hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল-গিরাস চিন্তার উন্মেষ ও কর্মবিকাশের অনুশীলন (১ম খন্ড)

লেখকঃ তাওফীক বিন খলফ বিন আবদুল্লাহ বিন আল-রেফায়ী

২৫
সপ্তম বপন: কার্যকরী বিকল্প তৈরির যুক্তি
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَذِكْرَى لِمَنْ كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ ﴿37﴾

‘নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যার রয়েছে অন্তর অথবা যে নিবিষ্টচিত্তে শ্রবণ করে প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে। [সূরা কাফ : ৩৭]

وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِبْ بِهِ وَلاَ تَحْنَثْ إِنَّا وَجَدْنَاهُ صَابِرًا نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ ﴿44﴾

‘আর তুমি তোমার হাতে এক মুঠো তৃণলতা নাও এবং তা দিয়ে আঘাত কর। আর কসম ভংগ করো না। নিশ্চয় আমি তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছি। সে কতই না উত্তম বান্দা! নিশ্চয়ই সে ছিল আমার অভিমুখী।’ [সূরা সাদ : ৪৪]

ارْكُضْ بِرِجْلِكَ هَذَا مُغْتَسَلٌ بَارِدٌ وَشَرَابٌ ﴿42﴾

‘[আমি বললাম], ‘তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত কর, এ হচ্ছে গোসলের সুশীতল পানি আর পানীয়’। [সূরা সাদ : ৪২]

عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : يا معشر الشباب ! من استطاع الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر، و أحصن للفرج، و من لم يستطع فعليه بالصوم فإنه له وجاء .

‘হে যুবসমাজ ! তোমাদের মধ্যে যে ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিতে পারে সে যেন বিয়ে করে ফেলে। কারণ তা দৃষ্টিকে অবনত এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষিত রাখে। আর যার সে সক্ষমতা নেই সে যেন রোজা রাখে। কারণ রোজাই হচ্ছে তার রক্ষাকবচ।’ [বুখারী : ৫০৬৬]

কোন মুসলিমের চিন্তা ও বোধে ছোট্ট একটি পরিবর্তন তার জীবনের মোড় ও গতিকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। বদলে যেতে পারে তার শক্তির জায়গাগুলো। এই পরিবর্তন হচ্ছে যে কোন ক্ষেত্রে ইতিবাচক বিকল্প তৈরিতে সার্থকতা লাভ করা।

এ হচ্ছে মানসিক প্রস্ত্ততি, যা ব্যক্তিকে তার শত্রুর সামনে এক রহস্যময় ধূর্ত প্রহেলিকারূপে হাজির করে, এবং ব্যাপক ও বিশেষ যে কোন বিপদের সামনে নিজ সম্প্রদায়ের জন্য বরাভয় হয়ে দাঁড়ায়। এই ইতিবাচক বিকল্প তৈরির মানসিকতার চর্চার ফলে মানুষ কোন বিপদের সামনেই আর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে উঠে না, অন্যের তৈরি ফাঁদে পা দেয়ার দুশ্চিন্তা তাকে আর পূর্বের মত শঙ্কিত করে না। এর চেয়ে বড় কথা হল, এই মানসিক চর্চার ফলে ব্যক্তি তার উপর আপতিত বিপদের মুখ শত্রুর দিকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়, সক্ষম হয় তার দীন ও উম্মতকে রক্ষার কৌশল অবলম্বন করতে, এভাবে সে তার ইহকাল ও পরকাল- উভয়টি রক্ষার প্রয়াস পায়।

বিপদ আসে অন্ধকার এলাকায় শকুনের মত পাখা মেলে, চারদিক বিস্তৃত থাকে তার শক্তি, ব্যাপক ভয়ানক আগুনের মত ধেয়ে আসে, কিন্তু ব্যক্তি, এই চর্চার ফলে, প্রথম ধাক্কা সহজে সামলে উঠে। সুতরাং সে বিপদের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করে না, তার কপালে ফুটে উঠে না চিন্তার রেখা, সে বিষণ্ণ হয়ে উঠে না।

সে শান্ত ও স্থির থাকে, নীরবতা অবলম্বন করে, তার অন্তর সদা তার প্রতিই ধাবিত ও সম্পৃক্ত থাকে, যিনি যাবতীয় আদেশ ও নিষেধের মালিক। আর তার চিন্তা গভীর থেকে গভীরে হাতড়ে বেড়ায় মানসিক কোন পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি বিকল্প তৈরি করতে, যাতে বিপদকে নিআমতে পরিবর্তন করা যায়।

সে বুঝতে পারে এই বিপদকে নিআমতে রূপান্তরের সূচনা হবে চিন্তায় ছোট্ট একটি পরিবর্তনের মাধ্যমে। এর মাধ্যমেই এক ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে, এক বাস্তব বিবর্তনের সূচনা হবে। এটি হচ্ছে রেডিও ওয়েভের মত, ছোট্ট একটি ওয়েভের ফলে দেশে দেশে একটি সংবাদ অনায়াসে পৌঁছে যায়। আল্লাহর কাছে, সন্দেহ নেই, যে কোন বিষয়ই অনায়াসসাধ্য।

আমরা সচেতনভাবে নিজেদের প্রতি লক্ষ্য করলে অবাক হয়ে যাই। অসংখ্য বিপদ আমাদের আক্রান্ত করে, বিপদে আমরা হেস্তনেস্ত হয়ে যাই। এক সময় মনে হয়, এ বিপদ থেকে মুক্ত হওয়া আমাদের বুদ্ধির ঊর্ধ্বের বিষয়। তখন চারদিক ও ভবিষ্যত অন্ধকার মনে হয়। অত:পর যখন সেই দু:সহ দিনগুলো কেটে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু আগের মত হয়ে যায়, জীবন গতিময় হয়ে উঠে। বিপদের অভ্যন্তরে বীজ হয়ে লুকিয়ে থাকে অনেক কল্যাণ, অঢেল রিযক।

মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে অপবাদের তুলনায় বড় কোন বিপদ আছে?

মানুষের মান-মর্যাদা ও সম্মান যতটা গুরুত্বপূর্ণ ও বড় ব্যাপার ঠিক ততটাই বড় ব্যাপার নিজেকে নিস্কলুষ রাখা, যাবতীয় অপবাদ থেকে মুক্ত রাখা। এ সত্বেও, আল্লাহ তাআলা আয়িশা রা.-কে অপবাদ প্রদানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন :

إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالإِفْكِ عُصْبَةٌ مِنْكُمْ لاَ تَحْسَبُوهُ شَرًّا لَكُمْ بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَكُمْ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ مَا اكْتَسَبَ مِنَ الإِثْمِ وَالَّذِي تَوَلَّى كِبْرَهُ مِنْهُمْ لَهُ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿11﴾

‘নিশ্চয় যারা এ অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। এটাকে তোমরা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর মনে করো না, বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যতটুকু পাপ সে অর্জন করেছে। আর তাদের থেকে যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য রয়েছে মহা আযাব।’। [সূরা নূর : ১১]

প্রতিবার বিপদে আক্রান্ত হওয়ার পর আমরা বলি, এই শেষ, আমি আর কখনো এবারের মত এতটা কেঁপে উঠব না, বিপদের সম্মুখে দিশাহারা হয়ে যাব না। কিন্তু এই শেষ আর কখনো আসে না, প্রতিবার তার পুনরাগমন দেখে দেখে আমরা অস্থির হয়ে যাই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীতে যদি আমরা দৃষ্টি দেই, তবে দেখতে পাব কার্যকরী কোন বিকল্প তৈরি করা এবং বিপদের মোড় ঘুরিয়ে তাকে নিআমত করে নেয়ার জন্য তিনি সর্বদা সজাগ হয়ে আছেন। আমরা বর্তমানে যে বিপদেই আক্রান্ত হচ্ছি, রাসূলের জীবন তার কোন উদাহরণ পাব, যা এর চেয়েও ভয়াবহ বিপদ হিসেবে তার জীবনে এসেছিল। দেখতে পাই কীভাবে রাসূল বিপদ হতে বের হওয়ার পথ খুঁজে নিচ্ছেন, বিপদ হওয়া সত্বেও তাকে কীভাবে নিআমতে রূপান্তরিত করছেন।

কষ্ট যাতনা ও অন্যের দ্বারা শাস্তিভোগ কি মানুষের জীবনে সবচেয়ে কঠিন বিষয় নয়? জীবনী শক্তির অধিকাংশই কি এখানে নি:শেষ হয়ে যায় না? কিন্তু এই কষ্ট যাতনাই রাসূল ও তার সাহাবীদের জীবনে এমন পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল, যার উদাহরণ ইতিহাসের পাতায় বিরল। তিনি মক্কার লোক দ্বারা দীর্ঘদিন কষ্টভোগের পর তার অনুসারীদেরকে হাবশায় হিজরতের নির্দেশ দিলেন, যেখানে তারা রাজার পক্ষ থেকে কোন দুর্ভোগের শিকার হবে না। এই নির্দেশ ও হিজরতই ছিল প্রথম বিজয়, আজ পর্যন্ত যা বপনের আলোকিত ধারাকে অব্যাহত রেখেছে, এবং তাওহীদের অমীয় ধারায় আমাদেরকে বিধৌত করছে। ইসলাম তার দাওয়াতকে এই হিজরতের মাধ্যমে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে দিয়েছে, মানুষ যুগ ও বংশ পরম্পরায় তাকে কিয়ামত অবধি নিয়ে যাবে।

দেশান্তর কি দেহ থেকে আত্মাকে বিচ্ছিন্ন করার মত কোন বিপদ নয়?

কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিপদ থেকে উদ্ভাবন করলেন এমন এক বিজয়, আশ্রয় ও মুক্ততা যা তাকে ও তার দাওয়াত পৃথিবী ব্যাপী ব্যপকতা দান করেছে, এবং কিয়ামত অবধি টিকে থাকার মজবুত ভিত এনে দিয়েছে। তিনি মদীনার মত এক পবিত্র নগরীকে পেয়েছিলেন।

মদীনা ছিল আল্লাহর নির্বাচন, নির্বাচনের যাবতীয় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর কাছেই রক্ষিত। আল্লাহ তাআলা রাসূলকে মদীনার পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। রাসূল অপেক্ষা করছিলেন কোন বিকল্পের, তাই তিনি বিভিন্ন মৌসুমে অন্যান্য গোত্রের সাথে নানাভাবে মিলিত হচ্ছিলেন। এভাবে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য সর্বোত্তম এলাকা নির্বাচন করলেন।

প্রতিটি নবী- যে তার সম্প্রদায়কে মন্দ কাজ, কুফরী ও শিরকে বাধা প্রদান করেছেন- আপন সম্প্রদায়ের সম্মুখে প্রয়োজনীয় বিকল্প পেশ করেছেন। কুরআন এর উত্তম সাক্ষী।

নূহ তার সন্তানকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন :

يَا بُنَيَّ ارْكَبْ مَعَنَا .

‘হে আমার পুত্র, আমাদের সাথে আরোহণ কর’। [সূরা হূদ : ৪২] কাফির কওমের সাথে ডুবে যাওয়ার পরিবর্তে তিনি রক্ষা পাওয়ার জন্য এই বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন। অপর দিকে লূত আ. তার কওমকে বলছেন :

هَؤُلاَءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ .

‘হে আমার কওম, এরা আমার মেয়ে, তারা তোমাদের জন্য পবিত্র।’ [সূরা হূদ : ৭৮] অশ্লীল কর্মে বিকল্পরূপে তিনি তার কন্যা সন্তানদেরকে বিয়ে করে তাদের সাথে বৈধভাবে যৌনাচার করার প্রস্তাব করেছিলেন। ইউসূফ আ. মিসরবাসীকে আসন্ন দূর্ভিক্ষের প্রতিরোধে পথ বাতলে দিয়ে বলেছিলেন :

فَمَا حَصَدْتُمْ فَذَرُوهُ فِي سُنْبُلِه .

‘অতঃপর যে শস্য কেটে ঘরে তুলবে তা শীষের মধ্যে রেখে দেবে’। [সূরা ইউসূফ : ৪৭] কুরআনে এ ছাড়া আরো দৃষ্টান্ত রয়েছে।

পাঠক, বিপদ যেমনি হোক না কেন, অবশ্যই তা থেকে বের হওয়ার কোন পথ আছে। বিপদ কঠিন হোক কিংবা সহজ, ছোট্ট একটি পরিবর্তনের মাঝে লুকিয়ে আছে তার মুক্তি। তুমি দেখতে পাবে, কুরআন অনেক বড় বড় বিপদের উল্লেখ করে তা বান্দাদের সামনে তুলে ধরেছে, যা ভাল কোন বিকল্পে রূপ পেয়েছে। লাঠির আঘাতে বৃহৎ শিলাখন্ড থেকে পানির স্বচ্ছ ধারা প্রবাহিত হয়েছে, কিংবা আল্লাহর ভয়ে তা থেকে বেরিয়ে এসেছে দীর্ঘ প্রস্রবন। আগুনের স্ফুলিঙ্গ থেকে ঝরেছে বৃষ্টির ধারা, যা যমীনকে উদ্ভাসিত করেছে নতুন জীবনে। বজ্রের অগ্নুৎপাতের অভ্যন্তরে আল্লাহ তাআলা লুকিয়ে রেখেছিলেন এই পৃথিবীর সজিবতা। কে জানত, একদিন পানির ঢল থেকে বিদুৎ আবিস্কৃত হবে? ভয়ংকর বন্যার পরই কেন পলি মাটির স্তর জমে যমীনকে ফলে-ফুলে শোভিত করে তুলে?

এগুলো নিশ্চয় কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এ হচ্ছে কুরআনের পদ্ধতি, যা রাসূল সুবিন্যস্ত আকারে মানুষের সম্মুখে হাজির করেছেন। জীবনকে বুঝবার ও গঠন করবার এ এক নতুন পদ্ধতি, যা ব্যাপকভাবে মানুষের চিন্তা ও বিশেষভাবে মুসলিমদের চিন্তা ও বোধে ভাস্বর করে দেয়া হয়েছে।

জগত সৃষ্টি নিশ্চয় মানুষের সৃষ্টির চেয়ে বৃহৎ কোন ঘটনা, জগতের মাঝে লুকিয়ে আছে এমন অনেক শক্তির আভাস, যা বুঝা ও আয়ত্ব করা মানুষের শক্তিরও ঊর্ধ্বে। কিন্তু যখনি আমরা এ শক্তি ও বিশালতায় দৃষ্টি দিব, তখনি আমাদেরকে নতুন একটি বিষয় চিন্তায় সংযোজন করতে হবে, যাতে পুরো বিষয়টি আমাদের উপকারে ব্যয় হয়। জগত সম্পর্কিত আমাদের জ্ঞান ও কর্মের মূলমন্ত্রই হবে এই যে, জগতকে আমাদের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে, আমাদের শত্রু করে নয়।

এই পরিবর্তনের ধারা, আল্লাহ চাহে তো অবশ্যই, বিকল্প সন্ধানের মাধ্যমেই আমরা পাব। মানুষ ভয়ে যে আর্তরব করে উঠে, আমরা তাকে পরিবর্তন করে সতর্কতামূলক চিৎকারে পরিবর্তিত করে নিতে পারব। এ চিন্তা অনুসরণের ফলে কঠিন শত্রুতাও আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধ ভ্রাতৃত্বে পরিণত হবে। আল্লাহ তাআলা একে বর্ণনা করেছেন, বর্ণনা করেছেন এর উপায়, উৎসাহ দিয়েছেন এর প্রতি। কুরআনে বলেছেন :

وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ ﴿35﴾

‘আর এটি তারাই প্রাপ্ত হবে যারা ধৈর্যধারণ করবে, আর এর অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা মহাভাগ্যবান’। [সূরা ফুসসিলাত : ৩৫]

ইউসূফকে হারিয়ে ইয়াকূব আ. ভীষণ মনোকষ্টে পতিত হয়েছিলেন, বিপদ তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল। কিন্তু, ইউসূফের জামায় রক্তের দাগ তার মৃত্যুর বার্তা না হয়ে জীবনের সুসংবাদ হয়ে উঠেছিল। ইউসূফের বন্দীদশা তার দাওয়াত প্রচার ও প্রসারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, অন্যান্য বন্দীরা তার প্রচেষ্টার ফলে তার দাওয়াতে সারা দিয়েছিল। তার ভাইয়েরা বিনইয়ামীনকে হারিয়ে যে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছিল, ইয়াকূবের কাছে তাই ছিল আশার বাণী, নতুন করে সব ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত। দ্বিতীয় সন্তানকে হারিয়ে ইয়াকূব বলেছিলেন :

يَا بَنِيَّ اذْهَبُوا فَتَحَسَّسُوا مِنْ يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلاَ تَيْئَسُوا مِنْ رَوْحِ اللهِ إِنَّهُ لاَ يَيْئَسُ مِنْ رَوْحِ اللهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ ﴿87﴾

‘হে আমার ছেলেরা, তোমরা যাও এবং ইউসুফ ও তার ভাইয়ের খোঁজ খবর নাও। আর তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, কেননা কাফির কওম ছাড়া কেউই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না’। [সূরা ইউসূফ : ৮৭]

পরিশেষে, ইউসূফের প্রথম স্বপ্ন এমন বাস্তব হয়ে দেখা দিল, যা ছিল পৃথিবীর বুকে এক অভূতপূর্ব ঘটনা :

وَرَفَعَ أَبَوَيْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَخَرُّوا لَهُ سُجَّدًا وَقَالَ يَا أَبَتِ هَذَا تَأْوِيلُ رُؤْيَايَ مِنْ قَبْلُ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّي حَقًّا وَقَدْ أَحْسَنَ بِي إِذْ أَخْرَجَنِي مِنَ السِّجْنِ وَجَاءَ بِكُمْ مِنَ الْبَدْوِ مِنْ بَعْدِ أَنْ نَزَغَ الشَّيْطَانُ بَيْنِي وَبَيْنَ إِخْوَتِي إِنَّ رَبِّي لَطِيفٌ لِمَا يَشَاءُ إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ ﴿100﴾

‘আর সে তার পিতামাতাকে রাজাসনে উঠাল এবং তারা সকলে তার সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং সে বলল, ‘হে আমার পিতা, এই হল আমার ইতঃপূর্বের স্বপ্নের ব্যাখ্যা, আমার রব তা বাস্তবে পরিণত করেছেন আর তিনি আমার উপর এহসান করেছেন, যখন আমাকে জেলখানা থেকে বের করেছেন এবং তোমাদেরকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করার পর। নিশ্চয় আমার রব যা ইচ্ছা করেন, তাতে তিনি সূক্ষ্মদর্শী। নিশ্চয় তিনি সম্যক জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’।’। [সূরা ইউসূফ : ১০০]

খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননকালে একটি শিলাখন্ড কেউ সরাতে পারছিল না, রাসূল গিয়ে সেটি সরালেন, যখন তিনি তাতে আঘাত করছিলেন, তা থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বেরুচ্ছিল, তা দেখে রাসূল ইরশাদ করলেন :

ضربت ضربتي الأولى فبرق الذي رأيتم، فأضاء لي منها قصور الحيرة و مدائن كسرى كأنها أنياب الكلاب، و أخبرني جبريل أن أمتي ظاهرة عليهم، ثم ضربت ضربتي الثانية فبرق لي الذي رأيتم، أضاء لي قصور الحمر من أرض الروم كأنها أنياب الكلاب، و أخبرني جبريل أن أمتي ظاهرة عليها، ثم ضربت ضربتي الثالثة فبرق لي الذي رأيتم، أضاء لي معها قصور صنعاء كأنها أنياب الكلاب، و أخبرني جبريل أن أمتي ظاهرة عليها يبلغهن النصر فأبشروا .

‘আমি প্রথম আঘাত করতেই আলো জ্বলে ওঠল, সেটা তো তোমরা দেখেছ। সেই আলোয় আমি হিরার প্রাসাদ ও কেসরার শহরগুলো দেখতে পেলাম, কুকুরের দাঁতের মত জ্বল-জ্বল করছে এবং জিবরাইল আমাকে বললেন আমার উম্মত তাদের উপর জয়ী হবে। আমি দ্বিতীয়বার আঘাত করতেও আলো জ্বলে ওঠল, যা তোমারা দেখেছ। তাতে আমার সামনে রোমের লাল প্রাসাদগুলো কুকুরের দাঁতের মত ভেসে ওঠল এবং জিবরাইল আমাকে বললেন আমার উম্মত তাদের উপর বিজয়ী হবে। অত:পর আমি তৃতীয়বার আঘাত করলাম এবং তাতে আলো জ্বলে ওঠল, যা তোমরা দেখেছ। সেই আলোয় আমার সামনে সানআর প্রাসাদগুলো ভেসে ওঠল কুকুরের দাঁতের মত। জিবরাইল আমাকে বললেন, আমার উম্মত তাদের উপর বিজয়ী হবে। সুতরাং তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর’। [ইবনে জারীর তার তাফসীর গ্রন্থে হাদীসটির সনদ বর্ণনা করেছেন : ১০/২৬৯]

খন্দকের যুদ্ধের পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পরিপূর্ণ পরিবর্তনের ঘোষণা দিলেন, তিনি বললেন, ‘এখন আমরা তাদের দিকে ধেয়ে যাব, তারা আমাদের দিকে ধেয়ে আসবে না।’ [বুখারী : ৪১১০]

এ এক মহান পন্থা, যখন অন্ধকারের মজ্জায় তা বিকীর্ণ হয়, তখন অন্ধকার কেটে গিয়ে আলোকিত হয় আশপাশ, এবং মুসলমানদের এক বাস্তব বিজয়ের সূচনা করে। বিপদ ঠিক যতটা বড় হবে, প্রাপ্তিও হবে তত বড়, বিপদের সময়কাল হিসেবে ফলপ্রাপ্তির সময়কালও নির্ধারিত হবে।

উচ্চতর শিক্ষায় ব্যাপৃত কারো পক্ষে আমাদের এ আলোচনাকে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণার রূপ দান করা সম্ভব, তিনি জ্ঞান ও তৎপরতার সংমিশ্রনে একটি গবেষণা সন্দর্ভ হাজির করবেন আমাদের সম্মুখে, যাতে সাধারণভাবে সকল মুসলমানের জন্য, এবং বিশেষভাবে দায়ীদের জন্য এমন এক রূপান্তর দেখানো হবে, যা তাদের মানসিকতা ও বাস্তবতায় ব্যাপক ক্রিয়া করবে। গবেষকের সামনে থাকবে আল্লাহ তাআলার কালাম পবিত্র কুরআন, যা জুড়ে আছে বিকল্প তৈরির নানা উদাহরণ, এবং হাদীসের মহান ভান্ডার। আমি তাকে প্রাথমিক কিছু ইঙ্গিত করার জন্য এখানে কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু উদাহরণ টানবার প্রয়াস চালাব।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন