hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল-গিরাস চিন্তার উন্মেষ ও কর্মবিকাশের অনুশীলন (১ম খন্ড)

লেখকঃ তাওফীক বিন খলফ বিন আবদুল্লাহ বিন আল-রেফায়ী

৫৭
নবম বপন: মালিক ও ধনীক শ্রেণীর মাঝে
أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَةَ رَبِّكَ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا وَرَحْمَةُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ ﴿32﴾

‘তারা কি তোমার রবের রহমত ভাগ-বণ্টন করে? আমিই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই এবং তাদের একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অপরকে অধিনস্থ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আর তারা যা সঞ্চয় করে তোমার রবের রহমত তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট’। [সূরা যুখরুফ : ৩২]

عن أبي هريرة رضي الله عنه : أن فقراء المهاجرين أتوا رسول الله صلى الله عليه و سلم فقالوا : ذهب أهل الدثور بالدرجات العلى و النعيم المقيم فقال : ( و ما ذاك ؟ ) قالوا : يصلون كما نصلي، و يصومون كما نصوم، و يتصدقون و لا نتصدق، و يعتقون و لا نعتق، فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( أفلا أعلمكم شيئا تدركون به من سبقكم، و تسبقون به من بعدكم؟ و لا يكون أحد أفضل منكم إلا من صنع مثل ما صنعتم ؟ ) قالوا : بلى يا رسول الله، قال : ( تسبحون و تكبرون و تحمدون دبر كل صلاة ثلاثا و ثلاثين مرة ) ، فرجع فقراء المهاجرين إلى رسول الله صلى الله و عليه و سلم فقالوا : سمع إخواننا أهل الأموال بما فعلنا ففعلوا مثله : فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم ذلك فضل الله يؤتيه من يشاء .

‘আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত : অসচ্ছল মুহাজিররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল : বিত্তশালীরা তো উঁচু মাকাম ও স্থায়ী নিয়ামত সব নিয়ে যাচ্ছে ! তিনি বললেন : কীভাবে? তারা বললেন তারা আমাদের মত সালাত রোজা করে কিন্তু তারা সাদকা করে আমরা সাদকা করতে পারি না, তারা গোলাম আজাদ করে আমরা আজাদ করতে পারি না। তখন রাসূল বললেন : আমি কি তোমাদের সে উপায় শিখিয়ে দিব যার দ্বারা তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধরে ফেলতে পারবে এবং পরবর্তীদের থেকে এগিয়ে থাকবে, এবং তোমাদের অনুরূপ এই আমল করা ছাড়া কেউ তোমাদের চেয়ে উত্তম হতে পারবে না? তারা সবাই বললেন, অব্যশই হে আল্লাহর রাসূল !

প্রতি সালাতের পর তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার আলহামদু লিল্লাহ বলবে। এরপর দরিদ্র মুহাজিররা ফিরে এসে বললেন, ধনী মুহাজিররা আমাদের আমলের কথা জানতে পেরে অনুরূপ আমল শুরু করে দিয়েছে? রাসূল বললেন :- এটা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। আল্লাহ তা যাকে ইচ্ছা দান করেন। [মুসলিম : ৫৯৫]

যার অধীনে আল্লাহ তাআলা অনেক শ্রমিক ও মজুরকে নিয়োগ দিয়েছেন, এবং অধীনতার ফলে শ্রমিক ও মজুররা যার কথা মান্য করে, সে নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক অনুগ্রহ লাভ করেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ অবশ্যই কিয়ামত দিবসে প্রশ্ন করবেন, অনেকের দায়িত্বশীল হিসেবে তার কাছ থেকে হিসেব চাওয়া হবে। সুতরাং, তুমি সতর্ক হও, পার্থিবে যাকে তুমি অনেক সহযোগিতা করেছ, আখিরাত দিবসে তার কারণে নিজের ধ্বংস ডেকে এনো না।

শ্রমিক শ্রেণীর মাধ্যমে তুমি যে সাদাকায়ে জারিয়ার সূচনা করতে পার, তা নিয়ে ভাবার পূর্বে তোমাকে ভাবতে হবে, তোমার উপর তাদের কী কী হক রয়েছে। প্রথমে এই ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতা এনে অত:পর তোমাকে অন্য ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে। অনেক শ্রমিক অভিযোগ করে যে, তাদেরকে পারিশ্রমিক যথাসময়ে প্রদান করা হয় না, অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ ছিল :

‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তুমি তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ [ইবনে মাজা : ২৪৪৩]

কোন কোন মালিক নির্দিষ্ট কোন কাজের অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের ঘোষণা প্রদান করেন, কিন্তু কাজ শেষে তা আদায় করেন না। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে স্পষ্টরূপে ঘোষণা দিয়েছেন :

وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللهِ إِذَا عَاهَدْتُمْ وَلاَ تَنْقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا إِنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ ﴿91﴾

তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর এবং আল্লাহকে তোমাদের যামীন করে শপথ করার পর তা ভঙ্গ কর না। আর তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন’। [সূরা নাহল : ৯১]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াদা ভঙ্গকে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং ওয়াদা ভঙ্গ, পারিশ্রমিক প্রদান না করা, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ এবং অত:পর মজলুমের বদদুআ...এত কিছু যদি এক সাথ হয়, তবে তা কী ভয়াবহ ফল বয়ে আনবে তা বলাই বাহুল্য।

ইসলামের প্রাথমিক সময়ে সামাজিক নানা চাপের ফলে কোন কোন মালিক শ্রেণী শ্রমিককে বাধ্য করত কুফরি কার্যকলাপ ও বিশ্বাস বজায় রাখতে, কুরআনে এসেছে :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لاَ تَفْعَلُونَ ﴿2﴾ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لاَ تَفْعَلُونَ ﴿3﴾

‘হে মুমিনগণ, তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসমেত্মাষজনক’। [সূরা ছাফ : ২-৩]

অপর দিকে কিছু মালিক শ্রেণী অনেক শ্রমিককে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে এসেছে, তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে অন্যান্য মুসলমানদের জন্য আদর্শ হয়ে আছে। তুমি হয়তো বলবে, আমি ক্ষতির আশংকায় শ্রমিকদের সাথে উত্তম আচরণ করতে ভয় পাই। আমি তাকে বলব, নিম্ন বর্ণিত হাদীসের প্রতি তুমি লক্ষ্য কর :

عن شداد بن أوس قال : ثنتان حفظتهما عن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : ( إن الله كتب الإحسان على كل شيئ، فإذا قتلتم فأحسنوا القتلة، و إذا ذبحتم فأحسنوا الذبح، و ليحد أحدكم شفرته، و ليرح ذبيحته ).

‘শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে দুটি জিনিস শিখেছি। তিনি বলেছেন : ‘আল্লাহ সব কিছুর উপর ইহসান করা ফরজ করেছেন। হত্যা করার সময় ভাল করে হত্যা কর, জবেহ করার সময় ভাল করে জবেহ কর, যে জবেহ করতে চায় সে যেন তার ছুরি ধার দিয়ে নেয় এবং পশুকে কষ্ট না দেয়।’ [মুসলিম : ১৯৫৫]

বলতে পার, আমি যদি তাদের প্রতি অধিক দয়ার্দ্র হয়ে যাই, তবে তারা তো আমাকে দরিদ্র ভাববে। আমি বলব, নিম্নোক্ত হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য কর :

عن عائشة رضي الله عنها عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : إن الرفق لا يكون في شيئ إلا زانه، و لا ينزع من شيئ إلا شانه .

‘আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : নম্রতা সব কিছুকেই সুন্দর করে আর অনমনীয়তা সব জায়গাতেই দোষণীয়’। [মুসলিম : ২৫৯৪]

তুমি বলতে পার, ‘আমি যদি তাদের প্রতি রুক্ষ না হই, তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন না করি, তবে আমার উপস্থিতি-অনুপস্থিতি তাদের নিকট একই রকম মনে হবে এবং তারা আমাকে তাদেরই একজন মনে করবে।’ তবে আমি তোমাকে এই হাদীসটির প্রতি দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করব :

ما استكبر من أكل معه خادمه .

‘যার সাথে তার ভৃত্য আহার করে, সে অহংকারী নয়!’ [বাইহাকী : ৭৮৩৯]

শ্রমিকের প্রতি কঠোরতা এবং তার ইহসানের মাঝে কোন প্রকার তুলনা টেনে এনো না, কাজ ও শ্রমিকের মাঝে তুলনা টেনে কেন নিজের ক্ষতি ডেকে আনবে?

তুমি কি দাওয়াত ও তোমার অন্যান্য কর্মের মাঝে কোন দেয়াল তুলে রেখেছ? তোমার দাওয়াতের সফলতার তুলনায় ব্যবসার সফলতা কি অধিক গুরুত্বপূর্ণ? জেনে রাখ, এই উভয় বস্ত্তর সফলতাই আল্লাহর হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সাফল্য দান করেন।

তুমি কিছুটা সচেতন হলেই তোমার পার্থিব উপার্জন সম্পৃক্ত কর্মের মাধ্যমে অনেককে তোমার আখিরাত ও পরকালের জন্য কাজে লাগাতে পার। তুমি কি তোমার কর্মক্ষেত্রে, কারখানায় একটি ছোট্ট মসজিদ নির্মাণে সক্ষম নও? নিদেনপক্ষে একটি সালাতের স্থান? যদি প্রশস্ত স্থান নাও থাকে, তাহলেও তুমি আবাসস্থলে ও কর্মক্ষেত্রে একটি সালাতের স্থান নির্ধারণ করে নাও।

তুমি তোমার কর্মক্ষেত্রে একজন দায়ী নিয়োগ কর, যাকে অন্যান্যদের মতই বেতন প্রদান করা হবে। যার দায়িত্ব হবে সকলের মাঝে দাওয়াতী কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। যারা অমুসলিম, তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান, মুসলিমদেরকে প্রয়োজনীয় মাসআলা মাসায়িল, কুরআন ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া। একটি কোম্পানী তৈরি করে তার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হলে তুমি নিশ্চয় একজন দায়ীকে নিয়োগ দেওয়ার তাওফীক রাখ?

মুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে তুমি অমুসলিমদেরকে কর্মে নিয়োগ দিচ্ছ কেন, মুসলমানগণ কি তোমার থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে গেছে? তোমার কি মনে হয় তাদের কাজের প্রয়োজন নেই? কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের আবশ্যক শর্তগুলো থেকে কেন ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ’র শর্ত কেটে দিয়েছ? তুমি কি জান, এভাবে তুমি অমুসলিম শক্তিকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে শক্তির যোগান দিয়ে যাচ্ছ?

মনে কর, মুসলিম অমুসলিম সকলে কাতারে দাঁড়িয়ে আছে, চাকরীতে নিয়োগের অপেক্ষা করছে। যে মুসলমান, সে এ ব্যাপারে মোটেই সন্দেহ করছে না যে, তুমি তাকে নিয়োগ দিবে, কারণ, তুমি তার মুসলিম ভাই। অত:পর তুমি এলে, এসে অমুসলিমকে নিয়োগ দিয়ে দিলে, মুসলিমদের প্রতি মোটেই ভ্রুক্ষেপ করলে না। মুসলিমদের কারো কি এ নিয়োগের প্রয়োজন ছিল না, তবে কেন তুমি অমুসলিমকে নিয়োগ দিলে? অমুসলিম যখন তোমার দেশে পৌঁছবে, তার উপাস্য হবে আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কেউ, সে তাওহীদের ভূমিতে গায়রুল্লাহর ইবাদাত করবে, এই ভূমি কি তাকে এবং সেই সূত্রে তোমাকে অভিশাপ দিবে না? কারণ, তুমি যদি তাকে নিয়োগ না দিতে, তবে নিশ্চয় একজন মুসলিম তার স্থলে আল্লাহর ইবাদাতে নিজেকে নিমগ্ন করত !

সুতরাং, শরীয়তের হুকুম পুনরায় পাঠ কর, আখিরাতের আমলনামা খুলে দেখ, তাতে তুমি ইতিপূর্বে কী কী লেখে রেখেছ।

কর্মক্ষেত্র ছুটিতে বা স্থায়ীভাবে যখন কেউ দেশে ফিরে যায়, তখন তুমি তাকে কিছু হাদিয়া দিয়ে দাও, হতে পারে তা তার ভাষায় লিখিত ইসলামী পুস্তক, সিডি বা এ জাতীয় কিছু।

যদি উক্ত শ্রমিক মুসলিম হয়, তবে তাকে ইসলামী বিশ্বাস সংক্রান্ত পুস্তক হাদিয়া দাও, যাতে শুদ্ধ আকীদা, তার রুকুন, ওয়াজিব, সুন্নত ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তৃত অথবা সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে।

তুমি তোমার ব্যাবসার লভ্যাংশ থেকে নির্দিষ্ট একটি অংশ দীনের কাজে ব্যয় করতে পার। ইসলাম বিষয়ে মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন পত্রিকার এজেন্ট হয়ে তার কপি বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দাও বিনামূল্যে বিতরণের জন্যে।

হে ব্যাবসায়ী ভাই, তোমাকে এক বড় বিপদ সম্পর্কে আমি হুশিয়ারি করছি, সূদ কী পরিণতি বয়ে আনতে পারে, কুরআন হাদীস অধ্যয়ন করে অবশ্যই তা তোমাকে উপলব্ধি করতে হবে।

কন্ট্রাক্টর ও আয়কারীদের অনেকে শয়তানের পিছনে ছুটে বেড়ায়, নতুন নতুন প্রজেক্টের সূচনা ও তাকে বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তারা বলে, প্রজেক্টটি মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেলে লোন নেয়া বন্ধ করে দিব। কিন্তু অবস্থা তাই দাঁড়ায়, আল্লাহ পবিত্র কুরআনে যেমন বলেছেন :

يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ .

‘শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়’। [সূরা বাকা : ২৭৫]

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যখনি তাদের প্রজেক্ট শেষ হয়, নতুন প্রজেক্ট লোভনীয় হয়ে তার সামনে হাজির হয়। প্রজেক্ট যতই বড় হবে, ততই ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে সূদ। তুমি কি ভাব যে, শয়তান তোমাকে ছেড়ে দিবে, সে তোমাকে একের পর এক আঘাত করে যাবে।

নাকি তুমি শয়তানের হাত ধরে তাওবা করতে চাও? তুমি কি আল্লাহকে মোটেও ভয় পাচ্ছ না? আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সূদ ও সূদী কারবারকে তার সাথে যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। কুরআনে এসেছে :

{ فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللهِ وَرَسُولِهِ }

‘তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও’। [সূরা বাকারা : ২৭৯]

সুতরাং, যদি তুমি আল্লাহর সাথে যুদ্ধের শক্তি রাখ, তবে এগিয়ে যাও। আর যদি বল, তোমার সে শক্তি নেই, তবে দ্রুত এই ময়দান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নাও, আল্লাহর কাছে ছুটে যাও লজ্জিত ও ক্রন্দনরত হয়ে :

فَفِرُّوا إِلَى اللهِ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ ﴿50﴾

‘অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তো তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী।’ [সূরা যারিয়াত : ৫০]

কেন তুমি একে ক্ষুদ্র পাপ হিসেবে বিবেচনা করছ? এ ব্যাপারে যারা তোমাকে সতর্ক করছে, তাদের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করছ না? এর বিপদের প্রতি দৃষ্টিপাত করছ না? যেন তুমি দেখা ও শ্রবণ হতে বিরত থাকলে কোন পাপ হবে না !

তুমি কি যিনাকে ছোট পাপ মনে কর?

সন্দেহ নেই, তোমার উত্তর হবে, না।

তবে কি তোমার ধারণা আছে যে, সর্বনিম্ন সূদের হারও যিনার চেয়ে ভয়াবহ পরিণতিবাহী? আব্দুল্লাহ বিন হানজালা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

درهم رباَ يأكله الرجل و هو يعلم، أشد من ستة و ثلاثين زينة .

‘সচেতনভাবে সূদের এক দেরহাম ভোগ করা ছত্রিশবার যিনা থেকেও কঠিন’। [আহমদ : ২১৯৫৭]

তুমি কি ঐ হাদীস সম্পর্কে অবগত আছ, যেখানে রাসূল সূদকে সাতটি ভয়ানক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য করেছেন, এবং ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণের উপরে তাকে স্থান দিয়েছেন?

হাদীসে এসেছে, সূদখোর তার কবরে রক্তের নহরে ভাসবে, আগুনের পাথর তাকে ক্রমাগত গ্রাস করে যাবে, যতক্ষণ না কিয়ামত প্রতিষ্ঠা হয়। এই হাদীস সম্পর্কে কি তুমি বে-খবর?

কিয়ামতের দিবসে সূদখোরের অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন :

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ .

‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়।’ [সূরা বাকারা : ২৭৫]

যারা আয়কারবার ও ব্যাবসার ক্ষেত্রে সূদকে হালকাভাবে নিচ্ছে, তারা যেন রাসূলের এ উক্তির প্রতি লক্ষ্য রাখে :

الربا ثلاثة و سبعون بابا أيسرها مثل أن ينكح الرجل أمه، و إن أربى الربا عرض الرجل المسلم .

‘সূদের তেহাওুরটি দরজা রয়েছে। তার সবচেয়ে সহজতরটাও মায়ের সাথে ব্যাভিচারের মত জঘন্য আর সবচেয়ে কঠিন সূদ মুসলমানের সম্মান দীর্ণ করা।’ [বাইহাকী : ৫১৩১]

و في رواية عن أبي هريرة رضي الله عنه ( الربا سبعون بابا، أدناها كالذي يقع على أمه )

‘আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত আরেকটি বর্ণনায় এসেছে : সূদের সত্তরটি দরজা রয়েছে তার সবচেয়ে নিম্ন স্তরেরটা আপন মায়ের সাথে ব্যাভিচার করার মত’। [বাইহাকী : ৫১৩২]

و في رواية عن البراء بن عازب قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم الربا اثنان و سبعون بابا، أدناها مثل إتيان الرجل بأمه، و إن أربى الربا استطالة الرجل في عرض أخيه .

‘বারা ইবনে আজেব রা. থেকে বর্ণিত আরেকটি বর্ণনায় আছে : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : সূদের বাহাত্তরটি দরজা রয়েছে, তার সাধারণতরটা আপন মায়ের সাথে ব্যাভিচারের মত। সবচেয়ে কঠিন সূদ ভাইয়ের মান হানি করা’। [তাবরানী : ৭১৫১]

সুতরাং, কি এমন লাভের সন্ধান পেয়েছ যে, অনায়াসে এ পাপ করে যাচ্ছ? তুমি যদি দারিদ্রে্যর ভয় কর, তবে আল্লাহ বাণীর প্রতি দৃকপাত কর :

الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿268﴾

‘শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রতার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ [সূরা বাকারা : ২৬৮]

যদি বল, তুমি সূদের ব্যবহার ব্যতীত জীবন ধারণ করতে পারবে না, তবে আমি তোমাকে প্রশ্ন করব : তোমার জন্য কি মৃত জন্তু ভক্ষণ হালাল করে দেয়া হয়েছে? তুমি নিশ্চয় উত্তরে বলবে : না।

তবে কি তুমি বলবে, সূদ এখনকার সমাজ ব্যবস্থায় একটি প্রয়োজনী বিষয়? তাহলে আমি বলব, কোথা থেকে এ প্রয়োজনের উৎপত্তি? এটি একটি প্রয়োজনী বিষয়- এই ফতওয়া তোমাকে কে দিল?

এত দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন নেই, কেবল দুটি বাক্যই এই বিতর্কের সমাপ্তি টানার জন্য যথেষ্ট। কুরআনে এসেছে :

وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا .

‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে করেছেন হারাম’। [সূরা বাকারা : ২৭৫]

আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللهِ وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ﴿275﴾

‘অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওয়ালায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে’। [সূরা বাকারা : ২৭৫]

হয়তো তুমি উদাহরণ টেনে বলবে, অমুক আলিম তার ফতওয়ায় এমন বলেছেন ...। আমি বলব, তুমি যদি সত্যিই আলিমদের অনুসরণ করে থাক, তাহলে আলিম, মুফতি বোর্ড ও সংস্থা সকলের সম্মিলিত মত হচ্ছে সূদ হারাম, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে যেভাবে সূদী লেনদেন হচ্ছে, তা কোনভাবেই হালাল হতে পারে না।

তুমি নিজেকে প্রশ্ন কর : কেন তুমি একজনের ফতওয়ার উপর ভিত্তি করে হরদম সূদ খেয়ে যাচ্ছ, সকল আলিমের সম্মিলিত মতকে উপেক্ষা করে একজনের মতকে গ্রহণ করার মাধ্যমে কেবল তোমার চাতুরিই প্রকাশ পাচ্ছে না?

সত্যিই যদি তুমি শরয়ী কোন প্রমাণের সন্ধান কর, তবে প্রথমেই আমি সর্বোত্তম প্রমাণ উপস্থাপন করেছি। তুমি একান্তে, আল্লাহকে সামনে রেখে নিজেকে প্রশ্ন কর, তোমার অন্তরই তোমার সর্বোত্তম হিসাব রক্ষক। তোমার অন্তর অবশ্যই তোমাকে এ উত্তর দিবে যে, সূদ পরিত্যাগই তোমার জন্য উত্তম, তোমার আখিরাতের জীবনের জন্য অধিক ফলদায়ক।

সূদ সংক্রান্ত অসংখ্য মাসআলা রয়েছে, যার সবগুলো তোমার পাঠ করে দেখার প্রয়োজন নেই, যে কোনটির অনুসরণই তোমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিবে।

তোমার উপর প্রয়োজনী ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দায়িত্ব রয়েছে।

যেহেতু তুমি ব্যবসাকে নিজের জীবন ধারনের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছ, সুতরাং, তোমাকে অবশ্যই ব্যবসা ও মুআমালা সংক্রান্ত শরীয়তের মাসআলা মাসায়েল পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে হবে। তুমি এমন মুআমালায় অংশগ্রহণ করবে না, যার শরীয়তী আহকাম তোমার জানা নেই। ব্যক্তিগতভাবে যদি জেনে নেওয়া সম্ভব না হয়, তবে জ্ঞাত কোন আলিমের শরনাপন্ন না হওয়া অবধি সে কাজে কোনদিন অংশগ্রহণ করবে না। এমন আলিমেরই শরনাপন্ন হবে, যার মাঝে অবশ্যম্ভাবী দুটি শর্ত বিদ্যমান : ইলম ও তাকওয়া।

মনে রাখবে, আল্লাহ তোমাকে অনেক লোকের দায়িত্ব দিয়েছেন, যাদের উপর তোমার রয়েছে পার্থিব কর্তৃত্ব। সুতরাং, তুমি তোমার হাতকে ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহ’ তথা আল্লাহ রাস্তায় ব্যয়ের মাধ্যমে উঁচু কর। এভাবে দুনিয়া ও আখিরাত- উভয় স্থানেই তোমার হাত উঁচু হবে। ইয়াতীমদের দায়িত্ব গ্রহণ কর, মসজিদ নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন কর, ইলমী কাজে সহায়তা প্রদান কর ; সর্বোপরি এমন কাজে সশরীরে হাজির থাক, যা আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত করে এবং মিটিয়ে দেয় কুফরের অশ্লীল উচ্চারণ।

এতটুকু পাঠ শেষ করে তুমি পুরো লেখাটি পুনরায় অধ্যয়ন কর, একজন পাঠকের ভূমিকা ত্যাগ করে সক্রিয় হওয়ার সাধনা কর, এ কাজের সাথে নিজেকে আত্মনিয়োগ কর।

আজ তোমার হাতে যা সুযোগ হয়ে আছে, কাল যেন তাই তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়ে হাজির না হয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন