মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ভারতের হিন্দু-মুসলমান জাতি এক সূত্রে বাধা। যদিও ধর্ম পৃথক তবুও মিলনমৈত্রী, দেশের সু-গঠন, সংরক্ষণ বা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এ দুটি সম্প্রদায় মস্তক ও দেহের মত সংযুক্ত। তবুও অনেকে মনে করেন ভারতে আরও জাতি এবং ধর্ম রয়েছে, সুতরাং মুসলমানদেরকে এত গুরুত্ব দেয়ার কোন যুক্তি নেই। হিন্দু জাতির পাশে মুসলমানদের চিন্তা করতে যে উপকরণ ও বৈশিষ্ট্য মেলে, অন্য ক্ষেত্রে তা মেলে না। আমরা জানি ইংরেজ শাসকগণ বিদেশী, কারণ তারা এদেশকে নিজের দেশ বলে মনে করতে পারেন নি।
তার শাসনের নামে শোষন করে ভারতীয় সম্পদ নিজের দেশে নিয়ে স্বদেশকে সমৃদ্ধিশালী করেছে। আর বাবর, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আলমগীর, শেরশাহ এঁরা এদেশকে স্বদেশ প্রমাণ করেছেন-অন্য কোন দেশে ভারতের ধনরত্ন নিয়ে তাকে সমৃদ্ধ করেছেন তা নয়। অবশ্য যেসব মুসলমান নৃপতি ভারত আক্রমণ করে এখানকার সম্পদ নিয়ে নিজের দেশে জমা করেছেন তাদের বিদেশী বলতে কারো আপত্তি নেই।
এ মুসলিম জাতির সাথে ভারতের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তুলনা করলে দেখতে পাওয়া যাবে অনেক ব্যবধান ! মুসলমান জাতি সাতশত বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মুসলমান জাতি ছাড়া ভারতে আর কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এ উন্নতির উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেননি। যদি শক্তিশালী ইংরেজকেও তুলনার জন্য টেনে আনা হয় তাহলে দেখা যাবে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত তারা শাসন চালাতে পেরেছেন, অর্থাৎ ২০০ বছরেরও কম।
স্বামী বিবেকানন্দের লেখা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য' পুস্তকের ১১৫ পৃষ্ঠা থেকে তুলে ধরছি-ইউরোপের উদ্দেশ্য সকলকে নাশ করে আমরা বেঁচে থাকব, আর্যদের উদ্দেশ্য সকলকে আমরা সমান করব। ইউরোপের সভ্যতার উপায়- তলওয়ার; আর্যের উপায়-শিক্ষা সভ্যতার তারতম্যে, সভ্যতা শেখবার সোপান-বর্ণবিভাগ। ইউরোপে বলবানের জয়, দুর্বলের
স্বামী বিবেকানন্দ আরও বলেন, “দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে, সেথায়ই আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা, জাতীয়ত্ব আজও বর্তমান।" (দ্রঃ ঐ, পৃষ্ঠা ১১৮)
স্বামীজির কথার সত্যতা চিন্তা করলেই দেখা যাবে হাজার বছর ধরে মুসলমানদের প্রশাসন চললেও ভারতের কোন জাতি ও ধর্মকে তারা শেষ করে দেননি, যদি এ মতলব তাদের থাকত তাহলে ভারতে একটিও অমুসমান থাকার কথা নয়। আজ যদি এ ধারণা হয়-ভারতবাসীকে সব এক ধর্মীয় জাতিতে পরিণত করতে হবে, তাতে ধর্মান্তরকরণ, বিতাড়ণ অথবা পরকালে প্রেরণ যেটি যেখানে প্রয়োজন-তাহলে নিসন্দেহে বলা যায় এ সাংঘাতিক সংকল্পের সাথে বিগত পৌনে এক হাজার বছর রাজত্ব করা মুসলমানদের মানসিকতার তুলনা করলে শ্রদ্ধায় হৃদয় হৃষ্ট ও নমনীয় হয়ে ওঠে।
ভারতের শুধু সংখ্যালঘু জাতিই নয়, যে কোন জাতির সাথে মুসলমানদের তুলনা করলে দেখা যাবে তারা শুধু ভারতীয় জাতিই নন বরং বিশ্ব বা জাগতিক জাতি। কারণ ভারতের সমস্ত মুসলমান যদি কোনভাবে শেষ হয়েও যান তবুও পৃথিবীতে এ জাতি ও ধর্মের বিলুপ্তি ঘটবে না। কারণ, আরব, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও উগাণ্ডার মত গণ্ডা গণ্ডা দেশ আছে, যেখানে মুসলমান সংখ্যাধিক্য। তাছাড়া সারা বিশ্বে এমন কোন রাষ্ট্র নেই যেখানে মুসলমান জাতি স্থায়ীভাবে যুগ যুগ ধরে বাস করছে না।
মুসলমান সভ্যতা বিশ্বের উন্নতির সর্ববিভাগে এমন সৃজনশীলতা আবিষ্কারের জনক হয়ে আছে যা ঐতিহাসিক সত্য। বিজ্ঞান বিভাগে দৃষ্টি দিলেই দেখা যায়, রসায়ন বা কেমিস্ট্রির জন্মদাতা মুসলমান। রসায়নের ইতিহাসে জাবিরের নাম সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া ছোটখাট জিনিস ধরলে তো ফিরিস্তি অনেক লম্বা হয়ে যাবে। বন্দুক, বারুদ, কামান, প্রস্তর নিক্ষেপণ যন্ত্রের আবিষ্কারও তাঁদেরই অবদান। যুদ্ধের উন্নত কৌশল ও বারুদ বা আগ্নেয়াস্ত্র সম্বন্ধে বিখ্যাত আরবী গ্রন্থ তারাই লিখেছেন বিশ্ববাসীর জন্য। সেটির নাম আলফুরুসিয়া ওয়াল মানাসিব উল হারাবিয়া।
ভূগোলেও মুসলমান অবদান এত বেশি যা জানলে অবাক হতে হয়। ৬০ জন মুসলিম ভূগোলবিদ পৃথিবীর প্রথম যে মানচিত্র এঁকেছিলেন তা আজও বিশ্বের বিস্ময়। আরবী নাম হচ্ছে 'সুরাতুল আরদ', যার অর্থ হচ্ছে বিশ্বের আকৃতি। ইবনে ইউনুসের অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা মণ্ডল নিয়ে গবেষণার ফল ইউরোপ মাথা পেতে মেনে নিয়েছিল। ফরগানী, বাত্তানি ও আল খেরজেমি প্রমুখের ভৌগলিক অবদান স্বর্ণমণ্ডিত বলা যায়। কম্পাস যন্ত্রের আবিষ্কারকও মুসলমান। তার নাম ইবনে আহমদ। জলের গভীরতা ও সমুদ্রের স্রোত-মাপক যন্ত্রের আবিষ্কারক ইবনে আবদুল মাজিদ।
বিজ্ঞানের উপর যে সব মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থ পাওয়া যায় আজও তা বিজ্ঞান জগতের পুঁজির মত ব্যবহৃত হচ্ছে। ২৭৫ টি গবেষণামূলক পুস্তক যিনি একাই লিখেছেন তিনি হচ্ছেন আলকিন্দি। প্রাচীন বিজ্ঞানী হাসান, আহমদ ও মুহাম্মদ সম্মিলিতভাবে ৮৬০ সনে বিজ্ঞানের একশত রকমের যন্ত্র তৈরির নিয়ম ও ব্যবহার প্রণালী এবং তার প্রয়োজন নিয়ে গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। চার্লস ডারউইন পশু-পক্ষি, লতা-পাতা নিয়ে গবেষণা করে পৃথিবীতে প্রচার করেছেন বিবর্তনবাদ'।
কিন্তু তারও পূর্বে যিনি এ কাজ করার রাস্তা করে গেলেন এবং ইতিহাসে সাক্ষ্য রেখে গেলেন, তিনি হচ্ছেন আল আসমাঈ। তাঁর বইগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই। ৭৪০ খৃস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয় এবং ৮২৮ খৃস্টাব্দে হয় তার পরলোকগমন। মুসলমানরাই পৃথিবীতে এখন চিনি তৈরি করেন। ভূতত্ত্ব সম্বন্ধে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মুজাম আল উবাদা'র লেখক হচ্ছেন কুব ইবনে আবদুল্লাহ ৭০২ খৃস্টাব্দে তুলা থেকে তুলট কাগজ প্রথম সৃষ্টি করেন ইউসুফ মনে উমর। তার দু'বছর পর বাগদাদে কাগজের কারখানা তৈরী হয়।
মুপি জাইয়িন জাবীর ইবনে হাইয়ান-ইস্পাত তৈরী, ধাতুর সোধন, তরল বাশীকরণ, কাপড় ও চামড়া রং করা, ওয়াটার প্রুফ তৈরী, লোহার মরিচা প্রতিরোধক বার্ণিশ, চুলের কলপ ও লেখার পাকা কালি সৃষ্টিতে অমর হয়ে রয়েছেন। ম্যাঙ্গানিক ডাই অক্সাইড থেকে কাঁচ তৈরীর প্রথম চিন্তাবিদ মুসলিম বিজ্ঞানী আররাজী’ও অমর হয়ে আছেন। ইংরেজদের ইংরাজী শব্দে এ বিজ্ঞানীর নাম Razes লেখা আছে।
একদিকে তিনি ধর্মীয় পণ্ডিত অপরদিকে গণিতজ্ঞ ও চিকিৎসা বিশারদ ছিলেন। সোহাগা, লবণ, পারদ, গন্ধক, আর্সেনিক ও সালমিয়াক নিয়ে তাঁর লেখা ও গবেষণা উল্লেখযোগ্য। আরও মজার কথা, পৃথিবীতে প্রথম পানি জমিয়ে বরফ তৈরী করাও তার অক্ষয় কীর্তি। ইউরোপ পরে নিজের দেশে বরফ প্রস্তুত কারখানা চালু করে। পৃথিবী বিখ্যাত গণিত বিশারদদের ভিতর ওমর খৈয়ামের স্থান উজ্জ্বল রত্নের মত। ঠিক তেমনি নাসিরুদ্দিন তুসী এবং আবুসিনার নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আকাশ জগত পর্যবেক্ষণ করার জন্য বর্তমান বিশ্বের মানমন্দির আছে বৃট্রেনে এবং আমেরিকায় কিন্তু কে বা কারা এগুলোর প্রথম আবিষ্কারক প্রশ্ন উঠলে উত্তর আসবে হাজ্জাজ ইবনে মাসার এবং হুনাইন ইবনে ইসহাক। এঁরাই পৃথিবীর প্রথম মানমন্দিরের আবিষ্কারক। সেটা ছিল ৭২৮ খৃস্টাব্দ। ৮৩০ খৃষ্টাব্দে জন্দেশপুরে দ্বিতীয় মানমন্দির তৈরী হয় বাগদাদে হয় তৃতীয় মানমন্দির। দামেস্ক শহরে চতুর্থ মানমন্দির তৈরী করেন আল মামুন। আর ইতিহাসের ঐতিহাসিকদের কথা বলতে গেলে মুসলিম অবদান বাদ দিয়ে তা কল্পনা করা খুবই মুশকিল। এমনকি, মুসলমান ঐতিহাসিকরা কলম না ধরলে ভারতের ইতিহাস হয়ত নিখোঁজ হয়ে যেত।
অবশ্য ইংরেজ ঐতিহাসিকদের সংখ্যাও কম নয়। তবে একান্তভাবে মনে রাখার কথা, ইতিহাসের স্রষ্টা বিশেষতঃ মুসলমান। তার অনুবাদক দল ইংরেজ ঐতিহাসিকরা আর আমাদের ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব ইংরাজীর অনুবাদ করেছেন। যে কোন প্রকৃত ঐতিহাসিক কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক অন্ততঃ 'জানিনা' বলতে পারবেন না, নিশ্চয় স্বীকার করবেন যে, মূল ঐতিহাসক বেশির ভাগই মুসলিম।
যেমন-আলবিরুণী, ইবনে বতুতা, আলিবিন হামিদ, বাইহাকীম, উবী, গাজী মিনহাজুদ্দিন সিরাজ, মহীয়ুদ্দিন, মুহাম্মদ ঘোরী, জিয়াউদ্দিীন বাণী আমীর খুসরু, শামসী সিরাজ, বাবর, ইয়াহিয়া-বিন-আহমদ, জওহর, আব্বাস শেরওয়নি, আবুল ফজল, বাদাউনি, ফিরিস্তা, কাফি খাঁ, মীর গোলাম হুসাইন, হুসাইল সালেমী ও সইদ আলী প্রমুখ মনীষীবৃন্দ। আরও লম্বা ফিরিস্তি হলে অসহিষ্ণু পাঠক পড়তে বিরক্তি বোধ করবেন, তাই ঐতিহাসিকদের নাম ছেড়ে দিয়ে বিখ্যাত বিখ্যাত মূল ইতিহাস গ্রন্থের নাম জানাচ্ছি। অন্তত একবার পাঠকবর্গের পবিত্র রসনার পরশে গ্রন্থ ও গ্রন্থকারদের আত্মা ধন্য হোক।
