মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
রবীন্দ্রনাথের বিষয় বাস্তবিকই বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৮৬১-তে। আর তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৪১ সনে।
রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা ও ব্যক্তিত্ব যেমন উল্লেখযোগ্য তেমনি তার ভূমিকাও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তবে শুরুতেই বলে রাখা ভাল যে, পরিবেশ এমন একটা জিনিস যার কিছু না কিছু প্রভাব মানুষকে প্রভাবিত করেই। রবীন্দ্রনাথের যুগে বুদ্ধিজীবী-কলম বেশিরভাগ যেদিকে চলছিল, যদি তিনি তার উল্টো পথে চলতেন তাহলে যেভাবে আজ তিনি সমাদৃত হয়েছেন হয়ত তা নাও হতে পারতেন। আর তাই তিনিও লিখেছিলেন?
বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ' সম্বন্ধে পূর্বে তার স্বরূপ ও প্রকৃতি সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই আনন্দমঠে রচিত বন্দেমাতরম' গানটির কবি সুর দেন এবং নিজে গেয়ে বঙ্কিমকে শোনান। (রবীন্দ্র জীবনী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬)
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন স্বাতন্ত্রপ্রিয় মানুষ। যখন তিনি বুঝলেন যে, মিলিত হিন্দু-মুসলমান সকলে এ গানকে অন্তর থেকে মেনে নিতে পারে না, তখন কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি স্বয়ং আপত্তি করেছিলেন যাতে ওটা জাতীয় সঙ্গীত না হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই অধিবেশন কলকাতাতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এ সভার সভাপতি ছিলেন রহমতুল্লা। ...সমগ্র 'বন্দেমাতরম' গানটি কংগ্রেসের জাতীয় সঙ্গীত' রূপে সর্বজাতির গ্রহণীয় নয় বলে মত প্রকাশ করে রবীন্দ্রনাথ উগ্রপন্থীদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন এবং তার বিরোধিতা সত্ত্বেও 'বন্দেমাতরম' প্রথম স্তবক কংগ্রেসে জাতীয় সঙ্গীত রূপে গৃহীত হয়। (১৯৩৭)।” (অধ্যাপক (ঢাকা বিশ্বঃ) ডক্টর মনিরুজ্জামানঃ আধুনিক বাংলা কাব্যে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, পৃষ্ঠা ২৬৯-প্রভাত মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র জীবনকথা, পৃষ্ঠা ২৬০-৬১)
শিবাজী সম্বন্ধে আলোচনা পূর্বে হয়েছে এবং অনেক মূল্যবান তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, শিবাজীকে সীমাহীন মহত্ত্ব দান করার পিছনে ছিল সাম্প্রদায়িক(?) নেতা তিলকের হাত। ১৯০৪ খৃষ্টাব্দে তিনি শিবাজী উৎসব পালন করেন। তিনি ছিলেন মহারাষ্ট্রের শিবাজী-ভক্ত নেতা। তারপর তিনি করেছিলেন গণপতি পূজা'। আর ১৮৯৩ এ পুণায় প্রতিষ্ঠা করলেন গোরক্ষিণী সভা'। এ প্রসঙ্গে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় 'রবীন্দ্র জীবনকথা'র ৬৭ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি খুব মূল্যবান-গোরক্ষিণী সভা স্থাপিত হয়, সেটাই হল হিন্দু ধার্মিকতার প্রতীক।
অচিরকালের মধ্যে মুসলমানের পক্ষে ধর্মের জন্য গোবধ অতি আবশ্যক, ও হিন্দুর পক্ষে গোবধ নিবারণ ধর্ম রক্ষার জন্যই অনিবার্য হয়ে উঠল। রক্তারক্তি শুরু হল। গরু মারতে ও গরু বাঁচাতে গিয়ে বিস্তর মানুষ মারতে লাগল।” ভারতবাসীর এ ভয়াবহ রক্তারক্তির মূলে তিলকের নেতৃত্ব থাকার জন্য অনেক শান্তিপ্রিয় হিন্দু-মুসলমান দুঃখিত হলেন। ইংরেজ সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে ১৮৯৭ সনে তিলককে বন্দী করলেন। মামলা চলতে থাকলো। ঠিক তখন রবীন্দ্রনাথ মোকদ্দমা চালাবার খরচ এবং তাকে কারাগারে থেকে মুক্ত করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে বা ভিক্ষা করতে নেমে পড়লেন। অবশ্য এটা তার দয়ালু মনের পরিচয়; তবুও এটাকে পরিবেশের প্রভাব না বলে
পারা যায় না। শুধু ওতেই শেষ নয়-কবি তাঁর কবিতায় শিবাজী ও মারাঠাদের যথেষ্ট গুণকীর্তন করে গেছেন; যা আজও দলিল হয়ে আছে। কবির এ লেখনীতে শিবাজী-ভক্ত সৃষ্টি করে লাভ হল এ যে, গো-খাদক মুসলমানদের অনেকেই বিদ্বেষী হয়ে পড়ল। কারো মনে তখন এ প্রশ্নটাএসেছিল বলে কোন প্রমাণ নেই যে, মুসলমান গোমাংস খেলে যদি শত্রু হয়, যদি তাদের হত্যা করতে শাসক খৃষ্টানদের কথা আগে ভাবা উচিত নয় কি? তারা কি মুসলমানদের থেকে অনেক বেশী গোমাংসাশী নয়? কিন্তু কবিও লিখে ফেললেন
“এক ধর্মরাজ্য হবে এ ভারতে' এ মহাবচন
করিব সম্বল।”
শেষে আরও লিখলেন :
“মারাঠা সাথে আজি হে বাঙ্গালী এক কণ্ঠে বল
জয়তু শিবাজী'।”
কলকাতায় মুসলমান শ্রমিক গাড়োয়ান ও গরীব দল যখন ইংরেজকে মার! মার! করে ইট পাথর ছুঁড়ে মারতে লাগলো তখন ইংরেজের ‘দেশীয় দালালরা তা সমর্থন করেন নি; বরং তার বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে ইচ্ছামত লিখে গেছেন এবং তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন এমন নজিরও আছে। এ প্রসঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা প্রজা' প্রবন্ধের কিছু অংশ তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন
“কিছুদিন হইল একদল ইতর শ্রেণীর অবিবেচক মুসলমান কলিকাতার রাজপথে লোষ্ট্র খন্ড হস্তে উপদ্রবের চেষ্টা করিয়াছিল। তাহার মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, লক্ষ্যটা বিশেষরূপে ইংরেজদের প্রতি। তাহাদের যথেষ্ট শাস্তিও হইয়াছিল। ...কেহ বলিল মুসলমানদের বস্তিগুলো একেবারে উড়াইয়া পুড়াইয়া দেওয়া যাক...।" (রবীন্দ্র রচনাবলী,
মহান রবীন্দ্রনাথের দুর্ণাম করার উদ্দেশ্য আমাদের নয়, বক্তব্য হচ্ছে-পরিবেশ মহান মানুষকেও প্রভাবিত করতে পারে। রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকবি বলে আমরা জেনে ও মেনে তৃপ্তি বোধ করি, তার প্রতিভাকে আমরা যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি-কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ইতিহাসের অঙ্গহানি করে সত্য চাপা করে দেয়ার পক্ষপাতী আমরা হতে চাই না।
শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত ‘পথের দাবী' যখন বাজেয়াপ্ত হয় তখন তিনি রবীন্দ্রনাথের সহযোগিতা চেয়ে একটি পত্র দিয়েছিলেন। চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথ যা লিখেছলেন তাকে স্বাগত জানান সকলের পক্ষে সম্ভব নয় :
কল্যাণীয়েষু, তোমার পথের দাবী' পড়া শেষ করেছি। বইখানি উত্তেজক। অর্থাৎ ইংরেজের শাসনের বিরুদ্ধে পাঠকের মনকে অপ্রসন্ন করে তোলে।...আমি নানা দেশে ঘুরে এলাম-আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে এই দেখলাম-একমাত্র ইংরেজ গভর্ণমেন্ট ছাড়া স্বদেশী প্রচার বাক্যে বা ব্যবহারে বিরুদ্ধতা আর কোন গভর্ণমেন্ট এতটা ধৈর্যের সাথে সহ্য করে না। ইতি ২৭শে মার্চ, ১৩৩৩-তোমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ পত্রে আমরা ইংরেজ সরকারের প্রতি কবি রবীন্দ্রনাথের আনুগত্য অস্বীকার করি বা না
করি তা বাদ দিয়ে শরৎচন্দ্র এ চিঠির জন্য নিজে কি লিখেছিলেন তার একটু অংশ তুলে দিচ্ছি “সে কি উত্তেজনা! কি বিক্ষোভ! রবীন্দ্রনাথ নাকি 'পথের দাবী' পড়ে ইংরেজের সহিষ্ণুতার প্রশংসা করেছেন। এ বইয়েতে নাকি ইংরেজদের প্রতি বিদ্বেষের ভাব আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। আমার পথের দাবী' পড়ে আমার দেশের কবির কাছে যদি এ দিকটাই বড় হয়ে থাকে, তাহলে স্বাধীনতার জন্যে আর আন্দোলন কেন? সবাই মিলে তো ইংরেজদের কাঁধে করে নেচে বেড়ান উচিত। হায় কবি, তুমি যদি জানতে তুমি আমাদের কত আশা-কত বড় গর্ব, তাহলে নিশ্চয় এমন কথা বলতে পারতে না। কবির কাছে আমার ‘পথের দাবী' যে এত বড় লাঞ্ছনা হবে, এ আমার স্বপ্নের অতীত ছিল। কি মন নিয়েই যে আমি এ বইখানা লিখেছিলুম, তা আমি কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। ” (নিষিদ্ধ বাংলাঃ শ্রীশিশির কর, পৃষ্ঠা ২৪,৩২; দরদী শরৎচন্দ্র মণীন্দ্রচক্রবর্তী; শরৎক্রের টুকরো কথা অবিনাশচন্দ্র ঘোষাল দ্রষ্টব্য)
কবিকে সম্মান করার অর্থ এ নয় যে, তার জীবনের ইতিহাসকে চেপে দিতে হবে, সত্যের অপলাপ করতে হবে। আমরা যদি সত্যকে চেপেই যাই তাহলে পৃথিবীর অন্যান্য লেখকরা তাদের সত্যের কলমকে কি থামিয়ে রাখবেন?
‘জনগণ-মন-অধিনায়ক জয় হে-ভারত ভাগ্য বিধাতা...' বিশাল ভারতের স্বাধীনতা সঙ্গীত। কিন্তু এটা রচিত হয়েছিল স্বাধীনতার পূর্বে (১৯১২)। তাছাড়া ইংরেজের ভারত ছাড়ার পূর্বেই কবির মৃত্যু হয়। আসলে অত্যাচারী ইংরেজ সরকারের প্রতিনিধি পঞ্চম জর্জ যখন দিল্লির সিংহাসনে উপবিষ্ট তখন কবির লেখা এ কবিতায় পঞ্চম জর্জকে ভারতের ভাগ্য-বিধাতা' বলে উল্লেখ করে সেটা উপহার দেয়া হযেছিল। রবীন্দ্রনাথের এ কবিতায় পঞ্চম জর্জকেই স্বাগত জানান হয়েছিল এবং তারই স্তুতি করা হয়েছিল বলে ভারতীয় সাধারণ এবং রাজনৈতিক মহলে তখন খুব ঝড় উঠেছিল। ইংরেজদের চলে যাবার পরেও এ নিয়ে কম তোলপাড় হয়নি। ষাটের দশকে আসামে ও এ দশকে কেরলে বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক ও পন্ডিতরা কবিতার উদ্দেশ্যে ও সারবস্তু নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছেন (দৈনিক আজকাল' পত্রিকা, ৩০.৪.১৯৯২)
পশ্চিমবঙ্গেও সম্প্রতি প্রতিবাদ উঠেছে বলে সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে। আমরা নানা বাধা বা দ্বিধায় এসব যদি নাই-ই প্রকাশ করি তাহলে আর কি কেহ এসব তথ্য প্রকাশ করবেন না? চট্টগ্রাম থেকে ১৯৭৫-তে একটা গুরুত্বপূর্ণ বই বের হয়েছে যেটার নাম-ভুলে যাওয়া ইতিহাস'। সে পুস্তকের ৯৬ পৃষ্ঠা এ মূল্যবান তথ্য মুদ্রিত হয়েছে।
এ সমস্ত তথ্যে তাঁর ইংরেজ-প্রীতির প্রমাণ পাওয়া যায় বলে যারা দাবি করেন, তাদের দাবি যেমন সহজে উড়িয়ে দেয়া যায় না তেমনি রবীন্দ্রনাথের ইংরেজ বিরোধী ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিঃ ডায়ারের নেতৃত্বে জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজদের গুলিতে যে নৃশংস হত্যাকান্ড হয়েছিল তাতে কবি ব্যথিত হয়েছিলেন। আর তারই প্রমাণ দিতে তিনি ইংরেজ প্রদত্ত নাইট' উপাধি ত্যাগ করেন।
রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে যে সমস্ত তথ্য পরিবেশন করা হল তাতে যাই-ই প্রমাণিত হোক না কেন, তিনি অবশ্য পরে সাম্প্রদায়িক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরে মুসলমান জাতির বৈশিষ্ট্য ও অধিকার উপলব্ধি করেছিলেন এবং সে সঙ্গে ইংরেজের প্রকৃত চরিত্রও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। উল্লেখিত তথ্যে যেমন সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব দেখা যায় তেমনি আবার তার ভাষাতেই তিনি লিখেছেনঃ“হিন্দু মুসলমানের সম্বন্ধ লইয়া আমাদের দেশে একটা পাপ আছে। এ পাপ অনেকদিন হইতে চলিয়া আসিতেছে। ইহার যা ফল তাহা না ভোগ করিয়া আমাদের কোন মতেই নিস্তার নাই।"
রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছেনঃ“তর্ক করিবার বেলায় বলিয়া থাকি কি করা যায়, শাস্ত্র তো মানিতে হইবে। অথচ শাস্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্বন্ধে পরস্পরকে এমন করিয়া ঘৃণা করিবার তো কোন বিধান দেখি না। যদি বা শাস্ত্রের সেই বিধানই হয়, তবে সে শাস্ত্র লইয়া স্বদেশ-জাতি-রাজ্যের প্রতিষ্ঠা কোনদিন হইবে না। মানুষকে ঘৃণা করা যে দেশে ধর্মের নিয়ম, প্রতিবেশীর হাতে পানি খাইলে যাহাদের পরকাল নষ্ট হয়, পরকে অপমান করিয়া যাহাদের জাতি রক্ষা করিতে হইবে, পরের হাতে চিরদিন অপমানিত না হইয়া তাহাদের গতি নাই তাহারা যাহাদিগকে ম্লেচ্ছ বলিয়া অবজ্ঞা করিতেছে সেই ম্লেচ্ছের অবজ্ঞা তাহাদিগকে সহ্য করিতে হইবে।” (এ মূল্যবান তথ্য চাপা পড়ে আছে রবীন্দ্র রচনাবলী', ১০ম খন্ড, ৬২৮-২১ পৃষ্ঠা)
রবীন্দ্রনাথ আরও বুঝতে পারলেন এবং স্বীকার করে তাঁর নিজের ভাষায় বললেন-“...যে একদেশে আমরা জন্মিয়াছি সেই দেশের ঐক্যকে খন্ডিত করিতে থাকিলে ধর্মহানি হয় এবং হইলে কখনই স্বার্থ রক্ষা হইতে পারে না তখনই আমরা উভয়ই ভ্রাতায় একই সমচেষ্টার মিলনক্ষেত্রে আসিয়া হাত ধরিয়া দাঁড়াইব।” (রবীন্দ্র রচনাবলী, ১০ম পৃষ্ঠা ৫০২)
১৯২০-২১ সালে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে মাওলানা মুহাম্মদ আলী ও গান্ধীজীর নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলমানের পূনর্মিলনের প্রচেষ্টা দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু বুঝেছিলেন যে এ মিলন স্থায়ী হবে না। কারণ রাজনৈতিক ও সামাজিক ষড়যন্ত্রে মুসলমানদেরকে উন্নতির ধাপ হতে চরম অবনতিতে নামান হয়েছে। তাই কবি ‘সমস্যা নামে একটি ঐতিহাসিক প্রবন্ধে লিখলেন। তাতে তিনি জানালেন-হিন্দু-মুসলমানের মিলন অপেক্ষা সমকক্ষতা প্রয়োজন আগে। (তথ্যঃরবীন্দ্র রচনাবলী, ২৪শ খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৩-৫৮,৩৬২)
কবি মুসলমানদের শক্তি এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা অনুভব করে লিখেছেনঃ “বাংলাদেশের পূর্বভাগে মুসলমানের সংখ্যাই অধিক। ধর্মগত ও সমাজগত কারণে মুসলমানের মধ্যে হিন্দুর চেয়ে ঐক্য বেশী-সুতরাং শক্তির প্রধান উপকরণ তাহাদের মধ্যে নিহিত হইয়া আছে...”-তথ্যাংশ রবীন্দ্র রচনাবলী'র দশম খন্ডের ৫২৩ পৃষ্ঠায় আছে।
ইংরেজকে যে তিনি মুগ্ধ করতে পেরেছিলেন তা প্রমাণিত হয়েছে। এ মুগ্ধ করার পিছনে কবিকে যেসব কাজ করতে হয়েছে তাতে ভারতের একটা দল তার সমালোচনা করতে ছাড়েন নি। তবে এও সত্য যে, কবি নিজেকে নিজেই সংশোধন করে নিয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, ইংরেজের বিচার মানে অবিচার; আর হিন্দু-মুসলমানের মিলিত নেতৃত্ব ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। এ প্রসঙ্গে ১৯০৫ খৃষ্টাব্দের ৭ই আগষ্ট অবস্থা ও ব্যবস্থা নামক নিজের লেখা যে প্রবন্ধইিব কলকাতার টাউন হলে পড়েছিলেন তার একটু অংশ উদ্ধৃত করলাম-“দেশের কর্মশক্তিকে একটি বিশেষ কর্তসভার মধ্যে বদ্ধ করিতে হইবে। অন্তত একজন হিন্দু ও একজন মুসলমানকে আমারা এই সভার অধিনায়ক করিব-তাঁদের নিকট নিজেকে সম্পূর্ণ অধীন, সম্পূর্ণ নত করিয়া রাখিব-তাহাদিগকে সম্মান করিয়া দেশকে সম্মানিত করিব।” (দ্রষ্টব্য রবীন্দ্র রচনাবলী, তৃতীয় খণ্ড, ১৩৭১, পৃষ্ঠা ৬১২) ভারতে অনেক জাতি ও উপজাতি আছে।
এখন যদি রবীন্দ্রনাথের সত্য-ভক্তদের প্রশ্ন করা যায়-বিশ্ববিখ্যাত রবিবাবু কি ভারতের নানাজাতি, নানামত, নানা পরিধানের কথা জানতেন না? তবুও কেন তিনি হিন্দু-মুসলমান' নিয়ে এত লেখালেখি করলেন? আর কোন জাতিকে নিয়ে কেন লিখলেন না? তিনি কি মুসলিম জাতির মর্যাদা, অধিকার ও প্রকৃত মূল্যায়নকে তাঁর লেখনী প্রতিভায় ফুটিয়ে তোলেন নি? এখানেও প্রমাণস্বরূপ তাঁর ভাষাতেই বলা যায়-“এদিকে একটা প্রকাণ্ড বিচ্ছেদের খড়গ দেশের মাথার উপর ঝুলিতেছে। কত শত স্নেহ উপভোগ করিয়াছি, তথাপি আজও আমাদের মিলনে বিঘ্ন ঘাটিতেছে। এই দুর্বলতার কারণ যতদিন আছে ততদিন আমাদের দেশের কোন মহৎ আশাকে সম্পূর্ণ সফল করা সম্ভব হইবে না...আমরা গোড়া হইতে ইংরেজদের স্কুলে বেশি মনোযোগের সাথে পড়া মুখস্থ করিয়াছি বলিয়া গভর্ণমেন্টের চাকরী ও সম্মানের ভাগ মুসলমান ভ্রাতাদের চেয়ে আমাদের অংশে বেশি পড়িয়াছে সন্দেহ নাই। ...এইটুকু (পার্থক্য) কোন মতে না মিটিয়া গেলে আমাদের ঠিক মনের মিলন হইবে না।”
রবীন্দ্রনাথ আরও জানালেন : “আমরা যে মুসলমানদের অথবা আমাদের দেশের জনসাধারণের যথার্থ হিতৈষী তাহার কোন প্রমাণ দিই নাই, অতএব তাহারা আমাদের হিতৈষিতায় সন্দেহ বোধ করিলে তাহাদিগকে দোষী করা যায় না।...আমরা যে দেশের সাধারণ লোকের ভাই তাহা দেশের সাধারণ লোক জানে না এবং আমাদের মনের মধ্যেও যে তাহাদের প্রতি ভ্রাতৃত্বভাব অত্যন্ত জাগরুক-আমাদের ব্যবহারে এখনও তাহার কোন প্রমাণ নাই।”
রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের গুরুত্ব এত বেশি অনুভব করেছিলেন, যে তা তিনি তাঁর লেখায় সুস্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় : “স্বদেশীযুগে আমরা দেশের মুসলমানদের কিছু অস্বাভাবিক উচ্চস্বরেই আত্মীয় বলিয়া, ভাই বলিয়া ডাকাডাকি শুরু করিয়াছিলাম। সেই স্নেহের ডাকে যখন তাহারা অশ্রু গদগদ কণ্ঠে সাড়া দিল না তখন আমরা তাহাদের উপর ভারী রাগ করিয়াছিলাম। ভাবিয়াছিলাম এটা নিতান্তই ওদের শয়তানি। একদিনের জন্যও ভাবি নাই, আমাদের ডাকের মধ্যে গরজ ছিল কিন্তু সত্য ছিল না,...। বাংলার মুসলমান যে এই বেদনায় আমাদের সাথে এক হয় নাই তাহার কারণ তাহাদের সাথে আমরা কোনদিন হৃদয়কে এক হইতে দিই নাই।"
ডাঃ কালিদাস নাগ বিলেত থেকে পত্র-মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন-“হিন্দু-মুসলমান সমস্যার সমাধান কি?' সেটা ছিল ১৯২২ সাল। পত্রোত্তরে কবি লিখেছিলেনঃ “খিলাফত উপলক্ষ্যে মুসলমান নিজের মসজিদে এবং অন্যত্র হিন্দুকে যত কাছে টেনেছে, হিন্দু মুসলমানকে তত কাছে টানতে পারে নি। আচার হচ্ছে মানুষে সাথে মানুষের সম্বন্ধের সেতু, সেখানেই পদে পদে হিন্দু নিজেদের বেড়া তুলে রেখেছে। ...অন্য আচার অবলম্বীদের অশুচি বলে গণ্য করার মত মানুষের মিলনের এমন ভীষণ বাধা আর কিছুই নেই।" চিঠির শেষে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, “আমরাও মানসিক অবরোধ কেটে বেরিয়ে আসব; যদি না আসি তবে নানাঃ পন্থা বিদ্যুতে আয়না'। (শ্রীসত্যেন সেনঃ পনেরই আগস্ট, পৃষ্ঠা ১১০-১১৪)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/58
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।