মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
পিতার মৃত্যুর কয়েক বছর আগেই মাওলানা আলাউদ্দিন (অশুদ্ধ ও গেঁয়ো নাম 'দুদু মিঞা') স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। পিতার মৃত্যুর পরেই তিনি সংগ্রামের ধারা একটু বদল করলেন। হিন্দু-মুসলমান দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের কানে প্রথমে তিনিই সাম্যবাদ প্রচার করেন। আরও বলেন, জমিদার ও ইউরোপীয় নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি হিন্দুর উপর অত্যাচার হয় তাহলেও ইসলাম অনুযায়ী আমাদের তাদের পাশে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাওয়া ধর্মের বিধান।
যদি না যাওয়া হয়, তাহলে অধর্মের কাজ হবে। তিনি শাসনতন্ত্র কায়েম করলেন। তার বাহিনী তলোয়ার, সড়কি, তীর, ধনুক প্রভৃতি অস্ত্রে সজ্জিত হয়। সর্বপ্রথম তিনি বিপ্লবী খিলাফত ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেন পুরোপুরিভাবে। এ পদে সর্বোচ্চ স্থানে যিনি থাকতেন তাকে বলা হত ‘ওস্তাদজী'। তাদের পরামর্শদাতারা দুজন ছিলেন খলিফা'। এমনিভারে সুপারিনটেনডেন্ট খলিফা, ওয়ার্ড খলিফা, গাঁও খলিফা প্রভৃতি নানা নামে নানা পদের ব্যবস্থা ছিল। তিন-চারশো বিপ্লবী পরিবার নিয়ে একটি গ্রাম ইউনিট ছিল। সুপারিনটেনডেন্ট খলিফার একজন পিয়ন ও একজন পেয়াদা থাকত, তাদের দ্বারা নীচে হতে উপর মহলে যোগাযোগ ও নির্দেশ পাঠাবার ব্যবস্থা ছিল। দ্রেঃ M.A khan : History of the Faraidi Movement in Bengal, p. 104-112)
তারা আদালতে বা পঞ্চায়েত গঠন করেন এবং সমস্ত অঞ্চলের বিচার বিপ্লবীরাই করতে থাকেন। মুসলমানদের যাকাত, ওশর ইত্যাদি দাতব্য অর্থ সংগ্রহ করা, সংগঠনের চাঁদা ফসল হতে তোলা, ঠিক মত তা আদায় করা, সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা, মাদরাসা মক্তব তৈরি করা, মসজিদ তৈরি করা, প্রভৃতি কাজ জাদু খেলার গতিতে চলতে লাগল। এদিকে বিপ্লবীদের সুবিচার তখন ইংরেজ বিরোধিতার নামান্তর। তারা বললেন, পৃথিবীতে জমি জায়গা যা আছে সব ঈশ্বরের। সেখানে জমিদার বা সরকারের কর নেয়া জুলুম বা অত্যাচার। মানুষ সব সমান, আমাদের কারো উপর তাদের কর্তৃত্ব করবার অধিকার নেই।
“এ সুবাদে অমুসলমানরাও অনেকে তাদের কাছে কেস্ করতেন। বিচারও সূক্ষ্মভাবে হত। বিচারের রায় না মানলে তা মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা আলাউদ্দিনের সৈন্য বিভাগের ছিল। শেষে অবস্থা অনুকূলে দেখে তিনি তার এলাকায় ঘোষণা করলেন, সমস্ত বিচার আমাদের স্বদেশী আদালতে হবে; যদি কেহ ইংরেজদের আদালতে বিচারপ্রার্থী হয় তাহলে তাকে শাস্তি নিতে হবে। এতে ইংরেজ ব্যবসায়ী বা নীলকরের সাহেবরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল, আর জমিদার শ্রেণীও খুব অসন্তুষ্ট হল। কিছু মুসলমানের সহযোগিতায় তারা বলতে লাগলেন, “গরীব ছোটলোকদের এত মাথায় তোলা অবিচার মাত্র। অবশেষে ইংরেজদের স্তম্ভ জমিদার শ্রেণী, হিন্দু এবং মুসলমান উভয় শ্রেণীর বিপ্লবীদের উপর আক্রমণ শুরু করে এবং তা বহুদিন পর্যন্ত চলতে থাকে। (Proceeding of the Judicial Department. 0. c. No. 25. 29 May 1843, p. 462)
ইংরেজের ইঙ্গিতে ফরিদপুরের সিকাদার ও ঘোষ পরিবারের দু’জন বড় জমিদারও মুসলমান প্রজাদের জন্য ঘোষণা করলেন, মুসলমানরা গরু কোরবানী করতে পারবে না, কালী ও দূর্গাপূজায় কর দিতে বাধ্য থাকবে। দাড়ির উপরও কর বসান হয়, আর নিষেধ করা হয়, কোন মুসলমান বিপ্লবী দলের সাথে সংযোগ না রাখতে।
প্রথমে কিছু মুসলমান প্রজা তার অবহেলা করলে জমিদাররা তাদের কঠোর শাস্তি দেন। [দ্রঃ A.R, Mallick, p. 72-73, M.A. khan. p. 27-28 আলাউদ্দিন সাহেব ১৮৪১ খৃস্টাব্দে কানাইপুরের সিকদার ও ফরিদপুরের জয়নারায়ণ জমিদারদ্বয়ের বিরুদ্ধে সৈন্যসহ আক্রমণ করে উভয়কে পরাজিত করে। খুব মনে রাখার মত দরকার যে, এ লড়াই হিন্দু-মুসলমানের নয়, বরং কৃষক-জমিদারের লড়াই, অথবা ইংরেজ শাসকের শোষণের বিরুদ্ধে মুসলমান বিপ্লবীদের সংগ্রাম। এরপরে কানাইপুরের জমিদার জয়নারায়ণবাবু ১৮৪২ খৃষ্টাব্দে প্রবলভাবে বিপ্লবীদের বাধা দেন। ফলে যুদ্ধ তুমুল রূপ নেয়। শেষে বিপ্লবীরা জমিদারের ভাই মদন বাবুকে ধরে নিয়ে চলে যায়। অনেকে বলেন, তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। এবং পদ্মা নদীতে নিক্ষেপ করা হয় ( M. A. Khan, p.27-29)
এ হামলায় ৮০০ জন মুসলমান বিপ্লবী যুক্ত ছিলেন। জমিদাররা ইংরেজদের আদালতে মামলা করলে বিচারে ২২ জনের ৭ বছর করে জেল হয়। আলাউদ্দিনের অবশ্য কোন শাস্তি হয়নি, তিনি মুক্তি পান। অনেকের মতে এও ঠিক যে, তার শাস্তি হলে হিতে বিপরীত হত। কেননা পুলিসী রিপোর্ট অনুযায়ী এ সময় আলাউদ্দিনের হাতে আশি হাজার লোক প্রাণ দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। (দ্রঃ P.J.D.০.c.No.99.7.4,1847, P.146]). ১৮৪১ ও '৪২ এর ঘটনার পর মুসলমানদের বিরুদ্ধে জমিদারগণ লড়াই করতে সাহসী হননি। তবে ইংরেজদের সাথে যোগাযোগ করে সমস্ত সংবাদ সরবরাহ করা এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জমিদারের সাথে শোষিত মানুষের বা কৃষকের লড়াইটিকে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক লড়াই বলে প্রমাণ করার খুব চেষ্টা করা হয়েছিল। অমলেন্দু দে তাঁর উল্লিখিত পুস্তকের ৭৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, জমিদারগণ অনেকাংশে সাফল্য মন্ডিত হয়েছিলেন। লড়াইটিকে হিন্দু-মুসলমানের লড়াই বলে সাধারণ মানুষকে বোঝান সম্ভব হয়েছিল।
এ সময় ডানলপ সাহেব ছিলেন কাসিমপুরের নীলকুঠির প্রভাবশালী সাহেব। এ ইংরেজের বিশ্বস্ত পার্শচর ছিলেন কালীপ্রসাদ কাঞ্জিলাল নামে এক গোমস্তা। ডানলপ সাহেব এবং এ ব্রাহ্মণ গোমস্তা আট শত সশস্ত্র লোক নিয়ে বাহাদুরপুরে ‘দুদু মিঞার বাড়ি আক্রমণ করেন। বাড়ির চারজন প্রহরীকে হত্যা এবং বহু ব্যক্তিকে আহত করে সে বাজারের দেড় লক্ষ টাকার অর্থ ও সম্পদ নিয়ে ফিরে যান। 6ে .M. A. Khan, p.35; অমলে দে, পৃষ্ঠা ৭৫)
১৮৪৬ সনের ৫ই ডিসেম্বর আলাউদ্দিন প্রতিশোধ নিতে ডানলপ সাহেবের কুঠি আক্রমণ করেন। পরে সে গোমস্তাকে বাখরগঞ্জ এলাকায় অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় এবং তাদের ২৬ হাজার টাকার ক্ষতি করে দেয়া হয়। অধ্যাপক অমলেন্দু দের ভাষায়-“তাদের তুলনায় ডানলপের ক্ষতির পরিমাণ অল্পই ছিল।” (দ্রঃ অমলেন্দু দে, পৃষ্ঠা ৭৫)
সে সময়কার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ডানলপের বন্ধু। সে সুবাদে অনায়াসেই ডানলপ কোর্টে কেস করলেন। আলাউদ্দিন এবং ৬৩ জন মুসলমান বিপ্লবীকে বন্দী করে বিচার চলতে থাকে। বিচারে সকলের শাস্তির রায় হয়। সে রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতার সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করা হয়। চতুর ইংরেজ অবস্থা বুঝে সকলকেই মুক্তি দেয়। ১৮৪৭ সনে মুক্তি পেয়ে আলাউদ্দিন সারা ভারতে প্রত্যেক কেন্দ্র সংবাদ পাঠান যে, চারিদিক হতে একসাথে ইংরেজ ধ্বংস অভিযান চালাতে পারলে ইংরেজকে তাড়িয়ে দেশ স্বাধীন করা সম্ভব হবে। ষড়যন্ত্র চলতে লাগল। শেষে খুবই গোপনে এ সিদ্ধান্তে আসা গেল যে, সারা ভারতের আন্দোলন ও বিপ্লবকে ইংরেজ তার সৈন্য বাহিনী দিয়েই দমন করছে, সুতরাং সৈন্যদের কোন প্রকারে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারলেই উদ্দেশ্য সফল হতে পারে।
১৮৫৭ সনের স্বাধীনতা যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নেয়ার পূর্বেই সরকার টের পায় যে, নেতা আলাউদ্দিনকে জেলে দেয়া ছাড়া পেরে ওঠা সম্ভব হবে না। তাই তাঁকে বন্দী করে জেলে খুব অত্যাচার ও দুর্ব্যবহারের ইন্ধন করা হয়। শরীর দুর্বল এবং অসুস্থ থাকলেও মন আর মস্তিষ্ক কিন্তু দুর্বল হয়নি একটুও। তাঁকে ছাড়া হয়েছিল ১৮৬০ সনে। শুধু ভয় করেই এবং নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই যে ইংরেজ সরকার তাকে বন্দী করেছিল তাতে সন্দেহ নেই। [M.A. khan. p. 42-43]. অনেকে মনে করেন, এ রকম এক বিরাট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন স্বাধীনচেতা নেতা যদি স্বাধীনভাবে ছাড়া থাকতেন তাহলে বিপ্লবের রূপরেখার প্রভূত পরিবর্তন হত। আর সে জন্যই ইংরেজ তাকে বন্দী করে প্রায় পাচ বছর আটকে রাখে। দু'বছর তিনি জেলের বাইরে বেঁচে থাকলেও জেলের অত্যাচারের জের টানতে হয়েছিল শেষ জীবন পর্যন্ত। ১৮৬২ সনের ২৪শে অক্টোবর স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী মাওলানা আলাউদ্দিন বাংলারই মাটিতে চিরনিদ্রিত হন। আজকের নিষ্ঠুর ইতিহাস যেন ভুলে গেছে সে বিপ্লবীর কথা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/48
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।