hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শামায়েলে তিরমিযী

লেখকঃ মুহাম্মাদ বিন ঈসা আত তিরমিযী (রহ.)

৫০
অধ্যায়- ৪৭ : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিনয়
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন :

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَا تُطْرُوْنِيْ كَمَا اَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ اِنَّمَا اَنَا عَبْدٌ فَقُوْلُوْا : عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهٗ

২৫৪. উমর ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা আমার সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করো না। যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করে থাকে। আমি আল্লাহর বান্দা। তাই আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলই বলো। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪; দারেমী, হা/২৭৮৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২৩৯; জামেউস সগীর, হা/১৩৩১৯; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৩০।]

ব্যাখ্যা : ইসলাম সর্বদা আক্বীদাসহ সকল ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছে। বাড়াবাড়ি ও শিথিলতা উভয়টিই বর্জনের নির্দেশ দিয়েছে। ইয়াহুদিরা নবীদের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছে। তাঁদেরকে যথাযথ মর্যাদা দেয়নি। এমনকি তাঁদেরকে হত্যাও করেছে। অন্যদিকে নাসারারা ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর স্থানে বসিয়েছে। এভাবে উভয় জাতি চরম গোমরাহীর শিকার হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এদিকে ইঙ্গিত করে তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করার জন্য উম্মাতকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন এবং বলেছেন, আমার পরিচয় হলো, আমি আল্লাহর প্রকৃত বান্দা, তাঁর মনোনীত সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। আমি আল্লাহ নই। আল্লাহর অংশীদারও নই। আমার ব্যাপারে এমন কোন উক্তি করবে না, যা দাসত্ব ও রিসালাতের পরিপন্থী হয়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ সামান্য খাবারে দাওয়াত দিলেও অংশগ্রহণ করতেন :

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يُدْعٰى اِلٰى خُبْزِ الشَّعِيْرِ وَالْاِهَالَةِ السَّنِخَةِ فَيُجِيْبُ . وَلَقَدْ كَانَ لَهٗ دِرْعٌ عِنْدَ يَهُوْدِيٍّ فَمَا وَجَدَ مَا يَفُكُّهَا حَتّٰى مَاتَ

২৫৫. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ -কে যবের রুটি এবং কয়েক দিনের পুরনো চর্বির তরকারী খাওয়ার দাওয়াত করলেও তা গ্রহণ করতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি বর্ম এক ইয়াহুদির নিকট বন্ধক ছিল। শেষ জীবন পর্যন্ত তা ছাড়ানোর মতো পয়সা তাঁর হাতে ছিল না। [মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৪০১৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২১২৯; জামেউস সগীর, হা/৯০৭০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১১৬৩২।]

ব্যাখ্যা : দাওয়াত ও হাদিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে ভালোবাসা প্রকাশ করা। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ হাদিয়ার বস্তুর দিকে বিবেচনা না করে দাতার ভালোবাসা বিবেচনা করতেন। এজন্য ক্ষুদ্র জিনিষও আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতেন, ফেরত দিতেন না।

রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি পুরনো আসনে বসে হজ্জ পালন করেন :

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : حَجَّ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى رَحْلٍ رَثٍّ وَعَلَيْهِ قَطِيْفَةٌ لَا تُسَاوِيْ اَرْبَعَةَ دَرَاهِمَ فَقَالَ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًّا لَا رِيَاءَ فِيْهِ وَلَا سُمْعَةَ

২৫৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি পুরনো আসনে বসে হজ্জ পালন করেন। তাঁর আসনের উপর একটি কাপড় ছিল, যার মূল্য চার দিরহামও ছিল না। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি এ হজ্জকে লৌকিকতা ও প্রচার বিলাস হতে মুক্ত করো। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬১৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১২২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩৪৩।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ তার জন্য কারো দাঁড়ানোকে পছন্দ করতেন না :

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : لَمْ يَكُنْ شَخْصٌ اَحَبَّ اِلَيْهِمْ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ : وَكَانُوْا اِذَا رَاَوْهُ لَمْ يَقُوْمُوْا ، لِمَا يَعْلَمُوْنَ مِنْ كَرَاهَتِهٖ لِذٰلِكَ

২৫৭. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণের কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেয়ে প্রিয় কোন ব্যক্তিত্ব এ পৃথিবীতে ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখে দাঁড়াতেন না। কারণ, তারা জানতেন যে, তাঁকে দেখে দাঁড়ানোটা তিনি পছন্দ করতেন না। [আদাবুল মুফরাদ, হা/৯৪৬; তাহযীবুল আছার, হা/২৭৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৬৭; মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২৬০৯৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫৮।]

ব্যাখ্যা : কারো সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকা নবী ﷺ পছন্দ করতেন না। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম নবী ﷺ কে দেখে দাঁড়াতেন না। তাই এটাই সুন্নত যে, কারো আগমনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে যদি কাউকে এগিয়ে আনা বা কাউকে সহযোগিতা করার প্রয়োজন দেখা দেয় তবে তার জন্য দাঁড়ানো জায়েয আছে। যেমন সাহাবায়ে কেরাম সা‘দ ইবনে মুয়ায (রাঃ) কে এগিয়ে আনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনধারার আরো কিছু বিবরণ :

عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : سَاَلْتُ خَالِيْ هِنْدَ بْنَ اَبِيْ هَالَةَ ، وَكَانَ وَصَّافًا عَنْ حِلْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ ، وَاَنَا اَشْتَهِيْ اَنْ يَصِفَ لِي مِنْهَا شَيْئًا ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ فَخْمًا مُفَخَّمًا ، يَتَلَأْلَأُ وَجْهُهٗ تَلَأْلُؤَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَذَكَرَ الْحَدِيْثَ بِطُوْلِهٖ قَالَ الْحَسَنُ : فَكَتَّمْتُهَا الْحُسَيْنَ زَمَانًا ، ثُمَّ حَدَّثْتُهٗ فَوَجَدْتُهٗ قَدْ سَبَقَنِيْ اِلَيْهِ . فَسَاَلَهٗ عَمَّا سَاَلْتُهٗ عَنْهُ وَوَجَدْتُهٗ قَدْ سَاَلَ اَبَاهَا عَنْ مَدْخَلِهٖ وَمَخْرَجِهٖ وَشَكْلِهٖ فَلَمْ يَدَعْ مِنْهُ شَيْئًا

قَالَ الْحُسَيْنُ : فَسَاَلْتُ اَبِيْ ، عَنْ دُخُوْلِ رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ : كَانَ اِذَا اَوٰى اِلٰى مَنْزلِهٖ جَزَّاَ دُخُوْلَهٗ ثَلَاثَةَ اَجْزَاءٍ ، جُزْءًا لِلّٰهِ ، وَجُزْءًا لِاَهْلِهٖ ، وَجُزْءًا لِنَفْسِهٖ ، ثُمَّ جَزَّاَ جُزْاَهٗ بَيْنَهٗ وَبَيْنَ النَّاسِ ، فَيَرُدُّ ذٰلِكَ بِالْخَاصَّةِ عَلَى الْعَامَّةِ ، وَلَا يَدَّخِرُ عَنْهُمْ شَيْئًا ، وَكَانَ مِنْ سِيرَتِهٖ فِي جُزْءِ الْأُمَّةِ اِيْثَارُ اَهْلِ الْفَضْلِ بِاِذْنِهٖ وَقَسْمِهٖ عَلٰى قَدْرِ فَضْلِهِمْ فِيْ الدِّيْنِ ، فَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَةِ ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَاجَتَيْنِ ، وَمِنْهُمْ ذُو الْحَوَائِجِ ، فَيَتَشَاغَلُ بِهِمْ وَيَشْغَلُهُمْ فِيْمَا يُصْلِحُهُمْ وَالْأُمَّةَ مِنْ مُسَاءَلَتِهِمْ عَنْهُ وَاِخْبَارِهِمْ بِالَّذِي يَنْبَغِيْ لَهُمْ وَيَقُوْلُ : لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ مِنْكُمُ الْغَائِبَ ، وَاَبْلِغُوْنِيْ حَاجَةَ مَنْ لَا يَسْتَطِيْعُ اِبْلَاغَهَا ، فَاِنَّهٗ مَنْ اَبْلَغَ سُلْطَانًا حَاجَةَ مَنْ لَا يَسْتَطِيْعُ اِبْلَاغَهَا ثَبَّتَ اللهُ قَدمَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، لَا يُذْكَرُ عِنْدَهٗ اِلَّا ذٰلِكَ ، وَلَا يُقْبَلُ مِنْ اَحَدٍ غَيْرِهٖ ، يَدْخُلُوْنَ رُوَّادًا وَلَا يَفْتَرِقُوْنَ اِلَّا عَنْ ذَوَاقٍ ، وَيُخْرِجُوْنَ اَدِلَّةً يَعْنِيْ عَلَى الْخَيْرِ

قَالَ : فَسَاَلْتُهٗ عَنْ مَخْرَجِهٖ كَيْفَ يَصْنَعُ فِيْهِ ؟ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَخْرِنُ لِسَانُهٗ اِلَّا فِيْمَا يَعْنِيْهِ ، وَيُؤَلِّفُهُمْ وَلَا يُنَفِّرُهُمْ ، وَيُكْرِمُ كَرِيمَ كُلِّ قَوْمٍ وَيُوَلِّيْهِ عَلَيْهِمْ ، وَيُحَذِّرُ النَّاسَ وَيَحْتَرِسُ مِنْهُمْ مِنْ غَيْرِ اَنْ يَطْوِيَ عَنْ اَحَدٍ مِنْهُمْ بِشْرَهٗ وَخُلُقَهٗ ، وَيَتَفَقَّدُ اَصْحَابَهٗ ، وَيَسْاَلُ النَّاسَ عَمَّا فِي النَّاسِ ، وَيُحَسِّنُ الْحَسَنَ وَيُقَوِّيْهٖ ، وَيُقَبِّحُ الْقَبِيْحَ وَيُوَهِّيْهِ ، مُعْتَدِلُ الْاَمْرِ غَيْرُ مُخْتَلِفٍ ، لَا يَغْفُلُ مَخَافَةَ اَنْ يَغْفُلُوْا اَوْ يَمِيْلُوْا ، لِكُلِّ حَالٍ عِنْدَهٗ عَتَادٌ ، لَا يُقَصِّرُ عَنِ الْحَقِّ وَلَا يُجَاوِزُهٗ . اَلَّذِيْنَ يَلُوْنَهٗ مِنَ النَّاسِ خِيَارُهُمْ ، اَفْضَلُهُمْ عِنْدَهٗ اَعَمُّهُمْ نَصِيْحَةً ، وَاَعْظَمُهُمْ عِنْدَهٗ مَنْزِلَةً اَحْسَنُهُمْ مُوَاسَاةً وَمُؤَازَرَةً .

قَالَ : فَسَاَلْتُهٗ عَنْ مَجْلِسِهٖ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لَا يَقُوْمُ وَلَا يَجْلِسُ اِلَّا عَلٰى ذِكْرٍ ، وَاِذَا انْتَهٰى اِلٰى قَوْمٍ جَلَسَ حَيْثُ يَنْتَهِيْ بِهِ الْمَجْلِسُ وَيَأْمُرُ بِذٰلِكَ ، يُعْطِيْ كُلَّ جُلَسَائِهٖ بِنَصِيْبِهٖ ، لَا يَحْسَبُ جَلِيْسُهٗ اَنَّ اَحَدًا اَكْرَمُ عَلَيْهِ مِنْهُ ، مَنْ جَالَسَهٗ اَوْ فَاوَضَهٗ فِيْ حَاجَةٍ صَابَرَهٗ حَتّٰى يَكُوْنَ هُوَ الْمُنْصَرِفُ عَنْهُ ، وَمَنْ سَاَلَهٗ حَاجَةً لَمْ يَرُدَّهٗ اِلَّا بِهَا اَوْ بِمَيْسُوْرٍ مِنَ الْقَوْلِ ، قَدْ وَسِعَ النَّاسَ بَسْطُهٗ وَخُلُقُهٗ ، فَصَارَ لَهُمْ اَبًا وَصَارُوْا عِنْدَهٗ فِي الْحَقِّ سَوَاءً ، مَجْلِسُهٗ مَجْلِسُ عِلْمٍ وَحِلْمٍ وَحَيَاءٍ وَاَمَانَةٍ وَصَبْرٍ ، لَا تُرْفَعُ فِيْهِ الْاَصْوَاتُ وَلَا تُؤْبَنُ فِيْهِ الْحُرَمُ ، وَلَا تُثَنّٰى فَلَتَاتُهٗ مُتَعَادِلِيْنَ ، بَلْ كَانُوْا يَتَفَاضَلُوْنَ فِيْهِ بِالتَّقْوٰى ، مُتَوَاضِعِيْنَ يُوَقِّرُوْنَ فِيْهِ الْكَبِيْرَ وَيَرْحَمُوْنَ فِيْهِ الصَّغِيْرَ ، وَيُؤْثِرُوْنَ ذَا الْحَاجَةِ وَيَحْفَظُوْنَ الْغَرِيْبَ

২৫৮. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার মামা হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবস্থা জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, যিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবস্থা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বর্ণনা করতেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেহাকৃতি ছিল উচ্চ ও মর্যাদাসম্পন্ন। তাঁর চেহেরা ছিল পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল। অতঃপর পূর্ণ বিবরণ পেশ করেন। হাসান (রাঃ) বলেন, এ হাদীস হুসাইন (রাঃ) এর কাছে বেশ কিছু কাল বর্ণনা করিনি। পরে বলা হলে জানা গেল যে, তিনি আমার আগেই এ হাদীসটি শুনেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এ হাদীসটি কেবল মামার কাছ থেকে শুনেননি; উপরন্তু পিতা আলী (রাঃ) এর কাছ হতেও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘরে প্রবেশ করা, বাইরে যাওয়া ও অন্যান্য রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এ সম্পর্কে কোন কিছুই তিনি ছাড়েননি।

হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা আলী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গৃহে প্রবেশ করার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন গৃহে প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর গৃহের অবস্থানকে তিনটি ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগ আল্লাহর ইবাদাতের জন্য, এক ভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য এবং এক ভাগ নিজের কাজকর্মের জন্য। এ কাজকর্মের সময়কেও তিনি ২ ভাগে বিভক্ত করেন। এক ভাগে নেহায়তই নিজের জন্য এবং এক ভাগ অন্যান্য লোকের জন্য। এ সময়ে বিশেষ বিশেষ সাহাবীগণ তার নিকট আসতেন। তাদের কাছে কোন কিছুর অব্যক্ত থাকত না। এ সকল লোকের মধ্যে আলেমগণ প্রথমে আসার অনুমতি পেতেন। তাদের ধর্মীয় মর্যাদার বিচারে তাদেরকে সময় দিতেন। কেউ এক, কেউ দুই, আবার কেউ ততোধিক প্রয়োজন নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ সকলের প্রয়োজন মিটিয়ে দিতেন এবং তাদেরকে এমন কাজের নির্দেশ দিতেন, যা তাদের নিজেদের এবং পুরো উম্মতের উপকারে আসে।

এ সময় তিনি সমবেতদের লক্ষ্য করে বলতেন, তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছ, তারা আমার বাণী অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দেবে। যারা কোন কারণে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারনি, তোমরা তাদের জিজ্ঞাসা আমার কাছ থেকে জেনে নিয়ে তাদেরকে জানিয়ে দেবে। কারণ, যে ব্যক্তি এমন কোন নিবেদন বাদশাহের কাছে পৌঁছায় যে বাদশা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার কদমকে অটল রাখবেন। তোমরা এ ব্যাপারে সতর্ক হও। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মজলিসে কেবল এসব আলোচনাই চলত। রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীগণের থেকে এসব আলাপ-আলোচনাই শুনতেন। সেখানে কোন প্রকার বাহুল্য কথাবার্তা হতো না। সাহাবীরা ধর্মীয় জ্ঞান আহরণের আগ্রহ নিয়ে আসতেন এবং দ্বীনের স্বাদ গ্রহণ করতেন এবং তারা কল্যাণের দিশারী হয়ে ফিরে যেতেন।

হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ বাইরে যাওয়ার সময় কীরূপ করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ অহেতুক কথাবার্তা হতে স্বীয় জবানকে সংযত রাখতেন। মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতেন। তাদেরকে কোনভাবেই নিরুৎসাহিত করতেন না। সকল গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করতেন এবং তাদের মধ্য হতে তাদের নেতা মনোনীত করতেন। লোকদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাতেন। স্বীয় সঙ্গীদের খোঁজ-খবর রাখতেন এবং লোকদের পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসন্ধান করে (কোন প্রকার জটিলতা থাকলে) তা সংশোধন করে দিতেন। ভালোকে সমর্থন করে তাকে শক্তিশালী করতেন এবং খারাপকে খারাপ বলে প্রতিহত করতেন। কোন প্রকার মতবিরোধ সৃষ্টি না করে সবকিছুতেই মধ্যমপন্থা অনুসরণ করতেন। লোকদের সংশোধন করতে কোন প্রকার অলসতা করতেন না। নসীহত ও উপদেশ দানের সময় লোকেরা যেন উদাসীন ও বিরক্ত হয়ে না পড়ে, তিনি সে দিকেও খেয়াল রাখতেন। প্রত্যেক কাজের জন্য তাঁর কাছে বিশেষ ব্যবস্থা থাকত। সত্যের ব্যাপারে কোন প্রকার সংকীর্ণতা ছিল না, সীমা অতিক্রম হতো না। যেসব লোক তাঁর কাছে আসত, তারা উৎকৃষ্ট লোকে পরিণত হতো। যেই ব্যক্তি অপরের মঙ্গল কামনা করত, সে-ই তাঁর নিকট উত্তম ব্যক্তিরূপে সম্মানিত হতো। আর সে ব্যক্তিই তাঁর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরূপে মনে হতো, যে অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় অতি উৎসাহী ছিল।

হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমি আমার মামার কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মজলিস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ উঠা-বসায় সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকতেন। যখন কোথাও যেতেন, যেখানেই তাঁকে বসতে দিত, তিনি সেখানেই বসতেন। অন্যদেরকেও অনুরূপ করার নির্দেশ দিতেন। তিনি লোকের মাথা ডিঙ্গিয়ে যেতে নিষেধ করেন। এ কথা সত্য যে, তিনি যে আসনেই বসতেন, তাই মধ্যমনির আসনে পরিণত হতো। তিনি উপস্থিত সকলেরই কথা শুনতেন। উপস্থিত সকলেই মনে করত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে অধিক মর্যাদা দিচ্ছেন। তাঁর কাছে কেউ আসলে সে নিজে উঠে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি উঠেতেন না। কেউ তার কাছে কিছু চাইলে তা না দিয়ে তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতেন না। না থাকলে নম্রভাবে বুঝিয়ে বলতেন। তাঁর দান সবার জন্যই অবধারিত ছিল। মায়া-মমতায় তিনি সকলের পিতা স্বরূপ ছিলেন। ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নিকট সবাই সমান ছিল। তাঁর মজলিস ছিল জ্ঞান, লজ্জা, ধৈর্য ও আমানতের। সেখানে কোন প্রকার হট্টগোল হতো না এবং কারো মান-সম্মানেরও ক্ষতি হতো না। সকলেই সমান মর্যাদা পেতেন। তবে তাকওয়ার বিচারে একে অন্যের উপর মর্যাদাসম্পন্ন হতেন। একে অন্যের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করতেন। বড়কে শ্রদ্ধা ও ছোটকে স্নেহ করতেন। প্রয়োজনধারীকে অগ্রাধিকার দেয়া হতো এবং ভিনদেশীকে হেফাযত করা হতো। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৭৮৬৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭০৫; জামেউস সগীর, হা/৯৯৪৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৬২।]

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَوْ أُهْدِيَ اِلَيَّ كُرَاعٌ لَقَبِلْتُ ، وَلَوْ دُعِيْتُ عَلَيْهِ لَاَجَبْتُ

২৫৯. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাকে যদি ছাগলের একটি পা-ও দান করা হয়, তাহলে আমি অবশ্যই তা গ্রহণ করব। এ জন্য যদি আমাকে এতে দাওয়াত করা হয়, তবে আমি দাওয়াত গ্রহণ করব। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩২০০; ইবনে হিববান, হা/৫২৯১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৫২৯; সুনানুল কাবীর লিল বায়হাকী, হা/১২২৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/২২৪১৯; জামেউস সগীর, হা/৯৩৮৮।]

عَنْ جَابِرٍ قَالَ : جَاءَنِي رَسُوْلُ اللهِ لَيْسَ بِرَاكِبِ بَغْلٍ وَلَا بِرْذَوْنٍ

২৬০. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে আসলেন; কিন্তু তখন তিনি খচ্চর বা তুর্কি ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৬৪; আবু দাউদ, হা/৩০৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১২৬৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/২১৪০।]

তিনি নবজাতক বাচ্চাকেও কোলে তুলে নিতেন :

عَنْ يُوْسُفَ بْنَ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَّامٍ قَالَ : سَمَّانِيْ رَسُوْلُ اللهِ يُوْسُفَ وَاَقْعَدَنِيْ فِيْ حِجْرِهٖ وَمَسَحَ عَلٰى رَأْسِيْ

২৬১. ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার নাম রাখেন ইউসুফ। অতঃপর তিনি আমাকে কোলে তুলে নেন এবং মাথার উপর হাত রাখেন। [আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৫১; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৮১৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৬৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হা/৬৯০; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৯০৯।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ মাত্র ৪ দিরহাম মূল্যের হওদার উপর বসে হজ্জ পালন করেন :

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ حَجَّ عَلٰى رَحْلٍ رَثٍّ وَقَطِيْفَةٍ ، كُنَّا نَرٰى ثَمَنَهَا اَرْبَعَةَ دَرَاهِمَ ، فَلَمَّا اسْتَوَتْ بِهٖ رَاحِلَتُهٗ قَالَ : لَبَّيْكَ بِحَجَّةٍ لَا سُمْعَةَ فِيْهَا وَلَا رِيَاءَ

২৬১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ উটের পুরনো একটি হাওদায় বসে হজ্জ পালন করেন। এর উপর এক টুকরো কাপড় ছিল। আমাদের মতে এর মূল্য ৪ দিরহাম হবে। হাওদায় উপবিষ্ট অবস্থায় তিনি এ দু‘আ করছিলেন যে, হে প্রভু! আমি হজ্জে তোমার দরবারে হাজির হয়েছি। তুমি একে লৌকিকতা ও প্রচারণার হতে মুক্ত রাখ। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮৯০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬১৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১২২; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩৪৩।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ লাউ খুবই পছন্দ করতেন :

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ رَجُلًا خَيَّاطًا دَعَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَرَّبَ مِنْهُ ثَرِيْدًا عَلَيْهِ دُبَّاءُ قَالَ : فَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَأْخُذُ الدُّبَّاءَ وَكَانَ يُحِبُّ الدُّبَّاءَ .

قَالَ ثَابِتٌ : فَسَمِعْتُ اَنَسًا يَقُوْلُ : فَمَا صُنِعَ لِيْ طَعَامٌ اَقْدَرُ عَلٰى اَنْ يُصْنَعَ فِيْهِ دُبَّاءُ اِلَّا صُنِعَ .

২৬২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক দর্জি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দাওয়াত করে। তাঁর খাবারের জন্য লাউ মিশ্রিত সারীদ উপস্থিত করা হয়। লাউ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খুব প্রিয় খাদ্য ছিল। এজন্য তিনি লাউ খেতে শুরু করেন।

সাবিত বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এরপর হতে আমার জন্য যে তরকারী রান্না করা হতো, তাতে লাউ দেয়া হতো, যদি তা সম্ভব হতো। [শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৪৬; মুস্তাখরাজে আবু ‘আওয়ানা, হা/৬৭২০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৯৬৬৭।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন :

عَنْ عَمْرَةَ ، قَالَتْ : قِيْلَ لِعَائِشَةَ : مَاذَا كَانَ يَعْمَلُ رَسُوْلُ اللهِ فِي بَيْتِهٖ ؟ قَالَتْ : كَانَ بَشَرًا مِنَ الْبَشَرِ ، يَفْلِيْ ثَوْبَهٗ ، وَيَحْلُبُ شَاتَهٗ ، وَيَخْدُمُ نَفْسَهٗ .

২৬৩. আমরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে অবস্থানকালে কি করতেন? জবাবে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন একজন মানুষ। পোশাকের মধ্যে তিনি উকুন তালাশ করতেন, ছাগল দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২৩৭; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮৭৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৭৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৭৫।]

بَابُ مَا جَاءَ فِي خُلُقِ رَسُوْلِ اللهِ

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন