HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনে ইসলামি দিক নির্দেশনা

লেখকঃ মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনূ

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনে ইসলামি দিক নির্দেশনা

মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনূ

অনুবাদ : ইঞ্জিনিয়ার মুজীবুর রহামন

সম্পাদানা : ইকবাল হোছাইন মাছুম

ইসলামের বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. ইসলাম হচ্ছে তাওহিদ তথা একত্ববাদের দ্বীন। আর তাওহিদ হচ্ছে, অন্তরে দৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, বিশ্ব জগতকে সৃষ্টি করেছেন এককভাবে মহান এক স্রষ্টা। বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি জ্বলন্ত সত্য । প্রতিটি বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল লোক এটি স্বীকার করতে বাধ্য, কারণ তাদের বুদ্ধি ও বিবেচনাই তাদেরকে স্বীকার করতে বাধ্য করে। আরো বিশ্বাস পোষণ করা যে, সেই স্রষ্টাই হচ্ছেন সত্যিকারের মাবুদ, সুতরাং যাবতীয় ইবাদত একমাত্র তাঁরই উদ্দেশে হতে হবে। একমাত্র তাঁর নামেই জবেহ করতে হবে, নজর নেয়াজ তাঁর নামেই দেয়া যাবে। দোয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

الدُّعاَءُ هُوَ الْعبَادة ( الترمذي )

অর্থাৎ, দোয়াই ইবাদত। (তিরমিজি, হাসান সহিহ)

এ কারণেইতো গাইরুল্লাহর নিকট দোয়া করা জায়েয নেই।

২। ইসলাম সমস্ত কিছুর সমন্বয় সাধন করে, কোনো বিভেদ সৃষ্টি করে না। এবং আল্লাহ প্রেরিত সকল রাসূলের উপর ঈমান আনতে বলে, যাদেরকে তিনি প্রেরণ করেছেন লোকদের হেদায়েতের জন্য, তাদের জীবনকে সুসংহত করার জন্য। আমাদের রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন তাদের মধ্যে সর্বশেষ নবী। আর তাঁর শরিয়ত আল্লাহর হুকুমে পূর্ববর্তী সকল শরিয়তকে বাতিল করে দিয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁকে সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি তাদেরকে মিথ্যা ও বিকৃত ধর্মের কবল হতে রক্ষা করে অপরিবর্তনশীল দ্বীন, ইসলামের মধ্যে শামিল করতে পারেন।

৩। ইসলামের যাবতীয় শিক্ষা ও বিধান সহজ এবং সর্ব সাধারণের জন্য বোধযোগ্য । ইসলাম কোনো রকম অবাস্তব চিন্তা কিংবা বিকৃত আকিদা অথবা দার্শনিকের কাল্পনিক কোনো চিন্তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। এটি সর্ব যুগে, প্রতিটি সমাজে সহজেই পালনযোগ্য জীবন ব্যবস্থার নাম।

৪। ইসলাম জড় ও আত্মিক জগতকে সম্পূর্ণ আলাদা করে না। বরঞ্চ জীবনকে এক ও সর্বব্যাপী ধারণা করে এবং উভয় জগতকে এক হিসাবে দেখে। তাই কোনো একটাকে গ্রহণ করা, আর অন্যটাকে ছেড়ে দেয়ার নীতি ইসলামের মধ্যে নেই।

৫। ইসলাম অত্যন্ত দৃঢ়তার সংগে মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার যার পর নাই গুরুত্ব দেয় এবং জাতি, ভাষা, বর্ণ ও এলাকাগত দূরত্ব বিভেদকে অস্বীকার করে কঠিনভাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে সর্বাধিক মুত্তাকি। (সূরা হুজুরাত: ১৩)

৬। ইসলামে দ্বীন নিয়ে ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই, যারা এমনটি করবে ইসলামে তাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। অনুরূপভাবে তাতে এমন কোনো অবাস্তব চিন্তা ও ওলীক ধারণা নেই যা বিশ্বাস করা কঠিন। প্রতিটি ব্যক্তিরই আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস পড়ার অধিকার আছে, যার ইচ্ছা সেই পড়তে পারে এবং সালাফে সালেহীন যেভাবে বুঝেছেন ঠিক সেভাবে বুঝে নিয়ে তার ভিত্তিতেই জীবনকে গড়তে পারে।

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান
১। ইসলাম মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই সুন্দর ও সুসংহত করেছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কিংবা সামাজিক যাই হোক না কেন। আর সাথে সাথে এই জাতীয় সমস্যাবলী সমাধানের জন্য উত্তম রাস্তাও প্রদর্শন করেছে।

২। ইসলাম মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাস্তা দেখানোর জন্য সচেষ্ট । এর মধ্যে মূল কথা হচ্ছে, সময়ের সুষ্ঠ ব্যবহার। আর ইসলামের বিধানসমূহই হচ্ছে মুসলিমদের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের কামিয়াবির সঠিক দিক নির্দেশনা।

৩। ইসলামের মূল হচ্ছে আকিদাহ, অত:পর শরিয়াহ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কার জীবনের সম্পূর্ণ প্রচেষ্টাই ছিল আকিদা সংশোধন ও প্রচার। তারপর যখন তিনি মদিনায় হিজরত করেন, তখন শরিয়ত প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে সেখানে ইসলামি রাস্ট্র গঠন করা যায়।

৪। ইসলাম মানুষকে জ্ঞানের দিকে আহবান করে। আর উৎসাহিত করে নবলব্ধ উপকারী ইলম অর্জনের জন্য। তাই দেখা যায়, মধ্য যুগে মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতি উচ্চ স্তরে পৌঁছে ছিলেন। যেমন, ইবনু হাইছাম, আল-বিরুণি এবং আরও অনেকে।

৫। ইসলাম হালাল ধন-দৌলত অর্জন করাকে স্বীকৃতি দেয়। তবে শর্ত হল, তাতে কোনোরূপ ধোকাবাজী কিংবা জোর জবরদস্তি থাকবে না। বরং ইসলাম তার অনুসারীদেরকে হালাল পথে ধন-সম্পদ উপার্জনের উৎসাহ দেয়। আর উপার্জিত অর্থ দ্বারা অনাথ-অসহায়-দরিদ্র, ফকির মিসকিনদের সাহায্য ও আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এভাবেই ইসলামের সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে প্রচারিত হয়, যারা তাদের শরিয়ত তাদের রব হতে গ্রহণ করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শুরা: ১১)

আর হালাল পন্থায় সম্পদ জমা করা প্রসঙ্গে যা প্রচারণা করা হয় তা মিথ্যা হাদিস তার কোনো ভিত্তি নেই।

৬। ইসলাম হচ্ছে জেহাদ ও জীবনের দ্বীন। প্রতিটি মুসলিমের জন্য এটা ফরজ করা হয়েছে যে, দ্বীনের সাহায্যের জন্য সে তার জান ও মালকে ব্যয় করবে। আর তা জীবনধর্মী দ্বীন। অর্থাৎ ইসলাম মানুষকে এমন শিক্ষা দেয় যদ্দ্বারা তারা সুন্দরভাবে জীবনকে গড়ে তুলতে পারে। তবে শর্ত হল, আখিরাতের জীবনকে দুনিয়ার জীবনের উপর প্রধান্য দিতে হবে।

৭। ইসলাম তার নিজস্ব গন্ডির মধ্যে স্বাধীন চিন্তা-ভাবনার পথকে প্রশস্ত করে দেয় ও সাথে সাথে চিন্তা জগতের জড়তাকে দূর করে। আর ইসলামের মধ্যে যে সমস্ত মন্দ চিন্তা-ভাবনা প্রবেশ করে তাকে হটিয়ে দেয়। এবং তার অনুসারীদের অগ্র যাত্রাকে বাধা দানকারী যাবতীয় বিদআত-সুসংস্কার ও মউজু হাদিসকে দূরীভূত করে।

দোয়া হচ্ছে ইবাদত
দোয়া যে ইবাদত তা সহিহ হাদিসেই বর্ণিত হয়েছে। এটা হতে এই প্রমাণিত হয় যে দোয়া বিশেষ ধরণের ইবাদত। কোনো রাসূল কিংবা ওলীর জন্য যেমন সালাত আদায় করা চলে না, তেমনিভাবে কোনো রাসূল অথবা ওলীর নিকট (তাদের মৃত্যুর পর) আল্লাহকে ছেড়ে কোনো দোয়াও চাওয়া যাবে না।

১। যদি কোনো মুসলিম বলে, হে আল্লাহর রাসূল! বা হে গায়েবের খবর জানা ব্যক্তি! আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করুন, সাহায্য করুন। এভাবে দোয়া করা ও সাহায্য চাওয়া হচ্ছে ইবাদত যা গায়রুল্লাহর জন্য করার কারণে শিরক হল। যদিও তার অন্তরে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল থাকে যে, আল্লাহই রক্ষাকর্তা। বিষয়টি ঐ ব্যক্তির ন্যায় হবে, যে আল্লাহর সাথে কোনো শিরক করে বলে, আমার অন্তরে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। কিন্তু কেউ এমনটি করলে ইসলামি আইন অনুযায়ী তার এ কথা অগ্রাহ্য হবে। কারণ, তার মুখের কথা আমলের বিপরীত। অথচ ইসলাম কার্যকর রাখার জন্য মুখের কথার সাথে অন্তরের নিয়ত ও আকিদার মিল থাকতে হয়। যদি না হয় তাহলে তা শিরক বা কুফরির পর্যায়ে যায়, যা তওবা ব্যতীত আল্লাহ ক্ষমা করেন না।

২। আবার যদি কোনো মুসলিম বলে: আমার নিয়ত হচ্ছে তাদেরকে (রাসূল ও ওলী) আল্লাহর নিকট মধ্যস্থতাকারী বানানো। যেমন কোনো মধ্যস্থতাকারী ব্যতীত আমিরের নিকট আমি যেতে পারি না। এমনটি করার অর্থ হলো সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর সাথে অত্যাচারী মাখলুকের তুলনা করা, যার নিকট মধ্যস্থতাকারী ব্যতীত পৌঁছা যায় না। এই ধরণের তুলনা কুফরির পর্যায়ভুক্ত। আল্লাহ তাআলার জাত, সিফাত ও কার্যসমূহ এসব থেকে পবিত্র, তা বর্ণনা করে তিনি বলেন:

(আরবি)

তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শুরা: ১১)

বরং আল্লাহর সাথে তো ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির তুলনা করাও কুফরি ও শিরকের পর্যায়ভুক্ত। আর সেখানে অত্যাচারীর সাথে তুলনা করা তো আরো ভয়ংকর। যারা বড় বড় অহংকারের কথা বলে আল্লাহ তাআলা সে সব যালিম হতে খুবই পবিত্র।

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় মুশরিকরা এই ধারণা পোষণ করত যে, মহান আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, তিনিই রিযক দাতা। তারপরও তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাদের আউলিয়াদের ডাকত (যারা মূর্তি আকারে ছিল) যাতে তারা তাদেরকে আল্লাহর নিকট পৌঁছে দেয়। আল্লাহ তাদের এই মধ্যস্থতা স্থাপন পছন্দ করেননি বরং তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন:

(আরবি)

আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা কেবল এজন্যই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যবাদী কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হেদায়াত দেন না। ( সূরা যুমার : ৩৯)

আল্লাহ তাআলা আমাদের অতি নিকটবর্তী ও শ্রবণকারী। তাঁর নিকট কোনো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন:

(আরবি)

আর যদি আমার বান্দারা তোমার নিকট আমার সম্বন্ধে প্রশ্ন করে তবে বল: নিশ্চয়ই আমি অতি নিকটে... (সূরা বাকারা: ১৮৬)

৪। সেসব মুশরিকরা প্রচণ্ড বিপদে পড়লে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকত।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর চারদিক থেকে ধেয়ে আসে তরঙ্গ এবং তাদের নিশ্চিত ধারণা হয় যে, তাদেরকে পরিবেষ্টন করা হয়েছে। তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে তাঁর জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, যদি আপনি এ থেকে আমাদেরকে নাজাত দেন, তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সূরা ইউনুস : ২২)

তারা তাদের আউলিয়া-অভিভাবকদেরকে (যারা মূর্তির আকারে ছিল) ডাকত সুখের সময়। এতদসত্ত্বেও কোরআন তাদেরকে কাফের আখ্যায়িত করেছে। তাহলে যেসব মুসলিম সুখ, প্রচণ্ড বিপদ ও পরীক্ষার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা নেককার (মৃত) ব্যক্তিদের ডেকে তাদের নিকট ঊদ্ধার কামনা করে, তাদের সম্বন্ধে আপনাদের কি ধারণা? তারা কি আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী পড়েনি?

(আরবি)

তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না ? আর তারা তাদের আহ্বান সম্পর্কে উদাসীন। আর যখন মানুষকে একত্র করা হবে, তখন এ উপাস্যগুলো তাদের শত্রু হবে এবং তারা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে। (সূরা আহকাফ : ৫-৬)

৫। অনেকের ধারণা, মুশরিকরা (যাদের কথা কোরআনে আছে) পাথরের তৈরি মূর্তিদের নিকট দোয়া করত। এটা ভূল । কারণ, যে মূর্তিদের কথা কোরআনে বর্ণিত আছে তারা ছিলেন নেককার ব্যক্তি।

বোখারি শরিফে ইবনে আব্বাস রা. হতে সূরা নূহের ঐ কথার ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে:

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللّهُ عَنْهُمَا فِي قَوْلِهِ تَعَالي فيِ سُورةِ نُوحٍ :( وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آَلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا ) قَالَ هَذِهِ اَسْمَاءُ رِجَالٍ صاَلِحِيْنَ مِنْ قَوْمِ نُوْحٍ فَلَمَّا هَلَكَ اُولَئِكَ أوْحيَ الشَّيْطَانُ إلَي قَوْمِهِمْ : أنِِ انْصِبُو إليَ مَجَالِسِهِمْ الَّتِي كَانُوا يَجْلِسُوْنَ فِيهَا أنْصَابًا وَ سَمُّوْهَا بِأسْمَائِهِمْ فَفَعَلُوْا وَلَمْ تُعْبَدْ حَتَّي إذَا هَلَكَ اُولَئِكَ وَنُسِيَ الْعِلْمُ عُبِدَتْ ( البخاري )

(আর তারা বলল: তোমরা তোমাদের মাবুদদের ত্যাগ করো না। আর ত্যাগ করো না ওদ্দ, সুয়ায়’, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাছর কে) এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রা. বলেন: এরা ছিলেন নূহ আ:-এর কওমের নেককার ব্যক্তি। যখন তারা মৃত্যুমুখে পতিত হলেন, শয়তান তখন তাদের কওমের লোকদের বলল: তারা যেখানে বসত সেখানে তাদের মূর্তি বানিয়ে স্থাপন করো, আর তাদের নামকরণও করো। তারা সেটাই করল, কিন্তু তখনও তাদের ইবাদত করা হতো না। তারপর যখন এই লোকেরা মৃতু মুখে পতিত হল, মূর্তি স্থাপনের মূল বিষয় সংক্রান্ত তথ্য মানুষ বি:স্মৃত হয়ে গেল, তখন থেকেই এই মূর্তিদের ইবাদত শুর হয়ে গেল। (বোখারি)

৬। আল্লাহ তাআলা নবী ও আউলিয়াগণকে আহ্বানকারীদের ধিক্কার দিয়ে বলেন:

(আরবি)

বল, তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে করো। তারা তো তোমাদের দু:খ-দুর্দশা দূর করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না। তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে তাঁর নিকটতর? আর তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর আজাবকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার রবের আজাব ভীতিকর। ( সূরা ইসরা : ৫৬-৫৭)

ইবনে কাসীর র. এই আয়াতের তাফসিরে যা বলেন তার সারাংশ হল, আয়াতটি সেসব লোকের শানে নাযিল হয়েছে, যারা ঈসা আ. ও মালাইকাদের ইবাদত করত। যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের নিকট দোয়া করত এই আয়াত সেসব ব্যক্তিদের কাজের প্রতিবাত করছে। তারা নবী কিংবা ওলী হলেও একই কথা প্রযোজ্য।

৭। কেউ কেউ ধারণা করে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট বিপদে মুক্তি চাওয়া জায়েয। তারা বলে: সত্যিকারের বিপদ ঊদ্ধারকারী হলেন আল্লাহ, আর রাসূল বা আউলিয়াদের নিকট বিপদ থেকে উদ্ধার চাওয়া রূপক স্বরূপ। যেমন মানুষ বলে থাকে যে, আমাকে ঐ ঔষধ বা ডাক্তার রোগ মুক্তি দিয়েছে। তাদের এসব কথা ঠিক নয়। কারণ ইবরাহীম আ. বলেন:

(আরবি)

যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অত:পর তিনিই আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন। আর যিনি আমাকে খাওয়ান এবং পান করান। আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন যিনি আমাকে আরোগ্য করেন। (সূরা শুয়ারা : ৭৮-৮০)

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা বার বার তিনিই করেন বলে কথাটা উল্লেখ করেছেন এজন্য যে, নিশ্চয়ই হিদায়াত দাতা, রিযক দাতা, সুস্থতা দানকারী একমাত্র তিনিই, অন্য কেউ নয়। সুতরাং ঔষধ হচ্ছে আল্লাহর রহমতের দ্বারা রোগমুক্তির উপকরণ, সে নিজে রোগমুক্তি দাতা নয়।

৮। এমন অনেক ব্যক্তি আছে যারা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য, উদ্ধারকারী জীবিত কি মৃত তা প্রভেদ করে না। কিন্ত আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

জীবিত ও মৃত ব্যক্তিরা কখনই এক সমান নয়। (সূরা ফাতির : ২২ )

অন্যত্র বলেন:

(আরবি)

তখন তার নিজের দলের লোকটি শত্রুদলের লোকটির বিরুদ্ধে তার কাছে সাহায্য চাইল। (সূরা কাসাস : ১৫ )

ঘটনাটি এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে যিনি মুসা আ.-এর নিকট সাহায্য চেয়েছিলেন শত্রুর বিরুদ্ধে। আর তিনি সাহায্যও করেছিলেন।

(আরবি)

সে তাকে মুষ্টিঘাত করে, ফলে সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। (সূরা কাসাস: ১৫)

কিন্তু কোনো অবস্থাতে মৃত ব্যক্তির নিকট বিপদে সাহায্য চাওয়া জায়েয নয়। কারণ, সে আহ্বান শুনতে পায় না। আর শুনেও যদি, কিন্তু জবাব দেয়ার কোনো ক্ষমতা তার নেই। এ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

যদি তোমরা তাদেরকে ডাক, তারা তোমাদের ডাক শুনবে না; আর শুনতে পেলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে এবং কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শরিক করাকে অস্বীকার করবে। (সূরা ফাতির : ১৪ )

এই আয়াত হতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হল যে, মৃতদের ডাকাডাকি করা, তাদের নিকট দোয়া চাওয়া শিরকের পর্যায়ভুক্ত।

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর তারা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। (তারা) মৃত, জীবিত নয় এবং তারা জানে না কখন তাদের পুনরুজ্জীবিত করা হবে। (সূরা নাহল : ২০-২১ )

৯। সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, লোকেরা কিয়ামতের দিন নবীদের নিকট এসে শাফায়াত প্রার্থনা করবে। এভাবে শেষ পর্যায়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে, তাদের উপর আপতিত বিপদ হতে উদ্ধারের জন্য শাফায়াতের অনুরোধ করবে। তখন তিনি বলবেন: হ্যাঁ আমি তা করব। তারপর তিনি আরশের নীচে সিজদা করবেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট সে বিপদ হতে উদ্ধার এবং শীঘ্র বিচার কার্য শুরুর প্রার্থনা করবেন। এই শাফায়াত এমন সময় তাঁর নিকট চাওয়া হবে, যখন তিনি জীবিত হবেন এবং তাঁর সাথে লোকেরা কথা বলবে এবং তিনিও তাদের সাথে কথা বলবেন। তারা আরজি জানাবে যে, তিনি যেন তাদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ (শাফায়াত) করেন এবং তাদের জন্য বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করেন। আর এটাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করবেন। (আমার মাতা পিতা তার জন্য কোরবান হউক)।

১০। মৃত ও জীবিতদের কাছে প্রার্থনার মধ্যে পার্থক্য যে আছে, সে প্রসঙ্গে সব চেয়ে বড় দলিল উমর রা.-এর আমল, যখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষের প্রসার ঘটেছিল। তখন তিনি রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চাচা আববাস রা.-এর নিকট তাদের জন্য দোয় চেয়েছিলেন। রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট দোয়া চাননি, কারণ ততদিনে তিনি উপরের বন্ধু (মহান আল্লাহ) র নিকট প্রত্যাবর্তন করেছেন।

১১। বহু আলেম ধারণা করেন যে, অসীলা এবং বিপদে সাহায্য চাওয়া একই ধরণের। আসলে তাদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। অসীলা হল আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করা কোনো মাধ্যম ধরে। যেমন বলা হে আল্লাহ! আপনার প্রতি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লামের প্রতি আমাদের যে ভালবাসা আছে, তার অসীলায় আমাকে বিপদ মুক্ত করুন। এভাবে দোয়া করা জায়েয। আর বিপদে সাহায্য চাওয়া হল, কোনো গাইরুল্লাহর নিকট কিছু চাওয়া। যেমন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে বিপদ হতে উদ্ধার করুন। এটা কোন ক্রমেই জায়েয নয়। এটা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর আল্লাহকে ছেড়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার কোনো উপকার করতে পারবে না কোনো ক্ষতি। যদি তা কর অবশ্যই তুমি জালিমদের (মুশরিক) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা ইউনুস : ১০৬ )

আল্লাহ তাআলা তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অন্যদের বলতে বলেছেন:

(আরবি)

বল, আমি কোনো ক্রমেই তোমাদের ক্ষতি বা ভাল করার ক্ষমতা রাখি না। (সূরা জিন : ২১)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

বল, আমি তো কেবল আমার প্রতিপালককেই ডাকি, আর তার সাথে কাউকে শরিক করি না। (সূরা জিন : ২০ )

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

إذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ وَ إذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ ( رواه الترمذى وقال حسن صحيح )

অর্থাৎ, যখন (কিছু) চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। (তিরমিজি, হাসান সহিহ)

কবি বলেন:

বিপদে একমাত্র আল্লাহর নিকটেই চাই

কারণ, তিনি ব্যতীত দূরকারী আর তো কেউ নাই

আল্লাহ্ তাআলা কোথায় আছেন?
যে আল্লাহ্ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি কোথায় আছেন তা জানা আমাদের জন্য ওয়াজিব, যাতে করে আমাদের অন্তরের দোয়া ও সালাতের দ্বারা তাঁর প্রতি আমরা ধাবিত হতে পারি । যে ব্যক্তি তার রব কোথায় আছেন সে সম্বন্ধে জ্ঞাত নয়, সে খুবই ক্ষতির মধ্যে আছেন। কারণ, যে এ ব্যাপারে জানবে না, সে তাঁর ইবাদতের হক পুরাপুরি আদায় করতে পারে না।

মহান আল্লাহ আরশের উপরে আছেন। আর আল্লাহ যে উপরে আছেন এইটি তাঁর একটি সিফাত। আর এই সিফাত কোরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত তাঁর অন্যান্য সিফাতের মতই। যেমন শ্রবন করা, দেখা, কথা বলা, অবতীর্ণ হওয়া এবং এ জাতীয় অন্যান্য সিফাত । সালাফে সালেহীনদের আকিদা এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দল তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এই ঈমান পোষণ করে যে, যেসব বিষয় সম্বন্ধে মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর কিতাবে খবর দিয়েছেন, তা কোনো রকম পরিবর্তন, অস্বীকৃতি ও সৃষ্টির সাথে তুলনা ব্যতীতই তাঁর সাথে প্রযোজ্য। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

কোনো কিছুই তাঁর মত নয়। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।(সূরা শুরা : ১১ )

সেসব সিফাতের একটি হচ্ছে, তিনি সৃষ্টির উপরে আছেন। এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব।

এ কারণে যখন ইমাম মালেককে পবিত্র কোরআনের আয়াত (অর্থাৎ, রহমান (আল্লাহ) আরশের উপর আছেন) সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয়েছিল। । তিনি বলেছিলেন:

উপরে আছেন তা তো বুঝাই যাচ্ছে, কিন্তু কিভাবে আছেন তা অজানা, আর তার উপরে ঈমান আনা ওয়াজিব।

হে মুসলিম ভাই, ইমাম মালেকের বক্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করুন। তিনি আল্লাহ উপরে আছেন, এ বিষয়ে ঈমান আনাকে প্রতিটি মুসলিমের জন্য ওয়াজিব বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু কিভাবে আছেন, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।(ঈমানের জন্য সেটি জানা জরুরিও নয়)

এ জন্যই আল্লাহ তাআলার যে সমস্ত সিফাত কোরআনে ও সহিহ হাদিসে উল্লেখ আছে, তার কোনো একটাকে অস্বীকার করলে, (যেমন আল্লাহ আসমানের উপরে আছেন) সে ঐ আয়াত বা হাদিসকে অস্বীকারকারী হল। কারণ, এই সিফাত হচ্ছে পূর্ণতার, সম্মানের ও উঁচু। তা কোন ক্রমেই আল্লাহ হতে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু পরবর্তী যামানার কিছু ওলামা যারা দর্শনের (philosophy)দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছ কিছু আয়াত ও সিফাতকে বিকৃত করতে সচেষ্ট হয়।ফলে এদের কারণে বহু লোকের আকিদা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা আল্লাহ পাকের এই পূর্ণ সিফাতকে পর্যন্ত অস্বীকার করে।তারা সালাফগণের পথের বিরোধিতা করে। কিন্তু মূলে সালাফগণের রাস্তাই হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্য, জ্ঞান নির্ভর ও হিকমত পূর্ণ।ঐ ব্যক্তির কথা কতই না উত্তম যিনি বলেন: প্রতিটি ভালই রয়েছে সালাফগণের রাস্তা অনুসরনের মধ্যে, আর প্রতিটি খারাবীই রয়েছে পরববর্তীগনের বিদআতকে মূল কথা বলে মেনে নিয়ে তা অনুসরনের মধ্যে।

কোরআন ও সহিহ হাদিসে আল্লাহ তাআলার যে সমস্ত সিফাতের কথা বলা হয়েছে তার উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। সুতরাং তাঁর সিফাতসমূহের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা, কিংবা কিছু সিফাতকে যেভাবে আছে সেভাবে স্বীকার করা আর কিছুকে পরিবর্তন করে বিশ্বাস করা। এমনটি কোনো ক্রমেই জায়েয হবে না।

যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শ্রবণকারী ও দর্শনকারী, তার মানে এই নয় যে, তার শ্রবণ ও দর্শনযন্ত্র আমাদেরই মত।

এমনিভাবে তার জন্য এটাও বিশ্বাস করা দরকার যে, আল্লাহ আসমানের উপর আছেন, ঠিক যেভাবে তার সম্মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় সেভাবেই আছেন। কোনো সৃষ্টির সাদৃশ্য হয়ে নয়। কারণ এই সমস্ত সিফাত আল্লাহ তাআলার পূর্ণতা প্রকাশ করে। তা তিনি তাঁর কিতাবে প্রমাণ করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদিসেও তা প্রমাণ করেছেন। সত্যিকারের ফিতরত ও বুদ্ধি-বিবেচনাও একে স্বীকার করে।

ইমাম বোখারি রহ.-এর উস্তাদ নাইম ইবনে হাম্মাদ রহ. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে তুলনা করল সে কুফরি করল। আর আল্লাহ তাআলা নিজের সম্বন্ধে যা বলেছেন তাকে যে অস্বীকার করল সেও কুফরি করল। আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের সম্বন্ধে কিংবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্বন্ধে যা বলেছেন তাতে কোনো তুলনার অবকাশ নেই। (শরহু আকিদাহ্ তাহাবিয়া)।

আল্লাহ আরশের উপর আছেন
কোরআন, সহিহ হাদিস, সঠিক বুদ্ধি ও সহিহ অনুভূতি সমস্ত কিছুই উপরোক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করে।

১। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন:

(আরবি)

পরম করুণাময় (আল্লাহ) আরশের উপর আছেন। (সূরা তাহা : ৫ )

সহিহ বোখারিতেও এমনটি বর্ণিত হয়েছে।

২। অন্যত্র বলেন:

(আরবি)

যিনি আসমানে আছেন, (অর্থাৎ আল্লাহ) তিনি তোমাদেরসহ জমিন ধসিয়ে দেয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ... (সূরা মূলক: ১৬ )

ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতের তাফসিরে বলেন, তিনি আল্লাহ। (তাফসিরে ইবনুল জাওযি)।

৩। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

(আরবি)

তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে। (সূরা নাহল : ৫০ )

৪। আল্লাহ তাআলা নবী ঈসা আলাইহিস সালাম সম্বন্ধে বলেন:

(আরবি)

বরং তিনি (আল্লাহ) তাকে তাঁর নিকটে উঠিয়ে নিয়েছেন। (সূরা নিসা : ১৫৮ )

৫। তিনি আরও বলেন:

(আরবি)

আর তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। (সূরা আনআম : ৩ )

এ সমস্ত আয়াতের তাফসিরে ইবনে কাসির রহ: বলেন: তাফসিরকারকগণ এ ব্যপারে একমত হয়েছেন যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে সেভাবে বর্ণনা করবেন না যেমনটি করেছে জাহমিয়া সম্প্রদায় (এক গোমরাহ দল)। তারা বলে, আল্লাহ সবত্র আছেন। মহান আল্লাহ তাদের এ জাতীয় কথা হতে পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে।

তবে মহান আল্লাহ যে বলেছেন,

(আরবি)

তোমরা যেখানেই থাকনা কেন, তিনি তোমাদের সাথে আছেন। (সূরা হাদীদ: ৪ )

তার ব্যখ্যা হল; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমাদের সাথে আছেন দেখার দ্বারা, শ্রবনের দ্বারা, যা বর্ণিত আছে তাফসিরে জালালাইন ও ইবনে কাসীরে। এই আয়াতের পূর্বের ও শেষের অংশ এই কথারই ব্যাখ্যা প্রদান করে।

৬। রাসূলকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম আসমানের উপর উঠান হয়েছিল, তাঁর রবের সাথে কথোপকথনের জন্য। আর সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল। (বোখারি ও মুসলিম)।

৭। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

ألاَ تأمَنُونيِْْ وَأنا أمِينُ مَنْ فيِ السَّمَاء ( وهو اللهُ ) ( ومعني في السَّماء : علي السَّمَاء ) ( متفق عليه )

তোমরা কি আমাকে আমিন (বিশ্বাসী) বলে স্বীকার কর না? আমি তো সে জাতের নিকট আমিন বলে পরিগণিত যিনি আসমানের উপর আছেন। আল্লাহর নিকট। (বোখারি ও মুসলিম)।

৮। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

إرْحَمُوا مَنْ فيِ الارضِ يَرْحَمُكٌمْ مَنْ في السَّمَاء ( أي هو الله ) ( الترمذي وقال حسن صحيح )

যারা জমিনে আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তবেই যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন। (তিরমিযী হাসান সহিহ)।

৯। অন্য হাদিসে এসেছে:

سأَلَ رَسُولُ الله صلي الله عليه وسلَّمَ : جَارِيَةً فَقَالَ لَهَا : أيْنَ اللهَ؟ فَقَالَتْ في السَّماءِ قَالَ مَنْ أنا؟ قَالَتْ أنْتَ رَسٌولُ اللهِ قَالَ : أعْتِقْهَا فإنَّها مُؤْمِنَةً . ( مسلم )

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রীতদাসীকে জিজ্ঞেস করলেন: বলত আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আসমানে। তারপর তিনি বললেন: বলত আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে মুক্ত করে দাও, কারণ সে মুমিন। (মুসলিম)।

১০। অন্যতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

وَالْعَرْشُ فَوْقَ الْمَاء وَاللهُ فَوْقَ عَرْشِهِ وَهُوَ يَعْلَمُ مَا انتُمْ عَلَيْهِ . ( حسن رواه أبو داود )

আরশ পানির উপর আর আল্লাহ আরশের উপর তৎসত্তেও, তোমরা কি করবা না কর তিনি তা জ্ঞাত আছেন। (আবু দাউদ হাসান)।

১১।আবু বকর রা. বলেছেন:

ومَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فَانَّ اللهَ فيِ السماء حَيٌّ لا يمُوتُ ( رواه الدارمي في الرد غلي الجهمية باسناد صحيح )

যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আসমানের উপর জীবিত আছেন, কখনই মৃত্যুমুখে পতিত হবেন না। (সুনানে দারেমি সহিহ সনদ) জাহমীয়াদের প্রতি উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

১২। আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারককে র. প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমরা কিভাবে আমাদের রব সম্বন্ধে জানতে পারব? উত্তরে বলেন: তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি হতে আলাদা হয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের জাত আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি থেকে আলাদা হয়ে। তার ইই উপরে থাকা সৃষ্টির সাথে কোন সামঞ্জস্য নেই।

১৩। চার ইমামগণই এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি আরশের উপর আছেন তিনি তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন।

১৪। মুসল্লী সিজদায় বলেন: (আমার মহান উচু রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। দোয়া করার সময় সে তার হস্তদয়কে আসমানের দিকে উত্তলন করে।

১৫। যখন বাজ্জাদের প্রশ্ন করা হয়, বলত আল্লাহ কেথায়? তখন তারা তাদের স্বভাবজাত প্রবৃত্তির বশে বলে: তিনি আসমানে।

১৬। সুস্থ বুদ্ধি, বিবেক, আল্লাহ যে আসমানে আছেন তা সমর্থন করে। যদি তিনি সর্বত্রই বিরাজমান হতেন তবে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতেন এবং সাহাবীদের শিক্ষা দিতেন। দুনিয়ার বুকে এমন অনেক নাপাক অপবিত্র জায়গা আছে যেখানে তাঁর থাকার প্রশ্নই উঠে না।

১৭। যদি বলা হয়, আল্লাহ পাক তার জাত সহকারে আমাদের সাথে সর্বস্থানে আছেন, তবে তার জাতকে বিভক্ত করতে হয়। কারণ, সর্বত্র বলতে বহু জায়গা বুঝায়। এটাই ঠিক যে আল্লাহ তাআলার পবিত্র জাত এককই। তাকে কোন অবস্থাতেই বিভক্ত করা যায় না। তাই ঐ কথার কোন মূল্য নেই, যে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। আর এটা ছাবেত যে, তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন। তাঁর শ্রবেনর, দেখার ও জ্ঞানের দ্বারা।

ইসলামে ক্ষতিকর আমলসমূহ
ইসলামে এমন কিছু আমল আছে, তার কোনো একটিও যদি একজন মুসলিম সম্পাদন করে তবে সে শিরক করল বলে বিবেচিত হবে। ফলে তার সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং চিরস্থায়ীভাবে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। সেসব গুনাহ মহান আল্লাহ তওবা ব্যতীত ক্ষমা করেন না । নিম্নে সেই আমল গুলো বর্ণিত হল:

১। গাইরুল্লাহর নিকট দোআ করা।

এ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর তাঁকে ছেড়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার উপকার করতে পারে, আর না কোনো ক্ষতি করতে পারে। আর যদি তা কর, তবে অবশ্যই তুমি যালেমদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা ইউনুস: ১০৬)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছেন:

منْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُوْنِ اللهِ نِدًّا دخَلَ النَّارَ ( رواه البخاري )

যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁর কোনো সমকক্ষকে ডাকা অবস্থায় মারা যাবে, সে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। (বোখারি)

২। তাওহিদের কথা শুনলে যাদের অন্তর ঘৃণায় রি রি করে উঠে, তারাই একমাত্র তাঁর নিকট দোয়া করা কিংবা বিপদে সাহায্য চাওয়াকে অপছন্দ করে। আর রাসূলুল্লাহ, মৃত আউলিয়া কিংবা অদৃশ্য কারো নিকট দোয়া করার সময় অন্তর খুশিতে ভরে উঠে। তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া ফলপ্রসূ মনে করে। এগুলো সবই মুশরিকদের নিদর্শন। এদের সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, এক আল্লাহর কথা বলা হলে তাদের অন্তর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যগুলোর কথা বলা হলে তখনই তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়। (সূরা যুমার: ৪৫)

এই আয়াত সেসব লোকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যারা একমাত্র আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কারীদের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়। তাদেরকে তারা ওহাবি বলে সম্বোধন করে। কারণ ওহিবিরাই মানুষদেরকে তাওহিদের দিকে ডেকে থাকে।

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা কোনো ওলীর নামে পশু জবাই করা। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও জবাই কর। (সূরা কাওসার: ২)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِاللهِ ( رواه مسلم )

যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে জবাই করে, আল্লাহ তার উপর লানত করেন। (মুসলিম)

৪। নৈকট্য হাসিল ও ইবাদতের নিয়তে কোনো সৃষ্টিকে নজর-নেয়াজ দেয়া। কারণ, নজর অথবা কিছু উৎসর্গ করা যাবে কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে । যেমন আল কোরআনে বলা হয়েছে:

(আরবি)

হে আমার রব আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয় আমি তা খাসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। (সূরা আলে ইমরান : ৩৫)

৫। নৈকট্য হাসিল বা ইবাদতের নিয়তে কবরের চতুর্পাশ্বে তওয়াফ করা।

কারণ, তাওয়াফ শুধু কাবা শরিফের সাথেই নির্দিষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর তারা যেন তওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের। (সূরা হজ্জ: ২৯)।

৬। গাইরুল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা।

কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

একমাত্র তাঁরই উপর তায়াক্কুল কর যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক। (সূরা ইউনুস : ৮৪)৭। রাজা বাদশাহ কিংবা জীবিত বা মৃত সম্মানিত কোনো ব্যক্তিকে জেনে বুঝে ইবাদতের নিয়তে রুকু বা সিজদা করা। কারণ রুকু সিজদা হচ্ছে ইবাদত আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট।

৮। দলিল দ্বারা সমর্থিত ইসলামের পরিচিত কোনো রুকন অস্বীকার করা। যেমন সালাত, জাকাত, সওম ও হজ। অথবা ঈমানের ভিত্তিসমূহ যেমন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, নবী-রাসূল, কিয়ামত দিবস ও তাকদিরের ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন- এর যে কোনো একটিকে অস্বীকার করা। এমনিভাবে দীনের অবিচ্ছেদ্য বিষয়াদির কোনোটিকে অস্বীকার করা।

৯- ইসলাম বা ইসলামি অর্থনৈতিক বা চারিত্রিক কোনো রীতি অনুরূপভাবে ইবাদত, মুআমালাত মোট কথা ইসলাম প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয়কে অপছন্দ করা। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

তা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। অতএব তিনি তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ : ৯)।

১০। কোরআন কিংবা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের কোনো হুকুম-আহকামকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’? তোমরা ওজর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরি করেছ। (সূরা তাওবা : ৬৫-৬৬)।

১১- কোরআনুল করিম কিংবা সহিহ হাদিসের কোনো হুকুম জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা।

১২- আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতকে তিরষ্কার-র্ভৎসনা করা, দ্বীনকে অভিশাপ দেয়া, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেয়া কিংবা তাঁর কোনো কাজকে বিদ্রুপ করা, অথবা তিনি যে আহকাম দিয়েছেন তার কোনো সমালোচনা করা। এর যে কোনো একটির সাথে জড়িত হলেই ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।

১৩- কোরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আল্লাহ তাআলার সুন্দর সুন্দর নাম ও সিফাতসমূহ, তাঁর কার্যাদির যে কোনো একটি অজ্ঞতা বা ব্যাখ্যা ব্যতীত অস্বীকার করা।

১৪- মানুষের হিদায়েতের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত নবী-রাসূল সকলের প্রতি ঈমান আনয়ন না করা। অথবা তাদের কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা। কারণ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন:

(আরবি)

আমরা তাঁর রাসূলদের কারো মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। (সূরা বাকারা : ২৮৫)

১৫- আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত বিধান মত বিচার না করা, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে যে এই যুগে ইসলামের সেসব নীতি সঙ্গত ও উপযোগী নয়, অথবা অন্য যে সব (কুফরি) আইন চালু আছে তা সঠিক।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর যারা আল্লাহ প্রদত্ত আইনে বিচার করে না তারাই কাফের। (সূরা মায়িদা: ৪৪)

১৬- ইসলাম বহির্ভূত আইনে বিচার করা, কিংবা ইসলামি বিচারকে অপছন্দ করা। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। (সূরা নিসা: ৬৫)

১৭- গাইরুল্লাহকে আইন প্রণয়নের অধিকার দেয়া। যেমন একনায়কত্ব, গণতন্ত্র কিংবা ইসলামের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক অন্য কোনো মতবাদপুষ্ট যারা আল্লাহর শরিয়ত বিরোধী আইন প্রণয়ন করে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

তাদের জন্য কি এমন কিছু শরিক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শুরা : ২১)

১৮- আল্লাহ কতৃক হালালকৃত বিষয়াদিকে হারাম করা বা হারামকৃত বিষয়াদিকে হালাল করা। যেমন কিছু সংখ্যক আলেম তাবীল (বিকৃত ব্যাখ্যা) দ্বারা সুদকে হালাল বলেন। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম । (সূরা বাকারা: ২৭৫)

১৯- ধ্বংসকারী চিন্তা ও মতবাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, যেমন নাস্তিক্যবাদ, মাসুনিয়া- ইহুদিবাদ, মার্কসবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ যা আরব দেশীয় অমুসলিমদেরকে অনারব মুসলিমদের উপর প্রাধান্য দেয় ইত্যাদি।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান: ৮৫)

২০- দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করা বা ইসলামকে পরিত্যাগ করে অন্য ধর্মকে গ্রহণ করা। কারণ আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেন:

(আরবি)

আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা বাকারা : ২১৭)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্বন্ধে বলেন:

مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فاقْتُلُوهُ ( رواه البخاري )

যে নিজ দ্বীনকে পরিত্যাগ করবে, তাকে হত্যা করে ফেল। (বোখারি)

২১- ইসলাম বিরোধী ইহুদি, খৃষ্টান অথবা নাস্তিকদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাহায্য- সহযোগিতা করা। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:

(আরবি)

মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোন ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন এবং আল্লাহর নিকটই প্রত্যাবর্তন। (সূরা আলে ইমরান: ২৮)

২২- নাস্তিক যারা আল্লাহর অস্তত্বকেই স্বীকার করে না অনুরূপভাবে ইহুদি কিংবা খৃষ্টান, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনে না, তাদেরকে কাফের মনে না করা। কারণ আল্লাহ তাআলা তাদের কাফের বলে সম্বোধন করে বলেন:

(আরবি)

নিশ্চয় কিতাবিদের মাধ্যে যারা কুফরি করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে থাকবে স্থায়ীভাবে। ওরাই হল নিকৃষ্ট সৃষ্টি। (সূরা বাইয়েনাহ : ৬ )

২৩- সূফী বা পীর নামে খ্যাত কিছু লোক আছে যারা অদ্বৈতবাদের কথা বলে। তারা বলে জগতে আল্লাহ ছাড়া কিছুই নেই। তাদের প্রশিদ্ধ একজন এমন কথাও বলে, কুকুর শুকর সবই আমাদের মাবুদ। সে আরও বলে, আল্লাহতো গির্জার পাদ্রি ছাড়া কেউ নন! এদের নেতা মনসুর হাল্লাজ বলত: আমিই তিনি, তিনিই আমি। ফলে আলেমরা তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাকে কতল করা হয়েছিল। এ ধরনের আকিদা পোষণ করাও ইসলাম থেকে বিচ্যুতির কারণ।

২৪- দ্বীনকে রাষ্ট্রীয় কার্য হতে, অনুরূপ রাষ্ট্রকে দ্বীন হতে আলাদা করে ফেলা, আর বলা যে ইসলামে রাজনীতি নেই। কারণ, এসব মতবাদ কোরআন হাদিস অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে।

২৫- কোনো কোনো সূফী বলে যে, মহান আল্লাহ দুনিয়া নির্বাহের জন্য তার কার্যসমূহ কিছু কিছু আউলিয়ার হাতে অর্পণ করেছেন। তাদের কুতুব বলা হয়। এমনসব ধারণা আল্লাহর কার্যাবলির মধ্যে শিরক বলে পরিগণিত। কারণ আল্লাহ বলেন:

(আরবি)

তাঁর হাতেই রয়েছে আসমান ও যমিন পরিচালনার ক্ষমতা। (সূরা যুমার: ৬৩)

২৬- এসব বাতিল আকিদা ও আমল অযু নষ্টকারী আমল সমূহের মত। এর কোনো একটাও যদি কোনো মুসলিম বিশ্বাস করে কিংবা আমল করে তবে তার ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া ও নিজ সম্পাদিত আমল নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষ পেতে হলে তাকে তাওবা করে আবারো ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

যদি তুমি শিরক কর তবে তোমার আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা যুমার: ৬৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে এই দোয়া শিখিয়েছেন।

اللّهمَّ انّا نَعُوذُبِكَ مِنْ اَنْ نُشْرِكَ بِكَ شيئاً نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لا نَعْلَمُ ( رواه أحمد بسند حسن )

হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট জেনে বুঝে আপনার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করা হতে পানাহ চাই, আর যা আমাদের জানা নাই তা হতে ক্ষমা চাই। (মুসনাদে আহমাদ, সনদ হাসান)

মিথ্যাবাদী দজ্জালদের বিশ্বাস করো না
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ اَتي عَرَّافاً أوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أنْزِلَ عَلي مُحَمَّدٍ ( صحيح رواه أحمد )

যে ব্যক্তি কোনো গণক কিংবা (জিন পুজারি) ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন করল এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করল, তবে সে সেইসব বিষয়কে অস্বীকার করল যা রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর অবতীর্ণ হয়েছে। ( মুসনাদ আহমাদ, সনদ সহিহ)

এ কারণে গণক, জিন পূজারি, যাদুকর এবং এই জাতীয় ব্যক্তি, যারা দাবী করে যে মানুষের অন্তরের খবর, রোগের ঔষধ কিংবা ভবিষ্যতের খবর তারা জানে, তাদের কথা বিশ্বাস করা হারাম। কারণ এ জাতীয় বিষয়াদি সম্বন্ধে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জ্ঞাত আছেন।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর তিনি অন্তরসমূহের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা হাদিদ : ৬ )

অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:

(আরবি)

বল আসমান ও জমিনে আল্লাহ ব্যতীত এমন কেউ নেই যে গায়েবের কথা জানে। (সূরা নামল : ৬৫ )

এ জাতীয় দাজ্জালদের নিকট হতে যেসব কথা বের হয়, তা হচ্ছে ধোকা ও প্রতারণা, অনুমান নির্ভর কথা। তাদের বেশিরভাগ কথা হচ্ছে শয়তানের তরফ হতে মিথ্যা ও বানোয়াট।

কেবলমাত্র স্বল্প বুদ্ধির লোকেরাই এইসব ধোকায় পতিত হয় । যদি তারা সত্যিই গায়েবের খবর জানত, তবে অবশ্যই মাটির নিচের গুপ্ত ধন সম্পদ বের করে নিত। ফলে তারা আর দরিদ্র থাকত না। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করতে হত না। আর যদি তারা প্রকৃত অর্থেই সত্যবাদী হত, তবে তারা ইহুদিদের গোপন খবরাদি ও ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে আমাদের জানিয়ে দিত, যদ্দ্বারা আমরা তাদের পরাজিত করতে পারতাম।

গাইরুল্লাহর নামে শপথ করো না
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لَاتَحْلِفُوا بِأبائِكُم مَنْ حَلَفَ بِاللهِ فَلْيُصَدَّقْ وَمَنْ حَلَفَ لَهُ بِاللهِ فَلْيَرْضَ وَمَنْ لَمْ يَرْضَ بِاللهِ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ ( صحيح ابن ماجة )

তোমরা তোমাদের বাপ দাদাদের নামে কসম খেও না। যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে কসম খায়, সে যেন তা সত্যতে পরিণত করে। আর যার নিকট আল্লাহর নামে শপথ করে, সে যেন তাতে খুশি থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে খুশি নয়, সে আল্লাহর কেউ নয়। (সহিহ ইবনে মাজাহ, সহিহ আল-জামে)

২। অন্যত্র মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের পিতা মাতার নামে শপথ করো না। বন্ধু বান্ধবের নামেও না। এক কথায় আল্লাহ ছাড়া আন্য কারো নামেই শপথ করো না। আর একমাত্র সত্য কসমই করো। (সহিহ, আবু দাউদ)

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

مَنْ حَلَفَ بِغيرِاللهِ فَقَدْ أشْرَكَ ( صحيح رواه أحمد وغيره )

যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করল সে শিরক করল। (সহিহ, আহমাদ ও অন্যান্যরা)

৪। অন্যত্র রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ حَلَفَ عَلي يَمِيْنٍ صَبْرٍ يَقْتَطِعُ بِهَا مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ هُوَ فِيْهَا فَاجِرٌ لَقِيَ اللهَ وَ هُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانٌ ( متفق عليه )

যে ব্যক্তি কোনো বিচারকের বিচারের জন্য এমন মিথ্যা শপথ করে যাতে কোনো মুসলিমের সম্পদ নষ্ট হয়, তবে সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ পাবে যখন তিনি তার উপর রাগান্বিত থাকবেন। (বোখারি ও মুসলিম)

৫। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

مَنْ حَلَفَ عَلَي يَمِينٍ فَرأي غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْها فلْيأْتِ الذي هُوَ خَيْرٌ وَلْيُكَفِّر عَنْ يَمِيْنِهِ ( رواه مسلم )

যদি কোনো ব্যক্তি শপথ করল। অত:পর দেখল যে শপথের বিপরীত বস্তু তার থেকে উত্তম ও কল্যাণ কর। তাহলে সে যেন উত্তমটি গ্রহণ করে আর কৃত শপথের কাফফারা আদায় করে। ( সহিহ মুসলিম)

৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ حَلَفَ فَاسْتَثْني فَانْ شَاءَ مَضَي وَاِنْ شَاءَ تَرَكَ غَيْرَ حَنْثٍ ( صحيح رواه النسائي )

যদি কেউ ইনশাআল্লাহ বলে কোনো শপথ করে। তাহলে চাইলে সে তার উপর থাকতে পারে আবার ইচ্ছা হলে কোনো কাফফারা আদায় করা ছাড়াই তা ত্যাগ করতে পারে। (সহিহ, বর্ণনায় নাসায়ি)

৭। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করাকে গাইরুল্লাহর নামে সঠিক শপথ করা হতে উত্তম মনে করি।

৮। অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ حَلَفَ مِنْكُمْ فَقَالَ فِي حَلْفِهِ : باللاتِ وَالْعُزَّي فَلْيَقُل لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَمَنْ قَالَ لِصَاحِبِهِ تَعال أُقَامِرُكَ فَلْيَتَصَدَّقْ بِشَيئٍ ( متفق عليه )

যদি কেউ শপথ করতে গিয়ে বলে, লাত ও উজ্জার শপথ, তবে সে যেন বলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।আর কেউ যদি তার সাথীকে বলে, এস আমরা জুয়া খেলি, তবে সে যেন কিছু দান খয়রাত করে। ( বর্ণনায় সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম)

৯। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

مَنْ حَلَفَ بِمِلَّةِ غَيرِ الاسْلامِ كَاذِبًا فَهُوَ كَمَا قَالَ ( متفق عليه )

যদি কেউ কসম খেয়ে বলে, যদি আমি অমুক অমুক কাজ না করি তবে আমি অমুসলিম। যদিও সে উহা মিছামিছি বলে, তথাপি সে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। ( সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম)

১০
উপরোক্ত হাদিসসমূহ হতে শিক্ষনীয় বিষয়
১। নবী, কাবা, আমানত, পুত্র, পিতা মাতা, বংশ, আউলিয়া কিংবা এ জাতীয় কোনো মাখলুকের নামে শপথ করা হারাম। এদের নামে শপথ ছোট শিরকের পর্যায়ভুক্ত। কারণ যখন সে অন্যদের নামে শপথ করে, তখন তাদেরকে আল্লাহর ন্যায় সম্মান করে। আর তা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ জাতীয় কাজ হতে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। তওবা করে পরিত্যাগ করা উচিত। কখনও কখনও এই ধরনের শপথ বড় শিরকের পর্যায়ভুক্তও হয়ে যায়। যেমন, যদি কেউ কোনো ওলীর নামে শপথের সময় এই ধারনা পোষণ করে যে, তার গোপনীয় ক্ষমতা আছে, যদি তার নামে মিথ্যা শপথ করা হয় তবে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। এই ধারনা মনে থাকলে সে গোপন কথা জানা প্রতিশোধ ও ক্ষতি করার ক্ষমতার ব্যাপারে এই ওলীকে আল্লাহর পর্যায়ে জ্ঞান করল। ( কারণ এসব করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার আছে , কোনো জীবিত কিংবা মৃত ওলীর নেই)।

২। গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা শরিয়ত সম্মত নয়, তাই ঐ শপথ পালন করার মধ্যে কোনো বাধ্য বাধকতা নেই।

৩। যদি কেউ এমন শপথ করে যে, সে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদ করবে, অথবা কোনো পাপ কাজ করবে, তবে সে যেন তা না করে বরং শপথের কাফ্ফারা আদায় করে। এই কাফ্ফারা সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফরা হল দশজন মিসকিনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অত:পর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা কসমের হেফাজত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। (সূরা মায়িদা: ৮৯ )

১১
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
তাঁর চরিত্র ছিল পবিত্র কোরআন। আল্লাহ ও তাঁর দীনের জন্য তিনি রাগান্বিত হতেন, আবার তাঁর কারণেই খুশি হতেন। ব্যক্তিগত কারণে কোনো প্রতিশোধ নিতেন না কিংবা রাগান্বিত হতেন না। কিন্তু যখনই দেখতেন আল্লাহ তাআলার কোনো সম্মান নষ্ট হচ্ছে, তখনই তিনি রাগান্বিত হতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম সত্যবাদী ছিলেন। কোনো জিম্মা গ্রহণ করলে উত্তমভাবে তা আদায় করতেন। খুবই নরম ভাষাভাষী ছিলেন তিনি। পরিবারের লোকদের সাথে খুবই নম্র ব্যবহার করতেন। কুমারী মেয়েদের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। দৃষ্টি সর্বদা অবনত রাখতেন, আর চিন্তা ভাবনায় মশগুল থাকতেন। কখনও কোনো অশ্লীল কথা বলতেন না, কোনো অভিশাপ দিতেন না। খারাপ কাজকে খারাবী দ্বারা প্রতিরোধ করতেন না। বরঞ্চ ক্ষমা ও উত্তম দ্বারা সংশোধন করতে চেষ্টা করতেন। কেউ তাঁর নিকট কোন জিনিস চাইলে অবশ্যই তা দিতে চেষ্টা করতেন। অথবা নম্রভাবে অপারগতার কথা বুঝিয়ে বলতেন। তিনি না ছিলেন কর্কশ ভাষী, আর না কঠিন হৃদয়ের অধিকারী। কেউ কোনো কথা বলতে থাকলে, মাঝখানে থামিয়ে দিতেন না। যদি সে নাহক কিছু বলত, তখন তাকে নিষেধ করতেন অথবা নিজে উঠে দাঁড়াতেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা প্রতিবেশির হক আদায় করতেন। মেহমানদের মেহমানদারী ও সম্মান করতেন। এমন কোনো সময় ব্যয় করতেন না যা আল্লাহর জন্য হত না। আর যা না করলেই নয় তাই কেবল আদায় করতেন। হাঁচিকে পছন্দ করতেন, হাই তোলাকে অপছন্দ করতেন। যখন তার সামনে দুটি কাজ আসত তখন তার মধ্যে সহজটিকে গ্রহণ করতেন, যদি না তা পাপের কাজ হত। বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করতে সচেষ্ট হতেন। অত্যাচারিতদের সাহায্য করতেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবিদের ভালবাসতেন, তাদের সাথে পরামার্শ করে কার্যাদি নির্বাহ করতেন। তাদের খোঁজ খবর রাখতেন। কেউ অসুস্থ হলে দেখেত যেতেন। কেউ অনুপস্থিত থাকলে আসতে বলতেন। কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হলে তার জন্য দোয়া করতেন। কেউ ওজর পেশ করলে তা কবুল করতেন। হক আদায়ের ব্যাপারে শক্তিশালী বা দুর্বল সকলেই তার নিকট এক সমান ছিল। যখন কোনো কথা বলতেন, তখন কেউ তা গণনা করতে চাইলে সহজেই সমর্থ হত। (কারণ তা হত শুদ্ধ ও ধীরে ধীরে)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কখনও হাসি মজাক করতেন, কিন্তু তখনও তার পবিত্র মুখ হতে সত্য ছাড়া কিছুই বের হত না।

১২
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কছু আদব ও নম্রতার বর্ণনা
তিনি সর্বোচ্চ দয়ালু ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সাহাবিদের সর্বদা দয়া ও সম্মান করতেন। যদি তাদের বসার স্থান সঙ্কুচিত হত তখন তাকে প্রশস্ত করতে সচেষ্ট হতেন। করো সাথে সাক্ষাত হলে তিনিই প্রথমে সালাম দিতেন। কারো সাথে মুসাফাহা করলে, উক্ত ব্যক্তি হাত টেনে না নেয়া পর্যন্ত নিজে হাত গুটাতেন না। তিনি অত্যাধিক নম্র ও ভদ্র ছিলেন। যখন কোনো কওমের নিকট গমন করতেন, তখন মজলিসের যেখানেই খালি পেতেন সেখানেই বসতেন এবং সেভাবে বসতে অন্যদের হুকুম করতেন। আর তাঁর নিকট যারা বসতেন, তাদের প্রত্যেকের কথা উত্তমভাবে শ্রবণ করতেন। ফলে তাদের কেউ এতটুকুও ধারণা পোষণ করত না যে অমুক আমার থেকে রাসূলের নিকট অধিক সম্মানীয়। যদি কেউ তাঁর নিকট বসা থাকত, তবে সে না উঠা পর্যন্ত তিনি দন্ডায়মান হতেন না। যদি বিশেষ কোনো কারণে ঐ স্থান ত্যাগ করতে হত, তবে তিনি তার অনুমতি নিয়ে নিতেন। তাঁর সম্মানে দন্ডায়মান হওয়াকে তিনি অপছন্দ করতেন। আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, সাহাবিগণের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক সম্মানী আর কেউ ছিলেন না। তথাপি তাঁকে দেখলে তারা কেউ দন্ডায়মান হতেন না, কারণ তারা জানতেন যে, এ কাজকে তিনি অপছন্দ করেন। (সহিহ, বর্ণনায় আহমদ ও তিরমিজি)

ব্যাখ্যা: তবে কেউ কারো সাথে দেখা করতে কারো বাড়ী গেলে বাড়ীওয়ালা ঐ মেহমানের সম্মানে দাড়াতে পারেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহমানের সম্মানে এমনটি করতেন। অনুরূপভাবে কেউ সফর থেকে ফেরত আসলে, তার সাথে কোলাকুলি করার জন্যও দাড়ানো জায়েয। কারণ রাসূলুল্লাহর সাহাবিরা এমনটি করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে কারো দিকে তাকাতেন না, যা সে অপছন্দ করত। রোগীদের দেখতে যেতেন। গরিব মিসকিনদের ভালবাসতেন। তাদের সাথে একত্রে বসতেন। তাদের জানাযায় অংশগ্রহণ করতেন। দরিদ্রকে তার দ্ররিদ্রতার কারণে হীন দৃষ্টিতে দেখততেন না। আর রাজা-বাদশাহকে তার রাজত্বের কারণে ভয় পেতেন না। যে কোনো ক্ষুদ্র নেয়ামত হলেও তার সম্মান করতেন। কোনো অবস্থাতেই কখনও কোনো খাদ্যের দোষ বের করতেন না। পছন্দ হলে গ্রহণ করতেন, না হলে হাত গুটিয়ে থাকতেন। খাদ্য গ্রহণ ও পান করতেন প্রথমে বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আর খাবার শেষে বলতেন আলহামদু লিল্লাহ। সুগন্ধি (আতর) খুবই পছন্দ করতেন। দুর্গন্ধযুক্ত জিনিসকে অপছন্দ করতেন। যেমন কাঁচা পিয়াজ, রসুন কিংবা এই জাতীয় খাদ্য। এসব জিনিসকে দুর্গন্ধের কারণে অপছন্দ করতেন।

হজ্জ আদায় কালে বললেন:

اللهمَّ هذه حجَّة لاَ رِيَاءَ فِيْهَا وَلَا سُمْعَة ( صحيح رواه احمد والترمذي )

হে আল্লাহ এই হজ্জের মধ্যে কোনো রিয়াও নেই এবং নাম ও খ্যাতি কুড়ানোর উদ্দেশ্যও নেই। (সহিহ, বর্ণনায় আহমদ ও তিরমিজি)

তিনি বসার ব্যাপারে কিংবা পোষাকের ব্যাপারে তার সাহাবিগণ হতে আলাদা কিছু করতেন না। ফলে গ্রাম থেকে আগত লোকজন মজলিসে এসে প্রশ্ন করত, তোমাদের মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে? তার নিকট সর্বোত্তম পোষাক ছিল কামিজ (টাখনুর মাঝামাঝি পর্যন্ত লম্বা পোষাক) খাদ্য গ্রহণ বা পোষাকের ব্যাপারে কোনো বাড়াবাড়ি করতেন না। মাথায় টুপি ও পাগড়ি পরিধান করতেন আর ডান হাতের অনামিকায় রুপার আংটি পরিধান করতেন। তাঁর দাঁড়ি ছিল লম্বা ও প্রশস্ত।

১৩
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত ও জেহাদের কিছু ঘটনা
আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশ্ব জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি এসে আরব, অনারবসহ বিশ্ব মানবতাকে এমন এক দ্বীনের দিকে ডাকেন যাতে তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ, শান্তি ও মুক্তি নিহিত রয়েছে। প্রথমই তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করেন। প্রার্থনা, দোয়া ও সাহায্য সব তাঁর কাছেই চাওয়ার দাওয়াত প্রদান করেন।

আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিয়ে বলেন:

(আরবি)

বল, নিশ্চয় আমি আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকে শরিক করি না। (সূরা জিন : ২০ )

মুশরিকরা তাঁর এই দাওয়াত প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, তাকে বাধা দেয়। কারণ, তার দাওয়াত ছিল তাদের মূর্তি পুজা ও তাদের বাপ-দাদা হতে প্রাপ্ত পথের অন্ধ অনুসরণ বিরুদ্ধ কথা। ফলে তারা তাঁকে নানা দোষে দোষারোপ করতে লাগল। কখনও বলত যাদুকর, কখনও বলত পাগল, অথচ এই সত্য পথের দাওয়াত দানের পূর্বে তারা তাঁকে সত্যবাদী ও আমানতদার বলেই ডাকতো।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কওমের এই ধরনের অন্যায় আচারণ সহ্য করতে থাকেন। কারণ, আল্লাহ তাআলা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

(আরবি)

অতএব তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাদের মধ্য থেকে কোনো পাপিষ্ঠ বা অস্বীকরকারীর আনুগত্য করো না। (সূরা দাহার : ২৪ )

তিনি মক্কায় তের বছর ধরে একত্ববাদ ও তাওহিদের দিকে লোকদের ডাকতে থাকেন। আর অনুসারীদের নিয়ে কাফেরদের পক্ষ থেকে আগত কষ্ট ও যাতনা সহ্য করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ন্যায়, ভালবাসা ও সাম্যের উপর ভিত্তি করে নতুন এক ইসলামি সমাজ গঠন করার উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে নিজ সাহাবিদের নিয়ে মদিনা শরিফে হিজরত করেন।

আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিভিন্ন মুজেযা দ্বারা সাহায্য করছেন। আল্লাহ প্রদত্ত সবচেয়ে বড় মুজেযা হল কোরআন শরিফ যা তাওহিদ, ইলম, জেহাদ, ও উন্নত চরিত্রের দিকে আহ্বান করে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় দাওয়াতের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজা বাদশাহদের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র লেখেন। যেমন রোমের বাদশাহ কায়সারকে পত্র দিয়ে বলেন, ইসলাম গ্রহণ করুন, নিরাপদ হয়ে যাবেন এবং আপনাকে আল্লাহ তাআলা দ্বিগুন সাওয়াব দিবেন।

আরও লেখেন, হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা এক কালিমার দিকে অগ্রসর হও, যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে মিল ঘটাবে। তা হল আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোনো শিরক করব না। আর আল্লাহকে ছেড়ে আমরা একে অন্যকে রব বলে গ্রহণ করব না। আর ধর্মযাজক-পাদ্রীরা হালাল ও হারামের ভিতর যে নতুন সংযোজন করেছে তার অনুগত হব না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিক ও ইহুদিদের সাথে যুদ্ধ করেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের উপর জয়যুক্ত হয়েছেন। প্রায় ত্রিশটি গজওয়াতে (জেহাদে) নিজে শরিক হয়েছেন। জেহাদ, দাওয়াত ও মানবতাকে জুলুম (শিরক) ও মানুষের দাসত্বের শিকল থেকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় শত শত সারিয়্যাহ (যেসব জেহাদে নবীজী নিজে অংশ গ্রহণ করেননি বরং সাহাবিদের পাঠিয়েছেন) প্রেরণ করেছেন। তিনি তাদেরকে সর্ব প্রথম তাওহিদের প্রতি দাওয়াত দিতে বলতেন।

১৪
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসা ও তাঁর অনুসরন করা
আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম (সূরা আলে ইমরান : ৩১ )

لايؤمِنُ أحَدُكُم حَتَّى أكُونَ أحَبَّ إلَيْهِ مِنْ واَلِدِهِ وَ وَلَدِهِ وَالنَّاسِ أجْمَعِيْنَ ( رواه البخاري ومسلم )

তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট, তার পিতা, সন্তান এবং সমস্ত মানুষ হতে অধিক প্রিয় হব। (বোখারি ও মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাঝে সন্বেবেসিত হয়েছিল উত্তম ও মহান চরিত্রিক গুণাবলী, সাহসিকতা ও দয়া। তাঁকে যে ব্যক্তিই দেখত, সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ত। যে-ই সামান্য কিছুদিন তাঁর সাথে উঠা বসা করত, তাকে ভালবাসতে বাধ্য হয়ে যেত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিছালাতকে উত্তম ভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। উম্মতকে নসিহত করেছেন তথা কল্যাণের পথ দেখিয়েছেন। সাহাবিদের অন্তর তাওহিদ দ্বারা জয়যুক্ত করেছেন, যেমনি করে রাজ্যসমূহ জয়যুক্ত করেছেন জেহাদ দ্বারা, যাতে লোকেরা বান্দার ইবাদত করা হতে বেরিয়ে এসে রবের ইবাদত করতে পারে। সেই দ্বীন বর্তমানে আমাদের নিকট পৌঁছেছে বিদাআত ও কুসংস্কার মুক্ত হয়ে। তাতে নতুন করে কোনো বিষয়ের যোগ বা বিয়োগ করার প্রয়োজন নেই।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম আর তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। (সূরা মায়িদা : ৩ )

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

انَّمَا بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ مَكَارِمَ الْاَخْلَاقِ ( صحيح الحاكم ووافقه الذهبي )

আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সম্মানজনক চরিত্রাবলীকে পূর্ণতা দান করার জন্য। (সহিহ, বর্ণনায় হাকেম, আল্লামা জাহাবি এর সমর্থন করেছেন।)

এগুলো হচ্ছে তোমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চারিত্রিক গুনাবলী। তাই তা আঁকড়ে ধর, যাতে সত্যিই তাকে ভালবাসার অধিকারী হতে পার।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে। (সূরা আহযাব : ২১)

খুব ভালভাবে জেনে রাখুন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসার দাবী হচ্ছে, আল্লাহর কোরআন ও সহিহ হাদিস মোতাবেক আমল করা। নিজেদের বিচার-ফায়সালাও কোরআন-হাদিস দ্বারা সম্পন্ন করা। নবীজী যেই তাওহিদের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে তা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এবং সর্ব ক্ষেত্রে তাদের কথা ও বিচারের উপর কারো কথা বা বিচারকে প্রাধান্য না দেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না (অর্থাৎ তাদের কথার উপর কাউকে প্রধান্য দিও না) আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা হুজুরাত : ১ )

তাঁর প্রতি ভালবাসার নির্দশনের মধ্যে রয়েছে, তিনি যে তাওহিদের প্রতি মানুষদেরকে ডেকেছেন তাকে ভালবাসা ও প্রতিষ্ঠা করা। আর যারা সেই তাওহিদের প্রতি লোকদের আহ্ববান করে তাদেরকেও ভালবাসা। তাদেরকে কোনো তুচ্ছ ও বিদ্রূপাত্মক নামে ভূষিত না করা। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তোমার প্রিয় হাবিব ও তাঁর আনুসারীদের যথাযথ ভালবাসার যোগ্যতা দাও। তাঁর শাফাআত আমাদের নসীব কর। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলীতে আমাদের বিভূষিত কর।

১। তিনি বলেছেন,

إنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا إنْ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوْا أبَدًا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ( رواه الحاكم وصححه الألباني )

আমি তোমাদের কাছে এমন দু’টো জিনিস রেখে গেলাম, যদি তোমরা তা উত্তমভাবে পাকড়ে ধর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ। (বর্ণনায় হাকেম, আল্লামা আলবানি সহিহ বলে মন্তব্য করেছেন)

২। তিনি আরও বলেছেন:

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْديِينَ تَمَسَّكُوْا بِهَا ( صحيح رواه أحمد )

তোমাদের উপর জরুরি হল, আমার সুন্নাহ ও হেদায়েত প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)

৩। আন্যত্র তিনি বলেছেন:

يَا فَطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَلِيْنِي مِنْ مَالِي مَا شِئْتِ لا أغْني عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئاً ( رواه البخاري )

হে মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমা, আমার ধন-দৌলত হতে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও, আখেরাতে আমি কোনো ক্রমেই আল্লাহ হতে তোমার সাহায্য করতে পারব না। (সহিহ বোখারি)

৪। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন,

مَنْ أطَاعَنِي فَقَدْ أطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَي اللهَ ( رواه البخاري )

যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে যেন আল্লাহর আনুগত্য করল, আর যে আমার বিরুদ্ধাচরণ করল সে যেন আল্লাহরও বিরুদ্ধাচরণ করল। ( সহিহ বোখারি)

৫। তিনি আরও বলেছেন:

لا تَطْرُوْنِي كَمَا أطْرَتِ النَّصَارى ابنَ مَرْيَمَ فانَّما أنَا عَبْدٌ فَقُوْلُوا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ ( رواه البخاري )

তোমরা আমার প্রশংসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কর না, যেমনিভাবে খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্বন্ধে করেছে। আমিতো কেবলি একজন বান্দা, সুতরাং তোমরা বল আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। ( সহিহ বোখারি)

৬। আন্যত্র তিনি বলেছেন:

قاَتَلَ اللهُ الْيَهُوْدَ اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ( رواه البخاري )

আল্লাহ ইহুদিদের অভিসম্পাৎ (ধংস) করুন। কারণ, তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ ( সেজদার জায়গা) বানিয়ে ফেলেছিল। (সহিহ বোখারি)

৭। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

مَنْ تَقَوَّلَ عَلَيَّ مَا لَمْ اَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأَ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ( صحيح رواه أحمد )

যে আমার নামে এমন কথা বলবে যা আমি বলিনি , সে যেন তার ঠিকানা (জাহান্নামের) আগুনে করে নেয়। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)

৮। আন্যত্র তিনি বলেছেন:

إنِّي لا أصَافِحَ النِّساء ( صحيح رواه الترمذي )

আমি মহিলাদের সাথে মোসাফাহা করি না। (সহিহ, বর্ণনায় তিরমিজী)

(অর্থাৎ সেসব মহিলাদের সাথে যাদের সাথে বিবাহ জায়েয)

৯। তিনি আরো বলেছেন:

مَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي ( متفق عليه )

যে আমার সুন্নাহ হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার কেউ নয়। ( বর্ণনায় সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম )

১০। নবীজী দোয়ায় বলতেন:

اللهُمَّ إنِّي أعُوْذُبِكَ مِنْ عِلْمٍ لا يَنْفَعُ ( رواه مسلم )

হে আল্লাহ, আমি সেসব ইলম হতে তোমার নিকট পানাহ চাই, যা কোনো উপকার করে না। ( সহিহ মুসলিম) (অর্থাৎ এমন ইলম যার উপর আমল করি না বা অন্যকে শিক্ষা দান করি না। এবং যে ইলম আমার চারিত্রিক মন্দত্বকে দূরীভূত করে না)

১৫
আমরা কিভাবে আমাদের সন্তানদের লালন-পালন করব?
প্রতিটি মাতা-পিতার অন্তরেই সন্তানের প্রতি মায়া-মমতা স্বভাবতই বেশি থাকে। সেই মায়া-মমতা যেন বিপদের কারণ না হয় তাই তার প্রয়োগেরও নির্দিষ্টি নীতিমালা রয়েছে পবিত্র ইসলামে। সুতরাং সন্তান লালন-পালন ও তাদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে যে বিষয়টির প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে সন্তান যেন কোনোভাবেই বিপথগামী নয় হয় এবং মাতা-পিতাকে বিপথগামী করতে না পারে। প্রতিটি পিতা-মাতারই সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সার্বিক পরিচর্যার ক্ষেত্রে ইসলামি নীতিমালা মেনে চলতে পারলেই যে বিপথগামীতা থেকে মুক্ত থাকা যাবে সেটি বলে দেয়া যায় অনায়াসেই।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাতের পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। (সূরা তাহরীম : ৬ )

মাতা-পিতা, শিক্ষক তথা সমাজের সকলেরই আল্লাহর নিকট জবাবদেহি করতে হবে সন্তানদের গঠন করার ব্যাপারে। যদি তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তবে সন্তানরা সুখী হবে এবং অন্যরাও সফল হবে দুনিয়া ও আখিরাতে । আর যদি তাদেরকে উত্তমভাবে গড়ে তোলা না যায় তবে অশান্তি ও দুর্দশা সকলেরই জন্য । ফলে, তাদের পাপের ভার অন্যদের উপরও বর্তাবে। এ জন্যই হাদিস শরিফে এসেছে:

كلُّكُم رَاعٍ وَ كُلُّكُمْ مَسْؤُلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ( متفق عليه )

তোমরা প্রত্যেকেই (রাখালের মত) দায়িত্বশীল, আর এ দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে প্রত্যেককেই জবাবদেহি করতে হবে। (বোখারি ও মুসলিম )

হে সম্মনিত শিক্ষক, হে জাতির কাণ্ডারী, আপনার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে দেয়া সুসংবাদ শ্রবণ করুন:

فَوَاللهِ لأن يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رجُلًا واحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمُرِ النِّعَمِ ( رواه البخاري )

আল্লাহর শপথ, তোমার মাধ্যমে মহান আল্লাহ একজন মাত্র ব্যক্তিকে হেদায়াত দান করা, তোমার লাল উটের (মালিক হওয়া) থেকেও অনেক উত্তম। (বোখারি)

হে অভিভাবকবৃন্দ, আপনাদের জন্যও কতই না চমৎকার সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

إذا ماتَ الانسانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ الاَّ مِنْ ثَلاثٍ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أوْ عِلْمٍ يَنْتَفِعُ بِهِ أوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُولَهُ ( رواه مسلم )

মানুষ যখন মারা যায় তিন ধরণের আমল ব্যতীত সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, সদকায়ে জারিয়া, ইলম যার দ্বারা সে উপকৃত হয় এবং নেককার সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম)।

সুতরাং হে আমার মুরব্বীবৃন্দ, সকল কাজের আগে প্রথমে নিজেদের সংশোধনে সচেষ্ট হোন। সন্তানদের সম্মুখে আপনি যে ভাল কাজ করবেন তাই উত্তম। তাদের সম্মুখে যাবতীয় মন্দ ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ করুন। শিক্ষক ও পিতামাতা যদি সব সময় নিজ সন্তান ও ছাত্রদের সম্মুখে উত্তম চরিত্র ও ভাল ব্যবহার প্রদর্শনে আন্তরিক থাকে, তবেই তারা উত্তম শিক্ষা পাবে।

১৬
নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের ব্যাপারে আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
১। বাচ্চাদেরকে প্রথমে ‘ ‍‍‌‌‍ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পড়তে শিক্ষা দেয়া, অত:পর পরিণীত বয়সে উপনীত হলে কালেমার অর্থ শিক্ষা দেয়া।

২। সর্বদা সন্তানের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করতে আন্তরিক হওয়া। কারণ, আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, রিজিক প্রদান করছেন, বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। তিনি একক ও শরিকবিহীন। সুতরাং ইবাদতের সত্যিকার অধিকারী তিনিই। তিনিই প্রকৃত মাবুদ এবং সকল ইবাদত পাওয়ার একমাত্র যোগ্য সত্ত্বা।

৩। সন্তানদেরকে জান্নাত সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে তাতে প্রবেশের ব্যাপারে উদ্ধুদ্ধ করা। যেসব কাজের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায় সে সম্বন্ধে তাদের ধারণা দেয়া, যেমন যারা সালাত আদায় করবে, সওম পালন করবে, মাতা-পিতার বাধ্য থাকবে, আর আল্লাহ যাতে রাজি খুশী হন সেসব কাজ করবে, তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাথে সাথে জাহান্নাম সম্বন্ধে অবহিত করে সে ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করতে হবে। উপদেশ দিয়ে বলতে হবে- যারা সালাত আদায় করে না, মাতা পিতার সাথে অসভ্য-অবাধ্য আচারণ করে, আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে এমন কাজে নিয়োজিত থাকে যেমন আল্লাহ প্রদত্ত শরিয়ত ত্যাগ করে মানুষের তৈরী আইন দ্বারা বিচার কাজ সম্পন্ন করে, শরিয়ত পরিপন্থী পন্থায় জীবন যাপন করে, মানুষের ধন-সম্পদ প্রতারণা, মিথ্যা কিংবা সুদের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা সহ আল্লাহ ও বান্দার হক নষ্ট করে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

৪। বাচ্চাদের ঈমান ও আকিদার প্রতি বিশেষ যত্নবান থাকতে হবে। তাদের শেখাতে হবে যে দোয়া একমাত্র আল্লাহর নিকটই করতে হবে এবং একমাত্র তাঁর নিকটই সাহায্য ভিক্ষা করতে হবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস রা. কে শিখিয়েছিলেন,

إذا سأَلْتَ فاسْألِ اللهَ وَاذا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ باللهِ ( رواه الترمذي وقال حسن صحيح )

যখন চাইবে কেবল আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহয্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। (তিরমিজি, হাসান-সহিহ)

১৭
সন্তানদের সালাত শিক্ষা দেয়া
১। অল্প বয়স থেকেই ছেলে মেয়েদেরকে সালাত শিক্ষা দেয়া ওয়াজিব, যাতে বয়োপ্রাপ্ত হলে সর্বদা তা আদায়ে সচেষ্ট থাকে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্বন্ধে বলেছেন:

عَلِّمُواأولاَدَكُمْ الصَّلاةَ إذا بَلَغُوا سَبْعًا واضْرِبُوهم عَلَيْهَا إذا بَلَغُوأ عَشَرًا وَفَرقُّوا بَيْنَهُم فيِ الْمَضَاجِعِ ( صحيح رواه أحمد )

তোমাদের সন্তানদেরকে সালাত শেখাবে যখন তারা সাত বছর বয়সে উপনীত হয়, আর বয়স দশ বছর হয়ে গেলে তার জন্য তাদের প্রহার করবে। এবং বিছানায় তাদেরকে আলাদা করে দিবে। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)

সালাতের তালীম দিতে গিয়ে তাদেরকে প্রথমে অজু শেখাবে, তাদের সম্মুখে সালাত আদায় করবে, যা দেখে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তাদেরকে সাথে নিয়ে মসজিদে গমন করা। আর তাদের সেসব কিতাব পড়তে উদ্বুদ্ধ করা যাতে সালাতের সহিহ নিয়মাবলী আছে, যেন পরিবারের সকলে সালাতের নিয়মাবলী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এটা শিক্ষক ও পিতামাতা উভয়েরই দায়িত্ব। যদি এতে কোনো গাফেলতি করা হয়, তাহলে এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

২। সন্তানদের কোরআন শেখাতে হবে। প্রথমে সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য ছোট ছোট সূরাগুলি অর্থসহ শিক্ষা দিতে হবে। সালাতের নিয়মাবলী ও মাসনূন দোয়া যেমন আত্তাহিয়াতু, দরূদ ইত্যাদি শিক্ষা দিতে হবে। কোরআনের কায়দা-কানুন তথা তাজবিদ, কোরআন হিফজ ও প্রয়োজনীয় হাদিসের শিক্ষা দানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

৩। সন্তানদের জুমুআ ও মসজিদে গিয়ে জামাতে সালাত আদায় করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা। যদি সমজিদে গিয়ে তারা কোন ভুল ত্রুটি করে তবে মিষ্টি ভাষায় ভুল সংশোধন করে দেয়া। কোনো ধমক বা ভৎসনা না করা, যাতে তারা সালাত পরিত্যাগ করার কোনো অজুহাত তুলতে না পারে। তাহলেতো আমরা অপরাধী হয়ে যাব। আমরা যদি আমাদের শৈশবের ভুল ত্রুটি ও খেল তামাশার কথাগুলো স্মরণ করি, তাহলে সহজেই তাদের ক্ষমা করতে পারব।

১৮
হারাম কাজ হতে নিবৃত্ত রাখা
১। সন্তানদের সব সময় কুফরি কথা-বার্তা, গালাগাল, অভিশাপ ও আজেবাজে কথা বলা হতে উপযুক্ত উপদেশের মাধ্যমে নিবৃত্ত রাখতে হবে। আর নম্র ও মিষ্টি ভাষায় তাদের এটা শেখাতে হবে, কুফরি কাজ ও কথা-বার্তা হারাম, এর কারণে চিরস্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। আমাদের জিহবাকে তাদের সম্মুখে সর্বাবস্থায় সংযত রাখতে হবে, যাতে আমরা তাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারি।

২। তাদেরকে তাস, পাশা, দাবা, লুডু, কেরাম ও জুয়া খেলাসহ সর্ব প্রকার হারাম খেলা হতে নিবৃত্ত রাখতে হবে। এ খেলাগুলো প্রাথমিকভাবে সাধারণত: সময় কাটানোর জন্যই শুরু করা হয় কিন্তু ক্রমান্বয়ে তা জুয়ায় রূপান্তরিত হয়। ফলে পারস্পরিক শত্রুতার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া এগুলো ব্যক্তিগত টাকা-পয়সা, সময় এবং সালাতকেও নষ্ট করে।

৩। তাদেরকে আজেবাজে পত্রিকা পড়া হতে নিবৃত্ত রাখতে হবে। সাথে সাথে অশ্লীল ছবি, ডিটেকটিভ ও যৌন গল্প পড়া হতেও নিবৃত্ত রাখতে হবে। এ জাতীয় সিনেমা, টেলিভিশন, ভিডিও দেখা হতেও নিষেধ করতে হবে। কারণ, এগুলো তাদের চরিত্রকে কলুষিত ও ভবিষ্যতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে।

৪। সন্তানকে ধুমপান ও মাদক দ্রব্য ব্যবহারের ব্যাপারে কড়াভাবে নিষেধ করতে হবে। বুঝাতে হবে যে, তাবৎ চিকিৎসকদের মিলিত মতামত হল, মাদক দ্রব্য ও এ জাতীয় জিনিস শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। যক্ষ্মা ও ক্যান্সারের প্রধান কারণ হচ্ছে এই ধুমপান ও মাদকাশক্তি। ধুমপান দাঁতকে নষ্ট ও মুখকে দুর্গন্ধময় করে। বক্ষ ব্যাধির প্রধান কারণ হলো এই ধুমপান। এতে কোনোই উপকারিতা নেই। বরং ক্ষতিই ক্ষতি। তাই তা পান ও বিক্রয় করা হারাম। এর পরিবর্তে ফল বা লবণাক্ত কোনো দ্রব্য খেতে পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

৫। সন্তানদেরকে সর্বদা কথায় ও কাজে সত্যবাদী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদের সম্মুখে কখনো মিথ্যা কথা বলা যাবে না, যদিও হাসি বা ঠাট্টাচ্ছলে হোক। তাদের সাথে কোনো ওয়াদা করলে অবশ্যই তা পালন করতে হবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ قَالَ لصَبِيٍّ تَعالَ هَاكَ ( خُذْ ) ثُمَّ لَمْ يُعْطِهِ فَهِيَ كِذْبَةٌ ( صحيح رواه أحمد )

যে ব্যক্তি কোনো শিশুকে বলল, এসো... তা গ্রহণ কর । তার:পর তাকে তা দিল না, তাহলে তা হবে মিথ্যাবাদীতা। (সহিহ বর্ণনায় আহমাদ)

৬। সন্তানদের হারাম পথে উপার্জিত মাল যেমন- ঘুষ, সুদ চুরি, ডাকাতি, প্রতারণার মাধ্যতে অর্জিত পয়সায় আহার করালে এবং তা দ্বারা লালন পালন করলে সেসব সন্তান অসুখী, অবাধ্য হয় ও নানা ধরণের পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

৭। সন্তানদের উপর ধ্বংস বা গজবের বদদোয়া করা উচিত নয়। কারণ, দোয়া ভাল ও মন্দ উভয় প্রকারই কবুল হয়ে যায়। ফলে তারা আরো বেশি খারাপ ও পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। বরং এভাবে বলা উত্তম যে, আল্লাহ তোমায় সংশোধন করুন।

৮। আল্লাহর সাথে শরিক করা হতে তাদের খুব সাবধান করতে হবে। যেমন, মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা, তাদের নিকট কোনো সাহায্য ভিক্ষা করা। কারণ তারাও আল্লাহর বান্দা, কারও কোনো ভাল কিংবা মন্দ করার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার কোনো উপকার করতে পারে আর না কোনো ক্ষতি। পরন্তু যদি তা কর তবে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত । (সূরা ইউনুস : ১০৬ )

১৯
কাপড় দ্বারা শরীর আবৃত করা ও পর্দা করা
১। বাল্য কাল হতেই মেয়েদের শরীর আবৃত করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। যাতে বালেগ হওয়ার সাথে সাথে তারা এর উপর আরো মজবুত হয়ে চলতে পারে। তাদেরকে কখনও ছোট জামা পরিধান করানো ঠিক নয়। কিংবা প্যান্ট-সার্ট এককভাবে কোনোটাই পরাতে নেই। কারণ ওগুলো অমুসলিম ও পুরুষদের জন্য নির্ধারিত পোষাক। এ কারণে অন্যান্য যুবকরা ফিৎনা ও ধোকায় পতিত হতে পারে।

যখনই তাদের বয়স সাত বছর অতিক্রম করবে তখন থেকেই সর্বদা তাকে রুমাল কিংবা উড়না জাতীয় কাপড় দ্বারা মস্তক আবৃত করার জন্য হুকুম করতে হবে । তারপর যখন বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্কা) হবে, তখন মুখ মন্ডল ঢাকার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। আর এমন বোরখা পরিধান করাতে হবে, যা হবে লম্বা ও ঢিলেঢালা। এবং যা তার সম্মানের হিফাজত করবে।

পবিত্র কোরআন মুমিনদের পর্দা করার জন্য এই বলে উৎসাহিত করছে,

(আরবি)

হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিলবাবের (জিলবাব হচ্ছে এমন পোষাক যা পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করে) কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। (সূরা আহযাব : ৫৯)

আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে ঘরের বাইরে ঘুরাফিরা ও বিনা পর্দায় চলাফেরা করতে নিষেধ করে বলেন:

(আরবি)

এবং প্রাক- জাহেলি যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। (সূরা আহযাব : ৩৩)

২। সন্তানদের এই উপদেশ দিতে হবে যে, পুরুষরা পুরুষদের পোষাক ও মহিলারা মহিলাদের পোষাক পরিধান করবে, যাতে তাদের প্রত্যেককে আলাদা করে পার্থক্য করা যায় ও চেনা যায়। আর তোরা যেন অমুসলিমদের পোষাক পরিচ্ছেদ যেমন সংকীর্ণ প্যান্ট বা এ জাতীয় পোষাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য যে সব ক্ষতিকারক অভ্যাস রয়েছে তা থেকেও তারা যেন বিরত থাকে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لَعَنَ النَّبِيُّ صَلي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّساءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ وَلَعَنَ الْمُخَنَّثِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ والْمُتَرَجِّلاتِ مِنَ النِّسَاءِ ( رواه البخاري )

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরষের বেশধারী মহিলা ও মহিলাদের বেশধারী পুরুষদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। পুরুষদের মধ্যে যারা মহিলাদের মত চলাফিরা করে এবং মেয়েদের মধ্যে যারা পুরুষদের মত চলাফিরা করে তাদের উপরও অভিশাপ করেছেন। (সহিহ বোখারি)

অন্যত্র আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

وَمَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ( رواه ابو داود صحيح )

যে ব্যক্তি কোনো কওমের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। (সহিহ, বর্ণনায় আবু দাউদ)

২০
চারিত্রিক গুণাবলী ও আদব কায়দা
১। আমরা আমাদের বাচ্চাদের এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করব, যাতে তারা কোনো কিছু গ্রহণ করা, প্রদান করা, পান করা, লেখা ও মেহমানদারী করার সময় ডান হাত ব্যবহার করে। প্রতিটি কাজের পূর্বে যেন বিসমিল্লাহ বলে। বিশেষ করে পানাহার করার সময়। আর খাবার গ্রহণ করবে বসা অবস্থায় । খানাপিনা ও প্রতিটি ভালকাজ শেষে যেন বলে আলহামদুলিল্লাহ।

২। তাদেরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে। যেমন- হাত পায়ের নখ ছোট করা, খাবার গ্রহণের পূর্বে ও পরে হস্তদ্বয় ধৌত করা, এস্তেঞ্জা করতে শিক্ষা দেয়া, প্রশ্রাবের পর টিস্যু কাগজ অথবা ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা অথবা পানি দ্বারাধৌত করা। এতে করে তাদের সালাত শুদ্ধ হবে এবং পোষাক পরিচ্ছেদেও কোনো নাপাকি স্পর্শ করবে না।

৩। তাদের উপদেশ দান করতে হবে গোপনে। যদি কোনো ভূল ত্রুটি করেও থাকে, তথাপি প্রকাশ্যে সকলের সামনে অপমান করা ঠিক হবে না। যদি তারা কোনো কথা গ্রহণ করতে ধৃষ্টতা প্রকাশ করে, তাহলে তাদের সাথে কথা বন্ধ রাখতে হবে তিন দিন পর্যন্ত।

৪। তাদেরকে আজানের সময় নীরব থাকা, মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে আজানের জবাব দেয়া, আজান শেষে রাসূলের উপর সালাত ও সালাম পড়া ও রাসূলুল্লাহর জন্য অছিলার দোয়া করার জন্য শিক্ষা দিতে হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজান শেষে এই দোয়া পড়তে বলেছেন:

اللهمَّ ربَّ هذهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ والصَّلاةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ ( رواه البخاري )

হে আল্লাহ এই পরিপূর্ণ আহবান ও সালাতের রব। অনুগ্রহ করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অছীলা ও মর্যাদা দান করুন। আর যে প্রশংসিত স্থানের ওয়াদা আপনি করেছেন, তা তাকে দান করুন। (বোখারি)

৫। যদি সম্ভব হয়, তবে প্রতিটি সন্তানের জন্য আলাদা বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে অথবা গায়ের চাদর আলাদা দিতে হবে। উত্তম হচ্ছে- মেয়েদের জন্য আলাদা এবং ছেলেদের জন্য আলাদা কামরার ব্যবস্থা করা। ফলে, এটা তাদের চরিত্র ও স্বাস্থ্যের হিফাজত করবে।

৬। তাদের এমন অভ্যাস গড়তে হবে, যাতে রাস্তা ঘাটে কোনো আবর্জনা না ফেলে। এবং সম্মুখে কখনও কোনো আবর্জনা দেখলে তা যেন দুরে সরিয়ে ফেলে।

৭। দুষ্ট ও খারাপ বন্ধুদের সাথে উঠ বসার ব্যাপারে সর্বদা সাবধান করতে হবে। আর রাস্তা ঘাটে তাদের অবস্থান করার ব্যাপারে সাবধান করতে হবে।

৮।সন্তানদেরকে বাড়ি, রাস্তা ও শ্রেণী কক্ষ এক কথায় সব জায়গায় “আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” বলে সালাম দেয়ার অভ্যাস করাতে হবে ।

৯।প্রতিবেশির সাথে সদ্ভাব রাখার ব্যাপারে উপদেশ দিতে হবে এবং তাদের কষ্ট দেয়া হতেও তাদেরকে বিরত রাখতে হবে।

১০। বাচ্চাদের এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা মেহমানদের সম্মানও উত্তমভাবে তাদের মেহমানদারী করে।

২১
জেহাদ ও বীরত্ব
১। মাঝে মাঝে পরিবারের লোকজন ও ছাত্ররা একত্রে বৈঠকে বসবে। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিদের জীবনী পাঠ করে শোনাবে। যাতে তারা বুঝতে পারে যে, আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নির্ভিক সেনাপতি। আর তাঁর সাহাবিরা যেমন- আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী, মুয়াবিয়া রা. মুসলিম দেশসমূহ জয় করেছিলেন। তারা জয়যুক্ত হয়েছিলেন ঈমানের শক্তিতেই। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র এমনকি যুদ্ধ অবস্থায়ও তারা কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী চলতেন। তাদের চারিত্রিক গুণাবলী ছিল অতি উচ্চ।

২। সন্তানদের গড়ে তুলতে হবে বীরত্ব মনোভাবাপন্ন হিসেবে। তারা সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ করবে। আর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না। কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা গল্প-গুজব ও কেচ্ছ-কাহিনী দ্বারা তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করা ঠিক হবে না।

৩। তাদের মধ্যে এমন মূল্যবোধ ও চেতনা জাগ্রত করতে হবে, যাতে অন্যায়কারী ও জালেমদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। আমাদের যুবকরা শীঘ্রই ফিলিস্তিন ও বাইতুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করতে পারবে, যদি তারা ইসলামি শিক্ষার উপর চলে এবং আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। ইনশাআল্লাহ তখন তারা জয়যুক্ত হবেই।

৪। তাদেরকে উত্তম ও ইসলামি চরিত্র গঠনমূলক বই-পুস্তক কিনে দিতে হবে। যেমন কোরআনের কাহিনীসমূহ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী, সাহাবি ও মুসলিম রেনেসাঁদের বিরত্ব গাথা। যেমন শামায়েলে মুহাম্মাদিয়া, আল আকিদা আল ইসলামিয়া, আরকানুল ঈমান ওয়াল ইসলাম, মিনহাজ আল-ফিরকাতুন নাজিয়াহ, ধুমপানের ব্যপারে ইসলামের হুকুম, তাওজিহাত আল ইসলামিয়াহ, দীনের জরুরি জ্ঞানসমূহ, অদ্ভুত কাহিনীসমূহ, যা হক ও বাতিলকে আলাদা করে, ইত্যাদি বই পড়তে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।

২২
মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য
দুনিয়া আখেরাতে নাজাত পেতে হলে, নিম্নোক্ত উপদেশগুলি পালন করতে হবে-

১। মাতা পিতার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলবে। তাদেরকে ‘উহ্’ শব্দটি পর্যন্ত বলবে না। তাদের ধমক দিবে না। আর তাদের সাথে নম্র ব্যবহার করবে।

২। সর্বদা মাতা পিতার আদেশ-নিষেধ পালন করতে তৎপর থাকবে, তবে কোনো পাপের কাজ হলে ভিন্ন কথা। কারণ, স্রষ্টাকে অসন্তুষ্ট করে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।

৩। তাদের সংঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবে। কখনও তাদের সম্মুখে বেয়াদবি করবে না। কখনও তাদের প্রতি রাগের সাথে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে না।

৪। সর্বদা মাতা পিতার সুনাম, সম্মান ও ধন-সম্পদের হিফাজতে সচেষ্ট থাকবে। তাদের অনুমতি ব্যতীত তাদের কোনো টাকা-পয়সা ধরবে না।

৫। যেসব কাজে তারা খুশি হন সেসব কাজে তারা নির্দেশ না দিলেও উদ্যোগী হও। যেমন তাদের খেদমত করা এবং প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র ক্রয় করে দেয়া।

৬। তোমার সর্ববিধ কাজে তাদের সাথে পরামর্শ করবে। আর যদি কোনো অবস্থায় তাদের বিরোধিতা করতে হয়, তবে তাদের নিকট ওজর পেশ করবে।

৭। তাদের ডাকে হাসিমুখে উপস্থিত হবে। আর বলবে, হে আমার মাতা, হে আমার পিতা, তাদের মাম্মি, ড্যাডি ইত্যাদি সম্বোধন করে ডাকবে না। সেগুলো অমুসলিমদের ব্যবহৃত শব্দ।

৮। পিতা-মাতার বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাদের সম্মান করতে হবে। এগুলো তাদের জিবদ্দশায় যেমনি করতে হবে তেমনি মৃত্যুর পরেও।

৯। তাদের সাথে ঝগড়া করা যাবে না। তাদের ভুল-ভ্রান্তিও খোঁজা যাবে না। বরঞ্চ আদবের সাথে তাদেরকে সঠিক জিনিসটি জানাতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে।

১০। তাদের অবাধ্য হবে না। তাদের সম্মুখে উচ্চস্বরে কথা বলবে না। তাদের কথাবার্তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। মাতা-পিতার সম্মানের খাতিরে তোমার কোনো ভাই বোনদের কষ্ট দিবে না।

১১। তাদের কেউ তোমার সম্মুখে উপস্থিত হলে সম্মান প্রদর্শনার্থে দাড়িয়ে যাবে। আর তাদের কপাল চুম্বন করবে।

১২। মাতাকে তার গৃস্থালি কাজে সহযোগিতা করবে। অনুরূপ পিতার কাজে সহযোগিতা করতেও পিছপা হবে না।

১৩। মাতা-পিতার অনুমতি ব্যতীত কোথায়ও বের হবে না। সেই কাজটি যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন। যদি বিশেষ অসুবিধার কারণে বের হতে হয়, তা হলে তাদের নিকট ওজর পেশ করবে। তাদের থেকে দূরের কোনো সফর যেমন দেশ বা নিজ শহর ছেড়ে কোথাও গেলে, তাদের সাথে চিঠি পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখবে।

১৪। অনুমতি ব্যতীত কখনও তাদের কক্ষে প্রবেশ করবে না। বিশেষ করে তাদের ঘুম কিংবা বিশ্রামের সময়।

১৫। যদি তোমার ধুমপান বা এজাতীয় কোনো বদ অভ্যাস থাকে, তবে কস্মিনকালেও তাদের সম্মুখে তা করবে না। তবে এসব বদ অভ্যাস ছেড়ে দেয়াই জরুরি। কারণ, এগুলো সালাত আদায়ে বাধা স্বরূপ।

১৬। আহারের সময় তাদেরর পূর্বে খাবার গ্রহণ করবে না। খানা-পিনার সময় তাদের একরাম করতে সচেষ্ট হবে।

১৭। তাদের সম্মুখে কখনও মিথ্যা কথা বলবে না। তাদের কোনো কাজ তোমার পছন্দ না হলে তাদের দোষ বের করতে তৎপর হবে না।।

১৮। তাদের সম্মুখে তোমার স্ত্রী বা সন্তানদের প্রাধান্য দিবে না। সর্বাবস্থাতে তাদেরকে রাজি-খুশি রাখতে তৎপর থাকবে। তাদের রাজি খুশিতেই আল্লাহ তাআলা রাজি হবেন। আর তাদের নারাজিতে, আল্লাহ তাআলা নারাজ হবেন।

১৯। তাদের সম্মুখে উচুঁ স্থানে বসবে না। অনুরূপভাবে তাদের সামনে অহংকারের সাথে পদদয় লম্বা করে দিয়ে বসবে না।

২০। পিতার সম্মুখে কখনও নিজের বড়ত্ব জাহির করবে না। তুমি যত বড় কর্মচারী বা কর্মকর্তা হও না কেন। তাদের কোনো ভাল কাজকে মন্দ বলবে না। তাদের কোনো কষ্ট দিবে না, যদিও তা মুখের কথার দ্বারাই হোক না কেন।

২১। তাদের জন্য খরচের ব্যাপারে কখনও কৃপণতা করবে না যে, তারা অভিযোগ উত্থাপন করতে পারে। এটা তোমার জন্য অত্যন্ত লজ্জাস্কর ব্যাপার। পরবর্তীতে তা তোমার সন্তানদের মধ্যেও দেখতে পাবে। তাই তোমার সন্তানদের ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা কর।

মাতা পিতার সাথে যেরকম ব্যবহার করবে, সন্তানদের নিকট হতে সেরকম ব্যবহারই আশা করতে পার।

২২। মাতা পিতার বেশি বেশি দেখাশুনা করবে এবং তাদেরকে মাঝে-মধ্যে হাদিয়া-উপঢৌকন দিবে। তারা যে কষ্ট করে তোমাকে প্রতিপালন করেছেন তজ্জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা-শুকরিয়া আদায় করবে। তুমি আজ তোমার সন্তানদের যেমন আদর কর এবং তাদের জন্য কষ্ট কর, একদা তারাও তোমার জন্য ঐ রকমই করতেন।

২৩। তোমার সেবা, আনুগত্য ও সম্মান পাওয়ার সর্বাধিক হকদার হলেন তোমার মাতা। তারপর তোমার পিতা। মনে রেখো, মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।

২৪। মাতা-পিতার অবাধ্যচারণ ও তাদের সাথে রাগারাগি করা হতে বিরত থাকবে। অন্যথায় তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে দু:খ কষ্টে পতিত হবে। আজ তুমি তোমার মাতা-পিতার সাথে যেমন ব্যবহার করবে, ভবিষ্যতে তোমার সন্তানরা তোমার সাথে সেরকম ব্যবহারই করবে।

২৫। যদি তাদের নিকট কোনো কিছু চাইতে হয়, তবে নম্রভাবে চাইবে। সেটি মিলে গেলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। আর যদি তারা অপারগ হন, তবে তাদের ওজর গ্রহণ করবে। তাদের নিকট এমন কিছু দাবী করবে না, যা দিতে তাদের কষ্ট হয়।

২৬। তুমি উপার্জনক্ষম হবার সাথে সাথেই রিজিক অন্বেষণে তৎপর হবে। এবং মাতা পিতাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করবে।

২৭। মনে রেখো, তোমার উপর তোমার মাতা-পিতার যেমন হক আছে। তেমনি তোমার স্ত্রীরও তোমার উপর অধিকার আছে। তাই প্রত্যেক হকদারের হক সঠিকভাবে আদায় করতে চেষ্টা করবে। আর তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দিলে তা প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সাথে দূর করতে চেষ্টা করবে এবং গোপনে গোপনে উভয়কেই হাদিয়া-তোহফা দিবে।

২৮। যদি কখনও স্ত্রীর সাথে মাতা পিতার মনোমালিন্য হয়, তবে ন্যায়ানুগ পন্থায় উত্তম বিচারে সচেষ্ট হবে। স্ত্রী যদি হকের উপর থাকে তাহলে তাকে ভালভাবে বুঝিয়ে বলবে যে, তুমি তার পক্ষে আছ। কিন্তু মাতা পিতাকে খুশি রাখাও তোমার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

২৯। যদি বিয়ে কিংবা তালাকের ব্যাপারে মাতা পিতার সাথে তোমার কোনো মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে শরিয়তের আইনের আশ্রয় গ্রহণ করবে, ওটাই হবে তোমাদের জন্য উত্তম সাহায্যকারী।

৩০। ভাল-মন্দ উভয় ক্ষেত্রেই মাতা পিতার দোয়া কবুল হয়। তাই তাদের বদ দোয়া হতে বাঁচার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

৩১। পিতা-মাতার ব্যাপারে অন্যদের সাথেও উত্তম ব্যবহার করবে। কারো পিতা-মাতাকে গালমন্দ করবে না। কারণ, যে অন্যদের গালি দেয়, সে নিজেও গালি খায়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مِنَ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِِ وَالِدَيْهِ : قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَهَلْ يَشْتِمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ ؟ قَالَ : نَعَمْ، يَسُبُّ أبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أمَّهُ فَيَسُبُّ أمَّهُ ( متفق عليه )

একটি মারাত্মক কবিরা গুনাহ হচ্ছে নিজ পিতা-মাতাকে গালমন্দ করা, লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কেউ কি নিজ মাতা-পিতাকে গালমন্দ করতে পারে? নবীজী বললেন, হ্যাঁ, কেউ কারো বাবাকে গালি দিলো তখন সেও তার বাবাকে গালি দিল, অনুরূপ কেই কারো মাকে গালি দিল তখন সেও তার মাকে গালি দিল। (বর্ণনায় বোখারি ও মুসলিম)

৩২। নিয়মিত মাতা পিতার যিয়ারত করবে, তাদের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও। তাদের পক্ষ হতে দান খয়রাত করবে। সর্বদা তাদের জন্য দোয়া করবে যেমনটি আল্লাহ শিখিয়েছেন।

(আরবি)

হে আমার রব, আমাকে, আমার মাতা পিতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করে দিন। (সূরা নূহ : ২৯)

(আরবি)

হে আমার রব! তুমি আমার মাতা পিতার উপর দয়া কর যেমনিভাবে তারা আমাকে ছোট অবস্থায় লালন পালন করেছেন। (সূরা ইসরা : ২৪ )

২৩
কবিরা গুনাহসমূহ হতে বিরত থাক
১। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

তোমরা যদি সেসব কবিরা গুনাহ পরিহার কর, যা থেকে তোমাদের বারণ করা হয়েছে, তাহলে আমি তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাব সম্মনজনক প্রবেশস্থলে। (সূরা নিসা : ৩১ )

২। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

أكْبَرُ الْكَبَائِرِ : الْاشْرَاكُ بِاللهِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَ عُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ ( متفق عليه )

সবচেয়ে নিকৃষ্ট কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা, কাউকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। (বোখারি ও মুসলিম)

৩। শরয়ি পরিভাষায় কবিরা গুনাহ সেসব পাপকে বলা হয়, যেসব পাপ সম্বন্ধে দুনিয়ায় হদ বা শাস্তির বিধান রয়েছে এবং আখেরাতে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে।

২৪
কবিরা গুনাহ কি কি?
ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: কবিরা গুনাহের সংখ্যা প্রায় সাতশত। তন্মধ্যে সাতটি সর্বাধিক মারাত্মক ও বড়। তবে এখানে একটি কথা হচ্ছে, বার বার ইস্তেগফার করলে কবিরা আর কবিরা থাকে না অনুরূপ সগিরা গুনাহ বার বার করলে তা আর সগিরা থাকে না। বরং সেটি কবিরা হয়ে যায়। কবিরা গুনাহ সব এক পর্যায়ের নয় বরং কোনো কোনোটি অপরটির থেকে বড়।

২৫
কবিরা গুনাহের শ্রেণীভেদ ১। আকিদার মধ্যে কবিরা গুনাহ:
আল্লাহর সাথে শিরক করা। এর পরিধি ব্যাপক যথা গাইরুল্লাহর জন্য ইবাদত করা, তাদের নিকট দোয়া-প্রার্থনা করা, কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ( رواه الترمذي وقال حسن صحيح )

দোয়া হচ্ছে ইবাদত। (তিরমিজি, হাসান সহিহ)

শরিয়তের ইলম শুধুমাত্র দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে হাসিল করা। প্রয়োজনের সময় ইলমকে গোপন রাখা কিংবা খেয়ানত করা। গণকদের কথা কিংবা যাদুকরদের বিশ্বাস করা। গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করা কিংবা তাদের নামে নযর নিয়াজ দেয়া ইত্যাদি। যাদু বিদ্যা শিক্ষা করা কাংবা সেই কাজে সহায়তা করা। গাইরুল্লাহর নামে কসম খাওয়া, যেমন সম্মান, সম্তান, নবী, কাবা কিংবা অন্য কোনো জিনিসের কসম খাওয়া। কোনো মুসলিম সম্বন্ধে খারাপ ধারণা করা, অথবা কাউকে বিনা দলিলে কাফের ফতোয়া দেয়া। অপরদিকে কাফেরদের কাফের না বলা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামে মিথ্যা বলা। যেমন, জেনে বুঝে মউযু হাদিস বর্ণনা করা। আল্লাহর ধর-পাকড় ও আযাব হতে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া। মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাব-রোদন ও উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা। মুখ-বুক চাপড়িয়ে চিৎকার করা। তাকদিরকে অস্বীকার বা মিথ্যা বলা। তাবিজ ঝুলানো, তা কোনো সুতা কিংবা কবজেই হোক বা সন্তান, গাড়ি-বাড়ী অথবা এই জাতীয় জিনিসের যে কোনটাকে চোখ লাগা হতে হিফাজত করার জন্য কিছু করা হোক।

২৬
২। জীবন ও বুদ্ধির মধ্যে কবিরা গুনাহ:
অন্যায় ও নাহকভাবে কাউকে কতল করা। আগুন দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা পশুকে পুড়িয়ে মারা। দুর্বল ব্যক্তি, স্ত্রী, ছাত্র কিংবা খাদেম অথবা কোনো পশুর সাথে অত্যধিক খারাপ ব্যবহার করা। গীবত, চোগলখুরী (ফেৎনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মন্দ ও খারাপ কথাকে অন্যর নিকট পৌঁছানো) করা। নেশা জাতীয় পানীয় যেমন মদ, তাড়ি, হুইসকি, বিয়ার ইত্যাদি পান করা। যেকোনো ধরনের বিষ পান করা। শুকরের গোশত কিংবা মৃত জন্তু ভক্ষণ করা, তবে একান্ত নিরুপায় হয়ে গেলে জীবন রক্ষার তাগিদে, যে টুকুতে জীবন রক্ষা পাবে ততটুকু গোশত ভক্ষণ করা জায়েয। ক্ষতিকর ও নেশা জাতীয় জিনিস গ্রহণ করা। যেমন গাজা, সিগারেট ইত্যাদি। বিনা কারণে নিজেকে কিংবা অন্য মানুষ হত্যা করা যদিও তা ধীরে ধীরে হয়। যেমন ধমপানের কারণে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। অন্যায় তর্ক করা। মানুষের উপর জুলুম ও তাদের সাথে শত্রুতা করা। হক গ্রহণ না করা বা তাতে রাগান্বিত হয়ে যাওয়া। ঠাট্টা বিদ্রুপ করা। মুসলিমদের গালি দেয়া। অহংকার করা, নিজকে বড় মনে করা। সাহাবাদেরকে গালি দেয়া। গোয়েন্দাগিরি বা মানুষের দোষ অনুসন্ধান করা। মানুষকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে শাসকদের নিকট মিথ্যা কথা বলা। জীবিত বা মৃত কোনো প্রাণীর মূর্তি বা ছবি বানান। তবে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ছবি তোলা জায়েয।

২৭
ধন-দৌলতের মধ্যে কবিরা গুনাহ
এতিমের মাল আত্মসাৎ করা। জুয়া, তাস, পাশা ইত্যাদি খেলা। চুরি ও ডাকাতি করা। জোর করে অন্যের সম্পদ দখল করা। সুদ দেয়া, সুদ গ্রহণ করা ও সুদের সাক্ষী হওয়া। ঘুষ গ্রহণ করা। ওজনে কম দেয়া। কারো মাল অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার জন্য আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করা। ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে ধোকা দেয়া। চুক্তি ভঙ্গ করা। মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। ওয়াদা ভঙ্গ করা। দাম বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে খাদ্য শস্য গুদামজাত করা। ক্ষতিকর অসিয়ত করা যাতে ওয়ারিসদের হক নষ্ট হয়, যেমন কেউ এমন ঋণের অসিয়ত করল যা আসলে তার উপর ছিল না। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সাক্ষ্য না দেয়া। আল্লাহ যে রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন তাতে খুশি না থাকা। পুরুষদের স্বর্ণালংকার পরিধান করা। অহংকার বশত: পায়ের টাখনুর নীচে লম্বা করে জামা, পায়জামা, লুঙ্গি ও প্যান্ট ইত্যাদি পরিধান করা। পরা।

২৮
ইবাদতের ক্ষেত্র কবিরা গুনাহসমূহ
সালাত আদায় না করা অথবা ওজর ব্যতীত দেরী করে আদায় করা। জাকাত প্রদান না করা। কোনো ওজর ছাড়াই রমজান মাসে সিয়াম ভঙ্গ করা। হজ করার সামার্থ থাকা সত্ত্বেও তা আদায় না করা। আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা হতে পলায়ন করা। যার উপর জেহাদ ওয়াজিব তার জন্য জান মাল বা কথার দ্বারা তা পালন না করা। কোনো ওজর ব্যতীত জুমআর সালাত আদায় না করা অথবা জামাতে হাজির না হওয়া। সামার্থ থাকা সত্ত্বেও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ না করা। প্রশ্রাব হতে পূর্ণভাবে পাক না হওয়া । ইলম অনুযায়ী আমল না করা।

২৯
পরিবারির ও বংশীয় গণ্ডীতে কবিরা গুনাহ
যেনা-ব্যভিচার করা। বলৎকার তথা পুং মিথুন করা। মুমিন নারীর নামে যেনার অপবাদ দেয়া। পর্দা ব্যতীত নারীদের বাহিরে ঘুরাফিরা করা। তাদের চুল ঢেকে না রাখা। নারীদের পুরুষের মত অনুরূপ পুরুষদের নারীদের মত সাজ-পোষাক ও চাল চলন করা, যেমন দাঁড়ি মুণ্ডন করা। মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া ও তাদের সাথে অসভ্য আচরণ করা। (তবে পাপ কাজে তাদের মান্য করা যাবে না)। শরিয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত আত্মীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা। শরয়ি ওজর যেমন হায়েয-নেফাস ব্যতীত বিছানায় স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়া। কারো স্ত্রীকে তার জন্য হালাল করার নিমিত্তে হিলাহ করা। (অর্থাৎ কারও তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এই নিয়তে বিয়ে করা যে সে তাকে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরিয়ে দিবে)।

মাহরাম পুরুষ ব্যতীত নারীর অন্যত্র সফর করা। জেনে শুনে সন্তানকে তার পিতা ব্যতীত অন্য কারো দিকে নিসবত করা। ইচ্ছাকৃতভাবে নিজ বংশের পরিচয় গোপন করা কিংবা পরিবর্তন করা। পর পুরুষের সাথে নিজ স্ত্রীর যেনা করাতে রাজি থাকা। প্রতিবেশিদের কষ্ট দেয়া। পুরুষ বা মহিলাদের ভ্রু কিংবা মুখের পশম উত্তোলন করে সুন্দর বানানোর চেষ্টা করা।

৩০
কবিরা গুনাহ হতে তওবা
হে মুসলিম ভাই, যদি কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত থাকেন, তবে সাথে সাথে তা পরিত্যাগ করুন। আর আল্লাহর নিকট খাটি তওবা করুন। ইস্তেগফার করুন যে আর কখনও সে কাজে প্রত্যাবর্তন করবেন না।

কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

নিশ্চয় তাওবা কবুল করা আল্লাহর যিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে। তারপর শীঘ্রই তাওবা করে। অত:পর আল্লাহ এদের তাওবা কবুল করবেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আর তাওবা নাই তাদের, যারা অন্যায় কাজ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, আমি এখন তাওবা করলাম, আর তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা কাফের অবস্থায় মারা যায়, আমি এদের জন্যই তৈরি করেছি যন্ত্রণাদায়ক আজাব। (সূরা নিসা : ১৭-১৮)

৩১
দ্বীনের অনুসরণ কর, বিদআতের প্রচলন করো না
১। যখনই আপনি দ্বীনের মধ্যে বিদআতের প্রচলন সম্বন্ধে মানুষকে সাবধান করতে যাবেন অথবা তাকে গোমরাহী বলবেন, তখনই কেউ কেউ আপনাকে বলবে, আপনার কাঁচের চশমাও তো বিদআত। এদের কথার উত্তরে বলুন: বিদআতের সম্পর্ক দ্বীনের সাথে আর আপনি যে চশমার কথা বলেছেন, ওটা দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নয়। বরং ওটা দুনিয়ার নব আবিস্কৃত জিনিসেরই একটি। যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

أنتم أعْلَمُ بِأمْرِ دنياكم ( رواه مسلم )

তোমাদের দুনিয়ার ব্যাপারে তোমরাই অধিক জ্ঞাত । (সহিহ মুসলিম)

এই নব আবিস্কৃত জিনিসসমূহ দু’মুখো অস্ত্রের মত। যেমন রেডিও, যদি ওটাকে ভাল কাজে ব্যবহার করি যেমন কোরআন পাঠ, দ্বীনি আলোচনা শ্রবণ ইত্যাদি। তবেই তা হালাল ও প্রয়োজনীয় জিনিসের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যদি ওটা দ্বারা খারাপ কাজ যেমন, গান বাজনা শ্রবণ করি তবে ওটা হারাম। কারণ এসবের দ্বারা চরিত্র নষ্ট হয়, আর সমাজ অধ:পতন ডেকে আনে।

৩২
দ্বীনের ক্ষত্রে বিদআত:
আর তা হচ্ছে সেসব আমল যার সমর্থনে কোরআন ও সহিহ হাদিসের কোনো বর্ণনা নেই। এই জাতীয় বিদআতকে ইসলাম অস্বীকার করে। এর সূচনাকারী ও পালনকারী উভয়কেই তিরষ্কার করা হয়েছে। এবং উভয়কেই গোমরাহ বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।

(ক) আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের বিদআতসমূহকে অস্বীকার করে বলেন:

(আরবি)

আর তাদের জন্য কি এমন কিছু শরিক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শুরা: ২১ )

(খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ( رواه مسلم )

যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যাতে আমাদের হুকুম নেই তা পরিত্যাজ্য। (সহিহ মুসলিম)

(গ) অন্যত্র তিনি বলেছেন:

اِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْاُمُوْرِ فَاِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةُ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ( رواه الترمذي حسن صحيح )

দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজনের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। কারণ এ জাতীয় প্রতিটি সংযোজনই বিদআত, আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি। (তিরমিজি, হাসান সহিহ)

(ঘ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

اِنَّ اللهَ حَجَبَ التَّوْبَةَ عَنْ كُلِّ صَاحِبِ بِدْعَةٍ حَتَّى يَدَعَهَا ( صحيح الطبراني )

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বিদাআতির তওবাকে কবুল করেন না, যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। (সহিহ তাবারানী)।

(ঙ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ أوى مُحْدِثًا ( مسلم )

যে ব্যক্তি কোনো বিদআতিকে আশ্রয় দিবে, সাহায্য করবে, আল্লাহ তার উপর লানত করুন। (মুসলিম)

(চ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন:

مَنْ وَقَّرَ صَاحِبَ بِدْعَةٍ فَقَدْ أعَانَ عَلى هَدَََمِ الاسْلامِ ( رواه البيهقي )

যে ব্যক্তি বিদআতিকে সম্মান করল, সে ইসলাম ধ্বংসের কাজে সাহায্য করল। (বর্ণনায় বায়হাকি)

(ছ) ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি, লোকেরা তাকে যতই সুন্দর মনে করুক না কেন।

(জ) ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো বিদআতকে প্রবর্তন করল এবং ধারণা করল যে তা উত্তম আমল, এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে সে এই ধারণাই করল, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রিসালাতের খেয়ানাত করেছেন। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করে দিলাম, আমার নেয়ামতকে তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা ৩ আয়াত)। সুতরাং ঐ সময়ে যা দ্বীন বলে পরিগণিত হয়নি, তা আজও দ্বীন বলে গণ্য হবে না।

(ঝ) ইমাম শাফেয়ি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি (দীনের মধ্যে সংযোজিত নতুন) কোনো আমলকে হসানাহ বলল, সে যেন নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল। যদি দ্বীনের মধ্যে উত্তম জিনিসের সংযোজন জায়েয হত, তবে বুদ্ধমানের কথা গ্রহণ করা জায়েয হত, শুধু ঈমানদারগণের কথা নয়। তখন দ্বীনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিছু কিছু নতুন জিনিসের প্রচলন ঘটানো জায়েয হত। আর তখন প্রতি ব্যক্তিই তার নিজের জন্য নতুন নতুন শরিয়তের প্রর্বতন করত।

(ঞ) গুদায়েফ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যখনই কোনো বিদআতের প্রচলন হয়, তখনই ঐ পরিমাণ সুন্নত পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

(ট) ইমাম হাসান বসরি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, কখনও বিদাআত পন্থীদের পার্শ্বে উপবেশন করবে না, তাহলে তোমার অন্তরও রোগাক্রান্ত হয়ে যাবে।

(ঠ) হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, সে জাতীয় ইবাদত, যা রাসূলের সহাবিগণ করেননি, তা করতে যেও না।

৩৩
বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে প্রচলিত কিছু বিদআত
১। মিলাদ পড়া, শবে মিরাজ ও ১৫ শাবানের রাতে (তথাকথিত শবে বরাত) মসজিদে সমবেত হয়ে সারা রাত ইবাদত-বন্দেগি করে কাটানো।

২। জিকির করার সময় বাদ্য বাজানো, নৃত্য করা, হাততালি দেয়া। অনুরূপভাবে উচ্চ ও সমস্বরে জিকির করা। আল্লাহর নামের পরিবর্তন করে হু হু, আই, ইহ, উহ, হুয়া, হিয়া বলা।

৩। মহররম মাসে মাতম করা। মৃত্যুর পর হাফেজ ও আলেমদের মাধ্যমে কোরআন খতম করিয়ে মৃত ব্যক্তির নামে সাওয়াব বখশে দেওয়া। এর বিনিময়ে তাদের হাদিয়া দেওয়া। মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে চেহলম, ফাতেহাখানি, জিয়াফত ইত্যাদি পালন করা।

৩৪
নেক কাজের আদেশ করা ও অন্যায় কাজে নিষেধ করা
নেক কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে বাধা দান, এমন দুটি ভিত্তি যার উপর নির্ভর করে সমাজের সুষ্ঠতা। একাজ এই উম্মতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদের বের করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য । তোমরা নেক কাজের আদেশ দিবে আর অন্যায় কাজে নিষেধ করবে, আর আল্লাহর উপর ঈমান আনায়ন করবে। (সূরা আলে ইমরান : ১১০ )

সুতরাং আমরা যদি নেক কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে নিষেধ করা হতে বিরত থাকি, তবে সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে। চরিত্রের অধ:পতন হবে। লেন-দেন ও মোয়ামালাতের ক্ষেত্রে ইনসাফের অবনতি ঘটবে এবং এ রকম আরো অনেক ক্ষতি হবে। নেক কাজের আদেশ দেয়া, আর অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করা কোনো ব্যক্তি বিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা সামার্থ ও ইলম অনুযায়ী নারী-পুরুষ, আলেম-অনালেম নির্বিশেষে সকল মুসলিমের উপরই ওয়াজিব।

রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ رأى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغيِّرْهُ بِيَدِهِ فَاِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهَِ فَاِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أضْعَفُ الايْمَانِ ( رواه مسلم )

তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কোনো খারাপ কাজ হতে দেখে, তবে সে যেন তা শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করে, যদি তাতে সামর্থ না হয় তবে যেন মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করে, যদি তাও না পারে তবে যেন অন্তর দিয়ে (ঘৃণা) করে। আর এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। (সহিহ মুসলিম)

৩৫
নেক কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ করার পন্থা ও মাধ্যমসমূহ
১। জুমুআ ও দুই ঈদে খোতবা দানের মাধ্যমে করা। খতিব সাহেব খোতবার মাধ্যমে সর্ব প্রকার অন্যায় কাজের ব্যাপারে লোকদের সাবধাবন করবেন।

২। সমাজের নানা ধরনের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে ভাষণ দেয়া, পত্রিকা কংবা পাক্ষিকে বক্তব্য পেশ করার মাধ্যমে। সাথে সাথে তার সঠিক সমাধান দেয়া।

৩। বই-পুস্তক রচনার মাধ্যমে। রচিত বইয়ে লেখক সেসব চিন্তা ও পরিকল্পনা সমাজের সম্মুখে পেশ করবেন যাতে মানুষের সংশোধন হয়।

৪। ওয়াজ-নসিহত ও মাহফিলের মাধ্যমে। মাহফিলের আয়োজন করে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্ধারণ করে কথা বলবেন। যেমন, ধুমপানের ক্ষতিকারক দিক; শারীরিক ক্ষতি ও আর্থিক অপচয় ।

৫। উপদেশ দান, এক ভাই অন্য ভাইকে উপদেশ দিবে। যেমন, সোনার আংটি পরিত্যাগ করার জন্য অথবা সালাত ত্যাগের ব্যাপারে ভয় প্রদর্শন করবে। গাইরুল্লাহর নিকট দোয়া করার ব্যাপারে সাবধান করবে।

৬। রিসালাহ তথা ছোট ছোট পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে, এটা সর্বাপেক্ষা উত্তম পদ্ধতি। প্রতিটি ব্যক্তিই অল্প কয়েক পৃষ্ঠায় লিখিত সালাত, জেহাদ, জাকাত অথবা কবিরা গুনাহ যেমন, মৃতদের নিকট দোয়া করা, তাদের নিকট সাহায্য ভিক্ষা করা ইত্যাদি বিষয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করতে পারেন, তাহলে এ জাতীয় পুস্তিকা পড়তে সাধারণ মানুষ খুবই উৎসাহিত হবে এবং উপকৃত হবে।

৩৬
নেক কাজে আদেশ দানকারীর জন্য কতিপয় শর্ত:
১। সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে নিষেধ করবে নম্র ও ভদ্রতার সাথে, যাতে মানুষের অন্তর তা গ্রহণ করতে উৎসাহ বোধ করে। আল্লাহ তাআলা মূসা ও হারুন আলাইহিমাস সলামকে সম্বোধন করে বলেন:

(আরবি)

তোমরা দু’জন ফিরাউনের নিকট যাও কারণ, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (সূরা তাহা: ৪৩-৪৪ )

যদি কাউকে গালমন্দ করতে বা কুফরি কাজ করতে দেখা যায় তাহলে ভদ্রভাবে নরম ভাষায় উপদেশ দিতে হবে। তাকে শয়তানের ধোকা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলতে হবে। কারণ, শয়তানের কারণে সে এইভাবে গালমন্দ করছে। যে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করে একটির পর একটি নেয়ামত দিচ্ছেন, তিনি অবশ্যই শুকরিয়া পাওয়ার অধিকার রাখেন। আর কুফরি করলে কোনো লাভই হবে না। বরং এ জন্য সে দুনিয়ায় দুর্ভাগা হবে এবং আখেরাতেও সাজা প্রাপ্ত হবে। তারপর তাকে তওবা ও ইস্তেগফার করার পরামর্শ দিতে হবে।

২। যে সব কাজের আদেশ দিবে সে সম্পর্কে হালাল না হারাম তা উত্তম রূপে জানতে হবে, যাতে অন্যের উপকার করা সম্ভব হয় এবং অজ্ঞতার কারণে যেন অন্যের ক্ষতি হয়ে না যায়।

৩। যে কাজের নির্দেশ দিবে, তার উপর নিজের আমল থাকাটা উত্তম। আর যা থেকে নিষেধ করবে তা হতে আগে নিজে বিরত থাকবে, যাতে উদ্যোগটি পূর্ণরূপে উপকারী হয়। যারা আদেশ দিয়ে নিজেরা আমল করে না তাদের আল্লাহ তাআলা সম্বন্ধে বলেন:

(আরবি)

তোমরা কি মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তেলাওয়াত কর। তোমরা কি বুঝ না? (সূরা বাকারা : ৪৪ )

আর যে এই ধরনের ভুলে লিপ্ত রয়েছে, তার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়ে তা সংশোধন করতে তৎপর হতে হবে।

৪। আমলের মধ্যে ইখলাস পয়দা করতে হবে। আর যারা বিরোধিতা করবে তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে হবে। তবেই তা আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ওজর হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

বলল, তোমরা কেন উপদেশ দিচ্ছ এমন কওমকে, যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করবেন অথবা কঠিন আজাব দেবেন? তারা বলল, তোমাদের রবের নিকট ওজর পেশ করার উদ্দেশ্যে। আর হয়তো তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে। (সূরা আ’রাফ: ১৬৪)

৫। নেক কাজে আদেশ প্রদানকারীকে নির্ভীক হতে হবে। কারো কোনো সমালোচনায় কর্ণপাত করবে না। আর আপতিত যে কোনো বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

৩৭
বিশেষ কিছু গর্হিত কাজ ১। মসজিদ সংক্রান্ত গর্হিত কাজসমূহ
মসজিদকে চাকচিক্যময় রূপে ও নানা ধরনের রঙে রঙ্গীন করে সাজান। অপ্রয়োজনীয় অনেক মিনার তৈরী করা। মুসল্লিদের সম্মুখে বিভিন্ন ধরনের লেখা সম্বলিত বোর্ড স্থাপন করা। এতে সালাত আদায়ের সময় খুশুর ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষ করে যদি ঐ ধরনের কবিতা থাকে যাতে গাইরুল্লাহর নিকট বিপদে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। মুসল্লিদের সম্মুখ দিয়ে যাতায়াত করা, অপেক্ষমান মুসল্লিদের ঘাড়ের উপর দিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া, উচ্চস্বরে দোয়া, জিকির কিংবা তেলাওয়াত করা। অনুরূপভাবে উচ্চ আওয়াজে কথা বলা কিংবা দুরূদ পড়া। এতে অন্য মুসল্লিদের সালাতের ক্ষতি হয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত আমলগুলো নীরবে-নি:শব্দে সম্পাদন করতেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلى بَعْضٍ بِالقُرْآنِ ( صحيح رواه ابوداود )

তোমাদের কেউ অন্যের সম্মুখে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করবে না। (সহিহ আবু দাউদ)

অনুরূপভাবে উচ্চ শব্দে থুথু ফেলা, নাক ঝাড়া। এমনসব দাওয়াত কর্মী (দায়ী) বা খতিব নিযুক্ত করা যারা মউযু ও দুর্বল হাদিস উদ্ধৃত করে কথা বলে। আর শেষে এটা যে দুর্বল তা উল্লেখ করে না। যদিও সে সম্বন্ধে সহিহ হাদিস বিদ্যমান থাকে এবং তা এত বেশি যে দুর্বল হাদিস উল্লেখের প্রয়োজনই নেই। আজানের পূর্বে গাইরুল্লাহর নিকট মদদ ও সাহায্য ভিক্ষা করা। মীলাদুন্নবী উদযাপন করা ও তাতে নানা ধরনের কবিতা আবৃতি করা, যাতে গাইরুল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। ধুমপান করে মুখ পরিষ্কার না করেই মসজিদে যাওয়া এতে মুখের দুর্গন্ধে অন্যান্য মুসল্লি ও ফেরেশতাদের কষ্ট হয়। কেউ কেউ এমন অপরিচ্ছন্ন ও ময়লা কাপড় পরে সালাত আদায় করতে আসে যা হতে দুর্গন্ধ বের হয় এটিও একটি গর্হিত কাজ। খুবই উচ্চ আওয়াজে কথা বলা। জিকির করার সময় নৃত্য করা বা হাততালি দেয়া। মসজিদে বেচা-কেনা করা। হারানো জিনিসের এলান দেয়া। জামাতের সময় পায়ে পা, আর কাঁধে কাঁধ না মিলিয়ে ফাক ফাক হয়ে দাঁড়ানো।

৩৮
২। রাস্তাঘাটের গর্হিত কাজসমূহ
পর্দা ব্যতীত কিংবা মুখ না ঢেকে মহিলাদের রাস্তাঘাটে বের হওয়া, উচ্চস্বরে কথা বলা, অট্টহাসিতে ফেটে পড়া। রাস্তায় পুরুষ-মহিলাদের একে অপরের হাত ধরে হাটা ও লজ্জাহীনভাবে কথাবার্তা বলা। তাস বা জুয়ার সরঞ্জাম বিক্রি করা। মদ ও মাদক দ্রব্য বিক্রি করা। পুরুষ ও মহিলাদের নগ্ন ছবি লটকানো, যা চরিত্র বিনষ্ট করে । রাস্তাঘাটে আবর্জনা নিক্ষেপ করা। মহিলাদের দেখার জন্য রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা। রাস্তাঘাট, বাজার ও গাড়িতে পুরুষ ও মহিলাদের ঘেঁষাঘেঁষি করে বসা ও একত্রে চলাফেরা করা।

৩৯
৩। বাজারের গর্হিত কাজসমূহ
বেচা-কেনার সময় আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম খাওয়া। যেমন অন্যের সম্মান বা জিম্মার কসম ইত্যাদি। ভেজাল বা ধোকা দেয়া। বেচা কেনার সময় মিথ্যা বলা। রাস্তার উপর কার্পেট ইত্যাদি বিছিয়ে মানুষের চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি করা, কুফরি কাজ করা বা গালমন্দ করা। ওজনে কম দেয়া, উচ্চস্বরে কাউকে ডাকাডাকি করা। স্বামী কিংবা মাহরাম থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের বাজারে গিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করা।

৪০
৪। সাধারণ গর্হিত কাজসমূহ:
বাজনা ও গান শ্রবণ করা। গাইরে মাহরাম পুরুষ ও মহিলাদের মেলমেশা করা, যদিও তারা তারা চাচাতো, মামাতো ভাই কিংবা দেবরই হোক না কেন। প্রাণী বা মানুষের ছবি বা মূর্তি দেয়ালে, টেবিলের উপর কিংবা ষ্টাণ্ডের উপর অথবা অন্য কোনো স্থানে স্থাপন করা, যদিও তা তার নিজের কিংবা পিতা-মাতার হয়। পোষাক-পরিচ্ছেদ, খানাপিনা, আসবাব পত্র ক্রয়ে অতিরিক্ত খরচ করা। আর অতিরিক্ত খাবার রাস্তায়, ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়া। কারণ, আতিরিক্ত খাদ্যের ব্যাপারে ওয়াজিব হল, তা দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া যাতে তা তাদের উপকারে আসে। ধুমপান করা যা স্বাস্থ্য ও পার্শ্ববর্তী লোকদের ক্ষতি করে এবং টাকা ও সম্পদের অপচয় হয়। বাদ্য বাজানো। মাতা-পিতার অবাধ্যাচরণ করা। যৌন ম্যাগাজিন পাঠ করা। শিশু-কিশোরদের শরীরে তাবিজ কবজ বেঁধে দেয়া কিংবা বাড়ি ও গাড়িতে ঝুলানো, এ ধারণায় যে তার মাধ্যমে কুদৃষ্টি হতে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং বালা-মুসিবত দূর হবে। সাহাবিদের সম্পর্কে সম্মানহানীকর কথা বলা। আল্লাহ তাআলার কোনো হুকুম নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা, যা মূলত: কুফরি। যেমন সালাত, পর্দা, দাড়ি রাখা এবং এ জাতীয় নিদর্শনসমূহকে কটাক্ষ করা।

৪১
বাজারের দোয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশের সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার আমলনামায় হাজার হাজার সওয়াব লেখে দেবেন, হাজার হাজার গুনাহ মুছে দেবেন, জান্নাতে হাজার হাজার স্তর বাড়িয়ে দেবেন, এবং জান্নাতে তার জন্য একটি বাড়ি করে দেবেন।

لَا اِلهَ إلَاّاللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيْتُ وَهُوَ حَيٌّ لا يَمُوْتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ

وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ ( رواه أحمد وحسنه الألباني )

আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁর। তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু দান করেন। তিনি চিরঞ্জীব, কখনই মৃত্যুমুখে পতিত হবেন না। সমস্ত কল্যাণ তাঁরই হাতে। আর তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (বর্ণনায় আহমদ, আলবানি রহ. হাদিসটিকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন)

৪২
আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ
আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ওয়াজিব। তা মালের দ্বারাও হতে পারে এবং জানের দ্বারাও । অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় ধন দৌলত খরচ করা কিংবা নিজে স্বশরীরে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা। আবার জিহ্বা দ্বারাও জেহাদ করা যায়, অনুরূপভাবে লেখনীর দ্বারেও। আর তা হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দেয়া, আথবা ইসলামকে হেফাজত করার চেষ্টার মাধ্যমে।

৪৩
জেহাদের প্রকারভেদ ১। ফরজে আইন:
যখন অমুসলিম শত্রু পক্ষ মুসলিমদের কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্যত হয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জেহাদ করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরজ হয়ে যায়। যেমন ইহুদিরা এখন প্যালেস্টাইনকে দখল করে রেখেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এখন প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ। সার্মথ্যবান মসলিমরা যদি জান ও মাল দিয়ে ইহুদিদেরকে ওখান থেকে বের করে দিতে উদ্যোগী না হয়, তবে সমস্ত মুসলিমই তাতে গোনাহগার হবে।

৪৪
২। ফরজে কেফায়াহ:
সে জেহাদে কিছু সংখাক লোক শরিক হলে অন্যদের উপর হতে এ ফরজ অপসারিত হয়ে যাবে। সেই জেহাদের উপমা যেমন সারা পৃথিবীর সর্বত্র দাওয়াত পৌঁছানোর জেহাদ, যাতে সব জায়গায় ইসলামি শরিয়ত বাস্তবায়িত হয়। যেসব দেশ ইসলামে প্রবেশ করবে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে। আর যারা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে যাতে আল্লাহ তাআলার কালিমা বুলন্দ হয়। আর এই জেহাদ প্রথম প্রকার জেহাদের মতই কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। যখন থেকে মুসলমানরা এই জেহাদ পরিত্যাগ করেছে এবং দুনিয়াবি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তখন হতেই অপমান অপদস্ততা তাদেরকে চারিদিক থেকেঘিরে ধরেছে। তাদের সম্বন্ধে রাসূলের কথা সত্য হয়েছে। তিনি বলেছেন:

إذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعَيْنَةِ وَاَخَذْتُمْ اذْنَابَ البَقَرِ وَرَضِيْتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمْ الجِهَادَ في سَبِيْلِ اللهِ سَلَّطَ

اللهُ عَلَيكُمْ ذُلًّا لا يَنْزِعُهُ عَنْكُمْ حتىَّ تَرْجِعُوا إلى دِيْنِكُمْ ( صحيح رواه أحمد )

যখন তোমরা দিনার (টাকা পয়সা) দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, গরুর লেজ ধরে থাকবে (অর্থাৎ চাষাবাদ করবে) আর কৃষি কাজ নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে তাতে পড়ে থাকবে, আর আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ পরিত্যাগ করবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দিবেন, তা আর কখনো উঠিয়ে নিবেন না যতক্ষণ না তোমরা আবার দ্বীনের দিকে প্রত্যার্বতন কর। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)

৪৫
৩। শাসকদের সাথে জেহাদ করা:
যেমন শাসক, প্রশাসক ও তাদের সাহায্যকারীদের উপদেশ দান করা। তাদের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الدِّيْنُ النَّصِيحةُ قُلنَا لِمَنْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ للهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ المُسْلِمِيْنَ وَعاَمّتِِهِمْ ( رواه مسلم )

দ্বীন হচ্ছে নসিহত (হিতাকাঙ্খিতা)। আমরা বললাম: কার জন্য, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: আল্লাহর জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিমদের (রাষ্ট্রনায়ক) ইমামগণের জন্য এবং সাধারণ লোকদের জন্য। ( সহিহ মুসলিম)

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

اَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ ( حسن رواه ابو داود )

উত্তম জেহাদ হচ্ছে অত্যাচারী বাদশার সম্মুখে সত্য ও হক কথা বলে দেওয়া। (হাসান, বর্ণনায় আবু দাউদ)

সে সব অত্যাচারী শাসক তো আমাদের মতই মানুষ, আমাদের ভাষাতেই কথা বলে। অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার হতে বাঁচার একটি পদ্ধতি হচ্ছে, মুসলিমবৃন্দ নিজ রবের নিকট তওবা করবে। নিজ নিজ ঈমান-আকিদাকে সহিহ-শুদ্ধ করবে, নিজেদের ও পরিজনদেরকে সহিহ ইসলামের উপর গড়ে তুলবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। (সূরা রাদ : ১১ )

বর্তমান যুগের একজন বিখ্যাত দায়ী এই কথাগুলি আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, সর্ব প্রথম তোমাদের অন্তরে ইসলামি হুকুমত কায়েম কর, তবেই তোমাদের জমিনে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এ জন্য অবশ্য মূল ভিত্তিকে সুসংহত করতে হবে, যাতে তার উপর উত্তম জিনিস প্রতিষ্ঠা করা যায়। আর তা হচ্ছে ইসলামি সমাজ।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে জমিনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদত করবে, আমার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর এরপর যারা কুফরি করবে তারাই ফাসিক। (সূরা নূর: ৫৫ )

৪৬
৪। কাফের, নাস্তিক, ইহুদি, খৃষ্টান এক কথায় তাবত অমুসলিম সম্প্রদায় যারা আমাদের সাথে যুদ্ধরত, তাদের সাথে জেহাদ
কাফের, নাস্তিক, ইহুদি, খৃষ্টান এক কথায় তাবত অমুসলিম সম্প্রদায় যারা আমাদের সাথে যুদ্ধরত, তাদের সাথে জেহাদ করতে হবে। সে জেহাদ হবে সম্পদ, জীবন ও কথার দ্বারা। প্রতিটি মুসলমানকেই সাধ্যমত জেহাদে অংশগ্রহণ করতে হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

جَاهِدُوا الْمُشْرِكِيْنَ بِأمْوالِكُمْ وَاَنْفُسِكُمْ وَاَلْسِنَتِكُمْ ( صحيح رواه أحمد )

তোমরা মুশরেকদের সাথে জেহাদ কর সম্পদ, জীবন ও কথার দ্বারা। (সহিহ, বর্ণনায় আহমদ)

৪৭
৫। ফাসেক ও পাপিদের সাথে জেহাদ করা
তা করতে হবে শক্তি, কথা ও অন্তরের ঘৃণার দ্বারা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ رأى مِنْكُم مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَاِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَاِن ْلمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أضْعَفُ الايْمَانِ ( رواه مسلم )

তোমাদের কেউ কোনো অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজ দেখলে, সে যেন তা হাত (শক্তি) দ্বারা প্রতিরোধ করে। তাতে সমর্থ না হলে মুখ দ্বারা (প্রতিবাদ করার মাধ্যমে) তাতেও সমর্থ না হলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণার মাধ্যমে)। আর তা হচ্ছে একেবারেই দুর্বল ঈমান। ( সহিহ মুসলিম)

৪৮
৬। শয়তানের সাথে জেহাদ
যেমন, শয়তানের বিরোধিতা করা, তার ওয়াসওয়াসাকে (কু-মন্ত্রণা) গ্রহণ না করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

(আরবি)

নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু , অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়। (সূরা ফাতির: ৬ )

৪৯
৭। নফসের সাথে জেহাদ
সব সময় নফসের চাহিদার বিপরীত কাজ করতে হবে। তাকে দিয়ে আল্লাহর আনুগত্যের কাজ করাতে হবে। সর্ব প্রকার পাপকাজ হতে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর আমি আমার নফসকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয় নফস মন্দ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, আমার রব যাকে দয়া করেন সে ছাড়া। নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইউসুফ: ৫৩ )

কবি বলেন:

তোমাকে নফস ও শয়তানের বিরোধিতা করতে হবে এবং তাদের অমান্য করতে হবে। যদি তারা ভাল কোনো কথা বলে তবে তা শ্রবণ করতে হবে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার রাস্তায় মুজাহিদ হয়ে ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফিক দান করুন।

৫০
আল্লাহ তাআলা হতে সাহায্য আসার শর্তাবলী
আমিরুল মুমিনীন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে পারস্য দেশে জেহাদের জন্য সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন । তাদের নিকট তিনি নিম্নোক্ত উপদেশ বাণী লিখে পাঠান,

৫১
১। তাকওয়া
আমি তোমাকে ও তোমার সাথে প্রেরিত সকল সৈন্যকে সর্বাবস্থায় তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করার হুকুম করছি। কারণ, শত্রুদের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম ফলপ্রসূ কাজ এটিই। এটিই জেহাদের সর্বোত্তম হাতিয়ার।

৫২
২। পাপকাজ পরিত্যাগ করা
আমি আরো নির্দেশ দিচ্ছি সর্বতো ভাবে পাপকাজ হতে বিরত থাকার জন্য। এতে তোমরা তোমাদের শত্রুদের ব্যাপারে যেরূপ সাবধান থাকো তার চেয়েও বেশি সাবধান থাকবে। কারণ সৈনিকদের পাপকাজকে আমি শত্রুদের চেয়েও বেশি বিপদজনক মনে করি। আল্লাহ তাআলা শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সাহায্য করেন, তাদের পাপের কারণেই। যদি তা না হতো তবে জয়যুক্ত হওয়ার মত কোনো শক্তি মুসলিমদের ছিল না। কারণ, মুসলিমদের সৈন্য সংখ্যা ও সাজ সরাঞ্জাম কক্ষনই অমুসলিমদের সমান নয় কখনো ছিলও না। এখন যদি পাপকাজে আমরা মুসলিমরা তাদের সমান হয়ে যাই তবে তাদের শক্তি আমাদের থেকে বেশি হয়ে যাবে। যদি আমরা মুসলিমরা আল্লাহর দয়া ও সাহায্য দ্বারা জয়যুক্ত হতে না পারি, তবে শক্তি দ্বারা কক্ষনই তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারব না।

হে মুসলিম সম্প্রদায় ভাল করে জেনে রাখুন, আপনাদের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর তরফ থেকে হেফাজতকারী ফেরেশতা থাকেন। সুতরাং আপনারা যা কিছুই করেন না কেন সে সম্বন্ধে তারা সম্যক অবগত আছেন। অতএব তাদেরকে লজ্জা করে চলুন। আল্লাহর রাস্তায় থেকে কখনও কোনো পাপ কাজে জড়াবেন না। এমনটা ভাববেন না- আমাদের শত্রুরা আমাদের চেয়ে নিকৃষ্ট, আমরা যতই খারাপ করি না কেন, তারা আমাদের উপর জয়ী হতে পারবে না। অতীতে এমন অনেক জাতি অতিবাহিত হয়েছে যাদের উপর তাদের থেকে নিকৃষ্ট জাতিও বিজয় লাভ করেছে। যেমন, বনী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিল কাফের অগ্নিপুজকরা। আর এমনটি হয়েছিল তখনই, যখন তারা নানা পাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছিল।

৫৩
৩। আল্লাহর নিকট সাহায্য ভিক্ষা করা
মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর কাছে নিজ নফস বিরুদ্ধে সাহায্য ভিক্ষা করা। যেমনটি আমরা করে থাকি শত্রুদের বিরুদ্ধে। আমি আল্লাহর নিকট আমার নিজের জন্য ও আপনাদের জন্য এই দোয়াই করি। (ইবনু কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

৫৪
প্রতিটি মুসলিমের জন্য শরিয়তের উপদেশ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَا حَقّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يبيّتُ لَيْلَتَيْنِ وَلَهُ شَيْئٌ يُرِيْدُ أنْ يُوْصِي فِيْهِ الاَّ ووَصِيَّتُهُ مَكْتُوْبَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ ( متفق عليه )

নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে অসিয়ত করতে ইচ্ছুক মুসলিম ব্যক্তির জন্য অভীষ্ট বিষয়ে অসিয়ত লিখে নিজ মাথার কাছে রেখে দেয়া ব্যতীত দুই রাত অতিবাহিত করা ঠিক নয়। (বোখারি মুসলিম)

ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ কথা শ্রবণ করার পর আমার এমন কোনো রাত অতিবাহিত হয়নি যখন আমি অসিয়ত না লিখে শয়ন করেছি।

১। আমি এই অসিয়ত করছি যে, এই পরিমাণ টাকা আমার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি, ফকির এবং ইসলামি কিতাবাদি খরিদ বাবদ খরচ করতে হবে। তবে তাতে সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা যাবে না। আর এই অসিয়ত কোনো ওয়ারিশের জন্যও প্রযোজ্য হবে না।

২। আমার মৃত্যুর অন্তিম সময়ে অমুক অমুক নেক ব্যক্তিগণ উপস্থিত হবেন, যারা আমাকে আল্লাহ সম্বন্ধে আশার বাণী শোনাবেন।

৩। মৃত্যুর পূর্বেই কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালকীন (বার বার পড়া) দিতে হবে। মৃত্যুর পরে নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃত্যু আসন্ন ব্যক্তিদের কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালকীন দাও। (মুসলিম)

অন্যত্র নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ كَانَ آخِرُ كَلامِهِ لا إلهَ إلا اللهُ دَخَلَ الجَنَّةَ ( حسن رواه الحاكم )

যার শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (হাসান, বর্ণনায় হাকেম)

৪। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ যেন আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য দোয়া করে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর, তার সম্মান বাড়িয়ে দাও, তার উপর রহম কর এবং এ জাতীয় বরকতময় দোয়া।

৫। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের নিকট খবর পাঠাবে। টেলিফোনের মাধ্যমে হলেও, আর মসজিদের ইমাম ও মসল্লিদের এই খবর দিবে যাতে তারা মৃত্যু ব্যক্তির জন্য এস্তেগফার করে।

৬। অতি দ্রুত দেনা শোধ করতে তৎপর হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهِ حَتَّى يقْضىَ عَنْهُ ( صحيح رواه أحمد )

দেনার কারণে মুমিনের জান ঝুলন্ত থাকে, তা শোধ করা অবধি। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)

৭। বুদ্ধিমান মুসলিমদের উচিত, জীবদ্দশাতেই দেনা শোধ করা, যাতে তা বাদ পড়ে না যায় কিংবা কুসরি করা হয়। যখন জানাযা নিয়ে চলতে থাকবে, তখন নিরবে হাটবে। বেশি বেশি মুসল্লি তাতে শরিক হবে, আর মৃতের জন্য ইখলাসের সাথে দোয়া করবে।

৮। দাফনের পর তার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবে। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাফনের পর কবরের পার্শ্বে দণ্ডায়মান হয়ে বলতেন:

اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُم وَ سَلُوا لَهُ التَّثْبِيتَ فاِنَّهُ الأنَ يُسْأَلُ ( صحيح رواه الحاكم )

তোমরা নিজ ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর সে যাতে দৃঢ় থাকতে পারে সে জন্য আল্লাহর করুণা ভিক্ষা কর। কারণ, এখন তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। (সহিহ, বর্ণনায় হাকেম)

৯। মৃতের বাড়ি যেয়ে শোক প্রকাশ করা। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন:

إنَّ للهِ مَا أخَذَ وَلَهُ مَا أعْطىَ وَ كُلُّ شَيْئٍ عِنْدَهُ بِاَجَلٍ مُسَمىًّ فَلْتصْبِرْ ولِتَحْتَسِبْ ( رواه البخاري )

নিশ্চয় আল্লাহ যা নিয়ে যান সেই অধিকার তাঁর আছে, দেয়ার অধিকার তাঁরই। প্রতিটি বস্তুরই তার নিকট নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। সুতরাং তুমি সবর কর ও সাওয়াবের আশা রাখ। (বোখারি)

এ জন্য কোনো সময় বা স্থান নির্দিষ্ট করার দরকার নেই। আর দু:খ পেলে বলতে হবে,

إنا لله وإنا إليه راجعون، اللهم أجرني في مصيبتي وأخلف لي خيرا منها

আমরা আল্লাহর নিকট হতে এসেছি এবং তাঁর নিকটই প্রত্যাবর্তন করব। হে আল্লাহ আমার মুসিবতে সাওয়াব দাও আর এর থেকে উত্তম বদলা দান কর। আর মৃতের আত্মীয় স্বজনদের আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সবর করা ও রাজি খুশি থাকা ওয়াজিব।

১০। আর আত্মীয় স্বজন, প্রতেবেশি ও বন্ধু বান্ধবদের উচিত মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে পাঠিয়ে দেয়া। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

اِصْنَعُوا لآلِ جَعْفَرَ طَعَامًا فَقَدْ أتَاهُمْ مَا يُشْغِلُهُمْ ( حسن رواه أبو داود والترمذي )

তোমরা জাফর এর পরিবারের জন্য খাদ্য প্রস্তুত কর। কারণ তাদের এমন বিপদ এসেছে যা তাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে।(হাসান, বর্ণনায় আবু দাউদ ও তিরমিজি)

৫৫
শরিয়তে নিষিদ্ধ কার্যাবলী
১। ওয়ারিশদের কোনো একজনকে নির্দিষ্ট করে ধন দৌলতের অসিয়ত করে দান করা। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لا وصِيَّةَ لِوَارِثٍ ( رواه الدار قطني )

ওয়ারিশদের জন্য কোন অসিয়ত নেই। ( সহিহ, বর্ণনায় দারা কুতনি)

২। মৃতু ব্যক্তির জন্য উচ্চ স্বরে ক্রন্দন করা, বিলাপ করা, মুখ মন্ডল চাপড়ানো, জামা-কাপড় বিদীর্ন করা, কালো পোষাক পরিধান করা ইত্যাদি নিষিদ্ধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

المَيِّتُ يُعَذَّبُ فيِ قَبْرِهِ بِمَا نِيْحَ عَلَيْهِ ( رواه البخاري و مسلم )

মৃত ব্যক্তি কবরে আজাব ভোগ করবে তার উপর বিলাপ করার কারণে। (বোখারি ও মুসলিম)।

৩। ঘটা করে মৃত্যুর খবর প্রচার করা (মাইক কিংবা প্রচার পত্রের মাধ্যমে), তাদের সওয়াব রেসানির জন্য (তিন দিন, চল্লিশ দিন ইত্যাদি নির্দিষ্ট দিন ধার্য্য করে) খাদ্যের ব্যবস্থা করা, এটি বিদআত। কারণ, তা অমুসলিমদের অনুষ্ঠানাদির সাথে সামঞ্জস্যশীল। এবং এতে ধন দৌলত নষ্ট হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُم ( صحيح رواه أبو داود )

যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্যাবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে বিবেচিত হবে।( সহিহ, বর্ণনায় আবু দাউদ)।

৪। বাড়ীতে হাফেজে কোরআন বা ওলামা-মাশায়েখদের এনে মৃতু ব্যক্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত করানো। এবং এর বিনিময়ে তাদের খাওয়ানো ও হাদিয়া প্রদান করা। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

اِقْرؤا الْقُرْآنَ وَاعْمِلُوا بِهِ وَلا تأكُلُوا بِهِ وَلا تَسْتَكْثِرُوا بِهِ ( صحيح رواه أحمد )

তোমরা কোরআন তেলাওয়াত কর ও তার উপর আমল কর। তার দ্বারা রিজিক সংগ্রহ কর না। আর তার দ্বারা (দুনিয়ার জিনিস) বর্ধিত কর না। (সহিহ, বর্ণনায় আবু দাউদ)।

যে ব্যক্তি এই টাকা দান করবে, আর যে গ্রহণ করবে তাদের উভয়ের জন্যই এটা হারাম। যদি আমরা এই টাকা-পয়সা গরীব-মিসকীনদের দান করতাম, এই নিয়তে যে তার সাওয়াব যেন ঐ মৃত ব্যক্তির আমল নামায় পৌঁছায় তবে তাতেই উপকার হত।

৫। মৃতের জন্য তাজিয়াহর (সান্ত্বনাদান অনুষ্ঠান) আয়োজন, খাদ্য খাওয়ানো কিংবা মৃতের বাড়ীতে অথবা পার্শ্ববর্তী মসজিদে এই উদ্দেশ্যে একত্রিত হওয়া মাকরূহ। কারণ, জারির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমরা এই মত পোষণ করতাম যে মৃতের বাড়ীতে একত্রিত হওয়া এবং সেখানে খাদ্য গ্রহণ করা (দাফনের পর) শোকে বিলাপ করার অন্তর্ভুক্ত। এটা নিয়াহা যা হারাম। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)

(ইবনে মাজাহতে মৃতের উদ্দেশ্যে খানাপিনার ব্যবস্থা করাকে অবৈধ বলা হয়েছে। পৃষ্ঠা ১১৭)।

ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এরূপ জমায়েত হওয়া ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করাকে নিয়াহা তথা জাহেলি জামানার নিয়ম কানুন বলতেন। তাই সাহাবাগণের এজমাসম্মত রায় হল মৃত্যুকে উপলক্ষ করে খানা পিনার আয়োজন করা হারাম)

ইমাম শাফেয়ি রহ. ও ইমাম নববি রহ. আল-আজকার গ্রন্থে এই অনুষ্ঠানকে মাকরূহ বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইবনে আবেদীন আল হানাফী রহ. মৃতের আত্মীয়ের পক্ষ থেকে খাওয়ানোকে মাকরূহ বলেছেন। কারণ, মেহমানদারী করা হয় আনন্দের সময়, দু:খের সময় নয়। বাযাযিয়া নামক হানাফী মাজহাবের কিতাবে বলা হয়েছে যে, মৃত্যুর প্রথম দিন, তৃতীয় দিন, এক সপ্তাহ পর কিংবা এ ধরনের নিয়মে খানা খাওয়ানো মাকরূহ।

কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কবরস্থানে খাদ্য বহনকরে নেওয়া, ওখানে দাওয়াত করে লোকজন সমবেত করে কোরআন তেলাওয়াত করানো এবং নেককার ব্যক্তি, কারী ও হাফেজগণকে একত্রিত করা, খতমের দোয়া করা ইত্যাদি সবই মাকরূহ।

৬। কবরস্থানে কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ নামক বিদআত কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তাঁর সাহাবিগণ কেউই এই ধরনের কাজ কক্ষণই করেননি।

৭। কবরের উপর উঁচু করে পাথর বা ইট দিয়ে ঘিরাও দেয়া কিংবা বাঁধানো হারাম। অনুরূপভাবে চুনকাম করা অথবা তার উপর কোনো কিছু লেখা সবই হারাম। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে চুনকাম করতে কিংবা কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)।

অন্য রিওয়ায়েতে আছে, তিনি কবরের উপর কিছু লিখতেও নিষেধ করেছেন। (সহিহ, বর্ণনায় তিরমিজি ও হাকেম)

৫৬
দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব
১। আল-কোরাআনের বর্ণনানুযায়ী শয়তান বলে:

(আরবি)

আর অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। (সূরা নিসা : ১১৯ )

২। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর : ৭)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন, আর মুন্ডন করতে নিষেধ করেছেন।

৩। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছন:

جَزُّوا الشَّوارِبَ وَاَرْخُوا اللحى خَالِفُوا المَجُوسَ ( رواه مسلم )

গোফকে ছোট কর, আর দাড়িকে লম্বা কর। এভাবে অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর। (মুসলিম)

৪। অন্যত্র বলেছেন:

عَشْرٌ مِنَ الفطرة : قَصُّ الشَّوارِبِ وإعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّواكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَ قَصُّ الأظَافِرِ الخ ( رواه مسلم )

দশটি আমল ফিতরাত তথা স্বভাব ধর্মী: গোফ খাটো করা, দাড়ি লম্বা করা, মেছওয়াক করা, নাকে পানি দেয়া (অজুর সময়) নোখের অগ্রভাগ কেটে ছোট করা ...। (সহিহ মুসলিম)

দাড়ি লম্বা করা ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই তা মুন্ডন করা হারাম। (মুসলিম)

৫। অন্যত্র আছে:

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرَّجَالِ بِالنَّساء ( رواه البخاري )

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের সাদৃশ্যাবলম্বনকারী পুরুষদের উপর লানত করেছে। ( সহিহ বোখারি)

আর দাড়ি মুন্ডন করা ব্যক্তিকে মহিলাদের মতই দেখা যায়। ফলে সে আল্লাহর রহমত হতে দূরে সরে যায়।

৬। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لَكِنِّى أمَرَنِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ أنْ أعْفِي لِحْيَتِي وَ أنْ أقُصَّ شَاربِي ( حسن رواه ابن جرير )

আর আমার রব আমাকে দাড়িকে লম্বা করতে হুকুম করেছেন, আর গোফকে ছোট করতে। (হাসান, বর্ণনায় ইবনে জারির তাবারি)।

সুতরাং দাড়ি লম্বা করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ । শরয়ি পরিভাষায় একেই তো ওয়াজিব বলে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম সর্বদা এ বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।

৭। মুখমন্ডলের কোনো স্থানের পশম মুন্ডন করা জায়েয নয়। উপড়ে ফেলাও না জায়েয। কারণ, অভিধানে আছে, মুখমন্ডলের কপোল অংশটুকু দাড়িরই অন্তর্ভুক্ত।

৮। চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, দাড়ি চোয়ালদ্বয়কে সূর্যকিরণ থেকে রক্ষা করে। সুতারং তা মুন্ডন করা হলে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হবে।

৯। দাড়ি পুরুষ জাতির সৌন্দর্য বর্ধক, যে সৌন্দর্য দিয়ে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ কিছু প্রণীকেও দাড়ি দিয়েছেন, যেমন মোরগ, যাতে মুরগি হতে আলাদা করা যায়। কথিত আছে এক নব বিবাহিত ব্যক্তি বাসর ঘরে স্ত্রীর সম্মুখে উপস্থিত হলো। সে নারী বিয়ের পূর্বে স্বামীর মুখে দাড়ি দেখেছিল। ফলে দাড়ি মুন্ডন করা অবস্থায় দেখে তার দিক হতে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। স্বামীর দাড়ি বিহীন চেহারা তার মনোপুত হয়নি। বান্ধবীরা কোনো এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, তুমি দাড়িওয়ালা ছেলেকে বিয়ে করতে মনস্থ করেছ কেন? উত্তরে সে বলল, আমি একজন পুরুষকে বিয়ে করতে চাই, কোনো মহিলাকে নয়।

১০। দাড়ি মুন্ডন করা নিষিদ্ধ কাজের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ কাজকে নিষেধ করা আমাদের জন্য ওয়াজিব। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ رأى مِنْكُم مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَاِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَاِن ْلمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أضْعَفُ الايْمَانِ ( رواه مسلم )

তোমাদের কেউ কোনো নিষিদ্ধ কাজ সঙ্ঘটিত হতে দেখলে হাতের (শক্তি) দ্বারা তা প্রতিহত করবে, এতে সমর্থ না হলে মুখ দ্বারা প্রতিবাদ করবে তাতেও সমর্থ না হলে অন্তরে ঘৃণা করবে আর এটি দুর্বলতম ঈমান। (সহিহ মুসলিম)।َ

১১। দাড়ি মুন্ডন করা কোনো এক ব্যক্তিকে একদিন বলেছিলাম, তুমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাস? উত্তরে সে বলল অবশ্যই, খুবই ভালবাসি। তখন বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাড়ি লম্বা করো। সুতরাং যে ব্যক্তি তাকে ভলবাসবে সে কি তার অনুসরণ করবে না বিরোধিতা করবে? উত্তরে বলল অনুসরণ করবে। অত:পর ওয়াদা করল যে, অবশ্যই দাড়ি লম্বা করবে।

১২। যদি আপনার স্ত্রী আপনাকে দাড়ি লম্বা করতে বাঁধা দেয় তখন বলুন, আমি একজন মুসলিম, আল্লাহর আনুগত্য করার মধ্যে আমার কামিয়াবি সুতরাং আমি আমার রবের বুরুদ্ধাচরণ করতে পারি না। এতে আমার ভয় হয়। নসিহত করার পাশাপাশি তাকে হাদিয়া পেশ করুন বিভিন্ন উপহার সামগ্রি দান করুন, তার মন ভুলানোর চেষ্টা করুন। আর তাকে রাসূলের সে হাদিস বর্ণনা করে শুনান, যাতে তিনি বলেছেন,

لا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ في مَعْصِيَةِ الْخاَلقِ ( صحيح رواه أحمد )

স্রষ্টাকে অসন্তুষ্ট করে সৃষ্টির আনুগত্য নেই। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)।

৫৭
গান বাজনার ব্যাপারে ইসলামের বিধান
১। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আজাব। (সূরা লোকমান: ৬ )

বেশিরভাগ তাফসিরকারকগণ আয়াতে বর্ণিত ‘লাহ্ওয়াল হাদিস’ বলতে গানকে বুঝিয়েছেন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সেটি গান।

ইমাম হাসান বসরি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াত গান ও বাদ্য যন্ত্রের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে।

২।আল্লাহ তাআলা শয়তানকে সম্বোধন করে বলেন:

(আরবি)

তুই তোর কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারিস প্ররোচিত কর। (সূরা ইসরা: ৬৪)

৫৮
গান বাজনার ক্ষতিকর দিকসমূহ
ইসলাম কোনো জিনিসের মধ্যে ক্ষতিকর কিছু না থাকলে তাকে হারাম করেনি। গান ও বাজনার মধ্যে নানা ধরনের ক্ষতিকর জিনিস রয়েছে। তাই গান-বাজনাকে ইসলাম হারাম করেছে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ এ সম্বন্ধে বলেন:

৫৯
বাজনা হচ্ছে নফসের মদ স্বরূপ।
মদ যেমন মানুষের ক্ষতি করে, বাদ্যও মানুষের সেরকম ক্ষতি করে। যখন গান-বাজনা তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখনই তারা শিরকে পতিত হয়। আর তখন তারা ফাহেশা কাজ ও জুলুম করতে উদ্যত হয়। তারা শিরক করতে থাকে এবং যাদের কতল করা নিষেধ তাদেরকেও কতল করতে থাকে। যিনা-ব্যভিচার করে। যারা গান বাজনা করে তাদের বেশির ভাগের মধ্যেই এই তিনটি দোণষ দেখা যায়। তাদের বেশির ভাগ লোকই মুখ দিয়ে শিস ও হাততালি দেয়।

৬০
শিরকের নিদর্শন:
তাদের বেশির ভাগই তাদের শায়খ (পীর) অথবা গায়কদের আল্লাহর মতই ভালবাসে অথবা আরো অধিক।

৬১
অশ্লীলতা ও ফাহেশার মধ্যে আছে:
গান হল যিনা-ব্যভিচারের রাস্তা স্বরূপ। এ কারণেই বেশিরভাগ অশ্লীল ও ফাহেশা কাজ অনুষ্ঠিত হয় গানের মজলিসে। সেখানে নারী, পুরুষ, বালক, বালিকা চরম অবাধ ও লজ্জাহীন হয়ে পড়ে। এভাবে গান শ্রবণ করতে করতে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনে। তখন তাদের জন্য ফাহেশা কাজ করা সহজ হয়ে দাড়ায়, যা মদ্যপানের সমতুল্য কিংবা আরও জঘন্য।

৬২
কতল বা হত্যা:
অনেক সময় গান শ্রবণ করতে করতে উত্তেজিত হয়ে একে অপরকে কতল করে ফেলে। তখন অপরাধ আড়াল করার জন্য বলে, তার মধ্যে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে হত্যা করা ছাড়া উপায় ছিল না। হত্যা থেকে বিরত থাকা তার ক্ষমতার বাইরে ছিল। আসলে এমন সব পরিস্থিতি ও মজলিসে শয়তান উপস্থিত হয়। আর যাদের উপর শয়তান বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তারা অন্যদের কতল করে ফেলে।

গান বাজনা শ্রবণে অন্তরের কোনো লাভ হয় না, তাতে কোনো উপকারও নেই, বরং উল্টো তাতে আছে গোমরাহী ও অনিষ্ট। গান অন্তরাত্মার জন্য সেরকম ক্ষতিকর যেমন মদ শরীরের জন্য । ফলে যারা সঙ্গীত শ্রবণে অভ্যস্ত হয়ে যায় তাদের নেশা মদ্যপায়ীর নেশা থেকেও মারাত্মক হয়। তারা গান-বাজনায় যে মজা পায় তা মদ্যপায়ীর মদ থেকেও অনেক বেশি।

শয়তানও তাদের নিয়ে খেলা করে। এই অবস্থায় তারা আগুনে প্রবেশ করে, কেউ গরম লোহা শরীরে কিংবা জিহবায় প্রবেশ করায়। অথবা এ জাতীয় অনিষ্টকর কাজে প্রবৃত্ত হয়। এমন লোকদের সালাত আদায় কিংবা কোরআন তেলাওয়াত কালে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় না। এর মূল কারণ হচ্ছে, সালাত, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে শরিয়ত সম্মত ইবাদত, ঈমান বিষয়ক কাজ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজ, যা শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর গান-বাজনা, ঢোল-তবলা ইবাদতের নামে বিদআত। এতে আছে শিরক ও শয়তানি সব কাজ, যাতে শয়তানরা সহজেই আকৃষ্ট হয়।

৬৩
শরীরে লোহা প্রবেশ করানোর হাকিকত
শরীরের মধ্যে লোহার শলাকা না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো প্রবেশ করিয়েছেন না তার সাহাবিরা। যদি এ কাজ উত্তমই হত তবে অবশ্যই তারা এতে অগ্রগামী হতেন। এসব বরং সূফী-পীর ও ভণ্ড-বিদআতীদের কাজ। আমি তাদেরকে মসজিদে একত্রিত হতে দেখেছি, তাদের সাথে তবলা জাতীয় যন্ত্র- ‘দফ’ ছিল। তারা গান করছিল,

এনে দাও মদের গ্লাস, পান করাও তা আমাদের...

আল্লাহর ঘরে বসে মদ জাতীয় অপবিত্র দ্রব্যের উচ্চারণ করতে তাদের লজ্জাও হয় না। সাথে সাথে উচ্চ আওয়াজে দফ বাজাচ্ছিল এবং গাইরুল্লাহর নিকট বিপদ হতে উদ্ধার চাচ্ছিল। আর বলছিল, হে দাদা... এভাবে শয়তান তাদের ধোকায় নিপতিত করেছিল। একজনকে দেখলাম, নিজ জামা খুলে একটি লোহার শিক হাতে নিয়ে পাঁজরের মধ্যে প্রবেশ করাল। আর একজনকে দেখলাম, কাচের একটি গ্লাস ভেঙ্গে দাঁত দিয়ে চুর্ণ বিচুর্ণ করছে। তখন আমি মনে মনে বললাম, এরা যা বলছে তা যদি সত্যিই হয় তবে যেন তারা সেসব ইহুদির সাথে যুদ্ধ করে যারা আমাদের ভূমি জবর দখল করে রেখেছে, আর আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে। যেসব শয়তান সেখানে উপস্থিত হয় এসব কাজে তারা তাদের সাহায্য করে। কারণ, সেসব কাজে নিপতিত লোকেরা আল্লাহর স্মরণ হতে দূরে রয়েছে। আর যখন তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের নিকট বিপদে উদ্ধার চায়, তখন তারা শিরকের মধ্যে লিপ্ত হয়। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর যে পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী।আর নিশ্চয়ই তারাই (শয়তান) মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয়। অথচ মানুষ মনে করে তারা হিদায়েত প্রাপ্ত। (সূরা জুখরুফ : ৩৬-৩৭)

আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য শয়তানকে নির্দিষ্ট করে দেন, যাতে তারা আরও গোমরাহ হতে পারে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

বল, যে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তাকে পরম করুণাময় প্রচুর অবকাশ দেবেন, (সূরা মারইয়াম: ৭৫)

শয়তান যে তাদের সাহায্য করে, এতে আবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ, সুলাইমান আলাইহিস সালাম এক জিনের নিকট সাহায্য চেয়েছিলেন, রাণী বিলকিসের সিংহাসন উঠিয়ে আনার জন্য। এ সম্বন্ধে কোরআনে আছে:

(আরবি)

এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দিব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশস্ত। (সূরা নামল : ৩৯)

যারা হিন্দুস্তানে গিয়েছেন যেমন বিখ্যাত পরিব্রাজক ও ভ্রমনবিদ ইবনে বতুতা প্রমুখ তারা অগ্নি উপাসকদের লোহার শিক শরীরে প্রবেশ করানোর চেয়েও ভয়ংকর ঘটনা দেখেছে, অথচ তারা ছিল মূর্তিপূজারি-কাফের। তাই এইসব ঘটনা কোনো কারামত বা অলৌকিক ঘটনা নয়। বরং এগুলো সেসব শয়তানের ঘটনা যারা এভাবে একত্রিত হয় গান বাজনার আশরে। দেখা যায়, বেশির ভাগ লোক, যারা শরীরে শিক প্রবেশ করায়, তারা নানা ধরনের পাপে লিপ্ত । এমনকি প্রকাশ্যভাবে তারা আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত থাকে। কারণ তারা তাদের মৃত পূর্ব পুরুষদের নিকট সাহায্য ভিক্ষা করে। তাহলে কিভাবে কারামতের অধিকারী, ওলীআল্লাহ হতে পারে?

আল্লাহ তাআলা আউলিয়াদের সম্বন্ধে বলেন:

(আরবি)

শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই, আর তারা পেরেশানও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত। (সূরা ইউনুস : ৬২-৬৩)

ওলী হচ্ছেন আল্লাহর এমন মুমিন বান্দা, যিনি সর্বদা এক আল্লাহর নিকট সাহায্য ভিক্ষা করেন। আর মুত্তাকি হচ্ছেন ঐ ব্যক্তি যিনি আল্লাহর সাথে পাপ ও শিরক করা হতে বিরত থাকেন। এসব ওলীদের জীবনে হঠাৎ করে কোনো কারামত ঘটে যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মানুষের দাবী বা লোক দেখানোর জন্য এমনটা ঘটে না।

৬৪
বর্তমান যুগে গান বাজনা
বর্তমান জামানায় বেশির ভাগ গান হয় বিয়ের মজলিস ও এ জাতীয় অন্যান্য উৎসব-অনুষ্ঠানে, রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে। পরিবেশনকৃত এসব গানের বেশির ভাগই হয় ভালবাসা, শাহওয়াত, চুমু, দেখা-সাক্ষাৎ ও যৌন সুড়সুড়ি প্রদান মূলক । তাতে থাকে চেহারা, কপাল ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গের বর্ণনা। যা যুবকদের মনে কামনা-বসনা জাগিয়ে তোলে, তাদেরকে অশ্লীল কাজ ও ব্যভিচার করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের চরিত্রকে ধ্বংস করে।

গায়ক গায়িকারা গান বাজনার নামে একত্রিত হলে পয়সা-কড়ি ব্যয় হয়, আর তা করা হয় সংস্কৃতির নাম দিয়ে জাতীয় তহবিল থেকে চুরি করে। তারপর ঐ পয়সা-কড়ি নিয়ে তারা ইউরোপ-আমেরিকাতে বাড়ী গাড়ী খরিদ করে। তারা তাদের অশ্লীল গান বাজনা দিয়ে একদিকে জাতীয় চরিত্র নষ্ট করে অন্য দিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচার হয় শত্রুদেশে। তাদের অশ্লীল ও নগ্ন শরীল দেখিয়ে যুবকদের চরিত্র নষ্ট করে। ফলে, আল্লাহকে ছেড়ে তারা তাদেরকে ভালবাসতে থাকে। ১৯৬৭ সালে ইহুদিদের সাথে যুদ্ধের সময় রেডিও হতে বলা হচ্ছিল, তোমরা যুদ্ধে অগ্রসর হও কারণ তোমাদের সাথে অমুক অমুক গায়িকা আছে। এর ফলে, (আল্লাহর সাহায্য থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে) পাপিষ্ট ইহুদিদের সাথে চরমভাবে পরাজিত হয়। মুসলমান হিসাবে তাদের বলা উচিৎ ছিল, তোমরা সম্মুখে অগ্রসর হতে থাক তোমাদের সাথে আল্লাহ আছেন, তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন।

এক গায়িকা সে সময় ঘোষণা দিয়েছিল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পূর্বে তার প্রতি মাসে কায়রোতে যে মাসিক উৎসব অনুষ্ঠিত হতো, এ বছর যদি তারা জয়যুক্ত হয় তাহলে সেই অনুষ্ঠান সে তেলআবিবে করবে । অন্যদিকে ইহুদিরা যুদ্ধের পর বায়তুল মুকাদ্দাসের গোনাহ মোচনের দেয়ালের সামনে দাড়িয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছিল, আল্লাহ তাদের সাহায্য করার জন্য।

দ্বীনি ও ভক্তিমূলক গান-বাজনার মধ্যে নানা ধরনের আকিদা বিরোধী কথা থাকে। যেমন বলা হল, প্রতি নবীরই একটা নির্দিষ্ট অবস্থান আছে, আর হে মুহাম্মাদ! এই সেই আরশ! একে গ্রহণ করুন। এই বাক্যের শেষ কথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামে মিথ্যা বানানো হয়েছে, যার মূল ঠিক নয়। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই আরশ গ্রহণ করবেন না, আর তাঁর রবও এ কথা বলবেন না।

৬৫
শ্রুতিমধুর কন্ঠস্বরের মাধ্যমে মেয়েদের ফিৎনা
সাহাবি বারাহ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহুর কন্ঠস্বর ছিল মধুর। কোনো কোনো সফরে রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে চলার সময় ধর্মীয় গান গাইতেন। একদা যখন তিনি গান গাচ্ছিলেন, আর মহিলারা নিকটে এসে পড়ল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, মেয়েদের থেকে সাবধান! ফলে তিনি নিশ্চুপ হয়ে পড়লেন। তার কণ্ঠস্বর মেয়েরা শ্রবণ করুক তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পসন্দ করেননি। (হাকেম)।

যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আশঙ্কা করে থাকেন যে, বাগানে গিয়ে সুর করে কবিতা পড়লে মেয়েদের মধ্যে ফিৎনা হবে, তাহলে বর্তমান যুগে মহিলারা রেডিও টেলিভিশনে যে ধরণের গান বাজনা করে, তাদের গান বাজনা শুনলে কি বলতেন? এই ধরনের গায়িকারা বেশির ভাগই নানা ধরনের ফাসেক ও নগ্ন কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে, আর শরীরের নানাবিধ বর্ণনা দিয়ে যে ছন্দ পাঠ করে তাতে বিবিধ ধরনের অবস্থার ও নফসিয়াতের উদ্রেক করে। ফলে অন্তরে এমন রোগের সৃষ্টি হয় যা তাদেরকে উৎসাহিত করে লজ্জা শরম বির্সজন দিতে ও বেহায়াপনায় লিপ্ত হতে। যদি এই গানের সাথে মাতাল করা সুরের মিশ্রণ ঘটে, তবে তো তাদের বুদ্ধির বিভ্রম ঘটায়। যারাই গানের নেশায় পতিত হয়, গান তাদের সে রকম ক্ষতিই করে যা মদ পান করার মাধ্যমে হয়ে থাকে।

৬৬
গান অন্তরে নিফাকি সৃষ্টি করে
বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, গান অন্তরে (কপটতা) মুনাফেকী উৎপন্ন করে, যেমন পানি ঘাস উৎপন্ন করে। জিকির অন্তরে ঈমান উৎপন্ন করে, যেমন পানি ফসল উৎপন্ন করে।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি সব সময় গান বাজনায় ব্যস্ত থাকে, তার অন্তরে নেফাকি সৃষ্টি হবে, যদিও তার মধ্যে এর অনুভূতি আসবে না। যদি সে নেফাকির হাকিকত বুঝতে পারত, তবে অবশ্যই অন্তরে তার প্রতিফলন দেখতে পেত। কারণ, কারো অন্তরে কোনো অবস্থাতেই গানের মহব্বত ও কোরআনের মহব্বত একত্রে সন্নিবেশিত হতে পারে না। তাদের একটি অবশ্যই অন্যটিকে দূর করে দিবে। কারণ আমরা দেখতে পাই যে, কোরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করা, গান ও কাওয়ালী শ্রবণকারীদের কাছে খুবই কঠিন ঠেকে। আর তেলাওয়াতকারী যে আয়াত তেলাওয়াত করে, তা দ্বারা তারা মোটেই উপকৃত হয় না। ফলে শরীরে কোনো নড়াচড়া ও অন্তরে কোনো উদ্দীপনা আসে না। আর যখনই তারা গান শ্রবণ করে, তখনই তাদের কন্ঠস্বরে এক চাঞ্চল্যকর প্রভাব সৃষ্টি হয়, অন্তরে একটি ভাবের সৃষ্টি হয়, রাত্রি জাগরণ করা মধুর হয়। ফলে দেখতে পাই তারা গান বাদ্য শ্রবণ করাকে কোরআন তেলাওয়াত শ্রবণ অপেক্ষা বেশি প্রধান্য দেয়। বেশির ভাগ লোকই যারা গান ও বাদ্যের ফিৎনায় লিপ্ত আছে, তারা সালাত আদায়ে খুব অলসতা দেখায়। বিশেষ করে জামাতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে।

হাম্বলি মাযহাবের বিখ্যাত আলেম ইবনে আকীল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যদি কোনো গায়িকা গান গায় তবে তা শ্রবণ করা হারাম। হ্যাঁ. নিজ স্ত্রী গান গাইতে জানলে স্বামীর জন্য গাওয়া এবং স্বামীর পক্ষে সেই গান শুনাতে কোনো দোষ নেই। এ ব্যপারে হাম্বলি মাজহাবে কোনো মতবিরোধ নেই।

ইবনে হাযম রহ. বলেন, মুসলিমদের পক্ষে বেগানা মহিলার গান শ্রবণ করে আনন্দ লাভ করা হারাম।

৬৭
গান বাজনা শ্রবণের প্রতিকার
রেডিও, টেলিভিশন, ভিডিও এবং এ জাতীয় সামগ্রী যাতে গান বাজানো হয় তা শ্রবণ করা হতে বিরত থাকতে হবে, এবং এগুলো বর্জন করতে হবে। বিশেষ করে অশ্লীল গান হতে, যাতে বাদ্যও বাজানো হয়।

গান বাজনার বিপরীত কাজ করা যেমন আল্লাহর জিকির ও কোরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

إنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الذِيْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ ( رواه مسلم )

যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা হয় সে ঘর হতে শয়তান পলায়ন করে। (সহিহ মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাতের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তর সমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়ত ও রহমত। (সূরা ইউনুস: ৫৭)

এবং বেশি পরিমাণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম মনীষীদের জীবনি ও শামায়েল পাঠ করা। তা হতে শিক্ষা গ্রহণ করা।

৬৮
যে সব গান শ্রবণ করা জায়েয
{গান সম্বন্ধে ইসলামের নির্ধারিত নীতিমালা আছে, যেসব গানে বাদ্য-বাজনা থাকবে তা সর্বাবস্থায় হারাম। আর বাদ্য-বাজনা যদি না থাকে তাহলে দেখতে হবে গানের কোথায় ইসলামি আকিদা ও আমল পরিপন্থী কোনো বক্তব্য আছে কি-না। থাকলে সে গানও না জায়েয। অনুরূপভাবে যেসব গানের মাধ্যমে নারী-পুরুষ একে অপরকে আকর্ষণ করা হয়, মনে কামনা-বাসনা সৃষ্টি হয়, সেসব গানও বৈধ নয়। যেসব গানে ইসলামের সুন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়। শ্রোতাদের ইসলাম, জিহাদ ও ভাল কাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়, সেসব গানের মাধ্যমে কোনোরূপ ফেতনার আশঙ্কা না থাকলে বাজনা-বাদ্য ছাড়া গাওয়া জায়েয আছে।}

ঈদের গান,

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত:

دَخَلَ رَسُولُ اللهِ صَلي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ تَضْرِبَانِ بِدَفَّيْنِ ( وَفِي رِوَايَةٍ عِنْدِي جَارِيَتَانِ تُغَنِّيَانِ ) فَانْتَهَرَهُمَا ابُوْبَكرٍ فَقالَ صَلي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعْهُنَّ فَانَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيْدًا وَإنَّ عِيْدَنَا هَذا الْيَوْم ( رواه البخاري )

এক দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন তার ঘরে দুইটি বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের ধমক দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আজকের দিনটি আমাদের ঈদের দিন । (বোখারি)

দফ বাজিয়ে বিয়ে-শাদি প্রচারের জন্য গান গাওয়া আর তাতে মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করা। দলিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

فَصْلُ ما بَيْنَ الْحَلَالِ وَالْحَرامِ ضَرْبُ الدَّفِ وَالصَّوْتُ فِي النِّكَاحِ ( رواه أحمد )

বিবাহ-শাদিতে হারাম ও হালালের মধ্যে পার্থক্য হল দফ বাজানো ও আওয়াজ করা। (এই শব্দে বুঝা যায় যে, সেখানে বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে) ( বর্ণনায় আহমদ)

কাজ করার সময় ইসলামি গান শ্রবণ করা, যাতে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে যেসব গানে দোয়া থাকে। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু নামক সাহাবির কবিতা আবৃত্তি করতেন। আর সাথিদেরকে খন্দকের যুদ্ধের সময় পরিখা খনন করতে উদ্ধুদ্ধ করতেন এই বলে যে,

اللهم إن العَيْشَ عَيشُ الآخِرَه فَاغفرللأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِره

হে আল্লাহ আখেরাতের জীবন ও আরামই একমাত্র জীবন। সুতরাং আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দিন।

তখন আনসার ও মুহাজিরগণ উত্তর দিলেন:

نَحْنُ الَّذِيْنَ بَايَعْنَا مُحَمَّدًا عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِيْنَا أَبَدًا

আমরাই হচ্ছি সেসব ব্যক্তিবর্গ যারা মুহাম্মাদের নিকট বাইআত করেছি, জিহাদের জন্য যতদিনই আমরা জীবিত থাকিনা কেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে যখন খন্দক খনন করছিলেন, তখন ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করছিলেন:

والله لو لا الله ما اهتدينا ولا تصدقنا ولا صمنا

فأنزلن سكينة علينا وثبت الأقدام إن لاقينا

إن الألى قد بغوا علينا إذا أرادوا فتنة أبينا

আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ না থাকতেন তাহলে আমরা হেদায়াত পেতাম না। আর সদকা করতাম না, সিয়ামও পালন করতাম না।

তাই আমাদের উপর সাকিনা (শান্তি) নাযিল করুন। আর যখন শত্রুদের মুকাবিলা করব তখন আমাদের দৃঢ়পদ রাখুন।

মুশরিকরা আমাদের উপর আক্রমণ করেছে, আর যদি তারা কোনো ফিৎনা সৃষ্টি করে, তবে আমরা তা ঠেকাবই।

এর সাথে তারা উচ্চ আওয়াজে বার বার ‘আবাইনা’ শব্দটি উচ্চারণ করছিলেন।

যেসব গানে আল্লাহর তাওহিদের কথা আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ও তার শামায়েলের কথা আছে, জেহাদের উৎসাহ ও তাতে দৃঢ় থাকার কথা আছে, চরিত্রকে দৃঢ় করতে উদ্ধুদ্ধ করার কথা আছে, মুসলিমদের একে অন্যের প্রতি মহব্বত ও সম্পর্ক সৃষ্টির প্রতি আহ্বান আছে, যার মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক নীতি বা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়। ব্যক্তি ও সমাজকে উপকৃত করে, দ্বীনি আমল ও উন্নত চরিত্র গঠনের দিকে আহ্বান করে এমন গান ইসলামে না জায়েয নয়।

ঈদ ও বিয়ের সময় কেবল মাত্র মহিলাদের জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে দফ বাজানোর অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। জিকিরের সময় দফ ব্যবহারের অনুমতি ইসলাম কখনই দেয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিকিরের সময় কখনই তা ব্যবহার করেননি। তাঁর পর তাঁর সাহাবিদের কেউ কখনই তা করেননি। পরবর্তী যুগে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এসবের প্রচলন করেছে ভণ্ড সূফি ও পীরেরা । তারা জিকিরে দফ বাজানকে সুন্নত বলে প্রচারণা চালিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করেছে। সঠিক ইসলামি দৃষ্টিকোণে জিকিরে দফ বাজানো সুন্নত তো নয়ই বরং মারাত্মক বিদআত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

ايَّاكُمْ وَمُحْدَثاتِ الْاُمُوْرِ فاِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بدْعَة وكُلُّ بِدْعةٍ ضَلالَة ( رواه الترمذي )

তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো বিষয় সংযোজন করা হতে বিরত থেকো। কারণ, প্রতিটি নতুন সংযোজনই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। (তিরমিজি)

৬৯
ছবি ও মূর্তির ব্যাপারে ইসলামের বিধান
পৃথিবীতে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছে সকল মানুষকে এক আল্লাহর দিকে ডাকা ও আউলিয়া, নেককার কিংবা অন্য কোনো গাইরুল্লাহর ইবাদত করা হতে তাদেরকে বিরত রাখার জন্য। বহু পূর্ব হতে পৃথিবীতে গাইরুল্লাহর পূজা ও ইবাদত করা হয় তাদের মূর্তি, ভাস্কর অথবা প্রতিকৃতি বানিয়ে। এক আল্লাহর প্রতি ইসলামের এই চিরন্তন দাওয়াত বহু পূর্ব হতেই চালু হয়েছে। যখন থেকে তিনি মানুষের হিদায়েতের জন্য তাঁর রাসূলদের প্রেরণ করা শুরু করেছেন ঠিক তখন থেকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

আর অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এই বলে যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, আর তাগুত থেকে বিরত থাক। (সূরা নাহল : ৩৬)

(আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি বা বস্তুর ইবাদত করা হয় আর তাতে তারা সন্তুষ্ট থাকে তাদেরকেই তাগুত বলা হয়)

এ সব মূর্তির কথা সূরা নূহতে উল্লেখিত হয়েছে। উপরোল্লেখিত আমাদের দাবীর সমর্থনে সবচেয়ে বড় দলিল হল, সেই মূর্তিগুলো ছিল সেই যুগের সর্বোত্তম নেককারগণের।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

(আরবি)

আর তারা বলল. তোমরা কোনো অবস্থাতেই তোমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করো না, পরিত্যাগ করো না ওদ্দ, সূয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাসরকে । তারা তো অনেককেই বিপথগামী করেছে। (সূরা নূহ: ২৩-২৪)

আয়াতের ব্যাখ্যায় বোখারিতে বর্ণিত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বলেন,

তারা ছিলেন নূহ আলাইহিস সালামের কওমের নেককার লোক। যখন তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন শয়তান তাদের পরিজন ও ভক্তবৃন্দকে গোপনে কুমন্ত্রনা দেয় যে, তারা যে সমস্ত স্থানে বসত সেখানে তাদের মূর্তি বানিয়ে রাখ, আর সে মূর্তিদেরকে তাদের নামেই পরিচিত কর। তখন তারা তাই করল, কিন্তু তখনও তাদের ইবাদত শুরু হয়নি। তারপর যখন তখনকার লোকেরাও মারা গেল, তখন তাদের পরের যুগের লোকেরা ভুলে গেল যে, কেন সেই মূর্তিগুলি বানানো হয়েছিল। আর তখন থেকেই তাদের পূজা শুরু হয়ে গেল। (ফতহুল বারি ৬/৭ )

এই ঘটনা হতে একটা শিক্ষা পাওয়া যায় এই যে, গাইরুল্লাহর ইবাদতের কারণগুলির একটি হল এ জাতীয় নেতাদের মূর্তি তৈরী করা। অনেকেরই ধারনা বর্তমান সময়ে মূর্তি, বিশেষ করে ছবি হারাম নয়, হালাল। কারণ, বর্তমানে কেউ ছবি বা মূর্তির পূজা করে না। কিন্তু এটা কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়:

বর্তমান যুগেও মূর্তি ও ছবির পূজা হয়ে থাকে। যেমন গির্জাসমূহে আল্লাহকে ছেড়ে ইসা আ. ও তার মাতা মরিয়মের আ. ছবির পূজা হয়। ক্রুশের সামনে তারা রুকুও করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র তৈরী করা হয়েছে ঈসা আ. ও তার মায়ের উপর, যা খুবই উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা হয়। আর তা ঘরে ঝুলিয়ে রাখা হয় তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ইবাদত করার জন্য।

এসব ভাস্কর যা দুনিয়ার দিক দিয়ে উন্নত ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অনগ্রসর জাতি কিংবা জাতীয় নেতা লোকেরা তাদের সম্মান প্রর্দশন করে মস্তক হতে টুপি খুলে, অথবা তাদের সম্মুখ দিয়ে যাবার সময় মাথা ঝুকিয়ে অতিক্রম করে। যেমন, আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটনের ভাস্কার্য, ফ্রান্সে নিপোলিয়ানের মূর্তি, রাশিয়ায় লেলিন ও ষ্টালিনের ভাস্কার্য যা সেসব দেশের বড় বড় রাস্তায় স্থাপন করা হয়েছে। তাদের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমের সময় পথচারিরা মস্তক ঝুকিয়ে সালাম দেয়। পরিতাপের বিষয় এ ধরনের ভাস্কার্য নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা অনেক আরব দেশেও ছড়িয়ে পড়িছে। এভাবেই তারা কাফেরদের অনুসরন করতে উদ্যোগী হয়েছে। যদিও ওয়াজিব ছিল এই জাতীয় ভাস্কার্য তৈরী না করে, সেই ধন দৌলত মসজিদ মাদ্রাসা, হাসপাতাল, সাহায্য সংস্থা ইত্যাদি তৈরির জন্য ব্যয় করা, যাতে এই উপকার সকলের নিকট পৌছে, যদিও তারা এটা তাদের নামে নাম করণ করুক না কেন তাতে কোন ক্ষতি নেই।

আর এমন একদিন আসবে, যখন এই ভাস্কার্যগুলির সম্মুখে মস্তক অবনত করে সম্মান প্রদর্শন করা হবে এবং তাদের ইবাদত করা হবে, যেমনভাবে ইউরোপ, তুর্কী এবং অন্যান্য দেশে হচ্ছে। আর তাদের পূর্বে নূহ আ.-এর কওম তা করেছিল। তারা তাদের নেতাদের ভাস্কার্য তৈরী করেছিল, অত:পর তাকে সম্মান করত পর্যায়ক্রমে ইবাদত করত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হুকুম করে বলেন:

لا تَدَعْ تِمْثَالاً إلاَّ طَمسْتَهُ ولا قَبْرًا مُشْرِفًا إلاَّ سَوَّيْتَهُ ( رواه مسلم )

স্মৃতিসৌধ কিংবা মূর্তি দেখলেই ভেঙ্গে ফেলবে আর উঁচু কবর পেলে তাকে মাটির সাথে মিশিয়ে সমান করে দিবে। ( সহিহ মুসলিম)

অন্য রেওয়ায়েতে আছে, যত ছবি দেখবে তাকে টুকরা টুকরা করে ফেলবে।

৭০
ছবি ও মূর্তির ক্ষতিকর দিকসমূহ
ইসলামে যত জিনিসকেই হারাম করা হয়েছে দ্বীনি, চারিত্রিক, আর্থিক বা এ জাতীয় কোনো না কোনো ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তা করা হয়েছে। আর সত্যিকারের মুসলিম সর্বদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, যদিও তার সেই হুকুমের হাকিকত ও বাস্তবতা সম্বন্ধে পূর্ণ ধারনা না থাকে। মূর্তি ও ছবির অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন,

১। আকিদা ও দ্বীনের ক্ষেত্রে, আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই ছবি, মূর্তি ও এ জাতীয় বিষয়গুলো বহু লোকেরই ঈমান-আকীদা নষ্ট করে ফেলেছে। কারণ, খৃষ্টানরা নবী ঈসা ও মরিয়ম আলাইহিমাস সালামের এর কল্পিত ছবির পূজা করে, তাদের সাথে ক্রুশের ছবিরও পূজা করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় তাদের নেতাদের মূর্তির পূজা করা হয়।

মূর্তিগুলোর সামনে তারা নিজেদের মস্তকসমূহকে অবনত করে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে কোনো কোনো মুসলিম ও আরব দেশ । তারাও তাদের নেতাদের মূর্তি ও ভাস্কার্য স্থাপন করেছে, বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গায়। সূফী ও ভন্ড পীরদের মধ্যে এর প্রবনতা দেখা দিয়েছে। তারা তাদের পীর মাশায়েখদের ছবি, সালাত আদায় করার সময় তাদের সম্মুখে স্থাপন করে এই নিয়তে যে, এতে তাদের মধ্যে খুশু বা আল্লাহর ভয় পয়দা হয়। তারা জিকিররত অবস্থায় তাদের মাশায়েখদের ছবি উত্তোলন করে। ফলে তাদের মরাকাবা ও মুশাহাদা দেখাতে বিঘ্ন ঘটায়। কোনো কোনো স্থানে তাদের ছবিকে সম্মান দেখিয়ে বরকত জন্য ঝুলিয়ে রাখে।

অনুরূপভাবে অনেক গায়ক গায়িকা ও শিল্পীদের ছবি তাদের অনুসারীরা ভালবাসে। তারা ওদের ছবি সংগ্রহ করে সম্মান এবং পবিত্রতা দেখানোর জন্য ঘরে কিংবা অন্যত্র ঝুলিয়ে রাখে। এ সম্বন্ধে লেখক ১৯৬৭ সালে ইহুদিদের সাথে সংঘটিত যুদ্ধের ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চান, যাতে মুসলমানরা গায়কদের সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল, ফলে আল্লাহ তাদের সাথে ছিলেন না। আর তারা শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়। গায়করা তাদের কোনো উপকার করতে পারেনি, পারেনি পরাজয় রোধ করতে। বরং তাদের কারণেই মূলত: পরাজয় তরান্বিত হয়েছিল। হায়! আরবগণ যদি সেই ঘটনা হতে শিক্ষা গ্রহণ করে সর্বান্তকরণে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করত, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহর সাহায্য পেত।

২। ছবি ও মূর্তি যে কিভাবে যুবক, যুবতীদের চরিত্র নষ্ট করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাস্তাঘাট বাড়িঘর পূর্ণ হয়ে আছে তথকাথিত সেসব শিল্পীদের ছবিতে, যারা নগ্ন, অর্ধ নগ্ন হয়ে ছবি উঠিয়েছে। ফলে, যুবকরা তাদের প্রতি আশক্ত হয়ে পড়েছে। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নানা অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মূল্যবান চরিত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে, তারা না দ্বীন ও আখেরাত সম্বন্ধে চিন্তা করছে, আর না বাইতুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার চিন্তা করছে। না নিজেদের মান-সম্মান নিয়ে ভাবছে আর না জেহাদের মাধ্যমে হক প্রতিষ্ঠা ও নিজেদের হৃত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চিন্তা ভাবনা করছে। বর্তমান সময়ে ছবির প্রচার-প্রচারণা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিল্পীদের ছবি। জুতার বাক্স থেকে শুরু করে দৈনিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা-ম্যাগাজিন, বই-পুস্তকসহ কোথাও ছবির হামলা থেকে মুক্ত নেই। আর যৌন উন্মাদনা সৃষ্টিকারী সিনেমা, খন্ড ও ধারাবাহিক নাটক এবং ডিটেকটিভ চলচিত্রসমূহও প্রতিযোগিতা মূলকভাবে অশ্লীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আবার কার্টুনের নামে এমনসব ছবি নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে বিকৃত করা হচ্ছে বাধাহীনভাবে। কারণ, আল্লাহ তাআলা লম্বা নাক, বড় কান কিংবা বিরাট বিরাট চোখ দিয়ে প্রিয় মানুষ সৃষ্টি করেননি, তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম অবয়ব ও উন্নত গঠন প্রণালী দিয়ে। অথচ কার্টুনের নামে তারা মানুষকে অঙ্কন করছে যাচ্ছে তাই ভাবে।

৩। ছবি ও মূর্তির পেছনে যে কি পরিমাণ অর্থ-কড়ি নষ্ট হয়, তা তো সকলেরই গোচরীভূত হয়। ভাস্কর ও মূর্তি নির্মাণের পেছনে হাজার হাজার, লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। আর ইসলামিক নীতিমালার বিচারে ওই ব্যয়টি হয় শয়তানের রাস্তায়। আরো পরিতাপের বিষয় বহু লোক সেসব নির্মিত ঘোড়া, উট, হাতি, মানুষের মূর্তি-প্রতিকৃতি ইত্যাদি ক্রয় করে তাদের ঘরে নিয়ে কাঁচের আলমারীতে সাজিয়ে রাখে। আবার অনেকে মাতা পিতা বা পরিবারের লোকদের ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে। এর থেকেও লজ্জাকর ঘটনা হল, কেউ কেউ বাসর রাতে স্ত্রীর সাথে যে ছবি তোলে তা ড্রইং রুমে ঝুলিয়ে রাখে অন্যদের দেখানোর জন্য। মনে হয় যেন এই স্ত্রী তার একার নয়, সকলের। এইসব নাজায়েয ও অহেতুক কাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় তা যদি গরীব মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করা হত, তাহলে একদিকে যেমন দারিদ্র বিমোচন হত, হত মুসলিম ভাইয়ের প্রতি ভায়ের যে অধিকার রয়েছে সে অধিকার আদায় অন্যদিকে এসব দানের কারণে মৃত আত্মীয়দের রূহ শান্তি পেত।

৭১
ছবি ও মূর্তির কি একই হুকুম
অনেকে ধারণা করে যে, জাহিলি যুগে যে সব মূর্তি তৈরী করা হত ইসলাম কেবল সেগুলিকেই হারাম করেছে। বর্তমান যুগের অধুনিক ছবি এর অন্তর্ভুক্ত নয় । এটি বড়ই বিস্ময়কর একটি ধারনা। মনে হচ্ছে, ছবিকে হারাম করে যে সব হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে তারা যেন তা শ্রবণই করেনি। তার কয়েকটি হাদিস নিম্নে উল্লেখিত হল:

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন। তাতে ছবি আঁকা ছিল। ঘরে প্রবেশের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টি এতে পতিত হলে তিনি আর ঘরে প্রবেশ করলেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজীর চেহারা দেখেই তা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট তওবা করছি। আমি কি গুনাহ করেছি ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এই ছোট বালিশটি কোথায় পেলে? তিনি বললেন: আমি এটা এ জন্য খরিদ করেছি, যাতে আপনি এতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা এই সমস্ত ছবি অংকন করেছে কিয়ামতের দিন তাদেরকে আজাব দেয়া হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা যাদের সৃষ্টি করেছিলে তাদের জীবিত কর। অত:পর বললেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না। (বোখারি ও মুসলিম)

তিনি আরো বলেছেন:

أشَدُّ النَّاسِ عَذابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِيْنِ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِ اللهِ ( متفق عليه )

যারা ( ছবি অঙ্কন করে) আল্লাহর সৃষ্টির সমকক্ষ নিরূপণ করছে কেয়ামতের দিন সবচে কঠিন আজাব তাদেরই হবে। (বোখারি ও মুসলিম)

বোখারি শরীফে বর্ণিত আছে:

أنَّ النَّبيَّ صلي الله عليه وسلم لَمَّا رأي الصُّوَرَ في البيتِ لَمْ يَدْخُلْ حتّي مُحِيَتْ ( رواه البخاري )

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ছবি দেখার পর তা মিটিয়ে না ফেলা পর্যন্ত তাতে প্রবেশ করেননি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ীতে ছবি ঝুলাতে নিষেধ করেছেন আর অন্যদের তা আঁকতে কিংবা উঠাতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিজি)

৭২
যে সব ছবি দোষনীয় নয়
গাছপালা, চন্দ্র, তারকা, পাহাড়-পর্বত, পাথর, সাগর, নদ-নদী, প্রাকৃতিক দৃশ্য, পবিত্র স্থান যেমন কাবাঘর, মদীনা শরীফ, বাইতুল মোকাদ্দাস অনুরূপ অন্যান্য মসজিদের ছবি, যা মানুষ বা প্রাণী নয় এক কথায় প্রাণহীন-নির্জীব বস্তুর ছবি অঙ্কন, নির্মাণ বা ক্যামরার মাধ্যমে উঠানো কিংবা ভাস্কর বানানো দোষনীয় নয় বরং জায়েয।

দলীল: ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যদি তুমি ছবি বা মূর্তি বানাতেই চাও, তবে কোনো বৃক্ষ বা এমন জিনিসের ছবি আঁক যাদের জীবন নেই।

পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা এ জাতীয় অতিশয় প্রয়োজনীয় কাজে ছবি তোলা বা অঙ্কন করা জায়েয।

হত্যাকারী কিংবা অপরাধীদের ছবি তোলা জায়েয, যাতে তাদের ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। অনুরূপভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রয়োজনে ছবি তোলার ব্যাপারেও কিছু ওলামা জায়েযের ফতোয়া দিয়েছেন।

ছবির মাথা যদি কেটে দেয়া হয়. তবে তা ব্যবহার করার অনুমতি আছে। কারণ, ছবির মূল হল মাথা। তখন তা জড় পদার্থের পর্যায়ে পড়ে। এ সম্বন্ধে জিবরাইল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন:

مُر برأسِ التِّمْثَالِ يَقْطَعُ فَيَصِيْرُ عَلي هَيئَةِ الشَّجَرَةِ وَمُرْ بِالسَّتْرِ فلْيَقْطَعْ فليَجْعَلْ مِنْهُ وِسَادَتَيْنِ تَوطأنِ ( رواه ابوداود )

আপনি মূর্তির মাথা কেটে দিতে বলেন, ফলে তা গাছের মত কিছু একটাতে পরিবর্তিত হবে। আর পর্দার কাপড়কে দু’টুকরা করে তা দ্বারা দুটি বালিশ বানাতে বলেন। (আবু দাউদ)

৭৩
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস অনুযায়ী আমল কর
১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لا تَقُومُ السَّاعَةُ حتىَّ يُقَاتِلُ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُوْنَ ( رواه مسلم )

ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, যতক্ষণ না মুসলিমগণ ইহুদিদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, আর মুসলিমরা তাদের হত্যা করবে। (মুসলিম)

২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيْلِ اللهِ ( رواه البخاري )

যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কালিমা উঁচু করার জন্য যুদ্ধ করে সে-ই আল্লাহর রাস্তায় আছে। (বোখারি)

৩। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

مَنْ أرْضىَ النَّاسَ بِسَخَطِ اللهِ وَكَّلَهُ الله الى النَّاسِ ( حسن رواه الترمذي )

যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষকে খুশি করতে চায়, আল্লাহ তাকে মানুষদের হাতে ছেড়ে দেন। ( বর্ণনায় তিরমিজি, হাদিসের সনদ হাসান)।

৪। আন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُوْنِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ ( رواه البخاري )

যে ব্যক্তির মৃত্যু এমন অবস্থায় হয় যে সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁরই সমতুল্য কাউকে ডাকতো (দোয়া করত) তবে সে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। (বোখারি)।

৫। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

مَنْ كَتَمَ عِلْمًا الْجَمَهُ اللهُ بِلِجَامٍ مِن نَّارٍ ( صحيح رواه أحمد )

যে ব্যক্তি ইলমকে গোপন রাখবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনের লাগাম পরাবেন। (সহিহ, বর্ণনায় আহমদ)।

৬। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

مَنْ لَعِبَ بِالنَّردِ فَقَدْ عَصىَ اللهَ وَرَسُولَهُ ( صحيح رواه احمد )

যে পাশা (লুডু) খেলল, সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করল। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)।

৭। আন্যত্র তিনি বলেছেন:

بَدَأَ الاسْلامُ غَرِيْبًا وَسَيَعُودُ غَرِيْبًا كَمَا بَدَأَ فَطُوبَى للغُرَبَاءِ ( رواه مسلم )

ইসলাম (অপরিচিত) আগন্তকের মত শুরু হয়েছিল, আবার অপরিচিতর মতই সত্তর প্রত্যাবর্তণ করবে। সুতরাং সেই (অপরিচিত) আগন্তকদের জন্য সুসংবাদ। ( সহিহ মুসলিম)

অন্য রেওয়ায়েতে আছে: সেসব আগন্তকদের জন্য সুসংবাদ যারা মানুষকে সংশোধনের চেষ্টা করে, যখন তারা পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। (আবু ওমর দানী, সনদ সহিহ)

৮। অন্যত্র তিনি বলেছেন:

ঐ সমস্ত আগন্তকদের জন্য সুসংবাদ যারা অনেক মন্দ লোকের মাঝে হবে সৎ লোক । তাদের অনুসারীর সংখ্যা হতে অমান্যকারীর সংখ্যা হবে অনেক বেশি। (সহিহ আহমাদ)।

৯। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ انَّما الطَّاعَةُ في الْمَعْرُوْفِ ( رواه البخاري )

আল্লাহর অবাধ্যতার (পাপ) কাজে কোনো আনুগত্য নেই, আনুগত্য হবে কেবল নেক ও অনুমোদিত কাজে। (বোখারি)।

৭৪
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের যে হুকুম করেন তাকে আঁকড়ে ধর
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لَعَنَ اللهُ النَّامِصَاتِ وَالْمُتَنَمِّصاتِ الْمُغَيِّراتِ لِخَلقِ اللهِ ( متفق عليه )

আল্লাহ তাআলা লা’নত করুন ভ্রু উৎপাটনকারী নারী ও এর নির্দেশদানকারী নারীর উপর যারা আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি সাধন করে। (বোখারি ও মুসলিম)

২। তিনি আরও বলেছেন:

وَ نِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاتٌ مَائِلاتٌ رُؤُوسُهُنَّ كَاَسْنِمَةِ الْبَخْتِ الْمَائِلَةِ لا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلا يَجِدْنَ رِيْحَهَا ( رواه مسلم )

যেসব মহিলা (পাতলা কিংবা আটঁসাট) পোশাক পরে উলঙ্গপ্রায় থাকবে, শরীরকে নাচিয়ে হেলেদুলে চলবে, আর মাথায় উটের কুঁজোর মত খোপা বাঁধবে, তারা কক্ষণই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর না তারা জান্নাতের সুগন্ধি অনুভব করবে। (সহিহ মুসলিম)।

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

اتَّقُوااللهَ وَاَجْمِلُوا في الطَّلَبِ ( صحيح رواه الحاكم )

আল্লাহকে ভয় কর, আর প্রার্থনা ও অন্বেষণ সুন্দরভাবে কর। (সহিহ, বর্ণনায় হাকেম)

অর্থাৎ হালাল গ্রহণ করবে এবং হারাম পরিত্যাগ করবে।

৪। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

ارْبَعُوا على أنْفُسِكُمْ فَاِنَّكُمْ لا تَدْعُونَ أصَمًّ وَلا غاَئِبًا ( رواه مسلم )

(জিকর ও দোয়ার ক্ষেত্রে আস্তে ও নীচু স্বরে করে) তোমরা নিজেদের উপর করুণা কর কারণ তোমরা বধির ও অনুপস্থিত কাউকে ডাকছো না। (সহিহ মুসলিম)।

৫। তিনি আরো বলেছেন:

أشَدُّ النَّاسِ بَلاءً الأنبِيَاءُ ثُمَّ الصَّالِحُونَ ( صحيح رواه ابن ماجه )

মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন নবীগণ তারপর নেককারগণ। (সহিহ, বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)।

৬। অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

صِلْ مَنْ قَطَعَكَ وَأحْسِنْ إلى مَنْ أسَاءَ إلَيْكَ وَ قُلْ الْحَق وَلَوْ عَلىَ نَفْسِكَ ( صحيح رواه ابن النجار )

যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে, তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ। আর যে দুর্ব্যবহার করে তার সাথে উত্তম ব্যবহার কর। আর নিজের বিরুদ্ধে গেলেও সত্য কথা বলবে। (সহিহ, বর্ণনায় ইবনু নাজ্জার)।

৭। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

تَعِسَ عَبْدُ الدِينارِ وَالدِّرْهَمِ والْقَطِيْفَةِ إنْ أعْطى رَضِيَ وانْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ ( رواه البخاري )

ধংস হয়েছে টাকা-পয়মা আর পোশাকের গোলাম। যদি দেয়া হয় তবে খুশী হয়, আর না দেয়া হলে খুশী হয় না। (সহিহ বোখারি)।

৮। অন্যত্র বলেছেন:

أوَلا أدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ اذا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ ؟ أفْشُوا السَّلامَ بَيْنَكُمْ ( رواه مسلم )

আমি কি তোমাদের এমন আমল শিক্ষা দেব না, যা করলে তোমাদের একে অন্যর মধ্যে মহব্বত পয়দা হবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও। (সহিহ মুসলিম)।

৯। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

كُنْ في الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أوْ عَابِرُ سَبِيْلٍ ( رواه البخاري )

দুনিয়ায় এমনভাবে থাক যেন তুমি (অপরিচিত) আগন্তক বা রাস্তার পথিক। (সহিহ বোখারি)

১০। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لا يُقِيْمُ الرجُلُ الرجلَ مِنْ مَجْلِسِهِ ثُمَّ يَجْلِسُ فِيْهِ ولكِنْ تَفَسَّحُوا وَتَوَسَّعُوا ( رواه مسلم )

এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে তার আসন হতে উঠিয়ে সেখানে বসবে না, বরং স্থান করে বসবে, প্রশস্ত হয়ে বসবে। (সহিহ মুসলিম)।

১১। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:

لا يُقِيْمُ الرجُلُ للرجُلِ مِنْ مَجْلِسِهِ وَلَكِنْ افْسَحُوا يَفْسَحِ اللهُ لَكُمْ ( رواه حمد )

এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে তার আসন হতে উঠিয়ে বসবে না, বরং নিজেদের মধ্যে স্থান করে নিবে। তাতেই আল্লাহ তাদের স্থান করে দিবেন।

(হাসান, বর্ণনায় আহমাদ)।

১২। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন:

مَا أسْكَرَ كَثِيْرُهُ فَقَلِيْلُهُ حَرَامٌ ( صحيح رواه ابوداود )

যে জিনিসের অধিক পরিমাণে নেশার উদ্রেক করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (সহিহ, বর্ণনায় আবু দাউদ)।

৭৫
তোমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে ভাই ভাই হয়ে যাও
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা একে অন্যের সাথে হিংসা বিদ্ধেষ কর না, একে অন্যের সাথে রাগারাগি কর না, কেউ কারো সাথে গোপনে কথাবার্তা বলার সময় তা চুপিসারে শ্রবণ কর না, একে অন্যের উপর প্রধান্য দিয়ে কোনো জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ো না। একে অন্যের দোষ তালাশ করে বেড়িও না, দালালির মাধ্যমে (খরিদ করার ইচ্ছা না সত্ত্বেও) দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি কর না। একে অন্যের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ কর না। একে অন্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত কর না। এক ভাইয়ের বিক্রির উপর বিক্রি কর না, আর আল্লাহর বান্দা হয়ে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থেকো যেমনটি তিনি তোমাদেরকে হুকুম করেছেন।

এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। না তার উপর যুলুম করবে, আর না তাকে সাহায্য করতে বিমুখ হবে। আর না তাকে নিকৃষ্ট চোখে দেখবে। তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে এ কথা বলার সময় বুকের দিকে ইশারা করলেন।

মুসলিমদের জন্য এমনটি করা খুবই নিকৃষ্ট যে সে তার অন্য ভাইকে ছোট মনে করবে।

এক মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের রক্ত, সম্মান, সম্পদ (নষ্ট করা) হারাম।

আর মন্দ ধারণা করা হতে সাবধান। কারণ মন্দ ধারণা নিকৃষ্টতম মিথ্যা।

মহান আল্লাহ তোমাদের চেহারা বা ধন-দৌলতের দিকে লক্ষ্য করেন না। তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলসমূহের দিকে লক্ষ্য করেন। (বোখারি ও মুসলিম)।

৭৬
যারা লানত পাবার যোগ্য
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মদের উপর লানত করেছেন। যে তা পান করবে, পরিবেশন করবে, বিক্রি করবে, বিক্রি করতে সাহায্য করবে, এবং যে এর রস সংগ্রহ করবে, কিংবা তাতে সাহায্য করবে, যে তা বহন করবে, এবং যেখানে বহন করে নেওয়া হবে, আরো লা’নত করেছেন তার মূল্য গ্রহণকারীর উপর, সকলের উপরই আল্লাহর লানত। (সহিহ, বর্ণনায় আবু দাউদ ও অন্যান্য)

২। তিনি আরো বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কবর জিয়ারতকারী নারীদের উপর লা’নত করেছেন। (সহিহ, আহমাদ ও অন্যান্য)।

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সাহাবিদের গালি দিবে তার উপর আল্লাহর লা’নত। (হাসান, বর্ণনায় তাবরাণি)।

৭৭
মুসলিমদের সম্বন্ধে কতিপয় হাদিস
১। (প্রকৃত) মুসলিম সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ (এর অনিষ্ট) থেকে অপর মুসলিমরা নিরাপদ। (বোখারি ও মুসলিম)

২। মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি, আর তাকে হত্যা করা কুফরি । (বোখারি)।

৩। উরুকে আবৃত রাখ, কারণ পুরুষের উরু তার আওরাত (তথা অবশ্যই ঢেকে রাখা জরুরি অঙ্গ)-এর অর্ন্তভুক্ত। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)।

৪। মুমিন কখনও দোষ অন্বেষণকারী, অভিসম্পাতকারী ও অশ্লীল ভাষী হতে পারে না। (সহিহ মুসলিম)

৫। যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে সে আমাদের কেউ নয়। (সহিহ মুসলিম)

৬। যে আমাদের ধোকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহিহ, বর্ণনায় তিরমিজি)

৭। যার মধ্যে নম্রতা নেই, তার মধ্যে অনেক কল্যাণ নেই। (মুসলিম)

৮। যে ব্যক্তি মানুষকে অসন্তুষ্ট করে আল্লাহকে খুশি করতে তৎপর হয়, আল্লাহ তাকে মানুষের ক্ষতি হতে রক্ষা করেন। আর যে আল্লাহকে নারাজ করে মানুষকে খুশি করে আল্লাহ তাকে মানুষের হাতে সপর্দ করে দেন। (সহিহ, বর্ণনায় তিরমিজি)

৯। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর লানত করেছেন। (হাসান, বর্ণনায় তিরমিজি)।

১০। ইযারের (লুঙ্গি) যে অংশ টাখনুর নিচে ঝুলে থাকবে, তা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (বোখারি)।

১১। যদি কেউ তার অন্য ভাইকে কাফের বলে তবে তাদের মধ্যে যে দোষী তার উপর তা নিপতিত হবে। (বোখারি)।

১২। মুনাফেকদেরকে কখনই ‘হে আমাদের সাইয়্যেদ (সর্দার)’ বলে সম্বোধন করো না, যদি সে তোমাদের সাইয়্যেদ হয় তবে তো তোমরা তোমাদের রবকে অসন্তুষ্ট করলে। (সহিহ, বর্ণনায় আহমদ)

১৩। শিশুরা আকিকার সাথে আবদ্ধ থাকে। তাই সপ্তম দিনে তার জন্য যবেহ কর এবং (একটি সুন্দর) নাম রেখে দাও, আর তার মাথা মুন্ডন করে দাও। (সহিহ, বর্ণনায় আবু দাউদ)

১৪। আল্লাহ তাআলা সুদদাতা, গ্রহীতা, সাক্ষীদ্বয় ও লেখকের উপর লা’নত করেছেন। এবং বলেছেন পাপের ক্ষেত্রে এরা সকলেই সমান। ( সহিহ মুসলিম)

১৫। যে ব্যক্তি কোনো বিদআতিকে আশ্রয় দিবে, তার উপর আল্লাহর লা’নত। (মুসলিম)

৭৮
ইসলামে নারীর মর্যাদা
নিশ্চয়ই ইসলাম নারীদের খুব মর্যাদা দিয়েছে। জাতি গঠনে তাদেরকে দায়িত্বশীল ও মুরব্বীর স্থান দিয়েছে। সমাজের কল্যাণ তখনই হবে যখন তারা ভাল হবে। ইসলাম তাদের জন্য পর্দা ফরয করেছে যাতে তাদেরকে অনিষ্ট ও খারাবি হতে রক্ষা করা যায়। পর্দার মাধ্যমে তাদের দ্বারা ঘৃণিত ও অশ্লীল কাজের পথ রুদ্ধ করে সমাজকেও রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্দার কারণে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভলবাসা ও রহমতের সম্পর্ক সৃদৃঢ় ও স্থায়ী হয়। কারণ, যখন কোনো স্বামী তার স্ত্রীর থেকেও সুন্দরী অন্য কোনো মহিলাকে দেখে, তখন তাদের নিজেদের সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা দেখা দেয়। এর ফলে হয়ত তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। একমাত্র পর্দাই পারে এসব আশঙ্কাজনক অবস্থা থেকে মানুষদের রক্ষা করতে। তাইতো পবিত্র কোরআনে পর্দা সম্বন্ধে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিলবাবের (এমন পোশাক যা পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করে) কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। (সূরা আহযাব : ৫৯ )

১। বিশ্ব বিখ্যাত নারী নেত্রী আনা বিজাল্ট বার বার বলেছেন, আমি অনেক চিন্তা করে দেখেছি অন্য ধর্মের তুলনায় ইসলামেই মহিলাদের অতিরিক্ত স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আর ইসলামই অন্য ধর্মের তুলনায় নারীদের হককে বেশি রক্ষা করে। এতে আছে একাধিক বিবি রাখার অধিকার। মহিলাদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও অধিক ন্যায় পরায়ণতার ব্যবস্থা করা হয়েছে ইসলামে। তার সাধীনতার অতিরিক্ত হেফাযত করা হয়েছে। ইংল্যাণ্ডের মত দেশেও মাত্র বিশ বছর পূর্বে নারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেছে । আর আমরা দেখি, ইসলাম প্রথম হতেই তাদেরকে উক্ত হক দান করেছে। এটা বড়ই নিকৃষ্ট অপবাদ যে, ইসলাম নারীদেরকে রূহহীন দেহ সবর্স্ব মনে করে থাকে।

২। তিনি আরও বলেন, যদি আমরা সঠিক ও ন্যায়ের সাথে মূল্যায়ন করি, তবে অতি সহজেই আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হবে যে, একাধিক বিয়ের যে ইসলাম অনুমতি দিয়েছে তাতে মহিলাদের জন্য রয়েছে ইজ্জতের হেফাযত এবং খাদ্য ও পোশাকের পূর্ণ নিশ্চয়তা। যা পাশ্চত্য নিয়ম-নীতি থেকে লক্ষ-কোটিগুণ উত্তম। কারণ পশ্চিমে একাধিক নারী বিবাহের রেওয়াজ ও সুযোগ নেই। কিন্তু রক্ষিতা গ্রহণ করতে বাধা নেই। আর পুরুষ রক্ষিতা গ্রহণ করে একমাত্র যৈবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য। সেটি পূর্ণ হয়ে গেলে সেই নারীকে রাস্তার আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে।

৩। প্রাচ্যবাদী ফ্রানসুয়া সাজান বলেন, হে পূর্বদেশের নারীবৃন্দ, যারা তোমাদেরকে নারী-পুরুষ সমান অধিকারের দাবিদার বলে সে দিকে আহ্বান করে, তারা মূলত: তোমাদের নিয়ে হাসি তামাশা করছে। কারণ, পূর্বে আমাদের নিয়েও ঐ রকম হাসি তামাশা করা হয়েছিল।

৪। স্যার ডন হারমুর বলেন, পর্দা হচ্ছে নারীদের সম্মান ও ইহতেরাম পাওয়ার মূল চাবি কাঠি। আমাদের এ জন্য মুসলিমদের সাথে গিবতা ও ঈর্ষা করা উচিত।

৭৯
ইসলাম সম্বন্ধে প্রাচ্যবাদীদের বক্তব্য
১। দার্শনিক বার্নার্ড শ বলেন, আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করেছি তার সজিবতার কারণে।আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, এটিই একমাত্র দ্বীন যার মধ্যে এমন প্রচণ্ড শক্তি লুকায়িত আছে যা জীবনের প্রতিটি পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে। আর প্রতিটি যুগের জন্য তা প্রযোজ্য। আমি সেই বিস্ময়কর ব্যক্তির জীবনী উত্তমভাবে অধ্যয়ন করেছি। তাঁর সম্বন্ধে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে, তার উপাধি হওয়া উচিত মানব জাতির রক্ষাকর্তা । এতে ঈসা আলাইহিস সালামের সাথেও শত্রুতা করা হবে না। বর্তমান সময়েও যদি সমগ্র দুনিয়ার শাসন ভার তাঁর মত কোনো ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, তিনি সকল সমস্যাবলীর এমন সুন্দর সমাধান দিবেন যাতে দুনিয়ায় আবারো শান্তি ও সুখ ফিরে আসবে, বর্তমান দুনিয়ায় যার অভাব সবচেয়ে বিশি । আমি ভবিষ্যৎ বাণী করে যাচ্ছি, আগামী দিনে ইউরোপের লোকেরা ইসলাম গ্রহন করবে।

আমরা যদি এখন ইউরোপের দিকে তাকাই তবে দেখা যাবে যে তারা আজ সত্যিই ইসলাম গ্রহন করছে।

৮০
একজন আমেরিকান মুসলিম তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী বলছেন
আমেরিকায় বহু লোক আছে যারা আজ নতুন রাস্তার সন্ধান করছে, হয় ইসলামের মধ্যে অথবা খৃষ্টবাদের মধ্যে। অথবা বৌদ্ধ কিংবা হিন্দু ধর্মের মধ্যে। কিন্তু দু:খের বিষয় আমেরিকায় বসবাসকারী এমন মুসলমানের সংখ্যা খুবই কম যারা মানুষদের বুঝাতে চেষ্টা করছে যে, ইসলামই হচ্ছে আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র রাস্তা, ওটাই হচ্ছে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। মানবতার শান্তির জন্য একমাত্র রাস্তা।

১। সর্ব প্রথম আমি বৌদ্ধ ধর্ম সম্বন্ধে গুরুত্ব দেই। এমন অনেক বছর আমার উপর দিয় অতিক্রান্ত হয়েছে যখন আমি ভাবতাম, আমি বৌদ্ধ সন্যাসী হয়ে গৃহত্যাগ করব। তারপর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধর্মের উপর তুলনামূলক পড়াশুনা করতে শুরু করি, তখন ইসলামের প্রতি ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হতে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিগ্রী লাভ করার পর ইউরোপ ভ্রমনে বের হই। তারপর হল্যাণ্ডে যেয়ে দুই বন্ধুর সান্নিধ্যে থেকে পড়াশুনায় লিপ্ত হই। তাদের একজন ছিল জর্ডানী ছাত্র। অন্যজন বয়োবৃদ্ধ এক সম্মানী ব্যক্তি। তিনি ছিলেন আলবেনিয়ান, হল্যাণ্ডে এসে তিরিশ বা চল্লিশ বছর আল্লাহর রাস্তায় অতিবাহিত করেছেন। এই দুই ব্যক্তির সংস্পর্শে থেকে আমি ইসলামে প্রবেশ করি। যদিও ইসলামের সৌন্দর্য সম্বন্ধে আমি খুব সামান্যই জ্ঞাত ছিলাম। তার পবিত্রতা, কার্যাবলি সম্বন্ধে খুব কমই জানতাম। তবে দৃঢ়ভাবে এই ধারণা পোষণ করতাম যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই আল্লাহর রাসূল ছিলেন। তারপর আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হতে মুখ ঘুরিয়ে নেই। আল্লাহও আমার নিকট হতে মুখ ফিরিয়ে নেন।

২। তারপর আমার শেষ পাঁচ বছরের কিছু অংশ আমেরিকায় অতিবাহিত করি। বাকি অংশ আরব বিশ্বে। ফলে এই লাভ হল যে, আমি আস্তে আস্তে ইসলামকে ভালবাসতে শিখলাম এবং তার মর্যাদা দিতে তৈরী হলাম। তারপর এই ধারণা আমার মধ্যে পরিস্কারভাবে ধরা দিল যে, কিভাবে দ্বীন মানুষের জীবনকে পরিচালনা করে এবং তা পবিত্র ও বরকতময় করে তোলে।

তবে আমার জন্য খুবই দু:খের বিষয় ছিল যে, তখনকার সময়ের মুসলিমদের সমাজ ব্যবস্থা দেখে আবার আমার মধ্য থেকে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ কমতে থাকে। কারণ, আমি দেখতে পাই, সে জাতি ও তাদের শাসকগণ আমেরিকা কিংবা পশ্চিমা বিশ্বের অন্ধ অনুসরণ করছে এমন একটি সময়ে যখন আমেরিকাসহ গোটা পশ্চিমা বিশ্বের আশা আকাংখা, ধ্যান ধারণা, বিশ্বাস ও নিয়মনীতি সবই নড়বড়ে হয়ে গেছে।

আমি দেখতে পেলাম আরব বিশ্বের লাখ লাখ লোক আমিরিকা যাচ্ছে হেদায়েত ও সঠিক রাস্তা পাওয়ার জন্য। কিন্তু অন্যদিকে লাখ লাখ আমেরিকান বিশ্বাস করছে যে দিন দিন তাদের দেশের অধ:পতন হচ্ছে। তাদের অনেকেই এমন বিশ্বসও পোষণ করতো যে, শীঘ্রই এই বিরাট দেশ ধ্বংসে পতিত হবে।

৩। আমেরিকার মুসলিমদের একদল আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান পোষণ করেন। বিশেষ করে, যারা নতুনভাবে হেদায়েত পেয়ে ইসলামে প্রবেশ করেছেন। আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন। এগুলো জানা না থাকার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। মাঝে মাঝে এটা খুবই ভয়ংকর হয়ে দাড়ায়। আর তা ইসলামের নামেই হয়। কিভাবে নিজ ভাইদেরকে হিদায়েতের রাস্তা দেখানো যায় এ বিষয়ে আমেরিকানদের জ্ঞান খুবই সামান্য। আর মুসলিমদের যারা এ সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান রাখেন এবং পুরোপুরি ভাবে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠত আছেন তাদের খুব কম লোকই আমেরিকায় দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে গমণ করেন কিংবা সেখানে দ্বীনকে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠত করতে সচেষ্ট হন। মুসলিমদের যেভাবে দাওয়াত দেয়া ওয়াজিব, তারা সেভাবে দাওয়াত দিচ্ছেন না। এবং আল্লাহর খাতিরে বা দ্বীনের খাতিরে আমেরিকা গমণ করছেন না।

৪। সবশেষে আশা করি যে, আগামী দশ বছরের মধ্যে অথবা এর কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই আমেরিকার অনেকেই সেখানে যে সমস্ত ইসলামি কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোতে ইসলামি সংস্কৃতি সম্বন্ধে পড়াশুনা করতে পারবে সাথে সাথে আমি এ আশা রাখি যে, তারা ওখানে উত্তম বন্ধুর পরিচয় পাবে আর আল্লাহ তাআলার আনুগত্যও করতে পারবে, আল্লাহ ও তার রাসূলের হেদায়েতের উপর চলতে সক্ষম হবে। সকল প্রশংসা বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের জন্য।

৮১
এক আমেরিকান যুবতীর ইসলাম গ্রহণ, ইসলামই হচ্ছে মানব জাতির রক্ষা ও হেফাযতের একমাত্র রাস্তা।
হাজেরা। যার আমেরিকান নাম ছিল এমিলি। বয়স আটাশ বছর। তিনি কলম্বিয়ার মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ কল্যাণ বিভাগে পড়া শুনা করতেন। প্রায় দুই বছর পূর্ব হতে তিনি ইসলাম ও তার হাকিকত সম্বন্ধে জানার জন্য খুবই অধ্যাবসায়ের সাথে প্রচুর পড়াশুনা শুরু করেন। এ জন্য তিনি খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি দ্রুত উপলব্ধি করেন যে, আমেরিকার বস্তুগত সাংস্কৃতির মধ্যে এই জাতীয় কথাবার্তা পাওয়া যাবে না। দুই বছর গভীর গবেষণা ও অনেক চিন্তা ভাবনার পর এমিলি ইসলাম ধর্ম কবুল করার ঘোষণা দেন। তারপর নিজ নাম পাল্টিয়ে রাখেন হাজেরা। কারণ হিসাবে বলেন, এই নামটি আমার নিকট অত্যন্ত প্রিয় কারণ, এটি ইসলামের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

হাজেরা তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, বহু বছর যাবত আমার মনের ভেতর বিভিন্ন জিনিস সম্বন্ধে প্রশ্ন উদিত হচ্ছিল। যেমন বিশ্ব জগত, দুনিয়ার অস্তিত্ব, জীবন ইত্যাদি। আমি এগুলির সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য নানা গবেষণা ও চিন্তা ভাবনা করছিলাম। এ জাতীয় প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। কিন্তু বৃথাই সমস্ত প্রচেষ্টা। কারণ, আমেরিকার বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষার মধ্যে এবস প্রশ্নের গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা পাইনি। আমি ইসলাম সম্বন্ধে অবগত ছিলাম। কিন্তু তার পরিপূর্ণ চিত্র আমার অন্তরে ছিল না। বরং নানা ধরণের বিপরীত মুখী কথা ছিল। যেমন, এটি এমন এক দ্বীন যা পুরুষ ও মহিলার মধ্যে সমতা বিধান করে না। তার নিয়মাবলী খুবই কঠোর ও শক্ত। এভাবেই ইসলামের হাকিকত সম্বন্ধে বহু দিন অজ্ঞ ছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে ইসলামের পবিত্রতা সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে শুরু করি এবং দেখলাম যে তা বস্তু জগতের বিরুদ্ধে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। ফলে তখন হতেই আমি ইসলাম সম্বন্ধে জানার জন্য ইসলামি বই পড়তে তৎপর হই। প্রথম অবস্থায় এ সম্বন্ধে গবেষণা করা অত্যন্ত কষ্টসঙ্কুল ছিল। কারণ, ইসলাম সম্বন্ধে ইংরেজিতে বিশ্বাসযোগ্য বই খুব কমই আছে। শুরু হতেই কেমন যেন ইসলামের প্রতি একটা অন্তরের টান ও অনুভব করলাম। ভালবেসে ফেললাম প্রিয় ধর্ম ইসলামকে। কারণ তা ন্যায় ও ইনসাফের দ্বীন। প্রতিটি ব্যক্তিকেই স্বাধীনতা দান করে। তার কাজের ও আমলের বোঝা বহন করার সুযোগ দেয়। এভাবে যতই দিন যাচ্ছিল ততই ইসলাম সম্বন্ধে আমার ধ্যান ধারণা বাড়ছিল। অবশেষে আল্লাহ তাআলা ইসলাম গ্রহণ করার তাওফীক আমায় দান করলেন।

৮২
হাজেরা ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিচ্ছেন
যখন থেকে হাজেরা ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন তখন থেকেই তিনি কঠোরভাবে দ্বীনের উপর আমল করতে চেষ্টা করেছেন এবং ইসলাম প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তার কথা হল, বর্তমানে তার একটিই কাজ, আর তা হল ইসলামের রাস্তায় মুজাহাদা করা, চেষ্টা-সাধনার সবটুকু নিংড়ে দেওয়া। আর উদ্দেশ্য হল, আমেরিকার প্রতিটি অধিবাসীর নিকট দাওয়াত পৌঁছান, যারা ইসলাম ও তার মূল-স্বরূপ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। কারণ, শত্রুরা ইসলামের আসল রূপকে পরিবর্তন করে বকৃত রূপে মানুষের সামনে তুলে ধরছে।

ইসলাম হাজেরাকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেয়। সে এক দিন অন্যান্য আমেরিকান মেয়েদের মত খেল-তামাশায় জীবন কাটাত, আজ ইসলামের ভিত্তি ও মৌলিক নীতির একনিষ্ঠ ধারক ও বাহকে পরিণত হয়েছে। হাজেরা সবসময় বলেন: আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হল ইসলামের জন্য সংগ্রাম-মুজাহাদা-সাধনা করা। আমি সীমা অতিক্রমকারী ধনতন্ত্র ও নষ্টামীর বিরুদ্ধে জেহাদ করব। আমি অভিজ্ঞতার আলোকে এটাই বুঝেছি যে, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ক্ষুধা-দারিদ্র, কষ্ট মুসিবত হতে মানবতাকে মুক্তি দেয়ার জন্য একটিই মাত্র রাস্তা আছে, আর তা হল ইসলাম।

যখন তাকে প্রশ্ন করা হল, একমাত্র ইসলামই মানবতাকে মুক্তি দেয়ার রাস্তা, এটা তার মনে করার কারণ কি? উত্তরে তিনি বললেন, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র দ্বীন যা আমাদের বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক তথা সমস্ত সমস্যার সমাধান দিতে পারে। ইসলাম সামগ্রিক জীবনের একমাত্র পরিপূর্ণ ব্যবস্থা, যা একই সাথে আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উভয়বিদ চাহিদার সমাধান দিয়েছে। এর মধ্যে কোনো অসম্পূর্ণতা নেই। যে সব প্রশ্ন আমাকে রাতের পর রাত নিদ্রাহীন রাখত, তার সঠিক ও পরিপূর্ণ জবাব আমি ইসলামের মধ্যেই পেয়েছি।

হাজেরা ইসলাম সম্বন্ধে যা বলেন, সত্যই বলেন। ইসলামকে তিনি সঠিকভাবেই অনুধাবন করেছেন। মাঝে মাঝে ইসলাম সম্বন্ধে আরবীতেও কিছু বলেন। তিনি ইসলামকে সর্ববাস্থায় উত্তমভাবে অনুধাবন করেছেন যে, তাতে আছে পরিপূর্ণ বিধান। ইসলাম শুধুমাত্র ইবাদতের নাম নয়, বরং মানব জীবনের সার্বিক পর্যায় ও বিষয়ের সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গ্রহনযোগ্য বিধি-ব্যবস্থা রয়েছে ইসলামে। তার দৃষ্টিতে জেহাদ হল সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ, বর্তমান সময়ের মুসলামনদের এর প্রতিই বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। ইসলাম গ্রহণের পর হতেই হাজেরা তার জীবন যাপন পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন করেছেন, শরিয়ত সম্মত পোষাক পরিধান শুরু করেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সঠিক সময়ে আদায় করতে তৎপর হয়েছেন। বহু কষ্ট-সাধনা করে কোরআনের অনেক আয়াত মুখস্থ করেছেন, যাতে সালাত সঠিকভাবে আদায় করতে পারেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তিনি তার সাথী-সঙ্গী ও পরিবারের নিকট হতে বহু বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু মুসলিম হাজেরা বলেন, আমার ঈমান-আকিদা ঠিক রাখার জন্য যে সাধনা করছি তা আমার দু:খ-কষ্টকে সুখে পরিণত করেছে। এটি বিশ্ব মুসলিমের জন্য শিক্ষনীয় । কারণ, ইসলামের জন্য অনেককেই প্রাথমিক যুগে বহু কষ্ট করতে হয়েছে, আর আমার ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো জিনিষের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। কোনো কিছুকে মোটেও ভ্রূক্ষেপ করি না আমি। হাজেরা শুধু মাত্র দ্বীনি ব্যাপারেই উৎসাহিত নন, রাজনৈতিক দিক দিয়েও উৎসাহী। বিশেষ করে এই ধারণা পোষণ করে যে, প্যালেষ্টাইনের লোকদের তাদের ন্যায্য হক ফিরিয়ে দেয়া উচিত। তজ্জন্য তিনি মানুষের সাথে কথা বলার সময় ফিলিস্তিনী জাতির উপর বর্বরোচিত নির্যাতন নিপীড়নের প্রতিবাদ করেন।

সত্যিই তার কোনো তুলনা হয় না। আমেরিকার এক সেতাঙ্গ মেয়ে ইসলামের দায়ী বনে গেছেন। ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত অন্য সকলের হক আদায় করতে সচেষ্ট হয়েছেন। যদিও এটা কঠোর সাধনা, তথপি তিনি নিরাশ হচ্ছেন না, আর কোনো কষ্টকেই আমলে নিচ্ছেন না।

তিনি যে বই লেখেছেন তাতে প্রতিটি মুসলিমকে বিশেষ করে আরবদেরকে সম্বোধন করে লখেছেন, তোমরাই তো মানব জাতির পথ প্রদর্শক ছিলে, তাই আজ ইসরাইল তথা তাদের দোসরদের সম্মুখে তোমাদের পবিত্র ভুমির স্বাধীনতা আদায় করতে দুর্বল হয়ে পড়ো না।

৮৩
ইসলাম গ্রহণের পর বিশ্ব বিখ্যাত গায়ক ষ্টিফেন্স-এর স্বীকরোক্তি
১৪০০ হিজরির ৫ই রমজান। আল-মদীনা আল-মুনাওয়ারা পত্রিকায় বিশ্ব বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী স্টিফেন্স এর বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, যিনি ইসলাম গ্রহণের পর নিজের নাম রেখেছেন ইউসুফ ইসলাম। তার বক্তব্যে অনেকগুলো জিনিস সম্বন্ধে তিনি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বহু মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় কথা বলেছেন তিনি। বলেছেন,

১। ইসলাম গ্রহণের পর আমি যখন গান করা ছেড়ে দিই, তখন পশ্চিমা জগতে বিশাল ধাক্কা লাগল। তারা একে অপরকে প্রশ্ন করতে শুরু করল, কিভাবে আমার এই পরিবর্তন? আর তখন থেকে প্রচার মাধ্যমে কিছু বলা কিংবা প্রচার করা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলাম। ফলে, আস্তে আস্তে তারা আমাকে ভুলে গেল। আগে যেমন সাংবাদিকরা আমার পেছনে সময় সময় সর্বদা লেগে থাকত, এখন তারা ক্ষ্যন্ত হল। কারণ, পশ্চিমের সবকটি প্রচার মাধ্যম ইহুদিদের দ্বারা প্রচারিত ও নিয়ন্ত্রিত। তাদের হাতেই সবগুলোর চাবি কাঠি।

২। আমার ইসলাম গ্রহণের মূল কারণ হল আমার ভাই, যিনি মসজিদুল আকসা যিয়ারতে গিয়েছিলেন। সেখান হতে তিনি আমার জন্য দুই জিলদ কোরআন (আরবী ও ইংরেজি) উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, আসমানি ধর্মসমূহের প্রতি আমার বিশেষ আকর্ষণ আছে। আমি একাকি কোরআন পাঠ করতাম । আস্তে আস্তে আমার পড়াশুনা পূর্ণতায় রূপ নিল। তারপর রাসূলের জীবনি পাঠ করলাম। তার ব্যক্তিত্ব দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়লাম। এভাবে দেড় বছর যাবত নানাভাবে পড়াশুনা করার পর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে ফেলল। আমি বুঝে গেলাম এটিই সহিহ দ্বীন। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, এই জন্য যে কোনো মুসলিমের সাথে মিলিত হবার পূর্বেই এবং তাদের মধ্যে যে বিবাদ-বিভেদ আছে তা জানার পূর্বেই, আমি ইসলামে প্রবেশ করেছিলাম।

৩। তারপর আমি বাইতুল মুকাদ্দাসে গমন করি। আমাকে দেখে মসজিদুল আকসার মুসলিমগণ খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। আমি কাঁদলাম ও সালাত আদায় করলাম। আল-কুদস হচ্ছে মুসলিম জগতের হৃদয়। আজ সে হৃদয় রোগাক্রান্ত। ফলে সম্পূর্ণ ইসলামি জগতও অসুস্থ। সেটি যদি সুস্থ হয় তবে শরীরও সম্পূর্ণ সেরে উঠবে। আমাদের সকলের একান্ত কর্তব্য হল এই হৃদয়কে ইসলামের নামে মুক্ত-স্বাধীন করা।

৪। ফিলিস্তিন জাতির কর্তব্য হচ্ছে ইসলাম ও দ্বীনকে পূর্ণভাবে আঁকড়ে ধরা, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সালাত আদায় করা। আমি এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আল্লাহ অবশ্যই তাদের সাহায্য করবেন।

৫। ইসলাম গ্রহণের পর যখন আমাকে বলা হল, ধুমপান হারাম, সাথে সাথে নিজেকে তা হতে বিরত রাখি। মদ্যপান ত্যাগ করি। মহিলাদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দেই চিরতরে। আর গান বাজনা হতে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখি।

৬। জনৈকা পর্দনশীলা মুসলিম রমণীকে বিয়ে করি। কারণ, দৈহিক সুন্দর্যই মুসলিম মহিলাদের মৌল বিষয় নয়। ইসলামই হচ্ছে ঈমান ও সম্মানের চাবিকাঠি।

৭। এখন আমি আরবি ভাষা শিখতে তৎপর হয়েছি যাতে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি। সাথে সাথে যেন তার স্বাদ গ্রহণ ও অর্থ বুঝতে পারি। শীঘ্রই আমি ইসলামের বড়ত্ব ও মহত্ব সম্বন্ধে বই লিখব বলে আশা করছি। কারণ আমার যে খ্যাতি ও প্রসিদ্ধি আছে বিশ্বব্যাপী তা ইসলাম প্রচারে ব্যবহার করতে চাই।

৮। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কালেমা পড়ার পরে ওয়াক্ত মত সালাত আদায় করা ইসলামের সর্বোচ্চ রোকন। সময় মত সালাতের হেফাযত করা মানুষ ও ইসলামের জন্য সর্বোচ্চ রক্ষাকবচ। প্রতিটি সালাতের পরই সুখ ও প্রশান্তির এক ঝর্ণাধারা আমি আমার মধ্যে অনুভব করি।

শুনেছি ইউসুফ ইসলাম ইংল্যান্ডে বসবাস করেন। সেখানে তিনি ইসলাম প্রচার কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। তার নিজস্ব মসজিদ রয়েছে। তার নিকট অন্যান্য মুসলিমবৃন্দ একত্রিত হন এবং বিভিন্ন কাজে তাকে সাহায্য করেন। ইসলাম আঁকড়ে থাকা ও তার বিধি-বিধানকে ভালবাসার ক্ষেত্রে তিনি সম সাময়িক অন্য অনেক মুসলিমদের অতিক্রম করে গেছেন। আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করি, হে আল্লাহ তুমি তাকে তাওফীক ও দৃঢ়তা দান করো। তার মধ্যে বরকত দাও। সারা বিশ্বে তার মত আরো যেসব মসলিমবৃন্দ আছেন তাদের মধ্যেও বরকত দান করো।

৮৪
সুস্থ হওয়ার দোয়া
১। শরীরের যে অংশে ব্যাথা হচ্ছে সেখানে তোমার হাত স্থাপন কর তারপর তিনবার বিসমিল্লাহ বলে সাতবার বল:

أَعُوْذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ ( رواه مسلم )

আল্লাহর সাহায্য ও কুদরতের নামে যে সমস্ত কষ্ট ও দু:খের ভয় পাচ্চি তা হতে পানাহ চাই।

অন্য রিওয়ায়েতে আছে: তুমি তোমার হাতকে উত্তোলন কর এবং তিনবার এভাবে সেস্থান স্পর্শ কর এবং উক্ত দোয়া পাঠ কর (হাসান, বর্ণনায় তিরমিজি)

২। আরও বলতে হবে:

اَللهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبأْسَ إِشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لا شِفَاءً إلا شِفَاءُكَ شِفَاءً لا يُغَادِرُ سُقْمًا ( متفق عليه )

হে আল্লাহ, মানুষের প্রতিপালক। কষ্টকে দুর কর। সুস্থতা দান কর। তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার সুস্থতা ছাড়া আর কোনো সুস্থতা নেই। এমন সুস্থতা দান কর যাতে আর অসুস্থতা না আসে।

৩। আরো বলা:

أعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ ( رواه البخاري )

আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ কথার ওসিলায় প্রতিটি শয়তান ও বিষধর প্রাণী এবং প্রতিটি মন্দ দৃষ্টি প্রক্ষেপণকারী চক্ষু হতে পানাহ চাই।

৪। অন্যত্র আছে, এই দোয়া বলা, যে ব্যক্তি এমন রোগিকে দেখতে যায়, যার অন্তিম মুহূর্ত এখনো উপস্থিত হয়নি, সে যেন তার নিকট সাতবার বলে:

أسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ أنْ يَشْفِيْكَ إلا عَافَاهُ اللهُ ( صحيح رواه الحاكم )

মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, যিনি মহান আরশের অধিপতি তিনি যেন তোমাকে সুস্থতা দান করেন। ফলে আল্লাহ তাকে সুস্থতা দান করেন।(সহিহ, বর্ণনায় হাকেম)

৫। যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ে তখন আর তাকে ঐ রোগ আক্রমণ করে না।

الْحَمْدُ للهِ الذي عَافَانِي ممَّا ابْتَلاكَ بِهِ وَفَضَّلَنِي عَلَى كثِيْرٍ ممَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلاً ( حسن رواه الترمذي )

আমি আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করছি, এ জন্য যে তোমাকে যে রোগবালাই আক্রমণ করেছে তিনি তা হতে আমাকে মুক্ত রেখেছেন। আর তাঁর সৃষ্টির অনেকের উপর আমাকে সম্মানিত করেছেন। (হাসান, বর্ণনায় তিরমিজি)।

৬। জিবরাইল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন হে মুহাম্মাদ! আপনার কি কোনো কষ্ট হচ্ছে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : হ্যা। তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বলতে বললেন:

بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ وَاللهُ يَشْفِيْكَ ( رواه مسلم )

আল্লাহর নামে আপনাকে ফুক দিচ্ছি, আর আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করবেন।

৭। রোগির নিকট সূরা ফাতেহা, সূরা ফালাক, সূরা নাস তিলাওয়াত কর। আর একমাত্র আল্লাহর নিকট সুস্থতা প্রার্থনা কর। দোয়ার সাথ সাথে ঔষধেরও ব্যবস্থা কর। ফকির মিসকিনদের দান খয়রাত কর। ইনশাল্লাহ সুস্থতা অর্জন করবে।

৮৫
সফর ও যানবাহনে আরোহনের দোয়া
১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করলে সে যেন বাড়ীর লোকদের বলে:

مَنْ أرَادَ أنْ يُسَافِرَ فَلْيَقُل لِمَنْ يَخْلُفُ : اَسْتَوْدِعُكُمُ اللهَ الَّذِي لا تَضِيْعُ وَدَائِعهُ ( حسن رواه أحمد )

আল্লাহর নিকট তোমাদের সোপর্দ করে যাচ্ছি, যার নিকট কোনো আমানত থাকলে তা নষ্ট হয় না। (হাসান, বর্ণনায় আহমদ)

২। আর মুসাফেরকে বলবে,

زَوَّدَكَ اللهُ التَّقوي وَغَفَرَ ذَنْبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ ( رواه الترمذي )

আল্লাহ তোমাকে তাকওয়ায় ভূষিত করুন, তোমার গোনাহ ক্ষমা করুন। আর যেখানেই থাকুন না কেন, তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন। (তিরমিজি)

৩। যানবাহনের দোয়া,

গাড়ী, বিমান কিংবা অন্য কোনো বাহনে আরোহন করলে বলবে,

بِسْمِ اللهِ الْحَمْدُ للهِ سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ الْحَمْدُ للهِ الْحَمْدُ للهِ الْحَمْدُ للهِ اللهُ اَكْبَرُ اللهُ اَكْبَرُ اللهُ اَكْبَرُ سُبْحَانَكَ إنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْلِي فَاِنَّهُ لا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ الاَّ اَنْتَ ( رواه الترمذي وقال حسن صحيح )

আল্লাহর নামে আরোহণ করছি, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি যিনি আমাদের জন্য এ বাহনকে অধীন করে দিয়েছেন। আর তা করার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। নিশ্চয়ই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। তারপর আলহামদু লিল্লাহ ৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩ বার বলে বলবে, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি আমার নিজের উপর যুলুম করেছি তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমার গুনাহকে ক্ষমা করতে পারে না। (বর্ণনায় তিরমিজি, আর তিনি বলেছেন হাদিসটি হাসান সহিহ)।

৪। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হয়ে উটের পিঠে আরোহন করলে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন। তারপর বলতেন,

سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ اللهُمَّ انَّا نَسْأَلُكَ فيِ سَفَرِنَا هَذَاالبِرَّ وَالتَّقْوى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى اللهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا واطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ اللهُمَّ انْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِي الأهْلِ اللهُمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ وعَثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ في الْمَالِ وَالْأهْلِ ( رواه مسلم )

আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি যিনি আমাদের জন্য এ বাহনকে অধীন করে দিয়েছেন। আর তা করার ক্ষমতা আমাদের ছিল না।

হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট এই সফরে ভাল কাজ ও তাকওয়ার প্রার্থনা করছি। আর এমন আমল যাতে তুমি খুশি হও। হে আল্লাহ ,আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ করে দাও। তার দূরত্বকে কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ, এই সফরে তুমি আমার সাথি। আর পরিবারের দখাশুনাকারী । হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট সফরের কষ্ট-মুসিবতের বিপদ হতে হেফাযত চাচ্ছি। আর নিকৃষ্ট জিনিস দেখা হতে এবং ধন-সম্পদ ও পরিবারের খারাপ পরিণতি হতে হেফাযত চাচ্ছি। (মুসলিম)।

৫। মুসাফির সফর থেকে ঘরে ফেরত আসলে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করবে,

آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ ( رواه مسلم )

আমরা প্রত্যাবর্তণ করেছি, তওবা করেছি, আমাদের রবের ইবাদত করছি ও তাঁর প্রশংসা করছি। (মুসলিম)।

৮৬
গ্রহণযোগ্য কিছু দোয়া
যদি তুমি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে সাফল্য লাভ করতে চাও তবে নিম্নোক্ত দোয়াগুলো পাঠ কর:

১। একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবিকে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে শুনে বললেন, আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার জীবন, এই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাঁর ইসমে আজমের ওসিলায় দোয়া করেছে। যখন এভাবে দোয়া করা হয়, তখন তা কবুল করা হয়। আর যখন কোনো জিনিস চাওয়া হয়, তা দিয়ে দেয়া হয়।

اللهُمَّ إنِّي أسْأَلُكَ بِأنِّي أشْهَدُ أنَّكَ أنْتَ اللهُ لا إله الاَّ أنْتَ الأحَدُ الصَّمَدُ الذي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ( صحيح رواه أحمد و ابو داود وغيرهما )

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ভিক্ষা চাচ্ছি শাহাদাতের ওসিলায় যে তুমি ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নেই। তুমি এক, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেন নি, আর কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। আর তাঁর কোনো সমকক্ষ নেই। (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ, আবু দাউদ ও অন্যান্যরা)

২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ দু:খ, পেরেশানিতে জর্জরিত হয়ে নিম্নের দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলা তার দু:খ পেরেশানিকে দূর করে দেন। আর সে স্থান আনন্দ দ্বারা পূর্ণ করে দেন:

اللهُمَّ إنِّي عَبْدُكَ وابنُ عَبْدِكَ وَابنُ امتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْل فِيَّ قَضَاءُكَ اسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَيتَ بِهِ نَفْسَكَ اوْ اَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ اوْ عَلَّمْتَهُ اَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ اَو اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ انْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي وَنُورَ بَصَرِي وَذِهَابَ هَمِّي وَ غَمِّي ( صحيح رواه احمد وابن حبان )

হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দা ও বান্দির সন্তান, আমার কপালের চুল তোমার হাতে, তোমার হুকুম আমার উপর চলে, আমার জন্য তোমার বিচার ন্যায় সঙ্গত, তোমার যত নাম আছে যা দ্বারা নিজেকে বিভুষিত করেছ, অথবা তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ, অথবা তোমার কোনো সৃষ্টিকে শিখিয়েছ, অথবা তোমার গায়েবের এলেমে গোপন রেখেছ তার অসিলায় আমি চাচ্ছি যে, কোরআনকে আমার হৃদয়ের প্রসবন বানিয়ে দাও, আমার চোখের নূর এবং আমার দু:খ-কষ্ট দূরকারী বানিয়ে দাও । (সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ ও ইবনে হিব্বান)।

৩। ইউনুস আলাইহিস সালাম যে দোয়া মাছের পেটে বসে করেছিলেন , যে কোনো মুসলিম বিপদাপদে যদি তা পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। দোয়াটি হল:

لاَ الهَ الاَّ انْتَ سُبْحَانَكَ انِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ( صحيح رواه احمد وغيره )

তুমি ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নেই। আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।(সহিহ, বর্ণনায় আহমাদ)।

৪। রাসূলের উপর দু:খ বা পেরেশানি আসলে বলতেন:

يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ اَسْتَغِيْثُ ( حسن رواه الترمذي )

হে চিরঞ্জীব, হে সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক, তোমার রহমতের ওসিলায় সাহায্য ভিক্ষা চাচ্ছি। (হাসান, বর্ণনায় তিরমিজি)

তবে সফল হবার নিয়ামাবলী গ্রহণ করাই হল মূল কর্তব্য। আর তা হচ্ছে দোয়ার পাশাপাশি খুবই গুরুত্বের সাথে আমল করতে হবে।

৮৭
হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়ার দোয়া
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হারানো জিনিসের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রথমে অজু করে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হবে, তাশাহুদ শেষ করে বলতে হবে,

اللهُمَّ رادَّ الضَّالَةِ هَادِى الضَّلالَةِ تَهْدِي مِنَ الضَّلالِ رُدَّ عَلَيَّ ضَالَّتي بِقُدْرَتِكَ وَسُلْطَانِكَ فَاِنَّهَا مِنْ فَضْلِكَ وَعَطَائِكَ ( قال البيهقي هذا موقوف وهو حسن )

হে আল্লাহ, হরনো জিনিস ফিরিয়ে দেয়ার মালিক । হারানো জিনিসকে তুমিই পথ দেখাও। যারা পথভ্রষ্ট তাদের তুমিই সঠিক পথ প্রদর্শন কর। তোমার কুদরত ও ক্ষমতার দ্বারা আমার হারানো জিনিসকে ফিরিয়ে দাও। আর তা কেবলই তোমার ফজল ও দানের বরকতে। (বর্ণনায় বাইহাকি, আর তিনি বলেছেন এটি মাওকুফ ও হসান)

৮৮
কোরআনুল করিম হতে কতিপয় দোয়া
(আরবি)

হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন এবং আমাদের জন্য আমাদের কর্মকাণ্ড সঠিক করে দিন। (সূরা কাহফ: ১০)

(আরবি)

হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা (সূরা বাকারা : ২০১ )

(আরবি)

হে আমাদের রব, আপনি হেদায়েত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সূরা আলে ইমরান : ৮ )

(আরবি)

হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু। (সূরা হাশর: ১০ )

(আরবি)

হে আমাদের রব, আমরা তোমার উপরই ভরসা করি, তোমারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো তোমারই কাছে। ( সূরা মুমতাহিনা : ৪ )

(আরবি)

আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।

(সূরা বাকারা: ২৮৬ )

(আরবি)

হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে যথার্থ ফয়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী। (সূরা আরাফ : ৮৯)

(আরবি)

হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে জালিম কওমের ফিতনার পাত্র বানাবেন না। আর আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহে কাফের কওম থেকে নাজাত দিন। (সুরা ইউনুস : ৮৫-৮৬)

(আরবি)

হে আমাদের রব, আমাদের উপর হতে আজাবকে দূর করে দিন। নিশ্চয়ই আমরা ঈমানদার। (সূরা দুখান : ১২ )

(আরবি)

হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন। (সূরা আরাফ : ১২৬ )

হে আমাদের মাবুদ! একমাত্র তুমিই বিপদে উদ্ধারকারী

হে পবিত্র সত্ত্বা, যিনি অন্তরের সব কিছু দেখেন ও শুনেন, যত কিছু হতে পারে সব কিছুই গণনা করে রাখেন। হে মহান, যার নিকট সমস্ত বিপদেই আশা করা যায়। হে মহা মহিম, যার নিকট সব দু:খ কষ্ট বলা যায় ও আশ্রয় নেয়া যায়। হে মহা দাতা, যার নিকট রিজিকের সমস্ত ভাণ্ডার রয়েছে যে হও বললেই সব হয়ে যায়। তোমার নিকটই সমস্ত কল্যাণ। তোমার নিকট আমার দীনতা-হীনতা ব্যতীত ওসিলা করার জন্য অন্য কিছু নেই।

তাই আমার হীন হাল নিয়ে আবদার করছি, আমার দারিদ্রকে দূর করে দাও। তোমার দরজায় করাঘাত করা ব্যতীত আমার অন্য কোনো উপায় নেই। তাই যদি ফিরিয়ে দাও তবে আর কোন দরজায় হাত পাতব ? অন্য কার নিকটে, কি নামেই বা আমি দোয়া করব? তোমার ফজল তোমা হতে যে দারিদ্র আসে তা দূরীভূত করে। তোমার দানশীলতা এত বেশি যে পাপ করলেও নিরাশ হই না।

কারণ, তোমার ফজলের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। আর দানের কোনো পরিধি নেই। সালাত ও সালাম নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিজনের উপর, যিনি কোরআন নিয়ে এসেছেন যে কোরআনের নূর সব কিছুকে উদ্ভাসিত করছে। আমীন!!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন