hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কিতাবুল ইলম

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১৬
ইলম শিক্ষা দেয়া সাদাকায়ে জারিয়া
মানুষ মারা যাওয়ার পর তার আর আমল করার কোন সুযোগ থাকে না। তাই তার আমলনামায় আর কোন সওয়াব লেখা হয় না। কিন্তু হাদীসে এমন কয়েকটি আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে, যার সওয়াব বান্দার মৃত্যুর পরও জারি থাকে। সেই কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হলো দ্বীনের ইলম প্রচারের ব্যবস্থা করে যাওয়া। যেমন, হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ اِنْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُه اِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِه أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَه

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সমসত্ম আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকে : (১) সাদাকায়ে জারিয়া, (২) জ্ঞান- যার থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকে এবং (৩) সুসন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৩১০; আবু দাউদ, হা/২৮৮২; তিরমিযী, হা/১৩৭৬; নাসাঈ, হা/৩৬৫১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮৩১; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৪৫৭; আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৮; বায়হাকী, হা/১২৪১৫; জামেউস সগীর, হা/৭৯৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৭৮; সুনানে দারেমী, হা/৫৫৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৯; মিশকাত, হা/২০৩।]

নিশ্চয় মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমলনামায় আর সওয়াব লেখা হয় না। কেননা সওয়াব মূলত তার আমলের বদলা, আর ব্যক্তি মারা যাওয়ার সাথে সাথে সে সুযোগ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সর্বদা ঐসব কল্যাণকর ও উপকারী কাজের বদলা চলতে থাকে, যা সে জীবিত অবস্থায় করে গিয়েছিল এবং তার ফল এখনো দুনিয়াতে চালু আছে। যেমন- কোন কিছু ওয়াকফ করে যাওয়া অথবা বই লিখে যাওয়া অথবা দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে যাওয়া অথবা দ্বীন শিক্ষার ব্যবস্থা করে যাওয়া অথবা সৎ সন্তান রেখে যাওয়া। সৎ সন্তান মূলত আমলেরই আওতাভুক্ত। কেননা পিতাই মূলত সন্তানের অস্তিত্বের কারণ ও তাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সদ্ভাবে গড়ে তোলার মাধ্যম। সন্তান ছাড়া অন্য কেউ যদি মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করে তাহলে মৃত ব্যক্তির জন্য ঐ দু‘আ কাজে আসবে, তবুও হাদীসে সন্তানকে নির্দিষ্ট করার কারণ হচ্ছে সন্তানকে দু‘আর ব্যাপারে উৎসাহিত করা। তাছাড়া সাধারণত পিতার মৃত্যুর পর তার কল্যাণের জন্য সকল কার্যক্রম সৎ সমত্মানগণই করে থাকে। যেমন- পিতার জন্য দু‘আ করা, সাদাকা করা, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা ইত্যাদি।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِه وَحَسَنَاتِه بَعْدَ مَوْتِه عِلْمًا عَلَّمَه وَنَشَرَه وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَه أَوْ مُصْحَفًا وَرَّثَه أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لِابْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِه فِي صِحَّتِه وَحَيَاتِه تَلْحَقُه مِنْ بَعْدِ مَوْتِه

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিনের ইন্তেকালের পরও তার যেসব নেক কাজের সওয়াব তার নিকট সবসময় পৌঁছতে থাকবে, সেগুলো হলো- (১) ইলম বা জ্ঞান- যা সে শিখেছে এবং প্রচার করেছে; (২) সৎ সন্তান- যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গেছে; (৩) কুরআন- যা উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেছে; (৪) মসজিদ- যা সে নির্মাণ করে গেছে; (৫) মুসাফিরখানা- যা সে পথিক-মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ করে গেছে; (৬) কূপ বা ঝর্ণা- যা সে খনন করে গেছে মানুষের পানি ব্যবহার করার জন্য এবং (৭) দান-খয়রাত- যা সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় তার ধনসম্পদ থেকে দান করে গেছে। মৃত্যুর পর এসব নেক কাজের সওয়াব তার নিকট পৌঁছতে থাকবে। [ইবনে মাজাহ, হা/২৪২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/২৪৯০; জামেউস সগীর, হা/৩৯৯৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৭৭; মিশকাত, হা/২৫৪।]

হাদীসের শেষের দিকে বলা হয়েছে, ব্যক্তি জীবিত ও সুস্থাবস্থায় তার সম্পদ হতে যা সাদাকা হিসেবে দিয়ে থাকে তার সওয়াব তার মৃত্যুর পর তার আমলনামাতে লিপিবদ্ধ হয়। উল্লেখিত হাদীসাংশ দ্বারা সুস্থাবস্থায় দান করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে, যাতে তার এ সাদাকাটি তার জীবনের সর্বোত্তম সাদাকাতে পরিণত হতে পারে।

عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ فَقَالَ إِنَّه أُبْدِعَ بِيْ فَاحْمِلْنِيْ فَقَالَ مَا عِنْدِيْ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَنَا أَدُلُّه عَلٰى مَنْ يَّحْمِلُه فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ دَلَّ عَلٰى خَيْرٍ فَلَه مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِه

আবু মাসঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী ﷺ এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সওয়ারী চলতে পারছে না, আপনি আমাকে একটি সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এ সময় তো আমার নিকট তোমাকে দেবার মতো কোন সওয়ারী নেই। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাকে এমন এক লোকের সন্ধান দিতে পারি, যে তাকে সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে কোন কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শন করে, সে উক্ত কার্য সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫০০৭; আবু দাউদ, হা/৫১৩১; তিরমিযী, হা/২৬৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৬৮; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৪২; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৪০৪৮; বায়হাকী, হা/১৭৬২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/২০০৫৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১১৫; মিশকাত, হা/২০৯।]

যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কথা, কাজ, ইশারা-ইঙ্গিত বা লিখনীর মাধ্যমে পূণ্যময় কোন কাজ বা ইলমের দিক-নির্দেশনা দেবে, সেও দিক-নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে। এতে দিক-নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সওয়াবে কোন ঘাটতি হবে না।

ইমাম নববী বলেন, ‘‘দিক-নির্দেশক দিক-নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে’’- এ উক্তির উদ্দেশ্য হলো, দিক-নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেমন সওয়াব লাভ করবে দিক-নির্দেশক ব্যক্তিও তেমন সওয়াব লাভ করবে, এতে উভয়ের সওয়াব সমান হওয়া আবশ্যক নয়।

ইমাম কুরতুবী বলেন- গুণে ও পরিমাণে উভয়ের সওয়াব সমান। কেননা কাজের উপর যে সওয়াব দেয়া হয়, তা আল্লাহর পক্ষ হতে অনুগ্রহ; আল্লাহ যাকে ইচছা তা দান করেন।

عَنْ جَرِيْرٍ قَالَ كُنَّا فِيْ صَدْرِ النَّهَارِ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ فَجَاءَهُ قَوْمٌ عُرَاةٌ مُجْتَابِي النِّمَارِ أَوِ الْعَبَاءِ مُتَقَلِّدِي السُّيُوْفِ عَامَّتُهُمْ مِنْ مُضَرَ بَلْ كُلُّهُمْ مِنْ مُضَرَ فَتَمَعَّرَ وَجْهُ رَسُوْلِ اللهِ لِمَا رَأٰى بِهِمْ مِنْ الْفَاقَةِ فَدَخَلَ ثُمَّ خَرَجَ فَأَمَرَ بِلَالًا فَأَذَّنَ وَأَقَامَ فَصَلّٰى ثُمَّ خَطَبَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ إِلٰى اٰخِرِ الْاٰيَةِ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا وَالْاٰيَةَ الَّتِيْ فِي الْحَشْرِ اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ تَصَدَّقَ رَجُلٌ مِنْ دِيْنَارِه مِنْ دِرْهَمِه مِنْ ثَوْبِه مِنْ صَاعِ بُرِّه مِنْ صَاعِ تَمْرِه حَتّٰى قَالَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ قَالَ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ الْأَنْصَارِ بِصُرَّةٍ كَادَتْ كَفُّه تَعْجِزُ عَنْهَا بَلْ قَدْ عَجَزَتْ قَالَ ثُمَّ تَتَابَعَ النَّاسُ حَتّٰى رَأَيْتُ كَوْمَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَثِيَابٍ حَتّٰى رَأَيْتُ وَجْهَ رَسُوْلِ اللهِ يَتَهَلَّلُ كَأَنَّه مُذْهَبَةٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَه أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ

জারীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা দিনের শুরুতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ছিলাম। এমন সময় কাঁধে তরবারি ঝুলিয়ে একদল লোক রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসলো। তাদের শরীর ছিল প্রায় উলঙ্গ; তারা তাদের শরীর কালো ডোরা রঙের চাদর দিয়ে কোন রকমে ঢেকে রেখেছিল। তাদের অধিকাংশ লোক, বরং সকলেই ছিল মুযার গোত্রের। তাদের চেহারায় ক্ষুধার লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল এবং তিনি খাবারের খুঁজে ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর কিছু না পেয়ে বেরিয়ে আসলেন এবং বিলাল (রাঃ) কে নির্দেশ দিলে তিনি আযান ও ইকামত দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সকলকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি খুৎবা দিলেন এবং এ আয়াত পড়লেন,

﴿ يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّنِسَآءً وَّاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِه وَالْاَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا ﴾

হে মানুষেরা! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, এরপর এ জোড়া হতে বহু নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা পরস্পর (নিজেদের অধিকার) দাবি করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কেও সতর্ক থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা- ১)

অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সূরা হাশরের এ আয়াত পাঠ করলেন :

﴿ يَاۤ اََيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ﴾

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের প্রত্যেকে ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য (কিয়ামতের জন্য) সে কী প্রেরণ করেছে।

(সূরা হাশর- ১৮)

(অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমাদের) প্রত্যেকেরই দীনার, দিরহাম, কাপড়-চোপড়, গম ও খেজুরের ভান্ডার হতে দান করা উচিত। অবশেষে তিনি বললেন, যদি খেজুর এক টুকরাও হয়।

জারীর (রাঃ) বলেন, এটা শুনে আনসারদের এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এলো, যা সে বহন করতে পারছিল না। অতঃপর লোকেরা একের পর এক জিনিসপত্র আনতে লাগল। এমনকি আমি দেখলাম, শস্য ও কাপড়-চোপড়ের দু’টি সত্মুপ হয়ে গেছে এবং দেখলাম, (আনন্দে) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেহারা ঝলমল করছে, যেন তা স্বর্ণে জড়ানো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ইসলামে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ চালু করল সে তা চালু করার সওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ সওয়াব সে পাবে। অথচ এদের সওয়াব কিছু কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করল, তার জন্য এ কাজের গোনাহ তো আছেই। এরপর যারা এ মন্দ রীতির উপর আমল করবে তাদের সমপরিমাণ গোনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে আমলকারীদের গোনাহ কম করা হবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯১৯৭; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪২০৮; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২২৬২; বায়হাকী, হা/৭৫৩১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৬৬১; মুসনাদে ইবনে জাদ, হা/৫১৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৯৮৯৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬১; মিশকাত, হা/২১০।]

হাদীসে কল্যাণকর বিষয় সূচনার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে, যাতে সমাজে তার ধারা চলতে থাকে। পক্ষান্তরে অকল্যাণকর কাজ সমাজে প্রসার ঘটবে এ আশঙ্কায় অকল্যাণকর কাজ চালু করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। আর সন্তোষজনক সুন্নাত চালু করা উপকারী ইলমেরই আওতাভুক্ত। সমেত্মাষজনক সুন্নাত তথা ভালো কাজের প্রচলন বলতে এমন কাজসমূহকে বুঝানো হয়, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতের বহির্ভূত নয়। অতএব, কেউ যদি দুনিয়াতে ইলম প্রচারের উদ্দেশ্যে কোন উদ্যোগ বাসত্মবায়ন করে তাহলে পরবর্তীতে এর মাধ্যমে যতজন লোক উপকৃত হবে তার সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।

সুযোগ অনুযায়ী মানুষকে নসীহত করতে হবে :

عَنْ عِكْرِمَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ حَدِّثِ النَّاسَ كُلَّ جُمُعَةٍ مَرَّةً فَإِنْ أَبَيْتَ فَمَرَّتَيْنِ فَإِنْ أَكْثَرْتَ فَثَلَاثَ مَرَّاتٍ وَلَا تُمِلَّ النَّاسَ هٰذَا الْقُرْاۤنَ وَلَا أُلْفِيَنَّكَ تَأْتِي الْقَوْمَ وَهُمْ فِي حَدِيثٍ مِنْ حَدِيثِهِمْ فَتَقُصُّ عَلَيْهِمْ فَتَقْطَعُ عَلَيْهِمْ حَدِيثَهُمْ فَتُمِلُّهُمْ وَلَكِنْ أَنْصِتْ فَإِذَا أَمَرُوكَ فَحَدِّثْهُمْ وَهُمْ يَشْتَهُونَه وَانْظُرْ السَّجْعَ مِنَ الدُّعَاءِ فَاجْتَنِبْهُ فَإِنِّي عَهِدْتُ رَسُولَ اللهِ وَأَصْحَابَه لَا يَفْعَلُونَ ذٰلِكَ

তাবেঈ ইকরিমা (রহ.) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেছেন, হে ইকরিমা! প্রত্যেক সপ্তাহে মাত্র একদিন মানুষকে ওয়াজ-নসীহত শোনাবে। যদি একবার ওয়াজ-নসীহত করা যথেষ্ট মনে না কর, তাহলে সপ্তাহে দু’বার। এর চেয়েও যদি বেশি করতে চাও, তাহলে সপ্তাহে তিনবার ওয়াজ-নসীহত করো। তোমরা এ কুরআনকে মানুষের নিকট বিরক্তিকর করে তুলো না। কোন জাতি যখন তাদের কোন ব্যাপারে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত থাকে তখন তোমরা সেখানে পৌঁছলে তাদের আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে তাদের কাছে ওয়াজ-নসীহত করতে আমি যেন তোমাদেরকে না দেখি। এ সময় তোমরা চুপ করে থাকবে। তবে তারা যদি তোমাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করার জন্য বলে, তখন তাদের আগ্রহ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে হাদীস শোনাও। কবিতার ছন্দে দু‘আ করা পরিত্যাগ করবে এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণকে দেখেছি, তারা এরূপ করতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩৩৭; মিশকাত, হা/২৫২২।]

সপ্তাহের প্রতিদিন মানুষকে নসীহত করা আল্লাহর কিতাবকে ও নবী ﷺ এর হাদীসকে তাদের সামনে বিরক্তিকর হিসেবে উপস্থাপনের শামিল। অনুরূপভাবে কোন সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে তাদের আলাপরত অবস্থাতে নসীহত করাও বিরক্তিকর হিসেবে উপস্থাপনের শামিল।

উপদেশ দিতে গিয়ে মানুষকে বিরক্ত করা যাবে না :

عَنْ شَقِيْقٍ قَالَ كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ يُذَكِّرُ النَّاسَ فِي كُلِّ خَمِيْسٍ فَقَالَ لَه رَجُلٌ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ لَوَدِدْتُ أَنَّكَ ذَكَّرْتَنَا فِي كُلَّ يَوْمٍ قَالَ أَمَا إِنَّه يَمْنَعُنِيْ مِنْ ذٰلِكَ أَنِّي أَكْرَه أَنْ أُمِلَّكُمْ وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَتَخَوَّلُنَا بِهَا مَخَافَةَ السَّاۤمَةِ عَلَيْنَا

তাবেঈ শাকীক (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) প্রত্যেক বৃহস্পতিবার লোকজনের সামনে ওয়াজ-নসীহত করতেন। একদিন এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমরা চাই, আপনি এভাবে প্রতিদিন আমাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করুন।

তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বললেন, এরূপ করতে আমাকে এ কথাই বাধা দিয়ে থাকে যে, আমি প্রতিদিন (ওয়াজ-নসীহত) করলে তোমরা বিরক্ত হয়ে উঠবে। এ কারণে আমি মাঝে মধ্যে ওয়াজ-নসীহত করে থাকি, যেমনিভাবে আমাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ লক্ষ্য রাখতেন, যাতে করে আমাদের মধ্যে বিরক্তির ভাব সৃষ্টি না হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৭০; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০৬০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৫২৪; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫১৩৭; মিশকাত, হা/২০৭।]

হাদীসটিতে ওয়াজ-নসীহতের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হয়েছে, যাতে মানুষ বিরক্তবোধ না করে এবং ওয়াজ-নসীহতের মূল উদ্দেশ্য ছুটে না যায়। সুতরাং নসীহত করার ক্ষেত্রে সময়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে ও মানুষের অবস্থা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) প্রত্যেক বৃহস্পতিবার মানুষকে নসীহত করতেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এ থেকে ইমাম বুখারী মাসআলা সাব্যস্ত করেছেন- নসীহতের জন্য উস্তাদ কর্তৃক সপ্তাহের কোন দিন ধার্য করা জায়েয।

কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে :

عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلَاثًا حَتّٰى تُفْهَمَ عَنْهُ وَإِذَا أَتٰى عَلٰى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلَاثًا

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন কোন কথা বলতেন (অধিকাংশ সময়) তিনবার বলতেন, যাতে মানুষ তাঁর কথাটা ভালো করে বুঝতে পারে। এভাবে যখন তিনি কোন সম্প্রদায়ের কাছে যেতেন তখন তাদেরকেও সালাম করতেন। আর তখন তিনি তাদেরকে তিনবার করে সালাম করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩২৪৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৭৩২০; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪১; জামেউস সগীর, হা/৮৮২৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪৭৩; মিশকাত, হা/২০৮।]

হাদীসে বর্ণিত এ কাজটি রাসূলুল্লাহ ﷺ অবস্থা অনুপাতে করতেন, অর্থাৎ- উপস্থাপিত শব্দ যদি কঠিন হতো অথবা শ্রোতাদের কাছে অপরিচিত হতো অথবা শ্রোতাদের সংখ্যা অধিক হতো, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন করতেন, সর্বদা নয়। কেননা বিনা প্রয়োজনে কথার পুনরাবৃত্তি করা বালাগাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায়, প্রয়োজনীয় স্থানে একজন শিক্ষকের জন্য উচিত হবে, তার কথাকে একাধিকবার বলা। এমনিভাবে কোন ব্যক্তি যখন একবার কোন কথা শোনার পর মুখস্থ করতে পারবে না বা বুঝতে পারবে না, তখন বক্তা/শিক্ষক তার কথা বুঝিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে বা মুখস্থ করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে একাধিকবার বলতে পারবেন। হাদীসের শেষাংশে রয়েছে, ‘‘রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন সম্প্রদায়ের কাছে গমন করতেন, তখন তিনবার সালাম দিতেন’’ এ কথার তাৎপর্য হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথম সালাম দিতেন অনুমতির জন্য, দ্বিতীয় সালাম দিতেন ঘরে প্রবেশের জন্য এবং তৃতীয় সালাম দিতেন বিদায়ের মুহূর্তে- এ প্রত্যেকটিই সুন্নাত।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন