মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“১৮১৭ খৃষ্টাব্দে জন্মেছিলেন অরবিন্দ। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৫০ সালে ভারতে তার ভক্ত ও অনুরক্তের অভাব নেই। আর সে জন্যই বঙ্কিমের মত তার নামের সাথে ঋষি যোগ করে তাকে ঋষি অরবিন্দ' বলা হয়ে থাকে।
ধর্মের দিক দিয়ে অরবিন্দ অত্যন্ত প্রাচীনপন্থী ছিলেন অর্থাৎ বঙ্কিমের আদর্শের সাথে তিনি একমত ছিলেন। খুলে বললে বলতে হয় হিন্দু জাগরণ, হিন্দু উন্নতিই ছিল তাঁর এবং তার গ্রুপের মতাদর্শ। কিন্তু বঙ্কিম, বিদ্যাসাগর, রামমোহন প্রভৃতি নেতাদের সাথে তার একটা পার্থক্য ছিল-ইংরেজ শাসন ও ইংরেজ জাতিকে তিনি মোটেই সুনজরে দেখেননি বা তাদেরকে সমর্থন করিননি। এটা শুধু তার ব্যক্তিগত মানসিক ব্যাপার ছিল না, ইংরেজ বিতাড়নে তিনি বা তার দল অস্ত্র ধারণ করেছিলেন এটাও ঐতিহাসিক সত্য।
তাঁর এ মহান দিক তাকে আরও স্মরণীয় ও বরণীয় করত যদি তার জাগরণের আওতায় ক্লান্ত বিপ্লব মুসলিম জাতির জন্য আহ্বান থাকত। ভুলক্রমে যদি তিনি মুসলমানদের না নিয়েই এগিয়ে চলার চেষ্টা করে থাকেন তাহলে তা অপরাধ না বলে অসাবধানতা বলে আচ্ছাদনের প্রলেপ প্রয়োগ করা চলত কিন্তু যে পথ ও মত তিনি বা তাঁর দল গ্রহণ করেছিলেন তা মুসলমানদের পুরোপুরি নীতি-বিরোধী এবং মর্যাদা-বিরোধী বলে অনেকে মনে করেন। কে কি মনে করে তার কোন একটা বেছে নেয়ার দায়িত্ব পালন না করে বরং অরবিন্দের কাজ, কথা ও জীবন জেনে বা পড়ে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা ভোগ করা অধিকতর কার্যকরী।
সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় ধারার ভগীং লাল-বাল-পাল ও অরবিন্দ প্রমুখ জাতীয়তাবাদীরা ভক্তিবাদ, অবতারবাদ, নীলাবাদ, অলৌকিকত্ব প্রভৃতিতে বিশ্বাস করতেন। শক্তির বোধনকল্পে ভরা কালী, দূর্গা, বাণী, বগলা প্রভৃতি দেবীর পূজা করতেন। শিবাজী ছিলেন তাঁদের আদর্শ। বঙ্কিম, বিবেকানন্দ ও দায়ানন্দ সরস্বতীর হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ চিন্তাকে অনেকাংশে ভিত্তি করে এ ধারা গড়ে উঠ। (দ্রঃ বাঙালীর রাষ্ট্রচিন্তা, পৃঃ ২৫৯)
সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় তার ৪৯৯ পৃষ্ঠার এই পুস্তকে নানা গ্রন্থের উদ্ধৃতি তুলে বইটিকে মজবুত করেছেন। তাতে তিনি আরও লিখেছেন-“পূর্বতন আধ্যাত্মিক জাতীয়তাবাদকে তারা হিন্দু পুনর্জাগরণে পরিমিশ্রিত করেন। পাঞ্জাব কেশবী লালা লাজপত রায় (১৮৫৬-১৯২৮) ছিলেন মুসলমান ও অহিন্দু ধর্মবিরোধী আর্যসমাজে দীক্ষিত। মহারাষ্ট্রে হিন্দু অতীতের পুনঃ প্রতিষ্ঠাকল্পে লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক (১৮৫৭-১৯২০) গণপতি ও শিবাজী উৎসবের (১৮৯৩-১৮৯৫) সাথে গোরক্ষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের উদ্ভাবক বিপিনচন্দ্র পাল হিন্দু জাতীয়তাবাদে পুরোপুরি উদ্বুদ্ধ না হলেও শ্রীকৃষ্ণকেই ভারতের অন্তরাত্মা মনে করতেন। লালা লাজপতের উপর বর্ষায় অন্তরীণ আদেশ (১৯০৭) জারি হওয়ায় বিপিনচন্দ্র ত্রস্তচিত্তে সারাদেশে রক্ষাকালী পূজা ও শ্বেতছাগ বলির নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার নিউ ইণ্ডিয়া' পত্রিকার প্রচ্ছদে থাকত জগদ্ধাত্রীর ছবি। অন্যদিকে
'যুগান্তর পত্রিকার প্রচ্ছদে থাকত খড়্গসহ মা কালীর হাত। জনশক্তির বোধন ও শত্রু নিধনকল্পে বরোদায় অরবিন্দ বগলা মূর্তি গড়িয়ে পূজা করেন (১৯০৩)। গুপ্ত সমিতিতে নবাগত কর্মীদের তিনি এক হাতে গীতা এবং অপর হাতে তলোয়ার দিয়ে বিপ্লবের শপথ গ্রহণ করাতেন। লাল-বাল-পাল নামে অভিহিত এ তিনজন আর অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন চরমপন্থী দলের প্রধান চার স্তম্ভ। এদের মধ্যে অরবিন্দ ছাড়া আর কেউ হিংসাত্মক বিপ্লবে বিশ্বাস করতেন না।” (বাঙালীর রাষ্টচিন্তা, পৃঃ ২৬০)
এ উদ্ধৃতি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে, কোন মুসলমানের পক্ষে এ পন্থায় শপথ নিয়ে ঐ মত সমর্থন করে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়া কত কঠিন ছিল। অথচ এ তথ্য চাপা পড়ে থাকলে মনে হবে মুসলমানরা এসব গুপ্ত সমিতিতে ব্যাপকভাবে যোগ দেয়নি; সুতরাং স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমান জাতির কোন অবদান নেই। কিছু ভাল ভাল হিন্দু নেতা বা উপযুক্ত হিন্দুকর্মী তাতে যোগ দিয়েছিলেন এজন্য যে, তারা বুঝেছিলেন-লাটি খেলা, তলোয়ার খেলা প্রভৃতি শরীরচর্চা নিশ্চয় শুভকর্ম, আর ইংরেজের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের প্রয়োজনও আছে। কিন্তু মুসলমান তাতে যোগ দিতে পায় না এটা অনেকে বুঝতে পারলেও মৌনতা অবলম্বন করেছিলেন হয়ত বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে। কিন্তু যখন দেখা গেল যেখানে সেখানে ডাকাতি করে অর্থ সংগ্রহ চলছে তখন অনেকেই বিবেকের তাড়নায় দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। চিত্তরঞ্জনদাস, প্রমথনাথ মিত্র, সরলা দেবী প্রভৃতি নেতৃবৃন্দ পদত্যাগ করে বেরিয়ে আসেন। (দ্রঃ ঐ, পৃঃ ২৬২)
অনুশীলন' ও 'যুগান্তর' এ দুটি তখন ছিল প্রধান সন্ত্রাসবাদী গুপ্তদল। ১৯০৯ সনে ইংরেজ সরকার এক এক করে এ সমস্ত দলকে নিষিদ্ধ করে। তখন এসব দল থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কমী কংগ্রেসে যোগ দেন। পরের দিকে গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের সময় এ দুটি বিপ্লবী দলের অনেক কর্মী ও নেতা কংগ্রেসের সদস্যপদ ও পন্থা গ্রহণ করেন। (সৌরেন্দমোহনঃ পৃঃ ২৬২) বঙ্কিমচন্দ্রের চিন্তাই ছিল তাঁর (অরবিন্দের) প্রেরণার উৎস। আনন্দমঠের আদর্শে অরবিন্দ ভবানী মন্দির প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছিলেন।" (ঐ, পৃঃ ২৬৩)
তিনি কংগ্রেস বিরোধী ছিলেন। কংগ্রেস পার্টির জন্য তিনি আক্রমণমূলক কথা বলতেন। কংগ্রেসের কর্মপন্থাকে বলতেন Political Mendicancy বা রাজনৈতিক ভিক্ষুকতা এবং কংগ্রেসকে বলতেন Unnational Congress অর্থাৎ অজাতীয় কংগ্রেস। অবশ্য এ কথাগুলো অরবিন্দ বললেও তার পিছনে যুক্তি দেখাবার মত ক্ষমতা অরবিন্দের ছিল; যেটা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়া সহজ ছিলনা। তিনি বলেছিলেন, "A Body like the Congress, which represents not the mass of the population, but a single and very limited class, could not honestly be called national."-যার ভাবার্থ হল-কংগ্রেস অল্প কিছু সীমিত লোকের দল, তারা সর্বসাধারণের প্রতিনিধি নয়, তাদের সত্যকার জাতীয় দল বলা যায় না।
অরবিন্দু ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে ‘ভবানী মন্দির' বই লেখেন। তাতে তিনি তার এমন কর্মপন্থার বর্ণনা দেন যা মুসলমানদের নিরাশ করে। ১৯০৬-এ বন্দেমাতরম' পত্রিকার সম্পাদক হয়ে যেভাবে লেখালেখি হয় তাতে মুসলিম মানস চমকে ওঠে। তার পূর্বেই গোরক্ষা আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল, যা মুসলমানদের চিন্তিত করে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যায় যে, মুসলমানদের হাত হতে গরুকে বাঁচাবার জন্য যে তোড়জোর চলে, শাসক খৃষ্টানদের হাত হতে গোরক্ষার তেমন কোন তোড়জোর করার ইতিহাস সহজলভ্য নয়। তারপরেই ১৯০৬-এ মুসলিম লীগ নামে মুসলমান সংস্থার সৃষ্টি হয়। অবশ্য মুসলিম লীগের প্রকৃত জন্মদাতা জিন্নাহ না কতকগুলো সংস্থা ও নেতৃবৃন্দের ভ্রান্ত পদক্ষেপ-তা বলতে গিয়ে ভাবতে বাধ্য হতে হয়।
বিরুদ্ধবাদীরা অরবিন্দের জন্য ডাকাতির অভিযোগ, মুসলমান বিদ্বেষের অভিযোগ যতোই তুলে ধরুন না কেন, তিনি যে ইংরেজ শাসনকে পুরোপুরিভাবে খতম করতে চেয়েছিলেন তাতে আদৌ সন্দেহ নেই।
সত্যের খাতিরে সত্যবেষীদের একথা ভোলা সম্ভব নয় যে, পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রের মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছেন, কারাবরণ করেছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন, পথের ভিক্ষুক হয়ে গেছেন তবুও অন্যায়ের কাছে অসত্যের কাছে পরাধীনতার কাছে মাথা নত করেননি, টার্গেট হতে মুখ ফিরিয়ে নেননি। অরবিন্দ বোমা রিভলভার নিয়ে গুপ্তহত্যা, ডাকাতি প্রভৃতি করতে গিয়ে অপরকে আঘাত দিয়েছেন সত্য কথা, তবে তার নিজের কতটুকু আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা ছিল তাও বিচার্য বিষয়। সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, “অরবিন্দ রাজনৈতিক ডাকাতি ও গুপ্তহত্যা কর্মতৎপরতার অধিনায়করূপে অভিযুক্ত হয়ে বছরকাল (১৯০৮-'০৯) বিচারাধীনে কারারুদ্ধ থাকেন। তাঁর এ কারাজীবন পরবর্তীকালের চিন্তাভাবনার দিক থেকে বিশেষ অর্থবহ” (ঐ, পৃঃ ২৬৮) অবশ বিচারে অরবিন্দ নির্দোষী প্রমাণিত হন।
কিন্তু জেলে এক বছর ধরে তার উপর প্রহার ও উৎপীড়ন চালানো হয়। যখন তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এলেন তখন দেখা গেল জেলের শাস্তি এবং বন্ধু-বান্ধবদের অনাগ্রহের ফলে অরবিন্দের শাসক ইংরেজের বিরুদ্ধে যে মনোভাব ছিল তার পরিবর্তন হয়ে একটা ভাবান্তর ঘটেছে। শাসকের প্রহার বা হাতুড়ির আঘাতে বিপ্লবীর ধর্ম অনুযায়ী বিপ্লবের পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার কথা, কিন্তু তিনি যা বললেন তা অনেক ভক্তের কাছে উল্টোই মনে হবে : “কর্তৃপক্ষের অত্যাচার ও উৎপীড়ন সম্পর্কে (অরবিন্দ বলেন যে, দমননীতি যেন ঈশ্বরের হাতুড়ি-যা দিয়ে পিটিয়ে তিনি আমাদের একটি শক্তিশালী নেশনে পরিণত করতে চান এবং আমাদের যন্ত্রস্বরুপ ব্যবহার করে বিশ্বকে পরিচালনা করাই তার ইচ্ছা। তিনি আমাদের ধ্বংস চান না, ছাঁচে লোহ পেটানোর মত তিনি আমাদের নবরূপে সৃষ্টি করতে চান।' এসময় অরবিন্দের উপর পুলিশের আবার বিষনজর পড়ে।
প্রথমে কিছুদিন চন্দন নগরে আত্মগোপন করে থেকে পরে সবার অলক্ষ্যে পণ্ডিচেরি চলে যান। তার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে এইখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে। সেখানে তিনি গভীর যোগ সাধনায় নিমগ্ন হন...(অরবিন্দ বলেন যে, ভগবানই ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করবেন, আর যথাসময়েই স্বাধীনতা অর্জিত হবে, এখন সকলের কর্তব্য যোগস্থ হয়ে কাজ করা-ভগবানে আত্মসমর্পণ করাই হল যোগসাধনার প্রথম পদক্ষেপ।' কারাগারে তিনি (দেবতা) বাসুদেবের এ মর্মেই আদেশ পেয়েছিলেন।" (দ্রঃ সৌরেন্দ্রমোহন, পৃঃ ২৬৮-৭০) ইংরেজ শাসকদের এজেন্ট জমিদাররা কর আদায়ের নামে যে অত্যাচার করতেন তার ইতিহাস পড়লে চমকে যেতে হয়।
ইংরেজ সরকারকে যেখানে তিন কোটি টাকা কর দিতে হত সেখানে গরীব চাষীদের ও শ্রমিকদের কাছ থেকে আদায় করা হত ১৮ কোটি টাকা। মনগড়া এমন কতগুলো কর আদায় করা হোত যা জানাতেও লজ্জাবোধ হয়। তার সংখ্যা ১৫ বা ততোধিক। যেমন টহুরী, বিয়ের সেলামী, পূজাপার্বনী, জমিদার পুত্রদের স্কুল খরচা, জমিদার পরিবারে তীর্থ খরচা, রসদ খরচা অর্থাৎ সাহেব এলে তাদের খাতির তোয়াজ করতে যে খরচা, ডাক খরচা, ভিক্ষা বা মাঙ্গন অর্থাৎ জমিদারের ঋণ শোধ করার জন্য কর, পুলিশ খরচা, ভোজ খরচা, সেলামী অর্থাৎ চাষী নতুন বাড়ি করলে তার দক্ষিণা, আয়কর, খারিজ দাখিল, নজরানা প্রভৃতি। ডক্টর বদরুদ্দিন উমরের পুস্তকে এ তথ্য থাকলেও চিন্তাশীল লেখক রাধারমণ সাহার পাবনা জেলার ইতিহাস'-এর ৯২ পৃষ্ঠা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। কর ছাড়াও জমিদাররা ১৬ রকম শাস্তি দিতেন গরীব চাষী ও প্রজাদের। যেমন দণ্ডাঘাত বা
বেত্রাঘাত, চর্মপাদুকা প্রহার, বাঁশ ও লাঠি দিয়ে বক্ষস্থল দলন, খাপরা দিয়ে নাসিকা কর্ণ মর্দন, মাটিতে নাসিকা ঘর্ষণ, পিঠে হাত বেঁধে বংশ দণ্ড দিয়ে মোড়া দেয়, গায়ে বিচুটি পাতা দেয়া, ধানের গোলায় পুরে রাখা, চুনের ঘরে বন্ধ করে রাখা, লঙ্কা মরিচের ধোয়া দেওয়া ইত্যাদি। (দ্রঃ সাময়িক পত্রে বাংলা সমাজ চিত্র : বিনয় ঘোষ, ২ খ. ৩৯, ১২৩)
এ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মুসলমান প্রধান চাষী সমাজ বা শোষিত সমাজ আগ্নেয়গিরির মত বিস্ফোরিত হয়ে জমিদারদের উপর আক্রমণ করে। তখন সমস্ত বাংলা সংবাদপত্রগুলো হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের হাতেই ছিল। তার আগে মুসলমান উচ্চবিত্ত শ্রেণী খতম হয়ে গেছে। সুতরাং রটিয়ে দেয়া হল যে, এটা হিন্দু-মুসলমানের লড়াই। সে সময় সন্ত্রাসবাদীদের বিখ্যাত নায়ক যে ভূমিকা নিয়েছিলেন তা অতীব দুঃখের-কলকাতার যুগান্তর দলের প্রধান স্বয়ং অরবিন্দ ঘোষ কলকাতা হতে ইন্দ্রনাথ নন্দী, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী, সুদীর সরকার প্রভৃতি ৬ জন যুবক বোমা, পিস্তল বা রিভলবার নিয়ে ময়মনসিংহে হিন্দুদের বৃক্ষার জন্য জামালপুর গমন করে।
এ ৬ জন এসে বোমা ও পিস্তল দিয় কৃষকদের ঘায়েল করে।" বলাবাহুল্য, উল্লিখিত ৬ জন সন্ত্রাসবাদীকে অরবিন্দ ঘোষই পাঠিয়েছিলেন। যিনি পরবর্তীকালে ঋষি অরবিন্দ নামে খ্যাতি অর্জন করেন। (পলাশী যুদ্ধো মুসলিম সমাজ ও নীল বিদ্রোহ পৃঃ ৩৭; সুপ্রকাশ রায়ঃ ভারতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের ইতিহা, পৃঃ ২৮৮-৮৯) কিন্তু এটা যে সাম্প্রদায়িক লড়াই ছিলনা, ওটা যে শুধুমাত্র শোষিত ও শোষকের লড়াই ছিল তা নিরপেক্ষ বিচারে স্বীকৃত। সুপ্রকাশ রায়ের ভাষায়-বাংলাদেশের সেকালের যুগান্তর সমিতির সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী নায়কগণ তাদের চিন্তাধারা ও আজন্ম পালিত সংস্কার অনুযায়ী ১৯০৭ খৃষ্টাব্দের জামালপুরের ঘটনার যে বিকৃত ব্যাখ্যাই করিয়া থাকুন না কেন, এ ঘটনাটি শ্রেণী-সংগ্রামের একটি বিক্ষিপ্ত দৃষ্টান্ত ব্যতীত, জমিদার মহাজন বিরোধী সংগ্রাম ব্যতীত অন্য কিছু নয়।” (সুপ্রকাশ রায় : ভারতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের ইতিহাস, পৃঃ ২৯০)
তাহলে বোঝা গেল, অরবিন্দের ইংরেজ বিরোধী মনোভাব থাকা সত্ত্বেও ইংরেজদের এজেন্টদের সাহায্য ও সহযোগিতা বিষয়ে তাঁর পদক্ষেপ যে সঠিক হয়েছিল, তা তার ভক্তদের পক্ষেও বলা মুশকিল। স্বদেশী আন্দোলনের নাম করে এ সন্ত্রাসবাদী দল যখন মুসলমানদের ডেকেছিল তখন আপামর মুসলিম জনসাধারণ সাড়া যে কেন দেয়নি তা সহজেই অনুমেয়।
আইনবিদ বিমলানন্দবাবু লিখেছেন, “মুসলমানরা যখন রাজনীতিতে ইনশাল্লা ঢোকালেন, তখন আমরা খুব চটেছিলাম। কিন্তু আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে, আমাদের ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র দেবী দূর্গাকে দেশজননীর বাহ্যিক রূপ বলে প্রচার করে গেছেন এবং অরবিন্দ, তিলক, বিপিন পাল প্রভৃতি সকল নেতাই বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শের পূজারী ছিলেন। অরবিন্দ ও অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা যে হিন্দু সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের উদ্গাতা ছিলেন, তারই সমর্থনে সাহিত্যিক গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরী লিখেছেন : “আমরা দেখিয়াছি দেখিতেছি অরবিন্দ এ বঙ্কিম প্রদর্শিত জাতীয়তাকেই সজ্ঞানে ১৮৯৪ খৃষ্টাব্দ হইতেই অনুসরণ করিতেছেন। ব্রাহ্মসমাজের অথবা মুসলমানের তিনি ধার ধারেন না।
তিনি এক পায়ে দাঁড়াইয়া বগলা মন্ত্র যপ বা বগলামূর্তি পূজা শেষ করিয়া আসিয়াছেন।' গুপ্ত সমিতিতে মাকালীও আছেন এবং শ্রীগীতাও আছে। এতে মুসলমান ভ্রাতাগণ যদি বলেন-এ ব্যবস্থায় দেশ উদ্ধারের জন্য আমরা যাই-ই বা কি করিয়া, আর থাকিই বা কোন্ মুখে? আমাদের ত একটা পৃথক ধর্ম ও তার অনুশাসন আছে’-এ কথার জবাব ত চরমপন্থীদের এ গুপ্ত সমিতির দেয়াই কর্তব্য।... হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাই অরবিন্দের জাতীয়তা, কংগ্রেসী জাতীয়তা তার জাতীয়তা নহে, বরং জাতীয়তার বিপরীত বস্তু।' বঙ্কিম-অরবিন্দ-বিপিন পাল এবং তাদের উত্তরসূরী বিপ্লব বাদীরা বাংলায় এবং তিলক ও তার উত্তরসূরী মহারাষ্ট্র ও উত্তর ভারতে যে জাতীয়তার আমদানী করলেন, তা ছিল নিছক হিন্দু সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ। মুসলমানগণ স্বভাবতই
২৯ এ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হতে ১৯০৫ হতে শুধু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন তা নয়-তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিষে বিষাক্ত রাজনীতির উন্মেষ হল।” (শ্রীবিমলানন্দ শাসমলঃ ভারত কি করে ভাগ হল, পৃঃ ২৩-২৪)
তাহলে আইনজীবী বিমলানন্দবাবু প্রমাণ্য তথ্য দিয়ে বোঝালেন যে, ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে পর্যন্ত হিন্দুদের উৎকট সাম্প্রদায়িকতা এবং মুসলমানদের দূরে ঠেলে পৃথক রেখে দেয়ার জন্য তারাই দায়ী। আর এজন্যই বোধ হয় ১৯০৬ খৃস্টাব্দে মুসলিম লীগ' জন্ম নিতে বাধ্য হয়েছিল। শ্রীবিমলানন্দ বাবুও লিখেছেন-“১৯০৬ সনের সুরাট কংগ্রেসে যখন তিলক-অরবিন্দ প্রভৃতি চরমপন্থী নেতারা নরমপন্থীদের অপসারিত করে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠানটিকে দখল করলেন, তখন স্বভাবতই এদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি কংগ্রেসকেও প্রভাবিত করলো। ১৯০৬ সনেই কংগ্রেস সাধারণভাবেই হিন্দুদের প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়াল। এবং তারই প্রতিযোগী হিসাবে দাঁড়ালো (ঐ সনেই) নব প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগ।” তাহলে মুসলিম লীগের জন্মদাতা কে বা কারা তা যেভাবেই শেখান হোক না কেন, আসল ইতিহাস যে দেশের ছাত্র ও জনসাধারণকে আসল শিক্ষা দেবে তাতে সন্দেহ নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/492/61
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।