মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত।’ [সূরা ইয়াসীন : ৬৫]
এগুলো হচ্ছে কাফিরদের হাত, যে পাপ তারা করেছে, সে ব্যাপারে তাদের হাতগুলো স্বীকৃতি দিবে। সুতরাং, তুমি কি তোমার হাতকে তোমার স্বপক্ষে কল্যাণের স্বীকৃতিদাতায় পরিণত করবে না? তোমার এই হাত, তার নির্জীব আঙুলগুলো কিয়ামত দিবসে কথা বলে উঠবে, তাকে কথা বলার শক্তি প্রদান করা হবে।
হায় আশ্চর্য ! হায় আফসোস ! বড় বড় জ্ঞানী ও দায়ীগণ কিংবা সর্বস্ব নিয়োগ করে যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে জ্ঞানের পথে, ইলমের রাহে, এমন তালিবে ইলমগণ একটি মাত্র কিতাব লেখার অনুপ্রেরণা বোধ করছে না, বরং, কয়েক ছত্র বা একটি নিবন্ধ লিখবার উৎসাহও পাচ্ছে না, যাতে থাকবে কল্যাণের দাওয়াত, মন্দ প্রথার বিরোধিতা কিংবা যে অন্যায় ছড়িয়ে গিয়েছে চারদিকে, যে হীন কুফরির জাল ঘিরে রেখেছে মানব সমাজকে- যাতে থাকবে তার বিরোধিতায় অবতীর্ণ হওয়ার অকুতোভয় প্রেরণা।
সন্দেহ নেই, লিখবার পরিপূর্ণ শক্তিই তাদের রয়েছে, কিংবা তাদের নিকট এমন কেউ রয়েছে, যে তাদের পক্ষ থেকে লিখে দেবে। অবস্থা ভেদে যে কোন পন্থাই তারা গ্রহণ করতে সক্ষম। তাদের সামনে ব্যাপকভাবে ইসলামের অসহায়ত্ব পরিদৃষ্ট হচ্ছে, বিশেষভাবে জ্ঞান কীভাবে অসহায়-অর্বাচীন হয়ে পড়ছে, সেটিও তাদের নিকট অবিদিত নয়, অথচ তারা তাকে সাহায্য করছে না। কুফরি দিকে দিকে ছড়িয়ে গিয়েছে, অথচ তারা তার বিরোধিতায় উপনীত হচ্ছে না। অন্যায় পাপাচার গ্রাস করে নিচ্ছে সব কিছু, কিন্তু এতে তারা বাধা প্রদান করছে না।
সহীহ হাদীসে আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
فضل العالم على العابد كفضلي على أدناكم .
‘আবিদের উপর আলিমের শ্রেষ্ঠত্ব এমন, যেমন আমার শ্রেষ্ঠতব তোমাদের সাধারণতর ব্যক্তির উপর।’
অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
إن الله و ملائكته و أهل السماوات و الأرضين حتى النملة في جحرها و حتى الحوت ليصلون على معلم الناس الخير .
‘নিশ্চয় আল্লাহ, তার ফেরেশতাগণ এবং আসমান ও যমীনের অধিবাসীরা সকলে, এমনকি গর্তের ক্ষুদ্র পিপীলিকা ও মাছ মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদানকারীর জন্য দুআ করে।’ [তিরমিযী : ২৬৭৫]
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন :
معلم الخير يستغفر له كل شيئ حتى الحيتان في البحر .
‘সব কিছু কল্যাণের শিক্ষাদানকারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি সমুদ্রের মাছও।’ [বাযযার। আলবানী বলেছেন : হাদীসটি সহীহ লিগায়রিহী।]
ইমাম শাফিয়ী রহ. বলেছেন : ‘ইলমের অনুসন্ধান নফল সালাত হতেও উত্তম।’ তিনি আরো বলেছেন : ‘যে পার্থিব জগত কামনা করবে জ্ঞানার্জন তার কর্তব্য। আর যে অপার্থিব জগত- আখিরাত কামনা করবে তারও কর্তব্য জ্ঞানার্জন।’ অপর স্থানে তার মন্তব্য ছিল : ‘ফরজ আমলের পর জ্ঞানার্জনের তুলনায় আল্লাহর নৈকট্যদানকারী শ্রেষ্ঠতর কিছু নেই।’ [তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত। ইমামন নববী : ১/৭৫]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে : জ্ঞানার্জনকারী এই শ্রেণীর নিকট বিপুল জ্ঞানভান্ডার থাকা সত্বেও যদি তারা মানুষকে কল্যাণের শিক্ষা না দেন, তাহলে কি আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী করুণা লাভ করবে? ফেরেশতা ও জগতের দুআ তাদের জন্য কাজে লাগবে?
উত্তর হচ্ছে : না।
তাছাড়া, মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদানকারীদেরও রয়েছে বিভিন্ন স্তরক্রম।
আলেম যদি এমন হন যে, তিনি একই সাথে শরীয়তের গভীর জ্ঞানের অধিকারী আলেম তৈরী করবেন, এবং গড়ে তুলবেন যোগ্য ছাত্রদের একটি শ্রেণী। সাথে সাথে রচনা করবেন মূল্যবান বইপত্র, যাতে থাকবে নতুন আবেদন, কল্যাণকর নতুন উপস্থাপনা, তবে সন্দেহ নেই, এ হবে সমাজের জন্য খুবই কল্যাণকর একটি দৃষ্টান্ত।
আমরা কখনো কখনো দেখতে পাই, কেউ কেউ লেখালেখির ব্যাপারে অজুহাত দেখাচ্ছেন, কিন্তু সকলেই কি অজুহাত দেখাবে? এতো হতে পারে না ! কিংবা যে তার বিষয়ে যোগ্য সে কি করে অজুহাত দেখায়?
এদের কারো কারো ক্ষেত্রে এমন হুকুম প্রদান করা যায় যে, লেখালেখির মাধ্যমে দাওয়াত তাদের জন্য ওয়াজিবে আইনী। কারণ, দাওয়াতের ক্ষেত্রে নীতিমালা হচ্ছে শরীয়ত ; কারণহীনভাবে নিজের স্বপক্ষে অজুহাত, অক্ষমতা দেখিয়ে নির্দোষ পিছু হটে যাওয়া, কিংবা লোক দেখানো বিনয়ী আচরণ- ইত্যাদি নয়। ‘আমি ব্যতীত অন্য কেউ করুক’ তাদের এ কথার চেয়ে ‘আমার থেকে উৎসারিত অথবা আমার কৃত’ এই কথা, সন্দেহ নেই, অনেক উত্তম।
দাওয়াতের এই মহতী ময়দান থেকে কারণহীন পিছু হটে যাওয়া আলেমের দৃষ্টান্ত বিরল নয়। তন্মধ্যে আমি কিছু আলেমের কথা উল্লেখ করব। যারা আমার সমাজেরই বাসিন্দা। যাদেরকে হয়তো আমি প্রত্যক্ষভাবে চিনি ও যাদের সাথে আমার রয়েছে গাঢ় বন্ধুত্ব। তবে পাঠক যদি একে নির্দিষ্ট কারো প্রতি ইঙ্গিতসূচক না ধরে ক্যাটাগরি হিসেবে গ্রহণ করে, তবে সেটা হবে কল্যাণকর ও আমাদের উদ্দেশ্যের অধিক নিকটতর।
একজন মালিকী আলেম : যিনি তার মাযহাবের ব্যাপারে ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন, ঋদ্ধ হয়েছেন পঠন ও পাঠনে। তার মাযহাবের অনুসারীদের মাঝে তিনি তার দেশে বিশেষ অবস্থান লাভ করেছেন। এবং এমন কিছু সূক্ষ্ম তত্ত্ব আবিস্কারে সক্ষম হয়েছেন, যা একই সাথে শক্তিশালী প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত মাযহাব বিরোধী। এ সমস্ত সূক্ষ্ম তত্ত্বের সমাধানে তার মাযহাবের অনুসারীগণ নিতান্ত অক্ষম। কিন্তু তিনি কোন কিতাবকে কেন্দ্র করে টীকা সংযোজন অথবা স্বতন্ত্র কোন গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে লেখালেখি হতে বিরত থেকেছেন, এ ব্যাপারে আমি তার মাঝে কোন উদ্যোগ দেখছি না।
তার মাযহাবের অনুসারীগণও, তাই, রয়ে গিয়েছে সেই ধারাবাহিকতায়, যা কিনা সিদ্ধ নয় এবং যা সহীহ ও স্পষ্ট নসের বিরোধী। তার ব্যাপারে আমরা কি বলব? আমি বলছি না যে, তাকে উক্ত মাযহাবকে ধ্বসিয়ে দিতে হবে। কিন্তু, জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে তিনি যে সত্য উন্মোচনে সক্ষম হয়েছেন, সেই বরাতে তাকে তো অবশ্যই তার মাযহাবের অনুসারীদেরকে রক্ষা করতে হবে এবং স্পষ্ট ও সহীহ নসের বিরোধিতা থেকে তাদেরকে বাধা প্রদান করতে হবে। আমি তাকে আহবান করব এবং করেও যাচ্ছি, একই সাথে সমান্তরালভাবে তার মাযহাব ও এর মৌলিক গ্রন্থগুলোকে পক্ষ-বিপক্ষ প্রমাণের দ্বারা পুষ্ট করে তুলতে। এর মাধ্যমে তিনি সক্ষম হবেন মাযহাব, তার ইমাম ও অনুসারীগণকে অনৈতিক ভুল থেকে রক্ষা করে সঠিক পথের দিকে নিয়ে আসতে।
সন্দেহ নেই, মাযহাবের বাইরে থেকে সমালোচনার তুলনায় ভিতর থেকে সমালোচনা অনেক উত্তম ও ফলপ্রসু।
কোন প্রকার পরিবর্তন বা কর্তন ব্যতীত ইমামের কথাকে প্রতিষ্ঠিত করা তার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ছিল। ইমামের পক্ষ হতে বর্ণিত ও সমাধানকৃত এমন অনেক মাসআলা পাওয়া যাবে, যাতে তারই কর্তৃক বিবৃত একাধিক মত পাওয়া যায়। সাথে সাথে এমন অনেক মাসআলার অবতারণা লক্ষ্য করা যায়, যার সঠিক মর্মার্থ এমনকি ব্যাখ্যাকারগণও উপলব্ধি করতে সক্ষম হননি। যে মর্মার্থ পরবর্তীগণ শুধরে দেন এবং অনুসারীগণকে সঠিক বিষয়টি ধরিয়ে দেয়। এ হচ্ছে একটি সচল প্রক্রিয়া, যা ক্রমান্বয়ে একটি মতকে অধিকতর শুদ্ধ ও স্পষ্ট করে তোলে। উক্ত আলেম যদি এ ধারায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হতেন, তবে সন্দেহ নেই, তা হত আমাদের সকলের জন্য অধিক কল্যাণকর।
অন্ধ প্রতিবন্ধিতা এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, সমকালীন অধিকাংশ মাযহাবের অনুসারীগণ মনে করে- হোক সে ছাত্র কিংবা শিক্ষক- সত্য কেবল তার অনুসৃত মাযহাবেই ধরা দিয়েছে, অন্যান্য যে মাযহাবই এর বিরোধী, তা অসত্য, সুতরাং অগ্রহণযোগ্য।
এভাবে, একটি সংকীর্ণ ও ক্ষুদ্র পরিসরে আমাদের জ্ঞানচর্চার সম্ভাবনাকে কেন্দ্রিভূত করে ফেলা এবং অন্যান্য মাযহাবকে ধ্বসিয়ে দেয়ার মনোবৃত্তি নিয়ে গ্রন্থ রচনা ও যে কারো জন্য ইজতিহাদের বৈধতা দান কোনভাবেই সুস্থ সিদ্ধান্তের পরিচায়ক হবে না। অভ্যন্তরীন সংস্কার কি কখনো ত্রুটি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে?
মাযহাব ও মাযহাবী এই সব বিষয়-আশয় সংক্রান্ত একটি তুলনা আমার কাছে অত্যন্ত চমকপ্রদ মনে হয়, যখনিই তুমি মাযহাবের বড় কোন আলেমের মুখোমুখি হবে এবং তাকে মাযহাবের প্রচলিত মাসআলার বাইরে কিছু জিজ্ঞেস করবে, উদ্ভুদভাবে তুমি দেখতে পাবে যে, তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আকাশ-পাতাল ভেবে অস্থির হচ্ছেন। যেন সমুদ্রের অথৈ জলরাশির অভ্যন্তর থেকে কোন মাছ ধরে এনে শুকনোয় ছেড়ে দিয়েছ।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরি হিসেবে একজন শাফেয়ী আলেম-এর কথা উল্লেখ করব। তিনি তার মাযহাবের গন্ডিতে খুবই যোগ্য পন্ডিত। অসাধারণ তার পান্ডিত্ব। শরীয়তের যে কোন ক্ষেত্রেই তার রয়েছে সরব পদচারণা। তালিবে ইলমদেরকে তিনি ক্লান্তিহীনভাবে মাযহাবী গ্রন্থের পাঠ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তার ছাত্রদের সামনে এমন এমন সূক্ষ্ম তত্ত্বের অবতারণা করছেন, যা কোন কিতাবেই বিরল। এবং সাথে সাথে তিনি তাদেরকে এমন হাদীসের বিশদ ব্যাখ্যা করছেন, যাকে কেন্দ্র করে আহকাম ও তার সূত্র নির্ধারিত হয়, এবং যাকে কেন্দ্র করে ইতিপূর্বে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর মতবিরোধের জন্ম নিয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে সমকালীন আলেম সমাজে বিশেষ অবস্থানে ভূষিত হয়েছেন, ঘরে-বাইরে, মসজিদে-মজলিসে একটির পর একটি কিতাবের পাঠ দিয়ে চলেছেন তিনি।
এত কিছু সত্ত্বেও, এ শাফেয়ী আলেম গ্রন্থ রচনার ব্যাপারে ভয়ানক রকমের ক্লান্তি বোধ করেন। এ বিষয়ে তার ভীষণ রকম অস্বীকৃতি। ডায়াবেটিস রোগের কারণে ক্রমে তিনি স্বাস্থ্যে ক্ষয়ে যাচ্ছেন। আমি আল্লাহর কাছে এ রোগ থেকে তার জন্য শেফা কামনা করি। তবে, সুখের কথা হচ্ছে, অবশেষে তিনি লেখালেখিতে প্রবৃত্ত হয়েছেন। আশা রাখি, অচিরেই আহলে ইলম তার মাধ্যমে ব্যাপক কল্যাণের দেখা পাবেন।
আমি এক পরিপক্ক বৃদ্ধকে জানি, যিনি পন্ডিত ব্যক্তিবর্গের সান্বিধ্যে ক্রমান্বয়ে ইলম অর্জন করেছেন, শরীয়া বিদ্যার অধিকাংশেরই তিনি পাঠ নিয়েছেন মনযোগ সহকারে ; এসব ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা সুবিস্তৃত এবং যে ইলম তিনি অর্জন করেছেন, আদায় করেছেন তার যাকাত- ইতিপূর্বে যে জ্ঞান তিনি অর্জন করেছেন, তার পাঠদানে তিনি ব্যাপৃত হয়েছেন অত্যন্ত সার্থকতার সাথে।
আমি যতটুকু জানি, তার সম্পর্কে আমার এ লেখার পূর্বেই তিনি ‘নায়লুল আওতার’ গ্রন্থের পূর্ণ পাঠদান ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছেন। একবার নয়, বহুবার দিয়েছেন। বারংবার এই পাঠদানের মাঝখানে তিনি অনেক অস্পষ্ট বিষয়কে স্পষ্ট করে তুলেছেন, অনেক সূক্ষ্মতত্ত্ব তার কাছে ধরা দিয়েছে। এত কিছু সত্বেও, এখন পর্যন্ত, তার নিকট উন্মোচিত সে বিষয়গুলো সম্পর্কে- জ্ঞানচর্চার সফরে পাঠকমাত্ররই যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- একটি মাত্র অক্ষরও লিপিবদ্ধ করেননি।
এ বিষয়টি তিনি কেন ঘটতে দিচ্ছেন, আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টির প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ ছিল তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের উল্লেখিত ভদ্রলোক কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে তার প্রচেষ্টার কারণে স্বতন্ত্র ও একক স্থান দখল করে আছেন। সমাজের ধনী ও বিত্তশালীদের কাছ থেকে তিনি অর্থ সংগ্রহ করে পৌঁছে দেন দরিদ্রের কাছে, ব্যয় করেন তাদের কল্যাণে। এ ক্ষেত্রে তার রয়েছে অদ্ভুত ও কার্যকরী সব অভিজ্ঞতা।
তোমরা এমন এমন দরিদ্রকে দেখে থাকবে, যাদের দারিদ্র্য অন্ধকারে ঢেকে থাকে, মুখ ফুটে না বলার কারণে ধনীরা যাদের মনে করে অঢেল ধন-সম্পদের অধিকারী অথবা স্বচ্ছল। কত অস্বচ্ছল ব্যক্তি আছে, দীর্ঘ দিন-মাস-বৎসর যাদের কেটে যাচ্ছে দারিদ্রে্যর পেষণে, কোথাও অন্ধকার রাতে কাউকে হয়তো তার গৃহ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বকেয়া ভাড়ার অজুহাত দেখিয়ে, কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কারো বাড়ী-ঘর ধ্বসে পড়েছে...কিন্তু এমন কিছু কল্যাণময় ব্যক্তি সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন, সকাল হতে না হতেই দেখবে তিনি উক্ত দুর্যোগ ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাশে এসে দাড়িয়েছেন, এবং পূর্বে তারা যে অবস্থায় ছিল তাদের প্রচেষ্টার ফলে তার চেয়ে উত্তম অবস্থায় এখন দিন কাটাচ্ছে।
মুখ ফুটে না বলার কারণে ধনীরা যাদেরকে অস্বচ্ছল বলে শনাক্ত করতে পারে না, এবং যাদের পাশে গিয়ে দাড়ায় না, তাদেরকে চিনতে পারা এবং শনাক্ত করতে পারা এক প্রকার যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য। যাদেরকে আল্লাহ সামর্থ্য দিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে সম্পদ গ্রহণ করা এবং তাদের অন্তরে পৌঁছতে পারা ভিন্ন প্রকার জ্ঞান ও দক্ষতা। আর শরয়ী কোন সমস্যা অথবা বিপর্যস্ত কোন এলাকার ব্যাপারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ- সন্দেহ নেই এ সবই দক্ষতার দাবী রাখে।
এমনিভাবে সাদাকা সত্যিকার হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং যে কোন কল্যাণমূলক কর্মকান্ডকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং তাকে একটি ধারাবাহিক সফলতায় পরিণত করা- সত্যিই অসাধারণ জ্ঞান ও শিল্প, আল্লাহ বিশেষ বান্দাদেরকেই এ গুণে ভূষিত করেন।
উক্ত ভদ্রলোককে আমি অনেকবার বলেছি, কেন আপনি আপনার এ অভিজ্ঞতা ও তার সারনির্যাস লিপিবদ্ধ করছেন না, এবং তাকে স্থায়ী গঠনমূলক রূপে উন্নীত করছেন না? প্রতিবারই এর উত্তরে তিনি আমাকে বলেছেন : আমি সুন্দর করে লিখতে পারি না। কর্মতৎপরতার বাইরে এই সব লেখাজোকায় আমার দক্ষতা নেই।
এ ধরণের চিন্তা ও মনোভাবের ফলেই যে কোন কর্মের স্রষ্টাকেই অকালে নি:শেষ করে দেয়, সুতরাং তিনি ও তার কর্ম এবং সেই কর্মের বিশাল অভিজ্ঞতা কালের গর্ভে হারিয়ে যায় আমাদের সবার অজান্তে। এবং প্রজন্মান্তরে অন্যান্য দায়ীদের নিকট এ অভিজ্ঞতার নির্যাস পৌঁছতে পারে না, মাঝ পথেই কেটে যায় তার যোগসূত্র।
তুমি কি তোমার জীবনে ঘটে যাওয়া মহান ঘটনা এবং দুর্লভ অভিজ্ঞাতাগুলো তোমার ভাষায় ব্যক্ত করতে পার না? নিশ্চয় ! তবে কেন অন্যত্র ছড়িয়ে থাকা দায়ীদের জন্য তোমার গল্পগুলো কলমের কালিতে লিপিবদ্ধ করছ না? তুমি তোমার অভিজ্ঞাতা ও নিরীক্ষাগুলো লিপিবদ্ধ কর, প্রয়োজনবোধে নিজের নাম তা থেকে উঠিয়ে দাও।
লিখ, এবং এর মাধ্যমে উত্তম আদর্শের সঞ্জীবন উদ্দেশ্য কর, মিটিয়ে দাও মন্দ প্রথা।
লিখ, আমাদের রব তাআলা, কারণ, লিপিবদ্ধ করেছেন তাদের কথা, যারা তাকে ভালোবেসে ভুখাদেরকে খাবার দিয়েছে, লিপিবদ্ধ করেছেন তাদের কথা, যারা প্রয়োজন ও দারিদ্র্য থাকা সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিয়েছে। তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন সৎ বান্দাদের সততা সম্পর্কে, মুফাসসিরগণ এ সমস্ত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা করেছেন, শানে নুযূল উল্লেখ করেছেন, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের নামগুলো।
লিখ, কারণ, হতে পারে এ লেখার ফলে তুমিই হবে তার প্রথম উপকারিতা ভোগকারী। এর ফলে তোমার মাঝেই হয়তো প্রথম শুদ্ধতা ও বিশুদ্ধতার উন্মেষ ঘটবে। স্বত:স্ফূর্ত আলোক জ্বলে উঠবে।
সারকথা হচ্ছে : জ্ঞান ও কর্মের যে কয়জন মহান ব্যক্তির উল্লেখ করেছি, এ উম্মতে তারাই একমাত্র দৃষ্টান্ত নন। বরং, দৃষ্টান্ত হিসেবে যখনই তাদের উল্লেখ করা হবে, তুমি দেখতে পাবে, এদের প্রতি জনের ছায়ায় তাদেরই মত বিরাট একটি দল জমায়েত হয়ে গিয়েছেন, যারা একই ব্যর্থতায় ভুগছেন। জ্ঞান ও কর্মের অন্যান্য এলাকাতে- হোক শরয়ী বা টেকনোলজিক্যাল, জ্ঞান ও কর্মের- তাদের দৃষ্টান্ত বিরল নয় মোটেই।
সুতরাং, চিন্তা ও কর্মের ঐতিহাসিক উন্মেষের এই প্রচেষ্টায় তাদের সুপ্ত ক্ষমতার কি প্রকাশ ঘটবে? তারা কি জেগে উঠার প্রেরণা খুঁজে পাবেন? কেঁপে উঠবে জীবনের সঞ্জীবন? পার্থিব জীবন মহাকালের অন্ধকারে লুপ্ত হওয়ার পূর্বেই কি তারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন তাদের এই বিষয়গুলো?!
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/723/9
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।