মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ভারতের পরলোকগত মনীষী হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) লিখিত একটি তথ্যপূর্ণ পুস্তিকা অবলম্বন করে বলা যায় যে, পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম আলাইহিস সালাম বেহেশত হতে বিতাড়িত হয়ে প্রথম পদার্পণ করেছিলেন ভূমণ্ডলের ভারত ভূমিতেই। জায়গাটা ছিল সিংহল, যেটা তখন ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর আদম, ইভ, জান্নাত, ইত্যাদি এসব কুরআনেরই কাহিনীভুক্ত।
ইসলাম ধর্ম বলে, আল্লাহর প্রচুর পরিমাণে ফেরেশতা বা মালাক আছে, তাঁদের মধ্যে প্রধানতম হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম। তার পৃথিবীতে প্রথম পদধূলি পড়েছিল ভারতে। যেহেতু প্রত্যেক নবীর কাছে তাকে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ পৌঁছাতে হত। এটাও বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ভারতের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জামাতা ও চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর সময়ে হযরতের সাথে আরবের কোন যোগাযোগ হয়নি। অথচ এমন কথা তিনি বলে গেছেন যাতে অবাক না হয়ে পারা যায় না। যার মর্মানুবাদ হচ্ছে এ, ভারতভূমি-যেখানে হযরত আদম আলাইহিস সালাম বেহেশত হতে নেমে এসেছিলেন এবং মক্কার ভূমি যা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর দ্বারা সম্বন্ধযুক্ত এ দুটি স্থান উত্তম ভূখণ্ড। অতএব, এ মুসলমানদের ভারতপ্রেম যে এক পবিত্র মীয় কারণ তা বোঝা যায়। ভারতের অযোধ্যায় এক বিরাট মন্দিরের পাশে সুদীর্ঘ এক কবর রয়েছে এটা সম্বন্ধে যুগ ধরে জনশ্রুতি-এ সমাধি হযরত শীষ আলাইহিস সালামের। তিনি ছিলেন আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর পুত্র।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-কে সিরিয়ার এক মনীষী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ভূমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ ত দেশ কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন-সে দেশ, যাকে সন্দীপ বলা হয়। যেখানে আদম আলাইহিস সালাম বেহেশত হতে নেমে এসেছিলেন। গবেষক ডাঃ মুহাম্মদ আলী তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, “বিশ্বনবী নিজেও ভারতকে ভালবাসতেন। তিনি একবার বলেছিলেন, ভারত হতে আমার প্রতি স্নিগ্ধশীতল হাওয়ার হিল্লোল ভেসে আসে।”
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সাহাবী ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর বর্ণনায় প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্ পৃথিবীতে মানুষ পাঠানর পূর্ব সমস্ত আত্মাকে একত্রিত করে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? উত্তরে প্রত্যেক মানুষের আত্মা বলেছিল-নিশ্চয়ই আপনি আমাদের প্রভু। বলাবাহুল্য, এ আত্মা-সমাজের একত্রিকরণ পৃথিবীর যে স্থানে হয়েছিল তা ভারতভূমির মধ্যে গণ্য।
সুগন্ধময় বেহেশত হতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন ভারতে আসেন তখন বেহেশতী সুগন্ধে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আমোদিত ছিল। তাই লেখকের ধারণা ভারতের সুগন্ধদ্রব্য তুলনামূলক হিসেবে পৃথিবীতে বিখ্যাত। যেমন ভারতের মৃগনাভি, কপূর, চন্দন কাঠ, জাফরান, কেওড়া এবং তীব্র গন্ধের পুষ্প ও মাধুর্য অস্বীকার করা যায় না।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন বেহেশত থেকে পৃথিবীতে আসেন তখন বেহেশত হতে এক খণ্ড পাথর সাথে এনেছিলেন যেটার নাম হাজরোল আসওয়াদ। সেটা কোন ঠাকুর দেবতা নয় শুধু পবিত্র একখানা পাথর মাত্র। বর্তমানে পাথরটা মক্কার কাবা ঘরে বহিঃপ্রাচীরের এক কোণে স্থাপিত আছে। সে পবিত্র পাথর পৃথিবীর প্রথম যেখানে স্পর্শিত হয়েছিল সেটাও ছিল এ ভারত বর্ষের।
বিশ্বনবীর সাহাবা হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হযরত আদমকে পৃথিবীতে পাঠানর সাথে সাথে প্রথম হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম-কে পাঠান হয়েছিল। তিনি পৃথিবীতে শুভাগমন করে বর্তমানের আযান ধ্বনির মত শব্দ করেন। তাতে মুহাম্মাদুর
রাসুলুল্লাহ কথাও ধ্বনিত হয়েছিল। তখন আদম আলাইহিস সালাম জিবরাইল আলাইহিস সালাম-কে প্রশ্ন করেছিলেন মুহাম্মদ ব্যক্তিটি কে? উত্তরে জিবরাইল আলাইহিস সালাম বলেন, ইনি আপনার সন্তানদের মধ্যে সর্বশেষ নবী। (দ্রঃ তবরানী গ্রন্থ এসব বিষয়ে শেষ কথা হচ্ছে এ-হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন, তার উপর ওহী' বা আল্লাহর আদেশবাণী অবতীর্ণ হত। সে বাণীগুলোই কুরআনের বাক্য হয়েছে। আর তার কথা, কাজ ও সমর্থিত বিষয়গুলো হাদীস বলে গণ্য।
প্রত্যেক মুসলমানের কাছে হাদীসের মূল্য কুরআনের পরেই গ্রহণযোগ্য। আর এ হাদীসেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সুস্পষ্ট ভাষায় বলে গেছেন ভারতের কথা। ভারতকে তিনি হিন্দ’ বলেই আখ্যায়িত করেছেন। যেমন একটা হাদীসের বঙ্গার্থ হচ্ছে এ-সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেছেন, আল্লাহর রাসূল আমাদের ভারত (হিন্দ) বিজয়ের নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অতএব যদি আমি সে সময় পর্যন্ত জীবিত থাকি, তবে আমি তাতে আমার জান-মাল ব্যয় করতে কুণ্ঠিত হব না। এতে যদি আমাকে নিহত হতে হয় তাহলে ও আমি শ্রেষ্ঠ শহীদে পরিণত হব। আর যদি শান্তিতে ফিরে আসি তবে আমি জাহান্নাম মুক্ত। আবু হোরায়রা।' (দ্রঃ নাসায়ী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২)
অতএব বহির্ভারতীয় মুসলমানদের ভারতপ্রেম ধর্মীয় কারণের জন্যও বটে। তাছাড়া সে যুগে এক দেশ আর এক দেশে যে অভিযান চালাত তখন সভ্যতার মাপকাঠিতে তা দোষণীয় ছিল না। যেমন বাজারে পণ্যদ্রব্যের মত দাস-দাসী কেনা-বেচা দোষণীয় ছিল না। তাছাড়া ভারতে ভয়াবহ সতীদাহ প্রথা দোষণীয় তো ছিলই না বরং পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হত। ভারত বর্ষে মুসলিম আগমনের ইতিহাসে আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা সাধারণতঃ এ. শিক্ষাই পায় যে, ভারত মুসলমানদের আগমন ঘটেছে মুহাম্মদ বিন কাসেমের সময়। এ সাথে আরও ধারণা-মুসলমানগণ বিদেশী, লুণ্ঠনকারী এবং অত্যাচারী। তারা বিনা কারণ বা প্ররোচনায় ভারত আক্রমণ করেছেন আর জোর করে ভারতের অমুসলমানদের মুসলমান করেছেন। যারা এসব তথ্য পরিবেশ করেন তাঁদেরও পুরোপুরি দোষী করা যায় না। যেহেতু ভারতের মূল ইতিহাস উদ্ধার করতে গেলে মুসলমান ঐতিহাসিক ও পর্যটকদের বাদ দিয়ে ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। ইংরেজ সৃষ্ট বিকৃত ইংরেজী ইতিহাসের অনুবাদ আর ভাবানুবাদ ভাঙ্গিয়ে চলতে হয় বেশিরভাগ ভারতীয় ঐতিহাসিকদের।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়ে খালেদ ইবনে ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি ইসরাঈল আফগান ও নিজের গোত্রের লোকদের পত্র দিয়ে সমস্ত ধর্মগ্রন্থের প্রতিশ্রুত নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণী ও কুরআনের কথা জানান-“আমি নিজে এ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছি, আপনারাও সুনিশ্চিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন আশা করছি। স্রষ্টা ছাড়া কোন সৃষ্টির কাছে নতি স্বীকার করাকে ইসলাম ধর্ম নিষেধ করেছে। সংশোধিত, সভ্য, চরিত্রবান, উন্নত হয়ে অধিকারী হওয়ার পূর্ণ পদ্ধতি লাভ করে আমরা উপকৃত হয়েছি।
তাই আপনাদেরও কল্যাণ কামনায় এ পত্র প্রেরণ।' (তারিখে জাহাঁকুশ ও মাজমাউল আনসার) উপরোক্ত মর্মের পত্র পেয়ে আফগানিস্তান হতে কয়স' নামে একজন প্রভাবশালী নেতা একদল লোকসহ মদীনায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। অনেক আলোচনার পর তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হযরত কয়ল' নাম পরিবর্তন করে ইসলামী নাম আবদুর রশিদ রাখলেন। আবদুর রশিদের সাথে একজন ইসলাম জানা আরবী সাহাবী তাদের সাথে আফগানিস্তান যান এবং সেখানে বহু আফগানীকে ইসলাম ধর্ম পরিবেশন করেন। আর তখন এ আফগানিস্তানের সাথেই ভারত বর্ষ সংযুক্ত বা অবিভক্ত ছিল।
ভারতের মাদ্রাজ বা তামিলনাড়ু প্রদেশের জেলার নাম মালাবার মালবার। এ মালবার আরবদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবসাকেন্দ্রিক ঘাঁটি ছিল। মাদ্রাজের এক বন্দরের উপর দিয়ে আরবরা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য চীন যাতায়াত করতেন। অবশ্য সারা পৃথিবীতে ইসলাম পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ববোধও তাদের ছিল।
মালবার স্থানটিকে আরবরা-মা’বার' বলতেন, আরবীতে এর অর্থ পারঘাট। আরব বণিক, মুবাল্লিগ ও নাবিকেরা এ ঘাটের উপর দিয়ে মাদ্রাজ, মক্কা, হেযায, মিশর ও চীনের মধ্যে যাতায়াত করতেন। বলাবাহুল্য, রাবার নাম তাঁদেরই রাখা।
‘পরাবৃত্ত’ পড়ে জানা যায় যে, ভারতের ‘চেরর রাজ্যের শেষ রাজা ছেরুমান পেরুমল ইচ্ছা করিয়া সিংহাসন ত্যাগ করিয়া মুসলমান ধর্ম গ্রহণ অভিলাষে মক্কানগরীতে গমন করেন। (দ্রঃ বিশ্বেকোষ ১৪ঃ ১৩৪ পৃষ্ঠা)
এছাড়াও একজন মুসলিম লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা যায়-“একজন হিন্দু রাজার মক্কা গমন এবং তাঁর মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে উপস্থিত হয়ে স্বেচ্ছায় মুসলমান হওয়া রাজা কিছুকাল হযরতের কাছে অবস্থান করে প্রত্যাবর্তনের সময় শহর' নামক স্থানে পরলোক গমন করেন।” (দ্রঃ তুহফাতুল মুজাহেদিন)
অতএব তরবারীর জোরে ইসলাম প্রচারিত' কথাটুকু ভারতের এ রাজার মুসলমান হওয়ার ব্যাপারে যে মোটেই খাপ খাওয়ান যায় না তা প্রমাণিত সত্য। বর্তমান বঙ্গের বিখ্যাত ঐতিহাসিক, ভারত পর্যটক লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে আনে। পরিষ্কার করে প্রমাণ করা যাবে আমাদের তথ্যের যথার্থতা।
“মালবার রাজাদের মধ্যে চেরুমান পেরুমলই প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পেরুমল বংশীয় শেষ রাজা। শুধু নিজে ধর্মান্তরিত হয়েই চেরুমান পেরুমল ক্ষান্ত হননি, প্রজাদের মধ্যেও ইসলাম ধর্ম প্রচারে তিনি সচেষ্ঠ হন। তবে যেদিক থেকেই দেখা হোক না কেন একজন দক্ষিণ ভারতীয় রাজা অন্তরের আকর্ষণে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং তার প্রচারের জন্য বিদেশ গিয়ে চেষ্টা করেছেন, এ ব্যাপারটা অশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বহু পুরুষ বাহিত ধর্ম ত্যাগ করে স্বেচ্ছায় উদ্দীপ্তচিত্তে শাসকরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এ রকম নজির ভারত বর্ষের অন্যত্র বিরল।” (সুরজিৎ দাশগুপ্তের লেখা-ভারত বর্ষ ও ইসলাম পৃষ্ঠা ১২৪-১২৫)
তাহলে এ হিন্দু রাজাই কি ভারতের প্রথম মুসলমান? না, তা নয়। তারও অনেক আগে ভারতে ইসলাম ধর্ম এসেছিল, তা না হলে কি করে জানলেন তিনি ইসলাম ও মুহাম্মদের (সাঃ) কথা? কেনই বা তার মক্কা যাওয়ার আকর্ষণ হল? মাদ্রাজের মালবারের মুসলিমদের ‘মোপলা' বলা হয় মোপলা সম্বন্ধে বিশ্বকোষ সম্পাদক মহাশয়ের লেখা হতে উদ্ধৃতি দিচ্ছি-“ইহারা অধ্যবসায়শীল, কর্মক্ষম এবং বর্ধিষ্ণু। ইহারা, আবার সুগঠিত ও বলিষ্ঠ ইহারা দেখিতে সুশ্রী ইহাদের ন্যায় পরিশ্রমী দ্বিতীয় জাতি ভারত বর্ষে আর কোথাও দৃষ্ট হয় না।
সাহসিকতায় ইহাবা চিরপ্রসিদ্ধ। ইহারা চিরপ্রসিদ্ধ আরবীয় ধর্ম মতে দীক্ষাদানই ইহাদের প্রধান কাজ। ইহারা শশ্রুধারণ করে। সকলেই মস্তকে টুপি দেয়। ইহারা স্বভাবত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।” মালবারের প্রাচীন নাম চেরর বা কেরল। ওখানে সে যুগে দশটি স্থানে মসজিদ তৈরী করা হয়েছিল-(১) কোরঙ্গনুর (২) কুইলন (৩) হিলি ধারওয়া পর্বত (৪) পাকর (৫) মঙ্গলোর নগর (৬) ধর্ম পত্তন বা দরফতন নগর (৭) চালিয়ান নগর (৮) কুণ্ড পুরম (৯) পন্থারিনী ও(১০) কঞ্জর কোর্টে। বিশ্বকোষ প্রণেতা লিখেছেন, “মসজিদ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই যে এতদ্দেশে মুসলমান প্রভাব বিস্তৃত হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। এই সকল মসজিদের ব্যয়ভার বহনের জন্য অনেক সম্পত্তিও প্রদত্ত হইয়াছিল। এ সময়ে উপকুলবাসী মুসলমান এবং ইসলাম ধর্মে
দীক্ষিত দেশীয় অধিবাসীদিগের সংখ্যা পরিবৃদ্ধি হইয়াছিল। ক্রমে তাঁহারা রাজ্যের মধ্যে প্রভাব সম্পন্ন হইয়া ওঠে।” (দ্রঃ বিশ্বকোষ ১৪ পৃষ্ঠা ৬১৮ এবং তোহফাতুল মুজাহেদিন পৃষ্ঠা ২৩ ও ২৪) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পরলোকগমণের কয়েক বছর পর হতেই ভারতে ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটে।
মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর আশি বছর যেতে না যেতেই মুহাম্মদ বিন কাসিমের পূর্বেই অনেক ইসলাম ধর্মাবলম্বীর আগমন যে ঘটেছে তার প্রমাণে বলা যায় ইসলামে দ্বিতীয় খলিফা উমরের রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সময়ে ওসমান নামে এক বিজ্ঞবীরকে আম্মান ও বাহরানের গভর্ণর নিযুক্ত করা হয়। ওসমান নিজের ভাইকে বাহরায়েনে নিজের পদে বহাল রেখে আম্মান হতে একটি সৈন্যবাহিনী ভারত সীমান্তে পাঠান। ওখান হতে অভিযান সমাপ্ত করে তার ভাই মুগীরাকে ভারতের করাচীতে পাঠান। বিপুল বাধার সম্মুখীন হয়েও মুগরীরা জয়ী হয়েছিলেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে।'
হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর পর হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তৃতীয় খলিফা হন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আমরকে ইরাকের শাসনকর্তা করে পাঠান এবং ভারত বর্ষের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও ধর্মনৈতিক সংবাদ সংগ্রহের নির্দেশ দেন। তিনি হাকিম' নামে একজনকে ভারতে এ কাজের জন্য পাঠালেন। তিনি যা রিপোর্ট দিলেন তার সারমর্ম হচ্ছে, ভারতে না যাওয়া ভাল কারণ সেখানে খাদ্য, পানীয় ও সব কিছুরই অসুবিধা। তাই আরবীয় ৩৮ হিজরী সন পর্যন্ত অভিযান থামিয়ে রাখা হয়। এরপর চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর অনুমতিতে হারিস' সিন্ধু অভিযান করেন। ভারতীয়দের পক্ষ থেকে তাকে তীব্র বাধা পেতে হয়। তুমুল যুদ্ধের পর আরবীয়গণ জয়লাভ করে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় সৈন্যদের বন্দী করেন।
এ সময়কার মনে রাখার বিষয় হল এটা যে, বন্দীদের হত্যা না করে তাঁদের খাওয়ার ও শোওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও প্রয়োজনীয় পোশাক পরিচ্ছদও সরবরাহ করেন। অপরদিকে কায়নান' নামক স্থানে মুসলমান বাহিনীকে ভারতীয় সৈন্য দ্বারা আকস্মিকভাবে আক্রান্ত পরাজিত ও বন্দী হতে হয় এবং অবশেষে প্রত্যেক বন্দীই নিহত হয়। তারপর ৪৪ হিজরীতে আমীর মোয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু-এর শাসনকালে মোহাল্লাব ভারত সীমান্তে অভিযান চালান। ফলাফলের সংবাদ সঠিক সূক্ষ্ম ও পর্যাপ্ত নয় বলে আগে বাড়ছি
মোহাল্লাবের মৃত্যুর পর মোয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আবদুল্লাহ ইবনে সওয়ারকে ভারতের দিকে পাঠালে তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জয়লাভ করে বিদেশীর ভূমিকায় কিছু মালপত্র নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন। অবশ্য পরে দস্যুর আক্রমণে তিনি নিহত হয়েছিলেন।
তারপর ভারতে আসেন রাশেদ। অবশেষে ময়দদেবল নামক স্থানে তুমুল যুদ্ধ হলে, তাতে তিনি নিহত হন। এ সংবাদ পেয়েই সেনান' এসে আবার বিজয়দের আহ্বান জানালে। পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়। এবার সেনান জয়লাভ করে দু'বছর সেখানে শাসনকার্য সম্পাদন করেন।
তারপর জিয়াদের পুত্র আবাবাস ভারতে আসেন এবং বীরত্বের পরিচয় দেন। এরপর মুনজীর ইবনে জরুদ আবেদী ভারতে আসেন এবং জয়ী হন। পরে ইরাকের শাসনকর্তা হন ইউসুফ সকফরি পুত্র হজ্জাজ। তিনি হারুণের পুত্র মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ ও বোদাজাল প্রেরণ করেন। তারাও বিক্ষিপ্তভাবে বিজয়ী হন। কারো উদ্দেশ্য ছিলনা তলোয়ার দিয়ে
অমুসলমানকে মুসলমান করা, তাই খুব মূল্যবান একটি উদ্ধৃতি এখানে যোগ করছি-“যে কারণেই হোক ভারতীয়দের মনে একটা ভুল ধারণা আছে, এক হাতে কোরআন আর অন্য হাতে তরবারী নিয়ে এদেশে ইসলামের প্রচার করা হয়েছে, কিন্তু লক্ষণীয় মুসলিম তলোয়ার যেখানে সব চাইতে প্রচণ্ড ছিল সে দিল্লি আগ্রা অঞ্চলের চাইতে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে-যেমন সিন্ধু, পাঞ্জাব, কাশীর, কেরালা, বাংলা প্রভৃতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বেশি।" (সুরজিৎ দাশগুপ্তের লেখা ঐ পুস্তকের ৩৭ পৃষ্ঠা)
উমাইয়া বংশের খলিফা আল ওয়ালিদের সময় তার সেনাপতি বীর মুসা তার সেরা সৈনিক তারিককে স্পেন বিজয়ে পাঠালেন, স্পেন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা জয় করে তারপর কুতাইবার বিজ্ঞান সম্মত কৌশল সাহসিকতা ও চরিত্র দৃঢ়তায় এশিয়া মহাদেশের অনেকাংশে ও প্রাচ্যে বিজয়পর্ব প্রতিপালিত হয়। এ প্রামাণ্য আলোচনায় বোঝা যায়, মুহাম্মদ বিন কাসিম 'প্রথম ভারত অভিযাত্রী নন।
ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদও বলেছেন—The liest Muslim invaders of Hindustan ... during he Khilafat of Umar.. . যার ভাবার্থ হচ্ছে, হিন্দুস্তানের প্রথম মুসলমান বিজয়ীগণ তুর্কী ছিলেন বরং বরং তাঁরা ছিলেন আরব জাতি। মহান নবীর পরলোকগমনের ঠিক পরেই এ আরব জাতি ইসলামের মতবাদের প্রচার ও প্রসারকল্পে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন। ধর্ম প্রচারের মধ্যেই আছে "পরকালের ভাল মন্দ-এ ছিল তাদের বিশ্বাস। এ আরবগণ যেখানেই গেছেন, বিক্রয়মপূর্ণ ' দুর্জন সাহসের পরিচয় দিয়েছেন সেখানে এবং জাতীয়তাবাদের গৌরবোজ্জ্বল প্রেরণাকে কেন্দ্র করে এভাবে সত্যে সন্ধানপ্রাপ্ত আরবগণ মাত্র বিশ বছরের মধ্যে সিরিয়া প্যালেস্টাইন, মিশর ও ইরানের অধিকারী হতে পেরেছিলেন।
পারস্য ও ইরান বিজয়ের পর আরবগণ তাঁদের এ বিজয়কে পূর্বদিকে সম্প্রসারণ করতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। সিরাজ ও হরমুজের ব্যবসাদারগণ তখন ব্যবসায়ী কার্যোপলক্ষে ভারতে উপকুলবর্তী অঞ্চলে গমনাগমন করতেন। আরবগণ তাদের মুখ হতেই অল্পবিস্তর ভারতের ধর্ম পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংবাদ পেয়েই ভারত অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং প্রথম ৬৩৬ - ৩৭ খৃষ্টাব্দে উমরের খিলাফতকালে ওমান হতে ভারতের প্রথম অভিযান শুরু হয়। জোর করে অস্ত্রের সাহায্যে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগে মুসলমান ইতিহাস যেভাবে ধিকৃত বা বিকৃত তার সমীক্ষা শুরু হতে বিলম্ব হত না-কিন্তু রাষ্ট্রশক্তি যাদ সে বই বাজেয়াপ্ত করে তাহলে কে তা ঠেকাবে?
মুসলমানদের শাসন শেষ হয়ে যাবার পরেও কি অমুসলমানরা মুসলমান হননি, না হচ্ছেন না? শুধু ভারতেই কেন, অন্যান্য প্রত্যেকটি রাষ্ট্রেই অমুসলমানদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার অনেক নজির আছে। বিগত ১৯৮১ তে দশ হাজারের অধিক হরিজন হিন্দু স্নীনাক্ষীপরমে কি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। ! যারা মুসলমান হন তাদের বংশে বিশ্ববিখ্যাত মনীষীদের জন্ম হয়েছে এমন অনেক নজিরও আছে। যেমন গান্ধীজীর বংশের উর্ধতন একজন পুরুষ মুসলমান হয়েছিলেন। তারই গৌত্র হচ্ছেন মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ। কথাটা অনেকের কাছে নতুন লাগছে, ফলে আমাকে
উদ্ধৃতি দিতে হচ্ছে-মিঃ মুহাম্মদ আলী জিন্নার ও শ্রীমোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর পিতামহ ছিলেন কাথিয়াবাড়ের একই সম্প্রদায়ভুক্ত গুজরাটী হিন্দু, কোন বিশেষ কারণে মিঃ জিন্নার পিতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে করাচীতে বসবাসকরেন।” (দ্রঃ গঙ্গানারায়ণ চন্দ্রের লেখা অবিস্মরণীয় গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৫ পৃষ্ঠা, ১৯৬৬, ২৩ জানুয়ারী, কলকাতা ১২)। এমনিভাবে ল্যর ইকবালের উদাহরণ দেয়া যায়।
বর্তমান ভারতে যারা মুসলমান বলে পরিচিত তাদের পূর্বপুরুষ বেশির ভাগই অনুন্নত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত ভারতীয় মানুষ ছিলেন। তাই বলে সম্ভ্রান্ত রাজা, মন্ত্রী উচ্চপদস্থ অমুসলমানরা যে মুসলমান হননি তা নয় যেমন ধরা যেতে পারে চেমল ও গৌড় বাংলার রাজা যদুর মুসলমান হওয়ার কথা। .
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।