hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

চেপে রাখা ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

৩০
আকবরের বিদায় পর্ব
বিশ্বের ইতিহাসে ষোড়শ শতাব্দীতে ধর্মীয় আন্দোলন ও আলোড়ন শুরু হয়েছিল। ভারত বর্ষে কবীর, নানক, শ্রীচৈতন্য প্রভৃতি মহাপুরুষগণ নানা ধর্মমত সৃষ্টি করে নানা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করলেন। তেমনি মাহদী' আন্দোলন জনসাধারণের মনকে আচ্ছন করে ফেলেছিল। প্রতি হাজার বছরের শেষ ভাগে ধর্মভোলা মানুষকে উদ্ধারের জন্য একজন মসিহ' পৃথিবীতে আর্বিভূত হবেন-এ ছিল মাহদীপন্থীদের বিশ্বাস। আফগানিস্তানেও অনুরূপ রাসনী' আন্দোলন শুরু হয়। তাদের ধ্যানধারণাও অনুরূপ ছিল।

১৫৭৫ খৃস্টাব্দে পারস্যের শাহ আততায়ীর দ্বারা নিহত হলেন। তখন পারস্য বা ইরানে একটা মোলহেদ' নামক ইসলাম বিধ্বংসী দল তৈরি হয়েছিল। পারস্যের নতুন শাহ সিংহাসনে বসেই চিন্তা করে দেখলেন, এ কুৎসিত নোংরা দলটি অদূর ভবিষ্যতে সুন্দর স্বচ্ছ ইসলাম ধর্মের কলঙ্কের কারণ হতে পারে। তাই এ মোলহেদ' দলকে নিষিদ্ধ করেন এবং তাদের বন্দী করার আদেশ দেন। কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলে তাদের প্রধান ঘাঁটি ছিল। এ ঘাটি পারস্যের শাহ আক্রমণ করলে তারা দলে দলে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। সম্রাট আকবরের সাথে তাদের দলনেতারা দেখা করে নিজেদের মত ও পথের কথা বলতে গিয়ে বলে, 'আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি, প্রত্যেক যুগে যুগে নবী আসেন। হযরত মুহাম্মদের পর আর কেহ নবী আসবেন না বটে, কিন্তু ইমাম মাহদীর আগমনের কথা কিতাবে আছে। তাছাড়া প্রতি হাজার বছর অন্তর একজন মোজাদ্দেদ বা সার্বজনীন ধর্ম বিশারদ আবির্ভূত হন। এখন আরবী হিজরী সালের সে হাজার বছর পূরণের যুগ। আমরা জানতে পেরেছি এ

যুগসন্ধিক্ষণে আপনিই সে ইমাম মাহদী এবং ধর্ম প্রচারক। অতএব আপনি এগিয়ে আসুন, পালন করুন আপনার পবিত্র দায়িত্ব।' সম্রাট আকবর এ রকমই একটা সুযোগের প্রতীক্ষায় ছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী আকবর তার রাজনীতির ভাল অঙ্গ হিসেবে এবং ধর্মজগতে অমর হওয়ার বাসনায় এ দলের নেতাদের নিজের উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করেন।(দ্রঃ হিষ্ট্রি অব ন্যাশনালিজম, পৃষ্ঠা ৩১)

কপট সুফী ভ্রাতৃদ্বয় ফৈজী ও আবুল ফজল এবং তাদের পিতার সাথে আকবরের সান্নিধ্য লাভের ফলে আকবরের ধর্মজীবন বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। তারা আকবরকে দর্শন ও ধর্মীয় আলোচনার জন্য ফতেপুর সিক্রিতে ইবাদতখানা নির্মাণ করতে উৎসাহ প্রদান করেন। পরে সম্রাট বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী পণ্ডিতদের তার ইবাদতখানায় আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করলেন। ১৫৮০ খৃষ্টাব্দে আকুয়াডিভ ও মনসারেটের জেসুইট মিশনকে (খৃষ্টান মিশন) আকবর তার সভায় সাদরে গ্রহণ করেন।

তিনি জোরোষ্ট্রিয় ও জৈব ধর্মের পণ্ডিতদেরও সভায় স্থান দিয়েছিলেন। আর হিন্দু পণ্ডিতগণ তো পূর্ব থেকেই সভায় বহাল ছিলেনই। ধর্ম-বিষয়ক পরামর্শদাতা ছিলেন আবুল ফজলের পিতা শেখ মুবারক। তিনি সর্ব বিষয়ে আকবরের মনোরঞ্জনের উপায় উদ্ভাবন করতেন বলে আকবর তাকে খুব সমীহ করতেন। শেখ মুবারক নানা যুক্তি তর্কের অবতারণা করে আকবরকে প্রমাণ করে দিলেন যে, উলামাগণ ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করেন। অপরাপর ধর্মের মধ্যেও কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে। যার ফলে বিদ্বেষ একঘেঁয়ে গোঁড়ামি এবং সম্প্রদায়গত আক্রমণের ভাব পরিলক্ষিত

নিরক্ষর সম্রাট আকবর ধর্ম প্রবণতা নতুন খাতে প্রবাহিত হল। সাম্রাজ্যলিপ্সু উচ্চাভিলাষী সম্রাট আকবরের জীবনে পূর্ব বর্ণিত ফার্সী ধর্মগুরুর আশ্চর্য প্রভাব দেখা যেতে লাগল। এ সময়ই শেখ মুবারক তাকে পরামর্শ দিলেন, যেহেতু তিনি রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা, সেহেতু তিনি ধর্মনেতাও হতে পারেন। ধর্মগুরু হওয়ার এ পরামর্শে আকবর বিশেষভাবে আকৃষ্ট হলেন।

এদিকে দরবারের পণ্ডিত ও সভাসদগণ শঠে শঠ্যং' নীতি গ্রহণ করেন। তারা সম্রাটকে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দিল্লিশ্বর, জগদীশ্বর' এর আওয়াজে ভারত বর্ষের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত মুখরিত করে তুলে তার প্রতি কৃত্রিম আনুগত্য প্রকাশ করতে লাগলেন। সে উদ্দেশ্যে ১৫৫৭ খৃস্টাব্দে এক হিন্দু কবি রচনা করলেন–

হেথা এক দেশ আছে নামে পঞ্চগৌড়

সেখানে রাজত্ব করেন বাদশাহ আকবর

অর্জুনের অবতার তিনি মহামতি

বীরত্বে তুলনাহীন জ্ঞানে বৃহস্পতি॥

ত্রেতা যুগে রাম হেন অতি সযতনে

এই কলি যুগে ভূপ পালে প্রজাগণে

(দ্রঃ চণ্ডী, মাধবাচার্য ও বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, পৃষ্ঠা ৩৭২)

পণ্ডিতগণের এ ধরনের চাটুকারিতা আর সে যুগের কিছু স্বার্থন্বেষী মৌলবিদের অন্তর্বিবাদ ও মতভেদ তার ভাবান্তর বা ইসলাম ধর্মের প্রতি অবহেলার অন্যতম কারণ ছিল। দরবারে আকবরের পাশে কে বেশি নিকটবর্তী হয়ে বসবেন তাই নিয়ে বিবাদ হওয়াতেও আকবরের ভাবান্তর হয়। তবে আকবরের উৎসাহ ও পরামর্শদাতারা তাকে বিশেষভাবে নতুন

ধর্ম সৃষ্টিতে উৎসাহিত করলেও তেমন কেহ পরবর্তীকালে নতুন ধর্মে দীক্ষিত হননি। বলাবাহুল্য, ইসলাম ধর্মের সর্বনাশ সাধন যাদের উদ্দেশ্য ছিল তারা কেবলমাত্র এ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কপট আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন। ধর্মগুরু হওয়ার পথে আকবর ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চললেন। ১৫৭৯ খৃস্টাব্দে ফতেপুর সিক্রীর প্রধান মসজিদ আকবর তাঁর বিশেষ দালাল দলকে উলামা সাজিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। পরে নিজে মসজিদের গেটে সাড়ম্বরে উপস্থিত হন। তার পূর্বে এ মসজিদকে জমকাল করে সাজান হয়েছিল। এবার যখনই আকবর সেখানে উপস্থিত হলেন অমনি সেই নকল উলামা আর বহুরূপী সভাসদগণ নামায ত্যাগ করে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাকে মসজিদের অভ্যন্তরে মিম্বরে বসালেন।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময় থেকে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাযের পূর্বে যে আরবী বক্তৃতা হত তা বাতিল করে আকবরের গুণগান সম্বলিত কবিতা পাঠ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সে কবিতার রচয়িতা ছিলেন ফৈজী। ঠিক হয়েছিল যে, আকবর নিজে সেটা পাঠ করে শোনাবেন বিরাট জনতাকে আর সকলে সমস্বরে 'আল্লাহু আকবর' (আকবরই আল্লাহ) বলে সাবাস দেবেন এবং সে সাথে অকবর তার নতুন দীন-ই-ইলাহি' ধর্মে দীক্ষিত হতে আদেশ দেবেন।

আকবর ফৈজীর লেখা নিজ গুণগান সম্বলিত কবিতা হাতে নিয়ে দণ্ডায়মান হলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক নাটকীয় ঘটনা এটাই যে, মাত্র তিন লাইন কবিতা আবৃত্তি করেই আকবর চোখে যেন কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকার দেখতে লাগলেন। তবু মনকে চাঙ্গা করে আবৃত্তি করতে লাগলেন, কিন্তু পারলেন না। তিনি যেন নিজ কানে শুনতে পাচ্ছিলেন নিজের বুকের স্পন্দন। হৃদকম্পনের কারণে তার একটি হাত বুকে বোলাতে লাগলেন। একটার পর একটা উপসর্গ দেখা দিতে লাগল। প্রথমে চোখ বিদ্রোহ করল, তারপর কণ্ঠস্বর বিদ্রোহী হয়ে উঠল।

শেষে তাকে মিম্বারের উঁচু ধাপ থেকে নীচে নেমে আসতে হল। সকলেই হতবাক। সমস্ত প্রোগ্রাম পণ্ড। অবশেষে কোন রকমে বললেন, ‘জোর করে নয়, ইচ্ছা করলে যে কেহ এ নতুন ধর্ম দীন-ই-ইলাহি গ্রহণ করতে পারে। এক ইংরেজ ঐতিহাসিক আকবরের হৃদকম্প আর মিম্বার থেকে নীচে অবতরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লিখেছেন, “কিন্তু এই ঘটনায় যে ভাবাবেগের সঞ্চার হইল, তাহা যে দৃঢ়চিত্ত, প্রবল শত্রুর মোকাবেলায়ও কখনও বিচলিত হয় নাই তাহাকে অভিভূত করিয়াছিল।

যে হৃদয় সকল বিপদে শান্ত থাকিত এখন তাহা দ্রুত স্পন্দিত হইতে লাগিল। যে কণ্ঠস্বর যুদ্ধের তুমুল হইনিনাদ ছাপাইয়াও উর্ধ্বে শ্রুত হইত এক্ষণে বালিকার কণ্ঠের ন্যায়ই তাহা ভাঙ্গিয়া পড়িল। প্রথম তিন ছত্রের উচ্চারণ সমাপ্ত করার পূর্বেই এই সম্রাট (নকল) নবীকে সেই উচ্চ মঞ্চ হইতে নামিয়া আসিতে হইল।" (অনুবাদ টার্কস্ ইন ইন্ডিয়া, পৃষ্ঠা ৬৯)

আকবর ১৫৮৭ সালে কাজী বা মুফতির বিচার ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করে তার পরিবর্তে তিনি নতুন আইন, সোজা কথা খিচুড়ি আইনের প্রবর্তন করেন। এ ঘটনায় স্বভাবতই অমুসলমান অনেকে আকবরের প্রতি শ্রদ্ধাবান হতে পারেন। তবে আকবর যদি পুরো হিন্দু হয়ে যেতেন তাহলে এ মারাত্মক অভিযোগ থেকে তিনি বাঁচতে পারতেন। কিন্তু তিনি হিন্দুও হননি আবার তাকে পুরোপুরি মুসলমান বলাও কঠিন। উপরন্তু দেখা যায় তিনি ভিতরে মুসলমান হয়ে তওবা করে অনুতাপ ও অনুশোচনা করে নিজের জীবনে সহস্র সহস্র ধিক্কার দিয়ে প্রাণত্যাগ করেন।

তাহলে তিনি হিন্দু মুসলমান উভয জাতির সাথেই সমানভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করে গেছেন বলে মনে হয়। হিন্দুদের খুশি করতে যত রকম ব্যবস্থা আছে তা তিনি করেছিলেন-আজ তা প্রমাণ হতে চলেছে। কিন্তু আসলে তার মধ্যে কোন আন্তরিকতা ছিলনা, মৌখিক ছিল সবই। তাঁর রাজনৈতিক চালাকিকে নিছক উদারতার অভিনয় ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না।

১৫৫৮ খৃষ্টাব্দে রাজা ভগবান দাসের ভাগ্না, দত্তক পুত্র এবং উত্তরাধিকারী মানসিংহকে আকবর তার নতুন ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করতে অনুরোধ বা আদেশ করেছিলেন। কিন্তু তিনি যা জবাব দিয়েছিলেন তা চমকপ্রদ ও উল্লেখযোগ্য। মানসিংহ বলেছিলেন, 'যদি জীবন উৎসর্গ করার সংকল্পই হয় মহামান্য সম্রাটের মতবাদ গ্রহণের একমাত্র অর্থ, তাহা হইলে আমার ধারণা, আমি যে সম্রাটের একজন বিশ্বস্ত অনুসারী তাহার প্রমাণ আমি যথেষ্টই দিয়াছি। কিন্তু আমি একজন হিন্দু, সম্রাট আমাকে মুসলমান হইতে বলিতেছেন না। আমি তৃতীয় কোন ধর্মের কথা অবগত নহি।' নবরত্নের অন্যতম সদস্য রাজা তোডরমলও আকবরের ধর্ম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তিনি ১৫৯০ খৃষ্টাব্দে হিন্দু অবস্থাতেই পরলোকগমন করেন।

আকবরের একান্ত অনুগত বীরবল ও অন্যান্য ১৭ জন ছাড়া আর কেহ দীন-ই-ইলাহি ধর্ম গ্রহণ করতে সম্মত হননি। তাছাড়া এ ১৮ জনও কেবল উঁচু রাজপদ ও অর্থের লোভে এ নতুন ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এখানেও আকবরের সবচেয়ে লজ্জাকর পরাজয়। কারণ, একজন সহায় সম্বলহীন ফকির দরবেশও মৃত্যুর পূর্বে শত সহস্র মুরিদ বা শিষ্য রেখে যেতে পারেন, অথচ আকবর দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বা জগদীশ্বর (?) হয়েও মাত্র ১৮ জন শিষ্য পেয়েছিলেন। শিষ্যের এ সীমাবদ্ধতা তাঁর পরাজয় ও অসাফল্য প্রমাণ করে। যাহোক, আকবরের মৃত্যুর পর আকবর অদৃশ্য হন বটে, কিন্তু তার রোপিত বিষবৃক্ষ ভারতের বুকে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির উপর দারুণভাবে আঘাত হানে। যার জের এখনও বিদ্যমান।

‘দীনি-ইলাহি' সম্পর্কে বিখ্যাত ঐতিহাসিক ডঃ স্মিথ বলেন, 'এ ধর্মবিশ্বাস ছিল হাস্যকর আভিজাত্য এবং অসংযত স্বৈরাচারের স্বাভাবিক ফল। অন্যত্র তিনি আরও বলেছেন, এটা আকবরের ভুলের সৃষ্টি, জ্ঞানের নয়।' আকবরের কার্যকলাপ ও চরিত্র সম্বন্ধে পূর্বে আলোচনা যদিও হয়েছে বুও এখানে আরও কিছু মূল্যবান তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে।

আজও ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে খামের উপর ৭৪ লেখেন। এর অর্থ হচ্ছে অত্যাচারী মুসলমানেরা নাকি এত হিন্দু ব্রাহ্মণ হত্যা করেছিলেন যে তাদের পৈতার ওজন হয়েছিল ৭৪ মণ। এখন প্রশ্ন, কে সে মুসলমান অত্যাচারী? নাম না জানলে হয়ত মনে হতে পারে আওরঙ্গজেব, হুমায়ুন, শেরশাহ, বাবর প্রভৃতি রাজা বাদশাহ কেহ, না হয় নাদির অথবা মুহাম্মাদ বিন কাসিম। কিন্তু যদি বলা হয় আকবর-তাহলে হয়ত অনেকে চমকে উঠতে পারেন। তাই শ্রীবেণু গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘চিতোরগড়ের কথা থেকে কয়েক লাইন তুলে দিচ্ছি-“সাড়ে চুয়াত্তর কথা শুনেছ নিশ্চয়? কথাটার ব্যবহার কেন হয়েছিল জান? চিঠি লিখে খামের পিছনে সাড়ে চুয়াত্তর লেখা হয় কেননা যাতে করে খামটা কেহ না খোলে।

যদি খোলে পাপের ভাগী হবে। গল্পটা ইতিহাসের। আকবর বাদশাহ হুকুম দিলেন যুদ্ধে যত লোক মরেছে তাদের পৈতাগুলো ওজন করতে। তাই করা হল। দেখা গেল ওজন হয়েছে সাড়ে চুয়াত্তর মণ। যদি পৈতার ওজন সাড়ে চুয়াত্তর মণ হয়, তাহলে অনুমান কর কত হাজার লোক মরেছিল যুদ্ধে। গল্পটা আজ হয়ত ঠিক বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না। তবে ঘটনাটি ঘটেছিল চিতোরে।' তবুও তাকে মহামতি বলতে হবে যত হত্যাই তিনি করুন না কেন। যদি তিনি অসংখ্য ব্রাহ্মণ হত্যাকারী তবুও তো তিনি ইসলামের শত্রুতা করেছিলেন। অবশ্য তাকে মহামতি বানালে অন্ততঃ মুসলমান বুদ্ধিজীবীর আকবরের মত হিন্দু ভাবাপন্ন হয়ে যাতে উদার উপাধি পান সে রাস্তা পরিষ্কার হবে। ইংরেজদের ইনজেকশন সত্যিই সাংঘাতিক।

দাবা খেলা আজও প্রচলিত আছে। দাবা খেলায় মানুষ খুঁটি ব্যবহার করে। কারও খুঁটি কাঠের, কারও হাড়ের, কারও বা হাতির দাঁতের, কারও রূপার, আবার কেহ ব্যবহার করেন সোনা খুঁটি। আকবরও দাবা খেলতেন, তার খুঁটি হয়ত সোনার কিংবা মূল্যবান পাথরের হবে বলে সাধারণের ধারণা। কিন্তু আগেই বলেছি তার চরিত্র-বিকৃতি মাত্রতিরিক্ত হয়ে গিয়েছিল, আকবরের দাবা খেলার খুঁটি ছিল-জড় পদার্থ নয়, জীবন্ত ঘোড়শী যুবতী সুন্দরী নারী। সে নারী নিয়ে হার জিত হত আর জিতে নেয়া নারীদের ব্যবহার করা হত আনন্দের সামগ্রী স্বরূপ। শ্রীগঙ্গোপাধ্যায়ও লিখেছেন, সুন্দরী সুবেশা তরুণীদের দাঁড় করিয়ে ছক কাটা ঘরে পাশা খেলতেন সম্রাট আকবর।

আকবরের কাছে বিবাহ আর ব্যভিচারের মধ্যে পার্থক্য ছিলনা। কোন কোন পণ্ডিতও বলেছেন, বিকানীরের রাজকন্যাকে আকবর বিয়ে করেছিলেন আবার তাঁরই গর্ভে সাথে খৃস্টানদের অবাধ মেলামেশা করার ক্ষেত্রে আকবরের যথেষ্ট উৎসাহ ছিল। তারই গর্ভে একটি সুন্দর সুস্থ সন্তান জন্মেছিল, আকবর সে নবজাতকের নাম তার মদপানের সাথী মিঃ দানিয়েলের নাম অনুসারে রেখেছিলেন, দানিয়েল। (দ্রঃ দুর্গেদুর্গে')

ইসলাম ধর্মে ভাগ্য গণনা বা হাত গণনা ইত্যাদি বিশ্বাস করা মারাত্মক অপরাধ। আকবর ইসলামের প্রতি সেখানেও আঘাত হেনেছেন। আকবর হিন্দু জ্যোতিষীকে বসিয়ে রাখতেন তার দরবারের চত্বরে এবং তিনি যা বলতেন আকবর তা-ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেনে নিতেন। যুদ্ধযাত্রা, প্রমোদ ভ্রমণ, প্রাসাদ নির্মাণ প্রভৃতি কাজে জ্যোতিষীর রায় গৃহীত হত। তবে অনেক মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে দ্বীনি ইলাহি'র সর্বজনপ্রিয়তার কথাও মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু যেহেতু আকবর তাকে বহুদিন ধরে ভক্তি করে এসেছেন তাই তখন ভক্তি করতে ইচ্ছা না হলেও অনেককে খুশি রাখতে মৌনতা পালন করা ছাড়া উপায় ছিলনা।

ইসলামের নামে অসভ্যতা, অনাচার, ইসলাম-ধ্বংসী কাজ, শিরক-বিদআত, বাউল-আউল, মিথ্যা মারেফতি ও অসভ্য মিথ্যাবাদী ফকির দলের নোংরামির উৎস আকবরের উৎসাহ এবং তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন। পরবর্তীকালে আওরঙ্গজেব অনেক বর্বরতা দূর করেছিলেন। কিন্তু আগাছা চাষ করার প্রয়োজন হয় না, সার দেয়ারও প্রয়োজন হয় না, এমনিই গজিয়ে ওঠে-তাই আজ এ আধুনিক যুগেও মাথা উচু কর গজিয়েছে বহু আগাছা ও বিষবৃক্ষ।

আকবর কিন্তু মৃত্যুর পূর্বাহ্নে তার অভিনয়ের মুখোস খুলে ফেলেছিলেন। সুদীর্ঘ ৪৯ বছর রাজত্ব করার পর ১৬০৫ খৃস্টাব্দে অজস্র স্ত্রীকে বিধবা করে পরলোকগমন করেন। আকবরের শেষ দশ বছরের ইতিহাস ভালভাবে পাওয়া যায় না। কারণ তাঁর মৃত্যুর দশ বছর আগে বিখ্যাত ঐতিহাসিক বাদাউনীর মৃত্যু হয়। অপর একজন ঐতিহাসিক আবুল ফজলও আকবরের মৃত্যুর বার বছর পূর্বেই নিহত হন। যাহোক, হিজরী ৯৯৯ সালে আকবর দেখলেন মাত্র আর এক বছর বাকি ১০০০ হিজরী সন পূর্ণ হতে, অথচ তিনি নতুন নবী বলে খ্যাতি লাভ করতে পারলেন না, ইমাম মাহদী ও মসীহ রূপে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করতেও পারলেন না।

তিনি ১০০০ হিজরী সনে বেশ বুঝতে পারলেন যে, তার সমস্ত স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই নয় বরং জাগরিত অবস্থায় দুঃস্বপ্ন দর্শন মাত্র। তাই মিঃ কীসিও বলেছেন-পরের বছরটা ছিল হিজরীর ৯৯৯ সাল। এবং তার পরেই এল ১০০০ হিজরী সাল। এক সহস্র বছরের যে ধোকা। ব্যাপকভাবে পোষণ করা হয়েছিল তার সমাধি রচিত হল এ ১০০০ হিজরী সনেই। (দ্রঃ টার্কস্ ইন ইন্ডিয়া, পৃষ্ঠা ৭২)

আকবরের মৃতদেহ কিন্তু দাহ বা নদীর বক্ষে নিক্ষেপ অথবা পশ্চিম দিকে পা রেখেও কবরস্ত করা হয়নি, সমাধি হয়েছিল সাধারণ মুসলমানের মতই। তবে বড় পরিতাপ ও অবাক হওয়ার কথা হল, যে অমুসলমানদের জন্য তার এত কাণ্ড এত পরিকল্পনা তারই আকবরের কবর খুঁড়ে অস্থিগুলোকে পর্যন্ত যতদূর সম্ভব অপবিত্র করে তুলে ফেলে দিয়েছিলেন। আকবর সম্বন্ধে আলোচনা আর বেশি নিষ্প্রয়োজন।

সদীর্ঘ আলোচনার পর কি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত তা সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তার বিষয়। তবে সব শেষে এটুকু বলে রাখা ও মনে রাখা ভাল যে, আকবরের হঠকারিতা, নিষ্ঠুরতা, স্ত্রী-লোলুপতা, শঠতা ও মদপানের অভিযোগের বিরাট বোঝাটি ঐতিহাসিকরা তার মাথা থেকে বহু টানাটানি করে নামিয়ে সেটাকে মুসলমান সুলতান, সম্রাট ও শাসকদের মধ্যে সমানভাবে পরিবেশন করে দিয়েছেন। তারই এক একটি ভাগ পেয়েছেন সুলতান মাহমুদ, মুহাম্মাদ বিন তুঘলক, সম্রাট বাবর, হুমায়ুন, আওরঙ্গজেব প্রভৃতি রাষ্ট্রনায়কেরা।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন