মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সবুক্তগীনের মৃত্যুর পর তার যোগ্যতম পুত্র সুলতান মাহমুদ আবির্ভূত হন ৯৯৭ থেকে ১০৩০ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত তার উদয় ও অস্তকাল নির্ধারিত।
শ্রীবিনয় ঘোষ তার জন্য লিখেছেন, “পিতাকে রাজা জয়পালের সহিত সন্ধি করিতে তিনিই নিষেধ করিয়াছিলেন। সুতরাং আরও দ্বিগুণ উৎসাহে হিন্দুস্থান অভিযান ও লুঠতরাজ করা তাহার পক্ষে স্বাভাবিক। ১০০০ - ১০২৬ খৃষ্টাব্দের মধ্যে অর্থাৎ ২৬ বছর ধরিয়া ক্রমান্বয়ে সুলতান মাহমুদ ১৭ বার ভারত অভিযান করেন।” ‘কিন্তু কাথিওয়াড়ের বিখ্যাত সোমনাথ মন্দির আক্রমণ ও লুণ্ঠন (১০২৫ খৃষ্টাব্দে) মাহমুদের নিকৃষ্ট অপকীর্তি বলিয়া ইতিহাসে নিন্দিত হইয়াছে। মন্দিরের ভিতরে কত যে মণিমুক্তা ও সোনার জিনিস ছিল তাহার হিসাব নাই। রাজপুত রাজারে প্রাণ অপেক্ষাও প্রিয় ছিল এই মন্দির।
তাঁহারা সকলে মিলিত হইয়া মন্দির রক্ষা করিবার চেষ্টা করেন। গুজরাটের রাজা ভীমদেব প্রতিরোধ-সংগ্রামে অগ্রণী হন। প্রায় ৫০০০ হিন্দু যোদ্ধা এই মন্দির রক্ষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেন। কিন্তু মন্দির রক্ষা করা সম্ভব হয় নাই। মাহমুদ মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করিয়া সব ধ্বংস করিবার আদেশ দেন। ব্রাহ্মণরা প্রচুর ধনসম্পদের বিনিময়ে মন্দিরটি ভিক্ষা চান, কিন্তু মাহমুদ তাহার উত্তরে বলেন যে তিনি হিন্দু দেবমুর্তি বিক্রেতা হইতে চান না দেবমূর্তি বিনাশী হইতে চান।
"বিধর্মীর উচ্ছেদ-সাধন ইসলামধর্মে প্রশংসনীয় কর্ম হইলেও তাহার ব্যাখ্যা মামুদের দৃষ্টান্ত দিয়া করা সঙ্গত নহে।" সুলতান মাহমুদ খুব উৎসাহী, উচ্চাকাঙ্কী, শ্রেষ্ঠ সৈন্যাধ্যক্ষের অন্যতম এ শ্রেষ্ঠ বিজেতা ছিলেন। তাঁর সতর বার ভারত আক্রমণ করার পশ্চাতে ভারতীয় রাজগণ কর্তৃক সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ, তার আনুগত্য অস্বীকার এবং ভারতীয় মিত্রবর্গকে উৎপীড়ন প্রভৃতি ছিল অনিবার্য কারণ। তাঁকে সোমনাথের মন্দির লুণ্ঠনকারী এবং অনেক অনাচারের নায়ক বলে অভিহিত করা হয়েছে ইতিহাসে। একথাও আমরা বলতে চাই না যে, তার কোন ভুল ত্রুটি ছিল না বা তার দারা কেহ কোনদিন কোনভাবে কষ্ট পাননি। তাহলে আরও পরিষ্কার করে বলতে হয়-গজনীর আমীর আলপতিগণের মৃত্যুর ১৪ বছর পর তার জামাতা সুবুক্তিগীন সুলতান হন। তিনি খুব প্রতাপশালী শাসক ছিলেন।
এ সময় ভারতের পাঞ্জাব শাহী রাজা জয়পালের চিন্তা হল, কাবুল হতে যদি তিনি ভারত আক্রমণ করেন তাহলে তাকে ঠেকানো একা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং রাজা জয়পাল উত্তর ভারতের প্রায় প্রত্যেক হিন্দু রাজাদের সংঘঠিত করে একযোগে সুবক্তগীনকে আক্রমণ করবেন বলে ঠিক করলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, জয়পালের এ সংগঠন ক্ষমতা প্রশংসার দাবীদার। যাই হোক, সম্মিলিত শক্তি নিয়ে সঙ্গীনের সাথে গজনী এবং লাঘমানের মাঝামাঝি ঘুজুক নামক স্থানে ভাষণ যুক্ত হয়।
জয়পালের সম্মিলিত বাহীনীকে সবুক্তগীন সাংঘাতিকভাবে পরাজিত করেন। জয়পাল প্রাণ বাঁচিয়ে বিজয়ী মুসলমান রাজার সঙ্গে কয়েকটা সন্ধিতে সই করে দলবল নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন ও বাড়ি এসেই সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করলেন। এ সংবাদে সুলতানের জয়পালের উপর রাগ হয়, তাই তিনি প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করেন। ৯৯৭ খৃষ্টাব্দে তিনি এ কাজের দায়িত্ব সুযোগ। বরপুত্র মাহমুদের উপর দিয়ে পরলোকগমন করেন।
“কোনমতে প্রাণ বাঁচিয়ে দলবলসহ স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অল্পকাল পরেই জয়পাল স্বীকৃত সন্ধি ভঙ্গ করলেন। জয়পালের আগ্রাসী মনোভাব ও বিশ্বাসঘাতকতা সুলতান সবুক্তগীনের মনে স্বভাবতই উন্মত্ত উষ্মা জাগাল, কিন্তু শঠ জয়পালকে শাস্তি দিয়ে যাওয়ার সুযোগ তিনি পেলেন না, সে দায়িত্ব একাধারে অসাধারণ জ্ঞানী ও যোদ্ধা পুত্র মাহমুদের উপর অর্পন করে ৯৯৭ খৃস্টাব্দে তিনি মারা গেলেন।" (শ্রীদাশগুপ্তের ভারত বর্ষ ও ইসলাম, পৃষ্ঠা ৩০)
সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে নাকি বলেন, এ আক্রমণ ধর্মীয় কারণেই কিন্তু ধর্মীয় কারণেই যদি মন্দির আক্রমণের ইচ্ছা বা নিয়ম থাকত তাহলে ১৭ বারের মধ্যে প্রথম বারেই তা হত, শেষবারে অর্থাৎ ১৬ বার আক্রমণের পরে তা ঘটত না। আসলে ওগলো ভরা মৌচাকের মত ধনভাণ্ডার হয়ে থাকত, আর মধুলোভীর দল তা খাওয়ার জন্য বারবার ফিরে আসত। বর্তমান যুগের মন্দিরগুলো শুধু দেবতা কেন্দ্রিক হলে আক্রমণের ব্যাপার থাকত না।
১০০০ খষ্টাব্দে মাহমুদ প্রাথমিক অভিযানের ফলস্বরূপ সীমান্তস্থিত কয়েকটি দুর্গ অধিকার করেন। পরের বছর তিনি জয়পালের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে জয়পাল তার পুত্র-পৌত্রসহ বন্দীত্ব বরণ করেন, কিন্তু করের প্রতিশ্রুতিতে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে পরাজয়ের গ্লানি থেকে আত্মরক্ষার নামান্তরে আগুনে প্রাণ বিসর্জন দেন। ১০০৫ খৃস্টাব্দে মুলতান অধিকৃত হয়। অতপর মুলতানের শাসনকর্তা দাউদকে বিদ্রোহাত্মক কার্যে সহায়তার অভিযোগে মাহমুদ জয়পালের পুত্র আনন্দপালের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ অভিযান প্রেরণ করেন।
আনন্দ পালের সন্ধি-নীতির ফলে সম্মিলিত হিন্দু বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েও পরিশেষে মাহমুদের জয় হয়। ১০০৯ খৃষ্টাব্দে তিনি নারায়ণপুরের রাজাকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। ১৯১২ খৃস্টাব্দে থানেশ্বরের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং তা অধিকার করেন। ১০১৮ খৃস্টাব্দে এক বৃহৎ সেনাবাহিনী পুরোভাগে থেকে তিনি গজনী রওনা হলেন। এ সময় বারণের রাজা দশ হাজার সৈন্যসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এক কথায় তার সুদীর্ঘ ৩৩ বছর কালব্যাপী ক্রমাগত যুদ্ধে তিনি একবার জন্যও পরাজয় বরণ করেননি।
