hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

চেপে রাখা ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

৩৬
অন্ধকূপ হত্যাঃ ইতিহাসের অলীক অধ্যায়
যে ইংরেজ জাতি বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়েছে সে ইংরেজকে হিমশিম খাইয়েছিলেন তরুণ যুবক নবাব সিরাজ।১৭৫৬ খৃষ্টাব্দের ২০শে জুন নবাবের সৈন্য কলকাতার দুর্গে এমন প্রচণ্ড আক্রমণ চালায় যা প্রতিরোধ করা ইংরেজদের সাধ্যের বাইরে ছিল। ইংরেজ সৈন্যদের বন্দী করে সিরাজের সম্মুখে আনা হল। সেনাপতি হলওয়েরও বাদ যাননি। সৈন্যরা ভয়ে কম্পিত কণ্ঠে প্রাণ ভিক্ষা চাইল। নবাব মিঃ হলওয়েলকে হাত বাদা অবস্থায় লাথি খাওয়া পশুর মত অবস্থায় দেখেলেন। সিরাজ ইচ্ছা করলে নিষ্ঠুরভাবে প্রত্যেককে হত্যার আদেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি কারোর প্রতি দুর্ব্যবহার করার আদেশ দেননি। (এ তথ্যের প্রমাণ মেজর বি.ডি, বসুর Rise of the Christian Power in India গ্রন্থে ৫৮ পৃষ্ঠায় রয়েছে)

কিছু আলেমকে কলকাতা বিজয়ের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশক উপাসনা ও বন্দীদের উপর নজর রাখবার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। বন্দীরা সকলেই ছিল মদপায়ী। তাদের মদ পানের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা ছিলনা বলে তারা খুব বেশি পরিমাণে পান করে উম্মত্ত হয়ে অসামরিক প্রহরী ও আলেমদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, অত্যাচার করে। সিরাজ এ সংবাদ শুনে তাদের আটক করতে বললেন সে বন্দীখানায়, যেখানে তারা ভারতীয়দের বন্দী করে রাখত-এরই কল্পিত নাম অন্ধুকূপ। (প্রমাণ; মেজর বি, ডি, বসুর ঐ গ্রন্ত, ৫৭ পৃষ্ঠা)

সিরাজের ইতিহাসে অন্ধকূপ হত্যা কাহিনী এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়; শাসকদের চরিত্রে কলঙ্কের মসিলেপনের এক অদ্ভুত ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা। তাই এ অন্ধকূপ হত্যা বা Black Hole সম্বন্ধে একটু আলোচনার প্রয়োজন।

সুধীরবাবু তাঁর রচনায় বাংলা তথা ভারতের কল্যাণের জন্য মস্তিষ্কের উর্বর পরিচয় দিতে চেষ্টা করে গেছেন। অন্ধকূপ হত্যার স্রষ্টা অবশ্য সুধীর বাবু নন, ইংরেজ অনুচর মিঃ হলওয়েল।

এ মিঃ হলওয়েলকে একটু যাচাই করা যাক। এ হলওয়েলই মীরজাফরকে সিংহাসনচ্যুত করায় ষড়যন্ত্র করে মীরকাশিমকে সিংহাসনে বসিয়ে ছিলেন এবং ৩০৯৩০০ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন (এর প্রমাণের জন্য ১৭৭২ খৃষ্টাব্দের Report of the Committee of the House of Commons দ্রষ্টব্য)

এ হলওয়েলই বিলেতের কর্তৃপক্ষকে পত্র লিখেছিলেন যে, নবাব মীরজাফর আলি খাঁর জঘণ্য চরিত্রের কথা কি আর জানাব। তিনি নিওয়াজেস মহিষী ঘসেটি বেগম, সিরাজের মা আমিনা বেগম ও সম্ভ্রান্ত মহিলাদের ঢাকার রাজ কারাগারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছেন।

এ পত্রের বক্তব্য যে কত ভিত্তিহীন ও অসত্য তা পরে প্রমাণিত। কারণ, হলওয়েল যখন ঢাকার রাজমহিলাদের মৃত্যু কাহিনী রচনা করেন তার পরেও তারা জীবিত ছিলেন। (Long's Selection from the Record of India vol.. 11

মিঃ হলওয়েলের লেখায় প্রমাণ হয় যে, সিরাজের কলকাতা আক্রমণের পূর্বে কলকাতা দুর্গে ষাটজন মাত্র ইউরোপীয়ান ছিল। এ ষাট জনের মধ্যে গভর্ণর ডেক্র, সেনাপতি মিনচিন, চার্লস ডগলাস, হেনরী ওয়েডারব্যারণ, লেঃ মেপলটফট, রেভারেণ্ড ক্যাস্টন, মিস্টার ম্যাকেট, ফ্রাঙ্কল্যাণ্ড, মানিংহাম ও ক্যাপ্টেন গ্রান্ট প্রভৃতি দশ জন বীরপুরুষ পালিয়ে গিয়েছিলেন।

তাহলে হলওয়েলের বর্ণনানুযায়ীই প্রমাণ হয়, সিরাজের হাতে মাত্র পঞ্চাশ জনের প্রাণহানি হয়। কিন্তু এ হলওয়েলই আবার কি করে শতাধিক লোকের মৃত্যু সংবাদ পরিবেশন করেছেন তা বড়ই আশ্চর্যের বিষয়। (এ তথ্যগুলোর প্রমাণের জন্য Halwell's letter to the Hon'ble Court of Directors, P.36, dated 30th Nov. 1758 দ্রষ্টব্য।)

মিঃ ড্রেকের দুর্গ পরিত্যাগের পর ১৭০ জন দুর্গে জীবিত ছিল বলে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী মিঃ গ্রে বলেছেন, ১৯শে জুন রাত্রে একজন ইংরেজ সৈন্য ৫৭ জন ডাচ সৈন্য সহ শত্রুপক্ষে যোগদান করে (প্রমাণ স্বরূপ Gray's Letter, Flill, Vol. 1 p. 108 দ্রষ্টব্য)

আবার মিঃ ওয়াটস বলেছেন, মিঃ ড্রেকের দুর্গ ত্যাগের পর এবং দুর্গের পতনের পূর্ব পর্যন্ত প্রাচীরের উপরেই নিহত হয় ৫০ জন সৈন্য। Hill; Vol. 1, p. 88-তে এ তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। এদিকে হলওয়েল বলেছেন, গোলন্দাজ বাহিনীর ৩১ জন সৈন্য ২০ শে জুন দুপুরের পূর্বেই নিহত হয় (য, ১১৪)

মিঃ মিলস বলেন, দুর্গের পতনের সময় ১৮ জন সৈন্য পলায়ন করেন (p.44) অতএব দেখা যাচ্ছে, একজনের বর্ণনার সাথে অন্য জনের বর্ণনার মিল নেই। অলীক ঘটনার সত্যতা এ ভাবেই প্রমাণিত হয়। আর ঐতিহাসিকদের গবেষণায়ও হিসেবে শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে এ দুর্গে ৮ থেকে ১০ জন মাত্র ইংরেজ বর্তমান ছিল।

এ হলওয়েলের স্বরূপ দেখে তাই নিরপেক্ষ দৃষ্টি সম্পন্ন লেখক শ্রী অক্ষয় কুমারে মৈত্র বলেন, “মুসলমানদের কথা ছাড়িয়া দাও। তাঁহারা, না হয় স্বজাতির কলঙ্ক বিলুপ্ত করিবার জন্য স্বরিত ইতিহাস হইতে এই শোচনীয় কাহিনী সযত্নে দূরে রাখিতে পারেন। কিন্তু

যাহারা নিদারুণ যন্ত্রণায় মর্মপীড়িত হইয়া অন্ধকুপ কারাগারে জীবন বিসর্জন করিলেন। তাহাদের স্বদেশীয় স্বজাতীয় সমসাময়িক ইংরেজদিগের কাগজ পত্রে অন্ধকূপ হত্যার নাম পর্যন্তও দেখিতে পাওয়া যায় না কেন?” (সিরাজুদ্দৌলা' দ্রষ্টব্য)। শ্রীমতী হেমলতা দেবী লিখিত ভারত বর্ষের ইতিহাস' পুস্তকের সমালোচনা করতে গিয়ে শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ইতিহাস" পুস্তকের দ্বিতীয় মুদ্রণের গ্রন্থ সমালোচনা অধ্যায়ে (১৫৭ পৃষ্ঠা) লিখেছেন, “সিরাজুদ্দৌলার রাজ্য শাসনকালে অন্ধকূপ হত্যার বিবরণ লেখিকা অসংশেয়ে প্রকাশ করিয়াছেন। যদি তিনি শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষরকুমার মৈত্রের ‘সিরাজুদ্দৌলা পাঠ করিতেন তবে এই ঘটনাকে ইতিহাসে স্থান দিতে নিশ্চয় কুষ্ঠিত হইতেন। ডক্টর ভোলানাথ চন্দ্র Travels of a Ilindoo নামক বিখ্যাত ইংরাজি গ্রন্থের লেখক।

তিনি ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে Calcutta University Magazine-এ প্রমাণ করেছেন, অন্ধকুপ হত্যার কাহিনী একেবারেই মিথ্যা। তিনি লিখেছেন এ ছোট ঘরে বেদানার দানার মত করেও যদি লোক রাখা যায় তবুও কোনমতেই ১৪৬ জনের স্থান হতে পারেনা। তার ভাষায়-"] have a ry doubtful faith in its account.....Geometry contradicting arithmetic give the lie to the story."" ডক্টর c. R, Wilson তাঁর old Fort William in Bengal গ্রন্থে Vol. il) ৫৯ পষ্ঠয় জ্যামিতি দিয়ে প্রমাণ করেছেন, দেড় ফুটের কিছু বেশি জায়গা প্রত্যেকের ভাগে পড়েছিল; সুতরাং এসব মনগড়া কাহিনী। তাছাড়া এনি বেসান্তও বলেছেন-"Geometry disproving arithmetic gave lie to the story." জনৈক বিখ্যাত ফরাসী পণ্ডিত সর্বজনবিদিত সমসাময়িক 'মুতাআক্ষিরীন' গ্রন্থের অনুবাদ করতে গিয়ে টীকাস্থরে লিখেছেন, অন্য লোকের কথা দুরে থাকুক, কলকাতার অধিবাসীরাই অন্ধকূপ হত্যার সংবাদ জানত না। যাদের বুকের উপর এ রকম ভয়ানক হত্যাকাণ্ড হয়েছিল তারা এর কিছুই জানল না, এটা কি আদৌ সম্ভব?

পলাতক ইংরেজ বীর পুরুষগণের পলায়নের বিবরণে বা সিরাজের প্রতি পিগটের পত্রে অথবা সিরাজকে লিখিত ওয়াটস্ এর ক্লাইভের বীরত্বপুর্ণ পত্রে অন্ধকূপের কোন উল্লেখ নেই। এছাড়া সিরাজকে লিখিত ইংরেজদের অন্যান্য চরম পত্রেও অন্ধকূপের উল্লেখ নেই। এমনকি ‘আলিনগরের সন্ধি কাগজেও তার উল্লেখ নেই।

ক্লাইভ কোর্ট অফ ডিরেক্টরকে যে পত্র লিখেছেন তাতে সিরাজকে কেন সিংহাসনচ্যুত করা হয়েছে তার বিবরণ আছে, কিন্তু অন্ধকূপ হত্যার কোন কথাই সেখানে নেই। অথচ সুধীর কুমার আর নবীন কুমারের নবীন কলমে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তাই এ ধরণের লেখনী বহু দৃঢ়চেতা সৎ মানুষ, যেমন অক্ষয় কুমার মৈত্র, বিহারীলাল সরকার, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, নিখিলনাথ রায়, কবি রবীন্দ্রনাথ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরনেতা নেতাজী সুভাষ বসু প্রভৃতি অনেকের মনে বেদনা দিয়েছিল। অক্ষয়কুমার মহাশয়ের আন্দোলন এবং কলমের অগ্নিবর্ষণকে নেতাজী দারুণভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন। ফলে ১৯১৫ খৃষ্টাব্দের ২৪ মে মার্চ কলকাতার ক্রিষ্টাক্যঅল সোসাইটির মাধ্যমে এসিয়াটিক সোসাইটির ঘরে এক বিরাট সভায় উপস্থিত অক্ষয় কুমার মৈত মিঃ জে, এইচ. লিটস এবং মিঃ এফ, জে, মানাহন প্রমুখের এ অকপ হার ইতিহাস-উপন্যাস উপকথার মত নিক্ষিপ্ত হয়, অর্থাৎ কাহিনীটি মিথ্যা বলে স্বীকৃতি পায়। তার কিছুদিন পরে জে, এইচ. লিটল Cail-utta Ilistorical Sciety. প্রত্রিকায় তা

প্রকাশ করে দেন এবং অকূপের জন্য বলা হয় " gigantic hoax" অর্থাৎ প্রকাণ্ড ধাপ্পাবাজি। উপরোক্ত তথ্যাদি Bengali Past and Present Vol. XI. Serial No.1 p. ৭৫ হতে গৃহীত। ১৯৪০ খৃস্টাব্দে জুন মাসে সুভাষ বসু এ অন্ধকূপ হত্যার চিহ্ন মনুমেন্টটি ভেঙে ফেলার দাবী করেন। এ নিয়ে বিরাট আন্দোলন হয়। শত্রু ইংরেজ ও মুসলমান বিদ্বেষী অনেকেই সেদিন অবাক অথবা অসন্তুষ্ট হন। কিন্তু সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী, তবে ধৈর্যের প্রয়োজন। ইংরেজ রাজত্বের রাজধানী কলকাতার এ মনুমেন্ট অবশেষে ইংরেজকে ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য হতে হয়।

শ্রীগিরিশ ঘোষের সিরাজউদ্দৌলা' নামক সঠিক ও সুন্দর বইটি এ সময় সাহসের সাথে লিখিত হয়। তার উপর অক্ষয়বাবুর ‘সিরাজউদ্দৌল্লা ও মীরকাশিম’ অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করে। পরে সত্যচরণ শাস্ত্রী একখানি বই লিখলেন তার নাম জালিয়াত ক্লাইভ। সখারাম গণেশ দেউর ‘দেশের কথা' নাম দিয়ে এ সম্বন্ধেই আর একখানা বই লিখলেন। এটাও বেশ মূল্যবান্ বই। এর দু-একটা বাক্য এখানে তুলে ধরছি-“ইংরাজ ইতিহাস লেখকেরা হিন্দু-ছাত্রদের হৃদয়ে মুসলমান বিদ্বেষ প্রজ্জ্বলিত রাখিবার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিয়াছেন।

পরিতাপের বিষয় কোন কোন অদূরদর্শী হিন্দু লেখক কাব্য নাটকাদিতে অনর্থক মুসলমান ভ্রাতাদিগের নিন্দাবাদ করিয়া ইংরাজের উদ্দেশ্য সিদ্ধি বিষয়ে সহায়তা করিতেছেন।” এদিকে গিরিশচন্দ্র ঘোষ একটি নাটকও লিখলেন যা সহজলভ্য বিষাক্ত ও চলতি নাটকের একেবারে উল্টা। সাধারণ মানুষের মগজ একটু নড়ে উঠল-তাহলে ইতিহাসে যা। শুনি তা তো সঠিক নয়। কবি নবীনচন্দ্র সেন এ বইটি পড়ে একটি চিঠি লিখলেন গিরিশচন্দ্রের নামে। তাও এখানে তুলে ধরা হল

“ভাই গিরিশ,

বিশ বৎসর বয়সে আমি পলাশীর যুদ্ধ' লিখিয়াছিলাম, আর তুমি ষাট বৎসর বয়সে ‘সিরাজুদ্দৌলা' লিখিয়াছ। আমি বিদেশী ইতিহাসে যেভাবে পাইয়াছি সেইভাবে চিত্রিত করিয়াছি। কিন্তু তুমি সিরাজের নিখুঁত চিত্রটি অঙ্কিত করিয়াছ। অতএব তুমি আমার অপেক্ষা অধিক ভাগ্যবান।”

অত্যন্ত দুঃখের কথা, সিরাজের ইতিহাসে পাওয়া যায় মূলতঃ মুসলমান মীরজাফরের কথা। তাতে প্রমাণ হয় মুসলমান জাতি মানেই বিশ্বাসঘাতক জাতি। ফলস্বরূপ আজ মুর্শিদাবাদ জেলা, এমনকি মুসলমান জাতি বাংলার মাটিতে যেন কলঙ্কিত। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস এ কথাই বলে যে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যে আকাশ ছোঁয়া অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল তা মুসলমানদের হাতেই। সিপাহী বিদ্রোহ' তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আর এ সিপাহী বিদ্রোহের গোড়াপত্তনের দাবীতে যে স্থান গৌরবের অধিকারী তা হল মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুর।

সিরাজ জানতেন মীরজাফরের হাবভাব। তাহলে এখানে একটা প্রশ্ন হবে, সিরাজ যদি জানতেন মীরজাফরের দ্বারা স্বাধীন ভাগ্যকাশে দুর্যোগ উদয় হবে, তবে কেন তাকে পূর্বাহ্নেই সরিয়ে দেননি? স্বাধীন ভারতের প্রতি সিরাজের এটা কি নিষ্ঠুরতা নয়? উত্তরে বলব, না। কারণ মীরজাফর একদা সিরাজের সম্মুখে পবিত্র কুরআন ছুঁয়ে শপথ করে বলেছিলেন, তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিংহাসন রক্ষা করতে চেষ্টা করবেন। তাই পবিত্র কুরআনের সম্মানার্থে : বিশ্বাসঘাতকার পূর্বেই তাকে শাস্তি দিতে পারেন নি।

বীর সিরাজ মিঃ ওয়াটস সাহেবকে সপরিবারে বন্দী করে কাশিমবাজার হতে মুর্শিদাবাদ নিয়ে এসেছিলেন। সিরাজ-জননী আমিনার কোমলতায় সিরাজের করুণাবতী স্ত্রী লূৎফুন্নেসা তাঁদের মুক্তি দিয়েছিলেন। যখন সিরাজ এ ঘটনা শুনলেন তখন গর্ভধারিণী মা বা সহধর্মিণী স্ত্রী কাউকে তিরস্কার অথবা কারো কাছ থেকে কৈফিয়ত চাওয়ার কোন ভূমিকাই নিতে পারেন নি। এটাও সিরাজের সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা ও উদারতা না নিষ্ঠুরতা তারও বিবেচনার ভার চলমান সমাজের উপরেই রইল।

রাজা রাজবল্লভ আলিবর্দীর আমলে প্রজাদের সর্বনাশ সাধন করে যে বিরাট অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন এবং তাঁর পুত্র কৃষ্ণদের মারফত সে প্রচুর অর্থ যখন ইংরেজরদের ঘাটিতে পাচার হয়েছিল তখন সিরাজ রাজবল্লভ ও তাঁর পুত্র কৃষ্ণদেবের উপর স্বাভাবিক ভাবেই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং ঠিক তারপরেই তিনি কলকাতায় দুর্গ নির্মাণের অপরাধে কলকাতা আক্রমণ করেছিলেন। বলাবাহুল্য, এ কৃষ্ণদেবের পাচার করা প্রচুর অর্থই কলকাতায় দুর্গ নির্মাণে ইংরেজদের হাত শক্ত করেছিল। তাই কৃষ্ণদেবের কাণ্ডকে কেন্দ্র করেই সিরাজের কলকাতা অভিযান। যুদ্ধ শেষে হলওয়েল, উমিচাঁদ ও কৃষ্ণদেবকে বন্দী করে তার সামনে আনা হল। সিরাজ যখন তাদের হাতের মুঠোয় পেলেন তখন তারা জেনে নিয়েছিলেন, প্রাণদণ্ডই হয়ত তাদের যোগ্য শান্তি। কিন্তু তিন জনেই যখন ক্ষমা প্রার্থনা করলেন সিরাজ প্রত্যেকক্ষে ক্ষমা করে মুক্তি দিলেন।

আরও একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কলকাতা বিজয়ের পর মানিকচাঁদকে কলকাতার দায়িত্ব দিয়ে, তাকে প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করে নবাব আদেশ দিলেন, বাজার-হাট যেন বন্ধ না থাকে। কারণ বাজার ও দোকানপাট বন্ধ থাকলে, ইংরেজরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যেভাবে কোণঠাসা হয়েছিল, খাদ্যদ্রব্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে তারা মারা যেতে পারে [c.R. Wilson; Old Fort William of Bengal, vol, 1 p. 30i]। এ রকম আরও অনেক মহানুভবতার দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে নবাবকে নিষ্ঠুর বলে চিহ্নিত করা যাবে, কি না তা বিচারের জন্য বাকী রইল।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন