মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
এর জন্ম হয় ১৮১২ খৃষ্টাব্দে। ১৫ বছর বয়সেই তার বিয়ে হয়। অবশ্য পত্নী দুর্গামণি দেবীর সাথে তিনি আজীবন সংসার করেন নাই। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কোন সাধারণ লোক ছিলেন না, বরং অসাধারণই ছিলেন। কারণ, সে যুগের অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক পত্র-পত্রিকার বাজারে তিনি বিখ্যাত পত্রিকা 'সংবাদ প্রভাকর-এর সম্পাদনা করতেন। এছাড়াও সংবাদ রত্নাবলী', 'পাষণ্ড পীড়ন' প্রভৃতি তার সম্পাদিত সাময়িক পত্রিকা ছিল।
শুধু পত্র-পত্রিকা পরিচালনাতেই তিনি খ্যাতি লাভ করেননি, প্রবোধ প্রভাকর,' ‘হিত প্রভাবক', 'বোধে বিকাশ' প্রভৃতি গ্রন্থ তার দ্বারা রচিত হয়। সবচেয়ে মনে রাখার মত উল্লেখযোগ্য কথা হল স্বাধীনতা আন্দোলনের যিনি প্রতিষ্ঠাতা বলে কথিত সে বঙ্কিমচন্দ্রের ইনি ছিলেন ‘গুরু (দ্রষ্টাব্য আশুতোষ দেব সংকলিত নুতন বাঙ্গালা অভিধানের চরিতাবলী অধ্যায়ের ১১১৫ পৃষ্ঠা, ১৩৬১ বঙ্গাব্দ)
শ্রীগুপ্তের প্রভাব তাঁর শিষ্যগণের মধ্যে বঙ্কিমের উপরেই যে বেশি পড়েছিল তা পরের আলোচনায় পরিষ্কার হবে। শমিচন্দ্রের আলোচনা বঙ্কিম প্রসঙ্গে হবে, এখন শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের লেখনী প্রতিভা কোন দিকে কিভাবে কাজে লেগেছে তার পর্যালোচনা করা যাক। কলমের কালি লেখকের শিল্পনিপুণতার যেমন দেশের কল্যাণ সাধন করতে পারে, তেমনি কলমের অপব্যবহারে দেশে সৃষ্টি হতে পারে বিদ্বেষবাষ্প, হিংসার হিংস্রতা ও সাম্প্রদায়িকতার তাণ্ডলীলা।
অখণ্ড ভারত বর্ষে যখন ইংরেজের রাজত্ব তখন তাদের প্রয়োজন হয়েছিল এক লেখক, কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, ঐতিহাসিক ও বিশ্বস্ত কর্মচারীর। অবশ্য ইংরেজ জাতি সাফল্যের সাথে তা সংগ্রহ করেছিল হিন্দু এবং অহিন্দু সম্প্রদায় হতে। আর এ হিন্দু লেখক গোষ্ঠীর শুরু হিসেবে ধরা যেতে পারে শ্রীঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে, কারণ তার জন্যই বলা হয় আমাদের দেশের সকলের কবি:-অর্থাৎ শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত এবং নিরক্ষরদের কাছেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয়।
বঙ্কিমচন্দ্র তার সাহিত্য জগতের শুরু শ্রীঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের প্রশংসার বলেছেন, রাগে সর্বাঙ্গ জুলিয়া যায় যে, এখন আমরা সকলেই মোচা ভুলিয়া কেলা কা ফুল বলিতে শিখিয়াছি।... আর যেই যা বলুক ঈশ্বরগুপ্ত মোচা বলেন। তিনি আরও লিখেছেন, “মধুসূদন হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ শিক্ষিত বাঙ্গালীর কবি-ঈশ্বরগুপ্ত বাঙ্গালার কবি। এখন আর খাটি বাঙ্গালী কবি জন্মে না-জন্মিবার যো নাই-জন্মিয়া কাজ নাই মধুসূদন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের সাথে তুলনা করে শেষ সিদ্ধান্তে ঈশ্বরচন্ত্রের জন্য লিখেছে, “তাহার যাহা আছে তাহা আর কাহারও নাই। আপন অধিকারের ভিতর তিনি রাজা। (দ্রষ্টব্য শ্রীঅমরেন্দ্রনাথ রায় সংকলিত সমালোচনা সংগ্রহ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, চতুর্থ সংস্করণ ১৯৫৫, পৃষ্ঠা ২১৫-২১৭)
“শত্রুতা করিয়া তিনি কাহাকেও গালি দেন না। মেকির উপর রাগ আছে বটে..... তবে ইহা স্বীকার করিতে হয় যে, ঈশ্বরগুপ্ত মেকির উপর গালিগালাজ করিতেন। অশ্লীলতা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতার একটি প্রধান দোষ। তবে ইহাও জানি, ঈশ্বরগুপ্তের অশ্লীলতা প্রকৃত অশ্লীলতা নহে....ঈশ্বর ধর্মাত্মা, কিন্তু সেকেলে কবি। ঈশ্বরচন্দ্রের অশ্লীল লেখনীর স্বপক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে ঋষি বঙ্কিম ব্যারিষ্টারের মত বলেছেন, “পক্ষান্তরে, স্ত্রী-পুরুষের মুখ চুম্বনটা আমাদের সমাজে অতি অশ্লীল ব্যাপার, কিন্তু ইংরেজের চক্ষে উহা অতি পবিত্র কার্য (ঐ, পৃষ্ঠা ২১৯-২২৩)
“তিনি ঈশ্বরকে (অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তাকে) নিকটে দেখিতেন, যেন প্রত্যক্ষ দেখিতেন, যেন মুখামুখী হইয়া কথা কহিতেন। আপনাকে যথার্থ ঈশ্বরের পুত্র, ঈশ্বরকে আপনার সাক্ষাৎ মূর্তিমান পিতা বলিয়া দৃঢ়বিশ্বাস করতেন ঋষি বঙ্কিম ঈশ্বরগুপ্তকে। সৃষ্টিকর্তার পুত্র প্রমাণ করেই ক্ষান্ত হলেন না, শেষে লিখলেন, 'ধন্য ঈশ্বরচন্দ্র! তুমি পিতৃপদ লাভ করিয়াছ সন্দেহ নাই। আমরা কেহই তোমার সামালোচক হইবার যোগ্য নহি। (পৃষ্ঠা ২২৬) বঙ্গের সমস্ত কবিদের সামনে রেখে বঙ্কিম লিখেছেন, “এমন বাঙ্গালীর বাঙ্গালা ঈশ্বরগুপ্ত ভিন্ন আর কেহই লেখে নাই-আর লিখিবার সম্ভাবনাও নাই। কেবল ভাষা নহে, ভাবও তাই।” বঙ্কিম শ্রীগুপ্তের রাজনীতির উপর মন্তব্য করে বলেছেন, “ঈশ্বরচন্দ্রের রাজনীতি বড় উদার ছিল। তাহাতেও যে, তিনি সময়ের অগ্রবর্তী ছিলেন, সে কথা বুঝাইতে গেলে অনেক কথা বলিতে হয়, সুতরাং নিরঙ হইলাম। (পৃষ্ঠা ২৩০, ২৩২)
বঙ্কিম যে ঈশ্বরগুপ্তের এক নম্বর ভক্ত ও শিষ্য ছিলেন উপরের লেখাতেই তা প্রমাণ হল কি না সেটা ছেড়ে দিয়েও রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলা যায়, বিবেচনা করিয়া দেখিতে হইবে, ঈশ্বগুপ্ত যখন সাহিত্য গুরু ছিলেন, বঙ্কিম তখন তাহার শিষ্য শ্রেণীর মধ্যে গণ্য ছিলেন। (ঐ, পৃষ্ঠা ২৫৩)
সুকুমার সেন বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাসের দ্বিতীয় খণ্ড ঈশ্বরগুপ্তের জন্য বলেছেন, তিনিই হচ্ছেন আধুনিক কালের কবি গোষ্ঠীর প্রথম প্রবর্তক। আরও বরেছেন, “রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ অধিকারী, দীনবন্ধু মিত্র ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-তাঁর এ চারি
মুখ্য শিষ্যের মধ্যে একমাত্র রঙ্গলালই কবিতার সরণি শেষ অবধি আঁকড়াইয়া ছিলেন। দ্বারকানাথ অল্প বয়সে মারা যান। বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাসের পথ ধরেন, দীনবন্ধু নাটক প্রহসনের।" (পৃষ্ঠা ১০১)
যাঁরা বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত তাদের উদারতা, মহত্ব বীরত্ব ও স্বাধীনতা-প্রবণতা থাকলে তা যেমন মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে, তেমনি সম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতা, কাপুরুষতা ও গোলামীপ্রবণতা থাকলে তার প্রভাবও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য। তাই এখানে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের লেখার কিছু চাপা পড়া নমুনা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে মাত্র। কলমের কালি কেমন করে হিন্দু-মুসলমানের মাঝে প্রাচীর তুলতে পারে, কেমন করে দেশকে ভাগাভাগি করতে পারে, কেমন করে ঈংরেজের বন্দনা করতে পারে, কেমন করে স্বাধীনতা আন্দোলনকে চেপে দিতে পারে তা গভীর চিন্তাসহ লক্ষ্য করার বিষয়।
মুসলমানদের খুশী করার জন্য অথবা হেয় করার জন্য ঈশ্বরগুপ্ত নিজে বা কারোর গোপন ইঙ্গিতে লিখলেন-
“একেবারে মারা যায় যত চাঁপদেড়ে (দাড়িওয়ালা)
হাসফাস করে যত প্যাঁজখোর নেড়ে।
বিশেষতঃ পাকা দাড়ি পেট মোটা ভুঁড়ে।
রৌদ্র গিয়া পেটে ঢোকে নেড়া মাথা ফুড়ে।
কাজি কোল্লা মিয়া মোল্লা দাঁড়িপাল্লা ধরি।
কাছাখোল্লা তোবাতাল্লা বলে আল্লা মরি।”
মুসলমান জাতি কত অসভ্য, মুর্খ ও শুদ্ধ কথা বলায় অপটু, অথবা তার বিপরীত কিছু একটা প্রমাণের জন্য তিনি লিখেছেন:-
“দিশি পাতি নেড়ে যারা,
তাতে পুড়ে হয় সারা,
মলাম মলাম মামু কর।
হ্যাদুবাড়ি খেনু ব্যাল
প্যাটেতে মাখিনু ত্যাল
নাতি তবু নিদ নাহি হয়।
এঁদে দেয় ফুফু নানী।
কুই ডেলের পানি,
ক্যাচাক্যালা কেচুর ছাল।..."
ইংরেজ বিতাড়নে যখন মুসলমানরা উঠে পড়ে লেগেছেন তখন বঙ্কিমবাবুদের গুরু লিখলেন-
“চিরকাল হয় যেন ব্রিটিশের জয়!
ব্রিটিশের রাজলক্ষ্মী স্থির যেন রয়।”
“ভারতের প্রিয়পুত্র হিন্দু সমূদয়।
মুখে বল সবে ব্রিটিশের জয়।"
("দিল্লির যুদ্ধ', গ্রন্থাবলী',পৃষ্ঠা ১৯১)
প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনকে কৌশলে সিপাহী যুদ্ধ নাম দিয়ে ইতিহাসকে কেমনভাবে পাল্টাবার চেষ্টা করা হযেছিল, তখনকার পত্রিকা, কবি-সাহিত্যিক ও উপন্যাস-স্রষ্টাদের ভূমিকা মন দিয়ে দেখলে তা বোঝা যাবে। শুধু তাই নয়, ইতিহাসের প্রকৃত রূপরেখা অঙ্কনেও তা যথেষ্ট সাহায্য করবে। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে লড়াই থেকে হিন্দু যুবক ও বিরঙ্গনা যুবতীদের কোন কায়দায় থামিয়ে রাখা হয়েছিল, এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়-কলমের যাদু!