সুলতান মাহমুদের ইতিহাসে সোমনাথ মন্দির অভিযান এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১০২৫ খৃস্টাব্দের শেষাংশে গজনী ত্যাগ করে সুলতান ১০২৬ খৃস্টাব্দের ৬ই জানুয়ারি সোমনাথের দ্বারে উপস্থিত হলে হিন্দুরা প্রবল বাধা প্রদান করেও পরাজিত হন। এ সোমনাথকে কেন্দ্র করেই আধুনিক সরকারী ইতিহাসে মাহমুদের ন্যায় স্বচ্ছ-চরিত্র বীরের উপর ভারতের মন্দিরসমূহ ধ্বংস করে ইসলামধর্ম প্রচারক, মূর্তি ভঙ্গকারী, অর্থলোলুপ, নরহত্যা ও লুণ্ঠনকারী ইত্যাদি অসংখ্য অপবাদ আরোপ করা হয়েছে।
অথচ প্রকৃত ইতিহাস এ সমস্ত ধারণার একটিও সত্য বলে প্রমাণ করেন। তাঁর ভারত আক্রমণ ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাপার। তদানীন্তন সময়ে ভারতের ধন সম্পদ, এমনকি অনেকের মতে জলদস্যুরাও তাদের লুণ্ঠিত অর্থ সোমনাথ মন্দিরে গচ্ছিত রাখত। এসব নানান কারণে সোমনাথ যখন মন্দিররুপী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল তখন আর মাহমুদের আক্রমণে কোন বাধা ছিলনা।
ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদও এ কথার সমর্থনে বলেন, "The temples of India which Mahinud raided were store houses of enormous and untold wealth and also some of these were political centres. হল-মাহমুদ ভারতের যে মন্দিরগুলো আক্রমণ করেছিলেন মেলে। বিপুল ও বর্ণনাতীত ধনরত্নে পূর্ণ ছিল এবং তাদের মধ্যে আবার কয়েকটি ছিল রাজনেতিক ক্রিয়াকলাপে
প্রত্যক্ষদর্শী বিখ্যাত ঐতিহাসিক আলবিরুনী বলেন, “বিদেশী বণিকদের কাছে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত সামগ্রীর বিক্রয়লব্ধ অর্থে যে সমস্ত হিন্দুরা ধনী হয়েছিল, তাদের দানের প্রাচুর্য দিয়েই এ সমস্ত ধনরত্ন সঞ্চিত হয়েছিল।"
অতএব, ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণেই তিনি মন্দির ধ্বংস করেছিলেন, একথা আদৌ সত্য নয়-ইংরেজ ঐতিহাসিক স্যার ডব্লিউ হেইগ বলেন, "Fis religious policy was based on toleration and though zealous for Islam, he maintained large body of Hindu troops and there was no reason to believe that conversion was a condition of their services." 29 oraid 5-0 ধর্মীয়নীতি সহিষ্ণুতার উপর গড়ে উঠেছিল এবং যদিও ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে তার উৎসাহ যথেষ্ট ছিল তথাপি তিনি এক বিরাট হিন্দু সৈন্যদল পোষণ করতেন এবং একথা বিশ্বস করারবা কোন হেতু নেই যে, ধর্মান্তর তাদের চাকরির জন্য একটা শর্ত স্বরূপ ছিল।
Prof. 1 tabit. ও বলেছেন, “The non-religious character his expedition will be obvious to the critic who has grasped the salient features of the age. It is impossible to read a religious motive in thein." TE 41
যার অর্থ হল--তার অভিযানের পিছনে কোন ধর্মীয় মনোভাবই যে বিদ্যমান নেই তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে সে সমালোচকের কাছে যিনি যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহকে সম্যক উপলব্ধি করতে পেরেছেন। মাহমুদ এবং তার সৈন্যদের মধ্যে ধর্মীয় উদ্দেশ্যের ছিচে-ফোটা পাওয়াও অসম্ভব ব্যাপার। সুলতান মাহমুদের ধর্মনীতি সম্বন্ধে মিঃ এলফিনষ্টোন বলেন, “এরকম ঘটনা কোথাও দেখা যায়নি যে, যুদ্ধ ব্যতীত কোথাও কোন হিন্দুকে তিনি প্রাণদণ্ড দান করেছেন।" তাঁর সামরিক বাহনীর ইতিহাসে তিলক রায়, হাজারী রায় এবং সেনানীর নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি গজনীতে হিন্দু সংস্কৃতি এবং সংস্কৃত সাহিত্যের উৎকর্ষ বিধানের জন্য একটি কলেজ, জনসাধারণের সুবিধার্থে একটি বাজার ও একটি মিউজিয়াম বা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ধর্মান্ধ হলে এ সমস্ত কাজ কি করে তার দ্বারা সম্ভব হত? এও উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারতে হিন্দু রাজন্যবর্গ ও মধ্য এশিয়ার মুসলমান রাজাদের সাথে তার ব্যবহারের কোন তারতম্য ছিলনা। তদুপরি ভারত অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে মন্দির ধ্বংস ও লুণ্ঠনের জন্য যে সমস্ত অভিযোগকারীরা তাঁকে লুণ্ঠনপ্রিয় ও হিন্দু বিদ্বেষী বলে প্রচার করতেন বা আজও করেন তাঁদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, এ সমস্তই যুদ্ধের ন্যায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হয়েছিল এব তাঁর পূর্ববর্তী ও তদানীন্তন যুগে তা আদৌ অসঙ্গত ছিলনা। তদানীন্তন প্রচলিত নীতি অনুসারে বিজিত জাতির লুণ্ঠিত ধন-সম্পত্তিতে বিজয়ী সৈন্যদের ন্যায্য অধিকার স্বীকার করা হত-মাহমুদ এ প্রচলিত নিয়ম পালন করেছেন মাত্র, এটা তার নতুন কিছু আবিষ্কার নয়।
আধুনিক সহজলভ্য ইতিহাসে সুলতান মাহমুদদের চরিত্রে এ সমস্ত কলঙ্ক আরোপ করা হয়েছে তার অনেকটাই অবিজ্ঞানপ্রসূত ও স্বপরিকল্পিত মন্তব্য ছাড়া কিছু নয়। সামগ্রিকভাবে তিনি ছিলেন দেহ মনে নানাবিধ গুণের সমবেশ অবিস্মরণীয় ব্যক্তি। তিনি বড়দেরকে মানতে জানতেন। অন্যায়ভাবে নিজ ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে কখনো স্বেচ্ছাচারিতা করতেন না।
খলিফার বৈধ প্রতিনিধি ছিলেন তিনি, সুতরাং ভালমন্ত সব কাজের কৈফিয়ত তাকে দেয়ার মত প্রস্তুতি তাঁর ছিল। এ সবের প্রমাণ মূল ইতিহাসে, যেমন কেরাইশীল সুলতানাত অ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের ২৫ পৃষ্ঠ পরিষ্কার লেখা আছে। তিনি নিয়মিত কুরআন পাঠ ও মসজিদে জামাতের সাথে নামায পড়তেন। এছাড়াও তাঁর রাজসভা কবি-সম্রাট ফিরদৌসী, মহাপণ্ডিত আলবিন, ঐতিহাসিক উবী, দার্শনিক ফারাবী প্রভৃতি মনীষীদের দ্বারা অলঙ্কত থাকত।
তিনি অত্যন্ত উদার ও ন্যায়পরায়ণ সুলতান ছিলেন। একটি ঘটনা দিয়ে বলা যায়-একবার দরিদ্র হিন্দু প্রজা সম্রাটের কাছে অভিযোগ নিয়ে এলেন যে, সম্রাটের ভাগ্নে নাকি তাঁর অসহায় স্ত্রীর উপর প্রতি সপ্তাহে পৈশাচিক অত্যাচার চালায়। সম্রাট তাঁকে সান্তনা দিয়ে নির্দেশ দিলেন, এবার যখনই তা ভাগ্নে তার বাড়ীতে যাবে সাথে সাথে তিনি যেন সম্রাটকে তা অবগত করান। তার হাতে একটা কার্ড দিয়ে জানালেন, এটা দেখালে যে কোন মুহর্তেই রাজভৃত্যরা তাকে সরাসরি সম্রাজের কাছে পৌঁছে দেবে। পরে একদনি রাত্রে সম্রাটের ভাগ্নে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হল। হিন্দু প্রজারা এ সুযোগের অপেক্ষাতে ছিলেন। তারা পরখ করবেন মুসলমান বাদশার ইসলামিক বিচার পদ্ধতি।
তৎক্ষণাৎ বাদশাহের কাছে খবর পৌঁছাল। বাদশাহ তরবারি হাতে সেই দরিদ্র প্রজার বাড়িতে উপস্থিত হলেন। টিমটিমে আলোয় দেখলেন এক উন্নত মস্তক যুবক ঘরের ভিতরে হিংস্র মূর্তিতে দাড়িয়ে আছে। তিনি ইশারায় আলোটি নিভিয়ে দিতে বলে উলঙ্গ তরবারি দিয়ে পিছন দিকে এক চোটে তাকে দ্বিখন্ডিত করলেন। তারপর গৃহকত্রীকে আলো জ্বালাতে নির্দেশ দিয়ে এক গ্লাস জল চাইলেন ও গ্লাসটির জল বসে তিন নিঃশ্বাসে শেষ করলেন।
অতঃপর দুরাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলেন, 'ওগো আল্লাহ, আমি যে তোমার পছন্দনীয় ইসলামের নিয়মানুযায়ী আমার এ হিন্দু প্রজার বিচারের ভার নিজ হস্তে সুসম্পন্ন করতে পারলাম তার জন্য তোমার অশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।' পরে হিন্দু প্রজা তাকে আলো নেভান ও জল পান করার কথা জিভেস করলে তিনি বললেন, স্নেহসিক্ত ভাগ্নের শিরচ্ছেদের পথে মায়া মমতার কোন বাধা সৃষ্টি না হয় তার জন্যই ছিল আলো নেভানোর নির্দেশ।
আর আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার অভিযোগের সুবিচার করতে পারছি ততক্ষণ জল স্পর্শ করব না, তাই এর মাথা কেটেই জলপান করতে চেয়েছিলাম, কারণ আমি তখনও অভুক্ত ও পিপাসায় কাতর ছিলাম। আরও অবাক হবার কথা এটা যে, হতভাগ্য যুবক আমার কোন ভাগ্নে নয়, সামান্য একজন রাজকর্মচারি মাত্র। ইসলামের এক বিচার পদ্ধতি দেখে সম্রাটের প্রজারা সেদিন আশ্চর্যান্বিত ও হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
আজ পৃথিবীর সে রাষ্ট্রের তত মর্যাদা দেয়া হয় যে রাষ্ট্র যত শক্তিশালী, আবার এ শক্তির পরিমাপ হয় সামরিক শক্তির উপর, আর তা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই বিপুল অর্থ। সুলতান মাহমুদ এ সত্যটুকু জানতেন। অথচ আমাদের ভারতীয় রাজাদের এ বিষয়ে ছিল কিছুটা অবহেলা। তখন বৈজ্ঞানিক অস্ত্র, ট্যাংক ও বিমান ছিলনা, ছিল হাতি ঘোড়া ও সৈন্যদের যুদ্ধ।
সে হাতি ঘোড়াদের বিশেষভাবে ট্রেনিং দেয়ার ক্ষেত্রে ছিল ভারতীয়দের শৈথিল্য, আর মাহমুদ এ বিষয়ে ছিলেন ভয়ানক সজাগ। তার বাহিনীতে শুধু একহাজার ছয়শত সত্তরটি শিক্ষিত হাতি ছিল যার প্রমাণ বাইহাকীর লেখা তারিখ বাইহাকি ইতিহাসের ৩৪৯ পাতায় রয়েছে। সুলতানারা জানতেন একটা হাতি ৫০০ অশ্বারোহী সৈন্যের সমান। এ মূল্যায়নের প্রমাণ পাওয়া যাবে ইবনে বতুতার লেখা রিসালাতের দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৫ পাতায়।
হাতি দিয়ে যে কাজ হয় ঘোড়া দিয়ে তা হয় না। আবার ক্ষিপ্রতার সাথে আক্রমণ প্রতিঘোড়ার দ্বারা যেভাবে হয় হাতি দিয়ে তা হয় না। মাহমুদের সময় সার্কাসের ঘোড়ার মত সুদক্ষ টেপ্রনিং প্রাপ্ত ঘোড়ার সংখ্যা ছিল এক লাখ বিশ হাজার। সুলতান মাহমুদ ব্রাহ্মণ বা হিন্দুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করতেন। যদিও এর প্রমাণ তারিখ বাইহাকীর মত আকর গ্রন্থে রয়েছে (পৃষ্ঠা ৬১৩, ৭৫৬)
তবুও অনেক বাংলা অনুবাদক ও লেখকের তা লিখতে মনে থাকে না। মাহমুদ হিন্দুদের বিচার হিন্দু আইনমত করবার ব্যবস্থা মেনে চলতেন এবং এ নিয়মকে করেই ভারতীয় সংবিধান চলত-কোরাইশীর লেখা সুলতানাত অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ১১ পাতায় এর প্রমাণ রয়েছে।
(ক) মাহমুদের গঠনমূলক প্রতিভা ছিল অত্যন্ত অধিক, (খ) তার রাজ্যবিস্তৃত ছিল দু'হাজার মাইল লম্বা পূর্ব-পশ্চিমে আর উত্তর-দক্ষিণে চৌদ্দ শত মাইল (গ) তার রাজ্যে প্রত্যেকে সুখ ও শান্তির ছায়ায় আরামে থাকত, (ঘ) সে যুগে মাহমুদের মত এত ভাল রাজা আর কেহই ছিলেন না। ‘ক’-এর প্রমাণ ডক্টর ঈশ্বরী প্রসাদের Mediaeval India-র ৯০ পৃষ্ঠা ‘খ’—-নাযিমের ইতিহাসের ১৬৯ পৃষ্ঠা, ‘গ'-গীবন, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৩ ও ‘ঘ’-এর প্রমাণ মিঃ এলফিনষ্টোন এর ইতিহাসের ৩৩৪ পাতায় পাওয়া যাবে। মিঃ গীবন তাকে আলেকজান্ডার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলেছেন- "The Sultan of Gazani surpassed the limits of conquest of Alexander.“ (Gibbon, Vol. VI, P. 241)
কেমব্রিজ হিষ্ট্রী অফ ইভিয়ার ৩য় খণ্ডের ৫৭৪ পাতায় স্যার জন মার্শাল লিখেছেন, “মহামতি মাহমুদ তাহার অব্যবহিত পরবর্তী সুলতানদের আমলে স্থাপত্যের আড়ম্বরে গজনী খেলাফতের সমস্ত নগরের মধ্যে বিখ্যাত হইয়া দাঁড়ায়।"Mr. keene বলেছেন মাহমুদ যেমন বি রাজ্য জয় করতেন তেমনি বিজ্ঞতার সঙ্গে সুশাসন করতেও সক্ষম হয়েছেন। [History of India, Vol. 1. P. 30]
“স্থলদর্শী ঐতিহাসিকদের অন্ধ অনুকরণের ফলে সুলতান মাহমুদের ন্যায় আর কারোর চরিত্র সম্ভবত এত বিকৃতপ্রাপ্ত হয় নাই"—ডক্টর এম, আবদুল কাদের। ডক্টর নামিও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রবন্ধ লিখে পি-এইচ, ডি, উপাধি পেয়েছেন তাতে বলেছেন, “মাহমুদ জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা।" অথচ ইতিহাসে আছে, মাহমুদ সোমনাথের মূর্তি ভাঙতে চাইলে মন্দিরের সেবকরা অনেক টাকা দিয়ে তাঁকে বিরত করবার চেষ্টা করলে তিনি বলেছিলেন, আমি প্রতিমা ভঙ্গকারী হিসেবে পরিচিত হতে চাই, প্রতিমা বা ঠাকুর বিক্রেতা হিসেবে নয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে এসব তথ্য সত্য নয়—'অন্ধকূপ হত্যার মতই সাজান কথা। যে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের কৃপায় আমরা অসত্যের বেলুন ইতিহাসে পেয়েছি তা আবার ইংরেজ ঐতিহাসিকদের ফুকারেই ফাটিয়ে দেয়া যায়-যেমনঃ উইলিয়াম হান্টার। তিনি অনেক তাথ্যিক বই লিখেছেন, তার মধ্যে listory মত India বইটিও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বইটির ৯৩ পৃষ্ঠায় এ ঘটনাকে অসত্য বা গল্প বলা 93175--- "There was a story ... once extensively belived, but now discovered to be untruc ... the whole story about Mahmud and his breaking of the image is a fabrication...." যার মর্মার্থ হচ্ছে,ম এক সময়ে লোকে গল্পটি খুব বেশি বিশ্বাস করলেও এখনকার গবেষণায় এটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে যে, মাহমুদ এবং তার মূর্তি ভরে গোটা গল্পটাই সাজান।
ইতিহাসে একথাও আছে-মাহমুদ সোমনাথের দরজাগুলো খুলে নিয়ে অন্য অট্টালিকায় লাগিয়েছিলেন। সত্য ইতিহাসে মন্দিরের দরজাগুলো খাটি চন্দন কাঠের ছিল বলে জানা যায়, কিন্তু বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে সে অভিযুক্ত দরজাগুলো দেবদারু গাছের। যদি ঘটনা সত্য হত তাহলে দরজাগুলোকে চন্দন কাঠের হত। এ তত্ত্বের প্রমাণ মিঃ ফার্গুসনের লেখা Indian and Eastern Architecture পুস্তকের ৩য় খণ্ডের ৪৯৬ পাতায় রয়েছে। কিছু ইংরেজ ঐতিহাসিক এবং দু'একজন মুসলমান ঐতিহাসিক তার বিরুদ্ধে উল্টোপাল্টা মিথ্যা কথা লিখলেই তা বিশ্বাসকরা যায় না। তাছাড়া ঐতিহাসিকরা মানুষ, যদি কোন অপরাধের জন্য কোন ঐতিহাসিক কারো কাছ হাতে, স্বয়ং বা তার কোন নিকটাত্মীয় শাস্তি পেয়ে থাকেন তাহলে তার কলমের গতি সত্য থেকে পিছলে যাওয়া স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে আরও ইতিহাস
সামনে রেখে গবেষণা ও চিন্তা ভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আসলে সলতান মাহমুদ ছিলেন সামাজী পরহেজগার দাড়িওয়ালা নিষ্ঠাবান মুসলমান-এটাই অনেকের কাছে বিরাট অপরাধ। “ইতিহাসে মাহমুদের স্থান নির্ধারণ করা কঠিন নয়। সমসাময়িক মুসলমানরা তাঁকে গাজী ও ইসলাম-নেতা বলে জানতেন। হিন্দুরা অনেকে আজ পর্যন্ত তাকে নিষ্ঠুর, অত্যাচার, আদি হুন এবং মন্দির ও মূর্তি ভঙ্গকারী বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু যিনি সে যুগের খবর রাখেন, তিনি অন্য মত পোষণ করতে বাধ্য।
নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের চোখে মাহমুদ একজন শ্রেষ্ঠ জননেতা, ন্যায়পরায়ণ সুলতান, সাহসী ও প্রভাবশালী সেনাপতি এবং জ্ঞানবিজ্ঞান শিল্পকলার উৎসাহদাতা ছিলেন। তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা বাদশাহদের এক আসনে বসার জন্য সমকক্ষ।” (ডঃ ঈশ্বর সেরে Mediaeval India এন্থের পৃষ্ঠ ১৯১ দুই)
সবশেষে আর একজন হিন্দু ঐতিহাসিকের মূল্যবান উদ্ধৃতি দিয়ে প্রসঙ্গ শেষ করতে চাই-“এটাই সঠিক কথা যে মাহমুদের যে সমর প্রতিভা ছিলতার তুলনা সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল এবং প্রাকমুসলিম ভারতীয় রাজাদের দ্বারা প্ররোচিত না হলেও মাহমুদের সমরপ্রতিভা কোন না কোনভাবে প্রকাশের পথ খুঁজে নিতই, হয়ত সে ক্ষেত্রে তার পক্ষে ভারত বর্ষের বদলে চীন তথা পূর্বদিকেই আক্রমণ চালনা করা সম্ভব ছিল।
কিন্তু জয়পাল প্রমুখ ভারতীয় রাজন্যদের স্পর্ধা, শঠতা ও সন্ধি ভঙ্গের অপরাধ তার ওই প্রতিভাকে বিশেষভাবে ভারত বর্ষের দিকেই বিকাশের অনুকূল পরিবেশ করে দিয়েছিল। পাঞ্জাবে কর্তৃত্ব বিস্তার ছাড়া ভারতীয় ভূখণ্ডে কোন স্থায়ী রাজত্ব প্রতিষ্ঠার অথবা ভারতীয় জনসাধারণের মধ্যে কোন ধর্মপ্রচারের পরিকল্পনা তাঁর ছিলনা, তা তিনি করেন নি। (শ্রী সুরজিৎ দাশগুপ্তের ভারত বর্ষ ও ইসলাম', পৃষ্ঠা ৩১),
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/18
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।