মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
শাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে ‘বাকি’ নামক স্থানে এক ব্যক্তির নিকট আগমন করেন, যে শিঙ্গা লাগাচ্ছিল, তখন আঠারো রমযান। তিনি বললেন:
«أَفْطَرَ الحَاجِمُ والمحْجُومُ» .
“যে শিঙ্গা লাগায় আর যার লাগানো হয় উভয় ইফতার করল”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৬৯; নাসাঈ ফিল কুবরা, হাদীস নং ৩১২৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬৮১; আহমদ: (৪/১২৩), আলী ইবন মাদিনি ও বুখারী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দেখুন: তালখিসুল হাবির: (২/১৯৩), আব্দুল্লাহ ইবন ইমাম আহমদ তার পিতার মাসআলা সমগ্রে নকল করেন: যে শিঙ্গা লাগায় এবং যার লাগানো হয়, উভয়ের সাওম ভাঙ্গার ব্যাপারে এটা সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদীস। মাসায়েলে ইমাম আহমদ: (৬৮২); সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৫৩৩; হাকেম: (১/৫৯২), মাজমু গ্রন্থে হাদীসটি ইমাম নববী সহীহ বলেছেন। তিনি বলেন: এ হাদীস ইমাম মুসলিমের শর্ত মোতাবেক: (৬/৩৫০)।]
সাওবান [দেখুন: সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস: আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৭১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬৮০; দারামি, হাদীস নং ১৭৩১; আহমদ: (৫/২৭৬); তায়ালিসি, হাদীস নং ৯৮৯; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৫৩২); ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৯৬২-১৯৬৩।], রাফে ইবন খাদিজ [দেখুন: রাফে ইবন খাদিজ থেকে বর্ণিত হাদীস: তিরমিযী, হাদীস নং ৭৭৪; আহমদ: (৩/৪৬৫); সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৫৩৫।] ও একদল সাহাবী থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে, এ জন্য একদল আলিম এ হাদীসকে মুতাওয়াতির বলেছেন।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন, তিনি সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”।
আবু দাউদের এক বর্ণনা আছে: “তিনি সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”। [দেখুন: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২০২; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৭২-২৩৭৪; তিরমিযী, হাদীস নং ৭৭৫-৭৭৭।]
শু‘বা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি সাবেত আল-বুনানিকে বলতে শুনেছি, তিনি মালিক ইবন আনাসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: আপনারা কি সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা অপছন্দ করতেন” তিনি বললেন: না, তবে দুর্বলতার কারণে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৩৮।]
আবু দাউদের এক বর্ণনায় আনাস থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “দুর্বলতার কারণে আমরা সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা অপছন্দ করতাম”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৭৫।]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. একাধিক হাদীস প্রমাণ করে যে, শিঙ্গা উভয়ের সাওম ভঙ্গ করে: যে লাগায় ও যার লাগানো হয়। আবার এর বিপরীতে অন্যান্য হাদীস রয়েছে, যা প্রমাণ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। তাই শিঙ্গার ব্যাপারে আলিমদের ইখতিলাফ সৃষ্টি হয়েছে। জমহুর আলিম বলেন সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা লাগানো বৈধ। নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলো বৈধতার হাদীস দ্বারা রহিত ও মানসুখ। [দেখুন: আবু সাঈদ খুদরী, ইবন মাসউদ ও উম্মে সালামা থেকে বর্ণিত সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা লাগানো বৈধ। উরওয়া, সাঈদ ইবন জুবায়ের এবং প্রসিদ্ধ তিন ইমাম: আবু হানীফা, মালেক ও ইমাম শাফে‘ঈ অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আল-মুগনি: (৪/৩৫০); মুহাল্লা: (৬/২০৪-২০৫); ফাতহুল বারি লি ইবন হাজার: (৪/১৭৪-১৭৮); সুবুলুস সালাম: (২/১৫৮-১৬০); নাইলুল আওতার: (৪/২৭৫)।]
ইমাম আহমদের মাযহাব হচ্ছে, শিঙ্গা সাওম ভঙ্গকারী। শাইখুল ইসলাম ও তার শিষ্য ইবনুল কাইয়্যেম এ মত গ্রহণ করেছেন। [দেখুন: যারা বলেছেন শিঙ্গার কারণে সাওম ভেঙ্গে যাবে, তাদের মধ্যে আতা ও আব্দুর রহমান ইবন মাহদি অন্যতম, ইমাম আহমদের এ মাযহাব। ইসহাক, ইবন মুনযির ও ইবন খুযাইমাহ তদনুরূপ বলেছেন। ইবন কুদামা একদল সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, তারা রাতে শিঙ্গা লাগাতেন। তাদের মধ্যে ইবন ওমর, ইবন আব্বাস, আবু মূসা ও আনাস অন্যতম। আল-মুগনি: (৪/৩৫০); মাজমুউল ফাতাওয়া: (২৫/২৫৭); রিসালা হাকিকাতুস সিয়াম: (৮১-৮৪); তাহযিবুস সুনান: (৬/৩৫৪-৩৬৮); ইলামুল ময়াক্কিয়িন: (২/৫২); ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন: সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা জায়েয মন্তব্যকারীগণ চারটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া ব্যতীত এ কথা বলতে পারেন না:(১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগিয়েছেন সুস্থ অবস্থায়, অসুস্থ অবস্থায় নয়।(২) তিনি শিঙ্গা লাগিয়েছেন মুকিম অবস্থায়, মুসাফির অবস্থায় নয়।(৩) তিনি ফরয সাওমে শিঙ্গা লাগিয়েছেন, নফল সাওমে নয়।(৪) তিনি শিঙ্গা লাগিয়েছেন নিষেধ করার পর, আগে নয়। যখন এ চারটি বিষয় প্রমাণ হবে, তখন বলা যাবে যে, রোযাদারের জন্য শিঙ্গা লাগানো বৈধ, অন্যথায় নয়”। যাদুল মা‘আদ: (৪/৬১-৬২)।]
সৌদি আরবের লাজনায়ে দায়েমা অনুরূপ ফতোয়া প্রদান করেছে। [দেখুন: ফাতাওয়াল লাজনাহ: (১০/২৬১-২৬২), ফাতাওয়া নং ১১৯১।]
সৌদি আরবের অধিকাংশ আলিম এটাই গ্রহণ করেছেন। অতএব, সাওম পালনকারীর দিনে শিঙ্গা পরিহার করাই সতর্কতা, এতে কোনো ইখতিলাফ থাকে না।
দুই. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস প্রমাণ করে যে, শিঙ্গা সাওম দুর্বল করে, তাই নিষেধ করা হয়েছে। এটা শরী‘আতের এক বৈশিষ্ট্য, সে তার অনুসারীদের থেকে কষ্ট দূরীভূত করে।
তিন. শিঙ্গা শরীর দুর্বল করে, তাই সাওম ভঙ্গকারী। যে শিঙ্গা লাগায় তার সাওম ভঙ্গের কারণ, হচ্ছে, রক্ত চোষণের ফলে তার মুখে রক্ত প্রবেশ করার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। হ্যাঁ যদি সে মুখে না চোষে, আধুনিক যন্ত্র দ্বারা টেনে বের করে, তাহলে তার সাওম ভঙ্গ হবে না। [দেখুন: শারহুল মুমতি: (৬/৩৮২)।]
চার. অপারেশন দ্বারা বিষাক্ত রক্ত বের করলে সাওম পালনকারীর সাওম ভেঙ্গে যাবে, তবে ডাক্তারের সাওম ভঙ্গ হবে না। [দেখুন: ফাতাওয়ায়ে লাজনায়ে দায়েমা: (১০/২৬২), ফাতাওয়া নং ৫৪৭। এটাই শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়ার পছন্দনীয় অভিমত। মাজমুউল ফাতাওয়া: (২৫/২৬৮), শাইখ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহিম তার ফাতাওয়াতে এ মতটি প্রধান্য দিয়েছেন: (৪/১৯১)।]
পাঁচ. মাথা হালকা করা বা কোনো কারণে স্বেচ্ছায় নাক থেকে রক্ত বের করলে সাওম ভেঙ্গে যাবে, অনিচ্ছায় অধিক রক্ত বের হলেও সাওম ভঙ্গ হবে না। [এটা শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ ফি ইখতিয়ারুল ফিকহিয়্যাহ: (১০৮); ইবন ইবরাহিম: (৪/১৯১) ও উসাইমিন: (১৯/২৪৯) প্রমুখগণের অভিমত। দেখুন: ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ: (১০/২৬৪), ফাতাওয়া নং ৩৪৫৫।] রক্ত বের হওয়ার কারণে যদি শরীর দুর্বল হয় ও সাওম ভাঙ্গার প্রয়োজন হয়, তাহলে তার অনুমতি রয়েছে, কারণ, সে অসুস্থ।
ছয়. রক্ত পরীক্ষা করলে সাওম ভঙ্গ হবে না, হ্যাঁ ইখতিলাফ এড়িয়ে থাকার জন্য এসব কাজ রাতে করা উত্তম। তবে রক্ত বেশি বের হলে সাওম ভেঙ্গে যাবে, তাই রাত ব্যতীত এসব কাজ না করা উত্তম। অসুখের জন্য প্রয়োজন হলে করবে, তবে সাওম ভেঙ্গে যাবে, পরে তা কাযা করবে। [দেখুন: ফাতাওয়া লাজনায়ে দায়েমা: (১০/২৬৩), ফাতাওয়া নং ৫৬; মাজমু ফাতাওয়া ইবন বায: (৩/২৩৮-২৩৯); মাজমু ফাতাওয়া ইবন উসাইমিন: (১৯/২৫০-২৫১)।]
সাত. অনিচ্ছাকৃতভাবে সাওম পালনকারীর শরীর থেকে দুর্ঘটনা অথবা যখমের কারণে অধিক রক্ত বের হলে, সাওম নষ্ট হবে না। যদি দুর্বলতার কারণে সাওম ভাঙ্গতে বাধ্য হয়, তাহলে সে অসুস্থ ব্যক্তির ন্যায় সাওম ভাঙ্গবে ও কাযা করবে। [দেখুন: ফাতাওয়া ইবন উসাইমিন: (১/৫১৪)।]
আট. দাঁত বের করার কারণে সাওম ভাঙ্গবে না, যদিও বেশি রক্ত বের হয়, কারণ, সে রক্ত বের করার জন্য তা বের করেনি, রক্ত তার ইচ্ছা ব্যতীত বের হয়েছে, কিন্তু সে রক্ত গিলবে না, যদি ইচ্ছাকৃত রক্ত গিলে ফেলে, সাওম ভেঙ্গে যাবে। [দেখুন: মাজমু ফাতাওয়া ইবন উসাইমিন: (১৯/২৪৯-২৫৩)।]
নয়. ডাক্তারি যন্ত্র দ্বারা কিডনি পরিষ্কার করে সে রক্ত বিভিন্ন কেমিক্যাল যেমন সুগার, লবন ইত্যাদি মিশিয়ে পুনরায় তা শরীরে প্রতিস্থাপন করলে সাওম ভেঙ্গে যাবে। [দেখুন: ফাতাওয়া লাজনায়ে দায়েমা: (৪৪৯৯)।]
দশ. শিঙ্গার ন্যায় রক্ত দান করলে সাওম ভেঙ্গে যাবে, তাই রাত ব্যতীত এ কাজ করবে না, তবে কাউকে বাঁচানোর জন্য রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হলে দিবে, সাওম ভঙ্গ করবে ও পরে কাযা করবে। [দেখুন: ফাতাওয়া ইবন উসাইমিন: (১/৫১১)।]
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।