মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আমরা ইতিহাসে দেখলাম সাম্প্রদায়িকতার গোড়াপত্তনে প্রথমে বিভেদের বীজ ফেলেছিলেন কিছু নেতা, অঙ্কুরিত বিভেদ-বৃক্ষকে বড় করলেন আরো কিছু নেতা-অস্ত্র এসে গেল হিন্দু, মুসলিম, শিখ, হরিজনের হাতে; হল রক্তাক্ত লড়াই। দেশ বিভক্তি তার পরিণতি। অথচ ভারতীয় হিন্দু, মুসলমান-শিখ-খৃষ্টান মিলেমিশে থাকতে পারলেই হত মানবতার প্রকৃত সার্থকতা; কিন্তু তা হতে দেয়া হয়নি। সে বিভেদ-বৃক্ষ আজও তার বংশ বিস্তার করে চলছে, করে চলছে তার প্রভাব বিস্তার-আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক মানুষ, অনেক দল ও গোষ্ঠী।
বর্তমানে সাম্প্রদায়িক কিছু দল বিবেকানন্দকে আদর্শ করে মুসলমান জাতি, তাদের ধর্ম এবং তাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে যেভাবে কলম ধরেছেন তা বড় বিস্ময়কর, ভয়াবহ ও মারাত্মক। অনেক পুস্তক-পুস্তিকা এ সম্বন্ধে প্রকাশিত হয়েছে। কোন কোন বই ইতিমধ্যে বহু বহু বার ছাপা হয়ে গেছে, বিতরণ করা হয়েছে অসংখ্য মানুষকে। যেমন একটার নাম দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞান চাই।' লেখক শিবপ্রসাদ রায়। প্রথম প্রকাশ ১৯৮২-৮৩, পঞ্চদশ মুদ্রণ। প্রথমে সে বই থেকেই কিছু নমুনা তুলে ধরছি “ভারতে সে শতকরা সাতানব্বই জন পাকপন্থীই রয়ে গেছে” (পৃষ্ঠা, ৮)
“গত এক বছরে (সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দ্বারা লেখক) কাশ্মীরে তিনশ হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে।” “ব্যাপকভাবে হিন্দুদের গণধর্মান্তর করার জন্য আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা আসছে।” (পৃ. ৫) “পশ্চিমবঙ্গে ত্রিশ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী মুসলমান বাংলাদেশ থেকে এসেছে। মেটিয়াবুরুজ, পার্ক সার্কাস, মুর্শিদাবাদে কাতারে কাতারে ঢুকেছে। শুধু কলকাতায় চার লক্ষ বিদেশী মুসলমানের হিসেব আছে সরকারের খাতায়। ...সি.পি. এম. (তাদের) রেশন কার্ড করে দিচ্ছে তো কংগ্রেস ভোটার লিস্টে নাম তুলে দিচ্ছে। ... কোলকাতায় হকার উচ্ছেদ করতে গিয়ে জ্যোতি বসু, যতীন চক্রবর্তী সব হিন্দু হকারদের তুলে দিলেন। বাংলাদেশ থেকে আসা বিহারী মুসলমানদের তুলতে পারলেন না। তাদের পিছনে এসে দাঁড়ালেন মিঞা কলিমুদ্দিন (শাম্স-লেখক)।” (পৃ. ১৬)
যে সমস্ত পুস্তক নিয়ে আমরা আলোচনা করছি সে সমস্ত পুস্তকে শুধু মুসলমানদেরকেই আঘাত হানা হয়নি, বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও সম্প্রদায়ের উপরেও আক্রমণ করা হয়েছে-যা অতীব দুঃখজনক ও দেশের সংহতির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
এ রকম আর একটা বই-‘আসুন, আমরা সবাই মিলে আর, এস, এস-কে খতম করি’। সপ্তম প্রকাশ, নভেম্বর ১৯৮৩। বইটির পঞ্চম পৃষ্ঠায় আছে-"R.S.S.-এর শক্তির উৎস সরকার নয়, আদর্শ কর্মী। ওরা শাস্ত্রও বোঝে, অস্ত্রও বোঝে।” “মদ্যপান করে, মিথ্যা কথা বলে, বিলাসী জীবন যাপন করে এদেশে আমরা গান্ধীবাদী দলের নেতৃত্ব করছি। পার্লামেন্টকে শুয়োরের খোয়াড় বলে, ধর্মকে আফিঙ বলে আমরা এদেশে কম্যুনিষ্ট হয়েছিলাম, এখন এম, এল, এ. হয়ে এম.পি. হয়ে শনি-সন্তোষীর পূজা করে বিয়ের সময় পণ নিয়ে হাতে একগুচ্ছ মাদুলি পরেও আমরা প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক। আমাদের আদর্শ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র।" (পৃ. ৮-৯) [নামকরণ দেখে বইটাকে আর, এস, এস, বিরোধী বই তাবার কোন কারণ নেই, বরং বিপরীতার্থই যে গ্রহ, বইটির বক্তব্যে তা প্রমাণিত হয়েছে। -লেখক]
এ ধরণের অপর একটা বই-সমাজের আহ্বান। পঞ্চম প্রকাশ, নভেম্বর '৮৩। তার থেকেও কিছু তুলে ধরলাম-“আরবের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে তবলিকি (ইসলাম ধর্মপ্রচারক সংস্থা তবলীগ জামাত'-লেখক) আন্দোলন। যার লক্ষ্য হচ্ছে, অবিলম্বে হিন্দুস্থানকে আল্লাহ তা'আলার রাজ্যে পরিণত করা। সে উদ্দেশ্যে মাদ্রাসা বাড়ান হচ্ছে, মসজিদে চুনকাম হচ্ছে, মাইকে আজান দেয়া হচ্ছে। লম্বা জামা দাড়ি, আর টুপী পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার মুসলমান। খৃষ্টান, মুসলমান দু-দলের আচরণে কিন্তু প্রকৃত ধর্মচর্চার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নৈতিকতা আধ্যাত্মিকতার কোন চিহ্ন নেই। ... ধর্মের নামে জাতীয়তা বদলের কারণেই অর্ধেক ভারত পাকিস্তান হয়েছে এবং আজও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এত অশান্তি।” (পৃ. ৬)
“একহাতে কোরআন অন্য হাতে তলোয়ার নিয়ে হত্যা, লুণ্ঠন, অত্যচারের মধ্য দিয়ে ইসলাম প্রচার হয়েছে।” (পৃ. ৮)
“অর্থনীতির কথা বলে গরীব মানুষের কল্যাণকারীর ছদ্ম ভূমিকা নিয়ে গণতন্ত্রের মুখোশ পরে কমুনিষ্টরা সাম্রাজ্ববাদের তল্পী বহন করে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এরা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাসী।... সি. পি. আই. বলেছে, রুশ সৈন্য ভারতে এলে আমরা স্বাগত জানাব। বুঝতে পারছেন মার্ক্সবাদ সে যে নামে এবং যেভাইে আসুক সে আপনার জাতীয়তার শত্রু।” (পৃ. ১৭) “অনেক মার্ক্সবাদী বলবে, মানুষের আবার জাত কি? খেটে খাওয়া মানুষের কোন জাত নেই। তাদের বলবেন, খেটে খাওয়া মানুষ কি পূর্ববঙ্গে ছিলনা? সেখানে মার্ক্সবাদ না কোরে জ্যোতিবাবু, প্রমোদবাবু, যতীন চক্রবর্তী, রাধিকা বানার্জীরা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে পালিয়ে এলেন কেন?" (পৃ. ৩১)
জওহরলাল নেহরুর জন্য এ পুস্তকে বলা হয়েছে-“একজন কংগ্রেসী নেতাকে তিনি তর্ক প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আমাকে গাধা বল, হিন্দু বল না।” (পৃ. ২৩)
এমনি আর একটা বই-আল্লা আমাদের কাঁদতে দাও।' লেখিকা জাহানারা বেগম। সম্ভবতঃ এটা ছদ্মনাম, আসল নাম অন্য কিছু। এ জাহানারা নাম্নী মহিলা অথবা এঁর পিছনে থেকে অদৃশ্য কোন লেখক ইসলামের উপর অনেক আঘাত এনেছেন। সবগুলো উদ্ধৃত করে বই-এর কলেবর বৃদ্ধি না করে শুধু এটুকু জানিয়ে রাখি যে, এ বইটাতেও ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম-সংস্কারের উপর যেভাবে কটাক্ষ হানা হয়েছে, তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকর্মীরা চিন্তিত না হয়ে পারেন না।
এবারে যে বইটির আলোচনায় আসব সেটির নাম-“একটি সেমেটিক ধর্ম ও তার সমীক্ষা' লেখক হিসেবে নাম ছাপা আছে চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের। আর শিবপ্রসাদ রায়, তাঁর নাম মুখবন্ধকার হিসেবে দিয়েছেন। প্রথম প্রকাশ বৈশাখ, '৯২। প্রকাশক সুশীলরঞ্জন মুখোপাধ্যায়-সোমড়াবাজার, হুগলী। মুদ্রক টাউন প্রেস,কালনা, বর্ধমান।
বইটিতে আল্লাহ, ইসলাম ধর্ম, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এবং মুসলমানদের জন্য যা লেখা হয়েছে তেমন অশ্লীল, সীমাহীন মুসলিম বিদ্বেষমূলক কোন বই এর আগে অনেকেই দেখেন নি। পবিত্র কোরআন ও হাদীসের অসম্পূর্ণ উদ্ধৃতির বঙ্গানুবাদ দিয়ে তার অপব্যাখ্যা এবং লেখকের মন্তব্য যেভাবে করা হয়েছে তা কতটা ও কি রকম ক্ষতিকারক সেটা পাঠকমাত্রেই উপলব্ধি করতে পারবেন কয়েকটা নমুনা পেশ করলেই
“ইসলাম যেখানে ক্ষমতাশালী সেখানে অন্য ধর্ম-সংস্কৃতি বলে কিছু থাকেনা। এটা আবার মনুষ্য জাতির পথের দিশারী, শ্রেষ্ঠ পবিত্র ধর্ম? এই রকম শান্তি ধ্বংসকারী মানবকারী মানবতার বিভীষিকা ইসলাম কৃপা দেখিয়ে মুসলমান তৈরি করতে পারে কিন্তু একটা মানুষ তৈরি করতে পারে না।" (পৃ. ১১)
“তবে কোরআনের বর্ণনায় আল্লাই নিশ্চয়ই মনুষ্য সমাজ ধ্বংসকারী কোন দানব এবং মুহম্মদ তার একজন এজেন্ট মাত্র। আয়াতটি (সুরাহ তওবা) থেকে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে মুসলমান মনুষ্যগুণচ্যুত একটি বর্বর জাতি এবং তাদের সঙ্গে অমুসলমানদের সহাবস্থান কখনই সম্ভব নয়” (পৃ.১২) “আল্লাহ কি দস্যু?... আল্লাহ কি থানার দারোগা?... তবে কি আল্লাহ বিশ্ব পরিচালক কমিটির চেয়ারম্যান?” (পৃ. যথাক্রমে ১৩, ১৭, ২০)
"বর্তমান আয়াতে (সুরা আনফালঃ১) আল্লাহকে স্বৈরাচারী ডাকাত সর্দার এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-কে তাঁর সহকারী হিসেবে দেখান হয়েছে। আল্লাহর চেলারা যুদ্ধ করে অর্থাৎ ডাকাতি করে যা লুঠ করে আনবে সেগুলো আল্লা নামী সর্দারচে দিয়ে দিতে হবে এবং সর্দার তখন প্রসন্ন হয়ে সহকারী মুহম্মদকে কিছু ভাগ দেবে।... কোরআনে বর্ণিত আল্লাহুকে তস্কর বা লুটেরা ছাড়া আর কি বলা যায়?... তাই কোরআন সম্মত মুসলমান যুদ্ধবাজ, অশান্তিপ্রিয় এবং সুস্থতার পরিপন্থী হবেই।” (পৃ,২৩, ২৫)
“দেড় হাজার বছর ধরে একটা মিথ্যে ধারণার বশবর্তী হয়ে চলেছে গোটা মুসলমান সমাজ।...মহম্মদ প্রকৃত রসুল ছিলেন কি না তার প্রতি আল্লাহর বাণী (কোরআন- লেখক) প্রেরিত হত কিনা এ বিষয়েও ঘোর সংশয় থেকে যাচ্ছে।...কোরআন কি সত্যিই পরমেশ্বরের প্রত্যাদেশ, নাকি কোন অসাবধানী লেখকের রচনা?" (পৃ. যথাক্রমে ২৯, ৩৫, ৩৬) বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ বুখারী শরীফের (১ম খণ্ড, পৃ. ৫০) একটি হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে এ পুস্তকে খেলা হয়েছে-“রসুলুল্লাহ এ রকম জ্ঞান যদি কয়েক কুইন্টাল আমাদের দেশে রপ্তানী করতে পারতেন তাহলে এদেশের অবিশ্বাসী মূর্খেরা জ্ঞানের ইঞ্জেকসন নিয়ে আপনার (রসুলুল্লার-লেখক) মতেই ঈমানদার হয়ে উঠত। এত কষ্ট করে পয়সা খরচ করে আর লেখাপড়া শিখতে হত না।”
“তখনকার কোরআনের কথা আজও অভ্রান্ত হবে এটা কি করে হতে পারে? যে ধর্মকে ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায় না সেটা স্থিতিশীল, অবৈজ্ঞানিক।” (পৃ. ৪৪)
সূরাহ আহযাবে’র ৩৮ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পারিপাশ্বিক ঘটনা বা শানে নুযূল'-কে বিকৃত করে মুসলমানদের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বইটিতে বলা হয়েছে“মহম্মদের যায়েদ' নামক এক পোষ্যপুত্র ছিল। যায়েদের স্ত্রীর নাম ছিল জয়নব'। জয়নবের সাথে মহম্মদের একটু ‘অবৈধ’ সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয় জানতে পেরে যায়েদ জয়নবকে তালাক দেয়। তখন মহম্মদ তাঁর ধ্যানগুহা থেকে দুদিন ঘুরে ফতোয়া জারী করেন যে, পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করা বৈধ। (প, ৫৯)
“হজরত মহম্মদকে একজন মহাপুরুষ জ্ঞানে সবাই শ্রদ্ধা করে, কিন্তু মহামানবের মধ্যে যে কামিনী ত্যাগ ও ইন্দ্রিয় সংযমের কথা দেখতে পাই তা কি ইসলাম ধর্ম-প্রবর্তক মহম্মদের জীবনে দেখা গেছে” (পু,৬১)
এ পুস্তকে মৃত্যুর পর বেহেশত বা স্বর্গ লাভের পরিপ্রেক্ষিতে জানি না কোন উদ্দেশ্য বলা হয়েছে-“যারা আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দাও কোরআনের প্রত্যেকটি বাণীই মেনে চলে, অমুসলমানকে কোতল করে, অবশ্যই একগণ্ডা বিয়ে করে বরাহের (অর্থাৎ শূয়োরের লেখক) ন্যায় সন্তান পয়দা করে-সেই বিশ্বাসী মুসলমানই একমাত্র বেহেশত লাভ করবে।” (পৃ, ৬৩)
এ তো গেল লেখালেখির প্রসঙ্গ। এবারে ভারতেরই মাটিতে প্রকাশ্যে কি হচ্ছে, কেমনভাবে বিভিন্ন দলের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে এবং তাতে জাতীয় সংহতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কতটা অক্ষুন্ন থাকতে পারে তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। যাদের আমরা সাধু সন্যাসী বলে মনে করি, যারা ঠাকুরের নামে কীর্তন করে ধন্য হচ্ছেন তারা যদি স্বামী বিবেকানন্দকে সামনে রেখে-তার মূর্তি, ছবি ও আদর্শের দোহাই দিয়ে মুসলমান বিরোধী কাজ শুরু করেন তাহলে তা নিশ্চয় খুবই বেদনাদায়ক চিন্তা।
আজ যেভাবে তরবারি, লাঠি, তীর-ধনুক ও চাকু-ছোরার ট্রেনিং চলছে তাকে যদি ব্যায়াম বা শরীরচর্চা' বলে ধরে নেয়া যায়, তা যদি দেশের যুবশক্তিকে সুদৃঢ় করার জন্য হয় তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে-মুসলমানদের তাতে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়না কেন? এ দেখে মনে পড়ে যায় আগের সে অনুশীলন', যুগান্তর' ও সাম্প্রদায়িক দলগুলোর কথা। অবশ্য তখন তার প্রয়োজন ছিল যদি স্বীকার করা যায়, কারণ সে অস্ত্র প্রয়োগের লক্ষ্য ছিল ইংরেজ এবং বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটান' কিন্তু বর্তমানে যে সব অস্ত্রশস্ত্রের ট্রেনিং দেয়া হয়েছে সে সব অস্ত্র কাদের ওপর প্রয়োগ হবে? টার্গেট' কারা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
মহারাষ্ট্রের জনৈকা মহিলা মন্ত্রীর সহযোগিতায় পাওয়া অস্ত্রলাইসেন্স নিয়ে যারা আজ রক্তহোলি খেলতে ছুটেছেন তাদের কি ভাবা উচিত ছিলনা, যে, সংখ্যালঘু মুসলমান, শিখ প্রভৃতি জাতিকে যখন আঘাত হানা হবে অথবা নিশ্চিহ্ন করার অভিযান চালান হবে তখন তারাও প্রতি-আঘাত করবে। দুপক্ষেই কমবেশি নিহত-আহত হবে। শেষে দেখা যাবে-মরেনি নেতারা, মরেছে নিরীহ হিন্দু-মুসলমান-শিখ প্রভৃতি ভারতীয় নর-নারী। (অস্ত্রলাইসেন্সের উপরোক্ত তথ্যের জন্য ভারতের দৈনিক পত্রিকা ‘আজকাল'-এর ৭.১১.১৯৮৫ সংখ্যা দ্রষ্টব্য)
ধর্মের নামে মন্দির, গুরুদ্বার, মিশন ও মাদ্রাসা যদি মানুষ মারার তালিম দেয়, পূজা মহরম বা এ রকম কিছুকে (বা কোন শোভাযাত্রাকে) কেন্দ্র করে যদি সশস্ত্র হয়ে এগিয়ে যায় তাহলে ভারতের ইতিহাস পুনরায় কলঙ্কিত হতে পারে।
তাই এখানেও বক্তব্য হল, রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দকে ভাঙ্গিয়ে যদি সাম্প্রদায়িক নেতারা লোক ঠকাতে চান তাহলে বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িকতাকে যে ঘৃণা করতেন এবং হিন্দু, মুসলমান ও ভদ্রলোক কথিত ‘ছোটলোক'কে নিয়ে মিলেমিশে যে থাকতে চেয়েছিলেন তার প্রমাণ পূর্বে দেয়া হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ সম্বন্ধেও অনেক তথ্যবহুল আলোচনা এ পুস্তকে পূর্বেই করা হয়েছে।
স্বামী বিবেকানন্দ যে অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার মানুষ ছিলেন, তিনি যে মুসলমানদের ভালবাসতেন এবং শ্রদ্ধা করতেন সে সম্বন্ধে আরো কিছু তথ্য পেশ করার প্রয়োজন রয়েছে। এখানে উদ্ধৃত তার নিজস্ব বক্তব্যগুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে তার নীতির সাথে তাকে সামনে' করে বর্তমান সংগঠনগুলোর নীতির যে কত পার্থক্য তা অনুমান করতে কষ্ট হবেনা।
(১) বিবেকানন্দ বলেছেন, “হিন্দু ধর্মের ন্যায় আর কোন ধর্মই এত উচ্চতানে মানবত্মার মহিমা প্রচার করেনা, আবার হিন্দুধর্ম যেমন পৈশাচিকভাবে গরীবও পতিতদের গলায় পা দেয় জগতে আর কোন ধর্ম এরূপ করেনা।”
(২) বিবেকানন্দ আরও বলেন : “জনসাধারণের সেবা, এটা আমাদের করতেই হবে।”-মুসলমানরা কি এ জনসাধারণের মধ্যে গণ্য নয়?
(৩) স্বামীজী বলেনঃ “মনে রাখিবে, দরিদ্রের কুটীরেই আমাদের জাতীয় জীবন স্পন্দিত হইতেছে।”-আজকের দরিদ্র মুসলিম কি এর মধ্যে পড়েনা? স্বামীজী-ভক্তদের এ কথা মনে রাখা উচিত।
(৪) স্বামীজী আরো বলেন, “যে দেশে কোটী কোটী মানুষ মহুয়ার ফুল খেয়ে বেঁচে) থাকে, আর দশ বিশ লাখ সাধু আর ক্রোর দশেক ব্রাহ্মা এ গরীবদের রক্ত চুষে খায়, আর তাদের উন্নতির কোন চেষ্টা করেনা, সে কি দেশ নয় নরক! শে ধর্ম না পৈশাচিক নৃত্য।”-সমস্ত ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ করে যে, ভারতে মুসলমান সম্প্রদায় শোষিত হয়েছে দুদিক থেকে, একদিকে ইংরেজদের দ্বারা এবং অন্যদিকে জমিদার, রাজা, মহারাজা, এবং বাবু'-দের দ্বারা-স্বামীজীর এ কথা এখনো তলিয়ে দেখা দরকার। (৫) বিবেকানন্দ বলেছেন : “দুঃখী দরিদ্রকে সাহায্য করা, পরের সেবার জন্য নরকে যাইতে প্রস্তুত হওয়া-আমি খুব বড় কাজ বলিয়া বিশ্বাস করি।” তাই বিবেকানন্দের অনুগামীদের প্রশ্ন-মুসলমান দুঃখী’ ও ‘দরিদ্রেরা কি তার ঐ বক্তব্যের আওতা থেকে বাদ যাবে? “ভারত বর্ষে দরিদ্রদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা (যে) অনেক বেশী”- এ কথা ডক্টর সত্য প্রসাদ সেনগুপ্তও স্বীকার করেছেন। (দ্রঃ মানবপ্রেমিক বিবেকানন্দ-বিবেকানন্দ স্মৃতি, পৃ. ৩৭),
(৬) একবার স্বামী বিবেকানন্দকে স্বামী অখণ্ডানন্দ প্রশ্ন করেছিলেন যে তার মহুলা ও সারগাছিতে প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনে মুসলমান ছেলেদের নেওয়া হবে কি না। উত্তরে স্বামীজী লিখেছিলেন: “মুসলমান ছেলেদেরও সাগ্রহে নেওয়া হবে, কিন্তু তাদের ধর্মের উপর যেন কোন কারণেই হস্তক্ষেপ না করা হয়। তাদেরও চরিত্রে, ত্যাগ-মাধুর্যে সত্যিকারের মানুষ করে তুলতে হবে। তাহলে মুসলমান ছাত্ররা তাদের সমাজ, রোজা ও ধর্মবিশ্বাস নিয়েই মিশনে পড়বে-এটা কি স্বামীজীর মনের কথা ছিলনা?
(৭) বিবেকানন্দ বলেছেন-“ভারতকে উঠাইতে হইবে, গরীবদের খাওয়াইতে হইবে,”-মুসলমানদের ডোবাতে হবে, তাদেরকে খাওয়ানো চলবে না-কই এ কথা তো তিনি বলেন নি!
(৮) স্বামীজী বললেন : সন্ন্যাসীর জন্ম হয়েছে “পরের জন্য প্রাণ দিতে, জীবের গগনভেদী ক্রন্দন নিবারণ করতে, বিধবার অশ্রু মোছাতে, পুত্র বিয়োগ বিধবার প্রাণে শান্তি দান করতে, অজ্ঞ ইতর সাধারণকে জীবন-সংগ্রামের উপযোগী করতে।”-এখানেও জিজ্ঞাস্য যে, বিবেকানন্দ যে সমস্ত কারণগুলো দেখিয়েছেন তার মধ্যে কি মুসলমানরা পড়েনা? যদি তারা এর বহির্ভূতই হয় তাহলে বিবেকানন্দ কেন প্রত্যেকটির পূর্বে হিন্দু শব্দ উল্লেখ করেনি?
৯) লাহোরে স্বমীজী একটি সত্য বা সমিতি স্থাপন করে ঘোষণা করেছিলেন। এ সভায় সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই।” তাহলে তার আদর্শে অনুপ্রাণিত সংগঠন ও নেতাদের দ্বারা আর কিভাবে মুসলমানরা সাম্প্রদায়িকতার শিকার হতে পারেন! তখনকার স্বামীজীভক্ত ও আজকের স্বামীজীভক্তের (একটা দল) মধ্যে কি বিরাট পার্থক্য লক্ষ্যণীয় নয়।
(১০) বিবেকানন্দ বলেছিলেনঃ “ফেলে দে তার শাস্ত্ৰ-ফাস্ত্র গঙ্গাজলে দেশের লোকগুলোকে আগে অন্নসংস্থান করবার উপায় শিখিয়ে দেয় তারপর ভাগবত পড়ে শোনাস।”-ভারতের মুসলমানরা কি বিবেকানন্দ বর্ণিত দেশের লোক' নয়? নাকি বিবেকানন্দের সময় দেশে মুসলমান ছিলনা? বিবেকানন্দ যেখানে তাঁর অনুগামীদের দেশের লোককে অন্নসংস্থানের উপায় শিখিয়ে দেয়ার আদেশ দিয়ে গেলেন, আজ সেখানে তা না করে যদি দেশের মুসলমানদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখের।
(১১) স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেনঃ “আবার কি কাল্পনিক ঈশ্বরের পূজো হে বাপু! বেদ, কোরআন, পুঁথি-পাচ্ছা এখন কিছুদিন শান্তি লাভ করুক-প্রত্যক্ষ ভগবান দয়া প্রেমের পূজা দেশে হোক। ভেদবুদ্ধিই বন্ধন (অর্থাৎ বাধা-লেখক) অভেদ বুদ্ধিই মুক্তি।” তা যদি হয় তাহলে মুসলমানদের সঙ্গে এত ভেদবুদ্ধি কেন?
(১২) ধর্ম কাকে বলে এ প্রশ্নের উত্তরে স্বামী বিবেকানন্দ অগ্রস্ত্যানন্দকে লিখেছিলেন: ‘নীতিপরায়ণ মনুষ্যত্বশালী ও পরহিতরত হওয়ার নামই ধর্ম।" যদি তাই হয় তাহলে বলতে হয়, এই পরিহিতের মধ্যে কি মুসলমানরা পড়েনা? নাকি তাদের উপকার করলে ধর্ম করা হয়না? আলোচ্য ১ হতে ১২ পর্যন্ত উদ্ধৃতিগুলো ডক্টর সত্যপ্রসাদ সেনগুপ্তের 'বিবেকানন্দ স্মৃতি-মানবপ্রেমিক বিবেকানন্দ’ পুস্তক হতে নেয়া।
বিবেকানন্দের এ সমস্ত উক্তির দিকে নজর রেখে বলা যায়-বর্তমানে আধুনিক কোন নকল স্বামীজী অথবা কোন বিবেকানন্দভক্ত তাঁর মতই নামের সাথে নন্দ' জুড়ে, অথবা তার মতই গেরুয়া বস্ত্র আর মাথায় পাগড়ি বেঁধে যদি মুসলমানদেরকে ভারত থেকে বিতাড়ন অথবা তাদেরকে হত্যা অথবা ধর্মান্তরিত বা শুদ্ধিকরণের কথা বলেন তাহলে তিনি যে ‘পরিষদেরই নেতা বা যে সংঘেরই মধ্যে কি মুসলমানরা পড়েনা? নাকি তাদের উপকার করলে ধর্ম করা হয়না? কর্তা হোন না কেন, তাঁকে স্বামী বিবেকানন্দের সাথে, তার আদর্শ ও নীতির সাথে মেলালে মিলবে কি না তার উত্তর সহজ ও সাধারণ।
তাহলে কি স্বামীজীর কোন গোপন ইতিহাস আছে, যাতে উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলোর বিপরীত কথা লেখা আছে। বর্তমানের নকল স্বামীজীরা কি সে গোপন আদেশ ও আদর্শকেই মেনে চলেছেন? মুসলমানদের গোমাংস খাওয়া নিয়ে বর্তমান সাম্প্রদায়িক নেতাদের বিরাট প্রচার, খেলাখেলিও ভাষণ চলছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে-এ সম্বন্ধে স্বামী বিবেকানন্দেরও কি এ রকম কোন বিশেষ ভূমিকা বা দুর্বলতা ছিল? আমাদের মতে-স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যাপারে এবং রাজনীতি করার বিষয়ে তার যে ভুমিকাই থাক না তার কাজে ও কথায় তিনি মুসলিম বিদ্বেষী ছিলেন-একথা মোটেই প্রমাণ হয়না।
তাছাড়া তার মত আমেরিকা-ঘোরা বিশ্ববিখ্যাত নেতার পক্ষে গোমাংস নিয়ে সঙ্কীর্ণ ধারণা রাখা মোটেই সম্ভব ছিলনা। এ প্রসঙ্গে একটি মূল্যমান উদ্ধৃতি দিচ্ছি “একদিন স্বামীজীর কাছে গোরক্ষিণী সভ্য'র জনৈক প্রচারক উপস্থিত হলেন। প্রচারক স্বামীজীকে প্রণাম করে তাকে গোমাতার একটি ছবি উপহার দিলেন। স্বামীজী তাদের
সভার উদ্দেশ্য কি এ প্রশ্ন করায় প্রচারক বললেন-“নিষ্ঠুর কসাইয়া ভারত বর্ষের গোমাতাদের হত্যা করছে তাই আমাদের সমিতি বিভিন্ন স্থানে পিজরা পোল প্রতিষ্ঠা করে কসাইদের হাত থেকে গোমাতাদের কিনে আশ্রয় দিচ্ছে। এ সময়ে মধ্যভারতে ভীষণ দুর্ভিক্ষ, সরকারি তালিকা মতে এ দুর্ভিক্ষে প্রায় ৯ লক্ষ লোক মারা গেছে। তাই স্বামীজী প্রচারককে প্রশ্ন করলেন-“আপনাদের তহবিল থেকে দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের সাহায্য করার ব্যবস্থা হয়েছে কি?' প্রচারক বললেন যে তারা মানুষের সাহায্য করেন না।
গোমাতাদের সাহায্য করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।...প্রচারক (আরও) বললেন, মানুষ তার কর্মফলে মারা যায় এবং দুভিক্ষও মানুষের কর্মফল।' স্বামীজীর কণ্ঠে আগ্নেয়গিরির উত্তাপ, তিনি বললেন-‘পশু পাখীদের বাঁচাবার জন্য আপনারা অজস্র অর্থব্যয় করেছেন, কিন্তু মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য আপনাদের প্রাণ এতটুকু কাঁদেনা! আপনি বলছেন, মানুষ কর্মফলের জন্য মরেছে, তাই যদি হয় তবে আপনার গোমাতারাও তো কর্মফলের জন্য কসাইয়ের হাতে মারা যাচ্ছে।' প্রচারক একটু লজ্জিত হলেন কিন্তু বললেন-“কিন্তু শাস্ত্রে যে বলে গরু আমাদের মা’; স্বামীজী হাসতে হাসতে বললেন-“গরু যে মা তা ভালই বুঝতে পাচ্ছি। নইলে এত কৃতী সন্তান আর কেন হবে?” (ডক্টর সত্যপ্রকাশ সেনগুপ্ত 'বিবেকানন্দ স্মৃতি-মানবপ্রেমিক বিবেকানন্দ, পৃ, ৬৮-৬৯)
এরপরেও প্রচারক বিবেকানন্দের কাছে অর্থ সাহায্য চাইলে তিনি বললেনঃ “আমার পয়সা কোথায়? তবে আমার হাতে যদি কখনও পয়সা আসে তবে আগে তা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করব।”, আমাদের বক্তব্য হল, প্রচারককে অতি সামান্য কিছু অর্থ সাহায্য করার ক্ষমতাও কি বিবেকানন্দের ছিলনা? নিশ্চই ছিল; তবুও কেন যে তিনি তা করেন নি তার ব্যাখ্যা অপ্রয়োজন।
অধ্যাপক দ্বিজেন্দ্রলাল নাথ লিখেছেনঃ “বিবেকানন্দের মানবপ্রেম এত সর্বব্যাপক ও সক্রিয় ছিল যে, মুসলমানদের হাত থেকে মুসলমানী রুচি অনুযায়ী প্রস্তুত খাদ্য গ্রহণে তার দ্বিধা ছিলনা। এরকম দুটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন ভগিনী নিবেদিতা তার Master Isaw Him গ্রন্থের ৯১ পৃষ্ঠায়।...এ সর্বাত্মক সহানুভূতির ফলে পরিব্রাজক জীবনে স্বামীজী মুসলমানদের নিকটও যে কত সহৃদয় ব্যবহার পেয়েছিলেন তার সীমা নেই। কাশ্মীর ভ্রমণের সময় একজন বর্ষীয়সী দরিদ্র মুসলমান রমণী তাকে যে ভাবে সযত্নে আপ্যায়িত করেন-সে বৃত্তান্ত তার পাশ্চাত্য শিষ্যদের কাছে বারে বারে উল্লেখ করেও ক্লান্তি বোধ করতেন না স্বামীজী।...ধর্মান্ধ হিন্দুরাই মুসলমানদের বিজাতীয় বলে ভাবতে শিখিয়েছে।
তাদের এ দৃষ্টি বিভ্রমই সরলচিত্ত মুসলমানকে হিন্দুর সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধার সৃষ্টি করেছে (যেমন রবীন্দ্রনাথও বলেছিলেন : '...মুসলমান নিজের মসজিদে এবং অন্যত্র হিন্দুকে যত কাছে টেনেছে, হিন্দু মুসলমানকে তত কাছে টানতে পারেনি।')....আমেরিকা যাত্রার পূর্বে ভারত ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে হায়দ্রাবাদের নবাব স্বামীজীকে নিজের প্রসাদে পরম সমাদরে অভ্যর্থনা করে শুধু যে উচ্চ মর্যাদা প্রদর্শন করেন তা নয়, পাশ্চাত্য দেশে স্বামীজীর সমন্বয়ী বেদান্ত ধর্মের আদর্শ প্রচারকে সফল করার জন্য অর্থ সাহায্য করতেও প্রস্তুত হন।...দ্বিতীয়বার ইংলেণ্ড যাত্রার সময় জাহাজ যখন জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রম করছিল আত্মমগ্ন স্বামীজী ভগিনী নিবেদিতাকে তীরভূমির দিকে নির্দেশ করে ভাবাবেগ কণ্ঠে বলেছিলেনঃ তুমি কি তাহাদিগকে
দেখ নাই? (পুনরায়) তুমি কি তাহাগিদকে দেখ নাই? তীরে অবতরণ করিয়া তাহারা (মুসলমানরা) দ্বীন দ্বীন (ধর্ম ধর্ম) ধ্বনিতে দিক মুখরিত করিতেছে।' একথা বলে স্বামীজী অর্ধঘণ্টা কাল যাবত নিবেদিতার নিকট ইসলাম পতাকাবাহী আরব বীরগণের স্পেন বিজয় কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন' (দ্রষ্টব্য সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার ও বিবেকানন্দ চরিত্র, পৃ, ২৯৫)।”
অধ্যাপক দ্বিজেন্দ্ররাল নাথ আরও বলেছেন-“তিনি মনে করতেন, ভারত বর্ষে মুসলমান অধিকার এক হিসেবে ভগবানের আশীর্বাদের মত।...নির্যাতিত হিন্দুর জীবনে মুসলমান-বিজয় এনে দিয়েছিল মুক্তির স্বাদ। এ কারণে মুসলমান শাসনধীনে এক-পঞ্চমাংশ ভারতবাসী মুসলমান হয়ে গিয়েছিল (দ্রষ্টব্যঃ The Future of India সম্পর্কে স্বামীজীর ভাষণ)।...আমাদের নেতাদের দুরদর্শিতা ও সমদর্শিতার অভাবে বিবেকানন্দ পরিকল্পিত বৈদান্তিক মস্তিষ্ক ও ইসলামীয় দেহের (Islamic Body and Vedantic Brain) মিলন সম্ভব হয়নি। এ মিলন সম্ভব হলে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসের ধারা যে ভিন্ন পথে প্রবাহিত হত-এ অনুমান অহেতুক নয়।” (দ্রষ্টব্যঃ “বিবেকানন্দ ও মুসলমান সমাজ' (প্রবন্ধ) নবজাতক পত্রিকা সম্পাদিকা মৈত্রেয়ী দেবী, প্রথম বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা, ১৩৭১, পৃ. ১৮-২৩)
আজ বড় বেদনার কথা-বিবেকানন্দের সামনে করে যেভাবে শুধু মুসলমান বিবর্জিত হিন্দু সংগঠন হচ্ছে বা কাজ চলছে তাতে মনে হবে বিবেকানন্দ বুঝি মুসলমানদের এক নম্বরের শত্রু ছিলেন। মহান বিবেকানন্দের এ মিথ্যা দুর্নাম নিশ্চিহ্ন করার জন্যই এ তথ্য পরিবেশন। তিনি মুসলমানদের সাথে সহজ ও সাধারণভাবে মেলামেশা করতেন, পরামর্শ নিতেন, পরামর্শ দিতেন এবং পত্রালাপ করতেন-যদিও এসব চাপা পড়া তথ্য তবুও তার মধ্যে থেকে একটি মাত্র পত্র এখানে তুলে ধরছি।
বিবেকানন্দ ১৮৯৮ খৃষ্টাব্দের ১০ই জুন আলমোড়। থেকে নৈনিতালের সরফরাজ হোসেনকে যে পত্রটি লিখেছেন তার অনুবাদ :
আলমোড়া ১০ই
জুন, ১৮৯৮ ইং
“প্রীতিভাজনেষু"
আপনার পত্রের মর্ম বিশেষভাবে উপলব্ধি করিলাম এবং ইহা জানিয়া যারপরনাই আনন্দিত হইয়াছি যে, ভগবান সকলের অগোচরে আমাদের মাতৃভূমির জন্য অপূর্ব আয়োজন করিতেছেন। ইহাকে আমরা বেদান্তই বলি আর যাই বলি, আসল কথা এই যে, অদ্বৈতবাদ (একত্ববাদ) ধর্মের এবং চিন্তার শেষ কথা, কেবল অদ্বৈতভূমি হইতেই মানুষ সকল ধর্ম এবং সম্প্রদায়কে প্রীতির চক্ষে দেখতে পারে। আমার বিশ্বাস যে, উহাই ভাবী শিক্ষিত মানব সমাজের ধর্ম। হিন্দুগণ অন্যান্য জাতি অপেক্ষা শ্রীঘ্র শ্রীঘ্র এ তত্ত্বে পৌছানোর কৃতিত্বটুকু পাইতে পারে, কারণ তারা হিব্রু কিংবা আরব জাতিগুলি অপেক্ষা প্রাচীনতর; কিন্তু কর্ম পরিণত (Practica) বেদান্ত-যাহা সমগ্র মানবজাতিকে নিজ আত্মা বলে দেখে এবং তদনুরূপ ব্যবহার করে থাকে-তাহা হিন্দুগণের মধ্যে সার্বজনীনভাবে এখনও পুষ্টি লাভ করে নাই।
পক্ষান্তরে আমাদের অভিজ্ঞতা এটা যে, কখনও যদি কোন ধর্মের লোক দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনে এ সাম্যের কাছাকাছি ' আসিয়া থাকে তবে একমাত্র ইসলাম ধর্মের লোকেরাই আসিয়াছে। এজন্য আমাদের দৃঢ় ধারণা যে, বেদান্তের মতবাদ যতই সুহ্ম ও বিস্ময়কর হউক না কেন, কর্মপরিণত (practical) ইসলাম ধর্মের সহায়তা ব্যতীত তাহা মানব সাধারণের অধিকাংশের নিকট সম্পূর্ণরূপে নিরর্থক। আমরা মানবজাতিকে সেই স্থানে লইয়া যাইতে চাই- যেখানে বেদও নাই, বাইবেলও নাই, কোরআনও নাই; অথচ বেদ, বাইবেল ও কোরানের সমন্বয় দ্বারাই তা করতে হবে। মানবকে শিখাতে হবেই যে, সকল ধর্ম, এক ধর্মেরই বিবিধ প্রকাশ মাত্র, সুতরাং যার যেটি সর্বাপেক্ষা উপযোগী সে বেছে লইতে পারে।
আমাদের নিজেদের মাতৃভূমির পক্ষে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মরূপ এ মহান মতের সময়ই-বৈদান্তিক মস্তিক এবং ইসলামীয় দেহ-একমাত্র আশা। আমি মানসচক্ষে দেখতেছি, এ বিবাদ-বিশৃঙ্খলা ভেদপূর্বক ভবিষ্যত পূর্ণাঙ্গ ভারত বৈদাস্তিক-মস্তিক এবং ইসলামীর দেহ লয়ে মহা-মহিমায় ও অপরাজেয় শক্তিতে জেগে উঠতেছে।
ভগবান আপনাকে মানব জাতির, বিশেষ করে আমাদের অতি হতভাগ্য জন্মভূমির সাহায্যের জন্যে একটি মহান যন্ত্ররূপে (Instrument) গঠিত করুন-এটাই সতত প্রার্থনা।
ইতি—
স্নেহর বিবেকানন্দ
দুঃখের বিষয়, মূল ইংরাজি চিঠির সাথে বাংলা অনুবাদ মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, অনুবাদক মশাই কিছুটা অংশ নিজের বুদ্ধিতে যোগ করেছিলেন। এ পত্রের তৃতীয় অনুচ্ছেদের শেষে যে মারাত্মক অসত্য কথাটি অনুবাদক যোগ করেছিলেন তা হচ্ছে এ-“এরূপ আচরণের যে গভীর অর্থ এবং এর ভিত্তিস্বরূপ যে সকল তত্ত্ব বিদ্যমান সে সম্বন্ধে হিন্দুগণের ধারণা পরিষ্কার এবং ইসলামপন্থীগণ সাধারণতঃ সচেতন নয়।” মূল ইতিহাসে বা মূল দলিলে এভাবে ভেজাল দেবার রীতি জাতির পক্ষে যে কত ক্ষতিকারক তা বলাই বাহুল্য। এ নিয়ে আলোচনাও করা হয়েছে। এ মারাত্মক রীতি ইংরেজরা সৃষ্টি করেছিল এবং তারাই ব্যাপক হারে সত্য ঘটনাকে বিকৃত করে ইতিহাসকে করেছিল কলঙ্কিত। কিন্তু স্বাধীনোত্তর চার দশক পরেও কি ভারতের সে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে? ইতিহাসকে কলুষিত করতে আমাদের কলম কি একটুও কাঁপবে না? সাম্প্রদায়িকতার শিকার হওয়া থেকে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী বাঘা বাঘা নবীণ ও প্রবীণের দলও আজ রক্ষা পাননি।
তাদের মাথায় এ কথা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে এবং হচেছ যে-মুসলমানরা কোন মতেই দেশীয় বা ভারতীয় নয়; তারা বিদেশী। অথচ মুসলমান জাতি যে বিদেশী নয়-এ কথা প্রায় সমস্ত ভারতীয় এবং বহির্ভারতীয় মনীষী স্বীকার করেছেন। আমরা এ পুস্তকের বিভিন্ন স্থানে প্রসঙ্গ অনুযায়ী তথ্যসহ তা প্রমাণ করেছি। পরলাকগত শ্রী মতী ইন্দিরা গান্ধীও এ প্রসঙ্গে অভিমত পোষণ করে বলেছিলেন-“ভারত হিন্দুদের মত মুসলমানদেরও জন্মভূমি এবং মুসলিম শাসনের বহু বৎসর পূর্ব থেকেই মুসলমানরা ভারতে বসবাস করে আসছে।”
এখন তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেয়া হয়-বিদেশ থেকে এলেই ‘বিদেশী হয়, তাহলে স্বভাবতঃই প্রশ্ন ওঠে-আর্যরা কি বিদেশী নন? তাঁরা যে বহির্ভারত থেকে আগত তার হতে আবির্ভূত হবার কথা ঘোষণা করেছেন বলে কি ভারতীয় সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের স্বদেশী
বলে বিদেশী বলতে হবে? কয়েক বছর আগে ভারত-পাকিস্তান বিবাদ-বিসম্বাদে যে সব পাকিস্তানী ও বাংলাদেশী হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে এসেছেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে কি ‘বিদেশী' বলে তাড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করতে হবে? আমাদের মতে, এ উদ্বাস্তুরা অবশ্যই ভারতীয়; যেহেতু বর্তমানে তারা ভারতকেই মাতৃভূমি বা নিজের দেশ মনে করেন। অবশ্য কোন উদ্বাস্তু যদি তা মনে না করে ভারতকে শুধুই অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্র মনে করে সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদ বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে জমা করে সেটাকেই বাসভূমি বলে সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দরতর করতে চান তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি বিদেশী'।
যেমন মুসলমান নাদির শাহ। তাঁকে বিদেশী' বলে যে অভিহিত করা যায় সে কথা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। তেমনি ইংরেজরাও যে বিদেশী তাতে সন্দেহ নেই, যেহেতু তারা এ দেশকে নিজের দেশ বলে মনে করেননি। তাই বলে বাবর, হুমায়ুন, আকবর, আওরঙ্গজেব, বাহাদুর শাহ, মুর্শিদকুলি খাঁ ও সিরাজুদ্দৌলাকে এবং বর্তমান ভারতীয় মুসলমানদেরকে যদি ‘বিদেশী” বলে উল্লেখ করা হয় তাহলে তা হবে ইতিহাস না জানার নামান্তর মাত্র। ঠিক এমনিভাবে বর্তমান ভারতের খৃস্টান ও মুসলমান জাতি-যাঁদের ভারত ছাড়া আর কোন স্বদেশ’ নেই, যাদের জন্ম-মৃত্যু আয়-ব্যয় সব ভারতকে কেন্দ্র করেই, তাদেরকে বিদেশী' বলা অর্থ নিঃসন্দেহে সত্য, সততা ও ন্যায় নীতিকে নিহত করারই সামিল। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ-এ দুই মুসলমান দেশ সেখানকার সংখ্যা লঘু সম্প্রদায় বা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যদি বিশ্ব মুসলিম পরিষদ’ অথবা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সমিতি' (Rs.s.) বা ‘আমরা মুসলমান' সংগঠন তৈরি করে এবং সেখানকার হিন্দুদের হত্যা, বিতাড়ন অথবা
ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে শাস্ত্রের নামে ব্যায়ামাগার করে এবং তাতে যদি হিন্দুদের প্রবেশাধিকার না থাকে তাহলে যে কোন দেশের যে কোন মানুষ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের এ উৎকট সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে যেমন ধিক্কার দেবেন তেমনই ধিক্কার দিতে দ্বিধা করবেন না সে দেশের প্রশাসন ও প্রশাসকবৃন্দকে। ঠিক অনুরূপভাবে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতে যদি এ অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে আমরা বিশ্বমানস’কে কি দাবিয়ে রাখতে পারব?
এখানে পূর্বের সে কথায় ফিরে এসে বলা যায়-আজও যদি আমরা সাবধান না হই তাহলে স্বামী বিবেকানন্দের মহান ভাবমূর্তি কুয়াশাচ্ছনই থেকে যাবে, আর মানুষের মনে প্রশ্ন জাগবে-এ সাম্প্রদায়িক, মুসলিম ও সংখ্যা লঘু-বিদ্বেষী নায়করা যে বিবেকানন্দের অনুসারী ও অনুগামী বলে দাবী করছেন তিনি কোন্ বিবেকানন্দ? তিনি সে মহান অসাম্প্রদায়িক বিবেকানন্দ, নাকি সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট অন্য কোন বিবেকানন্দ?
পরিশেষে বলি-মুসলমান জাতি যদি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসরণ ও অনুকরণে চলতে থাকেন, হিন্দু ভাই-বোন যদি স্বামী বিবেকানন্দের (বা কোনআদর্শ পুরুষের) আদর্শই গ্রহণ করেন, ভারতীয় বা স্বদেশীয় খৃস্টান বন্ধুরা যদি যীশু খৃস্টের মহান আদর্শকে অনুসরণ করেন, শিখ ভাই-বোনেরা যদি গুরু নানকের প্রকৃত আদর্শকে সাথে করে এগিয়ে যান এবং যে কোন দল বা সম্প্রদায় যদি তাদের আদর্শ নেতার আদর্শকে সামনে রেখে চলতে থাকেন তাহলেই বিবাদবিহীন সুষ্ঠু সমাজ গড়ে উঠবে, হাতে হাত মিলিয়ে জনকল্যাণকর কাজ করতে থাকবে, না কোন বাধা, সাম্প্রদায়িকতা, বিচ্ছিন্নবাদিতা, প্রাদেশিকতা এবং সমস্ত রকমের সঙ্কীর্ণতা নির্মূল হয়ে গড়ে উঠবে সৌভাতৃত্বের সুদৃঢ় বন্ধন।
সমাপ্ত
পাঠক/পাঠিকাদের প্রতি আলোচ্য গ্রন্থ সম্পর্কে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ পেলে আমরা বিশেষভাবে বাধিত হব। এ গ্রন্থ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ও সাদরে গৃহীত হবে। তবে মতামত ও পরামর্শ সংক্ষিপ্ত হওয়া একান্তভাবে বাঞ্ছনীয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/64
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।