HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ছোটদের আকীদাহ ও আখলাক

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ছোটদের আকীদাহ ও আখলাক

[মক্তব, স্কুল ও মাদরাসায় সিলেবাসভুক্ত করার উপযোগী

ছেলে-মেয়েদের আকীদাহ ও আখলাক বিষয়ক

একটি গুরুত্বপূর্ণ বই]

শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

সম্পাদনা

মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন কামরুল

ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ, ঢাকা

ভূমিকা
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ فِقْهُ الْاَطْفَالِ

‘ছোটদের আকীদাহ ও আখলাক’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।

আমরা আমাদের আদরের সন্তানদেরকে যেভাবে যত্নসহকারে লালনপালন করি, ঠিক সেভাবে ছোটকাল থেকেই তাদেরকে সহীহ আকীদাহ ও উত্তম আখলাক শিক্ষা দেয়া খুবই প্রয়োজন। ছোটকালে আমরা তাদেরকে যেভাবে গড়ে তুলব সেভাবেই তারা গড়ে উঠবে।

অনেকদিন থেকে এবিষয়ে একটি বই লেখার আগ্রহ ছিল, এখন আল্লাহ তা‘আলা সেই তাওফীক দিয়েছেন। এ বইয়ের মধ্যে অতীব জরুরি বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে সাজিয়ে তুলে ধরেছি। ছোটকালে পড়া মুখস্থ হয় বেশি। তাই প্রত্যেক পিতা-মাতা, অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ- আপনারা এ বইয়ের বিষয়গুলো ছেলে-মেয়েদেরকে মুখস্থ করাবেন। বড় হলে তারা সারাজীবন এ থেকে উপকার পাবে, ইনশা-আল্লাহ।

আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে যেন উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ খেদমতকে আমাদের সকলের নাজাতের অসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!

বিনীত

আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

০১৯১২-১৭৫৩৯৬

আকীদাহ ১. আকীদাহ বলতে কী বুঝায়?
আকীদাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল- বন্ধন, চুক্তি, বিশ্বাস ও সম্পর্ক স্থাপন। পারিভাষিক অর্থে মানুষ যার সাথে নিজের অন্তরের সুদৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করে, যে আদর্শ ও বিশ্বাসকে লালন করে মানুষ তার সমগ্র জীবন পরিচালনা করে তাকে আকীদাহ বলে। আকীদাহ সঠিক না থাকলে কোন ব্যক্তি যত বড় উত্তম কাজই করুক না কেন, আল্লাহর কাছে তার কোন মূল্য নেই।

২. ঈমান কাকে বলে?
আসমান-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করা, তাঁর উলূহিয়্যাত, রুবূবিয়্যাত ও গুণবাচক নামসমূহকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। তাঁর ফেরেশতামন্ডলী, নবী-রাসূলগণ, তাঁদের উপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ, তাক্বদীরের ভাল-মন্দ এবং বিশুদ্ধ দলীল দ্বারা প্রমাণিত দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহ ও অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কিত সংবাদসমূহ ইত্যাদির প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখাকে ঈমান বলে।

৩. ঈমান কি বাড়ে এবং কমে?
নেক আমলের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং পাপ করলে ঈমান কমে যায়। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ﴾

নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে থাকে।

(সূরা আনফাল- ২)

৪. কোন্ কোন্ কাজের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়?
যেসব কাজের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়- তা হলো :

ইলমে দ্বীন অর্জন করা।

আল্লাহ তা‘আলার গুণবাচক নামের পরিচয় জানা।

কুরআন পাঠ করা এবং গবেষণা করা।

আল্লাহর নিদর্শন ও তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।

অধিক হারে ইবাদাত করা।

যাবতীয় কুফর, শিরক, বিদ‘আত এবং কবীরা গোনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।

মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করা, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।

৫. কী কী কারণে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়?
১০টি কারণে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়- তা হলো :

আল্লাহর সাথে শরীক করা।

আল্লাহ ও বানদার মাঝখানে কোন মাধ্যম স্থির করা।

কাফিরদেরকে কাফির মনে না করা অথবা তাদের কুফরী সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা।

ইসলামের কোন বিধি-বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।

যাদু-মন্ত্র করা।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের পক্ষ নেয়া এবং তাদেরকে সহযোগিতা করা।

ইসলামের কোন বিধানকে অপছন্দ করা।

আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় অথবা তার চেয়েও বেশি কাউকে ভালোবাসা।

ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবনব্যবস্থাকে উত্তম মনে করা।

আল্লাহর দ্বীন থেকে বিমুখ হওয়া। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের প্রকাশিত বই ‘‘যেসব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’।]

৬. ঈমানের স্বাদ কারা পায়?
আববাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছেন যে, ঐ ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬০; তিরমিযী, হা/২৬২৩।]

৭. ঈমানের লক্ষণ কী?
যখন কোন বান্দার চরিত্র এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তার ভালো কাজ তাকে আনন্দ দেয়; আর সে কখনো অন্যায় কাজ করে ফেললে এটা তাকে কষ্ট দেয় তখনই তার মধ্যে ঈমান আছে বলে ধরে নেয়া যায়। আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, ঈমান কী অর্থাৎ ঈমানের আলামত কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমার ভালো কাজ তোমাকে আনন্দ দিলে আর খারাপ কাজ তোমার কাছে খারাপ লাগলে তুমি মুমিন। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৬৬।]

১০
৮. ঈমানের কয়টি শাখা রয়েছে?
ঈমানের অনেক শাখা রয়েছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঈমানের ৬০ অথবা ৭০ এর অধিক শাখাপ্রশাখা রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে, لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হ) বলা। আর তার মধ্যে সর্বনিম্ন হচ্ছে, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি অঙ্গ। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬১; আবু দাউদ, হা/৪৬৭৮; তিরমিযী, হা/২৬১৪; নাসাঈ, হা/৫০০৫।]

১১
৯. মুমিন কে?
কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখিত ছয়টি রুকন এবং এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহের প্রতি যে যথার্থ ঈমান আনে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে তাকে মুমিন বা বিশ্বাসী বলা হয়। প্রকৃত মুমিনদের পরিচয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْل اللهِ ۚ أُولٰٓئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ﴾

মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে, অতঃপর কোনরূপ সন্দেহ করে না, আর তাদের মাল দিয়ে ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে; তারাই সত্যবাদী। (সূরা হুজুরাত- ১৫)

১২
১০. আরকানুল ঈমান কয়টি ও কী কী?
আরকানুল ঈমান বা ঈমানের মৌলিক বিষয় ছয়টি- তা হলো :

১. আল্লাহর প্রতি ঈমান,

২. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান,

৩. আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান,

৪. রাসূলগণের প্রতি ঈমান,

৫. পরকালের প্রতি ঈমান,

৬. তাকদীর বা ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান।

হাদীসে জিবরাঈলে বর্ণিত হয়েছে:

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  ... مَا الْإِيْمَانُ قَالَ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهٖ وَكِتَابِهٖ وَلِقَائِهٖ وَرُسُلِهٖ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ كُلِّهٖ

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিবরাঈল (আ.) প্রশ্ন করলেন....ঈমান কী? রাসূলুল্লাহ ﷺ উত্তর দিলেন, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, পরকালে আল্লাহর সাক্ষাৎ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনা। আর বিশবাস করা আখেরাত এবং তাকদিরের সকল বিষয়ের প্রতি। [(সহীহ মুসলিম ১০৮; সুনানে আবু দাউদ ৪৬৯৭; সুনানে নাসায়ী ৫০০৬; মুসনাদে আহমদ ৩৭৪)]

১৩
আল্লাহর উপর ঈমান ১১. আল্লাহর উপর আমরা কিরূপ ঈমান রাখব?
নিশ্চয়ই আল্লাহ এক, তাঁর কোন শরীক নেই।

তাঁর মতো কিছুই নেই। কেউ তাঁর সমতুল্য নয়।

কিছুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে না।

তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।

তাঁর ক্ষয় নেই, ধ্বংস নেই।

তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত কোন কিছুই সংঘটিত হয় না।

তাঁর নিদ্রা নেই; তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না।

তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং প্রতিটি সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নন।

তিনি সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন। সব কিছুরই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।

সবকিছু তাঁর ইচ্ছা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে।

১৪
১২. আল্লাহ তা‘আলা কোথায় আছেন?
আল্লাহ তা‘আলা সত্ত্বাগতভাবে আরশের উপর সমুন্নত রয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى﴾

দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর সমুন্নত। (সূরা ত্বা-হা- ৫)

তবে তাঁর ক্ষমতা ও জ্ঞান সর্বস্থানেই বিরাজমান। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَهُوَ مَعَكُمْ اَيْنَ مَا كُنْتُمْؕ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ﴾

তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (জানার দিক দিয়ে বা সাহায্য করার ক্ষেত্রে) তোমাদের সঙ্গেই আছেন। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন। (সূরা হাদীদ- ৪)

১৫
১৩. ‘আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’ এর অর্থ কী?
‘আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’ এর অর্থ হচ্ছে - তিনি সব দেখেন এবং সব শুনেন। তিনি আমাদের সাথে আছেন শোনা, দেখা, জ্ঞান, কর্তৃত্বের মাধ্যমে। তিনি তাঁর বান্দাদের সাথে আছেন তাদের সাহায্য করা, বিজয় দেয়া, বিপদে উদ্ধার করা, সাফল্য দেয়ার মাধ্যমে। যেমন: পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

﴿لِتَعْلَمُوْاۤ أَنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَّأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا﴾

‘‘যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞান সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে।’’ (সূরা ত্বালাক ৬৫:১২)

১৬
১৪. আল্লাহ তা‘আলা কি নিরাকার?
আল্লাহ তা‘আলা নিরাকার নন। তাঁর মুখমন্ডল, চোখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি সবই রয়েছে। তবে এগুলো সৃষ্টিজগতের কারো মতো নয়; কোন কিছুর সাথে তাঁর তুলনা করা যায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌۚ وَّهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ﴾

কোনকিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা- ১১)

১৭
১৫. আল্লাহ তা‘আলার পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ে আছে কি?
না, আল্লাহ তা‘আলার পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি কেউ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ اَللهُ الصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ ﴾

বলো, তিনি আল্লাহ একক। তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাঁর থেকে কেউ জনম নেয়নি এবং তিনিও কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাস)

১৮
১৬. দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা সম্ভব কি?
না- দুনিয়াতে কারো পক্ষে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَا تُدْرِكُهُ الْاَ بْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْاَ بْصَارَ ۚ وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ﴾

কোন চোখই তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না, কিন্তু তিনি সকল দৃষ্টিকে আয়ত্ত করেন। আর তিনিই সূক্ষ্মদর্শী এবং সব খবর রাখেন।

(সূরা আন‘আম- ১০৩)

১৯
১৭. رَبٌّ (রব) কাকে বলে ?
رَبٌّ (রব) শব্দটির অর্থ হচ্ছে, অভিভাবক, প্রতিপালক ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় رَبٌّ (রব) বলা হয় ঐ সত্তাকে, যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেন, রিযিক দান করেন, লালনপালন করেন, বিধান দান করেন। সারা বিশ্বের একমাত্র রব হচ্ছেন আল্লাহ তা‘আলা।

২০
১৮. আমরা আমাদের রবকে কীভাবে চিনব?
রবের নিদর্শন যেমন রাত, দিন, চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়, সাগর, ঝর্ণা, নদী এবং ভূমন্ডল-নভোমন্ডল এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করে আমরা তাঁর অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারি। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

﴿وَمِنْ اٰيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ﴾

তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে হলো রাত, দিন, সূর্য আর চন্দ্র। সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না। সেজদা করো আল্লাহকে যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন যদি সত্যিকারভাবে তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করতে চাও। (সূরা হামীম সাজদা- ৩৭)

২১
ইসলাম ১৯. ইসলাম কী?
ইসলাম একটি আরবি শব্দ। ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- অনুগত হওয়া, নিজেকে সঁপে দেয়া, আত্মসমর্পণ করা। পারিভাষিক অর্থে ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা দ্বীনের নাম, যা মুহাম্মাদ ﷺ এর মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া, আত্মসমর্পণ করা, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ঈমান আনা, তাঁর অনুসরণ করা। শিরক থেকে পবিত্র হওয়া এবং মুশরিকদের থেকে মুক্ত হওয়া। [আদ -‍ দুরারুস সানিয়্যাহ ১/১২৯।]

২২
২০. মুসলিম কে?
আল্লাহর কাছে যে ব্যক্তি নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেয়, আত্মসমর্পণ করে, আনুগত্য করে, এককভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করে, সমস্ত শিরক থেকে মুক্ত হয়, শিরককারীদের থেকে মুক্ত হয় এবংতার পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে মেনে নেয়, প্রকৃতপক্ষে সে-ই মুসলিম।

২৩
২১. ইসলামের মূল উৎস কী?
ইসলামের মূল উৎস দু’টি। কিতাবুল্লাহ-আল্লাহর কিতাব তথা আল-কুরআন ও সুন্নাতে নববী তথা সহীহ হাদীস। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিদায় হজ্জের ভাষণে বলে গেছেন-

تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّه

আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বিষয় (দুটি জিনিস) রেখে গেলাম। তোমরা যতক্ষণ এগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন), আরেকটি হলো আমার সুন্নাহ (হাদীস)। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক ১৮৭৪; মিশকাত ১৮৬; সিলসিলা সহীহাহ ১৭৬১।]

এছাড়া এই দু’টি মূল উৎসের আলোকে রয়েছে ইজমা ও কিয়াস।

ইজমা: কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ কুরআন ও হাদীসের দলিলের ভিত্তিতে তাদের মতামতের ক্ষেত্রে একমত হলে তাকে ইজমা বলা হয়।

কিয়াস: কিয়াস অর্থ হল অনুমান করা, পরিমাণ করা, তুলনা করা। শরীয়তের পরিভাষায় কিয়াস বলা হয়, কুরআন-সুন্নাহর নস তথা মূল দলীলের আলোকে নবোদ্ভাবিত কোনো মাসআলার সমাধান বের করা।

২৪
২২. আরকানুল ইসলাম বা ইসলামের মূল ভিত্তি কয়টি ও কী কী?
ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। হাদীসে এসেছে,

قَالَ رَسُوْلُ اللهِ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।

১. আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল এর ঘোষণা করা

২. সালাত কায়েম করা।

৩. যাকাত আদায় করা।

৪. হজ্জ করা।

৫. রমাযানের সিয়াম পালন করা। [সহীহ বুখারী ৮; সহীহ মুসলিম ১৬; সুনানে তিরমিযী ২৬০৯।]

২৫
২৩. আমাদের দ্বীন কী?
আমাদের দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম অর্থ একমাত্র আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা।

মহান আল্লাহ কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন-

﴿إِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْإِسْلَامُ﴾

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হলো ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান- ১৯)

২৬
২৪. আল্লাহর দ্বীন কি পরিপূর্ণ?
হ্যাঁ- আল্লাহর দ্বীন পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾

আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)

সুতরাং ইসলামী বিধান থেকে কোন কিছু বাদ দেয়া যাবে না এবং কোন কিছু অতিরিক্তও করা যাবে না। যারা এ দুটির কোন একটি করবে, সে অবশ্যই বিভ্রান্ত হয়ে যাবে।

২৭
তাওহীদ ২৫. তাওহীদ কাকে বলে?
اَلتَّوْحِيْدُ শব্দের অর্থ একত্রীকরণ অথবা দৃঢ়ভাবে এককত্ব ঘোষণা করা। তাওহীদ হচ্ছে-- এক বাক্যে এ সুদৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, সকল বিষয়েই আল্লাহ এক ও একক, অদ্বিতীয়, সমকক্ষহীন, তুলনাহীন। জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে আল্লাহর একক সার্বভৌমতব মেনে নেয়াই হচেছ তাওহীদের মূল কথা।

২৮
২৬. তাওহীদ কত প্রকার ও কী কী ?
তাওহীদ তিন প্রকার। যথা-

(১) تَوْحِيْدُ الرُّبُوْبِيَّةِ (তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ)

এই তাওহীদের মূল কথা হচ্ছে, কেবল আল্লাহকেই রব হিসেবে বিশবাস করা এবং স্বীকৃতি দেয়া। দুনিয়া জুড়ে সমগ্র সৃষ্টিকে লালনপালন করতে যা কিছুর প্রয়োজন হয়, সবকিছু কেবল একজনই করছেন। তিনি হলেন আল্লাহ। এক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্য কেউ অংশগ্রহণকারী নেই বা শরীক নেই। মহান আল্লাহ বলেন :

﴿يَاۤ أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ ۚ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللهِ يَرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ ۚ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَأَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ﴾

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো। তিনি ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা আছে কি- যিনি তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন থেকে রিযিক দান করেন? তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা কীভাবে প্রতারিত হচ্ছো। (সূরা ফাতির- ৩)

(২) تَوْحِيْدُ الْاَسْمَاءِ وَ الصِّفَاتِ (তাওহীদুল আসমাই ওয়াস-সিফাত)

‘তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর তাৎপর্য হলো : আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে তাঁর এককত্ব। আর তা হলো, পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে আল্লাহ তা‘আলার যে সকল সুন্দর নাম ও উন্নত গুণাবলির বিবরণ এসেছে তা হুবহু আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত- এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন :

﴿اَللهُ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ لَهُ الْأَسْمَآءُ الْحُسْنٰى﴾

আল্লাহ! তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) মাবুদ নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই। (সূরা ত্বাহা- ৮)

(৩) تَوْحِيْدُ الْاُلُوْهِيَّةِ (তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ)

সমগ্র সৃষ্টিকুলের ইবাদাতের হকদার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা- এ কথা জানা, বিশ্বাস করা এবং বাস্তবে আমল করা। মহান আল্লাহর জন্যই সমগ্র দ্বীনকে খালিস করা এবং কেবল আল্লাহর জন্যই যে কোন ইবাদাত পালন করাকে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ‌ বলে।

আল্লাহ তা‘আলা শিখাচ্ছেনঃ

﴿إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ﴾

আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। (সূরা ফাতিহা- ৫)

২৯
২৭. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করা যাবে কী?
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করা যাবে না। কেননা তিনিই হচ্ছেন একমাত্র মাবূদ তথা উপাস্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اِنَّمَاۤ اِلٰهُكُمُ اللهُ الَّذِيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ﴾

তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা তবা-হা- ৯৮)

৩০
২৮. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করার দৃষ্টান্ত কীরূপ ?
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করার দৃষ্টান্ত হলো :

১. আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন মতবাদের অনুসরণ করা।

২. আল্লাহর বিধানের বিপরীতে অন্য কারো বিধান বাস্তবায়ন করা।

৩. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে সিজদা করা।

৪. আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতিত অন্য কারো সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত, সিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি পালন করা।

৫. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে মানণত করা।

৬. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা।

৩১
২৯. তাওহীদের মূল বাক্য কোনটি এবং এর কয়টি অংশ?
তাওহীদের মূল বাক্য হচ্ছে لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ (লা- ইলাহা ইল্লাল্লা-হ) তথা আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।

لَا إِلٰهَ إِلَّا الله [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] এর দুটি অংশ :

প্রথম অংশটি না-বাচক, আর দ্বিতীয় অংশটি হ্যাঁ-বাচক। প্রথমটি বর্জনমূলক, দ্বিতীয়টি গ্রহণমূলক।

لَا إِلٰهَ [লা-ইলাহা] বা না-বাচক অংশের মর্ম হলো, কোন ইবাদাতই কারো জন্য করা চলবে না, কারো সার্বভৌমত্ব ও শক্তি স্বীকার করা চলবে না, কারো বিধান ও আইন-কানুন মানা চলবে না, কোন কিছুতেই কারো প্রভুত্ব স্বীকার করা চলবে না। এসবের কোন একটিতেও কারো বিন্দুমাত্র শরীক স্থাপন করা চলবে না।

إِلَّا اللهُ [ইল্লাল্লাহ] বা হ্যাঁ-বাচক অংশের মর্ম হলো, শুধুমাত্র আল্লাহই সকল প্রকার ইবাদাতের প্রকৃত হকদার। তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, তারই বিধান ও আইন-কানুন বান্দার উপর প্রযোজ্য ও প্রয়োগ হবে। সবকিছুতেই তার প্রভুত্ব রয়েছে এবং এ সমস্ত ব্যাপারে কেউ বিন্দুমাত্র তাঁর শরীক/অংশীদার নেই।

৩২
৩০. তাগূতকে অস্বীকার করার বিধান কি?
আল্লাহ আদম সন্তানের উপর প্রথম যা ফরয করেছেন, তা হলো اَلْكُفْرُ بِالطَّاغُوْتِ তাগূতকে অস্বীকার করা এবং بِاللهِ اَلْاِيْمَانُ আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনা। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلًا أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ﴾

প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি (এ মর্মে) যে, আল্লাহর ইবাদাত করো আর তাগূতকে বর্জন করো। (সূরা নাহল : ৩৬)

﴿فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ﴾

অতএব যে তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে সে এমন এক মজবুত রজ্জুকে আঁকড়ে ধরল যা কখনও ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। (সূরা বাকারা- ২৫৬)

৩৩
৩১. তাগুত কাকে বলে?
আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয় তারা হচ্ছে তাগুত। তাগুত হচ্ছে ঐ সকল উপাস্য, নেতা-নেত্রী, মুরুবিব- যাদের আনুগত্য করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা হয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে বিচার-ফায়সালা চাওয়া হয় অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয়। অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন দলীল-প্রমাণ ছাড়া যাদের আনুগত্য করা হয়। এরাই হলো তাগুত ।

৩৪
৩২. প্রধান প্রধান তাগুত কারা?
বর্তমান সমাজের প্রধান প্রধান ৮ প্রকার তাগূত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১. ইবলীস : সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার ইবাদাতের দিকে মানুষকে আহবান করে এবং মানুষকে তাগূতে পরিণত করতে উষ্কানি দেয়- এমনকি অন্যান্য তাগূতদেরকেও সে পরিচালনা করে থাকে।

২. শাসক : আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে বা অস্বীকার করে মানুষের বানানো শাসনতন্ত্র কায়েম করে এমন শাসক তাগূতের অন্তর্ভুক্ত।

৩. বিচারক : যে বিচারক বা সমাজপতি আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা অস্বীকার বা বাতিল করে অন্য কোন মানবরচিত আইন-বিধান বা সংবিধান দিয়ে ফায়সালা করে তারাও তাগূতের অন্তর্ভুক্ত।

৪. ইলমে গায়েবের দাবিদার : যারা ইলমুল গায়িব বা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবি করে তারাও তাগূত।

৫. পীর-পুরোহিত : যেসব পীররা মনগড়া ইবাদাত ও বহু তরীকা নিজেরা তৈরি করে মানুষকে আল্লাহর পরিবর্তে তাদের ইবাদাতের দিকে আহবান করে এরাও তাগূতের অন্তর্ভুক্ত।

৬. যাদুকর : যাদুকরেরাও তাগূতের অন্তর্ভুক্ত।

৭. হাওয়া বা প্রবৃত্তি/খেয়াল-খুশির অনুসরণ করা : যারা কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ না করে মন যা চায় তাই করে এবং তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণে জীবনযাপন করে তারা তাদের প্রবৃত্তিকে ইলাহ বানিয়ে নেয়। তাই তাদের নিজ প্রবৃত্তিও তাগূতের অন্তর্ভুক্ত।

৮. বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ :

তাগুতগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ তাগুত হলো বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ করা। বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষ থেকে চলে আসা যত রসম-রেওয়াজ ও কুসংস্কার রয়েছে, সেগুলোকেই শক্তভাবে ধরে রাখা। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ যখনই মানুষকে হক্বের দিকে আহবান করেছেন তখনই তারা পূর্বপুরুষ ও আকাবিরদের দোহাই দিয়ে বলত, এটা পূর্বপুরুষ হতে চলে এসেছে, অমুক অমুক বড় বড় বুযুর্গ এ কাজ করেছেন, তারা কি কম বুঝেছেন? অথচ কুরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে-

﴿وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ﴾

যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব, যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। অথচ (এ ব্যাপারে) তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞান ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না।

(সূরা বাক্বারা- ১৭০)

৩৫
৩৩. لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তাবলি কী কী?
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ এর ৭টি শর্ত নিচে আলোচনা করা হলো :

১. اَلْعِلْمُ জ্ঞান : তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করা।

২. اَلْيَاقِيْنَ নিশ্চিত বিশ্বাস : তাওহীদ ও রিসালাতকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা।

৩. اَلصِّدْقُ সত্যবাদিতা : তাওহীদের কালিমায় সত্যবাদী হওয়া।

৪. اَلْاِخْلَاصُ একনিষ্ঠতা : কালিমার দাবি অনুযায়ী বান্দার সকল ইবাদাতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত করা।

৫. اَلْقَبُوْلُ গ্রহণ : কালিমাকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করা।

৬. اَلْاِنْقِيَادُ আত্মসমর্পণ : কালিমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে ইবাদাতের মাধ্যমে নিজেকে সমর্পণ করা।

৭. اَلْمُحَبَّةُ ভালোবাসা : এ কালিমাকে মনে-প্রাণে ভালোবাসতে হবে।

৩৬
রিসালাত ৩৪. রাসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার হুকুম কী?
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে সৎপথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পর্যায়ক্রমে অনেক নবী ও রাসূল পাঠিয়েছিলেন। সর্বপ্রথম নবী ছিলেন আদম (আঃ) এবং সর্বশেষ নবী ছিলেন মুহাম্মাদ ﷺ। এ দুজনের মধ্যখানে আল্লাহ তা‘আলা আরো অনেক নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁদের সকলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ। তাদের মধ্যে কাউকে অস্বীকার করা অথবা তাদের কাউকে আল্লাহর সমতুল্য মনে করা বড় ধরনের কুফরী।

৩৭
৩৫. মুহাম্মাদ ﷺ এর পর আরো কোন নবী অথবা রাসূলের আগমন ঘটবে কি?
না- মুহাম্মাদ ﷺ এর পর আর কোন নবী বা রাসূল আসবেন না। বরং তিনি হচ্ছে সর্বশেষ নবী ও রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَؕ وَكَانَ اللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا﴾

মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।

(সূরা আহযাব- ৪০)

সুতরাং বর্তমানে যে ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করবে সে মিথ্যাবাদী । আর যে ব্যক্তি উক্ত মিথ্যা নবুওয়াত দাবিকারীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, সেও কাফের হয়ে যাবে।

৩৮
৩৬. মুহাম্মাদ ﷺ কি নূরের তৈরি ছিলেন?
সকল নবীই মানুষ ছিলেন এবং তারা মাটির তৈরি ছিলেন। মুহাম্মাদ ﷺ নূরের তৈরি নন; বরং তিনি ছিলেন মাটির তৈরি অন্যান্য মানুষের মতই একজন মানুষ। তিনি হেদায়াতের আলো দেখাতেন সে হিসেবে তাঁকে হেদায়াতের নূর বলা যাবে। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে তিনি নূরের তৈরি এ আকীদাহ রাখা যাবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই এর সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

إِنَّمَاۤ أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ

আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। [সহীহ বুখারী, হা/৪০১; সহীহ মুসলিম, হা/১৩০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬০২; মিশকাত, হা/১০১৬।]

৩৯
৩৭. রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সর্বত্র হাযির-নাযির মনে করা যাবে কি?
রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সর্বত্র হাযির-নযির মনে করা যাবে না। জ্ঞানের দিক থেকে সর্বত্র হাযির-নাযির থাকার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ব্যাপারে এরূপ ধারণা করা শিরক হবে।

৪০
৩৮. নবী-রাসূলগণ কি গায়েব জানতেন?
না, তারা গায়েব জানতেন না। গায়েব জানা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার বৈশিষ্ট্য। গায়েবের যেসব বিষয় আল্লাহ তা‘আলা ওহীর মাধ্যমে নবী-রাসূলদের কাছে প্রকাশ করেছেন, তারা কেবল ততটুকুই জানতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِه ۤ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ فَإِنَّهٗ يَسْلُكُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِه رَصَدًا﴾

‘‘তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরন্ত তিনি অদৃশ্যের বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন।’’ (সূরা জ্বিন : ২৬-২৭)

সমস্ত গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছে, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। (সূরা আনআম- ৫৯)

৪১
৩৯. রাসূলুল্লাহ ﷺ কি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ?
হ্যাঁ- রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। কেননা তিনি ছিলেন অন্যান্য মানুষের মতই একজন মরণশীল সত্তা। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ إِنَّكَ مَيِّتٌ وَّإِنَّهُمْ مَّيِّتُوْنَ﴾

নিশ্চয় তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল। (সূরা যুমার- ৩০)

৪২
৪০. মুজিযা কাকে বলে ?
اَلْمُعْجِزَةُ (আল মু‘জিযাতু) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, অক্ষমকারী অলৌকিক নিদর্শন। নবী ও রাসূলগণ তাদের নবুওয়াতের দাবি প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব অলৌকিক কর্ম ও নিদর্শন প্রদর্শন করেছিলেন, সেগুলোকে মুজিযা বলা হয়। মুজিযা কেবল নবী-রাসূগণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নবী-রাসূল ছাড়া অন্য কারো মধ্যে মুজিযা প্রকাশ পায় না। যেমন হাতের লাঠি সাপে পরিণত হওয়া, বগল থেকে হাত বের করলে হাত সাদা হওয়া, আল্লাহর ইচ্ছায় মৃতকে জীবিত করা, মুহাম্মাদ ﷺ এর কুরআনপ্রাপ্ত হওয়া ইত্যাদি।

৪৩
৪১. কুরআনে উল্লেখিত ২৫ জন নবীর নাম কী কী?
১. আদম (আঃ)

২. নূহ (আঃ)

৩. ইদ্রীস (আঃ)

৪. হুদ (আঃ)

৫. সালেহ (আঃ)

৬. ইবরাহীম (আঃ)

৭. লূত (আঃ)

৮. ইসমাঈল (আঃ)

৯. ইসহাক (আঃ)

১০. ইয়াকূব (আঃ)

১১. ইউসুফ (আঃ)

১২. আইয়ূব (আঃ)

১৩. শুয়াইব (আঃ)

১৪-১৫. মূসা ও হারূন (আঃ)

১৬. ইউনুস (আঃ)

১৭. দাউদ (আঃ)

১৮. সুলায়মান (আঃ)

১৯. ইলয়াস (আঃ)

২০. আল ইয়াসা (আঃ)

২১. যুলকিফল (আঃ)

২২. যাকারিয়া (আঃ)

২৩. ইয়াহিয়া (আঃ)

২৪. ঈসা (আঃ)

২৫. বিশ্বনবী মুহাম্মাদ(সাঃ)

৪৪
কিতাবের প্রতি ঈমান ৪২. কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান বলতে কী বুঝায়?
আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে পথহারা মানুষকে পথ দেখানোর জন্য রাসূলগণের উপর ধর্মগ্রন্থ বা কিতাব নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলগণের উপর যে সকল কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সেগুলোর প্রতি ঈমান আনতে হবে। যে ব্যক্তি তার কিতাবসমূহ অথবা তাঁর কোন কিছুকে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে।

৪৫
৪৩. আসমানী কিতাব কয়টি ও কী কী?
বড় বড় আসমানী কিতাব সর্বমোট চারটি। সেগুলো হলো-

(১) তাওরাত- এটি মূসা (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল।

(২) যাবুর- এটি দাউদ (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল।

(৩) ইঞ্জিল- এটি ঈসা (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল।

(৪) কুরআন- এটি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ ﷺ এর অবতীর্ণ হয়েছিল।

উপরোক্ত চারটি আসমানী কিতাব ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নবীর উপর কিছু কিছু ছহীফা (ছোট পুস্তিকা) অবতীর্ণ হয়েছিল।

৪৬
৪৪. পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের হুকুম কি বর্তমান যুগেও প্রযোজ্য?
না- বরং বর্তমানে কেবল কুরআনের হুকুম বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। কেননা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই পূর্ববর্তী সকল কিতাবের হুকুম রহিত হয়ে গেছে।

৪৭
৪৫. বর্তমানে কুরআনের কোন বিধানকে অকার্যকর মনে করা যাবে কি?
কুরআনের বিধিবিধান কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের জন্যই প্রযোজ্য। যুগের আবর্তনে অথবা অন্য কোন কারণে এর কোন হুকুম অকার্যকর অথবা পরিবর্তন করা বৈধ নয়। যারা এরূপ মনে করবে তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং কাফির হয়ে যাবে।

৪৮
৪৬. কুরআন কি সৃষ্টিজগতের অন্তর্ভুক্ত?
না- কুরআন সৃষ্টিজগতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটি হচ্ছে আল্লাহর কালাম বা বাণী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ﴾

আল্লাহ নাযিল করেছেন সর্বোত্তম বাণী। (সূরা যুমার- ২৩)

৪৯
৪৭. কুরআনকে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব কে গ্রহণ করেছেন?
আল্লাহ তা‘আলা নিজেই এই দায়িতব গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন,

﴿اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحَافِظُوْنَ﴾

আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর- ৯)

৫০
৪৮. কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য কী কী?
মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য।

মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য।

মানুষকে পথভ্রষ্টতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।

মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

বিভিন্ন মতভেদের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য।

পাপের পথ পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য।

আখেরাতের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করার জন্য।

সৎকর্মীদেরকে সুসংবাদ দেয়া ও পাপীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য।

পরকালে মানুষের অভিযোগ তোলার পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্য।

৫১
৪৯. (ক) কুরআন মাজীদে কয়টি সূরা আছে?
(খ) সূরা সমূহের নামের অর্থ কী?

(গ) কোন্ সূরায় কয়টি আয়াত আছে?

(ঘ) কোন্ সূরায় কয়টি রুকূ আছে?

(ঙ) কোন্ সূরা কোথায় নাযিল হয়েছে?

(চ) নাযিলের ধারা অনুযায়ী কোন্ সূরা কত নাম্বার?

এ ৬টি প্রশ্নের উত্তর নিচের ছকে দেয়া হলো:

ক্র

মিক

সূরার

নাম

নামের

অর্থ

আয়াত সংখ্যা

রুকূ সংখ্যা

নাযিল স্থান

নাযিল ক্রম

০১

ফাতিহা

ভূমিকা

০৭

০১

মাক্কী

৪৮

০২

বাকারা

গাভী

২৮৬

৪০

মাদানী

৯১

০৩

আলে ইমরান

ইমরানের পরিবার

২০০

২০

মাদানী

৯৭

০৪

নিসা

নারী

১৭৬

২৪

মাদানী

১০০

০৫

মায়িদা

দস্তরখান

১২০

১৬

মাদানী

১১৪

০৬

আন‘আম

গৃহপালিত পশু

১৬৫

২০

মাক্কী

৮৯

০৭

আ‘রাফ

উঁচু স্থান

২০৬

২৪

মাক্কী

৮৭

০৮

আনফাল

গনীমত

৭৫

১০

মাদানী

৯৫

০৯

তাওবা

অনুশোচনা

১২৯

১৬

মাদানী

১১৩

১০

ইউনুস

ইউনুস নবী

১০৯

১১

মাক্কী

৮৪

১১

হূদ

হূদ নবী

১২৩

১০

মাক্কী

৭৫

ক্র

মিক

সূরার

নাম

নামের

অর্থ

আয়াত সংখ্যা

রুকূ সংখ্যা

নাযিল স্থান

নাযিল ক্রম

১২

ইউসুফ

ইউসুফ নবী

১১১

১২

মাক্কী

৭৭

১৩

রা‘দ

বিদ্যুৎ চমক

৪৩



মাক্কী

৯০

১৪

ইবরাহীম

ইবরাহীম নবী

৫২



মাক্কী

৭৬

১৫

হিজ্র

স্থান

৯৯



মাক্কী

৫৭

১৬

নাহ্ল

মৌমাছি

১২৮

১৬

মাক্কী

৭৩

১৭

বানী ইসরাঈল

জাতি

১১১

১২

মাক্কী

৬৭

১৮

ক্বাহ্ফ

গুহা

১১০

১২

মাক্কী

৬৯

১৯

মারইয়াম

মারইয়াম

৯৮



মাক্কী

৫৮

২০

ত্বা-হা

ত্বা-হা

১৩৫



মাক্কী

৫৫

২১

আম্বিয়া

নবী গণ

১১২



মাক্কী

৬৫

২২

হজ্জ

হজ্জ

৭৮

১০

মাক্কী

১০৭

২৩

মুমিনূন

বিশ্বাসীরা

১১৮



মাক্কী

৬৪

২৪

নূর

আলো

৬৪



মাদানী

১০৫

২৫

ফুরকান

পার্থক্যকারী

৭৭



মাক্কী

৬৬

২৬

শুআরা

কবি গণ

২২৭

১১

মাক্কী

৫৬

২৭

নাম্ল

পিঁপড়া

৯৩



মাক্কী

৬৮

২৮

কাসাস

কাহিনী

৮৮



মাক্কী

৭৯

২৯

আনকাবূত

মাকড়সা

৬৯



মাক্কী

৮১

৩০

রূম

দেশের নাম

৬০



মাক্কী

৭৪

৩১

লুক্বমান

ব্যক্তির নাম

৩৪



মাক্কী

৮২

৩২

আলিফ লাম সাজদাহ

সাজদাহ

৩০



মাক্কী

৭০

৩৩

আহযাব

বাহিনী

৭৩



মাদানী

১০৩

৩৪

সাবা

শহরের নাম

৫৪



মাক্কী

৮৫

৩৫

ফা-ত্বির

সৃষ্টিকর্তা

৪৫



মাক্কী

৮৬

৩৬

ইয়াসিন

ইয়াসিন

৮৩



মাক্কী

৬০

ক্র

মিক

সূরার

নাম

নামের

অর্থ

আয়াত সংখ্যা

রুকূ সংখ্যা

নাযিল স্থান

নাযিল ক্রম

৩৭

সাফ্ফাত

সারিবদ্ধ

১৮২



মাক্কী

৫০

৩৮

সোয়াদ

সোয়াদ

৮৮



মাক্কী

৫৯

৩৯

যুমার

দলেদলে

৭৫



মাক্কী

৮০

৪০

মুমিন/ গাফির

বিশ্বাসী/ক্ষমাকারী

৮৫



মাক্কী

৭৮

৪১

হা-মীম সাজদা

হা-মীম সাজদাহ

৫৪



মাক্কী

৭১

৪২

শূরা

পরামর্শ

৫৩



মাক্কী

৮৩

৪৩

যুখরুফ

সোনাদানা

১১২



মাক্কী

৬১

৪৪

দুখান

ধোয়া

৫৯



মাক্কী

৫৩

৪৫

জাসিয়া

নতজানু

৩৭



মাক্কী

৭২

৪৬

আহ্কাফ

স্থান

৩৫



মাক্কী

৮৮

৪৭

মুহাম্মাদ

মুহাম্মাদ নবী

৩৮



মাদানী

৯৮

৪৮

ফাত্হ

বিজয়

২৯



মাদানী

১০৮

৪৯

হুজরাত

ঘর

১৮



মাদানী

১১২

৫০

কাফ

কাফ

৪৫



মাক্কী

৫৪

৫১

যারিয়াত

নিক্ষেপকারী বাতাস

৬০



মাক্কী

৩৯

৫২

তূর

তূর পাহাড়

৪৯



মাক্কী

৪০

৫৩

নাজম

তারকা

৬২



মাক্কী

২৮

৫৪

কামার

চাঁদ

৫৫



মাক্কী

৪৯

৫৫

আর রহমান

দয়াময়

৭৮



মাদানী

৪৩

৫৬

ওয়াকি‘আহ

ঘটনা

৯৬



মাক্কী

৪১

৫৭

হাদীদ

লোহা

২৯



মাদানী

৯৯

৫৮

মুজাদালাহ

বিবাদ

২২



মাদানী

১০৬

৫৯

হাশর

সমবেত হওয়া

১৪



মাদানী

১০২

৬০

মুমতাহিনা

পরিক্ষা

১৩



মাদানী

১১০

৬১

সাফ্

কাতার

১৪



মাদানী

৯৮

৬২

জুমুআ’হ

একত্র হওয়া

১১



মাদানী

৯৪

ক্র

মিক

সূরার

নাম

নামের

অর্থ

আয়াত সংখ্যা

রুকূ সংখ্যা

নাযিল স্থান

নাযিল ক্রম

৬৩

মুনাফিকুন

মুনাফিক

১১



মাদানী

১০৪

৬৪

তাগাবুন

ক্ষতি

১৮



মাদানী

৯৩

৬৫

তালাক

বিচ্ছেদ

১২



মাদানী

১০১

৬৬

তাহরীম

নিষিদ্ধ করা

১২



মাদানী

১০৯

৬৭

মূল্ক

রাজত্ব

৩০



মাক্কী

৬৩

৬৮

কালাম

কলম

৫২



মাক্কী

১৮

৬৯

হাক্কাহ

সত্য ঘটনা

৫২



মাক্কী

৩৮

৭০

মা‘আরিজ

সিঁড়ি

৪৪



মাক্কী

৪২

৭১

নূহ

নূহ নবী

২৮



মাক্কী

৫১

৭২

জ্বীন

জ্বীন জাতি

২৮



মাক্কী

৬২

৭৩

মুয্যাম্মিল

কম্বলজড়িত

২০



মাক্কী

২৩

৭৪

মুদ্দাস্সির

কম্বলজড়িত

৫৬



মাক্কী



৭৫

কিয়ামাহ

কিয়ামত

৪০



মাক্কী

৩৬

৭৬

দাহ্র/ ইনসান

যুগ/ মানুষ

৩১



মাক্কী

৬২

৭৭

মুরসালাত

প্রেরিত

৫০



মাক্কী

৩২

৭৮

নাবা

সংবাদ

৪০



মাক্কী

৩৩

৭৯

নাযি আ‘ত

প্রচেষ্টাকারী

৪৬



মাক্কী

৩১

৮০

আ’বাসা

ভ্রু ভাজ করা

৪২



মাক্কী

১৭

৮১

তাক্ভীর

অন্ধকার

২৯



মাক্কী

২৭

৮২

ইনফিতার

খসেপড়া

১৯



মাক্কী

২৯

৮৩

মুতাফ্ফিফীন

পরিমাপকারী

৩৬



মাক্কী

৩৭

৮৪

ইনশিকাক

ফেঁটে যাওয়া

২৫



মাক্কী

২৬

৮৫

বুরুজ

কক্ষপথ

২২



মাক্কী

২২

৮৬

তারিক

তারকা

১৭



মাক্কী

১৫

৮৭

আ’লা

উঁচু

১৯



মাক্কী

১৯

৮৮

গাশিয়াহ

ঢেকে ফেলা

২৬



মাক্কী

৩৪

ক্র

মিক

সূরার

নাম

নামের

অর্থ

আয়াত সংখ্যা

রুকূ সংখ্যা

নাযিল স্থান

নাযিল ক্রম

৮৯

ফজর

ভোর

৩০



মাক্কী

৩৫

৯০

বালাদ

শহর

২০



মাক্কী

১১

৯১

শামস

সূর্য

১৫



মাক্কী

১৬

৯২

লায়ল

রাত্র

২১



মাক্কী

১০

৯৩

দ্বোহা

প্রভাত

১১



মাক্কী

১৩

৯৪

ইনশিরাহ

খোলে দেয়া





মাক্কী

১২

৯৫

ত্বীন

ডুমুর





মাক্কী

২০

৯৬

আলাক

ঝুলন্ত

১৯



মাক্কী



৯৭

কদর

মর্যাদা





মাক্কী

১৪

৯৮

বাইয়্যিনাহ

প্রমান





মাক্কী

৯২

৯৯

যিলযাল

ভুমিকম্প





মাক্কী

২৫

১০০

আদিয়াত

খুরের আঘাত

১২



মাক্কী

৩০

১০১

কারি’আ

আঘাতকারী

১১



মাক্কী

২৪

১০২

তাকাসূর

আধিক্য





মাক্কী



১০৩

আছর

যুগ





মাক্কী

২১

১০৪

হুমাযাহ

নিন্দাকারী





মাক্কী



১০৫

ফীল

হাতী





মাক্কী



১০৬

কুরাইশ

বংশের নাম





মাক্কী



১০৭

মাউন

ছোটখাট জিনিস





মাক্কী



১০৮

কাউসার

জান্নাতের নহর





মাক্কী



১০৯

কাফিরুন

কাফির দল





মাক্কী

৪৫

১১০

নাসর

সাহায্য করা





মাক্কী

১১১

১১১

লাহাব

আবু লাহাব





মাক্কী



১১২

এখলাস

একনিষ্টতা





মাক্কী

৪৪

১১৩

ফালাক

ঊষার/প্রভাত





মাক্কী

৪৬

১১৪

নাস

মানুষ





মাক্কী

৪৭

৫২
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান ৫০. ফেরেশতা কারা?
ফেরেশতারা হচ্ছেন আল্লাহর বিশেষ বানদা। তারা সর্বদা আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকেন। তারা কখনো আল্লাহর অবাধ্য হন না। ফেরেশতা নুরের তৈরি। ফেরেশতাদের সংখ্যা অসংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ অবগত নয়।

৫৩
৫১. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনার অর্থ কী?
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হলো, তাদের অস্তিত্ব স্বীকার করা, তারা আল্লাহর শ্রেষ্ট জীব, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাদেরকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাদেরকে সেই সম্মান দেয়া। তারা আল্লাহর বান্দা বা দাস। তারা আল্লাহর নির্দেশের বাইরে কোন কাজ করেন না।

৫৪
৫২. ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য কী?
১. আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে শক্তিশালী ও বড় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।

২. আল্লাহ ফেরেশতাদের জন্য দুই, তিন ও চার বা ততোধিক ডানা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

৩. তাদের পানাহারের প্রয়োজন হয় না। তারা বিবাহ করেন না, তাদের সন্তানও হয় না।

৪. ফেরেশতারা অন্তরবিশিষ্ট ও জ্ঞানী।

৫. তাদের নিজস্ব আকৃতি ছাড়াও অন্য আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে।

৬. তারা অক্লান্তভাবে আল্লাহর ইবাদাতে সর্বদা রত থাকেন।

৫৫
৫৩. ফেরেশতাদের কাজ কী?
ফেরেশতাগণ প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বে নিয়োজিত। যেমন- কেউ কেউ তাসবীহ পাঠে ব্যস্ত, কেউ কেউ দুনিয়ায় কোন হুকুম বাস্তবায়নে ব্যস্ত, কেউ কেউ সৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ইত্যাদি। তাদের প্রধান কয়েকজন হলেন।

১। জিবরাঈল (আঃ), যিনি আল্লাহর বাণী রাসূলগণের নিকট পৌঁছিয়ে থাকেন।

২। মীকাঈল (আঃ), যিনি আল্লাহর আদেশে জীবিকা বণ্টন করে থাকেন।

৩। মালাকুল মাওত (আঃ), যিনি জীবের রূহ কবজ করার কাজে নিয়োজিত আছেন।

৪। ইসরাফীল (আঃ), আল্লাহর আদেশ পেলে তিনি শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। আর তখনই কিয়ামত আরম্ভ হবে।

৬। মুনকার-নাকীর : কবরে মৃত ব্যক্তিকে তার মাবুদ, রাসূল ও ধর্ম সম্বন্ধে প্রশ্ন করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

৫। কিরামান কাতিবীন : মানুষের দৈনন্দিন ভালো-মন্দ কার্য লিপিবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَاِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِيْنَ كِرَامًا كَاتِبِيْنَ يَعْلَمُوْنَ مَا تَفْعَلُوْنَ﴾

নিশ্চয় তোমাদের ওপর নিযুক্ত রয়েছে সংরক্ষকগণ এবং সম্মানিত লেখকগণ। তোমরা যা কর তারা সে সম্পর্কে অবগত আছেন।

(সূরা ইনফিতার : ১০-১২)

৫৬
আখিরাত ৫৪. আখিরাত কী?
আখিরাত হচ্ছে পরকালের জীবন, যা মৃত্যুর পর থেকে শুরু হয়। কিয়ামতের দিন আদম (আঃ) থেকে শুরু করে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে আগমন করেছিল সকলকে তাদের কবর থেকে পুনরূত্থান করা হবে। তখন বিচার কায়েম হবে। এরপর কেউ জান্নাতে আরামে বসবাস করবে আবার কেউ জাহান্নামে আযাব ভোগ করতে থাকবে।

৫৭
৫৫. কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে?
কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে- এ ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো জ্ঞান নেই। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার কতিপয় আলামতের কথা বর্ণনা করে গেছেন। কিয়ামতের পূর্বে সেগুলো প্রকাশিত হবে।

৫৮
৫৬. কিয়ামতের ছোট ছোট ৫০টি আলামত কী কী?
১. শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর নবুওয়াত লাভ করা।

২. চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া।

৩. মুহাম্মাদ ﷺ এর মৃত্যু।

৪. ধনসম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া।

৫. ফেতনার বিস্তার ঘটা।

৬. নবুওয়াতের মিথ্যা দাবিদার প্রকাশ পাওয়া।

৭. আমানতের খিয়ানত বৃদ্ধি পাওয়া।

৮. ধর্মীয় জ্ঞান কমে যাওয়া এবং মূর্খতা বৃদ্ধি পাওয়া।

৯. ব্যভিচার বৃদ্ধি পাওয়া।

১০. সুদের বিস্তার লাভ করা।

১১. বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া।

১২. মদ্যপানের বিস্তার লাভ করা।

১৩. মসজিদ সুসজ্জিত করা এবং তা নিয়ে গর্ব করা।

১৪. অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করা।

১৫. দাসী কর্তৃক নিজ প্রভুকে জন্ম দেয়া।

১৬. হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পাওয়া।

১৭. সময় দ্রুত চলে যাওয়া।

১৮. হাট-বাজারগুলো পরস্পর নিকটবর্তী হওয়া।

১৯. শিরকের দ্রুত বিস্তার লাভ করা।

২০. প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার ও অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাওয়া।

২১. বৃদ্ধ লোকদের কৃত্রিম যৌবন প্রদর্শন করা।

২২. কৃপণতা বৃদ্ধি পাওয়া।

২৩. ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়া।

২৪. ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়া।

২৫. ঘন ঘন ভূমিধস ও বজ্রপাত হওয়া।

২৬. সৎ লোকদের মৃত্যুবরণ।

২৭. নীচু শ্রেণির লোকদের নেতৃত্ব লাভ করা।

২৮. কেবল পরিচিতদেরকে সালাম প্রদান করা।

২৯. অল্প জ্ঞানী ব্যক্তিদের থেকে ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণ করা।

৩০. উলঙ্গ মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া।

৩১. মুমিনের স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করা।

৩২. লেখালেখির অধিক বিস্তার লাভ করা।

৩৩. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নতের প্রতি অনীহা প্রকাশ করা।

৩৪. নতুন চাঁদ বড় আকারে দেখা যাওয়া।

৩৫. মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করা।

৩৬. মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।

৩৭. মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া।

৩৮. হঠাৎ মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়া।

৩৯. পরস্পর শক্রতা ও সম্পর্কহীনতা বৃদ্ধি পাওয়া।

৪০. সম্পদ বেড়ে যাওয়া।

৪১. ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাওয়া।

৪২. ফোরাত নদীর তলদেশে স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাওয়া।

৪৩. হিংস্র পশু ও জড় পদার্থ কর্তৃক মানুষের সাথে কথা বলা।

৪৪. নিজের মৃত্যু কামনা করা।

৪৫. রোমানদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ।

৪৬. ইয়াহুদিদের সাথে যুদ্ধ।

৪৭. জনৈক কাহতানীর আবির্ভাব।

৪৮. মদিনা তার খারাপ লোকদেরকে বের করে দেবে।

৪৯. এমন বায়ু যার ফলে সকল মুমিন মৃত্যুবরণ করবে।

৫০. কাবা ঘরের অবমাননা ও তা ধ্বংস হওয়া।

৫৯
৫৭. কিয়ামতের বড় বড় ৯টি আলামত কী কী?
ইমাম মাহদীর আগমন।

মাসীহ দাজ্জালের আগমন।

ঈসা (আ.) এর অবতরণ।

ইয়াজূজ-মাজূজের আগমন।

তিনটি বড় বড় ভূমিধস।

ব্যাপক আকারে ধোঁয়া বের হওয়া।

পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া।

দাববাতুল আরয (একটি প্রাণী) বের হওয়া।

বড় আকারের অগ্নিপাত।

৬০
৫৮. কিয়ামত দিবস কীভাবে সংঘটিত হবে?
ইসরাফিল (আঃ) কর্তৃক শিঙ্গায় ফুঁৎকার দানের মাধ্যমে কিয়ামত দিবস সংঘটিত হবে। প্রথম ফুঁৎকারের সাথে সাথে সমস্ত মানুষ হতভম্ব হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ফুঁৎকারে সাথে সাথে সমস্ত আকাশ-জমিন এবং এর মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তৃতীয় ফুঁৎকারের সাথে সাথে সমস্ত মানুষ নিজ নিজ কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَنُفِخَ فِى الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِى الْاَرْضِ اِلَّا مَنْ شَآءَ اللهُؕ ثُمَّ نُفِخَ فِيْهِ اُخْرٰى فَاِذَا هُمْ قِيَامٌ يَّنْظُرُوْنَ﴾

শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচছা করবেন তারা ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে। (সূরা যুমার- ৬৮)

৬১
৫৯. কিয়ামতের দিন মানুষ আমলনামা কীভাবে পাবে?
কিয়ামতের দিন মানুষের আমলনামা প্রদানের ধরণ হবে দুটি।

(১) যাদের আমলনামা সৎকর্ম সম্বলিত হবে এবং তা জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে, তাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে প্রদান করা হবে। ফলে তারা আনন্দিত হবে।

(২) যাদের আমলনামা সৎকর্ম সম্বলিত হবে না তাদের আমলনামা তাদের পেছন দিক থেকে দেয়া হবে। ফলে তারা খুবই আফসোস করবে।

৬২
৬০. কিয়ামতের দিন কীভাবে দাড়িপাল্লা প্রতিষ্ঠিত হবে?
কিয়ামতের দিন আমলনামা মাপার জন্য দাড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। সেখানে প্রতিটি মানুষের ভালো-মনদ সকল প্রকার আমল ন্যায়সঙ্গতভাবে ওজন করা হবে। এমতাবস্থায় কারো উপর বিনদু পরিমাণ অবিচার করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًاؕ وَاِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ اَتَيْنَا بِهَاؕ وَكَفٰى بِنَا حَاسِبِيْنَ﴾

আর আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয়, তবুও তা উপস্থিত করব; হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। (সূরা আম্বিয়া- ৪৭)

৬৩
৬১. সিরাত কী?
اَلصِّرَاطُ (আস-সিরাত) এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে রাস্তা বা পথ। আখিরাতের ক্ষেত্রে সিরাত বলতে ঐ রাস্তা বা পথকে বুঝানো হয়, যা জাহান্নামের উপর স্থাপিত হবে। সকলকেই এটি অতিক্রম করে জান্নাতে যেতে হবে। এর দুই পার্শ্বে থাকবে সা’দান গাছের কাঁটার ন্যায় অনেকগুলো কাঁটা। অপরাধীরা যখনই এই পুল অতিক্রম করতে যাবে, তখনই ঐ কাঁটাগুলো তাদেরকে আটকে ফেলবে এবং তারা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।

৬৪
৬২. মানুষ কীভাবে পুলসিরাত অতিক্রম করবে?
মানুষ তাদের নিজ নিজ আমলনামা অনুযায়ী এই পুল অতিক্রম করতে পারবে। যার আমলনামা যতবেশি নেকী সমৃদ্ধ হবে, সে ততদ্রুত গতিতে এই পুল অতিক্রম করতে পারবে। ফলে কেউ কেউ দৃষ্টির গতিতে, আবার কেউ কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ কেউ শক্তিশালী ঘোড়ার গতিতে, কেউ কেউ উষ্ট্রের গতিতে, কেউ কেউ দৌড়ে, কেউ কেউ হেটে হেটে, কেউ কেউ আগুনের মধ্যে আহত হয়ে এই পুল অতিক্রম করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৫৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭০৩।]

৬৫
৬৩. হাউযে কাউসার কী?
হাউযে কাউসার হচ্ছে জান্নাতের একটি জলাশয়ের নাম। এর আয়তন হবে ফিলিস্তিন থেকে ইয়ামানের সান‘আ পর্যন্ত দূরত্বের ন্যায়। আল্লাহ তা‘আলা এটি নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে দান করেছেন। এর পানি হবে বরফের চেয়ে বেশি শুভ্র এবং মধু মিশ্রিত দুগ্ধের চেয়েও বেশি মিষ্ট। সেখানে থাকবে পানকারীর জন্য আকাশের তারকার ন্যায় অসংখ্য পানপাত্র। সেখান থেকে যে ব্যক্তি একবার পানি পান করবে, সে আর পিপাসার্ত হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৫/২৪০৬; সহীহ মুসলিম, হা/১/২১৮]

৬৬
৬৪. কারা হাউযে কাউসারের পানি থেকে বঞ্চিত হবে?
দুনিয়াতে যারা বিদআতী আমল করবে, তারা হাউযে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না, বরং তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৮৭৩; জামেউস সগীর, হা/৪২৩৩।]

৬৭
৬৫. কিয়ামতের দিন উম্মতে মুহাম্মদীকে কীভাবে চেনা যাবে?
কিয়ামতের দিন উম্মতে মুহাম্মদীকে অযুর চিহ্ন দ্বারা চেনা যাবে, যা অন্য কোন উম্মতের মধ্যে থাকবে না। দুনিয়াতে উম্মতে মুহাম্মদীগণ অযু করার সময় যেসব অঙ্গ ধৌত করত, কিয়ামতের দিন সেসব অঙ্গ উদ্ভাসিত থাকবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১/২১৭;]

৬৮
৬৬. শাফায়াত কাকে বলে?
اَلشَّفَاعَةُ (আশ-শাফা‘আত) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সুপারিশ করা, ইসলামী পরিভাষায় কিয়ামতের দিন আল্লাহর অনুমতিক্রমে নির্দিষ্ট কতিপয় বানদা কর্তৃক অপর কিছু বানদার কল্যাণের জন্য আবেদন করাকেই শাফায়াত বলা হয়।

৬৯
৬৭. শাফায়াতের ব্যাপারে কোন শর্ত আছে কী?
হ্যাঁ- শাফায়াতের ব্যাপারে শর্ত আছে-

১. আল্লাহ তা‘আলা যাকে শাফায়াতের অনুমতি দেবেন সে ছাড়া অন্য কেউ সুপারিশ করতে পারবে না।

২. আল্লাহ তা‘আলা যার ব্যাপারে সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন তাকে ছাড়া অন্য কারো ব্যাপারে সুপারিশ করা যাবে না।

৭০
৬৮. জান্নাত ও জাহান্নাম কী?
জান্নাত ও জাহান্নাম হচ্ছে মানুষের চূড়ান্ত ঠিকানা। কিয়ামতের দিন বিচারকার্য শেষ হওয়ার পর মানুষ তাদের কর্মফল অনুযায়ী হয়তো জান্নাতে প্রবেশ করবে, অন্যথায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

৭১
৬৯. জান্নাতের চিত্র কিরূপ?
জান্নাত হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামতের ভান্ডার- যা কোন চোখ দেখে নাই, কোন কান শুনে নাই এবং কোন অন্তর কল্পনাও করে নাই। সেখানে থাকবে স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত উঁচু উঁচু প্রসাদ, বিভিন্ন রং- বেরঙ্গের গাছপালা, ফলমূল, নদ-নদী, ঝর্ণাধারা, বিলাসবহুল তৈজসপত্র, দৃষ্টিজোড়ানো স্ত্রীগণ ইত্যাদি। বিলাসবহুল জীবনধারণের সকল ধরনের ব্যবস্থাই সেখানে থাকবে।

৭২
কবর ৭০. আলামে বারযাখ কাকে বলে?
মৃত্যু পর থেকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়কালকে আলমে বারযাখ বলা হয়। অন্যকথায় এটিকে কবরের জগৎও বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنْ وَّرَآئِهِمْ بَرْزَخٌ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ﴾

তাদের সম্মুখে থাকবে বার্যাখ, উত্থান দিবস পর্যন্ত। (সূরা মু’মিনূন- ১০০)

৭৩
৭১. কবরের শান্তি অথবা আযাব কি সত্য?
হ্যাঁ- কবরের শাস্তি অথবা আযাবের বিষয়টি সত্য। মানুষকে কবরে শায়িত করার পর পরই মুনকার ও নাকির নামক দু’জন ফেরেশতা তার কবরে এসে তাকে বসায়। তারপর তাকে তিনটি প্রশ্ন করে। তখন সে যদি ঐ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারে, তাহলে তার উপর শান্তি বর্ষিত হতে থাকে এবং তার কবরের সাথে জান্নাতের সংযোগ করে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে সে যদি ঐ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার উপর আযাব নামতে থাকে এবং তার কবরের সাথে জাহান্নামের সংযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়।

৭৪
৭২. কবরে মুনকার-নাকির ফেরেশতাদ্বয় কী কী প্রশ্ন করবেন?
কবরে ফেরেশতাদ্বয় তিনটি প্রশ্ন করবে। তা হলো :

(১) তোমার রব কে?

(২) তোমার দ্বীন কী ছিল?

(৩) নবী সম্পর্কে বলা হবে এই ব্যক্তিটি কে- যিনি তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিলেন?

৭৫
তাকদীর ৭৩. তাকদীর কাকে বলে?
اَلتَّقْدِيْرُ (আত-তাকদীর) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পরিমাপ করা, নির্ধারণ করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় প্রতিটি সৃষ্টির জন্য আল্লাহ তা‘আলা যা লিখে রেখেছেন তাকে তাকদীর বলে।

আল্লাহ তা‘আলা হলেন সর্বজ্ঞানী। তিনি সৃষ্টির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমস্ত বিষয় সম্পর্কেই জানেন। তিনি এই জ্ঞানের ভিত্তিতেই তাকদীর লিপিবদ্ধ করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্টিজগতে যা কিছু সংঘটিত হবে আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু নির্দিষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اَلَمْ تَعْلَمْ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَآءِ وَالْاَ رْضِ اِنَّ ذٰلِكَ فِيْ كِتَابٍ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ﴾

তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা জানেন। এ সবই আছে এক কিতাবে; নিশ্চয় এটা আল্লাহর নিকট সহজ। (সূরা হাজ্জ- ৭০)

৭৬
৭৪. বান্দা কি তা নিজ কর্মের জন্য দায়ী?
হ্যাঁ-অবশ্যই বান্দা তার নিজ কর্মের জন্য দায়ী। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বন্দাদেরকে তাদের কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং কর্মশক্তিও দান করেছেন। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَوْ اَرَادُوا الْخُرُوْجَ لَاَعَدُّوْا لَهٗ عُدَّةً﴾

যদি তারা (যুদ্ধের জন্য) বের হতে চাইত তবে অবশ্যই তারা এটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করত। (সূরা তাওবা- ৪৬)

৭৭
বিবিধ ৭৫. সাহাবাগণের প্রতি আমরা কিরূপ ধারণা পোষণ করব?
সাহাবাগণের প্রতি আমরা এরূপ ধারণা রাখব যে, তারা সকলেই ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথী। তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে ভালোবাসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ যা কিছু বলেছেন, করেছেন এবং মৌন সম্মতি দিয়েছেন, সাহাবাগণ সবকিছুই বর্ণনা করে গেছেন। কোন সাহাবির প্রতি আমরা খারাপ ধারণা পোষণ করব না।

৭৮
৭৬. খুলাফায়ে রাশেদীনের প্রতি আমরা কিরূপ ধারণা পোষণ করব?
খুলাফায়ে রাশেদীন ছিলেন উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রেখে যাওয়া হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের মধ্যে প্রথম খলিফা ছিলেন আবু বকর (রাঃ), দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন উমর (রাঃ), তৃতীয় খলিফা ছিলেন উসমান (রাঃ) এবং চতুর্থ খলিফা ছিলেন আলী (রাঃ)।

৭৯
৭৭. ওলী কারা, তাদের প্রতি আমরা কিরূপ ধারণা পোষণ করব?
اَلْوَلِى (আল-ওয়ালী) শব্দের বহুবচন হচ্ছে اَوْلِيَاءُ (আওলিয়া), যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বন্ধু বা অভিভাবক। পরিভাষায় ওলী বলা হয় ঐ সমস্ত ব্যক্তিকে, যারা তাদের তাকওয়া ও সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।

যেহেতু ওলী-আওলিয়াগণ আল্লাহকে ভালোবাসেন তাই আমরা তাদেরকে সম্মান করব, তাদেরকে ভালোবাসব এবং তাদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকব। তবে এসব ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করা বৈধ নয়। যেমন- তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, তাদের কবরকে তীর্থস্থান বানানো, তাদের নামে মান্নত করা, তাদের কবরে গিয়ে সিজদা করা ইত্যাদি। কেননা এগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

৮০
কুফর ৭৮. কুফর কাকে বলে?
‘কুফর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- গোপন করা, অবিশ্বাস করা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর পক্ষ হতে আগত যেকোন বিধানকে যেকোনভাবে অস্বীকার করাকেই কুফর বলা হয়- চাই সেটা মুখে উচচারণের মাধ্যমে হোক অথবা কর্মের মাধ্যমে হোক।

৮১
৭৯. কুফর কত প্রকার ও কী কী?
কুফর সাধারণত দুই প্রকার-

(১) বড় কুফর তথা যেসব কুফরীর কারণে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। যেমন- ইসলামের কোন রূকনকে অস্বীকার করা, আল্লাহর একতববাদকে অস্বীকার করা ইত্যাদি।

(২) ছোট কুফর তথা যেসব কুফরীর কারণে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না; তবে কবীরা গোনাহে পতিত হয়। যেমন- যেকোন ধরনের সাধারণ গোনাহের কর্মে লিপ্ত হওয়া।

৮২
৮০. বড় কুফর কত প্রকার?
বড় কুফর ৫ প্রকার?

كُفْرُ التَّكْذِيْبِ (মিথ্যার কুফর) : কুরআন বা হাদীসকে বা এগুলোর কোন অংশকে অস্বীকার করা।

كُفْرُ الْعِنَادِ (অস্বীকার ও অহঙ্কারের কুফর) : এটা হলো সত্যকে জেনে-শুনে অহংকারবশত তার অনুসরণ না করা।

كُفْرُ الشَّكِّ (সন্দেহজনিত কুফর) : কিয়ামতের দিন সম্বন্ধে সন্দেহ বা মিথ্যা ধারণা পোষণ করা।

كُفْرُ الْاِعْرَاضِ (মুখ ফিরিয়ে নেয়া বা বিমুখতার কুফর) : ইসলাম যা দাবি করে তাকে গুরুত্ব না দিয়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।

كُفْرُ النِّفَاقِ (নিফাকীর কুফর) : তা হল মুখে ইসলামকে প্রকাশ করা এবং অন্তরে ও কাজে তার বিরোধিতা করা।

৮৩
৮১. মুরতাদ কাকে বলে? মুরতাদের হুকুম কী?
‘মুরতাদ’ শব্দটি আরবী ‘রিদ্দাহ’ শব্দ থেকে নির্গত। যার অর্থ ‘ফিরে যাওয়া, ‘ঘুরে যাওয়া’, ‘ধর্ম ত্যাগ করা’ ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায় মুরতাদ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হয়ে যায় অথবা অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করে। ইসলামে মুরতাদের হুকুম হলো: তাকে হত্যা করা।

৮৪
৮২. দারুল ইসলাম ও দারুল কুফর কী?
যে দেশে ইসলামী শাসন চলে, ইসলামই যে দেশে জীবনবিধানরূপে স্বীকৃতি লাভ করে এবং আল্লাহর শরীয়ত যে দেশে কার্যকর হয়, সেটা হচ্ছে দারুল ইসলাম। কিন্তু যে দেশে ইসলামী শাসন নেই এবং যেখানে ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়িত নয়, সে দেশ মুসলিম ও জিম্মি উভয়ের জন্যেই দারুল কুফর বা দারুল হরব।

৮৫
৮৩. কুফর ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য কী?
তাৎপর্যের দিক থেকে কুফর ও শিরকের মান প্রায় একই। তবে মূল পার্থক্য হচ্ছে, অস্বীকার করা এবং না করার মধ্যে। কুফর দ্বারা যে গুনাহ সংঘটিত হয় সেটা অস্বীকার করার মাধ্যমে হয়। পক্ষান্তরে শিরকের মাধ্যমে যে গুনাহ সংঘটিত সেটা স্বীকার করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনের কারণে হয়।

৮৬
শিরক ৮৪. শিরক কাকে বলে?
শিরক শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, অংশীদার স্থাপন করা, সহযোগী বানানো ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোন বিষয়ে তাঁর সমকক্ষ স্থাপন করা। যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করা, কুবরানী করা, তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, মান্নত করা, তাঁর প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা ব্যতীত অন্য কোন জীবনব্যবস্থাকে মেনে চলা ইত্যাদি। তাওহীদের বিপরিত হচ্ছে শিরক।

৮৭
৮৫. শিরকের ভয়াবহতা কেমন?
শিরক একটি বড় ধরনের জুলুম।

শিরক করে মারা গেলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন না।

শিরক করলে জান্নাত হারাম এবং জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়।

শিরক করলে সব আমল বাতিল হয়ে যায়।

৮৮
৮৬. শিরক কত প্রকার ও কী কী?
স্তর হিসেবে শিরক সাধারণত দুই প্রকার। যেমন-

(১) اَلشِّرْكُ الْاَكْبَرِ (আশ্শিরকুল আকবার) বড় শিরক :

এটা হলো, আল্লাহর সাথে কাউকে সমকক্ষ স্থির করে আল্লাহর মতো তার ইবাদাত করা ও আনুগত্য করা। এ প্রকার শিরক যে কাউকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।

(২) اَلشِّرْكُ الْاَصْغَرِ (আশ্শিরকুল আসগার) ছোট শিরক :

এটা হচ্ছে, আমল ও মুখের কথায় গায়রুল্লাহকে আল্লাহর সাথে শরীক করা। এ শিরক অনেক বড় কবীরা গোনাহ, কিন্তু এটি ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। এটি মুখের কথার দ্বারা হতে পারে আবার কর্মের দ্বারাও সংঘটিত হতে পারে। যেমন- রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোন আমল করা।

আকৃতিগত দিক থেকে শিরক ২ প্রকার :

(১) اَلشِّرْكُ الْجَلِيْ (আশ্শিরকুল জালী) প্রকাশ্য শিরক :

এটা হচ্ছে প্রকাশ্যভাবে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। যেমন- মূর্তিপূজা করা, চনদ্র অথবা সূর্যের ইবাদাত করা ইত্যাদি। এটি সর্বদা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

(২) اَلشِّرْكُ الْخَفِيْ (আশ্শিরকুল খফী) গোপন শিরক :

এটা হচ্ছে, হৃদয়ের এমন গোপন ইচ্ছা ও মুখের এমন অসতর্কমূলক কথা, যার মাধ্যমে আল্লাহকেও গায়রুল্লাহর সমান করা হয়। এটি কখনো বড় শিরক আবার কখনো ছোট শিরক হতে পারে।

৮৯
৮৭. সমাজে কি কি শিরক প্রচলিত রয়েছে?
সমাজে অনেক শিরক প্রচলিত রয়েছে। কয়েকটি হলো :

তাবিজ-কবজ ব্যবহার করা।

বালা মুসীবত দূর করার উদ্দেশ্যে রিং, তাগা (সূতা) ইত্যাদি পরিধান করা।

শূভ-অশুভ লক্ষণ বা সংকেত গ্রহণ করা।

‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন’ বলা।

পীর-দরবেশ, ওলী-আউলিয়া এবং কবরে শায়িতদের নিকট দোয়া-প্রার্থনা করা।

কবর-মাযার-দরগায় মান্নত করা।

মাযারে, ওরসে পীর-ফকিরদের উদ্দেশ্যে যবেহ করা, দান করা।

গাইরুল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।

আল্লাহ ব্যতীত বাপ-দাদা, দরবেশ কিংবা অন্যকিছুর নামে কসম করা।

নবীকে আল্লাহর নূরের তৈরী মনে করা।

তাগুতের কাছে বিচার ফয়সালা চাওয়া।

ভাগ্য গণনা করা।

৯০
৮৮. লুকমান তার ছেলেকে কি কি উপদেশ দিয়েছিলেন?
শিরক না করা।

আকীদাহ বিশুদ্ধ করা।

সালাত প্রতিষ্ঠা করা।

সৎকাজের আদেশ করা।

অসৎকাজ হতে বাধা প্রদান করা।

ধৈর্য অবলম্বন করা।

মানুষকে অবহেলা না করা।

অহংকার না করা।

চালচলনে ভারসাম্য রক্ষা করা।

কথাবার্তায় ভারসাম্য রক্ষা করা।

৯১
নিফাক ৮৯. নিফাক কাকে বলে?
নিফাক শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, লুকিয়ে রাখা, কপটতা করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশ করে অন্তরে কুফরী লুকিয়ে রাখাকে নিফাক বলা হয়। আর যে ব্যক্তি এরূপ কর্ম করে থাকে, তাকে মুনাফিক বলা হয়।

৯২
৯০. নিফাক কত প্রকার ও কী কী?
নিফাক সাধারণত দুই প্রকার-

(১) আকীদাগত নিফাক তথা মুখে কালিমা উচ্চারণ করা এবং অন্তরে কুফরী লুকিয়ে রাখা।

(২) কর্মগত নিফাক তথা আন্তরিকভাবে কালিমা উচ্চারণ করা এবং ঈমানী দুর্বলতার কারণে কোন নিফাকী কর্মকান্ড সংঘটিত হয়ে যাওয়া।

৯৩
৯১. মুনাফিকীর আলামত কয়টি ও কী কী?
মুনাফিকীর আলামত ৪টি। যেমন-

(১) আমানতের খিয়ানত করা।

(২) মিথ্যা কথা বলা।

(৩) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।

(৪) ঝগড়া করার সময় গালাগালি করা।

৯৪
কবীরা গুনাহ ৯২. কবীরা গুনাহ কাকে বলে?
কবিরা গুনাহ হচ্ছে ঐ সমস্ত গুনাহ, যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বা তাঁর রাসূল ﷺ ধমকি দিয়েছেন অথবা এই গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে লানত করেছেন অথবা কোন শাস্তির ঘোষণা করেছেন। কেউ কেউ বলেন, কবিরা গুনাহ হচ্ছে, ঐ সমস্ত গুনাহ, যেগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে অকাট্য দলীল প্রমাণ রয়েছে।

৯৫
৯৩. কবীরা গুনাহগুলো কী কী?
এখানে ৭০টি কবীরা গুনাহের উল্লেখ করা হলো:

১. আল্লাহর সাথে শরীক করা।

২. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা।

৩. যাদু করা।

৪. সালাত পরিত্যাগ করা।

৫. যাকাত না দেওয়া।

৬. বিনা ওযরে রমাযানের সিয়াম ভঙ্গ করা।

৭. হজ্জ করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা।

৮. মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া।

৯. আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যাগ করা।

১০. যিনা/ব্যভিচার করা।

১১. সমকামিতা করা।

১২. সুদ খাওয়া।

১৩. ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা এবং তার উপর জুলুম করা।

১৪. মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি মিথ্যারোপ করা।

১৫. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা।

১৬. ইমাম বা নেতা কর্তৃক প্রজাদের ধোঁকা দেয়া এবং তাদের উপর জুলুম করা।

১৭. অহংকার ও বড়াই করা।

১৮. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।

১৯. মদ্যপান করা।

২০. জুয়া খেলা।

২১. সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।

২২. গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা।

২৩. চুরি করা।

২৪. ডাকাতি এবং ছিনতাই করা।

২৫. মিথ্যা কসম খাওয়া।

২৬. জুলুম বা অত্যাচার।

২৭. অন্যায়ভাবে কর বা টোল আদায় করা।

২৮. হারাম খাওয়া, তা যেভাবেই হোক।

২৯. আত্মহত্যা করা।

৩০. মিথ্যা বলা।

৩১. অন্যায়ভাবে বিচার করা।

৩২. ঘুষ গ্রহণ করা।

৩৩. পোশাক-পরিচ্ছদে নারী ও পুরুষের মাঝে সাদৃশ্য সৃষ্টি করা।

৩৪. দাইয়ুস হওয়া (নিজ পরিবারের নারীদের বেপর্দায় রাখা)।

৩৫. হালাল করার উদ্দেশ্যে বিবাহকারী এবং যার জন্য বিবাহ করা হয়।

৩৬. প্রস্রাব থেকে পবিত্র না থাকা।

৩৭. রিয়া (লোক দেখানো কাজ)।

৩৮. পার্থিব উদ্দেশ্যে ইল্ম অর্জন এবং ইল্ম গোপন করা।

৩৯. খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা।

৪০. উপকার করে খোঁটা দেয়া।

৪১. তাকদিরকে অবিশ্বাস করা।

৪২. কান পেতে অন্য লোকের গোপন কথা শোনা।

৪৩. চোখলখোরী করা।

৪৪. লানত করা বা অভিশাপ দেয়া।

৪৫. ওয়াদা করে তা রক্ষা না করা।

৪৬. গণক বা জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করা।

৪৭. স্বামীর অবাধ্য হওয়া।

৪৮. প্রতিকৃতি বা চিত্রাংকন করা।

৪৯. বিপদে অধৈর্য হওয়া।

৫০. সীমালংঘন করা।

৫১. দুর্বল, দাস-দাসী, স্ত্রী এবং পশুর প্রতি কঠোর হওয়া।

৫২. প্রতিবেশীকে কষ্ট ও গালি দেয়া।

৫৩. মুসলিমদের কষ্ট ও গালি দেয়া।

৫৪. আল্লাহ্র বানদাদেরকে কষ্ট দেয়া।

৫৫. লুঙ্গি, জামা ইত্যাদি পোশাক পায়ের টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে দেয়া।

৫৬. পুরুষের স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় পরিধান করা।

৫৭. ক্রীতদাসের পলায়ন করা।

৫৮. আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করা।

৫৯. নিজের পিতা ছাড়া অন্যকে জেনে-শুনে পিতা বলে পরিচয় দেয়া।

৬০. ঝগড়া ও বিতন্ডা করা।

৬১. প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অন্যকে না দেয়া।

৬২. মাপে এবং ওজনে কম দেয়া।

৬৩. আল্লাহর দেয়া অবকাশকে নিরাপদ মনে করা।

৬৪. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া।

৬৫. বিনা ওজরে জামা’আত তরক করে একা একা সালাত আদায় করা।

৬৬. ওজর ছাড়া জুমু‘আ ছেড়ে দেয়া।

৬৭. ওসীয়ত দ্বারা কারো ক্ষতি করা।

৬৮. প্রতারণা এবং ধোঁকাবাজি করা।

৬৯. কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষত্রুটি অনুসন্ধান করা এবং তা ফাঁস করে দেয়া।

৭০. সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে গালমন্দ করা। [কিতাবুল কাবায়ের, ইমাম সামুসুদ্দীন আয যাহাবী।]

৯৬
৯৪. গীবত কাকে বলে?
আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ উপস্থিত সাহাবাগণকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা কি জানো গীবত কী? সাহাবাগণ উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূল ﷺ বললেন, ‘‘গীবত হল তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে। জিজ্ঞেস করা হল, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে এটাও কি গীবত হবে? রাসূল ﷺ বললেন, তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে সেটাই গীবত। আর তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে সেটা হবে তোহমাত। অর্থাৎ মিথ্যা অপবাদ।’’ [মুসলিম হা: ৬৭৫৮, তিরমিযী হা: ১৮৮৪, মেশকাত হা: ৪৬১৭।]

৯৭
৯৫. যবান দ্বারা কয়টি গুনাহ হয় ও কী কী?
যবান দ্বারা ১৭টি গুনাহ হয়

মিথ্যা কথা বলা।

হাসি-ঠাট্টা করা।

অশ্লীল কথা-বার্তা বলা।

কাউকে গালি-গালাজ করা।

পরের দোষচর্চা বা গীবত করা।

কারো উপর অপবাদ দেয়া।

চোগলখোরি করা।

কারো গোপন বিষয় প্রকাশ করা।

দু’মুখী নীতি গ্রহণ করা।

পরস্পর ঝগড়া করা।

অতিরিক্ত কথা বলা।

হারাম আলোচনায় লিপ্ত হওয়া।

কাউকে অভিশাপ দেয়া।

কারো সামনে তার প্রশংসা করা।

মানুষকে হাসানোর জন্য কথা বলা।

অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

খোঁটা দেয়া।

৯৮
৯৬. তওবা কুলের শর্তাবলী কী কী?
গুনাহ বর্জন করা।

অতীতের গুনাহের জন্য আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে অনুতপ্ত হওয়া।

ভবিষ্যতে আর উক্ত পাপ না করার সুদৃঢ় অঙ্গীকার করা।

যেসব ফরজ ও ওয়াজিবের কাজা আদায় করা ওয়াজিব সেগুলোর কাজা আদায় করা।

বান্দার হক মীমাংসা করা। প্রাপক জীবিত থাকলে তাকে তার হক ফেরত দিতে হবে অথবা মাফ চেয়ে নিতে হবে। প্রাপক জীবিত না থাকলে তার ওয়ারিসদেরকে তা ফেরত দিতে হবে।

কাউকে হাতে বা মুখে কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নেয়া।

নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত রাখা।

৯৯
ইবাদাত ৯৭. ইবাদাত কাকে বলে?
اَلْعِبَادَةُ (আল ইবাদাত) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, দাসত্ব করা, অনুগত হওয়া, নত হওয়া ও অনুসরণ করা। এর পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো, প্রকাশ্য ও গোপন যেসব কথা ও কাজ আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট হন তাকে ইবাদাত বলা হয়।

কোন ইবাদাত রয়েছে, যা অন্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। যেমন সহীহ আকীদাহ-বিশ্বাস অবলম্বন করা, ঈমান আনা ইত্যাদি। আবার কোন ইবাদাত রয়েছে, যা শরীর দ্বারা সম্পাদিত হয় যেমন সালাত, সিয়াম। আবার কোনটি অর্থ দ্বারা সম্পাদিত হয় যেমন যাকাত, আবার কোনটি শরীর ও অর্থ উভয়ের সমন্বয়ে সম্পাদিত হয় যেমন হজ্জ।

১০০
৯৮. ইবাদাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্তাবলি কী কী?
ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। তা হচ্ছে-

১. اَ لْاِيْمَانُ (আল ঈমান) তথা ঈমানের সকল বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

২. اَ لْاِخْلَاصُ (আল ইখলাস) তথা ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা।

৩. اِتِّبَاعُ السُّنُّةِ (ইত্তিবাউস সুন্নাহ) তথা রাসূলুল্লাহ ﷺ যে শরীয়াত নিয়ে এসেছে তার অনুসরণের মাধ্যমে ইবাদাত করা।

১০১
৯৯. ইবাদাতের গুরুত্ব কতটুকু
ইবাদাতের গুরুত্ব অনেক। আল্লাহ তা‘আলা মানুষ ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদাতের উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ﴾

আমি জিন ও মানুষকে আমার ইবাদাত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।

(সূরা যারিয়াত- ৫৬)

১০২
১০০. মানুষকে আল্লাহ কেন সৃষ্টি করেছেন?
আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)

আমল সুন্দর করার জন্য। (সূরা মুলক- ১, ২)

মানুষের কল্যাণ সাধন করার জন্য। (সূরা আলে ইমরান- ১১০)

খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার জন্য। (সূরা সোয়াদ-২৬)

১০৩
১০১.কোন্ কোন্ কাজ করলে ইবাদাত এবং সওয়াব হয়?
১. ফরয ইবাদাতসমূহ নিয়মিত পালন করা।

২. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা।

৩. রমাযান মাসে সিয়াম পালন করা।

৪. হজ্জ পালন করা।

৫. জিহাদে অর্থ ব্যয় করা।

৬. অধিকমাত্রায় নফল ইবাদাত করা।

৭. কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা।

৮. রাসূলের প্রতি ভালবাসা রাখা।

৯. সবকাজে রাসূলের অনুসরণ করা।

১০. কুরআন পাঠ করা ও গবেষণা করা।

১১. আল্লাহর পথে দান করা।

৩০. গোপনে সদকা করা।

১৬. ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়া।

১৯. অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা।

২০. চাকর/কর্মচারীর প্রতি সহানুভূতি দেখানো।

২১. কন্যাসন্তান লালনপালন করা।

২২. এতীম লালনপালন করা।

৩৩. এতীমের মাথায় হাত বুলানো।

২৩. মেহমানদারী করা।

২৪. রোগীর সেবা করা।

২৫. বয়স্কদের সম্মান করা।

২৮. জানাযার সালাতে শরীক হওয়া।

২৯. মসজিদ নির্মাণ করা।

৩১. রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।

৩২. পরিবারের জন্য খরচ করা।

৩৪. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করা।

৩৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।

৩৬. মাতা-পিতার সাথে সদাচরণ করা।

৩৮. জীবের প্রতি দয়া করা।

৪০. মানুষের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করা।

৪১. খুশী মনে অন্যের সাথে সাক্ষাত করা।

৪২. উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া।

৪৩. লজ্জা বজায় রাখা।

৪৪. ভাল কাজের দিকে মানুষকে আহবান করা।

৪৫. মানুষের দোষ ঢেকে রাখা।

৪৬. পশু-পাখির প্রতি দয়া দেখানো।

৪৭. ভিক্ষা হতে বিরত থাকা।

৪৮. মুসলমানদের উপর আরোপিত কষ্ট দূর করা।

৪৯. ভাল কাজের সুপারিশ করা।

৫০. হাসিমুখে কথা বলা।

৫১. অন্য ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু‘আ করা।

৫২. মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করা।

৫৩. সামর্থবান হলে বিবাহ করা।

৫৪. স্বামীর হক আদায় করা।

৫৫. স্ত্রীর হক আদায় করা।

৫৬. সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়া।

৫৭. হালাল উপায়ে উপার্জন করা

৫৮. ধৈর্যধারণ করা।

৫৯. তওবা-ইস্তেগফার করা।

৬০. যবানের হেফাযত করা।

৬৫. চোখের হেফাযত করা।

৬৬. নবীর উপর দরূদ পাঠ করা।

৬৮. সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করা।

৭০. ক্ষেত্রবিশেষ যিকির ও দু‘আ।

৭১. সৎ লোকদের সঙ্গে থাকা।

৭২. আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা।

১০৪
সুন্নাত ১০২. সুন্নাহ কাকে বলে?
সুন্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, اَلطَّرِيْقُ পথ, রাস্তা, নির্দেশনা, নিয়ম ইত্যাদি।

পরিভাষায় সুন্নাহ হচ্ছে সেই মূল আদর্শ, যা আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ব-মানবের জন্য নাযিল করেছেন এবং যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে তাঁর বাস্তব জীবনে অনুসরণ করেছেন। কেননা নবী করীম ﷺ যা বাস্তবভাবে অনুসরণ করেছেন, তার উৎস হলো ওহী। ওহীর সূত্রে নাযিল হওয়া আদর্শই রাসূলুল্লাহ ﷺ কাজে ও কর্মে অনুসরণ করেছেন। এটাই হচ্ছে সুন্নাহ।

১০৫
১০৩. ফিতরাত (স্বভাবজাত সুন্নাহ) কী কী?
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত :

১. গোঁফ খাটো করা,

২. দাড়ি লম্বা করা,

৩. মিসওয়াক করা,

৪. পানি দিয়ে নাক ঝাড়া,

৫. নখ কাটা,

৬. আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া,

৭. বগলের পশম উপড়ে ফেলা,

৮. নাভির নীচের পশম মুন্ডন করা

৯. ইস্তিঞ্জা করা।

যাকারিয়্যা বলেন, হাদীসের বর্ণনাকারী মুস‘আব বলেছেন, দশমটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। [সহীহ মুসলিম, হা/৬২৭; আবু দাউদ, হা/৫৩; তিরমিযী, হা/২৭৫৭; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৩।]

১০৬
১০৪. সকল ভালো কাজ কোন দিক হতে আরম্ভ করা সুন্নাহ?
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সকল কাজ ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরিধান করা, মাথার চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রেও। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৪; মুসলিম হা/৬৪০।]

১০৭
১০৫. ঘুমানোর আদাব/সুন্নাহ কী কী?
সাধারণ বিছানায় শয়ন করা।

রাতে ঘুমাতে দেরি না করা।

ছুঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বিতর আদায় করে নেয়া।

বাতি নিভানো, দরজা বন্ধ করা ও পানপাত্রের মুখ বন্ধ করা।

বেষ্টনী বা দেয়াল ছাড়া ছাদে শয়ন না করা।

হাত-মুখ পরিষ্কার করা।

ওজু অবস্থায় শোয়া।

ডান কাতে শোয়া।

ডান হাত গালের নিচে রাখা।

গোসল ফরয হলে ওযু করে শয়ন করা।

বিছানা ঝাড়া এবং বিসমিল্লাহ বলা।

সতর আবৃত রাখা।

সন্তানদের বয়স দশ বছর হলে বিছানা আলাদা করা।

ওসীয়তনামা লিখে রাখা।

উপুড় হয়ে পেটের উপর ভর করে শয়ন না করা।

তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ত করে শয়ন করা।

তাওবা করে শয়ন করা।

আল্লাহর যিকির অবস্থায় শয়ন করা।

১০৮
১০৬. ঘুমানোর সময় কোন্ কোন্ যিকির ও দু‘আ সুন্নাহ?
আল্লাহু আকবার ৩৪ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার এবং সুবহানাল্লাহ ৩৩।

আয়াতুল কুরসী পাঠ করা।

সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা।

সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস পাঠ করা।

সূরা মূলক পড়া।

ঘুমানোর সময় ৫টি দু‘আ পড়া।

اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَ أَحْيَا

اَللّٰهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ

بِاسْمِكَ رَبِّيْ وَضَعْتُ جَنْبِيْ وَبِكَ أَرْفَعُه ، اِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِيْ فَارْحَمْهَا،وَاِنْ أَرْسَلْتَهَا، فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِه عِبَادَكَ الصَّالِحِيْنَ

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَكَفَانَا وَاٰوَانَا فَكَمْ مِمَّنْ لَا كَافِىَ لَهٗ وَلَا مُئْوِىَ

اَللّٰهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِيْ إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِيْ إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِيْ إِلَيْكَ ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِيْ إلَيْكَ ، رَغْبَةً وَّرَهْبَةً إِلَيْكَ ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ ، اٰمَنْتُ بِكِتابِكَ الَّذِيْ أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِيْ أَرْسَلْتَ

৭. পার্শ্ব পরিবর্তনের সময় এ দু‘আ পড়া :

لَا إلٰهَ إِلَّا اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيْزُ الْغَفَّارُ

৮. নিদ্রাবস্থায় ভয় পেলে এ দু‘আ পড়া :

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِه وَعِقَابِه وَشَرِّ عِبَادِه وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ

১০৯
১০৭. নিদ্রাবস্থায় খারাপ স্বপ্ন দেখলে কী করবে?
ঘুমের মধ্যে মন্দ স্বপ্ন দেখলে তিন বার বাম দিকে থুথু ফেলবে, তারপর তিন বার ‘‘আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্শাইত্বা-নির রাজীম’’ পাঠ করে পার্শ্ব পরিবর্তন করবে।

১১০
১০৮. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর সুন্নাহ কী কী?
ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দু‘আ পড়া।

সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকূ পড়া।

ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা।

ঘুম থেকে উঠে নাক ঝাড়া।

কব্জি পর্যন্ত তিন বার হাত ধৌত করা।

তারপর ওযু করা।

তাহাজ্জুদ পড়া।

১১১
১০৯. প্রস্রাব-পায়খানার আদাব/সুন্নাহ কী কী?
মানুষের আড়ালে যাওয়া।

চলাফেরার রাস্তায় ও ছায়াদার বা ফলদার গাছের নিচে মলমূত্র ত্যাগ না করা :

গোসলখানায় প্রস্রাব না করা।

আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব না করা।

প্রস্রাবের ছিটা থেকে সাবধান থাকা।

দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা।

গর্তের মধ্যে প্রস্রাব না করা।

প্রস্রাব-পায়খানারত অবস্থায় সালামের উত্তর না দেয়া।

প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা না বলা।

মলমূত্র ত্যাগ করার সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে না রাখা।

জমিনের কাছাকাছি যেয়ে কাপড় উঠানো।

টয়লেটে প্রবেশের সময় দু‘আ পড়া।

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

১৩. মলমূত্র ত্যাগ করে বের হওয়ার পর দু‘আ পড়া :

আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন প্রস্রাব-পায়খানা থেকে বের হতেন তখন বলতেন,

غُفْرَانَكَ

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। [তিরমিযী হা ৭; আবু দাউদ, হা/৩০; ইবনে মাজাহ, হা/৩০০; মিশকাত, হা/৩৫৯।]

১১২
১১০. ইস্তিঞ্জার আদাব/সুন্নাহ কী কী?
হাড্ডি ও গোবর দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা।

ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করা।

ইস্তিঞ্জার পর মাটি অথবা সাবান দ্বারা হাত ধৌত করা।

সন্দেহ দূর করার জন্য ওযুর পর পানি ছিটানো।

ঢিলা ব্যবহারে লজ্জা-শরম বজায় রাখা।

১১৩
১১১. গোসলের আদাব/সুন্নাহ কী কী?
পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করবে।

তারপর প্রথমে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে।

তারপর লজ্জাস্থান পরিষ্কার করবে।

অতঃপর দু’পা ব্যতীত সালাতের ওযুর ন্যায় ওযু করবে।

পরে মাথায় তিন বার পানি ঢেলে সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করবে, যাতে শরীরের কোন জায়গা শুকনো না থাকে।

সব শেষে দু’পা ধৌত করবে। পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে। মহিলাদের চুলের খোপা খোলা জরুরি নয়, বরং চুলের গোড়া ভিজালেই যথেষ্ট হবে।

১১৪
১১২. অযুর আদাব/সুন্নাহ কী কী?
প্রথমে মনে মনে অযুর নিয়ত করবে।

তারপর بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলবে।

তারপর দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে।

তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে এবং পরে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে নাক ঝাড়বে।

তারপর কপালের গোড়া থেকে দু’কানের লতি হয়ে থুতনীর নীচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করবে।

তারপর প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। এবং আঙ্গুলসমূহ খিলাল করবে।

৭. তারপর দু’হাতের ভিজা আঙ্গুলগুলো মাথার সম্মুখ হতে পেছনে ও পেছন হতে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করবে। একই সাথে ভিজা শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কানের ভেতরের অংশ ও বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পেছনের অংশ মাসাহ করবে।

তারপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করবে [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৯২; মিশকাত হা/৩৯৪।] এবং বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করবে।

১১৫
১১৩. আযান শুনলে করণীয় কী?
আযানের জবাব দেয়া।

আযানের জবাব দেওয়ার পর দরূদ পড়া।

আযানের দু‘আ পড়া।

اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ

৪. সালাতের প্রস্তুতি নেয়া।

১১৬
১১৪. মসজিদে যাওয়ার সুন্নাহ কী কী?
১. দেরী না করে আগে আগে মসজিদে যাওয়া।

২. মসজিদে যাওয়ার সময় এ দু‘আ পড়া।

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ فِىْ قَلْبِىْ نُوْرًا وَّ فِىْ بَصَرِىْ نُوْرًا وَّ فِىْ سَمْعِىْ نُوْرًا وَّ عَنْ يَّمِيْنِىْ نُورًا وَّ عَنْ يَّسَارِىْ نُوْرًا وَّ فَوْقِىْ نُوْرًا وَّ تَحْتِىْ نُوْرًا وَّ أَمَامِىْ نُوْرًا وَّ خَلْفِىْ نُوْرًا وَّ عَظِّمْ لِىْ نُوْرًا

৩. ধীরস্থিরভাবে মসজিদে যাওয়া।

৪. ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।

৬. বিসমিল্লাহ বলা।

৭. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করা।

৮. মসজিদে প্রবেশের দু‘আ পড়া।

اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

৯. প্রথমে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া।

১১৭
১১৫. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নাহ কী কী
১. বাম পা দিয়ে বের হওয়া।

৩. বিসমিল্লাহ বলা।

৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করা।

৫. মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ পাঠ করা।

৬. মসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ।

بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ الله اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ اَللّٰهُمَّ اَعْصِمْنِىْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

১১৮
১১৬. ঘরে প্রবেশ ও ঘর হতে বের হওয়ার সময় সুন্নাহ কী কী?
১. আল্লাহর নাম স্মরণ করা।

২. ঘরে প্রবেশের সময় এ দু‘আ পড়া।

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبَّنَا تَوَكَّلْنَا

৩. মেসওয়াক করা।

৪. সালাম দিয়ে প্রবেশ করা।

৫. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দু‘আ পড়া।

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ

১১৯
১১৭. খাওয়ার আদাব/সুন্নাহ কী কী?
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া।

দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া।

হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া।

খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা।

ডান হাতে খাওয়া।

নিজের সামনের দিক থেকে খাওয়া।

পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া।

খাবারে অন্যকে শরিক করা।

খাবার অপছন্দনীয় হলে দোষ বর্ণনা না করা।

খাওয়ার মধ্যে মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করা।

পরিমিত খাওয়া।

পাত্র মুছে খাওয়া ও পড়ে যাওয়া খাদ্য উঠিয়ে খাওয়া।

আঙ্গুল চেটে খাওয়া।

খাওয়ার পর হাত-মুখ ধুয়ে ফেলবে ও দু‘আ পড়বে।

খাওয়ার পর দু‘আ পড়া।

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ ، وَلَا مُوَدَّعٍ ، وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا

কেউ দাওয়াত খাওয়ালে তার জন্য দু‘আ করা।

اَللّٰهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِىْ وَاسْقِ مَنْ سَقَانِىْ

১২০
১১৮. পান করার আদাব/সুন্নাহ কী কী?
পানীয় দ্রব্য পান করার ক্ষেত্রে নিচের সুন্নাতসমূহ লক্ষণীয় :

পানীয় দ্রব্যে ফুঁ না দেয়া ও গ্লাসের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়া।

পানীয়দ্রব্য তিন নিঃশ্বাসে পান করা।

পান করার শুরুতে بِسْمِ اللهِ (বিসমিল্লাহ) বলা।

পান করার শেষে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।

বসে পান করা। তবে প্রয়োজনে দাড়িয়ে পান করাও জায়েয আছে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬১৫।]

যমযমের পানি দাড়িয়ে পান করা।

দুধ পান করার পর কুলি করা উত্তম। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬০৯।]

দুধ পান করার পর বিশেষ দু‘আ পড়বে।

১২১
১১৯. পোশাক পরার আদাব/সুন্নাহ কী কী?
রেশমের পোশাক পরিধান না করা।

নারী-পুরুষ একে অপরের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে না।

প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য পোশাক পরবে না।

ভিন্ন ধর্মের পরিচয় বহনকারী পোশাক পরা যাবে না।

টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা যাবে না।

প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরা যাবে না।

টাইট পোশাক পরিধান করা যাবে না।

পোশাক বেশি চাকচিক্য হবে না।

অগোছালো ভঙ্গিতে পোষাক পরিধান করা অনুচিত।

পোশাক পরিষ্কার ও পরিপাটি হবে।

পোশাক সাধারণ থাকা ভালো।

শিশুদেরকেও শালীন পোশাক দেয়া জরুরি।

মহিলাদের পোশাক সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখবে।

মেয়েরা সুগন্ধি লাগিয়ে পুরুষদের মাঝে যাবে না।

পোশাক ডান দিক থেকে পরিধান করা।

পোশাক পরিধানের দু‘আ পড়া।

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ كَسَانِيْ هٰذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلَا قُوَّةَ

নতুন কাপড় পরিধানকারীকে দেখে পাঠ করার দু‘আ।

تُبْلِىْ وَيُخْلِفُ اللّٰهُ تَعَالٰى

১২২
১২০. মানুষের সাথে সাক্ষাতের আদাব/সুন্নাহ কী কী?
১. সালাম বিনিময় করা।

২. সালামের উত্তরে শব্দ বাড়িয়ে বলা।

৩. মুসাফাহা করা।

৪. মুচকি হাসি দিয়ে অবস্থা জানা।

৫. ভালো কথা বলা।

১২৩
১২১. এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের কয়টি হক রয়েছে?
এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৬টি হক রয়েছে :

১. সাক্ষাত হলে সালাম দেবে।

২. অসুস্থ হলে সেবা করবে।

৩. মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।

৪. দাওয়াত দিলে কবুল করবে।

৫. হাঁচিদাতার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে।

৬. নসীহত চাইলে উপদেশ দেবে। [ইবনে মাজাহ, হা/১৪৩৩; তিরমিযী, হা/২৭৩৬; শু‘আবুল ঈমান, হা/৮৭৫৩।]

১২৪
১২২. সফরের আদাব/সুন্নাহ কী কী?
মুসাফির বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দু‘আ পড়ে বের হবে।

সওয়ারীতে আরোহণ করার সময় প্রথমে এক বার বিসমিল্লাহ বলবে।

এরপর তিন বার আল্লাহু আকবার বলবে

তারপর নিচের দু‘আটি পাঠ করবে-

سُبْحَانَ الَّذِىْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ وَإِنَّا إِلٰى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ اَللّٰهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِىْ سَفَرِنَا هٰذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوٰى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضٰى اَللّٰهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هٰذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَه  ‐ اَللّٰهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِى السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِى الْاَهْلِ اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَاٰبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِى الْمَالِ وَالْاَهْلِ

কাউকে বিদায় দেয়ার সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দু‘আ পড়তেন।

أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوٰى وَغَفَرَ ذَنْۢبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ

১২৫
১২৩. কথা বলার আদাব/সুন্নাহ কী কী?
যেসব কথায় দ্বারা দ্বীন ও দুনিয়ার কোন লাভ নেই সেসব কথা না বলা।

দ্বীনের ব্যাপারে যাচাই বাছাই ও প্রমাণ ব্যতীত কোন কথা না বলা।

অতিরিক্ত কথা না বলা।

কারো কথার মাঝখানে কথা না বলা।

যেসব কথায় পাপ হয় সেসব কথা না বলা।

অহেতুক বিতর্কে না জড়ানো।

স্পষ্ট করে কথা বলা- যাতে অন্যরা সহজে বুঝতে পারে।

মধ্যম আওয়াজে কথা বলা।

গুরুত্বপূর্ণ কথা ৩ বার বলা।

১২৬
১২৪. মজলিস হতে উঠার সুন্নাহ কী?
মজলিস হতে উঠার সময় নিম্মোক্ত দু‘আটি পাঠ করা সুন্নাহ। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন বৈঠক থেকে উঠার সময় এ দু‘আ পড়লে ঐ বৈঠকের বেহুদা কথা-বার্তার কাফ্ফারা হয়ে যায়।

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ

১২৭
১২৫. মুমিনের বন্ধু কারা?
১. আল্লাহ তা‘আলা।

২. তাঁর রাসূল।

৩. ঈমানদারগণ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُوْنَ﴾

তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ঐসব মুমিনগণ; যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। (সূরা মায়েদা- ৫৫)

১২৮
১২৬. কাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না
ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না।

ইসলামকে নিয়ে তামাশাকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না।

কাফিরদেরকে বন্ধু বানানো যাবে না।

ইসলামের দুশমন যতই ঘনিষ্ট হোক তার সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না।

১২৯
আখলাক ১২৭. আখলাক কাকে বলে?
মানুষের আচার-আচরণ ও দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্য দিয়ে যে স্বভাব প্রকাশ পায় তাকে আখলাক বা চরিত্র বলে। আখলাক এমন এক ব্যাপক শব্দ যার দ্বারা একজন মানুষের জীবনের সমস্ত আচার-আচরণকে বুঝায়। মানবচরিত্রের দু’টি দিক রয়েছে, একটি কে আখলাকে হামীদাহ বলা হয়। অপরটিকে আখলাকে যামীমাহ বলা হয়।

মানুষের চরিত্রে যা কিছু ভালো ও উত্তম তা সবই আখলাকে হামীদার অন্তর্ভুক্ত। নবী-রাসূলগণ এসব চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।

আর মানব জীবনের যা কিছু নিন্দনীয় ও মন্দ তা সবই আখলাকে যামীমার অন্তর্ভুক্ত। আখলাকে যামীমাহ মানেই অসচ্চরিত্র, অন্যায় ও গুনাহের কাজ।

১৩০
১২৮. আখলাকে হামীদাহ বা সচ্চরিত্রের গুরুত্ব কতটুকু?
ভালো মানুষ মানেই সচ্চরিত্রের অধিকারী। ইসলামে সচ্চরিত্রের গুরুত্ব সর্বাধিক। চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়েও অধম।

সকল নবীই নিজ নিজ জাতিকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন। শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা পাঠিয়েছেন উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্য। আদর্শের প্রতীক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদর্শ অনুযায়ী জীবন গঠন করলে দুনিয়ার অঙ্গনে যেমন সম্মান পাওয়া যায় তেমনি আখেরাতেও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বিরাট পুরস্কার ও মর্যাদা পাওয়া যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মু’মিনের আমলের পাল্লায় কিয়ামতের দিন সবচেয়ে ভারী জিনিস হবে তার সচ্চরিত্র’’। [তিরমিযী হা/২০০২।]

পরিপূর্ণভাবে সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!

১৩১
১২৯. একজন মুমিনের আখলাক/চরিত্র কেমন হওয়া প্রয়োজন?
মুমিন বান্দা ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত নিয়মানুযায়ী পালন করবে।

পিতা-মাতার হক আদায় করবে।

আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখবে।

গরীব, দুঃখী, এতীম, মিসকীন ও অসহায়দের সাহায্য করবে।

প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করবে।

বড়দের সম্মান করবে এবং ছোটদের স্নেহ করবে।

প্রত্যেক কাজে সুন্নাতের অনুসরণ করবে।

সত্যের উপর অটল থাকবে।

হারাম কাজ বর্জন করবে, হালালের উপর অটল থাকবে।

জীব-জন্তুর প্রতি দয়া করবে। সাধ্যমত দান-খয়রাত করবে।

সাদাকায়ে জারিয়ার প্রতি গুরুত্ব দেবে।

ওয়াদা পালন করবে।

সঠিকভাবে লেনদেন করবে।

দ্বীনি ইল্ম অর্জন করে তদানুযায়ী আমল করবে।

সংসারে দ্বীনি পরিবেশ কায়েম রাখবে।

নারীরা পর্দা করবে এবং স্বামীর হুকুম পালন করবে।

স্বামীর খেদমত করবে এবং সন্তানের যত্ন নেবে।

আচরণে বিনয়ী হবে।

চাকুরী, ব্যবসা ও কর্মক্ষেত্রে দ্বীনি পরিবেশ বজায় রাখবে।

অধীনস্তদের প্রতি দয়াশীল হবে।

সুখে-দুঃখে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করবে।

দু’মুখো নীতি বর্জন করবে।

অপর ভাই-বোনের ইজ্জত রক্ষা করবে।

গুরুত্বপূর্ণ কাজে মশগুল থাকবে।

কথায় ও কাজে মিল রাখবে।

পরের দোষ কম দেখবে, নিজের দোষ বেশি দেখবে।

নিজের উপর অন্যায় করা হলেও সে ইনসাফ (ন্যায়বিচার) করবে।

কেউ ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দেবে।

ভাল কাজে আনন্দ পাবে, গুনাহ করলে ক্ষমা চাইবে।

নেক কাজে আগে থাকবে, পাপ থেকে দূরে থাকবে।

অভাব ও বিপদে পড়লেও শুকরিয়া আদায় করবে এবং ধৈর্যধারণ করবে।

শরীয়তের হুকুমের উপর অটল থাকবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।

হালাল রুজিতে সন্তুষ্ট থাকবে।

চোখ দু’টিকে হারাম জিনিস হতে ফিরিয়ে রাখবে।

লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে।

সত্য কথায় অটল থাকবে।

অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে।

ওয়াদা পালন করবে।

মেহমান ও প্রতিবেশীর সম্মান রক্ষা করবে।

১৩২
১৩০. রাসূল ﷺ এর চারিত্রিক গুণাবলী কেমন ছিল?
রাসূল ﷺ ছিলেন অধিক ধৈর্যশীল।

তিনি ছিলেন খুবই সাহসী।

আল্লাহ ছাড়া কাউকে তিনি ভয় করতেন না।

তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী।

কোন ব্যাপারে তিনি পক্ষপাতিত্ব করতেন না।

আপন-পর, ধনী-গরীব সবার সাথে তিনি সমান ব্যবহার করতেন।

তিনি ছিলেন ক্ষমাশীল, কেউ অন্যায় করলেও ক্ষমা করে দিতেন।

তিনি নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন।

কাপড়ে তালি লাগাতেন।

ঘরে থাকলে স্ত্রীদের সাথে কাজে শরীক হতেন।

সালাতের সময় উপস্থিত হলে মসজিদে চলে যেতেন।

তিনি বড়ই লজ্জাশীল ছিলেন।

কেউ হাদিয়া দিলে তিনি তা গ্রহণ করতেন।

মিসকিনের দাওয়াতও তিনি গ্রহণ করতেন।

নিজের কোন স্বার্থের জন্য কারও উপর রাগ করতেন না।

হালাল কোন জিনিস পরিত্যাগ করতেন না।

তিনি হেলান দিয়ে খেতেন না এবং টেবিলের উপরে রেখেও খেতেন না।

তিনি খাবার পর পায়ের নিচে হাত মুছতেন।

কেউ মারা গেলে জানাযায় শরীক হতেন।

তিনি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নরম স্বভাবের ছিলেন।

তিনি সুগন্ধি ভালবাসতেন।

মিসকিনদের সঙ্গে খাবার খেতেন, সম্মানিত লোকদেরকে তিনি সম্মান করতেন।

সকল আত্মীয়কে তিনি সমানভাবে দেখতেন ও তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতেন।

কারও উপর কঠোরতা করতেন না।

কেউ কোন দোষ করে ওজর পেশ করলে তিনি ক্ষমা করে দিতেন।

কোন কোন সময় সত্য কথা দ্বারা কৌতুক করতেন।

তিনি যা খেতেন ও পরতেন দাস-দাসীদেরকেও তাই দিতেন।

তিনি তাঁর সাহাবীদের বাগানে যাতায়াত করতেন।

তিনি কোন মিসকিনকে হেয়প্রতিপন্ন করতেন না।

আবার কোন বাদশাকেও ভয় করতেন না।

রাসূল ﷺ কোন মুমিনকে কখনো গালি দেননি।

কোন স্ত্রীকে বা খাদেমকে তিরস্কার বা লানত করেননি।

আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া তিনি কোনদিন কাউকে প্রহার করেননি।

আল্লাহর হক ছাড়া তিনি কারও কাছ থেকে প্রতিশোধ নেননি।

দু’টি কাজের মধ্যে এখতিয়ার দেয়া হলে তিনি সহজটি গ্রহণ করতেন।

গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে তিনি দূরে থাকতেন।

তিনি কর্কষভাষী ছিলেন না এবং কঠোর হৃদয়ের অধিকারীও ছিলেন না।

তিনি বাজারে গোলমালকারী ছিলেন না।

তিনি মন্দের বদলা মন্দ দিয়ে দিতেন না।

১৩৩
বিদআত ১৩১. বিদআত কাকে বলে?
বিদআত শব্দের অর্থ হচ্ছে, কোনরূপ পূর্ব নমুনা না দেখে এবং অন্য কিছুর অনুসরণ না করেই কোন কাজ নতুনভাবে সৃষ্টি করা। শরীয়াতের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে, শরীয়াতে নব আবিস্কৃত ঐ সকল ইবাদাত, যার কোন ভিত্তি নেই।

মোট কথা- যেসব আমল আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহ অথবা সাহাবাদের আমলের সাথে মিলবে না তা-ই বিদআত। [তাফসীরে কুরতুবীর ১১৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় দ্রষ্টব্য।]

১৩৪
১৩২. বিদআতের ভয়াবহ পরিণাম কী?
সকল বিদআতই গোমরাহী। আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।

عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ .. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ وَاِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَاِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَكُّلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّا

ইবরায বিন সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, তোমরা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয়ই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। সব বিদআতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণামই হচ্ছে জাহান্নাম। [সুনানে নাসাঈ: ১৫৭৮, সহীহ ইবনে খুযায়মা: ১৭৮৫।]

১৩৫
১৩৩. মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে শয়তানের পদক্ষেপসমূহ কী কী?
মানুষকে কুফরীতে লিপ্ত করা।

মানুষকে শিরকে লিপ্ত করা।

মানুষকে কবীরা গোনাহে লিপ্ত করা।

মানুষের সামনে সগীরা গোনাহকে হালকা করে তোলে ধরা।

মানুষকে কুসংস্কারে লিপ্ত করা।

মানুষকে বিদ‘আতে লিপ্ত করা।

১৩৬
১৩৪. সমাজে কি কি বিদআত প্রচলিত আছে?
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা।

কিয়াম করা।

ব্যক্তি বিশেষের রচিত দরূদ ও সালাম পাঠ করা।

খতমে কুরআনের অনুষ্ঠান করা।

ইসালে সওয়াবের নামে অনুষ্ঠান করা।

খতমে গাউছিয়া পাঠ করা।

খতমে তাসমিয়া পাঠ করা।

খতমে খাজেগান পাঠ করা।

খতমে ইউনুস পাঠ করা।

প্রচলিত নিয়মে ১০ই মুহাররাম তথা আশুরা পালন করা।

ফাতেহায়ে ইয়াজ দহম পালন করা।

আখেরী চাহার শোম্বা পালন করা।

শবে মেরাজ পালন করা।

শবে বরাত উদযাপন করা।

জানাযার সালাতের পর আবার মুনাজাত করা।

মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে খাবারের আয়োজন করা।

কবরের উপর গম্বুজ স্থাপন করা।

ওযু করার সময় বিশেষ দু‘আ পাঠ করা।

আযান দেয়ার পূর্বে কিছু পাঠ করা।

আযান দেয়ার সময় শাহাদাত আঙ্গুল চুম্বন করা।

আযানের পর হাত তুলে দু‘আ করা।

আযানের পর মাইকে দরূদ ও দু‘আ পাঠ করা।

আযানের দু‘আয় কোনো কিছু অতিরিক্ত করা।

কোনো আমলের জন্য মুখে নিয়ত পাঠ করা।

জায়নামাযের দু‘আ পাঠ করা।

জামাআতে সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করা।

১৩৭
সামাজিক ভুল-ভ্রান্তি ১৩৫. কোন্ কোন্ কাজ শুদ্ধ নয় অথচ সমাজে চালু আছে?
তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাত না পড়ে মসজিদে বসা শুদ্ধ নয়।

জামাআত শুরু হয়ে গেলে আর সুন্নাত পড়া শুদ্ধ নয়।

কারুকার্যপূর্ণ জায়নামায ব্যবহার করা শুদ্ধ নয়।

কাতার সোজা করতে না বলে সালাত শুরু করা শুদ্ধ নয়।

মুক্তাদী একজন হলে একটু পিছনে দাড়ানো শুদ্ধ নয়।

ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ না করা ঠিক নয়।

বিরতিহীনভাবে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ঠিক নয়।

কেউ জোরে আমীন বললে তাকে ঘৃণা করা ঠিক নয়।

সূরা পাঠ করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা শর্ত নয়।

সুযোগ থাকলে স্থান পরিবর্তন না করে সুন্নাত পড়া ঠিক নয়।

সুন্নাত-নফল থেকে ঘরকে খালি রাখা উচিত নয়।

মসজিদে দ্বিতীয় জামাআত না করা শুদ্ধ নয়।

দ্বিতীয় জামাআতে ইকামত না দেয়া শুদ্ধ নয়।

সালাতের দু‘আসমূহ মনে মনে পড়া শুদ্ধ নয়।

মাগরিবের আযানের সাথে সাথেই জামাআত শুরু করা শুদ্ধ নয়।

জামাআতে শরীক হওয়ার জন্য দৌড়ে যাওয়া শুদ্ধ নয়।

ইমামের অনুসরণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হওয়া শুদ্ধ নয়।

জুমু‘আর দ্বিতীয় আযান মিম্বরের পাশে দেয়া শুদ্ধ নয়।

মিম্বরে দাঁড়িয়ে সালাম না দিয়ে বসা শুদ্ধ নয়।

খুতবার সময় টাকা-পয়সা উঠানো শুদ্ধ নয়।

ঈদের সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত শুদ্ধ নয়।

জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা না পড়া ঠিক নয়।

কোনো উঁচু জিনিসের উপর সিজদা দেয়া শুদ্ধ নয়।

নারী-পুরুষের সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত পার্থক্য শুদ্ধ নয়।

মহিলাদেরকে জামাআতে শরীক হতে বাধা দেয়া ঠিক নয়।

মাথায় হাত দিয়ে দু‘আ পড়া শুদ্ধ নয়।

উমরি কাযা সালাত আদায় করার ভিত্তি নেই।

বিশ্ব ইজতেমাকে হজ্জের সাথে তুলনা করা শুদ্ধ নয়।

সহীহ কি না তা না জেনে হাদীস বর্ণনা করা শুদ্ধ নয়।

হাদীসের ৬টি কিতাবকে ছিহাহ সিত্তা বলা শুদ্ধ নয়। (কুতুস্সিত্তাহ বলবে)

প্রস্রাব করে ঢিলা নিয়ে জনসমক্ষে হাঁটা নির্লজ্জতা।

পায়ের টাখনোর নিচে কাপড় পরা হারাম।

সাত নামের তালিকা করে কুরবানী করা শুদ্ধ নয়।

কুরবানীর ভাগে আক্বীক্বা দেয়া শুদ্ধ নয়।

মুসলিমদের জন্য বিভিন্ন দিবস পালন করা ঠিক নয়।

শুধু ২৭ তরিখই শবে কদর মনে করা শুদ্ধ নয়।

কালেমার মর্মার্থ না বুঝে ঈমানদার দাবি করা ঠিক নয়।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে তাকবীর দেয়া ঠিক নয়।

সহীহ হাদীসের উপর আমলকারীকে তিরস্কার করা ঠিক নয়।

জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস- বলা সঠিক নয়।

ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া শুদ্ধ নয়।

উৎসব যার যার আনন্দ সবার- বলা শুদ্ধ নয়।

কুরআন পাঠের সাথে অন্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা শুদ্ধ নয়।

আগে সালাম না দিয়ে বক্তৃতা শুরু করা শুদ্ধ নয়।

১৩৮
১৩৬. জুমু‘আ সম্পর্কিত কী কী ভুল সমাজে চালু আছে?
মসজিদে জায়নামায বা মুসল্লা বিছিয়ে স্থান দখল করা।

খতীবের ‘লা ইলাহা....’ পাঠ শুনে সকলে উচ্চঃস্বরে ঐ কালেমা পাঠ করা।

নবীর নাম শুনে আঙ্গুলে চুম্বন করে তা চোখে লাগানো।

খুতবা বেশি লম্বা ও সালাত সংক্ষিপ্ত করা।

কাতার সোজা হওয়ার পূর্বেই সালাত শুরু করে দেয়া।

মসজিদের গেটে পানি হাতে দাঁড়িয়ে থেকে মুসল্লিদের ফুঁক নেয়া ও রোগ মুক্তির আশা করা।

১৩৯
১৩৭. হজ্জ ও উমরা সংক্রান্ত কী কী ভুল সমাজে চালু আছে?
মসজিদে আয়েশায় সওয়াবের উদ্দ্যেশে সালাত আদায় করতে যাওয়া।

হজ্জ বা ওমরাহকারীর মসজিদে হারামে প্রবেশ করে প্রথমে তাওয়াফ না করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া।

সালাতে হাত তোলার মত হাত তুলে হাজরে আসওয়াদের প্রতি ইশারা করা।

হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার জন্য ইমামের সালাম ফিরানোর পূর্বেই সালাম ফিরিয়ে পাথরের নিকট যাওয়া।

বরকতের আশায় যমযমের পানিতে টাকা পয়সা ভিজানো।

যমযমের পানি পান করার সময় কেবলার দিকে মুখ করা।

মুযদালিফায় রাত্রি জাগরণ না করা।

পাথর মারার সময় তাকবীরের সাথে অন্যান্য দু‘আ যেমন- ‘রাজমাল লিশশায়াত্বীন’ ইত্যাদি পাঠ করা।

পাথর মারার জন্য হাত বা আঙ্গুলের নির্দিষ্ট আকার বা ভঙ্গিমা করা।

পাথর মারার পর জুতা-স্যান্ডেল ইত্যাদি মারা।

যে হজ্জ আদায় করে আসে তাকে আলহাজ্জ বলা।

তাওয়াফে বিদার পর মসজিদ থেকে উল্টা পায়ে বের হওয়া।

বরকতের আশায় মক্কার মাটি সঙ্গে নিয়ে আসা।

১৪০
১৩৮. যিকির সংক্রান্ত কী কী ভুল সমাজে চালু আছে?
শরীয়তের নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট সংখ্যা ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় যিকির করা।

‘হু-হু’ বা ‘হুয়া-হুয়া’ অথবা কেবল ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলে যিকির করা।

কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে ভেঙ্গে যিকির করা অর্থাৎ নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘লা ইলাহা’ বলা এবং পরে আবার নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘ইল্লাল্লাহ’ বলা বা ‘ইল-ইল’ বলে যিকির করা।

ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী বলে যিকির করা।

উচ্চঃস্বরে যিকির করা।

হেলে-দুলে যিকির করা।

নেচে বা হাত তালি দিয়ে যিকির করা।

কোনো ওলীর নামে যিকির করা।

১৪১
১৩৯. পীর ও আওলিয়া সংক্রান্ত কী কী ভুল সমাজে চালু আছে?
ওলীরা পার্থিব জীবনের ন্যায় জীবিত আছেন বলে মনে করা।

ওলীরা আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেন বলে মনে করা।

ওলীরা জীবিতদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন বলে মনে করা।

ওলীরা কোন মানুষকে বিপদমুক্ত করতে পারেন বলে মনে করা।

ওলীরা গায়েবের সংবাদ জানেন বলে মনে করা।

ওলীদের ব্যবহৃত কোনো বস্তুকে বরকতের মাধ্যম মনে করা।

ওলীদের মাযারে সিজদা করা ইত্যাদি।

কোন ওলীর কবর তাওয়াফ করা।

১৪২
১৪০. নবী ﷺ সংক্রান্ত কী কী ভুল সমাজে চালু আছে?
রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে মানুষ মনে না করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে নূরের তৈরি মনে করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর ন্যায় গায়েব জানতেন বলে মনে করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেহের ওজন ও ছায়া ছিল না বলে মনে করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মল-মূত্র পবিত্র ছিল বলে মনে করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি এবং তাঁর নূর থেকে জগৎ সৃষ্টি বলে মনে করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সর্বত্র হাযির-নাযির মনে করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ মিলাদ মাহফিলে হাযির হন বলে মনে করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তা দিতে পারেন বলে মনে করা।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নামে কসম খাওয়া।

ইয়া নবী এভাবে নবীকে সম্বোধন করে দরূদ পড়া।

১৪৩
১৪১. মসজিদে নববী সংক্রান্ত কী কী ভুল সমাজে চালু আছে?
নবী ﷺ এর নিকট ইস্তেগফার করা।

নবী ﷺ এর নিকট সাহায্য চওয়া।

নবী ﷺ যিয়ারতকারীর সব প্রয়োজন জানেন বলে মনে করা।

মসজিদে নববীর মেহরাব, মিম্বর, হুজরার রেলিং ইত্যাদি স্পর্শ করে বরকত গ্রহণ করা।

মদীনা যিয়ারতের সময় মসজিদে নববীতে চল্লিশ ওয়াক্ত সালাত পড়তেই হয় বলে মনে করা।

সবুজ গম্বুজ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি দ্বারা বরকত গ্রহণ করা।

মসজিদ থেকে উল্টা পায়ে বের হওয়া।

১৪৪
১৪২. মৃতব্যক্তি কেন্দ্রিক কী কী ভুল সমাজে চালু আছে?
মৃত ব্যক্তির গোসল না দেয়া পর্যন্ত তার চারপাশে বসে কুরআন পাঠ করা।

মুমূর্ষ রোগীর সামনে কুরআন রেখে দেয়া।

মৃত ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করা।

মুমূর্ষ ব্যক্তির নিকট হতে ঋতুবতী, প্রসূতি ও অন্যান্য অপবিত্র মানুষদেরকে দূরে রাখা।

দাফন না হওয়া পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির ঘরের কোন খাবার না খাওয়া।

মৃতব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় প্রত্যেক অঙ্গে পানি ঢালতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা অন্যকিছু পাঠ করা।

লাশ উঠানো ও নামানোর সময় এবং পথে নিয়ে যাওয়ার সময় উচ্চৈঃস্বরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির করা।

মহিলার চুল ঝুটি না বেধে বুকের উপর খোলা ফেলে রাখা।

বরকতের আশায় বা আযাব মাফ হওয়ার আশায় কোন পীর বা ওলীর সুপারিশনামা অথবা কিছু আয়াত বা দু‘আ কাফনের ভিতরে রাখা।

কোন ওলীর কবরের পাশে কবর দেয়ার জন্য দূর থেকে লাশ আনা।

কাফনের উপর কোন আয়াত বা দু‘আ লিখা।

জানাযার খাটকে ফুল বা অন্যকিছু দিয়ে সজ্জিত করা।

সৌন্দর্যখচিত কালিমা অথবা আয়াত লিখিত মখমলের চাদর দ্বারা লাশ ঢাকা।

লাশের উপর বা কবরের উপর ফুল দেয়া।

পুষ্পস্তবক দ্বারা শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া।

জানাযার সাথে পতাকা বহন করা।

এই বিশ্বাস রাখা যে, মৃত ব্যক্তি নেক হলে তার লাশ হাল্কা হয়।

চল্লিশ কদম মাত্র জানাযা বহন করে নির্দিষ্ট সওয়াবের আশা করা।

জানাযার সালাতের কাতারে গোলাপ জল ছিটানো।

জানাযার সালাত শেষে হাত তুলে জামা‘আতী দু‘আ করা।

দাফন করার সময় জোরে জোরে যিকির পড়া।

মুর্দার জন্য কবরে বালিশ তৈরি করা।

কবরকে সুগন্ধিময় করা।

মাটি দেয়ার সময় ‘মিনহা খালাকনাকুম’ আয়াতটি পাঠ করা।

কবরে যে লাশ রাখে সে ছাড়া সকলের ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’ দু‘আ পাঠ করা।

লাশের বুকে মাটি রাখা।

কবর অধিক উঁচু করা।

মৃত ব্যক্তির মাথার দিকে সূরা ফাতিহা বা সূরা বাকারার প্রথমাংশ এবং পায়ের দিকে সূরা বাকারার শেষাংশ পাঠ করা।

অমাবশ্যার রাতে মৃত্যুবরণ করা খারাপ বা অশুভ মনে করা।

দাফনকর্ম শেষ করে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে বা কাউকে স্পর্শ করতে হয় না বলে বিশ্বাস করা।

কবরের পাশে কোন খাদ্য বিতরণ বা পশু যবেহ করা।

মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারো শোক পালনের উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য ত্যাগ করা।

মৃতের নামে কুরআনখানি, ফাতেহাখানি ও চল্লিশার আয়োজন করা।

মুর্দা মারা যাওয়ার স্থানে কয়েকদিন যাবত বাতি ও ধুপ জ্বালিয়ে রাখা।

মৃত ব্যক্তির বাড়িতে রুহ আসে বলে মনে করা।

যিয়ারতের জন্য কোন দিন নির্ধারণ করা।

কারো কবর যিয়ারতের মাধ্যমে বরকত লাভ হবে মনে করা।

কবরের সামনে মুসল্লির মতো খাড়া হওয়া।

লোক ডেকে এনে সালাত ও তিলাওয়াত ইত্যাদি দ্বারা ইসালে সওয়াব করা।

ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।

কবরস্থানের গাছপালাকে পবিত্র মনে করা এবং তা কাটা অনুচিত মনে করা।

গোসলের পানি গরম করার জন্য পাক ঘরের চুলা বাদ দিয়ে বাইরে চুলা বানিয়ে পানি গরম করা।

মৃত ব্যক্তিকে যেখানে গোসল দেয়া হয় সে স্থান ৪ দিন কিংবা ৪০ দিন পর্যন্ত বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা এবং রাতের বেলায় সেখানে মোম, হারিকেন বা বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে আলোকিত করে রাখা।

কাফন পরানোর সময় নির্ধারিত পরিমাণের চাউল, বিস্কুট ও ফলের ব্যবস্থা করা এবং সেগুলো কবরস্থানে আগত ফকিরদের মাঝে বিলি করা।

জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু রাববী, মুহাম্মাদ নবী’ কিংবা ‘কালিমা শাহাদাত’ পাঠ করা।

জানাযা নেয়ার সময় খাটিয়ার উপর আগরবাতি জ্বালানো।

জানাযা শেষে ‘‘লোকটি কেমন ছিল?’’ উপস্থিত সবাই ‘‘বেশ ভালো ছিল’’ এরকম প্রশ্নোত্তর করা।

জানাযা পড়ানোর সময় ইমাম একখন্ড সাদা কাপড় জায়নামায হিসেবে ব্যবহার করা, যা মূলত কাফনের কাপড়ের অংশ বিশেষ।

মৃত ব্যক্তির কাযা সালাত থাকলে কিংবা বেনামাযী হলে আর্থিক কাফফারা আদায় করা এবং মৃত ব্যক্তি গরীব হলে কাফফারার হিসেবে একটি কুরআন মাজীদ কাউকে হাদিয়া প্রদান করা।

মৃতব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে নীরবতা পালন করা।

কবরের উপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করা।

দুই ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাকে জরুরি মনে করা।

মৃত ব্যক্তিকে তার কোন আত্মীয়স্বজন স্বপ্নে দেখলে তার জন্য যেকোন খতম পড়ানো বা কোন অনুষ্ঠান করা।

সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে হোক কিংবা বরকত লাভের নিয়তে- এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা কুরআন-হাদীস ও সালাফে সালেহীন থেকে এসব কাজের সমর্থন পাওয়া যায় না।

১৪৫
১৪৩. কবর সংক্রান্ত কী কী ভুল সমাজে চালু আছে?
কবর বাঁধানো।

পাথরের উপর নাম খুদাই করা বা কোন আয়াত লিখা অথবা জান্নাতী লিখা।

কবরের উপর দর্গা ও মাযার তৈরি করা।

কবরকে কেন্দ্র করে মসজিদ ও গম্বুজ নির্মাণ করা।

কবরে বাতি জ্বালানো।

কবরে ধূপ-ধুনা দেয়া।

কবরে পশু যবাই করা।

কবরে সিজদা করা।

কবর তওয়াফ করা।

কবর বা মাযার চুম্বন বা স্পর্শ করে গায়ে মাখা।

কবরের দেয়ালে বা মাযারে কপাল, গাল পিঠ বা পেট লাগিয়ে দু‘আ করা।

কবরের সম্মুখে সালাত পড়া।

কবরবাসীকে নাজাতের ওসীলা বা বিপদে সুপারিশকারী মানা এবং তাদের ওসীলায় দু‘আ করা।

কবরবাসীর নামে কসম খাওয়া।

মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য, সন্তান, সম্পদ, সুখ ও বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া।

কবর যিয়ারতের পর উল্টা পায়ে ও কবরকে সামনে করেই ফিরে আসা।

১৪৬
১৪৪. বিবাহের ক্ষেত্রে কী কী কু-প্রথা সমাজে চালু আছে?
হিন্দুদের আগুন পূজার ন্যায় বিয়ের অনুষ্ঠানে কুলাতে করে প্রদীপ জ্বালিয়ে কনের চেহারার সামনে ঘুরানো।

সবার সামনে বর-কনেকে সালাত পড়ানো।

কনিষ্ঠা আঙ্গুলী দ্বারা বর-কনে পরস্পরকে ভাতের দানা খাওয়ানো।

জামাইয়ের ঝুঠা ভাত নিয়ে কনেকে খাওয়ানো।

গেট ধরে টাকা-পয়সা নেয়া।

জামাইয়ের জুতা খোলা বা সিংহাসন বানিয়ে তাতে জামাইকে বসিয়ে টাকা আদায় করা।

গায়ে হলুদের নামে অনুষ্ঠান করে বরের কপালে নারী কর্তৃক অথবা কনের কপালে পুরুষ কর্তৃক হলুদ লাগানো এবং একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ানো।

বরকে ভাবীদের দ্বারা হলুদ মাখানো ও গোসল দেয়া।

কোন মাসে বা দিনে বিয়ে অনুষ্ঠান করাকে অমঙ্গল মনে করা।

বিবাহ দিবস ও বিবাহ বার্ষিকী পালন করা।

হিন্দু রমণীদের ন্যায় মেয়ের কপালে টিপ লাগানো।

মহিলাদের সমস্বরে শিরকী কালামে গীত গাওয়া।

উকিল পিতা নির্ধারণ করা।

অধিক টাকা খরচ করে বাড়ির গেট আলোকসজ্জা করা।

কনের পিতা-মাতার পায়ে ধরে সালাম করা।

আতশবাজি করা।

নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে খাওয়া-দাওয়া করা।

কনের বাড়িতে দলবেধে যাওয়া।

কোন নির্দিষ্ট দিনে বা মাসে বিবাহ শুভ বা অশুভ মনে করা।

নিজ পিতা, ভাই বা আপনজন থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে উকিল বানানো।

কনের বিদায়কালে বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করা এবং মিষ্টান্ন বিতরণ করা।

১৪৭
১৪৫. কী কী কুসংস্কার সমাজে চালু আছে?
আমাদের মুসলিম সমাজে এমন অনেক কাজকর্ম হতে দেখা যায়, যা মূলত কল্পনাপ্রসুত অথবা অন্য কোন ধর্ম থেকে আমদানীকৃত। সমাজে এমন অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে, যা অনেকটাই হিন্দুদের কাজকর্মের সাথে মিলে যায়। এসব কুসংস্কারমূলক কথা ও কাজ থেকে অবশ্যই আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিচে কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

সন্ধ্যায় ঘরে আলো না জ্বালালে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।

কুকুর কাঁদলে বিপদ আসবে বলে মনে করা।

কাক ডাকলে কেউ মারা যাবে বলে বিশ্বাস করা।

ভাঙ্গা আয়নায় চেহারা দেখলে অমঙ্গল হয় বলে বিশ্বাস করা।

বাম চোখ ফরকালে বিপদ, ডান চোখ ফরকালে সৌভাগ্য বলে মনে করা।

ডান হাতের তালু চুলকালে পয়সা আসে বলে মনে করা।

বাম হাতের তালু চুলকালে পয়সা যাবে বলে বিশ্বাস করা।

নাক ও কপালে ফোঁড়া হলে ধনসম্পদ আসবে বলে মনে করা।

ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে/গালে হাত দিয়ে বসাকে কুলক্ষণ মনে করা।

জন্মগ্রহণের মাসে বিয়ে করলে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।

জোড় কলা খেলে জোড়া বাচ্চা হবে বলে ধারণা করা।

ফাঁটা বা ভাঙ্গা প্লেটে খেলে অলক্ষ্মী ঘরে আসে বলে মনে করা।

পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম না খাওয়া।

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন ভালো খাবার খেলে সারা বছরই ভালো খাবার জুটবে বলে মনে করা।

যাত্রার সময় কেউ হাঁচি দিলে/পেছন থেকে ডাকলে কুলক্ষণ মনে করা।

যাত্রাকালে কিছুতে হোঁচট খেলে অমঙ্গল হয় মনে করে একটু বসে পুনরায় যাত্রা করা।

শুরুতে বাধাগ্রস্ত হলে যাত্রা অশুভ হবে বলে মনে করা।

শনি, মঙ্গল ও আমাবশ্যার দিনকে অশুভ মনে করে শুভ কাজ না করা।

সকাল বেলা দোকান খোলার পর বাকিতে বিক্রি করলে সারাদিন বাকি বা ফাঁকি যাবে বলে মনে করা।

১ম বিক্রির বা ১ম ভাড়ার টাকা পেলে বরকতের আশায় চুমু খাওয়া, কপালে লাগানো।

জামাকাপড় গায়ে থাকা অবস্থায় সেলাই করা কুলক্ষণ মনে করা।

পরপর সন্তান মারা যাওয়ার পর পরবর্তী সন্তান জন্ম নিলে কান ছিদ্র করে দেয়া বা বাজে নাম রাখা।

কারও আলোচনা চলছে, ইতোমধ্যে সে এসে পড়লে বা ফোন করলে তার দীর্ঘজীবী হওয়ার আলামত বলে মনে করা।

নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা, মডেলিং, ফ্যাশন, নাটক, বর্ষবরণ, বসন্তবরণ, রাখিবন্ধন, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো ইত্যাদি প্রয়োজন মনে করা।

শনিবার দিন কোথাও যাওয়া ঠিক নয়, তাতে অকল্যাণ হবে মনে করা।

মৃত ব্যক্তির জন্য কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা।

পেঁচা ডাকলে বিপদ আসন্ন মনে করা।

পায়ে তিল থাকলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয় না মনে করা।

ঠোঁটের নিচে তিল, কানের নিচে তিল থাকলে অকল্যাণ হয় মনে করা।

চোখ টেরা থাকলে ভাগ্যবান হওয়া মনে করা।

নাক বোঁচা থাকলে বেশি করে বিয়ের প্রস্তাব আসে মনে করা।

বাজি ধরা।

খাবার সময় সালাম না দেয়া।

সন্ধ্যার পর বাড়িতে বাজার থেকে মাছ আনলে মাছের সাথে দুষ্ট জিন আসে মনে করা।

খাবার সময় জিহবায় কামড় লাগলে কেউ তাকে গালি দিয়েছে ও কাশি দিলে কেউ তাকে স্মরণ করেছে বলে মনে করা।

কপালে টিপ লাগানো ও পায়ে আলতা ব্যবহার করা।

প্রথম যৌবনে মেয়েদের পর্দা করা জরুরি নয় মনে করা।

প্রথম সন্তান মেয়ে হলে মন খারাপ করা।

অভাবী মেয়েদের অলক্ষ্মী ও পোড়া কপালী বলা।

সবার সামনে বর কনেকে সালাত আদায় করানো।

নতুন বর্ষ শুরু উপলক্ষে বোমা ফাটানো ও আতশবাজি করা।

বছরের প্রথম দিন ক্রেতাকে বাকি না দেয়া।

সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিতভাবে দোকানে আগরবাতি জ্বালানো ও পানি ছিটানো।

সবসময় ক্যাশ খালি না রেখে কিছু না কিছু টাকা পয়সা রাখা।

ছেলেদের কান ছিদ্র করা ও তাতে দুল পরিধান করা।

ছেলেদের গলায় চেইন পরিধান করা।

শিখা অনির্বাণ ও শিখা চিরন্তনের নামে প্রজ্জ্বলিত আগুনে সালাম দেয়া ও ফুল দেয়া।

বাচ্চাদের কপালে কাজলের ফোঁটা দেয়া।

বাচ্চাদের উপর দিয়ে টপকিয়ে গেলে আর বড় হবে না মনে করা।

নারী-পুরুষ দুজন মিলে জবাই করা যাবে না বলে মনে করা।

বাচ্চাদের আজেবাজে নাম রাখা।

কদমবুসী করা। অর্থাৎ সালাম দেয়ার সময় পা স্পর্শ করে সালাম করা।

১৪৮
১৪৬. ধূমপান করলে কী কী ক্ষতি হয়?
ধূমপানের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার, গলনালির ক্যান্সার, ফুসফুস ফোলা ও শ্বাসকষ্ট হয়।

ধূমপানের ফলে হার্ট এটাক ও হঠাৎ অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে।

ধূমপানের ফলে ঠোঁট, মুখ ও খাদ্যনালির মধ্যে ক্যান্সার হয়।

ধূমপানের ফলে মূত্রনালি বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ধূমপান মানুষের মেধাকে বিনষ্ট করে দেয়।

ধূমপান মানুষের দাঁতের ক্ষতি করে।

ধূমপানকারী ফেরেশতাদেরকে কষ্ট দেয়।

ধূমপান সুন্দর পরিবেশকে দূষিত করে।

ধূমপান দ্বারা ইসলামের দুশমনদের সহযোগিতা করা হয়।

এটি স্মরণশক্তি কমিয়ে দেয় এবং মনোবল দুর্বল করে দেয়।

অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়।

ধূমপানের কারণে দাঁতের সৌন্ধর্য্য নষ্ট হয়।

১৪৯
ছাত্র জীবন ১৪৭. Student শব্দের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী কী কী গুণাবলী লুকায়িত রয়েছে?
Student (স্টুডেন্ট) শব্দের মধ্যে সাতটি বর্ণ আছে। যথা- S, T, U, D, E, N, T এই এক একটি বর্ণ যেন এক একটি অপরিহার্য গুণ। যেমন-

প্রথম বর্ণ, S অর্থাৎ Study (স্টাডি) অধ্যয়ন

অধ্যয়নই ছাত্র-ছাত্রীদের একমাত্র পেশা ও নেশা হওয়া কর্তব্য। তারা নিজেদের ইচ্ছায় বারবার অধ্যয়ন করবে।

দ্বিতীয় বর্ণ T অর্থাৎ Tendency (টেন্ডেন্সি) ঝোঁক

অধ্যয়নের প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের ঝোঁক-প্রবণতা থাকতে হবে। অধ্যয়ন প্রবণতাই হবে তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

তৃতীয় বর্ণ U অর্থাৎ Unity (ইউনিটি) একতা

ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একতা থাকা আবশ্যক। ছাত্রসমাজের মধ্যে যদি একতার গুণটি বিদ্যমান থাকে তবে তারা একে অপরের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

চতুর্থ বর্ণ D অর্থাৎ Discipline (ডিসিপ্লিন) নিয়ম-শৃংখলা

ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়মতান্ত্রিক ও পরিকল্পিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। এজন্য একটি দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করে নিতে হবে। তাদেরকে পড়ার সময় পড়া, লেখার সময় লেখা, খেলাধুলার সময় খেলাধুলা এবং ভ্রমণের সময় ভ্রমণ করতে হবে।

পঞ্চম বর্ণ E অর্থাৎ Energy (এনার্জি) শক্তি

ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শক্তি ও সাহসের অধিকারী হতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের মনের মধ্যে কোনো প্রকার দুর্বলতা, হীনমন্যতা থাকবে না, তারা নীচু মনের অধিকারী হতে পারবে না। তারা সর্বদা সাহসী, বুদ্ধিমান, চালাক-চতুর, দৃঢ়চেতা ও অন্যায়ের প্রতিবাদে কঠোর হবে।

ষষ্ঠ বর্ণ N অর্থাৎ Neat and clean (নীট এন্ড ক্লীন) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

সবাইকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

নিজের পড়ার কক্ষ, খাবার কক্ষ, থাকার জায়গা, নিজের পোশাক, শরীর এবং বাড়ির আঙ্গিনাকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের পড়ার টেবিলকে রাখতে হবে সুসজ্জিত, বইগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে।

সপ্তম বর্ণ T অর্থাৎ Truthfulness (ট্রুথফুলনেস) সত্যবাদিতা

সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সত্য কথা বলতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সত্য বলা নেকী, আর নেকী জান্নাতের দিকে পথ দেখায়। অপর দিকে মিথ্যা বলা পাপ, আর পাপ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়।’’ (সহীহ মুসলিম হা/৬৮০৪)

‘‘সত্য মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস করে’’।

১৫০
১৪৮. পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কী করা উচিত?
পরীক্ষার দিন কলম, স্কেল, প্রবেশপত্রসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে যথাসময়ে বাসা থেকে বের হতে হবে- যাতে কোন তাড়াহুড়া ছাড়া সময়মত পরীক্ষার হলে পৌঁছা যায়।

উত্তরপত্র বা কাগজ পাওয়ার পর তাতে পরীক্ষার্থীর যেসব তথ্য লেখা প্রয়োজন তা সচেতনভাবে লিখতে হবে এবং উত্তরপত্রে প্রয়োজনীয় মার্জিন ও পৃষ্ঠার নম্বর বসাতে হবে।

প্রশ্নপত্র হাতে পেলেই সম্পূর্ণটা একনজর পড়ে নিতে হবে। তারপর বেশি কমন পড়া প্রশ্নগুলো পর্যায়ক্রমে লিখতে হবে। উত্তর লেখার পূর্বে প্রশ্নের নম্বর সঠিকভাবে বসাতে হবে।

কোন্ প্রশ্নে কত নম্বর আছে তা বুঝে সে অনুপাতে উত্তর লিখতে হবে।

কয়টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে তা জেনে সে অনুযায়ী সময় ভাগ করে নিতে হবে- যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সকল প্রশ্নের উত্তর লেখা যায়।

প্রশ্ন যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে করা হয়, তাহলে উত্তরও আলাদা আলাদা অনুচ্ছেদে লিখতে হবে।

সন, তারিখ ও উদ্ধৃতি এসব যাতে ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পয়েন্টগুলো আন্ডার লাইন করে দিলে ভাল হয়, তাহলে সহজেই তা পরীক্ষকের দৃষ্টিগোচর হবে।

উত্তরপত্র পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোন লেখা ভুল হয়ে গেলে ঘষামাজা না করে একটানে কেটে দিতে হবে।

পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার ৫/৭ মিনিট আগেই লেখা শেষ করে খাতা জমা দেয়ার পূর্বে একনজর দেখে নিতে হবে, কোন ভুল ধরা পড়লে সংশোধন করে দিতে হবে।

১৫১
১৪৯. একজন ছাত্রের প্রতিদিন কী কী পড়া উচিত?
নিয়মিত কুরআন মাজীদ পড়তে হবে। কুরআনের শব্দসমূহের অর্থ মুখস্থ করতে হবে। নিজের ভাষায় কুরআন বুঝার চেষ্টা করতে হবে।

কুরআনের ব্যাখ্যা হল হাদীস। তাই প্রতিদিন কিছু হাদীস পড়তে হবে।

দৈনন্দিন জীবনে অনেক দু‘আ রয়েছে। এগুলো শিখতে হবে এবং যথাস্থানে পড়তে হবে ।

পাঠ্যবই পড়তে হবে।

জ্ঞানকে প্রসারিত করতে হলে সিলেবাস বহির্ভূত বই এবং ইসলামী বই পড়তে হবে।

১৫২
১৫০. পড়াশোনা করার নিয়ম কী?
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগ্রহ সহকারে মনোযোগের সাথে পড়তে হবে।

যখন যে বিষয়টি পড়লে আয়ত্ত করতে সুবিধা হয় তখন সে বিষয়টি পড়বে ।

রুটিন মেনে প্রতিদিন নিয়মিত পড়বে।

বইয়ের ভিতরের মূল কথাগুলো আন্ডারলাইন করে রাখবে।

কোনো অধ্যায় পড়ার পর এর সারসংক্ষেপ মনে রাখতে হবে।

কোনো অংশ একবার পড়ে না বুঝলে একাধিকবার চেষ্টা করবে। অনেক সময় পরবর্তী অংশ পড়ার পর পূর্ববর্তী অংশ ক্লিয়ার হয়ে যায়।

কোনো অংশ ভুলে গেলে তা আবার পড়ে নিতে হবে।

নিজেকে বারবার প্রশ্ন করবে- এখানে এ শব্দটা কেন হল? এ বাক্যটা অন্যভাবে কী বলা যাবে? এ অধ্যায়ে কী কী প্রশ্ন হতে পারে? কোন অংশে এর উত্তর রয়েছে।

পড়া বিষয়টি অন্যের সাথে আলোচনা করবে তাহলে ঐ বিষয়টি অনেক দিন মনে থাকবে।

১৫৩
আসমাউল হুসনা
কুরআন এবং হাদীসে আল্লাহ তা’আলার অনেক সুন্দর নামের উল্লেখ আছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنَّ لِلّٰهِ تِسْعَةً وَّتِسْعِيْنَ اِسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ- إِنَّهٗ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ

‘‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলার নিরানববইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ নামসমূহ গণনা করবে (এ নামসমূহের যিকির করবে) সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিশ্চয় তিনি বেজোড়, তাই তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন।’’

(সহীহ বুখারী হা/৭৩৯২)

হাদীসে আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ এভাবে এসেছে :

هُوَ اللهُ الَّذِىْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ الْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلاَمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ الْغَفَّارُ الْقَهَّارُ الْوَهَّابُ الرَّزَّاقُ الْفَتَّاحُ الْعَلِيْمُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الْخَافِضُ الرَّافِعُ الْمُعِزُّ الْمُذِلُّ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ الْحَكَمُ الْعَدْلُ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ الْحَلِيْمُ الْعَظِيْمُ الْغَفُوْرُ الشَّكُوْرُ الْعَلِىُّ الْكَبِيْرُ الْحَفِيْظُ الْمُقِيْتُ الْحَسِيْبُ الْجَلِيْلُ الْكَرِيْمُ الرَّقِيْبُ الْمُجِيْبُ الْوَاسِعُ الْحَكِيْمُ الْوَدُوْدُ الْمَجِيْدُ الْبَاعِثُ الشَّهِيْدُ الْحَقُّ الْوَكِيْلُ الْقَوِىُّ الْمَتِيْنُ الْوَلِىُّ الْحَمِيْدُ الْمُحْصِى الْمُبْدِئُ الْمُعِيْدُ الْمُحْيِى الْمُمِيْتُ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ الْوَاجِدُ الْمَاجِدُ الْوَاحِدُ الصَّمَدُ الْقَادِرُ الْمُقْتَدِرُ الْمُقَدِّمُ الْمُؤَخِّرُ الْأَوَّلُ الْاٰٰخِرُ الظَّاهِرُ الْبَاطِنُ الْوَالِى الْمُتَعَالِى الْبَرُّ التَّوَّابُ الْمُنْتَقِمُ الْعَفُوُّ الرَّءُوْفُ - مَالِكُ الْمُلْكِ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ الْمُقْسِطُ الْجَامِعُ الْغَنِىُّ الْمُغْنِى الْمَانِعُ الضَّارُّ النَّافِعُ النُّوْرُ الْهَادِى الْبَدِيْعُ الْبَاقِى الْوَارِثُ الرَّشِيْدُ الصَّبُوْرُ -

এ নামসমূহের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সামনে দেয়া হল :

১. اَللهُ (আল্লা-হ) : এটি আল্লাহর যাতি নাম। এ নাম আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য উপযুক্ত নয়।

২. اَلْإِلٰهُ (আল-ইলা-হ) : উপাস্য, মাবুদ, ইবাদাত পাওয়ার অধিকারী।

৩. اَلرَّحْمٰنُ (আর-রহমান ) : পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

৪. اَلرَّحِيْمُ (আর-রহীম) : অতি দয়াবান।

৫. اَلْمَلِكُ (আল-মালিক) : সম্রাট, বাদশাহ, রাজা।

৬. اَلْقُدُّوْسُ (আল-কুদ্দূস) : অতি পবিত্র।

৭. اَلسَّلاَمُ (আস্-সালা-ম) : শান্তি।

৮. اَلْمُؤْمِنُ (আল-মু’মিন) : নিরাপত্তাবিধায়ক, সত্যায়নকারী।

৯. اَلْمُهَيْمِنُ (আল-মুহাইমিন) : রক্ষক, প্রভাবশালী।

১০. اَلْعَزِيْزُ (আল-আযীয) : পরাক্রমশালী।

১১. اَلْجَبَّارُ (আল-জাববা-র) : প্রয়োজন পূরণকারী, সংশোধনকারী।

১২. اَلْمُتَكَبِّرُ (আল-মুতাকাবিবর) : গর্বের অধিকারী।

১৩. اَلْخَالِقُ (আল-খা-লিক্ব) : সৃষ্টিকর্তা।

১৪. اَلْبَارِئُ (আল-বা-রিউ) : উদ্ভাবনকর্তা, পর্যায়ক্রমে সৃষ্টিকর্তা।

১৫. اَلْمُصَوِّرُ (আল-মুস্বাউবির) : রূপদাতা, আকৃতিদাতা।

১৬. اَلْغَفَّارُ (আল-গাফ্ফা-র) : পাপ মার্জনাকারী।

১৭. اَلْقَهَّارُ (আল-ক্বাহহা-র) : প্রতাপশালী, মহাপরাক্রমশালী।

১৮. اَلْوَهَّابُ (আল-ওয়াহ্হা-ব) : মহাদাতা।

১৯. اَلرَّزَّاقُ (আর- রায্যা-ক্ব) : রিযিকদাতা, রুযীদাতা।

২০. اَلْفَتَّاحُ (আল-ফাত্তা-হ) : শ্রেষ্ঠ ফায়সালাকারী, উন্মুক্তকারী।

২১. اَلْعَلِيْمُ (আল-আলীম) : সর্বজ্ঞ, মহাজ্ঞানী।

২২. اَلْقَابِضُ (আল-ক্বা-বিয) : জীবিকা সংকুচনকারী।

২৩. اَلْبَاسِطُ (আল-বা-সিত্ব) : জীবিকা সম্প্রসারণকারী।

২৪. اَلْخَافِضُ (আল-খাফিয) : নিম্নকারী।

২৫. اَلرَّافِعُ (আর-রাফি) : উত্তোলনকারী, মর্যাদা দানকারী।

২৬. اَلْمُعِزُّ (আল-মুইয) : ইয্যত দানকারী, সম্মানদাতা।

২৭. اَلْمُذِلُّ (আল-মুযিল) : অপমানকারী, সম্মান হরণকারী।

২৮ اَلسَّمِيْعُ (আস্-সামী’) : সর্বশ্রোতা।

২৯. اَلْبَصِيْرُ (আল-বাসীর) : সর্বদ্রষ্টা। তিনি সবকিছু দেখেন।

৩০. اَلْحَكَمُ (আল-হাকাম) : বিচারক, হুকুমকর্তা।

৩১. اَللَّطِيْفُ (আল-লাত্বীফ) : সূক্ষ্মদর্শী, স্নেহশীল।

৩২. اَلْخَبِيْرُ (আল- খাবীর) : পরিজ্ঞাত। তিনি সবকিছুর খবর রাখেন।

৩৩. اَلْحَلِيْمُ (আল-হালীম) : সহিষ্ণু, ধৈর্যশীল।

৩৪. اَلْعَظِيْمُ (আল-আযীম) : সুমহান। তাঁর মাহাত্ম্য সবার চেয়ে বড়।

৩৫. اَلْغَفُوْرُ (আল-গাফূর) : মহা ক্ষমাশীল।

৩৬. اَلشَّكُوْرُ (আশ্-শাকূর) : গুণাগ্রহী।

৩৭. اَلْعَلِىُّ (আল-আলিয়্যু) : সুউচ্চ।

৩৮. اَلْكَبِيْرُ (আল-কাবীর) : সুমহান, বড়।

৪৯. اَلْحَفِيْظُ (আল-হাফীয) : হেফাযতকারী, রক্ষাকর্তা।

৪০. اَلْمُقِيْتُ (আল-মুক্বীত) : শক্তিমান, খোরাকদাতা।

৪১. اَلْحَسِيْبُ (আল-হাসীব) : হিসাব গ্রহণকারী।

৪২. اَلْجَلِيْلُ (আল-জালিল) : মহিমাময়।

৪৩. اَلْكَرِيْمُ (আল-কারীম) : মহানুভব, সম্মানিত, দানশীল।

৪৪. اَلرَّقِيْبُ (আর-রাক্বীব) : তত্ত্বাবধায়ক, পর্যবেক্ষক, পরিদর্শক।

৪৫. اَلْمُجِيْبُ (আল-মুজীব) : প্রার্থনা মঞ্জুরকারী, দু‘আ কবুলকারী।

৪৬. اَلْوَاسِعُ (আল-ওয়া-সি’) : সর্বব্যাপী, প্রাচুর্যময়।

৪৭. اَلْحَكِيْمُ (আল-হাকীম) : প্রজ্ঞাময়, হেকমত ওয়ালা।

৪৮. اَلْوَدُوْدُ (আল-ওয়াদূদ) : প্রেমময়।

৪৯. اَلْمَجِيْدُ (আল-মাজীদ) : মর্যাদাবান, গৌরবান্বিত, মহিমান্বিত।

৫০. اَلْبَاعِثُ (আল-বাইস) : সাহায্যকারী।

৫১. اَلشَّهِيْدُ (আশ্-শাহীদ) : সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী।

৫২. اَلْحَقُّ (আল-হাক্ব) : সত্য, প্রকৃত, চিরসত্য।

৫৩. اَلْوَكِيْلُ (আল-ওয়াকীল) : ভরসাস্থল, অভিভাবক।

৫৪. اَلْقَوِىُّ (আল-কাভীয়্যু) : শক্তিশালী।

৫৫. اَلْمَتِيْنُ (আল-মাতীন) : শক্তিমান, পরাক্রান্ত।

৫৬. اَلْوَلِىُّ (আল-ওয়ালিয়্যু) : বন্ধু, অভিভাবক, সাহায্যকারী।

৫৭. اَلْحَمِيْدُ (আল-হামীদ) : প্রশংসিত, প্রশংসার্হ।

৫৮. اَلْمُحْصِى (আল-মুহস্বী) : হিসাব রক্ষক।

৫৯. اَلْمُبْدِئُ (আল-মুবদিউ) : প্রথম সৃষ্টিকারী, অস্তিত্ব দানকারী।

৬০. اَلْمُعِيْدُ (আল-মুঈদ) : পুনরাবর্তনকারী।

৬১. اَلْمُحْيِى (আল-মুহয়ি) : জীবনদাতা, মহান আল্লাহ সকলের জীবনদাতা।

৬২. اَلْمُمِيْتُ (আল-মুমীত) : মৃত্যু দানকারী, মরণদাতা।

৬৩. اَلْحَىُّ (আল-হাইয়্যু) : চিরঞ্জীব। তিনি সদা জীবিত।

৬৪. اَلَقَيُّوْمُ (আল-ক্বাইয়্যূম) : সদা জাগ্রত, তত্ত্বাবধায়ক, ধারক।

৬৫. اَلْوَاجِدُ (আল-ওয়া-জিদ) : ধনী, অভাবমুক্ত।

৬৬. الْمَاجِدُ (আল-মা-জিদ) গৌরবময়, মর্যাদাবান।

৬৭. اَلْوَاحِدُ (আল-ওয়া-হিদ) : একক, অদ্বিতীয়।

৬৮ اَلصَّمَدُ (আস্-সামাদ) : স্বয়ংসম্পূর্ণ, অমুখাপেক্ষী।

৬৯. اَلْقَادِرُ (আল-কা-দির) : সর্বশক্তিমান।

৭০. اَلْمُقْتَدِرُ (আল-মুকতাদির) : সর্বশক্তিমান, ক্ষমতাবান।

৭১ اَلْمُقَدِّمُ (আল-মুক্বাদ্দিম) : অগ্রবর্তী, অগ্রবর্তীকারী, উন্নয়ন দাতা।

৭২. اَلْمُؤَخِّرُ (আল-মুআখ্খির) : সর্বশেষ, অবনতি দানকারী।

৭৩. اَلْأَوَّلُ (আল-আউওয়ালু) : সর্বপ্রথম, আদি।

৭৪. اَلْاٰٰخِرُ (আল-আ-খিরু) : অন্ত। তাঁর পরে কিছু নেই।

৭৫. اَلظَّاهِرُ (আয্-যা-হির) : ব্যক্ত, অপরাভূত।

৭৬. اَلْبَاطِنُ (আল-বা-ত্বিন) : নিগূঢ়, গুপ্ত ও অব্যক্ত।

৭৭. اَلْوَالِى (আল-ওয়ালী) : বন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক।

৭৮. اَلْمُتَعَالِى (আল-মুতাআলী) : সর্বোচ্চ, সুমহান, উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন।

৭৯. اَلْبَرُّ (আল-বার্র) : কৃপানিধি। তিনি যার প্রতি ইচ্ছা কৃপা করে থাকেন।

৮০. اَلتَّوَّابُ (আত-তাওয়াব) : তওবা কবুলকারী।

৮১. اَلْمُنْتَقِمُ (আল-মুনতাকিম) : প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

৮২. اَلْعَفُوُّ (আল-আফুউ) : ক্ষমাশীল, পাপমোচনকারী।

৮৩. اَلرَّءُوْفُ (আর-রাঊফ) : অত্যন্ত স্নেহশীল, স্নেহময়।

৮৪. مَالِكُ الْمُلْكِ (মা-লিকুল মুল্ক) : সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।

৮৫. ذُو الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ (যুল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম) : মহিমাময়, মহানুভব।

৮৬. اَلْمُقْسِطُ (আল-মুকসিত) : ইনসাফকারী, ন্যায়বিচারক।

৮৭. اَلْجَامِعُ (আল-জামে’) : একত্রকারী, সমাবেশকারী।

৮৮. اَلْغَنِىُّ (আল-গানিয়্যু) : অভাবমুক্ত, অমুখাপেক্ষী।

৮৯. اَلْمُغْنِى (আল-মুগনী) : অভাব দূরকারী, সম্পদ দানকারী।

৯০. اَلْمَانِعُ (আল-মানে’) : রোধকারী, বাধাদানকারী।

৯১. اَلضَّارُّ (আয্-যার্র) : ক্ষতিগ্রস্তকারী।

৯২. اَلنَّافِعُ (আন-নাফে’) : উপকার দানকারী, কল্যাণ সাধনকারী।

৯৩. اَلنُّوْرُ (আন-নূর) : জ্যোতি, আলো।

৯৪. اَلْهَادِى (আল-হাদী) : হেদায়াতকারী, সুপথপ্রদর্শনকারী।

৯৫. اَلْبَدِيْعُ (আল-বাদী’) : উদ্ভাবনকর্তা। তিনি সবকিছুর উদ্ভাবনকর্তা।

৯৬. اَلْبَاقِى (আল-বা-ক্বী) : অবিনশ্বর।

৯৭. اَلْوَارِثُ (আল-ওয়া-রিস) : চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।

৯৮. اَلرَّشِيْدُ (আর-রাশীদ) : বিজ্ঞ।

৯৯. اَلصَّبُوْرُ (আস-স্বাবূর) : ধৈর্যধারণকারী।

وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন