hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আসরের সলাতের সঠিক ওয়াক্ত

লেখকঃ কামাল আহমাদ

৩৫
অনুচ্ছেদ-৩৩: ‘যখন তাপ প্রখর হবে, তখন তোমরা সলাতকে তাপ কমে গেলে আদায় করবে’- মর্মে বর্ণিত হাদীসের অপপ্রয়োগ। যার সম্পর্ক প্রচণ্ড গরম ও সফরের সাথে। কিন্তু হানাফী মাযহাবে এই হাদীসটির আলোকে জিবরীল (আ)-এর হাদীস মানসুখ বিবেচনা করা হয় এবং যোহরের স্থায়ী সময় নির্ধারণ করা হয় দুই ছায়া পর্যন্ত। যা হানাফী গবেষক আলেমগণও বাতিল করেছেন।
হাদীস-৪৭: সাহাবী আবূ সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত:

قَالَ رَسُولُ اللهِ أَبْرِدُوا بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ

“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: যোহরের সলাত গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৩৮।]

এই হাদীসটির সম্পর্ক: (১) সফরের সাথে-

হাদীস-৪৮: উক্ত সাহাবী আবূ সাঈদ (রা) বলেন:

كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ فِي سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى رَأَيْنَا فَيْءَ التُّلُولِ فَقَالَ النَّبِيُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلاَةِ .

“এক সফরে আমরা আল্লাহর নবী (স)-এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়াযযিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী (স) বললেন: গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়াযযিন আযান দিতে চাইলে নবী (স) (পুনরায়) বললেন: গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সলাত আদায়ে) এতো বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলো ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী (স) বললেন: গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর সলাত আদায় করো।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৩৯।]

(২) হাদীসটির সম্পর্ক গরমকালের সূর্যের চরম উত্তাপের সাথে, শীতের সাথে নয়-

হাদীস-৪৯: সাহাবী আনাস (রা) বলেন:

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ إِذَا كَانَ الْحَرُّ أَبْرَدَ بِالصَّلَاةِ وَإِذَا كَانَ الْبَرْدُ عَجَّلَ .

“রসূলুল্লাহ (স) (যোহরের সলাত) গরমকালে ঠাণ্ডা করে (গরম কমলে) আদায় করতেন, আর শীতকালে আগে আগে আদায় করতেন।” [. নাসাঈ হা/৪৯৯, মিশকাত হা/৬২০; সহীহ-আলবানী।]

হাদীস-৫০: সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) বলেন:

كَانَ قَدْرُ صَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ الظُّهْرَ فِي الصَّيْفِ ثَلَاثَةَ أَقْدَامٍ إِلَى خَمْسَةِ أَقْدَامٍ، وَفِي الشِّتَاءِ خَمْسَةَ أَقْدَامٍ إِلَى سَبْعَةِ أَقْدَامٍ .

“গরমকালে রসূলুল্লাহ (স)-এর যুহরের সলাতের (ছায়ার পরিমাণ) ছিল তিন হতে পাঁচ ক্বদম, আর শীতকালে পাঁচ হতে সাত ক্বদম।” [. আবূ দাউদ হা/৪০০, নাসাঈ হা/৫০৩, মিশকাত হা/৫৮৬; সহীহ-আলবানী।]

শেষ হাদীসটি গরম ও শীতকালের সূর্যকীরণের তারতম্য। কেননা, পূর্বের হাদীসগুলো প্রমাণ করে, রসূলুল্লাহ (স) গরমকালে সফর করলে যোহরের সলাত তুলনামূলক ঠাণ্ডা হওয়ার পর আদায় করতেন, যা শীতকালে প্রয়োজন ছিল না। অথচ হানাফী ফিক্বাহতে তীব্র গরমের সময়ের উক্ত হাদীসগুলোর আলোকে সারা বছরের যোহরের ওয়াক্ত নির্ধারিত হয়েছে। হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’-তে লেখা হয়েছে:

وقتها عند أبي حنيفة رحمه الله إذا صار ظل كل شيء مثله سوى فيء الزوال وقالا : إذا صار الظل مثله وهو رواية عن أبي حنيفة رحمه الله وفيي الزوال هو الفيء الذي يكون للأشياء وقت الزوال ولهما إمامة جبريل عليه السلام في اليوم الأول في هذا الوت و لأبي حنيفة رحمه الله قوله عليه الصلاة و السلام [ أبردوا بالظهر فإن شدة الحر من فيح جهنم ] وأشد الحر في ديارهم في هذا والوقت وإذا تعارضت الآثار لا ينقضي الوقت بالشك .

“আবূ হানীফা (রহ)-এর মতে যোহরের শেষ সময় হলো যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া মধ্যাহ্ন ছায়ার বাদ দিয়ে দ্বিগুণ হয়। আর দ্বিতীয় ইমামদ্বয় (ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ) বলেন: যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমান হয়। এটাও ইমাম আবূ হানীফা (রহ) হতে বর্ণিত, আরেকটি মত। في الزوال (মধ্যাহ্ন ছায়া) হল, ঠিক মধ্যাহ্নকালে কোনো বস্তুর যে ছায়া হয়, তাই। দ্বিতীয় ইমামদ্বেয়ের দলিল এই যে, জিবরীল (আ) প্রথম দিন এ সময় আসরের ইমামতি করেছেন।” [. আল-হিদায়াহ (ইফা) ১/৫৯ পৃ:, আশরাফুল হিদায়াহ ১/২৬৭ পৃ:।]

এ পর্যায়ে কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:

وقت العصر ما لم تصفى الشمس وامّا اخر وقت الظهر فلم يوجد فى حديث صحيح ولا ضعيف انه يبقى بعد مصير ظل كل شىء مثله ولذا خالف أبا حنيفة فى هذه المسألة صاحباه ووافقا الجمهور .

“যোহরের সলাতের শেষ ওয়াক্ত দ্বিগুণ ছায়া পর্যন্ত কোনো হাদীসে উক্ত হয়নি। সহীহ বা যঈফ কোনো হাদীসেই নেই। এ কারণেই এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দুই শিষ্য ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ)-এর মতও এর পরিপন্থী এবং জুমহুরের (অধিকাংশ ইমাম ও মুহা্দ্দিসগণের) অনুরূপ।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫২ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]

অতঃপর হানাফী ফিক্বহ ‘আল-হিদায়া’-তে লেখা হয়েছে:

و لأبي حنيفة رحمه الله قوله عليه الصلاة و السلام [ أبردوا بالظهر فإن شدة الحر من فيح جهنم ] وأشد الحر في ديارهم في هذا والوقت وإذا تعارضت الآثار لا ينقضي الوقت بالشك .

“ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর দলিল হল, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: ‘যোহরকে তোমরা শীতল করে পড়। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের তীব্রতা থেকেই আসছে।’ আর আরবদেশে (প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমান হওয়ায়) এ সময়টাতেই গরম প্রচণ্ডতম হয়। সুতরাং হাদীস যখন পরস্পর বিরোধপূর্ণ হল তখন সন্দেহবশত সময় শেষ হবে না।” [. আল-হিদায়া (ইফা) ১/৫৯ পৃ:, আশরাফুল হিদায়াহ ১/২৬৭ পৃ:।]

উক্তিটির পর্যালোচনায় কাযী সানাউল্লাহ পানীপথী হানাফী (রহ) লিখেছেন:

قال ابو حنيفة وأشدّ الحر فى ديارهم فى هذا الوقت حين صار ظل كل شىء مثله فكان حديث الإبراد ناسخا لحديث امامة جبرئيل فانه اوّل أحاديث الباب وإذا ثبت بقاء وقت الظهر بعد صيرورة الظل مثل الشيء نسخا لامامة جبرئيل بحديث الإبراد ثبت نسخ حديث امامة جبرئيل فى حق اوّل وقت العصر ايضا لكن امامة جبرئيل فى اليوم الثاني العصر عند صيرورة ظل كل شىء مثليه يفيد انه وقته ولم ينسخ .

“ইমাম আবূ হানীফা (রহ) বলেন: তাঁদের দেশে যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হতো, তখন প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভূত হতো, তাই যোহরের সলাত তাপ কমে গেলে আদায় করার হাদীস দ্বারা জিবরীল (আ)-এর ইমামতের হাদীসকে মানসুখ করেন। কেননা, জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস তো সলাতের ওয়াক্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রথম দিকের হাদীস। সুতরাং যোহরের সলাত তাপ কমে গেলে আদায় করার হাদীস দ্বারা জিবরীল (আ)-এর ইমামতির হাদীস মানসুখ হওয়া প্রমাণিত হল। তখন জিবরীল (আ) আসরের যে আওয়াল ওয়াক্তে ইমামতি করেছিলেন তাও রহিত হয়ে গেল।… কিন্তু দ্বিতীয় দিন জিবরীল (আ) দ্বিগুণ ছায়ার সময় যে আসরের সলাতে ইমামতি করেন, তাতে প্রতীয়মান হয়ে যে, এটি আসরের সলাতের ওয়াক্ত ছিল এবং এটি রহিত হয়নি।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫৩ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]

অতঃপর ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর বক্তব্য খণ্ডনে লিখেছেন:

وهذا الاستدلال ضعيف جدّا ودلالة حديث الأبراد على بقاء وقت الظهر بعد المثل ممنوع بل الأبراد امر إضافي وشدة الحرّ انما يكون عند الزوال وبعض الأبراد يحصل قبيل بلوغ الظل مثل الشيء ولو كان الحرّ فى ديارهم حين بلوغ ظل الشيء مثله أشد مما قبله لكان مقتضى الأمر بالابراد تعجيل الصلاة فى اوّل الوقت والله اعلم .

“এভাবে দলিল গ্রহণ অত্যন্ত দুর্বল। শীতল করার হাদীস থেকে এটা বুঝা যায় না যে, একগুণ ছায়া হওয়ার পরও যোহরের ওয়াক্ত বাকী থাকে। বরং ওয়াক্তের শীতলতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। আসল গরমের তীব্রতা তো সূর্য ঢলে পড়ার সময় হয়ে থাকে। সূর্য ঢলে পড়ার সময়ের মোকাবেলায় একগুণ ছায়া হওয়ার কিছু পূ্র্বে কতকটা ঠাণ্ডা তো হয়েই থাকে। আর যদি এটা মেনেও নেয়া হয় যে, তাঁদের দেশে একগুণ ছায়া হওয়ার সময় পূর্ব মুহূর্ত অপেক্ষা অধিক উত্তাপ অনুভব হয়, তবে স্বয়ং শীতল করার নির্দেশের দাবি হচ্ছে আওয়াল ওয়াক্তেই (ছায়া একগুণ হওয়ার পূর্বেই) যোহর আদায় করা। আল্লাহই সর্বোজ্ঞ।” [. তাফসীরে মাযহারী (ইফা) ৩/৩৫৩ পৃ:, সূরা নিসার ১০৩ নং আয়াতের তাফসীর।]

ইমাম আবূ হানীফা (রহ)-এর বিশ্লেষণটি শাব্দিক। আর শাব্দিক বিশ্লেষণ দ্বারা তিনি অধিকাংশ সাহাবী (রা) থেকে বর্ণিত নবী (স)-এর ব্যবহারিক হাদীসের দাবিকে সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন। নিচের হাদীসগুলো থেকে সুস্পষ্ট হবে ইমাম আবূ হানীফা (রহ) দুই ছায়া বা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার যে রায় দিয়েছেন- তা সাহাবীগণ (রা) বুঝেননি। যেমন-

হাদীস-৫১: সাহাবী আনাস (রা) বর্ণনা করেন:

كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ النَّبِيِّ بِالظَّهَائِرِ سَجَدْنَا على ثيابنا اتقاء الْحر .

“আমরা যখন নবী (স)-এর পিছনে যোহরের সলাত আদায় করতাম, তখন গরম থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাপড়ের উপর সাজদাহ করতাম।” [. সহীহ বুখারী হা/৫৪২, মিশকাত হা/৫৮৯।]

বুঝা যাচ্ছে, গরমের উত্তাপ থাকাবস্থায়ও নবী (স)-এর পিছনে সাহাবীগণ যোহরের সলাত আদায় করতেন। এ পর্যায়ে পূর্বে বর্ণিত হাদীসগুলোর দাবি হল, গরম কালে সূর্যের তাপ বেশি হলে, যোহরের সলাত তুলনামূলক ঠাণ্ডার সময় আদায় করা মুস্তাহাব। নিচের হাদীসটিও এক্ষেত্রে অপর একটি প্রমাণ:

হাদীস-৫২: সাহাবী খাব্বাব (রা) বর্ণনা করেন:

أَتَيْنَا رَسُولَ اللهِ «فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ حَرَّ الرَّمْضَاءِ، فَلَمْ يُشْكِنَا» قَالَ زُهَيْرٌ : قُلْتُ لِأَبِي إِسْحَاقَ : " أَفِي الظُّهْرِ؟ قَالَ : نَعَمْ، قُلْتُ : أَفِي تَعْجِيلِهَا؟ قَالَ : نَعَمْ

“আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর কাছে গিয়ে প্রচণ্ড গরমের (সলাত আদায়ের ব্যাপারে) অভিযোগ করলাম। কিন্তু তিনি (স) আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। বর্ণনাকারী যুহায়র বললেন, আমি আবূ ইসহাককে জিজ্ঞেস করলাম: তারা (খাব্বাব ও অন্য সহাবীগণ) কি যোহরের সলাত (প্রচণ্ড গরমের মধ্যে) আদায় করা সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি (যুহায়র) আবারও জিজ্ঞেস করলাম ( যোহরের সলাত) আগে ভাগে অর্থাৎ- ওয়াক্তের প্রথম দিকে আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি এবারও বললেন, হ্যাঁ।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯৩ (১৯০/৬১৯)।]

বুঝা যাচ্ছে, সবক্ষেত্রে নবী (স) যোহরের সলাত ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন না। বরং প্রচণ্ড গরমেও আওয়াল ওয়াক্তে যোহরের সলাত আদায় করতেন।

হাদীস-৫৩: সাহাবী জাবির বিন সামুরাহ (রা) বর্ণনা করেন:

كَانَ النَّبِيُّ يُصَلِّي الظُّهْرَ إِذَا دَحَضَتِ الشَّمْسُ ‏ .

“সূর্য (মাথার উপর থেকে) হেলে পড়লেই নবী (স) যোহরের সলাত আদায় করতেন।” [. সহীহ মুসলিম হা/১২৯১ (১৮৮/৬১৮)।]

এই হাদীসটি মৌলিক বা ‘আমভাবে যোহরের ওয়াক্তের প্রকৃত সময়কে বুঝাচ্ছে। যখন কোনো খাস বা সুনির্দিষ্ট কারণ এর ব্যতীক্রম কিছু বলবে, কেবল তখনই ঐ সুনির্দিষ্ট শর্তে মূল শর্তটির ব্যতিক্রম হিসেবে পালনযোগ্য হবে।

উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহ) উপরের ৫১ ও ৫২ নং মর্মে বর্ণিত হাদীসের আলোকে শেষোক্ত ৫৩ নং মর্মে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেছেন:

والحديث يدل على استحباب الإبراد، ولا يعارض ذلك الأحاديث الواردة بتعجيل الظهر وأفضلية أول الوقت لأنها عامة أو مطلقة، وحديث الإبراد خاص أو مقيد، ولا تعارض بين عام وخاص ولا بين مطلق ومقيد، وأما حديث خباب عند مسلم، قال : شكونا إلى رسول الله - ﷺ - حر الرمضاء في جباهنا وأكفنا فلم يشكنا . أي : لم يعذرنا ولم يزال شكوانا، فمحمول على أنهم طلبواً تأخيراً زائداً على قدر الإبراد،

“(৫১ নং) হাদীসটি যোহরের সলাত ঠাণ্ডা হওয়ার পর আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার দলিল। এর সাথে যোহরের সলাত দ্রুত আদায় ও প্রথম ওয়াক্তে আদায়ের ফযিলতের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কেননা, (৫৩ নং হাদীসের দাবি) ‘আম বা সাধারণভাবে মৌলিক ও উন্মুক্ত। পক্ষান্তরে ইবরাদ বা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার হাদীস খাস বা সুনির্দিষ্ট। আর আম ও খাসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, তেমনি উন্মুক্ত ও সুনির্দিষ্ট হওয়ার মধ্যেও বিরোধ নেই (কেননা, খাস নির্দিষ্ট শর্তের সাথে যুক্ত। আর শর্তটি পাওয়া না গেলে সব-সময় আম বা উন্মুক্ত নির্দেশের উপর আমল করতে হয়)। আর সহীহ মুসলিমে (৫২ নং হাদীসটিতে) বর্ণিত হয়েছে, খাব্বাব (রা) বলেন: আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট প্রচণ্ড গরমে আমাদের কপাল ও হাত পুড়ে যাবার অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তিনি (স) তা গ্রহণ করেননি। [. উক্ত বাক্যে সহীহ মুসলিমে কোনো হাদীস নেই। বরং সহীহ মুসলিমের হাদীসটি সেটাই যা পূর্বে উল্লেখ করেছি। বর্ণিত হাদীসটি অন্য কিতাবের। বিস্তারিত: সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৪৮১৩।] অর্থাৎ আমাদের ওজর ও অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। এর অর্থ হল, তাঁরা আরও বেশি ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।…” [. মিরআতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতুল মাসাবীহ (শামেলা) ২/৩০০-০১ পৃ:।]

জিবরীল (আ)-এর হাদীস সাহাবী ও তাবেঈদের যামানাতেও অনুসরণীয় ছিল- এ কারণে মানসুখ হওয়ার দাবিই বাতিল:

হাদীস-৫৪: তাবেঈ উরওয়াহ বিন যুবায়ের (রহ) বর্ণনা করেন:

يُحَدِّثُ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ فِيْ إِمَارَتِهِ أَخَّرَ الْمُغِيْرَةُ بْنُ شُعْبَةَ الْعَصْرَ وَهُوَ أَمِيْرُ الْكُوْفَةِ فَدَخَلَ عَلَيْهِ أَبُوْ مَسْعُوْدٍ عُقْبَةُ بْنُ عامِرٍ الْأَنْصَارِيُّ جَدُّ زَيْدِ بْنِ حَسَنٍ شَهِدَ بَدْرًا فَقَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ نَزَلَ جِبْرِيْلُ فَصَلَّى فَصَلَّى رَسُوْلُ اللهِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ ثُمَّ قَالَ هَكَذَا أُمِرْتُ كَذَلِكَ .

“উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) তাঁর খিলাফাত কালের বর্ণনা করেছেন যে, মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রা) কুফার আমীর থাকা কালে একদা আসরের সলাত আদায় করতে দেরি করে ফেললে যায়দ ইবনু হাসানের দাদা বদরী সাহাবী আবূ মাসউদ উকবাহ ইবনু আমির আনসারী (রা) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, আপনি তো জানেন যে, জিবরীল (আ) এসে সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ্ (স) তাঁর সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করলেন এবং বললেন: আমি এভাবেই সলাত আদায় করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি।” [. সহীহ বুখারী হা/৪০০৭। বিস্তারিত: সহীহ বুখারী হা/৫২১।]

হাদীস-৫৫: আর ইবনু শিহাব (রহ) বর্ণনা করেছেন:

أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ أَخَّرَ الْعَصْرَ شَيْئًا فَقَالَ لَهُ عُرْوَةُ أَمَا إِنَّ جِبْرِيْلَ قَدْ نَزَلَ فَصَلَّى أَمَامَ رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ عُمَرُ اعْلَمْ مَا تَقُوْلُ يَا عُرْوَةُ قَالَ سَمِعْتُ بَشِيْرَ بْنَ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُوْدٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ نَزَلَ جِبْرِيْلُ فَأَمَّنِيْ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ ثُمَّ صَلَّيْتُ مَعَهُ يَحْسُبُ بِأَصَابِعِهِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ .

“একবার উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) আসরের সলাত কিছুটা দেরিতে আদায় করলেন। তখন তাঁকে উরওয়াহ (রা) বললেন, একবার জিবরীল (আ) আসলেন এবং আল্লাহর রসূল (স) -এর ইমাম হয়ে সলাত আদায় করলেন। তা শুনে উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহ) বললেন, হে উরওয়াহ! কি বলছ, চিন্তা কর। উত্তরে তিনি বললেন, আমি বশীর ইবনু আবূ মাসঊদ (রা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (স)-কে বলতে শুনেছি, একবার জিবরীল (আ) আসলেন, অতঃপর তিনি আমার ইমামতি করলেন এবং তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপরও আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত গুণছিলেন। [. সহীহ বুখারী হা/৩২২১।]

ইমাম নওয়াবী (নববী রহ.) লিখেছেন:

أخر عمر بن عبدالعزيز   العصر   فأنكر عليه   عروة وأخرها المغيرة   فأنكر عليه   أبو مسعود الانصارى واحتجابامامة جبريل   عليه   السلام

“আসরের সলাতে উমার বিন আব্দুল আযীয দেরি করলে উরওয়াহ বিন যুবায়ের তাতে আপত্তি করলেন। তেমনি মুগীরাহ দেরি করাতে সাহাবী আবূ মাসউদ আনসারী (রা) আপত্তি করেন এবং জিবরীল (আ)-এর হাদীস দ্বারা দলিল উপস্থাপন করেন।” [. শারহু মুসলিম নাওয়াবী ১/২২২ পৃ:।]

সুস্পষ্ট হল, জিবরীল (আ)-এর হাদীসটিকে মানসুখ করার দাবিটি তাক্বলীদ বা দলীয় অন্ধ-অনুসরণ থেকে সৃষ্ট হয়ে একটি ধোঁকা ও ষড়যন্ত্রের রূপ নিয়েছে। এমনকি সাহাবী ও তাবেঈদের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তটি সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও নিজ ইমামের অন্ধ-অনুসরণ করাকে ফরয বানিয়ে আত্মতৃপ্তির চরম গোমরাহিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন