HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
তরবিয়ত ও চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন
লেখকঃ শামছুল হক ছিদ্দিক, নোমান আবুল বাশার, আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
‘আল্লাহর জন্য ভালোবাসা’ সম্পর্কে জাহেলী যুগে মানুষের কোন ধারণা ছিল না। স্বাদেশিকতা, বংশ সম্পর্ক বা অনুরূপ কিছু ছিল তাদের পরস্পর সম্পর্কের মূল ভিত্তি। আল্লাহর বিশেষ দয়ায় ইসলামের আলো উদ্ভাসিত হল। পরস্পর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উৎকর্ষতা আসল। ধর্মীয় সম্পর্ক সর্বোচ্চ ও সুমহান সম্পর্ক হিসেবে রূপ লাভ করল। এ-সম্পর্কের উপরেই প্রতিদান, পুরস্কার, ভালোবাসা ও ঘৃণা সাব্যস্ত হল। ইসলামের বিকাশের সাথে সাথে ‘ইসলামি ভ্রাতৃত্ব’ ও ‘আল্লাহর জন্য ভালোবাসা’ ইত্যাদি পরিভাষা চালু হল।
‘আল্লাহর জন্য ভালোবাসা’-এর অর্থ হচ্ছে, এক মুসলিম ভাই অপর মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ ও আল্লাহর আনুগত্য কামনা করা। সম্পদের মোহ, বংশ বা স্থান ইত্যাদির কোন সংশ্লিষ্টতা এক অপরের সম্পর্কের ও ভালোবাসার মানদন্ড হবে না।
‘আল্লাহর জন্য ভালোবাসা’-এর অর্থ হচ্ছে, এক মুসলিম ভাই অপর মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ ও আল্লাহর আনুগত্য কামনা করা। সম্পদের মোহ, বংশ বা স্থান ইত্যাদির কোন সংশ্লিষ্টতা এক অপরের সম্পর্কের ও ভালোবাসার মানদন্ড হবে না।
আল্লাহর জন্য ভালোবাসা স্থাপনকারীদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন :—আবু হুরাইরা র. থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন—
أن رجلا زار أخا له في قرية أخرى، فأرصد الله له على مدرجته ملكا، فلما أتى عليه قال أين تريد؟ قال : أريد أخا لي في هذه القرية، قال : هل لك عليه من نعمة تربها؟ قال : لا، غير أني أحببته في الله عز وجل، قال : فإني رسول الله إليك أن الله قد أحبك كما أحببته فيه . رواه مسلم (4656)
‘এক ব্যক্তি অন্য গ্রামে বসবাসকারী নিজ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হল। মহান আল্লাহ তার জন্য পথে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করে রাখলেন। যখন সে ফেরেশতা উক্ত ব্যক্তির নিকটবর্তী হল, বলল তুমি কোথায় যাও? সে বলল, এই গ্রামে বসবাসকারী আমার এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করা আমার উদ্দেশ্য। ফেরেশতা বলল, তার কাছে তোমার কোন পাওনা আছে কি-না ? সে বলল, না। কিন্তু আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তখন ফেরেশতা বলে উঠল, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত। মহান আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে ভালোবেসেছেন যে রকম তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসেছ। [মুসলিম : ৪৬৫৬]
হাদিসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وجبت محبتي للمحتابين فيّ، والمتجالسين فيّ، والمتزاورين فيّ، والمتباذلين في . رواه أحمد (21717)
আমার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসাকারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত। [আহমদ : ২১৭১৭]
আল্লাহর জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী আল্লাহর আরশের ছায়াতলে অবস্থান করবে, যে দিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله ... ورجلان تحابا في الله، اجتمعا عليه ، وتفرقا عليه . رواه البخاري (620)
‘সাত ব্যক্তি, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর ছায়াতলে ছায়া দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না...এবং দু ব্যক্তিকে, যারা আল্লাহর জন্য পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করেছে, তাঁর ভালোবাসায় একত্রিত হয়েছে, এবং তাঁর ভালোবাসায় পৃথক হয়েছে্। [বোখারি : ৬২০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :—
إن الله يقول يوم القيامة : أين المتحابون بجلالي، اليوم أظلهم في ظلي يوم لا ظل إلا ظلي . ( رواه مسلم :4655)
আল্লাহ কেয়ামত দিবসে বলবেন, ‘আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ—যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না—আমি তাদের ছায়া দেব।’ [মুসলিম : ৪৬৫৫]
আল্লাহর জন্য ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ মাধ্যম : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
لاتدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولاتؤمنوا حتى تحابوا ... رواه مسلم (81)
‘ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না।’ [সহিহ মুসলিম : ৮১] এক সাথি আরেক সাথির উপর প্রভাব বিস্তার করে বিধায় প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে সাথি গ্রহণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
الرجل على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل . رواه الترمذي (2300)
‘মানুষ তার বন্ধুর রীতি-নীতির উপর পরিচালিত হয়, সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের উচিত, কে তোমাদের বন্ধু হবে এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা।’ [তিরমিজি : ২৩০০]
أن رجلا زار أخا له في قرية أخرى، فأرصد الله له على مدرجته ملكا، فلما أتى عليه قال أين تريد؟ قال : أريد أخا لي في هذه القرية، قال : هل لك عليه من نعمة تربها؟ قال : لا، غير أني أحببته في الله عز وجل، قال : فإني رسول الله إليك أن الله قد أحبك كما أحببته فيه . رواه مسلم (4656)
‘এক ব্যক্তি অন্য গ্রামে বসবাসকারী নিজ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হল। মহান আল্লাহ তার জন্য পথে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করে রাখলেন। যখন সে ফেরেশতা উক্ত ব্যক্তির নিকটবর্তী হল, বলল তুমি কোথায় যাও? সে বলল, এই গ্রামে বসবাসকারী আমার এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করা আমার উদ্দেশ্য। ফেরেশতা বলল, তার কাছে তোমার কোন পাওনা আছে কি-না ? সে বলল, না। কিন্তু আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তখন ফেরেশতা বলে উঠল, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত। মহান আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে ভালোবেসেছেন যে রকম তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসেছ। [মুসলিম : ৪৬৫৬]
হাদিসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وجبت محبتي للمحتابين فيّ، والمتجالسين فيّ، والمتزاورين فيّ، والمتباذلين في . رواه أحمد (21717)
আমার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসাকারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত। [আহমদ : ২১৭১৭]
আল্লাহর জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী আল্লাহর আরশের ছায়াতলে অবস্থান করবে, যে দিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله ... ورجلان تحابا في الله، اجتمعا عليه ، وتفرقا عليه . رواه البخاري (620)
‘সাত ব্যক্তি, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর ছায়াতলে ছায়া দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না...এবং দু ব্যক্তিকে, যারা আল্লাহর জন্য পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করেছে, তাঁর ভালোবাসায় একত্রিত হয়েছে, এবং তাঁর ভালোবাসায় পৃথক হয়েছে্। [বোখারি : ৬২০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :—
إن الله يقول يوم القيامة : أين المتحابون بجلالي، اليوم أظلهم في ظلي يوم لا ظل إلا ظلي . ( رواه مسلم :4655)
আল্লাহ কেয়ামত দিবসে বলবেন, ‘আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ—যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না—আমি তাদের ছায়া দেব।’ [মুসলিম : ৪৬৫৫]
আল্লাহর জন্য ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ মাধ্যম : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
لاتدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولاتؤمنوا حتى تحابوا ... رواه مسلم (81)
‘ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না।’ [সহিহ মুসলিম : ৮১] এক সাথি আরেক সাথির উপর প্রভাব বিস্তার করে বিধায় প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে সাথি গ্রহণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
الرجل على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل . رواه الترمذي (2300)
‘মানুষ তার বন্ধুর রীতি-নীতির উপর পরিচালিত হয়, সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের উচিত, কে তোমাদের বন্ধু হবে এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা।’ [তিরমিজি : ২৩০০]
দ্বীনদার ও তাকওয়াবান হওয়া : তাকওয়াবানের কিছু আলামত নীচে উল্লেখ করা হল।
আল্লাহ প্রদত্ত অকাট্য বিধি-বিধান পালনে যত্নবান হওয়া। যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান—ইত্যাদি।
গালি-গালাজ, অভিশাপ, গিবত—ইত্যাদি থেকে নিজের জিহবাকে পরিচ্ছন্ন রাখা।
নিজ সাথিকে ভাল উপদেশ দেওয়া।
সজনদেরকে ভালোবাসা।
অশ্লীলতা ও পঙ্কিলতা থেকে দূরে থাকা।
ভাল কাজে সহযোগিতা প্রদান, পাপের কাজে নিরুৎসাহিত করা। আললাহ তাআলা বলেন :—
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ ﴿الزخرف :67﴾
‘বন্ধুরা সেই দিন হয়ে পড়বে একে অপরের শক্র, মুত্তাকীরা ব্যতীত।’ [যুখরুফ : ৬৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
لا تصاحب إلا مؤمنا، ولا يأكل طعامك إلا تقي . رواه الترمذي (3218)
‘ঈমানদার ব্যতীত সাথি গ্রহণ করো না, মুত্তাকী ব্যতীত কেহ যেন তোমার খাবার ভক্ষণ না করে।’ [তিরমিজি : ৩২১৮]
বুদ্ধিমান হওয়া : নির্বোধকে সাথি হিসেবে গ্রহণে কোন কল্যাণ নেই। কেননা সেই লাভ করতে গিয়ে ক্ষতি করে বসবে।
সুন্দর চরিত্রবান হওয়া : কেননা দুশ্চরিত্রবান সাথির অশুভ কর্মে তুমি আক্রান্ত হয়ে পড়বে, কষ্টে নিপতিত হবে।
সুন্নত মোতাবেক চলা : সাথি বেদআতী হলে তোমাকে বেদআতের দিকে নিয়ে যাবে, তোমার চিন্তা চেতনাকে কলুষিত করবে।
আল্লাহ প্রদত্ত অকাট্য বিধি-বিধান পালনে যত্নবান হওয়া। যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান—ইত্যাদি।
গালি-গালাজ, অভিশাপ, গিবত—ইত্যাদি থেকে নিজের জিহবাকে পরিচ্ছন্ন রাখা।
নিজ সাথিকে ভাল উপদেশ দেওয়া।
সজনদেরকে ভালোবাসা।
অশ্লীলতা ও পঙ্কিলতা থেকে দূরে থাকা।
ভাল কাজে সহযোগিতা প্রদান, পাপের কাজে নিরুৎসাহিত করা। আললাহ তাআলা বলেন :—
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ ﴿الزخرف :67﴾
‘বন্ধুরা সেই দিন হয়ে পড়বে একে অপরের শক্র, মুত্তাকীরা ব্যতীত।’ [যুখরুফ : ৬৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
لا تصاحب إلا مؤمنا، ولا يأكل طعامك إلا تقي . رواه الترمذي (3218)
‘ঈমানদার ব্যতীত সাথি গ্রহণ করো না, মুত্তাকী ব্যতীত কেহ যেন তোমার খাবার ভক্ষণ না করে।’ [তিরমিজি : ৩২১৮]
বুদ্ধিমান হওয়া : নির্বোধকে সাথি হিসেবে গ্রহণে কোন কল্যাণ নেই। কেননা সেই লাভ করতে গিয়ে ক্ষতি করে বসবে।
সুন্দর চরিত্রবান হওয়া : কেননা দুশ্চরিত্রবান সাথির অশুভ কর্মে তুমি আক্রান্ত হয়ে পড়বে, কষ্টে নিপতিত হবে।
সুন্নত মোতাবেক চলা : সাথি বেদআতী হলে তোমাকে বেদআতের দিকে নিয়ে যাবে, তোমার চিন্তা চেতনাকে কলুষিত করবে।
ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আদব রয়েছে যা মেনে চললেই আল্লাহর জন্য ভালোবাসার দাবি যথার্থ প্রমাণিত হবে। নীচে কতিপয় আদব উল্লেখ করা হল।
সালাম প্রদান ও হাসি-মুখে সাক্ষাৎ করা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
لاتحقرن من المعروف شيئا، ولو أن تلقى أخاك بوجه طلق . رواه مسلم (4760)
কোন ভাল কাজকে কখনো তুচ্ছ জ্ঞান কর না, এমনকি তা যদি তোমার ভাইয়ের সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাৎ করাও হয়। [সহিহ মুসলিম : ৪৭৬০]
উপঢৌকন প্রদান : ভালোবাসা বৃদ্ধি ও মনোমালিন্য দূরীকরণে এর রয়েছে বিরাট প্রভাব। রাসূলুল্লাহ বলেন :—
تهادوا تحابوا . موطأ مالك (1413)
‘তোমরা একে অপরকে উপহার প্রদান কর, তোমাদের পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ [মুয়াত্তা : ১৪১৩] এক ভাই অপর ভাইয়ের জন্য দোয়া করা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
ما من عبد مسلم يدعو لأخيه بظهر الغيب، إلا قال الملك : ولك بمثل . رواه مسلم (491)
‘কোন মুসলিম বান্দা যখন তার ভাইয়ের পিছনে তার জন্য দোয়া করে তখন ফেরেশতা বলে উঠে তোমার জন্যও অনুরূপ।’ [সহিহ মুসলিম : ৪৯১২] আর এটা তার সারা জীবন—এমনকি মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকবে।
অপর ভাইয়ের নিকট ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:—
إذا أحب الرجل أخاه، فليخبره أنه يحبه . رواه أبوداود (4459)
‘মানুষ যখন তার ভাইকে ভালোবাসে সে যেন তাকে অবহিত করে যে, সে তাকে ভালোবাসে।’ এবং তাকে বলবে : إني أحبك في الله ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।’ জওয়াবে সে বলবে : أحبك الذي أحببتني له ‘যে ব্যাপারে তুমি আমাকে ভালোবেসেছ সেটা আমার নিকট পছন্দ হয়েছে।’ [আবুদাউদ : ৪৪৫৯]
দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা : যাতে কমও না হয় আবার বেশিও না হয়। কম হলে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, বেশি হলে বিরক্ত হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
زر غبا، تزدد حبا .
‘বিরতি দিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ কর, ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ [] কবি বলেন :—
أكثر التكرار أقصاه المللزرغبا تزد حبا فمن
বিরতি দিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ কর, ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে, যে বার বার দেখা-সাক্ষাৎ করে অস্বস্তিবোধ তাকে দূরে সরিয়ে দিবে।
সাহায্য করা ও প্রয়োজন মেটানো : একে তিন পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
সর্বোচ্চ পর্যায় : নিজের প্রয়োজনের উপর অপর ভাইয়ের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
মধ্যপর্যায় : আবেদন ছাড়া অপর ভাইয়ের এমন প্রয়োজন মেটানো যা নিজের প্রয়োজনের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না।
নিম্ন পর্যায় : আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপর ভাইয়ের প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া।
অপর ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখা, তার গোপনীয় বিষয় প্রকাশ না করা, উত্তম পন্থায় তাকে উপদেশ দেয়া, তার ইজ্জত-আব্রু সংরক্ষণ করা, ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, সুন্দর আচরণ করা—ইত্যাদি।
সালাম প্রদান ও হাসি-মুখে সাক্ষাৎ করা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
لاتحقرن من المعروف شيئا، ولو أن تلقى أخاك بوجه طلق . رواه مسلم (4760)
কোন ভাল কাজকে কখনো তুচ্ছ জ্ঞান কর না, এমনকি তা যদি তোমার ভাইয়ের সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাৎ করাও হয়। [সহিহ মুসলিম : ৪৭৬০]
উপঢৌকন প্রদান : ভালোবাসা বৃদ্ধি ও মনোমালিন্য দূরীকরণে এর রয়েছে বিরাট প্রভাব। রাসূলুল্লাহ বলেন :—
تهادوا تحابوا . موطأ مالك (1413)
‘তোমরা একে অপরকে উপহার প্রদান কর, তোমাদের পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ [মুয়াত্তা : ১৪১৩] এক ভাই অপর ভাইয়ের জন্য দোয়া করা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
ما من عبد مسلم يدعو لأخيه بظهر الغيب، إلا قال الملك : ولك بمثل . رواه مسلم (491)
‘কোন মুসলিম বান্দা যখন তার ভাইয়ের পিছনে তার জন্য দোয়া করে তখন ফেরেশতা বলে উঠে তোমার জন্যও অনুরূপ।’ [সহিহ মুসলিম : ৪৯১২] আর এটা তার সারা জীবন—এমনকি মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকবে।
অপর ভাইয়ের নিকট ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:—
إذا أحب الرجل أخاه، فليخبره أنه يحبه . رواه أبوداود (4459)
‘মানুষ যখন তার ভাইকে ভালোবাসে সে যেন তাকে অবহিত করে যে, সে তাকে ভালোবাসে।’ এবং তাকে বলবে : إني أحبك في الله ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।’ জওয়াবে সে বলবে : أحبك الذي أحببتني له ‘যে ব্যাপারে তুমি আমাকে ভালোবেসেছ সেটা আমার নিকট পছন্দ হয়েছে।’ [আবুদাউদ : ৪৪৫৯]
দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা : যাতে কমও না হয় আবার বেশিও না হয়। কম হলে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, বেশি হলে বিরক্ত হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—
زر غبا، تزدد حبا .
‘বিরতি দিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ কর, ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ [] কবি বলেন :—
أكثر التكرار أقصاه المللزرغبا تزد حبا فمن
বিরতি দিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ কর, ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে, যে বার বার দেখা-সাক্ষাৎ করে অস্বস্তিবোধ তাকে দূরে সরিয়ে দিবে।
সাহায্য করা ও প্রয়োজন মেটানো : একে তিন পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
সর্বোচ্চ পর্যায় : নিজের প্রয়োজনের উপর অপর ভাইয়ের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
মধ্যপর্যায় : আবেদন ছাড়া অপর ভাইয়ের এমন প্রয়োজন মেটানো যা নিজের প্রয়োজনের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না।
নিম্ন পর্যায় : আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপর ভাইয়ের প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া।
অপর ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখা, তার গোপনীয় বিষয় প্রকাশ না করা, উত্তম পন্থায় তাকে উপদেশ দেয়া, তার ইজ্জত-আব্রু সংরক্ষণ করা, ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, সুন্দর আচরণ করা—ইত্যাদি।
আভিধানিক অর্থ :—স্মরণ করা, মনে করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা।
পারিভাষিক অর্থ :—শরিয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কোরআন পাঠ, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, তার আদেশ-নিষেধ পালন, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা—ইত্যাদি।
ইমাম নববী রা. বলেন :—জিকির কেবল তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর—ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই জিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত।
আল্লাহ তাআলার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের উপর অবিচল রাখে।
এ-কারণে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রে গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا . وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا . ﴿الأحزاب :41-42﴾
‘মোমিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। [সূরা আহযাব : ৪১,৪২]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :—
وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآَصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ ﴿ الأعراف : 205﴾
তোমরা প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চ-স্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। [সূরা আরাফ : ২০৫]
পারিভাষিক অর্থ :—শরিয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কোরআন পাঠ, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, তার আদেশ-নিষেধ পালন, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা—ইত্যাদি।
ইমাম নববী রা. বলেন :—জিকির কেবল তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর—ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই জিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত।
আল্লাহ তাআলার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের উপর অবিচল রাখে।
এ-কারণে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রে গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا . وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا . ﴿الأحزاب :41-42﴾
‘মোমিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। [সূরা আহযাব : ৪১,৪২]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :—
وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآَصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ ﴿ الأعراف : 205﴾
তোমরা প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চ-স্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। [সূরা আরাফ : ২০৫]
ইবনুল আরবী রহ. বলেন :—এ এক বড় অধ্যায় যেখানে জ্ঞানীরা হয়রান-দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কারণ, এর রয়েছে অনেক উপকারিতা, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রহ. স্বরচিত الوابل الصيب من الكلم الطيب গ্রন্থে সত্তুরের অধিক উপকার উল্লেখ করেছেন। নিম্নে কয়েকটির বিবরণ দেয়া হল।
ইহকাল ও পরকালে অন্তরে প্রশান্তি ও স্থিরতা লাভ : আল্লাহ তাআলা বলেন :—
الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ . ﴿الرعد :28﴾
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়। [সূরা রাদ : ২৮]
আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম এবাদত ; কেননা, আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করা হচ্ছে এবাদতের আসল লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ ﴿العنكبوت : 45﴾
আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। [সূরা আনকাবুত : ৪৫] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :—
وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا . ﴿الأحزاب : 35﴾
এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী—এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। [সূরা আহযাব : ৩৫] আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :—
ألا أنبئكم بخير أعمالكم، وأزكاها عند مليككم، وأرفعها في درجاتكم، وخير لكم من إعطاء الذهب والورق، ومن أن تلقوا عدوكم فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم، قالوا بلى يا رسول الله، قال : ذكر الله . رواه الترمذى (3299)
আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম ? তারা বলল :—হাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বললেন :—জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)। [তিরমিজি : ৩২৯৯] আল্লাহর জিকিরকারী, তাঁর নিদর্শনা-বলী থেকে শিক্ষা লাভকারী : তারাই বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآَيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ . الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ . ﴿آل عمران :190-191﴾
আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে। [আলে-ইমরান : ১৯০-১৯১]
আল্লাহর জিকির সুরক্ষিত দুর্গ : বান্দা এ-দ্বারা শয়তান থেকে রক্ষা পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসরাঈল-তনয়দেরকে বলেছেন :—
وآمركم أن تذكروا الله، فإن مثل ذلك مثل رجل خرج العدو في أثره سراعا، حتى إذا أتى على حصن حصين فأحرز نفسه منهم، كذلك العبد لا يحرز نفسه من الشيطان إلا بذكر الله . رواه أحمد في مسنده (2790)
‘এবং আমি তোমাদেরকে আল্লাহর জিকিরের আদেশ দিচ্ছি, কারণ এর তুলনা এমন এক ব্যক্তির ন্যায় যার পিছনে দুশমন দৌড়ে তাড়া করে ফিরছে, সে সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে নিজকে রক্ষা করেছে। অনুরূপ, বান্দা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে শয়তান থেকে সুরক্ষা পায়।’ [আহমদ : ২৭৯০]
জিকির মানুষের ইহকাল ও পরকালের মর্যাদা বৃদ্ধি করে : আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :—
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسير في طريق مكة، فمر على جبل يقال له جمدان، فقال : سيروا – هذا جمدان- سبق المفردون قال : وما المفردون، يا رسول الله؟ قال : الذاكرين الله كثيرا والذاكرات . رواه مسلم في صحيحه (4834)
মক্কার একটি রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটছিলেন। জুমদান নামক পাহাড় অতিক্রম করার সময় বললেন, তোমরা চল,—এটা জুমদান—মুফাররাদূন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিতরা এগিয়ে গেছে তিনি জিজ্ঞেস করলেন :—ইয়া রাসূলুল্লাহ মুফাররদূন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিত কারা ? জওয়াবে তিনি বললেন :—আল্লাহকে বেশি করে স্মরণকারী নারী-পুরুষ। [মুসলিম : ৪৮৩৪]
জিকিরের কারণে ইহকাল ও পরকালে জীবিকা বৃদ্ধি পায় : আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর কথা বিবৃত করে বলেন :—
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا . يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا . وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا . ﴿ نوح : 10-12﴾
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। [সূরা নূহ : ১০-১২]
উল্লেখ্য যে, ইস্তিগফার জিকিরের বিশেষ প্রকার হিসেবে বিবেচিত।
ইহকাল ও পরকালে অন্তরে প্রশান্তি ও স্থিরতা লাভ : আল্লাহ তাআলা বলেন :—
الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ . ﴿الرعد :28﴾
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়। [সূরা রাদ : ২৮]
আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম এবাদত ; কেননা, আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করা হচ্ছে এবাদতের আসল লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ ﴿العنكبوت : 45﴾
আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। [সূরা আনকাবুত : ৪৫] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :—
وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا . ﴿الأحزاب : 35﴾
এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী—এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। [সূরা আহযাব : ৩৫] আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :—
ألا أنبئكم بخير أعمالكم، وأزكاها عند مليككم، وأرفعها في درجاتكم، وخير لكم من إعطاء الذهب والورق، ومن أن تلقوا عدوكم فتضربوا أعناقهم ويضربوا أعناقكم، قالوا بلى يا رسول الله، قال : ذكر الله . رواه الترمذى (3299)
আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম ? তারা বলল :—হাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বললেন :—জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)। [তিরমিজি : ৩২৯৯] আল্লাহর জিকিরকারী, তাঁর নিদর্শনা-বলী থেকে শিক্ষা লাভকারী : তারাই বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآَيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ . الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ . ﴿آل عمران :190-191﴾
আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে। [আলে-ইমরান : ১৯০-১৯১]
আল্লাহর জিকির সুরক্ষিত দুর্গ : বান্দা এ-দ্বারা শয়তান থেকে রক্ষা পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসরাঈল-তনয়দেরকে বলেছেন :—
وآمركم أن تذكروا الله، فإن مثل ذلك مثل رجل خرج العدو في أثره سراعا، حتى إذا أتى على حصن حصين فأحرز نفسه منهم، كذلك العبد لا يحرز نفسه من الشيطان إلا بذكر الله . رواه أحمد في مسنده (2790)
‘এবং আমি তোমাদেরকে আল্লাহর জিকিরের আদেশ দিচ্ছি, কারণ এর তুলনা এমন এক ব্যক্তির ন্যায় যার পিছনে দুশমন দৌড়ে তাড়া করে ফিরছে, সে সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে নিজকে রক্ষা করেছে। অনুরূপ, বান্দা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে শয়তান থেকে সুরক্ষা পায়।’ [আহমদ : ২৭৯০]
জিকির মানুষের ইহকাল ও পরকালের মর্যাদা বৃদ্ধি করে : আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :—
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسير في طريق مكة، فمر على جبل يقال له جمدان، فقال : سيروا – هذا جمدان- سبق المفردون قال : وما المفردون، يا رسول الله؟ قال : الذاكرين الله كثيرا والذاكرات . رواه مسلم في صحيحه (4834)
মক্কার একটি রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটছিলেন। জুমদান নামক পাহাড় অতিক্রম করার সময় বললেন, তোমরা চল,—এটা জুমদান—মুফাররাদূন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিতরা এগিয়ে গেছে তিনি জিজ্ঞেস করলেন :—ইয়া রাসূলুল্লাহ মুফাররদূন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিত কারা ? জওয়াবে তিনি বললেন :—আল্লাহকে বেশি করে স্মরণকারী নারী-পুরুষ। [মুসলিম : ৪৮৩৪]
জিকিরের কারণে ইহকাল ও পরকালে জীবিকা বৃদ্ধি পায় : আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর কথা বিবৃত করে বলেন :—
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا . يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا . وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا . ﴿ نوح : 10-12﴾
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। [সূরা নূহ : ১০-১২]
উল্লেখ্য যে, ইস্তিগফার জিকিরের বিশেষ প্রকার হিসেবে বিবেচিত।
জিকির অন্তর দ্বারা হতে পারে, জিহবা দ্বারা হতে পারে, বা এক সঙ্গে উভয়টা দ্বারাও হতে পারে। এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, নীচে কিছু উল্লেখ করা হল :—
১. কোরআনে করিম পাঠ করা : এ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর নাজিলকৃত আল্লাহ তাআলার কালাম। আল্লাহর কালাম বিধায় সাধারণ জিকির-আজকারের চেয়ে কোরআন পাঠ করা উত্তম।
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :—
من قرأ حرفا من كتاب الله فله به حسنة، والحسنة بعشر أمثالها، لا أقول ( ألم ) حرف، ولكن ألف حرف، ولام حرف، وميم حرف . رواه الترمذي (2735)
‘যে কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষর পড়ল তার জন্য এর বিনিময়ে একটি নেকি অবধারিত। এবং তাকে একটি নেকির দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। আমি বলছি না আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, এবং লাম একটি অক্ষর, এবং মীম একটি অক্ষর। [তিরমিজি : ২৭৩৫]
২. মৌখিক জিকির : যেমন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর—ইত্যাদি পড়া, যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
৩. প্রার্থনা : এটা বিশেষ জিকির, কেননা এ-দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়।
৪. ইস্তিগফার করা : আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর কথা বিবৃত করে বলেন :—
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا . ﴿ نوح : 10﴾
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। [সূরা নূহ : ১০]
৫. অন্তর দিয়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা। এটা অন্যতম বড় জিকির। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآَيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ . الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ . ﴿آل عمران :190-191﴾
আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে—‘হে আমদের প্রতিপালক ! তুমি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে অগ্নি-শাস্তি হতে রক্ষা কর। [সূরা আলে-ইমরান : ১৯০,১৯১]
৫. রকমারি এবাদতের অনুশীলন করা : যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান, পিতা-মাতার সাথে অমায়িক আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, জ্ঞানার্জন ও অপরকে শিক্ষাদান—ইত্যাদি। কেননা, সৎকর্মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي . ﴿ طه : 14﴾
এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। [সূরা তা-হা : ১৪]
১. কোরআনে করিম পাঠ করা : এ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর নাজিলকৃত আল্লাহ তাআলার কালাম। আল্লাহর কালাম বিধায় সাধারণ জিকির-আজকারের চেয়ে কোরআন পাঠ করা উত্তম।
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :—
من قرأ حرفا من كتاب الله فله به حسنة، والحسنة بعشر أمثالها، لا أقول ( ألم ) حرف، ولكن ألف حرف، ولام حرف، وميم حرف . رواه الترمذي (2735)
‘যে কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষর পড়ল তার জন্য এর বিনিময়ে একটি নেকি অবধারিত। এবং তাকে একটি নেকির দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। আমি বলছি না আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, এবং লাম একটি অক্ষর, এবং মীম একটি অক্ষর। [তিরমিজি : ২৭৩৫]
২. মৌখিক জিকির : যেমন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর—ইত্যাদি পড়া, যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
৩. প্রার্থনা : এটা বিশেষ জিকির, কেননা এ-দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়।
৪. ইস্তিগফার করা : আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর কথা বিবৃত করে বলেন :—
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا . ﴿ نوح : 10﴾
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। [সূরা নূহ : ১০]
৫. অন্তর দিয়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা। এটা অন্যতম বড় জিকির। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآَيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ . الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ . ﴿آل عمران :190-191﴾
আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে—‘হে আমদের প্রতিপালক ! তুমি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে অগ্নি-শাস্তি হতে রক্ষা কর। [সূরা আলে-ইমরান : ১৯০,১৯১]
৫. রকমারি এবাদতের অনুশীলন করা : যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান, পিতা-মাতার সাথে অমায়িক আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, জ্ঞানার্জন ও অপরকে শিক্ষাদান—ইত্যাদি। কেননা, সৎকর্মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي . ﴿ طه : 14﴾
এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। [সূরা তা-হা : ১৪]
জিকির দু ভাগে বিভক্ত :—
১. সাধারণ জিকির : যার কোন নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। বিশেষ কিছু সময় বা স্থান ব্যতীত যে কোন সময়ে বা স্থানে এ সব জিকির করার অবকাশ আছে।
২. বিশেষ জিকির : যা বিশেষ সময়, অবস্থা ও পাত্র অনুসারে করা হয়। নীচে এমন কিছু সময়, অবস্থা ও স্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল যার সাথে বিশেষ বিশেষ জিকিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সকাল-বিকাল : এর সময় হচ্ছে ফজর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত, আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার সময়।
ঘরে প্রবেশের সময়।
মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়।
অসুস্থতার সময়।
বিপদাপদ ও পেরেশানীর সময়।
সফরের সময়।
বৃষ্টি বর্ষণের সময়।
১. সাধারণ জিকির : যার কোন নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। বিশেষ কিছু সময় বা স্থান ব্যতীত যে কোন সময়ে বা স্থানে এ সব জিকির করার অবকাশ আছে।
২. বিশেষ জিকির : যা বিশেষ সময়, অবস্থা ও পাত্র অনুসারে করা হয়। নীচে এমন কিছু সময়, অবস্থা ও স্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল যার সাথে বিশেষ বিশেষ জিকিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সকাল-বিকাল : এর সময় হচ্ছে ফজর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত, আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার সময়।
ঘরে প্রবেশের সময়।
মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়।
অসুস্থতার সময়।
বিপদাপদ ও পেরেশানীর সময়।
সফরের সময়।
বৃষ্টি বর্ষণের সময়।
১. সাধারণ জিকির : সামুরা বিন জুনদব থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললাম এরশাদ করেছেন :—
أحب الكلام إلى الله أربع : سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، لا يضرك بأيهن بدأت . رواه مسلم (3985)
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা চারটি : সুবহানাল্লাহ, আল্লাহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর, যে কোন একটি দ্বারাই আরম্ভ করা যেতে পারে। [মুসলিম : ৩৯৮৫]
২. সকাল-বিকালের জিকির : আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন :—
من قال حين يصبح وحين يمسي : سبحان الله وبحمده مائة مرة، لم يأت أحد يوم القيامة بأفضل مما جاء به إلا أحد قال مثل ما قال أو زاد عليه . رواه مسلم في صحيحه (4858)
যে সকাল এবং বিকালে ‘সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহী’ একশত বার বলবে, যে এ-রকম বা এর অতিরিক্ত বলবে, কেয়ামত দিবসে এর চেয়ে উত্তম কেউ কিছু আনয়ন করতে পারবে না। [সহিহ মুসলিম : ৪৮৫৮]
৩. বিপদের মুহূর্তে জিকির : আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় বলতেন :—
لا إله إلا الله العظيم الحليم، لا إله إلا الله رب العرش العظيم، لا إله إلا الله رب السموات ورب الأرض ورب العرش الكريم . رواه مسلم (4909)
আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি সুমহান, সহিষ্ণুবান, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই যিনি মহান আরশের রব, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই যিনি আকাশসমূহের রব, এবং ভূমির রব এবং সম্মানিত আরশের রব। [সহিহ মুসলিম : ৪৯০৯]
মোদ্দা কথা, বর্ণিত ফজিলত ও প্রতিশ্রুত পুরস্কার হাসিল করার অভীষ্ট লক্ষ্যে উল্লেখিত ও অনুল্লেখিত প্রয়োজনীয় জিকিরসমূহ মুখস্থ করে নিয়মিত পড়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিত।
أحب الكلام إلى الله أربع : سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، لا يضرك بأيهن بدأت . رواه مسلم (3985)
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা চারটি : সুবহানাল্লাহ, আল্লাহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর, যে কোন একটি দ্বারাই আরম্ভ করা যেতে পারে। [মুসলিম : ৩৯৮৫]
২. সকাল-বিকালের জিকির : আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন :—
من قال حين يصبح وحين يمسي : سبحان الله وبحمده مائة مرة، لم يأت أحد يوم القيامة بأفضل مما جاء به إلا أحد قال مثل ما قال أو زاد عليه . رواه مسلم في صحيحه (4858)
যে সকাল এবং বিকালে ‘সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহী’ একশত বার বলবে, যে এ-রকম বা এর অতিরিক্ত বলবে, কেয়ামত দিবসে এর চেয়ে উত্তম কেউ কিছু আনয়ন করতে পারবে না। [সহিহ মুসলিম : ৪৮৫৮]
৩. বিপদের মুহূর্তে জিকির : আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় বলতেন :—
لا إله إلا الله العظيم الحليم، لا إله إلا الله رب العرش العظيم، لا إله إلا الله رب السموات ورب الأرض ورب العرش الكريم . رواه مسلم (4909)
আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি সুমহান, সহিষ্ণুবান, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই যিনি মহান আরশের রব, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই যিনি আকাশসমূহের রব, এবং ভূমির রব এবং সম্মানিত আরশের রব। [সহিহ মুসলিম : ৪৯০৯]
মোদ্দা কথা, বর্ণিত ফজিলত ও প্রতিশ্রুত পুরস্কার হাসিল করার অভীষ্ট লক্ষ্যে উল্লেখিত ও অনুল্লেখিত প্রয়োজনীয় জিকিরসমূহ মুখস্থ করে নিয়মিত পড়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিত।
আভিধানিক অর্থে দোয়া—
দোয়া শব্দের অর্থ আহবান, প্রার্থনা। শরিয়তের পরিভাষায় দোয়া বলে কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধকল্পে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। দোয়া শব্দ পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
১- এবাদত :
মহান আল্লাহ বলেন :—
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ . ﴿المؤمن : 60﴾
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব, যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা অচিরে জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। [আল-মু‘মিন : ৬০]
২ -সাহায্য প্রার্থনা :
আল্লাহ বলেন :—
وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ . ﴿البقرة : 23﴾
যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সব সাহায্যকারীদেরকে আহবান কর।’ [আল-বাকারা : ২৩]
আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া এবং তার নৈকট্য লাভ করা ব্যতীত মানুষের কোন উপায় নেই, আর দোয়া হল আল্লাহর নৈকট্যলাভের বিশেষ বাহন ও মাধ্যম। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, প্রত্যাশা ও সাহায্য কামনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নিকটবর্তী হয়। এ দ্বারা মানুষ তার প্রতিপালকের এবাদত করে, উদ্দেশ্যে উপনীত হয়, তার সন্তুষ্টি লাভ করে।
দোয়া শব্দের অর্থ আহবান, প্রার্থনা। শরিয়তের পরিভাষায় দোয়া বলে কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধকল্পে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। দোয়া শব্দ পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
১- এবাদত :
মহান আল্লাহ বলেন :—
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ . ﴿المؤمن : 60﴾
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব, যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা অচিরে জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। [আল-মু‘মিন : ৬০]
২ -সাহায্য প্রার্থনা :
আল্লাহ বলেন :—
وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ . ﴿البقرة : 23﴾
যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সব সাহায্যকারীদেরকে আহবান কর।’ [আল-বাকারা : ২৩]
আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া এবং তার নৈকট্য লাভ করা ব্যতীত মানুষের কোন উপায় নেই, আর দোয়া হল আল্লাহর নৈকট্যলাভের বিশেষ বাহন ও মাধ্যম। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, প্রত্যাশা ও সাহায্য কামনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নিকটবর্তী হয়। এ দ্বারা মানুষ তার প্রতিপালকের এবাদত করে, উদ্দেশ্যে উপনীত হয়, তার সন্তুষ্টি লাভ করে।
দোয়াতে রয়েছে প্রভূত ফজিলত, মহা পুরস্কার, শুভ পরিণতি ও অনেক উপকার। নিম্নে তারই কিছু উল্লেখ করা হল।
(ক)-দোয়া এবাদত, দোয়াকারী ব্যক্তি দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ . فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ﴿السجدة :,16-17﴾
তাদের পাশর্ব শয্যা হতে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কী কী নয়ন প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে। [আস-সাজদা : ১৮]
(খ) দোয়াতে রয়েছে দোয়াকারী ব্যক্তির আবেদনের সাড়া, মহান আল্লাহ বলেন:—
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ . ﴿المؤمن :60﴾
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। [আল-মু‘মিনূন : ৬০] মহান আল্লাহ বলেন :—
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ . ﴿البقرة : 186﴾
আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে ; বস্ত্তত: আমি রয়েছি সন্নিকটে। [আল-বাকারা : ১৮৬]
(গ) দোয়াতে রয়েছে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য ও হীনতা-দীনতার প্রকাশ। মহান আল্লাহ বলেন :—
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ . وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا إِنَّ رَحْمَةَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ . ( الأعراف :55,56)
তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। [আল-আ‘রাফ :৫৫,৫৬]
(ঘ) দোয়া ইহকাল ও পরকালে দোয়াকারী ব্যক্তি থেকে অনিষ্ট রোধ করে ও পাপ মোচন করে।
(ক)-দোয়া এবাদত, দোয়াকারী ব্যক্তি দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ . فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ﴿السجدة :,16-17﴾
তাদের পাশর্ব শয্যা হতে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কী কী নয়ন প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে। [আস-সাজদা : ১৮]
(খ) দোয়াতে রয়েছে দোয়াকারী ব্যক্তির আবেদনের সাড়া, মহান আল্লাহ বলেন:—
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ . ﴿المؤمن :60﴾
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। [আল-মু‘মিনূন : ৬০] মহান আল্লাহ বলেন :—
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ . ﴿البقرة : 186﴾
আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে ; বস্ত্তত: আমি রয়েছি সন্নিকটে। [আল-বাকারা : ১৮৬]
(গ) দোয়াতে রয়েছে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য ও হীনতা-দীনতার প্রকাশ। মহান আল্লাহ বলেন :—
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ . وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا إِنَّ رَحْمَةَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ . ( الأعراف :55,56)
তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। [আল-আ‘রাফ :৫৫,৫৬]
(ঘ) দোয়া ইহকাল ও পরকালে দোয়াকারী ব্যক্তি থেকে অনিষ্ট রোধ করে ও পাপ মোচন করে।
মোমিনের প্রত্যাশা মহান আল্লাহ যেন তার দোয়া কবুল করেন। এবং তার মনের আশা পূরণ করেন। কিন্তু দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল।
১ - الإخلاص এখলাস : আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত এটি, মহান আল্লাহ বলেন:—
هو الحي لا إله إلا هو فادعوه مخلصين له الدين . ﴿المؤمن :66﴾
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব, তাকে ডাক খাঁটি এবাদতের মাধ্যমে। [আল-মু‘মিন : ৬৬]
সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল আল্লাহর জন্য এবাদতকে নিরঙ্কুশ করার নাম এখলাস। সুতরাং, এবাদত ও দোয়ায় মহান আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুকে উদ্দেশ্যে করা যাবে না। এর বিপরীত কর্মপন্থা যে অবলম্বন করল, সে অবশ্যই শিরক করল। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ ﴿المؤمنون : 117﴾
যে আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যার স্বপক্ষে কোন দলিল তার কাছে নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না। [আল-মু‘মিন : ১১৭]
২- দোয়াকারী ব্যক্তির সম্পদ হালাল হওয়া :—
কেননা, হারাম সম্পদ হচ্ছে দোয়া কবুলের পথে অন্তরায় ও বাধা।
ইমাম মুসলিম রহ. তার সহিহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :—
أيها الناس إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا، , وإن الله أمر المؤمنين بما أمر به المسلمين، , فقال : يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ . ﴿المؤمنون :51﴾ وقال : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ . ﴿البقرة :172﴾ ثم ذكر الرجل يطيل السفر أشعث أغبر يمد يده إلى السماء يارب يارب ومطعمه حرام ومشربه حرام . وغذي بالحرام فأنى يستجاب له . مسلم (1686)
হে মানুষ সকল ! নিশ্চয় আল্লাহ পুত:পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কবুল করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ রাসূলদের যে আদেশ দিয়েছেন তা মোমিনদের জন্যও আদেশরূপে বিবেচ্য। আল্লাহ বলেন :—‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হতে আহার কর এবং সৎকাজ কর ; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। [আল-মু‘মিনূন : ৫১] এবং আল্লাহ আরো বলেন—‘হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পাক পবিত্র বস্ত্ত সামগ্রী আহার হিসেবে ব্যবহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুজি হিসেবে দান করেছি।’ [আল-বাকারা : ১৭২]
অত:পর উস্ক-খুস্ক ধূলিময় অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, যে স্বীয় হস্ত-দ্বয় আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, হে প্রভু ! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে ? [মুসলিম : ১৬৮৬]
(৩) দোয়ায় সীমা-লঙ্ঘন না করা।
দোয়ার সময় বান্দা বৈধ সীমারেখায় বিচরণ করবে, পাপের কাজ সিদ্ধ করা বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, অথবা সামান্য ভুলের শাস্তি স্বরূপ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ধ্বংসের জন্য দোয়া করবে না। মহান আল্লাহ বলেন :—
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ . ﴿الأعراف : 55﴾
‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ [আল-আরাফ : ৫৫]
১ - الإخلاص এখলাস : আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত এটি, মহান আল্লাহ বলেন:—
هو الحي لا إله إلا هو فادعوه مخلصين له الدين . ﴿المؤمن :66﴾
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব, তাকে ডাক খাঁটি এবাদতের মাধ্যমে। [আল-মু‘মিন : ৬৬]
সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল আল্লাহর জন্য এবাদতকে নিরঙ্কুশ করার নাম এখলাস। সুতরাং, এবাদত ও দোয়ায় মহান আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুকে উদ্দেশ্যে করা যাবে না। এর বিপরীত কর্মপন্থা যে অবলম্বন করল, সে অবশ্যই শিরক করল। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ ﴿المؤمنون : 117﴾
যে আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যার স্বপক্ষে কোন দলিল তার কাছে নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না। [আল-মু‘মিন : ১১৭]
২- দোয়াকারী ব্যক্তির সম্পদ হালাল হওয়া :—
কেননা, হারাম সম্পদ হচ্ছে দোয়া কবুলের পথে অন্তরায় ও বাধা।
ইমাম মুসলিম রহ. তার সহিহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :—
أيها الناس إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا، , وإن الله أمر المؤمنين بما أمر به المسلمين، , فقال : يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ . ﴿المؤمنون :51﴾ وقال : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ . ﴿البقرة :172﴾ ثم ذكر الرجل يطيل السفر أشعث أغبر يمد يده إلى السماء يارب يارب ومطعمه حرام ومشربه حرام . وغذي بالحرام فأنى يستجاب له . مسلم (1686)
হে মানুষ সকল ! নিশ্চয় আল্লাহ পুত:পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কবুল করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ রাসূলদের যে আদেশ দিয়েছেন তা মোমিনদের জন্যও আদেশরূপে বিবেচ্য। আল্লাহ বলেন :—‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হতে আহার কর এবং সৎকাজ কর ; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। [আল-মু‘মিনূন : ৫১] এবং আল্লাহ আরো বলেন—‘হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পাক পবিত্র বস্ত্ত সামগ্রী আহার হিসেবে ব্যবহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুজি হিসেবে দান করেছি।’ [আল-বাকারা : ১৭২]
অত:পর উস্ক-খুস্ক ধূলিময় অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, যে স্বীয় হস্ত-দ্বয় আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, হে প্রভু ! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে ? [মুসলিম : ১৬৮৬]
(৩) দোয়ায় সীমা-লঙ্ঘন না করা।
দোয়ার সময় বান্দা বৈধ সীমারেখায় বিচরণ করবে, পাপের কাজ সিদ্ধ করা বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, অথবা সামান্য ভুলের শাস্তি স্বরূপ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ধ্বংসের জন্য দোয়া করবে না। মহান আল্লাহ বলেন :—
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ . ﴿الأعراف : 55﴾
‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ [আল-আরাফ : ৫৫]
উপরের আলোচনায় আমরা দোয়া কবুলের শর্ত সম্পর্কে জানতে পেরেছি, নীচে দোয়া কবুলের অন্তরায় সমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ কর হল।
আল্লাহর সাথে শিরক করা।
দোয়াতে এখলাস না থাকা।
অবৈধ কারবার করা, ভেজাল দেয়া।
সুদ খাওয়া।
অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা।
ঘুস নেওয়া।
দোয়াতে সীমা-লঙ্ঘন করা।
অবৈধ বা বেদআতী দোয়া করা যথা—মৃত বা কবরস্থ ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ করে দোয়া করা।
উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয় স্বতন্ত্রভাবে দোয়া কবুলের অন্তরায়। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের উপর অবশ্য কর্তব্য হল, সে যেন দোয়া কবুলের যে কোন অন্তরায় থেকে নিজেকে দূরে রাখে।
আল্লাহর সাথে শিরক করা।
দোয়াতে এখলাস না থাকা।
অবৈধ কারবার করা, ভেজাল দেয়া।
সুদ খাওয়া।
অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা।
ঘুস নেওয়া।
দোয়াতে সীমা-লঙ্ঘন করা।
অবৈধ বা বেদআতী দোয়া করা যথা—মৃত বা কবরস্থ ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ করে দোয়া করা।
উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয় স্বতন্ত্রভাবে দোয়া কবুলের অন্তরায়। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের উপর অবশ্য কর্তব্য হল, সে যেন দোয়া কবুলের যে কোন অন্তরায় থেকে নিজেকে দূরে রাখে।
১-বিনয়-বিনম্রতা ও একাগ্রতার সাথে দোয়া করা।
২-সংকল্প ও আকুতির সাথে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন :—
إذا دعا أحدكم فليعزم المسألة ولا يقولن : اللهم إن شئت فأعطني و فإنه لا مستكره له . رواه البخاري (5863)
অথাৎ—যখন তোমরা দোয়া করবে, তখন প্রার্থিত বিষয়টি লাভের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে, এবং বলবে না—হে আল্লাহ ! যদি তুমি চাও আমাকে প্রদান কর, কেননা, আল্লাহকে বাধ্যকারী কেউ নেই।’ [বোখারি : ৫৮৬৩]
৩-দোয়াকারী যেন উত্তম সময় ও স্থান বেছে নেয়, যেমন :—আরাফা দিবস, রমজান মাস. জুমার দিন, কদরের রাত, প্রত্যেক রাতের শেষাংশ, সালাতে সেজদারত অবস্থা, আজান একামতের মধ্যবর্তী সময়, সফরকালীন সময়, সিয়ামের সময় অসহায়ত্বের সময়, হজের সময়, বিশেষভাবে তাওয়াফ-সায়ীর সময় এবং জামরাতে পাথর নিক্ষেপের পর। এছাড়া, বিশেষ বিশেষ সময় ও স্থান সমূহে।
৪-পবিত্র অবস্থায় কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করা :—দোয়ার শুরু এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সালাত ও সালাম পেশ করা।
২-সংকল্প ও আকুতির সাথে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন :—
إذا دعا أحدكم فليعزم المسألة ولا يقولن : اللهم إن شئت فأعطني و فإنه لا مستكره له . رواه البخاري (5863)
অথাৎ—যখন তোমরা দোয়া করবে, তখন প্রার্থিত বিষয়টি লাভের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে, এবং বলবে না—হে আল্লাহ ! যদি তুমি চাও আমাকে প্রদান কর, কেননা, আল্লাহকে বাধ্যকারী কেউ নেই।’ [বোখারি : ৫৮৬৩]
৩-দোয়াকারী যেন উত্তম সময় ও স্থান বেছে নেয়, যেমন :—আরাফা দিবস, রমজান মাস. জুমার দিন, কদরের রাত, প্রত্যেক রাতের শেষাংশ, সালাতে সেজদারত অবস্থা, আজান একামতের মধ্যবর্তী সময়, সফরকালীন সময়, সিয়ামের সময় অসহায়ত্বের সময়, হজের সময়, বিশেষভাবে তাওয়াফ-সায়ীর সময় এবং জামরাতে পাথর নিক্ষেপের পর। এছাড়া, বিশেষ বিশেষ সময় ও স্থান সমূহে।
৪-পবিত্র অবস্থায় কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করা :—দোয়ার শুরু এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সালাত ও সালাম পেশ করা।
মানবদেহে আত্মা সর্বোচ্চ ও শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী। আত্মার জীবনে মানুষ জীবিত থাকে এবং তার মৃত্যুতে মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আত্মার এই শ্রেষ্ঠত্ব ও সুউচ্চ মর্যাদার কারণেই তার পর্যালোচনা ও অবস্থান বর্ণনা প্রসঙ্গে কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট ও বিশদ আলোচনা এসেছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَذِكْرَى لِمَنْ كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ ﴿ق : 37﴾
‘এতে সে ব্যক্তির জন্যে (প্রচুর) শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যার মন রয়েছে, অথবা যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে (সে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ) শুনতে চায়। [ক্বাফ : ৩৭]
فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَكِنْ تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ ﴿الحج : 46﴾
‘আসলে (অবোধ নির্বোধের) চোখ তো কখনো অন্ধ হয়ে যায় না, অন্ধ হয়ে যায় অন্তর সমূহ, যা মনের ভেতর থাকে।’ [আল-হাজ্জ : ৪৬] এবং আল্লাহ তাআলার পবিত্র বাণী—
وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ ﴿الأحزاب : 5﴾
‘এ ব্যাপারে যদি তোমাদের কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তাতে তোমাদের জন্যে কোন গুনাহ নেই। তবে যদি কেউ ইচ্ছা করে এমন কিছু করে (তাহলে সে গুনাহগার হবে)।’ [আল-আহযাব : ৫] এবং নোমান ইবনে বশীর রা.-এর বর্ণনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
... ألا وإن في الجسد مضغة، إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب .
জেনে রেখো নিশ্চয়ই দেহে একটি মাংসপিন্ড রয়েছে, সে মাংসপিন্ড পরিশুদ্ধ হলে গোটা দেহ পরিশুদ্ধ হবে, আর তা বিনষ্ট হলে গোটা দেহ বিনষ্ট হয়ে যাবে, জেনে রেখো তাই হল কলব বা অন্তকরণ এবং কলব কোন এক অবস্থায় দৃঢ় ও স্থায়ী থাকে না। কবি বলেন—
والرأي يصرف للإنسان أطواراما سمي القلب إلا من تقلبه
‘কলব’ নামকরণ হয়েছে তার সতত পরিবর্তনের কারণে.........।
এবং এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি বলতেন—
يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك .
‘হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী ! তুমি আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর অবিচল রেখো।’
তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা আপনার ও আপনার আনীত দ্বীনের উপর ঈমান এনেছি। অতএব আপনি কি আমাদের বিষয়ে ভয় করেন ? তিনি বললেন—
نعم، إن القلوب بين إصبعين من أصابع الله يقلبها كيف يشاء .
হ্যাঁ, আল্লাহর আঙুল সমূহের দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তী স্থানে হৃদয় স্থাপিত, তিনি যেমন ইচ্ছা করেন তাকে পরিবর্তন করেন। আর যেহেতু ‘কলব’ শব্দটি তাকাল্লুব অর্থাৎ পরিবর্তন শব্দ ধাতু থেকে উদ্ভূত তাই মুসলিমের জন্য এই বিধান আরোপিত হয়েছে যে, সে আল্লাহর নিকট তার হৃদয়কে অবিচল রাখার দোয়া করবে।
আল্লাহ তাআলা তার জ্ঞানবোধ সম্পন্ন বান্দাদের দোয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করে বলেন—
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا . ﴿آل عمران : 8﴾
‘হে আমাদের প্রভু ! আমাদের অন্ত:করণ সমূহকে হেদায়াত দেওয়ার পর তা বিভ্রান্ত ও পথ-চ্যুত করো না। [আল ইমরান : ৮] এমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দোয়া ছিল—
اللهم مصرف القلوب، صرف قلوبنا على طاعتك .
হে অন্তকরণ সমূহকে নিয়ন্ত্রণকারী ! আপনি আমাদের অন্তর সমূহকে আপনার আনুগত্যের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত করুন।’ অনুরূপভাবে তিন এ দোয়াও করতেন—
... وأسألك قلبا سليما .
...আপনার নিকট সুস্থ ও নিরাপদ অন্তর কামনা করি।
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَذِكْرَى لِمَنْ كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ ﴿ق : 37﴾
‘এতে সে ব্যক্তির জন্যে (প্রচুর) শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যার মন রয়েছে, অথবা যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে (সে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ) শুনতে চায়। [ক্বাফ : ৩৭]
فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَكِنْ تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ ﴿الحج : 46﴾
‘আসলে (অবোধ নির্বোধের) চোখ তো কখনো অন্ধ হয়ে যায় না, অন্ধ হয়ে যায় অন্তর সমূহ, যা মনের ভেতর থাকে।’ [আল-হাজ্জ : ৪৬] এবং আল্লাহ তাআলার পবিত্র বাণী—
وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ ﴿الأحزاب : 5﴾
‘এ ব্যাপারে যদি তোমাদের কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তাতে তোমাদের জন্যে কোন গুনাহ নেই। তবে যদি কেউ ইচ্ছা করে এমন কিছু করে (তাহলে সে গুনাহগার হবে)।’ [আল-আহযাব : ৫] এবং নোমান ইবনে বশীর রা.-এর বর্ণনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
... ألا وإن في الجسد مضغة، إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب .
জেনে রেখো নিশ্চয়ই দেহে একটি মাংসপিন্ড রয়েছে, সে মাংসপিন্ড পরিশুদ্ধ হলে গোটা দেহ পরিশুদ্ধ হবে, আর তা বিনষ্ট হলে গোটা দেহ বিনষ্ট হয়ে যাবে, জেনে রেখো তাই হল কলব বা অন্তকরণ এবং কলব কোন এক অবস্থায় দৃঢ় ও স্থায়ী থাকে না। কবি বলেন—
والرأي يصرف للإنسان أطواراما سمي القلب إلا من تقلبه
‘কলব’ নামকরণ হয়েছে তার সতত পরিবর্তনের কারণে.........।
এবং এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি বলতেন—
يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك .
‘হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী ! তুমি আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর অবিচল রেখো।’
তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা আপনার ও আপনার আনীত দ্বীনের উপর ঈমান এনেছি। অতএব আপনি কি আমাদের বিষয়ে ভয় করেন ? তিনি বললেন—
نعم، إن القلوب بين إصبعين من أصابع الله يقلبها كيف يشاء .
হ্যাঁ, আল্লাহর আঙুল সমূহের দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তী স্থানে হৃদয় স্থাপিত, তিনি যেমন ইচ্ছা করেন তাকে পরিবর্তন করেন। আর যেহেতু ‘কলব’ শব্দটি তাকাল্লুব অর্থাৎ পরিবর্তন শব্দ ধাতু থেকে উদ্ভূত তাই মুসলিমের জন্য এই বিধান আরোপিত হয়েছে যে, সে আল্লাহর নিকট তার হৃদয়কে অবিচল রাখার দোয়া করবে।
আল্লাহ তাআলা তার জ্ঞানবোধ সম্পন্ন বান্দাদের দোয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করে বলেন—
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا . ﴿آل عمران : 8﴾
‘হে আমাদের প্রভু ! আমাদের অন্ত:করণ সমূহকে হেদায়াত দেওয়ার পর তা বিভ্রান্ত ও পথ-চ্যুত করো না। [আল ইমরান : ৮] এমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দোয়া ছিল—
اللهم مصرف القلوب، صرف قلوبنا على طاعتك .
হে অন্তকরণ সমূহকে নিয়ন্ত্রণকারী ! আপনি আমাদের অন্তর সমূহকে আপনার আনুগত্যের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত করুন।’ অনুরূপভাবে তিন এ দোয়াও করতেন—
... وأسألك قلبا سليما .
...আপনার নিকট সুস্থ ও নিরাপদ অন্তর কামনা করি।
(১) সুস্থ অন্তর : আর তাহল ঐ প্রবৃত্তি থেকে নিরাপদ যা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের বিরুদ্ধাচরণ করে ; এবং প্রত্যেক ঐ সাদৃশ্য থেকে মুক্ত যা তার খবরের সঙ্গে বৈপরীত্য রাখে। মূলত: সে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খবরকে শর্তহীন আনুগত্যে গ্রহণ করবে। উপরন্তু প্রবৃত্তি ও নিজস্ব মতামতের ভিত্তিকে সে খবরের সঙ্গে কোন রকম বিরোধ সৃষ্টি করবে না। বেদআত ও ভ্রান্তিপন্থীরা যেমন করে থাকে এবং কেয়ামতের দিনে একমাত্র এই সুস্থ অন্তরের অধিকারী ছাড়া আর কারো মুক্তি নেই। ইবরাহীম আ.-এর দোয়া বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা বলেন—
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ . إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ . ﴿الشورى : 89﴾
‘সে দিন সম্পদ ও সন্তান কোন উপকারে আসবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।’ [আশ শুয়ারা : ৮৮-৮৯]
(২) মৃত অন্তর : তা সুস্থের বিপরীত। তা ঐ অন্তর যে তার প্রভুর পরিচয় জানে না এবং তার এবাদত করে না ; বরং সে তার প্রবৃত্তি ও চাহিদাগুলোর অনুসরণ করে। এবং তার প্রভুর প্রত্যাশার বিষয়ে সে নেহায়েত উদাসীন থাকে।
অতএব, এই প্রকারের অন্তর থেকে চূড়ান্ত ভাবে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। এবং এই অন্তর বিশিষ্ট লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা ও উঠা-বসা বর্জনীয়। কেননা তার সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা বিষক্রিয়া তুল্য, এবং তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরা করা ধ্বংসের নামান্তর।
(৩) রুগ্ণ অন্তর : এমন অন্তর যার জীবন রয়েছে, এবং তা অসুস্থ, সুতরাং তাতে আল্লাহর মুহববত, ভালোবাসা এবং তার প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস থাকবে। এবং পাশাপাশি তাতে বিকৃত চাহিদার প্রতি অনুরাগ ও তা প্রাধান্য দেওয়া ও অর্জন করার প্রতি লোভ, আকাঙ্ক্ষা থাকবে।
এমতাবস্থায় যখন তার রোগ বৃদ্ধি পাবে তা মৃত অন্তরের সঙ্গে পরিগণিত হবে। পক্ষান্তরে যখন তার সুস্থতা বৃদ্ধি পাবে তা সুস্থ অন্তর হিসেবে গণ্য হবে। প্রকৃত পক্ষে অন্তরসমূহ বিভিন্ন পরীক্ষা ও দুর্যোগের শিকার হয়। হুযাইফা রা.-এর বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
تعرض الفتن على القلوب كالحصير عودا عودا، فأي قلب أشربها نكت فيه نكتة سوداء، وأي قلب أنكرها نكت فيه نكتة بيضاء، حتى تصير القلوب على قلبين : على أبيض مثل الصفا، فلا تضره فتنة مادامت السموات والأرض، والآخر أسود مربادا كالكوز مجخيا، لا يعرف معروفا، ولا ينكر منكرا إلا ما أشرب من هواه .
‘চাটাইয়ের ভাজের ন্যায় ফেতনা সমূহ অন্তরের কাছে উপস্থাপিত করা হয়। অত:পর যে অন্তর ফেতনাকে গলধ:করণ করে, তার মধ্যে একটি কালো বিন্দু অঙ্কিত হয়। আর যে হৃদয় ফেতনাকে অস্বীকার করে, তার মধ্যে একটি শুভ্র বিন্দু অঙ্কিত হয়, এভাবে হৃদয়সমূহ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি স্বচ্ছ পরিষ্কার হৃদয়। আকাশ ও পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকা অবধি কোন ফেতনা তাকে ক্ষতি গ্রস্ত করতে পারবে না। দ্বিতীয়টি কৃষ্ণ বর্ণ। তা কোনা ভাল চিনে না এবং কোন অপছন্দনীয় বস্ত্তকে অস্বীকার করে না।
يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ . إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ . ﴿الشورى : 89﴾
‘সে দিন সম্পদ ও সন্তান কোন উপকারে আসবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।’ [আশ শুয়ারা : ৮৮-৮৯]
(২) মৃত অন্তর : তা সুস্থের বিপরীত। তা ঐ অন্তর যে তার প্রভুর পরিচয় জানে না এবং তার এবাদত করে না ; বরং সে তার প্রবৃত্তি ও চাহিদাগুলোর অনুসরণ করে। এবং তার প্রভুর প্রত্যাশার বিষয়ে সে নেহায়েত উদাসীন থাকে।
অতএব, এই প্রকারের অন্তর থেকে চূড়ান্ত ভাবে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। এবং এই অন্তর বিশিষ্ট লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা ও উঠা-বসা বর্জনীয়। কেননা তার সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা বিষক্রিয়া তুল্য, এবং তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরা করা ধ্বংসের নামান্তর।
(৩) রুগ্ণ অন্তর : এমন অন্তর যার জীবন রয়েছে, এবং তা অসুস্থ, সুতরাং তাতে আল্লাহর মুহববত, ভালোবাসা এবং তার প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস থাকবে। এবং পাশাপাশি তাতে বিকৃত চাহিদার প্রতি অনুরাগ ও তা প্রাধান্য দেওয়া ও অর্জন করার প্রতি লোভ, আকাঙ্ক্ষা থাকবে।
এমতাবস্থায় যখন তার রোগ বৃদ্ধি পাবে তা মৃত অন্তরের সঙ্গে পরিগণিত হবে। পক্ষান্তরে যখন তার সুস্থতা বৃদ্ধি পাবে তা সুস্থ অন্তর হিসেবে গণ্য হবে। প্রকৃত পক্ষে অন্তরসমূহ বিভিন্ন পরীক্ষা ও দুর্যোগের শিকার হয়। হুযাইফা রা.-এর বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
تعرض الفتن على القلوب كالحصير عودا عودا، فأي قلب أشربها نكت فيه نكتة سوداء، وأي قلب أنكرها نكت فيه نكتة بيضاء، حتى تصير القلوب على قلبين : على أبيض مثل الصفا، فلا تضره فتنة مادامت السموات والأرض، والآخر أسود مربادا كالكوز مجخيا، لا يعرف معروفا، ولا ينكر منكرا إلا ما أشرب من هواه .
‘চাটাইয়ের ভাজের ন্যায় ফেতনা সমূহ অন্তরের কাছে উপস্থাপিত করা হয়। অত:পর যে অন্তর ফেতনাকে গলধ:করণ করে, তার মধ্যে একটি কালো বিন্দু অঙ্কিত হয়। আর যে হৃদয় ফেতনাকে অস্বীকার করে, তার মধ্যে একটি শুভ্র বিন্দু অঙ্কিত হয়, এভাবে হৃদয়সমূহ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি স্বচ্ছ পরিষ্কার হৃদয়। আকাশ ও পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকা অবধি কোন ফেতনা তাকে ক্ষতি গ্রস্ত করতে পারবে না। দ্বিতীয়টি কৃষ্ণ বর্ণ। তা কোনা ভাল চিনে না এবং কোন অপছন্দনীয় বস্ত্তকে অস্বীকার করে না।
যথা (এক) সন্দেহপূর্ণ ব্যাধি : এটাই হল কঠিনতম ব্যাধি। সকল ভ্রান্ত বিশ্বাস এ ব্যাধির অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ কঠিন ব্যাধি হল শিরক। নেফাক ও বেদআত। আল্লাহ তাআলা বলেন—
فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا . ﴿البقرة : 10﴾
‘তাদের অন্তর সমূহে রয়েছে ব্যাধি, অত:পর আল্লাহ তাদের ব্যাধিকে অধিক বাড়িয়ে দিয়েছেন। [বাকারা : ১০]
সন্দেহ ও সংশয়পূর্ণ বিষয় থেকে বেঁচে থাকার সঠিক পথ হল আল্লাহর কিতাব ও সুন্নতে নববীকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করা। এবং যে সব বিষয়ে পূর্বসূরি সৎকর্মশীলগণ বিরত থেকেছেন সেগুলোতে বিরত থাকা।
(দুই) প্রবৃত্তিগত ব্যাধি : এ ব্যাধির মধ্যে প্রত্যেক ঐ কাজ অন্তর্ভুক্ত যা বান্দা জ্ঞাতসারে করে এবং এ বিশ্বাস পোষণ করে যে এই কাজ সত্যের পরিপন্থী। এর উদাহরণ হল হিংসা, কার্পণ্য, অবৈধ যৌনাকাঙ্ক্ষা, নিষিদ্ধ দৃষ্টি দান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا . ﴿الأحزاب : 32﴾
‘তোমরা কথা বলতে বিনম্র হয়ো না, তবে যার হৃদয়ে ব্যাধি রয়েছে সে লালায়িত হবে।’ [আল-আহযাব : ৩২] অন্যায় চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা থেকে বেঁচে থাকার সঠিক পদ্ধতি হল আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশিত বিষয়কে গভীরভাবে আঁকড়ে থাকা এবং আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অননুমোদিত বিষয় থেকে যথাযথ বেঁচে থাকা।
فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا . ﴿البقرة : 10﴾
‘তাদের অন্তর সমূহে রয়েছে ব্যাধি, অত:পর আল্লাহ তাদের ব্যাধিকে অধিক বাড়িয়ে দিয়েছেন। [বাকারা : ১০]
সন্দেহ ও সংশয়পূর্ণ বিষয় থেকে বেঁচে থাকার সঠিক পথ হল আল্লাহর কিতাব ও সুন্নতে নববীকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করা। এবং যে সব বিষয়ে পূর্বসূরি সৎকর্মশীলগণ বিরত থেকেছেন সেগুলোতে বিরত থাকা।
(দুই) প্রবৃত্তিগত ব্যাধি : এ ব্যাধির মধ্যে প্রত্যেক ঐ কাজ অন্তর্ভুক্ত যা বান্দা জ্ঞাতসারে করে এবং এ বিশ্বাস পোষণ করে যে এই কাজ সত্যের পরিপন্থী। এর উদাহরণ হল হিংসা, কার্পণ্য, অবৈধ যৌনাকাঙ্ক্ষা, নিষিদ্ধ দৃষ্টি দান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا . ﴿الأحزاب : 32﴾
‘তোমরা কথা বলতে বিনম্র হয়ো না, তবে যার হৃদয়ে ব্যাধি রয়েছে সে লালায়িত হবে।’ [আল-আহযাব : ৩২] অন্যায় চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা থেকে বেঁচে থাকার সঠিক পদ্ধতি হল আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশিত বিষয়কে গভীরভাবে আঁকড়ে থাকা এবং আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অননুমোদিত বিষয় থেকে যথাযথ বেঁচে থাকা।
অন্তরকরণের প্রাণ সঞ্চারের বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতি রয়েছে। তন্মধ্যে—
(এক) আল্লাহর একত্ববাদ ও তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, এই বিশ্বাসকে নবায়ন করা এবং আল্লাহ কর্তৃক অপরিহার্য পালনীয় বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করা। এই বিষয়গুলোই অন্তরের প্রাণ ও তার প্রাচুর্যের মূল নিয়ামক শক্তি।
(দুই) আল্লাহর কাছে বিনয়াবনত হওয়া এবং তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা, তার ধ্যান ও স্মরণ ও দোয়ায় অধিকতর মনোযোগী হওয়া। তার সৃষ্টিকুল ও অসংখ্য নেয়ামত-রাজির ব্যাপারে গভীরে চিন্তা ও অনুসন্ধান করা। আল্লাহ তাআলা বলেন—
الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ . ﴿الرعد : 28﴾
‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের অন্তকরণসমূহ আল্লাহর স্মরণে আশ্বস্ত, নিরাপদ রয়েছে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর স্মরণে অন্তরসমূহ পরিতৃপ্তি লাভ করে। [আর-রা‘দ : ২৮]
(তিন) গভীরভাবে আল-কোরআনুল কারীম অধ্যয়ন করা। তার অর্থ সমূহ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা ও তাতে নির্দেশিত বিষয়াবলী পালনে সচেষ্ট হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন—
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآَنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا . ﴿محمد : 24﴾
‘তারা কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তাভাবনা কেন করে না, নাকি তাদের হৃদয়সমূহ তালাবদ্ধ।’ [মুহাম্মাদ : ২৪]
(চার) অন্যায় ও পাপাচার ত্যাগ করা। কেননা, পাপাচার অন্তরসমূহকে মৃত বানিয়ে দেয়, এই পাপাচার বর্জনের মাধ্যমেই অন্তরসমূহে প্রাণ সঞ্চারিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন—
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ . ﴿المطففين : 14﴾
‘কক্ষনো না, বরং তাদের কৃত কর্মের কারণে তাদের হৃদয় সমূহে মরিচা পড়ে গেছে। [আল-মুতাফফিফীন : ১৪] ইবনুল মুবারক রহ. বলেন—
وقد يرث الذل إدمانهارأيت الذنوب تميت القلوب
فخير لنفسك عصيانها . وترك الذنوب حياة القلوب
পাপাচারকে আমি অন্তরসমূহকে মৃত বানাতে দেখেছি। পাপাচারের আসক্তি অপছন্দ ও লাঞ্ছনার শিকার বানায়, আর পাপাচারকে ত্যাগ করার মধ্যেই রয়েছে অন্তর সমূহের প্রাণ-সঞ্জীবনী। অতএব পাপাচার ত্যাগ করার মাঝেই তোমার সমূহ মঙ্গল নিহিত।
(পাঁচ) শরিয়তের জ্ঞানার্জনের প্রতি অদম্য আগ্রহ। এবং শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কথাও কাজ সমূহ সংশোধনের প্রতি যথার্থ গুরুত্ব প্রদান।
(ছয়) আখেরাত বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান। আখেরাতের জন্য প্রস্ত্ততি, তার স্মরণ ও তার দিকে অগ্রসর হওয়া।
(সাত) আখেরাতের ব্যাপারে প্রচুর গুরুত্ব প্রদান করা, পরকালমুখী হওয়া, তার স্মরণ করা, তার জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা।
(আট) কবর ও অসুস্থ রোগীদের জেয়ারত করা, কেননা, তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়, এবং অন্তর সমূহকে জীবন দান করে ও মানুষের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত-রাজির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
(এক) আল্লাহর একত্ববাদ ও তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, এই বিশ্বাসকে নবায়ন করা এবং আল্লাহ কর্তৃক অপরিহার্য পালনীয় বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করা। এই বিষয়গুলোই অন্তরের প্রাণ ও তার প্রাচুর্যের মূল নিয়ামক শক্তি।
(দুই) আল্লাহর কাছে বিনয়াবনত হওয়া এবং তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা, তার ধ্যান ও স্মরণ ও দোয়ায় অধিকতর মনোযোগী হওয়া। তার সৃষ্টিকুল ও অসংখ্য নেয়ামত-রাজির ব্যাপারে গভীরে চিন্তা ও অনুসন্ধান করা। আল্লাহ তাআলা বলেন—
الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ . ﴿الرعد : 28﴾
‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের অন্তকরণসমূহ আল্লাহর স্মরণে আশ্বস্ত, নিরাপদ রয়েছে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর স্মরণে অন্তরসমূহ পরিতৃপ্তি লাভ করে। [আর-রা‘দ : ২৮]
(তিন) গভীরভাবে আল-কোরআনুল কারীম অধ্যয়ন করা। তার অর্থ সমূহ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা ও তাতে নির্দেশিত বিষয়াবলী পালনে সচেষ্ট হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন—
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآَنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا . ﴿محمد : 24﴾
‘তারা কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তাভাবনা কেন করে না, নাকি তাদের হৃদয়সমূহ তালাবদ্ধ।’ [মুহাম্মাদ : ২৪]
(চার) অন্যায় ও পাপাচার ত্যাগ করা। কেননা, পাপাচার অন্তরসমূহকে মৃত বানিয়ে দেয়, এই পাপাচার বর্জনের মাধ্যমেই অন্তরসমূহে প্রাণ সঞ্চারিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন—
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ . ﴿المطففين : 14﴾
‘কক্ষনো না, বরং তাদের কৃত কর্মের কারণে তাদের হৃদয় সমূহে মরিচা পড়ে গেছে। [আল-মুতাফফিফীন : ১৪] ইবনুল মুবারক রহ. বলেন—
وقد يرث الذل إدمانهارأيت الذنوب تميت القلوب
فخير لنفسك عصيانها . وترك الذنوب حياة القلوب
পাপাচারকে আমি অন্তরসমূহকে মৃত বানাতে দেখেছি। পাপাচারের আসক্তি অপছন্দ ও লাঞ্ছনার শিকার বানায়, আর পাপাচারকে ত্যাগ করার মধ্যেই রয়েছে অন্তর সমূহের প্রাণ-সঞ্জীবনী। অতএব পাপাচার ত্যাগ করার মাঝেই তোমার সমূহ মঙ্গল নিহিত।
(পাঁচ) শরিয়তের জ্ঞানার্জনের প্রতি অদম্য আগ্রহ। এবং শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কথাও কাজ সমূহ সংশোধনের প্রতি যথার্থ গুরুত্ব প্রদান।
(ছয়) আখেরাত বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান। আখেরাতের জন্য প্রস্ত্ততি, তার স্মরণ ও তার দিকে অগ্রসর হওয়া।
(সাত) আখেরাতের ব্যাপারে প্রচুর গুরুত্ব প্রদান করা, পরকালমুখী হওয়া, তার স্মরণ করা, তার জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা।
(আট) কবর ও অসুস্থ রোগীদের জেয়ারত করা, কেননা, তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়, এবং অন্তর সমূহকে জীবন দান করে ও মানুষের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত-রাজির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
এই বিষয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টির গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে পুনরালোচনা হচ্ছে। জ্ঞানের স্বল্পতা হেতু কেউ মনে করেন, অন্তরের শুদ্ধতাও বাহ্যিক কর্মের শুদ্ধতা। এতদুভয়ের মধ্যে দৃষ্টিগ্রাহ্য পার্থক্য রয়েছে। তারা প্রমাণ স্বরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী উদ্ধৃত করেন, ( التقوى هاهنا ) ‘তাকওয়া’ এখানে। এই বলে তিনি তিন বার আপন বক্ষের দিকে ইঙ্গিত করেন। এই ধারণাটি শরিয়তের মূল বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা। দুইটির যে কোন একটি কারণে এ ব্যাখ্যা অনুসরণ করা হয়। মূর্খতা প্রসূত অথবা প্রবৃত্তির তাড়না প্রসূত।
এ বিষয়ে আমাদের জানা আবশ্যক যে, ঈমান হল কথা, কাজ ও নিয়তের সমষ্টি। অভ্যন্তরীণ সংশোধন বাইরের সংশোধনে প্রভাব ফেলে। তাই যখনই ভিতরের সংশোধন বৃদ্ধি পাবে তখন তা বাইরের সংশোধন বৃদ্ধি করবে। এ দুয়ের মাঝে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী—
ألا وإن في الجسد مضغة، إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب .
‘জেনে রেখো ! নিশ্চয়ই দেহে একটি মাংসপিন্ড রয়েছে, যখন তা সংশোধিত হয়ে যাবে গোটা দেহ সংশোধিত হবে। আর যখন তা বিকার হয়ে যাবে গোটা দেহ বিনষ্ট হয়ে যাবে। জেনে রাখো তা হল অন্তর।’ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী—
إن الله لاينظر إلى صوركم وأموالكم، ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم .
‘নি:সন্দেহে আল্লাহ তোমাদের অবয়ব ও ধন-সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেন না বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্ম সমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। হাফেজ ইবনে রজব (আল্লাহ তার রহম করুন) বলেন—
ويلزم من صلاح حركات القلب صلاح حركات الجوارح .
‘অন্তরের নড়াচড়ার সংশোধন দ্বারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়ার সংশোধন অপরিহার্য।’ যখন কোন বান্দার হৃদয় সুসংহত হয় তাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপস্থিতি অনুমিত হয় না। ফলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ সুসংহত হয় এবং আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কোন সত্তার উদ্দেশে ও সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তা পরিচালিত হয় না।
এ বিষয়ে আমাদের জানা আবশ্যক যে, ঈমান হল কথা, কাজ ও নিয়তের সমষ্টি। অভ্যন্তরীণ সংশোধন বাইরের সংশোধনে প্রভাব ফেলে। তাই যখনই ভিতরের সংশোধন বৃদ্ধি পাবে তখন তা বাইরের সংশোধন বৃদ্ধি করবে। এ দুয়ের মাঝে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী—
ألا وإن في الجسد مضغة، إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب .
‘জেনে রেখো ! নিশ্চয়ই দেহে একটি মাংসপিন্ড রয়েছে, যখন তা সংশোধিত হয়ে যাবে গোটা দেহ সংশোধিত হবে। আর যখন তা বিকার হয়ে যাবে গোটা দেহ বিনষ্ট হয়ে যাবে। জেনে রাখো তা হল অন্তর।’ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী—
إن الله لاينظر إلى صوركم وأموالكم، ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم .
‘নি:সন্দেহে আল্লাহ তোমাদের অবয়ব ও ধন-সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেন না বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্ম সমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। হাফেজ ইবনে রজব (আল্লাহ তার রহম করুন) বলেন—
ويلزم من صلاح حركات القلب صلاح حركات الجوارح .
‘অন্তরের নড়াচড়ার সংশোধন দ্বারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়ার সংশোধন অপরিহার্য।’ যখন কোন বান্দার হৃদয় সুসংহত হয় তাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপস্থিতি অনুমিত হয় না। ফলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ সুসংহত হয় এবং আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কোন সত্তার উদ্দেশে ও সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তা পরিচালিত হয় না।
আল্লাহ তাআলা যখন তার নবী আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আদমকে সেজদা করতে ফেরেশতাদের হুকুম করেন। অত:পর সব ফেরেশতা সেজদায় অবনমিত হল একমাত্র ইবলিস ছাড়া, সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার প্রভুর নির্দেশ অমান্য করল, এবং অস্বীকার ও অহংকার প্রদর্শন করল। এবং সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—
قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِينَ . قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ . قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ . وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ . قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ . قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ . إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ . قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ . لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ . ﴿ص : 75-85﴾
‘আল্লাহ তাআলা বললেন, হে ইবলিস, তোমাকে কোন্ জিনিস তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি, তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি কোনো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কেউ? ‘সে বলল (হ্যাঁ), আমি তো তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন থেকে বানিয়েছ আর তাকে বানিয়েছ মাটি থেকে। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি এখান থেকে এখনই বের হয়ে যাও, কেননা তুমি হচ্ছ অভিশপ্ত। ‘তোমার ওপর আমার অভিশাপ থাকবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত।’ সে বলল, (হ্যাঁ) আমি বেরিয়ে যাচ্ছি, তবে হে আমার মালিক ! তুমি আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যে দিন সব মানুষকে (দ্বিতীয়বার) জীবিত করে তোলা হবে। ‘আল্লাহ তাআলা বললেন, (হ্যাঁ, যাও) যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত। ‘অবধারিত সময়টি আসার সে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত (তুমি থাকবে) সে বলল (হ্যাঁ) তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপদগামী করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া। আল্লাহ তাআলা বললেন, (এ হচ্ছে) চূড়ান্ত সত্য, আর আমি এ সত্য কথাটাই বলছি—‘তোমার ও তোমার অনুসারীদের সবাইকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই। [সূরা সোয়াদ : ৭৬৫-৮৫।]
প্রকৃতপক্ষে শয়তান শত্রুতা পোষণেরই উপযুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন—
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ الفاطر 6
‘শয়তান হচ্ছে তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো, সে তার দলবলদের এ জন্যেই আহবান করে যেন তারা তার আনুগত্য করে জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে।’ [ফাতের : ৬।]
মানুষের কাছে এ বিষয়টি অস্পষ্ট নয় যে, শয়তান মানুষের প্রত্যক্ষ দুশমন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই অল্প যারা শয়তানকে শত্রু জ্ঞান করে। মানুষ শয়তানকে শত্রু হিসেবে ততক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে না যাবৎ না সে শয়তানের মানুষকে সত্য থেকে বিভ্রান্ত করার সমূহ পথ ও পদ্ধতি থেকে মানুষকে ভ্রান্ত পথে নিক্ষিপ্ত করার কলাকৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হবে। এবং পাশাপাশি সে শয়তানের কূট-চাল থেকে মুক্তির উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত না হবে। আলোচ্য অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হবে।
قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِينَ . قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ . قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ . وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ . قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ . قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ . إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ . قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ . لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ . ﴿ص : 75-85﴾
‘আল্লাহ তাআলা বললেন, হে ইবলিস, তোমাকে কোন্ জিনিস তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি, তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি কোনো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কেউ? ‘সে বলল (হ্যাঁ), আমি তো তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন থেকে বানিয়েছ আর তাকে বানিয়েছ মাটি থেকে। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি এখান থেকে এখনই বের হয়ে যাও, কেননা তুমি হচ্ছ অভিশপ্ত। ‘তোমার ওপর আমার অভিশাপ থাকবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত।’ সে বলল, (হ্যাঁ) আমি বেরিয়ে যাচ্ছি, তবে হে আমার মালিক ! তুমি আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যে দিন সব মানুষকে (দ্বিতীয়বার) জীবিত করে তোলা হবে। ‘আল্লাহ তাআলা বললেন, (হ্যাঁ, যাও) যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত। ‘অবধারিত সময়টি আসার সে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত (তুমি থাকবে) সে বলল (হ্যাঁ) তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপদগামী করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া। আল্লাহ তাআলা বললেন, (এ হচ্ছে) চূড়ান্ত সত্য, আর আমি এ সত্য কথাটাই বলছি—‘তোমার ও তোমার অনুসারীদের সবাইকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই। [সূরা সোয়াদ : ৭৬৫-৮৫।]
প্রকৃতপক্ষে শয়তান শত্রুতা পোষণেরই উপযুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন—
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ الفاطر 6
‘শয়তান হচ্ছে তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো, সে তার দলবলদের এ জন্যেই আহবান করে যেন তারা তার আনুগত্য করে জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে।’ [ফাতের : ৬।]
মানুষের কাছে এ বিষয়টি অস্পষ্ট নয় যে, শয়তান মানুষের প্রত্যক্ষ দুশমন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই অল্প যারা শয়তানকে শত্রু জ্ঞান করে। মানুষ শয়তানকে শত্রু হিসেবে ততক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে না যাবৎ না সে শয়তানের মানুষকে সত্য থেকে বিভ্রান্ত করার সমূহ পথ ও পদ্ধতি থেকে মানুষকে ভ্রান্ত পথে নিক্ষিপ্ত করার কলাকৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হবে। এবং পাশাপাশি সে শয়তানের কূট-চাল থেকে মুক্তির উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত না হবে। আলোচ্য অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হবে।
সর্বক্ষেত্রে শয়তানের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা হচ্ছে মানুষকে স্বধর্ম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া। যদি কোন কোন ক্ষেত্রে শয়তান এ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়, তবে তাকে অপরাধ ও শাস্তিতে নিক্ষেপ করা বা তার প্রতিদান কমিয়ে দেওয়া বা তাকে উত্তম কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা—ইত্যাদিতে জড়িয়ে ফেলা হয়। এরকম সাতটি স্তর রয়েছে—
(১) আল্লাহকে অস্বীকার করার ধাপ বা সিঁড়ি। এমনটি হলে তাকে সঙ্গে নিয়ে জাহান্নামে একত্রিত হবে।
(২) বেদআতের স্তর বা ধাপ :
এই স্তরটি ইবলিসের নিকট গুনাহের চেয়েও অধিক প্রিয়। কারণ, বেদআতকারী এ কথা মনে করে না যে, সে ভ্রান্তির মাঝে রয়েছে, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তা থেকে তাওবা করবে না। উপরন্তু দ্বীনের বিষয়ে এটি একটি জঘন্যতম উপসর্গ, বরং, বরং বলা যায়, দ্বীনের বিকৃতি।
(৩) কবিরা গুনাহের স্তর : আল্লাহর তাআলা বলেন—
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا . النساء : 31
‘যদি তোমরা সে সমস্ত বড়ো বড়ো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো, যা থেকে বেঁচে থাকার জন্যে তোমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাহলে তোমাদের ছোট-খাটো গুনাহ আমি (এমনিতেই তোমাদের হিসাব) থেকে মুছে দেবো এবং অত্যন্ত সম্মানজনক স্থানে আমি তোমাদের পৌঁছে দেবো। [আন-নিসিা : ৩১।]
(৪) সগীরা গুনাহের স্তর : মানুষ সাধারণত: একে তুচ্ছজ্ঞান করে। ফলে তা পুঞ্জীভূত হয়ে তাকে ধ্বংসে নিপতিত করে।
(৫) মুবাহের স্তর : মুবাহের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর অধিক আনুগত্য ও আখেরাতের জন্য পাথেয় অর্জন বাধা সৃষ্টি করে। মুবাহ কাজের সাথে সম্পৃক্ততা দুনিয়ার মুহববত ও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।
(৬) অনুত্তম ও অপ্রধান কাজের স্তর : অনুত্তম কাজের মাধ্যমে উত্তম কাজে এবং অপ্রধান কাজের মাধ্যমে প্রধান কাজ থেকে বিরত রাখে। ফলে তার প্রতিদান কমে যায় এবং পুণ্য ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
(৭) শয়তান তার কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে মানুষের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভের স্তর : এই সত্য সমূহের কোন একটিতে নিক্ষেপ করার মাধ্যমেই শয়তানের ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না বরং সে কখনো মানুষকে বেদআতে নিক্ষেপ করে, যেমন জন্ম দিবস ও নির্দিষ্ট আনন্দ উপভোগের বেদআত। তাছাড়া অন্যান্য বেদআত বা ভিন্ন প্রকৃতির কবিরা গুনাহে নিক্ষিপ্ত করে। যেমন নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে নামাজ দেরি করা অথবা পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জন না করা।
এমনিভাবে শয়তান মানুষের হৃদয়ে স্থান করে তাকে হিংসা, রিয়া অথবা আল্লাহর প্রতি মুহববত, আশা ও নির্ভরতার দুর্বলতায় নিক্ষেপ করে। এবং মানুষের বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে মিথ্যায় প্ররোচিত করে। যদি তাতে অক্ষম হয়ে পড়ে তবে অর্থহীন অঠিক কথাবার্তায় নিক্ষেপ করে, যাতে সে গিবত-পরনিন্দায় লিপ্ত হয়। অত:পর তার চেয়েও কঠিন বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং এভাবেই চলতে থাকে।
(১) আল্লাহকে অস্বীকার করার ধাপ বা সিঁড়ি। এমনটি হলে তাকে সঙ্গে নিয়ে জাহান্নামে একত্রিত হবে।
(২) বেদআতের স্তর বা ধাপ :
এই স্তরটি ইবলিসের নিকট গুনাহের চেয়েও অধিক প্রিয়। কারণ, বেদআতকারী এ কথা মনে করে না যে, সে ভ্রান্তির মাঝে রয়েছে, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তা থেকে তাওবা করবে না। উপরন্তু দ্বীনের বিষয়ে এটি একটি জঘন্যতম উপসর্গ, বরং, বরং বলা যায়, দ্বীনের বিকৃতি।
(৩) কবিরা গুনাহের স্তর : আল্লাহর তাআলা বলেন—
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا . النساء : 31
‘যদি তোমরা সে সমস্ত বড়ো বড়ো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো, যা থেকে বেঁচে থাকার জন্যে তোমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাহলে তোমাদের ছোট-খাটো গুনাহ আমি (এমনিতেই তোমাদের হিসাব) থেকে মুছে দেবো এবং অত্যন্ত সম্মানজনক স্থানে আমি তোমাদের পৌঁছে দেবো। [আন-নিসিা : ৩১।]
(৪) সগীরা গুনাহের স্তর : মানুষ সাধারণত: একে তুচ্ছজ্ঞান করে। ফলে তা পুঞ্জীভূত হয়ে তাকে ধ্বংসে নিপতিত করে।
(৫) মুবাহের স্তর : মুবাহের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর অধিক আনুগত্য ও আখেরাতের জন্য পাথেয় অর্জন বাধা সৃষ্টি করে। মুবাহ কাজের সাথে সম্পৃক্ততা দুনিয়ার মুহববত ও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।
(৬) অনুত্তম ও অপ্রধান কাজের স্তর : অনুত্তম কাজের মাধ্যমে উত্তম কাজে এবং অপ্রধান কাজের মাধ্যমে প্রধান কাজ থেকে বিরত রাখে। ফলে তার প্রতিদান কমে যায় এবং পুণ্য ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
(৭) শয়তান তার কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে মানুষের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভের স্তর : এই সত্য সমূহের কোন একটিতে নিক্ষেপ করার মাধ্যমেই শয়তানের ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না বরং সে কখনো মানুষকে বেদআতে নিক্ষেপ করে, যেমন জন্ম দিবস ও নির্দিষ্ট আনন্দ উপভোগের বেদআত। তাছাড়া অন্যান্য বেদআত বা ভিন্ন প্রকৃতির কবিরা গুনাহে নিক্ষিপ্ত করে। যেমন নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে নামাজ দেরি করা অথবা পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জন না করা।
এমনিভাবে শয়তান মানুষের হৃদয়ে স্থান করে তাকে হিংসা, রিয়া অথবা আল্লাহর প্রতি মুহববত, আশা ও নির্ভরতার দুর্বলতায় নিক্ষেপ করে। এবং মানুষের বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে মিথ্যায় প্ররোচিত করে। যদি তাতে অক্ষম হয়ে পড়ে তবে অর্থহীন অঠিক কথাবার্তায় নিক্ষেপ করে, যাতে সে গিবত-পরনিন্দায় লিপ্ত হয়। অত:পর তার চেয়েও কঠিন বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং এভাবেই চলতে থাকে।
মানুষের কাছে বিভ্রান্ত ও সম্মানোচ্যুত করার ক্ষেত্রে শয়তান সব ধরনের পথ ও পন্থা অবলম্বন করে। তাদের নিকট সে এমন সব পথে প্রবেশ করে যে, অধিকাংশ মানুষ সে সম্পর্কে বেখবর হয় অথচ সে তা অনুভব করতে পারে না। এভাবেই শয়তান আমাদের আদি পিতা ও মাতা আদম হাওয়া আ.-কে পথ-চ্যুত করেছে।
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ . ﴿البقرة : 36﴾
‘অত:পর শয়তান তাদের উভয়কে পথ-চ্যুত করেছে।’ [আল-বাক্বারা : ৩৬।] শয়তান মানুষকে তাদের একাংশের কৃতকর্মের জন্য পদস্খলন ঘটিয়ে ছিল অত:পর তারা ভয়ে পলায়ন করে।
إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا .
দু’টি বাহিনী সেদিন (সম্মুখ সমরে) একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল, সে দিন যারা (ময়দান থেকে) পালিয়ে গিয়েছিল তাদের একাংশের অর্জিত কাজের জন্য শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিয়েছিল। [আল-ইমরান : ১৫৫।] শয়তানের প্রবেশের পথসমূহ বন্ধের জন্য সবচে’ ফলপ্রসূ পদ্ধতি হচ্ছে সে প্রবেশপথ সমূহের পরিচয় লাভ করা। এই পথ সমূহ বন্ধের উপকরণ সমূহ ব্যবহার করা। শয়তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথসমূহের অন্যতম হচ্ছে—
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ . ﴿البقرة : 36﴾
‘অত:পর শয়তান তাদের উভয়কে পথ-চ্যুত করেছে।’ [আল-বাক্বারা : ৩৬।] শয়তান মানুষকে তাদের একাংশের কৃতকর্মের জন্য পদস্খলন ঘটিয়ে ছিল অত:পর তারা ভয়ে পলায়ন করে।
إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا .
দু’টি বাহিনী সেদিন (সম্মুখ সমরে) একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল, সে দিন যারা (ময়দান থেকে) পালিয়ে গিয়েছিল তাদের একাংশের অর্জিত কাজের জন্য শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিয়েছিল। [আল-ইমরান : ১৫৫।] শয়তানের প্রবেশের পথসমূহ বন্ধের জন্য সবচে’ ফলপ্রসূ পদ্ধতি হচ্ছে সে প্রবেশপথ সমূহের পরিচয় লাভ করা। এই পথ সমূহ বন্ধের উপকরণ সমূহ ব্যবহার করা। শয়তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথসমূহের অন্যতম হচ্ছে—
আদম আ.-এর ঘটনায় শয়তান তার জন্য গুনাহকে সুশোভিত, সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করেছে।
قَالَ يَا آَدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَى . ﴿طه :120﴾
‘সে (তাকে বলল হে আদম, আমি কি তোমাকে অনন্ত জীবনদায়িনী একটি বৃক্ষের কথা বলব (যার ফল খেলে তুমি এখানে চিরকাল জীবিত থাকতে পারবে) এবং বলব এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না ? [ত্বহা : ১২০।]
وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ
‘সে তাদের আরো বলল, তোমাদের মালিক তোমাদের এ বৃক্ষের (কাছে যাওয়া) থেকে তোমাদের যে বারণ করেছেন, তার উদ্দেশ্যে এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, (সেখানে গেলে) তোমরা উভয়েই ফেরেশতা হয়ে যাবে, অথবা (এর ফলে) তোমরা জান্নাতে চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। [আল-আরাফ : ২০।] বদর যুদ্ধে শয়তান মুশরিকদের জন্য তাদের কাজকে সুশোভিত করে দেখিয়েছে—
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَاللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ﴿47﴾ وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ . ﴿الأنفال : 48﴾
‘তোমরা (কখনো) তাদের মতো হয়ও না, যারা অহংকার ও লোকদের (নিজেদের শান-শওকত) দেখানোর জন্যে সাধারণ মানুষদেরকে যারা আল্লাহ তাআলার পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে, (মূলত) তাদের সমুদয় কার্যকলাপেই আল্লাহ তাআলা পরিবেষ্টন করে আছেন। যখন শয়তান তাদের কাজগুলোকে তাদের সামনে খুব চাকচিক্যময় করে পেশ করেছিল এবং সে তাদের বলেছিল, আজ মানুষের মাঝে কেউই তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারবে না। এবং আমি তো তোমাদের পাশেই আছি, অত:পর যখন উভয় দল সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন সে কেটে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাও না। আমি অবশ্যই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করি এবং (আমি জানি) আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন কঠোর শাস্তিদাতা। [আল-আনফাল : ৪৭-৪৮।]
শয়তানের এই সুন্দর সুশোভন প্রক্রিয়া ছলচাতুরতায় পরিপূর্ণ। কেননা, তার প্রতারণা কিছু উপদেশ, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার আড়ালে লুক্কায়িত থাকে। তাই সে আদম আ.-কে ও তার বিবি হাওয়াকে শপথ করে জানিয়েছিল যে সে বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী।
وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِينَ . ﴿الأعراف : 21﴾
‘সে তাদের কাছে কসম করে বলল, আমি অবশ্যই তোমাদের উভয়ের জন্যে হিতাকাঙ্ক্ষীদের একজন। [আল-আরাফ : ২১।]
এবং সে আদ ও সামুদ সম্প্রদায়ের জন্য তাদের কাজকে সুশোভিত করে প্রদর্শন করেছে।
وَعَادًا وَثَمُودَ وَقَدْ تَبَيَّنَ لَكُمْ مِنْ مَسَاكِنِهِمْ وَزَيَّنَ لَهُمَ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَكَانُوا مُسْتَبْصِرِينَ . ﴿العنكبوت : 38﴾
‘আদ এবং সামুদকেও (আমি ধ্বংস করেছিলাম), তাদের (ধ্বংসপ্রাপ্ত) বসতি থেকেই তো তোমাদের কাছে (আজাবের সত্যতা) প্রমাণিত হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কাজ (তাদের সামনে শোভন করে রেখেছিল এবং (এ কৌশল) সে তাদের (সঠিক) রাস্তা থেকে ফিরিয়ে রেখেছিল, অথচ তারা (তাদের অন্য সব ব্যাপারে) ছিল দারুণ বিচক্ষণ।’ [আল-আনকাবুত : ৩৮।] এমনিভাবে সাবা সম্প্রদায়ের জন্যও সুশোভন করেছিল।
وَجَدْتُهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُونَ . ﴿النمل : 24﴾
‘আমি তাকে এবং তার জাতিকে দেখলাম, তারা আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদা করছে, (মূলে) শয়তান তাদের (এ সব পার্থিব) কর্মকান্ড তাদের জন্যে শোভন করে রেখেছে এবং সে তাদের (সৎ) পথ থেকেও নিবৃত্ত করেছে, ফলে ওরা হেদায়াত লাভ করতে পারছে না। [আন-নামল : ২৪।] আল্লাহ তাআলা বলেন—
تَاللَّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ . ﴿النحل : 63﴾
(হে নবী,) আল্লাহর শপথ, তোমার আগেও আমি জাতি সমূহের কাছে নবী পাঠিয়ে ছিলাম, অত:পর শয়তান তাদের (খারাপ) কাজ সমূহ তাদের জন্যে শোভনীয় করে দিয়েছিল, সে (শয়তান) আজও তাদের বন্ধু হিসেবেই (হাজির) আছে, তাদের (সবার) জন্যেই রয়েছে কঠোর আজাব। [আন-নাহল : ৬৩।] মহান আল্লাহ বলেন—
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . ﴿الحجر :39-40﴾
সে বলল, হে আমার মালিক, তুমি যেভাবে (আজ) আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিলে (আমিও তোমার শপথ করে বলছি) আমি মানুষদের জন্যে পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজ সমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাটি বান্দা তাদের কথা আলাদা।’ [আল-হাজার : ৩৯-৪০।] এবং আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ . فَلَوْلَا إِذْ جَاءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا وَلَكِنْ قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ . فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ . ﴿الأنعام : 45﴾
‘তোমাদের আগের জাতি সমূহের কাছে আমি আমার রাসূল পাঠিয়েছিলাম, তাদের আমি দু:খ-কষ্ট ও বিপর্যয়ে (জালে) আটক রেখেছিলাম, যাতে করে তার বিনয়ের সাথে নতি স্বীকার করে। কিন্তু সত্যিই যখন তাদের (কাফের দলের) উপর আমার বিপর্যয় এসে আপতিত হলো, তখনও তারা বিনীত হলো না, অধিকন্তু তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেলো এবং তারা যা করে যাচ্ছিল, শয়তান তাদের কাছে তা আকর্ষণীয় করে তুলে ধরলো। অত:পর তারা সে সব কিছুই ভুলো গেলো, যা তাদের (বারবার) স্মরণ করানো হয়েছিল, তারপরও আমি তাদের ওপর (স্বচ্ছলতার সবকটি দুয়ারই খুলে দিলাম, শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাতে মত্ত হয়ে গেলো যা তাদের দেয়া হয়ে ছিল, তখন আমি তাদের হঠাৎ পাকড়াও করে নিলাম, ফলে তারা নিরাশ হয়ে পড়ল। (এভাবেই) যারা (আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে) জুলুম করেছে, তাদের মূলোচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে, আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে, যিনি সৃষ্টিকুলের মালিক।’ [আল-আনআম : ৪২-৪৫।] শয়তান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন—
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا . ﴿النساء :120﴾
সে (অভিশপ্ত শয়তান) তাদের (নানা) প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের (সামনে) যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা হচ্ছে প্রতারণা মাত্র। [আন-নিসা : ১২০।] ইবনুল কায়্যিম বর্ণনা করেন, শয়তানের প্রতিশ্রুতি যা মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌছে—যথা : তুমি দীর্ঘজীবী হবে, তুমি পার্থিব ভোগ-বিলাস অর্জন করবে, তুমি তোমার সতীর্থদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে, এবং তোমার শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করবে এবং দুনিয়ার কর্তৃত্ব তোমার অর্জিত হবে যেরূপ অন্যের ছিল—এমনিভাবে সে তার আশাকে প্রলম্বিত করে এবং তাকে গুনাহ ও শিরক করার ভিত্তিতে কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। উপরন্তু তাকে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, অলীক স্বপ্ন ও আশা দিয়ে রাখে। তার প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যাশার মাঝে পার্থক্য হল সে অবাস্তব, ভিত্তিহীন প্রতিশ্রুতি দেয়, এবং অসম্ভব বিষয়ের প্রত্যাশা দিয়ে থাকে, আর অক্ষম, দুর্বল আত্মা তার প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্নের প্রলোভনে নিজেদের খুইয়ে ফেলে। যেমন জনৈক বক্তা বলেছেন—
وإلا فقد عشنا بها زمنا رغدامنى إن تكن حقا أحسن المنى
আশা ও স্বপ্ন যদি বাস্তবানুগ হয় তবে তা হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট স্বপ্ন, অন্যথায় এর অর্থ হবে কিছু কাল সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকা। তাই বিনষ্ট রুগ্ণ প্রকৃতির প্রবৃত্তি অসার আশা ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে স্বাদ পায় ও আনন্দ লাভ করে।
ইবনুল কায়্যিম রহ. আরো উল্লেখ করেছেন, অসার কথাবার্তার উৎস হচ্ছে শয়তানের প্রতিশ্রুতি ও অলীক স্বপ্ন দেখানো। কেননা শয়তান তার সহচরদেরকে সত্য অর্জন ও তার মাধ্যম বিজয় লাভের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে। এবং তাদেরকে অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সত্যে পৌঁছার প্রতিশ্রুতি দেয়।
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا . ﴿النساء :120﴾
(অতএব, প্রত্যেক অসার কাজে আল্লাহর এই বাণী প্রতিফলিত যে তাদের সামনে) সে প্রতিশ্রুতি দেয় আর মিথ্যা-বাসনার (মায়াজাল) সৃষ্টি করে, আর শয়তান যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা হচ্ছে প্রতারণা মাত্র। [আন-নিসা : ১২০।] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় শাইখ আস-সাদি উল্লেখ করেছেন, এই প্রতিশ্রুতিতে ভীতি প্রদর্শনও অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন—
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ . ﴿البقرة : 268﴾
‘শয়তান সব সময়ই তোমাদের অভাব অনটনের ভয় দেখাবে এবং সে (নানাবিধ) অশ্লীল কর্মকান্ডের আদেশ দেবে, আর আল্লাহ তাআলা তোমাদের তার কাছে থেকে অসীম বরকত ও ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন (এবং সে দিকেই তিনি তোমাদের ডাকছেন) আল্লাহ তাআলা প্রাচুর্যময় সম্যক অবগত। [আল-বাকারা : ২৬৮।] কেননা, সে মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয় যখন তারা আল্লাহর পথে খরচ করবে তারা গরিব-দরিদ্র হয়ে যাবে। তারা যখন জেহাদ করে তাদের ভয় দেখায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ . آل عمران : 175
এই হচ্ছে তোমাদের (প্ররোচনাদানকারী) শয়তান তারা (শত্রু পক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তাদের আপনজনদের ভয় দেখাচ্ছিল, তোমরা কোনো অবস্থায়ই তাদের (এ হুমকিকে) ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও। [আল-ইমরান : ১৭৫।] সে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়। সম্ভব ও অসম্ভব সকল উপায়ে সে তাদের বুদ্ধিতে এটা প্রবেশ করায় যেন তারা কল্যাণময় কাজ থেকে বিরত থাকে। [তাইসিরুল কারিমির রহমান ফি তাফসিরে কালামিল মান্নান : পৃ : ১৬৮।]
قَالَ يَا آَدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَى . ﴿طه :120﴾
‘সে (তাকে বলল হে আদম, আমি কি তোমাকে অনন্ত জীবনদায়িনী একটি বৃক্ষের কথা বলব (যার ফল খেলে তুমি এখানে চিরকাল জীবিত থাকতে পারবে) এবং বলব এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না ? [ত্বহা : ১২০।]
وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ
‘সে তাদের আরো বলল, তোমাদের মালিক তোমাদের এ বৃক্ষের (কাছে যাওয়া) থেকে তোমাদের যে বারণ করেছেন, তার উদ্দেশ্যে এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, (সেখানে গেলে) তোমরা উভয়েই ফেরেশতা হয়ে যাবে, অথবা (এর ফলে) তোমরা জান্নাতে চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। [আল-আরাফ : ২০।] বদর যুদ্ধে শয়তান মুশরিকদের জন্য তাদের কাজকে সুশোভিত করে দেখিয়েছে—
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَاللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ﴿47﴾ وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ . ﴿الأنفال : 48﴾
‘তোমরা (কখনো) তাদের মতো হয়ও না, যারা অহংকার ও লোকদের (নিজেদের শান-শওকত) দেখানোর জন্যে সাধারণ মানুষদেরকে যারা আল্লাহ তাআলার পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে, (মূলত) তাদের সমুদয় কার্যকলাপেই আল্লাহ তাআলা পরিবেষ্টন করে আছেন। যখন শয়তান তাদের কাজগুলোকে তাদের সামনে খুব চাকচিক্যময় করে পেশ করেছিল এবং সে তাদের বলেছিল, আজ মানুষের মাঝে কেউই তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারবে না। এবং আমি তো তোমাদের পাশেই আছি, অত:পর যখন উভয় দল সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন সে কেটে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাও না। আমি অবশ্যই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করি এবং (আমি জানি) আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন কঠোর শাস্তিদাতা। [আল-আনফাল : ৪৭-৪৮।]
শয়তানের এই সুন্দর সুশোভন প্রক্রিয়া ছলচাতুরতায় পরিপূর্ণ। কেননা, তার প্রতারণা কিছু উপদেশ, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার আড়ালে লুক্কায়িত থাকে। তাই সে আদম আ.-কে ও তার বিবি হাওয়াকে শপথ করে জানিয়েছিল যে সে বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী।
وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِينَ . ﴿الأعراف : 21﴾
‘সে তাদের কাছে কসম করে বলল, আমি অবশ্যই তোমাদের উভয়ের জন্যে হিতাকাঙ্ক্ষীদের একজন। [আল-আরাফ : ২১।]
এবং সে আদ ও সামুদ সম্প্রদায়ের জন্য তাদের কাজকে সুশোভিত করে প্রদর্শন করেছে।
وَعَادًا وَثَمُودَ وَقَدْ تَبَيَّنَ لَكُمْ مِنْ مَسَاكِنِهِمْ وَزَيَّنَ لَهُمَ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَكَانُوا مُسْتَبْصِرِينَ . ﴿العنكبوت : 38﴾
‘আদ এবং সামুদকেও (আমি ধ্বংস করেছিলাম), তাদের (ধ্বংসপ্রাপ্ত) বসতি থেকেই তো তোমাদের কাছে (আজাবের সত্যতা) প্রমাণিত হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কাজ (তাদের সামনে শোভন করে রেখেছিল এবং (এ কৌশল) সে তাদের (সঠিক) রাস্তা থেকে ফিরিয়ে রেখেছিল, অথচ তারা (তাদের অন্য সব ব্যাপারে) ছিল দারুণ বিচক্ষণ।’ [আল-আনকাবুত : ৩৮।] এমনিভাবে সাবা সম্প্রদায়ের জন্যও সুশোভন করেছিল।
وَجَدْتُهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُونَ . ﴿النمل : 24﴾
‘আমি তাকে এবং তার জাতিকে দেখলাম, তারা আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদা করছে, (মূলে) শয়তান তাদের (এ সব পার্থিব) কর্মকান্ড তাদের জন্যে শোভন করে রেখেছে এবং সে তাদের (সৎ) পথ থেকেও নিবৃত্ত করেছে, ফলে ওরা হেদায়াত লাভ করতে পারছে না। [আন-নামল : ২৪।] আল্লাহ তাআলা বলেন—
تَاللَّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ . ﴿النحل : 63﴾
(হে নবী,) আল্লাহর শপথ, তোমার আগেও আমি জাতি সমূহের কাছে নবী পাঠিয়ে ছিলাম, অত:পর শয়তান তাদের (খারাপ) কাজ সমূহ তাদের জন্যে শোভনীয় করে দিয়েছিল, সে (শয়তান) আজও তাদের বন্ধু হিসেবেই (হাজির) আছে, তাদের (সবার) জন্যেই রয়েছে কঠোর আজাব। [আন-নাহল : ৬৩।] মহান আল্লাহ বলেন—
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . ﴿الحجر :39-40﴾
সে বলল, হে আমার মালিক, তুমি যেভাবে (আজ) আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিলে (আমিও তোমার শপথ করে বলছি) আমি মানুষদের জন্যে পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজ সমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাটি বান্দা তাদের কথা আলাদা।’ [আল-হাজার : ৩৯-৪০।] এবং আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ . فَلَوْلَا إِذْ جَاءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا وَلَكِنْ قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ . فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ . ﴿الأنعام : 45﴾
‘তোমাদের আগের জাতি সমূহের কাছে আমি আমার রাসূল পাঠিয়েছিলাম, তাদের আমি দু:খ-কষ্ট ও বিপর্যয়ে (জালে) আটক রেখেছিলাম, যাতে করে তার বিনয়ের সাথে নতি স্বীকার করে। কিন্তু সত্যিই যখন তাদের (কাফের দলের) উপর আমার বিপর্যয় এসে আপতিত হলো, তখনও তারা বিনীত হলো না, অধিকন্তু তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেলো এবং তারা যা করে যাচ্ছিল, শয়তান তাদের কাছে তা আকর্ষণীয় করে তুলে ধরলো। অত:পর তারা সে সব কিছুই ভুলো গেলো, যা তাদের (বারবার) স্মরণ করানো হয়েছিল, তারপরও আমি তাদের ওপর (স্বচ্ছলতার সবকটি দুয়ারই খুলে দিলাম, শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাতে মত্ত হয়ে গেলো যা তাদের দেয়া হয়ে ছিল, তখন আমি তাদের হঠাৎ পাকড়াও করে নিলাম, ফলে তারা নিরাশ হয়ে পড়ল। (এভাবেই) যারা (আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে) জুলুম করেছে, তাদের মূলোচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে, আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে, যিনি সৃষ্টিকুলের মালিক।’ [আল-আনআম : ৪২-৪৫।] শয়তান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন—
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا . ﴿النساء :120﴾
সে (অভিশপ্ত শয়তান) তাদের (নানা) প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের (সামনে) যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা হচ্ছে প্রতারণা মাত্র। [আন-নিসা : ১২০।] ইবনুল কায়্যিম বর্ণনা করেন, শয়তানের প্রতিশ্রুতি যা মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌছে—যথা : তুমি দীর্ঘজীবী হবে, তুমি পার্থিব ভোগ-বিলাস অর্জন করবে, তুমি তোমার সতীর্থদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে, এবং তোমার শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করবে এবং দুনিয়ার কর্তৃত্ব তোমার অর্জিত হবে যেরূপ অন্যের ছিল—এমনিভাবে সে তার আশাকে প্রলম্বিত করে এবং তাকে গুনাহ ও শিরক করার ভিত্তিতে কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। উপরন্তু তাকে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, অলীক স্বপ্ন ও আশা দিয়ে রাখে। তার প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যাশার মাঝে পার্থক্য হল সে অবাস্তব, ভিত্তিহীন প্রতিশ্রুতি দেয়, এবং অসম্ভব বিষয়ের প্রত্যাশা দিয়ে থাকে, আর অক্ষম, দুর্বল আত্মা তার প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্নের প্রলোভনে নিজেদের খুইয়ে ফেলে। যেমন জনৈক বক্তা বলেছেন—
وإلا فقد عشنا بها زمنا رغدامنى إن تكن حقا أحسن المنى
আশা ও স্বপ্ন যদি বাস্তবানুগ হয় তবে তা হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট স্বপ্ন, অন্যথায় এর অর্থ হবে কিছু কাল সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকা। তাই বিনষ্ট রুগ্ণ প্রকৃতির প্রবৃত্তি অসার আশা ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে স্বাদ পায় ও আনন্দ লাভ করে।
ইবনুল কায়্যিম রহ. আরো উল্লেখ করেছেন, অসার কথাবার্তার উৎস হচ্ছে শয়তানের প্রতিশ্রুতি ও অলীক স্বপ্ন দেখানো। কেননা শয়তান তার সহচরদেরকে সত্য অর্জন ও তার মাধ্যম বিজয় লাভের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে। এবং তাদেরকে অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সত্যে পৌঁছার প্রতিশ্রুতি দেয়।
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا . ﴿النساء :120﴾
(অতএব, প্রত্যেক অসার কাজে আল্লাহর এই বাণী প্রতিফলিত যে তাদের সামনে) সে প্রতিশ্রুতি দেয় আর মিথ্যা-বাসনার (মায়াজাল) সৃষ্টি করে, আর শয়তান যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা হচ্ছে প্রতারণা মাত্র। [আন-নিসা : ১২০।] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় শাইখ আস-সাদি উল্লেখ করেছেন, এই প্রতিশ্রুতিতে ভীতি প্রদর্শনও অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন—
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ . ﴿البقرة : 268﴾
‘শয়তান সব সময়ই তোমাদের অভাব অনটনের ভয় দেখাবে এবং সে (নানাবিধ) অশ্লীল কর্মকান্ডের আদেশ দেবে, আর আল্লাহ তাআলা তোমাদের তার কাছে থেকে অসীম বরকত ও ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন (এবং সে দিকেই তিনি তোমাদের ডাকছেন) আল্লাহ তাআলা প্রাচুর্যময় সম্যক অবগত। [আল-বাকারা : ২৬৮।] কেননা, সে মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয় যখন তারা আল্লাহর পথে খরচ করবে তারা গরিব-দরিদ্র হয়ে যাবে। তারা যখন জেহাদ করে তাদের ভয় দেখায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ . آل عمران : 175
এই হচ্ছে তোমাদের (প্ররোচনাদানকারী) শয়তান তারা (শত্রু পক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তাদের আপনজনদের ভয় দেখাচ্ছিল, তোমরা কোনো অবস্থায়ই তাদের (এ হুমকিকে) ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও। [আল-ইমরান : ১৭৫।] সে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়। সম্ভব ও অসম্ভব সকল উপায়ে সে তাদের বুদ্ধিতে এটা প্রবেশ করায় যেন তারা কল্যাণময় কাজ থেকে বিরত থাকে। [তাইসিরুল কারিমির রহমান ফি তাফসিরে কালামিল মান্নান : পৃ : ১৬৮।]
শয়তান মানুষকে এমনভাবে আশ্বস্ত করে যে, তার জীবন অনেক দীর্ঘ এবং তার কাছে সৎকর্ম ও তওবা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই সে যখন নামাজ পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে শয়তান তাকে বলে, তুমি তো এখনও সেই ছোট রয়ে গেছ, যখন বড় হবে নামাজ পড়বে। এবং যখন আত্মশুদ্ধিকারী ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি করতে চায় শয়তান তাকে বলে এটাতো তোমার প্রথম মওসুম : আগামী বৎসরের জন্যে তুমি অপেক্ষা কর। আর যখন কোন মানুষ কোরআন পড়তে চায় শয়তান তাকে বলে তুমি সন্ধ্যায় পড়বে। এবং সন্ধ্যা হলে বলে তুমি আগামীকাল পড়বে। এবং আগামীকাল বলে তুমি পরশু পড়বে, এভাবে মৃত্যু পর্যন্ত অপরাধকারী তার পাপের ওপর অবশিষ্ট থাকবে। আর এই প্রক্রিয়ায় শয়তান কিছু কাফেরকে ইসলাম থেকে নিবৃত্ত করে রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ . ﴿محمد : 25﴾
‘যাদের কাছে হেদায়াতের পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান এদের মন্দ কাজগুলো (ভালো লেবাস দিয়ে) শোভনীয় করে পেশ করে এবং তাদের জন্যে নানা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে রাখে। [মুহাম্মদ : ২৫।] তাই বলা হয়, এর অর্থ হচ্ছে শয়তান তাদের উদ্দেশ্যে আশাকে সম্প্রসারিত করেছে এবং তাদেরকে দীর্ঘায়ুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া ভিন্ন অর্থের মতও রয়েছে। কতক ঊলামায়ে কেরাম বলেছেন—
أنذركم سوف، فإنها أكبر جنود إبليس . تلبيس إبليس لابن الجوزي ص (৩৯০).
আমি তোমাদেরকে ‘সাওফা’ তথা ‘এই করছি’, ‘এখনও সময় আছে’, ‘ভবিষ্যতে করব’, ‘কিছুটা ঝামেলা মুক্ত হয়েই করা শুরু করব।’ এমন সব ভবিষ্যৎ অর্থবোধক শব্দ হতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। [তালবিসে ইবলিস : পৃ : ৩৯০।]
এবং এই অভিন্ন আচরণ করে থাকে যখন তারা আনুগত্য প্রদর্শন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেন—
يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب كل عقدة عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلى انحلت عقدة، فأصبح نشيطا طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان .
যখন তোমাদের কেউ ঘুমায়, শয়তান তার মাথায় তিনটি গিঁট দেয়। সারারাত ব্যাপী প্রতিটি গিঁট দিয়ে রাখে। অত:পর সে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। অত:পর যখন মানুষ ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যখন সে নামাজ পড়ে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অত:পর সে উদ্যম ও প্রাণবন্ত মন নিয়ে সকাল কাটায়। আর যদি এমনটি না করে তবে সে নিরানন্দ, উদ্যমহীন অলস সকাল কাটায়। এ কারণেই উল্লিখিত হাদিসে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগে আগে ঘুম থেকে জাগা এবং জিকির ও নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। ঐ দুই ব্যক্তির অবস্থা কতইনা সুন্দর যাদের সম্পর্কে রাসূল এভাবে আলোচনা করেছেন—
عجب ربنا عزوجل من رجلين : رجل ثار عن وطائه ولحافه، من بين أهله وحيه إلى صلاته، فيقول ربنا : أيا ملائكتي، انظروا إلى عبدي، ثار من فراشه ووطائه، ومن بين حيه وأهله إلى صلاته، رغبة فيما عندي، وشفقة مما عندي . ورجل غزا في سبيل الله عز وجل ...( المسند :1/416 ، وابن حبان ( الإحسان 6/297) وحسن المحقق إسناده .
আমাদের প্রভু দুই রকম ব্যক্তি দ্বারা আনন্দিত বোধ করেন। ঐ ব্যক্তি যে তার শয্যা-বাস ও চাদর ছেড়ে এবং পরিবার-পরিজন ও মহল্লা মধ্য থেকে নামাজের দিকে ধাবিত হয়েছে। অত:পর তা দেখে আমাদের প্রভু বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা ! তোমরা আমার বান্দার দিকে তাকাও সে তোর বিছানা ও শয্যা ছেড়ে এবং তার মহল্লা ও পরিবার পরিজনদের মধ্য থেকে নামাজের দিকে ধাবিত হয়েছে আমার দয়া ও অনুগ্রহের প্রত্যাশায়। আরেক ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেছেন...। [আল-মুসনাদ : ১/৪১৬, ইবনে হিববান : ইহসান অধ্যায় : ৬/২৯৭।]
আল্লাহর আদেশের প্রতি দ্রুত সাড়া দেওয়ায় এবং আনুগত্য স্বীকার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় এই বাস্তব চিত্রই আল্লাহর বাণীতে ব্যক্ত হয়েছে—
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ . ﴿آل عمران : 133﴾
‘তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়ার কাজে প্রতিযোগিতা করো, আর সেই জান্নাতের জন্যেও (প্রতিযোগিতা করো) যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবী সমান, আর এই (বিশাল) জান্নাত প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে সে সব (ভাগ্যবান) লোকদের জন্যে, যারা আল্লাহকে ভয় করে। [আল-ইমরান : ১৩৩।] আল্লাহ তাআলা বলেন,
سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ . ﴿الحديد : 21﴾
(অতএব, এসব অর্থহীন প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে) তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সেই (প্রতিশ্রুত) ক্ষমা ও চিরন্তন জান্নাত পাওয়ার জন্যে এগিয়ে যাও, (এমন জান্নাত) যার আয়তন আসমান জমিনের সমান প্রশস্ত, তা প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে সে সব মানুষদের জন্যে যারা আল্লাহ তাআলা ও তার (পাঠানো) রাসূলের ওপর ঈমান এনেছে, (মূলত) এ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার এক অনুগ্রহ। যাকে তিনি চান তাকে তিনি এ অনুগ্রহ প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন মহা অনুগ্রহশীল। [আল-হাদীদ : ২১] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কিছু সাহাবাকে উপদেশ দিয়েছেন—
إذا قمت في صلاتك فصل صلاة مودع .
তুমি নামাজের জন্য দন্ডায়মান হলে বিদায়ীর নামাজ হিসেবে পড়বে। [ইবনে মাজা : ৪১৭১, আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ . ﴿محمد : 25﴾
‘যাদের কাছে হেদায়াতের পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান এদের মন্দ কাজগুলো (ভালো লেবাস দিয়ে) শোভনীয় করে পেশ করে এবং তাদের জন্যে নানা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে রাখে। [মুহাম্মদ : ২৫।] তাই বলা হয়, এর অর্থ হচ্ছে শয়তান তাদের উদ্দেশ্যে আশাকে সম্প্রসারিত করেছে এবং তাদেরকে দীর্ঘায়ুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া ভিন্ন অর্থের মতও রয়েছে। কতক ঊলামায়ে কেরাম বলেছেন—
أنذركم سوف، فإنها أكبر جنود إبليس . تلبيس إبليس لابن الجوزي ص (৩৯০).
আমি তোমাদেরকে ‘সাওফা’ তথা ‘এই করছি’, ‘এখনও সময় আছে’, ‘ভবিষ্যতে করব’, ‘কিছুটা ঝামেলা মুক্ত হয়েই করা শুরু করব।’ এমন সব ভবিষ্যৎ অর্থবোধক শব্দ হতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। [তালবিসে ইবলিস : পৃ : ৩৯০।]
এবং এই অভিন্ন আচরণ করে থাকে যখন তারা আনুগত্য প্রদর্শন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেন—
يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب كل عقدة عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلى انحلت عقدة، فأصبح نشيطا طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان .
যখন তোমাদের কেউ ঘুমায়, শয়তান তার মাথায় তিনটি গিঁট দেয়। সারারাত ব্যাপী প্রতিটি গিঁট দিয়ে রাখে। অত:পর সে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। অত:পর যখন মানুষ ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যখন সে নামাজ পড়ে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অত:পর সে উদ্যম ও প্রাণবন্ত মন নিয়ে সকাল কাটায়। আর যদি এমনটি না করে তবে সে নিরানন্দ, উদ্যমহীন অলস সকাল কাটায়। এ কারণেই উল্লিখিত হাদিসে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগে আগে ঘুম থেকে জাগা এবং জিকির ও নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। ঐ দুই ব্যক্তির অবস্থা কতইনা সুন্দর যাদের সম্পর্কে রাসূল এভাবে আলোচনা করেছেন—
عجب ربنا عزوجل من رجلين : رجل ثار عن وطائه ولحافه، من بين أهله وحيه إلى صلاته، فيقول ربنا : أيا ملائكتي، انظروا إلى عبدي، ثار من فراشه ووطائه، ومن بين حيه وأهله إلى صلاته، رغبة فيما عندي، وشفقة مما عندي . ورجل غزا في سبيل الله عز وجل ...( المسند :1/416 ، وابن حبان ( الإحسان 6/297) وحسن المحقق إسناده .
আমাদের প্রভু দুই রকম ব্যক্তি দ্বারা আনন্দিত বোধ করেন। ঐ ব্যক্তি যে তার শয্যা-বাস ও চাদর ছেড়ে এবং পরিবার-পরিজন ও মহল্লা মধ্য থেকে নামাজের দিকে ধাবিত হয়েছে। অত:পর তা দেখে আমাদের প্রভু বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা ! তোমরা আমার বান্দার দিকে তাকাও সে তোর বিছানা ও শয্যা ছেড়ে এবং তার মহল্লা ও পরিবার পরিজনদের মধ্য থেকে নামাজের দিকে ধাবিত হয়েছে আমার দয়া ও অনুগ্রহের প্রত্যাশায়। আরেক ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেছেন...। [আল-মুসনাদ : ১/৪১৬, ইবনে হিববান : ইহসান অধ্যায় : ৬/২৯৭।]
আল্লাহর আদেশের প্রতি দ্রুত সাড়া দেওয়ায় এবং আনুগত্য স্বীকার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় এই বাস্তব চিত্রই আল্লাহর বাণীতে ব্যক্ত হয়েছে—
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ . ﴿آل عمران : 133﴾
‘তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়ার কাজে প্রতিযোগিতা করো, আর সেই জান্নাতের জন্যেও (প্রতিযোগিতা করো) যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবী সমান, আর এই (বিশাল) জান্নাত প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে সে সব (ভাগ্যবান) লোকদের জন্যে, যারা আল্লাহকে ভয় করে। [আল-ইমরান : ১৩৩।] আল্লাহ তাআলা বলেন,
سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ . ﴿الحديد : 21﴾
(অতএব, এসব অর্থহীন প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে) তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সেই (প্রতিশ্রুত) ক্ষমা ও চিরন্তন জান্নাত পাওয়ার জন্যে এগিয়ে যাও, (এমন জান্নাত) যার আয়তন আসমান জমিনের সমান প্রশস্ত, তা প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে সে সব মানুষদের জন্যে যারা আল্লাহ তাআলা ও তার (পাঠানো) রাসূলের ওপর ঈমান এনেছে, (মূলত) এ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার এক অনুগ্রহ। যাকে তিনি চান তাকে তিনি এ অনুগ্রহ প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন মহা অনুগ্রহশীল। [আল-হাদীদ : ২১] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কিছু সাহাবাকে উপদেশ দিয়েছেন—
إذا قمت في صلاتك فصل صلاة مودع .
তুমি নামাজের জন্য দন্ডায়মান হলে বিদায়ীর নামাজ হিসেবে পড়বে। [ইবনে মাজা : ৪১৭১, আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
শয়তান চেষ্টা করে মানুষকে এবাদত-আনুগত্য থেকে বাধা দিতে। অত:পর যখন সে তার আগ্রহ ও লোভ প্রত্যক্ষ করে, তখন এই লোভের দরজা দিয়ে তার কাছে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়ায় যে, সে তাকে এবাদতের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কঠোর বানিয়ে দেয়। এবং কখনো কখনো তাকে গুনাহের মাঝে নিক্ষেপ করে। আবার কখনো ভালো কাজ ছুটে যাওয়ার মাধ্যমে গুনাহে লিপ্ত করে। যেমন কোন ব্যক্তি ইসতিনজা ও ওজুর ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সে অঙ্গ সমূহকে তিনবারের অধিক ধৌত করে এবং খুব ভালো ভাবে ঘষামাজা করে, ফলে কখনো এ কারণে নামাজে বিলম্ব হয়। অথবা নামাজে ফাতেহা পাঠ, তাকবীর ও তাসবীহ সমূহ বারবার পাঠ করে, ফলে ইমামের অনুসরণ থেকে সে পিছিয়ে পড়ে। অত:পর সে এর কারণে জামাত ত্যাগ করে। অথবা তাহারাত ও সালাতের নিয়তে সে সন্দেহে পোষণ করে, তারপর সে নামাজ বা ওজু পুনরায় আদায় করে ; এভাবে তার উপর নামাজ কঠিন ও বোঝা স্বরূপ হয়ে পড়ে, এমনকি সে নামাজ ছেড়ে দেয়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। এভাবেই কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
هلك المتنطعون . قالها ثلاثا . رواه مسلم (2670)
চরমপন্থীরা ধ্বংস হয়েছে—তিন বার বলেছেন। [মুসলিম : ২৬৭০]
هلك المتنطعون . قالها ثلاثا . رواه مسلم (2670)
চরমপন্থীরা ধ্বংস হয়েছে—তিন বার বলেছেন। [মুসলিম : ২৬৭০]
মুসলমানকে শয়তানের প্রবেশ পথ সম্পর্কে জানতে হবে, এবং এও জানতে হবে এই কাজগুলো শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়। যে ব্যক্তি ওজুতে তিন বারের অধিক ধৌত করে তার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
فمن زاد فقد أساء وتعدى وظلم .
যে অতিরিক্ত করল সে মন্দ কাজ করল এবং জুলুম করল। [নাসায়ী : ১৪০, ইবনে মাজাহ : ৪২২। সহিহ নাসায়ী লিল আলবানি : ১৩৬]
অতএব সওয়াব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সে তিরস্কার ও দুর্ভোগের শিকার হবে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের এবাদত পালনের ক্ষেত্রে ভুল ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটতে পারে। তবে তা নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া জায়েজ নেই। যদি তা নিছক ধারণা হয়ে থাকে বা কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর পুনরাবৃত্তি ঘটে, অথবা যদি এমনটি এবাদতের পরে হয়ে থাকে। তাবে যদি মজবুত ভাবে সন্দিহান হয়ে থাকে যে, সে দুই সেজদা আদায় করেছে না এক সেজদা—এক্ষেত্রে তার কাছে যে ধারণাটি প্রাধান্য পাবে সেটাকেই গ্রহণ করবে। আর যদি কোন ধারণা প্রাধান্য না পায় তবে নিশ্চিত বিষয় তথা এক সেজদা হিসেবে আমল করবে। অত:পর দ্বিতীয় সেজদা আদায় করবে। তার নামাজের পূর্ণতা ও শয়তানের শাস্তি স্বরূপ এতটুকুই যথেষ্ট। [মুসলিম : ৫৭১] ওয়াসওসায় আক্রান্ত ব্যক্তির এতটুকু জানা যথেষ্ট যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কীভাবে ওজু ও গোসল করতেন। এবং কীভাবে আপন প্রভুর এবাদত করতেন ? তিনি এক মুদ দিয়ে ওজু করতেন। মুদ হল মধ্যম গড়নের ব্যক্তির দুই তালুর সমপরিমাণ ; এবং এক সা’ দিয়ে গোসল সারতেন। এক সা’ হল চার মুদের সমপরিমাণ। ফকিহ আলেমগণ মানুষের জন্যে বেঁচে থাকা কঠিন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সহজ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেমন পথ-ঘাটের কাদা যা সাধারণত নাপাক থাকে তা থেকে কাপড় ধোয়া জরুরি নয়। এমনিভাবে ঘরের ছাদ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি—যদি সেখানে না-পাকি না থাকার সম্পর্কে জানা থেকে। ইসলামের বিধান হল সহজীকরণ ও অসুবিধা দূরীকরন—
يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ . ﴿البقرة : 185﴾
‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের (জীবন) আসান করে দিতে চান, আল্লাহ তাআলা কখনোই তোমাদের জন্য কঠোর করে দিতে চান না। [আর-বাকারা : ২৮৫]
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ . ﴿الحج : 78﴾
এবং এ জীবন বিধানের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেননি। [আল-হজ্জ : ৭৮] আর সর্বাধিক ক্ষতিকর ওয়াসওয়াসা ও সন্দেহ হচ্ছে যা আক্বীদা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তাই এ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা জরুরি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
يأتي الشيطان أحدكم فيقول : من خلق كذا؟ من خلق كذا؟ حتى يقول : من خلق ربك؟ فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته . رواه البخاري (3276) ، ومسلم (134).
তোমাদের কারো নিকট শয়তান এসে বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছেন ? ওটা কে সৃষ্টি করেছেন ? এভাবে এক পর্যায়ে সে জিজ্ঞাসা করে তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছেন ? যখন কেউ এ পর্যন্ত পৌঁছে যায় সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে এবং নিজেকে বিরত রাখবে। [বোখারী : ৩২৭৬। মুসলিম : ১৩৪] এসব ভাব-কল্পনা থেকে কেউই তেমন নিরাপদ নয়। সাহাবায়ে কেরাম রা.-ও এ জাতীয় কল্পনায় নিমজ্জিত হতেন। তাই তারা খুব ভয় পেতেন এবং এ বিষয়ে কোন কথাই বলতেন না। এবং তারা রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এ বলে অভিযোগ করতেন—
إنا نجد في أنفسنا ما يتعاظم أحدنا أن يتكلم به، قال : وقد وجدتموه؟ قالوا : نعم، قال ذاك صريح الإيمان . أخرجه مسلم (132) ، وفي رواية قال : الله أكبر، الحمد لله الذي رد أمره إلى الوسوسة . ابن حبان ( الإحسان 147) ، وصحح المحقق شعيب الأرناوط إسناده .
আমরা আমাদের হৃদয়ে এমন ভাব-কল্পনা অনুভব করি যা বলা আমাদের কেউ কেউ সাংঘাতিক মনে করে। তিনি বললেন, তোমরা এমন পেয়েছ ? তারা বলল হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটাই হচ্ছে সুস্পষ্ট ঈমান। ভিন্ন আরেক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, আল্লাহু আকবার ! সকল প্রশংসা ঐ সত্তার যিনি তার বিষয়কে ওয়াসওয়াসার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ [ইবনে হিববান : ইসান অধ্যায় : ১৪৭] এসব প্ররোচনা যখন মানুষের মনকে প্রভাবিত করা সত্ত্বেও এ বিষয়ে সে কথা বলবে না এটাই প্রমাণ করবে যে শয়তান তার চক্রান্তে ব্যর্থ, অসফল হয়েছে। অত:পর মানুষ যখন এই ওয়াসওয়াসাকে প্রতিহত করবে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে, এবং জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে ও সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় ও ঈমানকে নতুন করার মাধ্যমে অথবা আল্লাহর নিকট দোয়া ও শয়তানের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করার আবেদনের মাধ্যমে, তখন শয়তান তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। বরং তা তার ঈমান ও সওয়াব বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পরিগণিত হবে। অতএব সমস্ত প্রশংসা মহামহিম আল্লাহর জন্য।
فمن زاد فقد أساء وتعدى وظلم .
যে অতিরিক্ত করল সে মন্দ কাজ করল এবং জুলুম করল। [নাসায়ী : ১৪০, ইবনে মাজাহ : ৪২২। সহিহ নাসায়ী লিল আলবানি : ১৩৬]
অতএব সওয়াব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সে তিরস্কার ও দুর্ভোগের শিকার হবে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের এবাদত পালনের ক্ষেত্রে ভুল ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটতে পারে। তবে তা নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া জায়েজ নেই। যদি তা নিছক ধারণা হয়ে থাকে বা কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর পুনরাবৃত্তি ঘটে, অথবা যদি এমনটি এবাদতের পরে হয়ে থাকে। তাবে যদি মজবুত ভাবে সন্দিহান হয়ে থাকে যে, সে দুই সেজদা আদায় করেছে না এক সেজদা—এক্ষেত্রে তার কাছে যে ধারণাটি প্রাধান্য পাবে সেটাকেই গ্রহণ করবে। আর যদি কোন ধারণা প্রাধান্য না পায় তবে নিশ্চিত বিষয় তথা এক সেজদা হিসেবে আমল করবে। অত:পর দ্বিতীয় সেজদা আদায় করবে। তার নামাজের পূর্ণতা ও শয়তানের শাস্তি স্বরূপ এতটুকুই যথেষ্ট। [মুসলিম : ৫৭১] ওয়াসওসায় আক্রান্ত ব্যক্তির এতটুকু জানা যথেষ্ট যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কীভাবে ওজু ও গোসল করতেন। এবং কীভাবে আপন প্রভুর এবাদত করতেন ? তিনি এক মুদ দিয়ে ওজু করতেন। মুদ হল মধ্যম গড়নের ব্যক্তির দুই তালুর সমপরিমাণ ; এবং এক সা’ দিয়ে গোসল সারতেন। এক সা’ হল চার মুদের সমপরিমাণ। ফকিহ আলেমগণ মানুষের জন্যে বেঁচে থাকা কঠিন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সহজ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেমন পথ-ঘাটের কাদা যা সাধারণত নাপাক থাকে তা থেকে কাপড় ধোয়া জরুরি নয়। এমনিভাবে ঘরের ছাদ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি—যদি সেখানে না-পাকি না থাকার সম্পর্কে জানা থেকে। ইসলামের বিধান হল সহজীকরণ ও অসুবিধা দূরীকরন—
يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ . ﴿البقرة : 185﴾
‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের (জীবন) আসান করে দিতে চান, আল্লাহ তাআলা কখনোই তোমাদের জন্য কঠোর করে দিতে চান না। [আর-বাকারা : ২৮৫]
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ . ﴿الحج : 78﴾
এবং এ জীবন বিধানের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেননি। [আল-হজ্জ : ৭৮] আর সর্বাধিক ক্ষতিকর ওয়াসওয়াসা ও সন্দেহ হচ্ছে যা আক্বীদা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তাই এ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা জরুরি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
يأتي الشيطان أحدكم فيقول : من خلق كذا؟ من خلق كذا؟ حتى يقول : من خلق ربك؟ فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته . رواه البخاري (3276) ، ومسلم (134).
তোমাদের কারো নিকট শয়তান এসে বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছেন ? ওটা কে সৃষ্টি করেছেন ? এভাবে এক পর্যায়ে সে জিজ্ঞাসা করে তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছেন ? যখন কেউ এ পর্যন্ত পৌঁছে যায় সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে এবং নিজেকে বিরত রাখবে। [বোখারী : ৩২৭৬। মুসলিম : ১৩৪] এসব ভাব-কল্পনা থেকে কেউই তেমন নিরাপদ নয়। সাহাবায়ে কেরাম রা.-ও এ জাতীয় কল্পনায় নিমজ্জিত হতেন। তাই তারা খুব ভয় পেতেন এবং এ বিষয়ে কোন কথাই বলতেন না। এবং তারা রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এ বলে অভিযোগ করতেন—
إنا نجد في أنفسنا ما يتعاظم أحدنا أن يتكلم به، قال : وقد وجدتموه؟ قالوا : نعم، قال ذاك صريح الإيمان . أخرجه مسلم (132) ، وفي رواية قال : الله أكبر، الحمد لله الذي رد أمره إلى الوسوسة . ابن حبان ( الإحسان 147) ، وصحح المحقق شعيب الأرناوط إسناده .
আমরা আমাদের হৃদয়ে এমন ভাব-কল্পনা অনুভব করি যা বলা আমাদের কেউ কেউ সাংঘাতিক মনে করে। তিনি বললেন, তোমরা এমন পেয়েছ ? তারা বলল হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটাই হচ্ছে সুস্পষ্ট ঈমান। ভিন্ন আরেক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, আল্লাহু আকবার ! সকল প্রশংসা ঐ সত্তার যিনি তার বিষয়কে ওয়াসওয়াসার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ [ইবনে হিববান : ইসান অধ্যায় : ১৪৭] এসব প্ররোচনা যখন মানুষের মনকে প্রভাবিত করা সত্ত্বেও এ বিষয়ে সে কথা বলবে না এটাই প্রমাণ করবে যে শয়তান তার চক্রান্তে ব্যর্থ, অসফল হয়েছে। অত:পর মানুষ যখন এই ওয়াসওয়াসাকে প্রতিহত করবে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে, এবং জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে ও সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় ও ঈমানকে নতুন করার মাধ্যমে অথবা আল্লাহর নিকট দোয়া ও শয়তানের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করার আবেদনের মাধ্যমে, তখন শয়তান তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। বরং তা তার ঈমান ও সওয়াব বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পরিগণিত হবে। অতএব সমস্ত প্রশংসা মহামহিম আল্লাহর জন্য।
মানুষকে ভালো কাজ ভুলিয়ে দিয়ে এবং মন্দ-কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শয়তান মানুষকে পাপে লিপ্ত করে। অথবা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভুলিয়ে অর্থহীন কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যেন তাতে গুরুত্ব দিয়ে তার ওপর আমল করে।
কেবল ওইসব লোকেরা প্রায়শই তাতে লিপ্ত হয় যারা শয়তানের পদক্ষেপে সাড়া দেয় ও তার বেশি আনুগত্য করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُولَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ . ﴿المجادلة : 19﴾
‘(আসলে) শয়তান এদের ওপর পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করে নিয়েছে, শয়তান এদের আল্লাহর স্মরণ (সম্পূর্ণ) ভুলিয়ে দিয়েছে, এরা হচ্ছে শয়তানের দল, হে রাসূল তুমি জেনে রাখো, শয়তানের দলের ধ্বংস অনিবার্য।’ [মুজাদালা : ১৯]
এইসব ব্যাধির চিকিৎসা হচ্ছে মানুষ বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ করবে এবং পাপাচার থেকে দ্রুত তাওবা করবে। কল্যাণের দিকে এগিয়ে যাবে এবং মন্দ ও অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آَيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ . ﴿الأنعام : 68﴾
‘তুমি যখন এমন লোককে দেখতে পাও যারা আমার আয়াত সমূহকে নিয়ে হাসি বিদ্রূপ করছে, তাহলে তুমি তাদের কাছ থেকে সরে এসো, যতক্ষণ না তারা অন্য কিছু বলতে শুরু করে, যদি কখনো, শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে সেখানে বসিয়ে) রাখে, তাহলে মনে পড়ার পর জালেম সম্প্রদায়ের সাথে আর বসে থেকো না। [আল-আনআম : ৬৮]
কেবল ওইসব লোকেরা প্রায়শই তাতে লিপ্ত হয় যারা শয়তানের পদক্ষেপে সাড়া দেয় ও তার বেশি আনুগত্য করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُولَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ . ﴿المجادلة : 19﴾
‘(আসলে) শয়তান এদের ওপর পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করে নিয়েছে, শয়তান এদের আল্লাহর স্মরণ (সম্পূর্ণ) ভুলিয়ে দিয়েছে, এরা হচ্ছে শয়তানের দল, হে রাসূল তুমি জেনে রাখো, শয়তানের দলের ধ্বংস অনিবার্য।’ [মুজাদালা : ১৯]
এইসব ব্যাধির চিকিৎসা হচ্ছে মানুষ বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ করবে এবং পাপাচার থেকে দ্রুত তাওবা করবে। কল্যাণের দিকে এগিয়ে যাবে এবং মন্দ ও অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آَيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ . ﴿الأنعام : 68﴾
‘তুমি যখন এমন লোককে দেখতে পাও যারা আমার আয়াত সমূহকে নিয়ে হাসি বিদ্রূপ করছে, তাহলে তুমি তাদের কাছ থেকে সরে এসো, যতক্ষণ না তারা অন্য কিছু বলতে শুরু করে, যদি কখনো, শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে সেখানে বসিয়ে) রাখে, তাহলে মনে পড়ার পর জালেম সম্প্রদায়ের সাথে আর বসে থেকো না। [আল-আনআম : ৬৮]
শয়তান তার কাফের ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী দল ও বাহিনী থেকে মুমিনদের ভয় দেখায়। এবং তাদেরকে নিজেদের শক্তি ও কঠোরতা বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। যেন মানুষ শয়তানের বাহিনীর আনুগত্য করেও তাদের অপছন্দ এবাদত ও আনুগত্য ছেড়ে দেয়া। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তা থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ . ﴿آل عمران : 175﴾
‘এই হচ্ছে তোমাদের (প্ররোচনাদানকারী) শয়তান, তারা (শত্রুপক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তাদের আপন জনদের ভয় দেখাচ্ছিল, তোমরা কোন অবস্থায়ই তাদের (এ হুমকিকে) ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও। [আল-ইমরান : ১৭৫] বিভিন্ন ভীতিকর স্বপ্ন ও ক্লান্তিকর চিন্তা-ভাবনা উসকে দেওয়ার মাধ্যমে এই ভয় দেখানো হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الرؤيا الصالحة من الله، والحلم من الشيطان، فإذا حلم أحدكم حلما يخافه فليبصق عن يساره، وليتعوذ بالله من شرها، فإنها لا تضره . ( رواه البخاري (3292) ، ومسلم (2261) وفيه أن البصق يكون ثلاثا .
‘সুন্দর ও কল্যাণময় স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আর স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। তোমাদের কেউ যখন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে সে যেন তার বাম পার্শ্বে থু-থু নিক্ষেপ করে এবং তার অকল্যাণ হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় ফলে তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [বোখারী : ৩২৯২। মুসলিম : ২২৬১]
إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ . ﴿آل عمران : 175﴾
‘এই হচ্ছে তোমাদের (প্ররোচনাদানকারী) শয়তান, তারা (শত্রুপক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তাদের আপন জনদের ভয় দেখাচ্ছিল, তোমরা কোন অবস্থায়ই তাদের (এ হুমকিকে) ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও। [আল-ইমরান : ১৭৫] বিভিন্ন ভীতিকর স্বপ্ন ও ক্লান্তিকর চিন্তা-ভাবনা উসকে দেওয়ার মাধ্যমে এই ভয় দেখানো হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الرؤيا الصالحة من الله، والحلم من الشيطان، فإذا حلم أحدكم حلما يخافه فليبصق عن يساره، وليتعوذ بالله من شرها، فإنها لا تضره . ( رواه البخاري (3292) ، ومسلم (2261) وفيه أن البصق يكون ثلاثا .
‘সুন্দর ও কল্যাণময় স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আর স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। তোমাদের কেউ যখন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে সে যেন তার বাম পার্শ্বে থু-থু নিক্ষেপ করে এবং তার অকল্যাণ হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় ফলে তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [বোখারী : ৩২৯২। মুসলিম : ২২৬১]
শয়তান সর্বাত্মক চেষ্টা করে আদম সন্তানকে ক্ষতি ও বিপদে নিক্ষেপ করতে এবং ঐ সময়টাতে সে ঐ কাজের পরিণতি সম্পর্কে তাকে অন্ধকরে রাখে ফলে বনী আদম ঐ কাজটি করে। অত:পর যখন সে ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে শয়তান তার থেকো মুক্ত হেয় যায়। তার পর সে কাজের ফলাফল প্রকাশ পেলে বনী আদম একাই তার দায়ভার বহন কারে। শয়তান নিজেকে দোষমুক্ত করে রাখে।
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ . فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِينَ . ﴿الحشر : 17﴾
এদের (আরেকটি) তুলনা হচ্ছে শয়তানের মতো, শয়তান এসে যখন মানুষদের বলে, (প্রথমে) আল্লাহকে অস্বীকার করো, অত:পর (সত্যিই) যখন সে (আল্লাহকে) অস্বীকার করে তখন (মুহূর্তেই) সে (বোল পালটে ফেলে এবং) বলে এখন আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি (নিজে) সৃষ্টি লোকের মালিক আল্লাহকে ভয় করি, অত:পর (শয়তান ও তার অনুসারী) এ দু’জনের পরিণাম হবে জাহান্নাম, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে, আর এটাই হচ্ছে জালেমদের শাস্তি। [আল হাশর : ১৬-১৭।] মানুষের অধিকাংশ আচার-আচরণের ক্ষেত্রে এ দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। একবার মেকদাদ রা. এর ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটেছিল। তিনি এই মনে করে সমস্ত দুধ পান করে ফেললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের নিকট পানাহার করবেন। অত:পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত বোধ করেন। [মুসলিম : ২০৫৫।]
মুমিন ব্যক্তি মাত্রই ধীমান, দূরদর্শী ও বুদ্ধিমান হয়ে থাকে, তাই সে শয়তানের চক্রান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারে। যদিও শয়তান তাকে একবার চক্রান্ত জালে নিক্ষেপ কারে, তার পর থেকে সে সম্পূর্ণ সতর্ক ও সজাগ হয়ে পায়। এ কারণেই মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لايلدغ المؤمن من جحر واحد مرتين . رواه البخاري (6133) ، ومسلم (2998).
মুমিন এক গর্তে দু’বার দংশিত হয় না। [বোখারী : ৬১৩৩। মুসলিম : ২৯৯৮।] শয়তান মানুষকে দুশ্চিন্তায় নিক্ষেপ করার ভয় থেকেই মানুষকে তার অপর ভাইয়ের সঙ্গে চুপিসারে কথা বলা থেকে নিষেধ করা হয়েছে, যেখানে তাদের উভয়ের সঙ্গে তৃতীয় আরেকজন উপস্থিত থাকে।
إذاكانوا ثلاثة فلا يتناجى اثنان دون ثالث، فإن ذلك يحزنه .
যখন তারা তিনজন থাকবে, তৃতীয়জনকে বাদ রেখে দু’জন কানাকানি কথাবার্তা বলবেন না, কেননা তা অপরজনকে দুশ্চিন্তায় ফেলবে। [বোখারী : ৬২৮৮। মুসলিম :২১৮৩।] যেমন শয়তান সব সময় অব্যাহত ভাবে চেষ্টা করে কাফের ও ফাসেক ব্যক্তিদেরকে মুমিনদের দু:খ কষ্ট দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে। যেমন তারা মুমিনদের ব্যাপারে কানাঘুসার মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে।
إِنَّمَا النَّجْوَى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ . ﴿المجادلة :10﴾
‘(আসলে) এদের গোপন সলাপরামর্শ তো হচ্ছে একটা শয়তানি প্ররোচনা, যার একমাত্র) উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদার লোকদের কষ্ট দেয়া (অথচ এরা জানে না) আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা ব্যতিরেকে তার ঈমানদারদের বিন্দুমাত্রও কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না,(তাই) ঈমানদারদের উচিত (হামেশা) আল্লাহর ওপরই নির্ভর করা।) [আল-মোযাদালাহ : ১০।] তাই মানুষের জন্য উচিত হচ্ছে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকা। এবং এমন বস্ত্ত থেকে বিরত থাকা যা তার মুসলমান ভাইদের কষ্টের কারণ হয়। আর যখন তার ওপর এমন দুশ্চিন্তা পতিত হবে সওয়াবের আশায় সে ধৈর্য ধারণ করবে। অত:পর সে পুরস্কৃত হবে। তবে এখানে বিশেষ গুরুত্বের কথা হচ্ছে, এই দু:খ বেদনা ও দুশ্চিন্তা যেন হতাশা ও দুনিয়া আখেরাতের কাজ ত্যাগের কারণ না হয়। এবং দুনিয়ার যে প্রাপ্তি খোয়া গেছে তাতে যেন অধিক আফসোস সৃষ্টি না হয়, এবং দ্বীন থেকে যা ছুটে গেছে তার জন্য তাওবা করবে এবং তার ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করবে। যাতে একই ভুল দ্বিতীয় বার পুনরাবৃত্তি না হয়। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিক নির্দেশনা কতইনা সুন্দর।
المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف، وفي كل خير . احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجز، وإن أصابك شيئ فلا تقل : لو أني فعلت كان كذا وكذا، ولكن قل : قدر الله وما شاء فعل، فإن لو تفتح عمل الشيطان . رواه مسلم (2664).
‘আল্লাহর নিকট শক্তিমান মুমিন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা অধিক উত্তম এবং সকল ভাল কাজে যা তোমার উপকারে আসবে এমন বস্ত্তর প্রতি লালায়িত হও। এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করও অক্ষম হয়োনা। তবে যদি কোন মুসিবত এসে যায় তাহলে বলো না, আমি যদি এমন টি করতাম তাহলে এমন হতো, বরং বলো, আল্লাহ তাআলা তাকদীরে যা রেখেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেন, কেননা যদি শয়তানের কাজ উন্মুক্ত করে দেয়। [মুসলিম : ২৬৬৪।]
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ . فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِينَ . ﴿الحشر : 17﴾
এদের (আরেকটি) তুলনা হচ্ছে শয়তানের মতো, শয়তান এসে যখন মানুষদের বলে, (প্রথমে) আল্লাহকে অস্বীকার করো, অত:পর (সত্যিই) যখন সে (আল্লাহকে) অস্বীকার করে তখন (মুহূর্তেই) সে (বোল পালটে ফেলে এবং) বলে এখন আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি (নিজে) সৃষ্টি লোকের মালিক আল্লাহকে ভয় করি, অত:পর (শয়তান ও তার অনুসারী) এ দু’জনের পরিণাম হবে জাহান্নাম, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে, আর এটাই হচ্ছে জালেমদের শাস্তি। [আল হাশর : ১৬-১৭।] মানুষের অধিকাংশ আচার-আচরণের ক্ষেত্রে এ দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। একবার মেকদাদ রা. এর ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটেছিল। তিনি এই মনে করে সমস্ত দুধ পান করে ফেললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের নিকট পানাহার করবেন। অত:পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত বোধ করেন। [মুসলিম : ২০৫৫।]
মুমিন ব্যক্তি মাত্রই ধীমান, দূরদর্শী ও বুদ্ধিমান হয়ে থাকে, তাই সে শয়তানের চক্রান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারে। যদিও শয়তান তাকে একবার চক্রান্ত জালে নিক্ষেপ কারে, তার পর থেকে সে সম্পূর্ণ সতর্ক ও সজাগ হয়ে পায়। এ কারণেই মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لايلدغ المؤمن من جحر واحد مرتين . رواه البخاري (6133) ، ومسلم (2998).
মুমিন এক গর্তে দু’বার দংশিত হয় না। [বোখারী : ৬১৩৩। মুসলিম : ২৯৯৮।] শয়তান মানুষকে দুশ্চিন্তায় নিক্ষেপ করার ভয় থেকেই মানুষকে তার অপর ভাইয়ের সঙ্গে চুপিসারে কথা বলা থেকে নিষেধ করা হয়েছে, যেখানে তাদের উভয়ের সঙ্গে তৃতীয় আরেকজন উপস্থিত থাকে।
إذاكانوا ثلاثة فلا يتناجى اثنان دون ثالث، فإن ذلك يحزنه .
যখন তারা তিনজন থাকবে, তৃতীয়জনকে বাদ রেখে দু’জন কানাকানি কথাবার্তা বলবেন না, কেননা তা অপরজনকে দুশ্চিন্তায় ফেলবে। [বোখারী : ৬২৮৮। মুসলিম :২১৮৩।] যেমন শয়তান সব সময় অব্যাহত ভাবে চেষ্টা করে কাফের ও ফাসেক ব্যক্তিদেরকে মুমিনদের দু:খ কষ্ট দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে। যেমন তারা মুমিনদের ব্যাপারে কানাঘুসার মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে।
إِنَّمَا النَّجْوَى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ . ﴿المجادلة :10﴾
‘(আসলে) এদের গোপন সলাপরামর্শ তো হচ্ছে একটা শয়তানি প্ররোচনা, যার একমাত্র) উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদার লোকদের কষ্ট দেয়া (অথচ এরা জানে না) আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা ব্যতিরেকে তার ঈমানদারদের বিন্দুমাত্রও কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না,(তাই) ঈমানদারদের উচিত (হামেশা) আল্লাহর ওপরই নির্ভর করা।) [আল-মোযাদালাহ : ১০।] তাই মানুষের জন্য উচিত হচ্ছে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকা। এবং এমন বস্ত্ত থেকে বিরত থাকা যা তার মুসলমান ভাইদের কষ্টের কারণ হয়। আর যখন তার ওপর এমন দুশ্চিন্তা পতিত হবে সওয়াবের আশায় সে ধৈর্য ধারণ করবে। অত:পর সে পুরস্কৃত হবে। তবে এখানে বিশেষ গুরুত্বের কথা হচ্ছে, এই দু:খ বেদনা ও দুশ্চিন্তা যেন হতাশা ও দুনিয়া আখেরাতের কাজ ত্যাগের কারণ না হয়। এবং দুনিয়ার যে প্রাপ্তি খোয়া গেছে তাতে যেন অধিক আফসোস সৃষ্টি না হয়, এবং দ্বীন থেকে যা ছুটে গেছে তার জন্য তাওবা করবে এবং তার ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করবে। যাতে একই ভুল দ্বিতীয় বার পুনরাবৃত্তি না হয়। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিক নির্দেশনা কতইনা সুন্দর।
المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف، وفي كل خير . احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجز، وإن أصابك شيئ فلا تقل : لو أني فعلت كان كذا وكذا، ولكن قل : قدر الله وما شاء فعل، فإن لو تفتح عمل الشيطان . رواه مسلم (2664).
‘আল্লাহর নিকট শক্তিমান মুমিন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা অধিক উত্তম এবং সকল ভাল কাজে যা তোমার উপকারে আসবে এমন বস্ত্তর প্রতি লালায়িত হও। এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করও অক্ষম হয়োনা। তবে যদি কোন মুসিবত এসে যায় তাহলে বলো না, আমি যদি এমন টি করতাম তাহলে এমন হতো, বরং বলো, আল্লাহ তাআলা তাকদীরে যা রেখেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেন, কেননা যদি শয়তানের কাজ উন্মুক্ত করে দেয়। [মুসলিম : ২৬৬৪।]
প্রবৃত্তির অনেক ফেতনা রয়েছে। তবে সর্বাধিক কঠিন ও বিপজ্জনক হচ্ছে বিত্ত, প্রতিপত্তি ও নারীর প্রতি লোভ লালসা।
সম্পদ ও খ্যাতির মোহ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ما ذئبان جائعان أرسلا في غنم بأفسد لها من حرص المرء على الشرف والمال لدينه . رواه الترمذي (2376) ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (1935).
দু’টি ক্ষুধার্ত বাঘকে একটি বকরির কাছে ছেড়ে দেওয়ার চেয়েও অধিক ক্ষতিকর হচ্ছে সম্পদও খ্যাতির প্রতি মানুষের লোভ লালসা, তার দ্বীনের জন্য। [তিরমিজি : ২৩৭৬। সহিহ আল-জামে : ১৯৩৫।] সম্পদের লোভ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ হচ্ছে, শরিয়ত সম্মত উপায়ে ধন-সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা তবে তা হবে অন্যান্য করণীয় দায়িত্বে অবহেলা ও অলসতা ছাড়া মধ্যম পন্থায়। পাশাপাশি অর্জিত সম্পদের জাকাতসহ বিভিন্ন হক আদায়ের মাধ্যমে। ধৈর্য উদ্দেশ্যও নিজের প্রয়োজনে কার্পণ্য ও অপচয় করবে না।
নারী সম্পর্কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إن الدنيا حلوة حضرة، وإن الله مستخلفكم فيها فينظر كيف تعلمون، فاتقوا الدنيا، واتقوا النساء، فإن أول فتنة بني إسرائيل كانت في النساء، رواه مسلم (2742).
নি:সন্দেহে দুনিয়া হচ্ছে সজীবও ভোগ্য বস্ত্ত, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দুনিয়ায় প্রতিনিধি বানাবেন, অত:পর তিনি লক্ষ্য করবেন তোমরা কেমন কাজ কর। তোমরা দুনিয়াকে ভয় করো এবং নারীকে। কেননা বনী ইসরাইলের প্রথম ফেতনা নারীদের মধ্যে ছিল। [মুসলিম : ২৭৪২।]
একারণেই এই ফেতনা সমূলে বন্ধ করার জন্যে শরিয়তের অনেক সতর্ক মূলক বিধান আরোপিত হয়েছে।
সেই আলোকে এবং নিম্নমুখী রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং একাকিত্বও মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপরন্তু মহিলাদের প্রকাশমান হওয়া ও সৌন্দর্য প্রকাশ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী,
ألا لايخلون رجل بامرأة إلا أن كان ثالهما الشيطان، رواه الترمذي (1173). وقال : هذا حديث حسن صحيح غريب، وصححه الألباني في صحيح سنن الترمذي (936).
খবরদার! কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সঙ্গে একাকিত্বে রাত না কাটায়। তাহলে তাদের তৃতীয় জন হবে শয়তান। আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
المرأة عورة، فإذا خرجت استشرفها الشيطان، رواه الترمذي (1173) وقال : هذا حديث حسن صحيح غريب، وصححه الألباني في صحيح سنن الترمذي (936).
‘মহিলা হচ্ছে আবৃত, অত:পর সে যখন বের হয় শয়তান তাকে উঁকিঝুকি দিয়ে দেখে। [তিরমিজি : ১১৭৩। সহিহ সুনানে তিরমিজি : ৯৩৬।] মুবারকপুরী এই শব্দের অর্থ করেছেন, পুরুষদের দৃষ্টিতে তাকে সুন্দর শোভন করে পেশ করা হয়। অথবা শয়তান তাকে দেখে তার মাধ্যমে অন্যকে অথবা তাকে বিভ্রান্ত করার জন্যে। [তুহফাতুল আহওয়াজি : ৪/২২৭।]
সম্পদ ও খ্যাতির মোহ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ما ذئبان جائعان أرسلا في غنم بأفسد لها من حرص المرء على الشرف والمال لدينه . رواه الترمذي (2376) ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (1935).
দু’টি ক্ষুধার্ত বাঘকে একটি বকরির কাছে ছেড়ে দেওয়ার চেয়েও অধিক ক্ষতিকর হচ্ছে সম্পদও খ্যাতির প্রতি মানুষের লোভ লালসা, তার দ্বীনের জন্য। [তিরমিজি : ২৩৭৬। সহিহ আল-জামে : ১৯৩৫।] সম্পদের লোভ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ হচ্ছে, শরিয়ত সম্মত উপায়ে ধন-সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা তবে তা হবে অন্যান্য করণীয় দায়িত্বে অবহেলা ও অলসতা ছাড়া মধ্যম পন্থায়। পাশাপাশি অর্জিত সম্পদের জাকাতসহ বিভিন্ন হক আদায়ের মাধ্যমে। ধৈর্য উদ্দেশ্যও নিজের প্রয়োজনে কার্পণ্য ও অপচয় করবে না।
নারী সম্পর্কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إن الدنيا حلوة حضرة، وإن الله مستخلفكم فيها فينظر كيف تعلمون، فاتقوا الدنيا، واتقوا النساء، فإن أول فتنة بني إسرائيل كانت في النساء، رواه مسلم (2742).
নি:সন্দেহে দুনিয়া হচ্ছে সজীবও ভোগ্য বস্ত্ত, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দুনিয়ায় প্রতিনিধি বানাবেন, অত:পর তিনি লক্ষ্য করবেন তোমরা কেমন কাজ কর। তোমরা দুনিয়াকে ভয় করো এবং নারীকে। কেননা বনী ইসরাইলের প্রথম ফেতনা নারীদের মধ্যে ছিল। [মুসলিম : ২৭৪২।]
একারণেই এই ফেতনা সমূলে বন্ধ করার জন্যে শরিয়তের অনেক সতর্ক মূলক বিধান আরোপিত হয়েছে।
সেই আলোকে এবং নিম্নমুখী রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং একাকিত্বও মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপরন্তু মহিলাদের প্রকাশমান হওয়া ও সৌন্দর্য প্রকাশ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী,
ألا لايخلون رجل بامرأة إلا أن كان ثالهما الشيطان، رواه الترمذي (1173). وقال : هذا حديث حسن صحيح غريب، وصححه الألباني في صحيح سنن الترمذي (936).
খবরদার! কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সঙ্গে একাকিত্বে রাত না কাটায়। তাহলে তাদের তৃতীয় জন হবে শয়তান। আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
المرأة عورة، فإذا خرجت استشرفها الشيطان، رواه الترمذي (1173) وقال : هذا حديث حسن صحيح غريب، وصححه الألباني في صحيح سنن الترمذي (936).
‘মহিলা হচ্ছে আবৃত, অত:পর সে যখন বের হয় শয়তান তাকে উঁকিঝুকি দিয়ে দেখে। [তিরমিজি : ১১৭৩। সহিহ সুনানে তিরমিজি : ৯৩৬।] মুবারকপুরী এই শব্দের অর্থ করেছেন, পুরুষদের দৃষ্টিতে তাকে সুন্দর শোভন করে পেশ করা হয়। অথবা শয়তান তাকে দেখে তার মাধ্যমে অন্যকে অথবা তাকে বিভ্রান্ত করার জন্যে। [তুহফাতুল আহওয়াজি : ৪/২২৭।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إن الشيطان قد أيس أن يعبده المصلون في جزيرة العرب، ولكن في التحريش بينهم، رواه مسلم (2812).
শয়তান এই বিষয়ে আশা হত হয়েছে আরব উপদ্বীপে মুসল্লিরা তার উপাসনা করবে তবে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব, সংঘাত সৃষ্টিতে নয়। [মুসলিম : ২৮১২।] এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আরব উপদ্বীপের অধিবাসীর তার এবাদত করবে এ বিষয়ে সে হতাশ। তবে সে তাদের মধ্যে বিবাদ বিসংবাদ কৃপণতা, হিংসা, যুদ্ধ ও ফেতনার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করবে। [নববী মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রহন্থ : ১৭/২২৮।]
إن الشيطان قد أيس أن يعبده المصلون في جزيرة العرب، ولكن في التحريش بينهم، رواه مسلم (2812).
শয়তান এই বিষয়ে আশা হত হয়েছে আরব উপদ্বীপে মুসল্লিরা তার উপাসনা করবে তবে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব, সংঘাত সৃষ্টিতে নয়। [মুসলিম : ২৮১২।] এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আরব উপদ্বীপের অধিবাসীর তার এবাদত করবে এ বিষয়ে সে হতাশ। তবে সে তাদের মধ্যে বিবাদ বিসংবাদ কৃপণতা, হিংসা, যুদ্ধ ও ফেতনার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করবে। [নববী মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রহন্থ : ১৭/২২৮।]
সোলাইমান বিন সারদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, ইতিমধ্যে দু’জন লোক পরস্পরকে গালমন্দ করছে। তাদের একজনের চেহারার রক্তিম হয়ে গেল এবং তার শিরা সমূহ ফুলে গেল। অত:পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال : أعوذ بالله من الشيطان ذهب عنه ما يجد، فقالوا له إن النبي صلى الله عليه وسلم قال : تعوذ بالله من الشيطان، فقال : وهل بي جنون؟ ذكر النووي أن الحديث فيه أن الغضب في غير الله تعالى من نزغ الشيطان . شرح النووي على مسلم (16/246)
আমি এমন একটি শব্দ জানি যদি সে তা উচ্চারণ করে তার উপলব্ধি দূর হয়ে যাবে। যদি সে বলে আমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চাই তবে তার ক্ষোভ পড়ে যাবে। অত:পর সবাই তাকে বলল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাও, সে বলল আমার মধ্যে কি উন্মাদনার লক্ষণ আছে? নববী উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুতে ক্রোধ শয়তানের প্রভাব থেকে। [মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রহন্থ : ১৭/২২৮।] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ রাত্রিতে ভয় পেয়েছিলেন, যেদিন শয়তান দু’জনের সাহাবির অন্তরে কিছু কুমন্ত্রণা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। আলী ইবনে হুনাইন হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী সাফিয়্যা বনিতে হুয়াই তাকে সংবাদ দিয়েছে,
أنها جاءت رسول الله صلى الله عليه وسلم تزوره وهو معتكف في المسجد في العشرالغوابر من رمضان، فتحدثت عنده ساعة من العشاء، ثم قامت تنقلب، فقام معها النبي صلى الله يقلبها، حتى إذا بلغت باب المسجد الذي عند مسكن أم سلمة زوج النبي صلى الله عليه وسلم، مر بهما رجلان من الأنصار، فسلما على رسول الله ثم نفذا، فقال لهما رسول الله صلى الله عليه وسلم : على رسلكما إنما هي الصفية بنت حيي، قالا : سبحان الله يا رسول الله، وكبر عليهما ما قال، قال : إن الشيطان يجري من ابن آدم مبلغ الدم، وإني خشيت أن يقذف في قلوبكما . رواه البخاري (6219) ، ومسلم (2175)
তিনি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। ঐ মুহূর্তে তিনি মসজিদে রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ অবস্থায় ছিলেন। অত:পর তিনি তার সঙ্গে রাতে কিছুক্ষণ কথা বললেন, তার পর তিনি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালেন। তার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। তার পর যখন সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মে সালমার আবাস্থলে এর নিকট মসজিদের দরজায় পৌঁছোলেন, উভয়ের পাশ দিয়ে আনসারদের দু’জন ব্যক্তি অতিক্রম করল। উভয়ে রাসূল কে সালাম দিল। অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, সে হল সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই। উভয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুবহানাল্লাহ! রাসূল এর কথা উভয়ের কাছে বড় মনে হল। তিনি বললেন, নি:সন্দেহ শয়তান আদম সন্তানের রক্তের শিরায় উপশিরায় প্রবাহিত হয়। আমি ভয় করছি যে তোমাদের অন্তরে মন্দ ধরনা সৃষ্টি করে। ইবনে হাজর রহ. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উভয়ের মন্দ ধারণার কথা বলেন নি। কারণ তিনি উভয়ের ঈমানের দৃঢ়তার ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে উভয়ের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা পোষণ করেছেন, শয়তান তাদেরকে এ ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পারে। কেননা, তারা নিষ্পাপ নন। এ মন্দ ধারণা তাদের ধ্বংসের দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য এবং এরকম ঘটনায় তাদের পরবর্তীদের জন্য শিক্ষা স্বরূপ তিনি উভয়কে সঙ্গে সঙ্গে অবগত করালেন। [ফাতহুল বারি : ৪/৩২৮।] হাদিসে এসেছে,
التحرز من التعرض لسوء الظن . فتح الباري لابن حجر (4/329)
মন্দ ধারণার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে। [ফাতহুল বারি : ৪/৩২৯।] জাবের রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
إن إبليس يضع عرشه على الماء، ثم يبعث سراياه فأدناهم منه منزلة أعظمهم فتنة، يجيئ أحدهم فيقول : فعلت كذا وكذا، فيقول : ما صنعت شيئا، قال : ثم يجيئ أحدهم فيقول : ما تركته حتى فرقت بينه وبين امرأته، قال : فيدنيه منه ويقول : نعم أنت . قال الأعمش : أراه قال : فيلتزمه . رواه مسلم (2813).
শয়তান তার সিংহাসন পানির উপর স্থাপন করে, অত:পর তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে মর্যাদায় সর্বনিম্ম যে সে সবচে’ বড় ফেতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন আসে এবং বলে, আমি এই কাজ করেছি ওটা করেছি। শয়তান তাকে বলে, তুমি কিছুই করোনি। অত:পর তাদের আরেকজন এসে বলে আমি কোন কিছুই ছাড়িনি। এমনকি অমুক ও তার স্ত্রীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছি। অত:পর শয়তান তার নিকটে যাবে এবং বলবে হ্যাঁ, তুমিই আসল কাজ করেছ। অত:পর সে তাকে জড়িয়ে ধরবে। [মুসলিম : ২৮১৩।]
عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : لايشير أحدكم على أخيه بالسلاح فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار . رواه البخاري (7072)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ স্বীয় ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত করবে না। হতে পারে, অজান্তেই শয়তান হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে নিবে। যার ফলশ্রুতিতে সে জাহান্নামের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে। [বোখারী : ৭০৭২।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী আয়েশা রা. বর্ণনা করেন—
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم خرج من عندها ليلا، قالت : فغرت عليه فجاء فرأى ما أصنع، فقال : ما لك يا عائشة؟ أغرت؟ فقلت : وما لي لا يغار مثلي على مثلك؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أقد جاءك شيطانك؟ قالت : يا رسول الله أو معي شيطان؟ قال : نعم، قلت : ومع كل إنسان؟ قال : نعم، قلت : ومعك يا رسول الله؟ قال : نعم، ولكن ربي أعانني عليه حتى أسلم . رواه مسلم (2815)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একরাতে তার কাছে থেকে বের হয়েছেন। তিনি বলেন, অত:পর তার উপর অভিমান করি। অত:পর তিনি আসলেন, ও আমাকে দেখলেন আমি কি করছি। অত:পর বললেন, হে আয়েশা ! তোমার কি হয়েছে? তুমি কি অভিমান করেছ? তার পর আমি বললাম, আমার মত নারী আপনার ওপর অভিমান করবে না তো কি হবে? অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমাকে কি শয়তান আক্রান্ত করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল আমার সঙ্গে ও কি শয়তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গেই কি শয়তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার প্রভু আমাকে তার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, ফলে সে মুসলমান হয়ে গেছে। [মুসলিম : ২৮১৫।]
إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال : أعوذ بالله من الشيطان ذهب عنه ما يجد، فقالوا له إن النبي صلى الله عليه وسلم قال : تعوذ بالله من الشيطان، فقال : وهل بي جنون؟ ذكر النووي أن الحديث فيه أن الغضب في غير الله تعالى من نزغ الشيطان . شرح النووي على مسلم (16/246)
আমি এমন একটি শব্দ জানি যদি সে তা উচ্চারণ করে তার উপলব্ধি দূর হয়ে যাবে। যদি সে বলে আমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চাই তবে তার ক্ষোভ পড়ে যাবে। অত:পর সবাই তাকে বলল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাও, সে বলল আমার মধ্যে কি উন্মাদনার লক্ষণ আছে? নববী উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুতে ক্রোধ শয়তানের প্রভাব থেকে। [মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রহন্থ : ১৭/২২৮।] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ রাত্রিতে ভয় পেয়েছিলেন, যেদিন শয়তান দু’জনের সাহাবির অন্তরে কিছু কুমন্ত্রণা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। আলী ইবনে হুনাইন হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী সাফিয়্যা বনিতে হুয়াই তাকে সংবাদ দিয়েছে,
أنها جاءت رسول الله صلى الله عليه وسلم تزوره وهو معتكف في المسجد في العشرالغوابر من رمضان، فتحدثت عنده ساعة من العشاء، ثم قامت تنقلب، فقام معها النبي صلى الله يقلبها، حتى إذا بلغت باب المسجد الذي عند مسكن أم سلمة زوج النبي صلى الله عليه وسلم، مر بهما رجلان من الأنصار، فسلما على رسول الله ثم نفذا، فقال لهما رسول الله صلى الله عليه وسلم : على رسلكما إنما هي الصفية بنت حيي، قالا : سبحان الله يا رسول الله، وكبر عليهما ما قال، قال : إن الشيطان يجري من ابن آدم مبلغ الدم، وإني خشيت أن يقذف في قلوبكما . رواه البخاري (6219) ، ومسلم (2175)
তিনি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। ঐ মুহূর্তে তিনি মসজিদে রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ অবস্থায় ছিলেন। অত:পর তিনি তার সঙ্গে রাতে কিছুক্ষণ কথা বললেন, তার পর তিনি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালেন। তার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। তার পর যখন সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মে সালমার আবাস্থলে এর নিকট মসজিদের দরজায় পৌঁছোলেন, উভয়ের পাশ দিয়ে আনসারদের দু’জন ব্যক্তি অতিক্রম করল। উভয়ে রাসূল কে সালাম দিল। অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, সে হল সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই। উভয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুবহানাল্লাহ! রাসূল এর কথা উভয়ের কাছে বড় মনে হল। তিনি বললেন, নি:সন্দেহ শয়তান আদম সন্তানের রক্তের শিরায় উপশিরায় প্রবাহিত হয়। আমি ভয় করছি যে তোমাদের অন্তরে মন্দ ধরনা সৃষ্টি করে। ইবনে হাজর রহ. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উভয়ের মন্দ ধারণার কথা বলেন নি। কারণ তিনি উভয়ের ঈমানের দৃঢ়তার ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে উভয়ের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা পোষণ করেছেন, শয়তান তাদেরকে এ ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পারে। কেননা, তারা নিষ্পাপ নন। এ মন্দ ধারণা তাদের ধ্বংসের দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য এবং এরকম ঘটনায় তাদের পরবর্তীদের জন্য শিক্ষা স্বরূপ তিনি উভয়কে সঙ্গে সঙ্গে অবগত করালেন। [ফাতহুল বারি : ৪/৩২৮।] হাদিসে এসেছে,
التحرز من التعرض لسوء الظن . فتح الباري لابن حجر (4/329)
মন্দ ধারণার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে। [ফাতহুল বারি : ৪/৩২৯।] জাবের রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
إن إبليس يضع عرشه على الماء، ثم يبعث سراياه فأدناهم منه منزلة أعظمهم فتنة، يجيئ أحدهم فيقول : فعلت كذا وكذا، فيقول : ما صنعت شيئا، قال : ثم يجيئ أحدهم فيقول : ما تركته حتى فرقت بينه وبين امرأته، قال : فيدنيه منه ويقول : نعم أنت . قال الأعمش : أراه قال : فيلتزمه . رواه مسلم (2813).
শয়তান তার সিংহাসন পানির উপর স্থাপন করে, অত:পর তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে মর্যাদায় সর্বনিম্ম যে সে সবচে’ বড় ফেতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন আসে এবং বলে, আমি এই কাজ করেছি ওটা করেছি। শয়তান তাকে বলে, তুমি কিছুই করোনি। অত:পর তাদের আরেকজন এসে বলে আমি কোন কিছুই ছাড়িনি। এমনকি অমুক ও তার স্ত্রীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছি। অত:পর শয়তান তার নিকটে যাবে এবং বলবে হ্যাঁ, তুমিই আসল কাজ করেছ। অত:পর সে তাকে জড়িয়ে ধরবে। [মুসলিম : ২৮১৩।]
عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : لايشير أحدكم على أخيه بالسلاح فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار . رواه البخاري (7072)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ স্বীয় ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত করবে না। হতে পারে, অজান্তেই শয়তান হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে নিবে। যার ফলশ্রুতিতে সে জাহান্নামের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে। [বোখারী : ৭০৭২।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী আয়েশা রা. বর্ণনা করেন—
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم خرج من عندها ليلا، قالت : فغرت عليه فجاء فرأى ما أصنع، فقال : ما لك يا عائشة؟ أغرت؟ فقلت : وما لي لا يغار مثلي على مثلك؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أقد جاءك شيطانك؟ قالت : يا رسول الله أو معي شيطان؟ قال : نعم، قلت : ومع كل إنسان؟ قال : نعم، قلت : ومعك يا رسول الله؟ قال : نعم، ولكن ربي أعانني عليه حتى أسلم . رواه مسلم (2815)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একরাতে তার কাছে থেকে বের হয়েছেন। তিনি বলেন, অত:পর তার উপর অভিমান করি। অত:পর তিনি আসলেন, ও আমাকে দেখলেন আমি কি করছি। অত:পর বললেন, হে আয়েশা ! তোমার কি হয়েছে? তুমি কি অভিমান করেছ? তার পর আমি বললাম, আমার মত নারী আপনার ওপর অভিমান করবে না তো কি হবে? অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমাকে কি শয়তান আক্রান্ত করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল আমার সঙ্গে ও কি শয়তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গেই কি শয়তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার প্রভু আমাকে তার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, ফলে সে মুসলমান হয়ে গেছে। [মুসলিম : ২৮১৫।]
যেমন এদিক সেদিক তাকানোর মাধ্যমে নামাজের মনোযোগ নষ্ট করাও নামাজে কুমন্ত্রণা দেওয়া। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
هو اختلا س يختلسه الشيطان من صلاة العبد . رواه البخاري (751)
এটা ও এক প্রকার চুরি। শয়তান মানুষের নামাজ থেকে তা চুরি করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল বলেছেন,
إذا نودي للصلاة أدبر الشيطان وله ضراط حتى لا يسمع التأذين، فإذا قضى النداء أقبل، حتى إذا ثوب بالصلاة أدبر، حتى إذا قضى التثويب أقبل حتى يخطر بين المرء ونفسه، يقول : اذكر كذا، اذكر كذا، لما لم يكن يذكر، حتى يظل الرجل لا يدري كم صلى؟ رواه البخاري (608) ومسلم (389)
যখন নামাজের জন্যে আহবান করা হয়, শয়তান পিঠ-পিছে দৌড়ে যতক্ষণ না সে আজান শুনতে পায়। যখন আজান শেষ হয় সে সামনে অগ্রসর হয়। যখন নামাজের কাতার সোজা করা হয় সে পিঠ ফিরে চলে যায়। অত:পর যখন একামাত শেষ হয় সে মানুষকে ও তার প্রবৃত্তিকে ধোঁকা দেয়, সে বলে, তুমি অমুক জিনিস, স্মরণ কর, ওটা মনে কর, যা সে ইতি পূর্বে মনে করতে পার ছিল না। এভাবে মানুষ কত রাকাত নামাজ পড়েছিল তা বলতে পারে না। [বোখারী : ৬০৮। মুসলিম : ৩৮৯।]
هو اختلا س يختلسه الشيطان من صلاة العبد . رواه البخاري (751)
এটা ও এক প্রকার চুরি। শয়তান মানুষের নামাজ থেকে তা চুরি করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল বলেছেন,
إذا نودي للصلاة أدبر الشيطان وله ضراط حتى لا يسمع التأذين، فإذا قضى النداء أقبل، حتى إذا ثوب بالصلاة أدبر، حتى إذا قضى التثويب أقبل حتى يخطر بين المرء ونفسه، يقول : اذكر كذا، اذكر كذا، لما لم يكن يذكر، حتى يظل الرجل لا يدري كم صلى؟ رواه البخاري (608) ومسلم (389)
যখন নামাজের জন্যে আহবান করা হয়, শয়তান পিঠ-পিছে দৌড়ে যতক্ষণ না সে আজান শুনতে পায়। যখন আজান শেষ হয় সে সামনে অগ্রসর হয়। যখন নামাজের কাতার সোজা করা হয় সে পিঠ ফিরে চলে যায়। অত:পর যখন একামাত শেষ হয় সে মানুষকে ও তার প্রবৃত্তিকে ধোঁকা দেয়, সে বলে, তুমি অমুক জিনিস, স্মরণ কর, ওটা মনে কর, যা সে ইতি পূর্বে মনে করতে পার ছিল না। এভাবে মানুষ কত রাকাত নামাজ পড়েছিল তা বলতে পারে না। [বোখারী : ৬০৮। মুসলিম : ৩৮৯।]
৩৬
(১০) কাফের ও ফাসেক বন্ধুদের প্রতি মন্দ চিন্তা ভাবনা, অশ্লীল কথাবার্তা ও ত্রুটি পূর্ণ কাজের মাধ্যমে ম্যাসেজ প্রদান:তারা এ পদ্ধতিতে মুমিনকে তার এবাদতের প্রতি দৃঢ় আস্থা থেকে বিচ্যুতি, আল্লাহর শরিয়ত, বিধি-বিধান ও ওয়াদায় সন্দেহ সৃষ্টির অপচেষ্টা লিপ্ত হয়। শয়তান মন্দ কাজের প্রতি ভালোবাসা ও কল্যাণময় কাজের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টির চেষ্টা করে।
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ . ﴿الأنعام : 121﴾
‘(জবেহের সময়) যার ওপর আল্লাহ তাআলার নাম নেয়া হয়নি, সে (জন্তুর গোশত) তোমরা কখনো খাবে না, (কেননা) তা হচ্ছে জঘন্য গুনাহের কাজ। শয়তানের (কাজই হচ্ছে) তার সঙ্গী সাথিদের মনে প্ররোচনা দেয়া, যেন তারা তোমাদের সাথে (এ নিয়ে) ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়, যদি তোমরা তাদের কথা মেনে চলো, তাহলে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে পড়বে। [আল আনআম : ১২১।] মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
أَلَمْ تَرَ أَنَّا أَرْسَلْنَا الشَّيَاطِينَ عَلَى الْكَافِرِينَ تَؤُزُّهُمْ أَزًّا ﴿مريم : 83﴾
হে নবী তুমি কি (এবিষয়টির প্রতি লক্ষ্য করোনি, আমি (ঠিকভাবে) কাফেরদের ওপর শয়তানদের ছেড়ে দিয়ে রেখেছি, তারা (আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে) তাদের ক্রমাগত উৎসাহ দান করছে। [মারইয়াম : ৮৩।]
শয়তান যখন মানুষের অন্তরের ওপর ক্ষমতাবান হয়, সে তাকে গুনাহ, পাপাচারের প্রতি আসক্ত করে এবং তাকে মন্দের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আর যখনই গুনাহ মেষ হয় সে তার কাছে ফিরে আসে। এভাবে তার প্রবৃত্ত কখনোই পাপাচার ও অন্যায় থেকে পরিতৃপ্ত হয় না। দুনিয়াতে এটাই হচ্ছে তার জন্য ছোট শাস্তি। আর পরকালের শাস্তি তো কঠিন, ও চিরস্থায়ী।
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ . ﴿الأنعام : 121﴾
‘(জবেহের সময়) যার ওপর আল্লাহ তাআলার নাম নেয়া হয়নি, সে (জন্তুর গোশত) তোমরা কখনো খাবে না, (কেননা) তা হচ্ছে জঘন্য গুনাহের কাজ। শয়তানের (কাজই হচ্ছে) তার সঙ্গী সাথিদের মনে প্ররোচনা দেয়া, যেন তারা তোমাদের সাথে (এ নিয়ে) ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়, যদি তোমরা তাদের কথা মেনে চলো, তাহলে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে পড়বে। [আল আনআম : ১২১।] মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
أَلَمْ تَرَ أَنَّا أَرْسَلْنَا الشَّيَاطِينَ عَلَى الْكَافِرِينَ تَؤُزُّهُمْ أَزًّا ﴿مريم : 83﴾
হে নবী তুমি কি (এবিষয়টির প্রতি লক্ষ্য করোনি, আমি (ঠিকভাবে) কাফেরদের ওপর শয়তানদের ছেড়ে দিয়ে রেখেছি, তারা (আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে) তাদের ক্রমাগত উৎসাহ দান করছে। [মারইয়াম : ৮৩।]
শয়তান যখন মানুষের অন্তরের ওপর ক্ষমতাবান হয়, সে তাকে গুনাহ, পাপাচারের প্রতি আসক্ত করে এবং তাকে মন্দের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আর যখনই গুনাহ মেষ হয় সে তার কাছে ফিরে আসে। এভাবে তার প্রবৃত্ত কখনোই পাপাচার ও অন্যায় থেকে পরিতৃপ্ত হয় না। দুনিয়াতে এটাই হচ্ছে তার জন্য ছোট শাস্তি। আর পরকালের শাস্তি তো কঠিন, ও চিরস্থায়ী।
শয়তান মানুষের মধ্যে সবচে’ ভাল ব্যক্তিকে একবার কুফরের প্রতি স্থানান্তরের জন্য খুবই লালায়িত। কিন্তু একাজটি সহজসাধ্য নয়। তাই সে পদে পদে তাকে নিয়ে অগ্রসর হয়। এক্ষেত্রে সে নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। এবাদত ও কল্যাণ মূলক কাজের ক্ষেত্রে সে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে, তা হচ্ছে,এবাদতকে কষ্ট সাধ্য করে তোলা ও তা থেকে অনীহা সৃষ্টি করা যাতে মানুষ এবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা করে। এ কারণেই আমাদেরকে প্রতি প্রত্যুষে অলসতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সকাল কাটিয়েছি এবং গোটা রাজত্ব আল্লাহর, হে প্রভু আমি তোমার কাছে অলসতা থেকে পানাহ চাই। যখন এবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা করবে সে তা ছেড়ে দেবে। অথবা তাকে দেরিতে আদায় করবে, আমরা বিলম্বে ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। মন্দ পাপের বিষয়ে সে এগুলোকে মানুষের কাছে সুন্দর, সুশোভন ও পছন্দনীয় করে উপস্থাপন করে। এবং তার কাছে বিষয়টি হালকা করে পেশ করে ফলে সে গুনাহের ক্ষতি সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারে না। আর যদি মানুষ গুনাহ থেকে নিবৃত্ত থাকে তবে সে গুনাহকে সত্যের সাথে গুলিয়ে ফেলে এবং বিষয়টিকে তার কাছে অস্বচ্ছ রাখে। এবং তার জন্য দোষমুক্ত হওয়ার নানা উপায় তৈরি করে, যাতে সে প্রথমবার পাপাচারে লিপ্ত হয়। এভাবে পরবর্তী মুহূর্তে তার পক্ষে তা অনেক সহজ মনে হয়।
তার পর সে যখন গুনাহ থেকে ফেরার বা তাওবা ইচ্ছা পোষণ করে, শয়তান তাকে বলে, তুমি তো কিছু করোনি, তুমি এখনও যুবক রয়েছ, যাতে সে আল্লাহর কৌশল থেকে নিশ্চিন্ত থাকে।
আর যদি সে তাওবার জন্য খুব বিচলিত বোধ করে শয়তান তাকে বলে, তুমি এটা করেছে, ওটা করেছ, তাকে সমস্ত গুনাহ ও অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে শয়তানের প্রথম পদক্ষেপ থেকে বেঁচে থাকা ছাড়া মানুষের পক্ষে কোন কল্যাণ আসবে না, মানুষের থেকে কখনো এমন কথাও শোনা যায় যা গুনাহকে সহজ করে দেয় ও এবাদতের ক্ষেত্রে নিরাসক্তি বিরাগ করে রাখে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ . ﴿النور : 21﴾
‘হে মানুষ তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তার কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, তোমাদের মধ্যে যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে যেন জেনে রাখে যে (অভিশপ্ত শয়তান) তো তাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ দেবে, যদি তোমাদের ওপর আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ না থাকে, তাহলে তোমাদের মধ্যে কেউই কখনো পাক পবিত্র হতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যাকে চান তাকে পবিত্র করেন এবং আল্লাহ তাআলা (সবকিছু) শোনেন, তিনি (সবকিছু) জানেন। [আন-নূর : ২১।] তাই শয়তানের পদক্ষেপ সমূহ, চেষ্টা, উপায় ও পথ সম্পর্কে জানা একান্ত আবশ্যক। তাহলেই তার ফাঁদে পড়ে গেলে সেখান থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। আর পথের শুরু থেকেই বিচ্যুতি থেকে বেচে থাকা পরবর্তী সময়ের তুলনায় অনেক সহজ।
তার পর সে যখন গুনাহ থেকে ফেরার বা তাওবা ইচ্ছা পোষণ করে, শয়তান তাকে বলে, তুমি তো কিছু করোনি, তুমি এখনও যুবক রয়েছ, যাতে সে আল্লাহর কৌশল থেকে নিশ্চিন্ত থাকে।
আর যদি সে তাওবার জন্য খুব বিচলিত বোধ করে শয়তান তাকে বলে, তুমি এটা করেছে, ওটা করেছ, তাকে সমস্ত গুনাহ ও অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে শয়তানের প্রথম পদক্ষেপ থেকে বেঁচে থাকা ছাড়া মানুষের পক্ষে কোন কল্যাণ আসবে না, মানুষের থেকে কখনো এমন কথাও শোনা যায় যা গুনাহকে সহজ করে দেয় ও এবাদতের ক্ষেত্রে নিরাসক্তি বিরাগ করে রাখে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ . ﴿النور : 21﴾
‘হে মানুষ তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তার কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, তোমাদের মধ্যে যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে যেন জেনে রাখে যে (অভিশপ্ত শয়তান) তো তাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ দেবে, যদি তোমাদের ওপর আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ না থাকে, তাহলে তোমাদের মধ্যে কেউই কখনো পাক পবিত্র হতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যাকে চান তাকে পবিত্র করেন এবং আল্লাহ তাআলা (সবকিছু) শোনেন, তিনি (সবকিছু) জানেন। [আন-নূর : ২১।] তাই শয়তানের পদক্ষেপ সমূহ, চেষ্টা, উপায় ও পথ সম্পর্কে জানা একান্ত আবশ্যক। তাহলেই তার ফাঁদে পড়ে গেলে সেখান থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। আর পথের শুরু থেকেই বিচ্যুতি থেকে বেচে থাকা পরবর্তী সময়ের তুলনায় অনেক সহজ।
এটা এমন একটি প্রতিরক্ষা কবচ যা শয়তানের সমূহ ষড়যন্ত্রকে সমূলৎপাটন করে। অত:পর মানুষ যখন কোন দুর্বল অবস্থায় পতিত হয়, তখন তাওবা, আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ ও গুনাহ থেকে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়া শয়তানের ষড়যন্ত্র ও কূট চালের সমস্ত প্রভাব দূর করে দেয়। আর শয়তান আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের এবাদত বিঘ্ন সৃষ্টির ক্ষেত্রে অক্ষমতা, ও দুর্বলতা সম্পর্কে নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইবলিসের ঘটনায় বলেন,
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . ﴿الحجر :40﴾
‘সে বলল, আমার মালিক, তুমি যেভাবে (আজ) আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিলে (আমি ও তোমার শপথ করে বলছি) আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজ সমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাটি বান্দা তাদের কথা আলাদা। [আল-হিজর : ৩৯-৪০।]
আল্লাহ তাআলা শয়তান সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন,
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . ﴿ص : 83﴾
‘সে বলল, (হ্যাঁ), তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপথ গামী করে ছাড়ব, তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া। [সোয়াদ : ৮২-৮৩।] অতএব যে ব্যক্তি শয়তানের ভ্রষ্টচারিতায় আক্রান্ত হবে, আল্লাহর ভয় ভীতি, পর্যবেক্ষণ এসব কিছু তাকে অলসতা থেকে জাগ্রত করবে এবং খোদাভীরুদের স্মরণ করিয়ে দেবে। অত:পর যখন তারা স্মরণ করবে তাদের দৃষ্টি খুলে যাবে এবং দৃষ্টি থেকে আবরণ সরে যাবে, অত:পর তারা হয়ে যাবে দৃষ্টিমান।
আল্লাহ তাআলা বলেন
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ ﴿الأعراف : 201﴾
‘আল্লাহ তাআলাকে যারা ভয় করে তাদের যদি কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে, তবে তারা (সাথে সাথেই) আত্মসচেতন হয়ে পড়ে, তৎক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়। [আল-আরাফ : ২০১।]
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . ﴿الحجر :40﴾
‘সে বলল, আমার মালিক, তুমি যেভাবে (আজ) আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিলে (আমি ও তোমার শপথ করে বলছি) আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজ সমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাটি বান্দা তাদের কথা আলাদা। [আল-হিজর : ৩৯-৪০।]
আল্লাহ তাআলা শয়তান সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন,
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . ﴿ص : 83﴾
‘সে বলল, (হ্যাঁ), তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপথ গামী করে ছাড়ব, তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া। [সোয়াদ : ৮২-৮৩।] অতএব যে ব্যক্তি শয়তানের ভ্রষ্টচারিতায় আক্রান্ত হবে, আল্লাহর ভয় ভীতি, পর্যবেক্ষণ এসব কিছু তাকে অলসতা থেকে জাগ্রত করবে এবং খোদাভীরুদের স্মরণ করিয়ে দেবে। অত:পর যখন তারা স্মরণ করবে তাদের দৃষ্টি খুলে যাবে এবং দৃষ্টি থেকে আবরণ সরে যাবে, অত:পর তারা হয়ে যাবে দৃষ্টিমান।
আল্লাহ তাআলা বলেন
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ ﴿الأعراف : 201﴾
‘আল্লাহ তাআলাকে যারা ভয় করে তাদের যদি কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে, তবে তারা (সাথে সাথেই) আত্মসচেতন হয়ে পড়ে, তৎক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়। [আল-আরাফ : ২০১।]
ইসলাম জামাতের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। কেননা তা শয়তানকে বিতাড়িত করে।
ইসলামের অধিকাংশ এবাদত ও মুআমালাত এই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। শয়তানের ষড়যন্ত্রে থেকে সুরক্ষায় এর প্রভাব সুস্পষ্ট।
(১)জামাতের সঙ্গে নামাজ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
ما من ثلاثة في قرية، ولا بدو، لا تقام فيهم الصلاة، إلا قد استحوذ عليهم الشيطان، فعليك بالجماعة، فإنما يأكل الذئب القاصية . رواه أبوداود (547) ، والنسائي (847) ، وحسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود (511).
যে গ্রামে বা পল্লিতে তিনজন একত্রে আছে, অথচ তাদের মধ্যে জামাত কায়েম হয় না, শয়তান তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। হে প্রিয় বন্ধু! তুমি কিন্তু জামাতের প্রতি গুরুত্ব দেবে। কারণ, ছাড়া বকরি বাঘে খায়। [আবু দাউদ : ৩৪৭। নাসায়ী : ৮৪৭। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৫১১।] তাই জামাতের গুরুত্ব দিতে হবে।
(২) সফরে জামাত : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
الراكب شيطان، والراكبان شيطانان، والثلاثة ركب . رواه أبوداود (2607) ، والترمذي (1674) ،و حسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود (2271).
একজন মুসাফির শয়তান, দু’জন মুসাফির দু’ই শয়তান, তিনজন মিলে একটি মুসাফির দল। [আবু-দাউদ : ২৬০৭। তিরমিজি : ১৬৭৪। সুনানে আবু দাউদ : ২২৭১।]
(৩) বাড়িতে একত্র সমাবেশ : আবু ছালাবা আল খাশানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন বাড়িতে অবস্থান নিতেন লোকেরা বিভিন্ন উপত্যকা ও ঘাটিতে পৃথক হয়ে যেত। অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إن تفرقكم في هذه الشعاب والأودية إنما ذلكم من الشيطان، فلم ينزل بعد ذلك منزلا إلا انضم بعضهم إلى بعض، حتى يقال : لو بسط عليهم ثوب لعمهم . رواه أبوداود (2628) ، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود (2288).
বিভিন্ন ঘাটি ও উপত্যকায় তোমাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অত:পর যখনই তিনি কোন বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকত। বলা হয় যদি তাদের ওপর কাপড় বিছিয়ে দেয়া হত সবাইকে তা ঢেকে ফেলত।
ইসলামের অধিকাংশ এবাদত ও মুআমালাত এই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। শয়তানের ষড়যন্ত্রে থেকে সুরক্ষায় এর প্রভাব সুস্পষ্ট।
(১)জামাতের সঙ্গে নামাজ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
ما من ثلاثة في قرية، ولا بدو، لا تقام فيهم الصلاة، إلا قد استحوذ عليهم الشيطان، فعليك بالجماعة، فإنما يأكل الذئب القاصية . رواه أبوداود (547) ، والنسائي (847) ، وحسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود (511).
যে গ্রামে বা পল্লিতে তিনজন একত্রে আছে, অথচ তাদের মধ্যে জামাত কায়েম হয় না, শয়তান তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। হে প্রিয় বন্ধু! তুমি কিন্তু জামাতের প্রতি গুরুত্ব দেবে। কারণ, ছাড়া বকরি বাঘে খায়। [আবু দাউদ : ৩৪৭। নাসায়ী : ৮৪৭। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৫১১।] তাই জামাতের গুরুত্ব দিতে হবে।
(২) সফরে জামাত : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
الراكب شيطان، والراكبان شيطانان، والثلاثة ركب . رواه أبوداود (2607) ، والترمذي (1674) ،و حسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود (2271).
একজন মুসাফির শয়তান, দু’জন মুসাফির দু’ই শয়তান, তিনজন মিলে একটি মুসাফির দল। [আবু-দাউদ : ২৬০৭। তিরমিজি : ১৬৭৪। সুনানে আবু দাউদ : ২২৭১।]
(৩) বাড়িতে একত্র সমাবেশ : আবু ছালাবা আল খাশানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন বাড়িতে অবস্থান নিতেন লোকেরা বিভিন্ন উপত্যকা ও ঘাটিতে পৃথক হয়ে যেত। অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إن تفرقكم في هذه الشعاب والأودية إنما ذلكم من الشيطان، فلم ينزل بعد ذلك منزلا إلا انضم بعضهم إلى بعض، حتى يقال : لو بسط عليهم ثوب لعمهم . رواه أبوداود (2628) ، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود (2288).
বিভিন্ন ঘাটি ও উপত্যকায় তোমাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অত:পর যখনই তিনি কোন বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকত। বলা হয় যদি তাদের ওপর কাপড় বিছিয়ে দেয়া হত সবাইকে তা ঢেকে ফেলত।
আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন বিষয়ে শয়তান থেকে আশ্রয় লাভের নির্দেশ দিয়েছেন। তার কাছে থেকে আশ্রয় লাভের অধিক গুরুত্বের তাগিদ থেকেই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(১) কোরআন তেলাওয়াতের সময় :
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ . ﴿النحل : 98﴾
‘অত:পর যখন তুমি কোরআন পাঠ করবে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। [আল-নাহল : ৯৮।]
(২) জাদু ও জাদুর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ . مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ . وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ . وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ . وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ . ﴿الفلق : 1-5﴾
(১) হে নবী তুমি বলো, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। (২) আশ্রয় চাই তার সৃষ্টি করা (প্রতিটি জিনিসের) অনিষ্ট থেকে। (৩) আমি আশ্রয় চাই রাতের (রাতের অন্ধকারে সংঘটিত) অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। (৪) (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে জাদু টোনা কারিণীদের, অনিষ্ট থেকে। (৫) হিংসুক ব্যক্তির (সব ধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকেও (আমি তোমার আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসার করে। [আল-ফালাক।]
(৩) মসজিদ প্রবেশের মুহূর্তে : আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন বলতেন—
أعوذ بالله العظيم، وبوجهه الكريم، وسلطانه القديم، من الشيطان الرجيم، وفيه : فإذا قلت ذلك، قال الشيطان : حفظ مني سائر اليوم . رواه أبوداود (466) ، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود (441).
মহান আল্লাহ তার মহিমান্বিত সত্তা ও তার প্রাচীন ক্ষমতার অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাচ্ছি। এ হাদিসে অতিরিক্ত বর্ণনা এও এসেছে, যখন তুমি এ দোয়া পড়বে, শয়তান বলে, সে সারা দিনের জন্য আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল। [আবু দাউদ : ৪৬৬। সুনানে আবু দাউদ : ৪৪১।]
(৪) নামাজে ওয়াসওয়াসা বা প্ররোচনা দেওয়ার মুহূর্তে : একবার উসমান ইবনে আছ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে আসলেন, অত:পর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয়তান আমার তেলাওয়াত, নামাজ এবং আমার মাঝে বসে রয়েছে, সে আমার কাছে এগুলোকে সন্দিহান করে তোলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন—
ذاك شيطان يقال له خترب، فإذا أحسسته فتعوذ بالله منه، واتفل على يسارك ثلاثا، قال : ففعلت ذلك، فأذهبه الله عني . رواه مسلم (2203).
ঐটা শয়তান। তাকে খাতরাব বলা হয়। যখন তুমি তাকে উপলব্ধি কর আল্লাহর নামে তার কাছ থেকে আশ্রয় চাইবে। এবং বাম দিকে তিন বার থুক ফেলবে। তিনি বলেন, আমি এমনটি করেছি, তারপর আল্লাহ তাআলা তাকে আমার থেকে দূর করে দিয়েছেন। [মুসলিম : ২২০৩।]
৫ রাগ, ক্রোধের সময় : সোলাইমান ইবনে সারদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, এমতাবস্থায় দু’জন লোক পরস্পর গালাগাল করছিল, তাদের একজনের চেহারা রক্ত বর্ণ ধারণ করল। এবং শিরা উপশিরা ফুল উঠল। অত:পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন—
إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال : أعوذ بالله من الشيطان، ذهب عنه ما يجد، فقالوا له : إن النبي قال : تعوذ بالله من الشيطان . فقال : وهل بي جنون؟ ! رواه البخاري (3282) ،ومسلم (2610).
আমি এমন একটি কথা জানি যদি সে তা বলে তার ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে যাবে। যদি সে বলে আমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই তাহলে তার ক্রোধ মিটে যাবে। অত:পর তারা তাকে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বলেছেন তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। অত:পর সে বলল, আমার কি কোন পাগলামি আছে? [বোখারী : ৩২৮২। মুসলিম : ২৬১০।] শয়তানের প্ররোচনা, প্রবঞ্চনা থেকে সুরক্ষিত দুর্গ হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
وَقُلْ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ . ﴿المؤمنون : 97﴾
‘(সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে) তুমি (বরং) বলো, হে আমার মালিক শয়তানদের যাবতীয় ওয়াসওয়াসা থেকে আমি তোমার পানাহ চাই। [আল-মোমেনুন : ৯৭।]
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ . ﴿فصلت : 36﴾
‘আল্লাহ তাআলা বলেন, শয়তানের পক্ষ থেকে তোমাকে কোন অনিষ্ট পৌঁছোলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে, নিশ্চয় তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞাত। [ফুসসিলাত : ৩৬।]
এই অন্তরের সৃষ্টি কর্তা তার সব অলিগলি, পথ ও গন্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এবং তিনি তার শক্তি ও ক্ষমতাকে নির্দিষ্ট করেন। তিনি মুসলমানের অন্তরকে ক্রোধের ক্ষতি ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে সংরক্ষণ করেন। তাই মুসলমানের জন্য শোভনীয় হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা। হে আল্লাহ অনুগত বান্দা তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সর্বদ্রষ্টা, সর্ব-শ্রোতা, মূর্খদের মূর্খতা ও বোকামি শুনেন এবং তাদের প্রবৃত্তির কষ্টের বিষয়ে তিনি জানেন, আর এতেই রয়েছে। অন্তরের তুষ্টি ও প্রবৃত্তির প্রশান্তি। উভয়ের জন্য তৃপ্তির বিষয় হচ্ছে, সর্ব-শ্রোতা ও সর্বজ্ঞ শুনছেন ও জানছেন। আল্লাহর শোনা ও সব মূর্খতা, বোকামি জানার পরে হে মুসলিম তোমার জন্য আর কি চাওয়ার থাকতে পারে ? অতএব তুমি জাহেলদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
(৬) স্বপ্নে মানুষেরে অপ্রীতিকর কিছু দেখার মুহূর্তে : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
الرؤيا الحسنة من الله، فإذا رأى أحدكم ما يحب فلا يحدث به إلا من يحب، وإذا رأى ما يكره، فليتعوذ بالله من شرها، ومن شر الشيطان، وليتفل ثلاثا، ولا يحدث بها أحدا، فإنها لن تضره . رواه البخاري (7044) ، ومسلم (2261).
সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে, তোমাদের কেউ যদি স্বপ্নে আনন্দদায়ক কিছু দেখে তবে তার জন্য আনন্দের বিষয় ঘটবে। আর যদি অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তাহলে তার অমঙ্গল থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে আশ্রয় চাইবে। এবং তিনবার থুতু ফেলবে। এবং কারো কাছে তা আলোচনা করবে না। তবে তার কোন ক্ষতি সাধন করবে না। [বোখরী : ৭০৪৪। মুসলিম : ২২৬১।]
(৭) চক্ষু ওঠার সময় : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান এবং হুসাইন কে তাআউয পড়াতেন, তিনি বলতেন—
إن أباكما كان يعوذ بها إسماعيل وإسحاق، أعوذ بكلمات الله التامة من كل شيطان وهامة، ومن كل عين لامة . رواه البخاري (3371).
তোমাদের পিতা ইব্রাহীম আ., ইসমাইল এবং ইসহাককে তাআউয পড়াতেন। [বোখারী : ৩৩৭১।]
(১) কোরআন তেলাওয়াতের সময় :
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ . ﴿النحل : 98﴾
‘অত:পর যখন তুমি কোরআন পাঠ করবে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। [আল-নাহল : ৯৮।]
(২) জাদু ও জাদুর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ . مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ . وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ . وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ . وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ . ﴿الفلق : 1-5﴾
(১) হে নবী তুমি বলো, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। (২) আশ্রয় চাই তার সৃষ্টি করা (প্রতিটি জিনিসের) অনিষ্ট থেকে। (৩) আমি আশ্রয় চাই রাতের (রাতের অন্ধকারে সংঘটিত) অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। (৪) (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে জাদু টোনা কারিণীদের, অনিষ্ট থেকে। (৫) হিংসুক ব্যক্তির (সব ধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকেও (আমি তোমার আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসার করে। [আল-ফালাক।]
(৩) মসজিদ প্রবেশের মুহূর্তে : আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন বলতেন—
أعوذ بالله العظيم، وبوجهه الكريم، وسلطانه القديم، من الشيطان الرجيم، وفيه : فإذا قلت ذلك، قال الشيطان : حفظ مني سائر اليوم . رواه أبوداود (466) ، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود (441).
মহান আল্লাহ তার মহিমান্বিত সত্তা ও তার প্রাচীন ক্ষমতার অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাচ্ছি। এ হাদিসে অতিরিক্ত বর্ণনা এও এসেছে, যখন তুমি এ দোয়া পড়বে, শয়তান বলে, সে সারা দিনের জন্য আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল। [আবু দাউদ : ৪৬৬। সুনানে আবু দাউদ : ৪৪১।]
(৪) নামাজে ওয়াসওয়াসা বা প্ররোচনা দেওয়ার মুহূর্তে : একবার উসমান ইবনে আছ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে আসলেন, অত:পর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয়তান আমার তেলাওয়াত, নামাজ এবং আমার মাঝে বসে রয়েছে, সে আমার কাছে এগুলোকে সন্দিহান করে তোলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন—
ذاك شيطان يقال له خترب، فإذا أحسسته فتعوذ بالله منه، واتفل على يسارك ثلاثا، قال : ففعلت ذلك، فأذهبه الله عني . رواه مسلم (2203).
ঐটা শয়তান। তাকে খাতরাব বলা হয়। যখন তুমি তাকে উপলব্ধি কর আল্লাহর নামে তার কাছ থেকে আশ্রয় চাইবে। এবং বাম দিকে তিন বার থুক ফেলবে। তিনি বলেন, আমি এমনটি করেছি, তারপর আল্লাহ তাআলা তাকে আমার থেকে দূর করে দিয়েছেন। [মুসলিম : ২২০৩।]
৫ রাগ, ক্রোধের সময় : সোলাইমান ইবনে সারদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, এমতাবস্থায় দু’জন লোক পরস্পর গালাগাল করছিল, তাদের একজনের চেহারা রক্ত বর্ণ ধারণ করল। এবং শিরা উপশিরা ফুল উঠল। অত:পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন—
إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال : أعوذ بالله من الشيطان، ذهب عنه ما يجد، فقالوا له : إن النبي قال : تعوذ بالله من الشيطان . فقال : وهل بي جنون؟ ! رواه البخاري (3282) ،ومسلم (2610).
আমি এমন একটি কথা জানি যদি সে তা বলে তার ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে যাবে। যদি সে বলে আমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই তাহলে তার ক্রোধ মিটে যাবে। অত:পর তারা তাকে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বলেছেন তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। অত:পর সে বলল, আমার কি কোন পাগলামি আছে? [বোখারী : ৩২৮২। মুসলিম : ২৬১০।] শয়তানের প্ররোচনা, প্রবঞ্চনা থেকে সুরক্ষিত দুর্গ হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
وَقُلْ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ . ﴿المؤمنون : 97﴾
‘(সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে) তুমি (বরং) বলো, হে আমার মালিক শয়তানদের যাবতীয় ওয়াসওয়াসা থেকে আমি তোমার পানাহ চাই। [আল-মোমেনুন : ৯৭।]
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ . ﴿فصلت : 36﴾
‘আল্লাহ তাআলা বলেন, শয়তানের পক্ষ থেকে তোমাকে কোন অনিষ্ট পৌঁছোলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে, নিশ্চয় তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞাত। [ফুসসিলাত : ৩৬।]
এই অন্তরের সৃষ্টি কর্তা তার সব অলিগলি, পথ ও গন্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এবং তিনি তার শক্তি ও ক্ষমতাকে নির্দিষ্ট করেন। তিনি মুসলমানের অন্তরকে ক্রোধের ক্ষতি ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে সংরক্ষণ করেন। তাই মুসলমানের জন্য শোভনীয় হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা। হে আল্লাহ অনুগত বান্দা তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সর্বদ্রষ্টা, সর্ব-শ্রোতা, মূর্খদের মূর্খতা ও বোকামি শুনেন এবং তাদের প্রবৃত্তির কষ্টের বিষয়ে তিনি জানেন, আর এতেই রয়েছে। অন্তরের তুষ্টি ও প্রবৃত্তির প্রশান্তি। উভয়ের জন্য তৃপ্তির বিষয় হচ্ছে, সর্ব-শ্রোতা ও সর্বজ্ঞ শুনছেন ও জানছেন। আল্লাহর শোনা ও সব মূর্খতা, বোকামি জানার পরে হে মুসলিম তোমার জন্য আর কি চাওয়ার থাকতে পারে ? অতএব তুমি জাহেলদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
(৬) স্বপ্নে মানুষেরে অপ্রীতিকর কিছু দেখার মুহূর্তে : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
الرؤيا الحسنة من الله، فإذا رأى أحدكم ما يحب فلا يحدث به إلا من يحب، وإذا رأى ما يكره، فليتعوذ بالله من شرها، ومن شر الشيطان، وليتفل ثلاثا، ولا يحدث بها أحدا، فإنها لن تضره . رواه البخاري (7044) ، ومسلم (2261).
সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে, তোমাদের কেউ যদি স্বপ্নে আনন্দদায়ক কিছু দেখে তবে তার জন্য আনন্দের বিষয় ঘটবে। আর যদি অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তাহলে তার অমঙ্গল থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে আশ্রয় চাইবে। এবং তিনবার থুতু ফেলবে। এবং কারো কাছে তা আলোচনা করবে না। তবে তার কোন ক্ষতি সাধন করবে না। [বোখরী : ৭০৪৪। মুসলিম : ২২৬১।]
(৭) চক্ষু ওঠার সময় : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান এবং হুসাইন কে তাআউয পড়াতেন, তিনি বলতেন—
إن أباكما كان يعوذ بها إسماعيل وإسحاق، أعوذ بكلمات الله التامة من كل شيطان وهامة، ومن كل عين لامة . رواه البخاري (3371).
তোমাদের পিতা ইব্রাহীম আ., ইসমাইল এবং ইসহাককে তাআউয পড়াতেন। [বোখারী : ৩৩৭১।]
প্রজ্ঞাময়, শরিয়তের বিধায়ক অনেক বিষয়ে বিসমিল্লাহ পাঠের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, শয়তানকে পরাভূত করার জন্য।
(১) যখন বাহন পিছলে যায় : জনৈক সাহাবি বলেছেন—
كنت رديف النبي صلى الله عليه وسلم، فعثرت دابته، فقلت : تعس الشيطان، فقال : لا تقل تعس الشيطان، فإنك إذا قلت ذلك تعاظم حتى يكون مثل البيت، ويقول : بقوتي، ولكن قل : بسم الله، فإنك إذا قلت ذلك تصاغر حتى يكون مثل الذباب . رواه أبوداود (4982) ، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود (4168)
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহযাত্রী ছিলাম। তার বাহনটি পিছলে যায়। তাই আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। তিনি বললেন শয়তান ধ্বংস হোক, একথা বলো না। কেননা তুমি যখন তা বলবে, সে নিজেকে বড় মনে করবে যেন সে ঘরের মত। এবং বলবে আমার শক্তিতে তা হয়েছে। বরং তুমি বল, বিসমিল্লাহ। কেননা তুমি যদি তা পড় তবে শয়তান মাছির মত নিজেকে ছোট মনে করবে। [আবু দাউদ : ৪৯৮২। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৪১৬৮।]
(২) বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোন লোক তার বাড়ি থেকে বের হয় এবং বলে—
إذا خرج الرجل من بيته فقال : بسم الله، توكلت على الله، لاحول ولا قوة إلا بالله، قال : يقال له حينئذ : هديت، وكفيت، ووقيت، فتنحى له الشياطين، فيقول شيطان آخر : كيف لك برجل قد هدي، وكفي، ووقي .
আল্লাহর নামে আল্লাহর ওপরই আমি ভরসা করছি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ ক্ষমতার মালিক নন। তিনি বললেন, তখন তাকে বলা হবে তুমি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছ, এবং যথেষ্ট করেছ ও পরিত্রাণ লাভ করেছ। অত:পর শয়তান তার জন্য সরে দাঁড়ায়। অপর শয়তান বলে, তোমার অমুক ব্যক্তির ব্যাপারে কি সংবাদ ? সে হেদায়াত পেল ও পরিত্রাণ লাভ করল। [আবু দাউদ : ৫০৯৫। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৪২৪৯।]
(৩) সহবাসের মুহূর্তে : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার পরিবারের নিকট গমন করে এবং বলে—
بسم الله، اللهم جنبنا الشيطان، وجنب الشيطان مارزقتنا، فرزقا ولدا، لم يضره الشيطان . رواه البخاري (3271).
উভয়কে এমন সন্তান দান করা হয় যাকে শয়তান কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।
(১) যখন বাহন পিছলে যায় : জনৈক সাহাবি বলেছেন—
كنت رديف النبي صلى الله عليه وسلم، فعثرت دابته، فقلت : تعس الشيطان، فقال : لا تقل تعس الشيطان، فإنك إذا قلت ذلك تعاظم حتى يكون مثل البيت، ويقول : بقوتي، ولكن قل : بسم الله، فإنك إذا قلت ذلك تصاغر حتى يكون مثل الذباب . رواه أبوداود (4982) ، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود (4168)
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহযাত্রী ছিলাম। তার বাহনটি পিছলে যায়। তাই আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। তিনি বললেন শয়তান ধ্বংস হোক, একথা বলো না। কেননা তুমি যখন তা বলবে, সে নিজেকে বড় মনে করবে যেন সে ঘরের মত। এবং বলবে আমার শক্তিতে তা হয়েছে। বরং তুমি বল, বিসমিল্লাহ। কেননা তুমি যদি তা পড় তবে শয়তান মাছির মত নিজেকে ছোট মনে করবে। [আবু দাউদ : ৪৯৮২। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৪১৬৮।]
(২) বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোন লোক তার বাড়ি থেকে বের হয় এবং বলে—
إذا خرج الرجل من بيته فقال : بسم الله، توكلت على الله، لاحول ولا قوة إلا بالله، قال : يقال له حينئذ : هديت، وكفيت، ووقيت، فتنحى له الشياطين، فيقول شيطان آخر : كيف لك برجل قد هدي، وكفي، ووقي .
আল্লাহর নামে আল্লাহর ওপরই আমি ভরসা করছি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ ক্ষমতার মালিক নন। তিনি বললেন, তখন তাকে বলা হবে তুমি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছ, এবং যথেষ্ট করেছ ও পরিত্রাণ লাভ করেছ। অত:পর শয়তান তার জন্য সরে দাঁড়ায়। অপর শয়তান বলে, তোমার অমুক ব্যক্তির ব্যাপারে কি সংবাদ ? সে হেদায়াত পেল ও পরিত্রাণ লাভ করল। [আবু দাউদ : ৫০৯৫। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৪২৪৯।]
(৩) সহবাসের মুহূর্তে : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার পরিবারের নিকট গমন করে এবং বলে—
بسم الله، اللهم جنبنا الشيطان، وجنب الشيطان مارزقتنا، فرزقا ولدا، لم يضره الشيطان . رواه البخاري (3271).
উভয়কে এমন সন্তান দান করা হয় যাকে শয়তান কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।
দিবা-রাত্রি সর্ব মুহূর্তে আল্লাহর কিতাব পাঠ শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়। উমর রা. উচ্চ স্বরে কোরআন তেলাওয়াত করে নামাজ পড়লেন, অত:পর (সকাল হলে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি এর মাধ্যমে শয়তানকে বিতাড়িত করছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (পরবর্তীতে নামাজের সময়) আওয়াজ সামান্য নিচু করার নির্দেশ দিলেন। মহান প্রজ্ঞাময় শরিয়ত প্রবর্তক এই বিষয়ের কিছু সুরা ও আয়াত নির্দিষ্ট করেছেন, তন্মধ্যে:
(১) সুরা আল বাকারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لا تجعلوا بيوتكم مقابر، إن الشيطان ينفر من البيت الذي تقرأ فيه سورة البقرة . رواه مسلم (780)
তোমরা তোমাদের কবরকে বাড়ি বানিয়ো না, নি:সন্দেহে শয়তান ঐ বাড়ির থেকে পালিয়ে বেড়ায় যেখানে সুরা আল বাকারা পাঠ করা হয়। [মুসলিম : ৭৮০।]
(২) আয়াতুল কুরসি : শয়তানের চক্রান্ত থেকে মুক্ত থাকার জন্য আয়াতুল কুরসি পাঠ অনেক উপকারী। শয়তান আবু হুরায়রা রা. কে এই আয়াত শিখিয়েছে, সে তার কাছে ব্যাখ্যা করেছে যে এই আয়াত পাঠ করবে,আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সর্বদা হেফাজতকারী থাকবে, সকল হওয়ার আগ মুহূর্তে পর্যন্ত শয়তান তার কাছেও ঘেঁষবে না। অত:পর রাসূল আবু হুরায়রাকে বললেন,
صدقك وهو كذوب . علقه البخاري في صحيحه بصيغة الجزم .
সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যুক। [সহিহ বোখারী : ২৩১১,২৩৭৫,৫০১০।]
(১) সুরা আল বাকারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لا تجعلوا بيوتكم مقابر، إن الشيطان ينفر من البيت الذي تقرأ فيه سورة البقرة . رواه مسلم (780)
তোমরা তোমাদের কবরকে বাড়ি বানিয়ো না, নি:সন্দেহে শয়তান ঐ বাড়ির থেকে পালিয়ে বেড়ায় যেখানে সুরা আল বাকারা পাঠ করা হয়। [মুসলিম : ৭৮০।]
(২) আয়াতুল কুরসি : শয়তানের চক্রান্ত থেকে মুক্ত থাকার জন্য আয়াতুল কুরসি পাঠ অনেক উপকারী। শয়তান আবু হুরায়রা রা. কে এই আয়াত শিখিয়েছে, সে তার কাছে ব্যাখ্যা করেছে যে এই আয়াত পাঠ করবে,আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সর্বদা হেফাজতকারী থাকবে, সকল হওয়ার আগ মুহূর্তে পর্যন্ত শয়তান তার কাছেও ঘেঁষবে না। অত:পর রাসূল আবু হুরায়রাকে বললেন,
صدقك وهو كذوب . علقه البخاري في صحيحه بصيغة الجزم .
সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যুক। [সহিহ বোখারী : ২৩১১,২৩৭৫,৫০১০।]
ঐ দু’জন সাহাবিকে রাসূলের বক্তব্য প্রমাণ করে যারা তাকে তার বিবি সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই এর সঙ্গে দেখেছিল, তিনি তো সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন—
لايشير أحدكم على أخيه بالسلاح فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار .
তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উঁচিয়ে ইঙ্গিত করবে না। কেননা সে জানে না হয়ত শয়তান নিজের হাতে নিয়ে যাবে অত:পর সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। [বোখারী : ৭০৭২।]
لايشير أحدكم على أخيه بالسلاح فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار .
তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উঁচিয়ে ইঙ্গিত করবে না। কেননা সে জানে না হয়ত শয়তান নিজের হাতে নিয়ে যাবে অত:পর সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। [বোখারী : ৭০৭২।]
এ বিষয়ে দু’টি হাদিসের বক্তব্য প্রমাণ করে : প্রথমত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب كل عقدة عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلى انحلت عقدة، فأصبح نشيطا طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان .
শয়তান তোমাদের মাথার অগ্রভাগে। তিনটি গিঁট দেয়, যখন সে ঘুমায়। সে সারারাত ব্যাপী তোমার ওপর গিঁট দিয়ে রাখবে এবং ঘুমিয়ে দেবে, যখন সে জাগ্রত হবে ও আল্লাহকে স্মরণ করবে, তার একটি গেড়ো খুলে যাবে, অত:পর যদি সে ওজু করে আরেকটি গেড়ো খুলে যাবে। তারপর যদি সে নামাজ পরে আরেকটি গেড়ো খুলে যাবে। অত:পর সে সুস্থ মন ও কর্মোদ্যমী উৎসাহী হয়ে যাবে। অন্যথায় সে অলস ও বিষাদগ্রস্ত মনের অধিকারী হয়ে যাবে। [বোখারী : ১১৪২। মুসলিম : ৭৭৬।] দ্বিতীয়টি হচ্ছে : রাসূল বলেছেন—
يأتي الشيطان أحدكم فيقول : من خلق كذا؟ من خلق كذا؟ حتى يقول : من خلق ربك؟، فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته . رواه البخاري (3276) ، ومسلم (134)
শয়তান তোমাদের কারো কাছে এসে বলে এটা কে সৃষ্টি করেছে, আর ওটা কে? এক পর্যায়ে সে বলে তোমার রবকে সৃষ্টি করেছে কে? অত:পর সে যখন এই স্তরে পৌঁছায় আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে এবং লাগাম টেনে ধরবে। [বোখারী : ৩২৭৬। মুসলিম : ১৩৪।]
يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب كل عقدة عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلى انحلت عقدة، فأصبح نشيطا طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان .
শয়তান তোমাদের মাথার অগ্রভাগে। তিনটি গিঁট দেয়, যখন সে ঘুমায়। সে সারারাত ব্যাপী তোমার ওপর গিঁট দিয়ে রাখবে এবং ঘুমিয়ে দেবে, যখন সে জাগ্রত হবে ও আল্লাহকে স্মরণ করবে, তার একটি গেড়ো খুলে যাবে, অত:পর যদি সে ওজু করে আরেকটি গেড়ো খুলে যাবে। তারপর যদি সে নামাজ পরে আরেকটি গেড়ো খুলে যাবে। অত:পর সে সুস্থ মন ও কর্মোদ্যমী উৎসাহী হয়ে যাবে। অন্যথায় সে অলস ও বিষাদগ্রস্ত মনের অধিকারী হয়ে যাবে। [বোখারী : ১১৪২। মুসলিম : ৭৭৬।] দ্বিতীয়টি হচ্ছে : রাসূল বলেছেন—
يأتي الشيطان أحدكم فيقول : من خلق كذا؟ من خلق كذا؟ حتى يقول : من خلق ربك؟، فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته . رواه البخاري (3276) ، ومسلم (134)
শয়তান তোমাদের কারো কাছে এসে বলে এটা কে সৃষ্টি করেছে, আর ওটা কে? এক পর্যায়ে সে বলে তোমার রবকে সৃষ্টি করেছে কে? অত:পর সে যখন এই স্তরে পৌঁছায় আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে এবং লাগাম টেনে ধরবে। [বোখারী : ৩২৭৬। মুসলিম : ১৩৪।]
গুনাহের কিছু কারণ ও ভূমিকা রয়েছে যা গুনাহের প্রতি টেনে নিয়ে যায়।
এবং তার কিছু প্রবেশ পথ রয়েছে যা সেখানে প্রবিষ্ট করে দেয়। গুনাহ থেকে বিরত ও বেঁচে থাকার জন্য এই সব বিষয়ের জানা নিতান্ত অপরিহার্য।
আল্লাহর অবাধ্য আচরণের অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে সর্ববৃহৎ হল, অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক কাজে মানুষের জড়িয়ে পড়া। তাকে দ্বীন বা দুনিয়ার কোন উপকার করবে না। উপরন্তু নিরর্থক কাজ বর্জন করা মানুষের ইসলামের পরিপূর্নতা ও তার ঈমান বৃদ্ধির পরিচায়ক। রাসূল বলেছেন,
من حسن إسلام المرء تركه ما لايعنيه . أخرجه الترمذي (2317) ، وابن ماجه (3976) ، وحسنه النووي في الأربعين النووية، والألباني في صحيح سنن الترمذي (1887).
‘মানুষের সর্বোত্তম ইসলাম হল নিরর্থক কাজ বর্জন করা। [তিরমিজি : ২৩১৭। ইবনে মাজাহ : ৩৯৭৬। সহিহ সুনানে তিরমিজি : ১৮৮৭।]
অতএব যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে ব্যস্ত রইল এবং দুনিয়ার কাজে তার পূর্ণ সময় ব্যয় করল এবং অধিক হারে মুবাহ কাজ করল- এই মুবাহ কাজ দ্বারা আল্লাহর আনুগত্য করার সাহায্য চাওয়া ছাড়া - সে তার জন্য গুনাহের উপকরণ সমূহ উন্মুক্ত করে দিল।
তবে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহ-ই হল গুনাহের দরজা : আর সবচে’ ক্ষতি কারক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ইবনুল কাইয়ুম বলেন, যে ব্যক্তি চতুষ্টয়কে সংরক্ষণ করল সে তার দ্বীনকে নিরাপদ করল সে গুলো হল, মুহূর্ত ও সময়, ক্ষতিকারক বস্ত্ত সমূহ, বাকশক্তি এবং পদক্ষেপ সমূহ।
অতএব, এই চারটি দরজায় নিজের পাহারাদার নিযুক্ত করা উচিত। এই গুলোর প্রাচীর সমূহে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে। কেননা, এগুলোর মাধ্যমেই শত্রু পরবশ করে তাকে। অত:পর সে গোটা ভূমিকে গ্রাস করে নেয় এবং প্রবল পরাক্রম হয়ে বিস্তার লাভ করে। মানুষের কাছে অধিকাংশ গুনাহ এই চারটি পথেই প্রবেশ করে তাকে।
সুতরাং গুনাহের উপকরণ ও যে সব প্রবেশপথে গুনাহ বিস্তার লাভ করে থাকে সে গুলো সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেন সে সে সব থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এখন সে সব বিষয়ের বিশদ আলোচনা উপস্থাপিত হচ্ছে।
এবং তার কিছু প্রবেশ পথ রয়েছে যা সেখানে প্রবিষ্ট করে দেয়। গুনাহ থেকে বিরত ও বেঁচে থাকার জন্য এই সব বিষয়ের জানা নিতান্ত অপরিহার্য।
আল্লাহর অবাধ্য আচরণের অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে সর্ববৃহৎ হল, অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক কাজে মানুষের জড়িয়ে পড়া। তাকে দ্বীন বা দুনিয়ার কোন উপকার করবে না। উপরন্তু নিরর্থক কাজ বর্জন করা মানুষের ইসলামের পরিপূর্নতা ও তার ঈমান বৃদ্ধির পরিচায়ক। রাসূল বলেছেন,
من حسن إسلام المرء تركه ما لايعنيه . أخرجه الترمذي (2317) ، وابن ماجه (3976) ، وحسنه النووي في الأربعين النووية، والألباني في صحيح سنن الترمذي (1887).
‘মানুষের সর্বোত্তম ইসলাম হল নিরর্থক কাজ বর্জন করা। [তিরমিজি : ২৩১৭। ইবনে মাজাহ : ৩৯৭৬। সহিহ সুনানে তিরমিজি : ১৮৮৭।]
অতএব যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে ব্যস্ত রইল এবং দুনিয়ার কাজে তার পূর্ণ সময় ব্যয় করল এবং অধিক হারে মুবাহ কাজ করল- এই মুবাহ কাজ দ্বারা আল্লাহর আনুগত্য করার সাহায্য চাওয়া ছাড়া - সে তার জন্য গুনাহের উপকরণ সমূহ উন্মুক্ত করে দিল।
তবে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহ-ই হল গুনাহের দরজা : আর সবচে’ ক্ষতি কারক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ইবনুল কাইয়ুম বলেন, যে ব্যক্তি চতুষ্টয়কে সংরক্ষণ করল সে তার দ্বীনকে নিরাপদ করল সে গুলো হল, মুহূর্ত ও সময়, ক্ষতিকারক বস্ত্ত সমূহ, বাকশক্তি এবং পদক্ষেপ সমূহ।
অতএব, এই চারটি দরজায় নিজের পাহারাদার নিযুক্ত করা উচিত। এই গুলোর প্রাচীর সমূহে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে। কেননা, এগুলোর মাধ্যমেই শত্রু পরবশ করে তাকে। অত:পর সে গোটা ভূমিকে গ্রাস করে নেয় এবং প্রবল পরাক্রম হয়ে বিস্তার লাভ করে। মানুষের কাছে অধিকাংশ গুনাহ এই চারটি পথেই প্রবেশ করে তাকে।
সুতরাং গুনাহের উপকরণ ও যে সব প্রবেশপথে গুনাহ বিস্তার লাভ করে থাকে সে গুলো সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেন সে সে সব থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এখন সে সব বিষয়ের বিশদ আলোচনা উপস্থাপিত হচ্ছে।
মানুষ দৃষ্টিশক্তি থেকে কোন ভাবেই অমুখাপেক্ষী নয়। যা দ্বারা সে তার পথ দেখতে পারে এবং তার গন্তব্য চিনতে পারে। এবং যা দ্বারা সে তার স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে। কিন্তু আমাদের বাস্তব সম্পর্কে চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই পর্যবেক্ষণ করছেন সে, এ মহান নেয়ামত দ্বারা মানুষ কীভাবে অনর্থক কাজের উদ্দেশে সীমা-লঙ্ঘন করছে, যা কোন প্রগতিবাদী সার্থক উন্নতির জন্য প্রচেষ্টাকারীর কর্ম হতে পারে না। এরশাদ হচ্ছে-
لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ . ﴿الدهر : 37﴾
যার ইচ্ছে সামনে অগ্রসর হোক, যার ইচ্ছে পশ্চাৎপসরণ করুক। [দাহার : ৩৭।]
এবং সন্দেহ নেই যে, দৃষ্টিকে নিছক নিরর্থক বিষয়ে নিবন্ধ করা উচিত নয়।
যদিও তা মুবাহ হোক বা না হোক। এবং নিজদের দৃষ্টি সংযত রাখার ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে যদিও তা যতই কঠিন হোক না কেন।
এবং তা অপরিষ্কার নয়। যে, এই মুবাহ দৃষ্টি নিষিদ্ধ হতে পারে যখন তা দায়িত্ব পালনে গাফেল বানাবে।
لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ . ﴿الدهر : 37﴾
যার ইচ্ছে সামনে অগ্রসর হোক, যার ইচ্ছে পশ্চাৎপসরণ করুক। [দাহার : ৩৭।]
এবং সন্দেহ নেই যে, দৃষ্টিকে নিছক নিরর্থক বিষয়ে নিবন্ধ করা উচিত নয়।
যদিও তা মুবাহ হোক বা না হোক। এবং নিজদের দৃষ্টি সংযত রাখার ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে যদিও তা যতই কঠিন হোক না কেন।
এবং তা অপরিষ্কার নয়। যে, এই মুবাহ দৃষ্টি নিষিদ্ধ হতে পারে যখন তা দায়িত্ব পালনে গাফেল বানাবে।
অপকারী বইপত্র ও ম্যাগাজিন পড়ার জন্য দৃষ্টি বোলানো যেমন কাল্পনিক গল্প ও রহস্য গল্প। বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্রের কাল্পনিক বর্ণনার মাধ্যমে মনের স্থূল আনন্দ ছাড়া এগুলোতে অর্থবহ কিছু নেই। এমনি ভাবে উপকার শূন্য আরো বিভিন্ন মাধ্যমে যেমন ক্রীড়াও শিল্পের সংবাদ ও কুকুরের সংবাদ ইত্যাদি। যখন বিষয়টি এরূপ তাহলে হারাম ও নিষিদ্ধ বস্ত্তর প্রতি দৃষ্টিদান আরো অধিক নিরর্থক কাজ। বিশেষত: মানুষের গোপনাঙ্গের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। কেননা তা আরো বেশি নিন্দনীয় কাজ ঐ সত্তার নিকট যিনি চক্ষুসমূহের খিয়ানত ও অন্তর এর গোপন সবকিছুর খবর রাখেন। এবং যার মন নিষিদ্ধ দৃষ্টির মাধ্যমে তার অন্তরকে হারাম থেকে বিরত রাখতে চায় তবে তা তার জন্য বৈধ। কেননা, তা দু’টি ক্ষতির মধ্যে লঘুতর। এবং এই চিকিৎসা প্রয়োগের মাধ্যমে সে তার অন্তরকে কল্যাণময় দৃষ্টির দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি, যা দৃষ্টি এবং অন্যান্য বিষয় যথা অন্তর কথা ও সক্রিয় কর্মের ক্ষেত্র প্রযোজ্য।
মানুষের অর্থহীন আচরণ যেমন কাজের ক্ষেত্রে হয় তদ্রুপ কথার ক্ষেত্রেও হয়। কেননা কথাও তার কাজের অংশ। তবে এ বিষয়ে অধি:কাংশ মানুষই বেখবর। তাই তারা তাদের কথাবার্তাকে কর্মের অঙ্গীভূত মনে করে না। উমর ইবনে আ: আযিয তাদের জন্য এ বিষয়টির তাৎপর্য সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন: তিনি বলেন,
من علم أن الكلام من عمله، أمسك عن الكلام إلا فيما يعنيه . الزهد للإمام أحمد ص 296 ، وانظر : جامع العلوم والحكم، لابن رجب 1/291.
‘যে জানবে যে তার কথা কর্মেরই অংশ সে নিরর্থক কথা থেকে নিবৃত্ত থাকবে।’ [ইমাম আহমদের ‘কিতাবুজ জুহুদ’ : ২৯৬। ইবনে রজবের ‘জামে আল-উলুম ওল হেকাম’ : ১/২৯১।]
বরং নিরর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার নিকটতম উদ্দেশ্যে হল জিহবাকে অর্থহীন কথা থেকে বাঁচিয়ে রাখা। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা সাক্ষ্য দিচ্ছে,
إن من حسن إسلام المرء قلة الكلام فيما لا يعنيه . أخرجه أحمد، 1/201 ، وهو حسن لغيره .
‘মানুষের সৌন্দর্য ইসলাম হল অর্থহীন কথা থেকে জিহবাকে বাঁচিয়ে রাখা। [আহমাদ : ১/২০১।] এবং আবুদ্দারদা রা. বলেছেন—
من فقه الرجل قلة الكلام فيما لايعنيه . أدب المجالسة، لابن عبد البر، ص 68.
মানুষের বুদ্ধিমত্তার অংশ বিশেষ হল নিরর্থক বিষয়ে কথার স্বল্পতা। [আদাবুল মুজালিসাহ : পৃ : ৬৮।]
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ . ﴿ق : 18﴾
‘মানুষের বাক্য সংযমের ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী যথেষ্ট যে, সে যে কথা উচ্চারণ করে তার নিকট রয়েছে রক্ষণশীল প্রহরী। [ক্বফ : ১৮।] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী—
وهل يكب الناس في النارعلى وجوههم-أوعلى مناخرهم- إلا حصائد ألسنتهم .
‘মানুষকে তাদের চেহারা বা কাঁধের উপর দিয়ে জাহান্নমে নিক্ষেপ করবে কেবল তাদের জিহবার শস্যসমূহ (কথা)। [তিরমিজি : ২৬১৬। আহমাদ : ৫/২৩১।]
জিহবাকে সংযত রাখবে এভাবে যে কোন শব্দ অনর্থক উচ্চারিত হবে না কেবলমাত্র ওইসব বিষয়ে কথা বলবে যেখানে তার দ্বীনের ক্ষেত্রে লাভ ও বৃদ্ধির আশা করা যায়। যখন সে কথা বলবে চিন্তা করবে তাতে কোন লাভ ও কল্যাণ আছে কি নেই? যদি কোন লাভ না থাকে নিজেকে সংযত রাখবে আর যদি তাতে কোন লাভ থাকে, তবে লক্ষ্য রাখবে এই কথার মাধ্যমে কী তার চেয়েও অধিক লাভ জনক কোন পথ ছুটে যাবে? এমন হলে এর দ্বারা ঐটিকে বিনষ্ট করবে না। ইবনে আববাস রা. বলেছেন—
خمس ، لهن أحسن من الدهم الموقفة : لا تتكلم فيما لا يعنيك، فإنه فضل ولا آمن عليك الوزر، ولا تتكلم فيما يعنيك حتى تجد له موضعا، فإنه رب متكلم في أمر قد وضعه في غير موضعه فيعنت .. الصمت لابن أبي الدنيا ص 95(114) إسناده ضعيف كما ذكره المحقق .
পাঁচটি অভ্যাস এমন যা তাদের জন্যে মহামূল্যবান অশ্ব থেকেও উত্তম : অপ্রয়োজনীয়-অহেতুক কথা বলবেনা। কারণ এটি অতিরিক্ত এবং তোমার কোন গোনাহ হবেনা বলে আমি নিশ্চিত নই। উপযুক্ত স্থান ব্যতীত প্রয়োজনীয় কথাও বলবে না। কারণ অনেক বক্তা অনুপযুক্ত স্থানে কথা বলার কারণে তিরস্কৃত হয়...।
(আল সমত : ইবন আবিদ্দুনিয়া)
বিশেষজ্ঞদের মতে এর সনদ দুর্বল।
যখন তুমি অন্তরের কোন ইচ্ছাকে প্রকাশ করতে চাও তবে জিহবার নড়াচড়ার মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। কেননা তার অভিব্যক্তি চেহারায় ফুটে ওঠে চাই সে চাক বা অস্বীকার করুক।
আশ্চর্যের বিষয় হল, মানুষের জন্য হারাম বস্ত্ত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ, জুলুম, ব্যভিচার, চুরি, মদ্য পান এবং নিষিদ্ধ দৃষ্টিদান ইত্যাদি বিষয় থেকে বেঁচে থাকা সহজ । আর তার পক্ষে জিহবার আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত থাকা খুবই কঠিন। তাই তুমি এমন লোক দেখতে পাবে যার কাছে দ্বীন, এবাদত এবং দুনিয়া বিমুখতা সম্পর্কে পরামর্শ করা হয়। অথচ ঐ ব্যক্তি এমন সব কথা বলে যা তাকে নির্ঘাত আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত করে। এবং এমন বিপরীত ধর্মী কথাবার্তা বলে যা আকাশ ও জমিনের চেয়ে ও অধিক দূরত্ব রাখে। এবং তুমি এমন অনেক লোক দেখেতে পাবে যারা অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে অনেক সচেতন অথচ তার জিহবা জীবিত বা মৃত সকলের ব্যাপারেই নির্বিচারে মন্তব্য করে সে কী বলেছে এ ব্যাপারে তার কোন পরওয়া নেই।
من علم أن الكلام من عمله، أمسك عن الكلام إلا فيما يعنيه . الزهد للإمام أحمد ص 296 ، وانظر : جامع العلوم والحكم، لابن رجب 1/291.
‘যে জানবে যে তার কথা কর্মেরই অংশ সে নিরর্থক কথা থেকে নিবৃত্ত থাকবে।’ [ইমাম আহমদের ‘কিতাবুজ জুহুদ’ : ২৯৬। ইবনে রজবের ‘জামে আল-উলুম ওল হেকাম’ : ১/২৯১।]
বরং নিরর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার নিকটতম উদ্দেশ্যে হল জিহবাকে অর্থহীন কথা থেকে বাঁচিয়ে রাখা। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা সাক্ষ্য দিচ্ছে,
إن من حسن إسلام المرء قلة الكلام فيما لا يعنيه . أخرجه أحمد، 1/201 ، وهو حسن لغيره .
‘মানুষের সৌন্দর্য ইসলাম হল অর্থহীন কথা থেকে জিহবাকে বাঁচিয়ে রাখা। [আহমাদ : ১/২০১।] এবং আবুদ্দারদা রা. বলেছেন—
من فقه الرجل قلة الكلام فيما لايعنيه . أدب المجالسة، لابن عبد البر، ص 68.
মানুষের বুদ্ধিমত্তার অংশ বিশেষ হল নিরর্থক বিষয়ে কথার স্বল্পতা। [আদাবুল মুজালিসাহ : পৃ : ৬৮।]
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ . ﴿ق : 18﴾
‘মানুষের বাক্য সংযমের ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী যথেষ্ট যে, সে যে কথা উচ্চারণ করে তার নিকট রয়েছে রক্ষণশীল প্রহরী। [ক্বফ : ১৮।] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী—
وهل يكب الناس في النارعلى وجوههم-أوعلى مناخرهم- إلا حصائد ألسنتهم .
‘মানুষকে তাদের চেহারা বা কাঁধের উপর দিয়ে জাহান্নমে নিক্ষেপ করবে কেবল তাদের জিহবার শস্যসমূহ (কথা)। [তিরমিজি : ২৬১৬। আহমাদ : ৫/২৩১।]
জিহবাকে সংযত রাখবে এভাবে যে কোন শব্দ অনর্থক উচ্চারিত হবে না কেবলমাত্র ওইসব বিষয়ে কথা বলবে যেখানে তার দ্বীনের ক্ষেত্রে লাভ ও বৃদ্ধির আশা করা যায়। যখন সে কথা বলবে চিন্তা করবে তাতে কোন লাভ ও কল্যাণ আছে কি নেই? যদি কোন লাভ না থাকে নিজেকে সংযত রাখবে আর যদি তাতে কোন লাভ থাকে, তবে লক্ষ্য রাখবে এই কথার মাধ্যমে কী তার চেয়েও অধিক লাভ জনক কোন পথ ছুটে যাবে? এমন হলে এর দ্বারা ঐটিকে বিনষ্ট করবে না। ইবনে আববাস রা. বলেছেন—
خمس ، لهن أحسن من الدهم الموقفة : لا تتكلم فيما لا يعنيك، فإنه فضل ولا آمن عليك الوزر، ولا تتكلم فيما يعنيك حتى تجد له موضعا، فإنه رب متكلم في أمر قد وضعه في غير موضعه فيعنت .. الصمت لابن أبي الدنيا ص 95(114) إسناده ضعيف كما ذكره المحقق .
পাঁচটি অভ্যাস এমন যা তাদের জন্যে মহামূল্যবান অশ্ব থেকেও উত্তম : অপ্রয়োজনীয়-অহেতুক কথা বলবেনা। কারণ এটি অতিরিক্ত এবং তোমার কোন গোনাহ হবেনা বলে আমি নিশ্চিত নই। উপযুক্ত স্থান ব্যতীত প্রয়োজনীয় কথাও বলবে না। কারণ অনেক বক্তা অনুপযুক্ত স্থানে কথা বলার কারণে তিরস্কৃত হয়...।
(আল সমত : ইবন আবিদ্দুনিয়া)
বিশেষজ্ঞদের মতে এর সনদ দুর্বল।
যখন তুমি অন্তরের কোন ইচ্ছাকে প্রকাশ করতে চাও তবে জিহবার নড়াচড়ার মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। কেননা তার অভিব্যক্তি চেহারায় ফুটে ওঠে চাই সে চাক বা অস্বীকার করুক।
আশ্চর্যের বিষয় হল, মানুষের জন্য হারাম বস্ত্ত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ, জুলুম, ব্যভিচার, চুরি, মদ্য পান এবং নিষিদ্ধ দৃষ্টিদান ইত্যাদি বিষয় থেকে বেঁচে থাকা সহজ । আর তার পক্ষে জিহবার আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত থাকা খুবই কঠিন। তাই তুমি এমন লোক দেখতে পাবে যার কাছে দ্বীন, এবাদত এবং দুনিয়া বিমুখতা সম্পর্কে পরামর্শ করা হয়। অথচ ঐ ব্যক্তি এমন সব কথা বলে যা তাকে নির্ঘাত আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত করে। এবং এমন বিপরীত ধর্মী কথাবার্তা বলে যা আকাশ ও জমিনের চেয়ে ও অধিক দূরত্ব রাখে। এবং তুমি এমন অনেক লোক দেখেতে পাবে যারা অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে অনেক সচেতন অথচ তার জিহবা জীবিত বা মৃত সকলের ব্যাপারেই নির্বিচারে মন্তব্য করে সে কী বলেছে এ ব্যাপারে তার কোন পরওয়া নেই।
এমন কথাবার্তা বলা যদি সে চুপ থাকে তবে সে গুনাহগার হবে না এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতে তার কোন ক্ষতি ও সাধিত হবে না। যেমন নিত্য দিনের ঘটনা এমন খাবার পোশাক ইত্যাদির আলোচনা। এবং অপরকে তার এবাদত সম্পর্কে প্রশ্ন করা এবং তার অবস্থান ও অপরের সঙ্গে তার কথাবার্তার অবস্থান ও কথাবার্তার বিবরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা। যা দ্বারা জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি কোন মিথ্যা বা ক্ষতি শিকার হয়।
আর নিরর্থক কথার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে অর্থপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরঞ্জন করা। তবে এটা আপেক্ষিক বিষয়। অর্থহীন বেফায়দা কথাবার্তার ক্ষেত্রে ঈমানদের নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আলোচনা অনেক বেশি।
এটা অস্পষ্ট নয় যে, গিবত, পরনিন্দা, অপবাদ ও মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি অধিক যুক্তি সংগত ভাবে হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।
মোট কথা জবানের ধ্বংসাত্মক পরিণাম ও তার বিপদ সমূহের পরিচয় লাভ এবং তা থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া নেহায়েত জরুরি। এই ভয়ে যে এর মাধ্যমে এ গুলোর সংঘটকরা ধ্বংস ও ক্ষতির মধ্যে নিপতিত হবে। ন্যূনতম এতটুকু উন্নীত হতে পারত তা থেকে বঞ্চিত হবে। এবং অর্থহীন কথাবার্তায় অনেক ক্ষতি রয়েছে। যথা: রিজিক বিলম্বকরণ, হেফাজতকারী ফেরেশতাদের যন্ত্রণা প্রদান, আল্লাহর নিকট নিরর্থক কথাবার্তার
রেকর্ড প্রেরণ ও শীর্ষ সাক্ষীদের সামনে সে আমলনামা পঠন জান্নাতে থেকে বাধা প্রদান, হিসাব, ভৎর্সনা, তিরস্কার, দলিল উপস্থাপন করা এবং আল্লাহর থেকে লজ্জা পাওয়া। হাদিসে এসেছে,
إن أحدكم ليتكلم بالكلمة من رضوان الله ما يظن أن تبلغ ما بلغت، فيكتب الله له بها رضوانه إلى يوم يلقاه، وإن أحدكم ليتكلم بالكلمة من سخط الله ما يظن أن تبلغ ما بلغت، فيكتب الله بها سخطه إلى يوم يلقاه . أخرجه الترمذي، ح 2319 ،وقال : حسن صحيح، وصححه الألباني،ح 1888.
তোমাদের কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি দায়ক কোন কথা বলে অথচ সে ধারণা করতে পারে না তা কোথায় পৌঁছোবে, অত:পর আল্লাহ তার জন্য কেয়ামতের সাক্ষাৎ দিবসে আপন সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে রাখেন এবং তোমাদের একই আল্লাহর অসন্তোষ প্রদানকারী কোন কথা বলে অথচ সে ধারণাও করতে পারে না তার পরিণাম কী হবে, অত:পর আল্লাহ কেয়ামত দিবসের জন্য তার প্রতি অসন্তুষ্টি লিখে রাখেন। [তিরমিজি : ২৩১৯। সহিহ আলবানি : ১৮৮৮।]
কথিত আছে, লোকমানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি কীভাবে তার মর্যাদাও সম্মানের আসন লাভ করেছেন। তিনি বলেছেন,
صدق الحديث، وطول السكوت عما لا يعنيني .
সত্য কথনও অর্থহীন বিষয়ে দীর্ঘ নীরবতা পালন। মুহাম্মদ ইবনে আজলান বলেছেন—
إنما الكلام أربعة : أن تذكر الله، أو تقرأ القرآن، أو تسأل عن علم فتخبر به، أو تتكلم فيما يعنيك من أمر دنياك . التمهيد لابن عبد البر، 9/202.
প্রকৃতপক্ষে কথা চার প্রকার : যথা; আল্লাহকে স্মরণ করা অথবা পবিত্র কোরআন পাঠ করা অথবা কোন জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন করে সে বিষয়ে অবগত হওয়া অথবা দুনিয়ার বিষয়ে উপকারী কথাবার্তা বলা।
হাসান ইবনে হুমাইদ বলেছে,
وقلت من مقالته الفضولإذا عقل الفتى استحيا واتقى
যখন কোন যুবক বুদ্ধিদীপ্ত হবে সে সলাজ ও খোদা-ভীরু হবে। এবং সে কথাবার্তায় পরিমিত ও স্বল্পভাষী হবে।
এটা অস্পষ্ট নয় যে, গিবত, পরনিন্দা, অপবাদ ও মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি অধিক যুক্তি সংগত ভাবে হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।
মোট কথা জবানের ধ্বংসাত্মক পরিণাম ও তার বিপদ সমূহের পরিচয় লাভ এবং তা থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া নেহায়েত জরুরি। এই ভয়ে যে এর মাধ্যমে এ গুলোর সংঘটকরা ধ্বংস ও ক্ষতির মধ্যে নিপতিত হবে। ন্যূনতম এতটুকু উন্নীত হতে পারত তা থেকে বঞ্চিত হবে। এবং অর্থহীন কথাবার্তায় অনেক ক্ষতি রয়েছে। যথা: রিজিক বিলম্বকরণ, হেফাজতকারী ফেরেশতাদের যন্ত্রণা প্রদান, আল্লাহর নিকট নিরর্থক কথাবার্তার
রেকর্ড প্রেরণ ও শীর্ষ সাক্ষীদের সামনে সে আমলনামা পঠন জান্নাতে থেকে বাধা প্রদান, হিসাব, ভৎর্সনা, তিরস্কার, দলিল উপস্থাপন করা এবং আল্লাহর থেকে লজ্জা পাওয়া। হাদিসে এসেছে,
إن أحدكم ليتكلم بالكلمة من رضوان الله ما يظن أن تبلغ ما بلغت، فيكتب الله له بها رضوانه إلى يوم يلقاه، وإن أحدكم ليتكلم بالكلمة من سخط الله ما يظن أن تبلغ ما بلغت، فيكتب الله بها سخطه إلى يوم يلقاه . أخرجه الترمذي، ح 2319 ،وقال : حسن صحيح، وصححه الألباني،ح 1888.
তোমাদের কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি দায়ক কোন কথা বলে অথচ সে ধারণা করতে পারে না তা কোথায় পৌঁছোবে, অত:পর আল্লাহ তার জন্য কেয়ামতের সাক্ষাৎ দিবসে আপন সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে রাখেন এবং তোমাদের একই আল্লাহর অসন্তোষ প্রদানকারী কোন কথা বলে অথচ সে ধারণাও করতে পারে না তার পরিণাম কী হবে, অত:পর আল্লাহ কেয়ামত দিবসের জন্য তার প্রতি অসন্তুষ্টি লিখে রাখেন। [তিরমিজি : ২৩১৯। সহিহ আলবানি : ১৮৮৮।]
কথিত আছে, লোকমানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি কীভাবে তার মর্যাদাও সম্মানের আসন লাভ করেছেন। তিনি বলেছেন,
صدق الحديث، وطول السكوت عما لا يعنيني .
সত্য কথনও অর্থহীন বিষয়ে দীর্ঘ নীরবতা পালন। মুহাম্মদ ইবনে আজলান বলেছেন—
إنما الكلام أربعة : أن تذكر الله، أو تقرأ القرآن، أو تسأل عن علم فتخبر به، أو تتكلم فيما يعنيك من أمر دنياك . التمهيد لابن عبد البر، 9/202.
প্রকৃতপক্ষে কথা চার প্রকার : যথা; আল্লাহকে স্মরণ করা অথবা পবিত্র কোরআন পাঠ করা অথবা কোন জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন করে সে বিষয়ে অবগত হওয়া অথবা দুনিয়ার বিষয়ে উপকারী কথাবার্তা বলা।
হাসান ইবনে হুমাইদ বলেছে,
وقلت من مقالته الفضولإذا عقل الفتى استحيا واتقى
যখন কোন যুবক বুদ্ধিদীপ্ত হবে সে সলাজ ও খোদা-ভীরু হবে। এবং সে কথাবার্তায় পরিমিত ও স্বল্পভাষী হবে।
চিন্তা ও কল্পনা বিষয়ক অধ্যায়টি বিশেষ গুরুত্ববহ। কেননা মানুষের কথা, কাজ ও আচরণ সমূহে এর শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। কারণ, চিন্তাই হল ভাল মন্দের উৎস। এবং চিন্তা থেকেই নানা ইচ্ছা, প্রেরণা ও সংকল্পের সৃষ্টি হয়। অতএব সে তার কল্পনা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবে সে তার প্রবৃত্তির লাগাম এর নিয়ন্ত্রক হবে এবং সে প্রবৃত্তর ওপর বিজয় লাভ করবে। পক্ষান্তরে যার কল্পনা তাকে পরাজিত করবে তার প্রবৃত্তি মন তার ওপর বিজয়ী হবে। আর সে কল্পনাকে লঘু দৃষ্টিতে দেখবে তাকে ধ্বংসের প্রান্তসীমায় নিয়ে যাবে। এবং এই কল্পনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকবে যাবৎ না তার নিরর্থক হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
আর কল্যাণময় কল্পনা যা মানুষের উপকারে আসে তা হচ্ছে, পার্থিব বা অপার্থিব কল্যাণ অর্জনের উদ্দেশে যা নিবেদিত অথবা কোন ইহলৌকিক বা পারলৌকিক অনিষ্ট দূর করার উদ্দেশে যা নির্দিষ্ট।
আর সর্বাধিক উপকারী হল যা আল্লাহ ও পরকালের উদ্দেশে হয়ে থাকে যেমন পবিত্র কোরআনের আয়াতের অর্থসমূহ গভীর চিন্তা ভাবনা করা এবং তা দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা। এবং আমাদের সামনে উপস্থিত জাগতিক নিদর্শন সমূহে ধ্যান-মগ্ন হওয়া এবং তা দ্বারা আল্লাহর নাম, গুন ও প্রজ্ঞার ওপর প্রমাণ উপস্থাপন করা। এমন ভাবে আল্লাহর নেয়ামত অনুগ্রহ ও দান সমূহ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা। প্রবৃত্তির দোষ ত্রুটি ও সমস্যা সমূহ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা। সময়ের দায়িত্ব প্রয়োজন সম্পর্কে চিন্তা মগ্ন হওয়া। এই মোট পাঁচ প্রকার।
পূর্ণতা হল হৃদয়কে কল্পনা শক্তি, চিন্তা-ভাবনা ও প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের চিন্তায় নিমগ্ন ও পরিপূর্ণ রাখা। এবং তার পথ ও গন্তব্য সম্পর্কে চিন্তা করা। সবচে’ পূর্ণতম মানুষ সে যে কল্পনা, চিন্তা ও ইচ্ছায় এর বাস্তবায়নে অধিক মনোযোগী। পক্ষান্তরে সবচে’ অসম্পূর্ণ মানুষ সে যে কল্পনা, চিন্তা ও ইচ্ছায় তার প্রবৃত্তির অধিক অনুগামী। আর কেউ তো অধিক এমন বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যা পুরো পুরি অর্থহীন, ফলে তার ইচ্ছাশক্তি প্রকৃত অর্থবহ কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। অত:পর তার ইহকাল ও পরকাল উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়। অতএব, অর্থহীন কল্পনা ও চিন্তা-ভাবনা এবং কাল্পনিক ও সুদূর পরাহত বিষয়ের চিন্তা কী উপকারে আসবে?
নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হচ্ছে, মেধাকে নিয়ন্ত্রণ করা। এবং তাকে কল্পনা ও প্রশস্ত চিন্তায় নির্বিঘ্নে খোরাখুরির সুযোগ না দেওয়া, যা তাকে পার্থিব উপকরণ তার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় পরিভ্রমণ করাবে। আর তাকে এক বস্ত্ত থেকে আরেক বস্ত্তর দিকে স্থানান্তর করবে। তবে তা তাকে প্রয়োজনীয় কোন স্থানে অবস্থান করাবে না। আর বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত চিন্তা-ভাবনার সুসংহত চিন্তা-ভাবনা মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্ত্ত। এবং জাতিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য।
আর কল্যাণময় কল্পনা যা মানুষের উপকারে আসে তা হচ্ছে, পার্থিব বা অপার্থিব কল্যাণ অর্জনের উদ্দেশে যা নিবেদিত অথবা কোন ইহলৌকিক বা পারলৌকিক অনিষ্ট দূর করার উদ্দেশে যা নির্দিষ্ট।
আর সর্বাধিক উপকারী হল যা আল্লাহ ও পরকালের উদ্দেশে হয়ে থাকে যেমন পবিত্র কোরআনের আয়াতের অর্থসমূহ গভীর চিন্তা ভাবনা করা এবং তা দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা। এবং আমাদের সামনে উপস্থিত জাগতিক নিদর্শন সমূহে ধ্যান-মগ্ন হওয়া এবং তা দ্বারা আল্লাহর নাম, গুন ও প্রজ্ঞার ওপর প্রমাণ উপস্থাপন করা। এমন ভাবে আল্লাহর নেয়ামত অনুগ্রহ ও দান সমূহ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা। প্রবৃত্তির দোষ ত্রুটি ও সমস্যা সমূহ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা। সময়ের দায়িত্ব প্রয়োজন সম্পর্কে চিন্তা মগ্ন হওয়া। এই মোট পাঁচ প্রকার।
পূর্ণতা হল হৃদয়কে কল্পনা শক্তি, চিন্তা-ভাবনা ও প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের চিন্তায় নিমগ্ন ও পরিপূর্ণ রাখা। এবং তার পথ ও গন্তব্য সম্পর্কে চিন্তা করা। সবচে’ পূর্ণতম মানুষ সে যে কল্পনা, চিন্তা ও ইচ্ছায় এর বাস্তবায়নে অধিক মনোযোগী। পক্ষান্তরে সবচে’ অসম্পূর্ণ মানুষ সে যে কল্পনা, চিন্তা ও ইচ্ছায় তার প্রবৃত্তির অধিক অনুগামী। আর কেউ তো অধিক এমন বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যা পুরো পুরি অর্থহীন, ফলে তার ইচ্ছাশক্তি প্রকৃত অর্থবহ কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। অত:পর তার ইহকাল ও পরকাল উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়। অতএব, অর্থহীন কল্পনা ও চিন্তা-ভাবনা এবং কাল্পনিক ও সুদূর পরাহত বিষয়ের চিন্তা কী উপকারে আসবে?
নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হচ্ছে, মেধাকে নিয়ন্ত্রণ করা। এবং তাকে কল্পনা ও প্রশস্ত চিন্তায় নির্বিঘ্নে খোরাখুরির সুযোগ না দেওয়া, যা তাকে পার্থিব উপকরণ তার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় পরিভ্রমণ করাবে। আর তাকে এক বস্ত্ত থেকে আরেক বস্ত্তর দিকে স্থানান্তর করবে। তবে তা তাকে প্রয়োজনীয় কোন স্থানে অবস্থান করাবে না। আর বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত চিন্তা-ভাবনার সুসংহত চিন্তা-ভাবনা মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্ত্ত। এবং জাতিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য।
এই বিষয়ে আমরা অন্তরের দুর্বলতা ও রোগ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতার শরণাপন্ন হওয়ার অধিক প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। যে রোগ শনাক্ত করবে ও তার কারণ গুলো বিশেষণ করবে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাখ্যা দেবে। একটি নাতি দীর্ঘ বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হচ্ছে ‘ জেনে রাখো ওয়াসওয়াসা ও প্ররোচনার সাথে সংশিষ্ট বিষয়গুলো চিন্তা-ভাবনা কে পর্যন্ত আক্রান্ত করে। আর চিন্তা -ভাবনা এ গুলোকে স্মরণের বিষয়ে পরিণত করে। তার পর স্মরণ এ গুলোকে ইচ্ছা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, ইচ্ছা তাকে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কাজে বাস্তবায়ন করে। অত:পর তা মজবুত হয়ে স্বভাব, অভ্যাসে পরিণত হয়। তাই এগুলোকে শুরু থেকেই মূলোৎপাটন করা অধিকতর সহজ তা দৃঢ় ও পূর্ণতা লাভ করার পর বিচ্ছিন্ন করার তুলনায়।
আর এটা জানা বিষয় যে, মানুষকে কল্পনা শক্তি মৃত বানিয়ে ফেলা এবং তা নির্মূল করার শক্তি দেওয়া হয়নি। প্রবৃত্তির বিভিন্ন উপসর্গ তার কাছে ভিড় করবেই। কিন্তু ইমানের শক্তি ও জ্ঞান তাকে সর্বোত্তম জিনিস গ্রহণ ও তার প্রতি সন্তুষ্টি এবং তা ধারণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আর সবচে’ মন্দ বিষয়কে প্রতিরোধ ও তার প্রতি ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশে সহায়তা করবে। যেমন সাহাবারা বলতেন—
يارسول الله إن أحدنا يجد في نفسه ما لأن يحترق حتى يصير حممة أحب إليه من أن يتكلم به فقال : أو قد وجدتموه؟ قالوا : نعم . قال : ذلك صريح الإيمان . وفي لفظ : الحمد لله الذي رد كيده إلى الوسوسة .
হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের কেউ তার মনের ভেতর এমনি কিছুর উপস্থিতি পায় যদি তা দাহ্য বস্ত্ত হত তা কয়লায় পরিণত হয়ে যেত। তিনি বললেন, তোমরা কি এমন কিছুর উপলব্ধি করেছ? তারা বললেন, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটাই হচ্ছে সুস্পষ্ট ইমান। অন্য ভাষায়, সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি কুমন্ত্রণার দিকে তার কৌশলকে বানচাল করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে দুটি বক্তব্য পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যান ও অপছন্দ করা ইমানের সুস্পষ্ট পরিচায়ক। দ্বিতীয় হচ্ছে, তার মনে শয়তানের উপস্থিতি ও প্ররোচনা দেয়া সুস্পষ্ট ইমান। কেননা ইমানের সঙ্গে বৈপরীত্য সৃষ্টি ও তার দ্বারা মানকে নির্বাসিত করার ইচ্ছায় শয়তান এমনটি করে থাকে।
মহান আল্লাহ মানুষরে মনকে সর্বদা ঘুর্নায়মান বা তার সাদৃশ্য করে সৃষ্টি করেছেন। তাই তার এমন এক বস্ত্ত দরকার যা সে বিচূর্ণ করবে। যদি তার মধ্যে কোন দানা রাখা হয় তবে তাকেই চূর্ণ করবে। আর যদি তার মধ্যে মাটি বা পাথর রাখা হয় তবে তাকেও বিচূর্ণ করবে। অতএব, মনের ভিতরে আন্দোলিত সমস্ত কল্পনা ও চিন্তাশক্তি জাঁতায় রক্ষিত দানা তুল্য। আর জাঁতা কখন ও কর্মহীন, নির্বিকার বসে থাকে না। তাই তার মধ্যে কিছু রাখতেই হবে। মানুষের মধ্যে কারও জাঁতা এমন যে নিজেও উপকৃত হয় এবং অন্যকেও উপকার পৌঁছায়। আর অধিকাংশ মানুষ তারা বালি, পাথর ও তৃন বিচূর্ণ করে। তারপর যখন খামির ও রুটি তৈরির সময় আসে তখনই চূর্ণ করার পরিচয় বেরিয়ে পড়ে।
আর এটাও জানা বিষয় যে, কল্পনার সংশোধন চিন্তার সংশোধনের তুলনায় অধিক সহজ। আর চিন্তার পরিশুদ্ধি ইচ্ছার পরিশুদ্ধির তুলনায় সহজ। এবং ইচ্ছার সংশোধন বিনষ্ট কর্মের প্রতিবিধানের তুলনায় সহজ। আর তার প্রতিবিধান ---- তাই সবচে’ উপকারী চিকিৎসা হচ্ছে, তুমি নিজেকে অর্থহীন ভাবনায় না জড়িয়ে অর্থপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রাখবে। অর্থহীন বিষয় চিন্তা-ভাবনা সব অনিষ্টের প্রবেশ পথ। আর যে নিরর্থক ভাবনায় জড়িয়ে পড়ে তার অর্থবহ কাজগুলো ছেড়ে অধিক লাভ জনক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। আর চিন্তা, কল্পনা, ইচ্ছা ও প্রেরণা শক্তিকে পরিশুদ্ধ করা অধিক বাঞ্ছনীয়। কেননা, এগুলোই হচ্ছে তোমার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ যা দ্বারা তুমি আপন প্রভুর নৈকট্য বা বৈরাগ্য লাভ কর। অথচ তোমার প্রভুর নৈকট্য লাভ ও তার তোমার প্রতি সন্তুষ্টিই হচ্ছে সৌভাগ্যের সোপান। আর তার থেকে তোমার দূরত্ব ও তোমার প্রতি তার অসন্তুষ্টি হচ্ছে পূর্ণ অমঙ্গল। আর যার কল্পনাও চিন্তার সীমানায় দুর্বুদ্ধি ও মন্দ ভাবনার স্থান পায় তার সমস্ত কাজেই এর প্রভাব থাকে।
তোমার চিন্তা ও ইচ্ছা শক্তির পরিমন্ডলে শয়তানকে স্থান দেয়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা সে চিন্তাকে এমন ভাবে বিনষ্ট করে যার ক্ষতিপূরণ অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। এবং সে তোমাকে ক্ষতিকর চিন্তা ও প্ররোচনায় নিক্ষেপ করবে। এবং সে তোমার ও তোমার মঙ্গলজনক চিন্তার মাঝে দেয়াল তৈরি করবে। অথচ তুমিই তাকে তোমার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছ। তাকে তোমার হৃদয় ও কল্পনার মালিকানার আসনে বসিয়েছ সে এগুলোর মালিক বনে গেছে। এসব গুলির সমন্বিত সংশোধনের উপায় হচ্ছে, আপনার চিন্তাকে জ্ঞান ও ভাবনায় নিমগ্ন রাখা, যথা, তওহিদ ও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জানা এবং মৃত্যুও তার পরবর্তী জান্নাত বা জাহান্নামের প্রবেশ সম্পর্কে ও মন্দ কর্ম ও তা থেকে বেঁচে থাকার উপায় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। ইচ্ছাও প্রতিজ্ঞার ক্ষেত্রে উপকারী ইচ্ছায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং অপকারী ইচ্ছা পরিত্যাগ করা। এই জাঁতাকে সংশোধনের মূল উপায় হচ্ছে অর্থবহ কাজে ব্যস্ত রাখা আর তার বিনাশ সাধান হচ্ছে অর্থহীন কাজে তাকে ব্যবহার করা।
আর এটা জানা বিষয় যে, মানুষকে কল্পনা শক্তি মৃত বানিয়ে ফেলা এবং তা নির্মূল করার শক্তি দেওয়া হয়নি। প্রবৃত্তির বিভিন্ন উপসর্গ তার কাছে ভিড় করবেই। কিন্তু ইমানের শক্তি ও জ্ঞান তাকে সর্বোত্তম জিনিস গ্রহণ ও তার প্রতি সন্তুষ্টি এবং তা ধারণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আর সবচে’ মন্দ বিষয়কে প্রতিরোধ ও তার প্রতি ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশে সহায়তা করবে। যেমন সাহাবারা বলতেন—
يارسول الله إن أحدنا يجد في نفسه ما لأن يحترق حتى يصير حممة أحب إليه من أن يتكلم به فقال : أو قد وجدتموه؟ قالوا : نعم . قال : ذلك صريح الإيمان . وفي لفظ : الحمد لله الذي رد كيده إلى الوسوسة .
হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের কেউ তার মনের ভেতর এমনি কিছুর উপস্থিতি পায় যদি তা দাহ্য বস্ত্ত হত তা কয়লায় পরিণত হয়ে যেত। তিনি বললেন, তোমরা কি এমন কিছুর উপলব্ধি করেছ? তারা বললেন, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটাই হচ্ছে সুস্পষ্ট ইমান। অন্য ভাষায়, সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি কুমন্ত্রণার দিকে তার কৌশলকে বানচাল করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে দুটি বক্তব্য পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যান ও অপছন্দ করা ইমানের সুস্পষ্ট পরিচায়ক। দ্বিতীয় হচ্ছে, তার মনে শয়তানের উপস্থিতি ও প্ররোচনা দেয়া সুস্পষ্ট ইমান। কেননা ইমানের সঙ্গে বৈপরীত্য সৃষ্টি ও তার দ্বারা মানকে নির্বাসিত করার ইচ্ছায় শয়তান এমনটি করে থাকে।
মহান আল্লাহ মানুষরে মনকে সর্বদা ঘুর্নায়মান বা তার সাদৃশ্য করে সৃষ্টি করেছেন। তাই তার এমন এক বস্ত্ত দরকার যা সে বিচূর্ণ করবে। যদি তার মধ্যে কোন দানা রাখা হয় তবে তাকেই চূর্ণ করবে। আর যদি তার মধ্যে মাটি বা পাথর রাখা হয় তবে তাকেও বিচূর্ণ করবে। অতএব, মনের ভিতরে আন্দোলিত সমস্ত কল্পনা ও চিন্তাশক্তি জাঁতায় রক্ষিত দানা তুল্য। আর জাঁতা কখন ও কর্মহীন, নির্বিকার বসে থাকে না। তাই তার মধ্যে কিছু রাখতেই হবে। মানুষের মধ্যে কারও জাঁতা এমন যে নিজেও উপকৃত হয় এবং অন্যকেও উপকার পৌঁছায়। আর অধিকাংশ মানুষ তারা বালি, পাথর ও তৃন বিচূর্ণ করে। তারপর যখন খামির ও রুটি তৈরির সময় আসে তখনই চূর্ণ করার পরিচয় বেরিয়ে পড়ে।
আর এটাও জানা বিষয় যে, কল্পনার সংশোধন চিন্তার সংশোধনের তুলনায় অধিক সহজ। আর চিন্তার পরিশুদ্ধি ইচ্ছার পরিশুদ্ধির তুলনায় সহজ। এবং ইচ্ছার সংশোধন বিনষ্ট কর্মের প্রতিবিধানের তুলনায় সহজ। আর তার প্রতিবিধান ---- তাই সবচে’ উপকারী চিকিৎসা হচ্ছে, তুমি নিজেকে অর্থহীন ভাবনায় না জড়িয়ে অর্থপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রাখবে। অর্থহীন বিষয় চিন্তা-ভাবনা সব অনিষ্টের প্রবেশ পথ। আর যে নিরর্থক ভাবনায় জড়িয়ে পড়ে তার অর্থবহ কাজগুলো ছেড়ে অধিক লাভ জনক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে। আর চিন্তা, কল্পনা, ইচ্ছা ও প্রেরণা শক্তিকে পরিশুদ্ধ করা অধিক বাঞ্ছনীয়। কেননা, এগুলোই হচ্ছে তোমার বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ যা দ্বারা তুমি আপন প্রভুর নৈকট্য বা বৈরাগ্য লাভ কর। অথচ তোমার প্রভুর নৈকট্য লাভ ও তার তোমার প্রতি সন্তুষ্টিই হচ্ছে সৌভাগ্যের সোপান। আর তার থেকে তোমার দূরত্ব ও তোমার প্রতি তার অসন্তুষ্টি হচ্ছে পূর্ণ অমঙ্গল। আর যার কল্পনাও চিন্তার সীমানায় দুর্বুদ্ধি ও মন্দ ভাবনার স্থান পায় তার সমস্ত কাজেই এর প্রভাব থাকে।
তোমার চিন্তা ও ইচ্ছা শক্তির পরিমন্ডলে শয়তানকে স্থান দেয়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা সে চিন্তাকে এমন ভাবে বিনষ্ট করে যার ক্ষতিপূরণ অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। এবং সে তোমাকে ক্ষতিকর চিন্তা ও প্ররোচনায় নিক্ষেপ করবে। এবং সে তোমার ও তোমার মঙ্গলজনক চিন্তার মাঝে দেয়াল তৈরি করবে। অথচ তুমিই তাকে তোমার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছ। তাকে তোমার হৃদয় ও কল্পনার মালিকানার আসনে বসিয়েছ সে এগুলোর মালিক বনে গেছে। এসব গুলির সমন্বিত সংশোধনের উপায় হচ্ছে, আপনার চিন্তাকে জ্ঞান ও ভাবনায় নিমগ্ন রাখা, যথা, তওহিদ ও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জানা এবং মৃত্যুও তার পরবর্তী জান্নাত বা জাহান্নামের প্রবেশ সম্পর্কে ও মন্দ কর্ম ও তা থেকে বেঁচে থাকার উপায় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। ইচ্ছাও প্রতিজ্ঞার ক্ষেত্রে উপকারী ইচ্ছায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং অপকারী ইচ্ছা পরিত্যাগ করা। এই জাঁতাকে সংশোধনের মূল উপায় হচ্ছে অর্থবহ কাজে ব্যস্ত রাখা আর তার বিনাশ সাধান হচ্ছে অর্থহীন কাজে তাকে ব্যবহার করা।
দায়িত্বে অবহেলাকারী অধিকাংশেরই সময় স্বল্পতা ও অবসরে অভাবের অভিযোগ তুলে। তবে সরেজমিনে অনুসন্ধানে তুমি লক্ষ করবে। এ গুলোর সবচে’ বড় কারণ হচ্ছে তাদের সময়ের বড় অংশ অর্থহীন কাজে বিনষ্ট হওয়া। তাদের বৈঠকগুলো থেকেও তুমি এসবের অনেক কিছুই অবহিত হতে পারবে। তুমি তা দেখতে পাবে ক্রীড়া-কৌতুক ও অসার গল্পের শুষ্ক পরিবেশ, নেতিবাচকতার নমুনা, অবহেলার আশ্রয়স্থল ও জীবনকে ধ্বংস করার পথ, অর্থবহ ও উপকারী বিষয়ে গুরুত্বহীন। আর এ নেতিবাচক কাজের ক্ষতি আরো তীব্র হয় যখন রোগাক্রান্ত কিছু সৎকর্মশীলরাও তাতে লিপ্ত হয়। অত:পর তাদের আসর গুলোই মন্দের দিক প্রতীক হয়ে যায়। আলেমে রববানী ইবনুল কায়্যিম তাদের সম্পর্কে আলোচনায় বলেন, সতীর্থদের মন্দ বৈঠক দুই প্রকার। তার একটি হচ্ছে, মনকে চাঙ্গা রাখা ও সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে বৈঠক। এ প্রকারের বৈঠক তার পরকালের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। আর ন্যূনতম ক্ষতি হচ্ছে, তা অন্তরকে দূষিত করে ও সময়ের অপচয় করে।
তবে কোন মজলিস উদ্দেশ্যপূর্ণ ও লক্ষ্য মুখী হয়, তবে তা কখন ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতও হয়ে থাকে। ইবনুল কায়্যিম মজলিসের কিছু ক্ষতি থেকে সতর্ক করছেন। তিনি দ্বিতীয় প্রকারের উলেখ করে বলেন, দ্বিতীয়ত হচ্ছে, পরস্পর একে অপরকে সত্য ও ধৈর্যধারণের উপদেশ এবং নাজাতের উপকরণ সমূহের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে পারস্পরিক মিলন বা সমাবেশ। এটা হচ্ছে মহত্তম গনিমত ও সর্বাধিক উপকারী বিষয়। কিন্তু তাতেও তিনটি ক্ষতির দিক রয়েছে।
প্রথমত: প্রয়োজনের তুলনায় অধিক কথাবার্তা ও মেলামেশা বা ঘনিষ্ঠতা অর্জন।
তৃতীয়ত: এটি একটি মনের আকাঙ্ক্ষা ও অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। যা দ্বারা উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এতদ সত্ত্বেও ভালোদের সংস্পর্শ অর্জন এবং নেককার মুরুবিবদের সান্নিধ্যর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে কোন নিষেধ নেই।
তবে গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে, সঙ্গী নির্বাচন দুরদর্শিতা ও উত্তম নির্বাচন করা। আর নিজেকে উপকারী মজলিসে নিয়মানুবর্তিতার সাথে সময় দিতে প্রস্ত্তত করা। আর মজলিসে আলোচিত কথা-কাজ ও বিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে পরিমাপ করা এবং তার জন্যে চেষ্টা সাধনা করা। কেননা এ ব্যাপারে অবহেলা ক্ষতি ডেকে আনবে। আবার কখনোও এ অভিযান অর্থহীন বিষয়ের দিকেও মোড় নিতে পারে। আর সে মুহূর্তে অর্থহীন ও ক্রীড়া কৌতুকে আসক্ত অন্তর মন্দ ও অর্থহীন বৈঠক উপস্থিত হতে প্ররোচিত হতে পারে। আর এটাই হচ্ছে শয়তানের পদক্ষেপ। মোট কথা হচ্ছে আড্ডা ও মেলামেশা হচ্ছে অঙ্গী। নফ্সে আম্মারা বা নফ্সে মুতমাআন্নাহ উভয়ের জন্য। এই মিশ্রণ থেকে ফলাফল প্রকাশ পাবে। মিশ্রণ যদি উত্তম হয় তবে তার ফলাফল ও ভালো হবে। এমনকি পবিত্র আত্মাসমূহ তার মিশ্রণ ফেরেশতা থেকে। আর মন্দ আত্মা তার মিশ্রণ শয়তান থেকে। তাই আল্লাহ তাআলা তার প্রজ্ঞায় ও কৌশলে পুণ্যবতী নারীদেরকে পুণ্যবান পুরুষদের জন্য এবং মন্দ নারীদেরকে মন্দাপুরুষদের জন্য নির্বাচন করেছেন।
মানুষের কাজও গুরুত্বের বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তাদের অর্থহীন ব্যস্ততার পরিমাণ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারবে। ক্রীড়া-কৌতুক, আনন্দ, উলস ও আনন্দদায়ক বা খেলাধুলা এবং হাত পায়ের নিরর্থক সমস্ত আন্দোলন। নানা ধরনের অর্থহীন প্রতিযোগিতা রান্না ও পোশাকের গ্রন্থাদী এবং গল্পের আসর ও নিরর্থক আনন্দ ভ্রমণ। বিভিন্ন চ্যানেল ও সম্প্রচারের পরিবেশিত অনুষ্ঠানের গভীর মনোনিবেশ এবং বিশ্ব সংবাদের গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন যা সংশিষ্ট ব্যক্তিদের ছাড়া অন্যদের কোন উপকারে আসে না। পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন পাঠ ও অর্থহীন পড়াশোনা সহ আরো অনেক নিষিদ্ধ জিনিস রয়েছে। সুস্পষ্ট নিষিদ্ধ বস্ত্ত দেখা ও শোনা যথা : পোশাক প্রদর্শনকারী নারীদের প্রতিযোগিতা ও সুন্দরী প্রতিযোগিতা। তারা এসব কিছু তোমাকে এই বিশ্ব ও তার কল্যাণ সম্পর্কে অবহিত করবে। আর তার ভ্রান্ত চেষ্টা তোমার কাছে সুস্পষ্ট করবে। অথচ সে মনে করছে কত উত্তম কাজই না সে করেছে। যারা আল্লাহ ও পরকালের বিশ্বাস রাখে না তাদের থেকে যদি এ কাজ প্রত্যাশিত না হয় তা হলে মুসলমানদের অবস্থা কী?
তিক্ত বাস্তবতা হচ্ছে, যাদের ওপর আল্লাহ হেদায়েতের নেয়ামত দিয়েছেন তাদের কারো অধিকাংশ গুরুত্ব মানুষ লক্ষ্য করে তাদের তিক্ততা বেড়ে যায়। এদের সম্পর্কে প্রথম বক্তব্য হচ্ছে তারা যেন বয়স ফুরিয়ে যাওয়ার নিজেদের নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে।
ইবনুল কায়্যূম রহ. বলেন, পদক্ষেপের সংরক্ষণ হচ্ছে নিজের কদমকে সওয়াবের প্রত্যাশা ছাড়া স্থানান্তর না করা। যদি তার পদক্ষেপে অতিরিক্ত সওয়াব প্রাপ্তি না হয়, তবে বসে থাকাই উত্তম। আর প্রত্যেক মুবাহ কাজে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়ত করলে তা সওয়াব হিসেবে পরিগণিত হবে। শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্ত কাজ ও আন্দোলনও ঠিক অনুরূপ।
তবে কোন মজলিস উদ্দেশ্যপূর্ণ ও লক্ষ্য মুখী হয়, তবে তা কখন ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতও হয়ে থাকে। ইবনুল কায়্যিম মজলিসের কিছু ক্ষতি থেকে সতর্ক করছেন। তিনি দ্বিতীয় প্রকারের উলেখ করে বলেন, দ্বিতীয়ত হচ্ছে, পরস্পর একে অপরকে সত্য ও ধৈর্যধারণের উপদেশ এবং নাজাতের উপকরণ সমূহের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে পারস্পরিক মিলন বা সমাবেশ। এটা হচ্ছে মহত্তম গনিমত ও সর্বাধিক উপকারী বিষয়। কিন্তু তাতেও তিনটি ক্ষতির দিক রয়েছে।
প্রথমত: প্রয়োজনের তুলনায় অধিক কথাবার্তা ও মেলামেশা বা ঘনিষ্ঠতা অর্জন।
তৃতীয়ত: এটি একটি মনের আকাঙ্ক্ষা ও অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। যা দ্বারা উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এতদ সত্ত্বেও ভালোদের সংস্পর্শ অর্জন এবং নেককার মুরুবিবদের সান্নিধ্যর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে কোন নিষেধ নেই।
তবে গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে, সঙ্গী নির্বাচন দুরদর্শিতা ও উত্তম নির্বাচন করা। আর নিজেকে উপকারী মজলিসে নিয়মানুবর্তিতার সাথে সময় দিতে প্রস্ত্তত করা। আর মজলিসে আলোচিত কথা-কাজ ও বিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে পরিমাপ করা এবং তার জন্যে চেষ্টা সাধনা করা। কেননা এ ব্যাপারে অবহেলা ক্ষতি ডেকে আনবে। আবার কখনোও এ অভিযান অর্থহীন বিষয়ের দিকেও মোড় নিতে পারে। আর সে মুহূর্তে অর্থহীন ও ক্রীড়া কৌতুকে আসক্ত অন্তর মন্দ ও অর্থহীন বৈঠক উপস্থিত হতে প্ররোচিত হতে পারে। আর এটাই হচ্ছে শয়তানের পদক্ষেপ। মোট কথা হচ্ছে আড্ডা ও মেলামেশা হচ্ছে অঙ্গী। নফ্সে আম্মারা বা নফ্সে মুতমাআন্নাহ উভয়ের জন্য। এই মিশ্রণ থেকে ফলাফল প্রকাশ পাবে। মিশ্রণ যদি উত্তম হয় তবে তার ফলাফল ও ভালো হবে। এমনকি পবিত্র আত্মাসমূহ তার মিশ্রণ ফেরেশতা থেকে। আর মন্দ আত্মা তার মিশ্রণ শয়তান থেকে। তাই আল্লাহ তাআলা তার প্রজ্ঞায় ও কৌশলে পুণ্যবতী নারীদেরকে পুণ্যবান পুরুষদের জন্য এবং মন্দ নারীদেরকে মন্দাপুরুষদের জন্য নির্বাচন করেছেন।
মানুষের কাজও গুরুত্বের বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তাদের অর্থহীন ব্যস্ততার পরিমাণ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারবে। ক্রীড়া-কৌতুক, আনন্দ, উলস ও আনন্দদায়ক বা খেলাধুলা এবং হাত পায়ের নিরর্থক সমস্ত আন্দোলন। নানা ধরনের অর্থহীন প্রতিযোগিতা রান্না ও পোশাকের গ্রন্থাদী এবং গল্পের আসর ও নিরর্থক আনন্দ ভ্রমণ। বিভিন্ন চ্যানেল ও সম্প্রচারের পরিবেশিত অনুষ্ঠানের গভীর মনোনিবেশ এবং বিশ্ব সংবাদের গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন যা সংশিষ্ট ব্যক্তিদের ছাড়া অন্যদের কোন উপকারে আসে না। পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন পাঠ ও অর্থহীন পড়াশোনা সহ আরো অনেক নিষিদ্ধ জিনিস রয়েছে। সুস্পষ্ট নিষিদ্ধ বস্ত্ত দেখা ও শোনা যথা : পোশাক প্রদর্শনকারী নারীদের প্রতিযোগিতা ও সুন্দরী প্রতিযোগিতা। তারা এসব কিছু তোমাকে এই বিশ্ব ও তার কল্যাণ সম্পর্কে অবহিত করবে। আর তার ভ্রান্ত চেষ্টা তোমার কাছে সুস্পষ্ট করবে। অথচ সে মনে করছে কত উত্তম কাজই না সে করেছে। যারা আল্লাহ ও পরকালের বিশ্বাস রাখে না তাদের থেকে যদি এ কাজ প্রত্যাশিত না হয় তা হলে মুসলমানদের অবস্থা কী?
তিক্ত বাস্তবতা হচ্ছে, যাদের ওপর আল্লাহ হেদায়েতের নেয়ামত দিয়েছেন তাদের কারো অধিকাংশ গুরুত্ব মানুষ লক্ষ্য করে তাদের তিক্ততা বেড়ে যায়। এদের সম্পর্কে প্রথম বক্তব্য হচ্ছে তারা যেন বয়স ফুরিয়ে যাওয়ার নিজেদের নিয়ে হিসাব-নিকাশ করে।
ইবনুল কায়্যূম রহ. বলেন, পদক্ষেপের সংরক্ষণ হচ্ছে নিজের কদমকে সওয়াবের প্রত্যাশা ছাড়া স্থানান্তর না করা। যদি তার পদক্ষেপে অতিরিক্ত সওয়াব প্রাপ্তি না হয়, তবে বসে থাকাই উত্তম। আর প্রত্যেক মুবাহ কাজে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়ত করলে তা সওয়াব হিসেবে পরিগণিত হবে। শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্ত কাজ ও আন্দোলনও ঠিক অনুরূপ।
মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেয়ামতরাজীর মধ্য থেকে আল্লাহ মানুষকে তার শরীরের যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহদান করেছেন তা অন্যতম। সে তার ইচ্ছামতো নিজের প্রয়োজনের মুহূর্তে এগুলোকে ব্যবহার করতে পারে। এবং তার প্রতি কারো এহসান ছাড়াই সে এগুলোকে তার প্রভুর আনুগত্যে নিয়োজিত করতে পারে। এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ থেকে বাকশক্তি একটি। এটি একটি গুরুত্ব পূর্ণ হাতিয়ার। সক্রিয় অস্ত্র। এর মাধ্যমে মানুষ তার ইচ্ছা অভিলাষ ব্যক্ত করে থাকে। এবং তার অভীপ্সা, আকাঙ্ক্ষা পূরণে তা ব্যবহার করতে পারে। সে তার মাধ্যমে কথা বলে আহবান করে, এবং তার মধ্যমেই নিজের চিন্তা ও মতামত প্রকাশ করে। তার মধ্যমে স্বীয় প্রভুর কালাম পাঠ করে এবং তার জিকির করে। এবং এর মধ্যমে মানুষ অপরকে নসিহত উপদেশ, দিকনির্দেশনা ও পথ প্রদর্শন করে। এবং সৎকাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করে ইত্যাদি।
বাকশক্তির গুরুত্ব, সংরক্ষণ ও তাকে সমূহ প্রকারের অকল্যাণ ও অমঙ্গলের জন্য ব্যবহার থেকে সতর্কীকরণ সম্পর্কে কোরআন ও সুন্নায় অনেক আলোচনা এসেছে, মানুষ যে বাকশক্তির মাধ্যমে কথা বলে তার গুরুত্ব বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ . ﴿ق : 18﴾
‘(ক্ষুদ্র একটি শব্দ সে উচ্চারণ করে না, যা সংরক্ষণ করার জন্যে একজন সদা সতর্ক প্রহরী তার সাথে নিয়োজিত থাকে না। [সূরা ক্বাফ : ১৮।]
سَنَكْتُبُ مَا قَالُوا . ﴿آل عمران : 181﴾
‘তারা যা কিছু বলে তা আমি (তাদের হিসেবের খাতায়) লেখে রাখব। [আল-ইমরান : ১৮১।] এবং তিনি বলেন
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ . ﴿النور : 15﴾
‘তোমরা এ (মিথ্যা)কে নিজেদের মুখে মুখে প্রচার করছিলে, নিজেদের মুখ দিয়ে এমন সব কথা বলে যাচ্ছিলে যে ব্যাপারে তোমাদের ফেতনা কিছুই জানা ছিল না, তোমরা একে একটি তুচ্ছ বিষয় মনে করছিলে, কিন্তু তা ছিল আল্লাহর কাছে একটি গুরুতর বিষয়। [আননূর : ১৫]
আল্লাহ তাআলা জবানকে উত্তম পন্থায় ব্যবহারের কিছু দিক নির্দেশনা সুস্পষ্ট করেছেন।
لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاةِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا﴿النساء : 114﴾
‘এদের অধিকাংশ গোপন সলাপরামর্শের ভেতরেই কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে নেই। তবে যদি কেই এর দ্বারা কাউকে কোনো দান খয়রাত, সৎকাজ ও অন্যের লক্ষ্যে যদি কেউ, আর আল্লাহ তাআলা র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কেউ এসব কাজ করে তাহলে অতি শীঘ্রই আমি তাকে মহা পুরস্কার দেবো। [আননেসা : ১১৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শব্দের গভীর প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে বলেন,
إن الرجل ليتكلم بالكلمة ما يتبين فيها يزل بها في النار أبعد ما بين المشرق والمغرب .
‘মানুষ যে শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে তার মাধ্যমে সে জাহান্নামে পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বে নিক্ষিপ্ত হবে।
অতএব, মানুষের জন্য সমুচিত হল তার বাকশক্তিকে সংরক্ষণ করা। এবং কেবল মাত্র সত্যও শাশ্বত কথা ছাড়া ভিন্ন কোন কথা না বলা যথা: আল্লার জিকির। এবং তার পবিত্রতম গ্রন্থ পাঠ করা। মানুষের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করা, তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শক করাও উপকারী ঘটনা, মুবাহ কথা বার্তা ইত্যাদি। বাকশক্তির প্রভাবে বিশেষ গুরুত্বে কারণেই ইসলাম মানুষের উপর তাকে সঠিক পন্থা ও কল্যাণময় পদ্ধতিতে ব্যবহারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এতটুকু সক্ষম না হলেও ন্যূনতম চুপ থাকার মাধ্যমে তাকে হেফাজত করা। এবং অর্থহীন বিষয়ে বাক্যব্যয় না করা। সহিহাইনে উদ্ধৃত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيرا أو ليصمت .
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার উচিত কল্যাণের কথা বলা অথবা চুপ থাকা।
মুয়ায ইবনে জাবালের রা. হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অবহিত করেছেন, কোন বস্ত্ত জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নামে থেকে দূরে রাখবে। এবং কল্যাণের দরজাসমূহ ও তার খুঁটি, মীসচুড়া কী তা জানিয়েছেন। অত:পর তিনি তাকে বলেছেন,
ألا أخبرك بملاك ذلك كله، قال معاذ : قلت : بلى يا نبي الله، فأخذ بلسانه فقال : ( كف عليك هذا ) فقلت : يا نبي الله، وإنا لمؤاخذون بما نتكلم به، فقال صلى الله عليه وسلم :( ثكلتك أمك يا معاذ، وهل يكب الناس في النار على وجوههم-أو على مناخرهم-إلا حصائد ألسنتهم ).
‘আমি কি তোমাকে এসব কিছুর নিয়ন্ত্রক কি বলব না? মু‘য়ায বললেন, অবশই হে আল্লাহর নবী! অত:পর তিনি তার জিহবা ধরলেন, বললেন তোমার উপর কর্তব্য হল একে সংযত রাখা। অত:পর আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী ! আমরা যে সাধারণত: কথাবার্তা বলি সে ব্যাপারেও কি হিসেবের মুখোমুখি হব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে মু‘আয ! তোমার মা অযথা কষ্ট স্বীকার করেছেন। মানুষকে নিজ চেহারা কিংবা গর্দানে ভর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে কে ?-তাদের জবানের কৃত উপার্জন ছাড়া!’ ’তিরমিজি বর্ণনা করেছেন,
أن سفيان بن عبد الله الثقفي-رضي الله عنه-سأل النبي صلى الله عليه وسلم فقال : ما أخوف ما تخاف عليّ؟ فأخذ بلسان نفسه ثم قال :( هذا ).
যে সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ আসসাকাফি রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন, আমি আমার বিষয়ে সবচে বেশি ভয় করেন? অতঃপর তিনি জিহবা স্পর্শ করলেন এবং বললেন, ‘এটা’।
অতএব যে মুসলমান দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি ও অকল্যাণ কামনা করে তার উপর দায়িত্ব হল যে তার কথাকে সুষমামন্ডিত করবে এবং জিহবা কে সংযত, সংরক্ষণ করবে। কেননা অল্পকিছু কথাও তাকে কখনো দুনিয়াও আখেরাতে ধ্বংসাত্মক পরিণাম ও ভয়াবহ ফলাফলে র দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
বাকশক্তির গুরুত্ব, সংরক্ষণ ও তাকে সমূহ প্রকারের অকল্যাণ ও অমঙ্গলের জন্য ব্যবহার থেকে সতর্কীকরণ সম্পর্কে কোরআন ও সুন্নায় অনেক আলোচনা এসেছে, মানুষ যে বাকশক্তির মাধ্যমে কথা বলে তার গুরুত্ব বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ . ﴿ق : 18﴾
‘(ক্ষুদ্র একটি শব্দ সে উচ্চারণ করে না, যা সংরক্ষণ করার জন্যে একজন সদা সতর্ক প্রহরী তার সাথে নিয়োজিত থাকে না। [সূরা ক্বাফ : ১৮।]
سَنَكْتُبُ مَا قَالُوا . ﴿آل عمران : 181﴾
‘তারা যা কিছু বলে তা আমি (তাদের হিসেবের খাতায়) লেখে রাখব। [আল-ইমরান : ১৮১।] এবং তিনি বলেন
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ . ﴿النور : 15﴾
‘তোমরা এ (মিথ্যা)কে নিজেদের মুখে মুখে প্রচার করছিলে, নিজেদের মুখ দিয়ে এমন সব কথা বলে যাচ্ছিলে যে ব্যাপারে তোমাদের ফেতনা কিছুই জানা ছিল না, তোমরা একে একটি তুচ্ছ বিষয় মনে করছিলে, কিন্তু তা ছিল আল্লাহর কাছে একটি গুরুতর বিষয়। [আননূর : ১৫]
আল্লাহ তাআলা জবানকে উত্তম পন্থায় ব্যবহারের কিছু দিক নির্দেশনা সুস্পষ্ট করেছেন।
لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاةِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا﴿النساء : 114﴾
‘এদের অধিকাংশ গোপন সলাপরামর্শের ভেতরেই কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে নেই। তবে যদি কেই এর দ্বারা কাউকে কোনো দান খয়রাত, সৎকাজ ও অন্যের লক্ষ্যে যদি কেউ, আর আল্লাহ তাআলা র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কেউ এসব কাজ করে তাহলে অতি শীঘ্রই আমি তাকে মহা পুরস্কার দেবো। [আননেসা : ১১৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শব্দের গভীর প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে বলেন,
إن الرجل ليتكلم بالكلمة ما يتبين فيها يزل بها في النار أبعد ما بين المشرق والمغرب .
‘মানুষ যে শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে তার মাধ্যমে সে জাহান্নামে পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বে নিক্ষিপ্ত হবে।
অতএব, মানুষের জন্য সমুচিত হল তার বাকশক্তিকে সংরক্ষণ করা। এবং কেবল মাত্র সত্যও শাশ্বত কথা ছাড়া ভিন্ন কোন কথা না বলা যথা: আল্লার জিকির। এবং তার পবিত্রতম গ্রন্থ পাঠ করা। মানুষের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করা, তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শক করাও উপকারী ঘটনা, মুবাহ কথা বার্তা ইত্যাদি। বাকশক্তির প্রভাবে বিশেষ গুরুত্বে কারণেই ইসলাম মানুষের উপর তাকে সঠিক পন্থা ও কল্যাণময় পদ্ধতিতে ব্যবহারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এতটুকু সক্ষম না হলেও ন্যূনতম চুপ থাকার মাধ্যমে তাকে হেফাজত করা। এবং অর্থহীন বিষয়ে বাক্যব্যয় না করা। সহিহাইনে উদ্ধৃত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيرا أو ليصمت .
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার উচিত কল্যাণের কথা বলা অথবা চুপ থাকা।
মুয়ায ইবনে জাবালের রা. হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অবহিত করেছেন, কোন বস্ত্ত জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নামে থেকে দূরে রাখবে। এবং কল্যাণের দরজাসমূহ ও তার খুঁটি, মীসচুড়া কী তা জানিয়েছেন। অত:পর তিনি তাকে বলেছেন,
ألا أخبرك بملاك ذلك كله، قال معاذ : قلت : بلى يا نبي الله، فأخذ بلسانه فقال : ( كف عليك هذا ) فقلت : يا نبي الله، وإنا لمؤاخذون بما نتكلم به، فقال صلى الله عليه وسلم :( ثكلتك أمك يا معاذ، وهل يكب الناس في النار على وجوههم-أو على مناخرهم-إلا حصائد ألسنتهم ).
‘আমি কি তোমাকে এসব কিছুর নিয়ন্ত্রক কি বলব না? মু‘য়ায বললেন, অবশই হে আল্লাহর নবী! অত:পর তিনি তার জিহবা ধরলেন, বললেন তোমার উপর কর্তব্য হল একে সংযত রাখা। অত:পর আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী ! আমরা যে সাধারণত: কথাবার্তা বলি সে ব্যাপারেও কি হিসেবের মুখোমুখি হব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে মু‘আয ! তোমার মা অযথা কষ্ট স্বীকার করেছেন। মানুষকে নিজ চেহারা কিংবা গর্দানে ভর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে কে ?-তাদের জবানের কৃত উপার্জন ছাড়া!’ ’তিরমিজি বর্ণনা করেছেন,
أن سفيان بن عبد الله الثقفي-رضي الله عنه-سأل النبي صلى الله عليه وسلم فقال : ما أخوف ما تخاف عليّ؟ فأخذ بلسان نفسه ثم قال :( هذا ).
যে সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ আসসাকাফি রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন, আমি আমার বিষয়ে সবচে বেশি ভয় করেন? অতঃপর তিনি জিহবা স্পর্শ করলেন এবং বললেন, ‘এটা’।
অতএব যে মুসলমান দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি ও অকল্যাণ কামনা করে তার উপর দায়িত্ব হল যে তার কথাকে সুষমামন্ডিত করবে এবং জিহবা কে সংযত, সংরক্ষণ করবে। কেননা অল্পকিছু কথাও তাকে কখনো দুনিয়াও আখেরাতে ধ্বংসাত্মক পরিণাম ও ভয়াবহ ফলাফলে র দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
এই শিরক হল জবানের সবচে বড় বিপদ। মানুষ কখনো এমন কোন শব্দ ব্যবহার করে কথা বলতে পারে যা তাকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করবে। যেমন যে শিরক যুক্ত কোন শব্দ উচ্চারণ করল। যেমন আল্লাহর দ্বীন বা কোরআন বা রাসূল সম্পর্কে তাচ্ছিল্য পূর্ণ কোন কথা বলল যদিও তা ঠাট্টা বা উপহাস ছলে হোক না কেন। আল্লাহ তাআলা এবিষয়ে সুস্পষ্ট করে বলেন,
يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِي قُلُوبِهِمْ قُلِ اسْتَهْزِئُوا إِنَّ اللَّهَ مُخْرِجٌ مَا تَحْذَرُونَ . وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ . لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ .
‘(এ) মোনাফেকরা আশঙ্কা করে, তোমাদের উপর এমন কোনো সূরা নাজিল হয়ে পড়ে কিনা, যা তাদের মনের ভেতরে কোনো লুকিয়ে থাকা) সব কিছু ফাঁস করে দেবে, (হে নবী) তুমি এদের বলো, হাঁ যতদূর পারো তোমরা বিদ্রূপ করে নাও, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা (এমন কিছু নাজিল করবেন, যাতে তিনি যে) সব কিছু ফাঁস করে দেবেন, যার তোমরা আশঙ্কা করছ। ‘তুমি যদি তাদের কিছু জিজ্ঞেস করো তারা বলবে (না) আমরা তো একটু কথাবার্তা ও হাসি কৌতুক করে ছিলাম মাত্র, তুমি (তাদের) বলো, তোমরা কি আল্লাহ তাআলা তার আয়াত সমূহ ও তার রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে। [সূরা তওবা : ৬৪,৬৫।]
শিরকের প্রকার সমূহে থেকে একটি ‘আশ শিরক আল আসগর’ ক্ষুদ্রতম শিরক। আর তা হলো কবিরা গুনাহ সমূহের সবচে বড় গুনাহ। তবে তা ধর্ম থেকে বের করে কুফর পর্যন্ত পৌঁছায় না। যথা: আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে কসম খাওয়া। এবং ‘মাশা আল্লাহ’ ও ‘মাশা ফুলান বলা’ এবং এমন বলা যে, যদি আল্লাহ এবং অমুক না হত ইত্যাদি। অতএব একজন মুমিনকে এসব বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِي قُلُوبِهِمْ قُلِ اسْتَهْزِئُوا إِنَّ اللَّهَ مُخْرِجٌ مَا تَحْذَرُونَ . وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ . لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ .
‘(এ) মোনাফেকরা আশঙ্কা করে, তোমাদের উপর এমন কোনো সূরা নাজিল হয়ে পড়ে কিনা, যা তাদের মনের ভেতরে কোনো লুকিয়ে থাকা) সব কিছু ফাঁস করে দেবে, (হে নবী) তুমি এদের বলো, হাঁ যতদূর পারো তোমরা বিদ্রূপ করে নাও, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা (এমন কিছু নাজিল করবেন, যাতে তিনি যে) সব কিছু ফাঁস করে দেবেন, যার তোমরা আশঙ্কা করছ। ‘তুমি যদি তাদের কিছু জিজ্ঞেস করো তারা বলবে (না) আমরা তো একটু কথাবার্তা ও হাসি কৌতুক করে ছিলাম মাত্র, তুমি (তাদের) বলো, তোমরা কি আল্লাহ তাআলা তার আয়াত সমূহ ও তার রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে। [সূরা তওবা : ৬৪,৬৫।]
শিরকের প্রকার সমূহে থেকে একটি ‘আশ শিরক আল আসগর’ ক্ষুদ্রতম শিরক। আর তা হলো কবিরা গুনাহ সমূহের সবচে বড় গুনাহ। তবে তা ধর্ম থেকে বের করে কুফর পর্যন্ত পৌঁছায় না। যথা: আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে কসম খাওয়া। এবং ‘মাশা আল্লাহ’ ও ‘মাশা ফুলান বলা’ এবং এমন বলা যে, যদি আল্লাহ এবং অমুক না হত ইত্যাদি। অতএব একজন মুমিনকে এসব বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
মিথ্যা হল বাস্তবের সঙ্গে সংগতিহীন কোন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া। এটা জবানের সমূহ বিপদের মধ্য থেকে সর্বাধিক ক্ষতিকর।
এবং গুনাহ ও অপরাধ সমূহের মধ্যে সবচে‘ কঠিন, মারাত্মক আর জঘন্যতম হল আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলা। এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরুদ্ধে মিথ্যা বলা। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآَيَاتِهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ .
‘তার চাইতে বড় জালেম আর কে আছে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে কোনো মিথ্যা কথা রচনা করে কিংবা তার কোন আয়াতকে অস্বীকার করে, এ ধরনের জালেমরা কখনো সাফল্য লাভ করতে পরবে না। [আল আনয়াম : ২১।]
মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلَالٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ . ﴿النحل : 116﴾
‘তোমাদের জিহবা আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যা আরোপ করে বলেই কখনো একথা বলো না যে, এটা হালাল ও এটা হারাম(জেনে রেখো), যারাই আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, তারা কখনোই সাফল্য লাভ করতে পারবে না। [আন নাহল : ১১৬।]
আলি রা. এর বর্ণনায় শায়খাইন রেওয়াত করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لاتكذبوا عليّ، فإنه من كذب عليّ فليلج النار .
‘তোমরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলো না, যে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলল সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’
সালামাহ বিন আল আকওয়া থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি—
من يقل علي ما لم أقل، فليتبوأ مقعده من النار .
‘যে আমার ব্যাপারে এমন কথা বলবে যা আমি বলিনি, সে জাহান্নামে তার আবাস গড়ে নিক।
মিথ্যার প্রকার সমূহ থেকে উপহাস বা ক্রীড়া কৌতূহল ছলে মানুষের উপর মিথ্যা বলা। আসহাবুসসুনান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
ويل لمن يحدث بالحديث ليضحك به القوم، ويل له، ويل له .
‘দুর্ভোগ ঐ ব্যক্তির যে এমন কথার অবতারণা করল যার কারণে কওম অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তার জন্য দুর্ভোগ, দুর্ভোগ,।’ মানুষের উপর মিথ্যা বলার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বেচা-কেনা, কথাবার্তা ইত্যাদিতে মিথ্যা বলা, এ সব কিছুর ফলাফল মন্দ এবং পরিণতি অশুভ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেন, মিথ্যা অশ্লীলতার দিকে পথ-প্রদর্শন করে। আর মিথ্যুক তার মধ্যে মুনাফেকদের বৈশিষ্ট্য সমূহের একটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
এবং গুনাহ ও অপরাধ সমূহের মধ্যে সবচে‘ কঠিন, মারাত্মক আর জঘন্যতম হল আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলা। এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরুদ্ধে মিথ্যা বলা। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآَيَاتِهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ .
‘তার চাইতে বড় জালেম আর কে আছে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে কোনো মিথ্যা কথা রচনা করে কিংবা তার কোন আয়াতকে অস্বীকার করে, এ ধরনের জালেমরা কখনো সাফল্য লাভ করতে পরবে না। [আল আনয়াম : ২১।]
মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلَالٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ . ﴿النحل : 116﴾
‘তোমাদের জিহবা আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যা আরোপ করে বলেই কখনো একথা বলো না যে, এটা হালাল ও এটা হারাম(জেনে রেখো), যারাই আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, তারা কখনোই সাফল্য লাভ করতে পারবে না। [আন নাহল : ১১৬।]
আলি রা. এর বর্ণনায় শায়খাইন রেওয়াত করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لاتكذبوا عليّ، فإنه من كذب عليّ فليلج النار .
‘তোমরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলো না, যে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলল সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’
সালামাহ বিন আল আকওয়া থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি—
من يقل علي ما لم أقل، فليتبوأ مقعده من النار .
‘যে আমার ব্যাপারে এমন কথা বলবে যা আমি বলিনি, সে জাহান্নামে তার আবাস গড়ে নিক।
মিথ্যার প্রকার সমূহ থেকে উপহাস বা ক্রীড়া কৌতূহল ছলে মানুষের উপর মিথ্যা বলা। আসহাবুসসুনান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
ويل لمن يحدث بالحديث ليضحك به القوم، ويل له، ويل له .
‘দুর্ভোগ ঐ ব্যক্তির যে এমন কথার অবতারণা করল যার কারণে কওম অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তার জন্য দুর্ভোগ, দুর্ভোগ,।’ মানুষের উপর মিথ্যা বলার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বেচা-কেনা, কথাবার্তা ইত্যাদিতে মিথ্যা বলা, এ সব কিছুর ফলাফল মন্দ এবং পরিণতি অশুভ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেন, মিথ্যা অশ্লীলতার দিকে পথ-প্রদর্শন করে। আর মিথ্যুক তার মধ্যে মুনাফেকদের বৈশিষ্ট্য সমূহের একটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
পরনিন্দা ও কুৎসা রটনা এ দু’টি মারাত্মক বস্ত্ত। এ দু’টি বস্ত্ত সমস্ত নেককে কেটে ফেলে এবং এমন ভাবে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন লাকড়ি খেয়ে ফেলে। গিবত হল, তোমার ভাইয়ের এমন আলোচনা যা সে অপছন্দ করবে। নামীমা হল, একজনের কথা আরেক জনের কাছে বলা, ঝগড়া ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশে। তাই এই দু’টি বিষয়ে পূর্ণ সতর্ক থাকার ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কারণ এগুলোর মন্দ প্রভাব ও ধ্বংসাত্মক পরিণাম রয়েছে। যেমন সমাজের সদস্যদের মাঝে হিংসা দ্বেষ শত্রুতা বিস্তার লাভ করা। আল্লাহ বলেন,
وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ . ﴿الحجرات : 12﴾
একজন আরেক জনের গিবত কারো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে। আর অবশ্যই তোমরা এটা অত্যন্ত ঘৃণা করো, এসব ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন। এবং তিনি একান্ত দয়ালু। [আল-হুজুরাত : ১২।] এবং আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ . ﴿الهمزة : 1﴾
দুর্ভোগ রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে, যে (সামনে পেছনে মানুষেদের) নিন্দা করে।’ [আল-হুমাযাহ : ১।] আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলি,
حسبك من صفية كذا وكذا، تعني قصيرة، فقال :
আপার কি সাফিয়্যাকে উপযুক্ত মনে হয়, তার উদ্দেশ্য ছিল সাফিয়্যা ছিল বেটে এর প্রতি ইঙ্গিত করা। অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
لقد قلت كلمة لو مزجت بماء البحر لمزجته .
তুমি এমন শব্দটি উচ্চারণ করেছ যদি সমুদ্রের পানি দ্বারাও তা মোছা যেত আমি মুছে ফেলতাম।’ হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,
لايدخل الجنة قتات .
চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’
وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ . ﴿الحجرات : 12﴾
একজন আরেক জনের গিবত কারো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে। আর অবশ্যই তোমরা এটা অত্যন্ত ঘৃণা করো, এসব ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন। এবং তিনি একান্ত দয়ালু। [আল-হুজুরাত : ১২।] এবং আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ . ﴿الهمزة : 1﴾
দুর্ভোগ রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে, যে (সামনে পেছনে মানুষেদের) নিন্দা করে।’ [আল-হুমাযাহ : ১।] আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলি,
حسبك من صفية كذا وكذا، تعني قصيرة، فقال :
আপার কি সাফিয়্যাকে উপযুক্ত মনে হয়, তার উদ্দেশ্য ছিল সাফিয়্যা ছিল বেটে এর প্রতি ইঙ্গিত করা। অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
لقد قلت كلمة لو مزجت بماء البحر لمزجته .
তুমি এমন শব্দটি উচ্চারণ করেছ যদি সমুদ্রের পানি দ্বারাও তা মোছা যেত আমি মুছে ফেলতাম।’ হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,
لايدخل الجنة قتات .
চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’
প্রকৃত অর্থে ‘যূর’ হল কোন বস্ত্তকে তার প্রকৃত রূপের বিপরীত সুন্দর ও আকর্ষণীয় রূপে উপস্থাপন করা। যেন কোন দর্শক বা শ্রোতা তার প্রকৃত অবস্থার বিপরীত পরিচয়ে তাকে চিনতে পারে। এই অর্থে অসার অলীক কথাবার্তাকে ‘যূর’ হিসেবে গণ্য করা হয়। কোরআন ও হাদিসে এই যূর আক্রান্ত থেকে সতর্কও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। মোমিনের বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ . ﴿الفرقان : 72﴾
‘যারা অসার, বানোয়াট সাক্ষ্য দেয় না।’ [আল-ফুরকান : ৭২।] এবিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন—
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ . ﴿الحج :30﴾
‘অতএব এখন মূর্তি পূজার অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থেকো। এবং বেচে থেকো সব ধরনের কথা থেকে। [আল-হজ্ব : ৩০।] আবি বাকরা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ألا أنبئكم بأكبر الكبائر؟ ثلاثا، قالوا : بلى يارسول الله، قال : الإشراك بالله، وعقوق الوالدين، وجلس وكان متكئا، فقال : ألا وقول الزور فما زال يكررها حتى قلنا : ليته سكت .
আমি কি তোমাদের সবচে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিন বার। সাহাবারা বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং মাতাপিতার অবাধ্যাচরণ করা এবং তিনি হেলান দিয়ে বসলেন, অত:পর বললেন, তোমরা যূর থেকে বেঁচে থেকো অত:পর তিনি বার তা পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম হায় তিনি যদি চুপ করতেন।
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ . ﴿الفرقان : 72﴾
‘যারা অসার, বানোয়াট সাক্ষ্য দেয় না।’ [আল-ফুরকান : ৭২।] এবিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ বলেন—
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ . ﴿الحج :30﴾
‘অতএব এখন মূর্তি পূজার অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থেকো। এবং বেচে থেকো সব ধরনের কথা থেকে। [আল-হজ্ব : ৩০।] আবি বাকরা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ألا أنبئكم بأكبر الكبائر؟ ثلاثا، قالوا : بلى يارسول الله، قال : الإشراك بالله، وعقوق الوالدين، وجلس وكان متكئا، فقال : ألا وقول الزور فما زال يكررها حتى قلنا : ليته سكت .
আমি কি তোমাদের সবচে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিন বার। সাহাবারা বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং মাতাপিতার অবাধ্যাচরণ করা এবং তিনি হেলান দিয়ে বসলেন, অত:পর বললেন, তোমরা যূর থেকে বেঁচে থেকো অত:পর তিনি বার তা পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম হায় তিনি যদি চুপ করতেন।
কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া। যেমন এ কথা বলা হে, ব্যভিচারকারী বা ব্যভিচারকারীর সন্তান অথবা হে লুতি! আর এটা জবানের একটা জঘন্যতম বিপদ। এবং কবিরা গুনাহের অপরাধ। আল্লাহ তাআলা এ গুনাহের অধিকারী ব্যক্তিকে দুনিয়াও আখেরাতে অভিশপ্ত সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ . يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ﴿النور : 24﴾
‘যারা সতী-সাধ্বী নারীদের প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ আরোপ করে, যারা (এ অপবাদের ব্যাপারে) কোন খবরই রাখে না, (সর্বোপরি) যারা ঈমান দার, তাদের প্রতি অপবাদ আরোপকারী) এসব মানুষের জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় স্থানেই অভিশাপ দেয়া হয়েছে, (উপরন্তু) তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর আজাব, ‘সে দিন তাদের কৃতকর্মের সম্বদ্ধে (স্বয়ং) তাদের জিহবা সমূহ, তাদের হাতগুলো ও তাদের পা গুলো তাদের বিরুদ্ধ সাক্ষ্য দেবে।’ [আন-নূর : ২৩-২৪।] আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
اجتنبوا السبع الموبقات، وذكر منها : قذف المحصنات المؤمنات الغافلات .
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্ত্ত থেকে বেঁচে থাকো। এবং তার মধ্যে থেকে উল্লেখ করেছেন। সতী-সাধ্বী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া।
إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ . يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ﴿النور : 24﴾
‘যারা সতী-সাধ্বী নারীদের প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ আরোপ করে, যারা (এ অপবাদের ব্যাপারে) কোন খবরই রাখে না, (সর্বোপরি) যারা ঈমান দার, তাদের প্রতি অপবাদ আরোপকারী) এসব মানুষের জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় স্থানেই অভিশাপ দেয়া হয়েছে, (উপরন্তু) তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর আজাব, ‘সে দিন তাদের কৃতকর্মের সম্বদ্ধে (স্বয়ং) তাদের জিহবা সমূহ, তাদের হাতগুলো ও তাদের পা গুলো তাদের বিরুদ্ধ সাক্ষ্য দেবে।’ [আন-নূর : ২৩-২৪।] আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
اجتنبوا السبع الموبقات، وذكر منها : قذف المحصنات المؤمنات الغافلات .
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্ত্ত থেকে বেঁচে থাকো। এবং তার মধ্যে থেকে উল্লেখ করেছেন। সতী-সাধ্বী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া।
এটা জবানের একটি অন্যতম বিপদ ও সমস্যা। মানুষকে এর জন্য হিসাব দিতে হবে। কেননা মানুষের প্রতিটি শব্দও উচ্চারণ গণনা করা হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ . ﴿ق : 18﴾
‘একটি শব্দও সে উচ্চারণ করে না, যা সংরক্ষণ করার জন্যে একজন সদা সতর্ক প্রহরী তার পাশে নিয়োজিত থাকে না। [ক্বাফ : ১৮।]
শাইখাইন আবু মুসা আল আশআরী রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন মুসলিম শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন—
من سلم المسلمون من لسانه ويده .
‘যার জবানও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’
সাহাল ইবনে সাদ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
من يضمن لي ما بين لحيته وما بين رجليه أضمن له الجنة .
‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়াল ও দুই উরু-সন্ধির মধ্যবতী স্থানের জিম্মাদারি নিবে আমি তার জন্যে জান্নাতের জিম্মাদার নিব।’ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
أيما رجل قال لأخيه يا كافر، فقد باء بها أحدهما، إن كان كما قال وإلا رجعت إليه .
যে কোন ব্যক্তি তার অপর ভাইকে কাফের বলে সম্বোধন করল তবে এ কথাটি এই দু’জনের একজনের প্রতি ফিরে আসবে। যদি তার কথা বাস্তবের অনুরূপ হয় তাহলে তো হল, অন্যথায় এ কথা তার দিকে ফিরে আসবে। সাবেত ইবনে রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لعن المؤمن كقتله .
‘মুমিনকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যা করার নামান্তর।’ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
ليس المؤمن بالطعان، ولا اللعان، ولا الفاحش، ولا البذي .
মুমিন তিরস্কারকারী, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না।’
‘মোট কথা মুসলমানের উপর কর্তব্য হল যে এসব বিপদ ও বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাকবে। এবং তার জবানকে সংযত ও নিয়ন্ত্রিত রাখবে। নিজেকে এমন কথা উচ্চারণে অভ্যস্ত করবে যা দুনিয়া ও আখেরাতে তার জন্যে কল্যাণ বয়ে, আনে, যেমন জিকির, কোরআন পাঠ, দোয়া, দাওয়াত, নসিহত বৈধ কথোপকথন ইত্যাদি। অথবা নীরব ও নিশ্চুপ থাকবে।
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ . ﴿ق : 18﴾
‘একটি শব্দও সে উচ্চারণ করে না, যা সংরক্ষণ করার জন্যে একজন সদা সতর্ক প্রহরী তার পাশে নিয়োজিত থাকে না। [ক্বাফ : ১৮।]
শাইখাইন আবু মুসা আল আশআরী রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন মুসলিম শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন—
من سلم المسلمون من لسانه ويده .
‘যার জবানও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’
সাহাল ইবনে সাদ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
من يضمن لي ما بين لحيته وما بين رجليه أضمن له الجنة .
‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়াল ও দুই উরু-সন্ধির মধ্যবতী স্থানের জিম্মাদারি নিবে আমি তার জন্যে জান্নাতের জিম্মাদার নিব।’ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
أيما رجل قال لأخيه يا كافر، فقد باء بها أحدهما، إن كان كما قال وإلا رجعت إليه .
যে কোন ব্যক্তি তার অপর ভাইকে কাফের বলে সম্বোধন করল তবে এ কথাটি এই দু’জনের একজনের প্রতি ফিরে আসবে। যদি তার কথা বাস্তবের অনুরূপ হয় তাহলে তো হল, অন্যথায় এ কথা তার দিকে ফিরে আসবে। সাবেত ইবনে রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لعن المؤمن كقتله .
‘মুমিনকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যা করার নামান্তর।’ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
ليس المؤمن بالطعان، ولا اللعان، ولا الفاحش، ولا البذي .
মুমিন তিরস্কারকারী, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না।’
‘মোট কথা মুসলমানের উপর কর্তব্য হল যে এসব বিপদ ও বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাকবে। এবং তার জবানকে সংযত ও নিয়ন্ত্রিত রাখবে। নিজেকে এমন কথা উচ্চারণে অভ্যস্ত করবে যা দুনিয়া ও আখেরাতে তার জন্যে কল্যাণ বয়ে, আনে, যেমন জিকির, কোরআন পাঠ, দোয়া, দাওয়াত, নসিহত বৈধ কথোপকথন ইত্যাদি। অথবা নীরব ও নিশ্চুপ থাকবে।
শ্রবণ শক্তি বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার মহান নেয়ামত ও অনুগ্রহ। তাই পবিত্রতম মহান আল্লাহ বলেন—
وَاللَّهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ . ﴿النحل : 78﴾
‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃ উদর থেকে বের করেছেন, তোমরা কিছু জানতে না, এবং তিনি তোমাদের জন্য দিয়েছেন শ্রবণ, দৃষ্টি শক্তি ও অন্তর সমূহ, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’ [আন-নাহল : ৭৮।]
উপরন্তু জ্ঞানের বৃহৎ উপকরণ সমূহের মধ্য থেকে এটি একটি। একারণেই কোরআন এর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপের কথা পুরাবৃত্তি হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলার বাণী—
أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آَذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا .
‘তারা কি ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করো না। অত:পর তাদের জন্যে যে হৃদয় রয়েছে তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করবে অথবা তাদের কান রয়েছে যা দ্বারা শ্রবণ করবে।’ [আল-হজ্ব : ৪৬।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রবণ শক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন—
كتب على ابن آدم نصيبه من الزنا، مدرك ذلك لا محالة، فالعينان زناهما النظر، والأذنان زناهما الاستماع، واللسان زناه الكلام، واليد زناها البطش، والرجل زناها الخطا، والقلب يهوي ويتمنى، ويصدقه الفرج أو يكذبه .
‘আদম সন্তানের জন্যে তার ব্যভিচারের অংশ লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে। অবশ্যম্ভাবী রূপে সে তার মুখোমুখি হবে। অতএব, দৃষ্টি দ্বয় উভয়ের ব্যভিচার হল দৃষ্টি নিক্ষেপ, কর্ণ দ্বয় উভয়ের ব্যভিচার হল শ্রবণ শক্তি, জবান তার ব্যভিচার হল কথা এবং হাত তার ব্যভিচার হল ধরা, এবং পা তার ব্যভিচার হল চলা, এবং অন্তর বাসনা ও আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে এবং লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়ন করে অথবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।’
وَاللَّهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ . ﴿النحل : 78﴾
‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃ উদর থেকে বের করেছেন, তোমরা কিছু জানতে না, এবং তিনি তোমাদের জন্য দিয়েছেন শ্রবণ, দৃষ্টি শক্তি ও অন্তর সমূহ, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’ [আন-নাহল : ৭৮।]
উপরন্তু জ্ঞানের বৃহৎ উপকরণ সমূহের মধ্য থেকে এটি একটি। একারণেই কোরআন এর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপের কথা পুরাবৃত্তি হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলার বাণী—
أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آَذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا .
‘তারা কি ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করো না। অত:পর তাদের জন্যে যে হৃদয় রয়েছে তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করবে অথবা তাদের কান রয়েছে যা দ্বারা শ্রবণ করবে।’ [আল-হজ্ব : ৪৬।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রবণ শক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন—
كتب على ابن آدم نصيبه من الزنا، مدرك ذلك لا محالة، فالعينان زناهما النظر، والأذنان زناهما الاستماع، واللسان زناه الكلام، واليد زناها البطش، والرجل زناها الخطا، والقلب يهوي ويتمنى، ويصدقه الفرج أو يكذبه .
‘আদম সন্তানের জন্যে তার ব্যভিচারের অংশ লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে। অবশ্যম্ভাবী রূপে সে তার মুখোমুখি হবে। অতএব, দৃষ্টি দ্বয় উভয়ের ব্যভিচার হল দৃষ্টি নিক্ষেপ, কর্ণ দ্বয় উভয়ের ব্যভিচার হল শ্রবণ শক্তি, জবান তার ব্যভিচার হল কথা এবং হাত তার ব্যভিচার হল ধরা, এবং পা তার ব্যভিচার হল চলা, এবং অন্তর বাসনা ও আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে এবং লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়ন করে অথবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।’
শ্রুত বিষয় তিন প্রকার : প্রথমত: আল্লাহ যা পছন্দ করেন এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট। এমন বিষয় শোনা পছন্দনীয়, কোরআনুল কারীম শোনা সর্বোত্তম শ্রবণ। এই শ্রবণ তিনটি স্তরে বিন্যস্ত।
নিছক শোনা, এবং তার চেয়ে ঊর্ধ্বে হল চিন্তা ও বুঝার উদ্দেশে শোনা এবং তার চেয়ে সর্বোচ্চ হল, উত্তর ও সাড়া দেওয়ার উদ্দেশে শোনা। আর শেষোক্ত প্রকার পূর্বের প্রকার সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।
এবং পছন্দনীয় শ্রবণের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জুমআর খুতবা শোনা। পিতা-মাতার কথা শোনা, কেননা তা থেকে মুখ ফিরানোর কোন সুযোগ নেই যতক্ষণ তা গুনাহে পর্যবসিত না হয়। এবং উপদেশ দানকারীর কথা শোনা। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ওয়াজ নসিহত শোনা এবং উপকারী ইলম পাঠ করা এবং তার সর্বোচ্চ হল শরিয়ত বিষয়ক ইলম, অন্যান্য সব উপকারী উলুম তার সঙ্গে সংযুক্ত।
দ্বিতীয় : মুবাহ, অনুমোদিত শ্রবণ; যা আল্লাহ পছন্দ করেন না এবং বিরোধিতাও করেন না। এবং যার কর্তাকে প্রশংসাও করেন না। এবং অপদস্ত করেন না। এমন বিষয় শোনা মুবাহের অন্তর্ভুক্ত। এই নিয়ম প্রত্যেক ঐ শ্রবণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার তিরস্কার বর্ণনায় শরিয়ত কোন বক্তব্য প্রদান করেনি। এই প্রকারের অনেক উদাহরণ রয়েছে। তন্মধ্যে এমন গল্প ঘটনা যাতে কোন অশ্লীলতা মিথ্যার আশ্রয় নেই। এবং এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সাধারণ মুবাহ কথাবার্তা ইত্যাদি।
তৃতীয়ত: এমন শ্রুত বিষয় যা আল্লাহ তাআলা অপছন্দ ও বিরোধিতা করেন। এবং তার ব্যাপারে নিষেধারোপ করেন। এবং তা প্রত্যাখ্যান করাদের প্রশংসা করেন। এমন বিষয় শোনা ঘৃণার্হ। আর তা থেকে সংযত থাকা ওয়াজিব। অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। এটা এভাবে হবে যে, মুসলমান আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করবে এবং তার অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে। এ বিষয়ের অনেক উদাহরণের মধ্য থেকে কিছু বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নিছক শোনা, এবং তার চেয়ে ঊর্ধ্বে হল চিন্তা ও বুঝার উদ্দেশে শোনা এবং তার চেয়ে সর্বোচ্চ হল, উত্তর ও সাড়া দেওয়ার উদ্দেশে শোনা। আর শেষোক্ত প্রকার পূর্বের প্রকার সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।
এবং পছন্দনীয় শ্রবণের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জুমআর খুতবা শোনা। পিতা-মাতার কথা শোনা, কেননা তা থেকে মুখ ফিরানোর কোন সুযোগ নেই যতক্ষণ তা গুনাহে পর্যবসিত না হয়। এবং উপদেশ দানকারীর কথা শোনা। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ওয়াজ নসিহত শোনা এবং উপকারী ইলম পাঠ করা এবং তার সর্বোচ্চ হল শরিয়ত বিষয়ক ইলম, অন্যান্য সব উপকারী উলুম তার সঙ্গে সংযুক্ত।
দ্বিতীয় : মুবাহ, অনুমোদিত শ্রবণ; যা আল্লাহ পছন্দ করেন না এবং বিরোধিতাও করেন না। এবং যার কর্তাকে প্রশংসাও করেন না। এবং অপদস্ত করেন না। এমন বিষয় শোনা মুবাহের অন্তর্ভুক্ত। এই নিয়ম প্রত্যেক ঐ শ্রবণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার তিরস্কার বর্ণনায় শরিয়ত কোন বক্তব্য প্রদান করেনি। এই প্রকারের অনেক উদাহরণ রয়েছে। তন্মধ্যে এমন গল্প ঘটনা যাতে কোন অশ্লীলতা মিথ্যার আশ্রয় নেই। এবং এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সাধারণ মুবাহ কথাবার্তা ইত্যাদি।
তৃতীয়ত: এমন শ্রুত বিষয় যা আল্লাহ তাআলা অপছন্দ ও বিরোধিতা করেন। এবং তার ব্যাপারে নিষেধারোপ করেন। এবং তা প্রত্যাখ্যান করাদের প্রশংসা করেন। এমন বিষয় শোনা ঘৃণার্হ। আর তা থেকে সংযত থাকা ওয়াজিব। অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। এটা এভাবে হবে যে, মুসলমান আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করবে এবং তার অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে। এ বিষয়ের অনেক উদাহরণের মধ্য থেকে কিছু বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দ্বীনকে তিরস্কার করা অনেক বড় হারামের অন্তর্ভুক্ত। বরং তা কুফর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। অতএব, যে ব্যক্তি এমন কিছু শোনাবে তার উপর কর্তব্য হল তা প্রত্যাখ্যান করা এবং দ্বীনের পক্ষে এর মুকাবেলা করা। অন্যথায় তার জন্যে যে এমন কথাবার্তা বলে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলা জায়েজ নেই। আর নিশ্চুপ ভাবে তার সঙ্গে ওঠা বসা সবচে’ বড় হারাম। আর তার নিকটবর্তী হারামের অন্তর্ভুক্ত হল। উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব তথা সাহাবায়ে কেরাম, উলামা ও মুছলেহ নেক ব্যক্তিদের সমালোচনা ও তিরস্কার করা। তারাই হলেন এই দ্বীনের কর্ণধার, বাহক প্রচারক। তাই তাদের মান-মর্যাদা রক্ষার্থে তাদের পক্ষে প্রতিরোধ করা সর্বোচ্চ ওয়াজিব ও অতীব পুণ্য কাজ।
ইবনুল কাইয়ুম রা. বলেছেন, নি:সন্দেহে গান, বাদ্যযন্ত্র এ গুলোকে শয়তান আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যে উদ্ভাবন করেছে। এবং আল্লাহ বান্দাদের জন্য যে শরিয়তকে অন্তরের সংশোধন উপায় হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন, তার বিরোধিতার জন্যে সৃষ্টি করেছে কোরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ঐকমত্যে এগুলো হারাম। বিশদভাবে এর আলোচনা করা হল।
(ক) কোরআনের দলিল সমূহ। আল্লাহ বলেন—
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ . ﴿لقمان : 6﴾
‘মানুষের মাঝে এমন ব্যক্তিও আছে যে অর্থহীন ও বেহুদা গল্প-কাহিনি কিনে, যাতে করে (মানুষের নিতান্ত) অজ্ঞতার ভিত্তিতে আল্লাহ তাআলার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। [লুকামন : ৬।]
ইবনে মাসউদ রা.কে এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে গান বাদ্য। আল্লাহ ঐ সত্তা যিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ইলাহ নেই। তিনি তিনবার একথার পুনরাবৃত্তি করেন, ইবনে উমর, ইবনে আববাস, ও জাবের রা. সকলে উক্ত আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন। তাবিয়িনদের মধ্যে থেকে অধিকাংশ তাফসীর বিদগণ ও ইবনে জুবাইর, ইকরামা এবং হাসান, সাঈদ ইবনে জুবাইর ও কাতাদা প্রমুখ ও অভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ . ﴿الإسراء : 64﴾
‘এদের মধ্যে যাকেই পারো তুমি তোমার আওয়াজ দিয়ে গোমরাহ করে দাও।’ [আল-ইসরা : ৬৪।]
মুজাহিদ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, গান ও যন্ত্র সংগীত। এ কারণেই সালফগণকে, শয়তানের আওয়াজ ও শয়তানের সংগীত হিসেবে নাম করেছেন।
(খ) সুন্নত বা হাদিসের আলোকে দলিল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত থেকে এমন কিছু গোত্র হবে যারা রেশম, মদ ও গান বাদ্যকে হালাল মনে করবে।
(গ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
ليكونن من أمتي أقوام يستحلون الحر والحرير، والخمر، والمعازف ..
আমার উম্মতের মাঝে এমন কতক লোকে আবির্ভাব ঘটবে-যারা অলংকার, রেশম, মদ ও গান-বাদ্যকে হালাল মনে করবে।
إن في أمتي خسفا ومسخا وقذفا، قالوا : يارسول الله، وهم يشهدون أن لا إله إلا الله؟ ! فقال : نعم، إذا ظهرت المعازف والخمور، ولبس الحرير .
হাদিসটির অনুবাদ বাকি রইল...................
(ঘ) বাদ্য যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে গান হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত।
একদল উলামা এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে আবু বকর আল আজুরার রা, যাকারিয়া ইবনে ইয়াহ আসসাজি এবং ইমাম আবু আমর ইবনে ছালাহ, আবু তৈয়্যব তাবারি আশ শাফেয়ি প্রমুখ।
(ক) কোরআনের দলিল সমূহ। আল্লাহ বলেন—
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ . ﴿لقمان : 6﴾
‘মানুষের মাঝে এমন ব্যক্তিও আছে যে অর্থহীন ও বেহুদা গল্প-কাহিনি কিনে, যাতে করে (মানুষের নিতান্ত) অজ্ঞতার ভিত্তিতে আল্লাহ তাআলার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। [লুকামন : ৬।]
ইবনে মাসউদ রা.কে এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে গান বাদ্য। আল্লাহ ঐ সত্তা যিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ইলাহ নেই। তিনি তিনবার একথার পুনরাবৃত্তি করেন, ইবনে উমর, ইবনে আববাস, ও জাবের রা. সকলে উক্ত আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন। তাবিয়িনদের মধ্যে থেকে অধিকাংশ তাফসীর বিদগণ ও ইবনে জুবাইর, ইকরামা এবং হাসান, সাঈদ ইবনে জুবাইর ও কাতাদা প্রমুখ ও অভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ . ﴿الإسراء : 64﴾
‘এদের মধ্যে যাকেই পারো তুমি তোমার আওয়াজ দিয়ে গোমরাহ করে দাও।’ [আল-ইসরা : ৬৪।]
মুজাহিদ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, গান ও যন্ত্র সংগীত। এ কারণেই সালফগণকে, শয়তানের আওয়াজ ও শয়তানের সংগীত হিসেবে নাম করেছেন।
(খ) সুন্নত বা হাদিসের আলোকে দলিল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত থেকে এমন কিছু গোত্র হবে যারা রেশম, মদ ও গান বাদ্যকে হালাল মনে করবে।
(গ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
ليكونن من أمتي أقوام يستحلون الحر والحرير، والخمر، والمعازف ..
আমার উম্মতের মাঝে এমন কতক লোকে আবির্ভাব ঘটবে-যারা অলংকার, রেশম, মদ ও গান-বাদ্যকে হালাল মনে করবে।
إن في أمتي خسفا ومسخا وقذفا، قالوا : يارسول الله، وهم يشهدون أن لا إله إلا الله؟ ! فقال : نعم، إذا ظهرت المعازف والخمور، ولبس الحرير .
হাদিসটির অনুবাদ বাকি রইল...................
(ঘ) বাদ্য যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে গান হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত।
একদল উলামা এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে আবু বকর আল আজুরার রা, যাকারিয়া ইবনে ইয়াহ আসসাজি এবং ইমাম আবু আমর ইবনে ছালাহ, আবু তৈয়্যব তাবারি আশ শাফেয়ি প্রমুখ।
গান শোর অনেক ক্ষতিকর দিক ও মন্দ প্রভাব রয়েছে। তন্মধ্যে
(এক) গান, কোরআন ও উপকারী নসিহত শোনার প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে।
(দুই) কোরআন বুঝা, চিন্তা করা ও তার স্বাদ আস্বাদন থেকে অন্তরকে নির্লিপ্ত করে রাখে।
এর অন্তর্নিহিত কারণ হল, গান হচ্ছে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র, তাই গান ও দয়াময়ের কোরআন একই অন্তরে কখনো একত্রিত হতে পারে না, কেননা উভয়ের মধ্যে রয়েছে বিশাল বৈপরীত্য ফলে কোরআন প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে নিষেধ করে। এবং পূত পবিত্রতার নির্দেশ দেয়।
(তিন) গান হল, ব্যভিচারের ও অশ্লীলতার ঠিকানা, কারণ তাতে প্রেম, ভালোবাসা ও নারীর আলোচনা থাকে। তা ছাড়াও এমন বিষয় থাকে যা পাপাচার ও অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে।
(চার) গানের মাধ্যমে হৃদয়ের সঙ্গে তার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলে আল্লাহর মহববত থেকে তার অন্তর বিমুখ হয়ে পড়ে।
(পাঁচ) সময়কে নিরর্থক ভাবে অপচয় ও নষ্ট করে বরং অনেক ক্ষতি সাধন করে।
(ছয়) গানের মাধ্যমে গায়কের নির্লজ্জতা সৃষ্টি হয়, তাই সে কখনো মাথা হেলিয়ে, করতালি দিয়ে অথবা হেলে দুলে, মাটিতে পদাঘাত করে আনন্দ প্রকাশ করে।
(এক) গান, কোরআন ও উপকারী নসিহত শোনার প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে।
(দুই) কোরআন বুঝা, চিন্তা করা ও তার স্বাদ আস্বাদন থেকে অন্তরকে নির্লিপ্ত করে রাখে।
এর অন্তর্নিহিত কারণ হল, গান হচ্ছে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র, তাই গান ও দয়াময়ের কোরআন একই অন্তরে কখনো একত্রিত হতে পারে না, কেননা উভয়ের মধ্যে রয়েছে বিশাল বৈপরীত্য ফলে কোরআন প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে নিষেধ করে। এবং পূত পবিত্রতার নির্দেশ দেয়।
(তিন) গান হল, ব্যভিচারের ও অশ্লীলতার ঠিকানা, কারণ তাতে প্রেম, ভালোবাসা ও নারীর আলোচনা থাকে। তা ছাড়াও এমন বিষয় থাকে যা পাপাচার ও অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে।
(চার) গানের মাধ্যমে হৃদয়ের সঙ্গে তার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলে আল্লাহর মহববত থেকে তার অন্তর বিমুখ হয়ে পড়ে।
(পাঁচ) সময়কে নিরর্থক ভাবে অপচয় ও নষ্ট করে বরং অনেক ক্ষতি সাধন করে।
(ছয়) গানের মাধ্যমে গায়কের নির্লজ্জতা সৃষ্টি হয়, তাই সে কখনো মাথা হেলিয়ে, করতালি দিয়ে অথবা হেলে দুলে, মাটিতে পদাঘাত করে আনন্দ প্রকাশ করে।
গিবত হল তোমার (দ্বীনি) ভাই সম্পর্কে এমন আলোচনা করা যা সে অপছন্দ করে।
এটা কবিরা গুনাহের শামিল। তাই গিবত শোনা জায়েজ নেই। বরং যখন কোন মুসলমান কাইকে গিবত করতে শুনবে তার দায়িত্ব হবে তাকে থামিয়ে দেয়া এবং তা পরিত্যাগ করার উপদেশ দেয়া। এবং গিবত থেকে ভীতি প্রদর্শন ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করা। যদি সে সাড়া দেয়, এটাই কাম্য। অন্যথায় এমন ব্যক্তির সঙ্গে ওঠা বসায় কোন কল্যাণ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ . ﴿القصص : 55﴾
‘যখন তারা বেহুদা কিছু শোনে তারা তা থেকে নিবৃত্ত করে।’ [আল-কাসাস : ৫৫।]
নিছক চুপ থাকার চেয়েও কঠিনতম হল শ্রবণকরী ব্যক্তি গিবত কারীর বক্তব্যে সমর্থন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবে। আল গাযালী রহ. বলেন, গিবতকে সমর্থন করাও গিবত। বরং চুপকারী ব্যক্তি গিবতকারীর অংশীদার সাব্যস্ত হবে।
এটা কবিরা গুনাহের শামিল। তাই গিবত শোনা জায়েজ নেই। বরং যখন কোন মুসলমান কাইকে গিবত করতে শুনবে তার দায়িত্ব হবে তাকে থামিয়ে দেয়া এবং তা পরিত্যাগ করার উপদেশ দেয়া। এবং গিবত থেকে ভীতি প্রদর্শন ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করা। যদি সে সাড়া দেয়, এটাই কাম্য। অন্যথায় এমন ব্যক্তির সঙ্গে ওঠা বসায় কোন কল্যাণ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ . ﴿القصص : 55﴾
‘যখন তারা বেহুদা কিছু শোনে তারা তা থেকে নিবৃত্ত করে।’ [আল-কাসাস : ৫৫।]
নিছক চুপ থাকার চেয়েও কঠিনতম হল শ্রবণকরী ব্যক্তি গিবত কারীর বক্তব্যে সমর্থন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবে। আল গাযালী রহ. বলেন, গিবতকে সমর্থন করাও গিবত। বরং চুপকারী ব্যক্তি গিবতকারীর অংশীদার সাব্যস্ত হবে।
পরনিন্দা হল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশে কারো কথা মানুষরে মাঝে স্থানান্তর করা। এটা কবিরা ও হারামের অন্তর্ভুক্ত। যার কাছে পরনিন্দা করা হয়। তার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
(ক) পরনিন্দাকারী ব্যক্তিকে বিশ্বাস করবে না। কারণ সে ফাসেক।
(খ) পরনিন্দাকারীকে তা থেকে নিষেধ করবে এবং উপদেশ দেবে।
(গ) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে। যাবৎ না সে তা পরিত্যাগ করে।
(ঙ) তার অনুপস্থিত ভাই সম্পর্কে অশুভ ধারণা পোষণ করবে না।
(ক) পরনিন্দাকারী ব্যক্তিকে বিশ্বাস করবে না। কারণ সে ফাসেক।
(খ) পরনিন্দাকারীকে তা থেকে নিষেধ করবে এবং উপদেশ দেবে।
(গ) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে। যাবৎ না সে তা পরিত্যাগ করে।
(ঙ) তার অনুপস্থিত ভাই সম্পর্কে অশুভ ধারণা পোষণ করবে না।
তাদের অপছন্দ সুস্পষ্ট হোক যেমন তারা বলল, আমাদের কথা শোনবে না অথবা অস্পষ্ট হোক কিন্তু বিভিন্ন নিদর্শন তার ইঙ্গিত করে যেমন তারা পরস্বর অনুচ্চ স্বরে কথাবার্তা বলছে- এমন লোকদের কথাবার্তায় কান পাতা জায়েজ নেই। এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, মানুষের কথাবার্তা কান পাতা তাদের বাড়িতে অথবা কক্ষে অথবা ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে অতএব তা এবং এর মত সবকিছু হারাম। ইসলামি শরিয়তের লক্ষ্য হচ্ছে এ গুলো হারাম সাব্যস্ত করা। কেননা, শরিয়ত মানুষের গোপন ও একান্ত বিষয়াদির সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে যে সব বিষয় মানুষ অন্য কাউকে অবগত হওয়া পছন্দকরে না। এ বিষয়ে আল্লাহর বাণীতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে
وَلَا تَجَسَّسُوا . ﴿الحجرات : 12﴾
‘তোমরা তত্ত্ব তালাশ কর না’। [আল-হুজুরাত : ১২।] তাজাযযুস বা গোয়েন্দাগিরি সাধারণত শোনা ইত্যাদির মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে তার সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধমকের বাণী উচ্চারণ করেছেন—
من اسمتع إلى حديث قوم وهم له كارهون صب في أذنيه الآنك يوم القيامة .
‘যে ব্যক্তি এমন কোন গোষ্ঠীর কথায় কান দিল যারা তা পছন্দ করে না। কেয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির দুই কানে গরম বিগলিত শিশা ঢেলে দেওয়া হবে। এ থেকেই অনুমিত হয়। প্রতিদান কাজের অনুরূপ।
وَلَا تَجَسَّسُوا . ﴿الحجرات : 12﴾
‘তোমরা তত্ত্ব তালাশ কর না’। [আল-হুজুরাত : ১২।] তাজাযযুস বা গোয়েন্দাগিরি সাধারণত শোনা ইত্যাদির মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে তার সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধমকের বাণী উচ্চারণ করেছেন—
من اسمتع إلى حديث قوم وهم له كارهون صب في أذنيه الآنك يوم القيامة .
‘যে ব্যক্তি এমন কোন গোষ্ঠীর কথায় কান দিল যারা তা পছন্দ করে না। কেয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির দুই কানে গরম বিগলিত শিশা ঢেলে দেওয়া হবে। এ থেকেই অনুমিত হয়। প্রতিদান কাজের অনুরূপ।
শরিয়তের পরিভাষায় মাসিয়াত বা পাপ হল, আল্লাহ তাআলা যা করা বান্দার জন্য আবশ্যক করেছেন, তা পালনে বিরত থাকা, এবং যা হারাম করেছেন, তা পালন করা। শরিয়তের পরিভাষা ব্যবহারে পাপকে বুঝানোর জন্য বিভিন্ন শব্দের উলেখ পাওয়া যায়, যেমন—যান্ব, খাতীআ’, ইসম, সাইয়্যিআ’—ইত্যাদি।
এর চূড়ান্ত বিপজ্জনক দিক হল, তা মানুষকে দূরে নিক্ষেপ করে আল্লাহ ও তার রহমত হতে, টেনে নেয় আল্লাহর ক্রোধ ও জাহান্নামের ভয়ানক পরিণতির দিকে। পাপের ক্রম ও ধারাবাহিকতা মানুষকে মাওলার সান্নিধ্য হতে ক্রমে দূরে নিক্ষেপ করে।
এ কারণে আল্লাহ রাববুল আলামিন পবিত্র কোরআনে পূণ: পূণ: এ সম্পর্কে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন, পাপ থেকে দূরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন ও পাপের কারণে অতীত জাতিগুলোর উপর যে-সকল আজাব-গজব ও নিরন্তর দুর্যোগ নেমে এসেছিল—তার বিবরণ তুলে ধরেছেন সবিস্তারে। সাবধান হতে বলেছেন এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। এরশাদ হয়েছে :—
فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ . ﴿المائدة : 49﴾
‘যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখ, তাদের কিছু পাপের কারণে আল্লাহ তাদের শাস্তি দিতে চান।’ [সূরা মায়েদা : ৪৯।]
أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ أَهْلِهَا أَنْ لَوْ نَشَاءُ أَصَبْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ ﴿الأعراف : 100﴾
কান এলাকার অধিবাসী ধ্বংস হওয়ার পর সেই এলাকার যারা উত্তরাধিকারী হয়, তাদের কাছে এটা কি প্রতীয়মান হয় না যে, আমি ইচ্ছা করলে পাপের কারণে তাদের শাস্তি দিতে পারি ?’ [সূরা আ’রাফ : ১০০।]
অনুরূপভাবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পাপ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন অসংখ্য হাদিসে। উদাহরণত : তিনি বলেছেন :—
اجتنبوا السبع الموبقات . . . رواه البخاري (2560)
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক পাপ থেকে দূরে থাকবে ...।’ [বোখারি : ২৫৬০।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদিসে ‘ইজতিনাব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। শব্দটি খুবই ইঙ্গিতবহ, কারণ, ‘ইজতিনাব’-এর মর্মার্থ হল, পাপ ও পাপের প্রতি মানুষের মনকে লালায়িত করে—এমন যে কোন কিছুকে সযত্নে এড়িয়ে চলা, কেবল পাপ বর্জনের মাধ্যমে রাসূলের উক্ত বাণীর সার্থক প্রতিফলন হবে না।
এর চূড়ান্ত বিপজ্জনক দিক হল, তা মানুষকে দূরে নিক্ষেপ করে আল্লাহ ও তার রহমত হতে, টেনে নেয় আল্লাহর ক্রোধ ও জাহান্নামের ভয়ানক পরিণতির দিকে। পাপের ক্রম ও ধারাবাহিকতা মানুষকে মাওলার সান্নিধ্য হতে ক্রমে দূরে নিক্ষেপ করে।
এ কারণে আল্লাহ রাববুল আলামিন পবিত্র কোরআনে পূণ: পূণ: এ সম্পর্কে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন, পাপ থেকে দূরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন ও পাপের কারণে অতীত জাতিগুলোর উপর যে-সকল আজাব-গজব ও নিরন্তর দুর্যোগ নেমে এসেছিল—তার বিবরণ তুলে ধরেছেন সবিস্তারে। সাবধান হতে বলেছেন এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। এরশাদ হয়েছে :—
فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ . ﴿المائدة : 49﴾
‘যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখ, তাদের কিছু পাপের কারণে আল্লাহ তাদের শাস্তি দিতে চান।’ [সূরা মায়েদা : ৪৯।]
أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ أَهْلِهَا أَنْ لَوْ نَشَاءُ أَصَبْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ ﴿الأعراف : 100﴾
কান এলাকার অধিবাসী ধ্বংস হওয়ার পর সেই এলাকার যারা উত্তরাধিকারী হয়, তাদের কাছে এটা কি প্রতীয়মান হয় না যে, আমি ইচ্ছা করলে পাপের কারণে তাদের শাস্তি দিতে পারি ?’ [সূরা আ’রাফ : ১০০।]
অনুরূপভাবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পাপ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন অসংখ্য হাদিসে। উদাহরণত : তিনি বলেছেন :—
اجتنبوا السبع الموبقات . . . رواه البخاري (2560)
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক পাপ থেকে দূরে থাকবে ...।’ [বোখারি : ২৫৬০।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদিসে ‘ইজতিনাব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। শব্দটি খুবই ইঙ্গিতবহ, কারণ, ‘ইজতিনাব’-এর মর্মার্থ হল, পাপ ও পাপের প্রতি মানুষের মনকে লালায়িত করে—এমন যে কোন কিছুকে সযত্নে এড়িয়ে চলা, কেবল পাপ বর্জনের মাধ্যমে রাসূলের উক্ত বাণীর সার্থক প্রতিফলন হবে না।
পাপ দু’ভাগে বিভক্ত—(১) কবীরা—মারাত্মক পাপ। (২) সগীরা বা লঘু পাপ।
পাপ দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার ব্যাপারে কোরআন-হাদিসের দলিল ও প্রমাণাদি অসংখ্য, নিম্নে তার কয়েকটি উদ্ধৃত করা হল :
(ক) আল-কোরআনে এসেছে :—
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُم . ﴿النساء : 31﴾
‘নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর মাঝে যা গুরুতর, তা হতে যদি তোমরা বিরত থাক, তবে তোমাদের ছোট পাপগুলো ক্ষমা করে দেব।’ [সূরা নিসা : ৩১।]
(খ) ভিন্ন এক স্থানে কোরআনের বর্ণনা :—
الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ . ﴿النجم : 32﴾
‘যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশল কার্য হতে, ছোট পাপের সম্পৃক্ততা সত্ত্বেও।’ [সূরা নাজম : ৩২।]
(গ) হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة كفارة لما بينهن ما لم تغش الكبائر . رواه الترمذي (198)
‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও এক জুমা’ হতে অপর জুমা’ হল এসবের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপের কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। [তিরমিযী : ১৯৮।]
পাপ দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার ব্যাপারে কোরআন-হাদিসের দলিল ও প্রমাণাদি অসংখ্য, নিম্নে তার কয়েকটি উদ্ধৃত করা হল :
(ক) আল-কোরআনে এসেছে :—
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُم . ﴿النساء : 31﴾
‘নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর মাঝে যা গুরুতর, তা হতে যদি তোমরা বিরত থাক, তবে তোমাদের ছোট পাপগুলো ক্ষমা করে দেব।’ [সূরা নিসা : ৩১।]
(খ) ভিন্ন এক স্থানে কোরআনের বর্ণনা :—
الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ . ﴿النجم : 32﴾
‘যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশল কার্য হতে, ছোট পাপের সম্পৃক্ততা সত্ত্বেও।’ [সূরা নাজম : ৩২।]
(গ) হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة كفارة لما بينهن ما لم تغش الكبائر . رواه الترمذي (198)
‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও এক জুমা’ হতে অপর জুমা’ হল এসবের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপের কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। [তিরমিযী : ১৯৮।]
কিছু কিছু পাপকে কোরাআন ও হাদিসের স্পষ্ট প্রমাণের আলোকে কবিরা গুনাহ হিসেবে শনাক্ত করা যায়, যেমন, আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, অন্যায় হত্যা, জাদু, মিথ্যা সাক্ষ্য—ইত্যাদি।
আর যে সব গুনাহ সম্পর্কে কবিরা হিসেবে স্পষ্ট ঘোষণা কোরআন বা হাদিসে আসেনি এরূপ পাপসমূহের কোনটি কবিরা তা নির্ণয় ও শনাক্তর জন্য আইনজ্ঞ উলামাগণ একটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন।
কবিরা গুনাহের সংজ্ঞা নিরূপণে ইসলামি আইন বিশারদদের মতামত এই যে, যে পাপ কোরআন ও হাদিসের দলিল দ্বারা কঠোরভাবে হারাম হওয়া প্রমাণিত, যার ব্যাপারে লা’নত ও গজবের ঘোষণা এসেছে, কিংবা জাহান্নামের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, অথবা দুনিয়াতে শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে—তাকে ইসলামের পরিভাষায় কবিরা গুনাহ বলা হয়।
আর যে সব গুনাহ সম্পর্কে কবিরা হিসেবে স্পষ্ট ঘোষণা কোরআন বা হাদিসে আসেনি এরূপ পাপসমূহের কোনটি কবিরা তা নির্ণয় ও শনাক্তর জন্য আইনজ্ঞ উলামাগণ একটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন।
কবিরা গুনাহের সংজ্ঞা নিরূপণে ইসলামি আইন বিশারদদের মতামত এই যে, যে পাপ কোরআন ও হাদিসের দলিল দ্বারা কঠোরভাবে হারাম হওয়া প্রমাণিত, যার ব্যাপারে লা’নত ও গজবের ঘোষণা এসেছে, কিংবা জাহান্নামের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, অথবা দুনিয়াতে শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে—তাকে ইসলামের পরিভাষায় কবিরা গুনাহ বলা হয়।
কবিরা গুনাহের উক্ত সংজ্ঞা যে পাপের উপর আরোপ করা যায় না, তাকেই ইসলামের পরিভাষায় সগীরা গুনাহ বলা হয়। যেমন : আজান হওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হওয়া, দাওয়াত পাওয়ার পর তাতে কোন কারণ ব্যতীত অংশ গ্রহণ না করা, সালামের উত্তর না দেয়া, হাঁচি দিয়ে যে আল্হামদুলিহ বলল তার উত্তর না দেয়া ইত্যাদি।
সগীরা গুনাহকে লঘু মনে করা কোন ক্রমেই উচিত নয়। কেননা, এতে কবিরা গুনাহে আক্রান্ত হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়।
সগীরা গুনাহকে লঘুভাবে নেয়ার ভয়ানক পরিণতি কি হতে পারে, তা এখানে আলোচনা করছি:—
(ক) মুসলমানের কর্তব্য, যা কিছু হতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা। কোন্টা ছোট আর কোন্টা বড়—তা বিবেচ্য নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
ما نهيتكم عنه فاجتنبوه . رواه مسلم (434(
‘যা থেকে আমি তোমাদের নিষেধ করেছি, তা পরিহার কর।’ [মুসলিম : ৪৩৪৮।]
(খ) মানুষের কর্তব্য, আল্লাহ তাআলার অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে গুনাহ পরিহার করে চলা। কেননা, যা কিছু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পরিহার করতে বলেছেন, তা পরিহার না করার অর্থ আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন, অসম্মান দেখানো। সন্দেহ নেই এটা খুবই আপত্তিকর ও গর্হিত কাজ।
তাই, এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত তাবেয়ী বেলাল ইবনে সা’দ রা.-এর উক্তি এরূপ—তুমি ছোট অপরাধ করলে, না বড় অপরাধ—তা ধর্তব্য নয়। মূল দেখার বিষয় তুমি কার কথার অবাধ্য হচ্ছ।
(গ) ছোট গুনাহ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়ে বলেছেন :—
إياكم ومحقرات الذنوب، فإنما مثل محقرات الذنوب كقوم نزلوا بطن واد، فجاء ذا بعود، وجاء ذا بعود، حتى أنضجوا خبزتهم، وإن محقرات الذنوب متى يؤخذ بها صاحبها تهلكه . رواه أحمد )21742) ، وصححه الألباني في الجامع
‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করবে। ছোট গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত সেই পর্যটক দলের মত, যারা একটি উপত্যকায় বিশ্রাম নিতে বসল। অত:পর তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি একটি লাকড়ি নিয়ে উপস্থিত হল, অপর ব্যক্তি আরেকটি; পরিণতিতে তাদের রুটি প্রস্ত্তত হয়ে গেল। এবং ছোট গুনাহের কারণে যদি কাউকে পাকড়াও করা হয়, তবে, সন্দেহ নেই, তা তার ধ্বংসের কারণ হবে।’ [আহমদ : ২১৭৪২।]
(ঘ) সগীরা গোনা মানুষের অভ্যস্ততার ফলে মানুষ ক্রমে অন্যান্য সগীরা এবং এক সময়ে কবিরা গুনাহে প্রতি লিপ্ত হয়ে পড়ে। সগীরা গুনাহকে হালকা মনে করে তাতে লিপ্ত হওয়া শয়তানের কুমন্ত্রণা বৈ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ . ﴿النور :21﴾
‘হে বিশ্বাসীগণ ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।’ [সূরা আন-নূর : ২১।]
সগীরা গুনাহকে লঘুভাবে নেয়ার ভয়ানক পরিণতি কি হতে পারে, তা এখানে আলোচনা করছি:—
(ক) মুসলমানের কর্তব্য, যা কিছু হতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা। কোন্টা ছোট আর কোন্টা বড়—তা বিবেচ্য নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
ما نهيتكم عنه فاجتنبوه . رواه مسلم (434(
‘যা থেকে আমি তোমাদের নিষেধ করেছি, তা পরিহার কর।’ [মুসলিম : ৪৩৪৮।]
(খ) মানুষের কর্তব্য, আল্লাহ তাআলার অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে গুনাহ পরিহার করে চলা। কেননা, যা কিছু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পরিহার করতে বলেছেন, তা পরিহার না করার অর্থ আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন, অসম্মান দেখানো। সন্দেহ নেই এটা খুবই আপত্তিকর ও গর্হিত কাজ।
তাই, এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত তাবেয়ী বেলাল ইবনে সা’দ রা.-এর উক্তি এরূপ—তুমি ছোট অপরাধ করলে, না বড় অপরাধ—তা ধর্তব্য নয়। মূল দেখার বিষয় তুমি কার কথার অবাধ্য হচ্ছ।
(গ) ছোট গুনাহ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়ে বলেছেন :—
إياكم ومحقرات الذنوب، فإنما مثل محقرات الذنوب كقوم نزلوا بطن واد، فجاء ذا بعود، وجاء ذا بعود، حتى أنضجوا خبزتهم، وإن محقرات الذنوب متى يؤخذ بها صاحبها تهلكه . رواه أحمد )21742) ، وصححه الألباني في الجامع
‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করবে। ছোট গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত সেই পর্যটক দলের মত, যারা একটি উপত্যকায় বিশ্রাম নিতে বসল। অত:পর তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি একটি লাকড়ি নিয়ে উপস্থিত হল, অপর ব্যক্তি আরেকটি; পরিণতিতে তাদের রুটি প্রস্ত্তত হয়ে গেল। এবং ছোট গুনাহের কারণে যদি কাউকে পাকড়াও করা হয়, তবে, সন্দেহ নেই, তা তার ধ্বংসের কারণ হবে।’ [আহমদ : ২১৭৪২।]
(ঘ) সগীরা গোনা মানুষের অভ্যস্ততার ফলে মানুষ ক্রমে অন্যান্য সগীরা এবং এক সময়ে কবিরা গুনাহে প্রতি লিপ্ত হয়ে পড়ে। সগীরা গুনাহকে হালকা মনে করে তাতে লিপ্ত হওয়া শয়তানের কুমন্ত্রণা বৈ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ . ﴿النور :21﴾
‘হে বিশ্বাসীগণ ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।’ [সূরা আন-নূর : ২১।]
(১) বার বার সগীরা গুনাহে লিপ্ত হলে অথবা সগীরা গুনাহ অভ্যাসে পরিণত হলে তা আর সগীরা গুনাহে সীমাবদ্ধ থাকে না। কবিরা গুনাহে পরিণত হয়।
প্রখ্যাত সাহাবি ইবনে আববাস রা. বলেন :
لا كبيرة مع استغفار، ولا صغيرة مع إصرار .
‘ইস্তেগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে কবিরা গুনাহ থাকে না। তবে বার বার সগীরা গুনাহ করে গেলে তা আর সগীরা গুনাহ থাকে না।’
(২) প্রকাশ্যে সগীরা গুনাহ করলে অথবা তা করে আনন্দিত হলে বা তা নিয়ে গর্ব করলে কবিরা গুনাহে পরিণত হয়। রাসূলুল্লাহ সালহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :—
كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا ثم يصبح وقد ستره الله فيقول : يا فلان قد عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه ويصبح يكشف ستر الله عنه . رواه البخاري (5608)
‘আমার উম্মতের সকল সদস্য ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কেবল যারা প্রকাশ্যে পাপ করে যায়, তারা ব্যতীত। প্রকাশ্যে পাপ করার অর্থ : কোন ব্যক্তি রাতে খারাপ কাজ করল। আল্লাহ তার এ কাজটি গোপন রাখলেন কিন্তু দিনের বেলায় সে লোকদের বলে বেড়াল, হে শুনেছ ! আমি গত রাতে এই এই করেছি। রাতে তার প্রতিপালক যা গোপন করলেন, দিনে সে তা প্রকাশ করে দিল।’ [বোখারী : ৫৬০৮।]
(৩) যিনি সগীরা গুনাহ করলেন, তিনি যদি মানুষের জন্য অনুসরণযোগ্য হয়ে থাকেন, তাহলে মানুষ তার কারণে এ গুনাহকে গুনাহ মনে করবে না। মনে করবে, তার মত মানুষ যখন এ কাজ করতে পারে, তাহলে আমরা করলে দোষ কি ? ফলে তাদের এ গুনাহের অংশ তারও বহন করতে হতে পারে।
প্রখ্যাত সাহাবি ইবনে আববাস রা. বলেন :
لا كبيرة مع استغفار، ولا صغيرة مع إصرار .
‘ইস্তেগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে কবিরা গুনাহ থাকে না। তবে বার বার সগীরা গুনাহ করে গেলে তা আর সগীরা গুনাহ থাকে না।’
(২) প্রকাশ্যে সগীরা গুনাহ করলে অথবা তা করে আনন্দিত হলে বা তা নিয়ে গর্ব করলে কবিরা গুনাহে পরিণত হয়। রাসূলুল্লাহ সালহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :—
كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا ثم يصبح وقد ستره الله فيقول : يا فلان قد عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه ويصبح يكشف ستر الله عنه . رواه البخاري (5608)
‘আমার উম্মতের সকল সদস্য ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, কেবল যারা প্রকাশ্যে পাপ করে যায়, তারা ব্যতীত। প্রকাশ্যে পাপ করার অর্থ : কোন ব্যক্তি রাতে খারাপ কাজ করল। আল্লাহ তার এ কাজটি গোপন রাখলেন কিন্তু দিনের বেলায় সে লোকদের বলে বেড়াল, হে শুনেছ ! আমি গত রাতে এই এই করেছি। রাতে তার প্রতিপালক যা গোপন করলেন, দিনে সে তা প্রকাশ করে দিল।’ [বোখারী : ৫৬০৮।]
(৩) যিনি সগীরা গুনাহ করলেন, তিনি যদি মানুষের জন্য অনুসরণযোগ্য হয়ে থাকেন, তাহলে মানুষ তার কারণে এ গুনাহকে গুনাহ মনে করবে না। মনে করবে, তার মত মানুষ যখন এ কাজ করতে পারে, তাহলে আমরা করলে দোষ কি ? ফলে তাদের এ গুনাহের অংশ তারও বহন করতে হতে পারে।
পাপের কারণে ব্যক্তির অন্তরাত্মা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, তার আত্মা ঢেকে যায় অন্ধকারাচ্ছন্নতার চাদরে। মনকে সংকুচিত মনে হয় সর্বদা। নানা প্রকার বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ভাল কাজের শক্তি-সামর্থ্য ও তাওফীক হ্রাস পায়।
প্রশ্ন হতে পারে— যারা পাপাচারে লিপ্ত তারাইতো গড়ে তুলছে প্রাচুর্য। যাপন করছে স্বাচ্ছন্দ্য জীবন ! নেয়ামত ও আনন্দের আবহ ঘিরে সর্বদা তাদের। কথা অসত্য নয়। তবে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ধৃত-পাকড়াও করার কৌশল মাত্র। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য এসেছে।
وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ . ﴿القلم : 45﴾
‘আর আমি তাদের সময় দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।’ [সূরা আল-কলম : ৪৫।]
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِأَنْفُسِهِمْ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ . ﴿آل عمران : 178﴾
‘কাফেরগণ যেন কখনো মনে না করে, আমি অবকাশ দেই তাদের মঙ্গলের জন্য; আমি অবকাশ দিয়ে থাকি, যাতে তাদের পাপ বৃদ্ধি পায়। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।’ [সূরা আলে ইমরান : ১৭৮।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :—
إن الله ليملي للظالم حتى إذا أخذه لم يفلته ثم قرأ : Õ وكذلك أخذ ربك إذا أخذ القرى وهي ظالمة Ô ﴿هود : 102﴾
আল্লাহ অত্যাচারীকে অবকাশ দেন। যখন তাকে পাকড়াও করা হয়, তখন সে দিশেহারা হয়ে যায়। অত:পর তিনি কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন : ‘এ রকমই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি। তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে, যখন তারা জুলুম করে।’ [সূরা হুদ : ১০২।]
প্রশ্ন হতে পারে— যারা পাপাচারে লিপ্ত তারাইতো গড়ে তুলছে প্রাচুর্য। যাপন করছে স্বাচ্ছন্দ্য জীবন ! নেয়ামত ও আনন্দের আবহ ঘিরে সর্বদা তাদের। কথা অসত্য নয়। তবে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ধৃত-পাকড়াও করার কৌশল মাত্র। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য এসেছে।
وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ . ﴿القلم : 45﴾
‘আর আমি তাদের সময় দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।’ [সূরা আল-কলম : ৪৫।]
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِأَنْفُسِهِمْ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ . ﴿آل عمران : 178﴾
‘কাফেরগণ যেন কখনো মনে না করে, আমি অবকাশ দেই তাদের মঙ্গলের জন্য; আমি অবকাশ দিয়ে থাকি, যাতে তাদের পাপ বৃদ্ধি পায়। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।’ [সূরা আলে ইমরান : ১৭৮।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :—
إن الله ليملي للظالم حتى إذا أخذه لم يفلته ثم قرأ : Õ وكذلك أخذ ربك إذا أخذ القرى وهي ظالمة Ô ﴿هود : 102﴾
আল্লাহ অত্যাচারীকে অবকাশ দেন। যখন তাকে পাকড়াও করা হয়, তখন সে দিশেহারা হয়ে যায়। অত:পর তিনি কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন : ‘এ রকমই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি। তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে, যখন তারা জুলুম করে।’ [সূরা হুদ : ১০২।]
সমাজে পাপাচার ও তার ক্ষতিকর প্রভাব বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পাপাচারের কারণে বিভিন্ন রোগ-ব্যধির বিস্তার ঘটে, দুষিত হয় পরিবেশ। দেখা দেয় নিরাপত্তার অভাব, বিঘ্ন ঘটে শান্তি-শৃংখলার, ভীতি ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহভাবে। কখনো অনাবৃষ্টি, কখনো অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্প, ঝড়-তুফানসহ দেখা দেয় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মানববিধ্বংসী যুদ্ধ, আগ্রাসন—ইত্যাদি বিবিধ অস্বাভাবিকতা মানুষের পাপাচারেরই ফসল।
তবে কাফিরদের অবাধ বিচরণ ও স্বচ্ছলতা দেখে মুসলিমদের বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ, হয় তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাময়িক অবকাশ, কিংবা হয়ত আল্লাহ তাআলা পরোকালের তুলনায় দুনিয়াতেই তাদের জন্য বরাদ্দ সকল সুখ-শান্তি বিলিয়ে দিচ্ছেন,—রাসূল হতে বর্ণিত হাদিসেও এর স্বপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে কাফিরদের অবাধ বিচরণ ও স্বচ্ছলতা দেখে মুসলিমদের বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ, হয় তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাময়িক অবকাশ, কিংবা হয়ত আল্লাহ তাআলা পরোকালের তুলনায় দুনিয়াতেই তাদের জন্য বরাদ্দ সকল সুখ-শান্তি বিলিয়ে দিচ্ছেন,—রাসূল হতে বর্ণিত হাদিসেও এর স্বপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।
সমাজের দায়িত্ব হল সকল প্রকার পাপাচার ও অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া। উপদেশ ও নসীহতের মাধ্যমে পাপাচার নির্মূল করা।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখার কর্মপন্থা গ্রহণ করা। একে ব্যাপারে অলসতা ও গাফিলতি প্রদর্শন প্রকারান্তরে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের জন্য সমূহ বিপদ ডেকে আনবে, সন্দেহ নেই। পাপ নির্মূলের চেষ্টা না করে যদি পাপের সাথে সহাবস্থানের মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়, আল্লাহর পক্ষ থেকে তবে শাস্তি নাযিল হওয়া অবধারিত। এরশাদ হয়েছে :—
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ . ﴿المائدة : 78-79﴾
‘বনী ইস্রাইলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল, তারা দাউদ ও মারইয়াম তনয় ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল—এ এজন্য যে, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা হতে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত, তা নিয়ত অতিব নিকৃষ্ট।’ [সূরা মায়েদা : ৭৮-৭৯।]
(খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :—
مثل القائم في حدود الله والواقع فيها كمثل قوم استهموا على سفينة، فأصاب بعضهم أعلاها، وبعضهم أسفلها، فكان الذين في أسفلها إذا استقوا الماء مروا على من فوقهم، فقالوا : لو أنا خرقنا في نصيبنا خرقا ولم نؤذ من فوقنا، فإن تركوهم وما أرادوا هلكوا جميعا، وإن أخذوا على أيديهم نجوا ونجوا جميعا .
‘যারা আল্লাহ তাআলার সীমারেখার ভিতরে এবং যারা সীমারেখা লংঘন করে তাদের দৃষ্টান্ত ঠিক এ রকম যে, কিছু লোক একটি জাহাজের যাত্রী। কিছু সংখ্যক উপর তলায় আর কিছু সংখ্যক নীচ তলায় আরোহণ করেছে। কিন্তু নীচের তলার যাত্রীদের পানির জন্য উপর তলায় যেতে হয়। তারা চিন্তা করল আমরা উপরে পানি আনার জন্য গেলে উপর তলার লোকজন বিরক্ত হয়, তাই আমরা যদি জাহাজ ফুটো করে আমাদের জন্য পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করি তাহলে ভালই হয়। এমতাবস্থায় যদি উপর তলার লোকজন নীচ তলার এই অবুঝ লোকদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা না দেয়, তাহলে জাহাজ ঢুবে গিয়ে উভয় তলার যাত্রীগণ প্রাণ হারাবেন নি:সন্দেহে। আর যদি তারা বাধা প্রদান করে, তাহলে উভয় তলার যাত্রীরা বেঁচে যাবেন।’ [বোখারি : ২৩১৩।] এমনিভাবে সমাজের ভাল লোকেরা যদি পাপাচারে লিপ্তদের পাপ কাজে বাধা না দেন, তাহলে এ পাপের কারণে যে দুর্যোগ নেমে আসবে, তা থেকে কেউ রেহাই পাবে না।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখার কর্মপন্থা গ্রহণ করা। একে ব্যাপারে অলসতা ও গাফিলতি প্রদর্শন প্রকারান্তরে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের জন্য সমূহ বিপদ ডেকে আনবে, সন্দেহ নেই। পাপ নির্মূলের চেষ্টা না করে যদি পাপের সাথে সহাবস্থানের মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়, আল্লাহর পক্ষ থেকে তবে শাস্তি নাযিল হওয়া অবধারিত। এরশাদ হয়েছে :—
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ . ﴿المائدة : 78-79﴾
‘বনী ইস্রাইলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল, তারা দাউদ ও মারইয়াম তনয় ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল—এ এজন্য যে, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা হতে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত, তা নিয়ত অতিব নিকৃষ্ট।’ [সূরা মায়েদা : ৭৮-৭৯।]
(খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :—
مثل القائم في حدود الله والواقع فيها كمثل قوم استهموا على سفينة، فأصاب بعضهم أعلاها، وبعضهم أسفلها، فكان الذين في أسفلها إذا استقوا الماء مروا على من فوقهم، فقالوا : لو أنا خرقنا في نصيبنا خرقا ولم نؤذ من فوقنا، فإن تركوهم وما أرادوا هلكوا جميعا، وإن أخذوا على أيديهم نجوا ونجوا جميعا .
‘যারা আল্লাহ তাআলার সীমারেখার ভিতরে এবং যারা সীমারেখা লংঘন করে তাদের দৃষ্টান্ত ঠিক এ রকম যে, কিছু লোক একটি জাহাজের যাত্রী। কিছু সংখ্যক উপর তলায় আর কিছু সংখ্যক নীচ তলায় আরোহণ করেছে। কিন্তু নীচের তলার যাত্রীদের পানির জন্য উপর তলায় যেতে হয়। তারা চিন্তা করল আমরা উপরে পানি আনার জন্য গেলে উপর তলার লোকজন বিরক্ত হয়, তাই আমরা যদি জাহাজ ফুটো করে আমাদের জন্য পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করি তাহলে ভালই হয়। এমতাবস্থায় যদি উপর তলার লোকজন নীচ তলার এই অবুঝ লোকদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা না দেয়, তাহলে জাহাজ ঢুবে গিয়ে উভয় তলার যাত্রীগণ প্রাণ হারাবেন নি:সন্দেহে। আর যদি তারা বাধা প্রদান করে, তাহলে উভয় তলার যাত্রীরা বেঁচে যাবেন।’ [বোখারি : ২৩১৩।] এমনিভাবে সমাজের ভাল লোকেরা যদি পাপাচারে লিপ্তদের পাপ কাজে বাধা না দেন, তাহলে এ পাপের কারণে যে দুর্যোগ নেমে আসবে, তা থেকে কেউ রেহাই পাবে না।
মুসলমানের কর্তব্য, অতি তাড়াতাড়ি পাপ থেকে তওবা ও ইস্তেগফার করা। আল্লাহ রাববুল আলামীনের কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের পাপের অংক নিজেই কষে দেখা। অনুরূপভাবে সৎকাজ বেশী-বেশী করা, যাতে সৎকাজগুলো পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়। উপরন্তু যেসব বিষয় মানুষকে পাপকাজে উদ্বুদ্ধ করে তা থেকে সর্বদা দূরত্ব বজায় রাখা।
পাপকর্মের সাথে কমবেশী আমরা সবাই জড়িত। তবে পাপীদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাওবা করে। আমাদের মধ্যে কেউ পাপকাজে জড়িয়ে পড়ল। আল্লাহ যা পছন্দ করেন না এমন কাজ করে বসল। একবারের পর আবার করল। অবচেতন নয় বরং সম্পূর্ণ চেতনা নিয়েই করল। তবে পরবর্তীতে সে অনুতপ্ত হল। মানসিকভাবে ব্যাথা অনুভব করল। মনে মনে নিয়ত করল, যদি কাজটা ছেড়ে দিতে পারি তাহলে আর কখনো করব না। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার পদস্খলন ঘটল। সে পাপটি আবার করল।
আবার অনেকেই এমন আছেন যারা পাপ করেন সংগোপনে আর মনে মনে বলেন, যদি এই সমস্যাটি না থাকত তাহলে পাপকাজ করতাম না। সমস্যাটি দূর হয়ে গেলে পাপ ছেড়ে ভাল হয়ে যাব।
পাপ করে এ ধরনের মানসিক অবস্থায় যে পড়ে, তার মানবাত্মা জাগ্রত। সে আল্লাহর ইচ্ছায় একদিন পাপ থেকে বেরিয়ে আসবে, পাপাচারের অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে।
আবার অনেকেই এমন আছেন যারা পাপ করেন সংগোপনে আর মনে মনে বলেন, যদি এই সমস্যাটি না থাকত তাহলে পাপকাজ করতাম না। সমস্যাটি দূর হয়ে গেলে পাপ ছেড়ে ভাল হয়ে যাব।
পাপ করে এ ধরনের মানসিক অবস্থায় যে পড়ে, তার মানবাত্মা জাগ্রত। সে আল্লাহর ইচ্ছায় একদিন পাপ থেকে বেরিয়ে আসবে, পাপাচারের অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে।
ঈমানদার ব্যক্তির হৃদয় জুড়ে থাকে প্রতিপালকের ভয়, যার মহিমা-মাহাত্ম্য আলোড়িত করে রাখে তার অন্তর জগৎ সারাক্ষণ। প্রতিপালকের অবাধ্য হওয়া কখনোই শুভ মনে হয় না তার কাছে। পাপ তার কাছে ঘৃণ্য-প্রত্যাখ্যাত বস্ত্ত। ঈমানের পরিধি-পর্যায় অনুযায়ী মুমিন ব্যক্তি আল্লাহকে মনে করে বড়ো, আর পাপকে মনে করে ঘৃণ্য অপরাধ।
উদাহরণত: আল্লাহ রাববুল আলামীন ঈমানদারদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন :—
كَانُوا قَلِيلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ . وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ . ﴿الذاريات : 17-18﴾
‘তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করে নিদ্রায়। আর রাতের শেষ প্রহরে নিমগ্ন হয় ক্ষমা প্রার্থনায়।’ [সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮।] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :—
الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا إِنَّنَا آَمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ . الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنْفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ . ﴿آل عمران : 16-17﴾
‘যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক ! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং, তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর এবং আমাদের লেলিহান আগুনের আজাব হতে রক্ষা কর। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী, এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থী।’ [সূরা আলে-ইমরান : ১৬ -১৭।] আল্লাহভীতি ও নৈতিক দায়িত্ববোধের কারণেই উলিখিত মুমিনগণ শেষ রাতের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আল্লাহ রাববুল আলামীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
কিভাবে মুমিনগণ পাপকে ভয়ের বস্ত্ত মনে করে তার একটা দৃষ্টান্ত প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদের কথায় পাওয়া যায়। তিনি বলেন :—
إن المؤمن يرى ذنوبه كأنه قاعد تحت جبل يخاف أن يقع عليه، وإن الفاجر يرى ذنوبه كذباب مر على أنفه فقال به هكذا . رواه البخاري (6308(
‘পাপ, ঈমানদার ব্যক্তির কাছে এমন মনে হয়—যেন সে পাহাড়ের পাদদেশে বসে আছে। আর এ ভয়ে ভীত যে, পাহাড়টি পড়ে যাবে তার মাথায়। অপরপক্ষে, একজন দুষ্ট ব্যক্তি তার পাপকে দেখে মনে করে মাছি সম, যা তার নাগের ডগা স্পর্শ করে চলে গেছে।’ [বোখারি : ৬৩০৮।] আনাস রা. বলেন :—
إنكم لتعملون أعمالا هي أدق في أعينكم من الشعر، إن كنا لنعدها على عهد النبي صلى الله عليه وسلم من الموبقات . رواه البخاري (6492)
‘এমন অনেক কাজ তোমরা কর, যা তোমাদের নজরে চুলের চেয়েও সরু অথচ আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে সেগুলোকে ধ্বংসাত্মক পাপ বলে জ্ঞান করতাম।’ [বোখারি : ৬৪৯২।]
তাবেয়ীদের লক্ষ্য করে তিনি তার এ মন্তব্য করেছিলেন। আমাদের অবস্থা দেখে তিনি কি মন্তব্য করতেন, তা বলাই বাহুল্য।
উদাহরণত: আল্লাহ রাববুল আলামীন ঈমানদারদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন :—
كَانُوا قَلِيلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ . وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ . ﴿الذاريات : 17-18﴾
‘তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করে নিদ্রায়। আর রাতের শেষ প্রহরে নিমগ্ন হয় ক্ষমা প্রার্থনায়।’ [সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮।] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :—
الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا إِنَّنَا آَمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ . الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنْفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ . ﴿آل عمران : 16-17﴾
‘যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক ! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং, তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর এবং আমাদের লেলিহান আগুনের আজাব হতে রক্ষা কর। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী, এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থী।’ [সূরা আলে-ইমরান : ১৬ -১৭।] আল্লাহভীতি ও নৈতিক দায়িত্ববোধের কারণেই উলিখিত মুমিনগণ শেষ রাতের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আল্লাহ রাববুল আলামীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
কিভাবে মুমিনগণ পাপকে ভয়ের বস্ত্ত মনে করে তার একটা দৃষ্টান্ত প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদের কথায় পাওয়া যায়। তিনি বলেন :—
إن المؤمن يرى ذنوبه كأنه قاعد تحت جبل يخاف أن يقع عليه، وإن الفاجر يرى ذنوبه كذباب مر على أنفه فقال به هكذا . رواه البخاري (6308(
‘পাপ, ঈমানদার ব্যক্তির কাছে এমন মনে হয়—যেন সে পাহাড়ের পাদদেশে বসে আছে। আর এ ভয়ে ভীত যে, পাহাড়টি পড়ে যাবে তার মাথায়। অপরপক্ষে, একজন দুষ্ট ব্যক্তি তার পাপকে দেখে মনে করে মাছি সম, যা তার নাগের ডগা স্পর্শ করে চলে গেছে।’ [বোখারি : ৬৩০৮।] আনাস রা. বলেন :—
إنكم لتعملون أعمالا هي أدق في أعينكم من الشعر، إن كنا لنعدها على عهد النبي صلى الله عليه وسلم من الموبقات . رواه البخاري (6492)
‘এমন অনেক কাজ তোমরা কর, যা তোমাদের নজরে চুলের চেয়েও সরু অথচ আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে সেগুলোকে ধ্বংসাত্মক পাপ বলে জ্ঞান করতাম।’ [বোখারি : ৬৪৯২।]
তাবেয়ীদের লক্ষ্য করে তিনি তার এ মন্তব্য করেছিলেন। আমাদের অবস্থা দেখে তিনি কি মন্তব্য করতেন, তা বলাই বাহুল্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
إياكم ومحقرات الذنوب، فإنما مثل محقرات الذنوب كقوم نزلوا بطن واد، فجاء ذا بعود، وجاء ذا بعود، حتى أنضجوا خبزتهم، وإن محقرات الذنوب متى يؤخذ بها صاحبها تهلكه . رواه أحمد (22808) ، وصححه الألباني في الجامع (2686)
‘ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। ক্ষুদ্র গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত সেই পর্যটক দলের মতো যারা একটি উপত্যকায় অবতরণ করল। তাদের একজন একটি কাষ্ঠখন্ড নিয়ে এল। অপরজন আরেকটি। আর এভাবেই তাদের রুটি ছেঁকা সম্পন্ন হল। এবং ছোট গুনাহের কারণে যদি কাউকে পাকড়াও করা হয় তবে তা তার ধ্বংসের কারণ হবে।’ [আহমাদ : ২২৮০। সহিহ আল-জামে : ২৬৮৬।] ইবনুল মু’তিয বলেছেন :—
خل الذنوب صغيرها وكبيرها ذاك التقى
واصنع كماش فوق أرض الشوق يحذر ما يرى
لا تحقرن صغيرها إن الجبال من الحصى
ছেড়ে দাও পাপ ছোট বড় সব— এটাই পরহেযগারী।
কন্টকাকীর্ণ জমিনে পথচলা ব্যক্তির ন্যায় সতর্ক দৃষ্টি সক্রিয় কর।
তোমাদের পাপের মধ্যে যেগুলো ছোট, তুচ্ছ জ্ঞান করোনা সেগুলোকেও ;
ছোট ছোট পাথর দিয়েই তো বনেছে সুবিশাল পর্বত।
إياكم ومحقرات الذنوب، فإنما مثل محقرات الذنوب كقوم نزلوا بطن واد، فجاء ذا بعود، وجاء ذا بعود، حتى أنضجوا خبزتهم، وإن محقرات الذنوب متى يؤخذ بها صاحبها تهلكه . رواه أحمد (22808) ، وصححه الألباني في الجامع (2686)
‘ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। ক্ষুদ্র গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত সেই পর্যটক দলের মতো যারা একটি উপত্যকায় অবতরণ করল। তাদের একজন একটি কাষ্ঠখন্ড নিয়ে এল। অপরজন আরেকটি। আর এভাবেই তাদের রুটি ছেঁকা সম্পন্ন হল। এবং ছোট গুনাহের কারণে যদি কাউকে পাকড়াও করা হয় তবে তা তার ধ্বংসের কারণ হবে।’ [আহমাদ : ২২৮০। সহিহ আল-জামে : ২৬৮৬।] ইবনুল মু’তিয বলেছেন :—
خل الذنوب صغيرها وكبيرها ذاك التقى
واصنع كماش فوق أرض الشوق يحذر ما يرى
لا تحقرن صغيرها إن الجبال من الحصى
ছেড়ে দাও পাপ ছোট বড় সব— এটাই পরহেযগারী।
কন্টকাকীর্ণ জমিনে পথচলা ব্যক্তির ন্যায় সতর্ক দৃষ্টি সক্রিয় কর।
তোমাদের পাপের মধ্যে যেগুলো ছোট, তুচ্ছ জ্ঞান করোনা সেগুলোকেও ;
ছোট ছোট পাথর দিয়েই তো বনেছে সুবিশাল পর্বত।
হাদিসে এসেছে—
عن سالم بن عبد الله قال : سمعت أبا هريرة يقول : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا ثم يصبح وقد ستره الله فيقول : يا فلان قد عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه ويصبح يكشف ستر الله عنه . رواه البخاري (6069) ، و مسلم (2990)
সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবু হুরাইরাহ y-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘প্রকাশ্যে পাপকারীরা ব্যতীত আমার সকল উম্মত ক্ষমাপ্রাপ্ত। প্রকাশ্যে পাপ করার মধ্যে এটাও যে, রাতে কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করল। আল্লাহ তার এ কাজটি গোপন রাখা সত্ত্বেও সে দিনের বেলায় বলে বেড়াল: শুনছেন ! আমি গত রাতে এই-এই করেছি। সে রাত কাটাল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার পাপ গোপন করে রাখলেন। আর তার সকাল হল এ অবস্থায় যে, আল্লাহ যা গোপন করলেন সে তা ফাঁস করে দিল।’ [বোখারি : ৬০৬৯। মুসলিম : ২৯৯০।] সুতরাং, কোন ব্যক্তি যদি পাপকার্য করে বসে তার উচিত হবে গোপন করে রাখা ; কেননা, আল্লাহ তা গোপন রেখেছেন। পাশাপাশি পাপের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা।
পাপের সম্পৃক্ততায় আসার পর কীভাবে তার প্রতিকার সম্ভব, এ ব্যাপারে প্রাজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে প্রশ্ন করার সময় গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশে এভাবে বলতে হবে যে, যদি কোন ব্যক্তি এই ধরনের পাপ করে বসে তাহলে তার প্রতিকার কী ?
عن سالم بن عبد الله قال : سمعت أبا هريرة يقول : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : كل أمتي معافى إلا المجاهرين، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا ثم يصبح وقد ستره الله فيقول : يا فلان قد عملت البارحة كذا وكذا، وقد بات يستره ربه ويصبح يكشف ستر الله عنه . رواه البخاري (6069) ، و مسلم (2990)
সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবু হুরাইরাহ y-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘প্রকাশ্যে পাপকারীরা ব্যতীত আমার সকল উম্মত ক্ষমাপ্রাপ্ত। প্রকাশ্যে পাপ করার মধ্যে এটাও যে, রাতে কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করল। আল্লাহ তার এ কাজটি গোপন রাখা সত্ত্বেও সে দিনের বেলায় বলে বেড়াল: শুনছেন ! আমি গত রাতে এই-এই করেছি। সে রাত কাটাল এ অবস্থায় যে, তার প্রতিপালক তার পাপ গোপন করে রাখলেন। আর তার সকাল হল এ অবস্থায় যে, আল্লাহ যা গোপন করলেন সে তা ফাঁস করে দিল।’ [বোখারি : ৬০৬৯। মুসলিম : ২৯৯০।] সুতরাং, কোন ব্যক্তি যদি পাপকার্য করে বসে তার উচিত হবে গোপন করে রাখা ; কেননা, আল্লাহ তা গোপন রেখেছেন। পাশাপাশি পাপের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা।
পাপের সম্পৃক্ততায় আসার পর কীভাবে তার প্রতিকার সম্ভব, এ ব্যাপারে প্রাজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে প্রশ্ন করার সময় গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশে এভাবে বলতে হবে যে, যদি কোন ব্যক্তি এই ধরনের পাপ করে বসে তাহলে তার প্রতিকার কী ?
এরশাদ হয়েছে :—
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آَبَائِهِنَّ أَوْ آَبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿النور : 31﴾
আপনি মুমিন নারীদের বলুন, স্বীয় দৃষ্টি অবনত রাখতে, নিজ লজ্জাস্থান হেফাজত করতে। তারা যেন স্বীয় সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা প্রকাশ হয়ে যায়—সে ব্যাপারে ভিন্ন কথা। তারা যেন ওড়না দিয়ে স্বীয় বক্ষদেশ ঢেকে দেয়। তারা যেন স্বীয় স্বামী, পিতা, শশুড়, স্বীয় সন্তান, স্বামীর সন্তান, সহদোর ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, মেয়ে লোক, স্বীয় মালিকাধীন বাদী, যৌনকাম মুক্ত কাজের লোক, অথবা নারী অঙ্গের বোধশুন্য বালক ব্যতীত কারো জন্য স্বীয় সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। গুপ্ত সৌন্দর্য প্রকাশ করনেচ্ছায় তারা যেন পদাঘাত না চলে। ‘হে মুমিনগণ ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ [সূরা নূর : ৩১।]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿سورة التحريم : 8﴾
‘হে মুমিনগণ, আল্লাহর নিকট খালেছ দিলে তওবা, খুব সম্ভব তোমাদের পদস্খলন গুলো মোচন করা হবে, তোমাদের প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে-যার তলদেশ দিয়ে স্রোতশীনি প্রবাহিত হয়। সে দিন আল্লাহ তাআলা নবি এবং তার সাথে ইমানদার লোকদের লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের নূর সম্মুখপানে ও ডান পার্শ্ব দিয়ে সবেগে চলতে থাকবে। তারা বলবে, ও আমাদের প্রভু, আমাদের পরিপূর্ণ নূর দান করুন, আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চিত আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা তাহরিম : ৮।]
যারা তওবা করে আল্লাহ রাববুল আলামীন তাদের ভালবাসেন। তিনি বলেন :
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ . ﴿البقرة : 222﴾
‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’ [সূরা আল-বাকরা : ২২২।] তওবার গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য উলিখিত কয়েকটি আয়াত যথেষ্ট। তওবা সম্পর্কিত সবগুলো আয়াত লেখার প্রয়োজন নেই। তওবাকারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা কতটা খুশী হন, তা উলেখ করাও প্রাসঙ্গিক মনে করি। হাদিসে এসেছে:—
لله أشد فرحا بتوبة عبده المؤمن، من رجل في أرض دوية مهلكة، معه راحلته، عليها طعامه وشرابه، فنام فاستيقظ وقد ذهبت، فطلبها حتى أدركه العطش ثم قال : أرجع إلى مكاني الذي كنت فيه، فأنام حتى أموت، فوضع رأسه على ساعده ليموت، فاستيقظ وعنده راحلته وعليها زاده وطعامه وشرابه، فالله أشد فرحا بتوبة العبد المؤمن من هذا براحلته وزاده . رواه البخاري (6308) ، ومسلم (2744(
‘আল্লাহ তার বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী আনন্দিত হন, যে তার উট হারিয়ে ফেলেছে এক জনমানবশূন্য ভয়ংকর প্রান্তরে। উটের পিঠে ছিল খাদ্য ও পানীয়। এরপর সে ঘুমিয়ে পড়ল। জাগ্রত হয়ে সে আবার উটের খোঁজে বের হল। একসময় তার তেষ্টা পেল। সে মনে মনে বলল, যেখানে ছিলাম সেখানে ফিরে যাই। অত:পর মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকি। মৃত্যু অবধারিত জেনে বাহুতে মাথা রেখে সে ঘুমিয়ে পড়ল। জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল, হারিয়ে যাওয়া উট তার পাথেয়-খাদ্য-পানীয় নিয়ে তার সামনেই দাঁড়িয়ে। এই ব্যক্তি তার উট ও পাথেয় ফিরে পেয়ে যতদূর খুশি হয়েছে তার থেকেও অধিক খুশি হন আল্লাহ তা’আলা বান্দার তাওবায়।’ [বোখারি : ৬৩০৮। মুসলিম : ২৭৪৪।]
পাপ সংঘটিত হলে উচিত হল অনতিবিলম্বে তাওবা করা; কারণ হায়াত আল্লাহর হাতে। যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর কঠিন থাবা তার জীবনাবসান ঘটাতে পারে।
অপরদিকে উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘পাপ সংঘটিত হলে বিলম্ব না করে তওবা করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়। যে ব্যক্তি তাওবা করতে দেরী করে, সে আরেকটি পাপে জড়িয়ে পড়ে।’
তাওবা করতে হবে মনে-প্রাণে। এমন যেন না হয় যে, মুখে মুখে বললাম, ‘হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর’ আর অন্তর থাকল গাফেল।
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آَبَائِهِنَّ أَوْ آَبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿النور : 31﴾
আপনি মুমিন নারীদের বলুন, স্বীয় দৃষ্টি অবনত রাখতে, নিজ লজ্জাস্থান হেফাজত করতে। তারা যেন স্বীয় সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা প্রকাশ হয়ে যায়—সে ব্যাপারে ভিন্ন কথা। তারা যেন ওড়না দিয়ে স্বীয় বক্ষদেশ ঢেকে দেয়। তারা যেন স্বীয় স্বামী, পিতা, শশুড়, স্বীয় সন্তান, স্বামীর সন্তান, সহদোর ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, মেয়ে লোক, স্বীয় মালিকাধীন বাদী, যৌনকাম মুক্ত কাজের লোক, অথবা নারী অঙ্গের বোধশুন্য বালক ব্যতীত কারো জন্য স্বীয় সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। গুপ্ত সৌন্দর্য প্রকাশ করনেচ্ছায় তারা যেন পদাঘাত না চলে। ‘হে মুমিনগণ ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ [সূরা নূর : ৩১।]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿سورة التحريم : 8﴾
‘হে মুমিনগণ, আল্লাহর নিকট খালেছ দিলে তওবা, খুব সম্ভব তোমাদের পদস্খলন গুলো মোচন করা হবে, তোমাদের প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে-যার তলদেশ দিয়ে স্রোতশীনি প্রবাহিত হয়। সে দিন আল্লাহ তাআলা নবি এবং তার সাথে ইমানদার লোকদের লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের নূর সম্মুখপানে ও ডান পার্শ্ব দিয়ে সবেগে চলতে থাকবে। তারা বলবে, ও আমাদের প্রভু, আমাদের পরিপূর্ণ নূর দান করুন, আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চিত আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা তাহরিম : ৮।]
যারা তওবা করে আল্লাহ রাববুল আলামীন তাদের ভালবাসেন। তিনি বলেন :
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ . ﴿البقرة : 222﴾
‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’ [সূরা আল-বাকরা : ২২২।] তওবার গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য উলিখিত কয়েকটি আয়াত যথেষ্ট। তওবা সম্পর্কিত সবগুলো আয়াত লেখার প্রয়োজন নেই। তওবাকারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা কতটা খুশী হন, তা উলেখ করাও প্রাসঙ্গিক মনে করি। হাদিসে এসেছে:—
لله أشد فرحا بتوبة عبده المؤمن، من رجل في أرض دوية مهلكة، معه راحلته، عليها طعامه وشرابه، فنام فاستيقظ وقد ذهبت، فطلبها حتى أدركه العطش ثم قال : أرجع إلى مكاني الذي كنت فيه، فأنام حتى أموت، فوضع رأسه على ساعده ليموت، فاستيقظ وعنده راحلته وعليها زاده وطعامه وشرابه، فالله أشد فرحا بتوبة العبد المؤمن من هذا براحلته وزاده . رواه البخاري (6308) ، ومسلم (2744(
‘আল্লাহ তার বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী আনন্দিত হন, যে তার উট হারিয়ে ফেলেছে এক জনমানবশূন্য ভয়ংকর প্রান্তরে। উটের পিঠে ছিল খাদ্য ও পানীয়। এরপর সে ঘুমিয়ে পড়ল। জাগ্রত হয়ে সে আবার উটের খোঁজে বের হল। একসময় তার তেষ্টা পেল। সে মনে মনে বলল, যেখানে ছিলাম সেখানে ফিরে যাই। অত:পর মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকি। মৃত্যু অবধারিত জেনে বাহুতে মাথা রেখে সে ঘুমিয়ে পড়ল। জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল, হারিয়ে যাওয়া উট তার পাথেয়-খাদ্য-পানীয় নিয়ে তার সামনেই দাঁড়িয়ে। এই ব্যক্তি তার উট ও পাথেয় ফিরে পেয়ে যতদূর খুশি হয়েছে তার থেকেও অধিক খুশি হন আল্লাহ তা’আলা বান্দার তাওবায়।’ [বোখারি : ৬৩০৮। মুসলিম : ২৭৪৪।]
পাপ সংঘটিত হলে উচিত হল অনতিবিলম্বে তাওবা করা; কারণ হায়াত আল্লাহর হাতে। যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুর কঠিন থাবা তার জীবনাবসান ঘটাতে পারে।
অপরদিকে উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘পাপ সংঘটিত হলে বিলম্ব না করে তওবা করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়। যে ব্যক্তি তাওবা করতে দেরী করে, সে আরেকটি পাপে জড়িয়ে পড়ে।’
তাওবা করতে হবে মনে-প্রাণে। এমন যেন না হয় যে, মুখে মুখে বললাম, ‘হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর’ আর অন্তর থাকল গাফেল।
নবী কারীম ﷺ বলেছেন :—
إن عبدا أصاب ذنبا فقال رب أذنبت ذنبا فاغفرلي فقال ربه : أعلم عبدي أن له ربا يغفر الذنب ويأخذ به ؟ غفرت لعبدي، ثم مكث ماشاء الله ثم أذنب ذنبا فقال : رب أذنبت ذنبا فاغفرلي فقال ربه : أعلم عبدي أن له ربا يغفر الذنب ويأخذ به ؟ غفرت لعبدي ثم مكث ما شاء الله ثم أذنب ذنبا فقال : رب أذنبت ذنبا فاغفرلي فقال ربه : أعلم عبدي أن له ربا يغفر الذنب ويأخذ به، غفرت لعبدي ثلاثا، فليعمل ما شاء .
‘এক বান্দা পাপ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক ! আমি তো অপরাধ করে ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করুন। এ কথা শুনে প্রতিপালক বললেন, আমার বান্দা কি অবগত তার একজন প্রতিপালক আছে, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন এবং শাস্তি দেন ? আচ্ছা আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলে সে আরেকটা পাপে জড়িয়ে পড়ল, এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক ! আমার দ্বারা পুনরায় অপরাধ সংঘটিত হয়ে গিয়েছে, আমাকে ক্ষমা করুন। এ কথা শুনে প্রতিপালক বললেন, আমার বান্দা কি অবগত তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন এবং শাস্তি দেন ? আচ্ছা, আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলে আবার সে একটি পাপ করে বসল, ও বলল, হে আমার প্রতিপালক ! আমি তো অপরাধ করে ফেলেছি আমাকে ক্ষমা করুন। এ কথা শুনে প্রতিপালক বললেন, আমার বান্দা কি জানে তার একজন প্রতিপালক আছেন যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন এবং শাস্তি দেন ? আচ্ছা আমি আমার বান্দাকে তিনবার ক্ষমা করলাম। এরপর যা ইচ্ছে সে করতে পারে। [বোখারি : ৭৫০৭। মুসলিম : ২৭৫৮।]
যে পাপে লিপ্ত হয়ে পড়েছে, সে যখন আল্লাহ তাআলার ক্ষমার এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবে, তখন সে বলবে, আমি প্রথমবার অন্যায় করে ক্ষমা পেয়েছি। দ্বিতীয়বার অন্যায় করেও যখন ক্ষমা লাভ করেছি, তৃতীয়বার আমি আর অপরাধ করতে চাইনা। বরং এ ক্ষমা নিয়ে যেন আমার ইন্তেকাল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ হাদীস তাকে বার বার পাপ করার উৎসাহে বাধা প্রদান করবে।
إن عبدا أصاب ذنبا فقال رب أذنبت ذنبا فاغفرلي فقال ربه : أعلم عبدي أن له ربا يغفر الذنب ويأخذ به ؟ غفرت لعبدي، ثم مكث ماشاء الله ثم أذنب ذنبا فقال : رب أذنبت ذنبا فاغفرلي فقال ربه : أعلم عبدي أن له ربا يغفر الذنب ويأخذ به ؟ غفرت لعبدي ثم مكث ما شاء الله ثم أذنب ذنبا فقال : رب أذنبت ذنبا فاغفرلي فقال ربه : أعلم عبدي أن له ربا يغفر الذنب ويأخذ به، غفرت لعبدي ثلاثا، فليعمل ما شاء .
‘এক বান্দা পাপ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক ! আমি তো অপরাধ করে ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করুন। এ কথা শুনে প্রতিপালক বললেন, আমার বান্দা কি অবগত তার একজন প্রতিপালক আছে, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন এবং শাস্তি দেন ? আচ্ছা আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলে সে আরেকটা পাপে জড়িয়ে পড়ল, এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক ! আমার দ্বারা পুনরায় অপরাধ সংঘটিত হয়ে গিয়েছে, আমাকে ক্ষমা করুন। এ কথা শুনে প্রতিপালক বললেন, আমার বান্দা কি অবগত তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন এবং শাস্তি দেন ? আচ্ছা, আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলে আবার সে একটি পাপ করে বসল, ও বলল, হে আমার প্রতিপালক ! আমি তো অপরাধ করে ফেলেছি আমাকে ক্ষমা করুন। এ কথা শুনে প্রতিপালক বললেন, আমার বান্দা কি জানে তার একজন প্রতিপালক আছেন যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন এবং শাস্তি দেন ? আচ্ছা আমি আমার বান্দাকে তিনবার ক্ষমা করলাম। এরপর যা ইচ্ছে সে করতে পারে। [বোখারি : ৭৫০৭। মুসলিম : ২৭৫৮।]
যে পাপে লিপ্ত হয়ে পড়েছে, সে যখন আল্লাহ তাআলার ক্ষমার এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবে, তখন সে বলবে, আমি প্রথমবার অন্যায় করে ক্ষমা পেয়েছি। দ্বিতীয়বার অন্যায় করেও যখন ক্ষমা লাভ করেছি, তৃতীয়বার আমি আর অপরাধ করতে চাইনা। বরং এ ক্ষমা নিয়ে যেন আমার ইন্তেকাল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ হাদীস তাকে বার বার পাপ করার উৎসাহে বাধা প্রদান করবে।
পাপের পিছনে কিছু কারণ ও ভূমিকার উপস্থিতি অনিবার্য। যেগুলোর কারণে পাপের পথে চলা সহজতর হয়। পাপ সংঘঠিত হতে থাকে র্নিবিঘ্নে। পাপী যখন পাপে সর্বশক্তি নিয়োগ করে পাপ থেকে প্রত্যাবর্তনের বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে, লুপ্ত হয় তার সজ্ঞান চেতনা, তখন তার সংশোধনের সকল পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এ কথাটি অনুধাবন করেছিলেন সেই আলেম, যিনি একশ মানুষের খুনী ব্যক্তির ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে :—
عن أبي سعيد الخدري رضى الله عنه أن نبي الله صلى الله عليه وسلم قال : كان فيمن كان قبلكم رجل قتل تسعا وتسعين نفسا، فسأل عن أعلم أهل الأرض ، فدل على راهب، فأتاه فقال : إنه قتل تسعا و تسعين نفسا فهل له من توبة ؟ فقال : لا، فقتله فكمل به المائة، ثم سأل عن أعلم أهل الأرض، فدل على رجل عالم، فقال : إنه قتل مائة نفس فهل له من توبة ؟ فقال : نعم ومن يحول بينه وبين التوبة ؟ انطلق إلى أرض كذا وكذا، فإن بها أناسا يعبدون الله، فاعبد الله معهم ولا ترجع إلى أرضك فإنها أرض سوء، فانطلق حتى إذا نصفه الطريق أتاه الموت، فاختصمت فيه ملائكة الرحمة وملائكة العذاب، فقال ملائكة الرحمة : جاء تائبا مقبلا بقلبه إلى الله، وقالت ملائكة العذاب : إنه لم يعمل خيرا قط، فأتاهم ملك في صورة آدمي، فجعلوه بينهم فقال : قيسوا ما بين الأرضين، فإلى أيتهما كان أدنى فهو له، فقاسوه فوجدوه أدنى إلى الأرض التي أراد، فقبضته ملائكة الرحمة .
আবু সায়ীদ খুদরী রহ. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—তোমাদের পুর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি নিরানববই জন মানুষকে হত্যা করল। এরপর সে তার পাপের পরিণাম জানার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের কথা জিজ্ঞেস করল। লোকেরা তাকে একজন সংসার-বিরাগী পাদ্রীর সন্ধান দিল। সে তার কাছে গিয়ে বলল, আমি নিরানববই জন মানুষকে হত্যা করেছি। এখন তওবার কোন সুযোগ আছে কি? পাদ্রী বলল, না, নেই। এতে লোকটি ক্ষিপ্ত হয়ে সেই পাদ্রীকে হত্যা করে একশ পূর্ণ করল। এরপর সে আবার একজন আলেমের সন্ধান করল তার পাপের পরিণাম জিজ্ঞেস করার জন্য। লোকজন তাকে একজন আলেমের সন্ধান দিলে সে তার কাছে গিয়ে বলল, আমি একশজন মানুষ হত্যা করেছি। এর থেকে তাওবার কোন সুযোগ আছে কি না ? আলেম বললেন, হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। তোমার ও তাওবার মধ্যে প্রতিবন্ধক কোন কিছু থাকতে পারে না। তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছুলোক আল্লাহর এবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে এবাদত কর এবং তোমার দেশে ফিরে যেও না। কারণ, তা খারাপ স্থান। লোকটি নির্দেশিত স্থানে গমনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল। মাঝ পথে তার মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তার প্রাণ গ্রহণের জন্য রহমতের ফেরেশ্তা ও শাস্তির ফেরেশ্তাদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে গেল। রহমতের ফেরেশ্তারা বলল, লোকটি মনে-প্রাণে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। তাই, আমরা তার আত্মা গ্রহণ করব। শাস্তির ফেরেশ্তাদের অভিমত ছিল, লোকটি কখনো ভাল কাজ করেনি। সে পাপী। তাই আমরা তাকে গ্রহণ করব। তখন মানুষের রূপ ধারণ করে একজন ফেরেশ্তা এসে তাদের বিতর্কের সমাধান বাতলে দিয়ে বলল, তোমরা তার উভয় পথ—যে পথ সে অতিক্রম করে এসেছে, ও যে পথ তার সম্মুখে রয়েছে—মেপে দেখ। উভয়ের মধ্যে যা নিটকতম, সে অনুযায়ী তার ফয়সালা হবে। মাপ দেয়া হল। দেখা গেল, সে তার গন্তব্যের দিকেই অধিক এগিয়ে আছে। অত:পর রহমতের ফেরেশতারাই তার প্রাণ গ্রহণ করল এবং। [বোখারি : ৩৪৭০। মুসলিম : ২৭৬৬।] সে হিসেবে আমাদের কর্তব্য, যে সাহচর্য পাপের পথে নিয়ে যায়, যেসব দেখা-সাক্ষাত পাপের দুয়ার খুলে দেয়, যে সকল দর্শন ও শ্রবণ পাপপ্রবৃক্তিকে সুড়সুড়ি দেয়, তা পরিহার করে চলা।
অনুরূপ যদি বাজারে গমন, টেলিভিশন দেখা, পত্রিকা পড়া ইত্যাদি পাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তবে এগুলোও পরিহার করে চলতে হবে অথবা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে এ জাতীয় সম্পৃক্ততা।
عن أبي سعيد الخدري رضى الله عنه أن نبي الله صلى الله عليه وسلم قال : كان فيمن كان قبلكم رجل قتل تسعا وتسعين نفسا، فسأل عن أعلم أهل الأرض ، فدل على راهب، فأتاه فقال : إنه قتل تسعا و تسعين نفسا فهل له من توبة ؟ فقال : لا، فقتله فكمل به المائة، ثم سأل عن أعلم أهل الأرض، فدل على رجل عالم، فقال : إنه قتل مائة نفس فهل له من توبة ؟ فقال : نعم ومن يحول بينه وبين التوبة ؟ انطلق إلى أرض كذا وكذا، فإن بها أناسا يعبدون الله، فاعبد الله معهم ولا ترجع إلى أرضك فإنها أرض سوء، فانطلق حتى إذا نصفه الطريق أتاه الموت، فاختصمت فيه ملائكة الرحمة وملائكة العذاب، فقال ملائكة الرحمة : جاء تائبا مقبلا بقلبه إلى الله، وقالت ملائكة العذاب : إنه لم يعمل خيرا قط، فأتاهم ملك في صورة آدمي، فجعلوه بينهم فقال : قيسوا ما بين الأرضين، فإلى أيتهما كان أدنى فهو له، فقاسوه فوجدوه أدنى إلى الأرض التي أراد، فقبضته ملائكة الرحمة .
আবু সায়ীদ খুদরী রহ. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—তোমাদের পুর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি নিরানববই জন মানুষকে হত্যা করল। এরপর সে তার পাপের পরিণাম জানার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের কথা জিজ্ঞেস করল। লোকেরা তাকে একজন সংসার-বিরাগী পাদ্রীর সন্ধান দিল। সে তার কাছে গিয়ে বলল, আমি নিরানববই জন মানুষকে হত্যা করেছি। এখন তওবার কোন সুযোগ আছে কি? পাদ্রী বলল, না, নেই। এতে লোকটি ক্ষিপ্ত হয়ে সেই পাদ্রীকে হত্যা করে একশ পূর্ণ করল। এরপর সে আবার একজন আলেমের সন্ধান করল তার পাপের পরিণাম জিজ্ঞেস করার জন্য। লোকজন তাকে একজন আলেমের সন্ধান দিলে সে তার কাছে গিয়ে বলল, আমি একশজন মানুষ হত্যা করেছি। এর থেকে তাওবার কোন সুযোগ আছে কি না ? আলেম বললেন, হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। তোমার ও তাওবার মধ্যে প্রতিবন্ধক কোন কিছু থাকতে পারে না। তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছুলোক আল্লাহর এবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে এবাদত কর এবং তোমার দেশে ফিরে যেও না। কারণ, তা খারাপ স্থান। লোকটি নির্দেশিত স্থানে গমনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল। মাঝ পথে তার মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তার প্রাণ গ্রহণের জন্য রহমতের ফেরেশ্তা ও শাস্তির ফেরেশ্তাদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে গেল। রহমতের ফেরেশ্তারা বলল, লোকটি মনে-প্রাণে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। তাই, আমরা তার আত্মা গ্রহণ করব। শাস্তির ফেরেশ্তাদের অভিমত ছিল, লোকটি কখনো ভাল কাজ করেনি। সে পাপী। তাই আমরা তাকে গ্রহণ করব। তখন মানুষের রূপ ধারণ করে একজন ফেরেশ্তা এসে তাদের বিতর্কের সমাধান বাতলে দিয়ে বলল, তোমরা তার উভয় পথ—যে পথ সে অতিক্রম করে এসেছে, ও যে পথ তার সম্মুখে রয়েছে—মেপে দেখ। উভয়ের মধ্যে যা নিটকতম, সে অনুযায়ী তার ফয়সালা হবে। মাপ দেয়া হল। দেখা গেল, সে তার গন্তব্যের দিকেই অধিক এগিয়ে আছে। অত:পর রহমতের ফেরেশতারাই তার প্রাণ গ্রহণ করল এবং। [বোখারি : ৩৪৭০। মুসলিম : ২৭৬৬।] সে হিসেবে আমাদের কর্তব্য, যে সাহচর্য পাপের পথে নিয়ে যায়, যেসব দেখা-সাক্ষাত পাপের দুয়ার খুলে দেয়, যে সকল দর্শন ও শ্রবণ পাপপ্রবৃক্তিকে সুড়সুড়ি দেয়, তা পরিহার করে চলা।
অনুরূপ যদি বাজারে গমন, টেলিভিশন দেখা, পত্রিকা পড়া ইত্যাদি পাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তবে এগুলোও পরিহার করে চলতে হবে অথবা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে এ জাতীয় সম্পৃক্ততা।
আল্লাহ রাববুল আলামীন তার নিকট ইস্তেগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য মানুষকে উৎসাহ ও নির্দেশ দিয়েছেন।
অনুরূপ, নবীগণও মানুষকে ইস্তেগফারের নির্দেশনা দিয়েছেন, উদ্দীপিত করেছেন বিপুলভাবে। নূহ আ.-এর ইস্তেগফারের আলোচনা পবিত্র কোরআনে উলেখ করা হয়েছে। নূহ আ. বলতেন :—
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا . ﴿ سورة نوح : 28﴾
‘হে আমার প্রতিপালক ! তুমি ক্ষমা কর আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং যারা ঈমানদার হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে, তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ; আর যালিমদের বেলায় বৃদ্ধি কর ধ্বংস ও বিলোপ।’ [সূরা নূহ : ২৮।]
অপরদিকে, মূসা আ. এর ইস্তেগফারের কথা আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে উলেখ করেছেন এভাবে:—
إِنْ هِيَ إِلَّا فِتْنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَنْ تَشَاءُ وَتَهْدِي مَنْ تَشَاءُ أَنْتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ . ﴿الأعراف : 155﴾
‘এ তো শুধু তোমার পরীক্ষা, যা দ্বারা তুমি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী কর আর যাকে ইচ্ছা দান কর হেদায়েতের আলো। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক; সুতরাং, আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর আর ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ।’ [সূরা আল-আ’রাফ : ১৫৫।]
ইব্রাহীম আ. এর ক্ষমা ও ইস্তেগফারের আলোচনা উলেখ করে কোরআনে এসেছে :—
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ . ﴿سورة إبراهيم : 41﴾
‘হে আমার প্রতিপালক ! যে দিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সে দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিনগণকে ক্ষমা করে দিও।’ [সূরা ইবরাহীম : ৪১।]
পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ার সাথে সাথে ইস্তেগফার করা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
إن المؤمن إذا أذنب كانت نكتة سوداء في قلبه، فإن تاب ونزع واستغفر صقل قلبه، وإن زاد زادت، حتى يعلو قلبه ذاك الرأن الذي ذكر الله عز وجل في القرآن ( كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ). ﴿المطففين : 14﴾ رواه الترمذي (3334)
মুমিন ব্যক্তি যখন কোন পাপ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তার হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে। যখন সে তওবা করে, ফিরে আসে, এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তখন তার অন্তরাত্মা পরিস্কার হয়ে যায়, মুছে যায় সে কালো দাগের স্মৃতি। পাপ বেড়ে গেলে অন্তরের কাল দাগও বেড়ে যায়। পরিণতিতে তার হৃদয় ঢেকে যায় প্রবল অন্ধকারাচ্ছন্নতায়। এটা সেই মর্চে, যার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এভাবে বলেছেন, ‘কখনও নয়; বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে মর্চে ধরিয়েছে।’ [সূরা মুতাফফিফীন : ১৪। তিরমিযী : ৩৩৩৪।]
ইস্তেগফার এবাদতের একটি মহোত্তম অংশ। তাই সালাত আদায়ের পর ইস্তেগফার করতে বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে :—
عن ثوبان رضي الله عنه قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا انصرف من صلاته استغفر ثلاثا . وقال : اللهم أنت السلام، ومنك السلام، تباركت ذا الجلال والإكرام . رواه مسلم (591) وفي حديث آخر يا ذا الجلال والإكرام . رواه مسلم (592)
ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাত শেষ করতেন তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন। [মুসলিম-৫৯১।]
পবিত্র হজ আদায়কালে ইস্তেগফার করার জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন :—
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘অত:পর লোকেরা যেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করবে। আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, বস্ত্তত আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [সূরা বাকারা : ১৯৯।]
ইসলামী শরিয়তে যে সকল যিকির-আযকারের প্রমাণ মিলে, সালাতের বইরে কিংবা ভিতরে ; তার মধ্যে ইস্তেগফার একটি গুরুত্বপূর্ণ যিকির। হাদিসে এসেছে:—
عن عائشة رضى الله عنها أنها قالت : كان النبي صلى الله عليه وسلم يكثر أن يقول في ركوعه وسجوده ( سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي ).
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু ও সেজদাতে বেশী করে বলতেন, হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ ! তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি তোমার প্রসংশা করছি, হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তিনি কোরআনের আয়াতের শিক্ষায় এ কাজটি করতেন। [বোখারি : ৮১৭। মুসলিম-৪৮৪।]
عن أبي هريرة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يقول في سجوده : اللهم اغفرلي ذنبي كله، دقـه وجله، أولـه وآخره، علانيته وسره . رواه مسلم (483)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদাবস্থায় বলতেন: ‘হে আল্লাহ! আমার সকল পাপ; ছোট ও বড়, সূচনা ও সমাপ্তি, প্রকাশ্য ও গোপন—ক্ষমা করে দাও। [মুসলিম-৪৮৩।] সালাতের বাইরে দিবা-রাত্রির যিকিরের মধ্যেও ইস্তেগফার রয়েছে। হাদিসে এসেছে—
عن شداد بن أوس عن النبي صلى الله عليه وسلم : سيد الاستغفار أن تقول : اللهم أنت ربي، لا إله إلا أنت خلقتني وأنا عبدك، وأنا على عهدك ووعدك ما استطعت، أعوذ بك من شر ما صنعت، أبوء لك بنعمتك عليّ، وأبوء بذنبي، فاغفرلي، فإنه لا يغفر الذنوب إلا أنت . قال : ومن قالها من النهار موقنا بـها، فمات من يومه قبل أن يمسي، فهو من أهل الجنة، ومن قالها من الليل وهو موقن بـها ، فمات قبل أن يصبح، فهو من أهل الجنة . رواه البخاري (5831)
সাদ্দাদ বিন আউস রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনার বাক্য) হল, তুমি এভাবে বলবে, হে আল্লাহ ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বুদ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আর আমি তোমার বান্দা। তোমার সাথে কৃত ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির উপর আমি আমার সাধ্যমত অটল রয়েছি। আমি যা কিছু করেছি তার অপকারিতা হতে তোমার আশ্রয় নিচ্ছি। আমার প্রতি তোমার যে নিআ’মত তা স্বীকার করছি। আর স্বীকার করছি তোমার কাছে আমার অপরাধ। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না।'
যে ব্যক্তি সকালে দৃঢ় বিশ্বাসে এটা পাঠ করবে, সে যদি ঐ দিনে সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে। আর যদি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সন্ধ্যায় পাঠ করে, আর সকাল হওয়ার পূর্বে সে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।’ [বোখারি : ৫৮৩১।] রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি-বেশি ইস্তেগফার করতেন। আবু হুরাইরা : বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
والله إني لاستغفر الله وأتوب إليه في اليوم أكثر من سبعين مرة . رواه البخاري (6307)
‘আল্লাহ তাআলার শপথ ! আমি দিনে সত্তর বারের বেশী আল্লাহর নিকট তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করি।’ [বোখারি : ৬৩০৭।] ইবনে উমর রা. বলেন—
إن كنا لنعد لرسول الله ... في المجلس الواحد مائة مرة : رب اغفر لي وتب عليّ إنك أنت التواب الرحيم . رواه أبوداود (1516) ،وابن ماجه (3814) ، وصححه الألباني في صحيح سنن ابن ماجه (3075).
একদিন এক মজলিসে আমরা গণনা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একশত বার বলেছেন, হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তাওবা কবুল করুন। আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল ও দয়াময়। [আবু দাউদ : ১৫১৬।]
অনুরূপ, নবীগণও মানুষকে ইস্তেগফারের নির্দেশনা দিয়েছেন, উদ্দীপিত করেছেন বিপুলভাবে। নূহ আ.-এর ইস্তেগফারের আলোচনা পবিত্র কোরআনে উলেখ করা হয়েছে। নূহ আ. বলতেন :—
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا . ﴿ سورة نوح : 28﴾
‘হে আমার প্রতিপালক ! তুমি ক্ষমা কর আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং যারা ঈমানদার হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে, তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ; আর যালিমদের বেলায় বৃদ্ধি কর ধ্বংস ও বিলোপ।’ [সূরা নূহ : ২৮।]
অপরদিকে, মূসা আ. এর ইস্তেগফারের কথা আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে উলেখ করেছেন এভাবে:—
إِنْ هِيَ إِلَّا فِتْنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَنْ تَشَاءُ وَتَهْدِي مَنْ تَشَاءُ أَنْتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ . ﴿الأعراف : 155﴾
‘এ তো শুধু তোমার পরীক্ষা, যা দ্বারা তুমি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী কর আর যাকে ইচ্ছা দান কর হেদায়েতের আলো। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক; সুতরাং, আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর আর ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ।’ [সূরা আল-আ’রাফ : ১৫৫।]
ইব্রাহীম আ. এর ক্ষমা ও ইস্তেগফারের আলোচনা উলেখ করে কোরআনে এসেছে :—
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ . ﴿سورة إبراهيم : 41﴾
‘হে আমার প্রতিপালক ! যে দিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে সে দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিনগণকে ক্ষমা করে দিও।’ [সূরা ইবরাহীম : ৪১।]
পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ার সাথে সাথে ইস্তেগফার করা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
إن المؤمن إذا أذنب كانت نكتة سوداء في قلبه، فإن تاب ونزع واستغفر صقل قلبه، وإن زاد زادت، حتى يعلو قلبه ذاك الرأن الذي ذكر الله عز وجل في القرآن ( كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ). ﴿المطففين : 14﴾ رواه الترمذي (3334)
মুমিন ব্যক্তি যখন কোন পাপ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তার হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে। যখন সে তওবা করে, ফিরে আসে, এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তখন তার অন্তরাত্মা পরিস্কার হয়ে যায়, মুছে যায় সে কালো দাগের স্মৃতি। পাপ বেড়ে গেলে অন্তরের কাল দাগও বেড়ে যায়। পরিণতিতে তার হৃদয় ঢেকে যায় প্রবল অন্ধকারাচ্ছন্নতায়। এটা সেই মর্চে, যার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এভাবে বলেছেন, ‘কখনও নয়; বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে মর্চে ধরিয়েছে।’ [সূরা মুতাফফিফীন : ১৪। তিরমিযী : ৩৩৩৪।]
ইস্তেগফার এবাদতের একটি মহোত্তম অংশ। তাই সালাত আদায়ের পর ইস্তেগফার করতে বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে :—
عن ثوبان رضي الله عنه قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا انصرف من صلاته استغفر ثلاثا . وقال : اللهم أنت السلام، ومنك السلام، تباركت ذا الجلال والإكرام . رواه مسلم (591) وفي حديث آخر يا ذا الجلال والإكرام . رواه مسلم (592)
ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাত শেষ করতেন তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন। [মুসলিম-৫৯১।]
পবিত্র হজ আদায়কালে ইস্তেগফার করার জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন :—
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘অত:পর লোকেরা যেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করবে। আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, বস্ত্তত আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [সূরা বাকারা : ১৯৯।]
ইসলামী শরিয়তে যে সকল যিকির-আযকারের প্রমাণ মিলে, সালাতের বইরে কিংবা ভিতরে ; তার মধ্যে ইস্তেগফার একটি গুরুত্বপূর্ণ যিকির। হাদিসে এসেছে:—
عن عائشة رضى الله عنها أنها قالت : كان النبي صلى الله عليه وسلم يكثر أن يقول في ركوعه وسجوده ( سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي ).
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু ও সেজদাতে বেশী করে বলতেন, হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ ! তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি তোমার প্রসংশা করছি, হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তিনি কোরআনের আয়াতের শিক্ষায় এ কাজটি করতেন। [বোখারি : ৮১৭। মুসলিম-৪৮৪।]
عن أبي هريرة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يقول في سجوده : اللهم اغفرلي ذنبي كله، دقـه وجله، أولـه وآخره، علانيته وسره . رواه مسلم (483)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদাবস্থায় বলতেন: ‘হে আল্লাহ! আমার সকল পাপ; ছোট ও বড়, সূচনা ও সমাপ্তি, প্রকাশ্য ও গোপন—ক্ষমা করে দাও। [মুসলিম-৪৮৩।] সালাতের বাইরে দিবা-রাত্রির যিকিরের মধ্যেও ইস্তেগফার রয়েছে। হাদিসে এসেছে—
عن شداد بن أوس عن النبي صلى الله عليه وسلم : سيد الاستغفار أن تقول : اللهم أنت ربي، لا إله إلا أنت خلقتني وأنا عبدك، وأنا على عهدك ووعدك ما استطعت، أعوذ بك من شر ما صنعت، أبوء لك بنعمتك عليّ، وأبوء بذنبي، فاغفرلي، فإنه لا يغفر الذنوب إلا أنت . قال : ومن قالها من النهار موقنا بـها، فمات من يومه قبل أن يمسي، فهو من أهل الجنة، ومن قالها من الليل وهو موقن بـها ، فمات قبل أن يصبح، فهو من أهل الجنة . رواه البخاري (5831)
সাদ্দাদ বিন আউস রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনার বাক্য) হল, তুমি এভাবে বলবে, হে আল্লাহ ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বুদ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আর আমি তোমার বান্দা। তোমার সাথে কৃত ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির উপর আমি আমার সাধ্যমত অটল রয়েছি। আমি যা কিছু করেছি তার অপকারিতা হতে তোমার আশ্রয় নিচ্ছি। আমার প্রতি তোমার যে নিআ’মত তা স্বীকার করছি। আর স্বীকার করছি তোমার কাছে আমার অপরাধ। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না।'
যে ব্যক্তি সকালে দৃঢ় বিশ্বাসে এটা পাঠ করবে, সে যদি ঐ দিনে সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে। আর যদি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সন্ধ্যায় পাঠ করে, আর সকাল হওয়ার পূর্বে সে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।’ [বোখারি : ৫৮৩১।] রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি-বেশি ইস্তেগফার করতেন। আবু হুরাইরা : বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
والله إني لاستغفر الله وأتوب إليه في اليوم أكثر من سبعين مرة . رواه البخاري (6307)
‘আল্লাহ তাআলার শপথ ! আমি দিনে সত্তর বারের বেশী আল্লাহর নিকট তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করি।’ [বোখারি : ৬৩০৭।] ইবনে উমর রা. বলেন—
إن كنا لنعد لرسول الله ... في المجلس الواحد مائة مرة : رب اغفر لي وتب عليّ إنك أنت التواب الرحيم . رواه أبوداود (1516) ،وابن ماجه (3814) ، وصححه الألباني في صحيح سنن ابن ماجه (3075).
একদিন এক মজলিসে আমরা গণনা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একশত বার বলেছেন, হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তাওবা কবুল করুন। আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল ও দয়াময়। [আবু দাউদ : ১৫১৬।]
হাদিসে এসেছে—
عن ابن مسعود رضى الله عنه أن رجلا أصاب امرأة قبلة فأتى النبي صلى الله عليه وسلم فأخبره فأنزل الله : ( وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ ). ﴿سورة هود : 114﴾ فقال الرجل : يارسول الله ألي هذا ؟ قال : لجميع أمتي كلهم . رواه البخاري (526) ، ومسلم (2763)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক পুরুষ অবৈধভাবে এক মহিলাকে চুমো দিল। সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে পাপের কথা স্বীকার করল। পরক্ষনে আল্লাহ তার বাণী নাযিল করলেন : ‘তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’ প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই পাপকর্ম মিটিয়ে দেয়।’ [সূরা হুদ : ১১৪।] এ কথা শুনে লোকটি বলল, হে রাসূল ! এ সুসংবাদ কি আমার জন্য ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘আমার উম্মতের সকলের জন্য।’ [বোখারি : ৫২৬। মুসলিম : ২৭৬৩।] অনুরূপভাবের আরো অনেক হাদীস রয়েছে, যা প্রমাণ করে নেক-আমল (সৎকর্ম) পাপসমূহকে মুছে দেয়। হাদিসে এসেছে :—
عن أبي هريرة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : " إذا توضأ العبد المسلم أو المؤمن فغسل وجهه خرج من وجهه كل خطيئة نظر إليها بعينه مع الماء أو آخر قطر الماء ، فإذا غسل يديه خرج من يديه كل خطيئة كان بطشتها يداه مع الماء أو آخر قطر الماء، فإذا غسل رجليه خرجت كل خطيئة مشتها رجلاه مع الماء أو مع آخر قطر الماء، حتى يخرج نقياً من الذنوب . رواه مسلم (244)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন অজু করে, অত:পর মুখমন্ডল ধোয়, পানির সাথে অথবা পানির শেষ ফোটার সাথে তার চেহারা থেকে ঐসব পাপ বের হয়ে যায় যা সে চক্ষু দিয়ে দেখেছে। সে যখন হাত ধোয়, পানির সাথে অথবা পানির শেষ ফোটার সাথে তার দু’হাত হতে এমনসব পাপ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছে। এরপর সে যখন দু’-পা ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে তার পা থেকে এমন সব পাপ বের হয়ে যায়, যা সে পায়ে হেঁটে গিয়ে করেছে। ’ [মুসলিম : ২৪৪।] এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেল অজু পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়। তদ্রুপ নামাজের দ্বারাও গুনা মাফ হয়। হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন—
( أرأيتم لو أن نهرا بباب أحدكم يغتسل فيه كل يوم خمسا، ما تقول ذلك يبقي من درنه؟ قالوا : لا يبقي من درنه شيئا . قال : فذلك مثل الصلوات الخمس يمحو الله به الخطايا ). رواه البخاري (528) ، ومسلم (667)
‘তোমরা কি চিন্তা করেছো, যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি ঝরনা থাকে, আর সে প্রতি দিন এর ভেতর পাঁচ বার গোসল করে, এ ঝরনার ব্যাপারে তোমাদের কি ধারনা—এ কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে দেবে? তারা সকলে বলল, তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে দেবে না। তিনি বললেন, এটাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা গুনাসমূহ মাফ করেন। [বোখারী : ৫২৮। মুসলিম : ৬৬৭।]
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মতোই যার ব্যাপারে হাদিসে বক্তব্য এসেছে—
আবু হুরাইরা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছেন: ‘তোমাদের কি মনে হয়, যদি তোমাদের কারো বাড়ীর সম্মুখে একটি প্রবাহমান নদী থাকে আর তাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে ? সাহাবীগণ বললেন, না, থাকবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের এটাই উদাহরণ, যার মাধ্যমে পাপসমূহ আল্লাহ তাআলা দূর করে দেন।’ [বোখারি : ৫২৮। মুসলিম : ৬৬৭।]
عن ابن مسعود رضى الله عنه أن رجلا أصاب امرأة قبلة فأتى النبي صلى الله عليه وسلم فأخبره فأنزل الله : ( وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ ). ﴿سورة هود : 114﴾ فقال الرجل : يارسول الله ألي هذا ؟ قال : لجميع أمتي كلهم . رواه البخاري (526) ، ومسلم (2763)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক পুরুষ অবৈধভাবে এক মহিলাকে চুমো দিল। সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে পাপের কথা স্বীকার করল। পরক্ষনে আল্লাহ তার বাণী নাযিল করলেন : ‘তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’ প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই পাপকর্ম মিটিয়ে দেয়।’ [সূরা হুদ : ১১৪।] এ কথা শুনে লোকটি বলল, হে রাসূল ! এ সুসংবাদ কি আমার জন্য ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘আমার উম্মতের সকলের জন্য।’ [বোখারি : ৫২৬। মুসলিম : ২৭৬৩।] অনুরূপভাবের আরো অনেক হাদীস রয়েছে, যা প্রমাণ করে নেক-আমল (সৎকর্ম) পাপসমূহকে মুছে দেয়। হাদিসে এসেছে :—
عن أبي هريرة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : " إذا توضأ العبد المسلم أو المؤمن فغسل وجهه خرج من وجهه كل خطيئة نظر إليها بعينه مع الماء أو آخر قطر الماء ، فإذا غسل يديه خرج من يديه كل خطيئة كان بطشتها يداه مع الماء أو آخر قطر الماء، فإذا غسل رجليه خرجت كل خطيئة مشتها رجلاه مع الماء أو مع آخر قطر الماء، حتى يخرج نقياً من الذنوب . رواه مسلم (244)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন অজু করে, অত:পর মুখমন্ডল ধোয়, পানির সাথে অথবা পানির শেষ ফোটার সাথে তার চেহারা থেকে ঐসব পাপ বের হয়ে যায় যা সে চক্ষু দিয়ে দেখেছে। সে যখন হাত ধোয়, পানির সাথে অথবা পানির শেষ ফোটার সাথে তার দু’হাত হতে এমনসব পাপ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছে। এরপর সে যখন দু’-পা ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে তার পা থেকে এমন সব পাপ বের হয়ে যায়, যা সে পায়ে হেঁটে গিয়ে করেছে। ’ [মুসলিম : ২৪৪।] এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেল অজু পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়। তদ্রুপ নামাজের দ্বারাও গুনা মাফ হয়। হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন—
( أرأيتم لو أن نهرا بباب أحدكم يغتسل فيه كل يوم خمسا، ما تقول ذلك يبقي من درنه؟ قالوا : لا يبقي من درنه شيئا . قال : فذلك مثل الصلوات الخمس يمحو الله به الخطايا ). رواه البخاري (528) ، ومسلم (667)
‘তোমরা কি চিন্তা করেছো, যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি ঝরনা থাকে, আর সে প্রতি দিন এর ভেতর পাঁচ বার গোসল করে, এ ঝরনার ব্যাপারে তোমাদের কি ধারনা—এ কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে দেবে? তারা সকলে বলল, তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে দেবে না। তিনি বললেন, এটাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা গুনাসমূহ মাফ করেন। [বোখারী : ৫২৮। মুসলিম : ৬৬৭।]
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মতোই যার ব্যাপারে হাদিসে বক্তব্য এসেছে—
আবু হুরাইরা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছেন: ‘তোমাদের কি মনে হয়, যদি তোমাদের কারো বাড়ীর সম্মুখে একটি প্রবাহমান নদী থাকে আর তাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে ? সাহাবীগণ বললেন, না, থাকবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের এটাই উদাহরণ, যার মাধ্যমে পাপসমূহ আল্লাহ তাআলা দূর করে দেন।’ [বোখারি : ৫২৮। মুসলিম : ৬৬৭।]
عن أبي ذر رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يقول الله عز وجل : " من جاء بالحسنة فله عشر أمثالها وأزيد، ومن جاء بالسيئة فجزاؤه سيئة مثلها، أو أغفر، ومن تقرب مني شبرا تقربت منه ذراعا، ومن تقرب مني ذراعا تقربت منه باعا، ومن آتاني يمشي أتيته هرولـة، ومن لقيني بقراب الأرض خطيئة لا يشرك بي شيئا لقيته بمثلها مغفرة . رواه مسلم (2687(
আবু যর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘সৎকাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে দেই দশগুণ বা তার থেকেও বেশী ছোয়াব। আর অন্যায়কারীকে দিই তার পাপের সমপরিমাণ শাস্তি, অথবা ক্ষমা করে দেই। যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক কায়া পরিমান এগিয়ে যাই। যে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। আর যদি কোন ব্যক্তি শিরক না করে পৃথিবীভরা পাপ নিয়েও আমার সাক্ষাতে আসে, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তাকে গ্রহণ করি। [মুসলিম : ২৬৮৭।]
তাওহীদ বাস্তবায়ন মুসলিম ব্যক্তির আচার-আচরণ পরিশুদ্ধ করে। মানুষকে পাপাচার পরিহার করতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহকে এক বলে জানা, তাঁকে ভালবাসা, আল্লাহ কেন্দ্রিক বন্ধুত্ব ও শক্রতার সম্পর্ক গড়ে তোলা, সকল কাজে তাওহীদের শিক্ষা-অনুভূতি জাগ্রত রাখা পাপাচার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে সন্দেহাতীতভাবে। যে ব্যক্তির তাওহীদী চেতনা দুর্বল-ম্রিয়মান, জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকা তাঁর পক্ষে দুষ্কর হবে বৈকি। যার তাওহীদী চেতনা সদা-জাগ্রত জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করার অজুহাত খুঁজে পাবে না। তাই, তাওহীদের ভাব-চেতনা-ধারণা সচল ও জাগ্রত রাখা ভিন্ন আমাদের গত্যন্তর নেই।
আবু যর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘সৎকাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে দেই দশগুণ বা তার থেকেও বেশী ছোয়াব। আর অন্যায়কারীকে দিই তার পাপের সমপরিমাণ শাস্তি, অথবা ক্ষমা করে দেই। যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক কায়া পরিমান এগিয়ে যাই। যে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। আর যদি কোন ব্যক্তি শিরক না করে পৃথিবীভরা পাপ নিয়েও আমার সাক্ষাতে আসে, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তাকে গ্রহণ করি। [মুসলিম : ২৬৮৭।]
তাওহীদ বাস্তবায়ন মুসলিম ব্যক্তির আচার-আচরণ পরিশুদ্ধ করে। মানুষকে পাপাচার পরিহার করতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহকে এক বলে জানা, তাঁকে ভালবাসা, আল্লাহ কেন্দ্রিক বন্ধুত্ব ও শক্রতার সম্পর্ক গড়ে তোলা, সকল কাজে তাওহীদের শিক্ষা-অনুভূতি জাগ্রত রাখা পাপাচার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে সন্দেহাতীতভাবে। যে ব্যক্তির তাওহীদী চেতনা দুর্বল-ম্রিয়মান, জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকা তাঁর পক্ষে দুষ্কর হবে বৈকি। যার তাওহীদী চেতনা সদা-জাগ্রত জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করার অজুহাত খুঁজে পাবে না। তাই, তাওহীদের ভাব-চেতনা-ধারণা সচল ও জাগ্রত রাখা ভিন্ন আমাদের গত্যন্তর নেই।
সৎমানুষের সাহচর্য পাপ থেকে দূরে থাকার বড় একটি মাধ্যম। কিন্তু সমস্যা হল, পাপী ব্যক্তি নিজেকে সৎ মানুষের সংস্পর্শে যাওয়ার উপযোগী মনে করে না। সে ভাবে, আমার মতো একজন পাপীর পক্ষে সৎমানুষের সঙ্গ লাভ কি করে সম্ভব ? আসলে এ ধরনের দৃষ্টিভংগী এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা সৃষ্টি হয়েছে পাপের আধিক্যের কারণে ও শয়তানের কু-মন্ত্রণায়। এক ধরনের নৈরাশ্যও অবশ্য এর পেছনে কার্যকর, তা স্বীকার করে নিতে হবে কোন বাধা নেই। এ প্রকৃতির মানসিক ব্যধির চিকিৎসা করা জরুরি। নিজেকেই নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় ভেবে দেখা যেতে পারে।
প্রথমত : সৎলোকের সঙ্গ লাভের চেষ্টা করা একটি ভাল কাজ, আল্লাহর একটি এবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله : الإمام العادل، وشاب نشأ في عبادة ربه، ورجل قلبه معلق بالمساجد، ورجلان تحابا في الله اجتمعا عليه وتفرقا عليه، ورجل طلبته امرأة ذات منصب وجمال فقال إني أخاف الله، ورجل تصدق أخفى حتى لا تعلم شماله ماذا تنفق يمينه، ورجل ذكر الله خاليا ففاضت عيناه . رواه بهذا اللفظ البخاري (660)
যেদিন আল্লাহ তাআলার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তার ছায়াতলে স্থান দিবেন।
এক. সুবিচারক ইমাম শাসক।
দুই. আল্লাহর এবাদতে যে যুবক মগ্ন থেকেছে।
তিন. যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকত।
চার. যে দুজন লোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে একে অপরকে ভালবাসে এবং আল্লাহর জন্য একত্র হয় ও আল্লাহর জন্য বিচ্ছিন্ন হয়।
পাঁচ. যাকে কোন সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত নারী ব্যভিচারের জন্য ডেকেছে, কিন্তু সে এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছে যে আমি আল্লাহকে ভয় করি।
ছয়. যে ব্যক্তি এতটা গোপনে দান করে যে, ডান হাতে যা দান করে বাম হাত তা জানে না।
সাত. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে অশ্রু ঝড়ায়। [বোখারি : ৬৬০।]
এ হাদিসে দু’ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর জন্য সৎসঙ্গ অবলম্বন করেছে ; তারা আমাদের এ আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশিষ্ট। তাই সৎসঙ্গ অবলম্বন করা একটি এবাদত।
দ্বিতীয়ত : সৎ ও নেককার লোকদের মহববত করলে তাদের সাথে অবস্থা্ন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, যদিও তাদের মর্যাদা পাওয়া না যায়। হাদিসে এসেছে—
عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه قال : قيل للنبي صلى الله عليه وسلم : الرجل يحب القوم ولما يلحق بهم ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : المرأ مع من أحب . رواه البخاري (6170) ، ومسلم (2641)
আবু মূসা আশ‘আরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন ব্যক্তি যদি এক সম্প্রদায়কে ভালবাসে তাহলে সে তাদের সাথে কেন অবস্থান করবে না ? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘ব্যক্তি তার সাথে থাকবে যাকে সে ভালবাসে।’ [বোখারি : ৬১৭০। মুসলিম : ২৬৪১।] রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যখন বিষয়টি প্রমাণিত তখন আমাদের নেক ও সৎলোকদের ভালবাসতে কতটা যত্নবান হওয়া উচিত ? যদি আমরা মনে করি মর্যাদায় আমরা তাদের সমকক্ষ হতে পারব না। কিন্তু এটা অসম্ভব নয় যে আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা দেখে তাদের মত মর্যাদা আমাদের দান করবেন, কিয়ামতে তাদের সাথে আমাদের অবস্থানের সুযোগ করে দেবেন।
তৃতীয়ত : পাপের সংস্পর্শে আসা ও পাপ বর্জন হিসেবে মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত :—
এক. যারা নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে, তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করে ও সকল পাপাচার থেকে দূরে থাকে। এরা হল সর্বোত্তম মানুষ। আল্লাহ রাববুল আলামীন যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করে নেন।
দুই. যারা পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, পাপ করে অনুতপ্ত হয়, অনুশোচনা করে। মনে করে আমি চরম অন্যায় করে ফেলেছি। এবং এ পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সে উদ্গ্রীব হয়ে উঠে।
তিন. যারা পাপ করে আনন্দিত হয়। পাপ কাজ খুঁজে বেড়ায়। পাপ করতে না পারলে অনুশোচনা করে বা অনুতপ্ত হয়।
এখন আমাদের ভাবতে হবে যে, যদিও আমরা প্রথম প্রকারের মতো হতে পারিনি কিন্তু আল্লাহর কাছে সর্বদা কামনা করব, আমরা যেন তাদের সমমর্যাদা লাভে ধন্য হই।
আর দ্বিতীয় প্রকারে অন্তর্ভূক্ত হওয়া তৃতীয় প্রকার মানুষদের মধ্যে গণ্য হওয়ার চেয়ে অনেক ভাল ও নিরাপদ।
যদি আমরা সৎ লোকের সঙ্গ লাভ করার চেষ্টা করি তবে হয়ত তৃতীয় প্রকার মানুষদের অন্তর্ভূক্ত হওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারব। প্রচেষ্টায় আমরা আন্তরিক হলে আল্লাহ রাববুল আলামীন হয়ত বা আমাদের প্রথম প্রকারের মানুষে রূপান্তরিত করে দেবেন।
চতুর্থত : পাপ করে অনুতপ্ত হওয়া, অনুশোচনা বোধ করা বা মনের বিষণ্ণতা যা অনেক ক্ষেত্রে সৎ-সঙ্গের কারণে সৃষ্টি হয়। যখন সৎ-সঙ্গ পরিহার করা হয় তখন পাপের প্রতি ঘৃণা ও অনুশোচনা কমে যেতে থাকে। যদি সৎলোকের সঙ্গ পরিহার করা হয় তাহলে পাপের প্রতি ঘৃণাবোধ চলে যায়। আর যদি সৎলোকের সাথে চলাফেরা করা হয় তখন মনে মনে এমন চিন্তা আসে যে আমার সাথের লোকগুলো আমার চেয়ে কত ভাল ! কত পবিত্র তাদের জীবনযাপন। এ ধরনের চিন্তা ও মানসিকতা পাপকাজ ত্যাগ করতে ভূমিকা রাখে যা সৎসঙ্গের কারণে সৃষ্টি হয়।
প্রথমত : সৎলোকের সঙ্গ লাভের চেষ্টা করা একটি ভাল কাজ, আল্লাহর একটি এবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله : الإمام العادل، وشاب نشأ في عبادة ربه، ورجل قلبه معلق بالمساجد، ورجلان تحابا في الله اجتمعا عليه وتفرقا عليه، ورجل طلبته امرأة ذات منصب وجمال فقال إني أخاف الله، ورجل تصدق أخفى حتى لا تعلم شماله ماذا تنفق يمينه، ورجل ذكر الله خاليا ففاضت عيناه . رواه بهذا اللفظ البخاري (660)
যেদিন আল্লাহ তাআলার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তার ছায়াতলে স্থান দিবেন।
এক. সুবিচারক ইমাম শাসক।
দুই. আল্লাহর এবাদতে যে যুবক মগ্ন থেকেছে।
তিন. যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকত।
চার. যে দুজন লোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে একে অপরকে ভালবাসে এবং আল্লাহর জন্য একত্র হয় ও আল্লাহর জন্য বিচ্ছিন্ন হয়।
পাঁচ. যাকে কোন সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত নারী ব্যভিচারের জন্য ডেকেছে, কিন্তু সে এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছে যে আমি আল্লাহকে ভয় করি।
ছয়. যে ব্যক্তি এতটা গোপনে দান করে যে, ডান হাতে যা দান করে বাম হাত তা জানে না।
সাত. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে অশ্রু ঝড়ায়। [বোখারি : ৬৬০।]
এ হাদিসে দু’ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর জন্য সৎসঙ্গ অবলম্বন করেছে ; তারা আমাদের এ আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশিষ্ট। তাই সৎসঙ্গ অবলম্বন করা একটি এবাদত।
দ্বিতীয়ত : সৎ ও নেককার লোকদের মহববত করলে তাদের সাথে অবস্থা্ন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, যদিও তাদের মর্যাদা পাওয়া না যায়। হাদিসে এসেছে—
عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه قال : قيل للنبي صلى الله عليه وسلم : الرجل يحب القوم ولما يلحق بهم ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : المرأ مع من أحب . رواه البخاري (6170) ، ومسلم (2641)
আবু মূসা আশ‘আরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন ব্যক্তি যদি এক সম্প্রদায়কে ভালবাসে তাহলে সে তাদের সাথে কেন অবস্থান করবে না ? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘ব্যক্তি তার সাথে থাকবে যাকে সে ভালবাসে।’ [বোখারি : ৬১৭০। মুসলিম : ২৬৪১।] রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যখন বিষয়টি প্রমাণিত তখন আমাদের নেক ও সৎলোকদের ভালবাসতে কতটা যত্নবান হওয়া উচিত ? যদি আমরা মনে করি মর্যাদায় আমরা তাদের সমকক্ষ হতে পারব না। কিন্তু এটা অসম্ভব নয় যে আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা দেখে তাদের মত মর্যাদা আমাদের দান করবেন, কিয়ামতে তাদের সাথে আমাদের অবস্থানের সুযোগ করে দেবেন।
তৃতীয়ত : পাপের সংস্পর্শে আসা ও পাপ বর্জন হিসেবে মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত :—
এক. যারা নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে, তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করে ও সকল পাপাচার থেকে দূরে থাকে। এরা হল সর্বোত্তম মানুষ। আল্লাহ রাববুল আলামীন যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করে নেন।
দুই. যারা পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, পাপ করে অনুতপ্ত হয়, অনুশোচনা করে। মনে করে আমি চরম অন্যায় করে ফেলেছি। এবং এ পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সে উদ্গ্রীব হয়ে উঠে।
তিন. যারা পাপ করে আনন্দিত হয়। পাপ কাজ খুঁজে বেড়ায়। পাপ করতে না পারলে অনুশোচনা করে বা অনুতপ্ত হয়।
এখন আমাদের ভাবতে হবে যে, যদিও আমরা প্রথম প্রকারের মতো হতে পারিনি কিন্তু আল্লাহর কাছে সর্বদা কামনা করব, আমরা যেন তাদের সমমর্যাদা লাভে ধন্য হই।
আর দ্বিতীয় প্রকারে অন্তর্ভূক্ত হওয়া তৃতীয় প্রকার মানুষদের মধ্যে গণ্য হওয়ার চেয়ে অনেক ভাল ও নিরাপদ।
যদি আমরা সৎ লোকের সঙ্গ লাভ করার চেষ্টা করি তবে হয়ত তৃতীয় প্রকার মানুষদের অন্তর্ভূক্ত হওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারব। প্রচেষ্টায় আমরা আন্তরিক হলে আল্লাহ রাববুল আলামীন হয়ত বা আমাদের প্রথম প্রকারের মানুষে রূপান্তরিত করে দেবেন।
চতুর্থত : পাপ করে অনুতপ্ত হওয়া, অনুশোচনা বোধ করা বা মনের বিষণ্ণতা যা অনেক ক্ষেত্রে সৎ-সঙ্গের কারণে সৃষ্টি হয়। যখন সৎ-সঙ্গ পরিহার করা হয় তখন পাপের প্রতি ঘৃণা ও অনুশোচনা কমে যেতে থাকে। যদি সৎলোকের সঙ্গ পরিহার করা হয় তাহলে পাপের প্রতি ঘৃণাবোধ চলে যায়। আর যদি সৎলোকের সাথে চলাফেরা করা হয় তখন মনে মনে এমন চিন্তা আসে যে আমার সাথের লোকগুলো আমার চেয়ে কত ভাল ! কত পবিত্র তাদের জীবনযাপন। এ ধরনের চিন্তা ও মানসিকতা পাপকাজ ত্যাগ করতে ভূমিকা রাখে যা সৎসঙ্গের কারণে সৃষ্টি হয়।
মুসলমান মাত্রই বিশ্বাস করে, আল্লাহ রাববুল আলামীন মানুষের জন্য ঐ সকল বিষয়ই হারাম বা অবৈধ করেছেন, যা মানুষ পরিহার করে চলতে পারে। তেমনি তিনি ঐ সব বিষয় মানুষকে করতে বলেছেন যা সে করার সামর্থ্য রাখে। যা নিষিদ্ধ, তা আপনি অবশ্যই পরিহার করার ক্ষমতা রাখেন। পাপ পরিহার করা কখনো অসম্ভব ব্যাপার নয়। প্রয়োজন শুধু অন্তরের দৃঢ়তা, অবিচল সাহস।
মনে রাখা প্রয়োজন ‘কঠিন ও অসম্ভব’ শব্দ দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। পাপ পরিহার করা কারো জন্য কঠিন হতে পারে, তবে কারও পক্ষেই তা অসম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
حجبت النار بالشهوات، وحجبت الجنة بالمكاره . رواه البخاري (6487) ، ومسلم (2823)
‘জাহান্নাম মনের কু-প্রবৃত্তি দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়েছে আর জান্নাত কঠিন কাজ দ্বারা আবৃত্ত করা হয়েছে।’ [বোখারি : ৬৪৮৭। মুসলিম : ২৮২৩।]
এ হাদিসের মর্ম কথা হল ভাল কাজ করা ও পাপ থেকে ফিরে থাকা কঠিন। আর পাপ কাজ করা সহজ। যদি এ কঠিনকে জয় করা যায় তাহলে জান্নাতে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যায়। আর মন যা কিছু চায় তা করা সহজ হলেও তা দিয়ে শুধু জাহান্নামের পর্দা উম্মুক্ত করা হয়।
অতএব পাপাচার থেকে বিরত থাকার জন্য ধৈর্য্য, উন্নত মানসিকতা, মনের দৃঢ়তা ও সাহস সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
মনে রাখা প্রয়োজন ‘কঠিন ও অসম্ভব’ শব্দ দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। পাপ পরিহার করা কারো জন্য কঠিন হতে পারে, তবে কারও পক্ষেই তা অসম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
حجبت النار بالشهوات، وحجبت الجنة بالمكاره . رواه البخاري (6487) ، ومسلم (2823)
‘জাহান্নাম মনের কু-প্রবৃত্তি দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়েছে আর জান্নাত কঠিন কাজ দ্বারা আবৃত্ত করা হয়েছে।’ [বোখারি : ৬৪৮৭। মুসলিম : ২৮২৩।]
এ হাদিসের মর্ম কথা হল ভাল কাজ করা ও পাপ থেকে ফিরে থাকা কঠিন। আর পাপ কাজ করা সহজ। যদি এ কঠিনকে জয় করা যায় তাহলে জান্নাতে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যায়। আর মন যা কিছু চায় তা করা সহজ হলেও তা দিয়ে শুধু জাহান্নামের পর্দা উম্মুক্ত করা হয়।
অতএব পাপাচার থেকে বিরত থাকার জন্য ধৈর্য্য, উন্নত মানসিকতা, মনের দৃঢ়তা ও সাহস সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
ইবনুল কায়্যিম রহ. এ বিষয়ে ‘আল-জওয়াবুল কাফি’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে তিনি এক ব্যক্তির উদ্দেশে পাপের কিছু পরিণাম লিপিবদ্ধ করেছেন যা থেকে কোনভাবেই পাপী ব্যক্তি মুক্ত হতে পারে না। তিনি লিখেছেন :—
(ক) আল্লাহ রাববুল আলামীন পাপের শাস্তির কথা বলে দিয়েছেন ও পরকালে শাস্তি প্রদানের ওয়াদা করেছেন।
(খ) পাপ তার কর্তার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সমাজের সৎ লোকগুলো তাকে ঘৃণা করে যায়।
(গ) পাপ তার মতো আরেকটি পাপের বীজ বপন করে ও অনুরূপ পাপের জন্ম দেয়।
(ঘ) অব্যাহত পাপের ফলে পাপের প্রতি ঘৃণা কমে যায় ও পাপের ব্যাপারে অন্তরে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়।
(ঙ) পাপের আধিক্য অন্তরকে কলুষিত ও অকার্যকর করে দেয় যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:—
إن المؤمن إذا أذنب كانت نكتة سوداء في قلبه، فإن تاب ونزع واستغفر صقل قلبه، وإن زاد زادت، حتى يعلو قلبه ذاك الران الذي ذكر الله عز وجل في القرآن ( كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ). ﴿المطففين : 14﴾ رواه الترمذي (3334) ، وحسنه الألباني في صحيح الجامع
মুমিন ব্যক্তি যখন কোন পাপ করে তখন তার হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে। যখন সে তাওবা করে, বিরত হয় ও ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন তার অন্তর পরিস্কার হয়ে যায়। পাপ বেড়ে গেলে অন্তরের কলুষতাও বেড়ে যায়। পরিণতিতে অন্তর উদ্ধত হয়ে উঠে। এটা সেই মর্চে, যার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এভাবে বলেছেন : ‘কখনও নয়; বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে মর্চে ধরিয়েছে।’ [তিরমিযী : ৩৩৩৪।]
(চ) পাপাচার পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিয়ে আসে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে—
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ . ﴿الروم : 41﴾
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে ; যাতে তিনি তাদেরকে আস্বাদন করান তাদের কৃতকর্মের কিছু ফল। হয়ত তারা (সঠিক পথে) ফিরে আসবে।’ [সূরা রূম : ৪১।]
(ছ) পাপ আল্লাহর নিয়ামতকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং গজব নামিয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ . ﴿الشورى : 30﴾
‘তোমরা যে বিপদে আক্রান্ত হও, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।’ [সূরা শূরা : ৩০।]
(জ) পাপী যখন সারা জীবন নিজের উপর অত্যাচার করে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অসমর্থ হয়। এমনকি মৃত্যুকালেও সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, পাপ করে বসে। এমন ধারণা পুষে বসে থাকা চরম বোকামী হবে যে, আমি মৃত্যুর পূর্বে সকল পাপ ছেড়ে দিয়ে পাক-পবিত্র হয়ে যাবো।
(ক) আল্লাহ রাববুল আলামীন পাপের শাস্তির কথা বলে দিয়েছেন ও পরকালে শাস্তি প্রদানের ওয়াদা করেছেন।
(খ) পাপ তার কর্তার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সমাজের সৎ লোকগুলো তাকে ঘৃণা করে যায়।
(গ) পাপ তার মতো আরেকটি পাপের বীজ বপন করে ও অনুরূপ পাপের জন্ম দেয়।
(ঘ) অব্যাহত পাপের ফলে পাপের প্রতি ঘৃণা কমে যায় ও পাপের ব্যাপারে অন্তরে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়।
(ঙ) পাপের আধিক্য অন্তরকে কলুষিত ও অকার্যকর করে দেয় যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:—
إن المؤمن إذا أذنب كانت نكتة سوداء في قلبه، فإن تاب ونزع واستغفر صقل قلبه، وإن زاد زادت، حتى يعلو قلبه ذاك الران الذي ذكر الله عز وجل في القرآن ( كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ). ﴿المطففين : 14﴾ رواه الترمذي (3334) ، وحسنه الألباني في صحيح الجامع
মুমিন ব্যক্তি যখন কোন পাপ করে তখন তার হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে। যখন সে তাওবা করে, বিরত হয় ও ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন তার অন্তর পরিস্কার হয়ে যায়। পাপ বেড়ে গেলে অন্তরের কলুষতাও বেড়ে যায়। পরিণতিতে অন্তর উদ্ধত হয়ে উঠে। এটা সেই মর্চে, যার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এভাবে বলেছেন : ‘কখনও নয়; বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে মর্চে ধরিয়েছে।’ [তিরমিযী : ৩৩৩৪।]
(চ) পাপাচার পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিয়ে আসে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে—
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ . ﴿الروم : 41﴾
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে ; যাতে তিনি তাদেরকে আস্বাদন করান তাদের কৃতকর্মের কিছু ফল। হয়ত তারা (সঠিক পথে) ফিরে আসবে।’ [সূরা রূম : ৪১।]
(ছ) পাপ আল্লাহর নিয়ামতকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং গজব নামিয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ . ﴿الشورى : 30﴾
‘তোমরা যে বিপদে আক্রান্ত হও, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।’ [সূরা শূরা : ৩০।]
(জ) পাপী যখন সারা জীবন নিজের উপর অত্যাচার করে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অসমর্থ হয়। এমনকি মৃত্যুকালেও সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, পাপ করে বসে। এমন ধারণা পুষে বসে থাকা চরম বোকামী হবে যে, আমি মৃত্যুর পূর্বে সকল পাপ ছেড়ে দিয়ে পাক-পবিত্র হয়ে যাবো।
অজ্ঞতাবশত অনেকে আল্লাহর ব্যাপারে আশা পোষণ করে যে, তিনি দয়াময়, রহমান রহীম, পরম ক্ষমাশীল, তিনি যাবতীয় পাপতাপ ক্ষমা করে দেন। আমি যত পাপই করি না কেন, তিনি তা ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু সে ভুলে যায় যে, আল্লাহর শাস্তি কঠিন শাস্তি, অপরাধীকে কখনো তিনি ছেড়ে দেন না।
আল্লাহ সম্পর্কে আশাবাদী থাকা ভাল ; তবে যে আশাবাদ পাপ করতে উদ্বুদ্ধ করে, তা শয়তানের কুমন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহ সম্পর্কে আশাবাদী থাকা ভাল ; তবে যে আশাবাদ পাপ করতে উদ্বুদ্ধ করে, তা শয়তানের কুমন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল-মুহসাবা ও শাব্দিক অর্থ আত্ন-সমালোচনা। নিজের হিসাব নিজে করে নেয়া। পরিভাষায় মুহাসাবা শব্দের অর্ধ হল, মানুষ তার কৃতকর্ম ও কথাগুলোর প্রতি তাকাবে। যখন দেখবে সে কোন ভাল কথা বা কাজ করেছে তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে এবং সে কথা ও কাজের উপর অটল থাকবে। আর যদি দেখে কোন খারাপ কথা বা কাজ করে ফেলেছে তাহলে সে তা ছেড়ে দেবে ও তাওবা ইস্তেগফার করবে।
জ্ঞানী ও সচেতন ব্যক্তি মাত্রে্ই কাজ করার পূর্বে চিন্তা করে দেখবে এ কাজটি তার জন্য কতোটা ভাল ফলাফল নিয়ে আসবে। যখন দেখবে যে, কাজটি ভাল ফল নিয়ে আসবে তখন সে তা করবে। আর যদি দেখে ফলাফল ভাল হবে না তখন সে করবে না।
মানুষ দুনিয়ার ব্যাপারে কোন কাজ করতে এ নীতিই অবলম্বন করে থাকে। ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চাকুরী জীবি, কৃষক, গবেষক সকলেই এ নীতি অনুসরণ করে। প্রতিটি পদক্ষেপেই চিন্তা করে কাজটি কতটুকু সফল হবে।
একজন মুসলিম তো দুনিয়াকে আখিরাতের ক্ষেত্র বলে বিশ্বাস করে। আরো বিশ্বাস করে আজ সে যা করে যাচ্ছে কালকে তার হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে। এ দিকের বিবেচনায় মানুষ যা কিছু আল্লাহর বিধি-নিষেধের আওতায় যা করবে তা আরো বেশী মুহাসাবার দাবী রাখে।
আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন ও বর্জন হল সবচেয়ে বড় ব্যবসা। দুনিয়ার কোন ব্যবসা বা কাজ কর্মে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব, কিন্তু আখিরাত সম্পর্কিত কাজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়লে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কখনো সম্ভব হয় না। আখিরাতে কেহ সফলকাম হলে সেটাই হবে স্থায়ী সফলতা আর কেহ ব্যর্থ সেটাই হবে স্থায়ী ব্যর্থতা।
হাসান বসরী রা. বলেন, আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি রহম করুন, যার সামনে কোন কাজ আসলে সে চিন্তা করে এটা আল্লাহর জন্য না কি তার পার্থিব স্বার্থ আদায়ের জন্য। যদি আল্লাহর জন্য হয় সে তাড়াতড়ি পথ চলতে শুরু করে। আর যদি পার্থিব স্বার্থের জন্য হয় তাহলে সে গড়িমসি করে।
আল্লাহ রাববুল আলামীন মুহাসাবা করতে নির্দেশ দিয়েছে :—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ . ﴿الحشر : 18﴾
‘হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।’ [সূরা হাশর : ১৮।]
ইবনে কাসীর রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তোমাদের নিজেদের হিসাবের মুখোমুখি হওয়ার পূর্বে নিজের হিসাব নিজে করে নাও এবং তাকিয়ে দেখ তুমি নিজের চিরস্থায়ী বসবাসের জন্য, তোমার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের জন্য কী সঞ্চয় করেছ।
জ্ঞানী ও সচেতন ব্যক্তি মাত্রে্ই কাজ করার পূর্বে চিন্তা করে দেখবে এ কাজটি তার জন্য কতোটা ভাল ফলাফল নিয়ে আসবে। যখন দেখবে যে, কাজটি ভাল ফল নিয়ে আসবে তখন সে তা করবে। আর যদি দেখে ফলাফল ভাল হবে না তখন সে করবে না।
মানুষ দুনিয়ার ব্যাপারে কোন কাজ করতে এ নীতিই অবলম্বন করে থাকে। ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চাকুরী জীবি, কৃষক, গবেষক সকলেই এ নীতি অনুসরণ করে। প্রতিটি পদক্ষেপেই চিন্তা করে কাজটি কতটুকু সফল হবে।
একজন মুসলিম তো দুনিয়াকে আখিরাতের ক্ষেত্র বলে বিশ্বাস করে। আরো বিশ্বাস করে আজ সে যা করে যাচ্ছে কালকে তার হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে। এ দিকের বিবেচনায় মানুষ যা কিছু আল্লাহর বিধি-নিষেধের আওতায় যা করবে তা আরো বেশী মুহাসাবার দাবী রাখে।
আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন ও বর্জন হল সবচেয়ে বড় ব্যবসা। দুনিয়ার কোন ব্যবসা বা কাজ কর্মে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব, কিন্তু আখিরাত সম্পর্কিত কাজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়লে তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কখনো সম্ভব হয় না। আখিরাতে কেহ সফলকাম হলে সেটাই হবে স্থায়ী সফলতা আর কেহ ব্যর্থ সেটাই হবে স্থায়ী ব্যর্থতা।
হাসান বসরী রা. বলেন, আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি রহম করুন, যার সামনে কোন কাজ আসলে সে চিন্তা করে এটা আল্লাহর জন্য না কি তার পার্থিব স্বার্থ আদায়ের জন্য। যদি আল্লাহর জন্য হয় সে তাড়াতড়ি পথ চলতে শুরু করে। আর যদি পার্থিব স্বার্থের জন্য হয় তাহলে সে গড়িমসি করে।
আল্লাহ রাববুল আলামীন মুহাসাবা করতে নির্দেশ দিয়েছে :—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ . ﴿الحشر : 18﴾
‘হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।’ [সূরা হাশর : ১৮।]
ইবনে কাসীর রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তোমাদের নিজেদের হিসাবের মুখোমুখি হওয়ার পূর্বে নিজের হিসাব নিজে করে নাও এবং তাকিয়ে দেখ তুমি নিজের চিরস্থায়ী বসবাসের জন্য, তোমার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের জন্য কী সঞ্চয় করেছ।
উমার রা. বলেছেন :
حاسبوا أنفسكم قبل أن تحاسبوا، وزنوا أنفسكم قبل أن توزنوا، فإنه أهون عليكم في الحساب غدا أن تحاسبوا أنفسكم اليوم، وتزينوا للعرض الأكبر، يومئذ تعرضون لا تخفى منكم خافية .
‘তোমরা হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে নিজেদের হিসাব করে নাও। আমল ওযন করার পূর্বে নিজেদের আমলের ওযন নিজেরা করে নাও। আজকের হিসাব আগামী কালের হিসাব প্রদানকে সহজ করে দেবে। মহা হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্ততি নাও। সে দিন উপস্থিত করা হবে তোমাদেরকে এবং তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না।’
মায়মুন ইবনে মেহরান বলেন :
لايكون الرجل تقياً حتى يكون لنفسه أشد محاسبة من الشريك لشريكه .
‘নিজের অংশীদার থেকে মানুষ যে রকম হিসাব করে পাওনা বুঝে নিয়ে থাকে, নিজের আমলের হিসাব তার চেয়ে কঠিনভাবে না করলে কেহ মুত্তাকী হতে পারবে না।’ হাসান বসরী রহ. বলেন :—
المؤمن قوام على نفسه، يحاسب نفسه لله عز وجل، وإنما خف الحساب يوم القيامة على قوم حاسبوا أنفسهم في الدنيا، وإنما شق الحساب يوم القيامة على قوم أخذوا الأمر من غير محاسبة .
‘আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে এ ভয় করে যে নিজের কর্মের হিসাব নিজে করবে সে সত্যিকার সাহসী মুমিন। যারা দুনিয়াতে নিজেদের কর্মের হিসাব নিজেরা করেছে পরকালে তাদের হিসাব-নিকাশ হাল্কা ও সহজ হবে। আর যারা পৃথিবীতে নিজেদের হিসাব করেনি পরকালে তাদের হিসাব দেয়া হবে অত্যন্ত কঠিন।’’
حاسبوا أنفسكم قبل أن تحاسبوا، وزنوا أنفسكم قبل أن توزنوا، فإنه أهون عليكم في الحساب غدا أن تحاسبوا أنفسكم اليوم، وتزينوا للعرض الأكبر، يومئذ تعرضون لا تخفى منكم خافية .
‘তোমরা হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে নিজেদের হিসাব করে নাও। আমল ওযন করার পূর্বে নিজেদের আমলের ওযন নিজেরা করে নাও। আজকের হিসাব আগামী কালের হিসাব প্রদানকে সহজ করে দেবে। মহা হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্ততি নাও। সে দিন উপস্থিত করা হবে তোমাদেরকে এবং তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না।’
মায়মুন ইবনে মেহরান বলেন :
لايكون الرجل تقياً حتى يكون لنفسه أشد محاسبة من الشريك لشريكه .
‘নিজের অংশীদার থেকে মানুষ যে রকম হিসাব করে পাওনা বুঝে নিয়ে থাকে, নিজের আমলের হিসাব তার চেয়ে কঠিনভাবে না করলে কেহ মুত্তাকী হতে পারবে না।’ হাসান বসরী রহ. বলেন :—
المؤمن قوام على نفسه، يحاسب نفسه لله عز وجل، وإنما خف الحساب يوم القيامة على قوم حاسبوا أنفسهم في الدنيا، وإنما شق الحساب يوم القيامة على قوم أخذوا الأمر من غير محاسبة .
‘আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে এ ভয় করে যে নিজের কর্মের হিসাব নিজে করবে সে সত্যিকার সাহসী মুমিন। যারা দুনিয়াতে নিজেদের কর্মের হিসাব নিজেরা করেছে পরকালে তাদের হিসাব-নিকাশ হাল্কা ও সহজ হবে। আর যারা পৃথিবীতে নিজেদের হিসাব করেনি পরকালে তাদের হিসাব দেয়া হবে অত্যন্ত কঠিন।’’
মুহাসাবার জন্য শরীঅত নির্দেশিত নিদিষ্ট কোন নিয়ম নেই। মুমিন ব্যক্তি নিজে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যেটা ভাল মনে করবেন সেটার হিসাব করতে চেষ্টা করবেন। যতবেশী নিজের কর্মকান্ডগুলো মুহাসাবা করবেন ততই কার কল্যাণ। কি কি বিষয়ে মুহাসাবা করা যেতে পারে এর এর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা নীচে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
(ক) প্রথমে হিসাব নিতে হবে আল্লাহ আমার প্রতি যে সকল কাজ, আকীদা-বিশ্বাস ফরজ করে দিয়েছেন আমি সেটা আদায় করছি কিনা ? আদায় করে থাকলে সেটা কি ইখলাছের সাথে আদায় করছি ? সেটা আদায় করতে যেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ অনুসরণ করছি কিনা? এ সকল প্রশ্নের উত্তরে যদি কোন ক্রটি পরিলক্ষিত হয় তাহলে তা দূর করতে হবে এবং এর জন্য তাওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে প্রথমে তাওহীদ বা আল্লাহর একাত্ববাদকে প্রাধ্যান্য দেবে। দেখতে হবে আমি তাওহীদের পরিপূর্ণ আকীদা পোষণ করছি কি না ? সকল প্রকার ছোট বড় শিরক থেকে পুত-পবিত্রতা অর্জন করতে পেরেছি কি না? সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা, তাওয়াক্কুল, তার কাছে আশ্রয় নেয়া ও তার কাছেই দোয়া-প্রার্থনা করছি কি না ? অত:পর ফরজ কাজের হিসাব নিতে চেষ্টা করা ; পাঁচ ওয়াক্ত সালাতসমূহ সময়মত, তার সকল শর্ত, রুকন, ওয়াজিব, সুন্নাতের সাথে আদায় হচ্ছে কি না?
(খ) আল্লাহ তাআলা যা কিছু নিষেধ করেছেন তা আমি কতখানি পরিহার করতে পেরেছি। এই বিষয়টার হিসাব নেয়া।
(গ) আমার আচার-আচারন সম্পূর্ণভাবে ইসলামী চরিত্রে পরিণত হয়েছে কি না? যদি না হয়ে থাকে তবে তা অর্জনের জন্য কোন প্রচেষ্টা চালিয়েছি কি না ? আর চরিত্রের খারাপ দিকগুলো পরিত্যাগ করতে পেরেছি কি না ? এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে থাকলে তা কতটা সফল হয়েছে ?
(ঘ) সুন্নাত ও নফল আমলগুলো আদায়ের ব্যাপারে কতখানি যত্নবান হয়েছি তা হিসেব করে দেখা।
(ঙ) উপরোলিখ বিষয়গুলো ছাড়া অন্য সকল কাজ-কর্মগুলো আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য করতে পেরেছি কি না তার হিসোব নেয়া।
এভাবে মুহাসাবা করে, নিজের হিসাব নিজে নিয়ে যে কোন মুসলিম নিজেকে উন্নত করতে পারে। পূর্ণতা ও সফলতার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে।
(ক) প্রথমে হিসাব নিতে হবে আল্লাহ আমার প্রতি যে সকল কাজ, আকীদা-বিশ্বাস ফরজ করে দিয়েছেন আমি সেটা আদায় করছি কিনা ? আদায় করে থাকলে সেটা কি ইখলাছের সাথে আদায় করছি ? সেটা আদায় করতে যেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ অনুসরণ করছি কিনা? এ সকল প্রশ্নের উত্তরে যদি কোন ক্রটি পরিলক্ষিত হয় তাহলে তা দূর করতে হবে এবং এর জন্য তাওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে প্রথমে তাওহীদ বা আল্লাহর একাত্ববাদকে প্রাধ্যান্য দেবে। দেখতে হবে আমি তাওহীদের পরিপূর্ণ আকীদা পোষণ করছি কি না ? সকল প্রকার ছোট বড় শিরক থেকে পুত-পবিত্রতা অর্জন করতে পেরেছি কি না? সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা, তাওয়াক্কুল, তার কাছে আশ্রয় নেয়া ও তার কাছেই দোয়া-প্রার্থনা করছি কি না ? অত:পর ফরজ কাজের হিসাব নিতে চেষ্টা করা ; পাঁচ ওয়াক্ত সালাতসমূহ সময়মত, তার সকল শর্ত, রুকন, ওয়াজিব, সুন্নাতের সাথে আদায় হচ্ছে কি না?
(খ) আল্লাহ তাআলা যা কিছু নিষেধ করেছেন তা আমি কতখানি পরিহার করতে পেরেছি। এই বিষয়টার হিসাব নেয়া।
(গ) আমার আচার-আচারন সম্পূর্ণভাবে ইসলামী চরিত্রে পরিণত হয়েছে কি না? যদি না হয়ে থাকে তবে তা অর্জনের জন্য কোন প্রচেষ্টা চালিয়েছি কি না ? আর চরিত্রের খারাপ দিকগুলো পরিত্যাগ করতে পেরেছি কি না ? এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে থাকলে তা কতটা সফল হয়েছে ?
(ঘ) সুন্নাত ও নফল আমলগুলো আদায়ের ব্যাপারে কতখানি যত্নবান হয়েছি তা হিসেব করে দেখা।
(ঙ) উপরোলিখ বিষয়গুলো ছাড়া অন্য সকল কাজ-কর্মগুলো আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য করতে পেরেছি কি না তার হিসোব নেয়া।
এভাবে মুহাসাবা করে, নিজের হিসাব নিজে নিয়ে যে কোন মুসলিম নিজেকে উন্নত করতে পারে। পূর্ণতা ও সফলতার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে।
(ক) জ্ঞান অর্জন করা। জ্ঞান বলতে শরয়ী জ্ঞানকে বুঝানো হয়েছে। যা ঈমান ও কুফর, হক ও বাতিল, সরল পথ ও ভ্রান্তপথ, লাভ ও ক্ষতির, কল্যাণ ও অকল্যাণ এর মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। যে ব্যক্তি এ জ্ঞানে যত উন্নতি লাভ করতে পারবে তার মুহাসাবা তত পূর্ণতা লাভ করবে।
(খ) নিজের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা। নিজেকে ভাল মনে করে আত্নতৃপ্তিতে মগ্ন হওয়া উচিত নয়। কোন ভাল কাজ করে যদি মনে করেন আমি অনেক কিছু করে ফেলেছি তাহলে মুহাসাবা করা সম্ভব হবে না। আমাদের সকলের বুঝতে হবে যে আমরা যতই ভাল কাজ করে থাকিনা কেন আল্লাহর রাববুল আলামীনের দৃষ্টিতে তা ক্রটিপূর্ণ। তিনি এ ক্রটি ক্ষমা করে যদি কাজটা কবুল করে নেন তাহলে এটা তাঁর অনুগ্রহ। আর যদি তিনি কাজটি ক্রটিপূর্ণ হওয়ার কারণে কবুল না করেন তাহলে এটা হবে তার ইনসাফ।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেনে: যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পেরেছে সে ই নিজের সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখে। আর যে নিজের সম্পর্কে অজ্ঞ, সে নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারনা পোষণ করে থাকে।
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন : ‘মানুষেরা সর্বদা ভুল-ক্রুটি করে আল্লাহর ক্ষমার মুখাপেক্ষী থাকে। আর যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, আমি আমার দায়িত্ব পূর্ণভাবে আদায় করেছি এবং আল্লাহর ক্ষমার প্রয়োজন নেই, সে পথভ্রষ্ঠ।
(খ) নিজের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা। নিজেকে ভাল মনে করে আত্নতৃপ্তিতে মগ্ন হওয়া উচিত নয়। কোন ভাল কাজ করে যদি মনে করেন আমি অনেক কিছু করে ফেলেছি তাহলে মুহাসাবা করা সম্ভব হবে না। আমাদের সকলের বুঝতে হবে যে আমরা যতই ভাল কাজ করে থাকিনা কেন আল্লাহর রাববুল আলামীনের দৃষ্টিতে তা ক্রটিপূর্ণ। তিনি এ ক্রটি ক্ষমা করে যদি কাজটা কবুল করে নেন তাহলে এটা তাঁর অনুগ্রহ। আর যদি তিনি কাজটি ক্রটিপূর্ণ হওয়ার কারণে কবুল না করেন তাহলে এটা হবে তার ইনসাফ।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেনে: যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পেরেছে সে ই নিজের সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখে। আর যে নিজের সম্পর্কে অজ্ঞ, সে নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারনা পোষণ করে থাকে।
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন : ‘মানুষেরা সর্বদা ভুল-ক্রুটি করে আল্লাহর ক্ষমার মুখাপেক্ষী থাকে। আর যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, আমি আমার দায়িত্ব পূর্ণভাবে আদায় করেছি এবং আল্লাহর ক্ষমার প্রয়োজন নেই, সে পথভ্রষ্ঠ।
মুহাসাবার উপকারিতা অনেক। এর কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হল :
(ক) মুহাসাবকারী নিজের দোষত্রুটি সম্পর্কে সচেতন হয়। আর যে নিজের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে সচেতন হতে না পারে, সে তা সংশোধন করতে পারবে না।
(খ) কু-প্রবৃত্তি সম্পর্কে অবগত হওয়া ও তার চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেয়া।
(গ) আল্লাহ রাববুল আলামীনের ধৈর্য অনুধাবন করা। এভাবে যে, আমি কত বড় অন্যায় করেছি অথচ তিনি আমাকে তৎক্ষনাৎ শাস্তি না দিয়ে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।
(ঘ) যে দুনিয়াতে নিজের হিসাব নিজে করবে পরকালে আল্লাহর কাছে তার হিসাব দেয়া সহজ হবে।
(ক) মুহাসাবকারী নিজের দোষত্রুটি সম্পর্কে সচেতন হয়। আর যে নিজের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে সচেতন হতে না পারে, সে তা সংশোধন করতে পারবে না।
(খ) কু-প্রবৃত্তি সম্পর্কে অবগত হওয়া ও তার চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেয়া।
(গ) আল্লাহ রাববুল আলামীনের ধৈর্য অনুধাবন করা। এভাবে যে, আমি কত বড় অন্যায় করেছি অথচ তিনি আমাকে তৎক্ষনাৎ শাস্তি না দিয়ে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।
(ঘ) যে দুনিয়াতে নিজের হিসাব নিজে করবে পরকালে আল্লাহর কাছে তার হিসাব দেয়া সহজ হবে।
দূর্বলতা ও পরিবর্তন মানুষের অভ্যাসের দুটো দিক। কিন্তু সমস্যা হল বহু মানুষ এমন আছেন যাদের অবস্থার পরিবর্তন হলে এবাদত-বন্দেগী ও সৎকর্ম ছেড়ে দেয়। তাদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত যে ঘর নির্মাণ করল অত:পর তা ভেঙ্গে দিল। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :—
وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا . ﴿النحل : 92﴾
‘তোমরা সেই মহিলার মত হয়োনা যে মজবুত ভাবে সুতো পাকানোর পর তার পাক খুলে নষ্ট করে দেয়।’ [সূরা নাহল : ৯২]
এতো গেল মক্কায় বসবাসকারী সেই মহিলার কথা যে শক্ত করে সুতা পাকাতো, কিছুক্ষন পর তা নিজেই ছিড়ে ফেলত। যদি তার কাজটি পাগলামী হয়ে থাকে তবে যারা নেক আমল বা সৎকাজ করে তা থেকে ফিরে যায়, অবিচল থাকে না সেটাও পাগলামী হবে। কিছুদিন নেক আমল করে তা বন্ধ করে দেয়ার চেয়ে সেটা না করা ভাল ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন :
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ . كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ . ﴿المطففين : 14-15﴾
‘কখনো নয়; তাদের কৃতকর্ম তাদের হৃদয়ে জং ধরিয়েছে। না, অবশ্যই সে দিন তারা তাদের প্রতিপালক হতে অন্তরিত থাকবে।’ [সূরা আলমুতাফফেফীন : ১৪-১৫] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ . ﴿الصف : 5﴾
‘অত:পর তারা যখন বক্র পথ অবলম্বন করল আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন।’ [সূরা আস-সাফ : ৫]
কাজে অবিচল রা থাকার দৃষ্টান্ত সে পথিকের সাথেও দেয়া যেতে পারে যে কিছুটা পথ অতিক্রম করে আবার পিছনে ফিরে আসল অথবা পথ চলা বন্ধ করে দিল। যে এ রকম করবে সে কখনো তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না। সেই পথিকই তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে যে অব্যাহত ভাবে পথ চলতে থাকবে। নিজ পথে অটল-অবিচল থাকবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি নেক আমল শুরু করে তা মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে পারবে সেই তার চুরান্ত গন্তব্য জান্নাতে পৌছে যেতে পারবে। দুনিয়া ও আখিরাতে এ সকল দৃঢ়তা অবলম্বনকারী ব্যক্তিরা সফল হবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ . نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ . نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ . ﴿فصلت : 30-32﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ন হয় ফিরিশ্তা এবং বলে, ‘তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা, এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। ‘আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমরা আদেশ কর।’ এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০-৩২] আল্লাহ আরো বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ . أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ﴿الأحقاف :14- 13﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে তাদের কোন ভয় নেই তারা দু:খিত ও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেথায় তারা স্থায়ী হবে তারা যা করত তার পুরস্কার স্বরূপ।’ [সূরা আহকাফ : ১৩]
وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا . ﴿النحل : 92﴾
‘তোমরা সেই মহিলার মত হয়োনা যে মজবুত ভাবে সুতো পাকানোর পর তার পাক খুলে নষ্ট করে দেয়।’ [সূরা নাহল : ৯২]
এতো গেল মক্কায় বসবাসকারী সেই মহিলার কথা যে শক্ত করে সুতা পাকাতো, কিছুক্ষন পর তা নিজেই ছিড়ে ফেলত। যদি তার কাজটি পাগলামী হয়ে থাকে তবে যারা নেক আমল বা সৎকাজ করে তা থেকে ফিরে যায়, অবিচল থাকে না সেটাও পাগলামী হবে। কিছুদিন নেক আমল করে তা বন্ধ করে দেয়ার চেয়ে সেটা না করা ভাল ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন :
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ . كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ . ﴿المطففين : 14-15﴾
‘কখনো নয়; তাদের কৃতকর্ম তাদের হৃদয়ে জং ধরিয়েছে। না, অবশ্যই সে দিন তারা তাদের প্রতিপালক হতে অন্তরিত থাকবে।’ [সূরা আলমুতাফফেফীন : ১৪-১৫] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ . ﴿الصف : 5﴾
‘অত:পর তারা যখন বক্র পথ অবলম্বন করল আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন।’ [সূরা আস-সাফ : ৫]
কাজে অবিচল রা থাকার দৃষ্টান্ত সে পথিকের সাথেও দেয়া যেতে পারে যে কিছুটা পথ অতিক্রম করে আবার পিছনে ফিরে আসল অথবা পথ চলা বন্ধ করে দিল। যে এ রকম করবে সে কখনো তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না। সেই পথিকই তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে যে অব্যাহত ভাবে পথ চলতে থাকবে। নিজ পথে অটল-অবিচল থাকবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি নেক আমল শুরু করে তা মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে পারবে সেই তার চুরান্ত গন্তব্য জান্নাতে পৌছে যেতে পারবে। দুনিয়া ও আখিরাতে এ সকল দৃঢ়তা অবলম্বনকারী ব্যক্তিরা সফল হবে। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ . نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ . نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ . ﴿فصلت : 30-32﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ন হয় ফিরিশ্তা এবং বলে, ‘তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা, এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। ‘আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমরা আদেশ কর।’ এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০-৩২] আল্লাহ আরো বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ . أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ﴿الأحقاف :14- 13﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে তাদের কোন ভয় নেই তারা দু:খিত ও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেথায় তারা স্থায়ী হবে তারা যা করত তার পুরস্কার স্বরূপ।’ [সূরা আহকাফ : ১৩]
অবিচলতা বলতে আলোচ্য প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হল ‘আল্লাহ তাআলার আনুগত্য, তার আদেশ-নির্দেশ মান্য করা ও তার নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিহার করতে অটল ও অবিচল থাকা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ . ﴿الحجر : 99﴾
‘তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের এবাদত কর।’ [সূরা আল-হিজর : ৯৯]
এর আলোকে এটা শোভনীয় নয় যে আমরা তাওবা ও এবাদত-বন্দেগী এবং নেক আমলগুলোকে কোন মৌসুম বা পর্বের সাথে সম্পর্কিত করে রাখব। রমজান আসলে আমরা সালাত, সিয়াম, তাওবা, ইস্তেগফার, দান-ছদকাহ করব আর রমজান শেষ হলে এগুলোর কথা ভুলে যাব। এমনি হজ্ব আসলে এবাদত-বন্দেগী করব আর হজ্ব থেকে ফিরে সব আগের মত করব, এমন যদি হয় আমাদের অবস্থা তাহলে ব্যাপারটা এমন দাড়ায় যে আমরা এগুলো করছি রমজান মাসের জন্য বা হজ্বের জন্য, আল্লাহর জন্য নয় বা আল্লাহর ভয়ে নয়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, যে সত্বা আমাদের সিয়াম পালন করতে, সালাত আদায় করতে, যাকাত দিতে, হজ্ব করতে ও আত্নীয়তার সম্পর্ক ভাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনিই আমাদের অহংকার, আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, সূদ খাওয়া, ঘুষ প্রদান ও গ্রহণ, হারাম সম্পদ উপার্জন ইত্যাদি করতে নিষেধ করেছেন। যদি আমরা তার কিছু আদেশ মান্য করি আর কিছু আদেশ-নিষেধ অবজ্ঞা করি তাহলে এটা অবিচলতার বিপরীত কাজ হল।
কাজেই অবিচলতা হল সত্য-সঠিক পথে চলা। আর তা হল কোন রকম বাড়াবড়ি, ছাড়াছাড়ি, হিলা-টালবাহানা, ধোকাবাজী, বিকৃত ব্যাখ্যা ও কৌশলের পথ অবলম্বন না করে দ্বীনে ইসলাম অনুসরণ করা।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন—‘ইস্তেকামা বা অবিচলতা হল একটা ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এর সংক্ষিপ্ত অর্থ হল আন্তরিকতা ও সততার সাথে আল্লাহর হুকুম আহকামসমূহ আদায় করা। আকীদাহ-&&বশ্বাস, কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, নিয়্যত-সংকল্প সহ সর্ব বিষয়ের সাথে রয়েছে অবিচলতার সম্পর্ক। এ অবিচলতা হবে আল্লাহর জন্য, আল্লাহর সাথে ও আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনের ক্ষেত্রে।
এমনিভাবে এবাদত-বন্দেগী, কাজ-কর্মে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবনা, অলসতা, অবজ্ঞা প্রভৃতি অবিচলতা তথা ইস্তেকামাতের বিপরীত। আল্লাহ তাআলা তার নবীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন—
فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ . ﴿هود : 112﴾
‘সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে অবিচল থাক এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারাও অবিচল থাকুক; এবং সীমালংঘন করবে না। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ [সূরা হুদ : ১১২] তিনি মুছা (আ:) ও হারূন (আ:) কেও অবিচলতার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন
قَدْ أُجِيبَتْ دَعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَانِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ . ﴿يونس : 89﴾
‘তোমাদের দু জনের দোয়া কবুল হল, সুতরাং তোমরা অবিচল থাক এবং কখনো অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করো না।’ [সূরা ইউনূস : ৮৯] তিনি আরো বলেন—
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ وَوَيْلٌ لِلْمُشْرِكِينَ . ( فصلت : 6)
‘বল, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি ওহী নাযিল হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। অতএব তোমরা তারই পথে অবিচল থাক। তারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য।’ [সূরা হা-মীম-সাজদাহ : ৬]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে উম্মতকে এই অবিচল থাকার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। যেমন এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন—
يا رسول الله ! قل للإسلام قولا لا أسأل عنه أحدا غيرك، قال : ( قل آمنت بالله ثم استقم ) رواه مسلم ....
হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ইসলামের বিষয়ে এমন একটা কথা বলে দিন যা আপনার পরে আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে না হয়। তিনি বললেন: ‘বল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অত:পর এর উপর অবিচল থাক।’ [মুসলিম]
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ উপদেশ দ্বীনে ইসলামের সামগ্রিক বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ। হজরত সাহাবায়ে কেরামও পরস্পরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ন্যায় প্রাগুক্ত উপদেশ প্রদান করতেন। যেমন হজরত হুজায়ফা রা. প্রথম যুগের মুহাজির-আনসার সাহাবায়ে কেরামদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
يا معشر القراء استقيموا، فقد سبقتم سبقا بعيدا، فإن أخذتم يمينا وشمالا، لقد ضللتم ضلالا بعيدا . ( رواه البخاري : 7282)
‘ও কোরআন-হাদিসের পন্ডিতগণ, অবিচল থাক। তোমরা অনেক অগ্রসর হয়েছো। যদি ডান-বামের কোন পথ কিংবা পদ্ধতির অনুসরণ কর, নির্ঘাত পথ ভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ [বোখারী : ৭২৮২]
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ . ﴿الحجر : 99﴾
‘তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের এবাদত কর।’ [সূরা আল-হিজর : ৯৯]
এর আলোকে এটা শোভনীয় নয় যে আমরা তাওবা ও এবাদত-বন্দেগী এবং নেক আমলগুলোকে কোন মৌসুম বা পর্বের সাথে সম্পর্কিত করে রাখব। রমজান আসলে আমরা সালাত, সিয়াম, তাওবা, ইস্তেগফার, দান-ছদকাহ করব আর রমজান শেষ হলে এগুলোর কথা ভুলে যাব। এমনি হজ্ব আসলে এবাদত-বন্দেগী করব আর হজ্ব থেকে ফিরে সব আগের মত করব, এমন যদি হয় আমাদের অবস্থা তাহলে ব্যাপারটা এমন দাড়ায় যে আমরা এগুলো করছি রমজান মাসের জন্য বা হজ্বের জন্য, আল্লাহর জন্য নয় বা আল্লাহর ভয়ে নয়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, যে সত্বা আমাদের সিয়াম পালন করতে, সালাত আদায় করতে, যাকাত দিতে, হজ্ব করতে ও আত্নীয়তার সম্পর্ক ভাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনিই আমাদের অহংকার, আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, সূদ খাওয়া, ঘুষ প্রদান ও গ্রহণ, হারাম সম্পদ উপার্জন ইত্যাদি করতে নিষেধ করেছেন। যদি আমরা তার কিছু আদেশ মান্য করি আর কিছু আদেশ-নিষেধ অবজ্ঞা করি তাহলে এটা অবিচলতার বিপরীত কাজ হল।
কাজেই অবিচলতা হল সত্য-সঠিক পথে চলা। আর তা হল কোন রকম বাড়াবড়ি, ছাড়াছাড়ি, হিলা-টালবাহানা, ধোকাবাজী, বিকৃত ব্যাখ্যা ও কৌশলের পথ অবলম্বন না করে দ্বীনে ইসলাম অনুসরণ করা।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন—‘ইস্তেকামা বা অবিচলতা হল একটা ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এর সংক্ষিপ্ত অর্থ হল আন্তরিকতা ও সততার সাথে আল্লাহর হুকুম আহকামসমূহ আদায় করা। আকীদাহ-&&বশ্বাস, কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, নিয়্যত-সংকল্প সহ সর্ব বিষয়ের সাথে রয়েছে অবিচলতার সম্পর্ক। এ অবিচলতা হবে আল্লাহর জন্য, আল্লাহর সাথে ও আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনের ক্ষেত্রে।
এমনিভাবে এবাদত-বন্দেগী, কাজ-কর্মে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবনা, অলসতা, অবজ্ঞা প্রভৃতি অবিচলতা তথা ইস্তেকামাতের বিপরীত। আল্লাহ তাআলা তার নবীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন—
فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ . ﴿هود : 112﴾
‘সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে অবিচল থাক এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারাও অবিচল থাকুক; এবং সীমালংঘন করবে না। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ [সূরা হুদ : ১১২] তিনি মুছা (আ:) ও হারূন (আ:) কেও অবিচলতার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন
قَدْ أُجِيبَتْ دَعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَانِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ . ﴿يونس : 89﴾
‘তোমাদের দু জনের দোয়া কবুল হল, সুতরাং তোমরা অবিচল থাক এবং কখনো অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করো না।’ [সূরা ইউনূস : ৮৯] তিনি আরো বলেন—
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ وَوَيْلٌ لِلْمُشْرِكِينَ . ( فصلت : 6)
‘বল, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি ওহী নাযিল হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। অতএব তোমরা তারই পথে অবিচল থাক। তারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য।’ [সূরা হা-মীম-সাজদাহ : ৬]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে উম্মতকে এই অবিচল থাকার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। যেমন এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন—
يا رسول الله ! قل للإسلام قولا لا أسأل عنه أحدا غيرك، قال : ( قل آمنت بالله ثم استقم ) رواه مسلم ....
হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ইসলামের বিষয়ে এমন একটা কথা বলে দিন যা আপনার পরে আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে না হয়। তিনি বললেন: ‘বল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অত:পর এর উপর অবিচল থাক।’ [মুসলিম]
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ উপদেশ দ্বীনে ইসলামের সামগ্রিক বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ। হজরত সাহাবায়ে কেরামও পরস্পরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ন্যায় প্রাগুক্ত উপদেশ প্রদান করতেন। যেমন হজরত হুজায়ফা রা. প্রথম যুগের মুহাজির-আনসার সাহাবায়ে কেরামদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
يا معشر القراء استقيموا، فقد سبقتم سبقا بعيدا، فإن أخذتم يمينا وشمالا، لقد ضللتم ضلالا بعيدا . ( رواه البخاري : 7282)
‘ও কোরআন-হাদিসের পন্ডিতগণ, অবিচল থাক। তোমরা অনেক অগ্রসর হয়েছো। যদি ডান-বামের কোন পথ কিংবা পদ্ধতির অনুসরণ কর, নির্ঘাত পথ ভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ [বোখারী : ৭২৮২]
(১) যারা অবিচল থাকে তাদের কাছে রহমতের ফিরিশতার আগমন। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا . ﴿فصلت : 30﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ন হয় ফিরিশ্তা এবং বলে, ‘তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০-৩২] আল্লাহ আরো বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ .
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে তাদের কোন ভয় নেই তারা দু:খিত ও হবে না।’ [সূরা আহকাফ : ১৩]
(২) জান্নাতে প্রবেশ করা। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন—
وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ . ﴿فصلت : 30﴾
‘এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০] আল্লাহ আরো বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ . أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ﴿الأحقاف : 14- 13﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে তাদের কোন ভয় নেই তারা দু:খিত ও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেথায় তারা স্থায়ী হবে তারা যা করত তার পুরস্কার স্বরূপ।’ [সূরা আহকাফ : ১৩]
(৩) ফিরিশতাদের বন্ধুত্ব অর্জন তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ। যারা অবিচল থাকে ফিরিশতারা তাদের বলবে—
نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ . ﴿فصلت : 31﴾
‘আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩১]
ইবনু কাসীর রহ. এ আয়াতের তাফসীরে উলেখ করেন, ‘অবিচল ঈমানদারকে মৃত্যুকালে ফরিশতারা উপস্থিত হয়ে বলবে : ‘আমরা পার্থিব জীবনে তোমাদের বন্ধু ছিলাম, আল্লাহর নির্দেশে সর্বদা তোমাদের সং&গ দিয়ে তোমাদের সাহায্য করেছি, বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেছি এমনিভাবে পরকালে তোমাদের বন্ধু হিসেবে থাকব, কবরে তোমাদের একাকীত্ব দূর করব, কিয়ামতের সময় তোমাদের সাথে থাকব, হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশের সময় তোমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা দেব, পুলসিরাত পার করে তোমাদের জান্নাতে পৌছে দেব।’ [তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/১১৭]
(৪) আল্লাহ তাআলার দয়া ও ক্ষমা লাভ : যেমন তিনি বলেছেন—
نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ . ﴿فصلت : 32﴾
‘এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩২]
এ আয়াতের তাফসীরে শায়খ সা’দী রহ. বলেছেন : ‘এ মহা পুরস্কার ও স্থায়ী সুখ-শান্তি এবং মেহমানদারী হল সেই পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে যিনি পাপসমূহ ক্ষমা করেছেন। সৎকাজের সামর্থ দিয়েছেন। অত:পর সৎকর্মগুলোকে কবুল করেছেন।’ [তাইসিরুল কারিমির রহমান ফি তাফসিরে কালামিল মান্নান। পৃ : ৬৯৪]
(৫) জীবিকার সচ্ছলতা : আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَأَنْ لَوِ اسْتَقَامُوا عَلَى الطَّرِيقَةِ لَأَسْقَيْنَاهُمْ مَاءً غَدَقًا . لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَمَنْ يُعْرِضْ عَنْ ذِكْرِ رَبِّهِ يَسْلُكْهُ عَذَابًا صَعَدًا . ﴿الجن : 16-17﴾
‘তারা যদি সত্যপথে অবিচল থাকত তাদেরকে আমি প্রচুর বারি বর্ষনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম। যা দ্বারা আমি তাদের পরীক্ষা করতাম। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ হতে বিমুখ হয় তিনি তাকে দু:সহ শাস্তিতে প্রবেশ করাবেন।’ [সূরা জিন : ১৬-১৭]
এ আয়াতের অর্থ হল যারা ঈমান আনবে ও এর উপর অবিচল থাকবে আমি তাদেরকে অঢেল সম্পদ ও জীবিকায় প্রাচুর্যতা দান করব। আরো দান করব প্রচুর বৃষ্টি, কারণ, আল্লাহর অনুগ্রহ ও জীবিকা মূলত বৃষ্টির ভেতর-ই। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ مِنْ رَبِّهِمْ لَأَكَلُوا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ أَرْجُلِهِمْ مِنْهُمْ أُمَّةٌ مُقْتَصِدَةٌ وَكَثِيرٌ مِنْهُمْ سَاءَ مَا يَعْمَلُونَ ﴿المائدة : 66﴾
‘যদি তারা তওরাত-ইঞ্জিল এবং তাদের প্রতি অবতীর্ণ বিধান বাস্তবায়ন করত, তাহলে তারা মাথার উপর ও পায়ের নিচ হতে জীবিকা ভোগ করত। হ্যাঁ, তাদের কতক মধ্যম পন্থি। তাবে তাদের অনেকেই অসৎ কর্মাব্যস্ত-অবাধ্য-ফাসেক। [মায়েদা : ৬৬] অন্যত্র বলেন—
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿الأعراف : 96﴾
‘যদি সে গ্রামবাসীরা ইমান গ্রহণ করত ও তাকওয়ার ব্রত নিত, আমরা তাদের উপর আসমান-জমিনের বরকতের দ্বারসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু না-তারা মিথ্যারোপ করেছে, আমিও তাদের কুকর্মের কারণে যমের ধরা-ধরেছি। [আরাফ : ৬৯]
(৬) পথভ্রষ্ঠ হওয়ার খেতাব থেকে মুক্তি পাওয়া :
ইহুদী ও খৃষ্টানগন সৎপথ লাভ করেছিল কিন্তু তারা এর উপর অবিচল থাকতে পারেনি। পরিণতিতে আল্লাহ তাদের বিভ্রান্ত ও ক্রোধনিপতিত বলে আখ্যা দিয়ে আমাদেরকে প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন ‘আমরা যেন তাদের মত না হই।’ যেমন আমরা সালাতে বলি—
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ . صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ . ﴿الفاتحة : 6-7﴾
‘আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয় যারা ক্রোধনিপতিত ও পথভ্রষ্ঠ। [ফাতেহা : ৬-৭]
(৭) আল্লাহর ক্রোধ হতে নাজাত : এরশাদ হচ্ছে-
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ . صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ .
‘আমাদেরকে সোজা পথ দেখান। আপনার অনুগ্রহ প্রাপ্ত বান্দাদের অনুসৃত পথ। তাদের পথ নয় যারা আপনার বিরাগ ভাজন-ক্রোধক্লিষ্ট ও পথভ্রষ্ঠ। [ফাতেহা : ৬-৭]
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا . ﴿فصلت : 30﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ন হয় ফিরিশ্তা এবং বলে, ‘তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০-৩২] আল্লাহ আরো বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ .
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে তাদের কোন ভয় নেই তারা দু:খিত ও হবে না।’ [সূরা আহকাফ : ১৩]
(২) জান্নাতে প্রবেশ করা। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন—
وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ . ﴿فصلت : 30﴾
‘এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০] আল্লাহ আরো বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ . أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ . ﴿الأحقاف : 14- 13﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে তাদের কোন ভয় নেই তারা দু:খিত ও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেথায় তারা স্থায়ী হবে তারা যা করত তার পুরস্কার স্বরূপ।’ [সূরা আহকাফ : ১৩]
(৩) ফিরিশতাদের বন্ধুত্ব অর্জন তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ। যারা অবিচল থাকে ফিরিশতারা তাদের বলবে—
نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ . ﴿فصلت : 31﴾
‘আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩১]
ইবনু কাসীর রহ. এ আয়াতের তাফসীরে উলেখ করেন, ‘অবিচল ঈমানদারকে মৃত্যুকালে ফরিশতারা উপস্থিত হয়ে বলবে : ‘আমরা পার্থিব জীবনে তোমাদের বন্ধু ছিলাম, আল্লাহর নির্দেশে সর্বদা তোমাদের সং&গ দিয়ে তোমাদের সাহায্য করেছি, বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেছি এমনিভাবে পরকালে তোমাদের বন্ধু হিসেবে থাকব, কবরে তোমাদের একাকীত্ব দূর করব, কিয়ামতের সময় তোমাদের সাথে থাকব, হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশের সময় তোমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা দেব, পুলসিরাত পার করে তোমাদের জান্নাতে পৌছে দেব।’ [তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/১১৭]
(৪) আল্লাহ তাআলার দয়া ও ক্ষমা লাভ : যেমন তিনি বলেছেন—
نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ . ﴿فصلت : 32﴾
‘এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩২]
এ আয়াতের তাফসীরে শায়খ সা’দী রহ. বলেছেন : ‘এ মহা পুরস্কার ও স্থায়ী সুখ-শান্তি এবং মেহমানদারী হল সেই পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে যিনি পাপসমূহ ক্ষমা করেছেন। সৎকাজের সামর্থ দিয়েছেন। অত:পর সৎকর্মগুলোকে কবুল করেছেন।’ [তাইসিরুল কারিমির রহমান ফি তাফসিরে কালামিল মান্নান। পৃ : ৬৯৪]
(৫) জীবিকার সচ্ছলতা : আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَأَنْ لَوِ اسْتَقَامُوا عَلَى الطَّرِيقَةِ لَأَسْقَيْنَاهُمْ مَاءً غَدَقًا . لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَمَنْ يُعْرِضْ عَنْ ذِكْرِ رَبِّهِ يَسْلُكْهُ عَذَابًا صَعَدًا . ﴿الجن : 16-17﴾
‘তারা যদি সত্যপথে অবিচল থাকত তাদেরকে আমি প্রচুর বারি বর্ষনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম। যা দ্বারা আমি তাদের পরীক্ষা করতাম। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ হতে বিমুখ হয় তিনি তাকে দু:সহ শাস্তিতে প্রবেশ করাবেন।’ [সূরা জিন : ১৬-১৭]
এ আয়াতের অর্থ হল যারা ঈমান আনবে ও এর উপর অবিচল থাকবে আমি তাদেরকে অঢেল সম্পদ ও জীবিকায় প্রাচুর্যতা দান করব। আরো দান করব প্রচুর বৃষ্টি, কারণ, আল্লাহর অনুগ্রহ ও জীবিকা মূলত বৃষ্টির ভেতর-ই। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ مِنْ رَبِّهِمْ لَأَكَلُوا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ أَرْجُلِهِمْ مِنْهُمْ أُمَّةٌ مُقْتَصِدَةٌ وَكَثِيرٌ مِنْهُمْ سَاءَ مَا يَعْمَلُونَ ﴿المائدة : 66﴾
‘যদি তারা তওরাত-ইঞ্জিল এবং তাদের প্রতি অবতীর্ণ বিধান বাস্তবায়ন করত, তাহলে তারা মাথার উপর ও পায়ের নিচ হতে জীবিকা ভোগ করত। হ্যাঁ, তাদের কতক মধ্যম পন্থি। তাবে তাদের অনেকেই অসৎ কর্মাব্যস্ত-অবাধ্য-ফাসেক। [মায়েদা : ৬৬] অন্যত্র বলেন—
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿الأعراف : 96﴾
‘যদি সে গ্রামবাসীরা ইমান গ্রহণ করত ও তাকওয়ার ব্রত নিত, আমরা তাদের উপর আসমান-জমিনের বরকতের দ্বারসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু না-তারা মিথ্যারোপ করেছে, আমিও তাদের কুকর্মের কারণে যমের ধরা-ধরেছি। [আরাফ : ৬৯]
(৬) পথভ্রষ্ঠ হওয়ার খেতাব থেকে মুক্তি পাওয়া :
ইহুদী ও খৃষ্টানগন সৎপথ লাভ করেছিল কিন্তু তারা এর উপর অবিচল থাকতে পারেনি। পরিণতিতে আল্লাহ তাদের বিভ্রান্ত ও ক্রোধনিপতিত বলে আখ্যা দিয়ে আমাদেরকে প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন ‘আমরা যেন তাদের মত না হই।’ যেমন আমরা সালাতে বলি—
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ . صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ . ﴿الفاتحة : 6-7﴾
‘আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয় যারা ক্রোধনিপতিত ও পথভ্রষ্ঠ। [ফাতেহা : ৬-৭]
(৭) আল্লাহর ক্রোধ হতে নাজাত : এরশাদ হচ্ছে-
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ . صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ .
‘আমাদেরকে সোজা পথ দেখান। আপনার অনুগ্রহ প্রাপ্ত বান্দাদের অনুসৃত পথ। তাদের পথ নয় যারা আপনার বিরাগ ভাজন-ক্রোধক্লিষ্ট ও পথভ্রষ্ঠ। [ফাতেহা : ৬-৭]
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ . ﴿عنكبوت : 69﴾
‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ [সূরা আনকাবুত : ৬৯]
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে অটল ও অবিচল থাকতে চেষ্টা করবে আল্লাহ তার প্রচেষ্টা কবুল করবেন।
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ . ﴿عنكبوت : 69﴾
‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ [সূরা আনকাবুত : ৬৯]
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে অটল ও অবিচল থাকতে চেষ্টা করবে আল্লাহ তার প্রচেষ্টা কবুল করবেন।
সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠা ও সকল প্রকার নেক আমল একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করার মাধ্যমে ইসলামে অবিচল থাকা যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آَدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ . وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ . ﴿يـس : 60-61﴾
‘হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই এবাদত কর, এটাই সরল পথ।’ [সূরা ইয়াসীন : ৬০-৬১] আবু বকর সিদ্দীক রা.—যিনি ছিলেন আল্লাহর নবীর পর উম্মতে মুসলিমার সর্বশ্রেষ্ঠ অবিচল ব্যক্তি - তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইস্তেকামাত কি ? তিনি বললেন :
ألا تشرك بالله شيئا . ( مدارج السالكين 2/108)
‘আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না।’ উসমান রা. বলেন :
استقيموا : أخلصوا العمل لله . ( مدارج السالكين 2/109)
‘তোমরা অটল অবিচল থাক অর্থাৎ আল্লাহর জন্যই সকল কাজ-কর্ম করবে।’ মুজাহিদ রহ. বলেন :—
استقيموا على شهادة أن لا إله إلا الله حتى لحقوا بالله . ( مدارج السالكين 2/109)
‘তোমরা মৃত্যু পর্যন্ত এ স্বাক্ষী প্রদানে অবিচল থাকবে যে, আল্লাহ ব্যতিত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই।’ (মাদারেজুস সালেকীন)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آَدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ . وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ . ﴿يـس : 60-61﴾
‘হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই এবাদত কর, এটাই সরল পথ।’ [সূরা ইয়াসীন : ৬০-৬১] আবু বকর সিদ্দীক রা.—যিনি ছিলেন আল্লাহর নবীর পর উম্মতে মুসলিমার সর্বশ্রেষ্ঠ অবিচল ব্যক্তি - তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইস্তেকামাত কি ? তিনি বললেন :
ألا تشرك بالله شيئا . ( مدارج السالكين 2/108)
‘আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না।’ উসমান রা. বলেন :
استقيموا : أخلصوا العمل لله . ( مدارج السالكين 2/109)
‘তোমরা অটল অবিচল থাক অর্থাৎ আল্লাহর জন্যই সকল কাজ-কর্ম করবে।’ মুজাহিদ রহ. বলেন :—
استقيموا على شهادة أن لا إله إلا الله حتى لحقوا بالله . ( مدارج السالكين 2/109)
‘তোমরা মৃত্যু পর্যন্ত এ স্বাক্ষী প্রদানে অবিচল থাকবে যে, আল্লাহ ব্যতিত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই।’ (মাদারেজুস সালেকীন)
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বিশ্বের সকল মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অটল ও অবিচল ব্যক্তি। অটলতা ও অবিচলতায় তিনি সকল মানুষের আদর্শ। আল্লাহ তার অবিচলতা সম্পর্কে নিজেই স্বাক্ষী দিচ্ছেন :
إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ . ﴿الحج : 67﴾
‘তুমি তো সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত।’ [সূরা হজ্ব : ৬৭] শুধু তাই নয় তিনি অবিচল ও অটল থাকতে মানুষকে আহবান জানাতেন। যেমন আল্লাহ বলেন :—
وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿الشورى : 52﴾
‘তুমি তো প্রদর্শন কর কেবল সরল পথ।’ [সূরা শূরা : ৫২]
إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ . ﴿الحج : 67﴾
‘তুমি তো সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত।’ [সূরা হজ্ব : ৬৭] শুধু তাই নয় তিনি অবিচল ও অটল থাকতে মানুষকে আহবান জানাতেন। যেমন আল্লাহ বলেন :—
وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿الشورى : 52﴾
‘তুমি তো প্রদর্শন কর কেবল সরল পথ।’ [সূরা শূরা : ৫২]
যে বাড়াবাড়ি করে সে আল্লাহর রাসূলের সুন্নাতের বিরোধী। সে কখনো আল্লাহর সাহায্য পায় না। সে বাড়াবাড়ি করতে করতে ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে পড়ে। ফলে সে কাজ-কর্মে অবিচল থাকতে পারে না।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন : ‘আমাদের পূর্ববর্তী বহু ইসলামী পন্ডিত দুটো মূলনীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে উল্যেখ করেছেন। তা হল ‘সকল কাজ-কর্মে মধ্যপন্থা অবলম্বন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা। এ দুটো মূলনীতি অনুসরণ করলে সে ইসলামের সকল কাজে অবিচল থাকতে পারবে।’ [মাদারেজুস সালেকীন]
বাড়াবাড়ির পথ ধরে শয়তান মানুষকে মূল পথ থেকে সরিয়ে নেয়। আর সুন্নাহকে কাঠোরভাবে অনুসরণ না করা মূলপথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন : ‘আমাদের পূর্ববর্তী বহু ইসলামী পন্ডিত দুটো মূলনীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে উল্যেখ করেছেন। তা হল ‘সকল কাজ-কর্মে মধ্যপন্থা অবলম্বন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা। এ দুটো মূলনীতি অনুসরণ করলে সে ইসলামের সকল কাজে অবিচল থাকতে পারবে।’ [মাদারেজুস সালেকীন]
বাড়াবাড়ির পথ ধরে শয়তান মানুষকে মূল পথ থেকে সরিয়ে নেয়। আর সুন্নাহকে কাঠোরভাবে অনুসরণ না করা মূলপথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ।
শয়তানের আনুগত্য থেকে বের হয়ে আসার একমাত্র পথ এটাই। আল্লাহ তাআলা বলেন :
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آَدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ . وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ . ﴿يـس : 60-61﴾
‘হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই এবাদত কর, এটাই সরল পথ।’ [সূরা ইয়াসীন : ৬০-৬১]
অটল ও অবিচল থাকার ক্ষেত্রে এটা সবচেয়ে বড় সহায়ক।
وَلَوْ أَنَّا كَتَبْنَا عَلَيْهِمْ أَنِ اقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ أَوِ اخْرُجُوا مِنْ دِيَارِكُمْ مَا فَعَلُوهُ إِلَّا قَلِيلٌ مِنْهُمْ وَلَوْ أَنَّهُمْ فَعَلُوا مَا يُوعَظُونَ بِهِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ وَأَشَدَّ تَثْبِيتًا . وَإِذًا لَآَتَيْنَاهُمْ مِنْ لَدُنَّا أَجْرًا عَظِيمًا ﴿النساء : 67﴾
‘আমরা যদি তাদের উপর ধার্য করে দিতাম, তোমরা পরস্পরকে হত্যা কর অথবা দেশান্তর কর। তাদের কম সংখ্যক লোকই তা বাস্তবায়ন করত। হ্যাঁ, যদি তারা উপদেশ বাস্তবায়ন করত, তাদের জন্য খুব ভাল হত এবং এটাই তাদের কঠোর দৃঢ়তা হত। আর আমাদের পক্ষ হতে আমরাও তাদের প্রচুর ও বিস্তৃত প্রতিদান দিতাম।’ [নিসা : ৬৬-৬৭]
আলী ইবনে আবি তালিব ও ইবনে আববাস রা. বলেন—
استقاموا : أدوا الفرائض . ( مدارج السالكين :2/109)
তারা অবিচল থেকেছে অর্থাৎ ফরজ সমূহ নিয়মিত আদায় করেছে।
হাসান রহ. বলেছেন—
استقاموا على أمر الله فعملوا بطاعته واجتنبوا معصيته . ( مدارج السالكين :2/109)
তারা অবিচল থেকেছে অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর তাআলার হুকুম মেনে চলেছে ও তার নিষেধ থেকে বিরত থেকেছে। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেছেন—
استقاموا على محبته وعبوديته، فلم يلتفتوا عنه يمنة ولا يسرة . ( مدارج السالكين :2/109)
তারা সর্বদা আল্লাহ তাআলার মহাববত এবং তার দাসত্ব আদায়ে অবিচল থেকেছে। এক্ষেত্রে এদিক-সেদিকও তাকায়নি। । (মাদারিজুস সালেকীন)
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آَدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ . وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ . ﴿يـس : 60-61﴾
‘হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই এবাদত কর, এটাই সরল পথ।’ [সূরা ইয়াসীন : ৬০-৬১]
অটল ও অবিচল থাকার ক্ষেত্রে এটা সবচেয়ে বড় সহায়ক।
وَلَوْ أَنَّا كَتَبْنَا عَلَيْهِمْ أَنِ اقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ أَوِ اخْرُجُوا مِنْ دِيَارِكُمْ مَا فَعَلُوهُ إِلَّا قَلِيلٌ مِنْهُمْ وَلَوْ أَنَّهُمْ فَعَلُوا مَا يُوعَظُونَ بِهِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ وَأَشَدَّ تَثْبِيتًا . وَإِذًا لَآَتَيْنَاهُمْ مِنْ لَدُنَّا أَجْرًا عَظِيمًا ﴿النساء : 67﴾
‘আমরা যদি তাদের উপর ধার্য করে দিতাম, তোমরা পরস্পরকে হত্যা কর অথবা দেশান্তর কর। তাদের কম সংখ্যক লোকই তা বাস্তবায়ন করত। হ্যাঁ, যদি তারা উপদেশ বাস্তবায়ন করত, তাদের জন্য খুব ভাল হত এবং এটাই তাদের কঠোর দৃঢ়তা হত। আর আমাদের পক্ষ হতে আমরাও তাদের প্রচুর ও বিস্তৃত প্রতিদান দিতাম।’ [নিসা : ৬৬-৬৭]
আলী ইবনে আবি তালিব ও ইবনে আববাস রা. বলেন—
استقاموا : أدوا الفرائض . ( مدارج السالكين :2/109)
তারা অবিচল থেকেছে অর্থাৎ ফরজ সমূহ নিয়মিত আদায় করেছে।
হাসান রহ. বলেছেন—
استقاموا على أمر الله فعملوا بطاعته واجتنبوا معصيته . ( مدارج السالكين :2/109)
তারা অবিচল থেকেছে অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর তাআলার হুকুম মেনে চলেছে ও তার নিষেধ থেকে বিরত থেকেছে। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেছেন—
استقاموا على محبته وعبوديته، فلم يلتفتوا عنه يمنة ولا يسرة . ( مدارج السالكين :2/109)
তারা সর্বদা আল্লাহ তাআলার মহাববত এবং তার দাসত্ব আদায়ে অবিচল থেকেছে। এক্ষেত্রে এদিক-সেদিকও তাকায়নি। । (মাদারিজুস সালেকীন)
১১১
(৬) আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা ও যে সকল বিষয় তার ক্রোধের কারণ তা থেকে দুরত্ব বজায় রাখা।
(৭) ইসলামী জ্ঞান অর্জনে আগ্রহ :ইসলামী জ্ঞান বা ইলমে দ্বীন হল আলোকবর্তিকা স্বরূপ। যেখানে আলো থাকে সেখানে অন্ধকার আসতে পারে না। অন্ধকার না আসা অবিচল থাকার সহায়ক। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :—
وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَيُؤْمِنُوا بِهِ فَتُخْبِتَ لَهُ قُلُوبُهُمْ وَإِنَّ اللَّهَ لَهَادِ الَّذِينَ آَمَنُوا إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿الحج : 54﴾
‘যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা যেন জানতে পারে যে, এটা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে প্রেরিত সত্য ; অত:পর তারা যেন এতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর যেন এর প্রতি অনুগত হয়। যারা ঈমান এনেছে তাদের অবশ্যই আল্লাহ সরল পথে পরিচালিত করব।’ [সূরা হজ্ব : ৫৪]
وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَيُؤْمِنُوا بِهِ فَتُخْبِتَ لَهُ قُلُوبُهُمْ وَإِنَّ اللَّهَ لَهَادِ الَّذِينَ آَمَنُوا إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿الحج : 54﴾
‘যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা যেন জানতে পারে যে, এটা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে প্রেরিত সত্য ; অত:পর তারা যেন এতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর যেন এর প্রতি অনুগত হয়। যারা ঈমান এনেছে তাদের অবশ্যই আল্লাহ সরল পথে পরিচালিত করব।’ [সূরা হজ্ব : ৫৪]
আল্লাহ রাববুল আলামীন দাওয়াতের নির্দেশের সাথে অবিচল থাকার বিষয় উলেখ করে বুঝিয়েছেন যারা মানুষকে সত্যের পথে আহবান করবে তারা সত্যে অবিচল থাকবে। যেমন তিনি বলেন :
فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ . ﴿الشورى : 15﴾
‘সুতরাং তুমি তাঁর দিকে আহবান কর ও এর উপর অটল থাকো যেভাবে তুমি আদিষ্ট হয়েছে।’ [সূরা শুরা : ১৫]
আল্লাহ তাআলা অবিচল থাকার আদেশ দানের পর মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার প্রসঙ্গ উলেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেন :
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ . ﴿فصلت : 33﴾
‘কথায়, ঐ ব্যক্তির চেয়ে কে উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে আমি তো মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত।’ [সূরা হামীম সাজদা : ৩৩]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ فَلَا يُنَازِعُنَّكَ فِي الْأَمْرِ وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ . وَإِنْ جَادَلُوكَ فَقُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُونَ ﴿الحج : 68﴾
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য এবাদতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আপনি তাদেরকে পালনকর্তার দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল পথেই আছেন। আর তারা যদি আপনার সাথে বিতর্কে উপনিত হয় তাহলে আপনি বলে দিন তোমরা যা করছো সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত। ’ [হজ : ৬৭]
فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ . ﴿الشورى : 15﴾
‘সুতরাং তুমি তাঁর দিকে আহবান কর ও এর উপর অটল থাকো যেভাবে তুমি আদিষ্ট হয়েছে।’ [সূরা শুরা : ১৫]
আল্লাহ তাআলা অবিচল থাকার আদেশ দানের পর মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার প্রসঙ্গ উলেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেন :
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ . ﴿فصلت : 33﴾
‘কথায়, ঐ ব্যক্তির চেয়ে কে উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে আমি তো মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত।’ [সূরা হামীম সাজদা : ৩৩]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ فَلَا يُنَازِعُنَّكَ فِي الْأَمْرِ وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ . وَإِنْ جَادَلُوكَ فَقُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُونَ ﴿الحج : 68﴾
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য এবাদতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আপনি তাদেরকে পালনকর্তার দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল পথেই আছেন। আর তারা যদি আপনার সাথে বিতর্কে উপনিত হয় তাহলে আপনি বলে দিন তোমরা যা করছো সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত। ’ [হজ : ৬৭]
আল্লাহর দ্বীনে অটল থাকার সংকল্প করলে সকল ভাল কাজে অটল থাকা যায়।
মুজাহিদ রহ. বলেন :
استقاموا على شهادة أن لا إله إلا الله حتى لحقوا بالله . ( مدارج السالكين 2/109)
‘তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত লাভ পর্যন্ত এ স্বাক্ষীর উপর অবিচল থাকেছে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন উপাস্য নেই।’
মুজাহিদ রহ. বলেন :
استقاموا على شهادة أن لا إله إلا الله حتى لحقوا بالله . ( مدارج السالكين 2/109)
‘তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত লাভ পর্যন্ত এ স্বাক্ষীর উপর অবিচল থাকেছে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন উপাস্য নেই।’
قال ابن عباس رضى الله عنهما في قول الله عز وجل : فاستقم كما أمرت ومن تاب معك ولا تطغوا إنه بما تعملون بصير . ﴿هود : 112﴾ ما نزلت على رسول الله صلى الله عليه وسلم في جميع القرآن آية أشد ولا أشق عليه من هذه الآية ولذلك قال صلى الله عليه وسلم لأصحابه حين قالوا قد أسرع إليك الشيب فقال : شيبتني هود وإخوتها . شرح النووي على مسلم (1/12)
ইবনে আববাস রা. বলেন, আল্লাহ তাআলার বানী فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ‘সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে অবিচল থাক এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারাও অবিচল থাকুক; এবং সীমালংঘন করবে না। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ [সূরা হুদ : ১১২] সূরা হুদ এর এ আয়াতের চেয়ে কঠিন কোন আয়াত আল্লাহর রাসূলের উপর নাযিল হয়নি। সাহাবাগন যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, আপনি তো তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে গেলেন। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হুদ ও তার ভাইয়েরা (অথ্যাৎ অবিচল থাকার এই আয়াত এবং এ জাতীয় অন্যান্য আয়াত) আমাকে বুড়ো বানিয়েছে।
ইবনে আববাস রা. বলেন, আল্লাহ তাআলার বানী فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ‘সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে অবিচল থাক এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারাও অবিচল থাকুক; এবং সীমালংঘন করবে না। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ [সূরা হুদ : ১১২] সূরা হুদ এর এ আয়াতের চেয়ে কঠিন কোন আয়াত আল্লাহর রাসূলের উপর নাযিল হয়নি। সাহাবাগন যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, আপনি তো তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে গেলেন। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হুদ ও তার ভাইয়েরা (অথ্যাৎ অবিচল থাকার এই আয়াত এবং এ জাতীয় অন্যান্য আয়াত) আমাকে বুড়ো বানিয়েছে।
ইতিহাসে যারা নীতিতে অটল ও অবিচল থাকার অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তাদের জীবনী পাঠ করলে অবিচল থাকার উৎসাহ সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী হলেন নবীগন। তারা যে কোন বিপদ- আপদ, জুলুম-নির্যাতন এমনকি হত্যার সম্মুখীন হয়েও নীতি ও আদর্শে অবিচল থেকেছেন। তাদের পরে সাহাবায়ে কেরাম, এর পর তাদের অনুসারীগন এবং এরপর তাদের পরবর্তীগন এ ধারাবাহিকতায় আজ পর্যন্ত যারা অতিবাহিত হয়ে গেছেন তাদের অবিচল থাকার ইতিহাস আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।
পবিত্র কোরআন একাগ্রচিত্তে তেলাওয়াত ও অধ্যায়ন করলে দ্বীনের উপর অবিচল থাকার উৎসাহ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
إِنَّ هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ . ﴿الإسراء : 9﴾
‘এই কোরআন হিদায়াত করে সেই পথের দিকে যা সুদৃঢ়।’ [সূরা ইসরা : ৯] আল্লাহ আরো বলেন :—
إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ . لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَقِيمَ . وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ . ﴿التكوير : 29﴾
এটা তো কেবল বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ, তার জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সোজা চলতে চায়। তোমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না। [তাকওয়ীর : ২৭-২৯] আরো বলেন—
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ . ﴿المائدة : 15﴾
‘তোমাদের কাছে, আল্লাহর পক্ষ হতে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। [মায়েদা : ১৫]
فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِي أُوحِيَ إِلَيْكَ إِنَّكَ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿الزخرف : 43﴾
‘সুতরাং তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর। তুমিই সরল পথে রয়েছে।’ [সূরা যুখরুফ : ৪৩] কোরআন শ্রবন করার পর জিন জাতিও এ বিষয়টি ভাল করে উপলব্দি করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
قَالُوا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنْزِلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَى مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ وَإِلَى طَرِيقٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿الأحقاف : 30﴾
‘তারা বলেছে, ‘ও আমাদের ভায়েরা, আমরা একটি কিতাব শুনেছি, যা হজরত মুসা আ. এর পর নাজিল করা হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাব সত্যায়ন করে, সত্য ধর্ম ও সঠিক পথের দিকে আহবান করে। [আহকাফ : ৩০]
إِنَّ هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ . ﴿الإسراء : 9﴾
‘এই কোরআন হিদায়াত করে সেই পথের দিকে যা সুদৃঢ়।’ [সূরা ইসরা : ৯] আল্লাহ আরো বলেন :—
إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ . لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَقِيمَ . وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ . ﴿التكوير : 29﴾
এটা তো কেবল বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ, তার জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সোজা চলতে চায়। তোমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না। [তাকওয়ীর : ২৭-২৯] আরো বলেন—
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ . ﴿المائدة : 15﴾
‘তোমাদের কাছে, আল্লাহর পক্ষ হতে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। [মায়েদা : ১৫]
فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِي أُوحِيَ إِلَيْكَ إِنَّكَ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿الزخرف : 43﴾
‘সুতরাং তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর। তুমিই সরল পথে রয়েছে।’ [সূরা যুখরুফ : ৪৩] কোরআন শ্রবন করার পর জিন জাতিও এ বিষয়টি ভাল করে উপলব্দি করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
قَالُوا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنْزِلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَى مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ وَإِلَى طَرِيقٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿الأحقاف : 30﴾
‘তারা বলেছে, ‘ও আমাদের ভায়েরা, আমরা একটি কিতাব শুনেছি, যা হজরত মুসা আ. এর পর নাজিল করা হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাব সত্যায়ন করে, সত্য ধর্ম ও সঠিক পথের দিকে আহবান করে। [আহকাফ : ৩০]
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন:
وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنْتُمْ تُتْلَى عَلَيْكُمْ آَيَاتُ اللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُ وَمَنْ يَعْتَصِمْ بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿آل عمران : 101﴾
‘কি রূপে তোমরা সত্য প্রত্যাখ্যান করবে যখন আল্লাহর আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট পঠিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে তাঁর রাসূল রয়েছেন? কেহ আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করলে সে অবশ্যই সরল পথে পরিচালিত হবে।’ [সূরা আলে ইমরান : ১০১] অর্থাৎ যে আল্লাহকে ধারণ করে ও তার দ্বীনের অনুসরণ করে সে তার পথে অবিচল থাকতে পারবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
فَأَمَّا الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا . ﴿النساء : 175﴾
‘সুতরাং যারা আল্লাহর উপর ইমান আনবে এবং তাতে অবিচল থাকবে, আল্লাহ তাদের স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহে প্রবেশ করাবেন। এবং তার পর্যন্ত পৌছার জন্য সঠিক পথ দেখাবেন। [নিসা : ১৭৫]
وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنْتُمْ تُتْلَى عَلَيْكُمْ آَيَاتُ اللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُ وَمَنْ يَعْتَصِمْ بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿آل عمران : 101﴾
‘কি রূপে তোমরা সত্য প্রত্যাখ্যান করবে যখন আল্লাহর আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট পঠিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে তাঁর রাসূল রয়েছেন? কেহ আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করলে সে অবশ্যই সরল পথে পরিচালিত হবে।’ [সূরা আলে ইমরান : ১০১] অর্থাৎ যে আল্লাহকে ধারণ করে ও তার দ্বীনের অনুসরণ করে সে তার পথে অবিচল থাকতে পারবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
فَأَمَّا الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا . ﴿النساء : 175﴾
‘সুতরাং যারা আল্লাহর উপর ইমান আনবে এবং তাতে অবিচল থাকবে, আল্লাহ তাদের স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহে প্রবেশ করাবেন। এবং তার পর্যন্ত পৌছার জন্য সঠিক পথ দেখাবেন। [নিসা : ১৭৫]
মুসলিমগন আল্লাহর কাছে তার দ্বীনে অবিচল থাকার জন্য সালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করে থাকেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে সূরা ফাতেহাতে বলে থাকেন :
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ . صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ . ﴿الفاتحة : 6-7﴾
‘আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয় যারা ক্রোধনিপতিত ও পথভ্রষ্ঠ।’ [সূরা ফাতেহা : ৬-৭]
আল্লাহর কাছে বান্দা যা কিছু প্রার্থনা করবে তা পাবে। যদি তার দ্বীনে অবিচল ও অটল থাকার তাওফীক বা সামর্থ চাওয়া হয় তাহলে কেন পাওয়া যাবে না ? অবশ্যই পাওয়া যাবে। তিনি আকাশ মন্ডলী ও সকল বিশ্বের মালিক। যার কোন শরীক নেই, যিনি কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। যিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান, তিনি তার অনুগ্রহে বান্দাকে অবিচল থাকার তাওফীক দেবেন। এরশাদ হচ্ছে—
وَاللَّهُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿البقرة : 213﴾
বলেন, আল্লাহ যাকে জান পথভ্রষ্ট করেন, আর যাকে জান সঠিক পথের দিশা দেন। [আন-আম : ৩৯]
আরো এরশাদ হচ্ছে- বলেন, আল্লাহ তাআলা-ই যাকে ইচ্ছে সঠিক পথ দেখান। [বাকারা : ২১৩]
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ . صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ . ﴿الفاتحة : 6-7﴾
‘আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয় যারা ক্রোধনিপতিত ও পথভ্রষ্ঠ।’ [সূরা ফাতেহা : ৬-৭]
আল্লাহর কাছে বান্দা যা কিছু প্রার্থনা করবে তা পাবে। যদি তার দ্বীনে অবিচল ও অটল থাকার তাওফীক বা সামর্থ চাওয়া হয় তাহলে কেন পাওয়া যাবে না ? অবশ্যই পাওয়া যাবে। তিনি আকাশ মন্ডলী ও সকল বিশ্বের মালিক। যার কোন শরীক নেই, যিনি কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। যিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান, তিনি তার অনুগ্রহে বান্দাকে অবিচল থাকার তাওফীক দেবেন। এরশাদ হচ্ছে—
وَاللَّهُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . ﴿البقرة : 213﴾
বলেন, আল্লাহ যাকে জান পথভ্রষ্ট করেন, আর যাকে জান সঠিক পথের দিশা দেন। [আন-আম : ৩৯]
আরো এরশাদ হচ্ছে- বলেন, আল্লাহ তাআলা-ই যাকে ইচ্ছে সঠিক পথ দেখান। [বাকারা : ২১৩]
অটল ও অবিচল থাকার ব্যাপারে আমরা অনেক সময় অলসতা ও শিথিলতা প্রদর্শন করে থাকি। এ অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এর ক্ষতি পূরণ করে দেয়া উচিত। ইবনু রজব রহ. বলেন, আল্লাহ যে বলেছেন—
فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ . ﴿فصلت : 6﴾
‘তোমরা অটল থাকো ও ক্ষমা প্রার্থনা কর’ এর উদ্দেশ্য হল অটল ও অবিচল থাকতে তোমরা যে অলসতা ও শিথিলতা দেখিয়ে থাকো তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে আবার অবিচল পথে চলে আস। [জামে’ আল-উলূম ওয়াল হিকাম: ইবনু রজব]
فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ . ﴿فصلت : 6﴾
‘তোমরা অটল থাকো ও ক্ষমা প্রার্থনা কর’ এর উদ্দেশ্য হল অটল ও অবিচল থাকতে তোমরা যে অলসতা ও শিথিলতা দেখিয়ে থাকো তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে আবার অবিচল পথে চলে আস। [জামে’ আল-উলূম ওয়াল হিকাম: ইবনু রজব]
শেষ পরিণতি বলতে যা বুঝায় তা হল, মানুষ মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ রাববুল আলামীন যা অপছন্দ করেন তা থেকে দূরে থাকবে, সকল পাপাচার থেকে তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তার আনুগত্যে আত্ননিয়োগ করবে ও সৎ কাজ করতে অগ্রণী হবে। এবং এ ভাল অবস্থায় তার ইন্তেকাল হবে। এমন হলেই বলা হবে তার শেষ পরিণতি ভাল হয়েছে। ভাল পরিনতি সম্পর্কে এ কথা হাদিসে এসেছে—
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( إذا أراد الله بعبده خيرا استعمله ) قالوا : كيف يستعمله؟ قال : ( يوفقه لعمل صالح قبل موته ) رواه أحمد (12036)
সাহাবী আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যখন আল্লাহ কোন মানুষের কল্যাণ করতে চান তখন তাকে সুযোগ করে দেন।’’ সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কিভাবে সুযোগ করে দেন ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘মৃত্যুর পূর্বে তাকে সৎকাজ করার সামর্থ দান করেন।’ [আহমদ : ১২০৩৬]
শেষ পরিণতি ভাল হওয়ার কিছু আলামত রয়েছে। কিছু আলামত এমন যা মৃত্যুকালে মুমিন ব্যক্তি নিজে অনুভব করে, মানুষের কাছে প্রকাশ পায় না, আর কিছু আছে যা মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়।
যে আলামতগুলো বান্দা নিজে মৃত্যুকালে উপলদ্ধি করে তা হল : মুত্যুকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ, তাঁর অনুগ্রহ, যার সুসংবাদ ফিরিশ্তারা নিয়ে আসে। যেমন আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ . نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ . نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ ﴿ فصلت :30- 32﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ন হয় ফিরিশ্তা এবং বলে, ‘তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা, এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। ‘আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমরা আদেশ কর।’ এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০-৩২] ফিরিশ্তারা এ সুসংবাদ যেমন মৃত্যুকালে দেয় তেমনি কবরে অবস্থানকালে দেয় এবং কবর থেকে পুনরুত্থানের সময়ও দেবে। হাদিসে এর বর্ণনা এসেছে—
عن عائشة رضي الله عنها قالت : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( من أحب لقاء الله أحب الله لقائه، ومن كره لقاء الله كره الله لقائه ) فقلت يا نبي الله : أكراهية الموت ؟ فكلنا نكره الموت ! فقال : ( ليس كذلك، ولكن المؤمن إذا بشر برحمة الله ورضوانه وجنته أحب لقاء الله فأحب الله لقائه، وإن الكافر إذا بشر بعذاب الله وسخطه كره لقاء الله فكره الله لقائه . رواه مسلم (2684)
আয়েশা রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।’’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে নবী ! সাক্ষাতকে অপছন্দ করার অর্থ কি মৃত্যুকে অপছন্দ করা? আমরাতো সকলেই মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকি! তিনি বললেন : ‘ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। বিষয়টা হল, মুমিন ব্যক্তিকে যখন আল্লাহর রহমত, তার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসতে থাকে। ফলে আল্লাহ তাআলা তার সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসেন। আর যখন আল্লাহর অবাধ্য মানুষকে আল্লাহর শাস্তি ও তার ক্রোধের খবর দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে। ফলে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।’ [মুসলিম : ২৬৮৪]
এ হাদিসে মৃত্যুকে পছন্দ আর অপছন্দ করার যে কথা বলা হয়েছে তা হল মৃত্যু যখন উপস্থিত হয়ে যায় ও তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায় তখনকার সময়। মৃত্যু উপস্থিত হলে মুমিন ব্যক্তি সুসংবাদ পেয়ে মৃত্যুকে ভালবাসে আর আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি তখন মৃত্যুকে ঘৃণা করে।
আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসার প্রমাণ হল পরকালকে সর্বদা পার্থিব জীবনের উপর প্রাধান্য দেবে। দুনিয়াতে চিরদিন অবস্থান করার আশা করবে না বরং পরকালীন জীবনের জন্য সৎকর্মের মাধ্যমে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে থাকবে।
আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করার বিষয়টি হল ঠিক এর বিপরীত। অর্থাৎ তারা দুনিয়ার জীবনকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেয় এবং পরকালের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে না। এদের তিরস্কার করে আল্লাহ বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا ... ﴿يونس : 7﴾
‘নিশ্চয়ই যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট এবং এতে পরিতৃপ্ত থাকে . . .।’ [সূরা ইউনূস : ৭]
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( إذا أراد الله بعبده خيرا استعمله ) قالوا : كيف يستعمله؟ قال : ( يوفقه لعمل صالح قبل موته ) رواه أحمد (12036)
সাহাবী আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যখন আল্লাহ কোন মানুষের কল্যাণ করতে চান তখন তাকে সুযোগ করে দেন।’’ সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কিভাবে সুযোগ করে দেন ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘মৃত্যুর পূর্বে তাকে সৎকাজ করার সামর্থ দান করেন।’ [আহমদ : ১২০৩৬]
শেষ পরিণতি ভাল হওয়ার কিছু আলামত রয়েছে। কিছু আলামত এমন যা মৃত্যুকালে মুমিন ব্যক্তি নিজে অনুভব করে, মানুষের কাছে প্রকাশ পায় না, আর কিছু আছে যা মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়।
যে আলামতগুলো বান্দা নিজে মৃত্যুকালে উপলদ্ধি করে তা হল : মুত্যুকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির সংবাদ, তাঁর অনুগ্রহ, যার সুসংবাদ ফিরিশ্তারা নিয়ে আসে। যেমন আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ . نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ . نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ ﴿ فصلت :30- 32﴾
‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অত:পর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ন হয় ফিরিশ্তা এবং বলে, ‘তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা, এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। ‘আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমরা আদেশ কর।’ এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ [সূরা হা-মীম- সাজদাহ : ৩০-৩২] ফিরিশ্তারা এ সুসংবাদ যেমন মৃত্যুকালে দেয় তেমনি কবরে অবস্থানকালে দেয় এবং কবর থেকে পুনরুত্থানের সময়ও দেবে। হাদিসে এর বর্ণনা এসেছে—
عن عائشة رضي الله عنها قالت : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( من أحب لقاء الله أحب الله لقائه، ومن كره لقاء الله كره الله لقائه ) فقلت يا نبي الله : أكراهية الموت ؟ فكلنا نكره الموت ! فقال : ( ليس كذلك، ولكن المؤمن إذا بشر برحمة الله ورضوانه وجنته أحب لقاء الله فأحب الله لقائه، وإن الكافر إذا بشر بعذاب الله وسخطه كره لقاء الله فكره الله لقائه . رواه مسلم (2684)
আয়েশা রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।’’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে নবী ! সাক্ষাতকে অপছন্দ করার অর্থ কি মৃত্যুকে অপছন্দ করা? আমরাতো সকলেই মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকি! তিনি বললেন : ‘ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। বিষয়টা হল, মুমিন ব্যক্তিকে যখন আল্লাহর রহমত, তার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসতে থাকে। ফলে আল্লাহ তাআলা তার সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসেন। আর যখন আল্লাহর অবাধ্য মানুষকে আল্লাহর শাস্তি ও তার ক্রোধের খবর দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে। ফলে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।’ [মুসলিম : ২৬৮৪]
এ হাদিসে মৃত্যুকে পছন্দ আর অপছন্দ করার যে কথা বলা হয়েছে তা হল মৃত্যু যখন উপস্থিত হয়ে যায় ও তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায় তখনকার সময়। মৃত্যু উপস্থিত হলে মুমিন ব্যক্তি সুসংবাদ পেয়ে মৃত্যুকে ভালবাসে আর আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি তখন মৃত্যুকে ঘৃণা করে।
আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসার প্রমাণ হল পরকালকে সর্বদা পার্থিব জীবনের উপর প্রাধান্য দেবে। দুনিয়াতে চিরদিন অবস্থান করার আশা করবে না বরং পরকালীন জীবনের জন্য সৎকর্মের মাধ্যমে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে থাকবে।
আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে অপছন্দ করার বিষয়টি হল ঠিক এর বিপরীত। অর্থাৎ তারা দুনিয়ার জীবনকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেয় এবং পরকালের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে না। এদের তিরস্কার করে আল্লাহ বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا ... ﴿يونس : 7﴾
‘নিশ্চয়ই যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট এবং এতে পরিতৃপ্ত থাকে . . .।’ [সূরা ইউনূস : ৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
من قال لا إله إلا الله ابتغاء وجه الله ختم له بها دخل الجنة، ومن صام يوما ابتغاء وجه الله ختم له بها دخل الجنة، ومن تصدق بصدقة ختم له بها دخل الجنة . رواه أحمد (23324)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বলবে, ‘আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নেই’ এবং এ কথার সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সওম পালন করবে এবং এ কাজের সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ছদকাহ করবে এবং এর সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [আহমদ : ২৩৩২৪]
من قال لا إله إلا الله ابتغاء وجه الله ختم له بها دخل الجنة، ومن صام يوما ابتغاء وجه الله ختم له بها دخل الجنة، ومن تصدق بصدقة ختم له بها دخل الجنة . رواه أحمد (23324)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বলবে, ‘আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নেই’ এবং এ কথার সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সওম পালন করবে এবং এ কাজের সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ছদকাহ করবে এবং এর সাথে তার জীবন শেষ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [আহমদ : ২৩৩২৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
رباط يوم وليلة خير من صيام شهر وقيامه، وإن مات جرى عليه عمله الذي كان يعمله، وأجري عليه رزقـه، وأمن الفتان . رواه مسلم (1913)
‘আল্লাহর পথে একদিন ও এক রাত সীমান্ত পাহাড়া দেয়া এক মাস ধরে সিয়াম পালন ও একমাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশী কল্যাণকর। যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে তাহলে যে কাজ সে করে যাচিছল মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে, তার রিজিক জারী থাকবে, কবর-হাশরের ফিৎনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।’ [মুসলিম : ১৯১৩]
رباط يوم وليلة خير من صيام شهر وقيامه، وإن مات جرى عليه عمله الذي كان يعمله، وأجري عليه رزقـه، وأمن الفتان . رواه مسلم (1913)
‘আল্লাহর পথে একদিন ও এক রাত সীমান্ত পাহাড়া দেয়া এক মাস ধরে সিয়াম পালন ও একমাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশী কল্যাণকর। যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে তাহলে যে কাজ সে করে যাচিছল মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে, তার রিজিক জারী থাকবে, কবর-হাশরের ফিৎনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।’ [মুসলিম : ১৯১৩]
মৃত্যুর সময় মৃত্যু ব্যক্তির কপালে ঘাম দেখা দিলে বুঝতে হবে তার শেষ পরিণতি ভাল হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
موت المؤمن بعرق الجبين . رواه النسائي (1829) وصححه الألباني .
‘ঈমানদারের মৃত্যু হল কপালের ঘামের সাথে।’ [নাসায়ী : ১৮২৯]
অর্থাৎ যে মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুকালে কপালে ঘাম দেখা যাবে ধরে নেয়া হবে তার ভাল মৃত্যু হয়েছে।
موت المؤمن بعرق الجبين . رواه النسائي (1829) وصححه الألباني .
‘ঈমানদারের মৃত্যু হল কপালের ঘামের সাথে।’ [নাসায়ী : ১৮২৯]
অর্থাৎ যে মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুকালে কপালে ঘাম দেখা যাবে ধরে নেয়া হবে তার ভাল মৃত্যু হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
ما من مسلم يموت يوم الجمعة أو ليلة الجمعة إلا وقـاه الله فتنة القبر . رواه الترمذي (1074) وصححه الألباني .
‘যে মুসলিম শুক্রবার দিবসে অথবা রাতে ইন্তেকাল করবে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।’ [তিরমিজী : ১০৭৪]
শুক্রবার রাত বলতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে বুঝানো হয়ে থাকে।
ما من مسلم يموت يوم الجمعة أو ليلة الجمعة إلا وقـاه الله فتنة القبر . رواه الترمذي (1074) وصححه الألباني .
‘যে মুসলিম শুক্রবার দিবসে অথবা রাতে ইন্তেকাল করবে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।’ [তিরমিজী : ১০৭৪]
শুক্রবার রাত বলতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে বুঝানো হয়ে থাকে।
এ রকম মৃত্যু কয়েক প্রকারে হয়ে থাকে যা নিম্নে তুলে ধরা হল
(ক) আল্লাহর পথে যুদ্ধে নিহত হওয়া, প্লেগ মহামারীতে মৃত্যু বরণ করা, পেটের পীড়া বা কলেরা ডায়রিয়াতে মৃত্যু বরণ করা, পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করা, কিছু চাপা পড়ে মৃত্যু বরণ করা। এদের সকলের মৃত্যু শহীদি মৃত্যু বলে গণ্য করা হয়। প্রমাণ হল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস :—
ما تعدون الشهيد فيكم ؟ قالوا : يا رسول الله ، من قتل في سبيل الله فهو شهيد، قال : إن شهداء أمتي إذا لقليل، قالوا : فمن هم يا رسول الله؟ قال : من قتل في سبيل الله فهو شهيد، ومن مات في سبيل الله فهو شهيد، ومن مات في الطاعون فهو شهيد، ومن مات في البطن فهو شهيد، والغريق شهيد . رواه مسلم (4941)
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কাদের শহীদ বলে গণ্য কর?’ সাহাবাগন উত্তর দিলেন, হে রাসূল ! যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হন তাদের শহীদ বলে গণ্য করা হয়। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদদের সংখ্যা অত্যন্ত কম হবে।’’ সাহাবাগণ বললেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহলে শহীদ কারা ? তিনি বললেন: ‘যে আল্লাহর পথে যুদ্ধে নিহত হয় সে শহীদ। যে আল্লাহর পথে যুদ্ধে (স্বাভাবিক ভাবে) মারা যায় সে শহীদ। যে প্লেগ মহামারীতে মারা যায় সে শহীদ। যে পেটের অশুখে মারা যায় সে শহীদ। যে ডুবে মারা যায় সে শহীদ।’ [মুসলিম : ৪৯৪১।] অন্য হাদিসে এসেছে—
الشهداء خمسة : المطعون، المبطون، الغرق، وصاحب الهدم، والشهيد في سبيل الله . البخاري (653)
‘শহীদ পাঁচ প্রকার : প্লেগে মৃত্যু বরণকারী, পেটের পীড়ায় মৃত্যু বরণকারী, ডুবে মৃত্যু বরণকারী, চাপা পড়ে মৃত্যু বরণকারী ও আল্লাহর পথে যুদ্ধে মৃত্যু বরণকারী।’ [বোখারি : ৬৫৩।]
(খ) সন্তান প্রসবের কারণে মৃত্যু বরণ করা। এটা শুধু মেয়েদের জন্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহীদ এর বর্ণনা করে বলেছেন—
والمرأة التي يقتلها ولدها جمعا رواه أحمد (22684)
‘এবং যে মহিলাকে তার সন্তান হত্যা করেছে।’ [আহমদ : ২২৬৮৪।]
উলামায়ে কেরাম বলেছেন এ হাদিসের অর্থ হল যে মহিলা সন্তান গর্ভ ধারণ অবস্থায় ইন্তেকাল করেছে সে শহীদ বলে গণ্য। আরেক হাদিসে এসেছে
والنفساء شهادة . رواه أحمد (8092)
‘প্রসব কালীন মৃত্যু হল শাহাদাত।’ [আহমাদ : ৮০৯২।] এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় সন্তান প্রসবের পর প্রসবজনিত জটিলতায় ইন্তেকাল করলে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে।
(গ) অগ্নি দগ্ধ বা প্যারালাইসিস হয়ে মৃত্যু বরণকারী শহীদ। যার প্রমাণ,
أنه ... عدد أصنافا من الشهداء فذكر منهم الحرق، وصاحب ذات الجنب . رواه ابن ماجه (2803)
এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক প্রকার শহীদ হিসাব করেছেন, তার ভেতর অগ্নিদগ্ধ এবং প্যারালাইসিস রোগীও রয়েছে। [ইবনে মাজাহ : ২৮০৩।]
(গ) নিজেকে বা নিজের পরিবারের কাউকে অথবা নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
من قتل دون ماله فهو شهيد، ومن قتل دون أهله فهو شهيد، ومن قتل دون دينه فهو شهيد، ومن قتل دون دمه فهو شهيد . رواه أبو داود (4772) ، وصححه الألباني .
‘যে নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের পরিবার-পরিজন রক্ষা করতে যেয়ে নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের ধর্মের জন্য নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের রক্তের জন্য নিহত হয় সে শহীদ।’ [আবু দাউদ : ৪৭৭২।]
একটি কথা মনে রাখা দরকার, তা হল যে বর্ণিত অবস্থা সমূহের কোন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে তার ব্যাপারে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা ঠিক হবে না যে, সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। বরং তার ব্যাপারে আমরা সুসংবাদ গ্রহণ করতে পারি। এমনিভাবে যদি কোন মুসলিম এ সকল আলামতের কোন একটি না নিয়ে মৃত্যু বরণ করে তার ব্যাপারে বলা যাবে না যে লোকটি আসলে ভাল নয়। কে জান্নাত বাসী হয়েছে আর কার মৃত্যু খারাপ হয়েছে ইত্যাদি গায়েব বা অদৃশ্যের খবর। আর কোন মানুষই গায়েবের খবর রাখে না।
(ক) আল্লাহর পথে যুদ্ধে নিহত হওয়া, প্লেগ মহামারীতে মৃত্যু বরণ করা, পেটের পীড়া বা কলেরা ডায়রিয়াতে মৃত্যু বরণ করা, পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করা, কিছু চাপা পড়ে মৃত্যু বরণ করা। এদের সকলের মৃত্যু শহীদি মৃত্যু বলে গণ্য করা হয়। প্রমাণ হল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস :—
ما تعدون الشهيد فيكم ؟ قالوا : يا رسول الله ، من قتل في سبيل الله فهو شهيد، قال : إن شهداء أمتي إذا لقليل، قالوا : فمن هم يا رسول الله؟ قال : من قتل في سبيل الله فهو شهيد، ومن مات في سبيل الله فهو شهيد، ومن مات في الطاعون فهو شهيد، ومن مات في البطن فهو شهيد، والغريق شهيد . رواه مسلم (4941)
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কাদের শহীদ বলে গণ্য কর?’ সাহাবাগন উত্তর দিলেন, হে রাসূল ! যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হন তাদের শহীদ বলে গণ্য করা হয়। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদদের সংখ্যা অত্যন্ত কম হবে।’’ সাহাবাগণ বললেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহলে শহীদ কারা ? তিনি বললেন: ‘যে আল্লাহর পথে যুদ্ধে নিহত হয় সে শহীদ। যে আল্লাহর পথে যুদ্ধে (স্বাভাবিক ভাবে) মারা যায় সে শহীদ। যে প্লেগ মহামারীতে মারা যায় সে শহীদ। যে পেটের অশুখে মারা যায় সে শহীদ। যে ডুবে মারা যায় সে শহীদ।’ [মুসলিম : ৪৯৪১।] অন্য হাদিসে এসেছে—
الشهداء خمسة : المطعون، المبطون، الغرق، وصاحب الهدم، والشهيد في سبيل الله . البخاري (653)
‘শহীদ পাঁচ প্রকার : প্লেগে মৃত্যু বরণকারী, পেটের পীড়ায় মৃত্যু বরণকারী, ডুবে মৃত্যু বরণকারী, চাপা পড়ে মৃত্যু বরণকারী ও আল্লাহর পথে যুদ্ধে মৃত্যু বরণকারী।’ [বোখারি : ৬৫৩।]
(খ) সন্তান প্রসবের কারণে মৃত্যু বরণ করা। এটা শুধু মেয়েদের জন্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহীদ এর বর্ণনা করে বলেছেন—
والمرأة التي يقتلها ولدها جمعا رواه أحمد (22684)
‘এবং যে মহিলাকে তার সন্তান হত্যা করেছে।’ [আহমদ : ২২৬৮৪।]
উলামায়ে কেরাম বলেছেন এ হাদিসের অর্থ হল যে মহিলা সন্তান গর্ভ ধারণ অবস্থায় ইন্তেকাল করেছে সে শহীদ বলে গণ্য। আরেক হাদিসে এসেছে
والنفساء شهادة . رواه أحمد (8092)
‘প্রসব কালীন মৃত্যু হল শাহাদাত।’ [আহমাদ : ৮০৯২।] এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় সন্তান প্রসবের পর প্রসবজনিত জটিলতায় ইন্তেকাল করলে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে।
(গ) অগ্নি দগ্ধ বা প্যারালাইসিস হয়ে মৃত্যু বরণকারী শহীদ। যার প্রমাণ,
أنه ... عدد أصنافا من الشهداء فذكر منهم الحرق، وصاحب ذات الجنب . رواه ابن ماجه (2803)
এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক প্রকার শহীদ হিসাব করেছেন, তার ভেতর অগ্নিদগ্ধ এবং প্যারালাইসিস রোগীও রয়েছে। [ইবনে মাজাহ : ২৮০৩।]
(গ) নিজেকে বা নিজের পরিবারের কাউকে অথবা নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
من قتل دون ماله فهو شهيد، ومن قتل دون أهله فهو شهيد، ومن قتل دون دينه فهو شهيد، ومن قتل دون دمه فهو شهيد . رواه أبو داود (4772) ، وصححه الألباني .
‘যে নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের পরিবার-পরিজন রক্ষা করতে যেয়ে নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের ধর্মের জন্য নিহত হয় সে শহীদ। যে নিজের রক্তের জন্য নিহত হয় সে শহীদ।’ [আবু দাউদ : ৪৭৭২।]
একটি কথা মনে রাখা দরকার, তা হল যে বর্ণিত অবস্থা সমূহের কোন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে তার ব্যাপারে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা ঠিক হবে না যে, সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। বরং তার ব্যাপারে আমরা সুসংবাদ গ্রহণ করতে পারি। এমনিভাবে যদি কোন মুসলিম এ সকল আলামতের কোন একটি না নিয়ে মৃত্যু বরণ করে তার ব্যাপারে বলা যাবে না যে লোকটি আসলে ভাল নয়। কে জান্নাত বাসী হয়েছে আর কার মৃত্যু খারাপ হয়েছে ইত্যাদি গায়েব বা অদৃশ্যের খবর। আর কোন মানুষই গায়েবের খবর রাখে না।
এক. আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়া অবলম্বন করা :
আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়ার মুল হল সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ তথা একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। এটা হল; সকল প্রকার ফরজ ওয়াজিব আদায়, সব ধরণের পাপাচার থেকে সাবধান থাকা, অবিলম্বে তাওবা করা ও সকল প্রকার ছোট-বড় শিরক থেকে মুক্ত থাকা।
দুই. বাহ্যিক ও আধ্যাতিক অবস্থা উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা:
প্রথমে নিজেকে সংশোধন করার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। যে নিজেকে সংশোধন করার জন্য চেষ্টা করবে আল্লাহ তার নীতি অনুযায়ী তাকে সংশোধনের সামর্থ দান করবেন। এর জন্যে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করা অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করা। এটাই মুক্তির পথ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿النساء : 102﴾
‘হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা।’ [সূরা নিসা : ১০২।]
আল্লাহ আরো বলেন—
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ ﴿الحجر : 99﴾
‘তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের এবাদত কর।’ [সূরা আল-হিজর : ৯৯।] ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য হল সর্বদা পাপ থেকে সাবধান থাকবে। কবীরা গুনাহকে বলা হয় মুবিকাত বা ধ্বংসকারী। আর অব্যাহত ছগীরা গুনাহ কবীরা গুনাহতে পরিণত হয়ে থাকে। বার বার ছগীরা করলে অন্তরে জং ধরে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
إياكم ومحقرات الذنوب، فإنما مثل محقرات الذنوب كقوم نزلوا بطن واد، فجاء ذا بعود، وجاء ذا بعود، حتى أنضجوا خبزتهم، وإن محقرات الذنوب متى يؤخذ بها صاحبها تهلكه . رواه أحمد (22808) وصححه الألباني في الجامع .
‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান থাকবে। ছোট গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত হল সেই পর্যটক দলের মত যারা একটি উপত্যকায় অবস্থান করল। অত:পর একজন একজন করে তাদের জ্বালানী কাঠগুলো অল্প অল্প করে জালিয়ে তাপ নিতে থাকল, পরিনতিতে তাদের রুটি তৈরী করার জন্য কিছুই অবশিষ্ট রইল না।’ [আহমদ : ২২৮০৮।]
কখনো কোন ধরণের পাপকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। প্রখ্যাত সাহাবী আনাস রা. বলেন—
إنكم لتعملون أعمالا هي أدق في أعينكم من الشعر، إن كنا لنعدها على عهد النبي صلى الله عليه وسلم من الموبقات . رواه البخاري (6492)
‘তোমরা অনেক কাজকে নিজেদের চোখে চুলের চেয়েও ছোট দেখ অথচ তা আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ধ্বংসাত্নক কাজ মনে করতাম।’ [বোখারি : ৬৪৯২।]
তিন. আল্লাহ রাববুল আলামীনের কাছে সর্বদা কান্নাকাটি কওে তার কাছে ঈমান ও তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক প্রার্থনা করা।
তিনি যেন তার সন্তুষ্টির সাথে মৃত্যুর তাওফীক দেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই এ দোয়া করতেন—
يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك . رواه الترمذي (2140) ، وصححه، وصححه الألباني في صحيح الجامع (7988)
‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখেন।’ [তিরমিজি : ২১৪০। সহিহ আল-জামে : ৭৯৮৮।] ইউসূফ (আ:) দোয়া করতেন :—
تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ ﴿يوسف : 101﴾
‘তুমি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দাও এবং সৎকর্মপরায়নদের অন্তর্ভূক্ত কর।’ [সূরা ইউসূফ : ১০১]
চার. আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকা
যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকে ও সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণের সাথে সম্পন্ন হবে তার শেষ পরিণতি শুভ হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
من كان آخر كلامه لا إله إلا الله دخل الجنة . أخرجه الحاكم (1299) ، وصححه، وصححه الألباني في صحيح الجامع (6479)
‘যার শেষ কথা হবে ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [সহিহ আল-হাকেম : ১২৯৯। সহিহ আল-জামে : ৬৪৭৯।]
আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়ার মুল হল সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ তথা একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। এটা হল; সকল প্রকার ফরজ ওয়াজিব আদায়, সব ধরণের পাপাচার থেকে সাবধান থাকা, অবিলম্বে তাওবা করা ও সকল প্রকার ছোট-বড় শিরক থেকে মুক্ত থাকা।
দুই. বাহ্যিক ও আধ্যাতিক অবস্থা উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা:
প্রথমে নিজেকে সংশোধন করার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। যে নিজেকে সংশোধন করার জন্য চেষ্টা করবে আল্লাহ তার নীতি অনুযায়ী তাকে সংশোধনের সামর্থ দান করবেন। এর জন্যে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করা অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করা। এটাই মুক্তির পথ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿النساء : 102﴾
‘হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা।’ [সূরা নিসা : ১০২।]
আল্লাহ আরো বলেন—
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ ﴿الحجر : 99﴾
‘তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের এবাদত কর।’ [সূরা আল-হিজর : ৯৯।] ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য হল সর্বদা পাপ থেকে সাবধান থাকবে। কবীরা গুনাহকে বলা হয় মুবিকাত বা ধ্বংসকারী। আর অব্যাহত ছগীরা গুনাহ কবীরা গুনাহতে পরিণত হয়ে থাকে। বার বার ছগীরা করলে অন্তরে জং ধরে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
إياكم ومحقرات الذنوب، فإنما مثل محقرات الذنوب كقوم نزلوا بطن واد، فجاء ذا بعود، وجاء ذا بعود، حتى أنضجوا خبزتهم، وإن محقرات الذنوب متى يؤخذ بها صاحبها تهلكه . رواه أحمد (22808) وصححه الألباني في الجامع .
‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান থাকবে। ছোট গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত হল সেই পর্যটক দলের মত যারা একটি উপত্যকায় অবস্থান করল। অত:পর একজন একজন করে তাদের জ্বালানী কাঠগুলো অল্প অল্প করে জালিয়ে তাপ নিতে থাকল, পরিনতিতে তাদের রুটি তৈরী করার জন্য কিছুই অবশিষ্ট রইল না।’ [আহমদ : ২২৮০৮।]
কখনো কোন ধরণের পাপকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। প্রখ্যাত সাহাবী আনাস রা. বলেন—
إنكم لتعملون أعمالا هي أدق في أعينكم من الشعر، إن كنا لنعدها على عهد النبي صلى الله عليه وسلم من الموبقات . رواه البخاري (6492)
‘তোমরা অনেক কাজকে নিজেদের চোখে চুলের চেয়েও ছোট দেখ অথচ তা আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ধ্বংসাত্নক কাজ মনে করতাম।’ [বোখারি : ৬৪৯২।]
তিন. আল্লাহ রাববুল আলামীনের কাছে সর্বদা কান্নাকাটি কওে তার কাছে ঈমান ও তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক প্রার্থনা করা।
তিনি যেন তার সন্তুষ্টির সাথে মৃত্যুর তাওফীক দেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই এ দোয়া করতেন—
يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك . رواه الترمذي (2140) ، وصححه، وصححه الألباني في صحيح الجامع (7988)
‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখেন।’ [তিরমিজি : ২১৪০। সহিহ আল-জামে : ৭৯৮৮।] ইউসূফ (আ:) দোয়া করতেন :—
تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ ﴿يوسف : 101﴾
‘তুমি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দাও এবং সৎকর্মপরায়নদের অন্তর্ভূক্ত কর।’ [সূরা ইউসূফ : ১০১]
চার. আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকা
যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকে ও সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণের সাথে সম্পন্ন হবে তার শেষ পরিণতি শুভ হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
من كان آخر كلامه لا إله إلا الله دخل الجنة . أخرجه الحاكم (1299) ، وصححه، وصححه الألباني في صحيح الجامع (6479)
‘যার শেষ কথা হবে ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [সহিহ আল-হাকেম : ১২৯৯। সহিহ আল-জামে : ৬৪৭৯।]
খারাপ পরিণতির মৃত্যু হল আল্লাহ রাববুল আলামীনের আদেশ-নিষেধ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা। এমতাবস্থায় সে আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি নিয়ে তার কাছে হাজিরা দিতে রওয়ানা দেয়। কত বড় দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত থাকাকালীন সময়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য যাত্রা করে। মানুষের দুনিয়ার জীবনটা একটা মূল্যবান সম্পদ। যদি সে এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আখিরাতের জন্য ভাল ব্যবসা করতে পারে এবং সেটা যদি লাভজনক হয় তবে তার উভয় জীবন সফল। আর যদি এর ব্যতিক্রম হয় তবে সে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হল যা আর কখনো পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। এটাই হল খারাপ পরিণতির মৃত্যু।
বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে আমৃত্যু তাকওয়া ও আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীর মধ্যে সময় কাটিয়েছে।
এমন অনেক মানুষ দেখা যায় যারা সাড়া জীবন আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে সময় কাটিয়েছে, সকল পাপাচার থেকে মুক্ত থেকেছে কিন্তু মৃত্যুর পুর্বে সে তার এ অবস্থা থেকে ফিরে গিয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
وإن الرجل ليعمل بعمل أهل الجنة حتى ما يكون بينه وبينها إلا ذراع فيسبق عليه الكتاب ، فيعمل بعمل أهل النار فيدخلها . رواه البخاري (3332) ، ومسلم (2643)
‘এক ব্যক্তি সাড়া জীবন জান্নাতের আমল করেছে। জান্নাত ও তার মধ্যে দূরত্ব ছিল মাত্র এক হাত। এমন সময় তার তাকদীর চলে আসল, সে জাহান্নামের কাজ করে বসল, ফলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে গেল।’ [বোখারি : ৩৩৩২। মুসলিম : ২৬৪৩।] এর একটা দৃষ্টান্ত অন্য হাদিসে এসেছে এভাবে—
عن سهل بن سعد رضى الله عنه أن رجلا من المسلمين في إحدى المعارك مع رسول الله صلى الله عليه وسلم أبلى بلاء شديدا، فأعجب الصحابة بذلك، وقالوا : ما أجزأ منا اليوم كما أجزأ فلان، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( أما أنه من أهل النار ) فقال بعض الصحابة : أينا من أهل الجنة إن كان هذا من أهل النار؟ فقال رجل من القوم : أنا صاحبه، سأنظر ماذا يفعل، فتبعه، قال فجرح الرجل جرحا شديدا فاستعجل الموت، فوضع سيفه في الأرض وذبابه بين ثديـيه، ثم تحامل على نفسه فقتل نفسه، فرجع الرجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : أشهد أنك رسول الله، قال : وما ذاك ؟ الرجل الذي ذكرت آنفا أنه من أهل النار، فأعظم الناس ذلك،فقلت أنا لكم به،فخرجت في طلبه، حتى جرح جرحا شديدا فاستعجل الموت، فوضع نصل سيفه بالأرض وذبابه بين ثديـيه، ثم تحامل على نفسه فقتل نفسه،فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( إن الرجل ليعمل عمل أهل الجنة فيما يبدو للناس وهو من أهل النار، وإن الرجل ليعمل عمل أهل النار فيما يبدو للناس وهو من أهل الجنة وفي بعض الروايات زيادة : ( وإنما الأعمال بالخواتيم ). رواه البخاري (6128)
সাহাবী সাহাল বিন সাআদ বলেন, রাসূলুল্লাহর উপস্থিতিতে একবার এক যুদ্ধে দেখলাম এক ব্যক্তি অত্যন্ত বীরত্ব ও বে-পরোয়াভাবে শত্রু বাহিনীর উপর আক্রমন করছে ও তাতে নিজেও প্রচন্ডভাবে আহত হচ্ছে। তার বীরত্ব ও ত্যাগে সাহাবায়ে কেরাম মুগ্ধ হয়ে বললেন, আমাদের কারো পুরস্কার কি এ ব্যক্তির পুরস্কারের মত হবে ? এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘কিন্তু সে তো জাহান্নামী।’ এ কথা শুনে অনেক সাহাবী বললেন, এই ব্যক্তি যদি জাহান্নামী হয় তা হলে জান্নাতে যাবে কে? দলের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল, আমি তার সাথে থাকব, দেখব সে কি করে? সে কথা মত তার সাথে থাকল। দেখা গেল সে খুব মারাত্মক ভাবে আহত হল। ধৈর্য ধারণ করে নিজেকে আর সামলাতে পারল না। নিজের তরবারী মাটিতে পুঁতে তার অগ্রভাগ নিজের পেটে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করল। সাহাবী এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনিই সত্যিকার রাসূল। তিনি বললেন সে কি? সাহাবী বললেন- কিছু আগে আপনি যে ব্যক্তির কথা বললেন যে সে জাহান্নামী ঠিকই সে জাহান্নামী। সাহাবারা বিস্ময় প্রকাশ করল। তখন তিনি বললেন আমি তোমাদেরকে এর কারণ বলছি। তারপর তিনি সংঘটিত ঘটনাটি সবিস্তারে বললেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘কোন কোন মানুষ জান্নাতের আমল করে মানুষ তা দেখে মনে করে সে জান্নাতী, অথচ সে জাহান্নামী। এমনিভাবে কোন কোন মানুষ জাহান্নামের আমল করে, মানুষ মনে করে সে জাহান্নামী, অথচ সে জান্নাতী।’’ কোন কোন বর্ণনায় এ বাক্যটি ও এসেছে তিনি বলেছেন: ‘আমল (কর্ম) গ্রহণযোগ্য হবে শেষ পরিণতির বিচারে।’ [বোখারি : ৬১২৮।] সাহাল বিন আস-সায়েদি বলেছেন—
نظر النبي صلى الله عليه وسلم إلى رجل يقاتل المشركين، وكان من أعظم المسلمين غناء عنهم، فقال من أحب أن ينظر إلى رجل من أهل النار فلينظر إلى هذا، فتبعه رجل فلم يزل على ذلك، حتى جرح فاستعجل الموت فقال بذبابة سيفه فوضعه بين ثدييه فتحامل عليه حتى خرج من بين كتفيه، فقال النبي ...( إن العبد ليعمل فيما يرى الناس عمل أهل الجنة وإنه لمن أهل النار، ويعمل فيما يرى الناس عمل أهل النار وهو من أهل الجنة وإنما الأعمال بخواتيمها ).
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কাফেরদের সাথে যুদ্ধেরত এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন-যে লোকটি অন্যান্য মুসলমানদের তুলনায় ঐশ্বর্যবান ছিল-অত:পর বললেন, যে জাহান্নামি দেখতে চাও, সে একে দেখে নাও। একথা শুনে একজন লোক শেষ পযর্ন্ত তার পিছু নিচ্ছিল, সে লক্ষ্য করল, লোকটি আহত হল, আর দ্রুত সেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করল। অর্থাৎ তলোয়ারের অগ্রভাগ বক্ষমাঝে বিদ্ধ করে, তার উপর ভর দিয়ে মাটিতে ওপুর হয়ে পড়ল, আর তলোয়ার তার দু’কাধের মধ্য দিয়ে পিষ্ঠবেধ করে বের হয়ে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কতক বান্দা এমন আমল করে, মানুষ যা দেখে বাহ্যত মনে করে, সে জান্নাতবাসী, অথচ সে জাহান্নামী। আবার কতক বান্দা এমন আমল করে, মানুষ যা দেখে বাহ্যত মনে করে, সে জাহান্নামী। অথচ সে জান্নাতী। তবে নিশ্চিত, শেষ পরিণতির ভিত্তিতেই সকল আমল বিবেচ্য ও বিচার্য হয়।
আল্লাহ রাববুল আলামীন ঐ সকল মুমিনদের প্রশংসা করেছেন যারা আল্লাহকে ভয় করার সাথে সাথে সুন্দরভাবে নেক আমল করে থাকে। তিনি বলেন :
إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ بِآَيَاتِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ . وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آَتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ . أُولَئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ ﴿المؤمنون : 57-61﴾
‘নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে, যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না, এবং যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী। [সূরা আল-মুমিনূন : ৫৭-৬১।]
যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হয় তার জন্য উচিত হবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে এ আশা পোষণ করা। যেমন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لا يموتن أحدكم إلا وهو يحسن الظن بالله عز وجل . رواه مسلم (2877)
‘আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা না নিয়ে তোমাদের মধ্যে কেহ যেন মৃত্যু বরণ না করে।’ [মুসলিম : ২৮৭৭।]
অনেক মানুষ এমন আছেন যারা আল্লাহর সীমাহীন দয়া ও ক্ষমা লাভের আশায় পাপ করতে থাকেন, তা থেকে ফিরে আসা যে প্রয়োজন তা অনুধাবন করতে চান না। এটা এক ধরনের মুর্খতা। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ . وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ . ﴿الحجر :50﴾
‘আমার বান্দাদের বলে দাও যে, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, এবং আমার শাস্তি- সে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি ! [সূরা আল-হিজর : ৪৯-৫০।] তিনি আরো বলেন—
حم . تَنْزِيلُ الْكِتَابِ مِنَ اللَّهِ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ . غَافِرِ الذَّنْبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيدِ الْعِقَابِ ذِي الطَّوْلِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ إِلَيْهِ الْمَصِيرُ ﴿الغافر : 1-3﴾
‘হা-মীম এ কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে- যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তাওবা কবুল করেন, যিনি শাস্তি দানে কঠোর শক্তিশালী। [সূরা আল-গাফির : ১-৩।]
অতএব আল্লাহ শুধু ক্ষমাশীল এ ধারনার ভিত্তিতে নিজের আমলগুলো দেখলে হবে না বরং তিনি যে কাঠোর শাস্তিদাতা এটা সর্বদা মনে রাখতে হবে।
বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে আমৃত্যু তাকওয়া ও আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীর মধ্যে সময় কাটিয়েছে।
এমন অনেক মানুষ দেখা যায় যারা সাড়া জীবন আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে সময় কাটিয়েছে, সকল পাপাচার থেকে মুক্ত থেকেছে কিন্তু মৃত্যুর পুর্বে সে তার এ অবস্থা থেকে ফিরে গিয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
وإن الرجل ليعمل بعمل أهل الجنة حتى ما يكون بينه وبينها إلا ذراع فيسبق عليه الكتاب ، فيعمل بعمل أهل النار فيدخلها . رواه البخاري (3332) ، ومسلم (2643)
‘এক ব্যক্তি সাড়া জীবন জান্নাতের আমল করেছে। জান্নাত ও তার মধ্যে দূরত্ব ছিল মাত্র এক হাত। এমন সময় তার তাকদীর চলে আসল, সে জাহান্নামের কাজ করে বসল, ফলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে গেল।’ [বোখারি : ৩৩৩২। মুসলিম : ২৬৪৩।] এর একটা দৃষ্টান্ত অন্য হাদিসে এসেছে এভাবে—
عن سهل بن سعد رضى الله عنه أن رجلا من المسلمين في إحدى المعارك مع رسول الله صلى الله عليه وسلم أبلى بلاء شديدا، فأعجب الصحابة بذلك، وقالوا : ما أجزأ منا اليوم كما أجزأ فلان، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( أما أنه من أهل النار ) فقال بعض الصحابة : أينا من أهل الجنة إن كان هذا من أهل النار؟ فقال رجل من القوم : أنا صاحبه، سأنظر ماذا يفعل، فتبعه، قال فجرح الرجل جرحا شديدا فاستعجل الموت، فوضع سيفه في الأرض وذبابه بين ثديـيه، ثم تحامل على نفسه فقتل نفسه، فرجع الرجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : أشهد أنك رسول الله، قال : وما ذاك ؟ الرجل الذي ذكرت آنفا أنه من أهل النار، فأعظم الناس ذلك،فقلت أنا لكم به،فخرجت في طلبه، حتى جرح جرحا شديدا فاستعجل الموت، فوضع نصل سيفه بالأرض وذبابه بين ثديـيه، ثم تحامل على نفسه فقتل نفسه،فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( إن الرجل ليعمل عمل أهل الجنة فيما يبدو للناس وهو من أهل النار، وإن الرجل ليعمل عمل أهل النار فيما يبدو للناس وهو من أهل الجنة وفي بعض الروايات زيادة : ( وإنما الأعمال بالخواتيم ). رواه البخاري (6128)
সাহাবী সাহাল বিন সাআদ বলেন, রাসূলুল্লাহর উপস্থিতিতে একবার এক যুদ্ধে দেখলাম এক ব্যক্তি অত্যন্ত বীরত্ব ও বে-পরোয়াভাবে শত্রু বাহিনীর উপর আক্রমন করছে ও তাতে নিজেও প্রচন্ডভাবে আহত হচ্ছে। তার বীরত্ব ও ত্যাগে সাহাবায়ে কেরাম মুগ্ধ হয়ে বললেন, আমাদের কারো পুরস্কার কি এ ব্যক্তির পুরস্কারের মত হবে ? এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘কিন্তু সে তো জাহান্নামী।’ এ কথা শুনে অনেক সাহাবী বললেন, এই ব্যক্তি যদি জাহান্নামী হয় তা হলে জান্নাতে যাবে কে? দলের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল, আমি তার সাথে থাকব, দেখব সে কি করে? সে কথা মত তার সাথে থাকল। দেখা গেল সে খুব মারাত্মক ভাবে আহত হল। ধৈর্য ধারণ করে নিজেকে আর সামলাতে পারল না। নিজের তরবারী মাটিতে পুঁতে তার অগ্রভাগ নিজের পেটে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করল। সাহাবী এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনিই সত্যিকার রাসূল। তিনি বললেন সে কি? সাহাবী বললেন- কিছু আগে আপনি যে ব্যক্তির কথা বললেন যে সে জাহান্নামী ঠিকই সে জাহান্নামী। সাহাবারা বিস্ময় প্রকাশ করল। তখন তিনি বললেন আমি তোমাদেরকে এর কারণ বলছি। তারপর তিনি সংঘটিত ঘটনাটি সবিস্তারে বললেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘কোন কোন মানুষ জান্নাতের আমল করে মানুষ তা দেখে মনে করে সে জান্নাতী, অথচ সে জাহান্নামী। এমনিভাবে কোন কোন মানুষ জাহান্নামের আমল করে, মানুষ মনে করে সে জাহান্নামী, অথচ সে জান্নাতী।’’ কোন কোন বর্ণনায় এ বাক্যটি ও এসেছে তিনি বলেছেন: ‘আমল (কর্ম) গ্রহণযোগ্য হবে শেষ পরিণতির বিচারে।’ [বোখারি : ৬১২৮।] সাহাল বিন আস-সায়েদি বলেছেন—
نظر النبي صلى الله عليه وسلم إلى رجل يقاتل المشركين، وكان من أعظم المسلمين غناء عنهم، فقال من أحب أن ينظر إلى رجل من أهل النار فلينظر إلى هذا، فتبعه رجل فلم يزل على ذلك، حتى جرح فاستعجل الموت فقال بذبابة سيفه فوضعه بين ثدييه فتحامل عليه حتى خرج من بين كتفيه، فقال النبي ...( إن العبد ليعمل فيما يرى الناس عمل أهل الجنة وإنه لمن أهل النار، ويعمل فيما يرى الناس عمل أهل النار وهو من أهل الجنة وإنما الأعمال بخواتيمها ).
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কাফেরদের সাথে যুদ্ধেরত এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন-যে লোকটি অন্যান্য মুসলমানদের তুলনায় ঐশ্বর্যবান ছিল-অত:পর বললেন, যে জাহান্নামি দেখতে চাও, সে একে দেখে নাও। একথা শুনে একজন লোক শেষ পযর্ন্ত তার পিছু নিচ্ছিল, সে লক্ষ্য করল, লোকটি আহত হল, আর দ্রুত সেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করল। অর্থাৎ তলোয়ারের অগ্রভাগ বক্ষমাঝে বিদ্ধ করে, তার উপর ভর দিয়ে মাটিতে ওপুর হয়ে পড়ল, আর তলোয়ার তার দু’কাধের মধ্য দিয়ে পিষ্ঠবেধ করে বের হয়ে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কতক বান্দা এমন আমল করে, মানুষ যা দেখে বাহ্যত মনে করে, সে জান্নাতবাসী, অথচ সে জাহান্নামী। আবার কতক বান্দা এমন আমল করে, মানুষ যা দেখে বাহ্যত মনে করে, সে জাহান্নামী। অথচ সে জান্নাতী। তবে নিশ্চিত, শেষ পরিণতির ভিত্তিতেই সকল আমল বিবেচ্য ও বিচার্য হয়।
আল্লাহ রাববুল আলামীন ঐ সকল মুমিনদের প্রশংসা করেছেন যারা আল্লাহকে ভয় করার সাথে সাথে সুন্দরভাবে নেক আমল করে থাকে। তিনি বলেন :
إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ بِآَيَاتِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ . وَالَّذِينَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ . وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آَتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ . أُولَئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ ﴿المؤمنون : 57-61﴾
‘নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে, যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না, এবং যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী। [সূরা আল-মুমিনূন : ৫৭-৬১।]
যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হয় তার জন্য উচিত হবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে এ আশা পোষণ করা। যেমন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
لا يموتن أحدكم إلا وهو يحسن الظن بالله عز وجل . رواه مسلم (2877)
‘আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা না নিয়ে তোমাদের মধ্যে কেহ যেন মৃত্যু বরণ না করে।’ [মুসলিম : ২৮৭৭।]
অনেক মানুষ এমন আছেন যারা আল্লাহর সীমাহীন দয়া ও ক্ষমা লাভের আশায় পাপ করতে থাকেন, তা থেকে ফিরে আসা যে প্রয়োজন তা অনুধাবন করতে চান না। এটা এক ধরনের মুর্খতা। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ . وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ . ﴿الحجر :50﴾
‘আমার বান্দাদের বলে দাও যে, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, এবং আমার শাস্তি- সে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি ! [সূরা আল-হিজর : ৪৯-৫০।] তিনি আরো বলেন—
حم . تَنْزِيلُ الْكِتَابِ مِنَ اللَّهِ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ . غَافِرِ الذَّنْبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيدِ الْعِقَابِ ذِي الطَّوْلِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ إِلَيْهِ الْمَصِيرُ ﴿الغافر : 1-3﴾
‘হা-মীম এ কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে- যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তাওবা কবুল করেন, যিনি শাস্তি দানে কঠোর শক্তিশালী। [সূরা আল-গাফির : ১-৩।]
অতএব আল্লাহ শুধু ক্ষমাশীল এ ধারনার ভিত্তিতে নিজের আমলগুলো দেখলে হবে না বরং তিনি যে কাঠোর শাস্তিদাতা এটা সর্বদা মনে রাখতে হবে।
আসলে তো সকল প্রকার পাপ থেকে তওবা করা মানুষের জন্য ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :—
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ . ﴿النور : 31﴾
‘হে মুমিনগন! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ [সূরা নূর : ৩১।] রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের মধ্যে একশ বার তাওবা করতেন, অথচ তার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। যেমন তিনি বলেছেন :
يا أيها الناس توبوا إلى الله، فإني أتوب في اليوم إليه مائة مرة . رواه مسلم (2702)
‘হে মানব সকল ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর। আমিতো দিনের মধ্যে একশত বার আল্লাহর কাছে তওবা কওে থাকি।’ [মুসলিম : ২৭০২।] নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন—
أن التائب من الذنب كمن لا ذنب لـه رواه ابن ماجه (4250) ، وحسنه الألباني في صحيح الجامع (3008)
‘পাপ থেকে তাওবা কারী এমন ব্যক্তির মত যে কোন পাপ করেনি।’ [ইবনু মাজাহ : ৪২৫০। সহিহ আল-জামে : ৩০০৮।]
তওবা করতে গড়িমসি করা ইবলীস শয়তানের বড় একটা ধোকা। সে মানুষকে বলতে থাকে, ‘এত তাড়াহুড়ো করার কি দরকার! তোমার আরো কত সময় পড়ে আছে। তুমি মাত্র যুবক। মনে কর তুমি কম করে হলেও ষাট বছর বেঁচে থাকবে। শেষ জীবনে খাটি তওবা করে নিবে। তখন খূব বেশী করে এবাদত-বন্দেগী করে পিছনের গুলো পুষিয়ে নিবে। এখন তুমি যুবক। জীবনটাকে একটু মনের মত উপভোগ করে নাও!’
এ কারণে অনেক উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘তওবা করতে গড়িমসি করা থেকে সাবধান থাকবে। ‘এখনতো সময় আছে-‘অতিসত্বর করে নিব, এইতো করে নিচ্ছি’ এজাতীয় ভবিষ্যত অর্থবহ শব্দ অর্থাৎ ‘সাওফা’ হতে ওলামায়ে কেরাম সতর্ক করে বলেছেন, কারণ, এটাই ইবলিসের সবচে’ বড় চেলা। কেননা এটা হল ইবলীস শয়তানের সবচেয়ে বড় চক্রান্ত।
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ . ﴿النور : 31﴾
‘হে মুমিনগন! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ [সূরা নূর : ৩১।] রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের মধ্যে একশ বার তাওবা করতেন, অথচ তার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। যেমন তিনি বলেছেন :
يا أيها الناس توبوا إلى الله، فإني أتوب في اليوم إليه مائة مرة . رواه مسلم (2702)
‘হে মানব সকল ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর। আমিতো দিনের মধ্যে একশত বার আল্লাহর কাছে তওবা কওে থাকি।’ [মুসলিম : ২৭০২।] নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন—
أن التائب من الذنب كمن لا ذنب لـه رواه ابن ماجه (4250) ، وحسنه الألباني في صحيح الجامع (3008)
‘পাপ থেকে তাওবা কারী এমন ব্যক্তির মত যে কোন পাপ করেনি।’ [ইবনু মাজাহ : ৪২৫০। সহিহ আল-জামে : ৩০০৮।]
তওবা করতে গড়িমসি করা ইবলীস শয়তানের বড় একটা ধোকা। সে মানুষকে বলতে থাকে, ‘এত তাড়াহুড়ো করার কি দরকার! তোমার আরো কত সময় পড়ে আছে। তুমি মাত্র যুবক। মনে কর তুমি কম করে হলেও ষাট বছর বেঁচে থাকবে। শেষ জীবনে খাটি তওবা করে নিবে। তখন খূব বেশী করে এবাদত-বন্দেগী করে পিছনের গুলো পুষিয়ে নিবে। এখন তুমি যুবক। জীবনটাকে একটু মনের মত উপভোগ করে নাও!’
এ কারণে অনেক উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘তওবা করতে গড়িমসি করা থেকে সাবধান থাকবে। ‘এখনতো সময় আছে-‘অতিসত্বর করে নিব, এইতো করে নিচ্ছি’ এজাতীয় ভবিষ্যত অর্থবহ শব্দ অর্থাৎ ‘সাওফা’ হতে ওলামায়ে কেরাম সতর্ক করে বলেছেন, কারণ, এটাই ইবলিসের সবচে’ বড় চেলা। কেননা এটা হল ইবলীস শয়তানের সবচেয়ে বড় চক্রান্ত।
তওবা বিলম্বিত হওয়ার একটি কারন হল এই আশা করা যে আমি তো আরো অনেকদিন বেঁচে থাকব। সাধারণত শয়তানের কু-মন্ত্রণায় এমনটি হয়ে থাকে। এ ধারণায় মানুষ আখিরাতকে ভুলে যায় ভুলে যায় মৃত্যুর কথাও। যদিও কখনো কখনো মৃত্যুর কথা মনে পড়ে তবে তা বেশীক্ষন থাকে না। মানুষ যখন আখিরাতের চেয়ে পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় তখন সে দুনিয়াবী চিন্তা-ভাবনায় অধিক সময় ব্যয় করে। হাদিসে এসেছে—
قال عبد الله بن عمر رضى الله عنهما : أخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بمنكبيّ فقال : ( كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل ) وكان ابن عمر يقول : إذا أمسيت فلا تننظر الصباح، وإذا أصبحت فلا تنتظر المساء، وخذ من صحتك لمرضك، ومن حياتك لموتك . رواه البخاري (6416)
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাঁধ ধরে বললেন : ‘দুনিয়াতে তুমি এমনভাবে বসবাস করবে যে তুমি একজন অপরিচিত লোক অথবা পথিক।’’ ইবনু উমার রা. সর্বদা বলতেন, যখন তুমি রাতে উপনীত হও তখন ভোর হওয়ার অপেক্ষা করবে না। যখন সকালে উঠবে তখন বিকালের অপেক্ষা করবে না। অসুস্থতার জন্য সুস্থ অবস্থায় কিছু করে নাও, মৃত্যুর জন্য জীবন থাকতে কিছু করে নাও।’ [বোখারি : ৬৪১৬।]
قال عبد الله بن عمر رضى الله عنهما : أخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بمنكبيّ فقال : ( كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل ) وكان ابن عمر يقول : إذا أمسيت فلا تننظر الصباح، وإذا أصبحت فلا تنتظر المساء، وخذ من صحتك لمرضك، ومن حياتك لموتك . رواه البخاري (6416)
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাঁধ ধরে বললেন : ‘দুনিয়াতে তুমি এমনভাবে বসবাস করবে যে তুমি একজন অপরিচিত লোক অথবা পথিক।’’ ইবনু উমার রা. সর্বদা বলতেন, যখন তুমি রাতে উপনীত হও তখন ভোর হওয়ার অপেক্ষা করবে না। যখন সকালে উঠবে তখন বিকালের অপেক্ষা করবে না। অসুস্থতার জন্য সুস্থ অবস্থায় কিছু করে নাও, মৃত্যুর জন্য জীবন থাকতে কিছু করে নাও।’ [বোখারি : ৬৪১৬।]
‘আমার জীবন দীর্ঘ ’ ধারণার এ ব্যাধির প্রতিকার করা যায় মৃত্যুর কথা স্মরণ করে, কবর জেয়ারত করে, মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল দিয়ে, জানাযাতে শরীক হয়ে, অসুস্থ মানুষের সেবা করে ও নেককার বা সৎলোকের সাথে বেশী করে দেখা-সাক্ষাত করে। এ সকল বিষয় অন্তরকে জাগ্রত করে, ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।
মৃত্যুর স্মরণ : এটা মানুষকে দুনিয়া বিমুখ করে আখিরাতমুখী হতে সাহায্য করে। নেক আমল বা সৎকর্মে আত্ন-নিয়োগ করতে প্রেরণা যোগায়। হজরত আবু হুরায় রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
أكثروا ذكر هاذم اللذات . ( رواه الترمذي (2307) ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (1210)
‘তোমরা মৃত্যুকে স্মরণ কর।’’ [তিরমিজি : ২৩০৭। সহিহ আল-জামে : ১২১০।]
মানুষ যখন মৃত্যু ব্যক্তির কথা চিন্তা করবে দেখতে পাবে এ মানুষটা তো আমার মত শক্তিশালী ছিল, সম্পদশালী ছিল ও আদেশ নিষেধের মালিক ছিল। কিন্তু আজ তার শরীর পোকায় ধরেছে, হাড্ডিগুলো গোশ্তশুন্য হয়ে পড়েছে। যখন আমার এ অবস্থাই হবে তখন এর জন্য তৈরী হয়ে যাওয়া উচিত। এমন কাজ-কর্ম করা উচিত যা মৃত্যুর পরও কাজে আসবে।
কবর জেয়ারত : এটা মনের জন্য একটা মুল্যবান ওয়াজ বা উপদশে। মানুষ অনুভব করবে কবর একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান। এখানে এসে মানুষের সকল পথ থেমে যায়। প্রবেশ করে অন্ধকার গর্তে। আর কখনো বের হতে পারবে না। তার সম্পদগুলো বন্টন হয়ে যাবে। নিজ স্ত্রী অন্যের সাথে বিবাহে যাবে। কিছুদিন পর সকলে তাকে ভুলে যাবে। এমনি ভাবে কবর যিয়ারতের মাধ্যমে সে মুল্যবান নছীহত অর্জন করবে। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
كنت نهيتكم عن زيارة القبور، ثم بدا لي أنها ترق القلب، وتدمع العين، وتذكر الآخرة، ولا تقولوا هجرا . رواه أحمد (13487) وصححه الألباني في صحيح الجامع (4584)
‘আমি তোমাদের কবর জেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। অবশ্য পরে আমার কাছে স্পষ্ট হল যে, কবর জেয়ারত মানুষের হৃদয়কে বিগলিত করে, চোখের পানি প্রবাহিত করে, পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে শোক বা বেদনা প্রকাশ করতে সেখানে কিছু বলবে না।’ [আহমদ : ১৩৪৮৭। সহিহ আল-জামে : ৪৫৮৪।]
মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ও দাফন কাফনে শরীক হওয়া : এ সকল কাজ করতে গিয়ে চিন্তা করবে যে, এ ব্যক্তি যখন জীবিত ছিল তখন তার গায়ে মানুষ হাত লাগাতে বা তার শরীর ওলট-পালট করতে সাহস পায়নি, তার অনুমতি ছাড়া কাছে ঘেঁষতে কেহ সাহস করেনি কিন্তু আজ সে একটা পাথরের মত হয়ে গেছে। যে গোছল করায় সে তাকে ইচ্ছে মত নাড়া-চারা করছে। এখানে তার কিছই বলার নেই।
নেককার ও সৎ মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করা : সৎ ও নেককার মানুষের সঙ্গ লাভ হৃদয়কে জাগ্রত করে, মনকে তরতাজা রাখে, সাহস ও হিম্মত বৃদ্ধি করে, মনোবল বেড়ে যায়। যখন দেখবে সৎমানুষটি এবাদত-বন্দেগীতে অগ্রগামী, আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া তার কোন উদ্দেশ্য নেই, জান্নাত লাভ করা ব্যতিত কার কোন লক্ষ্য নেই তখন সে এর দ্বারা প্রভাবিত হবে। পাপাচার ত্যাগ করে ভাল হয়ে যাবে।
তাই তো আল্লাহ রাববুল আলামীন তার নবীকেও সৎসঙ্গ অবলম্বন করার দিকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন—
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا ﴿الكهف : 28﴾
‘তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদের সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহবান করে তাদের প্রতিপালককে তাদের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না। তুমি তাদের আনুগত্য করবে না-যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।’ [সূরা আল-কাহাফ : ২৮।]
মৃত্যুর স্মরণ : এটা মানুষকে দুনিয়া বিমুখ করে আখিরাতমুখী হতে সাহায্য করে। নেক আমল বা সৎকর্মে আত্ন-নিয়োগ করতে প্রেরণা যোগায়। হজরত আবু হুরায় রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
أكثروا ذكر هاذم اللذات . ( رواه الترمذي (2307) ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (1210)
‘তোমরা মৃত্যুকে স্মরণ কর।’’ [তিরমিজি : ২৩০৭। সহিহ আল-জামে : ১২১০।]
মানুষ যখন মৃত্যু ব্যক্তির কথা চিন্তা করবে দেখতে পাবে এ মানুষটা তো আমার মত শক্তিশালী ছিল, সম্পদশালী ছিল ও আদেশ নিষেধের মালিক ছিল। কিন্তু আজ তার শরীর পোকায় ধরেছে, হাড্ডিগুলো গোশ্তশুন্য হয়ে পড়েছে। যখন আমার এ অবস্থাই হবে তখন এর জন্য তৈরী হয়ে যাওয়া উচিত। এমন কাজ-কর্ম করা উচিত যা মৃত্যুর পরও কাজে আসবে।
কবর জেয়ারত : এটা মনের জন্য একটা মুল্যবান ওয়াজ বা উপদশে। মানুষ অনুভব করবে কবর একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান। এখানে এসে মানুষের সকল পথ থেমে যায়। প্রবেশ করে অন্ধকার গর্তে। আর কখনো বের হতে পারবে না। তার সম্পদগুলো বন্টন হয়ে যাবে। নিজ স্ত্রী অন্যের সাথে বিবাহে যাবে। কিছুদিন পর সকলে তাকে ভুলে যাবে। এমনি ভাবে কবর যিয়ারতের মাধ্যমে সে মুল্যবান নছীহত অর্জন করবে। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
كنت نهيتكم عن زيارة القبور، ثم بدا لي أنها ترق القلب، وتدمع العين، وتذكر الآخرة، ولا تقولوا هجرا . رواه أحمد (13487) وصححه الألباني في صحيح الجامع (4584)
‘আমি তোমাদের কবর জেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। অবশ্য পরে আমার কাছে স্পষ্ট হল যে, কবর জেয়ারত মানুষের হৃদয়কে বিগলিত করে, চোখের পানি প্রবাহিত করে, পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে শোক বা বেদনা প্রকাশ করতে সেখানে কিছু বলবে না।’ [আহমদ : ১৩৪৮৭। সহিহ আল-জামে : ৪৫৮৪।]
মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ও দাফন কাফনে শরীক হওয়া : এ সকল কাজ করতে গিয়ে চিন্তা করবে যে, এ ব্যক্তি যখন জীবিত ছিল তখন তার গায়ে মানুষ হাত লাগাতে বা তার শরীর ওলট-পালট করতে সাহস পায়নি, তার অনুমতি ছাড়া কাছে ঘেঁষতে কেহ সাহস করেনি কিন্তু আজ সে একটা পাথরের মত হয়ে গেছে। যে গোছল করায় সে তাকে ইচ্ছে মত নাড়া-চারা করছে। এখানে তার কিছই বলার নেই।
নেককার ও সৎ মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করা : সৎ ও নেককার মানুষের সঙ্গ লাভ হৃদয়কে জাগ্রত করে, মনকে তরতাজা রাখে, সাহস ও হিম্মত বৃদ্ধি করে, মনোবল বেড়ে যায়। যখন দেখবে সৎমানুষটি এবাদত-বন্দেগীতে অগ্রগামী, আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া তার কোন উদ্দেশ্য নেই, জান্নাত লাভ করা ব্যতিত কার কোন লক্ষ্য নেই তখন সে এর দ্বারা প্রভাবিত হবে। পাপাচার ত্যাগ করে ভাল হয়ে যাবে।
তাই তো আল্লাহ রাববুল আলামীন তার নবীকেও সৎসঙ্গ অবলম্বন করার দিকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন—
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا ﴿الكهف : 28﴾
‘তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদের সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহবান করে তাদের প্রতিপালককে তাদের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না। তুমি তাদের আনুগত্য করবে না-যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।’ [সূরা আল-কাহাফ : ২৮।]
মানুষ যদি কোন পাপকে পছন্দ করে নেয় তখন তা থেকে সে তওবা করে না। শয়তান এ পাপের মাধ্যমে তার উপর ক্ষমতা চালায়। শেষে তাকে কূফর পর্যন্ত পৌছে দেয়। পাপকে পাপ জেনে করা আর তাকে পছন্দ করা এক বিষয় নয়। এ ধরণের মানুষ যখন মৃত্যুর দুয়ারে হাজির হয় তখন তাকে বলে দিয়েও তার শেষ কথা হিসাবে কালেমা উচ্চারণ করানো যায় না। বরং তখন তারা অন্য কথা বলে। এ রকম অনেক ঘটনা রয়েছে।
যেমন এক ব্যক্তি বাজারে দালালী করত। মৃত্যুকালে তাকে বলা হল আপনি বলুন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। সে বলতে থাকল, সাড়ে চার! সাড়ে চার!!
আরেক জন ব্যক্তিকে মৃত্যুকালে বলা হল আপনি লা-ইলাহা ইল্লাহ বলুন। সে তখন তার প্রেমিকাকে স্মরণ করে কবিতা বলা শুরু করল।
كيف الطريق إلى حمام منجابيارب قائلة يوم وقد تعبت
আরেক ব্যক্তিকে এমনিভাবে মৃত্যুকালে কালেমার তালকীন করা হল। সে গান গাইতে শুরু করল।
এ ধরনের বহু ঘটনা সমাজের লোকেরা প্রত্যক্ষ করেছে। অনেক লোক এমনও দেখা গেছে যারা পাপ কাজ করা অবস্থায় মৃত্যুর দরজায় পৌছে গেছে।
সবচেয়ে ভয়ংকর পাপ যা পাপীকে ধ্বংস করে : বাতিল আকীদা-বিশ্বাস ও ইসলাম সম্পর্কে অন্তরের কলুষতা হল সবচেয়ে ভয়ংকর গুনাহ। যেমন শরিয়তের কোন বিধি-বিধানের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করা বা মনে করা এটা ভাল নয়, সময়পোযোগী নয় ইত্যাদি। এমনি আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখা, শিরক করা, মুনাফিকি, লোক দেখানোর জন্য এবাদত-বন্দেগী করা, হিংসা, বিদ্বেষ রাখা ইত্যাদি।
আল্লাহ রাববুল আলামীন কোরআন কারীমে এমন অনেক আমলের উদাহরণ দিয়েছেন যার আমলকারী কোন প্রতিদান পায় না। তার নিয়্যত খারাপ হওয়ার কারণে অথবা পাপাচার বেশী বা মারাত্নক হওয়ার কারণে। এগুলো এমন কাজ যা নেক কর্মকে নিস্ফল করে দেয়, ব্যর্থ করে দেয়। যেমন তিনি বলেন :
أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ مِنْ نَخِيلٍ وَأَعْنَابٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ لَهُ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَأَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهُ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَاءُ فَأَصَابَهَا إِعْصَارٌ فِيهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآَيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ ﴿البقرة : 266﴾
‘তোমাদের কেহ কি চায় যে, তার খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান থাকে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং যাতে সর্বপ্রকার ফল-মুল আছে, যখন সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তার সন্তান-সন্ততি দুর্বল, অত:পর তার উপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয় ও তা জ্বলে যায় ? এভাবে আল্লাহ তার নিদর্শন তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার।’ [সুরা বাকারা : ২৬৬।]
এমনিভাবে মানুষের পাওনা আদায়, তাদের উপর জুলুম অত্যাচার ও তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়ে থাকলে তার প্রতিকার করতে হবে। মানুষের অধিকার সম্পর্কিত পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। যতক্ষন না তার যথাযথ সুরাহা করে মিমাংসা করা হয়, ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়, অথবা দাবী ছাড়িয়ে নেয়া হয় বা ক্ষমা মনজুর করিয়ে নেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন,
أن نفس المؤمن معلقة بدينه حتى يقضى عنه . رواه الترمذي (1078) ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (6779)
মানুষের রুহ, ঋনের কারণে ফেসে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষ হতে আদায় না করা হয়। [তিরমিজি : ১০৭৮। সহিহ আল-জামে : ৬৭৭৯।]
হাফেজ ইবনে রজব রহ. বলেছেন : ‘পাপাচার, আল্লাহর অবাধ্যতা ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ মৃত্যুকালে মানুষকে অপদস্ত করে। সাথে সাথে শয়তানও তাকে লাঞ্জিত করে। ঈমানের দুর্বলতার কারণে সে তখন দু লাঞ্জনার শিকার হয়ে খারাপ মৃত্যুর দিকে চলে যায়। আল্লাহ বলেন :
وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا ﴿الفرقان : 29﴾
‘শয়তানতো মানুষের জন্য মহা লাঞ্জনার কারণ।’ [সূরা আল-ফুরকান : ২৯।]
খারাপ মৃত্যু (যার থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি) তে ঐ ব্যক্তি পতিত হয় না আল্লাহর সাথে যার গোপন ও প্রকাশ্য আচরণ সুন্দও ও মার্জিত, যে কথা ও কাজে সত্যবাদী। ঐ ব্যক্তিই খারাপ মৃত্যুর মুখোমুখি হয় যার ভিতরের অবস্থা আকীদা-বিশ্বাসের দিক দিয়ে খারাপ হয়ে গেছে, কাজ-কর্মে বাহিরের দিকটা নষ্ট হয়ে গেছে আর পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে বে-পরোয়া হয়ে গেছে।
যেমন এক ব্যক্তি বাজারে দালালী করত। মৃত্যুকালে তাকে বলা হল আপনি বলুন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। সে বলতে থাকল, সাড়ে চার! সাড়ে চার!!
আরেক জন ব্যক্তিকে মৃত্যুকালে বলা হল আপনি লা-ইলাহা ইল্লাহ বলুন। সে তখন তার প্রেমিকাকে স্মরণ করে কবিতা বলা শুরু করল।
كيف الطريق إلى حمام منجابيارب قائلة يوم وقد تعبت
আরেক ব্যক্তিকে এমনিভাবে মৃত্যুকালে কালেমার তালকীন করা হল। সে গান গাইতে শুরু করল।
এ ধরনের বহু ঘটনা সমাজের লোকেরা প্রত্যক্ষ করেছে। অনেক লোক এমনও দেখা গেছে যারা পাপ কাজ করা অবস্থায় মৃত্যুর দরজায় পৌছে গেছে।
সবচেয়ে ভয়ংকর পাপ যা পাপীকে ধ্বংস করে : বাতিল আকীদা-বিশ্বাস ও ইসলাম সম্পর্কে অন্তরের কলুষতা হল সবচেয়ে ভয়ংকর গুনাহ। যেমন শরিয়তের কোন বিধি-বিধানের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করা বা মনে করা এটা ভাল নয়, সময়পোযোগী নয় ইত্যাদি। এমনি আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখা, শিরক করা, মুনাফিকি, লোক দেখানোর জন্য এবাদত-বন্দেগী করা, হিংসা, বিদ্বেষ রাখা ইত্যাদি।
আল্লাহ রাববুল আলামীন কোরআন কারীমে এমন অনেক আমলের উদাহরণ দিয়েছেন যার আমলকারী কোন প্রতিদান পায় না। তার নিয়্যত খারাপ হওয়ার কারণে অথবা পাপাচার বেশী বা মারাত্নক হওয়ার কারণে। এগুলো এমন কাজ যা নেক কর্মকে নিস্ফল করে দেয়, ব্যর্থ করে দেয়। যেমন তিনি বলেন :
أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ مِنْ نَخِيلٍ وَأَعْنَابٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ لَهُ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَأَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهُ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَاءُ فَأَصَابَهَا إِعْصَارٌ فِيهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآَيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ ﴿البقرة : 266﴾
‘তোমাদের কেহ কি চায় যে, তার খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান থাকে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং যাতে সর্বপ্রকার ফল-মুল আছে, যখন সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তার সন্তান-সন্ততি দুর্বল, অত:পর তার উপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয় ও তা জ্বলে যায় ? এভাবে আল্লাহ তার নিদর্শন তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার।’ [সুরা বাকারা : ২৬৬।]
এমনিভাবে মানুষের পাওনা আদায়, তাদের উপর জুলুম অত্যাচার ও তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়ে থাকলে তার প্রতিকার করতে হবে। মানুষের অধিকার সম্পর্কিত পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। যতক্ষন না তার যথাযথ সুরাহা করে মিমাংসা করা হয়, ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়, অথবা দাবী ছাড়িয়ে নেয়া হয় বা ক্ষমা মনজুর করিয়ে নেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন,
أن نفس المؤمن معلقة بدينه حتى يقضى عنه . رواه الترمذي (1078) ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (6779)
মানুষের রুহ, ঋনের কারণে ফেসে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষ হতে আদায় না করা হয়। [তিরমিজি : ১০৭৮। সহিহ আল-জামে : ৬৭৭৯।]
হাফেজ ইবনে রজব রহ. বলেছেন : ‘পাপাচার, আল্লাহর অবাধ্যতা ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ মৃত্যুকালে মানুষকে অপদস্ত করে। সাথে সাথে শয়তানও তাকে লাঞ্জিত করে। ঈমানের দুর্বলতার কারণে সে তখন দু লাঞ্জনার শিকার হয়ে খারাপ মৃত্যুর দিকে চলে যায়। আল্লাহ বলেন :
وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا ﴿الفرقان : 29﴾
‘শয়তানতো মানুষের জন্য মহা লাঞ্জনার কারণ।’ [সূরা আল-ফুরকান : ২৯।]
খারাপ মৃত্যু (যার থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি) তে ঐ ব্যক্তি পতিত হয় না আল্লাহর সাথে যার গোপন ও প্রকাশ্য আচরণ সুন্দও ও মার্জিত, যে কথা ও কাজে সত্যবাদী। ঐ ব্যক্তিই খারাপ মৃত্যুর মুখোমুখি হয় যার ভিতরের অবস্থা আকীদা-বিশ্বাসের দিক দিয়ে খারাপ হয়ে গেছে, কাজ-কর্মে বাহিরের দিকটা নষ্ট হয়ে গেছে আর পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে বে-পরোয়া হয়ে গেছে।
যখন কোন মুসলিম বিপদে পতিত হয় ও তাতে ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহর কাছে এর জন্য উত্তম প্রতিদানের আশা করে তখন সে তার পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। কিন্তু যদি সে মনে করে আমার জীবন সংকীর্ণ হয়ে গেছে মৃত্যু ছাড়া এ বিপদ থেকে কোন ভাবে উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা নেই তখনই সে পাপ করে বসল। আর নিজেকে হত্যা করে সে পাপ বাস্তবায়ন করে সে আল্লাহর গজবে পতিত হল। হাদিসে এসেছে,
عن أبي هريرة رضى الله عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : الذي يخنق نفسه يخنقها في النار، والذي يطعن نفسه يطعنها في النار . روا البخاري (1365).
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি নিজেকে ফাঁস দিল সে জাহান্নামে অবিরাম নিজেকে ফাঁস দিতে থাকবে। আর যে নিজেকে ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করল সে অবিরাম সিজেকে জাহান্নামে ছুড়িকাঘাত করতে থাকবে।’ [বোখারি : ১৩৬৫।] হাদিসে আরো এসেছে—
عن أبي هريرة رضى الله عنه قال : شهد رجل مع رسول الله صلى الله عليه وسلم خيبر فقال برجل ممن يدعي بالإسلام : هذا من أهل النار . فلما حضر القتال قاتل الرجل قتالا شديدا فأصابته جراحة، فقيل له : يا رسول الله، الذي قلت آنفا إنه من أهل النار، فإنه قد قاتل اليوم قتالا شديدا، وقد مات، فقال النبي صلى الله عليه وسلم : إلى النار، فكاد بعض المسلمين أن يرتاب، فبينما هم على ذلك إذ قيل له : إنه لم يمت ولكن به جراحة شديدة، فلما كان من الليل لم يصبر على الجراح فقتل نفسه، فأخبر النبي صلى الله عليه وسلم فقال : الله أكبر، أشهد أني عبد الله ورسوله . ثم أمر بلالا فنادى في الناس أنه لن يدخل الجنة إلا نفس مسلمة، وإن الله ليؤيد هذا الدين بالرجل الفاجر . رواه البخاري (3062). ومسلم (111).
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে রাসুলুল্লাহর সাথে এক ব্যক্তি যুদ্ধে অংশ নিতে আসল। যে নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাপারে বললেন : ‘লোকটি জাহান্নামী।’’ যখন সে যুদ্ধে অংশ নিয়ে যুদ্ধ শুরু করল ও অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে গুরুতরভাবে আহত হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা হল হে রাসূল ! আপনি কিছুক্ষন পূর্বে যাকে জাহান্নামী হওয়ার খবর দিয়েছিলেন সে তো আজ বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘সে জাহান্নামী।’ কিছু মুসলমান আল্লাহর রাসূলের এ কথায় কেমন যে সন্দেহ করতে লাগল। ইতিমধ্যে খবর আসল আসলে সে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়নি, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে মারাত্নকভাবে আহত হয়েছিল। রাতে সে বেদনায় ধৈর্য্য ধারণ করতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে। এ খবর যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলা হল তখন তিনি বললেন: ‘আল্লাহু আকবার, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’’ অত:পর তিনি বেলাল রা. কে বললেন, তুমি ঘোষণা দিয়ে দাও যে, মুসলিম আত্না ব্যতিত কেহ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনে ইসলামকে দুরাচার ব্যক্তির দ্বারাও সাহায্য করে থাকেন।’ [বোখারি : ৩০৬২। মুসলিম : ১১১।]
عن أبي هريرة رضى الله عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : الذي يخنق نفسه يخنقها في النار، والذي يطعن نفسه يطعنها في النار . روا البخاري (1365).
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি নিজেকে ফাঁস দিল সে জাহান্নামে অবিরাম নিজেকে ফাঁস দিতে থাকবে। আর যে নিজেকে ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করল সে অবিরাম সিজেকে জাহান্নামে ছুড়িকাঘাত করতে থাকবে।’ [বোখারি : ১৩৬৫।] হাদিসে আরো এসেছে—
عن أبي هريرة رضى الله عنه قال : شهد رجل مع رسول الله صلى الله عليه وسلم خيبر فقال برجل ممن يدعي بالإسلام : هذا من أهل النار . فلما حضر القتال قاتل الرجل قتالا شديدا فأصابته جراحة، فقيل له : يا رسول الله، الذي قلت آنفا إنه من أهل النار، فإنه قد قاتل اليوم قتالا شديدا، وقد مات، فقال النبي صلى الله عليه وسلم : إلى النار، فكاد بعض المسلمين أن يرتاب، فبينما هم على ذلك إذ قيل له : إنه لم يمت ولكن به جراحة شديدة، فلما كان من الليل لم يصبر على الجراح فقتل نفسه، فأخبر النبي صلى الله عليه وسلم فقال : الله أكبر، أشهد أني عبد الله ورسوله . ثم أمر بلالا فنادى في الناس أنه لن يدخل الجنة إلا نفس مسلمة، وإن الله ليؤيد هذا الدين بالرجل الفاجر . رواه البخاري (3062). ومسلم (111).
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে রাসুলুল্লাহর সাথে এক ব্যক্তি যুদ্ধে অংশ নিতে আসল। যে নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাপারে বললেন : ‘লোকটি জাহান্নামী।’’ যখন সে যুদ্ধে অংশ নিয়ে যুদ্ধ শুরু করল ও অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে গুরুতরভাবে আহত হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা হল হে রাসূল ! আপনি কিছুক্ষন পূর্বে যাকে জাহান্নামী হওয়ার খবর দিয়েছিলেন সে তো আজ বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘সে জাহান্নামী।’ কিছু মুসলমান আল্লাহর রাসূলের এ কথায় কেমন যে সন্দেহ করতে লাগল। ইতিমধ্যে খবর আসল আসলে সে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়নি, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে মারাত্নকভাবে আহত হয়েছিল। রাতে সে বেদনায় ধৈর্য্য ধারণ করতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে। এ খবর যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলা হল তখন তিনি বললেন: ‘আল্লাহু আকবার, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’’ অত:পর তিনি বেলাল রা. কে বললেন, তুমি ঘোষণা দিয়ে দাও যে, মুসলিম আত্না ব্যতিত কেহ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনে ইসলামকে দুরাচার ব্যক্তির দ্বারাও সাহায্য করে থাকেন।’ [বোখারি : ৩০৬২। মুসলিম : ১১১।]
এসকল বিষয় চিন্তা-ভাবনা করলে এটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে যে, যেখানেই আমরা থাকিনা কেন, যে অবস্থায় আমরা অবস্থান করিনা কেন সকল অবৈধ আকীদা-বিশ্বাস, মতাদর্শ, কথা-বার্তা থেকে সম্পূর্ন দুরত্ব বজায় রাখা, সর্বদা নিজের হৃদয়, মুখ ও যাবতীয় অঙ্গ-প্রতঙ্গ আল্লাহর স্মরণে নিয়োজিত রাখা, আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ পালনে যত্নবান হওয়া। আমরা যদি দুনিয়ার এ জীবনে দ্বীনে ইসলাম পালনের ব্যাপারে হতভাগ্য হয়ে পড়ি তাহলে এর ক্ষতিপুরণ কখনো সম্ভব হবে না। চিরকাল এ ব্যর্থতা বহন করতে হবে।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শেষ পরিণতি ভাল কাজের মাধ্যমে সমাপ্ত করে দেন, জীবনের শেষ দিনগুলো যেন আমাদের ভাল দিনগুলোর মধ্যে গণ্য হয়, আপনার সাথে সাক্ষাতের দিনটাই যেন আমাদের সবচেয়ে আনন্দঘন দিন হয়।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শেষ পরিণতি ভাল কাজের মাধ্যমে সমাপ্ত করে দেন, জীবনের শেষ দিনগুলো যেন আমাদের ভাল দিনগুলোর মধ্যে গণ্য হয়, আপনার সাথে সাক্ষাতের দিনটাই যেন আমাদের সবচেয়ে আনন্দঘন দিন হয়।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন