hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

চেপে রাখা ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

৩৫
নবাব সিরাজউদ্দৌলার চেপে রাখা ইতিহাসের তথ্য
ভারতের প্রাণকেন্দ্র বঙ্গদেশ, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব ছিলেন সিরাজুদ্দৌলা ১৭৫৭ খৃস্টাব্দে ইংরেজ ও তাদের দালালদের চক্রান্ত তাকে, অপর ভাষায় বাংলার স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা হয়। তার বীরত্ব ও মহত্ত্বকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ইতিহাসে বিকৃত করা হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করতে সমস্ত রক্তবিন্দু দিয়ে যিনি ভারতের মাটিতে রক্তরাঙা করালেন তাঁর ঐতিহাসিক স্বাস্ত্য রক্ষার জন্য সামান্যতম চেষ্টার পরিবর্তে বরং অসামান্য অপচেষ্টাই করা হয়েছে।

সম্রাটদের রাজ্যে বঙ্গদেশ একটা প্রদেশ বলে গণ্য ছিল। বাংলার প্রথম নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলি খাঁ পরে ১৭২৭ খৃষ্টাব্দে তার জামাতা সুজাউদ্দিন বাংলা বিহারের নবাব হন। পরবর্তীকালে ১৭৩৯ খৃষ্টাব্দে তাঁর পুত্র সরফরাজ খাঁ সিংহাসনে বসেন। তিনি যথেষ্ট উপযুক্ত ও শক্তিশালী ছিলেন। তার অধীনস্থ গভর্ণর আলিবর্দী খাঁ মারাঠা ও বর্গীদের লুণ্ঠন কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করার জন্য অনুমুতি প্রার্থনা করেন। তাতে সরফরাজ খা খুব একটা গুরুত্ব দেননি। এতে বীর আলিবর্দীর বীরত্ব প্রকাশে ও বঙ্গরক্ষার বাধা সৃষ্টি হয় দেখে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং সরফরাজকে পরাজিত করে নিজে নবাব হন।

নবাব হওয়ার পরে তিনি মারাঠি অত্যাচারকে বন্ধ করে জনসাধারণরে শুভাশীষ পেয়ে ধন্য হন। আলিবর্দ্দী খাঁয়ের কোন পুত্র সন্তান ছিলনা। তাই তার প্রাণপ্রিয় নাতি সিরাজউদ্দৌলাকেই সিংহাসনে বসিয়ে ছিলেন। সিরাজের পিতার নাম জয়নুদ্দিন আহমদ। তিনি ছিলেন বিহারের গভর্ণর। তার মায়ের নাম ছিল আমিনা। এ সিরাজউদ্দৌলার রাজত্বকাল ইতিহাসে এক গুরুত্বপুর্ণ অধ্যায়। আধুনিক ইতিহাসের মিথ্যা দুর্নামের আসরে তার ভূমিকা অতীব বেদনাদায়ক।

যাহোক সিরাজের সিংহাসন লাভের পরেই নবাবকে অযোগ্য মনে করে ইংরেজরা দুঃসাহসের সাথে কলকাতার ঘটি ফোর্ট উইলিয়ম দুর্গ তৈরি করতে শুরু করে। ইংরেজরা জানত সারা ভারতের মস্তিষ্ক বাংলা তাই কলকাতাতেই ঘাটি তৈরি পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করতে লাগল। সিরাজ সাথে সাথে সংবাদ পাঠালেন যে, দুর্গ তৈরি বন্ধ করা এবং তৈরি অংশ ভেঙ্গে ফেলা নবাবের আদেশ। ইংরেজরা নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করে দুর্গের কাজ অব্যাহত রাখে। কারণ নবাবের সাথে যুদ্ধের জন্য তাঁরা আগে থেকেই তৈরি ছিল। সিরাজ পূর্ণ সাহসিকতার সাথে বিদেশী ইংরেজকে আক্রমণ করেন এবং তাদের ভীষণভাবে পরাস্ত করেন। কলকাতা অধিকারের সংবাদ মাদ্রাজে পৌছালে বৃটিশ সেনাপতি ক্লাইভ সাথে সাথে সৈন্য সামন্ত নিয়ে কলকাতা পুনর্দখল করেন। ইংরেজরা বুঝতে পারল আর যুদ্ধে নামা যাবে না।

কারণ ইংরেজদের চক্রান্ত তারই বিশ্বাসভাজন হিন্দু ও মুসলমান বন্ধু-বান্ধব দেশশত্রু ইংরেজকে জয়ী করার জন্য সর্বস্ব পণ করে লেগেছে। ফলে বাধ্য হয়েই তাকে ১৭৫৬ খৃস্টাব্দে অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার ইতিহাস রেখে সন্ধি করতে হয়। এ সন্ধির নাম হয় ‘আলিনগরের সন্ধি'। সন্ধির শর্তানুযায়ী কলকাতা ইংরেজরা ফিরে পায় এব শুধু মাত্র ফোর্টউইলিয়ম দুর্গের মেরামত বা নির্মাণের অধিকার পায়। কিন্তু কিছুকালের মধ্যে ইংরেজরাই বিশ্বাসঘাতকের মত হঠাৎ বঙ্গের চন্দননগর দখল করল এবং সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার চেষ্টা করল।

এ ব্যাপারে ইংরেজরা যে বড় অস্ত্র হাতে পেয়েছিল তা হচ্ছে, বঙ্গের বিখ্যাত ধনী জগৎশেঠ, কলকাতার বড় ব্যবসায়ী উমিমচাঁদ বা আমীর চাঁদ এবং রাজারাজবল্লভ প্রভৃতি দেশের শত্রু ও শোষকবন্দ সিরাজ ও দেশের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সাথে যোগ দেন। জগৎশেঠের বাড়িতে গোপন সভা হয়। সে গোপন আলোচনায় স্ত্রীলোকের ছদ্মবেশে ইংরেজদের দুত মিঃ ওয়াটস্ সাহেবকে পালকীতে করে আনা হয়।

এ সভায় মিঃ ওয়াটস সকলকে লোভ লালসায় মুগ্ধ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করা হবে এবং তার ফলে বঙ্গ তথা সারা ভারতের মুসলমানদের উত্তেজিত হয়ে ওঠার রাস্তা বন্ধ করতে তারই আত্মীয় মীরজাফরকে সিংহাসনে বসান হবে। মিঃ ওয়াটস আরও জানালেন, সিরাজের সাথে লড়তে যে প্রস্তুতি ও বিপুল অর্থের প্রয়োজন তা বর্তমানে তাদের নেই। তখন জগৎশেঠ ঠেজীর কর্তব্য পালন করতে সদন্তে আশ্বাস দিয়েছিলেন, টাকা যা দিয়েছি আরও যত দরকার আমি আপনাদের দিয়ে যাব, কোন চিন্তা নেই। আপনারা প্রস্তুতি নিন।

মীরজাফরকে একটু বোঝাতে বেগ পেতে হল। তিনি প্রথমে বলেছিলেন, 'আমি নবাব আলিবর্দীর আত্মীয়, অতএব সিরাজুদ্দৌলাও আমার আত্মীয়; কি করে তা সম্ভব?” তখন উমিচাঁদ বুঝিয়েছিলেন “আমরা তো আর সিরাজকে মেরে ফেলছি না অথবা আমরা নিজেরাও নবাব হচ্ছি না, শুধু তাকে সিংহাসনচ্যুত করে আপনাকে বাসাতে চাইছি। কারণ আপনাকে শুধুমাত্র আমি নই, ইংরেজরা এবং মুসলমানদের অনেকেই আর এক কথায় অমুসলমানদের প্রায় প্রত্যেকেই গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখে।”

এবারে মীরজাফর আমীরচাঁদের (উর্মিচাঁদ) বিষ পান করলেন। উর্মি চাঁদের জয় হলে তিনিও পুরুস্কৃত হবেন। আর মীরজাফর হবেন বাংলার নবাব। এদিকে জগৎশেঠের শোষণের পথ হবে নিষ্কন্টক আর ইংরেজদের লাভ হিসেবে ভারত এসে যাবে তাদের মুঠোয়। পক্ষান্তরে সিরাজউদ্দৌলার লাভ হলে তা হত বাংলা তথা সমগ্র ভারতের লাভ।

যাহোক, ষড়যন্ত্রের জাল বোনা যখন শেষ, ভারতের স্বাধীনতার সূর্যকে পরাধীনতার গ্লানিতে সমাধিস্থ করার সমস্ত পরিকল্পনা যখন প্রস্তুত সে সময় ১৭৫৭ খৃস্টাব্দের ১৩ জুন ক্লাইভ মাত্র তিন হাজা দুইশত সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ যাত্রা করেন। একুশে জুন নবাবের অধীস্থ কাটোয়া ক্লাইভের দখলে আসে। ২২ শে জুন গঙ্গা পার হয়ে ক্লাইভ মধ্য রাত্রিতে নদীয়া জেলার সীমান্তে পলাশীর আম বাগানে পৌছান। নবাবের বহু গুণ বেশী সুদক্ষ সেনা আগে থেকেই তৈরি ছিল। ক্লাইভের তবুও ভয় নেই, কারণ তিনি জানেন এ যুদ্ধ নয়, পুতুল খেলা মাত্র। আগে হতেই পরিকল্পনা পাকাপাকি।আমীর চাঁদ, বায়দুর্লভ, জগৎশেঠ প্রভৃতির সাজান সেনাপতি আজ ভিতরে ভিতরে ক্লাইভের পক্ষে, সুতরাং বিজয় হয়েই আছে।

ক্লাইভের সৈন্য যেখানে মাত্র তিন হাজার দুই শত সেখানে সিরাজের সৈন্য পঞ্চাশ হাজার। কারো কারো মতে আরো বেশি। কিন্তু মীরজাফর, রায়দুর্লভ ও অন্যান্য সেনাপতি পুতুলের মত দাড়িয়ে রইলেন যুদ্ধক্ষেত্রে আর ইংরেজদের আক্রমণ ও গুলির আঘাতে নবাবের সৈন্য আত্মহত্যার মত মরতে শুরু করল। এ অবস্থায় সেনাপতির বিনা অনুমতিতেই সিরাজের জন্য তথা দেশ ও দশের জন্য মীরমর্দান বীর বিক্রমে যুদ্ধে ব্যপৃত হলেন আর পরক্ষণেই বিপক্ষের নির্মম গুলিতে বীরের মত শহীদ হলেন।

নবাব সিরাজ এ সংবাদে দিশেহারা হয়ে পড়লেন। এ সময়ে যুদ্ধের গতি নবাবের অনুকূলে যাচ্ছিল। কারণ মীরমর্দানের সাথে মোহনলাল ও সিনফ্রে তখন ইংরেজদের কায়দা করে ফেলেছিলেন। এমন শুভ মুহূর্তে নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফর যুদ্ধ বন্ধ করতে আদেশ দেন। রায়দুর্লভের অনুরোধে সিরাজও তা অনুমোদন করলেন। ঈদকে ক্লাভই এ প্রত্যাশিত মুহূর্তটার প্রতীক্ষাতেই ছিলেন। নবাবের সৈন্যদের ওপর গোলাবর্ষণ চলতে লাগল। অবশেষে নিরুপায় হয়ে নবাবের সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। নবাবও রাজমহলের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে গিয়ে পরিকল্পনানুযায়ী ধরা পড়লেন এবং তাকে বন্দী হতে হল। শেষ পর্যন্ত তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।

দেশের বিশ্বাসঘাতক সন্তানেরা এটা বোঝেনি যে, এ পরাজয় সিরাজের নয়, শুধু বাংলার নয়-সারা ভারতের। আর এ জয় ইংরেজ ও ইংল্যাণ্ডের। কিন্তু সিরাজ পরাজিত ও নিহত হলেন কেন? তার অযোগ্যতাই কি পরাজয়ের কারণ? এর উত্তরে বলা যেতে পারে, পলাশীর যুদ্ধ কোন যুদ্ধই ছিলনা। এটা ছিল যুদ্ধযুদ্ধ খেলা মাত্র। আসলে যাদের তিনি বিশ্বাস করতেন, সে উমিচাঁদ, সেনাপতি রায়দুর্রভ প্রধান সেনাপতি মীরজাফর, দেওয়ান রামচাঁদ, মুন্সী নবকৃষ্ণ আর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ ধনী জগৎশেঠ এঁরাই ছিলেন সিরাজের প্রতিদ্বন্দী। প্রকাশ্য শত্রুর দ্বারা যত ক্ষতি হয়, বন্ধু শত্রু হলে আরও

মারাত্মক। পলাশীর যুদ্ধে এ সত্যই দারুণভাবে প্রমাণিত। তাই নিরপেক্ষ বিখ্যাত লেখক শ্রীনিখিলনাথ রায় লিখেছেন, “অষ্টাদশ শতাব্দীর সে ভয়াবহ বিপ্লবে প্লাবিত হইয়া হতভাগ্য সিরাজ সামান্য তৃণের ন্যায় ভাসিয়া গিয়াছিল এবং মীরজাফর ও মীরকাশিম উক্ষিপ্ত ও অধঃক্ষিপ্ত কেহ বা অনন্ত দ্রিায় কেহ কেহ বা ফকিরী অবলম্বনে নিষ্কৃতি লাভ করেন। জগৎশেষ্ঠগণের ক্রোধ ঝটিকা সেই তুফানের সৃজনের মূল। দুঃখের বিষয় সেই ভীষণ তুফানে অবশেষে তাহাদিগকেও অনন্তগর্ভে আশ্রয় লইতে হইয়াছিল। যে বৃটিশ রাজ রাজেশ্বরী শান্তিধারায় আসমুদ্র হিমাচল স্নিগ্ধ হইতেছে জগৎশেষ্ঠগণের সাহায্যই তাহার প্রতিষ্ঠাতা।”

একজন ইংরেজ লিখিয়াছেন যে, “হিন্দু মহাজনের অর্থ আর ইংরেজ সেনাপতির তরবারি বাংলার মুসলমান রাজত্বের বিপর্যয়। যে বৃটিশ রাজলক্ষ্মীর কিরীট প্রভায় সমস্ত ভারত বর্ষ আলোকিত হইতেছে, মহাপ্রাণ জগৎশেষ্ঠগণের অর্থবৃষ্টিতে ও প্রাণপাতে তাহার অভিষেক ক্রিয়া সম্পদিত হয়।” (ঐতিহাসিক চিত্র, ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা দ্রষ্টব্য)

শ্রীবিনয় ঘোষও তার ভারতজনের ইতিহাসের ৫১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “আজকের যে কোন বালকও বুঝিতে পারে যে পলাশীর যুদ্ধ শুধু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মত অভিনয় ছাড়া আর কিছু নহে?।" ইংরেজ ঐতিহাসিক c. Malleson ও তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, "Plassey, then, though a decisire can never be considered a grat battle. "[Decisive Battles of India, p 73]

তাহলে ভারতের মানুষের এতবড় সর্বনাশ সাধন করার উদ্দেশ্য কি? এর উত্তরে অনেকে অনেক কথা বলেন। তবে একদল বিচক্ষণ পণ্ডিতের মতে সাম্প্রদায়িকতাই তার প্রধান কারণ। মুর্শিদাবাদের কথা বলতেই মনে পড়ে যায় মুসলমান মুদর্শিদকুলে তার নাম। কিন্তু তিনি মুসলমান ছিলেন বলেই তার অপরাধ ছিলনা, বরং তার বড় অপরাধ ছিল তিনি বাহ্মণের সন্তান হয়েও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন (এসিয়াটিক সোসাইটির সংরক্ষিত অক্ষয়কুমার মৈত্র সম্পদিত ঐতিহাসিক চিত্র দ্রষ্টব্য)। পৃথিবীর ইতিহাস-সমালোচনা করে জানা যায় ইংরেজরা মুসলমান শক্তির সাথে লড়াইয়ে বার বার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরাজিত হয়েছে। তার ফলস্বরূপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে সারা বিশ্বে মুসলমান রাষ্ট্রের প্রচুর্য। ক্রুসেডের যুদ্ধগুলোতে মুসলমানদের বীরত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়। ভারতে ব্যবসাদার ইংরেজ রাজা হয়ে বসতে পারত না, যদি তাদের সাথে ভারতের বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা না থাকত।

ভারতের যোধপুরের একটা দরিদ্র পরিবারের হীরানন্দ নামে এক ব্যক্তি বঙ্গদেশেরই এক গ্রামে কিছু গুপ্তধন পেয়ে উন্নতির শিখরে উঠতে থাকেন। স্বভাবতই তার প্রতি অনেকেই নজর দেন বা আকৃষ্ট হন। সে বংশেরই মানিকর্চাদের সাথে মুর্শিদকুলী খাব ভালবাসা হয়। মানিকচাঁদও ভাগ্যক্রমে কাজ গুছিয়ে বেশ উচু ধাপে উঠতে থাকেন। ১৭১৫ খৃস্টাব্দে বাদশাহ ফররুখশাহের কাছে সুপারিশ করে মুর্শিদকুলী খাঁ তাকে শেঠ উপাধি দান করেন। হিন্দু মুসলমানের ভালবাসার এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত এই ‘শেঠ' উপাধি দান। (রিয়াজুল সালাতিন; Stewart; History of Bengal 9841)

শেঠ বংশের ফতেহ চাঁদই প্রথমে জগৎশেঠ উপাধিপ্রাপ্ত হন। রিরায়জুস সালাতিনের ২৭৪ পাতায় পাওয়া যায়, মুহাম্মদ শাহ এ জগৎশেঠ উপাধিপ্রাপ্ত হন। রিয়াজুস সালাতিনের ২৭৪ পাতায় পাওয়া যায়, মুহাম্মদ শাহ এ জগৎশেঠ উপাধি দিয়েছিলেন; তার সাথে মোতির মালা এবং কয়েকটি হাতি। সম্রাট মুহাম্মদ শাহকে শেঠজীরা তোষণ ও সেবায় এত মুগ্ধ

করেন যে মুর্শিদকলি খাঁর উপর একবার বিরক্ত হয়ে তিনি ফতেহ চাঁদকেই নবাব করতে চেয়েছিলেন। মুর্শিদকুলি খাঁর মৃত্যুর সময়ে তার টাকা শেঠদের বাড়িতে যা জমা রাখা ছিল তার পরিমাণ সে বাজারের সাত কোটি টাকা; যা শেঠজীরা ফেরত দেননি। (নিখিলনাথ রায়ঃ মুর্শিদাবাদ কাহিনী, ৫৬ পৃষ্ঠা)

এ অর্থই হয়েছিল যত অনর্থের মূল। সারা ভারতে বহু স্থানে শেঠদের গদি ছিল। ইংরেজরা প্রথমে শেঠদের হাত করে এবং শেঠরা যত টাকা প্রয়োজন দিতে প্রতিশ্রুত হন। তারপর জগৎশেঠের বাড়িতে গোপন বৈঠক বলে সে সভাতে সাহেবদের সাথে সারা ভারতকে তথা সিরাজকে ধ্বংস করতে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হচ্ছেন জগৎশেঠ, রাজা মহেন্দ্র রায় (দুর্লভ রায়), রাজা রামনারায়ণ, রাজা রাজবল্লভ, কৃষ্ণদাস মীরজাফর প্রভৃতি।

যবনকে নবাব না করে কোন হিন্দুকে নবাব করার জন্য একজন প্রস্তাব দেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মুসলমান মীরজাফরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে লজ্জিত ও থতমত হয়ে বলেন, মীরজাফরকেই নবাব করে আমরা সিরাজকে সরাতে চাই।' উদ্দেশ্য, তাতে মুসলমানগণ ক্ষেপে উঠবে না; মুসলমান নবাবের পরিবর্তে মুসলমান নবাব মাত্র। দীর্ঘ কথোপকথনের পর রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কথাই যুক্তিসঙ্গত মনে করে তার এ মত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। (এরও পূর্ণ তথ্যঃ মুর্শিদাবাদ কাহিনী ও পুরানা কলকাতার কথাচিত্রের ৩৫৭-৩৫৮ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য)

তাই বলা যায়, ভারতে ইংরেজ সাম্রাজ্য শুধু তাদের গোলাগুলি আর মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং শেঠজীরেদ বিশ্বাসঘাতকতাই এর পশ্চাতে বিশেষ সহায়ক ছিল। শেঠজীদের ইংরেজদের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা ও গোলামি মীরজাফরের তুলনায় কোন অংশে কম ছিলনা বরং শেঠজীদের বিপুল অর্থ-সাহায্যেই ইংরেজদের এমন দুসাহসিক অভিযানের গোড়াপত্তন সম্ভব হয়েছিল। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণও এ বিরাট সত্যকে একেবারে হজম করতে পারেননি, তাই বলেছিলেন- "The rupees of the Hindu banker, equally with the sword of the English Colonel contributed to the over through of the Mahamedan power in Bengal." বোঝা, যাচ্ছে, বালায় মুসলমান শক্তিকে ধ্বংস করতে, ভারতকে পরাধীন করতে বৃটিশ সেনাপতির তরবারির সাথে হিন্দু ধনপতিদের অর্থভাণ্ডারও সমান ভাবে সহযোগিতা করেছিল।

শেঠজীরা শুধু ইংরেজদের হাতেই অর্থ ঢালেননি, সিরাজের সৈন্যদের পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ সরবরাহ করে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। আরও দুঃখের কথা, সিরাজকে হত্যা করার প্রস্তাব ইংরেজ সর্দারকে এ জগৎশেঠই দিয়েছিলেন।

মুর্শিদাবাদ কাহিনী’র লেখক নিখিলনাথ বাবু তাই খুব দরদ দিয়ে লিখেছেন-“হতভাগ্য সিরাজ রাজ্যহারা সর্বহারা হইয়া অবশেষে প্রাণ ভিক্ষার জন্য প্রত্যকের পদতলে বিলুণ্ঠিত হইয়াছিল। তাহারা প্রাণ দানের পরিবর্তে যদি প্রণানাশের কেহ সম্মতি দিয়া থাকে তাহা হইলে তাহারা ঘৃণিত ও নিষ্ঠর প্রকৃতির লোক এবং তাহারা যে সর্বদা নিন্দনীয় এ কথা মুক্ত কণ্ঠে বলা যাইতে পারে।”

জগৎশেঠের মৃত্যু হয়েছিল উচু পর্বত হতে নীচে নিক্ষিপ্ত হয়ে-পৃথিবীর প্রখ্যাত ধনী বংশ দরিদ্রতর হতে সৃষ্ট হয়ে দরিদ্রতম গোষ্ঠিতে বিভক্ত হয়ে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাসকে সাহিত্য, নাটক গ্রামোফোন রেকর্ড ও থিয়েটার চলচিত্র প্রভৃতিতে যে ভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছে তা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। নবাব নাকি চরিত্রহীন ও মদপায়ী ছিলেন তিনি নিষ্ঠর ছিলেন-এ অপবাদ নাকি

প্রমাণিত হয় তার অন্ধকূপ হত্যার দ্বারা। কিছু কম দুশো ইংরেজকে ছোট একটি অন্ধকার কক্ষে খাদ্য, পানীয় ও বাতাসের অভাব ঘটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল বলে নিরীহ সিরাজের নামে কলঙ্ক দেয়া হয়েছে। অবশ্য সিরাজউদ্দৌলা তাঁর কিশের বয়সে মদ পানের কলঙ্কে কলঙ্কিত হয়েছিলেন। কিন্তু আলিবর্দী প্রাণপ্রিয় সিরাজকে ডেকে মদ আর কোনও দিন স্পর্শ না করার জন্য কোরআন ছুঁয়ে শপথ করতে বললে সিরাজ বলেছিলেন, নানাজী আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। সিরাজ জীবনে কোন দিন আর মদ স্পর্শ করবে না। যদি করে তাহলে সে আপনার নাতি নামের কলঙ্ক।” বলাবাহুল্য, সিরাজ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন সারা জীবন। এছাড়াও নারী লোলুপতার মিথ্যা অপবাদ ও তার উপর যেভাবে যে পরিমাণে আরোপ করা হয় তাও ইংরেজ ও তাদের দালালদের কৌশল মাত্র।

শ্রীসুধীর কুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “সিরাজ অতিরিক্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি প্রায়ই নদীতে বন্যার সময় নৌকা আরোহীদিগকে উল্টাইয়া দিয়া বা ডুবাইয়া দিয়া এক সাথে এক দুই শত যুবক, যুবতী, স্ত্রী, বৃদ্ধ, শিশু সাঁতার না জানিয়া জলে নিমজ্জিত হওয়ায় নিষ্ঠুর দৃশ্যটি উপভোগ করিয়া আনন্দ লাভ করিতেন।”

এ প্রমাণহীন মিথ্যা কাহিনী পড়ে হয়ত অনেকে বলতে পারেন সুধীর বাবু তেমন উল্লেখ্য লোকের মধ্যে গণ্য নন, সুতরাং তার উক্তিতে গুরুত্ব না দেয়াই ভাল। কিন্তু বিখ্যাত কবি, উচ্চ ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালী বাবু নবীনচন্দ্র সেন যদি এ রকম বা তার চেয়েও মারাত্মক কিছু লিখে থাকেন তবে সুধীর বাবুরই বা লেখা দোষের হবে কেন? নবীনচন্দ্র সেন শুধু নৌকায় নবাবের নরহত্যার কথা সমর্থনেই ক্ষান্ত হননি, বরং গর্ভিনীর বক্ষ বিদারণ' অর্থাৎ সিরাজ নাকি জীবন্ত গর্ভবতী নারীর পেট কেটে সন্তান দেখতেন-এরকম কিংবন্তীর উল্লেখ করে তাতে নতুনত্বের সৃষ্টি করেছেন।

এমনি আরও কত আজগুবি আর অবান্তর উদ্ভট ঘটনার অবতারণা করে সিরাজের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার নীচতম প্রচেষ্টা চালান হয়েছে। সিরাজের অন্ধকূপ হত্যার ইতিহাসটিও এরই প্রতিচ্ছবি। যার সত্যতার অমর সাক্ষী নাকি কলকাতার ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত কুখ্যাত মনুমেন্ট।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন