মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইতিহাসের রক্ত মাংস হচ্ছে বিষয়বস্তুকে সংরক্ষিত করা, ইতিহাসের প্রাণ হচ্ছে সদুদ্দেশ্যেকে সফল করা। কিন্তু প্রচলিত ইতিহাসে কেন জানি তা হয়নি। ভারতে মুসলমান অভিযানের কথা উঠলেই মনে পড়বে মুহাম্মদ বিন কাসিমের কথা, অবশ্য তার অনেক আগে কিভাবে কেন মুসলমানদের আগমন ঘটে তা বলা হয়েছে। শ্রীবিনয় ঘোষ মুহাম্মদ বিন কাসিমের জন্য তার লেখা সরকারি পাঠ্য পুস্তক ‘ভারতজনের ইতিহাসে লিখেছেন—“বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা এবং তাহাদের ছলে-বলে-কৌশলে ধর্মান্তররিত করা ইসলামের প্রসার ও প্রতিষ্ঠার যুগে অন্যায় বলে গণ্য হত না। সে জন্য ইসলামের বিস্তারের পথ আরও সুম হয়েছে এবং তার জন্য দুর্ধর্ষ শক্তি সঞ্চয় ও প্রয়োগ করতে কোনও বাধার সৃষ্টি হয় নাই"। (দ্রঃ ভারতজনের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৭৭)
পরে শ্রীঘোষ আরও লিখেছেন-হিন্দু রাজা দাহিরের দুই কন্যাকে বন্দী করিয়া কাসিম খলিফার হারেমের জন্য পাঠাইয়াছিলেন, কিন্তু তারা খলিফার কাছে অভিযোগ করেন যে, কাসিম তাদের ইজ্জত বিনষ্ট করে। ইহাতে খলিফা ক্রুদ্ধ হইয়া হুকুম দেন যেন কাঁচা গোচর্মে আপাদ-মস্তক মুড়িয়া সেলাই করিয়া কাসিমকে তাহার কাছে অবিলম্বে পাঠান হয়। খলিফাকার আদেশ আল্লাহর দেশের মত। কাজেই কাসিম নিজেই এভাবে মৃত্যুবরণ করেন......এ কাহিনীর সবটুকু হয়ত ঐতিহাসিক সত্য " (ঐ, পৃষ্ঠা ২৭৯)
আমরা আগেও বলেছি আবার বলছি, মুহাম্মদ বিন কাসিমের অনেক আগে হতেই ভারতের মুসলমান আগমন হয়েছিল এবং সশস্ত্র অভিযানের কোন ব্যাপার ছিলনা। তাই ঐতিহাসিকরা বেসরকারি ইতিহাসে লিখেছেন, “আরবীয়দের সাথে ভারতীয়দের বাণিজ্য যেমন স্বাভাবিক চলছিল ৬৬৩ খৃষ্টাব্দের পরেও অর্ধশতাব্দী ধরে তেমনই ভাবে চলতে থাকে। বাণিজ্যের সূত্রে সিন্ধুনদের মোহানা থেকে সিংহল পর্যন্ত অর্থাৎ আরব সাগরের ভারতীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলে, প্রধান বন্দরগুলিতে, ছোট ছোট মুসলিম বসতিও গড়ে উঠেছিল। শত্রুতার সূত্রপাত হল ৭০৮ খৃষ্টাব্দে। এ সময় সিংহল থেকে এক জাহাজ ভর্তি মুসলিম রমণী ইরাকে যাওয়ার পথে দেবল নামক বন্দরের কাছে অপহৃতা হয়। সিন্ধুর রাজা দাহিরের কাছে ইরাকের শাসক হাজ্জাজ অপহৃতা রমণীদের প্রত্যার্পণের দাবী জানালে দাহির প্রত্যুত্তরে জানান যে অপহরণকারীরা যেহেতু তার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভুত জলদস্যু তাই হাজ্জাজের দাবী পূরণে তিনি অক্ষম।” (দ্রঃ ভারত বর্ষ ও ইসলাম, পৃষ্ঠা ২৫)
এ নিরপেক্ষ উদ্ধৃতি কি প্রমাণ করে না যে এক জাহাজ মুসলিম নারী ধর্ষিতা বা নিহত হওয়ায় তাদের পাচ দশ গুণ আত্মীয় আত্মীয়াও রাজদরবারে পর্যন্ত কান্না ও ক্রোধের আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করেছিল? রাজা নিজেই অভিযুক্ত ছিলেন এ অপকর্মের পিছনে যেটাকে তিনি জলদস্যু কর্তৃক বলে ঢাকবার চেষ্টা করেছেন। যদি এটা সত্য নাও হয়, তবুও আক্রমণ করা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল না কি? অত্যন্ত যখন এক রাষ্ট্রের আক্রমণ করা বীরত্ব বলে বিবেচিত হত। মুহাম্মদ বিন কাসিমের ভারত অভিযানের কারণ একাধিক
(১) হাজ্জাজ ইরান বা পারস্যের যুদ্ধে যখন প্রাণপণে লড়ছেন, মরাবাচা হারজিতের প্রশ্ন যেখানে, সেখানে রাজা দাহিরের হাজ্জাজের শত্রুকে বিশেষভাবে সাহায্য করেন।
(২) হাজ্জাজের শাসনকালে পারস্য হতে একটি বিদ্রোহী দল ভারতে পালিয়ে এলে রাজা দাহির তাদের আশ্রয় দেন। (৩).জাহাজ ভর্তি মহিলাদের ধর্ষণ এবং প্রাণনাশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনসাধারণ এবং পরিষদবর্গের পরামর্শে ভারত আক্রমণে বাধ্য হতে হয়।
(৪) হাজ্জাজ পরপর দুটি অভিযানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরাজিত বন্দী মুসলমানদের ভারতীয়রা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
তৃতীয়বারে মুহম্মদ বিন কাসিমকে পাঠান হয় ভারত অভিযানে। রাজ কন্যাদের কাহিনী একেবারে কল্পনা-গল্প ছাড়া কিছু নয়। কারণ কাঁচা গোচর্মে আপাদমস্তকে মুড়িয়া' লিখেছেন শ্রীঘোষ, মনে হয় এটা কোন এমন লেখকের সৃষ্টি করা গল্প যার কাছে গরুর চামড়া খুবই অপবিত্র। কিন্তু মুসলমানদের নিকট কাঁচা গোচর্ম কোন অপবিত্র বস্তু নয়। সুতরাং গল্পস্রষ্টা ভুল করেছেন, তাঁর লেখা উচিত ছিল শুকরের চর্ম। শ্রীমোষ লিখেছেন, “নারীর মর্যাদা কলঙ্কিত হইতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি (রাণী) এবং দুর্গের ভিতরের অন্যান্য মহিলারা অগ্নিকুণ্ডে ঝাপাইয়া পড়িয়া জীবন বিসর্জন দেন।”
একথা যদি সত্যি হয় তাহলে প্রশ্ন আসে, দাহিরের স্ত্রী সমস্ত নারীদের নিয়ে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিলেন আর সুন্দরী কুমারী কন্যাদের বাঁচিয়ে রেখে দিলেন সৈন্যদের অপহরণ করার জন্য এটা কি একটু সত্য বলে মনে হতে পারে। সুতরাং এ সব তথ্যে না আছে সত্যের বন্ধন আর না আছে তাতে দেশের মঙ্গল। মুহাম্মদ বিন কাসিম সম্বন্ধে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে, সমগ্র মুসলমান জাতি যেন তার জন্য অভিযুক্ত।
হাজ্জাজ ইসলাম পরায়ণ ছিলেন। তার মস্ত বড় একটা দলিল হল, যখন মুহাম্মদ বিন কাসিম বিজয়ী হলেন তখন বিজিতদের প্রতি কি ব্যবহার করতে হবে তা তিনি লিখে পাঠালেন—“যেহেতু বিজিতরা এখন আমাদের জিম্মি, অতএব তাদের জীবন ও সম্পত্তিতে আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার নেই। সুতরাং তাদেরকে আপন আপন উপাস্যের মন্দির গড়তে দাও। স্বধর্ম পালনের জন্য কেহ যেন বাধা বা শান্তি না পায়, স্বদেশের সুখে স্বচ্ছন্দে বসবাসে তাদের যেন কেহ কোনও বাধা না দেয়।” (দ্রঃ ভারত বর্ষ ও ইসলাম, পৃষ্ঠা ২৬)
আগেই বলেছি প্রকৃত ঐতিহাসিক হতে হলে ফারসী, আরবী প্রভৃতি বিদেশী ভাষা না জানলে মূল ইতিহাস বোঝা বা বুঝে উদ্ধার করা অসম্ভব। হয়ত শ্রী ঘোষের পক্ষে ওকালতি করে কেহ কেহ বলতে পারেন-তিনি যে আরবী ফারসী জানতেন না তারই বা প্রমাণ কি? প্রমাণ তারই লেখা এ ইতিহাসের ১৭৯ পৃষ্ঠায় মজুদ আছে। তিনি মুহাম্মদ বিন কাসিম নামের পরিবর্তে শুধু মাত্র কাসিম' ব্যবহার করে একটু সংক্ষেপ করা হয়েছে তাতে ক্ষতি কি? ক্ষতিটা অযোধ্যার ইতিহাস লিখতে গিয়ে রামচন্দ্রের স্থানে দশরথ চন্দ্র লিখলে যা হয়, তাই।
মান্যবর শ্রীঘোষকে শ্রদ্ধার সাথে দেশের ছাত্রসমাজ যদি প্রশ্ন করেন-সিন্ধু বিজয়ে ভারতে প্রথমে কোন মুসলমানের আগমন ঘটেছিল? উত্তরে প্রথম ভুল হয়ত এ হবে যে যাঁরা আগেই ইতিহাসের পাতায় সিন্ধু অভিযানের জন্য অমর হয়ে আছেন তিনি তার নামোল্লেখ না করেই বলবেন-কাসিম'। কিন্তু প্রশ্নকর্তা ও উত্তরদাতা নির্বিশেষে প্রত্যেক ইতিহাস অনুরাগীরই
জেনে রাখা ভাল যে, সিন্ধু বিজয়ী ব্রাহ্মণ রাজা দাহিরের প্রতিদ্বন্দ্বী এ মুসলমানের বাবার নাম ছিল কাসিম। তার নিজের নাম মুহাম্মদ। মুহাম্মদ বিন কাসিমের অর্থ হল-মুহাম্মদ, কাসিমের পুত্র। অর্থাৎ কাসিমের পুত্র মুহাম্মদ। এখন যদি নামের সংক্ষেপই করতে হয় তাহলে মুহাম্মদ লেখা উচিত ছিল। বিন বা ইবন মানে ছেলে, তাদের বা আরবের নিয়ম ছিল, যোগ্য পিতার নামে নিজের নাম যুক্ত করা।
পুনরায় আমি পূর্বের আলোচনায় আসছি। ক্রোধের বশ হয়ে হাজ্জাজ একদল সৈন্যসহ একজন বিচক্ষণ সেনাপতিকে পাঠিয়েছিলেন সিন্ধু অঞ্চলে। এ যুদ্ধ আরব সভ্যতা, শিক্ষা ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণী প্রচারের জন্য করা হয়েছিল বলা যাবে না বরং ক্রোধের উপর নির্ভর করেই ছিল এ অভিযান। যুদ্ধ হল সিন্ধুবাসীদের সাথে মুসলমানদের। প্রাথমিক অবস্থায় সিন্ধীরা পরাজয়ের দিকে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তাদের ধর্মের বিধানদাতাদের পরামর্শে দেবমূর্তি যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হলে যুদ্ধে কিন্তু মুসলমানদের ভাগ্যে দারুণভাবে পরাজয় নেমে আসে। যুদ্ধশেষে বিরাট মুসলিম সৈন্যবাহিনী এমনকি সেনাপতিকে পর্যন্ত সে ঠাকুরের সম্মুখে নির্মমভাবে টুকরা টুকরা করে হত্যা করা হয়। বন্দী জীবনযাপন করার সৌভাগ্য কোন মুসলমান সেনার হয়ে ওঠেনি।
শ্রীবিনয় ঘোষও তার ইতিহাসের ২৭৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “কিন্তু এ অভিযান ব্যর্থ হয়, দেবলের তথাকথিত দস্যুদের শায়েস্তা করা সম্ভব হয় না, সিন্ধীদের প্রবল প্রতিরোধে আরব সেনাপতি পর্যন্ত নিহত হন। অতপর হাজ্জাজ তাঁর আর এক অল্প বয়স্ক সুদর্শন বীরকে সেনাপতি নির্বাচিত করে পুনরায় সিন্ধু অভিমুখে মুসলমান বাহিনী পাঠালেন। ইনিই ইতিহাসে মুহাম্মদ বিন কাসিম নামে পরিচিত। এ তরুণ সেনাপতি হাজ্জাজের আপনজন-পিতৃব্য-পুত্র। শুধু তাই নয়, আরও গভীর সম্পর্কে এ যুবক ছিলেন তার জামাতা।
সালাতুল হাজাত' নামক উপাসনা অন্তে মাওলানা ও আওলিয়াদের পরামর্শ ও শুভাশীষ নিয়ে মুহাম্মদ বিন কাসিম এবার ধর্মনৈতিক কারণেই অভিযান চালালেন। মুহাম্মদ বিন কাসিম জলপথে এবং স্থলপথে উভয় দিক থেকেই তখনকার বিখ্যাত দেবল মন্দির আক্রমণ করলেন। সিন্ধীরা ব্রাহ্মণ রাজা দাহিরের আদেশে প্রবল বাধা দেয়ার জন্য বীরবিক্রমে ঝাপিয়ে পড়লেন। আবার পূর্ব সমরের ন্যায় জনসাধারণ ঠাকুরদের নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন। কিন্তু এবার নিমেষে দাহিরের সৈন্যরা মনোবল হারিয়ে ফেললেন। মুসলমান সৈন্যরা আল্লাহু আকবর বলে ওয়ধ্বনি দিতে লাগলেন।
যুদ্ধ পুরোদমে চলতে লাগল। রাজা দাহির হাতির উপর উপবিষ্ট হয়ে যুদ্ধ করছিলেন, এমন সময় বিপক্ষ বাহিনীর একটা তীর রাজার হাতির পিঠে হাওদায় পড়ে ও সাথে সাথে হু হু করে আগুন জ্বলে ওঠে। হাতি প্রাণের ভয় ও আতঙ্কে জলাশয়ে নেমে পড়ে। দাহির মাটিতে দাঁড়িয়েই যুদ্ধ করতে লাগলেন। কিন্তু তার সৈন্যদল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তখন একটা কথা রটে গেল-মুসলমানের। অগ্নিতীর ব্যবহার করে, যা লেলিহান শিখা নিয়ে জ্বলে ওঠে। শ্রীবিনয় ঘোষও তার ইতিহাসে এ বিষয়ে একটু আলোকপাত করেছেন। তিনি লিখেছেন, “দাহিরের হাতির হাওদায় আরবদের একটি অগ্নিতীর বিধিয়া আগুন জ্বলে ওঠে, হাতি দৌড়াইয়া জলের মধ্যে ঝাপাইয়া পড়ে।"
অনেকের মতে অলৌকিক বা দৈব ঘটনা ওটা যাহোক, দাহির যুদ্ধে বাধা দিতে গিয়ে নিহত হলেন। দাহিরের স্ত্রী সৈন্যদের সাহস যোগাতে এবং ফের একতাবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু রাণীর কথায় কোন ফল হল না। অবশেষে রাণী ও তার সঙ্গিনীগণ আরো বিপদগ্রস্ত হবার পূর্বেই আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করেন।
৭১২ খৃস্টাব্দের জুন মাসে ব্রাহ্মণ রাজা দাহির সাহসের সাথে যুদ্ধ করেও নিহত হন। তারপর এক বছরের মধ্যেই দাহিরের গোটা সাম্রাজ্য মুহাম্মদ বিন কাসিমের দ্বারা মুসলমানদের অধিকারে চলে যায়। হযরত মুহাম্মদ ৬৩২ খৃস্টাব্দে পরলোকগমন করেন আর কাসিমের পুত্র মুহাম্মদ ৭১২ খৃষ্টাব্দে এ ঐতিহাসিক যুদ্ধে ইসলামের বিজয় কেতন ভারত ভূমিতে উড্ডীন করেন। তিনি ইচ্ছা করলে হয়ত ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল করতলগত করতে পারতেন। কিন্তু অনেকের কাছে এ যুদ্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও আরবদের কাছে সেটা সাধারণ একটা যুদ্ধ ছিল মাত্র। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেক দিকেই তাদের অভিযান ছিল এর চেয়েও নাটকীয় ও আশ্চর্যজনক। মারাত্মক প্রতিকূল অবস্থাতেও নিশ্চিত পরাজয় হতে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে তা জয়ে পরিণত হয়েছিল।
এখানে উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে, ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় সংকীর্ণতা তথা পক্ষপাতিত্ব ও অবিচারের ফলে ভারতের জাঠ' সম্প্রদায় এবং মেড' সম্প্রদায় রাজার উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। তদুপরি তথাকথিত নীচ জাতি বা শোষিত, অবহেলিত, অনুন্নত সম্প্রদায় রাজাদের উপর ভাল ধারণা রাখতেন না। যুদ্ধের সময় তাদের সহযোগিতা স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায় নি। তবে জাঠ' ও মেড' সম্প্রদায় অত্যন্ত সাহসী ও বলিষ্ঠ। তারা মুসলমানদের পক্ষ প্রকাশ্যে সমর্থন করে দাহিরের বিরুদ্ধে তাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেন।
দাহিরের শোচনীয় পরাজয়ের এটিও একটি অন্যতম কারণ। মুহাম্মদ বিন কাসিমের মন্দির আক্রমণের কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন করা হল, মুহাম্মদ বিন কাসিম মন্দির আক্রমণ করতে গেলেন কেন? উত্তরে বলা যায়, তার পূর্বে ভারত অভিযানকারী পরাজিত মুসলমানগণ নির্মূল হয়েছিলেন। তাতে জনসাধারণের ধারণা হয়েছিল যে, দেবল মন্দিরের ঠাকুরের দ্বারাই এ জয় সম্ভব হয়েছে।
তার উপর যারা নতুন মুসলমান হয়েছিলেন তাদেরও ধর্ম বিশ্বাস শিথিল হয়ে গিয়েছিল। তাই মানব জাতিকে সৃষ্টির কাছে মাথা নত না করিয়ে, ঠাকুর-দেবতার কাছে যথাসর্বস্ব বিলিয়ে না দিয়ে স্রষ্টার কাছে মাথা নত করার প্রেরণা যোগানোর জন্যই এ মন্দিরের সম্মুখে যুদ্ধের আয়োজনের প্রয়োজন হয়েছিল। দেবতা-ঠাকুরের উপর ব্রাহ্মণদের আনুগত্য স্বাভাবিক ভাবেই ছিল, তার উপর গত যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের কারণে তারা স্বাভাবিকভাবেই এ মন্দিরের প্রতিমা বা দেবতাদের উপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। তাই রাজার মূল্যবান ধনাগার স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এ মন্দিরে। ফলে যুদ্ধ শেষে বহু মূল্যবান ধনাগার স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এ মন্দিরে। ফলে যুদ্ধ শেষে বহু মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী মুসলমানদের হাতে অতি সহজেই এসে গিয়েছিল।
ইসলাম ধর্মে বহু হিন্দু আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন দেবতার পূজা নিষ্ফল মনে করার কারণে। অতএব মুহাম্মদ বিন কাসিম যদি এ মন্দিরের প্রাঙ্গণে, পক্ষান্তরে দেবশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যদি বিজয়ী না হতেন তাহলে হয়ত এসব নব-মুসলিমদের ধর্মান্তরিত হওয়া ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হত।
আগেই বলা হয়েছে ব্রাহ্মণ রাজা দাহিরের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ও অন্যান্য মহিলারা মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনা সত্য। তাই বলে বিকৃত ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের চারিত্রিক দুর্বলতার কারণ বর্ণনা করা নিসন্দেহে পক্ষপাতিত্বের নামান্তর। আসল ব্যাপার হল হিন্দু ধর্মের বিধান মতে সম্ভ্রান্ত হিন্দু মহিলাদের আগুনে পুড়ে মৃত্যু বরণ করাটা খুবই মহৎ কাজ বলে বিবেচিত
হত। যেমন ছিল সতীদাহ প্রথার প্রাবল্যে স্বামীর মৃত্যুর পর জ্বলন্ত চিতায় ঝাঁপ দেয়া। এক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুরপর সন্তান, শ্বশুর, দেবর ও ভাসুরদের চারিত্রিক দুর্বলতার কারণে পুড়ে মরতে হত-একথা ঠিক নয়। আসলে দুর্বলা নারীদের চারিত্রিক দুর্বলতা, দুশ্চিন্তা ও ধর্মীয় সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্গের কথা মনে করেই আত্মহত্যা করা ছিল বীরাঙ্গনার পরিচয়। আর তাই দেখাদেখি দুর্বল মুহূর্তে মৃত্যুবরণের হিড়িক পড়ে যেত। অবশ্য এ প্রথা যে একটা অসভ্যতা বা বর্বরতা এ বিষয়ে অনেকেরই কোন সন্দেহ নেই।
যাহোক, মুহাম্মদ বিন কাসিম যুদ্ধান্তে কিছুদিন নিজের মুখ্য পদগুলোতে নিজেই নিয়োজিত লোকদেরকে বহাল করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর দাহিরের সময়ে যে হিন্দু কর্মচারী যে পদ নিয়ে থাকতেন তাকে সে পদে পুনর্বহাল করে চরম উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা এটা যে, ব্রাহ্মণদের উপর রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।'
বিশেষভাবে মনে রাখার কথা হল, এ সময় ভারতে কুরআন শরীফ ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণী বা হাদীস হিন্দুদের মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত, পঠিত ও সমাদৃত হয় এবং মুসলমান রাজার প্রবল আগ্রহে ভারতের পুরাতন পুঁথিপত্র এবং ধর্মগ্রন্থাদি অনুবাদের দ্বারোদঘাটনও সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, হিন্দুধর্মের পুস্তক-পত্র তুরস্ক ও আরবেও নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের ধারণা ছিল, যে দেশে থাকতে হবে সে দেশের পরিবেশ ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে না জানতে পারলে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অত্যন্ত অধ্যাবসায়ী হয়ে তাঁরা ভারতীয় প্রাচীন ভাষা শেখার জন্য বেসারসে এসেছিলেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক আমীর খসরু লিখিত ইতিহাসে আছে-'আবু মুসা দশ বছর ধরে হিন্দু ধর্মশাস্ত্র পড়বার জন্য পরিশ্রম করেছিলেন।
শ্রীঘোষ ভারতের ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় একটা কিংবদন্তীর ছাপ কেমন ভাবে একে দেয়ার চেষ্টা করেছেন তা লক্ষ্য করার বিষয়। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, উল্লিখিত দুই কন্যার কাহিনীর সবটুকু ঐতিহাসিক সত্য নয়'; তা সত্ত্বেও সন্দেহজনক ও সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধিকর এ মারাত্মক কথা ইতিহাস বলে চালিয়ে যাওয়ার পিছনে যে লাভ কতটুকু তা তিনি চিন্তা করে দেখলেই ভাল করতেন।
তিনি ২৭৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “দাহিরের দুই কন্যাকে বন্দী করে কাসিম খলিফার হারেমের জন্য পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তারা খলিফার কাছে অভিযোগ করেন যে কাসিম তাহাদের ইজ্জত বিনষ্ট করিয়া তাঁর কাছে পাঠিয়েছেন এতে খলিফা ক্রুদ্ধ হইয়া হুকুম দেন যেন কাচা গোচর্মে আপাদমস্তক মুড়িয়া সেলাই করে কাসিমকে তাঁর কাছে অবিলম্বে পাঠান হয়। খলিফার আদেশ আল্লাহর আদেশের মত। কাজেই কাসিম নিজেই এভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, নিজেই' অর্থে কি আত্মহত্যা' যদি তাই ধরে নেয়া হয় তাহলে এর উত্তরে বলা যেতে পারে—ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যায়, অনেক জাতির মধ্যেই রাজা রাণীদের বিপদের সময় আত্মহত্যা করার ঘটনা আছে।
কিন্তু একমাত্র মুসলমান রাজত্বে বাদশা-বেগমদের আত্মহত্যার ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যার কারণে পরকালে স্বর্গে যাওয়া সহজ সম্ভব নয়। তাই মুসলমান জাতি অদিকাংশ ক্ষেত্রে এ কুকর্ম হতে মুক্ত। অবশ্য ইদানিং ভারতে সাধারণ মুসলমান যারা দু-একজন আত্মহত্যা করছে, হয় তারা ধর্মের তত ধার ধারে না, অথবা তার প্রতিবেশীর প্রভাবেই প্রভাবিত। কিন্তু এ সময় মুহাম্মদ বিন কাসিমের পক্ষে আত্মহত্যা করা কোন মতেই সম্ভব ছিল না।
এছাড়া আরও একটি কারণে এরূপ ঘটনা মিথ্যা বলে বিবেচিত হচ্ছে। সেটা হচ্ছে এ যে, ইসলাম ধর্মের সংবিধানে আসামী, বাদী ও সাক্ষী ছাড়া অপর কারও মুখ থেকে কিছু শুনে আসামীর বক্তব্যকে ব্যক্ত করতে না দিয়ে দূর থেকে আদেশ বা নির্দেশ পাঠিয়ে কোন কিছু নির্ধারণ করা সম্পূর্ণ নীতি বহির্ভূত কাজ। অতএব যদি এ ঘটনা সত্যিই হত তাহলে মুহাম্মদ বিন কাসিমকে জানান হত এবং তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তা জানিয়ে সে পরিপ্রেক্ষিতে তার বক্তব্য শোনার পর সুবিচার-অবিচার যা-ই হোক হতে পারত। কিন্তু তাকে জীবন্ত আসতেই দেয়া হল না বরং কাঁচা গোচর্মে মুড়িয়ে তার মৃতদেহ আনান হল-এটা একেবারেই অবিশ্বাস্য। তবে হ্যা, যদি শুয়োরের চামড়ায় মুড়িয়ে আনার নির্দেশ থাকত তবে খলিফার ক্রুদ্ধ হওয়া প্রমাণ হত। কিন্তু অসত্য ইতিহাসে অর্থাৎ ইংরেজদের দালাল দ্বারা লিখিত ইতিহাসে গরুর চামড়ার কথা বলাই স্বাভাবিক।
আসল তথ্য হল, মুহাম্মদ বিন কাসিম স্বাভাবিকভাবেই মারা গিয়েছিলেন। তার মত বিখ্যাত বীরের মৃতদেহ রাজকীয় মর্যাদার সাথে কবর দেয়ার জন্যই মমি করার মত চামড়া সদৃশ মূল্যবান সাদা মখমল কাপড়ে মুড়ে কাঠোর বাক্সে করে উপযুক্ত স্থানে পৌঁছেছিল। তাছাড়া তার মৃত্যুও রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং আকস্মিকভাবেই হয়েছিল।
মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যু সম্বন্ধে আধুনিক ঐতিহাসিকগণ আজও একমত নন। কেহ কেহ মনে করেন তিনি আততায়ী কর্তৃক নিহত, আবার কেহ মনে করেন তাকে খলিফার চক্রান্তে হত্যা করা হয়েছে। অবশ্য অল্প বয়সেই যে তার আকস্মিক মৃত্যু হয় তাতে কারো সন্দেহ নেই। সন্দেহ শুধু এ পদ্মাদেবী আর সূর্যদেবীর কেচ্ছাকাহিনীতে। এ মিথ্যা ঘটনায় এও উল্লেখ আছে—মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর পর সুন্দরীয়দ্বয় খলিফার কাছে স্বীকার করেছিলেন যে, “মুহাম্মদ বিন কাসিম সাধু চরিত্রের লোক, আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুর প্রতিশোধের জন্য আমরা তার উপর মিথ্যা অভিযোগ করেছি।" তখন খলিফা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে দুই বোনকে হত্যার আদেশ দিলে উভয়কেই প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
শ্রীঘোষ তার ইতিহাসে লিখেছেন, “দাহিরের দুই কন্যাকে বন্দী করিয়া কাসিম খলিফার হারেমের জন্য পাঠাইয়াছিলেন। শ্রীঘোষের এ শব্দগুলোতে এ কথাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, খলিফা ব্যাভিচারী বা নারী ভোগী ছিলেন, তাই কুমারী নারী পেলেই সেনাপতিরা খলিফার ভোগের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু শিক্ষিত সমাজ আজ চিন্তা করতে শিখেছেন-তারা এটা কি সহজেই মেনে নেবেন যে, নারী ভোগী মুসলমান রাজকন্যাদের মত দুইজন সুন্দরী শিকার হাতে পেয়ে শুধু তাদের মায়াকান্না আর অভিমানের বায়না মেটাতে গিয়েই মুহাম্মদ বিন কাসিমকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন! শুধু তাই নয়, মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর পর তিনি যখনই এ সুন্দরীদ্বয়ের স্বীকারোক্তিতে বুঝতে পারলেন যে, তারা মুহাম্মদ বিন কাসিমের উপর মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন তখন সঙ্গে সঙ্গে তাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলেন।
আবার যদি তাঁদের অভিযোগের কারণেই, যদি লম্পট ব্যাভিচারীদের কাছে বিজাতি, কুমারী, অকুমারী ভেদাভেদ থাকে না তবুও যদি মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল বলে ধরে নেয়া যায়, সুন্দরীদ্বয়ের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাকে সত্য বলে মেনে নেয়া যায় না। রূপলাবণ্য, সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের জীবন্ত প্রতীক এ সুন্দরীদের হত্যা করা লম্পট চরিত্রের পক্ষে অবশ্যই অস্বাভাবিক। সুতরাং নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, খলিফার চরিত্রের উপর অভিযোগ এবং মুহাম্মদ বিন কাসিমের প্রতি নারী সরবরাহের অভিযোগ কল্পিত অসত্য ইতিহাস মাত্র।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/17
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।