্যক্তিকে বনী সুলাইম গোত্রের যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করেন। সে ফিরে এসে সংগৃহীত অর্থ-সম্পদের হিসাব নিকাশ দেয়ার সময় নবী ﷺ-কে বলল, এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে উপহার দেয়া হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে নিজের পিতামাতার বাড়িতে বসে থাক না কেন? দেখো! তোমার জন্য কোন উপহার আসে কি না। অতঃপর তিনি আমাদের মাঝে ভাষণ দিলেন; তারপর আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেন, আল্লাহ আমাকে যার অভিভাবক করেছেন, আমি তার কোন কাজে তোমাদের কাউকে নিযুক্ত করলে সে এসে বলে, এগুলো আপনাদের জন্য আর এগুলো আমার জন্য উপহার। তাহলে সে তার পিতামাতার বাড়িতে অবস্থান করছে না কেন? দেখি তাকে কত উপহার দেয়া হয়। আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অবৈধভাবে কারো জিনিস আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সে ঐগুলোর ভার বহন করে আল্লাহর সামনে হাযির হবে। সুতরাং সেদিন আমি তোমাদের কাউকে ঐ অবস্থায় আল্লাহর সামনে হাযির হতে দেখতে চাই না যে, সে তার পিঠে করে উট বয়ে আনবে এবং উটের মতো ডাকবে বা তার পিঠে গাভী বয়ে আনবে এবং গাভীর মতো ডাকবে অথবা তার পিঠে বকরি বয়ে নিয়ে আসবে এবং বকরির মতো ডাকবে। অতঃপর তিনি ডান হাত এতটুকু উঁচু করলেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছি? (বর্ণনাকারী বলেন) আমার চোখ তাঁকে এ কথা বলতে দেখেছে এবং আমার কান তা শুনেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৪৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৩৪০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৫১৫।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : الْهَدِيَّةُ إِلَى الْإِمَامِ غُلُوْلٌ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নেতাকে হাদিয়া দেয়া হলো খিয়ানত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১১৩২৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৬৯০২; জামেউস সগীর, হা/১৩০১০।]
﴿وَلَا تَاْكُلُوْاۤ اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের নিকট এজন্য উপস্থাপন করো না, যাতে তোমরা জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে মানুষের মালের কিছু অংশ খেতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৮)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ - - الرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারী উভয়কেই অভিশাপ করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৩৫৮২; তিরমিযী, হা/১৩৩৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৩১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০৭৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২১১; মিশকাত, হা/৩৭৫৩।]
তাছাড়া যে কাজ করা মানুষের কর্তব্য, সে কাজের বিনিময়ে অতিরিক্ত কোন কিছু গ্রহণ করা অথবা যে কাজ করা অন্যায়, সেটা করে দেয়ার মাধ্যমে কোন বিনিময় গ্রহণ করা অথবা সত্যকে ঢাকার জন্য যে কোন কিছুর বিনিময় গ্রহণ করা হারাম। সুতরাং এর মাধ্যমে উপার্জিত সকল প্রকার বসত্মুই হারাম বসত্মু হিসেবে গণ্য হবে।
কোন নেতা, উচ্চ পদস্থ অফিসার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইত্যাদি কাউকে কোন কাজ আদায়ের জন্য কোন প্রকার হাদিয়া বা উপঢৌকন দেওয়াও হারাম। কেননা এটাও ঘুষের অমত্মর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ اِسْتَعْمَلَ رَسُوْلُ اللهِ رَجُلًا عَلٰى صَدَقَاتِ بَنِيْ سُلَيْمٍ يُدْعَى ابْنَ اللُّتَبِيَّةِ فَلَمَّا جَاءَ حَاسَبَه قَالَ هٰذَا مَالُكُمْ وَهٰذَا هَدِيَّةٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ فَهَلَّا جَلَسْتَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْكَ وَأُمِّكَ حَتّٰى تَأْتِيَكَ هَدِيَّتُكَ إِنْ كُنْتَ صَادِقًا ثُمَّ خَطَبَنَا فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنٰى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّيْ أَسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ مِنْكُمْ عَلَى الْعَمَلِ مِمَّا وَلَّانِيَ اللهُ فَيَأْتِيْ فَيَقُوْلُ هٰذَا مَالُكُمْ وَهٰذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِيْ أَفَلَا جَلَسَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْهِ وَأُمِّه حَتّٰى تَأْتِيَه هَدِيَّتُه وَاللهِ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّه إِلَّا لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُه يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَلَأَعْرِفَنَّ أَحَدًا مِنْكُمْ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُ بَعِيْرًا لَه رُغَاءٌ ، أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ ، أَوْ شَاةً تَيْعَرُ ثُمَّ رَفَعَ يَدَه حَتّٰى رُئِيَ بَيَاضُ إِبْطِه يَقُوْلُ اللّٰهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ بَصْرَ عَيْنِيْ وَسَمْعَ أُذُنِيْ
আবু হুমাইদ সা‘ইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে লুতবীয়া নামক এক ব্যক্তিকে বনী সুলাইম গোত্রের যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করেন। সে ফিরে এসে সংগৃহীত অর্থ-সম্পদের হিসাব নিকাশ দেয়ার সময় নবী ﷺ-কে বলল, এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে উপহার দেয়া হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে নিজের পিতামাতার বাড়িতে বসে থাক না কেন? দেখো! তোমার জন্য কোন উপহার আসে কি না। অতঃপর তিনি আমাদের মাঝে ভাষণ দিলেন; তারপর আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেন, আল্লাহ আমাকে যার অভিভাবক করেছেন, আমি তার কোন কাজে তোমাদের কাউকে নিযুক্ত করলে সে এসে বলে, এগুলো আপনাদের জন্য আর এগুলো আমার জন্য উপহার। তাহলে সে তার পিতামাতার বাড়িতে অবস্থান করছে না কেন? দেখি তাকে কত উপহার দেয়া হয়। আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অবৈধভাবে কারো জিনিস আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সে ঐগুলোর ভার বহন করে আল্লাহর সামনে হাযির হবে। সুতরাং সেদিন আমি তোমাদের কাউকে ঐ অবস্থায় আল্লাহর সামনে হাযির হতে দেখতে চাই না যে, সে তার পিঠে করে উট বয়ে আনবে এবং উটের মতো ডাকবে বা তার পিঠে গাভী বয়ে আনবে এবং গাভীর মতো ডাকবে অথবা তার পিঠে বকরি বয়ে নিয়ে আসবে এবং বকরির মতো ডাকবে। অতঃপর তিনি ডান হাত এতটুকু উঁচু করলেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছি? (বর্ণনাকারী বলেন) আমার চোখ তাঁকে এ কথা বলতে দেখেছে এবং আমার কান তা শুনেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৪৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৩৪০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৫১৫।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : الْهَدِيَّةُ إِلَى الْإِمَامِ غُلُوْلٌ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নেতাকে হাদিয়া দেয়া হলো খিয়ানত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১১৩২৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৬৯০২; জামেউস সগীর, হা/১৩০১০।]
বিবাহের ক্ষেত্রে সাধারণত বরপক্ষ কন্যাপক্ষকে মোহরানা প্রদান করে থাকে, যা কন্যার প্রাপ্য অধিকার। আর এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِيْٓئًا مَّرِيْٓئًا﴾
নারীদেরকে তাদের মোহর প্রদান করো, কিন্তু যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে (মোহরের) কিছু অংশ তোমাদেরকে দিয়ে দেয়, তবে (তা) তৃপ্তির সাথে ভোগ করো। (সূরা নিসা- ৪)
আর এর বিপরীত তথা বরপক্ষ কর্তৃক কন্যাপক্ষ থেকে কোন কিছু দাবি করাই হচ্ছে যৌতুক, যা শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়। উপরমত্মু এটি এক প্রকার যুলুম। কেননা এর মাধ্যমে বরপক্ষ কর্তৃক কন্যাপক্ষের কাছে অন্যায় দাবি করা হয়। ফলে অনেক বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিমত্মা করে বর পক্ষের যৌতুকের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। আর এটাই হচ্ছে যুলুম।
তবে কোন দাবি-দাওয়া ছাড়াই মেয়ের বাবা-মা যদি কোন কিছু প্রদান করে অথবা মেয়ের সংসারে কোনরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে তাতে কোন দোষ নেই।
﴿وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَاِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوْهُ هَنِيْٓئًا مَّرِيْٓئًا﴾
নারীদেরকে তাদের মোহর প্রদান করো, কিন্তু যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে (মোহরের) কিছু অংশ তোমাদেরকে দিয়ে দেয়, তবে (তা) তৃপ্তির সাথে ভোগ করো। (সূরা নিসা- ৪)
আর এর বিপরীত তথা বরপক্ষ কর্তৃক কন্যাপক্ষ থেকে কোন কিছু দাবি করাই হচ্ছে যৌতুক, যা শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়। উপরমত্মু এটি এক প্রকার যুলুম। কেননা এর মাধ্যমে বরপক্ষ কর্তৃক কন্যাপক্ষের কাছে অন্যায় দাবি করা হয়। ফলে অনেক বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিমত্মা করে বর পক্ষের যৌতুকের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। আর এটাই হচ্ছে যুলুম।
তবে কোন দাবি-দাওয়া ছাড়াই মেয়ের বাবা-মা যদি কোন কিছু প্রদান করে অথবা মেয়ের সংসারে কোনরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে তাতে কোন দোষ নেই।
গণক বা জ্যোতিষী বলা হয় ঐ সমসত্ম ব্যক্তিকে, যারা হসত্মরেখা দেখে অথবা বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ এবং তারকার উদয়-অসত্মাচলের ভিত্তিতে অথবা অন্য কোন লক্ষণ দেখে বা তিথী গণনা করে অথবা শয়তানদের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং ইলমে গায়েবের দাবি করে। ইসলাম এসব গণক ও জ্যোতিষীদের সকল প্রকার উপার্জনকে হারাম করে দিয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِنِ
আবু মাস‘ঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কুকুরের মূল্য, যিনার বিনিময়ে সম্পদ এবং ভাগ্য গণনার মাধ্যমে উপার্জন করা হতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৯২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩৮; আবু দাউদ, হা/৩৪৩০; তিরমিযী, হা/১১৩৩; নাসাঈ, হা/৪২৯২; ইবনে মাজাহ, হা/২১৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৫৭; মিশকাত, হা/২৭৬৪।]
অতএব যারা ভাগ্য গণনা করে উপার্জন করে থাকে, তাদের উপার্জন হারাম হিসেবে গণ্য হবে।
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِنِ
আবু মাস‘ঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কুকুরের মূল্য, যিনার বিনিময়ে সম্পদ এবং ভাগ্য গণনার মাধ্যমে উপার্জন করা হতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৯২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩৮; আবু দাউদ, হা/৩৪৩০; তিরমিযী, হা/১১৩৩; নাসাঈ, হা/৪২৯২; ইবনে মাজাহ, হা/২১৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৫৭; মিশকাত, হা/২৭৬৪।]
অতএব যারা ভাগ্য গণনা করে উপার্জন করে থাকে, তাদের উপার্জন হারাম হিসেবে গণ্য হবে।
নারীর দেহকে কেন্দ্র করে যেসব ব্যবসা পরিচালিত হয়, সেটাকেই বলা হয় পতিতাবৃত্তি। সুতরাং নারীর দেহকে কেন্দ্র করে সামান্য কিছু উপার্জন করলেও সেটা পতিতাবৃত্তির উপার্জন হিসেবে গণ্য হবে, এ উপার্জনকে ইসলাম স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : لَا يَحِلُّ ثَمَنُ الْكَلْبِ وَلَا حُلْوَانُ الْكَاهِنِ وَلَا مَهْرُ الْبَغِىِّ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কুকুরের মূল্য গ্রহণ করা, ভাগ্য গণনার মাধ্যমে উপার্জন করা এবং ব্যভিচারের বিনিময় গ্রহণ করা হালাল নয়। [আবু দাউদ, হা/৩৪৮৬; নাসাঈ, হা/৪২৯৩; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪২৮৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৯৮।]
এ বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত সমাজে প্রচলিত যেসব উপার্জন হারাম, তার কয়েকটি নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
ব্যভিচারের মাধ্যমে উপার্জন করা।
ব্লু ফিল্ম তৈরি করার মাধ্যমে উপার্জন করা।
ব্লু ফিল্ম প্রচারের মাধ্যমে উপার্জন করা।
ব্লু ফিল্ম বিক্রির মাধ্যমে উপার্জন করা।
নৃত্য পরিবেশন করার মাধ্যমে উপার্জন করা।
নাচ শিখানোর মাধ্যমে উপার্জন করা।
গান গাওয়ার মাধ্যমে উপার্জন করা।
অভিনয়ের মাধ্যমে উপার্জন করা।
দোকানকে সুন্দরীদের ছবি দিয়ে সাজিয়ে রেখে ক্রেতাকে আকর্ষিত করে ব্যবসা করা।
বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য নারীরা নিজেদের দেহকে বিক্রি করার মাধ্যমে উপার্জন করা।
পত্রিকা প্রচারের উদ্দেশ্যে সুন্দরী নারীদের ছবি ছাপানো।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : لَا يَحِلُّ ثَمَنُ الْكَلْبِ وَلَا حُلْوَانُ الْكَاهِنِ وَلَا مَهْرُ الْبَغِىِّ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কুকুরের মূল্য গ্রহণ করা, ভাগ্য গণনার মাধ্যমে উপার্জন করা এবং ব্যভিচারের বিনিময় গ্রহণ করা হালাল নয়। [আবু দাউদ, হা/৩৪৮৬; নাসাঈ, হা/৪২৯৩; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪২৮৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৯৮।]
এ বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত সমাজে প্রচলিত যেসব উপার্জন হারাম, তার কয়েকটি নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
ব্যভিচারের মাধ্যমে উপার্জন করা।
ব্লু ফিল্ম তৈরি করার মাধ্যমে উপার্জন করা।
ব্লু ফিল্ম প্রচারের মাধ্যমে উপার্জন করা।
ব্লু ফিল্ম বিক্রির মাধ্যমে উপার্জন করা।
নৃত্য পরিবেশন করার মাধ্যমে উপার্জন করা।
নাচ শিখানোর মাধ্যমে উপার্জন করা।
গান গাওয়ার মাধ্যমে উপার্জন করা।
অভিনয়ের মাধ্যমে উপার্জন করা।
দোকানকে সুন্দরীদের ছবি দিয়ে সাজিয়ে রেখে ক্রেতাকে আকর্ষিত করে ব্যবসা করা।
বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য নারীরা নিজেদের দেহকে বিক্রি করার মাধ্যমে উপার্জন করা।
পত্রিকা প্রচারের উদ্দেশ্যে সুন্দরী নারীদের ছবি ছাপানো।
আমানত শব্দটি اَلْاَمْنُ থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো, নিরাপত্তা লাভ করা, বিশ্বাস করা ইত্যাদি। আর আমানতের বিপরীত হচ্ছে খিয়ানত। এর অর্থ হচ্ছে, ক্ষতি করা, বিশ্বাসঘাতকতা করা। কাউকে বিশ্বাস করে তার কাছে কোন কিছু গচ্ছিত রাখা হচ্ছে আমানত। আমানত এমন যাবতীয় চুক্তি, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত, যা মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে অথবা মানুষ ও মানুষের মধ্যে কিংবা জাতি ও জাতির মধ্যে সম্পাদিত হয়ে থাকে। এটা সংরক্ষণ করা ওয়াজিব। আমানত সংরক্ষণ না করাই হচ্ছে খিয়ানত। এটা কবীরা গোনাহের অমত্মর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْاۤ اَمَانَاتِكُمْ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাসঘাতকতা করো না। (সূরা আনফাল- ২৭)
অপর আয়াতে তিনি বলেন,
﴿ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَاْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ﴾
যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করেছে, সে যা আত্মসাৎ করেছে তা নিয়ে কিয়ামতের দিন হাজির হবে; অনন্তর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তারা নির্যাতিত হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৬১)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ --: أَدِّ الْأَمَانَةَ إِلٰى مَنِ ائْتَمَنَكَ وَلَا تَخُنْ مَنْ خَانَكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমার কাছে যে আমানত রেখেছে, তা তাকে প্রত্যার্পণ করো এবং যে তোমার খিয়ানত করেছে, তুমি তার খিয়ানত করো না। [আবু দাউদ, হা/৩৫৩৭; তিরমিযী, হা/১২৬৪; দার কুতনী, হা/২৯৩৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২২৯২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৫৯; মুসনাদে দারেমী, হা/২৬৩৯; জামেউস সগীর, হা/২৪০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪২৩; মিশকাত, হা/২৯৩৪।]
অতএব যে ব্যক্তি আমানতের খিয়ানত করে সে অনেকগুলো পাপের মধ্যে জড়িয়ে যায়। সুতরাং এর মাধ্যমে সকল প্রকার উপার্জন হারাম হিসেবে সাব্যসত্ম হবে। নিম্নে বর্তমান সমাজে প্রচলিত কিছু আমানতের খিয়ানতের চিত্র তুলে ধরা হলো :
জনসাধারণের নামে সরকারি অনুদান নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক আত্মসাৎ করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতিতে আক্রামত্ম এলাকায় সরকারি অনুদান এলে তা হতে এমন বহু লোক আছে যারা ঐ অনুদান আত্মসাৎ করে, অথচ তারা তার হকদার নয়। রাসত্মা, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণের জন্য যে টাকা সরকারের কোষাগার থেকে আসে, তার অনেকটাই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা কুক্ষিগত করে।
কোন জন কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান (মসজিদ, মাদরাসা, ইয়াতীমখানা, বায়তুল মাল প্রভৃতি) এর ক্যাশিয়ার বা কোষাধ্যক্ষ হয়ে তহবিল আত্মসাৎ করা।
মালিকের বিনা অনুমতিতে বেতনভুক্ত কর্মচারী কর্তৃক দোকান থেকে বিভিন্ন জিনিস খাওয়া বা বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ানো।
মালিক কর্তৃক নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাল বিক্রি করে বাড়তি টাকা মেরে দেয়া।
বেতনভুক্ত কর্মচারীর নিজে অতিরিক্ত মাল গোপনে রেখে ব্যবসা করা আর মালিকের মাল বিক্রয় না করা।
দর্জি কর্তৃক মাপ নেয়ার সময় মাপ বেশি ধরে কাপড় চুরি করা।
স্বর্ণকার কর্তৃক সোনা-রূপা থেকে কিছু অংশ চুরি করা এবং তার জায়গায় খাদ ভরে দিয়ে ওজন পূর্ণ করা।
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের মালিক জানা সত্ত্বেও গোপন করে তা ভক্ষণ করা।
ভাগ চাষের ভাগ ঠিকমতো না দেয়া।
মালিকের গাড়ির ভাড়া গোপন করে ভক্ষণ করা।
পার্টনারশিপ ব্যবসায় পার্টনারের টাকা গোপন করে ঠিকমতো ভাগ না দেয়া এবং নিজে বেশি নিয়ে তা খাওয়া।
চাকুরির স্থলে কর্তব্য সঠিকভাবে পালন না করা, গাফলতি করা।
আমানতস্বরূপ রাখা টাকা ব্যবসায় খাটিয়ে লাভ ভোগ করা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মুতাওয়াল্লী, সেক্রেটারী, ক্যাশিয়ার প্রভৃতি যারা টাকা-পয়সার দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাদের কর্তৃক ঐ ফান্ড বা মাল থেকে নিজের কাজে লাগানো।
নকল দলীল, সার্টিফিকেট, ভাউচার প্রভৃতি বানিয়ে জালিয়াতি করে অর্থ উপার্জন করা।
দলীল নকল করে জায়গা-জমি জবরদখল করা।
প্রতিষ্ঠানের বা মালিকের মাল কিনতে গিয়ে কম টাকা দিয়ে ক্রয় করে রশিদে বেশি লেখিয়ে বাকি টাকা নিজে ভোগ করা হারাম।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَخُوْنُوا اللهَ وَالرَّسُوْلَ وَتَخُوْنُوْاۤ اَمَانَاتِكُمْ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাসঘাতকতা করো না। (সূরা আনফাল- ২৭)
অপর আয়াতে তিনি বলেন,
﴿ وَمَنْ يَّغْلُلْ يَاْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ﴾
যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করেছে, সে যা আত্মসাৎ করেছে তা নিয়ে কিয়ামতের দিন হাজির হবে; অনন্তর প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে তা পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তারা নির্যাতিত হবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৬১)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ --: أَدِّ الْأَمَانَةَ إِلٰى مَنِ ائْتَمَنَكَ وَلَا تَخُنْ مَنْ خَانَكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমার কাছে যে আমানত রেখেছে, তা তাকে প্রত্যার্পণ করো এবং যে তোমার খিয়ানত করেছে, তুমি তার খিয়ানত করো না। [আবু দাউদ, হা/৩৫৩৭; তিরমিযী, হা/১২৬৪; দার কুতনী, হা/২৯৩৬; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২২৯২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৫৯; মুসনাদে দারেমী, হা/২৬৩৯; জামেউস সগীর, হা/২৪০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪২৩; মিশকাত, হা/২৯৩৪।]
অতএব যে ব্যক্তি আমানতের খিয়ানত করে সে অনেকগুলো পাপের মধ্যে জড়িয়ে যায়। সুতরাং এর মাধ্যমে সকল প্রকার উপার্জন হারাম হিসেবে সাব্যসত্ম হবে। নিম্নে বর্তমান সমাজে প্রচলিত কিছু আমানতের খিয়ানতের চিত্র তুলে ধরা হলো :
জনসাধারণের নামে সরকারি অনুদান নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক আত্মসাৎ করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতিতে আক্রামত্ম এলাকায় সরকারি অনুদান এলে তা হতে এমন বহু লোক আছে যারা ঐ অনুদান আত্মসাৎ করে, অথচ তারা তার হকদার নয়। রাসত্মা, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণের জন্য যে টাকা সরকারের কোষাগার থেকে আসে, তার অনেকটাই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা কুক্ষিগত করে।
কোন জন কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান (মসজিদ, মাদরাসা, ইয়াতীমখানা, বায়তুল মাল প্রভৃতি) এর ক্যাশিয়ার বা কোষাধ্যক্ষ হয়ে তহবিল আত্মসাৎ করা।
মালিকের বিনা অনুমতিতে বেতনভুক্ত কর্মচারী কর্তৃক দোকান থেকে বিভিন্ন জিনিস খাওয়া বা বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ানো।
মালিক কর্তৃক নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাল বিক্রি করে বাড়তি টাকা মেরে দেয়া।
বেতনভুক্ত কর্মচারীর নিজে অতিরিক্ত মাল গোপনে রেখে ব্যবসা করা আর মালিকের মাল বিক্রয় না করা।
দর্জি কর্তৃক মাপ নেয়ার সময় মাপ বেশি ধরে কাপড় চুরি করা।
স্বর্ণকার কর্তৃক সোনা-রূপা থেকে কিছু অংশ চুরি করা এবং তার জায়গায় খাদ ভরে দিয়ে ওজন পূর্ণ করা।
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের মালিক জানা সত্ত্বেও গোপন করে তা ভক্ষণ করা।
ভাগ চাষের ভাগ ঠিকমতো না দেয়া।
মালিকের গাড়ির ভাড়া গোপন করে ভক্ষণ করা।
পার্টনারশিপ ব্যবসায় পার্টনারের টাকা গোপন করে ঠিকমতো ভাগ না দেয়া এবং নিজে বেশি নিয়ে তা খাওয়া।
চাকুরির স্থলে কর্তব্য সঠিকভাবে পালন না করা, গাফলতি করা।
আমানতস্বরূপ রাখা টাকা ব্যবসায় খাটিয়ে লাভ ভোগ করা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মুতাওয়াল্লী, সেক্রেটারী, ক্যাশিয়ার প্রভৃতি যারা টাকা-পয়সার দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাদের কর্তৃক ঐ ফান্ড বা মাল থেকে নিজের কাজে লাগানো।
নকল দলীল, সার্টিফিকেট, ভাউচার প্রভৃতি বানিয়ে জালিয়াতি করে অর্থ উপার্জন করা।
দলীল নকল করে জায়গা-জমি জবরদখল করা।
প্রতিষ্ঠানের বা মালিকের মাল কিনতে গিয়ে কম টাকা দিয়ে ক্রয় করে রশিদে বেশি লেখিয়ে বাকি টাকা নিজে ভোগ করা হারাম।
মূর্তি ও ছবি হচ্ছে শিরকের উৎপত্তিস্থল। এ কারণেই ইসলামে যে কোন ধরনের মূর্তি বা ছবি তৈরি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর সকল উপার্জনও হারাম উপার্জনের অমত্মর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِيْ جُحَيْفَةَ قَالَ نَهَى النَّبِيُّ عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَثَمَنِ الدَّمِ وَنَهٰى عَنِ الْوَاشِمَةِ وَالْمَوْشُوْمَةِ وَاٰكِلِ الرِّبَا وَمُوْكِلِه وَلَعَنَ الْمُصَوِّرَ
আওন ইবনে আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কুকুর ও রক্তের মূল্য এবং ব্যভিচারের উপার্জন গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করেছেন। আর সুদখোর, সুদদাতা, চেহারা (নকশা করার জন্য) দাগে বা দাগায় এমন নারী এবং মূর্তি (বা ছবি) নির্মাতাকে অভিশম্পাত করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২০৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৭৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২২৯; মুসনাদে আবি ই‘আলা, হা/৮৯০।]
বর্তমান সমাজের আলোকে এ ধরনের উপার্জনের কিছু চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো :
সরাসরি মূর্তি তৈরি করে বিক্রি করা।
বিভিন্ন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করে বিক্রি করা।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে প্রাণীর ছবি তৈরির মাধ্যমে ব্যবসা করা।
যেসব কম্পানিতে প্রাণীর ছবি তৈরি করার জন্য কাজ দেয়া হয় সেসব কম্পানিতে চাকুরি করা।
বড় বড় ব্যক্তিত্বের ভাষ্কর্য তৈরির মাধ্যমে উপার্জন করা।
عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِيْ جُحَيْفَةَ قَالَ نَهَى النَّبِيُّ عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَثَمَنِ الدَّمِ وَنَهٰى عَنِ الْوَاشِمَةِ وَالْمَوْشُوْمَةِ وَاٰكِلِ الرِّبَا وَمُوْكِلِه وَلَعَنَ الْمُصَوِّرَ
আওন ইবনে আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কুকুর ও রক্তের মূল্য এবং ব্যভিচারের উপার্জন গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করেছেন। আর সুদখোর, সুদদাতা, চেহারা (নকশা করার জন্য) দাগে বা দাগায় এমন নারী এবং মূর্তি (বা ছবি) নির্মাতাকে অভিশম্পাত করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২০৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৭৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২২৯; মুসনাদে আবি ই‘আলা, হা/৮৯০।]
বর্তমান সমাজের আলোকে এ ধরনের উপার্জনের কিছু চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো :
সরাসরি মূর্তি তৈরি করে বিক্রি করা।
বিভিন্ন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করে বিক্রি করা।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে প্রাণীর ছবি তৈরির মাধ্যমে ব্যবসা করা।
যেসব কম্পানিতে প্রাণীর ছবি তৈরি করার জন্য কাজ দেয়া হয় সেসব কম্পানিতে চাকুরি করা।
বড় বড় ব্যক্তিত্বের ভাষ্কর্য তৈরির মাধ্যমে উপার্জন করা।
গান-বাজনা হচ্ছে শয়তানের মন্ত্র। শয়তান এর মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে এবং এর মাধ্যমে মানুষকে ইসলাম বিরোধী অনেক ধরনের পাপকর্ম করার আগ্রহ ও সুযোগ তৈরি করে দেয়। যার ফলে ইসলাম এ ধরনের কাজকে হারাম করে দিয়েছে; এমনকি এর মাধ্যমে উপার্জন করতেও নিষেধ করে দিয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ : أنَّ النَّبِيَّ نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الزَّمَّارَةِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কুকুর বিক্রয়ের মূল্য হতে এবং গানের উপার্জন হতে নিষেধ করেছেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৩৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩২৬৫; মিশকাত, হা/২৭৭৯।]
عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : لَا تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلَا تَشْتَرُوْهُنَّ وَلَا تُعَلِّمُوْهُنَّ وَلَا خَيْرَ فِيْ تِجَارَةٍ فِيْهِنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ فِيْ مِثْلِ هٰذَا أُنْزِلَتْ هٰذِهِ الْاٰيَةُ : ﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ﴾ إِلٰى اٰخِرِ الْاٰيَةِ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় করো না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিয়ো না। তাদেরকে দিয়ে ব্যবসা করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই এবং এদের উপার্জনও হারাম, যেমনটি এ আয়াতে বলা হয়েছে- আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা লাহওয়াল হাদীস (গান-বাজনা) ক্রয় করে নেয়, যাতে তারা (লোকদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। [তিরমিযী, হা/১২৮২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৩৭৮; মিশকাত, হা/২৭৮০।]
عَنْ أَبِىْ مَالِكٍ الْأَشْعَرِيُّ اَنَّ النَّبِيَّ يَقُوْلُ لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
আবু মালিক আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে যারা ব্যভিচার, সিল্কের কাপড় পরিধান, মদ্যপান ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৯০; আবু দাউদ, হা/৪০৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৭৫৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৩৩৯; বায়হাকী, হা/২০৭৭৭; জামেউস সগীর, হা/৯৫৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০৬৭; মিশকাত, হা/৫৩৪৩।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلٰى أُمَّتِي الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ وَالْمِزْرَ وَالْكُوْبَةَ وَالْقِنِّيْنَ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল-তবলা এবং বীণাজাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৪৭; জামেউস সগীর, হা/২৬২৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৭০৮।]
বর্তমান যুগে এর সাথে সম্পৃক্ত যেসব কাজকর্ম এ হুকুমের অমত্মর্ভুক্ত হবে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
গান গেয়ে বিনিময় গ্রহণ করা।
বাদ্য বাজিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা।
বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা করা।
গানের ক্যাসেট বিক্রির ব্যবসা করা।
মেমোরিতে গান লোড দেয়ার ব্যবসা করা।
গানের মঞ্চ তৈরি করে অর্থ উপার্জন করা।
গান-বাজনার সরঞ্জামাদি ভাড়া দেয়া।
নৃত্য ও অভিনয়ের মাধ্যমে উপার্জন করা।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ : أنَّ النَّبِيَّ نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الزَّمَّارَةِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কুকুর বিক্রয়ের মূল্য হতে এবং গানের উপার্জন হতে নিষেধ করেছেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৩৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩২৬৫; মিশকাত, হা/২৭৭৯।]
عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : لَا تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلَا تَشْتَرُوْهُنَّ وَلَا تُعَلِّمُوْهُنَّ وَلَا خَيْرَ فِيْ تِجَارَةٍ فِيْهِنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ فِيْ مِثْلِ هٰذَا أُنْزِلَتْ هٰذِهِ الْاٰيَةُ : ﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِيْ لَهْوَ الحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ﴾ إِلٰى اٰخِرِ الْاٰيَةِ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় করো না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিয়ো না। তাদেরকে দিয়ে ব্যবসা করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই এবং এদের উপার্জনও হারাম, যেমনটি এ আয়াতে বলা হয়েছে- আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা লাহওয়াল হাদীস (গান-বাজনা) ক্রয় করে নেয়, যাতে তারা (লোকদেরকে) আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। [তিরমিযী, হা/১২৮২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৩৭৮; মিশকাত, হা/২৭৮০।]
عَنْ أَبِىْ مَالِكٍ الْأَشْعَرِيُّ اَنَّ النَّبِيَّ يَقُوْلُ لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
আবু মালিক আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে যারা ব্যভিচার, সিল্কের কাপড় পরিধান, মদ্যপান ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৯০; আবু দাউদ, হা/৪০৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৭৫৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৩৩৯; বায়হাকী, হা/২০৭৭৭; জামেউস সগীর, হা/৯৫৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০৬৭; মিশকাত, হা/৫৩৪৩।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلٰى أُمَّتِي الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ وَالْمِزْرَ وَالْكُوْبَةَ وَالْقِنِّيْنَ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল-তবলা এবং বীণাজাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৪৭; জামেউস সগীর, হা/২৬২৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৭০৮।]
বর্তমান যুগে এর সাথে সম্পৃক্ত যেসব কাজকর্ম এ হুকুমের অমত্মর্ভুক্ত হবে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
গান গেয়ে বিনিময় গ্রহণ করা।
বাদ্য বাজিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা।
বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা করা।
গানের ক্যাসেট বিক্রির ব্যবসা করা।
মেমোরিতে গান লোড দেয়ার ব্যবসা করা।
গানের মঞ্চ তৈরি করে অর্থ উপার্জন করা।
গান-বাজনার সরঞ্জামাদি ভাড়া দেয়া।
নৃত্য ও অভিনয়ের মাধ্যমে উপার্জন করা।
যেসব প্রাণী ভক্ষণ করা হারাম, সেগুলো বিক্রি করাও হারাম। এগুলো বিক্রি করে তার মূল্য গ্রহণ করতে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِن
আবু মাস‘ঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কুকুরের মূল্য, যিনার বিনিময়ে সম্পদ এবং ভাগ্য গণনার মাধ্যমে উপার্জন করা হতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৯২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩৮; আবু দাউদ, হা/৩৪৩০; তিরমিযী, হা/১১৩৩; নাসাঈ, হা/৪২৯২; ইবনে মাজাহ, হা/২১৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৫৭; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৪৭৭; মিশকাত, হা/২৭৬৪।]
عَنْ أَبِى الزُّبَيْرِ قَالَ سَأَلْتُ جَابِرًا عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَالسِّنَّوْرِ قَالَ زَجَرَ النَّبِىُّ - - عَنْ ذٰلِكَ
আবু যুবায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি জাবির (রাঃ) এর নিকট কুকুর ও বিড়ালের মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, নবী ﷺ এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৯৮; আবু দাউদ, হা/৩৬৮১; তিরমিযী, হা/১২৭৯; নাসাঈ, হা/৪৬৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫১৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৪০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৭৩৮৪; মিশকাত, হা/২৭৬৮।]
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَهٰى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِن
আবু মাস‘ঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কুকুরের মূল্য, যিনার বিনিময়ে সম্পদ এবং ভাগ্য গণনার মাধ্যমে উপার্জন করা হতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৯২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩৮; আবু দাউদ, হা/৩৪৩০; তিরমিযী, হা/১১৩৩; নাসাঈ, হা/৪২৯২; ইবনে মাজাহ, হা/২১৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৫৭; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৪৭৭; মিশকাত, হা/২৭৬৪।]
عَنْ أَبِى الزُّبَيْرِ قَالَ سَأَلْتُ جَابِرًا عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَالسِّنَّوْرِ قَالَ زَجَرَ النَّبِىُّ - - عَنْ ذٰلِكَ
আবু যুবায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি জাবির (রাঃ) এর নিকট কুকুর ও বিড়ালের মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, নবী ﷺ এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৯৮; আবু দাউদ, হা/৩৬৮১; তিরমিযী, হা/১২৭৯; নাসাঈ, হা/৪৬৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫১৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৪০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৭৩৮৪; মিশকাত, হা/২৭৬৮।]
হালাল প্রাণীসমূহের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য কেবল যবেহকৃত প্রাণীসমূহকেই খাওয়া এবং বিক্রি করা বৈধ করেছেন। কিন্তু যেসব প্রাণী বৈধ পন্থায় যবেহ করা বা শিকার করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে মৃত্যুবরণ করে, সেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া, বিক্রি করা এবং তা থেকে অন্য কোন উপায়ে উপকার লাভ করাকে তিনি হারাম করে দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : عَامَ الْفَتْحِ وَهُوَ بِمَكَّةَ إِنَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيْرِ وَالْأَصْنَامِ فَقِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَرَأَيْتَ شُحُوْمَ الْمَيْتَةِ فَإِنَّهَا يُطْلٰى بِهَا السُّفُنُ وَيُدْهَنُ بِهَا الْجُلُوْدُ وَيَسْتَصْبِحُ بِهَا النَّاسُ فَقَالَ : لَا هُوَ حَرَامٌ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عِنْدَ ذٰلِكَ قَاتَلَ اللهُ الْيَهُوْدَ إِنَّ اللهَ لَمَّا حَرَّمَ شُحُوْمَهَا جَمَلُوْهٗ ثُمَّ بَاعُوْهُ فَأَكَلُوْا ثَمَنَهٗ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে মক্কায় থাকাবস্থায় বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম ঘোষণা করেছেন। তখন বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? কেননা তা নৌকায় লাগানো হয়, চামড়ায় ঘষা হয় এবং লোকেরা তা জ্বালানির কাজেও ব্যবহার করে। তিনি বললেন, না- তাও হারাম। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদিদেরকে ধ্বংস করুন। যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য মৃত জমত্মুর চর্বি হারাম করেছেন, এতদসত্ত্বেও তারা মৃত জন্তুর চর্বি গলায়। তারপর তারা তা বিক্রি করে মূল্য ভোগ করে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৩২; আবু দাউদ, হা/৩৪৮৮; তিরমিযী, হা/১২৯৭; নাসাঈ, হা/৪২৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৫১২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৩৬৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৪০; মিশকাত, হা/২৭৬৬।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ الْخَمْرَ وَثَمَنَهَا وَحَرَّمَ الْمَيْتَةَ وَثَمَنَهَا وَحَرَّمَ الْخِنْزِيْرَ وَثَمَنَه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মদ ও তার মূল্য, মৃত ও তার মূল্য এবং শূকর ও তার মূল্যকে হারাম করে দিয়েছেন। [আবু দাউদ, হা/৩৪৮৭; দার কুতনী, হা/২৮১৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৩৭১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২৩৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩৫৮।]
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : عَامَ الْفَتْحِ وَهُوَ بِمَكَّةَ إِنَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيْرِ وَالْأَصْنَامِ فَقِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَرَأَيْتَ شُحُوْمَ الْمَيْتَةِ فَإِنَّهَا يُطْلٰى بِهَا السُّفُنُ وَيُدْهَنُ بِهَا الْجُلُوْدُ وَيَسْتَصْبِحُ بِهَا النَّاسُ فَقَالَ : لَا هُوَ حَرَامٌ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عِنْدَ ذٰلِكَ قَاتَلَ اللهُ الْيَهُوْدَ إِنَّ اللهَ لَمَّا حَرَّمَ شُحُوْمَهَا جَمَلُوْهٗ ثُمَّ بَاعُوْهُ فَأَكَلُوْا ثَمَنَهٗ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে মক্কায় থাকাবস্থায় বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম ঘোষণা করেছেন। তখন বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? কেননা তা নৌকায় লাগানো হয়, চামড়ায় ঘষা হয় এবং লোকেরা তা জ্বালানির কাজেও ব্যবহার করে। তিনি বললেন, না- তাও হারাম। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদিদেরকে ধ্বংস করুন। যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য মৃত জমত্মুর চর্বি হারাম করেছেন, এতদসত্ত্বেও তারা মৃত জন্তুর চর্বি গলায়। তারপর তারা তা বিক্রি করে মূল্য ভোগ করে থাকে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৩২; আবু দাউদ, হা/৩৪৮৮; তিরমিযী, হা/১২৯৭; নাসাঈ, হা/৪২৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৫১২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৩৬৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৪০; মিশকাত, হা/২৭৬৬।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ الْخَمْرَ وَثَمَنَهَا وَحَرَّمَ الْمَيْتَةَ وَثَمَنَهَا وَحَرَّمَ الْخِنْزِيْرَ وَثَمَنَه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মদ ও তার মূল্য, মৃত ও তার মূল্য এবং শূকর ও তার মূল্যকে হারাম করে দিয়েছেন। [আবু দাউদ, হা/৩৪৮৭; দার কুতনী, হা/২৮১৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৩৭১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২৩৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩৫৮।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَهٰى عَنْ بَيْعِ حَبَلِ الْحَبَلَةِ ، وَكَانَ بَيْعًا يَتَبَايَعُه أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ كَانَ الرَّجُلُ يَبْتَاعُ الْجَزُوْرَ إِلٰى أَنْ تُنْتَجَ النَّاقَةُ ثُمَّ تُنْتَجُ الَّتِيْ فِيْ بَطْنِهَا
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ গর্ভস্থিত বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয় করতে বারণ করেছেন। জাহেলিয়াতের যুগে এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হতো। অর্থাৎ কেউ এ চুক্তিতে উট বিক্রয় করত যে, তার (উটের) পেটে বাচ্চা হলে অথবা ঐ বাচ্চার পেটে বাচ্চা হলে সে এর বিনিময় প্রদান করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৪৩; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩৩; সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৮২-৮৩; নাসাঈ, হা/৪৬২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৪৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬১৭৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১১৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১০৭; মিশকাত, হা/২৮৫৫।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ গর্ভস্থিত বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয় করতে বারণ করেছেন। জাহেলিয়াতের যুগে এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হতো। অর্থাৎ কেউ এ চুক্তিতে উট বিক্রয় করত যে, তার (উটের) পেটে বাচ্চা হলে অথবা ঐ বাচ্চার পেটে বাচ্চা হলে সে এর বিনিময় প্রদান করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৪৩; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩৩; সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৮২-৮৩; নাসাঈ, হা/৪৬২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৪৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬১৭৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১১৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১০৭; মিশকাত, হা/২৮৫৫।]
মানুষ হচ্ছে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। সুতরাং তার শরীরটাও তার প্রয়োজনের খাতিরেই তিনি তাকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন। সুতরাং শরীরের কোন অঙ্গ বিক্রি করা বা এর কোন রূপ বিকৃতি ঘটানো আমানতের খিয়ানত হিসেবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে মৃত লাশের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করাও হারাম এবং জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এ শর্তেও বিক্রি করা হরাম যে, সে মৃত্যুবরণ করার পর তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অমুককে দিয়ে দেয়া হবে এবং এর বিনিময়ে তার পরিবারকে এতো পরিমাণ টাকা দিতে হবে।
তবে রক্ত বা অঙ্গ দান করার পর যদি কেউ খুশি হয়ে উপহার স্বরূপ দাতাকে কিছু দেয়, তাহলে তা গ্রহণ করাতে দোষ নেই। যেহেতু তা বিক্রয়ের পর্যায়ভুক্ত নয়।
তবে রক্ত বা অঙ্গ দান করার পর যদি কেউ খুশি হয়ে উপহার স্বরূপ দাতাকে কিছু দেয়, তাহলে তা গ্রহণ করাতে দোষ নেই। যেহেতু তা বিক্রয়ের পর্যায়ভুক্ত নয়।
কাউকে জিম্মি করে তার অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা এক প্রকার ডাকাতি। এ পদ্ধতিতে করায়ত্ব করা সমসত্ম সম্পদ হারাম উপার্জনের অমত্মর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে,
عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ أَخِيْ بَنِيْ فَهْمٍ أَخْبَرَه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ أَكَلَ بِمُسْلِمٍ أَكْلَةً أَطْعَمَهُ اللهُ بِهَا أَكْلَةً مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
বনী ফাহমের ভাই মুসতাওরীদ ইবনে সাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে মাধ্যম বানিয়ে এক গ্রাসও কিছু ভক্ষণ করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে অনুরূপ ভক্ষণ করাবেন। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১৬৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৪০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭১২০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬২৯১; আবু দাউদ, হা/৪৮৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮০৪০; জামেউস সগীর, হা/১১০২৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯৩৪; মিশকাত, হা/৫০৪৭।]
عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ أَخِيْ بَنِيْ فَهْمٍ أَخْبَرَه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ أَكَلَ بِمُسْلِمٍ أَكْلَةً أَطْعَمَهُ اللهُ بِهَا أَكْلَةً مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
বনী ফাহমের ভাই মুসতাওরীদ ইবনে সাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে মাধ্যম বানিয়ে এক গ্রাসও কিছু ভক্ষণ করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে অনুরূপ ভক্ষণ করাবেন। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭১৬৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৪০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭১২০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬২৯১; আবু দাউদ, হা/৪৮৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮০৪০; জামেউস সগীর, হা/১১০২৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯৩৪; মিশকাত, হা/৫০৪৭।]
বর্তমানে প্রতারণামূলক এ ব্যবসার সাথে অনেক চক্রই জড়িয়ে গেছে। তারা কাউকে অপহরণ করে দেশে-বিদেশে বা পতিতালয়ে অথবা অন্য কোন কাজের জন্য বিক্রি করে দেয়। আবার কাউকে উচ্চ বেতনের লোভ দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে ছেড়ে দেয়। আবার কাউকে ভালোবাসার মায়াজালে আবদ্ধ করে অথবা বিবাহের প্ররোচনায় নিয়ে গিয়ে অন্য কোন চক্রের হাতে তুলে দেয় এবং এর বিনিময়ে টাকা আদায় করে। এসবই হারাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ أُتِيَ بِرَجُلٍ يَسْرِقُ الصِّبْيَانَ ، ثُمَّ يَخْرُجُ بِهِمْ فَيَبِيْعُهُمْ فِيْ أَرْضٍ أُخْرٰى فَأَمَرَ بِه رَسُوْلُ اللهِ فَقُطِعَتْ يَدُه
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে শিশুদেরকে চুরি করে ভিন্ন দেশে বিক্রি করে দিত। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত কেটে দিতে আদেশ করেন। [দার কুতনী, হা/৩৪৬২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৬৯১; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/২৪০৭।]
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ أُتِيَ بِرَجُلٍ يَسْرِقُ الصِّبْيَانَ ، ثُمَّ يَخْرُجُ بِهِمْ فَيَبِيْعُهُمْ فِيْ أَرْضٍ أُخْرٰى فَأَمَرَ بِه رَسُوْلُ اللهِ فَقُطِعَتْ يَدُه
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে শিশুদেরকে চুরি করে ভিন্ন দেশে বিক্রি করে দিত। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত কেটে দিতে আদেশ করেন। [দার কুতনী, হা/৩৪৬২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭৬৯১; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/২৪০৭।]
যাদু মূলত একটি ধোঁকা। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শয়তানের সহায়তা বিদ্যমান থাকে। এর মাধ্যমে মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রসত্ম হয়। তাই ইসলাম যাদুর মাধ্যমে উপার্জন করাকে হারাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ - - عَنِ النُّشْرَةِ فَقَالَ هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে যাদু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটি একটি শয়তানের কাজ। [আবু দাউদ, হা/৩৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৬৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭০৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০১০১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮২৯২; মিশকাত, হা/৪৫৫৩।]
এ ক্ষেত্রে যেসব উপার্জন হারাম হিসেবে গণ্য হবে সেগুলো হলো :
যাদু শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে বিনিময় গ্রহণ করা।
যাদুর খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করা।
মানুষকে যাদুর মধ্যে আবদ্ধ করে কোন কিছু গ্রহণ করা।
যাদুর মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে কোন কিছু গ্রহণ করা।
যাদুর খেলা দেখিয়ে লোক জমা করে পণ্য বিক্রি করা।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ - - عَنِ النُّشْرَةِ فَقَالَ هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে যাদু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটি একটি শয়তানের কাজ। [আবু দাউদ, হা/৩৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৬৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭০৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০১০১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮২৯২; মিশকাত, হা/৪৫৫৩।]
এ ক্ষেত্রে যেসব উপার্জন হারাম হিসেবে গণ্য হবে সেগুলো হলো :
যাদু শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে বিনিময় গ্রহণ করা।
যাদুর খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করা।
মানুষকে যাদুর মধ্যে আবদ্ধ করে কোন কিছু গ্রহণ করা।
যাদুর মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে কোন কিছু গ্রহণ করা।
যাদুর খেলা দেখিয়ে লোক জমা করে পণ্য বিক্রি করা।
যারা অনৈসলামিক রাষ্ট্রে ওকালতি ও বিচারকার্য পরিচালনা করে টাকা কামাই করে তাদের এই কামাই বৈধ নয়। কারণ ইসলামের পরিভাষায় যাদেরকে তাগুত বলা হয় তাদের মধ্যে মারাত্মক একটি তাগুত হলো আল্লাহর নাযিলকৃত ওহীর বিধানের পরিবর্তে মানবরচিত বিধান দিয়ে বিচার-ফায়সালাকারী বিচারক। কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِهٖؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا﴾
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, আবার তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়? অথচ তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
এখানে ‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন বিচারককে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন অনুযায়ী বিচার করে। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার না করার পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ ﴾
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না, তারা কাফের। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
﴿وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ ﴾
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না, তারা যালেম (অন্যায়কারী)। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
﴿وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ ﴾
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-ফায়াসালা করে না, তারা ফাসেক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না, আল্লাহ তাদের পরিণাম সম্পর্কে তিনটি বিধান বর্ণনা করেছেন। (এক) তারা কাফের। (দুই) তারা যালেম। (তিন) তারা ফাসেক।
﴿اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ اَنْ يَّتَحَاكَمُوْاۤ اِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ اُمِرُوْاۤ اَنْ يَّكْفُرُوْا بِهٖؕ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ اَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا﴾
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, আবার তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়? অথচ তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
এখানে ‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন বিচারককে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন অনুযায়ী বিচার করে। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার না করার পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ ﴾
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না, তারা কাফের। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
﴿وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ ﴾
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না, তারা যালেম (অন্যায়কারী)। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
﴿وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ ﴾
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-ফায়াসালা করে না, তারা ফাসেক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না, আল্লাহ তাদের পরিণাম সম্পর্কে তিনটি বিধান বর্ণনা করেছেন। (এক) তারা কাফের। (দুই) তারা যালেম। (তিন) তারা ফাসেক।
ধর্ম ব্যবসার মূলে রয়েছে ইলম। এক শ্রেণির উলামা রয়েছে যারা মানুষের নিকট থেকে অসৎ উপায়ে অর্থ গ্রহণ করে থাকে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ﴾
হে মুমিনগণ! পন্ডিত এবং সংসারবিরাগীদের মধ্যে অনেকেই অন্যের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে থাকে। (সূরা তাওবা- ৩৪)
অনেকে আল্লাহর বিধানের অপব্যাখ্যা করে টাকা কামাই করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ يَكْتُبُوْنَ الْكِتَابَ بِاَيْدِيْهِمْۗ ثُمَّ يَقُوْلُوْنَ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ لِيَشْتَرُوْا بِه ثَمَنًا قَلِيْلًا فَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيْهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا يَكْسِبُوْنَ﴾
আফসোস তাদের জন্য যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে! অতঃপর তারা বলে, এগুলো হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ শরীয়তের বিধান- যাতে তারা এর মাধ্যমে সামান্য বিনিময় গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য তাদের শাসিত্ম এবং যা তারা উপার্জন করেছে, তার জন্যও তাদের শাসিত্ম রয়েছে। (সূরা বাক্বারা- ৭৯)
অনেক লোক আছে যারা ইলম অর্জন করে কেবল দুনিয়া অর্জনের জন্য। এর পরিণতি অত্যমত্ম ভয়াবহ। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغٰى بِه وَجْهُ اللهِ لَا يَتَعَلَّمُه اِلَّا لِيُصِيْبَ بِه عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِيْ رِيْحَهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন জ্ঞান অর্জন করে, যা দ্বারা আল্লাহর সমত্মুষ্টি অর্জন করা যায়; আর সে তা কেবল পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে অর্জন করে, তাহলে কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৪৩৮; আবু দাউদ, হা/৩৬৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৫২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৮৮; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৭৩; জামেউস সগীর, হা/১১১০৪; মিশকাত, হা/২২৭।]
عَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِه وُجُوْهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللّٰهُ النَّارَ
কা‘ব ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে আলেমদের উপর গৌরব করার জন্য অথবা মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। [তিরমিযী, হা/২৬৫৪; জামেউস সগীর, হা/১১৩২৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৬; মিশকাত, হা/২২৫।]
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُوْنَ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ﴾
হে মুমিনগণ! পন্ডিত এবং সংসারবিরাগীদের মধ্যে অনেকেই অন্যের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে থাকে। (সূরা তাওবা- ৩৪)
অনেকে আল্লাহর বিধানের অপব্যাখ্যা করে টাকা কামাই করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَوَيْلٌ لِّلَّذِيْنَ يَكْتُبُوْنَ الْكِتَابَ بِاَيْدِيْهِمْۗ ثُمَّ يَقُوْلُوْنَ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ لِيَشْتَرُوْا بِه ثَمَنًا قَلِيْلًا فَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيْهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا يَكْسِبُوْنَ﴾
আফসোস তাদের জন্য যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে! অতঃপর তারা বলে, এগুলো হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ শরীয়তের বিধান- যাতে তারা এর মাধ্যমে সামান্য বিনিময় গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য তাদের শাসিত্ম এবং যা তারা উপার্জন করেছে, তার জন্যও তাদের শাসিত্ম রয়েছে। (সূরা বাক্বারা- ৭৯)
অনেক লোক আছে যারা ইলম অর্জন করে কেবল দুনিয়া অর্জনের জন্য। এর পরিণতি অত্যমত্ম ভয়াবহ। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغٰى بِه وَجْهُ اللهِ لَا يَتَعَلَّمُه اِلَّا لِيُصِيْبَ بِه عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِيْ رِيْحَهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন জ্ঞান অর্জন করে, যা দ্বারা আল্লাহর সমত্মুষ্টি অর্জন করা যায়; আর সে তা কেবল পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে অর্জন করে, তাহলে কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৪৩৮; আবু দাউদ, হা/৩৬৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৫২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৮৮; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৭৩; জামেউস সগীর, হা/১১১০৪; মিশকাত, হা/২২৭।]
عَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِه وُجُوْهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللّٰهُ النَّارَ
কা‘ব ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে আলেমদের উপর গৌরব করার জন্য অথবা মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। [তিরমিযী, হা/২৬৫৪; জামেউস সগীর, হা/১১৩২৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৬; মিশকাত, হা/২২৫।]
মীলাদ হচ্ছে ইসলামে নতুন আবিষ্কৃত একটি বিদআত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের শরীয়তে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে, যা তার (শরীয়তের) মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যাত। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭; জামেউস সগীর, হা/১০৯১৪; মিশকাত, হা/১৪০।]
আমাদের সমাজের অনেক আলেমকেই বেশ গুরুত্বের সাথে এটাকে পালন করতে দেখা যায়। তারা এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাদিয়া হিসেবে অর্থ গ্রহণ করে থাকে। অথচ উপরোক্ত হাদীস অনুযায়ী এসব কাজকর্ম সম্পূর্ণভাবে হারাম এবং এর মাধ্যমে সকল প্রকার উপার্জনও অবৈধ।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের শরীয়তে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে, যা তার (শরীয়তের) মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যাত। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭; জামেউস সগীর, হা/১০৯১৪; মিশকাত, হা/১৪০।]
আমাদের সমাজের অনেক আলেমকেই বেশ গুরুত্বের সাথে এটাকে পালন করতে দেখা যায়। তারা এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাদিয়া হিসেবে অর্থ গ্রহণ করে থাকে। অথচ উপরোক্ত হাদীস অনুযায়ী এসব কাজকর্ম সম্পূর্ণভাবে হারাম এবং এর মাধ্যমে সকল প্রকার উপার্জনও অবৈধ।
তাবিজ সাধারণত তিন প্রকার হয়ে থাকে। সেগুলো হলো :
১. এক প্রকার তাবিজ আছে, যা একটি কাগজের মধ্যে নক্সা বানিয়ে সংখ্যা লিখে অথবা কোন ফেরেশতা, জিন কিংবা শয়তানের নাম ছক আকারে লিখে অথবা কোন যাদুবিদ্যার সাহায্য নিয়ে অবোধগম্য বাক্য লিখে তৈরি করা হয়।
২. আরেক প্রকার তাবিজ আছে, যা কোন ধাতু, পশু-পাখির হাড়, লোম বা পালক কিংবা গাছের শিকড় দিয়ে অথবা মসজিদ, পীরতলা, কবর বা মাযারের ধুলা দিয়ে অথবা কোন বুযুর্গের মাথার পাগড়ী, কবরে জড়ানো চাদরের অংশ, কাবা ঘরের গিলাফের সুতো, মক্কা-মদীনার মাটি ইত্যাদি দিয়ে বানানো হয়। আবার এমন তাবিজও আছে, যা গাজাখোর ফকীরদের গাজার ছাই বা অন্য কোন নোংরা জিনিস দিয়ে তৈরি করা হয়।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই দুই প্রকার তাবিজ শিরকের অমত্মর্ভুক্ত। সুতরাং এই দুই প্রকার তাবিজের মাধ্যমে যত ধরনের আয়-উপার্জন হবে সবগুলো বাতিল ও হারাম হিসেবে গণ্য হবে।
৩. তৃতীয়ত আরেক প্রকার তাবিজ আছে, যা কুরআনের আয়াত কাগজে লিখে তৈরি করা হয়। এ প্রকার তাবিজের ব্যাপারে কেউ কেউ জায়েয বললেও তা ব্যবহার করা যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ সাধারণভাবে সকল প্রকার তাবিজ ব্যবহারকে শিরক হিসেবে সাব্যসত্ম করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ أَقْبَلَ إِلَيْهِ رَهْطٌ فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ فَقَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، بَايَعْتَ تِسْعَةً وَتَرَكْتَ هٰذَا ؟ قَالَ : إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيْمَةً فَأَدْخَلَ يَدَه فَقَطَعَهَا فَبَايَعَه ، وَقَالَ : مَنْ عَلَّقَ تَمِيْمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
উকবা ইবনে আমের আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট দশ জন লোক বাই‘আতের জন্য উপস্থিত হলো। অতঃপর তিনি নয় জনের কাছ থেকে বাই‘আত নিলেন এবং একজনের কাছ থেকে বাই‘আত নিলেন না। তখন তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নয় জনের বাই‘আত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এক জনের বাই‘আত গ্রহণ করলেন না কেন? তিনি বললেন, ওর দেহে তাবিজ আছে। অতঃপর তিনি নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর তার নিকট থেকেও বাই‘আত নিলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তাবিজ লটকাল সে শিরক করল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪২৯৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪৯২।]
১. এক প্রকার তাবিজ আছে, যা একটি কাগজের মধ্যে নক্সা বানিয়ে সংখ্যা লিখে অথবা কোন ফেরেশতা, জিন কিংবা শয়তানের নাম ছক আকারে লিখে অথবা কোন যাদুবিদ্যার সাহায্য নিয়ে অবোধগম্য বাক্য লিখে তৈরি করা হয়।
২. আরেক প্রকার তাবিজ আছে, যা কোন ধাতু, পশু-পাখির হাড়, লোম বা পালক কিংবা গাছের শিকড় দিয়ে অথবা মসজিদ, পীরতলা, কবর বা মাযারের ধুলা দিয়ে অথবা কোন বুযুর্গের মাথার পাগড়ী, কবরে জড়ানো চাদরের অংশ, কাবা ঘরের গিলাফের সুতো, মক্কা-মদীনার মাটি ইত্যাদি দিয়ে বানানো হয়। আবার এমন তাবিজও আছে, যা গাজাখোর ফকীরদের গাজার ছাই বা অন্য কোন নোংরা জিনিস দিয়ে তৈরি করা হয়।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই দুই প্রকার তাবিজ শিরকের অমত্মর্ভুক্ত। সুতরাং এই দুই প্রকার তাবিজের মাধ্যমে যত ধরনের আয়-উপার্জন হবে সবগুলো বাতিল ও হারাম হিসেবে গণ্য হবে।
৩. তৃতীয়ত আরেক প্রকার তাবিজ আছে, যা কুরআনের আয়াত কাগজে লিখে তৈরি করা হয়। এ প্রকার তাবিজের ব্যাপারে কেউ কেউ জায়েয বললেও তা ব্যবহার করা যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ সাধারণভাবে সকল প্রকার তাবিজ ব্যবহারকে শিরক হিসেবে সাব্যসত্ম করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ أَقْبَلَ إِلَيْهِ رَهْطٌ فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ فَقَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، بَايَعْتَ تِسْعَةً وَتَرَكْتَ هٰذَا ؟ قَالَ : إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيْمَةً فَأَدْخَلَ يَدَه فَقَطَعَهَا فَبَايَعَه ، وَقَالَ : مَنْ عَلَّقَ تَمِيْمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
উকবা ইবনে আমের আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট দশ জন লোক বাই‘আতের জন্য উপস্থিত হলো। অতঃপর তিনি নয় জনের কাছ থেকে বাই‘আত নিলেন এবং একজনের কাছ থেকে বাই‘আত নিলেন না। তখন তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নয় জনের বাই‘আত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এক জনের বাই‘আত গ্রহণ করলেন না কেন? তিনি বললেন, ওর দেহে তাবিজ আছে। অতঃপর তিনি নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর তার নিকট থেকেও বাই‘আত নিলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তাবিজ লটকাল সে শিরক করল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪২৯৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪৯২।]
যেসব ঝাড়ফুঁকের সাথে শিরক, বিদআত ও বিভিন্ন কুসংস্কার মিশ্রিত হয়ে যায়, নিঃসন্দেহে সেটা হারাম এবং এর মাধ্যমে হাদিয়া হিসেবে যা কিছু গ্রহণ করা হবে তাও হারাম হিসেবে সাব্যসত্ম হবে। যেমন-
১. ঝাড়ফুঁক করার সময় শিরকী বাক্য ও মন্ত্র ব্যবহার করা।
২. কোন দেব-দেবী, ফেরেশতা, জিন, শয়তান, ওলী-আওলিয়ার নাম নিয়ে ঝাড়ফুঁক করা।
৩. মনগড়া বাক্য দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা ইত্যাদি।
তবে কুরআনের আয়াত এবং সহীহ দু‘আ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা জায়েয আছে।
১. ঝাড়ফুঁক করার সময় শিরকী বাক্য ও মন্ত্র ব্যবহার করা।
২. কোন দেব-দেবী, ফেরেশতা, জিন, শয়তান, ওলী-আওলিয়ার নাম নিয়ে ঝাড়ফুঁক করা।
৩. মনগড়া বাক্য দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা ইত্যাদি।
তবে কুরআনের আয়াত এবং সহীহ দু‘আ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা জায়েয আছে।
ইসালে সওয়াব উপলক্ষে খতমে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে নাজায়েয। এজন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদের ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করানো বা অন্য কোন দু‘আ-কালাম ও অযিফা পড়ানো হারাম। যে পড়াবে এবং যে পড়বে, তারা উভয়ই গুনাহগার হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِِ بْنِ شِبْلٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : اِقْرَؤُوا الْقُرْاٰنَ وَلَا تَغْلُوْا فِيْهِ ، وَلَا تَجْفُوْا عَنْهُ ، وَلَا تَأْكُلُوْا بِهٖ ، وَلَا تَسْتَكْثِرُوْا بِهٖ
আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পাঠ করো এবং তার ব্যাপারে অবজ্ঞা প্রদর্শন ও অতিরঞ্জন করো না এবং তার মাধ্যমে উদর পূর্তি ও ধনবৃদ্ধি করো না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৬৮।]
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِِ بْنِ شِبْلٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : اِقْرَؤُوا الْقُرْاٰنَ وَلَا تَغْلُوْا فِيْهِ ، وَلَا تَجْفُوْا عَنْهُ ، وَلَا تَأْكُلُوْا بِهٖ ، وَلَا تَسْتَكْثِرُوْا بِهٖ
আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পাঠ করো এবং তার ব্যাপারে অবজ্ঞা প্রদর্শন ও অতিরঞ্জন করো না এবং তার মাধ্যমে উদর পূর্তি ও ধনবৃদ্ধি করো না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৬৮।]
কুরআনের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করে কিছু গ্রহণ করা জায়েয আছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ خَارِجَةَ بْنِ الصَّلْتِ التَّمِيْمِىِّ عَنْ عَمِّه قَالَ أَقْبَلْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُوْلِ اللهِ - - فَأَتَيْنَا عَلٰى حَىٍّ مِنَ الْعَرَبِ فَقَالُوْا إِنَّا أُنْبِئْنَا أَنَّكُمْ جِئْتُمْ مِنْ عِنْدِ هٰذَا الرَّجُلِ بِخَيْرٍ فَهَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ دَوَاءٍ أَوْ رُقْيَةٍ فَإِنَّ عِنْدَنَا مَعْتُوْهًا فِى الْقُيُوْدِ قَالَ فَقُلْنَا نَعَمْ . قَالَ فَجَاءُوْا بِمَعْتُوْهٍ فِى الْقُيُوْدِ - قَالَ - فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ غُدْوَةً وَعَشِيَّةً كُلَّمَا خَتَمْتُهَا أَجْمَعُ بُزَاقِىْ ثُمَّ أَتْفُلُ فَكَأَنَّمَا نُشِطَ مِنْ عِقَالٍ قَالَ فَأَعْطَوْنِىْ جُعْلًا فَقُلْتُ لَا حَتّٰى أَسْأَلَ رَسُوْلَ اللهِ - - فَقَالَ كُلْ فَلَعَمْرِىْ مَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةِ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةِ حَقٍّ
খারজা ইবনে সালত আত তামীমী (রহ.) তার চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট হতে রওয়ানা করলাম এবং একটি আরব গোত্রের নিকট পৌঁছলাম। তারা বলল, আমরা সংবাদ পেয়েছি যে, আপনারা এই ব্যক্তির (নবীর) নিকট হতে কল্যাণ নিয়ে এসেছেন। সুতরাং আপনাদের নিকট কি কোন ঔষধ বা মন্ত্র আছে? কারণ আমাদের নিকট বন্ধনে আবদ্ধ একটি পাগল আছে। আমরা বললাম, হ্যাঁ- আছে। রাবী বলেন, তারা বন্ধন সহকারে পাগলটাকে নিয়ে আসলো। অতঃপর আমি তিন দিন পর্যমত্ম সকাল-বিকাল তার উপর সূরা ফাতিহা পাঠ করলাম এবং আমি আমার থুথু একত্র করে তার উপর মারলাম। তিনি বলেন, এতে সে যেন হঠাৎ বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তারা আমাকে কিছু পারিশ্রমিক দিল। আমি বললাম, না- (এটা আমি গ্রহণ করব না) যতক্ষণ না আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করি। (অতঃপর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম)। তিনি বললেন, খাও; আমার জীবনের শপথ, অবশ্য যে ব্যক্তি বাতিল মন্ত্র দ্বারা খায় (সে খায় বাতিল পন্থায়) আর তুমি তো খাচ্ছ সত্য মন্ত্র দ্বারা। [আবু দাউদ, হা/৩৯০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৮৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৮০৪; মিশকাত, হা/২৯৮৬।]
عَنْ خَارِجَةَ بْنِ الصَّلْتِ التَّمِيْمِىِّ عَنْ عَمِّه قَالَ أَقْبَلْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُوْلِ اللهِ - - فَأَتَيْنَا عَلٰى حَىٍّ مِنَ الْعَرَبِ فَقَالُوْا إِنَّا أُنْبِئْنَا أَنَّكُمْ جِئْتُمْ مِنْ عِنْدِ هٰذَا الرَّجُلِ بِخَيْرٍ فَهَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ دَوَاءٍ أَوْ رُقْيَةٍ فَإِنَّ عِنْدَنَا مَعْتُوْهًا فِى الْقُيُوْدِ قَالَ فَقُلْنَا نَعَمْ . قَالَ فَجَاءُوْا بِمَعْتُوْهٍ فِى الْقُيُوْدِ - قَالَ - فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ غُدْوَةً وَعَشِيَّةً كُلَّمَا خَتَمْتُهَا أَجْمَعُ بُزَاقِىْ ثُمَّ أَتْفُلُ فَكَأَنَّمَا نُشِطَ مِنْ عِقَالٍ قَالَ فَأَعْطَوْنِىْ جُعْلًا فَقُلْتُ لَا حَتّٰى أَسْأَلَ رَسُوْلَ اللهِ - - فَقَالَ كُلْ فَلَعَمْرِىْ مَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةِ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةِ حَقٍّ
খারজা ইবনে সালত আত তামীমী (রহ.) তার চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট হতে রওয়ানা করলাম এবং একটি আরব গোত্রের নিকট পৌঁছলাম। তারা বলল, আমরা সংবাদ পেয়েছি যে, আপনারা এই ব্যক্তির (নবীর) নিকট হতে কল্যাণ নিয়ে এসেছেন। সুতরাং আপনাদের নিকট কি কোন ঔষধ বা মন্ত্র আছে? কারণ আমাদের নিকট বন্ধনে আবদ্ধ একটি পাগল আছে। আমরা বললাম, হ্যাঁ- আছে। রাবী বলেন, তারা বন্ধন সহকারে পাগলটাকে নিয়ে আসলো। অতঃপর আমি তিন দিন পর্যমত্ম সকাল-বিকাল তার উপর সূরা ফাতিহা পাঠ করলাম এবং আমি আমার থুথু একত্র করে তার উপর মারলাম। তিনি বলেন, এতে সে যেন হঠাৎ বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তারা আমাকে কিছু পারিশ্রমিক দিল। আমি বললাম, না- (এটা আমি গ্রহণ করব না) যতক্ষণ না আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করি। (অতঃপর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম)। তিনি বললেন, খাও; আমার জীবনের শপথ, অবশ্য যে ব্যক্তি বাতিল মন্ত্র দ্বারা খায় (সে খায় বাতিল পন্থায়) আর তুমি তো খাচ্ছ সত্য মন্ত্র দ্বারা। [আবু দাউদ, হা/৩৯০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৮৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৮০৪; মিশকাত, হা/২৯৮৬।]
বর্তমান সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি খুব পরিচিত একটি পেশা। অনেক লোক এমন রয়েছে, যারা ভিক্ষাবৃত্তিকেই নিজেদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে। আবার এজন্য অনেকেই অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে। অথচ ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتّٰى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِيْ وَجْهِه مُزْعَةُ لَحْمٍ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, কেউ কেউ সর্বদা মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে থাকে। পরিশেষে সে যখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তার মুখমন্ডলে এক টুকরাও মাংস থাকবে না। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৭৪; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/২৩৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৬২২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩২৩৩।]
বর্তমান সমাজে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে থাকে, তারা কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমন-
১. অনেকে ভিক্ষা করাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। সুতরাং তারা প্রয়োজনে অথবা অপ্রয়োজনে সর্বাবস্থায় ভিক্ষা করে থাকে। এভাবে ভিক্ষা করা বৈধ নয়।
২. আবার অনেকে কেবল প্রয়োজনের খাতিরে ভিক্ষা করে থাকে। তারা সত্যিকার অর্থেই উপার্জন করতে সক্ষম নয় এবং তাদের জীবিকা উপার্জনের অন্য কোন পথও নেই। এ ক্ষেত্রে তাদের ততটুকু পরিমাণ ভিক্ষা করার সুযোগ আছে, যতটুকু পরিমাণ সম্পদ হলে তার দিন অতিবাহিত হয়ে যাবে।
যেসব ক্ষেত্রে কোন কিছু চাওয়া বৈধ :
ইসলামে একামত্ম নিরুপায় অবস্থা ছাড়া অপরের নিকট হাত পাতা বৈধ নয়। এ ক্ষেত্রে ইসলাম তিন ধরনের ব্যক্তিকে অনুমোদন প্রদান করেছে। যেমন-
১. যে ব্যক্তি অর্থদন্ডে পড়বে (কারো দিয়াত বা জরিমানা দেয়ার যামিন হবে) তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করে দেবে।
২. যে ব্যক্তি দুর্যোগগ্রসত্ম হবে এবং যার ধনসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যমত্ম চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছলতা ফিরে না আসে।
৩. যে ব্যক্তি উপার্জন করতে অক্ষম হয়ে পড়বে তার জন্য চাওয়া বৈধ।
এ ছাড়া অন্য কোন লোকের জন্য চেয়ে খাওয়া বৈধ নয়।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتّٰى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِيْ وَجْهِه مُزْعَةُ لَحْمٍ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, কেউ কেউ সর্বদা মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে থাকে। পরিশেষে সে যখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তার মুখমন্ডলে এক টুকরাও মাংস থাকবে না। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৭৪; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/২৩৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৬২২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩২৩৩।]
বর্তমান সমাজে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে থাকে, তারা কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমন-
১. অনেকে ভিক্ষা করাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। সুতরাং তারা প্রয়োজনে অথবা অপ্রয়োজনে সর্বাবস্থায় ভিক্ষা করে থাকে। এভাবে ভিক্ষা করা বৈধ নয়।
২. আবার অনেকে কেবল প্রয়োজনের খাতিরে ভিক্ষা করে থাকে। তারা সত্যিকার অর্থেই উপার্জন করতে সক্ষম নয় এবং তাদের জীবিকা উপার্জনের অন্য কোন পথও নেই। এ ক্ষেত্রে তাদের ততটুকু পরিমাণ ভিক্ষা করার সুযোগ আছে, যতটুকু পরিমাণ সম্পদ হলে তার দিন অতিবাহিত হয়ে যাবে।
যেসব ক্ষেত্রে কোন কিছু চাওয়া বৈধ :
ইসলামে একামত্ম নিরুপায় অবস্থা ছাড়া অপরের নিকট হাত পাতা বৈধ নয়। এ ক্ষেত্রে ইসলাম তিন ধরনের ব্যক্তিকে অনুমোদন প্রদান করেছে। যেমন-
১. যে ব্যক্তি অর্থদন্ডে পড়বে (কারো দিয়াত বা জরিমানা দেয়ার যামিন হবে) তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করে দেবে।
২. যে ব্যক্তি দুর্যোগগ্রসত্ম হবে এবং যার ধনসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যমত্ম চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছলতা ফিরে না আসে।
৩. যে ব্যক্তি উপার্জন করতে অক্ষম হয়ে পড়বে তার জন্য চাওয়া বৈধ।
এ ছাড়া অন্য কোন লোকের জন্য চেয়ে খাওয়া বৈধ নয়।
শেয়ার শব্দের অর্থ হচ্ছে শরীক হওয়া, অংশীদার হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং যেসব ব্যবসায় দুই বা ততোধিক পক্ষ অংশীদার থাকে, সেসব ব্যবসাকে শেয়ার ব্যবসা বলা হয়।
শেয়ার ব্যবসার ক্ষেত্রে শর্তসমূহ :
ইসলামে শেয়ার ব্যবসার জন্য পৃথকভাবে কোন শর্ত না থাকলেও ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের যাবতীয় শর্তসমূহ এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং এ ধরনের ব্যবসা ঐসব শর্তসমূহ দিয়েই পরিচালিত হবে। যেমন-
১. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সেসব কম্পানির মূল পণ্য হালাল হতে হবে। সুতরাং যেসব পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা ইসলামে নিষিদ্ধ, সেসব পণ্যের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত কম্পানির শেয়ার ক্রয় করা যাবে না।
২. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সেসব কম্পানির যাবতীয় লেনদেন বৈধ হতে হবে। অর্থাৎ যেসব কম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না, সেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করা যাবে না।
৩. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সত্যিকার অর্থেই সেসব কম্পানির অসিত্মত্ব থাকতে হবে। সুতরাং যেসব কম্পানির কোন অসিত্মত্ব তথা বাসত্মবে কোন কম্পানি নেই কিন্তু টাকা-পয়সার লেনদেনের ক্ষেত্রে এর অসিত্মত্ব বিদ্যমান সেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করা যাবে না।
৪. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সেসব কম্পানির পুঁজি বৈধ হতে হবে। সুতরাং সেসব কম্পানির মূল পুঁজি যদি সুদের ভিত্তিতে গড়ে উঠে, তাহলে সেসব কম্পানির শেয়ারও ক্রয় করা যাবে না।
৫. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সেসব কম্পানির লেনদেন সুদমুক্ত কি না সেটা নিশ্চিত হতে হবে। যেসব কম্পানির সুদমুক্ত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহ থাকে, সেসব কম্পানির শেয়ারও ক্রয় করা যাবে না।
৬. শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের পদ্ধতিও বৈধ হতে হবে। যেসব শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ইসলামিক নীতি অনুসরণ করা হয় না, সেসব শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ নয়।
৭. ক্রয়-বিক্রয়ের সাধারণ নিয়ম হলো উভয় পক্ষ উপস্থিত থেকে এক পক্ষ প্রসত্মাব দিবে এবং অপর পক্ষ সম্মতি দিবে। সুতরাং শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও উভয় পক্ষ উপস্থিত থেকে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
৮. বিক্রীত শেয়ার পরিপূর্ণভাবে হসত্মামত্মরযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ ক্রয়কৃত শেয়ারে ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।
প্রচলিত শেয়ার ব্যবসা ও তার হুকুম :
এ কথা সুস্পষ্ট যে, বর্তমানে আমরা যেটাকে শেয়ার ব্যবসা বলে জানি, তাতে ইসলামের নীতি অনুসরণ করা হয় না। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :
১. বর্তমানে যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয় সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশ কম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না।
২. বর্তমানে শেয়ার বাজারে অনেক কম্পানি এমন রয়েছে, যেগুলোর মূলত কোন অসিত্মত্বই নেই। সেগুলোর অসিত্মত্ব কেবল টাকা-পয়সার উপরই বিদ্যমান। যার কারণে এটি একধরনের প্রতারণা। অথচ ইসলামে প্রতারণা করা কঠোরভাবে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।
৩. বর্তমানে শেয়ার বাজারের অধিকাংশ কম্পানিই সুদী কারবারের সাথে জড়িত।
৪. বর্তমানে যেসব পদ্ধতিতে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয় সেটা ইসলামী ক্রয়-বিক্রয়ের নীতি অনুযায়ী অনুমোদিত নয়। কেননা এসব ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে না। সুতরাং এতে ক্রয়-বিক্রয়ের সরাসরি প্রসত্মাব ও গ্রহণনীতিরও অনুসরণ করা হয় না।
৫. বর্তমানে যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা হয় সেগুলোর অধিকাংশের পুঁজিও হালাল নয়।
তাই ইসলাম শেয়ার ব্যবসার অনুমোদন দিলেও বর্তমানে যেসব পদ্ধতিতে শেয়ার ব্যবসা সংঘটিত হচ্ছে সেগুলো শরীয়ত সম্মত নয়।
শেয়ার ব্যবসার ক্ষেত্রে শর্তসমূহ :
ইসলামে শেয়ার ব্যবসার জন্য পৃথকভাবে কোন শর্ত না থাকলেও ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের যাবতীয় শর্তসমূহ এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং এ ধরনের ব্যবসা ঐসব শর্তসমূহ দিয়েই পরিচালিত হবে। যেমন-
১. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সেসব কম্পানির মূল পণ্য হালাল হতে হবে। সুতরাং যেসব পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা ইসলামে নিষিদ্ধ, সেসব পণ্যের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত কম্পানির শেয়ার ক্রয় করা যাবে না।
২. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সেসব কম্পানির যাবতীয় লেনদেন বৈধ হতে হবে। অর্থাৎ যেসব কম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না, সেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করা যাবে না।
৩. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সত্যিকার অর্থেই সেসব কম্পানির অসিত্মত্ব থাকতে হবে। সুতরাং যেসব কম্পানির কোন অসিত্মত্ব তথা বাসত্মবে কোন কম্পানি নেই কিন্তু টাকা-পয়সার লেনদেনের ক্ষেত্রে এর অসিত্মত্ব বিদ্যমান সেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করা যাবে না।
৪. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সেসব কম্পানির পুঁজি বৈধ হতে হবে। সুতরাং সেসব কম্পানির মূল পুঁজি যদি সুদের ভিত্তিতে গড়ে উঠে, তাহলে সেসব কম্পানির শেয়ারও ক্রয় করা যাবে না।
৫. যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয় করবে, সেসব কম্পানির লেনদেন সুদমুক্ত কি না সেটা নিশ্চিত হতে হবে। যেসব কম্পানির সুদমুক্ত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহ থাকে, সেসব কম্পানির শেয়ারও ক্রয় করা যাবে না।
৬. শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের পদ্ধতিও বৈধ হতে হবে। যেসব শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ইসলামিক নীতি অনুসরণ করা হয় না, সেসব শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ নয়।
৭. ক্রয়-বিক্রয়ের সাধারণ নিয়ম হলো উভয় পক্ষ উপস্থিত থেকে এক পক্ষ প্রসত্মাব দিবে এবং অপর পক্ষ সম্মতি দিবে। সুতরাং শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও উভয় পক্ষ উপস্থিত থেকে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
৮. বিক্রীত শেয়ার পরিপূর্ণভাবে হসত্মামত্মরযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ ক্রয়কৃত শেয়ারে ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।
প্রচলিত শেয়ার ব্যবসা ও তার হুকুম :
এ কথা সুস্পষ্ট যে, বর্তমানে আমরা যেটাকে শেয়ার ব্যবসা বলে জানি, তাতে ইসলামের নীতি অনুসরণ করা হয় না। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :
১. বর্তমানে যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয় সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশ কম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না।
২. বর্তমানে শেয়ার বাজারে অনেক কম্পানি এমন রয়েছে, যেগুলোর মূলত কোন অসিত্মত্বই নেই। সেগুলোর অসিত্মত্ব কেবল টাকা-পয়সার উপরই বিদ্যমান। যার কারণে এটি একধরনের প্রতারণা। অথচ ইসলামে প্রতারণা করা কঠোরভাবে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।
৩. বর্তমানে শেয়ার বাজারের অধিকাংশ কম্পানিই সুদী কারবারের সাথে জড়িত।
৪. বর্তমানে যেসব পদ্ধতিতে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয় সেটা ইসলামী ক্রয়-বিক্রয়ের নীতি অনুযায়ী অনুমোদিত নয়। কেননা এসব ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে না। সুতরাং এতে ক্রয়-বিক্রয়ের সরাসরি প্রসত্মাব ও গ্রহণনীতিরও অনুসরণ করা হয় না।
৫. বর্তমানে যেসব কম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা হয় সেগুলোর অধিকাংশের পুঁজিও হালাল নয়।
তাই ইসলাম শেয়ার ব্যবসার অনুমোদন দিলেও বর্তমানে যেসব পদ্ধতিতে শেয়ার ব্যবসা সংঘটিত হচ্ছে সেগুলো শরীয়ত সম্মত নয়।
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের পথকে প্রশসত্ম করে দিয়েছেন। যার মাধ্যমে হালাল উপার্জন করা সম্ভব হয়। আল্লাহ রিযিক আহরণ করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র ও উপায়-উপকরণ তৈরি করে দিয়েছেন। তাই আমাদের কর্তব্য হলো এসব উপায়-উপকরণ ব্যবহার করে হালাল রিযিক উপার্জনের চেষ্টা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ﴾
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিক-দিগন্তে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো। (জেনে রেখো) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মুলক- ১৫)
যেসব জিনিস পবিত্র ও হালাল কেবল সেসব বসত্মুকে কেন্দ্র করে উপার্জন করা হালাল হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَسْأَلُوْنَكَ مَاذَاۤ أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ﴾
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে যে, তাদের জন্য কী কী (বসত্মু) হালাল করা হয়েছে। বলো, তোমাদের জন্য কেবল পবিত্র বসত্মুসমূহ হালাল করা হয়েছে।
(সূরা মায়েদা- ৪)
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًاؗ وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوُّ مُّبِيْنٌ﴾
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
(সূরা বাক্বারা- ১৬৮)
কোন বসত্মু পবিত্র হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। তা হলো-
১. বসত্মুটি মূলগতভাবে পবিত্র হওয়া। যেমন- মৃত জমত্মু, রক্ত, শূকর, হিংস্র প্রাণী ইত্যাদি না হওয়া।
২. বসত্মুটি অর্জনের মাধ্যম পবিত্র ও ভেজালমুক্ত হওয়া। যেমন- সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, ধোঁকা, চুরি, ডাকাতি, যুলুম ইত্যাদি থেকে মুক্ত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً۪ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ (চক্রবৃদ্ধি হারে) সুদ ভক্ষণ করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১৩০)
﴿هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَ رْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهٖؕ وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ﴾
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিক-দিগন্তে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো। (জেনে রেখো) তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা মুলক- ১৫)
যেসব জিনিস পবিত্র ও হালাল কেবল সেসব বসত্মুকে কেন্দ্র করে উপার্জন করা হালাল হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَسْأَلُوْنَكَ مَاذَاۤ أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ﴾
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে যে, তাদের জন্য কী কী (বসত্মু) হালাল করা হয়েছে। বলো, তোমাদের জন্য কেবল পবিত্র বসত্মুসমূহ হালাল করা হয়েছে।
(সূরা মায়েদা- ৪)
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِى الْاَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًاؗ وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِؕ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوُّ مُّبِيْنٌ﴾
হে মানবজাতি! পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র তা হতে খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
(সূরা বাক্বারা- ১৬৮)
কোন বসত্মু পবিত্র হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। তা হলো-
১. বসত্মুটি মূলগতভাবে পবিত্র হওয়া। যেমন- মৃত জমত্মু, রক্ত, শূকর, হিংস্র প্রাণী ইত্যাদি না হওয়া।
২. বসত্মুটি অর্জনের মাধ্যম পবিত্র ও ভেজালমুক্ত হওয়া। যেমন- সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, ধোঁকা, চুরি, ডাকাতি, যুলুম ইত্যাদি থেকে মুক্ত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً۪ وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ (চক্রবৃদ্ধি হারে) সুদ ভক্ষণ করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আলে ইমরান- ১৩০)
১. উপার্জনে কম বা বেশি হওয়াকে পরীক্ষা হিসেবে মনে করতে হবে :
কারো উপার্জন কম অথবা বেশি হওয়া আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার জন্য একটি পরীক্ষা। যারা এটাকে বিশ্বাস করে না, তারা অহংকারী হয়ে যায় এবং আল্লাহর নাফরমান বান্দাতে পরিণত হয়। এদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَمَّا الْإِنْسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّه فَأَكْرَمَه وَنَعَّمَه فَيَقُوْلُ رَبِّيْۤ أَكْرَمَنِ ‐ وَأَمَّاۤ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَه فَيَقُوْلُ رَبِّيْۤ أَهَانَنِ﴾
আর মানুষ তো এমন যে, যখন তার রব তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তাকে সম্মান দান করেন এবং অনুগ্রহ প্রদান করেন, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন। আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার উপর তার রিযিক সঙ্কুচিত করে দেন, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে অপমানিত করেছেন। (সূরা ফাজর- ১৫, ১৬)
২. সম্পদ অর্জন কারাকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করা যাবে না :
উপার্জন করতে গিয়ে এটা মনে করা যাবে না যে, কেবল সম্পদ অর্জন করার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ অথবা সম্পদ অর্জন করাটাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের একমাত্র মাধ্যম। বরং এটাও মনে করতে হবে যে, কখনো কখনো সম্পদ অর্জন করাটা আল্লাহর নৈকট্য লাভে বাধা হয়েও দাঁড়াতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَاۤ أَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ أَوْلَادُكُمْ بِالَّتِيْ تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفٰۤى إِلَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولٰٓئِكَ لَهُمْ جَزَآءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوْا وَهُمْ فِي الْغُرُفَاتِ اٰمِنُوْنَ﴾
আর তোমাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি এমন বসত্মু নয়, যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে, তারাই আমলের বিনিময়ে পাবে বহুগুণ প্রতিদান। আর তারা (জান্নাতের) সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে। (সূরা সাবা- ৩৭)
৩. উপার্জন আল্লাহর বিধান পালনে প্রতিবন্ধক হতে পারবে না :
উপার্জন হচ্ছে আমাদের জীবন নির্বাহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে উপার্জন করার সময় এ বিষয়টি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, তা যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল না করে এবং ফরয ইবাদাত থেকে বিরত না রাখে। যদি এমনটি করে তাহলে সে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করবে তারাই তো ক্ষতিগ্রসত্ম। (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
৪. রিযিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করতে হবে :
প্রতিটি মুসলিমের জন্য রিযিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা আবশ্যক। প্রত্যেকটি বান্দার ভাগ্যে আল্লাহ তা‘আলা যে রিযিক লিখে রেখেছেন সেটা তার নিকট আসবেই। সুতরাং রিযিক আসতে দেরি হলে কখনো ধৈর্যচ্যুত হয়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা যাবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : أَيُّهَا النَّاسُ , اِتَّقُوا اللهَ وَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ ، فَإِنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوْتَ حَتّٰى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا , وَإِنْ أَبْطَأَ عَنْهَا
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কোন আত্মাই তার ভাগ্যে নির্ধারিত সর্বশেষ রিযিক অর্জন না করা পর্যমত্ম মৃত্যুবরণ করবে না। [ইবনে মাজাহ, হা/২১৪৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯৮।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، عَنِ النَّبِيِّ أَنَّه قَالَ : وَإِنَّ الرُّوْحَ الْأَمِيْنَ نَفَثَ فِيْ رُوْعِيْ أَنَّه لَيْسَ مِنْ نَفْسٍ تَمُوْتُ حَتّٰى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا ، فَاتَّقُوا اللهَ ، وَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ ، وَلَا يَحْمِلَنَّكُمُ اسْتِبْطَاءُ الرِّزْقِ أَنْ تَطْلُبُوْهُ بِمَعَاصِي اللهِ ، فَإِنَّه لَا يُدْرَكُ مَا عِنْدَ اللهِ إِلَّا بِطَاعَتِه
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, নিশ্চয় রুহুল আমীন আমার অমত্মরে এ কথা ঢেলে দিয়েছেন যে, কোন জীব তার রিযিক পরিপূর্ণভাবে ভোগ না করা পর্যমত্ম মৃত্যুবরণ করবে না। সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ধনসম্পদ উপার্জনে উত্তম নীতি অবলম্বন করো। আর রিযিক পৌঁছানোর বিলম্বতা যেন তোমাদেরকে আল্লাহর নাফরমানীর পথে উদ্বুদ্ধ না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা আছে তা তাঁর আনুগত্য ছাড়া অর্জন করা যায় না। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১১১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৮৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৫৪৭৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৮৯১; মিশকাত, হা/৫৩০০।]
৫. সততা বজায় রাখতে হবে :
সততা হচ্ছে সকল স্থায়ীত্বের মূল। কোন ব্যক্তির মাঝে সততা না থাকলে সে কখনো কোথাও টিকে থাকতে পারে না। চাই সেটা সামাজিক দিক থেকেই হোক, চাকুরির ক্ষেত্রেই হোক অথবা ব্যবসার ক্ষেত্রেই হোক। এজন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ رِفَاعَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِنَّ التُّجَّا رَ يُحْشَرُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فُجَّارًا إِلَّا مَنِ اتَّقٰى وَبَرَّ وَصَدَقَ
রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা পাপী অবস্থায় উঠবে। তবে যারা মুত্তাকী, নেককার এবং সত্যবাদী তারা ব্যতীত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৪১১; ইবনে মাজাহ, হা/২১৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯১০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭১৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৪৪; সুনানে দারেমী, হা/২৫৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৫০৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৫৮; মিশকাত, হা/২৭৯৯।]
৬. আমানতদারিতা বজায় রাখতে হবে :
উপার্জন হালাল হওয়ার মধ্যে আমানতদারিতার গুণ থাকা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে আমানতদারিতা রক্ষার আদেশ দিয়ে বলেন,
﴿فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَه وَلْيَتَّقِ اللهَ رَبَّه ﴾
আর যদি তোমরা একে অপরকে বিশ্বসত্ম মনে কর, তবে যাকে বিশ্বসত্ম মনে করা হয়, সে যেন স্বীয় আমানত আদায় করে এবং তার রব আল্লাহর প্রতি তাকওয়া অবলম্বন করে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
৭. অঙ্গীকার পালন করতে হবে :
যথাযথভাবে অঙ্গীকার পালন করা হচ্ছে সততা ও আমানতদারিতার আলামত। সুতরাং চাকুরি, ব্যবসা, ঋণ ইত্যাদি সকল ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে মৌখিক বা লিখিতভাবে যেসব অঙ্গীকার প্রদান করা হয়, সেগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿بَلٰى مَنْ أَوْفٰى بِعَهْدِه وَاتَّقٰى فَإِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ﴾
হ্যাঁ- অবশ্যই যে নিজ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ৭৬)
৮. সচ্ছতা বজায় রাখতে হবে :
সচ্ছতা হচ্ছে হালাল উপার্জনের অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।
(সূরা আহযাব- ৭০)
৯. ইলম অর্জন করতে হবে :
যদি কোন বিষয়ে ইলম না থাকে, তাহলে তার পক্ষে উক্ত বিষয়ে সঠিক সিদ্ধামত্ম নেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারো যদি হালাল-হারাম সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে, তাহলে তার পক্ষে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধামত্ম নেয়া অসম্ভব। আর যেসব দেশে ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালু নেই সেসব দেশে তো আরো কঠিন। এজন্য কোন কিছু করার আগে তা হালাল না হারাম জেনে নিতে হবে।
কারো উপার্জন কম অথবা বেশি হওয়া আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার জন্য একটি পরীক্ষা। যারা এটাকে বিশ্বাস করে না, তারা অহংকারী হয়ে যায় এবং আল্লাহর নাফরমান বান্দাতে পরিণত হয়। এদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَمَّا الْإِنْسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّه فَأَكْرَمَه وَنَعَّمَه فَيَقُوْلُ رَبِّيْۤ أَكْرَمَنِ ‐ وَأَمَّاۤ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَه فَيَقُوْلُ رَبِّيْۤ أَهَانَنِ﴾
আর মানুষ তো এমন যে, যখন তার রব তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তাকে সম্মান দান করেন এবং অনুগ্রহ প্রদান করেন, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন। আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার উপর তার রিযিক সঙ্কুচিত করে দেন, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে অপমানিত করেছেন। (সূরা ফাজর- ১৫, ১৬)
২. সম্পদ অর্জন কারাকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করা যাবে না :
উপার্জন করতে গিয়ে এটা মনে করা যাবে না যে, কেবল সম্পদ অর্জন করার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ অথবা সম্পদ অর্জন করাটাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের একমাত্র মাধ্যম। বরং এটাও মনে করতে হবে যে, কখনো কখনো সম্পদ অর্জন করাটা আল্লাহর নৈকট্য লাভে বাধা হয়েও দাঁড়াতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَاۤ أَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ أَوْلَادُكُمْ بِالَّتِيْ تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفٰۤى إِلَّا مَنْ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولٰٓئِكَ لَهُمْ جَزَآءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوْا وَهُمْ فِي الْغُرُفَاتِ اٰمِنُوْنَ﴾
আর তোমাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি এমন বসত্মু নয়, যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে, তারাই আমলের বিনিময়ে পাবে বহুগুণ প্রতিদান। আর তারা (জান্নাতের) সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে। (সূরা সাবা- ৩৭)
৩. উপার্জন আল্লাহর বিধান পালনে প্রতিবন্ধক হতে পারবে না :
উপার্জন হচ্ছে আমাদের জীবন নির্বাহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে উপার্জন করার সময় এ বিষয়টি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, তা যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল না করে এবং ফরয ইবাদাত থেকে বিরত না রাখে। যদি এমনটি করে তাহলে সে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَاۤ أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সমত্মানসমত্মতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করবে তারাই তো ক্ষতিগ্রসত্ম। (সূরা মুনাফিকূন- ৯)
৪. রিযিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করতে হবে :
প্রতিটি মুসলিমের জন্য রিযিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা আবশ্যক। প্রত্যেকটি বান্দার ভাগ্যে আল্লাহ তা‘আলা যে রিযিক লিখে রেখেছেন সেটা তার নিকট আসবেই। সুতরাং রিযিক আসতে দেরি হলে কখনো ধৈর্যচ্যুত হয়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা যাবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : أَيُّهَا النَّاسُ , اِتَّقُوا اللهَ وَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ ، فَإِنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوْتَ حَتّٰى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا , وَإِنْ أَبْطَأَ عَنْهَا
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কোন আত্মাই তার ভাগ্যে নির্ধারিত সর্বশেষ রিযিক অর্জন না করা পর্যমত্ম মৃত্যুবরণ করবে না। [ইবনে মাজাহ, হা/২১৪৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯৮।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، عَنِ النَّبِيِّ أَنَّه قَالَ : وَإِنَّ الرُّوْحَ الْأَمِيْنَ نَفَثَ فِيْ رُوْعِيْ أَنَّه لَيْسَ مِنْ نَفْسٍ تَمُوْتُ حَتّٰى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا ، فَاتَّقُوا اللهَ ، وَأَجْمِلُوْا فِي الطَّلَبِ ، وَلَا يَحْمِلَنَّكُمُ اسْتِبْطَاءُ الرِّزْقِ أَنْ تَطْلُبُوْهُ بِمَعَاصِي اللهِ ، فَإِنَّه لَا يُدْرَكُ مَا عِنْدَ اللهِ إِلَّا بِطَاعَتِه
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, নিশ্চয় রুহুল আমীন আমার অমত্মরে এ কথা ঢেলে দিয়েছেন যে, কোন জীব তার রিযিক পরিপূর্ণভাবে ভোগ না করা পর্যমত্ম মৃত্যুবরণ করবে না। সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ধনসম্পদ উপার্জনে উত্তম নীতি অবলম্বন করো। আর রিযিক পৌঁছানোর বিলম্বতা যেন তোমাদেরকে আল্লাহর নাফরমানীর পথে উদ্বুদ্ধ না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা আছে তা তাঁর আনুগত্য ছাড়া অর্জন করা যায় না। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১১১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৮৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৫৪৭৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৮৯১; মিশকাত, হা/৫৩০০।]
৫. সততা বজায় রাখতে হবে :
সততা হচ্ছে সকল স্থায়ীত্বের মূল। কোন ব্যক্তির মাঝে সততা না থাকলে সে কখনো কোথাও টিকে থাকতে পারে না। চাই সেটা সামাজিক দিক থেকেই হোক, চাকুরির ক্ষেত্রেই হোক অথবা ব্যবসার ক্ষেত্রেই হোক। এজন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ رِفَاعَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِنَّ التُّجَّا رَ يُحْشَرُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فُجَّارًا إِلَّا مَنِ اتَّقٰى وَبَرَّ وَصَدَقَ
রিফা‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা পাপী অবস্থায় উঠবে। তবে যারা মুত্তাকী, নেককার এবং সত্যবাদী তারা ব্যতীত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৪১১; ইবনে মাজাহ, হা/২১৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯১০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭১৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৪৪; সুনানে দারেমী, হা/২৫৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৫০৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৫৮; মিশকাত, হা/২৭৯৯।]
৬. আমানতদারিতা বজায় রাখতে হবে :
উপার্জন হালাল হওয়ার মধ্যে আমানতদারিতার গুণ থাকা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে আমানতদারিতা রক্ষার আদেশ দিয়ে বলেন,
﴿فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَه وَلْيَتَّقِ اللهَ رَبَّه ﴾
আর যদি তোমরা একে অপরকে বিশ্বসত্ম মনে কর, তবে যাকে বিশ্বসত্ম মনে করা হয়, সে যেন স্বীয় আমানত আদায় করে এবং তার রব আল্লাহর প্রতি তাকওয়া অবলম্বন করে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
৭. অঙ্গীকার পালন করতে হবে :
যথাযথভাবে অঙ্গীকার পালন করা হচ্ছে সততা ও আমানতদারিতার আলামত। সুতরাং চাকুরি, ব্যবসা, ঋণ ইত্যাদি সকল ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে মৌখিক বা লিখিতভাবে যেসব অঙ্গীকার প্রদান করা হয়, সেগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿بَلٰى مَنْ أَوْفٰى بِعَهْدِه وَاتَّقٰى فَإِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ﴾
হ্যাঁ- অবশ্যই যে নিজ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান- ৭৬)
৮. সচ্ছতা বজায় রাখতে হবে :
সচ্ছতা হচ্ছে হালাল উপার্জনের অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।
(সূরা আহযাব- ৭০)
৯. ইলম অর্জন করতে হবে :
যদি কোন বিষয়ে ইলম না থাকে, তাহলে তার পক্ষে উক্ত বিষয়ে সঠিক সিদ্ধামত্ম নেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারো যদি হালাল-হারাম সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে, তাহলে তার পক্ষে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধামত্ম নেয়া অসম্ভব। আর যেসব দেশে ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালু নেই সেসব দেশে তো আরো কঠিন। এজন্য কোন কিছু করার আগে তা হালাল না হারাম জেনে নিতে হবে।
১. মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়া যাবে না :
মিথ্যা ও প্রতারণা হচ্ছে অত্যমত্ম খারাপ কাজ। এটি মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং যারা উপার্জনের ক্ষেত্রে মিথ্যা ও প্রতারণার পথ অবলম্বন করবে, সেটা তাকে নিশ্চিত ধ্বংস ও জাহান্নামের পথে নিয়ে যাবে। হালাল উপার্জন করতে হলে সর্বক্ষেত্রে মিথ্যা ও প্রতারণা বর্জন করতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -....... وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِىْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِىْ إِلَى النَّارِ
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মিথ্যা পাপ কাজের দিকে পথ দেখায়, আর পাপ কাজ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৪; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮০৩; আবু দাউদ, হা/৪৯৯১; তিরমিযী, হা/১৯৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৩৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১৩৩৮; আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৮৬; জামেউস সগীর, হা/৭৫২০; মিশকাত, হা/৪৮২৪।]
২. অতিরিক্ত লোভ করা যাবে না :
অতিরিক্ত লোভ-লালসা হচ্ছে মানুষের অধঃপতনের অন্যতম কারণ। কেননা এ তাড়নায় মানুষ অসৎ কাজের যাবতীয় সিদ্ধামত্ম যেমন- সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, প্রতারণা, যুলুম ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করে থাকে। আর এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন,
﴿أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ ‐ حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ ‐ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ﴾
প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে। এমনকি তোমরা কবরে পৌঁছে যাও। কখনো নয়, শীঘ্রই তোমরা জানবে। (সূরা তাকাসুর, ১-৩)
৩. সুদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না :
সুদ আদান-প্রদান করা একটি স্পষ্ট হারাম কাজ এবং এর মাধ্যমে উপার্জিত সকল প্রকার সম্পদও হারাম। সুতরাং হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুদ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সুদের সাথে সম্পৃক্ত অথবা সুদের সম্ভাবনা আছে এমনসব কাজ অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
৪. যুলুমের আশ্রয় নেয়া যাবে না :
যুলুম হচ্ছে মারাত্মক একটি অপরাধ। তাই হালাল উপার্জনের জন্য সকল প্রকার যুলুমকে বর্জন করতে হবে এবং যুলুমের সাথে সম্পর্ক রাখে অথবা যুলুমের সম্ভাবনা আছে এমনসব কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে।
৫. ঘুষের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না :
ঘুষ আদান-প্রদান করাও একটি মারাত্মক অপরাধ। এর মাধ্যমে উপার্জিত সকল সম্পদ হারাম। অতএব হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ঘুষ এবং ঘুষের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়কে বর্জন করতে হবে।
৬. খিয়ানত করা যাবে না :
খিয়ানত অনেক অপরাধের মূল। যার মধ্যে খিয়ানতের অভ্যাস বিদ্যমান, তার দ্বারা হারাম কাজ সহ অনেক ধরনের পাপ কাজ করাই সম্ভব। সুতরাং এ ধরনের পাপ কাজের মাধ্যমে উপার্জন করাও হারাম। অতএব হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সকল প্রকার খিয়ানত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
৭. সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ থেকে দূরে থাকতে হবে :
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِىٍّ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ - - دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلٰى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ
হাসান ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এই বাণীটি ভালোভাবে স্মরণ রেখেছি- (তিনি বলেন) যে কাজে মনে খটকা লাগে, সে কাজ পরিহার করে খটকাহীন কাজ অবলম্বন করো। কেননা সত্যের ক্ষেত্রে দ্বিধা সৃষ্টি হয় না, বরং মিথ্যার ক্ষেত্রেই দ্বিধা সৃষ্টি হয়। [তিরমিযী, হা/২৫১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৩৩৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৭৬২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১১৩৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭০৪৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৩৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৩৪৮; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৭৬২; মিশকাত, হা/২৭৭৩।]
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لَا يَعْلَمُهَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِه وَعِرْضِه ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعٰى حَوْلَ الْحِمٰى يُوْشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهٗ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا إِنَّ حِمَى اللهِ فِيْ أَرْضِه مَحَارِمُهٗ أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهٗ أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, হালাল ও হারাম প্রকাশ্য এবং এ উভয়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু, যা অধিকাংশ মানুষই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি নিজেকে এসব সন্দেহজনক বস্তু থেকে রক্ষা করবে, সে যেন নিজের দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐসব সন্দেহজনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার দৃষ্টান্ত ঐ রাখালের ন্যায়, যে কোন সরকারি চারণভূমির আশপাশে (তার পশুগুলোকে) চরায়। তখন এ সম্ভাবনা থাকে যে, তার পশুগুলো তাতে ঢুকে যেতে পারে। (জেনে রেখো) প্রত্যেক বাদশাহরই একটি চারণভূমি থাকে। সাবধান! দুনিয়াতে আল্লাহর চারণভূমি হলো তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। নিশ্চয় মানুষের শরীরে এমন একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা সুস্থ থাকলে সম্পূর্ণ শরীর সুস্থ থাকবে। আর যখন তা বিনষ্ট হয়ে যাবে, তখন সম্পূর্ণ শরীর বিনষ্ট হয়ে যাবে। সাবধান! সেটি হলো কলব তথা অন্তর। [সহীহ বুখারী, হা/৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৯৮; সুনানে দারেমী, হা/২৫৩১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০৩; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৩৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৪৩৫; জামেউস সগীর, হা/১৭৩১; মিশকাত, হা/২৭৬২।]
মিথ্যা ও প্রতারণা হচ্ছে অত্যমত্ম খারাপ কাজ। এটি মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং যারা উপার্জনের ক্ষেত্রে মিথ্যা ও প্রতারণার পথ অবলম্বন করবে, সেটা তাকে নিশ্চিত ধ্বংস ও জাহান্নামের পথে নিয়ে যাবে। হালাল উপার্জন করতে হলে সর্বক্ষেত্রে মিথ্যা ও প্রতারণা বর্জন করতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -....... وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِىْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِىْ إِلَى النَّارِ
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মিথ্যা পাপ কাজের দিকে পথ দেখায়, আর পাপ কাজ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৪; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮০৩; আবু দাউদ, হা/৪৯৯১; তিরমিযী, হা/১৯৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৩৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৭৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১৩৩৮; আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৮৬; জামেউস সগীর, হা/৭৫২০; মিশকাত, হা/৪৮২৪।]
২. অতিরিক্ত লোভ করা যাবে না :
অতিরিক্ত লোভ-লালসা হচ্ছে মানুষের অধঃপতনের অন্যতম কারণ। কেননা এ তাড়নায় মানুষ অসৎ কাজের যাবতীয় সিদ্ধামত্ম যেমন- সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, প্রতারণা, যুলুম ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করে থাকে। আর এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন,
﴿أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ ‐ حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ ‐ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ﴾
প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে। এমনকি তোমরা কবরে পৌঁছে যাও। কখনো নয়, শীঘ্রই তোমরা জানবে। (সূরা তাকাসুর, ১-৩)
৩. সুদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না :
সুদ আদান-প্রদান করা একটি স্পষ্ট হারাম কাজ এবং এর মাধ্যমে উপার্জিত সকল প্রকার সম্পদও হারাম। সুতরাং হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুদ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সুদের সাথে সম্পৃক্ত অথবা সুদের সম্ভাবনা আছে এমনসব কাজ অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
৪. যুলুমের আশ্রয় নেয়া যাবে না :
যুলুম হচ্ছে মারাত্মক একটি অপরাধ। তাই হালাল উপার্জনের জন্য সকল প্রকার যুলুমকে বর্জন করতে হবে এবং যুলুমের সাথে সম্পর্ক রাখে অথবা যুলুমের সম্ভাবনা আছে এমনসব কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে।
৫. ঘুষের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না :
ঘুষ আদান-প্রদান করাও একটি মারাত্মক অপরাধ। এর মাধ্যমে উপার্জিত সকল সম্পদ হারাম। অতএব হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ঘুষ এবং ঘুষের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়কে বর্জন করতে হবে।
৬. খিয়ানত করা যাবে না :
খিয়ানত অনেক অপরাধের মূল। যার মধ্যে খিয়ানতের অভ্যাস বিদ্যমান, তার দ্বারা হারাম কাজ সহ অনেক ধরনের পাপ কাজ করাই সম্ভব। সুতরাং এ ধরনের পাপ কাজের মাধ্যমে উপার্জন করাও হারাম। অতএব হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সকল প্রকার খিয়ানত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
৭. সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ থেকে দূরে থাকতে হবে :
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِىٍّ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ - - دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلٰى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ
হাসান ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এই বাণীটি ভালোভাবে স্মরণ রেখেছি- (তিনি বলেন) যে কাজে মনে খটকা লাগে, সে কাজ পরিহার করে খটকাহীন কাজ অবলম্বন করো। কেননা সত্যের ক্ষেত্রে দ্বিধা সৃষ্টি হয় না, বরং মিথ্যার ক্ষেত্রেই দ্বিধা সৃষ্টি হয়। [তিরমিযী, হা/২৫১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৩৩৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৭৬২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১১৩৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭০৪৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৩৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৩৪৮; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৭৬২; মিশকাত, হা/২৭৭৩।]
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لَا يَعْلَمُهَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِه وَعِرْضِه ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعٰى حَوْلَ الْحِمٰى يُوْشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهٗ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا إِنَّ حِمَى اللهِ فِيْ أَرْضِه مَحَارِمُهٗ أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهٗ أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, হালাল ও হারাম প্রকাশ্য এবং এ উভয়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু, যা অধিকাংশ মানুষই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি নিজেকে এসব সন্দেহজনক বস্তু থেকে রক্ষা করবে, সে যেন নিজের দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐসব সন্দেহজনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার দৃষ্টান্ত ঐ রাখালের ন্যায়, যে কোন সরকারি চারণভূমির আশপাশে (তার পশুগুলোকে) চরায়। তখন এ সম্ভাবনা থাকে যে, তার পশুগুলো তাতে ঢুকে যেতে পারে। (জেনে রেখো) প্রত্যেক বাদশাহরই একটি চারণভূমি থাকে। সাবধান! দুনিয়াতে আল্লাহর চারণভূমি হলো তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। নিশ্চয় মানুষের শরীরে এমন একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা সুস্থ থাকলে সম্পূর্ণ শরীর সুস্থ থাকবে। আর যখন তা বিনষ্ট হয়ে যাবে, তখন সম্পূর্ণ শরীর বিনষ্ট হয়ে যাবে। সাবধান! সেটি হলো কলব তথা অন্তর। [সহীহ বুখারী, হা/৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৯৮; সুনানে দারেমী, হা/২৫৩১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০৩; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৩৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৪৩৫; জামেউস সগীর, হা/১৭৩১; মিশকাত, হা/২৭৬২।]
হালাল উপার্জনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের উপায় আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য তৈরি করে রেখেছেন। এসব উপায়সমূহের মধ্যে যেকোন একটি উপায় অবলম্বন করে মুমিন বান্দা তার উপার্জনের ব্যবস্থা করে নিতে পারে। যুগে যুগে নবী-রাসূল ও সৎ ব্যক্তিগণ হালাল উপার্জনের জন্য নানা রকম পেশা গ্রহণ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ، أَنَّه قَالَ لِرَجُلٍ جَالِسٍ عِنْدَه .. فَأُحَدِّثُكَ عَنِ الْأَنْبِيَاءِ الْمَذْكُوْرِيْنَ فِيْ كِتَابِ اللهِ أُحَدِّثُكَ عَنْ اٰدَمَ إِنَّه كَانَ عَبْدًا حَرَّاثًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ نُوْحٍ إِنَّه كَانَ عَبْدًا نَجَّارًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ إِدْرِيْسَ إِنَّه كَانَ عَبْدًا خَيَّاطًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ دَاوُدَ أَنَّه كَانَ عَبْدًا زَرَّادًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ مُوْسٰى أَنَّه كَانَ عَبْدًا رَاعِيًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ أَنَّه كَانَ عَبْدًا زَرَّاعًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ صَالِحٍ أَنَّه كَانَ عَبْدًا تَاجِرًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ سُلَيْمَانَ أَنَّه كَانَ عَبْدًا اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ وَكَانَ يَصُوْمُ فِيْ أَوَّلِ الشَّهْرِ سِتَّةَ أَيَّامٍ وَفِيْ وَسَطِه ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَفِيْ اٰخِرِه ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَكَانَتْ لَه تِسْعُ مِائَةِ سَرِيَّةٍ ، وَثَلَاثُ مِائَةِ فِهْرِيَّةٍ وَأُحَدِّثُكَ عَنِ ابْنِ الْعَذْرَاءِ الْبَتُوْلِ عِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ أَنَّه كَانَ لَا يَخْبَأُ شَيْئًا لِغَدٍ وَيَقُوْلُ : الَّذِيْ غَدَّانِيْ سَوْفَ يُعَشِّيْنِيْ وَالَّذِيْ عَشَّانِيْ سَوْفَ يُغَدِّيْنِيْ ، يَعْبُدُ اللهَ لَيْلَةً كُلَّهَا يُصَلِّيْ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَهُوَ بِالنَّهَارِ سَائِحٌ ، وَيَصُوْمُ الدَّهْرَ كُلَّه ، وَيَقُوْمُ اللَّيْلَ كُلَّه ، وَأُحَدِّثُكَ عَنِ النَّبِيِّ الْمُصْطَفٰى أَنَّه كَانَ يَرْعٰى غَنْمَ أَهْلِ بَيْتِه بِأَجْيَادَ ، وَكَانَ يَصُوْمُ فَنَقُوْلُ : لَا يُفْطِرُ ، وَيُفْطِرُ فَنَقُوْلُ : لَا يَصُوْمُ ، وَكُلُّهَا مَا رَأَيْنَاهُ صَائِمًا وَيَصُوْمُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ ، وَكَانَ أَلْيَنَ النَّاسِ جَنَاحًا وَأَطْيَبَهُمْ خَبَرًا، وَأَطْوَلَهُمْ عِلْمًا، وَأُخْبِرُكَ عَنْ حَوَّاءَ أَنَّهَا كَانَتْ تَغْزِلُ الشَّعْرَ فَتُحَوِّلُه بِيَدِهَا فَتَكْسُوْ نَفْسَهَا وَوَلَدَهَا ، وَأَنَّ مَرْيَمَ بِنْتَ عِمْرَانَ كَانَتْ تَصْنَعُ ذٰلِكَ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার নিকট বসা এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি আমার কাছে আসো। আমি তোমাকে আল্লাহর কিতাবে উল্লেখিত নবীদের ব্যাপারে বর্ণনা করব।
১. আমি তোমাকে আদম (আঃ) সম্পর্কে বর্ণনা করছি। তিনি কৃষক ছিলেন।
২. নূহ (আঃ) কাঠমিস্ত্রী বা ছুতোর কাজ করতেন।
৩. ইদরীস (আঃ) দর্জির কাজ করতেন।
৪. দাউদ (আঃ) কামারের কাজ করতেন।
৫. মূসা (আঃ) ছাগল চরাতেন।
৬. ইবরাহীম (আঃ) চাষাবাদ করতেন।
৭. সালেহ (আঃ) ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন।
৮. সুলায়মান (আঃ) আল্লাহর এমন এক বান্দা ছিলেন, যাকে আল্লাহ বিশাল রাজত্ব দান করেছিলেন। তিনি মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন রোযা রাখতেন। আবার মাসের মধ্যখানে তিন দিন এবং শেষেও তিন দিন রোযা রাখতেন।
৯. ঈসা (আঃ) আগামীকালের জন্য কোন কিছু গচ্ছিত রাখতেন না। তিনি বলতেন, যিনি আমাকে সকালে আহার করিয়েছেন তিনি সন্ধ্যায় আহার করাবেন। আর যিনি সন্ধ্যায় আহার করাবেন তিনি আগামী দিনেও আহার করাবেন। তিনি কোন কোন রাত্রে সারা রাত ইবাদাত করতেন এবং দিনে রোযা রাখতেন।
১০. শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ বকরি চরাতেন। তিনি এমনভাবে রোযা রাখতেন যে- আমরা বলতাম, তিনি আর রোযা ভাঙবেন না। আবার এমনভাবে রোযা ছেড়ে দিতেন যে, আমরা বলতাম, তিনি আর রোযা রাখবেন না। তিনি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন। তিনি মানুষের সাথে অত্যমত্ম সুন্দর এবং নম্র আচরণ করতেন। আর তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী।
১১. হাওয়া (আঃ) সুতা কাটার কাজ করতেন এবং নিজ হাতে তা বুনতেন; অতঃপর তা নিজে পরতেন এবং নিজের সমত্মানদেরকে পরাতেন। আর মারইয়াম (আঃ)-ও তাই করতেন। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৪১৬৫।]
এছাড়া এমন কোন নবী নেই যিনি তার জীবনে রাখালের কাজ করেননি। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এসব নবী-রাসূল ও সৎ ব্যক্তিগণ যেসব পেশায় কাজ করে গেছেন সেগুলো হালাল ছিল।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ، أَنَّه قَالَ لِرَجُلٍ جَالِسٍ عِنْدَه .. فَأُحَدِّثُكَ عَنِ الْأَنْبِيَاءِ الْمَذْكُوْرِيْنَ فِيْ كِتَابِ اللهِ أُحَدِّثُكَ عَنْ اٰدَمَ إِنَّه كَانَ عَبْدًا حَرَّاثًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ نُوْحٍ إِنَّه كَانَ عَبْدًا نَجَّارًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ إِدْرِيْسَ إِنَّه كَانَ عَبْدًا خَيَّاطًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ دَاوُدَ أَنَّه كَانَ عَبْدًا زَرَّادًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ مُوْسٰى أَنَّه كَانَ عَبْدًا رَاعِيًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ أَنَّه كَانَ عَبْدًا زَرَّاعًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ صَالِحٍ أَنَّه كَانَ عَبْدًا تَاجِرًا ، وَأُحَدِّثُكَ عَنْ سُلَيْمَانَ أَنَّه كَانَ عَبْدًا اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ وَكَانَ يَصُوْمُ فِيْ أَوَّلِ الشَّهْرِ سِتَّةَ أَيَّامٍ وَفِيْ وَسَطِه ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَفِيْ اٰخِرِه ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَكَانَتْ لَه تِسْعُ مِائَةِ سَرِيَّةٍ ، وَثَلَاثُ مِائَةِ فِهْرِيَّةٍ وَأُحَدِّثُكَ عَنِ ابْنِ الْعَذْرَاءِ الْبَتُوْلِ عِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ أَنَّه كَانَ لَا يَخْبَأُ شَيْئًا لِغَدٍ وَيَقُوْلُ : الَّذِيْ غَدَّانِيْ سَوْفَ يُعَشِّيْنِيْ وَالَّذِيْ عَشَّانِيْ سَوْفَ يُغَدِّيْنِيْ ، يَعْبُدُ اللهَ لَيْلَةً كُلَّهَا يُصَلِّيْ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَهُوَ بِالنَّهَارِ سَائِحٌ ، وَيَصُوْمُ الدَّهْرَ كُلَّه ، وَيَقُوْمُ اللَّيْلَ كُلَّه ، وَأُحَدِّثُكَ عَنِ النَّبِيِّ الْمُصْطَفٰى أَنَّه كَانَ يَرْعٰى غَنْمَ أَهْلِ بَيْتِه بِأَجْيَادَ ، وَكَانَ يَصُوْمُ فَنَقُوْلُ : لَا يُفْطِرُ ، وَيُفْطِرُ فَنَقُوْلُ : لَا يَصُوْمُ ، وَكُلُّهَا مَا رَأَيْنَاهُ صَائِمًا وَيَصُوْمُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ ، وَكَانَ أَلْيَنَ النَّاسِ جَنَاحًا وَأَطْيَبَهُمْ خَبَرًا، وَأَطْوَلَهُمْ عِلْمًا، وَأُخْبِرُكَ عَنْ حَوَّاءَ أَنَّهَا كَانَتْ تَغْزِلُ الشَّعْرَ فَتُحَوِّلُه بِيَدِهَا فَتَكْسُوْ نَفْسَهَا وَوَلَدَهَا ، وَأَنَّ مَرْيَمَ بِنْتَ عِمْرَانَ كَانَتْ تَصْنَعُ ذٰلِكَ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার নিকট বসা এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি আমার কাছে আসো। আমি তোমাকে আল্লাহর কিতাবে উল্লেখিত নবীদের ব্যাপারে বর্ণনা করব।
১. আমি তোমাকে আদম (আঃ) সম্পর্কে বর্ণনা করছি। তিনি কৃষক ছিলেন।
২. নূহ (আঃ) কাঠমিস্ত্রী বা ছুতোর কাজ করতেন।
৩. ইদরীস (আঃ) দর্জির কাজ করতেন।
৪. দাউদ (আঃ) কামারের কাজ করতেন।
৫. মূসা (আঃ) ছাগল চরাতেন।
৬. ইবরাহীম (আঃ) চাষাবাদ করতেন।
৭. সালেহ (আঃ) ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন।
৮. সুলায়মান (আঃ) আল্লাহর এমন এক বান্দা ছিলেন, যাকে আল্লাহ বিশাল রাজত্ব দান করেছিলেন। তিনি মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন রোযা রাখতেন। আবার মাসের মধ্যখানে তিন দিন এবং শেষেও তিন দিন রোযা রাখতেন।
৯. ঈসা (আঃ) আগামীকালের জন্য কোন কিছু গচ্ছিত রাখতেন না। তিনি বলতেন, যিনি আমাকে সকালে আহার করিয়েছেন তিনি সন্ধ্যায় আহার করাবেন। আর যিনি সন্ধ্যায় আহার করাবেন তিনি আগামী দিনেও আহার করাবেন। তিনি কোন কোন রাত্রে সারা রাত ইবাদাত করতেন এবং দিনে রোযা রাখতেন।
১০. শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ বকরি চরাতেন। তিনি এমনভাবে রোযা রাখতেন যে- আমরা বলতাম, তিনি আর রোযা ভাঙবেন না। আবার এমনভাবে রোযা ছেড়ে দিতেন যে, আমরা বলতাম, তিনি আর রোযা রাখবেন না। তিনি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন। তিনি মানুষের সাথে অত্যমত্ম সুন্দর এবং নম্র আচরণ করতেন। আর তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী।
১১. হাওয়া (আঃ) সুতা কাটার কাজ করতেন এবং নিজ হাতে তা বুনতেন; অতঃপর তা নিজে পরতেন এবং নিজের সমত্মানদেরকে পরাতেন। আর মারইয়াম (আঃ)-ও তাই করতেন। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৪১৬৫।]
এছাড়া এমন কোন নবী নেই যিনি তার জীবনে রাখালের কাজ করেননি। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এসব নবী-রাসূল ও সৎ ব্যক্তিগণ যেসব পেশায় কাজ করে গেছেন সেগুলো হালাল ছিল।
মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য চাষাবাদ হচ্ছে সর্বপ্রাচীন একটি মাধ্যম। সৃষ্টিকুলের খাদ্যের উৎসও হচ্ছে চাষাবাদ। আর এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর মাটিকে উৎপাদন ও ফসল ফলানোর উপযোগী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তারপর মানুষ নিজেদের সুবিধার্থে আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এ ব্যবস্থার আরো উন্নতি সাধন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖ – اَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا ‐ ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَرْضَ شَقًّا ‐ فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا ‐ وَعِنَبًا وَّقَضْبًا ‐ وَزَيْتُوْنًا وَّنَخْلًا ‐ وَحَدَآئِقَ غُلْبًا ‐ وَفَاكِهَةً وَّاَبًّا – مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ﴾
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি প্রচুর পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করি। ফলে তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাকসবজি, যায়তুন, খেজুর, বহু নিবিড় ঘন বাগান, ফল-ফলাদি এবং গবাদি পশুর খাদ্য (ঘাস), তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের সামগ্রী হিসেবে। (সূরা আবাসা, ২৪-৩২)
ইসলামে চাষাবাদ করাকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং এজন্য উৎসাহও প্রদান করা হয়েছে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ ، أَوْ إِنْسَانٌ ، أَوْ بَهِيْمَةٌ إِلَّا كَانَ لَه بِه صَدَقَةٌ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম যখন কোন গাছ লাগায় অথবা ফসল ফলায়, অতঃপর তা হতে কোন পাখি, মানুষ অথবা পশু (তার ফল-ফসল ইত্যাদি) খায়, তখন তা তার জন্য সাদাকা স্বরূপ হয়। [সহীহ বুখারী, হা/২৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৫৫; তিরমিযী, হা/১৩৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪১৩; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/২১১০; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২৮৫১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২০৮৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪২৩০।]
এছাড়াও অনেক হাদীসেই এ পেশাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং হালাল উপার্জনের জন্য এটি খুবই উত্তম পন্থা। তবে এ ক্ষেত্রে ইসলাম কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে, যেগুলো মেনে চলা একামত্ম আবশ্যক। নিম্নে সে সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করা হলো :
১. জমির মালিক নিজেই চাষ করবে :
কোন জমি চাষ করা বা না করার অধিকার সে জমির মালিকের। সুতরাং যদি সামর্থ থাকে তাহলে উক্ত জমির মালিকই জমি চাষ করবে, তারপর সে যাকে অনুমতি দেবে সে চাষ করবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ كَانَتْ لَه أَرْضٌ فَلْيَزْرَعْهَا ، أَوْ لِيَمْنَحْهَا أَخَاهُ فَإِنْ أَبٰى فَلْيُمْسِكْ أَرْضَه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার কাছে ভূমি আছে সে যেন তাতে নিজে কৃষিকাজ করে কিংবা তার ভাইকে (চাষ করতে) দেয়। যদি এটাও না করতে চায় তবে সে যেন তার ভূমি ফেলে রাখে। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৪১; সহীহ মুসলিম, হা/৪০১৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৫২; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৯৭; জামেউস সগীর, হা/১১৪৬০।]
২. জমির মালিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চাষ করিয়ে নিতে পারে :
জমির মালিক যদি নিজে চাষ করতে অক্ষম হয় তাহলে সে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অপরের মাধ্যমেও চাষ করাতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত-
পারিশ্রমিক প্রদানে যেন কমতি না হয়।
পারিশ্রমিক নির্ধারণের সময় যেন প্রচলিত দামের দিকে লক্ষ্য করা হয়।
শ্রমিকের কোনরূপ দুর্বলতার সুযোগ নেয়া না হয়।
৩. বর্গাচাষ করতে দেয়া যাবে :
উৎপন্ন ফসলের নির্দিষ্ট অংশ প্রদানের শর্তে কাউকে জমি চাষ করতে দেয়াকে বর্গাচাষ বলে। জমির মালিক ইচ্ছা করলে যে কাউকে এ ধরনের চাষ করতে দিতে পারে। ইমাম বুখারী মু‘আল্লাক সূত্রে বর্ণনা করেন,
عَنْ أَبِيْ جَعْفَرٍ قَالَ مَا بِالْمَدِيْنَةِ أَهْلُ بَيْتِ هِجْرَةٍ إِلَّا يَزْرَعُوْنَ عَلَى الثُّلُثِ وَالرُّبُعِ .
আবু জা‘ফার (ইমাম বাকির) বলেছেন, মদীনাতে মুহাজিরদের এমন কোন পরিবার ছিল না যারা এক-তৃতীয়াংশ কিংবা এক-চতুর্থাংশ ফসলের শর্তে ভাগে চাষাবাদ করত না।
وَقَالَ الْحَسَنُ لَا بَأْسَ أَنْ يُجْتَنَى الْقُطْنُ عَلَى النِّصْفِ .
হাসান বসরী (রাঃ) বলেন, আধাআধি শর্তে তুলা চাষ করাতে কোন দোষ নেই। [সহীহ বুখারী, ‘অর্ধেক বা অনুরূপ ফসলের শর্তে ভাগে চাষাবাদ’ অধ্যায়; ৩/১৩৭ পৃঃ; মিশকাত, হা/২৯৮০।]
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও এ ধরনের চাষ করিয়ে নিয়েছেন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - - أَنَّه دَفَعَ إِلٰى يَهُوْدِ خَيْبَرَ نَخْلَ خَيْبَرَ وَأَرْضَهَا عَلٰى أَنْ يَعْتَمِلُوْهَا مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَلِرَسُوْلِ اللهِ - - شَطْرُ ثَمَرِهَا
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ) খায়বারের বাগান ও জমিন খায়বারের ইয়াহুদিদেরকে এ শর্তে প্রদান করেন যে, তারা নিজেদের মাল খরচ করে তাতে কাজ করবে, আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার ফলের অর্ধেক প্রাপ্ত হবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৪৮; আবু দাউদ, হা/৩৪১১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৬৪৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৯৬৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৫৬; মিশকাত, হা/২৯৭২।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ أَعْطٰى خَيْبَرَ الْيَهُوْدَ عَلٰى أَنْ يَعْمَلُوْهَا وَيَزْرَعُوْهَا وَلَهُمْ شَطْرُ مَا خَرَجَ مِنْهَا
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ ইয়াহুদিদেরকে খায়বারের জমি এ শর্তে প্রদান করেন যে, তারা নিজেরা তাতে শ্রম দিবে, চাষাবাদ করবে এবং তার বিনিময়ে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক তারা লাভ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৩১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৬৪৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৯৬৪; মিশকাত, হা/২৯৭২।]
তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ মুখাবারা পদ্ধতিতে বর্গাচাষ করতে দিতে নিষেধ করেছেন। আর মুখাবারা বলা হয় ঐ পদ্ধতিকে, যার মাধ্যমে জমির মালিক জমির নির্দিষ্ট অংশের ফসল গ্রহণের শর্তে বর্গা দেয়। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ يَقُوْلُ كُنَّا لَا نَرٰى بِالْخِبْرِ بَأْسًا حَتّٰى كَانَ عَامُ أَوَّلَ فَزَعَمَ رَافِعٌ أَنَّ نَبِىَّ اللهِ - - نَهٰى عَنْهُ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মুখাবারা করায় কোন দোষ মনে করতাম না। এভাবে যখন প্রথম বছর অতিবাহিত হলো, তখন রাফি‘ (রাঃ) বললেন, নবী ﷺ এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০১৭; নাসাঈ, হা/৩৯১৯; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১০০৭; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৬৭; মিশকাত, হা/২৯৭৩।]
عَنْ رَافِعٍ قَالَ : كُنَّا أَكْثَرَ أَهْلِ الْمَدِيْنَةِ حَقْلًا ، وَكَانَ أَحَدُنَا يُكْرِيْ أَرْضَه فَيَقُوْلُ هٰذِهِ الْقِطْعَةُ لِيْ وَهٰذِه لَكَ فَرُبَّمَا أَخْرَجَتْ ذِه وَلَمْ تُخْرِجْ ذِه فَنَهَاهُمُ النَّبِيُّ .
রাফি‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনাবাসীদের মধ্যে আমাদের অধিক কৃষি জমি ছিল। আমাদের মাঝে কেউ কেউ তার জমি বর্গা দিত এবং বলত, এ অংশ আমার এবং এ অংশ তোমার। কখনো এক অংশে ফসল ফলত, আর অন্য অংশে ফসল ফলত না। নবী ﷺ তাদেরকে এরকম করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৩২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৭৮; মিশকাত, হা/২৯৭৫।]
যারা জমির মালিকের অনুমতি না নিয়ে জমি চাষ করে, তাদের ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে,
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنْ زَرَعَ فِىْ أَرْضِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَلَيْسَ لَه مِنَ الزَّرْعِ شَىْءٌ وَلَه نَفَقَتُه
রাফে‘ ইবনে খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন লোকের অনুমতি ব্যতীত তার জমিতে কৃষি চাষ করে, তার জন্য কৃষির কোন অংশ নেই। সে তার খরচ পাবে মাত্র। [আবু দাউদ, হা/৩৪০৫; তিরমিযী, হা/১৩৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৬৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২০৮১; মিশকাত, হা/২৯৭৯।]
৪. নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এক বা একাধিক বছরের জন্য চাষ করতে দেয়া :
নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণের বিনিময়ে কাউকে এক বা একাধিক বছরের জন্য চাষ করতে দেয়া যাবে।
৫. জমিতে হারাম দ্রব্য উৎপাদন বা প্রসত্মুত করা যাবে না :
কোন জমিতে এমন দ্রব্য উৎপাদন করা যাবে না, যা শরীয়তে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে অথবা যাতে ক্ষতিকর কোন উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। যেমন- আফিম, গাঁজা, চারস বা অনুরূপ মাদক দ্রব্য ইত্যাদি।
আবার কোন জমি এমন কাউকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া যাবে না, যে এতে হারাম দ্রব্য প্রসত্মুত করবে বলে জানা যাবে। যেমন- মদের কারখানা, বিড়ি তৈরি করার কারখানা ইত্যাদি।
৬. জমির ফসলের ওশর প্রদান করতে হবে :
জমির ফসলের হক্ব হচ্ছে যথাযথভাবে ওশর প্রদান করা। সুতরাং নির্দিষ্ট নিয়মে ফসলের উৎপাদনের পর সমসত্ম ফসলের ১০ ভাগের এক ভাগ বৃষ্টির পানিতে হলে বা ২০ ভাগের এক ভাগ সেচের পানিতে হলে ওশর হিসেবে প্রদান করা ফরয।
﴿فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ اِلٰى طَعَامِهٖ – اَنَّا صَبَبْنَا الْمَآءَ صَبًّا ‐ ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَرْضَ شَقًّا ‐ فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا حَبًّا ‐ وَعِنَبًا وَّقَضْبًا ‐ وَزَيْتُوْنًا وَّنَخْلًا ‐ وَحَدَآئِقَ غُلْبًا ‐ وَفَاكِهَةً وَّاَبًّا – مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِاَنْعَامِكُمْ﴾
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি প্রচুর পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে অদ্ভুতভাবে বিদীর্ণ করি। ফলে তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙ্গুর, শাকসবজি, যায়তুন, খেজুর, বহু নিবিড় ঘন বাগান, ফল-ফলাদি এবং গবাদি পশুর খাদ্য (ঘাস), তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের সামগ্রী হিসেবে। (সূরা আবাসা, ২৪-৩২)
ইসলামে চাষাবাদ করাকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং এজন্য উৎসাহও প্রদান করা হয়েছে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ ، أَوْ إِنْسَانٌ ، أَوْ بَهِيْمَةٌ إِلَّا كَانَ لَه بِه صَدَقَةٌ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলিম যখন কোন গাছ লাগায় অথবা ফসল ফলায়, অতঃপর তা হতে কোন পাখি, মানুষ অথবা পশু (তার ফল-ফসল ইত্যাদি) খায়, তখন তা তার জন্য সাদাকা স্বরূপ হয়। [সহীহ বুখারী, হা/২৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৫৫; তিরমিযী, হা/১৩৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪১৩; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/২১১০; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২৮৫১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২০৮৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪২৩০।]
এছাড়াও অনেক হাদীসেই এ পেশাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং হালাল উপার্জনের জন্য এটি খুবই উত্তম পন্থা। তবে এ ক্ষেত্রে ইসলাম কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে, যেগুলো মেনে চলা একামত্ম আবশ্যক। নিম্নে সে সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করা হলো :
১. জমির মালিক নিজেই চাষ করবে :
কোন জমি চাষ করা বা না করার অধিকার সে জমির মালিকের। সুতরাং যদি সামর্থ থাকে তাহলে উক্ত জমির মালিকই জমি চাষ করবে, তারপর সে যাকে অনুমতি দেবে সে চাষ করবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ كَانَتْ لَه أَرْضٌ فَلْيَزْرَعْهَا ، أَوْ لِيَمْنَحْهَا أَخَاهُ فَإِنْ أَبٰى فَلْيُمْسِكْ أَرْضَه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার কাছে ভূমি আছে সে যেন তাতে নিজে কৃষিকাজ করে কিংবা তার ভাইকে (চাষ করতে) দেয়। যদি এটাও না করতে চায় তবে সে যেন তার ভূমি ফেলে রাখে। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৪১; সহীহ মুসলিম, হা/৪০১৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৫২; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৯৭; জামেউস সগীর, হা/১১৪৬০।]
২. জমির মালিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চাষ করিয়ে নিতে পারে :
জমির মালিক যদি নিজে চাষ করতে অক্ষম হয় তাহলে সে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অপরের মাধ্যমেও চাষ করাতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত-
পারিশ্রমিক প্রদানে যেন কমতি না হয়।
পারিশ্রমিক নির্ধারণের সময় যেন প্রচলিত দামের দিকে লক্ষ্য করা হয়।
শ্রমিকের কোনরূপ দুর্বলতার সুযোগ নেয়া না হয়।
৩. বর্গাচাষ করতে দেয়া যাবে :
উৎপন্ন ফসলের নির্দিষ্ট অংশ প্রদানের শর্তে কাউকে জমি চাষ করতে দেয়াকে বর্গাচাষ বলে। জমির মালিক ইচ্ছা করলে যে কাউকে এ ধরনের চাষ করতে দিতে পারে। ইমাম বুখারী মু‘আল্লাক সূত্রে বর্ণনা করেন,
عَنْ أَبِيْ جَعْفَرٍ قَالَ مَا بِالْمَدِيْنَةِ أَهْلُ بَيْتِ هِجْرَةٍ إِلَّا يَزْرَعُوْنَ عَلَى الثُّلُثِ وَالرُّبُعِ .
আবু জা‘ফার (ইমাম বাকির) বলেছেন, মদীনাতে মুহাজিরদের এমন কোন পরিবার ছিল না যারা এক-তৃতীয়াংশ কিংবা এক-চতুর্থাংশ ফসলের শর্তে ভাগে চাষাবাদ করত না।
وَقَالَ الْحَسَنُ لَا بَأْسَ أَنْ يُجْتَنَى الْقُطْنُ عَلَى النِّصْفِ .
হাসান বসরী (রাঃ) বলেন, আধাআধি শর্তে তুলা চাষ করাতে কোন দোষ নেই। [সহীহ বুখারী, ‘অর্ধেক বা অনুরূপ ফসলের শর্তে ভাগে চাষাবাদ’ অধ্যায়; ৩/১৩৭ পৃঃ; মিশকাত, হা/২৯৮০।]
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও এ ধরনের চাষ করিয়ে নিয়েছেন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - - أَنَّه دَفَعَ إِلٰى يَهُوْدِ خَيْبَرَ نَخْلَ خَيْبَرَ وَأَرْضَهَا عَلٰى أَنْ يَعْتَمِلُوْهَا مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَلِرَسُوْلِ اللهِ - - شَطْرُ ثَمَرِهَا
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ) খায়বারের বাগান ও জমিন খায়বারের ইয়াহুদিদেরকে এ শর্তে প্রদান করেন যে, তারা নিজেদের মাল খরচ করে তাতে কাজ করবে, আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার ফলের অর্ধেক প্রাপ্ত হবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৪৮; আবু দাউদ, হা/৩৪১১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৬৪৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৯৬৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৫৬; মিশকাত, হা/২৯৭২।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ أَعْطٰى خَيْبَرَ الْيَهُوْدَ عَلٰى أَنْ يَعْمَلُوْهَا وَيَزْرَعُوْهَا وَلَهُمْ شَطْرُ مَا خَرَجَ مِنْهَا
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ ইয়াহুদিদেরকে খায়বারের জমি এ শর্তে প্রদান করেন যে, তারা নিজেরা তাতে শ্রম দিবে, চাষাবাদ করবে এবং তার বিনিময়ে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক তারা লাভ করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৩১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৬৪৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৯৬৪; মিশকাত, হা/২৯৭২।]
তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ মুখাবারা পদ্ধতিতে বর্গাচাষ করতে দিতে নিষেধ করেছেন। আর মুখাবারা বলা হয় ঐ পদ্ধতিকে, যার মাধ্যমে জমির মালিক জমির নির্দিষ্ট অংশের ফসল গ্রহণের শর্তে বর্গা দেয়। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ يَقُوْلُ كُنَّا لَا نَرٰى بِالْخِبْرِ بَأْسًا حَتّٰى كَانَ عَامُ أَوَّلَ فَزَعَمَ رَافِعٌ أَنَّ نَبِىَّ اللهِ - - نَهٰى عَنْهُ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মুখাবারা করায় কোন দোষ মনে করতাম না। এভাবে যখন প্রথম বছর অতিবাহিত হলো, তখন রাফি‘ (রাঃ) বললেন, নবী ﷺ এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০১৭; নাসাঈ, হা/৩৯১৯; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১০০৭; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৬৭; মিশকাত, হা/২৯৭৩।]
عَنْ رَافِعٍ قَالَ : كُنَّا أَكْثَرَ أَهْلِ الْمَدِيْنَةِ حَقْلًا ، وَكَانَ أَحَدُنَا يُكْرِيْ أَرْضَه فَيَقُوْلُ هٰذِهِ الْقِطْعَةُ لِيْ وَهٰذِه لَكَ فَرُبَّمَا أَخْرَجَتْ ذِه وَلَمْ تُخْرِجْ ذِه فَنَهَاهُمُ النَّبِيُّ .
রাফি‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনাবাসীদের মধ্যে আমাদের অধিক কৃষি জমি ছিল। আমাদের মাঝে কেউ কেউ তার জমি বর্গা দিত এবং বলত, এ অংশ আমার এবং এ অংশ তোমার। কখনো এক অংশে ফসল ফলত, আর অন্য অংশে ফসল ফলত না। নবী ﷺ তাদেরকে এরকম করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৩২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৭৮; মিশকাত, হা/২৯৭৫।]
যারা জমির মালিকের অনুমতি না নিয়ে জমি চাষ করে, তাদের ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে,
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنْ زَرَعَ فِىْ أَرْضِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَلَيْسَ لَه مِنَ الزَّرْعِ شَىْءٌ وَلَه نَفَقَتُه
রাফে‘ ইবনে খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন লোকের অনুমতি ব্যতীত তার জমিতে কৃষি চাষ করে, তার জন্য কৃষির কোন অংশ নেই। সে তার খরচ পাবে মাত্র। [আবু দাউদ, হা/৩৪০৫; তিরমিযী, হা/১৩৬৬; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৬৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২০৮১; মিশকাত, হা/২৯৭৯।]
৪. নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এক বা একাধিক বছরের জন্য চাষ করতে দেয়া :
নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণের বিনিময়ে কাউকে এক বা একাধিক বছরের জন্য চাষ করতে দেয়া যাবে।
৫. জমিতে হারাম দ্রব্য উৎপাদন বা প্রসত্মুত করা যাবে না :
কোন জমিতে এমন দ্রব্য উৎপাদন করা যাবে না, যা শরীয়তে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে অথবা যাতে ক্ষতিকর কোন উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। যেমন- আফিম, গাঁজা, চারস বা অনুরূপ মাদক দ্রব্য ইত্যাদি।
আবার কোন জমি এমন কাউকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া যাবে না, যে এতে হারাম দ্রব্য প্রসত্মুত করবে বলে জানা যাবে। যেমন- মদের কারখানা, বিড়ি তৈরি করার কারখানা ইত্যাদি।
৬. জমির ফসলের ওশর প্রদান করতে হবে :
জমির ফসলের হক্ব হচ্ছে যথাযথভাবে ওশর প্রদান করা। সুতরাং নির্দিষ্ট নিয়মে ফসলের উৎপাদনের পর সমসত্ম ফসলের ১০ ভাগের এক ভাগ বৃষ্টির পানিতে হলে বা ২০ ভাগের এক ভাগ সেচের পানিতে হলে ওশর হিসেবে প্রদান করা ফরয।
ইসলাম চাষাবাদের পাশাপাশি শিল্পকর্মের জন্য অনুমোদন প্রদান করেছে; এমনকি অনেক নবী ও রাসূলও এ কর্ম সম্পাদন করে গেছেন। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوْسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُمْ مِّنْ ۢبَأْسِكُمْ﴾
আমি তাকে [দাউদ (আঃ)-কে] বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে। (সূরা আম্বিয়া- ৮০)
তবে এ পেশা হালাল হওয়ার জন্য কতিপয় বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরি। যেমন-
১. পণ্যটি বৈধ হতে হবে :
যে পণ্যটির দ্বারা শিল্পকর্ম করা হবে, সেটি অবশ্যই বৈধ ও পবিত্র হতে হবে। ইসলাম যেসব জিনিস অপবিত্র ঘোষণা করেছে সেসব জিনিস দ্বারা শিল্পকর্ম করা যাবে না।
২. ছবিমুক্ত হতে হবে :
শিল্পকর্মের মাধ্যমে তৈরি জিনিসটি অবশ্যই প্রাণীর ছবি থেকে মুক্ত হতে হবে। যেসব পণ্য তৈরি করার জন্য বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ব্যবহার করা হয়, সেসব পণ্য তৈরি করা যাবে না। তবে বিভিন্ন জড়বসত্মুর ছবি ব্যবহার করা যাবে।
৩. অশ্লীলতামুক্ত হতে হবে :
যেসব শিল্পকর্ম অশ্লীলতার ভিত্তিতে গড়ে উঠে সেগুলো তৈরি করা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত থাকা একেবারেই নিষিদ্ধ।
৪. মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর বিষয় থেকে মুক্ত থাকা :
ইসলাম মানব জাতিকে ক্ষতিগ্রসত্ম করে এমনসব জিনিস নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সুতরাং যেসব শিল্পকর্মের মাধ্যমে মানুষ ক্ষতিগ্রসত্ম হয় সেগুলো তৈরি করা হারাম।
৫. নারী-পুরুষের পৃথক কাজের ব্যবস্থা থাকা :
বর্তমানে অনেক শিল্প কারখানাতে নারী-পুরুষকে একই সাথে কাজ করতে দেখা যায়। এতে নারীদের পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হয়। সুতরাং ইসলাম এ ধরনের ব্যবস্থাকে কখনো বৈধ ঘোষণা করে না।
৬. পারিশ্রমিক প্রদানে গড়িমসি করা যাবে না :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : قَالَ اللهُ ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ أَعْطٰى بِيْ ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهٗ وَرَجُلٌ اِسْتَأْجَرَ أَجِيْرًا فَاسْتَوْفٰى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী হব। তারা হলো :
১. যে আমার নামে ওয়াদা করে ভঙ্গ করেছে।
২. যে মুক্ত স্বাধীন মানুষকে বিক্রয় করেছে এবং তার বিক্রয়লব্ধ মূল্য ভক্ষণ করেছে।
৩. আর যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ করে সম্পূর্ণ কাজ আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু পারিশ্রমিক প্রদান করেনি। [সহীহ বুখারী, হা/২২২৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৭৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৩৩৯; মিশকাত, হা/২৯৮৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : أَعْطُوا الْأَجِيْرَ أَجْرَهٗ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهٗ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তার ঘাম শুকানোর পূর্বেই আদায় করে দিবে। [ইবনে মাজাহ, হা/২৪৪৩; জামেউস সগীর, হা/১৯৩৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৭৭; মিশকাত, হা/২৯৮৭।]
﴿وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوْسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُمْ مِّنْ ۢبَأْسِكُمْ﴾
আমি তাকে [দাউদ (আঃ)-কে] বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে। (সূরা আম্বিয়া- ৮০)
তবে এ পেশা হালাল হওয়ার জন্য কতিপয় বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরি। যেমন-
১. পণ্যটি বৈধ হতে হবে :
যে পণ্যটির দ্বারা শিল্পকর্ম করা হবে, সেটি অবশ্যই বৈধ ও পবিত্র হতে হবে। ইসলাম যেসব জিনিস অপবিত্র ঘোষণা করেছে সেসব জিনিস দ্বারা শিল্পকর্ম করা যাবে না।
২. ছবিমুক্ত হতে হবে :
শিল্পকর্মের মাধ্যমে তৈরি জিনিসটি অবশ্যই প্রাণীর ছবি থেকে মুক্ত হতে হবে। যেসব পণ্য তৈরি করার জন্য বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ব্যবহার করা হয়, সেসব পণ্য তৈরি করা যাবে না। তবে বিভিন্ন জড়বসত্মুর ছবি ব্যবহার করা যাবে।
৩. অশ্লীলতামুক্ত হতে হবে :
যেসব শিল্পকর্ম অশ্লীলতার ভিত্তিতে গড়ে উঠে সেগুলো তৈরি করা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত থাকা একেবারেই নিষিদ্ধ।
৪. মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর বিষয় থেকে মুক্ত থাকা :
ইসলাম মানব জাতিকে ক্ষতিগ্রসত্ম করে এমনসব জিনিস নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সুতরাং যেসব শিল্পকর্মের মাধ্যমে মানুষ ক্ষতিগ্রসত্ম হয় সেগুলো তৈরি করা হারাম।
৫. নারী-পুরুষের পৃথক কাজের ব্যবস্থা থাকা :
বর্তমানে অনেক শিল্প কারখানাতে নারী-পুরুষকে একই সাথে কাজ করতে দেখা যায়। এতে নারীদের পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হয়। সুতরাং ইসলাম এ ধরনের ব্যবস্থাকে কখনো বৈধ ঘোষণা করে না।
৬. পারিশ্রমিক প্রদানে গড়িমসি করা যাবে না :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : قَالَ اللهُ ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ أَعْطٰى بِيْ ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهٗ وَرَجُلٌ اِسْتَأْجَرَ أَجِيْرًا فَاسْتَوْفٰى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী হব। তারা হলো :
১. যে আমার নামে ওয়াদা করে ভঙ্গ করেছে।
২. যে মুক্ত স্বাধীন মানুষকে বিক্রয় করেছে এবং তার বিক্রয়লব্ধ মূল্য ভক্ষণ করেছে।
৩. আর যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ করে সম্পূর্ণ কাজ আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু পারিশ্রমিক প্রদান করেনি। [সহীহ বুখারী, হা/২২২৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৭৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৩৩৯; মিশকাত, হা/২৯৮৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : أَعْطُوا الْأَجِيْرَ أَجْرَهٗ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهٗ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তার ঘাম শুকানোর পূর্বেই আদায় করে দিবে। [ইবনে মাজাহ, হা/২৪৪৩; জামেউস সগীর, হা/১৯৩৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৭৭; মিশকাত, হা/২৯৮৭।]
নির্দিষ্ট পরিমাণ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করার নামই হচ্ছে চাকুরি। ইসলাম উপার্জনের এ ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করেছে। অনেক নবী ও রাসূল চাকুরির মাধ্যমে উপার্জন করে গেছেন। যেমন- মূসা (আঃ) শু‘আইব (আঃ) এর বাড়িতে চাকুরি করেছেন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الْغَنَمَ فَقَالَ أَصْحَابُه وَأَنْتَ فَقَالَ نَعَمْ كُنْتُ أَرْعَاهَا عَلٰى قَرَارِيْطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মহান আল্লাহ পৃথিবীতে এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি ছাগল চরাননি। তখন সাহাবীগণ বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল!) আপনিও কি? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ- আমিও কয়েক কীরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম। [সহীহ বুখারী, হা/২২৬২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৮৫; মিশকাত, হা/২৯৮৩।]
তবে এ ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত কতগুলো বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করা আবশ্যক। যেমন-
১. দায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে হবে :
যিনি চাকুরি করবেন বা শ্রম দিবেন তাকে ঐ শ্রম দেয়ার জন্য যোগ্য হতে হবে। সুতরাং কোন ব্যক্তির এমন কোন পদে চাকুরির আবেদন করাও ঠিক নয়, যে পদে চাকুরি করার ক্ষমতা তার নেই। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلَا تَسْتَعْمِلُنِىْ قَالَ فَضَرَبَ بِيَدِه عَلٰى مَنْكِبِىْ ثُمَّ قَالَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِنَّكَ ضَعِيْفٌ وَإِنَّهَا أَمَانَةٌ وَإِنَّهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْىٌ وَنَدَامَةٌ إِلَّا مَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا وَأَدَّى الَّذِىْ عَلَيْهِ فِيْهَا
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বললাম, আপনি কি আমাকে কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিবেন না? এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর হাত আমার কাঁধের উপর রেখে বললেন, হে আবু যর! তুমি বড় দুর্বল ব্যক্তি। আর এ পদ হচ্ছে কঠিন আমানতের ব্যাপার। কিয়ামতের দিন তা-ই হবে লজ্জা ও লাঞ্ছনার কারণ। তবে যে ব্যক্তি এ দায়িত্ব পূর্ণ যোগ্যতার সাথে গ্রহণ করবে এবং দক্ষতা ও সততার সাথে যথাযথভাবে তা পালন করবে তার বেলায় নয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৭২৩; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/৪৮৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০৭০৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭০২০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৩২০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৭৬; মিশকাত, হা/৩৬৮২।]
২. বৈধ পন্থায় চাকুরি গ্রহণ করতে হবে :
চাকুরি গ্রহণ করার সময় অবশ্যই বৈধ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। নতুবা উক্ত চাকুরির মাধ্যমে উপার্জিত সমসত্ম সম্পদ হারাম হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমানে অনেক চাকুরির ক্ষেত্রেই অসৎ পন্থা প্রায়ই চোখে পড়ে। যেমন- ঘুষ প্রদান করা, স্বজনপ্রীতি করা, চাকুরির প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নেয়া ইত্যাদি।
৩. ক্ষতিকর প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না :
যেসব প্রতিষ্ঠান জনগণের বা মুসলিম জাতির ক্ষতি বয়ে আনে, সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না। চাই সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হোক বা গার্মেন্টস হোক বা ঔষধ কম্পানিই হোক বা কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানই হোক। সুতরাং যেসব ঔষধ কম্পানিতে ভেজাল ঔষধ তৈরি করে সেখানে চাকুরি করা যাবে না, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলাম বিরোধী আদর্শ শিক্ষা দেয়া হয় সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকুরি করা যাবে না, যেসব পানীয় জনগণের জন্য ক্ষতিকর সেসব পানীয় তৈরির কম্পানিতে চাকুরি করা যাবে না। এভাবে চাকুরির ক্ষেত্রে এ দিকটি যথাযথভাবে লক্ষ্য রেখে চাকুরি করতে হবে।
৪. ঈমান ও আমলের ক্ষতি করে এমন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না :
যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করলে ঈমান বা ফরয আমলের কোন ক্ষতি হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না। যেমন- অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোতে নামায আদায় করার জন্য সময় দেয়া হয় না বা বাধা দেয়া হয়, রোযা রাখতে বাধা দেয়া হয়, টাখনুর নিচে কাপড় পরতে বাধ্য করা হয়, নারী কর্মীদেরকে পর্দা বর্জন করতে বাধ্য করা হয়। সুতরাং যেসব প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না।
৫. অন্যায় কাজে সহযোগিতামূলক চাকুরি করা যাবে না :
যেসব কাজ ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব কাজে কোন ধরনের সহযোগিতা হবে- এমন কোন প্রতিষ্ঠানে বা পদেও চাকুরি করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
তাই যেসব প্রতিষ্ঠানে সুদ, ঘুষ, ধোঁকা, প্রতারণা ইত্যাদি বিদ্যমান সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান আল্লাহর আইন বাসত্মবায়নে বাধা প্রদান করে সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না। কেননা এগুলোতে চাকুরি করা মানেই তাদেরকে সহযোগিতা করা।
৬. চাকুরিজীবিকে নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে :
যিনি চাকুরি করবেন তাকে অবশ্যই তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হবে। অন্যথায় যদি কেউ তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অবহেলা করে বা ফাঁকিবাজি করে, তাহলে তার ঐ অবহেলিত সময়ের পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ হবে না। সুতরাং চাকুরিজীবিকে অবশ্যই পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে, আমত্মরিকতা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : كُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه وَالْإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِيْ أَهْلِه وَمَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه وَالْمَرْأَةُ فِيْ بَيْتِ زَوْجِهَا رَاعِيَةٌ وَمَسْؤُوْلَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا وَالْخَادِمُ فِيْ مَالِ سَيِّدِه رَاعٍ وَمَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه قَالَ وَحَسِبْتُ أَنْ قَدْ قَالَ وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِيْ مَالِ أَبِيْهِ
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নেতা একজন রক্ষক; তাকে তার অধীনস্তদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের লোকজনদের রক্ষক; তাকে তার অধীনস্তদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের রক্ষক; তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। খাদেম তার মালিকের রক্ষক। আর এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি এও বলেছেন, ছেলে তার বাপের সম্পদের রক্ষক। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৫১; মু‘জামুল আওসাত, হা/৩৮৯০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৪৬৬; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হা/২০৬৪৯।]
৭. দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে :
যে চাকুরি করবে তাকে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ ঘুষ গ্রহণ করা, আত্মসাৎ করা, স্বজনপ্রীতি করা, অন্যায়ভাবে কাউকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা, কারো প্রতি যুলুম করা ইত্যাদি কাজ থেকে মুক্ত হতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ - - الرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ .
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুষ দাতা ও গ্রহীতাকে লানত করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৩৫৮২; তিরমিযী, হা/১৩৩৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৩১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০৭৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২১১; মিশকাত, হা/৩৭৫৩।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الْغَنَمَ فَقَالَ أَصْحَابُه وَأَنْتَ فَقَالَ نَعَمْ كُنْتُ أَرْعَاهَا عَلٰى قَرَارِيْطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মহান আল্লাহ পৃথিবীতে এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি ছাগল চরাননি। তখন সাহাবীগণ বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল!) আপনিও কি? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ- আমিও কয়েক কীরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম। [সহীহ বুখারী, হা/২২৬২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৮৫; মিশকাত, হা/২৯৮৩।]
তবে এ ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত কতগুলো বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করা আবশ্যক। যেমন-
১. দায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে হবে :
যিনি চাকুরি করবেন বা শ্রম দিবেন তাকে ঐ শ্রম দেয়ার জন্য যোগ্য হতে হবে। সুতরাং কোন ব্যক্তির এমন কোন পদে চাকুরির আবেদন করাও ঠিক নয়, যে পদে চাকুরি করার ক্ষমতা তার নেই। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلَا تَسْتَعْمِلُنِىْ قَالَ فَضَرَبَ بِيَدِه عَلٰى مَنْكِبِىْ ثُمَّ قَالَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِنَّكَ ضَعِيْفٌ وَإِنَّهَا أَمَانَةٌ وَإِنَّهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْىٌ وَنَدَامَةٌ إِلَّا مَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا وَأَدَّى الَّذِىْ عَلَيْهِ فِيْهَا
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বললাম, আপনি কি আমাকে কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিবেন না? এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর হাত আমার কাঁধের উপর রেখে বললেন, হে আবু যর! তুমি বড় দুর্বল ব্যক্তি। আর এ পদ হচ্ছে কঠিন আমানতের ব্যাপার। কিয়ামতের দিন তা-ই হবে লজ্জা ও লাঞ্ছনার কারণ। তবে যে ব্যক্তি এ দায়িত্ব পূর্ণ যোগ্যতার সাথে গ্রহণ করবে এবং দক্ষতা ও সততার সাথে যথাযথভাবে তা পালন করবে তার বেলায় নয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৭২৩; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/৪৮৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২০৭০৭; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭০২০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৩২০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৭৬; মিশকাত, হা/৩৬৮২।]
২. বৈধ পন্থায় চাকুরি গ্রহণ করতে হবে :
চাকুরি গ্রহণ করার সময় অবশ্যই বৈধ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। নতুবা উক্ত চাকুরির মাধ্যমে উপার্জিত সমসত্ম সম্পদ হারাম হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমানে অনেক চাকুরির ক্ষেত্রেই অসৎ পন্থা প্রায়ই চোখে পড়ে। যেমন- ঘুষ প্রদান করা, স্বজনপ্রীতি করা, চাকুরির প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নেয়া ইত্যাদি।
৩. ক্ষতিকর প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না :
যেসব প্রতিষ্ঠান জনগণের বা মুসলিম জাতির ক্ষতি বয়ে আনে, সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না। চাই সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হোক বা গার্মেন্টস হোক বা ঔষধ কম্পানিই হোক বা কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানই হোক। সুতরাং যেসব ঔষধ কম্পানিতে ভেজাল ঔষধ তৈরি করে সেখানে চাকুরি করা যাবে না, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলাম বিরোধী আদর্শ শিক্ষা দেয়া হয় সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকুরি করা যাবে না, যেসব পানীয় জনগণের জন্য ক্ষতিকর সেসব পানীয় তৈরির কম্পানিতে চাকুরি করা যাবে না। এভাবে চাকুরির ক্ষেত্রে এ দিকটি যথাযথভাবে লক্ষ্য রেখে চাকুরি করতে হবে।
৪. ঈমান ও আমলের ক্ষতি করে এমন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না :
যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করলে ঈমান বা ফরয আমলের কোন ক্ষতি হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না। যেমন- অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোতে নামায আদায় করার জন্য সময় দেয়া হয় না বা বাধা দেয়া হয়, রোযা রাখতে বাধা দেয়া হয়, টাখনুর নিচে কাপড় পরতে বাধ্য করা হয়, নারী কর্মীদেরকে পর্দা বর্জন করতে বাধ্য করা হয়। সুতরাং যেসব প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না।
৫. অন্যায় কাজে সহযোগিতামূলক চাকুরি করা যাবে না :
যেসব কাজ ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব কাজে কোন ধরনের সহযোগিতা হবে- এমন কোন প্রতিষ্ঠানে বা পদেও চাকুরি করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
তাই যেসব প্রতিষ্ঠানে সুদ, ঘুষ, ধোঁকা, প্রতারণা ইত্যাদি বিদ্যমান সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান আল্লাহর আইন বাসত্মবায়নে বাধা প্রদান করে সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যাবে না। কেননা এগুলোতে চাকুরি করা মানেই তাদেরকে সহযোগিতা করা।
৬. চাকুরিজীবিকে নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে :
যিনি চাকুরি করবেন তাকে অবশ্যই তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হবে। অন্যথায় যদি কেউ তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অবহেলা করে বা ফাঁকিবাজি করে, তাহলে তার ঐ অবহেলিত সময়ের পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ হবে না। সুতরাং চাকুরিজীবিকে অবশ্যই পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে, আমত্মরিকতা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : كُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه وَالْإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِيْ أَهْلِه وَمَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه وَالْمَرْأَةُ فِيْ بَيْتِ زَوْجِهَا رَاعِيَةٌ وَمَسْؤُوْلَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا وَالْخَادِمُ فِيْ مَالِ سَيِّدِه رَاعٍ وَمَسْؤُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِه قَالَ وَحَسِبْتُ أَنْ قَدْ قَالَ وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِيْ مَالِ أَبِيْهِ
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নেতা একজন রক্ষক; তাকে তার অধীনস্তদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের লোকজনদের রক্ষক; তাকে তার অধীনস্তদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের রক্ষক; তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। খাদেম তার মালিকের রক্ষক। আর এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি এও বলেছেন, ছেলে তার বাপের সম্পদের রক্ষক। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৫১; মু‘জামুল আওসাত, হা/৩৮৯০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৪৬৬; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হা/২০৬৪৯।]
৭. দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে :
যে চাকুরি করবে তাকে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ ঘুষ গ্রহণ করা, আত্মসাৎ করা, স্বজনপ্রীতি করা, অন্যায়ভাবে কাউকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা, কারো প্রতি যুলুম করা ইত্যাদি কাজ থেকে মুক্ত হতে হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ - - الرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ .
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুষ দাতা ও গ্রহীতাকে লানত করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৩৫৮২; তিরমিযী, হা/১৩৩৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৩১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০৭৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২১১; মিশকাত, হা/৩৭৫৩।]
ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে উপার্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাধ্যম। সমাজ জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা ও প্রভাব অত্যমত্ম তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূর প্রসারী। ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেবল বৈধই বলেনি; বরং এ ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহ ও গুরুত্ব প্রদান করেছে। আর এজন্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ সহ অনেক নবী-রাসূল ও সৎ ব্যক্তিগণ- এমনকি অনেক সাহাবীগণও ব্যবসা-বাণিজ্য করে গেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসাকে হালাল ঘোষণা করেছেন :
﴿وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا﴾
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।
(সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
হালাল ব্যবসা করা সবচেয়ে উত্তম উপার্জন :
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ قَالَ : قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، أَيُّ الْكَسْبِ أَطْيَبُ ؟ قَالَ : عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِه وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُوْرٍ
রাফে‘ ইবনে খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ প্রকার উপার্জন সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, কোন ব্যক্তির নিজ হাতের দ্বারা উপার্জন এবং প্রত্যেক হালাল ব্যবসা। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩০৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৭৩১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৬০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪২৮৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/১১৭৪; জামেউস সগীর, হা/১৯১৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৬০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯১; মিশকাত, হা/২৭৮৩।]
আল্লাহ তা‘আলা হালাল ব্যবসার মধ্যে বরকত দান করেন :
عَنْ حَكِيْمِ بْنِ حِزَامٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا ، أَوْ قَالَ حَتّٰى يَتَفَرَّقَا - فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِيْ بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় শেষে পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার অধিকার রাখে। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে এবং বিক্রেতা বিক্রীত দ্রব্যের দোষ-ত্রুটি বলে দেয়, তাহলে এই ক্রয়-বিক্রয়ে উভয়কে বরকত প্রদান করা হয়। কিন্তু যদি তারা মিথ্যা বলে এবং বিক্রীত দ্রব্যের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখে, তাহলে এই ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/২০৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৩৭; তিরমিযী, হা/১২৪৬; নাসাঈ, হা/৪৪৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩৪৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯০৪; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১৪১৩; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৯৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩০৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৪১; সুনানে দারেমী, হা/২৫৪৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৫১; জামেউস সগীর, হা/৫২০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৮৪; মিশকাত, হা/২৮০২।]
আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসাকে হালাল ঘোষণা করেছেন :
﴿وَاَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا﴾
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।
(সূরা বাক্বারা- ২৭৫)
হালাল ব্যবসা করা সবচেয়ে উত্তম উপার্জন :
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ قَالَ : قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، أَيُّ الْكَسْبِ أَطْيَبُ ؟ قَالَ : عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِه وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُوْرٍ
রাফে‘ ইবনে খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ প্রকার উপার্জন সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, কোন ব্যক্তির নিজ হাতের দ্বারা উপার্জন এবং প্রত্যেক হালাল ব্যবসা। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩০৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৭৩১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭০০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২১৬০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪২৮৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/১১৭৪; জামেউস সগীর, হা/১৯১৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৬০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৯১; মিশকাত, হা/২৭৮৩।]
আল্লাহ তা‘আলা হালাল ব্যবসার মধ্যে বরকত দান করেন :
عَنْ حَكِيْمِ بْنِ حِزَامٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا ، أَوْ قَالَ حَتّٰى يَتَفَرَّقَا - فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِيْ بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় শেষে পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার অধিকার রাখে। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে এবং বিক্রেতা বিক্রীত দ্রব্যের দোষ-ত্রুটি বলে দেয়, তাহলে এই ক্রয়-বিক্রয়ে উভয়কে বরকত প্রদান করা হয়। কিন্তু যদি তারা মিথ্যা বলে এবং বিক্রীত দ্রব্যের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখে, তাহলে এই ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/২০৭৯; সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৩৭; তিরমিযী, হা/১২৪৬; নাসাঈ, হা/৪৪৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩৪৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯০৪; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১৪১৩; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৯৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩০৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৪১; সুনানে দারেমী, হা/২৫৪৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৫১; জামেউস সগীর, হা/৫২০৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৮৪; মিশকাত, হা/২৮০২।]
আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি যে কোন পন্থাকে বৈধ করেননি। বরং হালাল হিসেবে সাব্যসত্ম হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত ও বিধিবিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নিম্নে সেসব শর্তাবলি ও বিধিবিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে :
পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে ক্রেতা ও বিক্রেতার পরস্পর সমত্মুষ্টি ও সম্মতি থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধ্যবাধকতা বা চালবাজি গ্রহণযোগ্য নয়।
২. ব্যবসায়িক পণ্যটি হালাল হতে হবে :
যে পণ্যটির মাধ্যমে ব্যবসা করা হয় সেটি অবশ্যই হালাল পণ্য হতে হবে। কেননা হারাম কোন পণ্য দিয়ে ব্যবসা করা বৈধ নয়।
৩. পণ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে :
ব্যবসায়িক পণ্য সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের সঠিক ধারণা থাকতে হবে। কেননা না দেখে অনুমানের ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করলে ধোঁকার আশঙ্কা থাকে।
৪. পণ্য নিজ আয়ত্তে থাকতে হবে :
কোন পণ্য সম্পূর্ণভাবে নিজের মালিকানায় অথবা নিজের আয়ত্তে না আসা পর্যমত্ম সে পণ্য দিয়ে ব্যবসা করা বৈধ নয়। কেননা এতে ধোঁকার আশঙ্কা রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلَا يَبِيْعُه حَتّٰى يَسْتَوْفِيَه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কেউ খাদ্য-সামগ্রী ক্রয় করলে যতক্ষণ তা তার পূর্ণ দখলে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত যেন তা বিক্রি না করে। [সহীহ বুখারী, হা/২১২৬; নাসাঈ, হা/৪৬০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩০৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯৮৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৩৪; মিশকাত, হা/২৮৪৪।]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلَا يَبِعْه حَتّٰى يَكْتَالَه
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন খাদ্য-সামগ্রী ক্রয় করবে, সে যেন তা পরিপূর্ণভাবে বুঝে না নেয়া পর্যমত্ম বিক্রি না করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯১৬; আবু দাউদ, হা/৩৪৯৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬১৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২১৭৫৪; মিশকাত, হা/২৮৪৫।]
عَنْ حَكِيْمِ بْنِ حِزَامٍ قَالَ نَهَانِىْ رَسُوْلُ اللهِ - - أَنْ أَبِيْعَ مَا لَيْسَ عِنْدِىْ
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে ঐসব বসত্মু ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, যা আমার দখলে নেই। [তিরমিযী, হা/১২৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩৪৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৬৭৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩০৩১; মিশকাত, হা/২৮৬৭।]
এ শর্ত অনুযায়ী আকাশে উড়মত্ম পাখি, পানিতে অবস্থিত মাছ, মুকুল অবস্থায় থাকা ফল, সত্মনে থাকা অবস্থায় দুধ, দুধ থাকা অবস্থায় ঘি ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ নয়।
৫. ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পৃথক হওয়া পর্যমত্ম ইখতিয়ার থাকবে :
ইখতিয়ার বলা হয় ঐ অধিকারকে, যার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরও যে কেউ তা ভঙ্গ করতে পারে। আর এ ইখতিয়ারটি ততক্ষণ পর্যমত্ম প্রযোজ্য হবে, যতক্ষণ না ক্রেতা-বিক্রেতা একে অপরের নিকট থেকে পৃথক হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : الْمُتَبَايِعَانِ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا بِالْخِيَارِ عَلٰى صَاحِبِه مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا إِلَّا بَيْعَ الْخِيَارِ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতার ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার ইখতিয়ার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে, যতক্ষণ না তারা উভয়ে পৃথক হয়ে যায়। [সহীহ বুখারী, হা/২১১১; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৪৯; আবু দাউদ, হা/৩৪৫৬; নাসাঈ, হা/৪৪৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯১৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৩৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৯০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৪৭; জামেউস সগীর, হা/১১৬২০; মিশকাত, হা/২৮০১।]
৬. প্রত্যেক বসত্মু ভিন্ন জাতীয় দ্রব্যের মাধ্যমে বিনিময় করতে হবে :
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ اسْتَعْمَلَ رَجُلًا عَلٰى خَيْبَرَ فَجَاءَهُ بِتَمْرٍ جَنِيْبٍ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَكُلُّ تَمْرِ خَيْبَرَ هٰكَذَا قَالَ : لَا وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا لَنَأْخُذُ الصَّاعَ مِنْ هٰذَا بِالصَّاعَيْنِ وَالصَّاعَيْنِ بِالثَّلَاثَةِ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا تَفْعَلْ بِعِ الْجَمْعَ بِالدَّرَاهِمِ ثُمَّ ابْتَعْ بِالدَّرَاهِمِ جَنِيْبًا
আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে খায়বারের (ফসল) আদায়কারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তখন সে তাঁর কাছে কিছু উন্নতমানের খেজুর নিয়ে আসলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ (তা দেখে) জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এরকম? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর কসম! সকল খেজুর এমন নয়। আমরা এগুলোর এক সা‘ অন্যগুলোর দুই সা‘ এর পরিবর্তে এবং এগুলোর দুই সা‘ অন্যগুলোর তিন সা‘ এর পরিবর্তে গ্রহণ করে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এরূপ করবে না। বরং প্রথমে মিশ্রিত খেজুরগুলো দিরহামের পরিবর্তে বিক্রি করবে। তারপর উক্ত দিরহামের পরিবর্তে উত্তম খেজুরগুলো ক্রয় করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২২০১-০২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৬৬; নাসাঈ, হা/৪৫৫৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০২১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৮৪৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪২৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৬৪; মিশকাত, হা/২৮১৩।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيَّ قَالَ جَاءَ بِلَالٌ إِلَى النَّبِيِّ بِتَمْرٍ بَرْنِيٍّ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ مِنْ أَيْنَ هٰذَا قَالَ بِلَالٌ كَانَ عِنْدَنَا تَمْرٌ رَدِيٌّ فَبِعْتُ مِنْهُ صَاعَيْنِ بِصَاعٍ لِنُطْعِمَ النَّبِيَّ فَقَالَ النَّبِيُّ عِنْدَ ذٰلِكَ أَوَّهْ أَوَّهْ عَيْنُ الرِّبَا عَيْنُ الرِّبَا لَا تَفْعَلْ وَلٰكِنْ إِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَشْتَرِيَ فَبِعِ التَّمْرَ بِبَيْعٍ اٰخَرَ ثُمَّ اشْتَرِهِ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা বিলাল (রাঃ) নবী ﷺ এর নিকট কিছু বারনী খেজুর [রোগনাশক উত্তম খেজুর, যা আকারে গোল এবং হলুদ রং বিশিষ্ট।] নিয়ে আসলেন। তখন নবী ﷺ তাঁকে বললেন, এগুলো কোথায় পেলে? বিলাল (রাঃ) বললেন, আমার নিকট কিছু নিকৃষ্ট খেজুর ছিল। নবী ﷺ-কে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে এর দু’ সা‘ এর পরিবর্তে এর এক সা‘ ক্রয় করে এনেছি। নবী ﷺ বললেন, ওয়া! ওয়া! এতো সরাসরি সুদ, এ তো সরাসরি সুদ- এমনটি করো না। তবে যখন তুমি উৎকৃষ্ট খেজুর ক্রয় করতে চাইবে, তখন নিকৃষ্ট খেজুর অন্য কোন জিনিসের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিবে। তারপর ঐ মূল্যের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট খেজুর ক্রয় করে নিবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৩১২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬১৩; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪২৭; মিশকাত, হা/২৮১৪।]
১. ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে :
পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে ক্রেতা ও বিক্রেতার পরস্পর সমত্মুষ্টি ও সম্মতি থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধ্যবাধকতা বা চালবাজি গ্রহণযোগ্য নয়।
২. ব্যবসায়িক পণ্যটি হালাল হতে হবে :
যে পণ্যটির মাধ্যমে ব্যবসা করা হয় সেটি অবশ্যই হালাল পণ্য হতে হবে। কেননা হারাম কোন পণ্য দিয়ে ব্যবসা করা বৈধ নয়।
৩. পণ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে :
ব্যবসায়িক পণ্য সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের সঠিক ধারণা থাকতে হবে। কেননা না দেখে অনুমানের ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করলে ধোঁকার আশঙ্কা থাকে।
৪. পণ্য নিজ আয়ত্তে থাকতে হবে :
কোন পণ্য সম্পূর্ণভাবে নিজের মালিকানায় অথবা নিজের আয়ত্তে না আসা পর্যমত্ম সে পণ্য দিয়ে ব্যবসা করা বৈধ নয়। কেননা এতে ধোঁকার আশঙ্কা রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلَا يَبِيْعُه حَتّٰى يَسْتَوْفِيَه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কেউ খাদ্য-সামগ্রী ক্রয় করলে যতক্ষণ তা তার পূর্ণ দখলে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত যেন তা বিক্রি না করে। [সহীহ বুখারী, হা/২১২৬; নাসাঈ, হা/৪৬০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩০৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯৮৬; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৩৪; মিশকাত, হা/২৮৪৪।]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلَا يَبِعْه حَتّٰى يَكْتَالَه
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন খাদ্য-সামগ্রী ক্রয় করবে, সে যেন তা পরিপূর্ণভাবে বুঝে না নেয়া পর্যমত্ম বিক্রি না করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯১৬; আবু দাউদ, হা/৩৪৯৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬১৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২১৭৫৪; মিশকাত, হা/২৮৪৫।]
عَنْ حَكِيْمِ بْنِ حِزَامٍ قَالَ نَهَانِىْ رَسُوْلُ اللهِ - - أَنْ أَبِيْعَ مَا لَيْسَ عِنْدِىْ
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে ঐসব বসত্মু ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন, যা আমার দখলে নেই। [তিরমিযী, হা/১২৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩৪৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৬৭৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩০৩১; মিশকাত, হা/২৮৬৭।]
এ শর্ত অনুযায়ী আকাশে উড়মত্ম পাখি, পানিতে অবস্থিত মাছ, মুকুল অবস্থায় থাকা ফল, সত্মনে থাকা অবস্থায় দুধ, দুধ থাকা অবস্থায় ঘি ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ নয়।
৫. ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পৃথক হওয়া পর্যমত্ম ইখতিয়ার থাকবে :
ইখতিয়ার বলা হয় ঐ অধিকারকে, যার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরও যে কেউ তা ভঙ্গ করতে পারে। আর এ ইখতিয়ারটি ততক্ষণ পর্যমত্ম প্রযোজ্য হবে, যতক্ষণ না ক্রেতা-বিক্রেতা একে অপরের নিকট থেকে পৃথক হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : الْمُتَبَايِعَانِ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا بِالْخِيَارِ عَلٰى صَاحِبِه مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا إِلَّا بَيْعَ الْخِيَارِ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতার ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার ইখতিয়ার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে, যতক্ষণ না তারা উভয়ে পৃথক হয়ে যায়। [সহীহ বুখারী, হা/২১১১; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৪৯; আবু দাউদ, হা/৩৪৫৬; নাসাঈ, হা/৪৪৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯১৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৩৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৯০; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৪৭; জামেউস সগীর, হা/১১৬২০; মিশকাত, হা/২৮০১।]
৬. প্রত্যেক বসত্মু ভিন্ন জাতীয় দ্রব্যের মাধ্যমে বিনিময় করতে হবে :
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ اسْتَعْمَلَ رَجُلًا عَلٰى خَيْبَرَ فَجَاءَهُ بِتَمْرٍ جَنِيْبٍ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَكُلُّ تَمْرِ خَيْبَرَ هٰكَذَا قَالَ : لَا وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا لَنَأْخُذُ الصَّاعَ مِنْ هٰذَا بِالصَّاعَيْنِ وَالصَّاعَيْنِ بِالثَّلَاثَةِ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا تَفْعَلْ بِعِ الْجَمْعَ بِالدَّرَاهِمِ ثُمَّ ابْتَعْ بِالدَّرَاهِمِ جَنِيْبًا
আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে খায়বারের (ফসল) আদায়কারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তখন সে তাঁর কাছে কিছু উন্নতমানের খেজুর নিয়ে আসলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ (তা দেখে) জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এরকম? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর কসম! সকল খেজুর এমন নয়। আমরা এগুলোর এক সা‘ অন্যগুলোর দুই সা‘ এর পরিবর্তে এবং এগুলোর দুই সা‘ অন্যগুলোর তিন সা‘ এর পরিবর্তে গ্রহণ করে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এরূপ করবে না। বরং প্রথমে মিশ্রিত খেজুরগুলো দিরহামের পরিবর্তে বিক্রি করবে। তারপর উক্ত দিরহামের পরিবর্তে উত্তম খেজুরগুলো ক্রয় করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২২০১-০২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৬৬; নাসাঈ, হা/৪৫৫৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০২১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৮৪৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪২৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৬৪; মিশকাত, হা/২৮১৩।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيَّ قَالَ جَاءَ بِلَالٌ إِلَى النَّبِيِّ بِتَمْرٍ بَرْنِيٍّ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ مِنْ أَيْنَ هٰذَا قَالَ بِلَالٌ كَانَ عِنْدَنَا تَمْرٌ رَدِيٌّ فَبِعْتُ مِنْهُ صَاعَيْنِ بِصَاعٍ لِنُطْعِمَ النَّبِيَّ فَقَالَ النَّبِيُّ عِنْدَ ذٰلِكَ أَوَّهْ أَوَّهْ عَيْنُ الرِّبَا عَيْنُ الرِّبَا لَا تَفْعَلْ وَلٰكِنْ إِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَشْتَرِيَ فَبِعِ التَّمْرَ بِبَيْعٍ اٰخَرَ ثُمَّ اشْتَرِهِ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা বিলাল (রাঃ) নবী ﷺ এর নিকট কিছু বারনী খেজুর [রোগনাশক উত্তম খেজুর, যা আকারে গোল এবং হলুদ রং বিশিষ্ট।] নিয়ে আসলেন। তখন নবী ﷺ তাঁকে বললেন, এগুলো কোথায় পেলে? বিলাল (রাঃ) বললেন, আমার নিকট কিছু নিকৃষ্ট খেজুর ছিল। নবী ﷺ-কে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে এর দু’ সা‘ এর পরিবর্তে এর এক সা‘ ক্রয় করে এনেছি। নবী ﷺ বললেন, ওয়া! ওয়া! এতো সরাসরি সুদ, এ তো সরাসরি সুদ- এমনটি করো না। তবে যখন তুমি উৎকৃষ্ট খেজুর ক্রয় করতে চাইবে, তখন নিকৃষ্ট খেজুর অন্য কোন জিনিসের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিবে। তারপর ঐ মূল্যের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট খেজুর ক্রয় করে নিবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৩১২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬১৩; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪২৭; মিশকাত, হা/২৮১৪।]
ইসলাম সাধারণত ৫টি পদ্ধতিতে ব্যবসা করার অনুমোদন দিয়েছে। সেগুলো হলো :
(১) বায়‘উ মুরাবাহা : লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে নগদ মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের একক ব্যবসা।
(২) বায়‘উ মুয়াজ্জাল : উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্দিষ্ট দিন বা সময় পর্যমত্ম বাকি রেখে এক সাথে মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় করার মাধ্যমে ব্যবসা।
(৩) বায়‘উস সালাম : উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে পণ্য হসত্মামত্মরের শর্তে নগদ মূল্য পরিশোধ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করার মাধ্যমে ব্যবসা। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ الْمَدِيْنَةَ وَالنَّاسُ يُسْلِفُوْنَ فِي الثَّمَرِ الْعَامَ وَالْعَامَيْنِ ، أَوْ قَالَ عَامَيْنِ ، أَوْ ثَلَاثَةً شَكَّ إِسْمَاعِيْلُ - فَقَالَ مَنْ سَلَّفَ فِيْ تَمْرٍ فَلْيُسْلِفْ فِيْ كَيْلٍ مَعْلُوْمٍ وَوَزْنٍ مَعْلُوْمٍ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মদীনায় আগমন করেন তখন মদীনার লোকেরা এক-দুই বছর অথবা দুই-তিন বছর মেয়াদে খেজুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করত। এ দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি খেজুরের মূল্য অগ্রিম প্রদান করে, সে যেন নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজনের উল্লেখ করে অগ্রিম মূল্য প্রদান করে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৩৯; সহীহ মুসলিম, হা/৪২০২; আবু দাউদ, হা/৩৪৬৫; তিরমিযী, হা/১৩১১; নাসাঈ, হা/৪৬১৬; ইবনে মাজাহ, হা/২২৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৪১১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১১১০১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৭৪৪; মিশকাত, হা/২৮৮৩।]
(৪) বায়‘উ মুযারাবা : এক পক্ষের মূলধন এবং অপরপক্ষের শ্রমের সমন্বয়ে যৌথ ব্যবসা। [আব্দুর রহমান আল-জাযায়রী, কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ (বৈরুত : দারুল ইলমিয়্যাহ, তা.বি) ৩/৩৪; শাহ ওয়ালী উল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, তা.বি.) ২/১১৬।] এ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ তাদের মাঝে চুক্তিহারে বণ্টিত হবে। [মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫৩৫; দার কুতনী, হা/৩০৭৭; ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৪৭২; ৫/২৯২ পৃঃ; বুলুগুল মারাম, হা/৮৯৫।] রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদীজা (রাঃ) এর মূলধন দ্বারা এরূপ যৌথ ব্যবসা করেছিলেন এবং সাহাবীগণের অনেকেই এ পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। [ইমাম শামসুদ্দীন আস-সারাখসী, আল-মাবসূত (বৈরুত : দারুল মা‘রিফাহ, ১৪১৪ হিঃ/১৯৯৩ ইং), ২২/১৮ পৃঃ।]
এ প্রকার ব্যবসায় যে ব্যক্তি পুঁজির যোগান দেয় তাকে صَاحِبُ الْمَالِ (সাহেবুল মাল) বা رَبُّ الْمَالِ (রাববুল মাল) বলা হয়। আর যে ব্যক্তি শ্রম দেয় তথা ব্যবসা পরিচালনা করে, তাকে مُضَارِبٌ (মুযারিব) বা উদ্যোক্তা বলা হয়। এখানে সাহেবুল মাল এর পুঁজি হচ্ছে ব্যবসার জন্য প্রদত্ত অর্থ-সম্পদ; আর মুযারিবের পুঁজি হচ্ছে তার শ্রম।
এ প্রকার ব্যবসায় লাভ হলে ব্যবসার শুরুতে কৃত চুক্তির শর্তানুসারে সাহেবুল মাল এবং মুযারিব উভয়েই উক্ত লভ্যাংশ বণ্টন করে নিবে। পক্ষান্তরে ব্যবসায় লোকসান হলে সম্পূর্ণ লোকসান কেবল সাহেবুল মাল তথা পুঁজি বিনিয়োগকারীকেই বহন করতে হবে এবং মুযারিবের ব্যয়িত সকল প্রকার শ্রম ও সময় ব্যর্থ হিসেবে গণ্য হবে। তবে ব্যবসা পরিচালনায় মুযারিবের অবহেলা কিংবা চুক্তির শর্ত ভঙ্গের কারণে লোকসান হলে সেক্ষেত্রে লোকসানের দায়ভার মুযারিবকেই বহন করতে হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে পুঁজির মালিকের কোন ভূমিকা থাকে না। [আলী আল-খাফীফ, আশ-শিরকাতু ফী ফিকহিল ইসলামী (কায়রো : দারুন নশর, ১৯৬২ ইং), ৭৪ পৃঃ।]
(৫) বায়‘উ মুশারাকা : মূলধন ও লভ্যাংশের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক অংশীদারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসা। [সা‘দী আবু হাবীব, আল-কামূসুল ফিকহ (পাকিস্তান : ইদারাতুল কুরআন ওয়াল উলূমিল ইসলামিয়্যাহ, তাবি), ১৯৫ পৃঃ; মুফতী মুহাম্মাদ তাক্বী উছমানী, অনুঃ মুফতী মুহাম্মাদ জাবের হোসাইন, ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতি : সমস্যা ও সমাধান, (ঢাকা : মাকতাবাতুল আশরাফ, ২০০৫ ইং), ২৭ পৃঃ।]
এ পদ্ধতিতে ব্যবসায় লাভ হলে অংশীদারগণ পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে তা ভাগ করে নিবে। আর লোকসান হলে অংশীদারগণ নিজ নিজ পুঁজির আনুপাতিক হারে তা বহন করবে। [আবু দাউদ, হা/৪৮৩৬; বুলুগুল মারাম, হা/৮৭০; নায়লুল আওতার, হা/২৩৩৪-৩৫।]
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বায়না চুক্তি করা যাবে :
ততক্ষণাৎ পণ্য গ্রহণ না করে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য বায়না হিসেবে অগ্রিম যা কিছু দেয়া হয় তাকে বায়না চুক্তি বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যসত্ম হয়ে যাবে।
ব্যবসার ক্ষেত্রে জামানত রাখা যাবে :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ اشْتَرٰى طَعَامًا مِنْ يَهُوْدِيٍّ إِلٰى أَجَلٍ وَرَهَنَه دِرْعًا مِنْ حَدِيْدٍ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ লৌহ নির্মিত একটি বর্ম জামানত রেখে জনৈক ইয়াহুদির নিকট থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু খাদ্য-সামগ্রী (বাকিতে) কিনেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২০৬৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৯৩৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৬৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৩০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৫২১; মিশকাত, হা/২৮৮৪।]
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ وَدِرْعُه مَرْهُوْنَةٌ عِنْدَ يَهُوْدِيٍّ بِثَلَاثِيْنَ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ইহলোক ত্যাগ করলেন, এ সময় তাঁর বর্মখানি ত্রিশ সা‘ যবের বদলে এক ইয়াহুদির নিকট বন্ধক ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/২৯১৬; নাসাঈ, হা/৪৬৫১; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪০৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯৭৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৯৫; মিশকাত, হা/২৮৮৫।]
(১) বায়‘উ মুরাবাহা : লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে নগদ মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের একক ব্যবসা।
(২) বায়‘উ মুয়াজ্জাল : উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্দিষ্ট দিন বা সময় পর্যমত্ম বাকি রেখে এক সাথে মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় করার মাধ্যমে ব্যবসা।
(৩) বায়‘উস সালাম : উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে পণ্য হসত্মামত্মরের শর্তে নগদ মূল্য পরিশোধ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করার মাধ্যমে ব্যবসা। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ الْمَدِيْنَةَ وَالنَّاسُ يُسْلِفُوْنَ فِي الثَّمَرِ الْعَامَ وَالْعَامَيْنِ ، أَوْ قَالَ عَامَيْنِ ، أَوْ ثَلَاثَةً شَكَّ إِسْمَاعِيْلُ - فَقَالَ مَنْ سَلَّفَ فِيْ تَمْرٍ فَلْيُسْلِفْ فِيْ كَيْلٍ مَعْلُوْمٍ وَوَزْنٍ مَعْلُوْمٍ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মদীনায় আগমন করেন তখন মদীনার লোকেরা এক-দুই বছর অথবা দুই-তিন বছর মেয়াদে খেজুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করত। এ দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি খেজুরের মূল্য অগ্রিম প্রদান করে, সে যেন নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজনের উল্লেখ করে অগ্রিম মূল্য প্রদান করে। [সহীহ বুখারী, হা/২২৩৯; সহীহ মুসলিম, হা/৪২০২; আবু দাউদ, হা/৩৪৬৫; তিরমিযী, হা/১৩১১; নাসাঈ, হা/৪৬১৬; ইবনে মাজাহ, হা/২২৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৪১১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১১১০১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৭৪৪; মিশকাত, হা/২৮৮৩।]
(৪) বায়‘উ মুযারাবা : এক পক্ষের মূলধন এবং অপরপক্ষের শ্রমের সমন্বয়ে যৌথ ব্যবসা। [আব্দুর রহমান আল-জাযায়রী, কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ (বৈরুত : দারুল ইলমিয়্যাহ, তা.বি) ৩/৩৪; শাহ ওয়ালী উল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, তা.বি.) ২/১১৬।] এ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ তাদের মাঝে চুক্তিহারে বণ্টিত হবে। [মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৫৩৫; দার কুতনী, হা/৩০৭৭; ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৪৭২; ৫/২৯২ পৃঃ; বুলুগুল মারাম, হা/৮৯৫।] রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদীজা (রাঃ) এর মূলধন দ্বারা এরূপ যৌথ ব্যবসা করেছিলেন এবং সাহাবীগণের অনেকেই এ পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। [ইমাম শামসুদ্দীন আস-সারাখসী, আল-মাবসূত (বৈরুত : দারুল মা‘রিফাহ, ১৪১৪ হিঃ/১৯৯৩ ইং), ২২/১৮ পৃঃ।]
এ প্রকার ব্যবসায় যে ব্যক্তি পুঁজির যোগান দেয় তাকে صَاحِبُ الْمَالِ (সাহেবুল মাল) বা رَبُّ الْمَالِ (রাববুল মাল) বলা হয়। আর যে ব্যক্তি শ্রম দেয় তথা ব্যবসা পরিচালনা করে, তাকে مُضَارِبٌ (মুযারিব) বা উদ্যোক্তা বলা হয়। এখানে সাহেবুল মাল এর পুঁজি হচ্ছে ব্যবসার জন্য প্রদত্ত অর্থ-সম্পদ; আর মুযারিবের পুঁজি হচ্ছে তার শ্রম।
এ প্রকার ব্যবসায় লাভ হলে ব্যবসার শুরুতে কৃত চুক্তির শর্তানুসারে সাহেবুল মাল এবং মুযারিব উভয়েই উক্ত লভ্যাংশ বণ্টন করে নিবে। পক্ষান্তরে ব্যবসায় লোকসান হলে সম্পূর্ণ লোকসান কেবল সাহেবুল মাল তথা পুঁজি বিনিয়োগকারীকেই বহন করতে হবে এবং মুযারিবের ব্যয়িত সকল প্রকার শ্রম ও সময় ব্যর্থ হিসেবে গণ্য হবে। তবে ব্যবসা পরিচালনায় মুযারিবের অবহেলা কিংবা চুক্তির শর্ত ভঙ্গের কারণে লোকসান হলে সেক্ষেত্রে লোকসানের দায়ভার মুযারিবকেই বহন করতে হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে পুঁজির মালিকের কোন ভূমিকা থাকে না। [আলী আল-খাফীফ, আশ-শিরকাতু ফী ফিকহিল ইসলামী (কায়রো : দারুন নশর, ১৯৬২ ইং), ৭৪ পৃঃ।]
(৫) বায়‘উ মুশারাকা : মূলধন ও লভ্যাংশের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক অংশীদারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসা। [সা‘দী আবু হাবীব, আল-কামূসুল ফিকহ (পাকিস্তান : ইদারাতুল কুরআন ওয়াল উলূমিল ইসলামিয়্যাহ, তাবি), ১৯৫ পৃঃ; মুফতী মুহাম্মাদ তাক্বী উছমানী, অনুঃ মুফতী মুহাম্মাদ জাবের হোসাইন, ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতি : সমস্যা ও সমাধান, (ঢাকা : মাকতাবাতুল আশরাফ, ২০০৫ ইং), ২৭ পৃঃ।]
এ পদ্ধতিতে ব্যবসায় লাভ হলে অংশীদারগণ পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে তা ভাগ করে নিবে। আর লোকসান হলে অংশীদারগণ নিজ নিজ পুঁজির আনুপাতিক হারে তা বহন করবে। [আবু দাউদ, হা/৪৮৩৬; বুলুগুল মারাম, হা/৮৭০; নায়লুল আওতার, হা/২৩৩৪-৩৫।]
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বায়না চুক্তি করা যাবে :
ততক্ষণাৎ পণ্য গ্রহণ না করে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য বায়না হিসেবে অগ্রিম যা কিছু দেয়া হয় তাকে বায়না চুক্তি বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যসত্ম হয়ে যাবে।
ব্যবসার ক্ষেত্রে জামানত রাখা যাবে :
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ اشْتَرٰى طَعَامًا مِنْ يَهُوْدِيٍّ إِلٰى أَجَلٍ وَرَهَنَه دِرْعًا مِنْ حَدِيْدٍ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ লৌহ নির্মিত একটি বর্ম জামানত রেখে জনৈক ইয়াহুদির নিকট থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু খাদ্য-সামগ্রী (বাকিতে) কিনেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২০৬৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৯৩৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৬৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৩০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৫২১; মিশকাত, হা/২৮৮৪।]
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ وَدِرْعُه مَرْهُوْنَةٌ عِنْدَ يَهُوْدِيٍّ بِثَلَاثِيْنَ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ইহলোক ত্যাগ করলেন, এ সময় তাঁর বর্মখানি ত্রিশ সা‘ যবের বদলে এক ইয়াহুদির নিকট বন্ধক ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/২৯১৬; নাসাঈ, হা/৪৬৫১; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪০৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯৭৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৯৫; মিশকাত, হা/২৮৮৫।]
১. একটি শর্তের উপর আরেকটি শর্ত করা যাবে না :
ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি শর্তের উপর আরেকটি শর্ত প্রয়োগ করা নিষিদ্ধ। কেননা এ ধরনের ব্যবসা পাতানোর অমত্মর্ভুক্ত হয় এবং এতে ক্রেতা-বিক্রেতার সমত্মুষ্টির অনুপস্থিতি থাকে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلَ اللهِ لَا تَحِلُّ صَفْقَتَانِ فِيْ صَفْقَةٍ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একটি শর্তের উপর আরেকটি শর্ত করা বৈধ নয়। [মু‘জামুল আওসাত, হা/১৬১০।]
এ হাদীসের স্বরূপ এমন যে, বিক্রেতা বলল, আমি তোমার নিকট এটি একশত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছি; তবে শর্ত হলো, আমার নিকট তোমার অমুক পণ্যটি এত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে।
২. বাজারে আগত পণ্য বাজারে পৌঁছার পূর্বে ক্রয় করা যাবে না :
বাজারে সব সময় মূল্য উঠা-নামা করে থাকে। সুতরাং কোন বিক্রেতা বাজারে না পৌঁছা পর্যমত্ম কোন পণ্যের মূল্য সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে পারে না। এমতাবস্থায় যদি কোন বিক্রেতা কোন পণ্য নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়, তাহলে তার বাজারে পৌঁছার পূর্বে রাসত্মায় গিয়ে তা ক্রয় করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এর মাধ্যমে বিক্রেতার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا يَبِيْعُ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَيْعِ بَعْضٍ وَلَا تَلَقَّوُا السِّلَعَ حَتّٰى يُهْبَطَ بِهَا إِلَى السُّوْقِ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একজনের বিক্রি করার সময় আরেকজন সেই জিনিস বিক্রি করতে যেয়ো না এবং হাটে না আসা পর্যন্ত আগে গিয়ে (বহিরাগত) কোন দ্রব্য খরিদ করতে যেয়ো না। [সহীহ বুখারী, হা/২১৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৪; আবু দাউদ, হা/৩৪৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৩৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৯৪২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৩১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৭১; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৪৭; মিশকাত, হা/২৮৪৯।]
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَلَقَّوُا الرُّكْبَانَ ، وَلَا يَبِيْعُ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَيْعِ بَعْضٍ وَلَا تَنَاجَشُوْا وَلَا يَبِيْعُ حَاضِرٌ لِبَادٍ وَلَا تُصَرُّوا الْغَنَمَ وَمَنِ ابْتَاعَهَا فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ بَعْدَ أَنْ يَحْتَلِبَهَا إِنْ رَضِيَهَا أَمْسَكَهَا وَإِنْ سَخِطَهَا رَدَّهَا وَصَاعًا مِنْ تَمْرٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
১. (কমমূল্যে খরিদের উদ্দেশ্যে) বণিক দলের সাথে আগেই যেয়ে দেখা করো না।
২. একজনের দরদামের উপর আরেকজন দরদাম করো না।
৩. ক্রয়ের নিয়ত না থাকলে প্রতারণা করে মূল্য বৃদ্ধি করো না।
৪. শহরবাসী গ্রামবাসীর দ্রব্য-সামগ্রী বিক্রি করো না। [তবে ব্যবসায়ীগণ যদি গ্রাম থেকে আগত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে না ঠকিয়ে বাজারে প্রচলিত মূল্য অনুযায়ী দ্রব্য-সামগ্রী ক্রয় করে নেয় তাহলে সেটা বৈধ হবে।]
৫. আর বকরির দুধ দোহন না করে (দুধ আটকিয়ে) বিক্রি করো না। কেউ এ ধরনের বকরি ক্রয় করলে তার জন্য দু’টি ভালো সুযোগ রয়েছে। দোহনের পর সন্তুষ্ট হলে রেখে দেবে আর অসন্তুষ্ট হলে তা এক সা‘ খেজুরসহ ফিরিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৫০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/৩৪৪৫; নাসাঈ, হা/৪৪৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৬৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৬; মিশকাত, হা/২৮৪৭।]
আর যারা এরূপ করবে তাদের ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : لَا تَلَقَّوُا الْجَلَبَ فَمَنْ تَلَقَّاهُ فَاشْتَرٰى مِنْهُ فَإِذَا أَتٰى سَيِّدُهُ السُّوْقَ فَهُوَ بِالْخِيَارِ
ইবনে সিরীন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা এগিয়ে গিয়ে পণ্যবাহী কাফেলার সাথে মিলিত হয়ো না। যদি কেউ এরূপ করে এবং তার থেকে কোন বসত্মু ক্রয় করে নেয় তবে বিক্রেতা বাজারে পৌঁছার পর বিক্রয় বহাল রাখা বা বাতিল করার ব্যাপারে ইখতিয়ার পাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৮; নাসাঈ, হা/৪৫০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩২৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৭৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৫৩; সুনানে দারেমী, হা/২৫৬৬; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩১৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৫; মিশকাত, হা/২৮৪৮।]
৩. মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য গুদামজাত করা যাবে না :
বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য না হলে পণ্যের ভারসাম্য ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে পণ্য গুদামজাত করা বৈধ। কেননা এতে জনগণের কোন ক্ষতি সাধন হয় না। কিন্তু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য গুদামজাত করে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। হাদীসে এ ধরনের গুদামজাত করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞারোপ করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ مَعْمَرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ
মা‘মার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে, সে গুনাহগার হিসেবে সাব্যসত্ম হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪২০৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৪৭৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৫২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৪৫৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১২৭; মিশকাত, হা/২৮৯২।]
৪. পণ্য হাতে না আসার পূর্বে বিক্রয় করা যাবে না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ مَنِ اشْتَرٰى طَعَامًا فَلَا يَبِعْهُ حَتّٰى يَسْتَوْفِيَه وَيَقْبِضَه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করেছে সে যেন তা গ্রহণ ও তার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পূর্বে বিক্রয় না করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯২১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৩১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২১৭৪৪।]
৫. গাছে থাকা অপরিপক্ব ফল বা শস্য বিক্রয় করা যাবে না :
রাসূলুল্লাহ ﷺ গাছে থাকা অপরিপক্ব ফল বা ফসল পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। কেননা এতে ক্রেতার লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَهٰى عَنْ بَيْعِ الثِّمَارِ حَتّٰى يَبْدُوَ صَلَاحُهَا نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُبْتَاعَ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ খাওয়ার উপযোগী হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর এটা তিনি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২১৯৪; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৪১; আবু দাউদ, হা/৩৩৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/২২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৯১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৭০১; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১৯৪০; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৭৯৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৮৯৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৩৩; সুনানে দারেমী, হা/২৫৫৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৭৭; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩৬২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৪৩১৫; মুসনাদে শাফেঈ, হা/৫০৬; মিশকাত, হা/২৮৩৯।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - نَهٰى عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتّٰى يَزْهُوَ وَعَنِ السُّنْبُلِ حَتّٰى يَبْيَضَّ وَيَأْمَنَ الْعَاهَةَ نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُشْتَرِىَ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ পাকার আগে খেজুর বিক্রি করতে এবং সাদা হওয়ার আগে অথবা দুর্যোগমুক্ত হওয়ার পূর্বে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি এ বিষয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৪৩; আবু দাউদ, হা/৩৩৭০; তিরমিযী, হা/১২২৭; নাসাঈ, হা/৪৫৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৪৯৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৮১৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯২০; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৭৬; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩৬৩; মিশকাত, হা/২৮৩৯।]
অতএব ধান, গম, খেজুর, আম, লিচু ইত্যাদি ফল-ফলাদি পরিপক্ব হওয়ার পূর্বেই অথবা ফুল অবস্থাতেই গোটা বাগান বিক্রি করা বৈধ নয়। কারণ তাতে ক্রেতা অথবা বিক্রেতা কারো না কারো ধোঁকায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।
৬. অপরের দরদামের উপর দরদাম করা যাবে না :
যখন ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে দরদাম চলতে থাকে, এমতাবস্থায় তৃতীয় কেউ এসে বিক্রেতার কাছে উপস্থিত হয়ে দাম করবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ : لَا يَبِعِ الرَّجُلُ عَلٰى بَيْعِ أَخِيْهِ وَلَا يَخْطُبْ عَلٰى خِطْبَةِ أَخِيْهِ إِلَّاأَنْ يَأْذَنَ لَه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কোন মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের উপর দাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয় তার অনুমতি ছাড়া। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭২২; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৭৯২৮; মিশকাত, হা/২৮৫০।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ لَا يَسُمِ الْمُسْلِمُ عَلٰى سَوْمِ أَخِيْهِ وَلَا يَخْطُبْ عَلٰى خِطْبَتِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যেন তার মুসলিম ভাইয়ের দরদামের উপর দরদাম না করে এবং তার বিবাহের প্রসত্মাবের উপর প্রসত্মাব না দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৫২৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৫১৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২১৪।]
৭. অনুমানভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না :
অনুমানের উপর নির্ভর করে ক্রয়-বিক্রয় করলে ক্রেতা বা বিক্রেতা যে কোন এক পক্ষের ক্ষতিগ্রসত্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ অনুমানের উপর ভিত্তি করে অথবা পণ্য সত্মূপ আকারে রেখে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - - عَنْ بَيْعِ الصُّبْرَةِ مِنَ التَّمْرِ لَا يُعْلَمُ مَكِيْلَتُهَا بِالْكَيْلِ الْمُسَمّٰى مِنَ التَّمْرِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ খেজুর মাপার জন্য প্রচলিত পরিমাপক দ্বারা না মেপে সত্মূপ আকারে খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯২৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০২৬; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬০৯৩; মিশকাত, হা/২৮১৬।]
৮. নিষিদ্ধ সময়ে ব্যবসা করা যাবে না :
নিষিদ্ধ সময় বলতে জুমু‘আর দিন খুতবার আযান দেয়ার পর থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যমত্ম সময়কে বুঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এ সময়টিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ﴾
হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন নামাযের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা জুমু‘আ- ৯)
তবে অন্যান্য নামাযের সময়ও ব্যবসায়িক কাজে ব্যসত্ম থাকা উচিত নয়। নামাযের ব্যাপারে এ ধরনের আচরণ করাটা আল্লাহর উপর ব্যবসাকে প্রাধান্য দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়, যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ ‐ رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِۚ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ﴾
সেসব ঘরসমূহের মধ্যে আললাহর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করতে, তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা (সাহাবীরা) এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৬, ৩৭)
৯. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা যাবে না :
যদি বিক্রেতা মিথ্যা কসম করে, তাহলে ক্রেতা সেটা সহজেই বিশ্বাস করে নেয়। এতে ক্রেতা ধোঁকা খায়। ইসলামে এটা হারাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ الْأَنْصَارِىِّ أَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِى الْبَيْعِ فَإِنَّهٗ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ
আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা ব্যবসার মধ্যে অধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাকো। কেননা সেটা পণ্য বিক্রয়ে সহায়তা করে, কিন্তু বরকত বিনষ্ট করে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪২১০; নাসাঈ, হা/৪৪৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৫৯৭; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৪৮; বায়হাকী, হা/১০১৯০; জামেউস সগীর, হা/৪৪৫০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৬৩৪; মিশকাত, হা/২৭৯৩।]
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ قَالَ فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ - - ثَلَاثَ مِرَارٍ . قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ خَابُوْا وَخَسِرُوْا مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهٗ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ
আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কথাটি তিনবার বললেন। তখন আবু যর (রাঃ) বলে উঠলেন, তারা তো ধ্বংস হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর রাসূল! এরা কারা? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে, কোন কিছু দান করে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩০৬; আবু দাউদ, হা/৪০৮৯; তিরমিযী, হা/১২১১; নাসাঈ, হা/২৫৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/২২০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪৭৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪০২৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭১৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩১৭০; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/৪৬৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৭১২৩; জামেউস সগীর, হা/৫৩৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০৩৪; মিশকাত, হা/২৭৯৫।]
১০. দালালী করা যাবে না :
অনেক বিক্রেতা তার পক্ষে কিছু লোক রাখে, যারা ভুয়া ক্রেতা সেজে মূল্য বলে থাকে- যাতে করে তারা প্রকৃত ক্রেতাকে প্রতারিত করে পণ্যটির ন্যায্য মূল্য থেকে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারে। বর্তমানে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রায়ই এ ধরনের পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। অথচ এটাকে সরাসরি হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : نَهَى النَّبِيُّ عَنِ النَّجْشِ .
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতারণামূলক মূল্য বৃদ্ধি করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২১৪২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৭; সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৩; নাসাঈ, হা/৪৪৯৭; ইবনে মাজাহ, হা/২১৭৩।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ - - لَا تَنَاجَشُوْا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা পরস্পর প্রতারণামূলক দালালী করো না। [আবু দাউদ, হা/৩৪৪০।]
১১. অবৈধ কাজে সহযোগিতা করার জন্য ব্যবসা করা যাবে না :
যেসব ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ কাজসমূহে সহযোগিতা করা হয় সেসব ব্যবসা করা যাবে না। যেমন- চুরির মাল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা, অবৈধ সার্টিফিকেট তৈরির ব্যবসা ইত্যাদি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
১২. ব্যবসার মধ্যে শিরক ও বিদআত অবলম্বন করা যাবে না :
বর্তমানে ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের শিরক ও বিদআতের প্রচলন রয়েছে, যেগুলো অবলম্বন করা বড় ধরনের গুনাহের কাজ। যেমন- এ কথা বলা যে, সকাল বেলা বাকি দিলে অমঙ্গল হয়, অমুক মাযারে দান না করলে ব্যবসায় লোকসান হবে; অমুক পীরের দু‘আর কারণে আমার ব্যবসার উন্নতি হয়েছে, আমি নিজ ক্ষমতা বলেই ব্যবসায় উন্নতি সাধন করতে পেরেছি ইত্যাদি অথবা এ ধরনের কাজ করা যে, ব্যবসার উন্নতির জন্য কোন মহান ব্যক্তির ছবি বা মূর্তি কর্মস্থলে রেখে দেয়া, ব্যবসার উন্নতির জন্য ব্যবসার স্থলে তাবিজ ঝুলানো ইত্যাদি।
১৩. মাপে কম দেয়া যাবে না :
মাপে কম দেয়া একটি মারাত্মক অপরাধ। পূর্ববর্তী যুগে আইকাহ ও মাদইয়ান শহরের লোকেরা এ অন্যায়মূলক কাজে ব্যাপকভাবে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তখন তাদের নবী ছিলেন শু‘আইব (আঃ)। তিনি তাদেরকে সতর্ক করে দেয়ার পরও তারা তাদের এহেন অসৎ কর্ম চালিয়ে যেতে থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেন। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে তাদের ঘটনা বিসত্মারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। [সূরা আরাফের ৮৫-৯৩ নং আয়াত; সূরা হুদের ৮৪-৯৫ নং আয়াত; সূরা শু‘আরার ১৭৬-১৯০ নং আয়াত।] তাছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা বারবার এ বিষয়ে উম্মতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং সঠিকভাবে মাপ দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ﴾
সঠিক পরিমাণে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। (সূরা শু‘আরা- ১৮২)
﴿وَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ بِالْقِسْطِ﴾
ন্যায্যভাবে পরিমাণ ও ওজন করো। (সূরা আন‘আম- ১৫২)
﴿وَاَوْفُوا الْكَيْلَ اِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا﴾
মেপে দেয়ার সময় পূর্ণভাবে মেপে দেবে এবং সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৫)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ – اَلَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ – وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ – اَلَا يَظُنُّ اُولٰٓئِكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ – لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ – يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾
মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা ওজনে কম দেয়। যারা লোকের নিকট হতে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মাপ অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে মহান দিবসে, যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে? (সূরা মুতাফফিফীন, ১-৬)
﴿وَاَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ﴾
ওজনের ক্ষেত্রে ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠা করো এবং মাপে কম দিয়ো না।
(সূরা আর রহমান- ৯)
আল্লাহ তা‘আলার এমন নিষেধাজ্ঞা বাণীর পরও যারা এসব কর্মে লিপ্ত হবে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে দুর্যোগ নেমে আসবে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِي اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : خَمْسٌ بِخَمْسٍ، قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا خَمْسٌ بِخَمْسٍ؟ قَالَ : مَا نَقَضَ قَوْمٌ الْعَهْدَ إِلَّا سُلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوُّهُمْ، وَمَا حَكَمُوْا بِغَيْرِ مَا أَنْزَلَ اللهُ إِلَّا فَشَا فِيْهِمُ الْفَقْرُ، وَلَا ظَهَرَتْ فِيْهِمُ الْفَاحِشَةُ إِلَّا فَشَا فِيْهِمُ الْمَوْتُ، وَلَا طفَّفُوْا الْمِكْيَالَ إِلَّا مُنِعُوا النَّبَاتَ وَأُخِذُوْا بِالسِّنِيْنَ، وَلَا مَنَعُوا الزَّكَاةَ إِلَّا حُبِسَ عَنْهُمُ الْقَطْرُ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পাঁচটি বিষয় পাঁচটি বিষয়ের কারণে হয়ে থাকে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ পাঁচটি বিষয় কোন্ পাঁচটি বিষয়ের কারণে হয়ে থাকে? তিনি বললেন, সেগুলো হলো-
(১) কোন সম্প্রদায় চুক্তি ভঙ্গ করলে তাদের শত্রুদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করা হয়।
(২) কোন সম্প্রদায় আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা না করলে তাদের মধ্যে দারিদ্রতা বিসত্মার লাভ করে।
(৩) কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতার বিসত্মার ঘটলে তাদের মধ্যে মৃত্যু অর্থাৎ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে।
(৪) কোন সম্প্রদায় মাপে বা ওজনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তাদেরকে দুর্ভিক্ষ গ্রাস করে।
(৫) কোন সম্প্রদায় যাকাত দেয়া বন্ধ করে দিলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয়। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৮৩০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৬২৬; জামেউস সগীর, হা/৫৫৫১।]
অতএব ব্যবসায়িক মাল-সামগ্রী ওজন করে দেয়ার সময় কোন ক্রমেই কম দেয়া যাবে না; বরং প্রয়োজনে সামান্য বেশি হেলিয়ে দেয়াই উত্তম। যেমনটি রাসূলুল্লাহ ﷺ করেছিলেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سُوَيْدِ بْنِ قَيْسٍ ، قَالَ ...... ، قَالَ النَّبِيُّ : يَا وَزَّانُ زِنْ وَأَرْجِحْ
সুওয়াইদ ইবনে কায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বললেন, হে ওজনকারী, ওজন করার সময় প্রাপ্য অপেক্ষা একটু বেশি দিবে। [ইবনে মাজাহ, হা/২২২০; নাসাঈ, হা/৪৫৯২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৪৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৫২৪; মিশকাত, হা/২৯২৪।]
তাছাড়া এ ক্ষেত্রে কোনরূপ প্রতারণা ও ধোঁকার আশ্রয় নেয়াও বৈধ হবে না। যেমন- পণ্য সামগ্রী ভিজিয়ে রাখা, ওজন করার সময় পাল্লার নিচে কোন কিছু আটকে রাখা, মাপযন্ত্রের মেশিনে কারচুপি করা ইত্যাদি।
১৪. একই জাতীয় বসত্মু কমবেশি করে বিনিময় করা যাবে না :
একই জাতীয় বসত্মু কমবেশি করে বিক্রি করা সুদের অমত্মর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلًا بِمِثْلٍ سَوَاءً بِسَوَاءٍ يَدًا بِيَدٍ فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هٰذِهِ الْأَصْنَافُ فَبِيْعُوْا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর এবং লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। অবশ্য এ দ্রব্যগুলো যদি একটি অপরটির ব্যতিক্রম হয় অর্থাৎ পণ্য এক জাতীয় না হয়, তাহলে তোমরা যেরূপ ইচ্ছা বিক্রি করতে পার- যদি সেটা নগদ নগদ হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৪৭; নাসাঈ, হা/৪৫৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০১৮; দার কুতনী, হা/২৮৭৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৮১৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৯৩৭; জামেউস সগীর, হা/৫৭৫৮; মিশকাত, হা/২৮০৮।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - اَلذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلًا بِمِثْلٍ يَدًا بِيَدٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى الْاٰخِذُ وَالْمُعْطِىْ فِيْهِ سَوَاءٌ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। এরপর কেউ যদি বাড়তি কিছু প্রদান করে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করে তবে তা সুদ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে গ্রহণকারী ও প্রদানকারী উভয়ে সমপরিমাণ গুনাহের অধিকারী হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৪৮; নাসাঈ, হা/৪৫৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪৮৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৯৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৯৩৯; মিশকাত, হা/২৮০৯।]
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَبِيْعُوا الذَّهَبَ بِالذَّهَبِ إِلَّا مِثْلًا بِمِثْلٍ ، وَلَا تُشِفُّوْا بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ ، وَلَا تَبِيْعُوا الْوَرِقَ بِالْوَرِقِ إِلَّا مِثْلًا بِمِثْلٍ وَلَا تُشِفُّوْا بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ وَلَا تَبِيْعُوْا مِنْهَا غَائِبًا بِنَاجِزٍ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের সাথে স্বর্ণ পরিমাণে সমান না হলে বিক্রি করো না, কিংবা একটি অপরটি হতে কম বা বেশি করে বিক্রি করো না। একইভাবে তোমরা পরিমাণে সমান না হলে কিংবা একাংশ আরেক অংশ হতে কম বা বেশি হলে রৌপ্য রৌপ্যের বিনিময়ে বিক্রি করো না, কিংবা নগদের সাথে বাকিতে বিক্রি করো না। [সহীহ বুখারী, হা/২১৭৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৯৯; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৩৮; তিরমিযী, হা/১২৪১; নাসাঈ, হা/৪৫৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০১৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৩৬৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৩৬৮; জামেউস সগীর, হা/১৩১৬৭; মিশকাত, হা/২৮১০।]
১৫. দুধ আটকিয়ে রেখে পশু বিক্রি করা যাবে না :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ ... وَلَا تُصَرُّوا الْغَنَمَ وَمَنِ ابْتَاعَهَا فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ بَعْدَ أَنْ يَحْتَلِبَهَا إِنْ رَضِيَهَا أَمْسَكَهَا وَإِنْ سَخِطَهَا رَدَّهَا وَصَاعًا مِنْ تَمْرٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন... বকরির দুধ দোহন না করে (দুধ আটকিয়ে) বিক্রি করো না। কেউ এ ধরনের বকরি ক্রয় করলে তার জন্য দু’টি ভালো সুযোগ রয়েছে। দোহনের পর সন্তুষ্ট হলে রেখে দেবে আর অসন্তুষ্ট হলে তা এক সা‘ খেজুরসহ ফিরিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৫০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/৩৪৪৫; নাসাঈ, হা/৪৪৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৬৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৬; মিশকাত, হা/২৮৪৭।]
১৬. ক্রয়-বিক্রয়ে অনির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ বাদ রাখার শর্ত করা যাবে না :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ عَنِ الثُّنْيَا إِلَّاأَنْ يَعْلَمَ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে বিক্রীত বসত্মু হতে অনির্দিষ্ট পরিমাণ কিছু অংশ বাদ রাখতে নিষেধ করেছেন। অবশ্য যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ বাদ রেখে বিক্রয় করে, তবে তা জায়েয হবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৭১; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৯১৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৪৮; তিরমিযী, হা/১২৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২১৬০০; মিশকাত, হা/২৮৬১।]
এখানে বাদ দেয়ার অর্থ হলো- যেমন বিক্রেতা বলল, এই বৃক্ষের সমসত্ম ফল তোমার নিকট বিক্রি করলাম, কিন্তু কিছু অংশ আমি রেখে দেব। ব্যবসার ক্ষেত্রে এরূপ শর্তারোপ করা বৈধ নয়। কেননা এতে কিছু অংশের পরিমাণ নিয়ে বিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৭. বাগানের ফল দুই-তিন বৎসরের জন্য অগ্রিম বিক্রি করা জায়েয নয় :
কোন নির্দিষ্ট বৃক্ষের বা বাগানের ফল দুই-তিন বৎসরের জন্য অগ্রিম বিক্রি করা জায়েয নয়। কারণ পরবর্তী বৎসর এ বৃক্ষে বা বাগানে ফল না-ও হতে পারে।
ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি শর্তের উপর আরেকটি শর্ত প্রয়োগ করা নিষিদ্ধ। কেননা এ ধরনের ব্যবসা পাতানোর অমত্মর্ভুক্ত হয় এবং এতে ক্রেতা-বিক্রেতার সমত্মুষ্টির অনুপস্থিতি থাকে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلَ اللهِ لَا تَحِلُّ صَفْقَتَانِ فِيْ صَفْقَةٍ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একটি শর্তের উপর আরেকটি শর্ত করা বৈধ নয়। [মু‘জামুল আওসাত, হা/১৬১০।]
এ হাদীসের স্বরূপ এমন যে, বিক্রেতা বলল, আমি তোমার নিকট এটি একশত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছি; তবে শর্ত হলো, আমার নিকট তোমার অমুক পণ্যটি এত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে।
২. বাজারে আগত পণ্য বাজারে পৌঁছার পূর্বে ক্রয় করা যাবে না :
বাজারে সব সময় মূল্য উঠা-নামা করে থাকে। সুতরাং কোন বিক্রেতা বাজারে না পৌঁছা পর্যমত্ম কোন পণ্যের মূল্য সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে পারে না। এমতাবস্থায় যদি কোন বিক্রেতা কোন পণ্য নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়, তাহলে তার বাজারে পৌঁছার পূর্বে রাসত্মায় গিয়ে তা ক্রয় করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এর মাধ্যমে বিক্রেতার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا يَبِيْعُ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَيْعِ بَعْضٍ وَلَا تَلَقَّوُا السِّلَعَ حَتّٰى يُهْبَطَ بِهَا إِلَى السُّوْقِ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একজনের বিক্রি করার সময় আরেকজন সেই জিনিস বিক্রি করতে যেয়ো না এবং হাটে না আসা পর্যন্ত আগে গিয়ে (বহিরাগত) কোন দ্রব্য খরিদ করতে যেয়ো না। [সহীহ বুখারী, হা/২১৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৪; আবু দাউদ, হা/৩৪৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৩৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৯৪২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৩১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৭১; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৪৭; মিশকাত, হা/২৮৪৯।]
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَلَقَّوُا الرُّكْبَانَ ، وَلَا يَبِيْعُ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَيْعِ بَعْضٍ وَلَا تَنَاجَشُوْا وَلَا يَبِيْعُ حَاضِرٌ لِبَادٍ وَلَا تُصَرُّوا الْغَنَمَ وَمَنِ ابْتَاعَهَا فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ بَعْدَ أَنْ يَحْتَلِبَهَا إِنْ رَضِيَهَا أَمْسَكَهَا وَإِنْ سَخِطَهَا رَدَّهَا وَصَاعًا مِنْ تَمْرٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
১. (কমমূল্যে খরিদের উদ্দেশ্যে) বণিক দলের সাথে আগেই যেয়ে দেখা করো না।
২. একজনের দরদামের উপর আরেকজন দরদাম করো না।
৩. ক্রয়ের নিয়ত না থাকলে প্রতারণা করে মূল্য বৃদ্ধি করো না।
৪. শহরবাসী গ্রামবাসীর দ্রব্য-সামগ্রী বিক্রি করো না। [তবে ব্যবসায়ীগণ যদি গ্রাম থেকে আগত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে না ঠকিয়ে বাজারে প্রচলিত মূল্য অনুযায়ী দ্রব্য-সামগ্রী ক্রয় করে নেয় তাহলে সেটা বৈধ হবে।]
৫. আর বকরির দুধ দোহন না করে (দুধ আটকিয়ে) বিক্রি করো না। কেউ এ ধরনের বকরি ক্রয় করলে তার জন্য দু’টি ভালো সুযোগ রয়েছে। দোহনের পর সন্তুষ্ট হলে রেখে দেবে আর অসন্তুষ্ট হলে তা এক সা‘ খেজুরসহ ফিরিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৫০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/৩৪৪৫; নাসাঈ, হা/৪৪৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৬৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৬; মিশকাত, হা/২৮৪৭।]
আর যারা এরূপ করবে তাদের ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : لَا تَلَقَّوُا الْجَلَبَ فَمَنْ تَلَقَّاهُ فَاشْتَرٰى مِنْهُ فَإِذَا أَتٰى سَيِّدُهُ السُّوْقَ فَهُوَ بِالْخِيَارِ
ইবনে সিরীন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা এগিয়ে গিয়ে পণ্যবাহী কাফেলার সাথে মিলিত হয়ো না। যদি কেউ এরূপ করে এবং তার থেকে কোন বসত্মু ক্রয় করে নেয় তবে বিক্রেতা বাজারে পৌঁছার পর বিক্রয় বহাল রাখা বা বাতিল করার ব্যাপারে ইখতিয়ার পাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৮; নাসাঈ, হা/৪৫০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩২৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৭৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৫৩; সুনানে দারেমী, হা/২৫৬৬; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩১৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৫; মিশকাত, হা/২৮৪৮।]
৩. মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য গুদামজাত করা যাবে না :
বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য না হলে পণ্যের ভারসাম্য ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে পণ্য গুদামজাত করা বৈধ। কেননা এতে জনগণের কোন ক্ষতি সাধন হয় না। কিন্তু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য গুদামজাত করে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। হাদীসে এ ধরনের গুদামজাত করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞারোপ করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ مَعْمَرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ
মা‘মার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে, সে গুনাহগার হিসেবে সাব্যসত্ম হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪২০৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৪৭৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৫২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৪৫৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১২৭; মিশকাত, হা/২৮৯২।]
৪. পণ্য হাতে না আসার পূর্বে বিক্রয় করা যাবে না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ مَنِ اشْتَرٰى طَعَامًا فَلَا يَبِعْهُ حَتّٰى يَسْتَوْفِيَه وَيَقْبِضَه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করেছে সে যেন তা গ্রহণ ও তার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পূর্বে বিক্রয় না করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯২১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৩১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২১৭৪৪।]
৫. গাছে থাকা অপরিপক্ব ফল বা শস্য বিক্রয় করা যাবে না :
রাসূলুল্লাহ ﷺ গাছে থাকা অপরিপক্ব ফল বা ফসল পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। কেননা এতে ক্রেতার লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَهٰى عَنْ بَيْعِ الثِّمَارِ حَتّٰى يَبْدُوَ صَلَاحُهَا نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُبْتَاعَ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ খাওয়ার উপযোগী হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর এটা তিনি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২১৯৪; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৪১; আবু দাউদ, হা/৩৩৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/২২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৯১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৭০১; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১৯৪০; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৭৯৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৮৯৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৩৩; সুনানে দারেমী, হা/২৫৫৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৭৭; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩৬২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৪৩১৫; মুসনাদে শাফেঈ, হা/৫০৬; মিশকাত, হা/২৮৩৯।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - نَهٰى عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتّٰى يَزْهُوَ وَعَنِ السُّنْبُلِ حَتّٰى يَبْيَضَّ وَيَأْمَنَ الْعَاهَةَ نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُشْتَرِىَ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ পাকার আগে খেজুর বিক্রি করতে এবং সাদা হওয়ার আগে অথবা দুর্যোগমুক্ত হওয়ার পূর্বে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি এ বিষয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৪৩; আবু দাউদ, হা/৩৩৭০; তিরমিযী, হা/১২২৭; নাসাঈ, হা/৪৫৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৪৯৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৮১৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯২০; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৭৬; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩৬৩; মিশকাত, হা/২৮৩৯।]
অতএব ধান, গম, খেজুর, আম, লিচু ইত্যাদি ফল-ফলাদি পরিপক্ব হওয়ার পূর্বেই অথবা ফুল অবস্থাতেই গোটা বাগান বিক্রি করা বৈধ নয়। কারণ তাতে ক্রেতা অথবা বিক্রেতা কারো না কারো ধোঁকায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।
৬. অপরের দরদামের উপর দরদাম করা যাবে না :
যখন ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে দরদাম চলতে থাকে, এমতাবস্থায় তৃতীয় কেউ এসে বিক্রেতার কাছে উপস্থিত হয়ে দাম করবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ : لَا يَبِعِ الرَّجُلُ عَلٰى بَيْعِ أَخِيْهِ وَلَا يَخْطُبْ عَلٰى خِطْبَةِ أَخِيْهِ إِلَّاأَنْ يَأْذَنَ لَه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কোন মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের উপর দাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয় তার অনুমতি ছাড়া। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭২২; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৭৯২৮; মিশকাত, হা/২৮৫০।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ لَا يَسُمِ الْمُسْلِمُ عَلٰى سَوْمِ أَخِيْهِ وَلَا يَخْطُبْ عَلٰى خِطْبَتِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যেন তার মুসলিম ভাইয়ের দরদামের উপর দরদাম না করে এবং তার বিবাহের প্রসত্মাবের উপর প্রসত্মাব না দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৫২৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৫১৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২১৪।]
৭. অনুমানভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না :
অনুমানের উপর নির্ভর করে ক্রয়-বিক্রয় করলে ক্রেতা বা বিক্রেতা যে কোন এক পক্ষের ক্ষতিগ্রসত্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ অনুমানের উপর ভিত্তি করে অথবা পণ্য সত্মূপ আকারে রেখে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - - عَنْ بَيْعِ الصُّبْرَةِ مِنَ التَّمْرِ لَا يُعْلَمُ مَكِيْلَتُهَا بِالْكَيْلِ الْمُسَمّٰى مِنَ التَّمْرِ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ খেজুর মাপার জন্য প্রচলিত পরিমাপক দ্বারা না মেপে সত্মূপ আকারে খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯২৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০২৬; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬০৯৩; মিশকাত, হা/২৮১৬।]
৮. নিষিদ্ধ সময়ে ব্যবসা করা যাবে না :
নিষিদ্ধ সময় বলতে জুমু‘আর দিন খুতবার আযান দেয়ার পর থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যমত্ম সময়কে বুঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এ সময়টিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ﴾
হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন নামাযের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা জুমু‘আ- ৯)
তবে অন্যান্য নামাযের সময়ও ব্যবসায়িক কাজে ব্যসত্ম থাকা উচিত নয়। নামাযের ব্যাপারে এ ধরনের আচরণ করাটা আল্লাহর উপর ব্যবসাকে প্রাধান্য দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়, যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ ‐ رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِۚ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ﴾
সেসব ঘরসমূহের মধ্যে আললাহর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করতে, তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা (সাহাবীরা) এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৬, ৩৭)
৯. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা যাবে না :
যদি বিক্রেতা মিথ্যা কসম করে, তাহলে ক্রেতা সেটা সহজেই বিশ্বাস করে নেয়। এতে ক্রেতা ধোঁকা খায়। ইসলামে এটা হারাম। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ الْأَنْصَارِىِّ أَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِى الْبَيْعِ فَإِنَّهٗ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ
আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা ব্যবসার মধ্যে অধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাকো। কেননা সেটা পণ্য বিক্রয়ে সহায়তা করে, কিন্তু বরকত বিনষ্ট করে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪২১০; নাসাঈ, হা/৪৪৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৫৯৭; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৪৮; বায়হাকী, হা/১০১৯০; জামেউস সগীর, হা/৪৪৫০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৬৩৪; মিশকাত, হা/২৭৯৩।]
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ قَالَ فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ - - ثَلَاثَ مِرَارٍ . قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ خَابُوْا وَخَسِرُوْا مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهٗ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ
আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কথাটি তিনবার বললেন। তখন আবু যর (রাঃ) বলে উঠলেন, তারা তো ধ্বংস হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর রাসূল! এরা কারা? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে, কোন কিছু দান করে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩০৬; আবু দাউদ, হা/৪০৮৯; তিরমিযী, হা/১২১১; নাসাঈ, হা/২৫৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/২২০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪৭৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪০২৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭১৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩১৭০; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/৪৬৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৭১২৩; জামেউস সগীর, হা/৫৩৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০৩৪; মিশকাত, হা/২৭৯৫।]
১০. দালালী করা যাবে না :
অনেক বিক্রেতা তার পক্ষে কিছু লোক রাখে, যারা ভুয়া ক্রেতা সেজে মূল্য বলে থাকে- যাতে করে তারা প্রকৃত ক্রেতাকে প্রতারিত করে পণ্যটির ন্যায্য মূল্য থেকে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারে। বর্তমানে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রায়ই এ ধরনের পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। অথচ এটাকে সরাসরি হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : نَهَى النَّبِيُّ عَنِ النَّجْشِ .
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতারণামূলক মূল্য বৃদ্ধি করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২১৪২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৭; সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৩; নাসাঈ, হা/৪৪৯৭; ইবনে মাজাহ, হা/২১৭৩।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ - - لَا تَنَاجَشُوْا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা পরস্পর প্রতারণামূলক দালালী করো না। [আবু দাউদ, হা/৩৪৪০।]
১১. অবৈধ কাজে সহযোগিতা করার জন্য ব্যবসা করা যাবে না :
যেসব ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ কাজসমূহে সহযোগিতা করা হয় সেসব ব্যবসা করা যাবে না। যেমন- চুরির মাল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা, অবৈধ সার্টিফিকেট তৈরির ব্যবসা ইত্যাদি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)
১২. ব্যবসার মধ্যে শিরক ও বিদআত অবলম্বন করা যাবে না :
বর্তমানে ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের শিরক ও বিদআতের প্রচলন রয়েছে, যেগুলো অবলম্বন করা বড় ধরনের গুনাহের কাজ। যেমন- এ কথা বলা যে, সকাল বেলা বাকি দিলে অমঙ্গল হয়, অমুক মাযারে দান না করলে ব্যবসায় লোকসান হবে; অমুক পীরের দু‘আর কারণে আমার ব্যবসার উন্নতি হয়েছে, আমি নিজ ক্ষমতা বলেই ব্যবসায় উন্নতি সাধন করতে পেরেছি ইত্যাদি অথবা এ ধরনের কাজ করা যে, ব্যবসার উন্নতির জন্য কোন মহান ব্যক্তির ছবি বা মূর্তি কর্মস্থলে রেখে দেয়া, ব্যবসার উন্নতির জন্য ব্যবসার স্থলে তাবিজ ঝুলানো ইত্যাদি।
১৩. মাপে কম দেয়া যাবে না :
মাপে কম দেয়া একটি মারাত্মক অপরাধ। পূর্ববর্তী যুগে আইকাহ ও মাদইয়ান শহরের লোকেরা এ অন্যায়মূলক কাজে ব্যাপকভাবে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তখন তাদের নবী ছিলেন শু‘আইব (আঃ)। তিনি তাদেরকে সতর্ক করে দেয়ার পরও তারা তাদের এহেন অসৎ কর্ম চালিয়ে যেতে থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেন। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে তাদের ঘটনা বিসত্মারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। [সূরা আরাফের ৮৫-৯৩ নং আয়াত; সূরা হুদের ৮৪-৯৫ নং আয়াত; সূরা শু‘আরার ১৭৬-১৯০ নং আয়াত।] তাছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা বারবার এ বিষয়ে উম্মতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং সঠিকভাবে মাপ দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ﴾
সঠিক পরিমাণে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। (সূরা শু‘আরা- ১৮২)
﴿وَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ بِالْقِسْطِ﴾
ন্যায্যভাবে পরিমাণ ও ওজন করো। (সূরা আন‘আম- ১৫২)
﴿وَاَوْفُوا الْكَيْلَ اِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا﴾
মেপে দেয়ার সময় পূর্ণভাবে মেপে দেবে এবং সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৫)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ – اَلَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ – وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ – اَلَا يَظُنُّ اُولٰٓئِكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ – لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ – يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾
মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা ওজনে কম দেয়। যারা লোকের নিকট হতে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মাপ অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে মহান দিবসে, যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে? (সূরা মুতাফফিফীন, ১-৬)
﴿وَاَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ﴾
ওজনের ক্ষেত্রে ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠা করো এবং মাপে কম দিয়ো না।
(সূরা আর রহমান- ৯)
আল্লাহ তা‘আলার এমন নিষেধাজ্ঞা বাণীর পরও যারা এসব কর্মে লিপ্ত হবে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে দুর্যোগ নেমে আসবে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِي اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : خَمْسٌ بِخَمْسٍ، قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا خَمْسٌ بِخَمْسٍ؟ قَالَ : مَا نَقَضَ قَوْمٌ الْعَهْدَ إِلَّا سُلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوُّهُمْ، وَمَا حَكَمُوْا بِغَيْرِ مَا أَنْزَلَ اللهُ إِلَّا فَشَا فِيْهِمُ الْفَقْرُ، وَلَا ظَهَرَتْ فِيْهِمُ الْفَاحِشَةُ إِلَّا فَشَا فِيْهِمُ الْمَوْتُ، وَلَا طفَّفُوْا الْمِكْيَالَ إِلَّا مُنِعُوا النَّبَاتَ وَأُخِذُوْا بِالسِّنِيْنَ، وَلَا مَنَعُوا الزَّكَاةَ إِلَّا حُبِسَ عَنْهُمُ الْقَطْرُ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পাঁচটি বিষয় পাঁচটি বিষয়ের কারণে হয়ে থাকে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ পাঁচটি বিষয় কোন্ পাঁচটি বিষয়ের কারণে হয়ে থাকে? তিনি বললেন, সেগুলো হলো-
(১) কোন সম্প্রদায় চুক্তি ভঙ্গ করলে তাদের শত্রুদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করা হয়।
(২) কোন সম্প্রদায় আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা না করলে তাদের মধ্যে দারিদ্রতা বিসত্মার লাভ করে।
(৩) কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতার বিসত্মার ঘটলে তাদের মধ্যে মৃত্যু অর্থাৎ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে।
(৪) কোন সম্প্রদায় মাপে বা ওজনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তাদেরকে দুর্ভিক্ষ গ্রাস করে।
(৫) কোন সম্প্রদায় যাকাত দেয়া বন্ধ করে দিলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয়। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৮৩০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৬২৬; জামেউস সগীর, হা/৫৫৫১।]
অতএব ব্যবসায়িক মাল-সামগ্রী ওজন করে দেয়ার সময় কোন ক্রমেই কম দেয়া যাবে না; বরং প্রয়োজনে সামান্য বেশি হেলিয়ে দেয়াই উত্তম। যেমনটি রাসূলুল্লাহ ﷺ করেছিলেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سُوَيْدِ بْنِ قَيْسٍ ، قَالَ ...... ، قَالَ النَّبِيُّ : يَا وَزَّانُ زِنْ وَأَرْجِحْ
সুওয়াইদ ইবনে কায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বললেন, হে ওজনকারী, ওজন করার সময় প্রাপ্য অপেক্ষা একটু বেশি দিবে। [ইবনে মাজাহ, হা/২২২০; নাসাঈ, হা/৪৫৯২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৪৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৫২৪; মিশকাত, হা/২৯২৪।]
তাছাড়া এ ক্ষেত্রে কোনরূপ প্রতারণা ও ধোঁকার আশ্রয় নেয়াও বৈধ হবে না। যেমন- পণ্য সামগ্রী ভিজিয়ে রাখা, ওজন করার সময় পাল্লার নিচে কোন কিছু আটকে রাখা, মাপযন্ত্রের মেশিনে কারচুপি করা ইত্যাদি।
১৪. একই জাতীয় বসত্মু কমবেশি করে বিনিময় করা যাবে না :
একই জাতীয় বসত্মু কমবেশি করে বিক্রি করা সুদের অমত্মর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلًا بِمِثْلٍ سَوَاءً بِسَوَاءٍ يَدًا بِيَدٍ فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هٰذِهِ الْأَصْنَافُ فَبِيْعُوْا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর এবং লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। অবশ্য এ দ্রব্যগুলো যদি একটি অপরটির ব্যতিক্রম হয় অর্থাৎ পণ্য এক জাতীয় না হয়, তাহলে তোমরা যেরূপ ইচ্ছা বিক্রি করতে পার- যদি সেটা নগদ নগদ হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৪৭; নাসাঈ, হা/৪৫৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০১৮; দার কুতনী, হা/২৮৭৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৮১৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৯৩৭; জামেউস সগীর, হা/৫৭৫৮; মিশকাত, হা/২৮০৮।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - اَلذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلًا بِمِثْلٍ يَدًا بِيَدٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى الْاٰخِذُ وَالْمُعْطِىْ فِيْهِ سَوَاءٌ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। এরপর কেউ যদি বাড়তি কিছু প্রদান করে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করে তবে তা সুদ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে গ্রহণকারী ও প্রদানকারী উভয়ে সমপরিমাণ গুনাহের অধিকারী হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৪৮; নাসাঈ, হা/৪৫৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪৮৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৯৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৯৩৯; মিশকাত, হা/২৮০৯।]
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَبِيْعُوا الذَّهَبَ بِالذَّهَبِ إِلَّا مِثْلًا بِمِثْلٍ ، وَلَا تُشِفُّوْا بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ ، وَلَا تَبِيْعُوا الْوَرِقَ بِالْوَرِقِ إِلَّا مِثْلًا بِمِثْلٍ وَلَا تُشِفُّوْا بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ وَلَا تَبِيْعُوْا مِنْهَا غَائِبًا بِنَاجِزٍ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের সাথে স্বর্ণ পরিমাণে সমান না হলে বিক্রি করো না, কিংবা একটি অপরটি হতে কম বা বেশি করে বিক্রি করো না। একইভাবে তোমরা পরিমাণে সমান না হলে কিংবা একাংশ আরেক অংশ হতে কম বা বেশি হলে রৌপ্য রৌপ্যের বিনিময়ে বিক্রি করো না, কিংবা নগদের সাথে বাকিতে বিক্রি করো না। [সহীহ বুখারী, হা/২১৭৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৯৯; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৩৮; তিরমিযী, হা/১২৪১; নাসাঈ, হা/৪৫৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০১৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৩৬৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৩৬৮; জামেউস সগীর, হা/১৩১৬৭; মিশকাত, হা/২৮১০।]
১৫. দুধ আটকিয়ে রেখে পশু বিক্রি করা যাবে না :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ ... وَلَا تُصَرُّوا الْغَنَمَ وَمَنِ ابْتَاعَهَا فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ بَعْدَ أَنْ يَحْتَلِبَهَا إِنْ رَضِيَهَا أَمْسَكَهَا وَإِنْ سَخِطَهَا رَدَّهَا وَصَاعًا مِنْ تَمْرٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন... বকরির দুধ দোহন না করে (দুধ আটকিয়ে) বিক্রি করো না। কেউ এ ধরনের বকরি ক্রয় করলে তার জন্য দু’টি ভালো সুযোগ রয়েছে। দোহনের পর সন্তুষ্ট হলে রেখে দেবে আর অসন্তুষ্ট হলে তা এক সা‘ খেজুরসহ ফিরিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৫০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/৩৪৪৫; নাসাঈ, হা/৪৪৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৬৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৬; মিশকাত, হা/২৮৪৭।]
১৬. ক্রয়-বিক্রয়ে অনির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ বাদ রাখার শর্ত করা যাবে না :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ عَنِ الثُّنْيَا إِلَّاأَنْ يَعْلَمَ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে বিক্রীত বসত্মু হতে অনির্দিষ্ট পরিমাণ কিছু অংশ বাদ রাখতে নিষেধ করেছেন। অবশ্য যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ বাদ রেখে বিক্রয় করে, তবে তা জায়েয হবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৭১; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৯১৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৪৮; তিরমিযী, হা/১২৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২১৬০০; মিশকাত, হা/২৮৬১।]
এখানে বাদ দেয়ার অর্থ হলো- যেমন বিক্রেতা বলল, এই বৃক্ষের সমসত্ম ফল তোমার নিকট বিক্রি করলাম, কিন্তু কিছু অংশ আমি রেখে দেব। ব্যবসার ক্ষেত্রে এরূপ শর্তারোপ করা বৈধ নয়। কেননা এতে কিছু অংশের পরিমাণ নিয়ে বিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৭. বাগানের ফল দুই-তিন বৎসরের জন্য অগ্রিম বিক্রি করা জায়েয নয় :
কোন নির্দিষ্ট বৃক্ষের বা বাগানের ফল দুই-তিন বৎসরের জন্য অগ্রিম বিক্রি করা জায়েয নয়। কারণ পরবর্তী বৎসর এ বৃক্ষে বা বাগানে ফল না-ও হতে পারে।
‘শোফা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, মিলানো, মিশানো ও মিশ্রিত করা। শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ হচ্ছে, অংশীদার বা প্রতিবেশী হওয়ার কারণে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি হলে তা ক্রয়ের অগ্রাধিকার লাভ করা।
যেসব ক্ষেত্রে শোফা বৈধ :
শোফা কেবল স্থাবর সম্পত্তি তথা ঘর-বাড়ি ও জায়গা-জমির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَضَى النَّبِيُّ بِالشُّفْعَةِ فِيْ كُلِّ مَالٍ لَمْ يُقْسَمْ فَإِذَا وَقَعَتِ الْحُدُوْدُ وَصُرِّفَتِ الطُّرُقُ فَلَا شُفْعَةَ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক এজমালী (ভাগ করা যায় না এমন) সম্পদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে নবী ﷺ অগ্রাধিকারের ফায়সালা প্রদান করেছেন। তবে সবার সীমানা নির্ধারিত হয়ে রাস্তা আলাদা হয়ে গেলে তখন আর অগ্রাধিকার থাকে না। [সহীহ বুখারী, হা/২২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৭১; মিশকাত, হা/২৯৬১।]
কারা শোফা এর অধিকার লাভ করবে :
শোফা এর ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী ও প্রতিবেশীরাই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَضٰى رَسُوْلُ اللهِ - - بِالشُّفْعَةِ فِىْ كُلِّ شِرْكَةٍ لَمْ تُقْسَمْ رَبْعَةٍ أَوْ حَائِطٍ . لَا يَحِلُّ لَه أَنْ يَبِيْعَ حَتّٰى يُؤْذِنَ شَرِيْكَه فَإِنْ شَاءَ أَخَذَ وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ فَإِذَا بَاعَ وَلَمْ يُؤْذِنْهُ فَهُوَ أَحَقُّ بِه
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সেসব শরিকী বিষয়ে শোফার পক্ষে হুকুম দিয়েছেন যা বিভক্ত করা যায় না- জমি হোক বা বাগান; আপন শরীককে না জানিয়ে তা বিক্রি করা বৈধ নয়। সে ইচ্ছা করলে রাখবে অথবা ইচ্ছা করলে ছেড়ে দিবে। যদি সে বিক্রি করে এবং শরীককে অবগত না করে তাহলে সে শরীকই তা পাওয়ার অধিকতর হকদার। [সহীহ মুসলিম, হা/৪২১৩; নাসাঈ, হা/৪৭০১; দার কুতনী, হা/৪৫৩২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৯০৫; মিশকাত, হা/২৯৬২।]
عَنْ أَبِيْ رَافِعٍ سَمِعَ النَّبِىَّ - - يَقُوْلُ الْجَارُ أَحَقُّ بِسَقَبِهِ
আবু রাফে‘ হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছেন যে, প্রতিবেশী তার নিকটতম সম্পত্তির অধিকতর হকদার। [সহীহ বুখারী, হা/২২৫৮; আবু দাউদ, হা/৩৫১৮; নাসাঈ, হা/৪৭০২; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৯৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৮০; মিশকাত, হা/২৯৬৩।]
দাবি না করলে শোফা এর অধিকার বাতিল হয়ে যাবে :
বিক্রি হওয়ার সময় উপস্থিত থাকলে বা তার খবর শুনে দাবি না করলে এর অধিকার বাতিল হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَةِ جَارِه يُنْتَظَرُ بِهَا وَإِنْ كَانَ غَائِبًا إِذَا كَانَ طَرِيْقُهُمَا وَاحِدًا
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রতিবেশী তার শোফার হকদার। তার জন্য এ ব্যাপারে অপেক্ষা করা হবে, যদিও সে অনুপস্থিত থাকে, যখন উভয়ের পথ এক হয়। [আবু দাউদ, হা/৩৫২০; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪২৯২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬২৬৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৯১৭; মিশকাত, হা/২৯৬৭।]
যেসব ক্ষেত্রে শোফা বৈধ :
শোফা কেবল স্থাবর সম্পত্তি তথা ঘর-বাড়ি ও জায়গা-জমির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَضَى النَّبِيُّ بِالشُّفْعَةِ فِيْ كُلِّ مَالٍ لَمْ يُقْسَمْ فَإِذَا وَقَعَتِ الْحُدُوْدُ وَصُرِّفَتِ الطُّرُقُ فَلَا شُفْعَةَ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক এজমালী (ভাগ করা যায় না এমন) সম্পদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে নবী ﷺ অগ্রাধিকারের ফায়সালা প্রদান করেছেন। তবে সবার সীমানা নির্ধারিত হয়ে রাস্তা আলাদা হয়ে গেলে তখন আর অগ্রাধিকার থাকে না। [সহীহ বুখারী, হা/২২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৭১; মিশকাত, হা/২৯৬১।]
কারা শোফা এর অধিকার লাভ করবে :
শোফা এর ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী ও প্রতিবেশীরাই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَضٰى رَسُوْلُ اللهِ - - بِالشُّفْعَةِ فِىْ كُلِّ شِرْكَةٍ لَمْ تُقْسَمْ رَبْعَةٍ أَوْ حَائِطٍ . لَا يَحِلُّ لَه أَنْ يَبِيْعَ حَتّٰى يُؤْذِنَ شَرِيْكَه فَإِنْ شَاءَ أَخَذَ وَإِنْ شَاءَ تَرَكَ فَإِذَا بَاعَ وَلَمْ يُؤْذِنْهُ فَهُوَ أَحَقُّ بِه
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সেসব শরিকী বিষয়ে শোফার পক্ষে হুকুম দিয়েছেন যা বিভক্ত করা যায় না- জমি হোক বা বাগান; আপন শরীককে না জানিয়ে তা বিক্রি করা বৈধ নয়। সে ইচ্ছা করলে রাখবে অথবা ইচ্ছা করলে ছেড়ে দিবে। যদি সে বিক্রি করে এবং শরীককে অবগত না করে তাহলে সে শরীকই তা পাওয়ার অধিকতর হকদার। [সহীহ মুসলিম, হা/৪২১৩; নাসাঈ, হা/৪৭০১; দার কুতনী, হা/৪৫৩২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৯০৫; মিশকাত, হা/২৯৬২।]
عَنْ أَبِيْ رَافِعٍ سَمِعَ النَّبِىَّ - - يَقُوْلُ الْجَارُ أَحَقُّ بِسَقَبِهِ
আবু রাফে‘ হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছেন যে, প্রতিবেশী তার নিকটতম সম্পত্তির অধিকতর হকদার। [সহীহ বুখারী, হা/২২৫৮; আবু দাউদ, হা/৩৫১৮; নাসাঈ, হা/৪৭০২; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৯৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৮০; মিশকাত, হা/২৯৬৩।]
দাবি না করলে শোফা এর অধিকার বাতিল হয়ে যাবে :
বিক্রি হওয়ার সময় উপস্থিত থাকলে বা তার খবর শুনে দাবি না করলে এর অধিকার বাতিল হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَةِ جَارِه يُنْتَظَرُ بِهَا وَإِنْ كَانَ غَائِبًا إِذَا كَانَ طَرِيْقُهُمَا وَاحِدًا
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রতিবেশী তার শোফার হকদার। তার জন্য এ ব্যাপারে অপেক্ষা করা হবে, যদিও সে অনুপস্থিত থাকে, যখন উভয়ের পথ এক হয়। [আবু দাউদ, হা/৩৫২০; ইবনে মাজাহ, হা/২৪৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪২৯২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬২৬৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৯১৭; মিশকাত, হা/২৯৬৭।]
ঋণ প্রদান করার জন্য ঋণদাতার কাছে জামানত হিসেবে যা কিছু রাখা হয় সেটাকে বলা হয় বন্ধক। এ পদ্ধতিটি ইসলামে বৈধ রয়েছে।
তবে বর্তমানে আমাদের সমাজে বন্ধকের এ রূপটি দেখা যায় না। বরং এর বিপরীতে আরো কিছু রূপ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
কেউ কেউ জামানতের বসত্মুটি থেকে সে একাই উপকার গ্রহণ করে; কিন্তু ঋণগ্রহীতাকে কিছুই প্রদান করে না। এটা একেবারেই বৈধ নয়।
প্রচলিত বন্ধক বৈধ না হওয়ার কারণ :
১. জামানতটা হচ্ছে মূলত আমানত। এটি ব্যবহার করা অথবা এর কোনরূপ ক্ষতি সাধন করা অথবা এর কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা অথবা এর থেকে কোনরূপ উপকার গ্রহণ করা যবে না। সুতরাং ঋণের জামানত হিসেবে যা কিছু গ্রহণ করা হয়, সেগুলো থেকে কোনরূপ উপকার গ্রহণ করা হারাম।
২. জামানত প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঋণ আদায়ের নিশ্চয়তা লাভ করা। এর থেকে কোনরূপ উপকার লাভ করা উদ্দেশ্য নয়। যদিও ঋণগ্রহিতা বাধ্য হয়ে অথবা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার দ্বারা উপকৃত হতে বা তা ব্যবহার করতে অনুমতি দেয় তবুও নয়। কেননা ইসলামের নীতি এই যে, যে ঋণ অতিরিক্ত কিছু বয়ে আনে, তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে।
বন্ধকের বৈধ পদ্ধতি :
বন্ধকের ক্ষেত্রে একটি বৈধ পদ্ধতি হচ্ছে, ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে যে জিনিসটি জামানত হিসেবে গ্রহণ করা হবে সে জিনিসটিকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যমত্ম ভোগ করতে দেবে এবং এর পরিবর্তে ঋণদাতার প্রদত্ত ঋণ থেকে সম্পূর্ণ টাকা কেটে নিবে। ফলে ইজারা পদ্ধতি অনুযায়ী উক্ত ঋণের টাকা থেকে ভোগ করার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ হয়ে যাবে। অতঃপর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উক্ত বসত্মুটি আবার মূল মালিকের কাছে ফিরে আসবে।
উল্লেখ্য যে, যারা বন্ধকের এসব শর্ত থেকে মুক্ত থাকার জন্য কৌশল হিসেবে এ ধরনের চুক্তি করে যে, ঋণের অর্থ থেকে প্রতি মাসে ১০০ অথবা ২০০ অথবা এরূপ সামান্য কোন মূল্য কেটে নিবে তাদের জন্য সেটা বৈধ হবে না। কেননা বাসত্মবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এ মূল্যে সাধারণত কোন ব্যক্তিই কোন কিছু ইজারা দিবে না। এতে ঋণগ্রহীতা কেবল বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে থাকে।
তবে বর্তমানে আমাদের সমাজে বন্ধকের এ রূপটি দেখা যায় না। বরং এর বিপরীতে আরো কিছু রূপ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
কেউ কেউ জামানতের বসত্মুটি থেকে সে একাই উপকার গ্রহণ করে; কিন্তু ঋণগ্রহীতাকে কিছুই প্রদান করে না। এটা একেবারেই বৈধ নয়।
প্রচলিত বন্ধক বৈধ না হওয়ার কারণ :
১. জামানতটা হচ্ছে মূলত আমানত। এটি ব্যবহার করা অথবা এর কোনরূপ ক্ষতি সাধন করা অথবা এর কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা অথবা এর থেকে কোনরূপ উপকার গ্রহণ করা যবে না। সুতরাং ঋণের জামানত হিসেবে যা কিছু গ্রহণ করা হয়, সেগুলো থেকে কোনরূপ উপকার গ্রহণ করা হারাম।
২. জামানত প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঋণ আদায়ের নিশ্চয়তা লাভ করা। এর থেকে কোনরূপ উপকার লাভ করা উদ্দেশ্য নয়। যদিও ঋণগ্রহিতা বাধ্য হয়ে অথবা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার দ্বারা উপকৃত হতে বা তা ব্যবহার করতে অনুমতি দেয় তবুও নয়। কেননা ইসলামের নীতি এই যে, যে ঋণ অতিরিক্ত কিছু বয়ে আনে, তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে।
বন্ধকের বৈধ পদ্ধতি :
বন্ধকের ক্ষেত্রে একটি বৈধ পদ্ধতি হচ্ছে, ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে যে জিনিসটি জামানত হিসেবে গ্রহণ করা হবে সে জিনিসটিকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যমত্ম ভোগ করতে দেবে এবং এর পরিবর্তে ঋণদাতার প্রদত্ত ঋণ থেকে সম্পূর্ণ টাকা কেটে নিবে। ফলে ইজারা পদ্ধতি অনুযায়ী উক্ত ঋণের টাকা থেকে ভোগ করার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ হয়ে যাবে। অতঃপর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উক্ত বসত্মুটি আবার মূল মালিকের কাছে ফিরে আসবে।
উল্লেখ্য যে, যারা বন্ধকের এসব শর্ত থেকে মুক্ত থাকার জন্য কৌশল হিসেবে এ ধরনের চুক্তি করে যে, ঋণের অর্থ থেকে প্রতি মাসে ১০০ অথবা ২০০ অথবা এরূপ সামান্য কোন মূল্য কেটে নিবে তাদের জন্য সেটা বৈধ হবে না। কেননা বাসত্মবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এ মূল্যে সাধারণত কোন ব্যক্তিই কোন কিছু ইজারা দিবে না। এতে ঋণগ্রহীতা কেবল বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে থাকে।
বন্ধকী জিনিস ব্যবহার করলে তার মূল্য দিতে হবে :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلرَّهْنُ يُرْكَبُ بِنَفَقَتِه إِذَا كَانَ مَرْهُوْنًا وَلَبَنُ الدَّرِّ يُشْرَبُ بِنَفَقَتِه إِذَا كَانَ مَرْهُوْنًا ، وَعَلَى الَّذِيْ يَرْكَبُ وَيَشْرَبُ النَّفَقَةُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি সওয়ারীর পশু কারো নিকট বন্ধক থাকে তবে তার খরচের পরিমাণে সে তার ওপর আরোহণ করতে পারে। আর যদি কোন দুগ্ধবতী পশু বন্ধক থাকে তবে খরচের পরিমাণে তার দুধ পান করা যেতে পারে। যে ব্যক্তি আরোহণ বা দুধ পান করবে খরচ বহনের দায়িত্ব তার ওপরই বর্তাবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৫১২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৩১; জামেউস সগীর, হা/৭৪০৯; মিশকাত, হা/২৮৮৬।]
যে ব্যক্তি রেহেন বা বন্ধক রেখেছে অর্থাৎ বন্ধকী বসত্মুর মালিক যে ব্যক্তি সে-ই এর আয়ের মালিক। অবশ্য উৎপন্ন বসত্মু যথাসম্ভব মূল বসত্মুর সাথে বন্ধক হিসেবে আবদ্ধ থাকবে। তদ্রূপ বন্ধকী বসত্মু ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যার নিকট বন্ধক রাখা হয়েছে তার অনুমতির প্রয়োজন থাকবে। বন্ধকী বসত্মুর ব্যয়ভারও ঐ মালিক তথা যে ব্যক্তি বন্ধক রেখেছে তার উপরই বর্তাবে। যার নিকট বন্ধক রাখা হয়েছে, তার জন্য কোনভাবেই বন্ধকী বসত্মু ভোগ করা জায়েয নয়।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلرَّهْنُ يُرْكَبُ بِنَفَقَتِه إِذَا كَانَ مَرْهُوْنًا وَلَبَنُ الدَّرِّ يُشْرَبُ بِنَفَقَتِه إِذَا كَانَ مَرْهُوْنًا ، وَعَلَى الَّذِيْ يَرْكَبُ وَيَشْرَبُ النَّفَقَةُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি সওয়ারীর পশু কারো নিকট বন্ধক থাকে তবে তার খরচের পরিমাণে সে তার ওপর আরোহণ করতে পারে। আর যদি কোন দুগ্ধবতী পশু বন্ধক থাকে তবে খরচের পরিমাণে তার দুধ পান করা যেতে পারে। যে ব্যক্তি আরোহণ বা দুধ পান করবে খরচ বহনের দায়িত্ব তার ওপরই বর্তাবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৫১২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৩১; জামেউস সগীর, হা/৭৪০৯; মিশকাত, হা/২৮৮৬।]
যে ব্যক্তি রেহেন বা বন্ধক রেখেছে অর্থাৎ বন্ধকী বসত্মুর মালিক যে ব্যক্তি সে-ই এর আয়ের মালিক। অবশ্য উৎপন্ন বসত্মু যথাসম্ভব মূল বসত্মুর সাথে বন্ধক হিসেবে আবদ্ধ থাকবে। তদ্রূপ বন্ধকী বসত্মু ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যার নিকট বন্ধক রাখা হয়েছে তার অনুমতির প্রয়োজন থাকবে। বন্ধকী বসত্মুর ব্যয়ভারও ঐ মালিক তথা যে ব্যক্তি বন্ধক রেখেছে তার উপরই বর্তাবে। যার নিকট বন্ধক রাখা হয়েছে, তার জন্য কোনভাবেই বন্ধকী বসত্মু ভোগ করা জায়েয নয়।
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাউকে কোন কিছুর বিনিময়ে কোন জিনিসের লাভ বা উপকার অর্জন করার অধিকার প্রদান করার পদ্ধতিকে ভাড়া বলা হয়। শরীয়তে এ পদ্ধতিকে বৈধ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ السَّائِبِ ..... وَأَمَرَ بِالْمُؤَاجَرَةِ وَقَالَ لَا بَأْسَ بِهَا
আবদুল্লাহ ইবনে সায়িব (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইজারা (ভাড়া) দিতে আদেশ করেছেন আর বলেছেন- এতে কোন সমস্যা নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৩৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪২১০; মিশকাত, হা/২৯৮১।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ السَّائِبِ ..... وَأَمَرَ بِالْمُؤَاجَرَةِ وَقَالَ لَا بَأْسَ بِهَا
আবদুল্লাহ ইবনে সায়িব (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইজারা (ভাড়া) দিতে আদেশ করেছেন আর বলেছেন- এতে কোন সমস্যা নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৩৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪২১০; মিশকাত, হা/২৯৮১।]
পতিত জমি প্রথমে যে ব্যক্তি আবাদ করবে সে-ই তার মালিক হিসেবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ مَنْ أَحْيٰى أَرْضًا مَيِّتَةً فَهِىَ لَهٗ وَلَيْسَ لِعِرْقِ ظَالِمٍ حَقٌّ
সাঈদ ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি পতিত জমি আবাদ করে সেটা তার। অন্যায় দখলকারীর মেহনতের কোন হক নেই। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৮৩১; তিরমিযী, হা/১৪৩৫; মিশকাত, হা/২৯৪৪।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ أَعْمَرَ أَرْضًا لَيْسَتْ لِأَحَدٍ فَهُوَ أَحَقُّ . قَالَ عُرْوَةُ قَضٰى بِه عُمَرُ فِيْ خِلَافَتِه
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন জমি চাষ করে- যার কোন মালিক নেই, তাহলে সে লোকই ঐ জমির বেশি হকদার। উরওয়া (রাঃ) বলেন, উমর (রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে অনুরূপ ফায়সালা দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৯২৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৫৭২৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২১১৪; জামেউস সগীর, হা/১১০০২; মিশকাত, হা/২৯৯১।]
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ مَنْ أَحْيٰى أَرْضًا مَيِّتَةً فَهِىَ لَهٗ وَلَيْسَ لِعِرْقِ ظَالِمٍ حَقٌّ
সাঈদ ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি পতিত জমি আবাদ করে সেটা তার। অন্যায় দখলকারীর মেহনতের কোন হক নেই। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৮৩১; তিরমিযী, হা/১৪৩৫; মিশকাত, হা/২৯৪৪।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ أَعْمَرَ أَرْضًا لَيْسَتْ لِأَحَدٍ فَهُوَ أَحَقُّ . قَالَ عُرْوَةُ قَضٰى بِه عُمَرُ فِيْ خِلَافَتِه
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন জমি চাষ করে- যার কোন মালিক নেই, তাহলে সে লোকই ঐ জমির বেশি হকদার। উরওয়া (রাঃ) বলেন, উমর (রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে অনুরূপ ফায়সালা দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৯২৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৫৭২৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২১১৪; জামেউস সগীর, হা/১১০০২; মিশকাত, হা/২৯৯১।]
যে মাল আল্লাহর ওয়াসেত্ম ওয়াকফ করা হয়, সে মাল তার হকদার ছাড়া অন্যের ভক্ষণ করা বৈধ নয়। ওয়াকফের সময় মুতাওয়াল্লী বা পরিচালকের নাম উল্লেখ না করলেও ওয়াকফ জায়েয হয়ে যায়। ওয়াকফকারী নিজেও পরিচালক হতে পারেন এবং আপন পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারেন। ওয়াকফ সম্পত্তিতে বেচা-কেনা বা দান-হেবা ও মীরাস জায়েয নেই। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَصَابَ أَرْضًا بِخَيْبَرَ فَأَتَى النَّبِيَّ يَسْتَأْمِرُهٗ فِيْهَا فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ أَصَبْتُ أَرْضًا بِخَيْبَرَ لَمْ أُصِبْ مَالًا قَطُّ أَنْفَسَ عِنْدِيْ مِنْهُ فَمَا تَأْمُرُ بِه قَالَ إِنْ شِئْتَ حَبَسْتَ أَصْلَهَا وَتَصَدَّقْتَ بِهَا قَالَ فَتَصَدَّقَ بِهَا عُمَرُ أَنَّهٗ لَا يُبَاعُ وَلَا يُوْهَبُ وَلَا يُوْرَثُ وَتَصَدَّقَ بِهَا فِي الْفُقَرَاءِ وَفِي الْقُرْبٰى وَفِي الرِّقَابِ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَالضَّيْفِ لَا جُنَاحَ عَلٰى مَنْ وَلِيَهَا أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا بِالْمَعْرُوْفِ وَيُطْعِمَ غَيْرَ مُتَمَوِّلٍ . قَالَ : فَحَدَّثْتُ بِهِ ابْنَ سِيْرِيْنَ فَقَالَ غَيْرَ مُتَأَثِّلٍ مَالًا
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) খায়বারে কিছু জমি পেলেন। তিনি এ ব্যাপারে নবী ﷺ এর কাছে পরামর্শের জন্য আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি খায়বারে এমন কিছু উৎকৃষ্ট জমি পেয়েছি, যেমনটি আমি ইতিপূর্বে কখনো পাইনি। আপনি এ সম্পর্কে আমাকে কি আদেশ দেন? তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে তার মালিকানা সংরক্ষিত রেখে তা থেকে প্রাপ্ত (উৎপন্ন ফসল) দান করতে পার। তিনি (ইবনে উমর) বলেন, উমর (রাঃ) এ শর্তে দান করেন, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং তা উত্তরাধিকার সূত্রে ভাগ হবে না। তা থেকে প্রাপ্ত উৎপাদন অভাবগ্রস্তদের, আত্মীয়দের, গোলাম মুক্তির ব্যাপারে, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফিরদের ও মেহমানদের ব্যাপারে ব্যয় করা হবে। হ্যাঁ, মুতাওয়াল্লীর জন্য নিয়ম অনুসারে নিজে ন্যায়সঙ্গতভাবে খাওয়ার ব্যাপারে বা অন্যকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কোন দোষ হবে না, তবে তা থেকে জমা করতে পারবে না। তারপর আমি অধস্তন বর্ণনাকারী ইবনে সীরীনের নিকট এ হাদীসটি বর্ণনা করলে, তিনি বলেন, আরও শর্ত রয়েছে, তা হলো মুতাওয়াল্লী সম্পদ জমা করবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪৮৩; দার কুতনী, হা/৪৪১৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২২৩৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৭২৬৬; মিশকাত, হা/৩০০৮।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَصَابَ أَرْضًا بِخَيْبَرَ فَأَتَى النَّبِيَّ يَسْتَأْمِرُهٗ فِيْهَا فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ أَصَبْتُ أَرْضًا بِخَيْبَرَ لَمْ أُصِبْ مَالًا قَطُّ أَنْفَسَ عِنْدِيْ مِنْهُ فَمَا تَأْمُرُ بِه قَالَ إِنْ شِئْتَ حَبَسْتَ أَصْلَهَا وَتَصَدَّقْتَ بِهَا قَالَ فَتَصَدَّقَ بِهَا عُمَرُ أَنَّهٗ لَا يُبَاعُ وَلَا يُوْهَبُ وَلَا يُوْرَثُ وَتَصَدَّقَ بِهَا فِي الْفُقَرَاءِ وَفِي الْقُرْبٰى وَفِي الرِّقَابِ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ وَالضَّيْفِ لَا جُنَاحَ عَلٰى مَنْ وَلِيَهَا أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا بِالْمَعْرُوْفِ وَيُطْعِمَ غَيْرَ مُتَمَوِّلٍ . قَالَ : فَحَدَّثْتُ بِهِ ابْنَ سِيْرِيْنَ فَقَالَ غَيْرَ مُتَأَثِّلٍ مَالًا
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) খায়বারে কিছু জমি পেলেন। তিনি এ ব্যাপারে নবী ﷺ এর কাছে পরামর্শের জন্য আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি খায়বারে এমন কিছু উৎকৃষ্ট জমি পেয়েছি, যেমনটি আমি ইতিপূর্বে কখনো পাইনি। আপনি এ সম্পর্কে আমাকে কি আদেশ দেন? তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে তার মালিকানা সংরক্ষিত রেখে তা থেকে প্রাপ্ত (উৎপন্ন ফসল) দান করতে পার। তিনি (ইবনে উমর) বলেন, উমর (রাঃ) এ শর্তে দান করেন, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং তা উত্তরাধিকার সূত্রে ভাগ হবে না। তা থেকে প্রাপ্ত উৎপাদন অভাবগ্রস্তদের, আত্মীয়দের, গোলাম মুক্তির ব্যাপারে, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফিরদের ও মেহমানদের ব্যাপারে ব্যয় করা হবে। হ্যাঁ, মুতাওয়াল্লীর জন্য নিয়ম অনুসারে নিজে ন্যায়সঙ্গতভাবে খাওয়ার ব্যাপারে বা অন্যকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কোন দোষ হবে না, তবে তা থেকে জমা করতে পারবে না। তারপর আমি অধস্তন বর্ণনাকারী ইবনে সীরীনের নিকট এ হাদীসটি বর্ণনা করলে, তিনি বলেন, আরও শর্ত রয়েছে, তা হলো মুতাওয়াল্লী সম্পদ জমা করবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৬০৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪৮৩; দার কুতনী, হা/৪৪১৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২২৩৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৭২৬৬; মিশকাত, হা/৩০০৮।]
কাউকে কোন কিছু হাদিয়া প্রদান করা বা দান করাকেই হেবা বলা হয়। ইসলামে হেবা প্রদান করা একটি অত্যমত্ম মর্যাদাপূর্ণ কাজ।
হাদিয়া গ্রহণ করা উচিত :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنْ عُرِضَ عَلَيْهِ رَيْحَانٌ فَلَا يَرُدُّهٗ فَإِنَّهٗ خَفِيْفُ الْمَحْمِلِ طَيِّبُ الرِّيْحِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কারো নিকট কোন ফুল আনা হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কারণ তা ওজনে হালকা এবং ঘ্রাণে উত্তম। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০২০; আবু দাউদ, হা/৪১৭৪; নাসাঈ, হা/৫২৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৪৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১০৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৮৫৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬১৮০; জামেউস সগীর, হা/১১৩৩৮; মিশকাত, হা/৩০১৬।]
عَنْ أَنَسٍ أَنَّه كَانَ لَا يَرُدُّ الطِّيْبَ وَزَعَمَ أَنَّ النَّبِيَّ كَانَ لَا يَرُدُّ الطِّيْبَ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি কখনো খুশবু ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি মনে করেন, নবী ﷺ-ও কখনো খুশবু ফিরিয়ে দিতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯২৯; তিরমিযী, হা/২৭৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৭৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩১৯; মিশকাত, হা/৩০১৭।]
দান করে তা ফেরত নেয়া হারাম :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ الْعَائِدُ فِيْ هِبَتِه كَالْكَلْبِ يَعُوْدُ فِيْ قَيْئِه لَيْسَ لَنَا مَثَلُ السَّوْءِ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, দান করে তা আবার ফেরত নেয়া ব্যক্তির তুলনা এমন কুকুরের সাথে হতে পারে, যে বমি করে তা আবার গলাধঃকরণ করে। এমন খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন আমাদের জন্য অশোভনীয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৭৫; তিরমিযী, হা/১২৯৮; নাসাঈ, হা/৩৬৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৩৭৭; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৫৪৮; জামেউস সগীর, হা/৯৫৫৭; মিশকাত, হা/৩০১৮।]
অবৈধ দান ফেরত নেয়া যাবে :
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ أَنَّ أَبَاهُ أَتٰى بِه إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ إِنِّيْ نَحَلْتُ ابْنِيْ هٰذَا غُلَامًا فَقَالَ أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَ مِثْلَهٗ قَالَ : لَا قَالَ فَارْجِعْهُ
নু‘মান ইবনে বাশির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) তার পিতা তাকে সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট গিয়ে বললেন, আমি আমার এ সন্তানকে একটি গোলাম দান করেছি। নবী ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার সব সন্তানকেই তার মতো দান করেছ? তিনি বললেন, না। নবী ﷺ বললেন, তাহলে তাকে ফিরিয়ে নাও। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪২৬২; নাসাঈ, হা/৩৬৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০৯৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৩৪৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৫৮১; মিশকাত, হা/৩০১৯।]
নিজ পুত্রকে হেবাকৃত জিনিস ফিরিয়ে নেয়া যাবে :
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّه أَنَّ نَبِيَّ اللهِ قَالَ : لَا يَرْجِعْ فِيْ هِبَتِه إِلَّا الْوَالِدُ مِنْ وَلَدِه
আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। নবী ﷺ বলেছেন, কেউ নিজ হেবাকৃত জিনিস ফিরিয়ে নিতে পারে না; তবে পিতা নিজ পুত্রকে যে হেবা করেছে তা ব্যতীত । [ইবনে মাজাহ, হা/২৩৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৭০৫; দার কুতনী, হা/২৯৬৮; জামেউস সগীর, হা/১৩৬৪৪; মিশকাত, হা/৩০২০।]
ওয়ারিসী সম্পদ থেকে কাউকে এককভাবে হাদিয়া দেয়া যাবে না :
عَنْ عَامِرٍ قَالَ : سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُوْلُ أَعْطَانِيْ أَبِيْ عَطِيَّةً فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ لَا أَرْضٰى حَتّٰى تُشْهِدَ رَسُوْلَ اللهِ فَأَتٰى رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ إِنِّيْ أَعْطَيْتُ ابْنِيْ مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً فَأَمَرَتْنِيْ أَنْ أُشْهِدَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَال أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلَدِكَ مِثْلَ هٰذَا قَالَ لَا قَالَ فَاتَّقُوا اللهَ وَاعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ قَالَ فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهٗ
আমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনে বাশির (রাঃ)-কে মিম্বারে উঠে বলতে শুনেছি, আমার পিতা (নু‘মান) আমাকে একটা জিনিস দান (হেবা) করলে আমার মা আমরাহ বিনতে রাওয়াহা বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সাক্ষী না করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি রাজি নই। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট গিয়ে বললেন, আমার স্ত্রী আমরাহ বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার এক ছেলেকে আমি একটি জিনিস দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! কিন্তু এ সম্পর্কে সে আপনাকে সাক্ষী করার জন্য আমাকে বলেছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি তোমার সব সন্তানকেই এভাবে দান করেছ? সে বলল, না। এটা শুনে তিনি বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমার সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ করো। (বর্ণনাকারী) বলেন, তিনি ফিরে এসে তার দান ফিরিয়ে নিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৩৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩১৬৩৬; মিশকাত, হা/৩০১৯।]
হাদিয়া গ্রহণ করা উচিত :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنْ عُرِضَ عَلَيْهِ رَيْحَانٌ فَلَا يَرُدُّهٗ فَإِنَّهٗ خَفِيْفُ الْمَحْمِلِ طَيِّبُ الرِّيْحِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কারো নিকট কোন ফুল আনা হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কারণ তা ওজনে হালকা এবং ঘ্রাণে উত্তম। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০২০; আবু দাউদ, হা/৪১৭৪; নাসাঈ, হা/৫২৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৪৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১০৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৮৫৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬১৮০; জামেউস সগীর, হা/১১৩৩৮; মিশকাত, হা/৩০১৬।]
عَنْ أَنَسٍ أَنَّه كَانَ لَا يَرُدُّ الطِّيْبَ وَزَعَمَ أَنَّ النَّبِيَّ كَانَ لَا يَرُدُّ الطِّيْبَ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি কখনো খুশবু ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি মনে করেন, নবী ﷺ-ও কখনো খুশবু ফিরিয়ে দিতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯২৯; তিরমিযী, হা/২৭৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৭৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩১৯; মিশকাত, হা/৩০১৭।]
দান করে তা ফেরত নেয়া হারাম :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ الْعَائِدُ فِيْ هِبَتِه كَالْكَلْبِ يَعُوْدُ فِيْ قَيْئِه لَيْسَ لَنَا مَثَلُ السَّوْءِ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, দান করে তা আবার ফেরত নেয়া ব্যক্তির তুলনা এমন কুকুরের সাথে হতে পারে, যে বমি করে তা আবার গলাধঃকরণ করে। এমন খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন আমাদের জন্য অশোভনীয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৭৫; তিরমিযী, হা/১২৯৮; নাসাঈ, হা/৩৬৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৩৭৭; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৫৪৮; জামেউস সগীর, হা/৯৫৫৭; মিশকাত, হা/৩০১৮।]
অবৈধ দান ফেরত নেয়া যাবে :
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ أَنَّ أَبَاهُ أَتٰى بِه إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ إِنِّيْ نَحَلْتُ ابْنِيْ هٰذَا غُلَامًا فَقَالَ أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَ مِثْلَهٗ قَالَ : لَا قَالَ فَارْجِعْهُ
নু‘মান ইবনে বাশির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) তার পিতা তাকে সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট গিয়ে বললেন, আমি আমার এ সন্তানকে একটি গোলাম দান করেছি। নবী ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার সব সন্তানকেই তার মতো দান করেছ? তিনি বললেন, না। নবী ﷺ বললেন, তাহলে তাকে ফিরিয়ে নাও। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪২৬২; নাসাঈ, হা/৩৬৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০৯৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৩৪৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৫৮১; মিশকাত, হা/৩০১৯।]
নিজ পুত্রকে হেবাকৃত জিনিস ফিরিয়ে নেয়া যাবে :
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّه أَنَّ نَبِيَّ اللهِ قَالَ : لَا يَرْجِعْ فِيْ هِبَتِه إِلَّا الْوَالِدُ مِنْ وَلَدِه
আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। নবী ﷺ বলেছেন, কেউ নিজ হেবাকৃত জিনিস ফিরিয়ে নিতে পারে না; তবে পিতা নিজ পুত্রকে যে হেবা করেছে তা ব্যতীত । [ইবনে মাজাহ, হা/২৩৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৭০৫; দার কুতনী, হা/২৯৬৮; জামেউস সগীর, হা/১৩৬৪৪; মিশকাত, হা/৩০২০।]
ওয়ারিসী সম্পদ থেকে কাউকে এককভাবে হাদিয়া দেয়া যাবে না :
عَنْ عَامِرٍ قَالَ : سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُوْلُ أَعْطَانِيْ أَبِيْ عَطِيَّةً فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ لَا أَرْضٰى حَتّٰى تُشْهِدَ رَسُوْلَ اللهِ فَأَتٰى رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ إِنِّيْ أَعْطَيْتُ ابْنِيْ مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً فَأَمَرَتْنِيْ أَنْ أُشْهِدَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَال أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلَدِكَ مِثْلَ هٰذَا قَالَ لَا قَالَ فَاتَّقُوا اللهَ وَاعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ قَالَ فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهٗ
আমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনে বাশির (রাঃ)-কে মিম্বারে উঠে বলতে শুনেছি, আমার পিতা (নু‘মান) আমাকে একটা জিনিস দান (হেবা) করলে আমার মা আমরাহ বিনতে রাওয়াহা বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সাক্ষী না করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি রাজি নই। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট গিয়ে বললেন, আমার স্ত্রী আমরাহ বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার এক ছেলেকে আমি একটি জিনিস দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! কিন্তু এ সম্পর্কে সে আপনাকে সাক্ষী করার জন্য আমাকে বলেছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি তোমার সব সন্তানকেই এভাবে দান করেছ? সে বলল, না। এটা শুনে তিনি বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমার সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ করো। (বর্ণনাকারী) বলেন, তিনি ফিরে এসে তার দান ফিরিয়ে নিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২৩৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩১৬৩৬; মিশকাত, হা/৩০১৯।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا يَحْلُبَنَّ أَحَدٌ مَاشِيَةَ امْرِئٍ بِغَيْرِ إِذْنِه أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تُؤْتٰى مَشْرُبَتُهٗ فَتُكْسَرَ خِزَانَتُهٗ فَيُنْتَقَلَ طَعَامُهٗ فَإِنَّمَا تَخْزُنُ لَهُمْ ضُرُوْعُ مَوَاشِيْهِمْ أَطْعِمَاتِهِمْ فَلَا يَحْلُبَنَّ أَحَدٌ مَاشِيَةَ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো পশুর দুধ দোহন করবে না। তোমাদের মাঝে কেউ এটা কি পছন্দ করবে যে, তার ভান্ডারে কোন লোক এসে গোলা ভেঙ্গে গোলার শস্য নিয়ে যাক? তাদের পশুগুলোর স্তন তাদের খাদ্য সঞ্চয় করে থাকে। সুতরাং কারো পশুর দুধ তার অনুমতি ব্যতীত দোহন করবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬০৮; আবু দাউদ, হা/২৬২৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৮৩১; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৯৪; মিশকাত, হা/২৯৩৯।]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো পশুর দুধ দোহন করবে না। তোমাদের মাঝে কেউ এটা কি পছন্দ করবে যে, তার ভান্ডারে কোন লোক এসে গোলা ভেঙ্গে গোলার শস্য নিয়ে যাক? তাদের পশুগুলোর স্তন তাদের খাদ্য সঞ্চয় করে থাকে। সুতরাং কারো পশুর দুধ তার অনুমতি ব্যতীত দোহন করবে না। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬০৮; আবু দাউদ, হা/২৬২৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৮৩১; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৯৪; মিশকাত, হা/২৯৩৯।]
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ عِنْدَ بَعْضِ نِسَائِه فَأَرْسَلَتْ إِحْدٰى أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ بِصَحْفَةٍ فِيْهَا طَعَامٌ فَضَرَبَتِ الَّتِي النَّبِيُّ فِيْ بَيْتِهَا يَدَ الْخَادِمِ فَسَقَطَتِ الصَّحْفَةُ فَانْفَلَقَتْ فَجَمَعَ النَّبِيُّ فِلَقَ الصَّحْفَةِ ثُمَّ جَعَلَ يَجْمَعُ فِيْهَا الطَّعَامَ الَّذِيْ كَانَ فِي الصَّحْفَةِ وَيَقُوْلُ غَارَتْ أُمُّكُمْ ثُمَّ حَبَسَ الْخَادِمَ حَتّٰى أُتِيَ بِصَحْفَةٍ مِنْ عِنْدِ الَّتِيْ هُوَ فِيْ بَيْتِهَا فَدَفَعَ الصَّحْفَةَ الصَّحِيْحَةَ إِلَى الَّتِيْ كُسِرَتْ صَحْفَتُهَا وَأَمْسَكَ الْمَكْسُوْرَةَ فِيْ بَيْتِ الَّتِيْ كَسَرَتْ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে থাকা অবস্থায় তাঁর অপর এক স্ত্রী একটি পেয়ালায় কিছু খাবার পাঠালেন। যে স্ত্রীর ঘরে নবী ﷺ অবস্থান করছিলেন, সেই স্ত্রী খাদেমের হাতে আঘাত করায় পেয়ালা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেল। নবী ﷺ পেয়ালার ভাঙ্গা টুকরা জমা করে তার মধ্যে যে খাবার ছিল তা উঠাতে লাগলেন। অতঃপর তিনি খাদেমকে থামিয়ে রেখে যে স্ত্রীর কাছে ছিলেন, তার কাছ থেকে একটি পাত্র নিয়ে যার পেয়ালা ভেঙ্গে গেছে তাকে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন এবং ভাঙ্গা পেয়ালাটি এ স্ত্রীর কাছে রাখলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২২৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৮৫৫; মিশকাত, হা/২৯৪০।]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে থাকা অবস্থায় তাঁর অপর এক স্ত্রী একটি পেয়ালায় কিছু খাবার পাঠালেন। যে স্ত্রীর ঘরে নবী ﷺ অবস্থান করছিলেন, সেই স্ত্রী খাদেমের হাতে আঘাত করায় পেয়ালা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেল। নবী ﷺ পেয়ালার ভাঙ্গা টুকরা জমা করে তার মধ্যে যে খাবার ছিল তা উঠাতে লাগলেন। অতঃপর তিনি খাদেমকে থামিয়ে রেখে যে স্ত্রীর কাছে ছিলেন, তার কাছ থেকে একটি পাত্র নিয়ে যার পেয়ালা ভেঙ্গে গেছে তাকে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন এবং ভাঙ্গা পেয়ালাটি এ স্ত্রীর কাছে রাখলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫২২৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৮৫৫; মিশকাত, হা/২৯৪০।]
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - لَا يَأْخُذْ أَحَدُكُمْ عَصَا أَخِيْهِ لَاعِبًا أَوْ جَادًّا فَمَنْ أَخَذَ عَصَا أَخِيْهِ فَلْيَرُدَّهَا إِلَيْهِ
সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রহ.) তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের লাঠি হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে রেখে দেয়ার উদ্দেশ্যে কেড়ে না নেয়। যে তার ভাইয়ের লাঠি কেড়ে নিবে সে যেন সেটা তাকে ফেরত দেয়। [তিরমিযী, হা/২১৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯৭০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৮৩৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৫৭২; মিশকাত, হা/২৯৪৮।]
সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রহ.) তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের লাঠি হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে রেখে দেয়ার উদ্দেশ্যে কেড়ে না নেয়। যে তার ভাইয়ের লাঠি কেড়ে নিবে সে যেন সেটা তাকে ফেরত দেয়। [তিরমিযী, হা/২১৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯৭০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৮৩৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৫৭২; মিশকাত, হা/২৯৪৮।]
যেসব খাদ্য কোন শিরকী, বিদআতী অথবা কোন পাপাচারমূলক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করার জন্য তৈরি করা হয়, সেসব খাদ্য খাওয়া যাবে না। কারণ এতে ঐসব পাপের প্রতি মৌন-সম্মতি ও সমর্থন প্রকাশ পায়। যেমন- ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে মেরাজ, শবে বরাত, মৃতব্যক্তি কেন্দ্রিক বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠানে পরিবেশনকৃত খাদ্য ইত্যাদি।
যাকাত বণ্টনের খাত হচ্ছে ৮টি। সুতরাং এই ৮ প্রকার ব্যতীত অন্য যে কারো জন্য যাকাতের মাল খাওয়া বৈধ নয়।
অনুরূপভাবে ফরয হওয়া সত্ত্বেও যারা যাকাত অথবা ওশর দেয় না তারা তাদের সম্পদকে অপবিত্র করে ফেলে। কারণ সম্পদের মধ্যে যাকাতের যে অংশ রয়েছে তা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত লোকদের হক।
অনুরূপভাবে ফরয হওয়া সত্ত্বেও যারা যাকাত অথবা ওশর দেয় না তারা তাদের সম্পদকে অপবিত্র করে ফেলে। কারণ সম্পদের মধ্যে যাকাতের যে অংশ রয়েছে তা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত লোকদের হক।
স্বর্ণ বা রৌপ্যের পাত্রে খাওয়া যাবে না। কেননা হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ أَبِيْ لَيْلٰى قَالَ كَانَ حُذَيْفَةُ بِالْمَدَائِنِ فَاسْتَسْقٰى فَأَتَاهُ دِهْقَانٌ بِقَدَحِ فِضَّةٍ فَرَمَاهُ بِه فَقَالَ إِنِّيْ لَمْ أَرْمِه إِلَّا أَنِّيْ نَهَيْتُه فَلَمْ يَنْتَهِ وَإِنَّ النَّبِيَّ نَهَانَا عَنِ الْحَرِيْرِ وَالدِّيْبَاجِ وَالشُّرْبِ فِيْ اٰنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَقَالَ هُنَّ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَهِيَ لَكُمْ فِي الْاٰخِرَةِ
ইবনে আবী লাইলা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফা (রাঃ) যখন মাদইয়ানে ছিলেন, তখন এক সময় তিনি পানি পান করতে চাইলেন। জনৈক গ্রাম্য সরদার তাঁর নিকট রৌপ্যের পাত্রে করে পানি নিয়ে আসলে তিনি তা ছুঁড়ে মারলেন এবং বললেন, আমি এটা ফেলতাম না, আমি পূর্বে তাকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এরপরও সে নিবৃত্ত হয়নি। নবী ﷺ আমাদেরকে মোটা ও মিহি রেশমী বস্ত্র ব্যবহার এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এসব দুনিয়ায় কাফেরদের জন্য আর তোমাদের জন্য হবে আখিরাতে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৩২; আবু দাউদ, হা/৩৭২৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৯৬২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬২৮১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৬৮৩৯; দার কুতনী, হা/৪৮৫৮।]
عَنِ ابْنِ أَبِيْ لَيْلٰى قَالَ كَانَ حُذَيْفَةُ بِالْمَدَائِنِ فَاسْتَسْقٰى فَأَتَاهُ دِهْقَانٌ بِقَدَحِ فِضَّةٍ فَرَمَاهُ بِه فَقَالَ إِنِّيْ لَمْ أَرْمِه إِلَّا أَنِّيْ نَهَيْتُه فَلَمْ يَنْتَهِ وَإِنَّ النَّبِيَّ نَهَانَا عَنِ الْحَرِيْرِ وَالدِّيْبَاجِ وَالشُّرْبِ فِيْ اٰنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَقَالَ هُنَّ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَهِيَ لَكُمْ فِي الْاٰخِرَةِ
ইবনে আবী লাইলা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফা (রাঃ) যখন মাদইয়ানে ছিলেন, তখন এক সময় তিনি পানি পান করতে চাইলেন। জনৈক গ্রাম্য সরদার তাঁর নিকট রৌপ্যের পাত্রে করে পানি নিয়ে আসলে তিনি তা ছুঁড়ে মারলেন এবং বললেন, আমি এটা ফেলতাম না, আমি পূর্বে তাকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এরপরও সে নিবৃত্ত হয়নি। নবী ﷺ আমাদেরকে মোটা ও মিহি রেশমী বস্ত্র ব্যবহার এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এসব দুনিয়ায় কাফেরদের জন্য আর তোমাদের জন্য হবে আখিরাতে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৩২; আবু দাউদ, হা/৩৭২৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৯৬২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬২৮১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৬৮৩৯; দার কুতনী, হা/৪৮৫৮।]
ঋণী ব্যক্তিকে কিছু অবকাশ দেয়া উচিত :
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ أُصِيْبَ رَجُلٌ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ - - فِىْ ثِمَارٍ ابْتَاعَهَا فَكَثُرَ دَيْنُهٗ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - تَصَدَّقُوْا عَلَيْهِ فَتَصَدَّقَ النَّاسُ عَلَيْهِ فَلَمْ يَبْلُغْ ذٰلِكَ وَفَاءَ دَيْنِه فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - لِغُرَمَائِه خُذُوْا مَا وَجَدْتُمْ وَلَيْسَ لَكُمْ إِلَّا ذٰلِكَ
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময়ে এক ব্যক্তির ক্রয় করা ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি অনেক ঋণী হয়ে পড়েন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা তাকে সাহায্য করো। লোকজন তাকে সাহায্য করল, কিন্তু প্রাপ্ত ঋণ পরিশোধের পরিমাণ হলো না। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার পাওনাদারদের বললেন, যা তোমরা পেয়েছ তা গ্রহণ করো; এর অতিরিক্ত আর পাবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৬৪; আবু দাউদ, হা/৩৪৭১; তিরমিযী, হা/৬৫৫; নাসাঈ, হা/৪৫৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৫৬৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯৩৫; মিশকাত, হা/২৯০০।]
ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তিকে ক্ষমা করার উপকারিতা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : كَانَ الرَّجُلُ يُدَايِنُ النَّاسَ فَكَانَ يَقُوْلُ لِفَتَاهُ إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِرًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ لَعَلَّ اللهُ أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا قَالَ فَلَقِيَ اللهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, পূর্বের যুগে একজন লোক ছিল। সে মানুষকে ঋণ দিত এবং আপন কর্মচারীকে বলে দিত; যখন তুমি ঋণ আদায়ে (তাগাদার জন্য) কোন গরীবের নিকট যাবে, তখন তাকে মাফ করে দিবে। সম্ভবত (এর ফলে) আল্লাহও আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নবী ﷺ বলেন, অতঃপর লোকটি (মৃত্যুর পর) আল্লাহর দেখা পেল। তখন আল্লাহ তাকে মাফ করে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮১; নাসাঈ, হা/৪৬৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯০৫; জামেউস সগীর, হা/৮৫৮২; মিশকাত, হা/২৯০১।]
عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ طَلَبَ غَرِيْمًا لَهٗ فَتَوَارٰى عَنْهُ ثُمَّ وَجَدَهٗ فَقَالَ إِنِّىْ مُعْسِرٌ . فَقَالَ اللهِ قَالَ اللهِ قَالَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ مَنْ سَرَّهٗ أَنْ يُنْجِيَهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ أَوْ يَضَعْ عَنْهُ
আবদুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদা (রহ.) হতে বর্ণিত যে, আবু কাতাদা (রাঃ) একবার তার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারী একজনকে খোঁজ করেন। সে তার থেকে লুকিয়েছিল। পরে তিনি তাকে পেয়ে যান। তখন সে লোকটি বলল, আমি অভাবগ্রস্ত। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! সে বলল, আল্লাহর শপথ। তারপর তিনি বললেন, তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এটা চায় যে, আল্লাহ তাকে কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দান করুন, সে যেন ঋণগ্রস্ত অক্ষম লোকের সহজ ব্যবস্থা করে কিংবা ঋণ মওকূফ করে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৯৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯০৩; মিশকাত, হা/২৯০২।]
ঋণ পরিশোধ করার সময় উত্তম পন্থা অবলম্বন করা উচিত :
عَنْ أَبِىْ رَافِعٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - اسْتَسْلَفَ مِنْ رَجُلٍ بَكْرًا فَقَدِمَتْ عَلَيْهِ إِبِلٌ مِنْ إِبِلِ الصَّدَقَةِ فَأَمَرَ أَبَا رَافِعٍ أَنْ يَقْضِىَ الرَّجُلَ بَكْرَهٗ فَرَجَعَ إِلَيْهِ أَبُوْ رَافِعٍ فَقَالَ لَمْ أَجِدْ فِيْهَا إِلَّا خِيَارًا رَبَاعِيًا . فَقَالَ أَعْطِه إِيَّاهُ إِنَّ خِيَارَ النَّاسِ أَحْسَنُهُمْ قَضَاءً
আবু রাফি‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তির নিকট থেকে একটি উটের বাচ্চা ধার নেন। এরপর তাঁর নিকট সাদাকার উট আসে। তিনি আবু রাফি‘কে সে ব্যক্তির উটের ধার শোধ করার আদেশ করেন। আবু রাফি‘ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ফিরে এসে জানালেন যে, সাদাকার উটের মধ্যে আমি সেরূপ দেখছি না, তবে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট উট আছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ওটাই তাকে দাও। সে ব্যক্তিই উত্তম যে ধার পরিশোধে উত্তম। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৯২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৫৯; আবু দাউদ, হা/৩৩৪৮; তিরমিযী, হা/১৩১৮; নাসাঈ, হা/৪৬১৭; ইবনে মাজাহ, হা/২২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭২২৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৫৩; মিশকাত, হা/২৯০৫।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا تَقَاضٰى رَسُوْلَ اللهِ فَأَغْلَظَ لَهٗ فَهَمَّ أَصْحَابُهٗ فَقَالَ دَعُوْهُ فَإِنَّ لِصَاحِبِ الْحَقِّ مَقَالًا وَاشْتَرُوْا لَهٗ بَعِيْرًا فَأَعْطُوْهُ إِيَّاهُ وَقَالُوْا لَا نَجِدُ إِلَّا أَفْضَلَ مِنْ سِنِّه قَالَ اشْتَرُوْهُ فَأَعْطُوْهُ إِيَّاهُ فَإِنَّ خَيْرَكُمْ أَحْسَنُكُمْ قَضَاءً
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে তার পাওনার কড়া তাগাদা করল। সাহাবীরা তাকে শায়েস্তা করতে উদ্যত হলে তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা পাওনাদারের কথা বলার অধিকার রয়েছে। তোমরা বরং একটি উট কিনে তাকে দিয়ে দাও। তাঁরা বললেন, আমরা তার উটের চেয়ে উত্তম বয়সের উট ব্যতীত উটের সন্ধান পাচ্ছি না। তিনি বললেন, সেটিই কিনে তাকে দিয়ে দাও। কারণ তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তি উত্তম যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৯০; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৯৪; তিরমিযী, হা/১৩১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮৮১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৫৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৫২; মিশকাত, হা/২৯০৬।]
সক্ষম ব্যক্তির পক্ষে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা যুলুমের অমত্মর্ভুক্ত :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ . أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ مَطْلُ الْغَنِىِّ ظُلْمٌ وَإِذَا أُتْبِعَ أَحَدُكُمْ عَلٰى مَلِىءٍ فَلْيَتْبَعْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সক্ষম ব্যক্তির ঋণ আদায়ে গড়িমসি করা অত্যাচারের শামিল। তোমাদের কারো প্রতি ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব দিলে সে যেন তা গ্রহণ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮৫; আবু দাউদ, হা/৩৩৪৭; নাসাঈ, হা/৪৬৯১; ইবনে মাজাহ, হা/২৪০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৩২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১৪; জামেউস সগীর, হা/১০৮১৫; মিশকাত, হা/২৯০৭।]
অক্ষম ব্যক্তিকে ঋণের বোঝা হালকা করে দেয়া উত্তম :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أَخْبَرَهٗ أَنَّهٗ تَقَاضَى ابْنَ أَبِيْ حَدْرَدٍ دَيْنًا لَهٗ عَلَيْهِ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ فِي الْمَسْجِدِ فَارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُهُمَا حَتّٰى سَمِعَهَا رَسُوْلُ اللهِ وَهُوَ فِيْ بَيْتِه فَخَرَجَ إِلَيْهِمَا رَسُوْلُ اللهِ حَتّٰى كَشَفَ سِجْفَ حُجْرَتِه وَنَادٰى يَا كَعْبُ بْنَ مَالِكٍ يَا كَعْبُ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَأَشَارَ بِيَدِه أَنْ ضَعِ الشَّطْرَ مِنْ دَيْنِكَ قَالَ كَعْبٌ قَدْ فَعَلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ قُمْ فَاقْضِه
কা‘ব ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময়ে মসজিদে নববীতে ইবনে আবী হাদরাদ (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা) এর নিকট পাওনার ব্যাপারে তাগিদ দিলেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে উভয়ের স্বর উচ্চ হয়ে গেল, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় ঘর থেকেই শুনতে পেলেন। অতঃপর তিনি ঘর থেকে বের হয়ে ডাকলেন, হে কা‘ব! তখন কা‘ব বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত। তিনি তাঁর হাতের ইশারায় বললেন, তোমার ঋণ অর্ধেক কমিয়ে দাও। তখন কা‘ব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কমিয়ে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ (অপর ব্যক্তিকে) বললেন- যাও, তুমি এখন (তার কাছে বাকিটা প্রদান করে) ঋণ পরিশোধ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৬৭; আবু দাউদ, হা/৩৫৯৭; নাসাঈ, হা/৫৪০৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৪২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭২২১; মিশকাত, হা/২৯০৮।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তির জানাযা আদায় করতেন না :
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ : كُنَّا جُلُوْسًا عِنْدَ النَّبِيِّ إِذْ أُتِيَ بِجَنَازَةٍ ، فَقَالُوْا : صَلِّ عَلَيْهَا ، فَقَالَ : هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ قَالُوْا : لَا قَالَ : فَهَلْ تَرَكَ شَيْئًا ؟ قَالُوْا : لَا فَصَلّٰى عَلَيْهِ ، ثُمَّ أُتِيَ بِجَنَازَةٍ أُخْرٰى ، فَقَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، صَلِّ عَلَيْهَا ، قَالَ : هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ قِيْلَ : نَعَمْ ، قَالَ : فَهَلْ تَرَكَ شَيْئًا ؟ قَالُوْا : ثَلَاثَةَ دَنَانِيْرَ ، فَصَلّٰى عَلَيْهَا ، ثُمَّ أُتِيَ بِالثَّالِثَةِ ، فَقَالُوْا : صَلِّ عَلَيْهَا قَالَ : هَلْ تَرَك شَيْئًا ؟ قَالُوْا : لَا ، قَالَ : فَهَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ قَالُوْا : ثَلَاثَةُ دَنَانِيْرَ ، قَالَ : صَلُّوْا عَلٰى صَاحِبِكُمْ قَالَ أَبُوْ قَتَادَةَ : صَلِّ عَلَيْهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَعَلَيَّ دَيْنُهٗ فَصَلّٰى عَلَيْهِ
সালামা ইবনে আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা নবী ﷺ এর নিকট বসেছিলাম, এমন সময় একটি মৃতদেহ আনা হলো। লোকেরা বলল, এর জানাযার নামায পড়ুন। তিনি বললেন, তার কি কোন ঋণ রয়েছে? তারা বলল, না। তিনি বললেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল, না। তখন তিনি তার জানাযা পড়লেন। তারপর আরেকটি মৃতদেহ আনা হলো। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এর জানাযার নামায পড়ুন। তিনি বললেন, তার কি কোন ঋণ রয়েছে? বলা হলো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল, তিনটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) রেখে গেছে। তখন তিনি তার (জানাযার) নামায পড়লেন। তারপর তৃতীয় একটি মৃতদেহ আনা হলো। লোকেরা বলল, এর জানাযার নামায পড়ুন। তিনি বললেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল না। তিনি বললেন, তার কি কোন ঋণ রয়েছে? তারা বলল, তিন দীনার ঋণ আছে। তিনি বললেন, তোমাদের এ সঙ্গীটির জানাযার নামায তোমরাই পড়ো। আবু কাতাদা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার দেনার দায় আমার উপর। তখন তিনি তার নামায পড়লেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৮৯; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৬১৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৫৩; মিশকাত, হা/২৯০৯।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُؤْتٰى بِالرَّجُلِ الْمُتَوَفّٰى عَلَيْهِ الدَّيْنُ فَيَسْأَلُ هَلْ تَرَكَ لِدَيْنِه فَضْلًا فَإِنْ حُدِّثَ أَنَّهٗ تَرَكَ لِدَيْنِه وَفَاءً صَلّٰى وَإِلَّا قَالَ لِلْمُسْلِمِيْنَ صَلُّوْا عَلٰى صَاحِبِكُمْ فَلَمَّا فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ الْفُتُوْحَ قَالَ أَنَا أَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ فَمَنْ تُوُفِّيَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فَتَرَكَ دَيْنًا فَعَلَيَّ قَضَاؤُهٗ وَمَنْ تَرَكَ مَالًا فَلِوَرَثَتِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কোন ঋণী ব্যক্তির লাশ আনা হলে প্রথমে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, সে ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত কিছু মালামাল রেখে গেছে কি? যদি বলা হতো, সে ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু রেখে গেছে, তাহলে তিনি তার জানাযার নামায পড়াতেন। তা না হলে বলতেন, তোমাদের সাথির জানাযার নামায তোমরাই পড়ো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁকে বিজয় দান করলেন তখন তিনি বললেন, মুমিনদের নিজেদের চাইতে আমিই তাদের অধিক নিকটবর্তী। অতএব মুমিনদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঋণ রেখে মারা যাবে তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। আর যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যাবে তা তার উত্তরাধিকারীদের। [সহীহ বুখারী, হা/২২৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২৪২; তিরমিযী, হা/১০৭০; নাসাঈ, হা/১৯৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৭২৭; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৫৪২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৪৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১৩; মিশকাত, হা/২৯১৩।]
উপরোল্লেখিত হাদীসগুলো দ্বারা ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা বিধানের ব্যবস্থা করা না হলে সমাজ-কল্যাণের একটি বৃহত্তম শাখার দ্বার বন্ধ হয়ে যাবে। কর্জে-হাসানা তথা সৌজন্যমূলক ঋণ সমাজ-কল্যাণের একটি বৃহত্তম শাখা, তাই ইসলামে এর অত্যাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এমনকি এর জন্য দানের চেয়ে অধিক সওয়াব রয়েছে। তাই তা পরিশোধের জন্য নবী ﷺ এতো অধিক গুরুত্ব দান করেছেন যে, ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা না করে এবং না রেখে মারা গেলেও ঐ ঋণ বাতিল সাব্যসত্ম হবে না; বরং রাষ্ট্রকে উক্ত ঋণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না :
عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ أَنَّهٗ سَمِعَهٗ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - - أَنَّهٗ قَامَ فِيْهِمْ فَذَكَرَ لَهُمْ أَنَّ الْجِهَادَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْإِيْمَانَ بِاللهِ أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ تُكَفَّرُ عَنِّىْ خَطَايَاىَ فَقَالَ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ - - نَعَمْ إِنْ قُتِلْتَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - كَيْفَ قُلْتَ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ أَتُكَفَّرُ عَنِّىْ خَطَايَاىَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - نَعَمْ وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ إِلَّا الدَّيْنَ فَإِنَّ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لِىْ ذٰلِكَ
আবু কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ) একদা তাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং তাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, আল্লাহর পথে জিহাদ এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনা হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই তাহলে কি আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন- হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে (শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায়) আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কী বললে? তখন সে ব্যক্তি (আবার) বলল, আপনি কি মনে করেন- আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই তাহলে কি আমার সকল গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হ্যাঁ, তুমি যদি ধৈর্যধারণকারী, সওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখী অবস্থায় নিহত হও, অবশ্য ঋণের কথা আলাদা। কেননা জিবরাঈল (আঃ) আমাকে এ কথা বলেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৯৮৮; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৯৮৬; তিরমিযী, হা/১৯১২; নাসাঈ, হা/৩১৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৫৯৫; মিশকাত, হা/৩৮০৫।]
শহীদদের ঋণও ক্ষমা করা হবে না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلَّا الدَّيْنَ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ঋণ ব্যতীত শহীদের সকল গুনাহই ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৯৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৫১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৫৫৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৫৯৩৬; জামেউস সগীর, হা/১৪০৭৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৩৫৫; মিশকাত, হা/২৯১২।]
মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কেবল ঋণের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِه حَتّٰى يُقْضٰى عَنْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি (মৃত্যুর পর তার মর্যাদালাভে) বাধা প্রাপ্ত হয়ে থাকে ঋণের দ্বারা- যতক্ষণ না তা তার পক্ষ হতে পরিশোধ করা হয়। [তিরমিযী, হা/১০৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০৬১; জামেউস সগীর, হা/১১৭২৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১১; মুসনাদে শাফেঈ, হা/১৬৮৯; মিশকাত, হা/২৯১৫।]
ঋণ থেকে মুক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে :
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ مَاتَ وَهُوَ بَرِىْءٌ مِنْ ثَلَاثٍ اَلْكِبْرِ وَالْغُلُوْلِ وَالدَّيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকার, খিয়ানত এবং ঋণ হতে মুক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [তিরমিযী, হা/১৫৭২; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৮৬৭২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২২১৮; মুসনাদে দারেমী, হা/২৬৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৩৫১; মিশকাত, হা/২৯২১।]
সক্ষম ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করলে তাকে শাসিত্ম দেয়া যাবে :
عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيْدِ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - - قَالَ لَىُّ الْوَاجِدِ يُحِلُّ عِرْضَهٗ وَعُقُوْبَتَهٗ قَالَ ابْنُ الْمُبَارَكِ يُحِلُّ عِرْضَهٗ يُغَلَّظُ لَهٗ وَعُقُوْبَتَهٗ يُحْبَسُ لَهٗ
আমর ইবনে শারীদ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, (&ঋণ পরিশোধে) সক্ষম ব্যক্তি টালবাহানা করলে তাকে লজ্জিত করা এবং শাসিত্ম প্রদান করা যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বলেছেন, লজ্জিত করা অর্থ, তার প্রতি কঠোর বাক্য প্রয়োগ করা; আর শাসিত্ম প্রদান করা অর্থ (আইনের মাধ্যমে) তাকে হাজতে রাখা। [আবু দাউদ, হা/৩৬৩০; নাসাঈ, হা/৪৬৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৪২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১৫; মিশকাত, হা/২৯১৯।]
ঋণ পরিশোধের সময় দু‘আ :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ رَبِيْعَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّه قَالَ : اِسْتَقْرَضَ مِنِّي النَّبِيُّ أَرْبَعِيْنَ أَلْفًا فَجَاءَهٗ مَالٌ فَدَفَعَهٗ إِلَيَّ وَقَالَ : بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ ، إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالْأَدَاءُ
আবদুল্লাহ ইবনে আবু রাবী‘আ (রহ.) তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী ﷺ (বাইতুল মালের প্রয়োজনে) আমার নিকট হতে ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। যখন (বাইতুল মালে) অর্থ সঞ্চয় হলো, তখন তিনি আমার প্রাপ্য পরিশোধ করলেন এবং আমার জন্য দু‘আ করলেন- আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ধনসম্পদ ও পরিবার-পরিজনের মধ্যে বরকত দান করুন। আর বললেন, ঋণ দেয়ার প্রতিদান ঋণদাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং ঋণ পরিশোধ করা। [নাসাঈ, হা/৪৬৮৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/১০৭৪৬; মিশকাত, হা/২৯২৬।]
মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে আগে তার ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক :
عَنْ سَعْدِ بْنِ الْأَطْوَلِ قَالَ : مَاتَ أَخِيْ وَتَرَكَ ثَلَاثَ مِئَةِ دِيْنَارٍ وَتَرَكَ وَلَدًا صِغَارًا فَأَرَدْتُ أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ ، فَقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ : إِنَّ أَخَاكَ مَحْبُوْسٌ بِدَيْنِه فَاذْهَبْ فَاقْضِ عَنْهُ قَالَ : فَذَهَبْتُ فَقَضَيْتُ عَنْهُ ثُمَّ جِئْتُ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ قَدْ قَضَيْتُ عَنْهُ وَلَمْ يَبْقَ إِلَّا امْرَأَةً تَدَّعِيْ دِيْنَارَيْنِ وَلَيْسَتْ لَهَا بَيِّنَةٌ قَالَ : أَعْطِهَا فَإِنَّهَا صَادِقَةٌ
সাদ ইবনে আতওয়াল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ভাই মৃত্যুবরণ করার সময় ৩০০ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) রেখে গেলেন এবং নাবালক সমত্মান রেখে গেলেন। আমার ইচ্ছা হলো যে, তার দীনারগুলো তার শিশুদের জন্য ব্যয় করব। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, তোমার ভাই ঋণের দায়ে আবদ্ধ রয়েছে। তার ঋণ পরিশোধ করো। তিনি (সাদ) বললেন, অতঃপর আমি ঋণ পরিশোধ করলাম এবং পুনরায় এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সব ঋণই পরিশোধ করেছি; কেবল একজন মহিলা অবশিষ্ট রয়েছে। সে দুই দীনার পাওয়ার দাবি করছে, কিন্তু তার কোন সাক্ষী নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাকেও দিয়ে দাও, সে সত্যবাদিনী। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৬৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৫১০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১০০৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৫৩৩৩; মিশকাত, হা/২৯২৮।]
ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে খুবই কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে :
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جَحْشٍ قَالَ : كُنَّا جُلُوْسًا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ فَرَفَعَ رَأْسَهٗ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ وَضَعَ رَاحَتَهٗ عَلٰى جَبْهَتِه ثُمَّ قَالَ : سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا نُزِّلَ مِنَ التَّشْدِيْدِ فَسَكَتْنَا وَفَزِعْنَا فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْغَدِ سَأَلْتُهٗ : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا هٰذَا التَّشْدِيْدُ الَّذِيْ نُزِّلَ؟ فَقَالَ : وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِه لَوْ أَنَّ رَجُلًا قُتِلَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتّٰى يُقْضٰى عَنْهُ دَيْنُهٗ
মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে জাহশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট মসজিদের সম্মুখস্থ খোলা জায়গায় বসা ছিলাম। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মাথা উঠালেন অতঃপর দৃষ্টিকে অবনত করে কপালের উপর হাত রাখলেন এবং বললেন, সুবহা-নাল্লাহ! কী কঠোরতা অবতীর্ণ হলো! বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এদিন চুপ রইলাম এবং ভয় পেলাম। পরবর্তী দিন ভোর হলে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি কঠোরতা অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, (ঋণ সম্পর্কে কঠোরতা অবতীর্ণ হয়েছে।) ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাসত্মায় শহীদ হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করে এবং আবার শহীদ হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করে, অতঃপর আবার শহীদ হয় এবং তার উপর ঋণ থাকে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হয়। [নাসাঈ, হা/৪৬৮৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৮২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২২১২; মিশকাত, হা/২৯২৯।]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ أُصِيْبَ رَجُلٌ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ - - فِىْ ثِمَارٍ ابْتَاعَهَا فَكَثُرَ دَيْنُهٗ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - تَصَدَّقُوْا عَلَيْهِ فَتَصَدَّقَ النَّاسُ عَلَيْهِ فَلَمْ يَبْلُغْ ذٰلِكَ وَفَاءَ دَيْنِه فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - لِغُرَمَائِه خُذُوْا مَا وَجَدْتُمْ وَلَيْسَ لَكُمْ إِلَّا ذٰلِكَ
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময়ে এক ব্যক্তির ক্রয় করা ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি অনেক ঋণী হয়ে পড়েন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা তাকে সাহায্য করো। লোকজন তাকে সাহায্য করল, কিন্তু প্রাপ্ত ঋণ পরিশোধের পরিমাণ হলো না। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তার পাওনাদারদের বললেন, যা তোমরা পেয়েছ তা গ্রহণ করো; এর অতিরিক্ত আর পাবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৬৪; আবু দাউদ, হা/৩৪৭১; তিরমিযী, হা/৬৫৫; নাসাঈ, হা/৪৫৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৫৬৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯৩৫; মিশকাত, হা/২৯০০।]
ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তিকে ক্ষমা করার উপকারিতা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : كَانَ الرَّجُلُ يُدَايِنُ النَّاسَ فَكَانَ يَقُوْلُ لِفَتَاهُ إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِرًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ لَعَلَّ اللهُ أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا قَالَ فَلَقِيَ اللهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, পূর্বের যুগে একজন লোক ছিল। সে মানুষকে ঋণ দিত এবং আপন কর্মচারীকে বলে দিত; যখন তুমি ঋণ আদায়ে (তাগাদার জন্য) কোন গরীবের নিকট যাবে, তখন তাকে মাফ করে দিবে। সম্ভবত (এর ফলে) আল্লাহও আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নবী ﷺ বলেন, অতঃপর লোকটি (মৃত্যুর পর) আল্লাহর দেখা পেল। তখন আল্লাহ তাকে মাফ করে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮১; নাসাঈ, হা/৪৬৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯০৫; জামেউস সগীর, হা/৮৫৮২; মিশকাত, হা/২৯০১।]
عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ طَلَبَ غَرِيْمًا لَهٗ فَتَوَارٰى عَنْهُ ثُمَّ وَجَدَهٗ فَقَالَ إِنِّىْ مُعْسِرٌ . فَقَالَ اللهِ قَالَ اللهِ قَالَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ مَنْ سَرَّهٗ أَنْ يُنْجِيَهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ أَوْ يَضَعْ عَنْهُ
আবদুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদা (রহ.) হতে বর্ণিত যে, আবু কাতাদা (রাঃ) একবার তার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারী একজনকে খোঁজ করেন। সে তার থেকে লুকিয়েছিল। পরে তিনি তাকে পেয়ে যান। তখন সে লোকটি বলল, আমি অভাবগ্রস্ত। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! সে বলল, আল্লাহর শপথ। তারপর তিনি বললেন, তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এটা চায় যে, আল্লাহ তাকে কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দান করুন, সে যেন ঋণগ্রস্ত অক্ষম লোকের সহজ ব্যবস্থা করে কিংবা ঋণ মওকূফ করে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৯৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯০৩; মিশকাত, হা/২৯০২।]
ঋণ পরিশোধ করার সময় উত্তম পন্থা অবলম্বন করা উচিত :
عَنْ أَبِىْ رَافِعٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - اسْتَسْلَفَ مِنْ رَجُلٍ بَكْرًا فَقَدِمَتْ عَلَيْهِ إِبِلٌ مِنْ إِبِلِ الصَّدَقَةِ فَأَمَرَ أَبَا رَافِعٍ أَنْ يَقْضِىَ الرَّجُلَ بَكْرَهٗ فَرَجَعَ إِلَيْهِ أَبُوْ رَافِعٍ فَقَالَ لَمْ أَجِدْ فِيْهَا إِلَّا خِيَارًا رَبَاعِيًا . فَقَالَ أَعْطِه إِيَّاهُ إِنَّ خِيَارَ النَّاسِ أَحْسَنُهُمْ قَضَاءً
আবু রাফি‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তির নিকট থেকে একটি উটের বাচ্চা ধার নেন। এরপর তাঁর নিকট সাদাকার উট আসে। তিনি আবু রাফি‘কে সে ব্যক্তির উটের ধার শোধ করার আদেশ করেন। আবু রাফি‘ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ফিরে এসে জানালেন যে, সাদাকার উটের মধ্যে আমি সেরূপ দেখছি না, তবে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট উট আছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ওটাই তাকে দাও। সে ব্যক্তিই উত্তম যে ধার পরিশোধে উত্তম। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৯২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৫৯; আবু দাউদ, হা/৩৩৪৮; তিরমিযী, হা/১৩১৮; নাসাঈ, হা/৪৬১৭; ইবনে মাজাহ, হা/২২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭২২৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৫৩; মিশকাত, হা/২৯০৫।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا تَقَاضٰى رَسُوْلَ اللهِ فَأَغْلَظَ لَهٗ فَهَمَّ أَصْحَابُهٗ فَقَالَ دَعُوْهُ فَإِنَّ لِصَاحِبِ الْحَقِّ مَقَالًا وَاشْتَرُوْا لَهٗ بَعِيْرًا فَأَعْطُوْهُ إِيَّاهُ وَقَالُوْا لَا نَجِدُ إِلَّا أَفْضَلَ مِنْ سِنِّه قَالَ اشْتَرُوْهُ فَأَعْطُوْهُ إِيَّاهُ فَإِنَّ خَيْرَكُمْ أَحْسَنُكُمْ قَضَاءً
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে তার পাওনার কড়া তাগাদা করল। সাহাবীরা তাকে শায়েস্তা করতে উদ্যত হলে তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা পাওনাদারের কথা বলার অধিকার রয়েছে। তোমরা বরং একটি উট কিনে তাকে দিয়ে দাও। তাঁরা বললেন, আমরা তার উটের চেয়ে উত্তম বয়সের উট ব্যতীত উটের সন্ধান পাচ্ছি না। তিনি বললেন, সেটিই কিনে তাকে দিয়ে দাও। কারণ তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তি উত্তম যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৯০; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৯৪; তিরমিযী, হা/১৩১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮৮১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৫৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৫২; মিশকাত, হা/২৯০৬।]
সক্ষম ব্যক্তির পক্ষে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা যুলুমের অমত্মর্ভুক্ত :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ . أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ مَطْلُ الْغَنِىِّ ظُلْمٌ وَإِذَا أُتْبِعَ أَحَدُكُمْ عَلٰى مَلِىءٍ فَلْيَتْبَعْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সক্ষম ব্যক্তির ঋণ আদায়ে গড়িমসি করা অত্যাচারের শামিল। তোমাদের কারো প্রতি ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব দিলে সে যেন তা গ্রহণ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৮৫; আবু দাউদ, হা/৩৩৪৭; নাসাঈ, হা/৪৬৯১; ইবনে মাজাহ, হা/২৪০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৩২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১৪; জামেউস সগীর, হা/১০৮১৫; মিশকাত, হা/২৯০৭।]
অক্ষম ব্যক্তিকে ঋণের বোঝা হালকা করে দেয়া উত্তম :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أَخْبَرَهٗ أَنَّهٗ تَقَاضَى ابْنَ أَبِيْ حَدْرَدٍ دَيْنًا لَهٗ عَلَيْهِ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ فِي الْمَسْجِدِ فَارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُهُمَا حَتّٰى سَمِعَهَا رَسُوْلُ اللهِ وَهُوَ فِيْ بَيْتِه فَخَرَجَ إِلَيْهِمَا رَسُوْلُ اللهِ حَتّٰى كَشَفَ سِجْفَ حُجْرَتِه وَنَادٰى يَا كَعْبُ بْنَ مَالِكٍ يَا كَعْبُ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَأَشَارَ بِيَدِه أَنْ ضَعِ الشَّطْرَ مِنْ دَيْنِكَ قَالَ كَعْبٌ قَدْ فَعَلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ قُمْ فَاقْضِه
কা‘ব ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময়ে মসজিদে নববীতে ইবনে আবী হাদরাদ (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা) এর নিকট পাওনার ব্যাপারে তাগিদ দিলেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে উভয়ের স্বর উচ্চ হয়ে গেল, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় ঘর থেকেই শুনতে পেলেন। অতঃপর তিনি ঘর থেকে বের হয়ে ডাকলেন, হে কা‘ব! তখন কা‘ব বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত। তিনি তাঁর হাতের ইশারায় বললেন, তোমার ঋণ অর্ধেক কমিয়ে দাও। তখন কা‘ব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কমিয়ে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ (অপর ব্যক্তিকে) বললেন- যাও, তুমি এখন (তার কাছে বাকিটা প্রদান করে) ঋণ পরিশোধ করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৪০৬৭; আবু দাউদ, হা/৩৫৯৭; নাসাঈ, হা/৫৪০৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৪২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭২২১; মিশকাত, হা/২৯০৮।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তির জানাযা আদায় করতেন না :
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ : كُنَّا جُلُوْسًا عِنْدَ النَّبِيِّ إِذْ أُتِيَ بِجَنَازَةٍ ، فَقَالُوْا : صَلِّ عَلَيْهَا ، فَقَالَ : هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ قَالُوْا : لَا قَالَ : فَهَلْ تَرَكَ شَيْئًا ؟ قَالُوْا : لَا فَصَلّٰى عَلَيْهِ ، ثُمَّ أُتِيَ بِجَنَازَةٍ أُخْرٰى ، فَقَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، صَلِّ عَلَيْهَا ، قَالَ : هَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ قِيْلَ : نَعَمْ ، قَالَ : فَهَلْ تَرَكَ شَيْئًا ؟ قَالُوْا : ثَلَاثَةَ دَنَانِيْرَ ، فَصَلّٰى عَلَيْهَا ، ثُمَّ أُتِيَ بِالثَّالِثَةِ ، فَقَالُوْا : صَلِّ عَلَيْهَا قَالَ : هَلْ تَرَك شَيْئًا ؟ قَالُوْا : لَا ، قَالَ : فَهَلْ عَلَيْهِ دَيْنٌ ؟ قَالُوْا : ثَلَاثَةُ دَنَانِيْرَ ، قَالَ : صَلُّوْا عَلٰى صَاحِبِكُمْ قَالَ أَبُوْ قَتَادَةَ : صَلِّ عَلَيْهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَعَلَيَّ دَيْنُهٗ فَصَلّٰى عَلَيْهِ
সালামা ইবনে আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা নবী ﷺ এর নিকট বসেছিলাম, এমন সময় একটি মৃতদেহ আনা হলো। লোকেরা বলল, এর জানাযার নামায পড়ুন। তিনি বললেন, তার কি কোন ঋণ রয়েছে? তারা বলল, না। তিনি বললেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল, না। তখন তিনি তার জানাযা পড়লেন। তারপর আরেকটি মৃতদেহ আনা হলো। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এর জানাযার নামায পড়ুন। তিনি বললেন, তার কি কোন ঋণ রয়েছে? বলা হলো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল, তিনটি দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) রেখে গেছে। তখন তিনি তার (জানাযার) নামায পড়লেন। তারপর তৃতীয় একটি মৃতদেহ আনা হলো। লোকেরা বলল, এর জানাযার নামায পড়ুন। তিনি বললেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল না। তিনি বললেন, তার কি কোন ঋণ রয়েছে? তারা বলল, তিন দীনার ঋণ আছে। তিনি বললেন, তোমাদের এ সঙ্গীটির জানাযার নামায তোমরাই পড়ো। আবু কাতাদা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার দেনার দায় আমার উপর। তখন তিনি তার নামায পড়লেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৮৯; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৬১৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১৫৩; মিশকাত, হা/২৯০৯।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُؤْتٰى بِالرَّجُلِ الْمُتَوَفّٰى عَلَيْهِ الدَّيْنُ فَيَسْأَلُ هَلْ تَرَكَ لِدَيْنِه فَضْلًا فَإِنْ حُدِّثَ أَنَّهٗ تَرَكَ لِدَيْنِه وَفَاءً صَلّٰى وَإِلَّا قَالَ لِلْمُسْلِمِيْنَ صَلُّوْا عَلٰى صَاحِبِكُمْ فَلَمَّا فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ الْفُتُوْحَ قَالَ أَنَا أَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ فَمَنْ تُوُفِّيَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فَتَرَكَ دَيْنًا فَعَلَيَّ قَضَاؤُهٗ وَمَنْ تَرَكَ مَالًا فَلِوَرَثَتِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কোন ঋণী ব্যক্তির লাশ আনা হলে প্রথমে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, সে ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত কিছু মালামাল রেখে গেছে কি? যদি বলা হতো, সে ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু রেখে গেছে, তাহলে তিনি তার জানাযার নামায পড়াতেন। তা না হলে বলতেন, তোমাদের সাথির জানাযার নামায তোমরাই পড়ো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁকে বিজয় দান করলেন তখন তিনি বললেন, মুমিনদের নিজেদের চাইতে আমিই তাদের অধিক নিকটবর্তী। অতএব মুমিনদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঋণ রেখে মারা যাবে তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। আর যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যাবে তা তার উত্তরাধিকারীদের। [সহীহ বুখারী, হা/২২৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪২৪২; তিরমিযী, হা/১০৭০; নাসাঈ, হা/১৯৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৭২৭; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৫৪২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৪৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১৩; মিশকাত, হা/২৯১৩।]
উপরোল্লেখিত হাদীসগুলো দ্বারা ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা বিধানের ব্যবস্থা করা না হলে সমাজ-কল্যাণের একটি বৃহত্তম শাখার দ্বার বন্ধ হয়ে যাবে। কর্জে-হাসানা তথা সৌজন্যমূলক ঋণ সমাজ-কল্যাণের একটি বৃহত্তম শাখা, তাই ইসলামে এর অত্যাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এমনকি এর জন্য দানের চেয়ে অধিক সওয়াব রয়েছে। তাই তা পরিশোধের জন্য নবী ﷺ এতো অধিক গুরুত্ব দান করেছেন যে, ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা না করে এবং না রেখে মারা গেলেও ঐ ঋণ বাতিল সাব্যসত্ম হবে না; বরং রাষ্ট্রকে উক্ত ঋণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ঋণগ্রসত্ম ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না :
عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ أَنَّهٗ سَمِعَهٗ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - - أَنَّهٗ قَامَ فِيْهِمْ فَذَكَرَ لَهُمْ أَنَّ الْجِهَادَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْإِيْمَانَ بِاللهِ أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ تُكَفَّرُ عَنِّىْ خَطَايَاىَ فَقَالَ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ - - نَعَمْ إِنْ قُتِلْتَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - كَيْفَ قُلْتَ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ أَتُكَفَّرُ عَنِّىْ خَطَايَاىَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - نَعَمْ وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ إِلَّا الدَّيْنَ فَإِنَّ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لِىْ ذٰلِكَ
আবু কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ) একদা তাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং তাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, আল্লাহর পথে জিহাদ এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনা হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই তাহলে কি আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন- হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে (শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায়) আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কী বললে? তখন সে ব্যক্তি (আবার) বলল, আপনি কি মনে করেন- আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই তাহলে কি আমার সকল গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হ্যাঁ, তুমি যদি ধৈর্যধারণকারী, সওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখী অবস্থায় নিহত হও, অবশ্য ঋণের কথা আলাদা। কেননা জিবরাঈল (আঃ) আমাকে এ কথা বলেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৯৮৮; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৯৮৬; তিরমিযী, হা/১৯১২; নাসাঈ, হা/৩১৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৫৯৫; মিশকাত, হা/৩৮০৫।]
শহীদদের ঋণও ক্ষমা করা হবে না :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلَّا الدَّيْنَ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ঋণ ব্যতীত শহীদের সকল গুনাহই ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৯৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৫১; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২৫৫৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৫৯৩৬; জামেউস সগীর, হা/১৪০৭৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৩৫৫; মিশকাত, হা/২৯১২।]
মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কেবল ঋণের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় :
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِه حَتّٰى يُقْضٰى عَنْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি (মৃত্যুর পর তার মর্যাদালাভে) বাধা প্রাপ্ত হয়ে থাকে ঋণের দ্বারা- যতক্ষণ না তা তার পক্ষ হতে পরিশোধ করা হয়। [তিরমিযী, হা/১০৭৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০৬১; জামেউস সগীর, হা/১১৭২৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১১; মুসনাদে শাফেঈ, হা/১৬৮৯; মিশকাত, হা/২৯১৫।]
ঋণ থেকে মুক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে :
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ مَاتَ وَهُوَ بَرِىْءٌ مِنْ ثَلَاثٍ اَلْكِبْرِ وَالْغُلُوْلِ وَالدَّيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকার, খিয়ানত এবং ঋণ হতে মুক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [তিরমিযী, হা/১৫৭২; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৮৬৭২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২২১৮; মুসনাদে দারেমী, হা/২৬৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৩৫১; মিশকাত, হা/২৯২১।]
সক্ষম ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করলে তাকে শাসিত্ম দেয়া যাবে :
عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيْدِ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - - قَالَ لَىُّ الْوَاجِدِ يُحِلُّ عِرْضَهٗ وَعُقُوْبَتَهٗ قَالَ ابْنُ الْمُبَارَكِ يُحِلُّ عِرْضَهٗ يُغَلَّظُ لَهٗ وَعُقُوْبَتَهٗ يُحْبَسُ لَهٗ
আমর ইবনে শারীদ (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, (&ঋণ পরিশোধে) সক্ষম ব্যক্তি টালবাহানা করলে তাকে লজ্জিত করা এবং শাসিত্ম প্রদান করা যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বলেছেন, লজ্জিত করা অর্থ, তার প্রতি কঠোর বাক্য প্রয়োগ করা; আর শাসিত্ম প্রদান করা অর্থ (আইনের মাধ্যমে) তাকে হাজতে রাখা। [আবু দাউদ, হা/৩৬৩০; নাসাঈ, হা/৪৬৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৪২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৯৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১৫; মিশকাত, হা/২৯১৯।]
ঋণ পরিশোধের সময় দু‘আ :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ رَبِيْعَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّه قَالَ : اِسْتَقْرَضَ مِنِّي النَّبِيُّ أَرْبَعِيْنَ أَلْفًا فَجَاءَهٗ مَالٌ فَدَفَعَهٗ إِلَيَّ وَقَالَ : بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ ، إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالْأَدَاءُ
আবদুল্লাহ ইবনে আবু রাবী‘আ (রহ.) তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী ﷺ (বাইতুল মালের প্রয়োজনে) আমার নিকট হতে ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। যখন (বাইতুল মালে) অর্থ সঞ্চয় হলো, তখন তিনি আমার প্রাপ্য পরিশোধ করলেন এবং আমার জন্য দু‘আ করলেন- আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ধনসম্পদ ও পরিবার-পরিজনের মধ্যে বরকত দান করুন। আর বললেন, ঋণ দেয়ার প্রতিদান ঋণদাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং ঋণ পরিশোধ করা। [নাসাঈ, হা/৪৬৮৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/১০৭৪৬; মিশকাত, হা/২৯২৬।]
মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে আগে তার ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক :
عَنْ سَعْدِ بْنِ الْأَطْوَلِ قَالَ : مَاتَ أَخِيْ وَتَرَكَ ثَلَاثَ مِئَةِ دِيْنَارٍ وَتَرَكَ وَلَدًا صِغَارًا فَأَرَدْتُ أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ ، فَقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ : إِنَّ أَخَاكَ مَحْبُوْسٌ بِدَيْنِه فَاذْهَبْ فَاقْضِ عَنْهُ قَالَ : فَذَهَبْتُ فَقَضَيْتُ عَنْهُ ثُمَّ جِئْتُ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ قَدْ قَضَيْتُ عَنْهُ وَلَمْ يَبْقَ إِلَّا امْرَأَةً تَدَّعِيْ دِيْنَارَيْنِ وَلَيْسَتْ لَهَا بَيِّنَةٌ قَالَ : أَعْطِهَا فَإِنَّهَا صَادِقَةٌ
সাদ ইবনে আতওয়াল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ভাই মৃত্যুবরণ করার সময় ৩০০ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) রেখে গেলেন এবং নাবালক সমত্মান রেখে গেলেন। আমার ইচ্ছা হলো যে, তার দীনারগুলো তার শিশুদের জন্য ব্যয় করব। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, তোমার ভাই ঋণের দায়ে আবদ্ধ রয়েছে। তার ঋণ পরিশোধ করো। তিনি (সাদ) বললেন, অতঃপর আমি ঋণ পরিশোধ করলাম এবং পুনরায় এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সব ঋণই পরিশোধ করেছি; কেবল একজন মহিলা অবশিষ্ট রয়েছে। সে দুই দীনার পাওয়ার দাবি করছে, কিন্তু তার কোন সাক্ষী নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তাকেও দিয়ে দাও, সে সত্যবাদিনী। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৬৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৫১০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১০০৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৫৩৩৩; মিশকাত, হা/২৯২৮।]
ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে খুবই কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে :
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جَحْشٍ قَالَ : كُنَّا جُلُوْسًا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ فَرَفَعَ رَأْسَهٗ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ وَضَعَ رَاحَتَهٗ عَلٰى جَبْهَتِه ثُمَّ قَالَ : سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا نُزِّلَ مِنَ التَّشْدِيْدِ فَسَكَتْنَا وَفَزِعْنَا فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْغَدِ سَأَلْتُهٗ : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا هٰذَا التَّشْدِيْدُ الَّذِيْ نُزِّلَ؟ فَقَالَ : وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِه لَوْ أَنَّ رَجُلًا قُتِلَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ ثُمَّ أُحْيِيَ ثُمَّ قُتِلَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتّٰى يُقْضٰى عَنْهُ دَيْنُهٗ
মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে জাহশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট মসজিদের সম্মুখস্থ খোলা জায়গায় বসা ছিলাম। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মাথা উঠালেন অতঃপর দৃষ্টিকে অবনত করে কপালের উপর হাত রাখলেন এবং বললেন, সুবহা-নাল্লাহ! কী কঠোরতা অবতীর্ণ হলো! বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এদিন চুপ রইলাম এবং ভয় পেলাম। পরবর্তী দিন ভোর হলে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি কঠোরতা অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বললেন, (ঋণ সম্পর্কে কঠোরতা অবতীর্ণ হয়েছে।) ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাসত্মায় শহীদ হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করে এবং আবার শহীদ হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করে, অতঃপর আবার শহীদ হয় এবং তার উপর ঋণ থাকে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হয়। [নাসাঈ, হা/৪৬৮৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৮২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/২২১২; মিশকাত, হা/২৯২৯।]
হারাম উপার্জন থেকে তওবা করা :
আমাদের উপার্জনের মধ্যে জেনে বা না জেনে অনেক সময় হারাম উপার্জন হয়ে থাকতে পারে। এমতাবস্থায় আমরা তওবা করার মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে পারি। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًاؕ عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো- একান্ত বিশুদ্ধ তওবা। তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকর্মসমূহের (গুনাহগুলো) মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। (সূরা তাহরীম- ৮)
হারাম উপার্জন করার জন্য অনুতপ্ত হওয়া :
তওবা করার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে অনুতপ্ত হওয়া। সুতরাং নিজের উপার্জনের মধ্যে হারাম কোন কিছু থাকলে তার জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং অনুশোচনা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السُوْٓءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِيْبٍ فَاُولٰٓئِكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا﴾
আল্লাহ কেবল তাদের তওবা-ই কবুল করেন, যারা অজ্ঞতাবশত পাপ করে ফেলে, অতঃপর তাড়াতাড়ি তওবা করে নেয়। আল্লাহ এসব লোকের তওবা কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১৭)
হারাম উপার্জন না করার দৃঢ় সিদ্ধামত্ম গ্রহণ করা :
কোন বিষয়ে তওবা করলে তা থেকে বিরত থাকা এবং বিরত থাকার উপর অটল থাকা আবশ্যক। সুতরাং কেউ যদি হারাম উপার্জন করে এবং এমতাবস্থায় তওবা করে তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না; বরং তাকে যে কোন ধরনের হারাম উপার্জন না করার দৃঢ় সিদ্ধামত্ম নিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْؕ وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلٰى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ﴾
মুমিন তো তারাই- যখনই তারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের জীবনের প্রতি অত্যাচার করে ফেলে, তখনই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের অপরাধসমূহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ব্যতীত কে আছে, যে অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা যা (পাপ) করেছে, তার উপর জেনে-শুনে অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৫)
হালাল উপার্জন ও হারাম উপার্জনকে পৃথক করা :
হালাল ও হারাম উপার্জনের ক্ষতি ও পরিণতি সম্পর্কে সবকিছু উপলব্ধি করার পর উভয়টিকে পৃথক করে ফেলতে হবে। কোনভাবেই হারাম উপার্জনের দিকে ঝুঁকা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ لَّا يَسْتَوِي الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
বলো, অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ করে। অতএব হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা! আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়েদা- ১০০)
অর্জিত হারাম উপার্জনসমূহ থেকে মুক্তি লাভ করা :
যেহেতু হারাম উপার্জন হচ্ছে অবৈধ সম্পদ। সুতরাং এগুলো নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করাও হারাম। কাজেই এগুলো নিজের কাছে জমা করে রাখার কোন সুযোগ নেই। বরং এর সবগুলো সম্ভব হলে প্রকৃত মালিককে দিয়ে দিতে হবে, নতুবা কোন সওয়াবের আশা না করে কেবল দায়মুক্তির উদ্দেশ্যে কোন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে ফেলতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِاٰخِذِيْهِ اِلَّاۤ اَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা বের করেছি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। আর তোমরা খারাপ জিনিস দান করার ইচ্ছা করো না। কেননা অন্ধ না হলে তোমরা নিজেরাই তো সেটা গ্রহণ করতে চাও না। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে দান করতে বলেছেন, যা থেকে দান করলে সওয়াবের আশা করা যায়। আর হারাম উপায়ে উপার্জিত সকল সম্পদ যেহেতু অপবিত্র, সুতরাং সেগুলো থেকে দান করলে কোন সওয়াবের আশা করা যায় না।
এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ كَانَتْ لَهٗ مَظْلَمَةٌ لِأَحَدٍ مِنْ عِرْضِه أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لَا يَكُوْنَ دِيْنَارٌ ، وَلَا دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهٗ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِه وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهٗ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِه فَحُمِلَ عَلَيْهِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কেউ তার ভাইয়ের মান-সম্মান অথবা অন্য কোন কিছুর উপর যুলুম করে থাকে, তাহলে সে যেন আজই তার থেকে দায়মুক্ত হয়ে নেয়, সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন টাকা-পয়সা কাজে আসবে না। সেদিন যদি তার নেক আমল থেকে থাকে, তাহলে যুলুম পরিমাণ অনুযায়ী নেক আমল থেকে কেটে নেয়া হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে, তাহলে মাযলুম ব্যক্তির গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৫৮০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৩৬১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৭৮০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৩৫; জামেউস সগীর, হা/১১৪৫৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২২২; মিশকাত, হা/৫১২৬।]
উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রে যদি সম্পদ খুবই সামান্য পরিমাণও হয়, তাহলেও উপরোক্ত পদ্ধতিতে দায়মুক্তি করে নেয়া আবশ্যক। কেননা হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِيْنِه فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ فَقَالَ لَهٗ رَجُلٌ وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيْرًا يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ وَإِنْ قَضِيْبًا مِنْ أَرَاكٍ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজ হাত দিয়ে কোন মুসলিমের হক খেয়ে ফেলে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং জান্নাত হারাম করে দেন। তখন একজন লোক তাকে জিজ্ঞেস করল, যদি তা সামান্য বসত্মু হয়? তিনি বললেন, যদিও তা আরাক গাছের ডাল পরিমাণও হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৭০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪০৯; নাসাঈ, হা/৫৪১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৯৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১২২৬; জামেউস সগীর, হা/১১০২১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৪১; মিশকাত, হা/৩৭৬০।]
বেশি বেশি ভালো কাজ করা :
বেশি বেশি ভালো কাজ করলে সওয়াবের পাল্লা ধীরে ধীরে ভারি হতে থাকে এবং পাপের পাল্লা হালকা হতে থাকে। এভাবে এক সময় ভালো কাজগুলো পাপের কাজগুলোকে মিটিয়ে দেয় এবং এক সময় সওয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকে। সুতরাং জীবনে উপার্জিত হারাম সম্পদের কথা ও পাপ কাজের কথা চিমত্মা করে বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। তাহলে হারাম উপার্জনের প্রভাব মিটে গিয়ে হালাল উপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়বে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ﴾
নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। (সূরা হুদ- ১১৪)
আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা :
যেহেতু হারাম উপার্জন করা একটি মারাত্মক ধরনের গুনাহ; সুতরাং এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কেননা কোন বান্দা অন্যায় করার পর তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْٓءًا اَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهٗ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ১১০)
আমাদের উপার্জনের মধ্যে জেনে বা না জেনে অনেক সময় হারাম উপার্জন হয়ে থাকতে পারে। এমতাবস্থায় আমরা তওবা করার মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে পারি। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْاۤ اِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًاؕ عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো- একান্ত বিশুদ্ধ তওবা। তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকর্মসমূহের (গুনাহগুলো) মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়ে গেছে। (সূরা তাহরীম- ৮)
হারাম উপার্জন করার জন্য অনুতপ্ত হওয়া :
তওবা করার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে অনুতপ্ত হওয়া। সুতরাং নিজের উপার্জনের মধ্যে হারাম কোন কিছু থাকলে তার জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং অনুশোচনা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السُوْٓءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِيْبٍ فَاُولٰٓئِكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْؕ وَكَانَ اللهُ عَلِيْمًا حَكِيْمًا﴾
আল্লাহ কেবল তাদের তওবা-ই কবুল করেন, যারা অজ্ঞতাবশত পাপ করে ফেলে, অতঃপর তাড়াতাড়ি তওবা করে নেয়। আল্লাহ এসব লোকের তওবা কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা- ১৭)
হারাম উপার্জন না করার দৃঢ় সিদ্ধামত্ম গ্রহণ করা :
কোন বিষয়ে তওবা করলে তা থেকে বিরত থাকা এবং বিরত থাকার উপর অটল থাকা আবশ্যক। সুতরাং কেউ যদি হারাম উপার্জন করে এবং এমতাবস্থায় তওবা করে তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না; বরং তাকে যে কোন ধরনের হারাম উপার্জন না করার দৃঢ় সিদ্ধামত্ম নিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْؕ وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلٰى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ﴾
মুমিন তো তারাই- যখনই তারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের জীবনের প্রতি অত্যাচার করে ফেলে, তখনই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের অপরাধসমূহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ব্যতীত কে আছে, যে অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা যা (পাপ) করেছে, তার উপর জেনে-শুনে অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৩৫)
হালাল উপার্জন ও হারাম উপার্জনকে পৃথক করা :
হালাল ও হারাম উপার্জনের ক্ষতি ও পরিণতি সম্পর্কে সবকিছু উপলব্ধি করার পর উভয়টিকে পৃথক করে ফেলতে হবে। কোনভাবেই হারাম উপার্জনের দিকে ঝুঁকা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ لَّا يَسْتَوِي الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
বলো, অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ করে। অতএব হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা! আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়েদা- ১০০)
অর্জিত হারাম উপার্জনসমূহ থেকে মুক্তি লাভ করা :
যেহেতু হারাম উপার্জন হচ্ছে অবৈধ সম্পদ। সুতরাং এগুলো নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করাও হারাম। কাজেই এগুলো নিজের কাছে জমা করে রাখার কোন সুযোগ নেই। বরং এর সবগুলো সম্ভব হলে প্রকৃত মালিককে দিয়ে দিতে হবে, নতুবা কোন সওয়াবের আশা না করে কেবল দায়মুক্তির উদ্দেশ্যে কোন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে ফেলতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِاٰخِذِيْهِ اِلَّاۤ اَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِؕ وَاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য যা বের করেছি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিসসমূহ দান করো। আর তোমরা খারাপ জিনিস দান করার ইচ্ছা করো না। কেননা অন্ধ না হলে তোমরা নিজেরাই তো সেটা গ্রহণ করতে চাও না। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ সম্পদশালী ও প্রশংসিত। (সূরা বাক্বারা- ২৬৭)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে দান করতে বলেছেন, যা থেকে দান করলে সওয়াবের আশা করা যায়। আর হারাম উপায়ে উপার্জিত সকল সম্পদ যেহেতু অপবিত্র, সুতরাং সেগুলো থেকে দান করলে কোন সওয়াবের আশা করা যায় না।
এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ كَانَتْ لَهٗ مَظْلَمَةٌ لِأَحَدٍ مِنْ عِرْضِه أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لَا يَكُوْنَ دِيْنَارٌ ، وَلَا دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهٗ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِه وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهٗ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِه فَحُمِلَ عَلَيْهِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কেউ তার ভাইয়ের মান-সম্মান অথবা অন্য কোন কিছুর উপর যুলুম করে থাকে, তাহলে সে যেন আজই তার থেকে দায়মুক্ত হয়ে নেয়, সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন টাকা-পয়সা কাজে আসবে না। সেদিন যদি তার নেক আমল থেকে থাকে, তাহলে যুলুম পরিমাণ অনুযায়ী নেক আমল থেকে কেটে নেয়া হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে, তাহলে মাযলুম ব্যক্তির গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৫৮০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৩৬১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৭৮০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৩৫; জামেউস সগীর, হা/১১৪৫৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২২২; মিশকাত, হা/৫১২৬।]
উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রে যদি সম্পদ খুবই সামান্য পরিমাণও হয়, তাহলেও উপরোক্ত পদ্ধতিতে দায়মুক্তি করে নেয়া আবশ্যক। কেননা হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِيْنِه فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ فَقَالَ لَهٗ رَجُلٌ وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيْرًا يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ وَإِنْ قَضِيْبًا مِنْ أَرَاكٍ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজ হাত দিয়ে কোন মুসলিমের হক খেয়ে ফেলে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং জান্নাত হারাম করে দেন। তখন একজন লোক তাকে জিজ্ঞেস করল, যদি তা সামান্য বসত্মু হয়? তিনি বললেন, যদিও তা আরাক গাছের ডাল পরিমাণও হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৭০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪০৯; নাসাঈ, হা/৫৪১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৯৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১২২৬; জামেউস সগীর, হা/১১০২১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৪১; মিশকাত, হা/৩৭৬০।]
বেশি বেশি ভালো কাজ করা :
বেশি বেশি ভালো কাজ করলে সওয়াবের পাল্লা ধীরে ধীরে ভারি হতে থাকে এবং পাপের পাল্লা হালকা হতে থাকে। এভাবে এক সময় ভালো কাজগুলো পাপের কাজগুলোকে মিটিয়ে দেয় এবং এক সময় সওয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকে। সুতরাং জীবনে উপার্জিত হারাম সম্পদের কথা ও পাপ কাজের কথা চিমত্মা করে বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। তাহলে হারাম উপার্জনের প্রভাব মিটে গিয়ে হালাল উপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়বে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ﴾
নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। (সূরা হুদ- ১১৪)
আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা :
যেহেতু হারাম উপার্জন করা একটি মারাত্মক ধরনের গুনাহ; সুতরাং এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কেননা কোন বান্দা অন্যায় করার পর তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْٓءًا اَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهٗ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا﴾
আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে। (সূরা নিসা- ১১০)
যেসকল খাদ্য ও পানীয় মুসলিমদের জন্য হালাল তা খাওয়া ও পান করার কিছু সুন্নত নিয়ম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নত অনুসরণের অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। নিম্নে এ সংক্রামত্ম কতিপয় আদব উল্লেখ করা হলো :
১. মেঝেতে দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া।
২. খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়া।
৩. হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া :
عَنْ عَلِيِّ بْنِ الْأَقْمَرِ سَمِعْتُ أَبَا جُحَيْفَةَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا اٰكُلُ مُتَّكِئًا
আলী ইবনে আবু আকমার (রহ.) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) আমি আবু জুহায়ফা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে খাই না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৮; আবু দাউদ, হা/৩৭৭১; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৭৬; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১১৪৩।]
হেলান দিয়ে খাওয়া অহংকারীদের আচরণ। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এটা পছন্দ করতেন না।
৪. খাওয়ার শুরুতে দু‘আ পড়া :
খাওয়ার শুরুতে বলবে, بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লা-হ) অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। আর শুরুতে বিসমিল্লাহ ভুলে গেলে বলবে, بِسْمِ اللهِ أَوَّلَه وَاٰخِرَه (বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহ) অর্থাৎ খাওয়ার শুরু ও শেষ আল্লাহর নামে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ - رَضِىَ اللهُ عَنْهَا - أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالٰى فَإِنْ نَسِىَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللهِ تَعَالٰى فِىْ أَوَّلِه فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللهِ أَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ খাওয়া শুরু করবে তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর যদি শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যায়, তবে ‘‘বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহ’’ পাঠ করবে। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬৯; তিরমিযী, হা/১৮৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২১৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭০৮৭; মিশকাত, হা/৪২০২]
৫. ডান হাতে খাওয়া :
عَنِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِيْنِه وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِيْنِه فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِه وَيَشْرَبُ بِشِمَالِه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় এবং যখন কেউ পান করে, তখন সে যেন ডান হাতে পান করে। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় এবং বাম হাতেই পান করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৪; আবু দাউদ, হা/৩৭৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৩৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২২৬; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৭১২।]
৬. নিজের সামনের দিক থেকে খাওয়া :
عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِىْ سَلَمَةَ قَالَ كُنْتُ فِىْ حَجْرِ رَسُوْلِ اللهِ - وَكَانَتْ يَدِىْ تَطِيْشُ فِى الصَّحْفَةِ فَقَالَ لِىْ يَا غُلَامُ سَمِّ اللهَ وَكُلْ بِيَمِيْنِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيْكَ
উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একজন বালক হিসেবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমার হাত খাওয়ার পাত্রের চতুর্দিকে পৌঁছত। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে বৎস! আল্লাহর নাম বলো ও ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হতে খাও। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হ/১৬৭০; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৮; আবু দাউদ, হা/৩৭৭৯; তিরমিযী, হা/১৮৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৭।]
৭. পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اَلْبَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ فَكُلُوْا مِنْ حَافَتَيْهِ وَلَا تَأْكُلُوْا مِنْ وَسَطِه
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, খাবারের বরকত তার মধ্যখানে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং তোমরা (প্লেটের) পার্শ্ব থেকে আহার (শুরু) করো এবং মধ্যস্থল থেকে আহার (শুরু) করো না। [তিরমিযী, হা/১৮০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২৪৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫০৬৪; মুসনাদে হুমাঈদী, হা/৫৫৭।]
৮. খাবারে অন্যকে শরীক করা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّهٗ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : طَعَامُ الْاِثْنَيْنِ كَافِي الثَّلَاثَةِ وَطَعَامُ الثَّلَاثَةِ كَافِي الْأَرْبَعَةِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৫৮; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮৮; তিরমিযী, হা/১৮২০; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩১৮।]
৯. খাবার অপছন্দনীয় হলে দোষ বর্ণনা না করা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ النَّبِيُّ طَعَامًا قَطُّ إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهٗ وَإِلَّا تَرَكَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কখনো খাদ্যের দোষ প্রকাশ করেননি। অবশ্য মনে চাইলে খেয়েছেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৬৩; সুনানুল বায়হাকী, হা/১৪৩৯৮।]
১০. খাওয়ার মাঝে মাঝে আল্লাহর প্রশংসা করা :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِنَّ اللهَ لَيَرْضٰى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الْأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهٗ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهٗ عَلَيْهَا
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর সমত্মুষ্ট হন, যে খাওয়া ও পান করার মাঝে মাঝে আল্লাহর প্রশংসা করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১০৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৯৮৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬৫; মিশকাত, হা/৪২০০।]
১১. পরিমিত খাওয়া :
عَنْ مَيْمُوْنَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : الْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مَعِيٍّ وَاحِدٍ، وَالْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ .
মায়মূনা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি এক নাড়িতে আহার করে। আর কাফের সাত নাড়িতে আহার করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৪৭; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৯৩; তিরমিযী, হা/১৮১৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭১৮।]
মুহাদ্দীসগণ বিভিন্নভাবে এ হাদীসের ব্যাখ্যা করেছেন। এর একটি অর্থ হচ্ছে, মুমিন ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ কম থাকে। এজন্য সে অল্প খেয়েও তৃপ্তি লাভ করে। আর কাফের ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ বেশি থাকে। এজন্য সে বেশি খেলেও তৃপ্ত হয় না। এর ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলে খায়। এজন্য তার খাবারে বরকত হয়। কিন্তু কাফের বিসমিল্লাহ বলে খায় না বিধায় তার খাবারে বরকত হয় না এবং শয়তান তার সাথে খায়। আর শয়তান তার সাথে আহার করে বিধায় তার বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়।
১২. পড়ে যাওয়া খাদ্য উঠিয়ে খাওয়া :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - كَانَ إِذَا أَكَلَ طَعَامًا لَعِقَ أَصَابِعَهُ الثَّلَاثَ وَقَالَ إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمِطْ عَنْهَا الْأَذٰى وَلْيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ وَأَمَرَنَا أَنْ نَسْلُتَ الصَّحْفَةَ وَقَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ لَا يَدْرِىْ فِىْ أَىِّ طَعَامِه يُبَارَكُ لَهٗ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খাবার খেতেন তখন তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, যখন তোমাদের কারো কোন লোকমা পড়ে যায় তখন সে যেন তা হতে ময়লা ফেলে দেয়; অতঃপর তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। (রাবী বলেন) আর তিনি আমাদেরকে পাত্র মুছে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমাদের কেউ এটা জানে না যে, খাবারের কোন্ অংশে তার জন্য বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪২৬; আবু দাউদ, হা/৩৮৪৭; তিরমিযী, হা/১৮০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১২১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭৩২।]
১৩. আঙ্গুল চেটে খাওয়া :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَامًا فَلَا يَمْسَحْ يَدَهٗ حَتّٰى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَهَا
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কিছু খায়, তখন সে যেন (আঙ্গুলী) চেটে খাওয়া অথবা অন্যের দ্বারা তা চাটিয়ে নেয়া পর্যন্ত হাত না মুছে ফেলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪২৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫১৭৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৫০১১।]
১৪. পানীয় দ্রব্যে ফুঁ না দেয়া ও গ্লাসের মধ্যে নিশ্বাস না ছাড়া :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَتَنَفَّسْ فِي الْإِنَاءِ وَإِذَا أَتَى الْخَلَاءَ فَلَا يَمَسَّ ذَكَرَهٗ بِيَمِيْنِه وَلَا يَتَمَسَّحْ بِيَمِيْنِه
আবদুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদা (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পান করবে, তখন সে যেন পাত্রের মধে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন তোমাদের কেউ বাথরুমে যাবে, তখন সে যেন ডান হাত দ্বারা লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং ইস্তেঞ্জা না করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৪৩৮; তিরমিযী, হা/১৮৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪২৭।]
১৫. পানীয়দ্রব্য তিন নিঃশ্বাসে পান করা :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِىَّ كَانَ إِذَا شَرِبَ تَنَفَّسَ ثَلَاثًا وَقَالَ هُوَ أَهْنَأُ وَأَمْرَأُ وَأَبْرَأُ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) নবী ﷺ যখন পান করতেন, তখন তিন নিঃশ্বাসে পান করতেন এবং বলতেন, এটা তৃপ্তিদায়ক, সহজ ও কল্যাণকর। [আবু দাউদ, হা/৩৭২৯; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/২২৩২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৫০৫৪।]
১৬. খাওয়ার পর দু‘আ পাঠ করা :
সাহল ইবনে মু‘আয (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি খাওয়া শেষ করে এই দু‘আটি পাঠ করে তবে তার আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ।
অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ পানাহার করালেন এবং আমার সামর্থ ও উপায় না থাকা সত্ত্বেও আমাকে তা রিযিক হিসেবে দান করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৪০২৫; তিরমিযী, হা/৩৪৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৭০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৪০৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৩।]
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দসত্মরখানা উঠাতেন, তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ ، وَلَا مُوَدَّعٍ ، وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হি কাছীরান ত্বায়্যিবান, মুবারাকান ফীহি, গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দা‘ইন ওয়ালা মুসতাগনান ‘আনহু রাববানা।
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি অধিক পবিত্র ও বরকতময়। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এ খাদ্য হতে নির্লিপ্ত হতে পারব না, তা কখনো বিদায় দিতে পারব না, আর তা হতে অমুখাপেক্ষীও হতে পারব না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৫৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৮৭০; বায়হাকী, হা/১৪৪৮; মিশকাত, হা/৪১৯৯।]
১৭. কেউ দাওয়াত খাওয়ালে তার জন্য দু‘আ করা :
মিকদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মজলিসে খাবার শেষ করে এ দু‘আটি পাঠ করলেন।
اَللّٰهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী ওয়াস্ক্বি মান সাক্বা-নী।
অর্থ : হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাল তুমি তাকে আহার করাও, যে আমাকে পান করাল তুমি তাকে পান করাও। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৮৬০। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‐ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْن ]
১. মেঝেতে দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া।
২. খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়া।
৩. হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া :
عَنْ عَلِيِّ بْنِ الْأَقْمَرِ سَمِعْتُ أَبَا جُحَيْفَةَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا اٰكُلُ مُتَّكِئًا
আলী ইবনে আবু আকমার (রহ.) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) আমি আবু জুহায়ফা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে খাই না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৮; আবু দাউদ, হা/৩৭৭১; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৭৬; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১১৪৩।]
হেলান দিয়ে খাওয়া অহংকারীদের আচরণ। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এটা পছন্দ করতেন না।
৪. খাওয়ার শুরুতে দু‘আ পড়া :
খাওয়ার শুরুতে বলবে, بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লা-হ) অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। আর শুরুতে বিসমিল্লাহ ভুলে গেলে বলবে, بِسْمِ اللهِ أَوَّلَه وَاٰخِرَه (বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহ) অর্থাৎ খাওয়ার শুরু ও শেষ আল্লাহর নামে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ - رَضِىَ اللهُ عَنْهَا - أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالٰى فَإِنْ نَسِىَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللهِ تَعَالٰى فِىْ أَوَّلِه فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللهِ أَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ খাওয়া শুরু করবে তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর যদি শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যায়, তবে ‘‘বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহ’’ পাঠ করবে। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬৯; তিরমিযী, হা/১৮৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২১৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭০৮৭; মিশকাত, হা/৪২০২]
৫. ডান হাতে খাওয়া :
عَنِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِيْنِه وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِيْنِه فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِه وَيَشْرَبُ بِشِمَالِه
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় এবং যখন কেউ পান করে, তখন সে যেন ডান হাতে পান করে। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় এবং বাম হাতেই পান করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৪; আবু দাউদ, হা/৩৭৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৩৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২২৬; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৭১২।]
৬. নিজের সামনের দিক থেকে খাওয়া :
عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِىْ سَلَمَةَ قَالَ كُنْتُ فِىْ حَجْرِ رَسُوْلِ اللهِ - وَكَانَتْ يَدِىْ تَطِيْشُ فِى الصَّحْفَةِ فَقَالَ لِىْ يَا غُلَامُ سَمِّ اللهَ وَكُلْ بِيَمِيْنِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيْكَ
উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একজন বালক হিসেবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমার হাত খাওয়ার পাত্রের চতুর্দিকে পৌঁছত। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে বৎস! আল্লাহর নাম বলো ও ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হতে খাও। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হ/১৬৭০; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৮; আবু দাউদ, হা/৩৭৭৯; তিরমিযী, হা/১৮৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৭।]
৭. পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اَلْبَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ فَكُلُوْا مِنْ حَافَتَيْهِ وَلَا تَأْكُلُوْا مِنْ وَسَطِه
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, খাবারের বরকত তার মধ্যখানে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং তোমরা (প্লেটের) পার্শ্ব থেকে আহার (শুরু) করো এবং মধ্যস্থল থেকে আহার (শুরু) করো না। [তিরমিযী, হা/১৮০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২৪৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫০৬৪; মুসনাদে হুমাঈদী, হা/৫৫৭।]
৮. খাবারে অন্যকে শরীক করা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّهٗ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : طَعَامُ الْاِثْنَيْنِ كَافِي الثَّلَاثَةِ وَطَعَامُ الثَّلَاثَةِ كَافِي الْأَرْبَعَةِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৫৮; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮৮; তিরমিযী, হা/১৮২০; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩১৮।]
৯. খাবার অপছন্দনীয় হলে দোষ বর্ণনা না করা :
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ النَّبِيُّ طَعَامًا قَطُّ إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهٗ وَإِلَّا تَرَكَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কখনো খাদ্যের দোষ প্রকাশ করেননি। অবশ্য মনে চাইলে খেয়েছেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৬৩; সুনানুল বায়হাকী, হা/১৪৩৯৮।]
১০. খাওয়ার মাঝে মাঝে আল্লাহর প্রশংসা করা :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِنَّ اللهَ لَيَرْضٰى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الْأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهٗ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهٗ عَلَيْهَا
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর সমত্মুষ্ট হন, যে খাওয়া ও পান করার মাঝে মাঝে আল্লাহর প্রশংসা করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১০৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৯৮৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬৫; মিশকাত, হা/৪২০০।]
১১. পরিমিত খাওয়া :
عَنْ مَيْمُوْنَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : الْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مَعِيٍّ وَاحِدٍ، وَالْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ .
মায়মূনা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি এক নাড়িতে আহার করে। আর কাফের সাত নাড়িতে আহার করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৪৭; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৯৩; তিরমিযী, হা/১৮১৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭১৮।]
মুহাদ্দীসগণ বিভিন্নভাবে এ হাদীসের ব্যাখ্যা করেছেন। এর একটি অর্থ হচ্ছে, মুমিন ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ কম থাকে। এজন্য সে অল্প খেয়েও তৃপ্তি লাভ করে। আর কাফের ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ বেশি থাকে। এজন্য সে বেশি খেলেও তৃপ্ত হয় না। এর ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলে খায়। এজন্য তার খাবারে বরকত হয়। কিন্তু কাফের বিসমিল্লাহ বলে খায় না বিধায় তার খাবারে বরকত হয় না এবং শয়তান তার সাথে খায়। আর শয়তান তার সাথে আহার করে বিধায় তার বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়।
১২. পড়ে যাওয়া খাদ্য উঠিয়ে খাওয়া :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - كَانَ إِذَا أَكَلَ طَعَامًا لَعِقَ أَصَابِعَهُ الثَّلَاثَ وَقَالَ إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمِطْ عَنْهَا الْأَذٰى وَلْيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ وَأَمَرَنَا أَنْ نَسْلُتَ الصَّحْفَةَ وَقَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ لَا يَدْرِىْ فِىْ أَىِّ طَعَامِه يُبَارَكُ لَهٗ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খাবার খেতেন তখন তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, যখন তোমাদের কারো কোন লোকমা পড়ে যায় তখন সে যেন তা হতে ময়লা ফেলে দেয়; অতঃপর তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। (রাবী বলেন) আর তিনি আমাদেরকে পাত্র মুছে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমাদের কেউ এটা জানে না যে, খাবারের কোন্ অংশে তার জন্য বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪২৬; আবু দাউদ, হা/৩৮৪৭; তিরমিযী, হা/১৮০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১২১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৭৩২।]
১৩. আঙ্গুল চেটে খাওয়া :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَامًا فَلَا يَمْسَحْ يَدَهٗ حَتّٰى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَهَا
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কিছু খায়, তখন সে যেন (আঙ্গুলী) চেটে খাওয়া অথবা অন্যের দ্বারা তা চাটিয়ে নেয়া পর্যন্ত হাত না মুছে ফেলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪২৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫১৭৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৫০১১।]
১৪. পানীয় দ্রব্যে ফুঁ না দেয়া ও গ্লাসের মধ্যে নিশ্বাস না ছাড়া :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَتَنَفَّسْ فِي الْإِنَاءِ وَإِذَا أَتَى الْخَلَاءَ فَلَا يَمَسَّ ذَكَرَهٗ بِيَمِيْنِه وَلَا يَتَمَسَّحْ بِيَمِيْنِه
আবদুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদা (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পান করবে, তখন সে যেন পাত্রের মধে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন তোমাদের কেউ বাথরুমে যাবে, তখন সে যেন ডান হাত দ্বারা লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং ইস্তেঞ্জা না করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৪৩৮; তিরমিযী, হা/১৮৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪২৭।]
১৫. পানীয়দ্রব্য তিন নিঃশ্বাসে পান করা :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِىَّ كَانَ إِذَا شَرِبَ تَنَفَّسَ ثَلَاثًا وَقَالَ هُوَ أَهْنَأُ وَأَمْرَأُ وَأَبْرَأُ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেন) নবী ﷺ যখন পান করতেন, তখন তিন নিঃশ্বাসে পান করতেন এবং বলতেন, এটা তৃপ্তিদায়ক, সহজ ও কল্যাণকর। [আবু দাউদ, হা/৩৭২৯; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/২২৩২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৫০৫৪।]
১৬. খাওয়ার পর দু‘আ পাঠ করা :
সাহল ইবনে মু‘আয (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি খাওয়া শেষ করে এই দু‘আটি পাঠ করে তবে তার আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ।
অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ পানাহার করালেন এবং আমার সামর্থ ও উপায় না থাকা সত্ত্বেও আমাকে তা রিযিক হিসেবে দান করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৪০২৫; তিরমিযী, হা/৩৪৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৭০; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৪০৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৩।]
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দসত্মরখানা উঠাতেন, তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ ، وَلَا مُوَدَّعٍ ، وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হি কাছীরান ত্বায়্যিবান, মুবারাকান ফীহি, গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দা‘ইন ওয়ালা মুসতাগনান ‘আনহু রাববানা।
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি অধিক পবিত্র ও বরকতময়। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এ খাদ্য হতে নির্লিপ্ত হতে পারব না, তা কখনো বিদায় দিতে পারব না, আর তা হতে অমুখাপেক্ষীও হতে পারব না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৫৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৮৭০; বায়হাকী, হা/১৪৪৮; মিশকাত, হা/৪১৯৯।]
১৭. কেউ দাওয়াত খাওয়ালে তার জন্য দু‘আ করা :
মিকদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মজলিসে খাবার শেষ করে এ দু‘আটি পাঠ করলেন।
اَللّٰهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী ওয়াস্ক্বি মান সাক্বা-নী।
অর্থ : হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাল তুমি তাকে আহার করাও, যে আমাকে পান করাল তুমি তাকে পান করাও। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৮৬০। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‐ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْن ]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন