HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
সুন্নাত
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
প্রতিটি গুরম্নত্বপূর্ণ কাজে বিশ্ব নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাত রয়েছে। এসব সুন্নাতের অনুসরণ করা আমাদের জন্য একান্ত জরম্নরি। নবী ﷺ কঠিনভাবে আমাদেরকে সুন্নাতের অনুসরণ করার তাকিদ করে গেছেন। হাদীসে রয়েছে,
عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ يَّعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِىْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّيْنَ الرَّاشِدِيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা আমার মৃত্যুর পরে জীবিত থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমাদের জন্য আবশ্যক হলো আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত (আদর্শ) মেনে চলা। তোমরা ওটাকে শক্তভাবে ধারণ করো এবং তোমাদের মাড়ির দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরো। খবরদার! ইবাদাতের নামে তৈরি করা সকল নতুন কাজ থেকে বিরত থাকো। কেননা সকল নবোদ্ভাবিত ইবাদাত বিদআত। আর সকল বিদআত গোমরাহী। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৬০৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৪২; মুসনাদে আহমদ, হা/১৭১৪৫।]
আমাদের প্রতিটি আমল নবী ﷺ Gi mybœvZ I ZixKv Abyhvqx nIqv cÖ‡qvRb| Avgv‡`i Avgjm~nI mnxn `jxj Øviv cÖgvwYZ n‡Z n‡e| wKš—y Avd‡mv‡mi welq n‡jv, আমাদের দেশে পাঞ্জেগানা ওযীফা নামে কিছু বই বাজারে রয়েছে। সরলমনা মুসলিম ভাই-বোনেরা নেকীর আশায় এসব বই পড়ে থাকেন। অথচ এসব বইয়ে অনেক ভিত্তিহীন আমলের কথা রয়েছে, এমনও অনেক আমল আছে যা স্পষ্ট বিদআত। যেমন- দু‘আয়ে গঞ্জল আরশ, দু‘আয়ে হাবীব, দরূদে তাজ, দরূদে হাজারী, আহাদনামা ইত্যাদি। এসবের কোন সহীহ দলীল নেই।
আর শরীয়তের একটি মূলনীতি হলো- সব জিনিসই হালাল, তবে সেটাই হারাম হবে যেটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল রয়েছে। আর সব আমলই বাতিল, কেবল ঐ আমল ব্যতীত যে আমল করার পক্ষে সহীহ দলীল রয়েছে।
অনেকে বলে থাকেন, এ আমল করতে তো নিষেধ করা হয়নি। তাই সমস্যা কী। না, শরীয়তের মূলনীতি এ রকম নয়। কোন আমল তখনই ইবাদাত বলে গণ্য হবে যখন সেটা কুরআন-সুন্নার দলীল দ্বারা প্রমাণিত হবে।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ اَحْدَثَ فِي اَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু (আমল) সংযোজন করবে, যা মূলত তাতে নেই, তা পরিত্যাজ্য (বাতিল) হবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯।]
অতএব আমলের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে এবং দলীলভিত্তিক সহীহ বই পড়ে আমল করতে হবে।
এ বইয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত কিছু আমল এবং আমাদের দৈনন্দিন অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন কাজে নবী ﷺ এর সুন্নাত কেমন ছিল তা বর্ণনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলার কাছে এ প্রার্থনাই করছি যে, তিনি যেন আমাদের এ শ্রমকে কবুল করেন। সেই সাথে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন গঠন করার তাওফীক দান করেন। আমীন!
যারা এখনো দ্বীনের সঠিক জ্ঞান পায়নি তাদের কাছে দ্রুত দাওয়াত পৌঁছানো আমাদের উপর জরম্নরি। তাই সামর্থ অনুযায়ী আমরা সবাই দাওয়াতী কাজে অংশগ্রহণ করি। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْاٰ يَةً
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ‘‘আমার কথা লোকদের নিকট পৌঁছিয়ে দাও, তা একটি আয়াত (বাণী) হলেও।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১।]
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
প্রতিটি গুরম্নত্বপূর্ণ কাজে বিশ্ব নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাত রয়েছে। এসব সুন্নাতের অনুসরণ করা আমাদের জন্য একান্ত জরম্নরি। নবী ﷺ কঠিনভাবে আমাদেরকে সুন্নাতের অনুসরণ করার তাকিদ করে গেছেন। হাদীসে রয়েছে,
عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ يَّعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِىْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّيْنَ الرَّاشِدِيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা আমার মৃত্যুর পরে জীবিত থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমাদের জন্য আবশ্যক হলো আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত (আদর্শ) মেনে চলা। তোমরা ওটাকে শক্তভাবে ধারণ করো এবং তোমাদের মাড়ির দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরো। খবরদার! ইবাদাতের নামে তৈরি করা সকল নতুন কাজ থেকে বিরত থাকো। কেননা সকল নবোদ্ভাবিত ইবাদাত বিদআত। আর সকল বিদআত গোমরাহী। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৬০৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৪২; মুসনাদে আহমদ, হা/১৭১৪৫।]
আমাদের প্রতিটি আমল নবী ﷺ Gi mybœvZ I ZixKv Abyhvqx nIqv cÖ‡qvRb| Avgv‡`i Avgjm~nI mnxn `jxj Øviv cÖgvwYZ n‡Z n‡e| wKš—y Avd‡mv‡mi welq n‡jv, আমাদের দেশে পাঞ্জেগানা ওযীফা নামে কিছু বই বাজারে রয়েছে। সরলমনা মুসলিম ভাই-বোনেরা নেকীর আশায় এসব বই পড়ে থাকেন। অথচ এসব বইয়ে অনেক ভিত্তিহীন আমলের কথা রয়েছে, এমনও অনেক আমল আছে যা স্পষ্ট বিদআত। যেমন- দু‘আয়ে গঞ্জল আরশ, দু‘আয়ে হাবীব, দরূদে তাজ, দরূদে হাজারী, আহাদনামা ইত্যাদি। এসবের কোন সহীহ দলীল নেই।
আর শরীয়তের একটি মূলনীতি হলো- সব জিনিসই হালাল, তবে সেটাই হারাম হবে যেটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল রয়েছে। আর সব আমলই বাতিল, কেবল ঐ আমল ব্যতীত যে আমল করার পক্ষে সহীহ দলীল রয়েছে।
অনেকে বলে থাকেন, এ আমল করতে তো নিষেধ করা হয়নি। তাই সমস্যা কী। না, শরীয়তের মূলনীতি এ রকম নয়। কোন আমল তখনই ইবাদাত বলে গণ্য হবে যখন সেটা কুরআন-সুন্নার দলীল দ্বারা প্রমাণিত হবে।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ اَحْدَثَ فِي اَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু (আমল) সংযোজন করবে, যা মূলত তাতে নেই, তা পরিত্যাজ্য (বাতিল) হবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯।]
অতএব আমলের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে এবং দলীলভিত্তিক সহীহ বই পড়ে আমল করতে হবে।
এ বইয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত কিছু আমল এবং আমাদের দৈনন্দিন অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন কাজে নবী ﷺ এর সুন্নাত কেমন ছিল তা বর্ণনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলার কাছে এ প্রার্থনাই করছি যে, তিনি যেন আমাদের এ শ্রমকে কবুল করেন। সেই সাথে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন গঠন করার তাওফীক দান করেন। আমীন!
যারা এখনো দ্বীনের সঠিক জ্ঞান পায়নি তাদের কাছে দ্রুত দাওয়াত পৌঁছানো আমাদের উপর জরম্নরি। তাই সামর্থ অনুযায়ী আমরা সবাই দাওয়াতী কাজে অংশগ্রহণ করি। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْاٰ يَةً
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ‘‘আমার কথা লোকদের নিকট পৌঁছিয়ে দাও, তা একটি আয়াত (বাণী) হলেও।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১।]
اَلسُّنَّةُ (আস-সুন্নাতু) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে اَلطَّرِيْقُ (আত-ত্বারীকু) তথা পথ। কুরআন মাজীদে ‘সুন্নাত’ শব্দটি পথ, পন্থা, নীতি, নিয়ম ও পদ্ধতি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-
﴿سُنَّةَ اللهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيْلًا﴾
আল্লাহর নীতি, যা পূর্ব থেকেই কার্যকর রয়েছে। আর তুমি কখনো আল্লাহর এ নীতিতে কোনোরূপ পরিবর্তন দেখবে না। (সূরা ফাতাহ- ২৩)
আর নবীর সুন্নাত হচ্ছে সেই নিয়ম, পন্থা ও পদ্ধতি, যা তিনি বাস্তব কাজে ও কর্মে অনুসরণ করে চলতেন।
হাদীস বিশারদ বা মুহাদ্দিসীনের পরিভাষায় ‘সুন্নাত’ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা, কাজ, সমর্থন ও অনুমোদন। প্রচলিত কথায় এটাকেই ‘হাদীস’ বলা হয়। আর ফুকাহাদের পরিভাষায় ‘সুন্নাত’ বলা হয় এমন কাজকে, যা ফরজ বা ওয়াজিব নয় বটে; কিন্তু নবী করীম ﷺ তা প্রায়ই করেছেন।
আমাদের আলোচ্য সুন্নাত হল সেই মূল আদর্শ, যা রাসূলে করীম ﷺ বাস্তব কাজে ও কর্মে অনুসরণ করেছেন।
﴿سُنَّةَ اللهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيْلًا﴾
আল্লাহর নীতি, যা পূর্ব থেকেই কার্যকর রয়েছে। আর তুমি কখনো আল্লাহর এ নীতিতে কোনোরূপ পরিবর্তন দেখবে না। (সূরা ফাতাহ- ২৩)
আর নবীর সুন্নাত হচ্ছে সেই নিয়ম, পন্থা ও পদ্ধতি, যা তিনি বাস্তব কাজে ও কর্মে অনুসরণ করে চলতেন।
হাদীস বিশারদ বা মুহাদ্দিসীনের পরিভাষায় ‘সুন্নাত’ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা, কাজ, সমর্থন ও অনুমোদন। প্রচলিত কথায় এটাকেই ‘হাদীস’ বলা হয়। আর ফুকাহাদের পরিভাষায় ‘সুন্নাত’ বলা হয় এমন কাজকে, যা ফরজ বা ওয়াজিব নয় বটে; কিন্তু নবী করীম ﷺ তা প্রায়ই করেছেন।
আমাদের আলোচ্য সুন্নাত হল সেই মূল আদর্শ, যা রাসূলে করীম ﷺ বাস্তব কাজে ও কর্মে অনুসরণ করেছেন।
রাসূল ﷺ এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উচিত বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাতের অনুসারী হওয়া। কেননা মুহাম্মাদ ﷺ এর চেয়ে উত্তম চরিত্রের দৃষ্টান্ত দ্বিতীয় আর কেউ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ﴾
নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ক্বালাম- ৪)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার এবং তাঁর আদর্শকে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ﴾
নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
(সূরা আহযাব- ২১)
যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী চলার অভ্যাস করবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভ করবে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত সকল কাজে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ করা। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান ও সফলতার অধিকারী হতে পারব, ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَأُولٰئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ أُولٰئِكَ رَفِيْقًا﴾
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করবে, তারা (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও নেককারদের সঙ্গে থাকবে, আর তারা কতইনা উত্তম সঙ্গী। (সূরা নিসা- ৬৯)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন-
فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ
আল্লাহর কসম! তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, তার নিজ সত্ত্বা ও সকল মানুষ হতে অধিক ভালোবাসার পাত্র না হব। [সহীহ বুখারী, হা/১৩।]
জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহর রাসূলের প্রতি মুহাববত বা ভালোবাসা রাখা ও তাঁর সুনণাতের অনুসরণ করা এবং তাঁর দেখানো হেদায়াতের উপর অটল থাকাই হল দ্বীনের মূল বিষয়। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য রাসূল ﷺ এর অনুসরণকে শর্ত হিসেবে উলেস্নখ করেছেন।
﴿ قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ﴾
(হে নবী!) বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা আলে ইমরান- ৩১)
যে লোক প্রত্যেক কাজে রাসূল ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ করার জন্য নিজেকে অভ্যস্ত করে নেবে, আল্লাহ তার অন্তরকে নূরান্বিত করে দেবেন। আদেশ-নিষেধ, কথা-কাজ ও চরিত্রের দিক দিয়ে রাসূল ﷺ এর অনুসারী হওয়ার মাধ্যমেই মানুষ মর্যাদাবান হতে পারে।
﴿وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ﴾
নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ক্বালাম- ৪)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার এবং তাঁর আদর্শকে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ﴾
নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
(সূরা আহযাব- ২১)
যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুযায়ী চলার অভ্যাস করবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভ করবে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত সকল কাজে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ করা। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান ও সফলতার অধিকারী হতে পারব, ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَأُولٰئِكَ مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ أُولٰئِكَ رَفِيْقًا﴾
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করবে, তারা (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও নেককারদের সঙ্গে থাকবে, আর তারা কতইনা উত্তম সঙ্গী। (সূরা নিসা- ৬৯)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন-
فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ
আল্লাহর কসম! তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, তার নিজ সত্ত্বা ও সকল মানুষ হতে অধিক ভালোবাসার পাত্র না হব। [সহীহ বুখারী, হা/১৩।]
জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহর রাসূলের প্রতি মুহাববত বা ভালোবাসা রাখা ও তাঁর সুনণাতের অনুসরণ করা এবং তাঁর দেখানো হেদায়াতের উপর অটল থাকাই হল দ্বীনের মূল বিষয়। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য রাসূল ﷺ এর অনুসরণকে শর্ত হিসেবে উলেস্নখ করেছেন।
﴿ قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ﴾
(হে নবী!) বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
(সূরা আলে ইমরান- ৩১)
যে লোক প্রত্যেক কাজে রাসূল ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ করার জন্য নিজেকে অভ্যস্ত করে নেবে, আল্লাহ তার অন্তরকে নূরান্বিত করে দেবেন। আদেশ-নিষেধ, কথা-কাজ ও চরিত্রের দিক দিয়ে রাসূল ﷺ এর অনুসারী হওয়ার মাধ্যমেই মানুষ মর্যাদাবান হতে পারে।
১. রাসূল ﷺ এর ভালোবাসার নিদর্শন হল আল্লাহর রাসূল ﷺ যে শরীয়াত নিয়ে আগমন করেছেন, আর যে সকল বিধি-বিধান রেখে গেছেন সেগুলোকে মনেপ্রাণে মেনে নেয়া। রাসূল ﷺ এর আদেশ ও নিষেধসমূহ পালন করতে মনের মধ্যে কোন সংকীর্ণতা না রাখা।
২. রাসূল ﷺ এর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হল- কথা ও কাজের দ্বারা তার দ্বীনের সাহায্য করা এবং শরীয়তবিরোধী কাজ হতে নিজে দূরে থাকা এবং অন্যকেও দূরে রাখা।
৩. রাসূল ﷺ এর ভালোবাসার নিদর্শন হল- রাসূল ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া এবং সকল কাজে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা।
২. রাসূল ﷺ এর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হল- কথা ও কাজের দ্বারা তার দ্বীনের সাহায্য করা এবং শরীয়তবিরোধী কাজ হতে নিজে দূরে থাকা এবং অন্যকেও দূরে রাখা।
৩. রাসূল ﷺ এর ভালোবাসার নিদর্শন হল- রাসূল ﷺ এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া এবং সকল কাজে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা।
১. যে ব্যক্তি রাসূল ﷺ এর মত চরিত্র গড়ার জন্য চেষ্টা করে সে ঈমানের মিষ্টতা লাভ করে।
২. যে ব্যক্তি সুন্নাতের উপর আমল করবে সে ইবাদাত-বন্দেগী করতে স্বাদ পাবে।
৩. সুন্নাতের উপর আমল করলে ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর মহববত লাভ করতে সক্ষম হবে।
৪. ফরয আমলের ঘাটতি সুন্নাত দ্বারা পূরণ হয়।
৫. সুন্নাতের উপর আমল করলে বিদআত হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
৬. সুন্নাতের উপর আমল মানেই আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনকে সম্মান করা।
২. যে ব্যক্তি সুন্নাতের উপর আমল করবে সে ইবাদাত-বন্দেগী করতে স্বাদ পাবে।
৩. সুন্নাতের উপর আমল করলে ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর মহববত লাভ করতে সক্ষম হবে।
৪. ফরয আমলের ঘাটতি সুন্নাত দ্বারা পূরণ হয়।
৫. সুন্নাতের উপর আমল করলে বিদআত হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
৬. সুন্নাতের উপর আমল মানেই আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনকে সম্মান করা।
স্বভাবজাত সুন্নাত হলো এমন কাজ, যা সকল নবী-রাসূল সম্পাদন করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা এসব সুন্নাত পালনকারীদেরকে ভালোবাসেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الْأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الْإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ . قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيْتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُوْنَ الْمَضْمَضَةَ
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত :
১. গোঁফ খাটো করা,
২. দাড়ি লম্বা করা,
৩. মিসওয়াক করা,
৪. পানি দিয়ে নাক ঝাড়া,
৫. নখ কাটা,
৬. আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া,
৭. বগলের পশম উপড়ে ফেলা,
৮. নাভির নীচের পশম মুন্ডন করা
৯. এবং ইস্তিঞ্জা করা।
যাকারিয়্যা বলেন, হাদীসের বর্ণনাকারী মুস‘আব বলেছেন, দশমটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৭; আবু দাউদ, হা/৫৩; তিরমিযী, হা/২৭৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৩।]
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الْأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الْإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ . قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيْتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُوْنَ الْمَضْمَضَةَ
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত :
১. গোঁফ খাটো করা,
২. দাড়ি লম্বা করা,
৩. মিসওয়াক করা,
৪. পানি দিয়ে নাক ঝাড়া,
৫. নখ কাটা,
৬. আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া,
৭. বগলের পশম উপড়ে ফেলা,
৮. নাভির নীচের পশম মুন্ডন করা
৯. এবং ইস্তিঞ্জা করা।
যাকারিয়্যা বলেন, হাদীসের বর্ণনাকারী মুস‘আব বলেছেন, দশমটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৭; আবু দাউদ, হা/৫৩; তিরমিযী, হা/২৭৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৩।]
পুরম্নষাঙ্গের অগ্রভাগ আবৃতকারী চামড়া কেটে ফেলাকে খাতনা বলে। ইবনে কুদামা বলেন, খাতনা করা পুরম্নষের জন্য ওয়াজিব, আর মহিলাদের জন্য সম্মানজনক। এটা তাদের জন্য ওয়াজিব নয়। [মুগনী ১/৮৫।]
খাতনা করা মুসলিমদের নিদর্শন। এটা মুসলিমদেরকে ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান থেকে পৃথককারী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। বালেগ হওয়ার পূর্বেই বাচ্চাদের খাতনা করানো জরম্নরি।
খাতনা করা মুসলিমদের নিদর্শন। এটা মুসলিমদেরকে ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান থেকে পৃথককারী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। বালেগ হওয়ার পূর্বেই বাচ্চাদের খাতনা করানো জরম্নরি।
নখ কাটা, গোঁফ খাটো করা, বগলের লোম উপড়ানো ও নাভির নিচের লোম মুন্ডন করা সুন্নাত। এর জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা বাধা নেই। যে সময় তা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হবে, তখনই পরিষ্কার করবে। তবে ৪০ দিনের বেশি তা রেখে দেয়া উচিত নয়।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার জন্য আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল- যাতে আমরা ৪০ দিনের বেশি দেরি না করি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২২; ইবনে মাজাহ, হা/৬৯৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭১১।]
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার জন্য আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল- যাতে আমরা ৪০ দিনের বেশি দেরি না করি। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২২; ইবনে মাজাহ, হা/৬৯৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭১১।]
দাঁতের ময়লা দূর করা এবং দাঁতকে সুস্থ রাখার জন্য গাছের ডাল বা শিকড় ব্যবহার করাকে মিসওয়াক বলে। মিসওয়াকের গুরম্নত্ব অনেক। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِي ، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ الْوُضُوْءِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি ওযুর সময় তাদেরকে মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৫৩১; বায়হাকী, হা/১৪৭।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِيْ ، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবু দাউদ, হা/৪৬; তিরমিযী, হা/২২; নাসাঈ, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৭।]
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন,
اَلسِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ
মিসওয়াক মুখকে পবিত্র করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি আনয়ন করে। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮৯; দার কুতনী, হা/৭০৯; নাসাঈ, হা/৫; মিশকাত, হা/৩৮১।]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِي ، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ الْوُضُوْءِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি ওযুর সময় তাদেরকে মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৫৩১; বায়হাকী, হা/১৪৭।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمَّتِيْ ، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। [সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবু দাউদ, হা/৪৬; তিরমিযী, হা/২২; নাসাঈ, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৭।]
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন,
اَلسِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ
মিসওয়াক মুখকে পবিত্র করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি আনয়ন করে। [ইবনে মাজাহ, হা/২৮৯; দার কুতনী, হা/৭০৯; নাসাঈ, হা/৫; মিশকাত, হা/৩৮১।]
পুরম্নষের জন্য দাড়ি লম্বা করা সুন্নাত বরং ওয়াজিব। এর কারণ হলো :
১. রাসূলুল্লাহ ﷺ দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ قَالَ : رَسُوْلُ اللهِ : خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো, গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করো। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৫; বায়হাকী, হা/৬৭২।]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوْسَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করে অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৭১; বায়হাকী, হা/৬৭৩।]
২. দাড়ি মুন্ডন করা অগ্নিপূজক ও কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। যেমনটি পূর্বোলেস্নখিত হাদীসদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে।
৩. দাড়ি কর্তন করলে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয় এবং শয়তানের আনুগত্য করা হয়।
৪. দাড়ি মুন্ডন করলে নারীদের সাদৃশ্য হয়ে যায়। আর যেসব পুরম্নষ নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের প্রতি অভিশাপ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫; তিরমিযী, হা/২৯৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৯০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৫১।]
১. রাসূলুল্লাহ ﷺ দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ قَالَ : رَسُوْلُ اللهِ : خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো, গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করো। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৫; বায়হাকী, হা/৬৭২।]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوْسَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা গোঁফ খাটো করো এবং দাড়ি লম্বা করে অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা করো। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৭১; বায়হাকী, হা/৬৭৩।]
২. দাড়ি মুন্ডন করা অগ্নিপূজক ও কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। যেমনটি পূর্বোলেস্নখিত হাদীসদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে।
৩. দাড়ি কর্তন করলে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয় এবং শয়তানের আনুগত্য করা হয়।
৪. দাড়ি মুন্ডন করলে নারীদের সাদৃশ্য হয়ে যায়। আর যেসব পুরম্নষ নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের প্রতি অভিশাপ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৫; তিরমিযী, হা/২৯৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৯০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৫১।]
তিন প্রকারে চুল রাখা সুন্নাত।
১. ওয়াফ্রা তথা কানের লতি পর্যন্ত,
২. লিম্মা তথা ঘাড় পর্যন্তত,
৩. জুম্মা তথা কাঁধ পর্যন্ত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللهِ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল দু’কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। [আবু দাউদ, হা/৪১৮৭।]
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللهِ فَوْقَ الْوَفْرَةِ وَدُونَ الْجُمَّةِ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চুল কানের নীচ থেকে ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। [আবু দাউদ, হা/৪১৮৯।]
عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِى لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِى حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللهِ - زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ .
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোনো ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরিধারী, লাল ইয়েমেনী চাদরের আবরণে রাসূলুল্লাহ থেকে সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মাদ (রহ.) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। [আবু দাউদ, হা/৪১৮৫।]
প্রথম হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। পরের হাদীসে বলা হয়েছে, কানের নীচ তথা ঘাড় বরাবর ছিল। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, কাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। সকল হাদীসের বক্তব্যই সঠিক। কারণ, চুল সব সময় এক অবস্থায় থাকে না। কখনো কম হয়, কখনো বেশি হয়। তিনি সর্বোচ্চ কাঁধ পর্যন্ত লম্বা করেছেন, যাকে ‘জুম্মা’ বলা হয়। আর সর্বাধিক ছোট করার পরিমাণ ছিল কানের লতি পর্যন্ত, যাকে ‘ওয়াফরা’ বলা হয়। আর এর মাঝামাঝি অবস্থানকে ‘লিম্মা’ বলা হয়। এ তিন প্রকার ছাড়া অন্যভাবেও চুল রাখা জায়েয আছে, যতক্ষণ তা অন্য কোনো জাতির সাদৃশ্য না হবে।
পুরম্নষের চুল কাঁধের নিচে যাবে না :
পুরম্নষের চুল কাঁধের নিচে লম্বা করা ঠিক নয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ - - وَلِى شَعْرٌ طَوِيْلٌ فَلَمَّا رَاٰنِى رَسُولُ اللهِ - - قَالَ «ذُبَابٌ ذُبَابٌ» . قَالَ فَرَجَعْتُ فَجَزَزْتُهٗ ثُمَّ أَتَيْتُهٗ مِنَ الْغَدِ فَقَالَ : إِنِّى لَمْ أَعْنِكَ وَهٰذَا أَحْسَنُ
ওয়ায়েল ইবনে হুজ্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ -এর নিকট উপস্থিত হলাম, এ সময় আমার মাথার চুল খুবই লম্বা ছিল। তিনি আমাকে দেখে বললেন : অশুভ! অমঙ্গলজনক! তখন আমি ফিরে এসে চুল কেটে ফেলি। পরদিন আমি যখন তাঁর কাছে আসলাম তখন তিনি বললেন, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করিনি, এটাই উত্তম। [আবু দাউদ-হা/৪১৯২।]
মাথার একাংশ কামিয়ে অপরাংশ রেখে দেয়া নিষেধ :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللهِ - - عَنِ الْقَزَعِ وَالْقَزَعُ أَنْ يُحْلَقَ رَأْسُ الصَّبِىِّ فَيُتْرَكَ بَعْضُ شَعْرِه .
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ‘ক্বাযা’ থেকে নিষেধ করেছেন। ক্বাযা হলো বাচ্চার মাথার একাংশ কামিয়ে অপরাংশ রেখে দেয়া। [আবু দাউদ, হা/৪১৯৫।]
মাথার চুল পরিপাটি করা সুন্নাত :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ أُرَجِّلُ رَأْسَ رَسُوْلِ اللهِ وَاَنَا حَائِضٌ
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হায়েয (ঋতুবতী) অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল পরিপাটি করতাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩; সহীহ বুখারী, হা/২৯৫; নাসাঈ, হা/২৭৭; মিশকাত, হা/৪৪১৯।]
চুল আঁচড়িয়ে পরিপাটি করে রাখতে হবে, তবে ঘন ঘন আঁচড়িয়ে ফ্যাশনে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া সমীচীন নয়।
মেয়েদের মাথার চুল লম্বা হবে এবং চিরম্ননি দিয়ে আঁচড়িয়ে পরিপাটি করে রাখবে। কোনোভাবেই মাথার চুল বব কাটিং করা (কপাল ও চোখের উপর ফেলে রাখা) আবার চুল কাঁধ পর্যন্ত কেটে শ্যাম্পু করে রাখা সুন্নাত নয়। সুতরাং এসব পরিত্যাগ করে মেয়েরা তাদের মাথার চুলকে একটা বয়স থেকে লম্বা হতে দেবে এবং আঁচড়িয়ে পরিপাটি করে মাথায় স্কার্ফ বা বড় ওড়না ব্যবহার করবে।
১. ওয়াফ্রা তথা কানের লতি পর্যন্ত,
২. লিম্মা তথা ঘাড় পর্যন্তত,
৩. জুম্মা তথা কাঁধ পর্যন্ত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللهِ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল দু’কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। [আবু দাউদ, হা/৪১৮৭।]
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللهِ فَوْقَ الْوَفْرَةِ وَدُونَ الْجُمَّةِ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চুল কানের নীচ থেকে ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। [আবু দাউদ, হা/৪১৮৯।]
عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِى لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِى حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللهِ - زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ .
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোনো ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরিধারী, লাল ইয়েমেনী চাদরের আবরণে রাসূলুল্লাহ থেকে সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মাদ (রহ.) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। [আবু দাউদ, হা/৪১৮৫।]
প্রথম হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। পরের হাদীসে বলা হয়েছে, কানের নীচ তথা ঘাড় বরাবর ছিল। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, কাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। সকল হাদীসের বক্তব্যই সঠিক। কারণ, চুল সব সময় এক অবস্থায় থাকে না। কখনো কম হয়, কখনো বেশি হয়। তিনি সর্বোচ্চ কাঁধ পর্যন্ত লম্বা করেছেন, যাকে ‘জুম্মা’ বলা হয়। আর সর্বাধিক ছোট করার পরিমাণ ছিল কানের লতি পর্যন্ত, যাকে ‘ওয়াফরা’ বলা হয়। আর এর মাঝামাঝি অবস্থানকে ‘লিম্মা’ বলা হয়। এ তিন প্রকার ছাড়া অন্যভাবেও চুল রাখা জায়েয আছে, যতক্ষণ তা অন্য কোনো জাতির সাদৃশ্য না হবে।
পুরম্নষের চুল কাঁধের নিচে যাবে না :
পুরম্নষের চুল কাঁধের নিচে লম্বা করা ঠিক নয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ - - وَلِى شَعْرٌ طَوِيْلٌ فَلَمَّا رَاٰنِى رَسُولُ اللهِ - - قَالَ «ذُبَابٌ ذُبَابٌ» . قَالَ فَرَجَعْتُ فَجَزَزْتُهٗ ثُمَّ أَتَيْتُهٗ مِنَ الْغَدِ فَقَالَ : إِنِّى لَمْ أَعْنِكَ وَهٰذَا أَحْسَنُ
ওয়ায়েল ইবনে হুজ্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ -এর নিকট উপস্থিত হলাম, এ সময় আমার মাথার চুল খুবই লম্বা ছিল। তিনি আমাকে দেখে বললেন : অশুভ! অমঙ্গলজনক! তখন আমি ফিরে এসে চুল কেটে ফেলি। পরদিন আমি যখন তাঁর কাছে আসলাম তখন তিনি বললেন, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করিনি, এটাই উত্তম। [আবু দাউদ-হা/৪১৯২।]
মাথার একাংশ কামিয়ে অপরাংশ রেখে দেয়া নিষেধ :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللهِ - - عَنِ الْقَزَعِ وَالْقَزَعُ أَنْ يُحْلَقَ رَأْسُ الصَّبِىِّ فَيُتْرَكَ بَعْضُ شَعْرِه .
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ‘ক্বাযা’ থেকে নিষেধ করেছেন। ক্বাযা হলো বাচ্চার মাথার একাংশ কামিয়ে অপরাংশ রেখে দেয়া। [আবু দাউদ, হা/৪১৯৫।]
মাথার চুল পরিপাটি করা সুন্নাত :
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ أُرَجِّلُ رَأْسَ رَسُوْلِ اللهِ وَاَنَا حَائِضٌ
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হায়েয (ঋতুবতী) অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাথার চুল পরিপাটি করতাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৩৩; সহীহ বুখারী, হা/২৯৫; নাসাঈ, হা/২৭৭; মিশকাত, হা/৪৪১৯।]
চুল আঁচড়িয়ে পরিপাটি করে রাখতে হবে, তবে ঘন ঘন আঁচড়িয়ে ফ্যাশনে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া সমীচীন নয়।
মেয়েদের মাথার চুল লম্বা হবে এবং চিরম্ননি দিয়ে আঁচড়িয়ে পরিপাটি করে রাখবে। কোনোভাবেই মাথার চুল বব কাটিং করা (কপাল ও চোখের উপর ফেলে রাখা) আবার চুল কাঁধ পর্যন্ত কেটে শ্যাম্পু করে রাখা সুন্নাত নয়। সুতরাং এসব পরিত্যাগ করে মেয়েরা তাদের মাথার চুলকে একটা বয়স থেকে লম্বা হতে দেবে এবং আঁচড়িয়ে পরিপাটি করে মাথায় স্কার্ফ বা বড় ওড়না ব্যবহার করবে।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ إِنْ كَانَ رَسُولُ اللهِ - - يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي شَأْنِه كُلِّه فِى طُهُورِه إِذَا تَطَهَّرَ وَفِى تَرَجُّلِه إِذَا تَرَجَّلَ وَفِى انْتِعَالِه إِذَا انْتَعَلَ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সকল কাজ ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরিধান করা, মাথার চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রেও। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৪; মুসলিম হা/৬৪০।]
হাদীসে উলেস্নখিত বিষয়গুলোই নয়; বরং যেসব কাজে সৌন্দর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, সেসব কাজ ডান দিকে হতে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমন- জামা বা মোজা পরিধান করার সময় ডান দিক থেকে শুরম্ন করা পছন্দনীয়। কারণ এর দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এমনিভাবে মসজিদে প্রবেশ করার সময় ডান পা প্রথমে দেবে। কারণ মসজিদে প্রবেশ করা মর্যাদার বিষয়। আর যেসব কাজে সৌন্দর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় না, সেসব কাজ বাম দিক থেকে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমন- পায়খানায় প্রবেশের সময় বাম পা আগে দেয়া, কাপড় ও জুতা খোলার সময় বাম পার্শ্ব হতে খুলা আরম্ভ করা এবং মসজিদ হতে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে বের করা ইত্যাদি।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সকল কাজ ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরিধান করা, মাথার চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রেও। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৪; মুসলিম হা/৬৪০।]
হাদীসে উলেস্নখিত বিষয়গুলোই নয়; বরং যেসব কাজে সৌন্দর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, সেসব কাজ ডান দিকে হতে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমন- জামা বা মোজা পরিধান করার সময় ডান দিক থেকে শুরম্ন করা পছন্দনীয়। কারণ এর দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এমনিভাবে মসজিদে প্রবেশ করার সময় ডান পা প্রথমে দেবে। কারণ মসজিদে প্রবেশ করা মর্যাদার বিষয়। আর যেসব কাজে সৌন্দর্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় না, সেসব কাজ বাম দিক থেকে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। যেমন- পায়খানায় প্রবেশের সময় বাম পা আগে দেয়া, কাপড় ও জুতা খোলার সময় বাম পার্শ্ব হতে খুলা আরম্ভ করা এবং মসজিদ হতে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে বের করা ইত্যাদি।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ إِذَا انْتَعَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِالْيَمِينِ وَإِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدَأْ بِالشِّمَالِ، لِتَكُنِ الْيُمْنَى أَوَّلَهُمَا تُنْعَلُ وَاٰخِرَهُمَا تُنْزَعُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুতা পরিধান করবে তখন সে যেন ডান দিক থেকে আরম্ভ করে। আর যখন খোলবে তখন যেন বাম দিক থেকে আরম্ভ করে- যাতে পরার সময় প্রথমে ডান পা এবং খোলার সময় প্রথমে বাম পা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৫।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুতা পরিধান করবে তখন সে যেন ডান দিক থেকে আরম্ভ করে। আর যখন খোলবে তখন যেন বাম দিক থেকে আরম্ভ করে- যাতে পরার সময় প্রথমে ডান পা এবং খোলার সময় প্রথমে বাম পা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৫।]
পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহ সজ্জিত করা এবং সতর আবৃত করার মাধ্যম। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যেসব নেয়ামত দান করেছেন, পোশাক তার মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
﴿يَا بَنِيْ اٰدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُّوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًا، وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ذٰلِكَ خَيْرٌ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ﴾
হে আদম সন্তান! আমি তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাকই হচ্ছে সর্বোত্তম। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আ‘রাফ ৭/২৬)
পোশাক ডান দিক থেকে পরিধান করা সুন্নাত :
পোশাক-পরিচ্ছদ ডান দিক থেকে পরিধান করা এবং বাম দিক থেকে খোলা সুন্নাত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ إِذَا لَبِسَ قَمِيْصًا بَدَأَ بِمَيَامِنِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন জামা পরিধান করতেন, তখন ডান দিক থেকে শুরম্ন করতেন। [তিরমিযী, হা/১৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৪২২; মিশকাত, হা/৪৩৩০।]
পোশাক পরিধানের দু‘আ- ১ :
সাহল ইবনে মু‘আয (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কাপড় পরিধান করে এ দু‘আটি পাঠ করল, আল্লাহ তার আগের পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ كَسَانِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةَ
আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ্।
অর্থ : যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এই পোশাক পরিধান করিয়েছেন এবং আমার শক্তি-সামর্থ্য ব্যতীতই তিনি তা আমাকে দান করেছেন। [আবু দাঊদ, হা/৪০২৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৪৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৭০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৮০১; দারেমী, হা/২৬৯০।]
পোশাক পরিধানের দু‘আ- ২ :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন নতুন কাপড় পরিধান করতেন, তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন।
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِه وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَه وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّه وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَه
আল্লা-হুম্মা লাকাল্ হামদু, আন্তা কাসাওতানীহি, আস্ আলুকা মিন খাইরিহী ওয়া খাইরি মা সুনি‘আ লাহূ, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহী ওয়া শার্রি মা- সুনি‘আ লাহূ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আপনিই এ কাপড় আমাকে পরিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ এবং এটি যে জন্য তৈরি করা হয়েছে, সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আমি এর অনিষ্ট থেকে এবং যে অনিষ্টের জন্য এটি তৈরি হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাঊদ, হা/৪০২২; তিরমিযী, হা/১৭৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৪২০; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১০৭৯; মিশকাত, হা/৪৩৪২।]
নতুন কাপড় পরিধানকারীকে দেখে পাঠ করার দু‘আ :
আবু নাযরা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীরা যখনই কাউকে নতুন কাপড় পরিধান করা অবস্থায় দেখতেন, তখনই তাকে উদ্দেশ্য করে এ দু‘আ পাঠ করতেন।
تُبْلِىْ وَيُخْلِفُ اللّٰهُ تَعَالٰى
তুব্লী ওয়া ইউখলিফুল্লা-হু তা‘আলা।
অর্থ : যথা সময়ে পুরাতন হয়ে বিনষ্ট হবে এবং আল্লাহ এর স্থলাভিষিক্ত করম্নক। [আবু দাঊদ, হা/৪০২২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হা/২৫৫৯৯।]
ধোয়া কাপড় পরিধানকারীকে দেখে পাঠ করার দু‘আ :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ উমর (রাঃ) কে একটি সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখে বললেন, তোমার কাপড়টি কি ধোয়া, নাকি নতুন? উমর (রাঃ) বললেন, এটি ধোয়া কাপড়। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আটি পাঠ করলেন।
اِلْبَسْ جَدِيْدًا وَعِشْ حَمِيْدًا وَمُتْ شَهِيْدًا
ইলবাস জাদীদান ওয়া ‘ইশ হামীদান ওয়া মুত শাহীদান।
অর্থ : তুমি নতুন পোশাক পরিধান করো এবং প্রশংসীত জীবন যাপন করো আর শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করো। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৬২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫২।]
﴿يَا بَنِيْ اٰدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُّوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًا، وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ذٰلِكَ خَيْرٌ ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ﴾
হে আদম সন্তান! আমি তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাকই হচ্ছে সর্বোত্তম। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আ‘রাফ ৭/২৬)
পোশাক ডান দিক থেকে পরিধান করা সুন্নাত :
পোশাক-পরিচ্ছদ ডান দিক থেকে পরিধান করা এবং বাম দিক থেকে খোলা সুন্নাত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ إِذَا لَبِسَ قَمِيْصًا بَدَأَ بِمَيَامِنِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন জামা পরিধান করতেন, তখন ডান দিক থেকে শুরম্ন করতেন। [তিরমিযী, হা/১৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৪২২; মিশকাত, হা/৪৩৩০।]
পোশাক পরিধানের দু‘আ- ১ :
সাহল ইবনে মু‘আয (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কাপড় পরিধান করে এ দু‘আটি পাঠ করল, আল্লাহ তার আগের পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ كَسَانِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةَ
আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ্।
অর্থ : যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এই পোশাক পরিধান করিয়েছেন এবং আমার শক্তি-সামর্থ্য ব্যতীতই তিনি তা আমাকে দান করেছেন। [আবু দাঊদ, হা/৪০২৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/১৪৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৭০; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪৮০১; দারেমী, হা/২৬৯০।]
পোশাক পরিধানের দু‘আ- ২ :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন নতুন কাপড় পরিধান করতেন, তখন এ দু‘আ পাঠ করতেন।
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِه وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَه وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّه وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَه
আল্লা-হুম্মা লাকাল্ হামদু, আন্তা কাসাওতানীহি, আস্ আলুকা মিন খাইরিহী ওয়া খাইরি মা সুনি‘আ লাহূ, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহী ওয়া শার্রি মা- সুনি‘আ লাহূ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আপনিই এ কাপড় আমাকে পরিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ এবং এটি যে জন্য তৈরি করা হয়েছে, সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আমি এর অনিষ্ট থেকে এবং যে অনিষ্টের জন্য এটি তৈরি হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আবু দাঊদ, হা/৪০২২; তিরমিযী, হা/১৭৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪৮৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৪২০; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১০৭৯; মিশকাত, হা/৪৩৪২।]
নতুন কাপড় পরিধানকারীকে দেখে পাঠ করার দু‘আ :
আবু নাযরা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীরা যখনই কাউকে নতুন কাপড় পরিধান করা অবস্থায় দেখতেন, তখনই তাকে উদ্দেশ্য করে এ দু‘আ পাঠ করতেন।
تُبْلِىْ وَيُخْلِفُ اللّٰهُ تَعَالٰى
তুব্লী ওয়া ইউখলিফুল্লা-হু তা‘আলা।
অর্থ : যথা সময়ে পুরাতন হয়ে বিনষ্ট হবে এবং আল্লাহ এর স্থলাভিষিক্ত করম্নক। [আবু দাঊদ, হা/৪০২২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হা/২৫৫৯৯।]
ধোয়া কাপড় পরিধানকারীকে দেখে পাঠ করার দু‘আ :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ উমর (রাঃ) কে একটি সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখে বললেন, তোমার কাপড়টি কি ধোয়া, নাকি নতুন? উমর (রাঃ) বললেন, এটি ধোয়া কাপড়। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আটি পাঠ করলেন।
اِلْبَسْ جَدِيْدًا وَعِشْ حَمِيْدًا وَمُتْ شَهِيْدًا
ইলবাস জাদীদান ওয়া ‘ইশ হামীদান ওয়া মুত শাহীদান।
অর্থ : তুমি নতুন পোশাক পরিধান করো এবং প্রশংসীত জীবন যাপন করো আর শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করো। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৫৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৬২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৫২।]
পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় বিধি-নিষেধ রয়েছে। যেমন :
১. রেশমের পোশাক পরিধান করা যাবে না :
রেশমের পোশাক পরিধান করা পুরম্নষদের জন্য হারাম। হাদীসে এসেছে, হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে এবং খাবার পরিবেশন করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে তিনি রেশমের কাপড় পরিধান করতে এবং তার উপর বসতে নিষেধ করেছেন। [বুখারী হা/৫৮৩৭; মিশকাত হা/৪৩২১।]
২. নারী-পুরম্নষ একে অপরের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে না :
মহিলাদের জন্য নির্ধারিত অথবা তাদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পুরম্নষদের জন্য পরিধান করা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে পুরম্নষদের জন্য নির্ধারিত পোশাকও মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ নারীদের বেশ ধারণকারী পুরম্নষদেরকে এবং পুরম্নষদের বেশ ধারণকারী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। [বুখারী হা/৫৮৮৫; মিশকাত হা/৪৪২৮।]
৩. প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পোশাক পরবে না :
যে পোশাক খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পরিধান করা হয় তা নিষিদ্ধ। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় খ্যাতি লাভের পোশাক পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। [ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬; মিশকাত হা/৪৩৪৬।]
৪. ভিন্ন ধর্মের পরিচয় বহনকারী পোশাক পরা যাবে না :
যেসব পোশাক ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মের পরিচয় বহন করে যেমন- ক্রুশ অঙ্কিত পোশাক, হিন্দুদের ধূতি, খ্রিস্টানদের এক ধরনের সাদা পোশাক ইত্যাদি পরিধান করা বৈধ নয়। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার পরিধানে দু’টি রঙিন কাপড় দেখে বললেন, এটা তো কাফেরদের কাপড়; অতএব তা পরিধান করো না। [মুসলিম, হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭।]
হিন্দুদের মতো উল্কি আঁকা এবং সিঁদুর পরাও হারাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির অনুসরণ করবে সে সেই জাতিরই অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। [ফতহুল বারী, ১৩/৩০০; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৯।]
৫. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা যাবে না :
ইচ্ছাকৃতভাবে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা জায়েয নয়। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির দিকে দৃষ্টি দিবেন না, যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত ইযার (লুঙ্গি) ঝুলিয়ে পরিধান করে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৮, সহীহ মুসলিম, হা/৩৭।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, ইযারের (লুঙ্গির) যে অংশ টাখনুর নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৭।]
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার (অপর বর্ণনায় তাঁর নিজের) নলার পশ্চাদভাগ ধরে বললেন, এই হলো লুঙ্গির (সর্বনিম্ন) স্থান। তুমি যদি তা মানতে না চাও তবে আরো নিচে, যদি তাও মানতে না চাও তবে আরো নিচে (নামাতে পারো)। যদি তুমি, তাও মানতে না চাও তবে পায়ের টাখনুর নিচে যাওয়ার অধিকার লুঙ্গির নেই। [তিরমিযী, হা/১৭৮৩; নাসায়ী, হা/৫৩২৯; মুখতাসারম্নশ শামাইল, হা/৯৯; সহীহাহ. হা/১৭৬৫, ২৬৮৩।]
৬. প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরা যাবে না :
কাপড়ে কোনো প্রাণীর ছবি রাখা যাবে না। কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা, টাঙ্গানো বা পোশাকে বহন করা ইসলামে নিষেধ। এ সকল কর্মে জড়িতদের জন্য পরলৌকিক জীবনে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
উবায়দুল্লাহ ইবনে উতবা (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি অসুস্থ আবু তালহা (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন। তিনি সেখানে সাহল ইবনে হুনায়ফ (রাঃ)-কে উপস্থিত পেলেন। তখন আবু তালহা (রাঃ) একজনকে ডেকে তার নিচে বিছানো চাদরটি সরিয়ে ফেলতে বললেন। তখন সাহল (রাঃ) বললেন, এটিকে সরিয়ে ফেলছেন কেন? তিনি বললেন, এতে তো ছবি রয়েছে। আর নবী ﷺ (ছবি সম্পর্কে) কী বলেছেন তা তো তুমি জান। [তিরমিজী হা/১৭৫০।]
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, অবশ্যই কিয়ামাতের দিন মানুষের মধ্যে (কঠিন) শাস্তি ভোগ করবে ছবি তৈরিকারীরা। [সহীহ বুখারী হা/৫৬০৬।]
৭. টাইট পোশাক পরিধান করা যাবে না :
এত টাইট পোশাক পরিধান করা যাবে না, যাতে শরীরের ভাঁজ ফুটে উঠে এবং বসতে ও সালাত আদায় করতে কষ্ট হয়। কেননা এর দ্বারা পোশাক পরিধানের মূল উদ্দেশ্য বিনষ্ট হয়ে যায়। নারীরা পাতলা পোশাক পরিধান করলে বেপর্দা থাকার গোনাহ হবে। আর এ ধরনের কাপড় পরে সালাত আদায় করলে তা সহীহ হবে না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দু’শ্রেণির জাহান্নামীকে আমি দেখিনি। (১) যাদের হাতে থাকবে গরম্নর লেজের ন্যায় ছড়ি, তা দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। (২) ঐ সকল রমণী, যারা বস্ত্র পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, পুরম্নষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারিণী এবং নিজেরাও পুরম্নষদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে লম্বা গ্রীবাবিশিষ্ট উটের চুঁটির ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না; অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূর থেকেও পাওয়া যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮ , মিশকাত হা/৩৫২৪।]
এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, এমন পোশাক পরিধান করে, যা তাকে পুরোপুরি আবৃত করে না। ফলে কাপড় পরলেও মূলত সে উলঙ্গই থেকে যায়। যেমন ওই নারী যে কি-না এমন পাতলা কাপড় পরে, যা তার কোমল ত্বক দৃশ্যমান করে অথবা এমন আঁটসাট বস্ত্র গায়ে জড়ায়, যা তার শরীরের বাহু, নিতম্ব প্রভৃতির ভাঁজগুলোকে পরিষ্কার ফুটিয়ে তোলে। নারীর পোশাক সেটিই, যা তার আপাদমস্তক ঢেকে ফেলে। দেহের কোনো অংশই প্রকাশ করে না। পুরম্ন ও প্রশস্ত হওয়ায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকারও নির্ণয় করে না। [মাজুমূ‘ ফাতাওয়া : ২২/১৪৬।]
৮. পোশাক বেশি চাকচিক্য হবে না :
পোশাক এমন হবে না যে ইবাদাতের সময় মনোযোগ আকর্ষণ করে। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কারম্নকার্য খচিত একটি পশমী চাদর পরিহিত অবস্থায় সালাত আদায় করলেন। অতঃপর বলেন, এই চাদরের কারম্নকার্য আমাকে অমনোযোগী করেছে। এটা আবু জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং আমার জন্য কারম্নকার্যহীন (আম্বেজানী) চাদর নিয়ে এসো। [সহীহুল বুখারী, হা/৩৭৩, ৭৫২, ৫৮১৭, মুসলিম, হা/৫৫৬।]
৯. অগোছালো ভঙ্গিতে পোষাক পরিধান করা অনুচিত :
এমন অগোছালো ভঙ্গিতে পোষাক পরিধান করা অনুচিত, যা আরামদায়ক নয় অথবা যাতে সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। লুঙ্গি পরে বিছানায় বা মাটিতে শুয়ে হাঁটুর উপর পা তুলে দিতে নবী ﷺ নিষেধ করেছেন। [জামউল ওসাইল শরহু শামায়িলিত তিরমিযী ১/১৭৯।] কেননা, এতে সতর খুলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
১০. পোশাক পরিষ্কার ও পরিপাটি হবে :
পোশাক পরিষ্কার ও পরিপাটি হওয়া চাই। জাবির (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের নিকট এলেন এবং এক ব্যক্তিকে ময়লা কাপড় পরিহিত দেখে বললেন, ‘এর কাছে কি এমন কিছু নেই, যা দিয়ে তার কাপড় ধৌত করবে।’ [আবু দাউদ হা/৪০৫৬।]
১১. পোশাক সাধারণ থাকা ভালো :
পোশাক সাদা-সিধে থাকা ঈমানের পরিচায়ক। মহানবী ﷺ বলেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বিনয় সহকারে সৌন্দর্যময় কাপড় পরা ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দেবেন; ফলে সে ঈমানের লেবাসের মধ্যে তার যেটা ইচ্ছা সেটাই পরতে পারবে। [সহীহ জামে, হা/৬১৪৫।]
তবে সুন্দর পোশাক পরা নিষিদ্ধ নয়। কারণ, আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। বান্দাকে তিনি যে নেয়ামত দান করেছেন তার চিহ্ন (তার দেহে) দেখতে পছন্দ করেন। আর তিনি (লোকচক্ষে) দরিদ্র সাজাকে ঘৃণা করেন। [সহীহ জামে, হা/ ১৭৪২।]
মহানবী ﷺ বলেছেন, তোমরা খাও, পান করো, দান করো, পরিধান করো, তবে তাতে যেন অপচয় ও অহংকার না থাকে। [বুখারী, আহমাদ হা/৬৬৯৫, নাসাঈ হা/২৫৫৯।]
১২. শিশুদেরকেও শালীন পোশাক দেয়া জরম্নরি :
শিশুদেরকে ইসলামী আদর্শে লালন পালন করা পিতামাতার দায়িত্ব। নিষিদ্ধ খাদ্য, পানীয়, পোশাক, কথাবার্তা ইত্যাদি থেকে তাদেরকে দূরে রাখা জরম্নরি। আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযিদ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর কাছে বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁর একটি ছোট্ট ছেলে তাঁর কাছে এল। ছেলেটিকে তার মা একটি রেশমী কামীস (জামা) পরিয়ে দিয়েছে। জামাটি পরে ছেলেটি খুব খুশি। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ছেলেটিকে বললেন, বেটা- কে তোমাকে এই জামাটি পরিয়েছে? এরপর বললেন, কাছে এসো। ছেলেটি কাছে আসলে তিনি জামাটি ছিড়ে ফেলেন এবং বলেন, তোমার আম্মার কাছে যেয়ে বলো, তোমাকে অন্য কাপড় পরিয়ে দিতে। [শুআবুল ঈমান হা/৬০৯১।]
১৩. মহিলাদের পোশাক সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখবে :**
মহিলাদের পোশাক যেন দেহের সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখে। দেহের কোন অঙ্গ বা সৌন্দর্য যেন কোন বেগানা পুরম্নষের সামনে প্রকাশ না পায়। মহানবী ﷺ বলেন, মেয়েদের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরম্নষের দৃষ্টিতে পরিশোভিত করে তোলে। [তিরমিযী, মিশকাত, হা/৩১০৯।]
মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই মাথায় স্কার্ফ ও ওড়না ব্যবহার করে আল্লাহ তা‘আলার বিধান মেনে চলাকে অভ্যাসে পরিণত করবে। এ ক্ষেত্রে মায়েদের ভূমিকা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। মায়েরা যদি পোশাক ব্যবহারে শালীন হয় এবং হিজাব পরে তবে তাদের মেয়েরাও সহজেই তাদের অনুসরণ করবে।
১৪. মেয়েরা সুগন্ধি লাগিয়ে পুরম্নষদের মাঝে যাবে না :
عَنْ أَبِىْ مُوْسٰى يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ ثُمَّ مَرَّتْ عَلَى الْقَوْمِ لِيَجِدُوْا رِيْحَهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ
আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে নারী সুগন্ধি লাগিয়ে কোন সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে- যেন তারা তার সুঘ্রাণ পায়, তাহলে সে ব্যভিচারীণী হিসেবে গণ্য হবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৬২; মুস্তাদরাকে হাকেম, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০১৯।]
১. রেশমের পোশাক পরিধান করা যাবে না :
রেশমের পোশাক পরিধান করা পুরম্নষদের জন্য হারাম। হাদীসে এসেছে, হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে এবং খাবার পরিবেশন করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে তিনি রেশমের কাপড় পরিধান করতে এবং তার উপর বসতে নিষেধ করেছেন। [বুখারী হা/৫৮৩৭; মিশকাত হা/৪৩২১।]
২. নারী-পুরম্নষ একে অপরের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে না :
মহিলাদের জন্য নির্ধারিত অথবা তাদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পুরম্নষদের জন্য পরিধান করা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে পুরম্নষদের জন্য নির্ধারিত পোশাকও মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ নারীদের বেশ ধারণকারী পুরম্নষদেরকে এবং পুরম্নষদের বেশ ধারণকারী নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। [বুখারী হা/৫৮৮৫; মিশকাত হা/৪৪২৮।]
৩. প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পোশাক পরবে না :
যে পোশাক খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পরিধান করা হয় তা নিষিদ্ধ। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় খ্যাতি লাভের পোশাক পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। [ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬; মিশকাত হা/৪৩৪৬।]
৪. ভিন্ন ধর্মের পরিচয় বহনকারী পোশাক পরা যাবে না :
যেসব পোশাক ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মের পরিচয় বহন করে যেমন- ক্রুশ অঙ্কিত পোশাক, হিন্দুদের ধূতি, খ্রিস্টানদের এক ধরনের সাদা পোশাক ইত্যাদি পরিধান করা বৈধ নয়। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার পরিধানে দু’টি রঙিন কাপড় দেখে বললেন, এটা তো কাফেরদের কাপড়; অতএব তা পরিধান করো না। [মুসলিম, হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭।]
হিন্দুদের মতো উল্কি আঁকা এবং সিঁদুর পরাও হারাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির অনুসরণ করবে সে সেই জাতিরই অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। [ফতহুল বারী, ১৩/৩০০; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৯।]
৫. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা যাবে না :
ইচ্ছাকৃতভাবে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা জায়েয নয়। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির দিকে দৃষ্টি দিবেন না, যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত ইযার (লুঙ্গি) ঝুলিয়ে পরিধান করে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৮, সহীহ মুসলিম, হা/৩৭।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, ইযারের (লুঙ্গির) যে অংশ টাখনুর নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৭।]
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার (অপর বর্ণনায় তাঁর নিজের) নলার পশ্চাদভাগ ধরে বললেন, এই হলো লুঙ্গির (সর্বনিম্ন) স্থান। তুমি যদি তা মানতে না চাও তবে আরো নিচে, যদি তাও মানতে না চাও তবে আরো নিচে (নামাতে পারো)। যদি তুমি, তাও মানতে না চাও তবে পায়ের টাখনুর নিচে যাওয়ার অধিকার লুঙ্গির নেই। [তিরমিযী, হা/১৭৮৩; নাসায়ী, হা/৫৩২৯; মুখতাসারম্নশ শামাইল, হা/৯৯; সহীহাহ. হা/১৭৬৫, ২৬৮৩।]
৬. প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরা যাবে না :
কাপড়ে কোনো প্রাণীর ছবি রাখা যাবে না। কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা, টাঙ্গানো বা পোশাকে বহন করা ইসলামে নিষেধ। এ সকল কর্মে জড়িতদের জন্য পরলৌকিক জীবনে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
উবায়দুল্লাহ ইবনে উতবা (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি অসুস্থ আবু তালহা (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন। তিনি সেখানে সাহল ইবনে হুনায়ফ (রাঃ)-কে উপস্থিত পেলেন। তখন আবু তালহা (রাঃ) একজনকে ডেকে তার নিচে বিছানো চাদরটি সরিয়ে ফেলতে বললেন। তখন সাহল (রাঃ) বললেন, এটিকে সরিয়ে ফেলছেন কেন? তিনি বললেন, এতে তো ছবি রয়েছে। আর নবী ﷺ (ছবি সম্পর্কে) কী বলেছেন তা তো তুমি জান। [তিরমিজী হা/১৭৫০।]
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, অবশ্যই কিয়ামাতের দিন মানুষের মধ্যে (কঠিন) শাস্তি ভোগ করবে ছবি তৈরিকারীরা। [সহীহ বুখারী হা/৫৬০৬।]
৭. টাইট পোশাক পরিধান করা যাবে না :
এত টাইট পোশাক পরিধান করা যাবে না, যাতে শরীরের ভাঁজ ফুটে উঠে এবং বসতে ও সালাত আদায় করতে কষ্ট হয়। কেননা এর দ্বারা পোশাক পরিধানের মূল উদ্দেশ্য বিনষ্ট হয়ে যায়। নারীরা পাতলা পোশাক পরিধান করলে বেপর্দা থাকার গোনাহ হবে। আর এ ধরনের কাপড় পরে সালাত আদায় করলে তা সহীহ হবে না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দু’শ্রেণির জাহান্নামীকে আমি দেখিনি। (১) যাদের হাতে থাকবে গরম্নর লেজের ন্যায় ছড়ি, তা দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। (২) ঐ সকল রমণী, যারা বস্ত্র পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, পুরম্নষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারিণী এবং নিজেরাও পুরম্নষদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে লম্বা গ্রীবাবিশিষ্ট উটের চুঁটির ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না; অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূর থেকেও পাওয়া যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮ , মিশকাত হা/৩৫২৪।]
এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, এমন পোশাক পরিধান করে, যা তাকে পুরোপুরি আবৃত করে না। ফলে কাপড় পরলেও মূলত সে উলঙ্গই থেকে যায়। যেমন ওই নারী যে কি-না এমন পাতলা কাপড় পরে, যা তার কোমল ত্বক দৃশ্যমান করে অথবা এমন আঁটসাট বস্ত্র গায়ে জড়ায়, যা তার শরীরের বাহু, নিতম্ব প্রভৃতির ভাঁজগুলোকে পরিষ্কার ফুটিয়ে তোলে। নারীর পোশাক সেটিই, যা তার আপাদমস্তক ঢেকে ফেলে। দেহের কোনো অংশই প্রকাশ করে না। পুরম্ন ও প্রশস্ত হওয়ায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকারও নির্ণয় করে না। [মাজুমূ‘ ফাতাওয়া : ২২/১৪৬।]
৮. পোশাক বেশি চাকচিক্য হবে না :
পোশাক এমন হবে না যে ইবাদাতের সময় মনোযোগ আকর্ষণ করে। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কারম্নকার্য খচিত একটি পশমী চাদর পরিহিত অবস্থায় সালাত আদায় করলেন। অতঃপর বলেন, এই চাদরের কারম্নকার্য আমাকে অমনোযোগী করেছে। এটা আবু জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং আমার জন্য কারম্নকার্যহীন (আম্বেজানী) চাদর নিয়ে এসো। [সহীহুল বুখারী, হা/৩৭৩, ৭৫২, ৫৮১৭, মুসলিম, হা/৫৫৬।]
৯. অগোছালো ভঙ্গিতে পোষাক পরিধান করা অনুচিত :
এমন অগোছালো ভঙ্গিতে পোষাক পরিধান করা অনুচিত, যা আরামদায়ক নয় অথবা যাতে সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। লুঙ্গি পরে বিছানায় বা মাটিতে শুয়ে হাঁটুর উপর পা তুলে দিতে নবী ﷺ নিষেধ করেছেন। [জামউল ওসাইল শরহু শামায়িলিত তিরমিযী ১/১৭৯।] কেননা, এতে সতর খুলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
১০. পোশাক পরিষ্কার ও পরিপাটি হবে :
পোশাক পরিষ্কার ও পরিপাটি হওয়া চাই। জাবির (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের নিকট এলেন এবং এক ব্যক্তিকে ময়লা কাপড় পরিহিত দেখে বললেন, ‘এর কাছে কি এমন কিছু নেই, যা দিয়ে তার কাপড় ধৌত করবে।’ [আবু দাউদ হা/৪০৫৬।]
১১. পোশাক সাধারণ থাকা ভালো :
পোশাক সাদা-সিধে থাকা ঈমানের পরিচায়ক। মহানবী ﷺ বলেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বিনয় সহকারে সৌন্দর্যময় কাপড় পরা ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দেবেন; ফলে সে ঈমানের লেবাসের মধ্যে তার যেটা ইচ্ছা সেটাই পরতে পারবে। [সহীহ জামে, হা/৬১৪৫।]
তবে সুন্দর পোশাক পরা নিষিদ্ধ নয়। কারণ, আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। বান্দাকে তিনি যে নেয়ামত দান করেছেন তার চিহ্ন (তার দেহে) দেখতে পছন্দ করেন। আর তিনি (লোকচক্ষে) দরিদ্র সাজাকে ঘৃণা করেন। [সহীহ জামে, হা/ ১৭৪২।]
মহানবী ﷺ বলেছেন, তোমরা খাও, পান করো, দান করো, পরিধান করো, তবে তাতে যেন অপচয় ও অহংকার না থাকে। [বুখারী, আহমাদ হা/৬৬৯৫, নাসাঈ হা/২৫৫৯।]
১২. শিশুদেরকেও শালীন পোশাক দেয়া জরম্নরি :
শিশুদেরকে ইসলামী আদর্শে লালন পালন করা পিতামাতার দায়িত্ব। নিষিদ্ধ খাদ্য, পানীয়, পোশাক, কথাবার্তা ইত্যাদি থেকে তাদেরকে দূরে রাখা জরম্নরি। আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযিদ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর কাছে বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁর একটি ছোট্ট ছেলে তাঁর কাছে এল। ছেলেটিকে তার মা একটি রেশমী কামীস (জামা) পরিয়ে দিয়েছে। জামাটি পরে ছেলেটি খুব খুশি। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ছেলেটিকে বললেন, বেটা- কে তোমাকে এই জামাটি পরিয়েছে? এরপর বললেন, কাছে এসো। ছেলেটি কাছে আসলে তিনি জামাটি ছিড়ে ফেলেন এবং বলেন, তোমার আম্মার কাছে যেয়ে বলো, তোমাকে অন্য কাপড় পরিয়ে দিতে। [শুআবুল ঈমান হা/৬০৯১।]
১৩. মহিলাদের পোশাক সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখবে :**
মহিলাদের পোশাক যেন দেহের সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখে। দেহের কোন অঙ্গ বা সৌন্দর্য যেন কোন বেগানা পুরম্নষের সামনে প্রকাশ না পায়। মহানবী ﷺ বলেন, মেয়েদের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরম্নষের দৃষ্টিতে পরিশোভিত করে তোলে। [তিরমিযী, মিশকাত, হা/৩১০৯।]
মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই মাথায় স্কার্ফ ও ওড়না ব্যবহার করে আল্লাহ তা‘আলার বিধান মেনে চলাকে অভ্যাসে পরিণত করবে। এ ক্ষেত্রে মায়েদের ভূমিকা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। মায়েরা যদি পোশাক ব্যবহারে শালীন হয় এবং হিজাব পরে তবে তাদের মেয়েরাও সহজেই তাদের অনুসরণ করবে।
১৪. মেয়েরা সুগন্ধি লাগিয়ে পুরম্নষদের মাঝে যাবে না :
عَنْ أَبِىْ مُوْسٰى يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ ثُمَّ مَرَّتْ عَلَى الْقَوْمِ لِيَجِدُوْا رِيْحَهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ
আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে নারী সুগন্ধি লাগিয়ে কোন সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে- যেন তারা তার সুঘ্রাণ পায়, তাহলে সে ব্যভিচারীণী হিসেবে গণ্য হবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৬২; মুস্তাদরাকে হাকেম, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০১৯।]
যেসকল খাদ্য ও পানীয় মুসলিমদের জন্য হালাল তা খাওয়া ও পান করার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনেক সুন্নাত রয়েছে। এসব সুন্নাতের অনুসরণে অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে কিছু উলেস্নখ করা হলো :
১. খাওয়ার আগে হাত ধোয়া।
২. দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া।
৩. হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া।
আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে খাই না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৮; আবু দাউদ, হা/৩৭৭১; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১১৪৩।] হেলান দিয়ে খাওয়া অহংকারীদের আচরণ। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এটা পছন্দ করতেন না।
৪. খাওয়ার শুরম্নতে দু‘আ পড়া :
খাওয়ার শুরম্নতে বলবে, بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লা-হ) অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি। আর শুরম্নতে বিসমিল্লাহ ভুলে গেলে বলবে, بِسْمِ اللهِ أَوَّلَه وَاٰخِرَه (বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহ) অর্থাৎ খাওয়ার শুরম্ন ও শেষ আল্লাহর নামে। হাদীসে এসেছে, আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ খাওয়া শুরম্ন করবে তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর যদি শুরম্নতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যায়, তবে ‘‘বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহ’’ পাঠ করবে। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬৯; তিরমিযী, হা/১৮৫৮; মিশকাত, হা/৪২০২]
৫. ডান হাতে খাওয়া :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় এবং যখন কেউ পান করে, তখন সে যেন ডান হাতে পান করে। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় এবং বাম হাতে পান করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৪; আবু দাউদ, হা/৩৭৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৩৭।]
৬. নিজের সামনের দিক থেকে খাওয়া :
উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একজন বালক হিসেবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমার হাত খাওয়ার পাত্রের চতুর্দিকে ঘুরতো। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে বৎস! আল্লাহর নাম বলো ও ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হতে খাও। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হ/১৬৭০; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৮।]
৭. পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, খাবারের বরকত তার মধ্যখানে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং তোমরা (প্লেটের) পার্শ্ব থেকে আহার (শুরম্ন) করো, মধ্যস্থল থেকে আহার (শুরম্ন) করো না। [তিরমিযী, হা/১৮০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২৪৫; মুসনাদে হুমাঈদী, হা/৫৫৭।]
৮. খাবারে অন্যকে শরিক করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দু’জনের খাবার তিন জনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চার জনের জন্য যথেষ্ট। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৫৮; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮৮।]
৯. খাবার অপছন্দনীয় হলে দোষ বর্ণনা না করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কখনো খাদ্যের দোষ বর্ণনা করেননি। অবশ্য মনে চাইলে খেয়েছেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৬৩; সুনানুল বায়হাকী, হা/১৪৩৯৮।]
১০. খাওয়ার মধ্যে মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করা :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর সন্তুষ্ট হন, যে খাওয়া ও পান করার মধ্যে মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১০৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৫১; মিশকাত, হা/৪২০০।]
১১. পরিমিত খাওয়া :
মায়মূনা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি এক নাড়িতে আহার করে। আর কাফির সাত নাড়িতে আহার করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৪৭; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭১৮।]
এর অর্থ হচ্ছে, মুমিন ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ কম থাকে। এজন্য সে অল্প খেয়েও তৃপ্তি লাভ করে। আর কাফির ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ বেশি থাকে। এজন্য সে বেশি খেলেও তৃপ্ত হয় না।
১২. পাত্র মুছে খাওয়া ও পড়ে যাওয়া খাদ্য উঠিয়ে খাওয়া :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খাবার খেতেন তখন তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, যখন তোমাদের কারো কোন লোকমা পড়ে যায় তখন সে যেন তা হতে ময়লা ফেলে দেয়; এরপর তা খেয়ে নেয়। শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। বর্ণনাকারী বলেন, আর তিনি আমাদেরকে পাত্র মুছে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমাদের কেউ এটা জানে না যে, খাবারের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪২৬; আবু দাউদ, হা/৩৮৪৭; তিরমিযী, হা/১৮০৩।]
১৩. আঙ্গুল চেটে খাওয়া :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কিছু খায়, তখন সে যেন (আঙ্গুল) চেটে খায় অথবা অন্যের দ্বারা তা চাটিয়ে নেয়া পর্যন্ত হাত না মুছে ফেলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪২৫৯।]
১৪. খাওয়ার পর হাত-মুখ ধুয়ে ফেলবে ও দু‘আ পড়বে :
খাওয়ার পর দু‘আ- ১ :
সাহল ইবনে মু‘আয (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি খাওয়া শেষ করে এই দু‘আটি পাঠ করে তবে তার আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ
আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ।
অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ পানাহার করালেন এবং আমার সামর্থ ও উপায় না থাকা সত্ত্বেও আমাকে তা রিযিক হিসেবে দান করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৪০২৫; তিরমিযী, হা/৩৪৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮৫; মিশকাত, হা/৪৩৪৩।]
খাওয়ার পর দু‘আ- ২ :
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দস্তরখানা উঠাতেন, তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ ، وَلَا مُوَدَّعٍ ، وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
আলহামদু লিল্লা-হি কাছীরান ত্বায়্যিবান, মুবারাকান ফীহি, গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দা‘ইন ওয়ালা মুসতাগনান ‘আনহু রাববানা।
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি অধিক পবিত্র ও বরকতময়। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এ খাদ্য হতে নির্লিপ্ত হতে পারব না, তা কখনো বিদায় দিতে পারব না, আর তা হতে অমুখাপেক্ষীও হতে পারব না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৫৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৮৭০; বায়হাকী, হা/১৪৪৮; মিশকাত, হা/৪১৯৯।]
কেউ দাওয়াত খাওয়ালে তার জন্য দু‘আ করা :
মিকদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মজলিসে খাবার শেষ করে এ দু‘আটি পাঠ করলেন।
اَللّٰهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ
আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী ওয়াস্ক্বি মান সাক্বা-নী।
অর্থ : হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাল তুমি তাকে আহার করাও, যে আমাকে পান করাল তুমি তাকে পান করাও। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৮৬০।]
১. খাওয়ার আগে হাত ধোয়া।
২. দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া।
৩. হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া।
আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে খাই না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৮; আবু দাউদ, হা/৩৭৭১; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/১১৪৩।] হেলান দিয়ে খাওয়া অহংকারীদের আচরণ। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এটা পছন্দ করতেন না।
৪. খাওয়ার শুরম্নতে দু‘আ পড়া :
খাওয়ার শুরম্নতে বলবে, بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লা-হ) অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি। আর শুরম্নতে বিসমিল্লাহ ভুলে গেলে বলবে, بِسْمِ اللهِ أَوَّلَه وَاٰخِرَه (বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহ) অর্থাৎ খাওয়ার শুরম্ন ও শেষ আল্লাহর নামে। হাদীসে এসেছে, আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ খাওয়া শুরম্ন করবে তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর যদি শুরম্নতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যায়, তবে ‘‘বিসমিল্লা-হি আওওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহ’’ পাঠ করবে। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬৯; তিরমিযী, হা/১৮৫৮; মিশকাত, হা/৪২০২]
৫. ডান হাতে খাওয়া :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় এবং যখন কেউ পান করে, তখন সে যেন ডান হাতে পান করে। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় এবং বাম হাতে পান করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৪; আবু দাউদ, হা/৩৭৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৩৭।]
৬. নিজের সামনের দিক থেকে খাওয়া :
উমর ইবনে আবু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একজন বালক হিসেবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমার হাত খাওয়ার পাত্রের চতুর্দিকে ঘুরতো। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, হে বৎস! আল্লাহর নাম বলো ও ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হতে খাও। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হ/১৬৭০; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮৮।]
৭. পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, খাবারের বরকত তার মধ্যখানে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং তোমরা (প্লেটের) পার্শ্ব থেকে আহার (শুরম্ন) করো, মধ্যস্থল থেকে আহার (শুরম্ন) করো না। [তিরমিযী, হা/১৮০৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫২৪৫; মুসনাদে হুমাঈদী, হা/৫৫৭।]
৮. খাবারে অন্যকে শরিক করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দু’জনের খাবার তিন জনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চার জনের জন্য যথেষ্ট। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৫৮; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮৮।]
৯. খাবার অপছন্দনীয় হলে দোষ বর্ণনা না করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কখনো খাদ্যের দোষ বর্ণনা করেননি। অবশ্য মনে চাইলে খেয়েছেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫৬৩; সুনানুল বায়হাকী, হা/১৪৩৯৮।]
১০. খাওয়ার মধ্যে মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করা :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর সন্তুষ্ট হন, যে খাওয়া ও পান করার মধ্যে মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১০৮; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৫১; মিশকাত, হা/৪২০০।]
১১. পরিমিত খাওয়া :
মায়মূনা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি এক নাড়িতে আহার করে। আর কাফির সাত নাড়িতে আহার করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৪৭; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭১৮।]
এর অর্থ হচ্ছে, মুমিন ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ কম থাকে। এজন্য সে অল্প খেয়েও তৃপ্তি লাভ করে। আর কাফির ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ বেশি থাকে। এজন্য সে বেশি খেলেও তৃপ্ত হয় না।
১২. পাত্র মুছে খাওয়া ও পড়ে যাওয়া খাদ্য উঠিয়ে খাওয়া :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খাবার খেতেন তখন তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, যখন তোমাদের কারো কোন লোকমা পড়ে যায় তখন সে যেন তা হতে ময়লা ফেলে দেয়; এরপর তা খেয়ে নেয়। শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। বর্ণনাকারী বলেন, আর তিনি আমাদেরকে পাত্র মুছে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমাদের কেউ এটা জানে না যে, খাবারের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪২৬; আবু দাউদ, হা/৩৮৪৭; তিরমিযী, হা/১৮০৩।]
১৩. আঙ্গুল চেটে খাওয়া :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কিছু খায়, তখন সে যেন (আঙ্গুল) চেটে খায় অথবা অন্যের দ্বারা তা চাটিয়ে নেয়া পর্যন্ত হাত না মুছে ফেলে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪২৫৯।]
১৪. খাওয়ার পর হাত-মুখ ধুয়ে ফেলবে ও দু‘আ পড়বে :
খাওয়ার পর দু‘আ- ১ :
সাহল ইবনে মু‘আয (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি খাওয়া শেষ করে এই দু‘আটি পাঠ করে তবে তার আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ
আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ।
অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ পানাহার করালেন এবং আমার সামর্থ ও উপায় না থাকা সত্ত্বেও আমাকে তা রিযিক হিসেবে দান করেছেন। [আবু দাউদ, হা/৪০২৫; তিরমিযী, হা/৩৪৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮৫; মিশকাত, হা/৪৩৪৩।]
খাওয়ার পর দু‘আ- ২ :
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দস্তরখানা উঠাতেন, তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ ، وَلَا مُوَدَّعٍ ، وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
আলহামদু লিল্লা-হি কাছীরান ত্বায়্যিবান, মুবারাকান ফীহি, গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দা‘ইন ওয়ালা মুসতাগনান ‘আনহু রাববানা।
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি অধিক পবিত্র ও বরকতময়। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এ খাদ্য হতে নির্লিপ্ত হতে পারব না, তা কখনো বিদায় দিতে পারব না, আর তা হতে অমুখাপেক্ষীও হতে পারব না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৪৫৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৮৭০; বায়হাকী, হা/১৪৪৮; মিশকাত, হা/৪১৯৯।]
কেউ দাওয়াত খাওয়ালে তার জন্য দু‘আ করা :
মিকদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মজলিসে খাবার শেষ করে এ দু‘আটি পাঠ করলেন।
اَللّٰهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ
আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী ওয়াস্ক্বি মান সাক্বা-নী।
অর্থ : হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাল তুমি তাকে আহার করাও, যে আমাকে পান করাল তুমি তাকে পান করাও। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৮৬০।]
পানীয় দ্রব্য পান করার ক্ষেত্রে নিচের সুন্নাতসমূহ লক্ষণীয় :
১. পানীয় দ্রব্যে ফুঁ না দেয়া ও গ্লাসের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়া। আবদুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদা (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পান করবে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন তোমাদের কেউ বাথরম্নমে যাবে, তখন সে যেন ডান হাত দ্বারা লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং ইস্তেঞ্জা না করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৪৩৮; তিরমিযী, হা/১৮৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪২৭।]
২. পানীয়দ্রব্য তিন নিঃশ্বাসে পান করা। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন পান করতেন, তখন তিন নিঃশ্বাসে পান করতেন এবং বলতেন, এটা তৃপ্তিদায়ক, সহজ ও কল্যাণকর। [আবু দাউদ, হা/৩৭২৯; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/২২৩২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৫০৫৪।]
৩. পান করার শুরম্নতে بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলা।
৪. পান করার শেষে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
৫. বসে পান করা। তবে প্রয়োজনে দাড়িয়ে পান করাও জায়েয আছে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬১৫।]
৬. যমযমের পানি দাড়িয়ে পান করা। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৮২।]
৭. দুধ পান করার পর কুলি করা উত্তম। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬০৯।]
৮. দুধ পান করার পর এ দু‘আ পড়বে :
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া যিদ্না মিনহু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য দুধে বরকত দান করম্নন এবং তা বাড়িয়ে দিন। [আবু দাঊদ, হা/৩৭৩২; তিরমিযী, হা/৩৪৫৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৮।]
১. পানীয় দ্রব্যে ফুঁ না দেয়া ও গ্লাসের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়া। আবদুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদা (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পান করবে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন তোমাদের কেউ বাথরম্নমে যাবে, তখন সে যেন ডান হাত দ্বারা লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং ইস্তেঞ্জা না করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৪৩৮; তিরমিযী, হা/১৮৮৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪২৭।]
২. পানীয়দ্রব্য তিন নিঃশ্বাসে পান করা। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন পান করতেন, তখন তিন নিঃশ্বাসে পান করতেন এবং বলতেন, এটা তৃপ্তিদায়ক, সহজ ও কল্যাণকর। [আবু দাউদ, হা/৩৭২৯; মুসনাদে তায়ালুসী, হা/২২৩২; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৫০৫৪।]
৩. পান করার শুরম্নতে بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলা।
৪. পান করার শেষে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
৫. বসে পান করা। তবে প্রয়োজনে দাড়িয়ে পান করাও জায়েয আছে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬১৫।]
৬. যমযমের পানি দাড়িয়ে পান করা। ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় নবী ﷺ দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৪০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৫৮২।]
৭. দুধ পান করার পর কুলি করা উত্তম। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬০৯।]
৮. দুধ পান করার পর এ দু‘আ পড়বে :
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া যিদ্না মিনহু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য দুধে বরকত দান করম্নন এবং তা বাড়িয়ে দিন। [আবু দাঊদ, হা/৩৭৩২; তিরমিযী, হা/৩৪৫৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৩২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৮।]
যখন কোন ব্যক্তি বিছানায় ঘুমাতে যায়, তখন তার কাছে ফেরেশতা আগমন করে এবং শয়তানও আগমন করে। ফেরেশতা বলে, তুমি কল্যাণের সাথে সমাপ্তি করো। আর শয়তান বলে, তুমি মন্দের সাথে সমাপ্তি করো। এরপর যদি ঐ বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে ঘুমায়, তবে ফেরেশতা তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। আর যখন সে ঘুম থেকে উঠে, তখন ফেরেশতা বলে, তুমি কল্যাণের সাথে শুরম্ন করো। আর শয়তান বলে, তুমি মন্দের সাথে শুরম্ন করো। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৩৩।]
তাই ঘুমানের সময় অবশ্যই সুন্নাতের অনুসরণ করা জরম্নরি। ঘুমানোর সময়কার সুন্নাতসমূহ নিম্নে উলেস্নখ করা হলো :
১. সাধারণ বিছানায় শয়ন করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ আঁশভর্তি চামড়ার বিছানায় নিদ্রা যেতেন। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ যে বিছানায় নিদ্রা যেতেন, তা ছিল চামড়ার। এর ভেতরে খেজুর গাছের আঁশ ভরা থাকত। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৫১; বায়হাকী, হা/১৩০৯৫।]
২. রাতে ঘুমাতে দেরি না করা :
عَنْ أَبِي بَرْزَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ كَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَ الْعِشَاءِ وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا
আবু বারযা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এশার সালাত আদায়ের আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৮।]
এশার পরে গল্প করতে নিষেধ করার কারণ রাতে ঘুমাতে দেরি করলে তাহাজ্জুদের জন্য উঠা কঠিন হয়ে যাবে।
৩. ছুঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বিতর আদায় করে নেয়া :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاثٍ : بِصِيَامِ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَكْعَتَيْ الضُّحَى وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَرْقُدَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু অর্থাৎ রসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে তিনটি কাজ করতে উপদেশ দিয়েছেন। সেগুলো হলো- প্রতি মাসে তিনটি করে সওম (রোযা) পালন করতে, ‘যুহা’ বা চাশ্তের দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতে এবং ঘুমানোর পূর্বে বিত্র সালাত আদায় করতে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৭।]
৪. বাতি নিভানো, দরজা বন্ধ করা ও পানপাত্রের মুখ বন্ধ করা :
عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ : أَطْفِئُوا الْمَصَابِيحَ إِذَا رَقَدْتُمْ، وَغَلِّقُوا الأَبْوَابَ، وَأَوْكُوا الأَسْقِيَةَ، وَخَمِّرُوا الطَّعَامَ وَالشَّرَابَ . وَأَحْسِبُهٗ قَالَ : وَلَوْ بِعُودٍ تَعْرُضُهٗ عَلَيْهِ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা (রাতে) ঘুমানোর সময় বাতিগুলো নিভিয়ে দাও, ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করো, পানপাত্রের মুখ বন্ধ করো, খাবার ও পানির পাত্রগুলো ঢেকে রাখো। সম্ভবত তিনি এ কথাও বলেছেন যে, কমপক্ষে একটি কাঠ দিয়ে হলেও আড়াআড়িভাবে পাত্রের উপর রেখে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬২৪।]
عَنْ أَبِي مُوسٰى قَالَ : احْتَرَقَ بَيْتٌ بِالْمَدِينَةِ عَلٰى أَهْلِه مِنَ اللَّيْلِ، فَحُدِّثَ بِشَأْنِهِمُ النَّبِيُّ قَالَ : إِنَّ هَذِهِ النَّارَ إِنَّمَا هِيَ عَدُوٌّ لَكُمْ، فَإِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوهَا عَنْكُمْ
আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা মদীনার একটি পরিবারের ঘরে আগুন লেগে তা পুড়ে গেল। তাদের এ ঘটনাটি নবী ﷺ-এর কাছে বর্ণনা করা হলে তিনি বললেন, এ আগুন তোমাদের শত্রু। তাই যখনই তোমরা ঘুমাতে যাবে তখন তা নিভিয়ে ফেলবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৯৪।]
৫. বেষ্টনী বা দেয়াল ছাড়া ছাদে শয়ন না করা :
عَنْ عَلِيِّ بنِ شَيْبَانَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ : مَنْ بَاتَ عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ لَيْسَ لَهُ حِجَارٌ فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ
আলী ইবনে শায়বান (রাঃ) এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন ছাদে রাত্রি যাপন করে, যার কোন দেয়াল নেই, তার উপর আল্লাহর কোন যিম্মাদারী থাকে না। [আবু দাউদ, হা/৫০৪৩; মিশকাত, হা/৪৭২০।]
৬. হাত-মুখ পরিষ্কার করা :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ : مَنْ نَامَ وَفِي يَدِه غَمَرٌ وَلَمْ يَغْسِلْهُ فَأَصَابَهٗ شَيْءٌ فَلا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় ঘুমাবে যে, তার হাতে ঘি (তৈলাক্ত জিনিস) আর সে তা ধৌত করেনি। এরপর যদি তার কোন বিপদ হয়, তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে। [আবু দাউদ, হা/৩৮৫৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৮১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫২১; মিশকাত, হা/৪২১৯।]
৭. ওজু অবস্থায় শোয়া :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : قَالَ لِىْ النَّبِيُّ إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় আসবে, তার পূর্বে সালাতের ওযুর ন্যায় ওযু করে নিবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৭।]
৭. ডান কাতে শোয়া :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : قَالَ لِىْ النَّبِيُّ إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلٰى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় আসবে, তার পূর্বে সালাতের ওযুর ন্যায় ওযু করে নিবে, তারপর ডান কাতে শুবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৭]
৮. ডান হাত গালের নিচে রাখা :
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهٗ مِنْ اللَّيْلِ وَضَعَ يَدَهٗ تَحْتَ خَدِّه
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন শয়ন করতেন, তখন তার হাতকে গালের নিচে রাখতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪২২৬; মিশকাত, হা/২৩৮২।]
৯. গোসল ফরয হলে ওযু করে শয়ন করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَأَنَّهٗ قَالَ : ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لِرَسُولِ اللهِ بِأَنَّهٗ تُصِيبُهٗ الْجَنَابَةُ مِنَ اللَّيْلِ؟ فَقَالَ لَهٗ رَسُولُ اللهِ : تَوَضَّأْ وَاغْسِلْ ذَكَرَكَ ثُمَّ نَمْ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে উলেস্নখ করলেন যে, রাতে জুনুবী অবস্থা দেখা দিলে কী করণীয়? রাসূল ﷺ বললেন, তুমি লজ্জাস্থান ধুইয়ে ওযু করে নিবে, তারপর ঘুমাবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৯০।]
১০. বিছানা ঝাড়া এবং বিসমিল্লাহ বলা :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : إِذَا أَوَى أَحَدُكُمْ إِلٰى فِرَاشِه فَلْيَأْخُذْ دَاخِلَةَ إِزَارِه فَلْيَنْفُضْ بِهَا فِرَاشَهٗ وَلْيُسَمِّ اللهَ ، فَإِنَّهٗ لَا يَعْلَمُ مَا خَلَفَهٗ بَعْدَهٗ عَلٰى فِرَاشِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন শয্যাগ্রহণ করতে তার বিছানায় আসে, তখন সে যেন তার কাপড়ের আঁচল দিয়ে বিছানাটি ঝেড়ে নেয় এবং ‘বিস্মিল্লাহ’ পাঠ করে। কেননা সে জানে না, বিছানা ছাড়ার পর তার বিছানায় কী ছিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৮৫।]
১১. সতর আবৃত রাখা :
- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ الله أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : لَا يَسْتَلْقِيَنَّ أَحَدُكُمْ ثُمَّ يَضَعُ إِحْدٰى رِجْلَيْه عَلَى الأخْرٰى
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন চিৎ হয়ে শুয়ে এক পায়ের উপর অপর পা না উঠায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৯৬।]
১২. সন্তানদের বয়স দশ বছর হলে বিছানা আলাদা করা :
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ : مُرُوْا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ
আমর ইবনে শুয়াইব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের নির্দেশ দাও- যখন তাদের বয়স সাত বছর হয়। আর তাদের বয়স যখন দশ বছর হয়, তখন এজন্য তাদেরকে মারধর করো (যদি তারা সালাত আদায় না করে থাকে) এবং এ বয়সেই তাদেরকে আলাদা বিছানায় থাকতে দাও। [আবু দাউদ, হা/৪৯৫; মিশকাত, হা/৫৭২।]
১৩. ওসীয়তনামা লিখে রাখা :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ : مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهٗ شَىْءٌ، يُوْصِيْ فِيْهِ يَبِيْتُ لَيْلَتَيْنِ، إِلَّا وَوَصِيَّتُهٗ مَكْتُوْبَةٌ عِنْدَهٗ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে মুসলিমের কাছে ওসীয়তের উপযোগী কোন বিষয় রয়েছে, ওসীয়তনামা তার কাছে লিখিত অবস্থায় থাকা ছাড়া তার জন্য দু’রাত অতিবাহিত করা বৈধ ন। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৩৮।]
১৪. উপুড় হয়ে পেটের উপর ভর করে শয়ন না করা :
عَنْ طِخْفَةَ الْغِفَارِيِّ - -، قَالَ : أَصَابَنِيْ رَسُوْلُ اللَّهِ - - نَائِمًا فِي الْمَسْجِدِ عَلَى بَطْنِيْ، فَرَكَضَنِيْ بِرِجْلِه ، وَقَالَ : مَا لَكَ وَلِهٰذَا النَّوْمِ . هٰذِه نَوْمَةٌ يَكْرَهُهَا اللهُ، أَوْ يُبْغِضُهَا اللهُ
তিখফাহ আল গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মসজিদে ঘুমন্ত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার পেটে আঘাত করলেন এবং তিনি তাঁর পা দ্বারা আমাকে খোঁচা দিলেন। তারপর বললেন, তোমার এবং তোমার এই ঘুমের কি হয়েছে? এ ধরনের ঘুমকে আল্লাহ অপছন্দ করেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৭২৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮২৩০।]
অপর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটা হচ্ছে জাহান্নামীদের শয়ন। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৭২৪; মিশকাত, হা/৪৭৩১।]
১৫. তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ত করে শয়ন করা :
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ -، عَنْ النَّبِيَّ - -، قَال : مَنْ أَتٰى فِرَاشَهٗ وَهُوَ يَنْوِيْ أَنْ يَقُومَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ، فَغَلَبَتْهُ عَيْنَاهُ حَتّٰى أَصْبَحَ، كُتِبَ لَهٗ مَا نَوٰى، وَكَانَ نَوْمُهٗ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّه عَزَّ وَجَلَّ
আবু দারদা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি শোয়ার সময় এ নিয়ত করবে যে, সে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবে, কিন্তু পরে তার ঘুমের চাপ বেশি হওয়ার কারণে সে তাহাজ্জুদ পড়তে পারেনি, তারপরেও এই নিয়তের কারণে সে নেকী পাবে। আর এই ঘুমটি আল্লাহর পক্ষ হতে সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। [নাসাঈ, হা/১৭৮৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১।]
১৬. তাওবা করে শয়ন করা :
ঘুমানোর সময় উচিত হলো সারাদিন যেসব পাপকর্ম হয়ে গেছে, সেগুলোর জন্য তাওবা ইস্তেগফার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে শয়ন করা এবং কারো প্রতি কোন বিদ্বেষ ও হিংসা অন্তরে না রাখা। এটা জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এক জান্নাতী ব্যক্তির সুসংবাদ দিয়েছিলেন। ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তুমি এমন কী আমল কর, যার কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমার সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তখন তিনি বলেছিলেন,
أَنِّي لَا أَجِدُ فِي نَفْسِيْ لِأَحَدٍ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ غِشًّا، وَلَا أَحْسُدُ أَحَدًا عَلٰى خَيْرٍ أَعْطَاهُ اللهُ إِيَّاهُ
আমার তেমন কোন আমল নেই, তবে আমি কোন মুসলমানের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করি না এবং আল্লাহ কাউকে কোন কিছু দিলে আমি হিংসাও করি না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭২০।]
১৭. আল্লাহর যিকির অবস্থায় শয়ন করা :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ أَنَّهٗ قَالَ : مَنِ اضْطَجَعَ مَضْجَعًا لَا يَذْكُرُ اللهَ فِيْهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنْ اللهِ تِرَةٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় রাতে ঘুমায় যে, সে আল্লাহকে স্মরণ করেনি- এটা তার জন্য আফসোসের কারণ হবে। [আবু দাউদ, হা/৪৮৫৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫১২; মিশকাত, হা/২২৭২।]
তাই ঘুমানের সময় অবশ্যই সুন্নাতের অনুসরণ করা জরম্নরি। ঘুমানোর সময়কার সুন্নাতসমূহ নিম্নে উলেস্নখ করা হলো :
১. সাধারণ বিছানায় শয়ন করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ আঁশভর্তি চামড়ার বিছানায় নিদ্রা যেতেন। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ যে বিছানায় নিদ্রা যেতেন, তা ছিল চামড়ার। এর ভেতরে খেজুর গাছের আঁশ ভরা থাকত। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৫১; বায়হাকী, হা/১৩০৯৫।]
২. রাতে ঘুমাতে দেরি না করা :
عَنْ أَبِي بَرْزَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ كَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَ الْعِشَاءِ وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا
আবু বারযা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এশার সালাত আদায়ের আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৮।]
এশার পরে গল্প করতে নিষেধ করার কারণ রাতে ঘুমাতে দেরি করলে তাহাজ্জুদের জন্য উঠা কঠিন হয়ে যাবে।
৩. ছুঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বিতর আদায় করে নেয়া :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاثٍ : بِصِيَامِ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَكْعَتَيْ الضُّحَى وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَرْقُدَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু অর্থাৎ রসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে তিনটি কাজ করতে উপদেশ দিয়েছেন। সেগুলো হলো- প্রতি মাসে তিনটি করে সওম (রোযা) পালন করতে, ‘যুহা’ বা চাশ্তের দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতে এবং ঘুমানোর পূর্বে বিত্র সালাত আদায় করতে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৫৭।]
৪. বাতি নিভানো, দরজা বন্ধ করা ও পানপাত্রের মুখ বন্ধ করা :
عَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ : أَطْفِئُوا الْمَصَابِيحَ إِذَا رَقَدْتُمْ، وَغَلِّقُوا الأَبْوَابَ، وَأَوْكُوا الأَسْقِيَةَ، وَخَمِّرُوا الطَّعَامَ وَالشَّرَابَ . وَأَحْسِبُهٗ قَالَ : وَلَوْ بِعُودٍ تَعْرُضُهٗ عَلَيْهِ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা (রাতে) ঘুমানোর সময় বাতিগুলো নিভিয়ে দাও, ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করো, পানপাত্রের মুখ বন্ধ করো, খাবার ও পানির পাত্রগুলো ঢেকে রাখো। সম্ভবত তিনি এ কথাও বলেছেন যে, কমপক্ষে একটি কাঠ দিয়ে হলেও আড়াআড়িভাবে পাত্রের উপর রেখে দাও। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬২৪।]
عَنْ أَبِي مُوسٰى قَالَ : احْتَرَقَ بَيْتٌ بِالْمَدِينَةِ عَلٰى أَهْلِه مِنَ اللَّيْلِ، فَحُدِّثَ بِشَأْنِهِمُ النَّبِيُّ قَالَ : إِنَّ هَذِهِ النَّارَ إِنَّمَا هِيَ عَدُوٌّ لَكُمْ، فَإِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوهَا عَنْكُمْ
আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা মদীনার একটি পরিবারের ঘরে আগুন লেগে তা পুড়ে গেল। তাদের এ ঘটনাটি নবী ﷺ-এর কাছে বর্ণনা করা হলে তিনি বললেন, এ আগুন তোমাদের শত্রু। তাই যখনই তোমরা ঘুমাতে যাবে তখন তা নিভিয়ে ফেলবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৯৪।]
৫. বেষ্টনী বা দেয়াল ছাড়া ছাদে শয়ন না করা :
عَنْ عَلِيِّ بنِ شَيْبَانَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ : مَنْ بَاتَ عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ لَيْسَ لَهُ حِجَارٌ فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ
আলী ইবনে শায়বান (রাঃ) এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন ছাদে রাত্রি যাপন করে, যার কোন দেয়াল নেই, তার উপর আল্লাহর কোন যিম্মাদারী থাকে না। [আবু দাউদ, হা/৫০৪৩; মিশকাত, হা/৪৭২০।]
৬. হাত-মুখ পরিষ্কার করা :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ : مَنْ نَامَ وَفِي يَدِه غَمَرٌ وَلَمْ يَغْسِلْهُ فَأَصَابَهٗ شَيْءٌ فَلا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় ঘুমাবে যে, তার হাতে ঘি (তৈলাক্ত জিনিস) আর সে তা ধৌত করেনি। এরপর যদি তার কোন বিপদ হয়, তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে। [আবু দাউদ, হা/৩৮৫৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৮১১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫২১; মিশকাত, হা/৪২১৯।]
৭. ওজু অবস্থায় শোয়া :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : قَالَ لِىْ النَّبِيُّ إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় আসবে, তার পূর্বে সালাতের ওযুর ন্যায় ওযু করে নিবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৭।]
৭. ডান কাতে শোয়া :
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : قَالَ لِىْ النَّبِيُّ إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلٰى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় আসবে, তার পূর্বে সালাতের ওযুর ন্যায় ওযু করে নিবে, তারপর ডান কাতে শুবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৭]
৮. ডান হাত গালের নিচে রাখা :
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهٗ مِنْ اللَّيْلِ وَضَعَ يَدَهٗ تَحْتَ خَدِّه
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন শয়ন করতেন, তখন তার হাতকে গালের নিচে রাখতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪২২৬; মিশকাত, হা/২৩৮২।]
৯. গোসল ফরয হলে ওযু করে শয়ন করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَأَنَّهٗ قَالَ : ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لِرَسُولِ اللهِ بِأَنَّهٗ تُصِيبُهٗ الْجَنَابَةُ مِنَ اللَّيْلِ؟ فَقَالَ لَهٗ رَسُولُ اللهِ : تَوَضَّأْ وَاغْسِلْ ذَكَرَكَ ثُمَّ نَمْ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে উলেস্নখ করলেন যে, রাতে জুনুবী অবস্থা দেখা দিলে কী করণীয়? রাসূল ﷺ বললেন, তুমি লজ্জাস্থান ধুইয়ে ওযু করে নিবে, তারপর ঘুমাবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৯০।]
১০. বিছানা ঝাড়া এবং বিসমিল্লাহ বলা :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ : إِذَا أَوَى أَحَدُكُمْ إِلٰى فِرَاشِه فَلْيَأْخُذْ دَاخِلَةَ إِزَارِه فَلْيَنْفُضْ بِهَا فِرَاشَهٗ وَلْيُسَمِّ اللهَ ، فَإِنَّهٗ لَا يَعْلَمُ مَا خَلَفَهٗ بَعْدَهٗ عَلٰى فِرَاشِه
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন শয্যাগ্রহণ করতে তার বিছানায় আসে, তখন সে যেন তার কাপড়ের আঁচল দিয়ে বিছানাটি ঝেড়ে নেয় এবং ‘বিস্মিল্লাহ’ পাঠ করে। কেননা সে জানে না, বিছানা ছাড়ার পর তার বিছানায় কী ছিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭৮৫।]
১১. সতর আবৃত রাখা :
- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ الله أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : لَا يَسْتَلْقِيَنَّ أَحَدُكُمْ ثُمَّ يَضَعُ إِحْدٰى رِجْلَيْه عَلَى الأخْرٰى
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন চিৎ হয়ে শুয়ে এক পায়ের উপর অপর পা না উঠায়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৯৬।]
১২. সন্তানদের বয়স দশ বছর হলে বিছানা আলাদা করা :
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ : مُرُوْا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ
আমর ইবনে শুয়াইব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের নির্দেশ দাও- যখন তাদের বয়স সাত বছর হয়। আর তাদের বয়স যখন দশ বছর হয়, তখন এজন্য তাদেরকে মারধর করো (যদি তারা সালাত আদায় না করে থাকে) এবং এ বয়সেই তাদেরকে আলাদা বিছানায় থাকতে দাও। [আবু দাউদ, হা/৪৯৫; মিশকাত, হা/৫৭২।]
১৩. ওসীয়তনামা লিখে রাখা :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ : مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهٗ شَىْءٌ، يُوْصِيْ فِيْهِ يَبِيْتُ لَيْلَتَيْنِ، إِلَّا وَوَصِيَّتُهٗ مَكْتُوْبَةٌ عِنْدَهٗ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে মুসলিমের কাছে ওসীয়তের উপযোগী কোন বিষয় রয়েছে, ওসীয়তনামা তার কাছে লিখিত অবস্থায় থাকা ছাড়া তার জন্য দু’রাত অতিবাহিত করা বৈধ ন। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৩৮।]
১৪. উপুড় হয়ে পেটের উপর ভর করে শয়ন না করা :
عَنْ طِخْفَةَ الْغِفَارِيِّ - -، قَالَ : أَصَابَنِيْ رَسُوْلُ اللَّهِ - - نَائِمًا فِي الْمَسْجِدِ عَلَى بَطْنِيْ، فَرَكَضَنِيْ بِرِجْلِه ، وَقَالَ : مَا لَكَ وَلِهٰذَا النَّوْمِ . هٰذِه نَوْمَةٌ يَكْرَهُهَا اللهُ، أَوْ يُبْغِضُهَا اللهُ
তিখফাহ আল গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মসজিদে ঘুমন্ত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার পেটে আঘাত করলেন এবং তিনি তাঁর পা দ্বারা আমাকে খোঁচা দিলেন। তারপর বললেন, তোমার এবং তোমার এই ঘুমের কি হয়েছে? এ ধরনের ঘুমকে আল্লাহ অপছন্দ করেন। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৭২৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮২৩০।]
অপর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটা হচ্ছে জাহান্নামীদের শয়ন। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৭২৪; মিশকাত, হা/৪৭৩১।]
১৫. তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ত করে শয়ন করা :
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ -، عَنْ النَّبِيَّ - -، قَال : مَنْ أَتٰى فِرَاشَهٗ وَهُوَ يَنْوِيْ أَنْ يَقُومَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ، فَغَلَبَتْهُ عَيْنَاهُ حَتّٰى أَصْبَحَ، كُتِبَ لَهٗ مَا نَوٰى، وَكَانَ نَوْمُهٗ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّه عَزَّ وَجَلَّ
আবু দারদা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি শোয়ার সময় এ নিয়ত করবে যে, সে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবে, কিন্তু পরে তার ঘুমের চাপ বেশি হওয়ার কারণে সে তাহাজ্জুদ পড়তে পারেনি, তারপরেও এই নিয়তের কারণে সে নেকী পাবে। আর এই ঘুমটি আল্লাহর পক্ষ হতে সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। [নাসাঈ, হা/১৭৮৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১।]
১৬. তাওবা করে শয়ন করা :
ঘুমানোর সময় উচিত হলো সারাদিন যেসব পাপকর্ম হয়ে গেছে, সেগুলোর জন্য তাওবা ইস্তেগফার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে শয়ন করা এবং কারো প্রতি কোন বিদ্বেষ ও হিংসা অন্তরে না রাখা। এটা জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এক জান্নাতী ব্যক্তির সুসংবাদ দিয়েছিলেন। ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তুমি এমন কী আমল কর, যার কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমার সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তখন তিনি বলেছিলেন,
أَنِّي لَا أَجِدُ فِي نَفْسِيْ لِأَحَدٍ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ غِشًّا، وَلَا أَحْسُدُ أَحَدًا عَلٰى خَيْرٍ أَعْطَاهُ اللهُ إِيَّاهُ
আমার তেমন কোন আমল নেই, তবে আমি কোন মুসলমানের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করি না এবং আল্লাহ কাউকে কোন কিছু দিলে আমি হিংসাও করি না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭২০।]
১৭. আল্লাহর যিকির অবস্থায় শয়ন করা :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ أَنَّهٗ قَالَ : مَنِ اضْطَجَعَ مَضْجَعًا لَا يَذْكُرُ اللهَ فِيْهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنْ اللهِ تِرَةٌ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় রাতে ঘুমায় যে, সে আল্লাহকে স্মরণ করেনি- এটা তার জন্য আফসোসের কারণ হবে। [আবু দাউদ, হা/৪৮৫৮; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫১২; মিশকাত, হা/২২৭২।]
১. ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ সুবহানাল্লাহ :
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আনা হয়েছে- এ মর্মে ফাতিমা (রাঃ) এর কাছে সংবাদ পৌঁছলে তিনি নবী ﷺ-এর কাছে উপস্থিত হয়ে (আটা তৈরির জন্য) যাঁতা পিষাজনিত শ্রম ও কষ্টের কথা জানিয়ে খাদিম হিসেবে একজন যুদ্ধবন্দিনী চাইতে গেলেন। কিন্তু তাঁর দেখা পেলেন না। তাই সে সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ)-কে বলে ফিরে আসলেন। পরে নবী ﷺ আসলে আয়িশা (রাঃ) তাকে বিষয়টি জানালেন এবং নবী ﷺ তখনই আমাদের ঘরে এলেন। আমরা তখন শুয়ে পড়েছি। আমরা বিছানা হতে উঠতে চাইলে তিনি বললেন, তোমরা যেভাবে আছো থাকো। (তারপর তিনি আমাদের মাঝখানে বসলেন) আলী (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর ঠান্ডা পদযুগলের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি তখন বললেন, তোমরা আমার কাছে যে জিনিস প্রার্থনা করেছ তার চাইতে কল্যাণকর বস্তুর সন্ধান কি আমি তোমাদেরকে দেব না? যখন তোমরা শয়ন করবে তখন চৌত্রিশবার ‘আল্লাহু আকবার’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ এবং তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ্’ পড়বে। তোমরা যা প্রার্থনা করেছ তার চাইতে এ কাজটি বেশি কল্যাণকর। [সহীহ বুখারী, হা/৩১১৩; সহীহ মুসলিম, হা/২৭২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪১; আবু দাউদ, হা/৫০৬৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬০৪।]
২. আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বলেছেন, তুমি শয়নকালে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার সাথে একজন হেফাযতকারী (ফেরেশতা) থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটবর্তী হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৫; মিশকাত, হা/২১২৩।]
﴿اَللهُ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ، لَا تَأْخُذُه سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ، لَه مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ إِلَّا بِإِذْنِه يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ، وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهۤ إِلَّا بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَلَا يَئُوْدُه حِفْظُهُمَا، وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূম, লা তা’খুযুহূ সিনাতুওঁ ওয়ালা নাঊম লাহূ মা ফিস্সামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিলআর্যি, মানযাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইয্নিহ্, ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খাল্ফাহুম ওয়ালা ইউহীতূনা বিশায়ইম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা শা-আ, ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আর্যা ওয়ালা ইয়াঊদুহূ হিফযুহুমা ওয়াহুয়াল ‘আলিয়্যুল ‘আযীম।
অর্থ : আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সবার রক্ষণা-বেক্ষণকারী, তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই; এমন কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সামনের ও পেছনের সবই তিনি জানেন; তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত তাঁর অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ আয়ত্ব করতে পারে না; তাঁর কুরসী আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না এবং তিনি সমুন্নত ও সুমহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
৩. সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা :
আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে কেউ রাতে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি সারা রাত বিপদমুক্ত থাকবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০০৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৯১৪; আবু দাঊদ, হা/১৩৯৯; তিরমিযী, হা/২৮৮১; ইবনে মাজাহ, সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৮১; মিশকাত, হা/২১২৫।]
﴿اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ ‐ - لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ- وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ إِنْ نَّسِيْنَاۤ أَوْ أَخْطَأْنَا، رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَاۤ إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَه عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا، رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِه وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَاۤ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ﴾
আ-মানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির্রাবিবহী ওয়ালমু’মিনূন, কুলস্নুন আ-মানা বিল্লা-হি ওয়া মালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রম্নসুলিহ্, লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মিররুসুলিহ্, ওয়াক্বা-লূ সামি‘না ওয়াআত্বা‘না গুফ্রা-নাকা রাববানা ওয়া ইলাইকাল মাসীর। লা ইউকালিস্নফুল্লা-হু নাফসান ইল্লা উস‘আহা, লাহা মা কাসাবাত ওয়া‘আলাইহা মাকতাসাবাত, রাববানা লা তুআ-খিযনা ইননাসীনা আও আখত্বা’না, রাববানা ওয়ালা তাহ্মিল ‘আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহূ ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা, রাববানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা ত্বা-ক্বাতালানা বিহ্, ওয়া‘ফু ‘আন্না ওয়াগ্ফির লানা ওয়ার্হামনা আনতা মাওলা-না ফানসুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কা-ফিরীন।
অর্থ : রাসূল তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে এবং মুমিনগণও। তারা সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং রাসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, (তারা বলে), ‘আমরা রাসূলগণের মধ্যে কারো ব্যাপারে তারতম্য করি না’ এবং তারা এ কথাও বলে যে, ‘আমরা শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করম্নন, আর প্রত্যাবর্তন আপনারই দিকে’। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেমন গুরম্ন-দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! যে ভার বহনের ক্ষমতা আমাদের নেই, এমন ভার আমাদের উপর চাপিয়ে দেবেন না, (ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করে) আমাদেরকে রেহাই দিন, আমাদেরকে ক্ষমা করম্নন এবং আমাদের প্রতি দয়া করম্নন। আপনিই আমাদের অভিভাবক, কাজেই আমাদেরকে কাফিরদের উপর বিজয় দান করম্নন।
৪. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস পাঠ করা :
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমানোর জন্য নিজের বিছানায় যেতেন, তখন দু’হাত মিলিয়ে তাতে ফুঁক দিতেন এবং মাথা থেকে আরম্ভ করে যতটুকু সম্ভব নিজের শরীরে হাত বুলাতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, ও সূরা নাস পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; আবু দাঊদ, হা/৫০৫৮; তিরমিযী, হা/৩৪০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৪৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩১০৪; মিশকাত, হা/২১৩২।]
সূরা ইখলাস :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا أَحَدٌ
বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লা-হুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউ-লাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লা-হূ কুফুওয়ান আহাদ।
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি, যিনি পরম করম্নণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আল্লাহ এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।
সূরা ফালাক্ব :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ -‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‐ - وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ‐ - وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ -‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল আ‘ঊযু বিরাবিবল ফালাক্ব। মিন শার্রি মা খালাক্ব। ওয়ামিন শার্রি গা-সিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শার্রিন্নাফ্ফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়ামিন শার্রি হা-সিদিন ইযা হাসাদ।
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি, যিনি পরম করম্নণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি সকাল বেলার রবের নিকট। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। অন্ধকার রাতের অনিষ্ট হতে, যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। গিরায় ফুঁৎকারকারিণীদের অনিষ্ট হতে। আর হিংসুকের অনিষ্ট হতে, যখন সে হিংসা করে।
সূরা নাস :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ‐ مَلِكِ النَّاسِ ‐ إِلٰهِ النَّاسِ ‐ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ‐ اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ ‐ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল আ‘ঊযু বিরাবিবন্না-স। মালিকিন্না-স। ইলা-হিন্না-স। মিন শার্©র্রল ওয়াসওয়া-সিল খান্না-স। আল্লাযী ইউওয়াসবিসু ফী সুদূরিন্না-স। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি, যিনি পরম করম্নণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের প্রকৃত ইলাহের কাছে। তার অনিষ্ট হতে যে কুমন্ত্রণা দিয়েই গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক অথবা মানুষদের মধ্য থেকে।
৫. ঘুমানোর সময় ১ম দু‘আ :
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَ أَحْيَا
আল্লা-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মৃত্যুবরণ করি ও আপনার নামে জাগ্রত হই। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১২; তিরমিযী, হা/৩৪১৭; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৫; মিশকাত, হা/২৩৮২।]
৬. ঘুমানোর সময় ২য় দু‘আ :
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন গালের নিচে নিজের ডান হাত রাখতেন এবং এ দু‘আ বলতেন।
اَللّٰهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
আল্লা-হুম্মা ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু ‘ইবা-দাক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে আপনার শাস্তি থেকে রক্ষা করম্নন, যেদিন আপনার বান্দাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন। [আবু দাঊদ, হা/৫০৪৭; তিরমিযী, হা/৩৩৯৮; মিশকাত, হা/২৪০০।]
৭. ঘুমানোর সময় ৩য় দু‘আ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নিজের বিছানায় আসে, তখন সে যেন এ দু‘আ পড়ে।
بِاسْمِكَ رَبِّيْ وَضَعْتُ جَنْبِيْ وَبِكَ أَرْفَعُه ، اِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِيْ فَارْحَمْهَا،وَاِنْ أَرْسَلْتَهَا، فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِه عِبَادَكَ الصَّالِحِيْنَ
বিসমিকা রাববী ওয়াযা‘তু জাম্বী, ওয়াবিকা আরফা‘উহূ। ইন আমসাক্তা নাফ্সী ফারহামহা, ওয়াইন আরসাল্তাহা ফাহ্ফায্হা বিমা তাহ্ফাযু বিহী ‘ইবা-দাকাস সা-লিহীন।
অর্থ : হে আমার রব! আপনার নামে আমি পিঠ রাখলাম এবং আপনার সাহায্যে তা উঠাব। যদি আপনি আমার জীবন নিয়ে নেন, তাহলে তার প্রতি রহম করম্নন। আর যদি ছেড়ে দেন, তাহলে তাকে হেফাযত করম্নন সেই বস্তু থেকে, যা থেকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদেরকে আপনি হেফাযত করে থাকেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬৭।]
৮. ঘুমানোর সময় ৪র্থ দু‘আ :
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বিছানায় যেতেন তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَاٰوَانَا فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِىَ لَهٗ وَلَا مُئْوِىَ
আল্হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা ওয়া সাক্বা-না ওয়া কাফা-না ওয়া আ-ওয়া-না, ফাকাম মিম্মান লা-কা-ফিয়া লাহূ ওয়ালা মু’বিয়া।
অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন, আমাদের প্রয়োজন পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের আশ্রয় প্রদান করেছেন। অথচ এমন বহুলোক রয়েছে, যাদেরকে পরিতৃপ্ত করার কেউ নেই এবং যাদেরকে আশ্রয়দানকারী কেউ নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬৯; আবু দাঊদ, হা/৫০৫৫; তিরমিযী, হা/৩৩৯৬; মিশকাত, হা/২৩৮৬।]
৯. ঘুমানোর সময় ৫ম দু‘আ :
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, তুমি যখন বিছানায় শয়ন করার ইচ্ছা করো, তখন সালাতের ওযুর মতো ওযু করবে, তারপর ডান কাতে শয়ন করে এ দু‘আ পড়বে, এতে তুমি যদি ঘুমের মধ্যে মারা যাও তাহলে স্বভাব ধর্মের (ইসলামের) উপর মারা যাবে। আর এ দু‘আটি তোমার শেষ বাক্যে পরিণত করো।
اَللّٰهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِيْ إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِيْ إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِيْ إِلَيْكَ ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِيْ إلَيْكَ ، رَغْبَةً وَّرَهْبَةً إِلَيْكَ ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ ، اٰمَنْتُ بِكِتابِكَ الَّذِيْ أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِيْ أَرْسَلْتَ
আল্লা-হুম্মা আসলামতু নাফ্সী ইলাইক, ওয়াওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্হী ইলাইক, ওয়াফাওওয়ায্তু আমরী ইলাইক, ওয়া আলজা’তু যাহ্রী ইলাইক, রাগ্বাতাও ওয়ারাহ্বাতান ইলাইক, লা মালজাআ ওয়ালা মানজা মিন্কা ইল্লা ইলাইক, আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা, ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমার জীবন সমর্পণ করলাম, আপনার দিকে আমার চেহারা নিবদ্ধ করলাম, আপনার উদ্দেশ্যে আমার কাজ-কর্ম নিবেদন করলাম এবং আপনার দিকে আমার পিঠ লাগালাম অর্থাৎ আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি)। আপনার প্রতি আগ্রহে ও শাস্তির ভয়ে এসব কাজ করছি। আপনার নিকট ছাড়া আর আশ্রয় পাওয়ার ও (নিজেকে) রক্ষা করার স্থান নেই। আপনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং যে নবী পাঠিয়েছেন তার উপর আমি ঈমান এনেছি। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৭, ৭৪৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫৮; আবু দাঊদ, হা/৫০৪।]
১০. পার্শ্ব পরিবর্তনের দু‘আ :
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন, তখন এই দু‘আ বলতেন।
لَا إلٰهَ إِلَّا اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল ওয়া-হিদুল ক্বাহ্হা-র, রাববুস্সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়ামা বাইনাহুমাল ‘আযীযুল গাফ্ফা-র।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক ও শক্তিশালী। আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে, সবকিছুর প্রতিপালক তিনি। তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯৮০; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৬৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৩০; জামেউস সগীর, হা/৮৮২২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৬৬।]
১১. নিদ্রাবস্থায় ভয় পেলে দু‘আ :
আমর ইবনে শু‘আইব (রাঃ) তার পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পায়, তখন সে যেন এ দু‘আ পড়ে।
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِه وَعِقَابِه وَشَرِّ عِبَادِه وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিন গাযাবিহী ওয়া‘ইক্বা-বিহী ওয়া শার্রি ‘ইবা-দিহী ওয়া মিন হামাযা-তিশ শায়া-ত্বী-নি ওয়াআই ইয়াহ্যুরূন।
অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের মাধ্যমে আশ্রয় চাচ্ছি তার ক্রোধ ও শাস্তি হতে, তার বান্দার অনিষ্ট হতে এবং শয়তানের খটকা হতে, আর সে যেন আমার নিকট উপস্থিত হতে না পারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭০৪; আবু দাঊদ, হা/৩৮৯৫; তিরমিযী, হা/৩৫২৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৪; মিশকাত, হা/২৪৭৭।]
১২. নিদ্রাবস্থায় ভালো বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয় :
আবু ক্বাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, উত্তম স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই তোমাদের যে কেউ ভালো স্বপ্ন দেখে, সে যেন এমন ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করে যাকে সে ভালোবাসে। আর যদি কেউ মন্দ স্বপ্ন দেখে, তাহলে সে যেন এর ক্ষতি থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং তিন বার বাম দিকে থুথু ফেলে। আর স্বপ্নটি যেন কারো কাছে না বলে, তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭১৬; সহীহ বুখারী, হা/৩২৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৬১৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৯; মিশকাত, হা/৪৬১২।]
ঘুমের মধ্যে মন্দ স্বপ্ন দেখলে তিন বার বাম দিকে থুথু ফেলবে, তারপর তিন বার ‘‘আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্শাইত্বা-নির রাজীম’’ পাঠ করে পার্শ্ব পরিবর্তন করবে।
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আনা হয়েছে- এ মর্মে ফাতিমা (রাঃ) এর কাছে সংবাদ পৌঁছলে তিনি নবী ﷺ-এর কাছে উপস্থিত হয়ে (আটা তৈরির জন্য) যাঁতা পিষাজনিত শ্রম ও কষ্টের কথা জানিয়ে খাদিম হিসেবে একজন যুদ্ধবন্দিনী চাইতে গেলেন। কিন্তু তাঁর দেখা পেলেন না। তাই সে সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ)-কে বলে ফিরে আসলেন। পরে নবী ﷺ আসলে আয়িশা (রাঃ) তাকে বিষয়টি জানালেন এবং নবী ﷺ তখনই আমাদের ঘরে এলেন। আমরা তখন শুয়ে পড়েছি। আমরা বিছানা হতে উঠতে চাইলে তিনি বললেন, তোমরা যেভাবে আছো থাকো। (তারপর তিনি আমাদের মাঝখানে বসলেন) আলী (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর ঠান্ডা পদযুগলের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি তখন বললেন, তোমরা আমার কাছে যে জিনিস প্রার্থনা করেছ তার চাইতে কল্যাণকর বস্তুর সন্ধান কি আমি তোমাদেরকে দেব না? যখন তোমরা শয়ন করবে তখন চৌত্রিশবার ‘আল্লাহু আকবার’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ এবং তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ্’ পড়বে। তোমরা যা প্রার্থনা করেছ তার চাইতে এ কাজটি বেশি কল্যাণকর। [সহীহ বুখারী, হা/৩১১৩; সহীহ মুসলিম, হা/২৭২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৪১; আবু দাউদ, হা/৫০৬৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬০৪।]
২. আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বলেছেন, তুমি শয়নকালে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার সাথে একজন হেফাযতকারী (ফেরেশতা) থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটবর্তী হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৫; মিশকাত, হা/২১২৩।]
﴿اَللهُ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ، لَا تَأْخُذُه سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ، لَه مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ إِلَّا بِإِذْنِه يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ، وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهۤ إِلَّا بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَلَا يَئُوْدُه حِفْظُهُمَا، وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূম, লা তা’খুযুহূ সিনাতুওঁ ওয়ালা নাঊম লাহূ মা ফিস্সামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিলআর্যি, মানযাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইয্নিহ্, ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খাল্ফাহুম ওয়ালা ইউহীতূনা বিশায়ইম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা শা-আ, ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আর্যা ওয়ালা ইয়াঊদুহূ হিফযুহুমা ওয়াহুয়াল ‘আলিয়্যুল ‘আযীম।
অর্থ : আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সবার রক্ষণা-বেক্ষণকারী, তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই; এমন কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সামনের ও পেছনের সবই তিনি জানেন; তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত তাঁর অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ আয়ত্ব করতে পারে না; তাঁর কুরসী আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না এবং তিনি সমুন্নত ও সুমহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
৩. সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা :
আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে কেউ রাতে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি সারা রাত বিপদমুক্ত থাকবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০০৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৯১৪; আবু দাঊদ, হা/১৩৯৯; তিরমিযী, হা/২৮৮১; ইবনে মাজাহ, সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৮১; মিশকাত, হা/২১২৫।]
﴿اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَمَلَآئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِه وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ ‐ - لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ- وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ إِنْ نَّسِيْنَاۤ أَوْ أَخْطَأْنَا، رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَاۤ إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَه عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِنَا، رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِه وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَاۤ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ﴾
আ-মানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির্রাবিবহী ওয়ালমু’মিনূন, কুলস্নুন আ-মানা বিল্লা-হি ওয়া মালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রম্নসুলিহ্, লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মিররুসুলিহ্, ওয়াক্বা-লূ সামি‘না ওয়াআত্বা‘না গুফ্রা-নাকা রাববানা ওয়া ইলাইকাল মাসীর। লা ইউকালিস্নফুল্লা-হু নাফসান ইল্লা উস‘আহা, লাহা মা কাসাবাত ওয়া‘আলাইহা মাকতাসাবাত, রাববানা লা তুআ-খিযনা ইননাসীনা আও আখত্বা’না, রাববানা ওয়ালা তাহ্মিল ‘আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহূ ‘আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা, রাববানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা ত্বা-ক্বাতালানা বিহ্, ওয়া‘ফু ‘আন্না ওয়াগ্ফির লানা ওয়ার্হামনা আনতা মাওলা-না ফানসুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কা-ফিরীন।
অর্থ : রাসূল তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে এবং মুমিনগণও। তারা সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং রাসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, (তারা বলে), ‘আমরা রাসূলগণের মধ্যে কারো ব্যাপারে তারতম্য করি না’ এবং তারা এ কথাও বলে যে, ‘আমরা শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করম্নন, আর প্রত্যাবর্তন আপনারই দিকে’। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেমন গুরম্ন-দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! যে ভার বহনের ক্ষমতা আমাদের নেই, এমন ভার আমাদের উপর চাপিয়ে দেবেন না, (ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করে) আমাদেরকে রেহাই দিন, আমাদেরকে ক্ষমা করম্নন এবং আমাদের প্রতি দয়া করম্নন। আপনিই আমাদের অভিভাবক, কাজেই আমাদেরকে কাফিরদের উপর বিজয় দান করম্নন।
৪. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস পাঠ করা :
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমানোর জন্য নিজের বিছানায় যেতেন, তখন দু’হাত মিলিয়ে তাতে ফুঁক দিতেন এবং মাথা থেকে আরম্ভ করে যতটুকু সম্ভব নিজের শরীরে হাত বুলাতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, ও সূরা নাস পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; আবু দাঊদ, হা/৫০৫৮; তিরমিযী, হা/৩৪০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৪৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩১০৪; মিশকাত, হা/২১৩২।]
সূরা ইখলাস :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ ‐ اَللهُ الصَّمَدُ ‐ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ ‐ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا أَحَدٌ
বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লা-হুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউ-লাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লা-হূ কুফুওয়ান আহাদ।
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি, যিনি পরম করম্নণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আল্লাহ এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।
সূরা ফালাক্ব :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ -‐ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‐ - وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ‐ - وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ -‐ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল আ‘ঊযু বিরাবিবল ফালাক্ব। মিন শার্রি মা খালাক্ব। ওয়ামিন শার্রি গা-সিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শার্রিন্নাফ্ফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়ামিন শার্রি হা-সিদিন ইযা হাসাদ।
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি, যিনি পরম করম্নণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি সকাল বেলার রবের নিকট। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। অন্ধকার রাতের অনিষ্ট হতে, যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। গিরায় ফুঁৎকারকারিণীদের অনিষ্ট হতে। আর হিংসুকের অনিষ্ট হতে, যখন সে হিংসা করে।
সূরা নাস :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ‐ مَلِكِ النَّاسِ ‐ إِلٰهِ النَّاسِ ‐ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ‐ اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ ‐ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
বিসমিল্লা-হির রাহ্মা-নির রাহীম। কুল আ‘ঊযু বিরাবিবন্না-স। মালিকিন্না-স। ইলা-হিন্না-স। মিন শার্©র্রল ওয়াসওয়া-সিল খান্না-স। আল্লাযী ইউওয়াসবিসু ফী সুদূরিন্না-স। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি, যিনি পরম করম্নণাময় ও অতি দয়ালু। বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের প্রকৃত ইলাহের কাছে। তার অনিষ্ট হতে যে কুমন্ত্রণা দিয়েই গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক অথবা মানুষদের মধ্য থেকে।
৫. ঘুমানোর সময় ১ম দু‘আ :
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَ أَحْيَا
আল্লা-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মৃত্যুবরণ করি ও আপনার নামে জাগ্রত হই। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১২; তিরমিযী, হা/৩৪১৭; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৫; মিশকাত, হা/২৩৮২।]
৬. ঘুমানোর সময় ২য় দু‘আ :
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন গালের নিচে নিজের ডান হাত রাখতেন এবং এ দু‘আ বলতেন।
اَللّٰهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
আল্লা-হুম্মা ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু ‘ইবা-দাক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে আপনার শাস্তি থেকে রক্ষা করম্নন, যেদিন আপনার বান্দাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন। [আবু দাঊদ, হা/৫০৪৭; তিরমিযী, হা/৩৩৯৮; মিশকাত, হা/২৪০০।]
৭. ঘুমানোর সময় ৩য় দু‘আ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নিজের বিছানায় আসে, তখন সে যেন এ দু‘আ পড়ে।
بِاسْمِكَ رَبِّيْ وَضَعْتُ جَنْبِيْ وَبِكَ أَرْفَعُه ، اِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِيْ فَارْحَمْهَا،وَاِنْ أَرْسَلْتَهَا، فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِه عِبَادَكَ الصَّالِحِيْنَ
বিসমিকা রাববী ওয়াযা‘তু জাম্বী, ওয়াবিকা আরফা‘উহূ। ইন আমসাক্তা নাফ্সী ফারহামহা, ওয়াইন আরসাল্তাহা ফাহ্ফায্হা বিমা তাহ্ফাযু বিহী ‘ইবা-দাকাস সা-লিহীন।
অর্থ : হে আমার রব! আপনার নামে আমি পিঠ রাখলাম এবং আপনার সাহায্যে তা উঠাব। যদি আপনি আমার জীবন নিয়ে নেন, তাহলে তার প্রতি রহম করম্নন। আর যদি ছেড়ে দেন, তাহলে তাকে হেফাযত করম্নন সেই বস্তু থেকে, যা থেকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদেরকে আপনি হেফাযত করে থাকেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩২০; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬৭।]
৮. ঘুমানোর সময় ৪র্থ দু‘আ :
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বিছানায় যেতেন তখন এ দু‘আটি পাঠ করতেন।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَاٰوَانَا فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِىَ لَهٗ وَلَا مُئْوِىَ
আল্হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা ওয়া সাক্বা-না ওয়া কাফা-না ওয়া আ-ওয়া-না, ফাকাম মিম্মান লা-কা-ফিয়া লাহূ ওয়ালা মু’বিয়া।
অর্থ : সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন, আমাদের প্রয়োজন পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের আশ্রয় প্রদান করেছেন। অথচ এমন বহুলোক রয়েছে, যাদেরকে পরিতৃপ্ত করার কেউ নেই এবং যাদেরকে আশ্রয়দানকারী কেউ নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬৯; আবু দাঊদ, হা/৫০৫৫; তিরমিযী, হা/৩৩৯৬; মিশকাত, হা/২৩৮৬।]
৯. ঘুমানোর সময় ৫ম দু‘আ :
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, তুমি যখন বিছানায় শয়ন করার ইচ্ছা করো, তখন সালাতের ওযুর মতো ওযু করবে, তারপর ডান কাতে শয়ন করে এ দু‘আ পড়বে, এতে তুমি যদি ঘুমের মধ্যে মারা যাও তাহলে স্বভাব ধর্মের (ইসলামের) উপর মারা যাবে। আর এ দু‘আটি তোমার শেষ বাক্যে পরিণত করো।
اَللّٰهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِيْ إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِيْ إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِيْ إِلَيْكَ ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِيْ إلَيْكَ ، رَغْبَةً وَّرَهْبَةً إِلَيْكَ ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ ، اٰمَنْتُ بِكِتابِكَ الَّذِيْ أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِيْ أَرْسَلْتَ
আল্লা-হুম্মা আসলামতু নাফ্সী ইলাইক, ওয়াওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্হী ইলাইক, ওয়াফাওওয়ায্তু আমরী ইলাইক, ওয়া আলজা’তু যাহ্রী ইলাইক, রাগ্বাতাও ওয়ারাহ্বাতান ইলাইক, লা মালজাআ ওয়ালা মানজা মিন্কা ইল্লা ইলাইক, আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা, ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমার জীবন সমর্পণ করলাম, আপনার দিকে আমার চেহারা নিবদ্ধ করলাম, আপনার উদ্দেশ্যে আমার কাজ-কর্ম নিবেদন করলাম এবং আপনার দিকে আমার পিঠ লাগালাম অর্থাৎ আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি)। আপনার প্রতি আগ্রহে ও শাস্তির ভয়ে এসব কাজ করছি। আপনার নিকট ছাড়া আর আশ্রয় পাওয়ার ও (নিজেকে) রক্ষা করার স্থান নেই। আপনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং যে নবী পাঠিয়েছেন তার উপর আমি ঈমান এনেছি। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৭, ৭৪৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫৮; আবু দাঊদ, হা/৫০৪।]
১০. পার্শ্ব পরিবর্তনের দু‘আ :
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন, তখন এই দু‘আ বলতেন।
لَا إلٰهَ إِلَّا اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল ওয়া-হিদুল ক্বাহ্হা-র, রাববুস্সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়ামা বাইনাহুমাল ‘আযীযুল গাফ্ফা-র।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক ও শক্তিশালী। আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে, সবকিছুর প্রতিপালক তিনি। তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯৮০; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৬৪১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৫৩০; জামেউস সগীর, হা/৮৮২২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০৬৬।]
১১. নিদ্রাবস্থায় ভয় পেলে দু‘আ :
আমর ইবনে শু‘আইব (রাঃ) তার পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পায়, তখন সে যেন এ দু‘আ পড়ে।
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِه وَعِقَابِه وَشَرِّ عِبَادِه وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিন গাযাবিহী ওয়া‘ইক্বা-বিহী ওয়া শার্রি ‘ইবা-দিহী ওয়া মিন হামাযা-তিশ শায়া-ত্বী-নি ওয়াআই ইয়াহ্যুরূন।
অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের মাধ্যমে আশ্রয় চাচ্ছি তার ক্রোধ ও শাস্তি হতে, তার বান্দার অনিষ্ট হতে এবং শয়তানের খটকা হতে, আর সে যেন আমার নিকট উপস্থিত হতে না পারে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭০৪; আবু দাঊদ, হা/৩৮৯৫; তিরমিযী, হা/৩৫২৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৪; মিশকাত, হা/২৪৭৭।]
১২. নিদ্রাবস্থায় ভালো বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয় :
আবু ক্বাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, উত্তম স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই তোমাদের যে কেউ ভালো স্বপ্ন দেখে, সে যেন এমন ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করে যাকে সে ভালোবাসে। আর যদি কেউ মন্দ স্বপ্ন দেখে, তাহলে সে যেন এর ক্ষতি থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং তিন বার বাম দিকে থুথু ফেলে। আর স্বপ্নটি যেন কারো কাছে না বলে, তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৭১৬; সহীহ বুখারী, হা/৩২৯২; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৬১৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৯; মিশকাত, হা/৪৬১২।]
ঘুমের মধ্যে মন্দ স্বপ্ন দেখলে তিন বার বাম দিকে থুথু ফেলবে, তারপর তিন বার ‘‘আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্শাইত্বা-নির রাজীম’’ পাঠ করে পার্শ্ব পরিবর্তন করবে।
১. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর ১ম দু‘আ :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وإِلَيْهِ النُّشُوْرُ
আল্ হাম্দুলিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না বা‘দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।
অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি আমাদেরকে মরণের পর জীবিত করেছেন এবং তাঁর দিকেই আবার প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১২; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬২; আবু দাঊদ, হা/৫০৫১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬২৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৫; জামেউস সগীর, হা/৮৭৭৯।]
২. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর ২য় দু‘আ :
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কেউ যদি শেষ রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এ দু‘আটি পড়ে, তবে সে যে কোন দু‘আ করলে তার দু‘আ কবুল করা হবে। আর যদি সে ওযু করে সালাত আদায় করে তবে তার সালাত কবুল করা হবে।
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ وَسُبْحَانَ اللهِ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ- اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুলমুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুলিস্ন শায়ইন ক্বাদীর, ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। আমরা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি। প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। তাঁর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি বা উপায় নেই। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করম্নন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৫৪; আবু দাঊদ, হা/৫০৬২; তিরমিযী, হা/৩৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭২৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬১২; মিশকাত, হা/১২১৩।]
৩. সূরা আলে ইমরানের শেষ রম্নকূ পড়া :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালা মাইমুনার ঘরে থাকলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺও এ রাতে তার সাথে ছিলেন। নবী ﷺ পরিবারের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললেন। তারপর ঘুমিয়ে গেলেন। যখন রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলো, তখন তিনি উঠলেন এবং আকাশের দিকে তাকালেন। অতঃপর সূরা আলে ইমরানের শেষ রম্নকূ তিলাওয়াত করলেন। তারপর ওযু করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলেন। অন্য বর্ণনায় শেষ রম্নকূর প্রথম ৫ আয়াত পড়ার কথা বর্ণিত আছে।
﴿إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِاُولِي الْاَلْبَابِ ‐ اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّ قُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‐ رَبَّنَاۤ إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَه وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ ‐ رَبَّنَاۤ إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُّنَادِيْ لِلْاِيْمَانِ أَنْ اٰمِنُوْا بِرَبِّكُمْ فَاٰمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ ‐ رَبَّنَا وَاٰتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلٰى رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ ‐ فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّيْ لَاۤ أُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثٰى بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَأُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ ‐ لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ الْبِلَادِ ‐ مَتَاعٌ قَلِيْلٌ ثُمَّ مَأٰوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ ‐ لٰكِنِ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا نُزُلًا مِّنْ عِنْدِ اللهِ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِّلْاَبْرَارِ ‐ وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ لَا يَشْتَرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًا أُولٰٓئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ إِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ ‐ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
ইন্না ফী খালক্বিসসামা-ওয়া-তি ওয়ালআরযি ওয়াখতিলা-ফিল লাইলি ওয়াননাহা-রি লাআ-য়া-তিল লিউলিল আলবা-ব। আল্লাযীনা ইয়াযকুরূনাল্লা-হা ক্বিয়া-মাওঁ ওয়াকু‘ঊদাওঁ ওয়া‘আলা জুনূবিহিম ওয়া ইয়াতাফাক্কারূনা ফী খালকিসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রাববানা মা-খালাক্বতা হা-যা বা-ত্বিলান, সুবহা-নাকা ফাক্বিনা ‘আযা-বাননা-র। রাববানা ইন্নাকা মান তুদ্খিলিন না-রা ফাক্বাদ আখযাইতাহ্, ওয়ামা লিযযা-লিমীনা মিন আনসা-র। রাববানা ইন্নানা সামি‘না মুনা-দিয়াই ইউনা-দী লিলঈমা-নি আনআ-মিনূ বিরাব্বিকুম ফাআ-মান্না। রাববানা ফাগফিরলানা যুনূবানা ওয়াকাফ্ফির ‘আন্না সায়্যিআ-তিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মা‘আল আবরা-র। রাববানা ওয়াআ-তিনা মা ওয়া‘আত্তানা ‘আলা রম্নসুলিকা ওয়ালা তুখযিনা ইয়াউমাল ক্বিয়ামাহ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ। ফাস্তাজা-বা লাহুম রাববুহুম আন্নী লা-উযী‘উ ‘আমালা ‘আ-মিলিম মিনকুম মিন যাকারিন আও উনসা, বা‘যুকুম মিম বা‘য, ফাল্লাযীনা হা-জারম্ন ওয়া উখরিজু মিন দিয়া-রিহিম ওয়াঊযূ ফী সাবীলী ওয়াক্বা-তালূ ওয়াকুতিলূ লাউকাফ্ফিরান্না ‘আনহুম সায়্যিআ-তিহিম ওয়ালা উদ্খীলান্নাহুম জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-র, সাওয়া-বাম মিন ‘ইনদিল্লা-হ, ওয়াল্লা-হু ‘ইনদাহূ হুসনুস সাওয়া-ব। লা-ইয়াগুর্রান্নাকা তাক্বালস্নুবুল্লাযীনা কাফারম্ন ফিল বিলা-দ। মাতা‘উন ক্বালীল। সুম্মা মা’ওয়া-হুম জাহান্নাম, ওয়াবি’সাল মিহা-দ। লা-কিনিল্লাযীনাত্তাক্বাও রাববাহুম লাহুম জান্না-তুন তাজরী মিন তাহ্তিহাল আনহা-রম্ন খা-লিদীনা ফীহা নুযুলাম মিন ‘ইনদিল্লা-হ, ওয়ামা ‘ইনদাল্লা-হি খাইরম্নল লিল আবরা-র। ওয়া ইন্না মিন আহলিল কিতা-বি লামাই ইউ’মিনু বিল্লা-হি ওয়ামা উনযিলা ইলাইকুম ওয়ামা উনযিলা ইলাইহিম খা-শি‘ঈনা লিল্লা-হি লা-ইয়াশ্তারূনা বিআ-য়া-তিল্লা-হি সামানান ক্বালীলা, উলা-ইকা লাহুম আজরম্নহুম ‘ইনদা রাবিবহিম, ইন্নাল্লা-হা সারী‘উল হিসা-ব। ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানুসবিরূ ওয়াসা-বিরূ ওয়ারা-বিতূ ওয়াত্তাকুল্লা-হা লা‘আল্লাকুম তুফলিহূন।
অর্থ : নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে। যারা দন্ডায়মান, উপবেশন ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা করে (বলে), হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা বৃথা সৃষ্টি করেননি। আপনিই পবিত্রতম; অতএব আমাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করম্নন। হে আমাদের প্রতিপালক! অবশ্যই আপনি যাকে জাহান্নামে দেবেন, নিশ্চয় তাকে লাঞ্চিত করবেন এবং অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের রব! নিশ্চয় আমরা এক আহবানকারীকে আহবান করতে শুনেছিলাম যে, তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, তাতেই আমরা ঈমান এনেছি; হে আমাদের রব! অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করম্নন, আর আমাদের গোনাহগুলো মুছে দিন এবং পুণ্যবানদের সাথে আমাদেরকে মৃত্যু দান করম্নন। হে আমাদের রব! আপনি স্বীয় রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদের সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলেন তা দান করম্নন এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে লাঞ্চিত করবেন না; নিশ্চয় আপনি ওয়াদা খিলাফ করেন না। অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন এ মর্মে যে, আমি তোমাদের পুরম্নষ অথবা নারীর মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। অতএব যারা হিজরত করেছে, তাদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, নিশ্চয় আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত; এটা আল্লাহর নিকট হতে প্রতিদান, আর আল্লাহর নিকটই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। শহরসমূহে কাফিরদের চালচলন যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। এসব কয়েকদিনের ভোগের সামগ্রী মাত্র; অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং তা কতইনা নিকৃষ্ট স্থান! কিন্তু যারা স্বীয় প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত, তন্মধ্যে তারা সদা অবস্থান করবে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে মেহমানদারী। আর যেসব বস্তু আল্লাহর নিকট রয়েছে তা পুণ্যবানদের জন্য বহুগুণে উত্তম। আর নিশ্চয় আহলে কিতাবের মধ্যে এরূপ লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহর প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে, সে বিষয়ে আল্লাহর ভয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে; যারা অল্প মূল্যে আল্লাহর নিদর্শনাবলি বিক্রি করে না, তাদের জন্যই তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে; নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং লড়াইয়ের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকো, আর আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫; আবু দাঊদ, হা/৫৮; নাসাঈ, হা/১৭০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮; মিশকাত, হা/১১৯৫, ১২০৯।]
৪. ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা :
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ .
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন রাতে উঠতেন, তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৫।]
৫. ঘুম থেকে উঠে নাক ঝাড়া :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِه فَتَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلاَثًا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيتُ عَلٰى خَيْشُومِه
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠে এবং অযু করে, তখন তার তিনবার নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে ফেলা কর্তব্য। কারণ শায়তান তার নাকের ছিদ্র পথে রাত কাটায়। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৯৫।]
৬. কব্জি পর্যন্ত তিন বার হাত ধৌত করা :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ : إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ فِي أَنْفِهِ مَاءً ثُمَّ لْيَنْتَثِرْ، وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ، وَإِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِه فَلْيَغْسِلْ يَدَه قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَهَا فِي وَضُوئِهِ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যখন ওযু করবে তখন সে যেন তার নাকের ছিদ্রে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়। আর যে ঢিলা ব্যবহার করবে সে যেন বিজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠে, সে যেন পানির পাত্রে হাত ঢুকাবার আগে কবজি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করে নেয়। কারণ তোমাদের কেউ জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/১৬২।]
৭. ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ الله قَالَ : يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلٰى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ مَكَانَ كُلِّ عُقْدَةٍ " عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ " - فَإِنْ اِسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ الله اِنْحَلَّتْ عُقْدَةٌ - فَإِنْ تَوَضَّأَ اِنْحَلَّتْ عُقْدَةٌ - فَإِنْ صَلّٰى اِنْحَلَّتْ عُقَدُهٗ . فَأَصْبَحَ نَشِيْطاً طَيِّبَ النَّفْسِ ، وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নিদ্রা যায় তখন শয়তান তার মাথার শেষ প্রান্তে অর্থাৎ ঘাড়ে তিনটি গিরা দেয়। প্রত্যেকটি গিরাতেই সে ফুঁক দিয়ে বলে, এখনো অনেক রাত আছে। পরে যখন সে ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। এরপর সে ওযু করলে আরো একটি গিরা খুলে যায়। আর যখন সে সালাত আদায় করে তখন সবগুলো গিরা খুলে যায়। এভাবে সে কর্মতৎপর ও প্রফুলস্ন মনের অধিকারী হয়ে সকালে উপণীত হয়। অন্যথায় বিমর্ষ ও অলস মন নিয়ে সকালে উপনীত হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪২।]
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وإِلَيْهِ النُّشُوْرُ
আল্ হাম্দুলিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না বা‘দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।
অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি আমাদেরকে মরণের পর জীবিত করেছেন এবং তাঁর দিকেই আবার প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১২; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৬২; আবু দাঊদ, হা/৫০৫১; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬২৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৫; জামেউস সগীর, হা/৮৭৭৯।]
২. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর ২য় দু‘আ :
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কেউ যদি শেষ রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এ দু‘আটি পড়ে, তবে সে যে কোন দু‘আ করলে তার দু‘আ কবুল করা হবে। আর যদি সে ওযু করে সালাত আদায় করে তবে তার সালাত কবুল করা হবে।
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ وَسُبْحَانَ اللهِ وَ الْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ- اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুলমুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুলিস্ন শায়ইন ক্বাদীর, ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। আমরা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি। প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। তাঁর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি বা উপায় নেই। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করম্নন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৫৪; আবু দাঊদ, হা/৫০৬২; তিরমিযী, হা/৩৪১৪; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭২৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬১২; মিশকাত, হা/১২১৩।]
৩. সূরা আলে ইমরানের শেষ রম্নকূ পড়া :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালা মাইমুনার ঘরে থাকলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺও এ রাতে তার সাথে ছিলেন। নবী ﷺ পরিবারের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললেন। তারপর ঘুমিয়ে গেলেন। যখন রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলো, তখন তিনি উঠলেন এবং আকাশের দিকে তাকালেন। অতঃপর সূরা আলে ইমরানের শেষ রম্নকূ তিলাওয়াত করলেন। তারপর ওযু করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলেন। অন্য বর্ণনায় শেষ রম্নকূর প্রথম ৫ আয়াত পড়ার কথা বর্ণিত আছে।
﴿إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِاُولِي الْاَلْبَابِ ‐ اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّ قُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‐ رَبَّنَاۤ إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَه وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ ‐ رَبَّنَاۤ إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُّنَادِيْ لِلْاِيْمَانِ أَنْ اٰمِنُوْا بِرَبِّكُمْ فَاٰمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ ‐ رَبَّنَا وَاٰتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلٰى رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ ‐ فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّيْ لَاۤ أُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنْكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثٰى بَعْضُكُمْ مِّنْ ۢبَعْضٍ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَأُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقَاتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَاُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِ وَاللهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ ‐ لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ الْبِلَادِ ‐ مَتَاعٌ قَلِيْلٌ ثُمَّ مَأٰوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ ‐ لٰكِنِ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا نُزُلًا مِّنْ عِنْدِ اللهِ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِّلْاَبْرَارِ ‐ وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ لَا يَشْتَرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًا أُولٰٓئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ إِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ ‐ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
ইন্না ফী খালক্বিসসামা-ওয়া-তি ওয়ালআরযি ওয়াখতিলা-ফিল লাইলি ওয়াননাহা-রি লাআ-য়া-তিল লিউলিল আলবা-ব। আল্লাযীনা ইয়াযকুরূনাল্লা-হা ক্বিয়া-মাওঁ ওয়াকু‘ঊদাওঁ ওয়া‘আলা জুনূবিহিম ওয়া ইয়াতাফাক্কারূনা ফী খালকিসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রাববানা মা-খালাক্বতা হা-যা বা-ত্বিলান, সুবহা-নাকা ফাক্বিনা ‘আযা-বাননা-র। রাববানা ইন্নাকা মান তুদ্খিলিন না-রা ফাক্বাদ আখযাইতাহ্, ওয়ামা লিযযা-লিমীনা মিন আনসা-র। রাববানা ইন্নানা সামি‘না মুনা-দিয়াই ইউনা-দী লিলঈমা-নি আনআ-মিনূ বিরাব্বিকুম ফাআ-মান্না। রাববানা ফাগফিরলানা যুনূবানা ওয়াকাফ্ফির ‘আন্না সায়্যিআ-তিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মা‘আল আবরা-র। রাববানা ওয়াআ-তিনা মা ওয়া‘আত্তানা ‘আলা রম্নসুলিকা ওয়ালা তুখযিনা ইয়াউমাল ক্বিয়ামাহ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ। ফাস্তাজা-বা লাহুম রাববুহুম আন্নী লা-উযী‘উ ‘আমালা ‘আ-মিলিম মিনকুম মিন যাকারিন আও উনসা, বা‘যুকুম মিম বা‘য, ফাল্লাযীনা হা-জারম্ন ওয়া উখরিজু মিন দিয়া-রিহিম ওয়াঊযূ ফী সাবীলী ওয়াক্বা-তালূ ওয়াকুতিলূ লাউকাফ্ফিরান্না ‘আনহুম সায়্যিআ-তিহিম ওয়ালা উদ্খীলান্নাহুম জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-র, সাওয়া-বাম মিন ‘ইনদিল্লা-হ, ওয়াল্লা-হু ‘ইনদাহূ হুসনুস সাওয়া-ব। লা-ইয়াগুর্রান্নাকা তাক্বালস্নুবুল্লাযীনা কাফারম্ন ফিল বিলা-দ। মাতা‘উন ক্বালীল। সুম্মা মা’ওয়া-হুম জাহান্নাম, ওয়াবি’সাল মিহা-দ। লা-কিনিল্লাযীনাত্তাক্বাও রাববাহুম লাহুম জান্না-তুন তাজরী মিন তাহ্তিহাল আনহা-রম্ন খা-লিদীনা ফীহা নুযুলাম মিন ‘ইনদিল্লা-হ, ওয়ামা ‘ইনদাল্লা-হি খাইরম্নল লিল আবরা-র। ওয়া ইন্না মিন আহলিল কিতা-বি লামাই ইউ’মিনু বিল্লা-হি ওয়ামা উনযিলা ইলাইকুম ওয়ামা উনযিলা ইলাইহিম খা-শি‘ঈনা লিল্লা-হি লা-ইয়াশ্তারূনা বিআ-য়া-তিল্লা-হি সামানান ক্বালীলা, উলা-ইকা লাহুম আজরম্নহুম ‘ইনদা রাবিবহিম, ইন্নাল্লা-হা সারী‘উল হিসা-ব। ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানুসবিরূ ওয়াসা-বিরূ ওয়ারা-বিতূ ওয়াত্তাকুল্লা-হা লা‘আল্লাকুম তুফলিহূন।
অর্থ : নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে। যারা দন্ডায়মান, উপবেশন ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা করে (বলে), হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তা বৃথা সৃষ্টি করেননি। আপনিই পবিত্রতম; অতএব আমাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করম্নন। হে আমাদের প্রতিপালক! অবশ্যই আপনি যাকে জাহান্নামে দেবেন, নিশ্চয় তাকে লাঞ্চিত করবেন এবং অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের রব! নিশ্চয় আমরা এক আহবানকারীকে আহবান করতে শুনেছিলাম যে, তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, তাতেই আমরা ঈমান এনেছি; হে আমাদের রব! অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করম্নন, আর আমাদের গোনাহগুলো মুছে দিন এবং পুণ্যবানদের সাথে আমাদেরকে মৃত্যু দান করম্নন। হে আমাদের রব! আপনি স্বীয় রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদের সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলেন তা দান করম্নন এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে লাঞ্চিত করবেন না; নিশ্চয় আপনি ওয়াদা খিলাফ করেন না। অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের আহবানে সাড়া দিলেন এ মর্মে যে, আমি তোমাদের পুরম্নষ অথবা নারীর মধ্য হতে কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করব না, তোমরা পরস্পর এক। অতএব যারা হিজরত করেছে, তাদের ঘরবাড়ি হতে বিতাড়িত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং সংগ্রাম করেছে ও নিহত হয়েছে, নিশ্চয় আমি তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত; এটা আল্লাহর নিকট হতে প্রতিদান, আর আল্লাহর নিকটই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। শহরসমূহে কাফিরদের চালচলন যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। এসব কয়েকদিনের ভোগের সামগ্রী মাত্র; অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং তা কতইনা নিকৃষ্ট স্থান! কিন্তু যারা স্বীয় প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত, তন্মধ্যে তারা সদা অবস্থান করবে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে মেহমানদারী। আর যেসব বস্তু আল্লাহর নিকট রয়েছে তা পুণ্যবানদের জন্য বহুগুণে উত্তম। আর নিশ্চয় আহলে কিতাবের মধ্যে এরূপ লোকও রয়েছে, যারা আল্লাহর প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে, সে বিষয়ে আল্লাহর ভয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে; যারা অল্প মূল্যে আল্লাহর নিদর্শনাবলি বিক্রি করে না, তাদের জন্যই তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে; নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ করো ও ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো এবং লড়াইয়ের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকো, আর আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫; আবু দাঊদ, হা/৫৮; নাসাঈ, হা/১৭০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮; মিশকাত, হা/১১৯৫, ১২০৯।]
৪. ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা :
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ .
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন রাতে উঠতেন, তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৫।]
৫. ঘুম থেকে উঠে নাক ঝাড়া :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِه فَتَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلاَثًا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيتُ عَلٰى خَيْشُومِه
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠে এবং অযু করে, তখন তার তিনবার নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে ফেলা কর্তব্য। কারণ শায়তান তার নাকের ছিদ্র পথে রাত কাটায়। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৯৫।]
৬. কব্জি পর্যন্ত তিন বার হাত ধৌত করা :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ : إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ فِي أَنْفِهِ مَاءً ثُمَّ لْيَنْتَثِرْ، وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ، وَإِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِه فَلْيَغْسِلْ يَدَه قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَهَا فِي وَضُوئِهِ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যখন ওযু করবে তখন সে যেন তার নাকের ছিদ্রে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়। আর যে ঢিলা ব্যবহার করবে সে যেন বিজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠে, সে যেন পানির পাত্রে হাত ঢুকাবার আগে কবজি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করে নেয়। কারণ তোমাদের কেউ জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/১৬২।]
৭. ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ الله قَالَ : يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلٰى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلَاثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ مَكَانَ كُلِّ عُقْدَةٍ " عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ " - فَإِنْ اِسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ الله اِنْحَلَّتْ عُقْدَةٌ - فَإِنْ تَوَضَّأَ اِنْحَلَّتْ عُقْدَةٌ - فَإِنْ صَلّٰى اِنْحَلَّتْ عُقَدُهٗ . فَأَصْبَحَ نَشِيْطاً طَيِّبَ النَّفْسِ ، وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلَانَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নিদ্রা যায় তখন শয়তান তার মাথার শেষ প্রান্তে অর্থাৎ ঘাড়ে তিনটি গিরা দেয়। প্রত্যেকটি গিরাতেই সে ফুঁক দিয়ে বলে, এখনো অনেক রাত আছে। পরে যখন সে ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। এরপর সে ওযু করলে আরো একটি গিরা খুলে যায়। আর যখন সে সালাত আদায় করে তখন সবগুলো গিরা খুলে যায়। এভাবে সে কর্মতৎপর ও প্রফুলস্ন মনের অধিকারী হয়ে সকালে উপণীত হয়। অন্যথায় বিমর্ষ ও অলস মন নিয়ে সকালে উপনীত হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪২।]
শেষ রাতে ইবাদাত করা জান্নাতী লোকদের বিশেষ গুণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন;
﴿اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো মধ্য রাতের সালাত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, ফরয সালাতের পর সবচেয়ে উত্তম সালাত কোনটি এবং রমাযান মাসের সিয়ামের পর সবচেয়ে উত্তম সিয়াম কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো মধ্য রাতের সালাত। আর রমাযান মাসের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০১৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৪।]
তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ম :
বিতরের সালাতসহ রাতের নফলের সর্বোত্তম সংখ্যা ১১ রাকাত অথবা ১৩ রাকাআত। দীর্ঘ কেরাত ও রম্নকু-সেজদা সহকারে এ সালাত আদায় করা ভাল। রাসূল ﷺ এমনই আমল করতেন। এ সালাত ২ রাকআত করে পড়তে হয়। ফজরের সময় শুরম্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সালাত আদায় করা যায়।
রাতের নফল সালাত প্রথমে দুই রাকাত ছোট কেরাতে আদায় করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ রাতে নফল সালাত আদায় করতে উঠলে সে যেন প্রথমে সংক্ষেপে দুই রাকাত সালাত দ্বারা শুরম্ন করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৮]
তাহাজ্জুদ সালাতের বিশেষ ছানা :
তাহাজ্জুদ সালাতের বিশেষ ছানা রয়েছে। ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দন্ডায়মান হতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ قَيِّمُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ . وَلَكَ الْحَمْدُ لَكَ مُلْكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ نُوْرُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اَللّٰهُمَّ لَكَ اَسْلَمْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَاِلَيْكَ اَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَاِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ، وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ، اَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ
আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়ালাকাল হামদু লাকা মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু, আনতা নূরম্নস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি। ওয়া লাকাল হামদু, আনতা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি। ওয়া লাকাল হামদু, আনতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া‘দুকাল হাক্কু, ওয়া লিকা-উকা হাক্কুন, ওয়া ক্বাওলুকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান্না-রম্ন হাক্কুন, ওয়ান্নাবিয়য়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন। আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া ‘আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়াবিকা খা-ছামতু, ওয়া ইলাইকা হা-কামতু, ফাগফিরলী মা-ক্বাদ্দামতু ওয়া মা-আখখারতু, ওয়া মা-আসরারতু ওয়ামা আ‘লানতু, আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরম্ন। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আকাশসমূহ, পৃথিবী ও এ দু’য়ের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর ধারক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আকাশ, জমিন এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আসমান জমিনের নূর। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আসমান ও জমিনের মালিক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা আপনিই চির সত্য। আপনার অঙ্গীকার চির সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য, আপনার বাণী সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ ﷺ সত্য, কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরই ভরসা করলাম এবং আপনারই অভিমুখী হলাম। আর আমি আপনার (সন্তুষ্টির) জন্যই শত্রুতায় লিপ্ত হই, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার পূর্বের ও পরের এবং প্রকাশ্য ও গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করম্নন। আপনিই অগ্রগামী এবং পশ্চাদগামী। আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৭; নাসাঈ, হা/১৬১৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৫১।]
রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর দু‘আ কবুল হয় :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْاٰخِرُ يَقُوْلُ : مَنْ يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ مَنْ يَّسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهٗ مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগানো সুন্নাত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি রহম করম্নন, যে বান্দা রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও জাগ্রত করে। স্ত্রী যদি সালাত আদায় না করে তবে তার চেহারায় পানি ঢালে। আল্লাহ রহম করম্নন সেই মহিলার প্রতি, যে রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে এবং সে তার স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে অস্বীকার করে তবে সে তার চেহারায় পানি দেয়। [আবু দাউদ, হা/১৩০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৩৬; সহীহুল জামে, হা/৩৪৮৮।]
﴿اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো মধ্য রাতের সালাত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, ফরয সালাতের পর সবচেয়ে উত্তম সালাত কোনটি এবং রমাযান মাসের সিয়ামের পর সবচেয়ে উত্তম সিয়াম কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো মধ্য রাতের সালাত। আর রমাযান মাসের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০১৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৪।]
তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ম :
বিতরের সালাতসহ রাতের নফলের সর্বোত্তম সংখ্যা ১১ রাকাত অথবা ১৩ রাকাআত। দীর্ঘ কেরাত ও রম্নকু-সেজদা সহকারে এ সালাত আদায় করা ভাল। রাসূল ﷺ এমনই আমল করতেন। এ সালাত ২ রাকআত করে পড়তে হয়। ফজরের সময় শুরম্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সালাত আদায় করা যায়।
রাতের নফল সালাত প্রথমে দুই রাকাত ছোট কেরাতে আদায় করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ রাতে নফল সালাত আদায় করতে উঠলে সে যেন প্রথমে সংক্ষেপে দুই রাকাত সালাত দ্বারা শুরম্ন করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৮]
তাহাজ্জুদ সালাতের বিশেষ ছানা :
তাহাজ্জুদ সালাতের বিশেষ ছানা রয়েছে। ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দন্ডায়মান হতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন।
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ قَيِّمُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ . وَلَكَ الْحَمْدُ لَكَ مُلْكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ نُوْرُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اَللّٰهُمَّ لَكَ اَسْلَمْتُ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَاِلَيْكَ اَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَاِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ، وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ، اَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ
আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়ালাকাল হামদু লাকা মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু, আনতা নূরম্নস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি। ওয়া লাকাল হামদু, আনতা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি। ওয়া লাকাল হামদু, আনতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া‘দুকাল হাক্কু, ওয়া লিকা-উকা হাক্কুন, ওয়া ক্বাওলুকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান্না-রম্ন হাক্কুন, ওয়ান্নাবিয়য়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন। আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া ‘আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়াবিকা খা-ছামতু, ওয়া ইলাইকা হা-কামতু, ফাগফিরলী মা-ক্বাদ্দামতু ওয়া মা-আখখারতু, ওয়া মা-আসরারতু ওয়ামা আ‘লানতু, আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরম্ন। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আকাশসমূহ, পৃথিবী ও এ দু’য়ের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর ধারক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আকাশ, জমিন এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আসমান জমিনের নূর। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা, আপনি আসমান ও জমিনের মালিক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা আপনিই চির সত্য। আপনার অঙ্গীকার চির সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য, আপনার বাণী সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ ﷺ সত্য, কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরই ভরসা করলাম এবং আপনারই অভিমুখী হলাম। আর আমি আপনার (সন্তুষ্টির) জন্যই শত্রুতায় লিপ্ত হই, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার পূর্বের ও পরের এবং প্রকাশ্য ও গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করম্নন। আপনিই অগ্রগামী এবং পশ্চাদগামী। আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৭; নাসাঈ, হা/১৬১৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৫১।]
রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর দু‘আ কবুল হয় :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْاٰخِرُ يَقُوْلُ : مَنْ يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ مَنْ يَّسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهٗ مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগানো সুন্নাত :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি রহম করম্নন, যে বান্দা রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও জাগ্রত করে। স্ত্রী যদি সালাত আদায় না করে তবে তার চেহারায় পানি ঢালে। আল্লাহ রহম করম্নন সেই মহিলার প্রতি, যে রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে এবং সে তার স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে অস্বীকার করে তবে সে তার চেহারায় পানি দেয়। [আবু দাউদ, হা/১৩০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৩৬; সহীহুল জামে, হা/৩৪৮৮।]
প্রস্রাব-পায়খানার যখন বেগ হবে তখনই তা সেরে নেয়া উচিৎ। প্রস্রাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় পবিত্রতার উপকরণ পানি/ঢিলা/টিসু সঙ্গে নিয়ে যাবে। টয়লেটে পানি আছে কি না আগে চেক করে নেবে। আল্লাহর নাম সম্বলিত আংটি বা কুরআনের আয়াত খোলা অবস্থায় সঙ্গে নিয়ে প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশ করবে না। প্রস্রাব-পায়খানার ব্যাপারে নিম্নোক্ত সুন্নাতসমূহ মেনে চলা জরম্নরি।
১. মানুষের আড়ালে যাওয়া :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফরে বের হতাম। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ মলমূত্র ত্যাগের জন্য এত দূর যেতেন যে, তাকে কেউ দেখতে পেত না। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৫; আবু দাউদ, হা/২।]
২. চলাফেরার রাস্তায় ও ছায়াদার বা ফলদার গাছের নিচে মলমূত্র ত্যাগ না করা :
যেসব জায়গা দিয়ে মানুষ চলাফেরা করে এবং যেসব ছায়াযুক্ত গাছের নিচে লোকেরা আরাম করার জন্য বসে, সেসব গাছের নিচে প্রস্রাব-পায়খানা করবে না। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা লানতকারী দুটি কাজ থেকে দূরে থাকো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, লানতকারী দুটি জিনিস কী? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মানুষের চলাফেরার রাস্তায় অথবা তাদের (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়ায় প্রস্রাব-পায়খানা করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৪০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪১৫।]
৩. গোসলখানায় প্রস্রাব না করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে গোসলখানায় প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৯৬; আবু দাউদ, হা/২৮; নাসাঈ, হা/২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭০৫৩।]
৪. আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব না করা :
যে স্থানে পানি জমা হয়ে থাকে সেসব স্থানে প্রস্রাব করা যাবে না। হাদীসে এসেছে, জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ জমা পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮১; নাসাঈ, হা/৩৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮৫৫।]
৫. প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকা :
প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে শরীর ও কাপড় অপবিত্র না হয়। কারণ এটা কবরে শাস্তি হওয়ার কারণ। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি বললেন, কবর দুটির মধ্যে শাস্তি হচ্ছে। তবে তারা বড় কোন বিষয়ের জন্য শাস্তি ভোগ করছে না। বরং তাদের একজন এমন ছিল যে, সে প্রস্রাবে পর্দা করত না। অন্য বর্ণনায় আছে, সে প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকত না। আর অন্য জনের অভ্যাস ছিল সে চোগলখুরি করে বেড়াত। [সহীহ বুখারী, হা/২১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩; আবু দাউদ, হা/২০; তিরমিযী, হা/৭০।]
৬. দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা :
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ বলে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন, তাহলে তোমরা তা বিশ্বাস করো না। কেননা তিনি বসা ব্যতীত কখনো প্রস্রাব করেননি। [তিরমিযী, হা/১২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০১; মিশকাত, হা/৩৬৫।]
কোন ওজর থাকলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যায়। হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ কোন এক সম্প্রদায়ের ময়লা ফেলার স্থানে আসলেন। অতঃপর তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন। তারপর পানি নিয়ে আসতে বললেন। ফলে আমি তাঁর জন্য পানি নিয়ে আসলে তিনি ওযু করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৪; তিরমিযী, হা/১৩; নাসাঈ, হা/২৬।]
৭. গর্তের মধ্যে প্রস্রাব না করা :
গর্তের মধ্যে প্রস্রাব করা উচিত নয়। কেননা গর্তে সাপ-বিচ্ছু অথবা বিষাক্ত পোকামাকড় থাকতে পারে। [মাজমাউয যাওয়য়িদ হা/১১১।]
৮. প্রস্রাব-পায়খানারত অবস্থায় সালামের উত্তর না দেয়া :
এ অবস্থায় কেউ সালাম দিয়ে ফেললে পবিত্র হয়ে উত্তর দেবে। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন প্রস্রাব করছিলেন। এমতাবস্থায় সে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সালাম দিল, কিন্তু তিনি তার জবাব দিলেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৯; মু‘জামূল আওসাত, হা/১৩৫০।]
৯. প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা না বলা :
এ অবস্থায় কথা বলা উচিত নয়। তবে একান্ত জরম্নরি কথা বলা যাবে। যেমন- পানি চেয়ে নেয়া বা অনুরূপ কিছু।
১০. মলমূত্র ত্যাগ করার সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে না রাখা :
عَنْ أَبِي أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوْهَا
আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন তোমরা মলমূত্র ত্যাগ করার স্থানে যাবে; তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না এবং কিবলার দিকে পিঠও দিবে না।
আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) আরো বলেন, আমরা শাম দেশে এসে লক্ষ্য করলাম- সেখানকার টয়লেটগুলো কিবলার দিকে মুখ করে বানানো হয়েছে। তখন আমরা মলমূত্র ত্যাগের সময় একটু বাকা হয়ে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতাম। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩২; আবু দাউদ, হা/৯; তিরমিযী, হা/৮।]
১১. জমিনের কাছাকাছি যেয়ে কাপড় উঠানো :
মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসার পূর্বে কাপড় উঠানো উচিত নয়। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মলমূত্র ত্যাগের সময় জমিনের কাছাকাছি না হওয়া পর্যন্ত কাপড় উঠাতেন না। [তিরমিযী, হা/১৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৫৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১১৪৫।]
১২. টয়লেটে প্রবেশের সময় দু‘আ পড়া :
যখন কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগের ঘরে প্রবেশ করবে অথবা খোলা ময়দানে মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসতে যাবে তখন প্রথমে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলবে। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জিন ও মানুষের গোপন অঙ্গের মাঝে পর্দা হলো, যখন সে পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হ’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি। [ইবনে মাজাহ, হা/২৯৭; জামেউস সগীর, হা/৮৮৪৩।]
এরপর নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করবে।
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়ালখাবা-ইস।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অপবিত্র পুরম্নষ জিন ও মহিলা জিন হতে আশ্রয় চাচ্ছি। [সহীহ বুখারী, হা/ ১৪২, ৬৩২২; সহীহ মুসলিম, হা/ ৮৫৭; তিরমিযী, হা/৬; নাসাঈ, হা/১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪০৭; মিশকাত, হা/৩৩৭।]
১৩. মলমূত্র ত্যাগ করে বের হওয়ার পর দু‘আ পড়া :
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন প্রস্রাব-পায়খানা থেকে বের হতেন তখন বলতেন,
غُفْرَانَكَ
উচ্চারণ : গুফরা-নাকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। [তিরমিযী হা ৭; আবু দাউদ, হা/৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৩০০; মিশকাত, হা/৩৫৯।]
১. মানুষের আড়ালে যাওয়া :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফরে বের হতাম। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ মলমূত্র ত্যাগের জন্য এত দূর যেতেন যে, তাকে কেউ দেখতে পেত না। [ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৫; আবু দাউদ, হা/২।]
২. চলাফেরার রাস্তায় ও ছায়াদার বা ফলদার গাছের নিচে মলমূত্র ত্যাগ না করা :
যেসব জায়গা দিয়ে মানুষ চলাফেরা করে এবং যেসব ছায়াযুক্ত গাছের নিচে লোকেরা আরাম করার জন্য বসে, সেসব গাছের নিচে প্রস্রাব-পায়খানা করবে না। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা লানতকারী দুটি কাজ থেকে দূরে থাকো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, লানতকারী দুটি জিনিস কী? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মানুষের চলাফেরার রাস্তায় অথবা তাদের (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়ায় প্রস্রাব-পায়খানা করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৪০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪১৫।]
৩. গোসলখানায় প্রস্রাব না করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে গোসলখানায় প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৫৯৬; আবু দাউদ, হা/২৮; নাসাঈ, হা/২৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭০৫৩।]
৪. আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব না করা :
যে স্থানে পানি জমা হয়ে থাকে সেসব স্থানে প্রস্রাব করা যাবে না। হাদীসে এসেছে, জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ জমা পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮১; নাসাঈ, হা/৩৯৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮৫৫।]
৫. প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকা :
প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে শরীর ও কাপড় অপবিত্র না হয়। কারণ এটা কবরে শাস্তি হওয়ার কারণ। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি বললেন, কবর দুটির মধ্যে শাস্তি হচ্ছে। তবে তারা বড় কোন বিষয়ের জন্য শাস্তি ভোগ করছে না। বরং তাদের একজন এমন ছিল যে, সে প্রস্রাবে পর্দা করত না। অন্য বর্ণনায় আছে, সে প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকত না। আর অন্য জনের অভ্যাস ছিল সে চোগলখুরি করে বেড়াত। [সহীহ বুখারী, হা/২১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩; আবু দাউদ, হা/২০; তিরমিযী, হা/৭০।]
৬. দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা :
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ বলে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন, তাহলে তোমরা তা বিশ্বাস করো না। কেননা তিনি বসা ব্যতীত কখনো প্রস্রাব করেননি। [তিরমিযী, হা/১২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০১; মিশকাত, হা/৩৬৫।]
কোন ওজর থাকলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যায়। হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী ﷺ কোন এক সম্প্রদায়ের ময়লা ফেলার স্থানে আসলেন। অতঃপর তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন। তারপর পানি নিয়ে আসতে বললেন। ফলে আমি তাঁর জন্য পানি নিয়ে আসলে তিনি ওযু করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২২৪; তিরমিযী, হা/১৩; নাসাঈ, হা/২৬।]
৭. গর্তের মধ্যে প্রস্রাব না করা :
গর্তের মধ্যে প্রস্রাব করা উচিত নয়। কেননা গর্তে সাপ-বিচ্ছু অথবা বিষাক্ত পোকামাকড় থাকতে পারে। [মাজমাউয যাওয়য়িদ হা/১১১।]
৮. প্রস্রাব-পায়খানারত অবস্থায় সালামের উত্তর না দেয়া :
এ অবস্থায় কেউ সালাম দিয়ে ফেললে পবিত্র হয়ে উত্তর দেবে। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন প্রস্রাব করছিলেন। এমতাবস্থায় সে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সালাম দিল, কিন্তু তিনি তার জবাব দিলেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৪৯; মু‘জামূল আওসাত, হা/১৩৫০।]
৯. প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা না বলা :
এ অবস্থায় কথা বলা উচিত নয়। তবে একান্ত জরম্নরি কথা বলা যাবে। যেমন- পানি চেয়ে নেয়া বা অনুরূপ কিছু।
১০. মলমূত্র ত্যাগ করার সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে না রাখা :
عَنْ أَبِي أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوْهَا
আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন তোমরা মলমূত্র ত্যাগ করার স্থানে যাবে; তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না এবং কিবলার দিকে পিঠও দিবে না।
আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) আরো বলেন, আমরা শাম দেশে এসে লক্ষ্য করলাম- সেখানকার টয়লেটগুলো কিবলার দিকে মুখ করে বানানো হয়েছে। তখন আমরা মলমূত্র ত্যাগের সময় একটু বাকা হয়ে বসতাম এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতাম। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩২; আবু দাউদ, হা/৯; তিরমিযী, হা/৮।]
১১. জমিনের কাছাকাছি যেয়ে কাপড় উঠানো :
মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসার পূর্বে কাপড় উঠানো উচিত নয়। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মলমূত্র ত্যাগের সময় জমিনের কাছাকাছি না হওয়া পর্যন্ত কাপড় উঠাতেন না। [তিরমিযী, হা/১৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৫৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১১৪৫।]
১২. টয়লেটে প্রবেশের সময় দু‘আ পড়া :
যখন কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগের ঘরে প্রবেশ করবে অথবা খোলা ময়দানে মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসতে যাবে তখন প্রথমে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলবে। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জিন ও মানুষের গোপন অঙ্গের মাঝে পর্দা হলো, যখন সে পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হ’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি। [ইবনে মাজাহ, হা/২৯৭; জামেউস সগীর, হা/৮৮৪৩।]
এরপর নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করবে।
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়ালখাবা-ইস।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অপবিত্র পুরম্নষ জিন ও মহিলা জিন হতে আশ্রয় চাচ্ছি। [সহীহ বুখারী, হা/ ১৪২, ৬৩২২; সহীহ মুসলিম, হা/ ৮৫৭; তিরমিযী, হা/৬; নাসাঈ, হা/১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪০৭; মিশকাত, হা/৩৩৭।]
১৩. মলমূত্র ত্যাগ করে বের হওয়ার পর দু‘আ পড়া :
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন প্রস্রাব-পায়খানা থেকে বের হতেন তখন বলতেন,
غُفْرَانَكَ
উচ্চারণ : গুফরা-নাকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। [তিরমিযী হা ৭; আবু দাউদ, হা/৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৩০০; মিশকাত, হা/৩৫৯।]
প্রস্রাব-পায়খানা হতে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করা ফরয। প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন না করা কবিরা গুনাহ। এ পাপ করলে মৃত্যুর পর কবর থেকেই আযাব শুরম্ন হয়ে যাবে। ইস্তিঞ্জা করার কিছু নিয়ম রয়েছে, যা পালন করা জরম্নরি। আর তা হলো :
১. হাড্ডি ও গোবর দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করো না। কেননা তা তোমাদের ভাই জিনদের খাবার। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮২; তিরমিযী, হা/১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৩৮১।]
২. ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা :
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় ডান হাত দিয়ে পুরম্নষাঙ্গ না ধরে, পায়খানার পর ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে এবং পানি পান করার সময় পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। [সহীহ বুখারী, হা/১৫৩; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩৬।]
৩. ইস্তিঞ্জার পর মাটি অথবা সাবান বা এ জাতীয় কিছু দ্বারা হাত ধৌত করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ পায়খানায় গমন করতেন তখন আমি তার জন্য পিতল বা চামড়ার পাত্রে পানি নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি তা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন। আবু দাউদ (রহ.) বলেন, ওয়াকে (রাঃ) এর হাদীসে রয়েছে যে, অতঃপর তিনি মাটির উপর হাত মাজতেন। [আবু দাউদ, হা/৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/৬৭৮; নাসাঈ, ১/৪৫; মিশকাত, হা/৩৬০।]
৪. সন্দেহ দূর করার জন্য ওযুর পর পানি ছিটানো :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ تَوَضَّأَ مَرَّةً مَرَّةً وَنَضَحَ فَرْجَهٗ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একবার করে ওযু করতেন এবং তার লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটিয়ে দিতেন। [দারেমী, হা/৭১১; বায়হাকী, ১/১৬১।]
৫. ঢিলা ব্যবহারে লজ্জা-শরম বজায় রাখা :
অনেক লোক রয়েছেন, যারা প্রস্রাব করার পর প্রস্রাবখানা থেকে বের হয়ে লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে জনসমক্ষে হাটাহাটি ও কাশাকাশি করতে থাকেন। অনেকে আবার লজ্জাস্থান ধরে এক পায়ের উপর আরেক পা দিয়ে চাপ দেন। এগুলো অতি নির্লজ্জ কাজ। এগুলো কোনটাই সুন্নাত নয়। যদি কারো প্রস্রাবের ফোটা নির্গত হতে দেরি হয় বা সন্দেহ থাকে তবে ঐ ব্যক্তির জন্য উচিত হলো প্রস্রাবখানায় থাকা অবস্থায় একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পানি/ঢিলা/টিসু ব্যবহার করা।
১. হাড্ডি ও গোবর দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করো না। কেননা তা তোমাদের ভাই জিনদের খাবার। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮২; তিরমিযী, হা/১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৩৮১।]
২. ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা :
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় ডান হাত দিয়ে পুরম্নষাঙ্গ না ধরে, পায়খানার পর ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে এবং পানি পান করার সময় পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। [সহীহ বুখারী, হা/১৫৩; সহীহ মুসলিম, হা/৬৩৬।]
৩. ইস্তিঞ্জার পর মাটি অথবা সাবান বা এ জাতীয় কিছু দ্বারা হাত ধৌত করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ পায়খানায় গমন করতেন তখন আমি তার জন্য পিতল বা চামড়ার পাত্রে পানি নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি তা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন। আবু দাউদ (রহ.) বলেন, ওয়াকে (রাঃ) এর হাদীসে রয়েছে যে, অতঃপর তিনি মাটির উপর হাত মাজতেন। [আবু দাউদ, হা/৪৫; ইবনে মাজাহ, হা/৬৭৮; নাসাঈ, ১/৪৫; মিশকাত, হা/৩৬০।]
৪. সন্দেহ দূর করার জন্য ওযুর পর পানি ছিটানো :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ تَوَضَّأَ مَرَّةً مَرَّةً وَنَضَحَ فَرْجَهٗ
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একবার করে ওযু করতেন এবং তার লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটিয়ে দিতেন। [দারেমী, হা/৭১১; বায়হাকী, ১/১৬১।]
৫. ঢিলা ব্যবহারে লজ্জা-শরম বজায় রাখা :
অনেক লোক রয়েছেন, যারা প্রস্রাব করার পর প্রস্রাবখানা থেকে বের হয়ে লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে জনসমক্ষে হাটাহাটি ও কাশাকাশি করতে থাকেন। অনেকে আবার লজ্জাস্থান ধরে এক পায়ের উপর আরেক পা দিয়ে চাপ দেন। এগুলো অতি নির্লজ্জ কাজ। এগুলো কোনটাই সুন্নাত নয়। যদি কারো প্রস্রাবের ফোটা নির্গত হতে দেরি হয় বা সন্দেহ থাকে তবে ঐ ব্যক্তির জন্য উচিত হলো প্রস্রাবখানায় থাকা অবস্থায় একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পানি/ঢিলা/টিসু ব্যবহার করা।
পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করবে। তারপর গোসল করার সময় প্রথমে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। তারপর লজ্জাস্থান পরিষ্কার করবে। অতঃপর দু’পা ব্যতীত সালাতের ওযুর ন্যায় ওযু করবে। পরে মাথায় তিন বার পানি ঢেলে সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করবে, যাতে শরীরের কোন জায়গা শুকনো না থাকে। সব শেষে দু’পা ধৌত করবে। [সহীহ বুখারী, হা/২৪৮; আবু দাউদ, হা/২৪২।] পুরম্নষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে। মহিলাদের চুলের খোপা খোলা জরম্নরি নয়, বরং চুলের গোড়া ভিজালেই যথেষ্ট হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৭০; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/২৪৬; মিশকাত হা/৪৩৮।]
বাথরম্নমের ভেতরে যেখানে কেউ দেখতে পাবে না সেখানে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয আছে। তবে নির্জন স্থানে হলেও উলঙ্গ হয়ে গোসল না করা উচিত। সম্ভব হলে পর্দার আড়ালে গোসল করা উত্তম। হাদীসে এসেছে, মাইমূনা বিনতে হারেস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গোসলের পানি রেখে তাকে পর্দা করে দিলাম। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৯৯।]
বেগানা নারী-পুরম্নষ একসাথে মিলে গোসল করা কোনভাবেই জায়েয নয়। গোসলের পর পুনরায় ওযু করা আবশ্যক নয়। আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ জানাবাতের গোসলের পর আর ওযু করতেন না। [ইবনে মাজাহ, হা/৫৭৯; বায়হাকী, হা/৮১৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৬৪৯।]
বাথরম্নমের ভেতরে যেখানে কেউ দেখতে পাবে না সেখানে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয আছে। তবে নির্জন স্থানে হলেও উলঙ্গ হয়ে গোসল না করা উচিত। সম্ভব হলে পর্দার আড়ালে গোসল করা উত্তম। হাদীসে এসেছে, মাইমূনা বিনতে হারেস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর গোসলের পানি রেখে তাকে পর্দা করে দিলাম। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮৯৯।]
বেগানা নারী-পুরম্নষ একসাথে মিলে গোসল করা কোনভাবেই জায়েয নয়। গোসলের পর পুনরায় ওযু করা আবশ্যক নয়। আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ জানাবাতের গোসলের পর আর ওযু করতেন না। [ইবনে মাজাহ, হা/৫৭৯; বায়হাকী, হা/৮১৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/৬৪৯।]
ওযু করার সুন্নাত নিয়ম :
১. ওযুর পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নাত। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হতো, তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রত্যেক ওযুর পূর্বে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৫; সহীহ বুখারী, হা/৮৮৭, সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবু দাউদ, হা/৪৬; তিরমিযী, হা/২২; নাসাঈ, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০৭।]
২. মনে মনে ওযুর নিয়ত করবে। [সহীহ বুখারী, হা/১; আবু দাউদ, হা/২২০৩; মিশকাত, হা/১।]
৩. তারপর بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলবে। [তিরমিযী, হা/২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৭; আবু দাউদ, হা/১০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১০৬০।]
ওযুর শুরম্নতে কেবল বিসমিল্লাহ পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। এ সময় অন্য কোন দু‘আ পড়ার বর্ণনা কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। তাছাড়া ওযুতে প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু‘আ কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। ওযু শেষে সূরা কদর পাঠ করারও কোন দলীল নেই।
৪. তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে এবং আঙ্গুলসমূহ খিলাল করবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৪৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৬৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত হা/৪০৫।]
৫. তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে এবং পরে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে নাক ঝাড়বে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] তবে সিয়ামরত অবস্থায় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৬. তারপর কপালের গোড়া থেকে দু’কানের লতি হয়ে থুতনীর নীচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করবে এবং দাড়ি খিলাল করবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৫০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত, হা/৪০৫।] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুতনীর নীচে দিবে। [আবু দাউদ হা/১৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৫০; মিশকাত, হা/৪০৮।]
৭. তারপর প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০০; সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০।]
৮. তারপর পানি নিয়ে দু’হাতের ভিজা আঙ্গুলগুলো মাথার সম্মুখ হতে পেছনে ও পেছন হতে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪।] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতরের অংশ ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পেছনের অংশ মাসাহ করবে। [নাসাঈ হা/১০২; মিশকাত হা/৪১৩।]
৯. তারপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করবে [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] এবং বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭।]
১০. এভাবে ওযু শেষে বাম হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দেবে। [আবু দাউদ হা/১৬৮; নাসাঈ, হা/১৩৫; মিশকাত হা/৩৬১।]
১১. ওযু করার পর দু‘আ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করবে এবং নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে। ফলে সে যেকোন দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করতে পারবে।
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَه ، وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহ্।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ মুসলিম, হা/ ৫৭৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৫০; মিশকাত, হা/২৮৯।]
১২. বাড়ি হতে ওযু করে মসজিদে যাওয়া সুন্নাত :
বাড়ি হতে ওযু করে মসজিদে যাওয়া সুন্নাত। হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি পবত্রিতা অর্জন করে ফরজ সালাত আদায় করার জন্য মসজিদের দিকে রওয়ানা হল তার প্রতিটি কদমে একটি একটি করে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, তার জন্য একটি করে দরজা বুলন্দ হবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩০।]
১৩. ওযুর পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া :
ওযুর পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া উচিত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ একমুদ (আধাসের পরিমাণ) পরিমাণ পানি দ্বারা ওযু করতেন। [বায়হাকী, হা/৪৯০।]।
১৪. অযুর অঙ্গসমূহ ধোয়ার সময় ফরজ সীমার চেয়ে একটু বাড়িয়ে ধৌত করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ اٰثَارِ الْوُضُوْءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ
কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১৮৪, ১০৭৮৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৪৯; জামেউস সগীর, হা/৩৭৬৮; মিশকাত, হা/২৯০।]
১৫. ওযুর পর তাহিয়্যাতুল ওযুর সালাত আদায় করা সুন্নাত :
তাহিয়্যা শব্দের অর্থ হচ্ছে উপঢৌকন। ওযু করার পর ওযুর উপহার হিসেবে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করাকে তাহিয়্যাতুল ওযু বলে। এ সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে। এ আমলের প্রতিদানস্বরূপ রাসূলুল্লাহ ﷺ বিলাল (রাঃ) এর পায়ের শব্দ জান্নাতে শুনতে পান।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لِبِلَالٍ عِنْدَ صَلَاةِ الْفَجْرِ يَا بِلَالُ حَدِّثْنِيْ بِاَرْجى عَمَلٍ عَمِلْتَهٗ فِي الْاِسْلَامِ فَاِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ - قَالَ مَا عَمِلْتُ عَمَلًا اَرْجىْ عِنْدِيْ اَنِّي لَمْ اَتَطَهَّرْ طَهُوْرًا فِيْ سَاعَةِ لَيْلٍ اَوْ نَهَارٍ اِلَّا صَلَّيْتُ بِذٰلِكَ الطُّهُوْرِ مَا كُتِبَ لِيْ اَنْ اُصَلِّيَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন ফজরের সালাতের পর বেলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলামের মধ্যে তোমার এমন কী আমল আছে, যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার (চলাচলের) শব্দ পেয়েছি। বেলাল (রাঃ) বললেন, আমি তেমন কোন আমল করিনি যার আশা করতে পারি; তবে দিনে বা রাতে যখনই ওযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফীক দেন সালাত আদায় করি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৬।]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِىِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَا مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوْءَ وَيُصَلِّىْ رَكْعَتَيْنِ يُقْبِلُ بِقَلْبِه وَوَجْهِه عَلَيْهِمَا إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
উক্ববা ইবনে আমের আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযু করবে এবং তার চেহারা ও অন্তর উভয়কে আল্লাহমুখী করে দু’রাক‘আত সালাত পড়বে, তার উপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [আবু দাউদ, হা/৯০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৬; নাসাঈ, হা/১৫১।]
১. ওযুর পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নাত। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হতো, তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রত্যেক ওযুর পূর্বে মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৫; সহীহ বুখারী, হা/৮৮৭, সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবু দাউদ, হা/৪৬; তিরমিযী, হা/২২; নাসাঈ, হা/৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০৭।]
২. মনে মনে ওযুর নিয়ত করবে। [সহীহ বুখারী, হা/১; আবু দাউদ, হা/২২০৩; মিশকাত, হা/১।]
৩. তারপর بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলবে। [তিরমিযী, হা/২৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৭; আবু দাউদ, হা/১০২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/১০৬০।]
ওযুর শুরম্নতে কেবল বিসমিল্লাহ পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। এ সময় অন্য কোন দু‘আ পড়ার বর্ণনা কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। তাছাড়া ওযুতে প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু‘আ কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। ওযু শেষে সূরা কদর পাঠ করারও কোন দলীল নেই।
৪. তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে এবং আঙ্গুলসমূহ খিলাল করবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৪৪৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৬৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত হা/৪০৫।]
৫. তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে এবং পরে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে নাক ঝাড়বে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] তবে সিয়ামরত অবস্থায় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৬. তারপর কপালের গোড়া থেকে দু’কানের লতি হয়ে থুতনীর নীচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করবে এবং দাড়ি খিলাল করবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/১৫০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮৭; মিশকাত, হা/৪০৫।] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুতনীর নীচে দিবে। [আবু দাউদ হা/১৪৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/২৫০; মিশকাত, হা/৪০৮।]
৭. তারপর প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১০০; সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৫৬০।]
৮. তারপর পানি নিয়ে দু’হাতের ভিজা আঙ্গুলগুলো মাথার সম্মুখ হতে পেছনে ও পেছন হতে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪।] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতরের অংশ ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পেছনের অংশ মাসাহ করবে। [নাসাঈ হা/১০২; মিশকাত হা/৪১৩।]
৯. তারপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করবে [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] এবং বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করবে। [আবু দাউদ, হা/১৪২; তিরমিযী, হা/৭৮৮; নাসাঈ, হা/৮৭; ইবনে মাজাহ, হা/৪০৭।]
১০. এভাবে ওযু শেষে বাম হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দেবে। [আবু দাউদ হা/১৬৮; নাসাঈ, হা/১৩৫; মিশকাত হা/৩৬১।]
১১. ওযু করার পর দু‘আ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করবে এবং নিচের দু‘আটি পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে। ফলে সে যেকোন দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করতে পারবে।
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَه ، وَاَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহ্।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। [সহীহ মুসলিম, হা/ ৫৭৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২২২; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৫০; মিশকাত, হা/২৮৯।]
১২. বাড়ি হতে ওযু করে মসজিদে যাওয়া সুন্নাত :
বাড়ি হতে ওযু করে মসজিদে যাওয়া সুন্নাত। হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি পবত্রিতা অর্জন করে ফরজ সালাত আদায় করার জন্য মসজিদের দিকে রওয়ানা হল তার প্রতিটি কদমে একটি একটি করে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, তার জন্য একটি করে দরজা বুলন্দ হবে। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৩০।]
১৩. ওযুর পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া :
ওযুর পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া উচিত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ একমুদ (আধাসের পরিমাণ) পরিমাণ পানি দ্বারা ওযু করতেন। [বায়হাকী, হা/৪৯০।]।
১৪. অযুর অঙ্গসমূহ ধোয়ার সময় ফরজ সীমার চেয়ে একটু বাড়িয়ে ধৌত করা :
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ اٰثَارِ الْوُضُوْءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ
কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, অযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৬; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১৮৪, ১০৭৮৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৪৯; জামেউস সগীর, হা/৩৭৬৮; মিশকাত, হা/২৯০।]
১৫. ওযুর পর তাহিয়্যাতুল ওযুর সালাত আদায় করা সুন্নাত :
তাহিয়্যা শব্দের অর্থ হচ্ছে উপঢৌকন। ওযু করার পর ওযুর উপহার হিসেবে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করাকে তাহিয়্যাতুল ওযু বলে। এ সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে। এ আমলের প্রতিদানস্বরূপ রাসূলুল্লাহ ﷺ বিলাল (রাঃ) এর পায়ের শব্দ জান্নাতে শুনতে পান।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لِبِلَالٍ عِنْدَ صَلَاةِ الْفَجْرِ يَا بِلَالُ حَدِّثْنِيْ بِاَرْجى عَمَلٍ عَمِلْتَهٗ فِي الْاِسْلَامِ فَاِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ - قَالَ مَا عَمِلْتُ عَمَلًا اَرْجىْ عِنْدِيْ اَنِّي لَمْ اَتَطَهَّرْ طَهُوْرًا فِيْ سَاعَةِ لَيْلٍ اَوْ نَهَارٍ اِلَّا صَلَّيْتُ بِذٰلِكَ الطُّهُوْرِ مَا كُتِبَ لِيْ اَنْ اُصَلِّيَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন ফজরের সালাতের পর বেলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলামের মধ্যে তোমার এমন কী আমল আছে, যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার (চলাচলের) শব্দ পেয়েছি। বেলাল (রাঃ) বললেন, আমি তেমন কোন আমল করিনি যার আশা করতে পারি; তবে দিনে বা রাতে যখনই ওযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফীক দেন সালাত আদায় করি। [সহীহ বুখারী, হা/১১৪৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৬।]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِىِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَا مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوْءَ وَيُصَلِّىْ رَكْعَتَيْنِ يُقْبِلُ بِقَلْبِه وَوَجْهِه عَلَيْهِمَا إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
উক্ববা ইবনে আমের আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযু করবে এবং তার চেহারা ও অন্তর উভয়কে আল্লাহমুখী করে দু’রাক‘আত সালাত পড়বে, তার উপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [আবু দাউদ, হা/৯০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৬; নাসাঈ, হা/১৫১।]
১. আল্লাহর নাম স্মরণ করা :
আল্লামা নববী (রহ.) বলেছেন, ঘরে প্রবেশের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, অধিক পরিমাণে আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং ঘরে যারা রয়েছে তাদেরকে সালাম দেওয়া মুস্তাহাব। হাদীসে আছে, যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর নাম নিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করল অতঃপর খাওয়ার সময়ও আল্লাহর নাম নিল তখন শয়তান বলে, তোমাদের এখানে রাত কাটানো ও রাতের আহার করার কোন সুযোগই রইল না।’’ [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮১।]
২. ঘরে প্রবেশের সময় এ দু‘আ পড়া :
আবু মালিক আল আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে, তখন সে যেন এই দু‘আটি পাঠ করে। তারপর সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করবে।
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبَّنَا تَوَكَّلْنَا
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাল মাওলাজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি বিসমিল্লা-হি ওয়ালাজনা ওয়া ‘আলাল্লা-হি রাববানা তাওয়াক্কালনা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি প্রবেশ করার এবং বের হওয়ার কল্যাণ চাই। আল্লাহর নামেই আমরা পৌঁছি এবং আল্লাহর আমরা উপর ভরসা করি। [আবু দাঊদ, হা/৫০৯৮; জামেউস সগীর, হা/৮৪১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৫; মিশকাত, হা/২৪৪৪।]
৩. মেসওয়াক করা :
রাসূল ﷺ সর্বদা ঘরে ঢুকে প্রথমে মেসওয়াক করতেন। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বাড়িতে প্রবেশের পর প্রথমে মেসওয়াক করতেন । [ইবনে মাজাহ, হা/২৯০।]
৪. সালাম দেওয়া :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
فَاِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً
যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি অভিবাদন হিসেবে সালাম প্রদান করবে, যা আল্লাহর নিকট কল্যাণময় ও পবিত্র।
(সূরা নূর- ৬১)
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দু‘আ পড়া :
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ
বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।
অর্থ : আল্লাহর নামে বের হলাম, তাঁর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপায় ও ক্ষমতা নেই। [আবু দাঊদ, হা/৫০৯৭; তিরমিযী, হা/৩৪২৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬০৫; জামেউস সগীর, হা/৫০০; মিশকাত, হা/২৪৪২]
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই দু‘আ পাঠ করলে পাঠকারীকে বলা হয়, তুমি সঠিক পথ-নির্দেশনা পেয়েছ। তোমার জন্য এটা যথেষ্ট হয়েছে। যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে নিজেকে হেফাজত করতে পেরেছ। শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়।
আল্লামা নববী (রহ.) বলেছেন, ঘরে প্রবেশের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, অধিক পরিমাণে আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং ঘরে যারা রয়েছে তাদেরকে সালাম দেওয়া মুস্তাহাব। হাদীসে আছে, যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর নাম নিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করল অতঃপর খাওয়ার সময়ও আল্লাহর নাম নিল তখন শয়তান বলে, তোমাদের এখানে রাত কাটানো ও রাতের আহার করার কোন সুযোগই রইল না।’’ [সহীহ মুসলিম, হা/৫৩৮১।]
২. ঘরে প্রবেশের সময় এ দু‘আ পড়া :
আবু মালিক আল আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে, তখন সে যেন এই দু‘আটি পাঠ করে। তারপর সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করবে।
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبَّنَا تَوَكَّلْنَا
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাল মাওলাজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি বিসমিল্লা-হি ওয়ালাজনা ওয়া ‘আলাল্লা-হি রাববানা তাওয়াক্কালনা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি প্রবেশ করার এবং বের হওয়ার কল্যাণ চাই। আল্লাহর নামেই আমরা পৌঁছি এবং আল্লাহর আমরা উপর ভরসা করি। [আবু দাঊদ, হা/৫০৯৮; জামেউস সগীর, হা/৮৪১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৫; মিশকাত, হা/২৪৪৪।]
৩. মেসওয়াক করা :
রাসূল ﷺ সর্বদা ঘরে ঢুকে প্রথমে মেসওয়াক করতেন। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বাড়িতে প্রবেশের পর প্রথমে মেসওয়াক করতেন । [ইবনে মাজাহ, হা/২৯০।]
৪. সালাম দেওয়া :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
فَاِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلٰۤى اَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِنْدِ اللهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً
যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি অভিবাদন হিসেবে সালাম প্রদান করবে, যা আল্লাহর নিকট কল্যাণময় ও পবিত্র।
(সূরা নূর- ৬১)
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দু‘আ পড়া :
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ
বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।
অর্থ : আল্লাহর নামে বের হলাম, তাঁর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপায় ও ক্ষমতা নেই। [আবু দাঊদ, হা/৫০৯৭; তিরমিযী, হা/৩৪২৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬০৫; জামেউস সগীর, হা/৫০০; মিশকাত, হা/২৪৪২]
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই দু‘আ পাঠ করলে পাঠকারীকে বলা হয়, তুমি সঠিক পথ-নির্দেশনা পেয়েছ। তোমার জন্য এটা যথেষ্ট হয়েছে। যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে নিজেকে হেফাজত করতে পেরেছ। শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়।
১. দেরী না করে আগে আগে মসজিদে যাওয়া :
প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি লোকেরা জানত যে, আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা লটারী করে হলেও উক্ত আমলগুলো করত। আর যদি তারা জানত যে, আগে সালাতে যাওয়ার মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তাহলে তারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আগে যাওয়ার চেষ্টা করত। আর যদি লোকেরা জানত যে, এশা ও ফজরের জামাআতের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে অর্থাৎ হাত ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে হলেও মসজিদে যেত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৯; সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১০০৯।]
২. মসজিদে যাওয়ার সময় এ দু‘আ পড়া :
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি তখন এ দু‘আটি পাঠ করছিলেন।
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ فِىْ قَلْبِىْ نُوْرًا وَّ فِىْ بَصَرِىْ نُوْرًا وَّ فِىْ سَمْعِىْ نُوْرًا وَّ عَنْ يَّمِيْنِىْ نُورًا وَّ عَنْ يَّسَارِىْ نُوْرًا وَّ فَوْقِىْ نُوْرًا وَّ تَحْتِىْ نُوْرًا وَّ أَمَامِىْ نُوْرًا وَّ خَلْفِىْ نُوْرًا وَّ عَظِّمْ لِىْ نُوْرًا
আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফী ক্বালবী নূরাও ওয়াফী বাসারী নূরাও ওয়াফী সাম‘য়ী নূরাও ওয়া ‘আন ইয়ামীনী নূরাও ওয়া ‘আন ইয়াসা-রী নূরাও ওয়া ফাউক্বী নূরাও ওয়া তাহ্তী নূরাও ওয়াআমা-মী নূরাও ওয়াখালফী নূরাও ওয়া ‘আয্যিম লী নূরা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার অন্তরে, চোখে, কানে এবং আমার ডানে-বামে, উপরে-নিচে, সামনে-পেছনে নূর দান করো এবং আমাকে অধিক নূর দান করো। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; মিশকাত, হা/১১৯৫।]
৩. ধীরস্থিরভাবে মসজিদে যাওয়া :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা যখন সালাতের একামত শুনবে তখন ধীরস্থিরভাবে প্রশান্তচিত্তে সালাতের দিকে গমন করবে। তাড়াহুড়া করবে না, যতটুকু জামাআতের সাথে পাবে, তা পড়ে নিবে। আর যেটুকু ছুটে যাবে তা আদায় করে নিবে। [সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৬৪৪।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঘরে অথবা বাজারে (একা একা) সালাত আদায়ের চেয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা তোমাদের কেউ যখন অযু করে এবং ভালোভাবে অযু করে, তারপর শুধু সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে, তাহলে সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যত কদম হাঁটবে, প্রত্যেক কদমের পরিবর্তে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে আছে বলেই গণ্য হবে। আর যতক্ষণ সে অযু অবস্থায় সালাত আদায়ের স্থানে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ (তার জন্য) এ বলে দু‘আ করতে থাকে- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহমত করো।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৩৮; আবু দাউদ, হা/৫৫৯; মিশকাত, হা/৭০২।]
৪. ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।
৫. ইতেকাফের নিয়ত করা।
৬. বিসমিল্লাহ বলা।
৭. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করা।
৮. মসজিদে প্রবেশের দু‘আ পড়া।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের এ দু‘আ পাঠ করে তখন শয়তান বলে, সারাদিনের জন্য সে আমার থেকে নিরাপত্তা লাভ করল। এ দু‘আটি পড়লে কয়েকটি সুন্নাতের উপর আমল হয়ে যায়।
اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‐ بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ‐ اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
আ‘ঊযুবিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়া সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম, বিসমিল্লা-হি ওয়াসসালা-তু ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্। আল্লা-হুম্মাফ্তাহ্লী আব্ওয়া-বা রাহমাতিক।
অর্থ : আমি মহান আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে তাঁর সম্মানিত চেহারার মাধ্যমে এবং তাঁর চিরন্তন প্রতাপের মাধ্যমে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। [আবু দাঊদ, হা/৪৬৬; বায়হাকী, হা/৬৭।]
১০. প্রথমে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া :
মসজিদে ঢুকে বসার পূর্বে দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করে নিতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৭; তিরমিযী, হা/৩১৬; নাসাঈ, হা/৭৩০।]
প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি লোকেরা জানত যে, আযান দেয়া এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায়ের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা লটারী করে হলেও উক্ত আমলগুলো করত। আর যদি তারা জানত যে, আগে সালাতে যাওয়ার মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তাহলে তারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আগে যাওয়ার চেষ্টা করত। আর যদি লোকেরা জানত যে, এশা ও ফজরের জামাআতের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে অর্থাৎ হাত ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে হলেও মসজিদে যেত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৪৯; সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/১০০৯।]
২. মসজিদে যাওয়ার সময় এ দু‘আ পড়া :
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি তখন এ দু‘আটি পাঠ করছিলেন।
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ فِىْ قَلْبِىْ نُوْرًا وَّ فِىْ بَصَرِىْ نُوْرًا وَّ فِىْ سَمْعِىْ نُوْرًا وَّ عَنْ يَّمِيْنِىْ نُورًا وَّ عَنْ يَّسَارِىْ نُوْرًا وَّ فَوْقِىْ نُوْرًا وَّ تَحْتِىْ نُوْرًا وَّ أَمَامِىْ نُوْرًا وَّ خَلْفِىْ نُوْرًا وَّ عَظِّمْ لِىْ نُوْرًا
আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফী ক্বালবী নূরাও ওয়াফী বাসারী নূরাও ওয়াফী সাম‘য়ী নূরাও ওয়া ‘আন ইয়ামীনী নূরাও ওয়া ‘আন ইয়াসা-রী নূরাও ওয়া ফাউক্বী নূরাও ওয়া তাহ্তী নূরাও ওয়াআমা-মী নূরাও ওয়াখালফী নূরাও ওয়া ‘আয্যিম লী নূরা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার অন্তরে, চোখে, কানে এবং আমার ডানে-বামে, উপরে-নিচে, সামনে-পেছনে নূর দান করো এবং আমাকে অধিক নূর দান করো। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১৬; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; মিশকাত, হা/১১৯৫।]
৩. ধীরস্থিরভাবে মসজিদে যাওয়া :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা যখন সালাতের একামত শুনবে তখন ধীরস্থিরভাবে প্রশান্তচিত্তে সালাতের দিকে গমন করবে। তাড়াহুড়া করবে না, যতটুকু জামাআতের সাথে পাবে, তা পড়ে নিবে। আর যেটুকু ছুটে যাবে তা আদায় করে নিবে। [সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৬৪৪।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঘরে অথবা বাজারে (একা একা) সালাত আদায়ের চেয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা তোমাদের কেউ যখন অযু করে এবং ভালোভাবে অযু করে, তারপর শুধু সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে, তাহলে সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যত কদম হাঁটবে, প্রত্যেক কদমের পরিবর্তে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে আছে বলেই গণ্য হবে। আর যতক্ষণ সে অযু অবস্থায় সালাত আদায়ের স্থানে অবস্থান করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ (তার জন্য) এ বলে দু‘আ করতে থাকে- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি রহমত করো।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৩৮; আবু দাউদ, হা/৫৫৯; মিশকাত, হা/৭০২।]
৪. ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।
৫. ইতেকাফের নিয়ত করা।
৬. বিসমিল্লাহ বলা।
৭. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করা।
৮. মসজিদে প্রবেশের দু‘আ পড়া।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের এ দু‘আ পাঠ করে তখন শয়তান বলে, সারাদিনের জন্য সে আমার থেকে নিরাপত্তা লাভ করল। এ দু‘আটি পড়লে কয়েকটি সুন্নাতের উপর আমল হয়ে যায়।
اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‐ بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ‐ اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
আ‘ঊযুবিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজ্হিহিল কারীম, ওয়া সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম, বিসমিল্লা-হি ওয়াসসালা-তু ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্। আল্লা-হুম্মাফ্তাহ্লী আব্ওয়া-বা রাহমাতিক।
অর্থ : আমি মহান আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে তাঁর সম্মানিত চেহারার মাধ্যমে এবং তাঁর চিরন্তন প্রতাপের মাধ্যমে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। [আবু দাঊদ, হা/৪৬৬; বায়হাকী, হা/৬৭।]
১০. প্রথমে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া :
মসজিদে ঢুকে বসার পূর্বে দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করে নিতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে বসে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৭; তিরমিযী, হা/৩১৬; নাসাঈ, হা/৭৩০।]
১. বাম পা দিয়ে বের হওয়া।
২. হালাল রম্নজি উপার্জনের নিয়তে বের হওয়া।
৩. বিসমিল্লাহ বলা।
৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করা।
৫. মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ পাঠ করা।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ ‐ اَللّٰهُمَّ اَعْصِمْنِىْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
বিসমিল্লা-হি ওয়াস্সালা-তু ওয়াস্সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিক, আল্লা-হুম্মা আ‘সিম্নী মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।
অর্থ : আল্লাহর নামে বের হচ্ছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করম্নন। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৭১, ৭৭৩।]
২. হালাল রম্নজি উপার্জনের নিয়তে বের হওয়া।
৩. বিসমিল্লাহ বলা।
৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করা।
৫. মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ পাঠ করা।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ :
بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ ‐ اَللّٰهُمَّ اَعْصِمْنِىْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
বিসমিল্লা-হি ওয়াস্সালা-তু ওয়াস্সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হ্, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাযলিক, আল্লা-হুম্মা আ‘সিম্নী মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।
অর্থ : আল্লাহর নামে বের হচ্ছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করম্নন। [ইবনে মাজাহ, হা/৭৭১, ৭৭৩।]
১. আযানের জবাব দেয়া :
যখন মুয়াজ্জিন আযান দেন তখন তার মতো আযানের বাক্যগুলো বলা। অন্য বর্ণনায় ‘হাইয়া আলাস সালাহ্’ এবং ‘হাইয়া আলাল ফালাহ্’ এর স্থলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্’- বাক্য উচ্চারণ করার কথাও বলা হয়েছে। [নাসায়ী, হা/৬৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। এমন সময় সালাতের ওয়াক্ত হলে বিলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিলেন। আযান শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে আযানের শব্দগুলো বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [নাসায়ী, হা/৬৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৬; মিশকাত, হা/৬৭৬।]
২. আযানের জবাব দেওয়ার পর দরূদ পড়া :
আযানের জবাব দেওয়ার পর দরূদ পড়া সুন্নাত। দরূদে ইব্রাহিম পড়া ভাল। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শোন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে অসীলা প্রার্থনা করো। কেননা, অসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য (আমার) শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
৩. আযানের দু‘আ পড়া :
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ
আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা নিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ্।
যখন মুয়াজ্জিন আযান দেন তখন তার মতো আযানের বাক্যগুলো বলা। অন্য বর্ণনায় ‘হাইয়া আলাস সালাহ্’ এবং ‘হাইয়া আলাল ফালাহ্’ এর স্থলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্’- বাক্য উচ্চারণ করার কথাও বলা হয়েছে। [নাসায়ী, হা/৬৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। এমন সময় সালাতের ওয়াক্ত হলে বিলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিলেন। আযান শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে আযানের শব্দগুলো বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [নাসায়ী, হা/৬৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬০৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৬; মিশকাত, হা/৬৭৬।]
২. আযানের জবাব দেওয়ার পর দরূদ পড়া :
আযানের জবাব দেওয়ার পর দরূদ পড়া সুন্নাত। দরূদে ইব্রাহিম পড়া ভাল। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শোন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে অসীলা প্রার্থনা করো। কেননা, অসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য (আমার) শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৪১৮; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
৩. আযানের দু‘আ পড়া :
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ
আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা নিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ্।
عَنْ أُمِّ حَبِيْبَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ - - أَنَّهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ : مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّى لِلّٰهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيْضَةٍ إِلَّا بَنَى اللهُ لَه بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ
নবী ﷺ এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যদি কোন মুসলিম বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয সালাত ব্যতীত ১২ রাক‘আত নফল সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৯; আবু দাউদ, হা/১২৫২; তিরমিযী, হা/৪১৫।]
এ বার রাক‘আত সালাত হচ্ছে,
১. ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত।
২. যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ও পরে দু’রাক‘আত।
৩. মাগরিবের পর দু’রাক‘আত এবং
৪. এশার পর দু’রাক‘আত।
নবী ﷺ এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যদি কোন মুসলিম বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয সালাত ব্যতীত ১২ রাক‘আত নফল সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৯; আবু দাউদ, হা/১২৫২; তিরমিযী, হা/৪১৫।]
এ বার রাক‘আত সালাত হচ্ছে,
১. ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত।
২. যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ও পরে দু’রাক‘আত।
৩. মাগরিবের পর দু’রাক‘আত এবং
৪. এশার পর দু’রাক‘আত।
নফল শব্দের অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত। কিয়ামতের দিন নফল সালাত মুমিন বান্দার বিরাট উপকারে আসতে পারে। বান্দার ফরয সালাতের ভুল-ত্রুটি নফল সালাত দ্বারা পূর্ণ করে দেয়া হবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার সালাত সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার সালাত সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল সালাত আছে কি না, যদি থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী হা/৪১৩, নাসাঈ, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
ফরয ব্যতীত আরো যে সকল সালাত নবী ﷺ আদায় করতেন, আমাদেরও সেগুলোর উপর আমল করা জরম্নরি। কেননা এসব সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ رَبِيْعَةَ بْنِ كَعْبٍ اَلْاَسْلَمِىِّ قَالَ كُنْتُ اَبِيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ - - فَاَتَيْتُهٗ بِوَضُوْئِهٖ وَحَاجَتِهٖ فَقَالَ لِىْ : سَلْ . فَقُلْتُ اَسْاَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِى الْجَنَّةِ . قَالَ : اَوَغَيْرَ ذٰلِكَ . قُلْتُ هُوَ ذَاكَ . قَالَ : فَاَعِنِّىْ عَلٰى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ
রাবী‘আহ ইবনে কা‘ব আসলামী (রাঃ) বলেন, আমি একদিন নবী ﷺ এর সাথে রাত্রি যাপন করলাম। এক সময় আমি তাঁর জন্য ওযুর পানি নিয়ে আসলাম। তখন নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে কিছু চাও! আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। নবী ﷺ বললেন, অন্য কিছু চাও। আমি বললাম, এ ছাড়া অন্য কিছু চাই না। এবার নবী ﷺ বললেন, তাহলে তুমি বেশি বেশি সিজদা করে (অর্থাৎ নফল সালাত আদায় করে) আমাকে সহযোগিতা করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২২; আবু দাউদ, হা/১৩২২; নাসাঈ, হা/১১৩৮।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার সালাত সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার সালাত সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল সালাত আছে কি না, যদি থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী হা/৪১৩, নাসাঈ, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
ফরয ব্যতীত আরো যে সকল সালাত নবী ﷺ আদায় করতেন, আমাদেরও সেগুলোর উপর আমল করা জরম্নরি। কেননা এসব সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ رَبِيْعَةَ بْنِ كَعْبٍ اَلْاَسْلَمِىِّ قَالَ كُنْتُ اَبِيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ - - فَاَتَيْتُهٗ بِوَضُوْئِهٖ وَحَاجَتِهٖ فَقَالَ لِىْ : سَلْ . فَقُلْتُ اَسْاَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِى الْجَنَّةِ . قَالَ : اَوَغَيْرَ ذٰلِكَ . قُلْتُ هُوَ ذَاكَ . قَالَ : فَاَعِنِّىْ عَلٰى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ
রাবী‘আহ ইবনে কা‘ব আসলামী (রাঃ) বলেন, আমি একদিন নবী ﷺ এর সাথে রাত্রি যাপন করলাম। এক সময় আমি তাঁর জন্য ওযুর পানি নিয়ে আসলাম। তখন নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে কিছু চাও! আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। নবী ﷺ বললেন, অন্য কিছু চাও। আমি বললাম, এ ছাড়া অন্য কিছু চাই না। এবার নবী ﷺ বললেন, তাহলে তুমি বেশি বেশি সিজদা করে (অর্থাৎ নফল সালাত আদায় করে) আমাকে সহযোগিতা করো। [সহীহ মুসলিম, হা/১১২২; আবু দাউদ, হা/১৩২২; নাসাঈ, হা/১১৩৮।]
اِشْرَاقٌ (ইশরাক) অর্থ চমকিত হওয়া। আর ضُحٰى (যোহা) অর্থ সূর্য গরম হওয়া। সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পর প্রথম প্রহরের শুরম্নতে পড়লে তাকে সালাতুল ইশরাক বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে সালাতুয যোহা বা চাশতের সালাত বলা হয়। এর শেষ সময় যোহরের ১৫ মিনিট আগ পর্যন্ত।
এ সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে।
عَنْ اَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهٗ كَاَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করার পর সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত যিকিরে লিপ্ত থাকবে এবং সূর্য আলোকিত হলে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তাকে একটি পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সওয়াব দান করবেন। [তিরমিযী, হা/৫৮৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১২৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪০৩।]
عَنْ أَبِى ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ - - أَنَّهٗ قَالَ : يُصْبِحُ عَلٰى كُلِّ سُلَامٰى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيْدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيْرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوْفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذٰلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحٰى
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর সাদাকা ওয়াজিব। আর প্রত্যেকবার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল-হাম্দুলিল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা একটি সাদাকা, উত্তম কাজের নির্দেশ দেয়া একটি সাদাকা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাও একটি সাদাকা। আর এই সবকিছুর জন্য চাশ্তের দু’রাক‘আত সালাতই যথেষ্ট হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৪; আবু দাউদ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫১৩।]
ইশরাকের সালাত ২ থেকে ১২ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত সালাত পড়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭৬; আবু দাউদ, হা/১২৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৩; মিশকাত হা/১৩০৯।] এ সালাতে প্রতি দু’রাক‘আত পর পর সালাম ফিরানো উত্তম।
এ সালাতের অনেক ফযীলত রয়েছে।
عَنْ اَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتّٰى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلّٰى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهٗ كَاَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করার পর সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত যিকিরে লিপ্ত থাকবে এবং সূর্য আলোকিত হলে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তাকে একটি পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সওয়াব দান করবেন। [তিরমিযী, হা/৫৮৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৬৪; জামেউস সগীর, হা/১১২৯২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪০৩।]
عَنْ أَبِى ذَرٍّ عَنِ النَّبِىِّ - - أَنَّهٗ قَالَ : يُصْبِحُ عَلٰى كُلِّ سُلَامٰى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيْدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيْرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوْفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذٰلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحٰى
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর সাদাকা ওয়াজিব। আর প্রত্যেকবার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল-হাম্দুলিল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলা একটি সাদাকা, প্রত্যেকবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা একটি সাদাকা, উত্তম কাজের নির্দেশ দেয়া একটি সাদাকা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাও একটি সাদাকা। আর এই সবকিছুর জন্য চাশ্তের দু’রাক‘আত সালাতই যথেষ্ট হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৪; আবু দাউদ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫১৩।]
ইশরাকের সালাত ২ থেকে ১২ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত সালাত পড়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭৬; আবু দাউদ, হা/১২৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭০৩; মিশকাত হা/১৩০৯।] এ সালাতে প্রতি দু’রাক‘আত পর পর সালাম ফিরানো উত্তম।
তাওবা শব্দের অর্থ ফিরে আসা অর্থাৎ গোনাহ থেকে ফিরে আসা। মুমিন বান্দা অনেক সময় গোনাহ করে ফেলতে পারে। সেই গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করাকে সালাতুত তাওবা বলে।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, কোন লোক যদি গোনাহ করে অতঃপর উঠে পবিত্রতা অর্জন করে এবং দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। [আবু দাউদ, হা/১৫২৩; তিরমিযী, হা/৪০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭।]
তাওবার সালাতেরও বিশেষ কোন নিয়ম নেই। সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত অথবা চার রাক‘আত সালাত আদায় করবে। এ সালাতের সিজদায় ও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে নিম্নের দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করবে :
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
আস্তাগফিরম্নল্লা-হাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহ।
অর্থ : আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকট যিনি ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তাওবা করছি। [আবু দাউদ, হা/১৫১৯; তিরমিযী, হা/৩৫৭৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৮৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০০৬৩; মিশকাত, হা/২৩৫৩।]
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, কোন লোক যদি গোনাহ করে অতঃপর উঠে পবিত্রতা অর্জন করে এবং দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। [আবু দাউদ, হা/১৫২৩; তিরমিযী, হা/৪০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭।]
তাওবার সালাতেরও বিশেষ কোন নিয়ম নেই। সাধারণ সালাতের ন্যায় দু’রাক‘আত অথবা চার রাক‘আত সালাত আদায় করবে। এ সালাতের সিজদায় ও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে নিম্নের দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করবে :
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
আস্তাগফিরম্নল্লা-হাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহ।
অর্থ : আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকট যিনি ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তাওবা করছি। [আবু দাউদ, হা/১৫১৯; তিরমিযী, হা/৩৫৭৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৮৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩০০৬৩; মিশকাত, হা/২৩৫৩।]
(১) একবার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) বলা। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩২।]
(২) তিনবার اَسْتَغْفِرُ اللهَ (আসতাগ্ফিরম্নল্লা-হ) আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, বলা। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; তিরমিযী, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৬১; নাসাঈ, হা/১৩৩৭।]
(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্যালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭; তিরমিযী, হা/৩০০;।]
(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুলিস্ন শায়ইন্ ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুস্ সানা-উলহাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০।]
(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুলিস্ন শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং যা তুমি বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরম্নদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/১৫০৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪১।]
(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুলিস্ন শায়ইন্ ক্বাদীর।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরিক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এ আমলটি করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০১।]
(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
﴿اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা-তা’খুযুহূ সিনাতুঁ ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরয্। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা- বিইয্নিহ, ইয়া‘লামু মা- বাইনা আইদীহিম ওয়া মা-খাল্ফাহুম। ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশায়ইম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা- বিমা-শা-আ ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরয্, ওয়ালা-ইয়াউদুহূ হিফ্যুহুমা- ওয়া হুয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞান হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।]
(২) তিনবার اَسْتَغْفِرُ اللهَ (আসতাগ্ফিরম্নল্লা-হ) আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, বলা। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; তিরমিযী, হা/৩০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪৬১; নাসাঈ, হা/১৩৩৭।]
(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্যালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭; তিরমিযী, হা/৩০০;।]
(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুলিস্ন শায়ইন্ ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুস্ সানা-উলহাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০।]
(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুলিস্ন শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং যা তুমি বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরম্নদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/১৫০৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪১।]
(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুলিস্ন শায়ইন্ ক্বাদীর।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরিক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এ আমলটি করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০১।]
(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
﴿اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা-তা’খুযুহূ সিনাতুঁ ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরয্। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা- বিইয্নিহ, ইয়া‘লামু মা- বাইনা আইদীহিম ওয়া মা-খাল্ফাহুম। ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশায়ইম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা- বিমা-শা-আ ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরয্, ওয়ালা-ইয়াউদুহূ হিফ্যুহুমা- ওয়া হুয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞান হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।]
১. আয়াতুল কুরসি ১ বার পড়বে :
যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করবে, সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৫৪২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৭৩১।]
২. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস ৩ বার করে পড়বে :
মু‘আয ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস তিন বার করে পাঠ করো, তাহলে সবকিছু থেকে তোমাকে হেফাযত করার জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে। [তিরমিযী, হা/৩৫৭৫; আবু দাঊদ, হা/৫০৮৩।]
৩. সকালে এ গুরম্নত্বপূর্ণ দু‘আটি ১ বার পড়বে :
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ أَسْأَ لُكَ خَيْرَ هٰذَا الْيَوْمِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِى النَّارِ وَعَذَابٍ فِى الْقَبْرِ
আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ওয়ালা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকালাহ্। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুলিস্ন শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরা হা-যাল ইয়াওমি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি হা-যিহিল লাইলাতি ওয়া শাররি মা বা‘দাহা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল কিবারি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিন ফিন্না-রি ওয়া ‘আযা-বিন ফিল ক্বাবর।
অর্থ : আমরা এবং সমগ্র জগৎ আল্লাহর জন্য সকালে উপনীত হলাম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ দিনের মঙ্গল কামনা করছি, আর আমি আশ্রয় চাই এ রাতের অমঙ্গল এবং এ রাতের পরবর্তী অংশে যে অমঙ্গল রয়েছে তা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা ও বার্ধক্যের অপকারিতা হতে। হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব ও কবরের শাস্তি হতে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮২-৮৩; আবু দাঊদ, হা/৫০৭৩; মিশকাত, হা/২৩৭১; তিরমিযী, হা/৩৩৯০।]
৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ সকাল-সন্ধ্যায় এই বাক্যগুলো ছাড়তেন না :
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِىْ وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِىْ وَمَالِىْ ‐ اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِىْ وَاٰمِنْ رَوْعَتِيْ ‐ اَللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْۢ بَيْنِ يَدَيَّ ، وَمِنْ خَلْفِيْ وَعَنْ يَمِيْنِيْ وَعَنْ شِمَالِيْ وَمِنْ فَوْقِيْ ‐ وَأَعُوْذُ بِعَظْمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওয়াদুনইয়া-ইয়া ওয়া আহলী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরাতী ওয়া আ-মিন রাও‘আতী। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া ‘আন শিমা-লী ওয়া মিন ফাওক্বী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযমাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার এবং সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার দোষ-ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন এবং আমাকে ভয়ের সময় নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ! আমার সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে এবং উপর দিক থেকে আমাকে নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ! আপনার বড়ত্বের মাধ্যমে আমি নিচ দিক থেকে ধ্বংস হওয়া থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। [আবু দাঊদ, হা/৫০৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৬১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৮৫; মিশকাত, হা/২৩৯৭।]
৫. সকাল ও সন্ধ্যায় সায়্যিদুল ইস্তিগফার পড়ার ফযীলত :
শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটা হলো (সায়্যিদুল ইস্তিগফার) শ্রেষ্ঠ ক্ষমাপ্রার্থনা, যে ব্যক্তি বিশ্বাস সহকারে সকালে এটা পড়বে, সে দিনে মারা গেলে জান্নাতবাসী হয়ে মারা যাবে। আর যদি সন্ধ্যায় পড়ে, অতঃপর রাতে মারা যায় তাহলেও সে জান্নাতবাসী হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩০৬; তিরমিযী, হা/৩৩৯৩; আবু দাঊদ, হা/৫০৭২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭২; সুনানে নাসাঈ, হা/৫৫২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১১; মিশকাত, হা/২৩৩৫।]
اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ ‐ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ بِذَ ۢنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ
আল্লা-হুম্মা আনতা রাববী লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু। আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা-সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বিযামবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরম্নয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমার উপর আপনার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।
৬. অশেষ নেকীর দু‘আ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আটি পাঠ করবে, সে ১০টি দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব অর্জন করবে। আর তার জন্য ১০০টি নেকী লেখা হবে এবং তার আমলনামা থেকে ১০০টি গোনাহ মুছে ফেলা হবে। আর সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সে শয়তানের (ওয়াস্ওয়াসা) থেকে মুক্ত থাকবে এবং কিয়ামতের দিন আর কেউ তার চেয়ে উত্তম আমলসহ উপস্থিত হবে না, একমাত্র সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এ দু‘আ তার চেয়ে অধিক আমল করেছে। [(সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৮)]
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুয়া ‘আলা কুলিস্ন শায়ইন ক্বাদীর।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সমস্ত রাজত্ব তাঁর, সকল প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের উপর শক্তিশালী।
৭. ফাতেমা (রাঃ) কে নবী ﷺ এর উপদেশ :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ফাতেমা (রাঃ) কে বললেন, আমার উপদেশ মানতে তোমাকে কীসে বাধা দেয়? তুমি যখন সকালে উপনীত হবে, তখন এ দু‘আটি পাঠ করবে এবং যখন বিকালে উপনীত হবে তখনও এ দু‘আটি পাঠ করবে।
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ ‐ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهٗ، وَلَا تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنِ
ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যূমু বিরাহমাতিকা আসতাগীছ, আসলিহ লী শা’নী কুল্লাহূ, ওয়ালা- তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আই-ন।
অর্থ : হে চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব! আপনার করম্নণার মাধ্যমে আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি। আপনি আমার সকল বিষয় সমাধা করে দিন এবং আমাকে আমার নিজের উপর এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে দিয়েন না। [সুনানে নাসাঈ আল কুবরা, হা/১০৪০৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০০০।]
৮. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা খুশি হয়ে যাবেন :
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় তিন বার করে এ দু‘আ পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার উপর খুশি হয়ে যাবেন।
رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا
রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়াবিল ইসলা-মি দ্বীনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।
অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭০; তিরমিযী, হা/৩৩৮৯।]
৯. কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না :
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এ দু‘আটি তিন বার পাঠ করে, তাহলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ
বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুর্রম্ন মা‘আসমিহী শাইউন ফিলআর্যি ওয়ালা ফিস্সামা-ই ওয়াহুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।
অর্থ : ঐ আল্লাহর নামে আমি শুরম্ন করছি, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোন বস্তু ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৬২; আবু দাঊদ, হা/৫০৮৮; তিরমিযী, হা/৩৩৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৯। মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৯৫।]
১০. জাহান্নাম থেকে মুক্তি :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আটি পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা ঐ দিন তাকে এক চতুর্থাংশ মুক্তি দেবেন। আর যে ব্যক্তি এ দু‘আটি চার বার পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ দিনের সম্পূর্ণ অংশেই মুক্তি দেবেন।
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيْعَ خَلْقِكَ إِنَّكَ أَنْتَ اللهُ ‐ لَا إِلٰهَ اِلَّا أَنْتَ وَحَدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতাকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা ইন্নাকা আনতাল্লা-হ। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুকা ওয়া রাসূলুক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনাকে, আপনার আরশ বহনকারী ফেরেশতাকে, আপনার সমস্ত ফেরেশতাদেরকে এবং আপনার সকল সৃষ্টিকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, আপনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আপনি একক, আপনার কোন শরিক নেই। আর মুহাম্মাদ ﷺ আপনার বান্দা ও রাসূল। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৩৭]
যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করবে, সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৫৪২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৭৩১।]
২. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস ৩ বার করে পড়বে :
মু‘আয ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস তিন বার করে পাঠ করো, তাহলে সবকিছু থেকে তোমাকে হেফাযত করার জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে। [তিরমিযী, হা/৩৫৭৫; আবু দাঊদ, হা/৫০৮৩।]
৩. সকালে এ গুরম্নত্বপূর্ণ দু‘আটি ১ বার পড়বে :
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ أَسْأَ لُكَ خَيْرَ هٰذَا الْيَوْمِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِى النَّارِ وَعَذَابٍ فِى الْقَبْرِ
আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ওয়ালা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকালাহ্। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুলিস্ন শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরা হা-যাল ইয়াওমি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি হা-যিহিল লাইলাতি ওয়া শাররি মা বা‘দাহা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল কিবারি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিন ফিন্না-রি ওয়া ‘আযা-বিন ফিল ক্বাবর।
অর্থ : আমরা এবং সমগ্র জগৎ আল্লাহর জন্য সকালে উপনীত হলাম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ দিনের মঙ্গল কামনা করছি, আর আমি আশ্রয় চাই এ রাতের অমঙ্গল এবং এ রাতের পরবর্তী অংশে যে অমঙ্গল রয়েছে তা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা ও বার্ধক্যের অপকারিতা হতে। হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব ও কবরের শাস্তি হতে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮২-৮৩; আবু দাঊদ, হা/৫০৭৩; মিশকাত, হা/২৩৭১; তিরমিযী, হা/৩৩৯০।]
৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ সকাল-সন্ধ্যায় এই বাক্যগুলো ছাড়তেন না :
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِىْ وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِىْ وَمَالِىْ ‐ اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِىْ وَاٰمِنْ رَوْعَتِيْ ‐ اَللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْۢ بَيْنِ يَدَيَّ ، وَمِنْ خَلْفِيْ وَعَنْ يَمِيْنِيْ وَعَنْ شِمَالِيْ وَمِنْ فَوْقِيْ ‐ وَأَعُوْذُ بِعَظْمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওয়াদুনইয়া-ইয়া ওয়া আহলী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরাতী ওয়া আ-মিন রাও‘আতী। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া ‘আন শিমা-লী ওয়া মিন ফাওক্বী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযমাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার এবং সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ! আপনি আমার দোষ-ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন এবং আমাকে ভয়ের সময় নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ! আমার সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে এবং উপর দিক থেকে আমাকে নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ! আপনার বড়ত্বের মাধ্যমে আমি নিচ দিক থেকে ধ্বংস হওয়া থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। [আবু দাঊদ, হা/৫০৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৯৬১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৯০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৮৫; মিশকাত, হা/২৩৯৭।]
৫. সকাল ও সন্ধ্যায় সায়্যিদুল ইস্তিগফার পড়ার ফযীলত :
শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটা হলো (সায়্যিদুল ইস্তিগফার) শ্রেষ্ঠ ক্ষমাপ্রার্থনা, যে ব্যক্তি বিশ্বাস সহকারে সকালে এটা পড়বে, সে দিনে মারা গেলে জান্নাতবাসী হয়ে মারা যাবে। আর যদি সন্ধ্যায় পড়ে, অতঃপর রাতে মারা যায় তাহলেও সে জান্নাতবাসী হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩০৬; তিরমিযী, হা/৩৩৯৩; আবু দাঊদ, হা/৫০৭২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭২; সুনানে নাসাঈ, হা/৫৫২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১১১; মিশকাত, হা/২৩৩৫।]
اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ ‐ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ بِذَ ۢنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ
আল্লা-হুম্মা আনতা রাববী লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু। আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা-সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বিযামবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরম্নয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমার উপর আপনার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।
৬. অশেষ নেকীর দু‘আ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আটি পাঠ করবে, সে ১০টি দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব অর্জন করবে। আর তার জন্য ১০০টি নেকী লেখা হবে এবং তার আমলনামা থেকে ১০০টি গোনাহ মুছে ফেলা হবে। আর সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সে শয়তানের (ওয়াস্ওয়াসা) থেকে মুক্ত থাকবে এবং কিয়ামতের দিন আর কেউ তার চেয়ে উত্তম আমলসহ উপস্থিত হবে না, একমাত্র সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এ দু‘আ তার চেয়ে অধিক আমল করেছে। [(সহীহ মুসলিম, হা/৭০১৮)]
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুয়া ‘আলা কুলিস্ন শায়ইন ক্বাদীর।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সমস্ত রাজত্ব তাঁর, সকল প্রশংসাও তাঁর। তিনি সকল বিষয়ের উপর শক্তিশালী।
৭. ফাতেমা (রাঃ) কে নবী ﷺ এর উপদেশ :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ ফাতেমা (রাঃ) কে বললেন, আমার উপদেশ মানতে তোমাকে কীসে বাধা দেয়? তুমি যখন সকালে উপনীত হবে, তখন এ দু‘আটি পাঠ করবে এবং যখন বিকালে উপনীত হবে তখনও এ দু‘আটি পাঠ করবে।
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ ‐ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهٗ، وَلَا تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنِ
ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যূমু বিরাহমাতিকা আসতাগীছ, আসলিহ লী শা’নী কুল্লাহূ, ওয়ালা- তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আই-ন।
অর্থ : হে চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব! আপনার করম্নণার মাধ্যমে আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি। আপনি আমার সকল বিষয় সমাধা করে দিন এবং আমাকে আমার নিজের উপর এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে দিয়েন না। [সুনানে নাসাঈ আল কুবরা, হা/১০৪০৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০০০।]
৮. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা খুশি হয়ে যাবেন :
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় তিন বার করে এ দু‘আ পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার উপর খুশি হয়ে যাবেন।
رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا
রাযীতু বিল্লা-হি রাববাও ওয়াবিল ইসলা-মি দ্বীনাও ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।
অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৯৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৭০; তিরমিযী, হা/৩৩৮৯।]
৯. কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না :
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এ দু‘আটি তিন বার পাঠ করে, তাহলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ
বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুর্রম্ন মা‘আসমিহী শাইউন ফিলআর্যি ওয়ালা ফিস্সামা-ই ওয়াহুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।
অর্থ : ঐ আল্লাহর নামে আমি শুরম্ন করছি, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোন বস্তু ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৮৬২; আবু দাঊদ, হা/৫০৮৮; তিরমিযী, হা/৩৩৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮৬৯। মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৯৫।]
১০. জাহান্নাম থেকে মুক্তি :
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে এ দু‘আটি পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা ঐ দিন তাকে এক চতুর্থাংশ মুক্তি দেবেন। আর যে ব্যক্তি এ দু‘আটি চার বার পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ দিনের সম্পূর্ণ অংশেই মুক্তি দেবেন।
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيْعَ خَلْقِكَ إِنَّكَ أَنْتَ اللهُ ‐ لَا إِلٰهَ اِلَّا أَنْتَ وَحَدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতাকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা ইন্নাকা আনতাল্লা-হ। লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুকা ওয়া রাসূলুক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনাকে, আপনার আরশ বহনকারী ফেরেশতাকে, আপনার সমস্ত ফেরেশতাদেরকে এবং আপনার সকল সৃষ্টিকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, আপনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আপনি একক, আপনার কোন শরিক নেই। আর মুহাম্মাদ ﷺ আপনার বান্দা ও রাসূল। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৩৭]
রমাযান মাস ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে কিছু কিছু সিয়াম রাখার অভ্যাস থাকা খুবই উত্তম এবং বিরাট সওয়াবের কাজ। আবু উমামা (রাঃ) নবী ﷺ কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কোন (ভালো) আমলের কথা বলে দিন। নবী ﷺ বললেন,
عَلَيْكَ بِاالصَّوْمِ فَإِنَّهٗ لَاعَدْلَ لَهٗ
তুমি অবশ্যই সিয়াম রাখবে, কেননা এর সমতুল্য অন্য কিছু নেই। [নাসাঈ, হা/২২২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৩০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৮৯৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৫৩৩; জামেউস সগীর, হা/৭৪৯২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৮৬।]
রমাযান মাস ছাড়াও যে দিনগুলোতে সিয়াম রাখার বিশেষ ফযীলত রয়েছে হাদীসের প্রমাণসহ নিচে তা উলেস্নখ করা হলো :
عَلَيْكَ بِاالصَّوْمِ فَإِنَّهٗ لَاعَدْلَ لَهٗ
তুমি অবশ্যই সিয়াম রাখবে, কেননা এর সমতুল্য অন্য কিছু নেই। [নাসাঈ, হা/২২২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৩০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৮৯৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৫৩৩; জামেউস সগীর, হা/৭৪৯২; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৮৬।]
রমাযান মাস ছাড়াও যে দিনগুলোতে সিয়াম রাখার বিশেষ ফযীলত রয়েছে হাদীসের প্রমাণসহ নিচে তা উলেস্নখ করা হলো :
শাওয়াল মাসের ছয়টি সিয়াম রাখা সুন্নাত। এর অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِىِّ - - أَنَّهٗ حَدَّثَهٗ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهٗ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি রমাযান মাসে সিয়াম রাখল এবং শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি সিয়াম রাখল, সে যেন সারা বছর সিয়াম রাখল। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/২৮৭৯; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৮১১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৮০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০০৬; মিশকাত, হা/২০৪৭।]
এ হাদীসটির উপর আমল করা সকলের উচিত। একটি নেক আমলের প্রতিদানে সর্বনিম্ন দশটি নেকী দেয়া হয়। তাই রমাযানের ত্রিশটি সিয়াম ৩০০ দিন আর শাওয়ালের ৬টি সিয়াম ৬০ দিনের সমান হয়। এতে ৩৬০ দিন পূর্ণ হয়ে যায়, যা একবছরের বেশি হয়; কারণ আরবি বছর ৩৫৪ দিনে হয়ে থাকে। এ সিয়ামগুলো শাওয়াল মাসের যেকোন দিন রাখা যায়, একসাথে না রেখে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও রাখা যায়।
عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِىِّ - - أَنَّهٗ حَدَّثَهٗ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - قَالَ : مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهٗ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি রমাযান মাসে সিয়াম রাখল এবং শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি সিয়াম রাখল, সে যেন সারা বছর সিয়াম রাখল। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১৫; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/২৮৭৯; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৮১১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৮০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০০৬; মিশকাত, হা/২০৪৭।]
এ হাদীসটির উপর আমল করা সকলের উচিত। একটি নেক আমলের প্রতিদানে সর্বনিম্ন দশটি নেকী দেয়া হয়। তাই রমাযানের ত্রিশটি সিয়াম ৩০০ দিন আর শাওয়ালের ৬টি সিয়াম ৬০ দিনের সমান হয়। এতে ৩৬০ দিন পূর্ণ হয়ে যায়, যা একবছরের বেশি হয়; কারণ আরবি বছর ৩৫৪ দিনে হয়ে থাকে। এ সিয়ামগুলো শাওয়াল মাসের যেকোন দিন রাখা যায়, একসাথে না রেখে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও রাখা যায়।
দশই মুহাররম অনেক ফযীলতপূর্ণ দিন। এদিন সিয়াম রাখার ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ
রমাযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১২; আবু দাউদ, হা/২৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৪।]
নবী ﷺ আরো বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُرَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يَّكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَهٗ
আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, আশুরার সিয়াম বিগত একবছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবু দাউদ, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/৭৫২; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০১৭।]
আশুরার সিয়ামের আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে মোট দু’টি সিয়াম রাখা উত্তম।
أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ
রমাযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮১২; আবু দাউদ, হা/২৪৩১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১১৩৪।]
নবী ﷺ আরো বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُرَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يَّكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَهٗ
আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, আশুরার সিয়াম বিগত একবছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবু দাউদ, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/৭৫২; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০১৭।]
আশুরার সিয়ামের আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে মোট দু’টি সিয়াম রাখা উত্তম।
প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের সিয়ামকে আইয়ামে বীযের সিয়াম বলা হয়। এ সিয়ামের অনেক গুরম্নত্ব রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ আবু যর (রাঃ) কে বললেন,
يَا أَبَا ذَرِّ إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصُمْ ثَلَاثَ عَشَرَةَ وَأَرْبَعَ عَشَرَةَ وَخَمْسَ عَشَرَةَ
হে আবু যর! তুমি যখন প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম রাখবে তখন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম রাখো। [তিরমিযী, হা/৭৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২১২৮; বায়হাকী, হা/৮২২৮; জামেউস সগীর, হা/৬৭৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৩৮; মিশকাত, হা/২০৫৭।]
আবু যর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম রাখল সে যেন সারা বছরই সিয়াম রাখল। এর সত্যতা স্বরূপ তিনি আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের এ আয়াতটি পাঠ করেন,
﴿مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشْرُ أَمْثَالِهَا﴾
যে ব্যক্তি একটি নেক আমল করবে এর বিনিময়ে সে দশটি নেকী পাবে।
(সূরা আনআম- ১৬০)
একদিন দশদিনের সমান এবং তিনদিন এক মাসের সমান। এভাবে প্রতি মাসে তিনটি সিয়াম রাখলে পূর্ণ বছর সিয়াম রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
يَا أَبَا ذَرِّ إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصُمْ ثَلَاثَ عَشَرَةَ وَأَرْبَعَ عَشَرَةَ وَخَمْسَ عَشَرَةَ
হে আবু যর! তুমি যখন প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম রাখবে তখন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম রাখো। [তিরমিযী, হা/৭৬১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২১২৮; বায়হাকী, হা/৮২২৮; জামেউস সগীর, হা/৬৭৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৩৮; মিশকাত, হা/২০৫৭।]
আবু যর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম রাখল সে যেন সারা বছরই সিয়াম রাখল। এর সত্যতা স্বরূপ তিনি আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের এ আয়াতটি পাঠ করেন,
﴿مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشْرُ أَمْثَالِهَا﴾
যে ব্যক্তি একটি নেক আমল করবে এর বিনিময়ে সে দশটি নেকী পাবে।
(সূরা আনআম- ১৬০)
একদিন দশদিনের সমান এবং তিনদিন এক মাসের সমান। এভাবে প্রতি মাসে তিনটি সিয়াম রাখলে পূর্ণ বছর সিয়াম রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
আরাফার দিন তথা যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের সিয়ামের গুরম্নত্ব অপরিসীম। এ সম্পর্কে নবী ﷺ বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّيْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَهٗ وَالسَّنَةَ الَّتِيْ بَعْدَهٗ
আমি ধারণা করি যে, আরাফার দিনের সিয়াম গত বছর ও আগামী এক বছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; তিরমিযী, হা/৭৪৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২০৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০১০; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৯০; মিশকাত, হা/২০৪৪।]
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّيْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَهٗ وَالسَّنَةَ الَّتِيْ بَعْدَهٗ
আমি ধারণা করি যে, আরাফার দিনের সিয়াম গত বছর ও আগামী এক বছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; তিরমিযী, হা/৭৪৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২০৭৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০১০; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৯০; মিশকাত, হা/২০৪৪।]
সপ্তাহে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সিয়াম রাখার অনেক ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবার ও বৃহস্পতিবারের সিয়ামকে খুবই গুরম্নত্ব দিতেন। তিনি বলতেন,
تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الْإِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُّعْرَضَ عَمَلِيْ وَأَنَا صَائِمٌ
সোমবার ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমলসমূহ আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। তাই আমি এটা পছন্দ করি যে, সিয়াম অবস্থায় আমার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হোক। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭১১; তিরমিযী, হা/৭৪৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৯৯; জামেউস সগীর, হা/৫২৭০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৪১; মিশকাত, হা/২০৫৬।]
আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবার ও বৃহস্পতিবারের সিয়ামকে খুবই গুরম্নত্ব দিতেন। তিনি বলতেন,
تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الْإِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُّعْرَضَ عَمَلِيْ وَأَنَا صَائِمٌ
সোমবার ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমলসমূহ আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। তাই আমি এটা পছন্দ করি যে, সিয়াম অবস্থায় আমার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হোক। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭১১; তিরমিযী, হা/৭৪৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৭৯৯; জামেউস সগীর, হা/৫২৭০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০৪১; মিশকাত, হা/২০৫৬।]
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
﴿إنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبيِّ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা রহমত বর্ষণ করেন রাসূলের প্রতি। সুতরাং হে ঈমানদারগণ! তোমরা রাসূলের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করো। (সূরা আহযাব- ৫৬)
১ বার দরূদ পাঠ করলে ১০টি রহমত নাযিল হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর এক বার দরূদ পাঠ করে, এর প্রতিদানে আল্লাহ তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাঊদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৬০; জামেউস সগীর, হা/৬১৫; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে আমার উপর ১ বার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর ১০টি রহমত নাযিল করবেন, তার ১০টি গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তার জন্য ১০টি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। [নাসাঈ, হা/১২৯৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৫৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৩৬০; জামেউস সগীর, হা/১১৩০৫; মিশকাত, হা/৯২২।]
জুমু‘আর দিন বেশি বেশি দরূদ পড়ার ফযীলত। আওস ইবনে আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আর দিনটি হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম। কাজেই তোমরা ঐ দিন আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করো। কারণ আমার নিকট তোমাদের দরূদগুলো উপস্থাপন করা হয়। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট আমাদের দরূদ কীভাবে উপস্থাপন করা হবে, আপনিতো তখন মাটির সাথে মিশে যাবেন? জবাবে তিনি বললেন, আল্লাহ নবীদের শরীরকে জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন অর্থাৎ মাটি কখনো নবীদের শরীর খেতে পারে না। [আবু দাঊদ, হা/১০৪৯, ১৫৩৩; নাসাঈ, হা/১৩৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬২০৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৩৩; দারেমী, হা/১৬১৩; জামেউস সগীর, হা/৩৯৭৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৫২৭; মিশকাত, হা/১৩৬১।]
কয়েকটি দরূদে ইবরাহীম :
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
আল্লা-হুম্মা সালিস্ন ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করম্নন, যেমনিভাবে আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করম্নন, যেমনিভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৮৭২৪; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৭৪৫; মিশকাত, হা/৯১৯।]
একটি ছোট দরূদ :
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ
আল্লা-হুম্মা সালিস্ন ‘আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করম্নন। [আবু দাউদ, হা/৯৮৩]
﴿إنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبيِّ يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা রহমত বর্ষণ করেন রাসূলের প্রতি। সুতরাং হে ঈমানদারগণ! তোমরা রাসূলের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করো। (সূরা আহযাব- ৫৬)
১ বার দরূদ পাঠ করলে ১০টি রহমত নাযিল হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর এক বার দরূদ পাঠ করে, এর প্রতিদানে আল্লাহ তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাঊদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৬৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৬০; জামেউস সগীর, হা/৬১৫; মিশকাত, হা/৬৫৭।]
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে আমার উপর ১ বার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর ১০টি রহমত নাযিল করবেন, তার ১০টি গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তার জন্য ১০টি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। [নাসাঈ, হা/১২৯৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৫৯; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৩৬০; জামেউস সগীর, হা/১১৩০৫; মিশকাত, হা/৯২২।]
জুমু‘আর দিন বেশি বেশি দরূদ পড়ার ফযীলত। আওস ইবনে আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আর দিনটি হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম। কাজেই তোমরা ঐ দিন আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ করো। কারণ আমার নিকট তোমাদের দরূদগুলো উপস্থাপন করা হয়। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট আমাদের দরূদ কীভাবে উপস্থাপন করা হবে, আপনিতো তখন মাটির সাথে মিশে যাবেন? জবাবে তিনি বললেন, আল্লাহ নবীদের শরীরকে জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন অর্থাৎ মাটি কখনো নবীদের শরীর খেতে পারে না। [আবু দাঊদ, হা/১০৪৯, ১৫৩৩; নাসাঈ, হা/১৩৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১০৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬২০৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭৩৩; দারেমী, হা/১৬১৩; জামেউস সগীর, হা/৩৯৭৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৫২৭; মিশকাত, হা/১৩৬১।]
কয়েকটি দরূদে ইবরাহীম :
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
আল্লা-হুম্মা সালিস্ন ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করম্নন, যেমনিভাবে আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করম্নন, যেমনিভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৮৭২৪; মুসনাদে হুমাইদী, হা/৭৪৫; মিশকাত, হা/৯১৯।]
একটি ছোট দরূদ :
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ
আল্লা-হুম্মা সালিস্ন ‘আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করম্নন। [আবু দাউদ, হা/৯৮৩]
১. আল্লাহর সাথে সর্বদা সম্পর্ক রাখাই প্রকৃত জীবন। বিপদ-আপদ, সুস্থ-অসুস্থ সকল অবস্থায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনার মধ্যেই রয়েছে মুক্তি। আল্লাহর নৈকট্য লাভের মধ্যেই রয়েছে তাঁর সন্তুষ্টি ও সফলতা। আর আল্লাহ তা‘আলা হতে দূরে থাকা ভ্রষ্টতা ও উভয় জাহানে নিজেকে সমূহ ক্ষতির দিকে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। আবদুল্লাহ ইবনে বুস্র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ইসলামের হুকুম-আহকাম অধিক হয়ে গেছে। কাজেই আপনি আমাকে এমন একটি বিষয় বলে দিন, যেটাকে আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরব। তিনি বললেন, তোমার জিহবা যেন সর্বক্ষণ আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকে। [তিরমিযী, হা/৩৩৭৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩৭৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭১৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮২২; বায়হাকী, হা/৬৩১৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৯১; জামেউস সগীর, হা/১৩৫৬৮; মিশকাত, হা/২২৭৯।]
২. মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্যকারী বস্তুই হল আল্লাহর যিকির। মুমিন বান্দা আল্লাহর যিকির করে আর মুনাফিক আল্লাহর যিকির করে না।
৩. শয়তান কোন মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তবে যখন মানুষ আল্লাহর যিকির হতে গাফেল হয় তখন মানুষকে শয়তান বিপথগামী করে।
৪. ইহকাল ও পরকালের সৌভাগ্য অর্জনের পথ হল আল্লাহর যিকির।
৫. যিকিরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এটি সদা-সর্বদা করার সুযোগ রয়েছে। জান্নাতবাসী কোন কিছুর জন্যই আফসোস করবে না; তবে সে সময়টুকুর জন্য আফসোস করবে, যে সময়টুকু তাদের দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর যিকির ছাড়া কেটেছে। সদা সর্বদা যিকির করা মানে সদা-সর্বদা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।
ঋতুবতী মহিলা ও প্রসূতি নারী এবং যাদের উপর গোসল ফরয হয়েছে অথবা ওযুর প্রয়োজন হয়েছে তাদের সবার জন্য চুপে চুপে অথবা আওয়াজ করে আল্লাহর যিকির বা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর দরূদ পড়তে পারেন। এমনকি দু‘আও করতে পারবেন।
আল্লাহর ইবাদাতের মূল ভিত্তিই হল যিকির। কেননা সবসময় ও সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের পরিচয় হল যিকির। আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার যিকির করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১৭, ৩৭৩।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার সম্বন্ধে যে রকম ধারণা করে, আমি ঠিক সে রকম। সে যখন আমাকে স্মরণ করে, তখন আমি তার সাথে থাকি। সে যদি মনে মনে আমাকে স্মরণ করে, আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি। আর সে যদি কোন মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি, অর্থাৎ ফেরেশতাদের মজলিসে। আর বান্দা যদি আমার দিকে এক বিগত পরিমাণ অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। আর বান্দা যদি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই। আর বান্দা যদি আমার দিকে হেটে অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮১, ৭০০৮, ৭১২৮; তিরমিযী, হা/৩৬০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪১৬; মিশকাত, হা/২২৬৪।]
পৃথিবীর রাজা বাদশাদের কেউ যদি কোন মানুষের কথা তার রাজদরবারে আলোচনা করে এবং তার প্রশংসা করে, তাহলে সে সীমাহীন খুশি হয়, তাহলে যিনি মালিকুলমুলক, রাজাধিরাজ তিনি যদি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম দরবারে কারো প্রশংসাসূচক আলোচনা করেন তাহলে তার খুশির কি কোন সীমা থাকার কথা?
২. মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্যকারী বস্তুই হল আল্লাহর যিকির। মুমিন বান্দা আল্লাহর যিকির করে আর মুনাফিক আল্লাহর যিকির করে না।
৩. শয়তান কোন মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তবে যখন মানুষ আল্লাহর যিকির হতে গাফেল হয় তখন মানুষকে শয়তান বিপথগামী করে।
৪. ইহকাল ও পরকালের সৌভাগ্য অর্জনের পথ হল আল্লাহর যিকির।
৫. যিকিরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এটি সদা-সর্বদা করার সুযোগ রয়েছে। জান্নাতবাসী কোন কিছুর জন্যই আফসোস করবে না; তবে সে সময়টুকুর জন্য আফসোস করবে, যে সময়টুকু তাদের দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর যিকির ছাড়া কেটেছে। সদা সর্বদা যিকির করা মানে সদা-সর্বদা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।
ঋতুবতী মহিলা ও প্রসূতি নারী এবং যাদের উপর গোসল ফরয হয়েছে অথবা ওযুর প্রয়োজন হয়েছে তাদের সবার জন্য চুপে চুপে অথবা আওয়াজ করে আল্লাহর যিকির বা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর দরূদ পড়তে পারেন। এমনকি দু‘আও করতে পারবেন।
আল্লাহর ইবাদাতের মূল ভিত্তিই হল যিকির। কেননা সবসময় ও সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের পরিচয় হল যিকির। আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার যিকির করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১১৭, ৩৭৩।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার সম্বন্ধে যে রকম ধারণা করে, আমি ঠিক সে রকম। সে যখন আমাকে স্মরণ করে, তখন আমি তার সাথে থাকি। সে যদি মনে মনে আমাকে স্মরণ করে, আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি। আর সে যদি কোন মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি, অর্থাৎ ফেরেশতাদের মজলিসে। আর বান্দা যদি আমার দিকে এক বিগত পরিমাণ অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। আর বান্দা যদি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই। আর বান্দা যদি আমার দিকে হেটে অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। [সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৯৮১, ৭০০৮, ৭১২৮; তিরমিযী, হা/৩৬০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪১৬; মিশকাত, হা/২২৬৪।]
পৃথিবীর রাজা বাদশাদের কেউ যদি কোন মানুষের কথা তার রাজদরবারে আলোচনা করে এবং তার প্রশংসা করে, তাহলে সে সীমাহীন খুশি হয়, তাহলে যিনি মালিকুলমুলক, রাজাধিরাজ তিনি যদি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম দরবারে কারো প্রশংসাসূচক আলোচনা করেন তাহলে তার খুশির কি কোন সীমা থাকার কথা?
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এ তাসবীহটি পাঠ করা আমার নিকট পৃথিবীর সকল বস্তুর চেয়ে অধিক প্রিয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭২৪, ৭০২২; তিরমিযী, হা/৩৫৯৭; মিশকাত, হা/২২৯৫।]
سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ، وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ ، وَاللهُ أكْبَرُ
সুবহা-নাল্লা-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়।
২. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটা হলো সবচেয়ে উত্তম যিকির হচ্ছে لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। [তিরমিযী, হা/৩৩৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮০০; মিশকাত, হা/২৩০৬।]
৩. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এমন দু’টি বাক্য রয়েছে, যা মুখে বলতে হালকা (সহজে উচ্চারণ করা যায়) কিন্তু পাল্লায় (ওজনে) ভারী এবং আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয়। বাক্যগুলো হলো,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম।
অর্থ : আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার প্রশংসার সাথে, তিনি পবিত্র ও মহান। [সহীহ বুখারীর সর্বশেষ হাদীস, মুসলিম হা/৭০২১; তিরমিযী, হা/৩৪৬৭; মিশকাত, হা/২২৯৮।]
আল্লাহর মহত্ত্ব উপলদ্ধি না করে, উদাসীন হয়ে কোন শব্দ বা বাক্যকে বারবার মুখে উচ্চারণ করার নাম যিকির নয়; বরং মৌখিক যিকিরের সাথে সাথে তার অর্থের প্রতি ধ্যান-খেয়াল করাও আবশ্যক। যাতে উক্ত যিকিরের প্রভাব অন্তরে প্রতিফলিত হয়।
سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ، وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ ، وَاللهُ أكْبَرُ
সুবহা-নাল্লা-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার।
অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়।
২. জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এটা হলো সবচেয়ে উত্তম যিকির হচ্ছে لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। [তিরমিযী, হা/৩৩৮৩; ইবনে মাজাহ, হা/৩৮০০; মিশকাত, হা/২৩০৬।]
৩. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এমন দু’টি বাক্য রয়েছে, যা মুখে বলতে হালকা (সহজে উচ্চারণ করা যায়) কিন্তু পাল্লায় (ওজনে) ভারী এবং আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয়। বাক্যগুলো হলো,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম।
অর্থ : আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার প্রশংসার সাথে, তিনি পবিত্র ও মহান। [সহীহ বুখারীর সর্বশেষ হাদীস, মুসলিম হা/৭০২১; তিরমিযী, হা/৩৪৬৭; মিশকাত, হা/২২৯৮।]
আল্লাহর মহত্ত্ব উপলদ্ধি না করে, উদাসীন হয়ে কোন শব্দ বা বাক্যকে বারবার মুখে উচ্চারণ করার নাম যিকির নয়; বরং মৌখিক যিকিরের সাথে সাথে তার অর্থের প্রতি ধ্যান-খেয়াল করাও আবশ্যক। যাতে উক্ত যিকিরের প্রভাব অন্তরে প্রতিফলিত হয়।
একজন মুমিনের জীবনে আল্লাহর নেয়ামত নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার সুযোগ সর্বক্ষণই বিরাজমান। বহু ক্ষেত্রে, বহু স্থানে, বহু পরিস্থিতিতে, বহু পর্যায়ে সে আল্লাহর নেয়ামত লাভ করে এবং এমন সব নেয়ামত লাভ করে যার কোন শেষ নেই। আমাদের জন্য আবশ্যক হল, তাঁর নেয়ামতের ব্যাপারে চিন্তা-ফিকির করা, তাঁর প্রশংসা করা এবং তাঁর শোকর আদায় করা।
আপনি যখন মসজিদের দিকে যান তখন আপনার এ যাওয়াটা একটা নেয়ামত। কারণ আপনার পাশের লোকটিকে দেখতে পাচ্ছেন যে, সে এই নেয়ামত হতে বঞ্চিত। বিশেষ করে ফজরের সালাতের সময়, আপনার আশ-পাশের মানুষগুলো মরা মানুষের মত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আর আল্লাহ তাআলা আপনাকে মসজিদে যাওয়ার নেয়ামত দান করেছেন।
আপনি রাস্তায় চলছেন, তখন অতি সুন্দর সুশোভিত দৃশ্য দেখে কি আল্লাহর নেয়ামত উপলব্ধি করবেন না? আপনি চলন্ত অবস্থায় দেখছেন যে, অমুক ব্যক্তির গাড়ি উল্টে গেছে আর আপনি নিরাপদ। এমন মহান নেয়ামত নিয়ে একটু ভেবে দেখুন তো!
আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তো সে-ই, যার অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের স্মরণ সর্বদা বিরাজমান। চাই সে সুস্থ থাকুক বা অসুস্থ, বিপদগ্রস্থ বা বিপদমুক্ত।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোন বিপদগ্রস্থ মানুষকে দেখলে বলবে, আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা যিনি তোমাকে যে বিপদে পরীক্ষা করছেন ঐ বিপদ হতে আমাকে পূর্ণ সুস্থ রেখেছেন এবং তার বহুসংখ্যক সৃষ্টির মধ্যে হতে আমাকে (সুস্বাস্থ্যের) নেয়ামতের জন্য প্রাধান্য দিয়েছেন। রাসূল ﷺ বলেন, এই দু‘আ পাঠকারী ব্যক্তি কখনো এমন বিপদে আক্রান্ত হবে না। [তিরমিযী, হা/ ৩৪৩২।]
আপনি যখন মসজিদের দিকে যান তখন আপনার এ যাওয়াটা একটা নেয়ামত। কারণ আপনার পাশের লোকটিকে দেখতে পাচ্ছেন যে, সে এই নেয়ামত হতে বঞ্চিত। বিশেষ করে ফজরের সালাতের সময়, আপনার আশ-পাশের মানুষগুলো মরা মানুষের মত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আর আল্লাহ তাআলা আপনাকে মসজিদে যাওয়ার নেয়ামত দান করেছেন।
আপনি রাস্তায় চলছেন, তখন অতি সুন্দর সুশোভিত দৃশ্য দেখে কি আল্লাহর নেয়ামত উপলব্ধি করবেন না? আপনি চলন্ত অবস্থায় দেখছেন যে, অমুক ব্যক্তির গাড়ি উল্টে গেছে আর আপনি নিরাপদ। এমন মহান নেয়ামত নিয়ে একটু ভেবে দেখুন তো!
আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তো সে-ই, যার অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের স্মরণ সর্বদা বিরাজমান। চাই সে সুস্থ থাকুক বা অসুস্থ, বিপদগ্রস্থ বা বিপদমুক্ত।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোন বিপদগ্রস্থ মানুষকে দেখলে বলবে, আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা যিনি তোমাকে যে বিপদে পরীক্ষা করছেন ঐ বিপদ হতে আমাকে পূর্ণ সুস্থ রেখেছেন এবং তার বহুসংখ্যক সৃষ্টির মধ্যে হতে আমাকে (সুস্বাস্থ্যের) নেয়ামতের জন্য প্রাধান্য দিয়েছেন। রাসূল ﷺ বলেন, এই দু‘আ পাঠকারী ব্যক্তি কখনো এমন বিপদে আক্রান্ত হবে না। [তিরমিযী, হা/ ৩৪৩২।]
নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘দু‘আই হচ্ছে ইবাদাত।’’ [আবু দাঊদ হা/১৪৮১, তিরমিযী হা/২৯৬৯।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘আল্লাহর কাছে দু‘আর চেয়ে অধিক সম্মানজনক আর কোন জিনিস নেই।’’ [তিরমিযী হা/৩৩৭০।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘যে আল্লাহর কাছে চায় না আল্লাহ তার প্রতি রাগ করেন।’’ [তিরমিযী হা/৩৩৭৩।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলমানের দু‘আ যদি পাপ কাজ ও রক্তসম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য না হয়, তবে তার দু‘আর কারণে নিচের তিনটির একটি ফল অবশ্যই আল্লাহ তাকে দান করবেন :
ক. হয় দুনিয়াতেই তার চাওয়া বস্তু তাকে দিয়ে দেবেন,
খ. নয়তো পরকালে তাকে এর প্রতিদান দেবেন,
গ. অথবা তার থেকে অনুরূপ কোন অমঙ্গল দূর করে দেবেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বক্তব্য শুনে সাহাবীগণ বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি দু‘আ করব। নবী করীম ﷺ বললেন, আল্লাহ আরো অধিক দান করবেন। [মুসনাদে আহমাদ হা/১০৭৪৯]
শেষ রাত্রের দু‘আ আল্লাহ কবুল করেন। রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُوْلُ : مَنْ يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ مَنْ يَّسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهٗ مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘আল্লাহর কাছে দু‘আর চেয়ে অধিক সম্মানজনক আর কোন জিনিস নেই।’’ [তিরমিযী হা/৩৩৭০।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘যে আল্লাহর কাছে চায় না আল্লাহ তার প্রতি রাগ করেন।’’ [তিরমিযী হা/৩৩৭৩।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন মুসলমানের দু‘আ যদি পাপ কাজ ও রক্তসম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য না হয়, তবে তার দু‘আর কারণে নিচের তিনটির একটি ফল অবশ্যই আল্লাহ তাকে দান করবেন :
ক. হয় দুনিয়াতেই তার চাওয়া বস্তু তাকে দিয়ে দেবেন,
খ. নয়তো পরকালে তাকে এর প্রতিদান দেবেন,
গ. অথবা তার থেকে অনুরূপ কোন অমঙ্গল দূর করে দেবেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বক্তব্য শুনে সাহাবীগণ বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি দু‘আ করব। নবী করীম ﷺ বললেন, আল্লাহ আরো অধিক দান করবেন। [মুসনাদে আহমাদ হা/১০৭৪৯]
শেষ রাত্রের দু‘আ আল্লাহ কবুল করেন। রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُوْلُ : مَنْ يَّدْعُوْنِي فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ مَنْ يَّسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهٗ مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৪৯৮; সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮।]
যদি চোখের পানি ফেলে বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চায়, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তার দিকে মনোযোগ দেন। বান্দা যখন তার কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য অথবা বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, তখন আল্লাহর রহমত তার দিকে অগ্রসর হয়। রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না- যে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, যেভাবে সম্ভব নয় দুধকে তার স্তনে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া। আর আল্লাহর রাস্তার ধূলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না।’’ [তিরমিযী, হা/১৬৩৯; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৯৫; তাবারানী, হা/১০০৩; মিশকাত, হা/৩৮২৯।]
রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি হচ্ছে, যে নির্জনে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে এবং তার দু‘চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।’’ [মুসলিম হা/২৪২৭।]
পাপের জন্য ক্রন্দন করার মধ্যে নাজাত নিহিত। উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূল ﷺ কে বললাম, নাজাতের পথ কী? তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার জিহবাকে আয়ত্তে রাখবে, যেন তা তোমার বিরম্নদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ না পায়, তোমার অবস্থান যেন তোমার গৃহে থাকে এবং তুমি তোমার পাপের জন্য কান্নাকাটি করতে থাক।’’ [তিরমিযী, হা/২৪০৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৬৯৮; মিশকাত, হা/৪৮৩৭।]
রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি হচ্ছে, যে নির্জনে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে এবং তার দু‘চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।’’ [মুসলিম হা/২৪২৭।]
পাপের জন্য ক্রন্দন করার মধ্যে নাজাত নিহিত। উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূল ﷺ কে বললাম, নাজাতের পথ কী? তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার জিহবাকে আয়ত্তে রাখবে, যেন তা তোমার বিরম্নদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ না পায়, তোমার অবস্থান যেন তোমার গৃহে থাকে এবং তুমি তোমার পাপের জন্য কান্নাকাটি করতে থাক।’’ [তিরমিযী, হা/২৪০৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৬৯৮; মিশকাত, হা/৪৮৩৭।]
সুযোগ পেলেই মানুষকে নম্রতা ও বিনয়ের সাথে ভাল কাজের প্রতি উৎসাহ দেবে এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَا إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ﴾
ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে? যে আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয় এবং নিজেও নেক আমল করে। আর সে বলে, আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন।’’ (সূরা হামীম সিজদা- ৩৩)
রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে তখন সে যেন স্বহস্তে তা প্রতিহত করে। যদি সে এতে সক্ষম না হয় তবে সে যেন মুখ দ্বারা যেন তার প্রতিবাদ করে। আর যদি সে এটাও না করতে পারে, তবে সে যেন অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করে। আর এটাই হল ঈমানের দুর্বলতম স্তর।’’ [মুসলিম, হা/১৮৬, মিশকাত, হা/ ৫১৩৭।]
পরকালে মুক্তির জন্য কেবল নিজের কর্ম সংশোধিত হওয়াই যথেষ্ট নয়। অপরের কল্যাণের চিন্তা করাও জরম্নরি। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কুকর্ম থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা নিজের মুক্তির পথ বন্ধ করার নামান্তর। এ ব্যাপারে সাধারণ মুসলমান এমনকি অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি পর্যন্তও উদাসীন।
﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَا إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ﴾
ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে? যে আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয় এবং নিজেও নেক আমল করে। আর সে বলে, আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন।’’ (সূরা হামীম সিজদা- ৩৩)
রাসূল ﷺ বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে তখন সে যেন স্বহস্তে তা প্রতিহত করে। যদি সে এতে সক্ষম না হয় তবে সে যেন মুখ দ্বারা যেন তার প্রতিবাদ করে। আর যদি সে এটাও না করতে পারে, তবে সে যেন অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করে। আর এটাই হল ঈমানের দুর্বলতম স্তর।’’ [মুসলিম, হা/১৮৬, মিশকাত, হা/ ৫১৩৭।]
পরকালে মুক্তির জন্য কেবল নিজের কর্ম সংশোধিত হওয়াই যথেষ্ট নয়। অপরের কল্যাণের চিন্তা করাও জরম্নরি। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কুকর্ম থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা নিজের মুক্তির পথ বন্ধ করার নামান্তর। এ ব্যাপারে সাধারণ মুসলমান এমনকি অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি পর্যন্তও উদাসীন।
রাসূল ﷺ বলেছেন,
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে অবশ্যই ভালো কথা বলবে অথবা চুপ থাকবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে অবশ্যই তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেবে না। (তিনি আরো বলেন,) যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের উপর ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার মেহমানকে সম্মান করে। [সহীহ বুখারী, হা/৬০১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪৭; আবু দাউদ, হা/৫১৫৬; তিরমিযী, হা/২৫০০।]
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে অবশ্যই ভালো কথা বলবে অথবা চুপ থাকবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে, সে অবশ্যই তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেবে না। (তিনি আরো বলেন,) যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের উপর ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার মেহমানকে সম্মান করে। [সহীহ বুখারী, হা/৬০১৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪৭; আবু দাউদ, হা/৫১৫৬; তিরমিযী, হা/২৫০০।]
অত্যন্ত শালীন ও নমনীয়তার সাথে হাঁটাচলা করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا
জমিনে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয় তুমি মাটিকে ফাটিয়ে দিতে পারবে না আর পাহাড়ের সমান উঁচুও হতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৭)
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ - وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ
তুমি মানুষের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কথা বলবে না এবং পৃথিবীতে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো বড়াইকারী ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তোমার চালচলনে মধ্যমপন্থা গ্রহণ করো এবং আওয়াজকে নীচু করো। নিশ্চয় আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আওয়াজ হচ্ছে গাধার আওয়াজ। (সূরা লুকমান ১৮-১৯)
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلًا
জমিনে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয় তুমি মাটিকে ফাটিয়ে দিতে পারবে না আর পাহাড়ের সমান উঁচুও হতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৩৭)
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ - وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ
তুমি মানুষের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কথা বলবে না এবং পৃথিবীতে গর্বের সাথে চলবে না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো বড়াইকারী ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তোমার চালচলনে মধ্যমপন্থা গ্রহণ করো এবং আওয়াজকে নীচু করো। নিশ্চয় আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আওয়াজ হচ্ছে গাধার আওয়াজ। (সূরা লুকমান ১৮-১৯)
১. সালাম বিনিময় :
পরস্পরের সাক্ষাতের সময় সালাম আদান-প্রদান করা একটি গুরম্নত্বপূর্ণ সুন্নাত। নবী করীম ﷺ এ সুন্নাতটির প্রতি বিশেষ গুরম্নত্ব প্রদান করেছেন। এর দ্বারা পরস্পরের মধ্যে মুহাববত সৃষ্টি হয়। পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলমানকেই সালাম দেয়া কর্তব্য। [সহীহ বুখারী, হা/১২; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৮১; আবু দাউদ, হা/৫১৯৬; মিশকাত, হা/৪৬২৯।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৫টি হক রয়েছে :
১. সাক্ষাত হলে সালাম দেবে।
২. অসুস্থ হলে সেবা করবে।
৩. মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।
৪. দাওয়াত দিলে কবুল করবে।
৫. হাঁচিদাতার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। [ইবনে মাজাহ, হা/১৪৩৩; তিরমিযী, হা/২৭৩৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৮৭৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হ/১০৯৭৯; মিশকাত, হা/৪৬৪৩।]
সালামের উত্তরে শব্দ বাড়িয়ে বলা সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَإِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوْهَا إِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا﴾
কেউ যখন তোমাকে সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ (সালাম) জানাবে, প্রতি উত্তরে তুমি তাকে তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ জানাও, কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)
রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন কাজটি সর্বোত্তম? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ইসলামের সবচেয়ে ভাল কাজ হল, ক্ষুধার্তকে আহার দেওয়া এবং পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া। [বুখারী, হা/১২; মুসলিম, হা/৩৯]
২. মুচকি হাসি :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সামান্যতম ভাল কাজকেও অবহেলা করবে না; যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার মত সাধারণ কাজ হয়ে থাকে। [মুসলিম, হা/২৬২৬]
৩. মুসাফাহা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যদি দু’জন মুসলমান পরস্পর সাক্ষাতের সময় হাত মিলায়, অর্থাৎ মুসাফাহা করে তাহলে তারা পৃথক হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে মাফ করে দেন। [আবু দাউদ, হা/৫২১২]
রাগ দমন করা :
সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ এর সামনে দু’জন লোক পরস্পরকে গালি দিল। কিন্তু তাদের একজন অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে গেলো, এমনকি তার চেহারা ফুলে বিকৃত হয়ে গেল। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এমন একটি কথা জানি, যা সে বললে তার ক্রোধ দূর হয়ে যাবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি লোকটির কাছে গিয়ে নবী ﷺ এর এ উক্তিটি তাকে অবহিত করলো এবং বললো, তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও এবং বলো ‘‘আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৮, ৬১১৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮১২-১৩; আবু দাঊদ, হা/৪৭৮২; তিরমিযী, হা/২৪৫২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৩০৩; মিশকাত, হা/২৪১৮।]
৪. ভালো কথা বলা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ভালো কথা বলাও সাদাকাহ। [বুখারী, হা/২৮২৭।]
ভালো কথা হল, যে কোন যিকির, দু‘আ, সালাম দেওয়া-নেওয়া এবং সত্যপ্রশংসা, উত্তম-উন্নত চরিত্র ও আচার-ব্যবহার বা ভালো কথাবার্তা, দ্বীনি আলোচনা, প্রশংসনীয় ও সুন্দর আদাব (শিষ্টাচার) এবং সুন্দরতম সকল কাজকর্ম। উত্তম বা ভাল কথা-বার্তা মানুষের মধ্যে যাদুর মত কাজ করে, মানুষের অন্তরকে আনন্দ দেয় এবং আত্মাকে প্রশান্ত ও শীতল করে। অতএব, আপনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনার পূর্ণ সময়টুকু ভাল কথাবার্তা দ্বারা সাজিয়ে নিন। সুন্দর আচার-ব্যবহার দ্বারা জীবন পরিচালনা করম্নন। আপনার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব এবং আপনার বাসা-বাড়ির কাজের লোকের সাথে আপনি সুন্দর আচার ব্যবহার করম্নন, যারা আপনার নিকট হতে সুন্দর ও উত্তম ব্যবহারের আশা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বল। (সূরা আহযাব-৭০)
পরস্পরের সাক্ষাতের সময় সালাম আদান-প্রদান করা একটি গুরম্নত্বপূর্ণ সুন্নাত। নবী করীম ﷺ এ সুন্নাতটির প্রতি বিশেষ গুরম্নত্ব প্রদান করেছেন। এর দ্বারা পরস্পরের মধ্যে মুহাববত সৃষ্টি হয়। পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলমানকেই সালাম দেয়া কর্তব্য। [সহীহ বুখারী, হা/১২; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৮১; আবু দাউদ, হা/৫১৯৬; মিশকাত, হা/৪৬২৯।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৫টি হক রয়েছে :
১. সাক্ষাত হলে সালাম দেবে।
২. অসুস্থ হলে সেবা করবে।
৩. মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।
৪. দাওয়াত দিলে কবুল করবে।
৫. হাঁচিদাতার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। [ইবনে মাজাহ, হা/১৪৩৩; তিরমিযী, হা/২৭৩৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৮৭৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হ/১০৯৭৯; মিশকাত, হা/৪৬৪৩।]
সালামের উত্তরে শব্দ বাড়িয়ে বলা সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَإِذَا حُيِّيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوْهَا إِنَّ اللهَ كَانَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيْبًا﴾
কেউ যখন তোমাকে সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ (সালাম) জানাবে, প্রতি উত্তরে তুমি তাকে তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ জানাও, কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা- ৮৬)
রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন কাজটি সর্বোত্তম? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ইসলামের সবচেয়ে ভাল কাজ হল, ক্ষুধার্তকে আহার দেওয়া এবং পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া। [বুখারী, হা/১২; মুসলিম, হা/৩৯]
২. মুচকি হাসি :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সামান্যতম ভাল কাজকেও অবহেলা করবে না; যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার মত সাধারণ কাজ হয়ে থাকে। [মুসলিম, হা/২৬২৬]
৩. মুসাফাহা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যদি দু’জন মুসলমান পরস্পর সাক্ষাতের সময় হাত মিলায়, অর্থাৎ মুসাফাহা করে তাহলে তারা পৃথক হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে মাফ করে দেন। [আবু দাউদ, হা/৫২১২]
রাগ দমন করা :
সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ এর সামনে দু’জন লোক পরস্পরকে গালি দিল। কিন্তু তাদের একজন অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে গেলো, এমনকি তার চেহারা ফুলে বিকৃত হয়ে গেল। তখন নবী ﷺ বললেন, আমি এমন একটি কথা জানি, যা সে বললে তার ক্রোধ দূর হয়ে যাবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি লোকটির কাছে গিয়ে নবী ﷺ এর এ উক্তিটি তাকে অবহিত করলো এবং বললো, তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও এবং বলো ‘‘আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৬০৪৮, ৬১১৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮১২-১৩; আবু দাঊদ, হা/৪৭৮২; তিরমিযী, হা/২৪৫২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৩০৩; মিশকাত, হা/২৪১৮।]
৪. ভালো কথা বলা :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ভালো কথা বলাও সাদাকাহ। [বুখারী, হা/২৮২৭।]
ভালো কথা হল, যে কোন যিকির, দু‘আ, সালাম দেওয়া-নেওয়া এবং সত্যপ্রশংসা, উত্তম-উন্নত চরিত্র ও আচার-ব্যবহার বা ভালো কথাবার্তা, দ্বীনি আলোচনা, প্রশংসনীয় ও সুন্দর আদাব (শিষ্টাচার) এবং সুন্দরতম সকল কাজকর্ম। উত্তম বা ভাল কথা-বার্তা মানুষের মধ্যে যাদুর মত কাজ করে, মানুষের অন্তরকে আনন্দ দেয় এবং আত্মাকে প্রশান্ত ও শীতল করে। অতএব, আপনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনার পূর্ণ সময়টুকু ভাল কথাবার্তা দ্বারা সাজিয়ে নিন। সুন্দর আচার-ব্যবহার দ্বারা জীবন পরিচালনা করম্নন। আপনার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব এবং আপনার বাসা-বাড়ির কাজের লোকের সাথে আপনি সুন্দর আচার ব্যবহার করম্নন, যারা আপনার নিকট হতে সুন্দর ও উত্তম ব্যবহারের আশা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বল। (সূরা আহযাব-৭০)
মজলিস হতে উঠার সময় নিম্মোক্ত দু‘আটি পাঠ করা সুন্নাত। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন বৈঠক থেকে উঠার সময় এ দু‘আ পড়লে ঐ বৈঠকের বেহুদা কথা-বার্তার কাফ্ফারা হয়ে যায়।
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ
সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা আসতাগফিরম্নকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং আপনার দিকেই ফিরে আসি। [তিরমিযী, হা/৩৪৩৩; আবু দাঊদ, হা/৪৮৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৮৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫১৭; দারেমী, হা/২৭০০; মিশকাত, হা/২৪৩৩।]
এ দু‘আর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ ও তাওহীদকে স্বীকার করে। আল্লাহ তাআলার তাওহীদের স্বীকারোক্তি ও তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা এবং তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে ভুল-ত্রুটি মাফ চেয়ে নেওয়া এবং পরিশুদ্ধ হওয়ার এক মহা সুযোগ গ্রহণ করে।
আমরা অনেক সময়েই বিভিন্ন স্থানে সমবেত হয়ে থাকি। যেমন খাওয়া-দাওয়া, সভা-সমাবেশ, পরিচিত লোকের সাথে একান্তে কথা বলা, অনেক দিনের বন্ধুর সাথে আলাপচারিতা, শিক্ষাপ্রদানের মজলিস, আপন পরিবারের সাথে একত্রে খোশগল্প, চলার পথে পরিচিত জনের সাথে কথা-বার্তা ইত্যাদি। এক্ষত্রে আমরা এ সুন্নাতটি আদায় করে অনেক সওয়াবের অধিকারী হতে পারি।
কোন মুসলিম ভাইয়ের নিকট হতে বিদায় নেওয়ার সময় সালাম দেয়া সুন্নাত। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ কোন মজলিসে পৌঁছলে সালাম দিবে। আবার যখন সেই মজলিস ত্যাগ করে চলে যাবে তখনও সালাম দিবে। কেননা, প্রথম সালাম শেষ সালামের জন্য যথেষ্ট নয়। [আবু দাউদ, হা/৫২০৮; তিরমিযী, হা/২৭০৬।]
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ
সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা আসতাগফিরম্নকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং আপনার দিকেই ফিরে আসি। [তিরমিযী, হা/৩৪৩৩; আবু দাঊদ, হা/৪৮৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৮৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫১৭; দারেমী, হা/২৭০০; মিশকাত, হা/২৪৩৩।]
এ দু‘আর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ ও তাওহীদকে স্বীকার করে। আল্লাহ তাআলার তাওহীদের স্বীকারোক্তি ও তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা এবং তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে ভুল-ত্রুটি মাফ চেয়ে নেওয়া এবং পরিশুদ্ধ হওয়ার এক মহা সুযোগ গ্রহণ করে।
আমরা অনেক সময়েই বিভিন্ন স্থানে সমবেত হয়ে থাকি। যেমন খাওয়া-দাওয়া, সভা-সমাবেশ, পরিচিত লোকের সাথে একান্তে কথা বলা, অনেক দিনের বন্ধুর সাথে আলাপচারিতা, শিক্ষাপ্রদানের মজলিস, আপন পরিবারের সাথে একত্রে খোশগল্প, চলার পথে পরিচিত জনের সাথে কথা-বার্তা ইত্যাদি। এক্ষত্রে আমরা এ সুন্নাতটি আদায় করে অনেক সওয়াবের অধিকারী হতে পারি।
কোন মুসলিম ভাইয়ের নিকট হতে বিদায় নেওয়ার সময় সালাম দেয়া সুন্নাত। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ কোন মজলিসে পৌঁছলে সালাম দিবে। আবার যখন সেই মজলিস ত্যাগ করে চলে যাবে তখনও সালাম দিবে। কেননা, প্রথম সালাম শেষ সালামের জন্য যথেষ্ট নয়। [আবু দাউদ, হা/৫২০৮; তিরমিযী, হা/২৭০৬।]
মুসাফিরকে দু‘আ পড়ে বিদায় দেয়া :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন লোককে বিদায় দিলে তার হাত ধরতেন। অতঃপর বিদায় হওয়া ব্যক্তি হাত না ছাড়লে রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত ছাড়তেন না। বিদায়ের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পড়তেন।
أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوٰى وَغَفَرَ ذَنْۢبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ
আসতাউদি‘উল্লা-হা দীনাকা ওয়া আমা-নাতাকা ওয়া খাওয়া-তীমা ‘আমালিক, যাউওয়াদাকাল্লা-হুত তাক্বওয়া ওয়া গাফারা যামবাকা ওয়া ইয়াস্সারা লাকাল খাইরা হায়ছুমা কুনতা।
অর্থ : আমি তোমার দ্বীন, তোমার আমানত এবং শেষ আমল আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছি। আল্লাহ তোমাকে তাক্বওয়া দান করম্নন, তোমার পাপ ক্ষমা করম্নন, আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজসাধ্য করম্নন, তুমি যেখানেই থাক । [আবু দাঊদ, হা/২৬০২; তিরমিযী, হা/৩৪৪২-৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৮২৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪৭৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৫৩২; মিশকাত, হা/২৪৩৫-৩৭।]
মুসাফিরের করণীয় :
মুসাফির বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দু‘আ পড়ে বের হবে। সওয়ারীতে আরোহণ করার সময় প্রথমে এক বার বিসমিল্লাহ বলবে। এরপর তিন বার আল্লাহু আকবার বলবে তারপর নিচের দু‘আটি পাঠ করবে-
سُبْحَانَ الَّذِىْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ وَإِنَّا إِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِىْ سَفَرِنَا هٰذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوٰى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضٰى ‐ اَللّٰهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هٰذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَه ‐ اَللّٰهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِى السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِى الْاَهْلِ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَاٰبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِى الْمَالِ وَالْاَهْلِ
সুবহা-নাল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহূ মুক্বরিনীনা ওয়াইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন, আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল বির্রা ওয়াত্তাক্বওয়া, ওয়া মিনাল ‘আমালি মা তারযা, আল্লা-হুম্মা হাওয়িন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা ওয়াত্বভি ‘আন্না বু‘দাহ। আল্লা-হুম্মা আনতাস সা-হিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালীফাতু ফিল আহলি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ওয়া‘সা-ইস সাফারি ওয়া কাআ-বাতিল মানযারি ওয়া সূইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহল।
অর্থ : ঐ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যিনি এ বাহনকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন; অথচ তাকে আমরা অনুগত করতে সক্ষম নই। অবশ্যই আমরা আমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। হে আল্লাহ! আমরা এই সফরে আপনার নিকট নেকী ও তাক্বওয়া চাই। আর আপনার পছন্দমতো আমল চাই। হে আল্লাহ! এ সফরকে আমাদের জন্য সহজ করে দিন এবং তার দূরত্বকে কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আপনিই আমাদের এ সফরের সাথি, আর পরিবারের রক্ষক। হে আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় চাই সফরের কষ্ট হতে, আর সফরের কষ্টদায়ক দৃশ্য হতে এবং সফর হতে প্রত্যাবর্তনকালে সম্পদ ও পরিবারের ক্ষয়-ক্ষতি ও কষ্টদায়ক দর্শন হতে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৩৯; আবু দাঊদ, হা/২৬০৪; তিরমিযী, হা/৩৪৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৩; মিশকাত, হা/২৪৩৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সফর হতে ফিরে আসতেন তখন আবারও উপরের দু‘আটি পাঠ করতেন এবং সেই সাথে নিম্নের অংশটুকুও পাঠ করতেন,
اٰيِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ
আ-য়িবূনা তা-ইবূনা ‘আবিদূনা লিরাবিবনা হা-মিদূন।
অর্থ : তাওবা করতে করতে, ইবাদাতরত অবস্থায় এবং আমাদের রবের প্রশংসা করতে করতে আমরা প্রত্যাবর্তন করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৩৯; আবু দাঊদ, হা/২৬০১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৪৪; মিশকাত, হা/২৪২০।]
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন লোককে বিদায় দিলে তার হাত ধরতেন। অতঃপর বিদায় হওয়া ব্যক্তি হাত না ছাড়লে রাসূলুল্লাহ ﷺ তার হাত ছাড়তেন না। বিদায়ের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পড়তেন।
أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوٰى وَغَفَرَ ذَنْۢبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ
আসতাউদি‘উল্লা-হা দীনাকা ওয়া আমা-নাতাকা ওয়া খাওয়া-তীমা ‘আমালিক, যাউওয়াদাকাল্লা-হুত তাক্বওয়া ওয়া গাফারা যামবাকা ওয়া ইয়াস্সারা লাকাল খাইরা হায়ছুমা কুনতা।
অর্থ : আমি তোমার দ্বীন, তোমার আমানত এবং শেষ আমল আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছি। আল্লাহ তোমাকে তাক্বওয়া দান করম্নন, তোমার পাপ ক্ষমা করম্নন, আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজসাধ্য করম্নন, তুমি যেখানেই থাক । [আবু দাঊদ, হা/২৬০২; তিরমিযী, হা/৩৪৪২-৪৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৮২৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪৭৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৫৩২; মিশকাত, হা/২৪৩৫-৩৭।]
মুসাফিরের করণীয় :
মুসাফির বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দু‘আ পড়ে বের হবে। সওয়ারীতে আরোহণ করার সময় প্রথমে এক বার বিসমিল্লাহ বলবে। এরপর তিন বার আল্লাহু আকবার বলবে তারপর নিচের দু‘আটি পাঠ করবে-
سُبْحَانَ الَّذِىْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ وَإِنَّا إِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِىْ سَفَرِنَا هٰذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوٰى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضٰى ‐ اَللّٰهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هٰذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَه ‐ اَللّٰهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِى السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِى الْاَهْلِ ‐ اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَاٰبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِى الْمَالِ وَالْاَهْلِ
সুবহা-নাল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহূ মুক্বরিনীনা ওয়াইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন, আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল বির্রা ওয়াত্তাক্বওয়া, ওয়া মিনাল ‘আমালি মা তারযা, আল্লা-হুম্মা হাওয়িন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা ওয়াত্বভি ‘আন্না বু‘দাহ। আল্লা-হুম্মা আনতাস সা-হিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালীফাতু ফিল আহলি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ওয়া‘সা-ইস সাফারি ওয়া কাআ-বাতিল মানযারি ওয়া সূইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহল।
অর্থ : ঐ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যিনি এ বাহনকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন; অথচ তাকে আমরা অনুগত করতে সক্ষম নই। অবশ্যই আমরা আমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। হে আল্লাহ! আমরা এই সফরে আপনার নিকট নেকী ও তাক্বওয়া চাই। আর আপনার পছন্দমতো আমল চাই। হে আল্লাহ! এ সফরকে আমাদের জন্য সহজ করে দিন এবং তার দূরত্বকে কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আপনিই আমাদের এ সফরের সাথি, আর পরিবারের রক্ষক। হে আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় চাই সফরের কষ্ট হতে, আর সফরের কষ্টদায়ক দৃশ্য হতে এবং সফর হতে প্রত্যাবর্তনকালে সম্পদ ও পরিবারের ক্ষয়-ক্ষতি ও কষ্টদায়ক দর্শন হতে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৩৯; আবু দাঊদ, হা/২৬০৪; তিরমিযী, হা/৩৪৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৩; মিশকাত, হা/২৪৩৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সফর হতে ফিরে আসতেন তখন আবারও উপরের দু‘আটি পাঠ করতেন এবং সেই সাথে নিম্নের অংশটুকুও পাঠ করতেন,
اٰيِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ
আ-য়িবূনা তা-ইবূনা ‘আবিদূনা লিরাবিবনা হা-মিদূন।
অর্থ : তাওবা করতে করতে, ইবাদাতরত অবস্থায় এবং আমাদের রবের প্রশংসা করতে করতে আমরা প্রত্যাবর্তন করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৩৯; আবু দাঊদ, হা/২৬০১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৪৪; মিশকাত, হা/২৪২০।]
যে কোন শরীয়ত অনুমোদিত কাজ এবং ভাল কাজ সওয়াবের নিয়তে করা সুন্নাত। আমরা ঘুম, খাওয়া, পান করা, রিযিকের সন্ধানে কাজকর্মসহ যাবতীয় দুনিয়াবী স্বাভাবিক কাজ-কর্ম (যেগুলিকে আমাদের শরীয়তে মুবাহ তথা বৈধ বলা হয়) সেগুলো করার সময় আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য ও রেজামন্দি লাভের নিয়ত করলেই অসংখ্য নেকী লাভ করতে পারি। কারণ সওয়াবের নিয়তের দরম্নণ দুনিয়াবী কাজকর্ম ইবাদাতে পরিণত হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যাবতীয় কর্মের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী হয়। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করবে তদনুযায়ী তার ফলাফল ভোগ করবে। [বুখারী, হা/১; মুসলিম, হা/১৯০৭।]
যারা সময়ের মূল্যায়ন করেন তারা এক সময়ে একাধিক ইবাদাত করতে পারেন। মসজিদে যাওয়া একটি ইবাদাত। এই ইবাদাতে রয়েছে বিশাল সওয়াব। এ স্থলে আরো ইবাদাত যোগ করা যায়। যেমন,
(ক) মসজিদের দিকে রওয়ানা দেয়া একটি ইবাদাত।
(খ) চলতে চলতে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা, তাসবীহ, তাহমীদ, তাকবীর বা তাহলীল পাঠ করা আরো একটি ইবাদাত।
(গ) কারো সাথে সাক্ষাত হলে সালাম দেয়া আরো একটি ইবাদাত।
কোন ওলীমা অনুষ্ঠানে হাজির হলে ২ বা তার চেয়ে বেশি ইবাদাত করা যায় :
(ক) ওলীমা অনুষ্ঠানে হাজির হওয়াটা একটি ইবাদাত।
(খ) ওলীমা অনুষ্ঠানে আপনি যতক্ষণ উপস্থিত থাকবেন, ততক্ষণ মানুষের মাঝে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন এবং মানুষ যাতে আল্লাহর দ্বীনে পরিপূর্ণভাবে দীক্ষিত হতে পারে সে জন্য দাওয়াতী কাজ করতে পারেন। আপনি অধিক পরিমাণে তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল, তাকবীর পড়তে পারেন। এতে একটি ইবাদাত করার সময় আপনি একাধিক ইবাদাত করে আপনার মূল্যবান সময়কে কাজে লাগাতে পারেন। এমন আরো অনেক পদ্ধতি হতে পারে।
মোট কথা, সময় বড়ই মূল্যবান জিনিস। সুতরাং এর কদর করা অতিব জরম্নরি। আমাদের দুনিয়ার এ জীবনটি অতি সংক্ষিপ্ত। এখানে প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড এতই মূল্যবান যে, টাকার অংকে এর মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এজন্য সর্বদা নিজেকে উত্তম আমলে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। যাতে একটি মুহূর্তও বেকার নষ্ট না হয়ে যায়। কারণ মানুষ জান্নাতে যাওয়ার পর কোন কিছুর জন্য আফসোস করবে না। শুধুমাত্র ঐ সময়টির জন্য আফসোস করবে, যে সময়টি আল্লাহর যিকির ব্যতীত অতিবাহিত হয়েছে। দুটি নিয়ামতের কদর অধিকাংশ মানুষ বুঝে না। একটি হচ্ছে সুস্থতা, অপরটি হচ্ছে সময়। সুতরাং সুস্থ থাকতে এবং হাতে সময় থাকতে জান্নাতের সামানা তৈরি করার জন্য নেক আমলের প্রতিযোগিতা করতে হবে। সময় ফুরিয়ে গেলে আফসোস করে কোন লাভ হবে না। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝ দান করম্নন এবং তার সন্তুষ্টিমূলক কাজে জীবন অতিবাহিত করার তাওফীক দান করম্নন। আমীন
(ক) মসজিদের দিকে রওয়ানা দেয়া একটি ইবাদাত।
(খ) চলতে চলতে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা, তাসবীহ, তাহমীদ, তাকবীর বা তাহলীল পাঠ করা আরো একটি ইবাদাত।
(গ) কারো সাথে সাক্ষাত হলে সালাম দেয়া আরো একটি ইবাদাত।
কোন ওলীমা অনুষ্ঠানে হাজির হলে ২ বা তার চেয়ে বেশি ইবাদাত করা যায় :
(ক) ওলীমা অনুষ্ঠানে হাজির হওয়াটা একটি ইবাদাত।
(খ) ওলীমা অনুষ্ঠানে আপনি যতক্ষণ উপস্থিত থাকবেন, ততক্ষণ মানুষের মাঝে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন এবং মানুষ যাতে আল্লাহর দ্বীনে পরিপূর্ণভাবে দীক্ষিত হতে পারে সে জন্য দাওয়াতী কাজ করতে পারেন। আপনি অধিক পরিমাণে তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল, তাকবীর পড়তে পারেন। এতে একটি ইবাদাত করার সময় আপনি একাধিক ইবাদাত করে আপনার মূল্যবান সময়কে কাজে লাগাতে পারেন। এমন আরো অনেক পদ্ধতি হতে পারে।
মোট কথা, সময় বড়ই মূল্যবান জিনিস। সুতরাং এর কদর করা অতিব জরম্নরি। আমাদের দুনিয়ার এ জীবনটি অতি সংক্ষিপ্ত। এখানে প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড এতই মূল্যবান যে, টাকার অংকে এর মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এজন্য সর্বদা নিজেকে উত্তম আমলে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। যাতে একটি মুহূর্তও বেকার নষ্ট না হয়ে যায়। কারণ মানুষ জান্নাতে যাওয়ার পর কোন কিছুর জন্য আফসোস করবে না। শুধুমাত্র ঐ সময়টির জন্য আফসোস করবে, যে সময়টি আল্লাহর যিকির ব্যতীত অতিবাহিত হয়েছে। দুটি নিয়ামতের কদর অধিকাংশ মানুষ বুঝে না। একটি হচ্ছে সুস্থতা, অপরটি হচ্ছে সময়। সুতরাং সুস্থ থাকতে এবং হাতে সময় থাকতে জান্নাতের সামানা তৈরি করার জন্য নেক আমলের প্রতিযোগিতা করতে হবে। সময় ফুরিয়ে গেলে আফসোস করে কোন লাভ হবে না। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝ দান করম্নন এবং তার সন্তুষ্টিমূলক কাজে জীবন অতিবাহিত করার তাওফীক দান করম্নন। আমীন
কুরআন শিক্ষা করা এবং অপরকে শিখানো এমন একটি মহৎ কাজ যে, এর মাধ্যমে বান্দা সকল মানুষের উপর শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে উন্নীত হতে পারে। এ কথা আল্লাহর নবী ﷺ বলেছেন। উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকেও শিক্ষা দেয়।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৫০২৭; আবু দাউদ, হা/১৪৫৪; তিরমিযী, হা/২৯০৭; মিশকাত, হা/২১০৯।]
কুরআন পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন এই কুরআনই শাফায়াত করবে, যাতে করে পাঠকারী জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করতে পারে। কুরআন পাঠ অন্তরের ময়লা দূর করে। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বার বার কুরআন নিয়ে গবেষণা করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। আত্মার প্রশান্তিতে কুরআন তেলাওয়াতের ভূমিকা অপরিসীম। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ
‘‘সাবধান! আল্লাহর স্মরণেই আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।’’ (সূরা রাদ- ২৮)
কুরআন তিলাওয়াত একটি উত্তম ইবাদাত। কুরআন ও হাদীসে কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি খুবই উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং এর যথেষ্ট ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
‘‘নিশ্চয় যারা কুরআন তেলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে কিছু অংশ দান করে তারা এমন ব্যবসার আশা করে যাতে কখনো লোকসান হবে না।’’ (সূরা ফাতির- ২৯)
এ আয়াতে কুরআন পড়াকে একটি লাভজনক ব্যবসা বলা হয়েছে। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পড়বে সে একটি নেকী পাবে আর একটি নেকী হবে দশটি নেকীর সমান। আমি বলছি না আলিফ, লাম, মীম সবমিলিয়ে একটি হরফ; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।’’ [তিরমিযী হা/২৯১০।]
কুরআন পাঠ করলে বা শুনলে ঈমান বাড়ে :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের হৃদয় প্রকম্পিত হয়, আর যখন তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করে। (সূরা আনফাল- ২)
কুরআন পাঠকারীর মর্যাদা :
আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কুরআন পাঠকারী হাফেয উচ্চমর্যাদার অধিকারী ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কুরআন পাঠ করে আর তা হিফয করা তার জন্য অতীব কষ্টকর হলেও তা হিফয করতে চেষ্টা করে, সে দ্বিগুণ পুরষ্কার লাভ করবে। [বুখারী হা/ ৪৯৩৭।]
কুরআন পাঠকারী ও আমলকারীর দৃষ্টান্ত :
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যে মুমিন কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, তার উদাহরণ ঐ লেবুর ন্যায়, যা খেতে সুস্বাদু এবং তার ঘ্রাণও মন মাতানো সুগন্ধযুক্ত। পক্ষান্তরে যে মুমিন কুরআন পাঠ করে না, কিন্তু কুরআনের অনুযায়ী আমল করে, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ খেজুরের ন্যায়, যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু কোন সুগন্ধ নেই।
আর সেসব মুনাফিক, যারা কুরআন পাঠ করে কিন্তু আমল করে না, তাদের উদাহরণ হচ্ছে ঐ রায়হানা ফলের ন্যায়, যার মনমাতানো সুগন্ধ আছে, কিন্তু খেতে একেবারেই তিক্ত আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠও করে না এবং তদানুসারে আমলও করে না, তার উদাহরণ হাঞ্জালার (মাকাল ফলের) ন্যায়, যা খেতেও তিক্ত এবং দুর্গন্ধযুক্ত। [বুখারী হা/ ৫০৫৯।]
ব্যাখ্যা বুঝে পড়তে হবে :
না‘ফে (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর যখন কুরআন মাজীদ পাঠ শুরম্ন করতেন তখন শেষ না করা পর্যন্ত কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। আমি একদিন তাঁর নিকট গেলাম। তিনি তখন সূরা বাকারা পাঠ করছিলেন। পাঠ করতে করতে তিনি এক জায়গায় থেমে গেলেন। অতঃপর আমাকে প্রশ্ন করলেন, কী বিষয়ে আয়াতটি নাযিল হয়েছে জানো? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, অমুক অমুক বিষয়ে নাযিল হয়েছে। তারপর তিনি আবার পাঠ করতে শুরম্ন করলেন। [বুখারী হা/ ৪৫২৬।]
সাত দিনের কমে খতম দেয়া ঠিক নয় :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, পূর্ণ একমাস সময়ের মধ্যে কুরআন (পাঠ করা) শেষ কর। আমি বললাম, কিন্তু আমি এর চেয়েও অধিক (পড়ার) ক্ষমতা রাখি। তখন নবী ﷺ বললেন, তাহলে প্রতি সাতদিনে একবার কুরআন শেষ কর এবং এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে কুরআন শেষ করো না। [বুখারী হা/ ৫০৫৪।]
ছোটদেরকে কুরআন পড়ানো উচিত :
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন আমি ছিলাম দশ বছরের এক বালক। এ বয়সেই আমি মুহকাম সূরাসমূহ (সূরা হুজুরাত থেকে শেষ পর্যন্ত) শিখে ফেলেছিলাম। [বুখারী হা/ ৫০৩৫।]
কুরআন জানার জন্য সাহাবীদের আগ্রহ :
মাসরূক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র শপথ, যিনি ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই, আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নেই যার সম্পর্কে আমি জানি না যে, তা কখন এবং কোথায় নাযিল হয়েছে, আর আল্লাহর কিতাবে এমন কোন আয়াতও নেই যা আমি জানি না যে, তা কার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারপরও আমি যদি জানতাম যে, এমন কোন ব্যক্তি রয়েছে, যে আমার চেয়ে কুরআন ভাল জানে এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তবে আমি উটে আরোহণ করে হলেও সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম। [বুখারী হা/ ৫০০২।]
কুরআনের সাথে লেগে থাকতে হবে :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেন, যে লোক কুরআন মুখস্থ করে হৃদয়ে রাখে, তার দৃষ্টান্ত ঐ উটের মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে তবে তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি বন্ধন খুলে দেয় তবে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। [বুখারী হা/ ৫০৩১।]
বিশেষভাবে লক্ষণীয় :
বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, কুরআন বুঝে পড়তে হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল : বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমান এমন আছেন যারা অর্থ না বুঝে শুধুমাত্র কুরআনের শব্দগুলো পড়েন এবং প্রতি হরফে দশ নেকী অর্জনের চিন্তা করেন। অথচ কুরআন না বুঝে পড়লে এর দ্বারা কুরআন নাযিলের আসল উদ্দেশ্য সফল হয় না। মানুষ কুরআন পড়বে, বুঝবে এবং কুরআন অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালনা করবে- এটাই হল কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য।
কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআন পড়ার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা। না বুঝে পড়লে পড়ার হক আদায় হয় না। না বুঝে একশত খতম দেয়ার চেয়ে কেউ যদি দু’চারটি আয়াত অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ বুঝে পড়ে এবং এর উপর আমল করতে পারে তবে এটা তার জন্য হাজারগুণ উত্তম হবে। কুরআন পড়ার সময় আমরা খেয়াল রাখব :
১। যেখানে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিয়ামত দানের ওয়াদা দিয়েছেন আমরা তা পাওয়ার আশা করব।
২। যেখানে শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন, আমরা সে শাস্তিকে ভয় করব।
৩। যেখানে কিছু করার আদেশ দিয়েছেন আমরা তা পালন করব।
৪। যেখানে কিছু করতে নিষেধ করেছেন আমরা তা করব না।
৫। যেখানে তিনি উপদেশ দিয়েছেন আমরা সে উপদেশ গ্রহণ করব।
৬। যেখানে তিনি নবী-রাসূলদের কিস্সা-কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আমরা এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব এবং আমাদের ঈমানকে আরো মজবুত করব।
কুরআন পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন এই কুরআনই শাফায়াত করবে, যাতে করে পাঠকারী জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করতে পারে। কুরআন পাঠ অন্তরের ময়লা দূর করে। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বার বার কুরআন নিয়ে গবেষণা করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। আত্মার প্রশান্তিতে কুরআন তেলাওয়াতের ভূমিকা অপরিসীম। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ
‘‘সাবধান! আল্লাহর স্মরণেই আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।’’ (সূরা রাদ- ২৮)
কুরআন তিলাওয়াত একটি উত্তম ইবাদাত। কুরআন ও হাদীসে কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি খুবই উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং এর যথেষ্ট ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَاَقَامُوا الصَّلَاةَ وَاَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ
‘‘নিশ্চয় যারা কুরআন তেলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে কিছু অংশ দান করে তারা এমন ব্যবসার আশা করে যাতে কখনো লোকসান হবে না।’’ (সূরা ফাতির- ২৯)
এ আয়াতে কুরআন পড়াকে একটি লাভজনক ব্যবসা বলা হয়েছে। নবী ﷺ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পড়বে সে একটি নেকী পাবে আর একটি নেকী হবে দশটি নেকীর সমান। আমি বলছি না আলিফ, লাম, মীম সবমিলিয়ে একটি হরফ; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।’’ [তিরমিযী হা/২৯১০।]
কুরআন পাঠ করলে বা শুনলে ঈমান বাড়ে :
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের হৃদয় প্রকম্পিত হয়, আর যখন তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা করে। (সূরা আনফাল- ২)
কুরআন পাঠকারীর মর্যাদা :
আয়েশা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কুরআন পাঠকারী হাফেয উচ্চমর্যাদার অধিকারী ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে কুরআন পাঠ করে আর তা হিফয করা তার জন্য অতীব কষ্টকর হলেও তা হিফয করতে চেষ্টা করে, সে দ্বিগুণ পুরষ্কার লাভ করবে। [বুখারী হা/ ৪৯৩৭।]
কুরআন পাঠকারী ও আমলকারীর দৃষ্টান্ত :
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যে মুমিন কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, তার উদাহরণ ঐ লেবুর ন্যায়, যা খেতে সুস্বাদু এবং তার ঘ্রাণও মন মাতানো সুগন্ধযুক্ত। পক্ষান্তরে যে মুমিন কুরআন পাঠ করে না, কিন্তু কুরআনের অনুযায়ী আমল করে, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ খেজুরের ন্যায়, যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু কোন সুগন্ধ নেই।
আর সেসব মুনাফিক, যারা কুরআন পাঠ করে কিন্তু আমল করে না, তাদের উদাহরণ হচ্ছে ঐ রায়হানা ফলের ন্যায়, যার মনমাতানো সুগন্ধ আছে, কিন্তু খেতে একেবারেই তিক্ত আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠও করে না এবং তদানুসারে আমলও করে না, তার উদাহরণ হাঞ্জালার (মাকাল ফলের) ন্যায়, যা খেতেও তিক্ত এবং দুর্গন্ধযুক্ত। [বুখারী হা/ ৫০৫৯।]
ব্যাখ্যা বুঝে পড়তে হবে :
না‘ফে (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর যখন কুরআন মাজীদ পাঠ শুরম্ন করতেন তখন শেষ না করা পর্যন্ত কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। আমি একদিন তাঁর নিকট গেলাম। তিনি তখন সূরা বাকারা পাঠ করছিলেন। পাঠ করতে করতে তিনি এক জায়গায় থেমে গেলেন। অতঃপর আমাকে প্রশ্ন করলেন, কী বিষয়ে আয়াতটি নাযিল হয়েছে জানো? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, অমুক অমুক বিষয়ে নাযিল হয়েছে। তারপর তিনি আবার পাঠ করতে শুরম্ন করলেন। [বুখারী হা/ ৪৫২৬।]
সাত দিনের কমে খতম দেয়া ঠিক নয় :
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বললেন, পূর্ণ একমাস সময়ের মধ্যে কুরআন (পাঠ করা) শেষ কর। আমি বললাম, কিন্তু আমি এর চেয়েও অধিক (পড়ার) ক্ষমতা রাখি। তখন নবী ﷺ বললেন, তাহলে প্রতি সাতদিনে একবার কুরআন শেষ কর এবং এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে কুরআন শেষ করো না। [বুখারী হা/ ৫০৫৪।]
ছোটদেরকে কুরআন পড়ানো উচিত :
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন আমি ছিলাম দশ বছরের এক বালক। এ বয়সেই আমি মুহকাম সূরাসমূহ (সূরা হুজুরাত থেকে শেষ পর্যন্ত) শিখে ফেলেছিলাম। [বুখারী হা/ ৫০৩৫।]
কুরআন জানার জন্য সাহাবীদের আগ্রহ :
মাসরূক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র শপথ, যিনি ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই, আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নেই যার সম্পর্কে আমি জানি না যে, তা কখন এবং কোথায় নাযিল হয়েছে, আর আল্লাহর কিতাবে এমন কোন আয়াতও নেই যা আমি জানি না যে, তা কার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারপরও আমি যদি জানতাম যে, এমন কোন ব্যক্তি রয়েছে, যে আমার চেয়ে কুরআন ভাল জানে এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তবে আমি উটে আরোহণ করে হলেও সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম। [বুখারী হা/ ৫০০২।]
কুরআনের সাথে লেগে থাকতে হবে :
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেন, যে লোক কুরআন মুখস্থ করে হৃদয়ে রাখে, তার দৃষ্টান্ত ঐ উটের মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে তবে তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি বন্ধন খুলে দেয় তবে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। [বুখারী হা/ ৫০৩১।]
বিশেষভাবে লক্ষণীয় :
বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, কুরআন বুঝে পড়তে হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল : বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমান এমন আছেন যারা অর্থ না বুঝে শুধুমাত্র কুরআনের শব্দগুলো পড়েন এবং প্রতি হরফে দশ নেকী অর্জনের চিন্তা করেন। অথচ কুরআন না বুঝে পড়লে এর দ্বারা কুরআন নাযিলের আসল উদ্দেশ্য সফল হয় না। মানুষ কুরআন পড়বে, বুঝবে এবং কুরআন অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালনা করবে- এটাই হল কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য।
কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআন পড়ার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা। না বুঝে পড়লে পড়ার হক আদায় হয় না। না বুঝে একশত খতম দেয়ার চেয়ে কেউ যদি দু’চারটি আয়াত অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ বুঝে পড়ে এবং এর উপর আমল করতে পারে তবে এটা তার জন্য হাজারগুণ উত্তম হবে। কুরআন পড়ার সময় আমরা খেয়াল রাখব :
১। যেখানে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিয়ামত দানের ওয়াদা দিয়েছেন আমরা তা পাওয়ার আশা করব।
২। যেখানে শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন, আমরা সে শাস্তিকে ভয় করব।
৩। যেখানে কিছু করার আদেশ দিয়েছেন আমরা তা পালন করব।
৪। যেখানে কিছু করতে নিষেধ করেছেন আমরা তা করব না।
৫। যেখানে তিনি উপদেশ দিয়েছেন আমরা সে উপদেশ গ্রহণ করব।
৬। যেখানে তিনি নবী-রাসূলদের কিস্সা-কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আমরা এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব এবং আমাদের ঈমানকে আরো মজবুত করব।
বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের আমল ও ফযীলতের ব্যাপারে অনেক জাল-যয়ীফ হাদীস রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরম্নরি। আল কুরআনুল কারীমের সকল সূরা ও আয়াতই মর্যাদাপূর্ণ ও গুরম্নত্বপূর্ণ। কুরআন মাজীদের সকল সূরা ও আয়াতই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এবং সবই আল্লাহর কালাম। এই দৃষ্টিকোণ থেকে এক আয়াতের মর্যাদা অপর আয়াত থেকে কম নয়।
তবে বিশেষ কিছু সূরা ও আয়াতের ব্যাপারে কিছু হাদীসে বিশেষ ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। এর সংখ্যা অতি কম। সহীহ সনদে যেসব বিশেষ সূরা ও আয়াতের ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো :
তবে বিশেষ কিছু সূরা ও আয়াতের ব্যাপারে কিছু হাদীসে বিশেষ ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। এর সংখ্যা অতি কম। সহীহ সনদে যেসব বিশেষ সূরা ও আয়াতের ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো :
সূরা ফাতিহা কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা :
সূরা ফাতিহা হচ্ছে কুরআন মাজীদের সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ সূরা। এর ফযীলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। হাদীসে এসেছে,
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সফরে থাকাকালে নবী ﷺ কোন এক স্থানে অবতরণ করলেন। তখন তার পাশে এক ব্যক্তি অবস্থান করল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নবী ﷺ তার দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি কি তোমাকে কুরআনের সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ সূরার ব্যাপারে সংবাদ দিব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী ﷺ পাঠ করলেন, ﴿ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾ অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১/৫৬০; সহীহ তারগীব ও ওয়াত তারহীব, হা/১৪৫৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৯৯।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! তাওরাত, যাবূর, ইঞ্জীল এবং ফুরকান তথা কুরআনে এই সূরার সমতুল্য কোন সূরা নেই। এটা হচ্ছে বার বার পঠিত সাতটি আয়াতবিশিষ্ট সূরা এবং মহান কুরআন, যা আমাকে দান করা হয়েছে। [বুখারী হা/৪৭০৩; আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২১৪২।**]
নামাযের প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা পড়তে হয় :
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার কোন সালাতই হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৯০০; আবু দাউদ, হা/৮২২; তিরমিযী, হা/২৪৭; নাসাঈ, হা/৯১০; বায়হাকী, হা/২১৯৩; মিশকাত, হা/৮২২।]
সূরা ফাতিহা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা হয় :
আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর কিছু সংখ্যক সাহাবী কোন এক সফরে যাত্রা করেন। তারা আরবদের কোন এক সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট মেহমানদারী কামনা করলেন। কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। (ঘটনাক্রমে) ঐ সম্প্রদায়ের দলপতি বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হলো। লোকেরা তার (সুস্থতার) জন্য সর্বপ্রকার চেষ্টা করল, কিন্তু ফল হলো না। তখন তাদের কেউ বলল, ঐ যে লোকগুলো এখানে এসেছে, তাদের নিকট যদি তোমরা যেতে! হয়তো তাদের কারো নিকট কিছু (ব্যবস্থা) থাকতে পারে। তখন তারা তাদের কাছে গেল এবং বলল, হে সফরকারী দল! আমাদের দলপতিকে বিচ্ছু দংশন করেছে। আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না। তোমাদের কারো কাছে কোন ব্যবস্থা আছে কি? তখন সাহাবীদের একজন বললেন, হ্যাঁ- আল্লাহর শপথ! আমি ঝাড়ফুঁক করি। তবে দেখো, আমরা তোমাদের নিকট মেহমানদারী কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। কাজেই আমি তোমাদের ঝাড়ফুঁক করব না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করবে। তখন তারা তাঁদের সাথে একপাল বকরীর শর্ত করল। এরপর ঐ সাহাবী গিয়ে তার (দংশিত স্থানের) উপর থুথু দিতে দিতে সূরা ফাতিহা পড়তে লাগলেন। ফলে সে এমনভাবে সুস্থ হলো যেন তার কোন অসুস্থতাই নেই। [সহীহ বুখারী, হা/২২৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/২১৫৬; মিশকাত, হা/২৯৮৫।]
সূরা ফাতিহা হচ্ছে কুরআন মাজীদের সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ সূরা। এর ফযীলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। হাদীসে এসেছে,
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সফরে থাকাকালে নবী ﷺ কোন এক স্থানে অবতরণ করলেন। তখন তার পাশে এক ব্যক্তি অবস্থান করল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নবী ﷺ তার দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি কি তোমাকে কুরআনের সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ সূরার ব্যাপারে সংবাদ দিব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী ﷺ পাঠ করলেন, ﴿ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾ অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৭৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১/৫৬০; সহীহ তারগীব ও ওয়াত তারহীব, হা/১৪৫৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৯৯।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! তাওরাত, যাবূর, ইঞ্জীল এবং ফুরকান তথা কুরআনে এই সূরার সমতুল্য কোন সূরা নেই। এটা হচ্ছে বার বার পঠিত সাতটি আয়াতবিশিষ্ট সূরা এবং মহান কুরআন, যা আমাকে দান করা হয়েছে। [বুখারী হা/৪৭০৩; আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২১৪২।**]
নামাযের প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা পড়তে হয় :
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার কোন সালাতই হয় না। [সহীহ বুখারী, হা/৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৯০০; আবু দাউদ, হা/৮২২; তিরমিযী, হা/২৪৭; নাসাঈ, হা/৯১০; বায়হাকী, হা/২১৯৩; মিশকাত, হা/৮২২।]
সূরা ফাতিহা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা হয় :
আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর কিছু সংখ্যক সাহাবী কোন এক সফরে যাত্রা করেন। তারা আরবদের কোন এক সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট মেহমানদারী কামনা করলেন। কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। (ঘটনাক্রমে) ঐ সম্প্রদায়ের দলপতি বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হলো। লোকেরা তার (সুস্থতার) জন্য সর্বপ্রকার চেষ্টা করল, কিন্তু ফল হলো না। তখন তাদের কেউ বলল, ঐ যে লোকগুলো এখানে এসেছে, তাদের নিকট যদি তোমরা যেতে! হয়তো তাদের কারো নিকট কিছু (ব্যবস্থা) থাকতে পারে। তখন তারা তাদের কাছে গেল এবং বলল, হে সফরকারী দল! আমাদের দলপতিকে বিচ্ছু দংশন করেছে। আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না। তোমাদের কারো কাছে কোন ব্যবস্থা আছে কি? তখন সাহাবীদের একজন বললেন, হ্যাঁ- আল্লাহর শপথ! আমি ঝাড়ফুঁক করি। তবে দেখো, আমরা তোমাদের নিকট মেহমানদারী কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। কাজেই আমি তোমাদের ঝাড়ফুঁক করব না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করবে। তখন তারা তাঁদের সাথে একপাল বকরীর শর্ত করল। এরপর ঐ সাহাবী গিয়ে তার (দংশিত স্থানের) উপর থুথু দিতে দিতে সূরা ফাতিহা পড়তে লাগলেন। ফলে সে এমনভাবে সুস্থ হলো যেন তার কোন অসুস্থতাই নেই। [সহীহ বুখারী, হা/২২৭৬; ইবনে মাজাহ, হা/২১৫৬; মিশকাত, হা/২৯৮৫।]
সূরা বাক্বারা শিক্ষা করাতে বরকত রয়েছে এবং ছেড়ে দেয়াতে ক্ষতি রয়েছে :
বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তখন আমি তাকে বলতে শুনলাম যে, তিনি বললেন, তোমরা সূরা বাক্বারা শিক্ষা করো। কেননা তা গ্রহণ করাতে বরকত রয়েছে এবং ছেড়ে দেয়াতে ক্ষতি রয়েছে। বাতিলপন্থীরা এর উপর আমল করতে সক্ষম হয় না। বুরায়দা (রাঃ) বললেন, তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। তারপর বললেন, তোমরা সূরা বাক্বারা ও আলে ইমরান শিক্ষা করো। কেননা এ দুটি হচ্ছে অলংকার, এ দুটি কিয়ামতের দিন তার সাথীকে ছায়া প্রদান করবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৫০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০৫৭; সুনানে দারেমী, হা/৩৪৫৪।]
যে ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘরে থাকতে পারে না :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের ঘরসমূহকে ক্ববরের মতো করে রেখো না (অর্থাৎ নফল সলাতসমূহ বাড়িতে আদায় করবে)। নিশ্চয় শয়তান ঐ ঘর থেকে পলায়ন করে, যে ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৮০; তিরমিযী, হা/২৮৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮২১; মিশকাত, হা/২১১৯।]
বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তখন আমি তাকে বলতে শুনলাম যে, তিনি বললেন, তোমরা সূরা বাক্বারা শিক্ষা করো। কেননা তা গ্রহণ করাতে বরকত রয়েছে এবং ছেড়ে দেয়াতে ক্ষতি রয়েছে। বাতিলপন্থীরা এর উপর আমল করতে সক্ষম হয় না। বুরায়দা (রাঃ) বললেন, তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। তারপর বললেন, তোমরা সূরা বাক্বারা ও আলে ইমরান শিক্ষা করো। কেননা এ দুটি হচ্ছে অলংকার, এ দুটি কিয়ামতের দিন তার সাথীকে ছায়া প্রদান করবে। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৯৫০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০৫৭; সুনানে দারেমী, হা/৩৪৫৪।]
যে ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘরে থাকতে পারে না :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের ঘরসমূহকে ক্ববরের মতো করে রেখো না (অর্থাৎ নফল সলাতসমূহ বাড়িতে আদায় করবে)। নিশ্চয় শয়তান ঐ ঘর থেকে পলায়ন করে, যে ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৮০; তিরমিযী, হা/২৮৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮২১; মিশকাত, হা/২১১৯।]
কুরআনের সর্বোত্তম আয়াত :
উবাই ইবনে কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি জান কুরআনের সর্বোত্তম আয়াত কোনটি? আমি বললাম, আয়াতুল কুরসী। এরপর তিনি আমার বুকে মারলেন এবং বললেন, তোমার জ্ঞান কতইনা তৃপ্তিদায়ক!- হে আবুল মুনযির। [সহীহ মুসলিম, হা/৮১০; মিশকাত, হা/২১২২।]
ঘুমানোর সময় এটা পড়লে জ্বিন ও শয়তান থেকে হেফাজত থাকা যায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বলেছেন, তুমি শয়নকালে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার সাথে একজন হেফাযতকারী (ফেরেশতা) থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটবর্তী হবে না। [(সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৫; মিশকাত, হা/২১২৩)]
সকাল-সন্ধ্যায় পড়লে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকা যায় :
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে। যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করবে, সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৫৪২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৭৩১।]
প্রত্যেক নামাযের পর পড়লে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয় :
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮।]
উবাই ইবনে কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি জান কুরআনের সর্বোত্তম আয়াত কোনটি? আমি বললাম, আয়াতুল কুরসী। এরপর তিনি আমার বুকে মারলেন এবং বললেন, তোমার জ্ঞান কতইনা তৃপ্তিদায়ক!- হে আবুল মুনযির। [সহীহ মুসলিম, হা/৮১০; মিশকাত, হা/২১২২।]
ঘুমানোর সময় এটা পড়লে জ্বিন ও শয়তান থেকে হেফাজত থাকা যায় :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ আমাকে বলেছেন, তুমি শয়নকালে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার সাথে একজন হেফাযতকারী (ফেরেশতা) থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার নিকটবর্তী হবে না। [(সহীহ বুখারী, হা/৩২৭৫; মিশকাত, হা/২১২৩)]
সকাল-সন্ধ্যায় পড়লে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকা যায় :
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে। যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করবে, সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৫৪২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১০৭৩১।]
প্রত্যেক নামাযের পর পড়লে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয় :
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৭৪০৮।]
এগুলো আরশের নিচ থেকে নাযিল হয়েছে :
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাকে অন্যান্য জাতি থেকে তিনটি দিক দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ করা হয়েছে। (১) সমস্ত পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। (২) এর মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করে দেয়া হয়েছে। (৩) আমাদের কাতারসমূহকে ফেরেশতাদের কাতারের মতো করে দেয়া হয়েছে। আর সূরা বাকারার সর্বশেষ এই আয়াতগুলো আমাকে আরশের ভান্ডার থেকে দেয়া হয়েছে; আমার পূর্বে কোন নবীকে এগুলো দেয়া হয়নি। আর আমার পরেও আর কাউকে এরূপ দেয়া হবে না। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৬০৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৩৯৯।]
আয়াতগুলো পড়লে এতে যে দু‘আ রয়েছে, তা কবুল করা হবে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট অবতীর্ণ হয়ে বলেন, তুমি দুইটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করো। এই দুইটি তোমাকে দেয়া হয়েছে, অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। একটি হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং অপরটি হচ্ছে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত। তুমি এখান থেকে যাই পড়বে, তাই তোমাকে দেয়া হবে। অর্থাৎ এই আয়াতগুলোতে যে দু‘আ রয়েছে, তা কবুল করা হবে। [তিরমিযী, হা/৩২৭৬।]
যে ব্যক্তি এগুলো রাত্রে পড়বে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে :
আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে কেউ রাতে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০০৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৯১৪; আবু দাঊদ, হা/১৩৯৯; তিরমিযী, হা/২৮৮১; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১০৯; মিশকাত, হা/২১২৫।]
যথেষ্ট হওয়ার অর্থ হচ্ছে- (১) রাতের ইবাদাতের জন্য যথেষ্ট হওয়া। (২) সকল বিপদাপদ থেকে মুক্তির জন্য যথেষ্ট হওয়া। (৩) শয়তান নিকটবর্তী না হওয়ার জন্য যথেষ্ট হওয়া। (৪) পুরোপুরি সওয়াব অর্জনের জন্য যথেষ্ট হওয়া। হাদীসের বক্তব্য সবগুলো অর্থকেই অন্তর্ভুক্ত করে। সুবহানাল্লাহ!
আয়াতগুলো পড়লে শয়তান নিকটবর্তী হয় না : নুমান ইবনে বশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লেখেন এবং সেখান থেকে সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত নাযিল করেন। কোন ঘরে যদি তিন রাত্র এ আয়াতগুলো পাঠ করা হয়, তাহলে শয়তান সে ঘরের নিকটবর্তী হতে পারে না। [তিরমিযী, হা/২৮৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬০৪।]
হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাকে অন্যান্য জাতি থেকে তিনটি দিক দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ করা হয়েছে। (১) সমস্ত পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। (২) এর মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করে দেয়া হয়েছে। (৩) আমাদের কাতারসমূহকে ফেরেশতাদের কাতারের মতো করে দেয়া হয়েছে। আর সূরা বাকারার সর্বশেষ এই আয়াতগুলো আমাকে আরশের ভান্ডার থেকে দেয়া হয়েছে; আমার পূর্বে কোন নবীকে এগুলো দেয়া হয়নি। আর আমার পরেও আর কাউকে এরূপ দেয়া হবে না। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৬০৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/২৩৯৯।]
আয়াতগুলো পড়লে এতে যে দু‘আ রয়েছে, তা কবুল করা হবে :
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট অবতীর্ণ হয়ে বলেন, তুমি দুইটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করো। এই দুইটি তোমাকে দেয়া হয়েছে, অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। একটি হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং অপরটি হচ্ছে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত। তুমি এখান থেকে যাই পড়বে, তাই তোমাকে দেয়া হবে। অর্থাৎ এই আয়াতগুলোতে যে দু‘আ রয়েছে, তা কবুল করা হবে। [তিরমিযী, হা/৩২৭৬।]
যে ব্যক্তি এগুলো রাত্রে পড়বে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে :
আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে কেউ রাতে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৪০০৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৯১৪; আবু দাঊদ, হা/১৩৯৯; তিরমিযী, হা/২৮৮১; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১০৯; মিশকাত, হা/২১২৫।]
যথেষ্ট হওয়ার অর্থ হচ্ছে- (১) রাতের ইবাদাতের জন্য যথেষ্ট হওয়া। (২) সকল বিপদাপদ থেকে মুক্তির জন্য যথেষ্ট হওয়া। (৩) শয়তান নিকটবর্তী না হওয়ার জন্য যথেষ্ট হওয়া। (৪) পুরোপুরি সওয়াব অর্জনের জন্য যথেষ্ট হওয়া। হাদীসের বক্তব্য সবগুলো অর্থকেই অন্তর্ভুক্ত করে। সুবহানাল্লাহ!
আয়াতগুলো পড়লে শয়তান নিকটবর্তী হয় না : নুমান ইবনে বশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লেখেন এবং সেখান থেকে সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত নাযিল করেন। কোন ঘরে যদি তিন রাত্র এ আয়াতগুলো পাঠ করা হয়, তাহলে শয়তান সে ঘরের নিকটবর্তী হতে পারে না। [তিরমিযী, হা/২৮৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৬০৪।]
নাওয়াস ইবনে সাম‘আন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআন অনুযায়ী যারা আমল করত তাদেরকে আনা হবে। সূরা আল বাক্বারা ও সূরা আলে ইমরান অগ্রভাগে থাকবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ সূরা দুটি সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন, যা আমি কখনো ভুলিনি। তিনি বলেছিলেন, এ সূরা দুটি দু’খন্ড ছায়াদানকারী মেঘের আকারে অথবা দুটি কালো চাদরের মতো ছায়াদানকারী হিসেবে আসবে, যার মধ্যখানে থাকবে আলোর ঝলকানি অথবা এ সূরা দুটি সারিবদ্ধ দু’ঝাঁক পাখির আকারে আসবে এবং পাঠকারীর পক্ষ নিয়ে যুক্তি দিতে থাকবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮০৫।]
সূরা আলে ইমরানের শেষ রম্নকূ :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলো, তখন নবী ﷺ ঘুম থেকে উঠলেন এবং আকাশের দিকে তাকালেন। অতঃপর সূরা আলে ইমরানের শেষ রম্নকূ তিলাওয়াত করলেন। তারপর ওযু করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলেন। অন্য বর্ণনায় শেষ রম্নকূর প্রথম ৫ আয়াত পড়ার কথা বর্ণিত আছে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫; আবু দাঊদ, হা/৫৮; নাসাঈ, হা/১৭০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮; মিশকাত, হা/১১৯৫, ১২০৯।]
সূরা আলে ইমরানের শেষ রম্নকূ :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলো, তখন নবী ﷺ ঘুম থেকে উঠলেন এবং আকাশের দিকে তাকালেন। অতঃপর সূরা আলে ইমরানের শেষ রম্নকূ তিলাওয়াত করলেন। তারপর ওযু করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলেন। অন্য বর্ণনায় শেষ রম্নকূর প্রথম ৫ আয়াত পড়ার কথা বর্ণিত আছে। [সহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫; আবু দাঊদ, হা/৫৮; নাসাঈ, হা/১৭০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৮; মিশকাত, হা/১১৯৫, ১২০৯।]
প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করলে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় :
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত স্মরণ রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৯১৯; আবু দাঊদ, হা/৪৩২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৬০।]
এটা তিলাওয়াত করলে নূর লাভ হয় :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফ যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে তিলাওয়াত করবে, এটা তার জন্য সে যেখান থেকে পাঠ করেছে সেখান থেকে নিয়ে মক্কা পর্যন্ত এবং ঐ দিন থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত নূর হবে। [সিলাসিলা সহীহাহ, হা/২৬৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৫।]
জুমু‘আর রাতে-দিনে এটা তিলাওয়াত করলে নূর লাভ হয় :
জুমু‘আর রাতে সূরা কাহফ পাঠ করার অনেক ফযীলত রয়েছে। হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর রাতে সূরা কাহফ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার এবং কাবা ঘরের মধ্যে যে পরিমাণ দূরত্ব রয়েছে তত পরিমাণ নূর দান করবেন। [সুনানে দারেমী, হা/৩৪৭০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩৯২; বায়হাকী, হা/৫৭৯২।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে সূরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমু‘আ থেকে অপর জুমুআ পর্যন্ত নূর হবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩৯২; বায়হাকী, হা/৫৭৯২; জামেউল আহাদীস, হা/২৩৪৩৬।]
বনী ইসরাঈল ও যুমার :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুমানোর পূর্বে সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা যুমার পাঠ করতেন। [তিরমিযী, হা/৩৪০৫।]
আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত স্মরণ রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৯১৯; আবু দাঊদ, হা/৪৩২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭৬০।]
এটা তিলাওয়াত করলে নূর লাভ হয় :
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফ যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে তিলাওয়াত করবে, এটা তার জন্য সে যেখান থেকে পাঠ করেছে সেখান থেকে নিয়ে মক্কা পর্যন্ত এবং ঐ দিন থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত নূর হবে। [সিলাসিলা সহীহাহ, হা/২৬৫১; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৫।]
জুমু‘আর রাতে-দিনে এটা তিলাওয়াত করলে নূর লাভ হয় :
জুমু‘আর রাতে সূরা কাহফ পাঠ করার অনেক ফযীলত রয়েছে। হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর রাতে সূরা কাহফ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার এবং কাবা ঘরের মধ্যে যে পরিমাণ দূরত্ব রয়েছে তত পরিমাণ নূর দান করবেন। [সুনানে দারেমী, হা/৩৪৭০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩৯২; বায়হাকী, হা/৫৭৯২।]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে সূরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমু‘আ থেকে অপর জুমুআ পর্যন্ত নূর হবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩৯২; বায়হাকী, হা/৫৭৯২; জামেউল আহাদীস, হা/২৩৪৩৬।]
বনী ইসরাঈল ও যুমার :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুমানোর পূর্বে সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা যুমার পাঠ করতেন। [তিরমিযী, হা/৩৪০৫।]
ঘুমানোর পূর্বে এটা পড়া সুন্নাত : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যতক্ষণ পর্যন্ত সূরা সিজদা এবং সূরা মূলক তিলাওয়াত না করতেন ততক্ষণ পর্যন্ত ঘুমাতে যেতেন না। [তিরমিযী, হা/২৮৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭০০; মিশকাত, হা/২১৫৫।]
বিভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুমানোর পূর্বে বিভিন্ন সূরা পাঠ করতেন। এর ব্যাখ্যা এভাবে হবে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সূরা পাঠ করেছেন এবং সাহাবীগণ যখন যেটা শুনেছেন সেভাবে বর্ণনা করেছেন।
জুমু‘আর দিন ফজরের নামাযে এটা পড়া সুন্নাত :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা জুমু‘আ ও সূরা মুনাফিকূন পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০২৮; আবু দাউদ, হা/১০৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮০০।]
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দুই ঈদে এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা আ‘লা এবং সূরা গাশিয়াহ পাঠ করতেন। এমনকি যদি কখনো ঈদ ও জুমু‘আ একই দিনে হত তবে তিনি ঈদ ও জুমু‘আর উভয় সালাতেই এ দুটি সূরা পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৬৫; আবু দাউদ, হা/১১২৪; তিরমিযী, হা/৫৩৩; নাসাঈ, হা/১৫৬৮।]
বিভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুমানোর পূর্বে বিভিন্ন সূরা পাঠ করতেন। এর ব্যাখ্যা এভাবে হবে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সূরা পাঠ করেছেন এবং সাহাবীগণ যখন যেটা শুনেছেন সেভাবে বর্ণনা করেছেন।
জুমু‘আর দিন ফজরের নামাযে এটা পড়া সুন্নাত :
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা জুমু‘আ ও সূরা মুনাফিকূন পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০২৮; আবু দাউদ, হা/১০৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮০০।]
নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ দুই ঈদে এবং জুমু‘আর সালাতে সূরা আ‘লা এবং সূরা গাশিয়াহ পাঠ করতেন। এমনকি যদি কখনো ঈদ ও জুমু‘আ একই দিনে হত তবে তিনি ঈদ ও জুমু‘আর উভয় সালাতেই এ দুটি সূরা পাঠ করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২০৬৫; আবু দাউদ, হা/১১২৪; তিরমিযী, হা/৫৩৩; নাসাঈ, হা/১৫৬৮।]
এটা তিলাওয়াতকারীর জন্য শাফায়াত করবে : আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে, যা তার তিলাওয়াতকারীর জন্য শাফা‘আত করবে। এমনকি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। সূরাটি হলো সূরা মূলক। [তিরমিযী, হা/২৮৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৫৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০৭৫; জামেউস সগীর, হা/৩৮৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৭৪; মিশকাত, হা/২১৫৩।]
এটা প্রতি রাত্রে তিলাওয়াতকারীকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেয় : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সূরা মূলক প্রতি রাত্রে তিলাওয়াত করবে, সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে। নবী ﷺ এর যুগে আমরা এটাকে مَانِعَةٌ (মুক্তিদানকারী) হিসেবে নাম দিতাম। [সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১৪০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৭৫।]
এটা প্রতি রাত্রে তিলাওয়াতকারীকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেয় : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সূরা মূলক প্রতি রাত্রে তিলাওয়াত করবে, সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে। নবী ﷺ এর যুগে আমরা এটাকে مَانِعَةٌ (মুক্তিদানকারী) হিসেবে নাম দিতাম। [সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১৪০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৪৭৫।]
এটা কুরআনের এক চতুর্থাংশ : রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সূরা কাফিরূন কুরআনের এক চতুর্থাংশের মর্যাদা রাখে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫১০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২০৭৮।]
ঘুমানোর সময় এটা পড়লে শিরক থেকে মুক্ত থাকা যায় : ফরওয়া ইবনে নওফেল (রাঃ) বলেন, আমি নবী ﷺ এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যা আমি শোয়ার সময় পড়ব। তখন তিনি বললেন, সূরা কাফিরূন পাঠ কর; কেননা এটা শিরক থেকে মুক্তকারী। [তিরমিযী, হা/৩৪০৩; আবু দাউদ, হা/৫০৫৭]
সালাতে এটা পড়ার গুরম্নত্ব :
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দুটি সূরা দিয়ে ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭২৬।]
২. রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাকআত সুন্নাতে এবং মাগরিবের দু’রাকআত সুন্নাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৮।]
৩. জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাওয়াফের দু’রাকআত সালাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১২১৮।]
ঘুমানোর সময় এটা পড়লে শিরক থেকে মুক্ত থাকা যায় : ফরওয়া ইবনে নওফেল (রাঃ) বলেন, আমি নবী ﷺ এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যা আমি শোয়ার সময় পড়ব। তখন তিনি বললেন, সূরা কাফিরূন পাঠ কর; কেননা এটা শিরক থেকে মুক্তকারী। [তিরমিযী, হা/৩৪০৩; আবু দাউদ, হা/৫০৫৭]
সালাতে এটা পড়ার গুরম্নত্ব :
১. আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দুটি সূরা দিয়ে ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭২৬।]
২. রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের দু’রাকআত সুন্নাতে এবং মাগরিবের দু’রাকআত সুন্নাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭২৩; আবু দাউদ, হা/১২৫৮।]
৩. জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাওয়াফের দু’রাকআত সালাতে সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পড়তেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১২১৮।]
এর ভালোবাসা জান্নাতে যাওয়ার কারণ; হাদীসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে আরয করল; আমি এই সূরাকে খুব ভালোবাসি। তিনি বললেন, এর ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে। [মুসনাদে আহমাদ : ৩/১৪১, ১৫০।]
এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ : হাদীসে এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা সবাই একত্রিত হয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ শুনাব। অতঃপর যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল, তারা একত্রিত হলো এবং সূরা ইখলাস পাঠ করে শুনালেন। তিনি আরো বললেন, এই সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [মুসলিম : ৮১২; তিরমিযী, হা/২৯০০।]
বিপদাপদে উপকারী : হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হবে। [আবু দাউদ, হা/৫০৮২; তিরমিযী, হা/৩৫৭৫।]
ঘুমানোর আগে পড়ার উপর গুরম্নত্ব : রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে উকবা ইবনে আমের! আমি কি তোমাকে এমন তিনটি উত্তম সূরা শিক্ষা দিব না, যার মতো কিছু তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর এবং কুরআনেও নাযিল হয়নি। উকবা বললেন, আমি বললাম, অবশ্যই হ্যাঁ! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করম্নন। উকবা বলেন, তারপর রাসূল ﷺ আমাকে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস এ সূরাগুলো পড়ালেন। তারপর বললেন, হে উকবা! রাত্রিতে তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত নিদ্রা যেয়ো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ কর। উকবা (রাঃ) বলেন, সেদিন থেকে আমি কখনও এই আমল ছাড়িনি। [মুসনাদে আহমাদ : ৪/৪১৮, ১৫৮-৫৯।]
এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ : হাদীসে এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা সবাই একত্রিত হয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ শুনাব। অতঃপর যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল, তারা একত্রিত হলো এবং সূরা ইখলাস পাঠ করে শুনালেন। তিনি আরো বললেন, এই সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [মুসলিম : ৮১২; তিরমিযী, হা/২৯০০।]
বিপদাপদে উপকারী : হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হবে। [আবু দাউদ, হা/৫০৮২; তিরমিযী, হা/৩৫৭৫।]
ঘুমানোর আগে পড়ার উপর গুরম্নত্ব : রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে উকবা ইবনে আমের! আমি কি তোমাকে এমন তিনটি উত্তম সূরা শিক্ষা দিব না, যার মতো কিছু তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর এবং কুরআনেও নাযিল হয়নি। উকবা বললেন, আমি বললাম, অবশ্যই হ্যাঁ! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করম্নন। উকবা বলেন, তারপর রাসূল ﷺ আমাকে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস এ সূরাগুলো পড়ালেন। তারপর বললেন, হে উকবা! রাত্রিতে তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত নিদ্রা যেয়ো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ কর। উকবা (রাঃ) বলেন, সেদিন থেকে আমি কখনও এই আমল ছাড়িনি। [মুসনাদে আহমাদ : ৪/৪১৮, ১৫৮-৫৯।]
সূরা ফালাক ও নাস এর উপকারিতা ও কল্যাণ অপরিসীম এবং মানুষের জন্য এ দুটি সূরার প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। বদনজর এবং সমস্ত দৈহিক ও আত্মিক অনিষ্ট দূর করার জন্য এ সূরাদ্বয়ের কার্যকারিতা অনেক। নির্ভরযোগ্য হাদীসে উভয় সূরার অনেক ফযীলত ও বরকত বর্ণিত আছে।
ঝাড়ফুঁক করা :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মু‘আব্বিযাত’ সূরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। পরবর্তীতে তিনি যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন তখন আমি তাকে ফুঁক দিতে লাগলাম এবং তাঁর-ই হাত দিয়ে তাঁর দেহ মুছে দিতে লাগলাম। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৬; সহীহ মুসলিম, হা/২১৯২।]
শুয়ার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিয়মিত আমল :
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যেতেন তখন তিনি তার দু’হাতের তালু একত্রিত করতেন। তারপর সেখানে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আ‘উযু বিরাবিবল ফালাক, কুল আ‘উযু বিরাবিবন নাস’ এ তিন সূরা পড়ে ফুঁ দিতেন। তারপর এ দু’হাতের তালু দিয়ে তার শরীরের যতটুকু সম্ভব মাসাহ করতেন। তার মাথা ও মুখ থেকে শুরম্ন করে শরীরের সামনের অংশে তা করতেন। এমনটি রাসূল তিনবার করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; আবু দাউদ, হা/৫০৫৬; তিরমিযী, হা/৩৪০২।]
প্রত্যেক সালাতের পর পড়ার জন্য নবী নির্দেশ দিয়েছেন :
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন প্রত্যেক সালাতের পর সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করি। [সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৩৬।]
ঝাড়ফুঁক করা :
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মু‘আব্বিযাত’ সূরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। পরবর্তীতে তিনি যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন তখন আমি তাকে ফুঁক দিতে লাগলাম এবং তাঁর-ই হাত দিয়ে তাঁর দেহ মুছে দিতে লাগলাম। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৬; সহীহ মুসলিম, হা/২১৯২।]
শুয়ার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিয়মিত আমল :
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যেতেন তখন তিনি তার দু’হাতের তালু একত্রিত করতেন। তারপর সেখানে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আ‘উযু বিরাবিবল ফালাক, কুল আ‘উযু বিরাবিবন নাস’ এ তিন সূরা পড়ে ফুঁ দিতেন। তারপর এ দু’হাতের তালু দিয়ে তার শরীরের যতটুকু সম্ভব মাসাহ করতেন। তার মাথা ও মুখ থেকে শুরম্ন করে শরীরের সামনের অংশে তা করতেন। এমনটি রাসূল তিনবার করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; আবু দাউদ, হা/৫০৫৬; তিরমিযী, হা/৩৪০২।]
প্রত্যেক সালাতের পর পড়ার জন্য নবী নির্দেশ দিয়েছেন :
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন প্রত্যেক সালাতের পর সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করি। [সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৩৬।]
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহর গুণাবলীর বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এগুলো পড়ে আমরা আল্লাহর পরিচয় জানব।
قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ - تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
অর্থ : ‘‘বলুন, হে আল্লাহ! আপনিই রাজত্বের মালিক যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আবার যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন। আর যাকে চান সম্মানিত করেন আবার যাকে চান অপদস্থ করেন। আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। আপনি রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান এবং জীবিতকে মৃত হতে আর মৃতকে জীবিত হতে বের করেন। আর যাকে ইচ্ছা করেন অগণিত রিযিক দান করেন।’’
قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ - تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
অর্থ : ‘‘বলুন, হে আল্লাহ! আপনিই রাজত্বের মালিক যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আবার যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন। আর যাকে চান সম্মানিত করেন আবার যাকে চান অপদস্থ করেন। আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। আপনি রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান এবং জীবিতকে মৃত হতে আর মৃতকে জীবিত হতে বের করেন। আর যাকে ইচ্ছা করেন অগণিত রিযিক দান করেন।’’
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৬৮।] এতে রয়েছে তাওহীদের ঘোষণা ও শিরকের অসারতা, দাওয়াতের পথে ধৈর্যধারণ এবং আসহাবে কাহফের যুবকদের সম্পর্কে বর্ণনা।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا (১) قَيِّمًا لِّيُنْذِرَ بَأْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًا (২) مَاكِثِيْنَ فِيْهِ اَبَدًا (৩) وَيُنْذِرَ الَّذِيْنَ قَالُوا اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا (৪) مَا لَهُمْ بِه مِنْ عِلْمٍ وَّلَا لِاٰبَآئِهِمْؕ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْؕ اِنْ يَّقُوْلُوْنَ اِلَّا كَذِبًا (৫) فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ اِنْ لَّمْ يُؤْمِنُوْا بِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَسَفًا (৬) اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْاَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَيُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا (৭) وَاِنَّا لَجَاعِلُوْنَ مَا عَلَيْهَا صَعِيْدًا جُرُزًا (৮) اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا (৯) اِذْ اَوَى الْفِتْيَةُ اِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا (১০)
অর্থ : ১। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে তিনি বক্রতা রাখেননি। ২। একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পকে সতর্ক করার জন্য এবং মুমিনগণ, যারা সৎকর্ম করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ দেবার জন্য যে, তাদের জন্য আছে উত্তম পুরস্কার, ৩। যাতে তারা হবে চিরস্থায়ী, ৪। আর সতর্ক করার জন্য তাদেরকে যারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, ৫। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরম্নষদেরও ছিল না। তাদের মুখনিঃসৃত বাক্য কী সাংঘাতিক! তারা তো কেবল মিথ্যাই বলে। ৬। তারা এ বাণী বিশ্বাস না করলে সম্ভবত তাদের পিছনে ঘুরে তুমি দুঃখে আত্ম-বিনাশী হয়ে পড়বে। ৭। পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে সেটার শোভা করেছি মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। ৮। তার উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করব। ৯। তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে বিস্ময়কর? ১০। যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হাতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো এবং আমাদের জন্য আমাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো।
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا (১) قَيِّمًا لِّيُنْذِرَ بَأْسًا شَدِيْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًا (২) مَاكِثِيْنَ فِيْهِ اَبَدًا (৩) وَيُنْذِرَ الَّذِيْنَ قَالُوا اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا (৪) مَا لَهُمْ بِه مِنْ عِلْمٍ وَّلَا لِاٰبَآئِهِمْؕ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْؕ اِنْ يَّقُوْلُوْنَ اِلَّا كَذِبًا (৫) فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ اِنْ لَّمْ يُؤْمِنُوْا بِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَسَفًا (৬) اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْاَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَيُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا (৭) وَاِنَّا لَجَاعِلُوْنَ مَا عَلَيْهَا صَعِيْدًا جُرُزًا (৮) اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيْمِ كَانُوْا مِنْ اٰيَاتِنَا عَجَبًا (৯) اِذْ اَوَى الْفِتْيَةُ اِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا (১০)
অর্থ : ১। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে তিনি বক্রতা রাখেননি। ২। একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পকে সতর্ক করার জন্য এবং মুমিনগণ, যারা সৎকর্ম করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ দেবার জন্য যে, তাদের জন্য আছে উত্তম পুরস্কার, ৩। যাতে তারা হবে চিরস্থায়ী, ৪। আর সতর্ক করার জন্য তাদেরকে যারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, ৫। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরম্নষদেরও ছিল না। তাদের মুখনিঃসৃত বাক্য কী সাংঘাতিক! তারা তো কেবল মিথ্যাই বলে। ৬। তারা এ বাণী বিশ্বাস না করলে সম্ভবত তাদের পিছনে ঘুরে তুমি দুঃখে আত্ম-বিনাশী হয়ে পড়বে। ৭। পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে সেটার শোভা করেছি মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ। ৮। তার উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করব। ৯। তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে বিস্ময়কর? ১০। যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হাতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো এবং আমাদের জন্য আমাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো।
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহর গুণাবচক নামের বর্ণনা রয়েছে। এ আয়াতগুলোর ফযীলতের ব্যাপারে যে হাদীস এসেছে তা সহীহ নয়। সুতরাং ঐ হাদীসের আলোকে ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে নয়, বরং আল্লাহর পরিচয় জানার জন্য ও তাঁর ভালোবাসা অর্জনের জন্য আমরা এগুলো পড়ব।
هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ - هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ - هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَاءُ الْحُسْنٰى يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ -
অর্থ : ‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। গুপ্ত ও প্রকাশ্য সবই তিনি জানেন। তিনি পরম দয়ালু, পরম করম্নণাময়। তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই মালিক, তিনি পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তাদাতা, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রান্ত, তিনিই প্রবল, তিনিই মহান, আল্লাহই সর্ব প্রকার শিরক হতে পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, তিনিই স্রষ্টা, তিনিই উদ্ভাবনকারী, তিনিই আকৃতিদাতা, আর তাঁরই জন্য উত্তম নামসমূহ রয়েছে; আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে তার সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছে। তিনি মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’’
هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ - هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ - هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَاءُ الْحُسْنٰى يُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ -
অর্থ : ‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। গুপ্ত ও প্রকাশ্য সবই তিনি জানেন। তিনি পরম দয়ালু, পরম করম্নণাময়। তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই মালিক, তিনি পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তাদাতা, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রান্ত, তিনিই প্রবল, তিনিই মহান, আল্লাহই সর্ব প্রকার শিরক হতে পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, তিনিই স্রষ্টা, তিনিই উদ্ভাবনকারী, তিনিই আকৃতিদাতা, আর তাঁরই জন্য উত্তম নামসমূহ রয়েছে; আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে তার সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছে। তিনি মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’’
এ ছোট্ট সূরাটিতে দুনিয়ার বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে এবং মানুষকে সতর্কবাণী শুনানো হয়েছে। তাই আমাদের উচিত এ সূরাটি পড়ে শিক্ষা অর্জন করা এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় পড়ে আখেরাতকে না ভুলা।
﷽
--أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ ‐ حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ ‐ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ ‐ ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ ‐ كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْيَقِيْنِ ‐ لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ ‐ ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ ‐ ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ
অর্থ : ১. প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে, ২. এমনকি তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাও। ৩. এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা অচিরেই জেনে নেবে, ৪. অতঃপর কখনও উচিত নয়। তোমরা অচিরেই জেনে নেবে। ৫. কখনই নয়; যদি তোমরা নিশ্চিত জানতে। ৬. তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে, ৭. অতঃপর তোমরা তা অবশ্যই দেখবে স্বচক্ষে, ৮. এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে।
﷽
--أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ ‐ حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ ‐ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ ‐ ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ ‐ كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْيَقِيْنِ ‐ لَتَرَوُنَّ الْجَحِيْمَ ‐ ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِيْنِ ‐ ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ
অর্থ : ১. প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে, ২. এমনকি তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাও। ৩. এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা অচিরেই জেনে নেবে, ৪. অতঃপর কখনও উচিত নয়। তোমরা অচিরেই জেনে নেবে। ৫. কখনই নয়; যদি তোমরা নিশ্চিত জানতে। ৬. তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে, ৭. অতঃপর তোমরা তা অবশ্যই দেখবে স্বচক্ষে, ৮. এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হবে।
এ সূরাটি ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য সমন্বিত বাণীর একটি অতুলনীয় নমুনা। কয়েকটা মাপজোকা শব্দের মধ্যে গভীর অর্থের এমন এক ভান্ডার রেখে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মানুষের সাফল্য ও কল্যাণের এবং তার ধ্বংস ও সর্বনাশের পথ বর্ণনা করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি অত্যন্ত গুরম্নত্বপূর্ণ সূরা। তারা দুজন যখন পরস্পর মিলিত হতেন, তখন তারা একজন অপরজনকে সূরা আসর না শুনানো এবং সালাম বিনিময় না করা পর্যন্ত পরস্পর থেকে বিদায় নিতেন না। [তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত : ৫১২৪।]
﷽
وَالْعَصْرِ (১) اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ (২) اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (৩)
অর্থ : (১) কসম যুগের,১ (২) নিশ্চয় মানুষ২ ক্ষতিগ্রস্ত;৩ (৩) কিন্তু তারা নয়,৪ যারা বিশ্বাস স্থাপন করে৫ এবং সৎকাজ করে;৬ আর যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় সত্যের৭ এবং উপদেশ দেয় সবরের।৮
﷽
وَالْعَصْرِ (১) اِنَّ الْاِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ (২) اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (৩)
অর্থ : (১) কসম যুগের,১ (২) নিশ্চয় মানুষ২ ক্ষতিগ্রস্ত;৩ (৩) কিন্তু তারা নয়,৪ যারা বিশ্বাস স্থাপন করে৫ এবং সৎকাজ করে;৬ আর যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় সত্যের৭ এবং উপদেশ দেয় সবরের।৮
এ সূরায় তাওহীদের শিক্ষা রয়েছে এবং কুফর ও শিরকের সাথে আপোষ না করে খাটি তাওহীদের উপর আমাদের প্রতিষ্ঠিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
﷽
قُلْ يَاۤ أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ -‐ لَاۤ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ وَلَاۤ أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ أَعْبُدُ ‐ وَلَاۤ أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ وَلَاۤ أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ أَعْبُدُ ‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি, যিনি পরম করম্নণাময় ও অতি দয়ালু- ১. (হে নবী!) আপনি বলে দিন, হে কাফিররা! ২. আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৪. এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৬. (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের কর্মফল তোমাদের জন্য আর আমার কর্মফল আমার জন্য।
﷽
قُلْ يَاۤ أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ -‐ لَاۤ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ وَلَاۤ أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ أَعْبُدُ ‐ وَلَاۤ أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ وَلَاۤ أَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ أَعْبُدُ ‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ
আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি, যিনি পরম করম্নণাময় ও অতি দয়ালু- ১. (হে নবী!) আপনি বলে দিন, হে কাফিররা! ২. আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৪. এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৬. (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের কর্মফল তোমাদের জন্য আর আমার কর্মফল আমার জন্য।
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ শোয়ার সময় এ সূরাটি পড়তেন। এ সূরার মধ্যে আল্লাহর অসীম কুদরত, তার সৃষ্টিজগতের রহস্য, মানব সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়, জান্নাতের নিয়ামত, জাহান্নামের শাস্তি, পরকালের বিচার ফায়সালা এবং পরকাল নিশ্চিত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
﷽
الٓمّٓ (১) تَنْزِيْلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيْهِ مِنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ (২) اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اَتَاهُمْ مِّنْ نَّذِيْرٍ مِّنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ (৩) اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِه مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا شَفِيْعٍ اَفَلَا تَتَذَكَّرُوْنَ (৪) يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ (৫) ذٰلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ (৬) اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍ (৭) ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهٗ مِنْ سُلَالَةٍ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ (৮) ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيْهِ مِنْ رُّوْحِه وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ (৯) وَقَالُوْاۤ اَاِذَا ضَلَلْنَا فِي الْاَرْضِ اَاِنَّا لَفِيْ خَلْقٍ جَدِيْدٍ ۢبَلْ هُمْ بِلِقَآءِ رَبِّهِمْ كَافِرُوْنَ (১০) قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِيْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ (১১)
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْ رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ (১২) وَلَوْ شِئْنَا لَاٰتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّيْ لَاَمْلَاَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ (১৩) فَذُوْقُوْا بِمَا نَسِيْتُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاۤ اِنَّا نَسِيْنَاكُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ (১৪) اِنَّمَا يُؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ (১৫) تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ (১৬) فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ (১৭) اَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا لَّا يَسْتَوُوْنَ (১৮) اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوٰى نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ (১৯) وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه تُكَذِّبُوْنَ (২০)
وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ (২১) وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّه ثُمَّ اَعْرَضَ عَنْهَاۤ اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ (২২) وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ فَلَا تَكُنْ فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْ لِّقَآئِه وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ (২৩) وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوْا وَكَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يُوقِنُوْنَ (২৪) اِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ (২৫) اَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ يَمْشُوْنَ فِيْ مَسَاكِنِهِمْ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ اَفَلَا يَسْمَعُوْنَ (২৬) اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِه زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ (২৭) وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْفَتْحُ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (২৮) قُلْ يَوْمَ الْفَتْحِ لَا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِيْمَانُهُمْ وَلَا هُمْ يُنْظَرُوْنَ (২৯) فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَانْتَظِرْ اِنَّهُمْ مُّنْتَظِرُوْنَ (৩০
সূরা সিজদার অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. আলিফ- লাম- মীম। ২. এ কিতাব বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই। ৩. তারা কি বলে যে, এটা তো সে নিজে রচনা করেছে? বরং এটা তো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্য, যেন তুমি এমন লোকদেরকে সাবধান করতে পার, যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। হয়তো তারা সরল সঠিক পথ লাভ করবে। ৪. আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ, জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন আবেদনকারী নেই তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? ৫. তিনি আসমানসমূহ থেকে জমিন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন, অবশেষে তা তার নিকট এমন একদিনে পৌঁছবে, যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। ৬. তিনি অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্যের পরিজ্ঞাত প্রতাপশালী, পরম দয়ালু। ৭. যিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে অতি সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি দিয়ে। ৮. তারপর তার বংশধরকে সৃষ্টি করেছেন নগণ্য পানির সারাংশ থেকে। ৯. পুনরায় তিনি তাকে সুগঠিত করেছেন এবং তাতে নিজের পক্ষ থেকে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন, আর তোমাদেরকে দান করেছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। ১০. আর তারা বলে, আমরা যখন মাটিতে মিশে শেষ হয়ে যাব, তখন কি আবার আমাদেরকে নতুন করে সৃষ্টি করা হবে? বস্তুত তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করে। ১১. তুমি বলো, তোমাদের জন্য নিয়োজিত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের মৃত্যু ঘটাবে, তারপর তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। ১২. আর যদি তুমি দেখতে! যখন পাপীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে স্বীয় মাথা নিচু করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম, এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ করম্নন; আমরা নেক কাজ করব। আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি। ১৩. আমি যদি ইচ্ছা করতাম, তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সরল সঠিক পথ দান করতাম, কিন্তু আমার এ বাণী নির্ধারিত হয়ে রয়েছে যে, আমি অবশ্যই জিন ও মানুষ সবাইকে দিয়েই জাহান্নাম পরিপূর্ণ করব। ১৪. অতএব আজকের এ দিনের সাক্ষাৎ লাভের কথা তোমাদের ভুলে থাকার কারণে তোমরা শাস্তি ভোগ করো, আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম। আর তোমরা যা করতে, তার জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাকো। ১৫. কেবল তারাই আমার নিদর্শনগুলোর প্রতি ঈমান রাখে, যাদেরকে আমার আয়াতসমূহ যখন স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং স্বীয়প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, আর তারা অহঙ্কার করে না। ১৬. তাদের পার্শ্বসমূহ (অঙ্গসমূহ) বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। ১৭. কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ। ১৮. যে ব্যক্তি ঈমানদার সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে পাপাচারী? কখনই তারা সমান হতে পারে না। ১৯. অতএব যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎ কাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের কাজকর্মের প্রতিদানস্বরূপ চিরকালের বাসস্থান জান্নাত। ২০. আর যারা পাপ কাজ করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, দোযখের যে আযাব তোমরা মিথ্যা বলতে আজ তা ভোগ করো। ২১. আমি নিশ্চয় তাদেরকে সামান্য শাস্তি ভোগ করাব মহাশাস্তির পূর্বে, যাতে তারা ফিরে আসে। ২২. ঐ ব্যক্তির চাইতে অধিক অত্যাচারী কে যাকে তার প্রতিপালকের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু সে তা থেকে বিমুখ হয়? আমি অবশ্যই পাপীদের থেকে প্রতিশোধ নেব। ২৩. আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছি। অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ সম্পর্কে কোন সন্দেহ করবে না। আর আমি তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথপ্রদর্শনকারী করেছিলাম। ২৪. আর আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচন করেছিলাম, যারা আমার আদেশ অনুযায়ী হেদায়াত করত, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত। ২৫. তারা যে বিষয়ে পরস্পরের মধ্যে দ্বিমত করত, অবশ্যই তোমার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। ২৬. এটাও কি তাদেরকে পথ দেখাল না যে, আমি তো তাদের আগে কত মানব সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদের বাসস্থানসমূহের মধ্যে এরা যাতায়াত করে থাকে? নিশ্চয় এতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শন। তবে কি তারা শোনবে না। ২৭. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ও পতিত জমিনে পানি প্রবাহিত করি, তারপর তার সাহায্যে শস্য উৎপাদন করি, তা থেকে খায় তাদের চতুষ্পদ জন্তুরা এবং তারা নিজেরাও? তবে কি তারা দেখে না? ২৮. আর তারা বলে, এ ফায়সালা কখন হবে যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক? ২৯. তুমি বলে দাও, সেই ফায়সালার দিনে কাফিরদের ঈমান তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে কোন অবকাশও দেয়া হবে না। ৩০. অতএব আপনি তাদের হতে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং অপেক্ষায় থাকুন, তারাও অপেক্ষায় রয়েছে।
﷽
الٓمّٓ (১) تَنْزِيْلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيْهِ مِنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ (২) اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اَتَاهُمْ مِّنْ نَّذِيْرٍ مِّنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ (৩) اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِه مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا شَفِيْعٍ اَفَلَا تَتَذَكَّرُوْنَ (৪) يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ (৫) ذٰلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ (৬) اَلَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍ (৭) ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهٗ مِنْ سُلَالَةٍ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ (৮) ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيْهِ مِنْ رُّوْحِه وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ (৯) وَقَالُوْاۤ اَاِذَا ضَلَلْنَا فِي الْاَرْضِ اَاِنَّا لَفِيْ خَلْقٍ جَدِيْدٍ ۢبَلْ هُمْ بِلِقَآءِ رَبِّهِمْ كَافِرُوْنَ (১০) قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِيْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ (১১)
وَلَوْ تَرٰۤى اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْ رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ (১২) وَلَوْ شِئْنَا لَاٰتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّيْ لَاَمْلَاَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ (১৩) فَذُوْقُوْا بِمَا نَسِيْتُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَاۤ اِنَّا نَسِيْنَاكُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ (১৪) اِنَّمَا يُؤْمِنُ بِاٰيَاتِنَا الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ (১৫) تَتَجَافٰى جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ (১৬) فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍ جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ (১৭) اَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا لَّا يَسْتَوُوْنَ (১৮) اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوٰى نُزُلًا ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ (১৯) وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه تُكَذِّبُوْنَ (২০)
وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰى دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ (২১) وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّه ثُمَّ اَعْرَضَ عَنْهَاۤ اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ (২২) وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَى الْكِتَابَ فَلَا تَكُنْ فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْ لِّقَآئِه وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِيْۤ اِسْرَآئِيْلَ (২৩) وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوْا وَكَانُوْا بِاٰيَاتِنَا يُوقِنُوْنَ (২৪) اِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ (২৫) اَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ يَمْشُوْنَ فِيْ مَسَاكِنِهِمْ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ اَفَلَا يَسْمَعُوْنَ (২৬) اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَى الْاَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِه زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ (২৭) وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْفَتْحُ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (২৮) قُلْ يَوْمَ الْفَتْحِ لَا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اِيْمَانُهُمْ وَلَا هُمْ يُنْظَرُوْنَ (২৯) فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَانْتَظِرْ اِنَّهُمْ مُّنْتَظِرُوْنَ (৩০
সূরা সিজদার অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. আলিফ- লাম- মীম। ২. এ কিতাব বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই। ৩. তারা কি বলে যে, এটা তো সে নিজে রচনা করেছে? বরং এটা তো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্য, যেন তুমি এমন লোকদেরকে সাবধান করতে পার, যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। হয়তো তারা সরল সঠিক পথ লাভ করবে। ৪. আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ, জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন আবেদনকারী নেই তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? ৫. তিনি আসমানসমূহ থেকে জমিন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন, অবশেষে তা তার নিকট এমন একদিনে পৌঁছবে, যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। ৬. তিনি অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্যের পরিজ্ঞাত প্রতাপশালী, পরম দয়ালু। ৭. যিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে অতি সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি দিয়ে। ৮. তারপর তার বংশধরকে সৃষ্টি করেছেন নগণ্য পানির সারাংশ থেকে। ৯. পুনরায় তিনি তাকে সুগঠিত করেছেন এবং তাতে নিজের পক্ষ থেকে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন, আর তোমাদেরকে দান করেছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। ১০. আর তারা বলে, আমরা যখন মাটিতে মিশে শেষ হয়ে যাব, তখন কি আবার আমাদেরকে নতুন করে সৃষ্টি করা হবে? বস্তুত তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করে। ১১. তুমি বলো, তোমাদের জন্য নিয়োজিত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের মৃত্যু ঘটাবে, তারপর তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে। ১২. আর যদি তুমি দেখতে! যখন পাপীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে স্বীয় মাথা নিচু করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম, এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ করম্নন; আমরা নেক কাজ করব। আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি। ১৩. আমি যদি ইচ্ছা করতাম, তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সরল সঠিক পথ দান করতাম, কিন্তু আমার এ বাণী নির্ধারিত হয়ে রয়েছে যে, আমি অবশ্যই জিন ও মানুষ সবাইকে দিয়েই জাহান্নাম পরিপূর্ণ করব। ১৪. অতএব আজকের এ দিনের সাক্ষাৎ লাভের কথা তোমাদের ভুলে থাকার কারণে তোমরা শাস্তি ভোগ করো, আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম। আর তোমরা যা করতে, তার জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাকো। ১৫. কেবল তারাই আমার নিদর্শনগুলোর প্রতি ঈমান রাখে, যাদেরকে আমার আয়াতসমূহ যখন স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং স্বীয়প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, আর তারা অহঙ্কার করে না। ১৬. তাদের পার্শ্বসমূহ (অঙ্গসমূহ) বিছানা থেকে এমনভাবে আলাদা হয়ে যায় যে, তারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করতে থাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। ১৭. কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ। ১৮. যে ব্যক্তি ঈমানদার সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে পাপাচারী? কখনই তারা সমান হতে পারে না। ১৯. অতএব যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎ কাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের কাজকর্মের প্রতিদানস্বরূপ চিরকালের বাসস্থান জান্নাত। ২০. আর যারা পাপ কাজ করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, দোযখের যে আযাব তোমরা মিথ্যা বলতে আজ তা ভোগ করো। ২১. আমি নিশ্চয় তাদেরকে সামান্য শাস্তি ভোগ করাব মহাশাস্তির পূর্বে, যাতে তারা ফিরে আসে। ২২. ঐ ব্যক্তির চাইতে অধিক অত্যাচারী কে যাকে তার প্রতিপালকের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু সে তা থেকে বিমুখ হয়? আমি অবশ্যই পাপীদের থেকে প্রতিশোধ নেব। ২৩. আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছি। অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ সম্পর্কে কোন সন্দেহ করবে না। আর আমি তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথপ্রদর্শনকারী করেছিলাম। ২৪. আর আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচন করেছিলাম, যারা আমার আদেশ অনুযায়ী হেদায়াত করত, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত। ২৫. তারা যে বিষয়ে পরস্পরের মধ্যে দ্বিমত করত, অবশ্যই তোমার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। ২৬. এটাও কি তাদেরকে পথ দেখাল না যে, আমি তো তাদের আগে কত মানব সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদের বাসস্থানসমূহের মধ্যে এরা যাতায়াত করে থাকে? নিশ্চয় এতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শন। তবে কি তারা শোনবে না। ২৭. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি শুষ্ক ও পতিত জমিনে পানি প্রবাহিত করি, তারপর তার সাহায্যে শস্য উৎপাদন করি, তা থেকে খায় তাদের চতুষ্পদ জন্তুরা এবং তারা নিজেরাও? তবে কি তারা দেখে না? ২৮. আর তারা বলে, এ ফায়সালা কখন হবে যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক? ২৯. তুমি বলে দাও, সেই ফায়সালার দিনে কাফিরদের ঈমান তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে কোন অবকাশও দেয়া হবে না। ৩০. অতএব আপনি তাদের হতে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং অপেক্ষায় থাকুন, তারাও অপেক্ষায় রয়েছে।
সূরা ইয়াসীনের ফযীলতের ব্যাপারে অনেক হাদীস পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলোর সনদ সহীহ নয়। তবে এই সূরাটিতে অনেক গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ সূরায় গাফিল মানুষদেরকে সতর্ক করা হয়েছে এবং দাওয়াতী কাজের নিয়ম, জাহান্নামের ভয় ও তার শাস্তি, জান্নাতের নিয়ামত, আল্লাহর অসীম কুদরত, পরকালীন জীবনের বাস্তবতা ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এ সূরাটি পড়ে আমরা আমাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করব।
﷽
يٰسٓ (১) وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ (২) اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ (৩) عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ (৪) تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ (৫) لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُوْنَ (৬) لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلٰۤى اَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ (৭) اِنَّا جَعَلْنَا فِيْۤ اَعْنَاقِهِمْ اَغْلَالًا فَهِيَ اِلَى الْاَذْقَانِ فَهُمْ مُّقْمَحُوْنَ (৮) وَجَعَلْنَا مِنْ ۢبَيْنِ اَيْدِيْهِمْ سَدًّا وَّمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَاَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لَا يُبْصِرُوْنَ (৯) وَسَوَآءٌ عَلَيْهِمْ اَاَنْذَرْتَهُمْ اَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ (১০) اِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَّاَجْرٍ كَرِيْمٍ (১১) اِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتٰى وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوْا وَاٰثَارَهُمْ وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنَاهُ فِيْۤ اِمَامٍ مُّبِيْنٍ (১২)
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلًا اَصْحَابَ الْقَرْيَةِ اِذْ جَآءَهَا الْمُرْسَلُوْنَ (১৩) اِذْ اَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوْهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوْاۤ اِنَّا اِلَيْكُمْ مُّرْسَلُوْنَ (১৪) قَالُوْا مَاۤ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَمَاۤ اَنْزَلَ الرَّحْمٰنُ مِنْ شَيْءٍ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا تَكْذِبُوْنَ (১৫) قَالُوْا رَبُّنَا يَعْلَمُ اِنَّاۤ اِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُوْنَ (১৬) وَمَا عَلَيْنَاۤ اِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ (১৭) قَالُوْاۤ اِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ (১৮) قَالُوْا طَآئِرُكُمْ مَّعَكُمْ اَئِنْ ذُكِّرْتُمْ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ (১৯) وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ (২০) اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ (২১) وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ (২২) اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ (২৩) اِنِّيْۤ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ (২৪) اِنِّيْۤ اٰمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُوْنِ (২৫) قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ (২৬) بِمَا غَفَرَ لِيْ رَبِّيْ وَجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُكْرَمِيْنَ (২৭)
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰى قَوْمِه مِنْ ۢبَعْدِه مِنْ جُنْدٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَمَا كُنَّا مُنْزِلِيْنَ (২৮) اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ خَامِدُوْنَ (২৯) يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ (৩০) اَلَمْ يَرَوْا كَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ اَنَّهُمْ اِلَيْهِمْ لَا يَرْجِعُوْنَ (৩১) وَاِنْ كُلٌّ لَّمَّا جَمِيْعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُوْنَ (৩২) وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَرْضُ الْمَيْتَةُ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَأْكُلُوْنَ (৩৩) وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ (৩৪) لِيَأْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِه وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ (৩৫) سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَرْضُ وَمِنْ اَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُوْنَ (৩৬) وَاٰيَةٌ لَّهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَاِذَا هُمْ مُّظْلِمُوْنَ (৩৭) وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ (৩৮) وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتّٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ (৩৯) لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ (৪০)
وَاٰيَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ (৪১) وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِه مَا يَرْكَبُوْنَ (৪২) وَاِنْ نَّشَأْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِيْخَ لَهُمْ وَلَا هُمْ يُنْقَذُوْنَ (৪৩) اِلَّا رَحْمَةً مِّنَّا وَمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ (৪৪) وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّقُوْا مَا بَيْنَ اَيْدِيْكُمْ وَمَا خَلْفَكُمْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ (৪৫) وَمَا تَأْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيَاتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ (৪৬) وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنُطْعِمُ مَنْ لَّوْ يَشَآءُ اللهُ اَطْعَمَهٗۤ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ (৪৭) وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْوَعْدُ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (৪৮) مَا يَنْظُرُوْنَ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً تَأْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُوْنَ (৪৯) فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ تَوْصِيَةً وَّلَاۤ اِلٰۤى اَهْلِهِمْ يَرْجِعُوْنَ (৫০) وَنُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَاِذَا هُمْ مِّنَ الْاَجْدَاثِ اِلٰى رَبِّهِمْ يَنْسِلُوْنَ (৫১) قَالُوْا يَا وَيْلَنَا مَنْ ۢبَعَثَنَا مِنْ مَّرْقَدِنَا هٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُوْنَ (৫২) اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ جَمِيْعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُوْنَ (৫৩) فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَّلَا تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ (৫৪)
اِنَّ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فَاكِهُوْنَ (৫৫) هُمْ وَاَزْوَاجُهُمْ فِيْ ظِلَالٍ عَلَى الْاَرَآئِكِ مُتَّكِئُوْنَ (৫৬) لَهُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّلَهُمْ مَّا يَدَّعُوْنَ (৫৭) سَلَامٌ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِيْمٍ (৫৮) وَامْتَازُوا الْيَوْمَ اَيُّهَا الْمُجْرِمُوْنَ (৫৯) اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ (৬০) وَاَنِ اعْبُدُوْنِيْ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ (৬১) وَلَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيْرًا اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ (৬২) هٰذِه جَهَنَّمُ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ (৬৩) اِصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ (৬৪) اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰۤى اَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَاۤ اَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ (৬৫) وَلَوْ نَشَآءُ لَطَمَسْنَا عَلٰۤى اَعْيُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَاَنّٰى يُبْصِرُوْنَ (৬৬) وَلَوْ نَشَآءُ لَمَسَخْنَاهُمْ عَلٰى مَكَانَتِهِمْ فَمَا اسْتَطَاعُوْا مُضِيًّا وَّلَا يَرْجِعُوْنَ (৬৭) وَمَنْ نُّعَمِّرْهُ نُنَكِّسْهُ فِي الْخَلْقِ اَفَلَا يَعْقِلُوْنَ (৬৮) وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهٗۤ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ وَّقُرْاٰنٌ مُّبِيْنٌ (৬৯) لِيُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَيًّا وَّيَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَى الْكَافِرِيْنَ (৭০)
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُوْنَ (৭১) وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَأْكُلُوْنَ (৭২) وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ (৭৩) وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنْصَرُوْنَ (৭৪) لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ نَصْرَهُمْ وَهُمْ لَهُمْ جُنْدٌ مُّحْضَرُوْنَ (৭৫) فَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْ اِنَّا نَعْلَمُ مَا يُسِرُّوْنَ وَمَا يُعْلِنُوْنَ (৭৬) اَوَلَمْ يَرَ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ (৭৭) وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّنَسِيَ خَلْقَهٗ قَالَ مَنْ يُّحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيْمٌ (৭৮) قُلْ يُحْيِيْهَا الَّذِيْۤ اَنْشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيْمٌ (৭৯) اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ (৮০) اَوَلَيْسَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِقَادِرٍ عَلٰۤى اَنْ يَّخْلُقَ مِثْلَهُمْ بَلٰى وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ (৮১) اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَا اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُولَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ (৮২) فَسُبْحَانَ الَّذِيْ بِيَدِه مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَّاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ (৮৩)
সূরা ইয়াসীনের অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. ইয়া-সীন। ২. কসম জ্ঞানগর্ভ কুরআনের। ৩. নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। ৪. আপনি সরল-সঠিক পথের উপর রয়েছেন। ৫. এ কুরআন নাযিল করা হয়েছে প্রবল প্রতাপশালী পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে। ৬. যেন আপনি সতর্ক করতে পারেন এমন লোকদেরকে, যাদের পূর্বপুরম্নষদেরকে সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফিল রয়ে গেছে। ৭. (তারা আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারণে) তাদের অধিকাংশের জন্য (তাদের অন্তরে সীল লাগিয়ে দেয়ার) বাণী অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তারা ঈমান আনবে না। ৮. আমি তাদের গলায় শৃঙ্খল পরিয়েছি, তা তাদের চিবুক পর্যন্ত ঝুলে রয়েছে। ফলে তারা মাথা খাড়া করে রেখেছে। ৯. আর আমি তাদের সামনে ও পেছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি এবং তাদেরকে ঢেকে দিয়েছি। ফলে তারা দেখতে পায় না। ১০. আপনি তাদেরকে সতর্ক করেন কিংবা না করেন, তাদের কাছে উভয়ই সমান, তারা ঈমান আনবে না। ১১. আপনি কেবল তাকেই সতর্ক করতে পারেন, যে উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে। অতএব আপনি তাকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন ক্ষমা ও উত্তম পুরস্কারের। ১২. আমি মৃতদেরকে জীবিত করি এবং আমি লিপিবদ্ধ করে রাখি যা তারা পূর্বে প্রেরণ করে, আর যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। ১৩. আপনি তাদের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ এক জনপদের অধিবাসীদের ঘটনা বর্ণনা করম্নন, যখন তাদের কাছে কয়েকজন রাসূল এসেছিলেন। ১৪. যখন আমি তাদের কাছে দু’জন রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তখন তারা তাদেরকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করল। অতঃপর আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় এক জনের মাধ্যমে। তারা বলল, আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। ১৫. জনপদবাসী বলল, তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ। আর দয়াময় আল্লাহ তো কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা শুধু মিথ্যাই বলে যাচ্ছ। ১৬. রাসূলগণ বললেন, আমাদের প্রতিপালক জানেন, আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। ১৭. আর আমাদের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টরূপে প্রচার করা। ১৮. তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে অকল্যাণের কারণ মনে করছি। তোমরা যদি (প্রচার কাজ হতে) বিরত না হও, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পাথর মেরে ধ্বংস করে ফেলব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে। ১৯. রাসূলগণ বললেন, তোমাদের অশুভ লক্ষণ তোমাদেরই সাথে রয়েছে। এটা কি এজন্য যে, আমরা তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়েছি? বরং তোমরা তো এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। ২০. অতঃপর শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে আসলো। তারপর সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। ২১. তোমরা অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও রয়েছে সৎ পথে। ২২. আর আমার কি হয়েছে যে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে? ২৩. আমি কি তাঁকে ছেড়ে অন্যান্য ইলাহকে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না। ২৪. এরূপ করলে আমি তো প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে পতিত হব। ২৫. আমি তো তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি। অতএব তোমরা আমার কথা শোনো। ২৬. তাকে বলা হলো- ‘‘জান্নাতে প্রবেশ করো।’’ সে বলল, আহা! যদি আমার সম্প্রদায় জানতে পারত- ২৭. যে, আমার প্রতিপালক কেন আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন! ২৮. তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের উপর আকাশ থেকে কোন বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং আমি (বাহিনী) অবতরণকারীও নই। ২৯. তা ছিল কেবলমাত্র এক মহা গর্জন। ফলে সাথে সাথে তারা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। ৩০. আফসোস! সে বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনও এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। ৩১. তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের পূর্বে কত মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি, যারা তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না? ৩২. আর তাদের সবাইকে অবশ্যই একত্রে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে। ৩৩. আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তারা তা থেকে খেয়ে থাকে। ৩৪. আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং তাতে প্রবাহিত করি ঝর্ণাসমূহ। ৩৫. যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? ৩৬. পবিত্র তিনি, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না তাদের প্রত্যেককে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। ৩৭. আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো রাত। আমি তা থেকে দিনকে অপসারণ করি, ফলে সাথে সাথেই তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ৩৮. আর সূর্য নিজ কক্ষ পথে চলতে থাকে। এটা মহাপ্রতাপশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। ৩৯. আমি চাঁদের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর, এমনকি তা (ভ্রমণ শেষে) খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে ফিরে আসে। ৪০. সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চাঁদকে ধরে ফেলে এবং রাতও দিনের পূর্বে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে বিচরণ করে। ৪১. আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের সন্তানসন্ততিকে ভরা নৌকায় আরোহণ করিয়েছি। ৪২. এবং তাদের জন্য আমি এর অনুরূপ আরো যানবাহন সৃষ্টি করেছি যাতে তারা আরোহণ করে। ৪৩. আর আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে ডুবিয়ে দিতে পারি, তখন কেউ তাদের আর্তনাদে সাড়া দেবে না এবং তাদেরকে উদ্ধারও করা হবে না। ৪৪. কিন্তু আমার পক্ষ থেকে রহমত ও কিছু সময়ের জন্য জীবনোপকরণ দেয়ার কারণে তা করি না। ৪৫. যখন তাদেরকে বলা হয়,
তোমরা ভয় করো যা তোমাদের সামনে রয়েছে এবং যা তোমাদের পেছনে আছে, যেন তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়। ৪৬. আর তাদের কাছে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির মধ্য হতে যখনই কোন নিদর্শন আসে তখনই তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ৪৭. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করো, তখন কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে যাকে খাওয়াতে পারতেন, আমরা তাকে কেন খাওয়াব? তোমরা তো রয়েছ প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে। ৪৮. তারা বলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে বলো এ ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে? ৪৯. তারা কেবল একটা বিকট শব্দের অপেক্ষায় রয়েছে, যা তাদেরকে পাকড়াও করবে এমন অবস্থায় যে, তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে। ৫০. তখন তারা ওসিয়ত করতেও সমর্থ হবে না এবং নিজ পরিবারের লোকদের কাছেও ফিরে যেতে পারবে না। ৫১. শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের প্রতিপালকের দিকে ছুটে যাবে। ৫২. তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠাল? দয়াময় আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন। ৫৩. এটা তো হবে একটা ভীষণ শব্দ মাত্র, ফলে তৎক্ষণাৎ তারা সবাই আমার সামনে উপস্থিত হবে। ৫৪. আজকের দিনে কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল প্রদান করা হবে, যা তোমরা করতে। ৫৫. নিঃসন্দেহে জান্নাতবাসীরা এদিন আনন্দে মশগুল থাকবে। ৫৬. তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়াতলে সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। ৫৭. সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিভিন্নরকম ফলমূল এবং যা কিছু তারা চাইবে তা সবই। ৫৮. তাদেরকে বলা হবে ‘সালাম’, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে। ৫৯. আর বলা হবে, হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। ৬০. হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করিনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? ৬১. আর আমার ইবাদাত করো, এটাই সরল-সঠিক পথ। ৬২. আর সে (শয়তান) তো তোমাদের মধ্য থেকে বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝ না? ৬৩. এ তো সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো। ৬৪. তোমরা যে কুফরী করতে, তার জন্য আজ তোমরা এতে প্রবেশ করো। ৬৫. আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা-গুলো সাক্ষ্য দেবে, যা তারা করত সে সম্পর্কে। ৬৬. আর আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত করে দিতে পারতাম, অতঃপর তারা পথ চলতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত? ৬৭. আর আমি যদি ইচ্ছা করতাম, তবে তাদের আকৃতি পরিবর্তন করে দিতাম তাদের নিজ স্থানেই, ফলে তারা সামনেও এগুতে পারত না এবং পিছনেও ফিরে যেতে পারত না। ৬৮. আর আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনি। তবুও কি তারা বুঝে না? ৬৯. আমি তাঁকে (রাসূলকে) কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তাঁর জন্য শোভনীয়ও নয়। এটা তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। ৭০. যাতে তিনি সতর্ক করেন এমন ব্যক্তিকে যে জীবিত এবং যাতে কাফিরদের উপর প্রমাণ সাব্যস্ত হয়। ৭১. তারা কি দেখে না যে, আমার হাতে তৈরি জিনিসগুলোর মধ্যে আমি তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি চতুষ্পদ জন্তু? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়। ৭২. আর আমি এগুলোকে তাদের অনুগত করে দিয়েছি। ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা খায়। ৭৩. তাদের জন্য এগুলোর মধ্যে রয়েছে আরও অনেক উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। তবুও কি তারা শুকরিয়া আদায় করবে না? ৭৪. তারা আল্লাহ ব্যতীত অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে এ আশায় যে, তাদেরকে অনুগ্রহ করা হবে। ৭৫. এসব ইলাহ তাদের কোন প্রকার সাহায্য করতে সক্ষম নয়; অথচ এরা তাদের সৈন্য হিসেবে উপস্থাপিত হবে। ৭৬. অতএব তাদের কথা যেন আপনাকে দুঃখ না দেয়। অবশ্যই আমি জানি যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে। ৭৭. মানুষ কি লক্ষ্য করে না যে, আমি তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি? অতঃপর সে হয়ে পড়ল প্রকাশ্য তর্ককারী। ৭৮. আর সে আমার সম্পর্কে উদাহরণ বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের জন্মের কথা ভুলে যায়। সে বলে, কে জীবিত করবে এ হাড়গুলোকে যখন সেগুলো পঁচে গলে যাবে? ৭৯. আপনি বলুন! তিনিই এগুলোকে আবার জীবিত করবেন, যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। ৮০. যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন। অতঃপর তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও। ৮১. আর যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি সক্ষম নন এদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে? হ্যাঁ, তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। ৮২. বস্তুত তাঁর সৃষ্টিকার্য এরূপ যে, যখন তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে বলেন, ‘‘হও’’ তখনই তা হয়ে যায়। ৮৩. অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে রয়েছে সর্ববিষয়ের সর্বময় ক্ষমতা এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
﷽
يٰسٓ (১) وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ (২) اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ (৩) عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ (৪) تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ (৫) لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُوْنَ (৬) لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلٰۤى اَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ (৭) اِنَّا جَعَلْنَا فِيْۤ اَعْنَاقِهِمْ اَغْلَالًا فَهِيَ اِلَى الْاَذْقَانِ فَهُمْ مُّقْمَحُوْنَ (৮) وَجَعَلْنَا مِنْ ۢبَيْنِ اَيْدِيْهِمْ سَدًّا وَّمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَاَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لَا يُبْصِرُوْنَ (৯) وَسَوَآءٌ عَلَيْهِمْ اَاَنْذَرْتَهُمْ اَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ (১০) اِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَّاَجْرٍ كَرِيْمٍ (১১) اِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتٰى وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوْا وَاٰثَارَهُمْ وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنَاهُ فِيْۤ اِمَامٍ مُّبِيْنٍ (১২)
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلًا اَصْحَابَ الْقَرْيَةِ اِذْ جَآءَهَا الْمُرْسَلُوْنَ (১৩) اِذْ اَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوْهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوْاۤ اِنَّا اِلَيْكُمْ مُّرْسَلُوْنَ (১৪) قَالُوْا مَاۤ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَمَاۤ اَنْزَلَ الرَّحْمٰنُ مِنْ شَيْءٍ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا تَكْذِبُوْنَ (১৫) قَالُوْا رَبُّنَا يَعْلَمُ اِنَّاۤ اِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُوْنَ (১৬) وَمَا عَلَيْنَاۤ اِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ (১৭) قَالُوْاۤ اِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ (১৮) قَالُوْا طَآئِرُكُمْ مَّعَكُمْ اَئِنْ ذُكِّرْتُمْ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ (১৯) وَجَآءَ مِنْ اَقْصَى الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ (২০) اِتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْاَلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ (২১) وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ (২২) اَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِه ۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ (২৩) اِنِّيْۤ اِذًا لَّفِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ (২৪) اِنِّيْۤ اٰمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُوْنِ (২৫) قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ (২৬) بِمَا غَفَرَ لِيْ رَبِّيْ وَجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُكْرَمِيْنَ (২৭)
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰى قَوْمِه مِنْ ۢبَعْدِه مِنْ جُنْدٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَمَا كُنَّا مُنْزِلِيْنَ (২৮) اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ خَامِدُوْنَ (২৯) يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِه يَسْتَهْزِئُوْنَ (৩০) اَلَمْ يَرَوْا كَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ اَنَّهُمْ اِلَيْهِمْ لَا يَرْجِعُوْنَ (৩১) وَاِنْ كُلٌّ لَّمَّا جَمِيْعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُوْنَ (৩২) وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَرْضُ الْمَيْتَةُ اَحْيَيْنَاهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَأْكُلُوْنَ (৩৩) وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنَّاتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ (৩৪) لِيَأْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِه وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ (৩৫) سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَرْضُ وَمِنْ اَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُوْنَ (৩৬) وَاٰيَةٌ لَّهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَاِذَا هُمْ مُّظْلِمُوْنَ (৩৭) وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ (৩৮) وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتّٰى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ (৩৯) لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ (৪০)
وَاٰيَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ (৪১) وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِه مَا يَرْكَبُوْنَ (৪২) وَاِنْ نَّشَأْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِيْخَ لَهُمْ وَلَا هُمْ يُنْقَذُوْنَ (৪৩) اِلَّا رَحْمَةً مِّنَّا وَمَتَاعًا اِلٰى حِيْنٍ (৪৪) وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّقُوْا مَا بَيْنَ اَيْدِيْكُمْ وَمَا خَلْفَكُمْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ (৪৫) وَمَا تَأْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيَاتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ (৪৬) وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنُطْعِمُ مَنْ لَّوْ يَشَآءُ اللهُ اَطْعَمَهٗۤ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ (৪৭) وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْوَعْدُ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (৪৮) مَا يَنْظُرُوْنَ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً تَأْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُوْنَ (৪৯) فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ تَوْصِيَةً وَّلَاۤ اِلٰۤى اَهْلِهِمْ يَرْجِعُوْنَ (৫০) وَنُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَاِذَا هُمْ مِّنَ الْاَجْدَاثِ اِلٰى رَبِّهِمْ يَنْسِلُوْنَ (৫১) قَالُوْا يَا وَيْلَنَا مَنْ ۢبَعَثَنَا مِنْ مَّرْقَدِنَا هٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُوْنَ (৫২) اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ جَمِيْعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُوْنَ (৫৩) فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَّلَا تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ (৫৪)
اِنَّ اَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فَاكِهُوْنَ (৫৫) هُمْ وَاَزْوَاجُهُمْ فِيْ ظِلَالٍ عَلَى الْاَرَآئِكِ مُتَّكِئُوْنَ (৫৬) لَهُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّلَهُمْ مَّا يَدَّعُوْنَ (৫৭) سَلَامٌ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِيْمٍ (৫৮) وَامْتَازُوا الْيَوْمَ اَيُّهَا الْمُجْرِمُوْنَ (৫৯) اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ (৬০) وَاَنِ اعْبُدُوْنِيْ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ (৬১) وَلَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيْرًا اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ (৬২) هٰذِه جَهَنَّمُ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ (৬৩) اِصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ (৬৪) اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰۤى اَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَاۤ اَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ (৬৫) وَلَوْ نَشَآءُ لَطَمَسْنَا عَلٰۤى اَعْيُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَاَنّٰى يُبْصِرُوْنَ (৬৬) وَلَوْ نَشَآءُ لَمَسَخْنَاهُمْ عَلٰى مَكَانَتِهِمْ فَمَا اسْتَطَاعُوْا مُضِيًّا وَّلَا يَرْجِعُوْنَ (৬৭) وَمَنْ نُّعَمِّرْهُ نُنَكِّسْهُ فِي الْخَلْقِ اَفَلَا يَعْقِلُوْنَ (৬৮) وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهٗۤ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ وَّقُرْاٰنٌ مُّبِيْنٌ (৬৯) لِيُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَيًّا وَّيَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَى الْكَافِرِيْنَ (৭০)
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُوْنَ (৭১) وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَأْكُلُوْنَ (৭২) وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ (৭৩) وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنْصَرُوْنَ (৭৪) لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ نَصْرَهُمْ وَهُمْ لَهُمْ جُنْدٌ مُّحْضَرُوْنَ (৭৫) فَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْ اِنَّا نَعْلَمُ مَا يُسِرُّوْنَ وَمَا يُعْلِنُوْنَ (৭৬) اَوَلَمْ يَرَ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ (৭৭) وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّنَسِيَ خَلْقَهٗ قَالَ مَنْ يُّحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيْمٌ (৭৮) قُلْ يُحْيِيْهَا الَّذِيْۤ اَنْشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيْمٌ (৭৯) اَلَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ (৮০) اَوَلَيْسَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ بِقَادِرٍ عَلٰۤى اَنْ يَّخْلُقَ مِثْلَهُمْ بَلٰى وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيْمُ (৮১) اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَا اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُولَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ (৮২) فَسُبْحَانَ الَّذِيْ بِيَدِه مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَّاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ (৮৩)
সূরা ইয়াসীনের অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. ইয়া-সীন। ২. কসম জ্ঞানগর্ভ কুরআনের। ৩. নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। ৪. আপনি সরল-সঠিক পথের উপর রয়েছেন। ৫. এ কুরআন নাযিল করা হয়েছে প্রবল প্রতাপশালী পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে। ৬. যেন আপনি সতর্ক করতে পারেন এমন লোকদেরকে, যাদের পূর্বপুরম্নষদেরকে সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফিল রয়ে গেছে। ৭. (তারা আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারণে) তাদের অধিকাংশের জন্য (তাদের অন্তরে সীল লাগিয়ে দেয়ার) বাণী অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তারা ঈমান আনবে না। ৮. আমি তাদের গলায় শৃঙ্খল পরিয়েছি, তা তাদের চিবুক পর্যন্ত ঝুলে রয়েছে। ফলে তারা মাথা খাড়া করে রেখেছে। ৯. আর আমি তাদের সামনে ও পেছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি এবং তাদেরকে ঢেকে দিয়েছি। ফলে তারা দেখতে পায় না। ১০. আপনি তাদেরকে সতর্ক করেন কিংবা না করেন, তাদের কাছে উভয়ই সমান, তারা ঈমান আনবে না। ১১. আপনি কেবল তাকেই সতর্ক করতে পারেন, যে উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে। অতএব আপনি তাকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন ক্ষমা ও উত্তম পুরস্কারের। ১২. আমি মৃতদেরকে জীবিত করি এবং আমি লিপিবদ্ধ করে রাখি যা তারা পূর্বে প্রেরণ করে, আর যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। ১৩. আপনি তাদের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ এক জনপদের অধিবাসীদের ঘটনা বর্ণনা করম্নন, যখন তাদের কাছে কয়েকজন রাসূল এসেছিলেন। ১৪. যখন আমি তাদের কাছে দু’জন রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তখন তারা তাদেরকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করল। অতঃপর আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় এক জনের মাধ্যমে। তারা বলল, আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। ১৫. জনপদবাসী বলল, তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ। আর দয়াময় আল্লাহ তো কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা শুধু মিথ্যাই বলে যাচ্ছ। ১৬. রাসূলগণ বললেন, আমাদের প্রতিপালক জানেন, আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। ১৭. আর আমাদের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টরূপে প্রচার করা। ১৮. তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে অকল্যাণের কারণ মনে করছি। তোমরা যদি (প্রচার কাজ হতে) বিরত না হও, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পাথর মেরে ধ্বংস করে ফেলব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে। ১৯. রাসূলগণ বললেন, তোমাদের অশুভ লক্ষণ তোমাদেরই সাথে রয়েছে। এটা কি এজন্য যে, আমরা তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়েছি? বরং তোমরা তো এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। ২০. অতঃপর শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে আসলো। তারপর সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো। ২১. তোমরা অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের কাছে বিনিময় চায় না এবং তারা নিজেরাও রয়েছে সৎ পথে। ২২. আর আমার কি হয়েছে যে, আমি তাঁর ইবাদাত করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে? ২৩. আমি কি তাঁকে ছেড়ে অন্যান্য ইলাহকে গ্রহণ করব? যদি দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোন উপকারে আসবে না এবং তারা আমাকে মুক্তও করতে পারবে না। ২৪. এরূপ করলে আমি তো প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে পতিত হব। ২৫. আমি তো তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি। অতএব তোমরা আমার কথা শোনো। ২৬. তাকে বলা হলো- ‘‘জান্নাতে প্রবেশ করো।’’ সে বলল, আহা! যদি আমার সম্প্রদায় জানতে পারত- ২৭. যে, আমার প্রতিপালক কেন আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন! ২৮. তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের উপর আকাশ থেকে কোন বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং আমি (বাহিনী) অবতরণকারীও নই। ২৯. তা ছিল কেবলমাত্র এক মহা গর্জন। ফলে সাথে সাথে তারা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। ৩০. আফসোস! সে বান্দাদের জন্য, যাদের কাছে কখনও এমন কোন রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। ৩১. তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের পূর্বে কত মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি, যারা তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না? ৩২. আর তাদের সবাইকে অবশ্যই একত্রে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে। ৩৩. আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তারা তা থেকে খেয়ে থাকে। ৩৪. আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং তাতে প্রবাহিত করি ঝর্ণাসমূহ। ৩৫. যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না? ৩৬. পবিত্র তিনি, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না তাদের প্রত্যেককে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। ৩৭. আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো রাত। আমি তা থেকে দিনকে অপসারণ করি, ফলে সাথে সাথেই তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ৩৮. আর সূর্য নিজ কক্ষ পথে চলতে থাকে। এটা মহাপ্রতাপশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। ৩৯. আমি চাঁদের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন স্তর, এমনকি তা (ভ্রমণ শেষে) খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে ফিরে আসে। ৪০. সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চাঁদকে ধরে ফেলে এবং রাতও দিনের পূর্বে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে বিচরণ করে। ৪১. আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের সন্তানসন্ততিকে ভরা নৌকায় আরোহণ করিয়েছি। ৪২. এবং তাদের জন্য আমি এর অনুরূপ আরো যানবাহন সৃষ্টি করেছি যাতে তারা আরোহণ করে। ৪৩. আর আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে ডুবিয়ে দিতে পারি, তখন কেউ তাদের আর্তনাদে সাড়া দেবে না এবং তাদেরকে উদ্ধারও করা হবে না। ৪৪. কিন্তু আমার পক্ষ থেকে রহমত ও কিছু সময়ের জন্য জীবনোপকরণ দেয়ার কারণে তা করি না। ৪৫. যখন তাদেরকে বলা হয়,
তোমরা ভয় করো যা তোমাদের সামনে রয়েছে এবং যা তোমাদের পেছনে আছে, যেন তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়। ৪৬. আর তাদের কাছে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলির মধ্য হতে যখনই কোন নিদর্শন আসে তখনই তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ৪৭. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করো, তখন কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে যাকে খাওয়াতে পারতেন, আমরা তাকে কেন খাওয়াব? তোমরা তো রয়েছ প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে। ৪৮. তারা বলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে বলো এ ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে? ৪৯. তারা কেবল একটা বিকট শব্দের অপেক্ষায় রয়েছে, যা তাদেরকে পাকড়াও করবে এমন অবস্থায় যে, তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে। ৫০. তখন তারা ওসিয়ত করতেও সমর্থ হবে না এবং নিজ পরিবারের লোকদের কাছেও ফিরে যেতে পারবে না। ৫১. শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের প্রতিপালকের দিকে ছুটে যাবে। ৫২. তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠাল? দয়াময় আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন। ৫৩. এটা তো হবে একটা ভীষণ শব্দ মাত্র, ফলে তৎক্ষণাৎ তারা সবাই আমার সামনে উপস্থিত হবে। ৫৪. আজকের দিনে কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল প্রদান করা হবে, যা তোমরা করতে। ৫৫. নিঃসন্দেহে জান্নাতবাসীরা এদিন আনন্দে মশগুল থাকবে। ৫৬. তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়াতলে সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। ৫৭. সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিভিন্নরকম ফলমূল এবং যা কিছু তারা চাইবে তা সবই। ৫৮. তাদেরকে বলা হবে ‘সালাম’, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে। ৫৯. আর বলা হবে, হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও। ৬০. হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে সতর্ক করিনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? ৬১. আর আমার ইবাদাত করো, এটাই সরল-সঠিক পথ। ৬২. আর সে (শয়তান) তো তোমাদের মধ্য থেকে বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝ না? ৬৩. এ তো সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো। ৬৪. তোমরা যে কুফরী করতে, তার জন্য আজ তোমরা এতে প্রবেশ করো। ৬৫. আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা-গুলো সাক্ষ্য দেবে, যা তারা করত সে সম্পর্কে। ৬৬. আর আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত করে দিতে পারতাম, অতঃপর তারা পথ চলতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত? ৬৭. আর আমি যদি ইচ্ছা করতাম, তবে তাদের আকৃতি পরিবর্তন করে দিতাম তাদের নিজ স্থানেই, ফলে তারা সামনেও এগুতে পারত না এবং পিছনেও ফিরে যেতে পারত না। ৬৮. আর আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনি। তবুও কি তারা বুঝে না? ৬৯. আমি তাঁকে (রাসূলকে) কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তাঁর জন্য শোভনীয়ও নয়। এটা তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন। ৭০. যাতে তিনি সতর্ক করেন এমন ব্যক্তিকে যে জীবিত এবং যাতে কাফিরদের উপর প্রমাণ সাব্যস্ত হয়। ৭১. তারা কি দেখে না যে, আমার হাতে তৈরি জিনিসগুলোর মধ্যে আমি তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি চতুষ্পদ জন্তু? অতঃপর তারা এগুলোর মালিক হয়। ৭২. আর আমি এগুলোকে তাদের অনুগত করে দিয়েছি। ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা খায়। ৭৩. তাদের জন্য এগুলোর মধ্যে রয়েছে আরও অনেক উপকারিতা এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। তবুও কি তারা শুকরিয়া আদায় করবে না? ৭৪. তারা আল্লাহ ব্যতীত অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে এ আশায় যে, তাদেরকে অনুগ্রহ করা হবে। ৭৫. এসব ইলাহ তাদের কোন প্রকার সাহায্য করতে সক্ষম নয়; অথচ এরা তাদের সৈন্য হিসেবে উপস্থাপিত হবে। ৭৬. অতএব তাদের কথা যেন আপনাকে দুঃখ না দেয়। অবশ্যই আমি জানি যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে। ৭৭. মানুষ কি লক্ষ্য করে না যে, আমি তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি? অতঃপর সে হয়ে পড়ল প্রকাশ্য তর্ককারী। ৭৮. আর সে আমার সম্পর্কে উদাহরণ বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের জন্মের কথা ভুলে যায়। সে বলে, কে জীবিত করবে এ হাড়গুলোকে যখন সেগুলো পঁচে গলে যাবে? ৭৯. আপনি বলুন! তিনিই এগুলোকে আবার জীবিত করবেন, যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। ৮০. যিনি সবুজ গাছ থেকে তোমাদের জন্য আগুন উৎপন্ন করেন। অতঃপর তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও। ৮১. আর যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি সক্ষম নন এদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে? হ্যাঁ, তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। ৮২. বস্তুত তাঁর সৃষ্টিকার্য এরূপ যে, যখন তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে বলেন, ‘‘হও’’ তখনই তা হয়ে যায়। ৮৩. অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে রয়েছে সর্ববিষয়ের সর্বময় ক্ষমতা এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
এ সূরাটিতে আল্লাহর অসীম নিয়ামতরাজি ও তার কুদরতের বর্ণনা রয়েছে। এতে আরো আছে জান্নাত-জাহান্নামের সুস্পষ্ট বর্ণনা। তাই এ সূরাটি পড়ে আমরা আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে জানব এবং জাহান্নামকে ভয় করব; আর জান্নাতের আশা করব এবং সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করব।
﷽
اَلرَّحْمٰنُ (১) عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ (২) خَلَقَ الْاِنْسَانَ (৩) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ (৪) اَلشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ (৫) وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ (৬) وَالسَّمَآءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ الْمِيْزَانَ (৭) اَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيْزَانِ (৮) وَاَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ (৯) وَالْاَرْضَ وَضَعَهَا لِلْاَنَامِ (১০) فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّالنَّخْلُ ذَاتُ الْاَكْمَامِ (১১) وَالْحَبُّ ذُو الْعَصْفِ وَالرَّيْحَانُ (১২) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (১৩) خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ (১৪) وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ (১৫) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (১৬)
رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ (১৭) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (১৮) مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ (১৯) بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ (২০) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (২১) يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ (২২) فَبِاَيِّ الَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (২৩) وَلَهُ الْجَوَارِ الْمُنْشَاٰتُ فِي الْبَحْرِ كَالْاَعْلَامِ (২৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (২৫) كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ (২৬) وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ (২৭) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (২৮) يَسْاَلُهٗ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ (২৯) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩০) سَنَفْرُغُ لَكُمْ اَيُّهَ الثَّقَلَانِ (৩১) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩২) يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اِنِ اسْتَطَعْتُمْ اَنْ تَنْفُذُوْا مِنْ اَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ فَانْفُذُوْا لَا تَنْفُذُوْنَ اِلَّا بِسُلْطَانٍ (৩৩) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩৪) يُرْسَلُ عَلَيْكُمَا شُوَاظٌ مِّنْ نَّارٍ وَّنُحَاسٌ فَلَا تَنْتَصِرَانِ (৩৫) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩৬) فَاِذَا انْشَقَّتِ السَّمَآءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ (৩৭) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩৮) فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُسْاَلُ عَنْ ذَنْۢبِه ۤ اِنْسٌ وَّلَا جَآنٌّ (৩৯) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪০)
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْاَقْدَامِ (৪১) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪২) هٰذِه جَهَنَّمُ الَّتِيْ يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُوْنَ (৪৩) يَطُوْفُوْنَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيْمٍ اٰنٍ (৪৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪৫) وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه جَنَّتَانِ (৪৬) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪৭) ذَوَاتَاۤ اَفْنَانٍ (৪৮) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪৯) فِيْهِمَا عَيْنَانِ تَجْرِيَانِ (৫০) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫১) فِيْهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ (৫২) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫৩) مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى فُرُشٍ ۢبَطَآئِنُهَا مِنْ اِسْتَبْرَقٍ وَّجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ (৫৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫৫) فِيْهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ اِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ (৫৬) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫৭) كَاَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ (৫৮) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫৯) هَلْ جَزَآءُ الْاِحْسَانِ اِلَّا الْاِحْسَانُ (৬০) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬১) وَمِنْ دُوْنِهِمَا جَنَّتَانِ (৬২) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬৩) مُدْهَآمَّتَانِ (৬৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬৫) فِيْهِمَا عَيْنَانِ نَضَّاخَتَانِ (৬৬) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬৭)
فِيْهِمَا فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ (৬৮) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬৯) فِيْهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ (৭০) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৭১) حُوْرٌ مَّقْصُوْرَاتٌ فِي الْخِيَامِ (৭২) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৭৩) لَمْ يَطْمِثْهُنَّ اِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ (৭৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৭৫) مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَّعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ (৭৬) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৭৭) تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ (৭৮)
সূরা আর-রহমানের অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. পরম দয়াময় (আল্লাহ)। ২. তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। ৩. তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। ৪. তিনি তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা (ভাষা)। ৫. সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে সুনির্দিষ্ট হিসাব অনুযায়ী। ৬. তারকা ও বৃক্ষরাজি (আল্লাহকে) সিজদা করে। ৭. তিনি আকাশকে সমুন্নত করেছেন এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা। ৮. যাতে তোমরা পরিমাপে সীমালঙ্ঘন না কর। ৯. তোমরা ওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠিত করো এবং ওজনে কম দিয়ো না। ১০. তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন সৃষ্টজীবের জন্য। ১১. এতে রয়েছে ফলমূল এবং খেজুর বৃক্ষ, যার ফল আবরণযুক্ত। ১২. আর খোসাবিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধী ফুল। ১৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ১৪. মানুষকে (আদমকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মতো শুকনা মাটি হতে। ১৫. আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নি শিখা হতে। ১৬. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ১৭. তিনিই দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের নিয়ন্ত্রণকারী। ১৮. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ১৯. তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন যারা পরস্পর মিলিত হয়। ২০. উভয়ের মাঝে রয়েছে এক অন্তরায় যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। ২১. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ২২. উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। ২৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ২৪. সমুদ্রে বিচরণশীল পর্বতসদৃশ্য কোন জাহাজ তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীণ। ২৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ২৬. ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল। ২৭. আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার প্রতিপালকের মুখমন্ডল (সত্তা), যা মহিমাময়, মহানুভব। ২৮. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ২৯. আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর নিকট প্রতিদিন প্রার্থনা করে, তিনি সর্বদা মহান কার্যে রত। ৩০. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩১. (হে মানুষ ও জিন!) আমি শীঘ্রই তোমাদের প্রতি (হিসাব-নিকাশের জন্য) মনোনিবেশ করবো। ৩২. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩৩. হে জিন ও মানব জাতি! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা হতে যদি তোমরা বের হতে পার, তবে বের হয়ে যাও; কিন্তু তোমরা তা পারবে না, শক্তি ব্যতিরেকে (আর সে শক্তি তোমাদের নেই)। ৩৪. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩৫. তোমাদের উভয়ের প্রতি প্রেরিত হবে অগ্নিশিখা ও ধোঁয়া, তোমরা তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। ৩৬. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩৭. যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে সেদিন ওটা লাল চামড়ার মতো রক্তবর্ণ ধারণ করবে। ৩৮. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩৯. সেদিন মানুষ ও জিনকে তার অপরাধ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে না। ৪০. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৪১. অপরাধীদেরকে চেনা যাবে তাদের চেহারার আলামত হতে; তাদেরকে পাকড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে। ৪২. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৪৩. এটা সেই জাহান্নাম, যা অপরাধীরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। ৪৪. তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে। ৪৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৪৬. আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি বাগান। ৪৭. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৪৮. উভয়টি বহু শাখা-পলস্নব বিশিষ্ট বৃক্ষে ভরপুর। ৪৯. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫০. উভয়টিতে রয়েছে সদা প্রবাহমান দু’টি ঝর্ণাধারা। ৫১. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫২. উভয় বাগানে রয়েছে প্রত্যেকটি ফল, যা হবে দুই প্রকার। ৫৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫৪. সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরম্ন রেশমের আস্তর বিশিষ্ট বিছানায়। দুই বাগানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী। ৫৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫৬. সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না রমণী, যাদেরকে ইতিপূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি। ৫৭. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫৮. তারা যেন হীরা ও মতি। ৫৯. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬০. উত্তম কাজের পুরস্কার উত্তম (জান্নাত) ব্যতীত আর কী হতে পারে? ৬১. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬২. এই বাগানদ্বয় ব্যতীত আরো দু’টি বাগান রয়েছে। ৬৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬৪. এ বাগান দু’টি গাঢ় সবুজ। ৬৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬৬. উভয় বাগানে আছে প্রবাহমান দুটি ঝর্ণাধারা। ৬৭. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬৮. সেখানে রয়েছে ফলমূল, খেজুর ও ডালিম। ৬৯. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭০. সেখানে রয়েছে উত্তম চরিত্রের অধিকারী সুন্দরী রমণীগণ। ৭১. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭২. তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হুরগণ। ৭৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭৪. যাদেরকে ইতিপূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি। ৭৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭৬. তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন সবুজ আসনে, যা অতি বিরল ও অতি উত্তম। ৭৭. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭৮. কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহিমাময় ও মহানুভব!
﷽
اَلرَّحْمٰنُ (১) عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ (২) خَلَقَ الْاِنْسَانَ (৩) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ (৪) اَلشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ (৫) وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ (৬) وَالسَّمَآءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ الْمِيْزَانَ (৭) اَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيْزَانِ (৮) وَاَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ (৯) وَالْاَرْضَ وَضَعَهَا لِلْاَنَامِ (১০) فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّالنَّخْلُ ذَاتُ الْاَكْمَامِ (১১) وَالْحَبُّ ذُو الْعَصْفِ وَالرَّيْحَانُ (১২) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (১৩) خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ (১৪) وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ (১৫) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (১৬)
رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ (১৭) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (১৮) مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ (১৯) بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ (২০) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (২১) يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ (২২) فَبِاَيِّ الَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (২৩) وَلَهُ الْجَوَارِ الْمُنْشَاٰتُ فِي الْبَحْرِ كَالْاَعْلَامِ (২৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (২৫) كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ (২৬) وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ (২৭) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (২৮) يَسْاَلُهٗ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ (২৯) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩০) سَنَفْرُغُ لَكُمْ اَيُّهَ الثَّقَلَانِ (৩১) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩২) يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْاِنْسِ اِنِ اسْتَطَعْتُمْ اَنْ تَنْفُذُوْا مِنْ اَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ فَانْفُذُوْا لَا تَنْفُذُوْنَ اِلَّا بِسُلْطَانٍ (৩৩) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩৪) يُرْسَلُ عَلَيْكُمَا شُوَاظٌ مِّنْ نَّارٍ وَّنُحَاسٌ فَلَا تَنْتَصِرَانِ (৩৫) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩৬) فَاِذَا انْشَقَّتِ السَّمَآءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ (৩৭) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৩৮) فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُسْاَلُ عَنْ ذَنْۢبِه ۤ اِنْسٌ وَّلَا جَآنٌّ (৩৯) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪০)
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْاَقْدَامِ (৪১) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪২) هٰذِه جَهَنَّمُ الَّتِيْ يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُوْنَ (৪৩) يَطُوْفُوْنَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيْمٍ اٰنٍ (৪৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪৫) وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه جَنَّتَانِ (৪৬) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪৭) ذَوَاتَاۤ اَفْنَانٍ (৪৮) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৪৯) فِيْهِمَا عَيْنَانِ تَجْرِيَانِ (৫০) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫১) فِيْهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ (৫২) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫৩) مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى فُرُشٍ ۢبَطَآئِنُهَا مِنْ اِسْتَبْرَقٍ وَّجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ (৫৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫৫) فِيْهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ اِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ (৫৬) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫৭) كَاَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ (৫৮) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৫৯) هَلْ جَزَآءُ الْاِحْسَانِ اِلَّا الْاِحْسَانُ (৬০) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬১) وَمِنْ دُوْنِهِمَا جَنَّتَانِ (৬২) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬৩) مُدْهَآمَّتَانِ (৬৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬৫) فِيْهِمَا عَيْنَانِ نَضَّاخَتَانِ (৬৬) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬৭)
فِيْهِمَا فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ (৬৮) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৬৯) فِيْهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ (৭০) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৭১) حُوْرٌ مَّقْصُوْرَاتٌ فِي الْخِيَامِ (৭২) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৭৩) لَمْ يَطْمِثْهُنَّ اِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ (৭৪) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৭৫) مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَّعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ (৭৬) فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (৭৭) تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ (৭৮)
সূরা আর-রহমানের অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. পরম দয়াময় (আল্লাহ)। ২. তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। ৩. তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। ৪. তিনি তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা (ভাষা)। ৫. সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে সুনির্দিষ্ট হিসাব অনুযায়ী। ৬. তারকা ও বৃক্ষরাজি (আল্লাহকে) সিজদা করে। ৭. তিনি আকাশকে সমুন্নত করেছেন এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা। ৮. যাতে তোমরা পরিমাপে সীমালঙ্ঘন না কর। ৯. তোমরা ওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠিত করো এবং ওজনে কম দিয়ো না। ১০. তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন সৃষ্টজীবের জন্য। ১১. এতে রয়েছে ফলমূল এবং খেজুর বৃক্ষ, যার ফল আবরণযুক্ত। ১২. আর খোসাবিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধী ফুল। ১৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ১৪. মানুষকে (আদমকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মতো শুকনা মাটি হতে। ১৫. আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নি শিখা হতে। ১৬. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ১৭. তিনিই দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের নিয়ন্ত্রণকারী। ১৮. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ১৯. তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন যারা পরস্পর মিলিত হয়। ২০. উভয়ের মাঝে রয়েছে এক অন্তরায় যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। ২১. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ২২. উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। ২৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ২৪. সমুদ্রে বিচরণশীল পর্বতসদৃশ্য কোন জাহাজ তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীণ। ২৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ২৬. ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল। ২৭. আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু তোমার প্রতিপালকের মুখমন্ডল (সত্তা), যা মহিমাময়, মহানুভব। ২৮. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ২৯. আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর নিকট প্রতিদিন প্রার্থনা করে, তিনি সর্বদা মহান কার্যে রত। ৩০. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩১. (হে মানুষ ও জিন!) আমি শীঘ্রই তোমাদের প্রতি (হিসাব-নিকাশের জন্য) মনোনিবেশ করবো। ৩২. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩৩. হে জিন ও মানব জাতি! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা হতে যদি তোমরা বের হতে পার, তবে বের হয়ে যাও; কিন্তু তোমরা তা পারবে না, শক্তি ব্যতিরেকে (আর সে শক্তি তোমাদের নেই)। ৩৪. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩৫. তোমাদের উভয়ের প্রতি প্রেরিত হবে অগ্নিশিখা ও ধোঁয়া, তোমরা তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। ৩৬. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩৭. যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে সেদিন ওটা লাল চামড়ার মতো রক্তবর্ণ ধারণ করবে। ৩৮. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৩৯. সেদিন মানুষ ও জিনকে তার অপরাধ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে না। ৪০. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৪১. অপরাধীদেরকে চেনা যাবে তাদের চেহারার আলামত হতে; তাদেরকে পাকড়াও করা হবে কপাল (চুলের ঝুঁটি) ও পা ধরে। ৪২. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৪৩. এটা সেই জাহান্নাম, যা অপরাধীরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করত। ৪৪. তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে। ৪৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৪৬. আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি বাগান। ৪৭. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৪৮. উভয়টি বহু শাখা-পলস্নব বিশিষ্ট বৃক্ষে ভরপুর। ৪৯. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫০. উভয়টিতে রয়েছে সদা প্রবাহমান দু’টি ঝর্ণাধারা। ৫১. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫২. উভয় বাগানে রয়েছে প্রত্যেকটি ফল, যা হবে দুই প্রকার। ৫৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫৪. সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরম্ন রেশমের আস্তর বিশিষ্ট বিছানায়। দুই বাগানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী। ৫৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫৬. সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না রমণী, যাদেরকে ইতিপূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি। ৫৭. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৫৮. তারা যেন হীরা ও মতি। ৫৯. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬০. উত্তম কাজের পুরস্কার উত্তম (জান্নাত) ব্যতীত আর কী হতে পারে? ৬১. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬২. এই বাগানদ্বয় ব্যতীত আরো দু’টি বাগান রয়েছে। ৬৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬৪. এ বাগান দু’টি গাঢ় সবুজ। ৬৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬৬. উভয় বাগানে আছে প্রবাহমান দুটি ঝর্ণাধারা। ৬৭. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৬৮. সেখানে রয়েছে ফলমূল, খেজুর ও ডালিম। ৬৯. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭০. সেখানে রয়েছে উত্তম চরিত্রের অধিকারী সুন্দরী রমণীগণ। ৭১. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭২. তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হুরগণ। ৭৩. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭৪. যাদেরকে ইতিপূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি। ৭৫. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭৬. তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন সবুজ আসনে, যা অতি বিরল ও অতি উত্তম। ৭৭. অতএব তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামত অস্বীকার করবে? ৭৮. কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহিমাময় ও মহানুভব!
এ সূরাটি তাওহীদের প্রমাণ দ্বারা পরিপূর্ণ। আর এতে জান্নাত ও জাহান্নামের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। পরকালে মানুষের অবস্থা কেমন হবে, কয় দলে ভাগ হবে ইত্যাদির বিবরণ রয়েছে। তাই আমরা এ সূরাটি পড়ে আল্লাহর পরিচয় জানব, শিরকমুক্ত হয়ে তাওহীদের অনুসরণ করব এবং সে অনুযায়ী আমল করব।
﷽
اِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ (১) لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ (২) خَافِضَةٌ رَّافِعَةٌ (৩) اِذَا رُجَّتِ الْاَرْضُ رَجًّا (৪) وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا (৫) فَكَانَتْ هَبَآءً مُّنْبَثًّا (৬) وَكُنْتُمْ اَزْوَاجًا ثَلَاثَةً (৭) فَاَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَاۤ اَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ (৮) وَاَصْحَابُ الْمَشْاَمَةِ مَاۤ اَصْحَابُ الْمَشْاَمَةِ (৯) وَالسَّابِقُوْنَ السَّابِقُوْنَ (১০) اُولٰٓئِكَ الْمُقَرَّبُوْنَ (১১) فِيْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ (১২) ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِيْنَ (১৩) وَقَلِيْلٌ مِّنَ الْاٰخِرِيْنَ (১৪) عَلٰى سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍ (১৫) مُتَّكِئِيْنَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِيْنَ (১৬)
يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ (১৭) بِاَكْوَابٍ وَّاَبَارِيْقَ وَكَأْسٍ مِّنْ مَّعِيْنٍ (১৮) لَا يُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُوْنَ (১৯) وَفَاكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُوْنَ (২০) وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُوْنَ (২১) وَحُوْرٌ عِيْنٌ (২২) كَاَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُوْنِ (২৩) جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ (২৪) لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّلَا تَأْثِيْمًا (২৫) اِلَّا قِيْلًا سَلَامًا سَلَامًا (২৬) وَاَصْحَابُ الْيَمِيْنِ مَاۤ اَصْحَابُ الْيَمِيْنِ (২৭) فِيْ سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ (২৮) وَطَلْحٍ مَّنْضُوْدٍ (২৯) وَظِلٍّ مَّمْدُوْدٍ (৩০) وَمَآءٍ مَّسْكُوْبٍ (৩১) وَفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ (৩২) لَا مَقْطُوْعَةٍ وَّلَا مَمْنُوْعَةٍ (৩৩) وَفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ (৩৪) اِنَّاۤ اَنْشَأْنَاهُنَّ اِنْشَآءً (৩৫) فَجَعَلْنَاهُنَّ اَبْكَارًا (৩৬) عُرُبًا اَتْرَابًا (৩৭) لِاَصْحَابِ الْيَمِيْنِ (৩৮) ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِيْنَ (৩৯) وَثُلَّةٌ مِّنَ الْاٰخِرِيْنَ (৪০) وَاَصْحَابُ الشِّمَالِ مَاۤ اَصْحَابُ الشِّمَالِ (৪১) فِيْ سَمُوْمٍ وَّحَمِيْمٍ (৪২) وَظِلٍّ مِّنْ يَّحْمُوْمٍ (৪৩) لَا بَارِدٍ وَّلَا كَرِيْمٍ (৪৪) اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُتْرَفِيْنَ (৪৫) وَكَانُوْا يُصِرُّوْنَ عَلَى الْحِنْثِ الْعَظِيْمِ (৪৬) وَكَانُوْا يَقُوْلُوْنَ اَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَاِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ (৪৭) اَوَاٰبَآؤُنَا الْاَوَّلُوْنَ (৪৮) قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ (৪৯) لَمَجْمُوْعُوْنَ اِلٰى مِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ (৫০)
ثُمَّ اِنَّكُمْ اَيُّهَا الضَّآلُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَ (৫১) لَاٰكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍ (৫২) فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ (৫৩) فَشَارِبُوْنَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيْمِ (৫৪) فَشَارِبُوْنَ شُرْبَ الْهِيْمِ (৫৫) هٰذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّيْنِ (৫৬) نَحْنُ خَلَقْنَاكُمْ فَلَوْلَا تُصَدِّقُوْنَ (৫৭) اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تُمْنُوْنَ (৫৮) اَاَنْتُمْ تَخْلُقُوْنَهٗۤ اَمْ نَحْنُ الْخَالِقُوْنَ (৫৯) نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوْقِيْنَ (৬০) عَلٰۤى اَنْ نُّبَدِّلَ اَمْثَالَكُمْ وَنُنْشِئَكُمْ فِيْ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ (৬১) وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ النَّشْاَةَ الْاُوْلٰى فَلَوْلَا تَذَكَّرُوْنَ (৬২) اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَحْرُثُوْنَ (৬৩) اَاَنْتُمْ تَزْرَعُوْنَهٗۤ اَمْ نَحْنُ الزَّارِعُوْنَ (৬৪) لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُوْنَ (৬৫) اِنَّا لَمُغْرَمُوْنَ (৬৬) بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ (৬৭) اَفَرَاَيْتُمُ الْمَآءَ الَّذِيْ تَشْرَبُوْنَ (৬৮) اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ (৬৯) لَوْ نَشَآءُ جَعَلْنَاهُ اُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُوْنَ (৭০) اَفَرَاَيْتُمُ النَّارَ الَّتِيْ تُوْرُوْنَ (৭১) اَاَنْتُمْ اَنْشَأْتُمْ شَجَرَتَهَاۤ اَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُوْنَ (৭২) نَحْنُ جَعَلْنَاهَا تَذْكِرَةً وَّمَتَاعًا لِّلْمُقْوِيْنَ (৭৩) فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ (৭৪) فَلَاۤ اُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُوْمِ (৭৫) وَاِنَّهٗ لَقَسَمٌ لَّوْ تَعْلَمُوْنَ عَظِيْمٌ (৭৬)
اِنَّهٗ لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ (৭৭) فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ (৭৮) لَا يَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ (৭৯) تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ (৮০) اَفَبِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَنْتُمْ مُّدْهِنُوْنَ (৮১) وَتَجْعَلُوْنَ رِزْقَكُمْ اَنَّكُمْ تُكَذِّبُوْنَ (৮২) فَلَوْلَاۤ اِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ (৮৩) وَاَنْتُمْ حِيْنَئِذٍ تَنْظُرُوْنَ (৮৪) وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُبْصِرُوْنَ (৮৫) فَلَوْلَاۤ اِنْ كُنْتُمْ غَيْرَ مَدِيْنِيْنَ (৮৬) تَرْجِعُوْنَهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (৮৭) فَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ (৮৮) فَرَوْحٌ وَّرَيْحَانٌ وَّجَنَّتُ نَعِيْمٍ (৮৯) وَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنْ اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ (৯০) فَسَلَامٌ لَّكَ مِنْ اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ (৯১) وَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِيْنَ الضَّآلِّيْنَ (৯২) فَنُزُلٌ مِّنْ حَمِيْمٍ (৯৩) وَتَصْلِيَةُ جَحِيْمٍ (৯৪) اِنَّ هٰذَا لَهُوَ حَقُّ الْيَقِيْنِ (৯৫) فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ (৯৬)
সূরা ওয়াকিয়ার অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। ২. (তখন) এর সংঘটন অস্বীকার করার মতো কেউ থাকবে না। ৩. এটা কাউকে করবে নীচু এবং কাউকে করবে সমুন্নত। ৪. যখন পৃথিবী প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে। ৫. পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ৬. অতঃপর তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে। ৭. তোমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে। ৮. ডান দিকের দল; (যারা ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্ত) কতই না ভাগ্যবান ডান দিকের দল! ৯. এবং বাম দিকের দল; (যারা বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্ত) কতই না হতভাগা বাম দিকের দল! ১০. আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। ১১. তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত। ১২. তারা থাকবে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতসমূহে। ১৩. তাদের অনেকেই হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে। ১৪. আর অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। ১৫. (তারা থাকবে) স্বর্ণখচিত আসনসমূহে। ১৬. তারা তাতে হেলান দিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বসবে। ১৭. (তাদের সেবায়) ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা। ১৮. (তারা হাজির হবে) পানপাত্র, কুঁজা ও প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। ১৯. সেই সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং তারা অজ্ঞানও হবে না। ২০. এবং তাদের পছন্দমতো ফলমূল (নিয়ে)। ২১. আর তাদের পছন্দমতো পাখির গোশত (নিয়ে)। ২২. আর (তাদের জন্য থাকবে) আয়তনয়না হুরগণ। ২৩. সযত্নে লুকিয়ে রাখা মুক্তার মতো। ২৪. তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ (এগুলো দেয়া হবে)। ২৫. সেখানে তারা কোন অসার অথবা পাপ বাক্য শুনবে না। ২৬. ‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ব্যতীত। ২৭. আর ডান হাতের দল, কতই না ভাগ্যবান ডান হাতের দল! ২৮. (তারা থাকবে এক উদ্যানে) সেখানে আছে কাঁটাবিহীন বরই গাছ। ২৯. কাঁদিভরা কলা গাছ। ৩০. সুদীর্ঘ ছায়া। ৩১. সদা প্রবাহমান পানি। ৩২. ও প্রচুর ফলমূল। ৩৩. যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও নয়। ৩৪. আর সমুন্নত শয্যাসমূহ। ৩৫. তাদেরকে (হুরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি নতুনরূপে। ৩৬. তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। ৩৭. সোহাগিনী ও সমবয়স্কা। ৩৮. এসব ডান দিকের লোকদের জন্য (পুরস্কারস্বরূপ)। ৩৯. তাদের অনেকেই হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে। ৪০. আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। ৪১. আর বাম দিকের দল, কতই না হতভাগা বাম দিকের দল! ৪২. তারা থাকবে অত্যধিক গরম হাওয়ায় ও উত্তপ্ত পানিতে। ৪৩. কালো ধোঁয়ার ছায়ায়। ৪৪. যা শীতলও নয়, আরামদায়কও নয়। ৪৫. ইতিপূর্বে তারা তো মগ্ন ছিল ভোগ-বিলাসে। ৪৬. আর তারা জঘন্য পাপ কর্মে লিপ্ত ছিল। ৪৭. তারা বলতো, আমরা যখন মরে গিয়ে হাড় ও মাটিতে পরিণত হব, তখনও কি পুনরায় উত্থিত হব? ৪৮. এবং আমাদের পূর্বপুরম্নষগণও? ৪৯. বলো, অবশ্যই পূর্ববর্তীগণ এবং পরবর্তীগণও। ৫০. সকলকে একত্রিত করা হবে এক নির্ধারিত দিনের নির্ধারিত সময়ে। ৫১. অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা! ৫২. তোমরা অবশ্যই যাক্কূম বৃক্ষ হতে আহার করবে। ৫৩. এবং তা দ্বারা পেট ভর্তি করবে। ৫৪. তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি। ৫৫. তা পান করবে তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায়। ৫৬. কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন। ৫৭. আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তবে কেন তোমরা বিশ্বাস করছ না? ৫৮. তোমরা কি ভেবে দেখেছ তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে? ৫৯. তা কি তোমরা সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? ৬০. আমি তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারণ করেছি এবং আমি অক্ষম নই। ৬১. এ ব্যাপারে যে, আমি তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের মতো (অন্যকে) নিয়ে আসব এবং তোমাদেরকে এমন (আকৃতিতে) তৈরি করব, যা তোমরা জান না। ৬২. তোমরা তো অবগত হয়েছ প্রথম সৃষ্টি সম্বন্ধে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন? ৬৩. তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? ৬৪. তা কি তোমরা অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি? ৬৫. আমি ইচ্ছা করলে তা খড়কুটায় পরিণত করতে পারি, তখন তোমরা হয়ে যাবে বিস্ময়ে হতবাক। ৬৬. (তখন তোমরা বলতে থাকবে) আমাদের তো বরবাদ হয়েছে! ৬৭. বরং আমরা বঞ্চিত হয়ে গেলাম। ৬৮. তোমরা যে পানি পান কর সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? ৬৯. তোমরাই কি তা মেঘ হতে বর্ষণ কর, না আমি বর্ষণ করি? ৭০. আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত বানাতে পারি। তবুও কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? ৭১. তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? ৭২. তোমরাই কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? ৭৩. আমি একে করেছি একটি নিদর্শনস্বরূপ এবং মরম্নবাসীদের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু। ৭৪. সুতরাং তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। ৭৫. আমি শপথ করছি তারকারাজির অস্তাচলের। ৭৬. অবশ্যই এটা এক মহা শপথ, যদি তোমরা জানতে। ৭৭. নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন। ৭৮. যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে। ৭৯. যারা পাক-পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। ৮০. এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। ৮১. তবুও কি তোমরা এই বাণীকে (কুরআনকে) তুচ্ছ গণ্য করবে? ৮২. এবং একে মিথ্যা প্রতিপন্ন করাকেই তোমরা তোমাদের জীবিকা আহরণের পেশা বানিয়ে নিবে? ৮৩. অতঃপর যখন কারও প্রাণ কণ্ঠাগত হয়। ৮৪. আর তখন তোমরা তাকিয়ে দেখ। ৮৫. আর আমি তোমাদের চেয়ে (জানার দিক দিয়ে) তার অধিক নিকটতর; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। ৮৬. যদি তোমাদের হিসাব-কিতাব না হওয়াই ঠিক হয়। ৮৭. তবে তোমরা এই আত্মাকে ফিরিয়ে নাও না কেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? ৮৮. যদি সে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়। ৮৯. তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম রিযিক ও নিয়ামতে ভরা জান্নাত। ৯০. আর যদি সে ডানপার্শ্বস্থদের একজন হয়। ৯১. (তবে তাকে বলা হবে,) তোমার জন্য ডানপার্শ্বস্থদের পক্ষ থেকে সালাম। ৯২. আর যদি সে পথভ্রষ্ট মিথ্যারোপকারীদের একজন হয়। ৯৩. তবে তার আপ্যায়ন হবে টগবগে ফুটন্ত পানি দ্বারা। ৯৪. আর (তার জন্য রয়েছে) জাহান্নামের আগুনের দহন। ৯৫. নিশ্চয় এটাই চূড়ান্ত সত্য। ৯৬. অতএব তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।
﷽
اِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ (১) لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ (২) خَافِضَةٌ رَّافِعَةٌ (৩) اِذَا رُجَّتِ الْاَرْضُ رَجًّا (৪) وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا (৫) فَكَانَتْ هَبَآءً مُّنْبَثًّا (৬) وَكُنْتُمْ اَزْوَاجًا ثَلَاثَةً (৭) فَاَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَاۤ اَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ (৮) وَاَصْحَابُ الْمَشْاَمَةِ مَاۤ اَصْحَابُ الْمَشْاَمَةِ (৯) وَالسَّابِقُوْنَ السَّابِقُوْنَ (১০) اُولٰٓئِكَ الْمُقَرَّبُوْنَ (১১) فِيْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ (১২) ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِيْنَ (১৩) وَقَلِيْلٌ مِّنَ الْاٰخِرِيْنَ (১৪) عَلٰى سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍ (১৫) مُتَّكِئِيْنَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِيْنَ (১৬)
يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ (১৭) بِاَكْوَابٍ وَّاَبَارِيْقَ وَكَأْسٍ مِّنْ مَّعِيْنٍ (১৮) لَا يُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُوْنَ (১৯) وَفَاكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُوْنَ (২০) وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُوْنَ (২১) وَحُوْرٌ عِيْنٌ (২২) كَاَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُوْنِ (২৩) جَزَآءً ۢبِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ (২৪) لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّلَا تَأْثِيْمًا (২৫) اِلَّا قِيْلًا سَلَامًا سَلَامًا (২৬) وَاَصْحَابُ الْيَمِيْنِ مَاۤ اَصْحَابُ الْيَمِيْنِ (২৭) فِيْ سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ (২৮) وَطَلْحٍ مَّنْضُوْدٍ (২৯) وَظِلٍّ مَّمْدُوْدٍ (৩০) وَمَآءٍ مَّسْكُوْبٍ (৩১) وَفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ (৩২) لَا مَقْطُوْعَةٍ وَّلَا مَمْنُوْعَةٍ (৩৩) وَفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ (৩৪) اِنَّاۤ اَنْشَأْنَاهُنَّ اِنْشَآءً (৩৫) فَجَعَلْنَاهُنَّ اَبْكَارًا (৩৬) عُرُبًا اَتْرَابًا (৩৭) لِاَصْحَابِ الْيَمِيْنِ (৩৮) ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِيْنَ (৩৯) وَثُلَّةٌ مِّنَ الْاٰخِرِيْنَ (৪০) وَاَصْحَابُ الشِّمَالِ مَاۤ اَصْحَابُ الشِّمَالِ (৪১) فِيْ سَمُوْمٍ وَّحَمِيْمٍ (৪২) وَظِلٍّ مِّنْ يَّحْمُوْمٍ (৪৩) لَا بَارِدٍ وَّلَا كَرِيْمٍ (৪৪) اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُتْرَفِيْنَ (৪৫) وَكَانُوْا يُصِرُّوْنَ عَلَى الْحِنْثِ الْعَظِيْمِ (৪৬) وَكَانُوْا يَقُوْلُوْنَ اَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَّعِظَامًا اَاِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ (৪৭) اَوَاٰبَآؤُنَا الْاَوَّلُوْنَ (৪৮) قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ (৪৯) لَمَجْمُوْعُوْنَ اِلٰى مِيْقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ (৫০)
ثُمَّ اِنَّكُمْ اَيُّهَا الضَّآلُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَ (৫১) لَاٰكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍ (৫২) فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ (৫৩) فَشَارِبُوْنَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيْمِ (৫৪) فَشَارِبُوْنَ شُرْبَ الْهِيْمِ (৫৫) هٰذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّيْنِ (৫৬) نَحْنُ خَلَقْنَاكُمْ فَلَوْلَا تُصَدِّقُوْنَ (৫৭) اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تُمْنُوْنَ (৫৮) اَاَنْتُمْ تَخْلُقُوْنَهٗۤ اَمْ نَحْنُ الْخَالِقُوْنَ (৫৯) نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوْقِيْنَ (৬০) عَلٰۤى اَنْ نُّبَدِّلَ اَمْثَالَكُمْ وَنُنْشِئَكُمْ فِيْ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ (৬১) وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ النَّشْاَةَ الْاُوْلٰى فَلَوْلَا تَذَكَّرُوْنَ (৬২) اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَحْرُثُوْنَ (৬৩) اَاَنْتُمْ تَزْرَعُوْنَهٗۤ اَمْ نَحْنُ الزَّارِعُوْنَ (৬৪) لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُوْنَ (৬৫) اِنَّا لَمُغْرَمُوْنَ (৬৬) بَلْ نَحْنُ مَحْرُوْمُوْنَ (৬৭) اَفَرَاَيْتُمُ الْمَآءَ الَّذِيْ تَشْرَبُوْنَ (৬৮) اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ (৬৯) لَوْ نَشَآءُ جَعَلْنَاهُ اُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُوْنَ (৭০) اَفَرَاَيْتُمُ النَّارَ الَّتِيْ تُوْرُوْنَ (৭১) اَاَنْتُمْ اَنْشَأْتُمْ شَجَرَتَهَاۤ اَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُوْنَ (৭২) نَحْنُ جَعَلْنَاهَا تَذْكِرَةً وَّمَتَاعًا لِّلْمُقْوِيْنَ (৭৩) فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ (৭৪) فَلَاۤ اُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُوْمِ (৭৫) وَاِنَّهٗ لَقَسَمٌ لَّوْ تَعْلَمُوْنَ عَظِيْمٌ (৭৬)
اِنَّهٗ لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ (৭৭) فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ (৭৮) لَا يَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ (৭৯) تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ (৮০) اَفَبِهٰذَا الْحَدِيْثِ اَنْتُمْ مُّدْهِنُوْنَ (৮১) وَتَجْعَلُوْنَ رِزْقَكُمْ اَنَّكُمْ تُكَذِّبُوْنَ (৮২) فَلَوْلَاۤ اِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ (৮৩) وَاَنْتُمْ حِيْنَئِذٍ تَنْظُرُوْنَ (৮৪) وَنَحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلٰكِنْ لَّا تُبْصِرُوْنَ (৮৫) فَلَوْلَاۤ اِنْ كُنْتُمْ غَيْرَ مَدِيْنِيْنَ (৮৬) تَرْجِعُوْنَهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (৮৭) فَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِيْنَ (৮৮) فَرَوْحٌ وَّرَيْحَانٌ وَّجَنَّتُ نَعِيْمٍ (৮৯) وَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنْ اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ (৯০) فَسَلَامٌ لَّكَ مِنْ اَصْحَابِ الْيَمِيْنِ (৯১) وَاَمَّاۤ اِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِيْنَ الضَّآلِّيْنَ (৯২) فَنُزُلٌ مِّنْ حَمِيْمٍ (৯৩) وَتَصْلِيَةُ جَحِيْمٍ (৯৪) اِنَّ هٰذَا لَهُوَ حَقُّ الْيَقِيْنِ (৯৫) فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ (৯৬)
সূরা ওয়াকিয়ার অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। ২. (তখন) এর সংঘটন অস্বীকার করার মতো কেউ থাকবে না। ৩. এটা কাউকে করবে নীচু এবং কাউকে করবে সমুন্নত। ৪. যখন পৃথিবী প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে। ৫. পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ৬. অতঃপর তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে। ৭. তোমরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে। ৮. ডান দিকের দল; (যারা ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্ত) কতই না ভাগ্যবান ডান দিকের দল! ৯. এবং বাম দিকের দল; (যারা বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্ত) কতই না হতভাগা বাম দিকের দল! ১০. আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। ১১. তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত। ১২. তারা থাকবে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতসমূহে। ১৩. তাদের অনেকেই হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে। ১৪. আর অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। ১৫. (তারা থাকবে) স্বর্ণখচিত আসনসমূহে। ১৬. তারা তাতে হেলান দিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বসবে। ১৭. (তাদের সেবায়) ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা। ১৮. (তারা হাজির হবে) পানপাত্র, কুঁজা ও প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। ১৯. সেই সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং তারা অজ্ঞানও হবে না। ২০. এবং তাদের পছন্দমতো ফলমূল (নিয়ে)। ২১. আর তাদের পছন্দমতো পাখির গোশত (নিয়ে)। ২২. আর (তাদের জন্য থাকবে) আয়তনয়না হুরগণ। ২৩. সযত্নে লুকিয়ে রাখা মুক্তার মতো। ২৪. তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ (এগুলো দেয়া হবে)। ২৫. সেখানে তারা কোন অসার অথবা পাপ বাক্য শুনবে না। ২৬. ‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ব্যতীত। ২৭. আর ডান হাতের দল, কতই না ভাগ্যবান ডান হাতের দল! ২৮. (তারা থাকবে এক উদ্যানে) সেখানে আছে কাঁটাবিহীন বরই গাছ। ২৯. কাঁদিভরা কলা গাছ। ৩০. সুদীর্ঘ ছায়া। ৩১. সদা প্রবাহমান পানি। ৩২. ও প্রচুর ফলমূল। ৩৩. যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও নয়। ৩৪. আর সমুন্নত শয্যাসমূহ। ৩৫. তাদেরকে (হুরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি নতুনরূপে। ৩৬. তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। ৩৭. সোহাগিনী ও সমবয়স্কা। ৩৮. এসব ডান দিকের লোকদের জন্য (পুরস্কারস্বরূপ)। ৩৯. তাদের অনেকেই হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে। ৪০. আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। ৪১. আর বাম দিকের দল, কতই না হতভাগা বাম দিকের দল! ৪২. তারা থাকবে অত্যধিক গরম হাওয়ায় ও উত্তপ্ত পানিতে। ৪৩. কালো ধোঁয়ার ছায়ায়। ৪৪. যা শীতলও নয়, আরামদায়কও নয়। ৪৫. ইতিপূর্বে তারা তো মগ্ন ছিল ভোগ-বিলাসে। ৪৬. আর তারা জঘন্য পাপ কর্মে লিপ্ত ছিল। ৪৭. তারা বলতো, আমরা যখন মরে গিয়ে হাড় ও মাটিতে পরিণত হব, তখনও কি পুনরায় উত্থিত হব? ৪৮. এবং আমাদের পূর্বপুরম্নষগণও? ৪৯. বলো, অবশ্যই পূর্ববর্তীগণ এবং পরবর্তীগণও। ৫০. সকলকে একত্রিত করা হবে এক নির্ধারিত দিনের নির্ধারিত সময়ে। ৫১. অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা! ৫২. তোমরা অবশ্যই যাক্কূম বৃক্ষ হতে আহার করবে। ৫৩. এবং তা দ্বারা পেট ভর্তি করবে। ৫৪. তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি। ৫৫. তা পান করবে তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায়। ৫৬. কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন। ৫৭. আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তবে কেন তোমরা বিশ্বাস করছ না? ৫৮. তোমরা কি ভেবে দেখেছ তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে? ৫৯. তা কি তোমরা সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? ৬০. আমি তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারণ করেছি এবং আমি অক্ষম নই। ৬১. এ ব্যাপারে যে, আমি তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের মতো (অন্যকে) নিয়ে আসব এবং তোমাদেরকে এমন (আকৃতিতে) তৈরি করব, যা তোমরা জান না। ৬২. তোমরা তো অবগত হয়েছ প্রথম সৃষ্টি সম্বন্ধে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন? ৬৩. তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? ৬৪. তা কি তোমরা অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি? ৬৫. আমি ইচ্ছা করলে তা খড়কুটায় পরিণত করতে পারি, তখন তোমরা হয়ে যাবে বিস্ময়ে হতবাক। ৬৬. (তখন তোমরা বলতে থাকবে) আমাদের তো বরবাদ হয়েছে! ৬৭. বরং আমরা বঞ্চিত হয়ে গেলাম। ৬৮. তোমরা যে পানি পান কর সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? ৬৯. তোমরাই কি তা মেঘ হতে বর্ষণ কর, না আমি বর্ষণ করি? ৭০. আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত বানাতে পারি। তবুও কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? ৭১. তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? ৭২. তোমরাই কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? ৭৩. আমি একে করেছি একটি নিদর্শনস্বরূপ এবং মরম্নবাসীদের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু। ৭৪. সুতরাং তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। ৭৫. আমি শপথ করছি তারকারাজির অস্তাচলের। ৭৬. অবশ্যই এটা এক মহা শপথ, যদি তোমরা জানতে। ৭৭. নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন। ৭৮. যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে। ৭৯. যারা পাক-পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। ৮০. এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। ৮১. তবুও কি তোমরা এই বাণীকে (কুরআনকে) তুচ্ছ গণ্য করবে? ৮২. এবং একে মিথ্যা প্রতিপন্ন করাকেই তোমরা তোমাদের জীবিকা আহরণের পেশা বানিয়ে নিবে? ৮৩. অতঃপর যখন কারও প্রাণ কণ্ঠাগত হয়। ৮৪. আর তখন তোমরা তাকিয়ে দেখ। ৮৫. আর আমি তোমাদের চেয়ে (জানার দিক দিয়ে) তার অধিক নিকটতর; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। ৮৬. যদি তোমাদের হিসাব-কিতাব না হওয়াই ঠিক হয়। ৮৭. তবে তোমরা এই আত্মাকে ফিরিয়ে নাও না কেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও? ৮৮. যদি সে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়। ৮৯. তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম রিযিক ও নিয়ামতে ভরা জান্নাত। ৯০. আর যদি সে ডানপার্শ্বস্থদের একজন হয়। ৯১. (তবে তাকে বলা হবে,) তোমার জন্য ডানপার্শ্বস্থদের পক্ষ থেকে সালাম। ৯২. আর যদি সে পথভ্রষ্ট মিথ্যারোপকারীদের একজন হয়। ৯৩. তবে তার আপ্যায়ন হবে টগবগে ফুটন্ত পানি দ্বারা। ৯৪. আর (তার জন্য রয়েছে) জাহান্নামের আগুনের দহন। ৯৫. নিশ্চয় এটাই চূড়ান্ত সত্য। ৯৬. অতএব তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।
এ সূরাটি প্রতি রাত্রে পড়া উচিত। এ সূরার মধ্যে আল্লাহর সৃষ্টির কৌশলের বর্ণনা, জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের অবস্থা, আল্লাহর অসীম ক্ষমতা এবং তার নিয়ামতরাজির বর্ণনা রয়েছে। এ সূরার শেষে আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমতার প্রকাশস্বরূপ মানুষের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন।
﷽
تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (১) اَلَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَّ هُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفُوْرُ (২) اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَّا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ (৩) ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَّ هُوَ حَسِيْرٌ (৪) وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُوْمًا لِّلشَّيَاطِيْنِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيْرِ (৫) وَلِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ (৬) إِذَاۤ أُلْقُوْا فِيْهَا سَمِعُوْا لَهَا شَهِيْقًا وَّ هِيَ تَفُوْرُ (৭) تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ كُلَّمَاۤ أُلْقِيَ فِيْهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيْرٌ (৮) قَالُوْا بَلٰى قَدْ جَآءَنَا نَذِيْرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا فِيْ ضَلَالٍ كَبِيْرٍ (৯) وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِيْۤ أَصْحَابِ السَّعِيْرِ (১০) فَاعْتَرَفُوْا بِذَۢ نْبِهِمْ فَسُحْقًا لِّاَصْحَابِ السَّعِيْرِ (১১) إِنَّ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَّ أَجْرٌ كَبِيْرٌ (১২) وَأَسِرُّوْا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوْا بِه ۤ إِنَّهٗ عَلِيْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ (১৩) أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ (১৪) هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِه وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ (১৫) أَأَمِنْتُمْ مَّنْ فِيْ السَّمَآءِ أَنْ يَّخْسِفَ بِكُمُ الْاَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُوْرُ (১৬) أَمْ أَمِنْتُمْ مَّنْ فِيْ السَّمَآءِ أَنْ يُّرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُوْنَ كَيْفَ نَذِيْرِ (১৭) وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيْرِ (১৮) أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَآفَّاتٍ وَّيَقْبِضْنَ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمٰنُ إِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍۢ بَصِيْرٌ (১৯) أَمَّنْ هٰذَا الَّذِيْ هُوَ جُنْدٌ لَّكُمْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ دُوْنِ الرَّحْمٰنِ إِنِ الْكَافِرُوْنَ إِلَّا فِيْ غُرُوْرٍ (২০) أَمَّنْ هٰذَا الَّذِيْ يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهٗ بَلْ لَّجُّوْا فِيْ عُتُوٍّ وَّنُفُوْرٍ (২১) أَفَمَنْ يَّمْشِيْ مُكِبًّا عَلٰى وَجْهِه ۤ أَهْدٰىۤ أَمَّنْ يَّمْشِيْ سَوِيًّا عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ (২২) قُلْ هُوَ الَّذِيْۤ أَنْشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ (২৩) قُلْ هُوَ الَّذِيْ ذَرَأَكُمْ فِيْ الْاَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ (২৪) وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (২৫) قُلْ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللهِ وَإِنَّمَاۤ أَنَا نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ (২৬) فَلَمَّا رَأَوْهُ زُلْفَةً سِيْٓئَتْ وُجُوْهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَقِيْلَ هٰذَا الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه تَدَّعُوْنَ (২৭) قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَهْلَكَنِيَ اللهُ وَمَنْ مَّعِيَ أَوْ رَحِمَنَا فَمَنْ يُّجِيْرُ الْكَافِرِيْنَ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ (২৮) قُلْ هُوَ الرَّحْمٰنُ اٰمَنَّا بِه وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا فَسَتَعْلَمُوْنَ مَنْ هُوَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ (২৯) قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَآؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّأْتِيْكُمْ بِمَآءٍ مَّعِيْنٍ (৩০)
সূরা মুলকের অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব; তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। ২. যিনি জীবন ও মরণ সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন যে- কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। আর তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। ৩. তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাতটি আকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না; আবার তাকিয়ে দেখো, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? ৪. অতঃপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখো, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। ৫. আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা (তারকারাজি) দ্বারা; আর সেগুলোকে শয়তানদেরকে প্রহার করার উপকরণ করেছি এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জাহান্নামের আযাব। ৬. আর যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে কুফরি করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব, কতই না নিকৃষ্ট সে প্রত্যাবর্তনস্থল! ৭. যখন তারা তাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে তখন তারা তার গর্জনের শব্দ শুনতে পাবে; আর তা টগবগ করে ফুটতে থাকবে। ৮. অত্যধিক ক্রোধে তা ফেটে পড়ার উপক্রম হবে। যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তাদেরকে তার রক্ষীরা জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি? ৯. তারা উত্তরে বলবে, হ্যাঁ আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল, অতঃপর আমরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি; তোমরা তো মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ। ১০. তারা আরো বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম না। ১১. অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। সুতরাং দূর হোক জাহান্নামবাসীরা। ১২. যারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। ১৩. তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে, তিনি তো অন্তরের গোপনীয়তা সম্পর্কেই সম্যক অবগত। ১৪. যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী, ভালোভাবে অবগত। ১৫. তিনি তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করেছেন; অতএব তোমরা এর রাস্তাসমূহে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো। তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ১৬. তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দেবেন না? তখন তা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। ১৭. কিংবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী বাতাস প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে, কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী! ১৮. আর তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল; ফলে কীরূপ হয়েছিল আমার শাস্তি? ১৯. তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের উপরের পাখির প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। ২০. দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের এমন কোন সৈন্য আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করবে? কাফিররা তো ধোঁকায় পড়ে আছে মাত্র। ২১. তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন এমন কে আছে যে, তোমাদেরকে রিযিক দান করবে? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে। ২২. যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে
ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি সঠিক পথপ্রাপ্ত, না কি সেই ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে? ২৩. বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। ২৪. বলুন, তিনিই পৃথিবী ব্যাপী তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে। ২৫. আর তারা (কাফিররা) বলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও (তবে বলো) এই প্রতিশ্রুতি কবে বাস্তবায়িত হবে? ২৬. বলুন, এ জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকটই আছে; আমি স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। ২৭. যখন তা নিকটে দেখবে তখন কাফিরদের মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে যাবে এবং তাদেরকে বলা হবে, এটাই তোমরা দাবি করতে। ২৮. বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি আল্লাহ আমাকে ও আমার সঙ্গীদেরকে ধ্বংস করেন অথবা আমাদের প্রতি রহম করেন তবে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে কে রক্ষা করবে? ২৯. বলুন, তিনিই দয়াময়, আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস রেখেছি এবং তাঁর উপরই ভরসা করেছি; অচিরেই তোমরা জানতে পারবে যে, কে স্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে। ৩০. বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি তোমাদের পানি ভূ-গর্ভের তলদেশে চলে যায় তবে কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্রবাহমান পানি?
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‐
وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
﷽
تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ (১) اَلَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَّ هُوَ الْعَزِيْزُ الْغَفُوْرُ (২) اَلَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَّا تَرٰى فِيْ خَلْقِ الرَّحْمٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرٰى مِنْ فُطُوْرٍ (৩) ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَّ هُوَ حَسِيْرٌ (৪) وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُوْمًا لِّلشَّيَاطِيْنِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيْرِ (৫) وَلِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ (৬) إِذَاۤ أُلْقُوْا فِيْهَا سَمِعُوْا لَهَا شَهِيْقًا وَّ هِيَ تَفُوْرُ (৭) تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ كُلَّمَاۤ أُلْقِيَ فِيْهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَاۤ أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيْرٌ (৮) قَالُوْا بَلٰى قَدْ جَآءَنَا نَذِيْرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا فِيْ ضَلَالٍ كَبِيْرٍ (৯) وَقَالُوْا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِيْۤ أَصْحَابِ السَّعِيْرِ (১০) فَاعْتَرَفُوْا بِذَۢ نْبِهِمْ فَسُحْقًا لِّاَصْحَابِ السَّعِيْرِ (১১) إِنَّ الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَّ أَجْرٌ كَبِيْرٌ (১২) وَأَسِرُّوْا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوْا بِه ۤ إِنَّهٗ عَلِيْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ (১৩) أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ (১৪) هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِه وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ (১৫) أَأَمِنْتُمْ مَّنْ فِيْ السَّمَآءِ أَنْ يَّخْسِفَ بِكُمُ الْاَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُوْرُ (১৬) أَمْ أَمِنْتُمْ مَّنْ فِيْ السَّمَآءِ أَنْ يُّرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُوْنَ كَيْفَ نَذِيْرِ (১৭) وَلَقَدْ كَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيْرِ (১৮) أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَآفَّاتٍ وَّيَقْبِضْنَ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا الرَّحْمٰنُ إِنَّهٗ بِكُلِّ شَيْءٍۢ بَصِيْرٌ (১৯) أَمَّنْ هٰذَا الَّذِيْ هُوَ جُنْدٌ لَّكُمْ يَنْصُرُكُمْ مِّنْ دُوْنِ الرَّحْمٰنِ إِنِ الْكَافِرُوْنَ إِلَّا فِيْ غُرُوْرٍ (২০) أَمَّنْ هٰذَا الَّذِيْ يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهٗ بَلْ لَّجُّوْا فِيْ عُتُوٍّ وَّنُفُوْرٍ (২১) أَفَمَنْ يَّمْشِيْ مُكِبًّا عَلٰى وَجْهِه ۤ أَهْدٰىۤ أَمَّنْ يَّمْشِيْ سَوِيًّا عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ (২২) قُلْ هُوَ الَّذِيْۤ أَنْشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْئِدَةَ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ (২৩) قُلْ هُوَ الَّذِيْ ذَرَأَكُمْ فِيْ الْاَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ (২৪) وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هٰذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ (২৫) قُلْ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللهِ وَإِنَّمَاۤ أَنَا نَذِيْرٌ مُّبِيْنٌ (২৬) فَلَمَّا رَأَوْهُ زُلْفَةً سِيْٓئَتْ وُجُوْهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَقِيْلَ هٰذَا الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه تَدَّعُوْنَ (২৭) قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَهْلَكَنِيَ اللهُ وَمَنْ مَّعِيَ أَوْ رَحِمَنَا فَمَنْ يُّجِيْرُ الْكَافِرِيْنَ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ (২৮) قُلْ هُوَ الرَّحْمٰنُ اٰمَنَّا بِه وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْنَا فَسَتَعْلَمُوْنَ مَنْ هُوَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ (২৯) قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَآؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّأْتِيْكُمْ بِمَآءٍ مَّعِيْنٍ (৩০)
সূরা মুলকের অর্থ
পরম করম্নণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরম্ন করছি
১. বরকতময় সেই সত্তা, যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব; তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। ২. যিনি জীবন ও মরণ সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন যে- কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। আর তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। ৩. তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাতটি আকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না; আবার তাকিয়ে দেখো, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? ৪. অতঃপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখো, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। ৫. আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা (তারকারাজি) দ্বারা; আর সেগুলোকে শয়তানদেরকে প্রহার করার উপকরণ করেছি এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জাহান্নামের আযাব। ৬. আর যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে কুফরি করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব, কতই না নিকৃষ্ট সে প্রত্যাবর্তনস্থল! ৭. যখন তারা তাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে তখন তারা তার গর্জনের শব্দ শুনতে পাবে; আর তা টগবগ করে ফুটতে থাকবে। ৮. অত্যধিক ক্রোধে তা ফেটে পড়ার উপক্রম হবে। যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তাদেরকে তার রক্ষীরা জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি? ৯. তারা উত্তরে বলবে, হ্যাঁ আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল, অতঃপর আমরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি; তোমরা তো মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ। ১০. তারা আরো বলবে, যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে অনুধাবন করতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম না। ১১. অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। সুতরাং দূর হোক জাহান্নামবাসীরা। ১২. যারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। ১৩. তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে, তিনি তো অন্তরের গোপনীয়তা সম্পর্কেই সম্যক অবগত। ১৪. যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী, ভালোভাবে অবগত। ১৫. তিনি তোমাদের জন্য জমিনকে চলাচলের উপযোগী করেছেন; অতএব তোমরা এর রাস্তাসমূহে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিযিক হতে আহার করো। তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ১৬. তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দেবেন না? তখন তা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। ১৭. কিংবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী বাতাস প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে, কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী! ১৮. আর তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল; ফলে কীরূপ হয়েছিল আমার শাস্তি? ১৯. তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের উপরের পাখির প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। ২০. দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের এমন কোন সৈন্য আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করবে? কাফিররা তো ধোঁকায় পড়ে আছে মাত্র। ২১. তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন এমন কে আছে যে, তোমাদেরকে রিযিক দান করবে? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্য বিমুখতায় অবিচল রয়েছে। ২২. যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে
ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি সঠিক পথপ্রাপ্ত, না কি সেই ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে? ২৩. বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। ২৪. বলুন, তিনিই পৃথিবী ব্যাপী তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে। ২৫. আর তারা (কাফিররা) বলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও (তবে বলো) এই প্রতিশ্রুতি কবে বাস্তবায়িত হবে? ২৬. বলুন, এ জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকটই আছে; আমি স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। ২৭. যখন তা নিকটে দেখবে তখন কাফিরদের মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে যাবে এবং তাদেরকে বলা হবে, এটাই তোমরা দাবি করতে। ২৮. বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি আল্লাহ আমাকে ও আমার সঙ্গীদেরকে ধ্বংস করেন অথবা আমাদের প্রতি রহম করেন তবে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে কে রক্ষা করবে? ২৯. বলুন, তিনিই দয়াময়, আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস রেখেছি এবং তাঁর উপরই ভরসা করেছি; অচিরেই তোমরা জানতে পারবে যে, কে স্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে। ৩০. বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি তোমাদের পানি ভূ-গর্ভের তলদেশে চলে যায় তবে কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্রবাহমান পানি?
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‐
وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন