hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হালাল রিযিকের সন্ধানে

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৮৬
ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে না
১. একটি শর্তের উপর আরেকটি শর্ত করা যাবে না :

ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি শর্তের উপর আরেকটি শর্ত প্রয়োগ করা নিষিদ্ধ। কেননা এ ধরনের ব্যবসা পাতানোর অমত্মর্ভুক্ত হয় এবং এতে ক্রেতা-বিক্রেতার সমত্মুষ্টির অনুপস্থিতি থাকে। হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلَ اللهِ لَا تَحِلُّ صَفْقَتَانِ فِيْ صَفْقَةٍ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একটি শর্তের উপর আরেকটি শর্ত করা বৈধ নয়। [মু‘জামুল আওসাত, হা/১৬১০।]

এ হাদীসের স্বরূপ এমন যে, বিক্রেতা বলল, আমি তোমার নিকট এটি একশত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছি; তবে শর্ত হলো, আমার নিকট তোমার অমুক পণ্যটি এত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে।

২. বাজারে আগত পণ্য বাজারে পৌঁছার পূর্বে ক্রয় করা যাবে না :

বাজারে সব সময় মূল্য উঠা-নামা করে থাকে। সুতরাং কোন বিক্রেতা বাজারে না পৌঁছা পর্যমত্ম কোন পণ্যের মূল্য সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে পারে না। এমতাবস্থায় যদি কোন বিক্রেতা কোন পণ্য নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়, তাহলে তার বাজারে পৌঁছার পূর্বে রাসত্মায় গিয়ে তা ক্রয় করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এর মাধ্যমে বিক্রেতার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا يَبِيْعُ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَيْعِ بَعْضٍ وَلَا تَلَقَّوُا السِّلَعَ حَتّٰى يُهْبَطَ بِهَا إِلَى السُّوْقِ

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একজনের বিক্রি করার সময় আরেকজন সেই জিনিস বিক্রি করতে যেয়ো না এবং হাটে না আসা পর্যন্ত আগে গিয়ে (বহিরাগত) কোন দ্রব্য খরিদ করতে যেয়ো না। [সহীহ বুখারী, হা/২১৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৪; আবু দাউদ, হা/৩৪৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৩৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৯৪২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২৩১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৭১; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৪৭; মিশকাত, হা/২৮৪৯।]

হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَلَقَّوُا الرُّكْبَانَ ، وَلَا يَبِيْعُ بَعْضُكُمْ عَلٰى بَيْعِ بَعْضٍ وَلَا تَنَاجَشُوْا وَلَا يَبِيْعُ حَاضِرٌ لِبَادٍ وَلَا تُصَرُّوا الْغَنَمَ وَمَنِ ابْتَاعَهَا فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ بَعْدَ أَنْ يَحْتَلِبَهَا إِنْ رَضِيَهَا أَمْسَكَهَا وَإِنْ سَخِطَهَا رَدَّهَا وَصَاعًا مِنْ تَمْرٍ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

১. (কমমূল্যে খরিদের উদ্দেশ্যে) বণিক দলের সাথে আগেই যেয়ে দেখা করো না।

২. একজনের দরদামের উপর আরেকজন দরদাম করো না।

৩. ক্রয়ের নিয়ত না থাকলে প্রতারণা করে মূল্য বৃদ্ধি করো না।

৪. শহরবাসী গ্রামবাসীর দ্রব্য-সামগ্রী বিক্রি করো না। [তবে ব্যবসায়ীগণ যদি গ্রাম থেকে আগত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে না ঠকিয়ে বাজারে প্রচলিত মূল্য অনুযায়ী দ্রব্য-সামগ্রী ক্রয় করে নেয় তাহলে সেটা বৈধ হবে।]

৫. আর বকরির দুধ দোহন না করে (দুধ আটকিয়ে) বিক্রি করো না। কেউ এ ধরনের বকরি ক্রয় করলে তার জন্য দু’টি ভালো সুযোগ রয়েছে। দোহনের পর সন্তুষ্ট হলে রেখে দেবে আর অসন্তুষ্ট হলে তা এক সা‘ খেজুরসহ ফিরিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৫০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/৩৪৪৫; নাসাঈ, হা/৪৪৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৬৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৬; মিশকাত, হা/২৮৪৭।]

আর যারা এরূপ করবে তাদের ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : لَا تَلَقَّوُا الْجَلَبَ فَمَنْ تَلَقَّاهُ فَاشْتَرٰى مِنْهُ فَإِذَا أَتٰى سَيِّدُهُ السُّوْقَ فَهُوَ بِالْخِيَارِ

ইবনে সিরীন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা এগিয়ে গিয়ে পণ্যবাহী কাফেলার সাথে মিলিত হয়ো না। যদি কেউ এরূপ করে এবং তার থেকে কোন বসত্মু ক্রয় করে নেয় তবে বিক্রেতা বাজারে পৌঁছার পর বিক্রয় বহাল রাখা বা বাতিল করার ব্যাপারে ইখতিয়ার পাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৮; নাসাঈ, হা/৪৫০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩২৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৭৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৫৩; সুনানে দারেমী, হা/২৫৬৬; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩১৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৫; মিশকাত, হা/২৮৪৮।]

৩. মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য গুদামজাত করা যাবে না :

বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য না হলে পণ্যের ভারসাম্য ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে পণ্য গুদামজাত করা বৈধ। কেননা এতে জনগণের কোন ক্ষতি সাধন হয় না। কিন্তু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য গুদামজাত করে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। হাদীসে এ ধরনের গুদামজাত করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞারোপ করা হয়েছে। যেমন-

عَنْ مَعْمَرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ

মা‘মার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে, সে গুনাহগার হিসেবে সাব্যসত্ম হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪২০৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১৪৭৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৫২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৪৫৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২১২৭; মিশকাত, হা/২৮৯২।]

৪. পণ্য হাতে না আসার পূর্বে বিক্রয় করা যাবে না :

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ مَنِ اشْتَرٰى طَعَامًا فَلَا يَبِعْهُ حَتّٰى يَسْتَوْفِيَه وَيَقْبِضَه

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করেছে সে যেন তা গ্রহণ ও তার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পূর্বে বিক্রয় না করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯২১; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৩১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২১৭৪৪।]

৫. গাছে থাকা অপরিপক্ব ফল বা শস্য বিক্রয় করা যাবে না :

রাসূলুল্লাহ ﷺ গাছে থাকা অপরিপক্ব ফল বা ফসল পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। কেননা এতে ক্রেতার লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَهٰى عَنْ بَيْعِ الثِّمَارِ حَتّٰى يَبْدُوَ صَلَاحُهَا نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُبْتَاعَ

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ খাওয়ার উপযোগী হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর এটা তিনি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২১৯৪; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৪১; আবু দাউদ, হা/৩৩৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/২২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৯১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৭০১; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১৯৪০; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫৭৯৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৮৯৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৪৩৩; সুনানে দারেমী, হা/২৫৫৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/২০৭৭; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩৬২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৪৩১৫; মুসনাদে শাফেঈ, হা/৫০৬; মিশকাত, হা/২৮৩৯।]

অপর হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - نَهٰى عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتّٰى يَزْهُوَ وَعَنِ السُّنْبُلِ حَتّٰى يَبْيَضَّ وَيَأْمَنَ الْعَاهَةَ نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُشْتَرِىَ

ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ পাকার আগে খেজুর বিক্রি করতে এবং সাদা হওয়ার আগে অথবা দুর্যোগমুক্ত হওয়ার পূর্বে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি এ বিষয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯৪৩; আবু দাউদ, হা/৩৩৭০; তিরমিযী, হা/১২২৭; নাসাঈ, হা/৪৫৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৪৯৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৮১৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৯২০; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪০৭৬; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১৩৬৩; মিশকাত, হা/২৮৩৯।]

অতএব ধান, গম, খেজুর, আম, লিচু ইত্যাদি ফল-ফলাদি পরিপক্ব হওয়ার পূর্বেই অথবা ফুল অবস্থাতেই গোটা বাগান বিক্রি করা বৈধ নয়। কারণ তাতে ক্রেতা অথবা বিক্রেতা কারো না কারো ধোঁকায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।

৬. অপরের দরদামের উপর দরদাম করা যাবে না :

যখন ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে দরদাম চলতে থাকে, এমতাবস্থায় তৃতীয় কেউ এসে বিক্রেতার কাছে উপস্থিত হয়ে দাম করবে না। হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ : لَا يَبِعِ الرَّجُلُ عَلٰى بَيْعِ أَخِيْهِ وَلَا يَخْطُبْ عَلٰى خِطْبَةِ أَخِيْهِ إِلَّاأَنْ يَأْذَنَ لَه

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কোন মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের উপর দাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয় তার অনুমতি ছাড়া। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭২২; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১৭৯২৮; মিশকাত, হা/২৮৫০।]

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ لَا يَسُمِ الْمُسْلِمُ عَلٰى سَوْمِ أَخِيْهِ وَلَا يَخْطُبْ عَلٰى خِطْبَتِه

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যেন তার মুসলিম ভাইয়ের দরদামের উপর দরদাম না করে এবং তার বিবাহের প্রসত্মাবের উপর প্রসত্মাব না দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৫২৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৫১৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১১২১৪।]

৭. অনুমানভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না :

অনুমানের উপর নির্ভর করে ক্রয়-বিক্রয় করলে ক্রেতা বা বিক্রেতা যে কোন এক পক্ষের ক্ষতিগ্রসত্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ অনুমানের উপর ভিত্তি করে অথবা পণ্য সত্মূপ আকারে রেখে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - - عَنْ بَيْعِ الصُّبْرَةِ مِنَ التَّمْرِ لَا يُعْلَمُ مَكِيْلَتُهَا بِالْكَيْلِ الْمُسَمّٰى مِنَ التَّمْرِ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ খেজুর মাপার জন্য প্রচলিত পরিমাপক দ্বারা না মেপে সত্মূপ আকারে খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৯২৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০২৬; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬০৯৩; মিশকাত, হা/২৮১৬।]

৮. নিষিদ্ধ সময়ে ব্যবসা করা যাবে না :

নিষিদ্ধ সময় বলতে জুমু‘আর দিন খুতবার আযান দেয়ার পর থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যমত্ম সময়কে বুঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এ সময়টিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,

﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَؕ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ﴾

হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিন যখন নামাযের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম- যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা জুমু‘আ- ৯)

তবে অন্যান্য নামাযের সময়ও ব্যবসায়িক কাজে ব্যসত্ম থাকা উচিত নয়। নামাযের ব্যাপারে এ ধরনের আচরণ করাটা আল্লাহর উপর ব্যবসাকে প্রাধান্য দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়, যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلَاةِ وَاِيْتَآءِ الزَّكَاةِۚ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ﴾

সেসব ঘরসমূহের মধ্যে আললাহর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করতে, তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা (সাহাবীরা) এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর- ৩৬, ৩৭)

৯. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা যাবে না :

যদি বিক্রেতা মিথ্যা কসম করে, তাহলে ক্রেতা সেটা সহজেই বিশ্বাস করে নেয়। এতে ক্রেতা ধোঁকা খায়। ইসলামে এটা হারাম। হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ الْأَنْصَارِىِّ أَنَّهٗ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِى الْبَيْعِ فَإِنَّهٗ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ

আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা ব্যবসার মধ্যে অধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাকো। কেননা সেটা পণ্য বিক্রয়ে সহায়তা করে, কিন্তু বরকত বিনষ্ট করে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪২১০; নাসাঈ, হা/৪৪৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৫৯৭; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৪৪৮; বায়হাকী, হা/১০১৯০; জামেউস সগীর, হা/৪৪৫০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৬৩৪; মিশকাত, হা/২৭৯৩।]

عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ قَالَ فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ - - ثَلَاثَ مِرَارٍ . قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ خَابُوْا وَخَسِرُوْا مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهٗ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ

আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কথাটি তিনবার বললেন। তখন আবু যর (রাঃ) বলে উঠলেন, তারা তো ধ্বংস হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর রাসূল! এরা কারা? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে, কোন কিছু দান করে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩০৬; আবু দাউদ, হা/৪০৮৯; তিরমিযী, হা/১২১১; নাসাঈ, হা/২৫৬৩; ইবনে মাজাহ, হা/২২০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪৭৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪০২৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭১৪; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৯২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩১৭০; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/৪৬৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৭১২৩; জামেউস সগীর, হা/৫৩৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০৩৪; মিশকাত, হা/২৭৯৫।]

১০. দালালী করা যাবে না :

অনেক বিক্রেতা তার পক্ষে কিছু লোক রাখে, যারা ভুয়া ক্রেতা সেজে মূল্য বলে থাকে- যাতে করে তারা প্রকৃত ক্রেতাকে প্রতারিত করে পণ্যটির ন্যায্য মূল্য থেকে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারে। বর্তমানে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রায়ই এ ধরনের পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। অথচ এটাকে সরাসরি হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : نَهَى النَّبِيُّ عَنِ النَّجْشِ .‏

ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতারণামূলক মূল্য বৃদ্ধি করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/২১৪২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৭; সহীহ মুসলিম, হা/৩৮৯৩; নাসাঈ, হা/৪৪৯৭; ইবনে মাজাহ, হা/২১৭৩।]

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ - - لَا تَنَاجَشُوْا

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা পরস্পর প্রতারণামূলক দালালী করো না। [আবু দাউদ, হা/৩৪৪০।]

১১. অবৈধ কাজে সহযোগিতা করার জন্য ব্যবসা করা যাবে না :

যেসব ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ কাজসমূহে সহযোগিতা করা হয় সেসব ব্যবসা করা যাবে না। যেমন- চুরির মাল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা, অবৈধ সার্টিফিকেট তৈরির ব্যবসা ইত্যাদি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾

তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। (সূরা মায়েদা- ২)

১২. ব্যবসার মধ্যে শিরক ও বিদআত অবলম্বন করা যাবে না :

বর্তমানে ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের শিরক ও বিদআতের প্রচলন রয়েছে, যেগুলো অবলম্বন করা বড় ধরনের গুনাহের কাজ। যেমন- এ কথা বলা যে, সকাল বেলা বাকি দিলে অমঙ্গল হয়, অমুক মাযারে দান না করলে ব্যবসায় লোকসান হবে; অমুক পীরের দু‘আর কারণে আমার ব্যবসার উন্নতি হয়েছে, আমি নিজ ক্ষমতা বলেই ব্যবসায় উন্নতি সাধন করতে পেরেছি ইত্যাদি অথবা এ ধরনের কাজ করা যে, ব্যবসার উন্নতির জন্য কোন মহান ব্যক্তির ছবি বা মূর্তি কর্মস্থলে রেখে দেয়া, ব্যবসার উন্নতির জন্য ব্যবসার স্থলে তাবিজ ঝুলানো ইত্যাদি।

১৩. মাপে কম দেয়া যাবে না :

মাপে কম দেয়া একটি মারাত্মক অপরাধ। পূর্ববর্তী যুগে আইকাহ ও মাদইয়ান শহরের লোকেরা এ অন্যায়মূলক কাজে ব্যাপকভাবে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তখন তাদের নবী ছিলেন শু‘আইব (আঃ)। তিনি তাদেরকে সতর্ক করে দেয়ার পরও তারা তাদের এহেন অসৎ কর্ম চালিয়ে যেতে থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেন। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে তাদের ঘটনা বিসত্মারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। [সূরা আরাফের ৮৫-৯৩ নং আয়াত; সূরা হুদের ৮৪-৯৫ নং আয়াত; সূরা শু‘আরার ১৭৬-১৯০ নং আয়াত।] তাছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা বারবার এ বিষয়ে উম্মতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং সঠিকভাবে মাপ দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। তিনি বলেন,

﴿وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ﴾

সঠিক পরিমাণে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। (সূরা শু‘আরা- ১৮২)

﴿وَاَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ بِالْقِسْطِ﴾

ন্যায্যভাবে পরিমাণ ও ওজন করো। (সূরা আন‘আম- ১৫২)

﴿وَاَوْفُوا الْكَيْلَ اِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَأْوِيْلًا﴾

মেপে দেয়ার সময় পূর্ণভাবে মেপে দেবে এবং সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৫)

অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ اَلَّذِيْنَ اِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ وَاِذَا كَالُوْهُمْ اَوْ وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ اَلَا يَظُنُّ اُولٰٓئِكَ اَنَّهُمْ مَّبْعُوْثُوْنَ لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾

মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা ওজনে কম দেয়। যারা লোকের নিকট হতে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মাপ অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে মহান দিবসে, যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে? (সূরা মুতাফফিফীন, ১-৬)

﴿وَاَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ﴾

ওজনের ক্ষেত্রে ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠা করো এবং মাপে কম দিয়ো না।

(সূরা আর রহমান- ৯)

আল্লাহ তা‘আলার এমন নিষেধাজ্ঞা বাণীর পরও যারা এসব কর্মে লিপ্ত হবে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে দুর্যোগ নেমে আসবে। যেমন- হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِي اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : خَمْسٌ بِخَمْسٍ، قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا خَمْسٌ بِخَمْسٍ؟ قَالَ : مَا نَقَضَ قَوْمٌ الْعَهْدَ إِلَّا سُلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوُّهُمْ، وَمَا حَكَمُوْا بِغَيْرِ مَا أَنْزَلَ اللهُ إِلَّا فَشَا فِيْهِمُ الْفَقْرُ، وَلَا ظَهَرَتْ فِيْهِمُ الْفَاحِشَةُ إِلَّا فَشَا فِيْهِمُ الْمَوْتُ، وَلَا طفَّفُوْا الْمِكْيَالَ إِلَّا مُنِعُوا النَّبَاتَ وَأُخِذُوْا بِالسِّنِيْنَ، وَلَا مَنَعُوا الزَّكَاةَ إِلَّا حُبِسَ عَنْهُمُ الْقَطْرُ

ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পাঁচটি বিষয় পাঁচটি বিষয়ের কারণে হয়ে থাকে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ পাঁচটি বিষয় কোন্ পাঁচটি বিষয়ের কারণে হয়ে থাকে? তিনি বললেন, সেগুলো হলো-

(১) কোন সম্প্রদায় চুক্তি ভঙ্গ করলে তাদের শত্রুদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করা হয়।

(২) কোন সম্প্রদায় আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা না করলে তাদের মধ্যে দারিদ্রতা বিসত্মার লাভ করে।

(৩) কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতার বিসত্মার ঘটলে তাদের মধ্যে মৃত্যু অর্থাৎ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে।

(৪) কোন সম্প্রদায় মাপে বা ওজনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তাদেরকে দুর্ভিক্ষ গ্রাস করে।

(৫) কোন সম্প্রদায় যাকাত দেয়া বন্ধ করে দিলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয়। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০৮৩০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৬২৬; জামেউস সগীর, হা/৫৫৫১।]

অতএব ব্যবসায়িক মাল-সামগ্রী ওজন করে দেয়ার সময় কোন ক্রমেই কম দেয়া যাবে না; বরং প্রয়োজনে সামান্য বেশি হেলিয়ে দেয়াই উত্তম। যেমনটি রাসূলুল্লাহ ﷺ করেছিলেন। হাদীসে এসেছে,

عَنْ سُوَيْدِ بْنِ قَيْسٍ ، قَالَ ...... ، قَالَ النَّبِيُّ  : يَا وَزَّانُ زِنْ وَأَرْجِحْ

সুওয়াইদ ইবনে কায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বললেন, হে ওজনকারী, ওজন করার সময় প্রাপ্য অপেক্ষা একটু বেশি দিবে। [ইবনে মাজাহ, হা/২২২০; নাসাঈ, হা/৪৫৯২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫১৪৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৫২৪; মিশকাত, হা/২৯২৪।]

তাছাড়া এ ক্ষেত্রে কোনরূপ প্রতারণা ও ধোঁকার আশ্রয় নেয়াও বৈধ হবে না। যেমন- পণ্য সামগ্রী ভিজিয়ে রাখা, ওজন করার সময় পাল্লার নিচে কোন কিছু আটকে রাখা, মাপযন্ত্রের মেশিনে কারচুপি করা ইত্যাদি।

১৪. একই জাতীয় বসত্মু কমবেশি করে বিনিময় করা যাবে না :

একই জাতীয় বসত্মু কমবেশি করে বিক্রি করা সুদের অমত্মর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে,

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلًا بِمِثْلٍ سَوَاءً بِسَوَاءٍ يَدًا بِيَدٍ فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هٰذِهِ الْأَصْنَافُ فَبِيْعُوْا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ

উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর এবং লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। অবশ্য এ দ্রব্যগুলো যদি একটি অপরটির ব্যতিক্রম হয় অর্থাৎ পণ্য এক জাতীয় না হয়, তাহলে তোমরা যেরূপ ইচ্ছা বিক্রি করতে পার- যদি সেটা নগদ নগদ হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৪৭; নাসাঈ, হা/৪৫৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০১৮; দার কুতনী, হা/২৮৭৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৮১৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৯৩৭; জামেউস সগীর, হা/৫৭৫৮; মিশকাত, হা/২৮০৮।]

عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - اَلذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلًا بِمِثْلٍ يَدًا بِيَدٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى الْاٰخِذُ وَالْمُعْطِىْ فِيْهِ سَوَاءٌ

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। এরপর কেউ যদি বাড়তি কিছু প্রদান করে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করে তবে তা সুদ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে গ্রহণকারী ও প্রদানকারী উভয়ে সমপরিমাণ গুনাহের অধিকারী হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১৪৮; নাসাঈ, হা/৪৫৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪৮৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১০৭৯৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২২৯৩৯; মিশকাত, হা/২৮০৯।]

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا تَبِيْعُوا الذَّهَبَ بِالذَّهَبِ إِلَّا مِثْلًا بِمِثْلٍ ، وَلَا تُشِفُّوْا بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ ، وَلَا تَبِيْعُوا الْوَرِقَ بِالْوَرِقِ إِلَّا مِثْلًا بِمِثْلٍ وَلَا تُشِفُّوْا بَعْضَهَا عَلٰى بَعْضٍ وَلَا تَبِيْعُوْا مِنْهَا غَائِبًا بِنَاجِزٍ

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, স্বর্ণের সাথে স্বর্ণ পরিমাণে সমান না হলে বিক্রি করো না, কিংবা একটি অপরটি হতে কম বা বেশি করে বিক্রি করো না। একইভাবে তোমরা পরিমাণে সমান না হলে কিংবা একাংশ আরেক অংশ হতে কম বা বেশি হলে রৌপ্য রৌপ্যের বিনিময়ে বিক্রি করো না, কিংবা নগদের সাথে বাকিতে বিক্রি করো না। [সহীহ বুখারী, হা/২১৭৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৯৯; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৩৮; তিরমিযী, হা/১২৪১; নাসাঈ, হা/৪৫৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭১৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫০১৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৩৬৯; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪৩৬৮; জামেউস সগীর, হা/১৩১৬৭; মিশকাত, হা/২৮১০।]

১৫. দুধ আটকিয়ে রেখে পশু বিক্রি করা যাবে না :

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ ... وَلَا تُصَرُّوا الْغَنَمَ وَمَنِ ابْتَاعَهَا فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ بَعْدَ أَنْ يَحْتَلِبَهَا إِنْ رَضِيَهَا أَمْسَكَهَا وَإِنْ سَخِطَهَا رَدَّهَا وَصَاعًا مِنْ تَمْرٍ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন... বকরির দুধ দোহন না করে (দুধ আটকিয়ে) বিক্রি করো না। কেউ এ ধরনের বকরি ক্রয় করলে তার জন্য দু’টি ভালো সুযোগ রয়েছে। দোহনের পর সন্তুষ্ট হলে রেখে দেবে আর অসন্তুষ্ট হলে তা এক সা‘ খেজুরসহ ফিরিয়ে দেবে। [সহীহ বুখারী, হা/২১৫০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/৩৪৪৫; নাসাঈ, হা/৪৪৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৩৪৫; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৩৯৬৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৪০৬; মিশকাত, হা/২৮৪৭।]

১৬. ক্রয়-বিক্রয়ে অনির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ বাদ রাখার শর্ত করা যাবে না :

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ عَنِ الثُّنْيَا إِلَّاأَنْ يَعْلَمَ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে বিক্রীত বসত্মু হতে অনির্দিষ্ট পরিমাণ কিছু অংশ বাদ রাখতে নিষেধ করেছেন। অবশ্য যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ বাদ রেখে বিক্রয় করে, তবে তা জায়েয হবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৯৭১; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৯১৮; মুসত্মাখরাজে আবু আওয়ানা, হা/৪১৪৮; তিরমিযী, হা/১২৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২১৬০০; মিশকাত, হা/২৮৬১।]

এখানে বাদ দেয়ার অর্থ হলো- যেমন বিক্রেতা বলল, এই বৃক্ষের সমসত্ম ফল তোমার নিকট বিক্রি করলাম, কিন্তু কিছু অংশ আমি রেখে দেব। ব্যবসার ক্ষেত্রে এরূপ শর্তারোপ করা বৈধ নয়। কেননা এতে কিছু অংশের পরিমাণ নিয়ে বিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১৭. বাগানের ফল দুই-তিন বৎসরের জন্য অগ্রিম বিক্রি করা জায়েয নয় :

কোন নির্দিষ্ট বৃক্ষের বা বাগানের ফল দুই-তিন বৎসরের জন্য অগ্রিম বিক্রি করা জায়েয নয়। কারণ পরবর্তী বৎসর এ বৃক্ষে বা বাগানে ফল না-ও হতে পারে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন