hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শামায়েলে তিরমিযী

লেখকঃ মুহাম্মাদ বিন ঈসা আত তিরমিযী (রহ.)

৫১
অধ্যায়- ৪৮ : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্র (মাধুর্য)
রাসূলুল্লাহ ﷺ সকলের সাথেই পূর্ণ মনোযোগের দিয়ে কথা বলতেন :

عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُقْبِلُ بِوَجْهِهٖ وَحَدِيْثِهٖ عَلٰى اَشَرِّ الْقَوْمِ يَتَاَلَّفُهُمْ بِذٰلِكَ فَكَانَ يُقْبِلُ بِوَجْهِهٖ وَحَدِيْثِهٖ عَلَيَّ ، حَتّٰى ظَنَنْتُ اَنِّيْ خَيْرُ الْقَوْمِ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ اَبُوْ بَكْرٍ ؟ قَالَ : اَبُو ْبَكْرٍ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ عُمَرُ ؟ فَقَالَ : عُمَرُ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَنَا خَيْرٌ اَوْ عُثْمَانُ ؟ قَالَ : عُثْمَانُ ، فَلَمَّا سَاَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ فَصَدَقَنِيْ فَلَوَدِدْتُ اَنِّيْ لَمْ اَكُنْ سَاَلْتُهٗ

২৬৪. আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তির সাথেও পূর্ণ মনোযোগ ফিরিয়ে মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে কথা বলতেন। এমনকি আমার সঙ্গেও তিনি কথা বলতেন অনুরূপভাবে। তাতে আমার মনে হলো, আমি সমাজের উত্তম মানুষ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালো, না আবু বকর ভালো? তিনি বললেন, আবু বকর! আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালো, না উমর ভালো? তিনি বললেন, উমর! আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমি ভালো না উসমান? তিনি বললেন, উসমান! আমি যখন বিস্তারিতভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, তখন আমাকে সঠিক কথা বলে দিলেন। পরে আমি মনে মনে কামনা করলাম, যদি আমি তাঁকে এরূপ প্রশ্ন না করতাম।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রর সম্পর্কে আনাস (রাঃ) এর বর্ণনা :

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : خَدَمْتُ رَسُوْلَ اللهِ عَشْرَ سِنِيْنَ فَمَا قَالَ لِيْ أُفٍّ قَطُّ ، وَمَا قَالَ لِشَيْءٍ صَنَعْتُهٗ لِمَ صَنَعْتَهٗ وَلَا لِشَيْءٍ تَرَكْتُهٗ لِمَ تَرَكْتَهٗ ، وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ مِنْ اَحْسَنِ النَّاسِ خُلُقًا ، وَلَا مَسَسْتُ خَزًّا وَلَا حَرِيْرًا وَلَا شَيْئًا كَانَ اَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُوْلِ اللهِ ، وَلَا شَمَمْتُ مِسْكًا قَطُّ وَلَا عِطْرًا كَانَ اَطْيَبَ مِنْ عَرَقِ النَّبِيِّ

২৬৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ১০ বছর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমত করেছি; কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তিনি কখনো আমার কোন কাজে ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। আমি করেছি এমন কোন কাজের ব্যাপারে তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করেছি? আর না করার ব্যাপারেও তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করনি? চরিত্র মাধুর্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। কোন রেশমী কাপড় বা কোন বিশুদ্ধ রেশম বা অন্য কোন এমন নরম জিনিস স্পর্শ করিনি, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাতের তালুর চেয়ে নরম। আমি এমন কোন মিশক বা আতরের সুবাস পাইনি, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘামের ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধিময়। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৪; দারেমী, হা/৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩০৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৮৯৪।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো অশোভনীয় আচরণ করতেন না :

عَنْ عَائِشَةَ ، اَنَّهَا قَالَتْ : لَمْ يَكُنْ رَسُوْلُ اللهِ فَاحِشًا وَلَا مُتَفَحِّشًا وَلَا صَخَّابًا فِي الْاَسْوَاقِ ، وَلَا يَجْزِئُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ ، وَلٰكِنْ يَعْفُو وَيَصْفَحُ

২৬৫. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন প্রকার অশোভনীয় কথা বলতেন না। বাজারেও তিনি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না। মন্দের প্রতিকার মন্দ দ্বারা করতেন না; বরং ক্ষমা করে দিতেন। অতঃপর কখনো তা আলোচনাও করতেন না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৮৬২; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৬২৩; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৯৪৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৪৪৩।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো কাউকে প্রহার করতেন না :

عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا ضَرَبَ رَسُوْلُ اللهِ بِيَدِهٖ شَيْئًا قَطُّ اِلَّا اَنْ يُجَاهِدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ، وَلَا ضَرَبَ خَادِمًا اَوِ امْرَاَةً

২৬৬. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় হাত দ্বারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৯৫; আবু দাউদ, হা/৪৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৮৮; বায়হাকী, হা/২০৫৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৫৮।]

ব্যাখ্যা : ‘হুদুদ’ হলো শরীয়তের নির্ধারিত শাস্তি এবং তা‘যীর হলো শাসন করা। প্রহার করা দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাগান্বিত হয়ে মারা উদ্দেশ্য। অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত লেগে যাওয়াকে প্রহার বলে না। বিশেষভাবে খাদিম ও নারীর কথা এজন্য উল্লেখ করেছেন যে, সাধারণত মানুষ এদেরকে অল্পতে মেরে থাকে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো এদেরকেও মারধর করেননি। যদিও শাসনের উদ্দেশ্যে হালকা মারধর বৈধ আছে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো নিজের জন্য প্রতিশোধ নিতেন না :

عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : مَا رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ مُنْتَصِرًا مِنْ مَظْلَمَةٍ ظُلِمَهَا قَطُّ مَا لَمْ يُنْتَهَكْ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ تَعَالٰى شَيْءٌ ، فَاِذَا انْتُهِكَ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ شَيْءٌ كَانَ مِنْ اَشَدِّهِمْ فِي ذٰلِكَ غَضَبًا ، وَمَا خُيِّرَ بَيْنَ اَمْرَيْنِ اِلَّا اخْتَارَ اَيْسَرَهُمَا مَا لَمْ يَكُنْ مَأْثَمًا

২৬৭. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে কখনো নিজের জন্য প্রতিশোধ নিতে দেখিনি, যতক্ষণ না কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত। অবশ্য যখন কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত, তখন তাঁর ন্যায় অধিক ক্রোধান্বিত আর কেউ হতো না। তাঁকে যদি দুটি কাজের মধ্যে যেকোন একটির অনুমতি দেয়া হতো, তবে তিনি সহজ কাজটি বেছে নিতেন, যতক্ষণ না এটাতে কোন গুনাহ হতো। [মুসনাদে হুমাইদী, হা/২৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫০২৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২২৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫০৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯১১৮।]

ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ কে যখন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে, দুটি বৈধ বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণের সুযোগ দেয়া হতো, তখন তিনি যে বিষয়টি উম্মতের জন্য সহজতর তা গ্রহণ করতেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ খারাপ লোকের সাথেও উত্তম আচরণ করতেন :

عَائِشَةَ ، قَالَتِ : اِسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ وَاَنَا عِنْدَهٗ ، فَقَالَ : بِئْسَ ابْنُ الْعَشِيْرَةِ اَوْ اَخُو الْعَشِيْرَةِ ، ثُمَّ اَذِنَ لَهٗ ، فَاَلَانَ لَهٗ الْقَوْلَ ، فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، قُلْتَ مَا قُلْتَ ثُمَّ اَلَنْتَ لَهُ الْقَوْلَ ؟ فَقَالَ : يَا عَائِشَةُ ، اِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اَوْ وَدَعَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ فُحْشِهٖ

২৬৮. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসার অনুমতি চাইল। আমি সে সময় তাঁর কাছে বসা ছিলাম। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি গোত্রের কতই না খারাপ লোক! অতঃপর তাকে আসার অনুমতি দেয়া হলো এবং তিনি তার সঙ্গে অতিশয় নরমভাবে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি বের হয়ে গেলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ব্যক্তিটি সম্পর্কে এরূপ কথা বললেন, আবার তার সাথে বিনম্র ব্যবহার করলেন! রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে আয়েশা! যে লোকের খারাপ ব্যবহারের জন্য লোকজন তাকে পরিহার করে এবং তার থেকে দূরে থাকে, সে সবচেয়ে খারাপ লোক। [আবু দাউদ, হা/৪৭৯৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৪৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৯৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৪৯; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৮২৩।]

ব্যাখ্যা : এ লোকটির নাম ছিল উয়াইনা। সে মুনাফিক ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর সে মুরতাদ হয়ে যায় এবং প্রকাশ্য কাফির হয়ে যায়। আবু বকর (রাঃ) এর দরবারে তাকে গ্রেফতার করে আনা হয়। ফলে মদিনার অলি-গলিতে বালকরা তিরস্কার করে বলল, এও মুরতাদ হয়ে গেল! তখন সে বলল, আমি কখন মুসলমান ছিলাম? আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহে পরে সে খাঁটি মনে ইসলাম গ্রহণ করে এবং উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে বিভিন্ন জিহাদে অংশ গ্রহণ করে।

আলী (রাঃ) এর ভাষায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রের বর্ণনা :

عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ : قَالَ الْحُسَيْنُ : سَأَلْتُ أَبِيْ عَنْ سِيْرَةِ النَّبِيِّ فِي جُلَسَائِهٖ ، فَقَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ دَائِمَ الْبِشْرِ ، سَهْلَ الْخُلُقِ ، لَيِّنَ الْجَانِبِ ، لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيْظٍ ، وَلَا صَخَّابٍ وَلَا فَحَّاشٍ ، وَلَا عَيَّابٍ وَلَا مُشَاحٍ ، يَتَغَافَلُ عَمَّا لَا يَشْتَهِي ، وَلَا يُؤْيِسُ مِنْهُ رَاجِيْهِ وَلَا يُخَيَّبُ فِيْهِ ، قَدْ تَرَكَ نَفْسَهٗ مِنْ ثَلَاثٍ : الْمِرَاءِ وَالْاِكْثَارِ وَمَا لَا يَعْنِيْهِ ، وَتَرَكَ النَّاسَ مِنْ ثَلَاثٍ : كَانَ لَا يَذُمُّ اَحَدًا وَلَا يَعِيْبُهٗ ، وَلَا يَطْلُبُ عَوْرَتَهٗ ، وَلَا يَتَكَلَّمُ اِلَّا فِيْمَا رَجَا ثَوَابَهٗ ، وَاِذَا تَكَلَّمَ اَطْرَقَ جُلَسَاؤُهٗ كَاَنَّمَا عَلٰى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ ، فَاِذَا سَكَتَ تَكَلَّمُوْا لَا يَتَنَازَعُوْنَ عِنْدَهُ الْحَدِيْثَ ، وَمَنْ تَكَلَّمَ عِنْدَهٗ اَنْصَتُوْا لَهٗ حَتّٰى يَفْرُغَ ، حَدِيْثُهُمْ عِنْدَهٗ حَدِيْثُ اَوَّلِهِمْ ، يَضْحَكُ مِمَّا يَضْحَكُوْنَ مِنْهُ ، وَيَتَعَجَّبُ مِمَّا يَتَعَجَّبُوْنَ مِنْهُ ، وَيَصْبِرُ لِلْغَرِيْبِ عَلَى الْجَفْوَةِ فِي مَنْطِقِهٖ وَمَسْاَلَتِهٖ حَتّٰى اِنْ كَانَ اَصْحَابُهٗ لَيَسْتَجْلِبُوْنَهُمْ وَيَقُوْلُ : اِذَا رَاَيْتُمْ طَالِبَ حَاجَةٍ يِطْلُبُهَا فَاَرْفِدُوْهٗ ، وَلَا يَقْبَلُ الثَّنَاءَ اِلَّا مِنْ مُكَافِئٍ وَلَا يَقْطَعُ عَلٰى اَحَدٍ حَدِيْثَهٗ حَتّٰى يَجُوْزَ فَيَقْطَعُهٗ بِنَهْيٍْ اَوْ قِيَامٍ

২৬৯. হাসান ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার পিতাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিদের ব্যাপারে তাঁর আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সদা হাস্যোজ্জোল ও বিনম্র স্বভবের অধিকারী। তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না। তিনি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অপরের দোষ খোঁজে বেড়াতেন না এবং কৃপণ ছিলেন না। তিনি অপছন্দনীয় কথা হতে বিরত থাকতেন। তিনি কাউকে নিরাশ করতেন না, আবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন- ঝগড়া-বিবাদ ও অহংকার করা এবং অযথা কথাবর্তা বলা। তিনটি কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখতেন- কারো নিন্দা করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না এবং কারো দোষ-ত্রেুাটি তালাশ করতেন না। যে কথায় সওয়াব হয়, শুধু তাই বলতেন। তিনি যখন কথা বলতেন তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন, যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তিনি কথা বলা শেষ করলে অন্যরা তাঁকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা জিজ্ঞেস করতে পারত। তাঁর কথায় কেউ বাদানুবাদ করতেন না। কেউ কোন কথা বলা শুরু করলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ থাকতেন। কেউ কোন কথায় হাসলে বা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও হাসতেন কিংবা বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত ব্যক্তির দৃঢ় আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি ধৈর্য্যের সঙ্গে সহ্য করতেন। কখনো কখনো সাহাবীগণ অপরিচিত লোক নিয়ে আসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন, কারো কোন প্রয়োজন দেখলে তা সামাধা করতে তোমরা সাহায্য করবে। কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি চুপ করে থাকতেন। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে কথা আরম্ভ করতেন না। অবশ্য কেউ অযথা কথা বলতে থাকলে তাকে নিষেধ করে দিতেন, অথবা মজলিস হতে উঠে যেতেন, যাতে বক্তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭০৫।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না :

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ : مَا سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ : لَا

২৭০. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩৩৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২০০১; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৮২৬; মু‘জামুল আওসাত, হা/১৩৩৯; মুসনাদে হুমাইদী, হা/১২৮২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮৫।]

ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে তিনি কারো প্রার্থনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতেন না। উপস্থিত থাকলে সাথে সাথে দিয়ে দিতেন, নতুবা পরবর্তী সময়ের জন্য ওয়াদা করতেন বা তার জন্য দু‘আ করতেন, যেন আল্লাহ তা‘আলা অন্যভাবে তার প্রয়োজন পূরণ করেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বশ্রেষ্ট দানশীল :

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ اَجْوَدَ مَا يَكُوْنُ فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ ، حَتّٰى يَنْسَلِخَ فَيَأْتِيْهِ جِبْرِيْلُ فَيَعْرِضُ عَلَيْهِ الْقُرْاٰنَ ، فَاِذَا لَقِيَهٗ جِبْرِيْلُ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ اَجْوَدَ بِالْخَيْرِ مِنَ الرِّيْحِ الْمُرْسَلَةِ

২৭১. ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দানশীল। বিশেষ করে রমাযান মাসে তিনি উদারভাবে দান করতেন। এ মাসে জিবরাঈল (আঃ) তাঁর কাছে আগমন করতেন এবং তাঁকে পবিত্র কুরআন শুনাতেন। যখন তাঁর কাছে জিবরাঈল (আঃ) আগমন করতেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এত বেশি দান খয়রাত করতেন, যেন প্রচন্ড বায়ু প্রবাহ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হতো। [সহীহ বুখারী, হা/১৯০২; সহীহ মুসলিম, হা/৬১৪৯; সুনানে নাসাঈ, হা/২০৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪২৫; ইবনে খুযাইমা, হা/১৮৮৯; ইবনে হিববান, হা/৩৪৪০; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮৭।]

তিনি আগামীকালের জন্য কোন কিছু জমা করে রাখতেন না :

عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ لَا يَدَّخِرُ شَيْئًا لِغَدٍ

২৭২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস ছিল, তিনি আগামীকালের জন্য কিছু জমা রেখে দিতেন না। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৯০; তাহযীবুল আছার, হা/২৪৯০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৩৫৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৩০; জামেউস সগীর, হা/৮৯৭৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৩৯১।]

ব্যাখ্যা : ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন কিছু আগামী দিনের জন্য জমা করে রাখতেন না। সবই দান করে দিতেন। এটাই ছিল আল্লাহ তা‘আলার উপর তাঁর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুলের নিদর্শন। তাঁর ওপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, (যেমন বিবিগণ) তাঁদের এক বছরের খরচ তিনি একত্রে দিয়ে দিতেন। তাঁরা প্রয়োজনে খরচ করতেন এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করতেন। ফলে কখনো এমন হতো যে, ঘরে রান্না করার মতো কিছুই থাকত না।

রাসূলুল্লাহ ﷺ হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদান দিতেন :

عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذِ بْنِ عَفْرَاءَ ، قَالَتْ : اَتَيْتُ النَّبِيَّ بِقِنَاعٍ مِنْ رُطَبٍ وَاَجْرٍ زُغْبٍ فَاَعْطَانِيْ مِلْءَ كَفِّهٖ حُلِيًّا وَذَهَبًا

২৭৩. রুবাইয়্যি বিনতে মু‘আওভভিয ইবনে আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি এক পাত্র খেজুর এবং কিছু হালকা পাতলা শসা নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খেদমতে উপস্থিত হলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এক মুষ্ঠ অলংকার ও স্বর্ণ দান করলেন। [মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০১৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭০৬৮।]

عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَقْبَلُ الْهَدِيَّةَ وَيُثِيبُ عَلَيْهَا

২৭৪. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ দান গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদানও দিতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৫; আবু দাউদ, হা/৩৫৩৮; মুজামুল আওসাত, হা/৮০৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৩৫; বায়হাকী, হা/১১৮০০; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৬১০; জামেউস সগীর, হা/৯১৩০।]

ব্যাখ্যা : এ হাদীসের শিক্ষা হলো, হাদিয়া গ্রহণ করা এবং হাদিয়ার প্রতিদান প্রদান করা নবী ﷺ এর সুন্নত।

- بَابُ مَا جَاءَ فِي حَيَاءِ رَسُوْلِ اللهِ

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন