মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
প্রথম যুগের বিশেষজ্ঞ ইমামগণ আল্লাহর বিধানের ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতাসহ অন্যান্য আরো অনেক কারণে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্যও ছিল একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে অন্যদের সিদ্ধামত্ম কুরআন-সুন্নার অধিক নিকটতর মনে হলে তারা নিজেদের মত পরিত্যাগ করে তা মেনে নিতে মোটেও কুণ্ঠিত হতেন না।
বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুসলিমই প্রথম যুগের মহান ইমামদের চিমত্মা-চেতনা ও তাদের মাযহাবের বর্তমান অবস্থার মধ্যকার অসংগতির ব্যাপারে অসচেতন।
ইমামগণ তাদের তাকলীদ (দলীলবিহীন অনুসরণ) না করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। রাসূলুলস্নাহ ﷺ ব্যতীত অন্য মানুষের কথা গৃহীত হতে পারে আবার পরিত্যাজ্যও হতে পারে। সুতরাং যদি কেউ এমন মতামত পেশ করে যা সহীহ হাদীস বিরোধী, তাহলে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাই তাকলীদ এর ব্যাপারে ইমাম ও তাদের ছাত্রবৃন্দের বক্তব্যগুলোর প্রতি আরেকটু গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করা উচিত। এ ব্যাপারে ইমামগণের পক্ষ থেকে যেসব মতামত পাওয়া যায় তার কিছু অংশ এখানে উলেস্নখ করা হলো :
(১) ইমাম আবু হানীফা (রহ.)
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তার ছাত্রদেরকে তার ব্যক্তিগত মতামতগুলো লিপিবদ্ধ করতে নিরুৎসাহিত করতেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর ভিত্তি ছিল কিয়াস। তবে তার ছাত্রদের সকলে মিলে ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে যেসব ব্যাপারে ঐক্যমতে উপনীত হয়েছিলেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে তিনি এমনটি করেননি। তার সাথিগণ তার অনেক কথা বিভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করেছেন, সব কয়টি কথা একই বিষয়ের প্রতি নির্দেশ করে। আর তা হচ্ছে, হাদীসকে আঁকড়ে ধরা ও এর বিপরীতে ইমামগণের কথা পরিহার করা ওয়াজিব। কথাগুলো হচ্ছে,
إِذَا صَحَّ الْحَدِيْثُ فَهُوَ مَذْهَبِيْ
হাদীস যখন সহীহ হবে সেটাই হবে আমার মাযহাব অর্থাৎ যখন কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে তখন সেটাই আমার মতামত বলে বিবেচিত হবে। [রাদ্দুল মুহতার, ১/৪৬২ পৃঃ; ফতওয়ায়ে শামী, ১/৪৬ পৃঃ।]
যে আমার কথার প্রমাণ জানে না তার পক্ষ আমার কথার দ্বারা ফতওয়া প্রদান করা হারাম। [আস সালাফিয়্যুন ওয়াল আইম্মাহ, ১/২৯ পৃঃ; হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, হা/১/৩৩১।]
হে হতভাগা ইয়াকুব! (আবু ইউসুফ) তুমি আমার থেকে যা শোন তা লেখো না, কেননা আমি আজ এক মত পোষণ করি আর আগামীকাল তা পরিহার করি। আবার আগামীকাল এক মত পোষণ করি আর পরশুদিন তা পরিত্যাগ করি। [সুনানে দারেমী, হা/১৯৭; তারীখে বাগদাদ ৭/৪০৩ পৃষ্ঠা।]
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) কে বলা হলো আপনি যখন কোন কথা বলেন, আর পবিত্র কুরআন তার বিরোধী হয় তাহলে কী করা হবে? তিনি উত্তরে বললেন, আপনারা কুরআনের মোকাবেলায় আমার কথা প্রত্যাখ্যান করুন। তারপর বলা হলো, আপনার কথা যদি হাদীসের বিরোধী হয়? তখন উত্তর দিলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীসের মোকাবেলায় আমার কথা পরিহার করুন। তারপর জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার কথা যদি সাহাবীগণের কথার বিরোধী হয়? তখন উত্তর দিলেন, সাহাবীগণের কথার মোকাবেলায় আমার কথা পরিত্যাগ করুন। [ঈকদুল জীদ, ৫৩ পৃঃ।]
আমি যখন কোন কথা বলি তা পবিত্র কুরআন ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীসের সাথে যাচাই করো। যদি ঐ দুটির সাথে আমার কথা মিলে, তাহলে গ্রহণ করো। আর যদি বিরোধী হয়, তাহলে প্রত্যাখ্যান করো ও দেয়াল পৃষ্ঠে নিক্ষেপ করো। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ১/১৬৩ পৃঃ ; মীযানে কুবরা, ১/৫৭ পৃঃ।]
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর নিকট কোন সমস্যার সমাধানের জন্য গেলে তার নিকট সে বিষয়ের হাদীস বিদ্যমান না থাকলে তিনি ফতওয়া দিয়ে বলতেন,
এটা নু‘মান বিন সাবিতের সিদ্ধামত্ম। আমাদের ক্ষমতা অনুসারে এটাই সর্বোৎকৃষ্ট উক্তি। কিন্তু যদি কেউ এটা অপেক্ষা অধিক বলিষ্ঠতার সিদ্ধামেত্ম উপনীত হতে সক্ষম হয় তাহলে সে সিদ্ধামত্মই সঠিক। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ১৬২ পৃঃ ; মীযানুল কুবরা, ১/৬০ পৃঃ।]
তিনি আরো বলতেন, যদি দলীল পেশ হয়ে যায় তাহলে তোমরা তদানুযায়ী কথা বলবে। [রাদ্দুল মুহতার, ১/৪৭ পৃঃ।]
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর সকল অনুসারীরা এ ব্যাপারে একমত যে, যঈফ বা দুর্বল হাদীস ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর কাছে কিয়াস ও তাঁর অভিমতের চেয়েও অনেক উত্তম। [ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন- ১২/৮২ পৃঃ।]
সাবধান! তোমরা আল্লাহর দ্বীনে নিজেদের অভিমত প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকো। সকল অবস্থাতেই সুন্নার অনুসরণ করো। যে ব্যক্তি সুন্নাহ থেকে বের হবে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। [মীযানুল কুবরা, ১/৯ পৃঃ।]
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর এ মনোভাব ছাত্রদেরকে তার মতের অন্ধ অনুসরণ করা থেকে বিরত রেখেছে এবং নিজেদের পাশাপাশি অপরের মতামতকেও শ্রদ্ধা করার মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে।
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তার নিজের ও তার ছাত্রদের মতামত অন্ধভাবে অনুসরণ করার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তিনি ও তার ছাত্রবৃন্দ কোন মূলনীতি বা প্রমাণের আলোকে মত দিয়েছেন তা না জেনে তিনি সে মতের অন্ধ অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
আবু হানীফা (রহ.) তার সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে সব সময়ই সজাগ ছিলেন। তাই তিনি তার ছাত্রবৃন্দ ও অন্যদের কাছে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন যে, সঠিক ও ভুলের চূড়ামত্ম মানদন্ড হলো কুরআন ও সুন্নাহ। যা কিছু এর সাথে সংগতিপূর্ণ তা-ই সঠিক, আর যা কিছু সংগতিপূর্ণ নয় তা-ই ভুল।
(২) ইমাম মালিক বিন আনাস (রহ.)
ইমাম মালিক (রহ.) নিজের সিদ্ধামেত্মর বিপরীত কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পেলে তিনি জনসম্মুখে দেয়া কোন সিদ্ধামত্ম পরিবর্তন করতেও কখনো দ্বিধা করতেন না।
ইবনে ওহাব (রহ.) বলেন, আমি ইমাম মালিক (রহ.) কে অযুতে পদযুগলের আঙ্গুলিসমূহ খিলাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে শুনেছি। তিনি উত্তরে বলেন, লোকদেরকে তা করতে হবে না। ইবনে ওহাব (রহ.) বলেন, আমি লোকসংখ্যা কমে আসা পর্যমত্ম অপেক্ষা করলাম। অতঃপর বললাম, আমাদের কাছে এ বিষয়ে হাদীস রয়েছে। তিনি বললেন, সেটা কী? আমি বললাম, আমাদেরকে লাইস ইবনে সাদ, ইবনে লহীয়া ও আমর ইবনে হারিস ইয়াযীদ ইবনে আমর আল মু‘আফিরী থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
অর্থাৎ আমি রাসূলুলস্নাহ ﷺ কে দেখেছি যে, তিনি তাঁর কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা পদযুগলের আঙ্গুলিগুলোর মধ্যভাগ মর্দন করেছেন। [বায়হাকী, হা/৩৬৫; শারহুল মা‘আনিল আছার, হা/১৭১; সিফাতু সালাতুন নাবী ﷺ, ১/২৮ পৃঃ।]
তখন ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, এ হাদীসটি হাসান, তবে আমি ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। ইবনে ওহাব (রহ.) বলেন, এরপর হতে ইমাম মালিক (রহ.) কে ঐ প্রশ্ন করা হলে তিনি উক্ত হাদীসের আলোকে আঙ্গুল খিলাল করার নির্দেশ দিতেন। [মুকাদ্দামাতুল জারহ্ ওয়াত্ তা‘দীল- ৩১, ৩২ পৃঃ।]
আববাসীয় খলীফা আবু জাফর আল মানসুর ও হারুনুর রশীদ ইমাম মালিকের আল মুয়াত্তা নামক হাদীস সংকলনকে গোটা ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধানে পরিণত করার জন্য তার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এই প্রসত্মাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, সাহাবীগণ ইসলামী সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রামেত্ম ছড়িয়ে পড়েছেন এবং তাদের থেকে বর্ণিত অনেক হাদীসই তার এ সংকলনে নেই।
এভাবে ইমাম মালিক (রহ.) নিজ মাযহাবকে রাষ্ট্রীয় মাযহাবে পরিণত করার সুযোগ পেয়েও তা নাকচ করে দেন। এর মাধ্যমে তিনি এমন একটি অপূর্ব দৃষ্টামত্ম স্থাপন করেছেন, যা নিঃসন্দেহে সকলের জন্য অনুকরণীয়।
ইবনে আবদুল বার (রহ.) বর্ণনা করেছেন, ইমাম মালিক বিন আনাস (রহ.) বলেন,
আমি একজন মানুষ, আমি ভুল করতে পারি। আবার কখনো সঠিক সিদ্ধামেত্মও উপনীত হতে পারি। সুতরাং আমার মতামতগুলোকে যাচাই করে দেখবে। অতঃপর যা কিছু কুরআন-সুন্নার সাথে সংগতিপূর্ণ তা গ্রহণ করবে, আর যা কিছু সাংঘর্ষিক তা প্রত্যাখ্যান করবে। [ফতওয়ায়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ২/৩৮৪।]
এ বক্তব্য প্রমাণ করে যে, ইমাম মালিক (রহ.) নিজে অন্য সবকিছুর উপর কুরআন ও সুন্নাহকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি কখনো চাননি যে, অন্ধভাবে তার মতামতের অনুসরণ করা হোক।
যে ব্যক্তি কোন বিদআত চালু করে এবং মনে করে যে, এটা ভালো কাজ, সে যেন এ দাবি করে যে, মুহাম্মাদ ﷺ রিসালাতের খিয়ানত করেছেন - (না‘ঊযুবিল্লাহ)। কেননা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবদ্দশায় বিদায় হজ্জের ভাষণদান কালে বলেন, আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে পছন্দ করে নিলাম। [তা‘লীকাতুল আলবানী আলা সিরাতিল মুসত্মাকীম, ১/৩ পৃঃ।]
(৩) ইমাম শাফেয়ী (রহ.)
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) তার শিক্ষক ইমাম মালিকের মতোই স্পষ্টভাষায় বলেছেন যে, তার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত সকল হাদীস সম্পর্কে জানা বা প্রাপ্ত সব হাদীস মুখস্থ রাখা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। তৎকালীন আলেমগণের কারো কারো কাছে কিছু হাদীস না পৌঁছার কারণে কিছু বিষয়ে তারা ভুল সিদ্ধামত্ম প্রদান করেছেন। তাই ভুল-শুদ্ধ নিরূপণের সর্বাবস্থায় নির্ভরযোগ্য একমাত্র মানদন্ড হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ।
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) থেকে এ মর্মে অনেক চমৎকার কথা উদ্ধৃত হয়েছে। তার অনুসারীগণ তার এসব কথায় অধিক সাড়া দিয়েছেন এবং উপকৃতও হয়েছেন। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মতো ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-ও বলতেন,
কোন বিষয়ে যখন কোন সহীহ হাদীস পাবে, জেনে রেখো, সেটাই আমার মাযহাব বা মত। তোমরা যদি আমার কোন উক্তি হাদীসের বিপরীত দেখতে পাও, তাহলে হাদীসের অনুসরণ করো এবং আমার উক্তি প্রাচীরের বাইরে ফেলে দাও। [মীযানুল কুবরা, ১/৫৭ পৃঃ ; ঈকাযুল হিমাম, ১০৭ পৃষ্ঠা; হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ১/১৬৩ পৃঃ।]
আমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সব সুন্নাহ সম্পর্কে জানেন বা কোন কিছুই ভুলে যাননি। তাই, আমি যে মূলনীতি বা যে আইনই প্রণয়ন করি না কেন, তাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নার খেলাফ কিছু থাকাটাই স্বাভাবিক। অতএব রাসূলুল্লাহ ﷺ যে বিধান দিয়েছেন তাই একমাত্র সঠিক বিধান এবং সেটাই আমার প্রকৃত মাযহাব। [ফিকহুল ইবাদাহ, ১/১৬।]
অর্থাৎ মুসলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যার কাছে রাসূলুলস্নাহ ﷺ এর সুন্নাহ (হাদীস) পরিষ্কারভাবে প্রকাশ হয়ে যায় তার পক্ষ অন্য কারো কথায় তা বর্জন করা বৈধ নয়। [ইকাযু হুমামি উলিল আবসার- ১/৫৮।]
তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসূলুলস্নাহ ﷺ এর সুন্নাহ বিরোধী কিছু পাবে তখন আমি যা বলেছি তা বাদ দিয়ে রাসূলুলস্নাহ ﷺ এর সুন্নাহ অনুসারে ফতওয়া দাও। [মহিউদ্দীন নববী, আল মাজমূ, ১/৬৩ পৃঃ।] অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ অনুসরণ করো, অন্য কারো কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করো না। [যাম্মুল কালাম- ১/৪৭ পৃঃ ; ইহতিজাজ বিশ শাফেঈ- ২/৮ পৃঃ ; ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘য়ীন- ২/৩৬১ পৃঃ।]
অর্থাৎ আপনারাই (এখানে আহমাদ ইবনে হাম্বলকে সম্বোধন করা হয়েছে) হাদীস বিষয়ে ও তার রিজালের (বর্ণনাকারীদের) ব্যাপারে আমার অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত। তাই সহীহ হাদীস পেলেই আমাকে জানাবেন, চাই তা কুফাবাসীদের বর্ণনাকৃত হোক অথবা বসরাবাসীদের হোক অথবা শাম (সিরিয়া) বাসীদের হোক- বিশুদ্ধ হলে আমি তাই গ্রহণ করব। [ঈকাযুল হিমাম, ১০২ পৃঃ।]
আমার জীবদ্দশায় অথবা মৃত্যুর পর যে সমসত্ম মাসআলায় আমার ফতওয়ার বিপরীতে মুহাদ্দিসগণের নিকট সহীহ হাদীস প্রমাণিত হয়েছে ঐসব মাসআলায় আমার মত প্রত্যাহার করে হাদীস গ্রহণ করে নিলাম। [হুলিয়্যাহ ৯/১০৭ পৃষ্ঠা; আদাবুশ্ শাফেঈ, ৯৩ পৃঃ; সিফাতুস সালাতিন্নাবী, ৫২ পৃঃ।]
যখন তোমরা দেখবে যে, আমি এমন কথা বলছি, যার বিরম্নদ্ধে নবী ﷺ থেকে বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে তবে জেনে রেখো যে, আমার বিবেক হারিয়ে গেছে। [ইকাযু হুমামি উলিল আবসার- ১/১৩০ পৃঃ।]
আমি যা কিছুই বলেছি তার বিরম্নদ্ধে নবী ﷺ থেকে সহীহ সূত্রে হাদীস এসে গেলে নবী ﷺ এর হাদীসই হবে অগ্রাধিকারযোগ্য। অতএব তোমরা আমার অন্ধ অনুসরণ করো না। [ঈকদুল জীদ, ৫৪ পৃঃ।]
নবী ﷺ এর প্রত্যেক হাদীসই আমার বক্তব্য, যদিও তোমরা আমার মুখ থেকে তা না শুনে থাক। [আল খুলাসাতু ফী আসবাবিল ইখতিলাফিল ফুকাহা, ১/১৭০ পৃঃ; আল মুকাদ্দীসী, ১/৮৫ পৃঃ।]
নিঃসন্দেহে ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর এ বক্তব্য তাকলীদের মূলে আঘাত করে। তাকলীদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে মাযহাবের মতকে সুন্নার উপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়; এমনকি মাযহাবের মতকে সমর্থন করতে গিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।
তাকলীদের বিপক্ষে এ মহান ইমামের অবস্থান ছিল একেবারেই আপসহীন। তিনি বাগদাদে অবস্থানকালে নিজ মাযহাবের সারাংশ হিসেবে ‘আল হুজ্জা’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এরপর মিশর ভ্রমণ করে ইমাম আল লাইস ইবনে সাদ (রহ.) এর মাযহাব অধ্যয়ন করার পর তিনি অনেক বিষয়ে তার পূর্বের মত পরিবর্তন করেন। এরপর তিনি ‘আল উম্ম’ নামক একটি নতুন গ্রন্থ রচনা করেন।
(৪) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)
ইমাম আহমাদ তার ছাত্রদের অমত্মরে ইসলামের মূল উৎসগুলোর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন। কারো ব্যক্তিগত মতের অন্ধ অনুসরণের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করার মাধ্যমে ইমাম আহমাদ (রহ.) তার শিক্ষক ইমাম শাফেয়ী ও অন্যান্য ইমামদের অনুসৃত রীতি অব্যাহত রেখেছিলেন। আগের ইমামদের কিছু কিছু অনুসারীর মধ্যে তাকলীদের প্রবণতা দেখা দেয়ায় ইমাম আহমাদ (রহ.) আরো বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তার ছাত্রদেরকে তার ব্যক্তিগত মতামত লিপিবদ্ধ করতে শুধু নিরুৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ (রহ.) আরো একধাপ এগিয়ে তার ব্যক্তিগত মতামত লিপিবদ্ধ করার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তাই তার ছাত্রদের যুগের পূর্বে তার মাযহাব লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা হয়নি।
ইমাম আহমাদ (রহ.) হাদীসকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে, তিনি কিয়াসের মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধামেত্মর উপর একটি দুর্বল হাদীসকেও প্রাধান্য দিতেন। তিনি আল মুসনাদ নামে ৩০,০০০ এর অধিক হাদীস সম্বলিত একটি গ্রন্থ সংকলন করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ উম্মতের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমার কাছ থেকে তোমরা যা শুনেছ তা পৌঁছে দাও, এমনকি তা যদি একটি আয়াতও হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১; তিরমিযী, হা/২৬৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৪৮৬; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫২৫; মু‘জামুস সগীর, হা/৪৬২; সুনানে দারেমী, হা/৫৪২; মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, হা/১০১৫৭; জামেউস সগীর, হা/৫১৪৮; মিশকাত, হা/১৯৮।]
মূলত কিয়ামত পর্যমত্ম গোটা মানবজাতির কাছে হেদায়াতের বাণী পৌঁছে দেয়াই ছিল এ নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য। এ কারণে, ইমাম আহমাদ (রহ.) সকলের কাছে হেদায়াত পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন প্রত্যেকটি বিষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ এত বেশি ছিল যে, কেউ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর একটি হাদীসকেও অবজ্ঞা করার দুঃসাহস দেখালে তিনি তাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিতেন। তিনি বলেছেন,
তোমরা আমার তাকলীদ করবে না। ইমাম মালিক (রহ.) এর তাকলীদ করবে না এবং ইমাম আবু হানীফা (রহ.), শাফেয়ী (রহ.), আওযাঈ (রহ.), সুফইয়ান সাওরী (রহ.) সহ কারো তাকলীদ করবে না। বরং দ্বীনের মাসআলা সেখান থেকে সংগ্রহ করবে, যেখান থেকে তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। কোন ব্যক্তির নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হলো তার দ্বীনের ব্যাপারে মানুষের রায় গ্রহণ করা। [আদ-দুরারুস সুন্নিয়্যাহ ফিল কুতুবিন নাজদিয়্যাহ, ১৫/৮০ পৃঃ।]
তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে এদের কারো অন্ধ অনুসরণ করবে না। নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীদের থেকে যা কিছু আসে তা গ্রহণ করো, অতঃপর তাবেঈদের। তাদের পরবর্তীদের ব্যাপারে কোন ব্যক্তির জন্য যে কারো নিকট থেকে গ্রহণ করার স্বাধীনতা রয়েছে। [মাজাল্লাতু বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ, ৪৭/২১৬।]
ইত্তেবা হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তি নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীদের থেকে যা আসে তার অনুসরণ করবে আর তাবেঈদের পর থেকে সে (যে কারো অনুসরণে) স্বাধীন থাকবে। [মাসায়েলে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, ২৭৬-২৭৭ পৃঃ।]
ইমাম আওযাঈ, ইমাম মালিক ও ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর সিদ্ধামত্মগুলো কেবল তাদের মতামত হিসেবেই বিবেচ্য। আমার কাছে তাদের সকলের মর্যাদা সমান। এক্ষেত্রে সঠিক ও ভুল নিরূপণের প্রকৃত মানদন্ড হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ। [আল জামি, ৩/১৪৯ পৃঃ।]
আমি আশ্চর্য হই তাদের আচরণে, যারা সহীহ হাদীস জানা সত্ত্বেও ইমাম সুফইয়ান (রহ.) এর অভিমত গ্রহণ করতে চায়, অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, অতএব যারা তাঁর আদেশের অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন সতর্ক হয় যে, তাদেরকে ফেতনা পেয়ে যাবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব গ্রাস করবে। [আল ইবানাহ কুবরা, ১/২৬০ পৃঃ ই‘লাম- ২/২৭১ পৃঃ।]
তুমি তোমার দ্বীনের বিষয়ে নবী-রাসূল ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির অন্ধ অনুকরণ করো না, কারণ তারা কখনো ত্রুটিমুক্ত নয়। [ইমাম ইবনে তাইমিয়া, আল মাজমূ‘- ২০/২১২ পৃঃ।]
এসব হলো ইমামগণের বক্তব্য, যাতে হাদীসের উপর আমল করার ব্যাপারে নির্দেশ রয়েছে এবং অন্ধভাবে তাদের অনুসরণ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কথাগুলো এতই স্পষ্ট যে, এগুলো কোন তর্ক বা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/569/37
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।