আখইয়ার, তারিখে ইয়াকুব, তারিখে তাবারী, আখবারুজ্জামান, মারওয়াজুজ জাহাব, তামবিনুল আশরাফ, কামিল, ইসদুল গাবাহ, আখবারুল আব্বাস, কিতাবুল ফিদ-আ, মুয়াজ্জামুল বুলদান প্রভৃতি ইতিহাস গ্রন্থগুলোর নাম পৃথিবী যতদিন থাকবে মুছে যাবে বলে মনে হয় না। সাধারণ পাঠক পাঠ করতে বিরক্তি বোধ করলেও লেখক সাহিত্যিক, নবযুগের বা আগামী যুগের ঐতিহাসিকদের জন্য এসব তথ্য পূর্ণ নামগুলোর মূল্য যে অপরিসীম, তা অস্বীকার করা যায় না।
পৃথিবীর বুকে সভ্যতার আলোকবর্তিকা গোড়া হচ্ছে কলম, তার পরের ধাপ হচ্ছে গ্রন্থ প্রণয়ন, গ্রন্থাগার নির্মাণ এবং বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি। মুসলমান ও আরব সভ্যতা এ বিষয়ে কতটা অগ্রসর ছিল তার সামান্য আভাষ দিচ্ছি। মুসলমান সভ্যতা কেন এদিকে ঝুঁকেছিল তার কারণ কুরআনে যে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি বাক্য রয়েছে তার মধ্যে প্রথম বাক্যটি হচ্ছে : তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন' আর তৃতীয় বাক্যে আছে, ‘পড় যিনি তোমাদের কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।'
তাছাড়া হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও আরবীতে যা বলেছেন তার মর্মার্থ হচ্ছে যে জ্ঞানার্জন করে তার মৃত্যু নেই', চীনে গিয়ে হলেও জ্ঞান অনুসন্ধান কর', 'প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ইলম বা বিদ্যা শিক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য', 'সমগ্র রাত্রির উপাসনা অপেক্ষা এক ঘণ্টা জ্ঞান চর্চা করা উত্তম’, 'যে জ্ঞানীকে সম্মান করে সে আমাকে সম্মান করে। সুতরাং নবী (সাঃ)-এর কথার ফলাফল তাঁর জীবদ্দশাতেই আরম্ভ হয়ে পরবর্তীকালে বাগদাদ, মিশরের কায়রো সালেনা ও কর্ডোভায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠল। (দ্রঃ The Spirit of Islam লেখক সৈয়দ আমীর আলি, পৃষ্ঠা ৩৬১ - ৩৬২) :
আদর্শ তালিবি ইলম বা বিদ্যানুসন্ধিৎসু দল হিসেবে তাঁরা ছিলেন পৃথিবীর উন্নত মার্গে।(দ্রঃ History of the Arabs, পৃষ্ঠা ২৪০, ছাপা ১৯৫১, লেখক Philip Hitti)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পরলোকগমনের ১১৮ বছর পর ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা তথা স্পেন হতে আরম্ভ করে একেবারে ভারতের সিন্ধুনদ পর্যন্ত ইসলাম সভ্যতা বিস্তার লাভ করে। (দ্রঃ বিজ্ঞানের ইতিহাস, ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৯).
আরব সভ্যতার ধারক ও বাহকরা শুধু দেশ জয়ই করেননি, বরং সেখানে মুসলমান পণ্ডিতদের বসিয়েছেন গবেষণা করতে এবং গ্রন্থাগার ভর্তি করেছেন নতুন ও পুরাতন পুঁথিপত্র পুস্তক সম্ভারে। (দ্রঃ ঐ পুস্তকের ১১০ পৃষ্ঠা)
মানুষের স্মরণশক্তি চঞ্চল সেহেতু হয়ত ভুল করে কেহ মনে করতে পারেন শুধু মুসলিম গুণগান এত কেন? তাই মনে করিয়ে দিচ্ছি, যারা মনে করেন ভারতের সমস্ত সংখ্যালঘু দায়েব মত মুসলিমরা একটা অন্যতম জাতি, তারা মনে রাখবেন মুসলিম শুধু ভারতের নয় বরং বিশ্বের বুকে সবজাগতিক জাতি বলে গণ্য নয় কি, সে বিচারের ভার সুধী সমাজের।
গ্রন্থ বা পুস্তুক সংগ্রহ মুসলমানদের জাতীয় স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। বন্দরে বন্দরে লোক প্রস্তুত থাকত, কোন বিদেশী এলেই তার কাছে যে বইপত্রগুলো আছে সেগুলো নিয়ে অজানা তথ্যের বইগুলো সাথে সাথে অনুবাদ করে তার কপি তৈরি করে তার বই ফেরত দেয়া হত আর তাদের অনিচ্ছা না থাকলে তা কিনে নেয়া হত। (দ্রঃ Guide to the Use of Books and Libraries (Megrow Hill, 1962),পৃষ্ঠা ১২)
হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা অভিযোগ আছে যে, তার আদেশে আমর ইবনুল আস আলেকজেন্দ্রিয়া লাইব্রেরীর লাখ লাখ গ্রন্থের গ্রন্থাগারে আগুন লাগিয়ে ভস্মীভূত করে দেন। কিন্তু এ কাহিনীটি.কোন ক্রমেই সঠিক নয়, কারণ আমর আলেকজেন্দ্রিয়া দখল করেন ৬৪২ খৃষ্টাব্দে, এ সময়ের পূর্বে লাইব্রেরীটির অস্তিত্বই ছিল না। (প্রমাণ-এর জন্য Mackensen এবং Ruth Stellhom-এর লেখা দ্রষ্টব্য)
তাছাড়া মিঃ গীবন বলেছেন-“আরবরা বিধর্মীদের গ্রন্থাদি বিনষ্ট করা পছন্দ করতেন না। তাদের ধর্মীয় নীতি এটা সমর্থন করে না।' (দ্রঃ গ্রন্থাগারের ইতিহাস (মধ্যযুগ) শামসুল হক, পৃষ্ঠা ৩২)
এ প্রসঙ্গে মিঃ হিট্টি বলেছেন-ওটা কিংবদন্তি হতে পারে তবে ইতিহাস হিসেবে বর্জনযোগ্য' (দ্রঃ History of the Arabs পৃষ্ঠা ১৬৬)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাহাবী হযরত আলী প্রশাসন, বিদ্রোহ দমন প্রভৃতি প্রয়োজনে কর্মব্যস্ত থাকলেও তার চেষ্টায় কুফার জামে মসজিদ জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। দেশ ও বিদেশের ছাত্রেরা সেখানে জ্ঞানার্জন করার জন্য ছুটে যেতেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু স্বয়ং ছিলেন সেখানকার অধ্যক্ষ। (দ্রঃ মুজীবর রহমানের লেখা হযরত আলী পুস্তকের ৩৬০ পৃষ্ঠা, ছাপা ১৯৬৮)
হযরত উমরের একশত বছর পরে বাগদাদে প্রথম পাবলিক লাইব্রেরী পরিদৃষ্ট হয়। (প্রমাণঃ Pinto, olga প্রণীত The Libraries of the Arabs During the Time of the Abbasids, islamic culture, April 1929, পৃষ্ঠা ৬০)
উমাইয়া বংশের আমলে ব্যাকরণ লেখা, ইতিহাস লেখা এবং স্থাপত্য বিদ্যার অগ্রগতি শুরু হয়। মিঃ হিট্টির মতে উমাইয়া আমল হচ্ছে উন্নতির যুগে ডিমে তা দেয়ার যুগ'। (দ্রঃ History of the Arabs পৃষ্ঠা ২৪০)
হযরতের সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যখন পরলোকগমন করেন তখন এক বড় উট বোঝাই বই রেখে গিয়েছিলেন, গবেষকদের চিন্তা করতে হবে, তখন বই সংগ্রহ করা এ যুগের মত সহজ ছিল না, কারণ সবই ছিল হাতের লেখা। (প্রমাণ : মাওঃ নূর মুহাম্মদ আজমীর হাদীসের তত্ত্ব ও ইতিহাস' পুস্তকের ৮১ পৃষ্ঠা, ১৯৬৬)
হযরত আবু হুরাইরার সাথে বহু গ্রন্থ পাওয়া গেছে, নূর মুহাম্মদ সাহেব যেগুলোকে খাতা বলেছেন। নবী (সাঃ)-এর একটা তরবারীর খাপে অনেক পুস্তিকার উপকরণ সংরক্ষিত ছিল। (দ্রঃ উপরের ঐ গ্রন্থ)
আরবের বিখ্যাত বক্তাদের সারা জীবনের সমস্ত বক্তৃতাগুলো লিখে নেয়ার মত লেখক ও প্রেমিকের অভাব ছিল না। লিখতে লিখতে কাগজ ফুরিয়ে গেলে জুতার চামড়াতে লেখা হত। তাতেও সঙ্কুলান না হলে হাতের তালুতে লিখতেও ভ্রুক্ষেপ ছিল না। (দ্রঃ ঐ পৃষ্ঠ ৮৫)
সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ বক্তার মুখ এবং মস্তিষ্ক নিঃসৃত বাণী লিখে সংগ্রহ করেছিলেন আবু আমর ইবনুল আ’লা যা একটি ঘরের ছাদ পর্যন্ত ঠেকে গিয়েছিল। (প্রমাণ। Encyclopaedia of Islam Vol-1 P, 127)
খলিফা মামুনের বিরাট গ্রন্থাগারের লাইব্রেরীয়ান ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল রেজেমি। ইনিই পৃথিবীতে প্রথম বীজগণিতের জন্মদাতা। তখনকার যুগে গ্রন্থাগারিক পদটি পাওয়া খুব কঠিন ছিল, কারণ তাঁকে অত্যন্ত পাণ্ডিত্য এবং স্মরণশক্তির অধিকারী, চরিত্রবান, মধুরভাষী ও পরিশ্রমী হতে হত। সে সময় পৃথিবীর মধ্যে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠতম গণিতজ্ঞ। তিনি এ অভিজ্ঞতা শুধু বই পড়েই অর্জন করেননি বরং বিশ্বপর্যটনও ছিল তার কারণ। তিনি ভারতেও এসেছিলেন বলে অনেকের ধারণা। ভারতের বহু ছাত্রকে তাঁর জ্ঞানাংশ দিয়ে তিনি তার প্রতিভার বীজ বপন করেন।
আর একথাও অস্বীকার করা যায় না যে, ভারতে সে যুগে যা কিছু গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন তা তিনিও গ্রহণ করেছিলেন। কারণ পর্যটনের উদ্দেশ্যই ছিল জ্ঞান সঞ্চয়। তিনি ভারতের বিষয় বর্ণনা করে কিতাবুল হিন্দ' নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। আরও মনে রাখার কথা, অঙ্ক বিভাগের শূন্যের মূল্য অমূল্য এবং অপরিসীম। এ শূন্যের (০) জন্মদাতাও তিনি। হিসাব আল জাবার ওয়াল মুকাবেলা' গ্রন্থ তার বিরাট অবদান। তিনি বিখ্যাত জ্যোতির্বিদও ছিলেন। খলিফার অনুরোধে তিনি আকাশের একটি মানচিত্র আঁকেন এবং একটি পঞ্জিকার জন্ম দেন। তাঁকে সরকারি উপাধি দেয়া হয়েছিল সাহিব আলজিজ' বলে। (প্রমাণঃ সমরেন্দ্রনাথ সেনের লেখা বিজ্ঞানের ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৬, ১৩৬৪)
আলমুকাদ্দাসি একজন ঐতিহাসিক এবং পর্যটক। তিনি বলেন-আদাউল্লাহ সিরাজ শহরে এমন একটি লাইব্রেরী করেছিলেন, যে অট্টালিকাটির তখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ছিল না। যা দেখলে মূর্খ শিক্ষিত যে কোন জন মুগ্ধ না হয়ে পারত না। ভবনটির ভিতরে অগভীর জলের নহর দিয়ে সাজান ছিল, উপরে ছিল গম্বুজ আর অট্টালিকাটি উদ্রানি দিয়ে ঘেরা ছিল, তৎসংলগ্ন একটি হ্রদ ছিল। পাঠকদের সুবিধার জন্য কাঠের মাচান বা কাঠের তাক একেবারে নীচে হতে উপর পর্যন্ত সাজান ছিল, মেঝেতে কার্পেট সাদৃশ্য বিছানা বিছান থাকত। আলোর ব্যবস্থাও ছিল। সমস্ত পুস্তকের ক্যাটালগ ছিল। তিনি আরও বলেন, সেটা ছাড়াও সেখানে আরও গ্রন্থাগার ছিল। (প্রমাণ : Pinto, olga লিখিত পূর্বের পুস্তকের ২২৮ পৃষ্ঠা)
সবুরের একাডেমী সংলগ্ন গ্রন্থাকাগারটিতে বই ছিল ১০৪০০ খানি। সবগুলোই হাতে লেখা ইয়াকুত ও অন্ধ কবি আল মা'রি যেসব বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলো ব্যবহার করেছেন তাতে সেকালের সংবাদে একালের লোকও অবাক না হয়ে পারে না।'
এবার ইউনিভারসিটি ও কলেজের দুএকটা উদাহরণ দিতে চাইছি। বাগদাদে ১০৬৫ এটাব্দে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ আরম্ভ হয় আর শেষ হয় ১০৬৭ খৃস্টাব্দে এটির প্রতিষ্ঠাতা নিজাম-উল-মুলক। তার কিছু দোষ ক্রটিও যেমন ছিল গুণও ছিল তার সাগরের মত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বেও অনেক মাদ্রাসা বা শিক্ষানিকেতন তৈরী হয়েছিল। তবুও এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
এখানে ছেলেরা মাসিক বৃত্তি পেত। অধ্যাপকগণ মিম্বরের মত উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে বকতৃতা দিতেন। ছাত্রদের প্রশ্ন করে উত্তর শুনতেন। দেশ-বিদেশের ছাত্রদের সংখ্যা এত ছিল যে উচ্চকণ্ঠের ঘোষক চীৎকার করে অধ্যাপকদের কথা জানিয়ে দিতেন।
এ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পৃথিবী বিখ্যাত লাইব্রেরীও সগৌরবে শোভিত হলি। ১১১৬ খৃস্টাব্দে প্রতিষ্ঠানের চারিদিকে আগুন লেগে যায়। কোনরকমে গ্রন্থগুলো সরিয়ে ফেলা হয় বটে কিন্তু প্রতিষ্ঠান ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইবনুল জাওজী বলেন, তার ক্যাটালগগুলো বড় সুন্দরভাবে সাজান ছিল, তার মধ্যে একটা ক্যাটালগের বই-এর সংখ্যাই হাজার। (1 : Abdus Subbuh : Libraries in the Early Islamic World (Reprinted from Journal of the University of Peshwar No-6. 1958 P.8)
মাদ্রাসা মুসতাসিরিয়া নামে এখানেই আর একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। অনেকের মতে সুলতান আল মুসতানিসিরের উদ্দেশ্য ছিল উপরোক্ত শিক্ষালয়ের সম্মান স্নান করা। তবুও শিক্ষক, ছাত্র ও প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য-গর্বে সেটাকে নিষ্প্রভ করা সম্ভব হয়নি। (Mackensen-এর লেখা পূর্বোক্ত পুস্তক, পৃষ্ঠা ৪১১)
মোঙ্গল নেতা হালাকু খান ১২৫৮ খৃস্টাব্দে বাগদাদ আক্রমণ করে নগর ও খলিফার বংশ ধ্বংস করে দেয়, অনেকে মনে করেন হালাকু বুঝি মুসলমান। কিন্তু আসলে তা নয়, বরং তাঁরা নরপিশাচ শ্রেণীর শক্তিশালী লুণ্ঠনকারী এবং তারা জাতিতে ছিল অমুসলমান ১৩২৭ খৃস্টাব্দে ইবনে বতুতা যখন বাগদাদ পর্যটন করেন সে সময়টা ছিল হালাকুর আক্রমণের ৭০তম বছর। তিনি এ দুটি বিশ্ববিদ্যিালয় সম্বন্ধে বর্ণনা করে গেছেন। (Travels of Ibne Botuta, Vol-II, P 332, 1962)
৯৭০ খৃষ্টাব্দে আফ্রিকার কায়রো বা মিশরে আলআযহার নামে একটি বিরাট মসজিদ নির্মিত হয়। আল আজিজ তার সাথে একটি একাডেমী তৈরী করেন পরে সেটা উন্নতির শেষ। ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এখনও সেটা বর্তমান। সে সময় সে গ্রন্থাগারে গ্রন্থের সংখ্যা ছিল ১৮,০০০। আমরা যেন ভুলে না যাই, তখন এত সহজে ছাপা বই পাওয়ার মত পরিবেশ ছিল না। ১০০৪ খৃস্টাব্দে আল হাকিম দারুল ইলম'-এর উদ্বোধন করেন। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন-হাদীস, ভাষাতত্ত্ব, জ্যোতির্বিদ্যা, ব্যাকরণ ও চিকিৎসা শাস্ত্র প্রভৃতি শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। প্রতিমাসে বেশ কয়েকবার বিতর্ক সভা অনুষ্ঠিত হত। (দ্রঃ Shalaby. Ahmad-47 69311 History of Muslim Education, gót 30%)
আজকের একটা আধুনিক গ্রন্থাগার সামনে রেখে হাজার বছর আগের লাইব্রেরীগুলো মিলিয়ে দেখলে মুসলিম সভ্যতার দান ও মানের পরিমাপ করা সহজ হবে। আল হাকিমের সময়ে গ্রন্থাগারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছিল ম্যানেজার প্রচুর কর্মচারী, পিওন, দারোয়ান প্রভৃতি। সেটা পরিচালনার জন্য সে যুগের খরচার একটা তালিকার উল্লেখ আছে। তখন সে দেশের স্বর্ণমুদ্রার নাম ছিল দীনার'। আবদানী' বা মাদুরের মূল্য বাবদ ১০ দীনার, লিপিকারদের কাগজ বাবদ ৯ দীনার, গ্রন্থাগারিকের জন্য ৪৮ দীনার, পানির জন্য ১২ দীনার, চাকর বাবদ ১৫ দীনার, কাগজ-কলম-কালি ১২ দীনার, পর্দা মেরামত ১ দীনার, বই মেরামত ও নষ্ট পাতা উদ্ধারের জন্য ১২ দীনার, শীতকালে ব্যবহারের জন্য ফেন্টের পর্দা ৫ দীনার, শীতকালে ব্যবহারের জন্য কার্পেট বাবদ ৪ দীনার। (দ্রঃ শামসুল হকের লেখা গ্রন্থাগারের ইতিহাস ও মধ্যযুগ, পৃষ্ঠা ১৩৫)
অষ্টম শতকে খলিফা হারুনের সময় বাগদাদ, সিরিয়ার দামেস্ক, ত্রিপলি ও হামায় কাগজের কল স্থাপিত হয়। অতএব এ কথা অত্যন্ত সত্য মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কারের আগে কাগজকল সাহিত্যিক তৎপরতায় নতুন যুগের দারোদঘাটন করে। অতএব বিশ্বের বুদ্ধিজীবীরা এ অবদান অস্বীকার করতে পারেন না। মিশরের বিশ্ববিদ্যালয়ের মত আরও যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় তখন ছিল, তার সবগুলো মুসলিম সভ্যতার সাক্ষ্য দেয়।
যেমনঃ কার্ডোভা, গ্রানাডা, টলেডো, মার্সিয়া, আলমেরিয়া, সেভিল, ভ্যালেনসিয়া, কাদজে বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্মদাতা বলা যায়। অবশ্য ইংরেজরা তাদের লেখায় পরিষ্কারভাবে তা স্বীকার করেছেন যেমন মিঃ নিকলসন বলেছেন, মুসলমানদের কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যায় স্পেন, ফ্রান্স, ইটালী এমনকি জার্মানীর জ্ঞান সাধকদের চুম্বকের মত টেনে আনত। (দ্রঃ Nichoison এর লেখা History of the Arabs পুস্তকের ৪১১ পৃষ্ঠা, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় মুদ্রণ, ১৯৬২)
আগেই জানান হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষা হচ্ছে বিদ্যা শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য। মুসরিম বলতে পুরুষ ও নারী উভয়কেই বুঝায়। সুতরাং হযরতের সময়ে মহিলাগণও কবিতা, কাব্য সাহিত্য এবং কুরআন-হাদীসে যে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন সে কথা অনেকের জানা আছে। যেমন হযরতের স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু একজন উচ্চস্তরের হাদীসবিদ ও বিদূষী ছিলেন।
স্পেন দেশে যখন ইসলামী সভ্যতা পৌছাল তখন শুধু পুরুষরাই জ্ঞান চর্চায় এগিয়ে এসেছিলেন তা নয় বরং মেয়েরাও অনগ্রসর ছিলেন না। যেমন বিখ্যাত মহিলা লাবানা, ফাতিমা, রাজিয়া, খাদিজা, আয়েশা প্রভৃতি। কেউ যেন মনে না করেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রী-কন্যা তাঁরা। তাঁদের নামগুলোর সাথে নব সাহেবের পরিবারের নামের মিল আছে। মাত্র। এর থেকে বুঝা যায় এ সমস্ত বিদুষী মহিলাদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ভক্ত ছিলেন।
এমনিভাবে 'রাদেয়া' নামে এক সুপণ্ডিত মহিলা ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন যেহেতু তখন বই ছাপার প্রেস ছিল না তাই হাতে লেখার উপর নির্ভর করতে হত জ্ঞান অনুসন্ধানকারীদের। তাই জ্ঞানী পুরুষদের বাড়ীর মেয়েরা স্ত্রী-কন্যা বোনেরা সে কাজে সহযোগিতা করতেন। অতএব লেখায় আরও হাত পাকাত, তাছাড়া যে তথ্য কেউ নিজে হাতে লিখে বা কপি করে অবশ্যই সেটা তার একবার নয় একাধিকবার পড়ার সমতুল্য হয়ে যায়। .. আরবে অত্যন্ত প্রাচীনকালে লেখাপড়ার চর্চা ছিল-পুরাতন আরবী সাহিত্য ও পুঁথিতে তার প্রমাণ আছে। যেমন সালমা' নামে এক বালিকার বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং দোয়াতে কলম ডুবিয়ে কালি নিয়ে খেলার উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং বুঝা যায় বিদ্যালয়, কলম ও দোয়াতের সাথে তাদের পরিচয় ছিল। (দ্রঃ ডক্টর হামিদুল্লার রেখা আহদে নববী কা নেযামে আলিমের পৃষ্ঠা ৯)
কবি, গায়ক ও সাহিত্যিকের প্রতিভা প্রবল হলেও আকস্মিক দুর্ঘটনা হলে সে মুহূর্তে প্রতিভা স্থবির হয়ে যায়। কিন্তু আরববাসীদের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ব্যাপার ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে আরবদেরশে উট চালকরা একরকম কবিতা বলে উটদের উত্তেজিত করে, ফলে
উটোর খুব দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে। মধুর বিন নাযার নামে এক আরবী যুবক উটের পিঠ হতে পড়ে গেলে তার হাত ভেঙ্গে যায় এবং তখনই হাতের দুঃখে তিনি কাব্র করে কাঁদছিলেন। সাথে সাথে উটটা আরও ছুটতে থাকে। তখন থেকে উটকে দ্রুতগামী করার জন্য এ কবিতা ব্যবহার করা হযব’ ছন্দে তা বলা হয়ে থাকে (দ্রঃ জুরজী যয়দান লিখিত তারিখু আদাবিল লুগাতিল আরাবিয়া, ১ম খণ্ড, মিশরে ১৯৫৯ তে ছাপা, পৃষ্ঠা ৬৪ ও ৬৫ এবং ইবনে সা'দের লেখা আততবকাত্ কুবরা, ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ২২)
কাব্য, কবিতা, সাহিত্য ও ছড়ায় আরববাসীরা বিশ্ববিখ্যাত ছিলেন। তাই সভা-সমিতি, বিবাহ, আনন্দ ও বিষাদে কবিতা-কাব্য ছিল তাদের আভিজাত্যের প্রতীক। (দ্রঃ কিতাবুল উমদাহ, ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ৪৯)
আরববাসীদের স্মরণশক্তির প্রখরতা এত বেশি ছিল যে মুখস্ত করা ও বলা একটা বাহাদুরির বিষয় ছিল। ফলে লেখার ব্যাপকতা ছিল না। সে কারণে দেখা যায় নবীর যুগে আরবে সুদক্ষ লেখক হিসেবে সতর জনের নাম গ্রহণযোগ্য। অবশ্য এখনকার মত আরবে তখন মানুষের এত ভীড়ও ছিলনা। (ই. জি. ব্রাউনের লেখা লিটারারী হিস্ট্রি অফ পার্শিয়া, ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ২৬১)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম মানব জাতির আদি পিতা। তিনি নানা ভাষার অক্ষর মাটি দিয়ে তৈরী করে আগুনে তা পুড়িয়ে নিয়েছিলেন। পরে নূহের বন্যায় তা নানা দেশে চলে যায়। কুরআন ও ইতিহাস বর্ণিত এ বন্যা হয়েছিল ঈসা আলাইহিস সালাম জন্মের ৩২০০ বছর পূর্বে। (দ্রঃ মাওলানা দারিয়াবাদরি আল কুরআনের উর্দু তফসীর, পৃষ্ঠা ৩৬৯)
অন্য মতে নবী ইসমাইল আরবী অক্ষরের জন্মদাতা। কেহ বলেন আরবী লিপির জন্মদাতা ‘আদনান। ঐতিহাসিক মসউদির মতে বনিমসিনের ছেলেরা আরবী লিপির আবিষ্কারক। সে সব লোকেদের নাম ছিল। আবজাদ, হুত্তি, হওয়জ ও কালিমন প্রভৃতি। তাদের নামানুসারেই আরবী বর্ণমালার নাম করণ হয়েছে। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন বলেছেন, সারা পৃথিবীতে প্রথমে লেখা শুরু করেন দক্ষিণে আরবের লোকেরা। (দ্রঃ আরবী সাহিত্যের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ১০৪)
অন্যতম হযরত হুদ আলাইহিস সালাম লিখিত-বর্ণের স্রষ্টা আর তিনি প্রত্যাদেশ দ্বারা তা শিখেছিলেন। (দ্রঃ আহমদ হাসানের লেখা আরবী বই এর উর্দু অনুবাদ, পৃষ্ঠা ১৫১
ডঃ শহীদুল্লাহর মতে আরবী লিপি শামী লিপি হতে এসেছে এবং গ্রীক ও লাতিন বর্ণমালাও এ শামীর অনুকরণে রচিত। (দ্রঃ ডঃ শহীদুল্লাহর সম্বর্ধনা গ্রন্থ, আরবী বর্ণমালা)
ভাষা গবেষক জার্মান প্রাচ্যবিদ মুরতস প্রমাণ করেছেন আরবীভাষীরাই ইয়ামেনে আরবী লিপি তৈরি করে। তিনি আরও প্রমাণ করেছেন স্পেনভাষীরা তাঁদের লেখার বিদ্যা শিখেছিল দক্ষিণ আরব থেকে। (দ্রঃ ডক্টর মনসুর ফাহমীর লেখা মুজাল্লাহুল মজমইল আরাবীম দামেশ ১ম খণ্ড ৩২, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৭
সুতরাং প্রমাণ হয়, আরবরা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলেন না বরং তাদের তৈরী আলোকবর্তিকা সারা বিশ্বকে আলোকিত করেছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে নিরক্ষর ছিলেন, এর অন্য তাৎপর্য রয়েছে। যদি তিনি উচ্চ শ্রেণীর শিক্ষক হতেন অথবা কোন উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতেন তাহলে অনেকেই ভাবতেন এত ভাষা, ভাব
অলংকার সম্বলিত কুরআন তাঁরই রচনা। কিন্তু তিনি তার সুযোগ পাননি। তাছাড়া পণ্ডিত পিতা হতেও পুত্রের পাণ্ডিত্য অর্জন সম্ভব, কিন্তু তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই তাঁর পিতা আবদুল্লাহ পরলোক গমন করেছিলেন। আর বিদুষী মা হতেও শিক্ষা নেয়া যায়, কিন্তু সেখানেও নবী বঞ্চিত ছিলেন। কারণ মক্কার বিষাক্ত 'লু' হাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার জন্য কচি বয়সেই তাঁর মা অনেক দূরে হালিমা নামের এক ধাত্রীকে পালন করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আর হালিমার ছেলেরা ছিল মেষের রাখাল। এসব সত্য তথ্যের মাঝখানে এটাই প্রমাণ হয় যে, কুরআনের সৃষ্টি নিপুণতায় নবীর কোন হাত ছিল না বরং তা আল্লাহ প্রেরিত আসমানী গ্রন্থ। পৃথিবীর সকল শিক্ষকের শিক্ষক নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বরণীয় বা করণীয়, কিন্তু কারো একথা বলার অধিকার ও সুযোগ নেই যে, তিনি বিশ্বনবীর শিক্ষক। গবে এটা ঠিক যে তিনি নিজে লিখতে না জানলেও কলম ও লেখার গুরুত্ব তার জানা ছিল। তিনি জানতেন, যে, জাতির কলম যত শক্তিশালী সে জাতি তত প্রতিষ্ঠিত ও উন্নত হতে পারবে। তাই ৬২৪ খৃস্টাব্দে বদর যুদ্ধের বন্দীদের মুক্তি দিয়েছেন এক ঐতিহাসিক শর্তে। সেটা হচ্ছে-নবীর নিরক্ষর ভক্তদের দশজনকে লেখা শেখাতে পারলেই একজন বন্দী মুক্তি পাবে। অবশ্য শিক্ষিত বন্দীদের জন্য এ শর্ত ছিল। (দ্রঃ সিরাতুল মুসতাফা, ১ম খণ্ড, ৫৯১ পৃষ্ঠা)
বিশ্বনবী তার বক্তব্য অনেক ক্ষেত্রে লিখিয়ে নিতেন। (হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২২৩ - ২২৪, লেখক মুঃ আঃ রহিম)
সাদিকাহ' বলে একটি হাদীস নবীর যুগেই সংকলন করা হয়েছিল যাতে এক হাজার হাদীস লেখা ছিল। (সুনানে দারিমি, পৃষ্ঠা ৬৭).
হযরত আনাস নবীজির সঙ্গী ছিলেন। তিনি তাঁর আদেশ, নির্দেশ, নিষেধ ও উপদেশ লিখে রাখতেন। লেখার মধ্যে যাতে ভুল না হয় বা অনিচ্ছাকৃত যোগ বিয়োগ না হয়, তাই তিনি পড়ে শোনাতে বলতেন এবং তিনি তা শুনতেন। (হাকিমঃ মুসতরদক, ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৫৭৩)
কবিরা অনেক ক্ষেত্রে ছোটকে বড়, বড়কে ছোট, সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য করে ফুটিয়ে তোলেন। সেজন্য সে ক্ষেত্রে কুরআনে কবিদের সম্বন্ধে কটুক্তি আছে। নবী তা সহজ করে মানুষের জন্য বোধগম্য করে জানিয়েছেন-কবিতা কথার মতই। ভাল কথা যেমন সুন্দর, ভাল:কবিতাও তেমন সুন্দর এব মন্দ কবিতা মন্দ কথার মতই মন্দ। (মিশকাতুল মাসাবিহ পৃষ্ঠা ৪১১)
বিশ্বনবী মক্কা ও মদীনাকেই শুধু শিক্ষাকেন্দ্র গড়েননি বরং তাঁর পণ্ডিত মুহাদ্দিস সাহাবীদের নিজের কাছে না রেখে তাদের পাঠিয়ে দিতেন তাদের প্রিয় জন্মভূমি হতে দূর দূরান্তে। তাই দেখা যা নবীর যুগে মক্কায় ২৬ জনকে রেখেছিলেন, কুফায় ৫১ জন, আফ্রিকার শিমে ১৬, খুরাসানে ৬ জন ও জযীরায় ৩ জন। ( নূর মুহাম্মদ আজমীর হাদীসের তত্ত্ব ও ইতিহাসের পৃষ্ঠা ১৯)
ভাষা, ব্যাকরণ ও লিপির ইতিহাসের ফিরিস্তি আজ বিশাল হলেও আরব সভ্যতা বা মুসলমান সভ্যতা একটা সাধারণ বস্তু নয় বরং অসাধারণ ও উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এ পৃথিবীতে যত ভাষা আছে আরবী ভাষা প্রথম সারির আন্তর্জিাতিক ভাষা বলে গণ্য। তাই ইউ. এস ও-তে যে কোন বক্তব্য আরবীতে অনুবাদ করতেই হয়। যদিও বর্তমান পৃথিবীতে ভাষা আছে মোট দু'হাজার সাতশ' ছিয়ানব্বইটি (দ্রঃ ডক্টর শহীদুল্লার ভাষার উৎপত্তি, সফিউল্লাহ সম্পাদিত শহীদুল্লার সংবর্ধনা গ্রন্থ (১৯৬৭) পৃষ্ঠা ২২২ হতে ২২৭)
পূর্বেই উল্লেখ করেছি মুসলমান জাতি এবং ইসলাম ধর্মকে যেন কেহ একটা মামুলী বা অতি সাধারণ বিষয় বলে এড়িয়ে না যান। বর্তমান সিনেমা, টেলিভিশন, রেডিও, বই-পুস্তক বিশেষতঃ ইতিহাসে প্রাপ্তব্য বিষয় হল, মুসলমান যেন হতভাগ্য জাতি আর তাদের ইতিহাস শুধু অত্যাচার আর বিলাসিতার ফানুস। তারা বিদেশী', আমাদের স্বদেশে এসে ভারতকে কারেছে অনুন্নত অথবা ধ্বংস। কিন্তু এ কথা প্রকৃত ইতিহাস বলেনা। স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটির পাঠ্যপুস্তক এখন যেভাবে লেখা হচ্ছে তা বেশ কয়েক বছর পূর্বেই বই-এর সাথে মেলালে অবাক আর বিস্মিতই হতে হবে।
যেমন অধ্যাপক শান্তিভূষণ বসু বলেন (ক) “পৃথিবীর সর্বাধুনিক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মের নাম ইসলাম ধর্ম। বহু পণ্ডিতের মতে একমাত্র ইসলাম ধর্মই কার্যকরীভাবে মানুষের মনুষ্যত্ব রক্ষায় তৎপর। খৃস্টধর্ম মানুষকে পাপের ফলস্বরূপ বিচার করেছে। হিন্দু ধর্মে মানুষকে বলা হয়েছে অমৃতের সন্তান। আপন সত্তার রূপ আবিষ্কার করে মানুষ আবার ঈশ্বরেই ফিরে যাবে। তার সত্তার রূপটিই হচ্ছে ঈশ্বরের রূপ, অর্থাৎ মানুষের ঈশ্বর হতে কোন বাধা নেই। বাইবেলে লেখা হয়েছে একটি উটের পক্ষে সঁচের রুদ্ধ পথে চলা যতটা দুষ্কর, ধনী ব্যক্তিদের স্বর্গে পৌঁছান তত কটিন অথচ ইহজগতে দারিদ্রপীড়িত অসহায় মানুষের দুর্গতির অন্ত নেই।
হিন্দু ধর্মে মানুষকে যতেই ঈশ্বর বলা হয়েছে। ততই মনুষ্যত্বের অবমাননা ঘটেছে দিনে দিনে। কাজেই বলা চলে, উপরোক্ত দুটি ধর্মে যদিও মানুষের কল্যাণই সমস্ত আলোচনার লক্ষ্য তবুও কার্যত সামাজিক জীবনে এ কল্যাণ প্রকৃষ্ট রূপ পায়নি। ইসলাম মানুষের কল্যাণ কামনা করে বাস্তব চেহারা পাবার দিকে এগিয়েছে। শুধু বাক্যেই নয়, প্রকাশিত সত্যেই জানা গেছে ইসলাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও ইহজাগতিক। এবং তিনিই (মুহাম্মদ) সমগ্র মানব সমাজকে আহ্বান করেন সমস্ত অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তাঁর এ আহ্বান ও সংগ্রাম এতেই প্রত্যক্ষ ও এতই সামাজিক মানুষের জীবন যাত্রায় সত্য যে ইসলাম স্বভাবতই সহজ, সরল, গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধর্ম হয়ে ওঠে।"
(খ) “মোসলেম শব্দটির অর্থও তাই, যারা আনুগত্য স্বীকার করেছে। এ আনুগত্য পৃথিবীর চূড়ান্ত শক্তির কাছে নয়, মহত্তম কোন ব্যক্তি বিশেষের কাছে নয়, এমন কি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছেও নয়। আনুগত্য একমাত্র আল্লাহর কাছে।"
(গ) “ইসলাম পুরোহিত তন্ত্রের ধর্ম নয়। ঈশ্বর-মানুষের মধ্যে তৃতীয় কোন মধ্যস্থের প্রয়োজন নেই ইসলামে। যে কোন শুদ্ধচরিত মসজিদে প্রার্থনা পরিচালনা করতে পারেন।”
ক, খ ও গ উদ্ধৃতি তিনটি নৈহাটির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজের অধ্যাপক শান্তিভূষণ বসুর ‘প্রাচ্য দর্শনের ভূমিকা' গ্রন্থের ২২৮, ২২৯, ২৩২ ও ২৩৪ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হল। যেটা ছাপা হয়েছে ১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে, কলিকাতা ৯ হতে। ১৯৬৪ সালের ছাপা তথ্যের সাথে ইদানীং কালের ছাপা তথ্যের যে অনেক গরমিল সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয় তা অতীব দুঃখের ও চিন্তার বিষয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/13
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।