মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
১৫৬৫ খৃস্টাব্দের যুদ্ধে বিজয়নগর রাজ্যের এক ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের পরে পরেই দক্ষিণ ভারতে মুসলমান আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সে থেকে মারাঠাগণ বাহমনী, আহমদনগর, বিজাপুর, গোলকুণ্ডা প্রভৃতি স্থানের সুলতানদের অধীনে কাজ করতেন। যে সমস্ত মারাঠা পরিবার সুলতানদের অধীনে রাজকর্মের ভিত্তিতে আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে ভোসলে পরিবার অন্যতম। কৃষি কর্মই ছিল ভোসলেদের পারিবারিক বৃত্তি। শিবাজীর পিতা শাহজী ভোসলে প্রথমে নিজাম শাহী সুলতানের অধীনে, পরে বিজাপুরের আদিল শাহী সুলতানের অধীনে চাকরিতে যুক্ত থেকে বেশ প্রতিপত্তি বাড়িয়েছিলেন।
উত্তর ভারতের মোঘল আর দক্ষিণ ভারতের সুলতানদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহের সুযোগে তারা সুলতানী ও মোঘল সাম্রাজ্যের দুর্গ দখল ও লুঠতরাজ করতেন। ধর্মগুরু নামদাসের শিক্ষা-দীক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শিবাজী মারাঠিদের জাতীয় চরিত্র আরও সংগঠিত করেন। শিবাজী জুনারের কাছে শিবনের পার্বত্য দর্গে জনাগ্রহণ করেন। স্বামী শাহজা ভোঁসলের অনাদরের জন্য জিজাবাঈ ও শিশু শিবাজী দাদাজী কোন্দদের নামে এক ব্রাহ্মণব আশ্রয় গ্রহণ করেন। মারাঠিদের শোয বীর্যের ঐতিহ্যই ছিল শিবাজীর চরিত্রের প্রধান ভিত্তি।
শিবাজীকে সাধারণ ইতিহাসে মনে হয় তিনি আদর্শ বীর, বিরাট যোদ্ধা, সুকৌশলী এবং আওরঙ্গজেবের চরম প্রত্যক্ষ প্রতিদ্বন্দী। আরও ধারণা হয় যে, আওরঙ্গজেব নাকি শিবাজীর কাছে বার বার পরাজয় বরণ করে নাজেহাল হয়েছিলেন। মোটকথা, শিশুকাল থেকেই এ ধারণা মনে ঠাই পেয়ে থাকে যে, শিবাজী কেবল মারাঠা জাতির গৌরব নন, বরং তিনি ভারতের বিখ্যাত রাজাও বটে; তাই তিনি জাতীয় বীর। আর তাই ভারতের প্রধানতম ফটক বোম্বাই-এ শিবাজীর মূর্তি বীর বেশে স্থাপিত হয়েছে। সমালোচকদের অপর পক্ষ কিন্তু শিবাজীকে সামান্য সৈনিক, দস্য, পাহাড়ী ইদুর, বিশ্বাসঘাতক এবং অকৃতজ্ঞ বলে মনে করেন।
নিরপেক্ষ পাঠকদের কাছে অবশ্য এ নিয়ে সমীক্ষার প্রয়োজন। তবে আকবরের ভুলভ্রান্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ঢাকা দিয়ে যারা তাকে মহামতি', আকবর দ্য গ্রেট', 'দিল্লিশ্বর'ও জগদীশ্বর' উপাধি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি তারা নিজ গুণে ঠিক বিপরীত পন্থায় আওরঙ্গজেবের নিন্দা বা তাকে হেয় করে প্রকাশ করতে পারেন। সুতরাং আওরঙ্গজেবের সাথে যাদের যত বিবাদ-বিসম্বাদ তারাই হবেন তত বীর, তত বাহাদর। শিবাজীর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে কিনা তা ভাবার বিষয়।
আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে দাক্ষিণাত্যে এক নতুন জাতির অভ্যুত্থান হয়, সেটাই হল মারাঠা জাতি। মারাঠা জাতি যাযাবর দুবৃত্তিতে চিরদিনের জন্য ইতিহাসে কুখ্যাতই ছিল। রাতের অন্ধকারে তারা অতর্কিতে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরবাসীদের উপর চড়াও হয়ে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে ধন-দৌলত অর্থ-সম্পদ নিয়ে চম্পট দিত। আমাদের বাংলাদেশে পুর্তুগীজ মগ দুস্যুদের মত মারাঠা বর্গী জাতিও কুখ্যাত ছিল। তাদের অত্যাচারের কাহিনী গ্রামীণ লোকগাথায় ও ইতিহাসের পাতায় মজুত আছে। মারাঠা বর্গীদের নিষ্ঠুর অত্যাচারে মানুষ এত আতঙ্কগ্রস্ত ছিল যে, কচি কচি বাচ্চাদের কান্না থামাবার জন্য বাংলার মায়েরা এখনও তাদের অত্যাচারের কথা তুলে বলেন
ছেলে ঘুমাল পাড়া জুড়াল
বগী এল দেশে।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে।
শিবাজীর পিতা শাহজী ভোসলে আহমাদনগরের উচ্চ পর্যায়ের সামরি কর্মচারি ছিলেন। তিনি তাঁর প্রথমা স্ত্রী জিজাবাঈকে নানা কারণে উপেক্ষা করতে থাকেন। তখন জিজবাঈ শিশু শিবাজীকে নিয়ে উল্লেখিত ব্রাহ্মণের আশ্রয় গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণ কোন্দদেব প্রকৃত শিক্ষিত ছিলেন না তবে শিবাজীকে একটা শিক্ষা তিনি ভালভাবে দিয়েছিলেন, তা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা, অর্থাৎ মুসলমান হিন্দুর শত্রু। নিরক্ষর শিবাজীর হৃদয়-ফলকে কোন্দদেবের কথা বিষবৃক্ষ রোপণের এক শক্ত বুনিয়াদ সৃষ্টি করে।
শিবাজী বড় হয়ে কোন্দদেবের কথা বাস্তায়িত করতে লাগলেন। সে সময় মাওয়ালী নামে অসভ্য এক পার্বত্য জাতির সাথে শিবাজীর মিলন হয়। শিবাজী তাদের এ আশ্বাস দিয়ে হাত মেলাতে বলেন যে তারা তার অধীনে যদি লুঠতরাজে সামিল হয় তাহলে প্রত্যেকের অংশে মোটামুটি ভাল বখরা পড়বে এবং ভবিষ্যতে মোঘল রাজধানী পর্যন্ত লুট করা যেতে পারে। শিবাজী মাওয়ালী জাতিকে নিয়ে একটা সৈন্যবাহিনী গঠন করে বিজাপুর রাজ্যে বার বার হানা দেন। এ ব্যাপারে বিজাপুরের সুলতান শিবাজীর উপর ক্রুদ্ধ হয়ে শিবাজীর পিতা শাহজীকে বন্দী করলেন। পিতাকে উদ্ধার করার শক্তি শিবাজীর ছিল না তাই শিবাজী তার মুক্তির জন্য সম্রাট শাহজাহানের কাছে অনেক অনুনয় বিনয়ের সাথে আবেদন রাখলেন।
সম্রাট শাহজাহানের মধ্যস্থায় শাহজী মুক্ত হন। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর ১৬৫৬ খৃস্টাব্দে শিবাজী অন্যায়ভাবে জাওয়ালী অধিকার করেন। আওরঙ্গজেব তখন বিজাপুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন। সে অবসরে মোঘল সাম্রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম ভূ-ভাগ তিনি আক্রমণ করেন। সম্রাট সংবাদ পেয়েই সেখানে মোঘল সৈন্য প্রেরণ করে মারাঠাদের বিতাড়িত করেন। শিবাজী হতমান হলেও আক্রমণের সংকল্প তখনও তার ছিল। অবশ্য মনে রাখা প্রয়োজন যে, সে সময় আওরঙ্গজেব পিতার অসুস্থতার সংবাদে দিল্লি ফিরে যান। সেটা ছিল ১৬৫৮ খৃষ্টাব্দ। শিবাজী আওরঙ্গজেবকে খুব ভয় করতেন তাই সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না গিয়ে না গিয়ে এ সুযোগটা গ্রহণ করলেন। তাছাড়া দিবালোকে সম্রাটের সাথে সম্মুখে সমরে অংশ গ্রহণের সাহস আদৌ তার ছিল বলে কোন প্রমাণ্য ইতিহাস পাওয়া যায় না।
শ্রীবিনয় ঘোষও তাঁর ভারতজনের ইতিহাসে'র ৬২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন “পিতার অসুস্থতার সংবাদ পাইয়া ঔরঙ্গজীব দাক্ষিণাত্য ছাড়িয়া চলিয়া গিয়ছিলেন (১৬৫৮) তারপর শিবাজীর মৃত? দুই বছর পরে আবার দাক্ষিণাত্যে ফিরে আসেন। শিবাজীর মৃত্যু হয়
১৬৮০ খৃষ্টাব্দে। ১৬৫৮ থেকে ১৬৮০ খৃষ্টাব্দে এ ২২ বছর, আর শিবাজীর মৃত্যুর পর ২ বছর মোট ২৪ বছর পরে আবার সম্রাট আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে আসেন। অতএব, আওরঙ্গজেব শিবাজীর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হলে এ সময়ের মধ্যে সারা দাক্ষিণাত্যে জয় করে নিতে পারতেন। তাছাড়া শিবাজী সারা জীবনে কোন যুদ্ধে আওরঙ্গজেবকে দেখতে পেয়েছিলেন কি না সন্দেহ। তাই, শিবাজী যে সম্রাট আওরঙ্গজেবকে বারবার পরাজিত করেছিলেন-এ কথা সঠিক নয়।
সম্রাটের শাসনকালে ১১ বছর শাহজাদা শাহ আলম, ৬ বছর বাহাদুর খা, ৪ বছর শায়েস্তা খাঁ, ২ বছর জয়সিংহ এবং ১ বছর দিলির খাঁ দাক্ষিণাত্যে সুবাদারি করেন। আওরঙ্গজেব দিল্লি থেকে ফরমান পাঠাতেন মাত্র। সম্রাট নন, তাঁর সেনাপতিগণই বার বার পরাস্ত করেছেন শিবাজীকে, বার বার তাদেরকে বন্দী করেছেন আর সম্রাট আওরঙ্গজেব বার বার তাঁদের ক্ষমা করেছেন।
প্রথম জীবনে শিবাজী বিজাপুরের অনেক দুর্গ মাওয়ালীদের সহযোগিতায় করায়ত্ব করেছিলেন। তখন সুলতান ক্রুদ্ধ হয়ে দশ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী প্রেরণ করলেন, সেনাপতি ছিলেন আফজল খা। এর পরের ঘটনা ১৯৪৬ খৃষ্টাব্দে ছাপা, আমাদের দেশের সরকারি স্কুলের পাঠ্য পুস্তক ইতিহাস পরিচয় থেকে তুলে ধরেছি-“শিবাজী দেখিলেন যে, প্রকাশ্য যুদ্ধে তিনি পারিবেন না, তাই তিনি এক মতলব আঁটিলেন; সন্ধির প্রস্তাব করিয়া তিনি আফজল খাঁর সহিত সাক্ষাত করিতে চাহিলেন।
দুইজনে সাক্ষাত হইল। সাক্ষাতের সময় কোন পক্ষেই বেশী লোকজন ছিলনা। সাক্ষাতকালে উভয়ে যখন উভয়কে আলিঙ্গন করিতেছিলেন, সেই সময়ে শিবাজী তাহার পোশাকের নীচে লুক্কায়িত বাঘনাখ' নামক অস্ত্র দ্বারা হঠাৎ আফজল খকে আক্রমণ করিয়া তাহাকে নিহত করিলেন। ইহার ফলে আফজল খার সেনাদল ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িল,; তখন শিবাজী তাহাদিগকে আক্রমণ করিয়া অনায়াসেই পরাজিত করিলেন।” (পৃষ্ঠা ১৪৮-৪৯)
প্রাচীনকাল হতে নিয়ম আছে সন্ধি বা কোন চুক্তি করার সময় শত্রু পক্ষকে হত্যা করা মানবতা বিরোধী। কিন্তু শিবাজীর এ রকম বিশ্বাসঘাতকতা ইতিহাসে বিরল। মারাঠা-ভক্ত ঐতিহাসিকগণ উল্টোভাবে আবার আফজল খাকেই দায়ী করেন। এখন আবার বিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছে তুলে ধরা হয়, আফজল খা আলিঙ্গনের সময় শিবাজীকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করছে শিবাজী বাঘনখ দিয়ে তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করেন। কিন্তু একজন সুশিক্ষিত শক্তিশালী দশ হাজার সৈন্যের সেনাপতির পক্ষে শিবাজীকে মারার জন্য তো যুদ্ধই যথেষ্ট ছিল এবং সেটাই বীরত্বের নিদর্শন হত। তিনি কিন্তু শিবাজীর দুর্বল কাতর কণ্ঠের আবেদন ম র করে বীরত্বের পরিবর্তে পরিচয় দিয়ে ভোলা মনে খালি হাতেই অগ্রসর হয়েছিলেন। প্রকৃত ইতিহাসের তথ্য এটাই।
শিবাজী নিজেকে খ্যাতির উচ্চশিখরে প্রতিষ্ঠিত করার আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে নব প্রস্তুতি নিয়ে মাওয়ালী জাতি ও মারাঠা জাতির বাছাই করা সৈন্য নিয়ে মোঘল ঘাঁটি আক্রমণ করলেন। সংবাদ পেয়ে আওরঙ্গজেব পাঠালেন শায়েস্তা খাকে শিবাজীকে পরাস্ত করতে। শায়েস্তা খাঁ মারাঠাদের বিতাড়িত করে পুনা, চাকান দুর্গ ও কল্যাণ অধিকার করেন। যুদ্ধ শেষে একদিন শায়েস্তা খাঁ পুনরায় রাত-শয্যায় বিশ্রাম করেছিলেন। এমন সময় সে রাতের অন্ধকারে শিবাজী অতর্কিতে শায়েস্তা খাঁর কক্ষে সশস্ত্রে আক্রমণ করলেন। শায়েস্তা খাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখলেন, দরজায় তরবারি হাতে শিবাজী। তিনি তখন সবলে জানালা ভেঙ্গে বেরিয়ে যাওয়র চেষ্টা করলে শিবাজীর তরবারির আঘাতে শায়েস্তা খাঁর দুটি আঙ্গুল কাটা
যায়। অত্যন্ত পরিতাপ ও বিপজ্জনক ঘটনার এখানেই শেষ নয়, শিবাজী শায়েস্তা খার নিরাপরাধ এক অল্প বয়স্ক পুত্রকে পেয়ে গেলেন এবং সাথে সাথে তিনি নিজে তাকে খণ্ড খণ্ড করে কেটে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করলেন। এ ঘটনাটি ঘটে ১৬৬৩ খৃস্টাব্দের এপ্রিল মাসে।
পরের বছর অর্থাৎ ১৬৬৪ খৃস্টাব্দে শিবাজী সুরাট বন্দর লুণ্ঠন করেন। তীর্থ যাত্রীদের জাহাজ পর্যন্ত তার অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। এ সংবাদে সম্রাট আওরঙ্গজেব বললেন, ‘যে সম্মুখে আসে না, মানবতার ধার ধারেনা, এ রকম একটা দু বা পার্বত্য মুষিক না হয়ে শিবাজী যদি একজন রাজা বা বীর হত তাহলে আমি কয়েকদিনের জন্য গিয়ে সমুচিত শিক্ষা দিতাম।' সম্রাট আওরঙ্গজেব এবার জয়সিংহ এবং দিলির খাকে পাঠালেন ‘পাহাড়ী ইদুর’ শিবাজীকে শিক্ষা দেয়ার জন্য।
মোঘল বাহিনী পুরন্দর দুর্গ অবরোধ করেন। দুর্গের ভিতরে শিবাজী সপরিবারে বাস করতেন। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত এবং পরাজিত হলে অশেষ লাঞ্ছনা ভোগ করতে হবে মনে করে শিবাজী ১৬৬৫ খৃষ্টাব্দের জুন মাসে পুরন্দরের চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী তাকে ২৩টা দুর্গ ও ১৬ লাখ টাকা বাৎসরিক রাজস্বের সম্পতি দিতে হল এবং নিজে মোসল আনুগত্যের বিনিময়ে ১২টা দুর্গ ও বাৎসরিক ৪ লাখ টাকা রাজস্বের সম্পত্তি রাখতে অনুমতি পান। যদিও শিবাজীর চরিত্র তাদের জানা ছিল, তা সত্ত্বেও বাদশার আইনে কেহ সন্ধি করতে এলে তাকে উপেক্ষা না করে স্বাগত জানাতে হত।
তাই শিবাজীকে প্রাণে না মেরে ১৬৬৬ খৃষ্টাব্দে বন্দী করে আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হল। সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে যথা সময়ে খবর পৌছল, ‘পাহাড়ী ইদুর খাচায় বন্দী। সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে সম্মুখে আনিয়ে বললেন, জয়সিংহ ও দিলির খা তোমার প্রাণ ভিক্ষার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি জানি তুমি বহু নরহত্যার অপরাধে দায়ী, তবু তোমাকে ক্ষমা করলাম। আর আগামীতে প্রজাদের উপর যেন কোন অত্যাচার না হয়। শিবাজী শুধু আক্রমণ করতেই জানতেন, সম্রাটের সাথে শালীনতা বজায় রেখে কথা বলতেও জানতেন না।
তাই শিবাজীর ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে সম্রাট আদেশ দিলেন। শিবাজীকে নজরবন্দী রেখে শিষ্টাচার শেখাতে। বন্দীর প্রতি সব রকম সুব্যবহার করতেও তিনি আদেশ দিলেন। শিবাজীর দেখাশুনার ভার ছিল তারই এক মারাঠি আত্মীয়ের উপর। বন্দী অবস্থায় শিবাজী দরবারে আবেদন করলেন, তিনি ধর্ম পালনের জন্য বিপুল পরিমাণে মিষ্টি দরিদ্র ব্রাহ্মণদের জন্য পাঠাতে চান। সম্রাট আওরঙ্গজেব বললেন, 'ধর্ম পালনের কথা বলেছে, অতএব আবেদন মঞ্জুর না করলে তা ধর্মে হস্তক্ষেপ করা হবে। এভাবে ঝুড়িতে করে মিষ্টি পাঠানোর অজুহাতে শিবাজী নিজেই ঝুড়িতে বসে পলায়ন করলেন।
দাক্ষিণাত্যে গিয়ে শিবাজী প্রথমে চুপচাপ থেকে মারাঠাদের আরও সংগঠিত করে ১৬৭০ খৃস্টাব্দে পুনরায় মোঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পূর্বেকার মত সুরাট লুঠ করে জোরপূর্বক ‘চৌথ আদায় করেন এবং নিজেকে স্বাধীন রাজা বলে ঘোষণা করলেন। ১৬৭৮ খৃষ্টাব্দে রায়গড়ে তার অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়। শিবাজী রাজা হয়ে ছত্রপতি' উপাধি গ্রহণ করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব তখন উত্তর পশ্চিম সীমান্তে পাঠান উপজাতির বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত। আওরঙ্গজেব শিবাজীর এ চরম পর্যায়ের সংবাদ শুনে বুঝলেন, শিবাজীকে ‘পাহাড়ী ইদুর' মনে করে উপেক্ষা করা ঠিক হয়নি।
তাই পাঠানদের বিদ্রোহ দমন করে যখন দাক্ষিণাত্যের দিকে নজর দিলেন তখন সংবাদ পেলেন যে শিবাজীর মৃত্যু হয়েছে। এ সংবাদ শুনে তিনি যে ফারসী কবিতা পাঠ করেছিলেন তার অর্থ-আমার দয়া, ক্ষমা, উদারতা, সহনশীলতা এবং দাক্ষিণাত্যে আমার অনুপস্থিতির সুযোগই শিবাজী ক্ষণিকের ইদুর রাজা হয়ে মরল।
সম্রাট আওরঙ্গজেব এরপর দেখলেন যে, শিবাজীর পুত্র শম্ভুজীও পিতার সমকক্ষ ও বিদ্রোহী। অবশ্য শম্ভুজীর পরিচয় আওরঙ্গজেব পূর্বেই পেয়েছিলেন, যেহেতু শম্ভুজীকেও শিবাজীর সাথে বন্দী করে আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তিনিও শিবাজীর সাথে মিষ্টির ঝুড়িতে পালিয়েছিলেন। শম্ভুজীও সমান বিদ্রোহাত্মক ভূমিকা নেন। এখানে আর একটা জরুরী কথা মনে রাখা দরকার দাক্ষিণাত্যে মারাঠা জাতি শুধু মাওয়ালীদের সহযোগেই দৌরাত্ম্য করত তা নয়, তারা পেয়েছিল আওরঙ্গজেবের আকবর নামের এক অবাধ্য সন্তানকেও।
যেমন করে মহামতি’ আকবরকে প্রশংসার মালা পরিয়ে তার স্বকীয়তা বিনষ্ট করা হয়েছিল, যে উপায়ে জাহাঙ্গীরকে জীবনে বিভ্রান্ত হতে হয়েছিল এবং যে কবচের দ্বারা শাহজাহানের পুত্র দারাশিকোহকে পঙ্গু করা হয়েছিল সে একই রকম পন্থায় আওরঙ্গজেবের শত্রু মারাঠা, মাওয়ালী ও সাম্প্রদায়িক নেতৃবৃন্দ আকবরকেও বুঝিয়েছিলেন যে, নাম যখন আকবর তখন কাজেও আকবর হলে সারা ভারতের হিন্দু সম্প্রদায় তার সাথে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। তাই অদূরদশী অপরিণত বয়সের আকবর সরল মনে সে যুক্তি বিশ্বাস করে ত্যাজ্যপুত্রের মত দাক্ষিণাত্যে পিতার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বিদ্রোহ যোগ দিয়েছিলেন।
যাহোক, বৃদ্ধ সম্রাট আল্লাহর উপর ভরসা করে, যুবকের মত মনোবল আর সাহস নিয়ে ১৬৮৬ খৃস্টাব্দে যথাক্রমে আক্রমণ করলেন বিজাপুর এবং গোলকুণ্ডা। কারণ বিজাপুর এবং গোলকুণ্ডার সুলতানগণ শিবাজী ও শম্ভুজীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করতেন। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, এ সুলতানগণের পতনের পর পরাজিত সৈন্য শম্ভুজীর সাথে যোগ দেয়।
সুলতানদের পালা শেষ করে সম্রাট আওরঙ্গজেব মারাঠাদের দিকে দৃষ্টি দেন। ১৬৮৯ খৃষ্টাব্দে শম্ভুজী সম্মুখ সমরে দণ্ডায়মান হলে আওরঙ্গজেব দুই রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। উপাসনান্তে আওরঙ্গজেব সৈন্যদের উৎসাহ-বধক ভাষণ দান করেন। মোঘল সৈন্য বিপুল উৎসাহ আর শক্তি নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ল। যেমনি শুরু তেমনি শেষ। শম্ভুজী শিবাজী অপেক্ষা বড় বীর ছিলেন।
কারণ তিনি অন্ততঃ একবারও সামনা-সামনি যুদ্ধের জন্য সাহস সঞ্চয় করতে পেরিলেন; এটা তাঁর কৃতিত্ব। মারাঠা শক্তি বিধ্বস্ত হবার পর শিবাজীর রায়গড় সহ বহু মারাঠা দুর্গ আওরঙ্গজেবের হস্তগত হয় এবং শাহু সহ শম্ভুজী পরিবার বন্দী হন। ১৬৮৯ খৃষ্টাব্দে আওরঙ্গজেব শুধু উত্তর ভারত নয়, দাক্ষিণাত্যেরও সর্বাধিনায়ক হয়ে পড়েন। আওরঙ্গজেব শব্দের অর্থই সিংহাসনের ‘শোভা'; সত্যই তাঁর নামের সার্থকতা আজও স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে রয়েছে আসল ইতিহাসের পাতায়।
শম্বুজীর মৃত্যুর পর মারাঠারা আবার সংগ্রাম শুরু করে। তার ছোট ভাই রাজারাম মহারাষ্ট্রের নেতা হন। সেনাপতি শান্তাজী ও ধনজীর নেতৃত্বে মারাঠা সৈন্য খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অপরদিকে সম্রাট মনে করেছিলেন মারাঠাদের মাথা তোলবার তেমন কেহ নেই-এ ধারণা মোঘলদের পক্ষে ক্ষতিকর হয়েছিল। পুনরায় ১৬৯০ খৃষ্টাব্দেই রাজারাম মোগলদের অতর্কিতে আক্রমণ করে কয়েকটি মোঘল ঘাঁটি দখল করে নেন। পরে অবশ্য মোঘল সৈন্য শান্তাজীকে নিহত করে। ১৭০০ খৃষ্টাব্দে রাজারামের মৃত্যু হলে নেতৃত্ব নিয়ে মারাঠাদের মধ্যে লড়াই বাঁধে। রাজারামের পুত্র তৃতীয় শিবাজীর রিজেন্ট' হন বীরাঙ্গনা তারাবাঈ। তারাবাঈ মোঘলদের ধ্বংসের জন্য যে বিরাট বিরাট পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সে সমস্ত পরিকল্পনা কিন্তু ৯০ বছরের বৃদ্ধ আওরঙ্গজেবকে এতটুকু টলাতে পারেনি।
হাল ইতিহাসে মারাঠা জাতিকে বীরের জাতি বলা হয়। আর সে জন্যই শিবাজীকে বলা হয় জাতীয় বীর। বাংলায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও স্বদেশী আন্দোলনে ১৯০৫ খৃস্টাব্দে শিবাজী উৎসব পালিত হয়। অনেক দূরদর্শী ঐতিহাসিকদের মতে এটা একট! ঐতিহাসিক ভ্রান্ত
পদক্ষেপ। কারণ, যদি জাতীয় হিন্দু বীর হিসেবেই উল্লেখ করতে হয় তাহলে প্রতাপ সিংহই উপযুক্ত শ্রেষ্ঠতর বীর। মারাঠা জাতি বা বর্গীর হাঙ্গামা সত্য ইতিহাসের পাতায় খুব বেশি অপরাধী এজন্য যে, ইংরেজ জাতিকে ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারে তারই অধিক পরিমাণে সাহায্য করেছিলেন। পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও লর্ড ওয়েলেসলীর ‘অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করার (১৮০২) ফলেই ভারতে ইংরেজ প্রভুত্ব দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইতিহাসে মারাঠা বা বর্গী হাঙ্গামাকারীরা যেভাবেই চিত্রিত হোক না কেন আসলে যে তারা দস্যু বা লুণ্ঠনকারী ছিল এ বিষয়ে অনেকের কোন সন্দেহ নেই। প্রমাণ স্বরূপ নিচে কতকগুলো উদ্ধৃতির উল্লেখ করা হল :
(ক) “মারাঠা অশ্বারোহী সৈন্যরা এদেশে বর্গী নামে পরিচিত। আলিবর্দী খাঁর সিংহাসনে আরোহণের পূর্ব হতেই তাহারা সময়ে সময়ে মোঘল সাম্রাজ্য আক্রমণ করিয়া লুটপাট করিত। আলিবর্দী খাঁর আমলে এদেশে যে আক্রমণ ও লুণ্ঠন চলিতে তাকে, তাহাই বর্গী হাঙ্গামা' নামে পরিচিত।...এইরূপে রঘুজী (মারাঠা) পুনঃ পুনঃ বঙ্গদেশ আক্রমণ করিয়া লুণ্ঠন করিতে লাগিল।” (খ) ইংরেজী বণিকেরা বর্গী হাঙ্গামার সুযোগ পেয়ে নবাবের কোন অনুমতি গ্রহণ না করে কলিকাতায় দুর্গ নতুন করিয়া গড়তে আরম্ভ করল।”
(গ) “মারাঠা তখনকার শ্রেষ্ঠ ধনী জগৎশেঠের বাড়ী লুণ্ঠন করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা লইয়া প্রস্থান করে।” (উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলো শ্রী অজয়কুমার বসু লিখিত ঐতিহাসিক প্রশ্নোত্তর' পুস্তকের ৬১-৬২ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য)
H. G. Rawlinson প্রণীত Sivaji the Maratha পুস্তকে আছে, “দক্ষিণে ভারতে মুসলমান সুলতানরা মারাঠাদের বিশ্বাস করে তাদের দায়িত্বপূর্ণ পদগুলো ও রাজ্য পরিচালনার ভার দান করেছিলেন। কিন্তু এ অতি উদারতা ও বিশ্বাসের ফল তাদের ও মুসলিম জাতির পক্ষে মারাত্মক হয়েছিল। শিবাজীর নেতৃত্বের মারাঠাদের বিদ্রোহ ও এর দ্বারা আফজল খার হত্যার নিরীহ জনসাধারণের উপর অসহ্য অত্যাচার, উপদ্রব, ধন-সম্পত্তি লুণ্ঠন ইত্যাদি ব্যাপার তার নিদর্শন।
শ্রীশরকুমার রায় লিখেছেন, “মারাঠা দেশনায়করা হিন্দু রাজ্য সংস্থাপনের অভিলাষ করিয়াছিলেন। সাধারণ লোকের বিশ্বাস মুসলমানরা হিন্দুদের প্রতি উৎপীড়ন করিতেন বলিয়া শিবাজী মুসলমানদের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। কিন্তু কেবলমাত্র মুসলমান শাসনকর্তাদের বিরুদ্ধ ভাব মারাঠাদের অভ্যুত্থান চেষ্টার একমাত্র কারণ নহে। আসল কথা এই যে, পঞ্চাদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে সমস্ত ভারত বর্ষে বিশেষ দাক্ষিণাত্যে ধর্ম সমাজ সাহিত্য প্রভৃতির একটা সংস্কারের যুগ আসিয়াছিল। মুসলমানদের সাথে কেবল বিরুদ্ধ সংঘর্ষের আঘাতেই যে এই সংস্কাররের চেষ্টা জাগিয়াছিল তাহা সত্য নহে।
বরং মুসলমান ধর্ম ও সাহিত্যের সংস্পর্শেই তথাকার হিন্দুচিত্তে একটি বিশেষ শক্তি সঞ্চার করিয়াছিলেন তাহাতে সন্দেহ নাই। রাজস্ব বিভাগের ও ধনকোষের কর্তৃত্ব হিন্দুরা লাভ করিয়াছিল। মারাঠারা সৈন্যদলভুক্ত হইয়া যেমন অর্থোপার্জন করিত তেমনি যুদ্ধবিদ্যায় দিন দিন উন্নতি লাভ করিতেছিল। দাক্ষিণাত্যের মুসলমান শাসনকর্তারা অনেকেই হিন্দু মহিলা বিবাহ করিতেন। এইরূপ হিন্দু-মুসলমান বৈবাহিক সম্বন্ধ মুসলমান রাজ্যগুলিতে হিন্দু জাতিকে বাড়াইয়া তুলিয়াছিল। যে সকল হিন্দু মুসলমান ধর্মগ্রহণ করিয়াছিল তাহাদিগের দ্বারাও হিন্দুদিগের ক্ষমতা বাড়িয়া উঠিতেছিল। এদেশের মুসলমানেরা কদাচ গোঁড়া হইয়া উঠিতে পারেন নাই। সময়ে সময়ে মুসলমানেরা যৎসামান্য অত্যাচার করিয়াছেন তাহা উল্লেখযোগ্য
নহে। সাধারণতঃ এদেশের মুসলমানেরা হিন্দু প্রজাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করিতেন এবং প্রকারান্তরে রাজকার্যের ক্ষমতা হিন্দুদের হস্তে অর্পণ করিতেন। ক্রমে বাহুবলে ও বুদ্ধি সুকৌশলে শাসন ও সৈন্য বিভাগে হিন্দুরাই প্রাধান্য লাভ করিয়াছিল। মুসলমান শাসনে হিন্দুদিগের ক্ষমতা লেশমাত্র বাধা না পাইয়া দিন দিন বাড়িয়া উঠিতেছিল। ক্রমশঃ হিরা এমন প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল যে মুসলমানেরা নামে মাত্র শাসনকর্তা ছিলেন। হিন্দুরাই রাজ্যের সর্বত্র ক্ষমতা চালনা করিবার ফলে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে গোলকুণ্ড, বিজাপুর, আহমদনগর ও বিজর এ মুসলমান রাজ্যগুলির সকল ক্ষমতা মারাঠী নীতিবেত্তা ও যোদ্ধাদিগের অধিগত হইল।” (দ্রঃ শ্রী রায়ের ‘শিবাজী ও মারাঠা')
এ মারাঠাদের অত্যাচারের মর্মন্তুদ কাহিনী আজও অনেককে শিহরিত করে। এখানেও এ লেখকের ভাষায় তার বর্ণনা না দিয়ে ইংরেজ ঐতিহাসিক হলওয়েলের উক্তির হুবহু অনুবাদ তুলে ধরছি-“তারা ভীষণতম ধ্বংসলীলা ও ক্রুরতম হিংসাত্মক কার্যে আনন্দ লাভ করত। তারা উঁত গাছের বাগানে ঘোড়া চড়িয়ে রেশম উৎপাদন একেবারে বন্ধ করে দেয়। দেশের সর্বত্র বিভীষিকার ছায়া পড়েছে। গৃহস্থ কৃষক ও ভঁতীরা সকলেই গৃহ ত্যাগ করে পলায়ন করেছে। আড়ৎগুলি পরিত্যক্ত, চাষের জমি অকর্ষিত। ...খাদ্যশস্য একেবারে অন্তর্হিত, ব্যাবসা-বাণিজ্য একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে উৎপীড়নের চাপে।" (Interesting Ilistory Events-Holwell, 1766, part 1 p. 121, 151).
জাষ্টিস্ আঃ মওদুদ বলেছেন, “এ দস্যুতার দাপট ও ক্রুরতার হিংস্র প্রকাশ উপমহাদেশেরই এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলেও কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল, তার চিত্র মেলে মারাঠী বর্গীয় লুণ্ঠন বৃত্তিতে।" (দ্রঃ মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশ ও সংস্কৃতির রূপান্তর, পৃষ্ঠা ৩৭)
প্রত্যক্ষদর্শী গঙ্গারাম মহাশয়ের বিবরণ আরও গুরুত্বপূর্ণ-“বর্গীরা সহসা উদিত হয়ে গ্রাম ঘিরে ফেলে, তখন সকল শ্রেণীর মানুষ যে যা পারে অবস্থাবর মালপত্র নিয়ে পলায়ন করে। বর্গীরা সব কিছু ফেলে দিলে কেবল সোনা-রূপা কেড়ে নেয়।
তারা কারও হস্ত কর্তন করে কারও কর্ণ-নাসিকা, কাউকে একেবারে হত্যা করে। সুন্দরী স্ত্রীলোক দেখলেই টেনে নিয়ে যায়...তারপর বর্গীরা তার উপর অকথ্য পাপাচার করে পরিত্যাগ করে যায়। লুণ্ঠন শেষে গ্রামকে গ্রাম জালিয়ে দেয়। প্রদেশের সর্বত্র এরূপ বীভৎস লুণ্ঠন ও অত্যাচার চালায়...তারা কেবল চিৎকার করে টাকা দাও, টাকা দাও। টাকা না পেলে তারা হতভাগ্য মানুষের নাকে জল ঢুকিয়ে কিংবা পুরিণীতে ডুবিয়ে হত্যা করে...ভাগীরথী পার হয়ে অপর তীরে গেলে তাদের অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি মিলে।” (দ্রষ্টব্য ঐ পুস্তকের ৩৬ পৃষ্ঠা)
যে অত্যাচারী কুখ্যাত “মারাঠা বর্গীর অমানুষিক নিষ্ঠুরতা ও দানবীয় লুণ্ঠনকর্মে বাংলাদেশের আপামর বাসিন্দা হয়েছিল, সে মারাঠা জাতির স্রষ্টা শিবাজীকে ইতিহাসে সীমাহীন সম্মান দেয়াটা অনেকেরই অবাক লাগার কথা।
বর্ধমানের মহারাজার সভাপতি শ্রীবাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার মহাশয় লিখেছেন, “শাহ রাজার সৈন্যরা দয়ামায়াহীন। তারা গর্ভবতী নারী, শিশু, ব্রাহ্মণ, দুদ্রি নির্বিশেষে সকলকে হত্যা করে...ভয়াল তাদের মূর্তি, সর্বপ্রকার লুণ্ঠন কর্মে সুপটু এবং সবরকম পাপাচারণে দক্ষ।" (History of Bengal, vol, i p. 457,458)
শ্রীপূর্ণেন্দু পত্রী বাবুর পুরানা কলকাতার কথাচিত্র' বইখানা একটা মূল্যবান দলিল বলা যায়। তার থেকে কিছু উদ্ধৃতি ও আলোচনা তুলে ধরেছি-শিবাজীর পরে মারাঠা নায়ক তখন রঘুজী ভোসলে। মন্ত্রী পণ্ডিত ভাস্কররাম কোলহৎকর। কূটবুদ্ধিতে অতুলনীয়। তারা দুজনে ঠিক করলেন বাংলাদেশকে (তখন অবিভক্ত) এবার জয় করে জুড়ে দিতে হবে নাগপুরের সাথে। কি করে সম্ভব হবে সেটা। কেন লুট-পাট, জোর-জুলুম, হত্যা আর অত্যাচারে। নাগপুরের এক পাহাড়ী অঞ্চলের অন্ধকার অরণ্য শিউরে উঠল এ দুই মারাঠা ঝরের গোপন ষড়যন্ত্রে।...ঘোড়ার খুরে পাথর ফাটিয়ে নাগপুরের পাহাড়ী অঞ্চল কাঁপিয়ে, বীরভূম-বিষ্ণুপুরের শালবন ডিঙিয়ে, উড়িষ্যার গিরিনদী পার হয়ে বিশ হাজার বর্গী সেনা নেমে এল বাংলার বুকে। সাথে ২৩ জন সর্দার। তাদের সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত।”
“বাদশাহ আওরঙ্গজেব এদের ঠাট্টা করে বলতেন-“পার্বত্য মূষিক। সে মূষিকের আক্রমণেই বাংলার গ্রাম, নগর, জনপদ, ফেটে পড়ল এক আকস্মিক চিৎকার, গ্রাম পুড়ছে। ঘর জ্বলছে। মাঠের ধান, দোকান-বাজারের খাদ্য শস্য, সংসারের আসবাব ঐশ্বর্য ধনরত্ন হচ্ছে লুটপাট। মানুষ পালাচ্ছে জন্মভুমির মায়া কাটিয়ে। দ্বিপ্রহরের চড়চড়ে রোদ। তারই মাঝে উন্মাদিনীর মত প্রাণ ভয়ে ছুটছে গর্ভবতী রমণী। ব্রাহ্মণ পণ্ডিত পালাচ্ছে। গলায় দুলছে শালগ্রাম শিলা। বগলে শাস্ত্রগ্রন্থ।” (দ্রঃ পুরানা কলকাতার কথাচিত্র, পৃষ্ঠা ২২৩-২২৪)
গঙ্গারাম বাবুর পদ্যাকারে লেখা দলিলে কিভাবে হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ধ্বংস করা হয়েছিল তার সুস্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায় ব্রাহ্মণ, গন্ধবণিক, কাঁসারী, কামার, কুমার, জেলে, ক্ষত্রিয়, রাজপুত, শেখ, সৈয়দ, মোঘল, পাঠান প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোকেরা বর্গীদের আক্রমণের নাম শুনে গ্রাম ছেড়ে পালাতে লাগলেন কিন্তু বর্গীরা মাজপথে তাদের ঘিরে কেমন ভাবে অত্যাচার করেছিল তার বর্ণনার হুবহু ছন্দ তুলে দিচ্ছি। অবশ্য এখনকার সাথে পূর্বের বানান ও শব্দের যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করার মত;
“এই মত সব লোক পলাইয়া জাইতে।
আচম্বিতে বরগি ঘেরিলা আইসা সাথে।
মাটে ঘেরিয়া বরগি দেয় তবে সাড়া।
সোনা রূপা লুঠে নএ আর সব ছাড়া॥
কারু হাত কাটে কারু নাক কান।
একি চোটে কাকু বধ-এ পরাণ।
ভাল২ স্ত্রীলোক জত ধইরা লইয়া জাএ।
আঙ্গুষ্ঠে দড়ি বাধি দেয় তার গলাএ
একজনে ছাড়ে তারে আর জন ধরে।
রমণের ডরে ত্রাহি শব্দ করে
এইমতে বরগি যত পাপ কর্ম কইরা।
সেই সব স্ত্রীলোক জত দেয় সব ছাইড়া
তবে মাঠে লুটিয়া বরগি গ্রামে সাধা-এ
বড়২ ঘরে আইয়া আগুনি লাগাএ
বাঙ্গালা চৌআরি জত বিষ্ণু মোণ্ডপ।
ছোট বড় ঘর আদি পোড়াইল সব।
এই মতে জত সব গ্রাম পোড়াইয়া।
চতুর্দিকে বরগি বেড়া লুটিয়া৷
কাহুকে বাঁধে বরগি দিয়া পিঠমোড়া।
চিত কইয়া মারে লাথি পা-এ জুত চড়া।
কপি দেহ রূপি দেহ বলে বারে বার।
রূপি না পাইয়া তবে নাকে জলে ভার।”
এ সব কিন্তু বর্গীরা তাদের সেনাপতির আদেশ অনুযায়ীই করত। সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতের হুকুমতনামা ছিল আরও ভয়ঙ্কর
“স্ত্রী পুরুষ আদি করি যতেক দেখিয়া।
তলোয়ার খুলিয়া সব তাহারে কাটিবা।”
ধর্মকে বাদ দিয়ে অন্যায়, আর ধর্মকে অবলম্বন করে অন্যায় নিশ্চয় এক নয়। অত্যাচারী ভাস্কর পণ্ডিত এবার ধর্মের (?) নামে দুর্গাপূজা করবেন বলে সকলকে ডাক দিলেন। তাদের আদেশে প্রতিমা নির্মিত হল। সাথে সাথে এল পূজার নামে পাঁঠা, মোষ আর লাখ লাখ টাকার উপঢৌকন। গঙ্গারাম মহাশয়ও লিখেছেন :
“তবে গ্রামে গ্রামে যত জমিদার ছিল।
তা সভারে ডাক দিয়া নিকটে আনিল।
কহিতে লাগিল তবে তা সভার ঠাঞি।
জগৎজননী মায়ের পূজা করিতে চাই।...
তারপর উপাদেয় সামগ্রী আইল জত।
ভার বাহান্ধিতে বোঝা এ কত শত।
ভাস্কর করিবে পূজা বলি দিবার তরে।
ছাগ মহিষ আইসে কত হাজারে হাজারে।”
(দ্রষ্টব্য শ্রীপূর্ণেন্দু পত্রীর পুরানা কলকাতার কথাচিত্র', পৃষ্ঠা ২২৫-২২৬)
মুসলমান লেখকের তো শিবাজী সম্বন্ধে পূর্ণ তথ্য তুলে ধরার উপায়ই নেই। তবে ইংরেজ ও হিন্দু লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখলে অন্ততঃ বইটি বাজেয়াপ্ত হওয়া থেকে রেহাই পাবে। তাই একটি উল্টা কথার (?) উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
“বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব আলিবর্দী খাঁর আমলেই কুখ্যাত মারাঠা দুস্যরা বারবার এ জায়গা আক্রমণ করেছিল এবং উভয়তঃ অর্থাৎ রঘুজী ভোঁসলে এবং পেশোয়া বালাজীরাও এর ডাকাত সৈন্যদলের অত্যাচারে সোনার বাংলা ছারখার হয়ে গিয়েছিল। বুদ্ধিমান স্থিতধী ও অসামান্য রণনিপুণ সেনাপতি আলিবর্দী রঘুজী ভোসলের বিরুদ্ধে পেশোয়ারা বালাজীরাও এর সৈন্য বাহিনীকে প্রয়োগ করেছিলেন।
পেশোয়ার সৈন্যবাহিনী (সংগঠিত ডাকাত দল) ভোঁসলে ও ভাস্কর পণ্ডিতকে প্রথমে বিতাড়ন করতে সক্ষম হল। কিন্তু এ দুটি ডাকাত দল নিজেদের মধ্যে যথেচ্ছ লুঠতরাজের বন্দোবস্ত করে পুনরায় বাংলাদেশ আক্রমণ করে। বাংলাদেশের লুটতরাজের বন্দোবস্ত ছিল ভাস্কর পণ্ডিত ও তার কুখ্যাত ২১ জন ডাকাত দলপতির হাতে।” (দ্রঃ মুর্শিদাবাদ জেলার সত্যিকারের ইতিহাস'; রতন লাহিড়ী, পৃষ্ঠা, ৬১-৬২)
ইংরেজদের উপস্থিতিতেও মারাঠাদের অত্যাচার অব্যাহত ছিল। তারাও বাধা দেয়ার ইতিহাস সৃষ্টিতে শূন্যের অঙ্কে। বর্গী মারাঠিদের অত্যাচার স্তব্ধ করে দিয়ে আহত বাংলাকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন বীর নবাব আলীবর্দী। অবশ্য তা করতে গিয়ে চতুরতা ও কৌশল খাটিয়ে ভাস্কর পণ্ডিতকে প্রাণদণ্ড দিতে হয়েছিল। (পঃ পুর্ণেন্দু পত্রীর ঐ পুস্তকের ২২৭-২২৮ পৃষ্ঠা)
শ্রীরতন লাহিড়ীও তার পুস্তকের ৬২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “মারাঠা বর্গীদের হাত থেকে সোনার বাংলাকে রক্ষা করার জন্যে আলিবর্দীর নাম চিরকাল বাঙালি জাতির ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।”
আলোচ্য লেখা থেকে প্রমাণ করা কঠিন নয় যে, মারাঠা বর্গীরা আসলে মুসলমান বিদ্বেষী কোন সম্প্রদায় নয়, বরং জাতি, ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের কাছে একটা লুণ্ঠনকারী অত্যাচারী জাতি। আর তাদের মধ্যে থেকে শিবাজীকে যেভাবে এক নম্বর শ্রেষ্ঠতম বীর হিন্দু নেতার সম্মান দিয়ে ইতিহাসকে সাজান হয়েছে তা অনেকের ভাল লাগলেও চিন্তাশীল, গবেষক, সত্যানুসন্ধিৎসু পাঠক মাত্রকেই যে তা ভাল লাগবে তার কোন গ্যারান্টি দেয়ার উপায় নেই। আওরঙ্গজেব তার কর্মচারি শিবাজী বারবার পরাস্ত করেছেন, বহুবার বন্দী করেছেন, আবার ক্ষমাও করেছেন অনেকবার। শিবাজীর পুত্র শম্বুও যুদ্ধ করতে গিয়ে সদলবলে বন্দী হন, আর নিহত হন শুধু শম্ভুজীর শিশুপুত্রকে রাজকীয় সুখে প্রতিপালন করেন এবং শাহর যৌবন এলে সুন্দর দুজন মারাটি যুবতীর সাথে বিয়ে দিয়ে দেন।
বিয়েতে প্রচুর উপহারের সাথে তিনি শিবাজীর ফেলে যাওয়া তরবারিও উপহার দেন। এ আশ্চর্য তথ্য পরিবেশিত হয়েছে অধ্যাপক সতীশচন্দ্র মহাশয়ের ‘মোঘল দরবারে দল ও রাজনীতি' পুস্তকের ৩১ ও ৩২ পাতায়। সতীশবাবু এ তথ্য কি সৃষ্টি করেছেন? না, এ চেপে রাখা তথ্যের তিনি উদ্ধৃতি নিয়েছেন Ragaim-E-Karaim-এর ৩৩২, ৪৩৩, ৪৮২, এবং Sardesai, New History 1, 331 পৃষ্ঠা হতে।
শিবাজীর কথা বলতে গিয়ে আওরঙ্গজেবের উদারতার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে এজন্য যে, চরিত্র বিচারে শিবাজী ও আওরঙ্গজেবকে তুলনা করে স্কুল-কলেজ ও ইউনিভারসিটির প্রশ্নপত্র সৃষ্টি করাকে কেহ যদি পাগলামি, বোকামী বা সাম্প্রদায়িকতা বলেন তা উড়িয়ে দেয়া যাবে কি? অনেক আধুনিক বিচক্ষণ ইতিহাসবেত্তাদের মতে, শিবাজী আওরঙ্গজেব অপেক্ষা বড়, সমপর্যায়ের অথবা নিকৃষ্ট এ তুলনা করাটাই অপ্রয়োজনীয়।
হিমালয়ের সাথে তুলনা করতে হলে অন্য একটা পর্বতমালাকে আনতে হয়, তাই বলে উই ঢিবিকে নয়। আমার মত লেখক যদি মেনেই নেয় যে, শিবাজী বিশ্ব বিখ্যাত বীর, ভারতের হিন্দু জাতির স্রষ্টা, উচ্চ শিক্ষিত, দয়ালু, গুণবান, সম্ভ্রান্ত বংশীয় অভ্রান্ত নেতা ইত্যাদি তাই বলে এ কথা পৃথিবীর সকল সুধীজনকে বুঝান যাবে কি? শিবাজীর পূর্ব পুরুষ ও উত্তরপুরুষদের ইতিহাস আর আওরঙ্গজেবের পূর্ববর্তীগণ ও পরবর্তীগণের ইতিহাস আমাদের সামনে থাকলেও মন মানতে চায় না অনেকের। যদি বলা হয়, আওরঙ্গজেব মারাঠাদের সাথে যুদ্ধে পূর্ণভাবে জয়ী হয়েছিলেন, শিবাজীর সমস্ত স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাগণকে আওরঙ্গজেব বন্দী করেন বটে কিন্তু তাঁদের সম্মানজনক ভাতা দিয়ে সাধারণ কারাগারে না রেখে নিজের থাকার জায়গার পাশে বিশেষ স্থানে আত্মীয়-পরিজনদের আসা যাওয়া বজায় রেখে বন্দী করেছিলেন-তাহলে অনেকের মনে হতে পারে, বোধ হয় এগুলো কোন কাচা লেখক অথবা মুসলমান ঘেঁসা ঐতিহাসিকের রচনা মাত্র।
তাই এ সম্বন্ধে একটি ইংরেজী উদ্ধৃতির হুবহু বাংলা অনুবাদ পেশ করছিঃ "১৬৮৮ খৃস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকেই (আওরঙ্গজেবের) প্রধানমন্ত্রী আসাদ খানের পুত্র ইতিকাদ খানকে রায়গড় দখলের জন্য প্রতিনিধি স্বরূপ পাঠান হয়েছিল। অনেক দিন যুদ্ধ করে তিনি ১৬৮৯ খৃস্টাব্দের ৯ই অক্টোবর দুর্গ দখল করে শিবাজীর বিধবা স্ত্রীগণ এবং ৯ বছর বয়সের শাহু সমেত পুত্র কন্যাগণকে বন্দী করলেন। বন্দী দলটাকে সম্রাটের শিবিরে ২৩শে নভেম্বর নিয়ে আসা হল। ভিন্ন ভিন্ন তাবুতে মহিলাদের রেখে সব রকম সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
শাহুকে সাতহাজারী ও রাজা উপাধি দান করা হয়েছিল এবং তাঁকে সম্রাটের নিকটস্থ শিবিরে বন্দী অবস্থায় রাখা হল। আর তার ভাই মদন ও আধু (মাধু?) সিংকে তাঁদের জননী ও পিতামহীদের সাথে উপযুক্ত ভাতাদিসহ বাস করা ও উপাসনা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এভাবে ১৬৮৯ খৃস্টাব্দের শেষের দিকেই আওরঙ্গজেব সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের অপ্রতিদ্বন্দী সম্রাট রূপে পরিগণিত হতে পেরেছিলেন। আদিল শাহ, কুতুব শাহ ও রাজা শম্ভুজী সকলেই পরাজিত হয়েছিলেন এবং তাদের সাম্রাজ্যগুলো তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।”
ভবিষ্যতে ইতিহাস লিখতে সাহায্য করতে পারে বলে ইংরেজি উদ্ধৃতিটিও তুলে faran-"As early as December, 1688, itiqad Khan (a son of the prime minister Asad khan) had been deputed to lay seize to Raighar. After a lony struggle he captured the fort on 9th October, 1689, and seized in it Shivaji's surviving widows and Shambhuji and Raja Ram's wives, daughters and sons including Shahu, a boy of nine. The captives were brought to the imperil camp at Karegaon on 23rd November. The ladies were lodged in separate tents with every 1 spect and privacy. Shahu was given the rank of a 7 Ha..ari and the title of Raja, but kept a prisoner near the imperial tent, while his brothers Modan singh and Adhu (Madhu?) Singh were permitted to live with their mothers and grand mothers, with proper allowances and establishment of offices.
Thus, by the end of the year 1689. Aurangzab was the unrivalled lord paramount of Northem India and the Deccan alike. Adil Shah. Qutab Shah and Raja Shambhuji had all fallen and their Jominions hae been annexed to his emprire. [History of Aurangzeb : Prof. J. N. Sirkar, Vol. IV p. 466-67].
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/31
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।