hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কিতাবুল ইলম

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩৬
সংস্কারক
উল্লেখিত অবক্ষয় সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের আবির্ভাব ঘটেছিল। তারা তাকলীদের বিরোধিতা করে ইজতিহাদের ধারাকে পুনরায় চালুর চেষ্টা করেছেন। তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে ইসলামী আইনের সঠিক উৎসগুলোর উপর নির্ভর করার আহবান জানিয়েছেন। এরূপ কয়েকজন মহান সংস্কারক ও তাদের অবদান নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. ইমাম আহমাদ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) :

সংস্কারকগণের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছেন ইমাম আহমাদ ইবনে তাইমিয়া (৬৬১-৭২৮ হিজরী মোতাবেক ১২৬৩-১৩২৮ সাল)। তৎকালীন প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রামত্ম আকীদা-বিশ্বাস ও আচার-আচরণের বিরুদ্ধে তিনি প্রবলভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর সমসাময়িক স্বার্থান্বেষী মহলের অনেকেই তাঁকে মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) আখ্যায়িত করে শাসকশ্রেণির মাধ্যমে বারবার কারারুদ্ধ করিয়েছে। এরপরও ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তার সময়ের একজন শ্রেষ্ঠতম বিদ্বান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। প্রথমদিকে তিনি হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী ফিকহ অধ্যয়ন করলেও নিজেকে এ মাযহাবের গন্ডির মধ্যে আটকে রাখেননি। তিনি ইসলামী আইনের উৎসগুলোকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করে তৎকালীন ইসলামী জ্ঞানের সব কয়টি শাখায় ব্যাপক জ্ঞান লাভ করেন।

ইসলাম থেকে বিচ্যুত বিভিন্ন উপদলের লেখনীগুলো এবং ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করে তিনি এগুলোর উপর বিশাল সমালোচনা গ্রন্থ রচনা করেন। সে সময় মঙ্গোলরা সাবেক আববাসী সাম্রাজ্যের পূর্ব-উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো দখল করে নেয় এবং মিশর ও উত্তর আফ্রিকাকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তাদের বিরুদ্ধে জিহাদেও অংশগ্রহণ করেছেন।

ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এর ছাত্রবৃন্দও ছিলেন তাদের সময়ের সেরা ইসলামী বিশেষজ্ঞ। তিনি ইজতিহাদ ও ইসলামের বিশুদ্ধ উৎসগুলোর দিকে ফিরে আসার যে আহবান জানিয়েছিলেন তার ছাত্রবৃন্দই তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সফলভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফিকহ ও হাদীসশাস্ত্রের বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ ইমাম ইবনে কাইয়িম (রহ.), হাদীসশাস্ত্রের অসাধারণ বিশেষজ্ঞ ইমাম আয-যাহাবী (রহ.) এবং তাফসীর, ইতিহাস ও হাদীসশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.)।

২. মুহাম্মাদ ইবনে আলী আশ-শাওকানী (রহ.) :

ইয়েমেনের শাওকান শহরে জন্মগ্রহণকারী মুহাম্মাদ ইবনে আলী শাওকানী (১১৭১-১২৫০ হিজরী মোতাবেক ১৭৫৭-১৮৩৫ সাল) এ যুগের সংস্কারকদের অন্যতম। ইমাম শাওকানী যাইদী মাযহাব অনুযায়ী ফিকহ অধ্যয়ন করে এ মাযহাবের একজন অসাধারণ বিশেষজ্ঞে পরিণত হন। তারপর তিনি হাদীস শাস্ত্রের গভীর অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেন এবং তার সময়ের সর্বাধিক খ্যাতিমান হাদীস বিশারদে পরিণত হন। এ পর্যায়ে তিনি নিজেকে নির্দিষ্ট মাযহাব থেকে মুক্ত করে স্বাধীনভাবে ইজতিহাদের চর্চা শুরু করেন। তিনি ফিকহ ও উসূলে ফিকহ এর উপর বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। এসব গ্রন্থে বিভিন্ন বিষয়ে সকল মাযহাবের মতকে পর্যালোচনা করে বিশুদ্ধ প্রমাণ ও সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য যুক্তির ভিত্তিতে সমাধান দেয়া হয়েছে।

ইমাম শাওকানির মতে, তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ হারাম। তিনি এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থও রচনা করেছেন। তার মধ্যে একটি হলো, اَلْقَوْلُ الْمُفِيْدُ فِىْ حُكْمِ التَّقْلِيْدِ (আল কাওলুল মুফীদ ফী হুকমিত তাকলীদ)। এ কারণে তিনিও সমকালীন অনেক তাকলীদপন্থী লোকদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। [মুহাম্মাদ ইবনে আলী আশ-শাওকানী, নাইলুল আওতার, ১/৩-৬।]

৩. শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভী (রহ.) :

সংস্কারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন আহমাদ ইবনে আবদুর রহীম (১১১৪-১১৭৬ হিজরী; ১৭০৩-১৭৬২ সাল)। তিনি শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভী নামে সর্বাধিক পরিচিত। তার জন্ম ভারতীয় উপমহাদেশে; আর সেখানেই তাকলীদের চর্চা ছিল সবচেয়ে বেশি। ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানার্জনের পর তিনি ইজতিহাদের দ্বার পুনরায় উন্মুক্ত করে মাযহাবগুলোকে একীভূত করার আহবান জানান।

ইসলামী আইনশাস্ত্রের মূলনীতিগুলো পুনঃনিরীক্ষণ ও বিভিন্ন মাযহাবের সিদ্ধামত্মগুলোর প্রমাণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ (রহ.) হাদীস গবেষণায় নতুনভাবে প্রাণ সঞ্চার করেন। তিনি প্রচলিত মাযহাবগুলোকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যে, কোন বিশেষ ক্ষেত্রে মাযহাবের সিদ্ধামেত্মর বিপরীতে অধিকতর বিশুদ্ধ প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রত্যেকেরই নিজ মাযহাবের পরিপন্থী মত গ্রহণের স্বাধীনতা আছে।

৪. আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) :

আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। মহান আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে হাদীস যাচাই-বাছাই ও বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথিবীর মুসলিমদের সম্মুখে ইসলামের সঠিক শিক্ষা উপস্থাপন করার তাওফীক দিয়েছেন তাদের মধ্যে আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার পুরো নাম আবু আবদুর রহমান মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.)।

তিনি ১৩৩৩ হিজরী (১৯১৪ ঈসায়ী) সনে পূর্ব ইউরোপের আলবেনিয়ার রাজধানী কুদরাহতে জন্মগ্রহণ করেন। আলবেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করার কারণে তিনি আলবানী নামে পরিচিত হন।

সে দেশে পর্দা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে তার পিতা তাকে নিয়ে সিরিয়ার রাজধানী দামেশকে হিজরত করেন।

আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী তার শিক্ষা জীবন দামেশকেই সমাপ্ত করেন। হানাফী ফিকহ শিক্ষার প্রতি পিতার উপদেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি হাদীস শাস্ত্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে অসাধারণ পান্ডিত্য অর্জন করেন।

যৌবনের প্রথম দিকে তিনি ঘড়ি মেরামত করে জীবিকা অর্জনের পথ বেছে নিলেও অধিকাংশ সময় তিনি হাদীস অধ্যয়ন ও গবেষণা এবং বই লেখার কাজে ব্যয় করতেন। ফলে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী সিরিয়ায় তাওহীদ ও সুন্নার দিকে দাওয়াত দেন। ফলে সিরিয়ার অনেক আলেম উলামা তার সাক্ষাতে আসেন এবং তিনিও ঐ সকল আলেমদের মাঝে তাওহীদের বিভিন্ন মাসআলা, কুরআন-সুন্নার অনুসরণ, মাযহাবী গোঁড়ামি, বিদআত ইত্যাদি অনেক বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করেন। তিনি তখনকার প্রচলিত সকল শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। যার কারণে মাযহাবের অন্ধভক্ত গোঁড়াপন্থী, বিদআতী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন একশ্রেণির নামধারী আলেমদের পক্ষ থেকে তিনি প্রচন্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হন। তারা সাধারণ লোকদেরকে তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। তাকে পথভ্রষ্ট ও ওহাবী বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে এবং জনসাধারণকে তার থেকে সতর্ক করতে থাকে।

অপরপক্ষে তার দাওয়াতের সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন দামেশকের স্বনামধন্য হকপন্থী উলামাগণ। তারা তাঁকে তার দাওয়াতের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে থাকেন।

১৯৬০ সালের প্রথম দিকে আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী সিরিয়ার ক্ষমতাসীনদের নজরদারীতে পড়েন। তিনি দু’বার গ্রেফতার হয়েছেন। প্রথমবার ১৯৬৮ সালের আগে দামেশকের কেল্লা কারাগারে এক মাস বন্দী ছিলেন, যেখানে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) কেও বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এ বছর যুদ্ধের সময় সিরিয়ার সরকার সকল রাজবন্দীকে মুক্ত করে দিলে তিনিও মুক্ত হন। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে পুনরায় কারাবরণ করতে হয়। তারপর তিনি সিরিয়া ছেড়ে জর্ডানে পাড়ি জমান এবং রাজধানী আম্মানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। মৃত্যু পর্যমত্ম তিনি সেখানেই অবস্থান করেন।

১৯৯৯ ঈসায়ী সনের ২ অক্টোবর আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) জর্ডানের রাজধানী আম্মানে ৮৬ বছর বয়সে ইমেত্মকাল করেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন