hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল-গিরাস চিন্তার উন্মেষ ও কর্মবিকাশের অনুশীলন (১ম খন্ড)

লেখকঃ তাওফীক বিন খলফ বিন আবদুল্লাহ বিন আল-রেফায়ী

৫৮
দশম বপন: মুহাজির
وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللهِ مِنْ بَعْدِ مَا ظُلِمُوا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَلأَجْرُ الآَخِرَةِ أَكْبَرُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ ﴿41﴾

‘যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দেব ; এবং আখিরাতের পুরস্কার তো শ্রেষ্ঠ, হায় যদি তারা জানত।’ [সূরা নাহল : ৪১]

وَمَنْ يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللهِ يَجِدْ فِي الأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللهِ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيمًا ﴿100﴾

‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [সূরা নিসা : ১০০]

عن خباب رضي الله عنه قال : ( هاجرنا مع النبي صلى الله عليه و سلم نلتمس وجه الله، فوقع أجرنا على الله، فمنا من مات لم يأكل من أجره شيئا، منهم مصعب بن عمير، و منا من أينعت له ثمرته فهو يهدبها ..)

‘খাববাব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হিজরত করলাম। আমাদের মধ্যে অনেকে তার কোনো ফল ভোগ না করেই মারা গেল, যেমন মুছআব ইবনে উমায়ের। আবার অনেকেই তার পরিপক্ব ফসল ভোগ করার সুযোগ পেল।’। [বুখারী : ১২৭৬]

শরীয়ত এবং ইতিহাসের বিবর্তনের দীর্ঘ পরম্পরা এ ব্যাপারে স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয় যে, হিজরতের মাধ্যমে এমন অনেক পরিবর্তন ও ওলটপালট ঘটে যায়, এমন বিজয় সূচিত হয়, নিরন্তর পরিশ্রম ও দীর্ঘ সাধনার পরও যা মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এবং যা ছিল মানুষের কল্পনার ঊর্ধ্বে। হিজরত ও হিজরতের পূর্বের অবস্থা, এ দুই কালের মূল্যবোধের বিস্তর ফারাক- এগুলো বিবেচনা করলেই আমাদের সামনে হিজরতের অবশ্যম্ভাবী ফল স্পষ্ট হয়ে দেখা দিবে।

ইবরাহীম খলীল দীর্ঘদিন তার সম্প্রদায়ের মাঝে অবস্থান করেছেন, তার ইচ্ছানুসারে বিজয় ধরা দেয়নি, মানুষের অন্তর বা রাষ্ট্র- কোথাও তিনি সারা পাচ্ছিলেন না। তার পিতা যখন বললেন :

لأَرْجُمَنَّكَ وَاهْجُرْنِي مَلِيًّا ﴿46﴾

‘অবশ্যই আমি তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করব। আর তুমি চিরতরে আমাকে ছেড়ে যাও’। [সূরা মারইয়াম : ৪৬]

তিনি হিজরতের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ইরাক ভূমি থেকে একাকী বেরিয়ে পড়লেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :

فَآَمَنَ لَهُ لُوطٌ وَقَالَ إِنِّي مُهَاجِرٌ إِلَى رَبِّي إِنَّهُ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿26﴾

‘অতঃপর লূত তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করল। আর ইবরাহীম বলল, ‘আমি আমার রবের দিকে হিজরত করছি। নিশ্চয় তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। [সূরা আনকাবূত : ২৬]

হিজরতের পর কল্যাণ ধারা তার পদতলে লুটিয়ে পড়ল। আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ ﴿71﴾ وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ نَافِلَةً وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِينَ ﴿72﴾ وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ ﴿73﴾

‘আর আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে সে দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি। আর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকূবকে অতিরিক্ত হিসেবে; আর তাদের প্রত্যেককেই আমি সৎকর্মশীল করেছিলাম। আর তাদেরকে আমি নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাত। আমি তাদের প্রতি সৎকাজ করার, সালাত কায়েম করার এবং যাকাত প্রদান করার জন্য ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর তারা আমারই ইবাদাত করত।’ [সূরা আম্বিয়া : ৭১-৭৩]

এভাবে ইবরাহীম খলীল আ.-এর হিজরতের ফল কিয়ামত অবধি স্থিরতা লাভ করল। হিজরতের পূর্বে কি তিনি কা’বা নির্মাণ করেছিলেন? মক্কা থেকে ফেরার পর শামে হিজরতের পূর্বে কি তিনি মাসজিদে আকসা নির্মাণ করেছিলেন, যেমন আমরা দেখতে পাই বুখারীতে বর্ণিত আবু জর-এর হাদীসে?

ইবনে কাসীর বলেন : ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে তিনি তার সম্প্রদায়ের সঙ্গ ত্যাগ করলেন, তাদেরকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় মনস্থ হলেন- তার স্ত্রী ছিল বন্ধ্যা নারী, তার সন্তান হচ্ছিল না, তাদের সাথে ছিল ভ্রাতুস্পুত্র লূত বিন হাযিন বিন আযর। এরপর আল্লাহ তাকে সৎ পুত্র দান করলেন, তার সন্তানদের মধ্যে নবুয়্যত ও কিতাব দেয়া হল। তার পরবর্তী সময়ে যে নবীই এসেছিলেন, তিনি ছিলেন তার বংশের। তার পরবর্তীতে প্রতিটি কিতাবই তার বংশধর কোন নবীর উপর নাযিল হয়েছে। তিনি তার স্বদেশ ও স্বজাতি ত্যাগ করে এমন এক দেশে হিজরত করেছিলেন যেখানে নির্দ্বিধায় আল্লাহর ইবাদাত করা যায় এবং মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত প্রদান করা যায়।’ [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১৫০/১]

মূসা আ.-এর জন্যও ভালো সময়ের সূচনা হয়েছিল, যখন তিনি প্রথমবার মিসর থেকে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় হিজরত করে বেরিয়ে পড়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :

فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا يَتَرَقَّبُ قَالَ رَبِّ نَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ ﴿২১﴾ وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَاءَ مَدْيَنَ قَالَ عَسَى رَبِّي أَنْ يَهْدِيَنِي سَوَاءَ السَّبِيلِ ﴿২২﴾

তখন সে ভীত প্রতীক্ষারত অবস্থায় শহর থেকে বেরিয়ে পড়ল। বলল, ‘হে আমার রব, আপনি যালিম কওম থেকে আমাকে রক্ষা করুন’। আর যখন মূসা মাদইয়ান অভিমুখে রওয়ানা করল, তখন বলল, ‘আশা করি আমার রব আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন।’ [সূরা কাছাছ : ২১-২২]

এ হিজরতের প্রাথমিক ফল এই ছিল যে, তিনি অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, তার ভীতি দূর হয়ে গিয়েছিল, লাভ করেছিলেন নিরাপত্তা। শুয়াইবের মত একজন সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তা পেয়েছিলেন, বিয়ে করেছিলেন তার কন্যাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি যখন প্রথমে তাকে সব খুলে বলেছিলেন, তখন শুয়াইব তাকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন :

لاَ تَخَفْ نَجَوْتَ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ ﴿25﴾

‘ভয় পেয়ো না, তুমি যালিম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি পেয়েছো’। [সূরা কাছাছ : ২৫]

তিনি সেখানে কিছু দিন কাটিয়ে দ্বিতীয় হিজরতে বের হলেন। কুরআনে এসেছে :

فَلَمَّا قَضَى مُوسَى الأَجَلَ وَسَارَ بِأَهْلِهِ آَنَسَ مِنْ جَانِبِ الطُّورِ نَارًا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آَنَسْتُ نَارًا لَعَلِّي آَتِيكُمْ مِنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ جَذْوَةٍ مِنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ ﴿29﴾ فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ مِنْ شَاطِئِ الْوَادِ الأَيْمَنِ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ أَنْ يَا مُوسَى إِنِّي أَنَا اللهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿30﴾

‘অতঃপর মূসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করল এবং সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তূর পর্বতের পাশে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিবার পরিজনকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি, সম্ভবত আমি তা থেকে তোমাদের কাছে আনতে পারব কোন খবর, অথবা একটি জ্বলন্ত অংগার; যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার’। অতঃপর যখন মূসা আগুনের নিকট আসল, তখন উপত্যকার ডান পার্শে পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত বৃক্ষ থেকে তাকে আহবান করে বলা হলো, ‘হে মূসা, নিশ্চয় আমিই আল্লাহ, সৃষ্টিকুলের রব’। [সূরা কাছাছ : ২৯-৩০]

এই হিজরতেই মূসা আ. কালীমুল্লাহ’র উপাধীতে ভূষিত হয়েছিলেন, নবুয়্যত লাভ করেছিলেন তার ভাই হারূন আ.। এই হিজরতের পরই তিনি ফিরআউনের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার বিশেষ সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন। জাদুকর ও মিসরবাসীর একদল তার দাওয়াতে ঈমান এনেছিল। সর্বোপরি ফিরআউনের জুলুম থেকে বনী ইসরাইল মুক্তি লাভ করেছিল।

দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে হিজরতের ফলে তিনিই লাভ করেছিলেন প্রভূত জ্ঞান, যখন তিনি খিজর আ. এর সাক্ষাত লাভ করেছিলেন। কুরআনে এসেছে :

وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ لاَ أَبْرَحُ حَتَّى أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا ﴿60﴾

‘আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার সহচর যুবকটিকে বলল, আমি চলতে থাকব যতক্ষণ না দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে উপনীত হব কিংবা দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেব।’ [সূরা কাহফ : ৬০]

সুলাইমান আ.-এর হিজরতের পরই কেবল বিলকীস ও তার সম্প্রদায় তার প্রতি ঈমান এনেছিল। জিহাদের সাথে সাথে যদি হিজরত না করতেন জুল কারনাইন, তবে তিনি এমন মর্যাদায় ভূষিত হতেন না। আসহাবে কাহফ বা গুহার অধিবাসীগণ যদি হিজরত না করে সম্প্রদায়ের সাথে থেকে যেতেন, তবে তাদের দীন রক্ষা সম্ভব হত না, কিয়ামত অবধি পঠিত পবিত্র কুরআনে তাদের ঘটনা সংরক্ষিত হত না।

ইতিহাসে হিজরত ও তার পরবর্তী ফল নিয়ে অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। তবে, ইতিহাসের মহত্তম হিজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিল। রাসূল হিজরতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন পুরোপুরিভাবে, তাই তিনি প্রথমেই তার অনুসারীদেরকে হিজরতে নির্দেশ দিলেন, তারা হাবশায় গমন করে তথায় ইসলামের প্রচারে নিয়োজিত হলেন। রাসূল নিজেও হিজরতের ইচ্ছা করছিলেন, হজের মৌসুমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে তিনি কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

এক হাদীসে আছে : ‘জাবের রা. থেকে আবু যুবাইর বর্ণনা করেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় সাত বছর ছিলেন। ওকায, মিজান্না এবং মিনার মৌসুমগুলোর সময় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। বলেছেন : আমার রবের রিসালাত পৌঁছানোতে কে আমাকে সহযোগিতা করবে? এক সময় এমন হল যে, ইয়ামান বা মিশর থেকে কোনো লোক আসলে লোকেরা তাকে গিয়ে বলত কুরাইশের এই যুবক সম্পর্কে সতর্ক থেক, সে যেন তোমাকে প্ররোচিত করতে না পারে। তিনি যখন তাদের কাফেলার মাঝ দিয়ে হেঁটে যেতেন তখন তারা তার দিকে অঙ্গুলী তুলে ইশারা করত।

এই সময়ই ইয়াসরিব থেকে আল্লাহ আমাদেরকে পাঠালেন এবং আমরা তাকে আশ্রয় দিলাম, তাকে বিশ্বাস করলাম। মানুষ তার কাছে যেতে লাগল। তার কথা শুনে তার প্রতি ঈমান আনতে লাগল। কেউ কেউ তার মুখ থেকে কুরআন শুনে পরিবারের নিকট ফিরে যেত এবং তার পরিবারের লোকেরাও তার মত ইসলাম গ্রহণ করত। এক সময় দেখা গেল আনসারদের প্রতিটি ঘরে, যারা প্রকাশ্যে ইসালাম পালন করে- এমন এক দল মুসলমান রয়েছে। এক দিন আমরা সবাই সমবেত হয়ে বললাম : আর কতদিন আমরা নবীকে সন্ত্রস্ত অবস্থায় পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুড়ে বেড়াতে দিব? তাই আমাদের সত্তুর জন লোক মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করল। হজের মৌসুমে তারা তার নিকট গিয়ে উপস্থিত হল এবং আমরা তার বাইআতে আকাবার ব্যাপারে সম্মত হলাম। একজন দুইজন করে গিয়ে আমরা সবাই একত্র হলাম।

আমরা বললাম : হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কিসের উপর আপনার হাতে বাইআত হব? তিনি বললেন, তোমরা আমার হাতে বায়াত হবে, উদ্যম ও আলস্য সর্বাবস্থায় আনুগত্যের উপর, স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছলতা সর্বাবস্থায় দানের উপর, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের উপর এবং এর উপর যে, সত্য বলবে অকুতোভয়ে, আল্লাহর ক্ষেত্রে কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় না করে এবং আমাকে সাহায্য করবে এবং প্রায়োজন হলে যে সব বিষয় থেকে নিজেদের এবং স্বজনদের রক্ষা কর তা থেকে আমাকেও রক্ষা করবে এবং এই সবের বিনিময়ে তোমাদের জন্য থাকবে জান্নাত।

তখন আমরা উঠে গিয়ে তার হাতে বাইআত হলাম। তাদের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি আসাদ বিন যারারাহ তাঁর হাত ধরে বলল : একটু দাঁড়াও হে ইয়াসরিববাসী, উটের পেট চাপড়ে আমরা যখন আসছি তখন আমরা কিন্তু জানতাম যে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তাকে বের করে নেওয়া মানে সমস্ত আরবের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়া এবং তোমাদের উত্তম লোকগুলো নিহত হওয়া এবং তোমাদের উপর তরবারি ছেয়ে যাওয়া। এখন হয় ধৈর্য ধরতে পার, যার জন্য আল্লাহ কাছে প্রতিদান পাবে, কিংবা কাপুরুষতা করে নিজেদের নিরাপত্তার আশংকায় পিছিয়ে পরতে পার, তিনি তোমাদের ওজর গ্রহণ করে নিবেন। তখন তারা বলল : ঠিক আছে আল্লাহর রাসূল, আমরা কখনো এই বাইআত ভঙ্গ করব না।

তখন আমরা উঠে গিয়ে তার হাতে বাইআত হলাম। তিনি আমাদের বাইআত গ্রহণ করলেন এবং এর বিনিময়ে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিলেন।’

হাবশার বাদশা নাজ্জাসী মুহাজিরদের দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন। রাসূলের ওফাতের পর যে দেশই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে, ইসলামের বিশ্বাসে দীক্ষিত হয়েছে, সেখানে অবশ্যই কোন সাহাবীর হিজরতের ঘটনা ঘটেছে। ইউরোপে ইসলাম প্রবেশ করেছে স্পেনে গমনকারী আব্দুর রহমানের মাধ্যমে। দীর্ঘ সত্তর বছর বাইতুল মুকাদ্দাস ছিনতাই হয়ে থাকার পর ইরাক থেকে সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর হিজরতের ফলে তা আবার মুসলমানদের হাতে এসেছিল।

অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইসলাম অমুসলিম দেশগুলো থেকে এক প্রকার বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, মুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানগণ বিপর্যস্ত সময় যাপন করছিলেন। ধীরে ধীরে ইসলাম আবার তার বাহু প্রসারিত করেছে, বিভিন্ন নগর, গ্রাম, কেন্দ্র, সংস্থা এবং হাজার হাজার অমুসলিমের ইসলামে দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সেই প্রসারের ব্যপ্তি দেখা যাচ্ছে। এ সবই হয়েছে আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ ও হিজরতের মাধ্যমে।

বিভিন্ন ইসলামী ও অনৈসলামী দেশ থেকে যখন ছাত্ররা মূল কেন্দ্র থেকে শিক্ষা নিয়ে অত:পর দেশে ফিরে যায়, ছড়িয়ে দেয় ইসলামের শিক্ষা, বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণা, তখন তা ইসলামের প্রসারের জন্য অভূতপূর্ব কাজ করে, দূর হয় ইসলাম সম্পর্কিত অনর্থ মূর্খামী, ইসলামের সঠিক জ্ঞানে তারা সঞ্জীবিত হয়, তাদের বিশ্বাসের গভীরে ইসলামী আক্বীদা প্রোথিত হয়।

এভাবে হিজরতের ফলে অনেক অভাবিত বিজয় সূচিত হয়, এমনকি হিজরতকারীদের যারা এখনো ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত, নানা বিদআতে জর্জরিত তারাও উপকৃত হয়। তার বিশ্বাসের জগতে এক ব্যাপক বিশুদ্ধতার সূচনা হয়।

হিজরতের মাধ্যমেই আমেরিকার আবিস্কার হয়েছিল, আজ আমেরিকা বিশ্বব্যাপী যে শক্তির বিস্তার করেছে, তার সূচনাও হয়েছিল হিজরতে মাধ্যমে। পৃথিবীর আনাচ কানাচ থেকে টেনে হিঁচরে ইহুদীদেরকে নিয়ে এসে গঠিত হয়েছিল ইসরাইল রাষ্ট্র।

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, এ যুগে হিজরতের সঠিক কোন উপকার কি আমরা লাভ করতে পারব? কিংবা কি প্রক্রিয়ায় এখন হিজরত সম্পন্ন হলে তা আমাদের জন্য সহায়তা বয়ে আনবে?

এর উত্তর খোঁজার জন্য আমাদেরকে যেতে হবে প্রথম যুগের হিজরতকারীদের কাছে, তাদের হিজরত কী কী ফল বয়ে এনেছিল, ইতিহাস কি আমাদেরকে সে ব্যাপারে জানাচ্ছে না? কিংবা এ যুগেও যারা নিজেদের দেশ ত্যাগ করে প্রবাসে থাকছে, দাওয়াত ভিন্ন অন্য কোন উদ্দেশ্য যাদের নেই, তাদের বিশ্বাস, বোধ আমাদেরকে কি সঠিক পথ দেখাচ্ছে না? যারা আমেরিকা, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে হিজরত করে দীন প্রচারে রত আছেন এবং তাদের সাথে সাথে ইসলামও সে দেশে পাখা মেলছে তাদেরকে আদর্শ মেনে আমরা এর উত্তর খুঁজে নিতে পারি। ইসলাম সে দেশগুলোতে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে, প্রতিদিন একটু একটু করে তার পরিধি বাড়ছে। বর্তমান যুগে জায়োনিষ্টরা ইসলামের উপর যেভাবে হামলে পড়ছে, তার অন্যতম ও প্রধান কারণ হচ্ছে হিংসা ও পৃথিবীব্যাপী এই আলোর ধারার বিস্তার। তারা একে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। মধ্য ইউরোপ ও ভূতপূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নে ইসলাম কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা বলার অপেক্ষা করছে না, এ ফলাফলের সূচনা নিশ্চয় ছিল কিছু নির্মোহ হিজরত।

এ সময়ে, পৃথিবীব্যাপী ইসলামের প্রসার, প্রচারের জন্য প্রয়োজন কিছু লোকের নির্মোহ হিজরত, দাওয়াত ভিন্ন অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, যারা হিজরত করবেন ইসলামের সুমহান দাওয়াত দিগ্বিদিক ছড়িয়ে দেয়ার মানসে।

কোন একক ব্যক্তির পক্ষে এ হিজরতের মহান দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় ; এর জন্য প্রয়োজন বিস্তৃত ঐতিহাসিক পাঠ, শরীয়ত ও ফিকাহকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অধ্যয়ন, যা গঠন করা হবে মাঠ পর্যায়ে তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহের মাধ্যমে, ভৌগলিক ও স্ট্রাটেজিক গবেষণা যা এক ফলপ্রসু পূর্ব ধারণা বয়ে আনবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন