মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আল-গিরাস চিন্তার উন্মেষ ও কর্মবিকাশের অনুশীলন (১ম খন্ড)
লেখকঃ তাওফীক বিন খলফ বিন আবদুল্লাহ বিন আল-রেফায়ী
১০
তৃতীয়ত : স্থায়ী উদ্যানের পূর্বে সেচ প্রবাহ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/723/10
‘আবু হুসাইন’ আমাকে এক চিন্তায় ভূষিত করেছেন, এবং চিন্তার উদ্রেকের মাধ্যমে তিনি এই উদ্যানে নতুন কিছু বপনের সৌভাগ্যে ভূষিত হয়েছেন। আল্লাহ তাকে চিন্তার উন্মেষ ও বপনে সর্বদা ভূষিত করুন ! আমি বইটির প্রাথমিক খসড়া প্রদর্শনের পর তিনি আমাকে এই বলে প্রস্তাব দিলেন যে, প্রতিটি বিষয়ের সাথে আপনি যদি বিষয় সংশ্লিষ্ট নস বা কুরআন-হাদীসের বর্ণনাগুলো উল্লেখ করে দিতেন, তাহলে অবশ্যই ভাল হত।
আমি তাকে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বললাম, দাওয়াত ও সাদাকায়ে জারিয়া সংক্রান্ত রচিত অধিকাংশ রচনাই কেবল নস উল্লেখের মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যা ঘটেছে, তাহল, উল্লেখিত নসগুলোর শব্দের ব্যাখ্যা, তাফসীর ইত্যাদি দ্বারা বিষয়টি আরো বেশি স্পষ্ট করে তোলার প্রয়াস চালানো হয়েছে। কখনো কখনো আমাদের মহান সালফে সালেহীনের শ্রেষ্ঠকর্ম, ঘটনাবহুল দৃষ্টান্ত হাজির করা হয়েছে। ইতিপূর্বের রচনাকারদের এই ছিল অনুসৃত পদ্ধতি। আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। আবু হুসাইনের সাথে আমার আলোচনা এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
তবে এ চিন্তার উদয়ের ক্ষণকাল পরেই, আমি আমার সুহৃদ ভাইয়ের নসীহত ও উপদেশকে কর্মে রূপান্তরিত করবার প্রয়াস চালালাম। আমি যা লিখেছি, এবং সে আমাকে যে উপদেশ দিয়েছে তাতে সমন্বয় ও বাস্তবায়নে প্রবৃত্ত হলাম। গ্রন্থাকারে উপস্থিত আমার এই উদ্যানের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সূচনাতে উপস্থাপন করলাম প্রবাহিত ঝর্ণাধারা বা নসসমূহ যা উক্ত উদ্যানের বৃক্ষের শিকড়ে, লতায় পাতায় সিঞ্চন করবে। তাকে উদ্ভাসিত করবে সবুজের বর্ণচ্ছটায়। চিন্তার এ পর্যায়টিকে আমরা নামকরণ করেছি ‘বপনের ঝর্ণাধারা’ নামে। গ্রন্থরূপী এই উদ্যান কি বপন নয়?
সুতরাং, উক্ত উদ্যানের জন্য চাই অঢেল পানি, যা তাতে সিঞ্চন করবে ঝর্ণাধারা, যা তাকে ভিজিয়ে দিবে জীবনের প্রাণস্পন্দনে। এখানে যে ঝর্ণাধারার উল্লেখ করেছি, তাই মূলত: কিতাব ও সুন্নাহর নসসমূহ। আর স্থায়ী কর্মসমূহ নামে আমরা এখানে যা উল্লেখ করেছি বা করব, তা বিগত মহান ব্যক্তিবর্গের কর্মসমূহ। বুখারীতে আছে, উসমান বিন মাজঊন রা.-এর স্ত্রী উম্মুল আলা মৃত্যুর পর তাকে স্বপ্নে দেখতে পেলেন। তিনি বলেন : আমি স্বপ্নে উসমানের জন্য একটি ঝর্ণা দেখতে পেলাম। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উক্ত স্বপ্ন বর্ণনা করলে তিনি বললেন : ‘সেটি তার আমল, যা তার জন্য প্রবাহিত হচ্ছে।’ [বুখারী : ৭০৮১]
বুখারী রহ. একে একটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন, যার নামকরণ করেছেন এভাবে : ‘স্বপ্নে প্রবাহিত ঝর্ণাধারার পরিচ্ছেদ’। যদি তা প্রবাহিত ও উৎসারিত ঝর্ণা নাও হত, তবে সেটিও হত কল্যাণকর। কারণ, পরিশ্রম ও ক্লান্তি ব্যায়ে যদি পানি নেওয়া হত, তাহলেও তা হত এক সর্বব্যাপী কল্যাণ, ব্যাপক করুণাধারা এবং এমন অনন্ত কর্মের সূচনা, যা পৌঁছে যেত সর্বত্র এবং হত দীর্ঘস্থায়ী। স্বপ্নের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত অধ্যায় ইমাম বুখারী রহ. আরম্ভ করেছেন এভাবে : ‘কুয়ো থেকে পানি তুলে মানুষকে তৃপ্ত করার পরিচ্ছেদ’। তাতে তিনি আব্দুল্লাহ বিন উমর হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাতে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
أريت كأني أنزع بدلو بكرة على قليب فجاء أبو بكر فنزع ذنوبا أو ذنوبين فنزع نزعا ضعيفا و الله تبارك و تعالى يغفر له، ثم جاء عمر فاستقى فاستحالت غربا فلم أر عبقريا من الناس يفري فريه حتى روى الناس ...
‘মনে হল যেন আমি এক সকালে কোনো কূপে বালতি ফেলে পানি তুলছি। তখন আবু বকর এসে এক কিংবা দুই বালতি পানি তুলল। সে খুব দুর্বলভাবে পানি তুলল। আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। তারপর ওমর এসে পানি নিল। এরপর তা বড় বালতিতে পরিণত হল। আমি এমন শক্তিশালী কাউকে দেখিনি, যে অভীষ্ট লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছে। এমনকি মানুষ তৃপ্ত হয়ে গেল...’। [বুখারী : ৩৬৮২]
সুতরাং, হে পাঠক, উদ্যানে প্রবেশের পূর্বে তুমি এই ঝর্ণাধারাগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যাও। ‘ঝর্ণাধারা’ হচ্ছে নসসমূহ, ‘বপন’ হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়ার চিন্তা, যা ঝর্ণাধারার সিঞ্চনে উৎসারিত-পল্লবিত। আর এ সবের সমন্বয়েই হল উদ্যান। তাই পাঠক এই লেখাগুলো পাঠ করতে গিয়ে আয়াত ও নির্বাচিত হাদীসসমূহ পাবে, যার রয়েছে বিশেষ ইঙ্গিত, যার নির্বাচনের অন্তর্নিহিত কারণ সহজে ধরা দিবে না। আমি এ ধরনের নসগুলো প্রতিটি উদ্যানের সূচনার পূর্বে উল্লেখ করেছি। পাঠক যখন পুরো বইটি সমাপ্ত করে পূনরায় আয়াত ও হাদীসগুলো পাঠ করবে, তখন অবশ্যই এগুলোর অন্তর্নিহিত কারণ তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। হাদীসগুলো উল্লেখের কারণ সে ধরতে পারবে এবং এর মর্মও তার কাছে উদ্ভাসিত হবে।
সুতরাং যে চিন্তাই এই ঐশী ধারার সিঞ্চন গ্রহণ না করবে, তার বপন ও চিন্তার উদ্রেক হবে মন্দ উদ্রেক। তার ফল হবে নষ্ট। অপর পক্ষে কুরআন সুন্নাহর ঝর্ণাধারা হবে আকাশ হতে বর্ষিত সে বৃষ্টি হতে উৎসারিত। আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, এতে উপত্যকাগুলো তাদের পরিমাণ অনুসারে প্লাবিত হয়, ফলে প্লাবন উপরস্থিত ফেনা বহন করে নিয়ে যায়। আর অলংকার ও তৈজসপত্র তৈরীর উদ্দেশ্যে তারা আগুনে যা কিছু উত্তপ্ত করে তাতেও অনুরূপ ফেনা হয়। এমনিভাবে আল্লাহ হক ও বাতিলের দৃষ্টান্ত দেন। অতঃপর ফেনাগুলো নিঃশেষ হয়ে যায়, আর যা মানুষের উপকার করে, তা যমীনে থেকে যায়। এমনিভাবেই আল্লাহ দৃষ্টান্তসমূহ পেশ করে থাকেন।’ [সুরা রাদ : ১৭]
আবু মূসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
مثل ما بعثني الله به من الهدى و العلم كمثل الغيث أصاب أرضا فكانت منها نقية قبلت الماء فأنبتت الكلأ و العشب الكثير، و كانت منها أجادب أمسكت الماء فنفع الله بها الناس فشربوا و سقوا و زرعوا، و أصابت منها طائفة أخرى إنما هي قيعان لا تمسك ماء و لا تنبت كلأً، فذلك مثل من فقه في دين الله و نفعه ما بعثني الله به فعلم و علم، و مثل من لم يرفع بذلك رأسا و لم يقبل هدى الله الذي أرسلت به .
‘আল্লাহ আমাকে যে হিদায়াত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে বৃষ্টির মত, যা কোন জমিতে পতিত হয়েছে। জমির কিছু রয়েছে উর্বর, যা পানিকে শুষে নেয়। ফলে তা বিপুল ঘাস-তৃণলতা উৎপন্ন করে। আর কিছু রয়েছে অনুর্বর, যা পানিকে ধরে রাখে। ফলে আল্লাহ তার মাধ্যমে মানুষকে উপকৃত করেন। তারা তা পান করে, সেচ দেয় ও কৃষি উৎপাদন করে। আর এক প্রকার, যাতে বৃষ্টি পতিত হয়, যা সমতলভূমি, পানি ধরেও রাখতে পারে না, কিংবা ঘাস-তৃণও উৎপন্ন করে না। এটিই হচ্ছে তাদের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর দীনে জ্ঞানার্জন করেছে এবং আমাকে আল্লাহ যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তা তার কাজে এসেছে এবং তাদের দৃষ্টান্ত যারা তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করেনি এবং আমি যে হিদায়াত দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণ করেনি।’ [বুখারী : ৭৯]
আমরা যদি শরয়ী নসসমূহকে আমাদের কর্মে ও কর্মক্ষেত্রে এভাবে স্থাপন করি, তবে অবশ্যই জীবন এক সবুজ উদ্যানে রূপান্তরিত হয়ে যাবে, এবং ইসলামের স্তম্ভ হবে সেই উদ্যানের ভিত্তি।
যতক্ষণ এই প্রবাহ অব্যাহত থাকবে, সৎ সঙ্গী উর্বরতা দিয়ে যাবে, ততক্ষণ বপনে সক্ষম কেউ বপনের ব্যাপারে অজুহাত দেখাতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
إن قامت الساعة و في يد أحدكم فسيلة فإن استطاع أن لا تقوم حتى يغرسها فليغرسها .
‘যদি কিয়ামত এসে পড়ে আর তোমাদের কারো হাতে কোন অঙ্কুর থাকে তবে সে যদি এ সুযোগ পায় যে, কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই সে তা বপন করতে পারবে, তবে সে যেন তা বপন করে নেয়।’ [বুখারী, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
সুতরাং, হে পাঠক ! হাদীসটিতে গভীর মনযোগ প্রদান কর এবং আমাদের আলোচ্য বিষয়ের সাথে তার সংশ্লেষ খুঁজে নাও।
إن قامت الساعة এ বাক্যাংশে إن শব্দটি শর্তসূচক, তবে এখানে তা আকস্মিকতার অর্থ দিচ্ছে। সুতরাং আকস্মিকভাবে যে কিয়ামত সংগঠনের মুখোমুখি হবে, তার উচিৎ হল এ আকস্মিক সময়টিতেও বপনের সুযোগ হাতছাড়া করবে না।
فليغرسها বপন দ্বারা এখানে শাব্দিক অর্থই উদ্দেশ্য। অঙ্কুর বপনে ব্যক্তির সার্থকতা হচ্ছে যেন ঐ ব্যক্তির মত যে তার ঝান্ডা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। যদিও এস্থলে কেবল বপনের মাধ্যমে ব্যক্তির আসল কল্যাণ লাভ হবে না। ব্যক্তি মূলত এই অবস্থায় দুটি কাজই করতে পারে। প্রথমত: সে হয়তো তার হাত থেকে অঙ্কুরটি ফেলে দিবে ফলে তা নির্জীব হয়ে যাবে, সাথে সাথে তারও জীবন নি:শেষ হয়ে যাবে। কিংবা দ্বিতীয়ত: সে তা জমিনে বপন করে দিবে। যে ব্যক্তিই কিছু বপন করে, তার আশা থাকে যে, তা একদিন বড় হবে, ফুলে-ফলে শোভিত হবে। এখানে ব্যক্তি যা বপন করবে, যদিও পার্থিব জীবনে তার ফললাভ হবে না, কিন্তু আখিরাতে অবশ্যই তা প্রাপ্ত হবে। কিন্তু সে যদি পার্থিব জীবন নি:শেষ হতে চলেছে, এই ভেবে তা ফেলে দেয়, তবে কী ফল সে লাভ করবে?
وبيد أحدكم فسيلة রাসূল যেহেতু এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদের হাতে কোন অঙ্কুর থাকবে...সুতরাং তা হবে ছোট ও আকারে ক্ষুদ্র। তার ক্ষুদ্রত্ব হচ্ছে এই যে, তার ফললাভের সময় এখনো অনেক দূরবর্তী।
فليغرسها বপন ও ফেলে দেয়ার সময়ের মাঝে পার্থক্য কতটুকু? বপনকারীর জন্য কয়েক কাজ সমাধা করা জরুরী : মাটি খোঁড়া, স্থাপন, অঙ্কুরটি পুতে দেয়া এবং পানি দেয়া। কিন্তু সময় এতই স্বল্প যে, যদি বপন করতে যায়, তাহলে হয়তো পানি দেয়ার সময় থাকবে না।
কিংবা পানি দিলেও হয়তো বপনকর্মটির শেষ পর্যন্ত সে উপনীত হতে সে সক্ষম হবে না। এত ধরনের সম্ভাবনা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। তিনি বলেছেন, সে যেন অবশ্যই তা বপন করে যায়। কে জানে, হয়তো অন্য কেউ এসে বপন-করা সে অঙ্কুরে পানি দিবে। কিংবা আল্লাহ অন্য কিছু ঘটাবেন, ফলে সে যা ভাবেনি, তাই ঘটবে?
فليغرسها যদি বপনের চেয়ে উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ থাকত, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তা বর্ণনা করতেন। জীবন সায়া হ্নর এই মুহূর্তে আমরা কি কল্পনা করি?
অবশ্যই এ অবশ্যই ব্যক্তি তার হাত থেকে অঙ্কুরটি ফেলে দিবে, হাত ঝেড়ে মুছে অজুর জন্য প্রস্ত্ততি নিবে, কায়মনোবাক্যে সালাতে নিমগ্ন হবে। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ কাজের নির্দেশ দেননি, বলেছেন, তুমি অবশ্যই তোমার হাতের অঙ্কুরটি মাটিতে পুতে দিবে।
কারণ, সে যদি সালাত ও দুআয় নিমগ্ন হয়, তবে এর কল্যাণ শুধু সেই ভোগ করবে, কিন্তু অঙ্কুরটি বপন করলে একই সাথে তা তার ও অপরের কল্যাণ বয়ে আনবে।
দুআ তার মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু বপনের ফলে একটি কল্যানের ধারা তার জন্য অব্যাহত থাকবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, মুত্যুর এমন কঠিন মুহূর্তেও তার জন্য অঙ্কুরটি বপন করা জরুরি বা ওয়াজিব ; অজু, সালাত কিংবা দুআ নয়। যদি বপন ত্যাগ করে সালাতে নিমগ্ন হয়, তবে হয়তো দেখা যাবে তৃতীয় কোন কাজ উপস্থিত হয়ে তাকে সালাত থেকে হটিয়ে দিবে, ফলে সে সেদিকেই ঝুঁকে যাবে।
এই হচ্ছে সেই গুঢ় রহস্য, যার কারণে আমি আমার এই রচনায় বপনের পূর্বে ঝর্ণাধারা অর্থাৎ চিন্তার পূর্বে সংশ্লিষ্ট নস উল্লেখ করেছি। উক্ত হাদীসে বপন সংক্রান্ত এ বর্ণনাও আমাদের উপর আল্লাহর এক অপার করুণার ইঙ্গিত- সন্দেহ নেই।
এই বপনের ফলে জন্ম হবে যে বৃক্ষের, শরীয়তের নসসমূহে তার উপকারিতার উল্লেখের কোন স্বল্পতা নেই। জীবন ও সঞ্জীবনের অপরিমেয় প্রামাণ্যতায় তা ভূষিত ও উদ্ভাসিত। প্রতি অংশ জুড়েই তার রয়েছে কল্যাণ ও উপকারিতা।
এই সেই বৃক্ষ, যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে উমর রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বলেছেন ‘নিশ্চয় তা মুমিনের বৃক্ষ’।
এই সেই বৃক্ষ, রাসূল যার শাখা-প্রশাখার সবুজ বিস্তারকে কবরবাসীর জন্য আযাবের লঘুকারক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এই সেই বৃক্ষ, যার ফলকে আল্লাহ তাআলা মারইয়াম আ.-এর জন্য প্রথম খাবার হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। ঈসা আ.-কে প্রসবের পর যখন তিনি বৃক্ষতলায় বসে ছিলেন। কুরআনে এসেছে :
‘আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে।অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোন লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব আজ আমি কোন মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না।’ [সূরা মারইয়াম : ২৫-২৬]
এই সেই বৃক্ষ, যার উৎপাদিত খাদ্যকে আল্লাহ তাআলা নবজাতকের জন্য নতুন জগতের প্রথম খাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, নির্ধারণ করেছেন রোজাদার ও তার পাকস্থলীর প্রথম আহার হিসেবে, দীর্ঘ অনাহারের পর যা উদরকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিবে। ঈদুল ফিতরের খুশীতে উৎফুল্ল ব্যক্তির জন্যও এই বৃক্ষের খাদ্য প্রথম খাদ্য।
এমনিভাবে, পবিত্র ভূমি...মদীনা মুনাওয়ারা ছিল খেজুর বৃক্ষের ভূমি ; সেই ভূমি, যা রাসূল হিজরতের পূর্বেই স্বপ্নে দেখেছিলেন। আবু বুরদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন :
رأيت في المنام أني أهاجر من مكة إلى أرض بها نخل، فذهب وهلى إلى أنها اليمامة أو هجر، فإذا هي المدينة يثرب، ورأيت في رؤياي هذه أني هززت سيفا فانقطع صدره، فإذا هو ما أصيب من المؤمنين يوم أحد، ثم هززته أخري فعاد أحسن ما كان، فإذا هو ما جاء الله به من الفتح و اجتماع المؤمنين، ورأيت فيها بقراً و الله خير، فإذا هم المؤمنون يوم أحد، و إذا الخير ما جاء الله به من الخير و ثواب الصدق الذي آتانا الله بعد يوم بدر .
‘স্বপ্নে দেখি আমি মক্কা থেকে খেজুর বৃক্ষ ছাওয়া একটি স্থানে হিজরত করছি। সে মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল স্থানটি ইয়ামামা কিংবা হাজার। কিন্তু পরে দেখা গেল তা মদীনা। আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি একটি তরবারী ঝাকাচ্ছি, হঠাৎ তা মাঝ থেকে ভেঙ্গে গেল। সেটা ছিল উহুদে মুসলমানদের আক্রান্ত হওয়ার প্রতিকীচিত্র।
এরপর তরবারীটি দ্বিতীয়বার ঝাকাতে তা পূর্বের চেয়ে ভাল হয়ে গেল। তার অর্থ আল্লাহর সাহায্যে মুসলমানদের পুনরায় সমবেত হয়ে পুনর্বিজয় অর্জন। তারপর আমি একটি গাভী ও তাতে অনেক কল্যাণ দেখতে পেলাম।
গাভীর মানে উহুদের মুমিনগণ, আর কল্যাণ হচ্ছে বদর দিবসের পর আল্লাহ আমাদের যে পার্থিব ও অপার্থিব কল্যাণ দান করলেন তা।’ [বুখারী : ৩৬২২]
আয়িশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান দেখানো হয়েছে, তা হচ্ছে দু পাহাড়ের মধ্যবর্তী খেজুর বৃক্ষ অধ্যুষিত এলাকা।’ [বুখারী।]
উত্তম ভূমি সেই ভূমি...।
উত্তম গুণ সেই গুণ...।
এই পৃথিবীতে কি এমন কোন ভূমি আছে, যা মদীনা মুনাওয়ারার তুলনায় উত্তম ফলদান করেছে?
আল্লাহর কাছে আমি কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, তিনি যেন গ্রন্থরূপী এই উদ্যান, তার বপন ও তার পাঠকের জন্য করুণা ধারা প্রবাহিত করেন।
দীর্ঘ এক ভূমিকার পর, এখন সময় হয়েছে, আমরা মগ্ন হব এর অধ্যায়গুলোয়, যার প্রতিটি অধ্যায়ে বপনের প্রচেষ্টা রয়েছে। আমি একে বাইশটি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছি। প্রতিটি অধ্যায়ই একটি পরিপূর্ণ উদ্যান, ফল আহরণকারীদের জন্য যার ফলগুলো ঝুঁকে আছে, যার শাখা-প্রশাখা ক্রম বিস্তারমান হয়ে সকলকে ছায়াতলে নিয়ে নিতে উদ্যত হয়ে আছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/723/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।