ব্যাপকভাবে যখন অমুসলমান জোয়ানরা আন্দোলনে যোগ দিলেন না তখন স্বাভাবিকভাবেই মুসলমানদের পরাজিত হতে হল। দখল করা দিল্লি ছেড়ে পালাতে হল। ঠিক তখন ঈশ্বরগুপ্ত লিখলেন:-
“ভয় নাই আর কিছু ভয় নাই আর।
শুভ সমাচার বড় শুভ সমাচার।
পুনর্বার হইয়াছে দিল্লী অধিকার।...":
দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ও বেগম জিনাত মহলে যখন বন্দী হলেন তখন তাদের পুত্রদের হত্যা করে কাটা মাথাগুলো বাহাদুর শাহকে উপঢৌকন দিয়ে নিষ্ঠুর উপহাস করা হয়েছিল। ঈশ্বরগুপ্ত ঐ ঘটনাকে সামনে রেখে লিখলেন:-
“...বাদশা বেগম দেহে ভোগে কারাগার।
অকারণে ক্রিয়াদোষে করে অত্যাচার।
মরিল দুজন তার প্রাণের কুমার।
একেবারে ঝাড়ে বংশে হল ছারখার।”
এক সময় অত্যাচারী ইংরেজরা যখন মুসলমানদের হাতে মার খাচ্ছিল তখন বেদনায় ব্যথিত হয়ে গুরু ঈশ্বরগুপ্ত লিখলেন :
“দুর্জয় যবন নষ্ট,
করিলেক মান ভ্রষ্ট
সব গেল ব্রিটিশের ফেম।
শুকাইল রাঙ্গা মুখ,
ইংরাজের এত দুখ,
ফাটে বুক হায় হায় হয়।”
বঙ্কিম-গরুর কামনা ছিল, মুসলমানরা পরাজিত হয়ে ইংরেজরা যেন জয়ী হয়-তাই লিখলেন :
‘যবনের যত বংশ,
একেবারে হবে ধ্বংস
সাজিয়াছে কোম্পানীর সেনা।”
“গরু জুরু (স্ত্রী) লবে কেড়ে
চাপদেড়ে যত নেড়ে
এই বেলা সামাল সামাল।”
বিপ্লবে মুসলমানদের সাথে হিন্দুরা কেহ যোগ দেন নি, এ কথা ঠিক নয়। লক্ষ্মীবাঈ, জাতিরা তোপী, নানা সাহেবও কুমার সিংহের মত অনেক বীর যে তাঁদের প্রাণ বিসর্জণ দিয়েছেন ইতিহাস তার জীবন্ত সাক্ষী। নানার মত বীরকে তিনি সৃষ্যি এড়ে দস্যি ছেড়ে লেই ক্ষান্ত হননি, আরও লিখলেন
নানা পাপে পটু নানা নাহি শুনে না, না।
অধর্মের অন্ধকারে হইয়াছে কানা।
তাল-দোষে তাল তুমি ঘটালে প্রমাদ।
আগেতে দেখেছে ঘুঘু শেষে দেখ ফাদ।
(নানা সাহেব-গ্রন্থাবলী", পৃষ্ঠা ১৮৯)
সম্মানীয়া নারী শহীদ লক্ষীবাঈ-এর জন্য লিখেছেন:-
“হ্যাদে কি শুনি বাণী, ঝাসীর রাণী,
ঠোঁট কাটা কাকী।
মেয়ে হয়ে সেনা নিয়ে, সাজিয়াছে নাকি!
“নানা তার ঘরের ঢৈঁকি...
হয়ে শেষে নানার নানী, মরে রাণী
দেখে বুক ফাটে
কোম্পানীর মুলুকে কি বগিগিরি খাটে।”
(কানপুরের যুদ্ধ জয়-গ্রন্থাবলী, পৃষ্ঠা ১৯০)
অপর দিকে রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রতি ভক্তিতে লিখলেন :
“এই ভারত কিসে রক্ষা হবে
ভেব না মা সে ভাবনা।
সেই তাতিয়া তোপীর মাথা কেটে।
আমরা ধরে দেব না না।"
(পৃষ্ঠা ১৩৬)
বৃটিশের প্রতি আনুগত্যে ও বৃটিশ-অনুগত যারা তাদের সাহস যোগাতে লিখলেন:
“জয় হোক ব্রিটিশের, ব্রিটিশের জয়।
রাজ-অনুগত যারা, তাদের কি ভয়।”
(গ্রন্থাবলী: পৃষ্ঠা ৩২০)৷
এ ধরণের লেখাই যে আজ ভারতকে বিভক্ত করেছে, মানুষের মনে বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ কোথায়? অবশ্য কেহ কেহ বলতে পারেন, উল্লিখিত উদাহরণগুলো তো সব কবিতার অংশ, কবিতায় কবির ভাব কখন কি হয় বলা দায়। যদি তাই-ই হয়, তাহলে এবারে তার অন্যান্য লেখনী অর্থাৎ তখনকার যে কাগজের তিনি সম্পাদক ছিলেন সে বিখ্যাত সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদকীয় কলমের উপর দৃষ্টি দেয়া যাক।
একেবারে ১৮৫৭-র জুন মাসের ২০ তারিখের সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদকীয় থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হল-“কয়েকদল অধার্মিক অবাধ্য অকৃতজ্ঞ হিতাহিত বিবেচনাবিহীন এতদেশীয় সেনা অর্ধার্মিকতা প্রকাশ পূর্বক রাজবিদ্রোহি হওয়াতে রাজ্যবাসী শান্ত স্বভাব প্রজা মাত্রেই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। ঈশ্বরগুপ্ত সম্পাদকীয় কলমে আরও লিখলেন-“ষবনাধিকারে আমরা ধর্ম বিষয়ে স্বাধীনতা প্রাপ্ত হই নাই, সর্বদাই অত্যাচার ঘটান হত।
মহরমের সময়ে সকল হিন্দুকে গলায় বদি অর্থাৎ যাবনিক ধর্মসুচক একটি সূত্র বান্ধিয়! দর্গায় যাইতে হইত, গমি অর্থাৎ নীরব থাকিয়া হাসান হোসেনের মৃত্যুর জন্য শোক চিহ্ন প্রকাশ করিতে হইত। কাছা খুলিয়া কুর্ণিশ করিয়া মোর্চ্চে নামক গান করিতে হইত। তাহা না করিলে শোণিতের সদ্র প্রবাহিত হইত। এক্ষণে ইংরাজাদিকারে সেই মনকাপ একেকালেই নিবারিত হইয়াছে, আমরা অনায়াসেই চার্চ নামক খ্রীস্টীয় ভজনামন্দিরের সম্মুখেই গভীর স্বরে ঢাক, ঢোল, কাড়া, তাসা, নহবত, সানাই, তুরী, ভেরী, বাদ করিতেছি, ‘হ্যাং ' শখে বলিদান করিতেছি, নৃত্য করিতেছি, গান করিতেছি, প্রজাপালক রাজা তাহাতে বিরক্ত মাত্র না হইয়া উৎসাহ প্রদান
করিতেছেন।..... নবাবী সময়ে আদর কায়দা করিতে করিতে কর্মচারিদিগের প্রাণাস্ত হইত। গড়ি, পালকি চড়া দূরে থাকুক হুজুরদিগের চক্ষে পড়িলে জুজুর মত সং সাজিয়া প্রাণ হাতে করিয়া থাকিতে হইত। বর্তমান রাজ মহাত্মারা যে বিষয়েই একেকারেই অভিমানশূন্য সমস্ত কর্মচারি যথোচিত মর্যাদার সহিত সুখে স্ব স্ব কর্ম নির্বাহ করিতেছেন, পথিকেরা কি মহারাণী কি গভর্ণর জেনারেল সকলের পাশ ঘেসিয়া নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে গমনাগমন করিতেছে। কেহ যদি সেলাম' না করে তাহাতে কিছুমাত্র ক্ষোভ নাই... যবনাধিকারে এই বঙ্গদেশের লোকেরা সময়ে সময়ে দস্যু, ভাস্কর বিশেষত: বর্গির হেঙ্গমায় হৃতসর্বস্ব হইয়া কি পর্যন্ত আন্তরিক যাতনা সম্ভোগ না করিয়াছেন। এইক্ষণে সেই যাতনার জাত নাই।”
সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকারের প্রতি হিন্দুর রাজভক্তি কমবে না-এ কথা স্মরণ করিয়ে সম্পাদক ঈশ্বরগুপ্ত লিখেছেন: “জগীশ্বর আপন ইচ্ছায় বিদ্রোহিদিগ্যে শাসন করুন, যাহারা বিদ্রোহি হয় নাই, তাহারদিগের মঙ্গল করুন, কোন কালে যেন তাহাদিগের মনে রাজভক্তির ব্যতিক্রম না হয়। হিন্দু সমাজের পক্ষ হতে সম্পাদক আরও লিখলেন, “হে ভাই, আমারদিগের শরীরে বল নাই, মনে সাহস নাই, যুদ্ধ করিতে জানি না, অতএব প্রার্থনাই আমারদিগের দুর্গ, ভক্তি আমাদিগের অস্ত্র এবং নাম জপ আমাদিগের বল..."।
১৮৫৭-র অগ্নিবর্ষের ২৯শে জুনের সম্পাদকীয় থেকে আর একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরছি-“অবাধ যবনেরা উপস্থিত বিদ্রোহ সময়ে গবর্ণমেন্টের সাহায্যার্থ কোন প্রকার সদনুষ্ঠান না করাতে তাহারদিগের রাজভক্তির সম্পূর্ণ বিপরীতাচরণ প্রচার হইয়াছে এবং বিজ্ঞ লোকেরা তাহারদিগের নিতান্ত অকৃতজ্ঞ জানিয়াছেন....যে সকল স্থানে বিদ্রোহানল প্রজ্জ্বলিত হইয়াছে তাবত স্থানেই যবনরা অস্ত্র ধারণ পূর্বক নিরাশ্রয় সাহেব বিবি বালক বালিকা এবং প্রজাদিগের প্রতি হৃদয় বিদীর্ণকর নিষ্ঠুরাচরণ করিয়াছে, সাহেবের মধ্যে অনেকে আপনাপন বহুকালের যবন ভৃত্যের দ্বারা হত হইয়াছেন, অধুনা যখন প্রজাদিগের প্রতি গবর্ণমেন্টের এতম অবিশ্বাস জন্মিয়াছে যে এই নগরে যে স্থানে অধিক যবনের বাস সেই স্থানেই অধিক রাজপ্রহরী নিযুক্ত হইয়াছে, নাগর্য বলন্টিয়ার সেনাগণ অতি সতর্কভাবে মাদরাসা, কলেজ রক্ষা করিতেছেন, যবনদিগের অন্তঃকরণে কি কারণ গবর্ণমেনেন্টর প্রতি বিরূপ ভাবের আবির্ভাব হইয়াছে তাহা আমরা কিছুই নিরূপণ করিতে পরিলাম না।”
মুসলমান বিপ্লবীদের যখন নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হচ্ছির ঠিক তখন-২২.৬, ১৮৫৭-র সংবাদ প্রভাকরের সংবাদে নয়, সম্পানকীয়তে ছাপা হল-“বন্য পশু শিকার নিমিত্ত শিকারিগণ যেমন পরমানন্দে দলবদ্ধ হই। গমন করে, শ্বেতাঙ্গ সৈন্যগণ সেরূপ পূলকিত চিত্তে সিপাই শিকারে গমন করিতেছে, নরাধম অকৃতজ্ঞদিগের আর রক্ষা নাই...।
অপর একটি সম্পাদকীয়তে ঈশ্বরগুপ্ত মুসলমানদেরকে উপদেশ দিয়ে লিখলেন, তোরা এখনো ক্ষান্ত হ....তোদের কুমন্ত্রণাতেই তৈমুর বংশ একেবারে ধ্বংস হইল, তোদের দোষেই প্রাচীন রাজধানী দিল্লিনগর রসাতলশয়ী হইল, তোদের দোষেই দিল্লীশ্বরের কারাবাস হল...দওরে দুরাত্মারা.....গলবন্ত্রে বিশ্ববিজয়ী বৃটিশ গভর্ণমেন্টের নিকট শির নত ফর...দয়াবান গভর্ণমেন্ট অপরাধ মার্জনা করিবেন....রাজানুগত্য স্বীকার করিলে জগদীশ্বর তোদের প্রতি কৃপানেত্রে নেত্রপাত করিবেন।”
স্বাধীনতা আন্দোলনের মুক্তিযোদ্ধারা পরাজিত হয়ে যখন নেপালের গভীর অরণ্যে ও পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করেছিলেন তখন বিপ্লবীদের লক্ষ্য করে বঙ্কিমের গুরু ঈশ্বরচন্দ্র এ সংবাদ প্রভাকরেই লিখলেন-"....নেপাল-দেশের অরণ্য পর্বতাদি স্থানে ঝিলবিল কিলবিল করিতেছে, দুরাত্মাদের দুরাবস্থা দৃষ্টে কান্না পায়, দুঃখও বোধ হয়, আবার
রঙ্গরস দেখিয়া হাসিতেও হয়...অরগুণে নয়, বরগুণে দড়...প্রায় ভাবতেই কেহ জেনারেল, কেহ কর্ণেল, কেহ ক্যাপন্টেন ইত্যাদি উপাধি ধারণ করিয়াছে, নবাব, দৌলা, খাঁ, বাহাদুরের তো ছড়াছড়ি হয়েছে, আবার দুই চারিজন নাক-কান-কাটা কমাণ্ডার ইন-চিফ বাহাদুর এবং লার্ড গবর্ণর জেনের সাহেব ইত্যাদিও হয়েছে, বাবাজীদের রাজ্য তো পাঁচপোয়া কিন্তু কলেক্টর মেজিস্ট্রেট, জজ, দেওয়ান, খাজাঞ্চি সঙ্গে সঙ্গেই রহিয়াছে, আহা।
নেড়ে চরিত্র বিচিত্র, ইহারা অদ্যজুতা গড়িতে গড়িতে কল্য সাহাজাদা পিরজাদা খাজাদা' নবাবজাদা হইয়া উঠে, রাতারাতি একে আর হইয়া বসে, যাহা হউক বাবাজীদের মুখের মতন হইয়াছে, জঙ্গের রঙ্গ দেখিয়া অন্তরঙ্গভাবে গদগদ হইয়াছিলেন, এদিকে জানেন না যে বাঙ্গাল বড় হেঁয়াল...'।” আন্দোলন থামার পর ব্যাপকভাবে ফাঁসি, দ্বীপান্তর ও কারাবাসের শান্তি বিশ্বেতঃ মুসলমানদের ভাগ্যে যখন নেমে এর তখন সম্পাদকীয়তে সম্পাদক আরও জানালেন, ফাঁসির জন্য তিনি বা তারা খুব খুশী, তবে শ্বেতাঙ্গদের শাস্তির ব্যাপারেও যেন পক্ষপাতিত্ব না করা হয়। (বিনয় ঘোষ সম্পাদিত ও সংকলিত সাময়িক পত্রে বালার সমাজ চিত্র প্রথম খণ্ড, সংবাদ প্রভাকর,' রচনা সংকলন, কলিকাতা ১৯৬২-র ২২৬-৫২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)
নিরপেক্ষ কোন হিন্দু তখন দেশে ছিলেন না, একথাও ঠিক নয়। অবশ্য এও ঠিক যে, নিরপেক্ষ যাঁরা ছিলেন তাদের প্রভাব এদের তুলনায় ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। বঙ্কিমচন্দ্র, সুকুমার সেন প্রভৃতি লেখকরা ঈশ্বরগুপ্তের জন্য অনেক কিছু লিখে থাকলেও শ্রীতারাপদ মুখোপাধ্যায় কিন্তু লিখেছেন-সংরক্ষণশীল মনের সুদৃঢ় সংস্কারের যখন কম্পন লাগিয়াছে তখন ইংরেজের শিক্ষা সভ্যতার উপর তিনি বিষেদগার করিয়াছেন, ইহা ছাড়া প্রকৃত দেশপ্রীতি ঈশ্বরচন্দ্রের ছিল বলিয়া মনে হয়না।" (দ্রষ্টব্যঃ আধুনিক বাংলা কাব্য" মিত্র ও ঘোষ, দ্বিতীয় সংস্করণ-১৯৫৯, পৃষ্ঠা ৫৭)
অপর দিকে বঙ্কিমচন্দ্র তার ও তাদের গ্রুপের মহান গুরু ঈশ্বরগুপ্তের জন্য যা লিখেছেন তা বহু মানুষের ভক্তিমাল্য ছিন্ন করে। তার ভাষায়-ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত “খাটি জিনিস বড় ভালবাসিতেন, মেকির বড় শত্রু। একথা যদি সত্য হয় তাহলে মেনে নিতে হবে-যেহেতু ঈশ্বরগুপ্ত ১৮৫৭ সনের স্বাধীনতা বিপ্লবের তীব্র বিরোধিতা ও শত্রুতা করেছিলেন সেহেতু এ স্বাধীনতা আন্দোলন আসল ছিলনা, বরং তা মেকি ও নকল ছিল। এও মেনে নিতে হবে যে, স্বাধীনতার চেষ্টা করা ছিল অন্যায় কাজ আর ইংরেজের গোলামী করা ছিল মহান কাজ। সে সাথে স্বভাবতই এ প্রশ্নও আসে-ভারতের স্বাধীনতা বিপ্লবীরা কি তাহলে সবাই সুপথগামী, কুপথগামীঃ-এর উত্তর চিন্তাশীল পাঠক ও সূক্ষ্মদর্শীরাই দিবেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/53
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।