hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

চেপে রাখা ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

৪১
নন্দকুমার, কান্তবাবু, রামাদ ও নরকৃষ্ণ গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ
নন্দকুমারঃ “যে সমস্ত বিশ্বাসঘাতক অর্থের বিনিময়ে নিজের দেশকে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দিয়েছিল-তরুণ নবাবের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তার সর্বনাশ করেছিল, তাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ শয়তান নন্দকুমার। তিনি হুগলীর ফৌজদার থাকার সময় ঘুষ খেয়ে ইংরেজদের শুধু ছেড়ে দেননি উপরন্তু বিনা বাধায় কলিকাতা পুনর্দখল করতে দেন। সিরাজুদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অন্যতম নায়ক ছিলেন এ শয়তানের অনুচর। পরে অর্থকরী স্বার্থ নিয়ে গণ্ডগোল হলে হেষ্টিংসের সাথে তার বিরোধ শুরু হয়। হেস্টিংসের প্ররোচনায় কান্তবাবু ও তাঁর অনুচরবৃন্দ এঁর বিরুদ্ধে দলিল জালের মামলা আনেন এবং এর ফাসি হয়। অনেকেরই নন্দুকুমারকে ভাল লোক বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করলেও এত বড় শয়তান খুব কম ছিল।

প্রথম পর্যায়ে ইনি ক্লাইভ মীরজাফর এর মধ্যে দৌত্যগিরি থেকে শুরু করে অর্থোপার্জনের জন্য হেন পাপ কাজ নেই যা তিনি করেননি। পলাশীর যুদ্ধে পর বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সহায়তার জন্যে এ কুখ্যাত মানুষটি ক্লাইভের দেওয়ানী বেনিয়ান পদ লাভ করেন। এবং.....বালা বিহার উড়িষ্যা সুবার সমস্ত অংশে চরম শোষণ ও অত্যাচারের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। পরে মীরজাফরের দেওয়ান হন এবং যে কোন উপায়ে অর্থোপার্জনের জন্য সব ধরনের পাপ করতেন।

স্বাভাবিক ভাবে ক্লাইভ মরে যাবার পর নন্দকুমারের সাথে গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিংস ও তার মুৎসুদ্দীন বেনিয়ান-কান্তবাবুর সঙ্গে স্বার্থের সংঘর্ষ বাধে এবং পরিনামে নন্দকুমারকে ফাসি কাঠে ঝুলাতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, নন্দকুমারের ফাসির পর সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইলাইজা ইশেকে তাঁর ন্যায়বিচারের জন্য রাজা নবকৃষ্ণ, কান্তবাবুর বা কান্তমুদি প্রমুখরা অভিনন্দন পত্র প্রদান করেছিলেন।" (পৃষ্ঠা পরিশিষ্ট কু' অধ্যায়ের ৪-৫-রতন লাহিড়ী এ তথ্য নিয়েছেনStephen এর Nundcomar Vol.1, পৃষ্ঠা ২২৯ থেকে)

অবশ্য মহারাজা নন্দকুমার দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব যে, অভিযোগের তার ফাসি দেওয়া হল সেই অভিযোগটি মিথ্যা এবং জাল জালিয়াতির ব্যাপার। সুতরাং ঐ মামলায় তার ফাঁসি হওয়ার জন্য বিচারক জজকে অভিনন্দন-এ এক অদ্ভুত ধরণের বিশ্বাসঘাতকতা। নন্দকুমারের ফাঁসির আদেশ শুনেই তার প্রাণদণ্ডের পুর্বেই ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর অনুগ্রহভাজন দালালরা এই কুকর্মের সাক্ষ্য রেখে গেছেন। যেমন প্রতিভারঞ্জন বাবুও লিখেছেন, তখন প্রাণদণ্ডের আগেই কোম্পানীর অনুগৃহীত নবকৃষ্ণু, হজুমল, রামলোচন প্রমুখ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি ইলাইজা ইম্পের কাছে চিঠি লিখে ইংরাজের বিচারশক্তির তারিফ করে অভিনন্দন পাঠায়।" (মুর্শিদাবাদের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ৮২)

যে অত্যাচারী বেইমান হেষ্টিংসের জালিয়াতিতে নন্দকুমারের ফাসি হল এবং সারা ভারত বর্ষের মানুষ কত অত্যাচারিত হল সেই হেষ্টিংস যখন তার দেশ ইংল্যান্ডের নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আসামী হলেন তখন যাতে তার শাস্তি না হয়ে মুক্তি হয়, তার জন্য এখান থেকে হিন্দু রাজা মহারাজা সুপরিশ করলেন। সুপারিশনামায় হেষ্টিংসের মিথ্যা প্রশংসা মহানুভবতা ও উদারতার কথাই ছিল মুল বিষয়। তাই প্রতিভা বাবুও লিখেছেন, “এই প্রশংসাপত্রে স্বাক্ষর করেন অন্তঃপুরবাসিনী মহিলা থেকে শুরু করে জমিদার রাজা মহারাজা এমনকি কাশী নবদ্বীপের একাধিক পণ্ডিত। বিষ্ময়কর হলেও সত্য। স্বাক্ষরকারীর মধ্যে দেখা যায় নন্দকুমারের দৌহিত্র রাজা মহানন্দ রামকৃষ্ণ এবং মহারাণী ভবানীর হস্তাক্ষর। ” (পৃষ্ঠা ৮২)

কান্তবাবুঃ রতন লাহিড়ী লিখেছেন “ভারত বর্ষের সত্যিকারের ইতিহাসে শয়তানদের পার্শ্বচর বলে বর্ণিত হবে যারা তাদের অন্যতম মুর্শিদাবাদের কাশিবাজারের কান্তবাবু বা কান্তমদি বা কৃষ্ণকান্ত নন্দী। ইনি প্রথম জীবনে ছিলেন কাশিবাজারের রেশম কুঠির মুহুরী।... কাশিমবাজারের কুঠির কাছে এঁদের মুদির দোকান ছিল। ইনি, যখন রেশম কুঠির মুহুরী, ওয়ারেন হেষ্টিংস তখন ছিলেন একজন নিম্নতন কর্মচারী।

স্বাভাবিক ভাবে এই দুই শয়তানের অনুচরের মধ্যে ভাবসাব হয়। সিরাজুদ্দৌলার কাশিবাজারের কুঠি দখলের সময় কান্তবাবু আশ্রয় দিয়ে হেষ্টিংসের প্রাণ ও মান রক্ষা করেছিলেন, এর প্রত্যুপকারে হেষ্টিংস কান্তবাবুকে নিজের মুৎসুদ্দীন নিয়োগ করেন এবং সর্বত্র শোষনের অবাধ অধিকার দান করেন এবং কোন উপায়ে যে কোন সম্পত্তি কান্তবাবু অধিগ্রহণ করতেন। এমনকি সারা ভারতে সর্বত্র যেখানে ওয়ারেন হেষ্টিংসের শাসন ও শোষণ চলত সেখানেই কান্তবাবুর শঠতা ও শয়তানি ছিল। রঙ্গপুরের বাহারবন্দ পরগণার জমিদার বন্দোবস্ত পেলেও জনগণ তাকে কর দিতে স্বীকৃত হয় না।

এজন্য তৎকালীন ম্যাজিষ্ট্রেট গুড়লাক এবং মানুষরূপী রাক্ষস বা দৈত্য বা ইবলিসের সহচর কান্তবাবু এখানে প্রজাদের উপর চরম অত্যাচার করেন। এ সবের মধ্যে প্রকাশ্যে সন্তানের সামনে বহু জন দিয়া তার মাকে ধর্ষণ, অত্যাচার উৎপীড়ন, স্তন কেটে দেয়া আরও অন্যান্য অত্যন্ত পাশবিক অত্যাচার, ঘর জ্বলান, পিটিয়ে মারা, আগুন ছেকা দেয়া অত্যন্ত সাধারণ ধরনের অত্যাচার ছিল। এ ব্যাপারে কান্তবাবুকে সাহায্য করেছিলেন স্বয়ং ওয়ারেন হেষ্টিংস। ১৮৭৮ সনের Calcutta Review এর Warren Hastings in Lower Bengal (দক্ষিণবঙ্গে ওয়ারেন হেষ্টিংস) দেখলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে।

এছাড়াও বহু জমিদারী লবণ মহলের ইজারা পেয়েছিলেন কান্তবাবু। শুধু তাই নয়, অযোধ্যার বেগমদের উপর অত্যাচার করে হেষ্টিংসের জন্য অর্থ আদায় করেছিলেন এই কান্তবাবু বা কাত্যাদি। হেষ্টিংস মুর্শিদাবাদের মণি বেগমের যত উৎকোচ বারংবার গ্রহণ করেছিলেন তার এক বিশেষ অংশ নিয়েছিল এ শয়তান। বেনারসের রাজা চৈতসিংহ ও তার রাণীদের উপর সর্ব রকম অত্যাচার ও অর্থ আদায়ের মূল পাণ্ডা ছিলেন এই কান্তমুদি। যখন বারাণসীর জনগণ বিক্ষোভ করেছিল তখন হেষ্টিংস চুনার দুর্গে পলায়ন করেছিলেন সঙ্গে এই ঘৃণ্য কান্তবাবু।পরবর্তীকালে ইংরেজ সৈন্য ব্যাপক লুণ্ঠন করলে এই লুণ্ঠনের মোটা ভাগ পেযেছিলেন কান্তবাবু। কাশী রাজভবনের পাথরের থাম, জানালা প্রভৃতি খুলে নিয়ে এসেছিলেন কান্তবাবু। বহু দুষ্কর্মের এই পাণ্ডাটি ১২৫০ বঙ্গাব্দে নরক বা দোজখ যাত্রা করে। এই শয়তানই কাশিমবাজার জমিদার বাড়ির স্রষ্টা।” (পৃষ্ঠা ১-২)

প্রতিভারঞ্জনবাবু তার মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে লিখেছেন, “শোষণ করেছে ইংরেজ ঠিকই, কিন্তু সেই শোষণে সাহায্য করেছে এ দেশের কিছু লোক। কোম্পানীর অনুগ্রহে এরা সামান্য অবস্থা থেকে কয়েক বছরের মধ্যেই অর্জন করেছে বিশাল সম্পত্তি, সেই সঙ্গে রাজা মহারাজা উপাধি। কাশিমবাজার কুঠিতে আট টাকা বেতনের কর্মচারী ছিল কান্তুমুদি। তার ব্যক্তিগত সম্পত্তির মূল্য ছিল মাত্র দেড় হাজার টাকা। গভর্ণর হেষ্টিংস সাহেবের অনুগ্রহে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বিশাল সম্পত্তির ও অর্থের মালিক হয়ে কান্তমুদি হল কান্তবাবু।

রামচাঁদ ও নবকৃষ্ণঃ প্রতিভারঞ্জন বাবু ছিলেন পলাশীর যুদ্ধে সময় রামাদ ছিল ত্রিশ টাকা বেতনের কর্মচারী। দশ বছর পর মৃত্যুকালে রেখে যায় নগদ সাত লাখ বিশ হাজার পাউণ্ড, সোনা ও রুপা ভর্তি চারশটি পাত্র, এক লাখ আশি হাজার পাউণ্ড দামের ভূ-সম্পত্তি এবং দু' লাখ পাউণ্ড দামের মণি মুক্তা।” (মুর্শিদাবাদের ইতিহাস, পৃঃ ৭৯)

পুর্ণেন্দু পত্রীও তার পুস্তকে রামাদের অল্প মাইনে পাওয়ার কথা লিখেছেন। আরও তথ্য দিয়ে বলেছেন, বামাদ নগদ ৭২ লাখ টাকা, মণিমুক্তা ২০ লাখ টাকার, ১৮ লাখ টাকার জমিদারি, ৪০০ কলসী-তার মধ্যে ৬০টি সোনার ও বাকীগুলো রূপার, সর্বমোট সে বাজারের ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার সম্পত্তি রেখে যান। তিনি নবকৃষ্ণ সম্পর্কেও লিখেছেন যে, প্রথমে তিনি মাত্র ৬০ টাকা বেতনে কাজ করতেন। কিন্তু অল্প দিন পরে তার মায়ের মৃত্যুতে ৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছিলেন। শোভাবজারের বিখ্যাত জমিদারবংশের প্রধান ভূ-সম্পত্তি ও বংশ প্রতিষ্ঠা তারই উপার্জিত অর্থে (পুরনো কলকাতার কথাচিত্র, পৃষ্ঠা ৪০০)

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ও লিখেছেন, 'রামচাঁদ তৎকালে ষাট টাকা মাত্র মাসিক বেতন পাইতেন; কিন্তু দশ বৎসর পরে, তিনি এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকার বিষয় রেখে মরেন। মুন্সী নবকৃষ্ণের মাসিক বেতন ষাট টাকার অধিক ছিলনা। কিন্তু তিনি অল্পদিন পরে, মাতৃশ্রাদ্ধ উপলক্ষে, নয় লাখ টাকা ব্যয় করেন। এ ব্যক্তিই পরিশেষে রাজা উপাধি প্রাপ্ত হইয়া রাজা নবকৃষ্ণ নামে বিখ্যাত হইয়াছিলেন;” (দ্রষ্টব্য বিদ্যাসাগর রচনাবরীর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত বাংলার ইতিহাস' পৃষ্ঠা ১১৯) গঙ্গাগোবিন্দ সিংহঃ শ্রীরতন লাহিড়ী তার উপরোক্ত বই-এ লিখেছেন, “এ কুখ্যাত লোকটি ছিলেন দেবীসিংহের জুড়িদার এবং ওয়ারেন হেষ্টিংসের একটি প্রিয় সহচর।

ধূর্তটি, জালিয়াতী, প্রবঞ্চনার ব্যাপারে ইনি ছিলেন এঁদের মধ্যে সর্বোত্তম। ইনি ছিলেন হেষ্টিংসের সমস্ত কুকাজের পরিকল্পনাকারী, রাজস্ব বিষয়ে ফার্সী ও অঙ্কে সুপণ্ডিত এবং কার্যতঃ সে প্রথম যুগের কোম্পানীর শাসনের সময়ের সর্বেসর্বা। কোম্পানীবাহাদুর ক্ষমতা দখলের পর রাজ আদয়ের ভার দেন বিহারের কুখ্যাত খেতাব রায় ও বাংলার কুখ্যাত রেজা খাকে। রেজা খা রাজস্ব আদায়ের বেশির ভাগ ব্যাপারে তার কর্মরত যুবক গঙ্গাগোবিন্দকে তার ভাব দেন। মনে রাখা প্রয়োজন রেজা খার বিশ্বস্ত দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ ছিলেন কান্দীর জমিদারবাড়ীর স্রষ্টা।

বংশানুক্রমিকভাবে আবার ইংরেজদের সঙ্গে সহযোগিতা ও জনগণকে শোষণের ব্যাপারেও এরা সুদক্ষ ছিলেন। সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করা ষড়যন্ত্রের মুখ্য পরিকল্পনা করেছিলেন গঙ্গাগোবিন্দের অগ্রজ বিশ্বস্ত রাধাকান্ত। এ বংশের অন্যতম আদি পুরুষ হরেকৃষ্ণ ছিলেন একটি কুখ্যাত সুদখোর মহাজন। এর থেকে পরে জমিদার হয়ে ওঠেন এবং গঙ্গাগোবিন্দের সময়ে এরা কার্যতঃ বাংলার সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিলেন। হেস্টিংসের সঙ্গে এর এত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল যে, রাজস্ব বিষয়ে কেউ গঙ্গাগোবিন্দ আর হেস্টিংসকে আলাদা ভাবতেন

হেষ্টিংস গঙ্গাগোবিন্দকে তার বিশ্বস্ত বন্ধু বলেছেন। হেস্টিংসের কুখ্যাত সহযোগীগুলির মধ্যে গঙ্গাগোবিন্দ ছিলেন সবচেয়ে পণ্ডিত বুদ্ধিমান সংগঠক। তার ফলে এঁর অপরাধগুলিও ছিল অনেক উঁচু দরের। কিন্তু হেস্টিংসের কাছে তাঁর বিশ্বস্ততার ব্যাপারে কোন ভুল ছিলনা।

হেষ্টিংসের বিদায়ের সময় জাহাজঘাটাতে গিয়ে চোখের জলে ভাসিয়ে ছিলেন এই বাংলা বিহার উড়িষ্যার সমস্ত রাজস্বের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা।...সর রকম অপরাধে এরা ওস্তাদ ছিলেন এবং যে কোন উপায়ে অর্থ, বিলাস ব্যসনের জন্য নারী সংগ্রহ, নিজেদের বিকৃত মানসিকতা

ধের জন্য অদ্ভুত ধরণের অত্যাচারের ব্যপারে এদের জুড়ি ছিল না।....অত্যাচারে র্শিদাবাদ ও পাট এলাকা শশান হয়ে উঠেছিল। বাধ্য হয়েই কোম্পানী এদের পদচ্যুত করে বন্দী করে কলকাতা নিয়ে যায়। এর ফলে ব্যাপক শূন্যতা দেখা গিয়েছিল। কোম্পানী সে জায়গা পুরণের দায়িত্ব দিয়েছিল একদল অনভিজ্ঞ তরুণ সিভিলিয়ানদের এরা কার্যতঃ গঙ্গাগোবিন্দের হাতের পুতুল হয়ে উঠেছিলেন। রাজা কমিটির দেওয়ান প্রথমে ছিলেন, সিরাজুদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অন্যতম নায়ক, রাজা রাজবল্লভ।

গঙ্গাগোবিন্দ প্রথমে এরই সহকারী হিসাবে তখনকার দিনে ৭০০ টাকা মাহিনার চাকরিতে নিযুক্ত হন। এর পর থেকে গঙ্গাগোবিন্দের জয়যাত্রা শুরু। ১৭৪৪ খৃস্টাব্দে গঙ্গাগোবি কলিকাতার রাজস্ব সমিতির দেওয়ানী পদ পান। নিখিলনাথ রায়ের ভাষায়, '১৭৪৪ খৃস্টাব্দে গঙ্গগোবিন্দ কলিকাতার রাজস্ব সমিতির দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হইয়া আপনার চরিত্রের পরিচয় দিতে লাগিলেন। যাহাদের উপরে তাহার তত্ত্বাবধানের ভার ছিল উৎকোচ ভারে তাহারা প্রপীড়িত হইয়া উঠিল।' (মুর্শিদাবাদ কাহিনী, পৃষ্ঠা ৩১৬)

....এর পরে ১৭৭৬ সনেই হেষ্টিংস মুর্শিদাবাদ পাটনা প্রভৃতির রাজস্ব সমিতি ভেঙ্গে নতুন ভাবে কলকাতায় সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন। গঙ্গাগোবিন্দকে পুনরায় দেওয়ান করে সর্বেসর্বা করে দেন এবং একটি পুতল-রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন। এই ভাবে সমস্ত ক্ষমতা করায়ত্ব হবার পর এই গঙ্গাগোবিন্দ তাঁর পুত্র প্রাণকৃষ্ণকে তার সহযোগী করে নেন। এইভাবে মহামান্য হেষ্টিংস বাহাদুরের কৃপায় গঙ্গাগোবিন্দ ও তাঁর পুত্র বাংলাসুবাকে শোষণের আখড়া করে তোলেন। এই শোষণের প্রয়োজনে এঁরা জালিয়াতি, প্রবঞ্চনা, শক্তি প্রয়োগ সব কিছু অপরাধ করেছিলেন। এমন সময়ে গঙ্গাগোবিন্দই ছিলেন সর্বেসর্বা। বিধবার সম্পত্তি অপহরণ, নাবালকের সম্পত্তি অধিগ্রহণের ব্যাপারে ইনি ছিলেন বিশেষ ভাবে অভিজ্ঞ।” (শ্রীরতন লাহিড়ী ঐ পুস্তকে পরিশিষ্টের ৭-৮ পৃষ্ঠা)

যে কোন দেশের আদর্শ সরকার অতিবৃিষ্টি, মহামারী, দুর্ভিক্ষ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকেন, তার জন্য থাকে মজুত অর্থভাণ্ডার। সিরাজের পতনের পর যে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তাতে দেশের ১/৩ অংশ লোক মারা গিয়েছিল। সিরাজের ধনভাণ্ডার যা ছিল তা গোটা কতক দেশীয় নেতাদের বাড়িতে কিভাবে জমা হয়েছিল, তা আলোচিত হয়েছে। তার চেয়ে বহু গুণ বেশী অর্থ ইংরেজ সিভিলিয়ান বা অফিসাররা ইংল্যাণ্ডে নিয়ে গিয়ে নিজেদের দেশকে ফাঁপিয়ে তুলেছিলেন। প্রতিভারঞ্জনবাবু লিখেছেন, অপ্রকাশ্যে ক্লাইভ কত টাকা পেয়েছে তার হিসাব পাওয়া যায় না। তিনি আরও লিখেছেন, 'পলাশী যুদ্ধে পর হীরাঝিল প্রাসাদের প্রকাশ্য ধনাগার লুঠের বখরা বাবদ ক্লাইভ সাহেব পায় প্রকাশ্যে দু লাখ আশী হাজার টাকা। এ ছাড়া চরম কৃতজ্ঞতার চিহ্ন স্বরূপ তাকে মীরজাফর দিয়েছে আরও এক লাখ ষাট হাজার টাকা। আরও বলেছেন, “স্ক্রাফটন সাহেব বলেছেন-ত্রিশোনা নৌকা বোঝাই ধনরত্ন নিয়ে গেছে ক্লাইব।”

এ্যাডমিরাল ওয়াটসন মৃত্যুকালে রেখে যায় সত্তর লাখ টাকা। নৌসেনানী পোক অর্জন করে বিপুল অর্থ। ওয়ারেন হেষ্টিংস প্রথম যখন এদেশের আসে তখন তার বেতন ছিল মাত্র পনের টাকা। কয়েক বছরের মধ্যেই সে হয় বিশাল ধনসম্পত্তির মালিক (হেষ্টিংস এ দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় ১৭৮৫ সনের তার এ দেশীয় যে সব সম্পত্তি নিলামে বিক্রিত করা হয় তার মধ্যে ছিল ৬৩ বিঘার বিরাট বাগানবাড়ী, ৪৬ বিঘার আস্তাবলসহ বিশাল অট্টালিকা,

কাঠের রেলিং ঘেরা ৫১ বিঘা জমি, ১৩৬ বিঘার বাগান, রুপার বাসন প্লেট, টেবিল, চেয়ার, হাতীর হাওদা, ঘোড়ার সাজ, ঝালদার পাল্কি, ভাবু, বাদ্যযন্ত্র, ছবি ইত্যাদি।” (মুর্শিদাবাদের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ৮০, কলিকাতা গেজেট, ১০-৫-১৭৮৫)

পূর্ণেন্দু পত্রীর মতে, (১) গতর ড্রেক ২৮০০০০, (২) কর্ণেল ক্লাইভ ২৮০০০০ মেম্বার হিসাবে, ২০০০০০ সেনাপতি হিসাবে এবং বিশিষ্ট দান হিসাবে ১৬০০০০০, (৩) ওয়াটটিস মেম্বার হিসাবে ২৪০০০০, বিশিষ্ট দান হিসাবে ৮০০০০০, (৪) মেজর কিলপ্যাথিক ২৪০০০০, অতিরিক্ত ৩০০০০০, (৫) মানিংহাম ২৪০০০০০, (৬) বিচার ২৪০০০০ (৭) কাউন্সিলের ৬ জন সভ্য ৬০০০০০, (৮) ওয়ালস ৫০০০০০, (৯) স্ক্রাফটন ২০০০০০, (১০) লুসিংটন ৫০০০ এ বিপুল পরিমাণের টাকা প্রাকশ্যে ভাগাভাগি হয়েছিল। অপ্রকাশ্যে কত হয়েছিল তা বলা কঠিন সিরাজুদ্দৌলার পতন না ঘটান হত, এ বিপুল পরিমাণ সম্পদ। যদি অর্থপিশাচরা আত্মসাত করতে না পারত, তাহলে অনেকের মতে মন্তর বা দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে সোনার দেশ মৃতখানায় পরিণত হত না। সিরাজুদ্দৌলার পতনের জন্য দায়ী বিশ্বাসঘাতক হিন্দু-মুসলমান নায়করা ইতিহাসে যেমন কলঙ্কিত, পরকালেও হয়ত হবে জাহান্নামী। যদি কেউ পরকালকে বাদ দিয়েও চিন্তা করেন তবুও বলা যায়, পৃখিবীতেও তাদের লাঞ্ছনা কম হয়নি।

যেমন মীরজাফর মারা যান কুষ্ঠ ব্যাধিতে। মীরন বজ্রাঘাতে মারা যান। লক্ষপতি উমিচাঁদ কপর্দকহীন অবস্থায় উন্মাদ ও ক্ষুধায় কাতর হয়ে মারা যান। মহারাজ নন্দকুমার মিথ্যা অভিযোগে ফাসিতে মারা যায়। শেঠ ও মহারাজ স্বরূপচাদ গঙ্গার পানিতে ডুবে মারা যায়। মুহম্মদী বেগ পাগল হয়ে কুপে পড়ে মারা যায়। রায়দুর্লভ জেলখানায় অনশন অর্ধাশনে মারা যায়। দু্র্রভরায় নিঃস্ব অসহায়ের মত নাস্তানাবুদ হয়ে সর্বস্বান্ত হয়। ক্লাইভ আত্মহত্যা করে। বিশ্বনিয়ন্তার নির্দেশে এভাবে প্রত্যেকের অবস্থানুযায়ী এক আশ্বর্য পার্থিব বিচার ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়। (দ্রষ্টব্য আমাদের মুক্তিসংগ্রাম' পুস্তকের ৩৩ পৃষ্ঠা ও ভুলে যাওয়া ইতিহাস পৃষ্ঠা ১৫)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন