hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

চেপে রাখা ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

২৫
সম্রাট জাহাঙ্গীর
আকবরের মৃত্যুর পর ১৬০৫ খৃষ্টাব্দে জাহাঙ্গীর সিংহাসন লাভ করেন। তিনি চরিত্রে, চেহারায়, পোশাক-পরিচ্ছদে পুরোপুরি ইসলাম বিরোধী ছিলেন। মুজাদ্দিদ আলফেসানী হযরত আহমদ সাহেবকে তিনি কারাগারে বন্দী করেছিলেন। কারণ আকবরের মতের বিরদ্ধে অভিযান তিনিই সৃষ্টি করেছিলেন এবং আকবরের নুতন ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে প্রকারান্তরে তাঁকে পরাজিত করেছিলেন এ আলফেসানী সাহেবই।

দেখা যায় পৃথিবীর বেশির ভাগ নবী রাসূলগণ দরিদ্র হয়েও হাজার হাজার শিষ্যের নেতা আর যার হাতে ছিল সারা ভারতের চাবিকাঠি, যিনি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, সারা জীবনে তার মাত্র ১৮ জন শিষ্য-তাও তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই বিকল ধর্মের অচল অবস্থা। এর পিছনেও হাত ছিল শিরহিন্দের হযরত মাওলানা আহমদ মুজাদ্দিদ আলফেসানীর ধর্মীয় প্রচার অভিযানের। (১) জাহাঙ্গীরকে আশফজাহ পরামর্শ দিলেন, বাদশাহী কর্মচারী উজীর নাজীর যেভাবে মুজাদ্দিদ আহমদ সাহেবের শিষ্য হতে শুরু করেছেন, তাতে একদিন রাজনৈতিক বিপ্লব আসতে পারে, তাই তার দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।

মদ্যপ জাহাঙ্গীর বড় বড় সেনাপতি ও রাজকর্মীদের তার পরামর্শে দূরে দূরে পাঠিয়ে দিলেন। তারপর মুজাদ্দিদ আহমদ সাহেবকে রাজ দরবারে আসতে সংবাদ পাঠালেন। তিনি জানতেন জাহাঙ্গীরের দরবারে প্রত্যেককে সিজদা বা প্রণিপাত করতে হত, আর করতে হত সমুখে নত হয়ে, দুহাত কপালে ঠেকিয়ে কুর্নিশ। জেনে শুনেই আহমদ সাহেব জাহাঙ্গীরের দরবারে ঘৃণাভরে সদর্পে মাথা উঁচু করে গিয়ে দাঁড়ালেন।

জাহাঙ্গীর জানতে চাইলেন তিনি দরবারের আইন অনুসারে সিজদা বা কুর্নিশ করলেন না কেন? আর অন্ততঃ আসসালামু আলাইকুমও তো করতে পারতেন? কপর্দকহীন হযরত আহমদ সাহেব বলেন, 'আমি জাহাঙ্গীরের দরবারের ভূত নই, আমি আল্লাহর দরবারের ভৃত্য। তাই তাঁর আইন আমার কাছে আইন, বাকি সব কিছু আমার কাছে বেআইন। আর তোমাকে সালাম দিই নাই এ জন্য যে তুমি অহঙ্কারী, হয়ত উত্তর দেবে না। তখন আমার সালাম দেয়ার অর্থ হবে প্রিয় নবীর একটা সুন্নাতকে পদদলিত করান।'

জাহাঙ্গীর রেগে তাকে বন্দী করে গোয়ালিয়র দুর্গের কারাগারে পাঠান। এ সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই জাহাঙ্গীরের উপর লোক আরও অসন্তুষ্ট হয়ে উঠল। মহব্বত খান কাবুলে জাহাঙ্গীরের কর্মী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনিও মুজাদ্দিদ সাহেবের শিষ্য। তাই ক্রোধে আগুন হয়ে তিনি বিদ্রোহ করলেন। শুধু তাই নয়, নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেন এবং জাহাঙ্গীরকে বন্দী করলেন। এদিকে মুজাদ্দিদ সাহেব মহব্বত খানকে জাহাঙ্গীরের সাথে ভাল ব্যবহার করতে জানালেন এবং তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বললেন।

মহব্বত খান তাই করলেন। (২) জাহাঙ্গীর এবার মুজাদ্দিদ সাহেবকে সসম্মানে দরবারে আমন্ত্রণ জানালেন, কিন্তু মুজাদ্দিদ সাহেব জানালেন তার কতকগুলো শর্ত পালন করলে তবে জাহাঙ্গীরের সাথে তিনি সাক্ষাত করতে পারেন, নচেত দেখা হবার কোন উপায় নেই।(ক) দরবার হতে ইসলাম বিরোধী সিজদা ও কুর্নিশ প্রথা উচ্ছেদ করতে হবে, (খ) ধ্বংস করে দেয়া মসজিদগুলো পুননির্মাণ করতে হবে, (গ) যুদ্ধকরের পুনপ্রবর্তন করতে হবে, (ঘ) জাহাঙ্গীরকে নিজে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী চলতে হবে এবং রাজ্যও ইসলামের আইনমত চলবে এবং (ঙ) বিচার আগের মতই কাজী বা মুফতি, মৌলবীরা করবেন (১ ও ২ নং তথ্য Mujaddid's Conception of Tawhid গ্রন্থের ১৬ ১৭ পৃষ্ঠা হতে নেয়া)

জাহাঙ্গীর সমস্ত শর্ত মেনে নিলেন, নিজে মুজাদ্দিদ সাহেবের শিষ্য হলেন এবং মদপান পরিত্যাগ করলেন। পাঁচবার নামায, কুরআন পাঠ প্রভৃতি শুরু করলেন। মুজাদ্দিদ সাহেবকে প্রধান পরামর্শদাতা করে মদ্যপ চরিত্রহীন ধর্মত্যাগী জাহাঙ্গীর ইসলামের স্নিগ্ধ আলোকে নব শিশুর মত নির্মল জীবন আরম্ভ করলেন। মাত্র পঞ্চাশ বছর তাঁর এ নূতন জীবন স্থায়িত্ব লাভ করেছিল। তিনি নূরজাহানকে পূর্বের মত প্রকাশ্য ভূমিকা পালন করতে নিষেধ করলেন। একটি কূপের মত গর্ত করে সেটা সোনা রূপার টাকা দিয়ে ভর্তি করলেন। তা থেকে জাহাঙ্গীর দীন, দুঃস্থ, অনাথ, বিধবা হিন্দু মুসলমান প্রজাদের দান করতেন।

একদিন যে জাহাঙ্গীর ছিলেন নূর জাহানের হাতের পুতুল, প্রজাদের প্রত্যক্ষ সাক্ষাতের কোন অবকাশ ছিলনা, আজ তিনি মুজাদ্দিদ সাহেবের পরামর্শে দরবারের বাইরের ফটকে একটি শিকল রাখলেন, যেটি একবারে জাহাঙ্গীরের শয়নকক্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, আর সাথে একটা ঘণ্টা বাঁধা ছিল। যে কোন অত্যাচারিত, উপাবাসী, অবহেলিত বা রাজকর্মচারিদের দ্বারা যারা কাজ সমাধা হয়নি এমন মুসলমান-অমুসলমান প্রজা সে শিকল টানলেই বাদশাহ জাহাঙ্গীর তাকে সাথে সাথে কক্ষে ডাকতেন এবং তার সন্তোষজনক সমাধা করে তবে ক্ষান্ত হতেন।

একদিন রূপ লাবণ্যের জীবন্ত প্রতীক নূর জাহান আয়নার সামনে তার রূপচর্চা করছিলেন। এমন সময় এক বিকৃত মস্তিষ্ক হিন্দু প্রজা কেমনভাবে একেবারে নূরজাহানের কক্ষে উপস্থিত হয়ে পড়েন। নূরজাহান সাথে সাথে তাকে গুলি করলে হিন্দু প্রজা মারা যান। মৃতের আত্মীয় শিল টানলেন এবং জাহাঙ্গীরের কাছে বিচারপ্রার্থী হলেন নূরজাহানের বিরুদ্ধে। জাহাঙ্গীর তাঁর প্রিয়তমা বিশ্ব সুন্দরী নূরজাহানের বিচার করে রায় দিলেন-প্রাণদণ্ড। সকলেই অবাক হলেন। সেদিনের জাহাঙ্গীর আর আজকের জাহাঙ্গীরের মধ্যে অনেক দূরত্ব, অনেক ব্যবধান; আগে ছিলেন ধর্মমুক্ত রাজা আর এখন হচ্ছেন ধর্মযুক্ত বাদশাহ।

সারা ভারতে সব থেকে যিনি বেশি অবাক হয়েছিলেন তিনি তার সহধর্মিণী নূরজাহান। নূরজাহান কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'হে স্বামী, পুরানা দিনের কোন কথা কি আপনার মনে নেই! আমার প্রেম, ভালবাসা, মায়া, সেবা, সমস্ত কিছু একটু মনের তুলাদণ্ডে কি ওজন করলে হত না?' জাহাঙ্গীর চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে বলেন, প্রিয়া নূরজাহান আমি আমার মনের তুলাদণ্ডে তোমার সারাজীবনের সবকিছু এক পাল্লায় চাপিয়েছি, আর অন্য পাল্লায় চাপিয়েছি হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) আইনকে; বারে বারেই আমার কাছে ভারী হয়েছে ইসলামের আইনের নির্দেশ।

ইসলামের আইনে তুমি তাকে হত্যা করতে পারতে কারোর প্রাণনাশের বা ব্যাভিচারের অপরাধে, কিন্তু সে দোষ তো তার ছিল না। সে ছিল বিকৃত মস্তিষ্ক। অতএব আবার বলছি, চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত-তোমার প্রাণদণ্ড।' বিচারপ্রার্থী স্বপ্ন দর্শকের মত নাটকীয় ইসলামী বিচার ব্যবস্থা দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “হে বাদশাহ আমরা আর প্রাণদণ্ড দেখতে চাই না, নূরজাহানকে ভ্রামরা ক্ষমা করলাম। আমরা আজ বুঝলাম ইসলাম সত্যিই শান্তি ও সত্যের নিরপেক্ষ ধর্ম।' কান্নাপ্লুত নূরজাহান তাদেরকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে ও ক্ষমা ভিক্ষা করে তবে প্রাণ ফিরে পেলেন। (মইজুদ্দিনের লেখা আদর্শ জীবনের ১১২-১১৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।)

জাহাঙ্গীর একবার শিকার করতে গিয়ে পথ ভুলে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণের বাড়িতে ওঠেন। বিধবা ব্রাহ্মণী তাকে কিছু আহার করান, তারপর তার ছোট মেয়ে বাদশাহর হাতে একটি পত্র তুলে দেয়, যাতে লেখা ছিল। বাদশাহ দীর্ঘজীবী হন, আমার কন্যা রেখে আমি মরে গেলে আপনি প্রতিপালন করবেন। বাদশাহ সে মেয়েকে কোলে তুলে আদর করে তার মৃত পিতার

জন্য অশ্রু ফেললেন আর সেদিন থেকে এ বালিকা ও তার মায়ের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করলেন। পরে একজন ব্রাহ্মণ সুপাত্রের সাথে বিয়ে দিলেন। এ রূপকুমারী নামক ব্রাহ্মণ কন্যার। অনেক টাকা পয়সা দিলেন বাদশাহ আর নূরজাহান নিজের দেহ হতে অনেক গহনা খুলে তাকে পরিচয় দিয়ে বললেন রূপকুমারী, আমি তোমার মা। এইত তোমায় গহনা পরিয়ে আমার এত আনন্দ! এত তৃপ্তি!' (মইজুদ্দিনের লেখা পুস্তকের ১২৬-১২৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)

জাহাঙ্গীরের চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছিল মাওলানা আহমদ শিরহিন্দির প্রভাবে। প্রায় ছয় বছর সম্রাট তার পরামর্শে চলেছিলেন। যদি জাহাঙ্গীরের জীবনের গতি আহমদ সাহেব পরিবর্তন না করতেন তাহলে শাহজাহান, আওরঙ্গজেব হতে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ পর্যন্ত মুসলমান শাসকদের চরিত্রে কিছু মাত্র মুসলিম চিহ্ন থাকত বলে মনে হয় না। সুতরাং বলা যায় যে, মুজাদ্দিদ আহমদ সাহেবের প্রভাব সারা ভারতে মুসলমান ও ইসলাম টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট সহায়ক ছিল। (দ্রঃ মাওঃ আকরাম খাঁর মোঃ বঃ সাঃ ইতিহাসের ১৪৯ পৃষ্ঠা; তাছাড়া জাহাঙ্গীরের পূর্ণ তথ্য জানতে তুজুকে জাহাঙ্গীরী গ্রন্থকে আকবর গ্রন্থ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন