hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

চেপে রাখা ইতিহাস

লেখকঃ গোলাম আহমাদ মোর্তজা

২৯
মহামতি’র ইতিহাসে দুর্লভ দলিল
আকবর এক নূতন ধর্মের সৃষ্টি করেছিলেন, যার নাম দীন-ই-ইলাহী'। এটা এক পক্ষের কাছে দারুণ ভাবে প্রশংসিত আর অপর পক্ষের কাছে তা নিরেট ভন্ডামি ও আবর্জনার ন্যায় পরিতাজ্য। নিরপেক্ষ ভূমিকায় বলতে হলে, দীন-ই-ইলাহী' ছিল মহামতি আকবরের স্বধর্মের নিপাত সাধনের এক পরিকল্পিত সুগভীর চক্রান্ত।

ইসলাম ধর্মে আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টির উপাসনা করা নিষেধই নয় বরং সৃষ্টির দ্বিতীয় কোন উপাস্য স্বীকার করলে তিনি মুসলমানই নন। তাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সারা জীবন পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করে গেছেন, উপাসনা একমাত্র স্রষ্টারই জন্য। কিন্তু মহামতি তার দীন-ই-ইলাহী' ধর্মে সূর্য উপাসনার উৎসাহ ও আদেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও শাস্ত্রানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সুর্যের উপাসনা করতেন।

সারা বিশ্বের মুসমানদের মূলমন্ত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ' অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ আল্লাহরই প্রেরিত নবী বা রাসূল। আকবর তার নুতন কালেমাই' চালু করলেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবর খলিফাতুল্লাহ।' এত বড় আঘাত, যা মুসলমানদের উপর কোন বিরুদ্ধাবাদী অন্য ধর্মাবলম্বীর পক্ষেও সম্ভব হয়নি, তাই-ই হয়েছিল মহামতির’ সময়ে।

আকবরের নুতন ধর্মে মদ ও সুদকে বৈধ করে ঘোষণা এবং উৎসাহ দান করা হয়েছে। কুরআন শরীফে জুয়া খেলাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আকবর তার নুতন ধর্মে জুয়া খেলা জায়েজ বা বৈধ করেন। শুধু তাই নয়, রাজ খরচে পৃথক অট্টালিকা তৈরি করে সেখানে জুয়া খেলার সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। এছাড়া মজার কথা হল, জুয়া খেলায় যাদের পুঁজি বা মূলধন থাকত না রাজকোষ থেকে তাদের ঋণ দেয়ারও সুব্যবস্থা ছিল।

দাড়ি রাখা ইসলাম ধর্মে ‘সুন্নাত বা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নির্দেশ। না রাখলে পাপ হয়। তাছাড়া দাড়ি রাখাকে বা বিশেষ কোন সুন্নাতকে উপেক্ষা কিংবা অস্বীকার করলে এবং সে ইসলাম বিরোধী বলে বিবেচিত হয়। মহামতি দাড়ি মুন্ডন বৈধ বলে আইন করলেন এবং তার মাতার মৃত্যুর পরেই মাতার শোকে দাড়ি মুন্ডন করে আদর্শের ভিত্তি স্থাপন করলেন। পর দিন থেকে রাজদরবারে যত উচ্চ শ্রেণীর কর্মচারি ছিলেন তারা অনেকে নিজের দাড়ি মুন্ডন করে বাদশাহের পদপ্রান্তে উৎসর্গ করলেন। মহামতি আকবর নিজের ধর্মের ও বুদ্ধির সাফল্যে বেশ আনন্দ উপভোগ করতে লাগলেন।

প্রত্যেক মুসলমানের কুরআন ও হাদীসের আইন অনুযায়ী স্ত্রী সংসর্গান্তে ফরয গোসল (এক বিশেষ নিয়মে গোসল) অবশ্য করণীয়। কিন্তু, নুতন ধর্মে তা রহিত করা হয় এবং এক নূতন প্রথার প্রচলন করা হয়-গোসল করা ভাল কিন্তু পরে নয়, পূর্বে।

মহামতি নিজের, রাজপুতগণের এবং সভাসদবর্গের সুবিধার্থে এক অভিনব বিয়ের প্রচলন করলেন যার নাম মুআ বা অস্থায়ী বিয়ে। অর্থাৎ দু-চার দিন বা দু-এক মাসের জন্য একটা বিয়ে করে আবার তাকে তালাক বা বিসর্জন করা যাবে। বিয়ের নামে এরকম এক বীভৎস ব্যভিচার প্রথার প্রচলন করে নারীর নারীত্বকে কলঙ্কিত করতে মহামতির মতি কোন সময়ে কেঁপে ওঠেনি।

তিনি ইসলামের সুচিন্তিত ‘পর্দা প্রথাকে একেবারে রহিত করেন। অর্থাৎ সারা ভারতের মুসলমান-হিন্দু ভদ্র রমণীগণের মধ্যে অবগুণ্ঠন-যথা ঢিলে পোশাক পরা, মাথায় কাপড় দেয়া, ওড়না ব্যবহার করা ইত্যাদি যেসব সভ্য নীতিগুলোর প্রচলন ছিল, মহামতি কঠোর নির্দেশ দিয়ে তা নিষিদ্ধ করলেন। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা লজ্জাশীলতা ও শালীনতাবোধ ছিল। কিন্তু মহামতি পরিস্কার নির্দেশ দিলেন-বাজারে বাইরে চলাফেরার সময় মাথায় কাপড়, পর্দা অথবা অবগুণ্ঠিতা হওয়া চলবে না।

বার বছরের কম বয়স্ক বালকদের খাতনা দেয়া নিষিদ্ধ। বড় হয়ে সে নিজের ইচ্ছায় করাতেও পারে আবার নাও করাতে পারে-এরকম আদেশও জারি করা হল।

মৃতকে কবর দেয়া সারা পৃথিবীর মুসলমানের একটা সার্বজনীন প্রথা ও ইসলাম ধর্মের নির্দেশ। আর কবর দেয়ার নিয়ম হল মৃতদেহটিকে কবরে এমনভাবে শায়িত করা যেন মক্কার কাবাঘরের দিকে পা বা মাথা না থাকে। (ভারতে উত্তর দক্ষিণে) সম্রাট নির্দেশ দিলেন মৃত ব্যক্তির স্কন্ধে একটা গমের প্যাকেট বা ইট বেঁধে পানিতে ফেলে দাও। আর যদি একান্ত কবর দিতেই হয় তাহলে ভারত বর্ষের পশ্চিম দিকে কাবা শরীফ, অতএব সেদিকে পা করেই মৃত দেহটিকে শায়িত রাখতে হবে।' ইসলামী বিধি অনুযায়ী পুরুষদের জন্য প্রকৃত রেশম সিল্ক বস্ত্র ও সোনার গহনা ব্যবহার অবৈধ। আকবর আইন করলেন পুরুষদের জন্য সোনা ও সিল্ক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়।

তাঁর নূতন ধর্মে গরু, মোষ, মহিষ উট খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু বন্য জন্তু যথা বাঘ, ভল্লুক, সিংহ ইত্যাদি খাওয়া বৈধ ছিল। গো মাংস খাওয়া শুধু নিষিদ্ধই ছিলনা, বিশ্বের মুসলমানদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ঈদুর আজাহা'তেও গরু ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। মসজিদ আযান দেয়া ও একসাথে (জামাতে) নামায পড়ার নিয়ম বন্ধ করা হয়েছিল (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৩১৪)

পবিত্র মক্কা শরীফে হজ্ব পালন যুগে যুগে সব দেশের স্বচ্ছল মুসলমানের জন্য একবার জরুরী, বলে ফরয। তার সময় হঠাৎ আইন করে হজ্ব নিষিদ্ধ করা হয়। কুকুর ও শূয়োর ইসলাম ধর্মে ঘৃণ্য পশু বলে চিহ্নিত। আকবর কিন্তু তার সময়ে কুকুর ও শুয়োরকে আল্লাহুর কদরত' (মহিমা) প্রকাশক ও পবিত্র বলে ঘোষণা করেন।

তিনি কুরআন-এ বিশ্বাস করতে নিষেধ করতেন। অর্থাৎ তিনি চাইতেন সারা পৃথিবী কুরআনের প্রদর্শিত পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে ধ্বংসের কারণ হোক। প্রত্যেক মুসলমানের তার মুসলমানিত্ব বজায় রাখার জন্য মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং বিচার দিবসের উপর বিশ্বাস রাখা একান্ত জরুরী। কিন্তু মহামতি’ পুনরুত্থান ও বিচারের ব্যবস্থাকে অস্বীকার করতেন।

মুসলমানদের একে অপরের সাথে সাক্ষাত হলে ‘আস্সালামু আলাইকুম' [আল্লাহ আপনার উপর শান্তি বর্ষণ করুন] বলার নিয়ম আছে। প্রত্যুত্তরে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম (আপনার উপরেও শান্তি বর্ষিত হোক) বলা হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে এ পদ্ধতি ছাড়া দ্বিতীয় কিছু নেই।

আকবর সালাম দেয়ার প্রথা বিরোপ করে তার পরিবর্তে আল্লাহু আকবার বলার নিয়ম চালু করেছিলেন। তার উত্তরে জাল্লা জালালুহু' বলা হত। এবারেও হিন্দু প্রজাগণ তার কাছে নিবেদন করলেন, সম্রাট, আপনার কাজকর্ম দেখে সমস্ত হিন্দুই আপনার উপরে সন্তুষ্ট। তাই শ্রদ্ধায় হিন্দুরা আপনাকে দিল্লিশ্বর ও জগদীশ্বর বলে। কিন্তু আপনি সালাম তুলে দিয়ে ‘আল্লাহু' শব্দ ব্যবহার করলেন কেন? আপনি এটাও তুলে দিন।' তখন আকবর হিন্দু প্রজাবর্গকে নিশ্চিন্ত করতে বললেন-মুসলমানদের জন্যই আমিই স্বয়ং আল্লাহ হয়ে প্রকাশিত হয়েছি অর্থাৎ আল্লাহু আকবর' মানে আকবরই আল্লাহ। তার অনুগত হিন্দু প্রজাগণ আবার অভিযোগ করলেন-আল্লাহু শব্দটা হিন্দু বিরোধী অতএব ওটাকে তুলেই দিন। আকবর তাই-ই করলেন। সারা দেশে ঘোষণা করে দিলেন-আজ থেকে সালাম' বা আল্লাহুর পরিবর্তে ‘আদাব' শব্দ ব্যবহার করতে হবে।

যীশুখৃষ্টের সাথে যেমন খৃস্টাব্দে’ জড়িত তেমনি ‘হিজরী সন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু অনেক হিন্দু প্রজা ‘দিল্লিশ্বরের কাছে আবেদন করলেন-আমরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ, আমাদের জন্য একটা পৃথক সনের ব্যবস্থা করা হোক। তাই করা হল, পৃথক নামের নাম রাখা হল ইলাহি' বছর। তাতে অনেক হিন্দু প্রজার হিন্দু প্রজা তাঁদের কৃতকার্যতার জন্য মহামতির মহত্বের প্রতি খুবই আস্থাবান হলেন। . এখানে বেশ প্রমাণ হচ্ছে, আকবর আসলে ইসলাম ধর্ম বিধ্বংসী কতকগুলো চরমপন্থী মানুষের হাতের পুতুল ছিলেন মাত্র। মুসলমানদের মসজিদ ও উপাসনালয়গুলোকে গুদাম ঘর ও হিন্দু প্রজাদের ক্লাব ঘরে রূপান্তরিত করেও আকবর এক বিশেষ শ্রেণীর বাহাবা কুড়িয়েছিলেন। (দ্রঃ পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৩২২)

ইসলাম ধর্ম নিঃশেষিত হতে পারে কি না তা পরীক্ষার জন্য কিছু মসজিদ অমুসলমান প্রজারা ভেঙ্গে ফেলে সে স্থানে মন্দির নির্মাণ করে। আকবরের কাছে প্রতিবাদ করা হলে তিনি যুক্তি দেখালেন, মুসলমানদের এ মসজিদগুলো সত্যিকারের প্রয়োজন নিশ্চয় ছিলনা, যদি থাকত তাহলে ভাঙ্গা সম্ভব হতনা। মন্দিরের প্রয়োজন ছিল তাই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদও ধর্মস্থান আর মন্দিরও ধর্মস্থান। একটি ধর্মস্থান ভেঙ্গে অধর্মের কিছু গড়া হলে

প্রতিকার করা যায় কিনা বিবেচনা করা হত। কিন্তু এখানে সে রকম কিছু না হয়ে বরং ধর্মস্থানের পরিবর্তে ধর্মস্থানই গড়ে উঠেছে। তারপরেই মসজিদ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে নূতন মসজিদ নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া হয়। মুসলমান ধর্মের হৃৎপিণ্ড পবিত্র কুরআন ও হাদীস শিক্ষা, শিক্ষালয় বা শিক্ষাদাতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আকবর সবচেয়ে মারাত্মক কর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ইসলাম সংক্রান্ত শিক্ষার চির অবসানই ছিল আকবরের উদ্দেশ্য। এক কথায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যা নির্দেশ দিয়েছেন বা নিষেধ করেছেন, তিনি যেন তার সাথেই সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন মুসলিম বিদ্বেষী অমুসলমান শাসকও যা কল্পনা করেননি, মহামতি’ তা বাস্তবে পরিণত করার জন্য কত পাকাপাকি সুব্যবস্থা করেছিলেন এ আলোচনার পর সে কথা সহজেই অনুমেয়।

আকবর নিজেকে ঈশ্বরের মত মনে করতেন এবং তিনি ভাবতেন, তিনি হচ্ছেন মনুষ্য আকারের দেবতা (দ্রঃ সেন্ট্রাল স্ট্রাকচার, পৃষ্ঠা ৫৯) আর সে জন্যই আকবর একটি নূতন ‘বিদাতের সৃষ্টি করেন, যাকে বলা হত ঝরোকা দর্শন'-সূর্য ওঠার সাথে সাথে তিনি দরবারে জনসাধারণের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে সৌভাগ্যের সৃষ্টি করতেন। আরও পরিষ্কার ভাষায় দিল্লিশ্বরকে জগদীশ্বর (?) মনে করে দেখতে আসতেন গরীব প্রজার দল। ঐতিহাসিক বাউনির মতে এটা ছিল হিন্দু দর্শনের অনুকরণ। (দ্রঃ মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ : ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৬)

আকবর জনসাধারণকে তার সৃষ্ট জীবের মত মনে করে খুব বেশি শ্রদ্ধার আশা করতেন। রাজদরবারে নিয়মের বাইরে একটু বেয়াদবি বা ভুলত্রুটি বরদাস্ত করতেন না। তার দরবারে কুর্ণিশ অর্থাৎ মাথা ও কোমর ঝুঁকিয়ে দুই হাতের তালু কপালে ঠেকাতে ঠেকাতে এগিয়ে যাওয়া এবং কাজ সেরে এভাবে ফিরে আসার প্রথা চালু ছিল।

তসলীম প্রথাও বর্তমান ছিল, অর্থাৎ ডান হাত মেঝেতে রেখে ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাতের তালু মাথায় ঠেকিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা। ইসলামে যদিও এক আল্লাহ্ ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে সিজদা করা মোটেই চলে না তবুও তার দরবারে ‘জামিন বসা' অর্থাৎ সম্রাটের সামনে মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে সিজদা বা প্রণিপাত করে সম্মান জানানর ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। (দ্রঃ আইন, প্রথম খণ্ডের ১০ পৃষ্ঠা, দি কালচারাল আস্পেক্ট অব মুসলিম ইন ইন্ডিয়াঃ এস, এম, জাফর, পৃষ্ঠা ২০-২৯)

আকবর ইসলামের নিয়ম-কানুন বর্জন করার আদেশই শুধু দিতেন না প্রকাশ্যে ইসলামের নিন্দাও করেন। বলতেন, 'আরবদেশের ফকীররা ইসলামের সৃষ্টি করেছে।' ইসলাম সম্বন্ধীয় আরবী বইপত্র পড়া নিষিদ্ধ ছিল, তবে চিকিৎসা বিষয়ক ও অনৈসলামিক প্রস্তকাদি পড়ার অনুমতি ছিল। আসমানী বাণী কুরআনকেও তিনি অস্বীকার করেন। (দ্রঃ নুযহাতুল কাওয়াতির ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৯)

ঐতিহাসিক মাওলানা আকরম খাঁর তথ্যবহুল বিরল গ্রন্থ “মোসলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস' থেকে আরও কিছু মূল্যবান তথ্য পরিবেশিত হচ্ছে-(ক) শাহী মহলে অগ্নি পূজার তিনিই ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। (খ) পারস্যের কুখ্যাত ‘মোলহেদ' দলের তিনিই প্রশয়দাতা যা থেকে ভারতে তান্ত্রিক ভণ্ড মারেফাত দলের সৃষ্টি হয়। (গ) তিনি নিজে স্বাতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে অন্য ধর্মের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কণ্ঠে রুদ্রাক্ষের মালা পরে চন্দন-চর্চিত দেহে সন্ন্যাসীর পোশাকে দরবারে বসতেন। (ঘ) সন্ধ্যার সময় দীপ জ্বালানোর সাথে সাথে আকবর সকলক নিয়ে দাঁড়িয়ে অগ্নি শিখাকে প্রণাম করতেন। (ঙ) তার সময়ে বেশ্যাখানা বা পতিতালয় বৈধ

করা হয় এবং প্রথম কর ধার্য করা হয়। (চ) তিনি আল্লাহর ছায়া, তার হুকুম না মানলে নরকে যেতে হবে-এ নির্দেশনামায় ১৭ জন মুসলমান ও একজন হিন্দু পণ্ডিতের সই করান। (ছ) হিন্দু প্রজাদেরকে মসজিদে পূজা করার অনুমতি দেন। (জ) মূর্থ নর-নারীরা আকবরকে নিয়মিত পূজা করতে শুরু করেন।

যদিও এ তথ্যগুলো উপরোক্ত গ্রন্থের ১২৯-১৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে তবুও এগুলো লেখকের সৃষ্টি করা বক্তব্য নয়, তিনি সাহায্য নিয়েছেন টার্কস্ ইন ইন্ডিয়া গ্রন্থের। এমনিভাবে মাওলানা আবুল আ'লা মওদুদী সাহেবের তাজদীদে এহ্ইয়ায়ে দ্বীনের আবদুর মান্নান তালিব কর্তৃক অনুদিত ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন পুস্তকের ৫৬-৬১ পৃষ্ঠাতেও কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

এখন একটা সহজ প্রশ্ন হতে পারে, উপরোক্ত তথ্যগুলো যদি সত্য হয় তবেই তো আকবর হবেন এ অভিযোগে অভিযুক্ত। কিন্তু যদি কোন ইতিহাসে তার প্রমাণ না থাকে তাহলে অভিযোগের অধিকার আধুনিক ঐতিহাসিকদেরই বা থাকবে কি করে? সেহেতু উল্লেখ করা যেতে পারে এসবাতুন নবুওত', রিসালাযে তাহলীলিয়া’, ‘মুনতাখাবুল লুবাব', মুনতাখাবুত্তাওয়ারিখ', নুযহাতুল খাওয়াতির’, ‘আইন-ই আকবরী’, Mujaddid's Conception of Towhid,' 'Awnul Mabud', 'Kalematul Hoque'. "History of Nationalism'

প্রভৃতি অসংখ্য আকর গ্রন্থ আকবরের কীর্তিকলাপের সাক্ষী স্বরূপ আজও বেঁচে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন লাইব্রেরিতে, যেগুলো পড়ে অব্যর্থ সত্য ইতিহাসের উৎস সন্ধানে উৎসাহের খোরাক পাওয়া যায়। এছাড়া আরও বহু পত্র-পত্রিকা আমাদের দেশে ছোট বড় লাইব্রেরিতেও মজুদ রয়েছে, যেগুলো হিন্দু, মুসলমান খৃষ্টান প্রভৃতি ঐতিহাসিকদের তথ্য ও তত্ত্বের মিশ্রণে নিঃসন্দেহে মূল্যবান মূলধন।

আকবরের কোন দোষ ইংরেজ ও বর্তমান ঐতিহাসিকরা স্বীকার করতে চান না মোটেই। তার গুণগানে বলা হয়, তিনি হিন্দুদের উপর থেকে জিজিয়া কর তুলে দিয়েছিলেন। যদি ক্ষণিকের জন্য মেনেই নেয়া হয় জিজিয়া হিন্দুদের প্রতি অত্যাচার ছিল তাহলে আকবর সিংহাসনে বসেই তা তুলে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। আকবরনামায় আছে, ১৫৬৪ খৃস্টাব্দে সারা ভারত বর্ষ থেকে জিজিয়া তুলে নেয়া হয়। যদিও আকবরনামা অনেক মূল্যবান তথ্য বহন করে তবুও মনে রাখা দরকার, এ ইতিহাস আকবর লিখিয়েছিলেন তার বিশ্বস্ত অনুচর আবুল ফজলকে দিয়ে। তাই সন তারিখের সঠিক তথ্য জানতে হলে অন্য ইতিহাসের দিকে নজর দেয়া ভাল।

যদি আমরা ঐতিহাসিক বাউনির মুনতাখাবুত্তাওয়ারিখ এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি, তাহলে তার দ্বিতীয় খণ্ডের ২৭৬ পৃষ্ঠায় দেখতে পাব আকবর জিজিয়ার উচ্ছেদ করেছিলেন ১৫৬৪ খৃস্টাব্দে নয়, ১৫৭৯ খৃষ্টাব্দে। হিন্দুদের কাছ থেকে সম্রাটের দরবারে এত বেশি উপহার আর উপঢৌকন আসত যে তাদের কাছ থেকে জিজিয়া নেয়ার প্রয়োজনই ছিলনা। তবুও দরদী (?) আকবর তা নিতে ছাড়েন নি। তাছাড়া, তর্কের খাতিরে ১৫৭৯-র পরিবর্তে যদি ১৫৬৪ খৃস্টাব্দকেই জিজিয়া বিলোপের সময় বলে ধরে নেয়া যায় তাহলেও বলা যায়, সিংহাসনে বসার (১৫৫৬) পর দীর্ঘ আটটি বছর তার দরদ ছিল কোথায়? এতদিন তিনি জিজিয়ার উচ্ছেদ করলেন না কেন, তা কি সূক্ষ্ম ও নিরপেক্ষ শ্রেণীর চিন্তার বিষয় নয়?

আরও গুরুত্বের ব্যাপার হল, আকবর প্রত্যেক অমুসলমানকেও যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বা যুদ্ধে যোগদানের জন্য অস্ত্রধারণে বাধ্যতামূলক আইন করেছিলেন। সুতরাং সেখানে জিজিয়া নেয়া তো কোনমতেই চলে না। তবুও জগদীশ্বর (?) তা থেকে বিরত হননি। তা সত্ত্বেও তিনি এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষের কাছে মহামতি বলে সুপরিচিত। (শর্ট হিষ্ট্রিঃ ঈশ্বরী গাছ পৃষ্ঠা ৩২)

আকবর অমুসলমানদের নাকি খুবই বিশ্বাস করতেন। বড় বড় সরকারি লেবেল মারা ঐতিহাসিকদের ইতিহাসে তাই দরদী আকবরের এত সুনাম। প্রকৃত ইতিহাস কিন্তু তা না বলে বরং উল্টোটাই তুলে ধরে।

আকবর-প্রচলিত মনসবদারী ব্যবস্থায় পাঁচ থেকে দশ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের মনসবদারদের মধ্যে অমুসলমানগণ থাকতে পারতেন কিন্তু দশ হাজার হতে পঞ্চাশ হাজার সৈন্যের মনসবদারিতে কোন হিন্দু বা অমুসলমান নিয়োগ তিনি মেনে নিতে পারেননি। মানসিংহ ও তোডরমল এত উচ্চপদের হয়েও মাত্র সাত হাজার অশ্বারোহী সৈন্য রাখতে পারতেন। দশ থেকে পঞ্চাশ হাজার বা তদুধের মনসবদার হতে পারতেন একমাত্র রাজ পরিবারের লোক। (দ্রঃ আনন্দরামঃ মিরাট-ই-ইসূতিলাহ-ব্রিটিশ মিউজিয়াম পাণ্ডুলিপি ১৮১৩; আইরভিন? আর্মি, পৃষ্ঠা ৪)

আকবরের দয়া মায়া আর কোমলতার অভাব হতে দেননি আমাদের ভারতীয় আধুনিক ঐতিহাসিকদের অনেকে, কিন্তু প্রকৃত তথ্যানুযায়ী তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির। প্রাণদণ্ড প্রাপ্ত আসামীরা কিভাবে পরোলোকে যাত্রা করবে তার প্রোগ্রাম আকবর সহজেই করতে পারতেন। আসামীকে হাতের পায়ের তলায় ফেলে এবং শূলে চড়িয়ে মারার মত নিষ্ঠর বর্বর যুগের শাস্তিও তিনি দিতে পারতেন। এমনকি অপরাধীকে ততক্ষণ দুই হাত দিয়ে গলা টিপে ধরে রাখার আদেশ দিতেন যতক্ষণ না প্রাণবায়ু শেষ হয়। (প্রমাণঃ মনসারেটের লেখা, কমেনটারী' পুস্তকের ২১০ পৃষ্ঠা)

আকবর কোন গভর্ণর বা আতালিকের কুটি বা অন্যায়ের সংবাদ পেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত না করেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতেন; ব্যবস্থা মানে একেবারে পদচ্যুত বা বরখাস্ত (ডঃ শরণঃ প্রভিনশিয়াল গভর্ণমেন্ট পৃষ্ঠা ১৭৩)

আওরঙ্গজেবের পরিবর্তে বরং আকবর কাউকে বিশ্বাস করতেন না বললে যদিও তা সঠিক হয় না তবুও কিছু প্রমাণ পেশ করা যায়। যেমন, একটা অঞ্চলে সম্মানীয় একজন গভর্ণরের প্রতি আকবর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে না পেরে অনেক ক্ষেত্রে আর একজন গভর্ণর অর্থাৎ যুগ্ম গভর্ণর নিয়োগ করতেন অথচ মোটেই তার প্রয়োজন ছিলনা। কাজের চাপ বেশি থাকলে তার অধীনে সহকারী রূপে আরও কর্মী রাখা যেতে পারত, যুগ্মভাবে রাখার প্রয়োজনীয়তা ছিলনা। তাছাড়া কোন একটা মাত্র ক্ষেত্রে যদি আকবর যুগ্ম গভর্ণর নিয়োগ করতেন তাহলে হয়ত তা প্রসঙ্গ হয়ে উঠত না। কিন্তু সন্দেহ প্রবণতার জন্য তিনি অনেক ক্ষেত্রেই এ ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছিলেন। নিয়োজিত যগ গভর্ণরদের তালিকা আকবরের বিশ্বাসী ঐতিহাসিক আবুল ফজল ভর ‘আকবর নামার তৃতীয় খণ্ডের ৫১১ পৃষ্ঠায় লিখে গেছেন।

গভর্ণরগণ যাতে বেশি প্রভাব বিস্তার না করতে পারেন বা যাতে বিদ্রোহী হয়ে না ওঠেন সে সন্দেহে প্রত্যেককে তিনি ঘন ঘন বদলি করতেন। তার কারণ কি ছিল? তা কি অবিশ্বসহেত নয়? কিন্তু যেহেতু আকবর করেছেন সেহেতু মন্তব্যের অনধিকার অনস্বীকার্য। মানসিংহের মত প্রভাবশালী কর্মকর্তাকেও গুপ্তচরের সামান্য সংবাদের উপর ভিত্তি করে তদন্ত না করেই কাবুল থেকে জোর তলবে দিল্লি ফিরে আসতে বাধ্য করেছিলেন। (আকবরনামা, ৩ খণ্ড, পৃঃ ৫১৭-৫১৮)

এমনিভাবে বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানকেও রাজষের অপব্যয়ের অভিযোগ এনে রাজদরবারে তৎক্ষণাৎ হাজিরা দিতে বাধ্য করেছিলেন। (দ্রঃ রিয়াজুস সালাতিন, পৃষ্ঠা ২২২-২২৩)

সাম্রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রেও আকবরের দূরদর্শিতার যথেষ্ট অভাব ছিল। ভারত বর্ষের তিন দিকে শুধু পানি আর জল। পানিপথের যে কোন দিক থেকে শত্রুর আক্রমণ সম্ভব ছিল। তাছাড়া প্রায়ই দেখা গেছে বিদেশীদের আগমন পানিপথেই হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত বর্ষের জন্য বিশাল ও শক্তিশালী এক নৌবহরের যে প্রয়োজন ছিল সে বিষয়ে আকবরের বুদ্ধিজ্ঞান একটুও উকি মারেনি। এ অদূরদর্শিতাকে অধ্যাপক আবদুল আলীম এম, এ শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকে শিথিল সংগঠন' বলে উদ্ধৃত করেছেন। অবশ্য তিনি তথ্য সরবরাহ করেছেন হুসাইনির লেখা মুঘল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন পুস্তকের ২৬৮ পৃষ্ঠা থেকে।

ইংরেজের অত্যাচার মনে পড়লে আজও বুক কেঁপে ওঠে। মনে পড়ে কত শোষণ, পীড়ন, প্রহার আর কোটি কোটি মানুষের ইতিকথা। সে ইংরেজকে আকবরই দিয়েছিলেন ভারত বর্ষে বুক ফুলিয়ে ব্যবসা করার অধিকার। যা তারা আগেও সীমিতভাবে পেয়েছিল। শুধু তাই নয় কুঠী বানাবার অধিকার, রাজদরবারে ও সর্বত্র খৃষ্টানধর্ম প্রচারের অধিকার। আর যেখানে ইচ্ছা বসবাস ও গীর্জা নির্মাণ করার অধিকার-এর প্রমাণ রয়েছে খৃস্টান ধর্ম প্রচারক মনসারেটের লেখা কমেন্টারী' পুস্তকের ৪৭ পৃষ্ঠায়।

মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ মূলত ইউরোপীয় জাতির আগমন। সেহেতু বলা যায়, ভারতে ইংরেজ তথা ইউরোপীয় জাতির আগমনের বীজ বপন করে গেছেন আকবর, আর জাহাঙ্গীর সে বীজের চারাগুলোকে শক্তিশালী করতে যথার্থ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এখন যদি এ কথাটুকু প্রমাণ হয় তাহলে আকবরকে ভারতবাসী ক্ষমা করে মহামতি বলে মেনে নিবেন কি না তা পাঠকবৃন্দের দায়িত্তে।

খৃষ্টান ও হিন্দু মহিলাদের বিয়ে করা এবং তাঁদের স্ব স্ব ধর্ম পালন, প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও পূর্ণ অধিকার দান আকবরের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অবশ্য এটা উদারতা বটে কিনা তা প্রত্যেক ঐতিহাসিক ও ইতিহাস অনুরাগীর চিন্তার বিষয়।

এ বিয়েকে কেন্দ্র করেই ইংরেজ জাতি ভারত বর্ষে রাজ্য বিস্তারের পথ সুগম করে। তাছাড়া রাজদরবারে মদপানের আমন্ত্রণ ইংরেজ রাজনীতিবিদগণ প্রায়ই পেতেন। মোগল সাম্রাজ্যের সমাধি রচনার কাজ আকবর শুরু করেন এবং মদপ পুত্র জাহাঙ্গীর স্যার টমাস রো ও তার মূল পুরোহিত, অক্সফোর্ড শিক্ষাপ্রাপ্ত, চতুর কুটনীতিবিদ রেভারেন্ড ফেবীকে অতি যাত্রায় প্রশ্রয় দান করে সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করেন। তিন বছর ক্রমাগত মোঘল দরবারে তদবির করে স্যার টমাস রো জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে তার সকল দাবী দাওয়া মধুর করিয়ে নিতে সক্ষম হন। ইংরেজরা অবশ্য কাজ গোছানের তাগিদে মদ খেতেন আর আকবর ও তাঁর পুত্রগণ শুধু মদ খেতেন বলা ঠিক হবে না বরং বলা যায়, মদই তাদের ছিল প্রধান খাদ্য।

খৃস্টানদের মুখে তাদের বীরত্ব গাথা শুনে এবং কিছু প্রত্যক্ষ করে আকবর-জাহাঙ্গীর ইংরেজদের উপর ভীত হয়ে পড়েছিলেন। অবশ্য কেহ কেহ বলেন, ইংরেজরা সূরা সুন্দরী রমণী দিয়ে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন বা পরাস্ত করে দিয়েছিলেন পিতা পুত্রের চেতনাকে। সে যাহোক, তারা ধীরে ধীরে খৃস্টান ধর্মের প্রতি সশ্রদ্ধ আনুগত্য প্রকাশ করে চললেন এবং দেশের ভিতরে ইউরোপীয় ঘাটি তৈরি করতে অনুমতি ও সাহায্য দিলেন। আর তার ফলস্বরূপ আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর থেকে উদীয়মান ইউরোপীয় শক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটায়। সুতরাং মোঘল সাম্রাজ্যের পতন তথা ভারত বর্ষের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার জন্য দায়ী আওরঙ্গজেব নন, দায়ী মূলত মহামতি বা জগদ্বীশ্বর নামক আকবর ও জাহাঙ্গীর।

এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক প্রিঙ্গল কেনেডি তাঁর The History of Muginals' গ্রন্থে যা বলেছেন তার অর্থ হল-আকবরের গঠিত সাম্রাজ্যের দুর্বলতা তার সামরিক নীতির মধ্যেই নিহিত ছিল। তিনি উত্তর পশ্চিম পার্বত্য অঞ্চলের ওপার হতে সতেজ ও সবল সৈন্য আমদানী বন্ধ করে এবং ভারত ভারতীয়দের জন্য নীতির অনুসরণ করে তার সাম্রাজ্যের পতনের জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী হয়েছেন। তার গঠিত সাম্রাজ্য যখন বিজাতীয় প্রতিকূল শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল তখন তার আর আত্মরক্ষা করার শক্তি ছিলনা।

এমনিভাবে বহু উদ্ধৃতির মধ্যে আর একটির উল্লেখ করে বলা যায়, “...শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা শেকোহ সম্রাট হলে খুব সম্ভবতঃ অতি সত্বর অবস্থান্তর বা পতন ঘটত। মোঘল সাম্রাজ্যের এ পতন স্থগিত রাখতে কৃতকার্য হয়েছিলেন ইসলামী তৃণীয়ের শেষ তীর আলমগীর বা আওরঙ্গজেব। দারা ছিলেন আকবরের মত বিজাতীয় ভাবাপন্ন। বলাবাহুল্য, আকবরই মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের বীজ বপন করেন। ইসলাম অনুরাগী মোহিউদ্দিন আলমগীর আওরঙ্গজেব বিজাতীয় প্রভাব দুনীতিসমূহ হতে সাম্রাজ্যকে সংস্কার ও সংশোধন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য তিনি কারও সন্তোষ বা অসন্তোষ কিছু মাত্র গ্রাহ্য করেননি। তাঁর চেষ্টা অনেকটা ফলবতী হয়েছিল বলেই ভারতে ইসলাম এবং জাতি হিসেবে মুসলমান এখনও টিকে আছে বা বেঁচে আছে। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর এরূপ অসাধারণ শক্তিশালী আদর্শ চরিত্রের কোন ব্যক্তি আর দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন নি।" (হবিবর রহমান প্রণীত ‘আলমগীর' দ্রষ্টব্য)

অতএব এতসুদীর্ঘ আলোচনার পর একথা ভুললে চলবে না যে, আধুনিক সহজলভ্য ইতিহাসে যা আছে তাই-ই অমৃতের ধার নয়। প্রকৃত ঐতিহাসিকের দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং যুক্তি বা সত্যের মাপকাঠিতে যা গ্রহণযোগ্য তা অবশ্যই গ্রহণীয়, বাকীটুকু পরিত্যাজ্য বা পরিহার্য।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন