মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
১৭৭২ খৃষ্টাব্দে তাঁর জন্ম হয় আর ১৮৩৩ সনে হয় তার পরলোকগমন। অবশ্য জন্ম সাল নিয়ে মতান্তর আছে। চেপে রাখা ইতিহাসের উদ্দেশ্যাবলীর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা অপসারণে মুসলমানদের মূল্য নির্ণয়, সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি রহস্য এবং সমাধানের উপায় ইত্যাদিকে সামনে রেখেই তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। সুতরাং এখানে রামমোহনের গোটা জীবনী লেখা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
স্বাধীনতা আন্দোলনে তার ভূমিকা বা সদিচ্ছা কি ছিল তা বলতে গিয়ে ডক্টর অমলেন্দু দে উল্লেখ করেছেন-"..রামমোহন ভারতে বৃটিশ শাসন সমর্থন করেন। বৃটিশ সরকারের ন্যায়পারায়ণতার উপর তার অঘাধ বিশ্বাস ছিল। তিনি ভারতে ব্রিটিশ কলোনাইজেশন সমর্থন করেন। এমন কি বৃটিশ নীলকরদেরও তিনি প্রশংসা করেন। তাঁর মতে নীলকরেরা দেশের
উপকার সাধন করেছে। তাছাড়া তিনি ভারতীয়দের সহ্য করার বিষয়ে ইংরেজের ভূমিকার প্রশংসা করেন। উপরন্তু তিনি ছিলেন জমিদারী প্রথার সমর্থক। মোটকথা, দেশাত্মবোধের বাস্তব প্রকাশ রামমোহনের মধ্যে পাওয়া যায় না।...তাই তিনি এ দেশের মঙ্গলের জন্যই ইংরেজ প্রভুত্ব কামনা করেন। সর্ব বিষয়ে উন্নতি সাধন করায় তিনি ইউরোপের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।...তার ধারণা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে গণতান্ত্রিক প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। প্রজাবর্গের অভাব-অভিযোগ প্রকাশের ব্যবস্থা না থাকলে বিপ্লব ঘটতে পারে। কিন্তু স্বাধীন মুদ্রাযন্ত্র তা নিবারণ করতে পারবে। তাতে ইংরেজ শাসনও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হবে।” (বাঙালী বুদ্ধিজীবী ও বিচ্ছিন্নতাবাদ, পৃষ্ঠা ৮-১০)
অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের জন্য রামমোহনের মনে হয়েছিল যে এ অত্যাচার তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। অমলেন্দু দে লিখেছেন, রামমোহন নীলকরদের দুর্ব্যবহার সম্বন্ধেও ওয়াকিবহাল ছিলেন। তবে বেন্টিঙ্ক ও দ্বারকানাথের মত তাঁরও মনে হয়েছে নীলকরেরা যে উপকার করেছে তার তুলনায় তাদের কদাচিৎ দুর্ব্যবহার ধর্তব্যের মধ্যেই নয়। তারা মনে করেন, যেখানে নীলের কারখানা বসেছে সেখানকার চাষীরা যেখানে নীলের চাষ নেই সে সব এলাকার চাষীদের চেয়ে অর্থনৈতিক অবস্থায় উন্নত (পৃষ্ঠা ১২)।” নীল বিষয়ক আরো তথ্য পরে আরও আলোচিত হয়েছে।
আমাদের দেশের মানুষ যে লবণ বা নুন তৈরি করে জীবিকা অর্জন করত এবং অন্যের চাহিদা মেটাত, সে রাস্তা বন্ধ করার জন্য ইংরেজ বিলেত থেকে নুন আমদানি করে নুন প্রস্তুতকারীদের সর্বনাশ সাধন করে। রামমোহন বলেন যে, ভারত বর্ষে ইংলণ্ড থেকে লবণ আমদানীর ব্যবস্থা করলে ভারতীয়রা খুশীই হবে। এবারে তাঁর শিক্ষার দিকটা আলোচনা করতে গিয়ে বলা যায়-যদিও তখন দেশে ইংরেজ শাসনের পত্তন হয়েছে, তবুও আইন-আদালত ও অন্যান্য সরকারী কাজে ফার্সী ভাষাই প্রচলিত ছিল। তাই বাংলা অ আ ক খ-র সঙ্গে ফার্সী আলে, বে, পে, তে, টে, সে শিখতে লাগলেন রামমোহন। (দ্রষ্টব্য রামমোহন-বিন্যসাগর-মাইকেল: ইন্দুভূষণ দাস, পৃষ্ঠা ৬)
রামকান্ত তার পুত্র রামমোহনকে ফার্সী উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র পাটনায় পাঠান। সেখানে তিনি ফার্সীতে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। কোরআনে নারীজাতির প্রতি সুবিচার এবং সদ্ব্যবহারের যে সব কথা আছে সেগুলোও রামমোহনকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করে। হিন্দু সমাজে সে আমলে নারীজাতির প্রতি সুবিচার করা হত না। পণ্ডিত নামে পরিচিত এক এর গোঁড়া লোক তখন হিন্দুসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এঁরা নানারকম বাধা-নিষেধের বেড়াজালে নারীজাতিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, কোন নারী বিধবা হলে সমাজপতির জোর করে তাকে স্বামীর চিতায় তুলে দিয়ে জীবন্ত দগ্ধ করে হত্যা করতেন এবং সবচেয়ে আশ্চর্য কথা, এ ভয়াবহ নৃশংস কার্যটি ধর্মের নামে সম্পন্ন করা হত।
কোরআন পড়ার পরে রামমোহনের মন হিন্দুসমাজের এ নৃশংস প্রথার প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে।” (শ্রীইন্দুভূষণ দাস, ঐ, পৃষ্ঠা ৭) এখানে প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি যে, সতীদাহ প্রথার সময় জোর করে ভাং ধুতরা পাতার রস বা এ রকম কোন নেশার জিনিষ খাইয়ে আগুনে ফেলে বাঁশ দিয়ে টিপে ধরা হত এবং খুব বেশী ধুনোর ধোয়া করা হত যাতে অন্য লোকে দেখতে না পায়। মৃত্যুর ভয়াবহ করুণ আর্তনাদ ঢাকার জন্য “এত রাজ্যের ঢাক ঢোল কাশি ও শখ সজোরে বাজান হত যে, কেহ যেন তাহার চিৎকার, কান্না বা অনুনয় বিনয় না শোনে”। (শরৎ রচনাবলী-নারীর মূল্য, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭১-৭২; কনক মুখোপাধ্যায় : উনবিংশ শতাব্দীর নারী প্রগতি ও রামমোহন-বিদ্যাসাগর, পৃষ্ঠা ১). কোরআন শিক্ষার পর রামমোহন কাশীতে গিয়ে সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত্য অর্জন করেন। বাড়ী ফিরে তিনি সতীদাহ প্রথা বা হিন্দুধর্মের কিছু কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলে তার মা তারিণী দেবী তাঁকে বিধর্মী বলে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন। রামমোহন তাঁর পিতাকে
বোঝাতে চাইলেন যে, তাদের পথ বেঠিক আর তাঁর (রামমোহনের) পথ সঠিক। চারিদিকে একথা প্রচার হয়ে গেল যে, রামমোহন বিধর্মী হয়ে গেছেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত, সংক্ষেপে বলা যায় রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ বীভৎস সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদ ও ব্রাহ্ম ধর্মের সৃষ্টির পিছনে কোরআন শরীফের অবদান অনস্বীকার্য। বীভৎস' প্রথা এজন্য বলছি যে, ১৮১৮ খৃষ্টাব্দে কলকাতার যা লোকসংখ্যা ছিল তা এখনকার চেয়ে অনেক কম। সেই ১৮১৮ খৃষ্টাব্দে শুধু কলকাতার বুকে ৫৩৩ জন মহিলাকে সতীদাহের নামে পোড়ান হয়েছিল। তাহলে সারা বাংলায় তথা সারা ভারতে প্রতি বছরে কত যে মহিলা-নিধন করা হয়েছে তা অনুমান করলে গা শিউরে ওঠে। (তথ্যঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ঃ বাংলার সংবাদ পত্র বাঙ্গালীর নবজাগরণ, পৃষ্ঠা ১১৭)
রামমোহনের মা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলেন যাতে তার মৃত স্বামীর জমিদারির অংশ রামমোহন না পান। রাজা রামমোহন মামলায় মাকে পরাজিত করেন এবং পরে মা'র কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, বাবার জমি সম্পত্তিতে তার কোন লোভ নেই। অবশ্য রাজা রামমোহন পরবর্তীকালে নিজের চেষ্টাতেই জমিদারের মর্যাদা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন অর্থাৎ জমিদারী কিনেছিলেন।
রামমোহন ইংরাজীতে সুপণ্ডিত হওয়ার পর তার পাণ্ডিত্যের খবর চারিদিকে পৌছে যায়। দ্বিতীয় আকবর শাহ তখন দিল্লীর বাদশাহ-নামে মাত্র বাদশাহ ছিলেন, ক্ষমতা ছিল আসলে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর হাতে। তাই বাদশাহ রামমোহনকে ডেকে তাকে বিলেত যাবার জন্য অনুরোধ করেন। রামমোহন এ সুযোগকে স্বর্ণমণ্ডিত মনে করে রাজি হয়ে যান-কারণ, খরচপত্র সব বাদশাহের পক্ষ হতে পাওয়া গেল।
বিলেতের বড়কর্তারা ভারতীয় হেঁজিপেঁজি লোকদের সাথে কথা বলতে ঘৃণা বা আপতি করতেন; শুধু ভারতীয় রাজা মহারাজাদেরই সরাসরি কথা বলার সুযোগ দিতেন। তাই রামমোহনকে ‘রাজা' উপাধি দিয়ে দিল্লির বাদশাহ ইংলণ্ডে পাঠালেন। বাদশাহের পক্ষ হতে নিবেদনে কোন ফল না হলেও রামমোহনের বিলেত যাত্রা এবং হঠাৎ প্রাপ্ত 'রাজা' উপাধি রামমোহনের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করতে সাহায্য করে। আর তাই রামমোহন যখন বিলেতে তখন ভারতের বিখ্যাত ইংরেজ নেতা ডেভিউ হেয়ার বিলেতে তার ভাইকে পত্র লিখলেন রাজা রামমোহনের থাকা, খাওয়া ও নানাস্থানে বক্তৃতাদি করার সমস্ত রকম সহযোগিতা করার জন্য।
পত্র মোতাবেক সব রকম ব্যবস্থা হয়েছিল। অবশ্য বিলেতে অসুস্থ হওয়ার জন্য তিনি পার্লামেন্টে তার বক্তব্য লিখে পাঠিয়েছিলেন। সে বিবৃতিতে পাঁচটি দাবী ছিল। অনেকের মতে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবী হল-“ভারতে ফার্সী ভাষা এবং আরবী ভাষা এবং আরবী ভাষার পরিবর্তে ইংরেজী শিক্ষার প্রচলন করতে হবে এবং সরকারী কাজকর্ম ইংরেজী ভাষার মাধ্যমেই করতে হবে। এটা অবশ্য পরে কার্যকরী হয়েছিল অর্থাৎ ইংরেজ সরকার ফার্সী ও আরবীর মৃত্যু ঘটিয়ে ভারতীয় বা বঙ্গীয় মুসলিম শিক্ষিত সমাজকে মূর্খ বেকার সমাজে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিল। (দ্রষ্টব্য ইন্দুভূষণ : ঐ, ৪৭ ও ৫০ পৃষ্ঠা)
রামমোহন ও বিদ্যাসাগরের তুলনা করতে গিয়ে কনক মুখোপাধ্যায়ের 'ঊনবিংশ শতাব্দীর নারী প্রগতি ও রামমোহন-বিদ্যাসাগর' পুস্তকের মুখবন্ধে নারায়ণ চৌধুরী লিখেছেন, “...কিন্তু ভুললে চলবে না রামমোহন এসেছিলেন সামজের সুবিদাভোগী অভিজাত স্তর থেকে আর বিদ্যাসাগর ছিলেন নেহাৎই এক দরিদ্র টুলো' ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সন্তান।...আর ইংরেজ নির্ভরতার কথাই যদি ওঠে, তবে রামমোহন বিদ্যাসাগর থেকে কম যান কিসে? বরং রামমোহনের ইংরেজ মুখাপেক্ষিতা ছিল প্রয়োজনের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশী মাত্রায় প্রকট এবং জমিদারী সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের গরজে কিয়ৎমাত্রায় স্বার্থ দোষদুষ্ট। ...রামমোহন এক সময়ে এদেশে স্থায়ী ইংরেজ উপনিবেশ গড়ার অনুকূলে মত প্রকাশ করেছিলেন এবং নীলকর সাহেব বনাম নীলচাষীদের মামলায় তিনি ছিলেন নীলকরদের (ইংরেজদের) পক্ষে।" (পৃষ্ঠা ৫)
তদানীন্তন ভারত বর্ষের রাজধানী ছিল কলকাতা। তাই কলকাতার একটা শিক্ষিত দালাল দল তৈরি করে ইংরেজ সরকার ভারতের প্রত্যেক বিপ্লব ও বিদ্রোহকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল-একথা বলা খুব সহজ নয় এবং পূর্বেও সহজ ছিল না। তাই কমরেড আবদুল্লাহ রসুলের কৃষক সভার ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছি-“...সে সাথে প্রয়োজন ছিল দেশের অনিশ্চিত ও অশান্ত অবস্থার মধ্যে মোটামুটি একটা শাস্তি স্থাপন করবার এবং তার সরকারের জন্য একটা সামাজিক সমর্থন পাবার। তাই এ নতুন জমিদার শ্রেণীকে সৃষ্টি করা হল কোম্পানির সরকারের সামাজিক সমর্থন ও সহায় হিসেবে; সোজা কথায় বিদেশী কোম্পানি-সরকারের একটা দালাল শ্রেণী হিসেবে।" (পৃষ্ঠা ১০-১১)
শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তখন হিন্দু জাগরণ, হিন্দু উন্নতি ও প্রগতির নামে এত বাড়াবাড়ি হয় এবং ইংরেজদের সাথে এত দহরম মহরম হতে থাকে যা মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত ক্ষতিকারক ও প্রতিকূল মনে হয় এবং এর ফলে হিন্দু-মুসলমানের বিভেদের প্রাচীরও মজবুত হতে থাকে। এ কথার সমর্থনে শ্রী সুশীলকুমার গুপ্ত লিখেছেন-“(উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে হিন্দু জাগৃতির ফলে হিন্দু সভ্যতা হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্ঠতার বাণী বিশেষভাবে প্রচলিত হইয়াছিল...ইহা ব্যতীত হিন্দুরা ইংরাজদের সহিত সহযোগিতা করিবার জন্যও মুসলমানদের বিরাগভাজন হইয়াছিল..."। (উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণ, পৃষ্ঠা ২৪৭, ২৫৪)
সত্যিই রামমোহনের ব্যক্তিত্ব বড় সতেজ ছিল। তিনি তাঁর বাবা মার জমিদারীর পরোয়া না করে বেশ অভাবে পড়েছিলেন। যখন তার স্ত্রী প্রসব করলেন তাঁদের পুত্র রাধামোহনকে, তখন অভাব এত বেশি ছিল যে, তার স্ত্রী উমা স্বামীকে তাঁর বাবার কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। কিন্তু রামমোহন সে কথা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তার বাবা-মা তাদেরকে বাড়ি হতে তাড়িয়ে দিয়েছেন, সে জন্য সেখানে সাহায্য চাওয়ার কথা বলা বাতুলতা হবে। ওদিকে ইংরেজদের সাথে যোগাযোগ অবশ্য অব্যাহত ছিল। ইংরেজরা তাঁকে যাচাই-বাছাই করে চাকুরি দিতে মনস্থ করেন। শেষে মিঃ ডগবী তাঁকে চাকরিতে বহাল করেন। (ইন্দুভূষণের ঐ পুস্তক দ্রষ্টব্য)
রামমোহন পরবর্তীকালে একজন জমিদার, ঋণদাতা ধনী মহাজন এবং কলকাতার বাড়ীওয়ালা হয়েছিলেন বলে ইতিহাসে প্রমাণিত; “তিনি (রামমোহন) কোম্পানির কাগজ কিনতেন এবং ব্যবসা করতেন, ইংরেজ সিভিলিয়ানদের টাকা ধার দিতেন, তাঁদের কয়েকজনের আনুকূল্যে তিনি কয়েক মাস ইষ্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানীর চাকুরী এবং কিছুকাল টমাস উডফোর্ডের ও দীর্ঘ কয়েক বছর জন ডিগবীর ব্যক্তিগত দেওয়ানরূপে কাজ করেন। এসব বৈষয়িক কর্ম, ব্যবসা এবং ইংরেজ রাজপুরুষদের ঘনিষ্ঠ সংযোগ-সহচর্য থেকে রাজার প্রভূত অর্থ সমাগম হয়েছিল, তিনি বিভিন্নস্থানে তালুক (জমিদারী) এবং কলিকাতার একাধিক বাড়ী ক্রয় করেছিলেন। (উনবিংশ শতাব্দীর পথিকঃ অরবিন্দ পোদ্দার, পৃষ্ঠা ১০-১১; জাষ্টিস মওদুদের পুর্বোক্ত পুস্তক, পৃষ্ঠা-৭৪)
রামমোহন যে একজন মৌলিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। সংস্কৃত, বাংলা, ইংরেজী, আরবী ও ফার্সীতে তার ভালভাবে দখল ছিল। এটা বলতে সহজ লাগলেও বিষয়টি কিন্তু বেশ কঠিনই ছিল। যেদিক দিয়েই হোক তিনি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন এবং ইংরেজদের সাথে মধুর সম্পর্কে ফাটল ধরতে দেননি। দেশের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিশেষ করে সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধনে তাঁর অক্ষয় অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ব্লাড প্রেশার রোগে আক্রান্ত হন। তখন এ ব্লাড প্রেশারকে 'ব্রেন ফিভার' বলা হত। ডক্টর কার্পেন্টার তাকে বিশ্রাম নিতে বলেন। অবশেষে রামমোহনের বিশিষ্ট বন্ধু ডক্টর ক্যারিককে ডাকা হল। তিনিও এ পূর্ণ বিশ্রামের কথা বললেন। কলকাতার ঘড়ি ব্যবসায়ী মিঃ ডেভিড হেয়ারের ভাই দেশে অর্থাৎ বিলেতে থাকতেন তা আগেই বলা হয়েছে। সেখানেই তিনি
বিশ্রাম নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে কুমারী হেয়ার ও কুমারী ক্যালেন তার সেবা শুশ্রুষা করতে লাগলেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও ডাক্তার তাকে বাঁচাতে পারলেন না। ১৮৩৩ খৃষ্টব্দের ২৭শে সেপ্টেম্বর কুমারী হেয়ারের কোলে মাথা রেখে ভারতমাতার সুসন্তান রাজা রামমোহন রায় ইংলণ্ডের ব্রিস্টল শহরে শেষ নিঃশ্বাস পরিত্যাগ করলেন। তারপর তার দেহ স্টেপলটন গ্রোভ নামক একটি নির্জন স্থানে কবর দেয়া হয়। পরে কবর থেকে তার অস্থিসমূহ তুলে আনাইভেল নামক একটি স্থানে দ্বিতীয়বার কবর দিয়ে সেখানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হয়; যেটা এখন ব্রিসটলের পথচারীদের স্মরণ করিয়ে দেয় রামমোহনের জীবন্ত ইতিহাস। (দ্রষ্টব্য রামমোহন-বিদ্যাসাগর-মাইকেলঃ ইন্দুভূষণ দাস, পৃষ্ঠা ৫৩)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/55
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।