hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শামায়েলে তিরমিযী

লেখকঃ মুহাম্মাদ বিন ঈসা আত তিরমিযী (রহ.)

৪৩
অধ্যায়-৪০ : রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইবাদাত
ইবাদাতের শাব্দিক অর্থ দাসত্ব বা গোলামী প্রকাশ করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ইবাদাত হলো প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এমন কথা ও কাজের নাম, যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা খুশি হন এবং সন্তুষ্ট থাকেন।

সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পা ফুলে যেত :

عَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ : صَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ حَتَّى انْتَفَخَتْ قَدَمَاهٗ فَقِيْلَ لَهٗ : اَتَتَكَلَّفُ هٰذَا وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَاَخَّرَ ؟ قَالَ : اَفَلَا اَكُوْنُ عَبْدًا شَكُوْرًا

১৯৫. মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, আপনি এত কষ্ট করছেন অথচ আল্লাহ তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি শোকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩০২; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৪১৯; ইবনে খুযাইমা, হা/১১৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২২৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬১৯।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং সাহরীর পূর্ব পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন :

عَنِ الْاَسْوَدِ بْنِ يَزِيْدَ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ بِاللَّيْلِ ؟ فَقَالَتْ : كَانَ يَنَامُ اَوَّلَ اللَّيْلِ ثُمَّ يَقُوْمُ ، فَاِذَا كَانَ مِنَ السَّحَرِ اَوْتَرَ ، ثُمَّ اَتَى فِرَاشَهٗ ، فَاِذَا كَانَ لَهٗ حَاجَةٌ اَلَمَّ بِاَهْلِهٖ ، فَاِذَا سَمِعَ الْاَذَانَ وَثَبَ ، فَاِنْ كَانَ جُنُبًا اَفَاضَ عَلَيْهِ مِنَ الْمَاءِ ، وَاِلَّا تَوَضَّاَ وَخَرَجَ اِلَى الصَّلَاةِ

১৯৬. আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তাহাজ্জুদ সালাত (রাতের সালাত) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন। তারপর সালাতে দাঁড়াতেন এবং সাহরীর পূর্বক্ষণে বিতর আদায় করতেন। এরপর প্রয়োজন মনে করলে বিছানায় আসতেন। তারপর আযানের শব্দ শুনে জেগে উঠতেন এবং অপবিত্র হলে সর্বাগ্রে পানি বইয়ে গোসল করে নিতেন নতুবা ওযূ করতেন। তারপর সালাত আদায় করতেন। [সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫৯৩।]

ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ﷺ এশার নামাযের পর রাতের প্রথমভাগে ঘুমাতেন। এরপর ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ ও বিতর আদায় করতেন। এটাই তাহাজ্জুদ এবং বিতরের উত্তম সময়। এরপর আগ্রহ হলে স্ত্রী গমন করতেন।

তিনি রাতের শেষ অর্ধাংশেও সালাত আদায় করতেন :

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، اَنَّهٗ اَخْبَرَهٗ اَنَّهٗ بَاتَ عِنْدَ مَيْمُوْنَةَ وَهِيَ خَالَتُهٗ قَالَ : فَاضْطَجَعْتُ فِي عَرْضِ الْوِسَادَةِ ، وَاضْطَجَعَ رَسُوْلُ اللهِ فِي طُوْلِهَا ، فَنَامَ رَسُوْلُ اللهِ حَتّٰى اِذَا انْتَصَفَ اللَّيْلُ اَوْ قَبْلَهٗ بِقَلِيْلٍ اَوْ بَعْدَهٗ بِقَلِيْلٍ ، فَاسْتَيْقَظَ رَسُوْلُ اللهِ فَجَعَلَ يَمْسَحُ النَّوْمَ عَنْ وَجْهِهٖ ، ثُمَّ قَرَاَ الْعَشْرَ الْاٰيَاتِ الْخَوَاتِيْمَ مِنْ سُوْرَةِ اٰلِ عِمْرَانَ ، ثُمَّ قَامَ اِلٰى شَنٍّ مُعَلَّقٍ فَتَوَضَّاَ مِنْهَا ، فَاَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ، ثُمَّ قَامَ يُصَلِّي قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ : فَقُمْتُ اِلٰى جَنْبِهٖ فَوَضَعَ رَسُوْلُ اللهِ يَدَهُ الْيُمْنٰى عَلٰى رَأْسِيْ ثُمَّ اَخَذَ بِأُذُنِيْ الْيُمْنٰى فَفَتَلَهَا فَصَلّٰى رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ - قَالَ مَعْنٌ : سِتَّ مَرَّاتٍ - ثُمَّ اَوْتَرَ ، ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتّٰى جَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ فَقَامَ فَصَلّٰى رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ، ثُمَّ خَرَجَ فَصَلّٰى الصُّبْحَ

১৯৭. ইবনে আববাস (আঃ) হতে বর্ণিত। একবার তিনি তাঁর খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন। তিনি বলেন, তিনি মায়মূনা (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বালিশের লম্বা দিকে ঘুমান আর আমি প্রস্থের দিকে ঘুমাই। রাসূলুল্লাহ ﷺ অর্ধ রাত কিংবা তার কিছুক্ষণ পূর্ব পর্যন্ত ঘুমালেন। তারপর তিনি জাগ্রত হন এবং মুখমন্ডল মুছে ঘুমের জড়তা দূর করেন। তারপর তিনি সূরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর তিনি ঝুলন্ত পানির মশকের কাছে যান এবং উত্তমরূপে ওযূ করেন। এরপর সালাতে দাঁড়ান। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার উপর ডান হাত রাখলেন, এরপর তিনি আমার ডান কান ধরে একটু মললেন (এতে আমি তাঁর ডান পাশে এসে দাঁড়ালাম)। অতঃপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। মা‘নের বর্ণনা মতে তিনি ২ রাক‘আত করে ৬ বার (১২ রাক‘আত) সালাত আদায় করেন। এরপর বিতর সালাত আদায় করেন। এরপর আরাম করেন। এরপর তাঁর কাছে মুয়ায্যিন এল। তখন তিনি সংক্ষেপে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এরপর মসজিদের উদ্দেশে বের হন এবং ফজরের সালাত আদায় করেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৫; সহীহ বুখারী, হা/১৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৫; আবু দাউদ, হা/১৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৬৪; ইবনে খুযাইমা, হা/১৬৭৫।]

ব্যাখ্যা : আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) ওযূ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাম পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অথচ নিয়ম হলো মুক্তাদী একা হলে ইমামের ডানে দাঁড়াবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ কান ধরে তাকে ডান দিকে দাঁড় করিয়ে দিলেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংখ্যায় তাহাজ্জুদের নামায আদায় করেছেন। সময় হিসেবে কখনো বেশি পড়েছেন। আবার কখনো কম পড়েছেন। তবে ১৩ রাক‘আতের বেশি হয়নি, যা বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً

১৯৮. ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ (তাহাজ্জুদ ও বিতরসহ কখনো কখনো) রাত্রে ১৩ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০১৯।]

রাত্রে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে না পারলে দিনে তা আদায় করে নিতেন :

عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ اِذَا لَمْ يُصَلِّ بِاللَّيْلِ مَنَعَهٗ مِنْ ذٰلِكَ النَّوْمُ ، اَوْ غَلَبَتْهُ عَيْنَاهٗ صَلّٰى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً

১৯৯. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যদি কখনো নবী ﷺ নিদ্রা বা প্রবল ঘুমের চাপের কারণে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তাহলে তিনি দিনে (চাশতের সময়) ১২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৪৫।]

ব্যাখ্যা : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, কারণবসত রাতের নফল ইবাদাত আদায় করতে সমর্থ না হলে তৎপরিমাণ ইবাদাত দিনের বেলায় করে নেয়া যায়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের সালাত দু’রাক‘আত করে আদায় করতেন :

عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ ، اَنَّهٗ قَالَ : لَاَرْمُقَنَّ صَلَاةَ النَّبِيِّ ، فَتَوَسَّدْتُ عَتَبَتَهٗ ، اَوْ فُسْطَاطَهٗ فَصَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ طَوِيْلَتَيْنِ ، طَوِيْلَتَيْنِ ، طَوِيْلَتَيْنِ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ وَهُمَا دُونَ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا ، ثُمَّ اَوْتَرَ فَذٰلِكَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً

২০০. যায়েদ ইবনে খালিদ আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত গভীর মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করার ইচ্ছা করলাম। তাই আমি তাঁর বাড়ি অথবা তাঁবুর চৌকাঠের উপর মাথা ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমে সংক্ষেপে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর তদপেক্ষা সংক্ষেপে ২ রাক‘আত, এরপর তার চেয়ে সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত এবং তার চেয়ে সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। এরপর সংক্ষেপে আরো ২ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তারপর বিতর আদায় করেন। এভাবে ১৩ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৬; আবু দাউদ, হা/১৩৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬২।]

ব্যাখ্যা : এ হাদীসে ‘ঘর অথবা তাঁবুর চৌকাঠের উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকার কথা’ বলা হয়েছে। বর্ণনাকারীর সন্দেহ হয়ে গেছে সাহাবী যায়েদ (রাঃ) ঘর শব্দ বলেছেন না তাঁবু শব্দ বলেছেন। এটা হচ্ছে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের অধিক সতর্কতার পরিচয়। তাঁরা সামান্য একটু সন্দেহ হলেও তা প্রকাশ করেছেন। তবে এখানে ঘর শব্দ না হয়ে তাঁবু শব্দটিই হবে। কারণ মুহাদ্দিসগণের মতে এটা কোন এক সফরের ঘটনা ছিল। তখন তাঁর সাথে স্ত্রীদের কেউ ছিলেন না। এজন্য যায়েদ ইবনে খালেদ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাতের আমল পর্যবেক্ষণ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান মাসে ১১ রাক‘আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন :

عَنْ اَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ ، اَنَّهٗ اَخْبَرَهٗ اَنَّهٗ سَاَلَ عَائِشَةَ ، كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُوْلِ اللهِ فِي رَمَضَانَ ؟ فَقَالَتْ : مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ لِيَزِيْدَ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهٖ عَلٰى اِحْدٰى عَشْرَةَ رَكْعَةً ، يُصَلِّيْ اَرْبَعًا لَا تَسْاَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّيْ اَرْبَعًا لَا تَسْاَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّيْ ثَلَاثًا ، قَالَتْ عَائِشَةُ : قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَتَنَامُ قَبْلَ اَنْ تُوْتِرَ ؟ فَقَالَ : يَا عَائِشَةُ ، اِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلَا يَنَامُ قَلْبِيْ

২০১. আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আয়েশা (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান মাসে কত রাক‘আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাযান অথবা অন্য সময় ১১ রাক‘আতের বেশি আদায় করতেন না। প্রথমে ৪ রাক‘আত আদায় করতেন। কী রকম একাগ্রতা নিয়ে ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন সে বিষয়ে তুমি জিজ্ঞেস করো না। তারপর আবার ৪ রাক‘আত আদায় করেন। তবে এর একাগ্রতা ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর ৩ রাক‘আত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের পূর্বে কি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, আমার চোখ নিদ্রা যায় কিন্তু অন্তর নিদ্রা যায় না। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬৩; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫৭; আবু দাউদ, হা/১৩৪৩।]

তিনি ১ রাক‘আত বিতর আদায় করতেন :

عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ اِحْدٰى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُوْتِرُ مِنْهَا بِوَاحِدَةٍ ، فَاِذَا فَرَغَ مِنْهَا اضْطَجَعَ عَلٰى شِقِّهِ الْاَيْمَنِ

২০২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রে ১১ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, যার মধ্যে ১ রাক‘আত হতো বিতর। যখন সালাত শেষে করতেন তখন তিনি ডান কাতে আরাম করতেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/২৬২; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৫১; আবু দাউদ, হা/১৩৩৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪১১৬; বায়হাকী, হা/৪৫৫১।]

কখনো কখনো তিনি রাতে ৯ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন :

عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّيْ مِنَ اللَّيْلِ تِسْعَ رَكَعَاتٍ

২০৩. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রে ৯ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৩; সুনানে নাসাঈ, হা/১৭২৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৬৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৬৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬১৫।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এক রাতের সালাতের বিবরণ :

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ، اَنَّهٗ صَلّٰى مَعَ النَّبِيِّ مِنَ اللَّيْلِ قَالَ : فَلَمَّا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ قَالَ : اَللهُ اَكْبَرُ ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ قَالَ : ثُمَّ قَرَاَ الْبَقَرَةَ ، ثُمَّ رَكَعَ رُكُوْعَهٗ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهٖ وَكَانَ يَقُوْلُ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ فَكَانَ قِيَامُهٗ نَحْوًا مِنْ رُكُوْعِهٖ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ، لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ثُمَّ سَجَدَ فَكَانَ سُجُوْدُهٗ نَحْوًا مِنْ قِيَامِهٖ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ ، فَكَانَ مَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ نَحْوًا مِنَ السُّجُوْدِ ، وَكَانَ يَقُوْلُ : رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ حَتّٰى قَرَاَ الْبَقَرَةَ وَاٰلَ عِمْرَانَ وَالنِّسَاءَ وَالْمَائِدَةَ اَوِ الْاَنْعَامَ شُعْبَةُ الَّذِيْ شَكَّ فِي الْمَائِدَةِ وَالاَنْعَامِ

২০৪. হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে রাত্রে সালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, যখন তিনি সালাত আরম্ভ করলেন, তখন বললেন,

اَللهُ اَكْبَرُ ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ

‘‘আল্ল-হু আকবার যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল ‘আযামাহ্’’

অর্থাৎ আল্লাহ মহান, রাজাধিরাজ, অসীম শক্তির অধিকারী, বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য তাঁরই জন্য।

তারপর তিনি (সূরা ফাতিহার পর) সূরা বাকারা তিলাওয়াত করেন। এরপর কিয়ামের ন্যায় দীর্ঘ রুকূ করেন। তিনি তাতে বলেন,

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ

‘‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’’, ‘‘সুবহা-না রবিবয়াল ‘আযীম’’

অর্থাৎ আমার প্রভু পুত-পবিত্র ও মহান; আমার প্রভু পুত-পবিত্র ও মহান।

তারপর মাথা উঠালেন এবং তাঁর কিয়াম রুকূ‘র ন্যায় দীর্ঘ হলো। এরপর বললেন,

لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ، لِرَبِّيَ الْحَمْدُ

‘‘লিরবিবয়াল হাম্দ, লিরবিবয়াল হাম্দ’’

অর্থাৎ সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য; সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য।

তারপর তিনি সিজদা করলেন, আর তার সিজদা কিয়ামের মতো দীর্ঘ হলো। তিনি বললেন,

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى

‘‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা, সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’’

অর্থাৎ আমার প্রভু পবিত্র ও মহান, আমার প্রভূ পবিত্র ও মহান।

তারপর মাথা উঠালেন (অর্থাৎ সিজদা হতে উঠে বসেন)। আর ২ সিজদার মধ্যকার সময় ছিল সিজদায় থাকা সময়ের ব্যবধানের মতো। এ সময় তিনি বলতেন,

رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ

‘‘রবিবগ্ ফিরলী’’, ‘‘রবিবগ্ ফিরলী’’

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো; হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো।

এমনকি তিনি সূরা বাক্বারা, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদা অথবা আনআম তিলাওয়াত করেন। বর্ণনাকারী সূরা মায়েদা না আনআম পর্যন্ত তিলাওয়াত করেছেন সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন। [আবু দাউদ, হা/৮৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৪২৩।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের মধ্যে একটি আয়াত বারবার তিলাওয়াত করতেন :

عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَامَ رَسُوْلُ اللهِ بِاٰيَةٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ لَيْلَةً

২০৫. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি আয়াত (পুনরাবৃত্তি করে) তিলাওয়াত করতে থাকেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৯১৪।]

ব্যাখ্যা : আয়াতটি ছিল :

﴿إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيْمُ﴾

(হে আল্লাহ!) তুমি যদি শাস্তি দিতে ইচ্ছা করো, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদের ক্ষমা করে দাও, তাহলে তুমি তো মহা পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আল মায়েদা- ১১৮)

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার দুটি গুণ ইনসাফ ও মাগফিরাতের বর্ণনা করা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দুটি গুণের প্রতি লক্ষ্য করেই বারবার আয়াতটি পাঠ করেন। কিয়ামত দিবসের পুরো অবস্থা এ দুটো গুণেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

রাসূলুল্লাহ ﷺ দীর্ঘ সময় যাবৎ কিয়াম করতেন :

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ : صَلَّيْتُ لَيْلَةً مَعَ رَسُوْلِ اللهِ فَلَمْ يَزَلْ قَائِمًا حَتّٰى هَمَمْتُ بِاَمْرِ سُوْءٍ قِيلَ لَهٗ : وَمَا هَمَمْتَ بِهٖ ؟ قَالَ : هَمَمْتُ اَنْ اَقْعُدَ وَاَدَعَ النَّبِيَّ

২০৬. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সালাত আদায় করি। তিনি এত দীর্ঘ (সময়) কিয়াম করেন যে, আমি একটি খারাপ কাজ করার সংকল্প করে বসি। তাকে বলা হলো আপনি কি করতে চেয়েছিলেন? তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে ছেড়ে বসে পড়ার ইচ্ছা করেছিলাম। [সহীহ বুখারী, হা/১১৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯৩৭; বায়হাকী, হা/৪৪৬০।]

বসে সালাত আদায় করলে তিলাওয়াতও বসে করতেন :

عَنْ عَائِشَةَ : اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يُصَلِّيْ جَالِسًا فَيَقْرَأُ وَهُوَ جَالِسٌ ، فَاِذَا بَقِيَ مِنْ قِرَاءَتِهٖ قَدْرُ مَا يَكُوْنُ ثَلَاثِيْنَ اَوْ اَرْبَعِيْنَ اٰيَةً ، قَامَ فَقَرَاَ وَهُوَ قَائِمٌ ، ثُمَّ رَكَعَ وَسَجَدَ ، ثُمَّ صَنَعَ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذٰلِكَ

২০৭. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী ﷺ বসে সালাত আদায় করলে তিলাওয়াতও বসে করতেন। যখন মাত্র ৩০ অথবা ৪০ আয়াত বাকী থাকত তখন দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতেন তারপর রুকূ ও সিজদা করতেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতও অনুরূপভাবে আদায় করতেন। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৩১১; সহীহ বুখারী, হা/১১১৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৯; আবু দাউদ, হা/৯৫৫।]

দাঁড়িয়ে কিরাআত পাঠ করলে রুকূ-সিজদাও দাঁড়ানো অবস্থাতেই করতেন :

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ قَالَ : سَاَلْتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ عَنْ تَطَوُّعِهٖ ، فَقَالَتْ : كَانَ يُصَلِّيْ لَيْلًا طَوِيْلًا قَائِمًا ، وَلَيْلًا طَوِيْلًا قَاعِدًا ، فَاِذَا قَرَاَ وَهُوَ قَائِمٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَائِمٌ ، وَاِذَا قَرَاَ وَهُوَ جَالِسٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ جَالِسٌ

২০৮. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি দীর্ঘ রাত্রি দাঁড়িয়ে কিংবা দীর্ঘ রাত্রি বসে সালাত আদায় করতেন। তিনি দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়লে রুকূ-সিজদাও দাঁড়ানো অবস্থাতেই করতেন। আবার যখন কিরাআত বসে পড়তেন, তখন বসা অবস্থাতেই রুকূ-সিজদা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৬; আবু দাউদ, হা/৯৫৬; ইবনে মাজাহ, হা/১২২৮; ইবনে খুযাইমা, হা/১২৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬৩১ ।]

ব্যাখ্যা : সাধারণত রাসূলুল্লাহ ﷺ নফল নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতেন। আবার কখনো কখনো বসেও আদায় করতেন। অধিকাংশ আলেমের মতে নফল নামায দাঁড়িয়ে, বসে, কিছু দাঁড়িয়ে কিছু বসে, সব অবস্থায় আদায় করা জায়েয। এমনকি বসে নামায শুরু করার পর দাঁড়িয়ে রুকূ-সিজদা করা। এমনিভাবে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে বসে রুকূ-সিজদা করাও বৈধ। তবে ফরয নামাযে দাঁড়ানোর শক্তি থাকলে বসে আদায় করা জায়েয নয়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ তারতীল সহকারে কিরাআত পাঠ করতেন :

عَنْ حَفْصَةَ ، زَوْجِ النَّبِيِّ قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّيْ فِيْ سُبْحَتِهٖ قَاعِدًا وَيَقْرَأُ بِالسُّوْرَةِ وَيُرَتِّلُهَا حَتّٰى تَكُوْنَ اَطْوَلَ مِنْ اَطْوَلَ مِنْهَا

২০৯. নবী ﷺ এর স্ত্রী হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ নফল সালাত বসে আদায় করতেন। তাতে তারতীল (তাজবীদ) সহকারে কিরাআত পাঠ করতেন। ফলে তা দীর্ঘ সূরার চেয়ে দীর্ঘতর মনে হতো। [মুয়াত্তা মালেক, হা/৩০৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৪৬; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৫৮; ইবনে খুযাইমা, হা/১২৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪৮৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৫০৮; দারেমী, হা/১৩৮৫।]

নবী ﷺ মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করতেন :

عَنْ عَائِشَةَ ،قَالَتْ : اَنَّ النَّبِيَّ لَمْ يَمُتْ حَتّٰى كَانَ اَكْثَرُ صَلَاتِهٖ وَهُوَ جَالِسٌ

২১০. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৪৫; সুনানে নাসাঈ, হা/১৬৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৭৩; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১২৩৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১১৮৪।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ৮ রাক‘আত সুন্নতের বর্ণনা :

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ فِي بَيْتِهٖ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ فِي بَيْتِهٖ

২১১. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত, মাগরিবের পর ঘরে ২ রাক‘আত এবং এশার পরে তাঁর ঘরে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫০৬; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১১৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৮২৩।]

ব্যাখ্যা : এ হাদীসে যোহরের ফরযের পূর্বে ২ রাক‘আত সুন্নতের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য হাদীস থেকে ৪ রাক‘আত সুন্নতের প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- জামে তিরমিযীতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের পূর্বে ৪ রাক‘আত এবং যোহরের পরে চার রাক‘আত সুন্নত পড়তেন। এজন্য ৪ রাক‘আত বা ২ রাক‘আত উভয়ই আদায় করা জায়েয আছে। তাছাড়া এ হাদীসে ফজরের সুন্নতের কথা উল্লেখ করা হয় নাই, যা রাবীর অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ আযানের পর ২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন :

عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : حَدَّثَتْنِي حَفْصَةُ : اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ حِيْنَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ وَيُنَادِي الْمُنَادِي قَالَ اَيُّوْبُ : وَأُرَاهٗ قَالَ : خَفِيْفَتَيْنِ

২১২. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাফসা (রাঃ) আমাকে (এ মর্মে) হাদীস শোনান যে, সুবহে সাদিকের সময় যখন মুয়ায্যিন আযান দিত, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ ২ রাক‘আত সালাত আদায় করে নিতেন। আইয়ূব বলেন, আমি মনে করি তিনি خَفِيفَتَيْنِ (সংক্ষিপ্ত ২ রাক‘আত) বলেছেন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫০৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৬৭; মুসনাদে মুস্তাখরাজ ‘আলাস সহীহাইন, হা/১৬৩৬।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ১০ রাক‘আত সুন্নতের বিবরণ :

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ : رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ قَالَ ابْنُ عُمَرَ : وَحَدَّثَتْنِي حَفْصَةُ بِرَكْعَتَيِ الْغَدَاةِ ، وَلَمْ اَكُنْ اَرَاهُمَا مِنَ النَّبِيِّ

২১৩. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে ৮ রাক‘আত স্মরণ রেখেছি- যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত, ২ রাক‘আত মাগরিবের পরে এবং ২ রাক‘আত এশার পরে। ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, হাফসা (রাঃ) আমার কাছে ফজরের ২ রাক‘আতের খরব দিয়েছেন। অথচ আমি নবী ﷺ কে তা আদায় করতে দেখিনি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৮০; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, হা/১৯৯৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৪৮২৪।]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ قَالَ : سَاَلتُ عَائِشَةَ ، عَنْ صَلَاةِ النَّبِيِّ قَالَتْ : كَانَ يُصَلِّيْ قَبْلَ الظُّهْرِ رَكْعَتَيْنِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ ، وَبَعْدَ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ ، وَبَعْدَ الْعِشَاءِ رَكْعَتَيْنِ ، وَقَبْلَ الْفَجْرِ ثِنْتَيْنِ

২১৪. আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে নবী ﷺ এর (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি ﷺ যোহরের পূর্বে ২ রাক‘আত এবং পরে ২ রাক‘আত, মাগরিবের পরে ২ রাক‘আত, এশার পরে ২ রাক‘আত এবং ফজরের পূর্বে ২ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৭০।]

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিনের ১৬ রাক‘আত নফল সালাতের বিবরণ :

عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ يَقُوْلُ : سَاَلْنَا عَلِيًّا ، عَنْ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ مِنَ النَّهَارِ ، فَقَالَ : اِنَّكُمْ لَا تُطِيْقُوْنَ ذٰلِكَ قَالَ : فَقُلْنَا : مَنْ اَطَاقَ ذٰلِكَ مِنَّا صَلّٰى ، فَقَالَ : كَانَ اِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَاهُنَا كَهَيْئَتِهَا مِنْ هَاهُنَا عِنْدَ الْعَصْرِ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ ، وَاِذَا كَانَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَهُنَا كَهَيْئَتِهَا مِنْ هَاهُنَا عِنْدَ الظُّهْرِ صَلّٰى اَرْبَعًا ، وَيُصَلِّي قَبْلَ الظُّهْرِ اَرْبَعًا ، وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ ، وَقَبْلَ الْعَصْرِ اَرْبَعًا ، يَفْصِلُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ بِالتَّسْلِيْمِ عَلَى الْمَلَائِكَةِ الْمُقَرَّبِيْنَ وَالنَّبِيِّيْنَ ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ

২১৫. আসিম ইবনে যামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আলী (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিনের (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তোমরা সেভাবে আদায় করার ক্ষমতা রাখ না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে আদায় করবে। এরপর তিনি বললেন, আসরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে তেমন হলে তিনি ২ রাক‘আত (ইশরাক সালাত) আদায় করতেন। আবার যোহরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে (পূর্ব দিকে সূর্য ততটা উপর হলে) তিনি ৪ রাক‘আত (চাশতের সালাত) আদায় করতেন। যোহরের পূর্বে ৪ রাক‘আত ও পরে ২ রাক‘আত এবং আসরের পূর্বে ৪ রাক‘আত আদায় করতেন। প্রতি ২ রাক‘আতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, নবীগণ এবং যেসকল মুমিন-মুসলিম তাদের অনুসরণ করেছেন তাদের প্রতি সালাম প্রেরণের মাধ্যমে ব্যবধান করতেন। [সুনানে নাসাঈ, হা/৮৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭৭; বায়হাকী, হা/৪৬৯৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৮৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৩৭।]

ব্যাখ্যা : নবী, ফেরেশতা এবং মুমিনদের প্রতি সালাম পাঠ করার অর্থ হলো, আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা। কেননা, এতে তাদের প্রতি সালাম পাঠ করা হয়। অথবা সালামের অর্থ ২ রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা। তখন উদ্দেশ্য হবে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আসরের পূর্বে ২ রাক‘আত করে ৪ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন।

بَابُ صَلَاةِ الضُّحٰى

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন