HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
শামায়েলে তিরমিযী
লেখকঃ মুহাম্মাদ বিন ঈসা আত তিরমিযী (রহ.)
সহীহ
শামায়েলে তিরমিযী
এ গ্রন্থে শামায়েলে তিরমিযীর কেবল
সহীহ হাদীসগুলো সংকলন করা হয়েছে।
মূল :
মুহাম্মাদ বিন ঈসা আত তিরমিযী (রহ.)
তাহকীক :
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী
অনুবাদ :
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
সম্পাদনা :
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
শামায়েলে তিরমিযী
এ গ্রন্থে শামায়েলে তিরমিযীর কেবল
সহীহ হাদীসগুলো সংকলন করা হয়েছে।
মূল :
মুহাম্মাদ বিন ঈসা আত তিরমিযী (রহ.)
তাহকীক :
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী
অনুবাদ :
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
সম্পাদনা :
মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ
এ গ্রন্থে শামায়েলে তিরমিযীর কেবল সহীহ হাদীসগুলো সংকলন করা হয়েছে। বিষয়বস্তু বুঝার সুবিধার্থে অধিকাংশ হাদীসের শুরুতে শিরোণাম দেয়া হয়েছে। অনেক হাদীসের সাথে ব্যাখ্যা সংযোজন করা হয়েছে।
মূল শামায়েলে তিরমিযীর সহীহ হাদীসগুলো অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের যেসব কিতাবে রয়েছে হাদীসের নাম্বারসহ সেসব কিতাবের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে।
মূল শামায়েলে তিরমিযীর সহীহ হাদীসগুলো অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের যেসব কিতাবে রয়েছে হাদীসের নাম্বারসহ সেসব কিতাবের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
‘সহীহ শামায়েলে তিরমিযী’ কিতাবটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
প্রত্যেক মুসলিম নর-নরীর উচিত বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া। কেননা মুহাম্মাদ ﷺ এর চেয়ে উত্তম চরিত্রের দৃষ্টান্ত দ্বিতীয় আর কেউ হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ﴾
‘‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’’। (সূরা ক্বালাম- ৪)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার এবং তাঁর আদর্শকে গ্রহণ করার নিদের্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন-
﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ﴾
‘‘নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’’ (সূরা আহযাব- ২১)
যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নত অনুযায়ী চলার অভ্যাস করবে আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে আলোকিত করে দেবেন এবং সে উভয় জগতে কল্যাণ লাভ করবে। সুতরাং আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গুণাবলি পড়ব, শুনব এবং নিজেরাও ঐরূপ গুণের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান ও সফলতার অধিকারী হতে পারব, ইনশা-আল্লাহ।
শামায়েলে তিরমিযীর কিছু যয়ীফ হাদীস রয়েছে। এ গ্রন্থে যয়ীফ হাদীসগুলো বাদ দিয়ে কেবল সহীহ হাদীসগুলো সংকলন করা হয়েছে। বুঝার সবিধার্থে প্রায় হাদীসের শুরুতে শিরোনাম দেয়া হয়েছে। অনেক হাদীসের সাথে ব্যাখ্যা সংযোজন করা হয়েছে। মূল শামায়েলে তিরমিযীর সহীহ হাদীসগুলো অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের যেসব কিতাবে রয়েছে নাম্বারসহ সেসব কিতাবের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। এ গ্রন্থের মাধ্যমে পাঠকরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দৈহিক, চারিত্রিক ও ব্যবহারিক গুণাবলি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন। আমরা সর্বক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সে তাওফীক দান করুন। আমীন!
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা যেন সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং আমাদেরকে উত্তম চরিত্র গঠন করার তাওফীক দান করেন। আর তিনি যেন আমাদেরকে এর ওসীলায় দুনিয়াতে শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির ফয়সালা করে দেন। আমীন!!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
‘সহীহ শামায়েলে তিরমিযী’ কিতাবটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
প্রত্যেক মুসলিম নর-নরীর উচিত বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া। কেননা মুহাম্মাদ ﷺ এর চেয়ে উত্তম চরিত্রের দৃষ্টান্ত দ্বিতীয় আর কেউ হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ﴾
‘‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’’। (সূরা ক্বালাম- ৪)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার এবং তাঁর আদর্শকে গ্রহণ করার নিদের্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন-
﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ﴾
‘‘নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’’ (সূরা আহযাব- ২১)
যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নত অনুযায়ী চলার অভ্যাস করবে আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে আলোকিত করে দেবেন এবং সে উভয় জগতে কল্যাণ লাভ করবে। সুতরাং আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গুণাবলি পড়ব, শুনব এবং নিজেরাও ঐরূপ গুণের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান ও সফলতার অধিকারী হতে পারব, ইনশা-আল্লাহ।
শামায়েলে তিরমিযীর কিছু যয়ীফ হাদীস রয়েছে। এ গ্রন্থে যয়ীফ হাদীসগুলো বাদ দিয়ে কেবল সহীহ হাদীসগুলো সংকলন করা হয়েছে। বুঝার সবিধার্থে প্রায় হাদীসের শুরুতে শিরোনাম দেয়া হয়েছে। অনেক হাদীসের সাথে ব্যাখ্যা সংযোজন করা হয়েছে। মূল শামায়েলে তিরমিযীর সহীহ হাদীসগুলো অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের যেসব কিতাবে রয়েছে নাম্বারসহ সেসব কিতাবের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। এ গ্রন্থের মাধ্যমে পাঠকরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দৈহিক, চারিত্রিক ও ব্যবহারিক গুণাবলি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন। আমরা সর্বক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সে তাওফীক দান করুন। আমীন!
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা যেন সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং আমাদেরকে উত্তম চরিত্র গঠন করার তাওফীক দান করেন। আর তিনি যেন আমাদেরকে এর ওসীলায় দুনিয়াতে শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির ফয়সালা করে দেন। আমীন!!
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
রাসূলুল্লাহ ﷺ বেশি দীর্ঘ ছিলেন না, আবার বেশি খাটোও ছিলেন না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيْسَ بِالطَّوِيْلِ الْبَائِنِ ، وَلَا بِالْقَصِيْرِ ، وَلَا بِالْاَبْيَضِ الْاَمْهَقِ ، وَلَا بِالْاٰدَمِ ، وَلَا بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ ، وَلَا بِالسَّبْطِ ، بَعَثَهُ اللهُ تَعَالٰى عَلٰى رَأْسِ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً ، فَاَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِيْنَ ، وَبِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ ، وَتَوَفَّاهُ اللهُ تَعَالٰى عَلٰى رَأْسِ سِتِّيْنَ سَنَةً ، وَلَيْسَ فِي رَأْسِهٖ وَلِحْيَتِهٖ عِشْرُوْنَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ খুব দীর্ঘ ছিলেন না আবার খাটোও ছিলেন না। তিনি ধবধবে সাদা কিংবা বাদামী বর্ণেরও ছিলেন না। তাঁর চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একদম সোজাও ছিল না। ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নবুওয়াত দান করেন। এরপর মক্কায় ১০ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর কাটান। আল্লাহ তা‘আলা ৬০ বছর বয়সে তাঁকে ওফাত দান করেন। ওফাতকালে তাঁর মাথা ও দাড়ির ২০টি চুলও সাদা ছিল না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৫; মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৪৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৮৭।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে যেমন উত্তম গুণাবলির সর্বাধিক সমাবেশ ঘটেছিল, তেমনি তাঁর দৈহিক সৌন্দর্যও ছিল অতুলনীয়। এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বেমানান দীর্ঘকায় ছিলেন না। আবার অতি খাটোও ছিলেন না। বরং মাঝারি গড়নের চেয়ে একটু দীর্ঘ ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, নবী ﷺ এর ইন্তেকাল হয়েছে ৬৩ বছর বয়সে। তিনি মক্কায় ১৩ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর অতিবাহিত করেছেন। এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো এ গ্রন্থের শেষের দিকে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত হাদীসটিতে দশকের পরের সংখ্যা ৩ বাদ দিয়ে মক্কায় অবস্থানকাল ১০ বছর এবং নবী ﷺ এর মোট বয়স ৬০ উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি ছিলেন গৌরবর্ণের :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ رَبْعَةً ، لَيْسَ بِالطَّوِيْلِ وَلَا بِالْقَصِيْرِ ، حَسَنَ الْجِسْمِ ، وَكَانَ شَعْرُهٗ لَيْسَ بِجَعْدٍ وَلَا سَبْطٍ اَسْمَرَ اللَّوْنِ ، اِذَا مَشٰى يَتَكَفَّأُ
২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মধ্যমাকৃতির ছিলেন। বেশি লম্বা কিংবা বেশি খাটোও ছিলেন না। তাঁর দেহ ছিল খুব আকর্ষণীয়। আর তাঁর চুল বেশি কোঁকড়ানো কিংবা একেবারে সোজাও ছিল না। তিনি ছিলেন গৌরবর্ণের। পথ চলতে তিনি সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে চলতেন। [মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩৮৩২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৪০।]
তিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنَ عَازِبٍ يَقُوْلُ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ رَجُلًا مَرْبُوْعًا بَعِيْدَ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ ، عَظِيْمَ الْجُمَّةِ اِلٰى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ الْيُسْرٰى ، عَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ ، مَا رَاَيْتُ شَيْئًا قَطُّ اَحْسَنَ مِنْهُ
৩. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মধ্যমাকৃতির ছিলেন। তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী অংশ ছিল তুলনামূলক প্রশস্ত। তাঁর ঘন চুলগুলো কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। তাঁর দেহে লাল লুঙ্গি ও লাল চাদর শোভা পেত। আমি তাঁর তুলনায় সুদর্শন কাউকে কখনো দেখিনি। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬২১০; নাসাঈ, হা/৫২৩২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ পুরুষের জন্যে লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। এ বিরোধ সমাধানে কেউ কেউ বলেন, উজ্জ্বল লাল পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে যে কাপড়দ্বয়ের কথা বলা হয়েছে, সেটা লাল ডোরাকাটা ছিল, উজ্জ্বল লাল বর্ণের ছিল না।
তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : مَا رَاَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ اَحْسَنَ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ، لَهٗ شَعْرٌ يَّضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ ، بَعِيْدُ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ ، لَمْ يَكُنْ ۢبِالْقَصِيْرِ وَلَا بِالطَّوِيْلِ
৪. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলবিশিষ্ট লাল চাদর ও লাল লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে সুদর্শন কাউকে দেখিনি। তাঁর কেশগুচ্ছ ছিল কাঁধ বরাবর। তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান অন্যদের তুলনায় কিছুটা প্রশস্ত ছিল। তিনি অধিক খাটো বা অধিক দীর্ঘাকৃতির ছিলেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫৮১।]
ব্যাখ্যা : ৩ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। আর এ হাদীসে বলা হয়েছে, কাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। উভয় বক্তব্যই ঠিক। কেননা, চুল সব সময় এক অবস্থায় থাকে না। কখনো কম হয়, কখনো বেশি হয়। আবার ইচ্ছাকৃতভাবেও বড় ছোট রাখা হয়। চুলের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার ব্যাখ্যা এভাবে করা যায় যে, তিনি সর্বোচ্চ কাঁধ পর্যন্ত লম্বা করেছেন, যাকে ‘জিম্মা’ বলা হয়। আর সর্বাধিক ছোট করার পরিমান ছিল কানের লতি, যাকে ‘ওয়াফরা’ বলে। আর এর মাঝামাঝি অবস্থানকে ‘লিম্মা’ বলা হয়।
তাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয়ের তালু এবং আঙ্গুলসমূহ ছিল মাংসল :
عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِي طَالِبٍ قَالَ : لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ بِالطَّوِيْلِ وَلَا بِالْقَصِيْرِ ، شَثْنُ الْكَفَّيْنِ وَالْقَدَمَيْنِ ، ضَخْمُ الرَّأْسِ ، ضَخْمُ الْكَرَادِيْسِ ، طَوِيْلُ الْمَسْرُبَةِ ، اِذَا مَشٰى تَكَفَّاَ تَكَفُّؤًا كَاَنَّمَا يَنْحَطُّ مِنْ صَبَبٍ ، لَمْ اَرَ قَبْلَهٗ وَلَا بَعْدَهٗ مِثْلَهٗ
৫. আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বেশি দীর্ঘ কিংবা বেশি খাটো ছিলেন না। তাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয়ের তালু এবং আঙ্গুলসমূহ ছিল মাংসল। তাঁর মাথা ছিল কিছুটা বড় এবং হাত-পায়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। বুক হতে নাভি পর্যন্ত পশমের একটি সরু রেখা প্রলম্বিত ছিল। যখন পথ চলতেন মনে হতো যেন কোন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর পূর্বে কিংবা পরে আমি তাঁর মতো (অনুপম আকর্ষণীয়) আর কাউকে দেখিনি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৯৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩১১।]
তিনি ছিলেন প্রশস্ত মুখ, ডাগর চক্ষু এবং সরু গোড়ালি বিশিষ্ট :
عَنْ جَابِرِبْنِ سَمُرَةَ يَقُوْلُ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ضَلِيْعَ الْفَمِ ، اَشْكَلَ الْعَيْنِ ، مَنْهُوْسَ الْعَقِبِ . قَالَ شُعْبَةُ : قُلْتُ لِسِمَاكٍ : مَا ضَلِيعُ الْفَمِ ؟ قَالَ : عَظِيْمُ الْفَمِ ، قُلْتُ : مَا اَشْكَلُ الْعَيْنِ ؟ قَالَ : طَوِيْلُ شِقِّ الْعَيْنِ ، قُلْتُ : مَا مَنْهُوْسُ الْعَقِبِ ؟ قَالَ : قَلِيْلُ لَحْمِ الْعَقِبِ
৬. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মুখ প্রশস্ত ছিল। চোখের শুভ্রতার মাঝে কিছুটা লালিমা ছিল। পায়ের গোড়ালি স্বল্প মাংসল ছিল। শু‘বা (রহঃ) বলেন, আমি সিমাক (রহঃ)-কে বললাম, ضَلِيْعُ الْفَمِ (যলী‘উল ফাম) কী? তিনি বললেন, বড় মুখগহবর বিশিষ্ট। আমি আবার বললাম, اَشْكَلُ الْعَيْنِ (আশ্কালুল ‘আইন) কী? তিনি বললেন, ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট। আমি বললাম, مَنْهُوْسُ الْعَقِبِ (মান্হূসুল ‘আক্বিব) কী? তিনি বললেন, সরু গোড়ালি বিশিষ্ট। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৮৯; জামেউস সগীর, হা/৮৯৫২; মিশকাত, হা/৫৭৮৪।]
তিনি ছিলেন পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও চমৎকার :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ فِي لَيْلَةٍ اِضْحِيَانٍ ، وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ ، فَجَعَلْتُ اَنْظُرُ اِلَيْهِ وَاِلَى الْقَمَرِ ، فَلَهُوَ عِنْدِيْ اَحْسَنُ مِنَ الْقَمَرِ
৭. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার পূর্ণিমা রাত্রির স্নিগ্ধ আলোতে রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম। তখন আমি একবার তাঁর দিকে ও একবার চাঁদের দিকে তাকাতে থাকলাম। মনে হলো তিনি আমার কাছে পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে অধিকতর চমৎকার। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৮৩; মা‘রেফাতুস সাহাবা, হা/১৪৩৫; মিশকাত, হা/৫৭৯৪।]
عَنْ اَبِيْ اِسْحَاقَ قَالَ : سَاَلَ رَجُلٌ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ : اَ كَانَ وَجْهُ رَسُوْلِ اللهِ مِثْلَ السَّيْفِ ؟ قَالَ : لَا ، بَلْ مِثْلَ الْقَمَرِ
৮. আবু ইসহাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার বারা ইবনে আযিব (রাঃ)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেহারা কি তরবারির ন্যায় ছিল? তিনি বললেন, না; বরং তা ছিল চাঁদের মতো। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫০১; দারেমী, হা/৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৮৭।]
ব্যাখ্যা : তরবারির সাথে সাদৃশ্য করা এ জন্য ত্রুটিযুক্ত ছিল যে, এতে চেহারা অধিক লম্বা হওয়ার ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া তরবারির চমকে শুভ্রতা বেশি থাকে, কিন্তু উজ্জ্বলতা থাকে না। তাই বারা ইবনে আযিব (রাঃ) তরবারির কথা অস্বীকার করে চাঁদের সাথে তুলনা করেছেন।
তাঁর শুভ্রতা ছিল রৌপ্যের ন্যায় :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اَبْيَضَ كَاَنَّمَا صِيْغَ مِنْ فِضَّةٍ ، رَجِلَ الشَّعْرِ
৯. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ শুভ্রতায় ছিলেন রৌপ্যের ন্যায় এবং তাঁর চুলগুলো ছিল কিছুটা কোঁকড়ানো। [জামেউস সগীর, হা/৮৭৪৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৫৩।]
ব্যাখ্যা : আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত এ অধ্যায়ের সর্বপ্রথম হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গায়ের রং নিরেট সাদা ছিল না। তাই এ হাদীসে তাকে রূপার সাথে তুলনা করা হয়েছে। তিনি লাল মিশ্রিত সাদা ছিলেন এবং উজ্জ্বল সুন্দর ছিলেন।
তিনি ছিলেন ইবরাহীম (আঃ) এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : عُرِضَ عَلَيَّ الْاَنْۢبِيَاءُ ، فَاِذَا مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ ضَرْبٌ مِّنَ الرِّجَالِ ، كَاَنَّهٗ مِنْ رِّجَالِ شَنُوْءَةَ ، وَرَاَيْتُ عِيسٰى ابْنَ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَاِذَا اَقْرَبُ مَنْ رَاَيْتُ بِهٖ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُوْدٍ ، وَرَاَيْتُ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَاِذَا اَقْرَبُ مَنْ رَاَيْتُ بِهٖ شَبَهًا صَاحِبُكُمْ ، يَعْنِي نَفْسَهٗ، وَرَاَيْتُ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَاِذَا اَقْرَبُ مَنْ رَاَيْتُ بِهٖ شَبَهًا دِحْيَةُ
১০. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার কাছে নবীগণকে পেশ করা হয়। মূসা (আঃ) এর মধ্যে বিভিন্ন লোকের সাদৃশ্য বিদ্ধমান ছিল। তিনি যেন শানুয়াহ গোত্রের লোক। আমি ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-কে উরওয়া ইবনে মাসঊদের সাদৃশ্যপূর্ণ দেখতে পাই। তারপর আমি ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখতে পাই এবং তাঁকে পাই ‘তোমাদের সঙ্গীর’ সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তোমাদের সঙ্গী বলে তিনি নিজেকে বুঝিয়েছেন। আর আমি জিবরাঈল (আঃ)-কে দিহইয়া (কালবী) এর সাথে সদৃশ্যপূর্ণ দেখতে পাই। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৩২; জামেউস সগীর, হা/৭৪৫১; মিশকাত, হা/৫৭১৪।]
তিনি ছিলেন শুভ্রকায় ও লাবণ্যময় :
عَنْ اَبِى الطُّفَيْلِ يَقُوْلُ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ وَمَا بَقِيَ عَلٰى وَجْهِ الْاَرْضِ اَحَدٌ رَاٰهُ غَيْرِيْ ، قُلْتُ : صِفْهُ لِيْ ، قَالَ : كَانَ اَبْيَضَ مَلِيْحًا مُّقَصَّدًا
১১. আবু তুফায়েল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি- তবে তাঁকে যারা দেখেছেন তাঁদের মধ্যে আমি ছাড়া কেউ ভূপৃষ্ঠে বেঁচে নেই। (বর্ণনাকারী বললেন) আমি বললাম আপনি আমার কাছে তাঁর বিবরণ পেশ করুন। তিনি বললেন, তিনি ছিলেন শুভ্রকায় ও লাবণ্যময় সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৮৪৮; আদাবুল মুফরাদ, হা/৭৯০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৪৮; জামেউস সগীর, হা/৮৭৫১; মিশকাত, হা/৫৭৮৫।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ خَاتَمِ النُّبُوَّةِ
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيْسَ بِالطَّوِيْلِ الْبَائِنِ ، وَلَا بِالْقَصِيْرِ ، وَلَا بِالْاَبْيَضِ الْاَمْهَقِ ، وَلَا بِالْاٰدَمِ ، وَلَا بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ ، وَلَا بِالسَّبْطِ ، بَعَثَهُ اللهُ تَعَالٰى عَلٰى رَأْسِ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً ، فَاَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِيْنَ ، وَبِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ ، وَتَوَفَّاهُ اللهُ تَعَالٰى عَلٰى رَأْسِ سِتِّيْنَ سَنَةً ، وَلَيْسَ فِي رَأْسِهٖ وَلِحْيَتِهٖ عِشْرُوْنَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ খুব দীর্ঘ ছিলেন না আবার খাটোও ছিলেন না। তিনি ধবধবে সাদা কিংবা বাদামী বর্ণেরও ছিলেন না। তাঁর চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একদম সোজাও ছিল না। ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নবুওয়াত দান করেন। এরপর মক্কায় ১০ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর কাটান। আল্লাহ তা‘আলা ৬০ বছর বয়সে তাঁকে ওফাত দান করেন। ওফাতকালে তাঁর মাথা ও দাড়ির ২০টি চুলও সাদা ছিল না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৫; মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৪৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৮৭।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে যেমন উত্তম গুণাবলির সর্বাধিক সমাবেশ ঘটেছিল, তেমনি তাঁর দৈহিক সৌন্দর্যও ছিল অতুলনীয়। এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বেমানান দীর্ঘকায় ছিলেন না। আবার অতি খাটোও ছিলেন না। বরং মাঝারি গড়নের চেয়ে একটু দীর্ঘ ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, নবী ﷺ এর ইন্তেকাল হয়েছে ৬৩ বছর বয়সে। তিনি মক্কায় ১৩ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর অতিবাহিত করেছেন। এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো এ গ্রন্থের শেষের দিকে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত হাদীসটিতে দশকের পরের সংখ্যা ৩ বাদ দিয়ে মক্কায় অবস্থানকাল ১০ বছর এবং নবী ﷺ এর মোট বয়স ৬০ উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি ছিলেন গৌরবর্ণের :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ رَبْعَةً ، لَيْسَ بِالطَّوِيْلِ وَلَا بِالْقَصِيْرِ ، حَسَنَ الْجِسْمِ ، وَكَانَ شَعْرُهٗ لَيْسَ بِجَعْدٍ وَلَا سَبْطٍ اَسْمَرَ اللَّوْنِ ، اِذَا مَشٰى يَتَكَفَّأُ
২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মধ্যমাকৃতির ছিলেন। বেশি লম্বা কিংবা বেশি খাটোও ছিলেন না। তাঁর দেহ ছিল খুব আকর্ষণীয়। আর তাঁর চুল বেশি কোঁকড়ানো কিংবা একেবারে সোজাও ছিল না। তিনি ছিলেন গৌরবর্ণের। পথ চলতে তিনি সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে চলতেন। [মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩৮৩২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৪০।]
তিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنَ عَازِبٍ يَقُوْلُ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ رَجُلًا مَرْبُوْعًا بَعِيْدَ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ ، عَظِيْمَ الْجُمَّةِ اِلٰى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ الْيُسْرٰى ، عَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ ، مَا رَاَيْتُ شَيْئًا قَطُّ اَحْسَنَ مِنْهُ
৩. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মধ্যমাকৃতির ছিলেন। তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী অংশ ছিল তুলনামূলক প্রশস্ত। তাঁর ঘন চুলগুলো কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। তাঁর দেহে লাল লুঙ্গি ও লাল চাদর শোভা পেত। আমি তাঁর তুলনায় সুদর্শন কাউকে কখনো দেখিনি। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬২১০; নাসাঈ, হা/৫২৩২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ পুরুষের জন্যে লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। এ বিরোধ সমাধানে কেউ কেউ বলেন, উজ্জ্বল লাল পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে যে কাপড়দ্বয়ের কথা বলা হয়েছে, সেটা লাল ডোরাকাটা ছিল, উজ্জ্বল লাল বর্ণের ছিল না।
তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : مَا رَاَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ اَحْسَنَ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ، لَهٗ شَعْرٌ يَّضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ ، بَعِيْدُ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ ، لَمْ يَكُنْ ۢبِالْقَصِيْرِ وَلَا بِالطَّوِيْلِ
৪. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলবিশিষ্ট লাল চাদর ও লাল লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে সুদর্শন কাউকে দেখিনি। তাঁর কেশগুচ্ছ ছিল কাঁধ বরাবর। তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান অন্যদের তুলনায় কিছুটা প্রশস্ত ছিল। তিনি অধিক খাটো বা অধিক দীর্ঘাকৃতির ছিলেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫৮১।]
ব্যাখ্যা : ৩ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। আর এ হাদীসে বলা হয়েছে, কাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। উভয় বক্তব্যই ঠিক। কেননা, চুল সব সময় এক অবস্থায় থাকে না। কখনো কম হয়, কখনো বেশি হয়। আবার ইচ্ছাকৃতভাবেও বড় ছোট রাখা হয়। চুলের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার ব্যাখ্যা এভাবে করা যায় যে, তিনি সর্বোচ্চ কাঁধ পর্যন্ত লম্বা করেছেন, যাকে ‘জিম্মা’ বলা হয়। আর সর্বাধিক ছোট করার পরিমান ছিল কানের লতি, যাকে ‘ওয়াফরা’ বলে। আর এর মাঝামাঝি অবস্থানকে ‘লিম্মা’ বলা হয়।
তাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয়ের তালু এবং আঙ্গুলসমূহ ছিল মাংসল :
عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِي طَالِبٍ قَالَ : لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ بِالطَّوِيْلِ وَلَا بِالْقَصِيْرِ ، شَثْنُ الْكَفَّيْنِ وَالْقَدَمَيْنِ ، ضَخْمُ الرَّأْسِ ، ضَخْمُ الْكَرَادِيْسِ ، طَوِيْلُ الْمَسْرُبَةِ ، اِذَا مَشٰى تَكَفَّاَ تَكَفُّؤًا كَاَنَّمَا يَنْحَطُّ مِنْ صَبَبٍ ، لَمْ اَرَ قَبْلَهٗ وَلَا بَعْدَهٗ مِثْلَهٗ
৫. আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বেশি দীর্ঘ কিংবা বেশি খাটো ছিলেন না। তাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয়ের তালু এবং আঙ্গুলসমূহ ছিল মাংসল। তাঁর মাথা ছিল কিছুটা বড় এবং হাত-পায়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। বুক হতে নাভি পর্যন্ত পশমের একটি সরু রেখা প্রলম্বিত ছিল। যখন পথ চলতেন মনে হতো যেন কোন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর পূর্বে কিংবা পরে আমি তাঁর মতো (অনুপম আকর্ষণীয়) আর কাউকে দেখিনি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৯৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩১১।]
তিনি ছিলেন প্রশস্ত মুখ, ডাগর চক্ষু এবং সরু গোড়ালি বিশিষ্ট :
عَنْ جَابِرِبْنِ سَمُرَةَ يَقُوْلُ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ضَلِيْعَ الْفَمِ ، اَشْكَلَ الْعَيْنِ ، مَنْهُوْسَ الْعَقِبِ . قَالَ شُعْبَةُ : قُلْتُ لِسِمَاكٍ : مَا ضَلِيعُ الْفَمِ ؟ قَالَ : عَظِيْمُ الْفَمِ ، قُلْتُ : مَا اَشْكَلُ الْعَيْنِ ؟ قَالَ : طَوِيْلُ شِقِّ الْعَيْنِ ، قُلْتُ : مَا مَنْهُوْسُ الْعَقِبِ ؟ قَالَ : قَلِيْلُ لَحْمِ الْعَقِبِ
৬. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মুখ প্রশস্ত ছিল। চোখের শুভ্রতার মাঝে কিছুটা লালিমা ছিল। পায়ের গোড়ালি স্বল্প মাংসল ছিল। শু‘বা (রহঃ) বলেন, আমি সিমাক (রহঃ)-কে বললাম, ضَلِيْعُ الْفَمِ (যলী‘উল ফাম) কী? তিনি বললেন, বড় মুখগহবর বিশিষ্ট। আমি আবার বললাম, اَشْكَلُ الْعَيْنِ (আশ্কালুল ‘আইন) কী? তিনি বললেন, ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট। আমি বললাম, مَنْهُوْسُ الْعَقِبِ (মান্হূসুল ‘আক্বিব) কী? তিনি বললেন, সরু গোড়ালি বিশিষ্ট। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০২৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৮৯; জামেউস সগীর, হা/৮৯৫২; মিশকাত, হা/৫৭৮৪।]
তিনি ছিলেন পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও চমৎকার :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ فِي لَيْلَةٍ اِضْحِيَانٍ ، وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ ، فَجَعَلْتُ اَنْظُرُ اِلَيْهِ وَاِلَى الْقَمَرِ ، فَلَهُوَ عِنْدِيْ اَحْسَنُ مِنَ الْقَمَرِ
৭. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার পূর্ণিমা রাত্রির স্নিগ্ধ আলোতে রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম। তখন আমি একবার তাঁর দিকে ও একবার চাঁদের দিকে তাকাতে থাকলাম। মনে হলো তিনি আমার কাছে পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে অধিকতর চমৎকার। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৮৩; মা‘রেফাতুস সাহাবা, হা/১৪৩৫; মিশকাত, হা/৫৭৯৪।]
عَنْ اَبِيْ اِسْحَاقَ قَالَ : سَاَلَ رَجُلٌ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ : اَ كَانَ وَجْهُ رَسُوْلِ اللهِ مِثْلَ السَّيْفِ ؟ قَالَ : لَا ، بَلْ مِثْلَ الْقَمَرِ
৮. আবু ইসহাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার বারা ইবনে আযিব (রাঃ)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেহারা কি তরবারির ন্যায় ছিল? তিনি বললেন, না; বরং তা ছিল চাঁদের মতো। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫০১; দারেমী, হা/৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৮৭।]
ব্যাখ্যা : তরবারির সাথে সাদৃশ্য করা এ জন্য ত্রুটিযুক্ত ছিল যে, এতে চেহারা অধিক লম্বা হওয়ার ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া তরবারির চমকে শুভ্রতা বেশি থাকে, কিন্তু উজ্জ্বলতা থাকে না। তাই বারা ইবনে আযিব (রাঃ) তরবারির কথা অস্বীকার করে চাঁদের সাথে তুলনা করেছেন।
তাঁর শুভ্রতা ছিল রৌপ্যের ন্যায় :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اَبْيَضَ كَاَنَّمَا صِيْغَ مِنْ فِضَّةٍ ، رَجِلَ الشَّعْرِ
৯. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ শুভ্রতায় ছিলেন রৌপ্যের ন্যায় এবং তাঁর চুলগুলো ছিল কিছুটা কোঁকড়ানো। [জামেউস সগীর, হা/৮৭৪৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৫৩।]
ব্যাখ্যা : আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত এ অধ্যায়ের সর্বপ্রথম হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গায়ের রং নিরেট সাদা ছিল না। তাই এ হাদীসে তাকে রূপার সাথে তুলনা করা হয়েছে। তিনি লাল মিশ্রিত সাদা ছিলেন এবং উজ্জ্বল সুন্দর ছিলেন।
তিনি ছিলেন ইবরাহীম (আঃ) এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : عُرِضَ عَلَيَّ الْاَنْۢبِيَاءُ ، فَاِذَا مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ ضَرْبٌ مِّنَ الرِّجَالِ ، كَاَنَّهٗ مِنْ رِّجَالِ شَنُوْءَةَ ، وَرَاَيْتُ عِيسٰى ابْنَ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَاِذَا اَقْرَبُ مَنْ رَاَيْتُ بِهٖ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُوْدٍ ، وَرَاَيْتُ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَاِذَا اَقْرَبُ مَنْ رَاَيْتُ بِهٖ شَبَهًا صَاحِبُكُمْ ، يَعْنِي نَفْسَهٗ، وَرَاَيْتُ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَاِذَا اَقْرَبُ مَنْ رَاَيْتُ بِهٖ شَبَهًا دِحْيَةُ
১০. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার কাছে নবীগণকে পেশ করা হয়। মূসা (আঃ) এর মধ্যে বিভিন্ন লোকের সাদৃশ্য বিদ্ধমান ছিল। তিনি যেন শানুয়াহ গোত্রের লোক। আমি ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-কে উরওয়া ইবনে মাসঊদের সাদৃশ্যপূর্ণ দেখতে পাই। তারপর আমি ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখতে পাই এবং তাঁকে পাই ‘তোমাদের সঙ্গীর’ সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তোমাদের সঙ্গী বলে তিনি নিজেকে বুঝিয়েছেন। আর আমি জিবরাঈল (আঃ)-কে দিহইয়া (কালবী) এর সাথে সদৃশ্যপূর্ণ দেখতে পাই। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৩২; জামেউস সগীর, হা/৭৪৫১; মিশকাত, হা/৫৭১৪।]
তিনি ছিলেন শুভ্রকায় ও লাবণ্যময় :
عَنْ اَبِى الطُّفَيْلِ يَقُوْلُ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ وَمَا بَقِيَ عَلٰى وَجْهِ الْاَرْضِ اَحَدٌ رَاٰهُ غَيْرِيْ ، قُلْتُ : صِفْهُ لِيْ ، قَالَ : كَانَ اَبْيَضَ مَلِيْحًا مُّقَصَّدًا
১১. আবু তুফায়েল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি- তবে তাঁকে যারা দেখেছেন তাঁদের মধ্যে আমি ছাড়া কেউ ভূপৃষ্ঠে বেঁচে নেই। (বর্ণনাকারী বললেন) আমি বললাম আপনি আমার কাছে তাঁর বিবরণ পেশ করুন। তিনি বললেন, তিনি ছিলেন শুভ্রকায় ও লাবণ্যময় সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৮৪৮; আদাবুল মুফরাদ, হা/৭৯০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৪৮; জামেউস সগীর, হা/৮৭৫১; মিশকাত, হা/৫৭৮৫।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ خَاتَمِ النُّبُوَّةِ
خَاتَمٌ অর্থ- আংটি, মোহর, সীল। মোহরে নবুওয়াত হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দু’কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি গোশতের টুকরা। এটি ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নবুওয়াতের নিদর্শন; আর এ নিদর্শনের কথা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহেও বর্ণিত ছিল।
নবী ﷺ এর দু’কাঁধের মধ্যভাগে মোহরে নবুওয়াত ছিল :
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ يَقُوْلُ : ذَهَبَتْ بِي خَالَتِيْ اِلَى النَّبِيِّ فَقَالَتْ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنَّ ابْنَ أُخْتِي وَجِعٌ . فَمَسَحَ رَأْسِيْ وَدَعَا لِيْ بِالْبَرَكَةِ ، وَتَوَضَّاَ ، فَشَرِبْتُ مِنْ وَضُوْئِهٖ ، وَقُمْتُ خَلْفَ ظَهْرِهٖ ، فَنَظَرْتُ اِلَى الْخَاتَمِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ ، فَاِذَا هُوَ مِثْلُ زِرِّ الْحَجَلَةِ
১২. সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে গেলেন। এরপর তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগ্নে অসুস্থ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু‘আ করলেন। তারপর তিনি ওযূ করলেন। আমি তাঁর ওযূর অবশিষ্ট পানি পান করলাম এবং তাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সহসা তাঁর দু’কাঁধের মধ্যস্থ মোহরে নবুওয়াতের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে, যা দেখতে পাখির (কবুতরের) ডিমের মতো। [সহীহ বুখারী, হা/১৯০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৩; মু‘জামুল কাবীর, হা/৬৫৪০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬২২; মিশকাত, হা/৪৭৬।]
তা ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিন্ড :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : رَاَيْتُ الْخَاتَمَ بَيْنَ كَتِفَيْ رَسُوْلِ اللهِ غُدَّةً حَمْرَاءَ مِثْلَ بَيْضَةِ الْحَمَامَةِ
১৩. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখেছি। আর তা যেন ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিন্ড। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০৩৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩০১; জামেউস সগীর, হা/৮৯৩৯; মিশকাত, হা/৫৭৭৯।]
সাহাবীগণ ইচ্ছে করলে মোহরে নবুওয়াতকে চুম্বন করতে পারতেন :
عَنْ رُمَيْثَةَ قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، وَلَوْ اَشَاءُ اَنْ أُقَبِّلَ الْخَاتَمَ الَّذِيْ بَيْنَ كَتِفَيْهِ مِنْ قُرْبِهٖ لَفَعَلْتُ ، يَقُوْلُ لِسَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ يَوْمَ مَاتَ : اهْتَزَّ لَهٗ عَرْشُ الرَّحْمٰنِ
১৪. রুমায়সা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা‘দ ইবনে মুয়ায (রাঃ) এর ওফাতের দিন আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তাঁর মৃত্যুতে রহমান (আল্লাহ তা‘আলা) এর আরশ কেঁপে উঠেছিল। রুমায়ছা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন এ উক্তি করেন তখন আমি তাঁর এত নিকটে ছিলাম যে, ইচ্ছে করলে তাঁর মোহরে নবুওয়াত চুম্বন করতে পারতাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৩৬; মু‘জামুল কাবীর, হা/২০১৬৫; মা‘রেফাতুস সাহাবা, হা/৭০০৫।]
সেটি ছিল এক গুচ্ছ কেশের মতো :
عَنْ اَبِىْ زَيْدٍ عَمْرُو بْنُ اَخْطَبَ الْاَنْصَارِيُّ قَالَ : قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ : يَا اَبَا زَيْدٍ ، اُدْنُ مِنِّي فَامْسَحْ ظَهْرِيْ ، فَمَسَحْتُ ظَهْرَهٗ، فَوَقَعَتْ اَصَابِعِيْ عَلَى الْخَاتَمِ قُلْتُ : وَمَا الْخَاتَمُ ؟ قَالَ : شَعَرَاتٌ مُّجْتَمِعَاتٌ
১৫. আবু যায়েদ আমর বিন আখতাব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে আবু যায়েদ! আমার কাছে এসো এবং আমার পৃষ্ঠদেশে হাত বুলাও। তখন আমি তাঁর পিঠে হাত বুলাতে থাকলাম। এক পর্যায়ে আমার আঙ্গুলগুলো মোহরে নবুওয়াতের উপর লেগে গেল। বর্ণনাকারী আমর বিন আখতাব (রাঃ) কে বললেন, ‘খাতাম’ (মোহরে নবুওয়াত) কী জিনিস? তিনি বললেন, এক গুচ্ছ কেশ। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৪০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৯৮।]
সালমান ফারসি (রাঃ) মোহরে নবুওয়াত দেখে ঈমান এনেছিলেন :
عَنْ اَبِيْ بُرَيْدَةَ ، يَقُوْلُ : جَاءَ سَلْمَانُ الْفَارِسِيُّ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ حِيْنَ قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ بِمَائِدَةٍ عَلَيْهَا رُطَبٌ فَوَضَعَهَا بَيْنَ يَدَيْ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ : يَا سَلْمَانُ مَا هٰذَا ؟ فَقَالَ : صَدَقَةٌ عَلَيْكَ وَعَلٰى اَصْحَابِكَ ، فَقَالَ : اِرْفَعْهَا ، فَاِنَّا لَا نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ قَالَ : فَرَفَعَهَا ، فَجَاءَ الْغَدَ بِمِثْلِهٖ ، فَوَضَعَهٗ بَيْنَ يَدَيْ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ : مَا هٰذَا يَا سَلْمَانُ ؟ فَقَالَ : هَدِيَّةٌ لَّكَ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ لِاَصْحَابِهٖ : اُبْسُطُوْا . ثُمَّ نَظَرَ اِلَى الْخَاتَمِ عَلٰى ظَهْرِ رَسُوْلِ اللهِ فَاٰمَنَ بِهٖ وَكَانَ لِلْيَهُوْدِ فَاشْتَرَاهُ رَسُوْلُ اللهِ بِكَذَا وَكَذَا دِرْهَمًا عَلٰى اَنْ يَّغْرِسَ لَهُمْ نَخْلًا فَيَعْمَلَ سَلْمَانُ فِيْهِ حَتّٰى تُطْعِمَ فَغَرَسَ رَسُوْلُ اللهِ النَّخلَ اِلَّا نَخْلَةً وَّاحِدَةً غَرَسَهَا عُمَرُ فَحَمَلَتِ النَّخْلُ مِنْ عَامِهَا وَلَمْ تَحْمِلْ نَخْلَةٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَا شَأْنُ هٰذِهِ النَّخْلَةِ فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَنَا غَرَسْتُهَا فَنَزَعَهَا رَسُوْلُ اللهِ فَغَرَسَهَا فَحَمَلَتْ مِنْ عَامِهَا
১৬. আবু বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মদিনায় হিজরতের পর একবার সালমান ফারসী (রাঃ) একটি পাত্রে কিছু কাঁচা খেজুর নিয়ে এলেন এবং তিনি তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে সালমান! এগুলো কিসের খেজুর? (অর্থাৎ হাদিয়া না সাদাকা?) তিনি বললেন, এগুলো আপনার ও আপনার সাথীদের জন্য সাদাকা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এগুলো তুলে নাও। আমরা সাদাকা খাই না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিলেন। পরের দিন তিনি অনুরূপ খেজুর নিয়ে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে পেশ করেন। তখন তিনি বললেন, সালমান! এসব কিসের খেজুর? সালমান (রাঃ) বললেন, আপনার জন্য হাদিয়া। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা হস্ত প্রসারিত করো (হাদিয়া গ্রহণ করো)। এরপর সালমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পৃষ্ঠদেশে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পেলেন; অতঃপর ঈমান আনলেন।
(বর্ণনাকারী বলেন) সালমান (রাঃ) জনৈক ইয়াহুদির গোলাম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে এত এত দিরহামের বিনিময়ে এবং এ শর্তে খরিদ করেন যে, সালমান তাঁর ইয়াহুদি মনিবের জন্য একটি খেজুর বাগান করে দেবে এবং তাতে ফল আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধান করতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর নিজ হাতে একটি চারা ছাড়া সবগুলো রোপণ করলেন এবং একটি চারা গাছ ওমর (রাঃ) রোপণ করেছিলেন। সে বছরই সকল গাছেই খেজুর আসল কিন্তু একটি গাছে খেজুর আসল না। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ গাছটির এ অবস্থা কেন? উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি রোপণ করেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ চারাটি উপড়িয়ে আবার রোপণ করলেন। ফলে সে বছরই তাতে খেজুর আসল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৪৭; শারহুল মা‘আনী, হা/২৯৮৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৪০৭।]
ব্যাখ্যা : إِنَّا لَا نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ ‘আমরা সাদাকা ভক্ষণ করি না’ এ বাক্যের মধ্যে আমরা দ্বারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর ঐ সমস্ত আত্মীয়-স্বজনকে বুঝানো হয়েছে, যাদের জন্য সাদাকা খাওয়া হারাম।
এটি ছিল এক টুকরো বাড়তি গোশত :
عَنْ اَبِيْ نَضْرَةَ الْعَوَقِيِّ قَالَ : سَاَلْتُ اَبَا سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ عَنْ خَاتَمِ رَسُوْلِ اللهِ يَعْنِي خَاتَمَ النُّبُوَّةِ - فَقَالَ : كَانَ فِي ظَهْرِهٖ بَضْعَةٌ نَاشِزَةٌ
১৭. আবু নজর আওয়াকী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মোহরে নবুওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, তা ছিল তাঁর পৃষ্ঠদেশের উপর এক টুকরো বাড়তি গোশত। [জামেউস সগীর, হা/৮৯৩৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৯৩।]
এটি ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায়, আর এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক ছিল :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَرْجِسَ قَالَ : اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ وَهُوَ فِي نَاسٍ مِّنْ اَصْحَابِهٖ، فَدُرْتُ هٰكَذَا مِنْ خَلْفِهٖ ، فَعَرَفَ الَّذِي أُرِيْدُ ، فَاَلْقَى الرِّدَاءَ عَنْ ظَهْرِهٖ ، فَرَاَيْتُ مَوْضِعَ الْخَاتَمِ عَلٰى كَتِفَيْهِ مِثْلَ الْجُمْعِ حَوْلَهَا خِيْلَانٌ كَاَنَّهَا ثَاٰلِيْلُ ، فَرَجَعْتُ حَتّٰى اسْتَقْبَلْتُهٗ ، فَقُلْتُ : غَفَرَ اللهُ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ، فَقَالَ : وَلَكَ فَقَالَ الْقَوْمُ : اَسْتَغْفَرَ لَكَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ فَقَالَ : نَعَمْ ، وَلَكُمْ ، ثُمَّ تَلَا هٰذِهِ الْاٰيَةَ ﴿وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ﴾
১৮. আবদুল্লাহ ইবনে সারজিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর সাহাবীগণের মাঝে ঘুরতেছিলেন। এক পর্যায়ে আমি তাঁর পিছু ধরলাম। তিনি আমার মনোবাঞ্ছনা বুঝতে পেরে পিঠ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলেন। তখন আমি তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পাই। আর তা ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায় এবং এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক শোভা পাচ্ছিল। এরপর আমি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন তিনি বললেন, তোমাকেও ক্ষমা করুন। তারপর লোকে আমাকে বলতে লাগল, তুমি বড়ই সৌভাগ্যবান। রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমার মাগফিরাত কামনা করেছেন। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ- তিনি তোমাদের জন্যও দু‘আ করেছেন। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন-
﴿وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ﴾
(হে রাসূল!) আপনি আপনার জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯) [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৪৩২; মা‘রেফাতুস সাহাবা, হা/৩৭৩১।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ شَعْرِ رَسُوْلِ اللهِ
নবী ﷺ এর দু’কাঁধের মধ্যভাগে মোহরে নবুওয়াত ছিল :
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ يَقُوْلُ : ذَهَبَتْ بِي خَالَتِيْ اِلَى النَّبِيِّ فَقَالَتْ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنَّ ابْنَ أُخْتِي وَجِعٌ . فَمَسَحَ رَأْسِيْ وَدَعَا لِيْ بِالْبَرَكَةِ ، وَتَوَضَّاَ ، فَشَرِبْتُ مِنْ وَضُوْئِهٖ ، وَقُمْتُ خَلْفَ ظَهْرِهٖ ، فَنَظَرْتُ اِلَى الْخَاتَمِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ ، فَاِذَا هُوَ مِثْلُ زِرِّ الْحَجَلَةِ
১২. সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে গেলেন। এরপর তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগ্নে অসুস্থ। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু‘আ করলেন। তারপর তিনি ওযূ করলেন। আমি তাঁর ওযূর অবশিষ্ট পানি পান করলাম এবং তাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সহসা তাঁর দু’কাঁধের মধ্যস্থ মোহরে নবুওয়াতের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে, যা দেখতে পাখির (কবুতরের) ডিমের মতো। [সহীহ বুখারী, হা/১৯০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৩; মু‘জামুল কাবীর, হা/৬৫৪০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬২২; মিশকাত, হা/৪৭৬।]
তা ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিন্ড :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : رَاَيْتُ الْخَاتَمَ بَيْنَ كَتِفَيْ رَسُوْلِ اللهِ غُدَّةً حَمْرَاءَ مِثْلَ بَيْضَةِ الْحَمَامَةِ
১৩. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখেছি। আর তা যেন ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিন্ড। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০৩৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩০১; জামেউস সগীর, হা/৮৯৩৯; মিশকাত, হা/৫৭৭৯।]
সাহাবীগণ ইচ্ছে করলে মোহরে নবুওয়াতকে চুম্বন করতে পারতেন :
عَنْ رُمَيْثَةَ قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، وَلَوْ اَشَاءُ اَنْ أُقَبِّلَ الْخَاتَمَ الَّذِيْ بَيْنَ كَتِفَيْهِ مِنْ قُرْبِهٖ لَفَعَلْتُ ، يَقُوْلُ لِسَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ يَوْمَ مَاتَ : اهْتَزَّ لَهٗ عَرْشُ الرَّحْمٰنِ
১৪. রুমায়সা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা‘দ ইবনে মুয়ায (রাঃ) এর ওফাতের দিন আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তাঁর মৃত্যুতে রহমান (আল্লাহ তা‘আলা) এর আরশ কেঁপে উঠেছিল। রুমায়ছা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন এ উক্তি করেন তখন আমি তাঁর এত নিকটে ছিলাম যে, ইচ্ছে করলে তাঁর মোহরে নবুওয়াত চুম্বন করতে পারতাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৩৬; মু‘জামুল কাবীর, হা/২০১৬৫; মা‘রেফাতুস সাহাবা, হা/৭০০৫।]
সেটি ছিল এক গুচ্ছ কেশের মতো :
عَنْ اَبِىْ زَيْدٍ عَمْرُو بْنُ اَخْطَبَ الْاَنْصَارِيُّ قَالَ : قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ : يَا اَبَا زَيْدٍ ، اُدْنُ مِنِّي فَامْسَحْ ظَهْرِيْ ، فَمَسَحْتُ ظَهْرَهٗ، فَوَقَعَتْ اَصَابِعِيْ عَلَى الْخَاتَمِ قُلْتُ : وَمَا الْخَاتَمُ ؟ قَالَ : شَعَرَاتٌ مُّجْتَمِعَاتٌ
১৫. আবু যায়েদ আমর বিন আখতাব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে আবু যায়েদ! আমার কাছে এসো এবং আমার পৃষ্ঠদেশে হাত বুলাও। তখন আমি তাঁর পিঠে হাত বুলাতে থাকলাম। এক পর্যায়ে আমার আঙ্গুলগুলো মোহরে নবুওয়াতের উপর লেগে গেল। বর্ণনাকারী আমর বিন আখতাব (রাঃ) কে বললেন, ‘খাতাম’ (মোহরে নবুওয়াত) কী জিনিস? তিনি বললেন, এক গুচ্ছ কেশ। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৪০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৯৮।]
সালমান ফারসি (রাঃ) মোহরে নবুওয়াত দেখে ঈমান এনেছিলেন :
عَنْ اَبِيْ بُرَيْدَةَ ، يَقُوْلُ : جَاءَ سَلْمَانُ الْفَارِسِيُّ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ حِيْنَ قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ بِمَائِدَةٍ عَلَيْهَا رُطَبٌ فَوَضَعَهَا بَيْنَ يَدَيْ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ : يَا سَلْمَانُ مَا هٰذَا ؟ فَقَالَ : صَدَقَةٌ عَلَيْكَ وَعَلٰى اَصْحَابِكَ ، فَقَالَ : اِرْفَعْهَا ، فَاِنَّا لَا نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ قَالَ : فَرَفَعَهَا ، فَجَاءَ الْغَدَ بِمِثْلِهٖ ، فَوَضَعَهٗ بَيْنَ يَدَيْ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ : مَا هٰذَا يَا سَلْمَانُ ؟ فَقَالَ : هَدِيَّةٌ لَّكَ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ لِاَصْحَابِهٖ : اُبْسُطُوْا . ثُمَّ نَظَرَ اِلَى الْخَاتَمِ عَلٰى ظَهْرِ رَسُوْلِ اللهِ فَاٰمَنَ بِهٖ وَكَانَ لِلْيَهُوْدِ فَاشْتَرَاهُ رَسُوْلُ اللهِ بِكَذَا وَكَذَا دِرْهَمًا عَلٰى اَنْ يَّغْرِسَ لَهُمْ نَخْلًا فَيَعْمَلَ سَلْمَانُ فِيْهِ حَتّٰى تُطْعِمَ فَغَرَسَ رَسُوْلُ اللهِ النَّخلَ اِلَّا نَخْلَةً وَّاحِدَةً غَرَسَهَا عُمَرُ فَحَمَلَتِ النَّخْلُ مِنْ عَامِهَا وَلَمْ تَحْمِلْ نَخْلَةٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَا شَأْنُ هٰذِهِ النَّخْلَةِ فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَنَا غَرَسْتُهَا فَنَزَعَهَا رَسُوْلُ اللهِ فَغَرَسَهَا فَحَمَلَتْ مِنْ عَامِهَا
১৬. আবু বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মদিনায় হিজরতের পর একবার সালমান ফারসী (রাঃ) একটি পাত্রে কিছু কাঁচা খেজুর নিয়ে এলেন এবং তিনি তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে সালমান! এগুলো কিসের খেজুর? (অর্থাৎ হাদিয়া না সাদাকা?) তিনি বললেন, এগুলো আপনার ও আপনার সাথীদের জন্য সাদাকা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এগুলো তুলে নাও। আমরা সাদাকা খাই না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিলেন। পরের দিন তিনি অনুরূপ খেজুর নিয়ে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে পেশ করেন। তখন তিনি বললেন, সালমান! এসব কিসের খেজুর? সালমান (রাঃ) বললেন, আপনার জন্য হাদিয়া। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা হস্ত প্রসারিত করো (হাদিয়া গ্রহণ করো)। এরপর সালমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পৃষ্ঠদেশে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পেলেন; অতঃপর ঈমান আনলেন।
(বর্ণনাকারী বলেন) সালমান (রাঃ) জনৈক ইয়াহুদির গোলাম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে এত এত দিরহামের বিনিময়ে এবং এ শর্তে খরিদ করেন যে, সালমান তাঁর ইয়াহুদি মনিবের জন্য একটি খেজুর বাগান করে দেবে এবং তাতে ফল আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধান করতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর নিজ হাতে একটি চারা ছাড়া সবগুলো রোপণ করলেন এবং একটি চারা গাছ ওমর (রাঃ) রোপণ করেছিলেন। সে বছরই সকল গাছেই খেজুর আসল কিন্তু একটি গাছে খেজুর আসল না। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ গাছটির এ অবস্থা কেন? উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি রোপণ করেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ চারাটি উপড়িয়ে আবার রোপণ করলেন। ফলে সে বছরই তাতে খেজুর আসল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৪৭; শারহুল মা‘আনী, হা/২৯৮৬; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৪০৭।]
ব্যাখ্যা : إِنَّا لَا نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ ‘আমরা সাদাকা ভক্ষণ করি না’ এ বাক্যের মধ্যে আমরা দ্বারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর ঐ সমস্ত আত্মীয়-স্বজনকে বুঝানো হয়েছে, যাদের জন্য সাদাকা খাওয়া হারাম।
এটি ছিল এক টুকরো বাড়তি গোশত :
عَنْ اَبِيْ نَضْرَةَ الْعَوَقِيِّ قَالَ : سَاَلْتُ اَبَا سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ عَنْ خَاتَمِ رَسُوْلِ اللهِ يَعْنِي خَاتَمَ النُّبُوَّةِ - فَقَالَ : كَانَ فِي ظَهْرِهٖ بَضْعَةٌ نَاشِزَةٌ
১৭. আবু নজর আওয়াকী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মোহরে নবুওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, তা ছিল তাঁর পৃষ্ঠদেশের উপর এক টুকরো বাড়তি গোশত। [জামেউস সগীর, হা/৮৯৩৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৯৩।]
এটি ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায়, আর এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক ছিল :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَرْجِسَ قَالَ : اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ وَهُوَ فِي نَاسٍ مِّنْ اَصْحَابِهٖ، فَدُرْتُ هٰكَذَا مِنْ خَلْفِهٖ ، فَعَرَفَ الَّذِي أُرِيْدُ ، فَاَلْقَى الرِّدَاءَ عَنْ ظَهْرِهٖ ، فَرَاَيْتُ مَوْضِعَ الْخَاتَمِ عَلٰى كَتِفَيْهِ مِثْلَ الْجُمْعِ حَوْلَهَا خِيْلَانٌ كَاَنَّهَا ثَاٰلِيْلُ ، فَرَجَعْتُ حَتّٰى اسْتَقْبَلْتُهٗ ، فَقُلْتُ : غَفَرَ اللهُ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ، فَقَالَ : وَلَكَ فَقَالَ الْقَوْمُ : اَسْتَغْفَرَ لَكَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ فَقَالَ : نَعَمْ ، وَلَكُمْ ، ثُمَّ تَلَا هٰذِهِ الْاٰيَةَ ﴿وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ﴾
১৮. আবদুল্লাহ ইবনে সারজিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর সাহাবীগণের মাঝে ঘুরতেছিলেন। এক পর্যায়ে আমি তাঁর পিছু ধরলাম। তিনি আমার মনোবাঞ্ছনা বুঝতে পেরে পিঠ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলেন। তখন আমি তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পাই। আর তা ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায় এবং এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক শোভা পাচ্ছিল। এরপর আমি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন তিনি বললেন, তোমাকেও ক্ষমা করুন। তারপর লোকে আমাকে বলতে লাগল, তুমি বড়ই সৌভাগ্যবান। রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমার মাগফিরাত কামনা করেছেন। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ- তিনি তোমাদের জন্যও দু‘আ করেছেন। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন-
﴿وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ﴾
(হে রাসূল!) আপনি আপনার জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯) [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১৪৩২; মা‘রেফাতুস সাহাবা, হা/৩৭৩১।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ شَعْرِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল দু’কানের মধ্যভাগ পর্যন্ত লম্বা ছিল :
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ شَعْرُ رَسُوْلِ اللهِ اِلٰى نِصْفِ أُذُنَيْهِ
১৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল দু’কানের মধ্যভাগ পর্যন্ত লম্বা ছিল। [নাসাঈ, হা/৫২৩৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৩৮।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ اَغْتَسِلُ اَنَا وَرَسُولُ اللهِ مِنْ اِنَاءٍ وَّاحِدٍ ، وَكَانَ لَهٗ شَعْرٌ فَوْقَ الْجُمَّةِ وَدُوْنَ الْوَفْرَةِ
২০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ একত্রে একই পাত্রের পানি দ্বারা গোসল করতাম। আর তাঁর চুল কানের লতি এবং মধ্যবর্তী স্থান বরাবর লম্বা ছিল। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৩৭; মিশকাত, হা/৪৪৬০।]
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ مَرْبُوْعًا ، بَعِيْدَ مَا بَيْنَ الْمِنْكَبَيْنِ ، وَكَانَتْ جُمَّتُهٗ تَضْرِبُ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ
২১. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মধ্যমাকৃতির দেহবিশিষ্ট ছিলেন। তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬২১০; আবু দাউদ, হা/৪০৭৪; নাসাঈ, হা/৫২৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪৯৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৮৪; মিশকাত, হা/৫৭৮৩।]
তাঁর চুল সামান্য কোঁকড়ানো ছিল :
عَنْ قَتَادَةَ قَالَ : قُلْتُ لِاَنَسٍ : كَيْفَ كَانَ شَعْرُ رَسُوْلِ اللهِ ؟ قَالَ : لَمْ يَكُنْ بِالْجَعْدِ وَلَا بِالسَّبْطِ ، كَانَ يَبْلُغُ شَعْرُهٗ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ
২২. কাতাদা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কেশ কেমন ছিল সে সম্পর্কে আমি আনাস (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, তিনি অত্যাধিক কোঁকড়ানো কিংবা একেবারে সোজা কেশবিশিষ্ট ছিলেন না। তাঁর কেশ উভয় কানের লতি পর্যন্ত শোভা পেত। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৩; নাসাঈ, হা/৫০৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৯১।]
তিনি চুলের মধ্যে বেণী বাঁধতেন :
عَنْ أُمِّ هَانِئٍ بِنْتِ اَبِي طَالِبٍ ، قَالَتْ : قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ مَكَّةَ قَدْمَةً وَلَهٗ اَرْبَعُ غَدَائِرَ
২৩. উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ চারটি চুলের বেণী নিয়ে মক্কায় আগমন করেছিলেন। [আবু দাউদ, হা/৪১৯৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৯৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৫৫৭৩; মিশকাত, হা/৪৪৪৬।]
ব্যাখ্যা : উল্লেখিত হাদীসে বেণী বা ঝুটি বলতে মহিলাদের মতো বেণী বা ঝুটি উদ্দেশ্য নয়। বরং এর দ্বারা বিশেষ ধরনের চুলের পরিপাটির উদ্দেশ্য। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ পুরুষদেরকে মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ شَعْرَ رَسُوْلِ اللهِ كَانَ اِلٰى اَنْصَافِ أُذُنَيْهِ
২৪. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল তাঁর দু’কানের মাঝামাঝি পর্যন্ত লম্বা ছিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৫; আবু দাউদ, হা/৪১৮৮; নাসাঈ, হা/৫০৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৩৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ চুলের মধ্যে সিঁথি করতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُسْدِلُ شَعْرَهٗ ، وَكَانَ الْمُشْرِكُوْنَ يَفْرِقُوْنَ رُءُوْسَهُمْ ، وَكَانَ اَهْلُ الْكِتَابِ يُسْدِلُوْنَ رُءُوسَهُمْ ، وَكَانَ يُحِبُّ مُوَافَقَةَ اَهْلِ الْكِتَابِ فِيْمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيْهِ بِشَيْءٍ ، ثُمَّ فَرَقَ رَسُوْلُ اللهِ رَأْسَهٗ
২৫. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কেশ নিম্নদেশে ঝুলিয়ে রাখতেন (অর্থাৎ প্রথমদিকে তিনি সিঁথি করতেন না)। আর মুশরিকরা তাদের মাথায় সিঁথি করত। পক্ষান্তরে আহলে কিতাব তাদের মাথার চুল ঝুলিয়ে রাখত। প্রথমদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে ব্যাপারে প্রত্যাদেশ না পেতেন, সেসব ব্যাপারে আহলে কিতাবদের অনুসরণ পছন্দ করতেন। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কেশকে সিঁথি করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫৮; নাসাঈ, হা/৫২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৫।]
عَنْ أُمِّ هَانِئٍ ، قَالَتْ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ذَا ضَفَائِرَ اَرْبَعٍ
২৬. উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে আমি চুলের চারটি বেণী বাঁধা অবস্থায় দেখেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৪৩০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০৪৮৩।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ تَرَجُّلِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ شَعْرُ رَسُوْلِ اللهِ اِلٰى نِصْفِ أُذُنَيْهِ
১৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল দু’কানের মধ্যভাগ পর্যন্ত লম্বা ছিল। [নাসাঈ, হা/৫২৩৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৩৮।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ اَغْتَسِلُ اَنَا وَرَسُولُ اللهِ مِنْ اِنَاءٍ وَّاحِدٍ ، وَكَانَ لَهٗ شَعْرٌ فَوْقَ الْجُمَّةِ وَدُوْنَ الْوَفْرَةِ
২০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ একত্রে একই পাত্রের পানি দ্বারা গোসল করতাম। আর তাঁর চুল কানের লতি এবং মধ্যবর্তী স্থান বরাবর লম্বা ছিল। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৩৭; মিশকাত, হা/৪৪৬০।]
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ مَرْبُوْعًا ، بَعِيْدَ مَا بَيْنَ الْمِنْكَبَيْنِ ، وَكَانَتْ جُمَّتُهٗ تَضْرِبُ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ
২১. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মধ্যমাকৃতির দেহবিশিষ্ট ছিলেন। তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬২১০; আবু দাউদ, হা/৪০৭৪; নাসাঈ, হা/৫২৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪৯৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৮৪; মিশকাত, হা/৫৭৮৩।]
তাঁর চুল সামান্য কোঁকড়ানো ছিল :
عَنْ قَتَادَةَ قَالَ : قُلْتُ لِاَنَسٍ : كَيْفَ كَانَ شَعْرُ رَسُوْلِ اللهِ ؟ قَالَ : لَمْ يَكُنْ بِالْجَعْدِ وَلَا بِالسَّبْطِ ، كَانَ يَبْلُغُ شَعْرُهٗ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ
২২. কাতাদা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কেশ কেমন ছিল সে সম্পর্কে আমি আনাস (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, তিনি অত্যাধিক কোঁকড়ানো কিংবা একেবারে সোজা কেশবিশিষ্ট ছিলেন না। তাঁর কেশ উভয় কানের লতি পর্যন্ত শোভা পেত। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৩; নাসাঈ, হা/৫০৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৯১।]
তিনি চুলের মধ্যে বেণী বাঁধতেন :
عَنْ أُمِّ هَانِئٍ بِنْتِ اَبِي طَالِبٍ ، قَالَتْ : قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ مَكَّةَ قَدْمَةً وَلَهٗ اَرْبَعُ غَدَائِرَ
২৩. উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ চারটি চুলের বেণী নিয়ে মক্কায় আগমন করেছিলেন। [আবু দাউদ, হা/৪১৯৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৯৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৫৫৭৩; মিশকাত, হা/৪৪৪৬।]
ব্যাখ্যা : উল্লেখিত হাদীসে বেণী বা ঝুটি বলতে মহিলাদের মতো বেণী বা ঝুটি উদ্দেশ্য নয়। বরং এর দ্বারা বিশেষ ধরনের চুলের পরিপাটির উদ্দেশ্য। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ পুরুষদেরকে মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ شَعْرَ رَسُوْلِ اللهِ كَانَ اِلٰى اَنْصَافِ أُذُنَيْهِ
২৪. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল তাঁর দু’কানের মাঝামাঝি পর্যন্ত লম্বা ছিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৫; আবু দাউদ, হা/৪১৮৮; নাসাঈ, হা/৫০৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৩৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ চুলের মধ্যে সিঁথি করতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُسْدِلُ شَعْرَهٗ ، وَكَانَ الْمُشْرِكُوْنَ يَفْرِقُوْنَ رُءُوْسَهُمْ ، وَكَانَ اَهْلُ الْكِتَابِ يُسْدِلُوْنَ رُءُوسَهُمْ ، وَكَانَ يُحِبُّ مُوَافَقَةَ اَهْلِ الْكِتَابِ فِيْمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيْهِ بِشَيْءٍ ، ثُمَّ فَرَقَ رَسُوْلُ اللهِ رَأْسَهٗ
২৫. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কেশ নিম্নদেশে ঝুলিয়ে রাখতেন (অর্থাৎ প্রথমদিকে তিনি সিঁথি করতেন না)। আর মুশরিকরা তাদের মাথায় সিঁথি করত। পক্ষান্তরে আহলে কিতাব তাদের মাথার চুল ঝুলিয়ে রাখত। প্রথমদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে ব্যাপারে প্রত্যাদেশ না পেতেন, সেসব ব্যাপারে আহলে কিতাবদের অনুসরণ পছন্দ করতেন। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কেশকে সিঁথি করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫৮; নাসাঈ, হা/৫২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৫।]
عَنْ أُمِّ هَانِئٍ ، قَالَتْ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ذَا ضَفَائِرَ اَرْبَعٍ
২৬. উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে আমি চুলের চারটি বেণী বাঁধা অবস্থায় দেখেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৪৩০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০৪৮৩।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ تَرَجُّلِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ মাথার কেশ পরিপাটি করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ أُرَجِّلُ رَأْسَ رَسُوْلِ اللهِ وَاَنَا حَائِضٌ
২৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হায়েয (ঋতুবতী) অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার কেশ পরিপাটি করতাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩; সহীহ বুখারী, হা/২৯৫; নাসাঈ, হা/২৭৭; মু‘জামুল আওসাত, হা/২০৬৬; দারেমী, হা/১০৫৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩৫৯; মিশকাত, হা/৪৪১৯।]
তিনি ডান দিক থেকে কেশ বিন্যাস করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : اِنْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيُحِبُّ التَّيَمُّنَ فِيْ طُهُوْرِهٖ اِذَا تَطَهَّرَ ، وَفِيْ تَرَجُّلِهٖ اِذَا تَرَجَّلَ ، وَفِي اِنْتِعَالِهٖ اِذَا انْتَعَلَ
২৮. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ওযূ করতেন তখন ডান দিক থেকে শুরু করতেন, কেশ বিন্যাস ও জুতা পরিধানের কাজও ডান দিক থেকে আরম্ভ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/৪০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৭০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮৫১।]
ব্যাখ্যা : হাদীসে উল্লেখিত বিষয়গুলোই নয়; বরং যেসব কাজে সৌন্দর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, সেসব কাজ ডান দিকে হতে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমন- জামা বা মোজা পরিধান করার সময় ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দনীয়। কারণ এর দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এমনিভাবে মসজিদে প্রবেশ করার সময় ডান পা প্রথমে দেবে। কারণ মসজিদে প্রবেশ করা মর্যাদার বিষয়। আর যেসব কাজে সৌনদর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় না, সেসব কাজ বাম দিক থেকে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমন- পায়খানায় প্রবেশের সময় বাম পা আগে দেয়া, কাপড় ও জুতা খোলার সময় বাম পার্শ্ব হতে খুলা আরম্ভ করা এবং মসজিদ হতে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে বের করা। আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মূলনীতি হিসেবে গণ্য হবে।
তিনি প্রত্যহ কেশ বিন্যাস করতে নিষেধ করেছেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ ، قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ عنِ التَّرَجُّلِ اِلَّا غِبًّا
২৯. আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যহ (বারবার) কেশ বিন্যাস করতে নিষেধ করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৪১৬১; নাসাঈ, হা/৫০৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৮৩৯; মু‘জামুল কাবীর, হা/১৬৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৪৮৪; জামেউস সগীর, হা/১২৮২৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫০১; মিশকাত, হা/৪৪৪৮।]
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে নিষেধ করেছেন। তিনি কখনো প্রয়োজনে বারবার চুল আঁচড়াতেন। আবার কখনো প্রয়োজন মনে না করলে আঁচড়াতেন না। মোটকথা মাথা আঁচড়ানোর ক্ষেত্রে করণীয় হলো মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা।
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ شَيْبِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ أُرَجِّلُ رَأْسَ رَسُوْلِ اللهِ وَاَنَا حَائِضٌ
২৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হায়েয (ঋতুবতী) অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার কেশ পরিপাটি করতাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩; সহীহ বুখারী, হা/২৯৫; নাসাঈ, হা/২৭৭; মু‘জামুল আওসাত, হা/২০৬৬; দারেমী, হা/১০৫৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩৫৯; মিশকাত, হা/৪৪১৯।]
তিনি ডান দিক থেকে কেশ বিন্যাস করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : اِنْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيُحِبُّ التَّيَمُّنَ فِيْ طُهُوْرِهٖ اِذَا تَطَهَّرَ ، وَفِيْ تَرَجُّلِهٖ اِذَا تَرَجَّلَ ، وَفِي اِنْتِعَالِهٖ اِذَا انْتَعَلَ
২৮. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ওযূ করতেন তখন ডান দিক থেকে শুরু করতেন, কেশ বিন্যাস ও জুতা পরিধানের কাজও ডান দিক থেকে আরম্ভ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/৪০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৭০৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮৫১।]
ব্যাখ্যা : হাদীসে উল্লেখিত বিষয়গুলোই নয়; বরং যেসব কাজে সৌন্দর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, সেসব কাজ ডান দিকে হতে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমন- জামা বা মোজা পরিধান করার সময় ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দনীয়। কারণ এর দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এমনিভাবে মসজিদে প্রবেশ করার সময় ডান পা প্রথমে দেবে। কারণ মসজিদে প্রবেশ করা মর্যাদার বিষয়। আর যেসব কাজে সৌনদর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় না, সেসব কাজ বাম দিক থেকে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমন- পায়খানায় প্রবেশের সময় বাম পা আগে দেয়া, কাপড় ও জুতা খোলার সময় বাম পার্শ্ব হতে খুলা আরম্ভ করা এবং মসজিদ হতে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে বের করা। আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মূলনীতি হিসেবে গণ্য হবে।
তিনি প্রত্যহ কেশ বিন্যাস করতে নিষেধ করেছেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ ، قَالَ : نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ عنِ التَّرَجُّلِ اِلَّا غِبًّا
২৯. আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যহ (বারবার) কেশ বিন্যাস করতে নিষেধ করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৪১৬১; নাসাঈ, হা/৫০৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৮৩৯; মু‘জামুল কাবীর, হা/১৬৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৪৮৪; জামেউস সগীর, হা/১২৮২৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫০১; মিশকাত, হা/৪৪৪৮।]
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে নিষেধ করেছেন। তিনি কখনো প্রয়োজনে বারবার চুল আঁচড়াতেন। আবার কখনো প্রয়োজন মনে না করলে আঁচড়াতেন না। মোটকথা মাথা আঁচড়ানোর ক্ষেত্রে করণীয় হলো মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা।
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ شَيْبِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চোখ ও দু’কানের মধ্যবর্তী অংশের কিছু চুল সাদা হয়েছিল :
عَنْ قَتَادَةَ قَالَ : قُلْتُ لِاَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : هَلْ خَضَبَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قَالَ : لَمْ يَبْلُغْ ذٰلِكَ ، اِنَّمَا كَانَ شَيْبًا فِي صُدْغَيْهِ وَلٰكِنْ اَبُو بَكْرٍ ، خَضَبَ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ
৩০. কাতাদা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি খিযাব ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, তিনি ঐ পর্যন্ত পৌঁছেন নি। (তাঁর দাঁড়ি ও চুল এতদূর সাদা হয়নি, যাতে খেযাবের প্রয়োজন হয়)। কেবলমাত্র তাঁর চোখ ও দু’কানের মধ্যবর্তী অংশের কিছু চুল সাদা হয়েছিল। তবে আবু বকর (রাঃ) মেহেদী পাতা ও কাতাম [কাতাম এক ধরণের সবুজ রঙের উদ্ভিদ। এটা দ্বারা খিযাব তৈরি করা হয়।] দ্বারা খিযাব লাগাতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৮৫১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৭৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২৮৯৩।]
তাঁর মাথা ও দাড়িতে মাত্র ১৪টি সাদা চুল ছিল :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : مَا عَدَدْتُ فِي رَأْسِ رَسُوْلِ اللهِ وَلِحْيَتِهٖ اِلَّا اَرْبَعَ عَشْرَةَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
৩১. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথা ও দাড়িতে মাত্র ১৪টি সাদা চুল গণনা করেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭১৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৫৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৯৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/২০১৮৫।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অতি স্বল্প পরিমাণ সাদা চুল ছিল। তবে এর পরিমাণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ হাদীসে ১৪টির কথা বলা হয়েছে। আর কোন বর্ণনায় ১৭টি, কোন বর্ণনায় ১৮টি, আবার কোন বর্ণনায় ২০টির কথা উল্লেখ রয়েছে। আসলে এসব বর্ণনাতে কোন বৈপরিত্য নেই। কারণ প্রত্যেকটি বর্ণনা আলাদা সময়ের সাথে অথবা বিভিন্ন জনের গণনার পার্থক্যের কারণে এ বৈপরিত্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রত্যেক রিওয়ায়াতের উদ্দেশ্য হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাদা চুল স্বল্প ছিল, এটাই বুঝানো।
মাথায় তৈল ব্যবহার করলে সাদা চুল দেখা যেত না :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ ، وَقَدْ سُئِلَ عَنْ شَيْبِ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ : كَانَ اِذَا دَهَنَ رَأْسَهٗ لَمْ يُرَ مِنْهُ شَيْبٌ ، وَاِذَا لَمْ يَدْهِنْ رُئِيَ مِنْهُ
৩২. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাদা চুল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাঁর মাথায় তৈল ব্যবহার করতেন তখন সাদা চুল দেখা যেত না। পক্ষান্তরে তৈল ব্যবহার না করলে কয়েক গাছি চুল সাদা হয়েছে বলে মনে হতো। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২২৯; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৯৩৪৫।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : اِنَّمَا كَانَ شَيْبُ رَسُوْلِ اللهِ نَحْوًا مِنْ عِشْرِيْنَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
৩৩. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাদা চুলের সংখ্যা ছিল ২০ এর কাছাকাছি। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৬৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৬৪।]
কায়েকটি সূরার প্রভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ اَبُو بَكْرٍ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : شَيَّبَتْنِي هُوْدٌ ، وَالْوَاقِعَةُ ، وَالْمُرْسَلَاتُ ، وَعَمَّ يَتَسَاءَلُوْنَ ، وَاِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
৩৪. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চুল তো সাদা হয়ে গিয়েছে। আপনি বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সূরা হূদ, ওয়াক্বিয়া, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসা-আলূন, ইযাশ-শামসু কুভভিরাত আমাকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৭৫; জামেউস সগীর, হা/৬০৩৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯৫৫।]
عَنْ اَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ : قَالُوا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، نَرَاكَ قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : قَدْ شَيَّبَتْنِي هُوْدٌ وَاَخَوَاتُهَا
৩৫. আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার বয়োবৃদ্ধ হওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন লক্ষ্য করছি। তিনি বললেন, হুদ এবং তদানুরূপ সূরাগুলো আমাকে বার্ধক্যে উপণীত করেছে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৭৭৪; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৮৮০; মিশকাত, হা/৫৩৫৩।]
ব্যাখ্যা : أَخَوَاتُهَا -এর দ্বারা ঐসব সূরা উদ্দেশ্য, যাতে কিয়ামত, জাহান্নাম প্রভৃতি ভীতিপ্রদর্শন বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে।
তাঁর চুল সাদা হলেও লাল মনে হতো :
عَنْ اَبِيْ رِمْثَةَ التَّيْمِيِّ قَالَ : اَتَيْتُ النَّبِيَّ وَمَعِي ابْنٌ لِيْ ، قَالَ : فَاَرَيْتُهٗ ، فَقُلْتُ لَمَّا رَاَيْتُهٗ : هٰذَا نَبِيُّ اللهِ وَعَلَيْهِ ثَوْبَانِ اَخْضَرَانِ ، وَلَهٗ شَعْرٌ قَدْ عَلَاهُ الشَّيْبُ ، وَشَيْبُهٗ اَحْمَرُ
৩৬. তায়মুর রাবাব গোত্রের আবু রিমছা আত-তায়মী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আমার ছেলেকে নিয়ে নবী ﷺ এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, আমার ছেলেকে তাঁকে দেখালাম। তারপর যখন তাঁকে দেখলাম তখন বললাম, ইনি আল্লাহর নবী। সে সময় তাঁর পরনে ২টি সবুজ রঙের কাপড় ছিল। তাঁর চুল সাদা দেখা যাচ্ছিল কিন্তু মনে হচ্ছিল লাল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১১১; মু‘জামুল কাবীর, হা/১৮১৭৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২০৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৯১; মিশকাত, হা/৪৩৫৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সিঁথি কাটার স্থানে কয়েকটি চুল সাদা ছিল :
عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ قَالَ : قِيلَ لِجَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ : اَكَانَ فِي رَأْسِ رَسُوْلِ اللهِ شَيْبٌ ؟ قَالَ : لَمْ يَكُنْ فِي رَأْسِ رَسُوْلِ اللهِ شَيْبٌ اِلَّا شَعَرَاتٌ فِي مَفْرِقِ رَأْسِهٖ ، اِذَا اِدَّهَنَ وَارَاهُنَّ الدُّهْنُ
৩৭. সিমাক ইবনে হারব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথায় সাদা (পাকা) চুল ছিল কি? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সিঁথি কাটার স্থানে কেবল কয়েকটি সাদা চুল শোভা পাচ্ছিল। এ চুলগুলোতে তৈল ব্যবহার করা হলে সাদা ঢেকে যেত। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০৩০; মু‘জামুল কাবীর, হা/১৯৩০।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ خِضَابِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ قَتَادَةَ قَالَ : قُلْتُ لِاَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : هَلْ خَضَبَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قَالَ : لَمْ يَبْلُغْ ذٰلِكَ ، اِنَّمَا كَانَ شَيْبًا فِي صُدْغَيْهِ وَلٰكِنْ اَبُو بَكْرٍ ، خَضَبَ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ
৩০. কাতাদা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি খিযাব ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, তিনি ঐ পর্যন্ত পৌঁছেন নি। (তাঁর দাঁড়ি ও চুল এতদূর সাদা হয়নি, যাতে খেযাবের প্রয়োজন হয়)। কেবলমাত্র তাঁর চোখ ও দু’কানের মধ্যবর্তী অংশের কিছু চুল সাদা হয়েছিল। তবে আবু বকর (রাঃ) মেহেদী পাতা ও কাতাম [কাতাম এক ধরণের সবুজ রঙের উদ্ভিদ। এটা দ্বারা খিযাব তৈরি করা হয়।] দ্বারা খিযাব লাগাতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৮৫১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৭৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২৮৯৩।]
তাঁর মাথা ও দাড়িতে মাত্র ১৪টি সাদা চুল ছিল :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : مَا عَدَدْتُ فِي رَأْسِ رَسُوْلِ اللهِ وَلِحْيَتِهٖ اِلَّا اَرْبَعَ عَشْرَةَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
৩১. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথা ও দাড়িতে মাত্র ১৪টি সাদা চুল গণনা করেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭১৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৫৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৯৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/২০১৮৫।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অতি স্বল্প পরিমাণ সাদা চুল ছিল। তবে এর পরিমাণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ হাদীসে ১৪টির কথা বলা হয়েছে। আর কোন বর্ণনায় ১৭টি, কোন বর্ণনায় ১৮টি, আবার কোন বর্ণনায় ২০টির কথা উল্লেখ রয়েছে। আসলে এসব বর্ণনাতে কোন বৈপরিত্য নেই। কারণ প্রত্যেকটি বর্ণনা আলাদা সময়ের সাথে অথবা বিভিন্ন জনের গণনার পার্থক্যের কারণে এ বৈপরিত্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রত্যেক রিওয়ায়াতের উদ্দেশ্য হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাদা চুল স্বল্প ছিল, এটাই বুঝানো।
মাথায় তৈল ব্যবহার করলে সাদা চুল দেখা যেত না :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ ، وَقَدْ سُئِلَ عَنْ شَيْبِ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ : كَانَ اِذَا دَهَنَ رَأْسَهٗ لَمْ يُرَ مِنْهُ شَيْبٌ ، وَاِذَا لَمْ يَدْهِنْ رُئِيَ مِنْهُ
৩২. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাদা চুল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাঁর মাথায় তৈল ব্যবহার করতেন তখন সাদা চুল দেখা যেত না। পক্ষান্তরে তৈল ব্যবহার না করলে কয়েক গাছি চুল সাদা হয়েছে বলে মনে হতো। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২২৯; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৯৩৪৫।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : اِنَّمَا كَانَ شَيْبُ رَسُوْلِ اللهِ نَحْوًا مِنْ عِشْرِيْنَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
৩৩. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাদা চুলের সংখ্যা ছিল ২০ এর কাছাকাছি। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৬৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৬৪।]
কায়েকটি সূরার প্রভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ اَبُو بَكْرٍ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : شَيَّبَتْنِي هُوْدٌ ، وَالْوَاقِعَةُ ، وَالْمُرْسَلَاتُ ، وَعَمَّ يَتَسَاءَلُوْنَ ، وَاِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
৩৪. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চুল তো সাদা হয়ে গিয়েছে। আপনি বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সূরা হূদ, ওয়াক্বিয়া, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসা-আলূন, ইযাশ-শামসু কুভভিরাত আমাকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৭৫; জামেউস সগীর, হা/৬০৩৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯৫৫।]
عَنْ اَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ : قَالُوا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، نَرَاكَ قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : قَدْ شَيَّبَتْنِي هُوْدٌ وَاَخَوَاتُهَا
৩৫. আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার বয়োবৃদ্ধ হওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন লক্ষ্য করছি। তিনি বললেন, হুদ এবং তদানুরূপ সূরাগুলো আমাকে বার্ধক্যে উপণীত করেছে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৭৭৪; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৮৮০; মিশকাত, হা/৫৩৫৩।]
ব্যাখ্যা : أَخَوَاتُهَا -এর দ্বারা ঐসব সূরা উদ্দেশ্য, যাতে কিয়ামত, জাহান্নাম প্রভৃতি ভীতিপ্রদর্শন বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে।
তাঁর চুল সাদা হলেও লাল মনে হতো :
عَنْ اَبِيْ رِمْثَةَ التَّيْمِيِّ قَالَ : اَتَيْتُ النَّبِيَّ وَمَعِي ابْنٌ لِيْ ، قَالَ : فَاَرَيْتُهٗ ، فَقُلْتُ لَمَّا رَاَيْتُهٗ : هٰذَا نَبِيُّ اللهِ وَعَلَيْهِ ثَوْبَانِ اَخْضَرَانِ ، وَلَهٗ شَعْرٌ قَدْ عَلَاهُ الشَّيْبُ ، وَشَيْبُهٗ اَحْمَرُ
৩৬. তায়মুর রাবাব গোত্রের আবু রিমছা আত-তায়মী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আমার ছেলেকে নিয়ে নবী ﷺ এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, আমার ছেলেকে তাঁকে দেখালাম। তারপর যখন তাঁকে দেখলাম তখন বললাম, ইনি আল্লাহর নবী। সে সময় তাঁর পরনে ২টি সবুজ রঙের কাপড় ছিল। তাঁর চুল সাদা দেখা যাচ্ছিল কিন্তু মনে হচ্ছিল লাল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১১১; মু‘জামুল কাবীর, হা/১৮১৭৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২০৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৯১; মিশকাত, হা/৪৩৫৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সিঁথি কাটার স্থানে কয়েকটি চুল সাদা ছিল :
عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ قَالَ : قِيلَ لِجَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ : اَكَانَ فِي رَأْسِ رَسُوْلِ اللهِ شَيْبٌ ؟ قَالَ : لَمْ يَكُنْ فِي رَأْسِ رَسُوْلِ اللهِ شَيْبٌ اِلَّا شَعَرَاتٌ فِي مَفْرِقِ رَأْسِهٖ ، اِذَا اِدَّهَنَ وَارَاهُنَّ الدُّهْنُ
৩৭. সিমাক ইবনে হারব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথায় সাদা (পাকা) চুল ছিল কি? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সিঁথি কাটার স্থানে কেবল কয়েকটি সাদা চুল শোভা পাচ্ছিল। এ চুলগুলোতে তৈল ব্যবহার করা হলে সাদা ঢেকে যেত। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০৩০; মু‘জামুল কাবীর, হা/১৯৩০।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ خِضَابِ رَسُوْلِ اللهِ
খিযাব ( خِضَابِ ) পরিচিতি : এটা আরবী শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ, রন্ধন বা রং করার পদার্থ, যার দ্বারা রং করা হয়। আর শব্দটির ক্রিয়ামূল হিসেবে অর্থ করলে অর্থ হবে রং করা। পরিভাষায় মেহেদী কিংবা কোন প্রকার উদ্ভিদ, যা দ্বারা দাড়ি-চুল রঙ্গিন করাকে বুঝায়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ খিযাব ব্যবহার করতেন :
عَنْ اَبِىْ رِمْثَةَ قَالَ : اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ مَعَ ابْنٍ لِيْ ، فَقَالَ : اِبْنُكَ هٰذَا ؟ فَقُلْتُ : نَعَمْ اَشْهَدُ بِهٖ، قَالَ : لَا يَجْنِيْ عَلَيْكَ ، وَلَا تَجْنِيْ عَلَيْهِ قَالَ : وَرَاَيْتُ الشَّيْبَ اَحْمَرَ
৩৮. আবু রিমসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার আমার ছেলেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এলাম। তিনি তখন জিজ্ঞেস করলেন, এ ছেলেটি কি তোমার? আমি বললাম, জি- হ্যাঁ। আপনি যদি এর সাক্ষী থাকতেন! তিনি বললেন, সে অপরাধ করলে তা তোমার উপর বর্তাবে না এবং তুমি অপরাধ করলে তার উপর বর্তাবে না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি তাঁর কেশ লাল দেখলাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১১৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৫৭।]
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ مَوْهَبٍ قَالَ : سُئِلَ اَبُوْ هُرَيْرَةَ : هَلْ خَضَبَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قَالَ : نَعَمْ
৩৯. উসমান ইবনে মাওহাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি খিযাব ব্যবহার করতেন? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ। [তাহযীবুল আছার, হা/ ৯১৩।]
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : رَاَيْتُ شَعْرَ رَسُوْلِ اللهِ مَخْضُوْبًا
৪০. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল খিযাবকৃত দেখেছি।
ব্যাখ্যা : কালো খিযাব ব্যবহার করা জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শেষ যামানায় এমন লোক পাওয়া যাবে, যারা কালো খিযাব বা কলপ ব্যবহার করবে। তারা জানণাতের সুঘ্রানও পাবে না। [আবু দাউদ, হা/৪২১৪; নাসাঈ, হা/৫০৭৫।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ كُحْلِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ খিযাব ব্যবহার করতেন :
عَنْ اَبِىْ رِمْثَةَ قَالَ : اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ مَعَ ابْنٍ لِيْ ، فَقَالَ : اِبْنُكَ هٰذَا ؟ فَقُلْتُ : نَعَمْ اَشْهَدُ بِهٖ، قَالَ : لَا يَجْنِيْ عَلَيْكَ ، وَلَا تَجْنِيْ عَلَيْهِ قَالَ : وَرَاَيْتُ الشَّيْبَ اَحْمَرَ
৩৮. আবু রিমসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার আমার ছেলেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এলাম। তিনি তখন জিজ্ঞেস করলেন, এ ছেলেটি কি তোমার? আমি বললাম, জি- হ্যাঁ। আপনি যদি এর সাক্ষী থাকতেন! তিনি বললেন, সে অপরাধ করলে তা তোমার উপর বর্তাবে না এবং তুমি অপরাধ করলে তার উপর বর্তাবে না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি তাঁর কেশ লাল দেখলাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১১৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৫৭।]
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ مَوْهَبٍ قَالَ : سُئِلَ اَبُوْ هُرَيْرَةَ : هَلْ خَضَبَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قَالَ : نَعَمْ
৩৯. উসমান ইবনে মাওহাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি খিযাব ব্যবহার করতেন? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ। [তাহযীবুল আছার, হা/ ৯১৩।]
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : رَاَيْتُ شَعْرَ رَسُوْلِ اللهِ مَخْضُوْبًا
৪০. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল খিযাবকৃত দেখেছি।
ব্যাখ্যা : কালো খিযাব ব্যবহার করা জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, শেষ যামানায় এমন লোক পাওয়া যাবে, যারা কালো খিযাব বা কলপ ব্যবহার করবে। তারা জানণাতের সুঘ্রানও পাবে না। [আবু দাউদ, হা/৪২১৪; নাসাঈ, হা/৫০৭৫।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ كُحْلِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক রাতে উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগাতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اِكْتَحِلُوْا بِالْاِثْمِدِ فَاِنَّهٗ يَجْلُو الْبَصَرَ ، وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ . وَزَعَمَ اَنَّ النَّبِيَّ كَانَتْ لَهٗ مُكْحُلَةٌ يَكْتَحِلُ مِنْهَا كُلَّ لَيْلَةٍ ثَلَاثَةً فِي هٰذِهٖ ، وَثَلَاثَةً فِي هٰذِهٖ
৪১. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করো। কারণ, তা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে ও পরিষ্কার রাখে এবং অধিক ভ্রু উৎপন্ন করে (ভ্রু উদগত হয়)। ইবনে আববাস (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ এর একটি সুরমাদানী ছিল। প্রত্যেক রাত্রে (ঘুমানোর পূর্বে) ডান চোখে তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। [সুনানুল কুবরা লিল ইমাম বাইহাকী, হা/৮৫১৬।]
ব্যাখ্যা : সুরমা ব্যবহারের হুকুম ও পদ্ধতি :
নারী-পুরুষ সকলের জন্য চোখে সুরমা লাগানো ভালো। তবে সওয়াবের নিয়তে সুরমা লাগানো উচিত, যাতে চোখের উপকারের সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নতের অনুসরণের সওয়াবও লাভ হয়।
অত্র হাদীসে সুরমা ব্যবহারের তিনটি উপকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা বর্তমান বিজ্ঞানে হুবহু প্রমাণিত। এছাড়াও গবেষণায় আরো উপকারিতা পাওয়া গেছে সেগুলো হলো :
১. সর্বধরনের ছোঁয়াচে রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।
২. চোখের প্রবেশকৃত ধূলাবালী নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে প্রভৃতি।
৩. অত্যন্ত কার্যকরী জীবাণুনাশক।
৪ চোখে জ্বালাপোড়া খুব কম হয়।
তিনি সাহাবীদেরকে ইছমিদ সুরমা ব্যবহারের জন্য উপদেশ দিয়েছেন :
عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَلَيْكُمْ بِالْاِثْمِدِ عِنْدَ النَّوْمِ ، فَاِنَّهٗ يَجْلُو الْبَصَرَ ، وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ
৪২. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা শোয়ার সময় অবশ্যই ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করবে। কারণ, তা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে এবং এর ফলে অধিক ভ্রূ জন্মায়। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৯৬; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২০৫৮।]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ خَيْرَ اَكْحَالِكُمُ الْاِثْمِدُ ، يَجْلُو الْبَصَرَ ، وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ
৪৩. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য ‘ইছমিদ’ সুরমা সর্বোৎকৃষ্ট। কারণ, তা দৃষ্টি বাড়ায় এবং এর ফলে অধিক ভ্রূ জন্মায় (উদগত হয়)। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৯৭; ইবনে হিববান, হা/ ৬০৭৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮২৪৮।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي لِبَاسِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اِكْتَحِلُوْا بِالْاِثْمِدِ فَاِنَّهٗ يَجْلُو الْبَصَرَ ، وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ . وَزَعَمَ اَنَّ النَّبِيَّ كَانَتْ لَهٗ مُكْحُلَةٌ يَكْتَحِلُ مِنْهَا كُلَّ لَيْلَةٍ ثَلَاثَةً فِي هٰذِهٖ ، وَثَلَاثَةً فِي هٰذِهٖ
৪১. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করো। কারণ, তা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে ও পরিষ্কার রাখে এবং অধিক ভ্রু উৎপন্ন করে (ভ্রু উদগত হয়)। ইবনে আববাস (রাঃ) আরো বলেন, নবী ﷺ এর একটি সুরমাদানী ছিল। প্রত্যেক রাত্রে (ঘুমানোর পূর্বে) ডান চোখে তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। [সুনানুল কুবরা লিল ইমাম বাইহাকী, হা/৮৫১৬।]
ব্যাখ্যা : সুরমা ব্যবহারের হুকুম ও পদ্ধতি :
নারী-পুরুষ সকলের জন্য চোখে সুরমা লাগানো ভালো। তবে সওয়াবের নিয়তে সুরমা লাগানো উচিত, যাতে চোখের উপকারের সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নতের অনুসরণের সওয়াবও লাভ হয়।
অত্র হাদীসে সুরমা ব্যবহারের তিনটি উপকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা বর্তমান বিজ্ঞানে হুবহু প্রমাণিত। এছাড়াও গবেষণায় আরো উপকারিতা পাওয়া গেছে সেগুলো হলো :
১. সর্বধরনের ছোঁয়াচে রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।
২. চোখের প্রবেশকৃত ধূলাবালী নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে প্রভৃতি।
৩. অত্যন্ত কার্যকরী জীবাণুনাশক।
৪ চোখে জ্বালাপোড়া খুব কম হয়।
তিনি সাহাবীদেরকে ইছমিদ সুরমা ব্যবহারের জন্য উপদেশ দিয়েছেন :
عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَلَيْكُمْ بِالْاِثْمِدِ عِنْدَ النَّوْمِ ، فَاِنَّهٗ يَجْلُو الْبَصَرَ ، وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ
৪২. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা শোয়ার সময় অবশ্যই ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করবে। কারণ, তা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে এবং এর ফলে অধিক ভ্রূ জন্মায়। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৯৬; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২০৫৮।]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ خَيْرَ اَكْحَالِكُمُ الْاِثْمِدُ ، يَجْلُو الْبَصَرَ ، وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ
৪৩. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য ‘ইছমিদ’ সুরমা সর্বোৎকৃষ্ট। কারণ, তা দৃষ্টি বাড়ায় এবং এর ফলে অধিক ভ্রূ জন্মায় (উদগত হয়)। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৯৭; ইবনে হিববান, হা/ ৬০৭৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮২৪৮।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي لِبَاسِ رَسُوْلِ اللهِ
পোশাক পরিধান করা কোন ক্ষেত্রে ফরয, কোন ক্ষেত্রে হারাম, কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব, আবার কোন ক্ষেত্রে মুবাহ। ফরয পোশাক হলো এতটুকু পরিধান করা, যা দ্বারা সতর আবৃত করা যায়। মুস্তাহাব হলো যার ব্যাপারে শরীয়ত উৎসাহ দান করেছে। যেমন- দু’ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করা। মাকরূহ ঐ পোশাক, যা পরিধান করতে উৎসাহিত করা হয়নি। যেমন- ধনীদের সর্বদা ছিন্ন ও পুরাতন কাপড় পরিধান করা। হারাম ঐ পোশাক, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। যেমন- পুরুষের জন্য ওজর ব্যতীত রেশমী কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রিয় পোষাক ছিল কামীস :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : كَانَ اَحَبَّ الثِّيَابِ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ الْقَمِيْصُ
৪৪. উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ পোষাক হিসেবে ‘কামীস’ বা জামা সর্বাধিক পছন্দ করতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৪০২৭।]
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন হাদীসের ভিত্তিতে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন ধরনের জামা পরিধান করতেন। তার কোনটির দৈর্ঘ্য ছিল টাখনু অবধি। কোনটি কিছুটা ছোট, যা হাঁটুর নিম্নভাগ পর্যন্ত ছিল। আবার কোনটির হাতা ছিল হাতের আঙ্গুলের প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা। কোনটির হাতা কিছুটা ছোট, যা কব্জি পর্যন্ত ছিল।
পুরুষের পোশাক পরিধানের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি বিশেষ দিক অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি পুরুষের পোশাকের নিচের অংশ পায়ের গোড়ালী থেকে উপরে রাখার আদেশ করেছেন এবং গোড়ালীর নিচে পাজামা, লুঙ্গি, জামা বা কোন পোশাক পরিধান করতে হারাম ঘোষণা করেছেন।
সর্বদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর লুঙ্গি ও জামা ‘টাখনুর’ উপরে থাকত। সাধারণত তিনি পোশাকের নিচের অংশ হাঁটু ও গোড়ালীর বরাবর বা ‘নিসফে সাক’ পর্যন্ত পরিধান করতেন। বিভিন্ন হাদীসে তিনি মুসলিম উম্মাহর পুরুষগণকে এভাবে পোশাক পরিধান করতে আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং মুসলিম পুরুষের জন্য স্বেচ্ছায় টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা হারাম। আবু হুরায়রা, আবদুল্লাহ ইবনে উমর ও অন্যান্য সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি দাম্ভিকতার সাথে নিজের পোশাক ঝুলিয়ে পরিধান করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৩৬৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭৮।]
মুসলিমের পোশাকের নীতি :
(১) পুরুষের পোশাক রেশমী হবে না।
(২) পোশাক সতর ঢাকার মতো হবে।
(৩) পুরুষের পোশাক মহিলাগণ পরবে না। আর মহিলা পুরুষের পোশাক পরবে না।
(৪) পোশাক যেন অহংকার প্রকাশার্থে না হয়।
(৫) পুরুষরা টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করবে না।
(৬) ইচ্ছাকৃতভাবে কাফিরদের সাদৃশ্য অবলম্বনার্থে তাদের পোশাক পরিধান করা যাবে না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর জামার বোতাম খোলা রাখতেন :
عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ فِي رَهْطٍ مِّنْ مُّزَيْنَةَ لِنُبَايِعَهٗ ، وَاِنَّ قَمِيْصَهٗ لَمُطْلَقٌ ، اَوْ قَالَ : زِرُّ قَمِيْصِهٖ مُطْلَقٌ ، قَالَ : فَاَدْخَلْتُ يَدِيْ فِي جَيْبِ قَمِيْصِهٖ فَمَسَسْتُ الْخَاتَمَ
৪৫. মু‘আবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মুযায়না গোত্রের একদল লোকের সাথে বায়‘আত গ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হলাম। এ সময় তাঁর জামার বোতাম খোলা ছিল। আমি তখন (বরকত লাভ করার জন্য) জামার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মোহরে নবুওয়াত স্পর্শ করলাম। [আবু দাউদ, হা/৪০৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬১৯।]
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন হাদীসের আলোকে মনে হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জামার বোতাম ছিল। তবে তিনি সাধারণত বোতাম লাগাতেন না। ফলে জামার ভেতর হাত প্রবেশ করিয়ে পিঠের মোহরে নবুওয়াত স্পর্শ করা সহজ ছিল।
তিনি ইয়ামেনী নকশী কাপড়ও পরিধান করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ خَرَجَ وَهُوَ يَتَّكِئُ عَلٰى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَلَيْهِ ثَوْبٌ قِطْرِيٌّ قَدْ تَوَشَّحَ بِهٖ ، فَصَلّٰى بِهِمْ
৪৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর কাঁধে ভর করে বাইরে বের হলেন। এ সময় তাঁর দেহে পরা ছিল একটি ইয়ামেনী নকশী কাপড়। তারপর তিনি লোকদের নামাযের ইমামতি করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৮৭।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ অসুস্থতার কারণে উসামা (রাঃ) এর কাঁধে ভর করে এসেছিলেন।
তিনি নতুন কাপড় পরিধানকালে কাপড়ের নাম উচ্চারণ পূর্বক দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنْ اَبِي سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهٖ عِمَامَةً اَوْ قَمِيْصًا اَوْ رِدَاءً ، ثُمَّ يَقُوْلُ : اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيْهِ ، اَسْاَلُكَ خَيْرَهٗ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهٗ ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهٖ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهٗ
৪৭. আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন তখন কাপড়ের নাম পাগড়ি অথবা কামীস অথবা চাদর ইত্যাদি উচ্চারণ করতেন। তারপর তিনি এ দু‘আ পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيْهٖ ، اَسْاَلُكَ خَيْرَهٗ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهٗ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهٖ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهٗ
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। যেহেতু তুমিই আমাকে তা পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আরো কল্যাণ চাচ্ছি যে উদ্দেশে এটা তৈরি করা হয়েছে তার। আর আমি তোমার স্মরণাপন্ন হচ্ছি এর যাবতীয় অনিষ্ট হতে এবং যে উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে তার অনিষ্ট হতে। [আবু দাউদ, হা/৪০২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৬৬; ইবনে হিববান, হা/৪৫২০; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০০৬৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৪০৮।]
ব্যাখ্যা : যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন নতুন জামা পরিধান করতেন, তখন আনন্দ প্রকাশার্থে তার নাম নির্ধারণ করতেন। যেমন- বলতেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ জামাটি বা পাগড়িটি দান করেছেন। তারপর দু‘আ পাঠ করে পরিধান করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি প্রিয় পোষাক ছিল হিবারা :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ اَحَبَّ الثِّيَابِ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ يَلْبَسُهُ الْحِبَرَةُ
৪৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামানে তৈরি চাদর) হিবারা। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮১৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬২; নাসাঈ, হা/৫৩১৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৪০; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৫৬৮।]
ব্যাখ্যা : সে সময়ে পোশাকের বিখ্যাত স্থান ইয়ামানের তৈরি ডোরা ও কারুকার্য সম্বলিত সূতী বা কাতান প্রকৃতির চাদরকে ‘হিবারা’ বলা হতো। এগুলো কখনো লাল, কখনো নীল, আবার কখনো সবুজ ডোরাকাটা হতো।
তিনি লাল রঙ্গের নকশী করা চাদরও পরিধান করতেন :
عَنْ اَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ كَاَنِّي اَنْظُرُ اِلٰى بَرِيْقِ سَاقَيْهِ
৪৯. আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ -কে লাল নকশী চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। আজও যেন আমি তাঁর উভয় গোড়ালীর ঔজ্জ্বল্য প্রত্যক্ষ করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১১৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৮১।]
তিনি লাল হুল্লা কাপড়ও পরিধান করতেন :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : مَا رَاَيْتُ اَحَدًا مِّنَ النَّاسِ اَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ، اِنْ كَانَتْ جُمَّتُهٗ لَتَضْرِبُ قَرِيْبًا مِّنْ مَّنْكِبَيْهِ
৫০. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘লাল হুল্লা’ পরিহিত কাউকে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে অধিক সুদর্শন দেখিনি। আর তাঁর কেশ (জুম্মা) উভয় কাঁধ স্পর্শ করছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯০১; নাসাঈ, হা/৫০৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬৩৬; সুনানে কুবরা, হা/৯২৭৫।]
ব্যাখ্যা : এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে সেলাই ছাড়া লুঙ্গি ও চাদর। এগুলো তৎকালীন আরব দেশের সর্বাধিক ব্যবহৃত পোশাক ছিল। এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বাধিক ব্যবহার করতেন। কেউ কেউ বলেছেন, চাদর ও লুঙ্গি একই প্রকারের একই রংয়ের প্রস্তুত হলে তাকে حُلَّةٌ বলে।
তিনি সবুজ চাদরও পরিধান করতেন :
عَنْ اَبِي رِمْثَةَ قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ اَخْضَرَانِ
৫১. আবু রিমছা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে দুটি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। [নাসাঈ, হা/১৫৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/ ৭১১৭; সানানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১৭৯৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ তৎকালীন সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন রংয়ের পোশাক পরিধান করেছেন। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, তার মধ্যে সবুজ, সাদা ও মিশ্রিত রং তিনি পছন্দ করতেন।
তিনি সাহাবীদেরকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করতে উপদেশ দিয়েছেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَلَيْكُمْ بِالْبَيَاضِ مِنَ الثِّيَابِ لِيَلْبِسْهَا اَحْيَاؤُكُمْ ، وَكَفِّنُوْا فِيْهَا مَوْتَاكُمْ ، فَاِنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ
৫২. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক। [নাসাঈ, হা/৫৩২৩; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৫৬৬।]
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْبَسُوا الْبَيَاضَ ؛ فَاِنَّهَا اَطْهَرُ وَاَطْيَبُ ، وَكَفِّنُوْا فِيْهَا مَوْتَاكُمْ
৫৩. সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কারণ, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের কাফন দাও। [মু‘জামুল কাবীর, হা/৯৬৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০২৭।]
তিনি কালো রঙের পশমী চাদরও পরিধান করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ ذَاتَ غَدَاةٍ وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مِنْ شَعَرٍ اَسْوَدَ
৫৪. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যুষে বাইরে বের হন। তখন তাঁর দেহে কালো পশমের একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬৬; আবু দাউদ, হা/৪০৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৩৪; সুনানের কুবরা লিল বাইহাকী, হা/৪৩৫৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৭০৭।]
তিনি আঁটসাঁট অস্তিন বিশিষ্ট রুমী জুববা পরিধান করেছিলেন :
عَنْ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ ، اَنَّ النَّبِيَّ لَبِسَ جُبَّةً رُومِيَّةً ضَيِّقَةَ الْكُمَّيْنِ
৫৫. মুগীরা ইবনে শু‘বা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট একটি রুমী জুববা পরিধান করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২৬৫।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন যে পোশাক পেয়েছেন তাই ব্যবহার করেছেন। তিনি সুতি, পশমী ও কাতানের তৈরি প্রভৃতি পোশাক ব্যবহার করেছেন। সবুজ, লাল, হলুদ, সাদা, কালো ও মিশ্রিত যখন যে রংয়ের পোশাক পেয়েছেন পরিধান করেছেন। কারণ আরবে কোন পোশাক তৈরি হতো না। এগুলো মক্কা-মদিনার বাইরে সিরিয়া, ইয়ামান প্রভৃতি দেশে তৈরি হতো। তাই ব্যবসায়ীগণ যে পোশাক আনতেন তাই সাধ্যমতো ক্রয় করে বা উপহার হিসেবে যা পেতেন তাই ব্যবহার করতেন।
بَابُ مَا جَاءَ فِي عَيْشِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রিয় পোষাক ছিল কামীস :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : كَانَ اَحَبَّ الثِّيَابِ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ الْقَمِيْصُ
৪৪. উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ পোষাক হিসেবে ‘কামীস’ বা জামা সর্বাধিক পছন্দ করতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৪০২৭।]
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন হাদীসের ভিত্তিতে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন ধরনের জামা পরিধান করতেন। তার কোনটির দৈর্ঘ্য ছিল টাখনু অবধি। কোনটি কিছুটা ছোট, যা হাঁটুর নিম্নভাগ পর্যন্ত ছিল। আবার কোনটির হাতা ছিল হাতের আঙ্গুলের প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা। কোনটির হাতা কিছুটা ছোট, যা কব্জি পর্যন্ত ছিল।
পুরুষের পোশাক পরিধানের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি বিশেষ দিক অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি পুরুষের পোশাকের নিচের অংশ পায়ের গোড়ালী থেকে উপরে রাখার আদেশ করেছেন এবং গোড়ালীর নিচে পাজামা, লুঙ্গি, জামা বা কোন পোশাক পরিধান করতে হারাম ঘোষণা করেছেন।
সর্বদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর লুঙ্গি ও জামা ‘টাখনুর’ উপরে থাকত। সাধারণত তিনি পোশাকের নিচের অংশ হাঁটু ও গোড়ালীর বরাবর বা ‘নিসফে সাক’ পর্যন্ত পরিধান করতেন। বিভিন্ন হাদীসে তিনি মুসলিম উম্মাহর পুরুষগণকে এভাবে পোশাক পরিধান করতে আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং মুসলিম পুরুষের জন্য স্বেচ্ছায় টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা হারাম। আবু হুরায়রা, আবদুল্লাহ ইবনে উমর ও অন্যান্য সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি দাম্ভিকতার সাথে নিজের পোশাক ঝুলিয়ে পরিধান করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৩৬৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭৮।]
মুসলিমের পোশাকের নীতি :
(১) পুরুষের পোশাক রেশমী হবে না।
(২) পোশাক সতর ঢাকার মতো হবে।
(৩) পুরুষের পোশাক মহিলাগণ পরবে না। আর মহিলা পুরুষের পোশাক পরবে না।
(৪) পোশাক যেন অহংকার প্রকাশার্থে না হয়।
(৫) পুরুষরা টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করবে না।
(৬) ইচ্ছাকৃতভাবে কাফিরদের সাদৃশ্য অবলম্বনার্থে তাদের পোশাক পরিধান করা যাবে না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর জামার বোতাম খোলা রাখতেন :
عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ فِي رَهْطٍ مِّنْ مُّزَيْنَةَ لِنُبَايِعَهٗ ، وَاِنَّ قَمِيْصَهٗ لَمُطْلَقٌ ، اَوْ قَالَ : زِرُّ قَمِيْصِهٖ مُطْلَقٌ ، قَالَ : فَاَدْخَلْتُ يَدِيْ فِي جَيْبِ قَمِيْصِهٖ فَمَسَسْتُ الْخَاتَمَ
৪৫. মু‘আবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মুযায়না গোত্রের একদল লোকের সাথে বায়‘আত গ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হলাম। এ সময় তাঁর জামার বোতাম খোলা ছিল। আমি তখন (বরকত লাভ করার জন্য) জামার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মোহরে নবুওয়াত স্পর্শ করলাম। [আবু দাউদ, হা/৪০৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬১৯।]
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন হাদীসের আলোকে মনে হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জামার বোতাম ছিল। তবে তিনি সাধারণত বোতাম লাগাতেন না। ফলে জামার ভেতর হাত প্রবেশ করিয়ে পিঠের মোহরে নবুওয়াত স্পর্শ করা সহজ ছিল।
তিনি ইয়ামেনী নকশী কাপড়ও পরিধান করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ خَرَجَ وَهُوَ يَتَّكِئُ عَلٰى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَلَيْهِ ثَوْبٌ قِطْرِيٌّ قَدْ تَوَشَّحَ بِهٖ ، فَصَلّٰى بِهِمْ
৪৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর কাঁধে ভর করে বাইরে বের হলেন। এ সময় তাঁর দেহে পরা ছিল একটি ইয়ামেনী নকশী কাপড়। তারপর তিনি লোকদের নামাযের ইমামতি করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৮৭।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ অসুস্থতার কারণে উসামা (রাঃ) এর কাঁধে ভর করে এসেছিলেন।
তিনি নতুন কাপড় পরিধানকালে কাপড়ের নাম উচ্চারণ পূর্বক দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنْ اَبِي سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهٖ عِمَامَةً اَوْ قَمِيْصًا اَوْ رِدَاءً ، ثُمَّ يَقُوْلُ : اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيْهِ ، اَسْاَلُكَ خَيْرَهٗ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهٗ ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهٖ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهٗ
৪৭. আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন তখন কাপড়ের নাম পাগড়ি অথবা কামীস অথবা চাদর ইত্যাদি উচ্চারণ করতেন। তারপর তিনি এ দু‘আ পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيْهٖ ، اَسْاَلُكَ خَيْرَهٗ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهٗ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهٖ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهٗ
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। যেহেতু তুমিই আমাকে তা পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আরো কল্যাণ চাচ্ছি যে উদ্দেশে এটা তৈরি করা হয়েছে তার। আর আমি তোমার স্মরণাপন্ন হচ্ছি এর যাবতীয় অনিষ্ট হতে এবং যে উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে তার অনিষ্ট হতে। [আবু দাউদ, হা/৪০২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৬৬; ইবনে হিববান, হা/৪৫২০; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০০৬৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৪০৮।]
ব্যাখ্যা : যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন নতুন জামা পরিধান করতেন, তখন আনন্দ প্রকাশার্থে তার নাম নির্ধারণ করতেন। যেমন- বলতেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ জামাটি বা পাগড়িটি দান করেছেন। তারপর দু‘আ পাঠ করে পরিধান করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি প্রিয় পোষাক ছিল হিবারা :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ اَحَبَّ الثِّيَابِ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ يَلْبَسُهُ الْحِبَرَةُ
৪৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামানে তৈরি চাদর) হিবারা। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮১৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬২; নাসাঈ, হা/৫৩১৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৪০; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৫৬৮।]
ব্যাখ্যা : সে সময়ে পোশাকের বিখ্যাত স্থান ইয়ামানের তৈরি ডোরা ও কারুকার্য সম্বলিত সূতী বা কাতান প্রকৃতির চাদরকে ‘হিবারা’ বলা হতো। এগুলো কখনো লাল, কখনো নীল, আবার কখনো সবুজ ডোরাকাটা হতো।
তিনি লাল রঙ্গের নকশী করা চাদরও পরিধান করতেন :
عَنْ اَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ كَاَنِّي اَنْظُرُ اِلٰى بَرِيْقِ سَاقَيْهِ
৪৯. আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ -কে লাল নকশী চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। আজও যেন আমি তাঁর উভয় গোড়ালীর ঔজ্জ্বল্য প্রত্যক্ষ করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/১১৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৮১।]
তিনি লাল হুল্লা কাপড়ও পরিধান করতেন :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : مَا رَاَيْتُ اَحَدًا مِّنَ النَّاسِ اَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ، اِنْ كَانَتْ جُمَّتُهٗ لَتَضْرِبُ قَرِيْبًا مِّنْ مَّنْكِبَيْهِ
৫০. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘লাল হুল্লা’ পরিহিত কাউকে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে অধিক সুদর্শন দেখিনি। আর তাঁর কেশ (জুম্মা) উভয় কাঁধ স্পর্শ করছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯০১; নাসাঈ, হা/৫০৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬৩৬; সুনানে কুবরা, হা/৯২৭৫।]
ব্যাখ্যা : এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে সেলাই ছাড়া লুঙ্গি ও চাদর। এগুলো তৎকালীন আরব দেশের সর্বাধিক ব্যবহৃত পোশাক ছিল। এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বাধিক ব্যবহার করতেন। কেউ কেউ বলেছেন, চাদর ও লুঙ্গি একই প্রকারের একই রংয়ের প্রস্তুত হলে তাকে حُلَّةٌ বলে।
তিনি সবুজ চাদরও পরিধান করতেন :
عَنْ اَبِي رِمْثَةَ قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ اَخْضَرَانِ
৫১. আবু রিমছা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে দুটি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। [নাসাঈ, হা/১৫৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/ ৭১১৭; সানানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১৭৯৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ তৎকালীন সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন রংয়ের পোশাক পরিধান করেছেন। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, তার মধ্যে সবুজ, সাদা ও মিশ্রিত রং তিনি পছন্দ করতেন।
তিনি সাহাবীদেরকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করতে উপদেশ দিয়েছেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَلَيْكُمْ بِالْبَيَاضِ مِنَ الثِّيَابِ لِيَلْبِسْهَا اَحْيَاؤُكُمْ ، وَكَفِّنُوْا فِيْهَا مَوْتَاكُمْ ، فَاِنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ
৫২. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক। [নাসাঈ, হা/৫৩২৩; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৫৬৬।]
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْبَسُوا الْبَيَاضَ ؛ فَاِنَّهَا اَطْهَرُ وَاَطْيَبُ ، وَكَفِّنُوْا فِيْهَا مَوْتَاكُمْ
৫৩. সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কারণ, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের কাফন দাও। [মু‘জামুল কাবীর, হা/৯৬৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০২৭।]
তিনি কালো রঙের পশমী চাদরও পরিধান করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ ذَاتَ غَدَاةٍ وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مِنْ شَعَرٍ اَسْوَدَ
৫৪. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যুষে বাইরে বের হন। তখন তাঁর দেহে কালো পশমের একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬৬; আবু দাউদ, হা/৪০৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৩৪; সুনানের কুবরা লিল বাইহাকী, হা/৪৩৫৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪৭০৭।]
তিনি আঁটসাঁট অস্তিন বিশিষ্ট রুমী জুববা পরিধান করেছিলেন :
عَنْ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ ، اَنَّ النَّبِيَّ لَبِسَ جُبَّةً رُومِيَّةً ضَيِّقَةَ الْكُمَّيْنِ
৫৫. মুগীরা ইবনে শু‘বা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট একটি রুমী জুববা পরিধান করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২৬৫।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন যে পোশাক পেয়েছেন তাই ব্যবহার করেছেন। তিনি সুতি, পশমী ও কাতানের তৈরি প্রভৃতি পোশাক ব্যবহার করেছেন। সবুজ, লাল, হলুদ, সাদা, কালো ও মিশ্রিত যখন যে রংয়ের পোশাক পেয়েছেন পরিধান করেছেন। কারণ আরবে কোন পোশাক তৈরি হতো না। এগুলো মক্কা-মদিনার বাইরে সিরিয়া, ইয়ামান প্রভৃতি দেশে তৈরি হতো। তাই ব্যবসায়ীগণ যে পোশাক আনতেন তাই সাধ্যমতো ক্রয় করে বা উপহার হিসেবে যা পেতেন তাই ব্যবহার করতেন।
بَابُ مَا جَاءَ فِي عَيْشِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ সাধারণ জীবন-যাপন করতেন :
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، وَعَلَيْهِ ثَوْبَانِ مُمَشَّقَانِ مِنْ كَتَّانٍ فَتَمَخَّطَ فِي اَحَدِهِمَا ، فَقَالَ : بَخٍ بَخٍ يَتَمَخَّطُ اَبُوْ هُرَيْرَةَ فِي الْكَتَّانِ ، لَقَدْ رَاَيْتُنِيْ وَاِنِّيْ لَاَخِرُّ فِيْمَا بَيْنَ مِنْۢبَرِ رَسُوْلِ اللهِ وَحُجْرَةِ عَائِشَةَ مَغْشِيًّا عَلَيَّ فَيَجِيءُ الْجَائِي فَيَضَعُ رِجْلَهٗ عَلٰى عُنُقِيْ يَرٰى اَنَّ بِيْ جُنُوْنًا ، وَمَا بِيْ جُنُوْنٌ ، وَمَا هُوَ اِلَّا الْجُوْعُ
৫৬. মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদিন আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁর দেহে দুটি কাতানের কাপড় (অর্থাৎ একটি কাতানের চাদর ও একটি লুঙ্গি) শোভা পাচ্ছিল। আবু হুরায়রা (রাঃ) তার একটি দ্বারা নাক পরিস্কার করছিলেন। তখন তিনি বলে উঠলেন। বাহ, বাহ! আবু হুরায়রা কাতানের কাপড় দ্বারা নাক পরিস্কার করছ! অথচ এক সময় এমন ছিল যখন আমি নিজে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মিম্বর এবং আয়েশা (রাঃ) এর হুজরার পার্শ্বে পেটের জ্বালায় কাতর হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতাম। প্রায় আগন্তুকই আমাকে মৃগী রোগী মনে করে গর্দানে পা দ্বারা আঘাত করত। প্রকৃতপক্ষে আমার মধ্যে উন্মাদনার লেশমাত্র ছিল না, বরং প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালাতেই আমার এ অবস্থা হতো। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩২৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনী গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রাঃ) এর ঘটনা বর্ণনার কারণ হলো, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একনিষ্ঠ খাদেম ছিলেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) ছিলেন আসহাবে সুফ্ফার একজন সদস্য। তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মেহমান ছিলেন। আর মেহমানের অবস্থা থেকে মেযবানের অবস্থা নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ মেহমান যেহেতু খাবারের জন্য কষ্ট করছেন এতে সহজেই অনুমান করা যায় যে, মেযবান তথা নবী ﷺ এর ঘরে তখন পর্যাপ্ত খাবার ছিল না।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) উক্ত হাদীসে তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর প্রাথমিক সময়ের অবস্থা এবং পরবর্তী অবস্থার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পরের ঘটনা।
তিনি তৃপ্তি সহকারে রুটি এবং গোশত ভক্ষণ করেননি :
عَنْ مَالِكِ بْنِ دِيْنَارٍ قَالَ : مَا شَبِعَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ خُبْزٍ قَطُّ وَلَا لَحْمٍ ، اِلَّا عَلٰى ضَفَفٍ . قَالَ مَالِكٌ : سَاَلْتُ رَجُلًا مِنْ اَهْلِ الْبَادِيَةِ : مَا الضَّفَفُ ؟ قَالَ : اَنْ يَّتَنَاوَلَ مَعَ النَّاسِ
৫৭. মালিক ইবনে দীনার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো ‘যাফাফ’ ছাড়া তৃপ্তি সহকারে রুটি এবং গোশত ভক্ষণ করেন নি।
মালিক ইবনে দীনার (রাঃ) বলেন, আমি এক বেদুঈনকে জিজ্ঞেস করি, ‘যাফাফ’ কী? সে বলল, মানুষের সাথে একত্রে পানাহার করা। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৮৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩১০৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৫৯।]
ব্যাখ্যা : যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘরে মেহমান আগমন করত তখন মেহমানের সাথে খাওয়ার সময় পেট পূর্ণ করে খেতেন। যাতে মেহমান ক্ষুধা রেখে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ না করে।
بَابُ مَا جَاءَ فِي خُفِّ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، وَعَلَيْهِ ثَوْبَانِ مُمَشَّقَانِ مِنْ كَتَّانٍ فَتَمَخَّطَ فِي اَحَدِهِمَا ، فَقَالَ : بَخٍ بَخٍ يَتَمَخَّطُ اَبُوْ هُرَيْرَةَ فِي الْكَتَّانِ ، لَقَدْ رَاَيْتُنِيْ وَاِنِّيْ لَاَخِرُّ فِيْمَا بَيْنَ مِنْۢبَرِ رَسُوْلِ اللهِ وَحُجْرَةِ عَائِشَةَ مَغْشِيًّا عَلَيَّ فَيَجِيءُ الْجَائِي فَيَضَعُ رِجْلَهٗ عَلٰى عُنُقِيْ يَرٰى اَنَّ بِيْ جُنُوْنًا ، وَمَا بِيْ جُنُوْنٌ ، وَمَا هُوَ اِلَّا الْجُوْعُ
৫৬. মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদিন আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁর দেহে দুটি কাতানের কাপড় (অর্থাৎ একটি কাতানের চাদর ও একটি লুঙ্গি) শোভা পাচ্ছিল। আবু হুরায়রা (রাঃ) তার একটি দ্বারা নাক পরিস্কার করছিলেন। তখন তিনি বলে উঠলেন। বাহ, বাহ! আবু হুরায়রা কাতানের কাপড় দ্বারা নাক পরিস্কার করছ! অথচ এক সময় এমন ছিল যখন আমি নিজে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মিম্বর এবং আয়েশা (রাঃ) এর হুজরার পার্শ্বে পেটের জ্বালায় কাতর হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতাম। প্রায় আগন্তুকই আমাকে মৃগী রোগী মনে করে গর্দানে পা দ্বারা আঘাত করত। প্রকৃতপক্ষে আমার মধ্যে উন্মাদনার লেশমাত্র ছিল না, বরং প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালাতেই আমার এ অবস্থা হতো। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩২৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনী গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রাঃ) এর ঘটনা বর্ণনার কারণ হলো, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একনিষ্ঠ খাদেম ছিলেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) ছিলেন আসহাবে সুফ্ফার একজন সদস্য। তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মেহমান ছিলেন। আর মেহমানের অবস্থা থেকে মেযবানের অবস্থা নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ মেহমান যেহেতু খাবারের জন্য কষ্ট করছেন এতে সহজেই অনুমান করা যায় যে, মেযবান তথা নবী ﷺ এর ঘরে তখন পর্যাপ্ত খাবার ছিল না।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) উক্ত হাদীসে তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর প্রাথমিক সময়ের অবস্থা এবং পরবর্তী অবস্থার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পরের ঘটনা।
তিনি তৃপ্তি সহকারে রুটি এবং গোশত ভক্ষণ করেননি :
عَنْ مَالِكِ بْنِ دِيْنَارٍ قَالَ : مَا شَبِعَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ خُبْزٍ قَطُّ وَلَا لَحْمٍ ، اِلَّا عَلٰى ضَفَفٍ . قَالَ مَالِكٌ : سَاَلْتُ رَجُلًا مِنْ اَهْلِ الْبَادِيَةِ : مَا الضَّفَفُ ؟ قَالَ : اَنْ يَّتَنَاوَلَ مَعَ النَّاسِ
৫৭. মালিক ইবনে দীনার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো ‘যাফাফ’ ছাড়া তৃপ্তি সহকারে রুটি এবং গোশত ভক্ষণ করেন নি।
মালিক ইবনে দীনার (রাঃ) বলেন, আমি এক বেদুঈনকে জিজ্ঞেস করি, ‘যাফাফ’ কী? সে বলল, মানুষের সাথে একত্রে পানাহার করা। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৮৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩১০৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৫৯।]
ব্যাখ্যা : যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘরে মেহমান আগমন করত তখন মেহমানের সাথে খাওয়ার সময় পেট পূর্ণ করে খেতেন। যাতে মেহমান ক্ষুধা রেখে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ না করে।
بَابُ مَا جَاءَ فِي خُفِّ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ নাজ্জাশীর হাদিয়াকৃত কালো রঙের মোজা পরিধান করতেন :
عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ ، عَنْ اَبِيْهِ ، اَنَّ النَّجَّاشِيَّ اَهْدٰى لِلنَّبِيِّ خُفَّيْنِ اَسْوَدَيْنِ سَاذَجَيْنِ، فَلَبِسَهُمَا ثُمَّ تَوَضَّاَ وَمَسَحَ عَلَيْهِمَا
৫৮. ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, একদা নাজ্জাশী রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে এক জোড়া কালো রঙের মোজা হাদিয়া পাঠান। এরপর তিনি ঐ মোজা দুটি পরিধান করে ওযূ করলেন এবং এর উপর মাসেহ করলেন। [আবু দাউদ, হা/১৫৫; ইবনে মাজাহ, হা/৫৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩১; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৯৪।]
ব্যাখ্যা : তৎকালীন হাবশার (আবিসিনিয়ার) বাদশার উপাধি ছিল নাজ্জাশী। মক্কা হতে মুসলমানদের হাবশায় হিজরত করাটা নাজ্জাশীর শাসনামলে হয়েছিল। তিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন। নাজ্জাশী রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে বিভিন্ন জিনিস উপহার হিসেবে পাঠিয়ে ছিলেন। তার মধ্যে একটি কোর্তা, একটি পাজামা এবং একটি রুমাল ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে সাহাবীদেরকে নিয়ে গায়েবানা জানাযা আদায় করেছিলেন। আর এটাই হলো প্রথম গায়েবানা জানাযার নামায।
بَابُ مَا جَاءَ فِي نَعْلِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ ، عَنْ اَبِيْهِ ، اَنَّ النَّجَّاشِيَّ اَهْدٰى لِلنَّبِيِّ خُفَّيْنِ اَسْوَدَيْنِ سَاذَجَيْنِ، فَلَبِسَهُمَا ثُمَّ تَوَضَّاَ وَمَسَحَ عَلَيْهِمَا
৫৮. ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, একদা নাজ্জাশী রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে এক জোড়া কালো রঙের মোজা হাদিয়া পাঠান। এরপর তিনি ঐ মোজা দুটি পরিধান করে ওযূ করলেন এবং এর উপর মাসেহ করলেন। [আবু দাউদ, হা/১৫৫; ইবনে মাজাহ, হা/৫৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩১; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৯৪।]
ব্যাখ্যা : তৎকালীন হাবশার (আবিসিনিয়ার) বাদশার উপাধি ছিল নাজ্জাশী। মক্কা হতে মুসলমানদের হাবশায় হিজরত করাটা নাজ্জাশীর শাসনামলে হয়েছিল। তিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন। নাজ্জাশী রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে বিভিন্ন জিনিস উপহার হিসেবে পাঠিয়ে ছিলেন। তার মধ্যে একটি কোর্তা, একটি পাজামা এবং একটি রুমাল ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে সাহাবীদেরকে নিয়ে গায়েবানা জানাযা আদায় করেছিলেন। আর এটাই হলো প্রথম গায়েবানা জানাযার নামায।
بَابُ مَا جَاءَ فِي نَعْلِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতিটি জুতায় দুটি করে ফিতা ছিল :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ لِنَعْلِ رَسُوْلِ اللهِ قِبَالَانِ مَثْنِيٌّ شِرَاكَهُمَا
৫৯. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতিটি জুতায় দুটি করে ফিতা ছিল। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৬১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৫৪।]
তাঁর জুতা ছিল চামড়ার :
حَدَّثَنَا عِيْسَى بْنُ طَهْمَانَ قَالَ : اَخْرَجَ اِلَيْنَا اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ نَعْلَيْنِ جَرْدَاوَيْنِ لَهُمَا قِبَالَانِ . قَالَ : فَحَدَّثَنِيْ ثَابِتٌ بَعْدُ عَنْ اَنَسٍ اَنَّهُمَا كَانَتَا نَعْلَيِ النَّبِيِّ
৬০. ঈসা ইবনে তাহমান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) আমাদের সম্মুখে দুটি লোমশূণ্য জুতা নিয়ে আসেন। আর ঐ দুটিতে দুটি করে চামড়ার ফিতা ছিল। তিনি (আহমাদ) বলেন, পরে সাবিত (রহঃ) আমাকে আনাস (রাঃ) হতে হাদীস শোনান যে, সে জুতা দুটি ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর। [সহীহ বুখারী, হা/৩১২৭।]
ব্যাখ্যা : সে সময়ে আরবে পশমসহ চামড়া দ্বারা জুতা বানানোর রীতি ছিল এবং এ ধরনের জুতা পরিধানের রীতি ছিল। এজন্য বর্ণনাকারী স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জুতা পশমবিহীন ছিল।
তিনি এসব জুতা পরে ওযূ করতেন :
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ جُرَيْجٍ ، اَنَّهٗ قَالَ لِابْنِ عُمَرَ : رَاَيْتُكَ تَلْبَسُ النِّعَالَ السِّبْتِيَّةَ ، قَالَ : اِنِّي رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَلْبَسُ النِّعَالَ الَّتِي لَيْسَ فِيْهَا شَعَرٌ ، وَيَتَوَضَّأُ فِيْهَا ، فَاَنَا أُحِبُّ اَنْ اَلْبَسَهَا
৬১. উবাইদ ইবনে জুরাইজ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ইবনে উমর (রাঃ)-কে বললেন, আমি আপনাকে লোমশূণ্য জুতা পরিধান করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এমন জুতা পরিধান করতে দেখেছি, যাতে কোন লোম ছিল না। আর তিনি সে জুতা পরিধান করে ওযূ করেছেন। তাই আমি লোমশূণ্য জুতা অধিক ভালোবাসি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৭৩৩; সহীহ বুখারী, হা/১৬৬; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৭৫; আবু দাউদ, হা/১৭৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৩৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৭৬৩।]
তাঁর জুতার ফিতা দুটি ছিল চামড়ার :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : كَانَ لِنَعْلِ رَسُوْلِ اللهِ قِبَالَانِ
৬২. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জুতায় দুটি করে চামড়ার ফিতা ছিল। [মুজামুল সগীর, হা/২৫৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ তালিযুক্ত জুতাও পরিধান করতেন :
عَنْ عَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ يَقُوْلُ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يُصَلِّي فِي نَعْلَيْنِ مَخْصُوْفَتَيْنِ
৬৩. আমর ইবনে হুরায়ছ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে তালিযুক্ত জুতা পরিধান করে সালাত আদায় করতে দেখেছি। [সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৭১৭; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১৪৬৫।]
তিনি এক পায়ে জুতা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا يَمْشِيَنَّ اَحَدُكُمْ فِي نَعْلٍ وَاحِدَةٍ ، لِيُنْعِلْهُمَا جَمِيْعًا اَوْ لِيُحْفِهِمَا جَمِيْعًا
৬৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরিধান করে না হাঁটে। হয়তো দু’পায়ে জুতা পরিধান করবে কিংবা খালি পায়ে হাঁটবে। [মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৩; সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৬।]
عَنْ جَابِرٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ نَهٰى اَنْ يَّأْكُلَ ، يَعْنِي الرَّجُلَ ، بِشِمَالِهٖ ، اَوْ يَمْشِيَ فِي نَعْلٍ وَاحِدَةٍ
৬৫. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বাম হাতে খেতে এবং এক পায়ে জুতা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৫৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৩৩৩২।]
জুতা পরিধান করা এবং খোলার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিক নিদের্শনা :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اِذَا انْتَعَلَ اَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِالْيَمِيْنِ ، وَاِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدَأْ بِالشِّمَالِ ، فَلْتَكُنِ الْيَمِيْنُ اَوَّلَهُمَا تُنْعَلُ وَاٰخِرَهُمَا تُنْزَعُ
৬৬. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুতা পরিধান করে তখন সে যেন ডান দিক থেকে আরম্ভ করে। কিন্তু খোলার সময় যেন বাম দিক হতে আরম্ভ করে। আর তাই জুতা পরিধানে ডান পা প্রথমে দেবে এবং খোলার সময় বাম পা হতে প্রথমে জুতা খোলবে। [মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৪; সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০০৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ডান দিক থেকে জুতা পরিধান করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي تَرَجُّلِهٖ وَتَنَعُّلِهٖ وَطُهُوْرِهٖ
৬৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কেশ বিন্যাস করা, জুতা পরিধান করা ও পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে ডান দিক হতে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২৬; সুনানে নাসাঈ, হা/৪২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৭১; ইবনে হিববান, হা/১০৯১।]
আবু বকর ও উমর (রাঃ)ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ন্যায় জুতা ব্যবহার করতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : كَانَ لِنَعْلِ رَسُوْلِ اللهِ قِبَالَانِ وَاَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ ، وَاَوَّلُ مَنْ عَقَدَ عَقْدًا وَّاحِدًا عُثْمَانُ
৬৮. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ , আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) প্রমুখের জুতায় দুটি করে ফিতা ছিল। উসমান (রাঃ)-ই সর্বপ্রথম এক ফিতাবিশিষ্ট জুতা পরিধান করেন। [মুজামুল কাবীর, হা/১২৮।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي ذِكْرِ خَاتَمِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ لِنَعْلِ رَسُوْلِ اللهِ قِبَالَانِ مَثْنِيٌّ شِرَاكَهُمَا
৫৯. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতিটি জুতায় দুটি করে ফিতা ছিল। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৬১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৫৪।]
তাঁর জুতা ছিল চামড়ার :
حَدَّثَنَا عِيْسَى بْنُ طَهْمَانَ قَالَ : اَخْرَجَ اِلَيْنَا اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ نَعْلَيْنِ جَرْدَاوَيْنِ لَهُمَا قِبَالَانِ . قَالَ : فَحَدَّثَنِيْ ثَابِتٌ بَعْدُ عَنْ اَنَسٍ اَنَّهُمَا كَانَتَا نَعْلَيِ النَّبِيِّ
৬০. ঈসা ইবনে তাহমান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) আমাদের সম্মুখে দুটি লোমশূণ্য জুতা নিয়ে আসেন। আর ঐ দুটিতে দুটি করে চামড়ার ফিতা ছিল। তিনি (আহমাদ) বলেন, পরে সাবিত (রহঃ) আমাকে আনাস (রাঃ) হতে হাদীস শোনান যে, সে জুতা দুটি ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর। [সহীহ বুখারী, হা/৩১২৭।]
ব্যাখ্যা : সে সময়ে আরবে পশমসহ চামড়া দ্বারা জুতা বানানোর রীতি ছিল এবং এ ধরনের জুতা পরিধানের রীতি ছিল। এজন্য বর্ণনাকারী স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জুতা পশমবিহীন ছিল।
তিনি এসব জুতা পরে ওযূ করতেন :
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ جُرَيْجٍ ، اَنَّهٗ قَالَ لِابْنِ عُمَرَ : رَاَيْتُكَ تَلْبَسُ النِّعَالَ السِّبْتِيَّةَ ، قَالَ : اِنِّي رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَلْبَسُ النِّعَالَ الَّتِي لَيْسَ فِيْهَا شَعَرٌ ، وَيَتَوَضَّأُ فِيْهَا ، فَاَنَا أُحِبُّ اَنْ اَلْبَسَهَا
৬১. উবাইদ ইবনে জুরাইজ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ইবনে উমর (রাঃ)-কে বললেন, আমি আপনাকে লোমশূণ্য জুতা পরিধান করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এমন জুতা পরিধান করতে দেখেছি, যাতে কোন লোম ছিল না। আর তিনি সে জুতা পরিধান করে ওযূ করেছেন। তাই আমি লোমশূণ্য জুতা অধিক ভালোবাসি। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৭৩৩; সহীহ বুখারী, হা/১৬৬; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৭৫; আবু দাউদ, হা/১৭৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৩৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৭৬৩।]
তাঁর জুতার ফিতা দুটি ছিল চামড়ার :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : كَانَ لِنَعْلِ رَسُوْلِ اللهِ قِبَالَانِ
৬২. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জুতায় দুটি করে চামড়ার ফিতা ছিল। [মুজামুল সগীর, হা/২৫৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ তালিযুক্ত জুতাও পরিধান করতেন :
عَنْ عَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ يَقُوْلُ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يُصَلِّي فِي نَعْلَيْنِ مَخْصُوْفَتَيْنِ
৬৩. আমর ইবনে হুরায়ছ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে তালিযুক্ত জুতা পরিধান করে সালাত আদায় করতে দেখেছি। [সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৭১৭; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১৪৬৫।]
তিনি এক পায়ে জুতা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا يَمْشِيَنَّ اَحَدُكُمْ فِي نَعْلٍ وَاحِدَةٍ ، لِيُنْعِلْهُمَا جَمِيْعًا اَوْ لِيُحْفِهِمَا جَمِيْعًا
৬৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরিধান করে না হাঁটে। হয়তো দু’পায়ে জুতা পরিধান করবে কিংবা খালি পায়ে হাঁটবে। [মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৩; সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৬।]
عَنْ جَابِرٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ نَهٰى اَنْ يَّأْكُلَ ، يَعْنِي الرَّجُلَ ، بِشِمَالِهٖ ، اَوْ يَمْشِيَ فِي نَعْلٍ وَاحِدَةٍ
৬৫. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বাম হাতে খেতে এবং এক পায়ে জুতা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪১৫৩; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৩৩৩২।]
জুতা পরিধান করা এবং খোলার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিক নিদের্শনা :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اِذَا انْتَعَلَ اَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِالْيَمِيْنِ ، وَاِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدَأْ بِالشِّمَالِ ، فَلْتَكُنِ الْيَمِيْنُ اَوَّلَهُمَا تُنْعَلُ وَاٰخِرَهُمَا تُنْزَعُ
৬৬. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুতা পরিধান করে তখন সে যেন ডান দিক থেকে আরম্ভ করে। কিন্তু খোলার সময় যেন বাম দিক হতে আরম্ভ করে। আর তাই জুতা পরিধানে ডান পা প্রথমে দেবে এবং খোলার সময় বাম পা হতে প্রথমে জুতা খোলবে। [মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৪; সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০০৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ডান দিক থেকে জুতা পরিধান করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي تَرَجُّلِهٖ وَتَنَعُّلِهٖ وَطُهُوْرِهٖ
৬৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কেশ বিন্যাস করা, জুতা পরিধান করা ও পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে ডান দিক হতে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২৬; সুনানে নাসাঈ, হা/৪২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৭১; ইবনে হিববান, হা/১০৯১।]
আবু বকর ও উমর (রাঃ)ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ন্যায় জুতা ব্যবহার করতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : كَانَ لِنَعْلِ رَسُوْلِ اللهِ قِبَالَانِ وَاَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ ، وَاَوَّلُ مَنْ عَقَدَ عَقْدًا وَّاحِدًا عُثْمَانُ
৬৮. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ , আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) প্রমুখের জুতায় দুটি করে ফিতা ছিল। উসমান (রাঃ)-ই সর্বপ্রথম এক ফিতাবিশিষ্ট জুতা পরিধান করেন। [মুজামুল কাবীর, হা/১২৮।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي ذِكْرِ خَاتَمِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আংটিতে আবিসিনীয় পাথর বসানো ছিল :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ خَاتَمُ النَّبِيِّ مِنْ وَّرِقٍ ، وَكَانَ فَصُّهٗ حَبَشِيًّا
৬৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ রূপার আংটি ব্যবহার করতেন। আর তাঁর আংটিতে আবিসিনীয় পাথর বসানো ছিল। [আবু দাউদ, হা/৪২১৮]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে একটি রৌপ্যের আংটি ছিল :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، اَنَّ النَّبِيَّ اِتَّخَذَ خَاتَمًا مِنْ فِضَّةٍ ، فَكَانَ يَخْتِمُ بِهٖ وَلَا يَلْبَسُهٗ
৭০. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করেছিলেন। তিনি তা দ্বারা (চিঠিপত্রে) সীল মারতেন, তবে তিনি (সচরাচর) তা পরিধান করতেন না। [নাসাঈ, হা/৫২১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৬৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ সীল মারার জন্য আংটিটি তৈরি করেছিলেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : لَمَّا اَرَادَ رَسُوْلُ اللهِ اَنْ يَكْتُبَ اِلَى الْعَجَمِ قِيْلَ لَهٗ : اِنَّ الْعَجَمَ لَا يَقْبَلُوْنَ اِلَّا كِتَابًا عَلَيْهِ خَاتَمٌ ، فَاصْطَنَعَ خَاتَمًا فَكَاَنِّيْ اَنْظُرُ اِلٰى بَيَاضِهٖ فِي كَفِّهٖ
৭১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অনারব রাজা-বাদশাহদের কাছে দাওয়াতপত্র প্রেরণের সংকল্প (ইচ্ছা) করেন তখন তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তারা সীল ছাড়া চিঠি গ্রহণ করে না। তাই তিনি একটি আংটি তৈরি করান। তাঁর হাতের নিচে রাখা আংটিটির ঔজ্জ্বল্য যেন আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩০৭৫।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমত কোন আংটি তৈরি করেননি। কিন্তু যখন অবগত হলেন বিভিন্ন রাজা-বাদশাহগণ সীল-মোহর ছাড়া চিঠিপত্রের মূল্যায়ন করেন না, তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ দীনের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণের জন্য আংটি তৈরি করেন।
হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয় যে, চিঠিপত্রের মাধ্যমে দীনের দাওয়াত দেয়াও সুন্নত। সুলায়মান (আঃ) সর্বপ্রথম চিঠির মাধ্যমে সাবার রাণী বিলকীসকে দাওয়াত দিয়েছিলেন।
আংটিটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ نَقْشُ خَاتَمِ رَسُوْلِ اللهِ : مُحَمَّدٌ سَطْرٌ ، وَرَسُوْلٌ سَطْرٌ ، وَاللهُ سَطْرٌ
৭২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল। ‘মুহাম্মাদ’ এক লাইনে, ‘রাসূল’ এক লাইনে এবং ‘আল্লাহ’ এক লাইনে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৭৮; ইবনে হিববান, হা/১৪১৪।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَتَبَ اِلٰى كِسْرٰى وَقَيْصَرَ وَالنَّجَاشِيِّ ، فَقِيْلَ لَهٗ : اِنَّهُمْ لَا يَقْبَلُوْنَ كِتَابًا اِلَّا بِخَاتَمٍ فَصَاغَ رَسُوْلُ اللهِ خَاتَمًا حَلْقَتُهٗ فِضَّةٌ ، وَنُقِشَ فِيْهِ : مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ
৭৩. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ পারস্য সম্রাট কিসরা, রোম সম্রাট কায়সার এবং আবিসিনীয় বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট (ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে) চিঠি লেখার ইচ্ছে পোষণ করেন। তখন তাঁকে জানানো হলো যে, তারা সীল-মোহর ছাড়া চিঠি গ্রহণ করেন না। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি আংটি তৈরি করান, যার বৃত্তটি ছিল রৌপ্যের। আর তিনি ঐ আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত করান। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০৩।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ যেসব বাদশাহর নামে চিঠি পাঠিয়েছেন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ যেসব রাজা-বাদশাহ ও শাসকদের নামে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণ করেন তাদের কয়েকজনের তালিকা নিম্নে দেয়া হলো :
১. রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াস : সাহাবী দিহইয়া কালবী (রাঃ) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নবুওয়াতের প্রতি তার বিশ্বাস থাকার পরও তিনি ঈমান আনেননি। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চিঠির কোন অবমাননাও করেননি।
২. পারস্যের সম্রাট পারভেজ : আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা আস-সাহমী (রাঃ) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান। পাপী পারভেজ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চিঠি ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বদ দু‘আর ফলে তার রাজ্যও ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
৩. আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজ্জাশী : এ চিঠির বাহক সাহাবী আমর ইবনে উমাইয়া (রাঃ)। যে নাজ্জাশী হাবশায় মুসলমানদেরকে স্থান দিয়েছিলেন তাঁর নাম আমবাসা। ষষ্ঠ হিজরী সনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবম হিজরী সনে মারা যান। মদিনায় রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করেন।
৪. মিশরের রাজা মুকাওকিস : তার কাছে চিঠি নিয়ে যান হাতিব ইবনে আবী বালতা‘আ। তিনি ইসলাম কবুল করেননি। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট হাদিয়া প্রেরণ করেন।
৫. বাহরাইনের রাজা মুনযির ইবনে সাদী : আলা ইবনে হাযরাম (রাঃ) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান। তিনি ইসলাম কবুল করেন এবং ইসলামী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।
৬. আম্মানের রাজা : সে সময় আম্মানে ছিল দু’জন বাদশাহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমর ইবনে আস (রাঃ) এর মাধ্যমে তাদের কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। চিঠি পেয়ে তাঁরা উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন।
আংটিটি পর্যায়ক্রমে খলীফাগণ ব্যবহার করেন এবং উসমান (রাঃ) এর হাত থেকে তা একটি কূপে পড়ে যায় :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : اِتَّخَذَ رَسُوْلُ اللهِ خَاتَمًا مِنْ وَّرِقٍ ، فَكَانَ فِي يَدِهٖ ثُمَّ كَانَ فِي يَدِ اَبِي بَكْرٍ ، وَيَدِ عُمَرَ ، ثُمَّ كَانَ فِي يَدِ عُثْمَانَ ، حَتّٰى وَقَعَ فِي بِئْرِ اَرِيْسٍ نَقْشُهٗ : مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ
৭৪. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি রূপার আংটি তৈরি করান। সর্বদা তা তাঁর হাতে থাকত। তারপর তা পালাক্রমে আবু বকর (রাঃ) উমর (রাঃ) এর হাতে আসে। এরপর উসমান (রাঃ) এর হাত থেকে (মু‘আয়কিবের সাথে লেনদেনের সময়) তা আরীস নামক কূপে পড়ে যায়। তাতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৩৪; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৮১৪।]
ব্যাখ্যা : এ কূপটি মসজিদে কুবার নিকটস্থ একটি খেজুর বাগানে অবস্থিত ছিল। সিরীয় ভাষাতে ‘আরীস’ অর্থ কৃষক। আরীস নামক একজন ইয়াহুদির নাম অনুপাতে ঐ কূপের নামকরণ করা হয়েছিল ‘বি‘রে আরীস’ বা আরীসের কূপ।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ خَاتَمُ النَّبِيِّ مِنْ وَّرِقٍ ، وَكَانَ فَصُّهٗ حَبَشِيًّا
৬৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ রূপার আংটি ব্যবহার করতেন। আর তাঁর আংটিতে আবিসিনীয় পাথর বসানো ছিল। [আবু দাউদ, হা/৪২১৮]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে একটি রৌপ্যের আংটি ছিল :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، اَنَّ النَّبِيَّ اِتَّخَذَ خَاتَمًا مِنْ فِضَّةٍ ، فَكَانَ يَخْتِمُ بِهٖ وَلَا يَلْبَسُهٗ
৭০. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করেছিলেন। তিনি তা দ্বারা (চিঠিপত্রে) সীল মারতেন, তবে তিনি (সচরাচর) তা পরিধান করতেন না। [নাসাঈ, হা/৫২১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৬৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ সীল মারার জন্য আংটিটি তৈরি করেছিলেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : لَمَّا اَرَادَ رَسُوْلُ اللهِ اَنْ يَكْتُبَ اِلَى الْعَجَمِ قِيْلَ لَهٗ : اِنَّ الْعَجَمَ لَا يَقْبَلُوْنَ اِلَّا كِتَابًا عَلَيْهِ خَاتَمٌ ، فَاصْطَنَعَ خَاتَمًا فَكَاَنِّيْ اَنْظُرُ اِلٰى بَيَاضِهٖ فِي كَفِّهٖ
৭১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অনারব রাজা-বাদশাহদের কাছে দাওয়াতপত্র প্রেরণের সংকল্প (ইচ্ছা) করেন তখন তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তারা সীল ছাড়া চিঠি গ্রহণ করে না। তাই তিনি একটি আংটি তৈরি করান। তাঁর হাতের নিচে রাখা আংটিটির ঔজ্জ্বল্য যেন আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩০৭৫।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমত কোন আংটি তৈরি করেননি। কিন্তু যখন অবগত হলেন বিভিন্ন রাজা-বাদশাহগণ সীল-মোহর ছাড়া চিঠিপত্রের মূল্যায়ন করেন না, তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ দীনের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণের জন্য আংটি তৈরি করেন।
হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয় যে, চিঠিপত্রের মাধ্যমে দীনের দাওয়াত দেয়াও সুন্নত। সুলায়মান (আঃ) সর্বপ্রথম চিঠির মাধ্যমে সাবার রাণী বিলকীসকে দাওয়াত দিয়েছিলেন।
আংটিটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ نَقْشُ خَاتَمِ رَسُوْلِ اللهِ : مُحَمَّدٌ سَطْرٌ ، وَرَسُوْلٌ سَطْرٌ ، وَاللهُ سَطْرٌ
৭২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল। ‘মুহাম্মাদ’ এক লাইনে, ‘রাসূল’ এক লাইনে এবং ‘আল্লাহ’ এক লাইনে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৭৮; ইবনে হিববান, হা/১৪১৪।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَتَبَ اِلٰى كِسْرٰى وَقَيْصَرَ وَالنَّجَاشِيِّ ، فَقِيْلَ لَهٗ : اِنَّهُمْ لَا يَقْبَلُوْنَ كِتَابًا اِلَّا بِخَاتَمٍ فَصَاغَ رَسُوْلُ اللهِ خَاتَمًا حَلْقَتُهٗ فِضَّةٌ ، وَنُقِشَ فِيْهِ : مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ
৭৩. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ পারস্য সম্রাট কিসরা, রোম সম্রাট কায়সার এবং আবিসিনীয় বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট (ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে) চিঠি লেখার ইচ্ছে পোষণ করেন। তখন তাঁকে জানানো হলো যে, তারা সীল-মোহর ছাড়া চিঠি গ্রহণ করেন না। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি আংটি তৈরি করান, যার বৃত্তটি ছিল রৌপ্যের। আর তিনি ঐ আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত করান। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০৩।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ যেসব বাদশাহর নামে চিঠি পাঠিয়েছেন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ যেসব রাজা-বাদশাহ ও শাসকদের নামে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণ করেন তাদের কয়েকজনের তালিকা নিম্নে দেয়া হলো :
১. রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াস : সাহাবী দিহইয়া কালবী (রাঃ) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নবুওয়াতের প্রতি তার বিশ্বাস থাকার পরও তিনি ঈমান আনেননি। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চিঠির কোন অবমাননাও করেননি।
২. পারস্যের সম্রাট পারভেজ : আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা আস-সাহমী (রাঃ) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান। পাপী পারভেজ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চিঠি ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বদ দু‘আর ফলে তার রাজ্যও ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
৩. আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজ্জাশী : এ চিঠির বাহক সাহাবী আমর ইবনে উমাইয়া (রাঃ)। যে নাজ্জাশী হাবশায় মুসলমানদেরকে স্থান দিয়েছিলেন তাঁর নাম আমবাসা। ষষ্ঠ হিজরী সনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবম হিজরী সনে মারা যান। মদিনায় রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করেন।
৪. মিশরের রাজা মুকাওকিস : তার কাছে চিঠি নিয়ে যান হাতিব ইবনে আবী বালতা‘আ। তিনি ইসলাম কবুল করেননি। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট হাদিয়া প্রেরণ করেন।
৫. বাহরাইনের রাজা মুনযির ইবনে সাদী : আলা ইবনে হাযরাম (রাঃ) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান। তিনি ইসলাম কবুল করেন এবং ইসলামী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।
৬. আম্মানের রাজা : সে সময় আম্মানে ছিল দু’জন বাদশাহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমর ইবনে আস (রাঃ) এর মাধ্যমে তাদের কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। চিঠি পেয়ে তাঁরা উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন।
আংটিটি পর্যায়ক্রমে খলীফাগণ ব্যবহার করেন এবং উসমান (রাঃ) এর হাত থেকে তা একটি কূপে পড়ে যায় :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : اِتَّخَذَ رَسُوْلُ اللهِ خَاتَمًا مِنْ وَّرِقٍ ، فَكَانَ فِي يَدِهٖ ثُمَّ كَانَ فِي يَدِ اَبِي بَكْرٍ ، وَيَدِ عُمَرَ ، ثُمَّ كَانَ فِي يَدِ عُثْمَانَ ، حَتّٰى وَقَعَ فِي بِئْرِ اَرِيْسٍ نَقْشُهٗ : مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ
৭৪. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি রূপার আংটি তৈরি করান। সর্বদা তা তাঁর হাতে থাকত। তারপর তা পালাক্রমে আবু বকর (রাঃ) উমর (রাঃ) এর হাতে আসে। এরপর উসমান (রাঃ) এর হাত থেকে (মু‘আয়কিবের সাথে লেনদেনের সময়) তা আরীস নামক কূপে পড়ে যায়। তাতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৩৪; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৮১৪।]
ব্যাখ্যা : এ কূপটি মসজিদে কুবার নিকটস্থ একটি খেজুর বাগানে অবস্থিত ছিল। সিরীয় ভাষাতে ‘আরীস’ অর্থ কৃষক। আরীস নামক একজন ইয়াহুদির নাম অনুপাতে ঐ কূপের নামকরণ করা হয়েছিল ‘বি‘রে আরীস’ বা আরীসের কূপ।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ
রাসূলুল্লাহ ﷺ আংটি ডান ও বাম হাতে পরিধান করতেন- এ সম্পর্কে উভয় ধরনের হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম বুখারী (রহঃ) ও ইমাম তিরযিমী (রহঃ) এর মতে ডান হাতে আংটি পরিধান করার হাদীস প্রাধান্যযোগ্য। তবে এ অধ্যায়ে ইমাম তিরমিযীর শিরোণাম থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, তিনি ডান হাতে পরিধান করার হাদীসসমূহকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
নবী ﷺ ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন :
عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِي طَالِبٍ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَلْبَسُ خَاتَمَهٗ فِي يَمِينِهٖ
৭৫. আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন। [আবু দাউদ, হা/৪২২৮; সুনানে নাসাঈ, হা/৫২০৩; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৪৫৮; ইবনে হিববান, হা/৫৫০১।]
সাহাবীগণও তাঁর অনুসরণে ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন :
عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ قَالَ : رَاَيْتُ ابْنَ اَبِيْ رَافِعٍ ، يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ فَسَاَلْتُهٗ عَنْ ذٰلِكَ فَقَالَ : رَاَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ جَعْفَرٍ يَّتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ ، وَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ
৭৬. হা্ম্মাদ ইবনে সালামা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু রাফি’কে ডান হাতে আংটি পরিধান করতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে জাফরকে ডান হাতে আংটি পরিধান করতে দেখেছি। আর আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ডান হাতে আংটি পরিধান করতে দেখেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৪২।]
عَنِ الصَّلتِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ ، يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ وَلَا اِخَالُهٗ اِلَّا قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ
৭৭. সালত ইবনে আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে আববাস (রাঃ) তাঁর ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন। আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি শুধু বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আংটির পাথরটি হাতের তালুর দিকে সন্নিহিত করে রাখতেন :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ : اَنَّ النَّبِيَّ اِتَّخَذَ خَاتَمًا مِنْ فِضَّةٍ ، وَجَعَلَ فَصَّهٗ مِمَّا يَلِيْ كَفَّهٗ ، وَنَقَشَ فِيْهِ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ ، وَنَهٰى اَنْ يَنْقُشَ اَحَدٌ عَلَيْهِ وَهُوَ الَّذِي سَقَطَ مِنْ مُعَيْقِيْبٍ فِي بِئْرِ اَرِيْسٍ
৭৮. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করান, যার পাথর স্থাপিত দিকটি তাঁর হাতের তালুর দিকে সন্নিহিত করে রাখেন। এ আংটিতে তিনি ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত করান। তবে অন্য কাউকে তা অংকিত করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ঐ আংটিটি মু‘আয়কীবের হাত থেকে আরীস কূপে পড়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৯৮; মুস্তাখরাজে আবু ‘আওয়ানা, হা/৬৯৮৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৩৩; মুসনাদে হুমায়দী, হা/৭০৯।]
হাসান ও হুসাইন (রাঃ) বাম হাতে আংটি পরিধান করতেন :
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : كَانَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ يَتَخَتَّمَانِ فِي يَسَارِهِمَا
৭৯. জাফর ইবনে মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতার হতে বর্ণনা করেন যে, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) বাম হাতে আংটি পরিধান করতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৫৬৭৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৪৭।]
স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা যাবে না :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : اِتَّخَذَ رَسُوْلُ اللهِ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ ، فَكَانَ يَلْبَسُهٗ فِي يَمِيْنِهٖ ، فَاتَّخَذَ النَّاسُ خَوَاتِيْمَ مِنْ ذَهَبٍ فَطَرَحَهٗ وَقَالَ : لَا اَلْبَسُهٗ اَبدًا فَطَرَحَ النَّاسُ خَوَاتِيْمَهُمْ
৮০. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি স্বর্ণের আংটি তৈরি করান। তিনি তা ডান হাতে পরিধান করতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)ও তাঁর দেখাদেখি স্বর্ণের আংটি তৈরি করান। এক পর্যায়ে তিনি স্বর্ণের আংটিটি খুলে ফেলেন এবং বলেন, আমি কখনো তা পরিধান করব না। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)ও তাঁদের আংটি খুলে ফেলেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১২৯।]
ব্যাখ্যা : ইসলামের প্রাথমিক যুগে স্বর্ণের ব্যবহার বৈধ ছিল। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমে স্বর্ণের আংটি তৈরি করান এবং পরিধান করেন। অতঃপর সাহাবীগণও তাঁর অনুসরণে স্বর্ণের আংটি তৈরি করান। যখন স্বর্ণের ব্যবহার পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ হয়, রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন সে আংটিটি খুলে ফেলেন এবং সাহাবীগণও খুলে ফেলেন।
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ سَيْفِ رَسُوْلِ اللهِ
নবী ﷺ ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন :
عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِي طَالِبٍ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَلْبَسُ خَاتَمَهٗ فِي يَمِينِهٖ
৭৫. আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন। [আবু দাউদ, হা/৪২২৮; সুনানে নাসাঈ, হা/৫২০৩; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৪৫৮; ইবনে হিববান, হা/৫৫০১।]
সাহাবীগণও তাঁর অনুসরণে ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন :
عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ قَالَ : رَاَيْتُ ابْنَ اَبِيْ رَافِعٍ ، يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ فَسَاَلْتُهٗ عَنْ ذٰلِكَ فَقَالَ : رَاَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ جَعْفَرٍ يَّتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ ، وَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ
৭৬. হা্ম্মাদ ইবনে সালামা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু রাফি’কে ডান হাতে আংটি পরিধান করতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে জাফরকে ডান হাতে আংটি পরিধান করতে দেখেছি। আর আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ডান হাতে আংটি পরিধান করতে দেখেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৪২।]
عَنِ الصَّلتِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ ، يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ وَلَا اِخَالُهٗ اِلَّا قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَتَخَتَّمُ فِي يَمِيْنِهٖ
৭৭. সালত ইবনে আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে আববাস (রাঃ) তাঁর ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন। আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি শুধু বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আংটির পাথরটি হাতের তালুর দিকে সন্নিহিত করে রাখতেন :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ : اَنَّ النَّبِيَّ اِتَّخَذَ خَاتَمًا مِنْ فِضَّةٍ ، وَجَعَلَ فَصَّهٗ مِمَّا يَلِيْ كَفَّهٗ ، وَنَقَشَ فِيْهِ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ ، وَنَهٰى اَنْ يَنْقُشَ اَحَدٌ عَلَيْهِ وَهُوَ الَّذِي سَقَطَ مِنْ مُعَيْقِيْبٍ فِي بِئْرِ اَرِيْسٍ
৭৮. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করান, যার পাথর স্থাপিত দিকটি তাঁর হাতের তালুর দিকে সন্নিহিত করে রাখেন। এ আংটিতে তিনি ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত করান। তবে অন্য কাউকে তা অংকিত করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ঐ আংটিটি মু‘আয়কীবের হাত থেকে আরীস কূপে পড়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৯৮; মুস্তাখরাজে আবু ‘আওয়ানা, হা/৬৯৮৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৩৩; মুসনাদে হুমায়দী, হা/৭০৯।]
হাসান ও হুসাইন (রাঃ) বাম হাতে আংটি পরিধান করতেন :
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : كَانَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ يَتَخَتَّمَانِ فِي يَسَارِهِمَا
৭৯. জাফর ইবনে মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতার হতে বর্ণনা করেন যে, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) বাম হাতে আংটি পরিধান করতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৫৬৭৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৪৭।]
স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা যাবে না :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : اِتَّخَذَ رَسُوْلُ اللهِ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ ، فَكَانَ يَلْبَسُهٗ فِي يَمِيْنِهٖ ، فَاتَّخَذَ النَّاسُ خَوَاتِيْمَ مِنْ ذَهَبٍ فَطَرَحَهٗ وَقَالَ : لَا اَلْبَسُهٗ اَبدًا فَطَرَحَ النَّاسُ خَوَاتِيْمَهُمْ
৮০. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি স্বর্ণের আংটি তৈরি করান। তিনি তা ডান হাতে পরিধান করতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)ও তাঁর দেখাদেখি স্বর্ণের আংটি তৈরি করান। এক পর্যায়ে তিনি স্বর্ণের আংটিটি খুলে ফেলেন এবং বলেন, আমি কখনো তা পরিধান করব না। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)ও তাঁদের আংটি খুলে ফেলেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১২৯।]
ব্যাখ্যা : ইসলামের প্রাথমিক যুগে স্বর্ণের ব্যবহার বৈধ ছিল। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমে স্বর্ণের আংটি তৈরি করান এবং পরিধান করেন। অতঃপর সাহাবীগণও তাঁর অনুসরণে স্বর্ণের আংটি তৈরি করান। যখন স্বর্ণের ব্যবহার পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ হয়, রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন সে আংটিটি খুলে ফেলেন এবং সাহাবীগণও খুলে ফেলেন।
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ سَيْفِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ সবসময় যে তরবারি ব্যবহার করতেন, তার নাম ছিল যুলফিকার বা যুলফাকার। এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আরো কয়েকটি তরবারি ছিল। সেগুলো হলো,
১. আল মাসূর (উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত)। [এটি তিনি পিতার উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। এ তরবারিটি তাঁর প্রথম তরবারি ছিল।]
২. আল কাযীব (মারাত্মক ধারাল)।
৩. আল বাত্তার (সর্বাধিক কর্তনকারী)।
৪. আল লাহীফ (বেষ্টনকারী)।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : كَانَتْ قَبِيْعَةُ سَيْفِ رَسُوْلِ اللهِ مِنْ فِضَّةٍ
৮১. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তরবারির বাটের অগ্রভাগ ছিল রৌপ্যের দ্বারা তৈরিকৃত। [আবু দাউদ, হা/২৫৮৫; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৮২০।]
ব্যাখ্যা : উল্লেখিত তরবারিটি ছিল যুলফিকার। মক্কা বিজয়ের দিন এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিল।
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ دِرْعِ رَسُوْلِ اللهِ
১. আল মাসূর (উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত)। [এটি তিনি পিতার উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। এ তরবারিটি তাঁর প্রথম তরবারি ছিল।]
২. আল কাযীব (মারাত্মক ধারাল)।
৩. আল বাত্তার (সর্বাধিক কর্তনকারী)।
৪. আল লাহীফ (বেষ্টনকারী)।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : كَانَتْ قَبِيْعَةُ سَيْفِ رَسُوْلِ اللهِ مِنْ فِضَّةٍ
৮১. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তরবারির বাটের অগ্রভাগ ছিল রৌপ্যের দ্বারা তৈরিকৃত। [আবু দাউদ, হা/২৫৮৫; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৮২০।]
ব্যাখ্যা : উল্লেখিত তরবারিটি ছিল যুলফিকার। মক্কা বিজয়ের দিন এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিল।
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ دِرْعِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে যুদ্ধের পোশাক বলতে লৌহবর্মকেই বুঝানো হতো। লৌহবর্ম হচ্ছে, এক ধরনের লোহার জামা, যা তরবারির ও তীরের আঘাত থেকে বাঁচার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে এগুলো অনেক যাদুঘরেই সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়।
عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِ قَالَ : كَانَ عَلَى النَّبِيِّ يَوْمَ أُحُدٍ دِرْعَانِ ، فَنَهَضَ اِلَى الصَّخْرَةِ فَلَمْ يَسْتَطِعْ ، فَاَقْعَدَ طَلْحَةَ تَحْتَهٗ ، وَصَعِدَ النَّبِيُّ حَتّٰى اسْتَوٰى عَلَى الصَّخْرَةِ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَوْجَبَ طَلْحَةُ
৮২. যুবায়ের ইবনে আওয়াম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন নবী ﷺ দুটি লৌহবর্ম পরিহিত ছিলেন। তিনি পর্বত শৃঙ্গে উঠতে চাইলেন কিন্তু (মারাত্মক জখম হওয়ায়) তা পারলেন না। তাই তিনি তালহা (রাঃ) এর উপর ভর করে পর্বত শৃঙ্গে উঠলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আমি নবী ﷺ -কে বলতে শুনেছি, তালহা (আমার শাফায়াত অথবা জান্নাত) ওয়াজিব করে নিল। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৯৭৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৭২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৬০২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯৪৫; মিশকাত, হা/৬১১২।]
ব্যাখ্যা : তালহা (রাঃ) এর উহুদ যুদ্ধে অসাধারণ আত্মত্যাগে সন্তুষ্ট হয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তালহা এমন কাজ করল, যার দ্বারা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। সে কাজটি ছিল এই যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে পাথরে উঠতে সহায়তা করে ছত্রভঙ্গ মুসলমানদেরকে একত্র করার সুযোগ করে দিলেন। তাছাড়া তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে শত্রুদের আঘাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে শত্রুর তীরের আঘাতে জর্জরিত হন। তাঁর শরীরে আশিটিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁর একটি হাতও অবশ হয়ে যায়।
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ عَلَيْهِ يَوْمَ أُحُدٍ دِرْعَانِ ، قَدْ ظَاهَرَ بَيْنَهُمَا
৮৩. সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেহে দুটি লৌহবর্ম ছিল। তিনি ঐ দুটির একটিকে অপরটির উপর পরিধান করেছিলেন। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮০৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৬৫৮; মিশকাত, হা/৩৮৮৬।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ مِغْفَرِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِ قَالَ : كَانَ عَلَى النَّبِيِّ يَوْمَ أُحُدٍ دِرْعَانِ ، فَنَهَضَ اِلَى الصَّخْرَةِ فَلَمْ يَسْتَطِعْ ، فَاَقْعَدَ طَلْحَةَ تَحْتَهٗ ، وَصَعِدَ النَّبِيُّ حَتّٰى اسْتَوٰى عَلَى الصَّخْرَةِ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَوْجَبَ طَلْحَةُ
৮২. যুবায়ের ইবনে আওয়াম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন নবী ﷺ দুটি লৌহবর্ম পরিহিত ছিলেন। তিনি পর্বত শৃঙ্গে উঠতে চাইলেন কিন্তু (মারাত্মক জখম হওয়ায়) তা পারলেন না। তাই তিনি তালহা (রাঃ) এর উপর ভর করে পর্বত শৃঙ্গে উঠলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আমি নবী ﷺ -কে বলতে শুনেছি, তালহা (আমার শাফায়াত অথবা জান্নাত) ওয়াজিব করে নিল। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৯৭৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৭২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৬০২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯৪৫; মিশকাত, হা/৬১১২।]
ব্যাখ্যা : তালহা (রাঃ) এর উহুদ যুদ্ধে অসাধারণ আত্মত্যাগে সন্তুষ্ট হয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তালহা এমন কাজ করল, যার দ্বারা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। সে কাজটি ছিল এই যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে পাথরে উঠতে সহায়তা করে ছত্রভঙ্গ মুসলমানদেরকে একত্র করার সুযোগ করে দিলেন। তাছাড়া তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে শত্রুদের আঘাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে শত্রুর তীরের আঘাতে জর্জরিত হন। তাঁর শরীরে আশিটিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁর একটি হাতও অবশ হয়ে যায়।
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ عَلَيْهِ يَوْمَ أُحُدٍ دِرْعَانِ ، قَدْ ظَاهَرَ بَيْنَهُمَا
৮৩. সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেহে দুটি লৌহবর্ম ছিল। তিনি ঐ দুটির একটিকে অপরটির উপর পরিধান করেছিলেন। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮০৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৬৫৮; মিশকাত, হা/৩৮৮৬।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ مِغْفَرِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : اَنَّ النَّبِيَّ دَخَلَ مَكَّةَ وَعَلَيْهِ مِغْفَرٌ ، فَقِيْلَ لَهٗ : هٰذَا ابْنُ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِاَسْتَارِ الْكَعْبَةِ ، فَقَالَ : اُقْتُلُوْهُ
৮৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় মক্কায় (বিজয়ী বেশে) প্রবেশ করেন। তখন তাঁকে বলা হলো, ঐ যে ইবনে খাতাল কাবাগৃহের গিলাফ ধরে ঝুলছে। তিনি বললেন, তোমরা তাকে হত্যা করো। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৭৪; আবু দাউদ, হা/২৬৮৭; নাসাঈ, হা/২৮৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০৮৭; ইবনে খুযাইমা, হা/৩০৬৩; ইবনে হিববান, হা/৩৭১৯; মুসনাদে বাযযার, হা/৬২৯০।]
ব্যাখ্যা :
ইবনে খাতালকে যে কারণে হত্যা করা হয় :
জাহেলী যুগে তার নাম ছিল আবদুল উজ্জা। সে মদিনায় এসে ইসলাম কবুল করলে তার নাম রাখা হয় আবদুল্লাহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে এক এলাকায় যাকাত আদায় করার জন্য নিযুক্ত করেন। তার সহযোগী একজন মুসলিম গোলাম ছিল। খাবার তৈরি করতে একটু দেরী হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে গোলামটিকে মেরে ফেলে এবং পালিয়ে মক্কায় গিয়ে ধর্মত্যাগী বা মুরতাদ হয়ে যায়। তাই মক্কা বিজয়ের দিন এ পাপিষ্ঠের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
তৎকালীন সময়ে আরবের মুশরিকরা কাবা ঘরের প্রতি পরম সম্মান প্রদর্শন করত। কোন অপরাধী কাবা ঘরের চাদর ধরে থাকলে তাকে নিরাপত্তা দেয়া হতো। নিয়মানুযায়ী নিরাপত্তার আশায় ইবনে খাতাল ঐ সময় কাবার গিলাফ ধরে থাকে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে হত্যার আদেশ দিলে সাহাবীগণ তাকে যম্যম্ কূপ ও মাকামে ইব্রাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে এনে হত্যা করেন।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ دَخَلَ مَكَّةَ عَامَ الْفَتْحِ ، وَعَلٰى رَأْسِهٖ الْمِغْفَرُ قَالَ : فَلَمَّا نَزَعَهٗ جَاءَهٗ رَجُلٌ ، فَقَالَ لَهٗ : اِبْنُ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِاَسْتَارِ الْكَعْبَةِ فَقَالَ : اُقْتُلُوْهُ . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ : وَبَلَغَنِيْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ لَمْ يَكُنْ يَوْمَئِذٍ مُحْرِمًا
৮৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর মাথায় হেলমেট পরিধান করে মক্কায় প্রবেশ করেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তা খুলে রাখেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে সংবাদ দিল যে, ইবনে খাতাল কাবা ঘরের গিলাফ ধরে ঝুলছে। তিনি বললেন, তোমরা তাকে হত্যা করো। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৯৪৬; সহীহ বুখারী, হা/৪২৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৯৫৫।]
ইবনে শিহাব (রহঃ) বলেন, এ মর্মে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সে দিন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন না।
بَابُ مَا جَاءَ فِي عِمَامَةِ رَسُوْلِ اللهِ
৮৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় মক্কায় (বিজয়ী বেশে) প্রবেশ করেন। তখন তাঁকে বলা হলো, ঐ যে ইবনে খাতাল কাবাগৃহের গিলাফ ধরে ঝুলছে। তিনি বললেন, তোমরা তাকে হত্যা করো। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৭৪; আবু দাউদ, হা/২৬৮৭; নাসাঈ, হা/২৮৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০৮৭; ইবনে খুযাইমা, হা/৩০৬৩; ইবনে হিববান, হা/৩৭১৯; মুসনাদে বাযযার, হা/৬২৯০।]
ব্যাখ্যা :
ইবনে খাতালকে যে কারণে হত্যা করা হয় :
জাহেলী যুগে তার নাম ছিল আবদুল উজ্জা। সে মদিনায় এসে ইসলাম কবুল করলে তার নাম রাখা হয় আবদুল্লাহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে এক এলাকায় যাকাত আদায় করার জন্য নিযুক্ত করেন। তার সহযোগী একজন মুসলিম গোলাম ছিল। খাবার তৈরি করতে একটু দেরী হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে গোলামটিকে মেরে ফেলে এবং পালিয়ে মক্কায় গিয়ে ধর্মত্যাগী বা মুরতাদ হয়ে যায়। তাই মক্কা বিজয়ের দিন এ পাপিষ্ঠের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
তৎকালীন সময়ে আরবের মুশরিকরা কাবা ঘরের প্রতি পরম সম্মান প্রদর্শন করত। কোন অপরাধী কাবা ঘরের চাদর ধরে থাকলে তাকে নিরাপত্তা দেয়া হতো। নিয়মানুযায়ী নিরাপত্তার আশায় ইবনে খাতাল ঐ সময় কাবার গিলাফ ধরে থাকে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে হত্যার আদেশ দিলে সাহাবীগণ তাকে যম্যম্ কূপ ও মাকামে ইব্রাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে এনে হত্যা করেন।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ دَخَلَ مَكَّةَ عَامَ الْفَتْحِ ، وَعَلٰى رَأْسِهٖ الْمِغْفَرُ قَالَ : فَلَمَّا نَزَعَهٗ جَاءَهٗ رَجُلٌ ، فَقَالَ لَهٗ : اِبْنُ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِاَسْتَارِ الْكَعْبَةِ فَقَالَ : اُقْتُلُوْهُ . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ : وَبَلَغَنِيْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ لَمْ يَكُنْ يَوْمَئِذٍ مُحْرِمًا
৮৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর মাথায় হেলমেট পরিধান করে মক্কায় প্রবেশ করেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তা খুলে রাখেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে সংবাদ দিল যে, ইবনে খাতাল কাবা ঘরের গিলাফ ধরে ঝুলছে। তিনি বললেন, তোমরা তাকে হত্যা করো। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৯৪৬; সহীহ বুখারী, হা/৪২৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৯৫৫।]
ইবনে শিহাব (রহঃ) বলেন, এ মর্মে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সে দিন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন না।
بَابُ مَا جَاءَ فِي عِمَامَةِ رَسُوْلِ اللهِ
সে সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবীগণের মাঝে পাগড়ি পরিধানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। তবে তারা কখনো কখনো শুধু টুপিও পরিধান করতেন। আর খুব কম সময়েই তাঁরা খালি মাথায় থাকতেন। পাগড়ি ছিল তাঁদের সৌন্দর্য ও মর্যাদার পোশাকসমূহের অন্যতম। তাঁরা কেবল সালাতের জন্য পাগড়ি ব্যবহার করতেন না। বরং তাঁরা পোশাকের অংশ হিসেবে সবসময়ই পাগড়ি পরিধান করতেন এবং ঐ অবস্থাতেই সালাত আদায় করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কালো পাগড়ি পরিধান করতেন :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : دَخَلَ النَّبِيُّ مَكَّةَ يَوْمَ الْفَتْحِ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ
৮৬. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী ﷺ কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৭৫; আবু দাউদ, হা/৪০৭৮; সুনানে নাসাঈ, হা/৫৩৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৮২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯৪৭; ইবনে হিববান, হা/৫৪২৫।]
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনার আলোকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সমগ্র জীবনে যে রঙের পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা হলো : সাদা, সবুজ এবং কালো।
তিনি পাগড়ি পরিধান করে খুৎবা প্রদান করতেন :
عَنْ عَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ ، قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ يَخْطُبُ عَلَى الْمِنْبَرِ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ
৮৭. আমর ইবনে হুরায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বারের উপর খুৎবা দিতে দেখেছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৭৭; আবু দাউদ, হা/৪০৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/১১০৪।]
তিনি পাগড়ির কিছু অংশ দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলিয়ে দিতেন :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اِذَا اعْتَمَّ سَدَلَ عِمَامَتَهٗ بَيْنَ كَتِفَيْهِ . قَالَ نَافِعٌ : وَكَانَ اِبْنُ عُمَرَ ، يَفْعَلُ ذٰلِكَ . قَالَ عُبَيْدُ اللهِ : وَرَاَيْتُ الْقَاسِمَ بْنَ مُحَمَّدٍ ، وَسَالِمًا يَفْعَلَانِ ذٰلِكَ
৮৮. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন পাগড়ি পরিধান করতেন তখন দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলিয়ে দিতেন। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, ইবনে উমর (রাঃ)ও অনুরূপ করতেন। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ ও সালিম (রহঃ)-কেও অনুরূপ করতে দেখেছি। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১০৯; জামেউস সগীর, হা/৮৮০৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৭১৭; মিশকাত, হা/৪৩৩৮।]
তিনি তৈলাক্ত পাগড়িও ব্যবহার করতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : اَنَّ النَّبِيَّ خَطَبَ النَّاسَ وَعَلَيْهِ عِصَابَةٌ دَسْمَاءُ
৮৯. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তৈলাক্ত পাগড়ি পরিধান করে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮০০।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ اِزَارِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ কালো পাগড়ি পরিধান করতেন :
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : دَخَلَ النَّبِيُّ مَكَّةَ يَوْمَ الْفَتْحِ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ
৮৬. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী ﷺ কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৭৫; আবু দাউদ, হা/৪০৭৮; সুনানে নাসাঈ, হা/৫৩৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৮২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯৪৭; ইবনে হিববান, হা/৫৪২৫।]
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনার আলোকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সমগ্র জীবনে যে রঙের পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা হলো : সাদা, সবুজ এবং কালো।
তিনি পাগড়ি পরিধান করে খুৎবা প্রদান করতেন :
عَنْ عَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ ، قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ يَخْطُبُ عَلَى الْمِنْبَرِ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ
৮৭. আমর ইবনে হুরায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বারের উপর খুৎবা দিতে দেখেছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৭৭; আবু দাউদ, হা/৪০৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/১১০৪।]
তিনি পাগড়ির কিছু অংশ দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলিয়ে দিতেন :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اِذَا اعْتَمَّ سَدَلَ عِمَامَتَهٗ بَيْنَ كَتِفَيْهِ . قَالَ نَافِعٌ : وَكَانَ اِبْنُ عُمَرَ ، يَفْعَلُ ذٰلِكَ . قَالَ عُبَيْدُ اللهِ : وَرَاَيْتُ الْقَاسِمَ بْنَ مُحَمَّدٍ ، وَسَالِمًا يَفْعَلَانِ ذٰلِكَ
৮৮. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন পাগড়ি পরিধান করতেন তখন দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলিয়ে দিতেন। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, ইবনে উমর (রাঃ)ও অনুরূপ করতেন। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ ও সালিম (রহঃ)-কেও অনুরূপ করতে দেখেছি। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১০৯; জামেউস সগীর, হা/৮৮০৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৭১৭; মিশকাত, হা/৪৩৩৮।]
তিনি তৈলাক্ত পাগড়িও ব্যবহার করতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : اَنَّ النَّبِيَّ خَطَبَ النَّاسَ وَعَلَيْهِ عِصَابَةٌ دَسْمَاءُ
৮৯. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তৈলাক্ত পাগড়ি পরিধান করে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৮০০।]
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ اِزَارِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ মোটা লুঙ্গি পরিধান করতেন :
عَنْ اَبِيْ بُرْدَةَ قَالَ : اَخْرَجَتْ اِلَيْنَا عَائِشَةُ ، كِسَاءً مُلَبَّدًا وَاِزَارًا غَلِيْظًا ، فَقَالَتْ : قُبِضَ رُوْحُ رَسُوْلِ اللهِ فِي هَذَيْنِ
৯০. আবু বুরদা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আয়েশা (রাঃ) আমাদের সামনে একটি তালিযুক্ত চাদর ও একটি মোটা লুঙ্গি বের করে আনেন। তারপর তিনি বললেন, ওফাতের সময় রাসূলুল্লাহ এ দুটি কাপড় পরিহিত ছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৮৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২০৬।]
ব্যাখ্যা : ‘ইযার’ ও রিদা’ ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে আরব দেশের অধিক প্রচলিত পোশাক। একটি শরীরের নিম্নাংশে জড়ানো ও একটি শরীরের উপরাংশে কাঁধের উপর দিয়ে জড়ানো থাকত। নিম্নাংশের চাদর বা সেলাইবিহীন লুঙ্গিকে ইযার বলা হয়। আর উপরাংশের চাদরকে রিদা বলা হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন প্রকার পোশাক পরিধান করতেন, তিনি কামীস (জামা) পছন্দ করতেন। তবে ব্যবহারের আধিক্যের দিক থেকে লুঙ্গি ও চাদরই সবচেয়ে বেশি পরিধান করতেন।
তিনি অর্ধ গোছ পর্যন্ত লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরিধান করতেন :
عَنِ الْاَشْعَثِ بْنِ سُلَيْمٍ قَالَ : سَمِعْتُ عَمَّتِيْ ، تُحَدِّثُ عَنْ عَمِّهَا قَالَ : بَيْنَا اَنَا اَمشِيْ بِالْمَدِيْنَةِ اِذَا اِنْسَانٌ خَلْفِيْ يَقُوْلُ : اِرْفَعْ اِزَارَكَ ، فَاِنَّهٗ اَتْقٰى وَاَبْقٰى فَاِذَا هُوَ رَسُوْلُ اللهِ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّمَا هِيَ بُرْدَةٌ مَلْحَاءُ قَالَ : اَمَا لَكَ فِيَّ أُسْوَةٌ ؟ فَنَظَرْتُ فَاِذَا اِزَارُهٗ اِلٰى نِصْفِ سَاقَيْهِ
৯১. আশ‘আস ইবনে সুলায়েম (রহঃ) বলেন, আমি আমার ফুফু হতে হাদীস শুনেছি। তিনি তাঁর চাচা (উবাইদ ইবনে খালিদ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একবার মদিনা যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে একজন লোক পেছন থেকে আমাকে চিৎকার করে বলে উঠলেন, তোমার কাপড় উপরে উঠাও; কারণ, তা অধিকতর (ধূলাবালি হতে) হেফাযতকারী ও স্থায়িত্বদানকারী। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ তো সাদা ডোরা কালো কাপড় (এতে আবার অহংকার করার কি আছে?) তিনি বললেন, আমার মধ্যে কি তোমার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ নেই? তখন আমি লক্ষ্য করলাম, তাঁর লুঙ্গি অর্ধ গোছ (হাটুর নিচে ও গোড়ালীর উপর) পর্যন্ত ঝুলন্ত। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৬০৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৭৯; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১২৮৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৭৩৭।]
তিনি টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরিধান করতে নিষেধ করেছেন :
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ قَالَ : اَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ بِعَضَلَةِ سَاقِيْ اَوْ سَاقِهٖ فَقَالَ : هٰذَا مَوْضِعُ الْاِزَارِ ، فَاِنْ اَبَيْتَ فَاَسْفَلَ ، فَاِنْ اَبَيْتَ فَلَا حَقَّ لِلاِزَارِ فِي الْكَعْبَيْنِ
৯২. হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার পায়ের গোছা অথবা (রাবীর সন্দেহ) পায়ের নলার গোশত ধরে বললেন, এ-ই হলো লুঙ্গি পরিধানের নিম্নতম স্থান। তুমি যদি এটাতে তৃপ্তিবোধ না কর তাহলে সামান্য নিচে নামাতে পার। এতেও যদি তুমি তৃপ্তিবোধ না কর, তাহলে জেনে রেখো, লুঙ্গি টাখনুর নিচে পরিধান করার কোন অধিকার তোমার নেই। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৭২; মুসনাদে আহমাদ হা/২৩৪৫০।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي مَشْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ اَبِيْ بُرْدَةَ قَالَ : اَخْرَجَتْ اِلَيْنَا عَائِشَةُ ، كِسَاءً مُلَبَّدًا وَاِزَارًا غَلِيْظًا ، فَقَالَتْ : قُبِضَ رُوْحُ رَسُوْلِ اللهِ فِي هَذَيْنِ
৯০. আবু বুরদা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আয়েশা (রাঃ) আমাদের সামনে একটি তালিযুক্ত চাদর ও একটি মোটা লুঙ্গি বের করে আনেন। তারপর তিনি বললেন, ওফাতের সময় রাসূলুল্লাহ এ দুটি কাপড় পরিহিত ছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৮৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৮৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২০৬।]
ব্যাখ্যা : ‘ইযার’ ও রিদা’ ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে আরব দেশের অধিক প্রচলিত পোশাক। একটি শরীরের নিম্নাংশে জড়ানো ও একটি শরীরের উপরাংশে কাঁধের উপর দিয়ে জড়ানো থাকত। নিম্নাংশের চাদর বা সেলাইবিহীন লুঙ্গিকে ইযার বলা হয়। আর উপরাংশের চাদরকে রিদা বলা হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন প্রকার পোশাক পরিধান করতেন, তিনি কামীস (জামা) পছন্দ করতেন। তবে ব্যবহারের আধিক্যের দিক থেকে লুঙ্গি ও চাদরই সবচেয়ে বেশি পরিধান করতেন।
তিনি অর্ধ গোছ পর্যন্ত লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরিধান করতেন :
عَنِ الْاَشْعَثِ بْنِ سُلَيْمٍ قَالَ : سَمِعْتُ عَمَّتِيْ ، تُحَدِّثُ عَنْ عَمِّهَا قَالَ : بَيْنَا اَنَا اَمشِيْ بِالْمَدِيْنَةِ اِذَا اِنْسَانٌ خَلْفِيْ يَقُوْلُ : اِرْفَعْ اِزَارَكَ ، فَاِنَّهٗ اَتْقٰى وَاَبْقٰى فَاِذَا هُوَ رَسُوْلُ اللهِ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّمَا هِيَ بُرْدَةٌ مَلْحَاءُ قَالَ : اَمَا لَكَ فِيَّ أُسْوَةٌ ؟ فَنَظَرْتُ فَاِذَا اِزَارُهٗ اِلٰى نِصْفِ سَاقَيْهِ
৯১. আশ‘আস ইবনে সুলায়েম (রহঃ) বলেন, আমি আমার ফুফু হতে হাদীস শুনেছি। তিনি তাঁর চাচা (উবাইদ ইবনে খালিদ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একবার মদিনা যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে একজন লোক পেছন থেকে আমাকে চিৎকার করে বলে উঠলেন, তোমার কাপড় উপরে উঠাও; কারণ, তা অধিকতর (ধূলাবালি হতে) হেফাযতকারী ও স্থায়িত্বদানকারী। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ তো সাদা ডোরা কালো কাপড় (এতে আবার অহংকার করার কি আছে?) তিনি বললেন, আমার মধ্যে কি তোমার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ নেই? তখন আমি লক্ষ্য করলাম, তাঁর লুঙ্গি অর্ধ গোছ (হাটুর নিচে ও গোড়ালীর উপর) পর্যন্ত ঝুলন্ত। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৬০৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৭৯; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১২৮৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৭৩৭।]
তিনি টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরিধান করতে নিষেধ করেছেন :
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ قَالَ : اَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ بِعَضَلَةِ سَاقِيْ اَوْ سَاقِهٖ فَقَالَ : هٰذَا مَوْضِعُ الْاِزَارِ ، فَاِنْ اَبَيْتَ فَاَسْفَلَ ، فَاِنْ اَبَيْتَ فَلَا حَقَّ لِلاِزَارِ فِي الْكَعْبَيْنِ
৯২. হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার পায়ের গোছা অথবা (রাবীর সন্দেহ) পায়ের নলার গোশত ধরে বললেন, এ-ই হলো লুঙ্গি পরিধানের নিম্নতম স্থান। তুমি যদি এটাতে তৃপ্তিবোধ না কর তাহলে সামান্য নিচে নামাতে পার। এতেও যদি তুমি তৃপ্তিবোধ না কর, তাহলে জেনে রেখো, লুঙ্গি টাখনুর নিচে পরিধান করার কোন অধিকার তোমার নেই। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৭২; মুসনাদে আহমাদ হা/২৩৪৫০।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي مَشْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ اِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدٍ ، مِنْ وَلَدِ عَلِيِّ بْنِ اَبِي طَالِبٍ قَالَ : كَانَ عَلِيٌّ اِذَا وَصَفَ النَّبِيَّ قَالَ : كَانَ اِذَا مَشٰى تَقَلَّعَ كَاَنَّمَا يَنْحَطُّ مِنْ صَبَبٍ
৯৩. আলী ইবনে আবু তালিব এর নাতী ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) যখন নবী ﷺ এর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতেন তখন বলতেন, তিনি যখন পথ চলতেন তখন পা তুলে এমনভাবে চলতেন যে, মনে হতো তিনি যেন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন।
عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِي طَالِبٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اِذَا مَشٰى تَكَفَّاَ تَكَفُّؤًا كَاَنَّمَا يَنْحَطُّ مِنْ صَبَبٍ
৯৪. আলী ইবনে আবু তলিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পথ চলতেন তখন সামনের দিকে এমনভাবে ঝুঁকে হাঁটতেন, মনে হতো তিনি যেন কোন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৬; মিশকাত, হা/৫৭৯০।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي تَقَنُّعِ رَسُوْلِ اللهِ
৯৩. আলী ইবনে আবু তালিব এর নাতী ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) যখন নবী ﷺ এর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতেন তখন বলতেন, তিনি যখন পথ চলতেন তখন পা তুলে এমনভাবে চলতেন যে, মনে হতো তিনি যেন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন।
عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِي طَالِبٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اِذَا مَشٰى تَكَفَّاَ تَكَفُّؤًا كَاَنَّمَا يَنْحَطُّ مِنْ صَبَبٍ
৯৪. আলী ইবনে আবু তলিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পথ চলতেন তখন সামনের দিকে এমনভাবে ঝুঁকে হাঁটতেন, মনে হতো তিনি যেন কোন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৬; মিশকাত, হা/৫৭৯০।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي تَقَنُّعِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُكْثِرُ الْقِنَاعَ كَاَنَّ ثَوْبَهٗ ثَوْبُ زَيَّاتٍ
৯৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রায় সবসময় মাথা ঢেকে রাখতেন। তাঁর ঢেকে রাখার বস্ত্রটি (তৈলাক্ত হয়ে) এমন হয়েছিল যে, মনে হতো তা যেন কোন তৈল বিক্রেতার (তৈল মোছার) একখন্ড বস্ত্র। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৬৪।]
ব্যাখ্যা : অধিক তেল ব্যবহারে কাপড় ময়লা হয়, তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ মাথায় অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার করতেন, যাতে টুপি বা পাগড়ি নষ্ট না হয়। এখানে কাপড় দ্বারা উদ্দেশ্য পাগড়ির নিচে ব্যবহারের কাপড়।
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ جِلْسَةِ رَسُوْلِ اللهِ
৯৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রায় সবসময় মাথা ঢেকে রাখতেন। তাঁর ঢেকে রাখার বস্ত্রটি (তৈলাক্ত হয়ে) এমন হয়েছিল যে, মনে হতো তা যেন কোন তৈল বিক্রেতার (তৈল মোছার) একখন্ড বস্ত্র। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৬৪।]
ব্যাখ্যা : অধিক তেল ব্যবহারে কাপড় ময়লা হয়, তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ মাথায় অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার করতেন, যাতে টুপি বা পাগড়ি নষ্ট না হয়। এখানে কাপড় দ্বারা উদ্দেশ্য পাগড়ির নিচে ব্যবহারের কাপড়।
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ جِلْسَةِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيْمٍ ، عَنْ عَمِّهٖ ، اَنَّهٗ رَاَى النَّبِيَّ مُسْتَلْقِيًا فِي الْمَسْجِدِ وَاضِعًا اِحْدٰى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرٰى
৯৬. আববাদ ইবনে তামীম (রহঃ) তার চাচা হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী ﷺ কে মসজিদে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে এক পায়ের উপর অপর পা রেখে (শোয়া অবস্থায়) আরাম করতে দেখেছেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৪১৬; সহীহ বুখারী, হা/৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬২৬; নাসাঈ, হা/৭২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯১]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, পায়ের উপর পা রেখে চিত হয়ে শুয়ে থাকাতে কোন দোষ নেই।
عَنْ اَبِي سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا جَلَسَ فِي الْمَسْجِدِ احْتَبٰى بِيَدَيْهِ
৯৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহতিবা অর্থাৎ নিতম্বের উপর ভর করে উরুর উপর হাত রেখে মসজিদে বসতেন। [আবু দাউদ, হা/৪৮৪৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬১২৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫৮; জামেউস সগীর, হা/৮৮৩১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮২৭; মিশকাত, হা/৪৮১৩।]
ব্যাখ্যা : উরুদ্বয়কে পেটের সাথে লাগিয়ে নিতম্বের উপর ভর দিয়ে বসে দু’হাত দিয়ে উভয় পায়ের নলা পেঁচিয়ে ধরে বসাকে ইহতিবা বলে। এ ধরনের বসা বিনয়ের পরিচায়ক।
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ تَكَاَةِ رَسُوْلِ اللهِ
৯৬. আববাদ ইবনে তামীম (রহঃ) তার চাচা হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী ﷺ কে মসজিদে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে এক পায়ের উপর অপর পা রেখে (শোয়া অবস্থায়) আরাম করতে দেখেছেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৪১৬; সহীহ বুখারী, হা/৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬২৬; নাসাঈ, হা/৭২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯১]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, পায়ের উপর পা রেখে চিত হয়ে শুয়ে থাকাতে কোন দোষ নেই।
عَنْ اَبِي سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا جَلَسَ فِي الْمَسْجِدِ احْتَبٰى بِيَدَيْهِ
৯৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহতিবা অর্থাৎ নিতম্বের উপর ভর করে উরুর উপর হাত রেখে মসজিদে বসতেন। [আবু দাউদ, হা/৪৮৪৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬১২৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫৮; জামেউস সগীর, হা/৮৮৩১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮২৭; মিশকাত, হা/৪৮১৩।]
ব্যাখ্যা : উরুদ্বয়কে পেটের সাথে লাগিয়ে নিতম্বের উপর ভর দিয়ে বসে দু’হাত দিয়ে উভয় পায়ের নলা পেঁচিয়ে ধরে বসাকে ইহতিবা বলে। এ ধরনের বসা বিনয়ের পরিচায়ক।
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ تَكَاَةِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বাম কাঁধে বালিশের উপর হেলান দিতেন :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ عَلٰى يَسَارِهٖ
৯৮. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বাম কাঁধে (হেলান দেয়া অবস্থায়) দেখেছি। [আবু দাউদ, হা/৪১৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০১৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৯; মুসনাদে বাযযার, হা/৪২৭২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১২৬; মিশকাত, হা/৪৭১২।]
হাদীস বর্ণনার সময়ও বালিশে হেলান দিতেন :
عَنْ اَبِي بَكْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلَا أُحَدِّثُكُمْ بِاَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ؟ قَالُوا : بَلٰى يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : اَلْاِشْرَاكُ بِاللهِ ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ . قَالَ : وَجَلَسَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَانَ مُتَّكِئًا قَالَ : وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ ، اَوْ قَوْلُ الزُّوْرِ قَالَ : فَمَا زَالَ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُهَا حَتّٰى قُلْنَا : لَيْتَهٗ سَكَتَ
৯৯. আবু বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে বলব না? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যাঁ- হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা ও পিতামাতার অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, হাদীস বর্ণনার সময় তিনি বালিশে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। এরপর তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, আর মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা অথবা মিথ্যা বলা (-ও কবীরা গুনাহ)। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কথা বারবার বলতে থাকেন। এমনকি আমরা মনে মনে বলতে লাগলাম যে, আহ! যদি তিনি চুপ করতেন!’ [সহীহ বুখারী, হা/২৬৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৪১০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৯৯।]
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ তিনটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর তালিকা এ তিনটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং বিভিন্ন হাদীসে আরো কতিপয় কাজকে ‘কবীরা গুনাহ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- খাবারে শরীক হওয়ার ভয়ে বা ভরণ পোষণের ভয়ে নিজ সন্তানকে হত্যা করা, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা প্রভৃতি।
কবীরা গুনাহের সংজ্ঞা :
গুনাহ দু’প্রকার। ১. কবীরা, ২. সগীরা। শরীয়তে যে পাপ কাজের জন্য কোন শাস্তির বিধান রয়েছে, তা করা কবীরা বা বড় গুনাহ। কেউ কেউ বলেন, কুরআন হাদীসে যে গুনাহ সম্পর্কে কঠোর ধমকি দেয়া হয়েছে- যদিও শাস্তির কথা বলা হয়নি, সেটি কবীরা।
তিনি কখনো ঠেস দেয়া অবস্থায় খেতেন না :
عَنْ اَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَمَّا اَنَا فَلَا اٰكُلُ مُتَّكِئًا
১০০. আবু জুহায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে আহার করি না। [মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২১৪; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৭০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৭০৬; মুজামুল কাবীর, হা/১৭৮০২; ইবনে হিববান, হা/৫২৪০।]
ব্যাখ্যা : ‘আমি হেলান দিয়ে আহার করি না’ এ উক্তিটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এ জন্য বলেছেন, মানুষ যেন তাঁর অনুসরণ করে।
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ مُتَّكِئًا عَلٰى وِسَادَةٍ
১০১. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ -কে বালিশের উপর হেলান দেয়া অবস্থায় দেখেছি। [আবু দাউদ, হা/৪১৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০১৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১২৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৯।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, আহার ছাড়া অন্য সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ হেলান দিয়ে বসতেন।
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ اِتِّكَاءِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ عَلٰى يَسَارِهٖ
৯৮. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বাম কাঁধে (হেলান দেয়া অবস্থায়) দেখেছি। [আবু দাউদ, হা/৪১৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০১৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৯; মুসনাদে বাযযার, হা/৪২৭২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১২৬; মিশকাত, হা/৪৭১২।]
হাদীস বর্ণনার সময়ও বালিশে হেলান দিতেন :
عَنْ اَبِي بَكْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلَا أُحَدِّثُكُمْ بِاَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ؟ قَالُوا : بَلٰى يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : اَلْاِشْرَاكُ بِاللهِ ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ . قَالَ : وَجَلَسَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَانَ مُتَّكِئًا قَالَ : وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ ، اَوْ قَوْلُ الزُّوْرِ قَالَ : فَمَا زَالَ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُهَا حَتّٰى قُلْنَا : لَيْتَهٗ سَكَتَ
৯৯. আবু বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে বলব না? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যাঁ- হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা ও পিতামাতার অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, হাদীস বর্ণনার সময় তিনি বালিশে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। এরপর তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, আর মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা অথবা মিথ্যা বলা (-ও কবীরা গুনাহ)। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কথা বারবার বলতে থাকেন। এমনকি আমরা মনে মনে বলতে লাগলাম যে, আহ! যদি তিনি চুপ করতেন!’ [সহীহ বুখারী, হা/২৬৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৪১০; আদাবুল মুফরাদ, হা/১৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৯৯।]
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ তিনটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর তালিকা এ তিনটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং বিভিন্ন হাদীসে আরো কতিপয় কাজকে ‘কবীরা গুনাহ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- খাবারে শরীক হওয়ার ভয়ে বা ভরণ পোষণের ভয়ে নিজ সন্তানকে হত্যা করা, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা প্রভৃতি।
কবীরা গুনাহের সংজ্ঞা :
গুনাহ দু’প্রকার। ১. কবীরা, ২. সগীরা। শরীয়তে যে পাপ কাজের জন্য কোন শাস্তির বিধান রয়েছে, তা করা কবীরা বা বড় গুনাহ। কেউ কেউ বলেন, কুরআন হাদীসে যে গুনাহ সম্পর্কে কঠোর ধমকি দেয়া হয়েছে- যদিও শাস্তির কথা বলা হয়নি, সেটি কবীরা।
তিনি কখনো ঠেস দেয়া অবস্থায় খেতেন না :
عَنْ اَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَمَّا اَنَا فَلَا اٰكُلُ مُتَّكِئًا
১০০. আবু জুহায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে আহার করি না। [মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২১৪; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৭০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৭০৬; মুজামুল কাবীর, হা/১৭৮০২; ইবনে হিববান, হা/৫২৪০।]
ব্যাখ্যা : ‘আমি হেলান দিয়ে আহার করি না’ এ উক্তিটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এ জন্য বলেছেন, মানুষ যেন তাঁর অনুসরণ করে।
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ مُتَّكِئًا عَلٰى وِسَادَةٍ
১০১. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ -কে বালিশের উপর হেলান দেয়া অবস্থায় দেখেছি। [আবু দাউদ, হা/৪১৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০১৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১২৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৮৯।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, আহার ছাড়া অন্য সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ হেলান দিয়ে বসতেন।
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ اِتِّكَاءِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ شَاكِيًا فَخَرَجَ يَتَوَكَّأُ عَلٰى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ وَعَلَيْهِ ثَوْبٌ قِطْرِيٌّ قَدْ تَوَشَّحَ بِهٖ فَصَلّٰى بِهِمْ
১০২. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একবার রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তখন তিনি উসামা (রাঃ) এর কাঁধে ভর করে বাইরে আসেন। সে সময় তাঁর দেহে একটা ইয়ামানী কাপড় জড়ানো ছিল। তারপর তিনি লোকদের ইমামতি করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৮৭; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/২২৫৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৯২।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ اَكْلِ رَسُوْلِ اللهِ
১০২. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একবার রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তখন তিনি উসামা (রাঃ) এর কাঁধে ভর করে বাইরে আসেন। সে সময় তাঁর দেহে একটা ইয়ামানী কাপড় জড়ানো ছিল। তারপর তিনি লোকদের ইমামতি করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৮৭; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/২২৫৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৯২।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ اَكْلِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ আহার শেষে তিন আঙ্গুলি চুষে নিতেন :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اِذَا اَكَلَ طَعَامًا لَعِقَ اَصَابِعَهُ الثَّلَاثَ
১০৩. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ যখন আহার করতেন তখন তিনি তাঁর তিনটি আঙ্গুলি চুষে নিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪১৬; আবু দাউদ, হা/৩৮৪৭; ইবনে হিববান, হা/৫২৫২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭১২১; বায়হাকী, হা/১৪৩৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৯৩৭; জামেউস সগীর, হা/৮৮১১।]
عَنْ اَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : اَمَّا اَنَا فَلَا اٰكُلُ مُتَّكِئًا
১০৪. আবু জুহায়ফা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ ইরশাদ করেছেন, আমি ঠেসরত অবস্থায় আহার করি না। [মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২১৪; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৭০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৭০৬; মুজামুল কাবীর, হা/১৭৮০২; ইবনে হিববান, হা/৫২৪০।]
তিনি তিন আঙ্গুলি দিয়ে আহার করতেন :
عَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَأْكُلُ بِاَصَابِعِهِ الثَّلَاثِ وَيَلْعَقُهُنَّ
১০৫. কা‘ব ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তিন অঙ্গুলি দিয়ে আহার করতেন এবং তা চুষে নিতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা, হা/২৪৯৫৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৮২০।]
ব্যাখ্যা : সাধারণত আহারের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ তিনটি আঙ্গুল ব্যবহার করতেন এবং খাওয়ার পর সেগুলো চেটে খেতেন। আঙ্গুল তিনটি হলো বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা।
কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা এ আঙ্গুলত্রয় দ্বারা পানাহার করতে দেখেছি। আরো দেখেছি যে, তিনি হাত ধৌত করার আগে তিন আঙ্গুল চেটে খেয়েছেন। প্রথমে মধ্যমা অতঃপর তর্জনী অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুল চেটেছেন।
উল্লেখ্য যে, নবী ﷺ এর সময় খেজুর, রুটি, গোশত অথবা তরকারীই ছিল প্রধান খাদ্য। এসব খাদ্য গ্রহণের সময় সব আঙ্গুল ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। বিধায় নবী ﷺ তিন আঙ্গুল দ্বারা খেতেন। কিন্তু ভাত খাওয়ার সময় পাঁচ আঙ্গুলই ব্যবহার করতে হয়। বিধায় সব আঙ্গুলই চেটে খাওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ আহার কর, তখন যেন আহার শেষে আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কারণ সে জানে না খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২৫৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪০৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬১।]
অতি ক্ষুধার কারণে তিনি একবার বাঁকা হয়ে ঠেস দিয়ে খেয়েছিলেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ : أُتِيَ رَسُوْلُ اللهِ بِتَمْرٍ فَرَاَيْتُهٗ يَأْكُلُ وَهُوَ مُقْعٍ مِنَ الْجُوْعِ
১০৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে খুরমা আনা হলো। তখন আমি তাঁকে তীব্র ক্ষুধার কারণে বাঁকা হয়ে ঠেস দিয়ে খেতে দেখেছি। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৪২।]
ব্যাখ্যা : সাধারণত রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন জিনিসের সাথে ঠেস দিয়ে বসে আহার করতেন না। এখানে সমস্যার কারণে হেলান দিয়েছিলেন।
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ خُبْزِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اِذَا اَكَلَ طَعَامًا لَعِقَ اَصَابِعَهُ الثَّلَاثَ
১০৩. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ যখন আহার করতেন তখন তিনি তাঁর তিনটি আঙ্গুলি চুষে নিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪১৬; আবু দাউদ, হা/৩৮৪৭; ইবনে হিববান, হা/৫২৫২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭১২১; বায়হাকী, হা/১৪৩৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৯৩৭; জামেউস সগীর, হা/৮৮১১।]
عَنْ اَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : اَمَّا اَنَا فَلَا اٰكُلُ مُتَّكِئًا
১০৪. আবু জুহায়ফা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ ইরশাদ করেছেন, আমি ঠেসরত অবস্থায় আহার করি না। [মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২১৪; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৭০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৭০৬; মুজামুল কাবীর, হা/১৭৮০২; ইবনে হিববান, হা/৫২৪০।]
তিনি তিন আঙ্গুলি দিয়ে আহার করতেন :
عَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَأْكُلُ بِاَصَابِعِهِ الثَّلَاثِ وَيَلْعَقُهُنَّ
১০৫. কা‘ব ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তিন অঙ্গুলি দিয়ে আহার করতেন এবং তা চুষে নিতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা, হা/২৪৯৫৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৮২০।]
ব্যাখ্যা : সাধারণত আহারের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ তিনটি আঙ্গুল ব্যবহার করতেন এবং খাওয়ার পর সেগুলো চেটে খেতেন। আঙ্গুল তিনটি হলো বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা।
কা‘ব ইবনে উজরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা এ আঙ্গুলত্রয় দ্বারা পানাহার করতে দেখেছি। আরো দেখেছি যে, তিনি হাত ধৌত করার আগে তিন আঙ্গুল চেটে খেয়েছেন। প্রথমে মধ্যমা অতঃপর তর্জনী অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুল চেটেছেন।
উল্লেখ্য যে, নবী ﷺ এর সময় খেজুর, রুটি, গোশত অথবা তরকারীই ছিল প্রধান খাদ্য। এসব খাদ্য গ্রহণের সময় সব আঙ্গুল ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। বিধায় নবী ﷺ তিন আঙ্গুল দ্বারা খেতেন। কিন্তু ভাত খাওয়ার সময় পাঁচ আঙ্গুলই ব্যবহার করতে হয়। বিধায় সব আঙ্গুলই চেটে খাওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ আহার কর, তখন যেন আহার শেষে আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কারণ সে জানে না খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২৫৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪০৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬১।]
অতি ক্ষুধার কারণে তিনি একবার বাঁকা হয়ে ঠেস দিয়ে খেয়েছিলেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ : أُتِيَ رَسُوْلُ اللهِ بِتَمْرٍ فَرَاَيْتُهٗ يَأْكُلُ وَهُوَ مُقْعٍ مِنَ الْجُوْعِ
১০৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে খুরমা আনা হলো। তখন আমি তাঁকে তীব্র ক্ষুধার কারণে বাঁকা হয়ে ঠেস দিয়ে খেতে দেখেছি। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৪২।]
ব্যাখ্যা : সাধারণত রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন জিনিসের সাথে ঠেস দিয়ে বসে আহার করতেন না। এখানে সমস্যার কারণে হেলান দিয়েছিলেন।
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ خُبْزِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পরিবারবর্গ কখনো একাধারে ২দিন পেট ভরে যবের রুটি আহার করেননি :
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّهَا قَالَتْ : مَا شَبِعَ اٰلُ مُحَمَّدٍ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيْرِ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتّٰى قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ
১০৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাত পর্যন্ত মুহাম্মাদ ﷺ এর পরিবারবর্গ একাধারে ২দিন পেট ভরে যবের রুটি আহার করেননি। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৪৬; তাহযীবুল আসার, হা/৬০৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৭৩।]
ব্যাখ্যা : বদান্যতা ও দানশীলতায় রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন অতুলনীয়। স্বেচ্ছায় এ অবস্থাকে গ্রহণ করে নেয়ার কারণেই তাঁকে এরূপ সাদাসিধা জীবন-যাপন করতে হয়েছে।
তিনি চাইলে সীমাহীন স্বাচ্ছন্দের সাথে জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু তা তাঁর পছন্দনীয় ছিল না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কখনো যবের রুটি উদ্ধৃত থাকত না :
عَنْ اَبِى أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ يَقُوْلُ : مَا كَانَ يَفْضُلُ عَنِ اَهْلِ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ خُبْزُ الشَّعِيْرِ
১০৮. আবু উমামা বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গৃহে কখনো যবের রুটি উদ্ধৃত থাকত না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৫০; মুজামুল কাবীর, হা/৭৫৭৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৭৫।]
ব্যাখ্যা : অন্যদের দান করার দরুণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘরে অতিরিক্ত পাকানোর মতো খাদ্য থাকত না। তাছাড়া আহলুস সুফ্ফা এবং অন্যান্য মেহমান তো থাকতই।
মাঝে মাঝে তিনি আহারের জন্য কিছুই পেতেন না :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَبِيْتُ اللَّيَالِيَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِيًا هُوَ وَاَهْلُهٗ لَا يَجِدُوْنُ عِشَاءً وَكَانَ اَكْثَرُ خُبْزِهِمْ خُبْزَ الشَّعِيْرِ
১০৯. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর পরিবারবর্গ একাধারে কয়েক রাত অনাহারে এমনভাবে কাটাতেন যে, তাঁরা আহার্য বস্তুর কোন কিছুই পেতেন না। আর অধিকাংশ সময় তাঁদের খাবার হতো যবের রুটি (অর্থাৎ ধারাবাহিক যবের রুটিও পেতেন না)। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৮০৫; মুজামুল কাবীর, হা/১১৭৩৩।]
তিনি কখনো ময়দা দেখেননি এবং খাবারের জন্য কোন চালনিও ব্যবহার করেননি :
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ، اَنَّهٗ قِيْلَ لَهٗ : اَكَلَ رَسُوْلُ اللهِ النَّقِيَّ ؟ - يَعْنِي الْحُوَّارٰى - فَقَالَ سَهْلٌ : مَا رَاٰى رَسُوْلُ اللهِ النَّقِيَّ حَتّٰى لَقِيَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ تَعَالٰى ، فَقِيْلَ لَهٗ : هَلْ كَانَتْ لَكُمْ مَنَاخِلُ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ؟ قَالَ : مَا كَانَتْ لَنَا مَنَاخِلُ . قِيْلَ : كَيْفَ كُنْتُمْ تَصْنَعُوْنَ بِالشَّعِيْرِ ؟ قَالَ : كُنَّا نَنْفُخُهٗ فَيَطِيْرُ مِنْهُ مَا طَارَ ثُمَّ نَعْجِنُهٗ
১১০. সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ কি ময়দার রুটি আহার করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর ওফাত পর্যন্ত ময়দা দেখেননি। তারপর তাঁকে বলা হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় আপনাদের কি চালনি ছিল? তিনি বললেন, আমাদের কোন চালনি ছিল না। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, তবে আপনারা যবের রুটি কীভাবে ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, আমরা তাতে ফুঁ দিতাম, যাতে অখাদ্য কিছু থাকলে তা উড়ে যায়। এরপর আমরা খামির করে নিতাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৮৬৫; তাহযীবুল আছার, হা/২৫১৭।]
ব্যাখ্যা : সাহল (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ময়দা দেখেননি এবং চালনি ব্যবহার করেননি। এ কথা তিনি তার জানা অনুসারে বলেছেন। কেননা তখন মক্কা ও মদিনায় চালনির প্রচলন ছিল না। অন্যথায় রাসূলুল্লাহ ﷺ নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে সিরিয়া সফরের সময় ময়দা দেখে থাকতে পারেন। কেননা সিরিয়ায় চালনি দিয়ে ময়দা চালার রেওয়াজ আগে থেকেই ছিল।
তিনি আহারের জন্য টেবিল এবং ছোট প্লেট ব্যবহার করতেন না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : مَا اَكَلَ نَبِيُّ اللهِ عَلٰى خِوَانٍ وَلَا فِي سُكُرُّجَةٍ ، وَلَا خُبِزَ لَهٗ مُرَقَّقٌ قَالَ : فَقُلْتُ لِقَتَادَةَ : فَعَلَامَ كَانُوْا يَأْكُلُوْنَ ؟ قَالَ : عَلٰى هٰذِهِ السُّفَرِ
১১১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ টেবিলে আহার করতেন না, ছোট প্লেটে খাবার নিতেন না এবং তাঁর জন্য চাপাতিও তৈরি করা হতো না।
(বর্ণনাকারী) ইউনুস বলেন, আমি কাতাদা (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করে বললাম, তাহলে কোন ধরণের প্লেটে তাঁরা আহার করতেন? তিনি বলেন, দস্তরখানের উপর রেখে আহার করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬১৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৪৭।]
ব্যাখ্যা : ‘সুকুররুজাহ’ শব্দটি ফারসী শব্দ। ক্ষুধা এবং হজমকারক রুচিবর্ধক বিভিন্ন উপকরণ রাখার ছোট ছোট পাত্র। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেহেতু নিজে পেটভরে আহার করতেন না, কাজেই পরিতৃপ্ত ভোজনের উপকরণও ব্যবহার করতেন না। তাছাড়া এভাবে আহার করা যেহেতু বিলাসী, তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এসব পদ্ধতি পরিহার করতেন। এটা অতিভোজনকারী লোভী লোকদের অভ্যাস।
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا شَبِعَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيْرِ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتّٰى قُبِضَ
১১২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর জীবদ্দশায় একাধারে ২দিন যবের রুটি আহার করেননি। [তাহযীবুল আছার, হা/৬০৯; শারহুস সুন্নাহ,হা/৪০৭৩।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ اِدَامِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّهَا قَالَتْ : مَا شَبِعَ اٰلُ مُحَمَّدٍ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيْرِ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتّٰى قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ
১০৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাত পর্যন্ত মুহাম্মাদ ﷺ এর পরিবারবর্গ একাধারে ২দিন পেট ভরে যবের রুটি আহার করেননি। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৪৬; তাহযীবুল আসার, হা/৬০৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৭৩।]
ব্যাখ্যা : বদান্যতা ও দানশীলতায় রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন অতুলনীয়। স্বেচ্ছায় এ অবস্থাকে গ্রহণ করে নেয়ার কারণেই তাঁকে এরূপ সাদাসিধা জীবন-যাপন করতে হয়েছে।
তিনি চাইলে সীমাহীন স্বাচ্ছন্দের সাথে জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু তা তাঁর পছন্দনীয় ছিল না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কখনো যবের রুটি উদ্ধৃত থাকত না :
عَنْ اَبِى أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ يَقُوْلُ : مَا كَانَ يَفْضُلُ عَنِ اَهْلِ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ خُبْزُ الشَّعِيْرِ
১০৮. আবু উমামা বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গৃহে কখনো যবের রুটি উদ্ধৃত থাকত না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৫০; মুজামুল কাবীর, হা/৭৫৭৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৭৫।]
ব্যাখ্যা : অন্যদের দান করার দরুণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘরে অতিরিক্ত পাকানোর মতো খাদ্য থাকত না। তাছাড়া আহলুস সুফ্ফা এবং অন্যান্য মেহমান তো থাকতই।
মাঝে মাঝে তিনি আহারের জন্য কিছুই পেতেন না :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَبِيْتُ اللَّيَالِيَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِيًا هُوَ وَاَهْلُهٗ لَا يَجِدُوْنُ عِشَاءً وَكَانَ اَكْثَرُ خُبْزِهِمْ خُبْزَ الشَّعِيْرِ
১০৯. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর পরিবারবর্গ একাধারে কয়েক রাত অনাহারে এমনভাবে কাটাতেন যে, তাঁরা আহার্য বস্তুর কোন কিছুই পেতেন না। আর অধিকাংশ সময় তাঁদের খাবার হতো যবের রুটি (অর্থাৎ ধারাবাহিক যবের রুটিও পেতেন না)। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৮০৫; মুজামুল কাবীর, হা/১১৭৩৩।]
তিনি কখনো ময়দা দেখেননি এবং খাবারের জন্য কোন চালনিও ব্যবহার করেননি :
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ، اَنَّهٗ قِيْلَ لَهٗ : اَكَلَ رَسُوْلُ اللهِ النَّقِيَّ ؟ - يَعْنِي الْحُوَّارٰى - فَقَالَ سَهْلٌ : مَا رَاٰى رَسُوْلُ اللهِ النَّقِيَّ حَتّٰى لَقِيَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ تَعَالٰى ، فَقِيْلَ لَهٗ : هَلْ كَانَتْ لَكُمْ مَنَاخِلُ عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ؟ قَالَ : مَا كَانَتْ لَنَا مَنَاخِلُ . قِيْلَ : كَيْفَ كُنْتُمْ تَصْنَعُوْنَ بِالشَّعِيْرِ ؟ قَالَ : كُنَّا نَنْفُخُهٗ فَيَطِيْرُ مِنْهُ مَا طَارَ ثُمَّ نَعْجِنُهٗ
১১০. সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ কি ময়দার রুটি আহার করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর ওফাত পর্যন্ত ময়দা দেখেননি। তারপর তাঁকে বলা হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় আপনাদের কি চালনি ছিল? তিনি বললেন, আমাদের কোন চালনি ছিল না। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, তবে আপনারা যবের রুটি কীভাবে ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, আমরা তাতে ফুঁ দিতাম, যাতে অখাদ্য কিছু থাকলে তা উড়ে যায়। এরপর আমরা খামির করে নিতাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৮৬৫; তাহযীবুল আছার, হা/২৫১৭।]
ব্যাখ্যা : সাহল (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ময়দা দেখেননি এবং চালনি ব্যবহার করেননি। এ কথা তিনি তার জানা অনুসারে বলেছেন। কেননা তখন মক্কা ও মদিনায় চালনির প্রচলন ছিল না। অন্যথায় রাসূলুল্লাহ ﷺ নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে সিরিয়া সফরের সময় ময়দা দেখে থাকতে পারেন। কেননা সিরিয়ায় চালনি দিয়ে ময়দা চালার রেওয়াজ আগে থেকেই ছিল।
তিনি আহারের জন্য টেবিল এবং ছোট প্লেট ব্যবহার করতেন না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : مَا اَكَلَ نَبِيُّ اللهِ عَلٰى خِوَانٍ وَلَا فِي سُكُرُّجَةٍ ، وَلَا خُبِزَ لَهٗ مُرَقَّقٌ قَالَ : فَقُلْتُ لِقَتَادَةَ : فَعَلَامَ كَانُوْا يَأْكُلُوْنَ ؟ قَالَ : عَلٰى هٰذِهِ السُّفَرِ
১১১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ টেবিলে আহার করতেন না, ছোট প্লেটে খাবার নিতেন না এবং তাঁর জন্য চাপাতিও তৈরি করা হতো না।
(বর্ণনাকারী) ইউনুস বলেন, আমি কাতাদা (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করে বললাম, তাহলে কোন ধরণের প্লেটে তাঁরা আহার করতেন? তিনি বলেন, দস্তরখানের উপর রেখে আহার করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬১৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৪৭।]
ব্যাখ্যা : ‘সুকুররুজাহ’ শব্দটি ফারসী শব্দ। ক্ষুধা এবং হজমকারক রুচিবর্ধক বিভিন্ন উপকরণ রাখার ছোট ছোট পাত্র। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেহেতু নিজে পেটভরে আহার করতেন না, কাজেই পরিতৃপ্ত ভোজনের উপকরণও ব্যবহার করতেন না। তাছাড়া এভাবে আহার করা যেহেতু বিলাসী, তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এসব পদ্ধতি পরিহার করতেন। এটা অতিভোজনকারী লোভী লোকদের অভ্যাস।
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا شَبِعَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيْرِ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتّٰى قُبِضَ
১১২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর জীবদ্দশায় একাধারে ২দিন যবের রুটি আহার করেননি। [তাহযীবুল আছার, হা/৬০৯; শারহুস সুন্নাহ,হা/৪০৭৩।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ اِدَامِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : نِعْمَ الْاِدَامُ الْخَلُّ . قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ ، فِي حَدِيْثِهٖ : نِعْمَ الْاِدَامُ اَوِ الْأُدْمُ الْخَلُّ
১১৩. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সিরকা কতই না চমৎকার তরকারী।
আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেন, সিরকা কতই না চমৎকার উদুম অথবা ইদাম তথা তরকারী। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩১৬।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে সিরকার প্রশংসা করা উদ্দেশ্য। সিরকা উত্তম তরকারী হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন সহজে তৈরি করা যায়, এর সাহায্যার্থে অনায়াসে রুটি ভক্ষণ করা যায় এবং সবসময় পাওয়া যায়।
এছাড়া সিরকার মাঝে কিছু উপকারিতাও রয়েছে। যেমন কফ ও পিত্ত দূর করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ : اَلَسْتُمْ فِي طَعَامٍ وَشَرَابٍ مَا شِئِتُمْ ؟ لَقَدْ رَاَيْتُ نَبِيَّكُمْ وَمَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلَأُ بَطْنَهٗ
১১৪. সিমাক ইবনে হার্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, তোমরা কি পানাহারের ব্যাপারে যা ইচ্ছা তা গ্রহণ কর না? (অর্থাৎ নিশ্চয় গ্রহণ করছ)। অথচ আমি দেখেছি তোমাদের নবী তৃপ্তি সহকারে পেট ভরে সাধারণ খেজুরও খেতে পাননি। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৫০; ইবনে হিববান, হা/৬৩৪০।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর সাহাবী ও তাবিয়ীগণ যখন প্রচুর খাদ্যের অধিকারী হন, তখন তাদেরকে সম্বোধন করে নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) একথা বলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুসরণের প্রতি এবং দুনিয়ার উপকরণ সংক্ষিপ্ত রাখার প্রতি উৎসাহিত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।
عَنْ زَهْدَمٍ الْجَرْمِيِّ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ اَبِيْ مُوْسٰى الْاَشْعَرِيِّ ، فَأُتِيَ بِلَحْمِ دَجَاجٍ فَتَنَحّٰى رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقَالَ : مَا لَكَ ؟ فَقَالَ : اِنِّيْ رَاَيْتُهَا تَأْكُلُ شَيْئًا فَحَلَفْتُ اَنْ لَا اٰكُلَهَا قَالَ : اُدْنُ فَاِنِّي رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَأْكُلُ لَحْمَ دَجَاجٍ
১১৫. যাহদাম জারমী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তাঁর কাছে ভূনা মুরগীর গোশত আনা হলো। ফলে উপস্থিত লোকদের একজন চলে যেতে উদ্যত হলো। তিনি [আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ)] তাঁকে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আমি এক (মুরগীকে) নাপাক খেতে দেখে এ মর্মে কসম করেছি যে, আমি আর কখনো মুরগীর গোশত খাব না। তিনি বললেন, কাছে এসো (এবং নির্দ্বিধায় খাও)। কারণ আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺকে আমি মুরগী খেতে দেখেছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৩৫৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৮৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮০৭।]
ব্যাখ্যা : উক্ত কথার দ্বারা আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, কোন হালাল বস্তুকে হারাম করা অনুচিত।
عَنْ زَهْدَمٍ الْجَرْمِيِّ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ اَبِيْ مُوْسٰى الْاَشْعَرِيِّ قَالَ : فَقَدَّمَ طَعَامَهٗوَقَدَّمَ فِي طَعَامِهٖ لَحْمَ دَجَاجٍ وَفِي الْقَوْمِ رَجُلٌ مِنْ بَنِيْ تَيْمِ اللهِ اَحْمَرُ كَاَنَّهٗ مَوْلًى قَالَ : فَلَمْ يَدْنُ فَقَالَ لَهٗ اَبُوْ مُوْسٰى : اُدْنُ ، فَاِنِّيْ قَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ اَكَلَ مِنْهُ ، فَقَالَ : اِنِّيْ رَاَيْتُهٗ يَأْكُلُ شَيْئًا فَقَذِرْتُهٗ فَحَلَفْتُ اَنْ لَا اَطْعَمَهٗ اَبَدًا
১১৬. যাহদাম জারমী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবু মূসা (রাঃ) এর নিকট ছিলাম। তিনি বলেন, তাঁর নিকট খাবার পরিবেশন করা হলো এবং সে খাবারে মুরগীর গোশত ছিল। সেখানে তায়মুল্লাহ গোত্রের লাল বর্ণের এক ব্যক্তি ছিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, সে যেন একজন গোলাম। বর্ণনাকারী বলেন, সে লোকটি খেতে আসল না। তখন আবু মূসা (রাঃ) তাঁকে বললেন, খেতে এসো- কারণ আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে মুরগীর গোশত খেতে দেখেছি। সে বলল, একে ময়লা কিছু খেতে দেখেছি। সে কারণে আমার ঘৃণা জন্মেছে। তাই আমি কসম করেছি যে, আমি এটা কখনো খাব না।
عَنْ اَبِيْ اَسِيْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : كُلُوْا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوْا بِهٖ ؛ فَاِنَّهٗ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ
১১৭. আবু আসীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা যায়তুন [যাইতুন জলপাই জাতীয় ফল, যা আরব দেশগুলোতে জন্মে।] তৈল খাও এবং তা মালিশ করো। কারণ, তা বরকতময় বৃক্ষ হতে উৎপন্ন। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৫০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬০৯৮; দারেমী, হা/২০৫২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৫৭০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৩৮; জামেউস সগীর, হ/৮৬২৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৭৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ লাউ পছন্দ করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يُعْجِبُهٗ الدُّبَّاءُ فَأُتِيَ بِطَعَامٍ ، اَوْ دُعِيَ لَهٗ فَجَعَلْتُ اَتَتَبَّعُهٗ فَاَضَعُهٗ بَيْنَ يَدَيْهِ لِمَا اَعْلَمُ اَنَّهٗ يُحِبُّهٗ
১১৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ লাউ খুবই পছন্দ করতেন। একবার তাঁর সম্মুখে খানা পরিবেশন করা হলো অথবা তিনি কোন দাওয়াতে গিয়েছিলেন (রাবীর সন্দেহ)। আমার যেহেতু জানা ছিল যে, তিনি লাউ খুব পছন্দ করেন, তাই (তরকারীর মধ্য হতে) বেছে বেছে তাঁর সামনে লাউ পেশ করলাম। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৬১।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ লাউয়ের তরকারী পছন্দ করার কারণ বহুবিধ। এটা শরীর ঠান্ডা রাখে, বুদ্ধি বৃদ্ধি করে। গরম আবহাওয়াতে উপকারী এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার পক্ষে অনুকূল হয়। এ ছাড়াও পিপাসা নিবারণ করে, মাথা ব্যথা দূর করে। আবার এটি স্বচ্ছন্দে গিলা যায়।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, যদি কোন পাত্রে বিভিন্ন খাবার থাকে, তাহলে নিজের সামনে ছাড়া অন্যের দিক থেকেও কোন প্রিয় জিনিস নেয়া যায়। শর্ত হচ্ছে, অন্য কারো যেন অপছন্দ না হয়। লাউয়ের টুকরা তালাশ করার কারণ হলো, সে সময় তরকারীতে ঝোল বেশি দেয়ার নিয়ম ছিল। কারণ, রাসূলুল্লাহ ﷺ তরকারিতে ঝোল বেশি দিতে উৎসাহ দিতেন- যাতে প্রতিবেশীর ঘরে হাদিয়া পাঠানো যায়।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ فَرَاَيْتُ عِنْدَهٗ دُبَّاءً يُقَطَّعُ فَقُلْتُ : مَا هٰذَا ؟ قَالَ : نُكَثِّرُ بِهٖ طَعَامَنَا
১১৯. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী ﷺ এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, লাউ কেটে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। আমি বললাম, এর দ্বারা কী হবে? তিনি বললেন, এর দ্বারা আমরা আমাদের খানা বৃদ্ধি করব। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৬২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের শিক্ষা হলো, রান্না করার বিষয়ে দৃষ্টি রাখা, তদারকি করা তাওয়াক্কুল এবং যুহদের বিপরীত নয়; বরং পরিমিত ব্যয় ও অল্পেতুষ্টি লাভে সহায়ক।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ : اِنَّ خَيَّاطًا دَعَا رَسُوْلَ اللهِ لِطَعَامٍ صَنَعَهٗ ، قَالَ اَنَسٌ : فَذَهَبْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ اِلٰى ذٰلِكَ الطَّعَامِ فَقَرَّبَ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ خُبْزًا مِنْ شَعِيْرٍ ، وَمَرَقًا فِيْهِ دُبَّاءٌ وَقَدِيْدٌ ، قَالَ اَنَسُ : فَرَاَيْتُ النَّبِيَّ يَتَتَبَّعُ الدُّبَّاءَ حَوَالَيِ الْقَصْعَةِ فَلَمْ اَزَلْ أُحِبُّ الدُّبَّاءَ مِنْ يَوْمِئِذٍ
১২০. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক দর্জি খানা তৈরি করে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে দাওয়াত দেয়। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আমিও ঐ দাওয়াতে গিয়েছিলাম। দর্জি লোকটি রাসূলুল্লাহ ﷺএর সামনে যবের রুটি ও ঝোল পরিবেশন করল। সে ঝোলের মধ্যে লাউ ও শুকনা গোশত ছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তরকারীর বাটির বিভিন্ন দিক থেকে লাউয়ের টুকরো খোঁজ করতে দেখেছি। আর সে দিন হতে আমি লাউ খুব পছন্দ করে আসছি। [সহীহ বুখারী, হা/২০৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৫৬; আবু দাউদ, হা/৩৭৮৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আনাস (রাঃ) এরও দাওয়াত ছিল। অথবা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খাদিম হিসেবে গিয়েছিলেন। এতে দোষের কিছু নেই যদি দাওয়াতদাতা অসন্তুষ্ট না হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺমিষ্টি দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يُحِبُّ الْحَلْوَاءَ وَالْعَسَلَ
১২১. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মিষ্টি দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৩১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২৩; ইবনে হিববান, হা/৫২৫৪।]
ব্যাখ্যা : হালওয়া মিষ্ট বস্তু, মিষ্টি জাতীয় জিনিস, মিষ্টান্ন। সাধারণ মানুষ যেসব মিষ্টি খাবার তৈরি করে তাকেই মূলত হালওয়া বলে। আর মূল অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে এর আওতায় মিষ্টি ফলমূলও পড়ে, তথাপিও প্রচলিত পরিভাষা হিসাবে এটা হালওয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। ‘হালওয়া’ বলতে গুড়, চিনি, মধুকেও বুঝায় এবং এর দ্বারা প্রস্তুত মিষ্ট খাদ্যসমূহকেও বুঝিয়ে থাকে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বকরীর পাঁজরের ভূনা গোশত পছন্দ করতেন :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ اَنَّهَا قَرَّبَتْ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ جَنْبًا مَشْوِيًّا فَاَكَلَ مِنْهُ ، ثُمَّ قَامَ اِلَى الصَّلَاةِ وَمَا تَوَضَّاَ
১২২. উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি বকরীর পাঁজরের ভূনা গোশত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে পরিবেশন করেন। তিনি তা হতে খেলেন এবং ওযূ না করেই সালাতে দাঁড়িয়ে যান। [নাসাঈ, হা/১৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৬৩।]
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আগুনে তৈরি খাবার খেলেও ওযূ ভঙ্গ হয় না। তবে অন্য হাদীস দ্বারা আগুনে পাক করা খাদ্য খেলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায় বলেও প্রমাণিত রয়েছে। কিছু সংখ্যক সাহাবী ও তাবিয়ীর মতামতও এটাই। তবে চার খলীফা এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণের মতে আগুনে তৈরি খাবার খেলেও ওযূ ভঙ্গ হয় না। তাঁরা বলেন, যে সকল হাদীস থেকে ওযূ ওয়াজিব হওয়ার কথা উল্লেখও হয়েছে, সেগুলো রহিত হয়ে গেছে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ ؕ قَالَ : اَكَلْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ شِوَاءً فِي الْمَسْجِدِ
১২৩. আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মসজিদে ভূনা গোশ্ত খেয়েছি।
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, একা বা জামা‘আতবদ্ধভাবে মসজিদে পানাহার করা বৈধ, তবে মসজিদের পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করতে হবে।
عَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ : ضِفْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَأُتِيَ بِجَنْبٍ مَشْوِيٍّ ، ثُمَّ اَخَذَ الشَّفْرَةَ فَجَعَلَ يَحُزُّ ، فَحَزَّ لِي بِهَا مِنْهُ قَالَ : فَجَاءَ بِلَالٌ يُؤْذِنُهٗ بِالصَّلَاةِ فَاَلْقٰى الشَّفْرَةَ فَقَالَ : مَا لَهٗ تَرِبَتْ يَدَاهُ ؟ قَالَ : وَكَانَ شَارِبُهٗ قَدْ وَفٰى ، فَقَالَ لَهٗ : اَقُصُّهٗ لَكَ عَلٰى سِوَاكٍ اَوْ قُصُّهٗ عَلٰى سِوَاكٍ
১২৪. মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মেহমান হলাম। তখন (আমার সামনে) ছাগলের পাঁজরের ভূনা গোশত পরিবেশন করা হলো। তারপর তিনি ছুরি দ্বারা তা কাটলেন এবং আমাকে দিলেন। এমন সময় বিলাল (রাঃ) তাঁকে সালাতের আহবান জানালেন। তিনি ছুরিটি ছুঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, তার কী হলো তার উভয় হাত ধূলোয় ধূসরিত হোক। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর গোঁফ লম্বা হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি তাঁকে বললেন, তোমার গোঁফ আমি মিসওয়াকের উপরে রেখে কেটে দেব। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৪৮; মিশকাত, হা/৪২৩৬।]
ব্যাখ্যা : তার দু’হাত ধূলিময় হোক। শাব্দিক বিবেচনার হিসেবে এটা বদ্দু‘আ। অর্থাৎ- সে দরিদ্র ও নিঃস্ব হয়ে যাক। তবে এখানে বদ্দু‘আ উদ্দেশ্য নয়। আরবি ভাষায় ধমক, তিরস্কার ও আক্ষেপমূলক বাক্য হিসেবে এ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়; এখানে এটাই উদ্দেশ্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ উরুর গোশত পছন্দ করতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : أُتِيَ النَّبِيُّ بِلَحْمٍ فَرُفِعَ اِلَيْهِ الذِّرَاعُ وَكَانَتْ تُعْجِبُهٗ فَنَهَسَ مِنْهَا
১২৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে বকরীর সামনের উরু পরিবেশন করা হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করতেন। অতঃপর তিনি তা থেকে দাঁত দিয়ে কেটে খেলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭১২; সহীহ মুসলিম, হা/৫০১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩০৭।]
ব্যাখ্যা : মানুষের ক্ষেত্রে কুনুই থেকে আঙ্গুলের আগা পর্যন্তকে যিরা বলে। গরু ও বকরীর ক্ষেত্রে বাহু বলতে রানকে বুঝায়। এখানে বাহু বলতে রান উদ্দেশ্য।
عَنْ اَبِيْ عُبَيْدٍ قَالَ : طَبَخْتُ لِلنَّبِيِّ قِدْرًا وَقَدْ كَانَ يُعْجِبُهٗ الذِّرَاعُ فَنَاوَلْتُهُ الذِّرَاعَ ثُمَّ قَالَ : نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ ، فَنَاوَلْتُهٗ ثُمَّ قَالَ : نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، وَكَمْ لِلشَّاةِ مِنْ ذِرَاعٍ فَقَالَ : وَالَّذِي نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَوْ سَكَتَّ لَنَاوَلْتَنِي الذِّرَاعَ مَا دَعَوْتُ
১২৬. আবু উবায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার নবী ﷺ এর জন্য এক ডেগ গোশত রান্না করলাম। তিনি বকরীর সামনের উরুর গোশত অধিক পছন্দ করতেন। তাই আমি তাঁকে সামনের একটি পা দিলাম। তারপর তিনি বললেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি তাঁকে সামনের আরেকটি পা দিলাম। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! বকরীর সামনের পা কয়টি থাকে? তিনি বললেন, সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি তুমি চুপ থাকতে তাহলে আমি যতক্ষণ সামনের পা চাইতাম, ততক্ষণ তুমি দিতে পারতে। [মুজামুল কাবীর, হা/১৮২৮৬; মুসনাদে বাযযার, হা/৮৩৪৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ শুকনো রুটি এবং সিরকা পছন্দ করতেন :
عَنْ أُمِّ هَانِئِ ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ فَقَالَ : اَعِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَقُلْتُ : لَا اِلَّا خُبْزٌ يَابِسٌ وَخَلٌّ ، فَقَالَ : هَاتِيْ ، مَا اَقْفَرَ بَيْتٌ مِنْ أُدْمٍ فِيْهِ خَلٌّ
১২৭. উম্মু হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী ﷺ আমার ঘরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি? আমি বললাম, না। আমার নিকট শুকনো রুটি এবং সিরকা ছাড়া কোন কিছুই নেই। তিনি বললেন, নিয়ে এসো। তখন তিনি বলেন, যে ঘরে সিরকা আছে সে ঘর তরকারীশূন্য নয়। [শারহে সুন্নাহ, হা/২৮৬৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২২০; মিশকাত, হা/৪২২২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে বর্ণিত ঘটনাটি মক্কা বিজয়ের দিন ঘটেছিল। উম্মু হানী (রাঃ) ছিলেন আবু তালেবের মেয়ে এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চাচাতো বোন। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ কত সাধারণ জীবন অতিবাহিত করতেন। আরো জানা যায় যে, যাদের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে, প্রয়োজনে তাদের কাছে কিছু চেয়ে নেয়া দোষের কিছু নয়।
عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى اَلْأَشْعَرِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : فَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيْدِ عَلٰى سَائِرِ الطَّعَامِ
১২৮. আবু মূসা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রমণীদের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) মর্যাদা সেরূপ, যেরূপ মর্যাদা যাবতীয় খাদ্যের মধ্যে সারীদের। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪১১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪২৫; সুনানে নাসাঈ, হা/৩৯৪৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৫৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭১১৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৩৫।]
ব্যাখ্যা : ঝুলের মধ্যে ভিজানো টুকরা টুকরা রুটিকে সারীদ বলা হয়। এ হাদীসে সারীদকে শ্রেষ্ঠ খাদ্য বলা হয়েছে। কারণ, এটা সহজে তৈরি করা যায় এবং তাড়াতাড়ি ভক্ষণ করা যায়। তাছাড়া এটা মজাদারও বটে এবং শক্তিবর্ধক। এসব কারণে গোশত ও রুটি জাতীয় যাবতীয় খাদ্যের মধ্যে সারীদ সর্বশ্রেষ্ঠ।
সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা কে?
এখানে ‘রমণীদের’ বলে আয়েশা (রাঃ) এর সমসাময়িক স্ত্রীলোকদেরকে বুঝানো হয়েছে। বস্তুত শ্রেষ্ঠতম মহিলা হলেন, মারইয়াম বিনতে ইমরান, তারপর ফাতিমা (রাঃ), তারপর খাদীজা (রাঃ) এরপর আয়েশা (রাঃ)। আয়েশা (রাঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব ছিল বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা এবং প্রিয়তমা হওয়ার দিক থেকে। তাছাড়া তাঁর সাথে একই বিছানায় থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর ওহী নাযিল হতো। খাদীজা (রাঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব ছিল এ হিসেবে যে, তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথম স্ত্রী এবং প্রথম মহিলা মুমিন। আর ফাতিমা (রাঃ) শ্রেষ্ঠত্ব এ দিক থেকে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কন্যা এবং জান্নাতের রমণীকুলের সর্দার।
عَنْ اَنَسٍ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : فَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيْدِ عَلٰى سَائِرِ الطَّعَامِ
১২৯. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রমণীকুলের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) মধ্যমণী ও মর্যাদার অধিকারিণী, যেমন সারীদ যাবতীয় খাদ্যের মধ্যমণী। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৩৩; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৫২; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮১১; দারেমী, হা/২১১৩; জামেউস সগীর, হা/৩৮৮০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৩৫;।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বকরীর কাঁধের গোশতও খেতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّهٗ رَاٰى رَسُوْلَ اللهِ تَوَضَّاَ مِنْ اَكْلِ ثَوْرِ اَقِطٍ ، ثُمَّ رَاٰهُ اَكَلَ مِنْ كَتِفِ شَاةٍ ، ثُمَّ صَلّٰى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ
১৩০. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে পানি খাওয়ার শেষে ওযূ করতে দেখেছেন। তিনি এও দেখেছেন যে, তিনি একবার বকরীর কাঁধের গোশত আহার করলেন। অথচ ওযূ না করেই সালাত আদায় করলেন। [সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১৫১; বায়হাকী, হা/৭০১; জামেউস সগীর, হা/১৩১১১; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৫২।]
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনার আলোকে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইসলামের প্রথম দিকে আগুনে রান্না করে জিনিস খেলে ওযূ করতেন। তাই তিনি পনীর খেয়ে ওযূ করেছেন। পরে এ হুকুম পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ বকরীর গোশত খেয়েও পুনরায় ওযূ করেননি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ খেজুর ও ছাতু দ্বারা ওলীমা করেছিলেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : اَوْلَمَ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى صَفِيَّةَ بِتَمْرٍ وَسَوِيْقٍ
১৩১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সাফিয়্যা (রাঃ) এর বিয়েতে খেজুর ও ছাতু দ্বারা ওলীমা সম্পন্ন করেন। [মুসনাদের আহমাদ, হা/১২০৯৯; মুসনাদে বাযযার, হা/৬২৯৪; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩৫৫৯।]
ব্যাখ্যা : যে ভোজের আয়োজন বিবাহের পর করা হয়, নবদম্পতির প্রথম মিলনের পর যে খুশির খানা তৈরি করা হয়, সেটিকে ওলীমা বলে।
খাইবারের যুদ্ধে সপ্তম হিজরীর মুহার্রম মাসে সাফিয়্যা মুসলমানদের হাতে বন্দী হন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে আযাদ করে দিয়ে বিয়ে করে নেন। এ সফরে খাইবার থেকে ফেরার পথে ওলীমা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। ওলীমা করা হয়েছিল হায়স, খেজুর ও ছাতু দ্বারা। হায়স হলো খেজুর, ঘি ও পনীর দ্বারা তৈরি এক প্রকার হালুয়া।
রাসূলুল্লাহ ﷺ গোশত পছন্দ করতেন :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : اَتَانَا النَّبِيُّ فِيْ مَنْزِلِنَا فَذَبَحْنَا لَهٗ شَاةً ، فَقَالَ : كَاَنَّهُمْ عَلِمُوْا اَنَّا نُحِبُّ اللَّحْمَ وَفِي الْحَدِيْثِ قِصَّةٌ
১৩২. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী ﷺ আমাদের বাড়িতে আসলেন। আমরা তাঁকে (আপ্যায়নের জন্য) একটি বকরী যবেহ করি। তারপর তিনি বললেন, মনে হচ্ছে তারা যেন জানে যে, আমি গোশত পছন্দ করি। এ হাদীসের সাথে দীর্ঘ ঘটনা সম্পৃক্ত রয়েছে।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ وَاَنَا مَعَهٗ فَدَخَلَ عَلٰى اِمْرَاَةٍ مِنَ الْاَنْصَارِ ، فذَبَحَتْ لَهٗ شَاةً فَاَكَلَ مِنْهَا ، وَاَتَتْهُ بِقِنَاعٍ مِنْ رُطَبٍ ، فَاَكَلَ مِنْهُ ، ثُمَّ تَوَضَّاَ لِلظُّهْرِ وَصَلّٰى ، ثُمَّ انْصَرَفَ ، فَاَتَتْهُ بِعُلَالَةٍ مِنْ عُلَالَةِ الشَّاةِ ، فَاَكَلَ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ وَلَمْ يَتَوَضَّأْ
১৩৩. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এক আনসারী মহিলার ঘরে আসলেন। আমি তখন তাঁর সাথে ছিলাম। তখন ঐ মহিলাটি তাঁর জন্য একটি বকরী যবাই করলেন। তিনি তা হতে কিছু গোশত আহার করলেন। এরপর ঐ মহিলাটি তাঁর সামনে এক থোকা তাজা খেজুর পেশ করলেন। তিনি তা হতেও কিছু খেয়ে নিলেন। এরপর তিনি ওযূ করে যোহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ঐ মহিলাটির নিকটে ফিরে আসলেন। মহিলাটি অবশিষ্ট গোশতের কিছু অংশ তাঁর সামনে পরিবেশন করলেন এবং তিনি তা খেলেন। এরপর ওযূ না করেই আসরের সালাত আদায় করলেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৫০; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৭৭৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ চর্বিযুক্ত খাবারও আহার করতেন :
عَنْ أُمِّ الْمُنْذِرِ ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ وَمَعَهٗ عَلِيٌّ ، وَلَنَا دَوَالٍ مُعَلَّقَةٌ ، قَالَتْ : فَجَعَلَ رَسُوْلُ اللهِ يَأْكُلُ وَعَلِيٌّ مَعَهٗ يَأْكُلُ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ لِعَلِيٍّ : مَهْ يَا عَلِيُّ ، فَاِنَّكَ نَاقِهٌ ، قَالَتْ : فَجَلَسَ عَلِيٌّ وَالنَّبِيُّ يَأْكُلُ ، قَالَتْ : فَجَعَلْتُ لَهُمْ سِلْقًا وَشَعِيْرًا ، فَقَالَ النَّبِيُّ لِعَلِيٍّ : مِنْ هٰذَا فَاَصِبْ فَاِنَّ هٰذَا اَوْفَقُ لَكَ
১৩৪. উম্মুল মুনযির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের বাড়িতে আসলেন। তাঁর সঙ্গে আলী (রাঃ)ও ছিলেন। আমাদের ঘরে কয়েক ছড়া (কাঁদি) খেজুর ঝুলন্ত ছিল। তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ কাঁদিগুলো হতে খেজুর খেতে থাকলেন এবং তাঁর সঙ্গে আলী (রাঃ)ও খেতে থাকলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে আলী! থাম- তুমি খেজুর খেয়ো না। কারণ, তুমি সবে মাত্র রোগ মুক্ত হয়েছ। তিনি বললেন, এতে আলী (রাঃ) খাওয়া বন্ধ করলেন। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ খেতে থাকলেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, আমি তাঁদের জন্য চর্বি দিয়ে যব রান্না করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আলী! তুমি এ থেকে খাও। কারণ, তা তোমার স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপযোগী। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৪২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮২৪৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০২১১; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৬৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪১৩৩; মিশকাত, হা/৪২১৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘হায়স’ নামক খাবারও খেতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَأْتِيْنِيْ فَيَقُوْلُ : اَعِنْدَكِ غَدَاءٌ ؟ فَاَقُوْلُ : لَا . قَالَتْ : فَيَقُولُ : اِنِّيْ صَائِمٌ . قَالَتْ : فَاَتَانِيْ يَوْمًا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنَّهٗ أُهْدِيَتْ لَنَا هَدِيَّةٌ قَالَ : وَمَا هِيَ؟ قُلْتُ : حَيْسٌ قَالَ : اَمَا اِنِّيْ اَصْبَحْتُ صَائِمًا قَالَتْ : ثُمَّ اَكَلَ
১৩৫. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ ভোরে আমার কাছে এসে বলতেন, তোমার নিকট নাশতা করার কিছু আছে কি? আমি কখনো কখনো বলতাম, না- কোন খাবার নেই। তখন তিনি বলতেন, আমি রোযার নিয়ত করলাম। একবার তিনি আমাদের নিকট আসলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য কিছু হাদিয়া এসেছে। তিনি বললেন, তা কোন ধরণের খাবার? আমি বললাম, হাইস (খেজুরের তৈরি মিষ্টান্ন বিশেষ)। তিনি বললেন, আমি তো রোযাদার অবস্থায় সকাল কাটিয়েছি। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর তিনি খেয়ে নিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০; আবু দাউদ, হা/২৪৫৭; নাসাঈ, হা/২৩২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২৬৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬২৮; দার কুতনী, হা/২২৩৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৪৫; মিশকাত, হা/২০৭৬।]
ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয় যে, নফল সওমের নিয়ত সুবহে সাদিকের সময় করা জরুরি নয়; সুবহে সাদিকের পর নিয়ত করলেও সওম সিদ্ধ হবে। প্রয়োজন হলে নফল সওম ভাঙ্গার অবকাশ আছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘সুফল’ পছন্দ করতেন :
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُعْجِبُهُ الثُّفْلُ قَالَ عَبْدُ اللهِ : يَعْنِي مَا بَقِيَ مِنَ الطَّعَامِ
১৩৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘সুফল’ পছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ [ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এর উস্তাদ] বলেন, ‘সুফ্ল’ হচ্ছে সে জিনিস, যা লোকেরা খাদ্য গ্রহণের পর হাঁড়ি-পাতিলের তলায় লেগে থাকে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩২৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭১১৬; জামেউস সগীর, হা/৯১১০; মিশকাত, হা/৪২১৭।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ وُضُوْءِ رَسُوْلِ اللهِ عِنْدَ الطَّعَامِ
১১৩. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সিরকা কতই না চমৎকার তরকারী।
আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেন, সিরকা কতই না চমৎকার উদুম অথবা ইদাম তথা তরকারী। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩১৬।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে সিরকার প্রশংসা করা উদ্দেশ্য। সিরকা উত্তম তরকারী হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন সহজে তৈরি করা যায়, এর সাহায্যার্থে অনায়াসে রুটি ভক্ষণ করা যায় এবং সবসময় পাওয়া যায়।
এছাড়া সিরকার মাঝে কিছু উপকারিতাও রয়েছে। যেমন কফ ও পিত্ত দূর করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ : اَلَسْتُمْ فِي طَعَامٍ وَشَرَابٍ مَا شِئِتُمْ ؟ لَقَدْ رَاَيْتُ نَبِيَّكُمْ وَمَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلَأُ بَطْنَهٗ
১১৪. সিমাক ইবনে হার্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, তোমরা কি পানাহারের ব্যাপারে যা ইচ্ছা তা গ্রহণ কর না? (অর্থাৎ নিশ্চয় গ্রহণ করছ)। অথচ আমি দেখেছি তোমাদের নবী তৃপ্তি সহকারে পেট ভরে সাধারণ খেজুরও খেতে পাননি। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৫০; ইবনে হিববান, হা/৬৩৪০।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর সাহাবী ও তাবিয়ীগণ যখন প্রচুর খাদ্যের অধিকারী হন, তখন তাদেরকে সম্বোধন করে নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) একথা বলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুসরণের প্রতি এবং দুনিয়ার উপকরণ সংক্ষিপ্ত রাখার প্রতি উৎসাহিত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।
عَنْ زَهْدَمٍ الْجَرْمِيِّ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ اَبِيْ مُوْسٰى الْاَشْعَرِيِّ ، فَأُتِيَ بِلَحْمِ دَجَاجٍ فَتَنَحّٰى رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقَالَ : مَا لَكَ ؟ فَقَالَ : اِنِّيْ رَاَيْتُهَا تَأْكُلُ شَيْئًا فَحَلَفْتُ اَنْ لَا اٰكُلَهَا قَالَ : اُدْنُ فَاِنِّي رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَأْكُلُ لَحْمَ دَجَاجٍ
১১৫. যাহদাম জারমী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তাঁর কাছে ভূনা মুরগীর গোশত আনা হলো। ফলে উপস্থিত লোকদের একজন চলে যেতে উদ্যত হলো। তিনি [আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ)] তাঁকে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আমি এক (মুরগীকে) নাপাক খেতে দেখে এ মর্মে কসম করেছি যে, আমি আর কখনো মুরগীর গোশত খাব না। তিনি বললেন, কাছে এসো (এবং নির্দ্বিধায় খাও)। কারণ আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺকে আমি মুরগী খেতে দেখেছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৩৫৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫৮৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮০৭।]
ব্যাখ্যা : উক্ত কথার দ্বারা আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, কোন হালাল বস্তুকে হারাম করা অনুচিত।
عَنْ زَهْدَمٍ الْجَرْمِيِّ قَالَ : كُنَّا عِنْدَ اَبِيْ مُوْسٰى الْاَشْعَرِيِّ قَالَ : فَقَدَّمَ طَعَامَهٗوَقَدَّمَ فِي طَعَامِهٖ لَحْمَ دَجَاجٍ وَفِي الْقَوْمِ رَجُلٌ مِنْ بَنِيْ تَيْمِ اللهِ اَحْمَرُ كَاَنَّهٗ مَوْلًى قَالَ : فَلَمْ يَدْنُ فَقَالَ لَهٗ اَبُوْ مُوْسٰى : اُدْنُ ، فَاِنِّيْ قَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ اَكَلَ مِنْهُ ، فَقَالَ : اِنِّيْ رَاَيْتُهٗ يَأْكُلُ شَيْئًا فَقَذِرْتُهٗ فَحَلَفْتُ اَنْ لَا اَطْعَمَهٗ اَبَدًا
১১৬. যাহদাম জারমী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবু মূসা (রাঃ) এর নিকট ছিলাম। তিনি বলেন, তাঁর নিকট খাবার পরিবেশন করা হলো এবং সে খাবারে মুরগীর গোশত ছিল। সেখানে তায়মুল্লাহ গোত্রের লাল বর্ণের এক ব্যক্তি ছিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, সে যেন একজন গোলাম। বর্ণনাকারী বলেন, সে লোকটি খেতে আসল না। তখন আবু মূসা (রাঃ) তাঁকে বললেন, খেতে এসো- কারণ আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে মুরগীর গোশত খেতে দেখেছি। সে বলল, একে ময়লা কিছু খেতে দেখেছি। সে কারণে আমার ঘৃণা জন্মেছে। তাই আমি কসম করেছি যে, আমি এটা কখনো খাব না।
عَنْ اَبِيْ اَسِيْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : كُلُوْا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوْا بِهٖ ؛ فَاِنَّهٗ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ
১১৭. আবু আসীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা যায়তুন [যাইতুন জলপাই জাতীয় ফল, যা আরব দেশগুলোতে জন্মে।] তৈল খাও এবং তা মালিশ করো। কারণ, তা বরকতময় বৃক্ষ হতে উৎপন্ন। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৫০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬০৯৮; দারেমী, হা/২০৫২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৫৭০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৩৮; জামেউস সগীর, হ/৮৬২৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৭৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ লাউ পছন্দ করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يُعْجِبُهٗ الدُّبَّاءُ فَأُتِيَ بِطَعَامٍ ، اَوْ دُعِيَ لَهٗ فَجَعَلْتُ اَتَتَبَّعُهٗ فَاَضَعُهٗ بَيْنَ يَدَيْهِ لِمَا اَعْلَمُ اَنَّهٗ يُحِبُّهٗ
১১৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ লাউ খুবই পছন্দ করতেন। একবার তাঁর সম্মুখে খানা পরিবেশন করা হলো অথবা তিনি কোন দাওয়াতে গিয়েছিলেন (রাবীর সন্দেহ)। আমার যেহেতু জানা ছিল যে, তিনি লাউ খুব পছন্দ করেন, তাই (তরকারীর মধ্য হতে) বেছে বেছে তাঁর সামনে লাউ পেশ করলাম। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৬১।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ লাউয়ের তরকারী পছন্দ করার কারণ বহুবিধ। এটা শরীর ঠান্ডা রাখে, বুদ্ধি বৃদ্ধি করে। গরম আবহাওয়াতে উপকারী এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার পক্ষে অনুকূল হয়। এ ছাড়াও পিপাসা নিবারণ করে, মাথা ব্যথা দূর করে। আবার এটি স্বচ্ছন্দে গিলা যায়।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, যদি কোন পাত্রে বিভিন্ন খাবার থাকে, তাহলে নিজের সামনে ছাড়া অন্যের দিক থেকেও কোন প্রিয় জিনিস নেয়া যায়। শর্ত হচ্ছে, অন্য কারো যেন অপছন্দ না হয়। লাউয়ের টুকরা তালাশ করার কারণ হলো, সে সময় তরকারীতে ঝোল বেশি দেয়ার নিয়ম ছিল। কারণ, রাসূলুল্লাহ ﷺ তরকারিতে ঝোল বেশি দিতে উৎসাহ দিতেন- যাতে প্রতিবেশীর ঘরে হাদিয়া পাঠানো যায়।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ فَرَاَيْتُ عِنْدَهٗ دُبَّاءً يُقَطَّعُ فَقُلْتُ : مَا هٰذَا ؟ قَالَ : نُكَثِّرُ بِهٖ طَعَامَنَا
১১৯. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী ﷺ এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, লাউ কেটে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। আমি বললাম, এর দ্বারা কী হবে? তিনি বললেন, এর দ্বারা আমরা আমাদের খানা বৃদ্ধি করব। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৬২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের শিক্ষা হলো, রান্না করার বিষয়ে দৃষ্টি রাখা, তদারকি করা তাওয়াক্কুল এবং যুহদের বিপরীত নয়; বরং পরিমিত ব্যয় ও অল্পেতুষ্টি লাভে সহায়ক।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ : اِنَّ خَيَّاطًا دَعَا رَسُوْلَ اللهِ لِطَعَامٍ صَنَعَهٗ ، قَالَ اَنَسٌ : فَذَهَبْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ اِلٰى ذٰلِكَ الطَّعَامِ فَقَرَّبَ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ خُبْزًا مِنْ شَعِيْرٍ ، وَمَرَقًا فِيْهِ دُبَّاءٌ وَقَدِيْدٌ ، قَالَ اَنَسُ : فَرَاَيْتُ النَّبِيَّ يَتَتَبَّعُ الدُّبَّاءَ حَوَالَيِ الْقَصْعَةِ فَلَمْ اَزَلْ أُحِبُّ الدُّبَّاءَ مِنْ يَوْمِئِذٍ
১২০. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক দর্জি খানা তৈরি করে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে দাওয়াত দেয়। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আমিও ঐ দাওয়াতে গিয়েছিলাম। দর্জি লোকটি রাসূলুল্লাহ ﷺএর সামনে যবের রুটি ও ঝোল পরিবেশন করল। সে ঝোলের মধ্যে লাউ ও শুকনা গোশত ছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তরকারীর বাটির বিভিন্ন দিক থেকে লাউয়ের টুকরো খোঁজ করতে দেখেছি। আর সে দিন হতে আমি লাউ খুব পছন্দ করে আসছি। [সহীহ বুখারী, হা/২০৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৫৬; আবু দাউদ, হা/৩৭৮৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আনাস (রাঃ) এরও দাওয়াত ছিল। অথবা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খাদিম হিসেবে গিয়েছিলেন। এতে দোষের কিছু নেই যদি দাওয়াতদাতা অসন্তুষ্ট না হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺমিষ্টি দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يُحِبُّ الْحَلْوَاءَ وَالْعَسَلَ
১২১. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মিষ্টি দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৩১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২৩; ইবনে হিববান, হা/৫২৫৪।]
ব্যাখ্যা : হালওয়া মিষ্ট বস্তু, মিষ্টি জাতীয় জিনিস, মিষ্টান্ন। সাধারণ মানুষ যেসব মিষ্টি খাবার তৈরি করে তাকেই মূলত হালওয়া বলে। আর মূল অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে এর আওতায় মিষ্টি ফলমূলও পড়ে, তথাপিও প্রচলিত পরিভাষা হিসাবে এটা হালওয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। ‘হালওয়া’ বলতে গুড়, চিনি, মধুকেও বুঝায় এবং এর দ্বারা প্রস্তুত মিষ্ট খাদ্যসমূহকেও বুঝিয়ে থাকে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বকরীর পাঁজরের ভূনা গোশত পছন্দ করতেন :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ اَنَّهَا قَرَّبَتْ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ جَنْبًا مَشْوِيًّا فَاَكَلَ مِنْهُ ، ثُمَّ قَامَ اِلَى الصَّلَاةِ وَمَا تَوَضَّاَ
১২২. উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি বকরীর পাঁজরের ভূনা গোশত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে পরিবেশন করেন। তিনি তা হতে খেলেন এবং ওযূ না করেই সালাতে দাঁড়িয়ে যান। [নাসাঈ, হা/১৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৬৩।]
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আগুনে তৈরি খাবার খেলেও ওযূ ভঙ্গ হয় না। তবে অন্য হাদীস দ্বারা আগুনে পাক করা খাদ্য খেলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায় বলেও প্রমাণিত রয়েছে। কিছু সংখ্যক সাহাবী ও তাবিয়ীর মতামতও এটাই। তবে চার খলীফা এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণের মতে আগুনে তৈরি খাবার খেলেও ওযূ ভঙ্গ হয় না। তাঁরা বলেন, যে সকল হাদীস থেকে ওযূ ওয়াজিব হওয়ার কথা উল্লেখও হয়েছে, সেগুলো রহিত হয়ে গেছে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ ؕ قَالَ : اَكَلْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ شِوَاءً فِي الْمَسْجِدِ
১২৩. আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মসজিদে ভূনা গোশ্ত খেয়েছি।
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, একা বা জামা‘আতবদ্ধভাবে মসজিদে পানাহার করা বৈধ, তবে মসজিদের পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করতে হবে।
عَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ : ضِفْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَأُتِيَ بِجَنْبٍ مَشْوِيٍّ ، ثُمَّ اَخَذَ الشَّفْرَةَ فَجَعَلَ يَحُزُّ ، فَحَزَّ لِي بِهَا مِنْهُ قَالَ : فَجَاءَ بِلَالٌ يُؤْذِنُهٗ بِالصَّلَاةِ فَاَلْقٰى الشَّفْرَةَ فَقَالَ : مَا لَهٗ تَرِبَتْ يَدَاهُ ؟ قَالَ : وَكَانَ شَارِبُهٗ قَدْ وَفٰى ، فَقَالَ لَهٗ : اَقُصُّهٗ لَكَ عَلٰى سِوَاكٍ اَوْ قُصُّهٗ عَلٰى سِوَاكٍ
১২৪. মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মেহমান হলাম। তখন (আমার সামনে) ছাগলের পাঁজরের ভূনা গোশত পরিবেশন করা হলো। তারপর তিনি ছুরি দ্বারা তা কাটলেন এবং আমাকে দিলেন। এমন সময় বিলাল (রাঃ) তাঁকে সালাতের আহবান জানালেন। তিনি ছুরিটি ছুঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, তার কী হলো তার উভয় হাত ধূলোয় ধূসরিত হোক। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর গোঁফ লম্বা হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি তাঁকে বললেন, তোমার গোঁফ আমি মিসওয়াকের উপরে রেখে কেটে দেব। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৪৮; মিশকাত, হা/৪২৩৬।]
ব্যাখ্যা : তার দু’হাত ধূলিময় হোক। শাব্দিক বিবেচনার হিসেবে এটা বদ্দু‘আ। অর্থাৎ- সে দরিদ্র ও নিঃস্ব হয়ে যাক। তবে এখানে বদ্দু‘আ উদ্দেশ্য নয়। আরবি ভাষায় ধমক, তিরস্কার ও আক্ষেপমূলক বাক্য হিসেবে এ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়; এখানে এটাই উদ্দেশ্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ উরুর গোশত পছন্দ করতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : أُتِيَ النَّبِيُّ بِلَحْمٍ فَرُفِعَ اِلَيْهِ الذِّرَاعُ وَكَانَتْ تُعْجِبُهٗ فَنَهَسَ مِنْهَا
১২৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে বকরীর সামনের উরু পরিবেশন করা হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করতেন। অতঃপর তিনি তা থেকে দাঁত দিয়ে কেটে খেলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭১২; সহীহ মুসলিম, হা/৫০১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩০৭।]
ব্যাখ্যা : মানুষের ক্ষেত্রে কুনুই থেকে আঙ্গুলের আগা পর্যন্তকে যিরা বলে। গরু ও বকরীর ক্ষেত্রে বাহু বলতে রানকে বুঝায়। এখানে বাহু বলতে রান উদ্দেশ্য।
عَنْ اَبِيْ عُبَيْدٍ قَالَ : طَبَخْتُ لِلنَّبِيِّ قِدْرًا وَقَدْ كَانَ يُعْجِبُهٗ الذِّرَاعُ فَنَاوَلْتُهُ الذِّرَاعَ ثُمَّ قَالَ : نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ ، فَنَاوَلْتُهٗ ثُمَّ قَالَ : نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، وَكَمْ لِلشَّاةِ مِنْ ذِرَاعٍ فَقَالَ : وَالَّذِي نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَوْ سَكَتَّ لَنَاوَلْتَنِي الذِّرَاعَ مَا دَعَوْتُ
১২৬. আবু উবায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার নবী ﷺ এর জন্য এক ডেগ গোশত রান্না করলাম। তিনি বকরীর সামনের উরুর গোশত অধিক পছন্দ করতেন। তাই আমি তাঁকে সামনের একটি পা দিলাম। তারপর তিনি বললেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি তাঁকে সামনের আরেকটি পা দিলাম। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! বকরীর সামনের পা কয়টি থাকে? তিনি বললেন, সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি তুমি চুপ থাকতে তাহলে আমি যতক্ষণ সামনের পা চাইতাম, ততক্ষণ তুমি দিতে পারতে। [মুজামুল কাবীর, হা/১৮২৮৬; মুসনাদে বাযযার, হা/৮৩৪৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ শুকনো রুটি এবং সিরকা পছন্দ করতেন :
عَنْ أُمِّ هَانِئِ ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ فَقَالَ : اَعِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَقُلْتُ : لَا اِلَّا خُبْزٌ يَابِسٌ وَخَلٌّ ، فَقَالَ : هَاتِيْ ، مَا اَقْفَرَ بَيْتٌ مِنْ أُدْمٍ فِيْهِ خَلٌّ
১২৭. উম্মু হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী ﷺ আমার ঘরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি? আমি বললাম, না। আমার নিকট শুকনো রুটি এবং সিরকা ছাড়া কোন কিছুই নেই। তিনি বললেন, নিয়ে এসো। তখন তিনি বলেন, যে ঘরে সিরকা আছে সে ঘর তরকারীশূন্য নয়। [শারহে সুন্নাহ, হা/২৮৬৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২২০; মিশকাত, হা/৪২২২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে বর্ণিত ঘটনাটি মক্কা বিজয়ের দিন ঘটেছিল। উম্মু হানী (রাঃ) ছিলেন আবু তালেবের মেয়ে এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চাচাতো বোন। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ কত সাধারণ জীবন অতিবাহিত করতেন। আরো জানা যায় যে, যাদের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে, প্রয়োজনে তাদের কাছে কিছু চেয়ে নেয়া দোষের কিছু নয়।
عَنْ أَبِيْ مُوْسٰى اَلْأَشْعَرِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : فَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيْدِ عَلٰى سَائِرِ الطَّعَامِ
১২৮. আবু মূসা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রমণীদের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) মর্যাদা সেরূপ, যেরূপ মর্যাদা যাবতীয় খাদ্যের মধ্যে সারীদের। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪১১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪২৫; সুনানে নাসাঈ, হা/৩৯৪৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৫৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭১১৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৩৫।]
ব্যাখ্যা : ঝুলের মধ্যে ভিজানো টুকরা টুকরা রুটিকে সারীদ বলা হয়। এ হাদীসে সারীদকে শ্রেষ্ঠ খাদ্য বলা হয়েছে। কারণ, এটা সহজে তৈরি করা যায় এবং তাড়াতাড়ি ভক্ষণ করা যায়। তাছাড়া এটা মজাদারও বটে এবং শক্তিবর্ধক। এসব কারণে গোশত ও রুটি জাতীয় যাবতীয় খাদ্যের মধ্যে সারীদ সর্বশ্রেষ্ঠ।
সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা কে?
এখানে ‘রমণীদের’ বলে আয়েশা (রাঃ) এর সমসাময়িক স্ত্রীলোকদেরকে বুঝানো হয়েছে। বস্তুত শ্রেষ্ঠতম মহিলা হলেন, মারইয়াম বিনতে ইমরান, তারপর ফাতিমা (রাঃ), তারপর খাদীজা (রাঃ) এরপর আয়েশা (রাঃ)। আয়েশা (রাঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব ছিল বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা এবং প্রিয়তমা হওয়ার দিক থেকে। তাছাড়া তাঁর সাথে একই বিছানায় থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর ওহী নাযিল হতো। খাদীজা (রাঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব ছিল এ হিসেবে যে, তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথম স্ত্রী এবং প্রথম মহিলা মুমিন। আর ফাতিমা (রাঃ) শ্রেষ্ঠত্ব এ দিক থেকে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কন্যা এবং জান্নাতের রমণীকুলের সর্দার।
عَنْ اَنَسٍ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : فَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيْدِ عَلٰى سَائِرِ الطَّعَامِ
১২৯. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, রমণীকুলের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) মধ্যমণী ও মর্যাদার অধিকারিণী, যেমন সারীদ যাবতীয় খাদ্যের মধ্যমণী। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৩৩; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৫২; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮১১; দারেমী, হা/২১১৩; জামেউস সগীর, হা/৩৮৮০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৩৫;।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ বকরীর কাঁধের গোশতও খেতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّهٗ رَاٰى رَسُوْلَ اللهِ تَوَضَّاَ مِنْ اَكْلِ ثَوْرِ اَقِطٍ ، ثُمَّ رَاٰهُ اَكَلَ مِنْ كَتِفِ شَاةٍ ، ثُمَّ صَلّٰى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ
১৩০. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে পানি খাওয়ার শেষে ওযূ করতে দেখেছেন। তিনি এও দেখেছেন যে, তিনি একবার বকরীর কাঁধের গোশত আহার করলেন। অথচ ওযূ না করেই সালাত আদায় করলেন। [সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৪২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১১৫১; বায়হাকী, হা/৭০১; জামেউস সগীর, হা/১৩১১১; সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৫২।]
ব্যাখ্যা : আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনার আলোকে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইসলামের প্রথম দিকে আগুনে রান্না করে জিনিস খেলে ওযূ করতেন। তাই তিনি পনীর খেয়ে ওযূ করেছেন। পরে এ হুকুম পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ বকরীর গোশত খেয়েও পুনরায় ওযূ করেননি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ খেজুর ও ছাতু দ্বারা ওলীমা করেছিলেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : اَوْلَمَ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى صَفِيَّةَ بِتَمْرٍ وَسَوِيْقٍ
১৩১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সাফিয়্যা (রাঃ) এর বিয়েতে খেজুর ও ছাতু দ্বারা ওলীমা সম্পন্ন করেন। [মুসনাদের আহমাদ, হা/১২০৯৯; মুসনাদে বাযযার, হা/৬২৯৪; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩৫৫৯।]
ব্যাখ্যা : যে ভোজের আয়োজন বিবাহের পর করা হয়, নবদম্পতির প্রথম মিলনের পর যে খুশির খানা তৈরি করা হয়, সেটিকে ওলীমা বলে।
খাইবারের যুদ্ধে সপ্তম হিজরীর মুহার্রম মাসে সাফিয়্যা মুসলমানদের হাতে বন্দী হন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে আযাদ করে দিয়ে বিয়ে করে নেন। এ সফরে খাইবার থেকে ফেরার পথে ওলীমা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। ওলীমা করা হয়েছিল হায়স, খেজুর ও ছাতু দ্বারা। হায়স হলো খেজুর, ঘি ও পনীর দ্বারা তৈরি এক প্রকার হালুয়া।
রাসূলুল্লাহ ﷺ গোশত পছন্দ করতেন :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : اَتَانَا النَّبِيُّ فِيْ مَنْزِلِنَا فَذَبَحْنَا لَهٗ شَاةً ، فَقَالَ : كَاَنَّهُمْ عَلِمُوْا اَنَّا نُحِبُّ اللَّحْمَ وَفِي الْحَدِيْثِ قِصَّةٌ
১৩২. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী ﷺ আমাদের বাড়িতে আসলেন। আমরা তাঁকে (আপ্যায়নের জন্য) একটি বকরী যবেহ করি। তারপর তিনি বললেন, মনে হচ্ছে তারা যেন জানে যে, আমি গোশত পছন্দ করি। এ হাদীসের সাথে দীর্ঘ ঘটনা সম্পৃক্ত রয়েছে।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ وَاَنَا مَعَهٗ فَدَخَلَ عَلٰى اِمْرَاَةٍ مِنَ الْاَنْصَارِ ، فذَبَحَتْ لَهٗ شَاةً فَاَكَلَ مِنْهَا ، وَاَتَتْهُ بِقِنَاعٍ مِنْ رُطَبٍ ، فَاَكَلَ مِنْهُ ، ثُمَّ تَوَضَّاَ لِلظُّهْرِ وَصَلّٰى ، ثُمَّ انْصَرَفَ ، فَاَتَتْهُ بِعُلَالَةٍ مِنْ عُلَالَةِ الشَّاةِ ، فَاَكَلَ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ وَلَمْ يَتَوَضَّأْ
১৩৩. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এক আনসারী মহিলার ঘরে আসলেন। আমি তখন তাঁর সাথে ছিলাম। তখন ঐ মহিলাটি তাঁর জন্য একটি বকরী যবাই করলেন। তিনি তা হতে কিছু গোশত আহার করলেন। এরপর ঐ মহিলাটি তাঁর সামনে এক থোকা তাজা খেজুর পেশ করলেন। তিনি তা হতেও কিছু খেয়ে নিলেন। এরপর তিনি ওযূ করে যোহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ঐ মহিলাটির নিকটে ফিরে আসলেন। মহিলাটি অবশিষ্ট গোশতের কিছু অংশ তাঁর সামনে পরিবেশন করলেন এবং তিনি তা খেলেন। এরপর ওযূ না করেই আসরের সালাত আদায় করলেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৫০; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৭৭৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ চর্বিযুক্ত খাবারও আহার করতেন :
عَنْ أُمِّ الْمُنْذِرِ ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ وَمَعَهٗ عَلِيٌّ ، وَلَنَا دَوَالٍ مُعَلَّقَةٌ ، قَالَتْ : فَجَعَلَ رَسُوْلُ اللهِ يَأْكُلُ وَعَلِيٌّ مَعَهٗ يَأْكُلُ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ لِعَلِيٍّ : مَهْ يَا عَلِيُّ ، فَاِنَّكَ نَاقِهٌ ، قَالَتْ : فَجَلَسَ عَلِيٌّ وَالنَّبِيُّ يَأْكُلُ ، قَالَتْ : فَجَعَلْتُ لَهُمْ سِلْقًا وَشَعِيْرًا ، فَقَالَ النَّبِيُّ لِعَلِيٍّ : مِنْ هٰذَا فَاَصِبْ فَاِنَّ هٰذَا اَوْفَقُ لَكَ
১৩৪. উম্মুল মুনযির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের বাড়িতে আসলেন। তাঁর সঙ্গে আলী (রাঃ)ও ছিলেন। আমাদের ঘরে কয়েক ছড়া (কাঁদি) খেজুর ঝুলন্ত ছিল। তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ ঐ কাঁদিগুলো হতে খেজুর খেতে থাকলেন এবং তাঁর সঙ্গে আলী (রাঃ)ও খেতে থাকলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে আলী! থাম- তুমি খেজুর খেয়ো না। কারণ, তুমি সবে মাত্র রোগ মুক্ত হয়েছ। তিনি বললেন, এতে আলী (রাঃ) খাওয়া বন্ধ করলেন। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ খেতে থাকলেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, আমি তাঁদের জন্য চর্বি দিয়ে যব রান্না করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আলী! তুমি এ থেকে খাও। কারণ, তা তোমার স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপযোগী। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৪২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮২৪৪; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০২১১; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৬৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪১৩৩; মিশকাত, হা/৪২১৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘হায়স’ নামক খাবারও খেতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَأْتِيْنِيْ فَيَقُوْلُ : اَعِنْدَكِ غَدَاءٌ ؟ فَاَقُوْلُ : لَا . قَالَتْ : فَيَقُولُ : اِنِّيْ صَائِمٌ . قَالَتْ : فَاَتَانِيْ يَوْمًا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنَّهٗ أُهْدِيَتْ لَنَا هَدِيَّةٌ قَالَ : وَمَا هِيَ؟ قُلْتُ : حَيْسٌ قَالَ : اَمَا اِنِّيْ اَصْبَحْتُ صَائِمًا قَالَتْ : ثُمَّ اَكَلَ
১৩৫. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ ভোরে আমার কাছে এসে বলতেন, তোমার নিকট নাশতা করার কিছু আছে কি? আমি কখনো কখনো বলতাম, না- কোন খাবার নেই। তখন তিনি বলতেন, আমি রোযার নিয়ত করলাম। একবার তিনি আমাদের নিকট আসলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য কিছু হাদিয়া এসেছে। তিনি বললেন, তা কোন ধরণের খাবার? আমি বললাম, হাইস (খেজুরের তৈরি মিষ্টান্ন বিশেষ)। তিনি বললেন, আমি তো রোযাদার অবস্থায় সকাল কাটিয়েছি। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর তিনি খেয়ে নিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০; আবু দাউদ, হা/২৪৫৭; নাসাঈ, হা/২৩২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২৬৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬২৮; দার কুতনী, হা/২২৩৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৪৫; মিশকাত, হা/২০৭৬।]
ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয় যে, নফল সওমের নিয়ত সুবহে সাদিকের সময় করা জরুরি নয়; সুবহে সাদিকের পর নিয়ত করলেও সওম সিদ্ধ হবে। প্রয়োজন হলে নফল সওম ভাঙ্গার অবকাশ আছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘সুফল’ পছন্দ করতেন :
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُعْجِبُهُ الثُّفْلُ قَالَ عَبْدُ اللهِ : يَعْنِي مَا بَقِيَ مِنَ الطَّعَامِ
১৩৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘সুফল’ পছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ [ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এর উস্তাদ] বলেন, ‘সুফ্ল’ হচ্ছে সে জিনিস, যা লোকেরা খাদ্য গ্রহণের পর হাঁড়ি-পাতিলের তলায় লেগে থাকে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩২৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭১১৬; জামেউস সগীর, হা/৯১১০; মিশকাত, হা/৪২১৭।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ وُضُوْءِ رَسُوْلِ اللهِ عِنْدَ الطَّعَامِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ خَرَجَ مِنَ الْخَلَاءِ فَقُرِّبَ اِلَيْهِ الطَّعَامُ فَقَالُوْا : اَلَا نَأْتِيْكَ بِوَضُوْءٍ ؟ قَالَ : اِنَّمَا أُمِرْتُ بِالْوُضُوْءِ اِذَا قُمْتُ اِلَى الصَّلَاةِ
১৩৭. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ বাইতুল খালা অর্থাৎ শৌচাগার থেকে বাইরে আসলেন। এরপর তাঁর সামনে খানা পরিবেশন করা হলো। সাহাবাগণ বললেন, আমরা আপনাকে ওযূর পানি দেব কি? তিনি বললেন, আমি তো কেবল সালাত আদায় করার সময় ওযূ করার জন্য নির্দেশ পেয়েছি। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬২; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৩৮১।]
ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ খাবার গ্রহণের আগে ওযূ করতে অস্বীকৃতি করেন এবং ওযূ না থাকা অবস্থায় খাদ্য গ্রহণ করেন। কাজেই বুঝা গেল যে, ইসলামে আহারের উদ্দেশ্যে ওযূর কোন বিধান নেই। আরো বুঝা গেল যে, মল-মূত্র ত্যাগ করার পর সঙ্গে সঙ্গে ওযূ করার অপরিহার্যতাও নেই।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ مِنَ الْغَائِطِ فَأُتِيَ بِطَعَامٍ ، فَقِيْلَ لَهٗ : اَلَا تَتَوَضَّأُ ؟ فَقَالَ : اَأُصَلِّيْ فَاَتَوَضَّأُ
১৩৮. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ ইস্তিঞ্জা তথা শৌচকার্য সেরে বাইরে আসলেন। এরপর খাবার পরিবেশন করা হলো। তখন তাঁকে বলা হলো, আপনি কি ওযূ করবেন না? তিনি বললেন, আমি কি সালাত আদায় করব যে, ওযূ করব? [সহীহ মুসলিম, হা/৮৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬১; দারেমী, হা/৭৬৭; বায়হাকী, হা/১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৭২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৯৪৯।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي قَوْلِ رَسُوْلِ اللهِ قَبْلَ الطَّعَامِ وَبَعْدَمَا يَفْرُغُ مِنْهُ
১৩৭. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ বাইতুল খালা অর্থাৎ শৌচাগার থেকে বাইরে আসলেন। এরপর তাঁর সামনে খানা পরিবেশন করা হলো। সাহাবাগণ বললেন, আমরা আপনাকে ওযূর পানি দেব কি? তিনি বললেন, আমি তো কেবল সালাত আদায় করার সময় ওযূ করার জন্য নির্দেশ পেয়েছি। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬২; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৩৮১।]
ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ খাবার গ্রহণের আগে ওযূ করতে অস্বীকৃতি করেন এবং ওযূ না থাকা অবস্থায় খাদ্য গ্রহণ করেন। কাজেই বুঝা গেল যে, ইসলামে আহারের উদ্দেশ্যে ওযূর কোন বিধান নেই। আরো বুঝা গেল যে, মল-মূত্র ত্যাগ করার পর সঙ্গে সঙ্গে ওযূ করার অপরিহার্যতাও নেই।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ مِنَ الْغَائِطِ فَأُتِيَ بِطَعَامٍ ، فَقِيْلَ لَهٗ : اَلَا تَتَوَضَّأُ ؟ فَقَالَ : اَأُصَلِّيْ فَاَتَوَضَّأُ
১৩৮. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ ইস্তিঞ্জা তথা শৌচকার্য সেরে বাইরে আসলেন। এরপর খাবার পরিবেশন করা হলো। তখন তাঁকে বলা হলো, আপনি কি ওযূ করবেন না? তিনি বললেন, আমি কি সালাত আদায় করব যে, ওযূ করব? [সহীহ মুসলিম, হা/৮৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬১; দারেমী, হা/৭৬৭; বায়হাকী, হা/১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৭২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৯৪৯।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي قَوْلِ رَسُوْلِ اللهِ قَبْلَ الطَّعَامِ وَبَعْدَمَا يَفْرُغُ مِنْهُ
রাসূলুল্লাহ ﷺ খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম নিতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِذَا اَكَلَ اَحَدُكُمْ فَنَسِيَ اَنْ يَذْكُرَ اللهَ تَعَالٰى عَلٰى طَعَامِهٖ فَلْيَقُلْ : بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ
১৩৯. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি খাবারের সময় আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) উচ্চারণ করতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন (স্মরণ হলে) বলেন,
بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ
‘‘বিসমিল্লা-হি আও্ওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহু’’
অর্থাৎ খাওয়ার শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নাম স্মরণ করছি। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৭৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২১৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭০৮৭; দারেমী, হা/২০২০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১০৭।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস হতে বুঝা যায় যে, ‘বিস্মিল্লাহ’ বলে আহার শুরু করা সুন্নত। শুধু ‘বিস্মিল্লাহ’ বলাতেই এ সুন্নত আদায় হবে। এ ক্ষেত্রে এই শব্দের সাথে অন্য কোন শব্দ যোগ করা যাবে না।
তিনি ডান দিকে হতে খাবার খেতে শুরু করার জন্য আদেশ দিয়েছেন :
عَنْ عُمَرَ بْنِ اَبِيْ سَلَمَةَ ، اَنَّهٗ دَخَلَ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ وَعِنْدَهٗ طَعَامٌ فَقَالَ : اُدْنُ يَا بُنَيَّ فَسَمِّ اللهَ تَعَالٰى وَكُلْ بِيَمِيْنِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيْكَ
১৪০. উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট প্রবেশ করেন। তখন তাঁর সামনে খাবার পরিবেশিত ছিল। তিনি বললেন, বৎস! কাছে এসো, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো এবং তোমার সামনের দিক থেকে ডান হাত দিয়ে খাবার খেতে শুরু করো। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৮; আবু দাউদ, হা/৩৭৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৭৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২১১; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৭২২।]
এ হাদীসের শিক্ষা :
(ক) পানাহার আরম্ভ করার সময় বিস্মিল্লাহ বলে আরম্ভ করা। এটা সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নত।
(খ) ডান হাত দিয়ে পানাহার করা। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বাম হাতে খেতে নিষেধ করেছেন।
(গ) পাত্রে নিজ দিক থেকে আহার করা সুন্নত, যদি এক পাত্রে একাধিক জন আহার করে।
খাওয়া শেষ হয়ে গেলে তিনি যে দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنْ اَبِيْ أُمَامَةَ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا رُفِعَتِ الْمَائِدَةُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ يَقُوْلُ : اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مُوْدَعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
১৪১. আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছ থেকে দস্তরখানা তুলে নেয়ার সময় এ দু‘আ পাঠ করতেন-
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হি হামদান্ কাসীরান্ ত্বইয়্যিবাম্ মুবা-রাকান্ ফীহি গায়রা মুওয়াদ্দা‘ইন ওয়ালা- মুসতাগনান্ ‘আন্হু রববানা-’’
অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এমন প্রশংসা যা অফুরান্ত, পবিত্র ও কল্যাণময়; এমন প্রশংসা যা বর্জন করা যায় না কিংবা তা হতে মুখাপেক্ষীহীন থাকা যায় না। হে আমাদের রব! (আমাদের দু‘আ কবুল করে নাও)। [আবু দাউদ, হা/৩৮৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৫৪; ইবনে হিববান, হা/৫২১৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯৩৫।]
‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার খেলে বরকত হয় :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَأْكُلُ الطَّعَامَ فِي سِتَّةٍ مِنْ اَصْحَابِهٖ فَجَاءَ اَعْرَابِيٌّ فَاَكَلَهٗ بِلُقْمَتَيْنِ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَوْ سَمّٰى لَكَفَاكُمْ
১৪২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী ﷺ তাঁর ৬ জন সাহাবী নিয়ে খাবার খেতে বসলেন। এমন সময় একজন বেদুঈন এসে দু’গ্রাসে সব খাবার খেয়ে ফেলল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার শুরু করত তাহলে তোমাদের সবার জন্য তা যথেষ্ট হতো। [ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১৪৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮২৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৪৪৬।]
খাবার খেয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ اللهَ لَيَرْضٰى عَنِ الْعَبْدِ اَنْ يَأْكُلَ الْاَكْلَةَ ، اَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهٗ عَلَيْهَا
১৪৩. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, যে এক লোকমা খানা খেয়ে অথবা এক ঢোক পানি পান করে তাঁর বিনিময়ে আল্লাহর প্রশংসা করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১০৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৮৭২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৩১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬৫।]
ব্যাখ্যা : পানাহার শেষে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন, তোমরা যদি আমার শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি তোমাদের নিয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দেব।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي قَدَحِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِذَا اَكَلَ اَحَدُكُمْ فَنَسِيَ اَنْ يَذْكُرَ اللهَ تَعَالٰى عَلٰى طَعَامِهٖ فَلْيَقُلْ : بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ
১৩৯. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি খাবারের সময় আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) উচ্চারণ করতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন (স্মরণ হলে) বলেন,
بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ
‘‘বিসমিল্লা-হি আও্ওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহু’’
অর্থাৎ খাওয়ার শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নাম স্মরণ করছি। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৭৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২১৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭০৮৭; দারেমী, হা/২০২০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১০৭।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস হতে বুঝা যায় যে, ‘বিস্মিল্লাহ’ বলে আহার শুরু করা সুন্নত। শুধু ‘বিস্মিল্লাহ’ বলাতেই এ সুন্নত আদায় হবে। এ ক্ষেত্রে এই শব্দের সাথে অন্য কোন শব্দ যোগ করা যাবে না।
তিনি ডান দিকে হতে খাবার খেতে শুরু করার জন্য আদেশ দিয়েছেন :
عَنْ عُمَرَ بْنِ اَبِيْ سَلَمَةَ ، اَنَّهٗ دَخَلَ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ وَعِنْدَهٗ طَعَامٌ فَقَالَ : اُدْنُ يَا بُنَيَّ فَسَمِّ اللهَ تَعَالٰى وَكُلْ بِيَمِيْنِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيْكَ
১৪০. উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট প্রবেশ করেন। তখন তাঁর সামনে খাবার পরিবেশিত ছিল। তিনি বললেন, বৎস! কাছে এসো, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো এবং তোমার সামনের দিক থেকে ডান হাত দিয়ে খাবার খেতে শুরু করো। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৮; আবু দাউদ, হা/৩৭৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৭৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২১১; সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৭২২।]
এ হাদীসের শিক্ষা :
(ক) পানাহার আরম্ভ করার সময় বিস্মিল্লাহ বলে আরম্ভ করা। এটা সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নত।
(খ) ডান হাত দিয়ে পানাহার করা। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বাম হাতে খেতে নিষেধ করেছেন।
(গ) পাত্রে নিজ দিক থেকে আহার করা সুন্নত, যদি এক পাত্রে একাধিক জন আহার করে।
খাওয়া শেষ হয়ে গেলে তিনি যে দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنْ اَبِيْ أُمَامَةَ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا رُفِعَتِ الْمَائِدَةُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ يَقُوْلُ : اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مُوْدَعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
১৪১. আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছ থেকে দস্তরখানা তুলে নেয়ার সময় এ দু‘আ পাঠ করতেন-
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হি হামদান্ কাসীরান্ ত্বইয়্যিবাম্ মুবা-রাকান্ ফীহি গায়রা মুওয়াদ্দা‘ইন ওয়ালা- মুসতাগনান্ ‘আন্হু রববানা-’’
অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এমন প্রশংসা যা অফুরান্ত, পবিত্র ও কল্যাণময়; এমন প্রশংসা যা বর্জন করা যায় না কিংবা তা হতে মুখাপেক্ষীহীন থাকা যায় না। হে আমাদের রব! (আমাদের দু‘আ কবুল করে নাও)। [আবু দাউদ, হা/৩৮৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৫৪; ইবনে হিববান, হা/৫২১৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯৩৫।]
‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার খেলে বরকত হয় :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَأْكُلُ الطَّعَامَ فِي سِتَّةٍ مِنْ اَصْحَابِهٖ فَجَاءَ اَعْرَابِيٌّ فَاَكَلَهٗ بِلُقْمَتَيْنِ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَوْ سَمّٰى لَكَفَاكُمْ
১৪২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী ﷺ তাঁর ৬ জন সাহাবী নিয়ে খাবার খেতে বসলেন। এমন সময় একজন বেদুঈন এসে দু’গ্রাসে সব খাবার খেয়ে ফেলল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার শুরু করত তাহলে তোমাদের সবার জন্য তা যথেষ্ট হতো। [ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১৪৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮২৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৪৪৬।]
খাবার খেয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ اللهَ لَيَرْضٰى عَنِ الْعَبْدِ اَنْ يَأْكُلَ الْاَكْلَةَ ، اَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهٗ عَلَيْهَا
১৪৩. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, যে এক লোকমা খানা খেয়ে অথবা এক ঢোক পানি পান করে তাঁর বিনিময়ে আল্লাহর প্রশংসা করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১০৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৮৭২; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৩১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬৫।]
ব্যাখ্যা : পানাহার শেষে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন, তোমরা যদি আমার শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি তোমাদের নিয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দেব।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي قَدَحِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ ثَابِتٍ قَالَ : اَخَرَجَ اِلَيْنَا اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ، قَدَحَ خَشَبٍ غَلِيْظًا مُضَبَّبًا بِحَدِيْدٍ فَقَالَ : يَا ثَابِتُ ، هٰذَا قَدَحُ رَسُوْلِ اللهِ
১৪৪. সাবিত (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আনাস ইবসে মালিক (রাঃ) লোহার পাত লাগানো কাঠের মোটা একটি পেয়ালা আমাদের নিকট বের করলেন। তারপর বললেন, সাবিত! এ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেয়ালা। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৩৩।]
ব্যাখ্যা : পেয়ালাটি ‘নুযার’ নামক কাঠের তৈরি ছিল। সেটা উত্তম পেয়ালা ছিল এবং সেটির পরিধির তুলনায় গভীরতা বেশি ছিল। পেয়ালাটি যেন ফেটে আলাদা না হয়ে যায়, সেজন্য লোহার তার দিয়ে ফাটলের স্থানটি শক্ত করে বাঁধানো হয়েছিল।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : لَقَدْ سَقَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ بِهٰذَا الْقَدَحِ الشَّرَابَ كُلَّهٗ ، الْمَاءَ وَالنَّبِيْذَ وَالْعَسَلَ وَاللَّبَنَ
১৪৫. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে এ পেয়ালা দ্বারা যাবতীয় পানীয় তথা নাবীয, কিসমিস, মধু ও দুধ ইত্যাদি পান করিয়েছি। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৩৯৪; বায়হাকী, হা/১৭১৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০২০।]
ব্যাখ্যা : নাবীয হলো, কোন পাত্রে কয়েকটি খেজুর বা কিছু পরিমাণ কিসমিস সন্ধ্যায় ভিজালে সকালে এবং সকালে ভিজালে সন্ধ্যায় যে শরবত তৈরি হয়। আনাস (রাঃ) এর উক্তির মর্ম হলো, তিনি ঐ পাত্রটিতে খুরমা অথবা কিসমিস ভিজিয়ে রাখতেন এবং ঐ পেয়ালাতে প্রস্তুত নাবীয রাসূলুল্লাহ ﷺ কে পান করাতেন। সাধারণত তিনি সন্ধ্যায় ভিজানো নাবীয সকালে এবং সকালে ভিজানো নাবীয সন্ধ্যায় পান করতেন। উল্লেখ্য যে, নেশা তৈরি হলে নাবীয ব্যবহার করা যাবে না।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي فَاكِهَةِ رَسُوْلِ اللهِ
১৪৪. সাবিত (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আনাস ইবসে মালিক (রাঃ) লোহার পাত লাগানো কাঠের মোটা একটি পেয়ালা আমাদের নিকট বের করলেন। তারপর বললেন, সাবিত! এ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেয়ালা। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৩৩।]
ব্যাখ্যা : পেয়ালাটি ‘নুযার’ নামক কাঠের তৈরি ছিল। সেটা উত্তম পেয়ালা ছিল এবং সেটির পরিধির তুলনায় গভীরতা বেশি ছিল। পেয়ালাটি যেন ফেটে আলাদা না হয়ে যায়, সেজন্য লোহার তার দিয়ে ফাটলের স্থানটি শক্ত করে বাঁধানো হয়েছিল।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : لَقَدْ سَقَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ بِهٰذَا الْقَدَحِ الشَّرَابَ كُلَّهٗ ، الْمَاءَ وَالنَّبِيْذَ وَالْعَسَلَ وَاللَّبَنَ
১৪৫. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে এ পেয়ালা দ্বারা যাবতীয় পানীয় তথা নাবীয, কিসমিস, মধু ও দুধ ইত্যাদি পান করিয়েছি। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৩৯৪; বায়হাকী, হা/১৭১৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০২০।]
ব্যাখ্যা : নাবীয হলো, কোন পাত্রে কয়েকটি খেজুর বা কিছু পরিমাণ কিসমিস সন্ধ্যায় ভিজালে সকালে এবং সকালে ভিজালে সন্ধ্যায় যে শরবত তৈরি হয়। আনাস (রাঃ) এর উক্তির মর্ম হলো, তিনি ঐ পাত্রটিতে খুরমা অথবা কিসমিস ভিজিয়ে রাখতেন এবং ঐ পেয়ালাতে প্রস্তুত নাবীয রাসূলুল্লাহ ﷺ কে পান করাতেন। সাধারণত তিনি সন্ধ্যায় ভিজানো নাবীয সকালে এবং সকালে ভিজানো নাবীয সন্ধ্যায় পান করতেন। উল্লেখ্য যে, নেশা তৈরি হলে নাবীয ব্যবহার করা যাবে না।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي فَاكِهَةِ رَسُوْلِ اللهِ
নবী ﷺ কাঁচা খেজুরের সাথে শসা খেতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يَأْكُلُ الْقِثَّاءَ بِالرُّطَبِ
১৪৬. আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কাঁচা খেজুরের সাথে শসা খেতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৫১; আবু দাউদ, হা/৩৮৩৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪১; দারেমী, হা/২০৫৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৯৩; জামেউস সগীর, হা/৯০১১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৬।]
তিনি তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ খেতেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَأْكُلُ الْبِطِّيْخَ بِالرُّطَبِ
১৪৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ খেতেন। [আবু দাউদ, হা/৩৮৩৮; ইবনে হিববান, হা/২৫৪৬; বায়হাকী, হা/১৪৪১৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৫০৪৪; জামেউস সগীর, হা/৯০০৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৭।]
ব্যাখ্যা : শসা জাতীয় ফলকে তরমুজ বলা হয়। এটা ঠান্ডা প্রকৃতির আর খেজুর গরম প্রকৃতির। দুটিকে এক সাথে মিলিয়ে খেলে উভয়ের ক্রিয়ায় ভারসাম্য আসে। তাছাড়া তরমুজ হলো পানসে জাতীয় আর খেজুর মিষ্টি জাতীয়। উভয়টি একত্রিত করলে কিছুটা মিষ্টি আসে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ দুটি এক সাথে খেতেন।
তিনি তাজা তরমুজ ও তাজা খেজুর একত্রে মিলিয়ে খেতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَجْمَعُ بَيْنَ الْخِرْبِزِ وَالرُّطَبِ
১৪৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে খিরবিয ও তাজা খেজুর একত্রে মিলিয়ে খেতে দেখেছি। [সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৬৯২; জামেউস সগীর, হা/৯০৪৭।]
ব্যাখ্যা : ‘খিরবিয’ শব্দটি ফার্সী শব্দ। খারবাযাহ হলো আরবি রূপ। এটি বাঙ্গি জাতীয় এক প্রকার ফল। এর উপরের আবরণ হলদে, ভিতরটা শক্ত সাদা, খেতে কিছুটা পানসে হয়। আরবে বর্তমানে এটি শামীম নামে পরিচিত।
নতুন ফল উদ্বোধনকালে তিনি যে দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : كَانَ النَّاسُ اِذَا رَاَوْا اَوَّلَ الثَّمَرِ جَاءُوْا بِهٖ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ، فَاِذَا اَخَذَهٗ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ : اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثِمَارِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِيْنَتِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا وَفِي مُدِّنَا، اَللّٰهُمَّ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ عَبْدُكَ وَخَلِيْلُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَاِنِّيْ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَاِنَّهٗ دَعَاكَ لِمَكَّةَ، وَاِنِّيْ اَدْعُوْكَ لِلْمَدِيْنَةِ بِمِثْلِ مَا دَعَاكَ بِه لِمَكَّةَ وَمِثْلِه مَعَهٗ قَالَ : ثُمَّ يَدْعُوْ اَصْغَرَ وَلِيَدٍ يَرَاهُ فَيُعْطِيْهِ ذٰلِكَ الثَّمَرَ
১৪৯. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম যখন কোন নতুন ফল দেখতেন তখন তাঁরা তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমতে পেশ করতেন। আর তিনি তা গ্রহণ করে এ মর্মে দু‘আ করতেন :
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثِمَارِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِيْنَتِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا وَفِي مُدِّنَا، اَللّٰهُمَّ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ عَبْدُكَ وَخَلِيْلُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَاِنِّيْ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَاِنَّهٗ دَعَاكَ لِمَكَّةَ، وَاِنِّيْ اَدْعُوْكَ لِلْمَدِيْنَةِ بِمِثْلِ مَا دَعَاكَ بِه لِمَكَّةَ وَمِثْلِه مَعَهٗ
‘‘আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফী সিমা-রিনা-, ওয়াবা-রিক্ব লানা- ফী মাদীনাতিনা-, ওয়াবা-রিক লানা- ফী স-‘ইনা- ওয়াফী মুদ্দিনা-, আল্ল-হুম্মা ইন্না ইব্র-হীমা ‘আব্দুকা ওয়া খালীলুকা ওয়া নাবীয়্যুকা, ওয়া ইন্নী ‘আব্দুকা ওয়া নবীয়্যুকা, ওয়া ইন্নাহু দা‘আ-কা লিমাক্কাহ, ওয়া ইন্নী আদ্‘ঊকা লিলমাদিনাতি বিমিছ্লি মা- দা‘আ-কা বিহী লিমাক্কাতা ওয়া মিছলিহী মা‘আহূ’’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের ফলসমূহে আমাদের জন্য বরকত দাও, আমাদের শহরে আমাদের জন্য বরকত দাও, আমাদের জন্য আমাদের ‘সা’ এবং আমাদের ‘মুদ্দে’ (পরিমাপ যন্ত্রে) বরকত দাও। হে আল্লাহ! নিশ্চয় ইবরাহীম (আঃ) তোমার বান্দা, তোমার বন্ধু এবং তোমার নবী। আর আমিও তোমার বান্দা ও তোমার নবী। তিনি (ইবরাহীম তো) তোমার কাছে মক্কার জন্য দু‘আ করেছিলেন আর আমি তাঁর ন্যায় মদিনার জন্য তোমার কাছে দু‘আ করছি এবং এর সঙ্গে আরো সমপরিমাণ দু‘আ করছি।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি যাকে সর্বকনিষ্ঠ দেখতেন এরূপ ছোট কাউকে ডেকে তাকে সে ফল দিয়ে দিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৪০০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৬৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০০৬১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১৯৯।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ شَرَابِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يَأْكُلُ الْقِثَّاءَ بِالرُّطَبِ
১৪৬. আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কাঁচা খেজুরের সাথে শসা খেতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৫১; আবু দাউদ, হা/৩৮৩৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪১; দারেমী, হা/২০৫৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/২৮৯৩; জামেউস সগীর, হা/৯০১১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৬।]
তিনি তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ খেতেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَأْكُلُ الْبِطِّيْخَ بِالرُّطَبِ
১৪৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ খেতেন। [আবু দাউদ, হা/৩৮৩৮; ইবনে হিববান, হা/২৫৪৬; বায়হাকী, হা/১৪৪১৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৫০৪৪; জামেউস সগীর, হা/৯০০৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৭।]
ব্যাখ্যা : শসা জাতীয় ফলকে তরমুজ বলা হয়। এটা ঠান্ডা প্রকৃতির আর খেজুর গরম প্রকৃতির। দুটিকে এক সাথে মিলিয়ে খেলে উভয়ের ক্রিয়ায় ভারসাম্য আসে। তাছাড়া তরমুজ হলো পানসে জাতীয় আর খেজুর মিষ্টি জাতীয়। উভয়টি একত্রিত করলে কিছুটা মিষ্টি আসে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ দুটি এক সাথে খেতেন।
তিনি তাজা তরমুজ ও তাজা খেজুর একত্রে মিলিয়ে খেতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَجْمَعُ بَيْنَ الْخِرْبِزِ وَالرُّطَبِ
১৪৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে খিরবিয ও তাজা খেজুর একত্রে মিলিয়ে খেতে দেখেছি। [সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৬৯২; জামেউস সগীর, হা/৯০৪৭।]
ব্যাখ্যা : ‘খিরবিয’ শব্দটি ফার্সী শব্দ। খারবাযাহ হলো আরবি রূপ। এটি বাঙ্গি জাতীয় এক প্রকার ফল। এর উপরের আবরণ হলদে, ভিতরটা শক্ত সাদা, খেতে কিছুটা পানসে হয়। আরবে বর্তমানে এটি শামীম নামে পরিচিত।
নতুন ফল উদ্বোধনকালে তিনি যে দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : كَانَ النَّاسُ اِذَا رَاَوْا اَوَّلَ الثَّمَرِ جَاءُوْا بِهٖ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ، فَاِذَا اَخَذَهٗ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ : اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثِمَارِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِيْنَتِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا وَفِي مُدِّنَا، اَللّٰهُمَّ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ عَبْدُكَ وَخَلِيْلُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَاِنِّيْ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَاِنَّهٗ دَعَاكَ لِمَكَّةَ، وَاِنِّيْ اَدْعُوْكَ لِلْمَدِيْنَةِ بِمِثْلِ مَا دَعَاكَ بِه لِمَكَّةَ وَمِثْلِه مَعَهٗ قَالَ : ثُمَّ يَدْعُوْ اَصْغَرَ وَلِيَدٍ يَرَاهُ فَيُعْطِيْهِ ذٰلِكَ الثَّمَرَ
১৪৯. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম যখন কোন নতুন ফল দেখতেন তখন তাঁরা তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমতে পেশ করতেন। আর তিনি তা গ্রহণ করে এ মর্মে দু‘আ করতেন :
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثِمَارِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِيْنَتِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا وَفِي مُدِّنَا، اَللّٰهُمَّ اِنَّ اِبْرَاهِيْمَ عَبْدُكَ وَخَلِيْلُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَاِنِّيْ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَاِنَّهٗ دَعَاكَ لِمَكَّةَ، وَاِنِّيْ اَدْعُوْكَ لِلْمَدِيْنَةِ بِمِثْلِ مَا دَعَاكَ بِه لِمَكَّةَ وَمِثْلِه مَعَهٗ
‘‘আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফী সিমা-রিনা-, ওয়াবা-রিক্ব লানা- ফী মাদীনাতিনা-, ওয়াবা-রিক লানা- ফী স-‘ইনা- ওয়াফী মুদ্দিনা-, আল্ল-হুম্মা ইন্না ইব্র-হীমা ‘আব্দুকা ওয়া খালীলুকা ওয়া নাবীয়্যুকা, ওয়া ইন্নী ‘আব্দুকা ওয়া নবীয়্যুকা, ওয়া ইন্নাহু দা‘আ-কা লিমাক্কাহ, ওয়া ইন্নী আদ্‘ঊকা লিলমাদিনাতি বিমিছ্লি মা- দা‘আ-কা বিহী লিমাক্কাতা ওয়া মিছলিহী মা‘আহূ’’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের ফলসমূহে আমাদের জন্য বরকত দাও, আমাদের শহরে আমাদের জন্য বরকত দাও, আমাদের জন্য আমাদের ‘সা’ এবং আমাদের ‘মুদ্দে’ (পরিমাপ যন্ত্রে) বরকত দাও। হে আল্লাহ! নিশ্চয় ইবরাহীম (আঃ) তোমার বান্দা, তোমার বন্ধু এবং তোমার নবী। আর আমিও তোমার বান্দা ও তোমার নবী। তিনি (ইবরাহীম তো) তোমার কাছে মক্কার জন্য দু‘আ করেছিলেন আর আমি তাঁর ন্যায় মদিনার জন্য তোমার কাছে দু‘আ করছি এবং এর সঙ্গে আরো সমপরিমাণ দু‘আ করছি।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি যাকে সর্বকনিষ্ঠ দেখতেন এরূপ ছোট কাউকে ডেকে তাকে সে ফল দিয়ে দিতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৪০০; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৬৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০০৬১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১৯৯।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ شَرَابِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ ঠান্ডা মিষ্টি পানীয় অধিকতর পছন্দ করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ اَحَبَّ الشَّرَابِ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ الْحُلْوُ الْبَارِدُ
১৫০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঠান্ডা মিষ্টি পানীয় অধিকতর পছন্দ করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১৪৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭২০০; সুনানুল কুবরা হা/৬৮১৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৬৭৬; জামেউস সগীর, হা/৮৭৫৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩০০৬।]
তিনি নিজে পান করে প্রথমে ডান পার্শ্বের ব্যক্তিকে দিতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : دَخَلْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ اَنَا وَخَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ عَلٰى مَيْمُوْنَةَ فَجَاءَتْنَا بِاِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ ، فَشَرِبَ رَسُوْلُ اللهِ وَاَنَا عَلٰى يَمِيْنِهٖ وَخَالِدٌ عَلٰى شِمَالِهٖ ، فَقَالَ لِيْ : اَلشَّرْبَةُ لَكَ ، فَاِنْ شِئِتَ اٰثَرْتَ بِهَا خَالِدًا فَقُلْتُ : مَا كُنْتُ لِأُوْثِرَ عَلٰى سُؤْرِكَ اَحَدًا ، ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ اَطْعَمَهُ اللهُ طَعَامًا ، فَلْيَقُلِ : اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَاَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ ، وَمَنْ سَقَاهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَبَنًا ، فَلْيَقُلِ : اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ . ثُمَّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَيْسَ شَيْءٌ يُجْزِئُ مَكَانَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ غَيْرُ اللَّبَنِ
১৫১. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আমি এবং খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ) একবার মায়মূনা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি আমাদের জন্য একটি পাত্রে দুধ আনলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তা হতে কিছু পান করলেন। সে সময় আমি ছিলাম তাঁর ডানে এবং খালিদ তাঁর বামে। তারপর তিনি আমাকে বললেন, এখন পান করার হক তোমার। তবে ইচ্ছে করলে তুমি খালিদকে তোমার উপর অগ্রাধিকার দিতে পার। এরপর ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, আমি আপনার উচ্ছিষ্টের ব্যাপারে কাউকে অগ্রাধিকার দিতে সম্মত নই। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ যদি কাউকে কোন খাবার খাওয়ান তাহলে তার বলা উচিত-
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَاَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ
‘‘আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফীহি ওয়া আত্ব‘ইম্না- খয়রাম্ মিন্হু।’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি এতে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চেয়েও বেশি সুস্বাদু খাবার দান করো।
আর যদি আল্লাহ কাউকে দুধ পান করান, তাহলে তার বলা উচিত-
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
‘‘আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফীহি ওয়াযিদ্না- মিন্হু।’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চেয়েও বেশি দাও।
এরপর বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, দুধ ছাড়া এমন কোন বস্তু নেই, যা খাদ্য ও পানীয় উভয়ের কাজ দেয়।
ব্যাখ্যা : ‘এখন পান করার অধিকার তোমার’ রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে আববাস (রাঃ) এর কাছে অনুমতি এজন্য চেয়েছিলেন যে, তখন তিনি ডানে বসা ছিলেন। আর খালেদ (রাঃ) ছিলেন বামে। আর বিভিন্ন হাদীসের বর্ণিত আছে- খাবার ডান দিক থেকে পরিবেশন করবে। এজন্য বড়কে সম্মান প্রদর্শনের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন, তুমি ইচ্ছা করলে খালেদকে আগে খেতে দিতে পার।
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ شُرْبِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ اَحَبَّ الشَّرَابِ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ الْحُلْوُ الْبَارِدُ
১৫০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঠান্ডা মিষ্টি পানীয় অধিকতর পছন্দ করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১৪৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭২০০; সুনানুল কুবরা হা/৬৮১৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৪৬৭৬; জামেউস সগীর, হা/৮৭৫৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩০০৬।]
তিনি নিজে পান করে প্রথমে ডান পার্শ্বের ব্যক্তিকে দিতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : دَخَلْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ اَنَا وَخَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ عَلٰى مَيْمُوْنَةَ فَجَاءَتْنَا بِاِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ ، فَشَرِبَ رَسُوْلُ اللهِ وَاَنَا عَلٰى يَمِيْنِهٖ وَخَالِدٌ عَلٰى شِمَالِهٖ ، فَقَالَ لِيْ : اَلشَّرْبَةُ لَكَ ، فَاِنْ شِئِتَ اٰثَرْتَ بِهَا خَالِدًا فَقُلْتُ : مَا كُنْتُ لِأُوْثِرَ عَلٰى سُؤْرِكَ اَحَدًا ، ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ اَطْعَمَهُ اللهُ طَعَامًا ، فَلْيَقُلِ : اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَاَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ ، وَمَنْ سَقَاهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَبَنًا ، فَلْيَقُلِ : اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ . ثُمَّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَيْسَ شَيْءٌ يُجْزِئُ مَكَانَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ غَيْرُ اللَّبَنِ
১৫১. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আমি এবং খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ) একবার মায়মূনা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি আমাদের জন্য একটি পাত্রে দুধ আনলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ তা হতে কিছু পান করলেন। সে সময় আমি ছিলাম তাঁর ডানে এবং খালিদ তাঁর বামে। তারপর তিনি আমাকে বললেন, এখন পান করার হক তোমার। তবে ইচ্ছে করলে তুমি খালিদকে তোমার উপর অগ্রাধিকার দিতে পার। এরপর ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, আমি আপনার উচ্ছিষ্টের ব্যাপারে কাউকে অগ্রাধিকার দিতে সম্মত নই। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ যদি কাউকে কোন খাবার খাওয়ান তাহলে তার বলা উচিত-
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَاَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ
‘‘আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফীহি ওয়া আত্ব‘ইম্না- খয়রাম্ মিন্হু।’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি এতে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চেয়েও বেশি সুস্বাদু খাবার দান করো।
আর যদি আল্লাহ কাউকে দুধ পান করান, তাহলে তার বলা উচিত-
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
‘‘আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফীহি ওয়াযিদ্না- মিন্হু।’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চেয়েও বেশি দাও।
এরপর বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, দুধ ছাড়া এমন কোন বস্তু নেই, যা খাদ্য ও পানীয় উভয়ের কাজ দেয়।
ব্যাখ্যা : ‘এখন পান করার অধিকার তোমার’ রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে আববাস (রাঃ) এর কাছে অনুমতি এজন্য চেয়েছিলেন যে, তখন তিনি ডানে বসা ছিলেন। আর খালেদ (রাঃ) ছিলেন বামে। আর বিভিন্ন হাদীসের বর্ণিত আছে- খাবার ডান দিক থেকে পরিবেশন করবে। এজন্য বড়কে সম্মান প্রদর্শনের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছিলেন, তুমি ইচ্ছা করলে খালেদকে আগে খেতে দিতে পার।
بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صِفَةِ شُرْبِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : اَنَّ النَّبِيَّ شَرِبَ مِنْ زَمْزَمَ وَهُوَ قَائِمٌ
১৫২. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৮২।]
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ ، عَنْ اَبِيْهِ ، عَنْ جَدِّهٖ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَشْرَبُ قَائِمًا وَقَاعِدًا
১৫৩. আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি তার পিতামহ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺকে দাঁড়িয়ে ও বসে (উভয় অবস্থায়) পান করতে দেখেছি। [সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৯২৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৪৮।]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : سَقَيْتُ النَّبِيَّ مِنْ زَمْزَمَ فَشَرِبَ وَهُوَ قَائِمٌ
১৫৪. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে যমযমের পানি পান করিয়েছি। আর তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৬৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৩২০; মু‘জামুস সাগীর, হা/৩৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৪৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ওযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করতেন :
عَنِ النَّزَّالِ بْنِ سَبْرَةَ قَالَ : اَتٰى عَلِيٌّ ، بِكُوْزٍ مِنْ مَاءٍ وَهُوَ فِي الرَّحْبَةِ فَاَخَذَ مِنْهُ كَفًّا فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَمَسَحَ وَجْهَهٗ وَذِرَاعَيْهِ وَرَأْسَهٗ ، ثُمَّ شَرِبَ وَهُوَ قَائِمٌ ، ثُمَّ قَالَ : هٰذَا وُضُوْءُ مَنْ لَمْ يُحْدِثْ ، هٰكَذَا رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ فَعَلَ
১৫৫. নায্যাল ইবনে সাবরা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) রাহবা তথা কুফার মসজিদের বারান্দায় অবস্থানকালে তাঁর জন্য এক মগ পানি আনা হলো। তিনি তা হতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে উভয় হাত ধৌত করলেন। তারপর কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। এরপর মুখমন্ডল মাসাহ করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট পানি পান করলেন। এরপর বললেন, যার ওযূ ভঙ্গ হয়নি, তার ওযূ হচ্ছে এই। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আমি এরূপ করতে দেখেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৮৩।]
ব্যাখ্যা : এখানে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে। তার একটি হলো হাত-মুখ প্রকৃত অর্থেই মাসেহ করেছেন। এ হিসেবে একে ওযূ বলা হয়েছে রূপক অর্থে। যাকে আভিধানিক অর্থেও ওযূ বলা যায়। পা ধৌত করার কথা উল্লেখ না থাকাতেও এটা বুঝা যায়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অল্প ধৌত করাকে মাসেহ বলা হয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় মাসেহ এর পরিবর্তে হাত মুখ ধৌত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। পা ধোয়ার কথাও কোন কোন বর্ণনাতে এসেছে। কাজেই হাদীসে ওযূ করাই উদ্দেশ্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ পান করার সময় তিনবার শ্বাস নিতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ : كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الْاِنَاءِ ثَلَاثًا اِذَا شَرِبَ ، وَيَقُوْلُ : هُوَ اَمْرَأُ وَاَرْوٰى
১৫৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় নবী ﷺ যখন পান করতেন তখন তিনবার শ্বাস নিতেন এবং বলতেন, তা অধিক স্বাস্থ্যকর ও তৃপ্তিদানে অধিকতর সহায়ক। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪০৫; সহীহ বুখারী, হা/২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৩২৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭২০৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১১৯।]
একদা তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় মশক হতে পানি পান করেন :
عَنْ كَبْشَةَ ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ فَشَرِبَ مِنْ قِرْبَةٍ مُعَلَّقَةٍ قَائِمًا ، فَقُمْتُ اِلٰى فِيْهَا فَقَطَعْتُهٗ
১৫৭. কাব্শা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার নিকট আসলেন। তখন তিনি লটকানো মশক হতে দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করলেন। এরপর আমি দাঁড়ালাম এবং মশকের মুখটি কেটে নিলাম। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৪২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৬২৪।]
আনাস (রাঃ)ও তিন শ্বাসে পানি পান করতেন :
عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ، يَتَنَفَّسُ فِي الْاِنَاءِ ثَلَاثًا ، وَزَعَمَ اَنَسٌ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الْاِنَاءِ ثَلَاثًا
১৫৮. সুমামা ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, নবী ﷺ তিন শ্বাসে পানি পান করতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৪১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯৪৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৩৭।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ دَخَلَ عَلٰى أُمِّ سُلَيْمٍ وَقِرْبَةٌ مُعَلَّقَةٌ فَشَرِبَ مِنْ فَمِ الْقِرْبَةِ وَهُوَ قَائِمٌ ، فَقَامَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ اِلٰى رَأْسِ الْقِرْبَةِ فَقَطَعَتْهَا
১৫৯. আনাস ইবনে মলিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী ﷺ আনাস (রাঃ) এর মাতা উম্মে সুলায়ম (রাঃ) এর বাড়ি যান। সেখানে একটি মশক ঝুলন্ত ছিল। এরপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় মশকটির মুখ হতে পানি পান করলেন। এরপর উম্মে সুলায়ম (রাঃ) মশকের নিকট পৌঁছান এবং তার মুখ কেটে নেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৪৬৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০৮১৫।]
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِي ْوَقَّاصٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَشْرَبُ قَائِمًا
১৬০. সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৬৫৪; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৩৭; শারহুল মা‘আনী, হা/৬৮৪৮।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي تَعَطُّرِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : اَنَّ النَّبِيَّ شَرِبَ مِنْ زَمْزَمَ وَهُوَ قَائِمٌ
১৫২. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৮২।]
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ ، عَنْ اَبِيْهِ ، عَنْ جَدِّهٖ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَشْرَبُ قَائِمًا وَقَاعِدًا
১৫৩. আমর ইবনে শু‘আইব (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি তার পিতামহ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺকে দাঁড়িয়ে ও বসে (উভয় অবস্থায়) পান করতে দেখেছি। [সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৯২৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৪৮।]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : سَقَيْتُ النَّبِيَّ مِنْ زَمْزَمَ فَشَرِبَ وَهُوَ قَائِمٌ
১৫৪. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে যমযমের পানি পান করিয়েছি। আর তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৬৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৩২০; মু‘জামুস সাগীর, হা/৩৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৪৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ওযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করতেন :
عَنِ النَّزَّالِ بْنِ سَبْرَةَ قَالَ : اَتٰى عَلِيٌّ ، بِكُوْزٍ مِنْ مَاءٍ وَهُوَ فِي الرَّحْبَةِ فَاَخَذَ مِنْهُ كَفًّا فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَمَسَحَ وَجْهَهٗ وَذِرَاعَيْهِ وَرَأْسَهٗ ، ثُمَّ شَرِبَ وَهُوَ قَائِمٌ ، ثُمَّ قَالَ : هٰذَا وُضُوْءُ مَنْ لَمْ يُحْدِثْ ، هٰكَذَا رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ فَعَلَ
১৫৫. নায্যাল ইবনে সাবরা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) রাহবা তথা কুফার মসজিদের বারান্দায় অবস্থানকালে তাঁর জন্য এক মগ পানি আনা হলো। তিনি তা হতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে উভয় হাত ধৌত করলেন। তারপর কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। এরপর মুখমন্ডল মাসাহ করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট পানি পান করলেন। এরপর বললেন, যার ওযূ ভঙ্গ হয়নি, তার ওযূ হচ্ছে এই। (তিনি বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আমি এরূপ করতে দেখেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৮৩।]
ব্যাখ্যা : এখানে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে। তার একটি হলো হাত-মুখ প্রকৃত অর্থেই মাসেহ করেছেন। এ হিসেবে একে ওযূ বলা হয়েছে রূপক অর্থে। যাকে আভিধানিক অর্থেও ওযূ বলা যায়। পা ধৌত করার কথা উল্লেখ না থাকাতেও এটা বুঝা যায়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অল্প ধৌত করাকে মাসেহ বলা হয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় মাসেহ এর পরিবর্তে হাত মুখ ধৌত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। পা ধোয়ার কথাও কোন কোন বর্ণনাতে এসেছে। কাজেই হাদীসে ওযূ করাই উদ্দেশ্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ পান করার সময় তিনবার শ্বাস নিতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ : كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الْاِنَاءِ ثَلَاثًا اِذَا شَرِبَ ، وَيَقُوْلُ : هُوَ اَمْرَأُ وَاَرْوٰى
১৫৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় নবী ﷺ যখন পান করতেন তখন তিনবার শ্বাস নিতেন এবং বলতেন, তা অধিক স্বাস্থ্যকর ও তৃপ্তিদানে অধিকতর সহায়ক। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪০৫; সহীহ বুখারী, হা/২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯৪৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৩২৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭২০৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১১৯।]
একদা তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় মশক হতে পানি পান করেন :
عَنْ كَبْشَةَ ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ فَشَرِبَ مِنْ قِرْبَةٍ مُعَلَّقَةٍ قَائِمًا ، فَقُمْتُ اِلٰى فِيْهَا فَقَطَعْتُهٗ
১৫৭. কাব্শা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার নিকট আসলেন। তখন তিনি লটকানো মশক হতে দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করলেন। এরপর আমি দাঁড়ালাম এবং মশকের মুখটি কেটে নিলাম। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৪২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৬২৪।]
আনাস (রাঃ)ও তিন শ্বাসে পানি পান করতেন :
عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ، يَتَنَفَّسُ فِي الْاِنَاءِ ثَلَاثًا ، وَزَعَمَ اَنَسٌ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الْاِنَاءِ ثَلَاثًا
১৫৮. সুমামা ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, নবী ﷺ তিন শ্বাসে পানি পান করতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৪১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯৪৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৩৭।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ دَخَلَ عَلٰى أُمِّ سُلَيْمٍ وَقِرْبَةٌ مُعَلَّقَةٌ فَشَرِبَ مِنْ فَمِ الْقِرْبَةِ وَهُوَ قَائِمٌ ، فَقَامَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ اِلٰى رَأْسِ الْقِرْبَةِ فَقَطَعَتْهَا
১৫৯. আনাস ইবনে মলিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী ﷺ আনাস (রাঃ) এর মাতা উম্মে সুলায়ম (রাঃ) এর বাড়ি যান। সেখানে একটি মশক ঝুলন্ত ছিল। এরপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় মশকটির মুখ হতে পানি পান করলেন। এরপর উম্মে সুলায়ম (রাঃ) মশকের নিকট পৌঁছান এবং তার মুখ কেটে নেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৪৬৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০৮১৫।]
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِي ْوَقَّاصٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَشْرَبُ قَائِمًا
১৬০. সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৬৫৪; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৩৭; শারহুল মা‘আনী, হা/৬৮৪৮।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي تَعَطُّرِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি আতরদানি ছিল :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ لِرَسُوْلِ اللهِ سُكَّةٌ يَتَطَيَّبُ مِنْهَا
১৬১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আতরদানি ছিল। তিনি তা হতে আতর লাগাতেন। [আবু দাউদ, হা/৪১৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৬৭; জামেউস সগীর, হা/৮৯৬২।]
তিনি কখনো সুগন্ধি ফেরত দিতেন না :
عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ، لَا يَرُدُّ الطِّيْبَ ، وَقَالَ اَنَسٌ : اِنَّ النَّبِيَّ كَانَ لَا يَرُدُّ الطِّيْبَ
১৬২. সুমামা ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) সুগদ্ধি ফেরত দিতেন না। আর আনাস (রাঃ) বলতেন, নবী ﷺ কখনো সুগন্ধি ফেরত দিতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৭৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৭০; জামেউস সগীর, হা/৮৯৮৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬০০৫।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ثَلَاثٌ لَا تُرَدُّ : الْوَسَائِدُ ، وَالدُّهْنُ ، وَاللَّبَنُ
১৬৩. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিনটি বস্তু কখনো ফেরত দেবে না- বালিশ, তৈল এবং দুধ। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৩১০০; জামেউস সগীর, হা/৫৩৫৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৭৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৬১৯।]
তিনি পুরুষ ও মহিলাদের সুগন্ধি ব্যবহারের পার্থক্য বলে দিয়েছেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : طِيْبُ الرِّجَالِ مَا ظَهَرَ رِيحُهٗ وَخَفِيَ لَوْنُهٗ ، وَطِيْبُ النِّسَاءِ مَا ظَهَرَ لَوْنُهٗ وَخَفِيَ رِيحُهٗ
১৬৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পুরুষের সুগদ্ধি ছড়ায় কিন্তু রং থাকে অদৃশ্য। আর মহিলাদের সুগন্ধির রং দৃশ্যমান কিন্তু তাতে গন্ধ নেই। [আবু দাউদ, হা/২১৭৬; সুনানে নাসাঈ, হা/৫১১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬৩৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৬২; জামেউস সগীর, হা/৩৮২৮।]
ব্যাখ্যা : পুরুষের সুগন্ধি এমন হতে হবে যাতে বেশি সুঘ্রাণ যুক্ত হয়। কিন্তু রং থাকে না। আর মহিলাদের সুগন্ধি হলো রং। যেমন- জাফরান, মেহেদি ইত্যাদি। অতএব, সুবাস ছড়ানো সুগন্ধি ব্যবহার করে ঘরের বাহিরে যাওয়া নিষেধ। তবে স্বামীর কাছে থাকা অবস্থায় যে কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে।
- بَابُ كَيْفَ كَانَ كَلَامُ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ لِرَسُوْلِ اللهِ سُكَّةٌ يَتَطَيَّبُ مِنْهَا
১৬১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আতরদানি ছিল। তিনি তা হতে আতর লাগাতেন। [আবু দাউদ, হা/৪১৪৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৬৭; জামেউস সগীর, হা/৮৯৬২।]
তিনি কখনো সুগন্ধি ফেরত দিতেন না :
عَنْ ثُمَامَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ، لَا يَرُدُّ الطِّيْبَ ، وَقَالَ اَنَسٌ : اِنَّ النَّبِيَّ كَانَ لَا يَرُدُّ الطِّيْبَ
১৬২. সুমামা ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) সুগদ্ধি ফেরত দিতেন না। আর আনাস (রাঃ) বলতেন, নবী ﷺ কখনো সুগন্ধি ফেরত দিতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৭৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৭০; জামেউস সগীর, হা/৮৯৮৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬০০৫।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ثَلَاثٌ لَا تُرَدُّ : الْوَسَائِدُ ، وَالدُّهْنُ ، وَاللَّبَنُ
১৬৩. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিনটি বস্তু কখনো ফেরত দেবে না- বালিশ, তৈল এবং দুধ। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৩১০০; জামেউস সগীর, হা/৫৩৫৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৭৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৬১৯।]
তিনি পুরুষ ও মহিলাদের সুগন্ধি ব্যবহারের পার্থক্য বলে দিয়েছেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : طِيْبُ الرِّجَالِ مَا ظَهَرَ رِيحُهٗ وَخَفِيَ لَوْنُهٗ ، وَطِيْبُ النِّسَاءِ مَا ظَهَرَ لَوْنُهٗ وَخَفِيَ رِيحُهٗ
১৬৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পুরুষের সুগদ্ধি ছড়ায় কিন্তু রং থাকে অদৃশ্য। আর মহিলাদের সুগন্ধির রং দৃশ্যমান কিন্তু তাতে গন্ধ নেই। [আবু দাউদ, হা/২১৭৬; সুনানে নাসাঈ, হা/৫১১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬৩৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৬২; জামেউস সগীর, হা/৩৮২৮।]
ব্যাখ্যা : পুরুষের সুগন্ধি এমন হতে হবে যাতে বেশি সুঘ্রাণ যুক্ত হয়। কিন্তু রং থাকে না। আর মহিলাদের সুগন্ধি হলো রং। যেমন- জাফরান, মেহেদি ইত্যাদি। অতএব, সুবাস ছড়ানো সুগন্ধি ব্যবহার করে ঘরের বাহিরে যাওয়া নিষেধ। তবে স্বামীর কাছে থাকা অবস্থায় যে কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে।
- بَابُ كَيْفَ كَانَ كَلَامُ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা ছিল সুস্পষ্ট :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَسْرُدُ سرْدَكُمْ هٰذَا ، وَلٰكِنَّهٗ كَانَ بَيِّنٍ فَصْلٍ ، يَحْفَظُهٗ مَنْ جَلَسَ اِلَيْهِ
১৬৫. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমাদের ন্যায় চটপটে তথা অস্পষ্টভাবে তাড়াতাড়ি কথা বলতেন না, বরং তাঁর প্রতিটি কথা ছিল সুস্পষ্ট। আর শ্রোতারা খুব সহজেই তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারত। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২৫২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৯৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কোন কথা তিনবার বলতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُعِيْدُ الْكَلِمَةَ ثَلَاثًا لِتُعْقَلَ عَنْهُ
১৬৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কথা তিনবার বলতেন, যাতে (শ্রোতারা) ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। [মুজামুল ইসমাঈলী, হা/১০৫; মু‘জামুস সগীর, হা/৯১২১।]
ব্যাখ্যা : সহজে বোধগম্য নয় এমন বিষয় হলে বা শ্রোতা অধিক থাকলে তিন দিকে ফিরে তিনবার বলতেন। যাতে উপস্থিত সকলে ভালোভাবে বুঝে নিতে পারে। তাছাড়া কোন বিষয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদানের জন্যও কোন কোন কথা তিনবার বলতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ) এর বর্ণনা :
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : سَاَلْتُ خَالِي هِنْدُ بْنُ اَبِيْ هَالَةَ ، وَكَانَ وَصَّافًا ، فَقُلْتُ : صِفْ لِيْ مَنْطِقَ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ مُتَوَاصِلَ الْاَحْزَانِ دَائِمَ الْفِكْرَةِ لَيْسَتْ لَهٗ رَاحَةٌ ، طَوِيْلُ السَّكْتِ ، لَا يَتَكَلَّمُ فِي غَيْرِ حَاجَةٍ ، يَفْتَتِحُ الْكَلَامَ وَيَخْتِمُهٗ بِاسْمِ اللهِ تَعَالٰى ، وَيَتَكَلَّمُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ ، كَلَامُهٗ فَصْلٌ ، لَا فُضُوْلَ وَلَا تَقْصِيْرَ ، لَيْسَ بِالْجَافِي وَلَا الْمُهِيْنِ ، يُعَظِّمُ النِّعْمَةَ ، وَاِنْ دَقَّتْ لَا يَذُمُّ مِنْهَا شَيْئًا غَيْرَ اَنَّهٗ لَمْ يَكُنْ يَذُمُّ ذَوَّاقًا وَلَا يَمْدَحُهٗ ، وَلَا تُغْضِبُهُ الدُّنْيَا ، وَلَا مَا كَانَ لَهَا ، فَاِذَا تُعُدِّيَ الْحَقُّ لَمْ يَقُمْ لِغَضَبِهٖ شَيْءٌ حَتّٰى يَنْتَصِرَ لَهٗ ، وَلَا يَغْضَبُ لِنَفْسِهٖ ، وَلَا يَنْتَصِرُ لَهَا ، اِذَا اَشَارَ اَشَارَ بِكَفِّهٖ كُلِّهَا ، وَاِذَا تَعَجَّبَ قَلَبَهَا ، وَاِذَا تَحَدَّثَ اِتَّصَلَ بِهَا ، وَضَرَبَ بِرَاحَتِهِ الْيُمْنٰى بَطْنَ اِبْهَامِهِ الْيُسْرٰى ، وَاِذَا غَضِبَ اَعْرَضَ وَاَشَاحَ ، وَاِذَا فَرِحَ غَضَّ طَرْفَهٗ ، جُلُّ ضَحِكِهِ التَّبَسُّمُ ، يَفْتَرُّ عَنْ مِثْلِ حَبِّ الْغَمَامِ
১৬৭. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (আমার) মামা হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবয়ব ও আখলাক সম্পর্কে সুন্দররূপে বর্ণনা করতেন। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বদা আখিরাতে উম্মতের মুক্তির চিন্তায় বিভোর থাকতেন। এ কারণে তাঁর কোন স্বস্তি ছিল না। তিনি অধিকাংশ সময় নীরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অধিক বিস্তারিত ছিল না কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোন প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল না, থাকত না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব। আল্লাহর নিয়ামত যত সামান্যই হতো তাকে তিনি অনেক বড় মনে করতেন। এতে তিনি কোন দোষত্রুটি খুঁজতেন না। তিনি অপরিহার্য খাদ্য সামগ্রীর ত্রুটি খতিয়ে দেখতেন না এবং উচ্ছ্বাসিত প্রশংসাও করতেন না। পার্থিব কোন বিষয় বা কাজের উপর ক্রোধ প্রকাশ করতেন না এবং তার জন্য আক্ষেপও করতেন না। অবশ্য যখন কেউ দীনি কোন বিষয়ে সীমলঙ্ঘন করত তখন তাঁর রাগের সীমা থাকত না। এমনকি তখন কেউ তাঁকে বশে রাখতে পারত না। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত কারণে ক্রোধান্বিত হতেন না এবং এজন্য কারো সাহায্য গ্রহণ করতেন না। কোন বিষয়ের প্রতি ইশারা করলে সম্পূর্ণ হাত দ্বারা ইশারা করতেন। তিনি কোন বিস্ময় প্রকাশ করলে হাত উল্টাতেন। যখন কথাবার্তা বলতেন তখন ডান হাতের তালুতে বাম হাতের আঙ্গুলের আভ্যন্তরীণ ভাগ দ্বারা আঘাত করতেন। কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হলে তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিতেন এবং অমনোযোগী হতেন। যখন তিনি আনন্দ-উৎফুল্ল হতেন তখন তাঁর চোখের কিনারা নিম্নমুখী করতেন। অধিকাংশ সময় তিনি মুচকি হাসতেন। তখন তাঁর দাঁতগুলো বরফের ন্যায় উজ্জ্বল সাদারূপে শোভা পেত। [শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৬২।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন খাদ্যের ত্রুটি ধরতেন না। কারণ, এটা আল্লাহর নিয়ামত। আবার অতিরিক্ত প্রশংসাও করতেন না। তবে কখনো আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা বা কারো সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোন খাদ্যের সাধারণ প্রশংসাও করেছেন। দুনিয়ার সাথে সম্পর্কিত কোন কিছুই তাঁকে রাগান্বিত করত না।
بَابُ مَا جَاءَ فِي ضَحِكِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَسْرُدُ سرْدَكُمْ هٰذَا ، وَلٰكِنَّهٗ كَانَ بَيِّنٍ فَصْلٍ ، يَحْفَظُهٗ مَنْ جَلَسَ اِلَيْهِ
১৬৫. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমাদের ন্যায় চটপটে তথা অস্পষ্টভাবে তাড়াতাড়ি কথা বলতেন না, বরং তাঁর প্রতিটি কথা ছিল সুস্পষ্ট। আর শ্রোতারা খুব সহজেই তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারত। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২৫২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৯৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কোন কথা তিনবার বলতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُعِيْدُ الْكَلِمَةَ ثَلَاثًا لِتُعْقَلَ عَنْهُ
১৬৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কথা তিনবার বলতেন, যাতে (শ্রোতারা) ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। [মুজামুল ইসমাঈলী, হা/১০৫; মু‘জামুস সগীর, হা/৯১২১।]
ব্যাখ্যা : সহজে বোধগম্য নয় এমন বিষয় হলে বা শ্রোতা অধিক থাকলে তিন দিকে ফিরে তিনবার বলতেন। যাতে উপস্থিত সকলে ভালোভাবে বুঝে নিতে পারে। তাছাড়া কোন বিষয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদানের জন্যও কোন কোন কথা তিনবার বলতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ) এর বর্ণনা :
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : سَاَلْتُ خَالِي هِنْدُ بْنُ اَبِيْ هَالَةَ ، وَكَانَ وَصَّافًا ، فَقُلْتُ : صِفْ لِيْ مَنْطِقَ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ مُتَوَاصِلَ الْاَحْزَانِ دَائِمَ الْفِكْرَةِ لَيْسَتْ لَهٗ رَاحَةٌ ، طَوِيْلُ السَّكْتِ ، لَا يَتَكَلَّمُ فِي غَيْرِ حَاجَةٍ ، يَفْتَتِحُ الْكَلَامَ وَيَخْتِمُهٗ بِاسْمِ اللهِ تَعَالٰى ، وَيَتَكَلَّمُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ ، كَلَامُهٗ فَصْلٌ ، لَا فُضُوْلَ وَلَا تَقْصِيْرَ ، لَيْسَ بِالْجَافِي وَلَا الْمُهِيْنِ ، يُعَظِّمُ النِّعْمَةَ ، وَاِنْ دَقَّتْ لَا يَذُمُّ مِنْهَا شَيْئًا غَيْرَ اَنَّهٗ لَمْ يَكُنْ يَذُمُّ ذَوَّاقًا وَلَا يَمْدَحُهٗ ، وَلَا تُغْضِبُهُ الدُّنْيَا ، وَلَا مَا كَانَ لَهَا ، فَاِذَا تُعُدِّيَ الْحَقُّ لَمْ يَقُمْ لِغَضَبِهٖ شَيْءٌ حَتّٰى يَنْتَصِرَ لَهٗ ، وَلَا يَغْضَبُ لِنَفْسِهٖ ، وَلَا يَنْتَصِرُ لَهَا ، اِذَا اَشَارَ اَشَارَ بِكَفِّهٖ كُلِّهَا ، وَاِذَا تَعَجَّبَ قَلَبَهَا ، وَاِذَا تَحَدَّثَ اِتَّصَلَ بِهَا ، وَضَرَبَ بِرَاحَتِهِ الْيُمْنٰى بَطْنَ اِبْهَامِهِ الْيُسْرٰى ، وَاِذَا غَضِبَ اَعْرَضَ وَاَشَاحَ ، وَاِذَا فَرِحَ غَضَّ طَرْفَهٗ ، جُلُّ ضَحِكِهِ التَّبَسُّمُ ، يَفْتَرُّ عَنْ مِثْلِ حَبِّ الْغَمَامِ
১৬৭. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (আমার) মামা হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবয়ব ও আখলাক সম্পর্কে সুন্দররূপে বর্ণনা করতেন। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বদা আখিরাতে উম্মতের মুক্তির চিন্তায় বিভোর থাকতেন। এ কারণে তাঁর কোন স্বস্তি ছিল না। তিনি অধিকাংশ সময় নীরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অধিক বিস্তারিত ছিল না কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোন প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল না, থাকত না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব। আল্লাহর নিয়ামত যত সামান্যই হতো তাকে তিনি অনেক বড় মনে করতেন। এতে তিনি কোন দোষত্রুটি খুঁজতেন না। তিনি অপরিহার্য খাদ্য সামগ্রীর ত্রুটি খতিয়ে দেখতেন না এবং উচ্ছ্বাসিত প্রশংসাও করতেন না। পার্থিব কোন বিষয় বা কাজের উপর ক্রোধ প্রকাশ করতেন না এবং তার জন্য আক্ষেপও করতেন না। অবশ্য যখন কেউ দীনি কোন বিষয়ে সীমলঙ্ঘন করত তখন তাঁর রাগের সীমা থাকত না। এমনকি তখন কেউ তাঁকে বশে রাখতে পারত না। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত কারণে ক্রোধান্বিত হতেন না এবং এজন্য কারো সাহায্য গ্রহণ করতেন না। কোন বিষয়ের প্রতি ইশারা করলে সম্পূর্ণ হাত দ্বারা ইশারা করতেন। তিনি কোন বিস্ময় প্রকাশ করলে হাত উল্টাতেন। যখন কথাবার্তা বলতেন তখন ডান হাতের তালুতে বাম হাতের আঙ্গুলের আভ্যন্তরীণ ভাগ দ্বারা আঘাত করতেন। কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হলে তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিতেন এবং অমনোযোগী হতেন। যখন তিনি আনন্দ-উৎফুল্ল হতেন তখন তাঁর চোখের কিনারা নিম্নমুখী করতেন। অধিকাংশ সময় তিনি মুচকি হাসতেন। তখন তাঁর দাঁতগুলো বরফের ন্যায় উজ্জ্বল সাদারূপে শোভা পেত। [শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৬২।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন খাদ্যের ত্রুটি ধরতেন না। কারণ, এটা আল্লাহর নিয়ামত। আবার অতিরিক্ত প্রশংসাও করতেন না। তবে কখনো আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা বা কারো সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোন খাদ্যের সাধারণ প্রশংসাও করেছেন। দুনিয়ার সাথে সম্পর্কিত কোন কিছুই তাঁকে রাগান্বিত করত না।
بَابُ مَا جَاءَ فِي ضَحِكِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ মুচকি হাসি হাসতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ ، اَنَّهٗ قَالَ : مَا رَاَيْتُ اَحَدًا اَكْثَرَ تَبَسُّمًا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ
১৬৮. আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে অধিক মুচকি হাস্যকারী ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৬৮৭।]
ব্যাখ্যা : পূর্বের অধ্যায়ের এক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে- রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বদা চিন্তিত থাকতেন। আর এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বেশি বেশি মুচকি হাসতেন। এ দু’হাদীসের সমন্বয় হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অন্তর সর্বদা চিন্তিত থাকত। কিন্তু লোকদের তিনি বুঝতে দিতেন না তাই তাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলতেন। এটা ছিল তাঁর উন্নত চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ : مَا كَانَ ضَحِكُ رَسُوْلِ اللهِ اِلَّا تَبَسُّمًا
১৬৯. আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সবসময় মুচকী হাসতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসার সময় দাঁত দেখা যেত :
عَنْ اَبِي ذَرٍّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنِّيْ لَاَعْلَمُ اَوَّلَ رَجُلٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ واٰخَرَ رَجُلٍ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ ، يُؤْتٰى بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ : اَعْرِضُوْا عَلَيْهِ صِغَارَ ذُنُوْبِهٖ وَيُخَبَّأُ عَنْهُ كِبَارُهَا ، فَيُقَالُ لَهٗ : عَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا ، وَهُوَ مُقِرٌّ لَا يُنْكِرُ ، وَهُوَ مُشْفِقٌ مِنْ كِبَارِهَا فَيُقَالُ : اَعْطُوْهُ مَكَانَ كُلِّ سَيِّئَةٍ عَمِلَهَا حَسَنَةً ، فَيَقُوْلُ : اِنَّ لِيْ ذُنُوْبًا مَا اَرَاهَا هَهُنَا، قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ : فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ضَحِكَ حَتّٰى بَدَتْ نَوَاجِذُهٗ
১৭০. আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আমি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিকে ভালোভাবে জানি। আর যে ব্যক্তি সর্বশেষ জাহান্নাম হতে নাজাত পাবে, তাকেও জানি। কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে (আল্লাহর নিকট উপস্থিত করে) বলা হবে, এর সগীরা গুনাহগুলো উপস্থাপন করো এবং কবীরা গুনাহগুলো গোপন করে রাখো। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি অমুক অমুক দিনে এই এই গুনাহ করেছ। তখন সে ব্যক্তি সবগুলো স্বীকার করবে এবং একটিও অস্বীকার করবে না। এরপর সে তার কবীরা গুনাহসমূহ সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তখন ঘোষণা দেয়া হবে যে, তার প্রতিটি মন্দ কাজের বিনিময়ে একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করো। এরপর সে বলবে, নিশ্চয় এখনও আমার অনেক গুনাহ বাকী আছে, যা দেখতে পাচ্ছি না। আবু যর (রাঃ) বলেন, তখন আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ মুচকি হাসছেন; এমনকি তাঁর সাদা দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছিল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪৩০; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৯৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩৬০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩০৫২।]
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : مَا حَجَبَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ مُنْذُ اَسْلَمْتُ وَلَا رَاٰنِيْ اِلَّا ضَحِكَ
১৭১. জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ইসলাম গ্রহণের পর হতে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে (তাঁর কাছে আসতে) বাধা দেননি। আর আমাকে দেখা মাত্রই তিনি হাসতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩০৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৫১৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯১৯৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭২০০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৪৯।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنِّيْ لَاَعْرِفُ اٰخِرَ اَهْلِ النَّارِ خُرُوْجًا ، رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنْهَا زَحْفًا ، فَيُقَالُ لَهٗ : اِنْطَلِقْ فَادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ : فَيَذْهَبُ لِيَدْخُلَ الْجَنَّةَ ، فَيَجِدُ النَّاسَ قَدْ اَخَذُوْا الْمَنَازِلَ ، فَيَرْجِعُ فَيَقُوْلُ : يَا رَبِّ ، قَدْ اَخَذَ النَّاسُ الْمَنَازِلَ ، فَيُقَالُ لَهٗ : اَتَذْكُرُ الزَّمَانَ الَّذِي كُنْتَ فِيْهِ ، فَيَقُوْلُ : نَعَمْ قَالَ : فَيُقَالُ لَهٗ : تَمَنَّ قَالَ : فَيَتَمَنّٰى ، فَيُقَالُ لَهٗ : فَاِنَّ لَكَ الَّذِيْ تَمَنَّيْتَ وَعَشَرَةَ اَضْعَافِ الدُّنْيَا " قَالَ : فَيَقُوْلُ : تَسْخَرُ بِيْ وَاَنْتَ الْمَلِكُ قَالَ : فَلَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ضَحِكَ حَتّٰى بَدَتْ نَوَاجِذُهٗ
১৭২. আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সর্বশেষে জাহান্নাম হতে নাজাত পেয়ে বের হয়ে আসবে, আমি তাঁকে চিনি। সে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম হতে বের হয়ে আসবে। এরপর তাকে বলা হবে, এসো। জান্নাতে প্রবেশ করো। ঘোষণা মুতাবিক সে (জান্নাতের দিকে) যাবে এবং সেখানে প্রবেশ করে দেখতে পাবে কোথাও ঠাঁই নাই। লোকেরা সকল স্থান অধিকার করে আছে। অতঃপর সে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক! লোকেরা তো সব স্থানই দখল করে আছে। তখন তাকে বলা হবে, তোমার সে কালের (দুনিয়ার) কথা স্মরণ আছে কি, যেখানে তুমি অবস্থান করেছিলে? সে বলবে, জি-হ্যাঁ। সবই আমার মনে পড়ে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তাকে বলা হবে, তোমার মনে যা চায়, তা আকাঙ্ক্ষা করো। তিনি বলেন, তখন সে আকাঙ্ক্ষা করবে। এরপর তাকে বলা হবে, তুমি যে ইচ্ছা পোষণ করলে তাই তোমার জন্য মঞ্জুর করা হলো এবং তোমাকে দশ দুনিয়ার সমান দেয়া হবে। তিনি বলেন, তখন সে বলবে, আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি আমার মালিক সারা জাহানের সম্রাট! তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এমতাবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মুচকি হাসি দিতে দেখলাম, এমনকি তাঁর দাঁত দেখা যাচ্ছিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮০; ইবনে হিববান, হা/৭৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৫৯৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩৫৬।]
عَنْ عَلِيِّ بْنِ رَبِيْعَةَ قَالَ : شَهِدْتُ عَلِيًّا ، أُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهٗ فِي الرِّكَابِ قَالَ : بِسْمِ اللهِ ، فَلَمَّا اسْتَوٰى عَلٰى ظَهْرِهَا قَالَ : الْحَمْدُ لِلّٰهِ ، ثُمَّ قَالَ : ﴿سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ ، وَاِنَّا اِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ﴾ ثُمَّ قَالَ : الْحَمْدُ لِلّٰهِ ثَلَاثًا ، وَاللهُ اَكْبَرُ ثَلَاثًا ، سُبْحَانَكَ اِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ، فَاغْفِرْ لِيْ فَاِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ ، ثُمَّ ضَحِكَ . فَقُلْتُ لَهٗ : مِنْ اَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ يَا اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ ؟ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَنَعَ كَمَا صَنَعْتُ ثُمَّ ضَحِكَ فَقُلْتُ : مِنْ اَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ : اِنَّ رَبَّكَ لَيَعْجَبُ مِنْ عَبْدِهٖ اِذَا قَالَ : رَبِّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي ، اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ غَيْرُكَ
১৭৩. আলী ইবনে রবী‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আলী (রাঃ) এর সামনে উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর কাছে একটি জানোয়ারকে আরোহণের জন্য আনা হলো। যখন তিনি সে পশুটির পাদানীতে পা রাখলেন এবং বললেন, ‘‘বিসমিল্লা-হ’’। অতঃপর জানোয়ারের পিঠে যখন সোজা হয়ে বসলেন তখন বললেন, ‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হ’’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর) অতঃপর বললেন :
﴿سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ ، وَاِنَّا اِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ﴾
‘‘সুব্হা-নাল্লাযী সাখ্খারা লানা- হা-যা- ওয়ামা- কুন্না- লাহূ মুক্বরিনীন, ওয়া ইন্না- ইলা- রবিবনা- লামুনক্বলিবূন’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! মহান সত্তার পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, যিনি আমাদের জন্য একে বশীভূত করেছেন। আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম নই। বস্তুত আমরা তার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। [সূরা যুখরুফ- ১৪।]
এরপর তিনি ৩ বার ‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হ’’ এবং ৩ বার ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ পাঠ করলেন। এরপর এ দু‘আ পড়লেন :
سُبْحَانَكَ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ، فَاغْفِرْ لِيْ فَاِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ
‘‘সুব্হা-নাকা ইন্নী যলামতু নাফ্সী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্তা।’’
অর্থাৎ আল্লাহ পবিত্র! নিশ্চয় আমি আমার নিজের উপর সীমালঙ্ঘন করেছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই।
এরপর তিনি হাসলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমীরুল মু’মিনীন! আপনার হাসি পেল? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺকে এমনভাবে দেখেছি যেভাবে আমি এইমাত্র কথা ও কাজ সম্পন্ন করলাম। এরপর তিনি মুচকি হাসি দিলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন জিনিস আপনাকে হাসাল? তিনি বললেন, তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দার এ কথা খুবই পছন্দ করেন যখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও, এ বিশ্বাস রেখে যে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৩; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৩৪; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৮৭৪৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৪৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৯৮।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ مِزَاحِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ ، اَنَّهٗ قَالَ : مَا رَاَيْتُ اَحَدًا اَكْثَرَ تَبَسُّمًا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ
১৬৮. আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে অধিক মুচকি হাস্যকারী ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৬৮৭।]
ব্যাখ্যা : পূর্বের অধ্যায়ের এক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে- রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বদা চিন্তিত থাকতেন। আর এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বেশি বেশি মুচকি হাসতেন। এ দু’হাদীসের সমন্বয় হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অন্তর সর্বদা চিন্তিত থাকত। কিন্তু লোকদের তিনি বুঝতে দিতেন না তাই তাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলতেন। এটা ছিল তাঁর উন্নত চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ : مَا كَانَ ضَحِكُ رَسُوْلِ اللهِ اِلَّا تَبَسُّمًا
১৬৯. আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সবসময় মুচকী হাসতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসার সময় দাঁত দেখা যেত :
عَنْ اَبِي ذَرٍّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنِّيْ لَاَعْلَمُ اَوَّلَ رَجُلٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ واٰخَرَ رَجُلٍ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ ، يُؤْتٰى بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ : اَعْرِضُوْا عَلَيْهِ صِغَارَ ذُنُوْبِهٖ وَيُخَبَّأُ عَنْهُ كِبَارُهَا ، فَيُقَالُ لَهٗ : عَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا ، وَهُوَ مُقِرٌّ لَا يُنْكِرُ ، وَهُوَ مُشْفِقٌ مِنْ كِبَارِهَا فَيُقَالُ : اَعْطُوْهُ مَكَانَ كُلِّ سَيِّئَةٍ عَمِلَهَا حَسَنَةً ، فَيَقُوْلُ : اِنَّ لِيْ ذُنُوْبًا مَا اَرَاهَا هَهُنَا، قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ : فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ضَحِكَ حَتّٰى بَدَتْ نَوَاجِذُهٗ
১৭০. আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আমি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিকে ভালোভাবে জানি। আর যে ব্যক্তি সর্বশেষ জাহান্নাম হতে নাজাত পাবে, তাকেও জানি। কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে (আল্লাহর নিকট উপস্থিত করে) বলা হবে, এর সগীরা গুনাহগুলো উপস্থাপন করো এবং কবীরা গুনাহগুলো গোপন করে রাখো। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি অমুক অমুক দিনে এই এই গুনাহ করেছ। তখন সে ব্যক্তি সবগুলো স্বীকার করবে এবং একটিও অস্বীকার করবে না। এরপর সে তার কবীরা গুনাহসমূহ সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তখন ঘোষণা দেয়া হবে যে, তার প্রতিটি মন্দ কাজের বিনিময়ে একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করো। এরপর সে বলবে, নিশ্চয় এখনও আমার অনেক গুনাহ বাকী আছে, যা দেখতে পাচ্ছি না। আবু যর (রাঃ) বলেন, তখন আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ মুচকি হাসছেন; এমনকি তাঁর সাদা দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছিল। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪৩০; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৯৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩৬০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩০৫২।]
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : مَا حَجَبَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ مُنْذُ اَسْلَمْتُ وَلَا رَاٰنِيْ اِلَّا ضَحِكَ
১৭১. জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ইসলাম গ্রহণের পর হতে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে (তাঁর কাছে আসতে) বাধা দেননি। আর আমাকে দেখা মাত্রই তিনি হাসতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩০৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৫১৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯১৯৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭২০০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৪৯।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنِّيْ لَاَعْرِفُ اٰخِرَ اَهْلِ النَّارِ خُرُوْجًا ، رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنْهَا زَحْفًا ، فَيُقَالُ لَهٗ : اِنْطَلِقْ فَادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ : فَيَذْهَبُ لِيَدْخُلَ الْجَنَّةَ ، فَيَجِدُ النَّاسَ قَدْ اَخَذُوْا الْمَنَازِلَ ، فَيَرْجِعُ فَيَقُوْلُ : يَا رَبِّ ، قَدْ اَخَذَ النَّاسُ الْمَنَازِلَ ، فَيُقَالُ لَهٗ : اَتَذْكُرُ الزَّمَانَ الَّذِي كُنْتَ فِيْهِ ، فَيَقُوْلُ : نَعَمْ قَالَ : فَيُقَالُ لَهٗ : تَمَنَّ قَالَ : فَيَتَمَنّٰى ، فَيُقَالُ لَهٗ : فَاِنَّ لَكَ الَّذِيْ تَمَنَّيْتَ وَعَشَرَةَ اَضْعَافِ الدُّنْيَا " قَالَ : فَيَقُوْلُ : تَسْخَرُ بِيْ وَاَنْتَ الْمَلِكُ قَالَ : فَلَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ضَحِكَ حَتّٰى بَدَتْ نَوَاجِذُهٗ
১৭২. আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সর্বশেষে জাহান্নাম হতে নাজাত পেয়ে বের হয়ে আসবে, আমি তাঁকে চিনি। সে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম হতে বের হয়ে আসবে। এরপর তাকে বলা হবে, এসো। জান্নাতে প্রবেশ করো। ঘোষণা মুতাবিক সে (জান্নাতের দিকে) যাবে এবং সেখানে প্রবেশ করে দেখতে পাবে কোথাও ঠাঁই নাই। লোকেরা সকল স্থান অধিকার করে আছে। অতঃপর সে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক! লোকেরা তো সব স্থানই দখল করে আছে। তখন তাকে বলা হবে, তোমার সে কালের (দুনিয়ার) কথা স্মরণ আছে কি, যেখানে তুমি অবস্থান করেছিলে? সে বলবে, জি-হ্যাঁ। সবই আমার মনে পড়ে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তাকে বলা হবে, তোমার মনে যা চায়, তা আকাঙ্ক্ষা করো। তিনি বলেন, তখন সে আকাঙ্ক্ষা করবে। এরপর তাকে বলা হবে, তুমি যে ইচ্ছা পোষণ করলে তাই তোমার জন্য মঞ্জুর করা হলো এবং তোমাকে দশ দুনিয়ার সমান দেয়া হবে। তিনি বলেন, তখন সে বলবে, আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি আমার মালিক সারা জাহানের সম্রাট! তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এমতাবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মুচকি হাসি দিতে দেখলাম, এমনকি তাঁর দাঁত দেখা যাচ্ছিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮০; ইবনে হিববান, হা/৭৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৫৯৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩৫৬।]
عَنْ عَلِيِّ بْنِ رَبِيْعَةَ قَالَ : شَهِدْتُ عَلِيًّا ، أُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهٗ فِي الرِّكَابِ قَالَ : بِسْمِ اللهِ ، فَلَمَّا اسْتَوٰى عَلٰى ظَهْرِهَا قَالَ : الْحَمْدُ لِلّٰهِ ، ثُمَّ قَالَ : ﴿سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ ، وَاِنَّا اِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ﴾ ثُمَّ قَالَ : الْحَمْدُ لِلّٰهِ ثَلَاثًا ، وَاللهُ اَكْبَرُ ثَلَاثًا ، سُبْحَانَكَ اِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ، فَاغْفِرْ لِيْ فَاِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ ، ثُمَّ ضَحِكَ . فَقُلْتُ لَهٗ : مِنْ اَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ يَا اَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ ؟ قَالَ : رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَنَعَ كَمَا صَنَعْتُ ثُمَّ ضَحِكَ فَقُلْتُ : مِنْ اَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ : اِنَّ رَبَّكَ لَيَعْجَبُ مِنْ عَبْدِهٖ اِذَا قَالَ : رَبِّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي ، اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ غَيْرُكَ
১৭৩. আলী ইবনে রবী‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আলী (রাঃ) এর সামনে উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর কাছে একটি জানোয়ারকে আরোহণের জন্য আনা হলো। যখন তিনি সে পশুটির পাদানীতে পা রাখলেন এবং বললেন, ‘‘বিসমিল্লা-হ’’। অতঃপর জানোয়ারের পিঠে যখন সোজা হয়ে বসলেন তখন বললেন, ‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হ’’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর) অতঃপর বললেন :
﴿سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِيْنَ ، وَاِنَّا اِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ﴾
‘‘সুব্হা-নাল্লাযী সাখ্খারা লানা- হা-যা- ওয়ামা- কুন্না- লাহূ মুক্বরিনীন, ওয়া ইন্না- ইলা- রবিবনা- লামুনক্বলিবূন’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! মহান সত্তার পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, যিনি আমাদের জন্য একে বশীভূত করেছেন। আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম নই। বস্তুত আমরা তার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। [সূরা যুখরুফ- ১৪।]
এরপর তিনি ৩ বার ‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হ’’ এবং ৩ বার ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ পাঠ করলেন। এরপর এ দু‘আ পড়লেন :
سُبْحَانَكَ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ، فَاغْفِرْ لِيْ فَاِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ
‘‘সুব্হা-নাকা ইন্নী যলামতু নাফ্সী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্তা।’’
অর্থাৎ আল্লাহ পবিত্র! নিশ্চয় আমি আমার নিজের উপর সীমালঙ্ঘন করেছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই।
এরপর তিনি হাসলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমীরুল মু’মিনীন! আপনার হাসি পেল? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺকে এমনভাবে দেখেছি যেভাবে আমি এইমাত্র কথা ও কাজ সম্পন্ন করলাম। এরপর তিনি মুচকি হাসি দিলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন জিনিস আপনাকে হাসাল? তিনি বললেন, তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দার এ কথা খুবই পছন্দ করেন যখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও, এ বিশ্বাস রেখে যে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৩; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৩৪; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৮৭৪৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৪৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৯৮।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ مِزَاحِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ আনাস (রাঃ) এর সাথে কৌতুক করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لَهٗ : يَا ذَا الْأُذُنَيْنِ . قَالَ مَحْمُوْدٌ : قَالَ اَبُو أُسَامَةَ : يَعْنِي يُمَازِحُهٗ
১৭৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী ﷺ তাকে সম্বোধন করে (কৌতুকচ্ছলে) বলেছিলেন, ‘হে দু’কানবিশিষ্ট!’। মাহমূদ (রহঃ) বলেন, আবু উসামা (রহঃ) এর অর্থ করেছেন- ‘‘তিনি তার সাথে কৌতুক করেছেন’’। [আবু দাউদ, হা/৫০০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৮৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৬৬১; জমেউস সগীর, হা/১৩৮৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০৬।]
আনাস (রাঃ) এর ছোট ভাইয়ের সাথে কৌতুক করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : اِنْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيُخَالِطُنَا حَتّٰى يَقُوْلَ لِاَخٍ لِي صَغِيْرٍ : يَا اَبَا عُمَيْرٍ ، مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ ؟
قَالَ اَبُو عِيْسٰى : وَفِقْهُ هٰذَا الْحَدِيْثِ اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُمَازِحُ وَفِيْهِ اَنَّهٗ كَنّٰى غُلَامًا صَغِيْرًا فَقَالَ لَهٗ : يَا اَبَا عُمَيْرٍ . وَفِيْهِ اَنَّهٗ لَا بَأْسَ اَنْ يُعْطَى الصَّبِيُّ الطَّيْرَ لِيَلْعَبَ بِهٖ . وَاِنَّمَا قَالَ لَهُ النَّبِيُّ : يَا اَبَا عُمَيْرٍ ، مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ ؟ لِاَنَّهٗ كَانَ لَهٗ نُغَيْرٌ يَلْعَبُ بِهٖ فَمَاتَ ، فَحَزِنَ الْغُلَامُ عَلَيْهِ فَمَازَحَهُ النَّبِيُّ : يَا اَبَا عُمَيْرٍ ، مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ ؟
১৭৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাদের সাথে কৌতুক করতেন। এমনকি একবার তিনি আমার ছোট ভাইকে (কৌতুক করে) বললেন, হে আবু উমায়ের! কী হলো নুগায়ের? [সহীহ বুখারী, হা/৬১২৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৪৭; আবু দাউদ, হা/৪৯৭১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৫৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৯; আদাবুল মুফরাদ, হা/৮৪৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৭৮৮।]
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসে অনুধাবনযোগ্য বিষয় হলো, আনাস (রাঃ) এর ছোট ভাইয়ের নুগায়ের নামে একটি পাখি ছিল, যা নিয়ে সে খেলা করত। পাখিটি মরে গেল। এতে সে দুঃখিত হলো। তখন নবী ﷺ তার সাথে কৌতুক করলেন এবং বললেন, ওহে আবু উমায়ের! কী হলো তোমার নুগায়ের? এতে বুঝা গেল যে, ছোট বাচ্চাদের পাখি নিয়ে খেলতে বাধা নেই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বাস্তবসম্মত কৌতুক করতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّكَ تُدَاعِبُنَا قَالَ : اِنِّي لَا اَقُوْلُ اِلَا حَقًّا
১৭৬. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের সাথে কৌতুক করছেন? তিনি বললেন, আমি কৌতুকচ্ছলে কখনো সত্য ছাড়া কিছু বলি না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭০৮; মুসানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১৭০৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৬৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০২; মু‘জামুল আওসাত, হা/৮৭০৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৭২৬।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَجُلًا اسْتَحْمَلَ رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ : اِنِّيْ حَامِلُكَ عَلٰى وَلَدِ نَاقَةٍ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، مَا اَصْنَعُ بِوَلَدِ النَّاقَةِ ؟ فَقَالَ : وَهَلْ تَلِدُ الْاِبِلَ اِلَّا النُّوْقُ
১৭৭. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট একটি বাহন চেয়েছিল, তিনি বললেন, আমি তোমাকে একটি উটনীর বাচ্চা দিচ্ছি। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, উটমাত্রই তো কোন না কোন উটনীর বাচ্চা। [আবু দাউদ, হা/৫০০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৪৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৬৮; বায়হাকী, হা/২০৯৫৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০৫।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَجُلًا مِنْ اَهْلِ الْبَادِيَةِ كَانَ اسْمُهٗ زَاهِرًا وَكَانَ يُهْدِيْ اِلَى النَّبِيِّ هَدِيَّةً مِنَ الْبَادِيَةِ ، فَيُجَهِّزُهُ النَّبِيُّ اِذَا اَرَادَ اَنْ يَخْرُجَ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : اِنَّ زَاهِرًا بَادِيَتُنَا وَنَحْنُ حَاضِرُوْهُ وَكَانَ يُحِبُّهٗ وَكَانَ رَجُلًا دَمِيْمًا فَاَتَاهُ النَّبِيُّ يَوْمًا وَهُوَ يَبِيْعُ مَتَاعَهٗ فَاحْتَضَنَهٗ مِنْ خَلْفِهٖ وَهُوَ لَا يُبْصِرُهٗ ، فَقَالَ : مَنْ هٰذَا ؟ اَرْسِلْنِي . فَالْتَفَتَ فَعَرَفَ النَّبِيُّ فَجَعَلَ لَا يَأْلُوْ مَا اَلْصَقَ ظَهْرَهٗ بِصَدْرِ النَّبِيِّ حِينَ عَرَفَهٗ ، فَجَعَلَ النَّبِيُّ يَقُوْلُ : مَنْ يَشْتَرِي هٰذَا الْعَبْدَ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِذًا وَاللهِ تَجِدُنِي كَاسِدًا ، فَقَالَ النَّبِيُّ : لٰكِنْ عِنْدَ اللهِ لَسْتَ بِكَاسِدٍ اَوْ قَالَ : اَنتَ عِنْدَ اللهِ غَالٍ
১৭৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। যাহির (ইবনে হিযাম আশজায়ী বদরী) নামে এক বেদুঈন প্রায়ই নবী ﷺ কে হাদিয়া দিত। যখন সে চলে যেতে উদ্যত হতো তখন নবী ﷺ বলতেন, যাহির আমাদের পল্লিবন্ধু, আমরা তার শহুরে বন্ধু। সে কদাকার হলেও নবী ﷺ তাকে ভালোবাসতেন। একবার সে বেচাকেনা করছিল আর নবী ﷺ তার অলক্ষ্যে পেছন দিক থেকে ধরে ফেললেন। তারপর সে বলল, কে? আমাকে ছেড়ে দাও! দৃষ্টিপাত করতেই সে নবী ﷺ কে দেখে তার পিঠ আরো নবী ﷺ এর বুকের সাথে মিলালো। এরপর নবী ﷺ বললেন, এ গোলামটিকে কে ক্রয় করবে?
যাহির বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বিক্রি করে কেবল অচল মুদ্রাই পাবেন। এরপর তিনি বললেন, কিন্তু তুমি আল্লাহর নিকট অচল নও। অথবা তিনি বলেছেন, আল্লাহর নিকট তোমার উচ্চমর্যাদা রয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৬৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৭৯০; বায়হাকী, হা/২০৯৬১; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৯২২।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ পেছন থেকে এসে যাহের (রাঃ) কে জড়িয়ে ধরা ছিল রসিকতা। যাহের (রাঃ) কে গোলাম আখ্যায়িত করাও ছিল এক ধরনের কৌতুক। কারণ তিনি গোলাম ছিলেন না। রাসূলুল্লাহ ﷺ মজা করার জন্য গোলাম বলেছেন।
عَنِ الْحَسَنِ قَالَ : اَتَتْ عَجُوْزٌ اِلَى النَّبِيِّ ، فَقَالَتْ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اُدْعُ اللهَ اَنْ يُدْخِلَنِي الْجَنَّةَ ، فَقَالَ : يَا أُمَّ فُلَانٍ ، اِنَّ الْجَنَّةَ لَا تَدْخُلُهَا عَجُوْزٌ قَالَ : فَوَلَّتْ تَبْكِيْ فَقَالَ : اَخْبِرُوْهَا اَنَّهَا لَا تَدْخُلُهَا وَهِيَ عَجُوْزٌ اِنَّ اللهَ تَعَالٰى يَقُوْلُ : ﴿اِنَّا اَنْشَأْنَاهُنَّ اِنْشَاءً فَجَعَلْنَاهُنَّ اَبْكَارًا عُرُبًا اَتْرَابًا﴾
১৭৯. হাসান (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার এক বৃদ্ধা মহিলা নবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন যেন আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বললেন, ওহে! কোন বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, (তা শুনে) সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। নবী ﷺ বললেন, তাকে এ মর্মে খবর দাও যে, তুমি বৃদ্ধাবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘‘আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি। আর তাদেরকে করেছি কুমারী- (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৩৬)। [সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৯৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০৬।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ كَلَامِ رَسُوْلِ اللهِ فِي الشِّعْرِ
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لَهٗ : يَا ذَا الْأُذُنَيْنِ . قَالَ مَحْمُوْدٌ : قَالَ اَبُو أُسَامَةَ : يَعْنِي يُمَازِحُهٗ
১৭৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী ﷺ তাকে সম্বোধন করে (কৌতুকচ্ছলে) বলেছিলেন, ‘হে দু’কানবিশিষ্ট!’। মাহমূদ (রহঃ) বলেন, আবু উসামা (রহঃ) এর অর্থ করেছেন- ‘‘তিনি তার সাথে কৌতুক করেছেন’’। [আবু দাউদ, হা/৫০০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৮৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৬৬১; জমেউস সগীর, হা/১৩৮৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০৬।]
আনাস (রাঃ) এর ছোট ভাইয়ের সাথে কৌতুক করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : اِنْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيُخَالِطُنَا حَتّٰى يَقُوْلَ لِاَخٍ لِي صَغِيْرٍ : يَا اَبَا عُمَيْرٍ ، مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ ؟
قَالَ اَبُو عِيْسٰى : وَفِقْهُ هٰذَا الْحَدِيْثِ اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُمَازِحُ وَفِيْهِ اَنَّهٗ كَنّٰى غُلَامًا صَغِيْرًا فَقَالَ لَهٗ : يَا اَبَا عُمَيْرٍ . وَفِيْهِ اَنَّهٗ لَا بَأْسَ اَنْ يُعْطَى الصَّبِيُّ الطَّيْرَ لِيَلْعَبَ بِهٖ . وَاِنَّمَا قَالَ لَهُ النَّبِيُّ : يَا اَبَا عُمَيْرٍ ، مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ ؟ لِاَنَّهٗ كَانَ لَهٗ نُغَيْرٌ يَلْعَبُ بِهٖ فَمَاتَ ، فَحَزِنَ الْغُلَامُ عَلَيْهِ فَمَازَحَهُ النَّبِيُّ : يَا اَبَا عُمَيْرٍ ، مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ ؟
১৭৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাদের সাথে কৌতুক করতেন। এমনকি একবার তিনি আমার ছোট ভাইকে (কৌতুক করে) বললেন, হে আবু উমায়ের! কী হলো নুগায়ের? [সহীহ বুখারী, হা/৬১২৯; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৪৭; আবু দাউদ, হা/৪৯৭১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৫৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৯; আদাবুল মুফরাদ, হা/৮৪৭; জামেউস সগীর, হা/১৩৭৮৮।]
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসে অনুধাবনযোগ্য বিষয় হলো, আনাস (রাঃ) এর ছোট ভাইয়ের নুগায়ের নামে একটি পাখি ছিল, যা নিয়ে সে খেলা করত। পাখিটি মরে গেল। এতে সে দুঃখিত হলো। তখন নবী ﷺ তার সাথে কৌতুক করলেন এবং বললেন, ওহে আবু উমায়ের! কী হলো তোমার নুগায়ের? এতে বুঝা গেল যে, ছোট বাচ্চাদের পাখি নিয়ে খেলতে বাধা নেই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বাস্তবসম্মত কৌতুক করতেন :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّكَ تُدَاعِبُنَا قَالَ : اِنِّي لَا اَقُوْلُ اِلَا حَقًّا
১৭৬. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের সাথে কৌতুক করছেন? তিনি বললেন, আমি কৌতুকচ্ছলে কখনো সত্য ছাড়া কিছু বলি না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭০৮; মুসানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১৭০৫; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৬৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০২; মু‘জামুল আওসাত, হা/৮৭০৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৭২৬।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَجُلًا اسْتَحْمَلَ رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ : اِنِّيْ حَامِلُكَ عَلٰى وَلَدِ نَاقَةٍ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، مَا اَصْنَعُ بِوَلَدِ النَّاقَةِ ؟ فَقَالَ : وَهَلْ تَلِدُ الْاِبِلَ اِلَّا النُّوْقُ
১৭৭. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট একটি বাহন চেয়েছিল, তিনি বললেন, আমি তোমাকে একটি উটনীর বাচ্চা দিচ্ছি। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, উটমাত্রই তো কোন না কোন উটনীর বাচ্চা। [আবু দাউদ, হা/৫০০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৪৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৬৮; বায়হাকী, হা/২০৯৫৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০৫।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَجُلًا مِنْ اَهْلِ الْبَادِيَةِ كَانَ اسْمُهٗ زَاهِرًا وَكَانَ يُهْدِيْ اِلَى النَّبِيِّ هَدِيَّةً مِنَ الْبَادِيَةِ ، فَيُجَهِّزُهُ النَّبِيُّ اِذَا اَرَادَ اَنْ يَخْرُجَ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : اِنَّ زَاهِرًا بَادِيَتُنَا وَنَحْنُ حَاضِرُوْهُ وَكَانَ يُحِبُّهٗ وَكَانَ رَجُلًا دَمِيْمًا فَاَتَاهُ النَّبِيُّ يَوْمًا وَهُوَ يَبِيْعُ مَتَاعَهٗ فَاحْتَضَنَهٗ مِنْ خَلْفِهٖ وَهُوَ لَا يُبْصِرُهٗ ، فَقَالَ : مَنْ هٰذَا ؟ اَرْسِلْنِي . فَالْتَفَتَ فَعَرَفَ النَّبِيُّ فَجَعَلَ لَا يَأْلُوْ مَا اَلْصَقَ ظَهْرَهٗ بِصَدْرِ النَّبِيِّ حِينَ عَرَفَهٗ ، فَجَعَلَ النَّبِيُّ يَقُوْلُ : مَنْ يَشْتَرِي هٰذَا الْعَبْدَ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِذًا وَاللهِ تَجِدُنِي كَاسِدًا ، فَقَالَ النَّبِيُّ : لٰكِنْ عِنْدَ اللهِ لَسْتَ بِكَاسِدٍ اَوْ قَالَ : اَنتَ عِنْدَ اللهِ غَالٍ
১৭৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। যাহির (ইবনে হিযাম আশজায়ী বদরী) নামে এক বেদুঈন প্রায়ই নবী ﷺ কে হাদিয়া দিত। যখন সে চলে যেতে উদ্যত হতো তখন নবী ﷺ বলতেন, যাহির আমাদের পল্লিবন্ধু, আমরা তার শহুরে বন্ধু। সে কদাকার হলেও নবী ﷺ তাকে ভালোবাসতেন। একবার সে বেচাকেনা করছিল আর নবী ﷺ তার অলক্ষ্যে পেছন দিক থেকে ধরে ফেললেন। তারপর সে বলল, কে? আমাকে ছেড়ে দাও! দৃষ্টিপাত করতেই সে নবী ﷺ কে দেখে তার পিঠ আরো নবী ﷺ এর বুকের সাথে মিলালো। এরপর নবী ﷺ বললেন, এ গোলামটিকে কে ক্রয় করবে?
যাহির বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বিক্রি করে কেবল অচল মুদ্রাই পাবেন। এরপর তিনি বললেন, কিন্তু তুমি আল্লাহর নিকট অচল নও। অথবা তিনি বলেছেন, আল্লাহর নিকট তোমার উচ্চমর্যাদা রয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৬৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৭৯০; বায়হাকী, হা/২০৯৬১; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৯২২।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ পেছন থেকে এসে যাহের (রাঃ) কে জড়িয়ে ধরা ছিল রসিকতা। যাহের (রাঃ) কে গোলাম আখ্যায়িত করাও ছিল এক ধরনের কৌতুক। কারণ তিনি গোলাম ছিলেন না। রাসূলুল্লাহ ﷺ মজা করার জন্য গোলাম বলেছেন।
عَنِ الْحَسَنِ قَالَ : اَتَتْ عَجُوْزٌ اِلَى النَّبِيِّ ، فَقَالَتْ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اُدْعُ اللهَ اَنْ يُدْخِلَنِي الْجَنَّةَ ، فَقَالَ : يَا أُمَّ فُلَانٍ ، اِنَّ الْجَنَّةَ لَا تَدْخُلُهَا عَجُوْزٌ قَالَ : فَوَلَّتْ تَبْكِيْ فَقَالَ : اَخْبِرُوْهَا اَنَّهَا لَا تَدْخُلُهَا وَهِيَ عَجُوْزٌ اِنَّ اللهَ تَعَالٰى يَقُوْلُ : ﴿اِنَّا اَنْشَأْنَاهُنَّ اِنْشَاءً فَجَعَلْنَاهُنَّ اَبْكَارًا عُرُبًا اَتْرَابًا﴾
১৭৯. হাসান (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার এক বৃদ্ধা মহিলা নবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন যেন আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বললেন, ওহে! কোন বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, (তা শুনে) সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। নবী ﷺ বললেন, তাকে এ মর্মে খবর দাও যে, তুমি বৃদ্ধাবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘‘আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি। আর তাদেরকে করেছি কুমারী- (সূরা ওয়াক্বিয়া- ৩৬)। [সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৯৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬০৬।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي صِفَةِ كَلَامِ رَسُوْلِ اللهِ فِي الشِّعْرِ
বিভিন্ন হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কোন কবির কবিতার অংশ বিশেষ আবৃত্তি করেছেন। কিন্তু তিনি কখনো নিজে কোন কবিতা রচনা করেননি। তবে মাঝে মধ্যে তাঁর কোন কোন কথা ছন্দযুক্ত হয়েছে।
বিষয়বস্তুর আলোকে কখনো কবিদের নিন্দা করা হয়েছে আবার কখনো প্রশংসা করা হয়েছে। এটা নির্ভর করে সৃজনতার উপর। যে মন্দভাবে রচনা করবে সেটা অবশ্যই নিন্দাযোগ্য। তবে লক্ষণীয় হলো অধিকাংশ কবি আল্লাহর যিক্র থেকে গাফিল থাকে।
নবী ﷺ ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قِيْلَ لَهَا : هَلْ كَانَ النَّبِيُّ يَتَمَثَّلُ بِشَيْءٍ مِنَ الشِّعْرِ ؟ قَالَتْ : كَانَ يَتَمَثَّلُ بِشِعْرِ ابْنِ رَوَاحَةَ ، وَيَتَمَثَّلُ بِقَوْلِهٖ : وَيَأْتِيْكَ بِالْاَخْبَارِ مَنْ لَمْ تُزَوَّدِ
১৮০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কাব্যের ছন্দে কথাবার্তা বলেন কিনা সে ব্যাপারে তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, নবী ﷺ ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতেন। আবার কখনো বলতেন-
وَيَأْتِيْكَ بِالْاَخْبَارِ مَنْ لَمْ تُزَوَّدِ
অর্থাৎ তোমার কাছে এমন ব্যক্তি সুসংবাদ নিয়ে আসেন, যাকে তুমি মজুরী দাও না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৭৬৯; আদাবুল মুফরাদ, হা/৮৬৭; বায়হাকী, হা/২০৯০৩।]
একবার আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে গেলে এ কবিতা পাঠ করেছিলেন :
عَنْ جُنْدُبِ بْنِ سُفْيَانَ الْبَجَلِيِّ قَالَ : اَصَابَ حَجَرٌ أُصْبُعَ رَسُوْلِ اللهِ فَدَمِيَتْ ، فَقَالَ : هَلْ اَنْتِ اِلَّا أُصْبُعٌ دَمِيْتِ ، وَفِي سَبِيْلِ اللهِ مَا لَقِيْتِ
১৮১. জুনদুব ইবনে সুফিয়ান আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) প্রস্তারাঘাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে যায়। তখন তিনি বলেন,
هَلْ اَنْتِ اِلَّا أُصْبُعٌ دَمِيْتِ ، وَفِي سَبِيْلِ اللهِ مَا لَقِيْتِ
অর্থাৎ তুমি একটি আঙ্গুল যার রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, তাও আল্লাহর রাস্তায়, যার প্রতিদান পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪৭৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮১৯; জমেউস সগীর, হা/১২৯৭৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ হাওয়াযিন গোত্রের সাথে যুদ্ধের সময় কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : قَالَ لَهٗ رَجُلٌ : اَفَرَرْتُمْ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ يَا اَبَا عُمَارَةَ ؟ فَقَالَ : لَا وَاللهِ مَا وَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ ، وَلٰكِنْ وَلّٰى سَرَعَانُ النَّاسِ تَلَقَّتْهُمْ هَوَازِنُ بِالنَّبْلِ وَ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى بَغْلَتِهٖ ، وَاَبُوْ سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ اٰخِذٌ بِلِجَامِهَا و َرَسُولُ اللهِ يَقُوْلُ : اَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ ، اَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ
১৮২. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি নবী ﷺ কে রণক্ষেত্রে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, না- নবী ﷺ কখনো পালিয়ে যাননি। বরং দলের কিছুসংখ্যক তাড়াহুড়াপ্রবণ লোক হাওয়াযিনের তীরের আঘাতে টিকতে না পেরে পিছু হটে এসেছিল। (বেশিরভাগ ছিল বনু সুলায়ম-এর লোক এবং মক্কার নও মুসলিম) তখন নবী ﷺ স্বীয় খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন। আর লাগাম ছিল আবু সুফ্ইয়ানের হাতে। তখন নবী ﷺ আবৃত্তি করছিলেন-
اَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ ، اَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ
অর্থাৎ আমি মিথ্যা নবী নই, আমি আব্দুল মুত্ত্বালিবের (বীর) সন্তান। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৭৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪৭১৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৭৭০; জামেউস সগীর, হা/২৩৩১।]
ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) নবী ﷺ এর সামনে কবিতা আবৃত্তি করতেন :
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ النَّبِيَّ دَخَلَ مَكَّةَ فِي عُمْرَةِ الْقَضَاءِ ، وَابْنُ رَوَاحَةَ يَمْشِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ ، وَهُوَ يَقُوْلُ :
خَلُّوْا بَنِي الْكُفَّارِ عَنْ سَبِيْلِهِ الْيَوْمَ نَضْرِبُكُمْ عَلٰى تَنْزِيْلِهْ
ضَرْبًا يُزِيْلُ الْهَامَ عَنْ مَقِيْلِهْ وَيُذْهِلُ الْخَلِيْلَ عَنْ خَلِيلِهْ
فَقَالَ لَهٗ عُمَرُ : يَا ابْنَ رَوَاحَةَ ، بَيْنَ يَدَيْ رَسُوْلِ اللهِ وَفِي حَرَمِ اللهِ تَقُوْلُ الشِّعْرَ ، فَقَالَ : خَلِّ عَنْهُ يَا عُمَرُ ، فَلَهِيَ اَسْرَعُ فِيْهِمْ مِنْ نَضْحِ النَّبْلِ
১৮৩. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ যখন উমরাতুল কাযা পালনের উদ্দেশে মক্কায় প্রবেশ করেন তখন ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) তাঁর সামনে চলছেন এবং বলছেন :
خَلُّوْا بَنِي الْكُفَّارِ عَنْ سَبِيْلِهِ الْيَوْمَ نَضْرِبُكُمْ عَلٰى تَنْزِيْلِهْ
ضَرْبًا يُزِيْلُ الْهَامَ عَنْ مَقِيْلِهْ وَيُذْهِلُ الْخَلِيْلَ عَنْ خَلِيلِهْ
অর্থাৎ হে কাফির সন্তানরা! তাঁর চলার পথ ছেড়ে দাও। আজ তাঁকে বাধা দিলে তোমাদেরকে এমন শায়েস্তা করব যে, কাঁধ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং বন্ধুর কথা ভুলে যাবে।
উমর (রাঃ) তাকে বললেন, ইবনে রওয়াহা! আল্লাহর হারামে এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সম্মুখে কবিতা আবৃত্তি করছ? নবী ﷺ বললেন, উমর! তাকে বলতে দাও। কারণ, তার কবিতা ওদের জন্য তীরের আঘাতের চেয়েও অধিক কার্যকর। [সুনানে নাসাঈ, হা/২৮৭৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০৪।]
সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে কবিতা আবৃত্তি করতেন :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : جَالَسْتُ النَّبِيَّ اَكْثَرَ مِنْ مِائَةِ مَرَّةٍ وَكَانَ اَصْحَابُهٗ يَتَنَاشَدُوْنَ الشِّعْرَ وَيَتَذَاكَرُوْنَ اَشْيَاءَ مِنْ اَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ وَهُوَ سَاكِتٌ وَرُبَّمَا تَبَسَّمَ مَعَهُمْ
১৮৪. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺএর মজলিসে শতাধিক বার বসেছি। আর তাতে তাঁর সাহাবীগণ কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং জাহেলি যুগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতেন। আর তিনি কখনো চুপ থাকতেন। আবার কখনো তাদের সাথে মুচকি হাসতেন। [ইবনে হিববান, হা/৫৭৮১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে শ্রেষ্ঠতম উদ্ধৃতি :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : اَشْعَرُ كَلِمَةٍ تَكَلَّمَتْ بِهَا الْعَرَبُ كَلِمَةُ لَبِيْدٍ : اَلَا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلَا اللهِ بَاطِلٌ
১৮৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আরব কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বাণী হচ্ছে লাবীদের এই চরণ :
اَلَا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلَا اللهَ بَاطِلٌ
অর্থাৎ সাবধান! আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০২৫; ইবনে হিববান, হা/৫৭৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০২৩৫; জামেউস সগীর, হা/১০০৬।]
ব্যাখ্যা : আরবের একজন সুবিখ্যাত কবি ছিলেন লাবীদ ইবনে রাবিয়া আল-আমিরী। তিনি তার গোত্রের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে ইসলাম কবুল করেন। ইসলাম কবুলের পর তিনি আর কবিতা রচনা করেননি। তিনি বলতেন, আমার জন্য কুরআনই যথেষ্ট।
লাবীদের এ উক্তিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ সবচেয়ে সত্য বলেছেন এজন্য যে, এটি কুরআনের নিচের আয়াতটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
﴿ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهٗ﴾
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই ধ্বংসশীল। [সূরা ফুরকান- ৮৮।]
নবী ﷺ অমুসলিম কবির কবিতাও শ্রবণ করতেন :
عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيْدِ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ فَاَنْشَدْتُهٗ مِائَةَ قَافِيَةٍ مِنْ قَوْلِ أُمَيَّةَ بْنِ اَبِي الصَّلْتِ الثَّقَفِيِّ ، كُلَّمَا اَنْشَدْتُهٗ بَيْتًا قَالَ لِيَ النَّبِيُّ : هِيْهِ حَتّٰى اَنْشَدْتُهٗ مِائَةً - يَعْنِي بَيْتًا - فَقَالَ النَّبِيُّ : اِنْ كَادَ لَيُسْلِمُ
১৮৬. আমর ইবনে শারীদ (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার আমি বাহনে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে বসা ছিলাম। তারপর আমি তাঁকে উমাইয়্যা ইবনে আবূ-সাল্ত বিরচিত একশ’ চরণ বিশিষ্ট একটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনালাম। কবিতা শেষ হলে তিনি আমাকে বললেন, আরো শোনাও। এরপর তিনি বললেন, সে ইসলাম গ্রহণের কাছাকাছি এসে গেছে। [সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১৫৬০; সহীহ মুসলিম, হা/৬০২২।]
ব্যাখ্যা : উমাইয়া ইবনে আবু সালত জাহিলী যুগের একজন স্বনামধন্য বিখ্যাত কবি ছিলেন। তাঁর কবিতাতে হক্ব ও সত্য কথা ফুটে উঠত। তিনি জাহেলী যুগেও ইবাদাত-বন্দেগী করতেন এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস রাখতেন। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিনি ইসলাম গ্রহণের দার প্রান্তে এসেছিলেন। তিনি ইসলামের যুগ পেয়েছিলেন; কিন্তু ইসলাম গ্রহণের তাওফীক হয়নি।
নবী ﷺ কবিতা আবৃত্তি করার উদ্দেশ্যে হাস্সান (রাঃ) [হাস্সান ইবনে সাবিত (রাঃ) ছিলেন বিখ্যাত একজিন সাহাবী কবি। তার উপাধি ছিল شَاعِرُ النَّبِيِ তথা নবী ﷺ এর কবি।] এর জন্য মসজিদে একটি মিম্বার তৈরি করেছিলেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَضَعُ لِحَسَّانَ بْنِ ثَابِتٍ مِنْبَرًا فِي الْمَسْجِدِ يَقُوْمُ عَلَيْهِ قَائِمًا يُفَاخِرُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - اَوْ قَالَ : يُنَافِحُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - وَيَقُوْلُ : اِنَّ اللهَ يُؤَيِّدُ حَسَّانَ بِرُوْحِ الْقُدُسِ مَا يُنَافِحُ اَوْ يُفَاخِرُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ
১৮৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ হাস্সান ইবেন সাবিত (রাঃ)-এর জন্য মসজিদে একটি মিম্বার স্থাপন করেছিলেন যেন তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রশংসার কবিতা পাঠ করেন অথবা তিনি বলেছেন, যেন তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ হতে কাফিরদের নিন্দাবাদের উত্তর দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ! রূহুল কুদ্স [জিবরীল (আঃ)] দ্বারা হাস্সানকে সাহায্য করেন যতক্ষণ সে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রশংসা করবে কিংবা কাফিরদের নিন্দার উত্তর দেবে। [আবু দাউদ, হা/৫০১৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৬০৫৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৫০১; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০৮; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৬৫৭।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي كَلَامِ رَسُوْلِ اللهِ فِي السَّمَرِ
বিষয়বস্তুর আলোকে কখনো কবিদের নিন্দা করা হয়েছে আবার কখনো প্রশংসা করা হয়েছে। এটা নির্ভর করে সৃজনতার উপর। যে মন্দভাবে রচনা করবে সেটা অবশ্যই নিন্দাযোগ্য। তবে লক্ষণীয় হলো অধিকাংশ কবি আল্লাহর যিক্র থেকে গাফিল থাকে।
নবী ﷺ ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قِيْلَ لَهَا : هَلْ كَانَ النَّبِيُّ يَتَمَثَّلُ بِشَيْءٍ مِنَ الشِّعْرِ ؟ قَالَتْ : كَانَ يَتَمَثَّلُ بِشِعْرِ ابْنِ رَوَاحَةَ ، وَيَتَمَثَّلُ بِقَوْلِهٖ : وَيَأْتِيْكَ بِالْاَخْبَارِ مَنْ لَمْ تُزَوَّدِ
১৮০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কাব্যের ছন্দে কথাবার্তা বলেন কিনা সে ব্যাপারে তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, নবী ﷺ ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতেন। আবার কখনো বলতেন-
وَيَأْتِيْكَ بِالْاَخْبَارِ مَنْ لَمْ تُزَوَّدِ
অর্থাৎ তোমার কাছে এমন ব্যক্তি সুসংবাদ নিয়ে আসেন, যাকে তুমি মজুরী দাও না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৭৬৯; আদাবুল মুফরাদ, হা/৮৬৭; বায়হাকী, হা/২০৯০৩।]
একবার আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে গেলে এ কবিতা পাঠ করেছিলেন :
عَنْ جُنْدُبِ بْنِ سُفْيَانَ الْبَجَلِيِّ قَالَ : اَصَابَ حَجَرٌ أُصْبُعَ رَسُوْلِ اللهِ فَدَمِيَتْ ، فَقَالَ : هَلْ اَنْتِ اِلَّا أُصْبُعٌ دَمِيْتِ ، وَفِي سَبِيْلِ اللهِ مَا لَقِيْتِ
১৮১. জুনদুব ইবনে সুফিয়ান আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) প্রস্তারাঘাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে যায়। তখন তিনি বলেন,
هَلْ اَنْتِ اِلَّا أُصْبُعٌ دَمِيْتِ ، وَفِي سَبِيْلِ اللهِ مَا لَقِيْتِ
অর্থাৎ তুমি একটি আঙ্গুল যার রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, তাও আল্লাহর রাস্তায়, যার প্রতিদান পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬১৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪৭৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮১৯; জমেউস সগীর, হা/১২৯৭৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ হাওয়াযিন গোত্রের সাথে যুদ্ধের সময় কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : قَالَ لَهٗ رَجُلٌ : اَفَرَرْتُمْ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ يَا اَبَا عُمَارَةَ ؟ فَقَالَ : لَا وَاللهِ مَا وَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ ، وَلٰكِنْ وَلّٰى سَرَعَانُ النَّاسِ تَلَقَّتْهُمْ هَوَازِنُ بِالنَّبْلِ وَ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى بَغْلَتِهٖ ، وَاَبُوْ سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ اٰخِذٌ بِلِجَامِهَا و َرَسُولُ اللهِ يَقُوْلُ : اَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ ، اَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ
১৮২. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি নবী ﷺ কে রণক্ষেত্রে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, না- নবী ﷺ কখনো পালিয়ে যাননি। বরং দলের কিছুসংখ্যক তাড়াহুড়াপ্রবণ লোক হাওয়াযিনের তীরের আঘাতে টিকতে না পেরে পিছু হটে এসেছিল। (বেশিরভাগ ছিল বনু সুলায়ম-এর লোক এবং মক্কার নও মুসলিম) তখন নবী ﷺ স্বীয় খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন। আর লাগাম ছিল আবু সুফ্ইয়ানের হাতে। তখন নবী ﷺ আবৃত্তি করছিলেন-
اَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ ، اَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ
অর্থাৎ আমি মিথ্যা নবী নই, আমি আব্দুল মুত্ত্বালিবের (বীর) সন্তান। [সহীহ বুখারী, হা/২৮৭৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪৭১৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৭৭০; জামেউস সগীর, হা/২৩৩১।]
ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) নবী ﷺ এর সামনে কবিতা আবৃত্তি করতেন :
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ النَّبِيَّ دَخَلَ مَكَّةَ فِي عُمْرَةِ الْقَضَاءِ ، وَابْنُ رَوَاحَةَ يَمْشِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ ، وَهُوَ يَقُوْلُ :
خَلُّوْا بَنِي الْكُفَّارِ عَنْ سَبِيْلِهِ الْيَوْمَ نَضْرِبُكُمْ عَلٰى تَنْزِيْلِهْ
ضَرْبًا يُزِيْلُ الْهَامَ عَنْ مَقِيْلِهْ وَيُذْهِلُ الْخَلِيْلَ عَنْ خَلِيلِهْ
فَقَالَ لَهٗ عُمَرُ : يَا ابْنَ رَوَاحَةَ ، بَيْنَ يَدَيْ رَسُوْلِ اللهِ وَفِي حَرَمِ اللهِ تَقُوْلُ الشِّعْرَ ، فَقَالَ : خَلِّ عَنْهُ يَا عُمَرُ ، فَلَهِيَ اَسْرَعُ فِيْهِمْ مِنْ نَضْحِ النَّبْلِ
১৮৩. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ যখন উমরাতুল কাযা পালনের উদ্দেশে মক্কায় প্রবেশ করেন তখন ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) তাঁর সামনে চলছেন এবং বলছেন :
خَلُّوْا بَنِي الْكُفَّارِ عَنْ سَبِيْلِهِ الْيَوْمَ نَضْرِبُكُمْ عَلٰى تَنْزِيْلِهْ
ضَرْبًا يُزِيْلُ الْهَامَ عَنْ مَقِيْلِهْ وَيُذْهِلُ الْخَلِيْلَ عَنْ خَلِيلِهْ
অর্থাৎ হে কাফির সন্তানরা! তাঁর চলার পথ ছেড়ে দাও। আজ তাঁকে বাধা দিলে তোমাদেরকে এমন শায়েস্তা করব যে, কাঁধ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং বন্ধুর কথা ভুলে যাবে।
উমর (রাঃ) তাকে বললেন, ইবনে রওয়াহা! আল্লাহর হারামে এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সম্মুখে কবিতা আবৃত্তি করছ? নবী ﷺ বললেন, উমর! তাকে বলতে দাও। কারণ, তার কবিতা ওদের জন্য তীরের আঘাতের চেয়েও অধিক কার্যকর। [সুনানে নাসাঈ, হা/২৮৭৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০৪।]
সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে কবিতা আবৃত্তি করতেন :
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : جَالَسْتُ النَّبِيَّ اَكْثَرَ مِنْ مِائَةِ مَرَّةٍ وَكَانَ اَصْحَابُهٗ يَتَنَاشَدُوْنَ الشِّعْرَ وَيَتَذَاكَرُوْنَ اَشْيَاءَ مِنْ اَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ وَهُوَ سَاكِتٌ وَرُبَّمَا تَبَسَّمَ مَعَهُمْ
১৮৪. জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺএর মজলিসে শতাধিক বার বসেছি। আর তাতে তাঁর সাহাবীগণ কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং জাহেলি যুগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতেন। আর তিনি কখনো চুপ থাকতেন। আবার কখনো তাদের সাথে মুচকি হাসতেন। [ইবনে হিববান, হা/৫৭৮১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে শ্রেষ্ঠতম উদ্ধৃতি :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : اَشْعَرُ كَلِمَةٍ تَكَلَّمَتْ بِهَا الْعَرَبُ كَلِمَةُ لَبِيْدٍ : اَلَا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلَا اللهِ بَاطِلٌ
১৮৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আরব কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বাণী হচ্ছে লাবীদের এই চরণ :
اَلَا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلَا اللهَ بَاطِلٌ
অর্থাৎ সাবধান! আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল। [সহীহ মুসলিম, হা/৬০২৫; ইবনে হিববান, হা/৫৭৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০২৩৫; জামেউস সগীর, হা/১০০৬।]
ব্যাখ্যা : আরবের একজন সুবিখ্যাত কবি ছিলেন লাবীদ ইবনে রাবিয়া আল-আমিরী। তিনি তার গোত্রের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে ইসলাম কবুল করেন। ইসলাম কবুলের পর তিনি আর কবিতা রচনা করেননি। তিনি বলতেন, আমার জন্য কুরআনই যথেষ্ট।
লাবীদের এ উক্তিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ সবচেয়ে সত্য বলেছেন এজন্য যে, এটি কুরআনের নিচের আয়াতটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
﴿ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهٗ﴾
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই ধ্বংসশীল। [সূরা ফুরকান- ৮৮।]
নবী ﷺ অমুসলিম কবির কবিতাও শ্রবণ করতেন :
عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيْدِ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ فَاَنْشَدْتُهٗ مِائَةَ قَافِيَةٍ مِنْ قَوْلِ أُمَيَّةَ بْنِ اَبِي الصَّلْتِ الثَّقَفِيِّ ، كُلَّمَا اَنْشَدْتُهٗ بَيْتًا قَالَ لِيَ النَّبِيُّ : هِيْهِ حَتّٰى اَنْشَدْتُهٗ مِائَةً - يَعْنِي بَيْتًا - فَقَالَ النَّبِيُّ : اِنْ كَادَ لَيُسْلِمُ
১৮৬. আমর ইবনে শারীদ (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার আমি বাহনে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে বসা ছিলাম। তারপর আমি তাঁকে উমাইয়্যা ইবনে আবূ-সাল্ত বিরচিত একশ’ চরণ বিশিষ্ট একটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনালাম। কবিতা শেষ হলে তিনি আমাকে বললেন, আরো শোনাও। এরপর তিনি বললেন, সে ইসলাম গ্রহণের কাছাকাছি এসে গেছে। [সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২১৫৬০; সহীহ মুসলিম, হা/৬০২২।]
ব্যাখ্যা : উমাইয়া ইবনে আবু সালত জাহিলী যুগের একজন স্বনামধন্য বিখ্যাত কবি ছিলেন। তাঁর কবিতাতে হক্ব ও সত্য কথা ফুটে উঠত। তিনি জাহেলী যুগেও ইবাদাত-বন্দেগী করতেন এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস রাখতেন। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিনি ইসলাম গ্রহণের দার প্রান্তে এসেছিলেন। তিনি ইসলামের যুগ পেয়েছিলেন; কিন্তু ইসলাম গ্রহণের তাওফীক হয়নি।
নবী ﷺ কবিতা আবৃত্তি করার উদ্দেশ্যে হাস্সান (রাঃ) [হাস্সান ইবনে সাবিত (রাঃ) ছিলেন বিখ্যাত একজিন সাহাবী কবি। তার উপাধি ছিল شَاعِرُ النَّبِيِ তথা নবী ﷺ এর কবি।] এর জন্য মসজিদে একটি মিম্বার তৈরি করেছিলেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَضَعُ لِحَسَّانَ بْنِ ثَابِتٍ مِنْبَرًا فِي الْمَسْجِدِ يَقُوْمُ عَلَيْهِ قَائِمًا يُفَاخِرُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - اَوْ قَالَ : يُنَافِحُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - وَيَقُوْلُ : اِنَّ اللهَ يُؤَيِّدُ حَسَّانَ بِرُوْحِ الْقُدُسِ مَا يُنَافِحُ اَوْ يُفَاخِرُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ
১৮৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ হাস্সান ইবেন সাবিত (রাঃ)-এর জন্য মসজিদে একটি মিম্বার স্থাপন করেছিলেন যেন তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রশংসার কবিতা পাঠ করেন অথবা তিনি বলেছেন, যেন তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ হতে কাফিরদের নিন্দাবাদের উত্তর দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ! রূহুল কুদ্স [জিবরীল (আঃ)] দ্বারা হাস্সানকে সাহায্য করেন যতক্ষণ সে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রশংসা করবে কিংবা কাফিরদের নিন্দার উত্তর দেবে। [আবু দাউদ, হা/৫০১৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৬০৫৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৫০১; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৪০৮; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৬৫৭।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي كَلَامِ رَسُوْلِ اللهِ فِي السَّمَرِ
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : جَلَسَتْ اِحْدٰى عَشْرَةَ امْرَاَةً فَتَعَاهَدْنَ وَتَعَاقَدْنَ اَنْ لَا يَكْتُمْنَ مِنْ اَخْبَارِ اَزْوَاجِهِنَّ شَيْئًا : فَقَالَتِ الْأُوْلٰى : زَوْجِي لَحْمُ جَمَلٍ غَثٍّ عَلٰى رَأْسِ جَبَلٍ وَعْرٍ ، لَا سَهْلٌ فَيُرْتَقٰى ، وَلَا سَمِيْنٌ فَيُنْتَقَلُ . قَالَتِ الثَّانِيَةُ : زَوْجِي لَا اَبُثُّ خَبَرَهٗ ، اِنِّيْ اَخَافُ اَنْ لَا اَذَرَهٗ ، اِنْ اَذْكُرْهُ اَذْكُرْ عُجَرَهٗ وَبُجَرَهٗ . قَالَتِ الثَّالِثَةُ : زَوْجِي الْعَشَنَّقُ ، اِنْ اَنْطِقْ أُطَلَّقْ ، وَاِنْ اَسْكُتْ أُعَلَّقْ . قَالَتِ الرَّابِعَةُ : زَوْجِيْ كَلَيْلِ تِهَامَةَ ، لَا حَرٌّ وَلَا قُرٌّ ، وَلَا مَخَافَةَ وَلَا سَاٰمَةَ . قَالَتِ الْخَامِسَةُ : زَوْجِيْ اِنْ دَخَلَ فَهِدَ ، وَاِنْ خَرَجَ اَسِدَ ، وَلَا يَسْاَلُ عَمَّا عَهِدَ . قَالَتِ السَّادِسَةُ : زَوْجِيْ اِنْ اَكَلَ لَفَّ ، وَاِنْ شَرِبَ اشْتَفَّ ، وَاِنِ اضْطَجَعَ التَّفَّ ، وَلَا يُولِجُ الْكَفَّ لِيَعْلَمَ الْبَثَّ . قَالَتِ السَّابِعَةُ : زَوْجِيْ عَيَايَاءُ اَوْ غَيَايَاءُ طَبَاقَاءُ كُلُّ دَاءٍ لَهٗ دَاءٌ ، شَجَّكِ اَوْ فَلَّكِ اَوْ جَمَعَ كُلًّا لَكِ . قَالَتِ الثَّامِنَةُ : زَوْجِيْ الْمَسُّ مَسُّ اَرْنَبٍ وَالرِّيْحُ رِيْحُ زَرْنَبٍ . قَالَتِ التَّاسِعَةُ : زَوْجِي رَفِيْعُ الْعِمَادِ طَوِيْلُ النِّجَادِ عَظِيْمُ الرَّمَادِ قَرِيْبُ الْبَيْتِ مِنَ النَّادِ . قَالَتِ الْعَاشِرَةُ : زَوْجِيْ مَالِكٌ وَمَا مَالِكٌ مَالِكٌ خَيْرٌ مِنْ ذٰلِكِ ، لَهٗ اِبِلٌ كَثِيْرَاتُ الْمَبَارِكِ ، قَلِيْلَاتُ الْمَسَارِحِ ، اِذَا سَمِعْنَ صَوْتَ الْمِزْهَرِ اَيْقَنَّ اَنَّهُنَّ هَوَالِكُ . قَالَتِ الْحَادِيَةَ عَشْرَةَ : زَوْجِيْ اَبُو زَرْعٍ وَمَا اَبُو زَرْعٍ ؟ اَنَاسَ مِنْ حُلِيٍّ أُذُنَيَّ ، وَمَلَا مِنْ شَحْمٍ عَضُدَيَّ ، وَبَجَّحَنِيْ فَبَجَحَتْ اِلَيَّ نَفْسِيْ ، وَجَدَنِيزْ فِيْ اَهْلِ غُنَيْمَةٍ بِشِقٍّ فَجَعَلَنِيْ فِيْ اَهْلِ صَهِيْلٍ وَاَطِيْطٍ وَدَائِسٍ وَمُنَقٍّ ، فَعِنْدَهٗ اَقُوْلُ فَلَا أُقَبَّحُ ، وَاَرْقُدُ فَاَتَصَبَّحُ وَاَشْرَبُ فَاَتَقَمَّحُ ، أُمُّ اَبِيْ زَرْعٍ فَمَا أُمُّ اَبِيْ زَرْعٍ ، عُكُوْمُهَا رَدَاحٌ ، وَبَيْتُهَا فَسَاحٌ ، ابْنُ اَبِيْ زَرْعٍ ، فَمَا ابْنُ اَبِيْ زَرْعٍ ، مَضْجَعُهٗ كَمَسَلِّ شَطْبَةٍ ، وَتُشْبِعُهٗ ذِرَاعُ الْجَفْرَةِ ، بِنْتُ اَبِيْ زَرْعٍ ، فَمَا بِنْتُ اَبِيْ زَرْعٍ ، طَوْعُ اَبِيْهَا وَطَوْعُ أُمِّهَا ، مِلْءُ كِسَائِهَا ، وَغَيْظُ جَارَتِهَا ، جَارِيَةُ اَبِيْ زَرْعٍ ، فَمَا جَارِيَةُ اَبِيْ زَرْعٍ ، لَا تَبُثُّ حَدِيْثَنَا تَبْثِيْثًا ، وَلَا تُنَقِّثُ مِيْرَتَنَا تَنْقِيْثًا ، وَلَا تَمْلَأُ بَيْتَنَا تَعْشِيْشًا ، قَالَتْ : خَرَجَ اَبُوْ زَرْعٍ وَالْاَوْطَابُ تُمْخَضُ ، فَلَقِيَ امْرَاَةً مَعَهَا وَلَدَانِ لَهَا كَالْفَهْدَيْنِ ، يَلْعَبَانِ مِنْ تَحْتِ خَصْرِهَا بِرُمَّانَتَيْنِ ، فَطَلَّقَنِيْ وَنَكَحَهَا ، فَنَكَحْتُ بَعْدَهٗ رَجُلًا سَرِيًّا ، رَكِبَ شَرِيًّا ، وَاَخَذَ خَطِّيًّا ، وَاَرَاحَ عَلَيَّ نَعَمًا ثَرِيًّا ، وَاَعْطَانِيْ مِنْ كُلِّ رَائِحَةٍ زَوْجًا ، وَقَالَ : كُلِيْ أُمَّ زَرْعٍ ، وَمِيْرِيْ اَهْلَكِ ، فَلَوْ جَمَعْتُ كُلَّ شَيْءٍ اَعْطَانِيْهِ ، مَا بَلَغَ اَصْغَرَ اٰنِيَةِ اَبِيْ زَرْعٍ . قَالَتْ عَائِشَةُ : فَقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ : كُنْتُ لَكِ كَاَبِيْ زَرْعٍ لِأُمِّ زَرْعٍ
১৮৮. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ১১ জন মহিলা এ মর্মে প্রতিশ্রুতিবব্ধ হলো যে, তারা তাদের নিজ নিজ স্বামী সম্পর্কে সব খুলে বলবে এবং কোন কিছুই গোপন করবে না।
প্রথম মহিলা বলল, আমার স্বামী অলস, অকর্মণ্য, দুর্বল উটের গোশততুল্য, তা আবার পর্বত চূড়ায় সংরক্ষিত; যা ধরাছোঁয়া দুঃসাধ্য। তার আচরণ রুক্ষ। ফলে তার কাছে যাওয়া যায় না। সে স্বাস্থ্যবানও নয়, আর তাকে ত্যাগও করতে পারছি না।
দ্বিতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী এমন যে, আমি আশংকা করছি, তার দোষত্রুটি বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না। আর আমি যদি বর্ণনা করে দেই, তাহলে কেবল দোষত্রুটিই বর্ণনা করব।
তৃতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী দীর্ঘদেহ বিশিষ্ট, দেখতে কদাকার। আমি কথা বললে (উত্তরে আসে) তালাক। আর নীরব থাকলে সে তো ঝুলন্ত রশি (অর্থাৎ কিছু চাইলে বদ মেজাজের সম্মুখীন হতে হয় এবং নীরব থাকলে হতে হয় বঞ্চিত)।
চতুর্থ মহিলা বলল, আমার স্বামী তিহামার রাত্রির ন্যায়- না (প্রচন্ড) গরম, আর না (প্রচন্ড) ঠান্ডা। তার থেকে কোন ভয়-ভীতি কিংবা অস্বস্তির কারণ নেই।
পঞ্চম মহিলা বলল, আমার স্বামী ঘরে এলে মনে হয় চিতাবাঘ আর বাইরে বের হলে সে হয় সাহসী সিংহ। বাড়িতে কি ঘটল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে না।
ষষ্ঠ মহিলা বলল, আমার স্বামী যখন খায়, তৃপ্তি ভরে খায়। আর পান করলে সব সাবাড় করে দেয় এবং কোন কিছু অবশিষ্ট রাখে না। আর যখন ঘুমাতে চায়, চাদর দেহে জড়িয়ে দেয়। আমার কোন বিপদাপদ আছে কি না তা হাত বাড়িয়েও দেখে না।
সপ্তম মহিলা বলল, আমার স্বামী অক্ষম, কথা বলতে পারে না, সব ধরনের রোগে আক্রান্ত। সে আমার মস্তক চূর্ণ করতে পারে অথবা মারধোর করে হাড়গোড় সব ভেঙ্গে দিতে পারে বা উভয়টিও করতে পারে।
অষ্টম মহিলা বলল, আমার স্বামীর পরশ খরগোশের ন্যায় কোমল। (তার ব্যবহৃত সুগন্ধি) জাফরানের সুগন্ধির ন্যায়।
নবম মহিলা বলল, আমার স্বামী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ত্ব। অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ, দীর্ঘ দেহবিশিষ্ট, তার বৈঠকখানা ঘরের নিকটবর্তী।
দশম মহিলা বলল, আমার স্বামী হলো আমার মালিক। মালিকের প্রশংসা কী আর করব (উপরে বর্ণিত সকলের প্রশংসা একত্র করলেও তার গুণ গেয়ে শেষ করা যাবে না)। তার রয়েছে অসংখ্য উট, অধিকাংশ সময় সেগুলো বাধাই থাকে। খুব কমই মাঠে চরানো হয়। এসব উট যখন বাদ্যের ঝংকার শোনে, তখন তারা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, তাদেরকে যবেহ করা হবে।
একাদশ মাহিলা উম্মে যার‘আ বলল, আমার স্বামী আবু যার‘আ। আবু যার‘আর কী আর প্রশংসা করব, সে তো অলংকার দিয়ে আমার দু’কান ভর্তি করে দিয়েছে, উপাদেয় খাবার খাইয়ে দু’বাহু চর্বিযুক্ত করে দিয়েছে। আমাকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে রেখেছে। ফলে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছি। আমি ছিলাম বকরী রাখালের কন্যা, খুব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হতো। আমি এখন অসংখ্য ঘোড়া, উট ও বকরী পালের মধ্যে তথা পর্যাপ্ত ধন-সম্পদের মধ্যে আছি। আমি তাকে কিছু বললেও আমাকে মন্দ বলত না। সারাক্ষণ নিদ্রায় কাটালেও কিছুই বলত না। পর্যাপ্ত খাওয়ার পরও খাবার অবশিষ্ট থাকত।
উম্মে আবু যার‘আর (একাদশ মহিলার শাশুড়ির) প্রশংসাই বা কি করব! তার বড় বড় পাত্রগুলো সর্বদা খানায় পরিপূর্ণ থাকতো। আর তার বাড়ির সীমানা সুবিশাল। ইবনে আবু যার‘আ তরবারির ন্যায় সূক্ষ্ম, বকরীর একটি উরুর গোশত তার জন্য যথেষ্ট। আবু যার‘আর কন্যা সম্পর্কেই কী বলব! পিতামাতার অনুগত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী, স্বাস্থ্যবান সতীনদের অন্তর্জ্বালার কারণ। আবু যার‘আর পরিচারিকার কথাই বা কি বলব! সে ঘরের গোপন তথ্য ফাঁস করে না। আমাদের খাবার বিনা অনুমতিতে হাত দেয় না। বাড়িতে কখনো আবর্জনা জমা করে রাখে না। সে (একাদশ মহিলা) বলল, আমি এমনই সুখ শান্তি, আদর সোহাগ সমৃদ্ধির মধ্যে দিনকাল কাটাচ্ছিলাম। এমন সময় একবার আবু যার‘আ বাইরে যান এবং দেখতে পান যে, স্বাস্থ্যবান দুটি শিশু তাদের মায়ের স্তন নিয়ে খেলা করছে। এরপর আবু যার‘আ আমাকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেন।
এরপর আমি একজন বিত্তশালী উষ্ট্রারোহী ব্যক্তিকে বিয়ে করি। সেও আমাকে পর্যাপ্ত সামগ্রী জোড়ায় জোড়ায় দিয়েছিল। সে স্বামী বলল, উম্মে যার‘আ! তৃপ্তি সহকারে খাও এবং ইচ্ছেমতো তোমার বাপের বাড়িতে পাঠাও। সে মহিলা বলল, তার দান-দক্ষিণার যাবতীয় বস্তু একত্র করলে আবু যার‘আর সামান্যও হবে না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, আবু যার‘আ যেমন উম্মে যার‘আর জন্য, আমিও ঠিক তদ্রুপ তোমার জন্য। (কিন্তু কখনো আবু যার‘আর মতো তোমাকে তালাক দেব না।) [সহীহ বুখারী, হা/৫১৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৫৮; ইবনে হিববান, হা/৭১০৪; জামেউস সগীর, হা/১৪১।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে বুঝা যায়- এশার পর প্রয়োজনীয় জাগতিক কথা বলা জায়েয। বিশেষত পরিবারের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে বিশ্বাসগত সমস্যা মুক্ত গল্প ও কিচ্ছা কাহিনী বলা জায়েয। এটা পরিবারের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপনের অংশ।
হাদীসের শিক্ষা
এ হাদীস থেকে অনেক শিক্ষা লাভ হয়।
১. স্ত্রী-পরিবারের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করা।
২. আয়েশা (রাঃ) এর বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
৩. রাতে এশার পর প্রয়োজনীয় আলোচনা করা ও পরিবারের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে ত্রুটিমুক্ত গল্প করা বৈধ।
৪. অতীত জাতীসমূহের ত্রুটিমুক্ত কিচ্ছাকাহিনী বর্ণনা করা জায়েয।
৫. কোন অনির্দিষ্ট ব্যক্তি; শ্রোতা যাকে চিনে না, তার দোষ বলা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
بَابُ مَا جَاءَ فِي نَوْمِ رَسُوْلِ اللهِ
১৮৮. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ১১ জন মহিলা এ মর্মে প্রতিশ্রুতিবব্ধ হলো যে, তারা তাদের নিজ নিজ স্বামী সম্পর্কে সব খুলে বলবে এবং কোন কিছুই গোপন করবে না।
প্রথম মহিলা বলল, আমার স্বামী অলস, অকর্মণ্য, দুর্বল উটের গোশততুল্য, তা আবার পর্বত চূড়ায় সংরক্ষিত; যা ধরাছোঁয়া দুঃসাধ্য। তার আচরণ রুক্ষ। ফলে তার কাছে যাওয়া যায় না। সে স্বাস্থ্যবানও নয়, আর তাকে ত্যাগও করতে পারছি না।
দ্বিতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী এমন যে, আমি আশংকা করছি, তার দোষত্রুটি বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না। আর আমি যদি বর্ণনা করে দেই, তাহলে কেবল দোষত্রুটিই বর্ণনা করব।
তৃতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী দীর্ঘদেহ বিশিষ্ট, দেখতে কদাকার। আমি কথা বললে (উত্তরে আসে) তালাক। আর নীরব থাকলে সে তো ঝুলন্ত রশি (অর্থাৎ কিছু চাইলে বদ মেজাজের সম্মুখীন হতে হয় এবং নীরব থাকলে হতে হয় বঞ্চিত)।
চতুর্থ মহিলা বলল, আমার স্বামী তিহামার রাত্রির ন্যায়- না (প্রচন্ড) গরম, আর না (প্রচন্ড) ঠান্ডা। তার থেকে কোন ভয়-ভীতি কিংবা অস্বস্তির কারণ নেই।
পঞ্চম মহিলা বলল, আমার স্বামী ঘরে এলে মনে হয় চিতাবাঘ আর বাইরে বের হলে সে হয় সাহসী সিংহ। বাড়িতে কি ঘটল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে না।
ষষ্ঠ মহিলা বলল, আমার স্বামী যখন খায়, তৃপ্তি ভরে খায়। আর পান করলে সব সাবাড় করে দেয় এবং কোন কিছু অবশিষ্ট রাখে না। আর যখন ঘুমাতে চায়, চাদর দেহে জড়িয়ে দেয়। আমার কোন বিপদাপদ আছে কি না তা হাত বাড়িয়েও দেখে না।
সপ্তম মহিলা বলল, আমার স্বামী অক্ষম, কথা বলতে পারে না, সব ধরনের রোগে আক্রান্ত। সে আমার মস্তক চূর্ণ করতে পারে অথবা মারধোর করে হাড়গোড় সব ভেঙ্গে দিতে পারে বা উভয়টিও করতে পারে।
অষ্টম মহিলা বলল, আমার স্বামীর পরশ খরগোশের ন্যায় কোমল। (তার ব্যবহৃত সুগন্ধি) জাফরানের সুগন্ধির ন্যায়।
নবম মহিলা বলল, আমার স্বামী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ত্ব। অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ, দীর্ঘ দেহবিশিষ্ট, তার বৈঠকখানা ঘরের নিকটবর্তী।
দশম মহিলা বলল, আমার স্বামী হলো আমার মালিক। মালিকের প্রশংসা কী আর করব (উপরে বর্ণিত সকলের প্রশংসা একত্র করলেও তার গুণ গেয়ে শেষ করা যাবে না)। তার রয়েছে অসংখ্য উট, অধিকাংশ সময় সেগুলো বাধাই থাকে। খুব কমই মাঠে চরানো হয়। এসব উট যখন বাদ্যের ঝংকার শোনে, তখন তারা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, তাদেরকে যবেহ করা হবে।
একাদশ মাহিলা উম্মে যার‘আ বলল, আমার স্বামী আবু যার‘আ। আবু যার‘আর কী আর প্রশংসা করব, সে তো অলংকার দিয়ে আমার দু’কান ভর্তি করে দিয়েছে, উপাদেয় খাবার খাইয়ে দু’বাহু চর্বিযুক্ত করে দিয়েছে। আমাকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে রেখেছে। ফলে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছি। আমি ছিলাম বকরী রাখালের কন্যা, খুব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হতো। আমি এখন অসংখ্য ঘোড়া, উট ও বকরী পালের মধ্যে তথা পর্যাপ্ত ধন-সম্পদের মধ্যে আছি। আমি তাকে কিছু বললেও আমাকে মন্দ বলত না। সারাক্ষণ নিদ্রায় কাটালেও কিছুই বলত না। পর্যাপ্ত খাওয়ার পরও খাবার অবশিষ্ট থাকত।
উম্মে আবু যার‘আর (একাদশ মহিলার শাশুড়ির) প্রশংসাই বা কি করব! তার বড় বড় পাত্রগুলো সর্বদা খানায় পরিপূর্ণ থাকতো। আর তার বাড়ির সীমানা সুবিশাল। ইবনে আবু যার‘আ তরবারির ন্যায় সূক্ষ্ম, বকরীর একটি উরুর গোশত তার জন্য যথেষ্ট। আবু যার‘আর কন্যা সম্পর্কেই কী বলব! পিতামাতার অনুগত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী, স্বাস্থ্যবান সতীনদের অন্তর্জ্বালার কারণ। আবু যার‘আর পরিচারিকার কথাই বা কি বলব! সে ঘরের গোপন তথ্য ফাঁস করে না। আমাদের খাবার বিনা অনুমতিতে হাত দেয় না। বাড়িতে কখনো আবর্জনা জমা করে রাখে না। সে (একাদশ মহিলা) বলল, আমি এমনই সুখ শান্তি, আদর সোহাগ সমৃদ্ধির মধ্যে দিনকাল কাটাচ্ছিলাম। এমন সময় একবার আবু যার‘আ বাইরে যান এবং দেখতে পান যে, স্বাস্থ্যবান দুটি শিশু তাদের মায়ের স্তন নিয়ে খেলা করছে। এরপর আবু যার‘আ আমাকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেন।
এরপর আমি একজন বিত্তশালী উষ্ট্রারোহী ব্যক্তিকে বিয়ে করি। সেও আমাকে পর্যাপ্ত সামগ্রী জোড়ায় জোড়ায় দিয়েছিল। সে স্বামী বলল, উম্মে যার‘আ! তৃপ্তি সহকারে খাও এবং ইচ্ছেমতো তোমার বাপের বাড়িতে পাঠাও। সে মহিলা বলল, তার দান-দক্ষিণার যাবতীয় বস্তু একত্র করলে আবু যার‘আর সামান্যও হবে না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, আবু যার‘আ যেমন উম্মে যার‘আর জন্য, আমিও ঠিক তদ্রুপ তোমার জন্য। (কিন্তু কখনো আবু যার‘আর মতো তোমাকে তালাক দেব না।) [সহীহ বুখারী, হা/৫১৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৫৮; ইবনে হিববান, হা/৭১০৪; জামেউস সগীর, হা/১৪১।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে বুঝা যায়- এশার পর প্রয়োজনীয় জাগতিক কথা বলা জায়েয। বিশেষত পরিবারের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে বিশ্বাসগত সমস্যা মুক্ত গল্প ও কিচ্ছা কাহিনী বলা জায়েয। এটা পরিবারের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপনের অংশ।
হাদীসের শিক্ষা
এ হাদীস থেকে অনেক শিক্ষা লাভ হয়।
১. স্ত্রী-পরিবারের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করা।
২. আয়েশা (রাঃ) এর বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
৩. রাতে এশার পর প্রয়োজনীয় আলোচনা করা ও পরিবারের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে ত্রুটিমুক্ত গল্প করা বৈধ।
৪. অতীত জাতীসমূহের ত্রুটিমুক্ত কিচ্ছাকাহিনী বর্ণনা করা জায়েয।
৫. কোন অনির্দিষ্ট ব্যক্তি; শ্রোতা যাকে চিনে না, তার দোষ বলা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
بَابُ مَا جَاءَ فِي نَوْمِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ ডান হাত গালের নিচে রেখে শয্যা যেতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ اِذَا اَخَذَ مَضْجَعَهٗ وَضَعَ كَفَّهُ الْيُمْنٰى تَحْتَ خَدِّهِ الْاَيْمَنِ ، وَقَالَ : رَبِّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
১৮৯. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন ডান হাত ডান গালের নিচে রাখতেন এবং বলতেন :
رَبِّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
‘‘রাবিব ক্বিনী ‘আযাবাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু ‘ইবা-দাক’’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে বাঁচিয়ে দিন সে দিনের আযাব থেকে যেদিন আপনার বান্দাদের পুনরুত্থিত করা হবে। [আবু দাউদ, হা/৫০৪৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬৫৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩১০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫২২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৫৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহ কর্তৃক নিষ্পাপ হওয়া অবগত সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলার দাসত্ব ও বিনয় প্রকাশ এবং উম্মতকে শিক্ষা দান করার নিমিত্তে এসব দু‘আ করতেন।
নিদ্রায় যাওয়া এবং নিদ্রা থেকে উঠার সময় এ দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اِذَا اَوٰى اِلٰى فِرَاشِهٖ قَالَ : اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ اَمُوْتُ وَاَحْيَا ، وَاِذَا اسْتَيْقَظَ قَالَ : اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي اَحْيَانَا بَعْدَمَا اَمَاتَنَا وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
১৯০. হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন শোয়ার জন্য বিছানায় আসতেন তখন বলতেন :
اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ اَمُوْتُ وَاَحْيَا
‘‘আল্ল-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার নামেই মৃত্যুলাভ (নিদ্রা) করছি এবং তোমার নামেই জীবিত (জাগ্রত) হব।)
অতঃপর আবার যখন নিদ্রা ভঙ্গ করতেন তখন বলতেন,
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي اَحْيَانَا بَعْدَمَا اَمَاتَنَا وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়ানা- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলায়হিন্ নুশূর’’
অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর! যিনি মৃত্যুর পর জীবন দিয়েছেন আর তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১২; আবু দাউদ, হা/৫০৫১; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৩১৯; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৩৯।]
নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا اَوٰى اِلٰى فِرَاشِهٖ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ فَنَفَثَ فِيْهِمَا ، وَقَرَاَ فِيهِمَا قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ وَقُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ وَقُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهٖ ، يَبْدَأُ بِهِمَا رَأْسَهٗ وَوَجْهَهٗ وَمَا اَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهٖ يَصْنَعُ ذٰلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
১৯১. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন শোয়ার জন্য বিছানায় যেতেন তখন দু’হাত মিলিয়ে সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করতেন। তারপর ফুঁ দিয়ে যথাসম্ভব মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরে তিনবার হাত বুলিয়ে দিতেন। তারপর মুখমন্ডল ও শরীরের সামনের অংশেও অনুরূপ বুলাতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; আবু দাউদ, হা/৫০৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৯৭।]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَامَ حَتّٰى نَفَخَ ، وَكَانَ اِذَا نَامَ نَفَخَ فَاَتَاهٗ بِلَالٌ فَاٰذَنَهٗ بِالصَّلَاةِ ، فَقَامَ وَصَلّٰى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ وَفِي الْحَدِيْثِ قِصَّةٌ
১৯২. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ নিদ্রায় গেলেন এমনকি তাঁর নাক ডাকতে আরম্ভ করে। আর যখন তিনি নিদ্রা যেতেন তখন নাক ডাকতেন। অতঃপর বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সালাতের প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ জানান। তারপর তিনি দাঁড়ালেন এবং সালাত আদায় করলেন; কিন্তু ওযূ করলেন না। হাদীসে আরো ঘটনা রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৯৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৯৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৩৬; বায়হাকী, হা/১৩১৬৩।]
ব্যাখ্যা : এতে বুঝা গেল যে, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ গভীর ঘুমে যেতেন তখন গলা থেকে আওয়াজ বের হতো। আর নবীগণের বৈশিষ্ট্য হলো, ঘুমের কারণেও তাঁদের ওযূ নষ্ট হয় না। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুম থেকে উঠে ওযূ না করেই নামায আদায় করেছেন। এর কারণ হিসেবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নবীদের চোখ ঘুমায়, অন্তর ঘুমায় না। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৩; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৭।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ শয্যা গ্রহণকালে এ দু‘আটিও পাঠ করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ اِذَا اَوٰى اِلٰى فِرَاشِهٖ قَالَ : اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَاٰوَانَا ، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهٗ وَلَا مُؤْوِيْ
১৯৩. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন (নিম্নোক্ত দু‘আ) পাঠ করতেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَاٰوَانَا ، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهٗ وَلَا مُؤْوِيْ
‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা- ওয়াসাক্বা-না- ওয়াকাফা-না- ওয়া আ-ওয়া-না- ফাকাম্ মিম্মান্ লা- কা-ফিয়া লাহূ ওয়ালা- মু’বী’’
অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের আহার করান ও পান করান। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই নিদ্রা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমন অনেক লোক রয়েছে যাদের কোন যথেষ্টকারী নেই এবং কোন আশ্রয়দাতাও নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬৯; আবু দাউদ, হা/৫০৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৭৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৪০।]
তিনি ডান কাতে বিশ্রাম নিতেন :
عَنْ اَبِيْ قَتَادَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ اِذَا عَرَّسَ بِلَيْلٍ اضْطَجَعَ عَلٰى شِقِّهِ الْاَيْمَنِ ، وَاِذَا عَرَّسَ قُبَيْلَ الصُّبْحِ نَصَبَ ذِرَاعَهٗ ، وَوَضَعَ رَأْسَهٗ عَلٰى كَفِّهٖ
২৯৪. আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ (সফরে) যখন রাতে বিশ্রাম নিতেন তখন ডান কাতে বিশ্রাম নিতেন। আর যদি ভোর হওয়ার উপক্রম হতো তাহলে ডান হাত দাঁড় করে হাতের তালুর উপর মাথা রাখতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৬৮৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৬৩১; বায়হাকী, হা/১০১২৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৫৫৮।]
ব্যাখ্যা : রাত্রিকালীন সফরে কোথাও যাত্রা বিরতি করলে, সময় বেশি থাকলে শুয়ে ঘুমাতেন। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস ছিল, তিনি ডান কাতে শুতেন। সময় কম থাকলে কনুই খাড়া করে হাতের তালুতে মাথা রেখে অল্প কিছুক্ষণ আরাম করে নিতেন।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي عِبَادَةِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ اِذَا اَخَذَ مَضْجَعَهٗ وَضَعَ كَفَّهُ الْيُمْنٰى تَحْتَ خَدِّهِ الْاَيْمَنِ ، وَقَالَ : رَبِّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
১৮৯. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন ডান হাত ডান গালের নিচে রাখতেন এবং বলতেন :
رَبِّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
‘‘রাবিব ক্বিনী ‘আযাবাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু ‘ইবা-দাক’’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে বাঁচিয়ে দিন সে দিনের আযাব থেকে যেদিন আপনার বান্দাদের পুনরুত্থিত করা হবে। [আবু দাউদ, হা/৫০৪৭; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬৫৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩১০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫২২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৫৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহ কর্তৃক নিষ্পাপ হওয়া অবগত সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলার দাসত্ব ও বিনয় প্রকাশ এবং উম্মতকে শিক্ষা দান করার নিমিত্তে এসব দু‘আ করতেন।
নিদ্রায় যাওয়া এবং নিদ্রা থেকে উঠার সময় এ দু‘আ পাঠ করতেন :
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اِذَا اَوٰى اِلٰى فِرَاشِهٖ قَالَ : اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ اَمُوْتُ وَاَحْيَا ، وَاِذَا اسْتَيْقَظَ قَالَ : اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي اَحْيَانَا بَعْدَمَا اَمَاتَنَا وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
১৯০. হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন শোয়ার জন্য বিছানায় আসতেন তখন বলতেন :
اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ اَمُوْتُ وَاَحْيَا
‘‘আল্ল-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার নামেই মৃত্যুলাভ (নিদ্রা) করছি এবং তোমার নামেই জীবিত (জাগ্রত) হব।)
অতঃপর আবার যখন নিদ্রা ভঙ্গ করতেন তখন বলতেন,
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي اَحْيَانَا بَعْدَمَا اَمَاتَنَا وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়ানা- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলায়হিন্ নুশূর’’
অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর! যিনি মৃত্যুর পর জীবন দিয়েছেন আর তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১২; আবু দাউদ, হা/৫০৫১; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৩১৯; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৩৯।]
নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اِذَا اَوٰى اِلٰى فِرَاشِهٖ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ فَنَفَثَ فِيْهِمَا ، وَقَرَاَ فِيهِمَا قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ وَقُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ وَقُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهٖ ، يَبْدَأُ بِهِمَا رَأْسَهٗ وَوَجْهَهٗ وَمَا اَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهٖ يَصْنَعُ ذٰلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
১৯১. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন শোয়ার জন্য বিছানায় যেতেন তখন দু’হাত মিলিয়ে সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করতেন। তারপর ফুঁ দিয়ে যথাসম্ভব মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরে তিনবার হাত বুলিয়ে দিতেন। তারপর মুখমন্ডল ও শরীরের সামনের অংশেও অনুরূপ বুলাতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; আবু দাউদ, হা/৫০৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৯৭।]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ نَامَ حَتّٰى نَفَخَ ، وَكَانَ اِذَا نَامَ نَفَخَ فَاَتَاهٗ بِلَالٌ فَاٰذَنَهٗ بِالصَّلَاةِ ، فَقَامَ وَصَلّٰى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ وَفِي الْحَدِيْثِ قِصَّةٌ
১৯২. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ নিদ্রায় গেলেন এমনকি তাঁর নাক ডাকতে আরম্ভ করে। আর যখন তিনি নিদ্রা যেতেন তখন নাক ডাকতেন। অতঃপর বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সালাতের প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ জানান। তারপর তিনি দাঁড়ালেন এবং সালাত আদায় করলেন; কিন্তু ওযূ করলেন না। হাদীসে আরো ঘটনা রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৯৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৯৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৩৬; বায়হাকী, হা/১৩১৬৩।]
ব্যাখ্যা : এতে বুঝা গেল যে, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ গভীর ঘুমে যেতেন তখন গলা থেকে আওয়াজ বের হতো। আর নবীগণের বৈশিষ্ট্য হলো, ঘুমের কারণেও তাঁদের ওযূ নষ্ট হয় না। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুম থেকে উঠে ওযূ না করেই নামায আদায় করেছেন। এর কারণ হিসেবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নবীদের চোখ ঘুমায়, অন্তর ঘুমায় না। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৩; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৭।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ শয্যা গ্রহণকালে এ দু‘আটিও পাঠ করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ اِذَا اَوٰى اِلٰى فِرَاشِهٖ قَالَ : اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَاٰوَانَا ، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهٗ وَلَا مُؤْوِيْ
১৯৩. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন (নিম্নোক্ত দু‘আ) পাঠ করতেন :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَاٰوَانَا ، فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِيَ لَهٗ وَلَا مُؤْوِيْ
‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা- ওয়াসাক্বা-না- ওয়াকাফা-না- ওয়া আ-ওয়া-না- ফাকাম্ মিম্মান্ লা- কা-ফিয়া লাহূ ওয়ালা- মু’বী’’
অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের আহার করান ও পান করান। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই নিদ্রা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমন অনেক লোক রয়েছে যাদের কোন যথেষ্টকারী নেই এবং কোন আশ্রয়দাতাও নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬৯; আবু দাউদ, হা/৫০৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৭৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৪০।]
তিনি ডান কাতে বিশ্রাম নিতেন :
عَنْ اَبِيْ قَتَادَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ اِذَا عَرَّسَ بِلَيْلٍ اضْطَجَعَ عَلٰى شِقِّهِ الْاَيْمَنِ ، وَاِذَا عَرَّسَ قُبَيْلَ الصُّبْحِ نَصَبَ ذِرَاعَهٗ ، وَوَضَعَ رَأْسَهٗ عَلٰى كَفِّهٖ
২৯৪. আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ (সফরে) যখন রাতে বিশ্রাম নিতেন তখন ডান কাতে বিশ্রাম নিতেন। আর যদি ভোর হওয়ার উপক্রম হতো তাহলে ডান হাত দাঁড় করে হাতের তালুর উপর মাথা রাখতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৬৮৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৬৩১; বায়হাকী, হা/১০১২৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৫৫৮।]
ব্যাখ্যা : রাত্রিকালীন সফরে কোথাও যাত্রা বিরতি করলে, সময় বেশি থাকলে শুয়ে ঘুমাতেন। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস ছিল, তিনি ডান কাতে শুতেন। সময় কম থাকলে কনুই খাড়া করে হাতের তালুতে মাথা রেখে অল্প কিছুক্ষণ আরাম করে নিতেন।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي عِبَادَةِ رَسُوْلِ اللهِ
ইবাদাতের শাব্দিক অর্থ দাসত্ব বা গোলামী প্রকাশ করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ইবাদাত হলো প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এমন কথা ও কাজের নাম, যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা খুশি হন এবং সন্তুষ্ট থাকেন।
সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পা ফুলে যেত :
عَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ : صَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ حَتَّى انْتَفَخَتْ قَدَمَاهٗ فَقِيْلَ لَهٗ : اَتَتَكَلَّفُ هٰذَا وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ ؟ قَالَ : اَفَلَا اَكُوْنُ عَبْدًا شَكُوْرًا
১৯৫. মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, আপনি এত কষ্ট করছেন অথচ আল্লাহ তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি শোকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩০২; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৪১৯; ইবনে খুযাইমা, হা/১১৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২২৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬১৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং সাহরীর পূর্ব পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন :
عَنِ الْاَسْوَدِ بْنِ يَزِيْدَ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ بِاللَّيْلِ ؟ فَقَالَتْ : كَانَ يَنَامُ اَوَّلَ اللَّيْلِ ثُمَّ يَقُوْمُ ، فَاِذَا كَانَ مِنَ السَّحَرِ اَوْتَرَ ، ثُمَّ اَتَى فِرَاشَهٗ ، فَاِذَا كَانَ لَهٗ حَاجَةٌ اَلَمَّ بِاَهْلِهٖ ، فَاِذَا سَمِعَ الْاَذَانَ وَثَبَ ، فَاِنْ كَانَ جُنُبًا اَفَاضَ عَلَيْهِ مِنَ الْمَاءِ ، وَاِلَّا تَوَضَّاَ وَخَرَجَ اِلَى الصَّلَاةِ
১৯৬. আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তাহাজ্জুদ সালাত (রাতের সালাত) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন। তারপর সালাতে দাঁড়াতেন এবং সাহরীর পূর্বক্ষণে বিতর আদায় করতেন। এরপর প্রয়োজন মনে করলে বিছানায় আসতেন। তারপর আযানের শব্দ শুনে জেগে উঠতেন এবং অপবিত্র হলে সর্বাগ্রে পানি বইয়ে গোসল করে নিতেন নতুবা ওযূ করতেন। তারপর সালাত আদায় করতেন। [সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫৯৩।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এশার নামাযের পর রাতের প্রথমভাগে ঘুমাতেন। এরপর ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ ও বিতর আদায় করতেন। এটাই তাহাজ্জুদ এবং বিতরের উত্তম সময়। এরপর আগ্রহ হলে স্ত্রী গমন করতেন।
তিনি রাতের শেষ অর্ধাংশেও সালাত আদায় করতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، اَنَّهٗ اَخْبَرَهٗ اَنَّهٗ بَاتَ عِنْدَ مَيْمُوْنَةَ وَهِيَ خَالَتُهٗ قَالَ : فَاضْطَجَعْتُ فِي عَرْضِ الْوِسَادَةِ ، وَاضْطَجَعَ رَسُوْلُ اللهِ فِي طُوْلِهَا ، فَنَامَ رَسُوْلُ اللهِ حَتّٰى اِذَا انْتَصَفَ اللَّيْلُ اَوْ قَبْلَهٗ بِقَلِيْلٍ اَوْ بَعْدَهٗ بِقَلِيْلٍ ، فَاسْتَيْقَظَ رَسُوْلُ اللهِ فَجَعَلَ يَمْسَحُ النَّوْمَ عَنْ وَجْهِهٖ ، ثُمَّ قَرَاَ الْعَشْرَ الْاٰيَاتِ الْخَوَاتِيْمَ مِنْ سُوْرَةِ اٰلِ عِمْرَانَ ، ثُمَّ قَامَ اِلٰى شَنٍّ مُعَلَّقٍ فَتَوَضَّاَ مِنْهَا ، فَاَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ، ثُمَّ قَامَ يُصَلِّي قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ : فَقُمْتُ اِلٰى جَنْبِهٖ فَوَضَعَ رَسُوْلُ اللهِ يَدَهُ الْيُمْنٰى عَلٰى رَأْسِيْ ثُمَّ اَخَذَ بِأُذُنِيْ الْيُمْنٰى فَفَتَلَهَا فَصَلّٰى رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ - قَالَ مَعْنٌ : سِتَّ مَرَّاتٍ - ثُمَّ اَوْتَرَ ، ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتّٰى جَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ فَقَامَ فَصَلّٰى رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ، ثُمَّ خَرَجَ فَصَلّٰى الصُّبْحَ
১৯৭. ইবনে আববাস (আঃ) হতে বর্ণিত। একবার তিনি তাঁর খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন। তিনি বলেন, তিনি মায়মূনা (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বালিশের লম্বা দিকে ঘুমান আর আমি প্রস্থের দিকে ঘুমাই। রাসূলুল্লাহ ﷺ অর্ধ রাত কিংবা তার কিছুক্ষণ পূর্ব পর্যন্ত ঘুমালেন। তারপর তিনি জাগ্রত হন এবং মুখমন্ডল মুছে ঘুমের জড়তা দূর করেন। তারপর তিনি সূরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর তিনি ঝুলন্ত পানির মশকের কাছে যান এবং উত্তমরূপে ওযূ করেন। এরপর সালাতে দাঁড়ান। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার উপর ডান হাত রাখলেন, এরপর তিনি আমার ডান কান ধরে একটু মললেন (এতে আমি তাঁর ডান পাশে এসে দাঁড়ালাম)। অতঃপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। মা‘নের বর্ণনা মতে তিনি ২ রাক‘আত করে ৬ বার (১২ রাক‘আত) সালাত আদায় করেন। এরপর বিতর সালাত আদায় করেন। এরপর আরাম করেন। এরপর তাঁর কাছে মুয়ায্যিন এল। তখন তিনি সংক্ষেপে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এরপর মসজিদের উদ্দেশে বের হন এবং ফজরের সালাত আদায় করেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৫; সহীহ বুখারী, হা/১৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৫; আবু দাউদ, হা/১৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৬৪; ইবনে খুযাইমা, হা/১৬৭৫।]
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) ওযূ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাম পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অথচ নিয়ম হলো মুক্তাদী একা হলে ইমামের ডানে দাঁড়াবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ কান ধরে তাকে ডান দিকে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংখ্যায় তাহাজ্জুদের নামায আদায় করেছেন। সময় হিসেবে কখনো বেশি পড়েছেন। আবার কখনো কম পড়েছেন। তবে ১৩ রাক‘আতের বেশি হয়নি, যা বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً
১৯৮. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ (তাহাজ্জুদ ও বিতরসহ কখনো কখনো) রাত্রে ১৩ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০১৯।]
রাত্রে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে না পারলে দিনে তা আদায় করে নিতেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ اِذَا لَمْ يُصَلِّ بِاللَّيْلِ مَنَعَهٗ مِنْ ذٰلِكَ النَّوْمُ ، اَوْ غَلَبَتْهُ عَيْنَاهٗ صَلّٰى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً
১৯৯. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যদি কখনো নবী ﷺ নিদ্রা বা প্রবল ঘুমের চাপের কারণে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তাহলে তিনি দিনে (চাশতের সময়) ১২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৪৫।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, কারণবসত রাতের নফল ইবাদাত আদায় করতে সমর্থ না হলে তৎপরিমাণ ইবাদাত দিনের বেলায় করে নেয়া যায়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের সালাত দু’রাক‘আত করে আদায় করতেন :
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ ، اَنَّهٗ قَالَ : لَاَرْمُقَنَّ صَلَاةَ النَّبِيِّ ، فَتَوَسَّدْتُ عَتَبَتَهٗ ، اَوْ فُسْطَاطَهٗ فَصَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ ، طَوِيْلَتَيْنِ ، طَوِيْلَتَيْنِ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ اَوْتَرَ فَذٰلِكَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً
২০০. যায়েদ ইবনে খালিদ আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত গভীর মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করার ইচ্ছা করলাম। তাই আমি তাঁর বাড়ি অথবা তাঁবুর চৌকাঠের উপর মাথা ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমে সংক্ষেপে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর তদপেক্ষা সংক্ষেপে ২ রাক‘আত, এরপর তার চেয়ে সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত এবং তার চেয়ে সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তারপর বিতর আদায় করেন। এভাবে ১৩ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৬; আবু দাউদ, হা/১৩৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে ‘ঘর অথবা তাঁবুর চৌকাঠের উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকার কথা’ বলা হয়েছে। বর্ণনাকারীর সন্দেহ হয়ে গেছে সাহাবী যায়েদ (রাঃ) ঘর শব্দ বলেছেন না তাঁবু শব্দ বলেছেন। এটা হচ্ছে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের অধিক সতর্কতার পরিচয়। তাঁরা সামান্য একটু সন্দেহ হলেও তা প্রকাশ করেছেন। তবে এখানে ঘর শব্দ না হয়ে তাঁবু শব্দটিই হবে। কারণ মুহাদ্দিসগণের মতে এটা কোন এক সফরের ঘটনা ছিল। তখন তাঁর সাথে স্ত্রীদের কেউ ছিলেন না। এজন্য যায়েদ ইবনে খালেদ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাতের আমল পর্যবেক্ষণ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান মাসে ১১ রাক‘আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন :
عَنْ اَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ ، اَنَّهٗ اَخْبَرَهٗ اَنَّهٗ سَاَلَ عَائِشَةَ ، كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُوْلِ اللهِ فِي رَمَضَانَ ؟ فَقَالَتْ : مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لِيَزِيْدَ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهٖ عَلٰى اِحْدٰى عَشْرَةَ رَكْعَةً ، يُصَلِّيْ اَرْبَعًا لَا تَسْاَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّيْ اَرْبَعًا لَا تَسْاَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّيْ ثَلَاثًا ، قَالَتْ عَائِشَةُ : قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَتَنَامُ قَبْلَ اَنْ تُوْتِرَ ؟ فَقَالَ : يَا عَائِشَةُ ، اِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلَا يَنَامُ قَلْبِيْ
২০১. আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আয়েশা (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান মাসে কত রাক‘আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান অথবা অন্য সময় ১১ রাক‘আতের বেশি আদায় করতেন না। প্রথমে ৪ রাক‘আত আদায় করতেন। কী রকম একাগ্রতা নিয়ে ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন সে বিষয়ে তুমি জিজ্ঞেস করো না। তারপর আবার ৪ রাক‘আত আদায় করেন। তবে এর একাগ্রতা ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর ৩ রাক‘আত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের পূর্বে কি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, আমার চোখ নিদ্রা যায় কিন্তু অন্তর নিদ্রা যায় না। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৩; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৭; আবু দাউদ, হা/১৩৪৩।]
তিনি ১ রাক‘আত বিতর আদায় করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ اِحْدٰى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُوْتِرُ مِنْهَا بِوَاحِدَةٍ ، فَاِذَا فَرَغَ مِنْهَا اضْطَجَعَ عَلٰى شِقِّهِ الْاَيْمَنِ
২০২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রে ১১ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, যার মধ্যে ১ রাক‘আত হতো বিতর। যখন সালাত শেষে করতেন তখন তিনি ডান কাতে আরাম করতেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬২; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫১; আবু দাউদ, হা/১৩৩৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১১৬; বায়হাকী, হা/৪৫৫১।]
কখনো কখনো তিনি রাতে ৯ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ تِسْعَ رَكَعَاتٍ
২০৩. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রে ৯ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৩; সুনানে নাসাঈ, হা/১৭২৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৬৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬১৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এক রাতের সালাতের বিবরণ :
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ، اَنَّهٗ صَلّٰى مَعَ النَّبِيِّ مِنَ اللَّيْلِ قَالَ : فَلَمَّا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ قَالَ : اَللهُ اَكْبَرُ ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ قَالَ : ثُمَّ قَرَاَ الْبَقَرَةَ ، ثُمَّ رَكَعَ رُكُوْعَهٗ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهٖ وَكَانَ يَقُوْلُ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ فَكَانَ قِيَامُهٗ نَحْوًا مِنْ رُكُوْعِهٖ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ، لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ثُمَّ سَجَدَ فَكَانَ سُجُوْدُهٗ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهٖ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ ، فَكَانَ مَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ نَحْوًا مِنَ السُّجُوْدِ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ حَتّٰى قَرَاَ الْبَقَرَةَ وَاٰلَ عِمْرَانَ وَالنِّسَاءَ وَالْمَائِدَةَ اَوِ الْاَنْعَامَ شُعْبَةُ الَّذِيْ شَكَّ فِي الْمَائِدَةِ وَالاَنْعَامِ
২০৪. হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে রাত্রে সালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, যখন তিনি সালাত আরম্ভ করলেন, তখন বললেন,
اَللهُ اَكْبَرُ ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
‘‘আল্ল-হু আকবার যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল ‘আযামাহ্’’
অর্থাৎ আল্লাহ মহান, রাজাধিরাজ, অসীম শক্তির অধিকারী, বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য তাঁরই জন্য।
তারপর তিনি (সূরা ফাতিহার পর) সূরা বাকারা তিলাওয়াত করেন। এরপর কিয়ামের ন্যায় দীর্ঘ রুকূ করেন। তিনি তাতে বলেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ
‘‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’’, ‘‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’’
অর্থাৎ আমার প্রভু পুত-পবিত্র ও মহান; আমার প্রভু পুত-পবিত্র ও মহান।
তারপর মাথা উঠালেন এবং তাঁর কিয়াম রুকূ‘র ন্যায় দীর্ঘ হলো। এরপর বললেন,
لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ، لِرَبِّيَ الْحَمْدُ
‘‘লিরবিবয়াল হাম্দ, লিরবিবয়াল হাম্দ’’
অর্থাৎ সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য; সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য।
তারপর তিনি সিজদা করলেন, আর তার সিজদা কিয়ামের মতো দীর্ঘ হলো। তিনি বললেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى
‘‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা, সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’’
অর্থাৎ আমার প্রভু পবিত্র ও মহান, আমার প্রভূ পবিত্র ও মহান।
তারপর মাথা উঠালেন (অর্থাৎ সিজদা হতে উঠে বসেন)। আর ২ সিজদার মধ্যকার সময় ছিল সিজদায় থাকা সময়ের ব্যবধানের মতো। এ সময় তিনি বলতেন,
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
‘‘রবিবগ্ ফিরলী’’, ‘‘রবিবগ্ ফিরলী’’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো; হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো।
এমনকি তিনি সূরা বাক্বারা, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদা অথবা আনআম তিলাওয়াত করেন। বর্ণনাকারী সূরা মায়েদা না আনআম পর্যন্ত তিলাওয়াত করেছেন সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪২৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের মধ্যে একটি আয়াত বারবার তিলাওয়াত করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَامَ رَسُوْلُ اللهِ بِاٰيَةٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ لَيْلَةً
২০৫. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি আয়াত (পুনরাবৃত্তি করে) তিলাওয়াত করতে থাকেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৯১৪।]
ব্যাখ্যা : আয়াতটি ছিল :
﴿إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيْمُ﴾
(হে আল্লাহ!) তুমি যদি শাস্তি দিতে ইচ্ছা করো, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদের ক্ষমা করে দাও, তাহলে তুমি তো মহা পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আল মায়েদা- ১১৮)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার দুটি গুণ ইনসাফ ও মাগফিরাতের বর্ণনা করা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দুটি গুণের প্রতি লক্ষ্য করেই বারবার আয়াতটি পাঠ করেন। কিয়ামত দিবসের পুরো অবস্থা এ দুটো গুণেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
রাসূলুল্লাহ ﷺ দীর্ঘ সময় যাবৎ কিয়াম করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ : صَلَّيْتُ لَيْلَةً مَعَ رَسُوْلِ اللهِ فَلَمْ يَزَلْ قَائِمًا حَتّٰى هَمَمْتُ بِاَمْرِ سُوْءٍ قِيلَ لَهٗ : وَمَا هَمَمْتَ بِهٖ ؟ قَالَ : هَمَمْتُ اَنْ اَقْعُدَ وَاَدَعَ النَّبِيَّ
২০৬. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করি। তিনি এত দীর্ঘ (সময়) কিয়াম করেন যে, আমি একটি খারাপ কাজ করার সংকল্প করে বসি। তাকে বলা হলো আপনি কি করতে চেয়েছিলেন? তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে ছেড়ে বসে পড়ার ইচ্ছা করেছিলাম। [সহীহ বুখারী, হা/১১৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯৩৭; বায়হাকী, হা/৪৪৬০।]
বসে সালাত আদায় করলে তিলাওয়াতও বসে করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُصَلِّيْ جَالِسًا فَيَقْرَأُ وَهُوَ جَالِسٌ ، فَاِذَا بَقِيَ مِنْ قِرَاءَتِهٖ قَدْرُ مَا يَكُوْنُ ثَلَاثِيْنَ اَوْ اَرْبَعِيْنَ اٰيَةً ، قَامَ فَقَرَاَ وَهُوَ قَائِمٌ ، ثُمَّ رَكَعَ وَسَجَدَ ، ثُمَّ صَنَعَ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذٰلِكَ
২০৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী ﷺ বসে সালাত আদায় করলে তিলাওয়াতও বসে করতেন। যখন মাত্র ৩০ অথবা ৪০ আয়াত বাকী থাকত তখন দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতেন তারপর রুকূ ও সিজদা করতেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতও অনুরূপভাবে আদায় করতেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৩১১; সহীহ বুখারী, হা/১১১৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৯; আবু দাউদ, হা/৯৫৫।]
দাঁড়িয়ে কিরাআত পাঠ করলে রুকূ-সিজদাও দাঁড়ানো অবস্থাতেই করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ عَنْ تَطَوُّعِهٖ ، فَقَالَتْ : كَانَ يُصَلِّيْ لَيْلًا طَوِيْلًا قَائِمًا ، وَلَيْلًا طَوِيْلًا قَاعِدًا ، فَاِذَا قَرَاَ وَهُوَ قَائِمٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَائِمٌ ، وَاِذَا قَرَاَ وَهُوَ جَالِسٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ جَالِسٌ
২০৮. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি দীর্ঘ রাত্রি দাঁড়িয়ে কিংবা দীর্ঘ রাত্রি বসে সালাত আদায় করতেন। তিনি দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়লে রুকূ-সিজদাও দাঁড়ানো অবস্থাতেই করতেন। আবার যখন কিরাআত বসে পড়তেন, তখন বসা অবস্থাতেই রুকূ-সিজদা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৬; আবু দাউদ, হা/৯৫৬; ইবনে মাজাহ, হা/১২২৮; ইবনে খুযাইমা, হা/১২৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৩১ ।]
ব্যাখ্যা : সাধারণত রাসূলুল্লাহ ﷺ নফল নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতেন। আবার কখনো কখনো বসেও আদায় করতেন। অধিকাংশ আলেমের মতে নফল নামায দাঁড়িয়ে, বসে, কিছু দাঁড়িয়ে কিছু বসে, সব অবস্থায় আদায় করা জায়েয। এমনকি বসে নামায শুরু করার পর দাঁড়িয়ে রুকূ-সিজদা করা। এমনিভাবে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে বসে রুকূ-সিজদা করাও বৈধ। তবে ফরয নামাযে দাঁড়ানোর শক্তি থাকলে বসে আদায় করা জায়েয নয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তারতীল সহকারে কিরাআত পাঠ করতেন :
عَنْ حَفْصَةَ ، زَوْجِ النَّبِيِّ قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّيْ فِيْ سُبْحَتِهٖ قَاعِدًا وَيَقْرَأُ بِالسُّوْرَةِ وَيُرَتِّلُهَا حَتّٰى تَكُوْنَ اَطْوَلَ مِنْ اَطْوَلَ مِنْهَا
২০৯. নবী ﷺ এর স্ত্রী হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ নফল সালাত বসে আদায় করতেন। তাতে তারতীল (তাজবীদ) সহকারে কিরাআত পাঠ করতেন। ফলে তা দীর্ঘ সূরার চেয়ে দীর্ঘতর মনে হতো। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৩০৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৪৬; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৫৮; ইবনে খুযাইমা, হা/১২৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫০৮; দারেমী, হা/১৩৮৫।]
নবী ﷺ মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ،قَالَتْ : اَنَّ النَّبِيَّ لَمْ يَمُتْ حَتّٰى كَانَ اَكْثَرُ صَلَاتِهٖ وَهُوَ جَالِسٌ
২১০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৪৫; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৭৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৩৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১৮৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ৮ রাক‘আত সুন্নতের বর্ণনা :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ فِي بَيْتِهٖ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ فِي بَيْتِهٖ
২১১. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত, মাগরিবের পর ঘরে ২ রাক‘আত এবং এশার পরে তাঁর ঘরে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫০৬; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৮২৩।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে যোহরের ফরযের পূর্বে ২ রাক‘আত সুন্নতের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য হাদীস থেকে ৪ রাক‘আত সুন্নতের প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- জামে তিরমিযীতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের পূর্বে ৪ রাক‘আত এবং যোহরের পরে চার রাক‘আত সুন্নত পড়তেন। এজন্য ৪ রাক‘আত বা ২ রাক‘আত উভয়ই আদায় করা জায়েয আছে। তাছাড়া এ হাদীসে ফজরের সুন্নতের কথা উল্লেখ করা হয় নাই, যা রাবীর অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ আযানের পর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : حَدَّثَتْنِي حَفْصَةُ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ حِيْنَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ وَيُنَادِي الْمُنَادِي قَالَ اَيُّوْبُ : وَأُرَاهٗ قَالَ : خَفِيْفَتَيْنِ
২১২. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাফসা (রাঃ) আমাকে (এ মর্মে) হাদীস শোনান যে, সুবহে সাদিকের সময় যখন মুয়ায্যিন আযান দিত, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ ২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন। আইয়ূব বলেন, আমি মনে করি তিনি خَفِيفَتَيْنِ (সংক্ষিপ্ত ২ রাক‘আত) বলেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫০৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৬৭; মুসনাদে মুস্তাখরাজ ‘আলাস সহীহাইন, হা/১৬৩৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ১০ রাক‘আত সুন্নতের বিবরণ :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ : رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ قَالَ ابْنُ عُمَرَ : وَحَدَّثَتْنِي حَفْصَةُ بِرَكْعَتَيِ الْغَدَاةِ ، وَلَمْ اَكُنْ اَرَاهُمَا مِنَ النَّبِيِّ
২১৩. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে ৮ রাক‘আত স্মরণ রেখেছি- যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত, ২ রাক‘আত মাগরিবের পরে এবং ২ রাক‘আত এশার পরে। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, হাফসা (রাঃ) আমার কাছে ফজরের ২ রাক‘আতের খরব দিয়েছেন। অথচ আমি নবী ﷺ কে তা আদায় করতে দেখিনি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৮০; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/১৯৯৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৮২৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ قَالَ : سَاَلتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ النَّبِيِّ قَالَتْ : كَانَ يُصَلِّيْ قَبْلَ الظُّهْرِ رَكْعَتَيْنِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ ، وَبَعْدَ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ ، وَبَعْدَ الْعِشَاءِ رَكْعَتَيْنِ ، وَقَبْلَ الْفَجْرِ ثِنْتَيْنِ
২১৪. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে নবী ﷺ এর (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি ﷺ যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত এবং পরে ২ রাক‘আত, মাগরিবের পরে ২ রাক‘আত, এশার পরে ২ রাক‘আত এবং ফজরের পূর্বে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৭০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিনের ১৬ রাক‘আত নফল সালাতের বিবরণ :
عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ يَقُوْلُ : سَاَلْنَا عَلِيًّا ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ مِنَ النَّهَارِ ، فَقَالَ : اِنَّكُمْ لَا تُطِيْقُوْنَ ذٰلِكَ قَالَ : فَقُلْنَا : مَنْ اَطَاقَ ذٰلِكَ مِنَّا صَلّٰى ، فَقَالَ : كَانَ اِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا كَهَيْئَتِهَا مِنْ هَاهُنَا عِنْدَ الْعَصْرِ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ ، وَاِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَهُنَا كَهَيْئَتِهَا مِنْ هَاهُنَا عِنْدَ الظُّهْرِ صَلّٰى اَرْبَعًا ، وَيُصَلِّي قَبْلَ الظُّهْرِ اَرْبَعًا ، وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ ، وَقَبْلَ الْعَصْرِ اَرْبَعًا ، يَفْصِلُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ بِالتَّسْلِيْمِ عَلَى الْمَلَائِكَةِ الْمُقَرَّبِيْنَ وَالنَّبِيِّيْنَ ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ
২১৫. আসিম ইবনে যামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আলী (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিনের (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তোমরা সেভাবে আদায় করার ক্ষমতা রাখ না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে আদায় করবে। এরপর তিনি বললেন, আসরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে তেমন হলে তিনি ২ রাক‘আত (ইশরাক সালাত) আদায় করতেন। আবার যোহরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে (পূর্ব দিকে সূর্য ততটা উপর হলে) তিনি ৪ রাক‘আত (চাশতের সালাত) আদায় করতেন। যোহরের পূর্বে ৪ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত এবং আসরের পূর্বে ৪ রাক‘আত আদায় করতেন। প্রতি ২ রাক‘আতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, নবীগণ এবং যেসকল মুমিন-মুসলিম তাদের অনুসরণ করেছেন তাদের প্রতি সালাম প্রেরণের মাধ্যমে ব্যবধান করতেন। [সুনানে নাসাঈ, হা/৮৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭৭; বায়হাকী, হা/৪৬৯৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৩৭।]
ব্যাখ্যা : নবী, ফেরেশতা এবং মুমিনদের প্রতি সালাম পাঠ করার অর্থ হলো, আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা। কেননা, এতে তাদের প্রতি সালাম পাঠ করা হয়। অথবা সালামের অর্থ ২ রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা। তখন উদ্দেশ্য হবে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আসরের পূর্বে ২ রাক‘আত করে ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন।
بَابُ صَلَاةِ الضُّحٰى
সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পা ফুলে যেত :
عَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ : صَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ حَتَّى انْتَفَخَتْ قَدَمَاهٗ فَقِيْلَ لَهٗ : اَتَتَكَلَّفُ هٰذَا وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ ؟ قَالَ : اَفَلَا اَكُوْنُ عَبْدًا شَكُوْرًا
১৯৫. মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, আপনি এত কষ্ট করছেন অথচ আল্লাহ তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি শোকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩০২; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৪১৯; ইবনে খুযাইমা, হা/১১৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২২৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬১৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং সাহরীর পূর্ব পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন :
عَنِ الْاَسْوَدِ بْنِ يَزِيْدَ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ بِاللَّيْلِ ؟ فَقَالَتْ : كَانَ يَنَامُ اَوَّلَ اللَّيْلِ ثُمَّ يَقُوْمُ ، فَاِذَا كَانَ مِنَ السَّحَرِ اَوْتَرَ ، ثُمَّ اَتَى فِرَاشَهٗ ، فَاِذَا كَانَ لَهٗ حَاجَةٌ اَلَمَّ بِاَهْلِهٖ ، فَاِذَا سَمِعَ الْاَذَانَ وَثَبَ ، فَاِنْ كَانَ جُنُبًا اَفَاضَ عَلَيْهِ مِنَ الْمَاءِ ، وَاِلَّا تَوَضَّاَ وَخَرَجَ اِلَى الصَّلَاةِ
১৯৬. আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তাহাজ্জুদ সালাত (রাতের সালাত) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন। তারপর সালাতে দাঁড়াতেন এবং সাহরীর পূর্বক্ষণে বিতর আদায় করতেন। এরপর প্রয়োজন মনে করলে বিছানায় আসতেন। তারপর আযানের শব্দ শুনে জেগে উঠতেন এবং অপবিত্র হলে সর্বাগ্রে পানি বইয়ে গোসল করে নিতেন নতুবা ওযূ করতেন। তারপর সালাত আদায় করতেন। [সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫৯৩।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এশার নামাযের পর রাতের প্রথমভাগে ঘুমাতেন। এরপর ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ ও বিতর আদায় করতেন। এটাই তাহাজ্জুদ এবং বিতরের উত্তম সময়। এরপর আগ্রহ হলে স্ত্রী গমন করতেন।
তিনি রাতের শেষ অর্ধাংশেও সালাত আদায় করতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، اَنَّهٗ اَخْبَرَهٗ اَنَّهٗ بَاتَ عِنْدَ مَيْمُوْنَةَ وَهِيَ خَالَتُهٗ قَالَ : فَاضْطَجَعْتُ فِي عَرْضِ الْوِسَادَةِ ، وَاضْطَجَعَ رَسُوْلُ اللهِ فِي طُوْلِهَا ، فَنَامَ رَسُوْلُ اللهِ حَتّٰى اِذَا انْتَصَفَ اللَّيْلُ اَوْ قَبْلَهٗ بِقَلِيْلٍ اَوْ بَعْدَهٗ بِقَلِيْلٍ ، فَاسْتَيْقَظَ رَسُوْلُ اللهِ فَجَعَلَ يَمْسَحُ النَّوْمَ عَنْ وَجْهِهٖ ، ثُمَّ قَرَاَ الْعَشْرَ الْاٰيَاتِ الْخَوَاتِيْمَ مِنْ سُوْرَةِ اٰلِ عِمْرَانَ ، ثُمَّ قَامَ اِلٰى شَنٍّ مُعَلَّقٍ فَتَوَضَّاَ مِنْهَا ، فَاَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ، ثُمَّ قَامَ يُصَلِّي قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ : فَقُمْتُ اِلٰى جَنْبِهٖ فَوَضَعَ رَسُوْلُ اللهِ يَدَهُ الْيُمْنٰى عَلٰى رَأْسِيْ ثُمَّ اَخَذَ بِأُذُنِيْ الْيُمْنٰى فَفَتَلَهَا فَصَلّٰى رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ - قَالَ مَعْنٌ : سِتَّ مَرَّاتٍ - ثُمَّ اَوْتَرَ ، ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتّٰى جَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ فَقَامَ فَصَلّٰى رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ، ثُمَّ خَرَجَ فَصَلّٰى الصُّبْحَ
১৯৭. ইবনে আববাস (আঃ) হতে বর্ণিত। একবার তিনি তাঁর খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন। তিনি বলেন, তিনি মায়মূনা (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বালিশের লম্বা দিকে ঘুমান আর আমি প্রস্থের দিকে ঘুমাই। রাসূলুল্লাহ ﷺ অর্ধ রাত কিংবা তার কিছুক্ষণ পূর্ব পর্যন্ত ঘুমালেন। তারপর তিনি জাগ্রত হন এবং মুখমন্ডল মুছে ঘুমের জড়তা দূর করেন। তারপর তিনি সূরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর তিনি ঝুলন্ত পানির মশকের কাছে যান এবং উত্তমরূপে ওযূ করেন। এরপর সালাতে দাঁড়ান। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার উপর ডান হাত রাখলেন, এরপর তিনি আমার ডান কান ধরে একটু মললেন (এতে আমি তাঁর ডান পাশে এসে দাঁড়ালাম)। অতঃপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। মা‘নের বর্ণনা মতে তিনি ২ রাক‘আত করে ৬ বার (১২ রাক‘আত) সালাত আদায় করেন। এরপর বিতর সালাত আদায় করেন। এরপর আরাম করেন। এরপর তাঁর কাছে মুয়ায্যিন এল। তখন তিনি সংক্ষেপে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এরপর মসজিদের উদ্দেশে বের হন এবং ফজরের সালাত আদায় করেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৫; সহীহ বুখারী, হা/১৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৫; আবু দাউদ, হা/১৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৬৪; ইবনে খুযাইমা, হা/১৬৭৫।]
ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) ওযূ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাম পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অথচ নিয়ম হলো মুক্তাদী একা হলে ইমামের ডানে দাঁড়াবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ কান ধরে তাকে ডান দিকে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংখ্যায় তাহাজ্জুদের নামায আদায় করেছেন। সময় হিসেবে কখনো বেশি পড়েছেন। আবার কখনো কম পড়েছেন। তবে ১৩ রাক‘আতের বেশি হয়নি, যা বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً
১৯৮. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ (তাহাজ্জুদ ও বিতরসহ কখনো কখনো) রাত্রে ১৩ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০১৯।]
রাত্রে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে না পারলে দিনে তা আদায় করে নিতেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ اِذَا لَمْ يُصَلِّ بِاللَّيْلِ مَنَعَهٗ مِنْ ذٰلِكَ النَّوْمُ ، اَوْ غَلَبَتْهُ عَيْنَاهٗ صَلّٰى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً
১৯৯. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যদি কখনো নবী ﷺ নিদ্রা বা প্রবল ঘুমের চাপের কারণে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তাহলে তিনি দিনে (চাশতের সময়) ১২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৪৫।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, কারণবসত রাতের নফল ইবাদাত আদায় করতে সমর্থ না হলে তৎপরিমাণ ইবাদাত দিনের বেলায় করে নেয়া যায়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের সালাত দু’রাক‘আত করে আদায় করতেন :
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ ، اَنَّهٗ قَالَ : لَاَرْمُقَنَّ صَلَاةَ النَّبِيِّ ، فَتَوَسَّدْتُ عَتَبَتَهٗ ، اَوْ فُسْطَاطَهٗ فَصَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ ، طَوِيْلَتَيْنِ ، طَوِيْلَتَيْنِ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ اَوْتَرَ فَذٰلِكَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً
২০০. যায়েদ ইবনে খালিদ আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত গভীর মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করার ইচ্ছা করলাম। তাই আমি তাঁর বাড়ি অথবা তাঁবুর চৌকাঠের উপর মাথা ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমে সংক্ষেপে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর তদপেক্ষা সংক্ষেপে ২ রাক‘আত, এরপর তার চেয়ে সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত এবং তার চেয়ে সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তারপর বিতর আদায় করেন। এভাবে ১৩ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৬; আবু দাউদ, হা/১৩৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে ‘ঘর অথবা তাঁবুর চৌকাঠের উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকার কথা’ বলা হয়েছে। বর্ণনাকারীর সন্দেহ হয়ে গেছে সাহাবী যায়েদ (রাঃ) ঘর শব্দ বলেছেন না তাঁবু শব্দ বলেছেন। এটা হচ্ছে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের অধিক সতর্কতার পরিচয়। তাঁরা সামান্য একটু সন্দেহ হলেও তা প্রকাশ করেছেন। তবে এখানে ঘর শব্দ না হয়ে তাঁবু শব্দটিই হবে। কারণ মুহাদ্দিসগণের মতে এটা কোন এক সফরের ঘটনা ছিল। তখন তাঁর সাথে স্ত্রীদের কেউ ছিলেন না। এজন্য যায়েদ ইবনে খালেদ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাতের আমল পর্যবেক্ষণ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান মাসে ১১ রাক‘আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন :
عَنْ اَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ ، اَنَّهٗ اَخْبَرَهٗ اَنَّهٗ سَاَلَ عَائِشَةَ ، كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُوْلِ اللهِ فِي رَمَضَانَ ؟ فَقَالَتْ : مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لِيَزِيْدَ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهٖ عَلٰى اِحْدٰى عَشْرَةَ رَكْعَةً ، يُصَلِّيْ اَرْبَعًا لَا تَسْاَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّيْ اَرْبَعًا لَا تَسْاَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّيْ ثَلَاثًا ، قَالَتْ عَائِشَةُ : قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَتَنَامُ قَبْلَ اَنْ تُوْتِرَ ؟ فَقَالَ : يَا عَائِشَةُ ، اِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلَا يَنَامُ قَلْبِيْ
২০১. আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আয়েশা (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান মাসে কত রাক‘আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান অথবা অন্য সময় ১১ রাক‘আতের বেশি আদায় করতেন না। প্রথমে ৪ রাক‘আত আদায় করতেন। কী রকম একাগ্রতা নিয়ে ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন সে বিষয়ে তুমি জিজ্ঞেস করো না। তারপর আবার ৪ রাক‘আত আদায় করেন। তবে এর একাগ্রতা ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর ৩ রাক‘আত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের পূর্বে কি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, আমার চোখ নিদ্রা যায় কিন্তু অন্তর নিদ্রা যায় না। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৩; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৭; আবু দাউদ, হা/১৩৪৩।]
তিনি ১ রাক‘আত বিতর আদায় করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ اِحْدٰى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُوْتِرُ مِنْهَا بِوَاحِدَةٍ ، فَاِذَا فَرَغَ مِنْهَا اضْطَجَعَ عَلٰى شِقِّهِ الْاَيْمَنِ
২০২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রে ১১ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, যার মধ্যে ১ রাক‘আত হতো বিতর। যখন সালাত শেষে করতেন তখন তিনি ডান কাতে আরাম করতেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬২; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫১; আবু দাউদ, হা/১৩৩৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১১৬; বায়হাকী, হা/৪৫৫১।]
কখনো কখনো তিনি রাতে ৯ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ تِسْعَ رَكَعَاتٍ
২০৩. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রে ৯ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৩; সুনানে নাসাঈ, হা/১৭২৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৬৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬১৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এক রাতের সালাতের বিবরণ :
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ، اَنَّهٗ صَلّٰى مَعَ النَّبِيِّ مِنَ اللَّيْلِ قَالَ : فَلَمَّا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ قَالَ : اَللهُ اَكْبَرُ ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ قَالَ : ثُمَّ قَرَاَ الْبَقَرَةَ ، ثُمَّ رَكَعَ رُكُوْعَهٗ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهٖ وَكَانَ يَقُوْلُ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ فَكَانَ قِيَامُهٗ نَحْوًا مِنْ رُكُوْعِهٖ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ، لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ثُمَّ سَجَدَ فَكَانَ سُجُوْدُهٗ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهٖ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ ، فَكَانَ مَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ نَحْوًا مِنَ السُّجُوْدِ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ حَتّٰى قَرَاَ الْبَقَرَةَ وَاٰلَ عِمْرَانَ وَالنِّسَاءَ وَالْمَائِدَةَ اَوِ الْاَنْعَامَ شُعْبَةُ الَّذِيْ شَكَّ فِي الْمَائِدَةِ وَالاَنْعَامِ
২০৪. হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে রাত্রে সালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, যখন তিনি সালাত আরম্ভ করলেন, তখন বললেন,
اَللهُ اَكْبَرُ ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
‘‘আল্ল-হু আকবার যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল ‘আযামাহ্’’
অর্থাৎ আল্লাহ মহান, রাজাধিরাজ, অসীম শক্তির অধিকারী, বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য তাঁরই জন্য।
তারপর তিনি (সূরা ফাতিহার পর) সূরা বাকারা তিলাওয়াত করেন। এরপর কিয়ামের ন্যায় দীর্ঘ রুকূ করেন। তিনি তাতে বলেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ
‘‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’’, ‘‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’’
অর্থাৎ আমার প্রভু পুত-পবিত্র ও মহান; আমার প্রভু পুত-পবিত্র ও মহান।
তারপর মাথা উঠালেন এবং তাঁর কিয়াম রুকূ‘র ন্যায় দীর্ঘ হলো। এরপর বললেন,
لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ، لِرَبِّيَ الْحَمْدُ
‘‘লিরবিবয়াল হাম্দ, লিরবিবয়াল হাম্দ’’
অর্থাৎ সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য; সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য।
তারপর তিনি সিজদা করলেন, আর তার সিজদা কিয়ামের মতো দীর্ঘ হলো। তিনি বললেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى
‘‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা, সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’’
অর্থাৎ আমার প্রভু পবিত্র ও মহান, আমার প্রভূ পবিত্র ও মহান।
তারপর মাথা উঠালেন (অর্থাৎ সিজদা হতে উঠে বসেন)। আর ২ সিজদার মধ্যকার সময় ছিল সিজদায় থাকা সময়ের ব্যবধানের মতো। এ সময় তিনি বলতেন,
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
‘‘রবিবগ্ ফিরলী’’, ‘‘রবিবগ্ ফিরলী’’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো; হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো।
এমনকি তিনি সূরা বাক্বারা, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদা অথবা আনআম তিলাওয়াত করেন। বর্ণনাকারী সূরা মায়েদা না আনআম পর্যন্ত তিলাওয়াত করেছেন সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪২৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের মধ্যে একটি আয়াত বারবার তিলাওয়াত করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَامَ رَسُوْلُ اللهِ بِاٰيَةٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ لَيْلَةً
২০৫. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি আয়াত (পুনরাবৃত্তি করে) তিলাওয়াত করতে থাকেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৯১৪।]
ব্যাখ্যা : আয়াতটি ছিল :
﴿إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيْمُ﴾
(হে আল্লাহ!) তুমি যদি শাস্তি দিতে ইচ্ছা করো, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদের ক্ষমা করে দাও, তাহলে তুমি তো মহা পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আল মায়েদা- ১১৮)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার দুটি গুণ ইনসাফ ও মাগফিরাতের বর্ণনা করা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দুটি গুণের প্রতি লক্ষ্য করেই বারবার আয়াতটি পাঠ করেন। কিয়ামত দিবসের পুরো অবস্থা এ দুটো গুণেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
রাসূলুল্লাহ ﷺ দীর্ঘ সময় যাবৎ কিয়াম করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ : صَلَّيْتُ لَيْلَةً مَعَ رَسُوْلِ اللهِ فَلَمْ يَزَلْ قَائِمًا حَتّٰى هَمَمْتُ بِاَمْرِ سُوْءٍ قِيلَ لَهٗ : وَمَا هَمَمْتَ بِهٖ ؟ قَالَ : هَمَمْتُ اَنْ اَقْعُدَ وَاَدَعَ النَّبِيَّ
২০৬. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করি। তিনি এত দীর্ঘ (সময়) কিয়াম করেন যে, আমি একটি খারাপ কাজ করার সংকল্প করে বসি। তাকে বলা হলো আপনি কি করতে চেয়েছিলেন? তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে ছেড়ে বসে পড়ার ইচ্ছা করেছিলাম। [সহীহ বুখারী, হা/১১৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯৩৭; বায়হাকী, হা/৪৪৬০।]
বসে সালাত আদায় করলে তিলাওয়াতও বসে করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُصَلِّيْ جَالِسًا فَيَقْرَأُ وَهُوَ جَالِسٌ ، فَاِذَا بَقِيَ مِنْ قِرَاءَتِهٖ قَدْرُ مَا يَكُوْنُ ثَلَاثِيْنَ اَوْ اَرْبَعِيْنَ اٰيَةً ، قَامَ فَقَرَاَ وَهُوَ قَائِمٌ ، ثُمَّ رَكَعَ وَسَجَدَ ، ثُمَّ صَنَعَ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذٰلِكَ
২০৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী ﷺ বসে সালাত আদায় করলে তিলাওয়াতও বসে করতেন। যখন মাত্র ৩০ অথবা ৪০ আয়াত বাকী থাকত তখন দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতেন তারপর রুকূ ও সিজদা করতেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতও অনুরূপভাবে আদায় করতেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৩১১; সহীহ বুখারী, হা/১১১৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৯; আবু দাউদ, হা/৯৫৫।]
দাঁড়িয়ে কিরাআত পাঠ করলে রুকূ-সিজদাও দাঁড়ানো অবস্থাতেই করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ عَنْ تَطَوُّعِهٖ ، فَقَالَتْ : كَانَ يُصَلِّيْ لَيْلًا طَوِيْلًا قَائِمًا ، وَلَيْلًا طَوِيْلًا قَاعِدًا ، فَاِذَا قَرَاَ وَهُوَ قَائِمٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَائِمٌ ، وَاِذَا قَرَاَ وَهُوَ جَالِسٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ جَالِسٌ
২০৮. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি দীর্ঘ রাত্রি দাঁড়িয়ে কিংবা দীর্ঘ রাত্রি বসে সালাত আদায় করতেন। তিনি দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়লে রুকূ-সিজদাও দাঁড়ানো অবস্থাতেই করতেন। আবার যখন কিরাআত বসে পড়তেন, তখন বসা অবস্থাতেই রুকূ-সিজদা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৬; আবু দাউদ, হা/৯৫৬; ইবনে মাজাহ, হা/১২২৮; ইবনে খুযাইমা, হা/১২৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৩১ ।]
ব্যাখ্যা : সাধারণত রাসূলুল্লাহ ﷺ নফল নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতেন। আবার কখনো কখনো বসেও আদায় করতেন। অধিকাংশ আলেমের মতে নফল নামায দাঁড়িয়ে, বসে, কিছু দাঁড়িয়ে কিছু বসে, সব অবস্থায় আদায় করা জায়েয। এমনকি বসে নামায শুরু করার পর দাঁড়িয়ে রুকূ-সিজদা করা। এমনিভাবে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে বসে রুকূ-সিজদা করাও বৈধ। তবে ফরয নামাযে দাঁড়ানোর শক্তি থাকলে বসে আদায় করা জায়েয নয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তারতীল সহকারে কিরাআত পাঠ করতেন :
عَنْ حَفْصَةَ ، زَوْجِ النَّبِيِّ قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّيْ فِيْ سُبْحَتِهٖ قَاعِدًا وَيَقْرَأُ بِالسُّوْرَةِ وَيُرَتِّلُهَا حَتّٰى تَكُوْنَ اَطْوَلَ مِنْ اَطْوَلَ مِنْهَا
২০৯. নবী ﷺ এর স্ত্রী হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ নফল সালাত বসে আদায় করতেন। তাতে তারতীল (তাজবীদ) সহকারে কিরাআত পাঠ করতেন। ফলে তা দীর্ঘ সূরার চেয়ে দীর্ঘতর মনে হতো। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৩০৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৪৬; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৫৮; ইবনে খুযাইমা, হা/১২৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫০৮; দারেমী, হা/১৩৮৫।]
নবী ﷺ মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ،قَالَتْ : اَنَّ النَّبِيَّ لَمْ يَمُتْ حَتّٰى كَانَ اَكْثَرُ صَلَاتِهٖ وَهُوَ جَالِسٌ
২১০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৪৫; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৭৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৩৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১৮৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ৮ রাক‘আত সুন্নতের বর্ণনা :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ فِي بَيْتِهٖ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ فِي بَيْتِهٖ
২১১. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত, মাগরিবের পর ঘরে ২ রাক‘আত এবং এশার পরে তাঁর ঘরে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫০৬; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৮২৩।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসে যোহরের ফরযের পূর্বে ২ রাক‘আত সুন্নতের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য হাদীস থেকে ৪ রাক‘আত সুন্নতের প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- জামে তিরমিযীতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের পূর্বে ৪ রাক‘আত এবং যোহরের পরে চার রাক‘আত সুন্নত পড়তেন। এজন্য ৪ রাক‘আত বা ২ রাক‘আত উভয়ই আদায় করা জায়েয আছে। তাছাড়া এ হাদীসে ফজরের সুন্নতের কথা উল্লেখ করা হয় নাই, যা রাবীর অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ আযানের পর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : حَدَّثَتْنِي حَفْصَةُ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ حِيْنَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ وَيُنَادِي الْمُنَادِي قَالَ اَيُّوْبُ : وَأُرَاهٗ قَالَ : خَفِيْفَتَيْنِ
২১২. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাফসা (রাঃ) আমাকে (এ মর্মে) হাদীস শোনান যে, সুবহে সাদিকের সময় যখন মুয়ায্যিন আযান দিত, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ ২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন। আইয়ূব বলেন, আমি মনে করি তিনি خَفِيفَتَيْنِ (সংক্ষিপ্ত ২ রাক‘আত) বলেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫০৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৬৭; মুসনাদে মুস্তাখরাজ ‘আলাস সহীহাইন, হা/১৬৩৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ১০ রাক‘আত সুন্নতের বিবরণ :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ : رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ قَالَ ابْنُ عُمَرَ : وَحَدَّثَتْنِي حَفْصَةُ بِرَكْعَتَيِ الْغَدَاةِ ، وَلَمْ اَكُنْ اَرَاهُمَا مِنَ النَّبِيِّ
২১৩. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে ৮ রাক‘আত স্মরণ রেখেছি- যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত, ২ রাক‘আত মাগরিবের পরে এবং ২ রাক‘আত এশার পরে। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, হাফসা (রাঃ) আমার কাছে ফজরের ২ রাক‘আতের খরব দিয়েছেন। অথচ আমি নবী ﷺ কে তা আদায় করতে দেখিনি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৮০; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/১৯৯৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৮২৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ قَالَ : سَاَلتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ النَّبِيِّ قَالَتْ : كَانَ يُصَلِّيْ قَبْلَ الظُّهْرِ رَكْعَتَيْنِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ ، وَبَعْدَ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ ، وَبَعْدَ الْعِشَاءِ رَكْعَتَيْنِ ، وَقَبْلَ الْفَجْرِ ثِنْتَيْنِ
২১৪. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে নবী ﷺ এর (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি ﷺ যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত এবং পরে ২ রাক‘আত, মাগরিবের পরে ২ রাক‘আত, এশার পরে ২ রাক‘আত এবং ফজরের পূর্বে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৭০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিনের ১৬ রাক‘আত নফল সালাতের বিবরণ :
عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ يَقُوْلُ : سَاَلْنَا عَلِيًّا ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ مِنَ النَّهَارِ ، فَقَالَ : اِنَّكُمْ لَا تُطِيْقُوْنَ ذٰلِكَ قَالَ : فَقُلْنَا : مَنْ اَطَاقَ ذٰلِكَ مِنَّا صَلّٰى ، فَقَالَ : كَانَ اِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا كَهَيْئَتِهَا مِنْ هَاهُنَا عِنْدَ الْعَصْرِ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ ، وَاِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَهُنَا كَهَيْئَتِهَا مِنْ هَاهُنَا عِنْدَ الظُّهْرِ صَلّٰى اَرْبَعًا ، وَيُصَلِّي قَبْلَ الظُّهْرِ اَرْبَعًا ، وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ ، وَقَبْلَ الْعَصْرِ اَرْبَعًا ، يَفْصِلُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ بِالتَّسْلِيْمِ عَلَى الْمَلَائِكَةِ الْمُقَرَّبِيْنَ وَالنَّبِيِّيْنَ ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ
২১৫. আসিম ইবনে যামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আলী (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিনের (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তোমরা সেভাবে আদায় করার ক্ষমতা রাখ না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে আদায় করবে। এরপর তিনি বললেন, আসরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে তেমন হলে তিনি ২ রাক‘আত (ইশরাক সালাত) আদায় করতেন। আবার যোহরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে (পূর্ব দিকে সূর্য ততটা উপর হলে) তিনি ৪ রাক‘আত (চাশতের সালাত) আদায় করতেন। যোহরের পূর্বে ৪ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত এবং আসরের পূর্বে ৪ রাক‘আত আদায় করতেন। প্রতি ২ রাক‘আতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, নবীগণ এবং যেসকল মুমিন-মুসলিম তাদের অনুসরণ করেছেন তাদের প্রতি সালাম প্রেরণের মাধ্যমে ব্যবধান করতেন। [সুনানে নাসাঈ, হা/৮৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭৭; বায়হাকী, হা/৪৬৯৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৩৭।]
ব্যাখ্যা : নবী, ফেরেশতা এবং মুমিনদের প্রতি সালাম পাঠ করার অর্থ হলো, আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা। কেননা, এতে তাদের প্রতি সালাম পাঠ করা হয়। অথবা সালামের অর্থ ২ রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা। তখন উদ্দেশ্য হবে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আসরের পূর্বে ২ রাক‘আত করে ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন।
بَابُ صَلَاةِ الضُّحٰى
الضُّحٰى (দ্বোহা) অর্থ সকালবেলা বা দিনের প্রথম প্রহর। হাদীসে ইশরাক ও চাশত উভয় নামাযকে বুঝাতে ‘সালাতুয দ্বোহা’ শব্দ এসেছে। সূর্য উদয়ের সময় নিষিদ্ধ ওয়াক্তের পর হতে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে দ্বোহা বলা হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ৪ রাক‘আত চাশতের সালাত আদায় করতেন :
عَنْ مُعَاذَةَ ، قَالَتْ : قُلْتُ لِعَائِشَةَ : اَكَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّي الضُّحٰى ؟ قَالَتْ : نَعَمْ ، اَرْبَعَ رَكَعَاتٍ وَيَزِيْدُ مَا شَاءَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ
২১৬. মু‘আযা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী ﷺ কি চাশতের সালাত আদায় করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ- ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আল্লাহ চাইলে কখনো কখনো বেশিও পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৮২; বায়হাকী, হা/৪৬৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫২৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০০৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬ রাক‘আতও চাশতের সালাত আদায় করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُصَلِّي الضُّحٰى سِتَّ رَكَعَاتٍ
২১৭. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬ রাক‘আত চাশতের সালাত আদায় করতেন। [মু‘জামুল আওসাত, হা/১২৭৬; জামেউস সগীর, হা/৯০৯১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা বিজয়ের দিন ৮ রাক‘আত চাশতের সালাত আদায় করেছিলেন :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ اَبِيْ لَيْلٰى قَالَ : مَا اَخْبَرَنِيْ اَحَدٌ ، اَنَّهٗ رَاَى النَّبِيَّ يُصَلِّي الضُّحٰى اِلَّا أُمُّ هَانِئٍ ، فَاِنَّهَا حَدَّثَتْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ دَخَلَ بَيْتَهَا يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ فَاغْتَسَلَ فَسَبَّحَ ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ مَا رَاَيْتُهٗ صَلّٰى صَلَاةً قَطُّ اَخَفَّ مِنْهَا ، غَيْرَ اَنَّهٗ كَانَ يُتِمُّ الرُّكُوْعَ وَالسُّجُوْدَ
২১৮. আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একমাত্র উম্মে হানী (রাঃ) ছাড়া কেউই রাসূলুল্লাহ ﷺ কে চাশতের সালাত আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাকে বলেননি। উম্মে হানী (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা বিজয়ের দিন আমার ঘরে আসেন এবং গোসল করে ৮ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে সালাত আদায় করতে আমি আর কখনো দেখিনি। অবশ্য তা সত্ত্বেও তিনি যথারীতি রুকূ-সিজদা আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭০০; ইবনে খুযাইমা, হা/১২৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৯৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০০০; দারেমী, হা/১৪৫২; বায়হাকী, হা/৪৬৮১।]
ব্যাখ্যা : আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লার উক্তি আমাকে উম্মু হানী (রাঃ) ছাড়া আর কেউ রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে চাশতের সালাত আদায় করতে দেখেছেন বলে অবহিত করেননি- এর দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় না যে, উম্মু হানী (রাঃ) ছাড়া অন্য কোন সাহাবী চাশতের সালাত সম্পর্কে জানতেন না। ইবনে জারীর (রহ.) বলেছেন, চাশতের সালাত সম্পর্কিত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত। এটা হতে পারে যাদেরকে আবদুর রহমান ইবনে আবী লায়লা জিজ্ঞেস করেছেন, তাঁদের মাঝে উম্মু হানী (রাঃ) ছাড়া আর কেউ দেখেননি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সফর থেকে ফিরে আসলে আগে সালাত আদায় করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ قَالَ : قُلْتُ لِعَائِشَةَ : اَكَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّي الضُّحٰى ؟ قَالَتْ : لَا اِلَّا اَنْ يَجِيءَ مِنْ مَغِيْبِهٖ
২১৯. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি চাশ্তের সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, কোন সফর হতে ফিরে আসলে সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯৪; আবু দাউদ, হা/১২৯৪; সুনানে নাসাঈ, হা/২১৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪২৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২১৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫২৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৭৮৭০।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এটা অভ্যাস ছিল যে, সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে সকাল বেলা মদিনায় প্রবেশ করতেন এবং সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে নফল সালাত আদায় করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সূর্য ঢলে পড়ার পর ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন :
عَنْ اَبِيْ اَيُّوْبَ الْاَنْصَارِيِّ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُدْمِنُ اَرْبَعَ رَكَعَاتٍ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنَّكَ تُدْمِنُ هٰذِهِ الْاَرْبَعَ رَكَعَاتٍ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَقَالَ : اِنَّ اَبْوَابَ السَّمَاءِ تُفْتَحُ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَلَا تُرْتَجُ حَتّٰى تُصَلّٰى الظُّهْرُ ، فَأُحِبُّ اَنْ يَصْعَدَ لِيْ فِيْ تِلْكَ السَّاعَةِ خَيْرٌ قُلْتُ : اَفِيْ كُلِّهِنَّ قِرَاءَةٌ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قُلْتُ : هَلْ فِيْهِنَّ تَسْلِيْمٌ فَاصِلٌ ؟ قَالَ : لَا
২২০. আবু আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সূর্য হেলে গেলে ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সূর্য হেলে গেলে (গুরুত্বের সঙ্গে) ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সূর্য হেলার পর আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং যোহরের সময় পর্যন্ত তা খোলা থাকে। আমি চাই এ সময় আমার কোন ভালো কাজ আকাশে পৌঁছুক। আমি বললাম, এর প্রতি রাক‘আতেই কি কিরাআত পড়তে হয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, ২ রাক‘আতের পর সালাম ফিরাতে হয় কি? তিনি বললেন, না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৫৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/১১৫৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৯৩০; বায়হাকী, হা/৪৩৫৫; জামেউস সগীর, হা/২৪১২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৮১৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ السَّائِبِ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْ اَرْبَعًا بَعْدَ اَنْ تَزُولَ الشَّمْسُ قَبْلَ الظُّهْرِ وَقَالَ : اِنَّهَا سَاعَةٌ تُفْتَحُ فِيْهَا اَبْوَابُ السَّمَاءِ ، فَأُحِبُّ اَنْ يَصْعَدَ لِيْ فِيْهَا عَمَلٌ صَالِحٌ
২২১. আবদুল্লাহ ইবনে সায়িব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ সূর্য হেলার পর হতে যোহরের পূর্ব পর্যন্ত ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, এ সময় আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। আমার একান্ত ইচ্ছা, এ সময় আমার কোন সৎকাজ আল্লাহর দরবারে পৌঁছুক। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৭৯০।]
عَنْ عَلِيٍّ ، اَنَّهٗ كَانَ يُصَلِّيْ قَبْلَ الظُّهْرِ اَرْبَعًا ، وَذَكَرَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْهَا عِنْدَ الزَّوَالِ وَيَمُدُّ فِيْهَا
২২২. আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি যোহরের পূর্বে ৪ রাক‘আত আদায় করতেন এবং বলতেন যে, সূর্য হেলার সময় নবী ﷺ এ সালাত আদায় করতেন এবং তাতে দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করতেন। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৩৩৩।]
ব্যাখ্যা : মুহাদ্দিসগণের মতে এখানে যোহরের ফরযের পূর্বের ৪ রাক‘আত সুন্নতের কথা বলা হয়েছে। কারণ সূর্য ঢলার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সুন্নত ছাড়া আর কোন নফল নামায নিয়মিত পড়তেন না। যদিও কেউ কেউ এটা ‘‘সালাতুয যাওয়াল’’ বলে উল্লেখ করেছেন, তবে এর কোন ভিত্তি নেই।
بَابُ صَلَاةِ التَّطَوُّعِ فِي الْبَيْتِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ ৪ রাক‘আত চাশতের সালাত আদায় করতেন :
عَنْ مُعَاذَةَ ، قَالَتْ : قُلْتُ لِعَائِشَةَ : اَكَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّي الضُّحٰى ؟ قَالَتْ : نَعَمْ ، اَرْبَعَ رَكَعَاتٍ وَيَزِيْدُ مَا شَاءَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ
২১৬. মু‘আযা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী ﷺ কি চাশতের সালাত আদায় করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ- ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আল্লাহ চাইলে কখনো কখনো বেশিও পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৮২; বায়হাকী, হা/৪৬৭৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫২৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০০৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬ রাক‘আতও চাশতের সালাত আদায় করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُصَلِّي الضُّحٰى سِتَّ رَكَعَاتٍ
২১৭. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬ রাক‘আত চাশতের সালাত আদায় করতেন। [মু‘জামুল আওসাত, হা/১২৭৬; জামেউস সগীর, হা/৯০৯১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা বিজয়ের দিন ৮ রাক‘আত চাশতের সালাত আদায় করেছিলেন :
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ اَبِيْ لَيْلٰى قَالَ : مَا اَخْبَرَنِيْ اَحَدٌ ، اَنَّهٗ رَاَى النَّبِيَّ يُصَلِّي الضُّحٰى اِلَّا أُمُّ هَانِئٍ ، فَاِنَّهَا حَدَّثَتْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ دَخَلَ بَيْتَهَا يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ فَاغْتَسَلَ فَسَبَّحَ ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ مَا رَاَيْتُهٗ صَلّٰى صَلَاةً قَطُّ اَخَفَّ مِنْهَا ، غَيْرَ اَنَّهٗ كَانَ يُتِمُّ الرُّكُوْعَ وَالسُّجُوْدَ
২১৮. আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একমাত্র উম্মে হানী (রাঃ) ছাড়া কেউই রাসূলুল্লাহ ﷺ কে চাশতের সালাত আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাকে বলেননি। উম্মে হানী (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা বিজয়ের দিন আমার ঘরে আসেন এবং গোসল করে ৮ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে সালাত আদায় করতে আমি আর কখনো দেখিনি। অবশ্য তা সত্ত্বেও তিনি যথারীতি রুকূ-সিজদা আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১০৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭০০; ইবনে খুযাইমা, হা/১২৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৯৪৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০০০; দারেমী, হা/১৪৫২; বায়হাকী, হা/৪৬৮১।]
ব্যাখ্যা : আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লার উক্তি আমাকে উম্মু হানী (রাঃ) ছাড়া আর কেউ রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে চাশতের সালাত আদায় করতে দেখেছেন বলে অবহিত করেননি- এর দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় না যে, উম্মু হানী (রাঃ) ছাড়া অন্য কোন সাহাবী চাশতের সালাত সম্পর্কে জানতেন না। ইবনে জারীর (রহ.) বলেছেন, চাশতের সালাত সম্পর্কিত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত। এটা হতে পারে যাদেরকে আবদুর রহমান ইবনে আবী লায়লা জিজ্ঞেস করেছেন, তাঁদের মাঝে উম্মু হানী (রাঃ) ছাড়া আর কেউ দেখেননি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সফর থেকে ফিরে আসলে আগে সালাত আদায় করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ قَالَ : قُلْتُ لِعَائِشَةَ : اَكَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّي الضُّحٰى ؟ قَالَتْ : لَا اِلَّا اَنْ يَجِيءَ مِنْ مَغِيْبِهٖ
২১৯. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি চাশ্তের সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, কোন সফর হতে ফিরে আসলে সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯৪; আবু দাউদ, হা/১২৯৪; সুনানে নাসাঈ, হা/২১৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪২৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২১৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫২৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৭৮৭০।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এটা অভ্যাস ছিল যে, সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে সকাল বেলা মদিনায় প্রবেশ করতেন এবং সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে নফল সালাত আদায় করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সূর্য ঢলে পড়ার পর ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন :
عَنْ اَبِيْ اَيُّوْبَ الْاَنْصَارِيِّ ، اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُدْمِنُ اَرْبَعَ رَكَعَاتٍ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنَّكَ تُدْمِنُ هٰذِهِ الْاَرْبَعَ رَكَعَاتٍ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَقَالَ : اِنَّ اَبْوَابَ السَّمَاءِ تُفْتَحُ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَلَا تُرْتَجُ حَتّٰى تُصَلّٰى الظُّهْرُ ، فَأُحِبُّ اَنْ يَصْعَدَ لِيْ فِيْ تِلْكَ السَّاعَةِ خَيْرٌ قُلْتُ : اَفِيْ كُلِّهِنَّ قِرَاءَةٌ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قُلْتُ : هَلْ فِيْهِنَّ تَسْلِيْمٌ فَاصِلٌ ؟ قَالَ : لَا
২২০. আবু আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সূর্য হেলে গেলে ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সূর্য হেলে গেলে (গুরুত্বের সঙ্গে) ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সূর্য হেলার পর আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং যোহরের সময় পর্যন্ত তা খোলা থাকে। আমি চাই এ সময় আমার কোন ভালো কাজ আকাশে পৌঁছুক। আমি বললাম, এর প্রতি রাক‘আতেই কি কিরাআত পড়তে হয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, ২ রাক‘আতের পর সালাম ফিরাতে হয় কি? তিনি বললেন, না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৫৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/১১৫৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৯৩০; বায়হাকী, হা/৪৩৫৫; জামেউস সগীর, হা/২৪১২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৮১৪।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ السَّائِبِ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْ اَرْبَعًا بَعْدَ اَنْ تَزُولَ الشَّمْسُ قَبْلَ الظُّهْرِ وَقَالَ : اِنَّهَا سَاعَةٌ تُفْتَحُ فِيْهَا اَبْوَابُ السَّمَاءِ ، فَأُحِبُّ اَنْ يَصْعَدَ لِيْ فِيْهَا عَمَلٌ صَالِحٌ
২২১. আবদুল্লাহ ইবনে সায়িব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ সূর্য হেলার পর হতে যোহরের পূর্ব পর্যন্ত ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, এ সময় আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। আমার একান্ত ইচ্ছা, এ সময় আমার কোন সৎকাজ আল্লাহর দরবারে পৌঁছুক। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৭৯০।]
عَنْ عَلِيٍّ ، اَنَّهٗ كَانَ يُصَلِّيْ قَبْلَ الظُّهْرِ اَرْبَعًا ، وَذَكَرَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْهَا عِنْدَ الزَّوَالِ وَيَمُدُّ فِيْهَا
২২২. আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি যোহরের পূর্বে ৪ রাক‘আত আদায় করতেন এবং বলতেন যে, সূর্য হেলার সময় নবী ﷺ এ সালাত আদায় করতেন এবং তাতে দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করতেন। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৩৩৩।]
ব্যাখ্যা : মুহাদ্দিসগণের মতে এখানে যোহরের ফরযের পূর্বের ৪ রাক‘আত সুন্নতের কথা বলা হয়েছে। কারণ সূর্য ঢলার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সুন্নত ছাড়া আর কোন নফল নামায নিয়মিত পড়তেন না। যদিও কেউ কেউ এটা ‘‘সালাতুয যাওয়াল’’ বলে উল্লেখ করেছেন, তবে এর কোন ভিত্তি নেই।
بَابُ صَلَاةِ التَّطَوُّعِ فِي الْبَيْتِ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ : سَاَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ عَنِ الصَّلَاةِ فِيْ بَيْتِيْ وَالصَّلَاةِ فِي الْمَسْجِدِ قَالَ : قَدْ تَرٰى مَا اَقْرَبَ بَيْتِيْ مِنَ الْمَسْجِدِ ، فَلَاَنْ أُصَلِّيَ فِيْ بَيْتِيْ اَحَبُّ اِلَيَّ مِنْ اَنْ أُصَلِّيَ فِي الْمَسْجِدِ اِلَّا اَنْ تَكُوْنَ صَلَاةً مَكْتُوْبَةً
২২৩. আবদুল্লাহ ইবনে সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, নফল সালাত আমার ঘরে পড়া ভালো, না মসজিদে পড়া ভালো? তিনি বললেন, তুমি দেখছ না আমার ঘর কত নিকটে, তা সত্ত্বেও ফরয সালাত মসজিদে পড়া ছাড়া অন্যান্য সালাত আমি ঘরে পড়াই উত্তম মনে করি। [ইবনে খুযাইমা, হা/১২০২; মু‘জামুস সাহাবা, হা/১৫৫৮; আল আহাদ ওয়াল মাছানী, হা/৮৬৫; শারহুল মা‘আনী, হা/১৯৯৪।]
ব্যাখ্যা : নফল সালাত ঘরে আদায় করাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিভিন্ন বাণী ও কর্ম থেকে বিষয়টি প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা তোমাদের ঘরকে ক্ববর বানিয়ে নিও না। অর্থাৎ যেমনিভাবে কবরে সালাত আদায় করা হয় না তেমনিভাবে ঘরে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থেকো না। ফরয সালাত মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করবে এবং নফল সালাত ঘরে আদায় করে নেবে।
بَابُ مَا جَاءَ فِي صَوْمِ رَسُوْلِ اللهِ
২২৩. আবদুল্লাহ ইবনে সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, নফল সালাত আমার ঘরে পড়া ভালো, না মসজিদে পড়া ভালো? তিনি বললেন, তুমি দেখছ না আমার ঘর কত নিকটে, তা সত্ত্বেও ফরয সালাত মসজিদে পড়া ছাড়া অন্যান্য সালাত আমি ঘরে পড়াই উত্তম মনে করি। [ইবনে খুযাইমা, হা/১২০২; মু‘জামুস সাহাবা, হা/১৫৫৮; আল আহাদ ওয়াল মাছানী, হা/৮৬৫; শারহুল মা‘আনী, হা/১৯৯৪।]
ব্যাখ্যা : নফল সালাত ঘরে আদায় করাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিভিন্ন বাণী ও কর্ম থেকে বিষয়টি প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা তোমাদের ঘরকে ক্ববর বানিয়ে নিও না। অর্থাৎ যেমনিভাবে কবরে সালাত আদায় করা হয় না তেমনিভাবে ঘরে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থেকো না। ফরয সালাত মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করবে এবং নফল সালাত ঘরে আদায় করে নেবে।
بَابُ مَا جَاءَ فِي صَوْمِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صِيَامِ رَسُوْلِ اللهِ ، قَالَتْ : كَانَ يَصُوْمُ حَتّٰى نَقُوْلَ قَدْ صَامَ ، وَيُفْطِرُ حَتّٰى نَقُوْلَ قَدْ اَفْطَرَ . قَالَتْ : وَمَا صَامَ رَسُوْلُ اللهِ شَهْرًا كَامِلًا مُنْذُ قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ اِلَّا رَمَضَانَ
২২৪. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তাতে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (ক্রমাগত) রোযা রাখতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি বুঝি অনবরত রোযা রেখেই যাবেন। আর যখন ইফতার করতেন, তখন আমরা বলতাম, তিনি হয়তো আর রোযা রাখবেন না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, মদিনায় হিজরতের পর রমাযান মাস ছাড়া আর কোন সময় তিনি পূর্ণ মাস রোযা রাখতেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/২৭৭৫; সুনানে নাসাঈ, হা/২৩৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৭৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৮০৯; মুসনাদে আবু ‘আওয়ানা, হা/২৯৩৮।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন নিয়মে রোযা রেখেছেন। তিনি কখনো কখনো একটানা অনেক দিন রোযা রাখতেন আবার বিরতিও দিতেন। তবে কোন মাস নফল রোযা থেকে খালি যেত না। তিনি মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّهٗ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ النَّبِيِّ ، فَقَالَ : كَانَ يَصُوْمُ مِنَ الشَّهْرِ حَتّٰى نَرٰى اَنْ لَا يُرِيْدَ اَنْ يُفْطِرَ مِنْهُ ، وَيُفْطِرُ مِنْهُ حَتّٰى نَرٰى اَنْ لَا يُرِيْدَ اَنْ يَصُوْمَ مِنْهُ شَيْئًا . وَكُنْتَ لَا تَشَاءُ اَنْ تَرَاهٗ مِنَ اللَّيْلِ مُصَلِّيًا اِلَّا رَاَيْتَهٗ مُصَلِّيًا ، وَلَا نَائِمًا اِلَّا رَاَيْتَهٗ نَائِمًا
২২৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আনাস (রাঃ)-কে নবী ﷺ এর রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, নবী ﷺ কোন মাসে এমনভাবে রোযা রাখতেন যে, আমরা মনে করতাম- তিনি হয়তো এ মাসে আর রোযা ছাড়বেন না। আবার অনেক সময় এমনভাবে রোযা ছেড়ে দিতেন যে, আমরা মনে করতাম- তিনি আর রোযা রাখবেন না। অবস্থা এমন ছিল যে, তুমি যদি তাঁকে সালাতরত অবস্থায় দেখতে চাইতে, তবে তাঁকে সালাতরত অবস্থায়-ই দেখতে পেতে। আর যদি নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে চাইতে, তবে তাঁকে নিদ্রিত অবস্থায়-ই দেখতে পেতে। [ইবনে খুযাইমা, হা/২১৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪৯৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৫৯২; বায়হাকী, হা/৪৫১১; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬১৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৯৮৪০।]
ব্যাখ্যা : আনাস (রাঃ) এ বাক্য দ্বারা বুঝাতে চান যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সারা রাত ঘুমিয়ে কাটাতেন না, আবার সারা রাত ইবাদাতও করতেন না; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। একাংশে ঘুমাতেন আরেকাংশে নামায পড়তেন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يَصُوْمُ حَتّٰى نَقُوْلَ مَا يُرِيْدُ اَنْ يُفْطِرَ مِنْهُ ، وَيُفْطِرُ حَتّٰى نَقُوْلَ مَا يُرِيْدُ اَنْ يَصُوْمَ مِنْهُ ، وَمَا صَامَ شَهْرًا كَامِلًا مُنْذُ قَدِمَ الْمَدِينَةَ اِلَّا رَمَضَانَ
২২৬. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো এমনভাবে রোযা রাখতেন যে, আমরা বলতাম, এ মাসে হয়তো তিনি আর রোযা ভাঙ্গবেন না। যখন রোযা ছেড়ে দিতেন, তখন (তাঁর অবস্থা দেখে) আমরা বলতাম, তিনি বুঝি আর রোযা রাখবেন না। মদিনায় হিজরতের পর রমাযান মাস ছাড়া তিনি আর কখনো পূর্ণ মাস রোযা রাখেননি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৯৮; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/২৭৪৮।]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : مَا رَاَيْتُ النَّبِيَّ يَصُوْمُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ اِلَّا شَعْبَانَ وَرَمَضَانَ
২২৭. উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে রমাযান ও শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে একাধিক্রমে রোযা রাখতে দেখিনি। [সুনানে নাসাঈ, হা/২১৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬০৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭২০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০২৫।]
ব্যাখ্যা : এ কথা দ্বারা আয়েশা (রাঃ) স্পষ্টভাবে বুঝাচ্ছেন যে, সম্পূর্ণ শাবান মাস বলতে শাবানের অধিকাংশ দিন বুঝানো হয়েছে।
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : لَمْ اَرَ رَسُوْلَ اللهِ يَصُوْمُ فِيْ شَهْرٍ اَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهٖ لِلّٰهِ فِيْ شَعْبَانَ ، كَانَ يَصُوْمُ شَعْبَانَ اِلَّا قَلِيْلًا بَلْ كَانَ يَصُوْمُهٗ كُلَّهٗ
২২৮. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে শাবান মাস ছাড়া আর কোন মাসে এত অধিক রোযা রাখতে দেখিনি। তিনি শাবান মাসের অধিকাংশ দিনই রোযা রাখতেন। বরং প্রায় সারা মাসই তাঁর রোযা অবস্থায় কাটত। [সুনানে নাসাঈ, হা/২১৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৫১৬; বায়হাকী, হা/৮২১২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০২৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতি মাসে ৩টি করে রোযা রাখতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَصُوْمُ مِنْ غُرَّةِ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ اَيَامٍ وَقَلَّمَا كَانَ يُفْطِرُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
২২৯. আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতি মাসের প্রথমদিকে তিনটি করে রোযা রাখতেন। জুমু‘আর দিন খুব কমই ইফতার করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮৬০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬৪৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৮১৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৮০৩; জামেউস সগীর, হা/৯১০৩।]
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন হাদীসে প্রতি মাসে ৩ দিন রোযা রাখার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যেমন- প্রত্যেক সৎ কাজের সওয়াব দশগুণ বৃদ্ধি করা হয়, এ হিসেবে ৩টি পূর্ণ রোযার সওয়াব ১ মাসের রোযার সমপরিমান হয়। এভাবে যে ব্যক্তি প্রতি মাসে ৩ দিন রোযা রাখল সে যেন সারা বছরই রোযা রাখল।
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতি মাসে ৩ দিন রোযা রাখতেন। কখনো মাসের শুরুতে ৩ দিন রোযা রাখতেন, কখনো চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَتَحَرّٰى صَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ
২৩০. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সোম ও বৃহস্পতিবারের রোযার প্রতি খুবই খেয়াল রাখতেন। [সুনানে নাসাঈ, হা/২৩৬১; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩৯; বায়হাকী, হা/৮২৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭৯২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৪৪।]
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : تُعْرَضُ الْاَعْمَالُ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَأُحِبُّ اَنْ يُعْرَضَ عَمَلِيْ وَاَنَا صَائِمٌ
২৩১. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, সোম বা বৃহস্পতিবার দিন মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আর রোযা অবস্থায় আমার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হোক- এটা আমি পছন্দ করি। [শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৯৯।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَصُوْمُ مِنَ الشَّهْرِ السَّبْتَ وَالْاَحَدَ وَالْاثْنَيْنَ ، وَمِنَ الشَّهْرِ الْاٰخَرِ الثُّلَاثَاءَ وَالْاَرْبَعَاءَ وَالْخَمِيْسَ
২৩২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন মাসে শনি, রবি ও সোম এবং কোন মাসে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখতেন। [তাহযীবুল আছার, হা/৯৮৪; মুসনাদে উমর ইবনে খাত্তাব, হা/১২২০।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَصُوْمُ فِيْ شَهْرٍ اَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهٖ فِي شَعْبَانَ
২৩৩. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে এর চেয়ে বেশি রোযা রাখতেন না।
عَنْ يَزِيْدَ الرِّشْكِ قَالَ : سَمِعْتُ مُعَاذَةَ ، قَالَتْ : قُلْتُ لِعَائِشَةَ : اَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَصُوْمُ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ . قُلْتُ : مِنْ اَيِّهٖ كَانَ يَصُوْمُ ؟ قَالَتْ : كَانَ لَا يُبَالِيْ مِنْ اَيِّهٖ صَامَ
২৩৪. ইয়াযীদ আর রিশক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু‘আয (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, কোন কোন তারিখে রোযা রাখতেন? তিনি বললেন, কোন নির্দিষ্ট তারিখ ছিল না। সুযোগ পেলেই তিনি রোযা রাখতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/১৮০২; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৬৭৭; মুস্তাখরাকে ইবনে ‘আওয়ানা, হা/২৩৭৩; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/১৩৯৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ আশুরার রোযা রাখতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ عَاشُوْرَاءُ يَوْمًا تَصُوْمُهٗ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ ، وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَصُوْمُهٗ ، فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ صَامَهٗ وَاَمَرَ بِصِيَامِهٖ ، فَلَمَّا افْتُرِضَ رَمَضَانُ كَانَ رَمَضَانُ هُوَ الْفَرِيْضَةُ وَتُرِكَ عَاشُوْرَاءُ ، فَمَنْ شَاءَ صَامَهٗ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهٗ
২৩৫. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশুরার দিন রোযা রাখত। রাসূলুল্লাহ ﷺ -ও হিজরতের পূর্বে আশুরার রোযা রাখতেন। মদিনায় হিজরতের পরও তিনি আশুরার রোযা রাখতেন এবং এ রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর রমাযানের রোযা ফরয করা হলে তা ফরযে পরিণত হয় এবং আশুরা ছেড়ে দেয়া হয়। সুতরাং যার ইচ্ছা সে তা রাখতে পারে, আবার যার ইচ্ছা ছেড়ে দিতে পারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬৬২; সহীহ বুখারী, হা/২০০২; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৮; আবু দাউদ, হা/২৪৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬২৯২; বায়হাকী, হা/৮১৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৯৪৪৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৩১।]
ব্যাখ্যা : রমাযানের রোযার আগে আশুরার রোযা ফরয ছিল। রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পর আশুরার রোযার অপরিহার্যতা রহিত হয়ে যায়। আশুরার রোযা রাখা মুস্তাহাব। এ দিনে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে রোযা রেখেছেন এবং উম্মতকে রোযা রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং ১০ তারিখের সাথে সাথে আগের দিন তথা ৯ তারিখেও রোযা রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন। তাই মুহার্রম মাসের ৯ ও ১০ তারিখে মোট দুটি রোযা রাখা উত্তম। তবে কেবল ১০ তারিখের একটি রোযা রাখাও জায়েয আছে।
মুহার্রম মাসের কোন দিনে বা রাতে এবং আশুরার দিনে বা রাতে কোন বিশেষ নামায আদায়ের কোন প্রকার নির্দেশনা বা উৎসাহ কোন হাদীসে বর্ণিত হয়নি। এ বিষয়ক সকল কথাই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মিথ্যাবাদীরা এসব হাদীস নিজেরা তৈরি করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নামে চালিয়ে দিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আমল ছিল নিয়মিত :
عَنْ عَلْقَمَةَ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، اَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَخُصُّ مِنَ الْاَيَّامِ شَيْئًا ؟ قَالَتْ : كَانَ عَمَلُهٗ دِيْمَةً ، وَاَيُّكُمْ يُطِيْقُ مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُطِيْقُ
২৩৬. আলক্বামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি ইবাদাতের জন্য কোন দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আমল ছিল সর্বকালীন। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেমন সামর্থ্যবান ছিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন সামর্থ্যবান কেউ আছে কি? [সহীহ বুখারী, হা/১৯৮৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৫; আবু দাউদ, হা/১৩৭২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৬০৩; বায়হাকী, হা/৮২৫৫।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ وَعِنْدِيْ اِمْرَاَةٌ فَقَالَ : مَنْ هٰذِهٖ ؟ قُلْتُ : فُلَانَةُ لَا تَنَامُ اللَّيْلَ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَلَيْكُمْ مِنَ الْاعْمَالِ مَا تُطِيْقُوْنَ ، فَوَاللهِ لَا يَمَلُّ اللهُ حَتّٰى تَمَلُّوْا ، وَكَانَ اَحَبَّ ذٰلِكَ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ الَّذِيْ يَدُوْمُ عَلَيْهِ صَاحِبُهٗ
২৩৭. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে আসলেন। সে সময় জনৈক মহিলা আমার কাছে বসা ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ মহিলাটি কে? আমি বললাম, সে অমুক। সে সারা রাত বিনিদ্র অবস্থায় কাটায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করা উচিত। আল্লাহর কসম! তিনি নেকী দান করতে কখনো কুন্ঠিত হন না, যতক্ষণ না তোমরা আমলে কুন্ঠিত হও। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন কাজ করতেই পছন্দ করেন, যা লোকেরা সর্বদা করতে সামর্থ্য রাখে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪২৩৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৮২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৬৫১; বায়হাকী, হা/৪৫১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৩৩।]
عَنْ اَبِي صَالِحٍ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، وَأُمَّ سَلَمَةَ ، اَيُّ الْعَمَلِ كَانَ اَحَبَّ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ؟ قَالَتَا : مَا دِيْمَ عَلَيْهِ وَاِنْ قَلَّ
২৩৮. আবু সালিহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) ও উম্মে সালামার কাছে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে প্রিয় কাজ কোনটি ছিল? তাঁরা উভয়েই বললেন, যে আমল সব সময় করা হয়, তা যত কমই হোক না কেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪১৯; সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩২৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৮৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৮৩; বায়হাকী, হা/৪৩৪২।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাতের আমল :
عَنْ عَاصِمَ بْنَ حُمَيْدٍ قَالَ : سَمِعْتُ عَوْفَ بْنَ مَالِكٍ يَقُوْلُ : كُنْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ لَيْلَةً فَاسْتَاكَ ثُمَّ تَوَضَّاَ ثُمَّ قَامَ يُصَلِّيْ ، فَقُمْتُ مَعَهٗ فَبَدَاَ فَاسْتَفْتَحَ الْبَقَرَةَ فَلَا يَمُرُّ بِاٰيَةِ رَحْمَةٍ اِلَّا وَقَفَ فَسَاَلَ ، وَلَا يَمُرُّ بِاٰيَةِ عَذَابٍ اِلَّا وَقَفَ فَتَعَوَّذَ ، ثُمَّ رَكَعَ فَمَكَثَ رَاكِعًا بِقَدْرِ قِيَامِهٖ ، وَيَقُوْلُ فِيْ رُكُوْعِهٖ : سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ ، ثُمَّ سَجَدَ بِقَدْرِ رُكُوْعِهٖ ، وَيَقُوْلُ فِيْ سُجُوْدِهٖ : سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ ثُمَّ قَرَاَ اٰلَ عِمْرَانَ ثُمَّ سُوْرَةً سُوْرَةً يَفْعَلُ مِثْلَ ذٰلِكَ فِيْ كُلِّ رَكْعَةٍ
২৩৯. আসিম ইবনে হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আওফ ইবনে মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি মিসওয়াক করলেন। পরে ওযূ করলেন এবং সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর সঙ্গে দাঁড়ালাম। তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করলেন। এরপর রহমতের আয়াত পাঠ করে চুপ থাকলেন এবং রহমত প্রার্থনা করলেন। এরপর আযাবের আয়াত পাঠ করে চুপ থাকলেন এবং মুক্তি কামনা করেন। তারপর রুকূ করলেন এবং এ দু‘আ পাঠ করলেন,
سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
‘‘সুবহা-না যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল ‘আযামাতি।’’
অর্থাৎ আমি পবিত্রতা ঘোষণা করছি ঐ সত্তার, যিনি মাহাত্ম্য, রাজত্ব, বড়ত্ব ও সম্মানের অধিকারী।
অতঃপর রুকূর সমপরিমাণ সময় সিজদা করেন এবং উপরোক্ত দু‘আটি আবারও পাঠ করেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা আলে ইমরান পাঠ করেন। তারপর একেক রাক‘আতে একেক সূরা পাঠ করেন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৩; সুনানে নাসাঈ, হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৫৪০; বায়হাকী, হা/৩৫০৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯১২; ।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي قِرَاءَةِ رَسُوْلِ اللهِ
২২৪. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তাতে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (ক্রমাগত) রোযা রাখতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি বুঝি অনবরত রোযা রেখেই যাবেন। আর যখন ইফতার করতেন, তখন আমরা বলতাম, তিনি হয়তো আর রোযা রাখবেন না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, মদিনায় হিজরতের পর রমাযান মাস ছাড়া আর কোন সময় তিনি পূর্ণ মাস রোযা রাখতেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/২৭৭৫; সুনানে নাসাঈ, হা/২৩৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৭৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৮০৯; মুসনাদে আবু ‘আওয়ানা, হা/২৯৩৮।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন নিয়মে রোযা রেখেছেন। তিনি কখনো কখনো একটানা অনেক দিন রোযা রাখতেন আবার বিরতিও দিতেন। তবে কোন মাস নফল রোযা থেকে খালি যেত না। তিনি মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন।
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّهٗ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ النَّبِيِّ ، فَقَالَ : كَانَ يَصُوْمُ مِنَ الشَّهْرِ حَتّٰى نَرٰى اَنْ لَا يُرِيْدَ اَنْ يُفْطِرَ مِنْهُ ، وَيُفْطِرُ مِنْهُ حَتّٰى نَرٰى اَنْ لَا يُرِيْدَ اَنْ يَصُوْمَ مِنْهُ شَيْئًا . وَكُنْتَ لَا تَشَاءُ اَنْ تَرَاهٗ مِنَ اللَّيْلِ مُصَلِّيًا اِلَّا رَاَيْتَهٗ مُصَلِّيًا ، وَلَا نَائِمًا اِلَّا رَاَيْتَهٗ نَائِمًا
২২৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আনাস (রাঃ)-কে নবী ﷺ এর রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, নবী ﷺ কোন মাসে এমনভাবে রোযা রাখতেন যে, আমরা মনে করতাম- তিনি হয়তো এ মাসে আর রোযা ছাড়বেন না। আবার অনেক সময় এমনভাবে রোযা ছেড়ে দিতেন যে, আমরা মনে করতাম- তিনি আর রোযা রাখবেন না। অবস্থা এমন ছিল যে, তুমি যদি তাঁকে সালাতরত অবস্থায় দেখতে চাইতে, তবে তাঁকে সালাতরত অবস্থায়-ই দেখতে পেতে। আর যদি নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে চাইতে, তবে তাঁকে নিদ্রিত অবস্থায়-ই দেখতে পেতে। [ইবনে খুযাইমা, হা/২১৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪৯৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৫৯২; বায়হাকী, হা/৪৫১১; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৩২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬১৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৯৮৪০।]
ব্যাখ্যা : আনাস (রাঃ) এ বাক্য দ্বারা বুঝাতে চান যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সারা রাত ঘুমিয়ে কাটাতেন না, আবার সারা রাত ইবাদাতও করতেন না; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। একাংশে ঘুমাতেন আরেকাংশে নামায পড়তেন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يَصُوْمُ حَتّٰى نَقُوْلَ مَا يُرِيْدُ اَنْ يُفْطِرَ مِنْهُ ، وَيُفْطِرُ حَتّٰى نَقُوْلَ مَا يُرِيْدُ اَنْ يَصُوْمَ مِنْهُ ، وَمَا صَامَ شَهْرًا كَامِلًا مُنْذُ قَدِمَ الْمَدِينَةَ اِلَّا رَمَضَانَ
২২৬. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো এমনভাবে রোযা রাখতেন যে, আমরা বলতাম, এ মাসে হয়তো তিনি আর রোযা ভাঙ্গবেন না। যখন রোযা ছেড়ে দিতেন, তখন (তাঁর অবস্থা দেখে) আমরা বলতাম, তিনি বুঝি আর রোযা রাখবেন না। মদিনায় হিজরতের পর রমাযান মাস ছাড়া তিনি আর কখনো পূর্ণ মাস রোযা রাখেননি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৯৮; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/২৭৪৮।]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : مَا رَاَيْتُ النَّبِيَّ يَصُوْمُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ اِلَّا شَعْبَانَ وَرَمَضَانَ
২২৭. উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে রমাযান ও শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে একাধিক্রমে রোযা রাখতে দেখিনি। [সুনানে নাসাঈ, হা/২১৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬০৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭২০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০২৫।]
ব্যাখ্যা : এ কথা দ্বারা আয়েশা (রাঃ) স্পষ্টভাবে বুঝাচ্ছেন যে, সম্পূর্ণ শাবান মাস বলতে শাবানের অধিকাংশ দিন বুঝানো হয়েছে।
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : لَمْ اَرَ رَسُوْلَ اللهِ يَصُوْمُ فِيْ شَهْرٍ اَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهٖ لِلّٰهِ فِيْ شَعْبَانَ ، كَانَ يَصُوْمُ شَعْبَانَ اِلَّا قَلِيْلًا بَلْ كَانَ يَصُوْمُهٗ كُلَّهٗ
২২৮. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে শাবান মাস ছাড়া আর কোন মাসে এত অধিক রোযা রাখতে দেখিনি। তিনি শাবান মাসের অধিকাংশ দিনই রোযা রাখতেন। বরং প্রায় সারা মাসই তাঁর রোযা অবস্থায় কাটত। [সুনানে নাসাঈ, হা/২১৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৩৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৫১৬; বায়হাকী, হা/৮২১২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০২৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতি মাসে ৩টি করে রোযা রাখতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَصُوْمُ مِنْ غُرَّةِ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ اَيَامٍ وَقَلَّمَا كَانَ يُفْطِرُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
২২৯. আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতি মাসের প্রথমদিকে তিনটি করে রোযা রাখতেন। জুমু‘আর দিন খুব কমই ইফতার করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮৬০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬৪৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/১৮১৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৮০৩; জামেউস সগীর, হা/৯১০৩।]
ব্যাখ্যা : বিভিন্ন হাদীসে প্রতি মাসে ৩ দিন রোযা রাখার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যেমন- প্রত্যেক সৎ কাজের সওয়াব দশগুণ বৃদ্ধি করা হয়, এ হিসেবে ৩টি পূর্ণ রোযার সওয়াব ১ মাসের রোযার সমপরিমান হয়। এভাবে যে ব্যক্তি প্রতি মাসে ৩ দিন রোযা রাখল সে যেন সারা বছরই রোযা রাখল।
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতি মাসে ৩ দিন রোযা রাখতেন। কখনো মাসের শুরুতে ৩ দিন রোযা রাখতেন, কখনো চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَتَحَرّٰى صَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ
২৩০. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সোম ও বৃহস্পতিবারের রোযার প্রতি খুবই খেয়াল রাখতেন। [সুনানে নাসাঈ, হা/২৩৬১; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩৯; বায়হাকী, হা/৮২৩০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭৯২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৪৪।]
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : تُعْرَضُ الْاَعْمَالُ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَأُحِبُّ اَنْ يُعْرَضَ عَمَلِيْ وَاَنَا صَائِمٌ
২৩১. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, সোম বা বৃহস্পতিবার দিন মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আর রোযা অবস্থায় আমার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হোক- এটা আমি পছন্দ করি। [শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৯৯।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَصُوْمُ مِنَ الشَّهْرِ السَّبْتَ وَالْاَحَدَ وَالْاثْنَيْنَ ، وَمِنَ الشَّهْرِ الْاٰخَرِ الثُّلَاثَاءَ وَالْاَرْبَعَاءَ وَالْخَمِيْسَ
২৩২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন মাসে শনি, রবি ও সোম এবং কোন মাসে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখতেন। [তাহযীবুল আছার, হা/৯৮৪; মুসনাদে উমর ইবনে খাত্তাব, হা/১২২০।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَصُوْمُ فِيْ شَهْرٍ اَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهٖ فِي شَعْبَانَ
২৩৩. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে এর চেয়ে বেশি রোযা রাখতেন না।
عَنْ يَزِيْدَ الرِّشْكِ قَالَ : سَمِعْتُ مُعَاذَةَ ، قَالَتْ : قُلْتُ لِعَائِشَةَ : اَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَصُوْمُ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ . قُلْتُ : مِنْ اَيِّهٖ كَانَ يَصُوْمُ ؟ قَالَتْ : كَانَ لَا يُبَالِيْ مِنْ اَيِّهٖ صَامَ
২৩৪. ইয়াযীদ আর রিশক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু‘আয (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, কোন কোন তারিখে রোযা রাখতেন? তিনি বললেন, কোন নির্দিষ্ট তারিখ ছিল না। সুযোগ পেলেই তিনি রোযা রাখতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/১৮০২; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৬৭৭; মুস্তাখরাকে ইবনে ‘আওয়ানা, হা/২৩৭৩; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/১৩৯৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ আশুরার রোযা রাখতেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ عَاشُوْرَاءُ يَوْمًا تَصُوْمُهٗ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ ، وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَصُوْمُهٗ ، فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ صَامَهٗ وَاَمَرَ بِصِيَامِهٖ ، فَلَمَّا افْتُرِضَ رَمَضَانُ كَانَ رَمَضَانُ هُوَ الْفَرِيْضَةُ وَتُرِكَ عَاشُوْرَاءُ ، فَمَنْ شَاءَ صَامَهٗ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهٗ
২৩৫. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশুরার দিন রোযা রাখত। রাসূলুল্লাহ ﷺ -ও হিজরতের পূর্বে আশুরার রোযা রাখতেন। মদিনায় হিজরতের পরও তিনি আশুরার রোযা রাখতেন এবং এ রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর রমাযানের রোযা ফরয করা হলে তা ফরযে পরিণত হয় এবং আশুরা ছেড়ে দেয়া হয়। সুতরাং যার ইচ্ছা সে তা রাখতে পারে, আবার যার ইচ্ছা ছেড়ে দিতে পারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৬৬২; সহীহ বুখারী, হা/২০০২; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৮; আবু দাউদ, হা/২৪৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬২৯২; বায়হাকী, হা/৮১৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৯৪৪৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৩১।]
ব্যাখ্যা : রমাযানের রোযার আগে আশুরার রোযা ফরয ছিল। রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পর আশুরার রোযার অপরিহার্যতা রহিত হয়ে যায়। আশুরার রোযা রাখা মুস্তাহাব। এ দিনে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে রোযা রেখেছেন এবং উম্মতকে রোযা রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং ১০ তারিখের সাথে সাথে আগের দিন তথা ৯ তারিখেও রোযা রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন। তাই মুহার্রম মাসের ৯ ও ১০ তারিখে মোট দুটি রোযা রাখা উত্তম। তবে কেবল ১০ তারিখের একটি রোযা রাখাও জায়েয আছে।
মুহার্রম মাসের কোন দিনে বা রাতে এবং আশুরার দিনে বা রাতে কোন বিশেষ নামায আদায়ের কোন প্রকার নির্দেশনা বা উৎসাহ কোন হাদীসে বর্ণিত হয়নি। এ বিষয়ক সকল কথাই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মিথ্যাবাদীরা এসব হাদীস নিজেরা তৈরি করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নামে চালিয়ে দিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আমল ছিল নিয়মিত :
عَنْ عَلْقَمَةَ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، اَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَخُصُّ مِنَ الْاَيَّامِ شَيْئًا ؟ قَالَتْ : كَانَ عَمَلُهٗ دِيْمَةً ، وَاَيُّكُمْ يُطِيْقُ مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُطِيْقُ
২৩৬. আলক্বামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি ইবাদাতের জন্য কোন দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আমল ছিল সর্বকালীন। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেমন সামর্থ্যবান ছিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন সামর্থ্যবান কেউ আছে কি? [সহীহ বুখারী, হা/১৯৮৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৫; আবু দাউদ, হা/১৩৭২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৬০৩; বায়হাকী, হা/৮২৫৫।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : دَخَلَ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ وَعِنْدِيْ اِمْرَاَةٌ فَقَالَ : مَنْ هٰذِهٖ ؟ قُلْتُ : فُلَانَةُ لَا تَنَامُ اللَّيْلَ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَلَيْكُمْ مِنَ الْاعْمَالِ مَا تُطِيْقُوْنَ ، فَوَاللهِ لَا يَمَلُّ اللهُ حَتّٰى تَمَلُّوْا ، وَكَانَ اَحَبَّ ذٰلِكَ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ الَّذِيْ يَدُوْمُ عَلَيْهِ صَاحِبُهٗ
২৩৭. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে আসলেন। সে সময় জনৈক মহিলা আমার কাছে বসা ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ মহিলাটি কে? আমি বললাম, সে অমুক। সে সারা রাত বিনিদ্র অবস্থায় কাটায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করা উচিত। আল্লাহর কসম! তিনি নেকী দান করতে কখনো কুন্ঠিত হন না, যতক্ষণ না তোমরা আমলে কুন্ঠিত হও। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন কাজ করতেই পছন্দ করেন, যা লোকেরা সর্বদা করতে সামর্থ্য রাখে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪২৩৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৮২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৬৫১; বায়হাকী, হা/৪৫১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৩৩।]
عَنْ اَبِي صَالِحٍ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، وَأُمَّ سَلَمَةَ ، اَيُّ الْعَمَلِ كَانَ اَحَبَّ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ ؟ قَالَتَا : مَا دِيْمَ عَلَيْهِ وَاِنْ قَلَّ
২৩৮. আবু সালিহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) ও উম্মে সালামার কাছে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে প্রিয় কাজ কোনটি ছিল? তাঁরা উভয়েই বললেন, যে আমল সব সময় করা হয়, তা যত কমই হোক না কেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪১৯; সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩২৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৮৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৮৩; বায়হাকী, হা/৪৩৪২।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাতের আমল :
عَنْ عَاصِمَ بْنَ حُمَيْدٍ قَالَ : سَمِعْتُ عَوْفَ بْنَ مَالِكٍ يَقُوْلُ : كُنْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ لَيْلَةً فَاسْتَاكَ ثُمَّ تَوَضَّاَ ثُمَّ قَامَ يُصَلِّيْ ، فَقُمْتُ مَعَهٗ فَبَدَاَ فَاسْتَفْتَحَ الْبَقَرَةَ فَلَا يَمُرُّ بِاٰيَةِ رَحْمَةٍ اِلَّا وَقَفَ فَسَاَلَ ، وَلَا يَمُرُّ بِاٰيَةِ عَذَابٍ اِلَّا وَقَفَ فَتَعَوَّذَ ، ثُمَّ رَكَعَ فَمَكَثَ رَاكِعًا بِقَدْرِ قِيَامِهٖ ، وَيَقُوْلُ فِيْ رُكُوْعِهٖ : سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ ، ثُمَّ سَجَدَ بِقَدْرِ رُكُوْعِهٖ ، وَيَقُوْلُ فِيْ سُجُوْدِهٖ : سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ ثُمَّ قَرَاَ اٰلَ عِمْرَانَ ثُمَّ سُوْرَةً سُوْرَةً يَفْعَلُ مِثْلَ ذٰلِكَ فِيْ كُلِّ رَكْعَةٍ
২৩৯. আসিম ইবনে হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আওফ ইবনে মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি মিসওয়াক করলেন। পরে ওযূ করলেন এবং সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর সঙ্গে দাঁড়ালাম। তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করলেন। এরপর রহমতের আয়াত পাঠ করে চুপ থাকলেন এবং রহমত প্রার্থনা করলেন। এরপর আযাবের আয়াত পাঠ করে চুপ থাকলেন এবং মুক্তি কামনা করেন। তারপর রুকূ করলেন এবং এ দু‘আ পাঠ করলেন,
سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
‘‘সুবহা-না যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল ‘আযামাতি।’’
অর্থাৎ আমি পবিত্রতা ঘোষণা করছি ঐ সত্তার, যিনি মাহাত্ম্য, রাজত্ব, বড়ত্ব ও সম্মানের অধিকারী।
অতঃপর রুকূর সমপরিমাণ সময় সিজদা করেন এবং উপরোক্ত দু‘আটি আবারও পাঠ করেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা আলে ইমরান পাঠ করেন। তারপর একেক রাক‘আতে একেক সূরা পাঠ করেন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৩; সুনানে নাসাঈ, হা/১১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৫৪০; বায়হাকী, হা/৩৫০৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯১২; ।]
- بَابُ مَا جَاءَ فِي قِرَاءَةِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ টেনে টেনে কিরাআত পাঠ করতেন :
عَنْ قَتَادَةَ ، قَالَ : قُلْتُ لِاَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : كَيْفَ كَانَتْ قِرَاءَةُ رَسُوْلِ اللهِ ؟ فَقَالَ : مَدًّا
২৪০. কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, টেনে পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৪৬; সুনানে নাসাঈ, হা/১০১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০২৫; দার কুতনী, হা/১১৭৭; বায়হাকী, হা/২২২২; শারহুস সুন্নাহ, হা/১২১৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৮৬৮।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিটি আয়াত আলাদা আলাদা করে পাঠ করতেন :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَقْطَعُ قِرَاءَتَهٗ يَقُوْلُ : ﴿الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾ ثُمَّ يَقِفُ ، ثُمَّ يَقُوْلُ : ﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ثُمَّ يَقِفُ ، وَكَانَ يَقْرَأُ ﴿مٰلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ﴾
২৪১. উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উম্মে সালামা বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিটি আয়াত আলাদা আলাদা করে পড়তেন। যেমন, ‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন’’ পাঠ করে একটু থামতেন। তারপর ‘‘আর্ রহমা-নির রহীম’’ পাঠ করে একটু থামতেন। তারপর ‘‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’’ পাঠ করতেন। [আবু দাউদ, হা/৪০০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬২৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯১০; দার কুতনী, হা/১১৯১; জামেউস সগীর, হা/৯১৩১; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩২২৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো আস্তে এবং কখনো উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ قَيْسٍ قَالَ : سَأَلْتُ عَائِشَةَ ،عَنْ قِرَاءَةِ النَّبِيِّ اَكَانَ يُسِرُّ بِالْقِرَاءَةِ اَمْ يَجْهَرُ ؟ قَالَتْ : كُلُّ ذٰلِكَ قَدْ كَانَ يَفْعَلُ قَدْ كَانَ رُبَّمَا اَسَرَّ وَرُبَّمَا جَهَرَ . فَقُلْتُ : الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ جَعَلَ فِي الْاَمْرِ سَعَةً
২৪২. আবদুল্লাহ ইবনে আবু ক্বায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি আস্তে কিরাআত পড়তেন, না উচ্চৈঃস্বরে? তিনি বললেন, উভয়টিই করতেন। কখনো আস্তে পড়তেন, আবার কখনো উচ্চৈঃস্বরে পড়তেন। আমি বললাম, আল্লাহর প্রশংসা যে, তিনি এ ব্যাপারে দু’ধরনেরই সুযোগ রেখেছেন।
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন রাতে আস্তে আর কোন রাতে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ করতেন। এ উভয় নিয়মই জায়েয। তবে অবস্থার ভিন্নতায় কখনো উচ্চৈঃস্বরে কখনো আস্তে কিরাআত পড়া উত্তম। নিজের মাঝে প্রাণবন্ততা নিয়ে আসা বা অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য উচ্চৈঃস্বরে পড়া উত্তম। অপরপক্ষে যদি কারো কষ্ট বা রিয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়, তাহলে আস্তে পড়া উত্তম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তিলাওয়াত প্রতিবেশীর ঘরের ছাদ থেকেও শুনা যেত :
عَنْ أُمِّ هَانِئٍ ، قَالَتْ : كُنْتُ اَسْمَعُ قِرَاءَةَ النَّبِيِّ بِاللَّيْلِ وَاَنَا عَلٰى عَرِيْشِيْ
২৪৩. উম্মু হানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার গৃহের ছাদে অবস্থান করে রাত্রিবেলায় নবী ﷺ এর কিরাআত শুনতে পেতাম। [সুনানে নাসাঈ, হা/১০১৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৯৬৫০; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৯৪৫; শারহুল মা‘আনী, হা/২০২৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৬৯২।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ উষ্ট্রের উপর বসেও তিলাওয়াত করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ يَقُوْلُ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ عَلٰى نَاقَتِهٖ يَوْمَ الْفَتْحِ وَهُوَ يَقْرَأُ : ﴿اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِيْنًا ‐ لِيَغْفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ﴾ قَالَ : فَقَرَاَ وَرَجَّعَ .
قَالَ : وَقَالَ مُعَاوِيَةُ بْنُ قُرَّةَ : لَوْلَا اَنْ يَجْتَمِعَ النَّاسُ عَلَيَّ لَاَخَذْتُ لَكُمْ فِي ذٰلِكَ الصَّوْتِ اَوْ قَالَ : اللَّحْنِ
২৪৪. আবদুললাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে উষ্ট্রের উপর বসা অবস্থায় পড়তে শুনেছি :
﴿اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا ‐ لِيَغْفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ﴾
অর্থাৎ নিশ্চয় আমি আপনার জন্য এমন একটা ফায়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট। যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করেন। [সূরা ফাতহ- ১, ২।] রাসূলুল্লাহ ﷺ তা তারজী করে পড়ছিলেন।
মু‘আবিয়া ইবনে কুর্রা বলেন, আমি যদি আমার কাছে লোক জড়ো হওয়ার আশংকা না করতাম, তাহলে আমি সেরূপ স্বরে তোমাদেরকে শুনাতাম। বর্ণনাকারী الصَّوْتِ কিংবা اللَّحْنِ শব্দ ব্যবহার করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৫৭৭; মুস্তাখরাজে ইবনে আবি ‘আওয়ানা, হা/৩১৩৭; মুসনাদে ইবনে জা‘দ, হা/১১১১; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/৮৮৭।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ গানের সূরে তিলাওয়াত করতেন না :
عَنْ قَتَادَةَ قَالَ : مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيًّا اِلَّا ، حَسَنَ الصَّوْتِ ، وَكَانَ نَبِيُّكُمْ حَسَنَ الْوَجْهِ ، حَسَنَ الصَّوْتِ ، وَكَانَ لَا يُرَجِّعُ
২৪৫. কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক নবীকেই সুন্দর চেহারা ও সুন্দর কন্ঠস্বর দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তোমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ -ও সুন্দর চেহারা ও সুন্দর স্বরের অধিকারী ছিলেন। তবে তিনি গানের সুরে তিলাওয়াত করতেন না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তিলাওয়াত বারান্দা থেকে শুনা যেত :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَتْ قِرَاءَةُ النَّبِيِّ رُبَّمَا يَسْمَعُهَا مَنْ فِي الْحُجْرَةِ وَهُوَ فِي الْبَيْتِ
২৪৬. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত এমন হতো যে, তিনি যখন তাঁর ঘরে বসে পড়তেন, তখন বারান্দা থেকে তা শুনা যেত। [আবু দাউদ, হা/১৩২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৬; বায়হাকী, হা/৪৪৭৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯১৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৩৬৯; শারহুল মা‘আনী, হা/২০২৩।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي بُكَاءِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ قَتَادَةَ ، قَالَ : قُلْتُ لِاَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : كَيْفَ كَانَتْ قِرَاءَةُ رَسُوْلِ اللهِ ؟ فَقَالَ : مَدًّا
২৪০. কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, টেনে পড়তেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৪৬; সুনানে নাসাঈ, হা/১০১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০২৫; দার কুতনী, হা/১১৭৭; বায়হাকী, হা/২২২২; শারহুস সুন্নাহ, হা/১২১৪; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৮৬৮।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিটি আয়াত আলাদা আলাদা করে পাঠ করতেন :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ يَقْطَعُ قِرَاءَتَهٗ يَقُوْلُ : ﴿الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾ ثُمَّ يَقِفُ ، ثُمَّ يَقُوْلُ : ﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ثُمَّ يَقِفُ ، وَكَانَ يَقْرَأُ ﴿مٰلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ﴾
২৪১. উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উম্মে সালামা বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিটি আয়াত আলাদা আলাদা করে পড়তেন। যেমন, ‘‘আলহাম্দু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন’’ পাঠ করে একটু থামতেন। তারপর ‘‘আর্ রহমা-নির রহীম’’ পাঠ করে একটু থামতেন। তারপর ‘‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’’ পাঠ করতেন। [আবু দাউদ, হা/৪০০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬২৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯১০; দার কুতনী, হা/১১৯১; জামেউস সগীর, হা/৯১৩১; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩২২৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো আস্তে এবং কখনো উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ قَيْسٍ قَالَ : سَأَلْتُ عَائِشَةَ ،عَنْ قِرَاءَةِ النَّبِيِّ اَكَانَ يُسِرُّ بِالْقِرَاءَةِ اَمْ يَجْهَرُ ؟ قَالَتْ : كُلُّ ذٰلِكَ قَدْ كَانَ يَفْعَلُ قَدْ كَانَ رُبَّمَا اَسَرَّ وَرُبَّمَا جَهَرَ . فَقُلْتُ : الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ جَعَلَ فِي الْاَمْرِ سَعَةً
২৪২. আবদুল্লাহ ইবনে আবু ক্বায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি আস্তে কিরাআত পড়তেন, না উচ্চৈঃস্বরে? তিনি বললেন, উভয়টিই করতেন। কখনো আস্তে পড়তেন, আবার কখনো উচ্চৈঃস্বরে পড়তেন। আমি বললাম, আল্লাহর প্রশংসা যে, তিনি এ ব্যাপারে দু’ধরনেরই সুযোগ রেখেছেন।
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন রাতে আস্তে আর কোন রাতে উচ্চৈঃস্বরে কিরাআত পাঠ করতেন। এ উভয় নিয়মই জায়েয। তবে অবস্থার ভিন্নতায় কখনো উচ্চৈঃস্বরে কখনো আস্তে কিরাআত পড়া উত্তম। নিজের মাঝে প্রাণবন্ততা নিয়ে আসা বা অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য উচ্চৈঃস্বরে পড়া উত্তম। অপরপক্ষে যদি কারো কষ্ট বা রিয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়, তাহলে আস্তে পড়া উত্তম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তিলাওয়াত প্রতিবেশীর ঘরের ছাদ থেকেও শুনা যেত :
عَنْ أُمِّ هَانِئٍ ، قَالَتْ : كُنْتُ اَسْمَعُ قِرَاءَةَ النَّبِيِّ بِاللَّيْلِ وَاَنَا عَلٰى عَرِيْشِيْ
২৪৩. উম্মু হানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার গৃহের ছাদে অবস্থান করে রাত্রিবেলায় নবী ﷺ এর কিরাআত শুনতে পেতাম। [সুনানে নাসাঈ, হা/১০১৩; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৯৬৫০; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৯৪৫; শারহুল মা‘আনী, হা/২০২৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৬৯২।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ উষ্ট্রের উপর বসেও তিলাওয়াত করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ يَقُوْلُ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ عَلٰى نَاقَتِهٖ يَوْمَ الْفَتْحِ وَهُوَ يَقْرَأُ : ﴿اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِيْنًا ‐ لِيَغْفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ﴾ قَالَ : فَقَرَاَ وَرَجَّعَ .
قَالَ : وَقَالَ مُعَاوِيَةُ بْنُ قُرَّةَ : لَوْلَا اَنْ يَجْتَمِعَ النَّاسُ عَلَيَّ لَاَخَذْتُ لَكُمْ فِي ذٰلِكَ الصَّوْتِ اَوْ قَالَ : اللَّحْنِ
২৪৪. আবদুললাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে উষ্ট্রের উপর বসা অবস্থায় পড়তে শুনেছি :
﴿اِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا ‐ لِيَغْفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۢبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ﴾
অর্থাৎ নিশ্চয় আমি আপনার জন্য এমন একটা ফায়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট। যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করেন। [সূরা ফাতহ- ১, ২।] রাসূলুল্লাহ ﷺ তা তারজী করে পড়ছিলেন।
মু‘আবিয়া ইবনে কুর্রা বলেন, আমি যদি আমার কাছে লোক জড়ো হওয়ার আশংকা না করতাম, তাহলে আমি সেরূপ স্বরে তোমাদেরকে শুনাতাম। বর্ণনাকারী الصَّوْتِ কিংবা اللَّحْنِ শব্দ ব্যবহার করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪২৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৫৭৭; মুস্তাখরাজে ইবনে আবি ‘আওয়ানা, হা/৩১৩৭; মুসনাদে ইবনে জা‘দ, হা/১১১১; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/৮৮৭।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ গানের সূরে তিলাওয়াত করতেন না :
عَنْ قَتَادَةَ قَالَ : مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيًّا اِلَّا ، حَسَنَ الصَّوْتِ ، وَكَانَ نَبِيُّكُمْ حَسَنَ الْوَجْهِ ، حَسَنَ الصَّوْتِ ، وَكَانَ لَا يُرَجِّعُ
২৪৫. কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক নবীকেই সুন্দর চেহারা ও সুন্দর কন্ঠস্বর দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তোমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ -ও সুন্দর চেহারা ও সুন্দর স্বরের অধিকারী ছিলেন। তবে তিনি গানের সুরে তিলাওয়াত করতেন না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তিলাওয়াত বারান্দা থেকে শুনা যেত :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَتْ قِرَاءَةُ النَّبِيِّ رُبَّمَا يَسْمَعُهَا مَنْ فِي الْحُجْرَةِ وَهُوَ فِي الْبَيْتِ
২৪৬. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত এমন হতো যে, তিনি যখন তাঁর ঘরে বসে পড়তেন, তখন বারান্দা থেকে তা শুনা যেত। [আবু দাউদ, হা/১৩২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৬; বায়হাকী, হা/৪৪৭৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৯১৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৩৬৯; শারহুল মা‘আনী, হা/২০২৩।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي بُكَاءِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায়কালে ক্রন্দন করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الشِّخِّيْرِ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ وَهُوَ يُصَلِّيْ وَلِجَوْفِهٖ اَزِيْزٌ كَاَزِيْزِ الْمِرْجَلِ مِنَ الْبُكَاءِ
২৪৭. আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম যে, তিনি সালাত আদায় করছেন। এমতাবস্থায় তাঁর বক্ষদেশ হতে কান্নার এমন শব্দ বের হচ্ছে, যেমন চুলার উপর রাখা পাত্র হতে টগবগ শব্দ শোনা যায়। [সুনানে নাসাঈ, হা/১২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৫৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৯০০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯৭১; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৮৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩২৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরআন শ্রবণ করেও ক্রন্দন করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ : اِقْرَأْ عَلَيَّ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَقَرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ قَالَ : اِنِّيْ أُحِبُّ اَنْ اَسْمَعَهٗ مِنْ غَيْرِيْ ، فَقَرَأْتُ سُوْرَةَ النِّسَاءِ ، حَتّٰى بَلَغْتُ ﴿وَجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰؤُلَاءِ شَهِيْدًا﴾ قَالَ : فَرَاَيْتُ عَيْنَيْ رَسُوْلِ اللهِ تَهْمِلَانِ
২৪৮. আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে পাঠ করে শুনাব, যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে! তিনি বললেন, আমি তা অপরের কাছ থেকে শুনতে পছন্দ করি। ফলে আমি সূরা নিসা পাঠ করতে শুরু করলাম। অতঃপর যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম-
﴿وَجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰؤُلَاءِ شَهِيْدًا﴾
অর্থাৎ আপনাকে ডাকব তাদের উপর সাক্ষীরূপে। [সূরা নিসা- ৪১।]
তখন আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৬৮২; সহীহ মুসলিম, হা/১৯০৩; আবু দাউদ, হা/৩৬৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬০৬; বায়হাকী, হা/২০৪৮৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৫৫৬০; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৮৯০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ সিজদাতে গেলেও ক্রন্দন করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : اِنْكَسَفَتِ الشَّمْسُ يَوْمًا عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّيْ ، حَتّٰى لَمْ يَكَدْ يَرْكَعُ ثُمَّ رَكَعَ ، فَلَمْ يَكَدْ يَرْفَعُ رَأْسَهٗ ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ ، فَلَمْ يَكَدْ اَنْ يَسْجُدَ ، ثُمَّ سَجَدَ فَلَمْ يَكَدْ اَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهٗ ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ ، فَلَمْ يَكَدْ اَنْ يَسْجُدَ ، ثُمَّ سَجَدَ فَلَمْ يَكَدْ اَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهٗ ، فَجَعَلَ يَنْفُخُ وَيَبْكِيْ ، وَيَقُوْلُ : رَبِّ اَلَمْ تَعِدْنِيْ اَنْ لَا تُعَذِّبَهُمْ وَاَنَا فِيْهِمْ ؟ رَبِّ اَلَمْ تَعِدْنِيْ اَنْ لَا تُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ ؟ وَنَحْنُ نَسْتَغْفِرُكَ . فَلَمَّا صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ اِنْجَلَتِ الشَّمْسُ ، فَقَامَ فَحَمِدَ اللهَ تَعَالٰى وَاَثْنٰى عَلَيْهِ ، ثُمَّ قَالَ : اِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَاٰيَتَانِ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَا يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ اَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهٖ ، فَاِذَا اِنْكَسَفَا فَافْزَعُوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ تَعَالٰى
২৪৯. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন সালাতে দন্ডায়মান হন। এতে তিনি এত বিলম্ব করলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর রুকূতে যাবেন না। যখন রুকূতে গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল, তিনি যেন আর মাথা তুলবেন না। তারপর যখন মাথা উঠালেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর সিজদায় যাবেন না। তারপর তিনি যখন সিজদায় গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর মাথা উঠাবেন না। তারপর যখন মাথা উঠালেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর সিজদায় যাবেন না। তারপর যখন সিজদায় গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর মাথা উঠবেন না। তিনি দীর্ঘশবাস ফেলছিলেন আর ক্রন্দন করছিলেন এবং দু‘আ পাঠ করছিলেন যে, হে আমার রব! তুমি কি এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, আমার উপস্থিতিতে আমার উম্মতকে শাস্তি দেবে না? আমরা তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ২ রাক‘আত সালাত শেষ করলেন, তখন সূর্যও বের হয়ে আসল। অতঃপর তিনি কিছু বলার জন্য দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর হামদ ও ছানার পর বললেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুর সঙ্গে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই। যখন চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণ হয়, তখন তোমরা আল্লাহর যিকর-এ লিপ্ত হও। [সহীহ মুসলিম, হা/২১৪০; আবু দাউদ, হা/১১৯৬; সুনানে নাসাঈ, হা/১৪৮২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৩৯২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১২২৯; বায়হাকী, হা/১৩৭৯।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ সূর্য গ্রহণের ঘটনায় জীবনে একবার সালাত আদায় করেছিলেন, তা ছিল দশম হিজরী সনে। আবার কেউ কেউ এটি নবম হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছিল বলে মত প্রকাশ করেছেন। আর চন্দ্রগ্রহণের সালাত আদায় করেছিলেন পঞ্চম হিজরী সনে।
জাহেলী যুগে লোকেরা বিশ্বাস করত যে, কোন বড় ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুর কারণে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ হয়। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রকৃত রহস্য বর্ণনা করে বলেছেন, চন্দ্র-সূর্য আললাহ তা‘আলার নিদর্শন। কারো জীবন বা মৃত্যুর সাথে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কন্যার মৃত্যুশোকে অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : اَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ اِبْنَةً لَهٗ تَقْضِيْ فَاحْتَضَنَهَا فَوَضَعَهَا بَيْنَ يَدَيْهِ فَمَاتَتْ وَهِيَ بَيْنَ يَدَيْهِ وَصَاحَتْ أُمُّ اَيْمَنَ فَقَالَ - يَعْنِي- رَسُوْلِ اللهِ : اَتَبْكِيْنَ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ؟ فَقَالَتْ : اَلَسْتُ اَرَاكَ تَبْكِيْ ؟ قَالَ : اِنِّي لَسْتُ اَبْكِيْ ، اِنَّمَا هِيَ رَحْمَةٌ ، اِنَّ الْمُؤْمِنَ بِكُلِّ خَيْرٍ عَلٰى كُلِّ حَالٍ ، اِنَّ نَفْسَهٗ تُنْزَعُ مِنْ بَيْنِ جَنْبَيْهِ ، وَهُوَ يَحْمَدُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ
২৫০. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এক কন্যা মূমুর্ষ অবস্থায় ছিলেন। তিনি তাকে কোলে তুলে সামনে রাখলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তখন উম্মে আয়মান (রাঃ) চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন, আল্লাহর রাসূলের সামনেই তুমি ক্রন্দন করছ? উম্মে আয়মান বললেন, আমি আপনাকেও কি অশ্রুসিক্ত দেখতে পাচ্ছি না? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি যে কান্না করছি তা নিষেধ নয়, তা আল্লাহর রহমত। অতঃপর তিনি বললেন, একজন মুমিন সর্বাবস্থায় মঙ্গলজনক অবস্থায় থাকে। এমনকি তার জীবন নিয়ে যাওয়ার সময়ও আল্লাহর প্রশংসা করে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৩২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, বিলাপ করে কাঁদা নিষিদ্ধ। তবে চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হওয়া নিষেধ নয়। এটা আল্লাহর রহমত এবং মন নরম হওয়ার লক্ষণ। সন্তানের প্রতি দয়া-মায়া নবী ﷺ এর সুন্নত।
উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) এর মৃত্যুতেও রাসূলুল্লাহ ﷺ কেঁদেছিলেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَبَّلَ عُثْمَانَ بْنَ مَظْعُونٍ وَهُوَ مَيِّتٌ وَهُوَ يَبْكِيْ اَوْ قَالَ : عَيْنَاهٗ تَهْرَاقَانِ
২৫১. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) মারা গেলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তার কপালে চুম্বন দিলেন। তিনি কাঁদছিলেন অথবা (রাবী) বলেন, তখন তাঁর চোখ হতে অশ্রু পড়ছিল। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৩৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৭০।]
ব্যাখ্যা : উসমান ইবনে মাযঊন (রাঃ) ছিলেন কুরাইশ বংশের লোক। আবার তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দুধ ভাই । ইসলামের প্রথম যুগে ১৩ জনের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর মদিনায় হিজরত করেন। হিজরী দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে ইন্তেকাল করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে সমাহিত হন। তিনি ছিলেন মুহাজিরদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইন্তেকালকারী সাহাবী।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কন্যাকে কবরের শোয়োনোর সময়ও কেঁদেছিলেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : شَهِدْنَا ابْنَةً لِرَسُوْلِ اللهِ وَرَسُوْلُ اللهِ جَالِسٌ عَلَى الْقَبْرِ فَرَاَيْتُ عَيْيَنْهِ تَدمَعَانِ ، فَقَالَ : اَفِيْكُمْ رَجُلٌ لَمْ يُقَارِفِ اللَّيْلَةَ ؟ قَالَ اَبُو طَلْحَةَ : اَنَا قَالَ : اِنْزِلْ فَنَزَلَ فِيْ قَبْرِهَا
২৫২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কন্যার কবরের পার্শ্বে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে বসেন। আমি দেখতে পেলাম, তাঁর চোখ হতে অশ্রু বেরোচ্ছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর নিকটবর্তী হওনি? আবু তালহা (রাঃ) বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন, তুমি কবরে অবতরণ করো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশে আবু তালহা (রাঃ) কবরে অবতরণ করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৯৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৬৮৫৩; বায়হাকী, হা/৬৮৩৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৫১৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬২২৫।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي فِرَاشِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الشِّخِّيْرِ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : اَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ وَهُوَ يُصَلِّيْ وَلِجَوْفِهٖ اَزِيْزٌ كَاَزِيْزِ الْمِرْجَلِ مِنَ الْبُكَاءِ
২৪৭. আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম যে, তিনি সালাত আদায় করছেন। এমতাবস্থায় তাঁর বক্ষদেশ হতে কান্নার এমন শব্দ বের হচ্ছে, যেমন চুলার উপর রাখা পাত্র হতে টগবগ শব্দ শোনা যায়। [সুনানে নাসাঈ, হা/১২১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৫৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৯০০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯৭১; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৮৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩২৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরআন শ্রবণ করেও ক্রন্দন করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ : اِقْرَأْ عَلَيَّ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَقَرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ قَالَ : اِنِّيْ أُحِبُّ اَنْ اَسْمَعَهٗ مِنْ غَيْرِيْ ، فَقَرَأْتُ سُوْرَةَ النِّسَاءِ ، حَتّٰى بَلَغْتُ ﴿وَجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰؤُلَاءِ شَهِيْدًا﴾ قَالَ : فَرَاَيْتُ عَيْنَيْ رَسُوْلِ اللهِ تَهْمِلَانِ
২৪৮. আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে পাঠ করে শুনাব, যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে! তিনি বললেন, আমি তা অপরের কাছ থেকে শুনতে পছন্দ করি। ফলে আমি সূরা নিসা পাঠ করতে শুরু করলাম। অতঃপর যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম-
﴿وَجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰؤُلَاءِ شَهِيْدًا﴾
অর্থাৎ আপনাকে ডাকব তাদের উপর সাক্ষীরূপে। [সূরা নিসা- ৪১।]
তখন আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৬৮২; সহীহ মুসলিম, হা/১৯০৩; আবু দাউদ, হা/৩৬৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬০৬; বায়হাকী, হা/২০৪৮৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৫৫৬০; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৮৯০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ সিজদাতে গেলেও ক্রন্দন করতেন :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : اِنْكَسَفَتِ الشَّمْسُ يَوْمًا عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّيْ ، حَتّٰى لَمْ يَكَدْ يَرْكَعُ ثُمَّ رَكَعَ ، فَلَمْ يَكَدْ يَرْفَعُ رَأْسَهٗ ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ ، فَلَمْ يَكَدْ اَنْ يَسْجُدَ ، ثُمَّ سَجَدَ فَلَمْ يَكَدْ اَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهٗ ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ ، فَلَمْ يَكَدْ اَنْ يَسْجُدَ ، ثُمَّ سَجَدَ فَلَمْ يَكَدْ اَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهٗ ، فَجَعَلَ يَنْفُخُ وَيَبْكِيْ ، وَيَقُوْلُ : رَبِّ اَلَمْ تَعِدْنِيْ اَنْ لَا تُعَذِّبَهُمْ وَاَنَا فِيْهِمْ ؟ رَبِّ اَلَمْ تَعِدْنِيْ اَنْ لَا تُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ ؟ وَنَحْنُ نَسْتَغْفِرُكَ . فَلَمَّا صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ اِنْجَلَتِ الشَّمْسُ ، فَقَامَ فَحَمِدَ اللهَ تَعَالٰى وَاَثْنٰى عَلَيْهِ ، ثُمَّ قَالَ : اِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَاٰيَتَانِ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَا يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ اَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهٖ ، فَاِذَا اِنْكَسَفَا فَافْزَعُوْا اِلٰى ذِكْرِ اللهِ تَعَالٰى
২৪৯. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন সালাতে দন্ডায়মান হন। এতে তিনি এত বিলম্ব করলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর রুকূতে যাবেন না। যখন রুকূতে গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল, তিনি যেন আর মাথা তুলবেন না। তারপর যখন মাথা উঠালেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর সিজদায় যাবেন না। তারপর তিনি যখন সিজদায় গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর মাথা উঠাবেন না। তারপর যখন মাথা উঠালেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর সিজদায় যাবেন না। তারপর যখন সিজদায় গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর মাথা উঠবেন না। তিনি দীর্ঘশবাস ফেলছিলেন আর ক্রন্দন করছিলেন এবং দু‘আ পাঠ করছিলেন যে, হে আমার রব! তুমি কি এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, আমার উপস্থিতিতে আমার উম্মতকে শাস্তি দেবে না? আমরা তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ২ রাক‘আত সালাত শেষ করলেন, তখন সূর্যও বের হয়ে আসল। অতঃপর তিনি কিছু বলার জন্য দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর হামদ ও ছানার পর বললেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুর সঙ্গে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই। যখন চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণ হয়, তখন তোমরা আল্লাহর যিকর-এ লিপ্ত হও। [সহীহ মুসলিম, হা/২১৪০; আবু দাউদ, হা/১১৯৬; সুনানে নাসাঈ, হা/১৪৮২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৩৯২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১২২৯; বায়হাকী, হা/১৩৭৯।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ সূর্য গ্রহণের ঘটনায় জীবনে একবার সালাত আদায় করেছিলেন, তা ছিল দশম হিজরী সনে। আবার কেউ কেউ এটি নবম হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছিল বলে মত প্রকাশ করেছেন। আর চন্দ্রগ্রহণের সালাত আদায় করেছিলেন পঞ্চম হিজরী সনে।
জাহেলী যুগে লোকেরা বিশ্বাস করত যে, কোন বড় ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুর কারণে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ হয়। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রকৃত রহস্য বর্ণনা করে বলেছেন, চন্দ্র-সূর্য আললাহ তা‘আলার নিদর্শন। কারো জীবন বা মৃত্যুর সাথে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কন্যার মৃত্যুশোকে অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : اَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ اِبْنَةً لَهٗ تَقْضِيْ فَاحْتَضَنَهَا فَوَضَعَهَا بَيْنَ يَدَيْهِ فَمَاتَتْ وَهِيَ بَيْنَ يَدَيْهِ وَصَاحَتْ أُمُّ اَيْمَنَ فَقَالَ - يَعْنِي- رَسُوْلِ اللهِ : اَتَبْكِيْنَ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ؟ فَقَالَتْ : اَلَسْتُ اَرَاكَ تَبْكِيْ ؟ قَالَ : اِنِّي لَسْتُ اَبْكِيْ ، اِنَّمَا هِيَ رَحْمَةٌ ، اِنَّ الْمُؤْمِنَ بِكُلِّ خَيْرٍ عَلٰى كُلِّ حَالٍ ، اِنَّ نَفْسَهٗ تُنْزَعُ مِنْ بَيْنِ جَنْبَيْهِ ، وَهُوَ يَحْمَدُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ
২৫০. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এক কন্যা মূমুর্ষ অবস্থায় ছিলেন। তিনি তাকে কোলে তুলে সামনে রাখলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তখন উম্মে আয়মান (রাঃ) চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন, আল্লাহর রাসূলের সামনেই তুমি ক্রন্দন করছ? উম্মে আয়মান বললেন, আমি আপনাকেও কি অশ্রুসিক্ত দেখতে পাচ্ছি না? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি যে কান্না করছি তা নিষেধ নয়, তা আল্লাহর রহমত। অতঃপর তিনি বললেন, একজন মুমিন সর্বাবস্থায় মঙ্গলজনক অবস্থায় থাকে। এমনকি তার জীবন নিয়ে যাওয়ার সময়ও আল্লাহর প্রশংসা করে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৩২।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, বিলাপ করে কাঁদা নিষিদ্ধ। তবে চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হওয়া নিষেধ নয়। এটা আল্লাহর রহমত এবং মন নরম হওয়ার লক্ষণ। সন্তানের প্রতি দয়া-মায়া নবী ﷺ এর সুন্নত।
উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) এর মৃত্যুতেও রাসূলুল্লাহ ﷺ কেঁদেছিলেন :
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَبَّلَ عُثْمَانَ بْنَ مَظْعُونٍ وَهُوَ مَيِّتٌ وَهُوَ يَبْكِيْ اَوْ قَالَ : عَيْنَاهٗ تَهْرَاقَانِ
২৫১. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) মারা গেলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তার কপালে চুম্বন দিলেন। তিনি কাঁদছিলেন অথবা (রাবী) বলেন, তখন তাঁর চোখ হতে অশ্রু পড়ছিল। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৩৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৭০।]
ব্যাখ্যা : উসমান ইবনে মাযঊন (রাঃ) ছিলেন কুরাইশ বংশের লোক। আবার তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দুধ ভাই । ইসলামের প্রথম যুগে ১৩ জনের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর মদিনায় হিজরত করেন। হিজরী দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে ইন্তেকাল করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে সমাহিত হন। তিনি ছিলেন মুহাজিরদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইন্তেকালকারী সাহাবী।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কন্যাকে কবরের শোয়োনোর সময়ও কেঁদেছিলেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : شَهِدْنَا ابْنَةً لِرَسُوْلِ اللهِ وَرَسُوْلُ اللهِ جَالِسٌ عَلَى الْقَبْرِ فَرَاَيْتُ عَيْيَنْهِ تَدمَعَانِ ، فَقَالَ : اَفِيْكُمْ رَجُلٌ لَمْ يُقَارِفِ اللَّيْلَةَ ؟ قَالَ اَبُو طَلْحَةَ : اَنَا قَالَ : اِنْزِلْ فَنَزَلَ فِيْ قَبْرِهَا
২৫২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর কন্যার কবরের পার্শ্বে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে বসেন। আমি দেখতে পেলাম, তাঁর চোখ হতে অশ্রু বেরোচ্ছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর নিকটবর্তী হওনি? আবু তালহা (রাঃ) বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন, তুমি কবরে অবতরণ করো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশে আবু তালহা (রাঃ) কবরে অবতরণ করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৯৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৬৮৫৩; বায়হাকী, হা/৬৮৩৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৫১৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬২২৫।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي فِرَاشِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ আঁশভর্তি চামড়ার বিছানায় নিদ্রা যেতেন :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : إِنَّمَا كَانَ فِرَاشُ رَسُوْلِ اللهِ الَّذِيْ يَنَامُ عَلَيْهِ مِنْ أَدَمٍ حَشْوُهٗ لِيْفٌ
২৫৩. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ যে বিছানায় নিদ্রা যেতেন, তা ছিল চামড়ার। এর ভেতরে খেজুর গাছের আঁশ ভরা থাকত। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৫১; বায়হাকী, হা/১৩০৯৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১২২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৮৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৮৬।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ সাধারণত চামড়া বা চটের তৈরি বিছানা বা মাদুর ব্যবহার করতেন। আরামদায়ক বিছানার প্রতি তাঁর কোন আগ্রহই ছিল না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে দেখলাম চটের বিছানায় শুয়ে থাকার কারণে তাঁর শরীরে দাগ লেগে যায়। এ দৃশ্য দেখে আমি কাঁদতে লাগলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! রোম ও পারস্য সম্রাটগণ কত আরামে জীবন-যাপন করছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, দুঃখের কোন কারণ নেই এদের ভাগ্যে দুনিয়া আর আমাদের ভাগ্যে আখিরাত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০১৭৪।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي تَوَاضُعِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : إِنَّمَا كَانَ فِرَاشُ رَسُوْلِ اللهِ الَّذِيْ يَنَامُ عَلَيْهِ مِنْ أَدَمٍ حَشْوُهٗ لِيْفٌ
২৫৩. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ যে বিছানায় নিদ্রা যেতেন, তা ছিল চামড়ার। এর ভেতরে খেজুর গাছের আঁশ ভরা থাকত। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৫১; বায়হাকী, হা/১৩০৯৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১২২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৮৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৮৬।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ সাধারণত চামড়া বা চটের তৈরি বিছানা বা মাদুর ব্যবহার করতেন। আরামদায়ক বিছানার প্রতি তাঁর কোন আগ্রহই ছিল না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট উপস্থিত হয়ে দেখলাম চটের বিছানায় শুয়ে থাকার কারণে তাঁর শরীরে দাগ লেগে যায়। এ দৃশ্য দেখে আমি কাঁদতে লাগলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! রোম ও পারস্য সম্রাটগণ কত আরামে জীবন-যাপন করছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, দুঃখের কোন কারণ নেই এদের ভাগ্যে দুনিয়া আর আমাদের ভাগ্যে আখিরাত। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১০১৭৪।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي تَوَاضُعِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন :
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا تُطْرُوْنِيْ كَمَا اَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ اِنَّمَا اَنَا عَبْدٌ فَقُوْلُوْا : عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهٗ
২৫৪. উমর ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা আমার সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করো না। যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করে থাকে। আমি আল্লাহর বান্দা। তাই আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলই বলো। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪; দারেমী, হা/২৭৮৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৩৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৩১৯; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৩০।]
ব্যাখ্যা : ইসলাম সর্বদা আক্বীদাসহ সকল ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছে। বাড়াবাড়ি ও শিথিলতা উভয়টিই বর্জনের নির্দেশ দিয়েছে। ইয়াহুদিরা নবীদের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছে। তাঁদেরকে যথাযথ মর্যাদা দেয়নি। এমনকি তাঁদেরকে হত্যাও করেছে। অন্যদিকে নাসারারা ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর স্থানে বসিয়েছে। এভাবে উভয় জাতি চরম গোমরাহীর শিকার হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এদিকে ইঙ্গিত করে তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করার জন্য উম্মাতকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন এবং বলেছেন, আমার পরিচয় হলো, আমি আল্লাহর প্রকৃত বান্দা, তাঁর মনোনীত সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। আমি আল্লাহ নই। আল্লাহর অংশীদারও নই। আমার ব্যাপারে এমন কোন উক্তি করবে না, যা দাসত্ব ও রিসালাতের পরিপন্থী হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সামান্য খাবারে দাওয়াত দিলেও অংশগ্রহণ করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يُدْعٰى اِلٰى خُبْزِ الشَّعِيْرِ وَالْاِهَالَةِ السَّنِخَةِ فَيُجِيْبُ . وَلَقَدْ كَانَ لَهٗ دِرْعٌ عِنْدَ يَهُوْدِيٍّ فَمَا وَجَدَ مَا يَفُكُّهَا حَتّٰى مَاتَ
২৫৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ -কে যবের রুটি এবং কয়েক দিনের পুরনো চর্বির তরকারী খাওয়ার দাওয়াত করলেও তা গ্রহণ করতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি বর্ম এক ইয়াহুদির নিকট বন্ধক ছিল। শেষ জীবন পর্যন্ত তা ছাড়ানোর মতো পয়সা তাঁর হাতে ছিল না। [মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৪০১৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২১২৯; জামেউস সগীর, হা/৯০৭০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১১৬৩২।]
ব্যাখ্যা : দাওয়াত ও হাদিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে ভালোবাসা প্রকাশ করা। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ হাদিয়ার বস্তুর দিকে বিবেচনা না করে দাতার ভালোবাসা বিবেচনা করতেন। এজন্য ক্ষুদ্র জিনিষও আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতেন, ফেরত দিতেন না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি পুরনো আসনে বসে হজ্জ পালন করেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : حَجَّ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى رَحْلٍ رَثٍّ وَعَلَيْهِ قَطِيْفَةٌ لَا تُسَاوِيْ اَرْبَعَةَ دَرَاهِمَ فَقَالَ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًّا لَا رِيَاءَ فِيْهِ وَلَا سُمْعَةَ
২৫৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি পুরনো আসনে বসে হজ্জ পালন করেন। তাঁর আসনের উপর একটি কাপড় ছিল, যার মূল্য চার দিরহামও ছিল না। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি এ হজ্জকে লৌকিকতা ও প্রচার বিলাস হতে মুক্ত করো। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬১৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১২২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩৪৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ তার জন্য কারো দাঁড়ানোকে পছন্দ করতেন না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : لَمْ يَكُنْ شَخْصٌ اَحَبَّ اِلَيْهِمْ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : وَكَانُوْا اِذَا رَاَوْهُ لَمْ يَقُوْمُوْا ، لِمَا يَعْلَمُوْنَ مِنْ كَرَاهَتِهٖ لِذٰلِكَ
২৫৭. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণের কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে প্রিয় কোন ব্যক্তিত্ব এ পৃথিবীতে ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখে দাঁড়াতেন না। কারণ, তারা জানতেন যে, তাঁকে দেখে দাঁড়ানোটা তিনি পছন্দ করতেন না। [আদাবুল মুফরাদ, হা/৯৪৬; তাহযীবুল আছার, হা/২৭৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৬৭; মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২৬০৯৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৮।]
ব্যাখ্যা : কারো সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকা নবী ﷺ পছন্দ করতেন না। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম নবী ﷺ কে দেখে দাঁড়াতেন না। তাই এটাই সুন্নত যে, কারো আগমনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে যদি কাউকে এগিয়ে আনা বা কাউকে সহযোগিতা করার প্রয়োজন দেখা দেয় তবে তার জন্য দাঁড়ানো জায়েয আছে। যেমন সাহাবায়ে কেরাম সা‘দ ইবনে মুয়ায (রাঃ) কে এগিয়ে আনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনধারার আরো কিছু বিবরণ :
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : سَاَلْتُ خَالِيْ هِنْدَ بْنَ اَبِيْ هَالَةَ ، وَكَانَ وَصَّافًا عَنْ حِلْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ ، وَاَنَا اَشْتَهِيْ اَنْ يَصِفَ لِي مِنْهَا شَيْئًا ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ فَخْمًا مُفَخَّمًا ، يَتَلَأْلَأُ وَجْهُهٗ تَلَأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَذَكَرَ الْحَدِيْثَ بِطُوْلِهٖ قَالَ الْحَسَنُ : فَكَتَّمْتُهَا الْحُسَيْنَ زَمَانًا ، ثُمَّ حَدَّثْتُهٗ فَوَجَدْتُهٗ قَدْ سَبَقَنِيْ اِلَيْهِ . فَسَاَلَهٗ عَمَّا سَاَلْتُهٗ عَنْهُ وَوَجَدْتُهٗ قَدْ سَاَلَ اَبَاهَا عَنْ مَدْخَلِهٖ وَمَخْرَجِهٖ وَشَكْلِهٖ فَلَمْ يَدَعْ مِنْهُ شَيْئًا
قَالَ الْحُسَيْنُ : فَسَاَلْتُ اَبِيْ ، عَنْ دُخُوْلِ رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ : كَانَ اِذَا اَوٰى اِلٰى مَنْزلِهٖ جَزَّاَ دُخُوْلَهٗ ثَلَاثَةَ اَجْزَاءٍ ، جُزْءًا لِلّٰهِ ، وَجُزْءًا لِاَهْلِهٖ ، وَجُزْءًا لِنَفْسِهٖ ، ثُمَّ جَزَّاَ جُزْاَهٗ بَيْنَهٗ وَبَيْنَ النَّاسِ ، فَيَرُدُّ ذٰلِكَ بِالْخَاصَّةِ عَلَى الْعَامَّةِ ، وَلَا يَدَّخِرُ عَنْهُمْ شَيْئًا ، وَكَانَ مِنْ سِيرَتِهٖ فِي جُزْءِ الْأُمَّةِ اِيْثَارُ اَهْلِ الْفَضْلِ بِاِذْنِهٖ وَقَسْمِهٖ عَلٰى قَدْرِ فَضْلِهِمْ فِيْ الدِّيْنِ ، فَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَةِ ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَتَيْنِ ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَوَائِجِ ، فَيَتَشَاغَلُ بِهِمْ وَيَشْغَلُهُمْ فِيْمَا يُصْلِحُهُمْ وَالْأُمَّةَ مِنْ مُسَاءَلَتِهِمْ عَنْهُ وَاِخْبَارِهِمْ بِالَّذِي يَنْبَغِيْ لَهُمْ وَيَقُوْلُ : لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ مِنْكُمُ الْغَائِبَ ، وَاَبْلِغُوْنِيْ حَاجَةَ مَنْ لَا يَسْتَطِيْعُ اِبْلَاغَهَا ، فَاِنَّهٗ مَنْ اَبْلَغَ سُلْطَانًا حَاجَةَ مَنْ لَا يَسْتَطِيْعُ اِبْلَاغَهَا ثَبَّتَ اللهُ قَدمَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، لَا يُذْكَرُ عِنْدَهٗ اِلَّا ذٰلِكَ ، وَلَا يُقْبَلُ مِنْ اَحَدٍ غَيْرِهٖ ، يَدْخُلُوْنَ رُوَّادًا وَلَا يَفْتَرِقُوْنَ اِلَّا عَنْ ذَوَاقٍ ، وَيُخْرِجُوْنَ اَدِلَّةً يَعْنِيْ عَلَى الْخَيْرِ
قَالَ : فَسَاَلْتُهٗ عَنْ مَخْرَجِهٖ كَيْفَ يَصْنَعُ فِيْهِ ؟ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَخْرِنُ لِسَانُهٗ اِلَّا فِيْمَا يَعْنِيْهِ ، وَيُؤَلِّفُهُمْ وَلَا يُنَفِّرُهُمْ ، وَيُكْرِمُ كَرِيمَ كُلِّ قَوْمٍ وَيُوَلِّيْهِ عَلَيْهِمْ ، وَيُحَذِّرُ النَّاسَ وَيَحْتَرِسُ مِنْهُمْ مِنْ غَيْرِ اَنْ يَطْوِيَ عَنْ اَحَدٍ مِنْهُمْ بِشْرَهٗ وَخُلُقَهٗ ، وَيَتَفَقَّدُ اَصْحَابَهٗ ، وَيَسْاَلُ النَّاسَ عَمَّا فِي النَّاسِ ، وَيُحَسِّنُ الْحَسَنَ وَيُقَوِّيْهٖ ، وَيُقَبِّحُ الْقَبِيْحَ وَيُوَهِّيْهِ ، مُعْتَدِلُ الْاَمْرِ غَيْرُ مُخْتَلِفٍ ، لَا يَغْفُلُ مَخَافَةَ اَنْ يَغْفُلُوْا اَوْ يَمِيْلُوْا ، لِكُلِّ حَالٍ عِنْدَهٗ عَتَادٌ ، لَا يُقَصِّرُ عَنِ الْحَقِّ وَلَا يُجَاوِزُهٗ . اَلَّذِيْنَ يَلُوْنَهٗ مِنَ النَّاسِ خِيَارُهُمْ ، اَفْضَلُهُمْ عِنْدَهٗ اَعَمُّهُمْ نَصِيْحَةً ، وَاَعْظَمُهُمْ عِنْدَهٗ مَنْزِلَةً اَحْسَنُهُمْ مُوَاسَاةً وَمُؤَازَرَةً .
قَالَ : فَسَاَلْتُهٗ عَنْ مَجْلِسِهٖ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَا يَقُوْمُ وَلَا يَجْلِسُ اِلَّا عَلٰى ذِكْرٍ ، وَاِذَا انْتَهٰى اِلٰى قَوْمٍ جَلَسَ حَيْثُ يَنْتَهِيْ بِهِ الْمَجْلِسُ وَيَأْمُرُ بِذٰلِكَ ، يُعْطِيْ كُلَّ جُلَسَائِهٖ بِنَصِيْبِهٖ ، لَا يَحْسَبُ جَلِيْسُهٗ اَنَّ اَحَدًا اَكْرَمُ عَلَيْهِ مِنْهُ ، مَنْ جَالَسَهٗ اَوْ فَاوَضَهٗ فِيْ حَاجَةٍ صَابَرَهٗ حَتّٰى يَكُوْنَ هُوَ الْمُنْصَرِفُ عَنْهُ ، وَمَنْ سَاَلَهٗ حَاجَةً لَمْ يَرُدَّهٗ اِلَّا بِهَا اَوْ بِمَيْسُوْرٍ مِنَ الْقَوْلِ ، قَدْ وَسِعَ النَّاسَ بَسْطُهٗ وَخُلُقُهٗ ، فَصَارَ لَهُمْ اَبًا وَصَارُوْا عِنْدَهٗ فِي الْحَقِّ سَوَاءً ، مَجْلِسُهٗ مَجْلِسُ عِلْمٍ وَحِلْمٍ وَحَيَاءٍ وَاَمَانَةٍ وَصَبْرٍ ، لَا تُرْفَعُ فِيْهِ الْاَصْوَاتُ وَلَا تُؤْبَنُ فِيْهِ الْحُرَمُ ، وَلَا تُثَنّٰى فَلَتَاتُهٗ مُتَعَادِلِيْنَ ، بَلْ كَانُوْا يَتَفَاضَلُوْنَ فِيْهِ بِالتَّقْوٰى ، مُتَوَاضِعِيْنَ يُوَقِّرُوْنَ فِيْهِ الْكَبِيْرَ وَيَرْحَمُوْنَ فِيْهِ الصَّغِيْرَ ، وَيُؤْثِرُوْنَ ذَا الْحَاجَةِ وَيَحْفَظُوْنَ الْغَرِيْبَ
২৫৮. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার মামা হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবস্থা জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, যিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবস্থা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বর্ণনা করতেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেহাকৃতি ছিল উচ্চ ও মর্যাদাসম্পন্ন। তাঁর চেহেরা ছিল পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল। অতঃপর পূর্ণ বিবরণ পেশ করেন। হাসান (রাঃ) বলেন, এ হাদীস হুসাইন (রাঃ) এর কাছে বেশ কিছু কাল বর্ণনা করিনি। পরে বলা হলে জানা গেল যে, তিনি আমার আগেই এ হাদীসটি শুনেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এ হাদীসটি কেবল মামার কাছ থেকে শুনেননি; উপরন্তু পিতা আলী (রাঃ) এর কাছ হতেও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘরে প্রবেশ করা, বাইরে যাওয়া ও অন্যান্য রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এ সম্পর্কে কোন কিছুই তিনি ছাড়েননি।
হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা আলী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গৃহে প্রবেশ করার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন গৃহে প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর গৃহের অবস্থানকে তিনটি ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগ আল্লাহর ইবাদাতের জন্য, এক ভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য এবং এক ভাগ নিজের কাজকর্মের জন্য। এ কাজকর্মের সময়কেও তিনি ২ ভাগে বিভক্ত করেন। এক ভাগে নেহায়তই নিজের জন্য এবং এক ভাগ অন্যান্য লোকের জন্য। এ সময়ে বিশেষ বিশেষ সাহাবীগণ তার নিকট আসতেন। তাদের কাছে কোন কিছুর অব্যক্ত থাকত না। এ সকল লোকের মধ্যে আলেমগণ প্রথমে আসার অনুমতি পেতেন। তাদের ধর্মীয় মর্যাদার বিচারে তাদেরকে সময় দিতেন। কেউ এক, কেউ দুই, আবার কেউ ততোধিক প্রয়োজন নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ সকলের প্রয়োজন মিটিয়ে দিতেন এবং তাদেরকে এমন কাজের নির্দেশ দিতেন, যা তাদের নিজেদের এবং পুরো উম্মতের উপকারে আসে।
এ সময় তিনি সমবেতদের লক্ষ্য করে বলতেন, তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছ, তারা আমার বাণী অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দেবে। যারা কোন কারণে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারনি, তোমরা তাদের জিজ্ঞাসা আমার কাছ থেকে জেনে নিয়ে তাদেরকে জানিয়ে দেবে। কারণ, যে ব্যক্তি এমন কোন নিবেদন বাদশাহের কাছে পৌঁছায় যে বাদশা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার কদমকে অটল রাখবেন। তোমরা এ ব্যাপারে সতর্ক হও। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মজলিসে কেবল এসব আলোচনাই চলত। রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীগণের থেকে এসব আলাপ-আলোচনাই শুনতেন। সেখানে কোন প্রকার বাহুল্য কথাবার্তা হতো না। সাহাবীরা ধর্মীয় জ্ঞান আহরণের আগ্রহ নিয়ে আসতেন এবং দ্বীনের স্বাদ গ্রহণ করতেন এবং তারা কল্যাণের দিশারী হয়ে ফিরে যেতেন।
হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ বাইরে যাওয়ার সময় কীরূপ করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ অহেতুক কথাবার্তা হতে স্বীয় জবানকে সংযত রাখতেন। মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতেন। তাদেরকে কোনভাবেই নিরুৎসাহিত করতেন না। সকল গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করতেন এবং তাদের মধ্য হতে তাদের নেতা মনোনীত করতেন। লোকদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাতেন। স্বীয় সঙ্গীদের খোঁজ-খবর রাখতেন এবং লোকদের পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসন্ধান করে (কোন প্রকার জটিলতা থাকলে) তা সংশোধন করে দিতেন। ভালোকে সমর্থন করে তাকে শক্তিশালী করতেন এবং খারাপকে খারাপ বলে প্রতিহত করতেন। কোন প্রকার মতবিরোধ সৃষ্টি না করে সবকিছুতেই মধ্যমপন্থা অনুসরণ করতেন। লোকদের সংশোধন করতে কোন প্রকার অলসতা করতেন না। নসীহত ও উপদেশ দানের সময় লোকেরা যেন উদাসীন ও বিরক্ত হয়ে না পড়ে, তিনি সে দিকেও খেয়াল রাখতেন। প্রত্যেক কাজের জন্য তাঁর কাছে বিশেষ ব্যবস্থা থাকত। সত্যের ব্যাপারে কোন প্রকার সংকীর্ণতা ছিল না, সীমা অতিক্রম হতো না। যেসব লোক তাঁর কাছে আসত, তারা উৎকৃষ্ট লোকে পরিণত হতো। যেই ব্যক্তি অপরের মঙ্গল কামনা করত, সে-ই তাঁর নিকট উত্তম ব্যক্তিরূপে সম্মানিত হতো। আর সে ব্যক্তিই তাঁর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরূপে মনে হতো, যে অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় অতি উৎসাহী ছিল।
হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার মামার কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মজলিস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ উঠা-বসায় সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকতেন। যখন কোথাও যেতেন, যেখানেই তাঁকে বসতে দিত, তিনি সেখানেই বসতেন। অন্যদেরকেও অনুরূপ করার নির্দেশ দিতেন। তিনি লোকের মাথা ডিঙ্গিয়ে যেতে নিষেধ করেন। এ কথা সত্য যে, তিনি যে আসনেই বসতেন, তাই মধ্যমনির আসনে পরিণত হতো। তিনি উপস্থিত সকলেরই কথা শুনতেন। উপস্থিত সকলেই মনে করত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে অধিক মর্যাদা দিচ্ছেন। তাঁর কাছে কেউ আসলে সে নিজে উঠে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি উঠেতেন না। কেউ তার কাছে কিছু চাইলে তা না দিয়ে তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতেন না। না থাকলে নম্রভাবে বুঝিয়ে বলতেন। তাঁর দান সবার জন্যই অবধারিত ছিল। মায়া-মমতায় তিনি সকলের পিতা স্বরূপ ছিলেন। ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নিকট সবাই সমান ছিল। তাঁর মজলিস ছিল জ্ঞান, লজ্জা, ধৈর্য ও আমানতের। সেখানে কোন প্রকার হট্টগোল হতো না এবং কারো মান-সম্মানেরও ক্ষতি হতো না। সকলেই সমান মর্যাদা পেতেন। তবে তাকওয়ার বিচারে একে অন্যের উপর মর্যাদাসম্পন্ন হতেন। একে অন্যের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করতেন। বড়কে শ্রদ্ধা ও ছোটকে স্নেহ করতেন। প্রয়োজনধারীকে অগ্রাধিকার দেয়া হতো এবং ভিনদেশীকে হেফাযত করা হতো। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৮৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭০৫; জামেউস সগীর, হা/৯৯৪৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৬২।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَوْ أُهْدِيَ اِلَيَّ كُرَاعٌ لَقَبِلْتُ ، وَلَوْ دُعِيْتُ عَلَيْهِ لَاَجَبْتُ
২৫৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাকে যদি ছাগলের একটি পা-ও দান করা হয়, তাহলে আমি অবশ্যই তা গ্রহণ করব। এ জন্য যদি আমাকে এতে দাওয়াত করা হয়, তবে আমি দাওয়াত গ্রহণ করব। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩২০০; ইবনে হিববান, হা/৫২৯১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৫২৯; সুনানুল কাবীর লিল বায়হাকী, হা/১২২৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২২৪১৯; জামেউস সগীর, হা/৯৩৮৮।]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : جَاءَنِي رَسُوْلُ اللهِ لَيْسَ بِرَاكِبِ بَغْلٍ وَلَا بِرْذَوْنٍ
২৬০. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে আসলেন; কিন্তু তখন তিনি খচ্চর বা তুর্কি ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৬৪; আবু দাউদ, হা/৩০৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১২৬৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২১৪০।]
তিনি নবজাতক বাচ্চাকেও কোলে তুলে নিতেন :
عَنْ يُوْسُفَ بْنَ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَّامٍ قَالَ : سَمَّانِيْ رَسُوْلُ اللهِ يُوْسُفَ وَاَقْعَدَنِيْ فِيْ حِجْرِهٖ وَمَسَحَ عَلٰى رَأْسِيْ
২৬১. ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার নাম রাখেন ইউসুফ। অতঃপর তিনি আমাকে কোলে তুলে নেন এবং মাথার উপর হাত রাখেন। [আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৫১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮১৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৬৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৬৯০; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৯০৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ মাত্র ৪ দিরহাম মূল্যের হওদার উপর বসে হজ্জ পালন করেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ حَجَّ عَلٰى رَحْلٍ رَثٍّ وَقَطِيْفَةٍ ، كُنَّا نَرٰى ثَمَنَهَا اَرْبَعَةَ دَرَاهِمَ ، فَلَمَّا اسْتَوَتْ بِهٖ رَاحِلَتُهٗ قَالَ : لَبَّيْكَ بِحَجَّةٍ لَا سُمْعَةَ فِيْهَا وَلَا رِيَاءَ
২৬১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ উটের পুরনো একটি হাওদায় বসে হজ্জ পালন করেন। এর উপর এক টুকরো কাপড় ছিল। আমাদের মতে এর মূল্য ৪ দিরহাম হবে। হাওদায় উপবিষ্ট অবস্থায় তিনি এ দু‘আ করছিলেন যে, হে প্রভু! আমি হজ্জে তোমার দরবারে হাজির হয়েছি। তুমি একে লৌকিকতা ও প্রচারণার হতে মুক্ত রাখ। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬১৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১২২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩৪৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ লাউ খুবই পছন্দ করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَجُلًا خَيَّاطًا دَعَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَرَّبَ مِنْهُ ثَرِيْدًا عَلَيْهِ دُبَّاءُ قَالَ : فَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَأْخُذُ الدُّبَّاءَ وَكَانَ يُحِبُّ الدُّبَّاءَ .
قَالَ ثَابِتٌ : فَسَمِعْتُ اَنَسًا يَقُوْلُ : فَمَا صُنِعَ لِيْ طَعَامٌ اَقْدَرُ عَلٰى اَنْ يُصْنَعَ فِيْهِ دُبَّاءُ اِلَّا صُنِعَ .
২৬২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক দর্জি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দাওয়াত করে। তাঁর খাবারের জন্য লাউ মিশ্রিত সারীদ উপস্থিত করা হয়। লাউ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খুব প্রিয় খাদ্য ছিল। এজন্য তিনি লাউ খেতে শুরু করেন।
সাবিত বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এরপর হতে আমার জন্য যে তরকারী রান্না করা হতো, তাতে লাউ দেয়া হতো, যদি তা সম্ভব হতো। [শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৪৬; মুস্তাখরাজে আবু ‘আওয়ানা, হা/৬৭২০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৯৬৬৭।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন :
عَنْ عَمْرَةَ ، قَالَتْ : قِيْلَ لِعَائِشَةَ : مَاذَا كَانَ يَعْمَلُ رَسُوْلُ اللهِ فِي بَيْتِهٖ ؟ قَالَتْ : كَانَ بَشَرًا مِنَ الْبَشَرِ ، يَفْلِيْ ثَوْبَهٗ ، وَيَحْلُبُ شَاتَهٗ ، وَيَخْدُمُ نَفْسَهٗ .
২৬৩. আমরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে অবস্থানকালে কি করতেন? জবাবে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন একজন মানুষ। পোশাকের মধ্যে তিনি উকুন তালাশ করতেন, ছাগল দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২৩৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮৭৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৭৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৭৫।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي خُلُقِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا تُطْرُوْنِيْ كَمَا اَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ اِنَّمَا اَنَا عَبْدٌ فَقُوْلُوْا : عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهٗ
২৫৪. উমর ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা আমার সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করো না। যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করে থাকে। আমি আল্লাহর বান্দা। তাই আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলই বলো। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪; দারেমী, হা/২৭৮৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৩৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৩১৯; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৩০।]
ব্যাখ্যা : ইসলাম সর্বদা আক্বীদাসহ সকল ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছে। বাড়াবাড়ি ও শিথিলতা উভয়টিই বর্জনের নির্দেশ দিয়েছে। ইয়াহুদিরা নবীদের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছে। তাঁদেরকে যথাযথ মর্যাদা দেয়নি। এমনকি তাঁদেরকে হত্যাও করেছে। অন্যদিকে নাসারারা ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর স্থানে বসিয়েছে। এভাবে উভয় জাতি চরম গোমরাহীর শিকার হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এদিকে ইঙ্গিত করে তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করার জন্য উম্মাতকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন এবং বলেছেন, আমার পরিচয় হলো, আমি আল্লাহর প্রকৃত বান্দা, তাঁর মনোনীত সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। আমি আল্লাহ নই। আল্লাহর অংশীদারও নই। আমার ব্যাপারে এমন কোন উক্তি করবে না, যা দাসত্ব ও রিসালাতের পরিপন্থী হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সামান্য খাবারে দাওয়াত দিলেও অংশগ্রহণ করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يُدْعٰى اِلٰى خُبْزِ الشَّعِيْرِ وَالْاِهَالَةِ السَّنِخَةِ فَيُجِيْبُ . وَلَقَدْ كَانَ لَهٗ دِرْعٌ عِنْدَ يَهُوْدِيٍّ فَمَا وَجَدَ مَا يَفُكُّهَا حَتّٰى مَاتَ
২৫৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ -কে যবের রুটি এবং কয়েক দিনের পুরনো চর্বির তরকারী খাওয়ার দাওয়াত করলেও তা গ্রহণ করতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি বর্ম এক ইয়াহুদির নিকট বন্ধক ছিল। শেষ জীবন পর্যন্ত তা ছাড়ানোর মতো পয়সা তাঁর হাতে ছিল না। [মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৪০১৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২১২৯; জামেউস সগীর, হা/৯০৭০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১১৬৩২।]
ব্যাখ্যা : দাওয়াত ও হাদিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে ভালোবাসা প্রকাশ করা। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ হাদিয়ার বস্তুর দিকে বিবেচনা না করে দাতার ভালোবাসা বিবেচনা করতেন। এজন্য ক্ষুদ্র জিনিষও আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতেন, ফেরত দিতেন না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি পুরনো আসনে বসে হজ্জ পালন করেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : حَجَّ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى رَحْلٍ رَثٍّ وَعَلَيْهِ قَطِيْفَةٌ لَا تُسَاوِيْ اَرْبَعَةَ دَرَاهِمَ فَقَالَ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًّا لَا رِيَاءَ فِيْهِ وَلَا سُمْعَةَ
২৫৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি পুরনো আসনে বসে হজ্জ পালন করেন। তাঁর আসনের উপর একটি কাপড় ছিল, যার মূল্য চার দিরহামও ছিল না। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি এ হজ্জকে লৌকিকতা ও প্রচার বিলাস হতে মুক্ত করো। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬১৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১২২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩৪৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ তার জন্য কারো দাঁড়ানোকে পছন্দ করতেন না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : لَمْ يَكُنْ شَخْصٌ اَحَبَّ اِلَيْهِمْ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : وَكَانُوْا اِذَا رَاَوْهُ لَمْ يَقُوْمُوْا ، لِمَا يَعْلَمُوْنَ مِنْ كَرَاهَتِهٖ لِذٰلِكَ
২৫৭. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণের কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে প্রিয় কোন ব্যক্তিত্ব এ পৃথিবীতে ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখে দাঁড়াতেন না। কারণ, তারা জানতেন যে, তাঁকে দেখে দাঁড়ানোটা তিনি পছন্দ করতেন না। [আদাবুল মুফরাদ, হা/৯৪৬; তাহযীবুল আছার, হা/২৭৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৬৭; মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২৬০৯৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৮।]
ব্যাখ্যা : কারো সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকা নবী ﷺ পছন্দ করতেন না। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম নবী ﷺ কে দেখে দাঁড়াতেন না। তাই এটাই সুন্নত যে, কারো আগমনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে যদি কাউকে এগিয়ে আনা বা কাউকে সহযোগিতা করার প্রয়োজন দেখা দেয় তবে তার জন্য দাঁড়ানো জায়েয আছে। যেমন সাহাবায়ে কেরাম সা‘দ ইবনে মুয়ায (রাঃ) কে এগিয়ে আনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনধারার আরো কিছু বিবরণ :
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : سَاَلْتُ خَالِيْ هِنْدَ بْنَ اَبِيْ هَالَةَ ، وَكَانَ وَصَّافًا عَنْ حِلْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ ، وَاَنَا اَشْتَهِيْ اَنْ يَصِفَ لِي مِنْهَا شَيْئًا ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ فَخْمًا مُفَخَّمًا ، يَتَلَأْلَأُ وَجْهُهٗ تَلَأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَذَكَرَ الْحَدِيْثَ بِطُوْلِهٖ قَالَ الْحَسَنُ : فَكَتَّمْتُهَا الْحُسَيْنَ زَمَانًا ، ثُمَّ حَدَّثْتُهٗ فَوَجَدْتُهٗ قَدْ سَبَقَنِيْ اِلَيْهِ . فَسَاَلَهٗ عَمَّا سَاَلْتُهٗ عَنْهُ وَوَجَدْتُهٗ قَدْ سَاَلَ اَبَاهَا عَنْ مَدْخَلِهٖ وَمَخْرَجِهٖ وَشَكْلِهٖ فَلَمْ يَدَعْ مِنْهُ شَيْئًا
قَالَ الْحُسَيْنُ : فَسَاَلْتُ اَبِيْ ، عَنْ دُخُوْلِ رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ : كَانَ اِذَا اَوٰى اِلٰى مَنْزلِهٖ جَزَّاَ دُخُوْلَهٗ ثَلَاثَةَ اَجْزَاءٍ ، جُزْءًا لِلّٰهِ ، وَجُزْءًا لِاَهْلِهٖ ، وَجُزْءًا لِنَفْسِهٖ ، ثُمَّ جَزَّاَ جُزْاَهٗ بَيْنَهٗ وَبَيْنَ النَّاسِ ، فَيَرُدُّ ذٰلِكَ بِالْخَاصَّةِ عَلَى الْعَامَّةِ ، وَلَا يَدَّخِرُ عَنْهُمْ شَيْئًا ، وَكَانَ مِنْ سِيرَتِهٖ فِي جُزْءِ الْأُمَّةِ اِيْثَارُ اَهْلِ الْفَضْلِ بِاِذْنِهٖ وَقَسْمِهٖ عَلٰى قَدْرِ فَضْلِهِمْ فِيْ الدِّيْنِ ، فَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَةِ ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَتَيْنِ ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَوَائِجِ ، فَيَتَشَاغَلُ بِهِمْ وَيَشْغَلُهُمْ فِيْمَا يُصْلِحُهُمْ وَالْأُمَّةَ مِنْ مُسَاءَلَتِهِمْ عَنْهُ وَاِخْبَارِهِمْ بِالَّذِي يَنْبَغِيْ لَهُمْ وَيَقُوْلُ : لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ مِنْكُمُ الْغَائِبَ ، وَاَبْلِغُوْنِيْ حَاجَةَ مَنْ لَا يَسْتَطِيْعُ اِبْلَاغَهَا ، فَاِنَّهٗ مَنْ اَبْلَغَ سُلْطَانًا حَاجَةَ مَنْ لَا يَسْتَطِيْعُ اِبْلَاغَهَا ثَبَّتَ اللهُ قَدمَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، لَا يُذْكَرُ عِنْدَهٗ اِلَّا ذٰلِكَ ، وَلَا يُقْبَلُ مِنْ اَحَدٍ غَيْرِهٖ ، يَدْخُلُوْنَ رُوَّادًا وَلَا يَفْتَرِقُوْنَ اِلَّا عَنْ ذَوَاقٍ ، وَيُخْرِجُوْنَ اَدِلَّةً يَعْنِيْ عَلَى الْخَيْرِ
قَالَ : فَسَاَلْتُهٗ عَنْ مَخْرَجِهٖ كَيْفَ يَصْنَعُ فِيْهِ ؟ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَخْرِنُ لِسَانُهٗ اِلَّا فِيْمَا يَعْنِيْهِ ، وَيُؤَلِّفُهُمْ وَلَا يُنَفِّرُهُمْ ، وَيُكْرِمُ كَرِيمَ كُلِّ قَوْمٍ وَيُوَلِّيْهِ عَلَيْهِمْ ، وَيُحَذِّرُ النَّاسَ وَيَحْتَرِسُ مِنْهُمْ مِنْ غَيْرِ اَنْ يَطْوِيَ عَنْ اَحَدٍ مِنْهُمْ بِشْرَهٗ وَخُلُقَهٗ ، وَيَتَفَقَّدُ اَصْحَابَهٗ ، وَيَسْاَلُ النَّاسَ عَمَّا فِي النَّاسِ ، وَيُحَسِّنُ الْحَسَنَ وَيُقَوِّيْهٖ ، وَيُقَبِّحُ الْقَبِيْحَ وَيُوَهِّيْهِ ، مُعْتَدِلُ الْاَمْرِ غَيْرُ مُخْتَلِفٍ ، لَا يَغْفُلُ مَخَافَةَ اَنْ يَغْفُلُوْا اَوْ يَمِيْلُوْا ، لِكُلِّ حَالٍ عِنْدَهٗ عَتَادٌ ، لَا يُقَصِّرُ عَنِ الْحَقِّ وَلَا يُجَاوِزُهٗ . اَلَّذِيْنَ يَلُوْنَهٗ مِنَ النَّاسِ خِيَارُهُمْ ، اَفْضَلُهُمْ عِنْدَهٗ اَعَمُّهُمْ نَصِيْحَةً ، وَاَعْظَمُهُمْ عِنْدَهٗ مَنْزِلَةً اَحْسَنُهُمْ مُوَاسَاةً وَمُؤَازَرَةً .
قَالَ : فَسَاَلْتُهٗ عَنْ مَجْلِسِهٖ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَا يَقُوْمُ وَلَا يَجْلِسُ اِلَّا عَلٰى ذِكْرٍ ، وَاِذَا انْتَهٰى اِلٰى قَوْمٍ جَلَسَ حَيْثُ يَنْتَهِيْ بِهِ الْمَجْلِسُ وَيَأْمُرُ بِذٰلِكَ ، يُعْطِيْ كُلَّ جُلَسَائِهٖ بِنَصِيْبِهٖ ، لَا يَحْسَبُ جَلِيْسُهٗ اَنَّ اَحَدًا اَكْرَمُ عَلَيْهِ مِنْهُ ، مَنْ جَالَسَهٗ اَوْ فَاوَضَهٗ فِيْ حَاجَةٍ صَابَرَهٗ حَتّٰى يَكُوْنَ هُوَ الْمُنْصَرِفُ عَنْهُ ، وَمَنْ سَاَلَهٗ حَاجَةً لَمْ يَرُدَّهٗ اِلَّا بِهَا اَوْ بِمَيْسُوْرٍ مِنَ الْقَوْلِ ، قَدْ وَسِعَ النَّاسَ بَسْطُهٗ وَخُلُقُهٗ ، فَصَارَ لَهُمْ اَبًا وَصَارُوْا عِنْدَهٗ فِي الْحَقِّ سَوَاءً ، مَجْلِسُهٗ مَجْلِسُ عِلْمٍ وَحِلْمٍ وَحَيَاءٍ وَاَمَانَةٍ وَصَبْرٍ ، لَا تُرْفَعُ فِيْهِ الْاَصْوَاتُ وَلَا تُؤْبَنُ فِيْهِ الْحُرَمُ ، وَلَا تُثَنّٰى فَلَتَاتُهٗ مُتَعَادِلِيْنَ ، بَلْ كَانُوْا يَتَفَاضَلُوْنَ فِيْهِ بِالتَّقْوٰى ، مُتَوَاضِعِيْنَ يُوَقِّرُوْنَ فِيْهِ الْكَبِيْرَ وَيَرْحَمُوْنَ فِيْهِ الصَّغِيْرَ ، وَيُؤْثِرُوْنَ ذَا الْحَاجَةِ وَيَحْفَظُوْنَ الْغَرِيْبَ
২৫৮. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার মামা হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবস্থা জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, যিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবস্থা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বর্ণনা করতেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেহাকৃতি ছিল উচ্চ ও মর্যাদাসম্পন্ন। তাঁর চেহেরা ছিল পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল। অতঃপর পূর্ণ বিবরণ পেশ করেন। হাসান (রাঃ) বলেন, এ হাদীস হুসাইন (রাঃ) এর কাছে বেশ কিছু কাল বর্ণনা করিনি। পরে বলা হলে জানা গেল যে, তিনি আমার আগেই এ হাদীসটি শুনেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এ হাদীসটি কেবল মামার কাছ থেকে শুনেননি; উপরন্তু পিতা আলী (রাঃ) এর কাছ হতেও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘরে প্রবেশ করা, বাইরে যাওয়া ও অন্যান্য রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এ সম্পর্কে কোন কিছুই তিনি ছাড়েননি।
হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা আলী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গৃহে প্রবেশ করার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন গৃহে প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর গৃহের অবস্থানকে তিনটি ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগ আল্লাহর ইবাদাতের জন্য, এক ভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য এবং এক ভাগ নিজের কাজকর্মের জন্য। এ কাজকর্মের সময়কেও তিনি ২ ভাগে বিভক্ত করেন। এক ভাগে নেহায়তই নিজের জন্য এবং এক ভাগ অন্যান্য লোকের জন্য। এ সময়ে বিশেষ বিশেষ সাহাবীগণ তার নিকট আসতেন। তাদের কাছে কোন কিছুর অব্যক্ত থাকত না। এ সকল লোকের মধ্যে আলেমগণ প্রথমে আসার অনুমতি পেতেন। তাদের ধর্মীয় মর্যাদার বিচারে তাদেরকে সময় দিতেন। কেউ এক, কেউ দুই, আবার কেউ ততোধিক প্রয়োজন নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ সকলের প্রয়োজন মিটিয়ে দিতেন এবং তাদেরকে এমন কাজের নির্দেশ দিতেন, যা তাদের নিজেদের এবং পুরো উম্মতের উপকারে আসে।
এ সময় তিনি সমবেতদের লক্ষ্য করে বলতেন, তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছ, তারা আমার বাণী অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দেবে। যারা কোন কারণে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারনি, তোমরা তাদের জিজ্ঞাসা আমার কাছ থেকে জেনে নিয়ে তাদেরকে জানিয়ে দেবে। কারণ, যে ব্যক্তি এমন কোন নিবেদন বাদশাহের কাছে পৌঁছায় যে বাদশা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার কদমকে অটল রাখবেন। তোমরা এ ব্যাপারে সতর্ক হও। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মজলিসে কেবল এসব আলোচনাই চলত। রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীগণের থেকে এসব আলাপ-আলোচনাই শুনতেন। সেখানে কোন প্রকার বাহুল্য কথাবার্তা হতো না। সাহাবীরা ধর্মীয় জ্ঞান আহরণের আগ্রহ নিয়ে আসতেন এবং দ্বীনের স্বাদ গ্রহণ করতেন এবং তারা কল্যাণের দিশারী হয়ে ফিরে যেতেন।
হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ বাইরে যাওয়ার সময় কীরূপ করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ অহেতুক কথাবার্তা হতে স্বীয় জবানকে সংযত রাখতেন। মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতেন। তাদেরকে কোনভাবেই নিরুৎসাহিত করতেন না। সকল গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করতেন এবং তাদের মধ্য হতে তাদের নেতা মনোনীত করতেন। লোকদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাতেন। স্বীয় সঙ্গীদের খোঁজ-খবর রাখতেন এবং লোকদের পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসন্ধান করে (কোন প্রকার জটিলতা থাকলে) তা সংশোধন করে দিতেন। ভালোকে সমর্থন করে তাকে শক্তিশালী করতেন এবং খারাপকে খারাপ বলে প্রতিহত করতেন। কোন প্রকার মতবিরোধ সৃষ্টি না করে সবকিছুতেই মধ্যমপন্থা অনুসরণ করতেন। লোকদের সংশোধন করতে কোন প্রকার অলসতা করতেন না। নসীহত ও উপদেশ দানের সময় লোকেরা যেন উদাসীন ও বিরক্ত হয়ে না পড়ে, তিনি সে দিকেও খেয়াল রাখতেন। প্রত্যেক কাজের জন্য তাঁর কাছে বিশেষ ব্যবস্থা থাকত। সত্যের ব্যাপারে কোন প্রকার সংকীর্ণতা ছিল না, সীমা অতিক্রম হতো না। যেসব লোক তাঁর কাছে আসত, তারা উৎকৃষ্ট লোকে পরিণত হতো। যেই ব্যক্তি অপরের মঙ্গল কামনা করত, সে-ই তাঁর নিকট উত্তম ব্যক্তিরূপে সম্মানিত হতো। আর সে ব্যক্তিই তাঁর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরূপে মনে হতো, যে অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় অতি উৎসাহী ছিল।
হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার মামার কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মজলিস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ উঠা-বসায় সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকতেন। যখন কোথাও যেতেন, যেখানেই তাঁকে বসতে দিত, তিনি সেখানেই বসতেন। অন্যদেরকেও অনুরূপ করার নির্দেশ দিতেন। তিনি লোকের মাথা ডিঙ্গিয়ে যেতে নিষেধ করেন। এ কথা সত্য যে, তিনি যে আসনেই বসতেন, তাই মধ্যমনির আসনে পরিণত হতো। তিনি উপস্থিত সকলেরই কথা শুনতেন। উপস্থিত সকলেই মনে করত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে অধিক মর্যাদা দিচ্ছেন। তাঁর কাছে কেউ আসলে সে নিজে উঠে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি উঠেতেন না। কেউ তার কাছে কিছু চাইলে তা না দিয়ে তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতেন না। না থাকলে নম্রভাবে বুঝিয়ে বলতেন। তাঁর দান সবার জন্যই অবধারিত ছিল। মায়া-মমতায় তিনি সকলের পিতা স্বরূপ ছিলেন। ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নিকট সবাই সমান ছিল। তাঁর মজলিস ছিল জ্ঞান, লজ্জা, ধৈর্য ও আমানতের। সেখানে কোন প্রকার হট্টগোল হতো না এবং কারো মান-সম্মানেরও ক্ষতি হতো না। সকলেই সমান মর্যাদা পেতেন। তবে তাকওয়ার বিচারে একে অন্যের উপর মর্যাদাসম্পন্ন হতেন। একে অন্যের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করতেন। বড়কে শ্রদ্ধা ও ছোটকে স্নেহ করতেন। প্রয়োজনধারীকে অগ্রাধিকার দেয়া হতো এবং ভিনদেশীকে হেফাযত করা হতো। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৮৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭০৫; জামেউস সগীর, হা/৯৯৪৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৬২।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَوْ أُهْدِيَ اِلَيَّ كُرَاعٌ لَقَبِلْتُ ، وَلَوْ دُعِيْتُ عَلَيْهِ لَاَجَبْتُ
২৫৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাকে যদি ছাগলের একটি পা-ও দান করা হয়, তাহলে আমি অবশ্যই তা গ্রহণ করব। এ জন্য যদি আমাকে এতে দাওয়াত করা হয়, তবে আমি দাওয়াত গ্রহণ করব। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩২০০; ইবনে হিববান, হা/৫২৯১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৫২৯; সুনানুল কাবীর লিল বায়হাকী, হা/১২২৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২২৪১৯; জামেউস সগীর, হা/৯৩৮৮।]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : جَاءَنِي رَسُوْلُ اللهِ لَيْسَ بِرَاكِبِ بَغْلٍ وَلَا بِرْذَوْنٍ
২৬০. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে আসলেন; কিন্তু তখন তিনি খচ্চর বা তুর্কি ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৬৪; আবু দাউদ, হা/৩০৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১২৬৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২১৪০।]
তিনি নবজাতক বাচ্চাকেও কোলে তুলে নিতেন :
عَنْ يُوْسُفَ بْنَ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَّامٍ قَالَ : سَمَّانِيْ رَسُوْلُ اللهِ يُوْسُفَ وَاَقْعَدَنِيْ فِيْ حِجْرِهٖ وَمَسَحَ عَلٰى رَأْسِيْ
২৬১. ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার নাম রাখেন ইউসুফ। অতঃপর তিনি আমাকে কোলে তুলে নেন এবং মাথার উপর হাত রাখেন। [আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৫১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮১৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৬৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৬৯০; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৯০৯।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ মাত্র ৪ দিরহাম মূল্যের হওদার উপর বসে হজ্জ পালন করেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ حَجَّ عَلٰى رَحْلٍ رَثٍّ وَقَطِيْفَةٍ ، كُنَّا نَرٰى ثَمَنَهَا اَرْبَعَةَ دَرَاهِمَ ، فَلَمَّا اسْتَوَتْ بِهٖ رَاحِلَتُهٗ قَالَ : لَبَّيْكَ بِحَجَّةٍ لَا سُمْعَةَ فِيْهَا وَلَا رِيَاءَ
২৬১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ উটের পুরনো একটি হাওদায় বসে হজ্জ পালন করেন। এর উপর এক টুকরো কাপড় ছিল। আমাদের মতে এর মূল্য ৪ দিরহাম হবে। হাওদায় উপবিষ্ট অবস্থায় তিনি এ দু‘আ করছিলেন যে, হে প্রভু! আমি হজ্জে তোমার দরবারে হাজির হয়েছি। তুমি একে লৌকিকতা ও প্রচারণার হতে মুক্ত রাখ। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬১৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১২২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩৪৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ লাউ খুবই পছন্দ করতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَجُلًا خَيَّاطًا دَعَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَرَّبَ مِنْهُ ثَرِيْدًا عَلَيْهِ دُبَّاءُ قَالَ : فَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَأْخُذُ الدُّبَّاءَ وَكَانَ يُحِبُّ الدُّبَّاءَ .
قَالَ ثَابِتٌ : فَسَمِعْتُ اَنَسًا يَقُوْلُ : فَمَا صُنِعَ لِيْ طَعَامٌ اَقْدَرُ عَلٰى اَنْ يُصْنَعَ فِيْهِ دُبَّاءُ اِلَّا صُنِعَ .
২৬২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক দর্জি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দাওয়াত করে। তাঁর খাবারের জন্য লাউ মিশ্রিত সারীদ উপস্থিত করা হয়। লাউ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খুব প্রিয় খাদ্য ছিল। এজন্য তিনি লাউ খেতে শুরু করেন।
সাবিত বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এরপর হতে আমার জন্য যে তরকারী রান্না করা হতো, তাতে লাউ দেয়া হতো, যদি তা সম্ভব হতো। [শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৪৬; মুস্তাখরাজে আবু ‘আওয়ানা, হা/৬৭২০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৯৬৬৭।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন :
عَنْ عَمْرَةَ ، قَالَتْ : قِيْلَ لِعَائِشَةَ : مَاذَا كَانَ يَعْمَلُ رَسُوْلُ اللهِ فِي بَيْتِهٖ ؟ قَالَتْ : كَانَ بَشَرًا مِنَ الْبَشَرِ ، يَفْلِيْ ثَوْبَهٗ ، وَيَحْلُبُ شَاتَهٗ ، وَيَخْدُمُ نَفْسَهٗ .
২৬৩. আমরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে অবস্থানকালে কি করতেন? জবাবে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন একজন মানুষ। পোশাকের মধ্যে তিনি উকুন তালাশ করতেন, ছাগল দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২৩৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮৭৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৭৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৭৫।]
بَابُ مَا جَاءَ فِي خُلُقِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ সকলের সাথেই পূর্ণ মনোযোগের দিয়ে কথা বলতেন :
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُقْبِلُ بِوَجْهِهٖ وَحَدِيْثِهٖ عَلٰى اَشَرِّ الْقَوْمِ يَتَاَلَّفُهُمْ بِذٰلِكَ فَكَانَ يُقْبِلُ بِوَجْهِهٖ وَحَدِيْثِهٖ عَلَيَّ ، حَتّٰى ظَنَنْتُ اَنِّيْ خَيْرُ الْقَوْمِ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ اَبُوْ بَكْرٍ ؟ قَالَ : اَبُو ْبَكْرٍ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ عُمَرُ ؟ فَقَالَ : عُمَرُ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ عُثْمَانُ ؟ قَالَ : عُثْمَانُ ، فَلَمَّا سَاَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ فَصَدَقَنِيْ فَلَوَدِدْتُ اَنِّيْ لَمْ اَكُنْ سَاَلْتُهٗ
২৬৪. আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তির সাথেও পূর্ণ মনোযোগ ফিরিয়ে মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে কথা বলতেন। এমনকি আমার সঙ্গেও তিনি কথা বলতেন অনুরূপভাবে। তাতে আমার মনে হলো, আমি সমাজের উত্তম মানুষ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালো, না আবু বকর ভালো? তিনি বললেন, আবু বকর! আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালো, না উমর ভালো? তিনি বললেন, উমর! আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমি ভালো না উসমান? তিনি বললেন, উসমান! আমি যখন বিস্তারিতভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, তখন আমাকে সঠিক কথা বলে দিলেন। পরে আমি মনে মনে কামনা করলাম, যদি আমি তাঁকে এরূপ প্রশ্ন না করতাম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রর সম্পর্কে আনাস (রাঃ) এর বর্ণনা :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : خَدَمْتُ رَسُوْلَ اللهِ عَشْرَ سِنِيْنَ فَمَا قَالَ لِيْ أُفٍّ قَطُّ ، وَمَا قَالَ لِشَيْءٍ صَنَعْتُهٗ لِمَ صَنَعْتَهٗ وَلَا لِشَيْءٍ تَرَكْتُهٗ لِمَ تَرَكْتَهٗ ، وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ اَحْسَنِ النَّاسِ خُلُقًا ، وَلَا مَسَسْتُ خَزًّا وَلَا حَرِيْرًا وَلَا شَيْئًا كَانَ اَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُوْلِ اللهِ ، وَلَا شَمَمْتُ مِسْكًا قَطُّ وَلَا عِطْرًا كَانَ اَطْيَبَ مِنْ عَرَقِ النَّبِيِّ
২৬৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ১০ বছর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমত করেছি; কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তিনি কখনো আমার কোন কাজে ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। আমি করেছি এমন কোন কাজের ব্যাপারে তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করেছি? আর না করার ব্যাপারেও তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করনি? চরিত্র মাধুর্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। কোন রেশমী কাপড় বা কোন বিশুদ্ধ রেশম বা অন্য কোন এমন নরম জিনিস স্পর্শ করিনি, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাতের তালুর চেয়ে নরম। আমি এমন কোন মিশক বা আতরের সুবাস পাইনি, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘামের ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধিময়। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৪; দারেমী, হা/৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮৯৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো অশোভনীয় আচরণ করতেন না :
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّهَا قَالَتْ : لَمْ يَكُنْ رَسُوْلُ اللهِ فَاحِشًا وَلَا مُتَفَحِّشًا وَلَا صَخَّابًا فِي الْاَسْوَاقِ ، وَلَا يَجْزِئُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ ، وَلٰكِنْ يَعْفُو وَيَصْفَحُ
২৬৫. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন প্রকার অশোভনীয় কথা বলতেন না। বাজারেও তিনি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না। মন্দের প্রতিকার মন্দ দ্বারা করতেন না; বরং ক্ষমা করে দিতেন। অতঃপর কখনো তা আলোচনাও করতেন না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৮৬২; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৬২৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৯৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৪৪৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো কাউকে প্রহার করতেন না :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا ضَرَبَ رَسُوْلُ اللهِ بِيَدِهٖ شَيْئًا قَطُّ اِلَّا اَنْ يُجَاهِدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ، وَلَا ضَرَبَ خَادِمًا اَوِ امْرَاَةً
২৬৬. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় হাত দ্বারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৯৫; আবু দাউদ, হা/৪৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৮৮; বায়হাকী, হা/২০৫৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৫৮।]
ব্যাখ্যা : ‘হুদুদ’ হলো শরীয়তের নির্ধারিত শাস্তি এবং তা‘যীর হলো শাসন করা। প্রহার করা দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাগান্বিত হয়ে মারা উদ্দেশ্য। অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত লেগে যাওয়াকে প্রহার বলে না। বিশেষভাবে খাদিম ও নারীর কথা এজন্য উল্লেখ করেছেন যে, সাধারণত মানুষ এদেরকে অল্পতে মেরে থাকে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো এদেরকেও মারধর করেননি। যদিও শাসনের উদ্দেশ্যে হালকা মারধর বৈধ আছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো নিজের জন্য প্রতিশোধ নিতেন না :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ مُنْتَصِرًا مِنْ مَظْلَمَةٍ ظُلِمَهَا قَطُّ مَا لَمْ يُنْتَهَكْ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ تَعَالٰى شَيْءٌ ، فَاِذَا انْتُهِكَ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ شَيْءٌ كَانَ مِنْ اَشَدِّهِمْ فِي ذٰلِكَ غَضَبًا ، وَمَا خُيِّرَ بَيْنَ اَمْرَيْنِ اِلَّا اخْتَارَ اَيْسَرَهُمَا مَا لَمْ يَكُنْ مَأْثَمًا
২৬৭. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে কখনো নিজের জন্য প্রতিশোধ নিতে দেখিনি, যতক্ষণ না কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত। অবশ্য যখন কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত, তখন তাঁর ন্যায় অধিক ক্রোধান্বিত আর কেউ হতো না। তাঁকে যদি দুটি কাজের মধ্যে যেকোন একটির অনুমতি দেয়া হতো, তবে তিনি সহজ কাজটি বেছে নিতেন, যতক্ষণ না এটাতে কোন গুনাহ হতো। [মুসনাদে হুমাইদী, হা/২৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫০২৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২২৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫০৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯১১৮।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ কে যখন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে, দুটি বৈধ বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণের সুযোগ দেয়া হতো, তখন তিনি যে বিষয়টি উম্মতের জন্য সহজতর তা গ্রহণ করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ খারাপ লোকের সাথেও উত্তম আচরণ করতেন :
عَائِشَةَ ، قَالَتِ : اِسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ وَاَنَا عِنْدَهٗ ، فَقَالَ : بِئْسَ ابْنُ الْعَشِيْرَةِ اَوْ اَخُو الْعَشِيْرَةِ ، ثُمَّ اَذِنَ لَهٗ ، فَاَلَانَ لَهٗ الْقَوْلَ ، فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، قُلْتَ مَا قُلْتَ ثُمَّ اَلَنْتَ لَهُ الْقَوْلَ ؟ فَقَالَ : يَا عَائِشَةُ ، اِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اَوْ وَدَعَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ فُحْشِهٖ
২৬৮. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসার অনুমতি চাইল। আমি সে সময় তাঁর কাছে বসা ছিলাম। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি গোত্রের কতই না খারাপ লোক! অতঃপর তাকে আসার অনুমতি দেয়া হলো এবং তিনি তার সঙ্গে অতিশয় নরমভাবে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি বের হয়ে গেলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ব্যক্তিটি সম্পর্কে এরূপ কথা বললেন, আবার তার সাথে বিনম্র ব্যবহার করলেন! রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে আয়েশা! যে লোকের খারাপ ব্যবহারের জন্য লোকজন তাকে পরিহার করে এবং তার থেকে দূরে থাকে, সে সবচেয়ে খারাপ লোক। [আবু দাউদ, হা/৪৭৯৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৪৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৯৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৪৯; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮২৩।]
ব্যাখ্যা : এ লোকটির নাম ছিল উয়াইনা। সে মুনাফিক ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর সে মুরতাদ হয়ে যায় এবং প্রকাশ্য কাফির হয়ে যায়। আবু বকর (রাঃ) এর দরবারে তাকে গ্রেফতার করে আনা হয়। ফলে মদিনার অলি-গলিতে বালকরা তিরস্কার করে বলল, এও মুরতাদ হয়ে গেল! তখন সে বলল, আমি কখন মুসলমান ছিলাম? আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহে পরে সে খাঁটি মনে ইসলাম গ্রহণ করে এবং উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে বিভিন্ন জিহাদে অংশ গ্রহণ করে।
আলী (রাঃ) এর ভাষায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রের বর্ণনা :
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : قَالَ الْحُسَيْنُ : سَأَلْتُ أَبِيْ عَنْ سِيْرَةِ النَّبِيِّ فِي جُلَسَائِهٖ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ دَائِمَ الْبِشْرِ ، سَهْلَ الْخُلُقِ ، لَيِّنَ الْجَانِبِ ، لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيْظٍ ، وَلَا صَخَّابٍ وَلَا فَحَّاشٍ ، وَلَا عَيَّابٍ وَلَا مُشَاحٍ ، يَتَغَافَلُ عَمَّا لَا يَشْتَهِي ، وَلَا يُؤْيِسُ مِنْهُ رَاجِيْهِ وَلَا يُخَيَّبُ فِيْهِ ، قَدْ تَرَكَ نَفْسَهٗ مِنْ ثَلَاثٍ : الْمِرَاءِ وَالْاِكْثَارِ وَمَا لَا يَعْنِيْهِ ، وَتَرَكَ النَّاسَ مِنْ ثَلَاثٍ : كَانَ لَا يَذُمُّ اَحَدًا وَلَا يَعِيْبُهٗ ، وَلَا يَطْلُبُ عَوْرَتَهٗ ، وَلَا يَتَكَلَّمُ اِلَّا فِيْمَا رَجَا ثَوَابَهٗ ، وَاِذَا تَكَلَّمَ اَطْرَقَ جُلَسَاؤُهٗ كَاَنَّمَا عَلٰى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ ، فَاِذَا سَكَتَ تَكَلَّمُوْا لَا يَتَنَازَعُوْنَ عِنْدَهُ الْحَدِيْثَ ، وَمَنْ تَكَلَّمَ عِنْدَهٗ اَنْصَتُوْا لَهٗ حَتّٰى يَفْرُغَ ، حَدِيْثُهُمْ عِنْدَهٗ حَدِيْثُ اَوَّلِهِمْ ، يَضْحَكُ مِمَّا يَضْحَكُوْنَ مِنْهُ ، وَيَتَعَجَّبُ مِمَّا يَتَعَجَّبُوْنَ مِنْهُ ، وَيَصْبِرُ لِلْغَرِيْبِ عَلَى الْجَفْوَةِ فِي مَنْطِقِهٖ وَمَسْاَلَتِهٖ حَتّٰى اِنْ كَانَ اَصْحَابُهٗ لَيَسْتَجْلِبُوْنَهُمْ وَيَقُوْلُ : اِذَا رَاَيْتُمْ طَالِبَ حَاجَةٍ يِطْلُبُهَا فَاَرْفِدُوْهٗ ، وَلَا يَقْبَلُ الثَّنَاءَ اِلَّا مِنْ مُكَافِئٍ وَلَا يَقْطَعُ عَلٰى اَحَدٍ حَدِيْثَهٗ حَتّٰى يَجُوْزَ فَيَقْطَعُهٗ بِنَهْيٍْ اَوْ قِيَامٍ
২৬৯. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার পিতাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিদের ব্যাপারে তাঁর আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সদা হাস্যোজ্জোল ও বিনম্র স্বভবের অধিকারী। তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না। তিনি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অপরের দোষ খোঁজে বেড়াতেন না এবং কৃপণ ছিলেন না। তিনি অপছন্দনীয় কথা হতে বিরত থাকতেন। তিনি কাউকে নিরাশ করতেন না, আবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন- ঝগড়া-বিবাদ ও অহংকার করা এবং অযথা কথাবর্তা বলা। তিনটি কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখতেন- কারো নিন্দা করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না এবং কারো দোষ-ত্রেুাটি তালাশ করতেন না। যে কথায় সওয়াব হয়, শুধু তাই বলতেন। তিনি যখন কথা বলতেন তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন, যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তিনি কথা বলা শেষ করলে অন্যরা তাঁকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা জিজ্ঞেস করতে পারত। তাঁর কথায় কেউ বাদানুবাদ করতেন না। কেউ কোন কথা বলা শুরু করলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ থাকতেন। কেউ কোন কথায় হাসলে বা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও হাসতেন কিংবা বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত ব্যক্তির দৃঢ় আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি ধৈর্য্যের সঙ্গে সহ্য করতেন। কখনো কখনো সাহাবীগণ অপরিচিত লোক নিয়ে আসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন, কারো কোন প্রয়োজন দেখলে তা সামাধা করতে তোমরা সাহায্য করবে। কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি চুপ করে থাকতেন। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে কথা আরম্ভ করতেন না। অবশ্য কেউ অযথা কথা বলতে থাকলে তাকে নিষেধ করে দিতেন, অথবা মজলিস হতে উঠে যেতেন, যাতে বক্তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭০৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ : مَا سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ : لَا
২৭০. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩৩৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২০০১; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৮২৬; মু‘জামুল আওসাত, হা/১৩৩৯; মুসনাদে হুমাইদী, হা/১২৮২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮৫।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে তিনি কারো প্রার্থনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতেন না। উপস্থিত থাকলে সাথে সাথে দিয়ে দিতেন, নতুবা পরবর্তী সময়ের জন্য ওয়াদা করতেন বা তার জন্য দু‘আ করতেন, যেন আল্লাহ তা‘আলা অন্যভাবে তার প্রয়োজন পূরণ করেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বশ্রেষ্ট দানশীল :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ اَجْوَدَ مَا يَكُوْنُ فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ ، حَتّٰى يَنْسَلِخَ فَيَأْتِيْهِ جِبْرِيْلُ فَيَعْرِضُ عَلَيْهِ الْقُرْاٰنَ ، فَاِذَا لَقِيَهٗ جِبْرِيْلُ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اَجْوَدَ بِالْخَيْرِ مِنَ الرِّيْحِ الْمُرْسَلَةِ
২৭১. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দানশীল। বিশেষ করে রমাযান মাসে তিনি উদারভাবে দান করতেন। এ মাসে জিবরাঈল (আঃ) তাঁর কাছে আগমন করতেন এবং তাঁকে পবিত্র কুরআন শুনাতেন। যখন তাঁর কাছে জিবরাঈল (আঃ) আগমন করতেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এত বেশি দান খয়রাত করতেন, যেন প্রচন্ড বায়ু প্রবাহ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হতো। [সহীহ বুখারী, হা/১৯০২; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৪৯; সুনানে নাসাঈ, হা/২০৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪২৫; ইবনে খুযাইমা, হা/১৮৮৯; ইবনে হিববান, হা/৩৪৪০; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮৭।]
তিনি আগামীকালের জন্য কোন কিছু জমা করে রাখতেন না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ لَا يَدَّخِرُ شَيْئًا لِغَدٍ
২৭২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস ছিল, তিনি আগামীকালের জন্য কিছু জমা রেখে দিতেন না। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৯০; তাহযীবুল আছার, হা/২৪৯০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৫৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৩০; জামেউস সগীর, হা/৮৯৭৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৯১।]
ব্যাখ্যা : ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কিছু আগামী দিনের জন্য জমা করে রাখতেন না। সবই দান করে দিতেন। এটাই ছিল আল্লাহ তা‘আলার উপর তাঁর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুলের নিদর্শন। তাঁর ওপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, (যেমন বিবিগণ) তাঁদের এক বছরের খরচ তিনি একত্রে দিয়ে দিতেন। তাঁরা প্রয়োজনে খরচ করতেন এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করতেন। ফলে কখনো এমন হতো যে, ঘরে রান্না করার মতো কিছুই থাকত না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদান দিতেন :
عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذِ بْنِ عَفْرَاءَ ، قَالَتْ : اَتَيْتُ النَّبِيَّ بِقِنَاعٍ مِنْ رُطَبٍ وَاَجْرٍ زُغْبٍ فَاَعْطَانِيْ مِلْءَ كَفِّهٖ حُلِيًّا وَذَهَبًا
২৭৩. রুবাইয়্যি বিনতে মু‘আওভভিয ইবনে আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি এক পাত্র খেজুর এবং কিছু হালকা পাতলা শসা নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এক মুষ্ঠ অলংকার ও স্বর্ণ দান করলেন। [মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০১৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭০৬৮।]
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَقْبَلُ الْهَدِيَّةَ وَيُثِيبُ عَلَيْهَا
২৭৪. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ দান গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদানও দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৫; আবু দাউদ, হা/৩৫৩৮; মুজামুল আওসাত, হা/৮০৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৩৫; বায়হাকী, হা/১১৮০০; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৬১০; জামেউস সগীর, হা/৯১৩০।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের শিক্ষা হলো, হাদিয়া গ্রহণ করা এবং হাদিয়ার প্রতিদান প্রদান করা নবী ﷺ এর সুন্নত।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي حَيَاءِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُقْبِلُ بِوَجْهِهٖ وَحَدِيْثِهٖ عَلٰى اَشَرِّ الْقَوْمِ يَتَاَلَّفُهُمْ بِذٰلِكَ فَكَانَ يُقْبِلُ بِوَجْهِهٖ وَحَدِيْثِهٖ عَلَيَّ ، حَتّٰى ظَنَنْتُ اَنِّيْ خَيْرُ الْقَوْمِ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ اَبُوْ بَكْرٍ ؟ قَالَ : اَبُو ْبَكْرٍ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ عُمَرُ ؟ فَقَالَ : عُمَرُ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ عُثْمَانُ ؟ قَالَ : عُثْمَانُ ، فَلَمَّا سَاَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ فَصَدَقَنِيْ فَلَوَدِدْتُ اَنِّيْ لَمْ اَكُنْ سَاَلْتُهٗ
২৬৪. আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তির সাথেও পূর্ণ মনোযোগ ফিরিয়ে মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে কথা বলতেন। এমনকি আমার সঙ্গেও তিনি কথা বলতেন অনুরূপভাবে। তাতে আমার মনে হলো, আমি সমাজের উত্তম মানুষ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালো, না আবু বকর ভালো? তিনি বললেন, আবু বকর! আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালো, না উমর ভালো? তিনি বললেন, উমর! আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমি ভালো না উসমান? তিনি বললেন, উসমান! আমি যখন বিস্তারিতভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, তখন আমাকে সঠিক কথা বলে দিলেন। পরে আমি মনে মনে কামনা করলাম, যদি আমি তাঁকে এরূপ প্রশ্ন না করতাম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রর সম্পর্কে আনাস (রাঃ) এর বর্ণনা :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : خَدَمْتُ رَسُوْلَ اللهِ عَشْرَ سِنِيْنَ فَمَا قَالَ لِيْ أُفٍّ قَطُّ ، وَمَا قَالَ لِشَيْءٍ صَنَعْتُهٗ لِمَ صَنَعْتَهٗ وَلَا لِشَيْءٍ تَرَكْتُهٗ لِمَ تَرَكْتَهٗ ، وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ اَحْسَنِ النَّاسِ خُلُقًا ، وَلَا مَسَسْتُ خَزًّا وَلَا حَرِيْرًا وَلَا شَيْئًا كَانَ اَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُوْلِ اللهِ ، وَلَا شَمَمْتُ مِسْكًا قَطُّ وَلَا عِطْرًا كَانَ اَطْيَبَ مِنْ عَرَقِ النَّبِيِّ
২৬৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ১০ বছর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমত করেছি; কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তিনি কখনো আমার কোন কাজে ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। আমি করেছি এমন কোন কাজের ব্যাপারে তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করেছি? আর না করার ব্যাপারেও তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করনি? চরিত্র মাধুর্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। কোন রেশমী কাপড় বা কোন বিশুদ্ধ রেশম বা অন্য কোন এমন নরম জিনিস স্পর্শ করিনি, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাতের তালুর চেয়ে নরম। আমি এমন কোন মিশক বা আতরের সুবাস পাইনি, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘামের ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধিময়। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৪; দারেমী, হা/৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮৯৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো অশোভনীয় আচরণ করতেন না :
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّهَا قَالَتْ : لَمْ يَكُنْ رَسُوْلُ اللهِ فَاحِشًا وَلَا مُتَفَحِّشًا وَلَا صَخَّابًا فِي الْاَسْوَاقِ ، وَلَا يَجْزِئُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ ، وَلٰكِنْ يَعْفُو وَيَصْفَحُ
২৬৫. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন প্রকার অশোভনীয় কথা বলতেন না। বাজারেও তিনি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না। মন্দের প্রতিকার মন্দ দ্বারা করতেন না; বরং ক্ষমা করে দিতেন। অতঃপর কখনো তা আলোচনাও করতেন না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৮৬২; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৬২৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৯৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৪৪৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো কাউকে প্রহার করতেন না :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا ضَرَبَ رَسُوْلُ اللهِ بِيَدِهٖ شَيْئًا قَطُّ اِلَّا اَنْ يُجَاهِدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ، وَلَا ضَرَبَ خَادِمًا اَوِ امْرَاَةً
২৬৬. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় হাত দ্বারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৯৫; আবু দাউদ, হা/৪৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৮৮; বায়হাকী, হা/২০৫৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৫৮।]
ব্যাখ্যা : ‘হুদুদ’ হলো শরীয়তের নির্ধারিত শাস্তি এবং তা‘যীর হলো শাসন করা। প্রহার করা দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাগান্বিত হয়ে মারা উদ্দেশ্য। অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত লেগে যাওয়াকে প্রহার বলে না। বিশেষভাবে খাদিম ও নারীর কথা এজন্য উল্লেখ করেছেন যে, সাধারণত মানুষ এদেরকে অল্পতে মেরে থাকে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো এদেরকেও মারধর করেননি। যদিও শাসনের উদ্দেশ্যে হালকা মারধর বৈধ আছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো নিজের জন্য প্রতিশোধ নিতেন না :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ مُنْتَصِرًا مِنْ مَظْلَمَةٍ ظُلِمَهَا قَطُّ مَا لَمْ يُنْتَهَكْ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ تَعَالٰى شَيْءٌ ، فَاِذَا انْتُهِكَ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ شَيْءٌ كَانَ مِنْ اَشَدِّهِمْ فِي ذٰلِكَ غَضَبًا ، وَمَا خُيِّرَ بَيْنَ اَمْرَيْنِ اِلَّا اخْتَارَ اَيْسَرَهُمَا مَا لَمْ يَكُنْ مَأْثَمًا
২৬৭. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে কখনো নিজের জন্য প্রতিশোধ নিতে দেখিনি, যতক্ষণ না কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত। অবশ্য যখন কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত, তখন তাঁর ন্যায় অধিক ক্রোধান্বিত আর কেউ হতো না। তাঁকে যদি দুটি কাজের মধ্যে যেকোন একটির অনুমতি দেয়া হতো, তবে তিনি সহজ কাজটি বেছে নিতেন, যতক্ষণ না এটাতে কোন গুনাহ হতো। [মুসনাদে হুমাইদী, হা/২৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫০২৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২২৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫০৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯১১৮।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ কে যখন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে, দুটি বৈধ বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণের সুযোগ দেয়া হতো, তখন তিনি যে বিষয়টি উম্মতের জন্য সহজতর তা গ্রহণ করতেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ খারাপ লোকের সাথেও উত্তম আচরণ করতেন :
عَائِشَةَ ، قَالَتِ : اِسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ وَاَنَا عِنْدَهٗ ، فَقَالَ : بِئْسَ ابْنُ الْعَشِيْرَةِ اَوْ اَخُو الْعَشِيْرَةِ ، ثُمَّ اَذِنَ لَهٗ ، فَاَلَانَ لَهٗ الْقَوْلَ ، فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، قُلْتَ مَا قُلْتَ ثُمَّ اَلَنْتَ لَهُ الْقَوْلَ ؟ فَقَالَ : يَا عَائِشَةُ ، اِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اَوْ وَدَعَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ فُحْشِهٖ
২৬৮. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসার অনুমতি চাইল। আমি সে সময় তাঁর কাছে বসা ছিলাম। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি গোত্রের কতই না খারাপ লোক! অতঃপর তাকে আসার অনুমতি দেয়া হলো এবং তিনি তার সঙ্গে অতিশয় নরমভাবে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি বের হয়ে গেলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ব্যক্তিটি সম্পর্কে এরূপ কথা বললেন, আবার তার সাথে বিনম্র ব্যবহার করলেন! রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে আয়েশা! যে লোকের খারাপ ব্যবহারের জন্য লোকজন তাকে পরিহার করে এবং তার থেকে দূরে থাকে, সে সবচেয়ে খারাপ লোক। [আবু দাউদ, হা/৪৭৯৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৪৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৯৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৪৯; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮২৩।]
ব্যাখ্যা : এ লোকটির নাম ছিল উয়াইনা। সে মুনাফিক ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর সে মুরতাদ হয়ে যায় এবং প্রকাশ্য কাফির হয়ে যায়। আবু বকর (রাঃ) এর দরবারে তাকে গ্রেফতার করে আনা হয়। ফলে মদিনার অলি-গলিতে বালকরা তিরস্কার করে বলল, এও মুরতাদ হয়ে গেল! তখন সে বলল, আমি কখন মুসলমান ছিলাম? আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহে পরে সে খাঁটি মনে ইসলাম গ্রহণ করে এবং উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে বিভিন্ন জিহাদে অংশ গ্রহণ করে।
আলী (রাঃ) এর ভাষায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রের বর্ণনা :
عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : قَالَ الْحُسَيْنُ : سَأَلْتُ أَبِيْ عَنْ سِيْرَةِ النَّبِيِّ فِي جُلَسَائِهٖ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ دَائِمَ الْبِشْرِ ، سَهْلَ الْخُلُقِ ، لَيِّنَ الْجَانِبِ ، لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيْظٍ ، وَلَا صَخَّابٍ وَلَا فَحَّاشٍ ، وَلَا عَيَّابٍ وَلَا مُشَاحٍ ، يَتَغَافَلُ عَمَّا لَا يَشْتَهِي ، وَلَا يُؤْيِسُ مِنْهُ رَاجِيْهِ وَلَا يُخَيَّبُ فِيْهِ ، قَدْ تَرَكَ نَفْسَهٗ مِنْ ثَلَاثٍ : الْمِرَاءِ وَالْاِكْثَارِ وَمَا لَا يَعْنِيْهِ ، وَتَرَكَ النَّاسَ مِنْ ثَلَاثٍ : كَانَ لَا يَذُمُّ اَحَدًا وَلَا يَعِيْبُهٗ ، وَلَا يَطْلُبُ عَوْرَتَهٗ ، وَلَا يَتَكَلَّمُ اِلَّا فِيْمَا رَجَا ثَوَابَهٗ ، وَاِذَا تَكَلَّمَ اَطْرَقَ جُلَسَاؤُهٗ كَاَنَّمَا عَلٰى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ ، فَاِذَا سَكَتَ تَكَلَّمُوْا لَا يَتَنَازَعُوْنَ عِنْدَهُ الْحَدِيْثَ ، وَمَنْ تَكَلَّمَ عِنْدَهٗ اَنْصَتُوْا لَهٗ حَتّٰى يَفْرُغَ ، حَدِيْثُهُمْ عِنْدَهٗ حَدِيْثُ اَوَّلِهِمْ ، يَضْحَكُ مِمَّا يَضْحَكُوْنَ مِنْهُ ، وَيَتَعَجَّبُ مِمَّا يَتَعَجَّبُوْنَ مِنْهُ ، وَيَصْبِرُ لِلْغَرِيْبِ عَلَى الْجَفْوَةِ فِي مَنْطِقِهٖ وَمَسْاَلَتِهٖ حَتّٰى اِنْ كَانَ اَصْحَابُهٗ لَيَسْتَجْلِبُوْنَهُمْ وَيَقُوْلُ : اِذَا رَاَيْتُمْ طَالِبَ حَاجَةٍ يِطْلُبُهَا فَاَرْفِدُوْهٗ ، وَلَا يَقْبَلُ الثَّنَاءَ اِلَّا مِنْ مُكَافِئٍ وَلَا يَقْطَعُ عَلٰى اَحَدٍ حَدِيْثَهٗ حَتّٰى يَجُوْزَ فَيَقْطَعُهٗ بِنَهْيٍْ اَوْ قِيَامٍ
২৬৯. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার পিতাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিদের ব্যাপারে তাঁর আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সদা হাস্যোজ্জোল ও বিনম্র স্বভবের অধিকারী। তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না। তিনি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অপরের দোষ খোঁজে বেড়াতেন না এবং কৃপণ ছিলেন না। তিনি অপছন্দনীয় কথা হতে বিরত থাকতেন। তিনি কাউকে নিরাশ করতেন না, আবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন- ঝগড়া-বিবাদ ও অহংকার করা এবং অযথা কথাবর্তা বলা। তিনটি কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখতেন- কারো নিন্দা করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না এবং কারো দোষ-ত্রেুাটি তালাশ করতেন না। যে কথায় সওয়াব হয়, শুধু তাই বলতেন। তিনি যখন কথা বলতেন তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন, যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তিনি কথা বলা শেষ করলে অন্যরা তাঁকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা জিজ্ঞেস করতে পারত। তাঁর কথায় কেউ বাদানুবাদ করতেন না। কেউ কোন কথা বলা শুরু করলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ থাকতেন। কেউ কোন কথায় হাসলে বা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও হাসতেন কিংবা বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত ব্যক্তির দৃঢ় আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি ধৈর্য্যের সঙ্গে সহ্য করতেন। কখনো কখনো সাহাবীগণ অপরিচিত লোক নিয়ে আসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন, কারো কোন প্রয়োজন দেখলে তা সামাধা করতে তোমরা সাহায্য করবে। কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি চুপ করে থাকতেন। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে কথা আরম্ভ করতেন না। অবশ্য কেউ অযথা কথা বলতে থাকলে তাকে নিষেধ করে দিতেন, অথবা মজলিস হতে উঠে যেতেন, যাতে বক্তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭০৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ : مَا سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ : لَا
২৭০. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩৩৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২০০১; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৮২৬; মু‘জামুল আওসাত, হা/১৩৩৯; মুসনাদে হুমাইদী, হা/১২৮২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮৫।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে তিনি কারো প্রার্থনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতেন না। উপস্থিত থাকলে সাথে সাথে দিয়ে দিতেন, নতুবা পরবর্তী সময়ের জন্য ওয়াদা করতেন বা তার জন্য দু‘আ করতেন, যেন আল্লাহ তা‘আলা অন্যভাবে তার প্রয়োজন পূরণ করেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বশ্রেষ্ট দানশীল :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ اَجْوَدَ مَا يَكُوْنُ فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ ، حَتّٰى يَنْسَلِخَ فَيَأْتِيْهِ جِبْرِيْلُ فَيَعْرِضُ عَلَيْهِ الْقُرْاٰنَ ، فَاِذَا لَقِيَهٗ جِبْرِيْلُ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اَجْوَدَ بِالْخَيْرِ مِنَ الرِّيْحِ الْمُرْسَلَةِ
২৭১. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দানশীল। বিশেষ করে রমাযান মাসে তিনি উদারভাবে দান করতেন। এ মাসে জিবরাঈল (আঃ) তাঁর কাছে আগমন করতেন এবং তাঁকে পবিত্র কুরআন শুনাতেন। যখন তাঁর কাছে জিবরাঈল (আঃ) আগমন করতেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এত বেশি দান খয়রাত করতেন, যেন প্রচন্ড বায়ু প্রবাহ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হতো। [সহীহ বুখারী, হা/১৯০২; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৪৯; সুনানে নাসাঈ, হা/২০৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪২৫; ইবনে খুযাইমা, হা/১৮৮৯; ইবনে হিববান, হা/৩৪৪০; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮৭।]
তিনি আগামীকালের জন্য কোন কিছু জমা করে রাখতেন না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ لَا يَدَّخِرُ شَيْئًا لِغَدٍ
২৭২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস ছিল, তিনি আগামীকালের জন্য কিছু জমা রেখে দিতেন না। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৯০; তাহযীবুল আছার, হা/২৪৯০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৫৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৩০; জামেউস সগীর, হা/৮৯৭৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৯১।]
ব্যাখ্যা : ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কিছু আগামী দিনের জন্য জমা করে রাখতেন না। সবই দান করে দিতেন। এটাই ছিল আল্লাহ তা‘আলার উপর তাঁর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুলের নিদর্শন। তাঁর ওপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, (যেমন বিবিগণ) তাঁদের এক বছরের খরচ তিনি একত্রে দিয়ে দিতেন। তাঁরা প্রয়োজনে খরচ করতেন এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করতেন। ফলে কখনো এমন হতো যে, ঘরে রান্না করার মতো কিছুই থাকত না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদান দিতেন :
عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذِ بْنِ عَفْرَاءَ ، قَالَتْ : اَتَيْتُ النَّبِيَّ بِقِنَاعٍ مِنْ رُطَبٍ وَاَجْرٍ زُغْبٍ فَاَعْطَانِيْ مِلْءَ كَفِّهٖ حُلِيًّا وَذَهَبًا
২৭৩. রুবাইয়্যি বিনতে মু‘আওভভিয ইবনে আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি এক পাত্র খেজুর এবং কিছু হালকা পাতলা শসা নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এক মুষ্ঠ অলংকার ও স্বর্ণ দান করলেন। [মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০১৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭০৬৮।]
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَقْبَلُ الْهَدِيَّةَ وَيُثِيبُ عَلَيْهَا
২৭৪. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ দান গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদানও দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৫; আবু দাউদ, হা/৩৫৩৮; মুজামুল আওসাত, হা/৮০৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৩৫; বায়হাকী, হা/১১৮০০; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৬১০; জামেউস সগীর, হা/৯১৩০।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসের শিক্ষা হলো, হাদিয়া গ্রহণ করা এবং হাদিয়ার প্রতিদান প্রদান করা নবী ﷺ এর সুন্নত।
- بَابُ مَا جَاءَ فِي حَيَاءِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ اَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ اَشدَّ حَيَاءً مِنَ الْعَذْرَاءِ فِيْ خِدْرِهَا ، وَكَانَ اِذَا كَرِهَ شَيْئًا عَرَفْنَاهُ فِي وَجْهِهٖ
২৭৫. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ পর্দানশীল কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। কোন কিছু তাঁর অপছন্দ হলে তাঁর চেহারা দেখেই আমরা তা বুঝতে পারতাম। [সহীহ বুখারী, হা/৬১০২; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭০১; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৬৭; বায়হাকী, হা/২০৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩০৬; জামেউস সগীর, হা/৮৯৩০।]
ব্যাখ্যা : শরীয়তের পরিভাষায় লজ্জা মানুষের অন্তর্নির্হিত এমন এক শক্তি, যা যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে ।
--- بَابُ مَا جَاءَ فِي حِجَامَةِ رَسُوْلِ اللهِ
২৭৫. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ পর্দানশীল কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। কোন কিছু তাঁর অপছন্দ হলে তাঁর চেহারা দেখেই আমরা তা বুঝতে পারতাম। [সহীহ বুখারী, হা/৬১০২; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭০১; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৬৭; বায়হাকী, হা/২০৫৭৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩০৬; জামেউস সগীর, হা/৮৯৩০।]
ব্যাখ্যা : শরীয়তের পরিভাষায় লজ্জা মানুষের অন্তর্নির্হিত এমন এক শক্তি, যা যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে ।
--- بَابُ مَا جَاءَ فِي حِجَامَةِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ শিঙ্গা লাগাতেন এবং এর পারিশ্রমিকও দিতেন :
عَنْ حُمَيْدٍ قَالَ : سُئِلَ اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ عَنْ كَسْبِ الْحَجَّامِ ، فَقَالَ : اِحْتَجَمَ رَسُوْلُ اللهِ حَجَمَهٗ اَبُو طَيْبَةَ ، فَاَمَرَ لَهٗ بِصَاعَيْنِ مِنْ طَعَامٍ ، وَكَلَّمَ اَهْلَهٗ فَوَضَعُوْا عَنْهُ مِنْ خَرَاجِهٖ وَقَالَ : اِنَّ اَفْضَلَ مَا تَدَاوَيْتَمْ بِهِ الْحِجَامَةُ ، اَوْ اِنَّ مِنْ اَمْثَلِ دَوَائِكُمُ الْحِجَامَةَ
২৭৬. হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-কে শিঙ্গা লাগানোর পারিশ্রমিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আবু তায়বা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে শিঙ্গা লাগিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে ২ সা‘ খাদ্যশস্য দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তার মালিকের সঙ্গে আলাপ করে তার নিকট হতে আদায়যোগ্য অর্থ খারাজও কমিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, তোমরা যে ঔষধ ব্যবহার কর, এর মধ্যে শিঙ্গা উত্তম। অথবা বলেছেন, শিঙ্গা উত্তম প্রতিষেধকের অন্তর্ভুক্ত। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯০৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩৭৫৮; মুস্তাখরাজে ইবনে আবি ‘আওয়ানা, হা/৪২৯৮।]
ব্যাখ্যা : তদানীন্তন আরবে মুনিব ক্রীতদাসকে দৈনিক প্রদেয় নির্দিষ্ট মাশুলের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ দিত। আবু তাইবাকেও মুনিব এভাবে অনুমতি দেন। তিনি দৈনিক তিন সা‘ মাশুলে কাজ করার সুযোগ পান। রাসূলুল্লাহ ﷺ তার মুনিবকে সুপারিশ করে এক সা‘ হ্রাস করান।
عَنْ عَلِيٍّ : اَنَّ النَّبِيَّ اِحْتَجَمَ وَاَمَرَنِيْ فَاَعْطَيْتُ الْحَجَّامَ اَجْرَهٗ
২৭৭. আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে শিঙ্গা লাগালেন এবং আমাকে এর পারিশ্রমিক দেয়ার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আমি তাকে পারিশ্রমিক দিয়ে দিলাম। [ইবনে মাজাহ, হা/২১৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩০; বায়হাকী, হা/১৯৩০৪; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৪৮।]
ব্যাখ্যা : এসব হাদীস থেকে জানা গেল যে, চিকিৎসা করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয় এবং শিঙ্গা লাগানো, শিঙ্গা লাগিয়ে ভাতা দেয়া-নেয়া উভয়ই জায়েয আছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ গর্দানের দু’পার্শ্বে ও কাঁধের দু’পার্শ্বে শিঙ্গা লাগাতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : اِنَّ النَّبِيَّ احْتَجَمَ فِي الْاَخْدَعَيْنِ وَبَيْنَ الْكَتِفَيْنِ ، وَاَعْطَى الْحَجَّامَ اَجْرَهٗ وَلَوْ كَانَ حَرَامًا لَمْ يُعْطِهٖ
২৭৮. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাঁর গর্দানের দু’পার্শ্বে এবং কাঁধের দু’পার্শ্বে শিঙ্গা লাগালেন এবং শিঙ্গা লাগানেওয়ালাকে এর পারিশ্রমিক দিলেন। শিঙ্গা লাগানো যদি হারাম হতো, তবে তিনি এর পারিশ্রমিক দিতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/২১০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৯০৬; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২২০৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৪২০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২১৩৮২।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، اَنَّ النَّبِيَّ دَعَا حَجَّامًا فَحَجَمَهٗ وَسَاَلَهٗ : كَمْ خَرَاجُكَ ؟ فَقَالَ : ثَلَاثَةُ اٰصُعٍ ، فَوَضَعَ عَنْهُ صَاعًا وَاَعْطَاهُ اَجْرَهٗ
২৭৯. ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এক শিঙ্গা লাগানেওয়ালাকে ডাকলেন। সে তাঁকে শিঙ্গা লাগাল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে দৈনিক কত দিতে হয়? সে বলল, প্রতিদিন তিন সা‘। রাসূলুল্লাহ ﷺ তার আদায়যোগ্য অর্থ এক সা‘ কমিয়ে দিলেন এবং তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিলেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৫৩৬; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৮২৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২১৩৮৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগাতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَحْتَجِمُ فِي الْاَخْدَعَيْنِ وَالْكَاهِلِ ، وَكَانَ يَحْتَجِمُ لِسَبْعَ عَشْرَةَ وَتِسْعَ عَشْرَةَ وَاِحْدٰى وَعِشْرِيْنَ
২৮০. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কাঁধের দু’পার্শ্বে এবং কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে শিঙ্গা লাগাতেন এবং তিনি ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগাতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩২৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৬৪; মিশকাত, হা/৪৫৪৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহরাম বাঁধা অবস্থাতেও শিঙ্গা লাগাতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ اِحْتَجَمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ بَمَلَلٍ عَلٰى ظَهْرِ الْقَدَمِ
২৮১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহরাম বাঁধা অবস্থায় পায়ের পাতার উপরিভাগে মালাল নামক স্থানে শিঙ্গা লাগালেন। [আবু দাউদ, হা/১৮৩৯; সুনানে নাসাঈ, হা/২৮৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৯৫২; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৯৮৬।]
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي اَسْمَاءِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ حُمَيْدٍ قَالَ : سُئِلَ اَنَسُ بْنُ مَالِكٍ عَنْ كَسْبِ الْحَجَّامِ ، فَقَالَ : اِحْتَجَمَ رَسُوْلُ اللهِ حَجَمَهٗ اَبُو طَيْبَةَ ، فَاَمَرَ لَهٗ بِصَاعَيْنِ مِنْ طَعَامٍ ، وَكَلَّمَ اَهْلَهٗ فَوَضَعُوْا عَنْهُ مِنْ خَرَاجِهٖ وَقَالَ : اِنَّ اَفْضَلَ مَا تَدَاوَيْتَمْ بِهِ الْحِجَامَةُ ، اَوْ اِنَّ مِنْ اَمْثَلِ دَوَائِكُمُ الْحِجَامَةَ
২৭৬. হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-কে শিঙ্গা লাগানোর পারিশ্রমিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আবু তায়বা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে শিঙ্গা লাগিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে ২ সা‘ খাদ্যশস্য দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তার মালিকের সঙ্গে আলাপ করে তার নিকট হতে আদায়যোগ্য অর্থ খারাজও কমিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, তোমরা যে ঔষধ ব্যবহার কর, এর মধ্যে শিঙ্গা উত্তম। অথবা বলেছেন, শিঙ্গা উত্তম প্রতিষেধকের অন্তর্ভুক্ত। [সহীহ মুসলিম, হা/৪১২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯০৬; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৩৭৫৮; মুস্তাখরাজে ইবনে আবি ‘আওয়ানা, হা/৪২৯৮।]
ব্যাখ্যা : তদানীন্তন আরবে মুনিব ক্রীতদাসকে দৈনিক প্রদেয় নির্দিষ্ট মাশুলের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ দিত। আবু তাইবাকেও মুনিব এভাবে অনুমতি দেন। তিনি দৈনিক তিন সা‘ মাশুলে কাজ করার সুযোগ পান। রাসূলুল্লাহ ﷺ তার মুনিবকে সুপারিশ করে এক সা‘ হ্রাস করান।
عَنْ عَلِيٍّ : اَنَّ النَّبِيَّ اِحْتَجَمَ وَاَمَرَنِيْ فَاَعْطَيْتُ الْحَجَّامَ اَجْرَهٗ
২৭৭. আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে শিঙ্গা লাগালেন এবং আমাকে এর পারিশ্রমিক দেয়ার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আমি তাকে পারিশ্রমিক দিয়ে দিলাম। [ইবনে মাজাহ, হা/২১৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩০; বায়হাকী, হা/১৯৩০৪; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৪৮।]
ব্যাখ্যা : এসব হাদীস থেকে জানা গেল যে, চিকিৎসা করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয় এবং শিঙ্গা লাগানো, শিঙ্গা লাগিয়ে ভাতা দেয়া-নেয়া উভয়ই জায়েয আছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ গর্দানের দু’পার্শ্বে ও কাঁধের দু’পার্শ্বে শিঙ্গা লাগাতেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : اِنَّ النَّبِيَّ احْتَجَمَ فِي الْاَخْدَعَيْنِ وَبَيْنَ الْكَتِفَيْنِ ، وَاَعْطَى الْحَجَّامَ اَجْرَهٗ وَلَوْ كَانَ حَرَامًا لَمْ يُعْطِهٖ
২৭৮. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাঁর গর্দানের দু’পার্শ্বে এবং কাঁধের দু’পার্শ্বে শিঙ্গা লাগালেন এবং শিঙ্গা লাগানেওয়ালাকে এর পারিশ্রমিক দিলেন। শিঙ্গা লাগানো যদি হারাম হতো, তবে তিনি এর পারিশ্রমিক দিতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/২১০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৯০৬; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২২০৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৪২০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২১৩৮২।]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، اَنَّ النَّبِيَّ دَعَا حَجَّامًا فَحَجَمَهٗ وَسَاَلَهٗ : كَمْ خَرَاجُكَ ؟ فَقَالَ : ثَلَاثَةُ اٰصُعٍ ، فَوَضَعَ عَنْهُ صَاعًا وَاَعْطَاهُ اَجْرَهٗ
২৭৯. ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এক শিঙ্গা লাগানেওয়ালাকে ডাকলেন। সে তাঁকে শিঙ্গা লাগাল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে দৈনিক কত দিতে হয়? সে বলল, প্রতিদিন তিন সা‘। রাসূলুল্লাহ ﷺ তার আদায়যোগ্য অর্থ এক সা‘ কমিয়ে দিলেন এবং তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিলেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৫৩৬; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৮২৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২১৩৮৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগাতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَحْتَجِمُ فِي الْاَخْدَعَيْنِ وَالْكَاهِلِ ، وَكَانَ يَحْتَجِمُ لِسَبْعَ عَشْرَةَ وَتِسْعَ عَشْرَةَ وَاِحْدٰى وَعِشْرِيْنَ
২৮০. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কাঁধের দু’পার্শ্বে এবং কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে শিঙ্গা লাগাতেন এবং তিনি ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখে শিঙ্গা লাগাতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩২৩৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৬৪; মিশকাত, হা/৪৫৪৬।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহরাম বাঁধা অবস্থাতেও শিঙ্গা লাগাতেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ اِحْتَجَمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ بَمَلَلٍ عَلٰى ظَهْرِ الْقَدَمِ
২৮১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহরাম বাঁধা অবস্থায় পায়ের পাতার উপরিভাগে মালাল নামক স্থানে শিঙ্গা লাগালেন। [আবু দাউদ, হা/১৮৩৯; সুনানে নাসাঈ, হা/২৮৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৯৫২; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৯৮৬।]
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي اَسْمَاءِ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ لِيْ اَسْمَاءً اَنَا مُحَمَّدٌ ، وَاَنَا اَحْمَدُ ، وَاَنَا الْمَاحِي الَّذِيْ يَمْحُو اللهُ بِيَ الْكُفْرَ ، وَاَنَا الْحَاشِرُ الَّذِي يُحْشَرُ النَّاسُ عَلٰى قَدَمِيْ ، وَاَنَا الْعَاقِبُ وَالْعَاقِبُ الَّذِيْ لَيْسَ بَعْدَهٗ نَبِيٌّ
২৮২. যুবায়ের ইবনে মুতয়িম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার একাধিক নাম রয়েছে। আমার নাম মুহাম্মাদ, আহমাদ, মাহী (ধ্বংসকারী); আল্লাহ তা‘আলা আমার দ্বারা কুফরী ধ্বংস করবেন। আমার নাম হা-শির (একত্রকারী); লোকদেরকে একত্রিত করার আগে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে উঠাবেন। আমার নাম আ-কিব (সর্বশেষ আগমনকারী নবী); অর্থাৎ তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৫৮০; মুসনাদে বাযযার, হা/৩৪১৩; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫০৪; ইবনে হিববান, হা/৬৩১৩।]
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসে শেষ ৩টির শাব্দিক বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম ২টি নামের বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হয়নি। সম্ভবত প্রথম দুটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সত্ত্বাগত নাম আর শেষোক্ত তিনটি গুণবাচক নাম।
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : لَقِيْتُ النَّبِيَّ فِي بَعْضِ طُرُقِ الْمَدِيْنَةِ فَقَالَ : اَنَا مُحَمَّدٌ ، وَاَنَا اَحْمَدُ ، وَاَنَا نَبِيُّ الرَّحْمَةِ ، وَنَبِيُّ التَّوْبَةِ ، وَاَنَا الْمُقَفّٰى ، وَاَنَا الْحَاشِرُ ، وَنَبِيُّ الْمَلَاحِمِ
২৮৩. হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মদিনার কোন এক রাস্তায় নবী ﷺ এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি নবীউর রহমত (রহমতের নবী) আমি নবীউত তাওবা (তাওবার নবী), আমি মুকাফফী (পরে আগমনকারী), আমি হাশির (একত্রকারী), আমি মালাহিমের নবী (জিহাদকারী)। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৩১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৮৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩২৩৫১; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/৪৯৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি গুণবাচক নাম হচ্ছে, দয়ার নবী। তিনি ছিলেন সকলের জন্য রহ্মত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আরো একটি গুণবাচক নাম ‘আল মুক্বাফ্ফী’ পূর্ণতা দানকারী। যার পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না, তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবুওয়াত পূর্ণতা লাভ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আরো একটি গুণবাচক নাম হলো ‘নবিউল মালাহিম’ অর্থাৎ- জিহাদের নবী। রাসূলুল্লাহ ﷺ সত্য দ্বীনকে বিজয়ী করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, আমার আগমন থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত থাকবে। তাই তাঁর আরেকটি গুণবাচক নাম হচ্ছে ‘নবিউল মালাহিম’।
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي عَيْشِ النَّبِيِّ
২৮২. যুবায়ের ইবনে মুতয়িম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার একাধিক নাম রয়েছে। আমার নাম মুহাম্মাদ, আহমাদ, মাহী (ধ্বংসকারী); আল্লাহ তা‘আলা আমার দ্বারা কুফরী ধ্বংস করবেন। আমার নাম হা-শির (একত্রকারী); লোকদেরকে একত্রিত করার আগে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে উঠাবেন। আমার নাম আ-কিব (সর্বশেষ আগমনকারী নবী); অর্থাৎ তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৫৮০; মুসনাদে বাযযার, হা/৩৪১৩; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫০৪; ইবনে হিববান, হা/৬৩১৩।]
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসে শেষ ৩টির শাব্দিক বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম ২টি নামের বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হয়নি। সম্ভবত প্রথম দুটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সত্ত্বাগত নাম আর শেষোক্ত তিনটি গুণবাচক নাম।
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : لَقِيْتُ النَّبِيَّ فِي بَعْضِ طُرُقِ الْمَدِيْنَةِ فَقَالَ : اَنَا مُحَمَّدٌ ، وَاَنَا اَحْمَدُ ، وَاَنَا نَبِيُّ الرَّحْمَةِ ، وَنَبِيُّ التَّوْبَةِ ، وَاَنَا الْمُقَفّٰى ، وَاَنَا الْحَاشِرُ ، وَنَبِيُّ الْمَلَاحِمِ
২৮৩. হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মদিনার কোন এক রাস্তায় নবী ﷺ এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি নবীউর রহমত (রহমতের নবী) আমি নবীউত তাওবা (তাওবার নবী), আমি মুকাফফী (পরে আগমনকারী), আমি হাশির (একত্রকারী), আমি মালাহিমের নবী (জিহাদকারী)। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৩১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪১৮৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩২৩৫১; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/৪৯৪।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি গুণবাচক নাম হচ্ছে, দয়ার নবী। তিনি ছিলেন সকলের জন্য রহ্মত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আরো একটি গুণবাচক নাম ‘আল মুক্বাফ্ফী’ পূর্ণতা দানকারী। যার পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না, তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবুওয়াত পূর্ণতা লাভ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আরো একটি গুণবাচক নাম হলো ‘নবিউল মালাহিম’ অর্থাৎ- জিহাদের নবী। রাসূলুল্লাহ ﷺ সত্য দ্বীনকে বিজয়ী করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, আমার আগমন থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত থাকবে। তাই তাঁর আরেকটি গুণবাচক নাম হচ্ছে ‘নবিউল মালাহিম’।
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي عَيْشِ النَّبِيِّ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কখনো পেটভরে খাওয়ার মতো খেজুর থাকত না :
عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ قَالَ : سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ : اَلَسْتُمْ فِيْ طَعَامٍ وَشَرَابٍ مَا شِئِتُمْ ؟ لَقَدْ رَاَيْتُ نَبِيَّكُمْ وَمَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلَأُ بَطْنَهٗ
২৮৪. সিমাক ইবনে হার্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনে বশীর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কি তোমাদের চাহিদামতো খাওয়া-দাওয়ায় তৃপ্ত নও? অথচ নবী ﷺ কে দেখেছি যে, পেটভরে খাওয়ার মতো খারাপ খেজুরও তাঁর ঘরে থাকত না। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৭১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৪০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৫৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৭৫; মিশকাত, হা/৪১৯৫।]
কখনো কখনো তাঁর পরিবারের চুলায় ১ মাসের অধিক সময় পর্যন্তও আগুন জ্বালানো হতো না :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : اِنْ كُنَّا اٰلَ مُحَمَّدٍ نَمْكُثُ شَهْرًا مَا نَسْتَوْقِدُ بِنَارٍ ، اِنْ هُوَ اِلَّا التَّمْرُ وَالْمَاءُ
২৮৫. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমাদের নবীর পরিবারে কখনো এমন হতো যে, এক মাসের অধিক সময় পর্যন্ত আগুন জ্বালানো হতো না; শুধু পানি ও খেজুর খেয়ে কাটাতাম। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২৭৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৬১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ও কয়েকজন সাহাবীর ক্ষুধাকালীন এক সময়ের ঘটনা :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ فِي سَاعَةٍ لَا يَخْرُجُ فِيْهَا وَلَا يَلْقَاهٗ فِيْهَا اَحَدٌ ، فَاَتَاهُ اَبُو بَكْرٍ ، فَقَالَ : مَا جَاءَ بِكَ يَا اَبَا بَكْرٍ ؟ قَالَ : خَرَجْتُ اَلْقٰى رَسُوْلَ اللهِ وَاَنْظُرُ فِي وَجْهِهٖ ، وَالتَّسْلِيْمَ عَلَيْهِ ، فَلَمْ يَلْبَثْ اَنْ جَاءَ عُمَرُ فَقَالَ : مَا جَاءَ بِكَ يَا عُمَرُ ؟ قَالَ : اَلْجُوْعُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ، قَالَ : وَاَنَا قَدْ وَجَدْتُّ بَعْضَ ذٰلِكَ فَانْطَلَقُوْا اِلٰى مَنْزِلِ اَبِي الْهَيْثَمِ بْنِ التَّيْهَانِ الْاَنْصَارِيِّ وَكَانَ رَجُلًا كَثِيْرَ النَّخْلِ وَالشَّاءِ ، وَلَمْ يَكُنْ لَهٗ خَدَمٌ ، فَلَمْ يَجِدُوْهٗ ، فَقَالُوْا لِاِمْرَاَتِهٖ : اَيْنَ صَاحِبُكِ ؟ فَقَالَتِ : انْطَلَقَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا الْمَاءَ ، فَلَمْ يَلْبَثُوْا اَنْ جَاءَ اَبُو الْهَيْثَمِ بِقِرْبَةٍ يَزْعَبُهَا ، فَوَضَعَهَا ثُمَّ جَاءَ يَلْتَزِمُ النَّبِيَّ وَيُفَدِّيهٖ بِاَبِيْهِ وَأُمِّهٖ ، ثُمَّ انْطَلَقَ بِهِمْ اِلٰى حَدِيقَتِهٖ فَبَسَطَ لَهُمْ بِسَاطًا ، ثُمَّ انْطَلَقَ اِلٰى نَخْلَةٍ فَجَاءَ بِقِنْوٍ فَوَضَعَهٗ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : اَفَلَا تَنَقَّيْتَ لَنَا مِنْ رُطَبِهٖ ؟ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنِّيْ اَرَدْتُّ اَنْ تَخْتَارُوا ، اَوْ تَخَيَّرُوْا مِنْ رُطَبِهٖ وَبُسْرِهٖ ، فَاَكَلُوْا وَشَرِبُوْا مِنْ ذٰلِكَ الْمَاءِ . فَقَالَ : هٰذَا وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ مِنَ النَّعِيْمِ الَّذِيْ تُسْاَلُوْنَ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ظِلٌّ بَارِدٌ ، وَرُطَبٌ طَيِّبٌ ، وَمَاءٌ بَارِدٌ . فَانْطَلَقَ اَبُو الْهَيْثَمِ لِيَصْنَعَ لَهُمْ طَعَامًا . فَقَالَ النَّبِيُّ : لَا تَذْبَحَنَّ ذَاتَ دَرٍّ ، فَذَبَحَ لَهُمْ عَنَاقًا اَوْ جَدْيًا ، فَاَتَاهُمْ بِهَا فَاَكَلُوا ، فَقَالَ : هَلْ لَكَ خَادِمٌ ؟ قَالَ : لَا .
قَالَ : فَاِذَا اَتَانَا سَبْيٌ فَأْتِنَا . فَأُتِيَ النَّبِيُّ بِرَأْسَيْنِ لَيْسَ مَعَهُمَا ثَالِثٌ ، فَاَتَاهُ اَبُو الْهَيْثَمِ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : اخْتَرْ مِنْهُمَا فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِخْتَرْ لِيْ . فَقَالَ النَّبِيُّ : اِنَّ الْمُسْتَشَارَ مُؤْتَمَنٌ ، خُذْ هٰذَا فَاِنِّيْ رَاَيْتُهٗ يُصَلِّيْ ، وَاسْتَوْصِ بِهٖ مَعْرُوْفًا . فَانْطَلَقَ اَبُو الْهَيْثَمِ اِلَى امْرَاَتِهٖ ، فَاَخْبَرَهَا بِقَوْلِ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَتِ امْرَاَتُهٗ : مَا اَنْتَ بِبَالِغٍ حَقَّ مَا قَالَ فِيْهِ النَّبِيُّ اِلَّا بِاَنْ تَعْتِقَهٗ قَالَ : فَهُوَ عَتِيْقٌ ، فَقَالَ : اِنَّ اللهَ لَمْ يَبْعَثْ نَبِيًّا وَلَا خَلِيْفَةً اِلَّا وَلَهٗ بِطَانَتَانِ : بِطَانَةٌ تَأْمُرُهٗ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَاهُ عَنِ الْمُنْكَرِ ، وَبِطَانَةٌ لَا تَأْلُوْهُ خَبَالًا ، وَمَنْ يُوْقَ بِطَانَةَ السُّوْءِ فَقَدْ وُقِيَ
২৮৬. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী ﷺ এমন সময় ঘর থেকে বের হলেন, যখন সচরাচর তিনি বের হন না। কেউ সাক্ষাৎ করতেও আসে না। এমন সময় আবু বকর (রাঃ) তাঁর কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, কি জন্য এসেছ হে আবু বকর! বললেন, আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে, তাঁর চেহারা দেখতে ও সালাম জানাতে এসেছি। কিছুক্ষণ পর উমর (রাঃ) আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কি জন্য এসেছ উমর? বললেন, ক্ষুধার তাড়নায় হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ বললেন, আমিও তা-ই অনুভব করছি।
অতঃপর তারা তিনজনই আবুল হায়সাম ইবনে তায়্যিহান আল আনসারীর বাড়ি গেলেন। তাঁর অনেক খেজুর বাগান, ফল বাগান ও ছাগলের পাল। কিন্তু কোন খাদেম ছিল না। তাঁরা তার দেখা পেলেন না। ফলে তাঁরা তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার স্বামী কোথায় গিয়েছেন? বলল, আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই আবুল হায়ছাম পানির পাত্র নিয়ে ফিরে আসলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন এবং তাঁর পিতামাতাকে উৎসর্গ করতে থাকেন।
তারপর তাদেরকে নিয়ে বাগানে গেলেন এবং তাঁদের জন্য বিছানা বিছিয়ে দিলেন। খেজুর বাগান হতে এক ছড়া খেজুর এনে দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমাদের জন্য তাজা খেজুর বেছে আনলে না কেন? (পূর্ণ একটি ছড়া আনার কি প্রয়োজন ছিল)। আবুল হায়ছাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি চাই আপনি তা হতে কাঁচা ও পাকা খেজুর বেছে নিন। অতঃপর তারা সকলেই খেজুর খেলেন এবং পানি পান করলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, এসবও সেসব নিয়ামতের মধ্যে গণ্য, কিয়ামতের দিন যেগুলোর হিসাব নেয়া হবে। তা হলো, শীতল ছায়া, তরতাজা খেজুর ও ঠান্ডা পানি।
অতঃপর আবুল হায়সাম তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমাদের জন্য যেন দুগ্ধবতী ছাগী যবেহ করা না হয়। অতঃপর তাঁদের জন্য একটি বাচ্চা ছাগল যবেহ করা হলো এবং যথাশ্রীঘ্র খাবার হাযির করা হলো এবং তাঁরা আহার করলেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তোমার কোন খাদেম আছে কি? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমাদের যখন কোন গোলাম আসবে, তখন আমাকে মনে করিয়ে দিও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে ২ জন গোলাম আসল। তাদের সঙ্গে তৃতীয় কেউ ছিল না। এমন সময় আবুল হায়সাম সেখানে উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, এ ২ জনের মধ্য হতে একজনকে বেছে নাও। বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনিই বেছে দিন। নবী ﷺ বললেন, পরামর্শদাতা বিশ্বস্ত হয়। অতএব তুমি একে নাও। কারণ, আমি তাকে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর আমি তোমাকে তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য অসিয়ত করছি।
অতঃপর আবুল হায়সাম স্ত্রীর কাছে ফিরে গেলেন এবং তাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অসিয়তের কথা শুনালেন। তাঁর স্ত্রী বললেন, আপনার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা সম্ভব নাও হতে পারে। অতএব আপনি গোলামকে আযাদ করে দিন। তাতে আবুল হায়ছাম গোলামটিকে আযাদ করে দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রত্যেক নবী ও খলীফার জন্য ২ জন গোপন পরামর্শদাতা সৃষ্টি করে দেন। একজন সৎপরামর্শ দেয় এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখে। অপরজন ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে ইতস্তত করে না। যে ব্যক্তিকে তার মন্দ স্বভাব থেকে নিরাপদ রাখা হয়েছে, তাকে সকল অন্যায় হতে নিরাপদ রাখা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৩৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭১৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৯৬; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৫৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬১২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪২৮২।]
শিয়াবে তালিবের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ কে গাছের চামড়া ও পাতা খেয়ে জীবনপাত করতে হয়েছিল :
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِيْ وَقَّاصٍ يَقُوْلُ : اِنِّي لَاَوَّلُ رَجُلٍ اَهْرَاقَ دَمًا فِي سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ، وَاِنِّيْ لَاَوَّلُ رَجُلٍ رَمٰى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ، لَقَدْ رَاَيْتُنِيْ اَغْزُو فِي الْعِصَابَةِ مِنْ اَصْحَابِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامِ مَا نَأْكُلُ اِلَّا وَرَقَ الشَّجَرِ وَالْحُبْلَةِ حَتّٰى تَقَرَّحَتْ اَشْدَاقُنَا ، وَاِنَّ اَحَدَنَا لَيَضَعُ كَمَا تَضَعُ الشَّاةُ وَالْبَعِيْرُ ، وَاَصْبَحَتْ بَنُو اَسَدٍ يَعْزُرُونِيْ فِي الدِّيْنِ . لَقَدْ خِبْتُ وَخَسِرْتُ اِذًا وَضَلَّ عَمَلِيْ
২৮৭. সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইসলামের প্রথম ব্যক্তি, যে কাফিরদের রক্ত প্রবাহিত করেছে। আমি প্রথম ব্যক্তি, যে আল্লাহর রাস্তায় তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা মুহাম্মাদ ﷺ এর সাহাবীরা এমন অবস্থায় যুদ্ধ করেছি যে, গাছের বাকল ও পাতা ছাড়া কিছুই খেতে পেতাম না। এসব খাওয়ার ফলে আমাদের মুখে ঘা হয়ে যেত। এমনকি উট ও বকরীর মলের ন্যায় চর্বিযুক্ত মল পড়ত। তা সত্ত্বেও বনূ আসাদের লোকেরা দীন সম্পর্কে আমাকে অভিযুক্ত করেছে। দীন সম্পর্কে যদি আমি অজ্ঞই হই, তবে তো আমার সকল আমলই বরবাদ হয়ে গেল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭২৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৯২৩।]
ব্যাখ্যা : ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এর এ হাদীস বর্ণনার উদ্দেশ্য হলো, ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানদের চেষ্টা এবং কষ্ট-ক্লেশের কথা বর্ণনা করা। তাই তিনি হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ৩০ রাত পর্যন্তও সামান্য আহারেই কাটিয়ে ছিলেন :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَقَدْ أُخِفْتُ فِي اللهِ وَمَا يَخَافُ اَحَدٌ ، وَلَقَدْ أُوذِيْتُ فِي اللهِ وَمَا يُؤْذٰى اَحَدٌ ، وَلَقَدْ اَتَتْ عَلَيَّ ثَلَاثُوْنَ مِنْ بَيْنِ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ وَمَا لِيْ وَلِبِلَالٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهٗ ذُو كَبِدٍ اِلَّا شَيْءٌ يُوَارَيِهٖ اِبِطُ بِلَالٍ
২৮৮. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাকে আল্লাহর পথে এমন ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে, যখন আর কাউকে ভয় প্রদর্শন করা হয়নি। আমাকে আল্লাহর পথে এমনভাবে কষ্ট দেয়া হয়েছে, যা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। আমাদের ৩০টি রাত এমনভাবে অতিবাহিত হয়েছে, যখন বিলালের বগলের নিচে লুকিয়ে রাখা সামান্য খাদ্য ছাড়া আমার ও বিলালের আহারের মতো কিছুই ছিল না। [ইবনে মাজাহ, হা/১৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪০৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৮০; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩২০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৫৬০; মুসানণাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৭৭২১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কখনো রুটি ও গোশত একত্রিত হতো না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : اَنَّ النَّبِيَّ لَمْ يَجْتَمِعْ عِنْدَهٗ غَدَاءٌ وَلَا عَشَاءٌ مِنْ خُبْزٍ وَلَحْمٍ اِلَّا عَلَى ضَفَفٍ .
قَالَ عَبْدُ اللهِ : قَالَ بَعْضُهُمْ : هُوَ كَثْرَةُ الاَيْدِيْ .
২৮৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। দিনের খাবারই হোক কিংবা রাতের খাবার, কোন সময়ই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে রুটি-গোশত একত্রিত হতো না। তবে মেহমানদারীর জন্য দস্তরখানায় তা থাকত। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৮৬; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩১০৮; ইবনে হিববান, হা/৬৩৫৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৮৯।]
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন, ضَفَفٍ -এর অর্থ হলো অনেক হাত একত্রিত হওয়া।
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মেহমান ছাড়া একা খেতেন, তখন রুটি বা গোশত যাই থাকত, খেয়ে নিতেন। অন্যটার অপেক্ষা করতেন না। আর মেহমানের আপ্যায়নের উদ্দেশে রুটি ও গেশত সাধ্যমতো উভয়টির ব্যবস্থা করতেন। তখন এক সাথে উভয়টি খাওয়ার সুযোগ হতো।
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي سِنِّ رَسُوْلِ اللهِ
عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ قَالَ : سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ : اَلَسْتُمْ فِيْ طَعَامٍ وَشَرَابٍ مَا شِئِتُمْ ؟ لَقَدْ رَاَيْتُ نَبِيَّكُمْ وَمَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلَأُ بَطْنَهٗ
২৮৪. সিমাক ইবনে হার্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনে বশীর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কি তোমাদের চাহিদামতো খাওয়া-দাওয়ায় তৃপ্ত নও? অথচ নবী ﷺ কে দেখেছি যে, পেটভরে খাওয়ার মতো খারাপ খেজুরও তাঁর ঘরে থাকত না। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৭১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৪০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৫৪৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৭৫; মিশকাত, হা/৪১৯৫।]
কখনো কখনো তাঁর পরিবারের চুলায় ১ মাসের অধিক সময় পর্যন্তও আগুন জ্বালানো হতো না :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : اِنْ كُنَّا اٰلَ مُحَمَّدٍ نَمْكُثُ شَهْرًا مَا نَسْتَوْقِدُ بِنَارٍ ، اِنْ هُوَ اِلَّا التَّمْرُ وَالْمَاءُ
২৮৫. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমাদের নবীর পরিবারে কখনো এমন হতো যে, এক মাসের অধিক সময় পর্যন্ত আগুন জ্বালানো হতো না; শুধু পানি ও খেজুর খেয়ে কাটাতাম। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪২৭৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৬১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ও কয়েকজন সাহাবীর ক্ষুধাকালীন এক সময়ের ঘটনা :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ فِي سَاعَةٍ لَا يَخْرُجُ فِيْهَا وَلَا يَلْقَاهٗ فِيْهَا اَحَدٌ ، فَاَتَاهُ اَبُو بَكْرٍ ، فَقَالَ : مَا جَاءَ بِكَ يَا اَبَا بَكْرٍ ؟ قَالَ : خَرَجْتُ اَلْقٰى رَسُوْلَ اللهِ وَاَنْظُرُ فِي وَجْهِهٖ ، وَالتَّسْلِيْمَ عَلَيْهِ ، فَلَمْ يَلْبَثْ اَنْ جَاءَ عُمَرُ فَقَالَ : مَا جَاءَ بِكَ يَا عُمَرُ ؟ قَالَ : اَلْجُوْعُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ، قَالَ : وَاَنَا قَدْ وَجَدْتُّ بَعْضَ ذٰلِكَ فَانْطَلَقُوْا اِلٰى مَنْزِلِ اَبِي الْهَيْثَمِ بْنِ التَّيْهَانِ الْاَنْصَارِيِّ وَكَانَ رَجُلًا كَثِيْرَ النَّخْلِ وَالشَّاءِ ، وَلَمْ يَكُنْ لَهٗ خَدَمٌ ، فَلَمْ يَجِدُوْهٗ ، فَقَالُوْا لِاِمْرَاَتِهٖ : اَيْنَ صَاحِبُكِ ؟ فَقَالَتِ : انْطَلَقَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا الْمَاءَ ، فَلَمْ يَلْبَثُوْا اَنْ جَاءَ اَبُو الْهَيْثَمِ بِقِرْبَةٍ يَزْعَبُهَا ، فَوَضَعَهَا ثُمَّ جَاءَ يَلْتَزِمُ النَّبِيَّ وَيُفَدِّيهٖ بِاَبِيْهِ وَأُمِّهٖ ، ثُمَّ انْطَلَقَ بِهِمْ اِلٰى حَدِيقَتِهٖ فَبَسَطَ لَهُمْ بِسَاطًا ، ثُمَّ انْطَلَقَ اِلٰى نَخْلَةٍ فَجَاءَ بِقِنْوٍ فَوَضَعَهٗ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : اَفَلَا تَنَقَّيْتَ لَنَا مِنْ رُطَبِهٖ ؟ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنِّيْ اَرَدْتُّ اَنْ تَخْتَارُوا ، اَوْ تَخَيَّرُوْا مِنْ رُطَبِهٖ وَبُسْرِهٖ ، فَاَكَلُوْا وَشَرِبُوْا مِنْ ذٰلِكَ الْمَاءِ . فَقَالَ : هٰذَا وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ مِنَ النَّعِيْمِ الَّذِيْ تُسْاَلُوْنَ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ظِلٌّ بَارِدٌ ، وَرُطَبٌ طَيِّبٌ ، وَمَاءٌ بَارِدٌ . فَانْطَلَقَ اَبُو الْهَيْثَمِ لِيَصْنَعَ لَهُمْ طَعَامًا . فَقَالَ النَّبِيُّ : لَا تَذْبَحَنَّ ذَاتَ دَرٍّ ، فَذَبَحَ لَهُمْ عَنَاقًا اَوْ جَدْيًا ، فَاَتَاهُمْ بِهَا فَاَكَلُوا ، فَقَالَ : هَلْ لَكَ خَادِمٌ ؟ قَالَ : لَا .
قَالَ : فَاِذَا اَتَانَا سَبْيٌ فَأْتِنَا . فَأُتِيَ النَّبِيُّ بِرَأْسَيْنِ لَيْسَ مَعَهُمَا ثَالِثٌ ، فَاَتَاهُ اَبُو الْهَيْثَمِ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : اخْتَرْ مِنْهُمَا فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِخْتَرْ لِيْ . فَقَالَ النَّبِيُّ : اِنَّ الْمُسْتَشَارَ مُؤْتَمَنٌ ، خُذْ هٰذَا فَاِنِّيْ رَاَيْتُهٗ يُصَلِّيْ ، وَاسْتَوْصِ بِهٖ مَعْرُوْفًا . فَانْطَلَقَ اَبُو الْهَيْثَمِ اِلَى امْرَاَتِهٖ ، فَاَخْبَرَهَا بِقَوْلِ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَتِ امْرَاَتُهٗ : مَا اَنْتَ بِبَالِغٍ حَقَّ مَا قَالَ فِيْهِ النَّبِيُّ اِلَّا بِاَنْ تَعْتِقَهٗ قَالَ : فَهُوَ عَتِيْقٌ ، فَقَالَ : اِنَّ اللهَ لَمْ يَبْعَثْ نَبِيًّا وَلَا خَلِيْفَةً اِلَّا وَلَهٗ بِطَانَتَانِ : بِطَانَةٌ تَأْمُرُهٗ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَاهُ عَنِ الْمُنْكَرِ ، وَبِطَانَةٌ لَا تَأْلُوْهُ خَبَالًا ، وَمَنْ يُوْقَ بِطَانَةَ السُّوْءِ فَقَدْ وُقِيَ
২৮৬. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী ﷺ এমন সময় ঘর থেকে বের হলেন, যখন সচরাচর তিনি বের হন না। কেউ সাক্ষাৎ করতেও আসে না। এমন সময় আবু বকর (রাঃ) তাঁর কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, কি জন্য এসেছ হে আবু বকর! বললেন, আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে, তাঁর চেহারা দেখতে ও সালাম জানাতে এসেছি। কিছুক্ষণ পর উমর (রাঃ) আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কি জন্য এসেছ উমর? বললেন, ক্ষুধার তাড়নায় হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ বললেন, আমিও তা-ই অনুভব করছি।
অতঃপর তারা তিনজনই আবুল হায়সাম ইবনে তায়্যিহান আল আনসারীর বাড়ি গেলেন। তাঁর অনেক খেজুর বাগান, ফল বাগান ও ছাগলের পাল। কিন্তু কোন খাদেম ছিল না। তাঁরা তার দেখা পেলেন না। ফলে তাঁরা তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার স্বামী কোথায় গিয়েছেন? বলল, আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই আবুল হায়ছাম পানির পাত্র নিয়ে ফিরে আসলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন এবং তাঁর পিতামাতাকে উৎসর্গ করতে থাকেন।
তারপর তাদেরকে নিয়ে বাগানে গেলেন এবং তাঁদের জন্য বিছানা বিছিয়ে দিলেন। খেজুর বাগান হতে এক ছড়া খেজুর এনে দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমাদের জন্য তাজা খেজুর বেছে আনলে না কেন? (পূর্ণ একটি ছড়া আনার কি প্রয়োজন ছিল)। আবুল হায়ছাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি চাই আপনি তা হতে কাঁচা ও পাকা খেজুর বেছে নিন। অতঃপর তারা সকলেই খেজুর খেলেন এবং পানি পান করলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, এসবও সেসব নিয়ামতের মধ্যে গণ্য, কিয়ামতের দিন যেগুলোর হিসাব নেয়া হবে। তা হলো, শীতল ছায়া, তরতাজা খেজুর ও ঠান্ডা পানি।
অতঃপর আবুল হায়সাম তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমাদের জন্য যেন দুগ্ধবতী ছাগী যবেহ করা না হয়। অতঃপর তাঁদের জন্য একটি বাচ্চা ছাগল যবেহ করা হলো এবং যথাশ্রীঘ্র খাবার হাযির করা হলো এবং তাঁরা আহার করলেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তোমার কোন খাদেম আছে কি? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমাদের যখন কোন গোলাম আসবে, তখন আমাকে মনে করিয়ে দিও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে ২ জন গোলাম আসল। তাদের সঙ্গে তৃতীয় কেউ ছিল না। এমন সময় আবুল হায়সাম সেখানে উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, এ ২ জনের মধ্য হতে একজনকে বেছে নাও। বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনিই বেছে দিন। নবী ﷺ বললেন, পরামর্শদাতা বিশ্বস্ত হয়। অতএব তুমি একে নাও। কারণ, আমি তাকে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর আমি তোমাকে তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য অসিয়ত করছি।
অতঃপর আবুল হায়সাম স্ত্রীর কাছে ফিরে গেলেন এবং তাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অসিয়তের কথা শুনালেন। তাঁর স্ত্রী বললেন, আপনার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা সম্ভব নাও হতে পারে। অতএব আপনি গোলামকে আযাদ করে দিন। তাতে আবুল হায়ছাম গোলামটিকে আযাদ করে দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রত্যেক নবী ও খলীফার জন্য ২ জন গোপন পরামর্শদাতা সৃষ্টি করে দেন। একজন সৎপরামর্শ দেয় এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখে। অপরজন ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে ইতস্তত করে না। যে ব্যক্তিকে তার মন্দ স্বভাব থেকে নিরাপদ রাখা হয়েছে, তাকে সকল অন্যায় হতে নিরাপদ রাখা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৩৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭১৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৯৬; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৫৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬১২; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪২৮২।]
শিয়াবে তালিবের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ কে গাছের চামড়া ও পাতা খেয়ে জীবনপাত করতে হয়েছিল :
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِيْ وَقَّاصٍ يَقُوْلُ : اِنِّي لَاَوَّلُ رَجُلٍ اَهْرَاقَ دَمًا فِي سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ، وَاِنِّيْ لَاَوَّلُ رَجُلٍ رَمٰى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ، لَقَدْ رَاَيْتُنِيْ اَغْزُو فِي الْعِصَابَةِ مِنْ اَصْحَابِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامِ مَا نَأْكُلُ اِلَّا وَرَقَ الشَّجَرِ وَالْحُبْلَةِ حَتّٰى تَقَرَّحَتْ اَشْدَاقُنَا ، وَاِنَّ اَحَدَنَا لَيَضَعُ كَمَا تَضَعُ الشَّاةُ وَالْبَعِيْرُ ، وَاَصْبَحَتْ بَنُو اَسَدٍ يَعْزُرُونِيْ فِي الدِّيْنِ . لَقَدْ خِبْتُ وَخَسِرْتُ اِذًا وَضَلَّ عَمَلِيْ
২৮৭. সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইসলামের প্রথম ব্যক্তি, যে কাফিরদের রক্ত প্রবাহিত করেছে। আমি প্রথম ব্যক্তি, যে আল্লাহর রাস্তায় তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা মুহাম্মাদ ﷺ এর সাহাবীরা এমন অবস্থায় যুদ্ধ করেছি যে, গাছের বাকল ও পাতা ছাড়া কিছুই খেতে পেতাম না। এসব খাওয়ার ফলে আমাদের মুখে ঘা হয়ে যেত। এমনকি উট ও বকরীর মলের ন্যায় চর্বিযুক্ত মল পড়ত। তা সত্ত্বেও বনূ আসাদের লোকেরা দীন সম্পর্কে আমাকে অভিযুক্ত করেছে। দীন সম্পর্কে যদি আমি অজ্ঞই হই, তবে তো আমার সকল আমলই বরবাদ হয়ে গেল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭২৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৯২৩।]
ব্যাখ্যা : ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এর এ হাদীস বর্ণনার উদ্দেশ্য হলো, ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানদের চেষ্টা এবং কষ্ট-ক্লেশের কথা বর্ণনা করা। তাই তিনি হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ৩০ রাত পর্যন্তও সামান্য আহারেই কাটিয়ে ছিলেন :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَقَدْ أُخِفْتُ فِي اللهِ وَمَا يَخَافُ اَحَدٌ ، وَلَقَدْ أُوذِيْتُ فِي اللهِ وَمَا يُؤْذٰى اَحَدٌ ، وَلَقَدْ اَتَتْ عَلَيَّ ثَلَاثُوْنَ مِنْ بَيْنِ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ وَمَا لِيْ وَلِبِلَالٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهٗ ذُو كَبِدٍ اِلَّا شَيْءٌ يُوَارَيِهٖ اِبِطُ بِلَالٍ
২৮৮. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাকে আল্লাহর পথে এমন ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে, যখন আর কাউকে ভয় প্রদর্শন করা হয়নি। আমাকে আল্লাহর পথে এমনভাবে কষ্ট দেয়া হয়েছে, যা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। আমাদের ৩০টি রাত এমনভাবে অতিবাহিত হয়েছে, যখন বিলালের বগলের নিচে লুকিয়ে রাখা সামান্য খাদ্য ছাড়া আমার ও বিলালের আহারের মতো কিছুই ছিল না। [ইবনে মাজাহ, হা/১৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪০৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪০৮০; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩২০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৫৬০; মুসানণাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৭৭২১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কখনো রুটি ও গোশত একত্রিত হতো না :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : اَنَّ النَّبِيَّ لَمْ يَجْتَمِعْ عِنْدَهٗ غَدَاءٌ وَلَا عَشَاءٌ مِنْ خُبْزٍ وَلَحْمٍ اِلَّا عَلَى ضَفَفٍ .
قَالَ عَبْدُ اللهِ : قَالَ بَعْضُهُمْ : هُوَ كَثْرَةُ الاَيْدِيْ .
২৮৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। দিনের খাবারই হোক কিংবা রাতের খাবার, কোন সময়ই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে রুটি-গোশত একত্রিত হতো না। তবে মেহমানদারীর জন্য দস্তরখানায় তা থাকত। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৮৬; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩১০৮; ইবনে হিববান, হা/৬৩৫৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৮৯।]
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন, ضَفَفٍ -এর অর্থ হলো অনেক হাত একত্রিত হওয়া।
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মেহমান ছাড়া একা খেতেন, তখন রুটি বা গোশত যাই থাকত, খেয়ে নিতেন। অন্যটার অপেক্ষা করতেন না। আর মেহমানের আপ্যায়নের উদ্দেশে রুটি ও গেশত সাধ্যমতো উভয়টির ব্যবস্থা করতেন। তখন এক সাথে উভয়টি খাওয়ার সুযোগ হতো।
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي سِنِّ رَسُوْلِ اللهِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : مَكَثَ النَّبِيُّ بِمَكَّةَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ سَنَةً يُوْحٰى اِلَيْهِ ، وَبِالْمَدِيْنَةِ عَشْرًا ، وَتُوُفِّيَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّيْنَ
২৯০. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর উপর ওহী অবতীর্ণ হতে থাকে। আর মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেন এবং ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৯০৩; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪২৯; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৭৭০; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/২৭৫১।]
عَنْ جَرِيرٍ أَنَّهٗ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ يَخْطُبُ فَقَالَ مَاتَ رَسُولُ اللهِ - - وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَأَنَا ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ
২৯১. জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মুআবিয়া (রাঃ)-কে একবার ভাষণ দিতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এখন আমার বয়স ৬৩ বছর। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯৬৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৪৫৫০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬০৩৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৮৪১।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসটি বর্ণনা করার সময় মু‘আবিয়া (রাঃ) এর বয়স ৬৩ বছর ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বয়সের সাথে তাঁর বয়সের মিল হয়ে যায় এজন্য তিনিও এ বয়সে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করেন। কিন্তু তাঁর এ আশা পূরণ হয়নি।
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ مَاتَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَّسِتِّيْنَ سَنَةً
২৯২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৬২।]
عَنِ ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُوْلُ : تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ وَهُوَ ابْنُ خَمْسٍ وَّسِتِّيْنَ
২৯৩. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৪৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২৪৫২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৭৭০২।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيْسَ بِالطَّوِيْلِ الْبَائِنِ ، وَلَا بِالْقَصِيْرِ ، وَلَا بِالْاَبْيَضِ الْاَمْهَقِ ، وَلَا بِالْاٰدَمِ ، وَلَا بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ ، وَلَا بِالسَّبْطِ ، بَعَثَهُ اللهُ تَعَالٰى عَلٰى رَأْسِ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً ، فَاَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِيْنَ ، وَبِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ ، وَتَوَفَّاهُ اللهُ عَلٰى رَأْسِ سِتِّيْنَ سَنَةً وَلَيْسَ فِيْ رَأْسِهٖ وَلِحْيَتِهٖ عِشْرُوْنَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
২৯৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ না দীর্ঘ অবয়ব বিশিষ্ট ছিলেন, না খর্বাকৃতির ছিলেন। না সাদা বর্ণের ছিলেন, না ছিলেন ধূসর বর্ণের। তাঁর চুল না খুব বক্র ছিল, না ছিল সোজা; বরং ঈষৎ কোঁকড়ানো ছিল। ৪০ বছরের মাথায় তাকে নবুওয়াত দান করা হয়। এরপর তিনি মক্কায় ১০ বছর, মদিনায় ১০ বছর কাটান এবং ৬০ বছরের মাথায় ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর দাড়ি বা মাথার ২০টি চুলও সাদা হয়নি। [মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৯; সহীহ বুখারী, হা/৫৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৪৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৮৭।]
উল্লেখ্য যে, নবী ﷺ এর বয়স সম্পর্কে উপরের হাদীসগুলোতে বিভিন্ন রকম বর্ণনা থাকলেও বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন। এরপর মক্কায় ১৩ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর অতিবাহিত করেন।
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي وَفَاةِ رَسُوْلِ اللهِ
২৯০. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর উপর ওহী অবতীর্ণ হতে থাকে। আর মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেন এবং ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৯০৩; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪২৯; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১২৭৭০; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/২৭৫১।]
عَنْ جَرِيرٍ أَنَّهٗ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ يَخْطُبُ فَقَالَ مَاتَ رَسُولُ اللهِ - - وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَأَنَا ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ
২৯১. জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মুআবিয়া (রাঃ)-কে একবার ভাষণ দিতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এখন আমার বয়স ৬৩ বছর। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯৬৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৪৫৫০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬০৩৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৮৪১।]
ব্যাখ্যা : এ হাদীসটি বর্ণনা করার সময় মু‘আবিয়া (রাঃ) এর বয়স ৬৩ বছর ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বয়সের সাথে তাঁর বয়সের মিল হয়ে যায় এজন্য তিনিও এ বয়সে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করেন। কিন্তু তাঁর এ আশা পূরণ হয়নি।
عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ مَاتَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَّسِتِّيْنَ سَنَةً
২৯২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৬২।]
عَنِ ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُوْلُ : تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ وَهُوَ ابْنُ خَمْسٍ وَّسِتِّيْنَ
২৯৩. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছিলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৪৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২৪৫২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩৭৭০২।]
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُوْلُ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَيْسَ بِالطَّوِيْلِ الْبَائِنِ ، وَلَا بِالْقَصِيْرِ ، وَلَا بِالْاَبْيَضِ الْاَمْهَقِ ، وَلَا بِالْاٰدَمِ ، وَلَا بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ ، وَلَا بِالسَّبْطِ ، بَعَثَهُ اللهُ تَعَالٰى عَلٰى رَأْسِ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً ، فَاَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِيْنَ ، وَبِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ ، وَتَوَفَّاهُ اللهُ عَلٰى رَأْسِ سِتِّيْنَ سَنَةً وَلَيْسَ فِيْ رَأْسِهٖ وَلِحْيَتِهٖ عِشْرُوْنَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ
২৯৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ না দীর্ঘ অবয়ব বিশিষ্ট ছিলেন, না খর্বাকৃতির ছিলেন। না সাদা বর্ণের ছিলেন, না ছিলেন ধূসর বর্ণের। তাঁর চুল না খুব বক্র ছিল, না ছিল সোজা; বরং ঈষৎ কোঁকড়ানো ছিল। ৪০ বছরের মাথায় তাকে নবুওয়াত দান করা হয়। এরপর তিনি মক্কায় ১০ বছর, মদিনায় ১০ বছর কাটান এবং ৬০ বছরের মাথায় ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর দাড়ি বা মাথার ২০টি চুলও সাদা হয়নি। [মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৯; সহীহ বুখারী, হা/৫৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৪৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৮৭।]
উল্লেখ্য যে, নবী ﷺ এর বয়স সম্পর্কে উপরের হাদীসগুলোতে বিভিন্ন রকম বর্ণনা থাকলেও বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন। এরপর মক্কায় ১৩ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর অতিবাহিত করেন।
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي وَفَاةِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ রবিউল আউয়াল মাসে এবং সোমবারে ইন্তেকাল করার ব্যাপারে কারো কোন মতভেদ নেই। কিন্তু তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশের মতে সেদিন ছিল, ১২ (বার) রবিউল আউয়াল।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের দিন আবু বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : اٰخِرُ نَظْرَةٍ نَظَرْتُهَا اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ كَشْفُ السِّتَارَةِ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ ، فَنَظَرْتُ اِلٰى وَجْهِهٖ كَاَنَّهٗ وَرَقَةُ مُصْحَفٍ وَالنَّاسُ خَلْفَ اَبِيْ بَكْرٍ ، فَاَشَارَ اِلَى النَّاسِ اَنِ اثْبُتُوْا ، وَاَبُوْ بَكْرٍ يَؤُمُّهُمْ وَاَلْقَى السِّجْفَ ، وَتُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ اٰخِرِ ذٰلِكَ الْيَوْمِ
২৯৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল ﷺ কে শেষবারের মতো দর্শন করলাম, যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত অবস্থায় সোমবার ফজরের নামাজের সময়; তখন তিনি পর্দা তুলে উম্মতের সালাতের অবস্থা দেখছিলেন। আমি তাঁর চেহেরায় যেন আল-কুরআনের পৃষ্ঠা জ্বলজ্বল করতে দেখেছিলাম। লোকেরা আবু বকর (রাঃ) এর পেছনে সালাত আদায় করছিল। (লোকেরা সরে দাঁড়াতে চাইল) কিন্তু তিনি ইঙ্গিতে সকলকে স্থির থাকার নির্দেশ দিলেন এবং আবু বকর (রাঃ) ইমামতি করলেন। সেদিন শেষ বেলায় রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তেকাল করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৯৭১; ইবনে মাজাহ, হা/১৬২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৭৫; বায়হাকী, হা/৪৮২৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৮২৪; মুসনাদে হুমাইদী, হা/১২৪১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ওফাতের সময় আয়েশা (রাঃ) এর কোলে ঠেস লাগিয়ে ছিলেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ مُسْنِدَةً النَّبِيَّ اِلٰى صَدْرِيْ - اَوْ قَالَتْ : اِلٰى حِجْرِيْ - فَدَعَا بِطَسْتٍ لِيَبُوْلَ فِيْهِ ، ثُمَّ بِالَ ، فَمَاتَ
২৯৬. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের সময় তিনি আমার সিনায় বা আমার কোলে ঠেস লাগিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি প্রস্রাব করার জন্য একটি পাত্র আনতে বললেন এবং তাতে প্রস্রাব করলেন। এরপর তিনি ইন্তেকাল করেন। [ইবনে খুযাইমা, হা/৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৬২৬; মুসনাদে আবু ‘আওয়ানা, হা/৫৭৫০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ -ও মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : لَا اَغْبِطُ اَحَدًا بَهَوْنِ مَوْتٍ بَعْدَ الَّذِيْ رَاَيْتُ مِنْ شِدَّةِ مَوْتِ رَسُوْلِ اللهِ
২৯৭. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুর কষ্ট দেখার পর অন্য কারো মৃত্যুর সময় কষ্ট হলে আমার হিংসা হয় না।
ব্যাখ্যা : এখানে মৃত্যুর পূর্বে রোগের কষ্ট বুঝানো হয়েছে। আয়েশা (রাঃ) এ কথা বলার উদ্দেশ্য, আমি মনে করতাম, রোগ ছাড়া হঠাৎ মৃত্যু সম্মান ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রোগের কষ্ট দেখে অবগত হতে পেরেছি, এটা কোন সৌভাগ্যের ব্যাপার নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে ভাগ্যবান আর কে হতে পারে? বরং রোগের কষ্ট দ্বারা গোনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রোগের কারণে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর মৃত্যুর স্থানেই দাফন করা হয় :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : لَمَّا قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ اِخْتَلَفُوْا فِيْ دَفْنِهٖ ، فَقَالَ اَبُوْ بَكْرٍ : سَمِعْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ شَيْئًا مَا نَسِيْتُهٗ قَالَ : مَا قَبَضَ اللهُ نَبِيًّا اِلَّا فِي الْمَوْضِعِ الَّذِيْ يُحِبُّ اَنْ يُدْفَنَ فِيْهِ . اَدْفِنُوْهُ فِي مَوْضِعِ فِرَاشِهٖ
২৯৮. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তিকাল হলো তখন তাঁর দাফন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিল। আবু বকর (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে এ সম্পর্কে এমন কিছু শুনেছি, যা আমি আজও ভুলিনি। অতঃপর বলেন, আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে এমন স্থানেই মৃত্যু দেন, যেখানে দাফন করা তিনি পছন্দ করেন। অতএব রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর মৃত্যুশয্যার স্থানেই দাফন করা হোক। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৮৩২; ।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ) তাঁর কপালে চুম্বন করেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، وَعَائِشَةَ ، اَنَّ اَبَا بَكْرٍ ، قَبَّلَ النَّبِيَّ بَعْدَ مَا مَاتَ
২৯৯. ইবনে আববাস ও আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ) তাঁর কপালে চুম্বন করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৫৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৫৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৮৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০২৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০২৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/১২১৯৫।]
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّ اَبَا بَكْرٍ ، دَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ بَعْدَ وَفَاتِهٖ فَوَضَعَ فَمَهٗ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَوَضَعَ يَدَيْهِ عَلٰى سَاعِدَيْهِ ، وَقَالَ : وَانَبِيَّاهُ ، وَاصَفِيَّاهُ ، وَاخَلِيْلَاهٗ
৩০০. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ) তাঁর নিকট এসে তাঁর দুই চোখের মাঝখানে মুখ লাগিয়ে চুম্বন করেন এবং তাঁর বাহুতে দু’হাত রেখে বলেন, হায় নবী! হায় অন্তরঙ্গ বন্ধু! হায় বন্ধু! [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৭৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮।]
ব্যাখ্যা : আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কপালে দু’চোখের মাঝখানে চুম্বন করেছেন। সাহাবী উসমান ইবনে মাযউনের ইন্তেকালের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে চুম্বন করেছেন। এতে বুঝা যায়, মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা জায়েয।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুতে সাহাবীদের কাছে সবকিছু অন্ধকার মনে হচ্ছিল :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : لَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي دَخَلَ فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ الْمَدِيْنَةَ اَضَاءَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ ، فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي مَاتَ فِيْهِ اَظْلَمَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ ، وَمَا نَفَضْنَا اَيْدِيَنَا مِنَ التُّرَابِ ، وَاِنَا لَفِي دَفْنِهٖ حَتّٰى اَنْكَرْنَا قُلُوبَنَا
৩০১. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেদিন মদিনায় প্রবেশ করছিলেন, সেদিন সেখানকার প্রতিটি জিনিস আলোকোজ্জল হয়ে পড়েছিল। অতঃপর যেদিন তিনি ইন্তেকাল করেন, সেদিন আবার তথাকার প্রতিটি জিনিস অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আমরা তাঁর দাফনকার্য শেষ করে কবরের মাটি থেকে হাত ঝাড়া না দিতেই আমাদের অন্তরে পরিবর্তন অনুভব করলাম। [ইবনে মাজাহ, হা/১৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৫৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৮৭১; মুসনানে আবু ই‘আলা, হা/৩২৯৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৮৩৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৬৩৪; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৪০৫।]
ব্যাখ্যা : এ বক্তব্যের অর্থ, এটা নয় যে, সাহাবীদের আমল ও আক্বীদার মাঝে পরিবর্তন হয়ে গেছে; বরং উদ্দেশ্য হলো, তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সান্নিধ্যে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতেন, সে বিশেষ অবস্থার পরিবর্তন অনুভব করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবারের দিন ইন্তেকাল করেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ
৩০২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবারের দিন ইন্তেকাল করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৩৪।]
মঙ্গলবারের দিন রাতে তাঁকে দাফন করা হয় :
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ فَمَكَثَ ذٰلِكَ الْيَوْمَ وَلَيْلَةَ الثُّلَاثَاءِ ، وَدُفِنَ مِنَ اللَّيْلِ
৩০৩. জা‘ফর ইবনে মুহাম্মাদ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবারে ইন্তেকাল করেন। সোমবার ও মঙ্গলবার দাফন-কাফনের প্রস্তুতিতেই চলে যায়। অতঃপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাঁকে দাফন করা হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যু ও আবু বকর (রাঃ) এর বাইয়াত গ্রহণ :
عَنْ سَالِمِ بْنِ عُبَيْدٍ ، وَكَانَتْ لَهٗ صُحْبَةٌ قَالَ : أُغْمِيَ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ فِي مَرَضِهٖ فَاَفَاقَ ، فَقَالَ : حَضَرَتِ الصَّلَاةُ ؟ فَقَالُوْا : نَعَمْ . فَقَالَ : مُرُوْا بِلَالًا فَلْيُؤَذِّنْ ، وَمُرُوْا اَبَا بَكْرٍ اَنْ يُّصَلِّيَ للنَّاسِ - اَوْ قَالَ : بِالنَّاسِ - قَالَ : ثُمَّ أُغْمِيَ عَلَيْهِ ، فَاَفَاقَ ، فَقَالَ : حَضَرَتِ الصَّلَاةُ ؟ فَقَالُوْا : نَعَمْ . فَقَالَ : مُرُوْا بِلَالًا فَلْيُؤَذِّنْ ، وَمُرُوْا اَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ : اِنَّ اَبِيْ رَجُلٌ اَسِيْفٌ ، اِذَا قَامَ ذٰلِكَ الْمَقَامَ بَكٰى فَلَا يَسْتَطِيْعُ ، فَلَوْ اَمَرْتَ غَيْرَهٗ قَالَ : ثُمَّ أُغْمِيَ عَلَيْهِ فَاَفَاقَ فَقَالَ : مُرُوْا بِلَالًا فَلْيُؤَذِّنْ ، وَمُرُوْا اَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ ، فَاِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ اَوْ صَوَاحِبَاتُ يُوْسُفَ قَالَ : فَأُمِرَ بِلَالٌ فَاَذَّنَ ، وَأُمِرَ اَبُوْ بَكْرٍ فَصَلّٰى بِالنَّاسِ ، ثُمَّ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ وَجَدَ خِفَّةً ، فَقَالَ : اُنْظُرُوْا لِيْ مَنْ اَتَّكِئِ عَلَيْهِ ، فَجَاءَتْ بَرِيْرَةُ وَرَجُلٌ اٰخَرُ ، فَاتَّكَاَ عَلَيْهِمَا فَلَمَّا رَاٰهٗ اَبُو بَكْرٍ ذَهَبَ لِينْكُصَ فَاَوْمَاَ اِلَيْهِ اَنْ يَثْبُتَ مَكَانَهٗ ، حَتّٰى قَضٰى اَبُو بَكْرٍ صَلَاتَهٗ ، ثُمَّ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ قُبِضَ ، فَقَالَ عُمَرُ : وَاللهِ لَا اَسْمَعُ اَحَدًا يَذْكُرُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قُبِضَ اِلَّا ضَرَبْتُهٗ بِسَيْفِيْ هٰذَا قَالَ : وَكَانَ النَّاسُ أُمِّيِّيْنَ لَمْ يَكُنْ فِيْهِمْ نَبِيٌّ قَبْلَهٗ ، فَاَمْسَكَ النَّاسُ ، فَقَالُوْا : يَا سَالِمُ ، انْطَلِقْ اِلَى صَاحِبِ رَسُوْلِ اللهِ فَادْعُهٗ ، فَاَتَيْتُ اَبَا بَكْرٍ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ فَاَتَيْتُهٗ اَبْكِيْ دَهِشًا ، فَلَمَّا راٰنِيْ قَالَ : اَقُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قُلْتُ : اِنَّ عُمَرَ يَقُوْلُ : لَا اَسْمَعُ اَحَدًا يَذْكُرُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قُبِضَ اِلَّا ضَرَبْتُهٗ بِسَيْفِيْ هٰذَا ، فَقَالَ لِيْ : اِنْطَلِقْ ، فَانْطَلَقْتُ مَعَهٗ ، فَجَاءَ هُوَ وَالنَّاسُ قَدْ دَخَلُوا عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ : يَا اَيُّهَا النَّاسُ ، اَفْرِجُوْا لِيْ ، فَاَفْرَجُوْا لَهٗ فَجَاءَ حَتّٰى اَكَبَّ عَلَيْهِ وَمَسَّهٗ ، فَقَالَ : ﴿اِنَّكَ مَيِّتٌ وَاِنَّهُمْ مَيِّتُوْنَ﴾ ثُمَّ قَالُوْا : يَا صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ، اَقُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، فَعَلِمُوْا اَنْ قَدْ صَدَقَ ، قَالُوْا : يَا صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ، اَيُصَلّٰى عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ؟ قَالَ : نَعَمْ ، قَالُوْا : وَكَيْفَ؟ قَالَ : يَدْخُلُ قَوْمٌ فَيُكَبِّرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ وَيَدْعُوْنَ ، ثُمَّ يَخْرُجُوْنَ ، ثُمَّ يَدْخُلُ قَوْمٌ فَيُكَبِّرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ وَيَدْعُوْنَ ، ثُمَّ يَخْرُجُوْنَ ، حَتّٰى يَدْخُلَ النَّاسُ ، قَالُوْا : يَا صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ، اَيُدْفَنُ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، قَالُوْا : اَيْنَ ؟ قَالَ : فِيْ الْمَكَانِ الَّذِيْ قَبَضَ اللهُ فِيْهِ رُوْحَهٗ ، فَاِنَّ اللهَ لَمْ يَقْبِضْ رُوْحَهٗ اِلَّا فِيْ مَكَانٍ طَيِّبٍ . فَعَلِمُوْا اَنْ قَدْ صَدَقَ ، ثُمَّ اَمَرَهُمْ اَنْ يَّغْسِلَهٗ بَنُو اَبِيْهِ وَاجْتَمَعَ الْمُهَاجِرُوْنَ يَتَشَاوَرُوْنَ ، فَقَالُوْا : اِنْطَلِقْ بِنَا اِلٰى اِخْوَانِنَا مِنَ الْاَنْصَارِ نُدْخِلُهُمْ مَعَنَا فِيْ هٰذَا الْاَمْرِ ، فَقَالَتِ الْاَنْصَارُ : مِنَّا اَمِيْرٌ وَمِنْكُمْ اَمِيْرٌ ، فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ : مَنْ لَهٗ مِثْلُ هٰذِهِ الثَّلَاثِ ﴿ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِي الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَا﴾ مَنْ هُمَا ؟ قَالَ : ثُمَّ بَسَطَ يَدَهٗ فَبَايَعَهٗ وَبَايَعَهُ النَّاسُ بَيْعَةً حَسَنَةً جَمِيْلَةً
৩০৪. সাহাবী সালিম ইবনে উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ অসুস্থ অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সালাতের সময় হয়েছে কি? সাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে নির্দেশ দাও এবং আবু বকরকে ইমামতি করতে বলো। অতঃপর তিনি আবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বলেন, সালাতের সময় হয়েছে কি? সাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে বলো এবং আবু বকরকে ইমামতি করতে বলো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার পিতা কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন কেঁদে ফেলবেন এবং ইমামতি করতে সক্ষম হবেন না। আপনি যদি তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন।
বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আবার জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে বলো এবং আবু বকরকে লোকদের সালাত পড়াতে বলো। পুনরায় আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার পিতা কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি ঐ ইমামতের জায়গায় দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং ইমামতি করতে সক্ষম হবেন না। আপনি যদি তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা তো ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনার সাথে জড়িত মহিলাদের মতো। বর্ণনাকারী বলেন, বেলাল (রাঃ)-কে আযান দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে তিনি আযান দেন এবং আবু বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি লোকদের সালাত পড়ান। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ কিছুটা সুস্থতাবোধ করে বলেন, দেখতো! আমার ভর নেয়ার মতো কোন লোক পাওয়া যায় কি না? তখন বর্ণনাকারী ও অপর এক লোক এলে তিনি তাঁদের উপর ভর করেন (এবং মসজিদে যান)। তাঁকে দেখে আবু বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসতে উদ্যোগী হলে তিনি তাঁকে স্বস্থানে স্থির থাকতে ইশারা করেন। এ অবস্থায় আবু বকর (রাঃ) সালাত আদায় করান। অতঃপর সোমবার রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তেকাল করলে উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনব যে, ‘‘রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তেকাল করেছেন’’ আমি আমার তরবারি দিয়ে তাকে আঘাত করব। আর লোকদের এ ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। কারণ, তাঁরা ইতোপূর্বে কোন নবীর মৃৃৃৃৃৃত্যু দেখেনি। তাই তাঁরা নীরব থাকেন।
কতিপয় সাহাবী বলেন, হে সালেম, তুমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথীকে ডেকে আন। অতএব আমি আবু বকর (রাঃ) এর নিকট এলাম। তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। আমি দিশেহারা হয়ে কান্নারত অবস্থায় আবু বকর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে দেখেই বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি ইন্তেকাল করেছেন? আমি বললাম উমর (রাঃ) বলেছেন, যাকে এ কথা বলতে শুনব যে, ‘‘রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তেকাল করেছেন’’ আমি আমার এ তরবারী দ্বারা তাকে আঘাত করব। আবু বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, চলো। অতএব আমি তাঁর সাথে চললাম এবং তিনিও আসলেন। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখার জন্য লোকজন এসে সমবেত হয়েছে। তিনি বলেন, হে লোক সকল, আমার জন্য রাস্তা করে দাও। তিনি এসে তাঁর প্রতি ঝুঁকে পড়েন এবং কপালে চুম্বন করে এ আয়াত পড়েন,
﴿اِنَّكَ مَيِّتٌ وَاِنَّهُمْ مَيِّتُوْنَ﴾
অর্থাৎ নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তাঁরাও (আপনার শত্রুরা) মরণশীল। [সূরা যুমার- ৩০।]
অতঃপর লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে রাসূলের সাহাবী! রাসূলুল্লাহ ﷺ কি ইন্তেকাল করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সবাই বিশ্বাস করলেন, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। তারা আবার জিজ্ঞেস করেন, হে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথী! আমরা কি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জানাযা পড়ব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা জিজ্ঞেস করেন, তা কী নিয়মে? তিনি বললেন, একদল লোক প্রবেশ করবে, তারা তাকবীর বলবে, দু‘আ করবে এবং দরূদ পাঠ করবে। তারা বের হয়ে এলে আরেক দল প্রবেশ করে একই নিয়েম তাকবীর, দু‘আ ও দরূদ পড়ে বের হয়ে আসবে। এ নিয়মে জামা‘আত ছাড়া সকলে আলাদা আলাদা জানাযার সালাত আদায় করবে। তারা আবার জিজ্ঞেস করেন, হে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গী! রাসূলুল্লাহ ﷺ কে কি দাফন করা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা জিজ্ঞেস করেন, কোথায়? তিনি বললেন, যে স্থানে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে সেখানেই। আল্লাহ তার পছন্দের স্থানেই তাঁর জান কবয করেছেন। তখন সকলের বিশ্বাস হলো, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে গোসল দেয়ার জন্য তাঁর পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনকে আদেশ করেন।
অতঃপর মুহাজিররা (খেলাফত প্রশ্নে) পরামর্শের জন্য মিলিত হন। মুহাজিররা আবু বকর (রাঃ)-কে বললেন, আমাদেরকে নিয়ে আনসার ভাইদের কাছে চলুন এবং এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের সাথে তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করব। আনসারগণ বললেন, আমাদের মধ্য হতে একজন আমীর এবং আপনাদের (মুহাজিরদের) মধ্য থেকে একজন আমীর হোক। তখন উমর (রাঃ) বললেন, এমন কে আছে, যে এই ঘটনার তৃতীয়জন (যে ঘটনাটির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন)-
﴿ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِي الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَا﴾
‘‘দু’জনের একজন যখন তারা ছিল গুহার মধ্যে, যখন সে তার সাথিকে বলল, বিচলিত হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’ [সূরা তাওবা- ৪০।]
কারা ছিলেন সে দু’জন? বর্ণনাকারী বলেন, তারপর উমর (রাঃ) তাঁর হাত প্রসারিত করে দিয়ে আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তারপর লোকেরাও তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭০৮১; সুনানুল কুবরা লিত তাবারানী, হা/৬২৪৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুতে ফাতিমা (রাঃ) এর ক্রন্দন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : لَمَّا وَجَدَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ كُرَبِ الْمَوْتِ مَا وَجَدَ ، قَالَتْ فَاطِمَةُ : وَاكَرْبَاهٗ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : لَا كَرْبَ عَلَى اَبِيْكِ بَعْدَ الْيَوْمِ ، اِنَّهٗ قَدْ حَضَرَ مِنْ اَبِيْكِ مَا لَيْسَ بِتَارِكٍ مِنْهُ اَحَدًا الْمُوَافَاةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
৩০৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মৃত্যুর কষ্ট ভোগ করছিলেন, তখন ফাতেমা (রাঃ) বললেন, হায়! আমার আববার কতই না কষ্ট হচ্ছে! রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আজকের পর তোমার পিতার আর কোন কষ্ট থাকবে না। তোমার পিতার নিকট মৃত্যু নামক এমন এক বিষয় উপস্থিত হয়েছে, যা থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ রেহাই পাবে না। [ইবনে মাজাহ, হা/১৬২৯।]
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي مِيرَاثِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের দিন আবু বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : اٰخِرُ نَظْرَةٍ نَظَرْتُهَا اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ كَشْفُ السِّتَارَةِ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ ، فَنَظَرْتُ اِلٰى وَجْهِهٖ كَاَنَّهٗ وَرَقَةُ مُصْحَفٍ وَالنَّاسُ خَلْفَ اَبِيْ بَكْرٍ ، فَاَشَارَ اِلَى النَّاسِ اَنِ اثْبُتُوْا ، وَاَبُوْ بَكْرٍ يَؤُمُّهُمْ وَاَلْقَى السِّجْفَ ، وَتُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ اٰخِرِ ذٰلِكَ الْيَوْمِ
২৯৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল ﷺ কে শেষবারের মতো দর্শন করলাম, যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত অবস্থায় সোমবার ফজরের নামাজের সময়; তখন তিনি পর্দা তুলে উম্মতের সালাতের অবস্থা দেখছিলেন। আমি তাঁর চেহেরায় যেন আল-কুরআনের পৃষ্ঠা জ্বলজ্বল করতে দেখেছিলাম। লোকেরা আবু বকর (রাঃ) এর পেছনে সালাত আদায় করছিল। (লোকেরা সরে দাঁড়াতে চাইল) কিন্তু তিনি ইঙ্গিতে সকলকে স্থির থাকার নির্দেশ দিলেন এবং আবু বকর (রাঃ) ইমামতি করলেন। সেদিন শেষ বেলায় রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তেকাল করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৯৭১; ইবনে মাজাহ, হা/১৬২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৭৫; বায়হাকী, হা/৪৮২৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৮২৪; মুসনাদে হুমাইদী, হা/১২৪১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ ওফাতের সময় আয়েশা (রাঃ) এর কোলে ঠেস লাগিয়ে ছিলেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ مُسْنِدَةً النَّبِيَّ اِلٰى صَدْرِيْ - اَوْ قَالَتْ : اِلٰى حِجْرِيْ - فَدَعَا بِطَسْتٍ لِيَبُوْلَ فِيْهِ ، ثُمَّ بِالَ ، فَمَاتَ
২৯৬. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের সময় তিনি আমার সিনায় বা আমার কোলে ঠেস লাগিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি প্রস্রাব করার জন্য একটি পাত্র আনতে বললেন এবং তাতে প্রস্রাব করলেন। এরপর তিনি ইন্তেকাল করেন। [ইবনে খুযাইমা, হা/৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৬২৬; মুসনাদে আবু ‘আওয়ানা, হা/৫৭৫০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ -ও মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : لَا اَغْبِطُ اَحَدًا بَهَوْنِ مَوْتٍ بَعْدَ الَّذِيْ رَاَيْتُ مِنْ شِدَّةِ مَوْتِ رَسُوْلِ اللهِ
২৯৭. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুর কষ্ট দেখার পর অন্য কারো মৃত্যুর সময় কষ্ট হলে আমার হিংসা হয় না।
ব্যাখ্যা : এখানে মৃত্যুর পূর্বে রোগের কষ্ট বুঝানো হয়েছে। আয়েশা (রাঃ) এ কথা বলার উদ্দেশ্য, আমি মনে করতাম, রোগ ছাড়া হঠাৎ মৃত্যু সম্মান ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রোগের কষ্ট দেখে অবগত হতে পেরেছি, এটা কোন সৌভাগ্যের ব্যাপার নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে ভাগ্যবান আর কে হতে পারে? বরং রোগের কষ্ট দ্বারা গোনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রোগের কারণে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর মৃত্যুর স্থানেই দাফন করা হয় :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : لَمَّا قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ اِخْتَلَفُوْا فِيْ دَفْنِهٖ ، فَقَالَ اَبُوْ بَكْرٍ : سَمِعْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ شَيْئًا مَا نَسِيْتُهٗ قَالَ : مَا قَبَضَ اللهُ نَبِيًّا اِلَّا فِي الْمَوْضِعِ الَّذِيْ يُحِبُّ اَنْ يُدْفَنَ فِيْهِ . اَدْفِنُوْهُ فِي مَوْضِعِ فِرَاشِهٖ
২৯৮. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তিকাল হলো তখন তাঁর দাফন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিল। আবু বকর (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে এ সম্পর্কে এমন কিছু শুনেছি, যা আমি আজও ভুলিনি। অতঃপর বলেন, আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে এমন স্থানেই মৃত্যু দেন, যেখানে দাফন করা তিনি পছন্দ করেন। অতএব রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর মৃত্যুশয্যার স্থানেই দাফন করা হোক। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৮৩২; ।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ) তাঁর কপালে চুম্বন করেন :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، وَعَائِشَةَ ، اَنَّ اَبَا بَكْرٍ ، قَبَّلَ النَّبِيَّ بَعْدَ مَا مَاتَ
২৯৯. ইবনে আববাস ও আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ) তাঁর কপালে চুম্বন করেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৫৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৫৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৮৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০২৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০২৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/১২১৯৫।]
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّ اَبَا بَكْرٍ ، دَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ بَعْدَ وَفَاتِهٖ فَوَضَعَ فَمَهٗ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَوَضَعَ يَدَيْهِ عَلٰى سَاعِدَيْهِ ، وَقَالَ : وَانَبِيَّاهُ ، وَاصَفِيَّاهُ ، وَاخَلِيْلَاهٗ
৩০০. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর আবু বকর (রাঃ) তাঁর নিকট এসে তাঁর দুই চোখের মাঝখানে মুখ লাগিয়ে চুম্বন করেন এবং তাঁর বাহুতে দু’হাত রেখে বলেন, হায় নবী! হায় অন্তরঙ্গ বন্ধু! হায় বন্ধু! [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৭৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮।]
ব্যাখ্যা : আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কপালে দু’চোখের মাঝখানে চুম্বন করেছেন। সাহাবী উসমান ইবনে মাযউনের ইন্তেকালের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে চুম্বন করেছেন। এতে বুঝা যায়, মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা জায়েয।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুতে সাহাবীদের কাছে সবকিছু অন্ধকার মনে হচ্ছিল :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ : لَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي دَخَلَ فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ الْمَدِيْنَةَ اَضَاءَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ ، فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي مَاتَ فِيْهِ اَظْلَمَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ ، وَمَا نَفَضْنَا اَيْدِيَنَا مِنَ التُّرَابِ ، وَاِنَا لَفِي دَفْنِهٖ حَتّٰى اَنْكَرْنَا قُلُوبَنَا
৩০১. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেদিন মদিনায় প্রবেশ করছিলেন, সেদিন সেখানকার প্রতিটি জিনিস আলোকোজ্জল হয়ে পড়েছিল। অতঃপর যেদিন তিনি ইন্তেকাল করেন, সেদিন আবার তথাকার প্রতিটি জিনিস অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আমরা তাঁর দাফনকার্য শেষ করে কবরের মাটি থেকে হাত ঝাড়া না দিতেই আমাদের অন্তরে পরিবর্তন অনুভব করলাম। [ইবনে মাজাহ, হা/১৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৫৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৮৭১; মুসনানে আবু ই‘আলা, হা/৩২৯৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৮৩৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৬৩৪; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৪০৫।]
ব্যাখ্যা : এ বক্তব্যের অর্থ, এটা নয় যে, সাহাবীদের আমল ও আক্বীদার মাঝে পরিবর্তন হয়ে গেছে; বরং উদ্দেশ্য হলো, তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সান্নিধ্যে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতেন, সে বিশেষ অবস্থার পরিবর্তন অনুভব করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবারের দিন ইন্তেকাল করেন :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ
৩০২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবারের দিন ইন্তেকাল করেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৩৪।]
মঙ্গলবারের দিন রাতে তাঁকে দাফন করা হয় :
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ ، عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ فَمَكَثَ ذٰلِكَ الْيَوْمَ وَلَيْلَةَ الثُّلَاثَاءِ ، وَدُفِنَ مِنَ اللَّيْلِ
৩০৩. জা‘ফর ইবনে মুহাম্মাদ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবারে ইন্তেকাল করেন। সোমবার ও মঙ্গলবার দাফন-কাফনের প্রস্তুতিতেই চলে যায়। অতঃপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাঁকে দাফন করা হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যু ও আবু বকর (রাঃ) এর বাইয়াত গ্রহণ :
عَنْ سَالِمِ بْنِ عُبَيْدٍ ، وَكَانَتْ لَهٗ صُحْبَةٌ قَالَ : أُغْمِيَ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ فِي مَرَضِهٖ فَاَفَاقَ ، فَقَالَ : حَضَرَتِ الصَّلَاةُ ؟ فَقَالُوْا : نَعَمْ . فَقَالَ : مُرُوْا بِلَالًا فَلْيُؤَذِّنْ ، وَمُرُوْا اَبَا بَكْرٍ اَنْ يُّصَلِّيَ للنَّاسِ - اَوْ قَالَ : بِالنَّاسِ - قَالَ : ثُمَّ أُغْمِيَ عَلَيْهِ ، فَاَفَاقَ ، فَقَالَ : حَضَرَتِ الصَّلَاةُ ؟ فَقَالُوْا : نَعَمْ . فَقَالَ : مُرُوْا بِلَالًا فَلْيُؤَذِّنْ ، وَمُرُوْا اَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ : اِنَّ اَبِيْ رَجُلٌ اَسِيْفٌ ، اِذَا قَامَ ذٰلِكَ الْمَقَامَ بَكٰى فَلَا يَسْتَطِيْعُ ، فَلَوْ اَمَرْتَ غَيْرَهٗ قَالَ : ثُمَّ أُغْمِيَ عَلَيْهِ فَاَفَاقَ فَقَالَ : مُرُوْا بِلَالًا فَلْيُؤَذِّنْ ، وَمُرُوْا اَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ ، فَاِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ اَوْ صَوَاحِبَاتُ يُوْسُفَ قَالَ : فَأُمِرَ بِلَالٌ فَاَذَّنَ ، وَأُمِرَ اَبُوْ بَكْرٍ فَصَلّٰى بِالنَّاسِ ، ثُمَّ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ وَجَدَ خِفَّةً ، فَقَالَ : اُنْظُرُوْا لِيْ مَنْ اَتَّكِئِ عَلَيْهِ ، فَجَاءَتْ بَرِيْرَةُ وَرَجُلٌ اٰخَرُ ، فَاتَّكَاَ عَلَيْهِمَا فَلَمَّا رَاٰهٗ اَبُو بَكْرٍ ذَهَبَ لِينْكُصَ فَاَوْمَاَ اِلَيْهِ اَنْ يَثْبُتَ مَكَانَهٗ ، حَتّٰى قَضٰى اَبُو بَكْرٍ صَلَاتَهٗ ، ثُمَّ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ قُبِضَ ، فَقَالَ عُمَرُ : وَاللهِ لَا اَسْمَعُ اَحَدًا يَذْكُرُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قُبِضَ اِلَّا ضَرَبْتُهٗ بِسَيْفِيْ هٰذَا قَالَ : وَكَانَ النَّاسُ أُمِّيِّيْنَ لَمْ يَكُنْ فِيْهِمْ نَبِيٌّ قَبْلَهٗ ، فَاَمْسَكَ النَّاسُ ، فَقَالُوْا : يَا سَالِمُ ، انْطَلِقْ اِلَى صَاحِبِ رَسُوْلِ اللهِ فَادْعُهٗ ، فَاَتَيْتُ اَبَا بَكْرٍ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ فَاَتَيْتُهٗ اَبْكِيْ دَهِشًا ، فَلَمَّا راٰنِيْ قَالَ : اَقُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قُلْتُ : اِنَّ عُمَرَ يَقُوْلُ : لَا اَسْمَعُ اَحَدًا يَذْكُرُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قُبِضَ اِلَّا ضَرَبْتُهٗ بِسَيْفِيْ هٰذَا ، فَقَالَ لِيْ : اِنْطَلِقْ ، فَانْطَلَقْتُ مَعَهٗ ، فَجَاءَ هُوَ وَالنَّاسُ قَدْ دَخَلُوا عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ : يَا اَيُّهَا النَّاسُ ، اَفْرِجُوْا لِيْ ، فَاَفْرَجُوْا لَهٗ فَجَاءَ حَتّٰى اَكَبَّ عَلَيْهِ وَمَسَّهٗ ، فَقَالَ : ﴿اِنَّكَ مَيِّتٌ وَاِنَّهُمْ مَيِّتُوْنَ﴾ ثُمَّ قَالُوْا : يَا صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ، اَقُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، فَعَلِمُوْا اَنْ قَدْ صَدَقَ ، قَالُوْا : يَا صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ، اَيُصَلّٰى عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ؟ قَالَ : نَعَمْ ، قَالُوْا : وَكَيْفَ؟ قَالَ : يَدْخُلُ قَوْمٌ فَيُكَبِّرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ وَيَدْعُوْنَ ، ثُمَّ يَخْرُجُوْنَ ، ثُمَّ يَدْخُلُ قَوْمٌ فَيُكَبِّرُوْنَ وَيُصَلُّوْنَ وَيَدْعُوْنَ ، ثُمَّ يَخْرُجُوْنَ ، حَتّٰى يَدْخُلَ النَّاسُ ، قَالُوْا : يَا صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ، اَيُدْفَنُ رَسُوْلُ اللهِ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، قَالُوْا : اَيْنَ ؟ قَالَ : فِيْ الْمَكَانِ الَّذِيْ قَبَضَ اللهُ فِيْهِ رُوْحَهٗ ، فَاِنَّ اللهَ لَمْ يَقْبِضْ رُوْحَهٗ اِلَّا فِيْ مَكَانٍ طَيِّبٍ . فَعَلِمُوْا اَنْ قَدْ صَدَقَ ، ثُمَّ اَمَرَهُمْ اَنْ يَّغْسِلَهٗ بَنُو اَبِيْهِ وَاجْتَمَعَ الْمُهَاجِرُوْنَ يَتَشَاوَرُوْنَ ، فَقَالُوْا : اِنْطَلِقْ بِنَا اِلٰى اِخْوَانِنَا مِنَ الْاَنْصَارِ نُدْخِلُهُمْ مَعَنَا فِيْ هٰذَا الْاَمْرِ ، فَقَالَتِ الْاَنْصَارُ : مِنَّا اَمِيْرٌ وَمِنْكُمْ اَمِيْرٌ ، فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ : مَنْ لَهٗ مِثْلُ هٰذِهِ الثَّلَاثِ ﴿ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِي الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَا﴾ مَنْ هُمَا ؟ قَالَ : ثُمَّ بَسَطَ يَدَهٗ فَبَايَعَهٗ وَبَايَعَهُ النَّاسُ بَيْعَةً حَسَنَةً جَمِيْلَةً
৩০৪. সাহাবী সালিম ইবনে উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ অসুস্থ অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সালাতের সময় হয়েছে কি? সাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে নির্দেশ দাও এবং আবু বকরকে ইমামতি করতে বলো। অতঃপর তিনি আবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বলেন, সালাতের সময় হয়েছে কি? সাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে বলো এবং আবু বকরকে ইমামতি করতে বলো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার পিতা কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন কেঁদে ফেলবেন এবং ইমামতি করতে সক্ষম হবেন না। আপনি যদি তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন।
বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আবার জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বললেন, তোমরা বেলালকে আযান দিতে বলো এবং আবু বকরকে লোকদের সালাত পড়াতে বলো। পুনরায় আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার পিতা কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি ঐ ইমামতের জায়গায় দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং ইমামতি করতে সক্ষম হবেন না। আপনি যদি তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা তো ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনার সাথে জড়িত মহিলাদের মতো। বর্ণনাকারী বলেন, বেলাল (রাঃ)-কে আযান দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে তিনি আযান দেন এবং আবু বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি লোকদের সালাত পড়ান। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ কিছুটা সুস্থতাবোধ করে বলেন, দেখতো! আমার ভর নেয়ার মতো কোন লোক পাওয়া যায় কি না? তখন বর্ণনাকারী ও অপর এক লোক এলে তিনি তাঁদের উপর ভর করেন (এবং মসজিদে যান)। তাঁকে দেখে আবু বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসতে উদ্যোগী হলে তিনি তাঁকে স্বস্থানে স্থির থাকতে ইশারা করেন। এ অবস্থায় আবু বকর (রাঃ) সালাত আদায় করান। অতঃপর সোমবার রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তেকাল করলে উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনব যে, ‘‘রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তেকাল করেছেন’’ আমি আমার তরবারি দিয়ে তাকে আঘাত করব। আর লোকদের এ ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। কারণ, তাঁরা ইতোপূর্বে কোন নবীর মৃৃৃৃৃৃত্যু দেখেনি। তাই তাঁরা নীরব থাকেন।
কতিপয় সাহাবী বলেন, হে সালেম, তুমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথীকে ডেকে আন। অতএব আমি আবু বকর (রাঃ) এর নিকট এলাম। তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। আমি দিশেহারা হয়ে কান্নারত অবস্থায় আবু বকর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে দেখেই বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কি ইন্তেকাল করেছেন? আমি বললাম উমর (রাঃ) বলেছেন, যাকে এ কথা বলতে শুনব যে, ‘‘রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তেকাল করেছেন’’ আমি আমার এ তরবারী দ্বারা তাকে আঘাত করব। আবু বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, চলো। অতএব আমি তাঁর সাথে চললাম এবং তিনিও আসলেন। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখার জন্য লোকজন এসে সমবেত হয়েছে। তিনি বলেন, হে লোক সকল, আমার জন্য রাস্তা করে দাও। তিনি এসে তাঁর প্রতি ঝুঁকে পড়েন এবং কপালে চুম্বন করে এ আয়াত পড়েন,
﴿اِنَّكَ مَيِّتٌ وَاِنَّهُمْ مَيِّتُوْنَ﴾
অর্থাৎ নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তাঁরাও (আপনার শত্রুরা) মরণশীল। [সূরা যুমার- ৩০।]
অতঃপর লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে রাসূলের সাহাবী! রাসূলুল্লাহ ﷺ কি ইন্তেকাল করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সবাই বিশ্বাস করলেন, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। তারা আবার জিজ্ঞেস করেন, হে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথী! আমরা কি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জানাযা পড়ব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা জিজ্ঞেস করেন, তা কী নিয়মে? তিনি বললেন, একদল লোক প্রবেশ করবে, তারা তাকবীর বলবে, দু‘আ করবে এবং দরূদ পাঠ করবে। তারা বের হয়ে এলে আরেক দল প্রবেশ করে একই নিয়েম তাকবীর, দু‘আ ও দরূদ পড়ে বের হয়ে আসবে। এ নিয়মে জামা‘আত ছাড়া সকলে আলাদা আলাদা জানাযার সালাত আদায় করবে। তারা আবার জিজ্ঞেস করেন, হে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গী! রাসূলুল্লাহ ﷺ কে কি দাফন করা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা জিজ্ঞেস করেন, কোথায়? তিনি বললেন, যে স্থানে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে সেখানেই। আল্লাহ তার পছন্দের স্থানেই তাঁর জান কবয করেছেন। তখন সকলের বিশ্বাস হলো, তিনি সত্য কথাই বলেছেন। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে গোসল দেয়ার জন্য তাঁর পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনকে আদেশ করেন।
অতঃপর মুহাজিররা (খেলাফত প্রশ্নে) পরামর্শের জন্য মিলিত হন। মুহাজিররা আবু বকর (রাঃ)-কে বললেন, আমাদেরকে নিয়ে আনসার ভাইদের কাছে চলুন এবং এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের সাথে তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করব। আনসারগণ বললেন, আমাদের মধ্য হতে একজন আমীর এবং আপনাদের (মুহাজিরদের) মধ্য থেকে একজন আমীর হোক। তখন উমর (রাঃ) বললেন, এমন কে আছে, যে এই ঘটনার তৃতীয়জন (যে ঘটনাটির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন)-
﴿ثَانِيَ اثْنَيْنِ اِذْ هُمَا فِي الْغَارِ اِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحْزَنْ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَا﴾
‘‘দু’জনের একজন যখন তারা ছিল গুহার মধ্যে, যখন সে তার সাথিকে বলল, বিচলিত হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’’ [সূরা তাওবা- ৪০।]
কারা ছিলেন সে দু’জন? বর্ণনাকারী বলেন, তারপর উমর (রাঃ) তাঁর হাত প্রসারিত করে দিয়ে আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তারপর লোকেরাও তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭০৮১; সুনানুল কুবরা লিত তাবারানী, হা/৬২৪৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুতে ফাতিমা (রাঃ) এর ক্রন্দন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : لَمَّا وَجَدَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ كُرَبِ الْمَوْتِ مَا وَجَدَ ، قَالَتْ فَاطِمَةُ : وَاكَرْبَاهٗ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : لَا كَرْبَ عَلَى اَبِيْكِ بَعْدَ الْيَوْمِ ، اِنَّهٗ قَدْ حَضَرَ مِنْ اَبِيْكِ مَا لَيْسَ بِتَارِكٍ مِنْهُ اَحَدًا الْمُوَافَاةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
৩০৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মৃত্যুর কষ্ট ভোগ করছিলেন, তখন ফাতেমা (রাঃ) বললেন, হায়! আমার আববার কতই না কষ্ট হচ্ছে! রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আজকের পর তোমার পিতার আর কোন কষ্ট থাকবে না। তোমার পিতার নিকট মৃত্যু নামক এমন এক বিষয় উপস্থিত হয়েছে, যা থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ রেহাই পাবে না। [ইবনে মাজাহ, হা/১৬২৯।]
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي مِيرَاثِ رَسُوْلِ اللهِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যুর সময় সবকিছু সাদাকা করে যান :
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ ، اَخِي جُوَيْرِيَةَ لَهٗ صُحْبَةٌ قَالَ : مَا تَرَكَ رَسُوْلُ اللهِ اِلَّا سِلَاحَهٗ وَبَغْلَتَهٗ وَاَرْضًا جَعَلَهَا صَدَقَةً
৩০৬. আমর ইবনে হারিস, যিনি উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়া (রাঃ) এর ভাই এবং একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তিকালের সময় হাতিয়ার, একটি খচ্চর এবং কিছু জমি ছাড়া আর কিছু রেখে যাননি। সেগুলোও সাদাকা করে যান। [সহীহ বুখারী, হা/২৯১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪৮১; সুনানে দার কুতনী, হা/৪৩৯৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২২৪১।]
ব্যাখ্যা : এখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাদা খচ্চরটি বুঝানো হচ্ছে। যাতে তিনি সওয়ার হতেন। এটার নাম ছিল ‘দুলদুল’।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন ওয়ারিস রেখে যাননি :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : جَاءَتْ فَاطِمَةُ اِلٰى اَبِي بَكْرٍ فَقَالَتْ : مَنْ يَرِثُكَ ؟ فَقَالَ : اَهْلِيْ وَوَلَدِيْ ، فَقَالَتْ : مَا لِيْ لَا اَرِثُ اَبِيْ ؟ فَقَالَ اَبُو بَكْرٍ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا نُوْرَثُ ، وَلٰكِنِّيْ اَعُوْلُ مَنْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَعُوْلُهٗ ، وَأُنْفِقُ عَلٰى مَنْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُنْفِقُ عَلَيْهِ
৩০৭. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ফাতিমা (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন, আপনার (ত্যাজ্য সম্পত্তির) ওয়ারিস কে হবে? তিনি বললেন, আমার পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততি। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, তবে আমি কেন আমার পিতার ওয়ারিস হব না? আবু বকর (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, আমরা কাউকে ওয়ারিস করি না। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ যাদের ভরণ-পোষণ করতেন, আমি তা বহাল রাখব এবং যাদের জন্য খরচ করে গিয়েছেন, আমিও তাদের জন্য খরচ করব। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩১১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০; শারহুল মা‘আনী, হা/৫৪৩৭।]
عَنْ اَبِي الْبَخْتَرِيِّ ، اَنَّ الْعَبَّاسَ ، وَعَلِيًّا ، جَاءَا اِلَى عُمَرَ يَخْتَصِمَانِ يَقُوْلُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا لِصَاحِبِهٖ : اَنْتَ كَذَا ، اَنْتَ كَذَا ، فَقَالَ عُمَرُ ، لِطَلْحَةَ ، وَالزُّبَيْرِ ، وَعَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ عَوْفٍ ، وَسَعْدٍ : اَنْشُدُكُمْ بِاللهِ اَسَمِعْتُمْ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : كُلُّ مَالِ نَبِيٍّ صَدَقَةٌ ، اِلَّا مَا اَطْعَمَهٗ ، اِنَّا لَا نُوْرَثُ ؟ وَفِي الْحَدِيْثِ قِصَّةٌ
৩০৮. আবুল বুখতারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে আববাস ও আলী (রাঃ) একে অপরের বিরূদ্ধে তাঁর কাছে অভিযোগ করেন। একে অপরকে বলতে থাকেন, (তুমি এরূপ, তুমি এরূপ) তুমি এ করেছ, তুমি এ করেছ। উমর (রাঃ) তালহা, যুবায়ের, আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও সা‘দ (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি, তোমরা কি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুননি যে, নবীদের সকল সম্পদ সাদাকা হয়? অবশ্য যা পরিবারের আহার বাবদ খরচ হবে, তা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ উক্তি, ‘‘আমরা কাউকে উত্তরাধিকারী করি না।’’ এ হাদীসে একটি দীর্ঘ ঘটনা আছে। [আবু দাউদ, হা/২৯৭৭; মুসনাদুল তায়ালুসী, হা/৬১।]
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا نُوْرَثُ مَا تَرَكْنَا فَهُوَ صَدَقَةٌ
৩০৯. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমরা নবীরা কাউকে ওয়ারিস করি না। আমাদের পরিত্যক্ত সকল সস্পদ সাদাকারূপে গণ্য। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৭৮; আবু দাউদ, হা/২৯৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১৬৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৩৫৩; জামেউস সগীর, হা/১৩৫১৭।]
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَا يَقْسِمُ وَرَثَتِيْ دِيْنَارًا وَلَا دِرْهَمًا ، مَا تَرَكْتُ بَعْدَ نَفَقَةِ نِسَائِي وَمُؤْنَةِ عَامِلِيْ فَهُوَ صَدَقَةٌ
৩১০. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমার উত্তরাধিকারী যেন আমার পরিত্যক্ত দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) বণ্টন না করে। আমার পরিবার-পরিজন ও আমার কর্মচারীর খরচ দেয়ার পর যা কিছু থাকবে, তা সাদাকা। [মুয়াত্তা মালেক, হা/১৮০৩; সহীহ বুখারী, হা/২৭৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৮২; আবু দাউদ, হা/২৯৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩০১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩১১৭।]
عَنْ مَالِكِ بْنِ اَوْسِ بْنِ الْحَدَثَانِ قَالَ : دَخَلْتُ عَلٰى عُمَرَ فَدَخَلَ عَلَيْهِ عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ عَوْفٍ ، وَطَلْحَةُ ، وَسَعْدٌ ، وَجَاءَ عَلِيٌّ ، وَالْعَبَّاسُ ، يَخْتَصِمَانِ ، فَقَالَ لَهُمْ عُمَرُ : اَنْشُدُكُمْ بِالَّذِيْ بِاِذْنِهٖ تَقُوْمُ السَّمَاءُ وَالْاَرْضُ ، اَتَعْلَمُوْنَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا نُوْرَثُ ، مَا تَرَكْنَاهٗ صَدَقَةٌ فَقَالُوْا : اَللّٰهُمَّ نَعَمْ وَفِي الْحَدِيْثِ قِصَّةٌ طَوِيْلَةٌ
৩১১. মালিক ইবনে আওস ইবনে হাদাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন আবদুর রহমান ইবনে আউফ, তালহা এবং সা‘দ (রাঃ) তাঁর নিকট উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পর আলী ও আববাস (রাঃ) বাদানুবাদ করতে করতে উপস্থিত হন। উমর (রাঃ) তাঁদের বলেন, আমি আপনাদেরকে সে সত্ত্বার কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, যাঁর ইচ্ছায় আসমান-জমিন কায়েম আছে, আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমরা নবীদের কোন ওয়ারিস নেই। আমরা যা কিছু রেখে যাই, তা সাদাকা। তাঁরা সকলে বললেন, হ্যাঁ- নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কথা বলেছেন। এ হাদীসে একটি দীর্ঘ ঘটনা রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২; বায়হাকী, হা/১৩১৪৭।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا تَرَكَ رَسُوْلُ اللهِ دِيْنَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَلَا شَاةً وَلَا بَعِيْرًا قَالَ : وَاَشُكُّ فِي الْعَبْدِ وَالْاَمَةِ
৩১২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দিনার, দিরহাম, বকরী ও উট কিছুই রেখে যাননি। বর্ণনাকারী বলেন, আয়েশা (রাঃ) দাস-দাসীর কথা উল্লেখ করেছেন কি না তা আমার মনে পড়ছে না। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৬১; সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১৬; আবু দাউদ, হা/২৮৬৫; সুনানে নাসাঈ, হা/৩৬২১; ইবনে মাজাহ, হা/২৬৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৫৭৯; বায়হাকী, হা/১২৩৩৩।]
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي رُؤْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ فِي الْمَنَامِ
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ ، اَخِي جُوَيْرِيَةَ لَهٗ صُحْبَةٌ قَالَ : مَا تَرَكَ رَسُوْلُ اللهِ اِلَّا سِلَاحَهٗ وَبَغْلَتَهٗ وَاَرْضًا جَعَلَهَا صَدَقَةً
৩০৬. আমর ইবনে হারিস, যিনি উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়া (রাঃ) এর ভাই এবং একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তিকালের সময় হাতিয়ার, একটি খচ্চর এবং কিছু জমি ছাড়া আর কিছু রেখে যাননি। সেগুলোও সাদাকা করে যান। [সহীহ বুখারী, হা/২৯১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪৮১; সুনানে দার কুতনী, হা/৪৩৯৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১২২৪১।]
ব্যাখ্যা : এখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাদা খচ্চরটি বুঝানো হচ্ছে। যাতে তিনি সওয়ার হতেন। এটার নাম ছিল ‘দুলদুল’।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন ওয়ারিস রেখে যাননি :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : جَاءَتْ فَاطِمَةُ اِلٰى اَبِي بَكْرٍ فَقَالَتْ : مَنْ يَرِثُكَ ؟ فَقَالَ : اَهْلِيْ وَوَلَدِيْ ، فَقَالَتْ : مَا لِيْ لَا اَرِثُ اَبِيْ ؟ فَقَالَ اَبُو بَكْرٍ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا نُوْرَثُ ، وَلٰكِنِّيْ اَعُوْلُ مَنْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَعُوْلُهٗ ، وَأُنْفِقُ عَلٰى مَنْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُنْفِقُ عَلَيْهِ
৩০৭. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ফাতিমা (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন, আপনার (ত্যাজ্য সম্পত্তির) ওয়ারিস কে হবে? তিনি বললেন, আমার পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততি। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, তবে আমি কেন আমার পিতার ওয়ারিস হব না? আবু বকর (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, আমরা কাউকে ওয়ারিস করি না। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ যাদের ভরণ-পোষণ করতেন, আমি তা বহাল রাখব এবং যাদের জন্য খরচ করে গিয়েছেন, আমিও তাদের জন্য খরচ করব। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩১১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০; শারহুল মা‘আনী, হা/৫৪৩৭।]
عَنْ اَبِي الْبَخْتَرِيِّ ، اَنَّ الْعَبَّاسَ ، وَعَلِيًّا ، جَاءَا اِلَى عُمَرَ يَخْتَصِمَانِ يَقُوْلُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا لِصَاحِبِهٖ : اَنْتَ كَذَا ، اَنْتَ كَذَا ، فَقَالَ عُمَرُ ، لِطَلْحَةَ ، وَالزُّبَيْرِ ، وَعَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ عَوْفٍ ، وَسَعْدٍ : اَنْشُدُكُمْ بِاللهِ اَسَمِعْتُمْ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : كُلُّ مَالِ نَبِيٍّ صَدَقَةٌ ، اِلَّا مَا اَطْعَمَهٗ ، اِنَّا لَا نُوْرَثُ ؟ وَفِي الْحَدِيْثِ قِصَّةٌ
৩০৮. আবুল বুখতারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে আববাস ও আলী (রাঃ) একে অপরের বিরূদ্ধে তাঁর কাছে অভিযোগ করেন। একে অপরকে বলতে থাকেন, (তুমি এরূপ, তুমি এরূপ) তুমি এ করেছ, তুমি এ করেছ। উমর (রাঃ) তালহা, যুবায়ের, আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও সা‘দ (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহর কসম দিয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি, তোমরা কি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুননি যে, নবীদের সকল সম্পদ সাদাকা হয়? অবশ্য যা পরিবারের আহার বাবদ খরচ হবে, তা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ উক্তি, ‘‘আমরা কাউকে উত্তরাধিকারী করি না।’’ এ হাদীসে একটি দীর্ঘ ঘটনা আছে। [আবু দাউদ, হা/২৯৭৭; মুসনাদুল তায়ালুসী, হা/৬১।]
عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا نُوْرَثُ مَا تَرَكْنَا فَهُوَ صَدَقَةٌ
৩০৯. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমরা নবীরা কাউকে ওয়ারিস করি না। আমাদের পরিত্যক্ত সকল সস্পদ সাদাকারূপে গণ্য। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৭৮; আবু দাউদ, হা/২৯৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১৬৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৩৫৩; জামেউস সগীর, হা/১৩৫১৭।]
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَا يَقْسِمُ وَرَثَتِيْ دِيْنَارًا وَلَا دِرْهَمًا ، مَا تَرَكْتُ بَعْدَ نَفَقَةِ نِسَائِي وَمُؤْنَةِ عَامِلِيْ فَهُوَ صَدَقَةٌ
৩১০. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমার উত্তরাধিকারী যেন আমার পরিত্যক্ত দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) বণ্টন না করে। আমার পরিবার-পরিজন ও আমার কর্মচারীর খরচ দেয়ার পর যা কিছু থাকবে, তা সাদাকা। [মুয়াত্তা মালেক, হা/১৮০৩; সহীহ বুখারী, হা/২৭৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৮২; আবু দাউদ, হা/২৯৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩০১; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩১১৭।]
عَنْ مَالِكِ بْنِ اَوْسِ بْنِ الْحَدَثَانِ قَالَ : دَخَلْتُ عَلٰى عُمَرَ فَدَخَلَ عَلَيْهِ عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ عَوْفٍ ، وَطَلْحَةُ ، وَسَعْدٌ ، وَجَاءَ عَلِيٌّ ، وَالْعَبَّاسُ ، يَخْتَصِمَانِ ، فَقَالَ لَهُمْ عُمَرُ : اَنْشُدُكُمْ بِالَّذِيْ بِاِذْنِهٖ تَقُوْمُ السَّمَاءُ وَالْاَرْضُ ، اَتَعْلَمُوْنَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : لَا نُوْرَثُ ، مَا تَرَكْنَاهٗ صَدَقَةٌ فَقَالُوْا : اَللّٰهُمَّ نَعَمْ وَفِي الْحَدِيْثِ قِصَّةٌ طَوِيْلَةٌ
৩১১. মালিক ইবনে আওস ইবনে হাদাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন আবদুর রহমান ইবনে আউফ, তালহা এবং সা‘দ (রাঃ) তাঁর নিকট উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পর আলী ও আববাস (রাঃ) বাদানুবাদ করতে করতে উপস্থিত হন। উমর (রাঃ) তাঁদের বলেন, আমি আপনাদেরকে সে সত্ত্বার কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, যাঁর ইচ্ছায় আসমান-জমিন কায়েম আছে, আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমরা নবীদের কোন ওয়ারিস নেই। আমরা যা কিছু রেখে যাই, তা সাদাকা। তাঁরা সকলে বললেন, হ্যাঁ- নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কথা বলেছেন। এ হাদীসে একটি দীর্ঘ ঘটনা রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২; বায়হাকী, হা/১৩১৪৭।]
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا تَرَكَ رَسُوْلُ اللهِ دِيْنَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَلَا شَاةً وَلَا بَعِيْرًا قَالَ : وَاَشُكُّ فِي الْعَبْدِ وَالْاَمَةِ
৩১২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দিনার, দিরহাম, বকরী ও উট কিছুই রেখে যাননি। বর্ণনাকারী বলেন, আয়েশা (রাঃ) দাস-দাসীর কথা উল্লেখ করেছেন কি না তা আমার মনে পড়ছে না। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৬১; সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১৬; আবু দাউদ, হা/২৮৬৫; সুনানে নাসাঈ, হা/৩৬২১; ইবনে মাজাহ, হা/২৬৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৫৭৯; বায়হাকী, হা/১২৩৩৩।]
- بَابُ : مَا جَاءَ فِي رُؤْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ فِي الْمَنَامِ
স্বপ্ন এমন কিছু কল্পনা, যা আল্লাহ তা‘আলা ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের অন্তরে সৃষ্টি করে দেন। অথবা ফেরেশতার মাধ্যমে কল্পনার উদ্রেক করান। আবার কখনো শয়তানের মাধ্যমে কল্পনার উদ্রেক হয় তাকে স্বপ্ন বলে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, স্বপ্ন তিন প্রকার- ১. ভালো স্বপ্ন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে শুভ সংবাদ। ২. ভীতিকর স্বপ্ন যা শয়তানের প্রভাবে মানুষ দেখে। ৩. ঐ সমস্ত ধারণা, যা মানুষ জাগ্রত অবস্থায় করে থাকে ঘুমের ঘোরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
যে নবী ﷺ কে স্বপ্নে দেখল যে বাস্তবেই নবীকে দেখল :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ رَاٰنِيْ فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَاٰنِيْ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَمَثَّلُ بِيْ
৩১৩. আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকেই দেখল। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৫৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪১৯৩; দারেমী, হা/২১৮৫; জামেউস সগীর, হা/১১২০২।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ জাগ্রত অবস্থায় যেমন শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত, তেমনিভাবে ঘুমন্ত অবস্থাতেও তিনি শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত। এমনকি তাঁর সুরতও শয়তানের প্রভাব থেকে সংরক্ষিত।
শয়তান রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রূপ ধারণ করতে পারে না :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ رَاٰنِيْ فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَاٰنِيْ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَصَوَّرُ اَوْ قَالَ : لَا يَتَشَبَّهٗ بِيْ
৩১৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকেই দেখল। কারণ, শয়তান আমার স্বরূপ ধারণ করতে পারে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩০৫।]
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ رَاٰنِيْ فِيْ الْمَنَامِ فَقَدْ رَاِٰنِيْ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَمَثَّلُنِيْ قَالَ اَبِيْ : فَحَدَّثْتُ بِهِ ابْنَ عَبَّاسٍ ، فَقُلْتُ : قَدْ رَاَيْتُهٗ ، فَذَكَرْتُ الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ فَقُلْتُ : شَبَّهْتُهٗ بِهٖ ، فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : اِنَّهٗ كَانَ يُشْبِهُهٗ
৩১৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকেই দেখল। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।
(আসিম বর্ণনা করেন) আমার পিতা কুলায়ব বলেন, আমি এ হাদীস ইবনে আববাস (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলাম এবং বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে স্বপ্নে দেখেছি। তখন হাসান ইবনে আলী (রাঃ) এর কথা আমার স্মরণ হলে আমি বললাম, স্বপ্নের আকৃতিকে হাসানের আকৃতির সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ পেলাম। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাদৃশই ছিলেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৪৮৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮১৮৬; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/২৬১।]
عَنْ يَزِيْدَ الْفَارِسِيِّ - وَكَانَ يَكْتُبُ الْمَصَاحِفَ - قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ فِي الْمَنَامِ زَمَنَ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : فَقُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ : اِنِّي رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ فِي النَّوْمِ ، فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يَقُوْلُ : اِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَسْتَطِيْعُ اَنْ يَّتَشَبَّهَ بِيْ ، فَمَنْ رَاٰنِيْ فِي النَّوْمِ فَقَدْ رَاٰنِيْ ، هَلْ تَسْتَطِيْعُ اَنْ تَنْعَتَ هٰذَا الرَّجُلَ الَّذِيْ رَاَيْتَهٗ فِي النَّوْمِ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، اَنْعَتُ لَكَ رَجُلًا بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ ، جِسْمُهٗ وَلَحْمُهٗ اَسْمَرُ اِلَى الْبَيَاضِ ، اَكْحَلُ الْعَيْنَيْنِ ، حَسَنُ الضَّحِكِ ، جَمِيْلُ دَوَائِرِ الْوَجْهِ ، مَلَاَتْ لِحْيَتُهٗ مَا بَيْنَ هٰذِهٖ اِلٰى هٰذِهٖ ، قَدْ مَلَاَتْ نَحْرَهٗ - قَالَ عَوْفٌ : وَلَا اَدْرِيْ مَا كَانَ مَعَ هٰذَا النَّعْتِ - فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : لَوْ رَاَيْتَهٗ فِي الْيَقَظَةِ مَا اسْتَطَعْتَ اَنْ تَنْعَتَهٗ فَوْقَ هٰذَا
৩১৬. ইয়াযীদ আল ফারিসী থেকে বর্ণিত। ইয়াযীদ, যিনি কুরআন লিখতেন। তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ কে স্বপ্নে দেখলাম। ইবনে আববাস (রাঃ) তখনও জীবিত ছিলেন। আমি ইবনে আববাস (রাঃ)-কে বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে স্বপ্নে দেখেছি। ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম নয়। যে আমাকে স্বপ্নে দেখে, সে প্রকৃতপক্ষে আমাকেই দেখে। [ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন], তুমি যাকে স্বপ্নে দেখেছ তাঁর কিছু বিবরণ দিতে পার? আমি বললাম, হ্যাঁ। তাঁর দেহাকৃতি মধ্যম আকারের, গায়ের রং গৌর, তাতে সাদা অংশ বেশি। সুরমা মাখা চোখ, প্রফুল্ল মুখ, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, মুখভর্তি দাড়ি যা বুক পর্যন্ত পরিপূর্ণ ছিল। ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, তুমি যদি জাগ্রত অবস্থায় তাঁকে দেখতে, তাহলেও এর চেয়ে বেশি বলতে সক্ষম হতে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪১০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩২৪৬৯।]
قَالَ اَبُو قَتَادَةَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ رَاٰنِي - يَعْنِي فِي النَّوْمِ - فَقَدْ رَاَى الْحَقَّ
৩১৭. আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে আমাকে দেখল, সে সত্যকেই দেখল। অর্থাৎ সে আমাকেই দেখল। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬০৫১; দারেমী, হা/২১৪০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩২৮৭; জামেউস সগীর, হা/১১১৯৮।]
মুমিনের সত্য স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৬ ভাগের ১ ভাগ :
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَنْ رَاٰنِيْ فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَاٰنِيْ ، فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَخَيَّلُ بِيْ وَقَالَ : وَرُؤْيَا الْمُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَاَرْبَعِيْنَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ
৩১৮. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি ঘুমের অবস্থায় আমাকে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, মুমিনের সত্য স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৬ ভাগের ১ ভাগ। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭১৩; সহীহ বুখারী, হা/৬৯৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৪৬; আবু দাউদ, হা/৫০২০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৭৪; জামেউস সগীর, হা/৫৮৩৯।]
ব্যাখ্যা : এখানে স্বপ্ন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নেক্কার মুমিন-মুমিনার স্বপ্ন। সুতরাং কাফির ও ফাসিকের স্বপ্ন নবুওয়াতের অংশ নয়। নবুওয়াতের অংশ বলতে ইলমে নবুওয়াতের অংশ বুঝানো হয়েছে।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ قَالَ : سَمِعْتُ اَبِي يَقُوْلُ : قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ الْمُبَارَكِ : اِذَا ابْتُلِيْتَ بِالْقَضَاءِ فَعَلَيْكَ بِالْاَثَرِ
৩১৯. মুহাম্মাদ ইবনে আলী বলেন, আমি আমার আববাকে বলতে শুনেছি, তোমাকে যখন বিচারকের পদে অভিষিক্ত করা হয়, তখন রিওয়ায়াতের অনুসরণ করার চেষ্টা করো। [আল মাজালিসাতু ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম, হা/৩২৬।]
ব্যাখ্যা : যেকোন বিষয়ের সমাধানের জন্য যথাসম্ভব কুরআন হাদীস থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনদের বাণী ও জীবনাদর্শ থেকে সমাধা খুঁজতে হবে এবং তার অনুসরণ করতে হবে।
عَنِ ابْنِ سِيرِيْنَ قَالَ : هٰذَا الْحَدِيْثُ دِيْنٌ ، فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَاْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ
৩২০. ইবনে সীরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাদীস শিক্ষা করা দীনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব তা শিক্ষার আগে একটি বিচার্য বিষয় হলো, তুমি দেখে নাও যে, কার কাছ থেকে এ দীন শিক্ষা করছ। [সহীহ মুসলিম, হা/২৬; দারেমী, হা/৪২৪।]
ব্যাখ্যা : দ্বীনের কোন কিছু গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কার থেকে এই দীনী বিষয় গ্রহণ করা হচ্ছে। ফাসেক ফুজ্জার বা বিদআতীর কাছ থেকে দ্বীনের নামে বদ দ্বীনী যেন গ্রহণ করা না হয়।
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বিখ্যাত দু’জন মুহাদ্দিসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তির দ্বারা কিতাব সমাপ্ত করেছেন।
প্রথম উক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) এর। ইবনুল মুবারাক বলেন, বিচার ও ফায়সালার ক্ষেত্রে নিজের রায় ও মতের উপর নির্ভর করবে না; হাদীস, সাহাবী বরং তাবিয়ীদের উক্তির অনুসরণ করবে। এটি একটি সাধারণ উপদেশ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আবার স্বপ্নের অনুচ্ছেদের সাথেও একে সম্পৃক্ততাও করা যেতে পারে। অর্থাৎ স্বপ্নের ব্যাখ্যাও এক ধরনের বিচার। তাই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যা মন চায়, তা বলে দেয়া ঠিক হবে না; বরং পূর্বসূরীদের ব্যাখ্যার আলোকে ব্যাখ্যা করা উচিত।
মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহঃ) ছিলেন একজন বিখ্যাত তাবিয়ী এবং তা‘বীর শাস্ত্র তথা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ। তার এ উক্তির উদ্দেশ্য হলো, ইলমে হাদীস দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। আর দ্বীন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা এর উপর মানুষের নীতি-আদর্শ নির্ভর করে। কারো দীন সঠিক না হলে তার পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতএব, দীন গ্রহণ করার পূর্বে লক্ষ্য করতে হবে, যার নিকট থেকে দীন গ্রহণ করা হচ্ছে, তিনি মুত্তাকী এবং হক্বপন্থী কি না? যে কারো থেকে দীন গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ উস্তাদের আক্বীদা, আমল ও আখলাকের প্রভাব ছাত্রের উপর পড়াটা স্বাভাবিক।
যে নবী ﷺ কে স্বপ্নে দেখল যে বাস্তবেই নবীকে দেখল :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ رَاٰنِيْ فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَاٰنِيْ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَمَثَّلُ بِيْ
৩১৩. আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকেই দেখল। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৫৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪১৯৩; দারেমী, হা/২১৮৫; জামেউস সগীর, হা/১১২০২।]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ জাগ্রত অবস্থায় যেমন শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত, তেমনিভাবে ঘুমন্ত অবস্থাতেও তিনি শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত। এমনকি তাঁর সুরতও শয়তানের প্রভাব থেকে সংরক্ষিত।
শয়তান রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রূপ ধারণ করতে পারে না :
عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ رَاٰنِيْ فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَاٰنِيْ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَصَوَّرُ اَوْ قَالَ : لَا يَتَشَبَّهٗ بِيْ
৩১৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকেই দেখল। কারণ, শয়তান আমার স্বরূপ ধারণ করতে পারে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩০৫।]
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ رَاٰنِيْ فِيْ الْمَنَامِ فَقَدْ رَاِٰنِيْ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَمَثَّلُنِيْ قَالَ اَبِيْ : فَحَدَّثْتُ بِهِ ابْنَ عَبَّاسٍ ، فَقُلْتُ : قَدْ رَاَيْتُهٗ ، فَذَكَرْتُ الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ فَقُلْتُ : شَبَّهْتُهٗ بِهٖ ، فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : اِنَّهٗ كَانَ يُشْبِهُهٗ
৩১৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকেই দেখল। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।
(আসিম বর্ণনা করেন) আমার পিতা কুলায়ব বলেন, আমি এ হাদীস ইবনে আববাস (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলাম এবং বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে স্বপ্নে দেখেছি। তখন হাসান ইবনে আলী (রাঃ) এর কথা আমার স্মরণ হলে আমি বললাম, স্বপ্নের আকৃতিকে হাসানের আকৃতির সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ পেলাম। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাদৃশই ছিলেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৪৮৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮১৮৬; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/২৬১।]
عَنْ يَزِيْدَ الْفَارِسِيِّ - وَكَانَ يَكْتُبُ الْمَصَاحِفَ - قَالَ : رَاَيْتُ النَّبِيَّ فِي الْمَنَامِ زَمَنَ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : فَقُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ : اِنِّي رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ فِي النَّوْمِ ، فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يَقُوْلُ : اِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَسْتَطِيْعُ اَنْ يَّتَشَبَّهَ بِيْ ، فَمَنْ رَاٰنِيْ فِي النَّوْمِ فَقَدْ رَاٰنِيْ ، هَلْ تَسْتَطِيْعُ اَنْ تَنْعَتَ هٰذَا الرَّجُلَ الَّذِيْ رَاَيْتَهٗ فِي النَّوْمِ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، اَنْعَتُ لَكَ رَجُلًا بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ ، جِسْمُهٗ وَلَحْمُهٗ اَسْمَرُ اِلَى الْبَيَاضِ ، اَكْحَلُ الْعَيْنَيْنِ ، حَسَنُ الضَّحِكِ ، جَمِيْلُ دَوَائِرِ الْوَجْهِ ، مَلَاَتْ لِحْيَتُهٗ مَا بَيْنَ هٰذِهٖ اِلٰى هٰذِهٖ ، قَدْ مَلَاَتْ نَحْرَهٗ - قَالَ عَوْفٌ : وَلَا اَدْرِيْ مَا كَانَ مَعَ هٰذَا النَّعْتِ - فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : لَوْ رَاَيْتَهٗ فِي الْيَقَظَةِ مَا اسْتَطَعْتَ اَنْ تَنْعَتَهٗ فَوْقَ هٰذَا
৩১৬. ইয়াযীদ আল ফারিসী থেকে বর্ণিত। ইয়াযীদ, যিনি কুরআন লিখতেন। তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ কে স্বপ্নে দেখলাম। ইবনে আববাস (রাঃ) তখনও জীবিত ছিলেন। আমি ইবনে আববাস (রাঃ)-কে বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে স্বপ্নে দেখেছি। ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম নয়। যে আমাকে স্বপ্নে দেখে, সে প্রকৃতপক্ষে আমাকেই দেখে। [ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন], তুমি যাকে স্বপ্নে দেখেছ তাঁর কিছু বিবরণ দিতে পার? আমি বললাম, হ্যাঁ। তাঁর দেহাকৃতি মধ্যম আকারের, গায়ের রং গৌর, তাতে সাদা অংশ বেশি। সুরমা মাখা চোখ, প্রফুল্ল মুখ, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, মুখভর্তি দাড়ি যা বুক পর্যন্ত পরিপূর্ণ ছিল। ইবনে আববাস (রাঃ) বললেন, তুমি যদি জাগ্রত অবস্থায় তাঁকে দেখতে, তাহলেও এর চেয়ে বেশি বলতে সক্ষম হতে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪১০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৩২৪৬৯।]
قَالَ اَبُو قَتَادَةَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ رَاٰنِي - يَعْنِي فِي النَّوْمِ - فَقَدْ رَاَى الْحَقَّ
৩১৭. আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে আমাকে দেখল, সে সত্যকেই দেখল। অর্থাৎ সে আমাকেই দেখল। [সহীহ বুখারী, হা/৬৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬০৫১; দারেমী, হা/২১৪০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩২৮৭; জামেউস সগীর, হা/১১১৯৮।]
মুমিনের সত্য স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৬ ভাগের ১ ভাগ :
عَنْ اَنَسٍ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَنْ رَاٰنِيْ فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَاٰنِيْ ، فَاِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَخَيَّلُ بِيْ وَقَالَ : وَرُؤْيَا الْمُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَاَرْبَعِيْنَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ
৩১৮. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি ঘুমের অবস্থায় আমাকে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, মুমিনের সত্য স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৬ ভাগের ১ ভাগ। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭১৩; সহীহ বুখারী, হা/৬৯৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৪৬; আবু দাউদ, হা/৫০২০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৭৪; জামেউস সগীর, হা/৫৮৩৯।]
ব্যাখ্যা : এখানে স্বপ্ন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নেক্কার মুমিন-মুমিনার স্বপ্ন। সুতরাং কাফির ও ফাসিকের স্বপ্ন নবুওয়াতের অংশ নয়। নবুওয়াতের অংশ বলতে ইলমে নবুওয়াতের অংশ বুঝানো হয়েছে।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ قَالَ : سَمِعْتُ اَبِي يَقُوْلُ : قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ الْمُبَارَكِ : اِذَا ابْتُلِيْتَ بِالْقَضَاءِ فَعَلَيْكَ بِالْاَثَرِ
৩১৯. মুহাম্মাদ ইবনে আলী বলেন, আমি আমার আববাকে বলতে শুনেছি, তোমাকে যখন বিচারকের পদে অভিষিক্ত করা হয়, তখন রিওয়ায়াতের অনুসরণ করার চেষ্টা করো। [আল মাজালিসাতু ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম, হা/৩২৬।]
ব্যাখ্যা : যেকোন বিষয়ের সমাধানের জন্য যথাসম্ভব কুরআন হাদীস থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনদের বাণী ও জীবনাদর্শ থেকে সমাধা খুঁজতে হবে এবং তার অনুসরণ করতে হবে।
عَنِ ابْنِ سِيرِيْنَ قَالَ : هٰذَا الْحَدِيْثُ دِيْنٌ ، فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَاْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ
৩২০. ইবনে সীরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাদীস শিক্ষা করা দীনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব তা শিক্ষার আগে একটি বিচার্য বিষয় হলো, তুমি দেখে নাও যে, কার কাছ থেকে এ দীন শিক্ষা করছ। [সহীহ মুসলিম, হা/২৬; দারেমী, হা/৪২৪।]
ব্যাখ্যা : দ্বীনের কোন কিছু গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কার থেকে এই দীনী বিষয় গ্রহণ করা হচ্ছে। ফাসেক ফুজ্জার বা বিদআতীর কাছ থেকে দ্বীনের নামে বদ দ্বীনী যেন গ্রহণ করা না হয়।
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বিখ্যাত দু’জন মুহাদ্দিসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তির দ্বারা কিতাব সমাপ্ত করেছেন।
প্রথম উক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) এর। ইবনুল মুবারাক বলেন, বিচার ও ফায়সালার ক্ষেত্রে নিজের রায় ও মতের উপর নির্ভর করবে না; হাদীস, সাহাবী বরং তাবিয়ীদের উক্তির অনুসরণ করবে। এটি একটি সাধারণ উপদেশ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আবার স্বপ্নের অনুচ্ছেদের সাথেও একে সম্পৃক্ততাও করা যেতে পারে। অর্থাৎ স্বপ্নের ব্যাখ্যাও এক ধরনের বিচার। তাই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যা মন চায়, তা বলে দেয়া ঠিক হবে না; বরং পূর্বসূরীদের ব্যাখ্যার আলোকে ব্যাখ্যা করা উচিত।
মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহঃ) ছিলেন একজন বিখ্যাত তাবিয়ী এবং তা‘বীর শাস্ত্র তথা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ। তার এ উক্তির উদ্দেশ্য হলো, ইলমে হাদীস দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। আর দ্বীন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা এর উপর মানুষের নীতি-আদর্শ নির্ভর করে। কারো দীন সঠিক না হলে তার পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতএব, দীন গ্রহণ করার পূর্বে লক্ষ্য করতে হবে, যার নিকট থেকে দীন গ্রহণ করা হচ্ছে, তিনি মুত্তাকী এবং হক্বপন্থী কি না? যে কারো থেকে দীন গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ উস্তাদের আক্বীদা, আমল ও আখলাকের প্রভাব ছাত্রের উপর পড়াটা স্বাভাবিক।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি উদাহরণ :
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ নিদ্রিত ছিলেন, এমতাবস্থায় তাঁর নিকট কয়েকজন ফেরেশতা আগমন করল এবং পরস্পর আলোচনা করতে লাগল। কেউ বলল, তিনি নিদ্রিত, আর কেউ বলল, তাঁর চক্ষু নির্দ্রিত, কিন্তু হৃদয় জাগ্রত। অতঃপর কয়েকজন বলল, তোমাদের এ সাথীর (নবী ﷺ এর) একটি উদাহরণ আছে। কেউ বলল, তাহলে সে উদাহরণটি বর্ণনা করুন। তাদের কেউ বলল, তিনি তো নিদ্রিত, আবার কেউ বলল, তাঁর চক্ষু নিদ্রিত কিন্তু অন্তর জাগ্রত। অতঃপর তারা বলল, তাঁর উদাহরণ হচ্ছে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে একটি গৃহ নির্মাণ করল। অতঃপর সেখানে যিয়াফাতের আয়োজন করল। আর একজন আহবানকারী প্রেরণ করল, অতঃপর যে সে আহবানকারীর দাওয়াত গ্রহণ করে উপস্থিত হলো, সে গৃহে প্রবেশ করে যিয়াফাতের খানা খেয়ে নিল। আর যে দাওয়াত গ্রহণ করল না সে গৃহেও প্রবেশ করতে পারল না, খেতেও পারল না। তারা বলল, এ উদাহরণের ব্যাখ্যা খুলে বলুন, যেন তিনি বুঝতে পারেন। কেউ বলল, তিনি তো নিদ্রায় মগ্ন আছেন (কীভাবে বুঝবেন)। আবার কেউ বলল, তাঁর শুধুমাত্র চক্ষুই নিদ্রিত, অন্তর জাগ্রত আছে। তারপর তারা ব্যাখ্যা করে বলল, গৃহ মানে জান্নাত, আর আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ ﷺ। তাই যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসরণ করল সে যেন আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ ﷺ -কে অমান্য করল, বস্তুত সে আল্লাহকেই অমান্য করল। (সহীহ বুখারী, হা/৭২৮১)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ নিদ্রিত ছিলেন, এমতাবস্থায় তাঁর নিকট কয়েকজন ফেরেশতা আগমন করল এবং পরস্পর আলোচনা করতে লাগল। কেউ বলল, তিনি নিদ্রিত, আর কেউ বলল, তাঁর চক্ষু নির্দ্রিত, কিন্তু হৃদয় জাগ্রত। অতঃপর কয়েকজন বলল, তোমাদের এ সাথীর (নবী ﷺ এর) একটি উদাহরণ আছে। কেউ বলল, তাহলে সে উদাহরণটি বর্ণনা করুন। তাদের কেউ বলল, তিনি তো নিদ্রিত, আবার কেউ বলল, তাঁর চক্ষু নিদ্রিত কিন্তু অন্তর জাগ্রত। অতঃপর তারা বলল, তাঁর উদাহরণ হচ্ছে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে একটি গৃহ নির্মাণ করল। অতঃপর সেখানে যিয়াফাতের আয়োজন করল। আর একজন আহবানকারী প্রেরণ করল, অতঃপর যে সে আহবানকারীর দাওয়াত গ্রহণ করে উপস্থিত হলো, সে গৃহে প্রবেশ করে যিয়াফাতের খানা খেয়ে নিল। আর যে দাওয়াত গ্রহণ করল না সে গৃহেও প্রবেশ করতে পারল না, খেতেও পারল না। তারা বলল, এ উদাহরণের ব্যাখ্যা খুলে বলুন, যেন তিনি বুঝতে পারেন। কেউ বলল, তিনি তো নিদ্রায় মগ্ন আছেন (কীভাবে বুঝবেন)। আবার কেউ বলল, তাঁর শুধুমাত্র চক্ষুই নিদ্রিত, অন্তর জাগ্রত আছে। তারপর তারা ব্যাখ্যা করে বলল, গৃহ মানে জান্নাত, আর আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ ﷺ। তাই যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসরণ করল সে যেন আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ ﷺ -কে অমান্য করল, বস্তুত সে আল্লাহকেই অমান্য করল। (সহীহ বুখারী, হা/৭২৮১)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‐ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ ‐ وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন