মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আল-গিরাস চিন্তার উন্মেষ ও কর্মবিকাশের অনুশীলন (১ম খন্ড)
লেখকঃ তাওফীক বিন খলফ বিন আবদুল্লাহ বিন আল-রেফায়ী
২২
পঞ্চম বপন: শয়তানের মসজিদে
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/723/22
روى الطبراني من حديث أبي أمامة مرفوعا و موقوفا عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : لما أهبط إبليس قال : يا رب لعنتني فما عملي؟ قال : السحر، قال : فما قرآني ؟ قال : الشعر، قال : فما كتابي ؟ قال : الوشم، قال : فما طعامي ؟ قال : كل ميتة و ما لم يذكر اسم الله عليه، قال : فما شرابي ؟ قال كل مسكر، قال : فأين مسكني ؟ قال الأسواق، قال : فما صوتي ؟ قال : المزامير، قال فما مصايدي ؟ قال : النساء .
‘তাবরানী বর্ণনা করেন, আবু উমামা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, যখন ইবলীসকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করা হল, সে বলল, হে আমার রব, আমাকে লা’নত করেছেন। সুতরাং এখন আমার কাজ কি হবে? তিনি বললেন, জাদু করা। সে বলল, আমার কুরআন কি? তিনি বললেন, কবিতা। সে বলল, আমার কিতাব কি? তিনি বললেন, উলকি। সে বলল, আমার খাদ্য কি? তিনি বললেন, এমন মৃত জন্তু, যাকে জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি। সে বলল, আমার পানীয় কি? তিনি বললেন, নেশাদ্রব্য। সে বলল, তবে আমার বসবাস কোথায় হবে? তিনি বললেন, বাজারে। সে বলল, আমার কণ্ঠ কি হবে? তিনি বললেন, বাশি। সে বলল আমার ফাঁদ কি হবে?। তিনি বললেন, নারী।’ [তাবরানী : ১১১৮১]
‘আর তারা বলে, ‘এ রাসূলের কী হল, সে আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে; তার কাছে একজন ফেরেশতা পাঠানো হল না কেন, যে তাঁর সাথে সতর্ককারী হত?’ [সূরা ফুরকান : ৭]
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على صبرة طعام، فأدخل يده فيها، فنالت أصابعه بللاً، فقال : ما هذا يا صاحب الطعام ؟ قال : أصابته السماء يا رسول الله ! قال : أفلا جعلته فوق الطعام كي يراه الناس ؟ من غش فليس مني .
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খাবারের স্ত্তপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি তাতে তার হাত প্রবেশ করালেন। তার আঙুলে কিছু ভেজা ভেজা অনুভূত হল। তিনি বললেন, হে খাবারওয়ালা, এগুলো কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, তাতে বৃষ্টি পড়েছিল। তিনি বললেন, তুমি ভেজাগুলো উপরে রাখতে পারলে না, যাতে মানুষ তা দেখতে পায়? যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ [মুসলিম : ১০২]
জিলহজের আট তারিখ সকালে আমি আমার ছেলে আব্দুল্লাহকে নিয়ে বাজারে হাঁটছিলাম, ঈদের দিনের কিছু কাপড় কেনার জন্য। আমরা একটি দোকানে প্রবেশ করলাম। দোকানদার রেডিও চালিয়ে রেখেছিল, বড় স্পিকারে গান বাজছিল।
হঠাৎ আমার সন্তান আমাকে বলল, আমি কি তাকে রেডিও বন্ধ করার জন্য বলব?
আমি বললাম, বল, আল্লাহ তোমার মাঝে বরকত দিন।
সে দোকানদারের দিকে এক কদম এগিয়ে গেল, কিন্তু সে দাঁড়িয়ে গেল, যেন সে আগের অবস্থানে ফিরে আসছে। সে নিজের দিকে তাকাল, যার বয়স এখনো সাত অতিক্রম করেনি, অত:পর তাকাল আফগানী দোকানীর দিকে, বিশাল বপু লোকটির পাশে সে নিজেকে অসহায় বোধ করল। তাই সে ভয় পেয়ে গেল। সে আমার কাছে ফিরে এল, আমি তাকে বললাম, যাও এবং তাকে রেডিওটি বন্ধ করতে বল।
সে বলল, বাবা, তুমি বল।
তখন আমি লোকটিকে বললাম, তুমি কি জান না, এখন হারাম (সম্মানিত) দিন অতিবাহিত হচ্ছে? এবং এই গান যে কোন সময়েই হারাম, এই সময়ে তার পাপ আরো অধিক?
সে তাচ্ছিল্য ভরে বলল, এ তো দেশী রেডিও।
বললাম, যা বিনামূল্যের, তাই কি হালাল?
সে বলল, না।
বললাম, গান তো বাজছে তোমার দোকানে, সুতরাং এখানে দেশের কথা আসছে কেন? দেশের দায়িত্বশীলদের এখানে টেনে আনার কী অর্থ? দেশ কি তোমাকে এটি চালিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে? নাকি না চালালে তোমাকে শাস্তি দেয়া হবে? আর কেনই বা আমরা এমন অনেক দোকানদারকে দেখি যারা সারা দিন কুরআন তিলাওয়াত চালিয়ে রাখে? আর কেউ কেউ তো কিছুই চালায় না?
সে বলল, সবাই তো গান চালিয়ে রাখে।
বললাম, ঠিক আছে, তারা সকলে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে। তুমিও কি তাদের সাথে সাথে ধ্বংসের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে আছো?
লোকটি গোঁয়াড়ের মত বলল, হা।
আমি বুঝে নিলাম লোকটি সত্যি বলছে না। তার উদ্দেশ্য সকলের সাথে ধ্বংস হওয়া নয়। মানুষ সাধারণত এ ধরনের উক্তি জেনে বুঝে করে না, মনের অজান্তে অসচেতনভাবে করে ফেলে। সুতরাং আমি তাকে লক্ষ্য করে বললাম, শোন, জগতে দু রকমের মানুষ আছে, একজন যার পিছনে অসংখ্য লোক পড়িমড়ি করে ছুটছে। আরেকজন, যার পিছনে প্রথম জনের তুলনায় অনেক কম অনুসারী। তুমি কি প্রথম জনের পিছনে ছুটবে, না দ্বিতীয় জনের পিছনে?
সে বলল, দ্বিতীয় জনের পিছনে।
বললাম, প্রথম জন হচ্ছে ইবলীস, সে তার অনুসারীদেরকে জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর দ্বিতীয় জন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনি তার অনুসারীদেরকে জান্নাতের দিকে পরিচালিত করছেন।
লোকটি তখন তার উক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হল, বলল, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তাই সে গিয়ে গান বন্ধ করল, আমার ছেলে তখন আনন্দিত হয়ে গেল।
জ্ঞান পিপাসু হে আমার ভাই ! আমি অনেকটা শব্দে শব্দে ঘটনা ও আমাদের আলোচনাটি উল্লেখের প্রয়াস পেয়েছি। প্রতিটি দায়ীর দাওয়াতী জীবনে এমন ঘটনা ঘটে, তাই, একে উদাহরণ হিসেবে তোমার সামনে তুলে ধরা ছিল উদ্দেশ্য। তোমার পক্ষে কি এমন সম্ভব নয় যে, দোকানে প্রবেশ করার পর দাওয়াতের ক্ষুদ্র কোন আমল করা ব্যতীত তা থেকে কোন কিছু ক্রয় করবে না? দোকানে যদি কেউ মন্দ কাজে লিপ্ত থাকে, তাহলে তাকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ ব্যতীত তুমি অন্য কোন আলাপ ও কেনাকাটায় ব্যপৃত হবে না?
দাওয়াতকালে কেউ অস্বীকার ও অস্বীকৃতি জ্ঞাপনের ফলে কি তুমি দাওয়াত থেকে বিরত থাকবে?
অধিকাংশ যুবক, দেখা যায়, এ অবস্থায় অস্বীকৃতির কথা ভেবে বিরত থাকে। কেন তারা বিরত থাকে? তারা কি আল্লাহ তাআলার এ বাণী শুনেনি? কুরআনে এসেছে :
‘এটি কিতাব, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তার সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোন সংকীর্ণতা না থাকে। যাতে তুমি তার মাধ্যমে সতর্ক করতে পার এবং তা মুমিনদের জন্য উপদেশ’। [সূরা আ’রাফ : ২]
তুমি কীভাবে বিরত থাকবে, অথচ রাসূল এ অবস্থায় দাওয়াতের কাজ হতে বিরত থাকেননি?
তোমার এ বিরত থাকায় তুমি কি দায়ীদের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠতে চাও?
বিরত থাকার মাধ্যমে মন্দকাজের অপসারণ সম্ভব?
একজন বিক্রেতার সামনেই যদি তোমার এমন অবস্থা দাঁড়ায়, তবে বড় কোন কর্তা ব্যক্তির সামনে তোমার কি অবস্থা দাঁড়াবে? কিংবা সে যদি হয় ক্ষমতাধর কোন ব্যক্তি, যার সামনে ন্যয়ের স্বপক্ষে কথা বলার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়?
তুমি তাকে, এমন অবস্থায়, নি:সংশয়ে সৎকাজের আদেশ প্রদান কর, মোটেও লজ্জাবোধ কর না, প্রজ্ঞার সাথে হাটে-বাজারের মন্দকাজ দূর করার প্রচেষ্টা চালাও, পিছু হটে যেও না। তোমার বিরোধীরা সংখ্যায় যদি বিপুল হয়, তবে আল্লাহর এ বাণী স্মরণ কর :
‘তিনি বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি’। [সূরা তাহা : ৪৬]
তুমি কি এটা পছনদ করো না যে, শয়তানের প্রজ্বলিত আগুন তোমার কারণে নিভে নি:শেষ হয়ে যাবে, বন্ধ হবে তার কূটকৌশল? যেখানেই মন্দের আবির্ভাব ঘটবে, সেখানেই তুমি দাওয়াত নিয়ে হাজির হবে? যদি তুমি এমন করে নিজেকে গড়তে পার, তবে সন্দেহ নেই, তুমি উত্তম ও আদর্শ এক সংস্কারক। কুরআনে এসেছে :
‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’?’। [সূরা ফুসসিলাত : ৩৩]
তুমি কার্যকরী ও সঠিক উপায়ে উক্ত দাওয়াতী কর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম হও, তবে শয়তানের প্রিয় স্থান বাজার তার জন্য সঙ্কীর্ণ হয়ে যাবে, সে উক্ত স্থানে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিব্রত বোধ করবে। মানুষের অন্তরে সৎ প্রেরণার উদ্ভব ঘটবে, স্থান-কাল নির্বিশেষে সকলে ভালো কাজের আগ্রহ বোধ করবে।
বাজারে দাওয়াতী কাজ ও উত্তম বীজ বপনের বিষয়টি একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভের জন্য আমাদের আর যা করণীয় তা পরিপূর্ণ উপলব্ধির জন্য আমি তোমাকে উক্ত ঘটনাটি শুনিয়েছি। তুমি নিশ্চয় এতে উপলব্ধি করেছ যে, মানুষের অন্তরে ভালো কিছুর বপন খুবই সম্ভব ও সহজসাধ্য- যদি আল্লাহ তা সহজ করে দেন। বাজারের মত এমন ঘৃণিত স্থানেই যদি দাওয়াত ও ভাল কিছুর উদ্ভাবন এতটা সহজ হয়, তবে যে সকল স্থান তার চেয়ে ভাল ও উত্তম তাতে কাজটি কী পরিমাণ সহজসাধ্য হবে, তা বলাই বাহুল্য।
সিডি ও ভিসিডি দোকানের মালিকের সাথে একবার আমার একান্তে কথা হল, আমি দেখলাম সে একজন মুসলমান এবং নামাজী ব্যক্তি। আমি তাকে বললাম, তুমিই কি এ দোকানের মালিক? সে বলল, হা।
বললাম, তুমি কি জান, তুমি যা করছ তা হারাম?
সে বলল, হা, কিন্তু এটি আমার ও আমার পরিবারের আয়ের উপায়।
বললাম, তুমি কি বিশ্বাস কর যে, আল্লাহ তোমার কাছ থেকে হিসাব গ্রহণ করবেন এবং তোমাকে জেরা করবেন? তুমি কি জান, তোমার কাছ থেকে যে ব্যক্তি গান বা ফিল্মেরে সিডি কিনে নিয়ে যায়, তার পাপের অংশীদার তুমিও? বরং, সে যে পরিমাণ পাপ করে, তোমার আমলনামাতেও সে পরিমাণ পাপ লেখা হয়? তুমি কি এ ব্যাপারে সচেতন যে, যে পরিমাণ সিডি ও ভিসিডি তুমি বিক্রয় করছ, ঠিক সে পরিমাণ ব্যক্তির পরিপূর্ণ পাপের অংশীদার হচ্ছো তুমি?
মাসে যদি তুমি এক হাজার সিডি বিক্রয় কর, তবে তোমার নামে এক হাজার ব্যক্তির পাপ লেখা হচ্ছে। তুমি এত পাপ বহন করতে সক্ষম?
তুমি কি জান যে, তুমি তোমার অজান্তে শয়তানের কাজ করে যাচ্ছ, তার পাপের আহবান মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছ? যিনার আমন্ত্রণ জানাচ্ছো সবাইকে? (কারণ, গান প্রকারান্তরে মানুষকে যিনায় উৎসাহী করে তুলে) এভাবে তোমাকে ঘিরে পাপের বিস্তৃত একটি বলয় গড়ে উঠছে, অথচ এ ব্যাপারে তুমি মোটেও সচেতন নও?
এ কেমন ব্যাবসা তুমি গ্রহণ করলে?
যেদিন তোমার ব্যবসা অধিক হয়, সেদিন প্রকারান্তরে পাপও বেশি হয়। যেদিন তুমি ভাববে যে, তুমি ব্যবসায় সফল, সেদিন মূলত তুমি জাহান্নামের আরো নিকটবর্তী হয়ে গেলে।
তুমি মরে যাবে, কিন্তু এ পাপের বলয় কখনো শেষ হবে না, অব্যাহত থাকবে তার ধারা, যতক্ষণ না তুমি তওবার মাধ্যমে এ ধারাকে তোমার জীবন থেকে নি:শেষ করে দাও। দেখ, কুরআনে আল্লাহ কী বলছেন :
‘ফলে কিয়ামত দিবসে তারা বহন করবে তাদের পাপভার পূর্ণ মাত্রায় এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে তারা অজ্ঞতার কারণে বিভ্রামত্ম করেছে। দেখ, তারা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট’। [সূরা নাহল : ২৫]
আমার আলোচনার ফলে- আলহামদুলিল্লাহ- লোকটি মাঝে পরিবর্তন ঘটল, সে তার দোকানে গানের সিডির বদলে দাওয়াতের সিডি বিক্রয় করতে আরম্ভ করল।
একবার আমি বাজারে হাঁটছিলাম, দেখলাম সরকারী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল দোকানে দোকানে ঘুরছে, আমি মনে মনে ভাবলাম, এটি একটি উত্তম সুযোগ, আমি তার মাধ্যমে কোন সাদাকায়ে জারিয়ার জন্ম দিতে পারি। এবং বাজারে ছড়িয়ে আছে এমন অনেক পাপের অবসান ঘটাতে পারি।
আমি তাকে সালাম জানিয়ে বললাম, দোকানের প্রবেশ পথে ও দেয়ালে যে অশ্লীল ছবি টানানো আছে, সেগুলোর ব্যাপারে তোমার কি মত? কাপড়ের দোকানে, ছবির শো রুমে, ভিডিও স্টোরে যে সমস্ত ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, সেগুলোকে তুমি সমর্থন কর?
সে বলল, এটি তাদের পেশার সাথে সম্পৃক্ত, তাদের কাজের ধর্মই এটা।
বললাম, তুমি মনে কর যে, যদি তারা ছবির পরিবর্তে হাতে লিখে রাখে, এবং ছবিগুলোকে এলবামে ভরে রাখে তবে রাষ্ট্রীয় আইন ও পেশার বিরোধী হয়ে যাবে?
সে বলল, না।
বললাম, তবে এ ধরনের ছবি টানিয়ে রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে হালাল নাকি হারাম? এগুলো কি মানুষের স্বভাব ও লজ্জাশীলতার বিরোধী নয়? তুমি তোমার যুবতী কন্যার জন্য এগুলো পছন্দ করবে?
সে বলল, এগুলো হারাম।
বললাম, তাহলে কি তুমি তাদেরকে এ আদেশ দিতে সক্ষম নও যে, এগুলো নামিয়ে ফেল, কারণ, তাতে আইন ও শরীয়ত লঙ্ঘন হচ্ছে এবং এগুলো হারাম?
সে বলল, হা।
বললাম, তবে তোমাকে তা করতে বাধা দিচ্ছে কিসে? এগুলোর বিরোধিতার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট নয় কি যে, এগুলো আল্লাহর আইনের বিরোধী, হারাম এবং মানুষের স্বাভাবিক লজ্জাশীলতার পরিপন্থী? নাকি এগুলো নামিয়ে ফেলা কিংবা নামানোর নির্দেশ প্রদান রাষ্ট্রীয় আইনের বিরোধী?
উক্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমাকে বলল, আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। সৎকর্মের প্রতি ইঙ্গিতকারীও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। এই নাও আমার ঠিকানা ও ফোন নাম্বার, আল্লাহ চাহে তো, আমি অবশ্যই তোমার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখব।
বললাম, আমি তোমার নিকট এর চেয়েও বড় কিছু আকাঙ্ক্ষা করি।
সে বলল, কী সেটা?
বললাম, তোমার মত অন্যান্য দায়িত্বশীলদের মাঝেও তুমি এ প্রেরণা ছড়িয়ে দাও।
বলল, আমি অবশ্যই তা করতে চেষ্টা করব।
বললাম, আমি তোমার নিকট আরো কিছু আশা করছি।
বলল, কী?
বললাম, তুমি অবশ্যই তা করবে প্রজ্ঞার সাথে। তোমাকে এমনভাবে উক্ত কাজ শেষ করতে হবে, যেন তা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে এবং পরিশুদ্ধভাবে তা সম্পন্ন হয়।
বলল, যতটা সম্ভব, ইনশাআল্লাহ, আমি সে ব্যাপারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
তার সাথে আলোচনা শেষে মাগরিবের সালাতের সময় ঘনিয়ে এল। আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম, আমার স্ত্রী আমার সঙ্গেই ছিল। সে মেয়েদের সালাতের স্থানে প্রবেশ করল। আমি দেখতে পেলাম স্থান সঙ্কটের কারণে কাতার মসজিদের বাহির পর্যন্ত চলে এসেছে। অন্যদিকে ইমাম মেহরাবের কাছে দুই কাতার ছেড়ে তার জায়নামাজ বিছিয়েছে। কারণ, মেহরাবের ভিতরে অত্যন্ত গরম। সালাতের পর আমি গিয়ে নিকটস্থ দোকান থেকে পাখা কিনে নিয়ে এলাম, সেটি মেহরাবের অভ্যন্তরে স্থাপন করার জন্য তাদেরকে দিলাম। এভাবে মুসল্লীদের জন্য দুটি কাতার বৃদ্ধি পেল। অত:পর মসজিদ নির্মাতার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তাকে আমার সাথে যোগাযোগের জন্য বললাম, মসজিদের আয়তন বৃদ্ধি এবং কয়েকটি বাথরুম সংযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিলাম। এভাবে আমি একটি ভাল কাজের সাথে সম্পৃক্ত হলাম, তারা আমাকে উত্তম প্রতিশ্রুতি দিল।
এদিকে আমার স্ত্রী নারীদের মাঝে দেখতে পেল, সালাত ও সালাতের আদবের ব্যাপারে তারা নানারকম অজ্ঞতায় ডুবে আছে। তারা উচ্চস্বরে কথা বলছিল, তাদের কাতার সোজা ছিল না। সে আমাকে এ ব্যাপারে অবগত করলে আমি ইমামকে প্রয়োজনীয় মাসআলা শিক্ষাদানের জন্য অনুরোধ করলাম। প্রতি সালাতের সময় মাইক্রোফনের মাধ্যমে তাদেরকে নসীহত করার জন্য বললাম।
সালাতের পর আমি আমাদের কেনাকাটা সম্পন্ন করার জন্য পুনরায় বাজারে প্রবেশ করলাম। আমার সন্তানরা ক্ষুধা অনুভব করল। খাবারের দোকানে বার্নারে মুরগির গোশত ঝলসানো হচ্ছিল। আমি খাবারের দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কোথা থেকে মুরগি সংগ্রহ কর?
বলল, ব্রাজিল থেকে।
বললাম, আমাকে কি কার্টনটি দেখানো যাবে?
দোকানদার সেটি নিয়ে এলে জিজ্ঞেস করলাম, এর দাম কত?
বলল, প্রতি কিলো পাঁচ দেরহাম ও পঁচিশ পয়সা।
বলল, ভাই, তুমি একজন মুসলিম। সুতরাং নিশ্চয় সর্বদা হালাল খাদ্যের প্রতি তুমি আগ্রহী, এবং মানুষকেও হারাম খাদ্য প্রদানে তোমার কুণ্ঠা রয়েছে? আর এই মুরগি, যদিও তার কার্টনে হালাল শব্দটি লেখা আছে, কিন্তু এর মাধ্যমে কেবল তাদের পণ্যের প্রসারই উদ্দেশ্য, এদের প্রক্রিয়াটিই এমন যে, তা কখনো হালাল হতে পারে না। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় তারা এর প্যাক করে এবং তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আমার কাছে এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে- লিখিত ও ভিডিও আকারে আমরা এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছি।
বলল, তাহলে এর সমাধান কি?
বললাম, তোমার কি এমন কোন মাধ্যমে আছে, যার থেকে তুমি বৈধ উপায়ে জবেহ করা মুরগি পাবে এবং যা জবেহ করেছে মুসলিম, মুসল্লীগণ? এবং পণ্যমূল্য যার কম?
সে বলল, হা।
তবে কেন অধিক মূল্য দিয়ে হলেও তা ক্রয় করছ না?
আমার আলোচনার পর উক্ত দোকানদার সেদিন থেকে হালাল মুরগি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিল। আমি আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম।
প্রিয় পাঠক ! আমাদের মাঝে কেউ কি এমন আছে, যে বাজারে গমন করে না? বাজারে কি তার দৃষ্টি অনেক অনৈতিক কাজ দৃষ্টিগোচর হয় না? বাজারে গিয়ে কি ভাল কিছু বপনের মত সুযোগ লাভ করে না? সুতরাং আল্লাহ তাআলা যে দায়িত্ব আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন, কেন আমরা তা পালন করছি না, কী বাধাকে আমরা ভয় পাচ্ছি?
সুতরাং, হে জান্নাতের বাজারের অনুসন্ধনীগণ, এগিয়ে যাও, এমন সওদা কর, যার দৃষ্টান্ত দুর্লভ। কুরআনে এসেছে :
هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلاَّ الإِحْسَانُ ﴿60﴾
‘উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম ছাড়া আর কী হতে পারে?’। [সূরা রহমান : ৬০]
ইলমের অনুসন্ধিৎসু হে আমার প্রিয় ভাই, এটিই হচ্ছে প্রকৃত উত্তম কর্ম। আমাদের প্রত্যেকে যদি এ কাজে আগ্রহী হতাম, সঠিক উপায়ে তা সম্পাদনে এগিয়ে আসতাম, তবে সন্দেহ নেই, সৎকাজের আদেশে আমরাই হতাম সর্ব বৃহৎ দল। পাপাচার দূর হয়ে যেত আমাদের থেকে, পবিত্রতা ও নৈকট্যের এক অনাবিল আবহ আমাদের মাঝে সর্বাঙ্গিনভাবে ছড়িয়ে যেত।
আমরা যদি তা পালন করতাম, তবে আমাদের প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে দূরন্ত সাহস ও সত্যের দুর্জয় আকাঙ্ক্ষা। ঘুমন্ত এমন অনেক অন্তর ঘুম থেকে জেগে উঠত, মন্দের পঙ্কিল নর্দমায় যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছে, তার অসচেতনতায় তার অন্তর মৃতের কাতারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অসংখ্য মানুষ আমাদের প্রচেষ্টার ফলে আল্লাহর অবশ্যম্ভাবী আযাব থেকে রক্ষা পেত।
এই অভিজ্ঞতার পর আমার কাছে নতুন এক চিন্তা ধরা দিল। এমন দোকানদার ও বাজারের লোকদের জন্য একটি চটি বই লেখার অনুপ্রেরণা বোধ করলাম, যা একাধিক ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করা হবে, যাতে বাজারের লোকদের সম্বোধন করে তাদেরকে সত্য পথে আহবান জানানো হবে। সাথে সাথে একটি অডিও সিডি প্রকাশ করে আরবদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হবে, যার শিরোনাম হবে ‘প্রচলিত পাপাচার’।
বিষয়টি খুবই গুরুত্ব বহন করে, যদি আমরা পবিত্র বাজার তৈরি করতে চাই, কিংবা যারা পবিত্রতা অবলম্বনকারী, তাদের জন্য কোন বাজার তৈরী করতে চাই। বাজারকে যদি আমরা ধীরে ধীরে, ক্রমান্বয় পরিবর্তনের ধারায় উন্নীত করতে প্রয়াসী হই, তাহলে সন্দেহ নেই, এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া, যাতে প্রোজ্বল হয়ে ধরা দিবে সততা, আমানত, শরীয়তের নীতিমালার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য, এমন একদল ব্যবসায়ী শ্রেণী, যারা আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে অবগত, যাতে ইসলামী নীতিমালা পরিপূর্ণ অনুসরণ করা হবে।
বিষয়টি, সন্দেহ নেই, খুবই গুরুতেবর দাবী রাখে, সাহসীরাই কেবল এর সংশোধনে অবদান রাখতে সক্ষম।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/723/22
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।