HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
আসরের সলাতের সঠিক ওয়াক্ত
লেখকঃ কামাল আহমাদ
আল্-হামদু লিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য। সলাত ও সালাম নাযিল হোক নবী মুহাম্মাদ (স), তাঁর পরিবার ও সাহাবীদের (রা) উপর।
এই পুস্তিকার মাধ্যমে আমরা সলাতুল আসরের গুরুত্ব ও ফযিলত জানার সাথে সাথে এর সঠিক ওয়াক্ত সম্পর্কে কুরআনের দাবি এবং রসূলুল্লাহ (স) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলো জানতে পারব। তেমনি সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে মুসলিমদের জুমহুর (অধিকাংশ) আলেমদের গ্রহণযোগ্য চিন্তা-গবেষণাগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন সম্পর্কে অবগত হব। আমরা আরও জানতে পারব, কিভাবে সহীহ ও সংক্ষিপ্ত হাদীসগুলো দ্বারা বিকৃত ব্যাখ্যা ও মাসআলা উপস্থাপন করা হয়। সেই সাথে ব্যাপক সংখ্যক সুস্পষ্ট সহীহ-হাদীস থাকার পরেও যঈফ ও জাল-হাদীসের দ্বারা নিজস্ব দল বা মাযহাবকে টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়।
আমরা চেষ্টা করেছি সাধ্যমত সহীহ-হাদীস ও মুহাদ্দিসগণের উপস্থাপনার আলোকে পুস্তিকাটি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য করতে। এরপরেও যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ হাদীস বাদ গিয়ে থাকে পরে পরবর্তী সংস্করণে তা এই পুস্তিকার মধ্যে সংযোজন করব ইনশাআল্লাহ। তেমনি যদি যঈফ ও জাল হাদীসের প্রতি আসক্তগণ তাদের আপত্তি দলিল-প্রমাণসহ লিখিতভাবে আমাদের কাছে জানান, পরবর্তী সময়ে সেগুলোও যাচাই-বাছাইপূর্বক এই পুস্তিকাটির বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
সর্বোপরি এই গবেষণার উদ্দেশ্য এটা প্রচার করা যে, কুরআন ও সহীহ-হাদীসের সঠিক অনুসরণ মানুষকে মতপার্থক্য ও দলে দলে বিভক্তি থেকে বিরত রাখে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“আর তাদের মতো হয়ো না, যারা ফিরক্বা সৃষ্টি করেছে এবং ইখতিলাফ (মতপার্থক্য) করেছে তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরও। তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।” [সূরা আলে-ইমরান : ১০৫ আয়াত]
অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে ইখতিলাফ হওয়া, ফিরক্বা সৃষ্টি হওয়া এবং আল্লাহর নাযিলকৃত স্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও সমাধানের দিকে না আসাটা নিশ্চিতভাবে দুনিয়াতে আযাব ও আখিরাতে জাহান্নামী হওয়া কারণ। কেননা নবী (স) বলেছেন:
لاَ تَخْتَلِفُوْا فَاِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ اخْتَلَفُوْا فَهَلَكُوْا
‘‘ইখতিলাফ করো না। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা ইখতিলাফ করত। এ কারণে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।’’ [সহীহ বুখারী হা/ ২৪১০]
অন্যত্র নবী (স) বলেছেন :
اِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِاِخْتِلاَفِهِمْ فِي الْكِتَابِ
‘‘তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা (আল্লাহর) কিতাবে ইখতিলাফ করেছিল। এ কারণে তারা ধ্বংস হয়েছিল।’’ [সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ইলম; মিশকাত (তাহক্বীক্ব হা/৯৮)]
এমনকি নবী (আ)-গণ আসার অন্যতম কারণ ছিল এটাই যে, তারা মানুষের মধ্যকার ইখতিলাফগুলো আল্লাহর নাযিলকৃত ওহীর আলোকে সমাধান করবেন। [দ্র: সূরা বাক্বারা: ২১৩ আয়াত]
পক্ষান্তরে আলেম হওয়া সত্ত্বেও যারা ইখতিলাফকে জিইয়ে রাখেন, মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন ফিরক্বা ও তরিক্বা প্রতিষ্ঠিত রাখেন, তারা উপরে উল্লেখিত হাদীসের ফযিলত থেকে বঞ্চিত। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত ইখতিলাফহীন রহমত থেকেও বঞ্চিত। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً ۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ إِلَّا مَن رَّحِمَ رَبُّكَ ۚ وَلِذَٰلِكَ خَلَقَهُمْ ۗ …
“তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন, তবে মানুষজাতিকে একটি উম্মাতে পরিণত করতেন, আর তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হতো না। তবে তোমার রব যাদের প্রতি রহম করেন তারা ব্যতীত (অন্যরা ইখতিলাফ করতেই থাকবে) এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। …” [সূরা হুদ: ১১৮-১৯ আয়াত]
এই পুস্তিকার মাধ্যমে উক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো বাস্তবায়নে আলেমদের পক্ষ থেকেই আলোচ্য বিষয়ের সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা সেই উদ্দেশ্য মুসলিম জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।
সম্মানিত পাঠকের কাছে অনুরোধ, এই বইটি পাঠের সময় উক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর দাবি স্মরণে রাখবেন। তা ছাড়া ইখতিলাফ ও ফিরক্বাহীন ইসলামি জীবন-যাপনের জন্য কুরআন ও সহীহ-হাদীসের অনুসরণের সাথে এর সমর্থনে প্রকাশিত পুস্তক-পুস্তিকা থেকে জ্ঞান অর্জন ও আক্বীদা নবায়ন একান্ত জরুরি।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইখতিলাফ ও ফিরক্বামুক্ত হয়ে দ্বীন ইসলামকে আঁকড়ে থাকার তাওফিক্ব দান করুন। আমীন!!
কামাল আহমাদ,
২০ আব্দুল আজীজ রোড, পুরাতন কসবা,
কাজীপাড়া, যশোর-৭৪০০।
ই-মেইল : kahmed_islam05@yahoo.com
এই পুস্তিকার মাধ্যমে আমরা সলাতুল আসরের গুরুত্ব ও ফযিলত জানার সাথে সাথে এর সঠিক ওয়াক্ত সম্পর্কে কুরআনের দাবি এবং রসূলুল্লাহ (স) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলো জানতে পারব। তেমনি সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে মুসলিমদের জুমহুর (অধিকাংশ) আলেমদের গ্রহণযোগ্য চিন্তা-গবেষণাগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন সম্পর্কে অবগত হব। আমরা আরও জানতে পারব, কিভাবে সহীহ ও সংক্ষিপ্ত হাদীসগুলো দ্বারা বিকৃত ব্যাখ্যা ও মাসআলা উপস্থাপন করা হয়। সেই সাথে ব্যাপক সংখ্যক সুস্পষ্ট সহীহ-হাদীস থাকার পরেও যঈফ ও জাল-হাদীসের দ্বারা নিজস্ব দল বা মাযহাবকে টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়।
আমরা চেষ্টা করেছি সাধ্যমত সহীহ-হাদীস ও মুহাদ্দিসগণের উপস্থাপনার আলোকে পুস্তিকাটি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য করতে। এরপরেও যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ হাদীস বাদ গিয়ে থাকে পরে পরবর্তী সংস্করণে তা এই পুস্তিকার মধ্যে সংযোজন করব ইনশাআল্লাহ। তেমনি যদি যঈফ ও জাল হাদীসের প্রতি আসক্তগণ তাদের আপত্তি দলিল-প্রমাণসহ লিখিতভাবে আমাদের কাছে জানান, পরবর্তী সময়ে সেগুলোও যাচাই-বাছাইপূর্বক এই পুস্তিকাটির বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
সর্বোপরি এই গবেষণার উদ্দেশ্য এটা প্রচার করা যে, কুরআন ও সহীহ-হাদীসের সঠিক অনুসরণ মানুষকে মতপার্থক্য ও দলে দলে বিভক্তি থেকে বিরত রাখে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“আর তাদের মতো হয়ো না, যারা ফিরক্বা সৃষ্টি করেছে এবং ইখতিলাফ (মতপার্থক্য) করেছে তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরও। তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।” [সূরা আলে-ইমরান : ১০৫ আয়াত]
অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে ইখতিলাফ হওয়া, ফিরক্বা সৃষ্টি হওয়া এবং আল্লাহর নাযিলকৃত স্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও সমাধানের দিকে না আসাটা নিশ্চিতভাবে দুনিয়াতে আযাব ও আখিরাতে জাহান্নামী হওয়া কারণ। কেননা নবী (স) বলেছেন:
لاَ تَخْتَلِفُوْا فَاِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ اخْتَلَفُوْا فَهَلَكُوْا
‘‘ইখতিলাফ করো না। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা ইখতিলাফ করত। এ কারণে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।’’ [সহীহ বুখারী হা/ ২৪১০]
অন্যত্র নবী (স) বলেছেন :
اِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِاِخْتِلاَفِهِمْ فِي الْكِتَابِ
‘‘তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা (আল্লাহর) কিতাবে ইখতিলাফ করেছিল। এ কারণে তারা ধ্বংস হয়েছিল।’’ [সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ইলম; মিশকাত (তাহক্বীক্ব হা/৯৮)]
এমনকি নবী (আ)-গণ আসার অন্যতম কারণ ছিল এটাই যে, তারা মানুষের মধ্যকার ইখতিলাফগুলো আল্লাহর নাযিলকৃত ওহীর আলোকে সমাধান করবেন। [দ্র: সূরা বাক্বারা: ২১৩ আয়াত]
পক্ষান্তরে আলেম হওয়া সত্ত্বেও যারা ইখতিলাফকে জিইয়ে রাখেন, মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন ফিরক্বা ও তরিক্বা প্রতিষ্ঠিত রাখেন, তারা উপরে উল্লেখিত হাদীসের ফযিলত থেকে বঞ্চিত। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত ইখতিলাফহীন রহমত থেকেও বঞ্চিত। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً ۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ إِلَّا مَن رَّحِمَ رَبُّكَ ۚ وَلِذَٰلِكَ خَلَقَهُمْ ۗ …
“তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন, তবে মানুষজাতিকে একটি উম্মাতে পরিণত করতেন, আর তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হতো না। তবে তোমার রব যাদের প্রতি রহম করেন তারা ব্যতীত (অন্যরা ইখতিলাফ করতেই থাকবে) এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। …” [সূরা হুদ: ১১৮-১৯ আয়াত]
এই পুস্তিকার মাধ্যমে উক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো বাস্তবায়নে আলেমদের পক্ষ থেকেই আলোচ্য বিষয়ের সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা সেই উদ্দেশ্য মুসলিম জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।
সম্মানিত পাঠকের কাছে অনুরোধ, এই বইটি পাঠের সময় উক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর দাবি স্মরণে রাখবেন। তা ছাড়া ইখতিলাফ ও ফিরক্বাহীন ইসলামি জীবন-যাপনের জন্য কুরআন ও সহীহ-হাদীসের অনুসরণের সাথে এর সমর্থনে প্রকাশিত পুস্তক-পুস্তিকা থেকে জ্ঞান অর্জন ও আক্বীদা নবায়ন একান্ত জরুরি।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইখতিলাফ ও ফিরক্বামুক্ত হয়ে দ্বীন ইসলামকে আঁকড়ে থাকার তাওফিক্ব দান করুন। আমীন!!
কামাল আহমাদ,
২০ আব্দুল আজীজ রোড, পুরাতন কসবা,
কাজীপাড়া, যশোর-৭৪০০।
ই-মেইল : kahmed_islam05@yahoo.com
৩
প্রথম অধ্যায়: সলাতের ওয়াক্তসমূহের হেফাযত এবং এক্ষেত্রে আসরের সলাতের বিশেষত্ব
অনুচ্ছেদ-১: সলাতের ওয়াক্ত এবং এর সীমানা নির্ধারিত।আল্লাহ তাআলা‘র উক্তি: إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
“নিশ্চয় মু’মিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে সলাত আদায় করা ফরয।” [. সূরা নিসা; ১০৩ আয়াত।]
হাদীস-১: ‘নির্দিষ্ট সময়’-এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন নবী (স) নিম্নোক্ত হাদীসে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ لِلصَّلاَةِ أَوَّلاً وَآخِرًا وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلاَةِ الظُّهْرِ حِينَ تَزُولُ الشَّمْسُ وَآخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَدْخُلُ وَقْتُ الْعَصْرِ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلاَةِ الْعَصْرِ حِينَ يَدْخُلُ وَقْتُهَا وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ تَصْفَرُّ الشَّمْسُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْمَغْرِبِ حِينَ تَغْرُبُ الشَّمْسُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَغِيبُ الأُفُقُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْعِشَاءِ الآخِرَةِ حِينَ يَغِيبُ الأُفُقُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَنْتَصِفُ اللَّيْلُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْفَجْرِ حِينَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ .
“আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন: সলাতের ওয়াক্তের শুরু ও শেষ সীমা রয়েছে। যোহরের সলাতের শুরুর সময় হচ্ছে যখন (সূর্য পশ্চিম দিকে) ঢলতে শুরু করে এব শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে আসরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া। আসরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে যখন আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করে (যোহরের শেষ সময়) এবং তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন সূর্যের আলো হলুদ রং ধারণ করে। মাগরিবের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর এবং তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন শাফাক্ব চলে যায়। ঈশার প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে যখন শাফাক্ব বিলীন হয়ে যায়, আর তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন অর্ধেক রাত চলে যায়। ফযরের সলাতের প্রথম ওয়াক্ত যখন ভোর শুরু হয় এবং তার ওয়াক্ত শেষ হয় যখন সূর্য উঠা শুরু হয়।” [. তিরমিযী হা/১৫১; সহীহ- আলবানী (রহ), হাসান- যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) ।]
“নিশ্চয় মু’মিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে সলাত আদায় করা ফরয।” [. সূরা নিসা; ১০৩ আয়াত।]
হাদীস-১: ‘নির্দিষ্ট সময়’-এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন নবী (স) নিম্নোক্ত হাদীসে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ لِلصَّلاَةِ أَوَّلاً وَآخِرًا وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلاَةِ الظُّهْرِ حِينَ تَزُولُ الشَّمْسُ وَآخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَدْخُلُ وَقْتُ الْعَصْرِ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلاَةِ الْعَصْرِ حِينَ يَدْخُلُ وَقْتُهَا وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ تَصْفَرُّ الشَّمْسُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْمَغْرِبِ حِينَ تَغْرُبُ الشَّمْسُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَغِيبُ الأُفُقُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْعِشَاءِ الآخِرَةِ حِينَ يَغِيبُ الأُفُقُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَنْتَصِفُ اللَّيْلُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْفَجْرِ حِينَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ .
“আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন: সলাতের ওয়াক্তের শুরু ও শেষ সীমা রয়েছে। যোহরের সলাতের শুরুর সময় হচ্ছে যখন (সূর্য পশ্চিম দিকে) ঢলতে শুরু করে এব শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে আসরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া। আসরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে যখন আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করে (যোহরের শেষ সময়) এবং তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন সূর্যের আলো হলুদ রং ধারণ করে। মাগরিবের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর এবং তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন শাফাক্ব চলে যায়। ঈশার প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে যখন শাফাক্ব বিলীন হয়ে যায়, আর তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন অর্ধেক রাত চলে যায়। ফযরের সলাতের প্রথম ওয়াক্ত যখন ভোর শুরু হয় এবং তার ওয়াক্ত শেষ হয় যখন সূর্য উঠা শুরু হয়।” [. তিরমিযী হা/১৫১; সহীহ- আলবানী (রহ), হাসান- যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) ।]
৪
অনুচ্ছেদ-২: আল্লাহ তাআলা সলাত হেফাযতের সাথে সাথে ‘সলাতুল উসতা’ বা মধ্যবর্তী সলাতকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে হেফাযত করতে বলেছেন।আল্লাহ তাআলা বলেন: حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ
“সলাতসমূহকে হেফাযত কর এবং মধ্যবর্তী সলাতও।” [. সূরা বাক্বারাহ: ২৩৮ আয়াত।]
ইমাম ইবনু কাসীর (রহ) বলেন:
يأمر تَعَالَى بِالْمُحَافَظَةِ عَلَى الصَّلَوَاتِ فِي أَوْقَاتِهَا وَحِفْظِ حُدُودِهَا وَأَدَائِهَا فِي أَوْقَاتِهَا، كَمَا ثَبَتَ فِي الصَّحِيحَيْنِ عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ : سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ: أَيُّ الْعَمَلِ أفضل؟ قال : «الصلاة في وَقْتِهَا» . قُلْتُ : ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ : «الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . قُلْتُ : ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ «بِرُّ الْوَالِدَيْنِ» … وَخَصَّ تَعَالَى مِنْ بَيْنِهَا بِمَزِيدِ التَّأْكِيدِ الصَّلَاةَ الْوُسْطَى .
“(এখানে) আল্লাহ তাআলা সলাতসমূহকে তার নির্ধারিত ওয়াক্ত মোতাবেক হেফাযত করা, সলাতের সীমারেখাগুলো হেফাযত করা এবং ওয়াক্ত মোতাবেক আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন- যেভাবে সহীহহাইনে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে: ‘আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞাসা করলাম: কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি (স) বললেন: ওয়াক্তমতো সলাত আদায় করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: অতঃপর কোনটি? তিনি (স) বললেন: আল-জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: অতঃপর কোনটি? তিনি (স) বললেন: পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।’ [. সহীহ বুখারী হা/৫২৭, ৫৯৭০, সহীহ মুসলিম ১৫৩ (১৩৭/৮৫)। অনত্র বর্ণিত হয়েছে: الصَّلَاةُ فِي أَوَّلِ وَقْتِهَا ‘প্রথম ওয়াক্তে সলাত আদায় করা।’ [সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩২৭, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৪৭৫; সনদ সহীহ-শুআয়েব আরনাউত]] …(অতঃপর আয়াতটিতে) আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্টভাবে মধ্যবর্তী সলাতের প্রতি ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছেন।” [. তাফসীর ইবনু কাসীর সূরা বাক্বারাহ’র ২৩৮ নং আয়াতের তাফসীর। বুঝা যাচ্ছে, জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ ও পিতামাতর প্রতি সদ্ব্যবহারের চেয়ে সময়মতো সলাত আদায় করাটা বেশি গুরুত্ববহ।]
“সলাতসমূহকে হেফাযত কর এবং মধ্যবর্তী সলাতও।” [. সূরা বাক্বারাহ: ২৩৮ আয়াত।]
ইমাম ইবনু কাসীর (রহ) বলেন:
يأمر تَعَالَى بِالْمُحَافَظَةِ عَلَى الصَّلَوَاتِ فِي أَوْقَاتِهَا وَحِفْظِ حُدُودِهَا وَأَدَائِهَا فِي أَوْقَاتِهَا، كَمَا ثَبَتَ فِي الصَّحِيحَيْنِ عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ : سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ: أَيُّ الْعَمَلِ أفضل؟ قال : «الصلاة في وَقْتِهَا» . قُلْتُ : ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ : «الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . قُلْتُ : ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ «بِرُّ الْوَالِدَيْنِ» … وَخَصَّ تَعَالَى مِنْ بَيْنِهَا بِمَزِيدِ التَّأْكِيدِ الصَّلَاةَ الْوُسْطَى .
“(এখানে) আল্লাহ তাআলা সলাতসমূহকে তার নির্ধারিত ওয়াক্ত মোতাবেক হেফাযত করা, সলাতের সীমারেখাগুলো হেফাযত করা এবং ওয়াক্ত মোতাবেক আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন- যেভাবে সহীহহাইনে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে: ‘আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞাসা করলাম: কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি (স) বললেন: ওয়াক্তমতো সলাত আদায় করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: অতঃপর কোনটি? তিনি (স) বললেন: আল-জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: অতঃপর কোনটি? তিনি (স) বললেন: পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।’ [. সহীহ বুখারী হা/৫২৭, ৫৯৭০, সহীহ মুসলিম ১৫৩ (১৩৭/৮৫)। অনত্র বর্ণিত হয়েছে: الصَّلَاةُ فِي أَوَّلِ وَقْتِهَا ‘প্রথম ওয়াক্তে সলাত আদায় করা।’ [সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩২৭, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৪৭৫; সনদ সহীহ-শুআয়েব আরনাউত]] …(অতঃপর আয়াতটিতে) আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্টভাবে মধ্যবর্তী সলাতের প্রতি ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছেন।” [. তাফসীর ইবনু কাসীর সূরা বাক্বারাহ’র ২৩৮ নং আয়াতের তাফসীর। বুঝা যাচ্ছে, জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ ও পিতামাতর প্রতি সদ্ব্যবহারের চেয়ে সময়মতো সলাত আদায় করাটা বেশি গুরুত্ববহ।]
হাদীস-২: আলী (রা) থেকে বর্ণিত,
لَمَّا كَانَ يَوْمُ الأَحْزَابِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «مَلَأَ اللَّهُ بُيُوتَهُمْ وَقُبُورَهُمْ نَارًا، شَغَلُونَا عَنِ الصَّلاَةِ الوُسْطَى حَتَّى غَابَتِ الشَّمْسُ»
“আহযাব যুদ্ধের দিন আল্লাহর রসূল (স) দুআ করেন: আল্লাহ তাদের (মুশরিকদের) ঘর ও কবর আগুনে পূর্ণ করুন। কেননা, তারা ‘সলাতুল উসতা’ থেকে আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।” [. সহীহ বুখারী হা/২৯৩১, সহীহ মুসলিম হা/১৩০৭ (২০২/৬২৭)।]
সাহাবী সামুরাহ বিন জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (স) বলেছেন:
صَلَاةُ الوُسْطَى صَلَاةُ العَصْرِ
“মধ্যবর্তী সলাত হল আসরের সলাত।” [. তিরমিযী হা/১৮২; সহীহ লি-গয়রিহী-আলবানী। অন্যত্র ইবনু মাসউদ (রা) থেকে- তিরমিযী হা/১৮১।]
কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
وقال الأكثرون وهو أرجح الأقوال انها صلوة العصر رواه جماعة عن رسول الله ﷺ وهو قول على وابن مسعود وابى أيوب وابى هريرة وعائشة رضى الله عنهم وبه قال ابراهيم النخعي وقتادة والحسن وهو مذهب ابى حنيفة واحمد .
“অধিকাংশ আলেমের মতে ‘সলাতুল উসতা’ হল- ‘সলাতুল আসর’ এবং এমতটিই অধিক গ্রহনীয়। এ বিষয়টি রসূলুল্লাহ (স) হতে একদল সাহাবী বর্ণনা করেছেন। এটি আলী, ইবনু মাসউদ, আবূ আইয়ুব, আবূ হুরায়রা, আয়েশা (রা) প্রমুখ সাহাবী এবং ইবরাহীম নাখঈ, ক্বাতাদা, ও হাসান প্রমুখ তাবেঈ (রহ)-এর অভিমত। আবূ হানীফা (রহ) ও আহমাদ (রহ)-এর মাযহাবও এটাই।…” [. তাফসীর মাযহারী (ইফা) ২/৭১২ পৃ:, সূরা বাক্বারাহ ২৩৮ নং আয়াতের তাফসীর।]
لَمَّا كَانَ يَوْمُ الأَحْزَابِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «مَلَأَ اللَّهُ بُيُوتَهُمْ وَقُبُورَهُمْ نَارًا، شَغَلُونَا عَنِ الصَّلاَةِ الوُسْطَى حَتَّى غَابَتِ الشَّمْسُ»
“আহযাব যুদ্ধের দিন আল্লাহর রসূল (স) দুআ করেন: আল্লাহ তাদের (মুশরিকদের) ঘর ও কবর আগুনে পূর্ণ করুন। কেননা, তারা ‘সলাতুল উসতা’ থেকে আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।” [. সহীহ বুখারী হা/২৯৩১, সহীহ মুসলিম হা/১৩০৭ (২০২/৬২৭)।]
সাহাবী সামুরাহ বিন জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (স) বলেছেন:
صَلَاةُ الوُسْطَى صَلَاةُ العَصْرِ
“মধ্যবর্তী সলাত হল আসরের সলাত।” [. তিরমিযী হা/১৮২; সহীহ লি-গয়রিহী-আলবানী। অন্যত্র ইবনু মাসউদ (রা) থেকে- তিরমিযী হা/১৮১।]
কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
وقال الأكثرون وهو أرجح الأقوال انها صلوة العصر رواه جماعة عن رسول الله ﷺ وهو قول على وابن مسعود وابى أيوب وابى هريرة وعائشة رضى الله عنهم وبه قال ابراهيم النخعي وقتادة والحسن وهو مذهب ابى حنيفة واحمد .
“অধিকাংশ আলেমের মতে ‘সলাতুল উসতা’ হল- ‘সলাতুল আসর’ এবং এমতটিই অধিক গ্রহনীয়। এ বিষয়টি রসূলুল্লাহ (স) হতে একদল সাহাবী বর্ণনা করেছেন। এটি আলী, ইবনু মাসউদ, আবূ আইয়ুব, আবূ হুরায়রা, আয়েশা (রা) প্রমুখ সাহাবী এবং ইবরাহীম নাখঈ, ক্বাতাদা, ও হাসান প্রমুখ তাবেঈ (রহ)-এর অভিমত। আবূ হানীফা (রহ) ও আহমাদ (রহ)-এর মাযহাবও এটাই।…” [. তাফসীর মাযহারী (ইফা) ২/৭১২ পৃ:, সূরা বাক্বারাহ ২৩৮ নং আয়াতের তাফসীর।]
৬
অনুচ্ছেদ-৪: রসূলুল্লাহ (স)-এর হাদীসে সলাত হেফাযত বলতে- আল্লাহ তাআলা‘র ভয়-ভীতিসহ ওয়াক্ত মোতাবেক সলাত আদায়ের সাথে সাথে ওযু, রুকু, সাজদা প্রভৃতি সঠিকভাবে আদায় করার অর্থ নেয়া হয়েছে।হাদীস-৩: সাহাবী উবাদাহ ইবনু সামিত (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
أَشْهَدُ أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ : «خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللَّهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ، وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ، إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ»
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে এবং আল্লাহ-ভীতি অবলম্বন করে ওয়াক্তমতো সলাত আদায় করবে এবং রুকু ও সাজদা পূর্ণভাবে আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে অঙ্গীকার। তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি তা করবে না, তার জন্য আল্লাহর নিকট কোনো অঙ্গীকার নেই। ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন, আর ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন।” [. আবূ দাউদ হা/৪২৫, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৭৩২, ২৪১৭; সহীহ-আলবানী।]
হাদীস-৪: সাহাবী কা‘ব বিন উজরা (রা) বর্ণনা করেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : " فإنَّ ربَّكم يقول : مَن صلّى الصلاةَ لوقتِها، وحافظ عليها ولمْ يُضَيِّعها استخفافاً بحقِّها؛ فله عَلَيَّ عهدٌ أنْ أُدخِلَه الجنّةَ . ومَن لمْ يصلِّها لِوقتها، ولمْ يحافظْ عليها، وضَيَّعها استخفافاً بحقِّها؛ فلا عهد له عليَّ، إنْ شئتُ عذّبتُه، وإنْ شئتُ غفرتُ له ".
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি যথাসময়ে সলাত আদায় করবে, তা হেফাযত করবে এবং তা হালকা মনে করে নষ্ট করবে না, তাকে আামি জান্নাতে প্রবেশ করাব। আমার পক্ষ থেকে তার জন্য রয়েছে অঙ্গীকার। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সময়মতো সলাত আদায় করবে না, তা হেফাযত করবে না, বরং তা হালকা মনে করে বিনষ্ট করবে, তার জন্য আমার কোনো অঙ্গীকার নেই। আামি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেব, নতুবা তাকে ক্ষমা করব।” [. তাবারানী ‘কাবীর’ ও ‘আওসাত’, আহমাদ, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (ইফা) ১/২৮৩ পৃ: হা/৯। (সাক্ষ্যের ভিত্তিতে) হাসান লি-গয়রিহি- আলবানী। [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহিব হা/৪০১। শুআয়েব আরনাউত বলেছেন: সহীহ লিগয়রিহি- তবে সনদটি বিচ্ছিন্নতার কারণে যঈফ…। [তাহক্বীক্ব মুসনাদু আহমাদ হা/১৮১৩২]]
أَشْهَدُ أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ : «خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللَّهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ، وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ، إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ»
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে এবং আল্লাহ-ভীতি অবলম্বন করে ওয়াক্তমতো সলাত আদায় করবে এবং রুকু ও সাজদা পূর্ণভাবে আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে অঙ্গীকার। তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি তা করবে না, তার জন্য আল্লাহর নিকট কোনো অঙ্গীকার নেই। ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন, আর ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন।” [. আবূ দাউদ হা/৪২৫, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৭৩২, ২৪১৭; সহীহ-আলবানী।]
হাদীস-৪: সাহাবী কা‘ব বিন উজরা (রা) বর্ণনা করেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : " فإنَّ ربَّكم يقول : مَن صلّى الصلاةَ لوقتِها، وحافظ عليها ولمْ يُضَيِّعها استخفافاً بحقِّها؛ فله عَلَيَّ عهدٌ أنْ أُدخِلَه الجنّةَ . ومَن لمْ يصلِّها لِوقتها، ولمْ يحافظْ عليها، وضَيَّعها استخفافاً بحقِّها؛ فلا عهد له عليَّ، إنْ شئتُ عذّبتُه، وإنْ شئتُ غفرتُ له ".
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি যথাসময়ে সলাত আদায় করবে, তা হেফাযত করবে এবং তা হালকা মনে করে নষ্ট করবে না, তাকে আামি জান্নাতে প্রবেশ করাব। আমার পক্ষ থেকে তার জন্য রয়েছে অঙ্গীকার। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সময়মতো সলাত আদায় করবে না, তা হেফাযত করবে না, বরং তা হালকা মনে করে বিনষ্ট করবে, তার জন্য আমার কোনো অঙ্গীকার নেই। আামি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেব, নতুবা তাকে ক্ষমা করব।” [. তাবারানী ‘কাবীর’ ও ‘আওসাত’, আহমাদ, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (ইফা) ১/২৮৩ পৃ: হা/৯। (সাক্ষ্যের ভিত্তিতে) হাসান লি-গয়রিহি- আলবানী। [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহিব হা/৪০১। শুআয়েব আরনাউত বলেছেন: সহীহ লিগয়রিহি- তবে সনদটি বিচ্ছিন্নতার কারণে যঈফ…। [তাহক্বীক্ব মুসনাদু আহমাদ হা/১৮১৩২]]
৭
অনুচ্ছেদ-৫: আসরের সলাতকে বলা হয়েছে ‘সলাতুল উসতা’ বা মধ্যবর্তী সলাত, আর উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-কে সম্বোধন করা হয়েছে ‘উম্মাতে ওয়াসাত’ বা মধ্যপন্থী উম্মাত হিসেবে।আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا .
“এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে ‘উম্মাতে ওয়াসাত’ বা মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।” [. সূরা বাক্বারাহ: ১৪৩ আয়াত।]
ইমাম কুরতুবী (রহ) লিখেছেন:
المعنى : وكما أن الكعبة وسط الأرض كذلك جعلناكم أمة وسطا ، أي جعلناكم دون الأنبياء وفوق الأمم . والوسط : العدل ، وأصل هذا أن أحمد الأشياء أوسطها .
“আয়াতটির অর্থ: যেভাবে কা‘বা পৃথিবীর ওয়াসাতে (মধ্যস্থানে), তেমনি তোমাদেরকে উম্মাতে ওয়াসাত বানানো হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদেরকে নবীগণ ছাড়া অন্য উম্মাতের উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আর ‘আল-ওয়াসাত’ হল, ‘আল-আদল’ (ন্যায়পরায়ণ)। এর প্রকৃত দাবি হল, আহমাদ (সর্বোৎকৃষ্ট/ সর্বোন্নত) বস্তু মাঝামাঝি হয়ে থাকে।” [. তাফসীর কুরতুবী, সূরা বাক্বারাহ: ১৪৩ আয়াতের তাফসীর দ্র:।]
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا .
“এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে ‘উম্মাতে ওয়াসাত’ বা মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।” [. সূরা বাক্বারাহ: ১৪৩ আয়াত।]
ইমাম কুরতুবী (রহ) লিখেছেন:
المعنى : وكما أن الكعبة وسط الأرض كذلك جعلناكم أمة وسطا ، أي جعلناكم دون الأنبياء وفوق الأمم . والوسط : العدل ، وأصل هذا أن أحمد الأشياء أوسطها .
“আয়াতটির অর্থ: যেভাবে কা‘বা পৃথিবীর ওয়াসাতে (মধ্যস্থানে), তেমনি তোমাদেরকে উম্মাতে ওয়াসাত বানানো হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদেরকে নবীগণ ছাড়া অন্য উম্মাতের উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আর ‘আল-ওয়াসাত’ হল, ‘আল-আদল’ (ন্যায়পরায়ণ)। এর প্রকৃত দাবি হল, আহমাদ (সর্বোৎকৃষ্ট/ সর্বোন্নত) বস্তু মাঝামাঝি হয়ে থাকে।” [. তাফসীর কুরতুবী, সূরা বাক্বারাহ: ১৪৩ আয়াতের তাফসীর দ্র:।]
৮
অনুচ্ছেদ-৬: পূর্ববর্তী উম্মাতের সাথে উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-কে আসরের সলাতের মেয়াদে দ্বিগুণ ফযিলত দ্বারা তুলনা করা হয়েছে।হাদীস-৫: সাহাবী আবূ মূসা (রা) থেকে বর্ণিত:
عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَثَلُ الْمُسْلِمِينَ وَالْيَهُودِ وَالنَّصَارَى كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَأْجَرَ قَوْمًا يَعْمَلُونَ لَهُ عَمَلاً يَوْمًا إِلَى اللَّيْلِ عَلَى أَجْرٍ مَعْلُومٍ فَعَمِلُوا لَهُ إِلَى نِصْفِ النَّهَارِ فَقَالُوا لاَ حَاجَةَ لَنَا إِلَى أَجْرِكَ الَّذِي شَرَطْتَ لَنَا وَمَا عَمِلْنَا بَاطِلٌ فَقَالَ لَهُمْ لاَ تَفْعَلُوا أَكْمِلُوا بَقِيَّةَ عَمَلِكُمْ وَخُذُوا أَجْرَكُمْ كَامِلاً فَأَبَوْا وَتَرَكُوا وَاسْتَأْجَرَ أَجِيرَيْنِ بَعْدَهُمْ فَقَالَ لَهُمَا أَكْمِلاَ بَقِيَّةَ يَوْمِكُمَا هَذَا وَلَكُمَا الَّذِي شَرَطْتُ لَهُمْ مِنْ الأَجْرِ فَعَمِلُوا حَتَّى إِذَا كَانَ حِينُ صَلاَةِ الْعَصْرِ قَالاَ لَكَ مَا عَمِلْنَا بَاطِلٌ وَلَكَ الأَجْرُ الَّذِي جَعَلْتَ لَنَا فِيهِ فَقَالَ لَهُمَا أَكْمِلاَ بَقِيَّةَ عَمَلِكُمَا مَا بَقِيَ مِنْ النَّهَارِ شَيْءٌ يَسِيرٌ فَأَبَيَا وَاسْتَأْجَرَ قَوْمًا أَنْ يَعْمَلُوا لَهُ بَقِيَّةَ يَوْمِهِمْ فَعَمِلُوا بَقِيَّةَ يَوْمِهِمْ حَتَّى غَابَتْ الشَّمْسُ وَاسْتَكْمَلُوا أَجْرَ الْفَرِيقَيْنِ كِلَيْهِمَا فَذَلِكَ مَثَلُهُمْ وَمَثَلُ مَا قَبِلُوا مِنْ هَذَا النُّورِ .
“নবী (স) বলেছেন: মুসলিম, ইয়াহূদী ও নাসারাদের উদাহরণ এরূপ, যেমন কোনো এক ব্যক্তি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করার জন্য কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ করল। তারা দুপুর পর্যন্ত কাজ করে বলল, তুমি আমাদের যে পারিশ্রমিক দিতে চেয়েছিলে তাতে আমাদের প্রয়োজন নেই, আর আমরা যে কাজ করেছি, তা বাতিল। সে ব্যক্তি (নিয়োগকর্তা) বলল, তোমরা এরূপ করবে না, বাকী কাজ পূর্ণ করে পুরো পারিশ্রমিক নিয়ে নাও। কিন্তু তারা তা করতে অস্বীকার করল এবং কাজ করা বন্ধ করে দিল। এরপর সে অন্য দু’জন মজুর কাজে নিযুক্ত করল এবং তাদেরকে বলল, তোমরা এই দিনের বাকী অংশ পূর্ণ করে দাও। আমি তোমাদেরকে সে পরিমাণ মজুরীই দিব, যা পূর্ববর্তীদের জন্য নির্ধারিত করেছিলাম। তখন তারা কাজ শুরু করল, কিন্তু যখন আসরের সলাতের সময় হল তখন তারা বলতে লাগল, আমরা যা করেছি তা বাতিল, আর আপনি এর জন্য যে মজুরী নির্ধারণ করছেন তা আপনারই। সে ব্যক্তি বলল, তোমরা বাকী কাজ করে দাও, দিনের তো সামান্যই বাকী রয়েছে। কিন্তু তারা অস্বীকার করল। তারপর সে ব্যক্তি অপর কিছু লোককে বাকী দিনের জন্য কাজে নিযুক্ত করল। তারা বাকী দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করল এবং পূর্ববর্তী দু’দলের পূর্ণ মজুরী নিয়ে নিল। এটা উদাহরণ হল, তাদের (ইয়াহুদী ও নাসারা) এবং এই নূর (ইসলাম) যারা গ্রহণ করেছে তাদের।” [. সহীহ বুখারী হা/২২৭১।]
সাহাবী ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ وَهُوَ قَائِمٌ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُولَ إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَا سَلَفَ قَبْلَكُمْ مِنْ الْأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ أُعْطِيَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ التَّوْرَاةَ فَعَمِلُوا بِهَا حَتَّى انْتَصَفَ النَّهَارُ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ثُمَّ أُعْطِيَ أَهْلُ الإِنْجِيلِ الإِنْجِيلَ فَعَمِلُوا بِهِ حَتَّى صَلاَةِ الْعَصْرِ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ثُمَّ أُعْطِيتُمْ الْقُرْآنَ فَعَمِلْتُمْ بِهِ حَتَّى غُرُوبِ الشَّمْسِ فَأُعْطِيتُمْ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ قَالَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ رَبَّنَا هَؤُلاَءِ أَقَلُّ عَمَلاً وَأَكْثَرُ أَجْرًا قَالَ هَلْ ظَلَمْتُكُمْ مِنْ أَجْرِكُمْ مِنْ شَيْءٍ قَالُوا لاَ فَقَالَ فَذَلِكَ فَضْلِي أُوتِيهِ مَنْ أَشَاءُ .
“আমি রসূলুল্লাহ্ (স)-কে বলতে শুনেছি, যখন তিনি মিম্বরে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি বললেন: তোমাদের আগের উম্মাতদের তুলনায় তোমাদের অবস্থানের সময়কাল আসরের সলাত ও সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়। তাওরাতের অনুসারীদেরকে তাওরাত দেয়া হলে তারা সে মোতাবেক আমল করল, তবে দুপুর হলে তারা অপারগ হয়ে গেল। এ জন্য তাদেরকে এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হলো। অতঃপর ইনজীলের অনুসারীদেরকে ইনজীল দেয়া হলো, তারা সে মোতাবেক আমল করল আসরের সলাত পর্যন্ত, তারপর তারা অক্ষম হয়ে পড়লে তাদেরকে দেয়া হলো এক কীরাত এক কীরাত করে। অতঃপর তোমাদেরকে কুরআন দেয়া হলো। ফলে এ কুরআন মোতাবেক তোমরা আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমল করেছ। এ জন্য তোমাদেরকে দু’কীরাত দু’কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে। তাওরাতের অনুসারীরা বলল, হে আমাদের রব! তারাতো আমলে সবচেয়ে কম আবার পারিশ্রমিকে সবচেয়ে অধিক। আল্লাহ্ তখন বললেন: তোমাদের পারিশ্রমিকে তোমাদের উপর কোনো যুলুম করা হয়েছে কি? তারা বলল, না। তখন আল্লাহ্ বললেন, সেটি হচ্ছে আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে চাই তাকে দিই।” [. সহীহ বুখারী হা/৭৪৬৭; অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/২২৬৮, ৩৪৫৯, ৫০২১, ৭৫৩৩ ।]
عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَثَلُ الْمُسْلِمِينَ وَالْيَهُودِ وَالنَّصَارَى كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَأْجَرَ قَوْمًا يَعْمَلُونَ لَهُ عَمَلاً يَوْمًا إِلَى اللَّيْلِ عَلَى أَجْرٍ مَعْلُومٍ فَعَمِلُوا لَهُ إِلَى نِصْفِ النَّهَارِ فَقَالُوا لاَ حَاجَةَ لَنَا إِلَى أَجْرِكَ الَّذِي شَرَطْتَ لَنَا وَمَا عَمِلْنَا بَاطِلٌ فَقَالَ لَهُمْ لاَ تَفْعَلُوا أَكْمِلُوا بَقِيَّةَ عَمَلِكُمْ وَخُذُوا أَجْرَكُمْ كَامِلاً فَأَبَوْا وَتَرَكُوا وَاسْتَأْجَرَ أَجِيرَيْنِ بَعْدَهُمْ فَقَالَ لَهُمَا أَكْمِلاَ بَقِيَّةَ يَوْمِكُمَا هَذَا وَلَكُمَا الَّذِي شَرَطْتُ لَهُمْ مِنْ الأَجْرِ فَعَمِلُوا حَتَّى إِذَا كَانَ حِينُ صَلاَةِ الْعَصْرِ قَالاَ لَكَ مَا عَمِلْنَا بَاطِلٌ وَلَكَ الأَجْرُ الَّذِي جَعَلْتَ لَنَا فِيهِ فَقَالَ لَهُمَا أَكْمِلاَ بَقِيَّةَ عَمَلِكُمَا مَا بَقِيَ مِنْ النَّهَارِ شَيْءٌ يَسِيرٌ فَأَبَيَا وَاسْتَأْجَرَ قَوْمًا أَنْ يَعْمَلُوا لَهُ بَقِيَّةَ يَوْمِهِمْ فَعَمِلُوا بَقِيَّةَ يَوْمِهِمْ حَتَّى غَابَتْ الشَّمْسُ وَاسْتَكْمَلُوا أَجْرَ الْفَرِيقَيْنِ كِلَيْهِمَا فَذَلِكَ مَثَلُهُمْ وَمَثَلُ مَا قَبِلُوا مِنْ هَذَا النُّورِ .
“নবী (স) বলেছেন: মুসলিম, ইয়াহূদী ও নাসারাদের উদাহরণ এরূপ, যেমন কোনো এক ব্যক্তি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করার জন্য কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ করল। তারা দুপুর পর্যন্ত কাজ করে বলল, তুমি আমাদের যে পারিশ্রমিক দিতে চেয়েছিলে তাতে আমাদের প্রয়োজন নেই, আর আমরা যে কাজ করেছি, তা বাতিল। সে ব্যক্তি (নিয়োগকর্তা) বলল, তোমরা এরূপ করবে না, বাকী কাজ পূর্ণ করে পুরো পারিশ্রমিক নিয়ে নাও। কিন্তু তারা তা করতে অস্বীকার করল এবং কাজ করা বন্ধ করে দিল। এরপর সে অন্য দু’জন মজুর কাজে নিযুক্ত করল এবং তাদেরকে বলল, তোমরা এই দিনের বাকী অংশ পূর্ণ করে দাও। আমি তোমাদেরকে সে পরিমাণ মজুরীই দিব, যা পূর্ববর্তীদের জন্য নির্ধারিত করেছিলাম। তখন তারা কাজ শুরু করল, কিন্তু যখন আসরের সলাতের সময় হল তখন তারা বলতে লাগল, আমরা যা করেছি তা বাতিল, আর আপনি এর জন্য যে মজুরী নির্ধারণ করছেন তা আপনারই। সে ব্যক্তি বলল, তোমরা বাকী কাজ করে দাও, দিনের তো সামান্যই বাকী রয়েছে। কিন্তু তারা অস্বীকার করল। তারপর সে ব্যক্তি অপর কিছু লোককে বাকী দিনের জন্য কাজে নিযুক্ত করল। তারা বাকী দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করল এবং পূর্ববর্তী দু’দলের পূর্ণ মজুরী নিয়ে নিল। এটা উদাহরণ হল, তাদের (ইয়াহুদী ও নাসারা) এবং এই নূর (ইসলাম) যারা গ্রহণ করেছে তাদের।” [. সহীহ বুখারী হা/২২৭১।]
সাহাবী ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ وَهُوَ قَائِمٌ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُولَ إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَا سَلَفَ قَبْلَكُمْ مِنْ الْأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ أُعْطِيَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ التَّوْرَاةَ فَعَمِلُوا بِهَا حَتَّى انْتَصَفَ النَّهَارُ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ثُمَّ أُعْطِيَ أَهْلُ الإِنْجِيلِ الإِنْجِيلَ فَعَمِلُوا بِهِ حَتَّى صَلاَةِ الْعَصْرِ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ثُمَّ أُعْطِيتُمْ الْقُرْآنَ فَعَمِلْتُمْ بِهِ حَتَّى غُرُوبِ الشَّمْسِ فَأُعْطِيتُمْ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ قَالَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ رَبَّنَا هَؤُلاَءِ أَقَلُّ عَمَلاً وَأَكْثَرُ أَجْرًا قَالَ هَلْ ظَلَمْتُكُمْ مِنْ أَجْرِكُمْ مِنْ شَيْءٍ قَالُوا لاَ فَقَالَ فَذَلِكَ فَضْلِي أُوتِيهِ مَنْ أَشَاءُ .
“আমি রসূলুল্লাহ্ (স)-কে বলতে শুনেছি, যখন তিনি মিম্বরে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি বললেন: তোমাদের আগের উম্মাতদের তুলনায় তোমাদের অবস্থানের সময়কাল আসরের সলাত ও সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়। তাওরাতের অনুসারীদেরকে তাওরাত দেয়া হলে তারা সে মোতাবেক আমল করল, তবে দুপুর হলে তারা অপারগ হয়ে গেল। এ জন্য তাদেরকে এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হলো। অতঃপর ইনজীলের অনুসারীদেরকে ইনজীল দেয়া হলো, তারা সে মোতাবেক আমল করল আসরের সলাত পর্যন্ত, তারপর তারা অক্ষম হয়ে পড়লে তাদেরকে দেয়া হলো এক কীরাত এক কীরাত করে। অতঃপর তোমাদেরকে কুরআন দেয়া হলো। ফলে এ কুরআন মোতাবেক তোমরা আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমল করেছ। এ জন্য তোমাদেরকে দু’কীরাত দু’কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে। তাওরাতের অনুসারীরা বলল, হে আমাদের রব! তারাতো আমলে সবচেয়ে কম আবার পারিশ্রমিকে সবচেয়ে অধিক। আল্লাহ্ তখন বললেন: তোমাদের পারিশ্রমিকে তোমাদের উপর কোনো যুলুম করা হয়েছে কি? তারা বলল, না। তখন আল্লাহ্ বললেন, সেটি হচ্ছে আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে চাই তাকে দিই।” [. সহীহ বুখারী হা/৭৪৬৭; অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/২২৬৮, ৩৪৫৯, ৫০২১, ৭৫৩৩ ।]
৯
অনুচ্ছেদ-৭: পূর্ববর্তী উম্মাত আসরের সলাতকে মর্যাদা দিতে পারেনি। তা-ই যে ব্যক্তি এই সলাত যথাযথভাবে আদায় করবে, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।হাদীস-৬: সাহাবী আবূ বাসরাহ আল-গিফারী (রা) থেকে বর্ণিত:
صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ الْعَصْرَ بِالْمُخَمَّصِ، فَقَالَ : «إِنَّ هَذِهِ الصَّلَاةَ عُرِضَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَضَيَّعُوهَا، فَمَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَ لَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ .
“(একদা) রসূলুল্লাহ্ (স) 'মুখাম্মাস' নামক স্থানে আমাদের নিয়ে আসরের সলাত আদায় করলেন। তিনি (স) বললেন: এই সলাত তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের নিকট পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এর মর্যাদা রক্ষা করেনি। যে ব্যক্তি উক্ত সলাতকে হেফাযত করবে, সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৮১২ (২৯২/৮৩০), নাসাঈ হা/৫২১।]
صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ الْعَصْرَ بِالْمُخَمَّصِ، فَقَالَ : «إِنَّ هَذِهِ الصَّلَاةَ عُرِضَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَضَيَّعُوهَا، فَمَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَ لَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ .
“(একদা) রসূলুল্লাহ্ (স) 'মুখাম্মাস' নামক স্থানে আমাদের নিয়ে আসরের সলাত আদায় করলেন। তিনি (স) বললেন: এই সলাত তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের নিকট পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এর মর্যাদা রক্ষা করেনি। যে ব্যক্তি উক্ত সলাতকে হেফাযত করবে, সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৮১২ (২৯২/৮৩০), নাসাঈ হা/৫২১।]
১০
অনুচ্ছেদ-৮: আসরের সলাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, তখন মালাকগণ আল্লাহ তাআলা‘র কাছে সলাতরত থাকার সংবাদ নিয়ে যান। এ বৈশিষ্ট্যটি ফজরের সলাতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাকী তিন ওয়াক্তের সলাতের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়।– যা সঠিক ওয়াক্তে ফজর ও আসরের সলাত আদায়ের গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে।হাদীস-৭: সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ : «يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يصلونَ وأتيناهم وهم يصلونَ»
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালাইকাহ্ আসতে থাকেন। তারা ফজর ও আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন: তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় রেখে এসেছ? উত্তরে মালাকগণ বলেন: আমরা আপনার বান্দাদেরকে সলাত আদায়রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সলাত আদায় করছিল।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫৫, সহীহ মুসলিম হা/১৩১৮ (২১০/৬৩২), মিশকাত হা/৬২৬।]
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ : «يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يصلونَ وأتيناهم وهم يصلونَ»
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালাইকাহ্ আসতে থাকেন। তারা ফজর ও আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন: তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় রেখে এসেছ? উত্তরে মালাকগণ বলেন: আমরা আপনার বান্দাদেরকে সলাত আদায়রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সলাত আদায় করছিল।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫৫, সহীহ মুসলিম হা/১৩১৮ (২১০/৬৩২), মিশকাত হা/৬২৬।]
১১
অনুচ্ছেদ-৯: সূর্যের তাপ বেশি হলে যোহরের সলাতকে ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত দেরিতে আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [. সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত:قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَبْرِدُوا بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ “রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যোহরের সলাত গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে।”[সহীহ বুখারী হা/৫৩৮]]তেমনি ফযিলতের উদ্দেশ্যে ঈশার সলাতকে পিছিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। [. সাহাবী মুআয বিন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত:قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَعْتِمُوا بِهَذِهِ الصَّلَاةِ فَإِنَّكُمْ قَدْ فُضِّلْتُمْ بِهَا عَلَى سَائِرِ الْأُمَمِ وَلَمْ تُصَلِّهَا أُمَّةٌ قَبْلَكُمْ.“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: তোমরা এই (ঈশার) সলাতকে দেরি করে পড়বে। কেননা, এই সলাত দ্বারা তোমাদেরকে অন্য উম্মাতের উপর ফযিলত দেয়া হয়েছে। তোমাদের পূর্বে কোনো উম্মাত কখনো এই সলাত পড়েনি।”[আবূ দাউদ হা/৪২১, মিশকাত হা/৬১২; সহীহ- আলবানী, যুবায়ের আলী যাঈ]] পক্ষান্তরে আসরের সলাত শীঘ্রই আদায়ের নির্দেশ রয়েছে। যার মধ্যে ধমকি ও ক্ষতির বিবরণ রয়েছে।হাদীস-৮: আবূ মালীহ (রহ) হতে বর্ণিত:
كُنَّا مَعَ بُرَيْدَةَ فِي يَوْمٍ ذِي غَيْمٍ فَقَالَ بَكِّرُوا بِالصَّلاَةِ فَإِنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ " مَنْ تَرَكَ صَلاَةَ الْعَصْرِ حَبِطَ عَمَلُهُ " .
“এক মেঘলা দিনে আমরা সাহাবী বুরাইদা (রা) -এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, শীঘ্র সলাত আদায় করে নাও। কেননা, নবী (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি আসরের সলাত ছেড়ে দেয় তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৯৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৩৬।]
كُنَّا مَعَ بُرَيْدَةَ فِي يَوْمٍ ذِي غَيْمٍ فَقَالَ بَكِّرُوا بِالصَّلاَةِ فَإِنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ " مَنْ تَرَكَ صَلاَةَ الْعَصْرِ حَبِطَ عَمَلُهُ " .
“এক মেঘলা দিনে আমরা সাহাবী বুরাইদা (রা) -এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, শীঘ্র সলাত আদায় করে নাও। কেননা, নবী (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি আসরের সলাত ছেড়ে দেয় তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৯৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৩৬।]
১২
অনুচ্ছেদ-১০: সূর্যের তাপ বেশি হওয়ার কারণে যোহরের সলাত এক ছায়া তথা আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার বৈধতা।হাদীস-৯: সাহাবী আবূ যার (রা) বলেন:
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فِي سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى سَاوَى الظِّلُّ التُّلُولَ فَقَالَ النَّبِيُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ .
“আমরা এক সফরে নবী (স)-এর সাথে ছিলাম। মুয়াযযিন আযান দিতে চাইলে তিনি বললেন: ঠাণ্ডা হতে দাও। কিছুক্ষণ পর মুয়াযযিন পুনরায় আযান দিতে চাইলে তিনি বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। অতঃপর সে আবার আযান দিতে চাইলে তিনি আবার বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। এভাবে বিলম্ব করতে করতে টিলাগুলোর ছায়া তার সমান হয়ে গেল। পরে নবী (স) বললেন: উত্তাপের প্রখরতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ বিশেষ।” [. সহীহ বুখারী হা/৬২৯।]
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فِي سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى سَاوَى الظِّلُّ التُّلُولَ فَقَالَ النَّبِيُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ .
“আমরা এক সফরে নবী (স)-এর সাথে ছিলাম। মুয়াযযিন আযান দিতে চাইলে তিনি বললেন: ঠাণ্ডা হতে দাও। কিছুক্ষণ পর মুয়াযযিন পুনরায় আযান দিতে চাইলে তিনি বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। অতঃপর সে আবার আযান দিতে চাইলে তিনি আবার বললেন, ঠাণ্ডা হতে দাও। এভাবে বিলম্ব করতে করতে টিলাগুলোর ছায়া তার সমান হয়ে গেল। পরে নবী (স) বললেন: উত্তাপের প্রখরতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ বিশেষ।” [. সহীহ বুখারী হা/৬২৯।]
১৩
অনুচ্ছেদ-১১: মাগরিবের সলাত আদায়ে দেরি না করার প্রতি এভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে যে, এর মধ্যে উম্মাতের কল্যাণ রয়েছে। কিন্তু ধমকি বা ক্ষতির বিবরণ নেই।হাদীস-১০: সাহাবী আবূ আইয়ুব আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: " لَا تَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍ أَوْ قَالَ : عَلَى الْفِطْرَةِ مَا لَمْ يُؤَخِّرُوا الْمَغْرِبَ إِلَى أَنْ تَشْتَبِكَ النُّجُومُ "
“রসূলূল্লাহ (স) বলেছেন: আমার উম্মাত সর্বদা কল্যাণে থাকবে, কিংবা বলেছেন: ফিতরাতের উপর থাকবে, যতদিন তারা মাগবিরে সলাত তারকারাজি ঘন হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করবে না।” [. আবূ দাউদ হা/৪১৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৩৯। হাসান-আলবানী, আলী যাঈ।]
ইমাম ইবনু খুযায়মাহ (রহ) বলেন:
اشْتِبَاكَ النُّجُومِ يَكُونُ قَبْلَ غَيْبُوبَةِ الشَّفَقِ بِوَقْتٍ طَوِيلٍ يُمْكِنُ أَنْ يُصَلَّى بَعْدَ اشْتِبَاكِ النُّجُومِ قَبْلَ غَيْبُوبَةِ الشَّفَقِ رَكَعَاتٌ كَثِيرَةٌ أَكْثَرُ مِنْ أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ .
“তারার চমক বা উজ্জ্বলতা লালীমা অদৃশ্য হবার অনেক আগেই শুরু হয়। তারকারাজির উজ্জলতার পর ও লালীমা অদৃশ্য হবার পূর্বে চার রাকআতের থেকে অনেক রাকআত বেশী আদায় করা যায়।” [. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৪০-এর পরবর্তী মন্তব্য।]
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: " لَا تَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍ أَوْ قَالَ : عَلَى الْفِطْرَةِ مَا لَمْ يُؤَخِّرُوا الْمَغْرِبَ إِلَى أَنْ تَشْتَبِكَ النُّجُومُ "
“রসূলূল্লাহ (স) বলেছেন: আমার উম্মাত সর্বদা কল্যাণে থাকবে, কিংবা বলেছেন: ফিতরাতের উপর থাকবে, যতদিন তারা মাগবিরে সলাত তারকারাজি ঘন হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করবে না।” [. আবূ দাউদ হা/৪১৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৩৯। হাসান-আলবানী, আলী যাঈ।]
ইমাম ইবনু খুযায়মাহ (রহ) বলেন:
اشْتِبَاكَ النُّجُومِ يَكُونُ قَبْلَ غَيْبُوبَةِ الشَّفَقِ بِوَقْتٍ طَوِيلٍ يُمْكِنُ أَنْ يُصَلَّى بَعْدَ اشْتِبَاكِ النُّجُومِ قَبْلَ غَيْبُوبَةِ الشَّفَقِ رَكَعَاتٌ كَثِيرَةٌ أَكْثَرُ مِنْ أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ .
“তারার চমক বা উজ্জ্বলতা লালীমা অদৃশ্য হবার অনেক আগেই শুরু হয়। তারকারাজির উজ্জলতার পর ও লালীমা অদৃশ্য হবার পূর্বে চার রাকআতের থেকে অনেক রাকআত বেশী আদায় করা যায়।” [. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৪০-এর পরবর্তী মন্তব্য।]
১৪
অনুচ্ছেদ-১২: ইফতারের জন্য মাগরিবের জামাআতের শরীক হওয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা রয়েছে, [. সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ وَأَحَدُكُمْ صَائِمٌ فَلْيَبْدَأْ بِالْعَشَاءِ قَبْلَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ وَلَا تعجلوا عن عشائكم““যখন সলাত দাঁড়ায় (ইক্বামাত দেয়া হয়) আর তোমাদের কেউ সায়িম (রোযাদার), তা হলে সে যেন মাগরিবের সলাতের পূর্বে তার সন্ধ্যার খাবার খেয়ে নেয়। আর সে যেন সন্ধ্যার খাবার গ্রহণে তাড়াহুড়া না করে। [সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২০৬৮- আলবানী ও শুআয়েব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (স্ব স্ব তাহক্বীক্ব ইবনু হিব্বান হা/২০৬৮)]] কিন্তু আসরের সলাতে ক্ষেত্রে শুরুর ওয়াক্তের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সুযোগ পেলে দেরিতে হওয়া আসরের জামাআতে শরীক হওয়া যাবে।হাদীস-১১: পরবর্তী অনুচ্ছেদ দ্র:।
১৫
অনুচ্ছেদ-১৩: কম লোক উপস্থিত হলে ঈশার জামাআত দেরিতে শুরু করা সুন্নাত। [. তাবেঈ আমর বিন হাসান বিন আলী (রহ) বর্ণনা করেন:سَأَلْنَا جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ صَلَاةِ النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ كَانَ يُصَلِّي الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَالْمَغْرِبَ إِذَا وَجَبَتْ وَالْعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ وَإِذَا قَلُّوا أَخَّرَ وَالصُّبْح بِغَلَس“আমরা সাহাবী জাবির বিন আব্দুল্লাহকে নবী (স) -এর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি (স) বললেন: নবী (স) যোহর পড়তেন মধ্যাহ্ন গড়ালেই, আসর পড়তেন সূর্য জীবন্ত থাকতেই, মাগরিব পড়তেন সূর্য ডুবলেই। ঈশার ক্ষেত্রে লোক বেশি হলে শীঘ্র পড়তেন আর লোক কম হলে দেরি করতেন এবং ফজর পড়তেন অন্ধকারে।” [সহীহ বুখারী হা/৫৬৫, সহীহ মুসলিম হা/১৩৪৬ (২৩৩/৬৪৬) মিশকাত হা/৫৮৮]] পক্ষান্তরে আসরের জামাআত দেরিতে আদায় হলে একাকী সঠিক সময়ে আদায় করাটা নবী (স)-এর নির্দেশ।হাদীস-১২: সাহাবী উবাদাহ বিন সামিত (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি (রা) বলেন:
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ " إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي أُمَرَاءُ تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا " . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ " نَعَمْ إِنْ شِئْتَ " . وَقَالَ سُفْيَانُ إِنْ أَدْرَكْتُهَا مَعَهُمْ أَأُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ " نَعَمْ إِنْ شِئْتَ "
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকদের আগমন ঘটবে কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় হতে বিরত রাখবে, এমনকি সলাতের ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি কি ঐ সলাত পুনরায় তাদের সাথেও আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার।” [. আবূ দাউদ হা/৪৩৩; সহীহ- আলবানী।]
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকেও অনুরূপ হাদীস প্রমাণিত (হাদীস নং-৪০)। নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় না করার অর্থ- সূর্য হলুদ হওয়া তথা আসরের সঠিক ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর সলাত আদায় করা। বর্ণনা সামনে আসবে (হাদীস নং: ২৪-২৮) ইনশাআল্লাহ।
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ " إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي أُمَرَاءُ تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا " . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ " نَعَمْ إِنْ شِئْتَ " . وَقَالَ سُفْيَانُ إِنْ أَدْرَكْتُهَا مَعَهُمْ أَأُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ " نَعَمْ إِنْ شِئْتَ "
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকদের আগমন ঘটবে কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় হতে বিরত রাখবে, এমনকি সলাতের ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি কি ঐ সলাত পুনরায় তাদের সাথেও আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার।” [. আবূ দাউদ হা/৪৩৩; সহীহ- আলবানী।]
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকেও অনুরূপ হাদীস প্রমাণিত (হাদীস নং-৪০)। নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় না করার অর্থ- সূর্য হলুদ হওয়া তথা আসরের সঠিক ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর সলাত আদায় করা। বর্ণনা সামনে আসবে (হাদীস নং: ২৪-২৮) ইনশাআল্লাহ।
১৬
অনুচ্ছেদ-১৪: নবী (স) সফরে আসরের সলাত যোহরের ওয়াক্তে আদায় করতেন। আবার যোহরের ওয়াক্ত আসরের প্রথম ওয়াক্ত পর্যন্তও বিলম্ব করতেন, কিন্তু আসরের ওয়াক্ত আসা মাত্রই পড়তেন।– এ থেকে আসরের সলাত এবং এর ওয়াক্তের গুরুত্ব সুস্পষ্ট হয়।হাদীস-১৩: সাহাবী মুআয বিন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত:
أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ إِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ قَبْلَ أَنْ يَرْتَحِلَ جَمَعَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ، وَإِنْ يَرْتَحِلْ قَبْلَ أَنْ تَزِيغَ الشَّمْسُ أَخَّرَ الظُّهْرَ حَتَّى يَنْزِلَ لِلْعَصْرِ .
“রসূলুল্লাহ (স) তাবুকের যুদ্ধে ছিলেন। (সাধারণত সফরকালে) যদি সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর তিনি কোথাও রওয়ানা হতেন, তখন তিনি যোহর ও আসরের সলাত একত্রে আদায় করতেন এবং সূর্য ঢলার পূর্বে রওয়ানা হলে তিনি যুহরকে বিলম্বে আদায় করতেন ‘আসর আসা পর্যন্ত।” [. আবূ দাউদ হা/১২০৮; সহীহ- আলবানী।]
মুসনাদু আহমাদে হাদীসটি এভাবে এসেছে:
وَإِذَا ارْتَحَلَ بَعْدَ زَيْغِ الشَّمْسِ صَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا .
“যখন সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করতেন তখন যোহর বিলম্বিত করতেন এবং আসরের ওয়াক্তে একত্রে আদায় করতেন।” [. মুসনাদু আহমাদ হা/২২০৯৪, মুসনাদু আহমাদ (ফতহুর রব্বানী-ইফা) ২/১২৩৬ নং।]
أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ إِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ قَبْلَ أَنْ يَرْتَحِلَ جَمَعَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ، وَإِنْ يَرْتَحِلْ قَبْلَ أَنْ تَزِيغَ الشَّمْسُ أَخَّرَ الظُّهْرَ حَتَّى يَنْزِلَ لِلْعَصْرِ .
“রসূলুল্লাহ (স) তাবুকের যুদ্ধে ছিলেন। (সাধারণত সফরকালে) যদি সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর তিনি কোথাও রওয়ানা হতেন, তখন তিনি যোহর ও আসরের সলাত একত্রে আদায় করতেন এবং সূর্য ঢলার পূর্বে রওয়ানা হলে তিনি যুহরকে বিলম্বে আদায় করতেন ‘আসর আসা পর্যন্ত।” [. আবূ দাউদ হা/১২০৮; সহীহ- আলবানী।]
মুসনাদু আহমাদে হাদীসটি এভাবে এসেছে:
وَإِذَا ارْتَحَلَ بَعْدَ زَيْغِ الشَّمْسِ صَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا .
“যখন সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করতেন তখন যোহর বিলম্বিত করতেন এবং আসরের ওয়াক্তে একত্রে আদায় করতেন।” [. মুসনাদু আহমাদ হা/২২০৯৪, মুসনাদু আহমাদ (ফতহুর রব্বানী-ইফা) ২/১২৩৬ নং।]
হাদীস-১৪: তাবেঈ আবূ উসামাহ ইবনু সাহল (রহ) থেকে বর্ণিত:
صَلَّيْنَا مَعَ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ الظُّهْرَ ثُمَّ خَرَجْنَا حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فَوَجَدْنَاهُ يُصَلِّي الْعَصْرَ فَقُلْتُ يَا عَمِّ مَا هَذِهِ الصَّلاَةُ الَّتِي صَلَّيْتَ قَالَ الْعَصْرُ وَهَذِهِ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الَّتِي كُنَّا نُصَلِّي مَعَهُ .
“আমরা একদিন উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহ)-এর সাথে যোহরের সলাত আদায় করলাম এবং সেখান থেকে সাহাবী আনাস ইবনু মালিক (রা)-এর কাছে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম তিনি আসরের সলাত আদায় করছেন। সলাত শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম: চাচাজান, এখন আপনি কোন্ ওয়াক্তের সলাত আদায় করলেন? তিনি বললেন: ‘আসর, আর এটিই হচ্ছে রসূলুল্লাহ (স)-এর সলাত যা আমরা তার সাথে আদায় করতাম।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৩০০ (১৯৬/ ৬২৩)।]
হাদীস-১৫: তাবেঈ আলা ইবনু আব্দুর রহমান (রহ) থেকে বর্ণিত:
أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فِي دَارِهِ بِالْبَصْرَةِ حِينَ انْصَرَفَ مِنَ الظُّهْرِ وَدَارُهُ بِجَنْبِ الْمَسْجِدِ فَلَمَّا دَخَلْنَا عَلَيْهِ قَالَ أَصَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَقُلْنَا لَهُ إِنَّمَا انْصَرَفْنَا السَّاعَةَ مِنَ الظُّهْرِ . قَالَ فَصَلُّوا الْعَصْرَ . فَقُمْنَا فَصَلَّيْنَا فَلَمَّا انْصَرَفْنَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ " تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِ يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتَّى إِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَهَا أَرْبَعًا لاَ يَذْكُرُ اللَّهَ فِيهَا إِلاَّ قَلِيلاً " .
“তিনি একদিন আনাস ইবনু মালিক (রা)-এর বসরাস্থ বাড়ীতে গেলেন। আর বাড়ীটি মাসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনু আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যোহরের সলাত আদায় করেছেন। আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান বলেন: আমরা তাঁর (আনাস ইবনু মালিকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা কি আসরের সলাত আদায় করছ? আমরা জবাবে তাকে বললাম, আমরা এই মাত্র যোহরের সলাত আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেন: যাও আসরের সলাত আদায় করে আস। এরপর আমরা গিয়ে আসরের সলাত আদায় করে তাঁর কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন: আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন: এটা মুনাফিক্বের সলাত- তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। শেষে যখন সূর্য শয়তানের দুই শিঙের মধ্যস্থলে যায় তখন দাঁড়ায় এবং তাড়াতাড়ি উঠে চার ঠোকর মারে। এতে তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৯ (১৯৫/৬২২)।] আর আবূ দাউদের বর্ণনাতে আছে:
دَخَلْنَا عَلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ بَعْدَ الظُّهْرِ فَقَامَ يُصَلِّي الْعَصْرَ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ صَلاَتِهِ ذَكَرْنَا تَعْجِيلَ الصَّلاَةِ أَوْ ذَكَرَهَا فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ " تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ يَجْلِسُ أَحَدُهُمْ حَتَّى إِذَا اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ فَكَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ أَوْ عَلَى قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا .
“একদা আমরা যোহরের সলাত আদায়ের পর আনাস ইবনু মালেক (রা)-এর নিকট গিয়ে দেখলাম তিনি আসরের সলাত আদায় করছেন। তাঁর সলাত সমাপ্তির পর আমরা তাকে বললাম, সলাত বেশি আগে আদায় করা হয়েছে। অথবা (আনাস রা.) নিজেই সলাত আগে আদায়ের কারণ বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি (আনাস রা.) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি: এটা মুনাফিকদের সলাত, এটা মুনাফিকদের সলাত, এটা মুনাফিকদের সলাত, এদের কেউ বসে থাকে অতঃপর সূর্যের রং যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং তা শয়তানের উভয় শিঙের মধ্যে বা শিঙের উপর অবস্হান করে তখন সে সলাত আদায় করার জন্য দণ্ডায়মান হয়ে চারটি ঠোকর দিয়ে থাকে।” [. আবূ দাউদ হা/৪১৩; সহীহ-আলবানী।]
صَلَّيْنَا مَعَ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ الظُّهْرَ ثُمَّ خَرَجْنَا حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فَوَجَدْنَاهُ يُصَلِّي الْعَصْرَ فَقُلْتُ يَا عَمِّ مَا هَذِهِ الصَّلاَةُ الَّتِي صَلَّيْتَ قَالَ الْعَصْرُ وَهَذِهِ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الَّتِي كُنَّا نُصَلِّي مَعَهُ .
“আমরা একদিন উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহ)-এর সাথে যোহরের সলাত আদায় করলাম এবং সেখান থেকে সাহাবী আনাস ইবনু মালিক (রা)-এর কাছে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম তিনি আসরের সলাত আদায় করছেন। সলাত শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম: চাচাজান, এখন আপনি কোন্ ওয়াক্তের সলাত আদায় করলেন? তিনি বললেন: ‘আসর, আর এটিই হচ্ছে রসূলুল্লাহ (স)-এর সলাত যা আমরা তার সাথে আদায় করতাম।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৩০০ (১৯৬/ ৬২৩)।]
হাদীস-১৫: তাবেঈ আলা ইবনু আব্দুর রহমান (রহ) থেকে বর্ণিত:
أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فِي دَارِهِ بِالْبَصْرَةِ حِينَ انْصَرَفَ مِنَ الظُّهْرِ وَدَارُهُ بِجَنْبِ الْمَسْجِدِ فَلَمَّا دَخَلْنَا عَلَيْهِ قَالَ أَصَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَقُلْنَا لَهُ إِنَّمَا انْصَرَفْنَا السَّاعَةَ مِنَ الظُّهْرِ . قَالَ فَصَلُّوا الْعَصْرَ . فَقُمْنَا فَصَلَّيْنَا فَلَمَّا انْصَرَفْنَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ " تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِ يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتَّى إِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَهَا أَرْبَعًا لاَ يَذْكُرُ اللَّهَ فِيهَا إِلاَّ قَلِيلاً " .
“তিনি একদিন আনাস ইবনু মালিক (রা)-এর বসরাস্থ বাড়ীতে গেলেন। আর বাড়ীটি মাসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনু আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যোহরের সলাত আদায় করেছেন। আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান বলেন: আমরা তাঁর (আনাস ইবনু মালিকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা কি আসরের সলাত আদায় করছ? আমরা জবাবে তাকে বললাম, আমরা এই মাত্র যোহরের সলাত আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেন: যাও আসরের সলাত আদায় করে আস। এরপর আমরা গিয়ে আসরের সলাত আদায় করে তাঁর কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন: আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন: এটা মুনাফিক্বের সলাত- তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। শেষে যখন সূর্য শয়তানের দুই শিঙের মধ্যস্থলে যায় তখন দাঁড়ায় এবং তাড়াতাড়ি উঠে চার ঠোকর মারে। এতে তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৯ (১৯৫/৬২২)।] আর আবূ দাউদের বর্ণনাতে আছে:
دَخَلْنَا عَلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ بَعْدَ الظُّهْرِ فَقَامَ يُصَلِّي الْعَصْرَ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ صَلاَتِهِ ذَكَرْنَا تَعْجِيلَ الصَّلاَةِ أَوْ ذَكَرَهَا فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ " تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ يَجْلِسُ أَحَدُهُمْ حَتَّى إِذَا اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ فَكَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ أَوْ عَلَى قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا .
“একদা আমরা যোহরের সলাত আদায়ের পর আনাস ইবনু মালেক (রা)-এর নিকট গিয়ে দেখলাম তিনি আসরের সলাত আদায় করছেন। তাঁর সলাত সমাপ্তির পর আমরা তাকে বললাম, সলাত বেশি আগে আদায় করা হয়েছে। অথবা (আনাস রা.) নিজেই সলাত আগে আদায়ের কারণ বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি (আনাস রা.) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি: এটা মুনাফিকদের সলাত, এটা মুনাফিকদের সলাত, এটা মুনাফিকদের সলাত, এদের কেউ বসে থাকে অতঃপর সূর্যের রং যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং তা শয়তানের উভয় শিঙের মধ্যে বা শিঙের উপর অবস্হান করে তখন সে সলাত আদায় করার জন্য দণ্ডায়মান হয়ে চারটি ঠোকর দিয়ে থাকে।” [. আবূ দাউদ হা/৪১৩; সহীহ-আলবানী।]
১৮
অনুচ্ছেদ-১৬: ফজর ও ঈশার সলাতের জামাআত মুনাফিক্বদের জন্য কঠিন। পক্ষান্তরে আসরের সলাতের ক্ষেত্রে মুনাফিক্বরা সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে।হাদীস-১৬: সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنَ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا .
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: মুনাফিকদের জন্য ফজর ও ঈশার সলাত অপেক্ষা অধিক ভারী সলাত আর নেই। এ দু’ সলাতের কী ফযীলত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।” [. সহীহ বুখারী হা/৬৫৭, মিশকাত হা/৬২৯। প্রায় অনুরূপ: সহীহ মুসলিম হা/১৩৬৮ (২৫২/৬৫১)।]
আসরের সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে মুনাফিক্বদের আচরণ সম্পর্কিত হাদীস পূর্বের অনুচ্ছেদে গত হয়েছে।
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنَ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا .
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: মুনাফিকদের জন্য ফজর ও ঈশার সলাত অপেক্ষা অধিক ভারী সলাত আর নেই। এ দু’ সলাতের কী ফযীলত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।” [. সহীহ বুখারী হা/৬৫৭, মিশকাত হা/৬২৯। প্রায় অনুরূপ: সহীহ মুসলিম হা/১৩৬৮ (২৫২/৬৫১)।]
আসরের সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে মুনাফিক্বদের আচরণ সম্পর্কিত হাদীস পূর্বের অনুচ্ছেদে গত হয়েছে।
১৯
দ্বিতীয় অধ্যায়: সলাতুল আসরের ওয়াক্ত
অনুচ্ছেদ-১৭: সলাতুল আসরের ওয়াক্তের সীমানা- বস্তুর ছায়া তার সমান হওয়া থেকে ছায়া দ্বীগুণ হওয়া পর্যন্ত। (সূর্য ঢলে যাবার পর যে ছায়া পরে তা ব্যতীত) [. সূর্য মধ্য রেখায় থাকলে কোনো খোলা জায়গায় একটি সরল কাঠি বা শলাকা সোজাভাবে গাড়লে যখন তার ছায়া তার দেহে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর পূর্ব দিকে পড়ে লম্বা হতে লাগবে তখনই হবে যোহরের সময়। এইভাবে তার ছায়া তার সমপরিমাণ হলে যোহরের সময় শেষ হয়ে যাবে। অনথা সূর্য মধ্যরেখায় না থাকলে, কোনো গোলার্ধে থাকার ফলে যে অতিরিক্ত ছায়া পড়ে, তা বাদ দিয়ে মাপতে হবে। কাঠির ছায়া কমতে কমতে ঠিক মধ্যাহ্নকালে আবার বাড়তে শুরু করবে। ঐ বাড়া অংশটি মাপলে যোহর ও আসরের সময় নির্ণয় করা যায়। [আব্দুল হামীদ ফাইযী, সলাতে মুবাশশির- সলাতের ওয়াক্ত দ্র:]]হাদীস-১৭: সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন:
أَمَّنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عِنْدَ الْبَيْتِ مَرَّتَيْنِ فَصَلَّى الظُّهْرَ فِي الأُولَى مِنْهُمَا حِينَ كَانَ الْفَىْءُ مِثْلَ الشِّرَاكِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ كُلُّ شَيْءٍ مِثْلَ ظِلِّهِ ... وَصَلَّى الْمَرَّةَ الثَّانِيَةَ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ لِوَقْتِ الْعَصْرِ بِالأَمْسِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَيْهِ …
“নবী (স) বলেন: জিবরীল (আ) কা‘বা শরীফের চত্বরে দু‘বার আমার সলাতে ইমামতি করেছেন। তিনি প্রথমবার যোহরের সলাত আদায় করালেন যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া জুতার ফিতার মত ছিল। অতঃপর তিনি আসরের সলাত আদায় করালেন যখন কোনো বস্তুর ছায়া তার সমান ছিল।… দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যোহরের সলাত আদায় করালেন, যখন কোনো জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। আসরের সলাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ।” [. তিরমিযী হা/১৪৯, আবূ দাউদ হা/৩৯৩।]
হাদীস-১৮: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُولِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ .
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যোহরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয় যখন সূর্য (মাথার উপর থেকে পশ্চিম দিকে) হেলে পড়ে এবং মানুষের ছায়া তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, যতক্ষণ আসরের সলাতের সময় উপস্থিত হয়। আসরের সলাতের সময় থাকে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৫(১৭৩/৬১২)।]
হাদীস-১৯: সাহাবী আনাস (রা) থেকে বর্ণিত:
أَنَّ رَسُولَ ﷺ كَانَ يُصَلِّي الْعَصْرَ بِمِثْلِهِ سَوَاءً .
“রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত আদায় করতেন যখন ছায়া প্রতিটি বস্তুর সমান হত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৬(১৯২/৬২১)।]
হাদীস-২০: জাবির (রা)-এর হাদীস,
عن الْحُسَيْنُ بْنُ بَشِيرِ بْنِ سَلاَّمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ دَخَلْتُ أَنَا وَمُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ، عَلَى جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيِّ فَقُلْنَا لَهُ أَخْبِرْنَا عَنْ صَلاَةِ، رَسُولِ ﷺ وَذَاكَ زَمَنُ الْحَجَّاجِ بْنِ يُوسُفَ . قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ فَصَلَّى الظُّهْرَ حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ الْفَىْءُ قَدْرَ الشِّرَاكِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ الْفَىْءُ قَدْرَ الشِّرَاكِ وَظِلِّ ... ثُمَّ صَلَّى مِنَ الْغَدِ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ الظِّلُّ طُولَ الرَّجُلِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ مِثْلَيْهِ قَدْرَ مَا يَسِيرُ الرَّاكِبُ سَيْرَ الْعَنَقِ إِلَى ذِي الْحُلَيْفَةِ .
“হুসাইন বিন বশীর ইবনু সাল্লাম তাঁর পিতা (বশীর ইবনু সাল্লাম রহ.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফের আমলে আমি এবং মুহাম্মদ ইবনু আলী (রহ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রা)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমাদেরকে রসুলুল্লাহ (স)-এর সলাত সম্পর্কে অবগত করুন। তিনি [জাবির (রা)] বললেন, যখন সুর্য ঢলে পড়ল এবং ছায়া জুতার ফিতার সমান হল, তখন রসুলুল্লাহ (স) নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে যোহরের সলাত আদায় করলেন। পুনরায় যখন ছায়া জুতার ফিতা পরিমান ও মানুষের ছায়ার সমপরিমাণ হল, তখন আসরের সলাত আদায় করলেন। ... পরদিন লোকের ছায়া তার সমান হলে যোহরের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর আসরের সলাত পড়লেন যখন মানুষের ছায়া তার দ্বিগুণ হল এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এতটুকু সময় বাকী রইল যে, একজন দ্রুতগামী আরোহী (মদিনা থেকে) যুল-হুলায়ফা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।” [. নাসাঈ হা/৫২৪ (ইফা. হা/৫২৫)। সাক্ষ্যমূলক হাদীস: সহীহ বুখারী হা/৫৬০।]
হাদীস-২১: সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «هَذَا جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ جَاءَكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ، فَصَلَّى الصُّبْحَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ، وَصَلَّى الظُّهْرَ حِينَ زَاغَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ رَأَى الظِّلَّ مِثْلَهُ، ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ حِينَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَحَلَّ فِطْرُ الصَّائِمِ، ثُمَّ صَلَّى الْعِشَاءَ حِينَ ذَهَبَ شَفَقُ اللَّيْلِ , ثُمَّ جَاءَهُ الْغَدَ فَصَلَّى بِهِ الصُّبْحَ حِينَ أَسْفَرَ قَلِيلًا، ثُمَّ صَلَّى بِهِ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ الظِّلُّ مِثْلَهُ، ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ الظِّلُّ مِثْلَيْهِ، ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ بِوَقْتٍ وَاحِدٍ حِينَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَحَلَّ فِطْرُ الصَّائِمِ، ثُمَّ صَلَّى الْعِشَاءَ حِينَ ذَهَبَ سَاعَةٌ مِنَ اللَّيْلِ» ، ثُمَّ قَالَ : «الصَّلَاةُ مَا بَيْنَ صَلَاتِكَ أَمْسِ وَصَلَاتِكَ الْيَوْمَ» .
“রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন: ইনি জিবরীল (আ), যিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনি ঊষা উদিত হলে ফজরের সলাত আদায় করেন। যোহরের সলাত আদায় করেন সুর্য ঢলে পড়লে, তারপর আসরের সলাত আদায় করেন যখন ছায়া তাঁর সমান দেখেন। তারপর যখন সূর্য অস্তমিত হলো, আর সায়িমের জন্য ইফতার করা হালাল হল তখন মাগরিবের সলাত আদায় করলেন। তারপর ইশার সলাত আদায় করেন সুর্য অস্তমিত হওয়ার পর যে শাফাক্ব দেখা যায়, তা অদৃশ্য হওয়ার পর। জিবরীল (আ) আবার পরদিন আসলেন এবং নবী (স)-কে সাথে নিয়ে ফজরের সলাত আদায় করলেন যখন কিছুটা ফর্সা হল তখন। পরে তাকে নিয়ে যোহরের সলাত আদায় করেন যখন ছায়া তার সমান হলো। তারপর আসরের সলাত আদায় করেন যখন ছায়া তার দ্বিগুণ হল। পরে মাগরিবের সলাত একই সময়ে পূর্বের দিনের ন্যায় আদায় করেন। যখন সূর্য অস্তমিত হল এবং সিয়াম পালনকারীর জন্য ইফতার করা হালাল হল। এরপর রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে গেলে ইশার সলাত আদায় করেন। পরে তিনি বলেন, আপনার আজকের সলাত ও গতকালকের সলাতের মধ্যবর্তী সময়ই হলো সলাতের সময়।” [. নাসাঈ হা/৫০৩; সহীহ –আলবানী।]
أَمَّنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عِنْدَ الْبَيْتِ مَرَّتَيْنِ فَصَلَّى الظُّهْرَ فِي الأُولَى مِنْهُمَا حِينَ كَانَ الْفَىْءُ مِثْلَ الشِّرَاكِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ كُلُّ شَيْءٍ مِثْلَ ظِلِّهِ ... وَصَلَّى الْمَرَّةَ الثَّانِيَةَ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ لِوَقْتِ الْعَصْرِ بِالأَمْسِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَيْهِ …
“নবী (স) বলেন: জিবরীল (আ) কা‘বা শরীফের চত্বরে দু‘বার আমার সলাতে ইমামতি করেছেন। তিনি প্রথমবার যোহরের সলাত আদায় করালেন যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া জুতার ফিতার মত ছিল। অতঃপর তিনি আসরের সলাত আদায় করালেন যখন কোনো বস্তুর ছায়া তার সমান ছিল।… দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যোহরের সলাত আদায় করালেন, যখন কোনো জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। আসরের সলাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ।” [. তিরমিযী হা/১৪৯, আবূ দাউদ হা/৩৯৩।]
হাদীস-১৮: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُولِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ .
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যোহরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয় যখন সূর্য (মাথার উপর থেকে পশ্চিম দিকে) হেলে পড়ে এবং মানুষের ছায়া তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, যতক্ষণ আসরের সলাতের সময় উপস্থিত হয়। আসরের সলাতের সময় থাকে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৫(১৭৩/৬১২)।]
হাদীস-১৯: সাহাবী আনাস (রা) থেকে বর্ণিত:
أَنَّ رَسُولَ ﷺ كَانَ يُصَلِّي الْعَصْرَ بِمِثْلِهِ سَوَاءً .
“রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত আদায় করতেন যখন ছায়া প্রতিটি বস্তুর সমান হত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৬(১৯২/৬২১)।]
হাদীস-২০: জাবির (রা)-এর হাদীস,
عن الْحُسَيْنُ بْنُ بَشِيرِ بْنِ سَلاَّمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ دَخَلْتُ أَنَا وَمُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ، عَلَى جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيِّ فَقُلْنَا لَهُ أَخْبِرْنَا عَنْ صَلاَةِ، رَسُولِ ﷺ وَذَاكَ زَمَنُ الْحَجَّاجِ بْنِ يُوسُفَ . قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ فَصَلَّى الظُّهْرَ حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ الْفَىْءُ قَدْرَ الشِّرَاكِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ الْفَىْءُ قَدْرَ الشِّرَاكِ وَظِلِّ ... ثُمَّ صَلَّى مِنَ الْغَدِ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ الظِّلُّ طُولَ الرَّجُلِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ مِثْلَيْهِ قَدْرَ مَا يَسِيرُ الرَّاكِبُ سَيْرَ الْعَنَقِ إِلَى ذِي الْحُلَيْفَةِ .
“হুসাইন বিন বশীর ইবনু সাল্লাম তাঁর পিতা (বশীর ইবনু সাল্লাম রহ.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফের আমলে আমি এবং মুহাম্মদ ইবনু আলী (রহ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রা)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমাদেরকে রসুলুল্লাহ (স)-এর সলাত সম্পর্কে অবগত করুন। তিনি [জাবির (রা)] বললেন, যখন সুর্য ঢলে পড়ল এবং ছায়া জুতার ফিতার সমান হল, তখন রসুলুল্লাহ (স) নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে যোহরের সলাত আদায় করলেন। পুনরায় যখন ছায়া জুতার ফিতা পরিমান ও মানুষের ছায়ার সমপরিমাণ হল, তখন আসরের সলাত আদায় করলেন। ... পরদিন লোকের ছায়া তার সমান হলে যোহরের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর আসরের সলাত পড়লেন যখন মানুষের ছায়া তার দ্বিগুণ হল এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এতটুকু সময় বাকী রইল যে, একজন দ্রুতগামী আরোহী (মদিনা থেকে) যুল-হুলায়ফা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।” [. নাসাঈ হা/৫২৪ (ইফা. হা/৫২৫)। সাক্ষ্যমূলক হাদীস: সহীহ বুখারী হা/৫৬০।]
হাদীস-২১: সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «هَذَا جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ جَاءَكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ، فَصَلَّى الصُّبْحَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ، وَصَلَّى الظُّهْرَ حِينَ زَاغَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ رَأَى الظِّلَّ مِثْلَهُ، ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ حِينَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَحَلَّ فِطْرُ الصَّائِمِ، ثُمَّ صَلَّى الْعِشَاءَ حِينَ ذَهَبَ شَفَقُ اللَّيْلِ , ثُمَّ جَاءَهُ الْغَدَ فَصَلَّى بِهِ الصُّبْحَ حِينَ أَسْفَرَ قَلِيلًا، ثُمَّ صَلَّى بِهِ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ الظِّلُّ مِثْلَهُ، ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ حِينَ كَانَ الظِّلُّ مِثْلَيْهِ، ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ بِوَقْتٍ وَاحِدٍ حِينَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَحَلَّ فِطْرُ الصَّائِمِ، ثُمَّ صَلَّى الْعِشَاءَ حِينَ ذَهَبَ سَاعَةٌ مِنَ اللَّيْلِ» ، ثُمَّ قَالَ : «الصَّلَاةُ مَا بَيْنَ صَلَاتِكَ أَمْسِ وَصَلَاتِكَ الْيَوْمَ» .
“রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন: ইনি জিবরীল (আ), যিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনি ঊষা উদিত হলে ফজরের সলাত আদায় করেন। যোহরের সলাত আদায় করেন সুর্য ঢলে পড়লে, তারপর আসরের সলাত আদায় করেন যখন ছায়া তাঁর সমান দেখেন। তারপর যখন সূর্য অস্তমিত হলো, আর সায়িমের জন্য ইফতার করা হালাল হল তখন মাগরিবের সলাত আদায় করলেন। তারপর ইশার সলাত আদায় করেন সুর্য অস্তমিত হওয়ার পর যে শাফাক্ব দেখা যায়, তা অদৃশ্য হওয়ার পর। জিবরীল (আ) আবার পরদিন আসলেন এবং নবী (স)-কে সাথে নিয়ে ফজরের সলাত আদায় করলেন যখন কিছুটা ফর্সা হল তখন। পরে তাকে নিয়ে যোহরের সলাত আদায় করেন যখন ছায়া তার সমান হলো। তারপর আসরের সলাত আদায় করেন যখন ছায়া তার দ্বিগুণ হল। পরে মাগরিবের সলাত একই সময়ে পূর্বের দিনের ন্যায় আদায় করেন। যখন সূর্য অস্তমিত হল এবং সিয়াম পালনকারীর জন্য ইফতার করা হালাল হল। এরপর রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে গেলে ইশার সলাত আদায় করেন। পরে তিনি বলেন, আপনার আজকের সলাত ও গতকালকের সলাতের মধ্যবর্তী সময়ই হলো সলাতের সময়।” [. নাসাঈ হা/৫০৩; সহীহ –আলবানী।]
হাদীস-২২: আনাস (রা) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ فَيَذْهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى الْعَوَالِي فَيَأْتِيهِمْ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ وَبَعْضُ الْعَوَالِي مِنَ الْمَدِينَةِ عَلَى أَرْبَعَةِ أَمْيَالٍ أَوْ نَحْوِهِ .
“আল্লাহর রসূল (স) ‘আসরের সলাত আদায় করতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকত। সলাতের পর কোনো গমনকারী ‘আওয়ালী’র দিকে রওয়ানা হয়ে তাদের নিকট পৌঁছে যেত, আর তখনও সূর্য উপরে থাকত। আওয়ালীর কোনো কোনো অংশ ছিল মদিনা হতে চার মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫০। ইমাম আবূ দাউদ বর্ণনা করেছেন: আওয়ালীর দূরত্ব মদীনাহ থেকে দুই অথবা তিন মাইল। যুহরী (রহ) বলেছেন: চার মাইল। [আবূ দাউদ হা/৪০৫]]
অন্য বর্ণনায় আছে, আনাস (রা) বলেন:
كُنَّا نُصَلِّي الْعَصْرَ ثُمَّ يَذْهَبُ الذَّاهِبُ مِنَّا إِلَى قُبَاءٍ فَيَأْتِيهِمْ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ .
“আমরা ‘আসরের সলাত আদায় করতাম, অতঃপর আমাদের কোনো গমনকারী কুবার দিকে যেত এবং সূর্য যথেষ্ট উপরে থাকতেই সে তাদের নিকট পৌঁছে যেত।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫১।]
মদীনা থেকে কুবা মাসজিদের দুরত্ব ৫ কি.মি./৩.১০ মাইল।
অন্য বর্ণনায় আছে, আনাস (রা) বলেন:
أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ بَيْضَاءُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ وَيَذْهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى الْعَوَالِي وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ .
“রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উঁচুতে তাপবিশিষ্ট অবস্থায় থাকত। সলাতের পর লোকজন ‘আওয়ালী (মদীনার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম) পর্যন্ত যেত। অথচ সূর্য তখনো উঁচুতেই থাকত।” [. আবূ দাউদ হা/৪০৪। খায়সামা (রহ) বলেন: حَيَاتُهَا أَنْ تَجِدَ، حَرَّهَا “সূর্যের জীবন্ত হওয়ার অর্থ হলো, তার তাপ অবশিষ্ট থাকা বা অনুভূত হওয়া।” [আবূ দাউদ হা/৪০৬]]
হাদীস-২৩: সাহাবী আবূ বারযা (রা) থেকে বর্ণিত:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ قَالَ كَانَ يُصَلِّي الْهَجِيرَ وَهْىَ الَّتِي تَدْعُونَهَا الأُولَى حِينَ تَدْحَضُ الشَّمْسُ، وَيُصَلِّي الْعَصْرَ، ثُمَّ يَرْجِعُ أَحَدُنَا إِلَى أَهْلِهِ فِي أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ .
“রসূলুল্লাহ্ (স)- যোহরের সলাত যাকে তোমরা প্রথম সলাত বলে থাকো, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। আর তিনি ‘আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ সূর্য তাপদাহ থাকতেই মদিনার শেষ প্রান্তে নিজ পরিজনের নিকট ফিরে আসতে পারত।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৯৯।]
আসরের সলাতের পর (উটে) আরোহী দ্রুত চললে সূর্যাস্তের পূর্বে ছয় মাইল (৯.৬৫ কি/মি) অতিক্রম করা সম্ভব।
হাদীস-২৪: সাহাবী ইবুন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত:
سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَقُولُ " نَزَلَ جِبْرِيلُ صلي الله عليه وسلم فَأَخْبَرَنِي بِوَقْتِ الصَّلَاةِ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ " . يَحْسُبُ بِأَصَابِعِهِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فَرَأَيْتُ رَسُولُ اللهِ ﷺ صَلَّى الظُّهْرَ حِينَ تَزُولُ الشَّمْسُ وَرُبَّمَا أَخَّرَهَا حِينَ يَشْتَدُّ الْحَرُّ وَرَأَيْتُهُ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ قَبْلَ أَنْ تَدْخُلَهَا الصُّفْرَةُ فَيَنْصَرِفُ الرَّجُلُ مِنَ الصَّلَاةِ فَيَأْتِي ذَا الْحُلَيْفَةِ قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ .
“আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি: জিবরীল (আ) অবতরণ করে আমাকে সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আমি তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি। এভাবে তিনি আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত গণনা করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে সূর্য ঢলে পড়ার সাথে সাথেই যোহরের সলাত আদায় করতে দেখেছি। প্রচণ্ড গরমের দিনে তিনি কখনো দেরি করেও আদায় করেছেন। আমি তাঁকে ঐ সময় ‘আসরের সলাত আদায় করতে দেখেছি যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল বর্ণ অবস্থায় থাকত, তখনো তাতে হলুদ রং আসেনি। কোনো ব্যক্তি ‘আসরের সলাত আদায় করে সূর্য ডুবার পূর্বেই যুলহুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছে যেত।” [. আবূ দাউদ হা/৩৯৪; হাসান-আলবানী।]
উক্ত বর্ণনাটি তাবারানী ‘আওসাতে’ এভাবে বর্ণিত হয়েছে:
وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ بَيْضَاءُ مُرْتَفِعَةٌ، يَسِيرُ الرَّجُلُ حِينَ يَنْصَرِفُ مِنْهَا إِلَى ذِي الْحُلَيْفَةِ سِتَّةَ أَمْيَالٍ قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ .
“আসর পড়তেন যখন সূর্য উজ্জ্বল ও উঁচুতে থাকত। কেউ আসরের সলাত থেকে অবসর নিয়ে ছয় মাইল দূরে যুলহুলায়ফাতে সূর্যাস্তের পূর্বে পৌঁছাতে পারত।” [. তাবারানী ‘আওসাত’ হা/৮৬৯৪- গরীব। বাস্তবেও স্থানটি ছয় মাইল দূরে অবস্থিত-সূত্র: ইন্টারনেট।]
হাফেয ইবুন হাজার (রহ) অনুরূপ মর্মে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে লিখেছেন:
فِي الْحَدِيثِ الْمُبَادَرَةُ بِصَلَاةِ الْعَصْرِ فِي أَوَّلِ وَقْتِهَا لِأَنَّهُ لَا يُمْكِنُ أَنْ يَذْهَبَ بَعْدَ صَلَاةِ الْعَصْرِ مِيلَيْنِ أَوْ أَكْثَرَ وَالشَّمْسُ لَمْ تَتَغَيَّرْ فَفِيهِ دَلِيلٌ لِلْجُمْهُورِ فِي أَنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرُ ظِلِّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ خِلَافًا لِأَبِي حَنِيفَةَ
“হাদীসটি দ্বারা আসরের সলাত প্রথম ওয়াক্তে আদায়ের দাবি করে। অন্যথায়, আসরের সলাতের পরে এটা অসম্ভব যে, দুই মাইল বা তার থেকে বেশি চলার পরেও সূর্যের (রঙ) পরিবর্তন হবে না। এ থেকেই জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের) দলিল রয়েছে যে, আসরের সলাতের ওয়াক্ত হল, প্রত্যেক বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। এক্ষেত্রে কেবল আবূ হানীফার বিরোধিতা আছে।” [. ফতহুল বারী ২/২৯ পৃ:, হা/৫৫১-এর ব্যাখ্যা।]
ইমাম নওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন:
لِأَنَّهُ لَا يُمْكِن أَنْ يَذْهَب بَعْد صَلَاة الْعَصْر مِيلَيْنِ وَثَلَاثَة وَالشَّمْس بَعْدُ لَمْ تَتَغَيَّر بِصُفْرَةٍ وَنَحْوهَا إِلَّا إِذَا صَلَّى الْعَصْر حِين صَارَ ظِلّ الشَّيْء مِثْله
“এটা অসম্ভব যে, আসরের সলাতের পর দুই বা তিন মাইল চলার পর সূর্যের (রঙ) হলুদ হয়ে পরিবর্তিত হবে না, তবে যদি আসরের সলাত তখন পড়া হয় যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান হয়।” [. শারহু মুসলিম নওয়াবী ২/৪১১ পৃ:, হা/৯৮৪-এর ব্যাখ্যা।]
كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ فَيَذْهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى الْعَوَالِي فَيَأْتِيهِمْ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ وَبَعْضُ الْعَوَالِي مِنَ الْمَدِينَةِ عَلَى أَرْبَعَةِ أَمْيَالٍ أَوْ نَحْوِهِ .
“আল্লাহর রসূল (স) ‘আসরের সলাত আদায় করতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকত। সলাতের পর কোনো গমনকারী ‘আওয়ালী’র দিকে রওয়ানা হয়ে তাদের নিকট পৌঁছে যেত, আর তখনও সূর্য উপরে থাকত। আওয়ালীর কোনো কোনো অংশ ছিল মদিনা হতে চার মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫০। ইমাম আবূ দাউদ বর্ণনা করেছেন: আওয়ালীর দূরত্ব মদীনাহ থেকে দুই অথবা তিন মাইল। যুহরী (রহ) বলেছেন: চার মাইল। [আবূ দাউদ হা/৪০৫]]
অন্য বর্ণনায় আছে, আনাস (রা) বলেন:
كُنَّا نُصَلِّي الْعَصْرَ ثُمَّ يَذْهَبُ الذَّاهِبُ مِنَّا إِلَى قُبَاءٍ فَيَأْتِيهِمْ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ .
“আমরা ‘আসরের সলাত আদায় করতাম, অতঃপর আমাদের কোনো গমনকারী কুবার দিকে যেত এবং সূর্য যথেষ্ট উপরে থাকতেই সে তাদের নিকট পৌঁছে যেত।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫১।]
মদীনা থেকে কুবা মাসজিদের দুরত্ব ৫ কি.মি./৩.১০ মাইল।
অন্য বর্ণনায় আছে, আনাস (রা) বলেন:
أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ بَيْضَاءُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ وَيَذْهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى الْعَوَالِي وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ .
“রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উঁচুতে তাপবিশিষ্ট অবস্থায় থাকত। সলাতের পর লোকজন ‘আওয়ালী (মদীনার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম) পর্যন্ত যেত। অথচ সূর্য তখনো উঁচুতেই থাকত।” [. আবূ দাউদ হা/৪০৪। খায়সামা (রহ) বলেন: حَيَاتُهَا أَنْ تَجِدَ، حَرَّهَا “সূর্যের জীবন্ত হওয়ার অর্থ হলো, তার তাপ অবশিষ্ট থাকা বা অনুভূত হওয়া।” [আবূ দাউদ হা/৪০৬]]
হাদীস-২৩: সাহাবী আবূ বারযা (রা) থেকে বর্ণিত:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ قَالَ كَانَ يُصَلِّي الْهَجِيرَ وَهْىَ الَّتِي تَدْعُونَهَا الأُولَى حِينَ تَدْحَضُ الشَّمْسُ، وَيُصَلِّي الْعَصْرَ، ثُمَّ يَرْجِعُ أَحَدُنَا إِلَى أَهْلِهِ فِي أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ .
“রসূলুল্লাহ্ (স)- যোহরের সলাত যাকে তোমরা প্রথম সলাত বলে থাকো, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। আর তিনি ‘আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ সূর্য তাপদাহ থাকতেই মদিনার শেষ প্রান্তে নিজ পরিজনের নিকট ফিরে আসতে পারত।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৯৯।]
আসরের সলাতের পর (উটে) আরোহী দ্রুত চললে সূর্যাস্তের পূর্বে ছয় মাইল (৯.৬৫ কি/মি) অতিক্রম করা সম্ভব।
হাদীস-২৪: সাহাবী ইবুন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত:
سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَقُولُ " نَزَلَ جِبْرِيلُ صلي الله عليه وسلم فَأَخْبَرَنِي بِوَقْتِ الصَّلَاةِ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ " . يَحْسُبُ بِأَصَابِعِهِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فَرَأَيْتُ رَسُولُ اللهِ ﷺ صَلَّى الظُّهْرَ حِينَ تَزُولُ الشَّمْسُ وَرُبَّمَا أَخَّرَهَا حِينَ يَشْتَدُّ الْحَرُّ وَرَأَيْتُهُ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ قَبْلَ أَنْ تَدْخُلَهَا الصُّفْرَةُ فَيَنْصَرِفُ الرَّجُلُ مِنَ الصَّلَاةِ فَيَأْتِي ذَا الْحُلَيْفَةِ قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ .
“আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি: জিবরীল (আ) অবতরণ করে আমাকে সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আমি তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি। এভাবে তিনি আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত গণনা করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে সূর্য ঢলে পড়ার সাথে সাথেই যোহরের সলাত আদায় করতে দেখেছি। প্রচণ্ড গরমের দিনে তিনি কখনো দেরি করেও আদায় করেছেন। আমি তাঁকে ঐ সময় ‘আসরের সলাত আদায় করতে দেখেছি যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল বর্ণ অবস্থায় থাকত, তখনো তাতে হলুদ রং আসেনি। কোনো ব্যক্তি ‘আসরের সলাত আদায় করে সূর্য ডুবার পূর্বেই যুলহুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছে যেত।” [. আবূ দাউদ হা/৩৯৪; হাসান-আলবানী।]
উক্ত বর্ণনাটি তাবারানী ‘আওসাতে’ এভাবে বর্ণিত হয়েছে:
وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ بَيْضَاءُ مُرْتَفِعَةٌ، يَسِيرُ الرَّجُلُ حِينَ يَنْصَرِفُ مِنْهَا إِلَى ذِي الْحُلَيْفَةِ سِتَّةَ أَمْيَالٍ قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ .
“আসর পড়তেন যখন সূর্য উজ্জ্বল ও উঁচুতে থাকত। কেউ আসরের সলাত থেকে অবসর নিয়ে ছয় মাইল দূরে যুলহুলায়ফাতে সূর্যাস্তের পূর্বে পৌঁছাতে পারত।” [. তাবারানী ‘আওসাত’ হা/৮৬৯৪- গরীব। বাস্তবেও স্থানটি ছয় মাইল দূরে অবস্থিত-সূত্র: ইন্টারনেট।]
হাফেয ইবুন হাজার (রহ) অনুরূপ মর্মে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে লিখেছেন:
فِي الْحَدِيثِ الْمُبَادَرَةُ بِصَلَاةِ الْعَصْرِ فِي أَوَّلِ وَقْتِهَا لِأَنَّهُ لَا يُمْكِنُ أَنْ يَذْهَبَ بَعْدَ صَلَاةِ الْعَصْرِ مِيلَيْنِ أَوْ أَكْثَرَ وَالشَّمْسُ لَمْ تَتَغَيَّرْ فَفِيهِ دَلِيلٌ لِلْجُمْهُورِ فِي أَنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرُ ظِلِّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ خِلَافًا لِأَبِي حَنِيفَةَ
“হাদীসটি দ্বারা আসরের সলাত প্রথম ওয়াক্তে আদায়ের দাবি করে। অন্যথায়, আসরের সলাতের পরে এটা অসম্ভব যে, দুই মাইল বা তার থেকে বেশি চলার পরেও সূর্যের (রঙ) পরিবর্তন হবে না। এ থেকেই জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের) দলিল রয়েছে যে, আসরের সলাতের ওয়াক্ত হল, প্রত্যেক বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। এক্ষেত্রে কেবল আবূ হানীফার বিরোধিতা আছে।” [. ফতহুল বারী ২/২৯ পৃ:, হা/৫৫১-এর ব্যাখ্যা।]
ইমাম নওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন:
لِأَنَّهُ لَا يُمْكِن أَنْ يَذْهَب بَعْد صَلَاة الْعَصْر مِيلَيْنِ وَثَلَاثَة وَالشَّمْس بَعْدُ لَمْ تَتَغَيَّر بِصُفْرَةٍ وَنَحْوهَا إِلَّا إِذَا صَلَّى الْعَصْر حِين صَارَ ظِلّ الشَّيْء مِثْله
“এটা অসম্ভব যে, আসরের সলাতের পর দুই বা তিন মাইল চলার পর সূর্যের (রঙ) হলুদ হয়ে পরিবর্তিত হবে না, তবে যদি আসরের সলাত তখন পড়া হয় যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান হয়।” [. শারহু মুসলিম নওয়াবী ২/৪১১ পৃ:, হা/৯৮৪-এর ব্যাখ্যা।]
হাদীস-২৫: সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
إِذَا صَلَّيْتُمُ الظُّهْرَ فَإِنَّهُ وَقْتٌ إِلَى أَنْ يَحْضُرَ الْعَصْرُ فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَإِنَّهُ وَقْتٌ إِلَى أَنْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ .
“তোমরা যখন যোহরের সলাত আদায় করবে তখন জেনে রেখ যে, এর সময় হলো- আসরের ওয়াক্ত শুরু না হওয়া পর্যন্ত। তোমরা যখন আসরের সলাত আদায় করবে তখন জেনে রেখ আসরের সলাতের সময় সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭২(১৭১/৬১২)।]
হাদীস-২৬: সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা) থেকে অন্য বর্ণনায় আছে:
عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : وَقْتُ الظُّهْرِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ .
“নবী (স) বলেছেন: আসরের সলাতের ওয়াক্ত উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত যোহরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে। আর সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত আসরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৩(১৭২/৬১২)।]
হাদীস-২৭: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ … وَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ .
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: …আসরের সলাতের সময় থাকে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৫(১৭৩/৬১২)।]
হাদীস-২৮: সাহাবী আবূ মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত:
[ أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي مُوسَىأَبِي مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، ] عَنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ ، أَنَّهُ أَتَاهُ سَائِلٌ يَسْأَلُهُ عَنْ مَوَاقِيتِ الصَّلَاةِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ شَيْئًا، قَالَ : فَأَقَامَ الْفَجْرَ حِينَ انْشَقَّ الْفَجْرُ، وَالنَّاسُ لَا يَكَادُ يَعْرِفُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ بِالظُّهْرِ، حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدِ انْتَصَفَ النَّهَارُ، وَهُوَ كَانَ أَعْلَمَ مِنْهُمْ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ بِالْعَصْرِ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ … ثُمَّ أَخَّرَ الْفَجْرَ مِنَ الْغَدِ حَتَّى انْصَرَفَ مِنْهَا، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدْ طَلَعَتِ الشَّمْسُ، أَوْ كَادَتْ، ثُمَّ أَخَّرَ الظُّهْرَ حَتَّى كَانَ قَرِيبًا مِنْ وَقْتِ الْعَصْرِ بِالْأَمْسِ، ثُمَّ أَخَّرَ الْعَصْرَ حَتَّى انْصَرَفَ مِنْهَا، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدِ احْمَرَّتِ الشَّمْسُ … فَقَالَ : الْوَقْتُ بَيْنَ هَذَيْنِ .
“জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (স) -এর কাছে এসে সলাতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি (স) তাকে জবাব দিলেন না তিনি (স) কাজের মাধ্যমে তাকে দেখিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। বর্ণনাকার সহাবী আবূ মূসা বলেন, উষার আগমনের সাথে সাথেই রসূলুল্লাহ (স) ফজরের সলাত আদায় করলেন। তখনও অন্ধকার এতটা ছিল যে লোকজন একে অপরকে দেখে চিনতে পারছিল না। এরপর তিনি (স) আযান দিতে আদেশ করলেন এবং লোকজন বলাবলি করছিল যে, দুপুর হয়েছে। অথচ রসূলুল্লাহ (স)-এ বিষয়ে তাদের চেয়ে বেশী অবহিত। তারপর তিনি (স) আসরের আযান দিতে আদেশ করলেন এবং এমন সময় আসরের সলাত আদায় করলেন যখন সূর্য আকাশের বেশ উপরের দিকে ছিল। …এর পরদিন সকালে তিনি (স) ফাজরের সলাত দেরি করে আদায় করলেন। এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, যখন সলাত শেষ করলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল- সূর্যোদয় ঘটেছে বা সূর্যোদয়ের উপক্রম হয়েছে। এরপর যোহরের সলাত এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, গত দিনের আসরের সলাত যে সময় আদায় করেছিলেন প্রায় সে সময় এসে গেল। অতঃপর আসরের সলাতটাও এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, সলাত শেষ করলে লোকজন বলাবলি করতে লাগল- সূর্য রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। অতঃপর (প্রশ্নকারীকে ডেকে) বললেন: এ দু'টি সময়ের মধ্যবর্তী সময়টুকুই সলাতসমূহের সময়।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৮০ (১৭৮/৬১৪), জামউল ফাওয়ায়েদ (ইফা) ১/৯৯৪ নং।]
إِذَا صَلَّيْتُمُ الظُّهْرَ فَإِنَّهُ وَقْتٌ إِلَى أَنْ يَحْضُرَ الْعَصْرُ فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَإِنَّهُ وَقْتٌ إِلَى أَنْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ .
“তোমরা যখন যোহরের সলাত আদায় করবে তখন জেনে রেখ যে, এর সময় হলো- আসরের ওয়াক্ত শুরু না হওয়া পর্যন্ত। তোমরা যখন আসরের সলাত আদায় করবে তখন জেনে রেখ আসরের সলাতের সময় সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭২(১৭১/৬১২)।]
হাদীস-২৬: সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা) থেকে অন্য বর্ণনায় আছে:
عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : وَقْتُ الظُّهْرِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ .
“নবী (স) বলেছেন: আসরের সলাতের ওয়াক্ত উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত যোহরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে। আর সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত আসরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৩(১৭২/৬১২)।]
হাদীস-২৭: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ … وَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ .
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: …আসরের সলাতের সময় থাকে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৫(১৭৩/৬১২)।]
হাদীস-২৮: সাহাবী আবূ মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত:
[ أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي مُوسَىأَبِي مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، ] عَنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ ، أَنَّهُ أَتَاهُ سَائِلٌ يَسْأَلُهُ عَنْ مَوَاقِيتِ الصَّلَاةِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ شَيْئًا، قَالَ : فَأَقَامَ الْفَجْرَ حِينَ انْشَقَّ الْفَجْرُ، وَالنَّاسُ لَا يَكَادُ يَعْرِفُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ بِالظُّهْرِ، حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدِ انْتَصَفَ النَّهَارُ، وَهُوَ كَانَ أَعْلَمَ مِنْهُمْ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ بِالْعَصْرِ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ … ثُمَّ أَخَّرَ الْفَجْرَ مِنَ الْغَدِ حَتَّى انْصَرَفَ مِنْهَا، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدْ طَلَعَتِ الشَّمْسُ، أَوْ كَادَتْ، ثُمَّ أَخَّرَ الظُّهْرَ حَتَّى كَانَ قَرِيبًا مِنْ وَقْتِ الْعَصْرِ بِالْأَمْسِ، ثُمَّ أَخَّرَ الْعَصْرَ حَتَّى انْصَرَفَ مِنْهَا، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدِ احْمَرَّتِ الشَّمْسُ … فَقَالَ : الْوَقْتُ بَيْنَ هَذَيْنِ .
“জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (স) -এর কাছে এসে সলাতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি (স) তাকে জবাব দিলেন না তিনি (স) কাজের মাধ্যমে তাকে দেখিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। বর্ণনাকার সহাবী আবূ মূসা বলেন, উষার আগমনের সাথে সাথেই রসূলুল্লাহ (স) ফজরের সলাত আদায় করলেন। তখনও অন্ধকার এতটা ছিল যে লোকজন একে অপরকে দেখে চিনতে পারছিল না। এরপর তিনি (স) আযান দিতে আদেশ করলেন এবং লোকজন বলাবলি করছিল যে, দুপুর হয়েছে। অথচ রসূলুল্লাহ (স)-এ বিষয়ে তাদের চেয়ে বেশী অবহিত। তারপর তিনি (স) আসরের আযান দিতে আদেশ করলেন এবং এমন সময় আসরের সলাত আদায় করলেন যখন সূর্য আকাশের বেশ উপরের দিকে ছিল। …এর পরদিন সকালে তিনি (স) ফাজরের সলাত দেরি করে আদায় করলেন। এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, যখন সলাত শেষ করলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল- সূর্যোদয় ঘটেছে বা সূর্যোদয়ের উপক্রম হয়েছে। এরপর যোহরের সলাত এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, গত দিনের আসরের সলাত যে সময় আদায় করেছিলেন প্রায় সে সময় এসে গেল। অতঃপর আসরের সলাতটাও এতটা দেরি করে আদায় করলেন যে, সলাত শেষ করলে লোকজন বলাবলি করতে লাগল- সূর্য রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। অতঃপর (প্রশ্নকারীকে ডেকে) বললেন: এ দু'টি সময়ের মধ্যবর্তী সময়টুকুই সলাতসমূহের সময়।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৮০ (১৭৮/৬১৪), জামউল ফাওয়ায়েদ (ইফা) ১/৯৯৪ নং।]
২২
অনুচ্ছেদ-২০: আসরের সলাতের ছাড়প্রাপ্ত ওয়াক্ত [জামাআত ক্বায়েমের জন্য নয়, ব্যক্তির বিশেষ অসুবিধায় প্রযোজ্য]হাদীস-২৯: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) থেকে বর্ণিত
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ … وَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: …আসরের সলাতের সময় থাকে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৫(১৭৩/৬১২)।]
হাদীস-৩০: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) থেকে অন্য বর্ণনাতে আছে:
وَقْتُ الظُّهْرِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ، وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْمَغْرِبُ،
“যোহরের ওয়াক্ত থাকে যতক্ষণ না আসরের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়, আর আসরের ওয়াক্ত থাকে যতক্ষণ না মাগরিবের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়।” [. বায়হাক্বী কুবরা হা/১৭৩৩- সহীহ (তাহক্বীক্ব উর্দু বায়হাক্বী কুবরা হা/১৭৩৩)।]
ইমাম বায়হাক্বী (রহ) শেষোক্ত হাদীসটি সম্পর্কে বলেন:
قَالَ شُعْبَةُ وَكَانَ أَحْيَانًا يَرْفَعُهُ وَأَحْيَانًا لَا يَرْفَعُهُ
“শু‘বাহ (রহ) কখনো এটি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন আবার কখনো মারফু হিসেবে বর্ণনা করেননি।”
এ পর্যায়ে সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমরের পূর্বের বর্ণনা তথা ‘আসরের সলাতের ওয়াক্ত সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত’ প্রাধান্যপ্রাপ্ত। তবে নিম্নোক্ত বর্ণনাগুলো আসর ও ফজরের সলাতের ছাড় দেয়া ওয়াক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়:
হাদীস-৩১: সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «إِذَا أَدْرَكَ أَحَدُكُمْ سَجْدَةً مِنْ صَلاَةِ العَصْرِ، قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَلْيُتِمَّ صَلاَتَهُ، وَإِذَا أَدْرَكَ سَجْدَةً مِنْ صَلاَةِ الصُّبْحِ، قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ، فَلْيُتِمَّ صَلاَتَهُ»
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের সলাতের এক সাজদা পায়, তা হলে সে যেন সলাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফজরের সলাতের এক সাজদাহ পায়, তা হলে সে যেন সলাত পূর্ণ করে নেয়।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫৬। অনুরূপ: সহীহ মুসলিম হা/১২৬১ (১৬৩/৬০৮)।]
হাদীস-৩২: উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْعَصْرِ سَجْدَةً قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ، أَوْ مِنَ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ، فَقَدْ أَدْرَكَهَا» ، وَالسَّجْدَةُ إِنَّمَا هِيَ الرَّكْعَةُ
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সলাতের একটি সাজদাহ করতে পারল কিংবা সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সলাতের একটি সাজদাহ করতে পারল সে উক্ত সলাত পেয়ে গেল।’ (বর্ণনাকারী বলেন:) সাজদাহ’র অর্থ- রাকআত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৬৩ (১৬৪/৬০৯)।]
এই হাদীসগুলোর সাথে নবী (স)-এর নিয়মিত জামাআত ক্বায়েম করার আমলগুলোর সাথে সম্পর্ক নেই। ফলে হাদীসগুলো দ্বারা ব্যক্তি যখন তার ছায়া একগুণ থেকে দ্বিগুণের পূর্বে তথা সূর্য তেজহীন হলুদ হওয়ার পূর্বে আদায় করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ইমাম ইবনু খুযায়মাহ (রহ) লিখেছেন:
بَابُ ذِكْرِ التَّغْلِيظِ فِي تَأْخِيرِ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى اصْفِرَارِ الشَّمْسِ، وَالدَّلِيلِ عَلَى أَنَّ قَوْلَهُ ﷺ فِي خَبَرِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو : «فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَهُوَ وَقْتٌ إِلَى أَنْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ» إِنَّمَا أَرَادَ وَقْتَ الْعُذْرِ وَالضَّرُورَةِ وَالنَّاسِي لِصَلَاةِ الْعَصْرِ، فَيَذْكُرُهَا قَبْلَ اصْفِرَارِ الشَّمْسِ أَوْ عِنْدَهُ . وَكَذَلِكَ أَرَادَ النَّبِيُّ ﷺ مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْعَصْرِ رَكْعَةً قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ فَقَدْ أَدْرَكَهَا، وَقْتَ الْعُذْرِ وَالضَّرُورَةِ وَالنَّاسِي لِصَلَاةِ الْعَصْرِ حِينَ يَذْكُرُهَا، وَقْتًا يُمْكِنُهُ أَنْ يُصَلِّيَ رَكْعَةً مِنْهَا قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ، لَا أَنَّهُ أَبَاحَ لِلْمُصَلِّي فِي غَيْرِ الْعُذْرِ وَالضَّرُورَةِ، وَهُوَ ذَاكِرٌ لِصَلَاةِ الْعَصْرِ، أَنْ يُؤَخِّرَهَا حَتَّى يُصَلِّيَ عِنْدَ اصْفِرَارِ الشَّمْسِ، أَوْ رَكْعَةً قَبْلَ الْغُرُوبِ وَثَلَاثًا بَعْدَهُ
“অনু্চ্ছেদ: আসরের সলাত হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার ব্যাপারে কঠিন ধমকী। এর এ সম্পর্কিত দলিল যে, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা)-এর হাদীসে নবী (স)-এর উক্তি: ‘যখন তোমারা আসরের সলাত আদায় কর, তখন হলুদ রঙ হওয়া পর্যন্ত এর ওয়াক্ত থাকে’-এর দ্বারা নবী (স)-এর উদ্দেশ্য ওজর, জরুরত বা ভুলে আসরের সলাত আদায় না করলে- হলুদ হওয়ার পূর্বে বা সে সময় আদায় করা। অনুরূপ তাঁর (স) হাদীস: ‘যে সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকআত পেল সে যেন সলাতটি পূর্ণ করে নেয়’-এর দাবি ও ওজর, জরুরত কিংবা ভুলে আসরের সলাত আদায় না করলে যখন খেয়াল আসে তখন (সূর্যাস্তের পূর্বে) এক রাকআত পড়া সম্ভব হলে, সে যেন তা আদায় করে। এর দ্বারা তাঁর (স) উদ্দেশ্য এটা নয় যে, মুসল্লির জন্য ওজরহীন ও জরুরতহীন অবস্থায় স্মরণ থাকা সত্ত্বেও আসরের সলাত আদায়ে দেরি করা মুবাহ (বৈধ)- এমনকি (এতটা দেরি যে) সে সুর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কিংবা সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত আদায় করবে আর বাকী তিন রাকআত সূর্যাস্তের পরে আদায় করবে।” [. সহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৩৩৩-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ।]
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ … وَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: …আসরের সলাতের সময় থাকে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৫(১৭৩/৬১২)।]
হাদীস-৩০: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) থেকে অন্য বর্ণনাতে আছে:
وَقْتُ الظُّهْرِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ، وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْمَغْرِبُ،
“যোহরের ওয়াক্ত থাকে যতক্ষণ না আসরের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়, আর আসরের ওয়াক্ত থাকে যতক্ষণ না মাগরিবের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়।” [. বায়হাক্বী কুবরা হা/১৭৩৩- সহীহ (তাহক্বীক্ব উর্দু বায়হাক্বী কুবরা হা/১৭৩৩)।]
ইমাম বায়হাক্বী (রহ) শেষোক্ত হাদীসটি সম্পর্কে বলেন:
قَالَ شُعْبَةُ وَكَانَ أَحْيَانًا يَرْفَعُهُ وَأَحْيَانًا لَا يَرْفَعُهُ
“শু‘বাহ (রহ) কখনো এটি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন আবার কখনো মারফু হিসেবে বর্ণনা করেননি।”
এ পর্যায়ে সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমরের পূর্বের বর্ণনা তথা ‘আসরের সলাতের ওয়াক্ত সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত’ প্রাধান্যপ্রাপ্ত। তবে নিম্নোক্ত বর্ণনাগুলো আসর ও ফজরের সলাতের ছাড় দেয়া ওয়াক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়:
হাদীস-৩১: সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «إِذَا أَدْرَكَ أَحَدُكُمْ سَجْدَةً مِنْ صَلاَةِ العَصْرِ، قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَلْيُتِمَّ صَلاَتَهُ، وَإِذَا أَدْرَكَ سَجْدَةً مِنْ صَلاَةِ الصُّبْحِ، قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ، فَلْيُتِمَّ صَلاَتَهُ»
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের সলাতের এক সাজদা পায়, তা হলে সে যেন সলাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফজরের সলাতের এক সাজদাহ পায়, তা হলে সে যেন সলাত পূর্ণ করে নেয়।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫৬। অনুরূপ: সহীহ মুসলিম হা/১২৬১ (১৬৩/৬০৮)।]
হাদীস-৩২: উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْعَصْرِ سَجْدَةً قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ، أَوْ مِنَ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ، فَقَدْ أَدْرَكَهَا» ، وَالسَّجْدَةُ إِنَّمَا هِيَ الرَّكْعَةُ
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সলাতের একটি সাজদাহ করতে পারল কিংবা সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সলাতের একটি সাজদাহ করতে পারল সে উক্ত সলাত পেয়ে গেল।’ (বর্ণনাকারী বলেন:) সাজদাহ’র অর্থ- রাকআত।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৬৩ (১৬৪/৬০৯)।]
এই হাদীসগুলোর সাথে নবী (স)-এর নিয়মিত জামাআত ক্বায়েম করার আমলগুলোর সাথে সম্পর্ক নেই। ফলে হাদীসগুলো দ্বারা ব্যক্তি যখন তার ছায়া একগুণ থেকে দ্বিগুণের পূর্বে তথা সূর্য তেজহীন হলুদ হওয়ার পূর্বে আদায় করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ইমাম ইবনু খুযায়মাহ (রহ) লিখেছেন:
بَابُ ذِكْرِ التَّغْلِيظِ فِي تَأْخِيرِ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى اصْفِرَارِ الشَّمْسِ، وَالدَّلِيلِ عَلَى أَنَّ قَوْلَهُ ﷺ فِي خَبَرِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو : «فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ فَهُوَ وَقْتٌ إِلَى أَنْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ» إِنَّمَا أَرَادَ وَقْتَ الْعُذْرِ وَالضَّرُورَةِ وَالنَّاسِي لِصَلَاةِ الْعَصْرِ، فَيَذْكُرُهَا قَبْلَ اصْفِرَارِ الشَّمْسِ أَوْ عِنْدَهُ . وَكَذَلِكَ أَرَادَ النَّبِيُّ ﷺ مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْعَصْرِ رَكْعَةً قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ فَقَدْ أَدْرَكَهَا، وَقْتَ الْعُذْرِ وَالضَّرُورَةِ وَالنَّاسِي لِصَلَاةِ الْعَصْرِ حِينَ يَذْكُرُهَا، وَقْتًا يُمْكِنُهُ أَنْ يُصَلِّيَ رَكْعَةً مِنْهَا قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ، لَا أَنَّهُ أَبَاحَ لِلْمُصَلِّي فِي غَيْرِ الْعُذْرِ وَالضَّرُورَةِ، وَهُوَ ذَاكِرٌ لِصَلَاةِ الْعَصْرِ، أَنْ يُؤَخِّرَهَا حَتَّى يُصَلِّيَ عِنْدَ اصْفِرَارِ الشَّمْسِ، أَوْ رَكْعَةً قَبْلَ الْغُرُوبِ وَثَلَاثًا بَعْدَهُ
“অনু্চ্ছেদ: আসরের সলাত হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার ব্যাপারে কঠিন ধমকী। এর এ সম্পর্কিত দলিল যে, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা)-এর হাদীসে নবী (স)-এর উক্তি: ‘যখন তোমারা আসরের সলাত আদায় কর, তখন হলুদ রঙ হওয়া পর্যন্ত এর ওয়াক্ত থাকে’-এর দ্বারা নবী (স)-এর উদ্দেশ্য ওজর, জরুরত বা ভুলে আসরের সলাত আদায় না করলে- হলুদ হওয়ার পূর্বে বা সে সময় আদায় করা। অনুরূপ তাঁর (স) হাদীস: ‘যে সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকআত পেল সে যেন সলাতটি পূর্ণ করে নেয়’-এর দাবি ও ওজর, জরুরত কিংবা ভুলে আসরের সলাত আদায় না করলে যখন খেয়াল আসে তখন (সূর্যাস্তের পূর্বে) এক রাকআত পড়া সম্ভব হলে, সে যেন তা আদায় করে। এর দ্বারা তাঁর (স) উদ্দেশ্য এটা নয় যে, মুসল্লির জন্য ওজরহীন ও জরুরতহীন অবস্থায় স্মরণ থাকা সত্ত্বেও আসরের সলাত আদায়ে দেরি করা মুবাহ (বৈধ)- এমনকি (এতটা দেরি যে) সে সুর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কিংবা সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত আদায় করবে আর বাকী তিন রাকআত সূর্যাস্তের পরে আদায় করবে।” [. সহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৩৩৩-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ।]
হাদীস-৩৩: সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন:
قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ ﷺ " مَنْ نَسِيَ صَلاَةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا " .
“নবী (স) বলেছেন: কেউ কোনো সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে পড়লে তার কাফফারাহ হলো যখনই স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৪৫৪ (৩১৫/৬৮৪), অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/৫৯৭ (সংক্ষেপে)।]
قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ ﷺ " مَنْ نَسِيَ صَلاَةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا " .
“নবী (স) বলেছেন: কেউ কোনো সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে পড়লে তার কাফফারাহ হলো যখনই স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৪৫৪ (৩১৫/৬৮৪), অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/৫৯৭ (সংক্ষেপে)।]
২৪
অনুচ্ছেদ-২২: ইচ্ছাকৃতভাবে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত বা ছাড়প্রাপ্ত ওয়াক্তে আসরের সলাত আদায়কারী মুনাফেক্বহাদীস-৩৪: আনাস (রা) বলেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: " تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ : يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتَّى إِذَا اصْفَرَّتْ وَكَانَتْ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللَّهَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلا "
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: এটা মুনাফিক্বের সলাত- তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সূর্যের হলদে রঙ এবং শয়তানের দুই শিঙের মধ্যস্থলে গেলে তারা তাড়াতাড়ি উঠে চার ঠোকর মারে। এতে তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।” [. সহীহ মুসলিম সুত্রে: মিশকাত হা/৫৯৩। অনুরূপ: আবূ দাউদ হা/৪১৩ সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৬১।]
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: " تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ : يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتَّى إِذَا اصْفَرَّتْ وَكَانَتْ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللَّهَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلا "
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: এটা মুনাফিক্বের সলাত- তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সূর্যের হলদে রঙ এবং শয়তানের দুই শিঙের মধ্যস্থলে গেলে তারা তাড়াতাড়ি উঠে চার ঠোকর মারে। এতে তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।” [. সহীহ মুসলিম সুত্রে: মিশকাত হা/৫৯৩। অনুরূপ: আবূ দাউদ হা/৪১৩ সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৬১।]
২৫
অনুচ্ছেদ-২৩: জিবরীল (আ) সলাতের যে ওয়াক্ত দেখিয়েছেন সে অনুযায়ী সলাত আদায়ের প্রতি নির্দেশ প্রদান এবং সেটা না পালন করাতে সাহাবীগণের উদ্বীগ্ন হওয়া।হাদীস-৩৫: তাবেঈ ইবনু শিহাব (রহ) বলেন:
أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ، أَخَّرَ الصَّلاَةَ يَوْمًا فَدَخَلَ عَلَيْهِ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ فَأَخْبَرَهُ أَنَّ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ أَخَّرَ الصَّلاَةَ يَوْمًا وَهُوَ بِالْكُوفَةِ فَدَخَلَ عَلَيْهِ أَبُو مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيُّ فَقَالَ مَا هَذَا يَا مُغِيرَةُ أَلَيْسَ قَدْ عَلِمْتَ أَنَّ جِبْرِيلَ نَزَلَ فَصَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ صَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ صَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ صَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ صَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ قَالَ " بِهَذَا أُمِرْتُ " . فَقَالَ عُمَرُ لِعُرْوَةَ انْظُرْ مَا تُحَدِّثُ يَا عُرْوَةُ أَوَإِنَّ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ هُوَ أَقَامَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَقْتَ الصَّلاَةِ فَقَالَ عُرْوَةُ كَذَلِكَ كَانَ بَشِيرُ بْنُ أَبِي مَسْعُودٍ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ .
“উমার ইবনু আবদুল 'আযীয (রহ) একদিন সলাত আদায় করতে ( বেশ দেরি করে ফেললেন) তাই উরওয়াহ ইবনু মাসউদ তার কাছে গিয়ে বললেন, কুফায় (গভর্নর) থাকাকালীন একদিন মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রা) (আসরের) সলাত আদায় করতে করতে দেরি করে ফেললেন। (সাহাবী) আবূ মাসউদ আল আনসারী (রা) গিয়ে তাকে বললেন, মুগীরাহ! একি করছ তুমি? তুমি কি জানো না যে, এক সময় জিবরীল (আ) এসে সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (স) তাঁর সাথে সলাত আদায় করলেন। তিনি জিবরীল (আ) আবার (আরেক ওয়াক্তের) সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (স) তাঁর সাথে আবার সলাত আদায় করলেন। তিনি জিবরীল (আ) পুনরায় (আরেক ওয়াক্তের) সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (স) পুনরায় এ সলাত তার সাথে আদায় করলেন। তিনি জিবরীল (আ) আবারও (আরেক ওয়াক্তের) সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (স) এ সলাত তার সাথে আদায় করলেন। এরপর জিবরীল (আ) বললেন, আপনি এভাবে সলাত আদায় করতে আদিষ্ট হয়েছেন। এ কথা শুনে উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) উরওয়াহ ইবনু যুবায়রকে বললেন: উরওয়াহ! তুমি কি বলছ তা কি চিন্তা করে দেখেছে? জিবরীল (আ) নিজে কি রসূলুল্লাহ (স)-এর জন্য সলাতের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন? জবাবে উরওয়াহ বলেন, বাশীর ইবনু আবূ মাসউদ তার পিতা আবূ মাসউদের নিকট থেকে তো এরূপই (সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া) বর্ণনা করতেন।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৬৭ (১৬৭/ ৬১১)। অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/৫২১, ৫২২।]
أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ، أَخَّرَ الصَّلاَةَ يَوْمًا فَدَخَلَ عَلَيْهِ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ فَأَخْبَرَهُ أَنَّ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ أَخَّرَ الصَّلاَةَ يَوْمًا وَهُوَ بِالْكُوفَةِ فَدَخَلَ عَلَيْهِ أَبُو مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيُّ فَقَالَ مَا هَذَا يَا مُغِيرَةُ أَلَيْسَ قَدْ عَلِمْتَ أَنَّ جِبْرِيلَ نَزَلَ فَصَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ صَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ صَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ صَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ صَلَّى فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ قَالَ " بِهَذَا أُمِرْتُ " . فَقَالَ عُمَرُ لِعُرْوَةَ انْظُرْ مَا تُحَدِّثُ يَا عُرْوَةُ أَوَإِنَّ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ هُوَ أَقَامَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَقْتَ الصَّلاَةِ فَقَالَ عُرْوَةُ كَذَلِكَ كَانَ بَشِيرُ بْنُ أَبِي مَسْعُودٍ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ .
“উমার ইবনু আবদুল 'আযীয (রহ) একদিন সলাত আদায় করতে ( বেশ দেরি করে ফেললেন) তাই উরওয়াহ ইবনু মাসউদ তার কাছে গিয়ে বললেন, কুফায় (গভর্নর) থাকাকালীন একদিন মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রা) (আসরের) সলাত আদায় করতে করতে দেরি করে ফেললেন। (সাহাবী) আবূ মাসউদ আল আনসারী (রা) গিয়ে তাকে বললেন, মুগীরাহ! একি করছ তুমি? তুমি কি জানো না যে, এক সময় জিবরীল (আ) এসে সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (স) তাঁর সাথে সলাত আদায় করলেন। তিনি জিবরীল (আ) আবার (আরেক ওয়াক্তের) সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (স) তাঁর সাথে আবার সলাত আদায় করলেন। তিনি জিবরীল (আ) পুনরায় (আরেক ওয়াক্তের) সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (স) পুনরায় এ সলাত তার সাথে আদায় করলেন। তিনি জিবরীল (আ) আবারও (আরেক ওয়াক্তের) সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (স) এ সলাত তার সাথে আদায় করলেন। এরপর জিবরীল (আ) বললেন, আপনি এভাবে সলাত আদায় করতে আদিষ্ট হয়েছেন। এ কথা শুনে উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) উরওয়াহ ইবনু যুবায়রকে বললেন: উরওয়াহ! তুমি কি বলছ তা কি চিন্তা করে দেখেছে? জিবরীল (আ) নিজে কি রসূলুল্লাহ (স)-এর জন্য সলাতের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন? জবাবে উরওয়াহ বলেন, বাশীর ইবনু আবূ মাসউদ তার পিতা আবূ মাসউদের নিকট থেকে তো এরূপই (সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া) বর্ণনা করতেন।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৬৭ (১৬৭/ ৬১১)। অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/৫২১, ৫২২।]
২৬
অনুচ্ছেদ-২৪: আসরের সলাতের পর এতটা সময় থাকতো যে, একটি উট যবাহ করে দশ ভাগে বণ্টন করার পর রান্না করে সূর্যাস্তের পূর্বে ঐ গোশত খাওয়া হতোহাদীস-৩৬: সাহাবী রাফি‘ বিন খাদীজ (রা) থেকে বর্ণিত:
كُنَّا نُصَلِّي الْعَصْرَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ تُنْحَرُ الْجَزُورُ فَتُقْسَمُ عَشَرَ قِسَمٍ ثُمَّ تُطْبَخُ فَنَأْكُلُ لَحْمًا نَضِيجًا قَبْلَ مَغِيبِ الشَّمْسِ .
“আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর সাথে এমন সময় আসরের সলাত আদায় করতাম যে সলাতের পর উট যবাহ করা হতো। তা দশ ভাগে বিভক্ত করা হতো। এরপর তা রান্না করে সূর্যাস্তের পূর্বেই ভালভাবে রান্না করে গোশত খেতাম।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৩০২ (১৯৮/৬২৫)।]
মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
قَالَ ابْنُ الْهُمَامِ فِي شَرْحِ الْهِدَايَةِ : إِذَا صَلَّى الْعَصْرَ قَبْلَ تَغَيُّرِ الشَّمْسِ أَمْكَنَ فِي الْبَاقِي إِلَى الْغُرُوبِ مِثْلَ هَذَا الْعَمَلِ، وَمَنْ شَاهَدَ الْمَهَرَةَ مِنَ الطَّبَّاخِينَ مَعَ الرُّؤَسَاءِ لَمْ يَسْتَبْعِدْ ذَلِكَ .
“ইবনু হুমাম হানাফী (রহ) হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়াহ’র ব্যাখ্যায় (‘ফতহুল ক্বাদীরে’) লিখেছেন: যখন আসরের সলাত সূর্যের রঙ (তেজ) পরিবর্তন করার পূর্বে আদায় করা হয় তখন এ ধরনের কাজ মাগরিবের পূর্বে সম্পন্ন করা যাবে। আর যখন তাদের মধ্যে দক্ষ রাধুনি বা বাবুর্চিদের উপস্থিতে করা হবে তখন এটা অসম্ভব নয়।” [. মুল্লা আলী ক্বারী, মিরক্বাত শরহু মিশকাত ২/৫৩৭, উর্দু মিরক্বাত ২/৪৭৩ পৃ. হা/৬১৫-এর ব্যাখ্যা।]
كُنَّا نُصَلِّي الْعَصْرَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ثُمَّ تُنْحَرُ الْجَزُورُ فَتُقْسَمُ عَشَرَ قِسَمٍ ثُمَّ تُطْبَخُ فَنَأْكُلُ لَحْمًا نَضِيجًا قَبْلَ مَغِيبِ الشَّمْسِ .
“আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর সাথে এমন সময় আসরের সলাত আদায় করতাম যে সলাতের পর উট যবাহ করা হতো। তা দশ ভাগে বিভক্ত করা হতো। এরপর তা রান্না করে সূর্যাস্তের পূর্বেই ভালভাবে রান্না করে গোশত খেতাম।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৩০২ (১৯৮/৬২৫)।]
মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
قَالَ ابْنُ الْهُمَامِ فِي شَرْحِ الْهِدَايَةِ : إِذَا صَلَّى الْعَصْرَ قَبْلَ تَغَيُّرِ الشَّمْسِ أَمْكَنَ فِي الْبَاقِي إِلَى الْغُرُوبِ مِثْلَ هَذَا الْعَمَلِ، وَمَنْ شَاهَدَ الْمَهَرَةَ مِنَ الطَّبَّاخِينَ مَعَ الرُّؤَسَاءِ لَمْ يَسْتَبْعِدْ ذَلِكَ .
“ইবনু হুমাম হানাফী (রহ) হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়াহ’র ব্যাখ্যায় (‘ফতহুল ক্বাদীরে’) লিখেছেন: যখন আসরের সলাত সূর্যের রঙ (তেজ) পরিবর্তন করার পূর্বে আদায় করা হয় তখন এ ধরনের কাজ মাগরিবের পূর্বে সম্পন্ন করা যাবে। আর যখন তাদের মধ্যে দক্ষ রাধুনি বা বাবুর্চিদের উপস্থিতে করা হবে তখন এটা অসম্ভব নয়।” [. মুল্লা আলী ক্বারী, মিরক্বাত শরহু মিশকাত ২/৫৩৭, উর্দু মিরক্বাত ২/৪৭৩ পৃ. হা/৬১৫-এর ব্যাখ্যা।]
২৭
অনুচ্ছেদ-২৫: আসরের সলাতের সময় সূর্যের আলো ঘরের মেঝেতে থাকবে ঘরের মেঝে সূর্যের আলোহীন হবে না বা ছায়া পড়বে না, অথবা সূর্যের আলো দেওয়ালে লাগবে না বা বাইরে যাবে না।হাদীস-৩৭: আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন:
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ صَلَّى الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ فِي حُجْرَتِهَا لَمْ يَظْهَرْ الْفَيْءُ مِنْ حُجْرَتِهَا .
“আল্লাহর রসূল (স) এমন সময় আসরের সলাত আদায় করেছেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো তাঁর ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর হতে বেরিয়ে পড়েনি।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৪৫।]
অন্য বর্ণনায় আছে:
كَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّي صَلاَةَ الْعَصْرِ وَالشَّمْسُ طَالِعَةٌ فِي حُجْرَتِي لَمْ يَظْهَرْ الْفَيْءُ بَعْدُ وَقَالَ مَالِكٌ وَيَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ وَشُعَيْبٌ وَابْنُ أَبِي حَفْصَةَ وَالشَّمْسُ قَبْلَ أَنْ تَظْهَرَ .
“নবী (স) ‘আসরের সলাত আদায় করতেন, আর সূর্যকিরণ তখনো আমার ঘরে থাকতো। সলাত আদায় করার পরও ছায়া (ঘরে) দৃষ্টিগোচর হতো না। আবু ‘আবদুল্লাহ্ [ইমাম বুখারী (রহ)] বলেন, ইমাম মালিক, ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ, শুআইব ও ইবনু আবূ হাফস্ (রহ) উক্ত সনদে এ হাদীসটির বর্ণনায়, ‘সূর্যরশ্মি আমার ঘরের ভিতরে থাকত, ঘরের মেঝেতে ছায়া নেমে আসেনি’ এমন বলেছেন।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৪৬।]
অন্য বর্ণনায় আছে:
انَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ فِي حُجْرَتِهَا قَبْلَ أَنْ تَظْهَرَ .
“রসূলুল্লাহ (স) ‘আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন রোদ তার ঘরের মধ্যে থাকত এবং দেয়ালে রোদ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই এরূপ হত।” [. আবূ দাউদ হা/৪০৭।]
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) ‘ফতহুল বারী’-তে হাদীসগুলোর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন:
وَالْمُسْتَفَادُ مِنْ هَذَا الْحَدِيثِ تَعْجِيلُ صَلَاةِ الْعَصْرِ فِي أَوَّلِ وَقْتِهَا وَهَذَا هُوَ الَّذِي فَهِمَتْهُ عَائِشَةُ وَكَذَا الرَّاوِي عَنْهَا عُرْوَةُ وَاحْتَجَّ بِهِ عَلَى عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي تَأْخِيرِهِ صَلَاةَ الْعَصْرِ كَمَا تَقَدَّمَ .
“এই হাদীস থেকে অর্জিত ফায়দা হল, আসরের সলাত শীঘ্র শীঘ্র এর প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে আদায় করতে হয়। আর এটাই আয়েশা (রা)-এর বুঝ এবং বর্ণনাকারী উরওয়াহ (রহ)-এর বুঝও এটাই। আর এ কারণেই তিনি (রহ) উমার বিন আব্দুল আযীয (রহ) আসরের (সলাত) দেরি করাতে এ দ্বারা হুজ্জাত (দলিল) নিয়েছেন যেভাবে পূর্বে [. সহীহ বুখারী (তাওহীদ) হা/৫২১ ও ৫২২। ৫২২ নং টি স্বতন্ত্র সনদসহ বর্ণিত হাদীস নয় বরং সনদসহ বর্ণিত ৫২১ নং এর শেষাংশ। পরবর্তী কালে যারা সহীহ বুখারীতে নম্বর যুক্ত করেছেন তারা হাদীসটি ৫২২ নং-এর অংশটি স্বতন্ত্রভাবে নম্বর দিয়েছেন। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সহীহ বুখারী হা/৪৯৭-এ বর্ণনাটি একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। [দ্র: সহীহ বুখারী (ইফা) ২য় খণ্ড প্রথম হাদীস]] হাদীসে এসেছে।” [. ফতহুল বারী ২/২৫ পৃ: ৫৪৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্র:।]
অতঃপর হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন:
وَشَذَّ الطَّحَاوِيّ فَقَالَ لَا دَلَالَةَ فِيهِ عَلَى التَّعْجِيلِ لِاحْتِمَالِ أَنَّ الْحُجْرَةَ كَانَتْ قَصِيرَةَ الْجِدَارِ فَلَمْ تَكُنِ الشَّمْسُ تَحْتَجِبُ عَنْهَا إِلَّا بِقُرْبِ غُرُوبِهَا فَيَدُلُّ عَلَى التَّأْخِيرِ لَا عَلَى التَّعْجِيلِ وَتُعُقِّبَ بِأَنَّ الَّذِي ذَكَرَهُ مِنَ الِاحْتِمَالِ إِنَّمَا يُتَصَوَّرُ مَعَ اتِّسَاعِ الْحُجْرَةِ وَقَدْ عُرِفَ بِالِاسْتِفَاضَةِ وَالْمُشَاهَدَةِ أَنَّ حُجَرَ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ ﷺ لَمْ تَكُنْ مُتَّسِعَةً وَلَا يَكُونُ ضَوْءُ الشَّمْسِ بَاقِيًا فِي قَعْرِ الْحُجْرَةِ الصَّغِيرَةِ إِلَّا وَالشَّمْسُ قَائِمَةٌ مُرْتَفِعَةٌ وَإِلَّا مَتَى مَالَتْ جِدًّا ارْتَفَعَ ضَوْؤُهَا عَنْ قَاعِ الْحُجْرَةِ وَلَوْ كَانَتِ الْجُدُرُ قَصِيرَةً قَالَ النَّوَوِيُّ كَانَتِ الْحُجْرَةُ ضَيِّقَةَ الْعَرْصَةِ قَصِيرَةَ الْجِدَارِ بِحَيْثُ كَانَ طُولُ جِدَارِهَا أَقَلَّ مِنْ مَسَافَةِ الْعَرْصَةِ بِشَيْءٍ يَسِيرٍ فَإِذَا صَارَ ظِلُّ الْجِدَارِ مِثْلَهُ كَانَتِ الشَّمْسُ بَعْدُ فِي أَوَاخِرِ الْعَرْصَةِ اه وَكَأَنَّ الْمُؤَلِّفَ لَمَّا لَمْ يَقَعْ لَهُ حَدِيثٌ عَلَى شَرْطِهِ فِي تَعْيِينِ أَوَّلِ وَقْتِ الْعَصْرِ وَهُوَ مَصِيرُ ظِلِّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ اسْتَغْنَى بِهَذَا الْحَدِيثِ الدَّالِّ عَلَى ذَلِكَ بِطَرِيقِ الِاسْتِنْبَاطِ وَقَدْ أَخْرَجَ مُسْلِمٌ عِدَّةَ أَحَادِيثَ مُصَرَّحَةً بِالْمَقْصُودِ وَلَمْ يُنْقَلْ عَنْ أَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مُخَالَفَةٌ فِي ذَلِكَ إِلَّا عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ فَالْمَشْهُورُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ أَوَّلُ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرُ ظِلِّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَيْهِ بِالتَّثْنِيَةِ قَالَ الْقُرْطُبِيُّ خَالَفَهُ النَّاسُ كُلُّهُمْ فِي ذَلِكَ حَتَّى أَصْحَابُهُ يَعْنِي الْآخِذِينَ عَنْهُ وَإِلَّا فَقَدِ انْتَصَرَ لَهُ جَمَاعَةٌ مِمَّنْ جَاءَ بَعْدَهُمْ فَقَالُوا ثَبَتَ الْأَمْرُ بِالْإِبْرَادِ وَلَا يَحْصُلُ إِلَّا بَعْدَ ذَهَابِ اشْتِدَادِ الْحَرِّ وَلَا يَذْهَبُ فِي تِلْكَ الْبِلَادِ إِلَّا بَعْدَ أَنْ يَصِيرَ ظِلُّ الشَّيْءِ مِثْلَيْهِ فَيَكُونُ أَوَّلُ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرَ الظِّلِّ مِثْلَيْهِ وَحِكَايَةُ مِثْلِ هَذَا تُغْنِي عَنْ رده .
“কিন্তু তাহাবী’র (হানাফী) দুর্বল উক্তি হল, তিনি বলেছেন: ‘আয়েশা (রা)-এর হাদীস দ্বারা আসরের সলাত শীঘ্রই আদায় করার দলিল নেই। কেননা কক্ষের দরজা খুবই নিচু ছিল। ফলে সূর্য (আলো) তখনই ঘর থেকে বের হতো না যতক্ষণ না তার প্রখরতা কমে গিয়ে সূর্যাস্তের নিকটবর্তী হতো। এ থেকে দলিল পাওয়া গেল যে, (নবী স.) আসরের সলাত দেরিতে পড়তেন এবং শীঘ্র ও (ওয়াক্ত হওয়ার) পরপর পড়তেন না।’ [. তাহাবী (ইফা) হা/১০৫৮-এর পরবর্তী মন্তব্য।] এর জবাব হল, তাহাবীর দাবিরর সম্ভবনাটা তখন হতে পারে, যখন সূর্যের আলো ঘরের মেঝেতে প্রশস্তভাবে পতিত হতো। অথচ আমরা পরিপূরক দলিল ও সাক্ষ্য থেকে জানতে পারি যে, নবী (স)-এর স্ত্রীর ঘরটি প্রশস্ত ছিল না, বরং সংকীর্ণ ও ছোট ছিল। ফলে ছোট ঘরে ততক্ষণ পর্যন্ত আলো থাকবে যতক্ষণ সূর্য খুব উঁচুতে অবস্থান করে। আর যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার নিকটবর্তী হয় তখন আলো ঘরের মেঝেতে থাকবে না, যদিওবা ঘরের দরজা ছোট হোক না কেন? ইমাম নওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন: ঘরের চত্বরের পরিধি ছিল সংকীর্ণ, দেওয়াল ছিল নিকটবর্তী, উচ্চতার দিক থেকে দরজাটি মেঝের প্রশস্ততার থেকে কিছু কম ছিল। ফলে যখন ছায়া দেওয়ালের সমান হতো তখন সূর্যের আলো মেঝের শেষাংশে চলে যেত। এর ফলে যখন ইমাম বুখারী (রহ) নিজের সহীহ’র শর্তানুযায়ী এক ছায়া পরিমানের পরবর্তী সময় সম্পর্কিত আসরের প্রথম ওয়াক্তের হাদীস পেলেন না, তখন কেবল আয়েশা (রা)-এর হাদীস গ্রহণ করলেন এবং তা দ্বারা প্রথম ওয়াক্তে আসরের সলাত আদায়ের সিদ্ধান্ত দিলেন। আর সহীহ মুসলিমের এ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট অনেক হাদীস রয়েছে যে, এক ছায়ার পরে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। কোনো আলেম থেকে এর বিরোধী বক্তব্য নেই, কেবল ইমাম আবূ হানীফা (রহ) থেকে রয়েছে। তাঁর প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে যে, আসরের ওয়াক্ত ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর শুরু হয়। ইমাম কুরতুবী (রহ) বলেছেন: সমস্ত মানুষ (আলেমগণ) এর বিরোধিতা করেছেন, অর্থাৎ তাঁদের নিকট আসরের ওয়াক্ত এক ছায়া থেকে শুরু হয়ে যায়। এমনকি ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্যও তাঁর বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু ইমাম সাহেবের পরবর্তী অনুসারীরা ‘ইবরাদ’(বা সূর্যের তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার) হাদীস দ্বারা দলিল নিয়ে যোহরের ওয়াক্ত দুই ছায়া পর্যন্ত রেখেছেন। কিন্তু তাদের এই দলিল গ্রহণ ঠিক নয় যা তারা ‘ইবরাদ’-হাদীস থেকে দ্বিগুণ ছায়ার অর্থ নিয়েছেন। অথচ ঐ ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা দ্বারা আসরের সলাত এক ছায়া থেকে প্রথম ওয়াক্ত প্রমাণিত হয়, যা দ্বারা তাদের উপস্থাপনা খণ্ডন হয়।” [. ফতহুল বারী ২/২৫ পৃ: ৫৪৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্র:।]
أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ صَلَّى الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ فِي حُجْرَتِهَا لَمْ يَظْهَرْ الْفَيْءُ مِنْ حُجْرَتِهَا .
“আল্লাহর রসূল (স) এমন সময় আসরের সলাত আদায় করেছেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো তাঁর ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর হতে বেরিয়ে পড়েনি।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৪৫।]
অন্য বর্ণনায় আছে:
كَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّي صَلاَةَ الْعَصْرِ وَالشَّمْسُ طَالِعَةٌ فِي حُجْرَتِي لَمْ يَظْهَرْ الْفَيْءُ بَعْدُ وَقَالَ مَالِكٌ وَيَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ وَشُعَيْبٌ وَابْنُ أَبِي حَفْصَةَ وَالشَّمْسُ قَبْلَ أَنْ تَظْهَرَ .
“নবী (স) ‘আসরের সলাত আদায় করতেন, আর সূর্যকিরণ তখনো আমার ঘরে থাকতো। সলাত আদায় করার পরও ছায়া (ঘরে) দৃষ্টিগোচর হতো না। আবু ‘আবদুল্লাহ্ [ইমাম বুখারী (রহ)] বলেন, ইমাম মালিক, ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ, শুআইব ও ইবনু আবূ হাফস্ (রহ) উক্ত সনদে এ হাদীসটির বর্ণনায়, ‘সূর্যরশ্মি আমার ঘরের ভিতরে থাকত, ঘরের মেঝেতে ছায়া নেমে আসেনি’ এমন বলেছেন।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৪৬।]
অন্য বর্ণনায় আছে:
انَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ فِي حُجْرَتِهَا قَبْلَ أَنْ تَظْهَرَ .
“রসূলুল্লাহ (স) ‘আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন রোদ তার ঘরের মধ্যে থাকত এবং দেয়ালে রোদ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই এরূপ হত।” [. আবূ দাউদ হা/৪০৭।]
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) ‘ফতহুল বারী’-তে হাদীসগুলোর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন:
وَالْمُسْتَفَادُ مِنْ هَذَا الْحَدِيثِ تَعْجِيلُ صَلَاةِ الْعَصْرِ فِي أَوَّلِ وَقْتِهَا وَهَذَا هُوَ الَّذِي فَهِمَتْهُ عَائِشَةُ وَكَذَا الرَّاوِي عَنْهَا عُرْوَةُ وَاحْتَجَّ بِهِ عَلَى عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي تَأْخِيرِهِ صَلَاةَ الْعَصْرِ كَمَا تَقَدَّمَ .
“এই হাদীস থেকে অর্জিত ফায়দা হল, আসরের সলাত শীঘ্র শীঘ্র এর প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে আদায় করতে হয়। আর এটাই আয়েশা (রা)-এর বুঝ এবং বর্ণনাকারী উরওয়াহ (রহ)-এর বুঝও এটাই। আর এ কারণেই তিনি (রহ) উমার বিন আব্দুল আযীয (রহ) আসরের (সলাত) দেরি করাতে এ দ্বারা হুজ্জাত (দলিল) নিয়েছেন যেভাবে পূর্বে [. সহীহ বুখারী (তাওহীদ) হা/৫২১ ও ৫২২। ৫২২ নং টি স্বতন্ত্র সনদসহ বর্ণিত হাদীস নয় বরং সনদসহ বর্ণিত ৫২১ নং এর শেষাংশ। পরবর্তী কালে যারা সহীহ বুখারীতে নম্বর যুক্ত করেছেন তারা হাদীসটি ৫২২ নং-এর অংশটি স্বতন্ত্রভাবে নম্বর দিয়েছেন। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সহীহ বুখারী হা/৪৯৭-এ বর্ণনাটি একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। [দ্র: সহীহ বুখারী (ইফা) ২য় খণ্ড প্রথম হাদীস]] হাদীসে এসেছে।” [. ফতহুল বারী ২/২৫ পৃ: ৫৪৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্র:।]
অতঃপর হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন:
وَشَذَّ الطَّحَاوِيّ فَقَالَ لَا دَلَالَةَ فِيهِ عَلَى التَّعْجِيلِ لِاحْتِمَالِ أَنَّ الْحُجْرَةَ كَانَتْ قَصِيرَةَ الْجِدَارِ فَلَمْ تَكُنِ الشَّمْسُ تَحْتَجِبُ عَنْهَا إِلَّا بِقُرْبِ غُرُوبِهَا فَيَدُلُّ عَلَى التَّأْخِيرِ لَا عَلَى التَّعْجِيلِ وَتُعُقِّبَ بِأَنَّ الَّذِي ذَكَرَهُ مِنَ الِاحْتِمَالِ إِنَّمَا يُتَصَوَّرُ مَعَ اتِّسَاعِ الْحُجْرَةِ وَقَدْ عُرِفَ بِالِاسْتِفَاضَةِ وَالْمُشَاهَدَةِ أَنَّ حُجَرَ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ ﷺ لَمْ تَكُنْ مُتَّسِعَةً وَلَا يَكُونُ ضَوْءُ الشَّمْسِ بَاقِيًا فِي قَعْرِ الْحُجْرَةِ الصَّغِيرَةِ إِلَّا وَالشَّمْسُ قَائِمَةٌ مُرْتَفِعَةٌ وَإِلَّا مَتَى مَالَتْ جِدًّا ارْتَفَعَ ضَوْؤُهَا عَنْ قَاعِ الْحُجْرَةِ وَلَوْ كَانَتِ الْجُدُرُ قَصِيرَةً قَالَ النَّوَوِيُّ كَانَتِ الْحُجْرَةُ ضَيِّقَةَ الْعَرْصَةِ قَصِيرَةَ الْجِدَارِ بِحَيْثُ كَانَ طُولُ جِدَارِهَا أَقَلَّ مِنْ مَسَافَةِ الْعَرْصَةِ بِشَيْءٍ يَسِيرٍ فَإِذَا صَارَ ظِلُّ الْجِدَارِ مِثْلَهُ كَانَتِ الشَّمْسُ بَعْدُ فِي أَوَاخِرِ الْعَرْصَةِ اه وَكَأَنَّ الْمُؤَلِّفَ لَمَّا لَمْ يَقَعْ لَهُ حَدِيثٌ عَلَى شَرْطِهِ فِي تَعْيِينِ أَوَّلِ وَقْتِ الْعَصْرِ وَهُوَ مَصِيرُ ظِلِّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ اسْتَغْنَى بِهَذَا الْحَدِيثِ الدَّالِّ عَلَى ذَلِكَ بِطَرِيقِ الِاسْتِنْبَاطِ وَقَدْ أَخْرَجَ مُسْلِمٌ عِدَّةَ أَحَادِيثَ مُصَرَّحَةً بِالْمَقْصُودِ وَلَمْ يُنْقَلْ عَنْ أَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مُخَالَفَةٌ فِي ذَلِكَ إِلَّا عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ فَالْمَشْهُورُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ أَوَّلُ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرُ ظِلِّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَيْهِ بِالتَّثْنِيَةِ قَالَ الْقُرْطُبِيُّ خَالَفَهُ النَّاسُ كُلُّهُمْ فِي ذَلِكَ حَتَّى أَصْحَابُهُ يَعْنِي الْآخِذِينَ عَنْهُ وَإِلَّا فَقَدِ انْتَصَرَ لَهُ جَمَاعَةٌ مِمَّنْ جَاءَ بَعْدَهُمْ فَقَالُوا ثَبَتَ الْأَمْرُ بِالْإِبْرَادِ وَلَا يَحْصُلُ إِلَّا بَعْدَ ذَهَابِ اشْتِدَادِ الْحَرِّ وَلَا يَذْهَبُ فِي تِلْكَ الْبِلَادِ إِلَّا بَعْدَ أَنْ يَصِيرَ ظِلُّ الشَّيْءِ مِثْلَيْهِ فَيَكُونُ أَوَّلُ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرَ الظِّلِّ مِثْلَيْهِ وَحِكَايَةُ مِثْلِ هَذَا تُغْنِي عَنْ رده .
“কিন্তু তাহাবী’র (হানাফী) দুর্বল উক্তি হল, তিনি বলেছেন: ‘আয়েশা (রা)-এর হাদীস দ্বারা আসরের সলাত শীঘ্রই আদায় করার দলিল নেই। কেননা কক্ষের দরজা খুবই নিচু ছিল। ফলে সূর্য (আলো) তখনই ঘর থেকে বের হতো না যতক্ষণ না তার প্রখরতা কমে গিয়ে সূর্যাস্তের নিকটবর্তী হতো। এ থেকে দলিল পাওয়া গেল যে, (নবী স.) আসরের সলাত দেরিতে পড়তেন এবং শীঘ্র ও (ওয়াক্ত হওয়ার) পরপর পড়তেন না।’ [. তাহাবী (ইফা) হা/১০৫৮-এর পরবর্তী মন্তব্য।] এর জবাব হল, তাহাবীর দাবিরর সম্ভবনাটা তখন হতে পারে, যখন সূর্যের আলো ঘরের মেঝেতে প্রশস্তভাবে পতিত হতো। অথচ আমরা পরিপূরক দলিল ও সাক্ষ্য থেকে জানতে পারি যে, নবী (স)-এর স্ত্রীর ঘরটি প্রশস্ত ছিল না, বরং সংকীর্ণ ও ছোট ছিল। ফলে ছোট ঘরে ততক্ষণ পর্যন্ত আলো থাকবে যতক্ষণ সূর্য খুব উঁচুতে অবস্থান করে। আর যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার নিকটবর্তী হয় তখন আলো ঘরের মেঝেতে থাকবে না, যদিওবা ঘরের দরজা ছোট হোক না কেন? ইমাম নওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন: ঘরের চত্বরের পরিধি ছিল সংকীর্ণ, দেওয়াল ছিল নিকটবর্তী, উচ্চতার দিক থেকে দরজাটি মেঝের প্রশস্ততার থেকে কিছু কম ছিল। ফলে যখন ছায়া দেওয়ালের সমান হতো তখন সূর্যের আলো মেঝের শেষাংশে চলে যেত। এর ফলে যখন ইমাম বুখারী (রহ) নিজের সহীহ’র শর্তানুযায়ী এক ছায়া পরিমানের পরবর্তী সময় সম্পর্কিত আসরের প্রথম ওয়াক্তের হাদীস পেলেন না, তখন কেবল আয়েশা (রা)-এর হাদীস গ্রহণ করলেন এবং তা দ্বারা প্রথম ওয়াক্তে আসরের সলাত আদায়ের সিদ্ধান্ত দিলেন। আর সহীহ মুসলিমের এ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট অনেক হাদীস রয়েছে যে, এক ছায়ার পরে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। কোনো আলেম থেকে এর বিরোধী বক্তব্য নেই, কেবল ইমাম আবূ হানীফা (রহ) থেকে রয়েছে। তাঁর প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে যে, আসরের ওয়াক্ত ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর শুরু হয়। ইমাম কুরতুবী (রহ) বলেছেন: সমস্ত মানুষ (আলেমগণ) এর বিরোধিতা করেছেন, অর্থাৎ তাঁদের নিকট আসরের ওয়াক্ত এক ছায়া থেকে শুরু হয়ে যায়। এমনকি ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্যও তাঁর বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু ইমাম সাহেবের পরবর্তী অনুসারীরা ‘ইবরাদ’(বা সূর্যের তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার) হাদীস দ্বারা দলিল নিয়ে যোহরের ওয়াক্ত দুই ছায়া পর্যন্ত রেখেছেন। কিন্তু তাদের এই দলিল গ্রহণ ঠিক নয় যা তারা ‘ইবরাদ’-হাদীস থেকে দ্বিগুণ ছায়ার অর্থ নিয়েছেন। অথচ ঐ ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা দ্বারা আসরের সলাত এক ছায়া থেকে প্রথম ওয়াক্ত প্রমাণিত হয়, যা দ্বারা তাদের উপস্থাপনা খণ্ডন হয়।” [. ফতহুল বারী ২/২৫ পৃ: ৫৪৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্র:।]
২৮
অনুচ্ছেদ-২৬: শাসক বা দায়িত্বশীলগণ যখন আসরের সলাত পিছিয়ে দেবে তখন একাকী সঠিক সময়ে আদায় করা জরুরি। সম্ভব হলে পরে জামাআতে শরীক হওয়া যাবে। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। এভাবে একাকী সলাত আদায় করলে- সেটাকে সলাতের হেফাযত করা গণ্য করা হয়েছে।হাদীস-৩৮: সাহাবী আবূ যর (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ " يَا أَبَا ذَرٍّ إِنَّهُ سَيَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ يُمِيتُونَ الصَّلاَةَ فَصَلِّ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ صَلَّيْتَ لِوَقْتِهَا كَانَتْ لَكَ نَافِلَةً وَإِلاَّ كُنْتَ قَدْ أَحْرَزْتَ صَلاَتَكَ " .
“আমাকে রসূলুল্লাহ (স) বললেন: হে আবূ যার! আমার পরে অচিরেই এমন আমীর বা শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে যারা একেবারে শেষ ওয়াক্তে সলাত আদায় করবে। এরূপ হলে তুমি কিন্তু সময় মতো (সলাতের উত্তম সময়ে) সলাত আদায় করে নিবে। পরে যদি তুমি তাদের সাথে সলাত আদায় করো তাহলে তা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি তা না হয় তা হলে তুমি অন্তত তোমার সলাত রক্ষা করতে সক্ষম হলে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৫১ (২৩৮/৬৪৮)।]
হাদীস-৩৯: সাহাবী উবাদাহ বিন সামিত (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ " إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي أُمَرَاءُ تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا " . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ " نَعَمْ إِنْ شِئْتَ " . وَقَالَ سُفْيَانُ إِنْ أَدْرَكْتُهَا مَعَهُمْ أَأُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ " نَعَمْ إِنْ شِئْتَ "
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকদের আগমন ঘটবে কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় হতে বিরত রাখবে, এমনকি সলাতের ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি কি ঐ সলাত পুনরায় তাদের সাথেও আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার।” [. আবূ দাউদ হা/৪৩৩; সহীহ- আলবানী।]
হাদীস-৪০: সাহাবী ইবনু মাসউদ (রা) বলেছেন:
إِنَّكُمْ فِي زَمَانٍ قَلِيلٍ خُطَبَاؤُهُ، كَثِيرٍ عُلَمَاؤُهُ، يُطِيلُونَ الصَّلَاةَ، وَيُقَصِّرُونَ الْخُطْبَةَ، وَإِنَّهُ سَيَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ كَثِيرٌ خُطَبَاؤُهُ، قَلِيلٌ عُلَمَاؤُهُ، يُطِيلُونَ الْخُطْبَةَ، وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ، حَتَّى يُقَالَ : هَذَا شَرَقُ الْمَوْتَى " قَالَ : قُلْتُ لَهُ : وَمَا شَرَقُ الْمَوْتَى؟ قَالَ : «إِذَا اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ جِدًّا، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ فَلْيُصَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، فَإِنِ احْتُبِسَ فَلْيُصَلِّ مَعَهُمْ، وَلْيَجْعَلْ صَلَاتَهُ وَحْدَهُ الْفَرِيضَةَ، وَلْيَجْعَلْ صَلَاتَهُ مَعَهُمْ تَطَوُّعًا .
“তুমি ঐ যামানাতে আছ যখন তাদের খুতবা কম হয়, তাদের অনেক আলেম আছেন, তাদের সলাত দীর্ঘ হয় এবং তাদের খুতবা ছোট হয়। তোমার উপর এমন যামানা আসবে যখন তাদের ব্যাপক খুতবা থাকবে, তাদের অল্প আলেম হবে, তাদের খুতবা হবে দীর্ঘ, আর তাদের সলাত হবে দেরিতে- এমনকি তারা বলবে: এই পূর্ব মারা গেছে। (রাবী) বলেন: আমি তাঁকে বললাম: পূর্ব মারা যাওয়াটা কি? তিনি (রা) বললেন: যখন সূর্য খুব হলুদ হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন (যামানা) পাবে, সে যেন তার ওয়াক্তে সলাত পড়ে। অতঃপর সে যেন তাদের সাথে বসে এবং তাদের সাথে সলাত আদায় করে। তার একক সলাতটি ফরয হিসেবে গণ্য হবে এবং তাদের সাথে আদায়কৃত সলাত নফল হিসেবে গণ্য হবে।” [. মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব হা/৩৭৮৭, মুহাল্লা (শামেলা) ২/৪৪ পৃ:। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী হাদীসের সাক্ষ্য হিসেবে সহীহ বা হাসান।]
অন্যত্র ইবনু মাসউদ (রা) বলেন:
إِنَّهُ سَيَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلاَة عَنْ وَقْتِهَا وَيَخْنُقُونَهَا إلَى شَرَقِ الْمَوْتَى فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمْ قَدْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَصَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ ، ثُمَّ اجْعَلُوا صَلاَتَكُمْ سُبْحَةً .
“অচিরেই তোমাদের এমন আমীর হবে যারা সলাতকে তার ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেবে এবং এর সময়কে এমনভাবে গলাচেপে ধরবে যে পূর্ব দিকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটবে (সূর্য বেশি হলুদ হবে)। সুতরাং তোমরা যদি এটা দেখ তবে তোমাদের ঘরে সলাত আদায় করবে। অতঃপর তাদের সাথে (সলাত) আদায় করবে নফল হিসেবে।” [. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭৬৭৩; সহীহ-তাহক্বীক্ব ইবনু আবী শায়বাহ (কায়রো: দারু কানুয ১৪৩৬/২০১৫) ৫/১৩২ পৃ: হা/৭৮০০। অনুরূপ: সহীহ মুসলিম হা/১০৭৮ (২৬/৫৩৪)।]
قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ " يَا أَبَا ذَرٍّ إِنَّهُ سَيَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ يُمِيتُونَ الصَّلاَةَ فَصَلِّ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ صَلَّيْتَ لِوَقْتِهَا كَانَتْ لَكَ نَافِلَةً وَإِلاَّ كُنْتَ قَدْ أَحْرَزْتَ صَلاَتَكَ " .
“আমাকে রসূলুল্লাহ (স) বললেন: হে আবূ যার! আমার পরে অচিরেই এমন আমীর বা শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে যারা একেবারে শেষ ওয়াক্তে সলাত আদায় করবে। এরূপ হলে তুমি কিন্তু সময় মতো (সলাতের উত্তম সময়ে) সলাত আদায় করে নিবে। পরে যদি তুমি তাদের সাথে সলাত আদায় করো তাহলে তা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি তা না হয় তা হলে তুমি অন্তত তোমার সলাত রক্ষা করতে সক্ষম হলে।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৫১ (২৩৮/৬৪৮)।]
হাদীস-৩৯: সাহাবী উবাদাহ বিন সামিত (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ " إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي أُمَرَاءُ تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا " . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ " نَعَمْ إِنْ شِئْتَ " . وَقَالَ سُفْيَانُ إِنْ أَدْرَكْتُهَا مَعَهُمْ أَأُصَلِّي مَعَهُمْ قَالَ " نَعَمْ إِنْ شِئْتَ "
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকদের আগমন ঘটবে কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় হতে বিরত রাখবে, এমনকি সলাতের ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি কি ঐ সলাত পুনরায় তাদের সাথেও আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার।” [. আবূ দাউদ হা/৪৩৩; সহীহ- আলবানী।]
হাদীস-৪০: সাহাবী ইবনু মাসউদ (রা) বলেছেন:
إِنَّكُمْ فِي زَمَانٍ قَلِيلٍ خُطَبَاؤُهُ، كَثِيرٍ عُلَمَاؤُهُ، يُطِيلُونَ الصَّلَاةَ، وَيُقَصِّرُونَ الْخُطْبَةَ، وَإِنَّهُ سَيَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ كَثِيرٌ خُطَبَاؤُهُ، قَلِيلٌ عُلَمَاؤُهُ، يُطِيلُونَ الْخُطْبَةَ، وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ، حَتَّى يُقَالَ : هَذَا شَرَقُ الْمَوْتَى " قَالَ : قُلْتُ لَهُ : وَمَا شَرَقُ الْمَوْتَى؟ قَالَ : «إِذَا اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ جِدًّا، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ فَلْيُصَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، فَإِنِ احْتُبِسَ فَلْيُصَلِّ مَعَهُمْ، وَلْيَجْعَلْ صَلَاتَهُ وَحْدَهُ الْفَرِيضَةَ، وَلْيَجْعَلْ صَلَاتَهُ مَعَهُمْ تَطَوُّعًا .
“তুমি ঐ যামানাতে আছ যখন তাদের খুতবা কম হয়, তাদের অনেক আলেম আছেন, তাদের সলাত দীর্ঘ হয় এবং তাদের খুতবা ছোট হয়। তোমার উপর এমন যামানা আসবে যখন তাদের ব্যাপক খুতবা থাকবে, তাদের অল্প আলেম হবে, তাদের খুতবা হবে দীর্ঘ, আর তাদের সলাত হবে দেরিতে- এমনকি তারা বলবে: এই পূর্ব মারা গেছে। (রাবী) বলেন: আমি তাঁকে বললাম: পূর্ব মারা যাওয়াটা কি? তিনি (রা) বললেন: যখন সূর্য খুব হলুদ হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন (যামানা) পাবে, সে যেন তার ওয়াক্তে সলাত পড়ে। অতঃপর সে যেন তাদের সাথে বসে এবং তাদের সাথে সলাত আদায় করে। তার একক সলাতটি ফরয হিসেবে গণ্য হবে এবং তাদের সাথে আদায়কৃত সলাত নফল হিসেবে গণ্য হবে।” [. মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব হা/৩৭৮৭, মুহাল্লা (শামেলা) ২/৪৪ পৃ:। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী হাদীসের সাক্ষ্য হিসেবে সহীহ বা হাসান।]
অন্যত্র ইবনু মাসউদ (রা) বলেন:
إِنَّهُ سَيَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلاَة عَنْ وَقْتِهَا وَيَخْنُقُونَهَا إلَى شَرَقِ الْمَوْتَى فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمْ قَدْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَصَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ ، ثُمَّ اجْعَلُوا صَلاَتَكُمْ سُبْحَةً .
“অচিরেই তোমাদের এমন আমীর হবে যারা সলাতকে তার ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেবে এবং এর সময়কে এমনভাবে গলাচেপে ধরবে যে পূর্ব দিকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটবে (সূর্য বেশি হলুদ হবে)। সুতরাং তোমরা যদি এটা দেখ তবে তোমাদের ঘরে সলাত আদায় করবে। অতঃপর তাদের সাথে (সলাত) আদায় করবে নফল হিসেবে।” [. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭৬৭৩; সহীহ-তাহক্বীক্ব ইবনু আবী শায়বাহ (কায়রো: দারু কানুয ১৪৩৬/২০১৫) ৫/১৩২ পৃ: হা/৭৮০০। অনুরূপ: সহীহ মুসলিম হা/১০৭৮ (২৬/৫৩৪)।]
২৯
অনুচ্ছেদ-২৭: শাসক সলাতের সময় পিছালে সঠিক ওয়াক্তে সলাত আদায়কারী এটা বলবে না যে: ‘আমি সলাত আদায় করে নিয়েছি তাই এখন আমি সলাত আদায় করব না।’হাদীস-৪১: সাহাবী আবূ যার (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
… صَلِّ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ مَعَهُمْ فَصَلِّ وَلاَ تَقُلْ إِنِّي قَدْ صَلَّيْتُ فَلاَ أُصَلِّي .
“…তুমি সময় মতো (প্রথম ওয়াক্তে) সলাত আদায় করে নিবে। তবে সবার সাথে জামা‘আতে যদি সলাত আদায় করার সুযোগ হয় তা হলে তাদের সাথেও সলাত আদায় করে নিবে- এ ক্ষেত্রে বলবে না যে, আমি সলাত আদায় করে নিয়েছি তাই এখন আমি সলাত আদায় করব না।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৫৫ (২৪২/৬৪৮)।]
… صَلِّ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ مَعَهُمْ فَصَلِّ وَلاَ تَقُلْ إِنِّي قَدْ صَلَّيْتُ فَلاَ أُصَلِّي .
“…তুমি সময় মতো (প্রথম ওয়াক্তে) সলাত আদায় করে নিবে। তবে সবার সাথে জামা‘আতে যদি সলাত আদায় করার সুযোগ হয় তা হলে তাদের সাথেও সলাত আদায় করে নিবে- এ ক্ষেত্রে বলবে না যে, আমি সলাত আদায় করে নিয়েছি তাই এখন আমি সলাত আদায় করব না।” [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৫৫ (২৪২/৬৪৮)।]
হাদীস-৪২: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত:
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ " سَيَلِي أُمُورَكُمْ بَعْدِي رِجَالٌ يُطْفِئُونَ السُّنَّةَ وَيَعْمَلُونَ بِالْبِدْعَةِ وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا " فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ أَدْرَكْتُهُمْ كَيْفَ أَفْعَلُ قَالَ " تَسْأَلُنِي يَا ابْنَ أُمِّ عَبْدٍ كَيْفَ تَفْعَلُ لاَ طَاعَةَ لِمَنْ عَصَى اللَّهَ " .
“নবী (স) বলেছেন: অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের আমীর হবে, যারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদআতের অনুসরণ করবে এবং সলাত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি যদি তাদের (যুগ) পাই, তবে কী করব? তিনি বলেন: হে উম্মু আবদ-এর পুত্র! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছ যে, তুমি কী করবে? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে, তার আনুগত্য করা যাবে না।” [. ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৫; সহীহ- আলবানী।]
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ " سَيَلِي أُمُورَكُمْ بَعْدِي رِجَالٌ يُطْفِئُونَ السُّنَّةَ وَيَعْمَلُونَ بِالْبِدْعَةِ وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا " فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ أَدْرَكْتُهُمْ كَيْفَ أَفْعَلُ قَالَ " تَسْأَلُنِي يَا ابْنَ أُمِّ عَبْدٍ كَيْفَ تَفْعَلُ لاَ طَاعَةَ لِمَنْ عَصَى اللَّهَ " .
“নবী (স) বলেছেন: অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের আমীর হবে, যারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদআতের অনুসরণ করবে এবং সলাত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি যদি তাদের (যুগ) পাই, তবে কী করব? তিনি বলেন: হে উম্মু আবদ-এর পুত্র! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছ যে, তুমি কী করবে? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে, তার আনুগত্য করা যাবে না।” [. ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৫; সহীহ- আলবানী।]
হাদীস-৪৩: সাহাবী আবূ সাঈদ (খুদরী) ও আবূ হুরায়রা বর্ণনা করেন,
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَيَأْتِيَنَّ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُقَرِّبُونَ شِرَارَ النَّاسِ، وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلاةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلا يَكُونَنَّ عَرِيفًا، وَلا شُرْطِيًا، وَلا جَابِيًا، وَلا خَازِنًا .
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই তোমাদের উপর এমন আমীর (শাসক) হবে, যারা সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোকদের নিজের কাছ টেনে নেবে এবং তারা সলাতের ওয়াক্ত গড়িয়ে যাওয়ার পর তা আদায় করবে। এই সময় তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে যেন তত্ত্বাবধায়ক, পুলিশ, যাকাতের সম্পদ আদায়কারী ও খাজাঞ্চী নিযুক্ত না হয়।” [. সহীহ ইবনে হিব্বান হা/৪৫৮৬, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (ইফা) ১/৫৫৭ পৃ:; হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- ইমাম হায়সামী (মাজমু‘আয়ে যাওয়ায়েদ ৫/৯২২৫ নং), হুসাইন সালীম আসাদ (তাহক্বীক্বকৃত মুসনাদে আবী ইয়ালা ২/১১১৫ নং) ও মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (আস-সহীহাহ ১/৩৬০ নং)।]
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَيَأْتِيَنَّ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُقَرِّبُونَ شِرَارَ النَّاسِ، وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلاةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلا يَكُونَنَّ عَرِيفًا، وَلا شُرْطِيًا، وَلا جَابِيًا، وَلا خَازِنًا .
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই তোমাদের উপর এমন আমীর (শাসক) হবে, যারা সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোকদের নিজের কাছ টেনে নেবে এবং তারা সলাতের ওয়াক্ত গড়িয়ে যাওয়ার পর তা আদায় করবে। এই সময় তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে যেন তত্ত্বাবধায়ক, পুলিশ, যাকাতের সম্পদ আদায়কারী ও খাজাঞ্চী নিযুক্ত না হয়।” [. সহীহ ইবনে হিব্বান হা/৪৫৮৬, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (ইফা) ১/৫৫৭ পৃ:; হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- ইমাম হায়সামী (মাজমু‘আয়ে যাওয়ায়েদ ৫/৯২২৫ নং), হুসাইন সালীম আসাদ (তাহক্বীক্বকৃত মুসনাদে আবী ইয়ালা ২/১১১৫ নং) ও মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (আস-সহীহাহ ১/৩৬০ নং)।]
৩২
তৃতীয় অধ্যায়: সহীহ হাদীসের অপপ্রয়োগ
অনুচ্ছেদ-৩০: ব্যাপকভাবে বর্ণিত শাব্দিক ও ব্যবহারিক বর্ণনার মোকাবেলায় একক বা বিচ্ছিন্নভাবে বর্ণিত হাদীসের শাব্দিক বিশ্লেষণ দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অসারতা।হাদীস-৪৪: উম্মু সালামাহ (রা) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ أَشَدَّ تَعْجِيلًا لِلظُّهْرِ مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ أَشَدُّ تَعْجِيلًا لِلْعَصْرِ مِنْهُ .
“রসূলুল্লাহ (স) যোহরের সলাতকে তোমাদের চেয়ে বেশি আগে ভাগে আদায় করতেন। আর তোমরা আসরের সলাতকে তাঁর চেয়ে বেশি আগে আদায় কর।” [. মুসনাদু আহমাদ হা/২৫৯৩৯, তিরমিযী হা/১৬১, মিশকাত হা/৬১৯।]
হাদীসটির ব্যাখ্যায় উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহ) লিখেছেন:
قال القاري : الظاهر أن الخطاب لغير الأصحاب ، قال : وفي الجملة يدل الحديث على استحباب تأخير العصر كما هو مذهبنا . قلت : وكذا استدل به العيني في البناية شرح الهداية على أفضلية تأخير العصر . وقد أجاب عن هذا الاستدلال الشيخ عبدالحي اللكنوي فقال : ولا يخفى على الماهر ما في الاستناد بهذا الحديث ، فإنه إنما يدل على كون التعجيل في الظهر أشد من التعجيل في العصر ، لا على استحباب التأخير . وقال شيخنا في شرح الترمذي بعد نقل كلام القاري : ليس فيه دلالة على استحباب تأخير العصر ، نعم فيه أن الذين خاطبتهم أم سلمة كانوا أشد تعجيلاً للعصر منه ﷺ ، وهذا لايدل على أنه ﷺ كان يؤخر العصر ، حتى يستدل به على استحباب التأخير .
“মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহ) বলেন: এখানে অনির্দিষ্টভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। হাদীসটির বাক্য আসরের সলাত দেরিতে করে পড়া মুস্তাহাব হবার দলিল, যেমনটি আমাদের (হানাফী) মাযহাবে রয়েছে। আমি (উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী) বলছি: এ হাদীস দ্বারা আয়নী (রহ) তাঁর ‘আল-বিনায়াহ শারহুল হিদায়াহ’-তে (সলাতুল) আসর দেরি করে পড়া উত্তম হওয়ার পক্ষে দলিল নিয়েছেন। এভাবে দলিল গ্রহণের জবাবে শাইখ আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী (রহ) বলেন: ‘বিশেষজ্ঞদের নিকট এটা গোপন নয় যে, এ হাদীস দ্বারা সিদ্ধান্ত দেয়া যায় না। কেননা, এ হাদীস দ্বারা দলিল নেয়া যায় যে, আসরের সলাতকে শীঘ্রই পড়ার চেয়ে যোহরের সলাতকে শীঘ্রই পড়াটা বেশি গুরুত্ববহ। কিন্তু দেরিতে (আসরের সলাত) পড়ার মুস্তাহাবের দলিল (হাদীসটিতে) নেই।’ আর আমার শাইখ (আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রহ.) ‘শারহুত তিরমিযী’ (তুহফাতুল আহওয়াযী)-তে মুল্লা আলী ক্বারী (রহ)-এর উদ্ধৃতি দেয়ার পর লিখেছেন: আসরের সলাত দেরিতে আদায় মুস্তাহাবের ব্যাপারে আলোচ্য হাদীসে কোনো দলিল নেই। তবে হ্যাঁ, উম্মু সালামাহ (রা) যাদেরকে সম্বোধন করেছিলেন, তারা নবী (স) থেকে (তুলনামূলক) শীঘ্র আসরের সলাত আদায় করে থাকবেন। সুতরাং নবী (স) আসরের সলাত দেরিতে আদায় করার এটি দলিল নয়।” [. মিরআতুল মাফাতিহ শরহু মিশকাতুল মাসাবীহ (শামেলা) হা/৬১৯-এর ব্যাখ্যা।]
শাব্দিকভাবে হাদীসটি থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, আসরের সলাতের চেয়ে যোহরের সলাত তুলনামূলক দ্রুত আদায় করতে হবে- যেভাবে আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী (রহ) বলেছেন। অথচ আমরা পূর্বে নবী (স)-এর নির্দেশ ও ব্যবহারিক আমল থেকে প্রমাণ করেছি যে, তিনি (স) সূর্যের তাপ বেশি হলে যোহরের সলাতকে কিছুটা পিছিয়ে দিতেন- কাঙ্ক্ষিতভাবে তাপ কমা বা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু আসরের সলাতের ক্ষেত্রে এমনটি বর্ণিত হয়নি। বরং সাহাবীদের বর্ণনানুযায়ী নবী (স) ও সাহাবীগণ (রা) আসরের সলাতকে শীঘ্র শীঘ্র আদায় করতেন। এমনকি সফর- যেখানে সলাত আদায়ে ওয়াক্তের হেফাযত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়- সেখানে বিকল্প সমাধান হিসেবে, সলাত ও এর ওয়াক্ত হেফাযতের স্বার্থে যোহরের ওয়াক্তে আসরের সলাত আদায় করেছেন। আবার যোহরকে সম্পূর্ণ আসরে ওয়াক্তে আদায় করে আসরকেও তার প্রথম ওয়াক্তেই আদায় করেছেন। যা থেকে বুঝা যায়, কুরআনে (সূরা বাক্বারাহ: ২৩৮) উল্লিখিত ‘সলাতসমূহের হেফাযত কর ও মধ্যবর্তী সলাতেরও’-এর দাবি নবী (স) ও সাহাবীদের (রা) থেকে শাব্দিক এবং ব্যবহারিক ভাবে প্রমাণিত। এ পর্যায়ে ব্যক্তি বিশেষ সাহাবীর শাব্দিক উপস্থাপনা দ্বারা আপেক্ষিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মোকাবেলায় অধিকাংশ সাহাবীর শাব্দিক ও ব্যবহারিক বর্ণনাই দলিল হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তাআলা সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।
মুহাম্মাদ বিন আলী নিমাবী (রহ) আলোচ্য হাদীসটি উল্লেখের পর লিখেছেন:
استدل الحنيفة بهذه الاحاديث على ان وقت الظهر لا ينقضى بعد المثل بل يبقى بعده ووقته ازيد من وقت العصر وفي الاستدلال بها ابحاث و انی لم اجد حدیثاً صحیحاً او ضعیفاً یدل علی ان وقت الظہر الی ان یصیر الظل مثلیہ و عن الامام ابی حنیفۃ قولان
“এই হাদীসগুলো থেকে হানাফীগণ দলিল নিয়েছেন যে, যোহরের ওয়াক্ত ছায়া একগুণ হওয়ার পর শেষ হয় না, বরং এর পরেও বাকী থাকে। আর যোহরের ওয়াক্ত আসরের ওয়াক্ত থেকে দীর্ঘ হয়ে থাকে। এই হাদীসগুলো দ্বারা দলিলগ্রহণ আলোচনাসাপেক্ষ। যদিও আমি কোনো সহীহ বা যঈফ হাদীস পাইনি যা দ্বারা প্রমাণিত হয়- যোহরের ওয়াক্ত ছায়া দুইগুণ হওয়া পর্যন্ত। বরং ইমাম আবূ হানীফা (রহ) থেকে এক্ষেত্রে দুটি উক্তি আছে (ছায়া একগুণ ও দ্বিগুণ হওয়া)।” [. আসারুস সুনান হা/১৯৯ ।]
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ أَشَدَّ تَعْجِيلًا لِلظُّهْرِ مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ أَشَدُّ تَعْجِيلًا لِلْعَصْرِ مِنْهُ .
“রসূলুল্লাহ (স) যোহরের সলাতকে তোমাদের চেয়ে বেশি আগে ভাগে আদায় করতেন। আর তোমরা আসরের সলাতকে তাঁর চেয়ে বেশি আগে আদায় কর।” [. মুসনাদু আহমাদ হা/২৫৯৩৯, তিরমিযী হা/১৬১, মিশকাত হা/৬১৯।]
হাদীসটির ব্যাখ্যায় উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহ) লিখেছেন:
قال القاري : الظاهر أن الخطاب لغير الأصحاب ، قال : وفي الجملة يدل الحديث على استحباب تأخير العصر كما هو مذهبنا . قلت : وكذا استدل به العيني في البناية شرح الهداية على أفضلية تأخير العصر . وقد أجاب عن هذا الاستدلال الشيخ عبدالحي اللكنوي فقال : ولا يخفى على الماهر ما في الاستناد بهذا الحديث ، فإنه إنما يدل على كون التعجيل في الظهر أشد من التعجيل في العصر ، لا على استحباب التأخير . وقال شيخنا في شرح الترمذي بعد نقل كلام القاري : ليس فيه دلالة على استحباب تأخير العصر ، نعم فيه أن الذين خاطبتهم أم سلمة كانوا أشد تعجيلاً للعصر منه ﷺ ، وهذا لايدل على أنه ﷺ كان يؤخر العصر ، حتى يستدل به على استحباب التأخير .
“মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহ) বলেন: এখানে অনির্দিষ্টভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। হাদীসটির বাক্য আসরের সলাত দেরিতে করে পড়া মুস্তাহাব হবার দলিল, যেমনটি আমাদের (হানাফী) মাযহাবে রয়েছে। আমি (উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী) বলছি: এ হাদীস দ্বারা আয়নী (রহ) তাঁর ‘আল-বিনায়াহ শারহুল হিদায়াহ’-তে (সলাতুল) আসর দেরি করে পড়া উত্তম হওয়ার পক্ষে দলিল নিয়েছেন। এভাবে দলিল গ্রহণের জবাবে শাইখ আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী (রহ) বলেন: ‘বিশেষজ্ঞদের নিকট এটা গোপন নয় যে, এ হাদীস দ্বারা সিদ্ধান্ত দেয়া যায় না। কেননা, এ হাদীস দ্বারা দলিল নেয়া যায় যে, আসরের সলাতকে শীঘ্রই পড়ার চেয়ে যোহরের সলাতকে শীঘ্রই পড়াটা বেশি গুরুত্ববহ। কিন্তু দেরিতে (আসরের সলাত) পড়ার মুস্তাহাবের দলিল (হাদীসটিতে) নেই।’ আর আমার শাইখ (আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রহ.) ‘শারহুত তিরমিযী’ (তুহফাতুল আহওয়াযী)-তে মুল্লা আলী ক্বারী (রহ)-এর উদ্ধৃতি দেয়ার পর লিখেছেন: আসরের সলাত দেরিতে আদায় মুস্তাহাবের ব্যাপারে আলোচ্য হাদীসে কোনো দলিল নেই। তবে হ্যাঁ, উম্মু সালামাহ (রা) যাদেরকে সম্বোধন করেছিলেন, তারা নবী (স) থেকে (তুলনামূলক) শীঘ্র আসরের সলাত আদায় করে থাকবেন। সুতরাং নবী (স) আসরের সলাত দেরিতে আদায় করার এটি দলিল নয়।” [. মিরআতুল মাফাতিহ শরহু মিশকাতুল মাসাবীহ (শামেলা) হা/৬১৯-এর ব্যাখ্যা।]
শাব্দিকভাবে হাদীসটি থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, আসরের সলাতের চেয়ে যোহরের সলাত তুলনামূলক দ্রুত আদায় করতে হবে- যেভাবে আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী (রহ) বলেছেন। অথচ আমরা পূর্বে নবী (স)-এর নির্দেশ ও ব্যবহারিক আমল থেকে প্রমাণ করেছি যে, তিনি (স) সূর্যের তাপ বেশি হলে যোহরের সলাতকে কিছুটা পিছিয়ে দিতেন- কাঙ্ক্ষিতভাবে তাপ কমা বা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু আসরের সলাতের ক্ষেত্রে এমনটি বর্ণিত হয়নি। বরং সাহাবীদের বর্ণনানুযায়ী নবী (স) ও সাহাবীগণ (রা) আসরের সলাতকে শীঘ্র শীঘ্র আদায় করতেন। এমনকি সফর- যেখানে সলাত আদায়ে ওয়াক্তের হেফাযত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়- সেখানে বিকল্প সমাধান হিসেবে, সলাত ও এর ওয়াক্ত হেফাযতের স্বার্থে যোহরের ওয়াক্তে আসরের সলাত আদায় করেছেন। আবার যোহরকে সম্পূর্ণ আসরে ওয়াক্তে আদায় করে আসরকেও তার প্রথম ওয়াক্তেই আদায় করেছেন। যা থেকে বুঝা যায়, কুরআনে (সূরা বাক্বারাহ: ২৩৮) উল্লিখিত ‘সলাতসমূহের হেফাযত কর ও মধ্যবর্তী সলাতেরও’-এর দাবি নবী (স) ও সাহাবীদের (রা) থেকে শাব্দিক এবং ব্যবহারিক ভাবে প্রমাণিত। এ পর্যায়ে ব্যক্তি বিশেষ সাহাবীর শাব্দিক উপস্থাপনা দ্বারা আপেক্ষিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মোকাবেলায় অধিকাংশ সাহাবীর শাব্দিক ও ব্যবহারিক বর্ণনাই দলিল হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তাআলা সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।
মুহাম্মাদ বিন আলী নিমাবী (রহ) আলোচ্য হাদীসটি উল্লেখের পর লিখেছেন:
استدل الحنيفة بهذه الاحاديث على ان وقت الظهر لا ينقضى بعد المثل بل يبقى بعده ووقته ازيد من وقت العصر وفي الاستدلال بها ابحاث و انی لم اجد حدیثاً صحیحاً او ضعیفاً یدل علی ان وقت الظہر الی ان یصیر الظل مثلیہ و عن الامام ابی حنیفۃ قولان
“এই হাদীসগুলো থেকে হানাফীগণ দলিল নিয়েছেন যে, যোহরের ওয়াক্ত ছায়া একগুণ হওয়ার পর শেষ হয় না, বরং এর পরেও বাকী থাকে। আর যোহরের ওয়াক্ত আসরের ওয়াক্ত থেকে দীর্ঘ হয়ে থাকে। এই হাদীসগুলো দ্বারা দলিলগ্রহণ আলোচনাসাপেক্ষ। যদিও আমি কোনো সহীহ বা যঈফ হাদীস পাইনি যা দ্বারা প্রমাণিত হয়- যোহরের ওয়াক্ত ছায়া দুইগুণ হওয়া পর্যন্ত। বরং ইমাম আবূ হানীফা (রহ) থেকে এক্ষেত্রে দুটি উক্তি আছে (ছায়া একগুণ ও দ্বিগুণ হওয়া)।” [. আসারুস সুনান হা/১৯৯ ।]
৩৩
অনুচ্ছেদ-৩১: পূর্বের উম্মাতের সাথে এই উম্মাতকে আসরের সলাতের সাথে তুলনা সম্পর্কিত হাদীসের অপপ্রয়োগ।হাদীস-৪৫: ইমাম বুখারী (রহ) বর্ণনা করেন:
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَا سَلَفَ قَبْلَكُمْ مِنَ الْأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ أُوتِيَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ التَّوْرَاةَ فَعَمِلُوا حَتَّى إِذَا انْتَصَفَ النَّهَارُ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ثُمَّ أُوتِيَ أَهْلُ الْإِنْجِيلِ الْإِنْجِيلَ فَعَمِلُوا إِلَى صَلاَةِ الْعَصْرِ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ثُمَّ أُوتِينَا الْقُرْآنَ فَعَمِلْنَا إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ فَأُعْطِينَا قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ فَقَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ أَيْ رَبَّنَا أَعْطَيْتَ هَؤُلَاءِ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ وَأَعْطَيْتَنَا قِيرَاطًا قِيرَاطًا وَنَحْنُ كُنَّا أَكْثَرَ عَمَلاً قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ هَلْ ظَلَمْتُكُمْ مِنْ أَجْرِكُمْ مِنْ شَيْءٍ قَالُوا لاَ قَالَ فَهُوَ فَضْلِي أُوتِيهِ مَنْ أَشَاءُ .
“সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রহ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছেন, আগেকার উম্মাতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হলো আসরের সলাত হতে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ন্যায়। তাওরাত অনুসারীদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিল। তারা তদনুযায়ী কাজ করতে লাগল; যখন দুপুর হলো, তখন তারা অপারগ হয়ে পড়ল। তাদের এক এক ‘কীরাত’ করে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। আর ইনজীল অনুসারীদেরকে ইনজীল দেয়া হলো। তারা আসরের সলাত পর্যন্ত কাজ করে অপরাগ হয়ে পড়ল। তাদেরকে এক এক ‘কীরাত’ করে পারিশ্রমিক দেয়া হলো। অতঃপর আমাদেরকে কুরআন দেয়া হলো। আমরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করলাম। আমাদের দু’ দু’ ‘কীরাত’ করে দেয়া হলো। এতে উভয় কিতাবী সম্প্রদায় বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দু’ দু’ ‘কীরাত’ করে দান করেছেন, আর আমাদের দিয়েছেন এক এক কীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশি। আল্লাহ্ তাআলা বললেন: তোমাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আমি কি তোমাদের প্রতি কোনোরূপ যুলুম করেছি? তারা বললো, না। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন: এ হলো, আমার অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দেই।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫৭।]
আলাউদ্দীন আবূ বাকার বিন মাসউদ আল-কাসানী আল-হানাফী তাঁর ফিক্বহ গ্রন্থ ‘বাদায়িস সানাঈ’-এ লিখেছেন:
فدل الحديث على أن مدة العصر أقصر من مدة الظهر ، وإنما يكون أقصر أن لو كان الأمر على ما قاله أبو حنيفة
“হাদীসটিতে দলিল রয়েছে যে, আসরের সময়কাল যোহরের সময়ের চেয়ে অনেক কম। আর এটা তখনই কম হবে যখন ইমাম আবূ হানীফার উক্তি মোতাবেক বিধানটি মূল্যায়ন করা হবে।” [. বাদায়িস সানাঈ ১/৩১৫ পৃ:।]
হানাফীরা হাদীসের যে অংশ থেকে দলিল নিয়েছেন তা হল:
فَقَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ أَيْ رَبَّنَا أَعْطَيْتَ هَؤُلَاءِ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ وَأَعْطَيْتَنَا قِيرَاطًا قِيرَاطًا وَنَحْنُ كُنَّا أَكْثَرَ عَمَلاً
“উভয় কিতাবী সম্প্রদায় বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দু’ দু’ ‘কীরাত’ করে দান করেছেন, আর আমাদের দিয়েছেন এক এক কীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশি।”
বুঝা যাচ্ছে, ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায় একত্রে তাদের আমলের কথা বলেছিল। স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের আমলের কথা বলেনি। তা ছাড়া হাদীসটির আলোকে নাসারা সম্প্রদায়ের আমল বন্ধ হওয়ার পর এই উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-এর আমল শুরু হয়েছে। অথচ ৫৭০ ঈশাব্দের পর মুহাম্মাদ (স)-এর আগমন করেন। তারপর থেকে আজ অবধি ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-এর আমল অব্যাহত আছে। যা নাসারাদের উক্ত সময়ের প্রায় দুইগুণেরও বেশি এবং এখনো অব্যাহত আছে। এ কারণেও উক্ত উক্তিটি ইয়াহুদী ও নাসারাদের যৌথভাবে ছিল, এককভাবে নাসারাদের ছিল না। অন্যথায় নাসারাদের সময়কাল উম্মাতের মুহাম্মাদী (স) থেকে বেশি গণ্য করলে সেটা ঐতিহাসিকভাবে ও বাস্তবতার বিরোধী হয়। কেননা, মুহাম্মাদ (স)-এর পরে নাসারাদের আমলকে গ্রহণযোগ্য আমল বলা হবে না, তথা তাদের আমল বন্ধ হয়েছে।
আবার ইয়াহুদীদের পক্ষ থেকে নাসারাদের থেকে বেশি কাজ করাতে সমান মুজরি পাওয়ায় কোনো আপত্তি উত্থাপিত হয়নি। যা থেকে বুঝা যায়, কাজ বেশি করার কারণে তাদের আপত্তি ছিল না, বরং দ্বিগুণ মজুরি দেয়াতে আপত্তি ছিল। যেমন: ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
قَالَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ رَبَّنَا هَؤُلاَءِ أَقَلُّ عَمَلاً وَأَكْثَرُ أَجْرًا .
“তাওরাতের অনুসারীরা বলল, হে আমাদের রব! তারাতো আমলে সবচেয়ে কম আবার পারিশ্রমিকে সবচেয়ে অধিক।” [. সহীহ বুখারী হা/৭৪৬৭; অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/২২৬৮, ৩৪৫৯, ৫০২১, ৭৫৩৩ ।]
এ থেকে বুঝা যায়, কতটা সময় আমল করেছে সেটার থেকে পারিশ্রমিক বেশি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।
তা ছাড়া নাসারাদের সময়কাল বাস্তবতার দৃষ্টিতে উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-এর থেকে কম। কেননা, মুহাম্মাদ (স) ৬১০ ঈশাব্দে নবুওয়াতী লাভের পর থেকে উক্ত হাদীস অনুযায়ী নাসারাদের আমল ঐ সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে। পক্ষান্তরে উম্মাতে মুহাম্মাদী (স) ১৪০০ হিজরে পার করে ১৫০০ শতাব্দী পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে উদাহরণটি উক্ত তিনটি সম্প্রদায়ের সময়কালকে ধারাবাহিকতা বুঝানোই মূখ্য। তা ছাড়া বাস্তব দাবির ভিত্তিতেও আসরের ওয়াক্ত এক ছায়া পরিমাণের পরের থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ধরলে, তা যোহরের শুরু থেকে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত সময়ের থেকে কম হয়ে থাকে। যদিও ব্যতিক্রম বছরের অল্প কিছু সময় আসরের ওয়াক্তের ব্যবধানটি বেশি হয়। এ সময়টি খুব কম বিধায় উদাহরণ হিসেবে বছরের বেশিরভাগ আসরের ওয়াক্তের সময়টি প্রযোজ্য।
ইমাম মালেকী (রহ), ইমাম শাফেঈ (রহ) ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ)-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসরের ওয়াক্ত এক ছায়া থেকে শুরু। উম্মুল কুরা’র পঞ্জিকা অনুযায়ী এই তিনি ইমামের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের যোহর থেকে আসর এবং আসর থেকে মাগরিবের সময়ের ব্যবধান উল্লেখ করছি:
তারিখ - যোহর শুরু - যোহর শেষ, আসর শুরু - যোহর থেকে, আসরের ব্যবধান - মাগরিব শুরু - আসর থেকে, মাগরিবের ব্যবধান।
১লা জানু: - ১২:০২ - ০৩:০৩ - ০৩ ঘণ্টা ০১ মি: - ০৫:২৩ - ০২ ঘণ্টা ২০ মি:
১লা ফেব্রু: - ১২:১২ - ০৩:২২ - ০৩ ঘণ্টা ১০ মি: - ০৫:৪৫ - ০২ ঘণ্টা ২৩ মি:
১লা মার্চ - ১২:১১ - ০৩:৩১ - ০৩ ঘণ্টা ২০ মি: - ০৬:০১ - ০২ ঘণ্টা ৩০ মি:
১লা এপ্রিল - ১২:০২ - ০৩:৩০ - ০৩ ঘণ্টা ২৮ মি: - ০৬:১৪ - ০২ ঘণ্টা ৪৪ মি:
১লা মে - ১১:৫৬ - ০৩:২১ - ০৩ ঘণ্টা ২৫ মি: - ০৬:২৭ - ০৩ ঘণ্টা ০৬ মি:
১লা জুন - ১১:৫৬ - ০৩:১৬ - ০৩ ঘণ্টা ২২ মি: - ০৬:৪১ - ০৩ ঘণ্টা ২৫ মি:
১লা জুলাই - ১২:০২ - ০৩:২১ - ০৩ ঘণ্টা ১৯ মি: - ০৬:৪৯ - ০৩ ঘণ্টা ২৮ মি:
১লা অগাষ্ট - ১২:০৫ - ০৩:২৯ - ০৩ ঘণ্টা ২৬ মি: - ০৬:৪১ - ০৩ ঘণ্টা ১২ মি:
১লা সেপ্টে: - ১১:৫৮ - ০৩:২৬ - ০৩ ঘণ্টা ২৮ মি: - ০৬:১৭ - ০২ ঘণ্টা ৫১ মি:
১লা অক্টো: - ১১:৪৮ - ০৩:১২ - ০৩ ঘণ্টা ২৪ মি: - ০৫:৪৬ - ০২ ঘণ্টা ২২ মি:
১লা নভে: - ১১:৪২ - ০২:৫৫ - ০৩ ঘণ্টা ১৩ মি: - ০৫:২০ - ০২ ঘণ্টা ২৫ মি:
১লা ডিসে: - ১১:৪৭ - ০২:৫০ - ০৩ ঘণ্টা ০৩ মি: - ০৫:১১ - ০২ ঘণ্টা ১১ মি:
উপরে দেখা যাচ্ছে ১লা জুন ও ১লা জুলাই যোহরের ওয়াক্তের স্থায়ীত্ব আসরের ওয়াক্তের স্থায়ীত্বের থেকে যথাক্রমে তিন মিনিট ও নয় মিনিট বেশি। পক্ষান্তরে বাকী দশটি মাস যোহরের ওয়াক্তের সময়সীমা থেকে আসরের ওয়াক্তের সময়সীমার ব্যবধান অনেক অনেক কম।
তা ছাড়া যদি জিবরীল (আ) কর্তৃক দেখানো প্রথম ওয়াক্ত তথা এক ছায়া থেকে আসরের শেষ ওয়াক্ত তথা দুই ছায়ার মূল ওয়াক্তকে হিসেবে করি, তবে অবশ্যই আসরের সলাতের সময় যোহরের থেকে সবসময় কমই হয়। তেমনি আবার যদি জিবরীল (আ)-এর হাদীস অনুযায়ী এক ছায়া ও দুই ছায়ার মাঝামাঝি সময়কে আসরের জামাআত হিসেবে নির্ধারণ করি, তা হলে সবসময়ের জন্য সারাবছর যোহরের তুলনায় আসরের ওয়াক্ত কম থাকে। কেননা, আসরের সলাত ওয়াক্ত এক ছায়া পরিমাণ হওয়ার সাথে সাথে পড়া হয় না। বরং অযু, আযান ও জামাআতের জন্য কিছু সময় অতিবাহিত হয়েই থাকে।
এ কারণে হানাফীদের জবাবে হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন:
وَذَلِكَ مَعْرُوفٌ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ بِهَذَا الْفَنِّ وَهُوَ أَنَّ الْمُدَّةَ الَّتِي بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ أَطْوَلُ مِنَ الْمُدَّةِ الَّتِي بَيْنَ الْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَأَمَّا مَا نَقَلَهُ بَعْضُ الْحَنَابِلَةِ مِنَ الْإِجْمَاعِ عَلَى أَنَّ وَقْتَ الْعَصْرِ رُبْعُ النَّهَار فَمَحْمُول على التَّقْرِيب إِذا فرعنا عَلَى أَنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرُ الظِّلِّ مِثْلَهُ كَمَا قَالَ الْجُمْهُورُ وَأَمَّا عَلَى قَوْلِ الْحَنَفِيَّةِ فَالَّذِي مِنَ الظُّهْرِ إِلَى الْعَصْرِ أَطْوَلُ قَطْعًا .
“এই বিষয়টি বিশেষজ্ঞ আলেমদের কাছে প্রসিদ্ধ যে, যোহর ও আসরের মধ্যকার মেয়াদ আসর ও মাগরিবের মধ্যের মেয়াদকালের চেয়ে বেশি। আর কিছু হাম্বলী যে ইজমা‘র কথা উল্লেখ করেছেন যে, আসর দিনের চতুর্থাংশ। এটা কাছাকাছি অনুমান, আর সেটা তখনই হয় যখন আসরের প্রথম ওয়াক্ত ছায়া সমপরিমাণ থেকে হিসাব করা হয়, যেভাবে জুমহুরের বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু হানাফীদের বক্তব্য হল, যোহর থেকে আসরের সময়কালই দীর্ঘ।” [. ফতহুল বারী ২/৪০ পৃ:।]
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَا سَلَفَ قَبْلَكُمْ مِنَ الْأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلاَةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ أُوتِيَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ التَّوْرَاةَ فَعَمِلُوا حَتَّى إِذَا انْتَصَفَ النَّهَارُ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ثُمَّ أُوتِيَ أَهْلُ الْإِنْجِيلِ الْإِنْجِيلَ فَعَمِلُوا إِلَى صَلاَةِ الْعَصْرِ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ثُمَّ أُوتِينَا الْقُرْآنَ فَعَمِلْنَا إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ فَأُعْطِينَا قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ فَقَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ أَيْ رَبَّنَا أَعْطَيْتَ هَؤُلَاءِ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ وَأَعْطَيْتَنَا قِيرَاطًا قِيرَاطًا وَنَحْنُ كُنَّا أَكْثَرَ عَمَلاً قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ هَلْ ظَلَمْتُكُمْ مِنْ أَجْرِكُمْ مِنْ شَيْءٍ قَالُوا لاَ قَالَ فَهُوَ فَضْلِي أُوتِيهِ مَنْ أَشَاءُ .
“সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রহ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছেন, আগেকার উম্মাতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হলো আসরের সলাত হতে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ন্যায়। তাওরাত অনুসারীদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিল। তারা তদনুযায়ী কাজ করতে লাগল; যখন দুপুর হলো, তখন তারা অপারগ হয়ে পড়ল। তাদের এক এক ‘কীরাত’ করে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। আর ইনজীল অনুসারীদেরকে ইনজীল দেয়া হলো। তারা আসরের সলাত পর্যন্ত কাজ করে অপরাগ হয়ে পড়ল। তাদেরকে এক এক ‘কীরাত’ করে পারিশ্রমিক দেয়া হলো। অতঃপর আমাদেরকে কুরআন দেয়া হলো। আমরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করলাম। আমাদের দু’ দু’ ‘কীরাত’ করে দেয়া হলো। এতে উভয় কিতাবী সম্প্রদায় বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দু’ দু’ ‘কীরাত’ করে দান করেছেন, আর আমাদের দিয়েছেন এক এক কীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশি। আল্লাহ্ তাআলা বললেন: তোমাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আমি কি তোমাদের প্রতি কোনোরূপ যুলুম করেছি? তারা বললো, না। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন: এ হলো, আমার অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দেই।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৫৭।]
আলাউদ্দীন আবূ বাকার বিন মাসউদ আল-কাসানী আল-হানাফী তাঁর ফিক্বহ গ্রন্থ ‘বাদায়িস সানাঈ’-এ লিখেছেন:
فدل الحديث على أن مدة العصر أقصر من مدة الظهر ، وإنما يكون أقصر أن لو كان الأمر على ما قاله أبو حنيفة
“হাদীসটিতে দলিল রয়েছে যে, আসরের সময়কাল যোহরের সময়ের চেয়ে অনেক কম। আর এটা তখনই কম হবে যখন ইমাম আবূ হানীফার উক্তি মোতাবেক বিধানটি মূল্যায়ন করা হবে।” [. বাদায়িস সানাঈ ১/৩১৫ পৃ:।]
হানাফীরা হাদীসের যে অংশ থেকে দলিল নিয়েছেন তা হল:
فَقَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ أَيْ رَبَّنَا أَعْطَيْتَ هَؤُلَاءِ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ وَأَعْطَيْتَنَا قِيرَاطًا قِيرَاطًا وَنَحْنُ كُنَّا أَكْثَرَ عَمَلاً
“উভয় কিতাবী সম্প্রদায় বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দু’ দু’ ‘কীরাত’ করে দান করেছেন, আর আমাদের দিয়েছেন এক এক কীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশি।”
বুঝা যাচ্ছে, ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায় একত্রে তাদের আমলের কথা বলেছিল। স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের আমলের কথা বলেনি। তা ছাড়া হাদীসটির আলোকে নাসারা সম্প্রদায়ের আমল বন্ধ হওয়ার পর এই উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-এর আমল শুরু হয়েছে। অথচ ৫৭০ ঈশাব্দের পর মুহাম্মাদ (স)-এর আগমন করেন। তারপর থেকে আজ অবধি ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-এর আমল অব্যাহত আছে। যা নাসারাদের উক্ত সময়ের প্রায় দুইগুণেরও বেশি এবং এখনো অব্যাহত আছে। এ কারণেও উক্ত উক্তিটি ইয়াহুদী ও নাসারাদের যৌথভাবে ছিল, এককভাবে নাসারাদের ছিল না। অন্যথায় নাসারাদের সময়কাল উম্মাতের মুহাম্মাদী (স) থেকে বেশি গণ্য করলে সেটা ঐতিহাসিকভাবে ও বাস্তবতার বিরোধী হয়। কেননা, মুহাম্মাদ (স)-এর পরে নাসারাদের আমলকে গ্রহণযোগ্য আমল বলা হবে না, তথা তাদের আমল বন্ধ হয়েছে।
আবার ইয়াহুদীদের পক্ষ থেকে নাসারাদের থেকে বেশি কাজ করাতে সমান মুজরি পাওয়ায় কোনো আপত্তি উত্থাপিত হয়নি। যা থেকে বুঝা যায়, কাজ বেশি করার কারণে তাদের আপত্তি ছিল না, বরং দ্বিগুণ মজুরি দেয়াতে আপত্তি ছিল। যেমন: ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
قَالَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ رَبَّنَا هَؤُلاَءِ أَقَلُّ عَمَلاً وَأَكْثَرُ أَجْرًا .
“তাওরাতের অনুসারীরা বলল, হে আমাদের রব! তারাতো আমলে সবচেয়ে কম আবার পারিশ্রমিকে সবচেয়ে অধিক।” [. সহীহ বুখারী হা/৭৪৬৭; অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/২২৬৮, ৩৪৫৯, ৫০২১, ৭৫৩৩ ।]
এ থেকে বুঝা যায়, কতটা সময় আমল করেছে সেটার থেকে পারিশ্রমিক বেশি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।
তা ছাড়া নাসারাদের সময়কাল বাস্তবতার দৃষ্টিতে উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-এর থেকে কম। কেননা, মুহাম্মাদ (স) ৬১০ ঈশাব্দে নবুওয়াতী লাভের পর থেকে উক্ত হাদীস অনুযায়ী নাসারাদের আমল ঐ সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে। পক্ষান্তরে উম্মাতে মুহাম্মাদী (স) ১৪০০ হিজরে পার করে ১৫০০ শতাব্দী পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে উদাহরণটি উক্ত তিনটি সম্প্রদায়ের সময়কালকে ধারাবাহিকতা বুঝানোই মূখ্য। তা ছাড়া বাস্তব দাবির ভিত্তিতেও আসরের ওয়াক্ত এক ছায়া পরিমাণের পরের থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ধরলে, তা যোহরের শুরু থেকে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত সময়ের থেকে কম হয়ে থাকে। যদিও ব্যতিক্রম বছরের অল্প কিছু সময় আসরের ওয়াক্তের ব্যবধানটি বেশি হয়। এ সময়টি খুব কম বিধায় উদাহরণ হিসেবে বছরের বেশিরভাগ আসরের ওয়াক্তের সময়টি প্রযোজ্য।
ইমাম মালেকী (রহ), ইমাম শাফেঈ (রহ) ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ)-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসরের ওয়াক্ত এক ছায়া থেকে শুরু। উম্মুল কুরা’র পঞ্জিকা অনুযায়ী এই তিনি ইমামের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের যোহর থেকে আসর এবং আসর থেকে মাগরিবের সময়ের ব্যবধান উল্লেখ করছি:
তারিখ - যোহর শুরু - যোহর শেষ, আসর শুরু - যোহর থেকে, আসরের ব্যবধান - মাগরিব শুরু - আসর থেকে, মাগরিবের ব্যবধান।
১লা জানু: - ১২:০২ - ০৩:০৩ - ০৩ ঘণ্টা ০১ মি: - ০৫:২৩ - ০২ ঘণ্টা ২০ মি:
১লা ফেব্রু: - ১২:১২ - ০৩:২২ - ০৩ ঘণ্টা ১০ মি: - ০৫:৪৫ - ০২ ঘণ্টা ২৩ মি:
১লা মার্চ - ১২:১১ - ০৩:৩১ - ০৩ ঘণ্টা ২০ মি: - ০৬:০১ - ০২ ঘণ্টা ৩০ মি:
১লা এপ্রিল - ১২:০২ - ০৩:৩০ - ০৩ ঘণ্টা ২৮ মি: - ০৬:১৪ - ০২ ঘণ্টা ৪৪ মি:
১লা মে - ১১:৫৬ - ০৩:২১ - ০৩ ঘণ্টা ২৫ মি: - ০৬:২৭ - ০৩ ঘণ্টা ০৬ মি:
১লা জুন - ১১:৫৬ - ০৩:১৬ - ০৩ ঘণ্টা ২২ মি: - ০৬:৪১ - ০৩ ঘণ্টা ২৫ মি:
১লা জুলাই - ১২:০২ - ০৩:২১ - ০৩ ঘণ্টা ১৯ মি: - ০৬:৪৯ - ০৩ ঘণ্টা ২৮ মি:
১লা অগাষ্ট - ১২:০৫ - ০৩:২৯ - ০৩ ঘণ্টা ২৬ মি: - ০৬:৪১ - ০৩ ঘণ্টা ১২ মি:
১লা সেপ্টে: - ১১:৫৮ - ০৩:২৬ - ০৩ ঘণ্টা ২৮ মি: - ০৬:১৭ - ০২ ঘণ্টা ৫১ মি:
১লা অক্টো: - ১১:৪৮ - ০৩:১২ - ০৩ ঘণ্টা ২৪ মি: - ০৫:৪৬ - ০২ ঘণ্টা ২২ মি:
১লা নভে: - ১১:৪২ - ০২:৫৫ - ০৩ ঘণ্টা ১৩ মি: - ০৫:২০ - ০২ ঘণ্টা ২৫ মি:
১লা ডিসে: - ১১:৪৭ - ০২:৫০ - ০৩ ঘণ্টা ০৩ মি: - ০৫:১১ - ০২ ঘণ্টা ১১ মি:
উপরে দেখা যাচ্ছে ১লা জুন ও ১লা জুলাই যোহরের ওয়াক্তের স্থায়ীত্ব আসরের ওয়াক্তের স্থায়ীত্বের থেকে যথাক্রমে তিন মিনিট ও নয় মিনিট বেশি। পক্ষান্তরে বাকী দশটি মাস যোহরের ওয়াক্তের সময়সীমা থেকে আসরের ওয়াক্তের সময়সীমার ব্যবধান অনেক অনেক কম।
তা ছাড়া যদি জিবরীল (আ) কর্তৃক দেখানো প্রথম ওয়াক্ত তথা এক ছায়া থেকে আসরের শেষ ওয়াক্ত তথা দুই ছায়ার মূল ওয়াক্তকে হিসেবে করি, তবে অবশ্যই আসরের সলাতের সময় যোহরের থেকে সবসময় কমই হয়। তেমনি আবার যদি জিবরীল (আ)-এর হাদীস অনুযায়ী এক ছায়া ও দুই ছায়ার মাঝামাঝি সময়কে আসরের জামাআত হিসেবে নির্ধারণ করি, তা হলে সবসময়ের জন্য সারাবছর যোহরের তুলনায় আসরের ওয়াক্ত কম থাকে। কেননা, আসরের সলাত ওয়াক্ত এক ছায়া পরিমাণ হওয়ার সাথে সাথে পড়া হয় না। বরং অযু, আযান ও জামাআতের জন্য কিছু সময় অতিবাহিত হয়েই থাকে।
এ কারণে হানাফীদের জবাবে হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন:
وَذَلِكَ مَعْرُوفٌ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ بِهَذَا الْفَنِّ وَهُوَ أَنَّ الْمُدَّةَ الَّتِي بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ أَطْوَلُ مِنَ الْمُدَّةِ الَّتِي بَيْنَ الْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَأَمَّا مَا نَقَلَهُ بَعْضُ الْحَنَابِلَةِ مِنَ الْإِجْمَاعِ عَلَى أَنَّ وَقْتَ الْعَصْرِ رُبْعُ النَّهَار فَمَحْمُول على التَّقْرِيب إِذا فرعنا عَلَى أَنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرُ الظِّلِّ مِثْلَهُ كَمَا قَالَ الْجُمْهُورُ وَأَمَّا عَلَى قَوْلِ الْحَنَفِيَّةِ فَالَّذِي مِنَ الظُّهْرِ إِلَى الْعَصْرِ أَطْوَلُ قَطْعًا .
“এই বিষয়টি বিশেষজ্ঞ আলেমদের কাছে প্রসিদ্ধ যে, যোহর ও আসরের মধ্যকার মেয়াদ আসর ও মাগরিবের মধ্যের মেয়াদকালের চেয়ে বেশি। আর কিছু হাম্বলী যে ইজমা‘র কথা উল্লেখ করেছেন যে, আসর দিনের চতুর্থাংশ। এটা কাছাকাছি অনুমান, আর সেটা তখনই হয় যখন আসরের প্রথম ওয়াক্ত ছায়া সমপরিমাণ থেকে হিসাব করা হয়, যেভাবে জুমহুরের বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু হানাফীদের বক্তব্য হল, যোহর থেকে আসরের সময়কালই দীর্ঘ।” [. ফতহুল বারী ২/৪০ পৃ:।]
৩৪
অনুচ্ছেদ-৩২: ‘আসরের ওয়াক্ত সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত’ - মর্মে বর্ণিত হাদীসের অপপ্রয়োগ। কেননা, উক্ত বাক্যটি আসরের শেষ সময়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপরেও হানাফীগণ হাদীসের বাক্যের সংক্ষিপ্ত অর্থ গ্রহণ করে জিবরীল (আ)-এর হাদীস মানসুখ বিবেচনা করেন।হাদীস-৪৬: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা) বর্ণনা করেন:
سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَنْ وَقْتِ الصَّلَوَاتِ فَقَالَ " وَقْتُ صَلاَةِ الْفَجْرِ مَا لَمْ يَطْلُعْ قَرْنُ الشَّمْسِ الأَوَّلُ وَوَقْتُ صَلاَةِ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ عَنْ بَطْنِ السَّمَاءِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ صَلاَةِ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَيَسْقُطْ قَرْنُهَا الأَوَّلُ …
“রসূলুল্লাহ (স)-কে সলাতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেন: সূর্যের উপর দিকের প্রান্তভাগ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত ফজর সলাতের সময় থাকে। যোহরের সলাতের সময় থাকে আকাশের মধ্যভাগ থেকে সূর্য গড়িয়ে আসরের সময় না হওয়া পর্যন্ত। আসরের সলাতের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর উপরের প্রান্তভাগ অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত। [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৬(১৭৪/৬১২)।]
অথচ অপর হাদীসে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সলাত আদায় করাটা মুনাফিক্বদের লক্ষণ বলা হয়েছে। যেমন, সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ يَجْلِسُ أَحَدُهُمْ حَتَّى إِذَا اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ فَكَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ أَوْ عَلَى قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا .
“এটা মুনাফিকদের সলাত, এটা মুনাফিকদের সলাত, এটা মুনাফিকদের সলাত, এদের কেউ বসে থাকে অতঃপর সূর্যের রং যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং তা শয়তানের উভয় শিঙের মধ্যে বা শিঙের উপর অবস্হান করে তখন সে সলাত আদায় করার জন্য দণ্ডায়মান হয়ে চারটি ঠোকর দিয়ে থাকে।” [. আবূ দাউদ হা/৪১৩; সহীহ-আলবানী।]
যদিও আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা আসরের শেষ ওয়াক্ত বলা হয়েছে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। [দ্র: হাদীস নং:১]
এটাতো ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সতর্কীকরণ। কেননা, দ্বিতীয় ছায়ার পর থেকে সূর্য ঘোলাটে হওয়া শুরু করে। তা হলে কিভাবে জিবরীল (আ)-এর হাদীস মানসুখ হল। অথচ কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
وامّا ما ورد فى حديث امامة جبرئيل اخر وقت العصر حين صار ظل كل شىء مثليه فمنسوخ من قوله صلى الله عليه وسلم وقت العصر ما لم تصفى الشمس
“জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস আসরের সলাতের ওয়াক্ত যে প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে, তা নবী (স)-এর এ উক্তি দ্বারা রহিত হয়েছে যে, আসরের ওয়াক্ত সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
অথচ এর পূর্বেই তিনি (রহ) লিখেছেন:
ثبت عنه صلى الله عليه وسلم والعصر الى اصفرار الشمس مكروه تحريما وأشدّ كراهة تأخير العصر الى الاصفرار لورود النهى عن الصّلوة فى ذلك الوقت وكونه منسوبا الى الشيطان
“সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত আসরের সলাতে বিলম্ব করা অতিশয় মাকরুহ। কেননা, ঐ সময় সলাত আদায় করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং তাকে শয়তানের সাথেও সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে।”
‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’-তে আসরের সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের বিধান লেখা হয়েছে নিম্নরূপ:
وَوَقْتُ الْعَصْرِ مِنْ صَيْرُورَةِ الظِّلِّ مِثْلَيْهِ غَيْرُ فَيْءِ الزَّوَالِ إلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ … وَيُسْتَحَبُّ تَأْخِيرُ الْعَصْرِ فِي كُلِّ زَمَانٍ مَا لَمْ تَتَغَيَّرْ الشَّمْسُ وَالْعِبْرَةُ لِتَغَيُّرِ الْقُرْصِ لَا لِتَغَيُّرِ الضَّوْءِ فَمَتَى صَارَ الْقُرْصُ بِحَيْثُ لَا تَحَارُ فِيهِ الْعَيْنُ فَقَدْ تَغَيَّرَتْ وَإِلَّا لَا .
“মধ্যাহ্নের (পরের) ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর আসরের ওয়াক্ত আরম্ভ হয় এবং তা সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাকী থাকে। [. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/১৪৪ পৃ:।] … সব সময় আসরের সলাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব, যতক্ষণ না সূর্যের রঙ বিবর্ণ হয়। সূর্যের গোলকের পরিবর্তন মূলতঃ ধর্তব্য। আলো বিবর্ণ হওয়া ধর্তব্য নয়। যখন সূর্যের গোলক এমন হয়ে যায় যে, এর প্রতি নজর করলে চোখ ধাঁধিয়ে না যায়, তখন মনে করতে হবে যে, সূর্যের মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে। এমন না হলে মনে করতে হবে যে, সূর্যের মধ্যে পরিবর্তন হয়নি।” [. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/১৪৫ পৃ:। অনুরূপ: হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’ (ইফা) ১/৬১ পৃ:, আশরাফুল হিদায়াহ ১/২৭৪ পৃ:।]
লক্ষ্যণীয়, হানাফী মাযহাবে আসরের সময় সেটা- যে পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করাটা মাকরুহ।
سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَنْ وَقْتِ الصَّلَوَاتِ فَقَالَ " وَقْتُ صَلاَةِ الْفَجْرِ مَا لَمْ يَطْلُعْ قَرْنُ الشَّمْسِ الأَوَّلُ وَوَقْتُ صَلاَةِ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ عَنْ بَطْنِ السَّمَاءِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ صَلاَةِ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَيَسْقُطْ قَرْنُهَا الأَوَّلُ …
“রসূলুল্লাহ (স)-কে সলাতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেন: সূর্যের উপর দিকের প্রান্তভাগ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত ফজর সলাতের সময় থাকে। যোহরের সলাতের সময় থাকে আকাশের মধ্যভাগ থেকে সূর্য গড়িয়ে আসরের সময় না হওয়া পর্যন্ত। আসরের সলাতের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর উপরের প্রান্তভাগ অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত। [. সহীহ মুসলিম হা/১২৭৬(১৭৪/৬১২)।]
অথচ অপর হাদীসে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সলাত আদায় করাটা মুনাফিক্বদের লক্ষণ বলা হয়েছে। যেমন, সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ تِلْكَ صَلاَةُ الْمُنَافِقِينَ يَجْلِسُ أَحَدُهُمْ حَتَّى إِذَا اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ فَكَانَتْ بَيْنَ قَرْنَىْ شَيْطَانٍ أَوْ عَلَى قَرْنَىِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا .
“এটা মুনাফিকদের সলাত, এটা মুনাফিকদের সলাত, এটা মুনাফিকদের সলাত, এদের কেউ বসে থাকে অতঃপর সূর্যের রং যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং তা শয়তানের উভয় শিঙের মধ্যে বা শিঙের উপর অবস্হান করে তখন সে সলাত আদায় করার জন্য দণ্ডায়মান হয়ে চারটি ঠোকর দিয়ে থাকে।” [. আবূ দাউদ হা/৪১৩; সহীহ-আলবানী।]
যদিও আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা আসরের শেষ ওয়াক্ত বলা হয়েছে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। [দ্র: হাদীস নং:১]
এটাতো ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সতর্কীকরণ। কেননা, দ্বিতীয় ছায়ার পর থেকে সূর্য ঘোলাটে হওয়া শুরু করে। তা হলে কিভাবে জিবরীল (আ)-এর হাদীস মানসুখ হল। অথচ কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
وامّا ما ورد فى حديث امامة جبرئيل اخر وقت العصر حين صار ظل كل شىء مثليه فمنسوخ من قوله صلى الله عليه وسلم وقت العصر ما لم تصفى الشمس
“জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস আসরের সলাতের ওয়াক্ত যে প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে, তা নবী (স)-এর এ উক্তি দ্বারা রহিত হয়েছে যে, আসরের ওয়াক্ত সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
অথচ এর পূর্বেই তিনি (রহ) লিখেছেন:
ثبت عنه صلى الله عليه وسلم والعصر الى اصفرار الشمس مكروه تحريما وأشدّ كراهة تأخير العصر الى الاصفرار لورود النهى عن الصّلوة فى ذلك الوقت وكونه منسوبا الى الشيطان
“সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত আসরের সলাতে বিলম্ব করা অতিশয় মাকরুহ। কেননা, ঐ সময় সলাত আদায় করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং তাকে শয়তানের সাথেও সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে।”
‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’-তে আসরের সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের বিধান লেখা হয়েছে নিম্নরূপ:
وَوَقْتُ الْعَصْرِ مِنْ صَيْرُورَةِ الظِّلِّ مِثْلَيْهِ غَيْرُ فَيْءِ الزَّوَالِ إلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ … وَيُسْتَحَبُّ تَأْخِيرُ الْعَصْرِ فِي كُلِّ زَمَانٍ مَا لَمْ تَتَغَيَّرْ الشَّمْسُ وَالْعِبْرَةُ لِتَغَيُّرِ الْقُرْصِ لَا لِتَغَيُّرِ الضَّوْءِ فَمَتَى صَارَ الْقُرْصُ بِحَيْثُ لَا تَحَارُ فِيهِ الْعَيْنُ فَقَدْ تَغَيَّرَتْ وَإِلَّا لَا .
“মধ্যাহ্নের (পরের) ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর আসরের ওয়াক্ত আরম্ভ হয় এবং তা সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাকী থাকে। [. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/১৪৪ পৃ:।] … সব সময় আসরের সলাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব, যতক্ষণ না সূর্যের রঙ বিবর্ণ হয়। সূর্যের গোলকের পরিবর্তন মূলতঃ ধর্তব্য। আলো বিবর্ণ হওয়া ধর্তব্য নয়। যখন সূর্যের গোলক এমন হয়ে যায় যে, এর প্রতি নজর করলে চোখ ধাঁধিয়ে না যায়, তখন মনে করতে হবে যে, সূর্যের মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে। এমন না হলে মনে করতে হবে যে, সূর্যের মধ্যে পরিবর্তন হয়নি।” [. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/১৪৫ পৃ:। অনুরূপ: হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’ (ইফা) ১/৬১ পৃ:, আশরাফুল হিদায়াহ ১/২৭৪ পৃ:।]
লক্ষ্যণীয়, হানাফী মাযহাবে আসরের সময় সেটা- যে পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করাটা মাকরুহ।
৩৫
অনুচ্ছেদ-৩৩: ‘যখন তাপ প্রখর হবে, তখন তোমরা সলাতকে তাপ কমে গেলে আদায় করবে’- মর্মে বর্ণিত হাদীসের অপপ্রয়োগ। যার সম্পর্ক প্রচণ্ড গরম ও সফরের সাথে। কিন্তু হানাফী মাযহাবে এই হাদীসটির আলোকে জিবরীল (আ)-এর হাদীস মানসুখ বিবেচনা করা হয় এবং যোহরের স্থায়ী সময় নির্ধারণ করা হয় দুই ছায়া পর্যন্ত। যা হানাফী গবেষক আলেমগণও বাতিল করেছেন।হাদীস-৪৭: সাহাবী আবূ সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত:
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَبْرِدُوا بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যোহরের সলাত গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৩৮।]
এই হাদীসটির সম্পর্ক: (১) সফরের সাথে-
হাদীস-৪৮: উক্ত সাহাবী আবূ সাঈদ (রা) বলেন:
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فِي سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى رَأَيْنَا فَيْءَ التُّلُولِ فَقَالَ النَّبِيُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلاَةِ .
“এক সফরে আমরা আল্লাহর নবী (স)-এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াযযিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী (স) বললেন: গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াযযিন আযান দিতে চাইলে নবী (স) (পুনরায়) বললেন: গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সলাত আদায়ে) এতো বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলো ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী (স) বললেন: গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর সলাত আদায় করো।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৩৯।]
(২) হাদীসটির সম্পর্ক গরমকালের সূর্যের চরম উত্তাপের সাথে, শীতের সাথে নয়-
হাদীস-৪৯: সাহাবী আনাস (রা) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِذَا كَانَ الْحَرُّ أَبْرَدَ بِالصَّلَاةِ وَإِذَا كَانَ الْبَرْدُ عَجَّلَ .
“রসূলুল্লাহ (স) (যোহরের সলাত) গরমকালে ঠাণ্ডা করে (গরম কমলে) আদায় করতেন, আর শীতকালে আগে আগে আদায় করতেন।” [. নাসাঈ হা/৪৯৯, মিশকাত হা/৬২০; সহীহ-আলবানী।]
হাদীস-৫০: সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) বলেন:
كَانَ قَدْرُ صَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الظُّهْرَ فِي الصَّيْفِ ثَلَاثَةَ أَقْدَامٍ إِلَى خَمْسَةِ أَقْدَامٍ، وَفِي الشِّتَاءِ خَمْسَةَ أَقْدَامٍ إِلَى سَبْعَةِ أَقْدَامٍ .
“গরমকালে রসূলুল্লাহ (স)-এর যুহরের সলাতের (ছায়ার পরিমাণ) ছিল তিন হতে পাঁচ ক্বদম, আর শীতকালে পাঁচ হতে সাত ক্বদম।” [. আবূ দাউদ হা/৪০০, নাসাঈ হা/৫০৩, মিশকাত হা/৫৮৬; সহীহ-আলবানী।]
শেষ হাদীসটি গরম ও শীতকালের সূর্যকীরণের তারতম্য। কেননা, পূর্বের হাদীসগুলো প্রমাণ করে, রসূলুল্লাহ (স) গরমকালে সফর করলে যোহরের সলাত তুলনামূলক ঠাণ্ডা হওয়ার পর আদায় করতেন, যা শীতকালে প্রয়োজন ছিল না। অথচ হানাফী ফিক্বাহতে তীব্র গরমের সময়ের উক্ত হাদীসগুলোর আলোকে সারা বছরের যোহরের ওয়াক্ত নির্ধারিত হয়েছে। হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’-তে লেখা হয়েছে:
وقتها عند أبي حنيفة رحمه الله إذا صار ظل كل شيء مثله سوى فيء الزوال وقالا : إذا صار الظل مثله وهو رواية عن أبي حنيفة رحمه الله وفيي الزوال هو الفيء الذي يكون للأشياء وقت الزوال ولهما إمامة جبريل عليه السلام في اليوم الأول في هذا الوت و لأبي حنيفة رحمه الله قوله عليه الصلاة و السلام [ أبردوا بالظهر فإن شدة الحر من فيح جهنم ] وأشد الحر في ديارهم في هذا والوقت وإذا تعارضت الآثار لا ينقضي الوقت بالشك .
“আবূ হানীফা (রহ)-এর মতে যোহরের শেষ সময় হলো যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া মধ্যাহ্ন ছায়ার বাদ দিয়ে দ্বিগুণ হয়। আর দ্বিতীয় ইমামদ্বয় (ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ) বলেন: যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমান হয়। এটাও ইমাম আবূ হানীফা (রহ) হতে বর্ণিত, আরেকটি মত। في الزوال (মধ্যাহ্ন ছায়া) হল, ঠিক মধ্যাহ্নকালে কোনো বস্তুর যে ছায়া হয়, তাই। দ্বিতীয় ইমামদ্বেয়ের দলিল এই যে, জিবরীল (আ) প্রথম দিন এ সময় আসরের ইমামতি করেছেন।” [. আল-হিদায়াহ (ইফা) ১/৫৯ পৃ:, আশরাফুল হিদায়াহ ১/২৬৭ পৃ:।]
এ পর্যায়ে কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:
وقت العصر ما لم تصفى الشمس وامّا اخر وقت الظهر فلم يوجد فى حديث صحيح ولا ضعيف انه يبقى بعد مصير ظل كل شىء مثله ولذا خالف أبا حنيفة فى هذه المسألة صاحباه ووافقا الجمهور .
“যোহরের সলাতের শেষ ওয়াক্ত দ্বিগুণ ছায়া পর্যন্ত কোনো হাদীসে উক্ত হয়নি। সহীহ বা যঈফ কোনো হাদীসেই নেই। এ কারণেই এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর মতও এর পরিপন্থী এবং জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহা্দ্দিসগণের) অনুরূপ।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
অতঃপর হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’-তে লেখা হয়েছে:
و لأبي حنيفة رحمه الله قوله عليه الصلاة و السلام [ أبردوا بالظهر فإن شدة الحر من فيح جهنم ] وأشد الحر في ديارهم في هذا والوقت وإذا تعارضت الآثار لا ينقضي الوقت بالشك .
“ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দলিল হল, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: ‘যোহরকে তোমরা শীতল করে পড়। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের তীব্রতা থেকেই আসছে।’ আর আরবদেশে (প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমান হওয়ায়) এ সময়টাতেই গরম প্রচণ্ডতম হয়। সুতরাং হাদীস যখন পরস্পর বিরোধপূর্ণ হল তখন সন্দেহবশত সময় শেষ হবে না।” [. আল-হিদায়া (ইফা) ১/৫৯ পৃ:, আশরাফুল হিদায়াহ ১/২৬৭ পৃ:।]
উক্তিটির পর্যালোচনায় কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
قال ابو حنيفة وأشدّ الحر فى ديارهم فى هذا الوقت حين صار ظل كل شىء مثله فكان حديث الإبراد ناسخا لحديث امامة جبرئيل فانه اوّل أحاديث الباب وإذا ثبت بقاء وقت الظهر بعد صيرورة الظل مثل الشيء نسخا لامامة جبرئيل بحديث الإبراد ثبت نسخ حديث امامة جبرئيل فى حق اوّل وقت العصر ايضا … لكن امامة جبرئيل فى اليوم الثاني العصر عند صيرورة ظل كل شىء مثليه يفيد انه وقته ولم ينسخ .
“ইমাম আবূ হানীফা (রহ) বলেন: তাঁদের দেশে যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হতো, তখন প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভূত হতো, তাই যোহরের সলাত তাপ কমে গেলে আদায় করার হাদীস দ্বারা জিবরীল (আ)-এর ইমামতের হাদীসকে মানসুখ করেন। কেননা, জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস তো সলাতের ওয়াক্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রথম দিকের হাদীস। সুতরাং যোহরের সলাত তাপ কমে গেলে আদায় করার হাদীস দ্বারা জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস মানসুখ হওয়া প্রমাণিত হল। তখন জিবরীল (আ) আসরের যে আওয়াল ওয়াক্তে ইমামতি করেছিলেন তাও রহিত হয়ে গেল।… কিন্তু দ্বিতীয় দিন জিবরীল (আ) দ্বিগুণ ছায়ার সময় যে আসরের সলাতে ইমামতি করেন, তাতে প্রতীয়মান হয়ে যে, এটি আসরের সলাতের ওয়াক্ত ছিল এবং এটি রহিত হয়নি।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫৩ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
অতঃপর ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর বক্তব্য খণ্ডনে লিখেছেন:
وهذا الاستدلال ضعيف جدّا ودلالة حديث الأبراد على بقاء وقت الظهر بعد المثل ممنوع بل الأبراد امر إضافي وشدة الحرّ انما يكون عند الزوال وبعض الأبراد يحصل قبيل بلوغ الظل مثل الشيء ولو كان الحرّ فى ديارهم حين بلوغ ظل الشيء مثله أشد مما قبله لكان مقتضى الأمر بالابراد تعجيل الصلاة فى اوّل الوقت والله اعلم .
“এভাবে দলিল গ্রহণ অত্যন্ত দুর্বল। শীতল করার হাদীস থেকে এটা বুঝা যায় না যে, একগুণ ছায়া হওয়ার পরও যোহরের ওয়াক্ত বাকী থাকে। বরং ওয়াক্তের শীতলতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। আসল গরমের তীব্রতা তো সূর্য ঢলে পড়ার সময় হয়ে থাকে। সূর্য ঢলে পড়ার সময়ের মোকাবেলায় একগুণ ছায়া হওয়ার কিছু পূ্র্বে কতকটা ঠাণ্ডা তো হয়েই থাকে। আর যদি এটা মেনেও নেয়া হয় যে, তাঁদের দেশে একগুণ ছায়া হওয়ার সময় পূর্ব মুহূর্ত অপেক্ষা অধিক উত্তাপ অনুভব হয়, তবে স্বয়ং শীতল করার নির্দেশের দাবি হচ্ছে আওয়াল ওয়াক্তেই (ছায়া একগুণ হওয়ার পূর্বেই) যোহর আদায় করা। আল্লাহই সর্বোজ্ঞ।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫৩ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর বিশ্লেষণটি শাব্দিক। আর শাব্দিক বিশ্লেষণ দ্বারা তিনি অধিকাংশ সাহাবী (রা) থেকে বর্ণিত নবী (স)-এর ব্যবহারিক হাদীসের দাবিকে সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন। নিচের হাদীসগুলো থেকে সুস্পষ্ট হবে ইমাম আবূ হানীফা (রহ) দুই ছায়া বা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার যে রায় দিয়েছেন- তা সাহাবীগণ (রা) বুঝেননি। যেমন-
হাদীস-৫১: সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন:
كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ النَّبِيِّ ﷺ بِالظَّهَائِرِ سَجَدْنَا على ثيابنا اتقاء الْحر .
“আমরা যখন নবী (স)-এর পিছনে যোহরের সলাত আদায় করতাম, তখন গরম থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাপড়ের উপর সাজদাহ করতাম।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৪২, মিশকাত হা/৫৮৯।]
বুঝা যাচ্ছে, গরমের উত্তাপ থাকাবস্থায়ও নবী (স)-এর পিছনে সাহাবীগণ যোহরের সলাত আদায় করতেন। এ পর্যায়ে পূর্বে বর্ণিত হাদীসগুলোর দাবি হল, গরম কালে সূর্যের তাপ বেশি হলে, যোহরের সলাত তুলনামূলক ঠাণ্ডার সময় আদায় করা মুস্তাহাব। নিচের হাদীসটিও এক্ষেত্রে অপর একটি প্রমাণ:
হাদীস-৫২: সাহাবী খাব্বাব (রা) বর্ণনা করেন:
أَتَيْنَا رَسُولَ اللهِ ﷺ «فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ حَرَّ الرَّمْضَاءِ، فَلَمْ يُشْكِنَا» قَالَ زُهَيْرٌ : قُلْتُ لِأَبِي إِسْحَاقَ : " أَفِي الظُّهْرِ؟ قَالَ : نَعَمْ، قُلْتُ : أَفِي تَعْجِيلِهَا؟ قَالَ : نَعَمْ
“আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর কাছে গিয়ে প্রচণ্ড গরমের (সলাত আদায়ের ব্যাপারে) অভিযোগ করলাম। কিন্তু তিনি (স) আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। বর্ণনাকারী যুহায়র বললেন, আমি আবূ ইসহাককে জিজ্ঞেস করলাম: তারা (খাব্বাব ও অন্য সহাবীগণ) কি যোহরের সলাত (প্রচণ্ড গরমের মধ্যে) আদায় করা সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি (যুহায়র) আবারও জিজ্ঞেস করলাম ( যোহরের সলাত) আগে ভাগে অর্থাৎ- ওয়াক্তের প্রথম দিকে আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি এবারও বললেন, হ্যাঁ।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৩ (১৯০/৬১৯)।]
বুঝা যাচ্ছে, সবক্ষেত্রে নবী (স) যোহরের সলাত ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন না। বরং প্রচণ্ড গরমেও আওয়াল ওয়াক্তে যোহরের সলাত আদায় করতেন।
হাদীস-৫৩: সাহাবী জাবির বিন সামুরাহ (রা) বর্ণনা করেন:
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُصَلِّي الظُّهْرَ إِذَا دَحَضَتِ الشَّمْسُ .
“সূর্য (মাথার উপর থেকে) হেলে পড়লেই নবী (স) যোহরের সলাত আদায় করতেন।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯১ (১৮৮/৬১৮)।]
এই হাদীসটি মৌলিক বা ‘আমভাবে যোহরের ওয়াক্তের প্রকৃত সময়কে বুঝাচ্ছে। যখন কোনো খাস বা সুনির্দিষ্ট কারণ এর ব্যতীক্রম কিছু বলবে, কেবল তখনই ঐ সুনির্দিষ্ট শর্তে মূল শর্তটির ব্যতিক্রম হিসেবে পালনযোগ্য হবে।
উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহ) উপরের ৫১ ও ৫২ নং মর্মে বর্ণিত হাদীসের আলোকে শেষোক্ত ৫৩ নং মর্মে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেছেন:
والحديث يدل على استحباب الإبراد، ولا يعارض ذلك الأحاديث الواردة بتعجيل الظهر وأفضلية أول الوقت لأنها عامة أو مطلقة، وحديث الإبراد خاص أو مقيد، ولا تعارض بين عام وخاص ولا بين مطلق ومقيد، وأما حديث خباب عند مسلم، قال : شكونا إلى رسول الله - ﷺ - حر الرمضاء في جباهنا وأكفنا فلم يشكنا . أي : لم يعذرنا ولم يزال شكوانا، فمحمول على أنهم طلبواً تأخيراً زائداً على قدر الإبراد، …
“(৫১ নং) হাদীসটি যোহরের সলাত ঠাণ্ডা হওয়ার পর আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার দলিল। এর সাথে যোহরের সলাত দ্রুত আদায় ও প্রথম ওয়াক্তে আদায়ের ফযিলতের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কেননা, (৫৩ নং হাদীসের দাবি) ‘আম বা সাধারণভাবে মৌলিক ও উন্মুক্ত। পক্ষান্তরে ইবরাদ বা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার হাদীস খাস বা সুনির্দিষ্ট। আর আম ও খাসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, তেমনি উন্মুক্ত ও সুনির্দিষ্ট হওয়ার মধ্যেও বিরোধ নেই (কেননা, খাস নির্দিষ্ট শর্তের সাথে যুক্ত। আর শর্তটি পাওয়া না গেলে সব-সময় আম বা উন্মুক্ত নির্দেশের উপর আমল করতে হয়)। আর সহীহ মুসলিমে (৫২ নং হাদীসটিতে) বর্ণিত হয়েছে, খাব্বাব (রা) বলেন: আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট প্রচণ্ড গরমে আমাদের কপাল ও হাত পুড়ে যাবার অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তিনি (স) তা গ্রহণ করেননি। [. উক্ত বাক্যে সহীহ মুসলিমে কোনো হাদীস নেই। বরং সহীহ মুসলিমের হাদীসটি সেটাই যা পূর্বে উল্লেখ করেছি। বর্ণিত হাদীসটি অন্য কিতাবের। বিস্তারিত: সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৪৮১৩।] অর্থাৎ আমাদের ওজর ও অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। এর অর্থ হল, তাঁরা আরও বেশি ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।…” [. মিরআতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতুল মাসাবীহ (শামেলা) ২/৩০০-০১ পৃ:।]
জিবরীল (আ)-এর হাদীস সাহাবী ও তাবেঈদের যামানাতেও অনুসরণীয় ছিল- এ কারণে মানসুখ হওয়ার দাবিই বাতিল:
হাদীস-৫৪: তাবেঈ উরওয়াহ বিন যুবায়ের (রহ) বর্ণনা করেন:
يُحَدِّثُ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ فِيْ إِمَارَتِهِ أَخَّرَ الْمُغِيْرَةُ بْنُ شُعْبَةَ الْعَصْرَ وَهُوَ أَمِيْرُ الْكُوْفَةِ فَدَخَلَ عَلَيْهِ أَبُوْ مَسْعُوْدٍ عُقْبَةُ بْنُ عامِرٍ الْأَنْصَارِيُّ جَدُّ زَيْدِ بْنِ حَسَنٍ شَهِدَ بَدْرًا فَقَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ نَزَلَ جِبْرِيْلُ فَصَلَّى فَصَلَّى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَمْسَ صَلَوَاتٍ ثُمَّ قَالَ هَكَذَا أُمِرْتُ كَذَلِكَ .
“উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) তাঁর খিলাফাত কালের বর্ণনা করেছেন যে, মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রা) কুফার আমীর থাকা কালে একদা আসরের সলাত আদায় করতে দেরি করে ফেললে যায়দ ইবনু হাসানের দাদা বদরী সাহাবী আবূ মাসউদ উকবাহ ইবনু আমির আনসারী (রা) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, আপনি তো জানেন যে, জিবরীল (আ) এসে সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ্ (স) তাঁর সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করলেন এবং বললেন: আমি এভাবেই সলাত আদায় করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি।” [. সহীহ বুখারী হা/৪০০৭। বিস্তারিত: সহীহ বুখারী হা/৫২১।]
হাদীস-৫৫: আর ইবনু শিহাব (রহ) বর্ণনা করেছেন:
أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ أَخَّرَ الْعَصْرَ شَيْئًا فَقَالَ لَهُ عُرْوَةُ أَمَا إِنَّ جِبْرِيْلَ قَدْ نَزَلَ فَصَلَّى أَمَامَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ عُمَرُ اعْلَمْ مَا تَقُوْلُ يَا عُرْوَةُ قَالَ سَمِعْتُ بَشِيْرَ بْنَ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُوْدٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ نَزَلَ جِبْرِيْلُ فَأَمَّنِيْ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ يَحْسُبُ بِأَصَابِعِهِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ .
“একবার উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) আসরের সলাত কিছুটা দেরিতে আদায় করলেন। তখন তাঁকে উরওয়াহ (রা) বললেন, একবার জিবরীল (আ) আসলেন এবং আল্লাহর রসূল (স) -এর ইমাম হয়ে সলাত আদায় করলেন। তা শুনে উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) বললেন, হে উরওয়াহ! কি বলছ, চিন্তা কর। উত্তরে তিনি বললেন, আমি বশীর ইবনু আবূ মাসঊদ (রা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (স)-কে বলতে শুনেছি, একবার জিবরীল (আ) আসলেন, অতঃপর তিনি আমার ইমামতি করলেন এবং তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপরও আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত গুণছিলেন। [. সহীহ বুখারী হা/৩২২১।]
ইমাম নওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন:
أخر عمر بن عبدالعزيز العصر فأنكر عليه عروة وأخرها المغيرة فأنكر عليه أبو مسعود الانصارى واحتجابامامة جبريل عليه السلام
“আসরের সলাতে উমার বিন আব্দুল আযীয দেরি করলে উরওয়াহ বিন যুবায়ের তাতে আপত্তি করলেন। তেমনি মুগীরাহ দেরি করাতে সাহাবী আবূ মাসউদ আনসারী (রা) আপত্তি করেন এবং জিবরীল (আ)-এর হাদীস দ্বারা দলিল উপস্থাপন করেন।” [. শারহু মুসলিম নাওয়াবী ১/২২২ পৃ:।]
সুস্পষ্ট হল, জিবরীল (আ)-এর হাদীসটিকে মানসুখ করার দাবিটি তাক্বলীদ বা দলীয় অন্ধ-অনুসরণ থেকে সৃষ্ট হয়ে একটি ধোঁকা ও ষড়যন্ত্রের রূপ নিয়েছে। এমনকি সাহাবী ও তাবেঈদের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তটি সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও নিজ ইমামের অন্ধ-অনুসরণ করাকে ফরয বানিয়ে আত্মতৃপ্তির চরম গোমরাহিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَبْرِدُوا بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যোহরের সলাত গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৩৮।]
এই হাদীসটির সম্পর্ক: (১) সফরের সাথে-
হাদীস-৪৮: উক্ত সাহাবী আবূ সাঈদ (রা) বলেন:
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فِي سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى رَأَيْنَا فَيْءَ التُّلُولِ فَقَالَ النَّبِيُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلاَةِ .
“এক সফরে আমরা আল্লাহর নবী (স)-এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াযযিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী (স) বললেন: গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াযযিন আযান দিতে চাইলে নবী (স) (পুনরায়) বললেন: গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সলাত আদায়ে) এতো বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলো ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী (স) বললেন: গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর সলাত আদায় করো।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৩৯।]
(২) হাদীসটির সম্পর্ক গরমকালের সূর্যের চরম উত্তাপের সাথে, শীতের সাথে নয়-
হাদীস-৪৯: সাহাবী আনাস (রা) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِذَا كَانَ الْحَرُّ أَبْرَدَ بِالصَّلَاةِ وَإِذَا كَانَ الْبَرْدُ عَجَّلَ .
“রসূলুল্লাহ (স) (যোহরের সলাত) গরমকালে ঠাণ্ডা করে (গরম কমলে) আদায় করতেন, আর শীতকালে আগে আগে আদায় করতেন।” [. নাসাঈ হা/৪৯৯, মিশকাত হা/৬২০; সহীহ-আলবানী।]
হাদীস-৫০: সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) বলেন:
كَانَ قَدْرُ صَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الظُّهْرَ فِي الصَّيْفِ ثَلَاثَةَ أَقْدَامٍ إِلَى خَمْسَةِ أَقْدَامٍ، وَفِي الشِّتَاءِ خَمْسَةَ أَقْدَامٍ إِلَى سَبْعَةِ أَقْدَامٍ .
“গরমকালে রসূলুল্লাহ (স)-এর যুহরের সলাতের (ছায়ার পরিমাণ) ছিল তিন হতে পাঁচ ক্বদম, আর শীতকালে পাঁচ হতে সাত ক্বদম।” [. আবূ দাউদ হা/৪০০, নাসাঈ হা/৫০৩, মিশকাত হা/৫৮৬; সহীহ-আলবানী।]
শেষ হাদীসটি গরম ও শীতকালের সূর্যকীরণের তারতম্য। কেননা, পূর্বের হাদীসগুলো প্রমাণ করে, রসূলুল্লাহ (স) গরমকালে সফর করলে যোহরের সলাত তুলনামূলক ঠাণ্ডা হওয়ার পর আদায় করতেন, যা শীতকালে প্রয়োজন ছিল না। অথচ হানাফী ফিক্বাহতে তীব্র গরমের সময়ের উক্ত হাদীসগুলোর আলোকে সারা বছরের যোহরের ওয়াক্ত নির্ধারিত হয়েছে। হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’-তে লেখা হয়েছে:
وقتها عند أبي حنيفة رحمه الله إذا صار ظل كل شيء مثله سوى فيء الزوال وقالا : إذا صار الظل مثله وهو رواية عن أبي حنيفة رحمه الله وفيي الزوال هو الفيء الذي يكون للأشياء وقت الزوال ولهما إمامة جبريل عليه السلام في اليوم الأول في هذا الوت و لأبي حنيفة رحمه الله قوله عليه الصلاة و السلام [ أبردوا بالظهر فإن شدة الحر من فيح جهنم ] وأشد الحر في ديارهم في هذا والوقت وإذا تعارضت الآثار لا ينقضي الوقت بالشك .
“আবূ হানীফা (রহ)-এর মতে যোহরের শেষ সময় হলো যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া মধ্যাহ্ন ছায়ার বাদ দিয়ে দ্বিগুণ হয়। আর দ্বিতীয় ইমামদ্বয় (ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ) বলেন: যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমান হয়। এটাও ইমাম আবূ হানীফা (রহ) হতে বর্ণিত, আরেকটি মত। في الزوال (মধ্যাহ্ন ছায়া) হল, ঠিক মধ্যাহ্নকালে কোনো বস্তুর যে ছায়া হয়, তাই। দ্বিতীয় ইমামদ্বেয়ের দলিল এই যে, জিবরীল (আ) প্রথম দিন এ সময় আসরের ইমামতি করেছেন।” [. আল-হিদায়াহ (ইফা) ১/৫৯ পৃ:, আশরাফুল হিদায়াহ ১/২৬৭ পৃ:।]
এ পর্যায়ে কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:
وقت العصر ما لم تصفى الشمس وامّا اخر وقت الظهر فلم يوجد فى حديث صحيح ولا ضعيف انه يبقى بعد مصير ظل كل شىء مثله ولذا خالف أبا حنيفة فى هذه المسألة صاحباه ووافقا الجمهور .
“যোহরের সলাতের শেষ ওয়াক্ত দ্বিগুণ ছায়া পর্যন্ত কোনো হাদীসে উক্ত হয়নি। সহীহ বা যঈফ কোনো হাদীসেই নেই। এ কারণেই এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর মতও এর পরিপন্থী এবং জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহা্দ্দিসগণের) অনুরূপ।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
অতঃপর হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’-তে লেখা হয়েছে:
و لأبي حنيفة رحمه الله قوله عليه الصلاة و السلام [ أبردوا بالظهر فإن شدة الحر من فيح جهنم ] وأشد الحر في ديارهم في هذا والوقت وإذا تعارضت الآثار لا ينقضي الوقت بالشك .
“ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দলিল হল, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: ‘যোহরকে তোমরা শীতল করে পড়। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের তীব্রতা থেকেই আসছে।’ আর আরবদেশে (প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমান হওয়ায়) এ সময়টাতেই গরম প্রচণ্ডতম হয়। সুতরাং হাদীস যখন পরস্পর বিরোধপূর্ণ হল তখন সন্দেহবশত সময় শেষ হবে না।” [. আল-হিদায়া (ইফা) ১/৫৯ পৃ:, আশরাফুল হিদায়াহ ১/২৬৭ পৃ:।]
উক্তিটির পর্যালোচনায় কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
قال ابو حنيفة وأشدّ الحر فى ديارهم فى هذا الوقت حين صار ظل كل شىء مثله فكان حديث الإبراد ناسخا لحديث امامة جبرئيل فانه اوّل أحاديث الباب وإذا ثبت بقاء وقت الظهر بعد صيرورة الظل مثل الشيء نسخا لامامة جبرئيل بحديث الإبراد ثبت نسخ حديث امامة جبرئيل فى حق اوّل وقت العصر ايضا … لكن امامة جبرئيل فى اليوم الثاني العصر عند صيرورة ظل كل شىء مثليه يفيد انه وقته ولم ينسخ .
“ইমাম আবূ হানীফা (রহ) বলেন: তাঁদের দেশে যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হতো, তখন প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভূত হতো, তাই যোহরের সলাত তাপ কমে গেলে আদায় করার হাদীস দ্বারা জিবরীল (আ)-এর ইমামতের হাদীসকে মানসুখ করেন। কেননা, জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস তো সলাতের ওয়াক্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রথম দিকের হাদীস। সুতরাং যোহরের সলাত তাপ কমে গেলে আদায় করার হাদীস দ্বারা জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস মানসুখ হওয়া প্রমাণিত হল। তখন জিবরীল (আ) আসরের যে আওয়াল ওয়াক্তে ইমামতি করেছিলেন তাও রহিত হয়ে গেল।… কিন্তু দ্বিতীয় দিন জিবরীল (আ) দ্বিগুণ ছায়ার সময় যে আসরের সলাতে ইমামতি করেন, তাতে প্রতীয়মান হয়ে যে, এটি আসরের সলাতের ওয়াক্ত ছিল এবং এটি রহিত হয়নি।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫৩ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
অতঃপর ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর বক্তব্য খণ্ডনে লিখেছেন:
وهذا الاستدلال ضعيف جدّا ودلالة حديث الأبراد على بقاء وقت الظهر بعد المثل ممنوع بل الأبراد امر إضافي وشدة الحرّ انما يكون عند الزوال وبعض الأبراد يحصل قبيل بلوغ الظل مثل الشيء ولو كان الحرّ فى ديارهم حين بلوغ ظل الشيء مثله أشد مما قبله لكان مقتضى الأمر بالابراد تعجيل الصلاة فى اوّل الوقت والله اعلم .
“এভাবে দলিল গ্রহণ অত্যন্ত দুর্বল। শীতল করার হাদীস থেকে এটা বুঝা যায় না যে, একগুণ ছায়া হওয়ার পরও যোহরের ওয়াক্ত বাকী থাকে। বরং ওয়াক্তের শীতলতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। আসল গরমের তীব্রতা তো সূর্য ঢলে পড়ার সময় হয়ে থাকে। সূর্য ঢলে পড়ার সময়ের মোকাবেলায় একগুণ ছায়া হওয়ার কিছু পূ্র্বে কতকটা ঠাণ্ডা তো হয়েই থাকে। আর যদি এটা মেনেও নেয়া হয় যে, তাঁদের দেশে একগুণ ছায়া হওয়ার সময় পূর্ব মুহূর্ত অপেক্ষা অধিক উত্তাপ অনুভব হয়, তবে স্বয়ং শীতল করার নির্দেশের দাবি হচ্ছে আওয়াল ওয়াক্তেই (ছায়া একগুণ হওয়ার পূর্বেই) যোহর আদায় করা। আল্লাহই সর্বোজ্ঞ।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫৩ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর বিশ্লেষণটি শাব্দিক। আর শাব্দিক বিশ্লেষণ দ্বারা তিনি অধিকাংশ সাহাবী (রা) থেকে বর্ণিত নবী (স)-এর ব্যবহারিক হাদীসের দাবিকে সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন। নিচের হাদীসগুলো থেকে সুস্পষ্ট হবে ইমাম আবূ হানীফা (রহ) দুই ছায়া বা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার যে রায় দিয়েছেন- তা সাহাবীগণ (রা) বুঝেননি। যেমন-
হাদীস-৫১: সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন:
كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ النَّبِيِّ ﷺ بِالظَّهَائِرِ سَجَدْنَا على ثيابنا اتقاء الْحر .
“আমরা যখন নবী (স)-এর পিছনে যোহরের সলাত আদায় করতাম, তখন গরম থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাপড়ের উপর সাজদাহ করতাম।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৪২, মিশকাত হা/৫৮৯।]
বুঝা যাচ্ছে, গরমের উত্তাপ থাকাবস্থায়ও নবী (স)-এর পিছনে সাহাবীগণ যোহরের সলাত আদায় করতেন। এ পর্যায়ে পূর্বে বর্ণিত হাদীসগুলোর দাবি হল, গরম কালে সূর্যের তাপ বেশি হলে, যোহরের সলাত তুলনামূলক ঠাণ্ডার সময় আদায় করা মুস্তাহাব। নিচের হাদীসটিও এক্ষেত্রে অপর একটি প্রমাণ:
হাদীস-৫২: সাহাবী খাব্বাব (রা) বর্ণনা করেন:
أَتَيْنَا رَسُولَ اللهِ ﷺ «فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ حَرَّ الرَّمْضَاءِ، فَلَمْ يُشْكِنَا» قَالَ زُهَيْرٌ : قُلْتُ لِأَبِي إِسْحَاقَ : " أَفِي الظُّهْرِ؟ قَالَ : نَعَمْ، قُلْتُ : أَفِي تَعْجِيلِهَا؟ قَالَ : نَعَمْ
“আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর কাছে গিয়ে প্রচণ্ড গরমের (সলাত আদায়ের ব্যাপারে) অভিযোগ করলাম। কিন্তু তিনি (স) আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। বর্ণনাকারী যুহায়র বললেন, আমি আবূ ইসহাককে জিজ্ঞেস করলাম: তারা (খাব্বাব ও অন্য সহাবীগণ) কি যোহরের সলাত (প্রচণ্ড গরমের মধ্যে) আদায় করা সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি (যুহায়র) আবারও জিজ্ঞেস করলাম ( যোহরের সলাত) আগে ভাগে অর্থাৎ- ওয়াক্তের প্রথম দিকে আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি এবারও বললেন, হ্যাঁ।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৩ (১৯০/৬১৯)।]
বুঝা যাচ্ছে, সবক্ষেত্রে নবী (স) যোহরের সলাত ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন না। বরং প্রচণ্ড গরমেও আওয়াল ওয়াক্তে যোহরের সলাত আদায় করতেন।
হাদীস-৫৩: সাহাবী জাবির বিন সামুরাহ (রা) বর্ণনা করেন:
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُصَلِّي الظُّهْرَ إِذَا دَحَضَتِ الشَّمْسُ .
“সূর্য (মাথার উপর থেকে) হেলে পড়লেই নবী (স) যোহরের সলাত আদায় করতেন।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯১ (১৮৮/৬১৮)।]
এই হাদীসটি মৌলিক বা ‘আমভাবে যোহরের ওয়াক্তের প্রকৃত সময়কে বুঝাচ্ছে। যখন কোনো খাস বা সুনির্দিষ্ট কারণ এর ব্যতীক্রম কিছু বলবে, কেবল তখনই ঐ সুনির্দিষ্ট শর্তে মূল শর্তটির ব্যতিক্রম হিসেবে পালনযোগ্য হবে।
উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহ) উপরের ৫১ ও ৫২ নং মর্মে বর্ণিত হাদীসের আলোকে শেষোক্ত ৫৩ নং মর্মে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেছেন:
والحديث يدل على استحباب الإبراد، ولا يعارض ذلك الأحاديث الواردة بتعجيل الظهر وأفضلية أول الوقت لأنها عامة أو مطلقة، وحديث الإبراد خاص أو مقيد، ولا تعارض بين عام وخاص ولا بين مطلق ومقيد، وأما حديث خباب عند مسلم، قال : شكونا إلى رسول الله - ﷺ - حر الرمضاء في جباهنا وأكفنا فلم يشكنا . أي : لم يعذرنا ولم يزال شكوانا، فمحمول على أنهم طلبواً تأخيراً زائداً على قدر الإبراد، …
“(৫১ নং) হাদীসটি যোহরের সলাত ঠাণ্ডা হওয়ার পর আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার দলিল। এর সাথে যোহরের সলাত দ্রুত আদায় ও প্রথম ওয়াক্তে আদায়ের ফযিলতের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কেননা, (৫৩ নং হাদীসের দাবি) ‘আম বা সাধারণভাবে মৌলিক ও উন্মুক্ত। পক্ষান্তরে ইবরাদ বা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার হাদীস খাস বা সুনির্দিষ্ট। আর আম ও খাসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, তেমনি উন্মুক্ত ও সুনির্দিষ্ট হওয়ার মধ্যেও বিরোধ নেই (কেননা, খাস নির্দিষ্ট শর্তের সাথে যুক্ত। আর শর্তটি পাওয়া না গেলে সব-সময় আম বা উন্মুক্ত নির্দেশের উপর আমল করতে হয়)। আর সহীহ মুসলিমে (৫২ নং হাদীসটিতে) বর্ণিত হয়েছে, খাব্বাব (রা) বলেন: আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট প্রচণ্ড গরমে আমাদের কপাল ও হাত পুড়ে যাবার অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তিনি (স) তা গ্রহণ করেননি। [. উক্ত বাক্যে সহীহ মুসলিমে কোনো হাদীস নেই। বরং সহীহ মুসলিমের হাদীসটি সেটাই যা পূর্বে উল্লেখ করেছি। বর্ণিত হাদীসটি অন্য কিতাবের। বিস্তারিত: সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৪৮১৩।] অর্থাৎ আমাদের ওজর ও অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। এর অর্থ হল, তাঁরা আরও বেশি ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।…” [. মিরআতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতুল মাসাবীহ (শামেলা) ২/৩০০-০১ পৃ:।]
জিবরীল (আ)-এর হাদীস সাহাবী ও তাবেঈদের যামানাতেও অনুসরণীয় ছিল- এ কারণে মানসুখ হওয়ার দাবিই বাতিল:
হাদীস-৫৪: তাবেঈ উরওয়াহ বিন যুবায়ের (রহ) বর্ণনা করেন:
يُحَدِّثُ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ فِيْ إِمَارَتِهِ أَخَّرَ الْمُغِيْرَةُ بْنُ شُعْبَةَ الْعَصْرَ وَهُوَ أَمِيْرُ الْكُوْفَةِ فَدَخَلَ عَلَيْهِ أَبُوْ مَسْعُوْدٍ عُقْبَةُ بْنُ عامِرٍ الْأَنْصَارِيُّ جَدُّ زَيْدِ بْنِ حَسَنٍ شَهِدَ بَدْرًا فَقَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ نَزَلَ جِبْرِيْلُ فَصَلَّى فَصَلَّى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَمْسَ صَلَوَاتٍ ثُمَّ قَالَ هَكَذَا أُمِرْتُ كَذَلِكَ .
“উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) তাঁর খিলাফাত কালের বর্ণনা করেছেন যে, মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রা) কুফার আমীর থাকা কালে একদা আসরের সলাত আদায় করতে দেরি করে ফেললে যায়দ ইবনু হাসানের দাদা বদরী সাহাবী আবূ মাসউদ উকবাহ ইবনু আমির আনসারী (রা) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, আপনি তো জানেন যে, জিবরীল (আ) এসে সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ্ (স) তাঁর সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করলেন এবং বললেন: আমি এভাবেই সলাত আদায় করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি।” [. সহীহ বুখারী হা/৪০০৭। বিস্তারিত: সহীহ বুখারী হা/৫২১।]
হাদীস-৫৫: আর ইবনু শিহাব (রহ) বর্ণনা করেছেন:
أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ أَخَّرَ الْعَصْرَ شَيْئًا فَقَالَ لَهُ عُرْوَةُ أَمَا إِنَّ جِبْرِيْلَ قَدْ نَزَلَ فَصَلَّى أَمَامَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ عُمَرُ اعْلَمْ مَا تَقُوْلُ يَا عُرْوَةُ قَالَ سَمِعْتُ بَشِيْرَ بْنَ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُوْدٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ نَزَلَ جِبْرِيْلُ فَأَمَّنِيْ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ يَحْسُبُ بِأَصَابِعِهِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ .
“একবার উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) আসরের সলাত কিছুটা দেরিতে আদায় করলেন। তখন তাঁকে উরওয়াহ (রা) বললেন, একবার জিবরীল (আ) আসলেন এবং আল্লাহর রসূল (স) -এর ইমাম হয়ে সলাত আদায় করলেন। তা শুনে উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) বললেন, হে উরওয়াহ! কি বলছ, চিন্তা কর। উত্তরে তিনি বললেন, আমি বশীর ইবনু আবূ মাসঊদ (রা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (স)-কে বলতে শুনেছি, একবার জিবরীল (আ) আসলেন, অতঃপর তিনি আমার ইমামতি করলেন এবং তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপরও আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত গুণছিলেন। [. সহীহ বুখারী হা/৩২২১।]
ইমাম নওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন:
أخر عمر بن عبدالعزيز العصر فأنكر عليه عروة وأخرها المغيرة فأنكر عليه أبو مسعود الانصارى واحتجابامامة جبريل عليه السلام
“আসরের সলাতে উমার বিন আব্দুল আযীয দেরি করলে উরওয়াহ বিন যুবায়ের তাতে আপত্তি করলেন। তেমনি মুগীরাহ দেরি করাতে সাহাবী আবূ মাসউদ আনসারী (রা) আপত্তি করেন এবং জিবরীল (আ)-এর হাদীস দ্বারা দলিল উপস্থাপন করেন।” [. শারহু মুসলিম নাওয়াবী ১/২২২ পৃ:।]
সুস্পষ্ট হল, জিবরীল (আ)-এর হাদীসটিকে মানসুখ করার দাবিটি তাক্বলীদ বা দলীয় অন্ধ-অনুসরণ থেকে সৃষ্ট হয়ে একটি ধোঁকা ও ষড়যন্ত্রের রূপ নিয়েছে। এমনকি সাহাবী ও তাবেঈদের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তটি সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও নিজ ইমামের অন্ধ-অনুসরণ করাকে ফরয বানিয়ে আত্মতৃপ্তির চরম গোমরাহিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
হাদীস-৫৬: আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
… صَلِّ الظُّهْرَ، إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ . وَالْعَصْرَ، إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَيْكَ .،.
“যোহরের সলাত পড় যখন তোমার ছায়া তোমার সমান হয়, আর আসর পড়- যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হয়।” [. মুয়াত্তা ইমাম মালিক (ইফা) হা/৯।]
পূর্বে আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত ১ ও ২১ নং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়:
যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় সূর্য ঢলে যাবার পর, আর শেষ ওয়াক্ত ছায়া সমান বা আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত।
আর আসরের শুরুর ওয়াক্ত ছায়া সমান হওয়া থেকে এবং শেষ ওয়াক্ত দ্বিগুণ ছায়া বা সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত।
এ পর্যায়ে শেষোক্ত ৫৬ নং হাদীসটি পূর্বে বর্ণিত ১ ও ২১ নং হাদীস দ্বারা ব্যাখ্যা নিতে হবে। অন্যথায় সংক্ষিপ্ত হাদীস দ্বারা অধিকাংশ সাহাবী বর্ণিত হাদীসের বিরোধিতা করা হয়। এ পর্যায়ে সংক্ষিপ্ত হাদীসটি চূড়ান্ত দলিল নয়। বরং হাদীসটিতে যোহর ও আসরের সলাতের শেষ সময়টুকু উল্লেখ করা হয়েছে। যার দাবি হল, ঐ সময়ের মধ্যে যোহর ও আসরের সলাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। যেভাবে টিলা সমান হওয়ার হাদীসে (৯ নং-এ) রয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত একাধিক সূত্রে বর্ণিত বিস্তারিত হাদীসকে বর্জন করে আলোচ্য সংক্ষিপ্ত হাদীসটিকে হানাফী মাযহাবের পক্ষে দলিল বানানো হচ্ছে। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।
অনুরূপ অপর একটি বর্ণনা হল, ইকরামাহ (রহ) বলেন:
كُنَّا مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي جِنَازَةٍ، فَلَمْ يُصَلِّ الْعَصْرَ، وَسَكَتَ حَتَّى رَاجَعْنَاهُ مِرَارًا، فَلَمْ يُصَلِّ الْعَصْرَ، حَتَّى رَأَيْنَا الشَّمْسَ عَلَى رَأْسِ أَطْوَلِ جَبَلٍ بِالْمَدِينَةِ
“একবার আমরা এক জানাযায় আবূ হুরায়রা (রা) -এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আসরের সলাত আদায় করলেন না এবং চুপ রইলেন। অবশেষে আমরা বারবার তাঁর নিকট সলাত আদায়ের জন্য অনুরোধ জানালাম। কিন্তু তিনি আসরের সলাত আদায় করলেন না, যতক্ষণ না আমরা মদীনার সর্বাপেক্ষা উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় সূর্য (আলো) দেখতে পাই।” [. তাহাবী শরীফ (ইফা) হা/১০৬২।]
হাদীসটি থেকে কেবল এতটুকু বুঝা যায় যে, লোকদের মাঝে সাধারণভাবে প্রচলিত আসরের ওয়াক্ত থেকে আবূ হুরায়রা (রা) দেরিতে আসরের সলাত আদায় করেছিলেন। অথচ আবূ হুরায়রা (রা) নিজেই নবী (স) থেকে সঠিক ওয়াক্তে আসরের সলাত আদায়ের অন্যতম বর্ণনাকারী। যার বিবরণ কিছু পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি। এ পর্যায়ে উক্ত ঘটনাটি একটি ব্যতিক্রম ও ভিন্ন কারণবিশিষ্ট হয়ে থাকবে। ফলে বর্ণনাটি নিয়মিত আসরের ওয়াক্ত নির্ধারণের হাদীস হিসেবে দলিল যোগ্য নয়। হানাফীগণ এই ব্যতিক্রম বিষয় উল্লেখকৃত হাদীস দ্বারা স্থায়ীভাবে আসরের সলাতের দলিল নিয়ে থাকে, যদিও সহীহ হাদীস নিয়মিত আসরের জামাআত করার সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকুক না কেন!?
… صَلِّ الظُّهْرَ، إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ . وَالْعَصْرَ، إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَيْكَ .،.
“যোহরের সলাত পড় যখন তোমার ছায়া তোমার সমান হয়, আর আসর পড়- যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হয়।” [. মুয়াত্তা ইমাম মালিক (ইফা) হা/৯।]
পূর্বে আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত ১ ও ২১ নং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়:
যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় সূর্য ঢলে যাবার পর, আর শেষ ওয়াক্ত ছায়া সমান বা আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত।
আর আসরের শুরুর ওয়াক্ত ছায়া সমান হওয়া থেকে এবং শেষ ওয়াক্ত দ্বিগুণ ছায়া বা সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত।
এ পর্যায়ে শেষোক্ত ৫৬ নং হাদীসটি পূর্বে বর্ণিত ১ ও ২১ নং হাদীস দ্বারা ব্যাখ্যা নিতে হবে। অন্যথায় সংক্ষিপ্ত হাদীস দ্বারা অধিকাংশ সাহাবী বর্ণিত হাদীসের বিরোধিতা করা হয়। এ পর্যায়ে সংক্ষিপ্ত হাদীসটি চূড়ান্ত দলিল নয়। বরং হাদীসটিতে যোহর ও আসরের সলাতের শেষ সময়টুকু উল্লেখ করা হয়েছে। যার দাবি হল, ঐ সময়ের মধ্যে যোহর ও আসরের সলাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। যেভাবে টিলা সমান হওয়ার হাদীসে (৯ নং-এ) রয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত একাধিক সূত্রে বর্ণিত বিস্তারিত হাদীসকে বর্জন করে আলোচ্য সংক্ষিপ্ত হাদীসটিকে হানাফী মাযহাবের পক্ষে দলিল বানানো হচ্ছে। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।
অনুরূপ অপর একটি বর্ণনা হল, ইকরামাহ (রহ) বলেন:
كُنَّا مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي جِنَازَةٍ، فَلَمْ يُصَلِّ الْعَصْرَ، وَسَكَتَ حَتَّى رَاجَعْنَاهُ مِرَارًا، فَلَمْ يُصَلِّ الْعَصْرَ، حَتَّى رَأَيْنَا الشَّمْسَ عَلَى رَأْسِ أَطْوَلِ جَبَلٍ بِالْمَدِينَةِ
“একবার আমরা এক জানাযায় আবূ হুরায়রা (রা) -এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আসরের সলাত আদায় করলেন না এবং চুপ রইলেন। অবশেষে আমরা বারবার তাঁর নিকট সলাত আদায়ের জন্য অনুরোধ জানালাম। কিন্তু তিনি আসরের সলাত আদায় করলেন না, যতক্ষণ না আমরা মদীনার সর্বাপেক্ষা উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় সূর্য (আলো) দেখতে পাই।” [. তাহাবী শরীফ (ইফা) হা/১০৬২।]
হাদীসটি থেকে কেবল এতটুকু বুঝা যায় যে, লোকদের মাঝে সাধারণভাবে প্রচলিত আসরের ওয়াক্ত থেকে আবূ হুরায়রা (রা) দেরিতে আসরের সলাত আদায় করেছিলেন। অথচ আবূ হুরায়রা (রা) নিজেই নবী (স) থেকে সঠিক ওয়াক্তে আসরের সলাত আদায়ের অন্যতম বর্ণনাকারী। যার বিবরণ কিছু পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি। এ পর্যায়ে উক্ত ঘটনাটি একটি ব্যতিক্রম ও ভিন্ন কারণবিশিষ্ট হয়ে থাকবে। ফলে বর্ণনাটি নিয়মিত আসরের ওয়াক্ত নির্ধারণের হাদীস হিসেবে দলিল যোগ্য নয়। হানাফীগণ এই ব্যতিক্রম বিষয় উল্লেখকৃত হাদীস দ্বারা স্থায়ীভাবে আসরের সলাতের দলিল নিয়ে থাকে, যদিও সহীহ হাদীস নিয়মিত আসরের জামাআত করার সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকুক না কেন!?
হাদীস-৫৭: আলী ইবনু শায়বান (রা)-এর বর্ণনা:
قَدِمْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الْمَدِينَةَ فَكَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ مَا دَامَتِ الشَّمْسُ بَيْضَاءَ نَقِيَّةً
“আমরা মদীনাতে রসূলূল্লাহ (স)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি আসরের সলাতকে বিলম্বিত করলেন- যতক্ষণ না সূর্য স্বচ্ছ সাদা হয়।” [. আবূ দাউদ হা/৪০৮।]
শাইখ আলবানী (রহ) হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। [. তাহক্বীক্ব আবূ দাউদ হা/৪০৮।]
শাইখ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) বলেন: সনদটিতে ইবনু ইয়াযীদ আল-ইয়ামামী ও তার শাইখ (ইয়যীদ বিন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন শায়বান) উভয়েই মাজহুল- যেভাবে ‘তাক্বরীব’ প্রভৃতিতে বর্ণিত হয়েছে। [. তাহক্বীক্ব উর্দু আবূ দাউদ হা/৪০৮।]
হাদীস-৫৮: আব্দুল ওয়াহিদ বিন নাফি‘ (রহ) বর্ণনা করেন:
دَخَلْتُ مَسْجِدَ الْمَدِينَةِ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بِالْعَصْرِ , قَالَ : وَشَيْخٌ جَالِسٌ فَلَامَهُ , وَقَالَ : إِنَّ أَبِي أَخْبَرَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْمُرُ بِتَأْخِيرِ هَذِهِ الصَّلَاةِ , قَالَ : فَسَأَلْتُ عَنْهُ فَقَالُوا : هَذَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَافِعِ بْنِ خَدِيجِ بْنِ رَافِعٍ .
“আমি মদীনার মাসজিদে প্রবেশ করলাম। মুয়াযযিন আসরের আযান দিলেন। তিনি বলেন: একজন প্রবীণ ব্যক্তি মাসজিদে বসা ছিলেন। তিনি তাকে তিরষ্কার করলেন এবং বললেন: আমার পিতা আমাকে অবহিত করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (স) এই সলাত বিলম্ব করে পড়ার নির্দেশ দিতেন। তিনি বলেন: আমি তার সম্পর্কে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বলল: তিনি রাফি‘ বিন খাদীজ (রা)-এর পুত্র আব্দুল্লাহ।” [. দারা কুতনী (ইফা) হা/৯৬৫।]
ইমাম দারা কুতনী (রহ) বলেন: هَذَا لَيْسَ بِقَوِيٍّ ‘হাদীসটি শক্তিশালী নয়।’
সুনানু দারা কুতনীর মুহাক্কিক্ব লিখেছেন:
وهذا الحديث ذكره الجوزقاني في " الموضوعات " كما في " لسان الميزان " (٤/ ٨٠ ). والحديث ذكره الزيلعي في " نصب الراية " (۱/ ٢٤٥ ) ، وقال : قال ابن القطان في " كتابه " عبد الواحد بن نافع أبو الرماح، مجهول الحال، مختلف في حديثه . اهـ
“হাদীসটি যাওযাক্বানী (রহ) তাঁর ‘আল-মাওযুআতে’ উল্লেখ করেছেন, যেভাবে ‘লিসানুল মীযানে’ (৪/৮০) বর্ণিত হয়েছে। যায়লাঈ (রহ) তাঁর ‘নাসবুর রায়াহ’ (১/২৪৫)-এ উল্লেখ করে বলেন: ইবনুল ক্বত্তান (রহ) তাঁর কিতাবে বলেন: আব্দুল ওয়াহিদ বিন নাফে‘ আবূ রিমাহ ‘মাজহুল হাল’, তার হাদীসে বর্ণনার ভিন্নতা থাকত।” [. তাহক্বীক্ব দারা কুতনী (বৈরুত: দারুল মা‘রিফাহ, ১৪২২/২০১১) ১/৫৫৯-৬০ পৃ:, হা/৯৭৭-এর টীকা ।]
কিছুটা ভিন্নভাবে বর্ণিত পরবর্তী হাদীসে (ইফা. হা/৯৬৬) ইমাম দারাকুতনী উক্ত রাবী সম্পর্কে লিখেছেন:
وَهَذَا حَدِيثٌ ضَعِيفُ الْإِسْنَادِ مِنْ جِهَةِ عَبْدِ الْوَاحِدِ هَذَا , لِأَنَّهُ لَمْ يَرْوِهِ عَنِ ابْنِ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ غَيْرُهُ , وَقَدِ اخْتُلِفَ فِي اسْمِ ابْنِ رَافِعٍ هَذَا وَلَا يَصِحُّ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ رَافِعٍ وَلَا عَنْ غَيْرِهِ مِنَ الصَّحَابَةِ , وَالصَّحِيحُ عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ وَعَنْ غَيْرِ وَاحِدٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ ضِدُّ هَذَا , وَهُوَ التَّعْجِيلُ بِصَلَاةِ الْعَصْرِ وَالتَّبْكِيرِ بِهَا فَأَمَّا الرِّوَايَةُ الصَّحِيحَةُ عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ .
“এই হাদীসের সনদ আব্দুল ওয়াহিদের কারণে যঈফ। কেননা, তিনি এই হাদীস রাফি‘ বিন খাদীজ ব্যতীত অন্যদের থেকে বর্ণনা করেননি। আর এই ইবনু রাফি‘-এর নাম সম্পর্কে মতভেদ আছে। এই হাদীস রাফি‘ বিন খাদীজ (রা) এবং অন্য সাহাবীদের সূত্রে সহীহ নয়। এর বিপরীতে সাহাবী রাফি‘ বিন খাদীজ (রা) ও নবী (রা)-এর একাধিক সাহাবী (রা) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, আসরের সলাত শীঘ্রই পড়তে হবে এবং তাকবীরও (আযান) শীঘ্র দিবে। আর রাফি‘ বিন খাদীজ (রা) বর্ণিত হাদীসটি সহীহ।” (দ্র: এই পুস্তিকার ৩৬ নং হাদীস)
অর্থাৎ হাদীসটি যঈফ হওয়ার সাথে সাথে রাফি‘বিন খাদীজ বর্ণিত সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ায় হাদীসটি মুনকার কিংবা মাওযু‘ (জাল) হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
হাদীস-৫৯: ইবনু জুরায়জ (রহ) বর্ণনা করেন:
عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ صَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ أَخْرَجَ مَالاً يَقْسِمُهُ يُبَادِرُ بِهِ اللَّيْلَ .
“তাবেঈ ইবনু মুলায়কাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত আদায় করতেন, অতঃপর মাল বণ্টন করতে করতে রাত নেমে আসত।” [. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩৪০।]
হাদীসটির সনদে ইবনু জুরায়জ (রহ) মুদাল্লিস এবং তিনি ‘আন দ্বারা বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। ফলে হাদীসটির সনদ তাদলীসের ত্রুটি কারণে যঈফ।
তা ছাড়া হাদীসটি মুরসাল। কেননা, তাবেঈ ইবনু মুলায়কাহ (রহ) নবী (স) থেকে সরাসরি হাদীসটি শোনেনি।
সুতরাং হাদীসটি যঈফ। তা ছাড়া হাদীসটি থেকে আসরের সালাতের শুরুর সময় সম্পর্কে অবিহত হওয়া যায় না।
হাদীস-৬০: ইবনু উমার (রা) বর্ণনা করেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «الوَقْتُ الأَوَّلُ مِنَ الصَّلَاةِ رِضْوَانُ اللَّهِ، وَالوَقْتُ الآخِرُ عَفْوُ اللَّهِ»
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: সলাতের প্রথম ওয়াক্তে আছে আল্লাহ সন্তুষ্টি, আর শেষ ওয়াক্তে আছে আল্লাহর ক্ষমা।” [. তিরমিযী হা/১৭২।]
(১) ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি বর্ণনার পর বলেন:
حَدِيثُ أُمِّ فَرْوَةَ لَا يُرْوَى إِلَّا مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ العُمَرِيِّ، وَلَيْسَ هُوَ بِالقَوِيِّ عِنْدَ أَهْلِ الحَدِيثِ، وَاضْطَرَبُوا فِي هَذَا الحَدِيثِ، وَقَدْ تَكَلَّمَ فِيهِ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ .
“উম্মু ফারওয়াহ (রহ)-এর হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনু উমার আল-উমারী ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করেননি। অথচ হাদীস বিশারদদের কাছে তিনি শক্তিশালী নন, যদিও তিনি সত্যবাদী। তাদের মতে তিনি এ হাদীসের সনদে গোলমাল করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ তার স্মরণশক্তির সমালোচনা করেছেন।”
(২) শাইখ আলবানী (রহ) ইমাম তিরমিযী (রহ)-এর বিশ্লেষণ থেকে হাদীসটিকে ‘যঈফ’ সাব্যস্ত করার পর বলেন:
وقال البيهقي : " هذا حديث يعرف بيعقوب بن الوليد المدني وهو منكر الحديث ضعفه يحيى بن معين وكذبه أحمد … وقال ابن عدي : الحديث بهذا الإسناد باطل ".
“বায়হাক্বী (রহ) বলেন: হাদীসটি ইয়া‘কুব বিন ওয়ালীদ মাদানীর মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে, তিনি মুনকারুল হাদীস। তাকে যঈফ বলেছেন ইয়াহইয়া বিন মাঈন আর মিথ্যুক বলেছেন আহমাদ …। ইবনু আদী (রহ) বলেন: হাদীসটির এই সনদ বাতিল।” [. ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৮ পৃ: হা/২৫৯-এর বিশ্লেষণ।]
উক্ত মর্মে জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রহ)-এর [. দারা কুতনী (ইফা) হা/৯৬১, বায়হাক্বী কুবরা হা/২০৪৯।] হাদীসটির সনদের হুসাইন বিন হুমায়দকে ইবনুল মাতীন ‘মিথ্যুক’ এবং উবায়দ বিন ক্বাসেমকে ইবনু মাঈন মাতরুক (পরিত্যাজ্য) বলেছেন। [. ইরওয়াউল গালীল- ঐ।]
অপর একটি বর্ণনাতে অতিরিক্ত হয়েছে: وَوَسَطُ الْوَقْتِ رَحْمَةُ اللَّهِ “আর ওয়াক্তের মাঝামাঝিতে আছে আল্লাহর রহমত।” [. দারা কুতনী (ইফা) হা/৯৬০।]
ইবনুল জাওযী (রহ) বলেন: সনদে ইবরাহীম বিন যাকারিয়া আছে। আবূ হাতিম রাযী (রহ) বলেন: সে মাজহুল। বায়হাক্বী (রহ)-ও আপত্তি করেছেন। [. ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৮ পৃ: হা/২৫৯-এর বিশ্লেষণ।]
হাদীস-৬১: সাওরী (রহ) বর্ণনা করেন:
عَنِ الْأَعْمَشِ قَالَ : «كَانَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ يُعَجِّلُونَ الظُّهْرَ، وَيُؤَخِّرُونَ الْعَصْرَ، وَيُعَجِّلُونَ الْمَغْرِبَ، وَيُؤَخِّرُونَ الْعِشَاءَ»
“আ‘মাশ বলেন: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রহ)-এর সাথীগণ যোহর শীঘ্র আদায় করতেন, আসর দেরিতে আদায় করতেন, মাগরিব শীঘ্র আদায় করতেন, আবার ঈশা দেরিতে আদায় করতেন।” [. মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক্ব হা/২০৪৩।]
সনদে (সুফিয়ান) সাওরী ও আ‘মাশ উভয়েই ব্যাপক তাদলীসকারী। ফলে সনদটি যঈফ।
তাবেঈদের বর্ণনা থেকে এটা প্রমাণিত হয় না যে, সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা)-এর সাথীগণ ছায়া দ্বিগুণ বা সূর্য হলদে রঙ বা তাপহীন হওয়ার পর আসরের সলাত আদায় করতেন। বরং সাহাবী ইবনু মাসউদ (রা) থেকে এটাই প্রমাণিত যে, তিনি নবী (স)-কে সূর্য হলুদ ও তেজহীন হওয়ার পূর্বে সলাত আদায় করতে দেখেছেন (হাদীস নং-২৪)। ইবনু মাসউদ (রা) সলাতকে যথাসময়ে আদায় না করা শাসকের পিছনে সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (হাদীস নং-৪০)।
এ পর্যায়ে তাবেঈদের থেকে উক্ত হাদীসে বর্ণিত আসরের সলাত সম্পর্কে হানাফী ব্যাখ্যা ও দাবি প্রত্যাখ্যাত।
অনুরূপ ইবনু মাসউদ (রা) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে: كَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ “তিনি আসরের সলাত দেরি করতেন।” [. মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক্ব হা/২০৮৯।]
এর সনদেও ইবনু ইসহাক্ব ও (সুফিয়ান) সওরী মুদাল্লিস। বাদ বাকী ব্যাখ্যা পূর্বের মতো।
হাদীস-৬২: যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ (রহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
كُنَّا جُلُوسًا مَعَ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي الْمَسْجِدِ الْأَعْظَمِ , وَالْكُوفَةُ يَوْمَئِذٍ أَخْصَاصٌ , فَجَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ فَقَالَ : الصَّلَاةُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لِلْعَصْرِ , فَقَالَ : «اجْلِسْ» , فَجَلَسَ ثُمَّ عَادَ فَقَالَ ذَلِكَ , فَقَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : «هَذَا الْكَلْبُ يُعَلِّمُنَا بِالسُّنَّةِ» , فَقَامَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَصَلَّى بِنَا الْعَصْرَ , ثُمَّ انْصَرَفْنَا فَرَجَعْنَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي كُنَّا فِيهِ جُلُوسًا فَجَثَوْنَا لِلرُّكَبِ لِنُزِولِ الشَّمْسِ لِلْمَغِيبِ نَتَرَآهَا .
“আমরা আলী (রা)-এর সাথে বড় মাসজিদে বসা ছিলাম। তখন কূফা ছিল বিশেষজ্ঞদের বাসস্থান। তার নিকট মুয়াযযিন এসে বললেন: ইয়া আমীরাল মু’মিনীন! আসরের সলাতের ওয়াক্ত হয়েছে। তিনি বললেন: তুমি বস! অতএব সে বসল। তারপর পুনরায় সলাতের কথা বলল। তখন আলী (রা) বললেন: এই কুকুর আমাদের সুন্নাত শিক্ষা দিচ্ছে। তারপর আলী (রা) দাঁড়ান এবং আমাদেরকে নিয়ে আসরের সলাত পড়ালেন। অতঃপর আমরা যেখানে বসা ছিলাম সেখানে ফিরে এলাম। আমরা হাঁটুতে ভর দিয়ে বসলাম সূর্য অস্ত যাওয়ার অপেক্ষায়।” [. দারা কুতনী হা/৯৮৮।]
ইমাম দারা কুতনী (রহ) হাদীসটি বর্ণনার পর লিখেছেন:
زِيَادُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ النَّخَعِيُّ مَجْهُولٌ لَمْ يَرْوِ عَنْهُ غَيْرُ الْعَبَّاسِ بْنِ ذَرِيحٍ
“(হাদীসটির সনদে) যিয়াদ বিন আব্দিল্লাহ নাখঈ মাজহুল। তার থেকে আব্বাস বিন যুরায়হ ছাড়া কেউ হাদীস বর্ণনা করেননি।”
সুনানু দারা কুতনী’র মুহাক্কিক্ব লিখেছেন: “হাকিম ও যাহাবী উভয়েই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- যা তাদের ভুল।” [. তাহক্বীক্ব দারা কুতনী (বৈরুত: দারুল মা‘রিফাহ, ১৪২২/২০১১) ১/৫৫৯-৬০ পৃ:, হা/৯৭৬-এর টীকা ।]
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন: وغلط الحاكم فزعم ان الشيخين اخرجا له
“হাকিম (রহ) ভুল করেছেন এবং ধারণা করেছেন ইমাম বুখারী (রহ) ও ইমাম মুসলিম (রহ) যিয়াদ বিন আব্দিল্লাহ নাখঈ থেকে বর্ণনা করেছেন।” [. লিসানুল মীযান: ১৯৮১ নং।]
আবূ আউন বর্ণনা করেন:
أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ عَلَى الْحِيطَانِ .
“নিশ্চয় আলী (রা) আসরের সলাতে দেরি করতেন, এমনকি সূর্যের আলো প্রাচীরের উপরে উঠে যেত।” [. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩২৭।]
ইবনু আবী শায়বাহ’র মুহাক্কিক্ব ড. সা’দ বিন নাসির লিখেছেন:
منقطع، أبوعون وهو محمد بن عبد الله الثقفي لم يسمع من علي .
“বর্ণনাটি মুনক্বাতে‘, আবূ আউন হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সাক্বাফী- তিনি আলী (রা) থেকে শোনেননি।” [. তাহক্বীক্ব মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ (রিয়াদ: দারু কানুয, ১৪৩৬/২০১৫) ৩/২১৭ পৃ:, হা/৩৩৪১-এর টীকা।]
অপর মুহাক্কিক্ব আবূ মুহাম্মাদ উসামাহ বলেছেন: আবূ আউন ও আবূ আসিম উভয়েই মাজহুল। [. তাহক্বীক্ব মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ (কায়রো: আল-ফারুক আল-হাদীসিয়্যাহ, ১৪২৯/২০০৮) ২/২০৭ পৃ:, হা/৩৩৩১-এর টীকা।]
হাদীস-৬৩: উমার বিন মুনাব্বিহ বর্ণনা করেছেন, সাওওয়ার বিন শাবীব থেকে তিনি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে:
أَنَّهُ كَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ حَتَّى أَقُولَ : قد اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ .
“তিনি আসরের সলাত দেরিতে আদায় করতেন, এমনকি বলা হতো: সূর্য হলুদ হয়ে গেছে।” [. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩২৮।]
মুহাক্কিক্ব আবূ মুহাম্মাদ উসামাহ বলেছেন:
في اسناده عمر بن منبه، وهو عمر بن يزيد بن منبه السعدي كما في (( الجرح )): (٤/ ٢٧٠ ) ، وهو مجهول الحال .
সনদটিতে উমার বিন মুনাব্বিহ আছেন। তিনি হলেন, উমার বিন ইয়াযীদ বিন মুনাব্বিহ আস-সা‘দী। (আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৪/২৭০) তিনি মাজহুল হাল। [. তাহক্বীক্ব মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ (কায়রো: আল-ফারুক আল-হাদীসিয়্যাহ, ১৪২৯/২০০৮) ২/২০৭ পৃ:, হা/৩৩৩২-এর টীকা।]
قَدِمْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الْمَدِينَةَ فَكَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ مَا دَامَتِ الشَّمْسُ بَيْضَاءَ نَقِيَّةً
“আমরা মদীনাতে রসূলূল্লাহ (স)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি আসরের সলাতকে বিলম্বিত করলেন- যতক্ষণ না সূর্য স্বচ্ছ সাদা হয়।” [. আবূ দাউদ হা/৪০৮।]
শাইখ আলবানী (রহ) হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। [. তাহক্বীক্ব আবূ দাউদ হা/৪০৮।]
শাইখ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) বলেন: সনদটিতে ইবনু ইয়াযীদ আল-ইয়ামামী ও তার শাইখ (ইয়যীদ বিন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন শায়বান) উভয়েই মাজহুল- যেভাবে ‘তাক্বরীব’ প্রভৃতিতে বর্ণিত হয়েছে। [. তাহক্বীক্ব উর্দু আবূ দাউদ হা/৪০৮।]
হাদীস-৫৮: আব্দুল ওয়াহিদ বিন নাফি‘ (রহ) বর্ণনা করেন:
دَخَلْتُ مَسْجِدَ الْمَدِينَةِ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بِالْعَصْرِ , قَالَ : وَشَيْخٌ جَالِسٌ فَلَامَهُ , وَقَالَ : إِنَّ أَبِي أَخْبَرَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْمُرُ بِتَأْخِيرِ هَذِهِ الصَّلَاةِ , قَالَ : فَسَأَلْتُ عَنْهُ فَقَالُوا : هَذَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَافِعِ بْنِ خَدِيجِ بْنِ رَافِعٍ .
“আমি মদীনার মাসজিদে প্রবেশ করলাম। মুয়াযযিন আসরের আযান দিলেন। তিনি বলেন: একজন প্রবীণ ব্যক্তি মাসজিদে বসা ছিলেন। তিনি তাকে তিরষ্কার করলেন এবং বললেন: আমার পিতা আমাকে অবহিত করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (স) এই সলাত বিলম্ব করে পড়ার নির্দেশ দিতেন। তিনি বলেন: আমি তার সম্পর্কে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বলল: তিনি রাফি‘ বিন খাদীজ (রা)-এর পুত্র আব্দুল্লাহ।” [. দারা কুতনী (ইফা) হা/৯৬৫।]
ইমাম দারা কুতনী (রহ) বলেন: هَذَا لَيْسَ بِقَوِيٍّ ‘হাদীসটি শক্তিশালী নয়।’
সুনানু দারা কুতনীর মুহাক্কিক্ব লিখেছেন:
وهذا الحديث ذكره الجوزقاني في " الموضوعات " كما في " لسان الميزان " (٤/ ٨٠ ). والحديث ذكره الزيلعي في " نصب الراية " (۱/ ٢٤٥ ) ، وقال : قال ابن القطان في " كتابه " عبد الواحد بن نافع أبو الرماح، مجهول الحال، مختلف في حديثه . اهـ
“হাদীসটি যাওযাক্বানী (রহ) তাঁর ‘আল-মাওযুআতে’ উল্লেখ করেছেন, যেভাবে ‘লিসানুল মীযানে’ (৪/৮০) বর্ণিত হয়েছে। যায়লাঈ (রহ) তাঁর ‘নাসবুর রায়াহ’ (১/২৪৫)-এ উল্লেখ করে বলেন: ইবনুল ক্বত্তান (রহ) তাঁর কিতাবে বলেন: আব্দুল ওয়াহিদ বিন নাফে‘ আবূ রিমাহ ‘মাজহুল হাল’, তার হাদীসে বর্ণনার ভিন্নতা থাকত।” [. তাহক্বীক্ব দারা কুতনী (বৈরুত: দারুল মা‘রিফাহ, ১৪২২/২০১১) ১/৫৫৯-৬০ পৃ:, হা/৯৭৭-এর টীকা ।]
কিছুটা ভিন্নভাবে বর্ণিত পরবর্তী হাদীসে (ইফা. হা/৯৬৬) ইমাম দারাকুতনী উক্ত রাবী সম্পর্কে লিখেছেন:
وَهَذَا حَدِيثٌ ضَعِيفُ الْإِسْنَادِ مِنْ جِهَةِ عَبْدِ الْوَاحِدِ هَذَا , لِأَنَّهُ لَمْ يَرْوِهِ عَنِ ابْنِ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ غَيْرُهُ , وَقَدِ اخْتُلِفَ فِي اسْمِ ابْنِ رَافِعٍ هَذَا وَلَا يَصِحُّ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ رَافِعٍ وَلَا عَنْ غَيْرِهِ مِنَ الصَّحَابَةِ , وَالصَّحِيحُ عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ وَعَنْ غَيْرِ وَاحِدٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ ضِدُّ هَذَا , وَهُوَ التَّعْجِيلُ بِصَلَاةِ الْعَصْرِ وَالتَّبْكِيرِ بِهَا فَأَمَّا الرِّوَايَةُ الصَّحِيحَةُ عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ .
“এই হাদীসের সনদ আব্দুল ওয়াহিদের কারণে যঈফ। কেননা, তিনি এই হাদীস রাফি‘ বিন খাদীজ ব্যতীত অন্যদের থেকে বর্ণনা করেননি। আর এই ইবনু রাফি‘-এর নাম সম্পর্কে মতভেদ আছে। এই হাদীস রাফি‘ বিন খাদীজ (রা) এবং অন্য সাহাবীদের সূত্রে সহীহ নয়। এর বিপরীতে সাহাবী রাফি‘ বিন খাদীজ (রা) ও নবী (রা)-এর একাধিক সাহাবী (রা) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, আসরের সলাত শীঘ্রই পড়তে হবে এবং তাকবীরও (আযান) শীঘ্র দিবে। আর রাফি‘ বিন খাদীজ (রা) বর্ণিত হাদীসটি সহীহ।” (দ্র: এই পুস্তিকার ৩৬ নং হাদীস)
অর্থাৎ হাদীসটি যঈফ হওয়ার সাথে সাথে রাফি‘বিন খাদীজ বর্ণিত সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ায় হাদীসটি মুনকার কিংবা মাওযু‘ (জাল) হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
হাদীস-৫৯: ইবনু জুরায়জ (রহ) বর্ণনা করেন:
عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ صَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ أَخْرَجَ مَالاً يَقْسِمُهُ يُبَادِرُ بِهِ اللَّيْلَ .
“তাবেঈ ইবনু মুলায়কাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত আদায় করতেন, অতঃপর মাল বণ্টন করতে করতে রাত নেমে আসত।” [. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩৪০।]
হাদীসটির সনদে ইবনু জুরায়জ (রহ) মুদাল্লিস এবং তিনি ‘আন দ্বারা বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। ফলে হাদীসটির সনদ তাদলীসের ত্রুটি কারণে যঈফ।
তা ছাড়া হাদীসটি মুরসাল। কেননা, তাবেঈ ইবনু মুলায়কাহ (রহ) নবী (স) থেকে সরাসরি হাদীসটি শোনেনি।
সুতরাং হাদীসটি যঈফ। তা ছাড়া হাদীসটি থেকে আসরের সালাতের শুরুর সময় সম্পর্কে অবিহত হওয়া যায় না।
হাদীস-৬০: ইবনু উমার (রা) বর্ণনা করেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: «الوَقْتُ الأَوَّلُ مِنَ الصَّلَاةِ رِضْوَانُ اللَّهِ، وَالوَقْتُ الآخِرُ عَفْوُ اللَّهِ»
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: সলাতের প্রথম ওয়াক্তে আছে আল্লাহ সন্তুষ্টি, আর শেষ ওয়াক্তে আছে আল্লাহর ক্ষমা।” [. তিরমিযী হা/১৭২।]
(১) ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি বর্ণনার পর বলেন:
حَدِيثُ أُمِّ فَرْوَةَ لَا يُرْوَى إِلَّا مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ العُمَرِيِّ، وَلَيْسَ هُوَ بِالقَوِيِّ عِنْدَ أَهْلِ الحَدِيثِ، وَاضْطَرَبُوا فِي هَذَا الحَدِيثِ، وَقَدْ تَكَلَّمَ فِيهِ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ .
“উম্মু ফারওয়াহ (রহ)-এর হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনু উমার আল-উমারী ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করেননি। অথচ হাদীস বিশারদদের কাছে তিনি শক্তিশালী নন, যদিও তিনি সত্যবাদী। তাদের মতে তিনি এ হাদীসের সনদে গোলমাল করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ তার স্মরণশক্তির সমালোচনা করেছেন।”
(২) শাইখ আলবানী (রহ) ইমাম তিরমিযী (রহ)-এর বিশ্লেষণ থেকে হাদীসটিকে ‘যঈফ’ সাব্যস্ত করার পর বলেন:
وقال البيهقي : " هذا حديث يعرف بيعقوب بن الوليد المدني وهو منكر الحديث ضعفه يحيى بن معين وكذبه أحمد … وقال ابن عدي : الحديث بهذا الإسناد باطل ".
“বায়হাক্বী (রহ) বলেন: হাদীসটি ইয়া‘কুব বিন ওয়ালীদ মাদানীর মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে, তিনি মুনকারুল হাদীস। তাকে যঈফ বলেছেন ইয়াহইয়া বিন মাঈন আর মিথ্যুক বলেছেন আহমাদ …। ইবনু আদী (রহ) বলেন: হাদীসটির এই সনদ বাতিল।” [. ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৮ পৃ: হা/২৫৯-এর বিশ্লেষণ।]
উক্ত মর্মে জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রহ)-এর [. দারা কুতনী (ইফা) হা/৯৬১, বায়হাক্বী কুবরা হা/২০৪৯।] হাদীসটির সনদের হুসাইন বিন হুমায়দকে ইবনুল মাতীন ‘মিথ্যুক’ এবং উবায়দ বিন ক্বাসেমকে ইবনু মাঈন মাতরুক (পরিত্যাজ্য) বলেছেন। [. ইরওয়াউল গালীল- ঐ।]
অপর একটি বর্ণনাতে অতিরিক্ত হয়েছে: وَوَسَطُ الْوَقْتِ رَحْمَةُ اللَّهِ “আর ওয়াক্তের মাঝামাঝিতে আছে আল্লাহর রহমত।” [. দারা কুতনী (ইফা) হা/৯৬০।]
ইবনুল জাওযী (রহ) বলেন: সনদে ইবরাহীম বিন যাকারিয়া আছে। আবূ হাতিম রাযী (রহ) বলেন: সে মাজহুল। বায়হাক্বী (রহ)-ও আপত্তি করেছেন। [. ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৮ পৃ: হা/২৫৯-এর বিশ্লেষণ।]
হাদীস-৬১: সাওরী (রহ) বর্ণনা করেন:
عَنِ الْأَعْمَشِ قَالَ : «كَانَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ يُعَجِّلُونَ الظُّهْرَ، وَيُؤَخِّرُونَ الْعَصْرَ، وَيُعَجِّلُونَ الْمَغْرِبَ، وَيُؤَخِّرُونَ الْعِشَاءَ»
“আ‘মাশ বলেন: সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রহ)-এর সাথীগণ যোহর শীঘ্র আদায় করতেন, আসর দেরিতে আদায় করতেন, মাগরিব শীঘ্র আদায় করতেন, আবার ঈশা দেরিতে আদায় করতেন।” [. মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক্ব হা/২০৪৩।]
সনদে (সুফিয়ান) সাওরী ও আ‘মাশ উভয়েই ব্যাপক তাদলীসকারী। ফলে সনদটি যঈফ।
তাবেঈদের বর্ণনা থেকে এটা প্রমাণিত হয় না যে, সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা)-এর সাথীগণ ছায়া দ্বিগুণ বা সূর্য হলদে রঙ বা তাপহীন হওয়ার পর আসরের সলাত আদায় করতেন। বরং সাহাবী ইবনু মাসউদ (রা) থেকে এটাই প্রমাণিত যে, তিনি নবী (স)-কে সূর্য হলুদ ও তেজহীন হওয়ার পূর্বে সলাত আদায় করতে দেখেছেন (হাদীস নং-২৪)। ইবনু মাসউদ (রা) সলাতকে যথাসময়ে আদায় না করা শাসকের পিছনে সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (হাদীস নং-৪০)।
এ পর্যায়ে তাবেঈদের থেকে উক্ত হাদীসে বর্ণিত আসরের সলাত সম্পর্কে হানাফী ব্যাখ্যা ও দাবি প্রত্যাখ্যাত।
অনুরূপ ইবনু মাসউদ (রা) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে: كَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ “তিনি আসরের সলাত দেরি করতেন।” [. মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক্ব হা/২০৮৯।]
এর সনদেও ইবনু ইসহাক্ব ও (সুফিয়ান) সওরী মুদাল্লিস। বাদ বাকী ব্যাখ্যা পূর্বের মতো।
হাদীস-৬২: যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ (রহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
كُنَّا جُلُوسًا مَعَ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي الْمَسْجِدِ الْأَعْظَمِ , وَالْكُوفَةُ يَوْمَئِذٍ أَخْصَاصٌ , فَجَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ فَقَالَ : الصَّلَاةُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لِلْعَصْرِ , فَقَالَ : «اجْلِسْ» , فَجَلَسَ ثُمَّ عَادَ فَقَالَ ذَلِكَ , فَقَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : «هَذَا الْكَلْبُ يُعَلِّمُنَا بِالسُّنَّةِ» , فَقَامَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَصَلَّى بِنَا الْعَصْرَ , ثُمَّ انْصَرَفْنَا فَرَجَعْنَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي كُنَّا فِيهِ جُلُوسًا فَجَثَوْنَا لِلرُّكَبِ لِنُزِولِ الشَّمْسِ لِلْمَغِيبِ نَتَرَآهَا .
“আমরা আলী (রা)-এর সাথে বড় মাসজিদে বসা ছিলাম। তখন কূফা ছিল বিশেষজ্ঞদের বাসস্থান। তার নিকট মুয়াযযিন এসে বললেন: ইয়া আমীরাল মু’মিনীন! আসরের সলাতের ওয়াক্ত হয়েছে। তিনি বললেন: তুমি বস! অতএব সে বসল। তারপর পুনরায় সলাতের কথা বলল। তখন আলী (রা) বললেন: এই কুকুর আমাদের সুন্নাত শিক্ষা দিচ্ছে। তারপর আলী (রা) দাঁড়ান এবং আমাদেরকে নিয়ে আসরের সলাত পড়ালেন। অতঃপর আমরা যেখানে বসা ছিলাম সেখানে ফিরে এলাম। আমরা হাঁটুতে ভর দিয়ে বসলাম সূর্য অস্ত যাওয়ার অপেক্ষায়।” [. দারা কুতনী হা/৯৮৮।]
ইমাম দারা কুতনী (রহ) হাদীসটি বর্ণনার পর লিখেছেন:
زِيَادُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ النَّخَعِيُّ مَجْهُولٌ لَمْ يَرْوِ عَنْهُ غَيْرُ الْعَبَّاسِ بْنِ ذَرِيحٍ
“(হাদীসটির সনদে) যিয়াদ বিন আব্দিল্লাহ নাখঈ মাজহুল। তার থেকে আব্বাস বিন যুরায়হ ছাড়া কেউ হাদীস বর্ণনা করেননি।”
সুনানু দারা কুতনী’র মুহাক্কিক্ব লিখেছেন: “হাকিম ও যাহাবী উভয়েই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- যা তাদের ভুল।” [. তাহক্বীক্ব দারা কুতনী (বৈরুত: দারুল মা‘রিফাহ, ১৪২২/২০১১) ১/৫৫৯-৬০ পৃ:, হা/৯৭৬-এর টীকা ।]
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন: وغلط الحاكم فزعم ان الشيخين اخرجا له
“হাকিম (রহ) ভুল করেছেন এবং ধারণা করেছেন ইমাম বুখারী (রহ) ও ইমাম মুসলিম (রহ) যিয়াদ বিন আব্দিল্লাহ নাখঈ থেকে বর্ণনা করেছেন।” [. লিসানুল মীযান: ১৯৮১ নং।]
আবূ আউন বর্ণনা করেন:
أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ عَلَى الْحِيطَانِ .
“নিশ্চয় আলী (রা) আসরের সলাতে দেরি করতেন, এমনকি সূর্যের আলো প্রাচীরের উপরে উঠে যেত।” [. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩২৭।]
ইবনু আবী শায়বাহ’র মুহাক্কিক্ব ড. সা’দ বিন নাসির লিখেছেন:
منقطع، أبوعون وهو محمد بن عبد الله الثقفي لم يسمع من علي .
“বর্ণনাটি মুনক্বাতে‘, আবূ আউন হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সাক্বাফী- তিনি আলী (রা) থেকে শোনেননি।” [. তাহক্বীক্ব মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ (রিয়াদ: দারু কানুয, ১৪৩৬/২০১৫) ৩/২১৭ পৃ:, হা/৩৩৪১-এর টীকা।]
অপর মুহাক্কিক্ব আবূ মুহাম্মাদ উসামাহ বলেছেন: আবূ আউন ও আবূ আসিম উভয়েই মাজহুল। [. তাহক্বীক্ব মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ (কায়রো: আল-ফারুক আল-হাদীসিয়্যাহ, ১৪২৯/২০০৮) ২/২০৭ পৃ:, হা/৩৩৩১-এর টীকা।]
হাদীস-৬৩: উমার বিন মুনাব্বিহ বর্ণনা করেছেন, সাওওয়ার বিন শাবীব থেকে তিনি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে:
أَنَّهُ كَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ حَتَّى أَقُولَ : قد اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ .
“তিনি আসরের সলাত দেরিতে আদায় করতেন, এমনকি বলা হতো: সূর্য হলুদ হয়ে গেছে।” [. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩২৮।]
মুহাক্কিক্ব আবূ মুহাম্মাদ উসামাহ বলেছেন:
في اسناده عمر بن منبه، وهو عمر بن يزيد بن منبه السعدي كما في (( الجرح )): (٤/ ٢٧٠ ) ، وهو مجهول الحال .
সনদটিতে উমার বিন মুনাব্বিহ আছেন। তিনি হলেন, উমার বিন ইয়াযীদ বিন মুনাব্বিহ আস-সা‘দী। (আল-জারাহ ওয়াত তা‘দিল ৪/২৭০) তিনি মাজহুল হাল। [. তাহক্বীক্ব মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ (কায়রো: আল-ফারুক আল-হাদীসিয়্যাহ, ১৪২৯/২০০৮) ২/২০৭ পৃ:, হা/৩৩৩২-এর টীকা।]
(১) ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) বলেছেন:
نقول : إذا زاد الظل على المثل فصار مثل الشيء وزيادة من حين زالت الشمس فقد دخل وقت العصر . وأما أبو حنيفة فإنه قال : لا يدخل وقت العصر حتى يصير الظل مثليه
“আমরা বলি: সূর্য ঢলে যাওয়ার পর যখন ছায়া সমপরিমাণ ও কিছুটা বেশি হয় তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। কিন্তু আবূ হানীফা বলেছেন: আসরের ওয়াক্ত শুরু হবে না ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।” [. মুয়াত্তা মুহাম্মাদ (ঢাকা: আহসান পাব:) হা/৮৭, পৃ: ৪৫।]
(২) হানাফী ফিক্বহ ‘কুদুরী’-তে বলা হয়েছে:
قال ابو يوسف ومحمد اذا صار ظل كل شئ مثله .
“ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) বলেছেন: যখন প্রত্যেক ছায়া সমপরিমাণ হয় (তখন যোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়)।” [. কুদুরী পৃ: ১৯।]
(৩) ক্বাযী সানাউল্লাহ পানীপথী (রহ) বলেন:
وقت ظهر بعد زوال ست تا سايه هر هر چیز کے برابر سایہ تک باقی رہتا ہے۔
“যোহরের ওয়াক্ত সূর্য ঢলার সময় থেকে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া বরাবর হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে।” [. মালাবুদ্দা মিনহু পৃ: ২৯।]
অন্যত্র তিনি (রহ) বলেন:
وقت العصر ما لم تصفى الشمس وامّا اخر وقت الظهر فلم يوجد فى حديث صحيح ولا ضعيف انه يبقى بعد مصير ظل كل شىء مثله ولذا خالف أبا حنيفة فى هذه المسألة صاحباه ووافقا الجمهور
“যোহরের সলাতের শেষ ওয়াক্ত দ্বিগুণ ছায়া পর্যন্ত কোনো হাদীসে উক্ত হয়নি। সহীহ বা যঈফ কোনো হাদীসেই নেই। এ কারণেই এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর মতও এর পরিপন্থী এবং জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহা্দ্দিসগণের) অনুরূপ।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
(৪) রশিদ আহমাদ দেওবন্দী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
ہاں وقت مثل، بندہ کے نزدیک زیادہ قوی ہے۔روایت حدیث سے ثبوت مثل کا ہوتا ہے۔دو مثل کا ثبوت حدیث سے نہیں، بناء علیہ ایک مثل پر عصر ہو جاتی ہے۔گو احتیاط دوسری روایت میں ہے .
“তবে হ্যাঁ- একগুণ ছায়া, এই বান্দার নিকট বেশি শক্তিশালী। হাদীসের বর্ণনা দ্বারা একগুণ ছায়া প্রমাণিত। দ্বিগুণ ছায়া পরিমাণ হাদীস থেকে প্রমাণিত নয়। ফলে ছায়া একগুণ হলে আসরের ওয়াক্ত হয়ে যায়। যদিও সাবধানতা রয়েছে অন্য বর্ণনাতে।” [. মাকাতিব রশিদিয়্যাহ পৃ: ২২।]
অন্যত্র লিখেছেন:
ایک مثل کا مذہب قوی ہے ،لہٰذا اگر ایک مثل پر عصر پڑھے تو ادا ہو جاتی ہے۔اعادہ نہ کرے '' ۔و اللہ تعالیٰ اعلم۔
“একগুণ ছায়ার মাযহাব শক্তিশালী। সুতরাং যদি একগুণ ছায়াতে আসর পড়া হয়, তবে সলাত আদায় হয়ে যাবে, পুনরায় আদায় করবে না।– আল্লাহই সর্বজ্ঞ।” [. ফাতাওয়া রশিদিয়্যাহ পৃ: ৯৮।]
(৫) মুহাম্মাদ বিন আলী নিমাবী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
'' انی لم اجد حدیثاً صحیحاً او ضعیفاً یدل علی ان وقت الظہر الی ان یصیر الظل مثلیہ و عن الامام ابی حنیفۃ قولان .
“আমি কোনো সহীহ বা যঈফ হাদীস পাইনি যা দ্বারা প্রমাণিত হয়- যোহরের ওয়াক্ত ছায়া দুইগুণ হওয়া পর্যন্ত। বরং ইমাম আবূ হানীফা (রহ) থেকে এক্ষেত্রে দুটি উক্তি আছে (ছায়া একগুণ হওয়া ও দ্বিগুণ হওয়া)।” [. আসারুস সুনান হা/১৯৯ ।]
(৬) আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভি হানাফী (রহ) লিখেছেন:
والانصاف في هذا المقام ان احاديث المثل صريحة صحيحة واخبار المثلين ليست صريحة في انه لا يدخل وقت العصر الى المثلين .
“এ ক্ষেত্রে ইনসাফের দাবি হল, এক ছায়া পরিমাণের হাদীস সুস্পষ্ট ও সহীহ। পক্ষান্তরে দ্বিগুণ ছায়ার সুষ্পষ্টতা নেই যে, ছায়া দ্বিগুণ না হওয়া পর্যন্ত আসর শুরু হয় না।” [. আত-তা‘লিকুল মুমাজ্জাদ পৃ: ৪৫ ।]
তিনি (রহ) আরও লিখেছেন:
وقال ابو حنيفة اول وقت العصر من حين يصير الظل مثلين وهذا خلاف الآثار وخلاف الجمهور وهو قول عند الفقهاء من اصحابه وغيرهم مهجور .
“ইমাম আবূ হানীফা (রহ) বলেছেন: আসরের প্রথম ওয়াক্ত তখন হয় যখন ছায়া দ্বিগুণ হয়। কিন্তু উক্তিটি হাদীসের খেলাফ। তা ছাড়া জুমহুরের (অধিকাংশ আলেমের)-ও খেলাফ। আর এই উক্তি তাঁর শিষ্য ও অন্য ফক্বীহদের নিকট মাহজুর (পরিত্যক্ত)।” [. আত-তা‘লিকুল মুমাজ্জাদ পৃ: ৪৩ ।]
نقول : إذا زاد الظل على المثل فصار مثل الشيء وزيادة من حين زالت الشمس فقد دخل وقت العصر . وأما أبو حنيفة فإنه قال : لا يدخل وقت العصر حتى يصير الظل مثليه
“আমরা বলি: সূর্য ঢলে যাওয়ার পর যখন ছায়া সমপরিমাণ ও কিছুটা বেশি হয় তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। কিন্তু আবূ হানীফা বলেছেন: আসরের ওয়াক্ত শুরু হবে না ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।” [. মুয়াত্তা মুহাম্মাদ (ঢাকা: আহসান পাব:) হা/৮৭, পৃ: ৪৫।]
(২) হানাফী ফিক্বহ ‘কুদুরী’-তে বলা হয়েছে:
قال ابو يوسف ومحمد اذا صار ظل كل شئ مثله .
“ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) বলেছেন: যখন প্রত্যেক ছায়া সমপরিমাণ হয় (তখন যোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়)।” [. কুদুরী পৃ: ১৯।]
(৩) ক্বাযী সানাউল্লাহ পানীপথী (রহ) বলেন:
وقت ظهر بعد زوال ست تا سايه هر هر چیز کے برابر سایہ تک باقی رہتا ہے۔
“যোহরের ওয়াক্ত সূর্য ঢলার সময় থেকে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া বরাবর হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে।” [. মালাবুদ্দা মিনহু পৃ: ২৯।]
অন্যত্র তিনি (রহ) বলেন:
وقت العصر ما لم تصفى الشمس وامّا اخر وقت الظهر فلم يوجد فى حديث صحيح ولا ضعيف انه يبقى بعد مصير ظل كل شىء مثله ولذا خالف أبا حنيفة فى هذه المسألة صاحباه ووافقا الجمهور
“যোহরের সলাতের শেষ ওয়াক্ত দ্বিগুণ ছায়া পর্যন্ত কোনো হাদীসে উক্ত হয়নি। সহীহ বা যঈফ কোনো হাদীসেই নেই। এ কারণেই এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর মতও এর পরিপন্থী এবং জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহা্দ্দিসগণের) অনুরূপ।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
(৪) রশিদ আহমাদ দেওবন্দী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
ہاں وقت مثل، بندہ کے نزدیک زیادہ قوی ہے۔روایت حدیث سے ثبوت مثل کا ہوتا ہے۔دو مثل کا ثبوت حدیث سے نہیں، بناء علیہ ایک مثل پر عصر ہو جاتی ہے۔گو احتیاط دوسری روایت میں ہے .
“তবে হ্যাঁ- একগুণ ছায়া, এই বান্দার নিকট বেশি শক্তিশালী। হাদীসের বর্ণনা দ্বারা একগুণ ছায়া প্রমাণিত। দ্বিগুণ ছায়া পরিমাণ হাদীস থেকে প্রমাণিত নয়। ফলে ছায়া একগুণ হলে আসরের ওয়াক্ত হয়ে যায়। যদিও সাবধানতা রয়েছে অন্য বর্ণনাতে।” [. মাকাতিব রশিদিয়্যাহ পৃ: ২২।]
অন্যত্র লিখেছেন:
ایک مثل کا مذہب قوی ہے ،لہٰذا اگر ایک مثل پر عصر پڑھے تو ادا ہو جاتی ہے۔اعادہ نہ کرے '' ۔و اللہ تعالیٰ اعلم۔
“একগুণ ছায়ার মাযহাব শক্তিশালী। সুতরাং যদি একগুণ ছায়াতে আসর পড়া হয়, তবে সলাত আদায় হয়ে যাবে, পুনরায় আদায় করবে না।– আল্লাহই সর্বজ্ঞ।” [. ফাতাওয়া রশিদিয়্যাহ পৃ: ৯৮।]
(৫) মুহাম্মাদ বিন আলী নিমাবী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
'' انی لم اجد حدیثاً صحیحاً او ضعیفاً یدل علی ان وقت الظہر الی ان یصیر الظل مثلیہ و عن الامام ابی حنیفۃ قولان .
“আমি কোনো সহীহ বা যঈফ হাদীস পাইনি যা দ্বারা প্রমাণিত হয়- যোহরের ওয়াক্ত ছায়া দুইগুণ হওয়া পর্যন্ত। বরং ইমাম আবূ হানীফা (রহ) থেকে এক্ষেত্রে দুটি উক্তি আছে (ছায়া একগুণ হওয়া ও দ্বিগুণ হওয়া)।” [. আসারুস সুনান হা/১৯৯ ।]
(৬) আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভি হানাফী (রহ) লিখেছেন:
والانصاف في هذا المقام ان احاديث المثل صريحة صحيحة واخبار المثلين ليست صريحة في انه لا يدخل وقت العصر الى المثلين .
“এ ক্ষেত্রে ইনসাফের দাবি হল, এক ছায়া পরিমাণের হাদীস সুস্পষ্ট ও সহীহ। পক্ষান্তরে দ্বিগুণ ছায়ার সুষ্পষ্টতা নেই যে, ছায়া দ্বিগুণ না হওয়া পর্যন্ত আসর শুরু হয় না।” [. আত-তা‘লিকুল মুমাজ্জাদ পৃ: ৪৫ ।]
তিনি (রহ) আরও লিখেছেন:
وقال ابو حنيفة اول وقت العصر من حين يصير الظل مثلين وهذا خلاف الآثار وخلاف الجمهور وهو قول عند الفقهاء من اصحابه وغيرهم مهجور .
“ইমাম আবূ হানীফা (রহ) বলেছেন: আসরের প্রথম ওয়াক্ত তখন হয় যখন ছায়া দ্বিগুণ হয়। কিন্তু উক্তিটি হাদীসের খেলাফ। তা ছাড়া জুমহুরের (অধিকাংশ আলেমের)-ও খেলাফ। আর এই উক্তি তাঁর শিষ্য ও অন্য ফক্বীহদের নিকট মাহজুর (পরিত্যক্ত)।” [. আত-তা‘লিকুল মুমাজ্জাদ পৃ: ৪৩ ।]
-https://islamqa.info/ar/220820
السؤال : ما الفرق بين أوقات الصلوات على المذهب الحنفي وأوقاتها العادية ، ولماذا تفصل كل المساجد التي تتبع مذهب أبي حنفية بين أذان العصر وصلاته بساعة كاملة ؟
প্রশ্ন: হানাফী ও অন্যান্যদের মধ্যে সলাতের ওয়াক্তগুলোতে কি পার্থক্য রয়েছে? আবূ হানীফার মাযহাবের অনুসারী মাসজিদগুলোতে আসরের আযান ও সলাতের ক্ষেত্রে এক ঘণ্টা পার্থক্য কেন?
الجواب : الحمد لله، الفرق بين مذهب الإمام أبي حنيفة ومذهب الجمهور في مواقيت الصلاة يتلخص في مسألتين :
জবাব: আল-হামদুলিল্লাহ, ইমাম আবূ হানীফার মাযহাব ও জুমহুরের মাযহাবে সলাতের ওয়াক্ত নিয়ে সংক্ষেপে দুটি মাসআলাতে পার্থক্য রয়েছে।
الفرق الأول : وقت بداية العصر فقد وقع فيه الخلاف على قولين :
প্রথম পার্থক্য: আসরের সলাতের শুরুর ওয়াক্ত। এক্ষেত্রে দুটি মতামত রয়েছে:
القول الأول :
أنه يبدأ إذا انتهى وقت الظهر ، وذلك عند مصير ظل كل شيء مثله ، سوى فيء الزوال ، وقد سبق شرح معنى مصير ظل كل شيء مثله في جواب السؤال رقم : ٩٩٤٠وهو قول جمهور أهل العلم من المالكية والشافعية والحنابلة ، وأبي يوسف ومحمد بن الحسن من الحنفية ، بل قال السرخسي في " المبسوط " (۱/۱٤۱) : " وهو رواية " محمد " عن أبي حنيفة رحمهما الله تعالى ، وإن لم يذكره في الكتاب نصا " انتهى ، كما هو اختيار الطحاوي من الحنفية . وأدلته عديدة صحيحة ، نذكر منها أصرحها :
الدليل الأول :
حديث إمامة جبريل بالنبي ﷺ ، وفيه : أَنَّه صَلَّى بِالنَّبِيِّ ﷺ العَصرَ حينَ صَارَ ظِلُّ كُلِّ شَيءٍ مِثلَه . رواه أبو داود ( ٣٩٣ ) والترمذي (۱ ٤٩، ۱ ٥٠ ) وقال حديث حسن صحيح ، وصححه الألباني في " صحيح أبي داود " .
প্রথম মত: যখন যোহরের ওয়াক্ত শেষ হয় এবং মধ্যাহ্নের ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান হয়, তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আমি পূর্ববর্তী প্রশ্ন নং- ৯৯৪০-তে এক ছায়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই মতামতটি জুমহুর (অধিকাংশ) আলেমদের মধ্যে মালেকী, শাফেঈ ও হাম্বলীদের। আর হানাফীদের মধ্যে আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর। বরং (হানাফী ফক্বীহ) সারাখসী (রহ) ‘মাবসূতে’(১/১৪১) বলেছেন: “মুহাম্মাদ (রহ) আবূ হানীফা (রহ) থেকে অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। যদিও কিতাবের সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।” অনুরূপভাবে হানাফীদের মধ্যে তাহাবীও মতামত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বেশকিছু সহীহ বর্ণনা রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি সুস্পষ্ট দলিল উল্লেখ করছি:
প্রথম দলিল: জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস। সেখানে এটা রয়েছে যে, জিবরীল (আ) নবী (স)-এর আসরের সলাতের ইমামতি করলেন, যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান হয়েছিল। [আবূ দাউদ হা/৩৯৩, তিরমিযী হা/১৪৯-১৫০-ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ আবূ দাউদে’ সহীহ গণ্য করেছেন।]
الدليل الثاني : عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن رسول الله ﷺ " كَانَ يُصَلِّي العَصرَ وَالشَّمسُ مُرتَفِعَةٌ حَيَّةٌ ، فَيَذهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى العَوَالِي ، فَيَأتِي العَوَالِي وَالشَّمسُ مُرتَفِعَةٌ " رواه البخاري ( ٥٥٠ ) ، ومسلم ( ٦٢ ۱) وفي رواية أخرى عندهما : " أنه يأتي مسجد قباء والشمس مرتفعة " إشارة إلى بقاء حرها وضوئها ، وأقرب العوالي مسافة ميلين ، وأبعدها مسافة ستة أميال " انظر " فتح الباري " (٢/ ٣٩ (
দ্বিতীয় দলিল: আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত পড়তেন যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল থাকত, (ফলে সলাতের পর) কোনো ব্যক্তি আওয়ালী পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসতে, এমনকি তখনও সূর্য উপরে থাকত। [সহীহ বুখারী হা/৫৫০, সহীহ মুসলিম হা/৬২১] উভয় কিতাবের অপর বর্ণনাতে আছে: “তারা মাসজিদে কুবাতে পৌঁছতেন, তখনও সূর্য উঁচুতে থাকত।” যার দাবি হল, সূর্যের তেজ ও উজ্জ্বলতা বাকী থাকত। মদীনার নিকটতর আওয়ালীগুলোর দূরত্ব দুই মাইল ছিল, আর দূরবর্তী আওয়ালীগুলোর দূরত্ব ছয় মাইল পর্যন্ত ছিল।” [বিস্তারিত ফতহুল বারী ২/৩৯]
قال النووي رحمه الله : " لا يمكن أن يذهب بعد صلاة العصر ميلين وثلاثة ، والشمس بعد لم تتغير بصفرة ونحوها ، إلا إذا صلى العصر حين صار ظل الشيء مثله ، ولا يكاد يحصل هذا الا في الأيام الطويلة " انتهى من " شرح مسلم " (٥/۱ ٢٢ (
ইমাম নওয়াবী (রহ) বলেছেন: আসরের সলাত পড়ার পর দুই-তিন মাইল চলার পর সূর্যের উজ্জ্বলতা হলুদ রঙে পরিবর্তিত না হওয়াটা তখনই সম্ভব, যখন কোনো বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার পর আসরের সলাত আদায় করা হয়। তা ছাড়া এটা তখনই সম্ভব যখন দিনগুলো দীর্ঘ (গরমকাল) থাকে। [শারহু মুসলিম নাওয়াবী ৫/১২২]
أما القول الثاني : فيذهب إلى أن وقت العصر يبدأ عند مصير ظل كل شيء مثليه ، سوى فيء الزوال ، وهو قول الإمام أبي حنيفة رحمه الله تعالى ، وعليه معظم المتأخرين من الحنفية ،ولذلك يتأخر أذان العصر في البلاد التي تعتمد مذهب الإمام أبي حنيفة .
واستدلوا بثلاثة أدلة :
দ্বিতীয় মত: এই মতানুসারে আসরে ওয়াক্ত তখন শুরু হয়, যখন প্রত্যেক বস্তুর দ্বিগুণ হয়, মধ্যাহ্নের ছায়া ব্যতীত। এটা ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর মত। পরবর্তী হানাফীদের অধিকাংশ এই মতের উপর রয়েছে। এ কারণে যে সব দেশে হানাফীদের প্রাধান্য বেশি সেখানে আসরের আযান দেরিতে দেয়া হয়। তারা তিনটি দলিল উপস্থাপন করেন:
الدليل الأول : عن ابن عمر رضي الله عنه أن النبي ﷺ قال : إِنَّمَا بَقَاءُكُم فِيمَا سَلَفَ قَبلَكُم مِنَ الأُمَمِ كَمَا بَينَ صَلاةِ العَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمسِ ، أُوتِيَ أَهلُ التَّورَاةِ التَّورَاةَ فَعَمِلُوا ، حَتّى إِذَا انتَصَفَ النَّهَارُ عَجَزُوا ، فَأُعطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ، ثُمَّ أُوتِيَ أَهلُ الإِنجِيلِ الإِنجِيلَ فَعَمِلُوا إِلَى صَلاةِ العَصرِ ثُمَّ عَجَزُوا ، فَأُعطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ، ثُمَّ أُوتِينَا القُرآنَ فَعَمِلنَا إِلَى غُرُوبِ الشَّمسِ ، فَأُعطِينَا قِيرَاطَينِ قِيرَاطَينِ ، فَقَالَ أَهلُ الكِتَابَينِ : أَيْ رَبَّنَا ! أَعطَيتَ هَؤُلاءِ قِيرَاطَينِ قِيرَاطَينِ ، وَأَعطَيتَنَا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ، وَنَحنُ كُنَّا أَكثَرَ عَمَلًا ؟ ! قَالَ : قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ : هَل ظَلَمتُكُم مِن أَجرِكُم مِن شَيْءٍ ؟ قَالُوا : لا ، قَالَ : فَهُوَ فَضلِي أُوتِيهِ مَن أَشَاءُ ) رواه البخاري : ٥٥٧ (.
يقول الإمام الكاساني رحمه الله وهو من كبار فقهاء الحنفية –:
" دل الحديث على أن مدة العصر أقصر من مدة الظهر ، وإنما يكون أقصر أن لو كان الأمر على ما قاله أبو حنيفة " انتهى من " بدائع الصنائع " (۱/٣۱٥) .
প্রথম দলিল: ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: তোমাদের আগের উম্মাতদের তুলনায় তোমাদের অবস্থানের সময়কাল আসরের সলাত থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়। তাওরাতের অনুসারীদেরকে তাওরাত দেয়া হলে তারা সে মোতাবেক আমল করল, তবে দিনের অর্ধেক হলে তারা অপারগ হয়ে গেল। এ জন্য তাদেরকে এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হল। অতঃপর ইনজীলের অনুসারীদেরকে ইনজীল দেয়া হল, তারা সে মোতাবেক আমল করল আসরের সলাত পর্যন্ত, তারপর তারা অক্ষম হয়ে পড়লে তাদেরকে দেয়া হল এক কীরাত এক কীরাত করে। অতঃপর তোমাদেরকে কুরআন দেয়া হল। ফলে এ কুরআন মোতাবেক তোমরা আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমল করেছ। এ জন্য তোমাদেরকে দু’কীরাত দু’কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে। (পূর্বের) উভয় কিতাবের অনুসারীরা বলল, হে আমাদের রব! তাদের দুই কীরাত দিলেন, আর আমাদেরকে এক এক কীরাত? অথচ আমরা তাদের থেকে বেশি পরিশ্রম করেছি। নবী (স) বলেন: আল্লাহ্ তাআলা তখন বললেন: তোমাদের পারিশ্রমিকে তোমাদের উপর কোনো যুলুম করা হয়েছে কি? তারা বলল, না। তখন আল্লাহ্ বললেন, এটি হচ্ছে আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে চাই তাকে দিই।”[সহীহ বুখারী হা/৫৫৭]
হানাফীদের বড় ফক্বীহদের একজন ইমাম কাসানী (রহ) লিখেছেন: “এই হাদীসটি থেকে দলিল নেয়া হয়, আসরের সময়কাল যোহরের সময়কাল থেকে কম। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর উক্তি মোতাবেক আসরের ওয়াক্ত গ্রহণ করা হয়।” [বাদাঈস সানায়ি‘ ১/৩১৫]
ولكن أجاب الحافظ ابن حجر عن هذا الاستدلال بقوله :" المعروف عند أهل العلم بالفن أن المدة التي بين الظهر والعصر أطول من المدة التي بين العصر والمغرب إذا فرعنا على أن أول وقت العصر كما قال الجمهور ، ( ويجاب ) بأنه ليس في الخبر نص على أن كلا من الطائفتين أكثر عملا ، لصدق أن كلهم مجتمعين أكثر عملا من المسلمين " انتهى من " فتح الباري " (٢/ ٥٣ )
وذكر أجوبة أخرى على استدلالهم بالحديث .
কিন্তু হাফেয ইবনু হাজার (রহ) উক্ত হাদীসটিকে দলিলগণ্য করার জবাবে লিখেছেন: “এটা বিশেষজ্ঞ আলেমদের নিকট প্রসিদ্ধ যে, জুমহুরের সিদ্ধান্ত (তথা এক ছায়া)-কে আসরের ওয়াক্ত গণ্য করলেও যোহর থেকে আসর পর্যন্ত সময় আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ের থেকে বেশি হবে। (আর হানাফীদের জবাবে বলা হবে) হাদীসে এটা সুস্পষ্ট নেই যে, উভয় পক্ষের কে বেশি আমল করেছে? বরং এটা বলা সঠিক হবে যে, তারা সবাই (ইয়াহুদী ও নাসরা) মিলে মুসলিমদের থেকে বেশি আমল করেছেন।”[ফতহুল বারী ২/৫৩ পৃ:] হাফেয ইবনু হাজার (রহ) হাদীসটি দ্বারা দলিল গ্রহণে হানাফীদের জবাবে আরও আলোচনা করেছেন।
ويقول ابن حزم رحمه الله :" وقت الظهر أطول من وقت العصر أبدا في كل زمان ومكان " انتهى من " المحلى " (٢/ ٢٢٢ ) ، ثم شرح ذلك فلكيا ، لمن أحب أن يرجع إليه .
ويقول ابن القيم رحمه الله :" ويالله العجب ! أي دلالة في هذا على أنه لا يدخل وقت العصر حتى يصير الظل مثلين ، بنوع من أنواع الدلالة ، وإنما يدل على أن صلاة العصر إلى غروب الشمس أقصر من نصف النهار إلى وقت العصر ، وهذا لا ريب فيه " انتهى من " إعلام الموقعين " (٢/ ٤٠٤ ).
فلم يبق وجه للاستدلال بالحديث .
আর ইবনু হাযম (রহ) বলেছেন: “যোহরের ওয়াক্ত আসরের ওয়াক্ত থেকে সব যামানা ও স্থানে দীর্ঘ।”[মুহাল্লা ২/২২২] অতঃপর তিনি আকাশবিদ্যার আলোকে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছে। যারা উৎসুক তারা দেখে নিতে পারেন।
আর হাফেয ইবনুল ক্বাইয়েম (রহ) লিখেছেন: “ইয়া আল্লাহ! খুব আশ্চর্যের বিষয়! হাদীসটিতে এই দলিল কোথায় আছে যে, ততক্ষণ পর্যন্ত আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় না, যতক্ষণ ছায়া দ্বিগুণ না হয়? দলিলটি থেকে কিভাবে এটা প্রমাণিত হয়? এখানে সর্বোচ্চ এ দলিল রয়েছে যে, আসরের সলাতের শুরুর ওয়াক্ত থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টুকু যোহর ও আসরের মধ্যকার সময়টুকুর চেয়ে কম। এক্ষেত্রে কোনো সংশয় নেই।” [ই‘লামুল মুয়াক্কিঈন২/৪০৪]
সুতরাং হাদীসটি দ্বারা আসরের ওয়াক্তের (দ্বিগুণ ছায়ার) দলিল নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
الدليل الثاني : عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي ﷺ قال : إِذَا اشتَدَّ الحَرُّ فَأَبرِدُوا بِالصَّلَاةِ ، فَإِنَّ شِدَّةَ الحَرِّ مِن فَيحِ جَهَنَّمَ رواه البخاري ( ٥٣٦ ) ، ومسلم (٦۱٥).
يقول الإمام الكاساني رحمه الله : " الإبراد يحصل بصيرورة ظل كل شيء مثليه ؛ فإن الحر لا يفتر ، خصوصا في بلادهم " انتهى من " بدائع الصنائع " (۱/٣۱٥).
দ্বিতীয় দলিল: আবূ হুরায়রা (রহ) থেকে বর্ণিত, নবী (স) বলেন: “যখন গরম বেশি হয়, তখন ঠাণ্ডার সময় সলাত আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা আসে জাহান্নামের উত্তাপ হতে। [সহীহ বুখারী হা/৫৩৪, সহীহ মুসলিম হা/৬১৫]
ইমাম কাসানী (রহ) বলেছেন: ঠাণ্ডা তখন হয়, যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হয়। কেননা, গরম (এক ছায়াতে) কমে না। বিশেষকরে তাদের দেশগুলোতে।” [বাদাঈস সানায়ি‘ ১/৩১৫]
وأجيب عنه بأن الإبراد يحصل بقرب مصير ظل كل شيء مثله ، وهذا الذي كان في زمن النبي ﷺ ، فإن تكملة حديث أنس السابق قال فيه : ( حَتَّى سَاوَى الظِّلُّ التُّلُولَ ) البخاري ( ٦٢٩ ).
قال الحافظ ابن حجر رحمه الله :" ظاهره أنه أخرها إلى أن صار ظل كل شيء مثله " انتهى من " فتح الباري " (٢/ ٢٩ ) ، وانظر " الشرح الممتع " (٢/ ٩٨ ) .
উক্ত মন্তব্যের জবাবে বলা হয়, উদ্দিষ্ট ঠাণ্ডা প্রত্যেক বস্তুর ছায়া সমান হওয়ার নিকটবর্তী সময় থেকে শুরু হয়। কেননা, এর উপর নবী (স) -এর যামানাতেই আমল করা হয়েছে। যেহেতু পূর্ববর্তী আনাস (রা)-এর হাদীসে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে: “এমনকি ছায়াগুলো টিলার বরাবর হয়ে যেত।” [সহীহ বুখারী হা/৬২৯]
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) বলেছেন: “হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ থেকে বুঝা যায়, নবী (স) যোহরের ওয়াক্ত সর্বোচ্চ এক ছায়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন।”[ফতহুল বারী ২/২৯২, অনুরূপ: শারহুল মুমতা‘২/৯৮]
الدليل الثالث : يقول الإمام السرخسي :" ولأنا عرفنا دخول وقت الظهر بيقين ، ووقع الشك في خروجه إذا صار الظل قامة ، لاختلاف الآثار ، واليقين لا يزال بالشك " انتهى من " المبسوط " (۱/۱٤۱).
وهذا الدليل يمكن الجواب عنه بأن اليقين في خروج وقت الظهر متحصل بالأدلة الصحيحة الصريحة السابقة ، وهو الذي أخذ به أهل العلم .
يقول الحافظ ابن حجر رحمه الله تعالى :
" ولم ينقل عن أحد من أهل العلم مخالفة في ذلك إلا عن أبي حنيفة ، قال القرطبي : خالفه الناس كلهم في ذلك ، حتى أصحابه ، يعني الآخذين عنه ؛ وإلا فقد انتصر له جماعة ممن جاء بعدهم " انتهى من " فتح الباري " (٢/ ٣٦ ).
তৃতীয় দলিল: ইমাম সারাখসী (হানাফী) বলেছেন: আমরা যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া সম্পর্কে অবগত। কিন্তু হাদীসের ইখতিলাফের কারণে যোহরের শেষ ওয়াক্তের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং নিশ্চিত বিষয়কে সংশয়যুক্ত বিষয় দ্বারা চূড়ান্ত করা যায় না। [আল-মাবসূত ১/১৪১]
উক্ত দলিলের জবাব এভাবে দেয়া যায় যে, যোহরের শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে আমাদের পূর্ববর্তী সহীহ ও সুস্পষ্ট (হাদীসভিত্তিক) দলিল থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। আর আলেমগণ সেটা গ্রহণ করেছেন।
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন: “আলেমদের মধ্যে আবূ হানীফা ছাড়া কারো থেকে এ সম্পর্কে বিরোধিতা নেই। ইমাম কুরতুবী (রহ) বলেছেন: “সমস্ত মানুষ (আলেমগণ) এক্ষেত্রে বিরোধিতা করেছেন, এমনকি ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর শিষ্যরাও। তাদের পরে আগত লোকেরা তাঁর পক্ষ সমর্থন করেছেন।” [ফতহুল বারী ২/৩৬]
وبهذا يتبين الخلاف في المسألة ، وأن مذهب الحنفية يؤخر صلاة العصر عن مذهب الجمهور ، ووضحنا دليل كل قول وما أجاب به العلماء . يقول الشيخ ابن عثيمين رحمه الله :
" يسن في صلاة العصر تعجيلها في أول الوقت ، وذلك لما يلي :
۱. لعموم الأدلة الدالة على المبادرة إلى فعل الخير ، كما في قوله تعالى ( فَاستَبِقُوا الخَيرَاتِ ) البقرة /۱ ٤٨ .
٢. ما ثبت أن الصلاة في أول وقتها أفضل .
٣. ما ثبت عن النبي ﷺ من حديث أبي برزة الأسلمي : أنه كان يصلي العصر والشمس مرتفعة . البخاري ( ٥٤٧ ) ، ومسلم ( ٦٤٧ ) " انتهى من " الشرح الممتع " (٢/۱ ٠٤ ).
ولمزيد من المصادر والمراجع ينظر : " المحلى " (٢/۱ ٩٧ ) ، " نهاية المحتاج (۱/ ٣٦٤ ) ، " فتح القدير " (۱/ ٢٢٧ ) ، و " حاشية الدسوقي " (۱/۱ ٧٧ ) ، " الموسوعة الفقهية " (٧/۱ ٧٣ ). وانظر جواب السؤال ( رقم : ۱ ٧٩٧٦٩ )…
উপরের বিশ্লেষণে মাসআলাটির মতপার্থক্য সুস্পষ্ট হয়েছে যে, হানাফী মাযহাবে জুমহুরের মাযহাবের চেয়ে দেরিতে আসরের সলাত আদায় করা হয়। এ সম্পর্কে আমরা দলিলের দাবি সুস্পষ্ট করেছি এবং আলেমদের জবাবমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। শাইখ উসায়মীন (রহ) বলেছেন: সুন্নাহ হল আসরের সলাত আওয়াল ওয়াক্তে শীঘ্রই আদায় করা। যার নিম্নোক্ত দিকগুলো রয়েছে:
১- দলিলের ‘আম দাবির ভিত্তিতে নেককাজ শীঘ্রই সম্পাদন করা। যেভাবে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “নেককাজে দ্রুত অগ্রসর হও।” [সূরা বাক্বারাহ: ১৪৮ আয়াত]
২- এটা প্রমাণিত যে, আওয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় সর্বোত্তম।
৩- নবী (স) থেকে প্রমাণিত যা সাহাবী আবূ বারযাহ আসলামী (রা) বর্ণনা করেছেন যে: “তিনি (স) আসরের সলাত পড়তেন সূর্য উঁচুতে থাকাবস্থায়। [সহীহ বুখারী হা/৫৪৭, সহীহ মুসলিম হা/৬৪৭ সূত্রে: আশ-শারহুল মুমাত্তা‘ ২/১০৪]
এই মাসআলা সম্পর্কে আরও জানার জন্য দেখুন: মুহাল্লা ২/১৯৭, নিহায়াতুল মুহতাজ ১/৩৬৪, ফতহুল ক্বাদীর ১/২২৭, হাশিয়াহ দাসুক্বী ১/১৭৭, আল-মাওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ ৭/১৭৩। আরও দ্র: প্রশ্নোত্তর নং-১৭৯৭৬৯।…
[সূত্র: https://islamqa.info/ar/220820]
অতঃপর মাগরিব ও ঈশার সলাত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা কেবল সলাতুল আসরের ওয়াক্ত সম্পর্কিত আলোচনাটুকু অনুবাদ করলাম। যারা আরও জানতে আগ্রহী তারা সংশ্লিষ্ট ওয়েব সাইট থেকে দেখে নিন।
السؤال : ما الفرق بين أوقات الصلوات على المذهب الحنفي وأوقاتها العادية ، ولماذا تفصل كل المساجد التي تتبع مذهب أبي حنفية بين أذان العصر وصلاته بساعة كاملة ؟
প্রশ্ন: হানাফী ও অন্যান্যদের মধ্যে সলাতের ওয়াক্তগুলোতে কি পার্থক্য রয়েছে? আবূ হানীফার মাযহাবের অনুসারী মাসজিদগুলোতে আসরের আযান ও সলাতের ক্ষেত্রে এক ঘণ্টা পার্থক্য কেন?
الجواب : الحمد لله، الفرق بين مذهب الإمام أبي حنيفة ومذهب الجمهور في مواقيت الصلاة يتلخص في مسألتين :
জবাব: আল-হামদুলিল্লাহ, ইমাম আবূ হানীফার মাযহাব ও জুমহুরের মাযহাবে সলাতের ওয়াক্ত নিয়ে সংক্ষেপে দুটি মাসআলাতে পার্থক্য রয়েছে।
الفرق الأول : وقت بداية العصر فقد وقع فيه الخلاف على قولين :
প্রথম পার্থক্য: আসরের সলাতের শুরুর ওয়াক্ত। এক্ষেত্রে দুটি মতামত রয়েছে:
القول الأول :
أنه يبدأ إذا انتهى وقت الظهر ، وذلك عند مصير ظل كل شيء مثله ، سوى فيء الزوال ، وقد سبق شرح معنى مصير ظل كل شيء مثله في جواب السؤال رقم : ٩٩٤٠وهو قول جمهور أهل العلم من المالكية والشافعية والحنابلة ، وأبي يوسف ومحمد بن الحسن من الحنفية ، بل قال السرخسي في " المبسوط " (۱/۱٤۱) : " وهو رواية " محمد " عن أبي حنيفة رحمهما الله تعالى ، وإن لم يذكره في الكتاب نصا " انتهى ، كما هو اختيار الطحاوي من الحنفية . وأدلته عديدة صحيحة ، نذكر منها أصرحها :
الدليل الأول :
حديث إمامة جبريل بالنبي ﷺ ، وفيه : أَنَّه صَلَّى بِالنَّبِيِّ ﷺ العَصرَ حينَ صَارَ ظِلُّ كُلِّ شَيءٍ مِثلَه . رواه أبو داود ( ٣٩٣ ) والترمذي (۱ ٤٩، ۱ ٥٠ ) وقال حديث حسن صحيح ، وصححه الألباني في " صحيح أبي داود " .
প্রথম মত: যখন যোহরের ওয়াক্ত শেষ হয় এবং মধ্যাহ্নের ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান হয়, তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আমি পূর্ববর্তী প্রশ্ন নং- ৯৯৪০-তে এক ছায়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই মতামতটি জুমহুর (অধিকাংশ) আলেমদের মধ্যে মালেকী, শাফেঈ ও হাম্বলীদের। আর হানাফীদের মধ্যে আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর। বরং (হানাফী ফক্বীহ) সারাখসী (রহ) ‘মাবসূতে’(১/১৪১) বলেছেন: “মুহাম্মাদ (রহ) আবূ হানীফা (রহ) থেকে অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। যদিও কিতাবের সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।” অনুরূপভাবে হানাফীদের মধ্যে তাহাবীও মতামত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বেশকিছু সহীহ বর্ণনা রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি সুস্পষ্ট দলিল উল্লেখ করছি:
প্রথম দলিল: জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস। সেখানে এটা রয়েছে যে, জিবরীল (আ) নবী (স)-এর আসরের সলাতের ইমামতি করলেন, যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান হয়েছিল। [আবূ দাউদ হা/৩৯৩, তিরমিযী হা/১৪৯-১৫০-ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ আবূ দাউদে’ সহীহ গণ্য করেছেন।]
الدليل الثاني : عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن رسول الله ﷺ " كَانَ يُصَلِّي العَصرَ وَالشَّمسُ مُرتَفِعَةٌ حَيَّةٌ ، فَيَذهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى العَوَالِي ، فَيَأتِي العَوَالِي وَالشَّمسُ مُرتَفِعَةٌ " رواه البخاري ( ٥٥٠ ) ، ومسلم ( ٦٢ ۱) وفي رواية أخرى عندهما : " أنه يأتي مسجد قباء والشمس مرتفعة " إشارة إلى بقاء حرها وضوئها ، وأقرب العوالي مسافة ميلين ، وأبعدها مسافة ستة أميال " انظر " فتح الباري " (٢/ ٣٩ (
দ্বিতীয় দলিল: আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত পড়তেন যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল থাকত, (ফলে সলাতের পর) কোনো ব্যক্তি আওয়ালী পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসতে, এমনকি তখনও সূর্য উপরে থাকত। [সহীহ বুখারী হা/৫৫০, সহীহ মুসলিম হা/৬২১] উভয় কিতাবের অপর বর্ণনাতে আছে: “তারা মাসজিদে কুবাতে পৌঁছতেন, তখনও সূর্য উঁচুতে থাকত।” যার দাবি হল, সূর্যের তেজ ও উজ্জ্বলতা বাকী থাকত। মদীনার নিকটতর আওয়ালীগুলোর দূরত্ব দুই মাইল ছিল, আর দূরবর্তী আওয়ালীগুলোর দূরত্ব ছয় মাইল পর্যন্ত ছিল।” [বিস্তারিত ফতহুল বারী ২/৩৯]
قال النووي رحمه الله : " لا يمكن أن يذهب بعد صلاة العصر ميلين وثلاثة ، والشمس بعد لم تتغير بصفرة ونحوها ، إلا إذا صلى العصر حين صار ظل الشيء مثله ، ولا يكاد يحصل هذا الا في الأيام الطويلة " انتهى من " شرح مسلم " (٥/۱ ٢٢ (
ইমাম নওয়াবী (রহ) বলেছেন: আসরের সলাত পড়ার পর দুই-তিন মাইল চলার পর সূর্যের উজ্জ্বলতা হলুদ রঙে পরিবর্তিত না হওয়াটা তখনই সম্ভব, যখন কোনো বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার পর আসরের সলাত আদায় করা হয়। তা ছাড়া এটা তখনই সম্ভব যখন দিনগুলো দীর্ঘ (গরমকাল) থাকে। [শারহু মুসলিম নাওয়াবী ৫/১২২]
أما القول الثاني : فيذهب إلى أن وقت العصر يبدأ عند مصير ظل كل شيء مثليه ، سوى فيء الزوال ، وهو قول الإمام أبي حنيفة رحمه الله تعالى ، وعليه معظم المتأخرين من الحنفية ،ولذلك يتأخر أذان العصر في البلاد التي تعتمد مذهب الإمام أبي حنيفة .
واستدلوا بثلاثة أدلة :
দ্বিতীয় মত: এই মতানুসারে আসরে ওয়াক্ত তখন শুরু হয়, যখন প্রত্যেক বস্তুর দ্বিগুণ হয়, মধ্যাহ্নের ছায়া ব্যতীত। এটা ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর মত। পরবর্তী হানাফীদের অধিকাংশ এই মতের উপর রয়েছে। এ কারণে যে সব দেশে হানাফীদের প্রাধান্য বেশি সেখানে আসরের আযান দেরিতে দেয়া হয়। তারা তিনটি দলিল উপস্থাপন করেন:
الدليل الأول : عن ابن عمر رضي الله عنه أن النبي ﷺ قال : إِنَّمَا بَقَاءُكُم فِيمَا سَلَفَ قَبلَكُم مِنَ الأُمَمِ كَمَا بَينَ صَلاةِ العَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمسِ ، أُوتِيَ أَهلُ التَّورَاةِ التَّورَاةَ فَعَمِلُوا ، حَتّى إِذَا انتَصَفَ النَّهَارُ عَجَزُوا ، فَأُعطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ، ثُمَّ أُوتِيَ أَهلُ الإِنجِيلِ الإِنجِيلَ فَعَمِلُوا إِلَى صَلاةِ العَصرِ ثُمَّ عَجَزُوا ، فَأُعطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ، ثُمَّ أُوتِينَا القُرآنَ فَعَمِلنَا إِلَى غُرُوبِ الشَّمسِ ، فَأُعطِينَا قِيرَاطَينِ قِيرَاطَينِ ، فَقَالَ أَهلُ الكِتَابَينِ : أَيْ رَبَّنَا ! أَعطَيتَ هَؤُلاءِ قِيرَاطَينِ قِيرَاطَينِ ، وَأَعطَيتَنَا قِيرَاطًا قِيرَاطًا ، وَنَحنُ كُنَّا أَكثَرَ عَمَلًا ؟ ! قَالَ : قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ : هَل ظَلَمتُكُم مِن أَجرِكُم مِن شَيْءٍ ؟ قَالُوا : لا ، قَالَ : فَهُوَ فَضلِي أُوتِيهِ مَن أَشَاءُ ) رواه البخاري : ٥٥٧ (.
يقول الإمام الكاساني رحمه الله وهو من كبار فقهاء الحنفية –:
" دل الحديث على أن مدة العصر أقصر من مدة الظهر ، وإنما يكون أقصر أن لو كان الأمر على ما قاله أبو حنيفة " انتهى من " بدائع الصنائع " (۱/٣۱٥) .
প্রথম দলিল: ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: তোমাদের আগের উম্মাতদের তুলনায় তোমাদের অবস্থানের সময়কাল আসরের সলাত থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়। তাওরাতের অনুসারীদেরকে তাওরাত দেয়া হলে তারা সে মোতাবেক আমল করল, তবে দিনের অর্ধেক হলে তারা অপারগ হয়ে গেল। এ জন্য তাদেরকে এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হল। অতঃপর ইনজীলের অনুসারীদেরকে ইনজীল দেয়া হল, তারা সে মোতাবেক আমল করল আসরের সলাত পর্যন্ত, তারপর তারা অক্ষম হয়ে পড়লে তাদেরকে দেয়া হল এক কীরাত এক কীরাত করে। অতঃপর তোমাদেরকে কুরআন দেয়া হল। ফলে এ কুরআন মোতাবেক তোমরা আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমল করেছ। এ জন্য তোমাদেরকে দু’কীরাত দু’কীরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে। (পূর্বের) উভয় কিতাবের অনুসারীরা বলল, হে আমাদের রব! তাদের দুই কীরাত দিলেন, আর আমাদেরকে এক এক কীরাত? অথচ আমরা তাদের থেকে বেশি পরিশ্রম করেছি। নবী (স) বলেন: আল্লাহ্ তাআলা তখন বললেন: তোমাদের পারিশ্রমিকে তোমাদের উপর কোনো যুলুম করা হয়েছে কি? তারা বলল, না। তখন আল্লাহ্ বললেন, এটি হচ্ছে আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে চাই তাকে দিই।”[সহীহ বুখারী হা/৫৫৭]
হানাফীদের বড় ফক্বীহদের একজন ইমাম কাসানী (রহ) লিখেছেন: “এই হাদীসটি থেকে দলিল নেয়া হয়, আসরের সময়কাল যোহরের সময়কাল থেকে কম। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর উক্তি মোতাবেক আসরের ওয়াক্ত গ্রহণ করা হয়।” [বাদাঈস সানায়ি‘ ১/৩১৫]
ولكن أجاب الحافظ ابن حجر عن هذا الاستدلال بقوله :" المعروف عند أهل العلم بالفن أن المدة التي بين الظهر والعصر أطول من المدة التي بين العصر والمغرب إذا فرعنا على أن أول وقت العصر كما قال الجمهور ، ( ويجاب ) بأنه ليس في الخبر نص على أن كلا من الطائفتين أكثر عملا ، لصدق أن كلهم مجتمعين أكثر عملا من المسلمين " انتهى من " فتح الباري " (٢/ ٥٣ )
وذكر أجوبة أخرى على استدلالهم بالحديث .
কিন্তু হাফেয ইবনু হাজার (রহ) উক্ত হাদীসটিকে দলিলগণ্য করার জবাবে লিখেছেন: “এটা বিশেষজ্ঞ আলেমদের নিকট প্রসিদ্ধ যে, জুমহুরের সিদ্ধান্ত (তথা এক ছায়া)-কে আসরের ওয়াক্ত গণ্য করলেও যোহর থেকে আসর পর্যন্ত সময় আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ের থেকে বেশি হবে। (আর হানাফীদের জবাবে বলা হবে) হাদীসে এটা সুস্পষ্ট নেই যে, উভয় পক্ষের কে বেশি আমল করেছে? বরং এটা বলা সঠিক হবে যে, তারা সবাই (ইয়াহুদী ও নাসরা) মিলে মুসলিমদের থেকে বেশি আমল করেছেন।”[ফতহুল বারী ২/৫৩ পৃ:] হাফেয ইবনু হাজার (রহ) হাদীসটি দ্বারা দলিল গ্রহণে হানাফীদের জবাবে আরও আলোচনা করেছেন।
ويقول ابن حزم رحمه الله :" وقت الظهر أطول من وقت العصر أبدا في كل زمان ومكان " انتهى من " المحلى " (٢/ ٢٢٢ ) ، ثم شرح ذلك فلكيا ، لمن أحب أن يرجع إليه .
ويقول ابن القيم رحمه الله :" ويالله العجب ! أي دلالة في هذا على أنه لا يدخل وقت العصر حتى يصير الظل مثلين ، بنوع من أنواع الدلالة ، وإنما يدل على أن صلاة العصر إلى غروب الشمس أقصر من نصف النهار إلى وقت العصر ، وهذا لا ريب فيه " انتهى من " إعلام الموقعين " (٢/ ٤٠٤ ).
فلم يبق وجه للاستدلال بالحديث .
আর ইবনু হাযম (রহ) বলেছেন: “যোহরের ওয়াক্ত আসরের ওয়াক্ত থেকে সব যামানা ও স্থানে দীর্ঘ।”[মুহাল্লা ২/২২২] অতঃপর তিনি আকাশবিদ্যার আলোকে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছে। যারা উৎসুক তারা দেখে নিতে পারেন।
আর হাফেয ইবনুল ক্বাইয়েম (রহ) লিখেছেন: “ইয়া আল্লাহ! খুব আশ্চর্যের বিষয়! হাদীসটিতে এই দলিল কোথায় আছে যে, ততক্ষণ পর্যন্ত আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় না, যতক্ষণ ছায়া দ্বিগুণ না হয়? দলিলটি থেকে কিভাবে এটা প্রমাণিত হয়? এখানে সর্বোচ্চ এ দলিল রয়েছে যে, আসরের সলাতের শুরুর ওয়াক্ত থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টুকু যোহর ও আসরের মধ্যকার সময়টুকুর চেয়ে কম। এক্ষেত্রে কোনো সংশয় নেই।” [ই‘লামুল মুয়াক্কিঈন২/৪০৪]
সুতরাং হাদীসটি দ্বারা আসরের ওয়াক্তের (দ্বিগুণ ছায়ার) দলিল নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
الدليل الثاني : عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي ﷺ قال : إِذَا اشتَدَّ الحَرُّ فَأَبرِدُوا بِالصَّلَاةِ ، فَإِنَّ شِدَّةَ الحَرِّ مِن فَيحِ جَهَنَّمَ رواه البخاري ( ٥٣٦ ) ، ومسلم (٦۱٥).
يقول الإمام الكاساني رحمه الله : " الإبراد يحصل بصيرورة ظل كل شيء مثليه ؛ فإن الحر لا يفتر ، خصوصا في بلادهم " انتهى من " بدائع الصنائع " (۱/٣۱٥).
দ্বিতীয় দলিল: আবূ হুরায়রা (রহ) থেকে বর্ণিত, নবী (স) বলেন: “যখন গরম বেশি হয়, তখন ঠাণ্ডার সময় সলাত আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা আসে জাহান্নামের উত্তাপ হতে। [সহীহ বুখারী হা/৫৩৪, সহীহ মুসলিম হা/৬১৫]
ইমাম কাসানী (রহ) বলেছেন: ঠাণ্ডা তখন হয়, যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হয়। কেননা, গরম (এক ছায়াতে) কমে না। বিশেষকরে তাদের দেশগুলোতে।” [বাদাঈস সানায়ি‘ ১/৩১৫]
وأجيب عنه بأن الإبراد يحصل بقرب مصير ظل كل شيء مثله ، وهذا الذي كان في زمن النبي ﷺ ، فإن تكملة حديث أنس السابق قال فيه : ( حَتَّى سَاوَى الظِّلُّ التُّلُولَ ) البخاري ( ٦٢٩ ).
قال الحافظ ابن حجر رحمه الله :" ظاهره أنه أخرها إلى أن صار ظل كل شيء مثله " انتهى من " فتح الباري " (٢/ ٢٩ ) ، وانظر " الشرح الممتع " (٢/ ٩٨ ) .
উক্ত মন্তব্যের জবাবে বলা হয়, উদ্দিষ্ট ঠাণ্ডা প্রত্যেক বস্তুর ছায়া সমান হওয়ার নিকটবর্তী সময় থেকে শুরু হয়। কেননা, এর উপর নবী (স) -এর যামানাতেই আমল করা হয়েছে। যেহেতু পূর্ববর্তী আনাস (রা)-এর হাদীসে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে: “এমনকি ছায়াগুলো টিলার বরাবর হয়ে যেত।” [সহীহ বুখারী হা/৬২৯]
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) বলেছেন: “হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ থেকে বুঝা যায়, নবী (স) যোহরের ওয়াক্ত সর্বোচ্চ এক ছায়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন।”[ফতহুল বারী ২/২৯২, অনুরূপ: শারহুল মুমতা‘২/৯৮]
الدليل الثالث : يقول الإمام السرخسي :" ولأنا عرفنا دخول وقت الظهر بيقين ، ووقع الشك في خروجه إذا صار الظل قامة ، لاختلاف الآثار ، واليقين لا يزال بالشك " انتهى من " المبسوط " (۱/۱٤۱).
وهذا الدليل يمكن الجواب عنه بأن اليقين في خروج وقت الظهر متحصل بالأدلة الصحيحة الصريحة السابقة ، وهو الذي أخذ به أهل العلم .
يقول الحافظ ابن حجر رحمه الله تعالى :
" ولم ينقل عن أحد من أهل العلم مخالفة في ذلك إلا عن أبي حنيفة ، قال القرطبي : خالفه الناس كلهم في ذلك ، حتى أصحابه ، يعني الآخذين عنه ؛ وإلا فقد انتصر له جماعة ممن جاء بعدهم " انتهى من " فتح الباري " (٢/ ٣٦ ).
তৃতীয় দলিল: ইমাম সারাখসী (হানাফী) বলেছেন: আমরা যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া সম্পর্কে অবগত। কিন্তু হাদীসের ইখতিলাফের কারণে যোহরের শেষ ওয়াক্তের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং নিশ্চিত বিষয়কে সংশয়যুক্ত বিষয় দ্বারা চূড়ান্ত করা যায় না। [আল-মাবসূত ১/১৪১]
উক্ত দলিলের জবাব এভাবে দেয়া যায় যে, যোহরের শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে আমাদের পূর্ববর্তী সহীহ ও সুস্পষ্ট (হাদীসভিত্তিক) দলিল থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। আর আলেমগণ সেটা গ্রহণ করেছেন।
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন: “আলেমদের মধ্যে আবূ হানীফা ছাড়া কারো থেকে এ সম্পর্কে বিরোধিতা নেই। ইমাম কুরতুবী (রহ) বলেছেন: “সমস্ত মানুষ (আলেমগণ) এক্ষেত্রে বিরোধিতা করেছেন, এমনকি ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর শিষ্যরাও। তাদের পরে আগত লোকেরা তাঁর পক্ষ সমর্থন করেছেন।” [ফতহুল বারী ২/৩৬]
وبهذا يتبين الخلاف في المسألة ، وأن مذهب الحنفية يؤخر صلاة العصر عن مذهب الجمهور ، ووضحنا دليل كل قول وما أجاب به العلماء . يقول الشيخ ابن عثيمين رحمه الله :
" يسن في صلاة العصر تعجيلها في أول الوقت ، وذلك لما يلي :
۱. لعموم الأدلة الدالة على المبادرة إلى فعل الخير ، كما في قوله تعالى ( فَاستَبِقُوا الخَيرَاتِ ) البقرة /۱ ٤٨ .
٢. ما ثبت أن الصلاة في أول وقتها أفضل .
٣. ما ثبت عن النبي ﷺ من حديث أبي برزة الأسلمي : أنه كان يصلي العصر والشمس مرتفعة . البخاري ( ٥٤٧ ) ، ومسلم ( ٦٤٧ ) " انتهى من " الشرح الممتع " (٢/۱ ٠٤ ).
ولمزيد من المصادر والمراجع ينظر : " المحلى " (٢/۱ ٩٧ ) ، " نهاية المحتاج (۱/ ٣٦٤ ) ، " فتح القدير " (۱/ ٢٢٧ ) ، و " حاشية الدسوقي " (۱/۱ ٧٧ ) ، " الموسوعة الفقهية " (٧/۱ ٧٣ ). وانظر جواب السؤال ( رقم : ۱ ٧٩٧٦٩ )…
উপরের বিশ্লেষণে মাসআলাটির মতপার্থক্য সুস্পষ্ট হয়েছে যে, হানাফী মাযহাবে জুমহুরের মাযহাবের চেয়ে দেরিতে আসরের সলাত আদায় করা হয়। এ সম্পর্কে আমরা দলিলের দাবি সুস্পষ্ট করেছি এবং আলেমদের জবাবমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। শাইখ উসায়মীন (রহ) বলেছেন: সুন্নাহ হল আসরের সলাত আওয়াল ওয়াক্তে শীঘ্রই আদায় করা। যার নিম্নোক্ত দিকগুলো রয়েছে:
১- দলিলের ‘আম দাবির ভিত্তিতে নেককাজ শীঘ্রই সম্পাদন করা। যেভাবে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “নেককাজে দ্রুত অগ্রসর হও।” [সূরা বাক্বারাহ: ১৪৮ আয়াত]
২- এটা প্রমাণিত যে, আওয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় সর্বোত্তম।
৩- নবী (স) থেকে প্রমাণিত যা সাহাবী আবূ বারযাহ আসলামী (রা) বর্ণনা করেছেন যে: “তিনি (স) আসরের সলাত পড়তেন সূর্য উঁচুতে থাকাবস্থায়। [সহীহ বুখারী হা/৫৪৭, সহীহ মুসলিম হা/৬৪৭ সূত্রে: আশ-শারহুল মুমাত্তা‘ ২/১০৪]
এই মাসআলা সম্পর্কে আরও জানার জন্য দেখুন: মুহাল্লা ২/১৯৭, নিহায়াতুল মুহতাজ ১/৩৬৪, ফতহুল ক্বাদীর ১/২২৭, হাশিয়াহ দাসুক্বী ১/১৭৭, আল-মাওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ ৭/১৭৩। আরও দ্র: প্রশ্নোত্তর নং-১৭৯৭৬৯।…
[সূত্র: https://islamqa.info/ar/220820]
অতঃপর মাগরিব ও ঈশার সলাত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা কেবল সলাতুল আসরের ওয়াক্ত সম্পর্কিত আলোচনাটুকু অনুবাদ করলাম। যারা আরও জানতে আগ্রহী তারা সংশ্লিষ্ট ওয়েব সাইট থেকে দেখে নিন।
৪০
সপ্তম অধ্যায়: জামাআতের গুরুত্ব ও যেসব কারণে সলাতের জামাআত ত্যাগ করা যায়
অনুচ্ছেদ-৩৫: আল্লাহ তাআলা সময়মতো সলাত আদায় করা ফরয করেছেন। আর জামাআতবদ্ধ সলাত আদায় রসূলুল্লাহ (স)-এর নির্দেশ ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا .
‘‘নিশ্চয় মু’মিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে সলাত আদায় করা ফরয।’’ [. সূরা নিসা; ১০৩ আয়াত।]
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) বলেন:
وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا الْمُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِهِ، لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ .
‘‘যদি তোমরা তোমাদের ঘরে সলাত পড় যেভাবে এই জামাআত বরখেলাফকারী তার ঘরে পড়ে থাকে, তা হলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে, আর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ কর তা হলে নিশ্চয় তোমরা গোমরাহ হয়ে যাবে।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৭৪ (২৪৬/৬৫৪), মিশকাত হা/১০৭২।]
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا .
‘‘নিশ্চয় মু’মিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে সলাত আদায় করা ফরয।’’ [. সূরা নিসা; ১০৩ আয়াত।]
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) বলেন:
وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا الْمُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِهِ، لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ .
‘‘যদি তোমরা তোমাদের ঘরে সলাত পড় যেভাবে এই জামাআত বরখেলাফকারী তার ঘরে পড়ে থাকে, তা হলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে, আর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ কর তা হলে নিশ্চয় তোমরা গোমরাহ হয়ে যাবে।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৭৪ (২৪৬/৬৫৪), মিশকাত হা/১০৭২।]
ক) জামাআতের সাথে সলাতের নেকী একাকি সলাতের থেকে পঁচিশ বা সাতাশ গুণ বেশি। [. সহীহ বুখারী হা/৬৪৫, সহীহ মুসলিম হা/১৩৬১-৬৪ (২৪৮-২৫০/৬৪৯), মিশকাত হা/১০৫২।]
খ) জামাআত ত্যাগকারীদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। [. সহীহ বুখারী হা/৬৪৪, ২৪২০, মিশকাত হা/১০৫৩।]
গ) অন্ধব্যক্তিকে ঘরে সলাত পড়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু যদি সে আযান শুনতে পায়- তবে যেন সে মাসজিদে আসে (জামাআতে শরীক হয়)। [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৭২ (২৫৫/৬৫৩), মিশকাত হা/১০৫৪।]
ঙ) ইশা ও ফজরের জামাআত মুনাফিক্বদের জন্য কষ্টদায়ক। [দ্র. হা/১৬]
খ) জামাআত ত্যাগকারীদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। [. সহীহ বুখারী হা/৬৪৪, ২৪২০, মিশকাত হা/১০৫৩।]
গ) অন্ধব্যক্তিকে ঘরে সলাত পড়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু যদি সে আযান শুনতে পায়- তবে যেন সে মাসজিদে আসে (জামাআতে শরীক হয়)। [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৭২ (২৫৫/৬৫৩), মিশকাত হা/১০৫৪।]
ঙ) ইশা ও ফজরের জামাআত মুনাফিক্বদের জন্য কষ্টদায়ক। [দ্র. হা/১৬]
আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
الصَّلَاةُ فِي جَمَاعَةٍ تَعْدِلُ خَمْسًا وَعِشْرِينَ صَلَاةً، فَإِذَا صَلَّاهَا فِي فَلَاةٍ فَأَتَمَّ رُكُوعَهَا وَسُجُودَهَا بَلَغَتْ خَمْسِينَ صَلَاةً» ، قَالَ أَبُو دَاوُدَ : قَالَ عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، فِي هَذَا الْحَدِيثِ «صَلَاةُ الرَّجُلِ فِي الْفَلَاةِ تُضَاعَفُ عَلَى صَلَاتِهِ فِي الْجَمَاعَةِ» .
‘‘জামাআতের সাথে এক ওয়াক্ত সলাত (একাকি) পঁচিশ ওয়াক্ত সলাত আদায়ের সমান। আর কেউ কোনো জন-মানবহীন এলাকাতে পূর্ণ রুকু-সাজদাসহ সলাত আদায় করলে পঞ্চাশ ওয়াক্তে সলাতের সওয়াব পাবে।- ইমাম আবূ দাউদ বলেন: আব্দুল ওয়াহিদ ইবনু যিয়াদ বর্ণনা করেছেন: কোনো ব্যক্তির জন-মানবহীন এলাকাতে সলাত আদায় করা জামাআতে সলাতের উপর কয়েকগুণ বেশি সওয়াব হবে।’’ [. আবূ দাউদ হা/৫৬০, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন: আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (ইফা) ১/২৯১ পৃ.।]
হাদীসের প্রথমাংশের صَلَّاهَا -এর صَلَّا একবচন এবং পরবর্তী যমীর هَا (হা)-এর সম্পর্ক الصَّلَاةُ -এর সাথে উন্মুক্তভাবে, জামাআতের সাথে নির্দিষ্টভাবে নয়। তা ছাড়া হাদীসের শেষাংশ থেকে প্রমাণিত হয়, জন-মানবহীন এলাকাতে একাকি ব্যক্তির সলাতে আবাসিক এলাকার জামাআতের সলাতের থেকে অনেক বেশি বরং দ্বিগুণ ফযিলতপূর্ণ। [. বিস্তারিত: ইমাম শওকানী (রহ), নায়লুল আওতার ৫/২১৯ পৃ.।]
এখানে শরিআতের সাধারণ বিধান থেকে একটি ব্যতিক্রম বিধানের ফযিলত বর্ণিত হল।
الصَّلَاةُ فِي جَمَاعَةٍ تَعْدِلُ خَمْسًا وَعِشْرِينَ صَلَاةً، فَإِذَا صَلَّاهَا فِي فَلَاةٍ فَأَتَمَّ رُكُوعَهَا وَسُجُودَهَا بَلَغَتْ خَمْسِينَ صَلَاةً» ، قَالَ أَبُو دَاوُدَ : قَالَ عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، فِي هَذَا الْحَدِيثِ «صَلَاةُ الرَّجُلِ فِي الْفَلَاةِ تُضَاعَفُ عَلَى صَلَاتِهِ فِي الْجَمَاعَةِ» .
‘‘জামাআতের সাথে এক ওয়াক্ত সলাত (একাকি) পঁচিশ ওয়াক্ত সলাত আদায়ের সমান। আর কেউ কোনো জন-মানবহীন এলাকাতে পূর্ণ রুকু-সাজদাসহ সলাত আদায় করলে পঞ্চাশ ওয়াক্তে সলাতের সওয়াব পাবে।- ইমাম আবূ দাউদ বলেন: আব্দুল ওয়াহিদ ইবনু যিয়াদ বর্ণনা করেছেন: কোনো ব্যক্তির জন-মানবহীন এলাকাতে সলাত আদায় করা জামাআতে সলাতের উপর কয়েকগুণ বেশি সওয়াব হবে।’’ [. আবূ দাউদ হা/৫৬০, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন: আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (ইফা) ১/২৯১ পৃ.।]
হাদীসের প্রথমাংশের صَلَّاهَا -এর صَلَّا একবচন এবং পরবর্তী যমীর هَا (হা)-এর সম্পর্ক الصَّلَاةُ -এর সাথে উন্মুক্তভাবে, জামাআতের সাথে নির্দিষ্টভাবে নয়। তা ছাড়া হাদীসের শেষাংশ থেকে প্রমাণিত হয়, জন-মানবহীন এলাকাতে একাকি ব্যক্তির সলাতে আবাসিক এলাকার জামাআতের সলাতের থেকে অনেক বেশি বরং দ্বিগুণ ফযিলতপূর্ণ। [. বিস্তারিত: ইমাম শওকানী (রহ), নায়লুল আওতার ৫/২১৯ পৃ.।]
এখানে শরিআতের সাধারণ বিধান থেকে একটি ব্যতিক্রম বিধানের ফযিলত বর্ণিত হল।
সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা) থেকে বর্ণিত:
أَنَّهُ أَذَّنَ بِالصَّلَاةِ فِي لَيْلَةٍ ذَاتِ بَرْدٍ وَرِيحٍ ثُمَّ قَالَ أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ ثُمَّ قَالَ : إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ كَانَ يَأْمُرُ الْمُؤَذِّنَ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ ذَاتُ بَرْدٍ وَمَطَرٍ يَقُولُ : «أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ» .
‘‘এক শীত ও বাতাসের রাতে তিনি (রা) আযান দিলেন। অতঃপর বললেন: তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সলাত পড়। অতঃপর বললেন: রসূলুল্লাহ (স) মুয়াযযিনকে আদেশ করতেন- যখন শীত ও বৃষ্টির রাত হয়, সে যেন বলে: أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ ( শোন! নিজ নিজ অবস্থানে সলাত আদায় কর।)’’ [. সহীহ বুখারী হা/৬৬৬, সহীহ মুসলিম হা/১৪৮৬(২৩/৬৯৭), মিশকাত হা/১০৫৫।]
… ابْنُ عَبَّاسٍ لِمُؤَذِّنِهِ فِي يَوْمٍ مَطِيرٍ : إِذَا قُلْتَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَلاَ تَقُلْ حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ، قُلْ : «صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ» ، فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوا، قَالَ : فَعَلَهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي، إِنَّ الجُمْعَةَ عَزْمَةٌ وَإِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أُحْرِجَكُمْ فَتَمْشُونَ فِي الطِّينِ وَالدَّحَضِ .
‘‘... ইবনু আব্বাস (রা) তাঁর মুয়াযযিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্ সলাহ’ বলবে না, বলবে ‘সল্লু ফী বুয়ূতিকুম’ ( তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সলাত আদায় কর)। লোকেরা তা অপছন্দ করল। তখন তিনি (রা) বললেন: আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রসূলুল্লাহ স.) তা করেছেন। জুমুআহ নিঃসন্দেহে জরুরি। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাঁদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৯০১।]
أَنَّهُ أَذَّنَ بِالصَّلَاةِ فِي لَيْلَةٍ ذَاتِ بَرْدٍ وَرِيحٍ ثُمَّ قَالَ أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ ثُمَّ قَالَ : إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ كَانَ يَأْمُرُ الْمُؤَذِّنَ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ ذَاتُ بَرْدٍ وَمَطَرٍ يَقُولُ : «أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ» .
‘‘এক শীত ও বাতাসের রাতে তিনি (রা) আযান দিলেন। অতঃপর বললেন: তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সলাত পড়। অতঃপর বললেন: রসূলুল্লাহ (স) মুয়াযযিনকে আদেশ করতেন- যখন শীত ও বৃষ্টির রাত হয়, সে যেন বলে: أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ ( শোন! নিজ নিজ অবস্থানে সলাত আদায় কর।)’’ [. সহীহ বুখারী হা/৬৬৬, সহীহ মুসলিম হা/১৪৮৬(২৩/৬৯৭), মিশকাত হা/১০৫৫।]
… ابْنُ عَبَّاسٍ لِمُؤَذِّنِهِ فِي يَوْمٍ مَطِيرٍ : إِذَا قُلْتَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَلاَ تَقُلْ حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ، قُلْ : «صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ» ، فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوا، قَالَ : فَعَلَهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي، إِنَّ الجُمْعَةَ عَزْمَةٌ وَإِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أُحْرِجَكُمْ فَتَمْشُونَ فِي الطِّينِ وَالدَّحَضِ .
‘‘... ইবনু আব্বাস (রা) তাঁর মুয়াযযিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্ সলাহ’ বলবে না, বলবে ‘সল্লু ফী বুয়ূতিকুম’ ( তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সলাত আদায় কর)। লোকেরা তা অপছন্দ করল। তখন তিনি (রা) বললেন: আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রসূলুল্লাহ স.) তা করেছেন। জুমুআহ নিঃসন্দেহে জরুরি। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাঁদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৯০১।]
সাহাবী ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
إِذَا وُضِعَ عَشَاءُ أَحَدِكُمْ وَأُقِيمَتِ الصَّلَاة فابدؤوا بِالْعَشَاءِ وَلَا يَعْجَلْ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ» وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُوضَعُ لَهُ الطَّعَامُ وَتُقَامُ الصَّلَاةُ فَلَا يَأْتِيهَا حَتَّى يَفْرُغُ مِنْهُ وَإِنَّهُ لِيَسْمَعَ قِرَاءَةَ الْإِمَامِ .
‘‘যখন তোমাদের কারো রাতের খাবার উপস্থিত হয়, অপর দিকে সলাতের ইক্বামত বলা হয়, তখন প্রথমে খাবে এবং সে যেন তাড়াতাড়ি না করে- যতক্ষণ না খাওয়া থেকে ঠিকমতো অবসর গ্রহণ করে। ইবনু উমার (রা)-এর নিয়ম ছিল, যখন তার জন্য খাওয়া উপস্থিত হতো, অপর দিকে তাক্ববীর বলা হতো, তিনি সলাতে উপস্থিত হতেন না, যতক্ষণ না ঠিকভাবে খাওয়া সারতেন- অথচ ইমামের ক্বিরাআত শুনতে পেতেন।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৬৭৪, সহীহ মুসলিম হা/১১৩১(৬৬/৫৫৯)- শব্দগুলো সহীহ বুখারীর, মিশকাত হা/১০৫৬।]
إِذَا وُضِعَ عَشَاءُ أَحَدِكُمْ وَأُقِيمَتِ الصَّلَاة فابدؤوا بِالْعَشَاءِ وَلَا يَعْجَلْ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ» وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُوضَعُ لَهُ الطَّعَامُ وَتُقَامُ الصَّلَاةُ فَلَا يَأْتِيهَا حَتَّى يَفْرُغُ مِنْهُ وَإِنَّهُ لِيَسْمَعَ قِرَاءَةَ الْإِمَامِ .
‘‘যখন তোমাদের কারো রাতের খাবার উপস্থিত হয়, অপর দিকে সলাতের ইক্বামত বলা হয়, তখন প্রথমে খাবে এবং সে যেন তাড়াতাড়ি না করে- যতক্ষণ না খাওয়া থেকে ঠিকমতো অবসর গ্রহণ করে। ইবনু উমার (রা)-এর নিয়ম ছিল, যখন তার জন্য খাওয়া উপস্থিত হতো, অপর দিকে তাক্ববীর বলা হতো, তিনি সলাতে উপস্থিত হতেন না, যতক্ষণ না ঠিকভাবে খাওয়া সারতেন- অথচ ইমামের ক্বিরাআত শুনতে পেতেন।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৬৭৪, সহীহ মুসলিম হা/১১৩১(৬৬/৫৫৯)- শব্দগুলো সহীহ বুখারীর, মিশকাত হা/১০৫৬।]
সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ وَأَحَدُكُمْ صَائِمٌ فَلْيَبْدَأْ بِالْعَشَاءِ قَبْلَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ وَلَا تعجلوا عن عشائكم .
‘‘যখন সলাত দাঁড়ায় (ইক্বামাত দেয়া হয়) আর তোমাদের কেউ সায়িম (রোযাদার), তা হলে সে যেন মাগরিবের সলাতের পূর্বে তার সন্ধ্যার খাবার খেয়ে নেয়। আর সে যেন সন্ধ্যার খাবার গ্রহণে তাড়াহুড়া না করে। [. সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২০৬৮- আলবানী ও শুআইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (স্ব স্ব তাহক্বীক্ব ইবনু হিব্বান হা/২০৬৮)]]
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ وَأَحَدُكُمْ صَائِمٌ فَلْيَبْدَأْ بِالْعَشَاءِ قَبْلَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ وَلَا تعجلوا عن عشائكم .
‘‘যখন সলাত দাঁড়ায় (ইক্বামাত দেয়া হয়) আর তোমাদের কেউ সায়িম (রোযাদার), তা হলে সে যেন মাগরিবের সলাতের পূর্বে তার সন্ধ্যার খাবার খেয়ে নেয়। আর সে যেন সন্ধ্যার খাবার গ্রহণে তাড়াহুড়া না করে। [. সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২০৬৮- আলবানী ও শুআইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (স্ব স্ব তাহক্বীক্ব ইবনু হিব্বান হা/২০৬৮)]]
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি:
لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ، وَلَا هُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ .
‘‘খাবার উপস্থিত হলে সলাত নেই। তেমনি পেশাব-পায়খানার বেগ নিয়ে সলাত নেই।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/১১৩৩ (৬৭/৫৬০), মিশকাত হা/১০৫৭।]
لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ، وَلَا هُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ .
‘‘খাবার উপস্থিত হলে সলাত নেই। তেমনি পেশাব-পায়খানার বেগ নিয়ে সলাত নেই।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/১১৩৩ (৬৭/৫৬০), মিশকাত হা/১০৫৭।]
এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ) সহীহ বুখারীতে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদটি এনেছেন:
بَابٌ : إِذَا حَضَرَ الطَّعَامُ وَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ : «يَبْدَأُ بِالعَشَاءِ» وَقَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ : «مِنْ فِقْهِ المَرْءِ إِقْبَالُهُ عَلَى حَاجَتِهِ حَتَّى يُقْبِلَ عَلَى صَلاَتِهِ وَقَلْبُهُ فَارِغٌ» .
‘‘অনুচ্ছেদ: খাবার উপস্থিত হবার পর সলাতের ইক্বামত হলে। ইবনু উমার (রা) (সলাতের) পূর্বে রাতের খাবার খেয়ে নিতেন। আবূ দারদা (রা) বলেছেন: জ্ঞানীর পরিচয় হল, প্রথমে নিজের প্রয়োজন পূরণ করবে, যাতে নিশ্চিতভাবে সলাতে মনোনিবেশ করতে পারে।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৬৭১-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ। আবূ দারদা (রা)-এর উক্তিটি ইমাম ইবনুল মুবারকের ‘কিতাবুল যুহদে’ হা/১১২৭ সনদসহ বর্ণিত হয়েছে।]
নবী (স) বলেছেন:
مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ، فَلَا صَلَاةَ لَهُ، إِلَّا مِنْ عُذْرٍ .
‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনতে পেল; কিন্তু জামাআতে উপস্থিত হলো না- তার কোনো সলাত নেই, তবে যদি ওজর থাকে।’’ [. ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩। হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- শাইখ আলবানী ও শাইখ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) ।]
بَابٌ : إِذَا حَضَرَ الطَّعَامُ وَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ : «يَبْدَأُ بِالعَشَاءِ» وَقَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ : «مِنْ فِقْهِ المَرْءِ إِقْبَالُهُ عَلَى حَاجَتِهِ حَتَّى يُقْبِلَ عَلَى صَلاَتِهِ وَقَلْبُهُ فَارِغٌ» .
‘‘অনুচ্ছেদ: খাবার উপস্থিত হবার পর সলাতের ইক্বামত হলে। ইবনু উমার (রা) (সলাতের) পূর্বে রাতের খাবার খেয়ে নিতেন। আবূ দারদা (রা) বলেছেন: জ্ঞানীর পরিচয় হল, প্রথমে নিজের প্রয়োজন পূরণ করবে, যাতে নিশ্চিতভাবে সলাতে মনোনিবেশ করতে পারে।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৬৭১-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ। আবূ দারদা (রা)-এর উক্তিটি ইমাম ইবনুল মুবারকের ‘কিতাবুল যুহদে’ হা/১১২৭ সনদসহ বর্ণিত হয়েছে।]
নবী (স) বলেছেন:
مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ، فَلَا صَلَاةَ لَهُ، إِلَّا مِنْ عُذْرٍ .
‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনতে পেল; কিন্তু জামাআতে উপস্থিত হলো না- তার কোনো সলাত নেই, তবে যদি ওজর থাকে।’’ [. ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩। হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- শাইখ আলবানী ও শাইখ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) ।]
৪৮
অনুচ্ছেদ-৪৩: ইমাম বা শাসক জামাআত দেরিতে ক্বায়েম করলে একাকি সময়মতো সলাত আদায় করতে হবে। যা সলাতের হেফাযত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। [. দ্র. হা/৩৮।] সম্ভব হলে দেরিতে আদায়কৃত জামাআতে শরীক হয়ে নফল সলাতের সওয়াব নিতে হবে- যা বাধ্যতামূলক নয়। [. দ্র. হা/৩৯।] কিন্তু মাসজিদে উপস্থিত থাকলে এটা বলবে না যে, আমি সলাত আদায় করব না। [. দ্র. হা/৪১।] বিদআতী ইমাম বা শাসক হলে তাকে ত্যাগ করতে হবে। [. দ্র. হা/৪২।] যা পূর্বের শর্তগুলোর মতো জামাআত ত্যাগের একটি শর্ত।এ সম্পর্কিত দলিল-প্রমাণ পূর্বে গত হয়েছে।
৪৯
অনুচ্ছেদ-৪৪: জামাআত ত্যাগে দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতি রয়েছে- যা হেফাযত করার মধ্যে বান্দার হক্বও রয়েছে।সাহাবী আবূ দারদা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِي قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلَاةُ إِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ .
‘‘তিনজন ব্যক্তি গ্রামে বা জঙ্গলে থাকলে তাদের মধ্যে জামাআতে সলাত ক্বায়েম না হলে- নিশ্চয় তাদের উপর শয়তান জয়ী হয়। সুতরাং অবশ্যই তুমি জামাআতবদ্ধ থাকবে। কেননা, নেকড়ে বাঘ দলচ্যুত ছাগলকে খেয়ে ফেলে।’’ [. আবূ দাউদ হা/৫৪৭, মুসনাদু আহমাদ হা/২৭৫১৪, মিশকাত হা/১০৬৭। শাইখ আলবানী (রহ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
সাহাবী হারিস আল-আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (স) বলেছেন:
وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ، السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالجِهَادُ وَالهِجْرَةُ وَالجَمَاعَةُ، فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَّا أَنْ يَرْجِعَ، وَمَنْ ادَّعَى دَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ» ، فَقَالَ رَجُلٌ : يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ؟ قَالَ : «وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ، فَادْعُوا بِدَعْوَى اللَّهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ المُسْلِمِينَ المُؤْمِنِينَ، عِبَادَ اللَّهِ .
‘‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলো প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করেছেন। (আমীরের) কথা শুনবে, আনুগত্য করবে, জিহাদ করবে, হিজরাত করবে এবং জামাআতবদ্ধ হয়ে থাকবে। যে লোক জামাআত হতে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হলো সে ইসলামের বন্ধন তার ঘাড় হতে খুলে ফেলে দিল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। যে জাহেলিয়াতের দিকে দাওয়াত দেয়া সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি সে সলাত আদায় করে, সিয়াম রাখে? তিনি (স) বললেন: যদিও সে সলাত আদায় করে ও সিয়াম রাখে। সুতরাং তোমার তোমাদেরকে ডাকো, যেভাবে আল্লাহ ডেকেছেন, তিনি তোমাদের নাম দিয়েছেন মুসলিম, মু’মিন, ইবাদুল্লাহ।... ’’ [. তিরমিযী হা/২৮৬৩, মিশকাত হা/৩৬৯৪ (সংক্ষেপে)। শাইখ আলবানী (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
অন্যত্র নবী (স) বলেছেন: وَإِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ ‘‘নিশ্চয় ইমাম হলো ঢালস্বরূপ, যার পিছনে থেকে যুদ্ধ করা হয় এবং নিরাপদে থাকা যায়।’’ [. সহীহ বুখারী হা/২৯৫৭, সহীহ মুসলিম হা/৪৬৬৬(৪৩/১৮৪১), মিশকাত হা/৩৬৬১।]
مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِي قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلَاةُ إِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ .
‘‘তিনজন ব্যক্তি গ্রামে বা জঙ্গলে থাকলে তাদের মধ্যে জামাআতে সলাত ক্বায়েম না হলে- নিশ্চয় তাদের উপর শয়তান জয়ী হয়। সুতরাং অবশ্যই তুমি জামাআতবদ্ধ থাকবে। কেননা, নেকড়ে বাঘ দলচ্যুত ছাগলকে খেয়ে ফেলে।’’ [. আবূ দাউদ হা/৫৪৭, মুসনাদু আহমাদ হা/২৭৫১৪, মিশকাত হা/১০৬৭। শাইখ আলবানী (রহ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
সাহাবী হারিস আল-আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (স) বলেছেন:
وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ، السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالجِهَادُ وَالهِجْرَةُ وَالجَمَاعَةُ، فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَّا أَنْ يَرْجِعَ، وَمَنْ ادَّعَى دَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ» ، فَقَالَ رَجُلٌ : يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ؟ قَالَ : «وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ، فَادْعُوا بِدَعْوَى اللَّهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ المُسْلِمِينَ المُؤْمِنِينَ، عِبَادَ اللَّهِ .
‘‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলো প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করেছেন। (আমীরের) কথা শুনবে, আনুগত্য করবে, জিহাদ করবে, হিজরাত করবে এবং জামাআতবদ্ধ হয়ে থাকবে। যে লোক জামাআত হতে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হলো সে ইসলামের বন্ধন তার ঘাড় হতে খুলে ফেলে দিল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। যে জাহেলিয়াতের দিকে দাওয়াত দেয়া সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি সে সলাত আদায় করে, সিয়াম রাখে? তিনি (স) বললেন: যদিও সে সলাত আদায় করে ও সিয়াম রাখে। সুতরাং তোমার তোমাদেরকে ডাকো, যেভাবে আল্লাহ ডেকেছেন, তিনি তোমাদের নাম দিয়েছেন মুসলিম, মু’মিন, ইবাদুল্লাহ।... ’’ [. তিরমিযী হা/২৮৬৩, মিশকাত হা/৩৬৯৪ (সংক্ষেপে)। শাইখ আলবানী (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
অন্যত্র নবী (স) বলেছেন: وَإِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ ‘‘নিশ্চয় ইমাম হলো ঢালস্বরূপ, যার পিছনে থেকে যুদ্ধ করা হয় এবং নিরাপদে থাকা যায়।’’ [. সহীহ বুখারী হা/২৯৫৭, সহীহ মুসলিম হা/৪৬৬৬(৪৩/১৮৪১), মিশকাত হা/৩৬৬১।]
৫০
অনুচ্ছেদ-৪৫: একাকি হলেও দেরিতে আদায়কৃত জামাআতে শরীক না হয়ে একাকি সলাত আদায়কে ‘সলাত হেফাযত’ বলা হয়েছে। [. দ্র. হা/৩৮।] কেননা, ওয়াক্তমতো সলাত আদায় করা আল্লাহ হক্ব বা তাঁরই নির্দেশ। পক্ষান্তরে মানবিক প্রয়োজন, যেমন- খাবার, পেশাব-পায়খানা, ঝড়-বৃষ্টি, ঠান্ডা প্রভৃতি কারণে জামাআতে শরীক না হওয়াটা বান্দার হক্ব। যদি বান্দার হক্ব আদায়ে জামাআত ত্যাগ করা যায়- তা হলে আল্লাহর হক্ব আদায়ে জামাআত ত্যাগ করা আরও বেশি প্রাধান্য পাবার যোগ্য। যেভাবে ঋণ বান্দার হক্ব, আর ক্বাযা সিয়াম আল্লাহর ঋণ। নবী (স) এক্ষেত্রে আল্লাহর হক্ব অগ্রাধিকার পাওয়ার সুন্দর উদাহরণ উপস্থাপন করেছেন। عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ , فَقَالَتْ : إِنَّ أُخْتِي مَاتَتْ وَعَلَيْهَا صِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ , قَالَ : أَرَأَيْتِ إِنْ كَانَ عَلَى أُخْتِكِ دَيْنٌ , أَكُنْتِ قَضَيْتِهِ " , قَالَتْ : نَعَمْ , قَالَ : «فَحَقُّ اللَّهِ أَحَقُّ» .
ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি (রা) বলেন: একজন মহিলা নবী (স)-এর কাছে আসল। সে বলল: আমার বোন মারা গেছেন। তার উপর দুইমাসের ধারাবাহিক সিয়াম রাখার দাবি ছিল। নবী (স) বললেন: আমাকে বল, যদি তোমার বোনের ঋণ থাকত, তা হলে কি তা আদায় করতে? মহিলাটি বলল: জি হ্যাঁ। নবী (স) বললেন: তা হলে আল্লাহর হক্ব আদায় করার দাবিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত। [. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২০৫৫; অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/১৯৫৩, সহীহ মুসলিম হা/২৫৮৩ (১৫৪/১১৪৮), তিরমিযী হা/৭১৬, ইবনু মাজাহ হা/১৭৫৮, সুনানু কুবরা নাসাঈ হা/২৯২৬।]
এ কারণে আল্লাহর নির্দেশ সময়মতো সলাত আদায় করলে আল্লাহর হক্ব তথা তাঁর নির্দেশ পালন করাটা প্রাধান্যপ্রাপ্ত। মুসলিমদের ইমাম বা শাসক এবং সর্বসাধারণ মুসলিমদের সাথে জামাআতে সলাত দেরিতে আদায় করা হলে এক্ষেত্রে আল্লাহর হক্বকে প্রাধান্য দিতে হবে। সম্ভব হলে পরে বান্দাদের সাথে জামাআতে শরীক হয়ে তাদের হক্ব পূরণ করা যাবে। যেভাবে পূর্বে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি (রা) বলেন: একজন মহিলা নবী (স)-এর কাছে আসল। সে বলল: আমার বোন মারা গেছেন। তার উপর দুইমাসের ধারাবাহিক সিয়াম রাখার দাবি ছিল। নবী (স) বললেন: আমাকে বল, যদি তোমার বোনের ঋণ থাকত, তা হলে কি তা আদায় করতে? মহিলাটি বলল: জি হ্যাঁ। নবী (স) বললেন: তা হলে আল্লাহর হক্ব আদায় করার দাবিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত। [. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২০৫৫; অনুরূপ: সহীহ বুখারী হা/১৯৫৩, সহীহ মুসলিম হা/২৫৮৩ (১৫৪/১১৪৮), তিরমিযী হা/৭১৬, ইবনু মাজাহ হা/১৭৫৮, সুনানু কুবরা নাসাঈ হা/২৯২৬।]
এ কারণে আল্লাহর নির্দেশ সময়মতো সলাত আদায় করলে আল্লাহর হক্ব তথা তাঁর নির্দেশ পালন করাটা প্রাধান্যপ্রাপ্ত। মুসলিমদের ইমাম বা শাসক এবং সর্বসাধারণ মুসলিমদের সাথে জামাআতে সলাত দেরিতে আদায় করা হলে এক্ষেত্রে আল্লাহর হক্বকে প্রাধান্য দিতে হবে। সম্ভব হলে পরে বান্দাদের সাথে জামাআতে শরীক হয়ে তাদের হক্ব পূরণ করা যাবে। যেভাবে পূর্বে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৫১
অনুচ্ছেদ-৪৬: সাহাবীগণ (রা)-ও এক্ষেত্রে আল্লাহর হক্বকে প্রাধান্য দিয়ে শাসকের অপেক্ষায় বসে না থেকে সলাত পড়ে ফেলতেন। কখনই শাসকের হক্বকে প্রাধান্য দেননি। عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ عَنِ الْقَاسِمِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ الْوَلِيدَ بْنَ عُقْبَةَ أَخَّرَ الصَّلَاةَ مَرَّةً فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ فَثَوَّبَ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى بِالنَّاسِ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ الْوَلِيدُ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ أَجَاءَكَ مِنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ أَمْرٌ فِيمَا فَعَلْتَ أَمْ ابْتَدَعْتَ قَالَ لَمْ يَأْتِنِي أَمْرٌ مِنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ وَلَمْ أَبْتَدِعْ وَلَكِنْ أَبَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْنَا وَرَسُولُهُ أَنْ نَنْتَظِرَكَ بِصَلَاتِنَا وَأَنْتَ فِي حَاجَتِكَ .
‘‘আব্দুল্লাহ বিন উসমান থেকে বর্ণিত, তিনি কাসিম থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন: একবার ওয়ালিদ বিন উক্ববা সলাতকে বিলম্বিত করলেন, এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং নিজে নিজেই ইক্বামত দিলেন। অতঃপর তিনি ইমামতি করলেন, এরপর ওয়ালিদ তাঁর (ইবনু মাসউদের) কাছে (লোক) পাঠালেন। (তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো) তুমি যা করলে তাতে কিসে তোমাকে প্ররোচিত করল? তোমার কাছে আমীরুল মু’মিনীন বা রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আছে কি? নাকি তুমি বিদআত করছ ? তিনি জবাব দিলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আমার কাছে আসেনি এবং আমি বিদআতও করছি না। বরং আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অস্বীকৃতি এসেছে যে, তোমার ব্যস্ততার কারণে তোমার জন্য আমরা সলাতের অপেক্ষা করব।’’ [. মুসনাদু আহমাদ (ইফা) ২/২৬৬ পৃ. হা/১৪০৬। মুহাক্কিক্ব শুআয়েব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্ব মুসনাদু আহমাদ হা/৪২৯৮]]
عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ الْبَرَّاءِ، قَالَ : قُلْتُ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ الصَّامِتِ : نُصَلِّي يَوْمَ الْجُمُعَةِ خَلْفَ أُمَرَاءَ فَيُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ، قَالَ : فَضَرَبَ فَخِذِي ضَرْبَةً أَوْجَعَتْنِي، وَقَالَ : سَأَلْتُ أَبَا ذَرٍّ، عَنْ ذَلِكَ فَضَرَبَ فَخِذِي، وَقَالَ : سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ : «صَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، وَاجْعَلُوا صَلَاتَكُمْ مَعَهُمْ نَافِلَةً» ، قَالَ : وَقَالَ عَبْدُ اللهِ : ذُكِرَ لِي أَنَّ نَبِيَّ اللهِ ﷺ ضَرَبَ فَخِذَ أَبِي ذَرٍّ .
‘‘আবুল আলিয়া আল-বার্রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুস সামিতকে বললাম, আমি এমন সব আমীর বা নেতার পিছনে জুমুআর সলাত আদায় করি যারা দেরি করে সলাত আদায় করে থাকে। মাতার (রা) বলেন: এ কথা শুনে আবুল আলিয়া আল বার্রা আমার ঊরুর উপরে সজোরে এমনভাবে হাত দিয়ে চাপড়ালেন যে, আমি ব্যথাই পেলাম। এবার তিনি বললেন: এ বিষয়ে আমি সাহাবী আবূ যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনিও আমার ঊরুর উপরে সজোরে হাত দিয়ে চাপড়িয়ে বললেন- আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন: এমতাবস্থায় তোমরা সময়মতো (প্রথম ওয়াক্তে) সলাত আদায় করে নিবে। আর তাদের সাথে জামাআতের সলাতকে নফল হিসেবে আদায় করবে। আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত বলেছেন, আমি জানতে পেরেছি যে, (এ কথা বলার সময়) আল্লাহর নবী (স)-ও আবূ যার-এর ঊরুর উপর সজোরে চাপড় দিয়েছিলেন।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৫৭(২৪৪/৬৪৮)।]
‘‘আব্দুল্লাহ বিন উসমান থেকে বর্ণিত, তিনি কাসিম থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন: একবার ওয়ালিদ বিন উক্ববা সলাতকে বিলম্বিত করলেন, এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং নিজে নিজেই ইক্বামত দিলেন। অতঃপর তিনি ইমামতি করলেন, এরপর ওয়ালিদ তাঁর (ইবনু মাসউদের) কাছে (লোক) পাঠালেন। (তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো) তুমি যা করলে তাতে কিসে তোমাকে প্ররোচিত করল? তোমার কাছে আমীরুল মু’মিনীন বা রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আছে কি? নাকি তুমি বিদআত করছ ? তিনি জবাব দিলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আমার কাছে আসেনি এবং আমি বিদআতও করছি না। বরং আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অস্বীকৃতি এসেছে যে, তোমার ব্যস্ততার কারণে তোমার জন্য আমরা সলাতের অপেক্ষা করব।’’ [. মুসনাদু আহমাদ (ইফা) ২/২৬৬ পৃ. হা/১৪০৬। মুহাক্কিক্ব শুআয়েব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্ব মুসনাদু আহমাদ হা/৪২৯৮]]
عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ الْبَرَّاءِ، قَالَ : قُلْتُ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ الصَّامِتِ : نُصَلِّي يَوْمَ الْجُمُعَةِ خَلْفَ أُمَرَاءَ فَيُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ، قَالَ : فَضَرَبَ فَخِذِي ضَرْبَةً أَوْجَعَتْنِي، وَقَالَ : سَأَلْتُ أَبَا ذَرٍّ، عَنْ ذَلِكَ فَضَرَبَ فَخِذِي، وَقَالَ : سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ : «صَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، وَاجْعَلُوا صَلَاتَكُمْ مَعَهُمْ نَافِلَةً» ، قَالَ : وَقَالَ عَبْدُ اللهِ : ذُكِرَ لِي أَنَّ نَبِيَّ اللهِ ﷺ ضَرَبَ فَخِذَ أَبِي ذَرٍّ .
‘‘আবুল আলিয়া আল-বার্রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুস সামিতকে বললাম, আমি এমন সব আমীর বা নেতার পিছনে জুমুআর সলাত আদায় করি যারা দেরি করে সলাত আদায় করে থাকে। মাতার (রা) বলেন: এ কথা শুনে আবুল আলিয়া আল বার্রা আমার ঊরুর উপরে সজোরে এমনভাবে হাত দিয়ে চাপড়ালেন যে, আমি ব্যথাই পেলাম। এবার তিনি বললেন: এ বিষয়ে আমি সাহাবী আবূ যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনিও আমার ঊরুর উপরে সজোরে হাত দিয়ে চাপড়িয়ে বললেন- আমি রসূলুল্লাহ (স)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন: এমতাবস্থায় তোমরা সময়মতো (প্রথম ওয়াক্তে) সলাত আদায় করে নিবে। আর তাদের সাথে জামাআতের সলাতকে নফল হিসেবে আদায় করবে। আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত বলেছেন, আমি জানতে পেরেছি যে, (এ কথা বলার সময়) আল্লাহর নবী (স)-ও আবূ যার-এর ঊরুর উপর সজোরে চাপড় দিয়েছিলেন।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৫৭(২৪৪/৬৪৮)।]
৫২
অনুচ্ছেদ-৪৭: শাসকের আনুগত্য তার হক্ব, যা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ ও আনুগত্যের মোকাবেলায় শাসকের আনুগত্য নেই।ইবনে উমার (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ؛ فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ .
‘‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর শ্রবণ করা ও আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য, যদিও তা তার পছন্দ বা অপছন্দ হোক- যতক্ষণ না আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া হয়। আল্লাহর নাফরমানীর ব্যাপারে কোনো শ্রবণ ও আনুগত্য নেই।’’ [. সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত (এমদা) ৭/৩৪৯৫ নং।]
السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ؛ فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ .
‘‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর শ্রবণ করা ও আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য, যদিও তা তার পছন্দ বা অপছন্দ হোক- যতক্ষণ না আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া হয়। আল্লাহর নাফরমানীর ব্যাপারে কোনো শ্রবণ ও আনুগত্য নেই।’’ [. সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত (এমদা) ৭/৩৪৯৫ নং।]
৫৩
অনুচ্ছেদ-৪৮: আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নির্দেশ থাকার পাশাপাশি ছাড় বা বিশেষ নির্দেশ দিয়ে থাকলে, ঐ ছাড় বা বিশেষ নির্দেশটি পালন করা ক্ষেত্রবিশেষে প্রাধান্য ও বেশি ফযিলতপূর্ণ হয়। যেমন- জন-মানবহীন এলাকায় একাকী সলাত আদায় করা জামাআতবদ্ধভাবে সলাত আদায়ের থেকে বেশি ফযিলতপূর্ণ। তেমনি ইমাম বা শাসক জামাআত পিছিয়ে দিলে বা দেরিতে পড়লে- সময়মতো সলাত আদায় করাকে ‘সলাত হেফাযত করা হল’ মর্মে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।সাহাবী ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ أَنْ يُؤتَى رُخْصَةٌ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ تُؤتَى مَعْصِيَةٌ .
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলাতাঁর রুখসাত (ছাড়) দেয়া কাজগুলো করা পছন্দ করেন, যেমন তিনি নাফরমানী কাজ করা অপছন্দ করেন।’’ [. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৫৪। মুস্তাফা আ‘যামী (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
অনুরূপ সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصُهُ كَمَا يحب أن تؤتى عزائمه .
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রুখসাত (অবকাশ) দেয়া কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন, যেমন তিনি তাঁর আযিমাত (মৌলিক) কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন।’’ [. সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৩৫৪। শুআয়েব আরনাউত (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ أَنْ يُؤتَى رُخْصَةٌ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ تُؤتَى مَعْصِيَةٌ .
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলাতাঁর রুখসাত (ছাড়) দেয়া কাজগুলো করা পছন্দ করেন, যেমন তিনি নাফরমানী কাজ করা অপছন্দ করেন।’’ [. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৫৪। মুস্তাফা আ‘যামী (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
অনুরূপ সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصُهُ كَمَا يحب أن تؤتى عزائمه .
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রুখসাত (অবকাশ) দেয়া কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন, যেমন তিনি তাঁর আযিমাত (মৌলিক) কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন।’’ [. সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৩৫৪। শুআয়েব আরনাউত (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
সম্প্রতি একটি হাদীসের অ্যাপস তৈরীকারী প্রতিষ্ঠানের ‘ফেসবুকে’ একজন সৌদি প্রবাসী হানাফী আলেমের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। যার বক্তব্যের বিষয়গুলো উক্ত ওয়েব সাইটটির পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি যে, সেটা সরাসরি সহীহ হাদীস বিরোধী বক্তব্য। আমরা ঐ আলেমের নাম উল্লেখ না করে, তার বক্তব্যটি উল্লেখ করে সংক্ষেপে জবাব দিচ্ছি। কেননা, আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনাতে মূল জবাব এসে গেছে।
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,
আল-হামদুলিল্লাহি রবিবল আলামীন, ওয়াস্ সলাতু ওয়াস সালামু আলা আশরাফিল আম্বিয়া-ই ওয়াল মুরসালীন, নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাঈন, আম্মা বা‘দ।
সুপ্রিয় দর্শক শ্রোতা ভাই ও বোনেরা,
আমাদের দেশে সম্প্রতি আসরের সলাত মাসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে আদায় করাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের বিভ্রান্তি এবং ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, কিছু লোকের মধ্যে। আর এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে মূলত আসরের সলাতের ওয়াক্ত কখন শুরু হয় সেটাকে কেন্দ্র করে। আসরের সলাতের ওয়াক্ত ঠিক কখন শুরু হয়? এটা নিয়ে শত শত বছর ধরে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে প্রসিদ্ধ দুটি মত চলে আসছে।
এক শ্রেণির ওলামায়ে কেরামের মতে ঠিক দ্বিপ্রহরে মধ্য আকাশে যখন মাথা বরাবর সূর্য অবস্থান করে। ঐ সময় প্রতিটি বস্তুর যে ছায়া থাকে, সবচেয়ে ক্ষুদ্র আকারের ছায়া। যে ছায়াকে মূল ছায়া বলা হয়। ঐ ছায়াটি মূল ছায়ার পরে আরও বৃদ্ধি হতে হতে, দীর্ঘ হতে হতে, বড় হতে হতে যখন সংশ্লিষ্ট বস্তুর সমপরিমাণ হয়ে যায়, তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর এ মতটি হলো ইমাম শাফেঈ ও আহমাদসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামের।
আর অপর মতটি হল, সূর্য যখন মধ্য আকাশে অবস্থান করে তখন প্রতিটি বস্তুর যে মূল ছায়া থাকে, সে মূল ছায়া থেকে আরও বৃদ্ধি হতে হতে যখন ছায়াটি সংশ্লিষ্ট বস্তুর দ্বিগুণ পরিমাণ হয়ে যায়, তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর এ মতটি হল, ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবূ ইউসুফসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামের।
পর্যালোচনা-১: উক্ত বক্তব্যের জবাব আমরা আলেমদের থেকে জেনে নেব। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’-তে হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন:
وَقَدْ أَخْرَجَ مُسْلِمٌ عِدَّةَ أَحَادِيثَ مُصَرَّحَةً بِالْمَقْصُودِ وَلَمْ يُنْقَلْ عَنْ أَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مُخَالَفَةٌ فِيْ ذَلِكَ إِلَّا عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ فَالْمَشْهُورُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ أَوَّلُ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرُ ظِلِّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَيْهِ بِالتَّثْنِيَةِ قَالَ الْقُرْطُبِيُّ خَالَفَهُ النَّاسُ كُلُّهُمْ فِيْ ذَلِكَ حَتَّى أَصْحَابُهُ يَعْنِي الْآخِذِينَ عَنْهُ وَإِلَّا فَقَدِ انْتَصَرَ لَهُ جَمَاعَةٌ مِمَّنْ جَاءَ بَعْدَهُمْ فَقَالُوا ثَبَتَ الْأَمْرُ بِالْإِبْرَادِ وَلَا يَحْصُلُ إِلَّا بَعْدَ ذَهَابِ اشْتِدَادِ الْحَرِّ وَلَا يَذْهَبُ فِيْ تِلْكَ الْبِلَادِ إِلَّا بَعْدَ أَنْ يَصِيرَ ظِلُّ الشَّيْءِ مِثْلَيْهِ فَيَكُونُ أَوَّلُ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرَ الظِّلِّ مِثْلَيْهِ وَحِكَايَةُ مِثْلِ هَذَا تُغْنِي عَنْ رده .
‘‘ইমাম মুসলিম (রহ) এই (এক ছায়ার পর আসরের ওয়াক্ত হওয়া) মর্মে একাধিক সুস্পষ্ট হাদীস বর্ণনা করেছেন। কোনো আলেম থেকে এর বিরোধী বক্তব্য নেই। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রহ) থেকে প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে যে, আসরের ওয়াক্ত ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর শুরু হয়। ইমাম কুরতুবী (রহ) বলেছেন: সমস্ত মানুষ (আলেমগণ) তাঁর বিরোধিতা করেছেন, অর্থাৎ তাঁদের নিকট আসরের ওয়াক্ত এক ছায়া থেকে শুরু হয়ে যায়। এমনকি ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্যও তাঁর বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু ইমাম সাহেবের পরবর্তী অনুসারীরা তাঁর পক্ষাবলম্বন করতে গিয়ে বলেছেন: ইবরাদ বা ঠান্ডায় সলাত আদায় প্রমাণিত। আর কঠিন তাপ দূর না হওয়া পর্যন্ত ঠান্ডা হবে না এবং আরব দেশগুলোতে বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ না হওয়া পর্যন্ত তাপ দূর হয় না। অতএব প্রমাণিত হল, বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হলে আসরের সলাতের আওয়াল ওয়াক্ত শুরু হয়।- এ ধরনের আলোচনা জবাব নিস্প্রয়োজন। ’’ [. ফতহুল বারী ২/২৫ পৃ. ৫৪৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্র.।]
বুঝা গেল সৌদি প্রবাসী হানাফী আলেম আমাদেরকে যে তথ্য দিয়েছেন তা সত্য নয়। বরং ইমাম আবূ হানাফী ছাড়া সবাই এর বিরোধিতা করেছেন, এমনকি তাঁর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) । সুতরাং বক্তা প্রথমেই ভুল তথ্য দিয়ে মাসআলাটি শুরু করেছেন। আমরা পূর্বে হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’ থেকে এটা নিশ্চিতভাবে জেনেছি যে, ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবূ ইউসুফের মতে আসরের ওয়াক্ত হলো বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হলে। [. এই বইয়ের ‘হাদীস-৫০’-এর আলোচনা দ্র.।] এ পর্যায়ে সৌদিপ্রবাসী হানাফী বক্তা কীভাবে বললেন, বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হলে আসরের ওয়াক্ত শুরু হওয়াটা উক্ত ইমামদ্বয়ের মত? আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সত্য গোপন করা থেকে হেফাযত করুন।
আল-হামদুলিল্লাহি রবিবল আলামীন, ওয়াস্ সলাতু ওয়াস সালামু আলা আশরাফিল আম্বিয়া-ই ওয়াল মুরসালীন, নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাঈন, আম্মা বা‘দ।
সুপ্রিয় দর্শক শ্রোতা ভাই ও বোনেরা,
আমাদের দেশে সম্প্রতি আসরের সলাত মাসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে আদায় করাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের বিভ্রান্তি এবং ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, কিছু লোকের মধ্যে। আর এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে মূলত আসরের সলাতের ওয়াক্ত কখন শুরু হয় সেটাকে কেন্দ্র করে। আসরের সলাতের ওয়াক্ত ঠিক কখন শুরু হয়? এটা নিয়ে শত শত বছর ধরে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে প্রসিদ্ধ দুটি মত চলে আসছে।
এক শ্রেণির ওলামায়ে কেরামের মতে ঠিক দ্বিপ্রহরে মধ্য আকাশে যখন মাথা বরাবর সূর্য অবস্থান করে। ঐ সময় প্রতিটি বস্তুর যে ছায়া থাকে, সবচেয়ে ক্ষুদ্র আকারের ছায়া। যে ছায়াকে মূল ছায়া বলা হয়। ঐ ছায়াটি মূল ছায়ার পরে আরও বৃদ্ধি হতে হতে, দীর্ঘ হতে হতে, বড় হতে হতে যখন সংশ্লিষ্ট বস্তুর সমপরিমাণ হয়ে যায়, তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর এ মতটি হলো ইমাম শাফেঈ ও আহমাদসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামের।
আর অপর মতটি হল, সূর্য যখন মধ্য আকাশে অবস্থান করে তখন প্রতিটি বস্তুর যে মূল ছায়া থাকে, সে মূল ছায়া থেকে আরও বৃদ্ধি হতে হতে যখন ছায়াটি সংশ্লিষ্ট বস্তুর দ্বিগুণ পরিমাণ হয়ে যায়, তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর এ মতটি হল, ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবূ ইউসুফসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামের।
পর্যালোচনা-১: উক্ত বক্তব্যের জবাব আমরা আলেমদের থেকে জেনে নেব। সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’-তে হাফেয ইবনু হাজার (রহ) লিখেছেন:
وَقَدْ أَخْرَجَ مُسْلِمٌ عِدَّةَ أَحَادِيثَ مُصَرَّحَةً بِالْمَقْصُودِ وَلَمْ يُنْقَلْ عَنْ أَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مُخَالَفَةٌ فِيْ ذَلِكَ إِلَّا عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ فَالْمَشْهُورُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ أَوَّلُ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرُ ظِلِّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَيْهِ بِالتَّثْنِيَةِ قَالَ الْقُرْطُبِيُّ خَالَفَهُ النَّاسُ كُلُّهُمْ فِيْ ذَلِكَ حَتَّى أَصْحَابُهُ يَعْنِي الْآخِذِينَ عَنْهُ وَإِلَّا فَقَدِ انْتَصَرَ لَهُ جَمَاعَةٌ مِمَّنْ جَاءَ بَعْدَهُمْ فَقَالُوا ثَبَتَ الْأَمْرُ بِالْإِبْرَادِ وَلَا يَحْصُلُ إِلَّا بَعْدَ ذَهَابِ اشْتِدَادِ الْحَرِّ وَلَا يَذْهَبُ فِيْ تِلْكَ الْبِلَادِ إِلَّا بَعْدَ أَنْ يَصِيرَ ظِلُّ الشَّيْءِ مِثْلَيْهِ فَيَكُونُ أَوَّلُ وَقْتِ الْعَصْرِ مَصِيرَ الظِّلِّ مِثْلَيْهِ وَحِكَايَةُ مِثْلِ هَذَا تُغْنِي عَنْ رده .
‘‘ইমাম মুসলিম (রহ) এই (এক ছায়ার পর আসরের ওয়াক্ত হওয়া) মর্মে একাধিক সুস্পষ্ট হাদীস বর্ণনা করেছেন। কোনো আলেম থেকে এর বিরোধী বক্তব্য নেই। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রহ) থেকে প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে যে, আসরের ওয়াক্ত ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর শুরু হয়। ইমাম কুরতুবী (রহ) বলেছেন: সমস্ত মানুষ (আলেমগণ) তাঁর বিরোধিতা করেছেন, অর্থাৎ তাঁদের নিকট আসরের ওয়াক্ত এক ছায়া থেকে শুরু হয়ে যায়। এমনকি ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্যও তাঁর বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু ইমাম সাহেবের পরবর্তী অনুসারীরা তাঁর পক্ষাবলম্বন করতে গিয়ে বলেছেন: ইবরাদ বা ঠান্ডায় সলাত আদায় প্রমাণিত। আর কঠিন তাপ দূর না হওয়া পর্যন্ত ঠান্ডা হবে না এবং আরব দেশগুলোতে বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ না হওয়া পর্যন্ত তাপ দূর হয় না। অতএব প্রমাণিত হল, বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হলে আসরের সলাতের আওয়াল ওয়াক্ত শুরু হয়।- এ ধরনের আলোচনা জবাব নিস্প্রয়োজন। ’’ [. ফতহুল বারী ২/২৫ পৃ. ৫৪৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্র.।]
বুঝা গেল সৌদি প্রবাসী হানাফী আলেম আমাদেরকে যে তথ্য দিয়েছেন তা সত্য নয়। বরং ইমাম আবূ হানাফী ছাড়া সবাই এর বিরোধিতা করেছেন, এমনকি তাঁর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) । সুতরাং বক্তা প্রথমেই ভুল তথ্য দিয়ে মাসআলাটি শুরু করেছেন। আমরা পূর্বে হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’ থেকে এটা নিশ্চিতভাবে জেনেছি যে, ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবূ ইউসুফের মতে আসরের ওয়াক্ত হলো বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হলে। [. এই বইয়ের ‘হাদীস-৫০’-এর আলোচনা দ্র.।] এ পর্যায়ে সৌদিপ্রবাসী হানাফী বক্তা কীভাবে বললেন, বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হলে আসরের ওয়াক্ত শুরু হওয়াটা উক্ত ইমামদ্বয়ের মত? আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সত্য গোপন করা থেকে হেফাযত করুন।
প্রথম ও দ্বিতীয় মতের মধ্যে খোলাসা পার্থক্য হলো যে, প্রথম মত অনুযায়ী যখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়, দ্বিতীয় মত অনুযায়ী তার চাইতে এক ঘণ্টা অথবা পৌনে এক ঘণ্টা পরে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যেহেতু বেশিরভাগ মাসজিদগুলো হানাফী ফিক্বাহকে অনুসরণ করে, হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের গবেষণা অনুযায়ী আসরের ওয়াক্ত যেহেতু প্রথম মতের চাইতে এক ঘণ্টা অথবা পৌনে এক ঘণ্টা পরে শুরু হয়ে থাকে, সেহেতু আমাদের দেশের মাসজিদগুলোতে সে অনুযায়ী আসরের ওয়াক্ত প্রথম মতের উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে এক ঘণ্টা অথবা পৌনে এক ঘণ্টা পরে শুরু হয়ে থাকে।
পর্যালোচনা-২: পহেলা জুন ও জুলাই যদি আমরা উভয় মতের আসরের সলাতের শুরুর ওয়াক্ত নির্ণয় করি, তা হলে সেক্ষেত্রে পার্থক্য হয়- প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা বিশ মিনিট। যা উক্ত বক্তার হিসাব থেকে অনেক বেশি।
পর্যালোচনা-২: পহেলা জুন ও জুলাই যদি আমরা উভয় মতের আসরের সলাতের শুরুর ওয়াক্ত নির্ণয় করি, তা হলে সেক্ষেত্রে পার্থক্য হয়- প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা বিশ মিনিট। যা উক্ত বক্তার হিসাব থেকে অনেক বেশি।
এখন আমাদের দেশের উলামায়ে কেরামের মধ্যে যারা প্রথম মতকে বিশুদ্ধ মনে করেন, সঠিক মনে করেন, তাদের অনেককে বলতে শোনা যায়, সাধারণ মানুষকে তারা বলে থাকেন যে, আপনারা আপনাদের এলাকাতে- প্রথম মত অনুযায়ী আসরের জামাআত হয় এরকম কোনো মাসজিদ যদি না পান, তা হলে সাধারণ মাসজিদে জামাআতের সাথে সলাত আদায় করার জন্য অপেক্ষা করবেন না। বরং আপনারা আসরের সলাত একাকি বাসায় পড়ে ফেলবেন। এক্ষেত্রে তারা ‘সহীহ মুসলিমে’র একটি হাদীসকে দলিল হিসেবে পেশ করে থাকেন, যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবূ যার আল-গিফারী (রা), তাকে নবী (স) একবার বলেছিলেন:
كيف أنت إذا كانت عليك أمراءُ يُؤخِّرونَ الصلاةَ عن وقتِها ، أو يُميتونَ الصلاةَ عن وقتِها ؟
অর্থাৎ ‘‘এমন একটি সময় হয়তো আসবে যখন মুসলিম শাসকেরা অনেক দেরিতে মাসজিদে আসবেন, আর তারা দেরিতে মাসজিদে আসার কারণে দেরিতে মাসজিদে সলাতের জামাআত দাঁড়াবে। আর এতো দেরিতে আসবেন, এতো দেরিতে মাসজিদে জামাআত দাঁড়াবে যে, সলাতকে তারা মূল ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করে ফেলবেন। অথবা তিনি (স) বলেছেন, তারা সলাতকে হত্যা করে ফেলবে। এত দেরি করে ফেলবেন যে, সলাতের প্রাণ যায়-যায় অবস্থা হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তুমি কি করবে? তখন আবূ যার গিফারী (রা) বলেছিলেন: فما تأمرني ؟ ‘‘হে আল্লাহর রসূল! এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আমাকে আপনি কি করার নির্দেশ করবেন, আমি তাই করব? তখন নবী (স) বলেছিলেন: صَلِّ الصلاةَ لوقتِها ‘এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, তুমি নিজে নিজে একাকি সলাত পড়ে ফেলবে এরপর পরে যদি তাদের সাথে জামাআতে শামিল হওয়ার সুযোগ হয় হবে এবং সেটা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। এই হাদীস সুনানু আবূ দাউদে ও নাসাঈতেও বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকে। এ হাদীসের আলোকে যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম বলে থাকেন যে, আমাদের দেশে যেহেতু ফিক্বহ হানাফী অনুসারে এক ঘণ্টা অথবা পৌনে এক ঘণ্টা পরে আসরের সলাত শুরু হয় অন্যান্য উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে, সেহেতু আপনারা যার যার বাসায় একাকি সলাত পড়ে ফেলবেন।
পর্যালোচনা-৩: সুনানু ইবনু মাজাহতে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসটির দাবি পরিপূর্ণ এবং খুবই সুস্পষ্ট, যা নিম্নরূপ:
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ " سَيَلِي أُمُورَكُمْ بَعْدِي رِجَالٌ يُطْفِئُونَ السُّنَّةَ وَيَعْمَلُونَ بِالْبِدْعَةِ وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا " فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنْ أَدْرَكْتُهُمْ كَيْفَ أَفْعَلُ قَالَ " تَسْأَلُنِي يَا ابْنَ أُمِّ عَبْدٍ كَيْفَ تَفْعَلُ لاَ طَاعَةَ لِمَنْ عَصَى اللَّهَ " .
‘‘নবী (স) বলেছেন: অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের আমীর হবে, যারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদআতের অনুসরণ করবে এবং সলাত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি যদি তাদের (যুগ) পাই, তবে কী করব? তিনি বলেন: হে উম্মু আবদ-এর পুত্র! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছ যে, তুমি কী করবে? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে, তার আনুগত্য করা যাবে না।’’ [. ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৫; সহীহ- আলবানী।]
সম্মানিত পাঠক! এখানে শাসক হওয়ার সাথে সাথে তাদের আরও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হল:
(১) তারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে,
(২) বিদআতের অনুসরণ করবে, এবং
(৩) সলাত নির্দিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করার ব্যাপারে দেরি করবে।
হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, বিদআতি ও সুন্নাত অনুসারী না হওয়ায় ঐ সমস্ত শাসককে অনুসরণ করা যাবে না। যারা বিদআত ও সুন্নাত বিলুপ্তির সাথে সাথে সলাত দেরিতে আদায় করে। পক্ষান্তরে যারা কেবল সলাত দেরিতে আদায় করে, তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, একাকী সময়মতো সলাত আদায় করে পরে জামাআতে শরীক হতে। এর দাবি কখনই এটা নয় যে, তারা একটি সলাতের ওয়াক্ত শেষ করে পরবর্তী সলাতের ওয়াক্তে জামাআত ক্বায়েম করবে। যদি সেটা হতো, তবে নবী (স) তাদের সাথে যুক্ত হয়ে পরবর্তী জামাআতবদ্ধ সলাত আদায়কে নফল বা অতিরিক্তি সওয়াব অর্জনের মাধ্যম বানাতেন না।
কিছু পরে আমরা জানতে পারব (‘পর্যালোচনা-৪, ৫ ও ৬’) এক্ষেত্রে শাসক ও আলেম একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
كيف أنت إذا كانت عليك أمراءُ يُؤخِّرونَ الصلاةَ عن وقتِها ، أو يُميتونَ الصلاةَ عن وقتِها ؟
অর্থাৎ ‘‘এমন একটি সময় হয়তো আসবে যখন মুসলিম শাসকেরা অনেক দেরিতে মাসজিদে আসবেন, আর তারা দেরিতে মাসজিদে আসার কারণে দেরিতে মাসজিদে সলাতের জামাআত দাঁড়াবে। আর এতো দেরিতে আসবেন, এতো দেরিতে মাসজিদে জামাআত দাঁড়াবে যে, সলাতকে তারা মূল ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করে ফেলবেন। অথবা তিনি (স) বলেছেন, তারা সলাতকে হত্যা করে ফেলবে। এত দেরি করে ফেলবেন যে, সলাতের প্রাণ যায়-যায় অবস্থা হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তুমি কি করবে? তখন আবূ যার গিফারী (রা) বলেছিলেন: فما تأمرني ؟ ‘‘হে আল্লাহর রসূল! এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আমাকে আপনি কি করার নির্দেশ করবেন, আমি তাই করব? তখন নবী (স) বলেছিলেন: صَلِّ الصلاةَ لوقتِها ‘এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, তুমি নিজে নিজে একাকি সলাত পড়ে ফেলবে এরপর পরে যদি তাদের সাথে জামাআতে শামিল হওয়ার সুযোগ হয় হবে এবং সেটা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। এই হাদীস সুনানু আবূ দাউদে ও নাসাঈতেও বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকে। এ হাদীসের আলোকে যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম বলে থাকেন যে, আমাদের দেশে যেহেতু ফিক্বহ হানাফী অনুসারে এক ঘণ্টা অথবা পৌনে এক ঘণ্টা পরে আসরের সলাত শুরু হয় অন্যান্য উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে, সেহেতু আপনারা যার যার বাসায় একাকি সলাত পড়ে ফেলবেন।
পর্যালোচনা-৩: সুনানু ইবনু মাজাহতে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসটির দাবি পরিপূর্ণ এবং খুবই সুস্পষ্ট, যা নিম্নরূপ:
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ " سَيَلِي أُمُورَكُمْ بَعْدِي رِجَالٌ يُطْفِئُونَ السُّنَّةَ وَيَعْمَلُونَ بِالْبِدْعَةِ وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا " فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنْ أَدْرَكْتُهُمْ كَيْفَ أَفْعَلُ قَالَ " تَسْأَلُنِي يَا ابْنَ أُمِّ عَبْدٍ كَيْفَ تَفْعَلُ لاَ طَاعَةَ لِمَنْ عَصَى اللَّهَ " .
‘‘নবী (স) বলেছেন: অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের আমীর হবে, যারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদআতের অনুসরণ করবে এবং সলাত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি যদি তাদের (যুগ) পাই, তবে কী করব? তিনি বলেন: হে উম্মু আবদ-এর পুত্র! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছ যে, তুমি কী করবে? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে, তার আনুগত্য করা যাবে না।’’ [. ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৫; সহীহ- আলবানী।]
সম্মানিত পাঠক! এখানে শাসক হওয়ার সাথে সাথে তাদের আরও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হল:
(১) তারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে,
(২) বিদআতের অনুসরণ করবে, এবং
(৩) সলাত নির্দিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করার ব্যাপারে দেরি করবে।
হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, বিদআতি ও সুন্নাত অনুসারী না হওয়ায় ঐ সমস্ত শাসককে অনুসরণ করা যাবে না। যারা বিদআত ও সুন্নাত বিলুপ্তির সাথে সাথে সলাত দেরিতে আদায় করে। পক্ষান্তরে যারা কেবল সলাত দেরিতে আদায় করে, তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, একাকী সময়মতো সলাত আদায় করে পরে জামাআতে শরীক হতে। এর দাবি কখনই এটা নয় যে, তারা একটি সলাতের ওয়াক্ত শেষ করে পরবর্তী সলাতের ওয়াক্তে জামাআত ক্বায়েম করবে। যদি সেটা হতো, তবে নবী (স) তাদের সাথে যুক্ত হয়ে পরবর্তী জামাআতবদ্ধ সলাত আদায়কে নফল বা অতিরিক্তি সওয়াব অর্জনের মাধ্যম বানাতেন না।
কিছু পরে আমরা জানতে পারব (‘পর্যালোচনা-৪, ৫ ও ৬’) এক্ষেত্রে শাসক ও আলেম একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সে সমস্ত উলামায়ে কেরামের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করব কয়েক কারণে:
(১) নবী (স) এই হাদীসে যে আবূ যার গিফারী (রা)-কে অনুমতি দিয়েছেন যে, তুমি একাকি সলাত পড়ে ফেলবে এবং পরবর্তী জামাআতে শামিল হওয়টা ঐচ্ছিক হিসেবে তোমার জন্য গণ্য হবে, সেটা ছিল- মূলত মুসলিম শাসকরা যখন অলসতা করে রাজনৈতিক কারণে, উদাসীনতার কারণে তারা মাসজিদে দেরিতে এসে দেরিতে জামাআত কায়েম করবেন, তখনকার জন্য।
পর্যালোচনা-৪: শাসক ছাড়াও এ সম্পর্কিত অপর একটি বর্ণনাতে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) আলেমদের ক্ষেত্রেও উক্ত হুকুম প্রয়োগ করেছেন। তিনি (রা) বলেন:
إِنَّكُمْ فِيْ زَمَانٍ قَلِيلٍ خُطَبَاؤُهُ، كَثِيرٍ عُلَمَاؤُهُ، يُطِيلُونَ الصَّلَاةَ، وَيُقَصِّرُونَ الْخُطْبَةَ، وَإِنَّهُ سَيَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ كَثِيرٌ خُطَبَاؤُهُ، قَلِيلٌ عُلَمَاؤُهُ، يُطِيلُونَ الْخُطْبَةَ، وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ، حَتَّى يُقَالَ : هَذَا شَرَقُ الْمَوْتَى " قَالَ : قُلْتُ لَهُ : وَمَا شَرَقُ الْمَوْتَى؟ قَالَ : «إِذَا اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ جِدًّا، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ فَلْيُصَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، فَإِنِ احْتُبِسَ فَلْيُصَلِّ مَعَهُمْ، وَلْيَجْعَلْ صَلَاتَهُ وَحْدَهُ الْفَرِيضَةَ، وَلْيَجْعَلْ صَلَاتَهُ مَعَهُمْ تَطَوُّعًا .
‘‘তুমি ঐ যামানাতে আছ যখন তাদের খতীবদের সংখ্যা কম হয়, তাদের অনেক আলেম আছেন, তাদের সলাত দীর্ঘ হয় এবং তাদের খুতবা ছোট হয়। তোমার উপর এমন যামানা আসবে যখন তাদের অনেক খতীব হবে, তাদের অল্প আলেম হবে, তাদের খুতবা হবে দীর্ঘ, আর তাদের সলাত হবে দেরিতে- এমনকি তারা বলবে: এই পূর্ব মারা গেছে। (রাবী) বলেন: আমি তাঁকে বললাম: পূর্ব মারা যাওয়াটা কি? তিনি (রা) বললেন: যখন সূর্য খুব হলুদ হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন (যামানা) পাবে, সে যেন তার ওয়াক্তে সলাত পড়ে। অতঃপর যদি বাধ্য করা হয় তবে তাদের সাথে সলাত আদায় করে নেবে। তার একক সলাতটি ফরয হিসেবে গণ্য হবে এবং তাদের সাথে আদায়কৃত সলাত নফল হিসেবে গণ্য হবে।’’ [. মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব হা/৩৭৮৭, মুহাল্লা (শামেলা) ২/৪৪ পৃ.। সনদে আবূ ইসহাক্ব মুদাল্লিস। আবূল আহওয়াস থেকে তারা শোনা উল্লেখ হয়নি। তা ছাড়া তার ইখতিলাত (বর্ণনাতে হেরফের) হতো। ইখতিলাতের পূর্বে বা পরে তার থেকে মুআম্মার শুনে বর্ণনা করেছেন- এমনটিও কেউ বলেননি। [আনিসুস সারী ফী তাহক্বীক্ব ওয়া তাখরীজ ফাতহুল বারী ৬/৪২৮১ পৃ. হা/৩০০৭] সহীহ মুসলিমে হাদীসটির [হা/১০৭৮ (২৬/৫৩৪)] মূলভাবে সাক্ষ্য থাকায় তাদলীসের ত্রুটি দূর হয়, ফলে হাদীসটি সহীহ বা হাসান। ইমাম হায়সামী (রহ) বলেন: বর্ণনাকারীগণ সিক্বাহ। (মাজমাউয যাওয়াযিদ হা/৩১৬০)। কিছুপরে জানব, শাসক ও আলেম ক্ষেত্রবিশেষ হকুমের দিকে থেকে পরিপূরক।]
বুঝা যাচ্ছে, এ কাজটি শাসকদের ন্যায় আলেমদের দ্বারাও সংঘটিত হবে।
(১) নবী (স) এই হাদীসে যে আবূ যার গিফারী (রা)-কে অনুমতি দিয়েছেন যে, তুমি একাকি সলাত পড়ে ফেলবে এবং পরবর্তী জামাআতে শামিল হওয়টা ঐচ্ছিক হিসেবে তোমার জন্য গণ্য হবে, সেটা ছিল- মূলত মুসলিম শাসকরা যখন অলসতা করে রাজনৈতিক কারণে, উদাসীনতার কারণে তারা মাসজিদে দেরিতে এসে দেরিতে জামাআত কায়েম করবেন, তখনকার জন্য।
পর্যালোচনা-৪: শাসক ছাড়াও এ সম্পর্কিত অপর একটি বর্ণনাতে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) আলেমদের ক্ষেত্রেও উক্ত হুকুম প্রয়োগ করেছেন। তিনি (রা) বলেন:
إِنَّكُمْ فِيْ زَمَانٍ قَلِيلٍ خُطَبَاؤُهُ، كَثِيرٍ عُلَمَاؤُهُ، يُطِيلُونَ الصَّلَاةَ، وَيُقَصِّرُونَ الْخُطْبَةَ، وَإِنَّهُ سَيَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ كَثِيرٌ خُطَبَاؤُهُ، قَلِيلٌ عُلَمَاؤُهُ، يُطِيلُونَ الْخُطْبَةَ، وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ، حَتَّى يُقَالَ : هَذَا شَرَقُ الْمَوْتَى " قَالَ : قُلْتُ لَهُ : وَمَا شَرَقُ الْمَوْتَى؟ قَالَ : «إِذَا اصْفَرَّتِ الشَّمْسُ جِدًّا، فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ فَلْيُصَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، فَإِنِ احْتُبِسَ فَلْيُصَلِّ مَعَهُمْ، وَلْيَجْعَلْ صَلَاتَهُ وَحْدَهُ الْفَرِيضَةَ، وَلْيَجْعَلْ صَلَاتَهُ مَعَهُمْ تَطَوُّعًا .
‘‘তুমি ঐ যামানাতে আছ যখন তাদের খতীবদের সংখ্যা কম হয়, তাদের অনেক আলেম আছেন, তাদের সলাত দীর্ঘ হয় এবং তাদের খুতবা ছোট হয়। তোমার উপর এমন যামানা আসবে যখন তাদের অনেক খতীব হবে, তাদের অল্প আলেম হবে, তাদের খুতবা হবে দীর্ঘ, আর তাদের সলাত হবে দেরিতে- এমনকি তারা বলবে: এই পূর্ব মারা গেছে। (রাবী) বলেন: আমি তাঁকে বললাম: পূর্ব মারা যাওয়াটা কি? তিনি (রা) বললেন: যখন সূর্য খুব হলুদ হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন (যামানা) পাবে, সে যেন তার ওয়াক্তে সলাত পড়ে। অতঃপর যদি বাধ্য করা হয় তবে তাদের সাথে সলাত আদায় করে নেবে। তার একক সলাতটি ফরয হিসেবে গণ্য হবে এবং তাদের সাথে আদায়কৃত সলাত নফল হিসেবে গণ্য হবে।’’ [. মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব হা/৩৭৮৭, মুহাল্লা (শামেলা) ২/৪৪ পৃ.। সনদে আবূ ইসহাক্ব মুদাল্লিস। আবূল আহওয়াস থেকে তারা শোনা উল্লেখ হয়নি। তা ছাড়া তার ইখতিলাত (বর্ণনাতে হেরফের) হতো। ইখতিলাতের পূর্বে বা পরে তার থেকে মুআম্মার শুনে বর্ণনা করেছেন- এমনটিও কেউ বলেননি। [আনিসুস সারী ফী তাহক্বীক্ব ওয়া তাখরীজ ফাতহুল বারী ৬/৪২৮১ পৃ. হা/৩০০৭] সহীহ মুসলিমে হাদীসটির [হা/১০৭৮ (২৬/৫৩৪)] মূলভাবে সাক্ষ্য থাকায় তাদলীসের ত্রুটি দূর হয়, ফলে হাদীসটি সহীহ বা হাসান। ইমাম হায়সামী (রহ) বলেন: বর্ণনাকারীগণ সিক্বাহ। (মাজমাউয যাওয়াযিদ হা/৩১৬০)। কিছুপরে জানব, শাসক ও আলেম ক্ষেত্রবিশেষ হকুমের দিকে থেকে পরিপূরক।]
বুঝা যাচ্ছে, এ কাজটি শাসকদের ন্যায় আলেমদের দ্বারাও সংঘটিত হবে।
আর আমাদের দেশের পরিস্থিতিটা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন, আমাদের দেশে আসরের সলাতে অন্যান্য উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে এক ঘণ্টা বা পৌনে এক ঘণ্টা পরে শুরু হচ্ছে- এটি হলো উলামায়ে কেরামের গবেষণাগত মতপার্থক্যের কারণে। গবেষণাগত মতপার্থক্যের কারণে যদি দেরি করা হয় সেটি, আর উদাসীনতার কারণে যে দেরি করা হয়- রাজা-বাদশাহরা যে দেরি করেন, সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ব্যতিক্রম বিষয়। দুটির সাথে আসমান ও যমীনের মধ্যে পার্থক্য।
পর্যালোচনা-৫: এই ইজতিহাদটির ক্ষেত্রে সহীহ মুতাওয়াতির হাদীসের বিরোধিতা করা হয়েছে। যেমন- কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
وامّا اخر وقت الظهر فلم يوجد فى حديث صحيح ولا ضعيف انه يبقى بعد مصير ظل كل شىء مثله ولذا خالف أبا حنيفة فى هذه المسألة صاحباه ووافقا الجمهور .
‘‘যোহরের সলাতের শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে কোনো সহীহ বা যঈফ হাদীসে এভাবে উল্লেখ হয়নি যে, সেটা প্রত্যেক বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে। এ কারণেই এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর মতও এর পরিপন্থি এবং দুজনের অবস্থান জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহা্দ্দিসগণের) অনুরূপ।’’ [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ., সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
অনুরূপ নিমাবী হানাফী (রহ)-এর বক্তব্যও পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, দুই ছায়া থেকে আসর শুরু মর্মে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। অথচ এক ছায়ার হাদীসগুলো মুতাওয়াতির এবং জুমহুর আলেমগণ এর অনুসারী। এ পর্যায়ে নবী (স)-এর নিচের হাদীসটি স্মরণযোগ্য:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ " مَنْ أُفْتِيَ بِفُتْيَا غَيْرَ ثَبَتٍ فَإِنَّمَا إِثْمُهُ عَلَى مَنْ أَفْتَاهُ .
‘‘আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যে ব্যক্তিকে প্রমাণ ছাড়া কোনো ফাতওয়া দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে তার (আমলটির) গোনাহ ফাতওয়াদাতার উপর পড়বে।’’ [. ইবনু মাজাহ হা/৫৩, আলবানী (রহ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন ।]
হানাফীদের আসরের ওয়াক্ত হওয়ার আরেকটি শর্ত হল, সূর্যের রং বিবর্ণ তথা হলুদ হওয়ার সূচনাতে। এ মর্মে ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে’ উল্লিখিত হয়েছে:
… وَيُسْتَحَبُّ تَأْخِيرُ الْعَصْرِ فِيْ كُلِّ زَمَانٍ مَا لَمْ تَتَغَيَّرْ الشَّمْسُ وَالْعِبْرَةُ لِتَغَيُّرِ الْقُرْصِ لَا لِتَغَيُّرِ الضَّوْءِ فَمَتَى صَارَ الْقُرْصُ بِحَيْثُ لَا تَحَارُ فِيهِ الْعَيْنُ فَقَدْ تَغَيَّرَتْ وَإِلَّا لَا .
‘‘... সবসময় আসরের সলাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব, যতক্ষণ না সূর্যের রং বিবর্ণ হয়। সূর্যের গোলকের পরিবর্তন মূলত ধর্তব্য। আলো বিবর্ণ হওয়া ধর্তব্য নয়। যখন সূর্যের গোলক এমন হয়ে যায় যে, এর প্রতি নজর করলে চোখ ধাঁধিয়ে না যায়, তখন মনে করতে হবে যে, সূর্যের মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে। এমন না হলে মনে করতে হবে যে, সূর্যের মধ্যে পরিবর্তন হয়নি।’’ [. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/১৪৫ পৃ.। অনুরূপ হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’ (ইফা) ১/৬১ পৃ., আশরাফুল হিদায়া ১/২৭৪ পৃ.।]
অর্থাৎ হানাফী মাযহাব অনুযায়ী দুই ছায়া ও সূর্যের রং বিবর্ণ হওয়া উভয়টি শর্ত। এই শর্তও সহীহ হাদীসের বিরোধী। এ পর্যায়ে কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
ثبت عنه ﷺ والعصر الى اصفرار الشمس مكروه تحريما وأشدّ كراهة تأخير العصر الى الاصفرار لورود النهى عن الصّلوة فى ذلك الوقت وكونه منسوبا الى الشيطان .
‘‘নবী (স) থেকে প্রমাণিত- সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত আসরের সলাতে বিলম্ব করা অতিশয় মাকরুহ। কেননা, ঐ সময় সলাত আদায় করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং তাকে শয়তানের সাথেও সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে।’’ [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ঐ।]
স্পষ্ট দলিল-প্রমাণ থাকার পরও ইজতিহাদ বা গবেষণার নামে ভিন্ন মত প্রদান শরিআতে বৈধ নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ج وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ .
‘‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা স্পষ্ট দলিল-প্রমাণ আসার পর ফিরক্বা বা দলাদলি করে ও ইখতিলাফ বা মতবিরোধ করে, তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক আযাব।’’ [. সূরা আলে-ইমরান: ১০৫ আয়াত।]
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا .
‘‘আর আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর সে বিষয়ে তাদের কোনো (সিদ্ধান্তের) এখতিয়ার নেই। আর যে আল্লাহ তাঁর রসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো।’’ [সূরা আহযাব: ৩৬]
এ মাসআলাটির ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ (স) থেকে স্পষ্ট দলিল-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইজতিহাদের নামে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিলে- পূর্বোক্ত আয়াত দুটি অর্থহীন হয়ে যায়। সেটাকে গণতন্ত্র বলা যেতে পারে, কিন্তু কখনই সেটা ইসলাম নয়।
এ পর্যায়ে সৌদিপ্রবাসী বক্তাকে বিনয়ের সাথে বলছি, আপনি সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণ করুন: ‘‘দুই ছায়া পর্যন্ত যোহরে ওয়াক্ত এবং দুই ছায়ার পর থেকে আসরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া’’- কীভাবে ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত হল? অথচ এটাই হানাফী মাযহাবের প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত আমল।
পর্যালোচনা-৫: এই ইজতিহাদটির ক্ষেত্রে সহীহ মুতাওয়াতির হাদীসের বিরোধিতা করা হয়েছে। যেমন- কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
وامّا اخر وقت الظهر فلم يوجد فى حديث صحيح ولا ضعيف انه يبقى بعد مصير ظل كل شىء مثله ولذا خالف أبا حنيفة فى هذه المسألة صاحباه ووافقا الجمهور .
‘‘যোহরের সলাতের শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে কোনো সহীহ বা যঈফ হাদীসে এভাবে উল্লেখ হয়নি যে, সেটা প্রত্যেক বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে। এ কারণেই এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর মতও এর পরিপন্থি এবং দুজনের অবস্থান জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহা্দ্দিসগণের) অনুরূপ।’’ [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ., সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]
অনুরূপ নিমাবী হানাফী (রহ)-এর বক্তব্যও পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, দুই ছায়া থেকে আসর শুরু মর্মে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। অথচ এক ছায়ার হাদীসগুলো মুতাওয়াতির এবং জুমহুর আলেমগণ এর অনুসারী। এ পর্যায়ে নবী (স)-এর নিচের হাদীসটি স্মরণযোগ্য:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ " مَنْ أُفْتِيَ بِفُتْيَا غَيْرَ ثَبَتٍ فَإِنَّمَا إِثْمُهُ عَلَى مَنْ أَفْتَاهُ .
‘‘আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যে ব্যক্তিকে প্রমাণ ছাড়া কোনো ফাতওয়া দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে তার (আমলটির) গোনাহ ফাতওয়াদাতার উপর পড়বে।’’ [. ইবনু মাজাহ হা/৫৩, আলবানী (রহ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন ।]
হানাফীদের আসরের ওয়াক্ত হওয়ার আরেকটি শর্ত হল, সূর্যের রং বিবর্ণ তথা হলুদ হওয়ার সূচনাতে। এ মর্মে ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে’ উল্লিখিত হয়েছে:
… وَيُسْتَحَبُّ تَأْخِيرُ الْعَصْرِ فِيْ كُلِّ زَمَانٍ مَا لَمْ تَتَغَيَّرْ الشَّمْسُ وَالْعِبْرَةُ لِتَغَيُّرِ الْقُرْصِ لَا لِتَغَيُّرِ الضَّوْءِ فَمَتَى صَارَ الْقُرْصُ بِحَيْثُ لَا تَحَارُ فِيهِ الْعَيْنُ فَقَدْ تَغَيَّرَتْ وَإِلَّا لَا .
‘‘... সবসময় আসরের সলাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব, যতক্ষণ না সূর্যের রং বিবর্ণ হয়। সূর্যের গোলকের পরিবর্তন মূলত ধর্তব্য। আলো বিবর্ণ হওয়া ধর্তব্য নয়। যখন সূর্যের গোলক এমন হয়ে যায় যে, এর প্রতি নজর করলে চোখ ধাঁধিয়ে না যায়, তখন মনে করতে হবে যে, সূর্যের মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে। এমন না হলে মনে করতে হবে যে, সূর্যের মধ্যে পরিবর্তন হয়নি।’’ [. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/১৪৫ পৃ.। অনুরূপ হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’ (ইফা) ১/৬১ পৃ., আশরাফুল হিদায়া ১/২৭৪ পৃ.।]
অর্থাৎ হানাফী মাযহাব অনুযায়ী দুই ছায়া ও সূর্যের রং বিবর্ণ হওয়া উভয়টি শর্ত। এই শর্তও সহীহ হাদীসের বিরোধী। এ পর্যায়ে কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:
ثبت عنه ﷺ والعصر الى اصفرار الشمس مكروه تحريما وأشدّ كراهة تأخير العصر الى الاصفرار لورود النهى عن الصّلوة فى ذلك الوقت وكونه منسوبا الى الشيطان .
‘‘নবী (স) থেকে প্রমাণিত- সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত আসরের সলাতে বিলম্ব করা অতিশয় মাকরুহ। কেননা, ঐ সময় সলাত আদায় করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং তাকে শয়তানের সাথেও সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে।’’ [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ঐ।]
স্পষ্ট দলিল-প্রমাণ থাকার পরও ইজতিহাদ বা গবেষণার নামে ভিন্ন মত প্রদান শরিআতে বৈধ নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ج وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ .
‘‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা স্পষ্ট দলিল-প্রমাণ আসার পর ফিরক্বা বা দলাদলি করে ও ইখতিলাফ বা মতবিরোধ করে, তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক আযাব।’’ [. সূরা আলে-ইমরান: ১০৫ আয়াত।]
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا .
‘‘আর আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর সে বিষয়ে তাদের কোনো (সিদ্ধান্তের) এখতিয়ার নেই। আর যে আল্লাহ তাঁর রসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো।’’ [সূরা আহযাব: ৩৬]
এ মাসআলাটির ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ (স) থেকে স্পষ্ট দলিল-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইজতিহাদের নামে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিলে- পূর্বোক্ত আয়াত দুটি অর্থহীন হয়ে যায়। সেটাকে গণতন্ত্র বলা যেতে পারে, কিন্তু কখনই সেটা ইসলাম নয়।
এ পর্যায়ে সৌদিপ্রবাসী বক্তাকে বিনয়ের সাথে বলছি, আপনি সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণ করুন: ‘‘দুই ছায়া পর্যন্ত যোহরে ওয়াক্ত এবং দুই ছায়ার পর থেকে আসরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া’’- কীভাবে ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত হল? অথচ এটাই হানাফী মাযহাবের প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত আমল।
ইজতিহাদ বা গবেষণার কারণে যদি কেউ এক ঘণ্টা বা পৌনে এক ঘণ্টা পরে সলাত আদায় করেন এবং তাদের দেশে ঐ সময় সলাত শুরু হয়, তা হলে সেক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর কাছে সওয়াব পাবেন। তিনি এর কারণে গোনাহগার হবেন না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি উদাসীনতা করে সলাতকে দেরি করবে পড়বে ইচ্ছাকৃত, সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে গোনাহগার হবেন। অতএব হাদীসে যে একাকি সলাতের অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেটি একটি প্রসঙ্গে, আর আমাদের দেশের পরিস্থিতিটা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গে।
পর্যালোচনা-৬: শাসকদের ব্যস্ততা ও উদাসীনতা যেভাবে সলাতকে দেরি করার জন্য দায়ি, একইভাবে আলেমদের ফাতাওয়াতে আসরের সলাত দেরিতে আদায় করাকে মুস্তাহাব বলাটাও সমানভাবে দায়ী। যেমন বলা হয়েছে:
وَيُسْتَحَبُّ تَأْخِيرُ الْعَصْرِ فِيْ كُلِّ زَمَانٍ مَا لَمْ تَتَغَيَّرْ الشَّمْسُ .
‘‘সবসময় আসরের সলাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব, যতক্ষণ না সূর্যের রং বিবর্ণ হয়।’’ [. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/১৪৫ পৃ.। অনুরূপ হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’ (ইফা) ১/৬১ পৃ., আশরাফুল হিদায়া ১/২৭৪ পৃ.।]
পক্ষান্তরে সহীহ ইবনু খুযায়মাতে এ সম্পর্কিত দুটি অনুচ্ছেদ নিম্নরূপ:
ﺑَﺎﺏُ اﺳْﺘِﺤْﺒَﺎﺏِ ﺗَﻌْﺠِﻴﻞِ ﺻَﻼَﺓِ اﻟْﻌَﺼْﺮِ.
‘‘অনুচ্ছেদ: আসরের সলাত তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব।’’
بَا ﺏُ ﺫِﻛْﺮِ اﻟﺘ َّ ﻐْﻠِﻴﻆِ ﻓِﻲ ﺗَﺄْﺧِﻴﺮِ ﺻَﻼَﺓِ اﻟْﻌَﺼْﺮِ ﺇِﻟَﻰ اﺻْﻔِﺮ َا ﺭِ اﻟﺸ َّ ﻤْﺲِ.
‘‘অনুচ্ছেদ: আসরের সলাতকে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্পর্কে কঠোরতার বর্ণনা।’’
উক্ত মর্মে সহীহ ইবনু হিব্বানেও কয়েকটি অনুচ্ছেদ এসেছে। ইমাম নাসাঈ (রহ) এ সম্পর্কে অনুচ্ছেদ এনেছেন: تَعْجِيْلِ الْعَصْرِ ‘আসরের সলাত শীঘ্রই আদায় করা।’
এ ছাড়া সূর্যের তাপ ঠান্ডা হওয়ার পূর্বে হানাফী মাযহাবে আসরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয় না। এই শর্তটিও নবী (স) ও সাহাবীদের আমলের বিরোধী। সুতরাং আমরা কীভাবে হানাফীদের আসরের সলাতে দেরি করাকে মুস্তাহাব হিসেবে মেনে নিতে পারি?
নিচের আয়াতে শাসক ও আলেম উভয়কে একই দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন:
يا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ .
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ’র, আনুগত্য কর তাঁর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে উলূল আমরের (নির্দেশদাতাদের)।’’ [সূরা নিসা : ৫৯ আয়াত]
তাফসীর ইবনু কাসির, তাফসীর কুরতুবী, তাফসীর বাগাভী, তাফসীর ফতহুল ক্বাদীর, তাফসীর আহসানুল বায়ান, তাফসীরে আবূ বাকার যাকারিয়া (সৌদি সরকার প্রকাশিত) প্রভৃতি তাফসীরে ‘উলূল আমর’ বলতে শাসক ও আলেম উভয়কে বুঝানো হয়েছে। ইমাম নাওয়াবী (নববী রহ.) বলেছেন :
فى عبد الله بن حذافة أمير السرية قال العلماء المراد بأولي الأمر من أوجب الله طاعته من الولاة والأمراء هذا قول جماهير السلف والخلف من المفسرين والفقهاء وغيرهم وقيل هم العلماء وقيل الأمراء والعلماء وأما من قال الصحابة خاصة فقط فقد أخطأ .
‘‘আলেমগণ বলেছেন: ‘উলূল আমর’ দ্বারা রাষ্ট্র ও শাসককে বুঝানো উদ্দেশ্য- যার আনুগত্য ওয়াজিব। এটাই অধিকাংশ সালাফ, খালাফ, মুফাসসির, ফক্বীহ প্রমুখের মত। কেউ কেউ বলেছেন: এর অর্থ আলেমগণ। অনেকে বলেছেন: শাসক ও আলেম উভয়। তবে যারা এর অর্থ কেবল সাহাবীদের জন্য খাস করেছেন, তারা ভুল করেছেন।’’ [. শরহে মুসলিম নাওয়াবী - কিতাবুল ইমারাত [ باب وجوب طاعة الامراء ...]। আলেমগণ এই জন্যই ‘উলূল আমর’ যে - তারা আমর বিল মা‘রুফ (সৎ কাজের আদেশ) ও নাহি আনিল মুনকারের (অসৎ কাজের নিষেধ) বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সমঝদার। আর এ কারণেই তারা শাসনযন্ত্রের অধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও এই পদবীর অধিকারী (দ্র. সূরা নিসা: ৮৩, সূরা ফাতির ৩৫: ২৮ আয়াত, সূরা তাওবা: ১২২ আয়াত, সূরা আলে-ইমরান: ১১৪ আয়াত)। অবশ্য শাসক ও আলেমের মূল্যায়ন তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকেই করতে হবে।]
ইজতিহাদ সম্পর্কিত হাদীসটির অবস্থা অনুরূপ। রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ .
‘‘যখন হাকিম বিচারের সময় ইজতিহাদ করে, তখন বিচার সহীহ হলে সে দুটি সওয়াব পায়। আর যখন বিচারের সময় ইজতিহাদ করে, তখন ভুল হলে সে একটি সওয়াব পায়।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৭৩৫২।]
আরবিতে ‘হাকিম’ অর্থ : বিচারক, শাসক, নির্দেশদাতা প্রভৃতি। [. ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফি।]
অথচ হাদীসটি আলেমদের ইজতিহাদের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেননা, আলেমরাও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের অন্যতম নির্দেশদাতা। তা ছাড়া আল্লাহ তাআলা-ও শরিআতি ফায়সালার ক্ষেত্রে নবী-রসূলদের সাথে আলেমদেরকেও শরিআতি হুকুম-আহকামের ফায়সালাকারী ও সংরক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন: [সূরা মায়িদা: ৪৪ আয়াত]
إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ج يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِن كِتَابِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ ج.
‘‘নিশ্চয় আমরা তাওরাত নাযিল করেছিলাম; এতে ছিল হেদায়াত ও আলো; নবীগণ, যারা ছিলেন অনুগত, তারা ইয়াহুদীদেরকে তদনুসারে হুকুম দিতেন। আর রব্বানী ও বিদ্বানগণও, কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল।’’
লক্ষণীয়, এখানে নবীদের সাথে ইয়াহুদী আলেমদেরকেও হাকিম বা হুকুমদাতা ও কিতাবের রক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর আয়াতটি শেষ হয়েছে এভাবে:
فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا ج وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ .
‘‘কাজেই তোমরা মানুষকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় ভয় কর। আর আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ বস্তু ক্রয় করো না। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির।’’ [সূরা মায়িদা: ৪৪ আয়াত]
বুঝা যাচ্ছে, এ সমস্ত আয়াত শাসক, বিচারক ও আলেম- সবার উদ্দেশ্যেই প্রযোজ্য। সাথে সাথে আলোচ্য আয়াতের আলোকে মূল ওহীর বিরোধী ফায়সালাকারীকে ‘কাফির’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আর সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতের আলোকে উলূল-আমরের সাথে বিরোধ হলে, কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরতে বলা হয়েছে।
আফসোস! মুজতাহিদ ইমামের মতামত আমরা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী পাওয়া সত্ত্বেও ‘ইজতিহাদী’ হুকুম গণ্য করে- সেগুলো মেনে চলাটা জায়েয করে চলছি। আল্লাহ তাআলা-ই প্রকৃত হিদায়াতদাতা।
ইজতেহাদী মাসআলায় মুজতাহিদ গুনাহগার হন না তার অর্থ এই নয় যে, ‘‘হক্ব তালাশ করবে না বরং তিনি যে ফাতওয়া দিয়েছেন তার উপর অটল থাকবে।’’ বরং হক্ব তালাশ করতে হবে এবং ভুলকে অনুসরণ করা যাবে না। ইবনু তাইমিয়াহ (রহ) বলেন:
إن إثمها قد يزول عن بعض الأشخاص لاجتهاد أو غيره، كما يزول إثم النبيذ والربا المختلف فيهما عن المجتهدين من السلف، ثم مع ذلك يجب بيان حالها، وأن لا يقتدى بمن استحلها، وأن لا يقصر في طلب العلم المبين لحقيقتها .
‘‘তার (বিদআতের) গুনাহ ইজতিহাদ বা অন্যান্য কারণে ব্যক্তি-বিশেষের ক্ষেত্রে মাফ হতে পারে। যেমন- নাবীয ও সূদের নাম দূর হয়ে যাওয়া। কেননা এ ব্যাপারে মুজতাহিদ সালাফদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। এরপরেও ওয়াজিব হল, বিদআতের অবস্থা তুলে ধরা, যারা তা হালাল মনে করেন তার অনুসরণ না করা এবং সঠিক জিনিস উদঘাটনকারী ইলম অনুসন্ধানে কার্পণ্য না করা। [. ইকতিযাউ সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬১০।]
কোনো মুজতাহিদ কোনো মাসআলায় ভুল ফাতওয়া দিলে তার গুনাহ মাফ হওয়ার অর্থ এ নয় যে, উক্ত কাজটি হালাল হয়ে যায়। বরং সেই শরিআত পরিপন্থী কাজটি সর্বদা শরিআত পরিপন্থী হিসেবেই গণ্য হবে।
সাঈদ বিন নাসের আল-গামেদী বলেন:
فزوال الإثم عن المجتهد في هذه المسائل الفرعية، وحصول الأجر له لا يدل على جواز فعله ولا على جواز الاقتداء به .
‘‘এসব ফিকহী মাসায়েলে মুজতাহিদের গুনাহ মাফ ও নেকির ভাগিদার হওয়া প্রমাণ করে না যে, সে কাজ বৈধ এবং তার অনুসরণ বৈধ।’’ [. হাকীকাতুল বিদআহ ওয়া আহকামুহা ২/৬৭ পৃ.।]
পর্যালোচনা-৬: শাসকদের ব্যস্ততা ও উদাসীনতা যেভাবে সলাতকে দেরি করার জন্য দায়ি, একইভাবে আলেমদের ফাতাওয়াতে আসরের সলাত দেরিতে আদায় করাকে মুস্তাহাব বলাটাও সমানভাবে দায়ী। যেমন বলা হয়েছে:
وَيُسْتَحَبُّ تَأْخِيرُ الْعَصْرِ فِيْ كُلِّ زَمَانٍ مَا لَمْ تَتَغَيَّرْ الشَّمْسُ .
‘‘সবসময় আসরের সলাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব, যতক্ষণ না সূর্যের রং বিবর্ণ হয়।’’ [. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/১৪৫ পৃ.। অনুরূপ হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’ (ইফা) ১/৬১ পৃ., আশরাফুল হিদায়া ১/২৭৪ পৃ.।]
পক্ষান্তরে সহীহ ইবনু খুযায়মাতে এ সম্পর্কিত দুটি অনুচ্ছেদ নিম্নরূপ:
ﺑَﺎﺏُ اﺳْﺘِﺤْﺒَﺎﺏِ ﺗَﻌْﺠِﻴﻞِ ﺻَﻼَﺓِ اﻟْﻌَﺼْﺮِ.
‘‘অনুচ্ছেদ: আসরের সলাত তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব।’’
بَا ﺏُ ﺫِﻛْﺮِ اﻟﺘ َّ ﻐْﻠِﻴﻆِ ﻓِﻲ ﺗَﺄْﺧِﻴﺮِ ﺻَﻼَﺓِ اﻟْﻌَﺼْﺮِ ﺇِﻟَﻰ اﺻْﻔِﺮ َا ﺭِ اﻟﺸ َّ ﻤْﺲِ.
‘‘অনুচ্ছেদ: আসরের সলাতকে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্পর্কে কঠোরতার বর্ণনা।’’
উক্ত মর্মে সহীহ ইবনু হিব্বানেও কয়েকটি অনুচ্ছেদ এসেছে। ইমাম নাসাঈ (রহ) এ সম্পর্কে অনুচ্ছেদ এনেছেন: تَعْجِيْلِ الْعَصْرِ ‘আসরের সলাত শীঘ্রই আদায় করা।’
এ ছাড়া সূর্যের তাপ ঠান্ডা হওয়ার পূর্বে হানাফী মাযহাবে আসরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয় না। এই শর্তটিও নবী (স) ও সাহাবীদের আমলের বিরোধী। সুতরাং আমরা কীভাবে হানাফীদের আসরের সলাতে দেরি করাকে মুস্তাহাব হিসেবে মেনে নিতে পারি?
নিচের আয়াতে শাসক ও আলেম উভয়কে একই দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন:
يا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ .
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ’র, আনুগত্য কর তাঁর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে উলূল আমরের (নির্দেশদাতাদের)।’’ [সূরা নিসা : ৫৯ আয়াত]
তাফসীর ইবনু কাসির, তাফসীর কুরতুবী, তাফসীর বাগাভী, তাফসীর ফতহুল ক্বাদীর, তাফসীর আহসানুল বায়ান, তাফসীরে আবূ বাকার যাকারিয়া (সৌদি সরকার প্রকাশিত) প্রভৃতি তাফসীরে ‘উলূল আমর’ বলতে শাসক ও আলেম উভয়কে বুঝানো হয়েছে। ইমাম নাওয়াবী (নববী রহ.) বলেছেন :
فى عبد الله بن حذافة أمير السرية قال العلماء المراد بأولي الأمر من أوجب الله طاعته من الولاة والأمراء هذا قول جماهير السلف والخلف من المفسرين والفقهاء وغيرهم وقيل هم العلماء وقيل الأمراء والعلماء وأما من قال الصحابة خاصة فقط فقد أخطأ .
‘‘আলেমগণ বলেছেন: ‘উলূল আমর’ দ্বারা রাষ্ট্র ও শাসককে বুঝানো উদ্দেশ্য- যার আনুগত্য ওয়াজিব। এটাই অধিকাংশ সালাফ, খালাফ, মুফাসসির, ফক্বীহ প্রমুখের মত। কেউ কেউ বলেছেন: এর অর্থ আলেমগণ। অনেকে বলেছেন: শাসক ও আলেম উভয়। তবে যারা এর অর্থ কেবল সাহাবীদের জন্য খাস করেছেন, তারা ভুল করেছেন।’’ [. শরহে মুসলিম নাওয়াবী - কিতাবুল ইমারাত [ باب وجوب طاعة الامراء ...]। আলেমগণ এই জন্যই ‘উলূল আমর’ যে - তারা আমর বিল মা‘রুফ (সৎ কাজের আদেশ) ও নাহি আনিল মুনকারের (অসৎ কাজের নিষেধ) বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সমঝদার। আর এ কারণেই তারা শাসনযন্ত্রের অধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও এই পদবীর অধিকারী (দ্র. সূরা নিসা: ৮৩, সূরা ফাতির ৩৫: ২৮ আয়াত, সূরা তাওবা: ১২২ আয়াত, সূরা আলে-ইমরান: ১১৪ আয়াত)। অবশ্য শাসক ও আলেমের মূল্যায়ন তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকেই করতে হবে।]
ইজতিহাদ সম্পর্কিত হাদীসটির অবস্থা অনুরূপ। রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ .
‘‘যখন হাকিম বিচারের সময় ইজতিহাদ করে, তখন বিচার সহীহ হলে সে দুটি সওয়াব পায়। আর যখন বিচারের সময় ইজতিহাদ করে, তখন ভুল হলে সে একটি সওয়াব পায়।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৭৩৫২।]
আরবিতে ‘হাকিম’ অর্থ : বিচারক, শাসক, নির্দেশদাতা প্রভৃতি। [. ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফি।]
অথচ হাদীসটি আলেমদের ইজতিহাদের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেননা, আলেমরাও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের অন্যতম নির্দেশদাতা। তা ছাড়া আল্লাহ তাআলা-ও শরিআতি ফায়সালার ক্ষেত্রে নবী-রসূলদের সাথে আলেমদেরকেও শরিআতি হুকুম-আহকামের ফায়সালাকারী ও সংরক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন: [সূরা মায়িদা: ৪৪ আয়াত]
إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ج يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِن كِتَابِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ ج.
‘‘নিশ্চয় আমরা তাওরাত নাযিল করেছিলাম; এতে ছিল হেদায়াত ও আলো; নবীগণ, যারা ছিলেন অনুগত, তারা ইয়াহুদীদেরকে তদনুসারে হুকুম দিতেন। আর রব্বানী ও বিদ্বানগণও, কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল।’’
লক্ষণীয়, এখানে নবীদের সাথে ইয়াহুদী আলেমদেরকেও হাকিম বা হুকুমদাতা ও কিতাবের রক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর আয়াতটি শেষ হয়েছে এভাবে:
فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا ج وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ .
‘‘কাজেই তোমরা মানুষকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় ভয় কর। আর আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ বস্তু ক্রয় করো না। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির।’’ [সূরা মায়িদা: ৪৪ আয়াত]
বুঝা যাচ্ছে, এ সমস্ত আয়াত শাসক, বিচারক ও আলেম- সবার উদ্দেশ্যেই প্রযোজ্য। সাথে সাথে আলোচ্য আয়াতের আলোকে মূল ওহীর বিরোধী ফায়সালাকারীকে ‘কাফির’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আর সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতের আলোকে উলূল-আমরের সাথে বিরোধ হলে, কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরতে বলা হয়েছে।
আফসোস! মুজতাহিদ ইমামের মতামত আমরা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী পাওয়া সত্ত্বেও ‘ইজতিহাদী’ হুকুম গণ্য করে- সেগুলো মেনে চলাটা জায়েয করে চলছি। আল্লাহ তাআলা-ই প্রকৃত হিদায়াতদাতা।
ইজতেহাদী মাসআলায় মুজতাহিদ গুনাহগার হন না তার অর্থ এই নয় যে, ‘‘হক্ব তালাশ করবে না বরং তিনি যে ফাতওয়া দিয়েছেন তার উপর অটল থাকবে।’’ বরং হক্ব তালাশ করতে হবে এবং ভুলকে অনুসরণ করা যাবে না। ইবনু তাইমিয়াহ (রহ) বলেন:
إن إثمها قد يزول عن بعض الأشخاص لاجتهاد أو غيره، كما يزول إثم النبيذ والربا المختلف فيهما عن المجتهدين من السلف، ثم مع ذلك يجب بيان حالها، وأن لا يقتدى بمن استحلها، وأن لا يقصر في طلب العلم المبين لحقيقتها .
‘‘তার (বিদআতের) গুনাহ ইজতিহাদ বা অন্যান্য কারণে ব্যক্তি-বিশেষের ক্ষেত্রে মাফ হতে পারে। যেমন- নাবীয ও সূদের নাম দূর হয়ে যাওয়া। কেননা এ ব্যাপারে মুজতাহিদ সালাফদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। এরপরেও ওয়াজিব হল, বিদআতের অবস্থা তুলে ধরা, যারা তা হালাল মনে করেন তার অনুসরণ না করা এবং সঠিক জিনিস উদঘাটনকারী ইলম অনুসন্ধানে কার্পণ্য না করা। [. ইকতিযাউ সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬১০।]
কোনো মুজতাহিদ কোনো মাসআলায় ভুল ফাতওয়া দিলে তার গুনাহ মাফ হওয়ার অর্থ এ নয় যে, উক্ত কাজটি হালাল হয়ে যায়। বরং সেই শরিআত পরিপন্থী কাজটি সর্বদা শরিআত পরিপন্থী হিসেবেই গণ্য হবে।
সাঈদ বিন নাসের আল-গামেদী বলেন:
فزوال الإثم عن المجتهد في هذه المسائل الفرعية، وحصول الأجر له لا يدل على جواز فعله ولا على جواز الاقتداء به .
‘‘এসব ফিকহী মাসায়েলে মুজতাহিদের গুনাহ মাফ ও নেকির ভাগিদার হওয়া প্রমাণ করে না যে, সে কাজ বৈধ এবং তার অনুসরণ বৈধ।’’ [. হাকীকাতুল বিদআহ ওয়া আহকামুহা ২/৬৭ পৃ.।]
এক্ষেত্রে আরেকটি কথা উল্লেখ করার মতো তা হলো- নবী (স) যে রাজা-বাদশাহদের উদাসীনতা হেতু দেরির কথা বলেছেন, সেটি সাহাবায়ে কেরামের যুগে ঘটেও গিয়েছে। কোনো কোনো শাসকেরা অনেক দেরি করে জুমুআর সলাতে হাজির হতেন, যার ফলে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা শুরু হতো। এরকম অবস্থায় সময় সাহাবায়ে কেরাম এ হাদীসের উপর আমল করেছেন, অর্থাৎ একাকি সলাত আদায় করেছেন এবং পরে জামাআতেও যোগ দিয়েছেন যাতে মুসলিমদের মধ্যে কোনো প্রকার ঐক্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে- এই ম্যাসেজটি বা এই বার্তাটি মানুষের কাছে না যায়- সেজন্য।
পর্যালোচনা-৭: হাদীসে শাসকদের উদাসীনতার সাথে সাথে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোও বর্ণিত হয়েছে। নবী (স) বলেছেন:
يُطْفِئُونَ السُّنَّةَ وَيَعْمَلُونَ بِالْبِدْعَةِ وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا .
‘‘তারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদআতের অনুসরণ করবে এবং সলাত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে।’’ [. ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৫; সহীহ- আলবানী।]
এই কাজগুলো আলেমদের দ্বারাও ঘটে থাকে।
বক্তা বলেছেন: ‘‘শাসকেরা অনেক দেরি করে জুমুআর সলাতে হাজির হতেন, যার ফলে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা শুরু হতো।’’
‘আসরের ওয়াক্ত শুরু’ হতো মর্মে বাক্য আমরা পায়নি। ‘সলাতকে মেরে ফেলা’ বা ‘সলাতের ওয়াক্তকে পিছিয়ে দেয়া’ মর্মের হাদীসের দাবি সম্পর্কে ইমাম নাওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন:
مَعْنَى يُمِيتُونَ الصَّلَاة : يُؤَخِّرُونَهَا ; فَيَجْعَلُونَهَا كَالْمَيِّتِ الَّذِي خَرَجَتْ رُوحه , وَالْمُرَاد بِتَأْخِيرِهَا عَنْ وَقْتهَا , أَيْ عَنْ وَقْتهَا الْمُخْتَار لا عَنْ جَمِيع وَقْتهَا , فَإِنَّ الْمَنْقُول عَنْ الأُمَرَاء الْمُتَقَدِّمِينَ وَالْمُتَأَخِّرِينَ إِنَّمَا هُوَ تَأْخِيرهَا عَنْ وَقْتهَا الْمُخْتَار , وَلَمْ يُؤَخِّرهَا أَحَد مِنْهُمْ عَنْ جَمِيع وَقْتهَا , فَوَجَبَ حَمْل هَذِهِ الأَخْبَار عَلَى مَا هُوَ الْوَاقِع .
‘‘সলাতকে মেরে ফেলার অর্থ হল: তারা সলাতে দেরি করবে এবং রূহ বের হয়েছে এমন মৃতকে রাখার মতো ফেলে রাখবে। আর সলাতে দেরি করার অর্থ হল: তারা মুখতার (বাছাইকৃত, পছন্দনীয়) ওয়াক্ত থেকে দেরি করবে, সম্পূর্ণ ওয়াক্ত থেকে নয়। কেননা, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী শাসকদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা মুখতার ওয়াক্তের ব্যাপারে দেরি করতেন। তাদের কেউই সম্পূর্ণ ওয়াক্ত (বা ওয়াক্তের শেষাংশ) পর্যন্ত দেরি করতেন না। তাই ওয়াজিব হচ্ছে, এসব হাদীস বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে প্রয়োগ করা।’’ [. শারহু মুসলিম নাওয়াবী ৬/১৪৭ পৃ.।]
এক ছায়া ও দুই ছায়া মত দুটির পার্থক্যের মাঝেও ঐ মুখতার (বাছাইকৃত, পছন্দনীয়) ওয়াক্তটিকে গ্রহণ বা বর্জনের আমল নিশ্চিত হয়। পক্ষান্তরে হানাফীদের নিকট দুই ছায়ার পূর্বে আসরের সলাত পড়লে- সলাতটিই বাতিল। কেননা, তাদের মাযহাবে তখনও যোহরের সলাতের সময় চলছে।
আলোচ্য বক্তা নিজেই উল্লেখ করেছেন, সাহাবীদের যামানাতে শাসক জুমুআর সলাত দেরিতে আদায় করতেন। তখন তাঁরা (রা) প্রথমে একাকী সলাত আদায় করতেন, অতঃপর জামাআতে শরীক হতেন। [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৫৭(৪৪/৬৪৮)।] কিছু পরে আমরা জানব, উক্ত বক্তাই আসরের সলাত দেরিতে আদায়ের ক্ষেত্রে আমলটি প্রয়োগে বিরোধিতা করেছেন। অথচ নবী (স) থেকে পরবর্তী শাসকদের আসরের সলাত দেরিতে আদায়ের বর্ণনাই বেশি। কেননা, হাদীসে ‘সলাতকে মেরে ফেলা’, ‘পূর্বদিক মারা যাওয়া’, ‘সূর্য হলুদ হওয়া’ ‘মুনাফিক্বরা অপেক্ষা করতে থাকে’ প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার দ্বারা আসরের সলাতকে বিশেষভাবে বুঝানো হয়েছে।
পর্যালোচনা-৭: হাদীসে শাসকদের উদাসীনতার সাথে সাথে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোও বর্ণিত হয়েছে। নবী (স) বলেছেন:
يُطْفِئُونَ السُّنَّةَ وَيَعْمَلُونَ بِالْبِدْعَةِ وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلاَةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا .
‘‘তারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদআতের অনুসরণ করবে এবং সলাত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে।’’ [. ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৫; সহীহ- আলবানী।]
এই কাজগুলো আলেমদের দ্বারাও ঘটে থাকে।
বক্তা বলেছেন: ‘‘শাসকেরা অনেক দেরি করে জুমুআর সলাতে হাজির হতেন, যার ফলে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা শুরু হতো।’’
‘আসরের ওয়াক্ত শুরু’ হতো মর্মে বাক্য আমরা পায়নি। ‘সলাতকে মেরে ফেলা’ বা ‘সলাতের ওয়াক্তকে পিছিয়ে দেয়া’ মর্মের হাদীসের দাবি সম্পর্কে ইমাম নাওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন:
مَعْنَى يُمِيتُونَ الصَّلَاة : يُؤَخِّرُونَهَا ; فَيَجْعَلُونَهَا كَالْمَيِّتِ الَّذِي خَرَجَتْ رُوحه , وَالْمُرَاد بِتَأْخِيرِهَا عَنْ وَقْتهَا , أَيْ عَنْ وَقْتهَا الْمُخْتَار لا عَنْ جَمِيع وَقْتهَا , فَإِنَّ الْمَنْقُول عَنْ الأُمَرَاء الْمُتَقَدِّمِينَ وَالْمُتَأَخِّرِينَ إِنَّمَا هُوَ تَأْخِيرهَا عَنْ وَقْتهَا الْمُخْتَار , وَلَمْ يُؤَخِّرهَا أَحَد مِنْهُمْ عَنْ جَمِيع وَقْتهَا , فَوَجَبَ حَمْل هَذِهِ الأَخْبَار عَلَى مَا هُوَ الْوَاقِع .
‘‘সলাতকে মেরে ফেলার অর্থ হল: তারা সলাতে দেরি করবে এবং রূহ বের হয়েছে এমন মৃতকে রাখার মতো ফেলে রাখবে। আর সলাতে দেরি করার অর্থ হল: তারা মুখতার (বাছাইকৃত, পছন্দনীয়) ওয়াক্ত থেকে দেরি করবে, সম্পূর্ণ ওয়াক্ত থেকে নয়। কেননা, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী শাসকদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা মুখতার ওয়াক্তের ব্যাপারে দেরি করতেন। তাদের কেউই সম্পূর্ণ ওয়াক্ত (বা ওয়াক্তের শেষাংশ) পর্যন্ত দেরি করতেন না। তাই ওয়াজিব হচ্ছে, এসব হাদীস বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে প্রয়োগ করা।’’ [. শারহু মুসলিম নাওয়াবী ৬/১৪৭ পৃ.।]
এক ছায়া ও দুই ছায়া মত দুটির পার্থক্যের মাঝেও ঐ মুখতার (বাছাইকৃত, পছন্দনীয়) ওয়াক্তটিকে গ্রহণ বা বর্জনের আমল নিশ্চিত হয়। পক্ষান্তরে হানাফীদের নিকট দুই ছায়ার পূর্বে আসরের সলাত পড়লে- সলাতটিই বাতিল। কেননা, তাদের মাযহাবে তখনও যোহরের সলাতের সময় চলছে।
আলোচ্য বক্তা নিজেই উল্লেখ করেছেন, সাহাবীদের যামানাতে শাসক জুমুআর সলাত দেরিতে আদায় করতেন। তখন তাঁরা (রা) প্রথমে একাকী সলাত আদায় করতেন, অতঃপর জামাআতে শরীক হতেন। [. সহীহ মুসলিম হা/১৩৫৭(৪৪/৬৪৮)।] কিছু পরে আমরা জানব, উক্ত বক্তাই আসরের সলাত দেরিতে আদায়ের ক্ষেত্রে আমলটি প্রয়োগে বিরোধিতা করেছেন। অথচ নবী (স) থেকে পরবর্তী শাসকদের আসরের সলাত দেরিতে আদায়ের বর্ণনাই বেশি। কেননা, হাদীসে ‘সলাতকে মেরে ফেলা’, ‘পূর্বদিক মারা যাওয়া’, ‘সূর্য হলুদ হওয়া’ ‘মুনাফিক্বরা অপেক্ষা করতে থাকে’ প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার দ্বারা আসরের সলাতকে বিশেষভাবে বুঝানো হয়েছে।
তা হলে এই আলোচনাটি থেকে মোটামোটি পরিষ্কার হলো যে, নবী (স)-এর হাদীসে যে একাকি সলাত আদায় করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং জামাআত ত্যাগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বা জামাআতকে ঐচ্ছিক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, সেটি ভিন্ন একটি প্রসঙ্গে ছিল। আর আমাদের দেশের প্রসঙ্গটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
পর্যালোচনা-৮: আমরা পূর্বে প্রমাণ করেছি-
ক) যোহরের সলাতকে অত্যধিক গরমের জন্য এক ছায়া বা আসরের পূর্ব পর্যন্ত দেরি করা যায়।
খ) মাগরিব জামাআতকে ইফতার করার জন্য দেরি করা যায়।
গ) ইশার সলাত দেরিতে আদায় করাটাই মুস্তাহাব। বিশেষ করে লোকজন কম হলে।
ঘ) সফরে যোহরের সলাতকে আসর পর্যন্ত বিলম্ব করা যায়। অথচ আসর বিলম্বে নয় বরং অগ্রে পড়া যায়।
উপরের আলোচনাতে প্রমাণিত হল, সাধারণভাবে আসরের সলাতকে দেরিতে আদায়ের প্রমাণ নেই। বরং সূর্য তেজযুক্ত থাকতে এবং হলুদ হওয়ার অনেক পূর্বে আদায় করতে হয়। অথচ অন্য সলাতের ক্ষেত্রে দেরিতে আদায় করার শরিআতি শর্তই রয়েছে। পক্ষান্তরে হানাফী মাযহাবে আসরকে দেরিতে আদায় করাকে মুস্তাহাব গণ্য করা হয়েছে। যা বিশেষ ওজর ছাড়া দেরি করা মুনাফেক্বী।
সুস্পষ্ট হলো, আসরের সলাত দেরিতে আদায় শাসকদের কারণেই হোক বা আলেমদের ফাতওয়ার কারণেই হোক- উভয় অবস্থাতেই নবী (স) থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ প্রথমে একাকী পড়ে নেবে, পরে ইচ্ছা হলে বা বাধ্য করা হলে জামাআতে পড়ে নেবে।
পর্যালোচনা-৮: আমরা পূর্বে প্রমাণ করেছি-
ক) যোহরের সলাতকে অত্যধিক গরমের জন্য এক ছায়া বা আসরের পূর্ব পর্যন্ত দেরি করা যায়।
খ) মাগরিব জামাআতকে ইফতার করার জন্য দেরি করা যায়।
গ) ইশার সলাত দেরিতে আদায় করাটাই মুস্তাহাব। বিশেষ করে লোকজন কম হলে।
ঘ) সফরে যোহরের সলাতকে আসর পর্যন্ত বিলম্ব করা যায়। অথচ আসর বিলম্বে নয় বরং অগ্রে পড়া যায়।
উপরের আলোচনাতে প্রমাণিত হল, সাধারণভাবে আসরের সলাতকে দেরিতে আদায়ের প্রমাণ নেই। বরং সূর্য তেজযুক্ত থাকতে এবং হলুদ হওয়ার অনেক পূর্বে আদায় করতে হয়। অথচ অন্য সলাতের ক্ষেত্রে দেরিতে আদায় করার শরিআতি শর্তই রয়েছে। পক্ষান্তরে হানাফী মাযহাবে আসরকে দেরিতে আদায় করাকে মুস্তাহাব গণ্য করা হয়েছে। যা বিশেষ ওজর ছাড়া দেরি করা মুনাফেক্বী।
সুস্পষ্ট হলো, আসরের সলাত দেরিতে আদায় শাসকদের কারণেই হোক বা আলেমদের ফাতওয়ার কারণেই হোক- উভয় অবস্থাতেই নবী (স) থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ প্রথমে একাকী পড়ে নেবে, পরে ইচ্ছা হলে বা বাধ্য করা হলে জামাআতে পড়ে নেবে।
(২) দ্বিতীয় যে কারণে আমি দ্বিমত পোষণ করব সেটা হল, আমাদের দেশে আসরের সলাত যে সময়টাতে হয়ে থাকে, এটা কোনো অবস্থাতে আসরের সলাতের মূল ওয়াক্তের বাইরে চলে যায় না। অর্থাৎ এতো বিলম্ব করা হয় না যে বিলম্বের কারণে আসরের সলাতের প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়, কারণ আসরের সলাতের গ্রহণযোগ্য ওয়াক্ত হলো, সুর্য হলুদ বর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত। সহীহ মুসলিমের হাদীস এসেছে, নবী (স) বলেছেন: وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ ‘আর আসরের ওয়াক্ত হলো যতক্ষণ না সূর্য হলুদ না হয় তার আগ পর্যন্ত।’ তা হলে আমাদের দেশে যে সময়টাতে আসরের সলাত ক্বায়েম হচ্ছে, আসরের সলাতের জামাআত দাঁড়াচ্ছে, মাসজিদগুলোতে আযান হচ্ছে- সে সময়টা কোনো অবস্থাতেই আসরের মূল ওয়াক্তের থেকে বিলম্বে আদায় করা হয় না, মূল ওয়াক্তের পরে আদায় করা হয় না।
পর্যালোচনা-৯: আমরা এ সম্পর্কে ‘অনুচ্ছেদ-৩২’-এর আলোচনা করেছি। বক্তার উপস্থাপিত হাদীসটি সহীহ, কিন্তু অর্থ নেয়া হয়েছে মাযহাবী। আসুন এখন আমরা হানাফী মাযহাবে ‘হলুদ হওয়ার’ পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রমাণ জেনে নিই। তাক্বী উসমানী দেওবন্দী হানাফীর ‘ফাতাওয়া উসমানীতে’ বর্ণিত হয়েছে:
سوال : احنف کے مسلک پر نماز عصر میں جو تآخیر افضل ہے تو اس افضلیت پر گھنٹوں کے حساب سے عصر اور مغریب کے درمیان کتنا وقت ہونا چاہۓ؟
প্রশ্ন: হানাফী মসলকে সলাতুল আসরের ক্ষেত্রে যেভাবে দেরি করাটা উত্তম, সেই উত্তমটি ঘণ্টা ধরে হিসাব করলে আসর ও মাগরিবের মাঝে কতোটা সময় হতে হবে?
جواب : حنفیہ کے نزدیک عصر کی نماز اصفرار شمس یعنی سورج کے زرد ہونے سے پہلی تک تآخیر کرنا افضل ہے۔ لیکن جماعت میں یہ خیال رکھنا ضروری ہے کہ نماز ختم کرنے کے بعد اصفرار سے پہلے اتنا وقت باقی رہے کہ اگر نماز کا اعادہ کرنا ہو تو وہ بھی اصفرار سے پہلے کیا جا سکے، یہ وقت موسوموں اور شہروں کے اختلاف سے بدلتا رہتا ہے، اس لۓ گھنٹا منٹ کے لحاظ سے اس کی کوئی مقدار دائمی طورپر مقرر نہیں کی سکتی۔
উত্তর: হানাফী মতে আসরের সলাত সূর্য হলুদ বা যরদা রঙ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দেরি করা উত্তম। কিন্তু জামাআত ক্বায়েমের ক্ষেত্রে এটা খেয়াল রাখা জরুরি যে, জামাআত শেষ করার পর হলুদ হওয়াটা বাকী থাকবে, যেন কাউকে সলাত পুনরায় পড়তে হলে হলুদ বর্ণ ধারণ করার পূর্বে তা আদায় করতে পারে। এই ওয়াক্ত মৌসুম ও শহর বিশেষের পার্থক্যের কারণে পরিবর্তন হয়। এ কারণে ঘণ্টা-মিনিট হিসাবে স্থায়ীভাবে সময় নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। [. তাক্বী উসমানী, ফাতাওয়ায়ে উসমানী ১/৩৫৯-৬০ পৃ.।]
পক্ষান্তরে সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ : يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ .
‘‘এটা মুনাফিক্বের সলাত- তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে ।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৯ (১৯৫/২২২), মিশকাত হা/৫৯৩। অনুরূপ: আবূ দাউদ হা/৪১৩ সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৬১।]
বেরলভী হানাফীদের ফাতাওয়াতেও নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে:
لو شرع فيه قبل التغير فمده اليه لا يكره والله تعالى أعلم ـ
‘‘সূর্য পরিবর্তনের পূর্বে সলাত শুরু করার পর সূর্য পরিবর্তন পর্যন্ত লম্বা করলে মাকরুহ হবে না।- আল্লাহ সর্বজ্ঞ।’’ [. দুররে মুখতার ১/৬১ পৃ. সূত্রে: ফাতাওয়া রেজভিয়্যা ৫/১৩৯ পৃ.।]
উক্ত আলোচনাটি করা হয়েছে হানাফী মাযহাব অনুযায়ী মুস্তাহাব ওয়াক্ত ও পরবর্তী মাকরুহ ওয়াক্ত সম্পর্কে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের জবাবে ইমাম ইবনু খুযায়মাহ ‘সূর্য হলুদ হওয়া’ সম্পর্কে যা লিখেছেন তা নিম্নরূপ:
‘‘অনু্চ্ছেদ: আসরের সলাত হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার ব্যাপারে কঠিন ধমকি। আর এ সম্পর্কিত দলিল যে, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা)-এর হাদীসে নবী (স)-এর উক্তি: ‘যখন তোমারা আসরের সলাত আদায় কর, তখন হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত এর ওয়াক্ত থাকে’-এর দ্বারা নবী (স)-এর উদ্দেশ্য ওজর, জরুরত বা ভুলে আসরের সলাত আদায় না করলে- হলুদ হওয়ার পূর্বে বা সে সময় আদায় করা। অনুরূপ তাঁর (স) হাদীস: ‘যে সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকআত পেল সে যেন সলাতটি পূর্ণ করে নেয়’-এর দাবিও ওজর, জরুরত কিংবা ভুলে আসরের সলাত আদায় না করলে যখন খেয়াল আসে তখন (সূর্যাস্তের পূর্বে) এক রাকআত পড়া সম্ভব হলে, সে যেন তা আদায় করে। এর দ্বারা তাঁর (স) উদ্দেশ্য এটা নয় যে, মুসল্লির জন্য ওজরহীন ও জরুরতহীন অবস্থায় স্মরণ থাকা সত্ত্বেও আসরের সলাত আদায়ে দেরি করা মুবাহ (বৈধ)- এমনকি (এতটা দেরি যে) সে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কিংবা সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত আদায় করবে আর বাকি তিন রাকআত সূর্যাস্তের পরে আদায় করবে।’’ [. সহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৩৩৩-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ। আরবি উদ্ধৃতি পূর্বে গত হয়েছে।]
অর্থাৎ ‘সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত’ কিংবা ‘সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত পাওয়া’ প্রভৃতি শব্দগুলো স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত আসরের জামাআতের জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং ব্যক্তি-বিশেষের ওজর বা জরুরত থাকলেই কেবল প্রযোজ্য। কেননা, জিবরীল (আ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আসরের সলাত হলো- এক ছায়া থেকে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়টুকু। অপর কিছু হাদীসে আছে, আসরের শেষ ওয়াক্ত সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। [দ্র: এই বইয়ের হা/১]
পক্ষান্তরে হানাফী মাযহাবে আসরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয়ে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর থেকে যখন সূর্যের বিবর্ণ হওয়া শুরু করে এবং এর ভিতরের গোলক দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে না যায়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)
অর্থাৎ হানাফীগণ যে সময় আসরের জামাআত আদায় করা মুস্তাহাব গণ্য করেছেন, সেটা রসূলুল্লাহ (স)-এর দেখানো মুস্তাহাব ওয়াক্ত নয়। সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবে হানাফীদের ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব করলে সূর্য হলুদ শুরু হওয়ার সীমানাতে প্রবেশ করা হয়।
পর্যালোচনা-৯: আমরা এ সম্পর্কে ‘অনুচ্ছেদ-৩২’-এর আলোচনা করেছি। বক্তার উপস্থাপিত হাদীসটি সহীহ, কিন্তু অর্থ নেয়া হয়েছে মাযহাবী। আসুন এখন আমরা হানাফী মাযহাবে ‘হলুদ হওয়ার’ পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রমাণ জেনে নিই। তাক্বী উসমানী দেওবন্দী হানাফীর ‘ফাতাওয়া উসমানীতে’ বর্ণিত হয়েছে:
سوال : احنف کے مسلک پر نماز عصر میں جو تآخیر افضل ہے تو اس افضلیت پر گھنٹوں کے حساب سے عصر اور مغریب کے درمیان کتنا وقت ہونا چاہۓ؟
প্রশ্ন: হানাফী মসলকে সলাতুল আসরের ক্ষেত্রে যেভাবে দেরি করাটা উত্তম, সেই উত্তমটি ঘণ্টা ধরে হিসাব করলে আসর ও মাগরিবের মাঝে কতোটা সময় হতে হবে?
جواب : حنفیہ کے نزدیک عصر کی نماز اصفرار شمس یعنی سورج کے زرد ہونے سے پہلی تک تآخیر کرنا افضل ہے۔ لیکن جماعت میں یہ خیال رکھنا ضروری ہے کہ نماز ختم کرنے کے بعد اصفرار سے پہلے اتنا وقت باقی رہے کہ اگر نماز کا اعادہ کرنا ہو تو وہ بھی اصفرار سے پہلے کیا جا سکے، یہ وقت موسوموں اور شہروں کے اختلاف سے بدلتا رہتا ہے، اس لۓ گھنٹا منٹ کے لحاظ سے اس کی کوئی مقدار دائمی طورپر مقرر نہیں کی سکتی۔
উত্তর: হানাফী মতে আসরের সলাত সূর্য হলুদ বা যরদা রঙ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দেরি করা উত্তম। কিন্তু জামাআত ক্বায়েমের ক্ষেত্রে এটা খেয়াল রাখা জরুরি যে, জামাআত শেষ করার পর হলুদ হওয়াটা বাকী থাকবে, যেন কাউকে সলাত পুনরায় পড়তে হলে হলুদ বর্ণ ধারণ করার পূর্বে তা আদায় করতে পারে। এই ওয়াক্ত মৌসুম ও শহর বিশেষের পার্থক্যের কারণে পরিবর্তন হয়। এ কারণে ঘণ্টা-মিনিট হিসাবে স্থায়ীভাবে সময় নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। [. তাক্বী উসমানী, ফাতাওয়ায়ে উসমানী ১/৩৫৯-৬০ পৃ.।]
পক্ষান্তরে সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ : يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ .
‘‘এটা মুনাফিক্বের সলাত- তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে ।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৯ (১৯৫/২২২), মিশকাত হা/৫৯৩। অনুরূপ: আবূ দাউদ হা/৪১৩ সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৬১।]
বেরলভী হানাফীদের ফাতাওয়াতেও নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে:
لو شرع فيه قبل التغير فمده اليه لا يكره والله تعالى أعلم ـ
‘‘সূর্য পরিবর্তনের পূর্বে সলাত শুরু করার পর সূর্য পরিবর্তন পর্যন্ত লম্বা করলে মাকরুহ হবে না।- আল্লাহ সর্বজ্ঞ।’’ [. দুররে মুখতার ১/৬১ পৃ. সূত্রে: ফাতাওয়া রেজভিয়্যা ৫/১৩৯ পৃ.।]
উক্ত আলোচনাটি করা হয়েছে হানাফী মাযহাব অনুযায়ী মুস্তাহাব ওয়াক্ত ও পরবর্তী মাকরুহ ওয়াক্ত সম্পর্কে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের জবাবে ইমাম ইবনু খুযায়মাহ ‘সূর্য হলুদ হওয়া’ সম্পর্কে যা লিখেছেন তা নিম্নরূপ:
‘‘অনু্চ্ছেদ: আসরের সলাত হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার ব্যাপারে কঠিন ধমকি। আর এ সম্পর্কিত দলিল যে, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা)-এর হাদীসে নবী (স)-এর উক্তি: ‘যখন তোমারা আসরের সলাত আদায় কর, তখন হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত এর ওয়াক্ত থাকে’-এর দ্বারা নবী (স)-এর উদ্দেশ্য ওজর, জরুরত বা ভুলে আসরের সলাত আদায় না করলে- হলুদ হওয়ার পূর্বে বা সে সময় আদায় করা। অনুরূপ তাঁর (স) হাদীস: ‘যে সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকআত পেল সে যেন সলাতটি পূর্ণ করে নেয়’-এর দাবিও ওজর, জরুরত কিংবা ভুলে আসরের সলাত আদায় না করলে যখন খেয়াল আসে তখন (সূর্যাস্তের পূর্বে) এক রাকআত পড়া সম্ভব হলে, সে যেন তা আদায় করে। এর দ্বারা তাঁর (স) উদ্দেশ্য এটা নয় যে, মুসল্লির জন্য ওজরহীন ও জরুরতহীন অবস্থায় স্মরণ থাকা সত্ত্বেও আসরের সলাত আদায়ে দেরি করা মুবাহ (বৈধ)- এমনকি (এতটা দেরি যে) সে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কিংবা সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত আদায় করবে আর বাকি তিন রাকআত সূর্যাস্তের পরে আদায় করবে।’’ [. সহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৩৩৩-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ। আরবি উদ্ধৃতি পূর্বে গত হয়েছে।]
অর্থাৎ ‘সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত’ কিংবা ‘সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত পাওয়া’ প্রভৃতি শব্দগুলো স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত আসরের জামাআতের জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং ব্যক্তি-বিশেষের ওজর বা জরুরত থাকলেই কেবল প্রযোজ্য। কেননা, জিবরীল (আ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আসরের সলাত হলো- এক ছায়া থেকে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়টুকু। অপর কিছু হাদীসে আছে, আসরের শেষ ওয়াক্ত সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। [দ্র: এই বইয়ের হা/১]
পক্ষান্তরে হানাফী মাযহাবে আসরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয়ে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর থেকে যখন সূর্যের বিবর্ণ হওয়া শুরু করে এবং এর ভিতরের গোলক দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে না যায়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)
অর্থাৎ হানাফীগণ যে সময় আসরের জামাআত আদায় করা মুস্তাহাব গণ্য করেছেন, সেটা রসূলুল্লাহ (স)-এর দেখানো মুস্তাহাব ওয়াক্ত নয়। সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবে হানাফীদের ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব করলে সূর্য হলুদ শুরু হওয়ার সীমানাতে প্রবেশ করা হয়।
আর নবী (স)-এর হাদীসে যে একাকি সলাত আদায় করার অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং জামাআতকে ঐচ্ছিক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, সেটিতো হলো তখন- যখন يُؤخِّرونَ الصلاةَ عن وقتِها ‘সলাতকে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করে ফেলবে।’ এখানে তো সলাতকে তার গ্রহণযোগ্য ওয়াক্তের ভেতরেই আদায় করা হচ্ছে। তা হলে কীসের ভিত্তিতে আপনি-আমি সাধারণ মানুষকে এটা বলার দুঃসাহস দেখায় যে, আপনারা যার যার বাসায় একাকি সলাত আদায় করে ফেলবেন!
পর্যালোচনা-১০: এখানে সৌদি প্রবাসী আলেম শব্দ ও বাক্যের আপেক্ষিক প্রয়োগকে নিজের চিন্তার পক্ষে প্রয়োগ করেছেন। আমরা কিছু পূর্বে ‘পর্যালোচনা-৭’-এ ইমাম নাওয়াবী (নববী রহ.) থেকে জেনেছি يُؤخِّرونَ الصلاةَ عن وقتِها ‘সলাতকে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করে ফেলবে’-এর অর্থ, মুখতার (বাছাইকৃত, পছন্দনীয়) ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করা। কখনই ইচ্ছাকৃতভাবে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা নয়। সেটাতো হাদীস অনুযায়ী মুনাফিক্বের সলাত।
সাহাবী ও তাবেঈদের যামানাতে আসরের সলাত তাড়াতাড়ি পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হতো, যা ছিল যোহরের খুব নিকটবর্তী সময় (এক ছায়া)। যদি তার থেকে দেরি করা হতো- তখন মুনফিক্বের সলাতের উদাহরণ পেশ করা হতো (দ্র. হা/১৫, ৩৫)। এভাবে আসরের সলাত আদায় করাতে আনাস (রা)-কে যখন বলা হলো, আপনি তাড়াতাড়ি আসরের সলাত আদায় করে ফেলেছেন। তখন আনাস (রা) বলেছিলেন:
إِنَّمَا أُصَلِّي كَمَا رَأَيْتُ أَصْحَابِي يُصَلُّونَ .
‘‘আমি ঐভাবেই সলাত আদায় করি যেভাবে আমার সাথীদেরকে (নবী স.-এর সাহাবীদেরকে) আদায় করতে দেখেছি।’’ [. নাসাঈ হা/৫১০। আলবানী (রহ) হাসান বলেছেন।]
অন্যত্র শীঘ্রই আসরের সলাত আদায় করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আনাস (রা)-কে বলেছিলেন:
الْعَصْرَ، وَهَذِهِ صَلَاةُ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الَّتِي كُنَّا نُصَلِّي .
‘‘এটা আসরের সলাত এবং এটাই রসূলুল্লাহ (স)-এর সলাত যা আমরা (সাহাবীগণ) আদায় করতাম।’’ [. নাসাঈ হা/৫০৯। আলবানী (রহ) সহীহ বলেছেন।]
আবার কখনো সাহাবীগণ (রা) জিবরীল (আ)-এর হাদীসের উদাহরণ দিতেন (দ্র. অনুচ্ছেদ-২৩)। আর জিবরীল (আ)-এর হাদীস অনুযায়ী আসরের ওয়াক্ত হলো এক ছায়া ও দুই ছায়ার মাঝের সময়টুকু। এ পর্যায়ে হাদীসগুলো পরস্পরের ব্যাখ্যা ধরলে, ‘সূর্য হলুদ হওয়া’র অর্থ হবে- দুই ছায়ার পর আসরকে পিছিয়ে দেয়া। কেননা, এটা নবী (স) ও সাহাবীদের থেকে প্রাপ্ত ব্যবহারিক আমল। পক্ষান্তরে প্রবাসী-বক্তা ‘সলাতের ওয়াক্ত পিছিয়ে’ দেয়ার যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা কেবলই শাব্দিক অর্থ। এ পর্যায়ে প্রমাণিত ব্যবহারিক ব্যাখ্যার মোকাবেলায় আপেক্ষিক শাব্দিক অর্থ শরিআত নয়।
উল্লেখ্য হানাফী ফাতওয়া হলো, দেরিতে আসরের সলাত পড়াটা মুস্তাহাব। যা দুই ছায়ার পর সূর্য হলুদ হওয়ার পূর্বে হয়ে থাকে। এ থেকে বুঝা যায়, হানাফী মাযহাবের ফাতওয়া অনুযায়ী তারা আসরের ওয়াক্তকে এর মূল ওয়াক্ত থেকে স্থায়ীভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।
পর্যালোচনা-১০: এখানে সৌদি প্রবাসী আলেম শব্দ ও বাক্যের আপেক্ষিক প্রয়োগকে নিজের চিন্তার পক্ষে প্রয়োগ করেছেন। আমরা কিছু পূর্বে ‘পর্যালোচনা-৭’-এ ইমাম নাওয়াবী (নববী রহ.) থেকে জেনেছি يُؤخِّرونَ الصلاةَ عن وقتِها ‘সলাতকে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করে ফেলবে’-এর অর্থ, মুখতার (বাছাইকৃত, পছন্দনীয়) ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করা। কখনই ইচ্ছাকৃতভাবে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা নয়। সেটাতো হাদীস অনুযায়ী মুনাফিক্বের সলাত।
সাহাবী ও তাবেঈদের যামানাতে আসরের সলাত তাড়াতাড়ি পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হতো, যা ছিল যোহরের খুব নিকটবর্তী সময় (এক ছায়া)। যদি তার থেকে দেরি করা হতো- তখন মুনফিক্বের সলাতের উদাহরণ পেশ করা হতো (দ্র. হা/১৫, ৩৫)। এভাবে আসরের সলাত আদায় করাতে আনাস (রা)-কে যখন বলা হলো, আপনি তাড়াতাড়ি আসরের সলাত আদায় করে ফেলেছেন। তখন আনাস (রা) বলেছিলেন:
إِنَّمَا أُصَلِّي كَمَا رَأَيْتُ أَصْحَابِي يُصَلُّونَ .
‘‘আমি ঐভাবেই সলাত আদায় করি যেভাবে আমার সাথীদেরকে (নবী স.-এর সাহাবীদেরকে) আদায় করতে দেখেছি।’’ [. নাসাঈ হা/৫১০। আলবানী (রহ) হাসান বলেছেন।]
অন্যত্র শীঘ্রই আসরের সলাত আদায় করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আনাস (রা)-কে বলেছিলেন:
الْعَصْرَ، وَهَذِهِ صَلَاةُ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ الَّتِي كُنَّا نُصَلِّي .
‘‘এটা আসরের সলাত এবং এটাই রসূলুল্লাহ (স)-এর সলাত যা আমরা (সাহাবীগণ) আদায় করতাম।’’ [. নাসাঈ হা/৫০৯। আলবানী (রহ) সহীহ বলেছেন।]
আবার কখনো সাহাবীগণ (রা) জিবরীল (আ)-এর হাদীসের উদাহরণ দিতেন (দ্র. অনুচ্ছেদ-২৩)। আর জিবরীল (আ)-এর হাদীস অনুযায়ী আসরের ওয়াক্ত হলো এক ছায়া ও দুই ছায়ার মাঝের সময়টুকু। এ পর্যায়ে হাদীসগুলো পরস্পরের ব্যাখ্যা ধরলে, ‘সূর্য হলুদ হওয়া’র অর্থ হবে- দুই ছায়ার পর আসরকে পিছিয়ে দেয়া। কেননা, এটা নবী (স) ও সাহাবীদের থেকে প্রাপ্ত ব্যবহারিক আমল। পক্ষান্তরে প্রবাসী-বক্তা ‘সলাতের ওয়াক্ত পিছিয়ে’ দেয়ার যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা কেবলই শাব্দিক অর্থ। এ পর্যায়ে প্রমাণিত ব্যবহারিক ব্যাখ্যার মোকাবেলায় আপেক্ষিক শাব্দিক অর্থ শরিআত নয়।
উল্লেখ্য হানাফী ফাতওয়া হলো, দেরিতে আসরের সলাত পড়াটা মুস্তাহাব। যা দুই ছায়ার পর সূর্য হলুদ হওয়ার পূর্বে হয়ে থাকে। এ থেকে বুঝা যায়, হানাফী মাযহাবের ফাতওয়া অনুযায়ী তারা আসরের ওয়াক্তকে এর মূল ওয়াক্ত থেকে স্থায়ীভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।
(৩) তৃতীয় যে কারণে আমি দ্বিমত পোষণ করব এ ফতোয়ার সঙ্গে সেটি হল, হানাফী ফিক্বাহ পৃথিবীতে নতুন করে সৃষ্টি হয়নি। শতশত, হাজার বছর ধরে হানাফী ফিক্বাহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং একই সাথে মুসলিম সমাজে হানাফী ফিক্বাহর পাশাপাশি অন্য ফিক্বাহ বা অন্য দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেন, অন্যটাকে বিশুদ্ধ মনে করেন- সেরকম মানুষও সহাবস্থান করেছেন, একসাথে বসবাস করেছেন। সেক্ষেত্রে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোনো আলেমকে এ ধরণের ফতোয়া দিতে দেখা যায়নি যে, অন্য ফিক্বাহ বা অন্য মত লালন করেন, অন্য মতকে বিশুদ্ধ মনে করেন, সেসমস্ত লোকেরা হানাফী ফিক্বাহ অনুসারে যেহেতু আসরের সলাত একটু দেরিতে আদায় করা হয়, অতএব তারা একাকি সলাত আদায় করে নিবেন এবং জামাআত তাদের জন্য ওয়াজিব নয়, ঐ জামাআতে শামিল হওয়া তার জন্য জরুরি নয়- এই ফতোয়া কেউ দিয়েছেন, এই কথাটি আমার জানা নাই। বরং এর বিপরীত ফতোয়া আছে ভূরিভূরি ।
পর্যালোচনা-১১: আমরা ‘পর্যালোচনা-৭’-এর পূর্বে বক্তার বক্তব্যে জেনেছি, জুমুআর সলাত দেরি করাতে সাহাবীরা উত্তম ওয়াক্তে সলাত আদায় করে পরবর্তী সময়ে জামাআতে শরীক হওয়ার হাদীসভিত্তিক ফাতওয়া দিতেন। অথচ আসরের সলাতের ক্ষেত্রে হাদীসগুলো আরও সূক্ষ্ম ও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হলেও- প্রবাসী বক্তা ফাতওয়া নেই বলে উল্লেখ করেছেন। আমরা বলব নবী (স)-এর দিক-নির্দেশনা ও সাহাবীদের আমল থাকায় যথেষ্ট।
এখন আমরা একটি হানাফী দেওবন্দীদের ফাতওয়া জানব:
প্রশ্ন:
میں حنفی مسلک پر عمل کرتاہوں، کیا میں شافعی یا حنبلی امام کے پیچھے عصر کی نماز پڑھ سکتاہوں؟ چونکہ ان کا وقت حنفی مسلک سے مختلف ہے ۔
আমি হানাফী মসলকের উপর আমল করি। আমি কি শাফেঈ বা হাম্বলী ইমামের পিছনে আসরের সলাত পড়তে পারব? অথচ তাদের ওয়াক্ত হানাফীদের থেকে আলাদা।
)۲ ( کیا عصر کے علاوہ کسی نماز میں فرق ہے؟ دبئی میں اکثر مساجد شافعی ہیں یا حنبلی ہیں، اس لیے نماز کا وقت ہوتے ہی اذان دی جاتی ہے، کیا شافعی یا حنبلی مسلک کے مطابق اذان ختم ہوتے ہی میں تنہا عصر کی نماز پڑھ سکتاہوں؟
(২) আসর ছাড়া অন্য সলাতে কি পার্থক্য আছে? দুবাইয়ে অধিকাংশ মাসজিদ শাফেঈ বা হাম্বলী। ফলে সলাতের ওয়াক্ত হলেই আযান হয়ে যায়। শাফেঈ বা হাম্বলী মসলক মোতাবেক আযান শেষ হওয়া মাত্র- আমি কি একাই আসরের সলাত পড়তে পারব?
জবাব:
)۱( صورت مسئولہ میں جب حنفی مسلک کے اعتبار سے عصر کی نماز کا وقت ہو اس وقت آپ نماز ادا کیا کریں، اگر ایک دو حضرات اور مل جائیں تو جماعت کرلیا کریں، ورنہ تنہا پڑھ لیں، مستقل طور پر شافعی یا حنبلی امام کی اقتداء میں عصر کی نماز نہ ادا کریں، اتفاقاً اگر کبھی پڑھ لیں تو اس کی گنجائش ہے۔
(১) প্রশ্নানুযায়ী যখন হানাফী মসলকের নিয়মে আসরের সলাতের ওয়াক্ত হয়, তখন আপনি (আসরের) সলাত আদায় করবেন। যদি একজন বা দুজন পাওয়া যায়, তা হলে জামাআত করবেন, অন্যথায় একাকী (সলাত) পড়বেন। সাধারণভাবে শাফেঈ ও হাম্বলী ইমামের ইক্তিদাতে আসরের সলাত আদায় করবেন না। ঘটনাক্রমে যদি কখনো পড়েন, সেটা ভিন্ন ব্যাপার।
)۲( عصر کے علاوہ دیگر نمازوں کے اوقات میں اختلاف نہیں ہے، البتہ وہ کچھ نمازوں کو اولِ وقت میں ادا کرتے ہیں، ہم کچھ تاخیر سے ادا کرتے ہیں، مگر وقت اس نماز کا شروع ہوچکا ہوتا ہے اس لیے آپ دیگر نمازیں ان کی اقتداء ہی میں ادا کریں، تنہا نہ پڑھیں۔
(২) আসর ছাড়া অন্য সলাতের ব্যাপারে মতপার্থক্য নেই। যদিও তারা কিছু সলাত আওয়াল ওয়াক্তে আদায় করে, আর আমরা কিছুটা দেরিতে আদায় করি। যেহেতু ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়, সেহেতু অন্য ওয়াক্তের সলাত তাদের ইক্তিদাতে আদায় করবেন, একাকী পড়বেন না।
)۳( وہاں عصر کی اذان ہوتے ہی آپ کے لیے تنہا عصر کی نماز پڑھنا صحیح نہیں بلکہ آپ توقف کریں اورمثلین کے بعد عصر کی نماز ادا کریں۔ واللہ تعالیٰ اعلم .
دارالافتاء، دارالعلوم دیوبند .
(২) সেখানে আসরের আযান শেষ হলেই, একাকী আসরের সলাত পড়া ঠিক না। বরং আপনি অপেক্ষা করবেন এবং দুই ছায়া হওয়ার পর আসরের সলাত আদায় করবেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। [দারুল ইফতা, দারুল উলূলম দেওবন্দ, ফাতওয়া # ২৬৩৬৩]
ওয়েব সাইট: http://www.darulifta-deoband.com/home/ur/Salah-Prayer/26363
উক্ত হানাফী ফাতওয়া ও নবী (স)-এর হাদীসের মধ্যে মিল ও অমিল নিম্নরূপ:
মিল ও অমিল-০১
সহীহ হাদীস: নবী (স) নির্দেশ দিয়েছিলেন- আসরের ওয়াক্ত যেন দেরি না করে প্রকৃত ওয়াক্ত তথা দুই ছায়ার পূর্বে আদায় করা হয়। কেননা, জিবরীল (আ)-এর হাদীস অনুযায়ী এক ছায়া ও দুই ছায়ার মাঝে প্রকৃত ওয়াক্ত।
হানাফী ফাতওয়া: হানাফী ফাতওয়া বলছে, অন্য মাযহাবে যখন এক ছায়ার পরপর আসর আদায় করবে, তখন তাদের সাথে আসরের সলাত আদায় না করে দুই ছায়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
মিল ও অমিল-০২
সহীহ হাদীস: নবী (স) সময়মতো আসরের সলাত পড়ার পর দেরিতে ক্বায়েমকৃত আসরের জামাআতে শরীক হওয়াকে ফযিলতপূর্ণ করার সাথে সাথে ঐচ্ছিকও করেছেন। আবার বিদআতী ও সুন্নাত বিরোধীদের জামাআতের ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
হানাফী ফাতওয়া: হানাফী ফাতওয়া অনুযায়ী এক ছায়াতে আদায়কৃত জামাআতে শরীক হওয়া যাবে না। বরং দুই ছায়ার পর জামাআত বা একাকী সলাত আদায় করতে হবে।
অর্থাৎ নবী (স) বর্ণিত হাদীসের ঠিক বিপরীত ফাতওয়া হানাফীদের রয়েছে। নিচের ফাতওয়াটি বলছে হানাফীরা শাফেঈদের সাথে এক ছায়ার পর আসরের জামাআত হলে তাতে শরীক হবে না। বরং দুই ছায়ার পর একাকী বা ভিন্নস্থানে জামাআতে আসরের সলাত আদায় করবে:
প্রশ্ন:
یہاں کویت میں ساری مساجد میں عصر کی نماز شافعی وقت کے مطابق ہوتی ہے۔ اگر ہمیں باجماعت نماز پڑھنا ہو تو حنفی وقت تو شروع ہی نہیں ہوتا۔ نماز باجماعت کیسے پڑھیں؟ کیا ایسی صورت نکل سکتی ہے کہ جماعت سے نماز نہ پڑھیں اور مسجد میں ہی حنفی وقت کا انتظار کریں او رجب حنفی وقت ہو جائے او رکوئی آدمی مسجد میں آجائے جس نے عصر نہیں پڑھی ہو تو اس کے ساتھ مسجد ہی میں دوسری جماعت کرلی جائے؟ لیکن مسجد میں دوسری جماعت کرنا مکروہ تحریمی ہے؟ کیا کوئی صورت نکل سکتی ہے یا پھر شافعی وقت کے مطابق ہی پہلی جماعت سے نماز پڑھیں؟
‘‘কুয়েতের সমস্ত মাসজিদের আসরের সলাত শাফেঈ ওয়াক্ত মোতাবেক আদায় করা হয়। যদি আমি জামাআতে সলাত পড়ি তবে হানাফী ওয়াক্ত তখনো শুরু হয় না। জামাআতসহ সলাত কীভাবে পড়ব? এমতাবস্থায় কি এ পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়- মাসজিদে হানাফী ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করব, যখন হানাফী ওয়াক্তে কেউ মাসজিদে আসে যে আসরের সলাত পড়েনি, তার সাথে মাসজিদে দ্বিতীয় জামাআত করব? কিন্তু মাসজিদে দ্বিতীয় জামাআত করা মাকরুহ তাহরিমী? কোনো পদ্ধতি আছে কি, নাকি শাফেঈ ওয়াক্ত মোতাবেক প্রথম জামাআতে সলাত পড়ব?’’
জবাব:
مسجد میں دوسری جماعت نہ کریں کیوں کہ یہ مکروہ ہے، حنفیہ میں سے صاحبین کے نزدیک مثل اول پر عصر کا وقت ہوجاتا ہے بنا بریں اگر کبھی شافعی وقت کے مطابق عصر کی نماز پڑھ لیں تو صاحبین کے قول کے مطابق اگرچہ نماز ہوجائے گی لیکن مفتی بہ قول کے مطابق چونکہ مثلین پر عصر کا وقت شروع ہوتا ہے، اس لیے حنفی وقت کا انتظار کرلیں اور دوچار حنفی حضرات جمع ہوکر الگ خارج مسجد یا کسی مناسب مقام پر جماعت کرلیا کریں۔واللہ تعالیٰ اعلم
دارالافتاء،دارالعلوم دیوبند .
‘‘মাসজিদে দ্বিতীয় জামাআত করবে না, কেননা এটা মাকরুহ। [. ফাতওয়াটিও সহীহ হাদীস বিরোধী। যেমন, সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণনা করেন: جَاءَ رَجُلٌ وَقَدْ صَلّى رَسُولُ اللّهِ فَقَالَ : أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلى هذَا فَيُصَلِّيَ مَعَه؟ فَقَامَ رَجُلٌ فَيُصَلِّىْ مَعَه . ‘‘একদিন এক লোক মাসজিদে এমন সময় আসলেন, যখন রসূলুল্লাহ (স) সলাত আদায় করে ফেলেছেন। তিনি (তাকে দেখে) বললেন: এমন কোনো মানুষ কি নেই যে তাকে সদাক্বাহ দিবে- তার সাথে সলাত আদায় করে। তখন এক লোক দাঁড়ালেন এবং তার সাথে সলাত আদায় করলেন।’’ [আবূ দাউদ হা/৫৭৪, তিরমিযী হা/২২০- আলবানী (রহ) সহীহ বলেছেন]বুঝা যাচ্ছে, একই মাসজিদে পরবর্তী জামাআত বৈধ। ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’র ফতোয়া অনুযায়ী, হানাফী মাযহাবেও নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে পরবর্তী জামাআত জায়েয: الْمَسْجِدُ إذَا كَانَ لَهُ إمَامٌ مَعْلُومٌ وَجَمَاعَةٌ مَعْلُومَةٌ فِي مَحِلِّهِ فَصَلَّى أَهْلُهُ فِيهِ بِالْجَمَاعَةِ لَا يُبَاحُ تَكْرَارُهَا فِيهِ بِأَذَانٍ ثَانٍ أَمَّا إذَا صَلَّوْا بِغَيْرِ أَذَانٍ يُبَاحُ إجْمَاعًا وَكَذَا فِي مَسْجِدِ قَارِعَةِ الطَّرِيقِ . كَذَا فِي شَرْحِ الْمَجْمَعِ لِلْمُصَنِّفِ إذَا زَادَ عَلَى الْوَاحِدِ فِي غَيْرِ الْجُمُعَةِ فَهُوَ جَمَاعَةٌ وَإِنْ كَانَ مَعَهُ صَبِيٌّ عَاقِلٌ . كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ .‘‘কোনো মহল্লার মাসজিদে যদি ইমাম ও জামাআত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লাবাসী যদি জামাআতের সাথে সলাত আদায় করে নেয়, তবে দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে এখানে পুনরায় জামাআত করা দুরস্ত নেই। যদি মহল্লাবাসী আযান ব্যতীত সলাত আদায় করে থাকে, তা হলে সমস্ত ইমামের মতে এখানে দ্বিতীয় জামাআত করা জায়েয আছে। এমনিভাবে রাস্তার মাসজিদেও দ্বিতীয় জামাআত করা জায়েয আছে (শারহুল মাজমা‘)। জুমুআ ব্যতীত অন্য সলাতে যদি একের অধিক লোক হয়, তা হলেও জামাআত সহীহ হবে। যদি ইমামের সাথে একজন জ্ঞানবান বালক উপস্থিত থাকে (সিরাজিয়্যা)।’’ [ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/২১৪ পৃ.]] হানাফীদের মধ্যে সাহেবাইনের (ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ.) মতে প্রথম (বা এক) ছায়াতে আসরের ওয়াক্ত হয়ে যায়। ফলে যদি কখনো শাফেঈ ওয়াক্ত মোতাবেক আসরের সলাত পড়ে নেয়, তা হলে সাহেবাইনের উক্তি মোতাবেক্ব যদিও সলাত হয়ে যাবে, কিন্তু ফাতওয়া হল- আসরের ওয়াক্ত দুই ছায়া থেকে শুরু হয়। সুতরাং হানাফী ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অতঃপর দুই-চারজন হানাফী উপস্থিত হলে মাসজিদ থেকে বের হয়ে বা সুবিধামত স্থানে জামাআত ক্বায়েম করবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
[দারুল ইফতা, দারুল উলূম দেওবন্দ, ফাতওয়া #২১১১০]
ওয়েব সাইট: http://www.darulifta-deoband.com/home/ur/Salah-Prayer/21110
বুঝা যাচ্ছে, নবী (স) একাকী আসরের সলাত পড়ার যে নির্দেশটি দিয়েছিলেন, সেটি ছিল ইমাম ও শাসকদের প্রকৃত বা মুস্তাহাব ওয়াক্ত থেকে দেরিতে জামাআত করার জন্যে। আর হানাফীরা এক ছায়ার পর তথা মুস্তাহাব ওয়াক্তের জামাআত ছেড়ে দিয়ে দুই ছায়া বা সূর্যের রং ও তেজ পরিবর্তনের সময় একাকী বা ভিন্ন স্থানে জামাআতে আসর ক্বায়েমের ফাতওয়া দিয়েছেন।
এরপরেও যদি সৌদি-প্রবাসী বক্তা বলেন, একটিও ফাতওয়া নেই। অথচ আমরা বলব, আরও ভয়ংকর হাদীস বিরোধী ফাতওয়া আছে। যার প্রমাণ উপরে উল্লেখ করেছি।
পর্যালোচনা-১১: আমরা ‘পর্যালোচনা-৭’-এর পূর্বে বক্তার বক্তব্যে জেনেছি, জুমুআর সলাত দেরি করাতে সাহাবীরা উত্তম ওয়াক্তে সলাত আদায় করে পরবর্তী সময়ে জামাআতে শরীক হওয়ার হাদীসভিত্তিক ফাতওয়া দিতেন। অথচ আসরের সলাতের ক্ষেত্রে হাদীসগুলো আরও সূক্ষ্ম ও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হলেও- প্রবাসী বক্তা ফাতওয়া নেই বলে উল্লেখ করেছেন। আমরা বলব নবী (স)-এর দিক-নির্দেশনা ও সাহাবীদের আমল থাকায় যথেষ্ট।
এখন আমরা একটি হানাফী দেওবন্দীদের ফাতওয়া জানব:
প্রশ্ন:
میں حنفی مسلک پر عمل کرتاہوں، کیا میں شافعی یا حنبلی امام کے پیچھے عصر کی نماز پڑھ سکتاہوں؟ چونکہ ان کا وقت حنفی مسلک سے مختلف ہے ۔
আমি হানাফী মসলকের উপর আমল করি। আমি কি শাফেঈ বা হাম্বলী ইমামের পিছনে আসরের সলাত পড়তে পারব? অথচ তাদের ওয়াক্ত হানাফীদের থেকে আলাদা।
)۲ ( کیا عصر کے علاوہ کسی نماز میں فرق ہے؟ دبئی میں اکثر مساجد شافعی ہیں یا حنبلی ہیں، اس لیے نماز کا وقت ہوتے ہی اذان دی جاتی ہے، کیا شافعی یا حنبلی مسلک کے مطابق اذان ختم ہوتے ہی میں تنہا عصر کی نماز پڑھ سکتاہوں؟
(২) আসর ছাড়া অন্য সলাতে কি পার্থক্য আছে? দুবাইয়ে অধিকাংশ মাসজিদ শাফেঈ বা হাম্বলী। ফলে সলাতের ওয়াক্ত হলেই আযান হয়ে যায়। শাফেঈ বা হাম্বলী মসলক মোতাবেক আযান শেষ হওয়া মাত্র- আমি কি একাই আসরের সলাত পড়তে পারব?
জবাব:
)۱( صورت مسئولہ میں جب حنفی مسلک کے اعتبار سے عصر کی نماز کا وقت ہو اس وقت آپ نماز ادا کیا کریں، اگر ایک دو حضرات اور مل جائیں تو جماعت کرلیا کریں، ورنہ تنہا پڑھ لیں، مستقل طور پر شافعی یا حنبلی امام کی اقتداء میں عصر کی نماز نہ ادا کریں، اتفاقاً اگر کبھی پڑھ لیں تو اس کی گنجائش ہے۔
(১) প্রশ্নানুযায়ী যখন হানাফী মসলকের নিয়মে আসরের সলাতের ওয়াক্ত হয়, তখন আপনি (আসরের) সলাত আদায় করবেন। যদি একজন বা দুজন পাওয়া যায়, তা হলে জামাআত করবেন, অন্যথায় একাকী (সলাত) পড়বেন। সাধারণভাবে শাফেঈ ও হাম্বলী ইমামের ইক্তিদাতে আসরের সলাত আদায় করবেন না। ঘটনাক্রমে যদি কখনো পড়েন, সেটা ভিন্ন ব্যাপার।
)۲( عصر کے علاوہ دیگر نمازوں کے اوقات میں اختلاف نہیں ہے، البتہ وہ کچھ نمازوں کو اولِ وقت میں ادا کرتے ہیں، ہم کچھ تاخیر سے ادا کرتے ہیں، مگر وقت اس نماز کا شروع ہوچکا ہوتا ہے اس لیے آپ دیگر نمازیں ان کی اقتداء ہی میں ادا کریں، تنہا نہ پڑھیں۔
(২) আসর ছাড়া অন্য সলাতের ব্যাপারে মতপার্থক্য নেই। যদিও তারা কিছু সলাত আওয়াল ওয়াক্তে আদায় করে, আর আমরা কিছুটা দেরিতে আদায় করি। যেহেতু ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়, সেহেতু অন্য ওয়াক্তের সলাত তাদের ইক্তিদাতে আদায় করবেন, একাকী পড়বেন না।
)۳( وہاں عصر کی اذان ہوتے ہی آپ کے لیے تنہا عصر کی نماز پڑھنا صحیح نہیں بلکہ آپ توقف کریں اورمثلین کے بعد عصر کی نماز ادا کریں۔ واللہ تعالیٰ اعلم .
دارالافتاء، دارالعلوم دیوبند .
(২) সেখানে আসরের আযান শেষ হলেই, একাকী আসরের সলাত পড়া ঠিক না। বরং আপনি অপেক্ষা করবেন এবং দুই ছায়া হওয়ার পর আসরের সলাত আদায় করবেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। [দারুল ইফতা, দারুল উলূলম দেওবন্দ, ফাতওয়া # ২৬৩৬৩]
ওয়েব সাইট: http://www.darulifta-deoband.com/home/ur/Salah-Prayer/26363
উক্ত হানাফী ফাতওয়া ও নবী (স)-এর হাদীসের মধ্যে মিল ও অমিল নিম্নরূপ:
মিল ও অমিল-০১
সহীহ হাদীস: নবী (স) নির্দেশ দিয়েছিলেন- আসরের ওয়াক্ত যেন দেরি না করে প্রকৃত ওয়াক্ত তথা দুই ছায়ার পূর্বে আদায় করা হয়। কেননা, জিবরীল (আ)-এর হাদীস অনুযায়ী এক ছায়া ও দুই ছায়ার মাঝে প্রকৃত ওয়াক্ত।
হানাফী ফাতওয়া: হানাফী ফাতওয়া বলছে, অন্য মাযহাবে যখন এক ছায়ার পরপর আসর আদায় করবে, তখন তাদের সাথে আসরের সলাত আদায় না করে দুই ছায়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
মিল ও অমিল-০২
সহীহ হাদীস: নবী (স) সময়মতো আসরের সলাত পড়ার পর দেরিতে ক্বায়েমকৃত আসরের জামাআতে শরীক হওয়াকে ফযিলতপূর্ণ করার সাথে সাথে ঐচ্ছিকও করেছেন। আবার বিদআতী ও সুন্নাত বিরোধীদের জামাআতের ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
হানাফী ফাতওয়া: হানাফী ফাতওয়া অনুযায়ী এক ছায়াতে আদায়কৃত জামাআতে শরীক হওয়া যাবে না। বরং দুই ছায়ার পর জামাআত বা একাকী সলাত আদায় করতে হবে।
অর্থাৎ নবী (স) বর্ণিত হাদীসের ঠিক বিপরীত ফাতওয়া হানাফীদের রয়েছে। নিচের ফাতওয়াটি বলছে হানাফীরা শাফেঈদের সাথে এক ছায়ার পর আসরের জামাআত হলে তাতে শরীক হবে না। বরং দুই ছায়ার পর একাকী বা ভিন্নস্থানে জামাআতে আসরের সলাত আদায় করবে:
প্রশ্ন:
یہاں کویت میں ساری مساجد میں عصر کی نماز شافعی وقت کے مطابق ہوتی ہے۔ اگر ہمیں باجماعت نماز پڑھنا ہو تو حنفی وقت تو شروع ہی نہیں ہوتا۔ نماز باجماعت کیسے پڑھیں؟ کیا ایسی صورت نکل سکتی ہے کہ جماعت سے نماز نہ پڑھیں اور مسجد میں ہی حنفی وقت کا انتظار کریں او رجب حنفی وقت ہو جائے او رکوئی آدمی مسجد میں آجائے جس نے عصر نہیں پڑھی ہو تو اس کے ساتھ مسجد ہی میں دوسری جماعت کرلی جائے؟ لیکن مسجد میں دوسری جماعت کرنا مکروہ تحریمی ہے؟ کیا کوئی صورت نکل سکتی ہے یا پھر شافعی وقت کے مطابق ہی پہلی جماعت سے نماز پڑھیں؟
‘‘কুয়েতের সমস্ত মাসজিদের আসরের সলাত শাফেঈ ওয়াক্ত মোতাবেক আদায় করা হয়। যদি আমি জামাআতে সলাত পড়ি তবে হানাফী ওয়াক্ত তখনো শুরু হয় না। জামাআতসহ সলাত কীভাবে পড়ব? এমতাবস্থায় কি এ পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়- মাসজিদে হানাফী ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করব, যখন হানাফী ওয়াক্তে কেউ মাসজিদে আসে যে আসরের সলাত পড়েনি, তার সাথে মাসজিদে দ্বিতীয় জামাআত করব? কিন্তু মাসজিদে দ্বিতীয় জামাআত করা মাকরুহ তাহরিমী? কোনো পদ্ধতি আছে কি, নাকি শাফেঈ ওয়াক্ত মোতাবেক প্রথম জামাআতে সলাত পড়ব?’’
জবাব:
مسجد میں دوسری جماعت نہ کریں کیوں کہ یہ مکروہ ہے، حنفیہ میں سے صاحبین کے نزدیک مثل اول پر عصر کا وقت ہوجاتا ہے بنا بریں اگر کبھی شافعی وقت کے مطابق عصر کی نماز پڑھ لیں تو صاحبین کے قول کے مطابق اگرچہ نماز ہوجائے گی لیکن مفتی بہ قول کے مطابق چونکہ مثلین پر عصر کا وقت شروع ہوتا ہے، اس لیے حنفی وقت کا انتظار کرلیں اور دوچار حنفی حضرات جمع ہوکر الگ خارج مسجد یا کسی مناسب مقام پر جماعت کرلیا کریں۔واللہ تعالیٰ اعلم
دارالافتاء،دارالعلوم دیوبند .
‘‘মাসজিদে দ্বিতীয় জামাআত করবে না, কেননা এটা মাকরুহ। [. ফাতওয়াটিও সহীহ হাদীস বিরোধী। যেমন, সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণনা করেন: جَاءَ رَجُلٌ وَقَدْ صَلّى رَسُولُ اللّهِ فَقَالَ : أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلى هذَا فَيُصَلِّيَ مَعَه؟ فَقَامَ رَجُلٌ فَيُصَلِّىْ مَعَه . ‘‘একদিন এক লোক মাসজিদে এমন সময় আসলেন, যখন রসূলুল্লাহ (স) সলাত আদায় করে ফেলেছেন। তিনি (তাকে দেখে) বললেন: এমন কোনো মানুষ কি নেই যে তাকে সদাক্বাহ দিবে- তার সাথে সলাত আদায় করে। তখন এক লোক দাঁড়ালেন এবং তার সাথে সলাত আদায় করলেন।’’ [আবূ দাউদ হা/৫৭৪, তিরমিযী হা/২২০- আলবানী (রহ) সহীহ বলেছেন]বুঝা যাচ্ছে, একই মাসজিদে পরবর্তী জামাআত বৈধ। ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’র ফতোয়া অনুযায়ী, হানাফী মাযহাবেও নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে পরবর্তী জামাআত জায়েয: الْمَسْجِدُ إذَا كَانَ لَهُ إمَامٌ مَعْلُومٌ وَجَمَاعَةٌ مَعْلُومَةٌ فِي مَحِلِّهِ فَصَلَّى أَهْلُهُ فِيهِ بِالْجَمَاعَةِ لَا يُبَاحُ تَكْرَارُهَا فِيهِ بِأَذَانٍ ثَانٍ أَمَّا إذَا صَلَّوْا بِغَيْرِ أَذَانٍ يُبَاحُ إجْمَاعًا وَكَذَا فِي مَسْجِدِ قَارِعَةِ الطَّرِيقِ . كَذَا فِي شَرْحِ الْمَجْمَعِ لِلْمُصَنِّفِ إذَا زَادَ عَلَى الْوَاحِدِ فِي غَيْرِ الْجُمُعَةِ فَهُوَ جَمَاعَةٌ وَإِنْ كَانَ مَعَهُ صَبِيٌّ عَاقِلٌ . كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ .‘‘কোনো মহল্লার মাসজিদে যদি ইমাম ও জামাআত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লাবাসী যদি জামাআতের সাথে সলাত আদায় করে নেয়, তবে দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে এখানে পুনরায় জামাআত করা দুরস্ত নেই। যদি মহল্লাবাসী আযান ব্যতীত সলাত আদায় করে থাকে, তা হলে সমস্ত ইমামের মতে এখানে দ্বিতীয় জামাআত করা জায়েয আছে। এমনিভাবে রাস্তার মাসজিদেও দ্বিতীয় জামাআত করা জায়েয আছে (শারহুল মাজমা‘)। জুমুআ ব্যতীত অন্য সলাতে যদি একের অধিক লোক হয়, তা হলেও জামাআত সহীহ হবে। যদি ইমামের সাথে একজন জ্ঞানবান বালক উপস্থিত থাকে (সিরাজিয়্যা)।’’ [ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী (ইফা) ১/২১৪ পৃ.]] হানাফীদের মধ্যে সাহেবাইনের (ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ.) মতে প্রথম (বা এক) ছায়াতে আসরের ওয়াক্ত হয়ে যায়। ফলে যদি কখনো শাফেঈ ওয়াক্ত মোতাবেক আসরের সলাত পড়ে নেয়, তা হলে সাহেবাইনের উক্তি মোতাবেক্ব যদিও সলাত হয়ে যাবে, কিন্তু ফাতওয়া হল- আসরের ওয়াক্ত দুই ছায়া থেকে শুরু হয়। সুতরাং হানাফী ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অতঃপর দুই-চারজন হানাফী উপস্থিত হলে মাসজিদ থেকে বের হয়ে বা সুবিধামত স্থানে জামাআত ক্বায়েম করবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
[দারুল ইফতা, দারুল উলূম দেওবন্দ, ফাতওয়া #২১১১০]
ওয়েব সাইট: http://www.darulifta-deoband.com/home/ur/Salah-Prayer/21110
বুঝা যাচ্ছে, নবী (স) একাকী আসরের সলাত পড়ার যে নির্দেশটি দিয়েছিলেন, সেটি ছিল ইমাম ও শাসকদের প্রকৃত বা মুস্তাহাব ওয়াক্ত থেকে দেরিতে জামাআত করার জন্যে। আর হানাফীরা এক ছায়ার পর তথা মুস্তাহাব ওয়াক্তের জামাআত ছেড়ে দিয়ে দুই ছায়া বা সূর্যের রং ও তেজ পরিবর্তনের সময় একাকী বা ভিন্ন স্থানে জামাআতে আসর ক্বায়েমের ফাতওয়া দিয়েছেন।
এরপরেও যদি সৌদি-প্রবাসী বক্তা বলেন, একটিও ফাতওয়া নেই। অথচ আমরা বলব, আরও ভয়ংকর হাদীস বিরোধী ফাতওয়া আছে। যার প্রমাণ উপরে উল্লেখ করেছি।
সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেমে দ্বীন এবং সারা পৃথিবীতে উলামায়ে কেরামের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম- শেখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-মুনাজ্জিদ , তাঁর বিশ্ববিখ্যাত islamqa-এ ওয়েব সাইটের ভিতরে একটি প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেছিলেন:
ولا حرج في الصلاة خلف الحنفية مع تأخيرهم العصر ؛ لأن هذا التأخير لا يخرج الصلاة عن وقتها .
‘হানাফী উলামায়ে কেরাম আসরের সলাত একটু দেরিতে আদায় করেন, তাদের দৃষ্টিতে ঐ সময় ওয়াক্ত শুরু হয় তার ভিত্তিতে। অতএব তাদের পিছনে আপনি যদি সলাত আদায় করেন তা হলে কোনো অসুবিধা নাই। কারণ এই দেরিটা সলাতকে তার মূল ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেয় না, বিলম্ব করে ফেলে না। বরং সলাতকে তার গ্রহণযোগ্য ওয়াক্তে ভেতরেই তারা আদায় করে থাকেন। অতএব তাদের পিছনে সলাত আদায় করাতে কোনো সমস্যা নেই।’
একই ফতোয়া দিয়েছে, কাতারভিত্তিক ফতোয়ার বিশ্ববিখ্যাত ওয়েব সাইট islamweb.com-এর ভিতরে এবং সমসাময়িক যুগের আরও অন্যান্য উলামায়ে কেরামের ফতোয়াও এক্ষেত্রে রয়েছে।
পর্যালোচনা-১২: শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদের সম্পূর্ণ বাক্য নিম্নরূপ :
ولا حرج في الصلاة خلف الحنفية مع تأخيرهم العصر ؛ لأن هذا التأخير لا يخرج الصلاة عن وقتها ، فإن وقت العصر - على الراجح - إلى اصفرار الشمس ؛ لما تقدم في حديث عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما . وينظر في مواقيت الصلاة جواب السؤال رقم :( ٩٩٤٠ ) .
لكن إن وجد مسجد يصلي العصر حسب قول الجمهور فهو أتبع للسنة والصلاة فيه أولى . والله أعلم .
‘‘হানাফীদের পিছে তাদের মতো দেরিতে আসরের সলাত পড়াতে কোনো দোষ নেই । কেননা, এই দেরিটা আসরের ওয়াক্তের বাইরে নয়। কেননা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মতে আসরের ওয়াক্ত হলো সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। যেভাবে পূর্বে সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। আরো দেখুন, ‘সলাতের ওয়াক্ত’ সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর নম্বর: ৯৯৪০। কিন্তু যদি এমন মাসজিদ পাওয়া যায় যেখানে জুমহুরের মত অনুযায়ী সালাত আদায় করা হয়- যা সবচেয়ে সুন্নাহভিত্তিক, তা হলে সে মসজিদে সালাত আদায় বেশি উত্তম। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।’’
[দ্র: https://islamqa.info/ar- ফাতওয়া নম্বর: ১৭৯৭৬৯]
আর আমরা জেনেছি এক্ষেত্রে জুমহুরের মতটি হল, এক ছায়ার পর আসরের সলাত জামাআতে আদায় করা এবং দুই ছায়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করা। এটাকেই শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ ‘সবচেয়ে সুন্নাহভিত্তিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ প্রবাসী বক্তা সেটা গোপন করেছেন।
এখন শাইখের প্রথম অংশ ‘‘কোনো দোষ নেই হানাফীদের পিছে তাদের মতো দেরিতে আসরের সলাত পড়াতে’’-এর বিশ্লেষণ করব।
আমরা ‘ফাতাওয়া আলমগীরী’ থেকে প্রমাণ উল্লেখ করেছি যে, হানাফীদের দুই ছায়ার অর্থ হল, সূর্যের গোলক দেখা যাওয়া, অর্থাৎ তেজ কমে যাওয়া। আমরা জেনেছি, তাক্বী উসমানী হানাফী বলেছেন: সূর্য হলুদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। আমরা ইমাম আবূ হানীফা থেকে এ যুক্তিও জেনেছি যে, দুই ছায়ার পূর্বে সূর্যের তেজ কমে না বা ঠান্ডা হয় না বিধায় আসরের সলাতের ওয়াক্ত দুই ছায়ার পরে। যা সরাসরি নিম্নোক্ত সহীহ হাদীসের বিরোধী:
(১) আনাস (রা) বলেন:
أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ بَيْضَاءُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ .
‘‘রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উঁচুতে তাপবিশিষ্ট অবস্থায় থাকত।’’ [. আবূ দাউদ হা/৪০৪। খায়সামা (রহ) বলেন: حَيَاتُهَا أَنْ تَجِدَ، حَرَّهَا ‘‘সূর্যের জীবন্ত হওয়ার অর্থ হলো, তার তাপ অবশিষ্ট থাকা বা অনুভূত হওয়া।’’ [আবূ দাউদ হা/৪০৬]]
(২) আবূ মালীহ (রা) হতে বর্ণিত:
كُنَّا مَعَ بُرَيْدَةَ فِيْ يَوْمٍ ذِي غَيْمٍ فَقَالَ بَكِّرُوا بِالصَّلاَةِ فَإِنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ " مَنْ تَرَكَ صَلاَةَ الْعَصْرِ حَبِطَ عَمَلُهُ " .
‘‘এক মেঘলা দিনে আমরা সাহাবী বুরাইদা (রা)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, শীঘ্র সলাত আদায় করে নাও। কেননা, নবী (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি আসরের সলাত ছেড়ে দেয় তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৫৯৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৩৬।]
ইমাম আবূল হাসান হানাফী সিন্দী (রহ) হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন:
قَوْله ( بَكَّرُوا بِالصَّلَاةِ ) أَيْ عَجَّلُوا بِهَا فِي الْيَوْم الْغَيْم أَيْ فِي الْيَوْم الَّذِي فِيهِ الْغَيْم لِأَنَّ التَّأْخِير فِيهِ قَدْ يُؤَدِّي إِلَى الْفَوْت مِنْ الْأَصْل أَوْ فَوْت الْوَقْت الْمُسْتَحَبّ .
‘‘নবী (স)-এর উক্তি ‘শীঘ্র সলাত আদায় করে নাও’ অর্থাৎ মেঘলা দিনে সলাত আদায়ে তাড়াতাড়ি কর। কেননা দিনটিতে মেঘ থাকায় দেরি করলে প্রকৃত ওয়াক্ত ছুটে যেতে পারে বা মুস্তাহাব ওয়াক্ত শেষ হতে পারে।’’ [. হাশিয়াহ আস-সিন্দি আলা ইবনু মাজাহ (বৈরুত: দারুল মা‘রিফাহ) ১/৩৮৬ পৃ.।]
(৩) আসরের সলাত শীঘ্রই আদায় না করে অপেক্ষা করাটা মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য। [দ্র: ‘অনুচ্ছেদ-১৫’ হা/১৪, ১৫ ও ১৬]
(৪) জিবরীল (আ)-এর হাদীসের এক ছায়া ও দুই ছায়ার মধ্যে আসরের ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। [দ্র. হা/২১] ফলে হলুদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষার সুযোগ নেই।
(৫) আবূ হুরায়রা (রা)-এর হাদীসে আসরের শেষ ওয়াক্ত- সূর্য হলুদ হলে। [দ্র. হা/১]
উক্ত হাদীসগুলোর আলোকে উম্মাতের করণীয় বিষয়গুলো হলো:
(ক) আসরে সলাত এক ছায়ার পর সূর্য উঁচুতে তাপযুক্ত থাকা অবস্থায় পড়তে হবে। এ আমলটি হানাফীদের মধ্যে নেই।
(খ) আসরের সলাতের ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা যাবে না। এক্ষেত্রে হানাফীরা এক ছায়া থেকে দুই ছায়ার হাদীসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দুই ছায়ার পরে আসরের সলাতকে সুনির্দিষ্ট করেছেন- যখন সূর্য হলুদ হওয়ার কাছাকাছি সময়ে পৌঁছে যায়। যা হাদীস বিরোধী।
(গ) সব সময় আসরের সলাতকে শীঘ্র আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে মেঘলা দিনে। এক্ষেত্রে হানাফীদের কোনো উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা নেই।
(ঘ) সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার ব্যাপারে উৎসাহমূলক কোনো হাদীস বর্ণিত হয়নি। বরং এর বিরোধিতায় হাদীসের মূলভাব ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সুর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত আসরের ওয়াক্ত ওজরবশত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। স্থায়ীভাবে জামাআত ক্বায়েমের জন্য ‘হলুদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করাকে মুস্তাহাব’ গণ্য করাটা অজুহাত হতে পারে না।
হানাফীদের মধ্যে আসরের ওয়াক্ত সম্পর্কে উক্ত করণীয়গুলো নেই, কিন্তু বর্জনীয়গুলো তাদের মধ্যে রয়েছে। এ কারণে শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ ও অন্যদের ফাতাওয়াতে হানাফীদের পক্ষে যে ছাড় দেয়া হয়েছে, তার সাথে হাদীসের মিল পাচ্ছি না। এর বিপরীতে আমরা দেওবন্দের ফাতওয়া থেকে জেনেছি, হানাফীরা তাদের ওয়াক্ত ক্বায়েমের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন। সম্ভবত শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদের মতো আরব আলেমরা হানাফীদের মেজাজ ও ফাতাওয়া সম্পর্কে অবগত না থাকায়- এমনটি বলেছেন।
ولا حرج في الصلاة خلف الحنفية مع تأخيرهم العصر ؛ لأن هذا التأخير لا يخرج الصلاة عن وقتها .
‘হানাফী উলামায়ে কেরাম আসরের সলাত একটু দেরিতে আদায় করেন, তাদের দৃষ্টিতে ঐ সময় ওয়াক্ত শুরু হয় তার ভিত্তিতে। অতএব তাদের পিছনে আপনি যদি সলাত আদায় করেন তা হলে কোনো অসুবিধা নাই। কারণ এই দেরিটা সলাতকে তার মূল ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেয় না, বিলম্ব করে ফেলে না। বরং সলাতকে তার গ্রহণযোগ্য ওয়াক্তে ভেতরেই তারা আদায় করে থাকেন। অতএব তাদের পিছনে সলাত আদায় করাতে কোনো সমস্যা নেই।’
একই ফতোয়া দিয়েছে, কাতারভিত্তিক ফতোয়ার বিশ্ববিখ্যাত ওয়েব সাইট islamweb.com-এর ভিতরে এবং সমসাময়িক যুগের আরও অন্যান্য উলামায়ে কেরামের ফতোয়াও এক্ষেত্রে রয়েছে।
পর্যালোচনা-১২: শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদের সম্পূর্ণ বাক্য নিম্নরূপ :
ولا حرج في الصلاة خلف الحنفية مع تأخيرهم العصر ؛ لأن هذا التأخير لا يخرج الصلاة عن وقتها ، فإن وقت العصر - على الراجح - إلى اصفرار الشمس ؛ لما تقدم في حديث عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما . وينظر في مواقيت الصلاة جواب السؤال رقم :( ٩٩٤٠ ) .
لكن إن وجد مسجد يصلي العصر حسب قول الجمهور فهو أتبع للسنة والصلاة فيه أولى . والله أعلم .
‘‘হানাফীদের পিছে তাদের মতো দেরিতে আসরের সলাত পড়াতে কোনো দোষ নেই । কেননা, এই দেরিটা আসরের ওয়াক্তের বাইরে নয়। কেননা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মতে আসরের ওয়াক্ত হলো সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। যেভাবে পূর্বে সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। আরো দেখুন, ‘সলাতের ওয়াক্ত’ সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর নম্বর: ৯৯৪০। কিন্তু যদি এমন মাসজিদ পাওয়া যায় যেখানে জুমহুরের মত অনুযায়ী সালাত আদায় করা হয়- যা সবচেয়ে সুন্নাহভিত্তিক, তা হলে সে মসজিদে সালাত আদায় বেশি উত্তম। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।’’
[দ্র: https://islamqa.info/ar- ফাতওয়া নম্বর: ১৭৯৭৬৯]
আর আমরা জেনেছি এক্ষেত্রে জুমহুরের মতটি হল, এক ছায়ার পর আসরের সলাত জামাআতে আদায় করা এবং দুই ছায়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করা। এটাকেই শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ ‘সবচেয়ে সুন্নাহভিত্তিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ প্রবাসী বক্তা সেটা গোপন করেছেন।
এখন শাইখের প্রথম অংশ ‘‘কোনো দোষ নেই হানাফীদের পিছে তাদের মতো দেরিতে আসরের সলাত পড়াতে’’-এর বিশ্লেষণ করব।
আমরা ‘ফাতাওয়া আলমগীরী’ থেকে প্রমাণ উল্লেখ করেছি যে, হানাফীদের দুই ছায়ার অর্থ হল, সূর্যের গোলক দেখা যাওয়া, অর্থাৎ তেজ কমে যাওয়া। আমরা জেনেছি, তাক্বী উসমানী হানাফী বলেছেন: সূর্য হলুদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। আমরা ইমাম আবূ হানীফা থেকে এ যুক্তিও জেনেছি যে, দুই ছায়ার পূর্বে সূর্যের তেজ কমে না বা ঠান্ডা হয় না বিধায় আসরের সলাতের ওয়াক্ত দুই ছায়ার পরে। যা সরাসরি নিম্নোক্ত সহীহ হাদীসের বিরোধী:
(১) আনাস (রা) বলেন:
أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ بَيْضَاءُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ .
‘‘রসূলুল্লাহ (স) আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উঁচুতে তাপবিশিষ্ট অবস্থায় থাকত।’’ [. আবূ দাউদ হা/৪০৪। খায়সামা (রহ) বলেন: حَيَاتُهَا أَنْ تَجِدَ، حَرَّهَا ‘‘সূর্যের জীবন্ত হওয়ার অর্থ হলো, তার তাপ অবশিষ্ট থাকা বা অনুভূত হওয়া।’’ [আবূ দাউদ হা/৪০৬]]
(২) আবূ মালীহ (রা) হতে বর্ণিত:
كُنَّا مَعَ بُرَيْدَةَ فِيْ يَوْمٍ ذِي غَيْمٍ فَقَالَ بَكِّرُوا بِالصَّلاَةِ فَإِنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ " مَنْ تَرَكَ صَلاَةَ الْعَصْرِ حَبِطَ عَمَلُهُ " .
‘‘এক মেঘলা দিনে আমরা সাহাবী বুরাইদা (রা)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, শীঘ্র সলাত আদায় করে নাও। কেননা, নবী (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি আসরের সলাত ছেড়ে দেয় তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।’’ [. সহীহ বুখারী হা/৫৯৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৩৬।]
ইমাম আবূল হাসান হানাফী সিন্দী (রহ) হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন:
قَوْله ( بَكَّرُوا بِالصَّلَاةِ ) أَيْ عَجَّلُوا بِهَا فِي الْيَوْم الْغَيْم أَيْ فِي الْيَوْم الَّذِي فِيهِ الْغَيْم لِأَنَّ التَّأْخِير فِيهِ قَدْ يُؤَدِّي إِلَى الْفَوْت مِنْ الْأَصْل أَوْ فَوْت الْوَقْت الْمُسْتَحَبّ .
‘‘নবী (স)-এর উক্তি ‘শীঘ্র সলাত আদায় করে নাও’ অর্থাৎ মেঘলা দিনে সলাত আদায়ে তাড়াতাড়ি কর। কেননা দিনটিতে মেঘ থাকায় দেরি করলে প্রকৃত ওয়াক্ত ছুটে যেতে পারে বা মুস্তাহাব ওয়াক্ত শেষ হতে পারে।’’ [. হাশিয়াহ আস-সিন্দি আলা ইবনু মাজাহ (বৈরুত: দারুল মা‘রিফাহ) ১/৩৮৬ পৃ.।]
(৩) আসরের সলাত শীঘ্রই আদায় না করে অপেক্ষা করাটা মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য। [দ্র: ‘অনুচ্ছেদ-১৫’ হা/১৪, ১৫ ও ১৬]
(৪) জিবরীল (আ)-এর হাদীসের এক ছায়া ও দুই ছায়ার মধ্যে আসরের ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। [দ্র. হা/২১] ফলে হলুদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষার সুযোগ নেই।
(৫) আবূ হুরায়রা (রা)-এর হাদীসে আসরের শেষ ওয়াক্ত- সূর্য হলুদ হলে। [দ্র. হা/১]
উক্ত হাদীসগুলোর আলোকে উম্মাতের করণীয় বিষয়গুলো হলো:
(ক) আসরে সলাত এক ছায়ার পর সূর্য উঁচুতে তাপযুক্ত থাকা অবস্থায় পড়তে হবে। এ আমলটি হানাফীদের মধ্যে নেই।
(খ) আসরের সলাতের ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা যাবে না। এক্ষেত্রে হানাফীরা এক ছায়া থেকে দুই ছায়ার হাদীসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দুই ছায়ার পরে আসরের সলাতকে সুনির্দিষ্ট করেছেন- যখন সূর্য হলুদ হওয়ার কাছাকাছি সময়ে পৌঁছে যায়। যা হাদীস বিরোধী।
(গ) সব সময় আসরের সলাতকে শীঘ্র আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে মেঘলা দিনে। এক্ষেত্রে হানাফীদের কোনো উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা নেই।
(ঘ) সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার ব্যাপারে উৎসাহমূলক কোনো হাদীস বর্ণিত হয়নি। বরং এর বিরোধিতায় হাদীসের মূলভাব ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সুর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত আসরের ওয়াক্ত ওজরবশত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। স্থায়ীভাবে জামাআত ক্বায়েমের জন্য ‘হলুদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করাকে মুস্তাহাব’ গণ্য করাটা অজুহাত হতে পারে না।
হানাফীদের মধ্যে আসরের ওয়াক্ত সম্পর্কে উক্ত করণীয়গুলো নেই, কিন্তু বর্জনীয়গুলো তাদের মধ্যে রয়েছে। এ কারণে শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ ও অন্যদের ফাতাওয়াতে হানাফীদের পক্ষে যে ছাড় দেয়া হয়েছে, তার সাথে হাদীসের মিল পাচ্ছি না। এর বিপরীতে আমরা দেওবন্দের ফাতওয়া থেকে জেনেছি, হানাফীরা তাদের ওয়াক্ত ক্বায়েমের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন। সম্ভবত শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদের মতো আরব আলেমরা হানাফীদের মেজাজ ও ফাতাওয়া সম্পর্কে অবগত না থাকায়- এমনটি বলেছেন।
ইসলামি শরিআতে জামাআতের সাথে সলাত আদায় করার গুরুত্ব অপরিসীম। নবী (স)-এর বহু হাদীস থেকে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, জামাআতের সাথে সলাত- এটা কখনো একাকি সলাতের সমকক্ষ হতে পারে না। একাকি সলাত আদায় করলে তিনি কখনো জামাআতের সলাত আদায়ের সওয়াব পেতে পারেন না।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের একটি প্রসিদ্ধ আক্বীদা হলো যে, জামাআতের সাথে সলাত আদায় করতে হবে যে কোনো মূল্যে। সৌদি আরবসহ যে সমস্ত দেশে শীআরা অবস্থান করে, সেখানে দেখা যায়- শীআরা সাধারণত মাসজিদে জামাআত চলাকালীন সময়েও একাকি তারা সলাত আদায় করে, জামাআতে যোগদান করে না। [. এই বৈশিষ্ট্যটি কিছু পূর্বে হানাফী ফাতোয়া থেকে উল্লেখ করেছি।] আহলে সুন্নাতের লোকেরা কোনো অবস্থাতে জামাআত ত্যাগ করে না। যদি ইমামের কোনো আক্বীদা কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে না যায়, তাকে ইসলাম থেকে খারিজ না করে দেয়- তা হলে ইমাম ফাসেক্ব হলেও, ইমাম কোনো খারাপ মানুষ হলেও তার পিছনে হলেও সলাত আদায় করতে হবে জামাআতের সাথে, একাকি আদায় করা যাবে না। এটাই ইমাম আবূ হানিফা, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ)-সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সমস্ত উলামায়ে কেরামের মত। ‘আক্বীদাতুত তাহাবিয়্যাহ’-তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে, ইমাম যদি ফাসেক্ব হয়, বিকল্প কোনো ইমাম না থাকলে ঐ ফাসেক্ব ইমামের পিছনেই জামাআতের সাথে সলাত আদায় কারতে হবে, একাকি সলাত আদায় করা যাবে না।
পর্যালোচনা-১৩: নবী (স) আসরের সলাত সম্পর্কিত হাদীসগুলোতে প্রকৃত ওয়াক্তে একাকী হলেও তা আদায় করা এবং পরবর্তী সময়ে জামাআতের শরীক হওয়ার সুযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এর দ্বারা প্রথম ওয়াক্তে সলাত আদায় ও জামাআতে সলাত আদায়- উভয় ফযিলত অর্জিত হয়। কিন্তু আসরের জামাআত দেরিতে আদায় করাতে তাতে শরীক হওয়াকে নফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা থেকে শরিআতে জামাআত আদায়ের গুরুত্ব থাকার সাথে সাথে আসরের সলাতের ক্ষেত্রে প্রথম ওয়াক্ত বা সঠিক ওয়াক্ত আদায়ের বিষয়টি অত্যধিক প্রাধান্য দিয়েছেন। উম্মাত হিসেবে এই প্রাধান্যের বিষয়টি হাদীসের আলোকে আমাদেরকেও প্রাধান্য দিতে হবে। শরিআতে যখন সাধারণ হুকুমের পাশাপাশি ব্যতিক্রম হুকুম থাকে তখন তার উপর আমল করাতে বেশি ফযিলত অর্জন হয়। এ মর্মে সাহাবী ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ أَنْ يُؤتَى رُخْصَةٌ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ تُؤتَى مَعْصِيَةٌ .
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রুখসাত (ছাড়) দেয়া কাজগুলো করা পছন্দ করেন, যেমন তিনি নাফরমানী কাজ করা অপছন্দ করেন।’’ [. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৫৪। মুস্তাফা আ‘যামী (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
অনুরূপ সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصُهُ كَمَا يحب أن تؤتى عزائمه .
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রুখসাত (অবকাশ) দেয়া কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন, যেমন তিনি পছন্দ করে আযিমাত (মৌলিক) কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন।’’ [. সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৩৫৪। শুআয়েব আরনাউত (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
জামাআতে সলাত অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আসরের সলাতকে প্রথম বা মূল ওয়াক্তে আদায় করাকে নবী (স) বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। তা ছাড়া ইশা ও ফজরের জামাআতে শরীক হওয়াকে মুনাফিক্বদের জন্য কষ্টদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে আসরের সলাতের ক্ষেত্রে অহেতুক দেরি করা, কিংবা সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত দেরি করাকে মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তা-ই এক্ষেত্রে আসরের সলাতকে দেরিতে আদায়কৃত জামাআতের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। বরং একাকী আদায় করতে হবে। সম্ভব হলে দেরিতে আদায়কৃত আসরের জামাআতে শরীক হয়ে সওয়াব নিতে হবে। শর্ত হল, ইমাম বিদআতী ও সুন্নাত বিরোধী হবে না। আর এগুলো নবী (স)-এর সাধারণে নির্দেশের পাশাপাশি বিশেষ নির্দেশ। যা পালনে বেশি সওয়াব অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।
ইমাম আবূ দাউদ (রহ) বর্ণনা করেছেন:
سَمِعْتُ أَحْمَدَ، قَالَ لَهُ رَجُلٌ " إِذَا دَخَلْتُ، وَقَدْ صَلَّيْتُ الْعَصْرَ وَأقِيمَتِ الصَّلَاةُ؟ قَالَ : صَلِّ مَعَهُمْ، قِيلَ : وَالظُّهْرُ؟ قَالَ : وَالصَّلَوَاتُ كُلُّهَا .
‘‘আমি ইমাম আহমাদ (রহ) থেকে শুনেছি, এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল: যদি আমি আসরের সলাত আদায়ের পর (মাসজিদে) প্রবেশ করি, আর তখন সলাত (জামাআত) দাঁড়ায় (তখন কী করব)? তিনি (রহ) বললেন: তাদের সাথে সলাত পড়। জিজ্ঞাসা করা হলো: আর যোহরের সলাত হলে? তিনি (রহ) বললেন: সব সলাতই।’’ [. মাসায়েলে ইমাম আহমাদ রিওয়ায়াত আবী দাউদ সিজিস্তানী ৭১ পৃ.।]
আমরাও মনে করি যে, জামাআত ত্যাগ করা ঠিক নয়। কিন্তু কোন্ জামাআত? সেই জামাআত যা সঠিক ওয়াক্তে অনুষ্ঠিত হয়, দেরিতে অনুষ্ঠিত হয় এমন জামাআত নয়। কারণ, স্বয়ং নবী (স) দেরিতে জামা'আত হলে তা ত্যাগ করে একাকী সঠিক ওয়াক্তে সালাত আদায়ের আদেশ দিয়েছেন।
প্রবাসী বক্তা এখানে ফাসেক ইমামের সাথে দেরিতে সালাত আদায়কে ক্বিয়াস করেছেন। যা একেবারেই ফাসেদ ক্বিয়াস। কারণ, ফাসেক ইমামের গুনাহ মুসল্লির নেকিতে কোনো প্রভাব পড়ে না এবং মুসল্লি তার দায়ভার বহন করে না। কিন্তু দেরিতে সালাত আদায় করলে মুসল্লির নেকিতে তার প্রভাব পড়ে এবং মুসল্লিকে তার ভার বহন করতে হয়। অন্যথায় নবী (স) একাকী সলাত আদায় করতে বলতেন না। এমনকি একাকী সলাত আদায় করাকে كُنْتَ قَدْ أَحْرَزْتَ صَلاَتَكَ ‘তুমি তোমার সলাতকে রক্ষা করলে’ বলে উল্লেখ করেতেন না।। ]দ্র. হা/৩৮] তাই বক্তা যে ক্বিয়াস করেছেন তা ‘‘ক্বিয়াস মা‘আল ফারেক্ব’’। আর ‘‘ক্বিয়াস মা‘আল ফারেক্ব’’ মূল্যহীন ক্বিয়াস ।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের একটি প্রসিদ্ধ আক্বীদা হলো যে, জামাআতের সাথে সলাত আদায় করতে হবে যে কোনো মূল্যে। সৌদি আরবসহ যে সমস্ত দেশে শীআরা অবস্থান করে, সেখানে দেখা যায়- শীআরা সাধারণত মাসজিদে জামাআত চলাকালীন সময়েও একাকি তারা সলাত আদায় করে, জামাআতে যোগদান করে না। [. এই বৈশিষ্ট্যটি কিছু পূর্বে হানাফী ফাতোয়া থেকে উল্লেখ করেছি।] আহলে সুন্নাতের লোকেরা কোনো অবস্থাতে জামাআত ত্যাগ করে না। যদি ইমামের কোনো আক্বীদা কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে না যায়, তাকে ইসলাম থেকে খারিজ না করে দেয়- তা হলে ইমাম ফাসেক্ব হলেও, ইমাম কোনো খারাপ মানুষ হলেও তার পিছনে হলেও সলাত আদায় করতে হবে জামাআতের সাথে, একাকি আদায় করা যাবে না। এটাই ইমাম আবূ হানিফা, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ)-সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সমস্ত উলামায়ে কেরামের মত। ‘আক্বীদাতুত তাহাবিয়্যাহ’-তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে, ইমাম যদি ফাসেক্ব হয়, বিকল্প কোনো ইমাম না থাকলে ঐ ফাসেক্ব ইমামের পিছনেই জামাআতের সাথে সলাত আদায় কারতে হবে, একাকি সলাত আদায় করা যাবে না।
পর্যালোচনা-১৩: নবী (স) আসরের সলাত সম্পর্কিত হাদীসগুলোতে প্রকৃত ওয়াক্তে একাকী হলেও তা আদায় করা এবং পরবর্তী সময়ে জামাআতের শরীক হওয়ার সুযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এর দ্বারা প্রথম ওয়াক্তে সলাত আদায় ও জামাআতে সলাত আদায়- উভয় ফযিলত অর্জিত হয়। কিন্তু আসরের জামাআত দেরিতে আদায় করাতে তাতে শরীক হওয়াকে নফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা থেকে শরিআতে জামাআত আদায়ের গুরুত্ব থাকার সাথে সাথে আসরের সলাতের ক্ষেত্রে প্রথম ওয়াক্ত বা সঠিক ওয়াক্ত আদায়ের বিষয়টি অত্যধিক প্রাধান্য দিয়েছেন। উম্মাত হিসেবে এই প্রাধান্যের বিষয়টি হাদীসের আলোকে আমাদেরকেও প্রাধান্য দিতে হবে। শরিআতে যখন সাধারণ হুকুমের পাশাপাশি ব্যতিক্রম হুকুম থাকে তখন তার উপর আমল করাতে বেশি ফযিলত অর্জন হয়। এ মর্মে সাহাবী ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ أَنْ يُؤتَى رُخْصَةٌ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ تُؤتَى مَعْصِيَةٌ .
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রুখসাত (ছাড়) দেয়া কাজগুলো করা পছন্দ করেন, যেমন তিনি নাফরমানী কাজ করা অপছন্দ করেন।’’ [. সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৫৪। মুস্তাফা আ‘যামী (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
অনুরূপ সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصُهُ كَمَا يحب أن تؤتى عزائمه .
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রুখসাত (অবকাশ) দেয়া কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন, যেমন তিনি পছন্দ করে আযিমাত (মৌলিক) কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন।’’ [. সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৩৫৪। শুআয়েব আরনাউত (রহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
জামাআতে সলাত অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আসরের সলাতকে প্রথম বা মূল ওয়াক্তে আদায় করাকে নবী (স) বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। তা ছাড়া ইশা ও ফজরের জামাআতে শরীক হওয়াকে মুনাফিক্বদের জন্য কষ্টদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে আসরের সলাতের ক্ষেত্রে অহেতুক দেরি করা, কিংবা সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত দেরি করাকে মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তা-ই এক্ষেত্রে আসরের সলাতকে দেরিতে আদায়কৃত জামাআতের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। বরং একাকী আদায় করতে হবে। সম্ভব হলে দেরিতে আদায়কৃত আসরের জামাআতে শরীক হয়ে সওয়াব নিতে হবে। শর্ত হল, ইমাম বিদআতী ও সুন্নাত বিরোধী হবে না। আর এগুলো নবী (স)-এর সাধারণে নির্দেশের পাশাপাশি বিশেষ নির্দেশ। যা পালনে বেশি সওয়াব অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।
ইমাম আবূ দাউদ (রহ) বর্ণনা করেছেন:
سَمِعْتُ أَحْمَدَ، قَالَ لَهُ رَجُلٌ " إِذَا دَخَلْتُ، وَقَدْ صَلَّيْتُ الْعَصْرَ وَأقِيمَتِ الصَّلَاةُ؟ قَالَ : صَلِّ مَعَهُمْ، قِيلَ : وَالظُّهْرُ؟ قَالَ : وَالصَّلَوَاتُ كُلُّهَا .
‘‘আমি ইমাম আহমাদ (রহ) থেকে শুনেছি, এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল: যদি আমি আসরের সলাত আদায়ের পর (মাসজিদে) প্রবেশ করি, আর তখন সলাত (জামাআত) দাঁড়ায় (তখন কী করব)? তিনি (রহ) বললেন: তাদের সাথে সলাত পড়। জিজ্ঞাসা করা হলো: আর যোহরের সলাত হলে? তিনি (রহ) বললেন: সব সলাতই।’’ [. মাসায়েলে ইমাম আহমাদ রিওয়ায়াত আবী দাউদ সিজিস্তানী ৭১ পৃ.।]
আমরাও মনে করি যে, জামাআত ত্যাগ করা ঠিক নয়। কিন্তু কোন্ জামাআত? সেই জামাআত যা সঠিক ওয়াক্তে অনুষ্ঠিত হয়, দেরিতে অনুষ্ঠিত হয় এমন জামাআত নয়। কারণ, স্বয়ং নবী (স) দেরিতে জামা'আত হলে তা ত্যাগ করে একাকী সঠিক ওয়াক্তে সালাত আদায়ের আদেশ দিয়েছেন।
প্রবাসী বক্তা এখানে ফাসেক ইমামের সাথে দেরিতে সালাত আদায়কে ক্বিয়াস করেছেন। যা একেবারেই ফাসেদ ক্বিয়াস। কারণ, ফাসেক ইমামের গুনাহ মুসল্লির নেকিতে কোনো প্রভাব পড়ে না এবং মুসল্লি তার দায়ভার বহন করে না। কিন্তু দেরিতে সালাত আদায় করলে মুসল্লির নেকিতে তার প্রভাব পড়ে এবং মুসল্লিকে তার ভার বহন করতে হয়। অন্যথায় নবী (স) একাকী সলাত আদায় করতে বলতেন না। এমনকি একাকী সলাত আদায় করাকে كُنْتَ قَدْ أَحْرَزْتَ صَلاَتَكَ ‘তুমি তোমার সলাতকে রক্ষা করলে’ বলে উল্লেখ করেতেন না।। ]দ্র. হা/৩৮] তাই বক্তা যে ক্বিয়াস করেছেন তা ‘‘ক্বিয়াস মা‘আল ফারেক্ব’’। আর ‘‘ক্বিয়াস মা‘আল ফারেক্ব’’ মূল্যহীন ক্বিয়াস ।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ)-তো এও বলেছেন, যদি ফাসেক্ব ইমামের পিছনে কেউ সলাত আদায় না করে যে, এই লোকটা ফাসেক্ব- সে কারণে, আর এই অজুহাত দেখিয়ে যদি সে একাকি সলাত আদায় করে, তা হলে সে মুসলিমদের মধ্যে একজন বিদআতি মুসলিম, সে একজন বিভ্রান্ত মুসলিম, সে কোনোভাবে হক্ব ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মতো জালিম-অত্যাচারী শাসক- যে কিনা সাহাবীদের রক্তকে হালাল পর্যন্ত মনে করত, তার পিছনেও সাহাবায়ে কেরাম জামাআতের সাথে সলাত আদায় করেছেন, একাকী সলাত আদায় করেননি।
পর্যালোচনা-১৪: আমরা নবী (স)-এর হাদীস থেকে জেনেছি সুন্নাত বিরোধী ও বিদআতী ইমাম বা শাসকের অনুসরণ করা যাবে না। [দ্র: হা/৪২]
ইমাম আহমাদ (রহ)-এর পুত্র আব্দুল্লাহ (রহ) বর্ণনা করেছেন:
سَأَلْتُ أَبِي رَحِمَهُ اللَّهُ عَنِ الصَّلَاةِ، خَلْفَ أَهْلِ الْبِدَعِ، قَالَ : «لَا يُصَلَّى خَلْفَهُمْ مِثْلُ الْجَهْمِيَّةِ وَالْمُعْتَزِلَةِ»،
‘‘আমি আমার আব্বাকে (রহ) বিদআতীদের পিছনে সলাত আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি (রহ) বললেন: তুমি তাদের পিছনে সলাত আদায় করবে না, যেমন- জাহমিয়্যা ও মু‘তাযিলা।’’ [. আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ, আস-সুন্নাহ ১/১০৩ পৃ. ৫ নম্বর।]
পক্ষান্তরে ফাসেক ও জালিম শাসক সম্পর্কে নবী (স)-এর পক্ষ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপ:
يَكُوْنَ بَعْدِيْ اَئِمَّةُ لاَيَهْتَدُوْنَ بِهُدَايَ وَلاَ يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِيْ وَسَيَقُوْمُ فِيْهِمْ رِجَالُ قُلُوْبُهُمْ قُلُوْبُ الشَّيَاطِيْنِ فِيْ جُثْمَانِ اِنْسٍ قَالَ قُلْتُ كَيْفَ اَصْنَعُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنْ اَدْرَكْتُ ذَالِكَ قَالَ تَسْمَعُ وَتُطِيْعُ لِلْاَمِيْرِ وَاِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ وَاُخِذَامَالُكَ فَاسْمَعْ وَاطِعْ ـ
‘‘আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে যারা আমার হেদায়েতে হেদায়েত প্রাপ্ত হবে না এবং আমার সুন্নাতও তারা অবলম্বন করবে না। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন সব লোকের উদ্ভব হবে যাদের অন্তঃকরণ হবে মানব দেহে শয়তানের অন্তঃকরণ। রাবী বলেন, আমি বললাম: তখন আমরা কী করবো, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই? বললেন: তুমি শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সম্পদ কেড়েও নেয়া হয় তবুও তুমি শুনবে এবং মানবে।’’ [. সহীহ মুসলিম হ/৪৬৭৯ (৫২/১৮৪৭), কিতাবুল ইমারাত - باب الامر بلزوم الجماعة عند ظهور الفتن وتحذير الدعاة الي الكفر ।]
অপর বর্ণনাতে আছে:
سَأَلَ سَلَمَةُ بْنُ يَزِيدَ الْجُعْفِيُّ رَسُولَ اللهِ ﷺ ، فَقَالَ : يَا نَبِيَّ اللهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُونَا حَقَّنَا، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ فِي الثَّانِيَةِ أَوْ فِي الثَّالِثَةِ، فَجَذَبَهُ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ، وَقَالَ : «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا، وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ .
‘‘সালামা ইবনু ইয়াযীদ আল-জু‘ফী (রা) রসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া নাবী-আল্লাহ! যদি আমাদের উপর এমন শাসকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তারা তাদের হক্ব তো আমাদের কাছে দাবি করে, কিন্তু আমাদের হক্ব তারা দেয় না। এমতাবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী করতে বলেন? তিনি তার উত্তরে এড়িয়ে গেলেন। তিনি আবার তাকে প্রশ্ন করলেন। আবার তিনি (স) এড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রশ্নকারী দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন আস‘আস ইবনু কায়স (রা) তাকে টানলেন। তিনি (স) বললেন: তোমরা শুনবে এবং মানবে। কেননা, তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে আর তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে।’’ [. সহীহ মুসলিম হ/৪৬৭৬ (৪৯/১৮৪৬) ।]
নবী (স) আরও বলেছেন:
اِسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوْا وَعَلَيْكُمْ مَا حَمِّلْتُمْ .
‘‘তোমরা শোন ও আনুগত্য কর। কারণ তাদের (পাপের) বোঝা তাদের ওপর। তোমাদের পাপের বোঝা তোমাদের ওপর।’’ [. সহীহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন ২/৬৬৯ নং।]
এ সমস্ত হাদীসের কারণে আমাদের সাথে দুনিয়াবী স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের হক্ব তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর হক্ব যেমন- আসরের সলাত মূল ওয়াক্তে আদায়ের চেষ্টা করার ব্যাপারে নবী (স) -এর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নির্দিষ্ট বা খাস হাদীসটি প্রযোজ্য হবে। আল্লাহ তাআলা সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন। তা ছাড়া এটি বক্তার ‘‘ক্বিয়াস মা‘আল ফারেক্ব’’ যেভাবে পূর্বে উল্লেখ করেছি। ফলে উক্ত দাবি মূলহীন।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মতো জালিম-অত্যাচারী শাসক- যে কিনা সাহাবীদের রক্তকে হালাল পর্যন্ত মনে করত, তার পিছনেও সাহাবায়ে কেরাম জামাআতের সাথে সলাত আদায় করেছেন, একাকী সলাত আদায় করেননি।
পর্যালোচনা-১৪: আমরা নবী (স)-এর হাদীস থেকে জেনেছি সুন্নাত বিরোধী ও বিদআতী ইমাম বা শাসকের অনুসরণ করা যাবে না। [দ্র: হা/৪২]
ইমাম আহমাদ (রহ)-এর পুত্র আব্দুল্লাহ (রহ) বর্ণনা করেছেন:
سَأَلْتُ أَبِي رَحِمَهُ اللَّهُ عَنِ الصَّلَاةِ، خَلْفَ أَهْلِ الْبِدَعِ، قَالَ : «لَا يُصَلَّى خَلْفَهُمْ مِثْلُ الْجَهْمِيَّةِ وَالْمُعْتَزِلَةِ»،
‘‘আমি আমার আব্বাকে (রহ) বিদআতীদের পিছনে সলাত আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি (রহ) বললেন: তুমি তাদের পিছনে সলাত আদায় করবে না, যেমন- জাহমিয়্যা ও মু‘তাযিলা।’’ [. আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ, আস-সুন্নাহ ১/১০৩ পৃ. ৫ নম্বর।]
পক্ষান্তরে ফাসেক ও জালিম শাসক সম্পর্কে নবী (স)-এর পক্ষ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপ:
يَكُوْنَ بَعْدِيْ اَئِمَّةُ لاَيَهْتَدُوْنَ بِهُدَايَ وَلاَ يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِيْ وَسَيَقُوْمُ فِيْهِمْ رِجَالُ قُلُوْبُهُمْ قُلُوْبُ الشَّيَاطِيْنِ فِيْ جُثْمَانِ اِنْسٍ قَالَ قُلْتُ كَيْفَ اَصْنَعُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنْ اَدْرَكْتُ ذَالِكَ قَالَ تَسْمَعُ وَتُطِيْعُ لِلْاَمِيْرِ وَاِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ وَاُخِذَامَالُكَ فَاسْمَعْ وَاطِعْ ـ
‘‘আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে যারা আমার হেদায়েতে হেদায়েত প্রাপ্ত হবে না এবং আমার সুন্নাতও তারা অবলম্বন করবে না। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন সব লোকের উদ্ভব হবে যাদের অন্তঃকরণ হবে মানব দেহে শয়তানের অন্তঃকরণ। রাবী বলেন, আমি বললাম: তখন আমরা কী করবো, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই? বললেন: তুমি শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সম্পদ কেড়েও নেয়া হয় তবুও তুমি শুনবে এবং মানবে।’’ [. সহীহ মুসলিম হ/৪৬৭৯ (৫২/১৮৪৭), কিতাবুল ইমারাত - باب الامر بلزوم الجماعة عند ظهور الفتن وتحذير الدعاة الي الكفر ।]
অপর বর্ণনাতে আছে:
سَأَلَ سَلَمَةُ بْنُ يَزِيدَ الْجُعْفِيُّ رَسُولَ اللهِ ﷺ ، فَقَالَ : يَا نَبِيَّ اللهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُونَا حَقَّنَا، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ سَأَلَهُ فِي الثَّانِيَةِ أَوْ فِي الثَّالِثَةِ، فَجَذَبَهُ الْأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ، وَقَالَ : «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا، وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ .
‘‘সালামা ইবনু ইয়াযীদ আল-জু‘ফী (রা) রসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া নাবী-আল্লাহ! যদি আমাদের উপর এমন শাসকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তারা তাদের হক্ব তো আমাদের কাছে দাবি করে, কিন্তু আমাদের হক্ব তারা দেয় না। এমতাবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী করতে বলেন? তিনি তার উত্তরে এড়িয়ে গেলেন। তিনি আবার তাকে প্রশ্ন করলেন। আবার তিনি (স) এড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রশ্নকারী দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন আস‘আস ইবনু কায়স (রা) তাকে টানলেন। তিনি (স) বললেন: তোমরা শুনবে এবং মানবে। কেননা, তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে আর তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে।’’ [. সহীহ মুসলিম হ/৪৬৭৬ (৪৯/১৮৪৬) ।]
নবী (স) আরও বলেছেন:
اِسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوْا وَعَلَيْكُمْ مَا حَمِّلْتُمْ .
‘‘তোমরা শোন ও আনুগত্য কর। কারণ তাদের (পাপের) বোঝা তাদের ওপর। তোমাদের পাপের বোঝা তোমাদের ওপর।’’ [. সহীহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন ২/৬৬৯ নং।]
এ সমস্ত হাদীসের কারণে আমাদের সাথে দুনিয়াবী স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের হক্ব তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর হক্ব যেমন- আসরের সলাত মূল ওয়াক্তে আদায়ের চেষ্টা করার ব্যাপারে নবী (স) -এর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নির্দিষ্ট বা খাস হাদীসটি প্রযোজ্য হবে। আল্লাহ তাআলা সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন। তা ছাড়া এটি বক্তার ‘‘ক্বিয়াস মা‘আল ফারেক্ব’’ যেভাবে পূর্বে উল্লেখ করেছি। ফলে উক্ত দাবি মূলহীন।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা)-এর যুগে ওয়ালিদ বিন উক্ববাহ নামক একজন পাপিষ্ঠ, যালিম এক ফাসিক্ব শাসক মাতাল হয়ে এসে সে ইমামতি করত। ফজরের সলাত প্রায়ই সে চার রাকআত আদায় করাতো। একবার চার রাকআত পড়ার পরে সে বলল, আরো পড়ব? তখন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) বললেন: তুমি তো প্রতিদিনই আমাদেরকে বেশি করে- চার রাকআত সলাত আদায় করাও। তা হলে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা)-এর মতো এত বড় আলেম সাহাবী- একজন মাতাল, ফাসেক্ব লোক সলাত পড়াচ্ছে ইমামতি করে- তবুও তিনি জামাআত ছেড়ে একাকি সলাত আদায় করতেন না।
পর্যালোচনা-১৫: উক্ত হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, নিয়মিতভাবে সাহাবী ওয়ালিদ বিন উক্ববাহ মাতাল অবস্থায় চার রাকআত ফজরের সলাত আদায় করাতেন। এরপরেও ইবনু মাসউদ (রা) তার পিছনে সলাত আদায় করতেন। কিন্তু সহীহ মুসলিমের হাদীস বলছে সাহাবী মাতাল ছিলেন বটে, কিন্তু তিনি দুই রাকআতই আদায় করেছিলেন। বর্ণনাটি নিম্নরূপ:
عن حُضَيْنُ بْنُ الْمُنْذِرِ أَبُو سَاسَانَ، قَالَ : شَهِدْتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ وَأُتِيَ بِالْوَلِيدِ قَدْ صَلَّى الصُّبْحَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ قَالَ : أَزِيدُكُمْ، فَشَهِدَ عَلَيْهِ رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا حُمْرَانُ أَنَّهُ شَرِبَ الْخَمْرَ، وَشَهِدَ آخَرُ أَنَّهُ رَآهُ يَتَقَيَّأُ، فَقَالَ عُثْمَانُ : إِنَّهُ لَمْ يَتَقَيَّأْ حَتَّى شَرِبَهَا، فَقَالَ : يَا عَلِيُّ، قُمْ فَاجْلِدْهُ …
‘‘হুসাইন বিন মুনযির আবূ সাসান বর্ণনা করেন: আমি উসমান বিন আফফান (রা)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন ওয়ালিদকে তার কাছে আনা হলো। সে ফজরের দুই রাকআত সলাত আদায় করে বলেছিল, তোমাদের জন্য আরও পড়ব? তখন দুই ব্যক্তি ওয়ালিদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিল। তন্মধ্যে একজনের নাম হুমরান। সে বলল: সে মদ খেয়েছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, সে তাকে বমি করতে দেখেছে। তখন উসমান (রা) বললেন: সে মদ খাওয়ার পরই বমি করেছে। অতএব তিনি বললেন: হে আলী (রা) ! আপনি উঠুন এবং তাকে বেত্রাঘাত করুন।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/৪৩৪৯ (৩৮/১৭০৭)।]
সহীহ মুসলিমের ঘটনাটি থেকে বুঝা যায়,
১) ওয়ালিদ বিন উকবাহ’র মদ খেয়ে ইমামতি করার ঘটনাটি বারংবার ঘটেনি।
২) ওয়ালিদ (রা) দুই রাকআতই পড়িয়েছিলেন, আরও রাকআত পড়ানোর কথা উত্থাপন করেছিলেন।
৩) সাহাবীদের সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের দায়িত্ববোধ এতটাই বেশি ছিল যে, তারা এ ধরনের অপরাধের বিচার অতি দ্রুত সম্পন্ন করতেন। দিনের পর দিন এ ধরনের প্রকাশ্য পাপকে জিইয়ে রাখতেন না। এ পর্যায়ে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ ও ওয়ালিদ বিন উক্ববাহ (রা)-এর নিম্নোক্ত ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ عَنِ الْقَاسِمِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ الْوَلِيدَ بْنَ عُقْبَةَ أَخَّرَ الصَّلَاةَ مَرَّةً فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ فَثَوَّبَ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى بِالنَّاسِ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ الْوَلِيدُ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ أَجَاءَكَ مِنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ أَمْرٌ فِيمَا فَعَلْتَ أَمْ ابْتَدَعْتَ قَالَ لَمْ يَأْتِنِي أَمْرٌ مِنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ وَلَمْ أَبْتَدِعْ وَلَكِنْ أَبَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْنَا وَرَسُولُهُ أَنْ نَنْتَظِرَكَ بِصَلَاتِنَا وَأَنْتَ فِي حَاجَتِكَ .
‘‘আব্দুল্লাহ বিন উসমান থেকে বর্ণিত, তিনি কাসিম থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন: একবার ওয়ালিদ বিন উক্ববা সলাতকে বিলম্বিত করলেন এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং নিজে নিজেই ইক্বামত দিলেন। অতঃপর তিনি ইমামতি করলেন, এরপর ওয়ালিদ তাঁর (ইবনু মাসউদের) কাছে (লোক) পাঠালেন। (তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো) তুমি যা করলে তাতে কিসে তোমাকে প্ররোচিত করল? তোমার কাছে আমীরুল মু’মিনীন বা রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আছে কি? নাকি তুমি বিদআত করছ? তিনি জবাব দিলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আমার কাছে আসেনি এবং আমি বিদআতও করছি না। বরং আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অস্বীকৃতি এসেছে যে, তোমার ব্যস্ততার কারণে আমরা তোমার জন্য সালাতের অপেক্ষা করব।।’’ [. মুসনাদু আহমাদ (ইফা) ২/২৬৬ পৃ. হা/১৪০৬। মুহাক্কিক্ব শুআয়েব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্ব মুসনাদু আহমাদ হা/৪২৯৮]]
বুঝা যাচ্ছে, দিনের পর দিন মাতাল অবস্থায় একজন সাহাবী চার রাকআত ফজরের সলাত পড়াতে থাকবেন এবং এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে অন্য সাহাবীরা তার আনুগত্য করার মধ্যে দিয়ে একটি মাসআলা প্রবর্তন করবেন- এমনটি ভাবাও অন্যায়। শীআরা যতগুলো ঘটনা সাহাবীদের বিরুদ্ধে প্রচার করে থাকে- তার মধ্যে আলোচ্য প্রবাসী বক্তা বর্ণিত ‘ফজরের সলাত চার রাকআত পড়ার’ ঘটনাটি অন্যতম। এ কারণে সনদগত দিকে থেকে সাহাবী ওয়ালিদ বিন উক্ববাহ (রা) সম্পর্কিত বর্ণনাটিকে সহীহ গণ্য করা হলেও এর মতনগত আপত্তি চলে আসে। তা ছাড়া হাফেয ইবনু হাজার (রহ) ইমাম তাবারী (রহ)-এর সূত্রে লিখেছেন, কুফাবাসী শত্রুতাবশত তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল, ইবনু আব্দুল বার সেটা অস্বীকার করেন। [. হাফেয ইবনু হাজার (রহ), আল-ইসাবাহ ৬/৬১৭পৃ. (উর্দু ৬/৬০৩): ويقال ان بعض أهل الكوفة تعصبوا عليه فشهدوا عليه بغير الحق حكاه الطبري واستنكره بن عبد البر .] পক্ষান্তরে ইমাম ইবনু কাসির (রহ)-ও ইমাম তাবারী (রহ)-এর মতো একই কথা উল্লেখ করেছেন। [. হাফেয ইবনু কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইফা) ৭/২৮১ পৃ.।] শাইখ ইরশাদুল হক্ব আসারীও উক্ত ইমামদ্বয়ের মতো বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। [. ইরশাদুল হক্ব আসারী, মাক্বামে সাহাবা (ফয়সালাবাদ: ইদারাতুল উলূম আল-আসারিয়্যা) পৃ. ৮২।] ফলে উক্ত বিচারে প্রদত্ত সাক্ষ্যগুলো সন্দেহের সৃষ্টি করে। আর হাদীস মানার ক্ষেত্রে সবাধিক সহীহ ও সন্দেহমুক্ত হাদীসটিই মানতে হবে। তা ছাড়া সাহাবীদের বিরুদ্ধে কটুক্তি নির্ভর বর্ণনার মোকাবেলায় কটুক্তিহীন সহীহ বর্ণনা পাওয়া গেলে সেটাই উল্লেখ করা উচিৎ।
আমরা শেষোক্ত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা)-এর আমলটিতে দেখেছি, তিনি শাসক কর্তৃক সলাতে দেরি করাতে, তার অপেক্ষায় বসে থাকেননি। তেমনি ইবনু মাসউদ (রা) এমন হাদীস বর্ণনা করেছেন যেখানে রসূলুল্লাহ (স) কর্তৃক সলাতের ওয়াক্ত পিছিয়ে দেয়া, সুন্নাতকে বিলুপ্ত করা ও বিদআতী শাসকের পিছনে সলাত আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। [দ্র. হা/৪২]
আর আমাদের আলোচনাও সলাত দেরিতে আদায় করাকে কেন্দ্র করে। ফাসেক ও জালিম শাসকের আনুগত্য নিয়ে নয়। এ পর্যায়ে সলাত দেরিতে আদায়ের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কিত হাদীস উল্লেখ না করে, জালিম-ফাসকের আনুগত্য সম্পর্কিত দলিল উপস্থাপন অগ্রহণযোগ্য। যারা উপস্থাপন করেছেন- তারা আলোচনা ভিন্ন প্রসঙ্গের দিকে নিয়ে গেছেন। আর এটা নিশ্চিত ভুল সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, বক্তার এটা ‘‘ক্বিয়াস মা‘আল ফারেক্ব’’। তাই বক্তার এ দাবি মূল্যহীন।
পর্যালোচনা-১৫: উক্ত হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, নিয়মিতভাবে সাহাবী ওয়ালিদ বিন উক্ববাহ মাতাল অবস্থায় চার রাকআত ফজরের সলাত আদায় করাতেন। এরপরেও ইবনু মাসউদ (রা) তার পিছনে সলাত আদায় করতেন। কিন্তু সহীহ মুসলিমের হাদীস বলছে সাহাবী মাতাল ছিলেন বটে, কিন্তু তিনি দুই রাকআতই আদায় করেছিলেন। বর্ণনাটি নিম্নরূপ:
عن حُضَيْنُ بْنُ الْمُنْذِرِ أَبُو سَاسَانَ، قَالَ : شَهِدْتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ وَأُتِيَ بِالْوَلِيدِ قَدْ صَلَّى الصُّبْحَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ قَالَ : أَزِيدُكُمْ، فَشَهِدَ عَلَيْهِ رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا حُمْرَانُ أَنَّهُ شَرِبَ الْخَمْرَ، وَشَهِدَ آخَرُ أَنَّهُ رَآهُ يَتَقَيَّأُ، فَقَالَ عُثْمَانُ : إِنَّهُ لَمْ يَتَقَيَّأْ حَتَّى شَرِبَهَا، فَقَالَ : يَا عَلِيُّ، قُمْ فَاجْلِدْهُ …
‘‘হুসাইন বিন মুনযির আবূ সাসান বর্ণনা করেন: আমি উসমান বিন আফফান (রা)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন ওয়ালিদকে তার কাছে আনা হলো। সে ফজরের দুই রাকআত সলাত আদায় করে বলেছিল, তোমাদের জন্য আরও পড়ব? তখন দুই ব্যক্তি ওয়ালিদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিল। তন্মধ্যে একজনের নাম হুমরান। সে বলল: সে মদ খেয়েছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, সে তাকে বমি করতে দেখেছে। তখন উসমান (রা) বললেন: সে মদ খাওয়ার পরই বমি করেছে। অতএব তিনি বললেন: হে আলী (রা) ! আপনি উঠুন এবং তাকে বেত্রাঘাত করুন।’’ [. সহীহ মুসলিম হা/৪৩৪৯ (৩৮/১৭০৭)।]
সহীহ মুসলিমের ঘটনাটি থেকে বুঝা যায়,
১) ওয়ালিদ বিন উকবাহ’র মদ খেয়ে ইমামতি করার ঘটনাটি বারংবার ঘটেনি।
২) ওয়ালিদ (রা) দুই রাকআতই পড়িয়েছিলেন, আরও রাকআত পড়ানোর কথা উত্থাপন করেছিলেন।
৩) সাহাবীদের সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের দায়িত্ববোধ এতটাই বেশি ছিল যে, তারা এ ধরনের অপরাধের বিচার অতি দ্রুত সম্পন্ন করতেন। দিনের পর দিন এ ধরনের প্রকাশ্য পাপকে জিইয়ে রাখতেন না। এ পর্যায়ে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ ও ওয়ালিদ বিন উক্ববাহ (রা)-এর নিম্নোক্ত ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ عَنِ الْقَاسِمِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ الْوَلِيدَ بْنَ عُقْبَةَ أَخَّرَ الصَّلَاةَ مَرَّةً فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ فَثَوَّبَ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى بِالنَّاسِ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ الْوَلِيدُ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ أَجَاءَكَ مِنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ أَمْرٌ فِيمَا فَعَلْتَ أَمْ ابْتَدَعْتَ قَالَ لَمْ يَأْتِنِي أَمْرٌ مِنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ وَلَمْ أَبْتَدِعْ وَلَكِنْ أَبَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْنَا وَرَسُولُهُ أَنْ نَنْتَظِرَكَ بِصَلَاتِنَا وَأَنْتَ فِي حَاجَتِكَ .
‘‘আব্দুল্লাহ বিন উসমান থেকে বর্ণিত, তিনি কাসিম থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন: একবার ওয়ালিদ বিন উক্ববা সলাতকে বিলম্বিত করলেন এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং নিজে নিজেই ইক্বামত দিলেন। অতঃপর তিনি ইমামতি করলেন, এরপর ওয়ালিদ তাঁর (ইবনু মাসউদের) কাছে (লোক) পাঠালেন। (তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো) তুমি যা করলে তাতে কিসে তোমাকে প্ররোচিত করল? তোমার কাছে আমীরুল মু’মিনীন বা রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আছে কি? নাকি তুমি বিদআত করছ? তিনি জবাব দিলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ আমার কাছে আসেনি এবং আমি বিদআতও করছি না। বরং আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অস্বীকৃতি এসেছে যে, তোমার ব্যস্ততার কারণে আমরা তোমার জন্য সালাতের অপেক্ষা করব।।’’ [. মুসনাদু আহমাদ (ইফা) ২/২৬৬ পৃ. হা/১৪০৬। মুহাক্কিক্ব শুআয়েব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্ব মুসনাদু আহমাদ হা/৪২৯৮]]
বুঝা যাচ্ছে, দিনের পর দিন মাতাল অবস্থায় একজন সাহাবী চার রাকআত ফজরের সলাত পড়াতে থাকবেন এবং এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে অন্য সাহাবীরা তার আনুগত্য করার মধ্যে দিয়ে একটি মাসআলা প্রবর্তন করবেন- এমনটি ভাবাও অন্যায়। শীআরা যতগুলো ঘটনা সাহাবীদের বিরুদ্ধে প্রচার করে থাকে- তার মধ্যে আলোচ্য প্রবাসী বক্তা বর্ণিত ‘ফজরের সলাত চার রাকআত পড়ার’ ঘটনাটি অন্যতম। এ কারণে সনদগত দিকে থেকে সাহাবী ওয়ালিদ বিন উক্ববাহ (রা) সম্পর্কিত বর্ণনাটিকে সহীহ গণ্য করা হলেও এর মতনগত আপত্তি চলে আসে। তা ছাড়া হাফেয ইবনু হাজার (রহ) ইমাম তাবারী (রহ)-এর সূত্রে লিখেছেন, কুফাবাসী শত্রুতাবশত তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল, ইবনু আব্দুল বার সেটা অস্বীকার করেন। [. হাফেয ইবনু হাজার (রহ), আল-ইসাবাহ ৬/৬১৭পৃ. (উর্দু ৬/৬০৩): ويقال ان بعض أهل الكوفة تعصبوا عليه فشهدوا عليه بغير الحق حكاه الطبري واستنكره بن عبد البر .] পক্ষান্তরে ইমাম ইবনু কাসির (রহ)-ও ইমাম তাবারী (রহ)-এর মতো একই কথা উল্লেখ করেছেন। [. হাফেয ইবনু কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইফা) ৭/২৮১ পৃ.।] শাইখ ইরশাদুল হক্ব আসারীও উক্ত ইমামদ্বয়ের মতো বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। [. ইরশাদুল হক্ব আসারী, মাক্বামে সাহাবা (ফয়সালাবাদ: ইদারাতুল উলূম আল-আসারিয়্যা) পৃ. ৮২।] ফলে উক্ত বিচারে প্রদত্ত সাক্ষ্যগুলো সন্দেহের সৃষ্টি করে। আর হাদীস মানার ক্ষেত্রে সবাধিক সহীহ ও সন্দেহমুক্ত হাদীসটিই মানতে হবে। তা ছাড়া সাহাবীদের বিরুদ্ধে কটুক্তি নির্ভর বর্ণনার মোকাবেলায় কটুক্তিহীন সহীহ বর্ণনা পাওয়া গেলে সেটাই উল্লেখ করা উচিৎ।
আমরা শেষোক্ত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা)-এর আমলটিতে দেখেছি, তিনি শাসক কর্তৃক সলাতে দেরি করাতে, তার অপেক্ষায় বসে থাকেননি। তেমনি ইবনু মাসউদ (রা) এমন হাদীস বর্ণনা করেছেন যেখানে রসূলুল্লাহ (স) কর্তৃক সলাতের ওয়াক্ত পিছিয়ে দেয়া, সুন্নাতকে বিলুপ্ত করা ও বিদআতী শাসকের পিছনে সলাত আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। [দ্র. হা/৪২]
আর আমাদের আলোচনাও সলাত দেরিতে আদায় করাকে কেন্দ্র করে। ফাসেক ও জালিম শাসকের আনুগত্য নিয়ে নয়। এ পর্যায়ে সলাত দেরিতে আদায়ের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কিত হাদীস উল্লেখ না করে, জালিম-ফাসকের আনুগত্য সম্পর্কিত দলিল উপস্থাপন অগ্রহণযোগ্য। যারা উপস্থাপন করেছেন- তারা আলোচনা ভিন্ন প্রসঙ্গের দিকে নিয়ে গেছেন। আর এটা নিশ্চিত ভুল সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, বক্তার এটা ‘‘ক্বিয়াস মা‘আল ফারেক্ব’’। তাই বক্তার এ দাবি মূল্যহীন।
অতএব প্রিয় বন্ধুগণ! সলাতের জামাআত যদি গ্রহণযোগ্য ওয়াক্তের ভিতরে আদায় করা হয়, সেটি আপনার দৃষ্টিতে যদি আওয়াল ওয়াক্তে নাও হয়- তবুও আপনাকে জামাআতের সাথে সলাত আদায় করতে হবে। কারণ আওয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় করার গুরুত্ব যে পরিমাণে ইসলামি শরিআতে তার চাইতে শতশত গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো জামাআতের সাথে সলাত আদায় করার গুরুত্ব, মাসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআতে আদায় করার, সলাত আদায় করার গুরুত্ব।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিকটা বুঝার তাওফিক্ব দান করুন এবং সঠিক মাসআলা অনুযায়ী আমল করার তাওফিক্ব দান করুন। ওয়াস সালামু ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বরাকাতুহু।
পর্যালোচনা-১৬: সম্মানিত পাঠক! আমরা জেনেছি, যেভাবে মানবিক প্রয়োজন যেমন- খাবার উপস্থিত হওয়া, পেশাব-পায়খানার বেগ, ঝড়-বৃষ্টি, কাদা-পানি প্রভৃতি কারণে জামাআত ছেড়ে দেয়া নবী (স) থেকে অনুমোদিত। তেমনি শাসক বা ইমাম কর্তৃক সলাতের জামাআত দেরিতে আদায়ের কারণে সময়মতো সলাতটি আদায় করে পুনরায় দেরিতে অনুষ্ঠিত জামাআতে শরীক হওয়াটা নবী (স)-এর অপর একটি নির্দেশনা। পক্ষান্তরে বিদআতী ও সুন্নাত বিরোধী ইমাম ও শাসকের পিছনে জামাআতে সলাত আদায় না করাটাও নবী (স)-এর অপর একটি নির্দেশ।
শাইখ আলবানী (রহ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: নবী (স)-এর হাদীস-
مَنْ أَمَّ النَّاسَ فَأَصَابَ الْوَقْتَ فَلَهُ وَلَهُمْ، وَمَنِ انْتَقَصَ مِنْ ذَلِكِ شَيْئًا، فَعَلَيْهِ وَلَا عَلَيْهِمْ .
‘‘কেউ লোকদের ইমাম হলে এবং সঠিক সময়ে (সলাত) আদায় করলে সে নিজে ও মুক্তাদীরা (সওয়াব) পাবে। আর যদি তাতে কোনো ত্রুটি করে তবে সেটা তার (ইমামের) উপর বর্তাবে মুক্তাদীর উপর বর্তাবে না।’’ [. আবূ দাউদ হা/৫৮০। সহীহ ইবনু খুযায়মাতে (হা/১৫১৩) فَأَصَابَ الْوَقْتَ وَأَتَمَّ الصَّلَاةَ ‘সঠিক সময় ও পরিপূর্ণভাবে সলাত আদায় করা’ উল্লেখ করা হয়েছে। সুনানে ইবনু মাজাহতে (হা/৯৮৩) ‘ওয়াক্ত বা সময়ের পরিবর্তে ‘সলাত’ শব্দটি এসেছে। ইমাম তাহাবী (রহ) বলেছেন: আব্দুর রহমান বিন হারামালাহ কর্তৃক আবূ আলী হামাদানী থেকে শোনা পরিচিত নয়। (মুশকিলূল আসার হা/২১৯৬)। কিন্তু এর আরও সাক্ষ্য থাকায় বর্ণনাটি হাসান। [তুহফাতুল আখইয়ার শারহু মুশকিলূল আসার হা/৭৮১]]-এই হাদীসটি থেকে কি আমরা অর্থ নিতে পারি যে, ইমাম যদি ওয়াক্তের পূর্বে সলাত আদায় করে তা হলে মুক্তাদি পুনরায় সলাত আদায় করবে না?
উত্তরে শাইখ (রহ) বলেছিলেন:
هذا إذا كان لا يعلم المأموم أما إذا كان يعلم فهنا يرد قوله عليه السلام ( سيليكم أمراء يؤخرون الصلاة عن وقتها فصلوها أنتم في وقتها ثم صلوها معهم تكون لكم نافلة )… هذا الحديث كالحديث الآخر في صحيح البخاري ( يُصَلُّونَ لَكُمْ، فَإِنْ أَصَابُوا فَلَكُمْ، وَإِنْ أَخْطَئُوا فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ ) أما لو علمنا أن رجلا يصلي بدون طهارة ما نقول أن هذا الصلاة صحيحة لأننا علمنا أنه لم يؤد الشرط كذلك الوقت من شروط الصلاة كما تعلم .
‘‘এটা তখন যখন মুক্তাদী জানে না। আর যখন সে জানে তখন নবী (স)-এর এই হাদীস প্রযোজ্য হবে: ‘অচিরেই তোমাদের আমীররা সলাতকে তার ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেব। তখন তোমরা ওয়াক্তের মধ্যে সলাত আদায় করবে, অতঃপর তাদের সাথে (জামাআতে) সলাত পড়বে, এটা তোমাদের জন্য নফল হবে।... এই হাদীসটির দাবি সহীহ বুখারীতে (হা/৬৯৪) বর্ণিত অপর একটি হাদীসের মতো যে, ‘(নবী স. বলেছেন:) তারা তোমাদের সলাত পড়াই, যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করে, তা হলে তোমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে। আর যদি তারা তাতে ত্রুটি করে তবে তোমাদের সওয়াব আছে, আর ত্রুটির দায়িত্ব তাদের উপর।’ যদি আমরা জানতে পারি যে, কোনো ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সলাত পড়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি না যে, তার সলাত হয়েছে। কেননা, আমরা জানি- সে শর্ত মোতাবেক আদায় করেনি। তেমনি, সলাতের ক্ষেত্রে ওয়াক্ত একটি শর্ত, যেমনটি তুমি জান।’’ [. শাইখ আলবানী (রহ), তাফরীগ সিলসিলাতিল হুদা ওয়ান নূর (শামেলা) ২১/৪৩৮।]
সৌদি প্রবাসী হানাফী আলেম নিজেই প্রাসঙ্গিক সহীহ হাদীস থেকে ভিন্ন প্রসঙ্গের বর্ণনা থেকে দলিল নিয়ে- নিজেই অপ্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেভাবে আমরা ‘তৃতীয় অধ্যায়: সহীহ হাদীসের অপপ্রয়োগ’-সম্পর্কিত আলোচনাতে দেখেছি, এমন শব্দ ও বাক্য হানাফী মাযহাবের পক্ষ থেকে দলিল গ্রহণ করা হয়েছে, যা দ্বারা তারা মূল আলোচনাকে দূরতম ব্যাখ্যা দিয়ে আপেক্ষেক করার মাধ্যমে নিজেদের মতের দলিল পেশ করে থাকেন। সাথে সাথে সুনির্দিষ্ট ও ব্যাপকভাবে বর্ণিত আসরের ওয়াক্ত-সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে মানসুখ সাব্যস্ত করেন। ঠিক একইভাবে শাসক দেরিতে সলাত আদায় করলে করণীয় বিষয় নবী (স) ও সাহাবীদের (রা) থেকে বর্ণিত হলেও, জালিম ও ফাসিক শাসকের আনুগত্য সম্পর্কিত হাদীস দ্বারা আলোচ্য প্রবাসী বক্তা দেরিতে আসরের জামাআতে শরীক হওয়াকে বেশি ফযিলতভুক্ত করেছেন। যা সহীহ হাদীসের সরাসরি বিরোধিতা।
তাছাড়া ফাসেক ইমামের জামাআতের সাথে দেরিতে জামাআতের ক্বিয়াস করা বাতিল ক্বিয়াস। তার কারণও আমরা অবগত হয়েছি। অতএব, বক্তার এ মত একেবারেই মূল্যহীন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ ধরনের বিভ্রান্তি থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিকটা বুঝার তাওফিক্ব দান করুন এবং সঠিক মাসআলা অনুযায়ী আমল করার তাওফিক্ব দান করুন। ওয়াস সালামু ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বরাকাতুহু।
পর্যালোচনা-১৬: সম্মানিত পাঠক! আমরা জেনেছি, যেভাবে মানবিক প্রয়োজন যেমন- খাবার উপস্থিত হওয়া, পেশাব-পায়খানার বেগ, ঝড়-বৃষ্টি, কাদা-পানি প্রভৃতি কারণে জামাআত ছেড়ে দেয়া নবী (স) থেকে অনুমোদিত। তেমনি শাসক বা ইমাম কর্তৃক সলাতের জামাআত দেরিতে আদায়ের কারণে সময়মতো সলাতটি আদায় করে পুনরায় দেরিতে অনুষ্ঠিত জামাআতে শরীক হওয়াটা নবী (স)-এর অপর একটি নির্দেশনা। পক্ষান্তরে বিদআতী ও সুন্নাত বিরোধী ইমাম ও শাসকের পিছনে জামাআতে সলাত আদায় না করাটাও নবী (স)-এর অপর একটি নির্দেশ।
শাইখ আলবানী (রহ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: নবী (স)-এর হাদীস-
مَنْ أَمَّ النَّاسَ فَأَصَابَ الْوَقْتَ فَلَهُ وَلَهُمْ، وَمَنِ انْتَقَصَ مِنْ ذَلِكِ شَيْئًا، فَعَلَيْهِ وَلَا عَلَيْهِمْ .
‘‘কেউ লোকদের ইমাম হলে এবং সঠিক সময়ে (সলাত) আদায় করলে সে নিজে ও মুক্তাদীরা (সওয়াব) পাবে। আর যদি তাতে কোনো ত্রুটি করে তবে সেটা তার (ইমামের) উপর বর্তাবে মুক্তাদীর উপর বর্তাবে না।’’ [. আবূ দাউদ হা/৫৮০। সহীহ ইবনু খুযায়মাতে (হা/১৫১৩) فَأَصَابَ الْوَقْتَ وَأَتَمَّ الصَّلَاةَ ‘সঠিক সময় ও পরিপূর্ণভাবে সলাত আদায় করা’ উল্লেখ করা হয়েছে। সুনানে ইবনু মাজাহতে (হা/৯৮৩) ‘ওয়াক্ত বা সময়ের পরিবর্তে ‘সলাত’ শব্দটি এসেছে। ইমাম তাহাবী (রহ) বলেছেন: আব্দুর রহমান বিন হারামালাহ কর্তৃক আবূ আলী হামাদানী থেকে শোনা পরিচিত নয়। (মুশকিলূল আসার হা/২১৯৬)। কিন্তু এর আরও সাক্ষ্য থাকায় বর্ণনাটি হাসান। [তুহফাতুল আখইয়ার শারহু মুশকিলূল আসার হা/৭৮১]]-এই হাদীসটি থেকে কি আমরা অর্থ নিতে পারি যে, ইমাম যদি ওয়াক্তের পূর্বে সলাত আদায় করে তা হলে মুক্তাদি পুনরায় সলাত আদায় করবে না?
উত্তরে শাইখ (রহ) বলেছিলেন:
هذا إذا كان لا يعلم المأموم أما إذا كان يعلم فهنا يرد قوله عليه السلام ( سيليكم أمراء يؤخرون الصلاة عن وقتها فصلوها أنتم في وقتها ثم صلوها معهم تكون لكم نافلة )… هذا الحديث كالحديث الآخر في صحيح البخاري ( يُصَلُّونَ لَكُمْ، فَإِنْ أَصَابُوا فَلَكُمْ، وَإِنْ أَخْطَئُوا فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ ) أما لو علمنا أن رجلا يصلي بدون طهارة ما نقول أن هذا الصلاة صحيحة لأننا علمنا أنه لم يؤد الشرط كذلك الوقت من شروط الصلاة كما تعلم .
‘‘এটা তখন যখন মুক্তাদী জানে না। আর যখন সে জানে তখন নবী (স)-এর এই হাদীস প্রযোজ্য হবে: ‘অচিরেই তোমাদের আমীররা সলাতকে তার ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেব। তখন তোমরা ওয়াক্তের মধ্যে সলাত আদায় করবে, অতঃপর তাদের সাথে (জামাআতে) সলাত পড়বে, এটা তোমাদের জন্য নফল হবে।... এই হাদীসটির দাবি সহীহ বুখারীতে (হা/৬৯৪) বর্ণিত অপর একটি হাদীসের মতো যে, ‘(নবী স. বলেছেন:) তারা তোমাদের সলাত পড়াই, যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করে, তা হলে তোমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে। আর যদি তারা তাতে ত্রুটি করে তবে তোমাদের সওয়াব আছে, আর ত্রুটির দায়িত্ব তাদের উপর।’ যদি আমরা জানতে পারি যে, কোনো ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সলাত পড়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি না যে, তার সলাত হয়েছে। কেননা, আমরা জানি- সে শর্ত মোতাবেক আদায় করেনি। তেমনি, সলাতের ক্ষেত্রে ওয়াক্ত একটি শর্ত, যেমনটি তুমি জান।’’ [. শাইখ আলবানী (রহ), তাফরীগ সিলসিলাতিল হুদা ওয়ান নূর (শামেলা) ২১/৪৩৮।]
সৌদি প্রবাসী হানাফী আলেম নিজেই প্রাসঙ্গিক সহীহ হাদীস থেকে ভিন্ন প্রসঙ্গের বর্ণনা থেকে দলিল নিয়ে- নিজেই অপ্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেভাবে আমরা ‘তৃতীয় অধ্যায়: সহীহ হাদীসের অপপ্রয়োগ’-সম্পর্কিত আলোচনাতে দেখেছি, এমন শব্দ ও বাক্য হানাফী মাযহাবের পক্ষ থেকে দলিল গ্রহণ করা হয়েছে, যা দ্বারা তারা মূল আলোচনাকে দূরতম ব্যাখ্যা দিয়ে আপেক্ষেক করার মাধ্যমে নিজেদের মতের দলিল পেশ করে থাকেন। সাথে সাথে সুনির্দিষ্ট ও ব্যাপকভাবে বর্ণিত আসরের ওয়াক্ত-সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে মানসুখ সাব্যস্ত করেন। ঠিক একইভাবে শাসক দেরিতে সলাত আদায় করলে করণীয় বিষয় নবী (স) ও সাহাবীদের (রা) থেকে বর্ণিত হলেও, জালিম ও ফাসিক শাসকের আনুগত্য সম্পর্কিত হাদীস দ্বারা আলোচ্য প্রবাসী বক্তা দেরিতে আসরের জামাআতে শরীক হওয়াকে বেশি ফযিলতভুক্ত করেছেন। যা সহীহ হাদীসের সরাসরি বিরোধিতা।
তাছাড়া ফাসেক ইমামের জামাআতের সাথে দেরিতে জামাআতের ক্বিয়াস করা বাতিল ক্বিয়াস। তার কারণও আমরা অবগত হয়েছি। অতএব, বক্তার এ মত একেবারেই মূল্যহীন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ ধরনের বিভ্রান্তি থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন