HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
One Hadith a Day (সহীহ বুখারী থেকে ৩৬৫টি হাদীস ও শিক্ষা)
লেখকঃ আমির জামান, নাজমা জামান
One Hadith a Day (সহীহ বুখারী থেকে বাছাইকৃত ৩৬৫টি হাদীস ও শিক্ষা)
[সহীহ বুখারী থেকে বাছাইকৃত ৩৬৫টি হাদীস ও শিক্ষা এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ব্যতীত অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ থেকে বাছাইকৃত ৩৬৫টি জাল ও দুর্বল হাদীস]
Family Development Package - Book 10
গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা:
আমির জামান
নাজমা জামান
Published by
Institute of Family Development, Canada
www.themessagecanada.com
[সহীহ বুখারী থেকে বাছাইকৃত ৩৬৫টি হাদীস ও শিক্ষা এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ব্যতীত অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ থেকে বাছাইকৃত ৩৬৫টি জাল ও দুর্বল হাদীস]
Family Development Package - Book 10
গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা:
আমির জামান
নাজমা জামান
Published by
Institute of Family Development, Canada
www.themessagecanada.com
আল্লাহর কিতাব আল কুরআন ওয়াহীয়ে মাতলু অর্থাৎ জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) কর্তৃক পঠিত হয়ে তাঁর মাধ্যমে নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) -কে দেয়া হয়েছে। আর সহীহ হাদীস হল গায়র মাত অর্থাৎ যা পঠিত হয়নি বরং আল্লাহ তা'আলা সরাসরি নবী (ﷺ) -এর অন্তরে সংস্থাপিত করেছেন। কুরআনও ওয়াহী, সহীহ হাদীসও ওয়াহী। আল্লাহ তা'আলার বাণী :
“আল্লাহর রসূল নিজের প্রবৃত্তি থেকে কিছুই বলেন না, তাঁর কথা হল ওয়াহী যা তাঁর প্রতি প্রেরিত হয়।” (সূরা আন নাজম, ৫৩ : ৩-৪)
“আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক।” (সূরা আল হাশর, ৫৯ : ৭)
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ প্রদান করেন তখন কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর ঐ নির্দেশের ব্যতিক্রম করার কোন অধিকার থাকে না, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ও তাঁর রসূলের কথা অমান্য করল, সে স্পষ্টতঃই পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।” (সূরা আল আহযাব, ৩৩ : ৩৬)
“আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন যাতে তারা সর্বদা-চিরকাল অবস্থান করবে।” (সূরা জিন, ৭২ : ২৩)
“কিন্তু না, তোমার রব্বের কসম! তারা প্রকৃত মু'মিন হতে পারবে না যে পর্যন্ত তারা তাদের যাবতীয় বিরোধপূর্ণ ব্যাপারে তোমাকে বিচারক সাব্যস্ত না করে এবং তুমি যে ফায়সালা প্রদান কর তা দ্বিধাহীন চিত্তে পরিপূর্ণ আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করে না নেয়।” (সূরা আন নিসা, ৪ : ৬৫)।
“সুতরাং যারা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, তাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে কিংবা তাদের উপর কোন যন্ত্রণাময় আযাব নাযিল হয়ে পড়ে।” (সূরা আন নূর, ২৪ : ৬৩)
যারা সহীহ হাদীস বিরোধী বিভিন্ন যুক্তি দোহাই দিয়ে পাঠকদেরকে সহীহ হাদীস না। মানার জন্য আহ্বান জানায় তারা ঈমানদার হিসেবে গণ্য হতে পারে কি না এ বিষয়টি উপযুক্ত আয়াতসমূহের আলোকে বিচার্য। “ওমুক মতে এই, ওমুক মতে এই"- এসব কথা বলে মুসলিমদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (ﷺ) -এর সরল-সোজা পথ থেকে বিচ্যুত করে কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না। মুসলিমগণ একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস মানতে বাধ্য, ওমুক তমুকের মত মানতে বাধ্য নয়। অতএব, আসুন! আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রতি আমল করে পরিপূর্ণ ঈমানদার হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি ।।
“আল্লাহর রসূল নিজের প্রবৃত্তি থেকে কিছুই বলেন না, তাঁর কথা হল ওয়াহী যা তাঁর প্রতি প্রেরিত হয়।” (সূরা আন নাজম, ৫৩ : ৩-৪)
“আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর, আর যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক।” (সূরা আল হাশর, ৫৯ : ৭)
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ প্রদান করেন তখন কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর ঐ নির্দেশের ব্যতিক্রম করার কোন অধিকার থাকে না, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ও তাঁর রসূলের কথা অমান্য করল, সে স্পষ্টতঃই পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।” (সূরা আল আহযাব, ৩৩ : ৩৬)
“আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন যাতে তারা সর্বদা-চিরকাল অবস্থান করবে।” (সূরা জিন, ৭২ : ২৩)
“কিন্তু না, তোমার রব্বের কসম! তারা প্রকৃত মু'মিন হতে পারবে না যে পর্যন্ত তারা তাদের যাবতীয় বিরোধপূর্ণ ব্যাপারে তোমাকে বিচারক সাব্যস্ত না করে এবং তুমি যে ফায়সালা প্রদান কর তা দ্বিধাহীন চিত্তে পরিপূর্ণ আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করে না নেয়।” (সূরা আন নিসা, ৪ : ৬৫)।
“সুতরাং যারা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, তাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে কিংবা তাদের উপর কোন যন্ত্রণাময় আযাব নাযিল হয়ে পড়ে।” (সূরা আন নূর, ২৪ : ৬৩)
যারা সহীহ হাদীস বিরোধী বিভিন্ন যুক্তি দোহাই দিয়ে পাঠকদেরকে সহীহ হাদীস না। মানার জন্য আহ্বান জানায় তারা ঈমানদার হিসেবে গণ্য হতে পারে কি না এ বিষয়টি উপযুক্ত আয়াতসমূহের আলোকে বিচার্য। “ওমুক মতে এই, ওমুক মতে এই"- এসব কথা বলে মুসলিমদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (ﷺ) -এর সরল-সোজা পথ থেকে বিচ্যুত করে কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না। মুসলিমগণ একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস মানতে বাধ্য, ওমুক তমুকের মত মানতে বাধ্য নয়। অতএব, আসুন! আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রতি আমল করে পরিপূর্ণ ঈমানদার হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি ।।
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, এই বইতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত ৩৬৫টি হাদীস সহীহ বুখারী’ থেকে সংকলন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য আমরা যারা সাধারণ মুসলিম তারা যেন এই ব্যস্ততম জীবনের মধ্যেও প্রতিদিন অন্ততপক্ষে একটি করে সহীহ হাদীস অধ্যয়ন করে জীবনের করণীয় সম্পর্কে জানতে পারি । সহীহ বুখারীর একটি হাদীস আমরা জানি যে আল্লাহর তা'আলার নিকট ঐ আমল সর্বাপেক্ষা প্রিয় যা নিয়মিত করা হয়। তাই আমরা দিনে যদি অন্ততপক্ষে একটি হাদীস পড়ি তাহলে দেখা যাবে আমাদের অজান্তে বছর শেষে ৩৬৫টি সহীহ হাদীস জানা হয়ে গেছে। তবে প্রতিদিন আমরা যে হাদীসটি পড়বো তা যেন মুখস্ত করে নেয়ার চেষ্টা করি। যেহেতু হাদীসগুলো বাংলায় সেহেতু আশা। করি সকলেরই অতিসহজেই মুখস্ত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
এই বইতে যে ৩৬৫টি হাদীস সংকলন করা হয়েছে তা তাওহীদ প্রকাশনীর ৬টি খন্ডে প্রকাশিত ৭৫৬৩টি হাদীস থেকে বাছাই করে নেয়া হয়েছে। আরো একটি মুল্যবান তথ্য হচ্ছে তাওহীদ প্রকাশনী ইমাম বুখারীর লিখা মূল আরবী কিতাব থেকে সরাসরি অভিজ্ঞ আরবী ভাষায় পারদর্শী ও হাদীস বিশারদবৃন্দের সহায়তায় তা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। এবং হাদীসগুলোর শুরুতে সে নাম্বার রয়েছে তা মূল আরবী সহীহ বুখারীর-ই নাম্বার। তাই কেউ যদি রেফারেন্স হিসেবে কোন হাদীস ব্যবহার করতে চান তাহলে এই নাম্মার অতি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আরব এবং অনারব সকলেই রেফারেন্স প্রয়োজন মিলিয়ে দেখতে পারবেন।
কিছু কিছু হাদীসের শেষে আমরা একটি * (স্টার চিহ্ন) ব্যবহার করেছি, এর কারণ হচ্ছে ঐ একই হাদীস সহীহ মুসলিমেও রয়েছে।
কিভাবে এবং কোথা থেকে পড়া শুরু করবো? বিষয়টি এমন নয় যে আমাদেরকে ঠিক জানুয়ারীর এক তারিখ থেকেই পড়া শুরু করতে হবে । অর্থাৎ আমি এই বইটি যে মাসেই হাতে পাই না কেন, যে কোন একটি তারিখ থেকেই পড়া শুরু করতে পারি । ক্যালেন্ডারের প্রতিদিনের তারিখের সাথে মিল রেখে পড়তে থাকলে হিসাব রাখতে হয়তো সুবিধে হবে। যেমন, আমি যদি ১লা জুলাই থেকে পড়া শুরু করি তা হলে পরবর্তী বছরের ৩০শে জুন গিয়ে ৩৬৫টি হাদীস পড়া শেষ হবে। আবার কেউ চাইলে দ্রুত জানার জন্য এক মাসেও পুড়ো বই পড়ে শেষ করে ফেলতে পারেন।
বিশেষ নোট :
সংকলনের সময় একটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা হয়েছে যে, ৩৬৫টি হাদীসের মধ্যে একটি শব্দও আমরা নিজেদের থেকে সংযুক্ত করিনি। কারণ রসূল (ﷺ) -এর কথাকে একবিন্দুও পরিবর্তন করার কারো অধিকার নেই। যদি কেউ কোন বক্তৃতায় কোন হাদীস কোট করেন তাহলে রসূল (ﷺ) -এর কথাটি হুবহু বলতে হবে, কোন প্রকার নড়চড় করা যাবে না। আরো কিছু তথ্য এই বইয়ের শেষে কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে যা একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন। যেমন : হাদীস সংকলনের ইতিহাস, হাদীসের প্রকারভেদ, সহীহ হাদীস, বানোয়াট হাদীস ইত্যাদি। এছাড়াও ইমাম বুখারী (রহ.) ও ইমাম মুসলিম (রহ.) দু’জনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস দেয়া হয়েছে। এই দুই ইমামের সংগৃহীত হাদীসগুলো নিঃসন্দেহে সহীহ তা পৃথিবীর সকল মুহাদ্দিস এবং স্কলারগণ একমত।
৩৬৫টি জাল ও দুর্বল হাদীস :
এই বইয়ের শেষ অধ্যায়ে আলবেনীয়ার বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ শায়খ নাসিরুদ্দিন আল আলবানীর যাচাই-বাছাই করা হাদীস গ্রন্থ থেকে ৩৬৫টি জাল ও দুর্বল হাদীস সংকলন করা হয়েছে। সহীহ হাদীসের পাশাপাশি এই কমোন জাল ও দুর্বল হাদীসগুলোও আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন।
সম্মানিত পাঠকের পরামর্শ, ভুল সংশোধন ও দৃষ্টি আকর্ষণ ইমেইল অথবা টেলিফোনে জানালে আগামী সংস্করণে তা প্রতিফলিত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের ভুল-ত্রুটি মার্জনা করে সঠিক পথে থাকার তৌফিক দিন। আমীন।
জাযাকআল্লাহু খায়রন,
আমির জামান
নাজমা জামান
টরন্টো, কানাডা।
এই বইতে যে ৩৬৫টি হাদীস সংকলন করা হয়েছে তা তাওহীদ প্রকাশনীর ৬টি খন্ডে প্রকাশিত ৭৫৬৩টি হাদীস থেকে বাছাই করে নেয়া হয়েছে। আরো একটি মুল্যবান তথ্য হচ্ছে তাওহীদ প্রকাশনী ইমাম বুখারীর লিখা মূল আরবী কিতাব থেকে সরাসরি অভিজ্ঞ আরবী ভাষায় পারদর্শী ও হাদীস বিশারদবৃন্দের সহায়তায় তা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। এবং হাদীসগুলোর শুরুতে সে নাম্বার রয়েছে তা মূল আরবী সহীহ বুখারীর-ই নাম্বার। তাই কেউ যদি রেফারেন্স হিসেবে কোন হাদীস ব্যবহার করতে চান তাহলে এই নাম্মার অতি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আরব এবং অনারব সকলেই রেফারেন্স প্রয়োজন মিলিয়ে দেখতে পারবেন।
কিছু কিছু হাদীসের শেষে আমরা একটি * (স্টার চিহ্ন) ব্যবহার করেছি, এর কারণ হচ্ছে ঐ একই হাদীস সহীহ মুসলিমেও রয়েছে।
কিভাবে এবং কোথা থেকে পড়া শুরু করবো? বিষয়টি এমন নয় যে আমাদেরকে ঠিক জানুয়ারীর এক তারিখ থেকেই পড়া শুরু করতে হবে । অর্থাৎ আমি এই বইটি যে মাসেই হাতে পাই না কেন, যে কোন একটি তারিখ থেকেই পড়া শুরু করতে পারি । ক্যালেন্ডারের প্রতিদিনের তারিখের সাথে মিল রেখে পড়তে থাকলে হিসাব রাখতে হয়তো সুবিধে হবে। যেমন, আমি যদি ১লা জুলাই থেকে পড়া শুরু করি তা হলে পরবর্তী বছরের ৩০শে জুন গিয়ে ৩৬৫টি হাদীস পড়া শেষ হবে। আবার কেউ চাইলে দ্রুত জানার জন্য এক মাসেও পুড়ো বই পড়ে শেষ করে ফেলতে পারেন।
বিশেষ নোট :
সংকলনের সময় একটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা হয়েছে যে, ৩৬৫টি হাদীসের মধ্যে একটি শব্দও আমরা নিজেদের থেকে সংযুক্ত করিনি। কারণ রসূল (ﷺ) -এর কথাকে একবিন্দুও পরিবর্তন করার কারো অধিকার নেই। যদি কেউ কোন বক্তৃতায় কোন হাদীস কোট করেন তাহলে রসূল (ﷺ) -এর কথাটি হুবহু বলতে হবে, কোন প্রকার নড়চড় করা যাবে না। আরো কিছু তথ্য এই বইয়ের শেষে কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে যা একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন। যেমন : হাদীস সংকলনের ইতিহাস, হাদীসের প্রকারভেদ, সহীহ হাদীস, বানোয়াট হাদীস ইত্যাদি। এছাড়াও ইমাম বুখারী (রহ.) ও ইমাম মুসলিম (রহ.) দু’জনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস দেয়া হয়েছে। এই দুই ইমামের সংগৃহীত হাদীসগুলো নিঃসন্দেহে সহীহ তা পৃথিবীর সকল মুহাদ্দিস এবং স্কলারগণ একমত।
৩৬৫টি জাল ও দুর্বল হাদীস :
এই বইয়ের শেষ অধ্যায়ে আলবেনীয়ার বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ শায়খ নাসিরুদ্দিন আল আলবানীর যাচাই-বাছাই করা হাদীস গ্রন্থ থেকে ৩৬৫টি জাল ও দুর্বল হাদীস সংকলন করা হয়েছে। সহীহ হাদীসের পাশাপাশি এই কমোন জাল ও দুর্বল হাদীসগুলোও আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন।
সম্মানিত পাঠকের পরামর্শ, ভুল সংশোধন ও দৃষ্টি আকর্ষণ ইমেইল অথবা টেলিফোনে জানালে আগামী সংস্করণে তা প্রতিফলিত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের ভুল-ত্রুটি মার্জনা করে সঠিক পথে থাকার তৌফিক দিন। আমীন।
জাযাকআল্লাহু খায়রন,
আমির জামান
নাজমা জামান
টরন্টো, কানাডা।
১. আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহ.) হতে বর্ণিত, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি : আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি : [কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে । তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে, যে জন্যে, সে হিজরত করেছে।]*
৬. ইবনু 'আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল রমাদানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমাদানের প্রতি রাতেই জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁর সাথে দেখা করতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল (ﷺ) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন। *
২৯. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয় । (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের বেশির ভাগই নারীজাতি; (কারণ) তারা কুফরী করে । জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করে?' তিনি বললেন : তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং অকৃতজ্ঞ হয়। তুমি যদি দীর্ঘদিন তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, অতঃপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখতে পেলেই বলে ফেলে, 'আমি কক্ষণো তোমার নিকট হতে ভালো ব্যবহার পাইনি।*
৩৪. 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন : চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায় ।
১) আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;
২) কথা বললে মিথ্যা বলে;
৩) অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং
৪) বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়। *
১) আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;
২) কথা বললে মিথ্যা বলে;
৩) অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং
৪) বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়। *
৫৪. উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : কর্মসমূহ সংকল্পের সাথে সম্পৃক্ত এবং প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য তার সংকল্প অনুযায়ী। কাজেই যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তদীয় রসূলের উদ্দেশে, তার হিজরত আল্লাহ ও তদীয় রসূলের উদ্দেশে হয়েছে বলেই ধরা হবে । আর যার হিজরত হয় দুনিয়া অর্জনের জন্য বা কোন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে যে উদ্দেশে সে হিজরত করেছে। *
৫৬. সাআদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় কর না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও। *
৫৯. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) মজলিসে জনসম্মুখে কিছু আলোচনা করছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর নিকট জনৈক বেদুঈন এসে জিজ্ঞেস করল, “কিয়ামাত কখন সংঘটিত হবে? আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাঁর আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বললেন, লোকটি যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেননি। আর কেউ কেউ বললেন বরং তিনি শুনতেই পাননি। আল্লাহর রসূল (ﷺ) আলোচনা শেষে বললেন : “কিয়ামাত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বলল, এই যে আমি, হে আল্লাহর রসূল! তিমি বললেন : যখন কোন অনুপযুক্ত ব্যক্তির উপর কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে।
৭১. হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি মু'আবিয়াহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের 'ইলম দান। করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মত কিয়ামাত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। *
৭৩. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : কেবল দু'টি বিষয়ে ইর্ষা করা বৈধ;
১) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন;
২) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ তাআলা প্রজ্ঞা দান। করেছেন, অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। *
১) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন;
২) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ তাআলা প্রজ্ঞা দান। করেছেন, অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। *
৮১. আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের নিকট আর কেউ বর্ণনা করবে না। আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের কিছু আলামাত হল ও ‘ইলম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে পরিচালক।
১৩৭. ‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহ.)-এর চাচা হতে বর্ণিত, একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) -এর নিকট এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হল যে, তার মনে হয়েছিল যেন সলাতের মধ্যে কিছু হয়ে গিয়েছিল। তিনি বললেন : সে যেন ফিরে না যায়, যতক্ষণ না শব্দ শোনে বা দুর্গন্ধ পায়। *
১৪৪. আবু আইয়ুব আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন টয়লেটে যায়, তখন সে যেন কিবলার দিকে মুখ না করে এবং তার দিকে পিঠও না করে, বরং তোমরা পূর্ব দিক এবং পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে (এই নির্দেশ মদীনার বাসিন্দাদের জন্য) *
১৭৬. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : বান্দা যে সময়টা মাসজিদে সলাতের অপেক্ষায় থাকে, তার সে পুরো সময়টাই সলাতের মধ্যে গণ্য হয় যতক্ষণ না সে হাদাস করে । জনৈক অনারব বলল, হে আবু হুরাইরাহ! ‘হাদাস কী? তিনি বললেন, ‘শব্দ করে বায়ু বের হওয়া।
১৭৮. মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, আমার অধিক পরিমাণে মযী বের হতো। কিন্তু আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করছিলাম। তাই আমি মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন আল্লাহর রসূল (ﷺ) -এর নিকট জিজ্ঞেস করেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেন : এতে শুধু ওযূ করতে হয় । হাদীসটি শু’বাহ (রহ.) আ’মাশ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন।
২২৩. উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর এমন একটি ছোট ছেলেকে নিয়ে আল্লাহর রসূল (ﷺ) -এর নিকট এলেন। যে তখনো খাবার খেতে শিখেনি। আল্লাহর রসূল (ﷺ) শিশুটিকে তাঁর কোলে বসালেন। তখন সে তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল । তিনি পানি আনিয়ে এর উপর ছিটিয়ে দিলেন এবং তা ধৌত করলেন না। *
২২৭. আসমা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা নবী (ﷺ) -এর নিকট এসে বললেন : (হে আল্লাহর রসূল!) বলুন, আমাদের কারো কাপড়ে হায়যের রক্ত লেগে গেলে সে কী করবে? তিনি বললেন : সে তা ঘষে ফেলবে, তারপর পানি দিয়ে রগড়াবে এবং ভাল করে ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর সেই কাপড়ে সলাত আদায় করবে। *
২৩৭. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নবী হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : আল্লাহর রাস্তায় মুসলিমদের যে যখম হয়, কিয়ামতের দিন তার প্রতিটি যখম আঘাতকালীন সময়ে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই থাকবে। রক্ত ছুটে বের হতে থাকবে। তার রং হবে রক্তের রং কিন্তু গন্ধ হবে মিশকের মত। *
৩৮৯. হুযাইফাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার রুকুসাজদাহ পুরোপুরি আদায় করছিল না। সে যখন সলাত শেষ করলো তখন তাকে হুযাইফাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন : তোমার সলাত ঠিক হয়নি। রাবী বলেন : আমার মনে হয় তিনি (হুযাইফাহ) এ কথাও বলেছেন, (এ অবস্থায়) তোমার মৃত্যু হলে তা মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর তরীকার বাইরে হবে ।
৪১৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : মুমিন যখন সলাতে থাকে, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে, বরং তার বাম দিকে অথবা (বাম) পায়ের নীচে ফেলে ।
৫১৩. নবী (ﷺ) -এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) -এর সামনে শুয়ে থাকতাম আর আমার পা দুটো থাকত তাঁর কিবলার দিকে। তিনি যখন সাজদাহ করতেন তখন আমাকে টোকা দিতেন, আর আমি আমার পা সরিয়ে নিতাম। তিনি দাঁড়িয়ে গেলে পুনরায় পা দুটো প্রসারিত করে দিতাম। আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন : তখন ঘরে কোন বাতি ছিল না। *
৫১৬. আবু কাতাদাহ আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাঁর মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত ও আবুল আস ইবনু রাবী'আহ ইবনু আবদ শামস (রহ.)-এর ঔরসজাত কন্যা উমামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-কে কাঁধে নিয়ে সলাত আদায় করতেন। তিনি যখন সাজদাহয় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন। *
৫২৮. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছেন, “বলতো যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোন ময়লা থাকবে? তারা বললেন, তার দেহে কোনোরূপ ময়লা বাকী থাকবে না। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন : এ হলো পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা (বান্দার) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন। *
৫৩৭. জাহান্নাম তার প্রতিপালকের নিকট এ বলে নালিশ করছিলো, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আর এক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাকে দু'টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দুটি হলো, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব কর তাই । *
৪৪
ফেব্রুয়ারী ১০ - সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে আসর সলাত এবং সুর্য উদয়ের পূর্ব মুহূর্তে ফযরের সলাত আদায়৫৫৬. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পুর্বে ‘আসরের সলাতের এক সাজদাহ পায়, তাহলে সে যেন সলাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফযর সলাতের এক সাজদাহ পায়, তাহলে সে যেন সলাত পূর্ণ করে নেয় । *
৬০৮. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : যখন সলাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান। হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সলাতের জন্য ইকামাত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইক্বামাত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে মনে করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌছে যে, সে কয় রাক'আত সলাত আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না।
৬৩৬. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে নবী (ﷺ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা ইক্বামাত শুনতে পাবে, তখন সলাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না । ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে।*
৬৫১. আবূ মূসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : (মসজিদ হতে) যে যত অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে সলাতে আসে, তার তত অধিক পুণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে সলাত আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার পুণ্য সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক, যে একাকী সলাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে। *
৬৯৪. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : তারা তোমাদের ইমামতি করে। যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করে তাহলে তার সওয়াব তোমরা পাবে। আর যদি তারা ভুল করে, তাহলে তোমাদের জন্য সওয়াব আছে, আর ভুলত্রুটির দায়িত্ব তাদের (ইমামের) উপরই বর্তাবে।
৭০৩. আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করে, তখন যেন সে সংক্ষেপে করে। কেননা, তাদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সলাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে ।*
৭০৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সলাত শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার সলাত সংক্ষেপ করে ফেলি । কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তা আমি জানি।
৭২৫. আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেন : তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নিও। কেননা, আমি আমার পিছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই। আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।
৬২
ফেব্রুয়ারী ২৮ - তাকবীরে তাহরীমা, রুকুতে যাওয়া এবং রুকু হতে উঠার সময় উভয় হাত উঠানো (রফেইয়াদাইন করা)৭৩৭. আবু কিলাবাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে দেখেছেন, তিনি যখন সলাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন, আবার যখন রুকু হতে। মাথা উঠাতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ) এরূপ করেছেন ।*
১১৭৮. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু (নবী (ﷺ)) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হল)
১) প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম,
২) সলাতুয-যুহা এবং
৩) বিতর (সলাত) আদায় করে শয়ন। করা । *
১) প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম,
২) সলাতুয-যুহা এবং
৩) বিতর (সলাত) আদায় করে শয়ন। করা । *
১২৩২. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : তোমাদের কেউ সলাতে দাঁড়ালে শয়তান এসে তাকে সন্দেহে ফেলে, এমনকি সে বুঝতে পারে না যে, সে কত রাকআত সলাত আদায় করেছে। তোমাদের কারো এ অবস্থা হলে সে যেন বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ করে ।
১২৩৮. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা অবস্থায়। মারা যায়, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যে আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুর শিরক না করা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
১৩১৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেন : যখন জানাযা (খাটিয়ায়) রাখা হয় এবং পুরুষ লোকেরা তা তাদের কাঁধে তুলে নেয়, সে পুণ্যবান হলে তখন বলতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে দাও। আর পুণ্যবান না হলে সে আপন পরিজনকে বলতে থাকে, হায় আফসোস! এটা নিয়ে তোমরা কোথায় যাচ্ছ? মানুষ জাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষ যদি তা শুনতে পেত তবে অবশ্যই অজ্ঞান হয়ে
১৩৫৯. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন ও প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা বা মাজুসী (অগ্নিপূজারী) রূপে গড়ে তোলে । যেমন, চতুষ্পদ পশু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয় । তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও? অতঃপর আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তিলাওয়াত করলেন : (যার অর্থ) “আল্লাহর দেয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর, যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দ্বীন” (সূরা রূম : ৩০)।
১৩৭৩. ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে বর্ণিত, তিনি আসমা বিনত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-কে বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ) (একবার) দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন তাতে তিনি কবরে মানুষ যে কঠিন। পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তার বর্ণনা দিলে মুসলিমগণ ভয়ার্ত চিৎকার করতে লাগলেন ।।
১৩৭৯. ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থান স্থল দেখানো হয়) আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে। তোমার অবস্থান স্থল, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি। *
১৪০৩. আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে । সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। অতঃপর আল্লাহর রসূল তিলাওয়াত করেন : “আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে । অচিরেই ক্বিয়ামাত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে ।” (সূরা আলি ইমরান : ১০৮)।
১৪০৯, ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, কেবল মাত্র দু'ধরনের ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষা রাখা। যেতে পারে, একজন এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং ন্যায় পথে তা ব্যয় করার মত ক্ষমতাবান করেছেন। অপরজন এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ দ্বীনের জ্ঞান দান করেছেন (আর তিনি) সে অনুযায়ী ফায়সালা দেন ও অন্যান্যকে তা শিক্ষা দেন।
১৪১০. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে, (আল্লাহ তা কবূল করবেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাকাহ পাহাড় বরাবর হয়ে যায় ।
১৪২০. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত যে, নবীর কোন সহধর্মিনী নবী (ﷺ)-কে বললেন : আমাদের মধ্য হতে সবার পূর্বে (মৃত্যুর পর) আপনার সাথে কে মিলিত হবে? তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচেয়ে লম্বা। তাঁরা একটি বাঁশের কাঠির মাধ্যমে হাত মেপে দেখতে লাগলেন। সওদার হাত সকলের হাতের চেয়ে লম্বা বলে প্রমাণিত হল। পরে সবার আগে যায়নাব। (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর মৃত্যু হলে আমরা বুঝলাম হাতের দীর্ঘতর অর্থ দানশীলতা। তিনি [যায়নাব (রাদিয়াল্লাহু আনহা)] আমাদের মধ্যে সবার আগে তাঁর সাথে মিলিত হন এবং তিনি দান করতে ভালবাসতেন। *
১৪৩০. ‘উকবাহ ইবনু হারিস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আল্লাহর রসূল (ﷺ) আসরের সলাত আদায় করে দ্রুত ঘরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর বিলম্ব না করে বের হয়ে আসলেন। আমি বললাম বা তাঁকে বলা হলো, এমনটি করার কারণ কী? তখন তিনি বললেন : ঘরে সদাকাহর একখণ্ড সোনা রেখে এসেছিলাম কিন্তু রাত পর্যন্ত তা ঘরে থাকা আমি পছন্দ করিনি। কাজেই তা বণ্টন করে দিয়ে এলাম ।
১৪৪১. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) সূত্রে নবী (ﷺ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : ফাসাদের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রী তার ঘরের খাদ্য সামগ্রী হতে সদাকাহ করলে সে এর সওয়াব পাবে। উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে। এবং খাজাঞ্চীও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে ।
১৪৭৭. শাবী (রহ.) হতে বর্ণিত যে, মুগীরা ইবনু শুবাহ (রহ.)-এর কাতিব (একান্ত সচিব) বলেছেন, মুআবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মুগীরা ইবনু শুবাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে লিখে পাঠালাম যে, নবী (ﷺ) -এর কাছ হতে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানান। তিনি তাঁর কাছে। লিখলেন, আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন-
১) অনর্থক কথাবার্তা,
২) সম্পদ নষ্ট করা এবং
৩) অত্যধিক প্রশ্ন করা।
১) অনর্থক কথাবার্তা,
২) সম্পদ নষ্ট করা এবং
৩) অত্যধিক প্রশ্ন করা।
১৮৯৬. সাহল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন : জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, সওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর। কেউ প্রবেশ না করে। *
১৯০০. ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সওম রাখবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার করবে। আর যদি আকাশ মেঘলা থাকে তবে সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে । ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহ.) ব্যতীত অন্যরা লায়স (রহ.) হতে ‘উকায়ল এবং ইউনুস (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) এ কথাটি বলেছেন রমাদানের চাঁদ সম্পর্কে।
১৯০১. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন : যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ‘ইবাদত করে, তার পিছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তারও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে ।
১৯০৪. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেন : আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, সওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ । তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোযাদার। যাঁর কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি । রোযাদারের জন্য রয়েছে দু'টি খুশী যা তাকে খুশী করে । যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে। তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে । *
১৯০৫. ‘আলকামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর সঙ্গে চলতে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর সাথে ছিলাম, তিনি বললেন : যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। সওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে ।
১৯৪৩. নবী (ﷺ) -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত যে, হামযাহ ইবনু আমর আসলামী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) অধিক সওম পালনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি নবী (ﷺ) -কে বললেন, আমি সফরেও কি সওম পালন করতে পারি? তিনি বললেন: ইচ্ছা করলে তুমি সওম পালন করতে পার, আবার ইচ্ছা করলে নাও করতে পার।
২০৮২. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেন, যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হবে ততক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা সত্য বলে ও যথাযথ অবস্থা বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি পণ্যের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে ও মিথ্যা বলে তবে ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত চলে যাবে ।
২১৯৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেন, ফলের উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন এবং খেজুরের রং ধরার আগে (বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন)। জিজ্ঞেস করা হল, রং ধরার অর্থ কী? তিনি বলেন, লাল বর্ণ বা হলুদ বর্ণ ধারণ করা।
২২৭০. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরোধী থাকব । তাদের এক ব্যক্তি হল, যে আমার নামে প্রতিজ্ঞা করল, তারপর তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি হল, যে স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে। অপর এক ব্যক্তি হল, যে কোন লোককে মজদুর নিয়োগ করল এবং তার হতে কাজ পুরোপুরি আদায় করল, অথচ তার পারিশ্রমিক দিল না।।
২৩৮৯. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড়ের সমান সোনা থাকত, তাহলেও আমার পছন্দ নয় যে, তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার কিছু অংশ আমার কাছে থাকুক। তবে এতটুকু পরিমাণ ব্যতীত, যা আমি ঋণ। পরিশোধ করার জন্য রেখে দেই।
২৩৯৭. 'আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) সলাতে এই বলে দু'আ করতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে। গুনাহ এবং ঋণ হতে পানাহ চাচ্ছি। একজন প্রশ্নকারী বলল, (হে আল্লাহর রসূল)! আপনি ঋণ হতে এত বেশী বেশী পানাহ চান কেন? তিনি উত্তর দিলেন, মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা খেলাফ করে।
২৪৪২. ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর যুলম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।
২৪৭৫. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যভিচারী মু'মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মু'মিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মু'মিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মু'মিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে।
২৭৪৭. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পদ পেতো সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়াত। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাঁর পছন্দ মত এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুণ, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠাংশ, স্ত্রীর জন্য এক অষ্টমাংশ, এক চুতর্থাংশ, স্বামীর জন্য অর্ধেক, এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন।
২৭৬০. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবী (ﷺ) - কে বললেন, আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার ধারণা হয় যে, যদি তিনি কথা বলতে পারতেন তবে সদাকাহ করতেন। আমি কি তার পক্ষ হতে সদাকাহ করব? আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন, হ্যা, তার পক্ষ হতে সদাকাহ করতে পার।
২৮১৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা। করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাকে দেয়া হয়। একমাত্র শহীদ ব্যতীত; সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে। *
২৮২৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) এই দু’আ করতেন, হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, ভীরুতা ও বার্ধক্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং জীবন ও মরণের ফিতনা থেকে এবং কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি। *
৩২১০. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেন যে, ফিরিশতামণ্ডলী মেঘমালার আড়ালে অবতরণ করেন এবং আকাশের ফায়সালাসমূহ আলোচনা করেন। তখন শয়তানেরা তা চুরি করে শোনার চেষ্টা করে এবং তার কিছু শোনেও ফেলে। অতঃপর তারা সেটা গণকের নিকট পৌছে দেয় এবং তারা সেই শোনা কথার সঙ্গে নিজেদের আরো শত মিথ্যা মিলিয়ে বলে থাকে।
৩২১১. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘জুমু'আর দিন মাসজিদের প্রতিটি দরজায় ফিরিশতা এসে দাঁড়িয়ে যায় এবং যে ব্যক্তি প্রথম মাসজিদে প্রবেশ করে, তার নাম লিখে নেয় । অতঃপর ক্রমান্বয়ে পরবর্তীদের নামও লিখে নেয়। ইমাম যখন বসে পড়েন। তখন তারা এসব লেখা পুস্তিকা বন্ধ করে দেন এবং তাঁরা মাসজিদে এসে যিকর (খুতবা) শুনতে থাকেন।
৩২১৬. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু জোড়ায় জোড়ায় দান করবে, তাকে জান্নাতের পর্যবেক্ষকগণ আহ্বান করতে থাকবে, হে অমুক ব্যক্তি! এ দিকে আস! তখন আবূ বাকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, এমন ব্যক্তি তো সেই যার কোন ধবংস নেই। তখন নবী (ﷺ) বললেন, আমি আশা করি, তুমি তাদের মধ্যে একজন হবে।
৩২২৯. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত সলাতে রত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশতাগণ এ বলে দু’আ করতে থাকে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন এবং হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন যতক্ষণ পর্যন্ত লোকটি সলাত ছেড়ে না দাঁড়ায় কিংবা তার ওযু ভঙ্গ না হয় ।
৩২৩৭. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফিরিশতাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দিতে থাকে। *
৩২৪১. 'ইমরান ইবনু হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি জান্নাতের অধিবাসী সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী হবে দরিদ্র লোক। জাহান্নামীদের সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি, আমি জানতে পারলাম, এর বেশির ভাগ অধিবাসী নারী।
৩২৪৭. সাহল ইবনু সা’দ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের সত্তর হাজার লোক অথবা সাত লক্ষ লোক একই সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের কেউ আগে কেউ পরে এভাবে নয় আর তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল থাকবে । *
৩২৬৫. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র । বলা হল, হে আল্লাহর রসূল! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেন, “দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো উনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সম পরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।'
৩২৭৩. ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা সূর্যোদয়ের সময়কে এবং সূর্যাস্তের সময়কে তোমাদের সলাতের জন্য নির্ধারিত করো না। কেননা তা শয়তানের দু' শিং-এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয়। বর্ণনাকারী বলেন, হিশাম (রহ.) ‘শয়তান’ বলেছেন ‘আশ-শয়তান’ বলেছেন তা আমি জানি না। *
৩২৮৬. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্মের সময় তার পার্শ্বদেশে শয়তান তার দুই আঙ্গুল দ্বারা খোচা মারে। ঈসা ইবনু মরয়াম (আলাইহিস সালাম)-এর ব্যতিক্রম। সে তাঁকে খোচা মারতে গিয়েছিল। তখন সে পর্দার ওপর খোচা মারে।
৩২৯২. আবু কাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, সৎ ও ভাল স্বপ্ন আল্লাহর তরফ হতে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের তরফ হতে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কেউ যখন ভয়ানক মন্দ স্বপ্ন দেখে তখন সে যেন তার বাম দিকে থুথু ফেলে আর শয়তানের ক্ষতি হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় । তা হলে এমন স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবে। না।
৩৩২০. ‘উবাইদ ইবনু হুনায়ন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি, নবী (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের কারো পানীয় দ্রব্যে মাছি পড়লে সেটাকে তাতে ডুবিয়ে দেবে। অতঃপর তাকে উঠিয়ে ফেলবে। কেননা তার এক ডানায় রোগ থাকে আর অপর ডানায় থাকে প্রতিষেধক।
৩৩৩৫. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে, তার এ খুনের পাপের অংশ আদম (আলাইহিস সালাম)-এর প্রথম ছেলের (কাবিলের) উপর বর্তায়। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার প্রচলন ঘটায়। *
৩২৭৪. আবু সাঈদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, সলাত আদায়ের সময় তোমাদের কারো সম্মুখ দিয়ে যখন কেউ চলাচল করবে তখন সে তাকে অবশ্যই বাধা দিবে । সে যদি অমান্য করে তবে আবারো তাকে বাধা দিবে । অতঃপরও যদি সে অমান্য করে তবে অবশ্যই তার সঙ্গে লড়াই করবে । কেননা সে শয়তান।
৩৫০৯. ওয়ায়িলাহ ইবনু আসকা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে, নবী (ﷺ) বলেছেন, কোন লোকের এমন লোককে পিতা বলে দাবি করা যে তার পিতা নয় এবং প্রকৃতই যা দেখেনি তা দেখার দাবি করা এবং আল্লাহর রসূল (ﷺ) যা বলেননি তা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করা নিঃসন্দেহে বড় মিথ্যা।
৯৩১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক জুমুআহর দিন নবী (ﷺ) খুতবাহ দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সলাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না; তিনি। বললেন : উঠ, দু'রাকআত সলাত আদায় কর ।
৩৭৫৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, তাকে ইরাকের এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইহরামের অবস্থায় মশা-মাছি মারা যাবে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে অথচ তারা। আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর নাতিকে হত্যা করেছে। নবী (ﷺ) বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আমার নিকট দুনিয়ায় যেন দু’টি ফুল ।
৩৭৬৮. 'আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে ‘আয়িশাহ! জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তোমাকে সালাম বলেছেন। আমি উত্তরে বললাম “ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু” । আপনি যা দেখতে পান আমি তা দেখতে পাই না। এ কথা দ্বারা তিনি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বুঝিয়েছেন।
৩৭৬৫. ইবনু আবূ মুলায়কাহ (রহ.) হতে বর্ণিত, ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলা হল, আপনি আমীরুল মু'মিনীন মু'আবিয়াহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর সঙ্গে এ বিষয় আলাপ করবেন কি? যেহেতু তিনি বিতর সলাত এক রাকআত আদায় করেছেন। ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, তিনি ঠিকই করেছেন, কারণ তিনি নিজেই একজন ফকীহ।
৩৮১৭. 'আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -এর অন্য কোন স্ত্রীর ব্যাপারে এত ঈর্ষা পোষণ করিনি, যতটুকু খাদীজাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর প্রতি করেছি। যেহেতু নবী (ﷺ) তার আলোচনা বেশি করতেন। তিনি (আরো) বলেন, খাদীজাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর (ইন্তি কালের) তিন বছর পর তিনি আমাকে বিবাহ করেন। আল্লাহ নিজে অথবা জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) নবী (ﷺ) কে আদেশ করলেন যে, খাদীজাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-কে জান্নাতে মণিমুক্তা খচিত একটি ভবনের খোশ খবর দিন।
৩৮৩১. 'আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলি যুগে আশুরার দিন কুরাইশগণ ও নবী (ﷺ) সাওম পালন করতেন। যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করলেন, তখন তিনি নিজেও আশুরার সাওম পালন করতেন এবং অন্যকেও তা পালনের নির্দেশ দিতেন। যখন রমাদানের সাওম ফরয করা হল তখন যার ইচ্ছা (আশুরা) সওম করতেন আর যার ইচ্ছা করতেন।
৩৭৪৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদের সামনে হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর মস্তক আনা হল এবং একটি বড় পাত্রে তা রাখা হল। তখন ইবনু যিয়াদ তা খুঁচাতে লাগল। এবং তাঁর রূপ লাবণ্য সম্পর্কে কটুক্তি করল। আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) গঠন ও আকৃতিতে নবী (ﷺ) -এর অবয়বের সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। তাঁর চুল ও দাড়িতে ওয়াসমা দ্বারা কলপ লাগানো ছিল।
৩৮৫০. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগের কাজের মধ্যে একটি হল : কারো বংশ-কুল নিয়ে খোটা দেয়া, কারো মৃত্যুতে বিলাপ করা। তৃতীয়টি (রাবী ‘উবাইদুল্লাহ) ভুলে গেছেন। তবে সুফিয়ান (রহ.) বলেন, তৃতীয় কাজটি হল, তারকার সাহায্যে বৃষ্টি চাওয়া।
৩৮৫১. ইবনু 'আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) -এর উপর যখন (ওয়াহী) নাযিল করা হয় তখন তাঁর বয়স ছিল চল্লিশ বছর । অতঃপর তিনি মক্কায় তের বছর অবস্থান করেন। অতঃপর তাঁকে হিজরত করার আদেশ দেয়া হয়। তিনি হিজরত করে মদীনায় চলে গেলেন এবং সেখানে দশ বছর অবস্থান করলেন, তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।
৩৭৮২. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ বললেন, আমাদের খেজুরের বাগানগুলি আমাদের এবং তাদের (মুহাজিরদের) মাঝে বণ্টন করে দিন। তিনি নবী (ﷺ) বললেন, না, তখন আনসারগণ বললেন, আপনারা বাগানগুলি রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের সাহায্য করুন এবং ফসলের অংশীদার হয়ে যান। মুহাজিরগণ বললেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।
৪১১১. ‘আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে নবী (ﷺ) হতে বর্ণিত যে, তিনি খন্দকের যুদ্ধের দিন বদদু’আ করে বলেছিলেন, আল্লাহ তাদের ঘরবাড়ি ও কবর আগুন দ্বারা ভরে দিন। কারণ তারা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সলাতের সময় ব্যস্ত করে রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে।
৪২৮৭. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী (ﷺ) মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন বাইতুল্লাহর চারপাশ ঘিরে তিনশত ষাটটি প্রতিমা স্থাপিত ছিল। তিনি হাতে একটি লাঠি নিয়ে প্রতিমাগুলোকে আঘাত করতে থাকলেন আর বলতে থাকলেন, হক্ব (সত্য) এসেছে, বাতিল (মিথ্যা) অপসৃত হয়েছে। হত্ত্ব এসেছে, বাতিলের উদ্ভব বা পুনরুত্থান আর ঘটবে না।
৪৩৮৮. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে নবী (ﷺ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল ও দরদী। ঈমান হল ইয়ামানীদের, হিকমাত হল ইয়ামানীদের, গরিমা ও অহঙ্কার রয়েছে উট-ওয়ালাদের মধ্যে, বারী পালকদের মধ্যে আছে। প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য ।
৪৪০৪. যায়দ ইবনু আরকাম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) উনিশটি যুদ্ধে স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন। আর হিজরাতের পর তিনি হাজ্জ আদায় করেন মাত্র একটি হাজ্জে। এরপর তিনি আর কোন হাজ্জ আদায় করেননি এবং তা হল বিদায় হাজ্জ। আবু ইসহাক (রহ.) বলেন, মক্কায় অবস্থানকালে তিনি আরেকটি হাজ্জ করেছিলেন।
৪৪৭৭. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -কে জিজ্ঞেস করলাম যে, কোন গুনাহ আল্লাহর কাছে। সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য অংশীদার দাঁড় করান। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এতো সত্যিই বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সঙ্গে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচার করা।
৪৬১২. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, যদি কেউ তোমাকে বলে যে, তাঁর অবতীর্ণ বিষয়ের সামান্য কিছুও মুহাম্মাদ (ﷺ) গোপন করেছেন তা হলে অবশ্যই, সে মিথ্যা বলেছে। আল্লাহ বলেছেন, “হে রসূল! আপনি তা পৌঁছে দিন যা আপনার প্রতি আপনার রবের তরফ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে।”
৪৬৩৬, আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যতক্ষণ না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ঘটবে ততক্ষণ কিয়ামত হবে না, যখন সেদিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং লোকেরা তা দেখবে তখন সবাই ঈমান গ্রহণ করবে, এটাই সময় যখন কোন ব্যক্তিকে তার ঈমান কল্যাণ সাধন করবে না ।
৪৬৮৬. আবু মূসা আশআরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা যালিমদের ঢিল দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে ধরেন, তখন আর ছাড়েন না। এরপর তিনি নবী (ﷺ) এ আয়াত পাঠ করেন- “আর এরকমই বটে আপনার রবের পাকড়াও যখন তিনি কোন জনপদবাসীকে পাকড়াও করেন তাদের যুলমের দরুন। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড় যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত কঠিন” (সূরা হূদ : ১০২)।
৪৭৩৭. ইবনু 'আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মদীনায় এলেন, তখন ইয়াহূদীরা আশুরার দিন সওম পালন করত। তিনি তাদের (সওমের কারণ) জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, এ দিনে মূসা (আলাইহিস সালাম) ফিরআউনের উপর জয়ী হয়েছিলেন। তখন নবী (ﷺ) বললেন, আমরাই তো তাদের চেয়ে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকটবর্তী। কাজেই (মুসলিমগণ) তোমরা এ সিয়াম পালন কর ।
৪৭৫৮. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, আল্লাহ তা'আলা প্রাথমিক যুগের মুহাজির মহিলাদের উপর রহম করুন, যখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত “তাদের গলা ও বক্ষদেশ যেন ওড়না দ্বারা আবৃত করে” অবতীর্ণ করলেন, তখন তারা চাদর ছিড়ে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকল ।
৪৭৯৯, আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন খুব লজ্জাশীল”। আর এ প্রেক্ষিতে আল্লাহর এ বাণী, হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে কষ্ট দিয়েছে। তারপর আল্লাহ তাআলা তাঁকে ওদের অভিযোগ থেকে পবিত্র করেছেন। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে অতি সম্মানিত।
৪৮১২. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা যমীনকে নিজ মুষ্ঠিতে নিবেন এবং আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করে তাঁর ডান হাতে নিবেন, তারপর বলবেন, আমিই মালিক, দুনিয়ার বাদশারা কোথায়?
৪৮১৩. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, শেষবার শিঙ্গায় ফুক দেয়ার পর যে সবার আগে মাথা উঠাবে, সে আমি। তখন আমি মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে দেখব আরশের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় । আমি জানি না, তিনি আগে থেকেই এভাবে ছিলেন, না শিঙ্গায় ফুক দেয়ার পর ।
৪৯১৮. হারিস ইবনু ওয়াহাব খুযাঈ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়; কিন্তু তাঁরা যদি কোন ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করে বসেন, তাহলে তা পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের পরিচয় বলব না? তারা রূঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী তারাই জাহান্নামী।
৪৯২৭. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) -এর প্রতি যখন ওয়াহী অবতীর্ণ করা হত, তখন তিনি দ্রুত তার জিহবা নাড়তেন। রাবী সুফইয়ান বলেন, এভাবে করার পেছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ওয়াহী মুখস্থ করা। তারপর আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন : তাড়াতাড়ি ওয়াহী আয়ত্ত করার জন্য তুমি তোমার জিহবা সঞ্চালন করবে না।
৪৯৩৭. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, কুরআনের হাফিয পাঠক লিপিকর সম্মানিত মালাকের মত । খুব কষ্টদায়ক হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কুরআন মাজীদ পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে । *
৪৯৩৯. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন যে ব্যক্তিরই হিসাব নেয়া হবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহ আমাকে। আপনার জন্য কুরবান করুন। আল্লাহ কি বলেননি, “যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব নিকাশ সহজেই নেয়া হবে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এ আয়াতে আমলনামা কীভাবে দেয়া হবে সে ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুবা যার খুঁটিনাটি হিসাব নেয়া হবে সে ধবংস হয়ে যাবে ।
৫০৫৪. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) আমাকে বললেন, “এক মাসে কুরআন পাঠ সমাপ্ত কর।” আমি বললাম, “আমি এর চেয়ে অধিক করার শক্তি রাখি ।” তখন নবী (ﷺ) বললেন, “তাহলে সাত দিনে তার পাঠ শেষ করো এবং এর চেয়ে কম সময়ে পাঠ শেষ করো না।”
৫০৬৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী (ﷺ) -এর ‘ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী (ﷺ) -এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী (ﷺ) - এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না । অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সলাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয় । *
৫০৬৬. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) -এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হে যুব সম্প্রদায় তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তার যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে ।
৫১৩৬, আবু সালামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী (ﷺ) বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি । *
৫১৪৩. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে, নবী (ﷺ) হতে বর্ণিত, তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা, খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের দোষ-ত্রুটি খুঁজিও না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিও না এবং একে অপরের প্রতি শত্রতা পোষণ করো না; বরং ভাই ভাই হয়ে যাও।
৫১৭৫. বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, নবী (ﷺ) আমাদেরকে সাতটি কাজ করতে বলেছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে রোগীর সেবা করার, জানাযায় অংশগ্রহণ করার, হাঁচি দিলে তার জবাব দেয়ার, কসম পুরা করায় সহযোগিতা করার, মযলুমকে সাহায্য করার, সালামের বিস্তার করার এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা কবুল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন স্বর্ণের আংটি পরতে, রুপার পাত্র ব্যবহার করতে, ঘোড়ার পিঠের উপরে রেশমী গদি ব্যবহার করতে এবং ‘কাসসিয়া বা পাতলা রেশমী কাপড় এবং দ্বীবাজ ব্যবহার করতে।
৫১৭৭. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ওয়ালীমায় কেবল ধনীদেরকে দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদেরকে দাওয়াত করা হয় না সেই ওয়ালীমা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। যে ব্যক্তি দাওয়াত কবুল করে না, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (ﷺ) -এর সঙ্গে অবাধ্যতা করে । *
৫১৮৬. আর তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরার হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরার উপরের হাড়। যদি তা সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি তা যেভাবে আছে সেভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থাকবে। অতএব তোমাদেরকে ওসীয়ত করা হলো নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য।
৫১৮৮. ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে । একজন শাসক সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের রক্ষক, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে । একজন গোলাম তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে । অতএব সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে।
৫১৯৫. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য সওম পালন বৈধ নয় এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না। যদি কোন স্ত্রী স্বামীর নির্দেশ ব্যতীত তার সম্পদ থেকে খরচ করে, তাহলে স্বামী তার অর্ধেক সওয়াব পাবে ।
৫১৯৯. আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, হে ‘আবদুল্লাহ! আমাকে কি এ খবর প্রদান করা হয়নি যে, তুমি রাতভর ‘ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক এবং দিনভর সিয়াম পালন কর? আমি বললাম, হ্যা, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, তুমি এরূপ করো না। বরং সিয়াম পালন কর, ইফতারও কর, রাত জেগে ইবাদত কর এবং নিদ্রা যাও। তোমার শরীরের উপর হক আছে; তোমার চোখেরও তোমার উপর হক। আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার উপর হক আছে।
৫২৩১. আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করব, যা আমি রসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে শুনেছি এবং আমি ব্যতীত আর কেউ সে হাদীস বলতে পারবে না। আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের আলামতের মধ্যে রয়েছে ইলম উঠে যাবে, অজ্ঞতা বেড়ে যাবে, ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে, মদ্য পানের মাত্রা বেড়ে যাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে যে, একজন পুরুষকে পঞ্চাশজন নারীর দেখাশুনা করতে হবে।
৫২২১. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, হে উম্মতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাবোধ আর কারো নেই। তিনি তাঁর কোন বান্দা নর হোক কি নারী হোক তার ব্যভিচার তিনি দেখতে চান না। হে উম্মতে মুহাম্মাদী! যা আমি জানি, তা যদি তোমরা জানতে তাহলে হাসতে খুব কম এবং কাঁদতে অধিক অধিক।
৫২৩২. ‘উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! দেবরের ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য । *
৫৩৩৯. (বর্ণনাকারী বলেন) আমি যাইনাবকে উম্মু হাবীবাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নবী (ﷺ) বলেছেন : আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মুসলিম নারীর জন্য করো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশী শোক পালন। করা হালাল নয় । তবে স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।
৫৩৬২. আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, ফাতিমাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) একটি খাদিম চাইতে নবী (ﷺ) -এর কাছে আসলেন। তিনি বললেন : আমি কি তোমাকে এর চেয়ে অধিক কল্যাণদায়ক বিষয়ে খবর দিব না? তুমি শয়নকালে তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ তেত্রিশবার ‘আল হামদুলিল্লাহ' এবং চৌত্রিশবার ‘আল্লাহু আকবার বলবে । পরে সুফইয়ান বলেন : এর মধ্যে যে কোন একটি চৌত্রিশবার। আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন : অতঃপর কখনোও আমি এগুলো ছাড়িনি। জিজ্ঞেস করা হলো সিফফীনের রাতেও না? তিনি বললেন : সিফফীনের রাতেও না ।
৫৬৩০. ‘আবদুল্লাহ পিতা আবু কাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন পানি পান করবে সে যেন তখন পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে । আর তোমাদের কেউ যখন প্রস্রাব করে, সে যেন ডান হাতে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং তোমাদের কেউ যখন শৌচ কার্য করে তখন সে যেন ডান হাতে তা না করে।
৫৩৯৩. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহ.) নাফি (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ততক্ষণ পর্যন্ত আহার করতেন না যতক্ষণ না তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্য একজন মিসকীনকে ডেকে আনা হতো। একদা আমি তাঁর সঙ্গে বসে খাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসলাম। লোকটি খুব অধিক আহার করল । তিনি বললেনঃ নাফি! এমন মানুষকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, মু'মিন এক পেটে খায়। আর কাফির সাত পেটে খায়। *
৫৬৪১-৫৬৪২. আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেন : মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। *
৫৬৪৭. ‘আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -এর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমি বললাম : নিশ্চয়ই আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। আমি এও বললাম যে, এটা এজন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব । তিনি বললেন : হ্যা। যে কেউ রোগাক্রান্ত হয়, তা থেকে গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে যায়, যেভাবে গাছ হতে তার পাতাগুলো ঝরে যায়। *
৫৬৮৭. খালিদ ইবনু সাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনু আবজার । তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদীনায় ফিরলাম। তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশুনা করতে আসেন ইবনু আবূ ‘আতীক। তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা এ কালো জিরা সাথে রেখ । এ থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যাইতুনের কয়েক ফোঁটা তৈল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা, ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছেন ? এই কালো জিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ । আমি বললাম : ‘সাম’ কী? তিনি বললেন ও মৃত্যু।
৫৬৭১. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : তোমাদের কেউ দুঃখ কষ্টে পতিত হবার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করতেই চায়, তা হলে সে যেন বলে : হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যাণকর হয়।
১৪৩১. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ঈদের দিন বের হলেন এবং দু'রাকআত সলাত আদায় করলেন, এর আগে ও পরে কোন সলাত আদায় করেননি। এরপর তিনি বিলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে সাথে নিয়ে মহিলাদের কাছে গেলেন। তাদের উপদেশ দিলেন এবং সদাকাহ করার নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলাগণ কানের দুল ও হাতের কংকন। ছুঁড়ে মারতে লাগলেন।
৫৭৪৮. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন আপন বিছানায় আসতেন, তখন তিনি তাঁর দু' হাতের তালুতে সূরা ইখলাস এবং মুআওব্বিাতায়ন (সূরা ফালাক এবং সূরা নাস) পড়ে ফুক দিতেন। তারপর উভয় তালু দ্বারা আপন চেহারা ও দুহাত শরীরের যতদূর পৌছায় মাসাহ করতেন। আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন : এরপর রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন অসুস্থ হন, তখন তিনি আমাকে ঐ রকম করার নির্দেশ দিতেন।
৫৭৮৪. ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন : যে ব্যক্তি অহংকার বশতঃ নিজের পোশাক ঝুলিয়ে চলবে, আল্লাহ তার প্রতি কিয়ামতের দিন (দয়ার) দৃষ্টি দিবেন না। তখন আবু বাকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন : হে আল্লাহর রসূল! আমার লুঙ্গির এক পাশ ঝুলে থাকে, আমি তাতে গিরা না দিলে । নবী (ﷺ) বললেন : যারা অহঙ্কার বশতঃ এমন করে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও।
৫৯৩১. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক সে সব নারীদের উপর যারা শরীরে উলকি অঙ্কণ করে এবং যারা অঙ্কণ করায়, আর সে সব নারীদের উপর যারা চুল, জ তুলে ফেলে এবং সে সব নারীদের উপর যারা সৌন্দর্যের জন্যে সম্মুখের দাঁত কেটে সরু করে, দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করে, যা আল্লার সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। রাবী বলেনঃ আমি কেন তার উপর অভিশাপ করব না, যাকে নবী (ﷺ) অভিশাপ করেছেন। আর আল্লাহর কিতাবে আছে : রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর (সূরা আল হাশর ৫৯ : ৭)।
৬০১১. নুমান ইবনু বাশীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মুমিনদের একটি দেহের মত দেখবে । যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ। নেয় । *
৫৯৭৫. সা'দ ইবনু হাফস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মা-বাবার নাফরমানী করা, প্রাপকের প্রাপ্য আটক রাখা, যে জিনিস গ্রহণ করা তোমাদের জন্য ঠিক নয় তা তলব করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেয়া। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন গল্প-গুজব করা, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা ও সম্পদ অপচয় করা।
৬০১৮. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে। যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা চুপ থাকে। *
৬০৪১. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে না, যতক্ষণ না সে কোন মানুষকে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে ভালবাসবে, আর যতক্ষণ না সে যে কুফরী থেকে আল্লাহ তাকে উদ্ধার করেছেন, তার দিকে ফিরে যাবার চেয়ে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অধিক প্রিয় মনে না করবে এবং যতক্ষণ না আল্লাহ ও তাঁর রসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর চেয়ে অধিক প্রিয় না হবেন।
১৪৭০. আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন : যার হাতে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম! তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে চাওয়া অপেক্ষা অনেক ভাল, চাই সে দিক বা না দিক।
৬০৫২. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (ﷺ) দু’টি কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন ও নিশ্চয়ই এ দু’জন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে বড় কোন গুনাহের কারণে কবরে তাদের আযাব দেয়া হচ্ছে না। এই কবরবাসী প্রস্রাব করার সময় সতর্ক থাকত না। আর ঐ কবরবাসী গীবত করে বেড়াত। এরপর তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল আনিয়ে সেটি দু'টুকরো করে এক টুকরো এক কবরের উপর এবং এক টুকরো অন্য কবরের উপর গেড়ে দিলেন। তারপর বললেন : এ ডালের টুকরো দু'টি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাদের শাস্তি কমিয়ে দিবেন।
৬০৪৯. 'উবাদাহ ইবনু সমিত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদিন রসূলুল্লাহ (ﷺ) লোকেদের ‘লাইলাতুল ক্বদর’ সম্বন্ধে অবহিত করার জন্য বের হলেন। তখন দু’জন মুসলিম ঝগড়া করছিলেন। নবী (ﷺ) বললেন : আমি ‘লাইলাতুল ক্বদর’ সম্পর্কে তোমাদের খবর দিতে বেরিয়ে এসেছিলাম। এ সময় অমুক, অমুক ঝগড়া করছিল। এজন্য ঐ খবরের ‘ইম’ আমার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। এটা হয়ত তোমাদের জন্য ভালোই হবে। অতএব তোমরা তা রমাদানের শেষ দশকের নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে খোঁজ করবে ।
৬০৭৭. আবু আইউব আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : কোন লোকের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাই-এর সাথে তিন। দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু’জনে দেখা হলেও একজন এদিকে আরেকজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে সেই উত্তম লোক। *
৬০৯৪. ‘আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন : সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতে পৌছায়। আর মানুষ সত্যের উপর কায়িম থেকে অবশেষে সিদ্দিক-এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায় । আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহর কাছে মহামিথ্যাচারী প্রতিপন্ন হয়ে যায় ।
৬০৬৯. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে। ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। *
৬১০৯. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী (ﷺ) আমার নিকট আসলেন। তখন ঘরে একখানা পর্দা ঝুলানো ছিল। যাতে ছবি ছিল। তা দেখে নবী (ﷺ) -এর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি পর্দাখানা হাতে নিয়ে ছিড়ে ফেললেন। আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী (ﷺ) লোকদের মধ্যে বললেন : ক্বিয়ামাতের দিন সবচেয়ে কঠিন। শাস্তি হবে ঐসব লোকের যারা এ সব ছবি অঙ্কণ করে ।
৬০৬৪. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ সন্ধান করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা পোষণ করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।
৬১১৫. সুলাইমান ইবনু সুরদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একবার নবী (ﷺ) -এর সম্মুখেই দু’ব্যক্তি গালাগালি করছিল। আমরাও তাঁর কাছেই উপবিষ্ট ছিলাম, তাদের একজন অপর জনকে এত রেগে গিয়ে গালি দিচ্ছিল যে, তার চেহারা রক্তিম হয়ে গিয়েছিল। তখন নবী (ﷺ) বললেন : আমি একটি কালিমা জানি, যদি এ লোকটি তা পড়তো, তবে তার রাগ দূর হয়ে যেত। অর্থাৎ যদি লোকটি ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশশাইত্বনির রজীম' পড়তো। তখন লোকেরা সে ব্যক্তিকে বলল, নবী (ﷺ) কী বলেছেন, তা কি তুমি শুনছো না? সে বলল : আমি নিশ্চয়ই পাগল নই।
৬১২৬. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে যখন কোন দুটি কাজের মধ্যে এখতিয়ার দেয়া হতো, তখন তিনি দুটির মধ্যে অপেক্ষাকৃত সহজটি গ্রহণ করতেন যদি তা গুনাহর কাজ না হত । আর যদি তা গুনাহের কাজ হতো, তা হলে তিনি তা থেকে সবার চেয়ে দূরে সরে থাকতেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন।
৬১২৮. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার এক বেদুঈন মাসজিদে প্রস্রাব করে দিলো। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। রসূলুল্লাহ ও তাদের বললেন : তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি অথবা একমাত্র পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদেরকে নম্র ব্যবহারকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, কঠোর ব্যবহারকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি।
৬১৩৫. আবূ শুরায়হ কা’বী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে। মেহমানের সম্মান একদিন ও একরাত। আর সাধারণ মেহমানদারী তিনদিন ও তিনরাত। এরপরে (তা হবে) সদাকাহ’। মেযবানকে কষ্ট দিয়ে, তার কাছে মেহমানের অবস্থান বৈধ নয়। (অন্যসূত্রে) মালিক (রহ.) এ রকম বর্ণনা করার পর আরো অধিক বলেন যে, নবী (ﷺ) বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অথবা সে যেন চুপ থাকে।
৬২২৬. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ' বলে তবে প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তির হাই উঠলে সে যেন তা যথাসম্ভব রোধ করে । কেননা কেউ হাই তুললে শয়তান তার প্রতি হাসে।
৬২৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, একবার জনৈক লোক নবী (ﷺ) -এর এক কক্ষে উঁকি দিল। তখন তিনি একটা তীর ফলক কিংবা তীর ফলকসমূহ নিয়ে তার দিকে দৌড়ালেন। আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন : তা যেন আমি এখনও দেখছি। তিনি ঐ লোকটির চোখ ছুঁড়ে দেয়ার জন্য তাকে খুঁজছিলেন। *
৬২৪৩. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা বানী আদামের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে । চোখের যিনা হলো দেখা, জিহ্বার যিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে। *
৬২৭০, ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) কোন লোককে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে অন্য লোক বসতে নিষেধ করেছেন। তবে তোমরা বসার জায়গা প্রশস্ত করে দাও এবং ব্যবস্থা করে দাও। ইবনু উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কেউ তার জায়গা থেকে উঠে যাক এবং তার স্থানে অন্যজন বসুক তা পছন্দ করতেন না।
৬৩০৫. আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন যে, প্রত্যেক নারীই যা চাওয়ার চেয়ে নিয়েছেন। অথবা নবী (ﷺ) বলেছেন : প্রত্যেক নারীকে যে দু’আর অধিকার দেয়া হয়েছিল তিনি সে দু’আ করে নিয়েছেন এবং তা ককূলও করা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার দু’আকে কিয়ামাতের দিনে আমার উম্মাতের শাফায়াতের জন্য রেখে দিয়েছি। *
৬৩১০. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) রাতের শেষভাগে এগার রাকআত সলাত আদায় করতেন। তারপর যখন সুবহি সাদিক হতো, তখন তিনি হালকা দু'রাকআত সলাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি নিজের ডান পার্শ্বে কাত হয়ে বিশ্রাম নিতেন। যতক্ষণ না মুয়াযিন এসে তাঁকে সলাতের খবর দিতেন।
৬৩১২. হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) যখন বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করতে যেতেন, তখন তিনি এ দু'আ পড়তেনঃ হে আল্লাহ! আপনারই নাম নিয়ে মরি আর আপনার নাম নিয়েই বাঁচি। আর তিনি জেগে উঠতেন তখন পড়তেন ও যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যুদানের পর আবার আমাদের পুনর্জীবিত করেছেন। আর প্রত্যাবর্তন তাঁর পানেই ।
৬৩২১. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন : আমার নিকট দু’আ করবে কে? আমি তার দু’আ কবুল করবো। আমার নিকট কে চাবে? আমি তাকে দান করবো। আমার কাছে কে তার গুনাহ ক্ষমা চাবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো।
৬৩৭৮-৬৩৭৯. উম্মু সুলায়ম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আনাস আপনার খাদিম, আপনি আল্লাহর নিকট তার জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’আ করলেন : হে আল্লাহ! আপনি তার মাল ও সন্তান বৃদ্ধি করে দিন, আর আপনি তাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে বারাকাত দান করুন। *
৬৩৯৯, আবু মূসা আশআরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) দু'আ করতেন : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার ভুল-ত্রুটিজনিত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা, আমার বাড়াবাড়ি এবং আর যা আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার হাসি-ঠাট্টামূলক গুনাহ, আমার প্রকৃত গুনাহ, আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ এবং ইচ্ছাকৃত গুনাহ, আর এসব গুনাহ যা আমার মধ্যে আছে। *
৬৪০২. ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহ.) আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, যখন ক্বারী আমীন’ বলবে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কারণ এ সময় ফিরিশতা আমীন বলে থাকেন। সুতরাং যার আমীন বলা ফিরিশতার আমীন বলার সঙ্গে মিলে যাবে, তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে ।
৬৪৩৬. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, যদি আদাম সন্তানের দু’ উপত্যকা ভরা মালধন থাকে তবুও সে তৃতীয়টার আকাঙ্ক্ষা করবে। আর মাটি ভিন্ন বানী আদমের পেট কিছুতেই ভরবে না। আর যে তাওবাহ করবে, আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করবেন। *
৬৪৭২. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : আমার উম্মতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক, যারা ঝাড়ফুকের আশ্রয় নেয় না, শুভ অশুভ মানে না এবং তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।
৬৪৬২. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন : নিশ্চয় বান্দা কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা বলে অথচ সে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে । *
৬৫১৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : তিনটি বস্তু মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে। দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার সঙ্গে থেকে যায় । তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার ‘আমল তার অনুসরণ করে। তার পরিবারবর্গ ও তার মাল ফিরে আসে, এবং তার ‘আমল তার সঙ্গে থেকে যায় । *
৬৫২১. সাহল ইবনু সা'দ সাঈদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে কিয়ামতের দিন মানুষকে সাদা ধবধবে রুটির ন্যায় যমীনের উপর একত্রিত করা হবে। সাহল বা অন্য কেউ বলেছেন, তার মাঝে কারও কোন পরিচয়ের পতাকা থাকবে না। *
৬৫২৭. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : মানুষকে হাশরের মাঠে উঠানো হবে নগ্ন পদ, নগ্ন দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় । আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তখন তাহলে পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের দিকে তাকাবে। তিনি বললেন : এরকম ইচ্ছে করার চেয়ে তখনকার অবস্থা হবে অতীব সংকটময় । *
৬৫৩৪. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : যে ব্যক্তি তার ভাই-এর উপর যুলুম করেছে সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয়, তার ভাই-এর পক্ষে তার নিকট হতে পূণ্য কেটে নেয়ার আগেই। কারণ সেখানে কোন দীনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে। যদি পুণ্য না থাকে তবে তার (মাজম) ভাই-এর গুনাহ এনে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।
৬৫৩৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলতেন : কিয়ামতের দিন কাফিরকে হাযির করা হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে তোমার যদি দুনিয়া ভর্তি সোনা থাকত তাহলে তুমি কি বিনিময়ে তা দিয়ে আযাব থেকে বাঁচতে চাইতে না? সে বলবে হাঁ। এরপর তাকে বলা হবে তোমার কাছে তো এর চেয়ে বহু ক্ষুদ্র বস্তু (তৌহীদ) চাওয়া হয়েছিল ।
৬৫৩৫. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : মু'মিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার পর একটি পুলের উপর তাদের দাঁড় করানো হবে, যা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে অবস্থিত। দুনিয়ায় তারা একে অপরের উপর যে যুলুম করেছিল তার প্রতিশোধ গ্রহণ করানো হবে। তারা যখন পাক-সাফ হয়ে যাবে, তখন তাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রাণ, প্রত্যেক ব্যক্তি তার দুনিয়ার বাসস্থানের তুলনায় জান্নাতের বাসস্থানকে উত্তমরূপে চিনতে পারবে ।
৬৫৩৯. আদী ইবনু হাতিম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেক লোকের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন। আর সেদিন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না। অতঃপর বান্দা দৃষ্টিপাত করে তার সামনে কিছুই দেখতে পাবে না। সে আবার তার সামনে দৃষ্টি ফেরাবে। তখন তার সামনে হাজির হবে জাহান্নাম। তোমাদের মধ্যে যে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ।
৩২২
নভেম্বর ১৫ - সেদিন সবচেয়ে কম শাস্তি হচ্ছে দু’পায়ের নিচে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে, তাতে তার মগ ফুটতে থাকবে৬৫৬১. নু'মান ইবনু বাশীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির সর্বাপেক্ষা। লঘু ‘আযাব হবে, যার দুপায়ের তলায় রাখা হবে জ্বলন্ত অঙ্গার, তাতে তার মগ ফুটতে থাকবে।*
৬৫৯৭. ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) রসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে মুশরিকদের নাবালিগ সন্তানাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, তারা (বাঁচলে) কী ‘আমাল করত এ ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
৬৭২৪. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা ধারণা করা হতে বেঁচে থাক, ধারণা করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কারও দোষ অনুসন্ধান করো না, দোষ বের করার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করো না, একে অন্যের হিংসা করো না, পরস্পরে সম্পর্কচ্ছেদ করো না। ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ আল্লাহর বান্দাহ হয়ে যাও।
২০৭৮. আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে নবী (ﷺ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যবসায়ী লোকদের ঋণ দিত। কোন অভাবগ্রস্তকে দেখলে সে তার কর্মচারীদের বলত, তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। এর ফলে আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। *
৬৯৪১. আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : তিনটি জিনিস এমন যার মধ্যে সেগুলো পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে।
১) আল্লাহ ও তাঁর রসূল তার কাছে আর সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হওয়া।
২) কাউকে কেবল আল্লাহর জন্য ভালবাসা।
৩) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে যেভাবে অপছন্দ করে, তেমনি পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়াকে অপছন্দ করে।
১) আল্লাহ ও তাঁর রসূল তার কাছে আর সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হওয়া।
২) কাউকে কেবল আল্লাহর জন্য ভালবাসা।
৩) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে যেভাবে অপছন্দ করে, তেমনি পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়াকে অপছন্দ করে।
৬৯৫২. আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : তোমার ভাইকে সাহায্য কর। সে যালিম হোক অথবা মজলুম হোক। এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! মজলুম হলে তাকে সাহায্য কবর তা তো বুঝলাম। কিন্তু যালিম হলে তাকে কিভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন : তাকে অত্যাচার থেকে বিরত রাখবে । আর এটাই হল তার সাহায্য।
৭০৬০. উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার নবী (ﷺ) মদীনার টিলাসমূহের একটির উপর উঠে বললেন : আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? উত্তরে সহাবা-ই-কিরাম বললেন,তখন নবী (ﷺ) বললেন : অবশ্যই আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ফিতনা বৃষ্টির মতো পতিত হচ্ছে।
৭০৬১. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন : সময় নিকটতর হতে থাকবে, আর ‘আমাল কমে যেতে থাকবে, কৃপণতা ছড়িয়ে দেয়া হবে, ফিতনার বিকাশ ঘটবে এবং হারজ ব্যাপকতর হবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হারজ সেটা কী? নবী (ﷺ) বললেন, হত্যা, হত্যা।
৭০৯৯, আবূ বাকরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি কথা দিয়ে আল্লাহ জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (তা হল) নবী (ﷺ) -এর নিকট যখন এ খবর পৌছল যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার মেয়েকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে, তখন তিনি বললেন ও সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে ।
৭১৩১. আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন : এমন কোন নারী প্রেরিত হন নি যিনি তার উম্মাতকে এই কানা মিথ্যাবাদী সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে কানা, আর তোমাদের রব কানা নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে কাফির শব্দটি লিপিবদ্ধ থাকবে। এ সম্পর্কে আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। *
৭১৪৯. আবু মূসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, আমি ও আমার কওমের দু’ব্যক্তি নবী (ﷺ) -এর নিকট আসলাম। সে দুজনের একজন বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে (কোন বিষয়ে) আমীর নিযুক্ত করুন। অন্যজনও ঐরূপ কথা বলল। তখন তিনি বললেন : যারা নেতৃত্ব চায় এবং এর লোভ করে, আমরা তাদেরকে এ পদে নিয়োগ করি না।
৭১৫০. হাসান বসরী (রহ.) হতে বর্ণিত যে, উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ (রহ.) মাকিল ইবনু ইয়াসারের মৃত্যুশয্যায় তাকে দেখতে গেলেন। তখন মাকিল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাকে বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করছি যা আমি নবী (ﷺ) থেকে শুনেছি। আমি নবী (ﷺ) থেকে শুনেছি যে, কোন বান্দাকে যদি আল্লাহ জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে কল্যাণ কামনার সঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।
৭১৯৯-৭২০০. উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট এ মর্মে বায়আত করলাম যে, সুখে দুঃখে আমরা তাঁর কথা শুনব ও তাকে মেনে চলব। দায়িত্বশীলদের নির্দেশের ক্ষেত্রে মতভেদে লিপ্ত হব না। যেখানেই থাকি না কেন সত্যের উপর দৃঢ় থাকব। কিংবা বলেছিলেন, সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর কাজে কোন নিন্দুকের ভয়। করব না।
৭৩২৭. ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে বললেন, আমাকে আমার অন্যান্য সঙ্গিণীদের সঙ্গে দাফন করবে। আমাকে নবী (ﷺ) -এর সঙ্গে ঘরে দাফন করবে না। কেননা তাতে আমাকে অধিক দ্বীনদার পরহেজগার মনে করা হবে, আমি তা পছন্দ করি না।।
৭৩৭৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, এক লোক অন্য এক লোককে বারবার ‘ইখলাস’ সূরা তিলাওয়াত করতে শুনল। সকাল বেলা লোকটি নবী (ﷺ) -এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট এ বিষয়টি উল্লেখ করল; লোকটি যেন সূরা ইখলাসের গুরুত্বকে কম করছিল। এই প্রেক্ষিতে নবী (ﷺ) বললেন : যে সত্তার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি! এ সূরাটি অবশ্যই কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ।
৭৩৯৪. হুযাইফাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) যখন আপন বিছানায় যেতেন, তখন বলতেন- হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরণ করি, আবার তোমারই নামে জীবিত হই। আবার ভোর হলে বলতেন, সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর (ঘুমের) পর জীবিত করেছেন এবং তাঁরই কাছে সমবেত হতে হবে।
৭৩৯৮, ‘আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এখানে এমন কতকগুলো সম্প্রদায় আছে, যারা সবে মাত্র শিরক ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। তারা আমাদের জন্য গোশত নিয়ে আসে। সেগুলো যবাই করার কালে তারা আল্লাহর নাম নেয় কিনা তা আমরা জানি না। নবী (ﷺ) বললেন : তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে নেবে এবং তা খাবে ।
৭৪৬৬. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : ঈমানদার শস্যক্ষেতের নরম ডগার মত। জোরে বাতাস বইলেই তার পাতা ঝুঁকে পড়ে। বাতাস শান্ত হলে, আবার সোজা হয়ে যায় । ঈমানদারদেরকে বালা-মুসিবত দিয়ে এভাবেই ঝুঁকিয়ে রাখা হয়। আর কাফিরের দৃষ্টান্ত দেবদারু গাছ, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়। ফলে আল্লাহ যখন চান সেটিকে মূলসহ উপড়ে ফেলেন।
৭৪৭৭. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ এভাবে দু’আ করো না, হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি চাইলে আমার প্রতি রহম কর। তুমি চাইলে আমাকে রিক দাও। বরং দু’আ প্রার্থী খুবই দৃঢ়তার সঙ্গে দু’আ করবে কেননা, তিনি যা চান তাই করেন। তাকে বাধ্য করার কেউ নেই।
৭৫৩৬. আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন : আমার বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত নিকটবর্তী হয়, আমি তখন তার দিকে এক হাত নিকটবর্তী হই। আর সে যখন আমার দিকে এক হাত নিকটবর্তী হয়, আমি তখন তার দিকে দু’হাত নিকটবর্তী হই। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে। দৌড়ে যাই ।
২৮৯৬, মুসআব ইবনু সা'দ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন সাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ধারণা ছিল অন্যদের চেয়ে তাঁর মর্যাদা অধিক। তখন নবী (ﷺ) বললেন, তোমরা দুর্বলদের (দু’আয়) ওয়াসীলায়ই সাহায্য প্রাপ্ত ও রিযক প্রাপ্ত হচ্ছ।'
৭৫৫৯. আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন : আল্লাহ বলেছেন ও তাদের চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে যে আমার সৃষ্টির মত সৃষ্টি করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে? তা হলে তারা একটা অণু কিংবা শস্যদানা কিংবা যব তৈরী করুক।
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন :
وما آتاكم الرسول قدوة وما نهاكم عنه فانتهوا
“রসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর আর যা থেকে বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর : ৭)।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে রসূল (ﷺ)-এর হাদীসকে অনুসরণ করার জন্য যেভাবে তাকীদ দিয়েছেন রসূল (ﷺ) নিজেও তাঁর হাদীসকে মেনে চলার জন্যে। উম্মতকে জোর তাকীদ দিয়েছেন। তিনি বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে গেলাম । আল্লাহর কিতাব ও রসূলের হাদীস। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এই দুটিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না ।
وما آتاكم الرسول قدوة وما نهاكم عنه فانتهوا
“রসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর আর যা থেকে বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর : ৭)।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে রসূল (ﷺ)-এর হাদীসকে অনুসরণ করার জন্য যেভাবে তাকীদ দিয়েছেন রসূল (ﷺ) নিজেও তাঁর হাদীসকে মেনে চলার জন্যে। উম্মতকে জোর তাকীদ দিয়েছেন। তিনি বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে গেলাম । আল্লাহর কিতাব ও রসূলের হাদীস। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এই দুটিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না ।
আল্লাহ তা'আলার কিছু বাণী ওয়াহিয়ে মাতলু দ্বারা জিবরীল আমীনের মাধ্যমে বর্ণিত না হয়ে এর ভাবার্থ ইলহাম বা স্বপ্নযোগে কিংবা জিবরীল আমীনের মাধ্যমে নবী (ﷺ) -কে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে নবী (ﷺ) ঐ ভাবার্থকে নিজের ভাষায় প্রকাশ করেছেন। ঐ ভাবার্থের শব্দগুলো সরাসরি আল্লাহ তা'আলার নয় বলে ওগুলোকে কুরআন হিসেবে ধরা হয়নি। কিন্তু এর ভাবার্থগুলো যেহেতু নবী (ﷺ) -এর, তাই এর নাম হাদীস। এজন্যই আল্লাহ তা'আলার উক্তিমূলক ভাবার্থ এবং ঐ উক্তির বর্ণনায় রসূল (ﷺ) -এর শব্দ উভয়কে এক কথায় হাদীসে কুদসী বলা হয়। অর্থাৎ আল্লাহর কথা যা রসূল (ﷺ) -এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
সাহাবা কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) মহানবী (ﷺ) -এর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং তাঁর প্রতিটি কাজ ও আচরণ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করতেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবাগণকে ইসলামের আদর্শ ও এর যাবতীয় নির্দেশ যেমন মেনে চলতে হুকুম দিতেন, তেমনি তা স্মরণ রাখতে এবং অনাগত মানব জাতির কাছে পৌছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদীস চর্চাকারীর জন্য তিনি নিমোক্ত দু’আ করেছেন : “আল্লাহ সে ব্যক্তিকে সজীব ও আলোকোজ্জ্বল করে রাখুন, যে আমার কথা শুনে স্মৃতিতে ধরে রাখল, তার পূর্ণ হিফাযাত করল এবং এমন লোকের কাছে পৌছে দিল, যে তা শুনতে পায়নি।” - (তিরমিযী ২য় খণ্ড)
মহানবী (ﷺ) ‘আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দলকে প্রয়োজনীয় উপদেশ দান করে বললেন : ‘এ কথাগুলো তোমরা পুরোপুরি স্মরণ রাখবে এবং যারা তোমাদের পিছনে রয়েছে তাদের কাছে পৌছে দিবে।” - (সহীহ বুখারী)।
তিনি সাহাবাগণকে সম্বোধন করে বলেছেন : “আজ তোমরা (আমার নিকট দ্বীনের কথা) শুনছ, তোমাদের নিকট থেকেও (তা) শুনা হবে।” - (মুসতাক হাকিম ১ম খণ্ড)।
তিনি আরো বলেন : “আমার পরে লোকেরা তোমাদের নিকট হাদীস শুনতে চাইবে । তাঁরা এ উদ্দেশ্যে তোমাদের নিকট এলে তাদের প্রতি সদয় হয়ো এবং তাঁদের নিকট হাদীস বর্ণনা করো।” - (মুসনাদ আহমাদ)।
তিনি অন্যত্র বলেছেন : “আমার নিকট থেকে একটি বাক্য হলেও তা অন্যের কাছে। পৌছে দাও।” -(সহীহ বুখারী)।
অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পরের দিন এবং দশম হিজরীতে বিদায় হজ্জের ভাষণে মহানবী (ﷺ) বলেন : “উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট আমার এ কথাগুলো পৌঁছে দেয়।” - (সহীহ বুখারী)।
রসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর উল্লেখিত বাণীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তাঁর সাহাবাগণ হাদীস সংরক্ষণে উদ্যোগী হন। প্রধানতঃ তিনটি শক্তিশালী উপায়ে মহানবী (ﷺ) -এর হাদীস সংরক্ষিত হয় :
(১) উম্মাতের নিয়মিত ‘আমাল ।
(২) রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর লিখিত ডকুমেন্ট, সাহাবাদের নিকট লিখিত আকারে সংরক্ষিত হাদীস ও পুস্তিকা। এবং
(৩) হাদীস মুখস্থ করে স্মৃতি ভাণ্ডারে সঞ্চিত রাখা, অতঃপর বর্ণনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে লোক পরস্পরায় তাঁর প্রচার ।
তদানীন্তন আরবদের স্মরণশক্তি অসাধারণভাবে প্রখর ছিল। কোন কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য একবার শ্রবণই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। স্মরণশক্তির সাহায্যে আরববাসীরা হাজার বছর ধরে তাদের জাতীয় ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে আসছিল। হাদীস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপায় হিসেবে এ মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মহানবী (ﷺ) যখনই কোন কথা বলতেন, উপস্থিত সাহাবাগণ পূর্ণ আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে তা শুনতেন, অতঃপর মুখস্থ করে নিতেন। তদানীন্তন মুসলিম সমাজে প্রায় এক লক্ষ লোক রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর বাণী ও কাজের বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন এবং স্মৃতিপটে ধরে রেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, “আমরা রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর হাদীস মুখস্থ করতাম।” (সহীহ মুসলিম)
উম্মাতের নীরবিচ্ছিন্ন ‘আমাল, পারস্পরিক পর্যালোচনা, শিক্ষাদানের মাধ্যমেও হাদীস সংরক্ষিত হয় । রসূলুল্লাহ (ﷺ) যে নির্দেশই দিতেন, সাহাবাগণ সাথে সাথে তা কার্যে পরিণত করতেন। তাঁরা মাসজিদ অথবা কোন নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হতেন এবং হাদীস আলোচনা করতেন। আনাস ইবনু মালিক (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, “আমরা মহানবী (ﷺ) -এর নিকট হাদীস শুনতাম। তিনি যখন মাজলিস থেকে উঠে চলে যেতেন, আমরা শোনা হাদীসগুলো পরস্পর পুনরাবৃত্তি ও পর্যালোচনা করতাম। আমাদের এক একজন করে সবাই হাদীসগুলো মুখস্থ শুনিয়ে দিতেন। এ ধরনের প্রায় বৈঠকেই অন্তত ষাট-সত্তরজন লোক উপস্থিত থাকতেন। বৈঠক থেকে আমরা যখন উঠে যেতাম তখন আমাদের প্রত্যেকেরই সবকিছু মুখস্থ হয়ে যেত। (আল-মাজমাউয যাওমাউয যাওয়ায়িদ ১ম খণ্ড)
মাসজিদে নাবাবীকে কেন্দ্র করে স্বয়ং নবী (ﷺ) -এর জীবদ্দশায় যে শিক্ষালয় গড়ে উঠেছিল সেখানে একদল বিশিষ্ট সাহাবা (আহলুস সুফফাহ) সার্বক্ষণিকভাবে কুরআন-হাদীস শিক্ষায় রত থাকতেন। হাদীস সংরক্ষণের জন্য যথাসময়ে যথেষ্ট পরিমাণে লেখনী শক্তিরও সাহায্য নেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুরআন মাজীদ ব্যতীত সাধারণতঃ অন্য কিছু লিখে রাখা হতো না। পরবর্তীকালে হাদীসের বিরাট সম্পদ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। হাদীস নবী (ﷺ) -এর জীবদ্দশায় লিপিবদ্ধ হয়নি, বরং তাঁর ইন্তিকালের শতাব্দীকাল পর লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে যে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে তার আদৌ কোন ভিত্তি নেই । অবশ্য এ কথা ঠিক যে, কুরআনের সঙ্গে হাদীস মিশ্রিত হয়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে কেবল এ আশঙ্কায় ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছিলেন : “আমার কোন কথাই লিখ না। কুরআন ব্যতীত আমার নিকট কেউ অন্য কিছু লিখে থাকলে তা যেন মুছে ফেলে।” - (সহীহ মুসলিম)।
কিন্তু যেখানে এরূপ বিভ্রান্তির আশঙ্কা ছিল না মহানবী (ﷺ) সে সকল ক্ষেত্রে হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে আল্লাহর রসূল! আমি হাদীস বর্ণনা করতে চাই। তাই যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক”। তিনি বললেন : “আমার হাদীস কণ্ঠস্থ করার সাথে লিখেও রাখতে পার।” - (দারিমী)।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাদিআল্লাহু আনহু) আরও বলেন, “আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম । কতিপয় সাহাবা আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) একজন মানুষ, কখন স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন”। এ কথা বলার পর আমি হাদীস লেখা থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর তা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন : “তুমি লিখে রাখ । সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, এ মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না।” - (আবু দাউদ, মুসনাদ আহমাদ, দারিমী, হাকিম, বাইহাকী)।
তাঁর সংকলনের নাম ছিল ‘সহীফাহ্ সাদিকাহ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাদিকাহ্ হাদীসের একটি সংকলন-যা আমি নবী (ﷺ) এর নিকট শুনেছি। -(উলুমুল হাদীস)।
এ সংকলনে এক হাজার হাদীস লিপিবদ্ধ ছিল।
আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, এক আনসারী সাহাবা রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিছু মনে রাখতে পারি না। নবী (ﷺ) বললেন, “তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও”। তারপর তিনি হাতের ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন । - (তিরমিযী)।
আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (ﷺ) ভাষণ দিলেন। আবু শাহ ইয়ামানী (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ ভাষণ আমাকে লিখে দিন। নবী (ﷺ) ভাষণটি তাকে লিখে দেয়ার নির্দেশ দেন - (সহীহ বুখারী, তিরমিযী, মুসনাদ আহমাদ)।
হাসান ইবনু মুনাবিহ (রহ.) বলেন, আবু হুরাইরাহ্ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে বিপুল। সংখ্যক কিতাব (পাণ্ডুলিপি) দেখালেন তাতে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর হাদীস লিপিবদ্ধ ছিল-(ফাতহুল বারী)।
আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর সংকলনের একটি কপি (ইমাম ইবনু তাইমিয়ার হস্তলিখিত) দামিক এবং বার্লিনের লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। আনাস ইবনু মালিক (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর (স্বহস্তে লিখিত) সংকলন বের করে ছাত্রদের দেখিয়ে বলেন, আমি এসব হাদীস নবী (ﷺ) -এর নিকট শুনে তা লিখে নিয়েছি। পরে তাঁকে তা পড়ে শুনিয়েছি - (মুসতাদরাক হাকিম)।
রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে স্বয়ং রসূলুল্লাহ (ﷺ) হাদীস লিখে রাখার অনুমতি দেন। তিনি প্রচুর হাদীস লিখে রাখেন -(মুসনাদ আহমাদ)।
“আলী ইবনু আবু তালিব (রাদিআল্লাহু আনহু)-ও হাদীস লিখে রাখতেন। চামড়ার থলের মধ্যে রক্ষিত সংকলনটি তাঁর সঙ্গেই থাকত। তিনি বলতেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট থেকে এ সহীফাহ্ ও কুরআন মাজীদ ব্যতীত আর কিছু লিখিনি। সংকলনটি স্বয়ং রসূলুল্লাহ (ﷺ) লেখিয়ে ছিলেন। এতে যাকাত, রক্তপণ (দিয়াত) বন্দীমুক্ত, মদীনার হারাম এবং আরও অনেক বিষয় সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ ছিল - (বুখারীর ফাতহুল বারী)।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর পুত্র আবদুর রহমান একটি পাণ্ডুলিপি নিয়ে এসে শপথ করে বললেন, এটা ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর স্বহস্তে লিখিত - (জামি’বায়ানিল ‘ইম ১ম খণ্ড)।
স্বয়ং নবী (ﷺ) হিজরত করে মদীনায় পৌছে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন (যা মদীনার সনদ নামে খ্যাত), হুদাইবিয়ার প্রান্তরে মক্কার মুশরিকদের সাথে যে সন্ধি করেন, বিভিন্ন সময়ে যে নির্দেশ জারি করেন, বিভিন্ন গোত্রপ্রধান ও রাজন্যবর্গের কাছে ইসলামের যে দাওয়াতনামা প্রেরণ করেন। এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোত্রকে যেসব জমি, খনি ও কূপ দান করেন তা সবই লিপিবদ্ধ আকারে ছিল এবং তা সবই হাদীসরূপে গণ্য। এসব ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয় যে, নবী (ﷺ) -এর সময় থেকেই হাদীস লেখার কাজ শুরু হয়। তাঁর দরবারে বহু সংখ্যক সাহাবা সবসময়। উপস্থিত থাকতেন এবং তাঁর মুখে যে কথাই শুনতেন, তা লিখে নিতেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর আমলে অনেক সাহাবার নিকট স্বহস্তে লিখিত সংকলন বর্তমান ছিল । উদাহরণস্বরূপ ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর সহীফায়ে সাদিকাহ্ আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর সংকলন সমধিক খ্যাত।
সাহাবাগণ যেভাবেই রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট থেকে হাদীসের জ্ঞান লাভ করেন তেমনিভাবে হাজার হাজার তাবিঈ (সাহাবাদের পরের যুগ) সাহাবাগণের কাছে হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন। একমাত্র আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর নিকট আটশত তাবি’ঈ হাদীস শিক্ষা করেন। সাঈদ ইবনুল। মুসাইয়্যাব, উরগুয়াহ্ ইবনু যুবায়র, ইমাম যুহরী, হাসান বাসরী, ইবনু সিরীন, নাফি’, ইমাম যাইনুল আবিদীন, মুজাহিদ, কাযী শুরায়হ, মাসরূক, মাকহুল, ‘ইকরিমাহ, ‘আতা, কাতাদাহ, ইমাম শাবী, ‘আলকামাহ, ইবরাহীম নাখ’ঈ (রহ.) প্রমুখ প্রবীণ তাবি’ঈর প্রায় সকল দশম হিজরীর পর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৪৮ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন।
অন্যদিকে সাহাবাগণ ১১০ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন। এদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, তাবি’ঈগণ সাহাবাগণের দীর্ঘ সাহচর্য লাভ করেন। একজন তাবি’ঙ্গ বহু সংখ্যক সাহাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নবী (ﷺ) -এর জীবনের ঘটনাবলী, তার বাণী, কাজ ও সিদ্ধান্তসমূহ অবগত করেন এবং তা তাদের পরবর্তীগণ অর্থাৎ তাবি তাবিঈনের নিকট পৌছে দেন। হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরু থেকে কনিষ্ঠ তাবিঈ ও তাবি’ঈ-তাবিঈনের এক বিরাট দল সাহাবা ও প্রবীণ তাবি’ঈদের বর্ণিত ও লিখিত হাদীসগুলো। ব্যাপকভাবে একত্র করতে থাকেন। তাঁরা গোটা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র উম্মতের মধ্যে হাদীসের জ্ঞান পরিব্যাপ্ত করে দেন। এ সময় ইসলামী বিশ্বের খলীফাহ 'উমার ইবনু 'আবদুল আযীয (রহ.) দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকদের নিকট হাদীস সংগ্রহ করার জন্য রাজকীয় ফরমান প্রেরণ করেন।
ফলে সরকারী উদ্যোগে সংগৃহীত হাদীসের বিভিন্ন সংকলন রাজধানী দামিশুক পৌছতে থাকে। খলীফাহ সেগুলোর একাধিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বত্র পাঠিয়ে দেন। এ যুগের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদীস সংকলন হচ্ছে । জামি’ সুফইয়ান সাওরী, জামি’ ইবনুল মুবারক, জামি’ ইমাম আওযাঈ, জামি’ ইবনু জুরায়জ ইত্যাদি। হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত হাদীসের চর্চা আরও ব্যাপকতর হয়। এ সময়কালেই হাদীসের প্রসিদ্ধ ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ সিজিস্তানী, আবু ঈসা তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ (রহ.)-এর আবির্ভাব হয় এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফলশ্রুতিতে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ছয়খানি হাদীস গ্রন্থ (কুতুবে সিত্তাহ) সংরক্ষিত হয়। এ যুগেই ইমাম শাফিঈ (রহ.) তাঁর কিতাবুল উম্ম ও ইমাম আহমাদ (রহ.) তাঁর আল-মুসনাদ গ্রন্থ সংকলন করেন। হিজরী চতুর্থ শতকে মুসতাদরাক হাকিম, সুনানু দারাকুতনী, সহীহ ইবসু হিববান, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, তাবারানীর আল মু'জাম, মুসান্নাফুত তাহাবী এবং আরও কতিপয় হাদীস গ্রন্থ সংকলিত হয় । ইমাম বাইহাকীর সুনানু কুবরা ৫ম হিজরী শতকে সংরক্ষিত হয়। চতুর্থ শতকের পর থেকে এ পর্যন্ত সংকলিত হাদীসের মৌলিক গ্রন্থগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সংকলন ও হাদীসের ভাষ্য গ্রন্থ এবং এ শাস্ত্রের শাখাপ্রশাখার উপর ব্যাপক গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। বর্তমান কাল পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এসব সংকলনের মধ্যে তাজরীদুল সিহাহ ওয়াস্ সুনান, আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, আল মুহাল্লা, মাসাহীবুস সুন্নাহ, নাইলুল আওতার প্রভৃতি সমধিক প্রসিদ্ধ।
হাদীস চর্চাকারীর জন্য তিনি নিমোক্ত দু’আ করেছেন : “আল্লাহ সে ব্যক্তিকে সজীব ও আলোকোজ্জ্বল করে রাখুন, যে আমার কথা শুনে স্মৃতিতে ধরে রাখল, তার পূর্ণ হিফাযাত করল এবং এমন লোকের কাছে পৌছে দিল, যে তা শুনতে পায়নি।” - (তিরমিযী ২য় খণ্ড)
মহানবী (ﷺ) ‘আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দলকে প্রয়োজনীয় উপদেশ দান করে বললেন : ‘এ কথাগুলো তোমরা পুরোপুরি স্মরণ রাখবে এবং যারা তোমাদের পিছনে রয়েছে তাদের কাছে পৌছে দিবে।” - (সহীহ বুখারী)।
তিনি সাহাবাগণকে সম্বোধন করে বলেছেন : “আজ তোমরা (আমার নিকট দ্বীনের কথা) শুনছ, তোমাদের নিকট থেকেও (তা) শুনা হবে।” - (মুসতাক হাকিম ১ম খণ্ড)।
তিনি আরো বলেন : “আমার পরে লোকেরা তোমাদের নিকট হাদীস শুনতে চাইবে । তাঁরা এ উদ্দেশ্যে তোমাদের নিকট এলে তাদের প্রতি সদয় হয়ো এবং তাঁদের নিকট হাদীস বর্ণনা করো।” - (মুসনাদ আহমাদ)।
তিনি অন্যত্র বলেছেন : “আমার নিকট থেকে একটি বাক্য হলেও তা অন্যের কাছে। পৌছে দাও।” -(সহীহ বুখারী)।
অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পরের দিন এবং দশম হিজরীতে বিদায় হজ্জের ভাষণে মহানবী (ﷺ) বলেন : “উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট আমার এ কথাগুলো পৌঁছে দেয়।” - (সহীহ বুখারী)।
রসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর উল্লেখিত বাণীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তাঁর সাহাবাগণ হাদীস সংরক্ষণে উদ্যোগী হন। প্রধানতঃ তিনটি শক্তিশালী উপায়ে মহানবী (ﷺ) -এর হাদীস সংরক্ষিত হয় :
(১) উম্মাতের নিয়মিত ‘আমাল ।
(২) রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর লিখিত ডকুমেন্ট, সাহাবাদের নিকট লিখিত আকারে সংরক্ষিত হাদীস ও পুস্তিকা। এবং
(৩) হাদীস মুখস্থ করে স্মৃতি ভাণ্ডারে সঞ্চিত রাখা, অতঃপর বর্ণনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে লোক পরস্পরায় তাঁর প্রচার ।
তদানীন্তন আরবদের স্মরণশক্তি অসাধারণভাবে প্রখর ছিল। কোন কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য একবার শ্রবণই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। স্মরণশক্তির সাহায্যে আরববাসীরা হাজার বছর ধরে তাদের জাতীয় ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে আসছিল। হাদীস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপায় হিসেবে এ মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মহানবী (ﷺ) যখনই কোন কথা বলতেন, উপস্থিত সাহাবাগণ পূর্ণ আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে তা শুনতেন, অতঃপর মুখস্থ করে নিতেন। তদানীন্তন মুসলিম সমাজে প্রায় এক লক্ষ লোক রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর বাণী ও কাজের বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন এবং স্মৃতিপটে ধরে রেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, “আমরা রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর হাদীস মুখস্থ করতাম।” (সহীহ মুসলিম)
উম্মাতের নীরবিচ্ছিন্ন ‘আমাল, পারস্পরিক পর্যালোচনা, শিক্ষাদানের মাধ্যমেও হাদীস সংরক্ষিত হয় । রসূলুল্লাহ (ﷺ) যে নির্দেশই দিতেন, সাহাবাগণ সাথে সাথে তা কার্যে পরিণত করতেন। তাঁরা মাসজিদ অথবা কোন নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হতেন এবং হাদীস আলোচনা করতেন। আনাস ইবনু মালিক (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, “আমরা মহানবী (ﷺ) -এর নিকট হাদীস শুনতাম। তিনি যখন মাজলিস থেকে উঠে চলে যেতেন, আমরা শোনা হাদীসগুলো পরস্পর পুনরাবৃত্তি ও পর্যালোচনা করতাম। আমাদের এক একজন করে সবাই হাদীসগুলো মুখস্থ শুনিয়ে দিতেন। এ ধরনের প্রায় বৈঠকেই অন্তত ষাট-সত্তরজন লোক উপস্থিত থাকতেন। বৈঠক থেকে আমরা যখন উঠে যেতাম তখন আমাদের প্রত্যেকেরই সবকিছু মুখস্থ হয়ে যেত। (আল-মাজমাউয যাওমাউয যাওয়ায়িদ ১ম খণ্ড)
মাসজিদে নাবাবীকে কেন্দ্র করে স্বয়ং নবী (ﷺ) -এর জীবদ্দশায় যে শিক্ষালয় গড়ে উঠেছিল সেখানে একদল বিশিষ্ট সাহাবা (আহলুস সুফফাহ) সার্বক্ষণিকভাবে কুরআন-হাদীস শিক্ষায় রত থাকতেন। হাদীস সংরক্ষণের জন্য যথাসময়ে যথেষ্ট পরিমাণে লেখনী শক্তিরও সাহায্য নেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুরআন মাজীদ ব্যতীত সাধারণতঃ অন্য কিছু লিখে রাখা হতো না। পরবর্তীকালে হাদীসের বিরাট সম্পদ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। হাদীস নবী (ﷺ) -এর জীবদ্দশায় লিপিবদ্ধ হয়নি, বরং তাঁর ইন্তিকালের শতাব্দীকাল পর লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে যে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে তার আদৌ কোন ভিত্তি নেই । অবশ্য এ কথা ঠিক যে, কুরআনের সঙ্গে হাদীস মিশ্রিত হয়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে কেবল এ আশঙ্কায় ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছিলেন : “আমার কোন কথাই লিখ না। কুরআন ব্যতীত আমার নিকট কেউ অন্য কিছু লিখে থাকলে তা যেন মুছে ফেলে।” - (সহীহ মুসলিম)।
কিন্তু যেখানে এরূপ বিভ্রান্তির আশঙ্কা ছিল না মহানবী (ﷺ) সে সকল ক্ষেত্রে হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে আল্লাহর রসূল! আমি হাদীস বর্ণনা করতে চাই। তাই যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক”। তিনি বললেন : “আমার হাদীস কণ্ঠস্থ করার সাথে লিখেও রাখতে পার।” - (দারিমী)।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাদিআল্লাহু আনহু) আরও বলেন, “আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম । কতিপয় সাহাবা আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) একজন মানুষ, কখন স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন”। এ কথা বলার পর আমি হাদীস লেখা থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর তা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন : “তুমি লিখে রাখ । সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, এ মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না।” - (আবু দাউদ, মুসনাদ আহমাদ, দারিমী, হাকিম, বাইহাকী)।
তাঁর সংকলনের নাম ছিল ‘সহীফাহ্ সাদিকাহ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাদিকাহ্ হাদীসের একটি সংকলন-যা আমি নবী (ﷺ) এর নিকট শুনেছি। -(উলুমুল হাদীস)।
এ সংকলনে এক হাজার হাদীস লিপিবদ্ধ ছিল।
আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, এক আনসারী সাহাবা রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিছু মনে রাখতে পারি না। নবী (ﷺ) বললেন, “তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও”। তারপর তিনি হাতের ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন । - (তিরমিযী)।
আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (ﷺ) ভাষণ দিলেন। আবু শাহ ইয়ামানী (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ ভাষণ আমাকে লিখে দিন। নবী (ﷺ) ভাষণটি তাকে লিখে দেয়ার নির্দেশ দেন - (সহীহ বুখারী, তিরমিযী, মুসনাদ আহমাদ)।
হাসান ইবনু মুনাবিহ (রহ.) বলেন, আবু হুরাইরাহ্ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে বিপুল। সংখ্যক কিতাব (পাণ্ডুলিপি) দেখালেন তাতে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর হাদীস লিপিবদ্ধ ছিল-(ফাতহুল বারী)।
আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর সংকলনের একটি কপি (ইমাম ইবনু তাইমিয়ার হস্তলিখিত) দামিক এবং বার্লিনের লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। আনাস ইবনু মালিক (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর (স্বহস্তে লিখিত) সংকলন বের করে ছাত্রদের দেখিয়ে বলেন, আমি এসব হাদীস নবী (ﷺ) -এর নিকট শুনে তা লিখে নিয়েছি। পরে তাঁকে তা পড়ে শুনিয়েছি - (মুসতাদরাক হাকিম)।
রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে স্বয়ং রসূলুল্লাহ (ﷺ) হাদীস লিখে রাখার অনুমতি দেন। তিনি প্রচুর হাদীস লিখে রাখেন -(মুসনাদ আহমাদ)।
“আলী ইবনু আবু তালিব (রাদিআল্লাহু আনহু)-ও হাদীস লিখে রাখতেন। চামড়ার থলের মধ্যে রক্ষিত সংকলনটি তাঁর সঙ্গেই থাকত। তিনি বলতেন, আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট থেকে এ সহীফাহ্ ও কুরআন মাজীদ ব্যতীত আর কিছু লিখিনি। সংকলনটি স্বয়ং রসূলুল্লাহ (ﷺ) লেখিয়ে ছিলেন। এতে যাকাত, রক্তপণ (দিয়াত) বন্দীমুক্ত, মদীনার হারাম এবং আরও অনেক বিষয় সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ ছিল - (বুখারীর ফাতহুল বারী)।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর পুত্র আবদুর রহমান একটি পাণ্ডুলিপি নিয়ে এসে শপথ করে বললেন, এটা ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর স্বহস্তে লিখিত - (জামি’বায়ানিল ‘ইম ১ম খণ্ড)।
স্বয়ং নবী (ﷺ) হিজরত করে মদীনায় পৌছে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন (যা মদীনার সনদ নামে খ্যাত), হুদাইবিয়ার প্রান্তরে মক্কার মুশরিকদের সাথে যে সন্ধি করেন, বিভিন্ন সময়ে যে নির্দেশ জারি করেন, বিভিন্ন গোত্রপ্রধান ও রাজন্যবর্গের কাছে ইসলামের যে দাওয়াতনামা প্রেরণ করেন। এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোত্রকে যেসব জমি, খনি ও কূপ দান করেন তা সবই লিপিবদ্ধ আকারে ছিল এবং তা সবই হাদীসরূপে গণ্য। এসব ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয় যে, নবী (ﷺ) -এর সময় থেকেই হাদীস লেখার কাজ শুরু হয়। তাঁর দরবারে বহু সংখ্যক সাহাবা সবসময়। উপস্থিত থাকতেন এবং তাঁর মুখে যে কথাই শুনতেন, তা লিখে নিতেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর আমলে অনেক সাহাবার নিকট স্বহস্তে লিখিত সংকলন বর্তমান ছিল । উদাহরণস্বরূপ ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর সহীফায়ে সাদিকাহ্ আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর সংকলন সমধিক খ্যাত।
সাহাবাগণ যেভাবেই রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট থেকে হাদীসের জ্ঞান লাভ করেন তেমনিভাবে হাজার হাজার তাবিঈ (সাহাবাদের পরের যুগ) সাহাবাগণের কাছে হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন। একমাত্র আবু হুরাইরাহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর নিকট আটশত তাবি’ঈ হাদীস শিক্ষা করেন। সাঈদ ইবনুল। মুসাইয়্যাব, উরগুয়াহ্ ইবনু যুবায়র, ইমাম যুহরী, হাসান বাসরী, ইবনু সিরীন, নাফি’, ইমাম যাইনুল আবিদীন, মুজাহিদ, কাযী শুরায়হ, মাসরূক, মাকহুল, ‘ইকরিমাহ, ‘আতা, কাতাদাহ, ইমাম শাবী, ‘আলকামাহ, ইবরাহীম নাখ’ঈ (রহ.) প্রমুখ প্রবীণ তাবি’ঈর প্রায় সকল দশম হিজরীর পর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৪৮ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন।
অন্যদিকে সাহাবাগণ ১১০ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন। এদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, তাবি’ঈগণ সাহাবাগণের দীর্ঘ সাহচর্য লাভ করেন। একজন তাবি’ঙ্গ বহু সংখ্যক সাহাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নবী (ﷺ) -এর জীবনের ঘটনাবলী, তার বাণী, কাজ ও সিদ্ধান্তসমূহ অবগত করেন এবং তা তাদের পরবর্তীগণ অর্থাৎ তাবি তাবিঈনের নিকট পৌছে দেন। হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরু থেকে কনিষ্ঠ তাবিঈ ও তাবি’ঈ-তাবিঈনের এক বিরাট দল সাহাবা ও প্রবীণ তাবি’ঈদের বর্ণিত ও লিখিত হাদীসগুলো। ব্যাপকভাবে একত্র করতে থাকেন। তাঁরা গোটা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র উম্মতের মধ্যে হাদীসের জ্ঞান পরিব্যাপ্ত করে দেন। এ সময় ইসলামী বিশ্বের খলীফাহ 'উমার ইবনু 'আবদুল আযীয (রহ.) দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকদের নিকট হাদীস সংগ্রহ করার জন্য রাজকীয় ফরমান প্রেরণ করেন।
ফলে সরকারী উদ্যোগে সংগৃহীত হাদীসের বিভিন্ন সংকলন রাজধানী দামিশুক পৌছতে থাকে। খলীফাহ সেগুলোর একাধিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বত্র পাঠিয়ে দেন। এ যুগের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদীস সংকলন হচ্ছে । জামি’ সুফইয়ান সাওরী, জামি’ ইবনুল মুবারক, জামি’ ইমাম আওযাঈ, জামি’ ইবনু জুরায়জ ইত্যাদি। হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত হাদীসের চর্চা আরও ব্যাপকতর হয়। এ সময়কালেই হাদীসের প্রসিদ্ধ ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ সিজিস্তানী, আবু ঈসা তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ (রহ.)-এর আবির্ভাব হয় এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফলশ্রুতিতে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ছয়খানি হাদীস গ্রন্থ (কুতুবে সিত্তাহ) সংরক্ষিত হয়। এ যুগেই ইমাম শাফিঈ (রহ.) তাঁর কিতাবুল উম্ম ও ইমাম আহমাদ (রহ.) তাঁর আল-মুসনাদ গ্রন্থ সংকলন করেন। হিজরী চতুর্থ শতকে মুসতাদরাক হাকিম, সুনানু দারাকুতনী, সহীহ ইবসু হিববান, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, তাবারানীর আল মু'জাম, মুসান্নাফুত তাহাবী এবং আরও কতিপয় হাদীস গ্রন্থ সংকলিত হয় । ইমাম বাইহাকীর সুনানু কুবরা ৫ম হিজরী শতকে সংরক্ষিত হয়। চতুর্থ শতকের পর থেকে এ পর্যন্ত সংকলিত হাদীসের মৌলিক গ্রন্থগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সংকলন ও হাদীসের ভাষ্য গ্রন্থ এবং এ শাস্ত্রের শাখাপ্রশাখার উপর ব্যাপক গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। বর্তমান কাল পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এসব সংকলনের মধ্যে তাজরীদুল সিহাহ ওয়াস্ সুনান, আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, আল মুহাল্লা, মাসাহীবুস সুন্নাহ, নাইলুল আওতার প্রভৃতি সমধিক প্রসিদ্ধ।
হাদীস শাস্ত্রবিদগণ হাদীসকে সংজ্ঞা, সনদ ও রাবীর সংখ্যার ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন। প্রথমতঃ সংজ্ঞার ভিত্তিতে হাদীস তিন প্রকার যথা :
১. কওলী : কথা জাতীয় হাদীসকে কৃওলী হাদীস বলে। যেমন বলা হলো- ‘রসূল (ﷺ) বলেছেন’
২. ফে’লী : কাজ-কর্ম ও বিবরণ সম্বলিত হাদীসকে ফে’লী হাদীস বলে। যেমন : “আবু মূসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রসূল (ﷺ) -কে মোরগের গোশত খেতে দেখেছি।
৩. তাকরীরি : অনুমোদন ও সমর্থনসূচক কথা ও কাজকে তাকরীরি হাদীস বলে। যেমন : ইবনে আওফা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন : আমরা রসূল (ﷺ) -এর সাথে সাতটি যুদ্ধ করেছি। আমরা তাঁর সাথে ফড়িং জাতীয় চড়ই খেতাম।
১. কওলী : কথা জাতীয় হাদীসকে কৃওলী হাদীস বলে। যেমন বলা হলো- ‘রসূল (ﷺ) বলেছেন’
২. ফে’লী : কাজ-কর্ম ও বিবরণ সম্বলিত হাদীসকে ফে’লী হাদীস বলে। যেমন : “আবু মূসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রসূল (ﷺ) -কে মোরগের গোশত খেতে দেখেছি।
৩. তাকরীরি : অনুমোদন ও সমর্থনসূচক কথা ও কাজকে তাকরীরি হাদীস বলে। যেমন : ইবনে আওফা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন : আমরা রসূল (ﷺ) -এর সাথে সাতটি যুদ্ধ করেছি। আমরা তাঁর সাথে ফড়িং জাতীয় চড়ই খেতাম।
শায়খাইন : ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমকে একত্রে শায়খাইন বলে।
সহীহাইন : বুখারী ও মুসলিম হাদীসগ্রন্থদ্বয়কে একত্রে সহীহাইন বলে।
মুত্তাফিক্ আলাইহঃ যে হাদীস একই সাহাবী হতে ইমাম বুখারী (রহ.) ও ইমাম মুসলিম (রহ.) উভয়েই সহীহ কিতাবদ্বয়ে গ্রহণ করেছেন তাকে ‘মুত্তাফিক্ব আলাইহ’ বলে ।
সিহাহ সিত্তাহও ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীসের কিতাব । কারো মতে ইবনে মাযার পরিবর্তে মুয়াত্তা ইমাম মালেক বিশুদ্ধ ছয় গ্রন্থের অন্তর্গত।
মুতাওয়াতির হাদীস : যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগেই এত অধিক রাবী বর্ণনা করেছেন যাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য একত্রিত হওয়া সাধারণত অসম্ভব এমন হাদীসকে মুতাওয়াতির হাদীস বলা হয় ।
মারফু হাদীস : যে হাদীসের সানাদ বা বর্ণনা সূত্র রসূলুল্লাহ ও পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। অর্থাৎ যে হাদীসে আল্লাহর রসূল (ﷺ) -এর কথা, কাজ অনুমোদন। বর্ণিত হয়েছে তাকে মারফু হাদীস বলে ।
মাওকুফ হাদীসঃ যে হাদীসের সানাদ বা বর্ণনা সূত্র সাহাবী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। অর্থাৎ যে হাদীসে সাহাবীর কথা, কাজ অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে। তাকে মাওকুফ হাদীস বলে।
মাকতু হাদীস : যে হাদীসের সানাদ বা বর্ণনা সূত্র তাবিঈ পর্যন্ত গিয়ে পৌছেছে তাকে মাকতু হাদীস বলে ।
মুআল্পাক হাদীস : যে হাদীসে সানাদের প্রথম থেকে এক বা একাধিক রাবী বিলুপ্ত হয়েছে তাকে মুআল্লাক হাদীস বলে। মুআল্লাক ও অনুরূপ হাদীসগুলো প্রত্যাখ্যাত হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
সহীহাইন : বুখারী ও মুসলিম হাদীসগ্রন্থদ্বয়কে একত্রে সহীহাইন বলে।
মুত্তাফিক্ আলাইহঃ যে হাদীস একই সাহাবী হতে ইমাম বুখারী (রহ.) ও ইমাম মুসলিম (রহ.) উভয়েই সহীহ কিতাবদ্বয়ে গ্রহণ করেছেন তাকে ‘মুত্তাফিক্ব আলাইহ’ বলে ।
সিহাহ সিত্তাহও ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীসের কিতাব । কারো মতে ইবনে মাযার পরিবর্তে মুয়াত্তা ইমাম মালেক বিশুদ্ধ ছয় গ্রন্থের অন্তর্গত।
মুতাওয়াতির হাদীস : যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগেই এত অধিক রাবী বর্ণনা করেছেন যাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য একত্রিত হওয়া সাধারণত অসম্ভব এমন হাদীসকে মুতাওয়াতির হাদীস বলা হয় ।
মারফু হাদীস : যে হাদীসের সানাদ বা বর্ণনা সূত্র রসূলুল্লাহ ও পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। অর্থাৎ যে হাদীসে আল্লাহর রসূল (ﷺ) -এর কথা, কাজ অনুমোদন। বর্ণিত হয়েছে তাকে মারফু হাদীস বলে ।
মাওকুফ হাদীসঃ যে হাদীসের সানাদ বা বর্ণনা সূত্র সাহাবী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। অর্থাৎ যে হাদীসে সাহাবীর কথা, কাজ অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে। তাকে মাওকুফ হাদীস বলে।
মাকতু হাদীস : যে হাদীসের সানাদ বা বর্ণনা সূত্র তাবিঈ পর্যন্ত গিয়ে পৌছেছে তাকে মাকতু হাদীস বলে ।
মুআল্পাক হাদীস : যে হাদীসে সানাদের প্রথম থেকে এক বা একাধিক রাবী বিলুপ্ত হয়েছে তাকে মুআল্লাক হাদীস বলে। মুআল্লাক ও অনুরূপ হাদীসগুলো প্রত্যাখ্যাত হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
প্রথম স্তর : কেবল সহীহ পর্যায়ের হাদীসসমূহ যে গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। সেগুলো প্রথম স্তরের হাদীস গ্রন্থ। মুয়াত্তা ইমাম মালেক, সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিম এই তিনখানি বিশ্বখ্যাত হাদীসগ্রন্থ এই পর্যায়ের।
দ্বিতীয় স্তর : এ স্তরের কিতাবে সাধারণতঃ সহীহ ও হাসান হাদীস রয়েছে। সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী ও জামে তিরমিযী ২য় স্তরের হাদীস গ্রন্থ।
তৃতীয় স্তর : প্রথম দ্বিতীয় স্তরের হাদীস গ্রন্থ সংকলিত হওয়ার আগে বা পরে কিংবা সমকালে যেসব হাদীস গ্রন্থাবন্ধ হয়েছে বটে কিন্তু তাতে সহীহ, হাসান, যঈফ, শাজ, মুনকার ইত্যাদি সকল প্রকারের হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে সেসব কিতাব ৩য় স্তরের পর্যায়ভুক্ত। বায়হাকী, তিবরানীর ইত্যাদি গ্রন্থাবলী তৃতীয় স্তরের কিতাব। এসব হাদীস গ্রন্থ সংকলনে গ্রন্থকারদের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাপ্ত হাদীসসমূহ একত্র করে শুধুমাত্র সংরক্ষণ করা।
চতুর্থ স্তর : সাধারণতঃ অগ্রহণযোগ্য বা যঈফ হাদীস যে কিতাবে সন্নিবেশিত হয়েছে সেগুলি এ স্তরের কিতাব । অপ্রখ্যাত ও অজ্ঞাত রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসসমূহ প্রখ্যাত গ্রন্থকারগণ তাদের কিতাবে শামিল করতে স্বীকার করেননি। কেননা এগুলো আদৌ হাদীস ছিল কি-না তা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। এগুলো সাহাবী কিংবা তাবেয়ীর উক্তি কিংবা বনি ইসরাইলদের কিচ্ছা কাহিনী অথবা দার্শনিক বা ওয়ায়েজদের কথার ফুলঝুড়ি ছিল যা উত্তরকালে ভুলক্রমে রসূলের হাদীসের সাথে মিশে যায় ।
পঞ্চম স্তর : যেসব হাদীস কোনো কোনো ফিকাহবিদ, সুফী, ওয়ায়েজ ও ঐতিহাসিকদের মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছে, উপরোক্ত স্তরের সাথে কোনো সাদৃশ্য নেই এবং বাক চাতুর্য, আল্লাহ বিমুখ লোকদের মনগড়া হাদীস যেসব গ্রন্থে স্থান পেয়েছে সেগুলি ৫ম স্তরের কিতাব ।
দ্বিতীয় স্তর : এ স্তরের কিতাবে সাধারণতঃ সহীহ ও হাসান হাদীস রয়েছে। সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী ও জামে তিরমিযী ২য় স্তরের হাদীস গ্রন্থ।
তৃতীয় স্তর : প্রথম দ্বিতীয় স্তরের হাদীস গ্রন্থ সংকলিত হওয়ার আগে বা পরে কিংবা সমকালে যেসব হাদীস গ্রন্থাবন্ধ হয়েছে বটে কিন্তু তাতে সহীহ, হাসান, যঈফ, শাজ, মুনকার ইত্যাদি সকল প্রকারের হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে সেসব কিতাব ৩য় স্তরের পর্যায়ভুক্ত। বায়হাকী, তিবরানীর ইত্যাদি গ্রন্থাবলী তৃতীয় স্তরের কিতাব। এসব হাদীস গ্রন্থ সংকলনে গ্রন্থকারদের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাপ্ত হাদীসসমূহ একত্র করে শুধুমাত্র সংরক্ষণ করা।
চতুর্থ স্তর : সাধারণতঃ অগ্রহণযোগ্য বা যঈফ হাদীস যে কিতাবে সন্নিবেশিত হয়েছে সেগুলি এ স্তরের কিতাব । অপ্রখ্যাত ও অজ্ঞাত রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসসমূহ প্রখ্যাত গ্রন্থকারগণ তাদের কিতাবে শামিল করতে স্বীকার করেননি। কেননা এগুলো আদৌ হাদীস ছিল কি-না তা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। এগুলো সাহাবী কিংবা তাবেয়ীর উক্তি কিংবা বনি ইসরাইলদের কিচ্ছা কাহিনী অথবা দার্শনিক বা ওয়ায়েজদের কথার ফুলঝুড়ি ছিল যা উত্তরকালে ভুলক্রমে রসূলের হাদীসের সাথে মিশে যায় ।
পঞ্চম স্তর : যেসব হাদীস কোনো কোনো ফিকাহবিদ, সুফী, ওয়ায়েজ ও ঐতিহাসিকদের মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছে, উপরোক্ত স্তরের সাথে কোনো সাদৃশ্য নেই এবং বাক চাতুর্য, আল্লাহ বিমুখ লোকদের মনগড়া হাদীস যেসব গ্রন্থে স্থান পেয়েছে সেগুলি ৫ম স্তরের কিতাব ।
আলহামদুলিল্লাহ, আজকাল অনেক বক্তা তার বক্তৃতায় হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়ার সময় রেফারেন্স উল্লেখ করেন। যেমন বলেন : সহীহ বুখারী হাদীস # ২৫৪৫ অথবা বলেন সহীহ বুখারী পৃষ্ঠা # ৫২৬, খন্ড নম্বর ৮ অথবা সবগুলোই উল্লেখ করেন। সহীহ বুখারীতে ইমাম বুখারী যে অরিজিনাল সিরিয়াল নম্বর দিয়ে গেছেন তা বাংলাদেশের তাওহীদ প্রকাশনী এবং সৌদিআরবের দারুস সালাম প্রকাশনী সিরিয়াল ঠিক রেখে ছাপিয়েছেন। কিন্তু আমরা জানি বাজারে আরো বিভিন্ন প্রকাশনীর সহীহ বুখারী রয়েছে, শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় সহীহ বুখারী রয়েছে। মূল বুখারী থেকে বেশীর ভাগ প্রকাশনীর হাদীসের সিরিয়াল নম্বর এবং পৃষ্ঠা নম্বর এবং খন্ড নম্বর এক নয়। এখন প্রশ্ন, বক্তা কোন দেশের কোন প্রকাশনীর কোন ভাষার সহীহ বুখারীর হাদীস নম্বরটি উল্লেখ করেছেন বা পৃষ্ঠা নম্বরটি উল্লেখ করেছেন সেটি উল্লেখ করা প্রয়োজন। তা না হলে কেউ যদি ক্রস চেক করতে চান তাহলে তা আর খুঁজে পাবেন না । হ্যা, যদি বক্তা অরিজিনাল বুখারীর সিরিয়াল নম্বর উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন তা হলে ঠিক আছে। এছাড়া অন্য কোন প্রকাশনীর হলে তার নাম উল্লেখ করা অবশ্যই প্রয়োজন ।
হাদীসের নীতি শাস্ত্রের পরিভাষায় মাওজু হাদীস হলো - নিজের মনগড়া বানানো কথাকে রসূল (ﷺ) -এর বাণী বলে পরিচয় দেয়া। হাফিজ ইবনে কাছীর প্রনীত - চরম মিথ্যাবাদী অপবাদকারীরা রসূল (ﷺ) -এর প্রতি যা সম্বোধন করে তাই ‘মাওজু বা জাল হাদীস । আদেশ-নিষেধ, বৈধ-অবৈধ, হালাল-হারাম, কিচ্ছা-কাহিনী, আকর্ষণ-বিকর্ষণ, ইবাদত-বন্দেগী মোটকথা ইসলামী শরিয়াতের যে কোনো ক্ষেত্রে যে কোনো বিষয়ের উপর মাওজু হাদীস বর্ণনা করা কিংবা হাদীস জাল করা সম্পূর্ণ হারাম।
১. কথিত হাদীসের রাবী মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা কাজ করা এবং জাল ও বানানোর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ ও পরিচিত হওয়া। পরিচিত মিথ্যকের বর্ণিত কথিত হাদীস মওজু বা জাল হওয়া সহজেই অনুমেয়।
২. রাবী যদি এমন শায়খ বা উস্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস বর্ণনা করেন যার সাথে রাবীর সাক্ষাৎ হওয়ার প্রমাণ নেই কিংবা বর্ণিত সময়ের আগেই ঐ শায়খের মৃত্যু হয়ে গেছে বলে প্রমাণিত হয় ।
১. কথিত হাদীসের রাবী মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা কাজ করা এবং জাল ও বানানোর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ ও পরিচিত হওয়া। পরিচিত মিথ্যকের বর্ণিত কথিত হাদীস মওজু বা জাল হওয়া সহজেই অনুমেয়।
২. রাবী যদি এমন শায়খ বা উস্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস বর্ণনা করেন যার সাথে রাবীর সাক্ষাৎ হওয়ার প্রমাণ নেই কিংবা বর্ণিত সময়ের আগেই ঐ শায়খের মৃত্যু হয়ে গেছে বলে প্রমাণিত হয় ।
১. প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে জালকারী নিজেই জালকরণের কথা স্বীকার করা ও শয়তানের প্ররোচনা অথবা হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কোনো জালকারী এক সময়ে হাদীস জাল করে। পরবর্তীতে সে তাওবাহ করতঃ স্বীকার করেছে যে, আমি অমুক অমুক হাদীস জাল করেছি। যেমন আমার বিন ছাবাহ বিন ইমরান আল-তামিনী বলেন‘আমি নবী মুস্তফা (ﷺ) -এর খুতবাহ জাল করেছি। মাইসারাহ বিন আযদ রাবিহী স্বীকার করেন যে, তিনি শুধুমাত্র ফজিলতের ৭০টি হাদীস জাল করেছেন।
২. কথিত হাদীস কুরআনের নির্দেশ কিংবা মুতাওয়াতের হাদীসের সুস্পষ্ট বিধানের বিপরীত হওয়া। আল্লামা সুয়ূতী (রহ.) তাদবীর কিতাবে ইবনে জাওজীর কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : যখন দেখবে জাল হাদীসটি বিবেকের বিপরীত অথবা বিবৃত হাদীসের খেলাফ কিংবা স্বীকৃত নীতিমালার বিরোধী তখন এ ধরনের হাদীসকেই মাওজু বা জাল হাদীস বলে জেনে নিও । উদাহরণ স্বরূপ ও জারজ সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অথচ আল্লাহর বাণীতে রয়েছে : “এবং কোনো বোঝা বহনকারীই অপর কারো পাপের বোঝা বহন করবে না”। কথিত হাদীসটি এই আয়াতের বিপরীত হওয়ায় হাদীসটি জাল হওয়া প্রমাণিত।
৩. বর্ণনাকারীর ধরন কিংবা বর্ণিত হাদীসের লক্ষণেই বুঝা যায় যে, হাদীসটি জাল। যেমন
“তোমাদের শিশুদের শিক্ষকরা তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির। ইয়াতিম ছেলেদের প্রতি তাদের দয়া নেই, মিসকিনদের প্রতি তারা খুবই রূঢ়।
৪. কথিত হাদীসের মতনে হাস্যকর কিংবা চাতুর্যপূর্ণ শব্দ থাকা। যেমন ‘মোরগকে ভর্ৎসনা করো না। কেননা মোরগ আমার বন্ধু ।
৫. কথিত হাদীস সাধারণ বিবেক বুদ্ধির বিপরীত হওয়া। যেমন- ‘বেগুন সকল রোগের প্রতিষেধক।
৬. কথিত হাদীসে এমন বিষয়ের উল্লেখ করা যা তৎকালিন সমস্ত মুসলিমেরই জ্ঞাত হওয়া সম্ভব ছিল অথচ হাদীসটি রাবী ছাড়া আর কেই জানে না। যেমন‘নবী মুস্তফা (ﷺ) বিদায় হাজ্জ থেকে ফেরার সময় গাদীরেখাম নামক স্থানে ১ লাখেরও অধিক সাহাবীর বিরাট সমাবেশে আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে খিলাফত দান করেন।
৭. রসূল (ﷺ) -এর বংশের লোকদের অতিরিক্ত প্রশংসা করা এবং সাহাবীদের গালি-গালাজ করা! এ ধরনের রেওয়ায়েত জাল হবে। বিশেষতঃ প্রথম ও দ্বিতীয় খলীফাদ্বয়ের ভৎসনা ও আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-র খিলাফতকে তাদের উপর অগ্রাধিকার দেয়ার হাদীস মনগড়া। যেমন হাদীস বলা হলো এভাবে ‘জান্নাতে এমন কোন বৃক্ষ নেই যার পাতায় লিখা আছে : লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ, আবু বকর ও ওমর এবং ওসমান জিন্নুরাইন। হাদীসটি যে বাড়াবাড়ি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
৮. সাধারণ ও গুরুত্বহীন কাজ বা কথার জন্যে কঠোর আযাব কিংবা সামান্য কাজ বা কথায় অসামান্য ও বিরাট পুরস্কারের ওয়াদাপূর্ণ হাদীসও জাল । যেসব হাদীস সাধারণ কাজের জন্য কঠোর আযাব অথবা সহজ কাজের জন্যে বিরাট প্রতিদান সম্বলিত তা জাল। এই শেষ প্রকারের জাল হাদীস কিচ্ছা কাহিনীকার ওয়ায়েজীন ও সুফীদের মধ্যে বেশী পাওয়া যায়। যেমন বলা হয় : ‘যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়বে আল্লাহ তার জন্যে প্রতিটি বাক্যের বিনিময়ে একটি পাখী সৃষ্টি করবেন যার ৭০ হাজার মুখ হবে এবং প্রতি ৭০ হাজার মুখের ভাষা হবে ৭০ হাজার। এভাবে (৭০X৭০ হাজার) কালেমা পাঠকের জন্যে তারা আল্লাহর কাছে ‘ইসতেগফার’ করবে ।
২. কথিত হাদীস কুরআনের নির্দেশ কিংবা মুতাওয়াতের হাদীসের সুস্পষ্ট বিধানের বিপরীত হওয়া। আল্লামা সুয়ূতী (রহ.) তাদবীর কিতাবে ইবনে জাওজীর কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : যখন দেখবে জাল হাদীসটি বিবেকের বিপরীত অথবা বিবৃত হাদীসের খেলাফ কিংবা স্বীকৃত নীতিমালার বিরোধী তখন এ ধরনের হাদীসকেই মাওজু বা জাল হাদীস বলে জেনে নিও । উদাহরণ স্বরূপ ও জারজ সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অথচ আল্লাহর বাণীতে রয়েছে : “এবং কোনো বোঝা বহনকারীই অপর কারো পাপের বোঝা বহন করবে না”। কথিত হাদীসটি এই আয়াতের বিপরীত হওয়ায় হাদীসটি জাল হওয়া প্রমাণিত।
৩. বর্ণনাকারীর ধরন কিংবা বর্ণিত হাদীসের লক্ষণেই বুঝা যায় যে, হাদীসটি জাল। যেমন
“তোমাদের শিশুদের শিক্ষকরা তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির। ইয়াতিম ছেলেদের প্রতি তাদের দয়া নেই, মিসকিনদের প্রতি তারা খুবই রূঢ়।
৪. কথিত হাদীসের মতনে হাস্যকর কিংবা চাতুর্যপূর্ণ শব্দ থাকা। যেমন ‘মোরগকে ভর্ৎসনা করো না। কেননা মোরগ আমার বন্ধু ।
৫. কথিত হাদীস সাধারণ বিবেক বুদ্ধির বিপরীত হওয়া। যেমন- ‘বেগুন সকল রোগের প্রতিষেধক।
৬. কথিত হাদীসে এমন বিষয়ের উল্লেখ করা যা তৎকালিন সমস্ত মুসলিমেরই জ্ঞাত হওয়া সম্ভব ছিল অথচ হাদীসটি রাবী ছাড়া আর কেই জানে না। যেমন‘নবী মুস্তফা (ﷺ) বিদায় হাজ্জ থেকে ফেরার সময় গাদীরেখাম নামক স্থানে ১ লাখেরও অধিক সাহাবীর বিরাট সমাবেশে আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে খিলাফত দান করেন।
৭. রসূল (ﷺ) -এর বংশের লোকদের অতিরিক্ত প্রশংসা করা এবং সাহাবীদের গালি-গালাজ করা! এ ধরনের রেওয়ায়েত জাল হবে। বিশেষতঃ প্রথম ও দ্বিতীয় খলীফাদ্বয়ের ভৎসনা ও আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-র খিলাফতকে তাদের উপর অগ্রাধিকার দেয়ার হাদীস মনগড়া। যেমন হাদীস বলা হলো এভাবে ‘জান্নাতে এমন কোন বৃক্ষ নেই যার পাতায় লিখা আছে : লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ, আবু বকর ও ওমর এবং ওসমান জিন্নুরাইন। হাদীসটি যে বাড়াবাড়ি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
৮. সাধারণ ও গুরুত্বহীন কাজ বা কথার জন্যে কঠোর আযাব কিংবা সামান্য কাজ বা কথায় অসামান্য ও বিরাট পুরস্কারের ওয়াদাপূর্ণ হাদীসও জাল । যেসব হাদীস সাধারণ কাজের জন্য কঠোর আযাব অথবা সহজ কাজের জন্যে বিরাট প্রতিদান সম্বলিত তা জাল। এই শেষ প্রকারের জাল হাদীস কিচ্ছা কাহিনীকার ওয়ায়েজীন ও সুফীদের মধ্যে বেশী পাওয়া যায়। যেমন বলা হয় : ‘যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়বে আল্লাহ তার জন্যে প্রতিটি বাক্যের বিনিময়ে একটি পাখী সৃষ্টি করবেন যার ৭০ হাজার মুখ হবে এবং প্রতি ৭০ হাজার মুখের ভাষা হবে ৭০ হাজার। এভাবে (৭০X৭০ হাজার) কালেমা পাঠকের জন্যে তারা আল্লাহর কাছে ‘ইসতেগফার’ করবে ।
হাদীস শাস্ত্রকে নির্ভেজাল, নিখাদ ও বিশুদ্ধ রাখার জন্যে ইসলামী চিন্তাবিদ ও হাদীস শাস্ত্রে অভিজ্ঞ স্কলারগণ আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও গবেষণার ফলে হাদীস যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা ও সমালোচনা যে বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তিগ্রাহ্য পদ্ধতির উৎপত্তি হয় তাকে সমালোচনা ও সামঞ্জস্য বিধায়ক জ্ঞান বলে। এই বিশেষ পদ্ধতির পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে ।
আমরা দেখতে পাই শব্দগত দিক থেকে হাদীসের দুটি অংশ। প্রথম অংশটি সনদ, আর দ্বিতীয় অংশটি হলো মতন। সনদের (হাদীস বর্ণনাকারীদের পরস্পরা নামসমূহ) যাচাই-বাছাই ও সমালোচনা করা হয় পদ্ধতির মাধ্যমে। কেননা হাদীস বর্ণনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনচরিত সম্পর্কে সূক্ষ্মভাবে জ্ঞাত হওয়া জরুরী।
অর্থাৎ হাদীসে উল্লেখিত সাহাবা (রাদিআল্লাহু আনহু), তাবেয়ী ও রাবীদের সম্পর্কিত ইলম। এই ইলম হলো হাদীসের অর্ধেক জ্ঞান। পদ্ধতির মাধ্যমে সনদে উল্লেখিত রাবীদের জীবন চরিত্রের যে দিকগুলো সূক্ষ্মতিসূক্ষ্মভাবে দেখা হয় তা এই :
১. রাবী কি ধরনের লোক।
২. রাবীর চারিত্রিক দোষ-গুণ কেমন।
৩. রাবীর ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান কতটুকু আয়ত্ত ।
৪. রাবীর উপলব্ধি ও বোধশক্তি কতটুকু প্রখর ও উন্নত।
৫. স্মরণ শক্তি ও প্রতিভা কেমন।
৬. রাবীর আকীদা বিশ্বাস, চিন্তা-গবেষণা ও মতবাদ নির্ভুল কিনা।
৭. রাবীর সমস্ত কর্মকাণ্ড ইসলামী বিধান মুতাবিক কিনা।
৮. রাবী সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন, বিকার বা রোগাগ্রস্ত নয় তো?
৯. সততা ও ন্যায় নিষ্ঠা রাবীর মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য কিনা।
১০. কখনো মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল কিনা ।
১১. রাবী সৎ চরিত্রবান, চরিত্রহীনতা তাকে কখনো স্পর্শ করেনি।
১২. রাবী কোথায় হাদীস শ্রবণ, গ্রহণ ও শিক্ষা করেছেন।
১৩. রাবী কার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন।
১৪. রাবী সত্যিই কি ওস্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে হাদীস শিখেছিল?
১৫. রাবীর তখন বয়স কত ছিল, কোথায়, কিভাবে কখন তিনি হাদীস শিখলেন?
আমরা দেখতে পাই শব্দগত দিক থেকে হাদীসের দুটি অংশ। প্রথম অংশটি সনদ, আর দ্বিতীয় অংশটি হলো মতন। সনদের (হাদীস বর্ণনাকারীদের পরস্পরা নামসমূহ) যাচাই-বাছাই ও সমালোচনা করা হয় পদ্ধতির মাধ্যমে। কেননা হাদীস বর্ণনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনচরিত সম্পর্কে সূক্ষ্মভাবে জ্ঞাত হওয়া জরুরী।
অর্থাৎ হাদীসে উল্লেখিত সাহাবা (রাদিআল্লাহু আনহু), তাবেয়ী ও রাবীদের সম্পর্কিত ইলম। এই ইলম হলো হাদীসের অর্ধেক জ্ঞান। পদ্ধতির মাধ্যমে সনদে উল্লেখিত রাবীদের জীবন চরিত্রের যে দিকগুলো সূক্ষ্মতিসূক্ষ্মভাবে দেখা হয় তা এই :
১. রাবী কি ধরনের লোক।
২. রাবীর চারিত্রিক দোষ-গুণ কেমন।
৩. রাবীর ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান কতটুকু আয়ত্ত ।
৪. রাবীর উপলব্ধি ও বোধশক্তি কতটুকু প্রখর ও উন্নত।
৫. স্মরণ শক্তি ও প্রতিভা কেমন।
৬. রাবীর আকীদা বিশ্বাস, চিন্তা-গবেষণা ও মতবাদ নির্ভুল কিনা।
৭. রাবীর সমস্ত কর্মকাণ্ড ইসলামী বিধান মুতাবিক কিনা।
৮. রাবী সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন, বিকার বা রোগাগ্রস্ত নয় তো?
৯. সততা ও ন্যায় নিষ্ঠা রাবীর মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য কিনা।
১০. কখনো মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল কিনা ।
১১. রাবী সৎ চরিত্রবান, চরিত্রহীনতা তাকে কখনো স্পর্শ করেনি।
১২. রাবী কোথায় হাদীস শ্রবণ, গ্রহণ ও শিক্ষা করেছেন।
১৩. রাবী কার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন।
১৪. রাবী সত্যিই কি ওস্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে হাদীস শিখেছিল?
১৫. রাবীর তখন বয়স কত ছিল, কোথায়, কিভাবে কখন তিনি হাদীস শিখলেন?
ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠী ইসলামের মূলোচ্ছেদ করতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। মুসলিম নাম ও বেশ ধারণের ছদ্মাবরণে কতিপয় লোক জাল করণের মতো ঘৃণ্য ও হীন পন্থা বেছে নেয়। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার দৃষ্টিতে জালকারীদেরকে ৬টি স্তরে ভাগ করা যায় । এই ৬ শ্রেণীর লোক স্ব-স্ব উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে হাদীস জালকরণে প্রবৃত্ত হয় ।
১. যিনদীক ও মুনাফিক সম্প্রদায় :
বাহ্যতঃ তারা মুসলিমদের কাছের মুসলিম হিসেবে পরিচিত। সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি সষ্টি করতঃ ইসলামের সৌন্দর্য নষ্ট করা ও অগ্রগতি ব্যহত করাই তাদের উদ্দেশ্যে। এরা ইসলাম বিদ্বেষী চরম শত্ৰ । হাম্মাদ বিন যায়েদ বলেন : ‘যিনদীকরা রসূল (ﷺ)-এর নামে ১৪ হাজার হাদীস জাল করে। আবুদল কারীম ইবনে আবুল আওযা নামে এক যিনদীককে মাহদীর খিলাফত আমলে বসরার আমীর মুহাম্মদ বিন সুলাইমান আল আব্বাসী ১৬০ হিজরী সনে যিনদীক হওয়ার কারণে হত্যা করেন। হত্যা করার সময় সে স্বীকার করে যে ও ‘আমি তোমাদের মধ্যে ৪ হাজার হাদীস জাল করি, যেগুলির মাধ্যমে আমি হালালকে হারাম করি আর হারামকে হালাল করি । যিনদীক গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বনী তামীমের কিনইয়ান ইবনে সাময়ান আন-নাহদী। খালিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসরী তাকে (হত্যা) শাস্তি দিয়ে আগুনে জ্বালিয়ে দেন। মুহাম্মদ বিন সায়ীদ ইবনে হাসান আল আসাদী নামীয় যিনদিককে আবু জাফর আল মানসুর (হত্যা) শাস্তি দেন, সেও প্রায় ৪ হাজার হাদীস জাল করে ।
২. বিদাআতপন্থী ও বস্তু প্রিয় সম্প্রদায় :
এ সম্প্রদায়ের কতিপয় লোক নিজেদের প্রবৃত্তি, বাসনা, কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে অগণিত হাদীস জাল করে। তারা কিছু হাদীস যুক্তির ভিত্তিতে রচনা করে । কুরআন ও হাদীসে এগুলোর কোনো প্রমাণ তো নেই। পরন্তু কোনো যৌক্তিকতাও নেই। রাফেজী ও খেতাবীরা এ সম্প্রদায়ের লোক । আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ আল মুকরী বলেন : একজন বিদা’আতপন্থী লোক। বিদা'আত থেকে তাওবাহ করত; স্বীকার করলেন : যার থেকে তোমরা এ হাদীস গ্রহণ করবে তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ কর । কেননা যখন আমরা ইচ্ছা করতাম তখনই আমরা সেটাকে হাদীস হিসেবে চালিয়ে দিয়েছি। রাফেজী সম্প্রদায়ের একজন ওস্তাদ আমাকে বলেছে, তারা হাদীস জাল করার জন্যে সমাবেশ ও সম্মেলন করতো।
৩. কিচ্ছা কাহিনী কারকগণ
কিচ্ছা কাহিনীর মধ্যে অলৌকিক ও আশ্চর্য ঘটনার অবতারণা করে সাধারণ শ্রোতামণ্ডলীর মন ও হৃদয়কে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করা, এসব বানানো কাহিনীকে হাদীস নামে আখ্যায়িত করে শ্রোতাদেরকে আরো সম্মোহিত করা এসব কাহিনীকারদের উদ্দেশ্য। ফলে সাধারণ লোক তাদের প্রতি অতিশয় আসক্ত হয়ে কাহিনীকারদেরকে বেশী করে উপহার উপঢৌকন দিবে । রিযক ও জীবিকার্জনই তাদের জালকরণের মূল উদ্দেশ্য। এসব গল্পকার ও কিচ্ছা কাহিনীকারদের অধিকাংশ অজ্ঞ তবে তারা আহলে ইসলামদের বেশ ধারণ করে থাকে। তারা নিরীহ জনসাধারণের অনেকের মাথা রসালো গল্প ও কল্পকাহিনীর মাধ্যমে বিগড়িয়ে দেয়।
৪. স্বার্থান্বেষী অতিলোভী আলেম সম্প্রদায় :
কতিপয় স্বার্থান্বেষী চাটুকার তোষামুদে আলেম যারা ইসলামী ইতিহাসের পরিভাষায় ওলামায়ে সুনামে খ্যাত তারাও দুর্ভাগ্যক্রমে এ ঘৃণ্য কাজে জড়িয়ে পড়ে। আখিরাতকে জলাঞ্জলি দিয়ে দুনিয়া হাসিল করা, সমকালীন ক্ষমতাসীন আমীর অমাত্যদের নৈকট্য লাভ করা, রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা, নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও মহাত্ম জনগণের সামনে তুলে ধরা, এসব আলেমদের হাদীস জালকরণের কারণ ও উদ্দেশ্য। এসব উদ্দেশ্য সাধন করতে তারা মিথ্যা ফতওয়া দেয়, কথা বানিয়ে তা শরিয়াত তথা রসূল (ﷺ)- এর হাদীস বলে প্রচার করে বেড়ায়, কুরআন ও হাদীসের স্বার্থস্বম্বলিত ব্যাখ্যা দান করে থাকে। এভাবেই এ শ্রেণীর কতিপয় আলেম হিদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহীকে প্রাধান্য দিয়ে গোটা আলেম সমাজের ললাটে কালিমা লেপন করে। এরা তখনো ছিল এখনো আছে এবং থাকবে।
৫. যোহদ, তাকওয়াহ, পরহেজগারী ও তাসাউফ পেশাধারী সম্প্রদায় :
এ স্তরে আছে এক ধরনের তথা কথিত পীর, ফকীর, দরবেশ, মুরশীদ, ইলমে তাছাউফ ও ইলমে লাদুন্নীর দাবীদার ব্যক্তিত্ব, পেশাদার ওয়ায়েহীন ও পা নছীহত কারীগণ। জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচার, ওয়াজ নছিহত। দ্বারা জনগণকে অধিক ধর্মপ্রাণ বানানো, ইবাদত বন্দেগীতে তাদেরকে অধিক উৎসাহিত অধিক ধর্মপ্রাণ বানানো, ইবাদত বন্দেগীতে তাদেরকে অধিক উৎসাহিত করা এবং আখিরাতের ভয়ে তাদেরকে আরো ভীতি ও সচেতন করে তোলা হাদীস জালকরণে তাদের উদ্দেশ্য। মানুষের গুনাহ থেকে বিরত রেখে আখিরাতমুখী করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নিয়ে হাদীস জালকরণেরা প্রবৃত্ত হলেও প্রকৃতপক্ষে তাতে দ্বীন ও ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার যে ব্যাপক ক্ষতি হয় তা কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। তাদের কারো উদ্দেশ্য তো বাহ্যিক তাকওয়া, পরহেজগারী ও দরবেশীর অন্তরালে আপন স্বার্থ চরিতার্থ করা। নিরীহ ও মূখ জনসাধারণের অজ্ঞতার সুযোগ এসব তথাকথিত দরবেশ ফকীরগণ স্বার্থসিদ্ধ কথাকেই হাদীস বলে চালিয়ে দেয়। ফলে এই মহলে আসল ও সহীহ হাদীস জাল হাদীসের মধ্যে ঢাকা পড়ে যায় ।
৬. হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞাত :
কতিপয় লোক হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতাবশতঃ মিথ্যা হাদীস রচনা করে। এ শ্রেণীর লোকদের ধারণা ভালো, মনমানসিকতা সুস্থ। সহজ সরল প্রকৃতিগত হওয়ায় তারা যা শুনে তাই বিশ্বস্ততার সাথে ধারণ করে। তারা আসলে শুদ্ধ-অশুদ্ধ, ঠিক-বেঠিক, ভুলনির্ভুলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে সক্ষম নয় । হাদীস জাল করণের দোষে দুষ্ট হলেও অজ্ঞতার কারণে তারা অন্যান্য শ্রেণীর জালকারীদের তুলনায় কম বিপদজনক এবং গুনাহও তাদের তুলনামূলকভাবে কম।
৭. শাসকদের নৈকট্য লাভ করা ও তোষামুদে ও চাটুকার শাসকবর্গের মনোরঞ্জণের জন্যে এ ঘৃণ্য কাজটি করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি ।
৮. যুদ্ধ বিগ্রহ কিংবা কলহে উত্তেজিত করা। স্বীয় দলের স্বপক্ষে লড়াই কিংবা ঝগড়া করতে, উত্তেজিত করতেও হাদীস জালকরণ করা হতো।
৯. বিতর্কপ্রিয় কিছু লোক নিজের ব্যক্তিত্ব, প্রতিপত্তি ও ঔদার্য জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে স্বপক্ষে হাদীস জাল করে। তারা মোহ, লালসা ও উৎসর্গের আতিশয্যে এমন অপকর্মে লিপ্ত হতে কিছুমাত্র বিচলিত হয়নি।
১. যিনদীক ও মুনাফিক সম্প্রদায় :
বাহ্যতঃ তারা মুসলিমদের কাছের মুসলিম হিসেবে পরিচিত। সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি সষ্টি করতঃ ইসলামের সৌন্দর্য নষ্ট করা ও অগ্রগতি ব্যহত করাই তাদের উদ্দেশ্যে। এরা ইসলাম বিদ্বেষী চরম শত্ৰ । হাম্মাদ বিন যায়েদ বলেন : ‘যিনদীকরা রসূল (ﷺ)-এর নামে ১৪ হাজার হাদীস জাল করে। আবুদল কারীম ইবনে আবুল আওযা নামে এক যিনদীককে মাহদীর খিলাফত আমলে বসরার আমীর মুহাম্মদ বিন সুলাইমান আল আব্বাসী ১৬০ হিজরী সনে যিনদীক হওয়ার কারণে হত্যা করেন। হত্যা করার সময় সে স্বীকার করে যে ও ‘আমি তোমাদের মধ্যে ৪ হাজার হাদীস জাল করি, যেগুলির মাধ্যমে আমি হালালকে হারাম করি আর হারামকে হালাল করি । যিনদীক গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বনী তামীমের কিনইয়ান ইবনে সাময়ান আন-নাহদী। খালিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসরী তাকে (হত্যা) শাস্তি দিয়ে আগুনে জ্বালিয়ে দেন। মুহাম্মদ বিন সায়ীদ ইবনে হাসান আল আসাদী নামীয় যিনদিককে আবু জাফর আল মানসুর (হত্যা) শাস্তি দেন, সেও প্রায় ৪ হাজার হাদীস জাল করে ।
২. বিদাআতপন্থী ও বস্তু প্রিয় সম্প্রদায় :
এ সম্প্রদায়ের কতিপয় লোক নিজেদের প্রবৃত্তি, বাসনা, কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে অগণিত হাদীস জাল করে। তারা কিছু হাদীস যুক্তির ভিত্তিতে রচনা করে । কুরআন ও হাদীসে এগুলোর কোনো প্রমাণ তো নেই। পরন্তু কোনো যৌক্তিকতাও নেই। রাফেজী ও খেতাবীরা এ সম্প্রদায়ের লোক । আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ আল মুকরী বলেন : একজন বিদা’আতপন্থী লোক। বিদা'আত থেকে তাওবাহ করত; স্বীকার করলেন : যার থেকে তোমরা এ হাদীস গ্রহণ করবে তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ কর । কেননা যখন আমরা ইচ্ছা করতাম তখনই আমরা সেটাকে হাদীস হিসেবে চালিয়ে দিয়েছি। রাফেজী সম্প্রদায়ের একজন ওস্তাদ আমাকে বলেছে, তারা হাদীস জাল করার জন্যে সমাবেশ ও সম্মেলন করতো।
৩. কিচ্ছা কাহিনী কারকগণ
কিচ্ছা কাহিনীর মধ্যে অলৌকিক ও আশ্চর্য ঘটনার অবতারণা করে সাধারণ শ্রোতামণ্ডলীর মন ও হৃদয়কে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করা, এসব বানানো কাহিনীকে হাদীস নামে আখ্যায়িত করে শ্রোতাদেরকে আরো সম্মোহিত করা এসব কাহিনীকারদের উদ্দেশ্য। ফলে সাধারণ লোক তাদের প্রতি অতিশয় আসক্ত হয়ে কাহিনীকারদেরকে বেশী করে উপহার উপঢৌকন দিবে । রিযক ও জীবিকার্জনই তাদের জালকরণের মূল উদ্দেশ্য। এসব গল্পকার ও কিচ্ছা কাহিনীকারদের অধিকাংশ অজ্ঞ তবে তারা আহলে ইসলামদের বেশ ধারণ করে থাকে। তারা নিরীহ জনসাধারণের অনেকের মাথা রসালো গল্প ও কল্পকাহিনীর মাধ্যমে বিগড়িয়ে দেয়।
৪. স্বার্থান্বেষী অতিলোভী আলেম সম্প্রদায় :
কতিপয় স্বার্থান্বেষী চাটুকার তোষামুদে আলেম যারা ইসলামী ইতিহাসের পরিভাষায় ওলামায়ে সুনামে খ্যাত তারাও দুর্ভাগ্যক্রমে এ ঘৃণ্য কাজে জড়িয়ে পড়ে। আখিরাতকে জলাঞ্জলি দিয়ে দুনিয়া হাসিল করা, সমকালীন ক্ষমতাসীন আমীর অমাত্যদের নৈকট্য লাভ করা, রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা, নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও মহাত্ম জনগণের সামনে তুলে ধরা, এসব আলেমদের হাদীস জালকরণের কারণ ও উদ্দেশ্য। এসব উদ্দেশ্য সাধন করতে তারা মিথ্যা ফতওয়া দেয়, কথা বানিয়ে তা শরিয়াত তথা রসূল (ﷺ)- এর হাদীস বলে প্রচার করে বেড়ায়, কুরআন ও হাদীসের স্বার্থস্বম্বলিত ব্যাখ্যা দান করে থাকে। এভাবেই এ শ্রেণীর কতিপয় আলেম হিদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহীকে প্রাধান্য দিয়ে গোটা আলেম সমাজের ললাটে কালিমা লেপন করে। এরা তখনো ছিল এখনো আছে এবং থাকবে।
৫. যোহদ, তাকওয়াহ, পরহেজগারী ও তাসাউফ পেশাধারী সম্প্রদায় :
এ স্তরে আছে এক ধরনের তথা কথিত পীর, ফকীর, দরবেশ, মুরশীদ, ইলমে তাছাউফ ও ইলমে লাদুন্নীর দাবীদার ব্যক্তিত্ব, পেশাদার ওয়ায়েহীন ও পা নছীহত কারীগণ। জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচার, ওয়াজ নছিহত। দ্বারা জনগণকে অধিক ধর্মপ্রাণ বানানো, ইবাদত বন্দেগীতে তাদেরকে অধিক উৎসাহিত অধিক ধর্মপ্রাণ বানানো, ইবাদত বন্দেগীতে তাদেরকে অধিক উৎসাহিত করা এবং আখিরাতের ভয়ে তাদেরকে আরো ভীতি ও সচেতন করে তোলা হাদীস জালকরণে তাদের উদ্দেশ্য। মানুষের গুনাহ থেকে বিরত রেখে আখিরাতমুখী করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নিয়ে হাদীস জালকরণেরা প্রবৃত্ত হলেও প্রকৃতপক্ষে তাতে দ্বীন ও ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার যে ব্যাপক ক্ষতি হয় তা কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। তাদের কারো উদ্দেশ্য তো বাহ্যিক তাকওয়া, পরহেজগারী ও দরবেশীর অন্তরালে আপন স্বার্থ চরিতার্থ করা। নিরীহ ও মূখ জনসাধারণের অজ্ঞতার সুযোগ এসব তথাকথিত দরবেশ ফকীরগণ স্বার্থসিদ্ধ কথাকেই হাদীস বলে চালিয়ে দেয়। ফলে এই মহলে আসল ও সহীহ হাদীস জাল হাদীসের মধ্যে ঢাকা পড়ে যায় ।
৬. হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞাত :
কতিপয় লোক হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতাবশতঃ মিথ্যা হাদীস রচনা করে। এ শ্রেণীর লোকদের ধারণা ভালো, মনমানসিকতা সুস্থ। সহজ সরল প্রকৃতিগত হওয়ায় তারা যা শুনে তাই বিশ্বস্ততার সাথে ধারণ করে। তারা আসলে শুদ্ধ-অশুদ্ধ, ঠিক-বেঠিক, ভুলনির্ভুলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে সক্ষম নয় । হাদীস জাল করণের দোষে দুষ্ট হলেও অজ্ঞতার কারণে তারা অন্যান্য শ্রেণীর জালকারীদের তুলনায় কম বিপদজনক এবং গুনাহও তাদের তুলনামূলকভাবে কম।
৭. শাসকদের নৈকট্য লাভ করা ও তোষামুদে ও চাটুকার শাসকবর্গের মনোরঞ্জণের জন্যে এ ঘৃণ্য কাজটি করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি ।
৮. যুদ্ধ বিগ্রহ কিংবা কলহে উত্তেজিত করা। স্বীয় দলের স্বপক্ষে লড়াই কিংবা ঝগড়া করতে, উত্তেজিত করতেও হাদীস জালকরণ করা হতো।
৯. বিতর্কপ্রিয় কিছু লোক নিজের ব্যক্তিত্ব, প্রতিপত্তি ও ঔদার্য জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে স্বপক্ষে হাদীস জাল করে। তারা মোহ, লালসা ও উৎসর্গের আতিশয্যে এমন অপকর্মে লিপ্ত হতে কিছুমাত্র বিচলিত হয়নি।
উপরোল্লেখিত উপায়ে জালকরণে যারা সমধিক খ্যাত ছিল তারা হলো ওহাব বিন ওহাব আল কাযী (আবুল) বোখতারী, মুহাম্মদ বিন সায়েবআলী কালবী, মুহাম্মদ বিন শায়ীদ শামী আল মাসলুব, আবু দাউদ নাখয়ী, ইসহাক বিন নজীহ আল মুলাতী, গিয়াসবিন ইবরাহীম, আল মুগীরা বিন সায়ীদ আল কুফী, মামুন ইবনে আহমদ, মুহাম্মদ বিনওককাশাহ আল কিরমানী, মুহাম্মদ ইবনে যিয়াদ আল ইয়াশকারী।
ইমাম নাসায়ী বলেন, মিথ্যা হাদীস রচনায় খ্যাত ছিল আরো ৪ জন। তারা হলো। মদীনায় ইবনে আবি ইয়াহইয়া, বাগদাদে ওয়াকেদী, খোরাসানে মাকাতেল বিন সুলাইমান এবং সিরিয়ায় মুহাম্মদ বিন সায়ীদ মাছলুব ।
আবান ইবন জাফর আল-নুজাইরামী। এ লোকটি শুধুমাত্র ইমাম আবু হানিফার (রহ.) নামে ৩০০ এর অধিক হাদীস জাল করে ।
ইমাম নাসায়ী বলেন, মিথ্যা হাদীস রচনায় খ্যাত ছিল আরো ৪ জন। তারা হলো। মদীনায় ইবনে আবি ইয়াহইয়া, বাগদাদে ওয়াকেদী, খোরাসানে মাকাতেল বিন সুলাইমান এবং সিরিয়ায় মুহাম্মদ বিন সায়ীদ মাছলুব ।
আবান ইবন জাফর আল-নুজাইরামী। এ লোকটি শুধুমাত্র ইমাম আবু হানিফার (রহ.) নামে ৩০০ এর অধিক হাদীস জাল করে ।
১. কিতাবুল আবাতিল - হাফেজ আল হোসাইন বিন ইবরাহীম আল জাওযিকানী (মৃত ৫৪৩ হিজরী)
২. আল মওজুয়াত - হাফেজ আবুল ফারাজ বিন আল জাওযী (মৃত ৫৯৭ হিজরী)।
৩. আদ্-দুরুল মুলতাকাত ফি তাবয়ীনিল গালত - হাসান ছাগানী লগভী (মৃত ৬৫০ হিজরী) ৪. আন-নুকাতুল বাদিয়াত, আল-লায়ীল মাছনুয়াহ আত-তায়াকুবাত – ইমাম সুয়ূতী (মৃত ৯১০ হিজরী)।
৫. আর ফাওয়ায়িদুল মাসজুয়াহ ফি বয়ানিল আহাদীসিল মাওজুয়াহ - মুহাম্মদ বিন ইউসুফ বিন আল-সামী (মৃত ৯৪২ হিজরী)
৬. তানযিহুশ শরীয়াতুল মারফুয়াহ আনিল আখবারিশ শানিয়াতিল মাওজুয়াহ – আলী বিন মুহাম্মদ ইরাক (মৃত ৯৬৩ হিজরী)
৭. তাযকিরাতুল মাওজুয়াত - মুহাম্মদ বিন তাহের আল-কাত্তলী আল হিন্দী (মৃত ৯৮৬ হিজরী)
৮. তাযকিরাতুল মাওজায়াত : মাওজুয়াতে কবীর নামে প্রকাশিত হয় - মোল্লা আলী কারী (মৃত ১০১৪ হিজরী)।
৯. তাময়ীযুত তাইয়্যেব মিনাল খাবীস
১০. আদদুরারুল মাছনুয়াত ফিল আহাদীসিল মাওজুয়াত - শেখ মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন মালেক সাফারিনী হাম্বলী (মৃত ১১৮৮)
১১. আল-ফাওয়ায়িদুল মাজমুয়াহ ফিল আহাদীসিল মাওজুয়াহ – শাইখুল ইসলাম মুহাম্মদ বিন আলী আল-শাওকানী (মৃত ১২৫০ হিজরী)
১২. আল আছারুল মারফুয়াহ ফিল আহাদীসিল মাওজুয়াহ – আল্লামা আঃ হাই বিন আঃ হাকীম লাখনুভী (মৃত ১৩০৪)
১৩. আল লুলুল মাওজু ফিমা কিলা ও লা আছলা লাহু আওবিআছলিহী মাওজু - আবুল মুহসীন মুহাম্মদ বিন খলীল আল-কাওকাজী (মৃত ১৩০৫)।
১৪. তাহজিরুল মুসলিমীন মিনাল আহাদীসুল মাওজুয়াহ আলা সাইয়্যেদিল মুরসালীন – মুহাম্মদ বশীর জাফর আজহারী (মৃত ১৩২৫ হিজরী)
১৫. আলকালামূল মারফু, ফিমা ইয়াতায়াল্লাকু বিল হাদীসীল মাওজু - মাওলানা আনোয়ারুল্লাহ হায়দরাবাদী।
১৬. আল-মাওজুয়াত – ইবনুল কিরানী
১৭. ইমাম শাওকানী।
১৮. নাসীর উদ্দিন আলবানী ১১ খণ্ডে প্রকাশিত এ গ্রন্থটি সর্বশেষ সংস্করণ। ৫৫০০ হাজার জাল, দুর্বল, ভিত্তিহীন হাদীস এই বিরাট গ্রন্থে স্থান পায়। বিতর্কিত হাদীসের সর্ববৃহৎ ও সর্বশেষ গ্রন্থটি হাদীসের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।
২. আল মওজুয়াত - হাফেজ আবুল ফারাজ বিন আল জাওযী (মৃত ৫৯৭ হিজরী)।
৩. আদ্-দুরুল মুলতাকাত ফি তাবয়ীনিল গালত - হাসান ছাগানী লগভী (মৃত ৬৫০ হিজরী) ৪. আন-নুকাতুল বাদিয়াত, আল-লায়ীল মাছনুয়াহ আত-তায়াকুবাত – ইমাম সুয়ূতী (মৃত ৯১০ হিজরী)।
৫. আর ফাওয়ায়িদুল মাসজুয়াহ ফি বয়ানিল আহাদীসিল মাওজুয়াহ - মুহাম্মদ বিন ইউসুফ বিন আল-সামী (মৃত ৯৪২ হিজরী)
৬. তানযিহুশ শরীয়াতুল মারফুয়াহ আনিল আখবারিশ শানিয়াতিল মাওজুয়াহ – আলী বিন মুহাম্মদ ইরাক (মৃত ৯৬৩ হিজরী)
৭. তাযকিরাতুল মাওজুয়াত - মুহাম্মদ বিন তাহের আল-কাত্তলী আল হিন্দী (মৃত ৯৮৬ হিজরী)
৮. তাযকিরাতুল মাওজায়াত : মাওজুয়াতে কবীর নামে প্রকাশিত হয় - মোল্লা আলী কারী (মৃত ১০১৪ হিজরী)।
৯. তাময়ীযুত তাইয়্যেব মিনাল খাবীস
১০. আদদুরারুল মাছনুয়াত ফিল আহাদীসিল মাওজুয়াত - শেখ মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন মালেক সাফারিনী হাম্বলী (মৃত ১১৮৮)
১১. আল-ফাওয়ায়িদুল মাজমুয়াহ ফিল আহাদীসিল মাওজুয়াহ – শাইখুল ইসলাম মুহাম্মদ বিন আলী আল-শাওকানী (মৃত ১২৫০ হিজরী)
১২. আল আছারুল মারফুয়াহ ফিল আহাদীসিল মাওজুয়াহ – আল্লামা আঃ হাই বিন আঃ হাকীম লাখনুভী (মৃত ১৩০৪)
১৩. আল লুলুল মাওজু ফিমা কিলা ও লা আছলা লাহু আওবিআছলিহী মাওজু - আবুল মুহসীন মুহাম্মদ বিন খলীল আল-কাওকাজী (মৃত ১৩০৫)।
১৪. তাহজিরুল মুসলিমীন মিনাল আহাদীসুল মাওজুয়াহ আলা সাইয়্যেদিল মুরসালীন – মুহাম্মদ বশীর জাফর আজহারী (মৃত ১৩২৫ হিজরী)
১৫. আলকালামূল মারফু, ফিমা ইয়াতায়াল্লাকু বিল হাদীসীল মাওজু - মাওলানা আনোয়ারুল্লাহ হায়দরাবাদী।
১৬. আল-মাওজুয়াত – ইবনুল কিরানী
১৭. ইমাম শাওকানী।
১৮. নাসীর উদ্দিন আলবানী ১১ খণ্ডে প্রকাশিত এ গ্রন্থটি সর্বশেষ সংস্করণ। ৫৫০০ হাজার জাল, দুর্বল, ভিত্তিহীন হাদীস এই বিরাট গ্রন্থে স্থান পায়। বিতর্কিত হাদীসের সর্ববৃহৎ ও সর্বশেষ গ্রন্থটি হাদীসের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।
শরীয়াতের মূল উৎস হচ্ছে কুরআন। আর কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হলো হাদীস। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন কারণেই ইসলামের মধ্যে নানা ধরনের বিদ’আতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে সুগভীর ষড়যন্ত্র । ইসলামের শত্রুরা যখন মুসলিমদের সাথে পেরে উঠছিলনা তখন তারা ইসলামের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। তারই অংশ হিসেবে কুচক্রীরা সম্মিলিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামে। ফলে কিছু কুচক্রী বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণের ভাব দেখিয়ে মুসলিমদের মাঝে তারা বিভিন্ন কর্মকান্ডের অনুপ্রবেশ ঘটাতে সক্ষম হয় । এজন্য তারা সাধারণ মুসলিম জনগণকে ধোকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিজেদের কথার মধ্যে “রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন” এই কথাটি সংযোগ করে হাদীস বলে চালিয়ে দেয়। এভাবে মুসলিম সমাজে জাল যঈফ হাদীসের প্রচলন ঘটে। একইভাবে প্রসার ঘটতে থাকে বিভিন্ন প্রকার বিদ’আত ও কুসংস্কারের ।
বিদ’আতির জ্ঞান উলট-পালট হয়ে তার নিকট সব কিছুই গোলমেলে হয়ে যায় । ফলে সে বিদ’আতকে সুন্নাত আর সুন্নাতকে বিদ’আত মনে করে। অতএব বিদআতের ভয়বহতা হতে রক্ষা পেতে হলে, আমাদের মাঝে প্রচলিত বিদ’আতগুলো হতে সতর্ক হয়ে সেগুলোকে পরিত্যাগ করে সহীহ সুন্নাহ মাফিক আমল করা ছাড়া আখিরাতে মুক্তির জন্য আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ। খোলা নেই। আসুন আমরা দুর্বল ও বানোয়াট হাদীসগুলো জেনে সেগুলো পরিত্যাগ করি এবং সহীহ হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমাদের জীবন গড়ি। যে আমলই আমরা করি না কেন তা যাচাই বাছাই করেই করা উচিত। কারণ হতে পারে বহু আমল আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে যেগুলো দুর্বল বা বানোয়াট হাদীসের উপর নির্ভরশীল । রসূল (ﷺ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার উপর আমার নির্দেশ নেই সে আমলটি অগ্রহণযোগ্য’ (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম) আসুন! আমরা জাল ও যঈফ হাদীসগুলো জানি এবং তথাকথিত হুজুরদের জাল ও যঈফ হাদীস নির্ভর ফাতোয়া ও আক্বীদাহ হতে নিজেদেরকে মুক্ত করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ও তাঁর নবীর যথাযথ অনুসরণ করার তৌওফীক দান করুন। আমীন। রসূল (ﷺ) বলেছেনঃ “মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শুনবে তাই হাদীস হিসেবে বর্ণনা করবে।” (সহীহ মুসলিম)
দুর্বল হাদীসের ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অথবা করেছেন এরূপ বলা ঠিক নয় । ইমাম নাবাবী (রহ.) বলেন : হাদীস বিশারদ মুহাক্কিক (সঠিক) আলেমগণ ও অন্যান্যরা বলেছেন : কোন হাদীস দুর্বল হলে তাতে এ কথা বলা যাবে না যে : রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অথবা করেছেন অথবা নির্দেশ দিয়েছেন, অথবা নিষেধ করেছেন অথবা হুকুম করেছেন ইত্যাদি যা দৃঢ় অর্থবোধক শব্দ দ্বারা প্রকাশ পায় । অনুরূপভাবে এ কথাও বলা যাবে না যে, আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন অথবা বলেছেন, কিংবা উল্লেখ করেছেন ইত্যাদি যা এর সমার্থবোধক শব্দ। অনুরূপভাবে তাবিঈ এবং তার পরবর্তীদের ক্ষেত্রেও এমন কথা বলা যাবে না, যদি হাদীসটি দুর্বল হয়ে থাকে। বরং এর প্রত্যেকটিতেই এ কথা বলতে হবে ও তার সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, তার সূত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে, অথবা উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি শব্দ। যে হাদীসের বিশুদ্ধতা তোমার কাছে স্পষ্ট হবে, সে ক্ষেত্রে তুমি বলবে “রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন”।
বিদ’আতির জ্ঞান উলট-পালট হয়ে তার নিকট সব কিছুই গোলমেলে হয়ে যায় । ফলে সে বিদ’আতকে সুন্নাত আর সুন্নাতকে বিদ’আত মনে করে। অতএব বিদআতের ভয়বহতা হতে রক্ষা পেতে হলে, আমাদের মাঝে প্রচলিত বিদ’আতগুলো হতে সতর্ক হয়ে সেগুলোকে পরিত্যাগ করে সহীহ সুন্নাহ মাফিক আমল করা ছাড়া আখিরাতে মুক্তির জন্য আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ। খোলা নেই। আসুন আমরা দুর্বল ও বানোয়াট হাদীসগুলো জেনে সেগুলো পরিত্যাগ করি এবং সহীহ হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমাদের জীবন গড়ি। যে আমলই আমরা করি না কেন তা যাচাই বাছাই করেই করা উচিত। কারণ হতে পারে বহু আমল আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে যেগুলো দুর্বল বা বানোয়াট হাদীসের উপর নির্ভরশীল । রসূল (ﷺ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার উপর আমার নির্দেশ নেই সে আমলটি অগ্রহণযোগ্য’ (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম) আসুন! আমরা জাল ও যঈফ হাদীসগুলো জানি এবং তথাকথিত হুজুরদের জাল ও যঈফ হাদীস নির্ভর ফাতোয়া ও আক্বীদাহ হতে নিজেদেরকে মুক্ত করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ও তাঁর নবীর যথাযথ অনুসরণ করার তৌওফীক দান করুন। আমীন। রসূল (ﷺ) বলেছেনঃ “মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শুনবে তাই হাদীস হিসেবে বর্ণনা করবে।” (সহীহ মুসলিম)
দুর্বল হাদীসের ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অথবা করেছেন এরূপ বলা ঠিক নয় । ইমাম নাবাবী (রহ.) বলেন : হাদীস বিশারদ মুহাক্কিক (সঠিক) আলেমগণ ও অন্যান্যরা বলেছেন : কোন হাদীস দুর্বল হলে তাতে এ কথা বলা যাবে না যে : রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অথবা করেছেন অথবা নির্দেশ দিয়েছেন, অথবা নিষেধ করেছেন অথবা হুকুম করেছেন ইত্যাদি যা দৃঢ় অর্থবোধক শব্দ দ্বারা প্রকাশ পায় । অনুরূপভাবে এ কথাও বলা যাবে না যে, আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন অথবা বলেছেন, কিংবা উল্লেখ করেছেন ইত্যাদি যা এর সমার্থবোধক শব্দ। অনুরূপভাবে তাবিঈ এবং তার পরবর্তীদের ক্ষেত্রেও এমন কথা বলা যাবে না, যদি হাদীসটি দুর্বল হয়ে থাকে। বরং এর প্রত্যেকটিতেই এ কথা বলতে হবে ও তার সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, তার সূত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে, অথবা উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি শব্দ। যে হাদীসের বিশুদ্ধতা তোমার কাছে স্পষ্ট হবে, সে ক্ষেত্রে তুমি বলবে “রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন”।
দুর্বল হাদীসের উপর কোন অবস্থাতেই ‘আমল করা যাবে না, চাই ফাযায়িলের ক্ষেত্রে হোক বা মুস্তাহাবগুলোর (উত্তম) ক্ষেত্রে হোক কিংবা অন্যকিছুর ক্ষেত্রে হোক। যারা দুর্বল হাদীসের উপর ফাযায়িলের ক্ষেত্রে আমল করা যাবে এরূপ কথা বলেছেন তাদের পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীস হতে কোনই দলীল নেই । দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য এমন ধরনের একটি দলীলও তাদের কোন আলেমের পক্ষে দেয়া সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র একে অপর হতে কতিপয় উক্তি বা ভাষ্য উল্লেখ করেছেন। যা তর্কের স্থলে গ্রহণযোগ্য নয়। তা সত্ত্বেও তাদের ভাষ্যের মধ্যেও মতদ্বন্দ্ব লক্ষণীয়, যেমন ইবনুল হুমাম বলেছেন : “দুর্বল হাদীস দ্বারা। মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয়, জাল হাদীস দ্বারা নয়।” অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা অনেক আলেমকে এই ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়। তারা কোন হাদীস সহীহ না যঈফ।
তা না জেনেই তার উপর আমল করছেন। আর যখন হাদীসটির দুর্বলতা অবহিত হন তখন দুর্বলতার পরিমাণ তারা জানতে চান না। সেটি কি কম দুর্বল না বেশি দুর্বল? অতঃপর সেই দুর্বল হাদীস মোতাবেক আমলের পক্ষে এমনভাবে প্রচারণা করেন ঠিক যেমনটি করতেন হাদীসটি সহীহ হলে! সেজন্যই মুসলিমদের মাঝে এমন অনেক ইবাদত বৃদ্ধি পেয়েছে যা মোটেই সহীহ নয় । পক্ষান্তরে মুসলিমরা এমন বহু সহীহ ইবাদত থেকে সরে গিয়েছে যা প্রমাণযোগ্য সনদসমূহের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর স্বীকৃত শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শাইখ নাসীরুদ্দীন আলবানী বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থের হাদীসগুলিকে যাচাই বাছাই করে সহীহ ও যঈফ হাদীসগুলিকে চিহ্নিত করেন। এছাড়া জাল হাদীসগুলোকে চিহ্নিত করে হাদীস শাস্ত্রকে নির্ভেজাল ও নিখুঁত রাখতে বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলারগণ যুগ যুগ ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিম ছাড়া বাকি অন্যান্য যে হাদীস গ্রন্থগুলো আছে যেমন : জামে আত তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন নাসাঈ, আহমদ, বাইহাকী ইত্যাদি সবগুলোর মধ্যেই কিছু কিছু জাল ও যঈফ হাদীস রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় যে আমাদের দেশে ‘মিশকাত শরীফ’ নামে সংকলিত যে হাদীসগ্রন্থটি মাদ্রাসার সিলেবাসভুক্ত পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয় তার মধ্যে প্রচুর হাদীস রয়েছে। যা জাল এবং যঈফ।
রেফারেন্সেস :
যঈফ ও মওজু হাদীসের সংকলন
যঈফ আত-তিরমিযী (দ্বিতীয় খন্ড)
যঈফ সুনানে ইবনে মাজাহ
যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ এবং উম্মতের মাঝে তার কুপ্রভাব [২য়। খন্ড] - নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ.)।
তা না জেনেই তার উপর আমল করছেন। আর যখন হাদীসটির দুর্বলতা অবহিত হন তখন দুর্বলতার পরিমাণ তারা জানতে চান না। সেটি কি কম দুর্বল না বেশি দুর্বল? অতঃপর সেই দুর্বল হাদীস মোতাবেক আমলের পক্ষে এমনভাবে প্রচারণা করেন ঠিক যেমনটি করতেন হাদীসটি সহীহ হলে! সেজন্যই মুসলিমদের মাঝে এমন অনেক ইবাদত বৃদ্ধি পেয়েছে যা মোটেই সহীহ নয় । পক্ষান্তরে মুসলিমরা এমন বহু সহীহ ইবাদত থেকে সরে গিয়েছে যা প্রমাণযোগ্য সনদসমূহের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর স্বীকৃত শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শাইখ নাসীরুদ্দীন আলবানী বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থের হাদীসগুলিকে যাচাই বাছাই করে সহীহ ও যঈফ হাদীসগুলিকে চিহ্নিত করেন। এছাড়া জাল হাদীসগুলোকে চিহ্নিত করে হাদীস শাস্ত্রকে নির্ভেজাল ও নিখুঁত রাখতে বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলারগণ যুগ যুগ ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিম ছাড়া বাকি অন্যান্য যে হাদীস গ্রন্থগুলো আছে যেমন : জামে আত তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন নাসাঈ, আহমদ, বাইহাকী ইত্যাদি সবগুলোর মধ্যেই কিছু কিছু জাল ও যঈফ হাদীস রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় যে আমাদের দেশে ‘মিশকাত শরীফ’ নামে সংকলিত যে হাদীসগ্রন্থটি মাদ্রাসার সিলেবাসভুক্ত পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয় তার মধ্যে প্রচুর হাদীস রয়েছে। যা জাল এবং যঈফ।
রেফারেন্সেস :
যঈফ ও মওজু হাদীসের সংকলন
যঈফ আত-তিরমিযী (দ্বিতীয় খন্ড)
যঈফ সুনানে ইবনে মাজাহ
যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ এবং উম্মতের মাঝে তার কুপ্রভাব [২য়। খন্ড] - নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ.)।
মিশকাতুল মাছবীহ এদেশের মানুষের কাছে অত্যধিক পরিচিত ও সমধিক পঠিত গ্রন্থ। মাদরাসাগুলোতে মিশকাতই প্রথমে অধ্যয়ন করা হয়। বিষয় ভিত্তিক হাদীস জানার জন্য সম্মানিত আলেম ও দাঈগণ মিশকাতকেই প্রথম। অবলম্বন মনে করেন। ‘মিশকাতুল মাছবীহ’ সিহা-সিত্তাহ’সহ বিভিন্ন বড় হাদীস গ্রন্থ থেকে নির্বাচিত সংকলন। “মিশকাতুল মাছবীহ' প্রখ্যাত দুইজন মুহাদ্দিসের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। প্রথমে ইমাম মুহিউস সুন্নাহ বাগাভী (৪৩৬-৫১৬ হিঃ) মাছবীহুস। সুন্নাহ’ নামে স্বতন্ত্র একটি হাদীসগ্রন্থ সংকলন করেন। সেখানে তিনি প্রায় ৪৪৩৪টি হাদীস অন্তর্ভুক্ত করেন। রাবীর নাম, সনদ এমনকি কোন গ্রন্থ থেকে হাদীসটি চয়ন করেছেন তাও তিনি উলেখ করেননি। অবশ্য তিনি হাদীসগুলো অধ্যায়ভিত্তিক বিন্যাস করেন এবং প্রত্যেক অধ্যায়কে দুই ভাগে বিভক্ত করেন।
(ক) “সিহহা’- যেখানে শুধু সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীস উল্লেখ করেন এবং
(খ) “হিসান’ বলে উক্ত গ্রন্থদ্বয়ের বাইরে অন্যান্য গ্রন্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর মুহাদ্দিস ওয়ালিউদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আলখত্বীব আত-তিবরিযী (মৃতঃ ৭৩৭ হিঃ) কঠোর শ্রম ব্যয় করে প্রত্যেক হাদীসের শুরুতে বর্ণনাকারীর নাম যোগ করেন। হাদীসটি কোন্ কোন্ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তাও উল্লেখ করেন। প্রত্যেক অধ্যায়কে তিনি তিনটি ফাছল বা অনুচ্ছেদে ভাগ। করেন। প্রথম অনুচ্ছেদে তিনি মূলগ্রন্থকারের অনুসরণে শুধু সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীস উলেখ করেন। উক্ত হাদীস অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ থাকলেও সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মর্যাদার কারণে তার সাথে অন্য কোন গ্রন্থ উল্লেখ করেননি। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে তিনি বুখারী মুসলিমের বাইরের হাদীস উল্লেখ করেছেন। আর তৃতীয় অনুচ্ছেদে বিষয়ের সংশ্লিষ্ট কতিপয় হাদীস নিজে সংযোজন করেছেন যা মূল গ্রন্থে ছিল না। ফলে এর হাদীস সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ৬০০০ (ছয় হাজার)। অতঃপর তিনি এর নামকরণ করেন ‘মিশকাতুল মাছবীহ। তাঁদের উভয়কে আল্লাহ তা'আলা উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন!
‘মিশকাতুল মাছবীহ’তে বিভিন্ন বড় বিষয়ের হাদীস অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বেশ কিছু, যঈফ ও জাল হাদীস সংযোজিত হয়েছে। আর যঈফ ও জাল হাদীস মুসলিম ঐক্য ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। সেজন্য পরস্পরের আমলের মাঝে ভিন্নতা ও দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। ওলামায়ে কেরামও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এই করুণ পরিণতির হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গত শতাব্দীর সংগ্রামী মুজাদ্দিদ, আপোসহীন মুহাদ্দিস, দূরদর্শী মুজতাহিদ, হাদীসশাস্ত্রের এক উজ্জ্বল প্রতিভা শায়খ আল্লামা মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) (১৩৩৩১৪২০হিঃ) মিশকাতুল মাছবীহ্র হাদীস সমূহের সহীহ ও যঈফ বাছাইয়ের কাজে কঠোর সাধনা করেন। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন- আমীন!!
শায়খ আলবানী (রহ.) মিশকাতের তাহক্বীকৃ (verification) সম্পন্ন করেননি। তবে তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে প্রায় হাদীসেরই তাহকী চলে এসেছে। এরপরও কিছু হাদীসের তাহক্বীক তাঁর পক্ষ থেকে পাওয়া যায় না। ফলে ঐ সমস্ত হাদীসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য অন্যান্য মুহাদ্দিসের মন্তব্য গ্রহণ করা উচিত।
কিছু হাদীস এমন রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে কোন কোন মুহাদ্দিস শিথিলতা অবলম্বন করতে গিয়ে সহীহ কিংবা যঈফ বলেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে মুহাদ্দিসগণের সূক্ষ্ম গবেষণায় তার বিপরীত প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ইমাম তিরমিযী, ইবনু খুযায়মাহ, ইবনু হিব্বান, হাকেম প্রমুখের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। এছাড়াও কোন হাদীসকে পূর্বে সহীহ কিংবা যঈফ বলেছেন পরে তার বিপরীত বলেছেন। মিশকাতের তাহক্টীত্ত্বের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় এমনটি হয়েছে। তাই শুধু মিশকাতের তাহক্বীক দেখেই কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না।।
একই হাদীসের মধ্যে একটি অংশ সহীহ আবার অন্য অংশ যঈফ রয়েছে। কখনো কোন বাক্য ও শব্দও এমন রয়েছে। এর কারণ হ’ল, সহীহ অংশটুকু অন্য সনদে সহীহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য হাদীসের সনদটি যঈফ হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ হাদীসকে সহীহ বলা হয়নি।
মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী কর্তৃক অনুদিত বঙ্গানুবাদ মিশকাত অনেকের কাছে রয়েছে। তবে পাঠক সমাজের জন্য বিশেষ হুশিয়ারী হল, বঙ্গানুবাদ মিশকাতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে। কারণ অনুবাদক অনেক জায়গায় মাযহাবী সিদ্ধান্তের উপরে হাদীসের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিতে পারেননি। বহু ক্ষেত্রে তিনি যঈফ ও জাল হাদীসকেই ব্যাখ্যার জন্য শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যঈফ ও জাল হাদীসের কুপ্রভাবে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এই উপমহাদেশে এর প্রভাব আরো বেশী।
(ক) “সিহহা’- যেখানে শুধু সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীস উল্লেখ করেন এবং
(খ) “হিসান’ বলে উক্ত গ্রন্থদ্বয়ের বাইরে অন্যান্য গ্রন্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর মুহাদ্দিস ওয়ালিউদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আলখত্বীব আত-তিবরিযী (মৃতঃ ৭৩৭ হিঃ) কঠোর শ্রম ব্যয় করে প্রত্যেক হাদীসের শুরুতে বর্ণনাকারীর নাম যোগ করেন। হাদীসটি কোন্ কোন্ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তাও উল্লেখ করেন। প্রত্যেক অধ্যায়কে তিনি তিনটি ফাছল বা অনুচ্ছেদে ভাগ। করেন। প্রথম অনুচ্ছেদে তিনি মূলগ্রন্থকারের অনুসরণে শুধু সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীস উলেখ করেন। উক্ত হাদীস অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ থাকলেও সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মর্যাদার কারণে তার সাথে অন্য কোন গ্রন্থ উল্লেখ করেননি। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে তিনি বুখারী মুসলিমের বাইরের হাদীস উল্লেখ করেছেন। আর তৃতীয় অনুচ্ছেদে বিষয়ের সংশ্লিষ্ট কতিপয় হাদীস নিজে সংযোজন করেছেন যা মূল গ্রন্থে ছিল না। ফলে এর হাদীস সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ৬০০০ (ছয় হাজার)। অতঃপর তিনি এর নামকরণ করেন ‘মিশকাতুল মাছবীহ। তাঁদের উভয়কে আল্লাহ তা'আলা উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন!
‘মিশকাতুল মাছবীহ’তে বিভিন্ন বড় বিষয়ের হাদীস অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বেশ কিছু, যঈফ ও জাল হাদীস সংযোজিত হয়েছে। আর যঈফ ও জাল হাদীস মুসলিম ঐক্য ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। সেজন্য পরস্পরের আমলের মাঝে ভিন্নতা ও দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। ওলামায়ে কেরামও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এই করুণ পরিণতির হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গত শতাব্দীর সংগ্রামী মুজাদ্দিদ, আপোসহীন মুহাদ্দিস, দূরদর্শী মুজতাহিদ, হাদীসশাস্ত্রের এক উজ্জ্বল প্রতিভা শায়খ আল্লামা মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) (১৩৩৩১৪২০হিঃ) মিশকাতুল মাছবীহ্র হাদীস সমূহের সহীহ ও যঈফ বাছাইয়ের কাজে কঠোর সাধনা করেন। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন- আমীন!!
শায়খ আলবানী (রহ.) মিশকাতের তাহক্বীকৃ (verification) সম্পন্ন করেননি। তবে তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে প্রায় হাদীসেরই তাহকী চলে এসেছে। এরপরও কিছু হাদীসের তাহক্বীক তাঁর পক্ষ থেকে পাওয়া যায় না। ফলে ঐ সমস্ত হাদীসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য অন্যান্য মুহাদ্দিসের মন্তব্য গ্রহণ করা উচিত।
কিছু হাদীস এমন রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে কোন কোন মুহাদ্দিস শিথিলতা অবলম্বন করতে গিয়ে সহীহ কিংবা যঈফ বলেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে মুহাদ্দিসগণের সূক্ষ্ম গবেষণায় তার বিপরীত প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ইমাম তিরমিযী, ইবনু খুযায়মাহ, ইবনু হিব্বান, হাকেম প্রমুখের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। এছাড়াও কোন হাদীসকে পূর্বে সহীহ কিংবা যঈফ বলেছেন পরে তার বিপরীত বলেছেন। মিশকাতের তাহক্টীত্ত্বের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় এমনটি হয়েছে। তাই শুধু মিশকাতের তাহক্বীক দেখেই কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না।।
একই হাদীসের মধ্যে একটি অংশ সহীহ আবার অন্য অংশ যঈফ রয়েছে। কখনো কোন বাক্য ও শব্দও এমন রয়েছে। এর কারণ হ’ল, সহীহ অংশটুকু অন্য সনদে সহীহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য হাদীসের সনদটি যঈফ হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ হাদীসকে সহীহ বলা হয়নি।
মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী কর্তৃক অনুদিত বঙ্গানুবাদ মিশকাত অনেকের কাছে রয়েছে। তবে পাঠক সমাজের জন্য বিশেষ হুশিয়ারী হল, বঙ্গানুবাদ মিশকাতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে। কারণ অনুবাদক অনেক জায়গায় মাযহাবী সিদ্ধান্তের উপরে হাদীসের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিতে পারেননি। বহু ক্ষেত্রে তিনি যঈফ ও জাল হাদীসকেই ব্যাখ্যার জন্য শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যঈফ ও জাল হাদীসের কুপ্রভাবে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এই উপমহাদেশে এর প্রভাব আরো বেশী।
১. আবু যার (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সর্বত্তোম কাজ হ’ল আল্লাহর জন্য ভালবাসা করা এবং আল্লাহর জন্য শত্রতা। করা। (যঈফ আবুদাউদ)
২. মুআয ইবনু জাবাল (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বলেন, জান্নাতের চাবি হচ্ছে “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ বলে সাক্ষ্য দান। করা । (যঈফ আহমাদ)
৩. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুই রকমের লোক রয়েছে, তাদের জন্য ইসলামের কোন অংশ নেই; মুর্জিয়া ও কৃান্দারিয়া । (যঈফ তিরমিযী)
৪. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, আমি রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে তাক্বদীর সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবে, কিয়ামতে তাকে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সে সম্পর্কে আলোচনা করবে না তাকে প্রশ্নও করা হবে না। (যঈফ ইবনে মাজাহ)
৫. আবু সাঈদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কাফিরের জন্য কবরে নিরানব্বইটি সাপ নির্ধারণ করা হয়। সেগুলো তাকে কিয়ামত পর্যন্ত কামড়াতে ও দংশন করতে থাকবে। যদি একটি সাপ যমীনে নিঃশ্বাস ফেলে, তাহলে যমীনে কখন তৃণ জন্মাবে না। (যঈফ। দারেমী, যঈফ তিরমিযী)
৬. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না, যে পর্যন্ত না তার প্রবৃত্তি আমি যা এনেছি তার অধীন না হয় । (যঈফ মিশকাত)
৭. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন রসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি যদি এরূপে সকাল-সন্ধ্যা কাটাতে পার যে, তোমার অন্তরে কারো জন্য হিংসা-বিদ্বেষ নেই, তবে তাই কর। অতঃপর রসূল (ﷺ) বললেন বাবা! ইহা তোমার সুন্নাতের অন্তর্গত এবং যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসে সে আমাকে ভালবাসে, আর যে আমাকে ভালবাসিবে সে জান্নাতে আমার সহিত থাকবে । (যঈফ তিরমিযী)
৮. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিভ্রান্তির সময় আমার উম্মত আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব রয়েছে। (যঈফ মিশকাত)
৯. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল খাবে এবং সুন্নাতের সহিত আমল করবে এবং যার অনিষ্ট হতে লোক নিরাপদ থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এরূপ লোকতো আজকাল অনেক । রসূল (ﷺ) বললেন, আমার পরবর্তী যুগসমূহেও এরূপ লোক থাকবে । (যঈফ তিরমিযী)
১০. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা এমন যামানায় আছ, যে যামানা তোমাদের কেউ যদি তার প্রতি। নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশের সাথেও আমল করে সে মুক্তি পাবে। (যঈফ তিরমিযী)
১১. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, শরী'আতের বিষয় তিন প্রকারঃ
(১) যার হিদায়াত সম্পূর্ণ পরিষ্কার, সুতরাং তার অনুসরণ করবে
(২) যার গোমরাহী সম্পূর্ণ পরিষ্কার, সুতরাং তা পরিহার করবে এবং
(৩) যাতে মতানৈক্য রয়েছে। তাকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করবে । (যঈফ মিশকাত)
১২. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একদা রসূল (ﷺ) আমদের বললেন, (আমার পর) লোক তোমাদের অনুসরণকারী হবে। আর দিকদিগন্ত হতে লোক তোমাদের নিকট দ্বীনের জ্ঞান লাভ করার উদ্দেশ্যে আসবে। সুতরাং যখন তারা তোমাদের নিকট আসবে তখন তোমরা তাদের সদুপদেশ দিবে । (যঈফ তিরমিযী)
১৩. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জ্ঞানের কথা জ্ঞানীর হারান ধন। সুতরাং যেখানে যার নিকটে পাবে সে-ই তার অধিকারী। (যঈফ তিরমিযী)
১৪. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, একজন ফক্বীহ শয়তানের পক্ষে এক হাজার আবেদ অপেক্ষাও মারাত্মক । (জাল তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
১৫. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ইলম সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয এবং অপাত্রে ইলম স্থাপনকারী যেন শূকরের গলায় জহরত, মুক্তা বা স্বর্ণ স্থাপনকারী । (যঈফ ইবনে মাজাহ)
১৬. সাখবারা আযদী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম সন্ধান করবে তার জন্য উহা পূর্ববর্তী পাপ সমূহের কাফফারা হয়ে যাবে । (জাল তিরমিযী)।
১৭. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ইলম তিন ধরনের । মুহকাম আয়াত, প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত, ফরয আদেল এর বাহিরে যা রয়েছে তা অতিরিক্ত । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ)।
১৮. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে, এমন সময় সমাগত প্রায় মানুষ ইলমের সন্ধানে দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু কোথাও মদীনার আলেমের অপেক্ষা অধিক বিজ্ঞ আলেম পাবেনা। (যঈফ তিরমিযী)
১৯. হাসান বসরী (রহ.) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যার মৃত্যু এসে গেছে এমন অবস্থায়, যখন সে ইসলামকে জিন্দা করার উদ্দেশ্যে ইলম সন্ধানে মশগুল আছে, জান্নাতে তার ও নবীদের মধ্যে মাত্র এক ধাপের পার্থক্য থাকবে । (যঈফ দারেমী, যঈফ। মিশকাত)
২০. ওয়াছেলা ইবনু আসল্কা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম সন্ধান করেছে এবং তা লাভ করতে পেরেছে, তার জন্য দুই গুণ সওয়াব রয়েছে। আর যদি তা লাভ করতে না পারে, তাহলে তার জন্য একগুণ সওয়াব রয়েছে। (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২১. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রাতের কিছু সময় ইলমের আলোচনা করা পূর্ণ রাত্রি জাগরণ অপেক্ষা উত্তম। (যঈফ। দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২২. আবু দারদা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) -কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রসূল ! ইলমের কোন্ সীমায় পৌছলে এক ব্যক্তি ফকীহ হতে পারে? উত্তরে রসূল (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তাদের দ্বীনের ব্যাপারে ৪০টি হাদীস মুখস্থ করেছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ফক্বীহরূপে উঠাবেন। এছাড়া কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষী হব । (জাল বায়হাক্কী)
২৩. আমাশ (রহ.) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ভুলে যাওয়া হচ্ছে ইলমের পক্ষে আপদস্বরূপ। ইলমকে নষ্ট করা হচ্ছে অনুপযুক্ত লোককে বলা । (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২৪. আবু দারদা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মন্দ সে ব্যক্তিই হবে, যে তার ইলম দ্বারা উপকৃত হতে পারেনি। (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২৫. হাসান বসরী (রহ.) বলেন, ইলম দুই প্রকার। এক প্রকার ইলম হচ্ছে আত্মীয়, আর এটাই হল উপকারী ইলম । আর এক প্রকার ইলম হচ্ছে। মুখে, তা হল মানুষের বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষে দলীল। (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২৬. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেন, অচিরেই মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে তখন নাম ব্যতীত ইসলামের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, অক্ষর ব্যতীত কুরআনের কিছু বাকী থাকবে না। তাদের মসজিদ সমূহে আবাদ হবে কিন্তু তা হবে হিদায়াতশূন্য। তাদের আলেমরা হবে আকাশের নীচে সর্বনিকৃষ্ট লোক। তাদের নিকট থেকে ফিৎনা প্রকাশ পাবে। অতঃপর বিপর্যয় তাদের দিকেই ফিরে যাবে। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
২৭. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ইলম দ্বারা কারও উপকার সাধিত হয় না, উহা এমন এক ধন-ভাণ্ডারের ন্যায়, যা হতে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা হয় না। (যঈফ দারেমী, যঈফ। মিশকাত)
২৮. জাবের (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল সলাত । আর সলাতের চাবি হল পবিত্রতা। (যঈফ তিরমিযী)
২৯. বানী সুলাইম গোত্রের এক ব্যক্তি বলেন, একবার রসূল (ﷺ) এই পাঁচটি কথা আমার হাতে অথবা তাঁর নিজের হাতে গুণে গুণে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা হল পাল্লার অর্ধেক আর ‘আলহামদুলিল্লাহ' বলা পূর্ণ করে উহাকে এবং আল্লাহু আকবার’ আসমান ও যমীনের মধ্যখানে যা আছে তাকে পূর্ণ করে । সিয়াম হল ধৈর্যের অর্ধেক এবং পবিত্রতা হল। ঈমানের অর্ধেক । (যঈফ তিরমিযী)
৩০. আব্দুল্লহ্ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় ওযূ সেই ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যে কাত হয়ে ঘুমিয়েছে। কেননা যখন কেউ কাত হয়ে ঘুমায় তখন তার শরীরের বন্ধনসমূহ শিথিল হয়ে পড়ে। (যঈফ তিরমিযী)
৩১. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) যখন পায়খানায় যেতেন, নিজের আংটিটি খুলে রাখতেন। (মুনকার হিসেবে যঈফ আবুদাউদ, যঈফ তিরমিযী, যঈফ নাসাঈ)
৩২. আব্দুল্লাহ ইবনু সারজেস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন গর্তে পেশাব না করে । (যঈফ নাসাঈ)
৩৩. ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একবার রসূল (ﷺ) আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, হে ওমর! দাঁড়িয়ে পেশাব করনা। অতঃপর আমি দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৩৪. আবু আইয়ুব (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, চারটি বিষয় নবীদের সুন্নাত। (ক) লজ্জা করা। (খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা (গ) মিসওয়াক করা ও (ঘ) বিবাহ করা। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৩৫. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে সলাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয় সেই সলাত মিসওয়াক করা বিহীন সলাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয় । (যঈফ বায়হাকী)
৩৬. উবাই ইবনু কা'ব (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, ওযুর জন্য একটি শয়তান রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘ওলাহান'। সুতরাং পানির কুমন্ত্রণা হতে সতর্ক থাকবে । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ তিরমিযী)
৩৭. আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) একদা ওযূ করলেন দুই দুইবার করে এবং বললেন, এটা এক নূরের উপর আর এক নূর । (জাল মিশকাত)
৩৮. আবু রাফে (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) যখন সলাতের জন্য ওযূ করতেন, তখন আপন আঙ্গুলে পরিহিত আংটিকে নেড়ে দিতেন। (যঈফ দারাকুত্রী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৩৯. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত আছে, নবী কারীম (ﷺ) চারটি কারণে গোসল করতেন- নাপাকীর কারণে, জুম'আর দিনে, শিঙ্গা লাগানোর কারণে ও মুরদাকে গোসলদানের কারণে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
৪০. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) নাপাকীর গোসল করতেন, অতঃপর আমাকে জড়িয়ে ধরে শরীর গরম করতেন আমার গোসল করার পূর্বেই । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৪১. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ঋতুবতী ও অপবিত্র ব্যক্তি কুরআনের কোন অংশ পড়বে না । (মুনকার তিরমিযী)
৪২. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, একদা রসূল (ﷺ) বললেন : এই সকল ঘরের দরজা মসজিদের দিক হতে (অন্য দিকে) ফিরিয়ে দাও। কারণ আমি মসজিদকে ঋতুবতী স্ত্রীলোক ও নাপাক ব্যক্তির জন্য জায়েয মনে করি না । (যঈফ আবুদাউদ)
৪৩. ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রৌদ্রে গরম করা পানি দ্বারা গোসল করিও না। কেননা, ইহা শ্বেত-কুষ্ঠা সৃষ্টি করে । (যঈফ দারাকুত্রী, যঈফ মিশকাত)
৪৪. মুগীরা ইবনু শো'বা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে নবী কারীম (ﷺ) -কে ওযূ করিয়েছি। তিনি মোজার উপর দিক ও উহার নীচের দিক উভয়ই মাসহে করেছেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)।
৪৫. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, যখন আমি ঋতুবতী থাকতাম, তখন বিছানা হতে মাদুরে নেমে আসতাম। তখন আমরা তাঁর নিকট যেতেম না, যে পর্যন্ত না আমরা পবিত্র হতাম । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ। মিশকাত)।
৪৬. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, হে আলী! তিনটি বিষয়ে বিলম্ব কর না। সলাত, যখন তার সময় আসে, জানাযা। যখন উপস্থিত হয়, স্বামীহারা নারী, যখন তুমি সমগোত্র ও সমশিল্প বর পাও। (যঈফ তিরমিযী)।
৪৭. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সলাতের প্রথম সময় হচ্ছে আল্লাহ্র সন্তোষ এবং শেষ সময় হচ্ছে আল্লাহর ক্ষমা। (জাল তিরমিযী)
৪৮. সালমান (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে ফযরের সলাতের দিকে গেল, সে ঈমানের পতাকা নিয়ে গেল। আর যে ভোরে (সলাত না আদায় না করে) বাজারের দিকে গেল, সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেল । (যঈফ ইবনে মাজাহ)
৪৯. বেলাল (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) আমাকে বলেছেন, কোন সলাতই ‘তাসবীব’ করবে না ফযরের সলাত ব্যতীত । (যঈফ তিরমিযী)
৫০. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়তে সাত বছর আযান দিবে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি নির্ধারিত। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৫১. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, মুসলিমদের দুইটি বিষয় মুআযযিনদের ঘাড়ে ঝুলে বয়েছে। সিয়াম এবং তাদের সলাত। (যঈফ ইবনে মাজাহ)।
৫২. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন সাত জায়গায় সলাত আদায় করতে, আবর্জনা ফেলার স্থানে, যবেহখানায়, কবরস্থানে, পথিমধ্যে, গোসলখানায়, উটশালায় এবং বায়তুল্লাহ্র ছাদে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৫৩. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কোন কিছুই সলাত নষ্ট করতে পারে না, তথাপি বাধা দিবে সম্মুখ দিয়ে গমকারীকে তোমাদের সাধ্যানুযায়ী। নিশ্চয়ই উহা শয়তান। (যঈফ আবুদাউদ)
৫৪. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ জানত, সলাতের মধ্যে তার মুছল্লী ভাইয়ের সম্মুখ দিয়ে এলোপাতাড়ি গমনে কী ক্ষতি রয়েছে, তাহলে সে একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকাকে উত্তম মনে করত। (যঈফ ইবনে মাজাহ)।
৫৫. জাবের ইবনু সামুরা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যায় মাগরিবের সলাতে ‘সূরা কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও ‘সূরা কুল হুয়াল্লাহু আহাদ পড়তেন। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ। মিশকাত)
৫৬. উরওয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু) একবার ফযরের সলাত পড়লেন এবং এর উভয় রাকআতেই সূরা বাক্বারা পড়লেন। (যঈফ মিশকাত)
৫৭. ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে দেখেছি, তিনি যখন সিজদা করতেন, হাতের পূর্বে হাঁটু যমীনে রাখতেন এবং যখন উঠতেন তখন হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ তিরমিযী, যঈফ নাসাঈ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৫৮. আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) তর্জনী দ্বারা ইশারা করতেন যখন তাশাহহুদ পড়তেন, কিন্তু সেটাকে নাড়তেন না। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ)।
৫৯. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) সলাতে ঠেস দিয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রসূল (ﷺ) হাতের উপর ভর দিতে নিষেধ করেছেন। (যঈফ আবুদাউদ)
৬০. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) প্রথম দুই রাকআতের পরের বৈঠক হতে এত তাড়াতাড়ি উঠতেন যেন তিনি উত্তপ্ত পাথরের উপর বসেছেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ তিরমিযী, যঈফ নাসাঈ)
৬১. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, যে ব্যক্তি নবী কারীম (ﷺ)-এর উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ। তার উপর ৭০ বার দুরূদ পাঠ করবেন। (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
৬২. রুওয়াইফে ইবনু ছাবেত আনছারী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের উপর দুরূদ পাঠ করবে এবং বলবে, “হে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁকে আপনি আপনার নিকট সম্মানিত স্থান দান করুন তার জন্য আমার শাফা'আত অবধারিত হবে । (যঈফ মিশকাত)
৬৩. সামুরা ইবনু জুনদুব (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) আমাদেরকে ইমামের সালামের উত্তর দিতে, অন্যকে ভালবাসতে ও সালাম দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
৬৪. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একদা রসূল (ﷺ) বললেন, বৎস! সলাতের মধ্যে কখনও এদিক সেদিক দেখবে না। সলাতের মধ্যে এদিক সেদিক দেখা ধ্বংসের কারণ । একান্তই যদি দেখতে হয় তাহলে নফলে, ফরযে নয়। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৬৫. আদী ইবনু ছাবেত (রাদিআল্লাহু আনহু) তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, হাঁচি, তন্দ্রা ও হাই তোলা সলাতের মধ্যে আর হায়েয ও বমি আসা এবং নাক হতে রক্ত পড়া শয়তানের পক্ষ হতে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৬৬. আবু যর গেফারী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সলাতে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার সম্মুখের কংকর মুছার চেষ্টা না করে। কারণ আল্লাহর রহমত তার সম্মুখীন রয়েছে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৬৭. উম্মু সালামা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) আফলাহ নামক আমাদের এক যুবককে দেখলেন, সে যখন সিজদা করতে যায় ফুঁ দেয় তখন রসূল (ﷺ) বললেন, হে আফলাহ! তোমার মুখমণ্ডলে ধূলাবালি লাগতে দাও। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৬৮. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আপন সলাতের শেষ দিকে সালামের পূর্বক্ষণে বসে বাতকর্ম করে, তাহলে তার সলাত হয়েছে। (যঈফ তিরমিযী)
৬৯. ইমরান ইবনু হুছাইন (রাদিআল্লাহু আনহু) নবী (ﷺ) তাদের ইমামতি করলেন এবং সলাতে ভুল করলেন। অতঃপর দুইটি সিজদা করলেন তারপর তাশাহহুদ পড়লেন এবং সালাম ফিরালেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ)।
৭০. জাবের ইবনু আব্দুল্লহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সলাত দেরী করে আদায় করবে না- খাওয়ার জন্য হোক অথবা অপর কোন আবশ্যকে । (যঈফ মিশকাত)
৭১. আবু মূসা আশআরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, দুই ব্যক্তি বা তদপেক্ষ অধিক সংখ্যক হলেই জামাআত হয় । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
৭২. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ ‘সলাত’ পাঠান কাতারের ডান দিকের লোকদের প্রতি । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৭৩. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, উত্তম লোকেরাই যেন তোমাদের আযান দেয় এবং তোমাদের ইমামতি যেন তোমাদের ক্বারীগণই করে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৭৪. সালামা বিনতে হুর (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে এটাও একটি। মসজিদে সমবেত মুছলীগণ একে অন্যকে ঠেলে দিবে; কিন্তু তাদের সলাত পড়াতে পারে এমন কোন উপযুক্ত ইমাম পাবে না। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৭৫. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) আছরের পূর্বে দুই রাক'আত (নফল) সলাত আদায় করতেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
৭৬. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে মাগরিবের পর ছয় রাক'আত সলাত পড়েছে, ঐ সময়ে ওদের মধ্যে সে কোন মন্দ বাক্য উচ্চারণ করেনি, তার সেই সলাত বার বছরের ইবাদতের সমান গণ্য করা হবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৭৭. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকআত সলাত পড়েছে, আল্লাহ্ তা'আলা তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর তৈরী করবেন । (জাল তিরমিযী, মিশকাত)
৭৮. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) যখনই ইশার সলাত পড়ে আমার ঘরে প্রবেশ করতেন তখনই তিনি চার রাকআত অথবা ছয় রাকআত সলাত পড়তেন। (যঈফ আবুদাউদ)
৭৯. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) মাগরিবের পর দুই রাকআত সুন্নাতে ক্বিরাআত এত দীর্ঘ করতেন যে, ততক্ষণে সমস্ত লোক মসজিদ হতে বিদায় হয়ে যেত। (যঈফ আবুদাউদ)
৮০. হুযায়ফা (রাদিআল্লাহু আনহু) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি এটাও বলেছেন, রসূল (ﷺ) বলতেন, মাগরিবের পর দুই রাকআত তাড়াতাড়ি পড়বে। কেননা, উহা ফরযের সাথে উপরে উঠান হয় । (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)।
৮১. বুরায়দা পবলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, বিতর হক; সুতরাং যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর হক, সুতরাং যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর হক, সুতরাং যে বিতর পড়বে না সে আমাদের দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। (যঈফ। আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
৮২. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বিতর তিন রাকআত পড়তেন যাতে মুফাছছাল সূরা সমূহের নয়টি সূরা পড়তেন। প্রত্যেক রাকআতে তিনটি করে যার শেষ সূরা ছিল ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ। (যঈফ তিরমিযী)
৮৩. আবু মূসা আশআরী (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, অর্ধ শা'বানের রাত্রিতে আল্লাহ তা'আলা অবতীর্ণ হন এবং মাফ করে দেন তাঁর সকল সৃষ্টিকে মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ব্যতীত। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)।
৮৪. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূবাহের বার রাকআত সলাত পড়বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণের একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৮৫. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি যোহার দুই রাকআত সলাত পড়ার প্রতি লক্ষ্য রাখবে, তার গোনাহ মাফ করা হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৮৬. নাফে’ বলেন, আব্দুল্লাহ্ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর পুত্র ওবায়দুল্লাহকে সফরে নফল সলাত পড়তে দেখতেন, কিন্তু তাঁকে বাধা দিতেন না। (যঈফ মিশকাত)
৮৭. সামুরা ইবনু জুনদুব (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে বিনা ওযরে জুম'আর সলাত ছেড়ে দিয়েছে, সে যেন এক দীনার দান করে। যদি ততে সমর্থ না হয় তবে, অর্ধ দীনার । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ)
৮৮. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি আযান শ্রবণ করেছে তার উপর জুম'আর সলাত ফরয। (যঈফ আবুদাউদ)
৮৯. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রয়োজন ছাড়া জুমু'আর সলাত ছেড়ে দিল সে মুনাফিক বলে লেখা হয়েছে এমন কিতাবে, যার লিখা মুছিয়ে ফেলা যায় না এবং পরিবর্তন করাও হয় না। অপর বর্ণনায় আছে, তিনবার ছেড়ে দিয়েছে। (যঈফ দারাকুত্রী, যঈফ মিশকাত)
৯০. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমুআর দিনে ইমামের খুৎবা দানকালে কথা বলে, সে হল গাধার ন্যায়, যে বোঝা উঠায় এবং যে তাকে বলে চুপ কর তার জন্যও জুমু'আ নেই । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)।
৯১. বারা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, মুসলিমদের দায়িত্ব হল, তারা যেন জুমু'আর দিনে গোসল করে এবং তাদের প্রত্যেকে যেন আপন পরিবারে কোন সুগন্ধি থাকলে তা গ্রহণ করে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৯২. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন, আমরা যেন শিং ভাঙ্গা ও কান কাটা পশু দ্বারা কুরবানী না করি। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ তিরমিযী)
৯৩. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) মদীনায় দশ বছর বছর অবস্থান করেছেন আর বরাবর কুরবানী করেছেন। (যঈফ তিরমিযী)
৯৪. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, নবীগণের মধ্যে এক নবী লোকদের নিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনায় বের হলেন। দেখলেন একটি পিঁপড়া নিজের পা দুইটি আকাশের দিকে উঠিয়ে রেখেছে। এটা দেখে নবী (ﷺ) বললেন, তোমরা ফিরে যাও। এই পিঁপড়াটির কারণে তোমাদের প্রার্থনায় সাড়া দেয়া হয়েছে। (যঈফ। দারাকুত্রী, যঈফ মিশকাত)
৯৫. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে উত্তমরূপে ওযু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তার কোন মুসলিম ভাইকে দেখতে যাবে, তাকে জাহান্নাম হতে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)।
৯৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা যখন কোন রোগীর নিকট যাবে, তার জীবন সম্পর্কে তাকে সান্ত্বনা দান করবে। ইহা নিয়তির কোন কিছু উল্টাতে পারবে না; কিন্তু তার মন সান্ত্বনা লাভ করবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৯৭. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন বান্দার গোনাহ অধিক হয়ে যায় এবং সে সকলের প্রায়শ্চিত্তের মত তার কোন নেক আমল না থাকে, আল্লাহ তা'আলা তাকে বিপদ ও চিন্তাগ্রস্ত করেন যাতে তার সে সকল গোনাহর প্রায়শ্চিত্ত করে দিতে পারেন। (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
৯৮. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) তিন দিনের পূর্বে কোন পীড়িতকে দেখতে যেতেন না । (যঈফ ইবনে মাজাহ)
৯৯, ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সফরের মউত শাহাদত । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১০০. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে রুগ্নাবস্থায় মারা গেছে, সে শহীদ হয়ে মারা গেছে, তাকে কবর-আযাব হতে রক্ষা করা হবে এবং সকাল-সন্ধ্যা তাকে জান্নাতের রিযিক দেওয়া হবে । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১০১. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, মৃত্যু হল মুমিনের তোহফা । (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১০২. মা'কেল ইবনু ইয়াসার (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের নিকট ‘সূরা ইয়াসীন’ পড়বে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
১০৩. মুহম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহ.) বলেন, আমি সাহাবী জাবের ইবনু আব্দুল্লাহর নিকট পৌছলাম, তখন তিনি মুমূর্ষ অবস্থায়। আমি বললাম, রসূল (ﷺ) -কে আমার সালাম দিবেন। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১০৪. উবাদা ইবনু ছামেত (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, উত্তম কাফন হচ্ছে হুল্লাহ এবং উত্তম কুরবানীর পশু হচ্ছে শিংওয়ালা দুম্বা । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১০৫. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের ভাল কার্যসমূহের উল্লেখ করবে এবং তাদের মন্দ কার্যসমূহের উল্লেখ হতে বিরত থাকবে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ। তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১০৬. আবু মূসা আশআরী (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের নিকট দিয়ে কোন লাশ অতিক্রম করবে, ইহুদী, খৃস্টানের, মুসলিমের হোক, তোমরা তার জন্য দাঁড়াবে। কারণ তোমরা তার সম্মানে দাঁড়াচ্ছো না, দাঁড়াচ্ছে তার সাথে যে সকল ফিরিশতা রয়েছেন তাঁদের সম্মানার্থে । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১০৭. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) -কে তাঁর মাথার দিক হতে কবরে নামানো হয়েছিল । (যঈফ মিশকাত)
১০৮. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একবার নবী কারীম (ﷺ) একটি কবরে প্রবেশ করলেন রাতে । তাই তাঁর জন্য বাতি জ্বালান হল, অতঃপর তিনি মুর্দাকে কিবলার দিক হতে গ্রহণ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তোমায় রহম করুন! তুমি ছিলে বড় কোমল প্রাণ, বড় কুরআন তেলাওয়াতকারী। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১০৯. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) –কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মরবে, তাকে ঘরে আবদ্ধ রাখবে না তাড়াতাড়ি তাকে কবরে পৌছে দিবে। তার মাথার নিকট সূরা বাকারার প্রথমাংশ এবং পায়ের দিকে বাকারার শেষের দিক পাঠ করবে । (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১১০. আবু রাফে’ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) সা'দ ইবনে মুআযকে কবরে নামিয়েছিলেন এবং তাঁর কবরের উপর পানি ছিটিয়ে ছিলেন। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১১১. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) অভিশাপ দিয়েছেন বিলাপকারিণীকে ও শ্রবণকারিণীকে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১১২. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান করে, তার বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় সওয়াব রয়েছে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১১৩. আবু বারযা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সন্তানহারা স্ত্রীলোককে সান্ত্বনা দান করবে, তাকে জান্নাতে একটি ডোরাদার কাপড় পরান হবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১১৪. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কারও জুতার ফিতা ছেড়ে যাবে, তখন সে যেন ‘ইন্নালিল্লা-হি’ পড়ে! কারণ ইহাও বিপদের অন্তর্ভুক্ত। (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১১৫. মুহাম্মাদ ইবনু নু'মান (রহ.) নবী কারীম (ﷺ) -এর নাম করে বলেন যে, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমু'আর দিন আপন মাবাবা অথবা তাঁদের মধ্যে একজনের কবর যিয়ারত করবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে এবং মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহারকারী বলে লেখা হবে । (জাল বায়হাক্বী, মিশকাত)
১১৬. ইবনু ফেরাসী হতে বর্ণিত আছে, তার পিতা ফেরাসী বলেছেন, আমি একদা রসূল (ﷺ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল (ﷺ) আমি কি কারও নিকট কিছু চাইতে পারি? নবী কারীম বললেন, যদি অগত্যা তোমার তা চাইতে হয়, তবে নেক ব্যক্তিদের নিকট চাইবে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১১৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কারও আপন জীবনকালে এক দিরহাম দান করা তার মৃত্যুকালে একশত দিরহাম দান করা অপেক্ষা অধিক উত্তম। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ। মিশকাত)
১১৮. আবু দারদা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে মৃত্যুকালে দান করে অথবা দাসদাসী মুক্ত করে, তার উদাহরণ সেই ব্যক্তির, যে পেট ভরে খাওয়ার পর হাদিয়া দেয়। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ। আবুদাউদ)
১১৯. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, এই দুইটি স্বভাব কোন মুমিনের মধ্যে একত্র হতে পারে না- কৃপণতা ও দুর্ব্যবহার । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১২০. আবুবকর ছিদ্দীক (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশ করবে না প্রতারক, কৃপণ এবং যে ব্যক্তি দান করে খোটা দেয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১২১. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা দানের ব্যাপার তাড়াতাড়ি করবে। কারণ বিপদাপদ তাকে অতিক্রম করতে পারে না । (যঈফ মিশকাত)
১২২. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) বলেছেন, দান আল্লাহ তা'আলার ক্রোধকে প্রশমিত করে এবং মন্দ-মৃত্যু রোধ করে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১২৩. জাবের (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর নামে কিছু চাওয়া যায় না জান্নাত ব্যতীত । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১২৪. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কোন ভুখ প্রাণীকে তৃপ্তি করে খাওয়ানোই হল শ্রেষ্ঠ দান। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১২৫. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, যখন রমাদান মাস উপস্থিত হত, রসূল (ﷺ) সমস্ত কয়েদীকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক যাঞ্চাকারীকে দান করতেন। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১২৬. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, তাঁর উম্মতকে মাফ করা হয় রমাদান মাসের শেষ রাতে। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রসূল ! এটা কি কদরের রাত্রি? রসুল (ﷺ) বললেন, না; বরং এই কারণে যে, কর্মচারীর বেতন দেয়া হয় যখন সে তার কর্ম শেষ করে । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১২৭. মু'আয ইবনু যুহরা বলেন, নবী (ﷺ) যখন ইফতার করতেন বলতেন, আল্লাহ আমি তোমারই জন্য সিয়াম রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিকে সিয়াম খুলেছি। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১২৮. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (ﷺ) সিয়াম অবস্থায় তাঁকে চুম্বন করতেন এবং তার জিহ্বা চুসতেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১২৯. আমের ইবনু রবীআ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী কারীম (ﷺ)-কে সিয়াম অবস্থায় অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৩০. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে রমাদানের একটি সিয়াম ভেঙ্গেছে কারণ ও রোগ ব্যতীত, তার উহা পূরণ করবে না সারা জীবনের সিয়াম- যদিও সে সারা জীবন সিয়াম রাখে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৩১. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তিন জিনিস সায়েমদের সিয়াম নষ্ট করে না- শিঙ্গা লাগানো, বমি করা, স্বপ্নদোষ । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৩২. সালামা ইবনু মুহাব্বাক (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যার এমন বাহন রয়েছে যা তাকে আরামের সাথে সাথে ঘরে পৌঁছে। দিবে, সে যেন সিয়াম রাখে যেখানেই সে সিয়াম পায়। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৩৩. আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সফর অবস্থায় রামাদানের সিয়াম মুক্বীম অবস্থায় ইফতারকারীর ন্যায় । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৩৪. নাফে’ আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, যে রমাদানের সিয়াম মাথায় রেখে মরে গেছে, তার পক্ষ হতে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে যেন একজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ান হয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৩৫. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) এক মাসের শনি, রবি ও সোমবার সিয়াম রাখতেন আর অপর মাসের মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৩৬. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (ﷺ) আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৩৭. উম্মু সালামা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) অপর দিনে সিয়াম রাখার চেয়ে শনি-রবিবারেই অধিক সিয়াম রাখতেন এবং বলতেন, এ দুইদিন মুশরিকদের পর্বের দিন। অতএব, এ ব্যাপারে আমি তাদের খেলাফ করাকে ভালবাসি। (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৩৮. হাফছা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, চারটি বিষয় এমন যেগুলিকে নবী কারীম (ﷺ) কখনও ছাড়তেন না-আশুরার সিয়াম, যিলহজ্জের প্রথম দশকের সিয়াম, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের সিয়াম এবং ফযরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নত। (যঈফ নাসাঈ, যঈফ মিশকাত)
১৩৯. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) আইয়ামে বীযের সিয়াম সফরে ছাড়তেন না। (যঈফ নাসাঈ, যঈফ মিশকাত)
১৪০. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন রসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের যাকাত রয়েছে এবং শরীরের যাকাত হল সিয়াম। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৪১. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে এক দিন সিয়াম রাখবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে জাহান্নাম হতে দূরে রাখবেন একটি কাক বাচ্চা কাল। থেকে অতি বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত যতদূর উড়ে যেতে পারে ততদূরে । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৪২. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একবার রসূল (ﷺ) - কে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, উহা পূর্ণ রমাদানেই রয়েছে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৪৩. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) ইতিকাফ অবস্থায় হাঁটতে পথের এদিক সেদিক গিয়ে ও না দাঁড়িয়ে রোগীর অবস্থা জিজ্ঞেস করতেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৪৪. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, রসূল (ﷺ) ই'তিকাফকারী সম্পর্কে বলেছেন, সে গোনাহসমূহ হতে বেঁচে থাকে এবং তার জন্য নেকীসমূহ লেখা হয় ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে (বাহিরে থেকে) যাবতীয় নেক কাজ করে । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৪৫. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে পেটে কুরআনের কোন অংশ নেই, তা শূন্য ঘরতুল্য। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ। মিশকাত)
১৪৬. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়েছে এবং সেটাকে মুখস্থ রেখেছে অতঃপর তার হালালকে। হালাল এবং হারামকে হারাম জেনেছে, তাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ কবুল করবেন, যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়েছিল । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)।
১৪৭. আল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে সূরা হা-মীম আল-মুমিন-ইলাইহিল মাছীর এবং আয়াতুলকুরসী পড়বে, তার দ্বারা তাকে হিফাযতে রাখা হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত আর যে তা সন্ধ্যায় পড়বে, তার দ্বারা তাকে হিফাযতে রাখা হবে সকাল পর্যন্ত। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৪৮, আবু দারদা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথমের তিন আয়াত পড়বে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে নিরাপদে রাখা হবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১৪৯. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের একটি কৃলব রয়েছে, আর কুরআনের কলব হল ‘সূরা ইয়াসীন’ । যে সেটা পড়বে, আল্লাহ তা'আলা তার বিনিময়ে দশ বার কুরআন খতমের সওয়াব নির্ধারণ করবেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৫০. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির এক হাজার পূর্বে সূরা ত্ব-হা’ ও ‘ইয়াসীন’ পাঠ করলেন। তখন ফিরিশতারা শুনে বললেন, ধন্য সেই জাতি, যাদের উপর এটা নাযিল হবে, ধন্য সেই পেট যে সেটা ধারণ করবে এবং ধন্য সেই মুখ যে সেটা উচ্চারণ করবে। (যঈফ মিশকাত)
১৫১. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ‘সূরা হা-মীম দুখান’ পড়ে সকালে উঠে এমতাবস্থায় তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। (জাল তিরমিযী, মিশকাত)
১৫২. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে জুম'আর রাতে ‘সূরা হা-মীম দুখান’ পড়বে, তাকে মাফ করা হবে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৫৩. ইরবায ইবনু সারিয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) শয়নের পূর্বে ‘মুসাব্বিহাত (হাদীদ, হাশর, ছফ, জুমুআহ, তাগাবুন) পাঠ করতেন এবং বলতেন, ঐ আয়াতগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যা হাজার আয়াত অপেক্ষাও উত্তম। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৫৪. আব্দুল মালেক ইবনু ওমায়র (রাদিআল্লাহু আনহু) মুরসালরূপে বর্ণনা করেন যে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সূরা ফাতিহায় সকল রোগের চিকিৎসা রয়েছে। (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১৫৫. উসমান ইবনু আফফান (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে সূরা আলে ইমরানের শেষের দিক পড়বে, তার জন্য পূর্ণ রাত্রি সলাতে অতিবাহিত করার সওয়াব লেখা হবে । (যঈফ মিশকাত, যঈফ দারেমী)
১৫৬. কা'ব ইবনু মালেক (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জুম'আর দিন তোমরা সূরা হুদ পড়বে । (যঈফ মিশকাত, যঈফ দারেমী)
১৫৭. আতা ইবনু আবু রাবাহ্ (রহ.) বলেন, আমার নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে একথা পৌছেছে যে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনের প্রথম দিকে ‘সূরা ইয়াসীন’ পড়বে, তার সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হবে । (যঈফ দারেমী, যঈফ। মিশকাত)
১৫৮. মা’কেল ইবনু ইয়াসার মুযানী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে শুধু আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে ‘সূরা ইয়াসীন’ পড়বে, তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করা হবে, সুতরাং তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের নিকট সূরা ইয়াসীন পড়। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১৫৯. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, প্রত্যেক জিনিসের একটি শীর্ষস্থান রয়েছে, আর কুরআনের শীর্ষস্থান হল সূরা বাক্বারাহ এবং প্রত্যেক জিনিসের একটি সার রয়েছে, আর কুরআনের সার হর ‘মুফাছছাল’ সূরা সমূহ। (যঈফ দারেমী, যঈফ। তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৬০. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক জিনিসের একটি শোভা রয়েছে, আর কুরআনের শোভা হল ‘সূরা আর রহমান’ । (যঈফ মিশকাত)
১৬১. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াক্আি পড়বে, কখনও সে দারিদ্রে পতিত হবে না। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) তার মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এটা পড়তে বলতেন। (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১৬২. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) সূরা সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লাকে ভালবাসতেন। (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৬৩. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন রসূল (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রত্যহ হাজার আয়াত পড়তে পারে না? সাহাবীগণ বললেন, কে প্রত্যহ হাজার আয়াত পড়তে পারবে? তখন তিনি বললেন, হতে কি তোমাদের কেউ প্রতিদিন সূরা ‘আলহাকুমুততকাছুর’ পড়তে পারে না? (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
১৬৪. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল বলেছেন, দু'আ হল ইবাদতের মগজ। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৬৫. ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ চাও। তিনি তাঁর নিকট চাওয়াকে পছন্দ করেন। আর মসীবত হতে মুক্তির অপেক্ষা করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৬৬, ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যার জন্য দু'আর দরজা খোলা, তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা হয়েছে এবং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা অপেক্ষা প্রিয়তর কোন জিনিসই চাওয়া হয় না। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৬৭. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য অনুপস্থিত ব্যক্তির দু'আই সত্বর কবুল হয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৬৮. সায়েব ইবনু ইয়াযীদ আপন পিতা উয়াযীদ হতে বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (ﷺ) যখন হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন, তখন হাত দ্বারা চেহারা মাসেহ করতেন। (যঈফ মিশকাত)
১৬৯. উম্মে হাবীবা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক কথাই তার পক্ষে ক্ষতিকর, কল্যাণকর নয় । সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজ হতে নিষেধ অথবা আল্লাহর যিকির ব্যতীত। (যঈফ। তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৭০. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর যিকির ছাড়া বেশী কথা বল না। কারণ আল্লাহর যিকির ছাড়া বেশী কথা অন্তর শক্ত হওয়ার কারণ। আর শক্ত দিল ব্যক্তিই হচ্ছে আল্লাহ হতে অনেক দূরে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৭১. যুবায়র (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, এমন কোন ভোর নেই যাতে আল্লাহর বান্দারা উঠেন, আর একজন ঘোষণাকারী এরূপ ঘোষণা না করেন, পবিত্র বাদশাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১৭২. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রশংসা করা হল সেরা কৃতজ্ঞতা। যে বান্দা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে তাঁর প্রশংসা করে না। (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১৭৩. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রথমে যাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে, তারা হবেন ঐ সমস্ত লোক যারা সুখে-দুঃখে সকল সময় আল্লাহর প্রশংসা করে। থাকেন। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)।
১৭৪. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ’ হল পাল্লার অর্ধেক, ‘আলহামদু লিল্লাহ' উহাকে পূর্ণ করে এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু’ এর সম্মুখে কোন পদা নেই, যতক্ষণ না তা আল্লাহর নিকটে পৌছে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৭৫. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ হল নিরানব্বইটি রোগের ঔষধ, যাদের সহজটা হল চিন্তা। (যঈফ মুসতাদরাক, যঈফ মিশকাত)
১৭৬. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সর্বদা ক্ষমা চায় আল্লাহ তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা হতে তাকে মুক্তি দেন। আর তাকে রিযিক দান করেন এমন স্থান থেকে যা সে ভাবেইনি । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)।
১৭৭. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর, যারা ভাল কাজ করে খুশী হয় এবং মন্দ কাজ করে ক্ষমা চায় । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৭৮. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ ভালবাসেন সেই মু'মিনকে যে পাপ করে তওবা করে । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)।
১৭৯. আবু যর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে মাফ করে দেন, যাবৎ পর্দা না পড়ে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল ! পর্দা কী? তিনি বললেন, কোন ব্যক্তির মুশরিক অবস্থায় মরা। (যঈফ মিশকাত)
১৮০. আবু মালেক আল-আশআরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে তখন সে যেন বলে, ‘আল্লাহ আমি তোমার নিকট আগম ও নির্গমনের মঙ্গল চাই। তোমার নামে আমি প্রবেশ করি। আমাদের রব্ব আল্লাহর নামে ভরসা করলাম। অতঃপর যেন আপন পরিবারের লোকদের প্রতি সালাম দেয়। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৮১. ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) পাঁচটি বিষয় হতে পানাহ চাইতেন- কাপুরুষতা, কৃপণতা, বয়সের মন্দতা, অন্তরের ফিতনা ও কবরের আযাব হতে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ, যঈফ মিশকাত)
১৮২. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (ﷺ) বলতেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সত্যের বিরুদ্ধাচরণ, কপটতা ও চরিত্রের অসাধুতা হতে পরিত্রাণ চাই'। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ। নাসাঈ, যঈফ মিশকাত)
১৮৩. মু'আয (রাদিআল্লাহু আনহু) নবী কারীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট পানাহ্ চাও লালসা হতে, যা মানুষকে দোষের দিকে নিয়ে যায় । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৮৪. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর তার সন্তানদের মধ্যে যারা বালেগ তাদেরকে ইহা শিখিয়ে দিতেন, আর যারা বালেগ নয় কাগজে লিখে তাদের গলায়। ঝুলিয়ে দিতেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৮৫. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একটি দু'আ আমি রসূল (ﷺ) হতে স্মরণ করেছি, যা আমি কখনও ছাড়ি না । হে আল্লাহ! আমাকে এরূপ করুন যাতে আমি সম্মানের সাথে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, বেশী করে আপনাকে স্মরণ করতে পারি, আপনার উপদেশ পালন। করতে পারি এবং আপনার হুকুম রক্ষা করতে পারি । (যঈফ মিশকাত)
১৮৬. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলতেন, হে আমি আপনার নিকটে স্বাস্থ্য, পবিত্রতা, আমানতদারী, উত্তম চরিত্র ও আপনার নির্দেশের উপর সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব কামনা করছি। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১৮৭. উম্মে মা'বাদ (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরকে কপটতা হতে, আমার কাজকে লোক দেখানো হতে, আমার যবানকে মিথ্যা হতে এবং আমার চক্ষুকে খিয়ানত করা হতে পবিত্র করুন। আপনি অবগত আছেন চক্ষুর লুকোচুরি ও অন্তরের কারসাজির ব্যাপারে । (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১৮৮, ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমাকে রসূল (ﷺ) এই দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন, তুমি বল, হে আল্লাহ! আপনি আমার ভিতরকে বাহির হতে উত্তম করুন এবং বাহিরকে পুন্যময় করুন। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট চাই তুমি যা মানুষকে ভাল দান করেছেন তা পরিবার, মাল ও সন্ত নি, যারা পথভ্রষ্ট বা পথভ্রষ্টকারী নয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৮৯, আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ পৌছার পথ খরচের মালিক হয়েছে, অথচ হাজ্জ করেনি, সে ইহুদী খ্রীস্টান হয়ে মারা যাক; এতে কিছু আসে যায় না। এজন্য যে, আল্লাহ বলেন, মানুষের প্রতি বায়তুল্লাহ্ হাজ্জ ফরয, যখন সে পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য লাভ করেছে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৯০. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তুমি কোন হাজীর সাক্ষাৎ পাবে তখন তাকে সালাম করবে, মুছাফাহা করবে। প্রবেশের পূর্বে। কারণ হাজী হল গোনাহ মাফ করা পবিত্র ব্যক্তি। (যঈফ। আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৯১. উমারা ইবনু খুযায়মা ইবনু ছাবেত তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী কারীম (ﷺ) যখন তালবিয়া হতে অবসর গ্রহণ করলেন, আল্লাহর নিকট তাঁর সন্তোষ প্রার্থনা করলেন ও জান্নাত চাইলেন। অতঃপর তাঁর নিকট জান্নামের আগুন হতে ক্ষমা চাইলেন তাঁর রহমতের উসীলায় । (যঈফ মিশকাত)।
১৯২. মুহাজেরে মাক্কী বলেন, একদা জাবের (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে জিজ্ঞেস করা হল, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ দেখবে সে দুআয় হাত উঠাবে কি-না? উত্তরে তিনি বললেন, আমরা নবী কারীম (ﷺ) -এর সাথে হাজ্জ করেছি; কিন্তু এইরূপ করিনি। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)।
১৯৩. তালহা ইবনু ওবায়দুল্লাহ ইবনু কারীয (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, শয়তানকে কোনদিন এত অধিক অপমানিত, অধিক ধিকৃত, অধিক হীন ও অধিক রাগান্বিত দেখা যায় না আরাফার দিন। অপেক্ষা। যেহেতু সে দেখতে থাকে যে, বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমত নাযিল হচ্ছে এবং তাদের বড় বড় পাপ মাফ করা হচ্ছে; কিন্তু যা দেখা গিয়েছিল বদরের দিনে; জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, বদরের দিন কী দেখা গিয়েছিল? উত্তরে তিনি বললেন, সেদিন সে নিশ্চিতরূপে দেখেছিল যে, জিবরীল (আ.) ফিরিশতাদেরকে সারিবন্দী করছেন। (যঈফ মালেক, যঈফ মিশকাত)
১৯৪. জাবের (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, শিকারের গোশত ইহরামেও তোমাদের জন্য হালাল-যদি না তোমরা নিজেরা উহা শিকার কর অথবা তোমাদের জন্য শিকার করা হয়। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ)
১৯৫. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হুদায়বিয়ার বৎসর তাঁরা যে পশু কুরবানী করেছিলেন (পরবর্তী বৎসরের) কাযা উমরায় তার পরিবর্তে অন্য পশু কুরবানী করতে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)।
১৯৬. আইয়াশ ইবনু আবু রবীয়া মাখযুমী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, এই উম্মত কল্যাণের সাথে থাকবে, যাবৎ তারা মক্কার এই সম্মান পূর্ণভাবে বজায় রাখবে । যখন তারা ইহা বিনষ্ট করবে ধবংস হয়ে যাবে । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৯৭. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ইসলামী জনপদ সমূহের মধ্যে মদীনা সবশেষে ধবংস হবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৯৮. জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ বাজালী (রাদিআল্লাহু আনহু) নবী কারীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা আমার প্রতি ওহী। করেছিলেন, এই তিনটির মধ্যে যেটিতেই আপনি অবতরণ করবেন সেটিই হবে আপনার হিজরতস্থল- মদীনা, বাহরাইন ও কিন্নাসরীন। (জাল তিরমিযী, মিশকাত)
১৯৯, মিসওয়াকসহ এক রাক'আত সলাত মিসওয়াক ছাড়া ৭০ রাকায়াতের চেয়ে উত্তম। (জাল হাদীস)
২০০. যে ব্যক্তি ওযূ থাকা অবস্থায় ওযু করে আল্লাহ তার আমলনামায় ১০টি নেকি লিখেন। (জাল হাদীস)
২০১. ওযূ যে করল এবং হাত দিয়ে ঘাড় মাসেহ করল, কিয়ামত দিবসে তার ঘাড়ে বেড়ী পড়ানো হবে না। (জাল হাদীস)
২০২. প্রচন্ড শীতে যে ওযূ করে তার জন্যে রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান আর প্রচন্ড গরমে ওযূ করলে সে পাবে এক গুণ সওয়াব। (জাল হাদীস)
২০৩. কেউ ওযূ করে শোবার পর সে রাতে মারা গেলে সে শহীদ হিসেবে তার মৃত্যু গণ্য হবে। (জাল হাদীস)
২০৪. এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি সলাত ছেড়ে দিয়েছি। রসূল (ﷺ) বললেন, পরিত্যক্ত সলাতের কাযা আদায় কর। লোকটি বললো, কিভাবে কাযা পড়বো? রসূল (ﷺ) বললেন, প্রত্যেক সলাতের সাথে অনুরূপ (ওয়াক্তের) সলাত পড়ে নাও। লোকটি বললো? ওয়াক্তিয়া সলাতের পর নাকি আগে? রসূল (ﷺ) বললেন, না (বরং) আগে । (জাল হাদীস)
২০৫. মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে এবং তালবীয়া পাঠকারীকে (হাজী) তালবীয়া পাঠ করা অবস্থায় কবর থেকে বের করা হবে এবং উচ্চস্বরে মুয়াজ্জিনকে ক্ষমা করা হবে । (জাল হাদীস)
২০৬. মুয়াজ্জিনের আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ বলার সময় তর্জনী আংগুলের উপরি পেট দিয়ে উভয় চক্ষু মাসেহ করা...। (জাল হাদীস)
২০৭. যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াদারীর কথা বলে আল্লাহ তার আমল নষ্ট করে দেন। (জাল হাদীস)।
২০৮. মসজিদে কথা বলা নেক আমলকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেমন চতুষ্পদ জন্তু ঘাস তৃণলতা খেয়ে ফেলে। (জাল হাদীস)
২০৯. যে ব্যক্তি মসজিদে বাতি দেয় ৭০ হাজার ফিরিশতা সে বাতি নিভানো পর্যন্ত তার জন্যে দু'আ করে, আর যে ব্যক্তি মসজিদে বিছানা বিছিয়ে দেয় ৭০ হাজার ফিরিশতা সে বিছানা ছিড়ে না যাওয়া পর্যন্ত তার জন্যে দু’আ করতে থাকে । (জাল হাদীস)
২১০. যে ব্যক্তি ফরয আদায় করলো আল্লাহর কাছে তার দু’আ গ্রহণীয় । (জাল হাদীস)
২১১. সবচেয়ে সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট লোকটি কওমের ইমামতি করবেন। (জাল হাদীস)
২১২. যে ব্যক্তি ফযর সলাত জামায়াতের সাথে আদায় করলো সে যেনো আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে ৫০টি হাজ্জ্ব করলো। (জাল হাদীস)
২১৩. সলাতের জন্যে ইকামত দিলে ফরয সলাত ছাড়া অন্য কারো সলাত নেই, তবে ফযরের দু'রাক'আত সুন্নত পড়া যাবে। (জাল হাদীস)
২১৪. আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর ফিরিশতাকুল জুমু'আর দিনে পাগড়ীসহ সলাত আদায়কারীর উপর রহমত বর্ষণ করেন। (জাল হাদীস)।
২১৫. যে এক বৎসর পর্যন্ত যত্নসহকারে আযান দেয় তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। হয়ে যায় । (জাল হাদীস)
২১৬. টুপীর উপর পাগড়ি পরিধান করা আমাদের ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য চিহ্ন স্বরূপ। বিচার দিনে মাথায় বাঁধা পাগড়ির প্রতিটি ভাজে নূর দান করা হবে । (জাল হাদীস)
২১৭. রসূল (ﷺ) জুমুআর (দু'রাক'আতের) আগে ও পরে কোন বিরতি ছাড়া ৪ রাকআত করে সলাত পড়তেন। (জাল হাদীস)
২১৮. যে মসজিদে বাতি দেয় ঐ বাতিতে এক ফোঁটা তৈল থাকা পর্যন্ত ফিরিশতাগণ তার জন্যে দু'আ করতে থাকেন। (জাল হাদীস)।
২১৯. মদীনার মসজিদে জুমু'আর সলাত আদায় করা অন্য মসজিদে ১ হাজার সলাত আদায় করার সমান অথবা তথায় রমাদান মাসের ১ মাস সিয়াম। রাখা অন্য মাসের ১০০০ মাস সিয়াম রাখার সমান। (জাল হাদীস)
২২০. পাগড়ীসহ দু'রাকআত, পাগড়ী ব্যতীত ৭০ রাকআত সলাতের চেয়ে উত্তম । (জাল হাদীস)
২২১. আমি জান্নাতে প্রবেশ করে মর্মর পাথরের প্রাসাদ দেখলাম যার মাটি খামিরা হয়েছে মিশ দিয়ে। আমি জিব্রাইলকে (আলাইহিস সালাম) জিজ্ঞেস করলাম : এটা কার জন্যে তৈরী করা হয়েছে? তিনি বললেন - আপনার উম্মতের মুয়াযযিন ও ইমামদের জন্যে । (জাল হাদীস)
২২২. তিনি (রসূল) শুধুমাত্র সলাতের শুরুতেই হস্তদ্বয় উঠাতেন (রফেঈ ইয়াদাইন) তারপর তিনি আর এ কাজটি পুনরায় করতেন না। (জাল হাদীস)
২২৩. রমাদান মাসে তিনি (রসূল) ২০ রাক'আত এবং বিতর সলাত জামায়াত ছাড়া পড়তেন। (জাল হাদীস)
২২৪. যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাতে জাগ্রত থাকে তার হৃদয় কখনও মৃত্যুবরণ করবে না অথচ সেদিন সকলের হৃদয় মরে যাবে । (জাল হাদীস)
২২৫. যে ব্যক্তি জুমুআর দিন রাতে রোগীদের সেবা করে, গরীবকে খাওয়ায় এবং জানাযায় শরীক হয়, ৪০ বৎসর পর্যন্ত তাকে গুনাহ স্পর্শ করবে না। (জাল হাদীস)
২২৬. যে সলাতে দুই হাত উপরে উঠায় (রফেঈ ইয়াদাইন) তার সলাত শুদ্ধ নয় । (জাল হাদীস)
২২৭. যে ইমামের পিছনে ইকতাদা করে ক্বিরাত পড়ে তার মুখ আগুন দিয়ে ভরে দেয়া হবে । (জাল হাদীস)
২২৮. সলাতুস তাসবীহ নামে সলাত আদায় করা। (জাল হাদীস)
২২৯, যে ব্যক্তি জুমু'আর দিন যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে দু'রাকআত। সলাতের ১ম রাকআতে ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসী ১ বার, ফালাক ২৫ বার এবং ২য় রাক'আতেফাতিহা, ইখলাস ও নাস ২৫ বার পড়বে এবং সালামান্তে লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা- পড়বে সে স্বপ্নযোগে আল্লাহকে এবং জান্নাতে নিজের স্থান না দেখে মৃত্যুবরণ করবে না। (জাল হাদীস)
২৩০. যে ব্যক্তি আশুরার দিন যোহর ও আসরে মধ্যবর্তী সময় ৪ রাক'আত সলাত পড়বে। প্রত্যেক রাকআতেফাতিহা ১ বার আয়াতুল কুরসী ১০ বার ...। (জাল হাদীস)
২৩১. ঈদুল ফিতরের পর ১২ রাক'আত এবং ঈদুল আযহার পর ৬ রাক'আত সলাত পড়া সুন্নত। (জাল হাদীস)
২৩২. ঈদের রাতে ৬ রাক'আত সলাত পড়লে পরিবারের এমন লোকদের জন্যে শাফায়াত করা যাবে যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গিয়েছিল । তাকে ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়ার মতো সওয়াব দান করবেন। (জাল হাদীস)
২৩৩. যে ব্যক্তি রমাদানের শেষ জুমুআর দিন রাতে ৫টি ফরয সলাত আদায় করবে তার পরিত্যক্ত সুন্নতগুলো আদায় হয়ে যাবে । (জাল হাদীস)
২৩৪. যে মুমিন বান্দা জুমার রাতে দু'রাক'আত সলাত প্রত্যেক রাকআতেফাতিহা এবং ২৫ বার ইখলাস পড়বে। তারপর সালামান্তে ১ হাজার বার দরুদ পাঠ করবে সে আমাকে স্বপ্নে দেখবে। আর যে আমাকে স্বপ্নে দেখবে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন। (জাল হাদীস)
২৩৫. যে ব্যক্তি যোহরের আগের ৪ রাকআত সলাত সব সময় না পড়বে সে আমার শাফায়াত পাবে না । (জাল হাদীস)
২৩৬. রাতের প্রথম ভাগে বিতর পড়লে শয়তান অসন্তোষ হয় এবং শেষরাতে সেহরী খেলে (রহমান) আল্লাহ খুশী হন । (জাল হাদীস)
২৩৭. মাগরিবের প্রতি রাকআতে ৪০ বার ইখলাসসহ ১০ রাকআত সলাত আদায় করা। (জাল হাদীস)
২৩৮. যাকাত আদায় কর এবং এদ্বারা আহলে ইলমের অন্বেষণ কর, কেননা এটাই অধিক নেক ও তাকওয়ার নীতি। (জাল হাদীস)
২৩৯. শুল্ক ও উশর (এক দশমাংশ) উভয়ই মুমিনের উপর একত্রিত হয় না। (জাল হাদীস)
২৪০. প্রত্যেক জিনিসের যাকাত আছে : আর ঘরের যাকাত হলো আতিথেয়তা। (জাল হাদীস)
২৪১. সাহায্য প্রার্থনাকারীদের দান কর; যদিও সে ঘোড়ায় চড়ে আসে। (জাল হাদীস)
২৪২. মানুষের কাছে হাত পাতা গর্হিত কাজ; এর চেয়ে জঘন্য ও অশ্লীল আর কোনো কাজ নেই। (জাল হাদীস)
২৪৩. যার কাছে সদাকা করার মতো কিছু নেই সে যেনো ইহুদীকে ভৎসনা করে। কেননা এটাই তার জন্যে সদাকাহ। (জাল হাদীস)
২৪৪. যে ব্যক্তি তার ভাইকে উদর পূর্তি করে রুটী খাওয়াবে এবং তৃষ্ণা মিটায়ে পানি পান করাবে । আল্লাহ তার থেকে দোযখ ৭টি পরিখা পরিমাণ দূরে নিয়ে যাবে । একেকটি পরিখার দূরত্ব হবে ৫শ’ বৎসরের রাস্তায় সম পরিমাণ । (জাল হাদীস)
২৪৫. যদি তুমি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাও এমতাবস্থায় যে তিনি তোমার উপর সন্তুষ্ট তাহলে তিনি যে রিক দান করেছেন তা খরচ করতে একটুও কৃপণতা করো না এবং কোনো সাহায্য প্রার্থীকেই বঞ্চিত করো না। (জাল হাদীস)
২৪৬. যে ব্যক্তি ক্ষুধার্তকে উদরপূর্তি করে খাওয়ায় এবং দোষকে গোপন রাখে। তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দেয়া হয় । (জাল হাদীস)
২৪৭. যে ব্যক্তির ব্যবহার ভালো তার প্রতি আকর্ষিত হওয়া হৃদয়ের প্রকৃতি আর অসদাচারণ ব্যক্তির প্রতি স্বভাবতই বিদ্বেষ জন্মে। (জাল হাদীস)
২৪৮. যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের উপকার করার চেষ্টা করে তার আগে পরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় । (জাল হাদীস)
২৪৯. সিয়াম রেখে সুস্থ্য থাকো। (জাল হাদীস)
২৫০. সিয়াম পালনকারীর প্রতিটি পশম আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। প্রত্যেক সিয়াম পালনকারী নর-নারীর জন্যে কিয়ামত দিবসে আরশের নীচে স্বর্ণখচিত পাত্র রাখা হবে । (জাল হাদীস)
২৫১. তিন ধরনের লোকদের খানা-পিনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না । সিয়াম পালন কারী, রাত্রি জাগরণকারী, আবেদ এবং মেজবান। তিন ধরনের লোকদের অসৎ চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। রোগী, সিয়াম পালনকারী এবং ন্যায়পরায়ণ ইমাম । (জাল হাদীস)
২৫২. যে ব্যক্তি সিয়াম পালনকারীকে হালাল খাদ্য ও পানীয় দ্বারা ইফতার করায় ফিরিশতাকুল তার জন্য মাগফিরাত কামনা করে থাকেন। (জাল হাদীস)
২৫৩. রজব মাস অবশ্যই মস্তবড় মাস। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি সিয়াম পালন করলো তাকে সহস্র বৎসরে সিয়াম পালনের সওয়াব দেয়া হবে...। (জাল হাদীস)
২৫৪. আশুরার দিন চোখে সুর্মা দিলে তার চোখ কখনো খারাপ হবে না। (জাল হাদীস)
২৫৫. রমাদান মাসের প্রথম রাতে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে থাকেন। আর আল্লাহ তা'আলা যখন কোন বান্দার প্রতি দৃষ্টি দেন তাকে কখনই শাস্তি পেতে হবে না। আল্লাহ তা'আলা রমাদানের প্রতিরাতে হাজার হাজার ব্যক্তিকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (জাল হাদীস)
২৫৬. যে রমাদান মাসে ১০ দিনে ইতিকাফ করল সে যেনো দু'টি হাজ্জ ও দু'টি ওমরাহ আদায় করল । (জাল হাদীস)
২৫৭. প্রত্যেক দুর্বলের জন্যে হাজ্জ হলো জিহাদ। (জাল হাদীস)
২৫৮. যে ব্যক্তি বৃষ্টির দিনে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করে প্রত্যেক ফোঁটার বিনিময়ে তার একটি নেকী লেখা হয় এবং অন্য একটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয় । (জাল হাদীস)
২৫৯. (শয়তানকে) কংকর নিক্ষেপ ব্যতীত কারো হাজ্জ কবুল হয় না । (জাল হাদীস)
২৬০. হাজী সাহেব তার ঘর থেকে বের হলেই সে আল্লাহর হিফাজতে চলে যায় । সে তার হাজ্জ সম্পন্ন করার আগে মারা গেলে আল্লাহ তাআলা তার আগের পরের সব গুনাহ মাফ করে দেন। এ রাস্তায় একটি দিরহাম ব্যয় করা ৪০ হাজার দিরহাম ব্যয় করার সমান। (জাল হাদীস)
২৬১. হাজীদের ফযীলত সম্পর্কে যদি লোকেরা জানতো তাহলে তারা হাজীদের পা পর্যন্ত ধৌত করে দিত। (জাল হাদীস)
২৬২. যে হাজ্জ অথবা ওমরাহ আদায় করতে গিয়ে মারা যায়, তার কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এবং হিসাব নিকাশ ও হবে না। তাকে বলা হবে। জান্নাতে প্রবেশ কর! (জাল হাদীস)।
২৬৩. যে ব্যক্তি মক্কা ও মদীনার কোনো এক জায়গায় মারা যাবে তার জন্যে আমার সুপারিশ করা ওয়াজিব হয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন শান্তিতে হাজির হবে । (জাল হাদীস)।
২৬৪. প্রতি বৎসর ৬ লাখ লোক হাজ্জ করার জন্যে আল্লাহ তা'আলা এই ঘরের সাথে ওয়াদা করেছেন। কম হলে আল্লাহ ফিরিশতা দ্বারা তা পূর্ণ করেন। (জাল হাদীস)
২৬৫. যে হাজ্জ করলো অথচ আমার যিয়ারত করলো না সে আমাকে খামুশ করে দিল । (হাদীসটি জাল)
২৬৬. যে আমার মৃত্যুর পর আমার যিয়ারত করবে সে যেন আমার জীবদ্দশায়ই যিয়ারত করলো। আর যে ব্যক্তি মক্কা কিংবা মদীনায় মৃত্যুবরণ করলো সে কিয়ামত দিবসে নিশ্চিন্তে উত্থিত হবে । (হাদীসটি জাল)
২৬৭. যে হাজ্জ করার আগে বিবাহ করবে সে (যেনো) গুনাহ করতে শুরু করলো। (জাল হাদীস)
২৬৮. পদব্রজে হাজ্জ আদায় কারীর ৭০ হাজ্জের সওয়াব আর যানবাহনে আরোহন করে হাজ্জ আদায়কারীর জন্যে রয়েছে ৩০ হাজ্জের সওয়াব । (জাল হাদীস)
২৬৯. যে হাজ্জ করে আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করলো সে যেনো আমার জীবিতাবস্থায় যিয়ারত করলো। (জাল হাদীস)
২৭০. যে আমার ও আমার পিতা ইব্রাহিমের কবর একই বৎসর যিয়ারত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । (জাল হাদীস)
২৭১. তোমরা হাজ্জ কর; কেননা পানি দ্বারা ধৌত করার ন্যায় হাজ্জ গুনাহকে ধুয়ে মুছে দেয় । (জাল হাদীস)
২৭২. বাইতুল্লার সম্মান প্রদর্শন হলো তাওয়াফ করা। (জাল হাদীস)
২৭৩. কুরবানী দানকারী ব্যক্তির জন্য কুরবানীর জন্তুর প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি সওয়াব রয়েছে। (জাল হাদীস)
২৭৪. যে হাজ্জ করল অথচ আমার কবর যিয়ারত করল না সে যেনো আমার সাথে রুঢ় ব্যবহার করলো। (জাল হাদীস)
২৭৫. নারী জাতির অস্তিত্ব না থাকলে পুরুষরা জান্নাতবাসী হতো। (জাল হাদীস)
২৭৬. যে কোন শিশুকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা পর্যন্ত লালন-পালন করবে, আল্লাহ তার কোন হিসাব নিবেন না। (জাল হাদীস)
২৭৭. তোমরা বিবাহ কর; তালাক দিও না। কেননা তালাক দিলে আরশ কেঁপে উঠে। (জাল হাদীস)
২৭৮. সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া বাবার কর্তব্য। (জাল হাদীস)
২৭৯. তিন সন্তানের কারো একজনের নাম মুহাম্মাদ না রাখা হলে সেটা হবে চরম মুখতা । (জাল হাদীস)
২৮০. নবজাতক ছেলের ডানকানে আযান আর বাম কানে ইকামত দিলে প্রসূতির কোন ক্ষতির আশংকা থাকে না । (জাল হাদীস)
২৮১. তোমরা যখন কিছু লিখ তখন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখে সেটাকে উত্তম করে তোল; তাতে তোমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়ে যাবে । (জাল হাদীস)
২৮২. ‘ইলম’ দু প্রকার ও শারীরিক বিদ্যা ও শরয়ী বিদ্যা। (জাল হাদীস)
২৮৩. জান্নাতবাসীগণ জান্নাতেও আলেমদের মুখাপেক্ষী হবেন...। (জাল হাদীস)
২৮৪. এক ঘন্টা ইলম তলব করা একরাত ইবাদতের চেয়ে উত্তম। আর একদিন তো তিনমাস সিয়াম রাখার চেয়েও ভালো। (জাল হাদীস)
২৮৫. ছাত্র উস্তাদের কাছে বসতেই আল্লাহ তাআলা তার জন্যে ৭০টি রহমতের দরজা খুলে দেন। (জাল হাদীস)
২৮৬. আল্লাহ কোনো বান্দাকে হীন করতে ইচ্ছা করলে তার ইলম ও আদব তাকে রক্ষা করে । (জাল হাদীস)
২৮৭. আলেমের দরবারে হাজির হওয়া হাজার আবেদের সলাত আদায় অপেক্ষা উত্তম । (জাল হাদীস)
২৮৮. আমার উম্মতের আলেমগণ বনী ইসরাইলের নবীগণের মতো। (জাল হাদীস)
২৮৯. নবী (ﷺ) লেখকের সামনে বলেছেনঃ তোমরা কলম কানে রাখো। কেননা তাতে বিস্তৃত বস্তুর স্মরণ হয়। (জাল হাদীস)
২৯০. আমার উম্মতের জন্য এমন একটা সময় আসবে যে সময় ফকীহগণ একে অপরকে ঈর্ষা করবে এবং ভদ্রলোকদের মতোই একে অপরের বিপরীতে তৎপর থাকবে । (জাল হাদীস)
২৯১. আলেমদের অনুসরণ কর; কেননা তারা দুনিয়ার আলো, আখিরাতের চেরাগ । (জাল হাদীস)
২৯২. সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও জ্ঞান অন্বেষণ করো। (জাল হাদীস)
২৯৩. তোমার মতানুযায়ী ইজতিহাদ কর। কারণ, আল্লাহ যখন তোমার সঠিক রায় সম্পর্কে অবহিত হন তখন তিনি সত্য ও সঠিকতার জন্যে তোমার সাথে অনুকুল হোন। (জাল হাদীস)
২৯৪. আমার সাহাবীর এবং আমার আগে নবীগণের পক্ষ থেকে যারা খলীফারূপে পরিগণিত তাদের সম্পর্কে আমি কি তোমাদেরকে অবহিত করবো? তারা হলো : যারা আমার ও তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর ওয়াস্তে কুরআন ও হাদীসসমূহ হিফজ করেছেন। (জাল হাদীস)
২৯৫. যে কেউ ইলম ও ইবাদতের অন্বেষণে মগ্ন থেকে বয়োবদ্ধি অবদি এ অবস্থায় অবস্থান করে আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামত দিবসে ৭২ জন। সিদ্দীকের সওয়াব দান করবেন। (জাল হাদীস)
২৯৬. ইলম অন্বেষণ ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা মু'মিন ব্যক্তির চরিত্র মাধুর্য হতে পারে না । (জাল হাদীস)
২৯৭. দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর। (জাল হাদীস)
২৯৮. কুরআন ছাড়া রোগমুক্তি কামনা করলেও আল্লাহ তাকে মুক্তি দিবেন না। (জাল হাদীস)
২৯৯, যে সূরায়ে ‘ইয়াসিন’ শ্রবণ করবে তার জন্যে রয়েছে বিশ দিনার আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব। যে তিলাওয়াত করবে সে পাবে ২০টি হাজ্জ করার পরিমাণ সওয়াব। আর যে লিখে পান করবে তার উদর পূর্তি হবে সহস্র ‘ইয়াকীন’ (বিশ্বাস), সহস্র নূর, সহস্র বরকত, সহস্র রিযক এবং সব ঈর্ষা দূর করে দেয়া হবে । (জাল হাদীস)
৩০০. যে সূরায়ে দুখান রাতে তিলাওয়াত করবে তার আগামীতে উপার্জনক্ষম গুনাহ মাফ করে দিবেন। (জাল হাদীস)
৩০১. যে ব্যক্তি সলাতের ওযূসহ সূরায়ে ফাতিহা দিয়ে আরম্ভ করে একশ’ বার কুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ পড়বে আল্লাহ তাকে প্রতি অক্ষরে ১০টি নেকী দিবেন, ১০টি গুনাহ মাফ করে দিবেন, ১০টি মর্যাদা দান করবেন এবং জান্নাতে তার জন্যে একটি অট্টালিকা তৈরী করবেন । (জাল হাদীস)
৩০২. যে একশ’ বার কুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ পড়বে তার জন্যে দেড় হাজার সওয়াব লেখা হবে; তবে ঋণের গুনাহ মাফ হবে না । (জাল হাদীস)
৩০৩. যে কুরআন হিফজ করবে বাবা-মায়ের আযাব লাঘব করার অভিপ্রায়ে (তাই হবে) যদিও তার বাবা-মা কাফির হয় । (জাল হাদীস)
৩০৪. বান্দা কুরআন খতম করলে ৬০ হাজার ফিরিশতা তার জন্যে রহমত কামনা করেন। (জাল হাদীস)
৩০৫. যে সূরায়ে ওয়াকিয়াহ প্রতিরাতে তিলাওয়াত করবে দারিদ্র তাকে কভু স্পর্শ করবে না। আর যে প্রতিরাতে লা ওকৃছিমু বিইয়াওমিল কিয়ামাহ সূরা পাঠ করবে সে আল্লাহর সাথে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল চেহারাসমূহ সাক্ষাৎ করবে। (জাল হাদীস)
৩০৬. যে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে এবং যাফরান রংয়ের সাহায্যে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে সাতবার লিখে জিহবা দিয়ে চাটবে সে কখনো ভূলবেনা । (জাল হাদীস)
৩০৭. হে আলী! তোমার মাথা ব্যথা অনুভব করলে মাথায় হাত রেখে সূরায়ে হাশরের শেষাংশ পড়; সনদ দু'টির রাবীগণ অজ্ঞাত, অচেনা । প্রত্যেক বস্তুর নসব থাকে। আমার নসব হলো সূরায়ে ইখলাস। (জাল হাদীস)
৩০৮. গুনাহ করলে রিযক কমে না, নেক কাজে তা বাড়ে না। তবে দু’আ পরিত্যাগ করা গুনাহের কাজ। (জাল হাদীস)
৩০৯. কুরআনের দিকে চেয়ে থাকা ইবাদত, বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দৃষ্টি দেয়া ইবাদত, আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)- দেখাও ইবাদত। (জাল হাদীস)
৩১০. যে আল্লাহর যিকর বেশী পরিমাণে করে না, সে যেনো ঈমান থেকে মুক্ত হয়ে গেল । (জাল হাদীস)
৩১১. যখন তিনি কোন মজলিসে আসতেন এবং কিছু সময় অবস্থান করার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি ১০ থেকে ১৫ বার আসতাগফিরুল্লাহ পড়তেন। (জাল হাদীস)
৩১২. যে ব্যক্তি জুমুআর দিন ৮০ বার আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে তার ৮০ বৎসরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে । (জাল হাদীস)
৩১৩, আল্লাহর যিকর ও দরূদ পড়ে তোমাদের খাদ্য নরম করে খাও; খাদ্য সামনে রেখে ঘুমিও না। অন্যথায় তোমাদের হৃদয় শক্ত হয়ে যাবে। (জাল হাদীস)
৩১৪. প্রতিটি বস্তুর থাকে একটি হৃদয়। আর সূরায়ে ইয়াসীন হলো কুরআনের হৃদয় । যে একবার এ সূরা পড়ল সে যেনো ১০ বার কুরআন পাঠ করল। (জাল হাদীস)
৩১৫. এক ঘন্টা ফিকর (চিন্তা) করা ৬০ বৎসর ইবাদতের চেয়ে উত্তম। (জাল হাদীস)
৩১৬. যে মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে ‘কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করবে তার কবরে কোন বিপদ হবে না, কবর চাপা থেকে নিরাপদ থাকবে । কিয়ামত দিবসে ফিরিশতাগণ তাকে বহন করতঃ তাদের পাখা দিয়ে পুলসিরাত থেকে জান্নাতে পৌছে দিবেন। (জাল হাদীস)
৩১৭. যে কাজের সূচনায় আল্লাহর তারিফ এবং আমার উপর দুরূদ পাঠ করা হয় না। তা অসম্পূর্ণ থাকে অর্থাৎ সব ধরনের বরকত থেকে কাজটি বঞ্চিত হয় । (জাল হাদীস)
৩১৮. যে আপনার উপর দিনে রাতে ১শ’ বার দুরূদ পড়বে আমি (আল্লাহ) তার উপর ২ হাজার রহমত দান করবো, সহস্র প্রয়োজন পূরণ করবো, তন্মধ্যে সবচেয়ে সহজ প্রয়োজন হলো জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দেয়া। (জাল হাদীস)
৩১৯. যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে এসে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে আমি তা শুনি। আর দূর থেকে আমার উপর দুরূদ পড়লে তজ্জন্য একজন। ফিরিশতা মোতায়েন করা হয়, সে আমার কাছে সেই দুরূদ পৌঁছে দেয়। আমি যার জন্যে সাক্ষ্য কিংবা সুপারিশকারী হই তার ইহলোক ও পরলোকে এটাই যথেষ্ঠ । (জাল হাদীস)
৩২০. আমি সে সময়ের নবী যখন আদম, পানি, মাটি কিছুই ছিল না। আরো আছে- আরশের পার্শ্বে একটি নূর ছিল । নবী বললেন : হে জিব্রাঈল! আমি ছিলাম সে নূর । (জাল হাদীস)
৩২১. যখন আদম ভুল স্বীকার করলেন, তখন তিনি বললেন : ইয়া রব! আমি মুহাম্মদের ওসিলায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। (জাল হাদীস)
৩২২. নবী শবে মিরাজে ৯০ হাজার কালাম আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভ করেন। তন্মধ্যে ৩০ হাজার জাহেরী যা আলেমগণ জানেন; আর ৬০ হাজার বাতেনী সেগুলো সম্পর্কে আলেমগণ অবগত নন; তবে ঐগুলো আলী (রাদিয়াল্লাহু)-র জানা। (জাল হাদীস)
৩২৩. নবী সিদরাতুল মুনতাহায় (মিরাজ রজনীতে) পৌছে গেলে জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) থমকে দাঁড়িয়ে বললেন : আর এক কদম পরিমাণ অগ্রসর হলে আমি জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাব ।” (জাল হাদীস)
৩২৪. কথাটি যাকওয়ান কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, সূর্য ও চন্দ্র কিরণে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর দেহের ছায়া কখনো দেখা যেতো না। (জাল হাদীস)
৩২৫. আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াকে বলেন : হে দুনিয়া! আমার ওলীদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করে যাও কিন্তু তাদের মধ্যে প্রবেশ করোনা যাতে তারা ফিতনায় পতিত না হয় । (জাল হাদীস)
৩২৬. আল্লাহর ওয়াস্তে ১ রাত সীমান্ত প্রহরা দেয়া, পরিবার-পরিজনে বেষ্টিত হয়ে ১০০০ বৎসর সিয়াম সলাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। ৩৬০ দিনে ১ বৎসর আর ১দিন ১০০০ বৎসরের সমান। (জাল হাদীস)
৩২৭. মুমিনের জন্য আল্লাহর হাদীয়া হলো : একজন ভিখারীকে তার দরজায় উপস্থিত করানোর নামান্তার । (জাল হাদীস)
৩২৮. যে ক্রোধ দমন করে আল্লাহ তার আযাব দূর করে দেন, যে তার মুখ সামলাতে সক্ষম হয়েছে আল্লাহ তার দোষ গোপন করেছেন; আর যে আল্লাহর কাছে ওজর করেছে তার ওজর আল্লাহ কবুল করেছেন। (জাল হাদীস)
৩২৯. তোমাদের চেহারা কমনীয় এবং চোখ হরিণী করা উচিত। কেননা আল্লাহ কমনীয় চেহারাকে আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে লজ্জা পায় । (জাল হাদীস)
৩৩০. পীর মাশায়েখদের ইজ্জত কর। কেননা, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আল্লাহর মহত্ব প্রকাশ করারই নামান্তর। (জাল হাদীস)
৩৩১. কম হেসে ও কম খেয়ে তোমাদের অন্তকরণ জীবন্ত রাখ । কৃচ্ছ সাধনায় হৃদয়কে পবিত্র কর; তাতে মন হবে উন্নত, প্রাণবন্ত। (জাল হাদীস)
৩৩২. ক্ষুধা-পিপাসার মাধ্যমে তোমরা নফসের সাথে জিহাদ কর। এর প্রতিদান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত মুজাহিদের মতই। ক্ষুধা ও তৃষ্ণার চেয়ে বেশী আর কোন আমল আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নয় । (জাল হাদীস)
৩৩৩. মুমিনের উচ্ছিষ্ট শিফা । (জাল হাদীস)
৩৩৪. হে লোক সকল! কুরবানী কর এবং কুরবানীর রক্তের মূল্যায়ন কর। কেননা রক্ত মাটিতে পতিত হতেই তা আল্লাহর দুর্গে পতিত হয়ে যায় । (জাল হাদীস)
৩৩৫. দেশপ্রেম ঈমানের অংগ । (জাল হাদীস)
৩৩৬. প্রতিটি জটিলতাই হারাম; আর দ্বীনের জন্যে কোনো জটিলতা নেই। (জাল হাদীস)
৩৩৭. পায়খানা, প্রস্রাবখানা, গোসলখানাকে তোমরা ভুতপ্রেতের প্রভাবিত জায়গা হিসেবে গ্রহণ কর; কেননা জ্বিনেরা সেখানে তোমাদের শিশুদের নিয়ে খেলা করে । (জাল হাদীস)
৩৩৮. ঋণ দ্বীন ও ইজ্জত কমিয়ে দেয় । (জাল হাদীস)
৩৩৯. যে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ তৈরী করে কিয়ামত দিবসে প্রাসাদটি তাঁর কাঁধে বহন করতে তাকে বাধ্য করা হবে । (জাল হাদীস)
৩৪০. প্রতি ৪০ জনে একজন আল্লাহর ওলী থাকেন। (জাল হাদীস)
৩৪১. মুসলিমদের যে শিশু ১২ বৎসর পদার্পন করার আগে মারা গিয়েছে সে আরশের নীচে কিয়ামত দিবসে শাফায়াতকারী ও শাফায়াত অর্জনকারী রূপে গণ্য হবে। তের বৎসর পেঁৗছলে তার নিজের হিসাব নিজেই দিবে । (জাল হাদীস)
৩৪২. আমার সাহাবাগণ তারকার ন্যায়, যারাই তাদের অনুবর্তী হবে তারাই হিদায়াত প্রাপ্ত হবে । (জাল হাদীস)
৩৪৩. রসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুবরণ করেননি। এমনকি তিনি (এখনো) পড়েন ও লেখেন । (জাল হাদীস)
৩৪৪. আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ জন এমন লোক সব সময় থাকবে যাদের ওসীলায় জমিন টিকে থাকবে, বৃষ্টি হবে এবং সাহায্য লাভ করবে । (জাল হাদীস)
৩৪৫. আরাফাতের দিন সর্বোত্তম দিন। আর যদি এই দিবসটি জুমুআর দিন হয় তাহলে দিনটি ৭০টি হাজ্জের চেয়ে উত্তম। (জাল হাদীস)
৩৪৬. (রসূল) তিনি আলোতে যেমন দেখতেন, অন্ধকারেও অনুরূপ দেখতেন। (জাল হাদীস)
৩৪৭. আমি নবীগণের শেষ, আর হে আলী! তুমি হচ্ছো ওলীগণের শেষ । (জাল হাদীস)
৩৪৮. ওযূ করার সময় ঘাড় মাসেহ করতে হয় । (জাল হাদীস)
৩৪৯. হাটুর উপর কাপড় উঠলে ওযূ ভেঙ্গে যায় । (জাল হাদীস)
৩৫০. অযু অবস্থায় বাচ্চাকে স্তন পান করালে অযু নষ্ট হয়ে যায় । (জাল হাদীস)
৩৫১. রসূল (ﷺ) এর পথে এক বুড়ি কাঁটা বিছিয়ে রাখতো ... একদিন বুড়ির জ্বর হলো....রসূল (ﷺ) দেখতে গেলেন....। (জাল হাদীস)
৩৫২. রাসুল (ﷺ) ঈদগাহে যাচ্ছিলেন পথে এক বাচ্চাকে কান্নারত অবস্থায় পেলেন এবং তাকে বাড়ি নিয়ে মা আয়শার নিকট দিলেন এবং মা আয়শা তাকে গোসল দিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দিলেন....। (জাল হাদীস)
৩৫৩. গাছের তলায় একদিন একটি হরিণ বাঁধা ছিল, হরীণ রসূল (ﷺ) কে বললেন আমাকে কিছুক্ষণের জন্য ছেড়ে দিন আমি আমার শিশুদেরকে দুধ পান করিয়ে আবার চলে আসবো....। (জাল হাদীস)
৩৫৪. হোসাইন (রাদিআল্লাহু আনহু) যেদিন শহীদ হন সেদিন “মা ফাতিমা কান্দিয়া কয় আজ বুঝি আমার হোসাইন কারবালাতে শহীদ হয়.....”। (জাল হাদীস)
৩৫৫. যে ব্যক্তি নিজেকে চিনল সে আল্লাহকে চিনল । (জাল হাদীস)
৩৫৬. আমি আরব, কুরআন আরবী, জান্নাতের ভাষা আরবী। (জাল হাদীস)
৩৫৭. জান্নাতের ভাষা আরবী, জাহান্নামের ভাষা ফার্সি। (জাল হাদীস)
৩৫৮. মাগরিবের পর ৬ রাকআত আওয়াবীনের সলাত আদায় করতে হবে। (জাল হাদীস)
৩৫৯. মহিলাদের বুককে উড়র সাথে লাগিয়ে আটোসাটো হয়ে সিজদা করতে হবে । (জাল হাদীস)
৩৬০. পনেরই শাবানে (সবেবরাতে) সিয়াম পালন করতে হবে । (জাল হাদীস)
৩৬১. কুরআন ৩০ পারা নয় ৯০ পারা । (জাল হাদীস)
৩৬২. আলেমদের মতবিরোধ রহমত স্বরূপ । (জাল হাদীস)
৩৬৩. মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম। (জাল হাদীস)
৩৬৪. একজন হাফিয ১০ জন ব্যক্তিকে জান্নাতে নিতে পারবে । (জাল হাদীস)
৩৬৫. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, শহর ছাড়া জুম’আ ও তাশরীক নেই। (জাল হাদীস)
২. মুআয ইবনু জাবাল (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বলেন, জান্নাতের চাবি হচ্ছে “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ বলে সাক্ষ্য দান। করা । (যঈফ আহমাদ)
৩. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুই রকমের লোক রয়েছে, তাদের জন্য ইসলামের কোন অংশ নেই; মুর্জিয়া ও কৃান্দারিয়া । (যঈফ তিরমিযী)
৪. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, আমি রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে তাক্বদীর সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবে, কিয়ামতে তাকে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সে সম্পর্কে আলোচনা করবে না তাকে প্রশ্নও করা হবে না। (যঈফ ইবনে মাজাহ)
৫. আবু সাঈদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কাফিরের জন্য কবরে নিরানব্বইটি সাপ নির্ধারণ করা হয়। সেগুলো তাকে কিয়ামত পর্যন্ত কামড়াতে ও দংশন করতে থাকবে। যদি একটি সাপ যমীনে নিঃশ্বাস ফেলে, তাহলে যমীনে কখন তৃণ জন্মাবে না। (যঈফ। দারেমী, যঈফ তিরমিযী)
৬. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না, যে পর্যন্ত না তার প্রবৃত্তি আমি যা এনেছি তার অধীন না হয় । (যঈফ মিশকাত)
৭. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন রসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি যদি এরূপে সকাল-সন্ধ্যা কাটাতে পার যে, তোমার অন্তরে কারো জন্য হিংসা-বিদ্বেষ নেই, তবে তাই কর। অতঃপর রসূল (ﷺ) বললেন বাবা! ইহা তোমার সুন্নাতের অন্তর্গত এবং যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসে সে আমাকে ভালবাসে, আর যে আমাকে ভালবাসিবে সে জান্নাতে আমার সহিত থাকবে । (যঈফ তিরমিযী)
৮. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিভ্রান্তির সময় আমার উম্মত আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব রয়েছে। (যঈফ মিশকাত)
৯. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল খাবে এবং সুন্নাতের সহিত আমল করবে এবং যার অনিষ্ট হতে লোক নিরাপদ থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এরূপ লোকতো আজকাল অনেক । রসূল (ﷺ) বললেন, আমার পরবর্তী যুগসমূহেও এরূপ লোক থাকবে । (যঈফ তিরমিযী)
১০. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা এমন যামানায় আছ, যে যামানা তোমাদের কেউ যদি তার প্রতি। নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশের সাথেও আমল করে সে মুক্তি পাবে। (যঈফ তিরমিযী)
১১. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, শরী'আতের বিষয় তিন প্রকারঃ
(১) যার হিদায়াত সম্পূর্ণ পরিষ্কার, সুতরাং তার অনুসরণ করবে
(২) যার গোমরাহী সম্পূর্ণ পরিষ্কার, সুতরাং তা পরিহার করবে এবং
(৩) যাতে মতানৈক্য রয়েছে। তাকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করবে । (যঈফ মিশকাত)
১২. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একদা রসূল (ﷺ) আমদের বললেন, (আমার পর) লোক তোমাদের অনুসরণকারী হবে। আর দিকদিগন্ত হতে লোক তোমাদের নিকট দ্বীনের জ্ঞান লাভ করার উদ্দেশ্যে আসবে। সুতরাং যখন তারা তোমাদের নিকট আসবে তখন তোমরা তাদের সদুপদেশ দিবে । (যঈফ তিরমিযী)
১৩. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জ্ঞানের কথা জ্ঞানীর হারান ধন। সুতরাং যেখানে যার নিকটে পাবে সে-ই তার অধিকারী। (যঈফ তিরমিযী)
১৪. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, একজন ফক্বীহ শয়তানের পক্ষে এক হাজার আবেদ অপেক্ষাও মারাত্মক । (জাল তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
১৫. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ইলম সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয এবং অপাত্রে ইলম স্থাপনকারী যেন শূকরের গলায় জহরত, মুক্তা বা স্বর্ণ স্থাপনকারী । (যঈফ ইবনে মাজাহ)
১৬. সাখবারা আযদী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম সন্ধান করবে তার জন্য উহা পূর্ববর্তী পাপ সমূহের কাফফারা হয়ে যাবে । (জাল তিরমিযী)।
১৭. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ইলম তিন ধরনের । মুহকাম আয়াত, প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত, ফরয আদেল এর বাহিরে যা রয়েছে তা অতিরিক্ত । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ)।
১৮. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে, এমন সময় সমাগত প্রায় মানুষ ইলমের সন্ধানে দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু কোথাও মদীনার আলেমের অপেক্ষা অধিক বিজ্ঞ আলেম পাবেনা। (যঈফ তিরমিযী)
১৯. হাসান বসরী (রহ.) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যার মৃত্যু এসে গেছে এমন অবস্থায়, যখন সে ইসলামকে জিন্দা করার উদ্দেশ্যে ইলম সন্ধানে মশগুল আছে, জান্নাতে তার ও নবীদের মধ্যে মাত্র এক ধাপের পার্থক্য থাকবে । (যঈফ দারেমী, যঈফ। মিশকাত)
২০. ওয়াছেলা ইবনু আসল্কা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম সন্ধান করেছে এবং তা লাভ করতে পেরেছে, তার জন্য দুই গুণ সওয়াব রয়েছে। আর যদি তা লাভ করতে না পারে, তাহলে তার জন্য একগুণ সওয়াব রয়েছে। (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২১. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রাতের কিছু সময় ইলমের আলোচনা করা পূর্ণ রাত্রি জাগরণ অপেক্ষা উত্তম। (যঈফ। দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২২. আবু দারদা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) -কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রসূল ! ইলমের কোন্ সীমায় পৌছলে এক ব্যক্তি ফকীহ হতে পারে? উত্তরে রসূল (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তাদের দ্বীনের ব্যাপারে ৪০টি হাদীস মুখস্থ করেছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ফক্বীহরূপে উঠাবেন। এছাড়া কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষী হব । (জাল বায়হাক্কী)
২৩. আমাশ (রহ.) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ভুলে যাওয়া হচ্ছে ইলমের পক্ষে আপদস্বরূপ। ইলমকে নষ্ট করা হচ্ছে অনুপযুক্ত লোককে বলা । (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২৪. আবু দারদা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মন্দ সে ব্যক্তিই হবে, যে তার ইলম দ্বারা উপকৃত হতে পারেনি। (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২৫. হাসান বসরী (রহ.) বলেন, ইলম দুই প্রকার। এক প্রকার ইলম হচ্ছে আত্মীয়, আর এটাই হল উপকারী ইলম । আর এক প্রকার ইলম হচ্ছে। মুখে, তা হল মানুষের বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষে দলীল। (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
২৬. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেন, অচিরেই মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে তখন নাম ব্যতীত ইসলামের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, অক্ষর ব্যতীত কুরআনের কিছু বাকী থাকবে না। তাদের মসজিদ সমূহে আবাদ হবে কিন্তু তা হবে হিদায়াতশূন্য। তাদের আলেমরা হবে আকাশের নীচে সর্বনিকৃষ্ট লোক। তাদের নিকট থেকে ফিৎনা প্রকাশ পাবে। অতঃপর বিপর্যয় তাদের দিকেই ফিরে যাবে। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
২৭. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ইলম দ্বারা কারও উপকার সাধিত হয় না, উহা এমন এক ধন-ভাণ্ডারের ন্যায়, যা হতে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা হয় না। (যঈফ দারেমী, যঈফ। মিশকাত)
২৮. জাবের (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল সলাত । আর সলাতের চাবি হল পবিত্রতা। (যঈফ তিরমিযী)
২৯. বানী সুলাইম গোত্রের এক ব্যক্তি বলেন, একবার রসূল (ﷺ) এই পাঁচটি কথা আমার হাতে অথবা তাঁর নিজের হাতে গুণে গুণে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা হল পাল্লার অর্ধেক আর ‘আলহামদুলিল্লাহ' বলা পূর্ণ করে উহাকে এবং আল্লাহু আকবার’ আসমান ও যমীনের মধ্যখানে যা আছে তাকে পূর্ণ করে । সিয়াম হল ধৈর্যের অর্ধেক এবং পবিত্রতা হল। ঈমানের অর্ধেক । (যঈফ তিরমিযী)
৩০. আব্দুল্লহ্ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় ওযূ সেই ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যে কাত হয়ে ঘুমিয়েছে। কেননা যখন কেউ কাত হয়ে ঘুমায় তখন তার শরীরের বন্ধনসমূহ শিথিল হয়ে পড়ে। (যঈফ তিরমিযী)
৩১. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) যখন পায়খানায় যেতেন, নিজের আংটিটি খুলে রাখতেন। (মুনকার হিসেবে যঈফ আবুদাউদ, যঈফ তিরমিযী, যঈফ নাসাঈ)
৩২. আব্দুল্লাহ ইবনু সারজেস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন গর্তে পেশাব না করে । (যঈফ নাসাঈ)
৩৩. ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একবার রসূল (ﷺ) আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন, হে ওমর! দাঁড়িয়ে পেশাব করনা। অতঃপর আমি দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৩৪. আবু আইয়ুব (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, চারটি বিষয় নবীদের সুন্নাত। (ক) লজ্জা করা। (খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা (গ) মিসওয়াক করা ও (ঘ) বিবাহ করা। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৩৫. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে সলাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয় সেই সলাত মিসওয়াক করা বিহীন সলাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয় । (যঈফ বায়হাকী)
৩৬. উবাই ইবনু কা'ব (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, ওযুর জন্য একটি শয়তান রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘ওলাহান'। সুতরাং পানির কুমন্ত্রণা হতে সতর্ক থাকবে । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ তিরমিযী)
৩৭. আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) একদা ওযূ করলেন দুই দুইবার করে এবং বললেন, এটা এক নূরের উপর আর এক নূর । (জাল মিশকাত)
৩৮. আবু রাফে (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) যখন সলাতের জন্য ওযূ করতেন, তখন আপন আঙ্গুলে পরিহিত আংটিকে নেড়ে দিতেন। (যঈফ দারাকুত্রী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৩৯. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত আছে, নবী কারীম (ﷺ) চারটি কারণে গোসল করতেন- নাপাকীর কারণে, জুম'আর দিনে, শিঙ্গা লাগানোর কারণে ও মুরদাকে গোসলদানের কারণে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
৪০. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) নাপাকীর গোসল করতেন, অতঃপর আমাকে জড়িয়ে ধরে শরীর গরম করতেন আমার গোসল করার পূর্বেই । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৪১. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ঋতুবতী ও অপবিত্র ব্যক্তি কুরআনের কোন অংশ পড়বে না । (মুনকার তিরমিযী)
৪২. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, একদা রসূল (ﷺ) বললেন : এই সকল ঘরের দরজা মসজিদের দিক হতে (অন্য দিকে) ফিরিয়ে দাও। কারণ আমি মসজিদকে ঋতুবতী স্ত্রীলোক ও নাপাক ব্যক্তির জন্য জায়েয মনে করি না । (যঈফ আবুদাউদ)
৪৩. ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রৌদ্রে গরম করা পানি দ্বারা গোসল করিও না। কেননা, ইহা শ্বেত-কুষ্ঠা সৃষ্টি করে । (যঈফ দারাকুত্রী, যঈফ মিশকাত)
৪৪. মুগীরা ইবনু শো'বা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে নবী কারীম (ﷺ) -কে ওযূ করিয়েছি। তিনি মোজার উপর দিক ও উহার নীচের দিক উভয়ই মাসহে করেছেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)।
৪৫. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, যখন আমি ঋতুবতী থাকতাম, তখন বিছানা হতে মাদুরে নেমে আসতাম। তখন আমরা তাঁর নিকট যেতেম না, যে পর্যন্ত না আমরা পবিত্র হতাম । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ। মিশকাত)।
৪৬. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, হে আলী! তিনটি বিষয়ে বিলম্ব কর না। সলাত, যখন তার সময় আসে, জানাযা। যখন উপস্থিত হয়, স্বামীহারা নারী, যখন তুমি সমগোত্র ও সমশিল্প বর পাও। (যঈফ তিরমিযী)।
৪৭. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সলাতের প্রথম সময় হচ্ছে আল্লাহ্র সন্তোষ এবং শেষ সময় হচ্ছে আল্লাহর ক্ষমা। (জাল তিরমিযী)
৪৮. সালমান (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে ফযরের সলাতের দিকে গেল, সে ঈমানের পতাকা নিয়ে গেল। আর যে ভোরে (সলাত না আদায় না করে) বাজারের দিকে গেল, সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেল । (যঈফ ইবনে মাজাহ)
৪৯. বেলাল (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) আমাকে বলেছেন, কোন সলাতই ‘তাসবীব’ করবে না ফযরের সলাত ব্যতীত । (যঈফ তিরমিযী)
৫০. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়তে সাত বছর আযান দিবে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি নির্ধারিত। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৫১. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, মুসলিমদের দুইটি বিষয় মুআযযিনদের ঘাড়ে ঝুলে বয়েছে। সিয়াম এবং তাদের সলাত। (যঈফ ইবনে মাজাহ)।
৫২. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন সাত জায়গায় সলাত আদায় করতে, আবর্জনা ফেলার স্থানে, যবেহখানায়, কবরস্থানে, পথিমধ্যে, গোসলখানায়, উটশালায় এবং বায়তুল্লাহ্র ছাদে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৫৩. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কোন কিছুই সলাত নষ্ট করতে পারে না, তথাপি বাধা দিবে সম্মুখ দিয়ে গমকারীকে তোমাদের সাধ্যানুযায়ী। নিশ্চয়ই উহা শয়তান। (যঈফ আবুদাউদ)
৫৪. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ জানত, সলাতের মধ্যে তার মুছল্লী ভাইয়ের সম্মুখ দিয়ে এলোপাতাড়ি গমনে কী ক্ষতি রয়েছে, তাহলে সে একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকাকে উত্তম মনে করত। (যঈফ ইবনে মাজাহ)।
৫৫. জাবের ইবনু সামুরা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যায় মাগরিবের সলাতে ‘সূরা কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও ‘সূরা কুল হুয়াল্লাহু আহাদ পড়তেন। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ। মিশকাত)
৫৬. উরওয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আবুবকর (রাদিআল্লাহু আনহু) একবার ফযরের সলাত পড়লেন এবং এর উভয় রাকআতেই সূরা বাক্বারা পড়লেন। (যঈফ মিশকাত)
৫৭. ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে দেখেছি, তিনি যখন সিজদা করতেন, হাতের পূর্বে হাঁটু যমীনে রাখতেন এবং যখন উঠতেন তখন হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ তিরমিযী, যঈফ নাসাঈ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৫৮. আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) তর্জনী দ্বারা ইশারা করতেন যখন তাশাহহুদ পড়তেন, কিন্তু সেটাকে নাড়তেন না। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ)।
৫৯. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) সলাতে ঠেস দিয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রসূল (ﷺ) হাতের উপর ভর দিতে নিষেধ করেছেন। (যঈফ আবুদাউদ)
৬০. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) প্রথম দুই রাকআতের পরের বৈঠক হতে এত তাড়াতাড়ি উঠতেন যেন তিনি উত্তপ্ত পাথরের উপর বসেছেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ তিরমিযী, যঈফ নাসাঈ)
৬১. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, যে ব্যক্তি নবী কারীম (ﷺ)-এর উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ। তার উপর ৭০ বার দুরূদ পাঠ করবেন। (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
৬২. রুওয়াইফে ইবনু ছাবেত আনছারী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের উপর দুরূদ পাঠ করবে এবং বলবে, “হে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁকে আপনি আপনার নিকট সম্মানিত স্থান দান করুন তার জন্য আমার শাফা'আত অবধারিত হবে । (যঈফ মিশকাত)
৬৩. সামুরা ইবনু জুনদুব (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) আমাদেরকে ইমামের সালামের উত্তর দিতে, অন্যকে ভালবাসতে ও সালাম দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
৬৪. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একদা রসূল (ﷺ) বললেন, বৎস! সলাতের মধ্যে কখনও এদিক সেদিক দেখবে না। সলাতের মধ্যে এদিক সেদিক দেখা ধ্বংসের কারণ । একান্তই যদি দেখতে হয় তাহলে নফলে, ফরযে নয়। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৬৫. আদী ইবনু ছাবেত (রাদিআল্লাহু আনহু) তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, হাঁচি, তন্দ্রা ও হাই তোলা সলাতের মধ্যে আর হায়েয ও বমি আসা এবং নাক হতে রক্ত পড়া শয়তানের পক্ষ হতে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৬৬. আবু যর গেফারী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সলাতে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার সম্মুখের কংকর মুছার চেষ্টা না করে। কারণ আল্লাহর রহমত তার সম্মুখীন রয়েছে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৬৭. উম্মু সালামা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) আফলাহ নামক আমাদের এক যুবককে দেখলেন, সে যখন সিজদা করতে যায় ফুঁ দেয় তখন রসূল (ﷺ) বললেন, হে আফলাহ! তোমার মুখমণ্ডলে ধূলাবালি লাগতে দাও। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৬৮. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আপন সলাতের শেষ দিকে সালামের পূর্বক্ষণে বসে বাতকর্ম করে, তাহলে তার সলাত হয়েছে। (যঈফ তিরমিযী)
৬৯. ইমরান ইবনু হুছাইন (রাদিআল্লাহু আনহু) নবী (ﷺ) তাদের ইমামতি করলেন এবং সলাতে ভুল করলেন। অতঃপর দুইটি সিজদা করলেন তারপর তাশাহহুদ পড়লেন এবং সালাম ফিরালেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ)।
৭০. জাবের ইবনু আব্দুল্লহ্ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সলাত দেরী করে আদায় করবে না- খাওয়ার জন্য হোক অথবা অপর কোন আবশ্যকে । (যঈফ মিশকাত)
৭১. আবু মূসা আশআরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, দুই ব্যক্তি বা তদপেক্ষ অধিক সংখ্যক হলেই জামাআত হয় । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
৭২. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ ‘সলাত’ পাঠান কাতারের ডান দিকের লোকদের প্রতি । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৭৩. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, উত্তম লোকেরাই যেন তোমাদের আযান দেয় এবং তোমাদের ইমামতি যেন তোমাদের ক্বারীগণই করে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৭৪. সালামা বিনতে হুর (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে এটাও একটি। মসজিদে সমবেত মুছলীগণ একে অন্যকে ঠেলে দিবে; কিন্তু তাদের সলাত পড়াতে পারে এমন কোন উপযুক্ত ইমাম পাবে না। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৭৫. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) আছরের পূর্বে দুই রাক'আত (নফল) সলাত আদায় করতেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
৭৬. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে মাগরিবের পর ছয় রাক'আত সলাত পড়েছে, ঐ সময়ে ওদের মধ্যে সে কোন মন্দ বাক্য উচ্চারণ করেনি, তার সেই সলাত বার বছরের ইবাদতের সমান গণ্য করা হবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৭৭. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকআত সলাত পড়েছে, আল্লাহ্ তা'আলা তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর তৈরী করবেন । (জাল তিরমিযী, মিশকাত)
৭৮. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) যখনই ইশার সলাত পড়ে আমার ঘরে প্রবেশ করতেন তখনই তিনি চার রাকআত অথবা ছয় রাকআত সলাত পড়তেন। (যঈফ আবুদাউদ)
৭৯. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) মাগরিবের পর দুই রাকআত সুন্নাতে ক্বিরাআত এত দীর্ঘ করতেন যে, ততক্ষণে সমস্ত লোক মসজিদ হতে বিদায় হয়ে যেত। (যঈফ আবুদাউদ)
৮০. হুযায়ফা (রাদিআল্লাহু আনহু) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি এটাও বলেছেন, রসূল (ﷺ) বলতেন, মাগরিবের পর দুই রাকআত তাড়াতাড়ি পড়বে। কেননা, উহা ফরযের সাথে উপরে উঠান হয় । (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)।
৮১. বুরায়দা পবলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, বিতর হক; সুতরাং যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর হক, সুতরাং যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর হক, সুতরাং যে বিতর পড়বে না সে আমাদের দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। (যঈফ। আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
৮২. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বিতর তিন রাকআত পড়তেন যাতে মুফাছছাল সূরা সমূহের নয়টি সূরা পড়তেন। প্রত্যেক রাকআতে তিনটি করে যার শেষ সূরা ছিল ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ। (যঈফ তিরমিযী)
৮৩. আবু মূসা আশআরী (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, অর্ধ শা'বানের রাত্রিতে আল্লাহ তা'আলা অবতীর্ণ হন এবং মাফ করে দেন তাঁর সকল সৃষ্টিকে মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ব্যতীত। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)।
৮৪. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূবাহের বার রাকআত সলাত পড়বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণের একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
৮৫. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি যোহার দুই রাকআত সলাত পড়ার প্রতি লক্ষ্য রাখবে, তার গোনাহ মাফ করা হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৮৬. নাফে’ বলেন, আব্দুল্লাহ্ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) তাঁর পুত্র ওবায়দুল্লাহকে সফরে নফল সলাত পড়তে দেখতেন, কিন্তু তাঁকে বাধা দিতেন না। (যঈফ মিশকাত)
৮৭. সামুরা ইবনু জুনদুব (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে বিনা ওযরে জুম'আর সলাত ছেড়ে দিয়েছে, সে যেন এক দীনার দান করে। যদি ততে সমর্থ না হয় তবে, অর্ধ দীনার । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ)
৮৮. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি আযান শ্রবণ করেছে তার উপর জুম'আর সলাত ফরয। (যঈফ আবুদাউদ)
৮৯. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রয়োজন ছাড়া জুমু'আর সলাত ছেড়ে দিল সে মুনাফিক বলে লেখা হয়েছে এমন কিতাবে, যার লিখা মুছিয়ে ফেলা যায় না এবং পরিবর্তন করাও হয় না। অপর বর্ণনায় আছে, তিনবার ছেড়ে দিয়েছে। (যঈফ দারাকুত্রী, যঈফ মিশকাত)
৯০. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমুআর দিনে ইমামের খুৎবা দানকালে কথা বলে, সে হল গাধার ন্যায়, যে বোঝা উঠায় এবং যে তাকে বলে চুপ কর তার জন্যও জুমু'আ নেই । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)।
৯১. বারা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, মুসলিমদের দায়িত্ব হল, তারা যেন জুমু'আর দিনে গোসল করে এবং তাদের প্রত্যেকে যেন আপন পরিবারে কোন সুগন্ধি থাকলে তা গ্রহণ করে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
৯২. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন, আমরা যেন শিং ভাঙ্গা ও কান কাটা পশু দ্বারা কুরবানী না করি। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ তিরমিযী)
৯৩. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) মদীনায় দশ বছর বছর অবস্থান করেছেন আর বরাবর কুরবানী করেছেন। (যঈফ তিরমিযী)
৯৪. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, নবীগণের মধ্যে এক নবী লোকদের নিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনায় বের হলেন। দেখলেন একটি পিঁপড়া নিজের পা দুইটি আকাশের দিকে উঠিয়ে রেখেছে। এটা দেখে নবী (ﷺ) বললেন, তোমরা ফিরে যাও। এই পিঁপড়াটির কারণে তোমাদের প্রার্থনায় সাড়া দেয়া হয়েছে। (যঈফ। দারাকুত্রী, যঈফ মিশকাত)
৯৫. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে উত্তমরূপে ওযু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তার কোন মুসলিম ভাইকে দেখতে যাবে, তাকে জাহান্নাম হতে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)।
৯৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা যখন কোন রোগীর নিকট যাবে, তার জীবন সম্পর্কে তাকে সান্ত্বনা দান করবে। ইহা নিয়তির কোন কিছু উল্টাতে পারবে না; কিন্তু তার মন সান্ত্বনা লাভ করবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)
৯৭. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন বান্দার গোনাহ অধিক হয়ে যায় এবং সে সকলের প্রায়শ্চিত্তের মত তার কোন নেক আমল না থাকে, আল্লাহ তা'আলা তাকে বিপদ ও চিন্তাগ্রস্ত করেন যাতে তার সে সকল গোনাহর প্রায়শ্চিত্ত করে দিতে পারেন। (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
৯৮. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) তিন দিনের পূর্বে কোন পীড়িতকে দেখতে যেতেন না । (যঈফ ইবনে মাজাহ)
৯৯, ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সফরের মউত শাহাদত । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১০০. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে রুগ্নাবস্থায় মারা গেছে, সে শহীদ হয়ে মারা গেছে, তাকে কবর-আযাব হতে রক্ষা করা হবে এবং সকাল-সন্ধ্যা তাকে জান্নাতের রিযিক দেওয়া হবে । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১০১. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, মৃত্যু হল মুমিনের তোহফা । (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১০২. মা'কেল ইবনু ইয়াসার (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের নিকট ‘সূরা ইয়াসীন’ পড়বে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ)
১০৩. মুহম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহ.) বলেন, আমি সাহাবী জাবের ইবনু আব্দুল্লাহর নিকট পৌছলাম, তখন তিনি মুমূর্ষ অবস্থায়। আমি বললাম, রসূল (ﷺ) -কে আমার সালাম দিবেন। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১০৪. উবাদা ইবনু ছামেত (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, উত্তম কাফন হচ্ছে হুল্লাহ এবং উত্তম কুরবানীর পশু হচ্ছে শিংওয়ালা দুম্বা । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১০৫. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের ভাল কার্যসমূহের উল্লেখ করবে এবং তাদের মন্দ কার্যসমূহের উল্লেখ হতে বিরত থাকবে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ। তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১০৬. আবু মূসা আশআরী (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের নিকট দিয়ে কোন লাশ অতিক্রম করবে, ইহুদী, খৃস্টানের, মুসলিমের হোক, তোমরা তার জন্য দাঁড়াবে। কারণ তোমরা তার সম্মানে দাঁড়াচ্ছো না, দাঁড়াচ্ছে তার সাথে যে সকল ফিরিশতা রয়েছেন তাঁদের সম্মানার্থে । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১০৭. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) -কে তাঁর মাথার দিক হতে কবরে নামানো হয়েছিল । (যঈফ মিশকাত)
১০৮. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একবার নবী কারীম (ﷺ) একটি কবরে প্রবেশ করলেন রাতে । তাই তাঁর জন্য বাতি জ্বালান হল, অতঃপর তিনি মুর্দাকে কিবলার দিক হতে গ্রহণ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তোমায় রহম করুন! তুমি ছিলে বড় কোমল প্রাণ, বড় কুরআন তেলাওয়াতকারী। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১০৯. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) –কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মরবে, তাকে ঘরে আবদ্ধ রাখবে না তাড়াতাড়ি তাকে কবরে পৌছে দিবে। তার মাথার নিকট সূরা বাকারার প্রথমাংশ এবং পায়ের দিকে বাকারার শেষের দিক পাঠ করবে । (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১১০. আবু রাফে’ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) সা'দ ইবনে মুআযকে কবরে নামিয়েছিলেন এবং তাঁর কবরের উপর পানি ছিটিয়ে ছিলেন। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১১১. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) অভিশাপ দিয়েছেন বিলাপকারিণীকে ও শ্রবণকারিণীকে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১১২. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান করে, তার বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় সওয়াব রয়েছে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১১৩. আবু বারযা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সন্তানহারা স্ত্রীলোককে সান্ত্বনা দান করবে, তাকে জান্নাতে একটি ডোরাদার কাপড় পরান হবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১১৪. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কারও জুতার ফিতা ছেড়ে যাবে, তখন সে যেন ‘ইন্নালিল্লা-হি’ পড়ে! কারণ ইহাও বিপদের অন্তর্ভুক্ত। (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১১৫. মুহাম্মাদ ইবনু নু'মান (রহ.) নবী কারীম (ﷺ) -এর নাম করে বলেন যে, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমু'আর দিন আপন মাবাবা অথবা তাঁদের মধ্যে একজনের কবর যিয়ারত করবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে এবং মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহারকারী বলে লেখা হবে । (জাল বায়হাক্বী, মিশকাত)
১১৬. ইবনু ফেরাসী হতে বর্ণিত আছে, তার পিতা ফেরাসী বলেছেন, আমি একদা রসূল (ﷺ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল (ﷺ) আমি কি কারও নিকট কিছু চাইতে পারি? নবী কারীম বললেন, যদি অগত্যা তোমার তা চাইতে হয়, তবে নেক ব্যক্তিদের নিকট চাইবে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১১৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কারও আপন জীবনকালে এক দিরহাম দান করা তার মৃত্যুকালে একশত দিরহাম দান করা অপেক্ষা অধিক উত্তম। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ। মিশকাত)
১১৮. আবু দারদা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে মৃত্যুকালে দান করে অথবা দাসদাসী মুক্ত করে, তার উদাহরণ সেই ব্যক্তির, যে পেট ভরে খাওয়ার পর হাদিয়া দেয়। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ। আবুদাউদ)
১১৯. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, এই দুইটি স্বভাব কোন মুমিনের মধ্যে একত্র হতে পারে না- কৃপণতা ও দুর্ব্যবহার । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১২০. আবুবকর ছিদ্দীক (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশ করবে না প্রতারক, কৃপণ এবং যে ব্যক্তি দান করে খোটা দেয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১২১. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা দানের ব্যাপার তাড়াতাড়ি করবে। কারণ বিপদাপদ তাকে অতিক্রম করতে পারে না । (যঈফ মিশকাত)
১২২. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) রসূল (ﷺ) বলেছেন, দান আল্লাহ তা'আলার ক্রোধকে প্রশমিত করে এবং মন্দ-মৃত্যু রোধ করে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১২৩. জাবের (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর নামে কিছু চাওয়া যায় না জান্নাত ব্যতীত । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১২৪. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কোন ভুখ প্রাণীকে তৃপ্তি করে খাওয়ানোই হল শ্রেষ্ঠ দান। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১২৫. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, যখন রমাদান মাস উপস্থিত হত, রসূল (ﷺ) সমস্ত কয়েদীকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক যাঞ্চাকারীকে দান করতেন। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১২৬. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, তাঁর উম্মতকে মাফ করা হয় রমাদান মাসের শেষ রাতে। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রসূল ! এটা কি কদরের রাত্রি? রসুল (ﷺ) বললেন, না; বরং এই কারণে যে, কর্মচারীর বেতন দেয়া হয় যখন সে তার কর্ম শেষ করে । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১২৭. মু'আয ইবনু যুহরা বলেন, নবী (ﷺ) যখন ইফতার করতেন বলতেন, আল্লাহ আমি তোমারই জন্য সিয়াম রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিকে সিয়াম খুলেছি। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১২৮. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (ﷺ) সিয়াম অবস্থায় তাঁকে চুম্বন করতেন এবং তার জিহ্বা চুসতেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১২৯. আমের ইবনু রবীআ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী কারীম (ﷺ)-কে সিয়াম অবস্থায় অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৩০. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে রমাদানের একটি সিয়াম ভেঙ্গেছে কারণ ও রোগ ব্যতীত, তার উহা পূরণ করবে না সারা জীবনের সিয়াম- যদিও সে সারা জীবন সিয়াম রাখে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৩১. আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তিন জিনিস সায়েমদের সিয়াম নষ্ট করে না- শিঙ্গা লাগানো, বমি করা, স্বপ্নদোষ । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৩২. সালামা ইবনু মুহাব্বাক (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যার এমন বাহন রয়েছে যা তাকে আরামের সাথে সাথে ঘরে পৌঁছে। দিবে, সে যেন সিয়াম রাখে যেখানেই সে সিয়াম পায়। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৩৩. আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সফর অবস্থায় রামাদানের সিয়াম মুক্বীম অবস্থায় ইফতারকারীর ন্যায় । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৩৪. নাফে’ আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন, নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন, যে রমাদানের সিয়াম মাথায় রেখে মরে গেছে, তার পক্ষ হতে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে যেন একজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ান হয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৩৫. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) এক মাসের শনি, রবি ও সোমবার সিয়াম রাখতেন আর অপর মাসের মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৩৬. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (ﷺ) আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৩৭. উম্মু সালামা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) অপর দিনে সিয়াম রাখার চেয়ে শনি-রবিবারেই অধিক সিয়াম রাখতেন এবং বলতেন, এ দুইদিন মুশরিকদের পর্বের দিন। অতএব, এ ব্যাপারে আমি তাদের খেলাফ করাকে ভালবাসি। (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৩৮. হাফছা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, চারটি বিষয় এমন যেগুলিকে নবী কারীম (ﷺ) কখনও ছাড়তেন না-আশুরার সিয়াম, যিলহজ্জের প্রথম দশকের সিয়াম, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের সিয়াম এবং ফযরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নত। (যঈফ নাসাঈ, যঈফ মিশকাত)
১৩৯. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) আইয়ামে বীযের সিয়াম সফরে ছাড়তেন না। (যঈফ নাসাঈ, যঈফ মিশকাত)
১৪০. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন রসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের যাকাত রয়েছে এবং শরীরের যাকাত হল সিয়াম। (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৪১. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে এক দিন সিয়াম রাখবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে জাহান্নাম হতে দূরে রাখবেন একটি কাক বাচ্চা কাল। থেকে অতি বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত যতদূর উড়ে যেতে পারে ততদূরে । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৪২. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একবার রসূল (ﷺ) - কে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, উহা পূর্ণ রমাদানেই রয়েছে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৪৩. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, নবী কারীম (ﷺ) ইতিকাফ অবস্থায় হাঁটতে পথের এদিক সেদিক গিয়ে ও না দাঁড়িয়ে রোগীর অবস্থা জিজ্ঞেস করতেন। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৪৪. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, রসূল (ﷺ) ই'তিকাফকারী সম্পর্কে বলেছেন, সে গোনাহসমূহ হতে বেঁচে থাকে এবং তার জন্য নেকীসমূহ লেখা হয় ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে (বাহিরে থেকে) যাবতীয় নেক কাজ করে । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৪৫. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে পেটে কুরআনের কোন অংশ নেই, তা শূন্য ঘরতুল্য। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ। মিশকাত)
১৪৬. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়েছে এবং সেটাকে মুখস্থ রেখেছে অতঃপর তার হালালকে। হালাল এবং হারামকে হারাম জেনেছে, তাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ কবুল করবেন, যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়েছিল । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনে মাজাহ)।
১৪৭. আল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে সূরা হা-মীম আল-মুমিন-ইলাইহিল মাছীর এবং আয়াতুলকুরসী পড়বে, তার দ্বারা তাকে হিফাযতে রাখা হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত আর যে তা সন্ধ্যায় পড়বে, তার দ্বারা তাকে হিফাযতে রাখা হবে সকাল পর্যন্ত। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৪৮, আবু দারদা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথমের তিন আয়াত পড়বে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে নিরাপদে রাখা হবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১৪৯. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের একটি কৃলব রয়েছে, আর কুরআনের কলব হল ‘সূরা ইয়াসীন’ । যে সেটা পড়বে, আল্লাহ তা'আলা তার বিনিময়ে দশ বার কুরআন খতমের সওয়াব নির্ধারণ করবেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৫০. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির এক হাজার পূর্বে সূরা ত্ব-হা’ ও ‘ইয়াসীন’ পাঠ করলেন। তখন ফিরিশতারা শুনে বললেন, ধন্য সেই জাতি, যাদের উপর এটা নাযিল হবে, ধন্য সেই পেট যে সেটা ধারণ করবে এবং ধন্য সেই মুখ যে সেটা উচ্চারণ করবে। (যঈফ মিশকাত)
১৫১. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ‘সূরা হা-মীম দুখান’ পড়ে সকালে উঠে এমতাবস্থায় তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। (জাল তিরমিযী, মিশকাত)
১৫২. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে জুম'আর রাতে ‘সূরা হা-মীম দুখান’ পড়বে, তাকে মাফ করা হবে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৫৩. ইরবায ইবনু সারিয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) শয়নের পূর্বে ‘মুসাব্বিহাত (হাদীদ, হাশর, ছফ, জুমুআহ, তাগাবুন) পাঠ করতেন এবং বলতেন, ঐ আয়াতগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যা হাজার আয়াত অপেক্ষাও উত্তম। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৫৪. আব্দুল মালেক ইবনু ওমায়র (রাদিআল্লাহু আনহু) মুরসালরূপে বর্ণনা করেন যে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সূরা ফাতিহায় সকল রোগের চিকিৎসা রয়েছে। (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১৫৫. উসমান ইবনু আফফান (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে সূরা আলে ইমরানের শেষের দিক পড়বে, তার জন্য পূর্ণ রাত্রি সলাতে অতিবাহিত করার সওয়াব লেখা হবে । (যঈফ মিশকাত, যঈফ দারেমী)
১৫৬. কা'ব ইবনু মালেক (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, জুম'আর দিন তোমরা সূরা হুদ পড়বে । (যঈফ মিশকাত, যঈফ দারেমী)
১৫৭. আতা ইবনু আবু রাবাহ্ (রহ.) বলেন, আমার নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে একথা পৌছেছে যে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনের প্রথম দিকে ‘সূরা ইয়াসীন’ পড়বে, তার সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হবে । (যঈফ দারেমী, যঈফ। মিশকাত)
১৫৮. মা’কেল ইবনু ইয়াসার মুযানী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে শুধু আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে ‘সূরা ইয়াসীন’ পড়বে, তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করা হবে, সুতরাং তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের নিকট সূরা ইয়াসীন পড়। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১৫৯. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, প্রত্যেক জিনিসের একটি শীর্ষস্থান রয়েছে, আর কুরআনের শীর্ষস্থান হল সূরা বাক্বারাহ এবং প্রত্যেক জিনিসের একটি সার রয়েছে, আর কুরআনের সার হর ‘মুফাছছাল’ সূরা সমূহ। (যঈফ দারেমী, যঈফ। তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৬০. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক জিনিসের একটি শোভা রয়েছে, আর কুরআনের শোভা হল ‘সূরা আর রহমান’ । (যঈফ মিশকাত)
১৬১. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াক্আি পড়বে, কখনও সে দারিদ্রে পতিত হবে না। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) তার মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এটা পড়তে বলতেন। (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১৬২. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) সূরা সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লাকে ভালবাসতেন। (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৬৩. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন রসূল (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রত্যহ হাজার আয়াত পড়তে পারে না? সাহাবীগণ বললেন, কে প্রত্যহ হাজার আয়াত পড়তে পারবে? তখন তিনি বললেন, হতে কি তোমাদের কেউ প্রতিদিন সূরা ‘আলহাকুমুততকাছুর’ পড়তে পারে না? (যঈফ দারেমী, যঈফ মিশকাত)
১৬৪. আনাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল বলেছেন, দু'আ হল ইবাদতের মগজ। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৬৫. ইবনু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ চাও। তিনি তাঁর নিকট চাওয়াকে পছন্দ করেন। আর মসীবত হতে মুক্তির অপেক্ষা করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৬৬, ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যার জন্য দু'আর দরজা খোলা, তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা হয়েছে এবং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা অপেক্ষা প্রিয়তর কোন জিনিসই চাওয়া হয় না। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৬৭. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য অনুপস্থিত ব্যক্তির দু'আই সত্বর কবুল হয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৬৮. সায়েব ইবনু ইয়াযীদ আপন পিতা উয়াযীদ হতে বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (ﷺ) যখন হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন, তখন হাত দ্বারা চেহারা মাসেহ করতেন। (যঈফ মিশকাত)
১৬৯. উম্মে হাবীবা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক কথাই তার পক্ষে ক্ষতিকর, কল্যাণকর নয় । সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজ হতে নিষেধ অথবা আল্লাহর যিকির ব্যতীত। (যঈফ। তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৭০. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর যিকির ছাড়া বেশী কথা বল না। কারণ আল্লাহর যিকির ছাড়া বেশী কথা অন্তর শক্ত হওয়ার কারণ। আর শক্ত দিল ব্যক্তিই হচ্ছে আল্লাহ হতে অনেক দূরে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৭১. যুবায়র (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, এমন কোন ভোর নেই যাতে আল্লাহর বান্দারা উঠেন, আর একজন ঘোষণাকারী এরূপ ঘোষণা না করেন, পবিত্র বাদশাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)।
১৭২. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রশংসা করা হল সেরা কৃতজ্ঞতা। যে বান্দা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে তাঁর প্রশংসা করে না। (যঈফ বায়হাকী, যঈফ মিশকাত)
১৭৩. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রথমে যাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে, তারা হবেন ঐ সমস্ত লোক যারা সুখে-দুঃখে সকল সময় আল্লাহর প্রশংসা করে। থাকেন। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)।
১৭৪. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ’ হল পাল্লার অর্ধেক, ‘আলহামদু লিল্লাহ' উহাকে পূর্ণ করে এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু’ এর সম্মুখে কোন পদা নেই, যতক্ষণ না তা আল্লাহর নিকটে পৌছে। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৭৫. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ হল নিরানব্বইটি রোগের ঔষধ, যাদের সহজটা হল চিন্তা। (যঈফ মুসতাদরাক, যঈফ মিশকাত)
১৭৬. ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সর্বদা ক্ষমা চায় আল্লাহ তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা হতে তাকে মুক্তি দেন। আর তাকে রিযিক দান করেন এমন স্থান থেকে যা সে ভাবেইনি । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)।
১৭৭. আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, রসূল (ﷺ) বলতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর, যারা ভাল কাজ করে খুশী হয় এবং মন্দ কাজ করে ক্ষমা চায় । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ মিশকাত)
১৭৮. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ ভালবাসেন সেই মু'মিনকে যে পাপ করে তওবা করে । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)।
১৭৯. আবু যর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে মাফ করে দেন, যাবৎ পর্দা না পড়ে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল ! পর্দা কী? তিনি বললেন, কোন ব্যক্তির মুশরিক অবস্থায় মরা। (যঈফ মিশকাত)
১৮০. আবু মালেক আল-আশআরী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে তখন সে যেন বলে, ‘আল্লাহ আমি তোমার নিকট আগম ও নির্গমনের মঙ্গল চাই। তোমার নামে আমি প্রবেশ করি। আমাদের রব্ব আল্লাহর নামে ভরসা করলাম। অতঃপর যেন আপন পরিবারের লোকদের প্রতি সালাম দেয়। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)
১৮১. ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) পাঁচটি বিষয় হতে পানাহ চাইতেন- কাপুরুষতা, কৃপণতা, বয়সের মন্দতা, অন্তরের ফিতনা ও কবরের আযাব হতে। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ, যঈফ মিশকাত)
১৮২. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (ﷺ) বলতেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সত্যের বিরুদ্ধাচরণ, কপটতা ও চরিত্রের অসাধুতা হতে পরিত্রাণ চাই'। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ। নাসাঈ, যঈফ মিশকাত)
১৮৩. মু'আয (রাদিআল্লাহু আনহু) নবী কারীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট পানাহ্ চাও লালসা হতে, যা মানুষকে দোষের দিকে নিয়ে যায় । (যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৮৪. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর তার সন্তানদের মধ্যে যারা বালেগ তাদেরকে ইহা শিখিয়ে দিতেন, আর যারা বালেগ নয় কাগজে লিখে তাদের গলায়। ঝুলিয়ে দিতেন। (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৮৫. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, একটি দু'আ আমি রসূল (ﷺ) হতে স্মরণ করেছি, যা আমি কখনও ছাড়ি না । হে আল্লাহ! আমাকে এরূপ করুন যাতে আমি সম্মানের সাথে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, বেশী করে আপনাকে স্মরণ করতে পারি, আপনার উপদেশ পালন। করতে পারি এবং আপনার হুকুম রক্ষা করতে পারি । (যঈফ মিশকাত)
১৮৬. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলতেন, হে আমি আপনার নিকটে স্বাস্থ্য, পবিত্রতা, আমানতদারী, উত্তম চরিত্র ও আপনার নির্দেশের উপর সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব কামনা করছি। (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১৮৭. উম্মে মা'বাদ (রাদিআল্লাহু আনহা) বলেন, আমি রসূল (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরকে কপটতা হতে, আমার কাজকে লোক দেখানো হতে, আমার যবানকে মিথ্যা হতে এবং আমার চক্ষুকে খিয়ানত করা হতে পবিত্র করুন। আপনি অবগত আছেন চক্ষুর লুকোচুরি ও অন্তরের কারসাজির ব্যাপারে । (যঈফ বায়হাক্বী, যঈফ মিশকাত)
১৮৮, ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমাকে রসূল (ﷺ) এই দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন, তুমি বল, হে আল্লাহ! আপনি আমার ভিতরকে বাহির হতে উত্তম করুন এবং বাহিরকে পুন্যময় করুন। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট চাই তুমি যা মানুষকে ভাল দান করেছেন তা পরিবার, মাল ও সন্ত নি, যারা পথভ্রষ্ট বা পথভ্রষ্টকারী নয় । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৮৯, আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ পৌছার পথ খরচের মালিক হয়েছে, অথচ হাজ্জ করেনি, সে ইহুদী খ্রীস্টান হয়ে মারা যাক; এতে কিছু আসে যায় না। এজন্য যে, আল্লাহ বলেন, মানুষের প্রতি বায়তুল্লাহ্ হাজ্জ ফরয, যখন সে পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য লাভ করেছে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৯০. ইবনু ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তুমি কোন হাজীর সাক্ষাৎ পাবে তখন তাকে সালাম করবে, মুছাফাহা করবে। প্রবেশের পূর্বে। কারণ হাজী হল গোনাহ মাফ করা পবিত্র ব্যক্তি। (যঈফ। আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৯১. উমারা ইবনু খুযায়মা ইবনু ছাবেত তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী কারীম (ﷺ) যখন তালবিয়া হতে অবসর গ্রহণ করলেন, আল্লাহর নিকট তাঁর সন্তোষ প্রার্থনা করলেন ও জান্নাত চাইলেন। অতঃপর তাঁর নিকট জান্নামের আগুন হতে ক্ষমা চাইলেন তাঁর রহমতের উসীলায় । (যঈফ মিশকাত)।
১৯২. মুহাজেরে মাক্কী বলেন, একদা জাবের (রাদিআল্লাহু আনহু)-কে জিজ্ঞেস করা হল, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ দেখবে সে দুআয় হাত উঠাবে কি-না? উত্তরে তিনি বললেন, আমরা নবী কারীম (ﷺ) -এর সাথে হাজ্জ করেছি; কিন্তু এইরূপ করিনি। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)।
১৯৩. তালহা ইবনু ওবায়দুল্লাহ ইবনু কারীয (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) বলেছেন, শয়তানকে কোনদিন এত অধিক অপমানিত, অধিক ধিকৃত, অধিক হীন ও অধিক রাগান্বিত দেখা যায় না আরাফার দিন। অপেক্ষা। যেহেতু সে দেখতে থাকে যে, বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমত নাযিল হচ্ছে এবং তাদের বড় বড় পাপ মাফ করা হচ্ছে; কিন্তু যা দেখা গিয়েছিল বদরের দিনে; জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, বদরের দিন কী দেখা গিয়েছিল? উত্তরে তিনি বললেন, সেদিন সে নিশ্চিতরূপে দেখেছিল যে, জিবরীল (আ.) ফিরিশতাদেরকে সারিবন্দী করছেন। (যঈফ মালেক, যঈফ মিশকাত)
১৯৪. জাবের (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (ﷺ) বলেছেন, শিকারের গোশত ইহরামেও তোমাদের জন্য হালাল-যদি না তোমরা নিজেরা উহা শিকার কর অথবা তোমাদের জন্য শিকার করা হয়। (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ নাসাঈ)
১৯৫. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হুদায়বিয়ার বৎসর তাঁরা যে পশু কুরবানী করেছিলেন (পরবর্তী বৎসরের) কাযা উমরায় তার পরিবর্তে অন্য পশু কুরবানী করতে । (যঈফ আবুদাউদ, যঈফ মিশকাত)।
১৯৬. আইয়াশ ইবনু আবু রবীয়া মাখযুমী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, এই উম্মত কল্যাণের সাথে থাকবে, যাবৎ তারা মক্কার এই সম্মান পূর্ণভাবে বজায় রাখবে । যখন তারা ইহা বিনষ্ট করবে ধবংস হয়ে যাবে । (যঈফ ইবনে মাজাহ, যঈফ আহমাদ, যঈফ মিশকাত)
১৯৭. আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, ইসলামী জনপদ সমূহের মধ্যে মদীনা সবশেষে ধবংস হবে । (যঈফ তিরমিযী, যঈফ মিশকাত)
১৯৮. জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ বাজালী (রাদিআল্লাহু আনহু) নবী কারীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা আমার প্রতি ওহী। করেছিলেন, এই তিনটির মধ্যে যেটিতেই আপনি অবতরণ করবেন সেটিই হবে আপনার হিজরতস্থল- মদীনা, বাহরাইন ও কিন্নাসরীন। (জাল তিরমিযী, মিশকাত)
১৯৯, মিসওয়াকসহ এক রাক'আত সলাত মিসওয়াক ছাড়া ৭০ রাকায়াতের চেয়ে উত্তম। (জাল হাদীস)
২০০. যে ব্যক্তি ওযূ থাকা অবস্থায় ওযু করে আল্লাহ তার আমলনামায় ১০টি নেকি লিখেন। (জাল হাদীস)
২০১. ওযূ যে করল এবং হাত দিয়ে ঘাড় মাসেহ করল, কিয়ামত দিবসে তার ঘাড়ে বেড়ী পড়ানো হবে না। (জাল হাদীস)
২০২. প্রচন্ড শীতে যে ওযূ করে তার জন্যে রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান আর প্রচন্ড গরমে ওযূ করলে সে পাবে এক গুণ সওয়াব। (জাল হাদীস)
২০৩. কেউ ওযূ করে শোবার পর সে রাতে মারা গেলে সে শহীদ হিসেবে তার মৃত্যু গণ্য হবে। (জাল হাদীস)
২০৪. এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি সলাত ছেড়ে দিয়েছি। রসূল (ﷺ) বললেন, পরিত্যক্ত সলাতের কাযা আদায় কর। লোকটি বললো, কিভাবে কাযা পড়বো? রসূল (ﷺ) বললেন, প্রত্যেক সলাতের সাথে অনুরূপ (ওয়াক্তের) সলাত পড়ে নাও। লোকটি বললো? ওয়াক্তিয়া সলাতের পর নাকি আগে? রসূল (ﷺ) বললেন, না (বরং) আগে । (জাল হাদীস)
২০৫. মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে এবং তালবীয়া পাঠকারীকে (হাজী) তালবীয়া পাঠ করা অবস্থায় কবর থেকে বের করা হবে এবং উচ্চস্বরে মুয়াজ্জিনকে ক্ষমা করা হবে । (জাল হাদীস)
২০৬. মুয়াজ্জিনের আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ বলার সময় তর্জনী আংগুলের উপরি পেট দিয়ে উভয় চক্ষু মাসেহ করা...। (জাল হাদীস)
২০৭. যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াদারীর কথা বলে আল্লাহ তার আমল নষ্ট করে দেন। (জাল হাদীস)।
২০৮. মসজিদে কথা বলা নেক আমলকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেমন চতুষ্পদ জন্তু ঘাস তৃণলতা খেয়ে ফেলে। (জাল হাদীস)
২০৯. যে ব্যক্তি মসজিদে বাতি দেয় ৭০ হাজার ফিরিশতা সে বাতি নিভানো পর্যন্ত তার জন্যে দু'আ করে, আর যে ব্যক্তি মসজিদে বিছানা বিছিয়ে দেয় ৭০ হাজার ফিরিশতা সে বিছানা ছিড়ে না যাওয়া পর্যন্ত তার জন্যে দু’আ করতে থাকে । (জাল হাদীস)
২১০. যে ব্যক্তি ফরয আদায় করলো আল্লাহর কাছে তার দু’আ গ্রহণীয় । (জাল হাদীস)
২১১. সবচেয়ে সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট লোকটি কওমের ইমামতি করবেন। (জাল হাদীস)
২১২. যে ব্যক্তি ফযর সলাত জামায়াতের সাথে আদায় করলো সে যেনো আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে ৫০টি হাজ্জ্ব করলো। (জাল হাদীস)
২১৩. সলাতের জন্যে ইকামত দিলে ফরয সলাত ছাড়া অন্য কারো সলাত নেই, তবে ফযরের দু'রাক'আত সুন্নত পড়া যাবে। (জাল হাদীস)
২১৪. আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর ফিরিশতাকুল জুমু'আর দিনে পাগড়ীসহ সলাত আদায়কারীর উপর রহমত বর্ষণ করেন। (জাল হাদীস)।
২১৫. যে এক বৎসর পর্যন্ত যত্নসহকারে আযান দেয় তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। হয়ে যায় । (জাল হাদীস)
২১৬. টুপীর উপর পাগড়ি পরিধান করা আমাদের ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য চিহ্ন স্বরূপ। বিচার দিনে মাথায় বাঁধা পাগড়ির প্রতিটি ভাজে নূর দান করা হবে । (জাল হাদীস)
২১৭. রসূল (ﷺ) জুমুআর (দু'রাক'আতের) আগে ও পরে কোন বিরতি ছাড়া ৪ রাকআত করে সলাত পড়তেন। (জাল হাদীস)
২১৮. যে মসজিদে বাতি দেয় ঐ বাতিতে এক ফোঁটা তৈল থাকা পর্যন্ত ফিরিশতাগণ তার জন্যে দু'আ করতে থাকেন। (জাল হাদীস)।
২১৯. মদীনার মসজিদে জুমু'আর সলাত আদায় করা অন্য মসজিদে ১ হাজার সলাত আদায় করার সমান অথবা তথায় রমাদান মাসের ১ মাস সিয়াম। রাখা অন্য মাসের ১০০০ মাস সিয়াম রাখার সমান। (জাল হাদীস)
২২০. পাগড়ীসহ দু'রাকআত, পাগড়ী ব্যতীত ৭০ রাকআত সলাতের চেয়ে উত্তম । (জাল হাদীস)
২২১. আমি জান্নাতে প্রবেশ করে মর্মর পাথরের প্রাসাদ দেখলাম যার মাটি খামিরা হয়েছে মিশ দিয়ে। আমি জিব্রাইলকে (আলাইহিস সালাম) জিজ্ঞেস করলাম : এটা কার জন্যে তৈরী করা হয়েছে? তিনি বললেন - আপনার উম্মতের মুয়াযযিন ও ইমামদের জন্যে । (জাল হাদীস)
২২২. তিনি (রসূল) শুধুমাত্র সলাতের শুরুতেই হস্তদ্বয় উঠাতেন (রফেঈ ইয়াদাইন) তারপর তিনি আর এ কাজটি পুনরায় করতেন না। (জাল হাদীস)
২২৩. রমাদান মাসে তিনি (রসূল) ২০ রাক'আত এবং বিতর সলাত জামায়াত ছাড়া পড়তেন। (জাল হাদীস)
২২৪. যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাতে জাগ্রত থাকে তার হৃদয় কখনও মৃত্যুবরণ করবে না অথচ সেদিন সকলের হৃদয় মরে যাবে । (জাল হাদীস)
২২৫. যে ব্যক্তি জুমুআর দিন রাতে রোগীদের সেবা করে, গরীবকে খাওয়ায় এবং জানাযায় শরীক হয়, ৪০ বৎসর পর্যন্ত তাকে গুনাহ স্পর্শ করবে না। (জাল হাদীস)
২২৬. যে সলাতে দুই হাত উপরে উঠায় (রফেঈ ইয়াদাইন) তার সলাত শুদ্ধ নয় । (জাল হাদীস)
২২৭. যে ইমামের পিছনে ইকতাদা করে ক্বিরাত পড়ে তার মুখ আগুন দিয়ে ভরে দেয়া হবে । (জাল হাদীস)
২২৮. সলাতুস তাসবীহ নামে সলাত আদায় করা। (জাল হাদীস)
২২৯, যে ব্যক্তি জুমু'আর দিন যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে দু'রাকআত। সলাতের ১ম রাকআতে ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসী ১ বার, ফালাক ২৫ বার এবং ২য় রাক'আতেফাতিহা, ইখলাস ও নাস ২৫ বার পড়বে এবং সালামান্তে লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা- পড়বে সে স্বপ্নযোগে আল্লাহকে এবং জান্নাতে নিজের স্থান না দেখে মৃত্যুবরণ করবে না। (জাল হাদীস)
২৩০. যে ব্যক্তি আশুরার দিন যোহর ও আসরে মধ্যবর্তী সময় ৪ রাক'আত সলাত পড়বে। প্রত্যেক রাকআতেফাতিহা ১ বার আয়াতুল কুরসী ১০ বার ...। (জাল হাদীস)
২৩১. ঈদুল ফিতরের পর ১২ রাক'আত এবং ঈদুল আযহার পর ৬ রাক'আত সলাত পড়া সুন্নত। (জাল হাদীস)
২৩২. ঈদের রাতে ৬ রাক'আত সলাত পড়লে পরিবারের এমন লোকদের জন্যে শাফায়াত করা যাবে যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গিয়েছিল । তাকে ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়ার মতো সওয়াব দান করবেন। (জাল হাদীস)
২৩৩. যে ব্যক্তি রমাদানের শেষ জুমুআর দিন রাতে ৫টি ফরয সলাত আদায় করবে তার পরিত্যক্ত সুন্নতগুলো আদায় হয়ে যাবে । (জাল হাদীস)
২৩৪. যে মুমিন বান্দা জুমার রাতে দু'রাক'আত সলাত প্রত্যেক রাকআতেফাতিহা এবং ২৫ বার ইখলাস পড়বে। তারপর সালামান্তে ১ হাজার বার দরুদ পাঠ করবে সে আমাকে স্বপ্নে দেখবে। আর যে আমাকে স্বপ্নে দেখবে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন। (জাল হাদীস)
২৩৫. যে ব্যক্তি যোহরের আগের ৪ রাকআত সলাত সব সময় না পড়বে সে আমার শাফায়াত পাবে না । (জাল হাদীস)
২৩৬. রাতের প্রথম ভাগে বিতর পড়লে শয়তান অসন্তোষ হয় এবং শেষরাতে সেহরী খেলে (রহমান) আল্লাহ খুশী হন । (জাল হাদীস)
২৩৭. মাগরিবের প্রতি রাকআতে ৪০ বার ইখলাসসহ ১০ রাকআত সলাত আদায় করা। (জাল হাদীস)
২৩৮. যাকাত আদায় কর এবং এদ্বারা আহলে ইলমের অন্বেষণ কর, কেননা এটাই অধিক নেক ও তাকওয়ার নীতি। (জাল হাদীস)
২৩৯. শুল্ক ও উশর (এক দশমাংশ) উভয়ই মুমিনের উপর একত্রিত হয় না। (জাল হাদীস)
২৪০. প্রত্যেক জিনিসের যাকাত আছে : আর ঘরের যাকাত হলো আতিথেয়তা। (জাল হাদীস)
২৪১. সাহায্য প্রার্থনাকারীদের দান কর; যদিও সে ঘোড়ায় চড়ে আসে। (জাল হাদীস)
২৪২. মানুষের কাছে হাত পাতা গর্হিত কাজ; এর চেয়ে জঘন্য ও অশ্লীল আর কোনো কাজ নেই। (জাল হাদীস)
২৪৩. যার কাছে সদাকা করার মতো কিছু নেই সে যেনো ইহুদীকে ভৎসনা করে। কেননা এটাই তার জন্যে সদাকাহ। (জাল হাদীস)
২৪৪. যে ব্যক্তি তার ভাইকে উদর পূর্তি করে রুটী খাওয়াবে এবং তৃষ্ণা মিটায়ে পানি পান করাবে । আল্লাহ তার থেকে দোযখ ৭টি পরিখা পরিমাণ দূরে নিয়ে যাবে । একেকটি পরিখার দূরত্ব হবে ৫শ’ বৎসরের রাস্তায় সম পরিমাণ । (জাল হাদীস)
২৪৫. যদি তুমি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাও এমতাবস্থায় যে তিনি তোমার উপর সন্তুষ্ট তাহলে তিনি যে রিক দান করেছেন তা খরচ করতে একটুও কৃপণতা করো না এবং কোনো সাহায্য প্রার্থীকেই বঞ্চিত করো না। (জাল হাদীস)
২৪৬. যে ব্যক্তি ক্ষুধার্তকে উদরপূর্তি করে খাওয়ায় এবং দোষকে গোপন রাখে। তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দেয়া হয় । (জাল হাদীস)
২৪৭. যে ব্যক্তির ব্যবহার ভালো তার প্রতি আকর্ষিত হওয়া হৃদয়ের প্রকৃতি আর অসদাচারণ ব্যক্তির প্রতি স্বভাবতই বিদ্বেষ জন্মে। (জাল হাদীস)
২৪৮. যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের উপকার করার চেষ্টা করে তার আগে পরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় । (জাল হাদীস)
২৪৯. সিয়াম রেখে সুস্থ্য থাকো। (জাল হাদীস)
২৫০. সিয়াম পালনকারীর প্রতিটি পশম আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। প্রত্যেক সিয়াম পালনকারী নর-নারীর জন্যে কিয়ামত দিবসে আরশের নীচে স্বর্ণখচিত পাত্র রাখা হবে । (জাল হাদীস)
২৫১. তিন ধরনের লোকদের খানা-পিনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না । সিয়াম পালন কারী, রাত্রি জাগরণকারী, আবেদ এবং মেজবান। তিন ধরনের লোকদের অসৎ চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। রোগী, সিয়াম পালনকারী এবং ন্যায়পরায়ণ ইমাম । (জাল হাদীস)
২৫২. যে ব্যক্তি সিয়াম পালনকারীকে হালাল খাদ্য ও পানীয় দ্বারা ইফতার করায় ফিরিশতাকুল তার জন্য মাগফিরাত কামনা করে থাকেন। (জাল হাদীস)
২৫৩. রজব মাস অবশ্যই মস্তবড় মাস। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি সিয়াম পালন করলো তাকে সহস্র বৎসরে সিয়াম পালনের সওয়াব দেয়া হবে...। (জাল হাদীস)
২৫৪. আশুরার দিন চোখে সুর্মা দিলে তার চোখ কখনো খারাপ হবে না। (জাল হাদীস)
২৫৫. রমাদান মাসের প্রথম রাতে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে থাকেন। আর আল্লাহ তা'আলা যখন কোন বান্দার প্রতি দৃষ্টি দেন তাকে কখনই শাস্তি পেতে হবে না। আল্লাহ তা'আলা রমাদানের প্রতিরাতে হাজার হাজার ব্যক্তিকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (জাল হাদীস)
২৫৬. যে রমাদান মাসে ১০ দিনে ইতিকাফ করল সে যেনো দু'টি হাজ্জ ও দু'টি ওমরাহ আদায় করল । (জাল হাদীস)
২৫৭. প্রত্যেক দুর্বলের জন্যে হাজ্জ হলো জিহাদ। (জাল হাদীস)
২৫৮. যে ব্যক্তি বৃষ্টির দিনে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করে প্রত্যেক ফোঁটার বিনিময়ে তার একটি নেকী লেখা হয় এবং অন্য একটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয় । (জাল হাদীস)
২৫৯. (শয়তানকে) কংকর নিক্ষেপ ব্যতীত কারো হাজ্জ কবুল হয় না । (জাল হাদীস)
২৬০. হাজী সাহেব তার ঘর থেকে বের হলেই সে আল্লাহর হিফাজতে চলে যায় । সে তার হাজ্জ সম্পন্ন করার আগে মারা গেলে আল্লাহ তাআলা তার আগের পরের সব গুনাহ মাফ করে দেন। এ রাস্তায় একটি দিরহাম ব্যয় করা ৪০ হাজার দিরহাম ব্যয় করার সমান। (জাল হাদীস)
২৬১. হাজীদের ফযীলত সম্পর্কে যদি লোকেরা জানতো তাহলে তারা হাজীদের পা পর্যন্ত ধৌত করে দিত। (জাল হাদীস)
২৬২. যে হাজ্জ অথবা ওমরাহ আদায় করতে গিয়ে মারা যায়, তার কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এবং হিসাব নিকাশ ও হবে না। তাকে বলা হবে। জান্নাতে প্রবেশ কর! (জাল হাদীস)।
২৬৩. যে ব্যক্তি মক্কা ও মদীনার কোনো এক জায়গায় মারা যাবে তার জন্যে আমার সুপারিশ করা ওয়াজিব হয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন শান্তিতে হাজির হবে । (জাল হাদীস)।
২৬৪. প্রতি বৎসর ৬ লাখ লোক হাজ্জ করার জন্যে আল্লাহ তা'আলা এই ঘরের সাথে ওয়াদা করেছেন। কম হলে আল্লাহ ফিরিশতা দ্বারা তা পূর্ণ করেন। (জাল হাদীস)
২৬৫. যে হাজ্জ করলো অথচ আমার যিয়ারত করলো না সে আমাকে খামুশ করে দিল । (হাদীসটি জাল)
২৬৬. যে আমার মৃত্যুর পর আমার যিয়ারত করবে সে যেন আমার জীবদ্দশায়ই যিয়ারত করলো। আর যে ব্যক্তি মক্কা কিংবা মদীনায় মৃত্যুবরণ করলো সে কিয়ামত দিবসে নিশ্চিন্তে উত্থিত হবে । (হাদীসটি জাল)
২৬৭. যে হাজ্জ করার আগে বিবাহ করবে সে (যেনো) গুনাহ করতে শুরু করলো। (জাল হাদীস)
২৬৮. পদব্রজে হাজ্জ আদায় কারীর ৭০ হাজ্জের সওয়াব আর যানবাহনে আরোহন করে হাজ্জ আদায়কারীর জন্যে রয়েছে ৩০ হাজ্জের সওয়াব । (জাল হাদীস)
২৬৯. যে হাজ্জ করে আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করলো সে যেনো আমার জীবিতাবস্থায় যিয়ারত করলো। (জাল হাদীস)
২৭০. যে আমার ও আমার পিতা ইব্রাহিমের কবর একই বৎসর যিয়ারত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । (জাল হাদীস)
২৭১. তোমরা হাজ্জ কর; কেননা পানি দ্বারা ধৌত করার ন্যায় হাজ্জ গুনাহকে ধুয়ে মুছে দেয় । (জাল হাদীস)
২৭২. বাইতুল্লার সম্মান প্রদর্শন হলো তাওয়াফ করা। (জাল হাদীস)
২৭৩. কুরবানী দানকারী ব্যক্তির জন্য কুরবানীর জন্তুর প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি সওয়াব রয়েছে। (জাল হাদীস)
২৭৪. যে হাজ্জ করল অথচ আমার কবর যিয়ারত করল না সে যেনো আমার সাথে রুঢ় ব্যবহার করলো। (জাল হাদীস)
২৭৫. নারী জাতির অস্তিত্ব না থাকলে পুরুষরা জান্নাতবাসী হতো। (জাল হাদীস)
২৭৬. যে কোন শিশুকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা পর্যন্ত লালন-পালন করবে, আল্লাহ তার কোন হিসাব নিবেন না। (জাল হাদীস)
২৭৭. তোমরা বিবাহ কর; তালাক দিও না। কেননা তালাক দিলে আরশ কেঁপে উঠে। (জাল হাদীস)
২৭৮. সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া বাবার কর্তব্য। (জাল হাদীস)
২৭৯. তিন সন্তানের কারো একজনের নাম মুহাম্মাদ না রাখা হলে সেটা হবে চরম মুখতা । (জাল হাদীস)
২৮০. নবজাতক ছেলের ডানকানে আযান আর বাম কানে ইকামত দিলে প্রসূতির কোন ক্ষতির আশংকা থাকে না । (জাল হাদীস)
২৮১. তোমরা যখন কিছু লিখ তখন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখে সেটাকে উত্তম করে তোল; তাতে তোমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়ে যাবে । (জাল হাদীস)
২৮২. ‘ইলম’ দু প্রকার ও শারীরিক বিদ্যা ও শরয়ী বিদ্যা। (জাল হাদীস)
২৮৩. জান্নাতবাসীগণ জান্নাতেও আলেমদের মুখাপেক্ষী হবেন...। (জাল হাদীস)
২৮৪. এক ঘন্টা ইলম তলব করা একরাত ইবাদতের চেয়ে উত্তম। আর একদিন তো তিনমাস সিয়াম রাখার চেয়েও ভালো। (জাল হাদীস)
২৮৫. ছাত্র উস্তাদের কাছে বসতেই আল্লাহ তাআলা তার জন্যে ৭০টি রহমতের দরজা খুলে দেন। (জাল হাদীস)
২৮৬. আল্লাহ কোনো বান্দাকে হীন করতে ইচ্ছা করলে তার ইলম ও আদব তাকে রক্ষা করে । (জাল হাদীস)
২৮৭. আলেমের দরবারে হাজির হওয়া হাজার আবেদের সলাত আদায় অপেক্ষা উত্তম । (জাল হাদীস)
২৮৮. আমার উম্মতের আলেমগণ বনী ইসরাইলের নবীগণের মতো। (জাল হাদীস)
২৮৯. নবী (ﷺ) লেখকের সামনে বলেছেনঃ তোমরা কলম কানে রাখো। কেননা তাতে বিস্তৃত বস্তুর স্মরণ হয়। (জাল হাদীস)
২৯০. আমার উম্মতের জন্য এমন একটা সময় আসবে যে সময় ফকীহগণ একে অপরকে ঈর্ষা করবে এবং ভদ্রলোকদের মতোই একে অপরের বিপরীতে তৎপর থাকবে । (জাল হাদীস)
২৯১. আলেমদের অনুসরণ কর; কেননা তারা দুনিয়ার আলো, আখিরাতের চেরাগ । (জাল হাদীস)
২৯২. সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও জ্ঞান অন্বেষণ করো। (জাল হাদীস)
২৯৩. তোমার মতানুযায়ী ইজতিহাদ কর। কারণ, আল্লাহ যখন তোমার সঠিক রায় সম্পর্কে অবহিত হন তখন তিনি সত্য ও সঠিকতার জন্যে তোমার সাথে অনুকুল হোন। (জাল হাদীস)
২৯৪. আমার সাহাবীর এবং আমার আগে নবীগণের পক্ষ থেকে যারা খলীফারূপে পরিগণিত তাদের সম্পর্কে আমি কি তোমাদেরকে অবহিত করবো? তারা হলো : যারা আমার ও তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর ওয়াস্তে কুরআন ও হাদীসসমূহ হিফজ করেছেন। (জাল হাদীস)
২৯৫. যে কেউ ইলম ও ইবাদতের অন্বেষণে মগ্ন থেকে বয়োবদ্ধি অবদি এ অবস্থায় অবস্থান করে আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামত দিবসে ৭২ জন। সিদ্দীকের সওয়াব দান করবেন। (জাল হাদীস)
২৯৬. ইলম অন্বেষণ ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা মু'মিন ব্যক্তির চরিত্র মাধুর্য হতে পারে না । (জাল হাদীস)
২৯৭. দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর। (জাল হাদীস)
২৯৮. কুরআন ছাড়া রোগমুক্তি কামনা করলেও আল্লাহ তাকে মুক্তি দিবেন না। (জাল হাদীস)
২৯৯, যে সূরায়ে ‘ইয়াসিন’ শ্রবণ করবে তার জন্যে রয়েছে বিশ দিনার আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব। যে তিলাওয়াত করবে সে পাবে ২০টি হাজ্জ করার পরিমাণ সওয়াব। আর যে লিখে পান করবে তার উদর পূর্তি হবে সহস্র ‘ইয়াকীন’ (বিশ্বাস), সহস্র নূর, সহস্র বরকত, সহস্র রিযক এবং সব ঈর্ষা দূর করে দেয়া হবে । (জাল হাদীস)
৩০০. যে সূরায়ে দুখান রাতে তিলাওয়াত করবে তার আগামীতে উপার্জনক্ষম গুনাহ মাফ করে দিবেন। (জাল হাদীস)
৩০১. যে ব্যক্তি সলাতের ওযূসহ সূরায়ে ফাতিহা দিয়ে আরম্ভ করে একশ’ বার কুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ পড়বে আল্লাহ তাকে প্রতি অক্ষরে ১০টি নেকী দিবেন, ১০টি গুনাহ মাফ করে দিবেন, ১০টি মর্যাদা দান করবেন এবং জান্নাতে তার জন্যে একটি অট্টালিকা তৈরী করবেন । (জাল হাদীস)
৩০২. যে একশ’ বার কুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ পড়বে তার জন্যে দেড় হাজার সওয়াব লেখা হবে; তবে ঋণের গুনাহ মাফ হবে না । (জাল হাদীস)
৩০৩. যে কুরআন হিফজ করবে বাবা-মায়ের আযাব লাঘব করার অভিপ্রায়ে (তাই হবে) যদিও তার বাবা-মা কাফির হয় । (জাল হাদীস)
৩০৪. বান্দা কুরআন খতম করলে ৬০ হাজার ফিরিশতা তার জন্যে রহমত কামনা করেন। (জাল হাদীস)
৩০৫. যে সূরায়ে ওয়াকিয়াহ প্রতিরাতে তিলাওয়াত করবে দারিদ্র তাকে কভু স্পর্শ করবে না। আর যে প্রতিরাতে লা ওকৃছিমু বিইয়াওমিল কিয়ামাহ সূরা পাঠ করবে সে আল্লাহর সাথে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল চেহারাসমূহ সাক্ষাৎ করবে। (জাল হাদীস)
৩০৬. যে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে এবং যাফরান রংয়ের সাহায্যে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে সাতবার লিখে জিহবা দিয়ে চাটবে সে কখনো ভূলবেনা । (জাল হাদীস)
৩০৭. হে আলী! তোমার মাথা ব্যথা অনুভব করলে মাথায় হাত রেখে সূরায়ে হাশরের শেষাংশ পড়; সনদ দু'টির রাবীগণ অজ্ঞাত, অচেনা । প্রত্যেক বস্তুর নসব থাকে। আমার নসব হলো সূরায়ে ইখলাস। (জাল হাদীস)
৩০৮. গুনাহ করলে রিযক কমে না, নেক কাজে তা বাড়ে না। তবে দু’আ পরিত্যাগ করা গুনাহের কাজ। (জাল হাদীস)
৩০৯. কুরআনের দিকে চেয়ে থাকা ইবাদত, বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দৃষ্টি দেয়া ইবাদত, আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)- দেখাও ইবাদত। (জাল হাদীস)
৩১০. যে আল্লাহর যিকর বেশী পরিমাণে করে না, সে যেনো ঈমান থেকে মুক্ত হয়ে গেল । (জাল হাদীস)
৩১১. যখন তিনি কোন মজলিসে আসতেন এবং কিছু সময় অবস্থান করার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি ১০ থেকে ১৫ বার আসতাগফিরুল্লাহ পড়তেন। (জাল হাদীস)
৩১২. যে ব্যক্তি জুমুআর দিন ৮০ বার আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে তার ৮০ বৎসরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে । (জাল হাদীস)
৩১৩, আল্লাহর যিকর ও দরূদ পড়ে তোমাদের খাদ্য নরম করে খাও; খাদ্য সামনে রেখে ঘুমিও না। অন্যথায় তোমাদের হৃদয় শক্ত হয়ে যাবে। (জাল হাদীস)
৩১৪. প্রতিটি বস্তুর থাকে একটি হৃদয়। আর সূরায়ে ইয়াসীন হলো কুরআনের হৃদয় । যে একবার এ সূরা পড়ল সে যেনো ১০ বার কুরআন পাঠ করল। (জাল হাদীস)
৩১৫. এক ঘন্টা ফিকর (চিন্তা) করা ৬০ বৎসর ইবাদতের চেয়ে উত্তম। (জাল হাদীস)
৩১৬. যে মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে ‘কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করবে তার কবরে কোন বিপদ হবে না, কবর চাপা থেকে নিরাপদ থাকবে । কিয়ামত দিবসে ফিরিশতাগণ তাকে বহন করতঃ তাদের পাখা দিয়ে পুলসিরাত থেকে জান্নাতে পৌছে দিবেন। (জাল হাদীস)
৩১৭. যে কাজের সূচনায় আল্লাহর তারিফ এবং আমার উপর দুরূদ পাঠ করা হয় না। তা অসম্পূর্ণ থাকে অর্থাৎ সব ধরনের বরকত থেকে কাজটি বঞ্চিত হয় । (জাল হাদীস)
৩১৮. যে আপনার উপর দিনে রাতে ১শ’ বার দুরূদ পড়বে আমি (আল্লাহ) তার উপর ২ হাজার রহমত দান করবো, সহস্র প্রয়োজন পূরণ করবো, তন্মধ্যে সবচেয়ে সহজ প্রয়োজন হলো জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দেয়া। (জাল হাদীস)
৩১৯. যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে এসে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে আমি তা শুনি। আর দূর থেকে আমার উপর দুরূদ পড়লে তজ্জন্য একজন। ফিরিশতা মোতায়েন করা হয়, সে আমার কাছে সেই দুরূদ পৌঁছে দেয়। আমি যার জন্যে সাক্ষ্য কিংবা সুপারিশকারী হই তার ইহলোক ও পরলোকে এটাই যথেষ্ঠ । (জাল হাদীস)
৩২০. আমি সে সময়ের নবী যখন আদম, পানি, মাটি কিছুই ছিল না। আরো আছে- আরশের পার্শ্বে একটি নূর ছিল । নবী বললেন : হে জিব্রাঈল! আমি ছিলাম সে নূর । (জাল হাদীস)
৩২১. যখন আদম ভুল স্বীকার করলেন, তখন তিনি বললেন : ইয়া রব! আমি মুহাম্মদের ওসিলায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। (জাল হাদীস)
৩২২. নবী শবে মিরাজে ৯০ হাজার কালাম আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভ করেন। তন্মধ্যে ৩০ হাজার জাহেরী যা আলেমগণ জানেন; আর ৬০ হাজার বাতেনী সেগুলো সম্পর্কে আলেমগণ অবগত নন; তবে ঐগুলো আলী (রাদিয়াল্লাহু)-র জানা। (জাল হাদীস)
৩২৩. নবী সিদরাতুল মুনতাহায় (মিরাজ রজনীতে) পৌছে গেলে জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) থমকে দাঁড়িয়ে বললেন : আর এক কদম পরিমাণ অগ্রসর হলে আমি জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাব ।” (জাল হাদীস)
৩২৪. কথাটি যাকওয়ান কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, সূর্য ও চন্দ্র কিরণে রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর দেহের ছায়া কখনো দেখা যেতো না। (জাল হাদীস)
৩২৫. আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াকে বলেন : হে দুনিয়া! আমার ওলীদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করে যাও কিন্তু তাদের মধ্যে প্রবেশ করোনা যাতে তারা ফিতনায় পতিত না হয় । (জাল হাদীস)
৩২৬. আল্লাহর ওয়াস্তে ১ রাত সীমান্ত প্রহরা দেয়া, পরিবার-পরিজনে বেষ্টিত হয়ে ১০০০ বৎসর সিয়াম সলাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। ৩৬০ দিনে ১ বৎসর আর ১দিন ১০০০ বৎসরের সমান। (জাল হাদীস)
৩২৭. মুমিনের জন্য আল্লাহর হাদীয়া হলো : একজন ভিখারীকে তার দরজায় উপস্থিত করানোর নামান্তার । (জাল হাদীস)
৩২৮. যে ক্রোধ দমন করে আল্লাহ তার আযাব দূর করে দেন, যে তার মুখ সামলাতে সক্ষম হয়েছে আল্লাহ তার দোষ গোপন করেছেন; আর যে আল্লাহর কাছে ওজর করেছে তার ওজর আল্লাহ কবুল করেছেন। (জাল হাদীস)
৩২৯. তোমাদের চেহারা কমনীয় এবং চোখ হরিণী করা উচিত। কেননা আল্লাহ কমনীয় চেহারাকে আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে লজ্জা পায় । (জাল হাদীস)
৩৩০. পীর মাশায়েখদের ইজ্জত কর। কেননা, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আল্লাহর মহত্ব প্রকাশ করারই নামান্তর। (জাল হাদীস)
৩৩১. কম হেসে ও কম খেয়ে তোমাদের অন্তকরণ জীবন্ত রাখ । কৃচ্ছ সাধনায় হৃদয়কে পবিত্র কর; তাতে মন হবে উন্নত, প্রাণবন্ত। (জাল হাদীস)
৩৩২. ক্ষুধা-পিপাসার মাধ্যমে তোমরা নফসের সাথে জিহাদ কর। এর প্রতিদান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত মুজাহিদের মতই। ক্ষুধা ও তৃষ্ণার চেয়ে বেশী আর কোন আমল আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নয় । (জাল হাদীস)
৩৩৩. মুমিনের উচ্ছিষ্ট শিফা । (জাল হাদীস)
৩৩৪. হে লোক সকল! কুরবানী কর এবং কুরবানীর রক্তের মূল্যায়ন কর। কেননা রক্ত মাটিতে পতিত হতেই তা আল্লাহর দুর্গে পতিত হয়ে যায় । (জাল হাদীস)
৩৩৫. দেশপ্রেম ঈমানের অংগ । (জাল হাদীস)
৩৩৬. প্রতিটি জটিলতাই হারাম; আর দ্বীনের জন্যে কোনো জটিলতা নেই। (জাল হাদীস)
৩৩৭. পায়খানা, প্রস্রাবখানা, গোসলখানাকে তোমরা ভুতপ্রেতের প্রভাবিত জায়গা হিসেবে গ্রহণ কর; কেননা জ্বিনেরা সেখানে তোমাদের শিশুদের নিয়ে খেলা করে । (জাল হাদীস)
৩৩৮. ঋণ দ্বীন ও ইজ্জত কমিয়ে দেয় । (জাল হাদীস)
৩৩৯. যে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ তৈরী করে কিয়ামত দিবসে প্রাসাদটি তাঁর কাঁধে বহন করতে তাকে বাধ্য করা হবে । (জাল হাদীস)
৩৪০. প্রতি ৪০ জনে একজন আল্লাহর ওলী থাকেন। (জাল হাদীস)
৩৪১. মুসলিমদের যে শিশু ১২ বৎসর পদার্পন করার আগে মারা গিয়েছে সে আরশের নীচে কিয়ামত দিবসে শাফায়াতকারী ও শাফায়াত অর্জনকারী রূপে গণ্য হবে। তের বৎসর পেঁৗছলে তার নিজের হিসাব নিজেই দিবে । (জাল হাদীস)
৩৪২. আমার সাহাবাগণ তারকার ন্যায়, যারাই তাদের অনুবর্তী হবে তারাই হিদায়াত প্রাপ্ত হবে । (জাল হাদীস)
৩৪৩. রসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুবরণ করেননি। এমনকি তিনি (এখনো) পড়েন ও লেখেন । (জাল হাদীস)
৩৪৪. আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ জন এমন লোক সব সময় থাকবে যাদের ওসীলায় জমিন টিকে থাকবে, বৃষ্টি হবে এবং সাহায্য লাভ করবে । (জাল হাদীস)
৩৪৫. আরাফাতের দিন সর্বোত্তম দিন। আর যদি এই দিবসটি জুমুআর দিন হয় তাহলে দিনটি ৭০টি হাজ্জের চেয়ে উত্তম। (জাল হাদীস)
৩৪৬. (রসূল) তিনি আলোতে যেমন দেখতেন, অন্ধকারেও অনুরূপ দেখতেন। (জাল হাদীস)
৩৪৭. আমি নবীগণের শেষ, আর হে আলী! তুমি হচ্ছো ওলীগণের শেষ । (জাল হাদীস)
৩৪৮. ওযূ করার সময় ঘাড় মাসেহ করতে হয় । (জাল হাদীস)
৩৪৯. হাটুর উপর কাপড় উঠলে ওযূ ভেঙ্গে যায় । (জাল হাদীস)
৩৫০. অযু অবস্থায় বাচ্চাকে স্তন পান করালে অযু নষ্ট হয়ে যায় । (জাল হাদীস)
৩৫১. রসূল (ﷺ) এর পথে এক বুড়ি কাঁটা বিছিয়ে রাখতো ... একদিন বুড়ির জ্বর হলো....রসূল (ﷺ) দেখতে গেলেন....। (জাল হাদীস)
৩৫২. রাসুল (ﷺ) ঈদগাহে যাচ্ছিলেন পথে এক বাচ্চাকে কান্নারত অবস্থায় পেলেন এবং তাকে বাড়ি নিয়ে মা আয়শার নিকট দিলেন এবং মা আয়শা তাকে গোসল দিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দিলেন....। (জাল হাদীস)
৩৫৩. গাছের তলায় একদিন একটি হরিণ বাঁধা ছিল, হরীণ রসূল (ﷺ) কে বললেন আমাকে কিছুক্ষণের জন্য ছেড়ে দিন আমি আমার শিশুদেরকে দুধ পান করিয়ে আবার চলে আসবো....। (জাল হাদীস)
৩৫৪. হোসাইন (রাদিআল্লাহু আনহু) যেদিন শহীদ হন সেদিন “মা ফাতিমা কান্দিয়া কয় আজ বুঝি আমার হোসাইন কারবালাতে শহীদ হয়.....”। (জাল হাদীস)
৩৫৫. যে ব্যক্তি নিজেকে চিনল সে আল্লাহকে চিনল । (জাল হাদীস)
৩৫৬. আমি আরব, কুরআন আরবী, জান্নাতের ভাষা আরবী। (জাল হাদীস)
৩৫৭. জান্নাতের ভাষা আরবী, জাহান্নামের ভাষা ফার্সি। (জাল হাদীস)
৩৫৮. মাগরিবের পর ৬ রাকআত আওয়াবীনের সলাত আদায় করতে হবে। (জাল হাদীস)
৩৫৯. মহিলাদের বুককে উড়র সাথে লাগিয়ে আটোসাটো হয়ে সিজদা করতে হবে । (জাল হাদীস)
৩৬০. পনেরই শাবানে (সবেবরাতে) সিয়াম পালন করতে হবে । (জাল হাদীস)
৩৬১. কুরআন ৩০ পারা নয় ৯০ পারা । (জাল হাদীস)
৩৬২. আলেমদের মতবিরোধ রহমত স্বরূপ । (জাল হাদীস)
৩৬৩. মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম। (জাল হাদীস)
৩৬৪. একজন হাফিয ১০ জন ব্যক্তিকে জান্নাতে নিতে পারবে । (জাল হাদীস)
৩৬৫. আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, শহর ছাড়া জুম’আ ও তাশরীক নেই। (জাল হাদীস)
নং | নাম।
বুখারী
জন্ম (শহর)
বুখারা (উজবেকিস্তান)
২| মুসলিম
৩ | আবু দাউদ
হিজরী/খৃঃ মৃত্যু (শহর) | হিজরী/খৃঃ ১৯৪/৮১০|
খারতাংক |২৫৬/৮৭০ (সমরকান্দ,
ইরান) ২০৪/৮২০ | নিশাপুর | ২৬১/৮৭৫
(ইরান) | ২০২/৮১৭ বসরা। ২৭৫/৮৮৮
(ইরাক)। ২১৫/৮৩০
৩০৩/৯১৫ (সৌদি আরব) ২০৯/৮২৮
তিরমি | ২৭৯/৮৯৬
(ইরান) ২০৯/৮২৮|| কাজভিন ২৭৩/৮৯০
(ইরান)
| ৪ | নাসাঈ
নিশাপুর। (খোরাসান, ইরান)
শিস্তান। (ইরান)
নাসা। (খোরাসান, ইরান)
তিরমিয (ইরান) কাজভিন (ইরান)
মক্কা।
৫ | তিরমিযী
ইবনে
মাজাহ
মোর্ট সংগৃহীত হাদীস এবং সেখান থেকে পরিত্যাগ ও গ্রহণ
নাম
নং |
||
পরিত্যাগ
গ্রহণ।
|
|
|
| বুখারী
মুসলিম || আবু দাউদ | নাসাঈ | তিরমিযী | ইবনে মাজাহ।
মোট সংগৃহীত | হাদীস ৬০০,০০০ ৩০০,০০০ ৩০০,০০০ ৫০০,০০০ ৪০০,০০০ ২০০,০০০ ২,৩০০,০০০
৯৯.৫৪ ৯৮.৫৫ ৯৮.৯৬ ৯৯.০৪
| |
২,৭৬২ ৪,৩৪৮ ৩,১১৫ ৪,৮০০ ৪,০০০ ৪,৩২১ ২৩,৩৪৬ (১.০২%)
৯৯.০০
৫|
৯৭.৮৩ ৯৮.৯৮%
মোট
চার খলিফার খিলাফত কাল
নাম (
খলিফা।
খিলাফতের কাল।
| (খ্রীঃ) (হিজরী/খৃঃ) | আবু বকর আস-সিদ্দিক (রা.) | ৬৩২ - ৬৩৪। ১৩/৬৩৪ ২য় | ওমর ইবন আল-খাত্তাব (রা.)। || ৬৩৪ - ৬৪৪ ২৩/৬৪৪
৩য়। উসমান ইবন আফফান (রা.) | ৬৪৪ - ৬৫৬। ৩৫/৬৫৬ | ৪র্থ | আলি ইবন আবি তালিব (রা.) | ৬৫৬ - ৬৬১ | ৪০/৬৬১
সাহাবীদের (রা.) বর্ণনাকৃত হাদীসের সংখ্যা
সাহাবা (রা.) | | বর্ণনাকৃত হাদীসের
সংখ্যা। আবু হুরাইরা (রা.)।
৫,৩৭৪ আয়িশা সিদ্দিকা (রা.)।
২,২১০ আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.)
১,৬৬০ আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রা.)।
১,৬৩০ যাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রা.)
১,৫৪০ আনাস ইবন মালিক (রা.)
১,২৮৬ আবু সাঈদ খুদরী (রা.)
১,১৭০ আব্দুল্লাহ ইবন মাসুদ (রা.)।
৮৪৮ আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রা.) || ৭০০
| মোট = | ১৬,৪১৮
বুখারী
জন্ম (শহর)
বুখারা (উজবেকিস্তান)
২| মুসলিম
৩ | আবু দাউদ
হিজরী/খৃঃ মৃত্যু (শহর) | হিজরী/খৃঃ ১৯৪/৮১০|
খারতাংক |২৫৬/৮৭০ (সমরকান্দ,
ইরান) ২০৪/৮২০ | নিশাপুর | ২৬১/৮৭৫
(ইরান) | ২০২/৮১৭ বসরা। ২৭৫/৮৮৮
(ইরাক)। ২১৫/৮৩০
৩০৩/৯১৫ (সৌদি আরব) ২০৯/৮২৮
তিরমি | ২৭৯/৮৯৬
(ইরান) ২০৯/৮২৮|| কাজভিন ২৭৩/৮৯০
(ইরান)
| ৪ | নাসাঈ
নিশাপুর। (খোরাসান, ইরান)
শিস্তান। (ইরান)
নাসা। (খোরাসান, ইরান)
তিরমিয (ইরান) কাজভিন (ইরান)
মক্কা।
৫ | তিরমিযী
ইবনে
মাজাহ
মোর্ট সংগৃহীত হাদীস এবং সেখান থেকে পরিত্যাগ ও গ্রহণ
নাম
নং |
||
পরিত্যাগ
গ্রহণ।
|
|
|
| বুখারী
মুসলিম || আবু দাউদ | নাসাঈ | তিরমিযী | ইবনে মাজাহ।
মোট সংগৃহীত | হাদীস ৬০০,০০০ ৩০০,০০০ ৩০০,০০০ ৫০০,০০০ ৪০০,০০০ ২০০,০০০ ২,৩০০,০০০
৯৯.৫৪ ৯৮.৫৫ ৯৮.৯৬ ৯৯.০৪
| |
২,৭৬২ ৪,৩৪৮ ৩,১১৫ ৪,৮০০ ৪,০০০ ৪,৩২১ ২৩,৩৪৬ (১.০২%)
৯৯.০০
৫|
৯৭.৮৩ ৯৮.৯৮%
মোট
চার খলিফার খিলাফত কাল
নাম (
খলিফা।
খিলাফতের কাল।
| (খ্রীঃ) (হিজরী/খৃঃ) | আবু বকর আস-সিদ্দিক (রা.) | ৬৩২ - ৬৩৪। ১৩/৬৩৪ ২য় | ওমর ইবন আল-খাত্তাব (রা.)। || ৬৩৪ - ৬৪৪ ২৩/৬৪৪
৩য়। উসমান ইবন আফফান (রা.) | ৬৪৪ - ৬৫৬। ৩৫/৬৫৬ | ৪র্থ | আলি ইবন আবি তালিব (রা.) | ৬৫৬ - ৬৬১ | ৪০/৬৬১
সাহাবীদের (রা.) বর্ণনাকৃত হাদীসের সংখ্যা
সাহাবা (রা.) | | বর্ণনাকৃত হাদীসের
সংখ্যা। আবু হুরাইরা (রা.)।
৫,৩৭৪ আয়িশা সিদ্দিকা (রা.)।
২,২১০ আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.)
১,৬৬০ আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রা.)।
১,৬৩০ যাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রা.)
১,৫৪০ আনাস ইবন মালিক (রা.)
১,২৮৬ আবু সাঈদ খুদরী (রা.)
১,১৭০ আব্দুল্লাহ ইবন মাসুদ (রা.)।
৮৪৮ আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রা.) || ৭০০
| মোট = | ১৬,৪১৮
অতি অল্প বয়সেই তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল, এতে তার মা অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করেন, ফলে আল্লাহ তাঁর দু’আ কবুল করেন। হঠাৎ এক রাতে স্বপ্ন দেখলেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এসে তার মাকে বলছেন, তোমার শিশুপুত্রের চক্ষু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। সত্যিই তিনি সকালে দেখলেন ইমাম বুখারী দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন।
অতি অল্প বয়সেই ইমাম বুখারী (রহ.) পবিত্র কুরআন মাজীদ মুখস্থ করেন। দশ বছর বয়সে তাঁর মাঝে হাদীস মুখস্থ করার প্রবল স্পৃহা দেখা দেয়। ইমাম বুখারী (রহ.)-এর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। এ সম্পর্কে অনেক ঘটনা পাওয়া যায় । দারসে অপরাপর ছাত্র শিক্ষকের মুখ থেকে হাদীস শোনার পর লিখে নিতেন। কিন্তু ইমাম বুখারী (রহ.) লিখতেন না। অন্য ছাত্ররা বলতো আপনি খাতা কলম ছাড়া বসে থাকেন কেন? এতে কি কোন লাভ আছে? প্রথমে তিনি কোন উত্তর দেননি। অতঃপর যখন অন্য ছাত্ররা এ ব্যাপারে খুব বেশী বলতে লাগল, তখন ইমাম বুখারী বলে উঠেন যে ঠিক আছে। আপনাদের সমস্ত লিখিত হাদীস নিয়ে আসুন। তাঁরা হাদীসসমূহ নিয়ে আসলেন। তিনি পর্যায়ক্রমে তাঁদের সেই হাদীসসমূহ মুখস্থ শুনিয়ে দিলেন। ইমাম বুখারী (রহ.)-এর স্মরণশক্তি সেদিন সকলকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছিল।
ইমাম বুখারী (রহ.) হাদীস শিক্ষার জন্য তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের বিখ্যাত জ্ঞানকেন্দ্র কুফা, বসরাহ, বাগদাদ, মদীনা ও অন্যান্য নগরী সফর করেন। তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। হাদীস শাস্ত্রে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হলো সহীহুল বুখারী । ইমাম বুখারী (রহ.) শুধু হাদীসেরই হাফিয ছিলেন না। রবং তিনি ফকীহ ও মুজতাহিদের সাথে সাথে (হাদীসের এটি বর্ণনার ক্ষেত্রে) এক মর্যাদাকর স্থানে। অধিষ্ঠিত ছিলেন। রিজালশাস্ত্রে তাঁকে ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম তিরমিযী বলেন, “ইরাক ও খোরাসানে হাদীসের ত্রুটি বর্ণনা, ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান এবং হাদীসের সনদ সম্পর্কে পরিচিত ব্যক্তি মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল এর মত কাউকে দেখিনি।” অনুরূপভাবে আবু মুসআব তাঁর সম্পর্কে বলেন, “আমাদের নিকট মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল দ্বীনের ব্যাপারে সূক্ষ্ম জ্ঞানের অধিকারী এবং উল্লেখযোগ্য ফকীহ ছিলেন ইমাম আহমাদ বিন হালের চেয়ে ।”
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম তিরমিযী বলেন, “ইরাক ও খোরাসানে হাদীসের ত্রুটি বর্ণনা, ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান এবং হাদীসের সনদ সম্পর্কে পরিচিত ব্যক্তি মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল এর মত কাউকে দেখিনি।” অনুরূপভাবে আবু মুসআব তাঁর সম্পর্কে বলেন, “আমাদের নিকট মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল দ্বীনের ব্যাপারে সূক্ষ্ম জ্ঞানের অধিকারী এবং উল্লেখযোগ্য ফকীহ ছিলেন ইমাম আহমাদ বিন হালের চেয়ে ।”
আলমু'জামুল মুফাহরাসের হিসাব অনুযায়ী সহীহুল বুখারীতে সর্বমোট ৭৫৬৩টি হাদীস রয়েছে। আর তাকরার বা পুনরাবৃত্তি বাদ দিয়ে ৪০০০ হাদীস আছে। এতে মোট ৯৮টি কিতাব বা অধ্যায় রয়েছে। ৬ লক্ষ হাদীস হতে যাচাই বাছাই করে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গ্রন্থখানি সংকলন করেন। সকল মুহাদ্দিসের সর্বসম্মত মতে সমস্ত হাদীস গ্রন্থের মধ্য হতে এর মর্যাদা সবার উর্দ্ধে এবং কুরআন মাজীদের পর সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ গ্রন্থ। যেমন বলা হয়ে থাকে। কিতাবুল্লাহ তথা কুরআনের পর আসমানের নীচে সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে সহীহ বুখারী । আরবী গ্রামার অনুযায়ী শব্দটি আসলে সহীহুল বুখারী অর্থ সহীহ বুখারীর। কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু সহীহ বুখারী শব্দটি বেশী প্রচলিত তাই আমরাও এটিই রেখেছি। ইমাম বুখারী (রহ.) স্বীয় কিতাব সহীহুল বুখারী সংকলনের ব্যাপারে দু’টি শর্ত আরোপ করেছেন ।
১. বর্ণনাকারী ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য হওয়া।
২. ওস্তাদ ও ছাত্রের মাঝে সাক্ষাৎ প্রমাণিত হওয়া।
১. বর্ণনাকারী ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য হওয়া।
২. ওস্তাদ ও ছাত্রের মাঝে সাক্ষাৎ প্রমাণিত হওয়া।
এর মধ্যে তিনটি কারণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তা হলো :
১. ইমাম বুখারী (রহ.)-এর ওস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই একদা তাঁর ছাত্রদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন যে, তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ শুধুমাত্র সহীহ হাদীসসমূহ একত্র করে একটি গ্রন্থ রচনা করতে তাহলে খুব ভালো হতো। এ থেকেই তাঁর মাঝে এ গ্রন্থ রচনার প্রেরণা জাগে।
২. কেউ কেউ বলেন : ইমাম বুখারী (রহ.) একবার স্বপ্নে দেখলেন, রসূল (ﷺ)-এর সহীহ হাদীসমূহ যঈফ হাদীস থেকে আলাদা করা হবে। তারপর থেকে ইমাম বুখারী (রহ.) গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেন এবং দীর্ঘ ১৬ বছরে তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ করেন।
৩. সহীহুল বুখারী সংকলনের পূর্বে সহীহ ও যঈফ হাদীসগুলো আলাদা করে কোন গ্রন্থ রচিত হয়নি। হাদীসের গ্রন্থগুলোতে উভয় প্রকারের হাদীসই লিপিবদ্ধ ছিল। তাই মুসলিম সমাজে কেবলমাত্র সহীহ হাদীস সম্বলিত একটি গ্রন্থের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি এ গ্রন্থখানি রচনা করেন।
১. ইমাম বুখারী (রহ.)-এর ওস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই একদা তাঁর ছাত্রদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন যে, তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ শুধুমাত্র সহীহ হাদীসসমূহ একত্র করে একটি গ্রন্থ রচনা করতে তাহলে খুব ভালো হতো। এ থেকেই তাঁর মাঝে এ গ্রন্থ রচনার প্রেরণা জাগে।
২. কেউ কেউ বলেন : ইমাম বুখারী (রহ.) একবার স্বপ্নে দেখলেন, রসূল (ﷺ)-এর সহীহ হাদীসমূহ যঈফ হাদীস থেকে আলাদা করা হবে। তারপর থেকে ইমাম বুখারী (রহ.) গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেন এবং দীর্ঘ ১৬ বছরে তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ করেন।
৩. সহীহুল বুখারী সংকলনের পূর্বে সহীহ ও যঈফ হাদীসগুলো আলাদা করে কোন গ্রন্থ রচিত হয়নি। হাদীসের গ্রন্থগুলোতে উভয় প্রকারের হাদীসই লিপিবদ্ধ ছিল। তাই মুসলিম সমাজে কেবলমাত্র সহীহ হাদীস সম্বলিত একটি গ্রন্থের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি এ গ্রন্থখানি রচনা করেন।
১. জামেউস সগীর
২. জুযউর রফইল ইয়াদাইন
৩. যুযউল কিরাআত
৪. আদাবুল মুফরাদ
৫. তারীখুল কাবীর
৬. তারীখুস সগীর
৭. তারীখুল আওসাত
৮. বিররুল ওয়ালিদাঈর
৯. কিতাবুল ঈলাল
১০. কিতাবুয যুআফা।।
মৃত্যু ও হাদীসের জগতে অন্যতম দিকপাল জীবনের শেষ প্রান্তে সীমাহীন জ্বালা যন্ত্রণা, দুঃখ-বেদনার মধ্য দিয়ে খারতাঙ্গ পল্লীতে ২৫৬ হিজরীর ১লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর দুনিয়া হতে চির বিদায় গ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
২. জুযউর রফইল ইয়াদাইন
৩. যুযউল কিরাআত
৪. আদাবুল মুফরাদ
৫. তারীখুল কাবীর
৬. তারীখুস সগীর
৭. তারীখুল আওসাত
৮. বিররুল ওয়ালিদাঈর
৯. কিতাবুল ঈলাল
১০. কিতাবুয যুআফা।।
মৃত্যু ও হাদীসের জগতে অন্যতম দিকপাল জীবনের শেষ প্রান্তে সীমাহীন জ্বালা যন্ত্রণা, দুঃখ-বেদনার মধ্য দিয়ে খারতাঙ্গ পল্লীতে ২৫৬ হিজরীর ১লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর দুনিয়া হতে চির বিদায় গ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
যাঁরা হাদীস শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন, হাদীস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যারা শত শত মাইল দুর্গম পথ পায়ে হেটে গমন করেছিলেন, নির্ভুল হাদীসসমূহকে কষ্টিপাথরে যাচাই-বাছাই করে গ্রন্থাকারে একত্র করার মত অসাধ্য কাজ যাঁরা সাধন করেছিলেন, যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার বিনিময়ে মুসলিম জাতি রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নির্ভুল হাদীসসমূহ গ্রন্থাকারে পেয়ে সত্যের সন্ধান লাভ করতে পেরেছে ইমাম মুসলিম (রহ.) তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর পূর্ণ নাম মুসলিম বিন আল-হাজ্জাজ আল কুশাইরী আন্ নীসাপুরী। তাঁর উপনাম আবুল হুসায়ন এবং উপাধি ছিল আসাকিরুদ্দীন।
আরবের বিখ্যাত গোত্র বানু কুশাইর বংশে খুরাসানের প্রসিদ্ধ শহর নীসাপূরে ২০০ বা ২০৪ বা ২০৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের সঠিক সাল সম্পর্কে বিভিন্ন মত পাওয়া যায় । তবে ঐতিহাসিকগণের নিরীক্ষণে প্রামাণিত হয় যে, তিনি ২০৬ হিজরী সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যেদিন জন্মগ্রহণ করেন সেদিনই ইমাম শাফিঈ (রহ.) মৃত্যুবরণ করেন।
ইমাম মুসলিম (রহ.) স্বীয় পিতা-মাতার তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন এবং উত্তম শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল শাইখ আল-হাজ্জাজ। ইমাম মুসলিম ছোট থেকেই তাক্বওয়া, পরহেযগারী ও নির্মল চরিত্রের অধিকারী হন। জীবনে তিনি কখনও কারও গীবাত করেননি। নীসাপূরেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অসাধারণ মেধা ও ধী-শক্তির অধিকারী হওয়ায় মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সেই তিনি তৎকালীন হাদীস বিশারদগণের নিকট ইলমে হাদীস অধ্যয়ন শুরু করেন। তাদের মধ্যে ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া আত তামীমী, আল কানবী মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া নিসাপূরী, আহমাদ বিন ইউনুস, ইসমাঈল বিন আবু উয়াইস প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অল্পদিনেই ইমাম মুসলিম (রহ.) হাদীস শাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করে ইমামদের পর্যায়ে উন্নীত হন!
ইমাম মুসলিম (রহ.) ইলমে হাদীস শিক্ষা করার উদ্দেশে তৎকালীন মুসলিম জাহানের প্রায় সকল কেন্দ্রেই গমন করেছেন। হিজায, সিরিয়া, মিসর, ইয়ামেন, বাগদাদ প্রভৃতি স্থানে শহরে উপস্থিত হয়ে সে স্থানে অবস্থানকারী প্রসিদ্ধ ‘ইলমে হাদীসের উস্তাদ ও মুহাদ্দিসগণের নিকট হতে হাদীস সংগ্রহ করেছেন। ইলমে হাদীসের উপর বিশেষ দক্ষতা অর্জনের পর তিনি শিক্ষা দানের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর নিকট হতে অসংখ্য শিস্য হাদীস শিক্ষা লাভ করেছেন। অধিকন্তু সে যুগের বড় বড় মুহাদ্দিসগণ তাঁর নিকট হতে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
ইমাম তিরমিযী (রহ.)-ও তাঁর নিকট হতে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর শ্রেষ্ঠ অবদান হল তার সংকলিত সহীহ মুসলিম। তিনি বিভিন্ন মুসলিম জ্ঞান কেন্দ্র সফর করে সুদীর্ঘ পনের বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে অবিশ্রান্ত সাধনা ও গবেষণার মাধ্যমে চার লক্ষ হাদীস সংকলন করেন এবং সেগুলো হতে পুনরাবৃত্তি বাদ দিয়ে তিন লক্ষ হাদীস সংকলন করেছেন(তাজকিরাতুল হুফফাজ ২/৫৮৯)। আবার এ তিন লক্ষ হাদীস হতে যাচাইবাছাই করে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য পুনঃ পুনঃ উদ্ধৃত হাদীসসহ মোট বার হাজার হাদীস সহীহ মুসলিমে অন্তর্ভুক্ত করেন। আর পুনঃ পুনঃ উল্লিখিত হাদীসসমূহ বাদে প্রায় চার হাজার হাদীস সহীহ মুসলিমে রয়েছে- (তাদরীব আর রাবী ৩০)।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর হাদীসের উপর সংকলিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে সহীহাইন বা বুখারী ও মুসলিম হচ্ছে পূর্ণমাত্রায় উত্তীর্ণ । বিশুদ্ধতার দিক দিয়ে পবিত্র কুরআনের পরই এ হাদীসগ্রন্থদ্বয়ের স্থান। আর মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামী শারী'আতের বিশেষজ্ঞগণের মধ্যে এ বিষয়ে কোন মতবিরোধ নেই যে, হাদীস গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে ইমাম বুখারী (রহ.) সংকলিত সহীহুল বুখারী। আর এরপরই সহীহ মুসলিমের স্থান। তবে কেউ কেউ আবার মুসলিমকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। কেননা, ইমাম মুসলিম কোন বিষয়ের উপর বর্ণিত সকল মতন যা বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে একই স্থানে একত্রিত করে লিপিবদ্ধ করেছেন। তাদেরকে বিভিন্ন অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করেননি। হাদীসের শিরোনাম খণ্ড খণ্ডভাবে লিখেননি যা সহীহুল বুখারীতে করা হয়েছে। হাদীসের শব্দ হুবহু রেখেছেন সামঞ্জস্য রেখে বর্ণনা করেননি।
প্রত্যেক রাবী কর্তৃক বর্ণিত শব্দ স্বতস্ত্রভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদীসের সাথে সাহাবাগণের কথা, তাবিঈন এবং অন্যদের অধ্যায় ও শিরোনামেও মিশ্রণ করেননি। সহীহ মুসলিম ও সহীহুল বুখারীর মধ্যে কোনটির অগ্রাধিকার বেশি বা নির্ভরযোগ্য এ বিষয়ের মতভেদের ক্ষেত্রে বলা যায়, কোন কোন দিক দিয়ে সহীহ মুসলিমের স্থান উধের্ব। যেমন বিশুদ্ধতার দিক দিয়ে বুখারী উত্তম এবং সাজানো দিক দিয়ে সহীহ মুসলিম অগ্রাধিকার পাবার যোগ্য। তবে সার্বিক বিচারে সহীহ বুখারীর পর সহীহ মুসলিম-এর স্থান ।
ইমাম মুসলিম (রহ.) শুধুমাত্র নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিবেচনার উপর ভিত্তি করে কোন হাদীসকে এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেননি বরং প্রত্যেকটি হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সমসাময়িক অন্যান্য হাদীস বিশারদগণের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন এবং তারা যে সকল হাদীস সম্পর্কে পূর্ণ একমত পোষণ করেছেন কেবল সে সব হাদীসগুলোকে তিনি সহীহ মুসলিমে সংকলন করেছেন- (শারহিন নাবাবী ১/১৭৪)।
এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন, কেবলমাত্র আমার বিবেচনায় সহীহ হাদীসসমূহই আমি এ কিতাবে সন্নিবেশিত করিনি, বরং তার সংকলিত হাদীস গ্রন্থে বিশুদ্ধতা সম্পর্কে দাবী করেছেন পৃথিবীর মুহাদ্দিসগণ যদি দু’শত বৎসর পর্যন্ত হাদীস লিপিবদ্ধ করতে থাকেন, তথাপি তাদেরকে অবশ্যই এ সনদযুক্ত বিশুদ্ধ কিতাবের উপর নির্ভর করতে হবে । তার এ দাবী মিথ্যা নয়; বরং এক বাস্তব সত্যরূপেই পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে। ইতিহাসও এর যথার্থতা প্রমাণিত করেছে যে, আজ প্রায় এগারশত বছরের অধিককাল। অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সমপর্যায়ের গ্রন্থ রচিত হয়নি। আল্লাহ তা'আলা ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর সহীহ মুসলিম-কে ককূল করেছেন। এর ফলশ্রুতিতেই আজ কেন অদূর ভবিষ্যতেও এর সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধতা বিশ্বমানবকে বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন আলো দান করবে। ইমাম মুসলিম (রহ.) মৃত্যু সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ এক কৌতুহলী ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
একবার জনৈক ব্যক্তি ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর নিকট হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। উক্ত হাদীস সম্পর্কে ইমাম মুসলিমের তাৎক্ষণিক কোন ধারণা ছিল না। এজন্য তিনি কোন উত্তর না দিয়ে নিজ গৃহে ফিরে আসেন এবং স্বীয় পাণ্ডুলিপিসমূহ অনুসন্ধান করতে থাকেন। এ সময়ে তার নিকট খুরমা খেজুরের টুকরী রাখা ছিল। তিনি এতই মগ্ন ছিলেন যে, একটা করে খেজুর খাচ্ছিলেন আর খুঁজছিলেন। এভাবে খেজুরের ঝুড়ি খালি হয়ে যায় এবং তিনি হাদীসটিও খুঁজে পান। অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সে রোগেই ২৬১ হিজরী সালে ২৪ রজব রবিবার সন্ধ্যায় কমবেশী ৫৫ বছর বয়সে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন। নীসাপুরে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
আরবের বিখ্যাত গোত্র বানু কুশাইর বংশে খুরাসানের প্রসিদ্ধ শহর নীসাপূরে ২০০ বা ২০৪ বা ২০৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের সঠিক সাল সম্পর্কে বিভিন্ন মত পাওয়া যায় । তবে ঐতিহাসিকগণের নিরীক্ষণে প্রামাণিত হয় যে, তিনি ২০৬ হিজরী সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যেদিন জন্মগ্রহণ করেন সেদিনই ইমাম শাফিঈ (রহ.) মৃত্যুবরণ করেন।
ইমাম মুসলিম (রহ.) স্বীয় পিতা-মাতার তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন এবং উত্তম শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল শাইখ আল-হাজ্জাজ। ইমাম মুসলিম ছোট থেকেই তাক্বওয়া, পরহেযগারী ও নির্মল চরিত্রের অধিকারী হন। জীবনে তিনি কখনও কারও গীবাত করেননি। নীসাপূরেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অসাধারণ মেধা ও ধী-শক্তির অধিকারী হওয়ায় মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সেই তিনি তৎকালীন হাদীস বিশারদগণের নিকট ইলমে হাদীস অধ্যয়ন শুরু করেন। তাদের মধ্যে ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া আত তামীমী, আল কানবী মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া নিসাপূরী, আহমাদ বিন ইউনুস, ইসমাঈল বিন আবু উয়াইস প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অল্পদিনেই ইমাম মুসলিম (রহ.) হাদীস শাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করে ইমামদের পর্যায়ে উন্নীত হন!
ইমাম মুসলিম (রহ.) ইলমে হাদীস শিক্ষা করার উদ্দেশে তৎকালীন মুসলিম জাহানের প্রায় সকল কেন্দ্রেই গমন করেছেন। হিজায, সিরিয়া, মিসর, ইয়ামেন, বাগদাদ প্রভৃতি স্থানে শহরে উপস্থিত হয়ে সে স্থানে অবস্থানকারী প্রসিদ্ধ ‘ইলমে হাদীসের উস্তাদ ও মুহাদ্দিসগণের নিকট হতে হাদীস সংগ্রহ করেছেন। ইলমে হাদীসের উপর বিশেষ দক্ষতা অর্জনের পর তিনি শিক্ষা দানের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর নিকট হতে অসংখ্য শিস্য হাদীস শিক্ষা লাভ করেছেন। অধিকন্তু সে যুগের বড় বড় মুহাদ্দিসগণ তাঁর নিকট হতে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
ইমাম তিরমিযী (রহ.)-ও তাঁর নিকট হতে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর শ্রেষ্ঠ অবদান হল তার সংকলিত সহীহ মুসলিম। তিনি বিভিন্ন মুসলিম জ্ঞান কেন্দ্র সফর করে সুদীর্ঘ পনের বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে অবিশ্রান্ত সাধনা ও গবেষণার মাধ্যমে চার লক্ষ হাদীস সংকলন করেন এবং সেগুলো হতে পুনরাবৃত্তি বাদ দিয়ে তিন লক্ষ হাদীস সংকলন করেছেন(তাজকিরাতুল হুফফাজ ২/৫৮৯)। আবার এ তিন লক্ষ হাদীস হতে যাচাইবাছাই করে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য পুনঃ পুনঃ উদ্ধৃত হাদীসসহ মোট বার হাজার হাদীস সহীহ মুসলিমে অন্তর্ভুক্ত করেন। আর পুনঃ পুনঃ উল্লিখিত হাদীসসমূহ বাদে প্রায় চার হাজার হাদীস সহীহ মুসলিমে রয়েছে- (তাদরীব আর রাবী ৩০)।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর হাদীসের উপর সংকলিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে সহীহাইন বা বুখারী ও মুসলিম হচ্ছে পূর্ণমাত্রায় উত্তীর্ণ । বিশুদ্ধতার দিক দিয়ে পবিত্র কুরআনের পরই এ হাদীসগ্রন্থদ্বয়ের স্থান। আর মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামী শারী'আতের বিশেষজ্ঞগণের মধ্যে এ বিষয়ে কোন মতবিরোধ নেই যে, হাদীস গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে ইমাম বুখারী (রহ.) সংকলিত সহীহুল বুখারী। আর এরপরই সহীহ মুসলিমের স্থান। তবে কেউ কেউ আবার মুসলিমকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। কেননা, ইমাম মুসলিম কোন বিষয়ের উপর বর্ণিত সকল মতন যা বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে একই স্থানে একত্রিত করে লিপিবদ্ধ করেছেন। তাদেরকে বিভিন্ন অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করেননি। হাদীসের শিরোনাম খণ্ড খণ্ডভাবে লিখেননি যা সহীহুল বুখারীতে করা হয়েছে। হাদীসের শব্দ হুবহু রেখেছেন সামঞ্জস্য রেখে বর্ণনা করেননি।
প্রত্যেক রাবী কর্তৃক বর্ণিত শব্দ স্বতস্ত্রভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদীসের সাথে সাহাবাগণের কথা, তাবিঈন এবং অন্যদের অধ্যায় ও শিরোনামেও মিশ্রণ করেননি। সহীহ মুসলিম ও সহীহুল বুখারীর মধ্যে কোনটির অগ্রাধিকার বেশি বা নির্ভরযোগ্য এ বিষয়ের মতভেদের ক্ষেত্রে বলা যায়, কোন কোন দিক দিয়ে সহীহ মুসলিমের স্থান উধের্ব। যেমন বিশুদ্ধতার দিক দিয়ে বুখারী উত্তম এবং সাজানো দিক দিয়ে সহীহ মুসলিম অগ্রাধিকার পাবার যোগ্য। তবে সার্বিক বিচারে সহীহ বুখারীর পর সহীহ মুসলিম-এর স্থান ।
ইমাম মুসলিম (রহ.) শুধুমাত্র নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিবেচনার উপর ভিত্তি করে কোন হাদীসকে এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেননি বরং প্রত্যেকটি হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সমসাময়িক অন্যান্য হাদীস বিশারদগণের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন এবং তারা যে সকল হাদীস সম্পর্কে পূর্ণ একমত পোষণ করেছেন কেবল সে সব হাদীসগুলোকে তিনি সহীহ মুসলিমে সংকলন করেছেন- (শারহিন নাবাবী ১/১৭৪)।
এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন, কেবলমাত্র আমার বিবেচনায় সহীহ হাদীসসমূহই আমি এ কিতাবে সন্নিবেশিত করিনি, বরং তার সংকলিত হাদীস গ্রন্থে বিশুদ্ধতা সম্পর্কে দাবী করেছেন পৃথিবীর মুহাদ্দিসগণ যদি দু’শত বৎসর পর্যন্ত হাদীস লিপিবদ্ধ করতে থাকেন, তথাপি তাদেরকে অবশ্যই এ সনদযুক্ত বিশুদ্ধ কিতাবের উপর নির্ভর করতে হবে । তার এ দাবী মিথ্যা নয়; বরং এক বাস্তব সত্যরূপেই পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে। ইতিহাসও এর যথার্থতা প্রমাণিত করেছে যে, আজ প্রায় এগারশত বছরের অধিককাল। অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সমপর্যায়ের গ্রন্থ রচিত হয়নি। আল্লাহ তা'আলা ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর সহীহ মুসলিম-কে ককূল করেছেন। এর ফলশ্রুতিতেই আজ কেন অদূর ভবিষ্যতেও এর সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধতা বিশ্বমানবকে বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন আলো দান করবে। ইমাম মুসলিম (রহ.) মৃত্যু সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ এক কৌতুহলী ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
একবার জনৈক ব্যক্তি ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর নিকট হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। উক্ত হাদীস সম্পর্কে ইমাম মুসলিমের তাৎক্ষণিক কোন ধারণা ছিল না। এজন্য তিনি কোন উত্তর না দিয়ে নিজ গৃহে ফিরে আসেন এবং স্বীয় পাণ্ডুলিপিসমূহ অনুসন্ধান করতে থাকেন। এ সময়ে তার নিকট খুরমা খেজুরের টুকরী রাখা ছিল। তিনি এতই মগ্ন ছিলেন যে, একটা করে খেজুর খাচ্ছিলেন আর খুঁজছিলেন। এভাবে খেজুরের ঝুড়ি খালি হয়ে যায় এবং তিনি হাদীসটিও খুঁজে পান। অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সে রোগেই ২৬১ হিজরী সালে ২৪ রজব রবিবার সন্ধ্যায় কমবেশী ৫৫ বছর বয়সে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন। নীসাপুরে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
তিনি সিরিয়ার দামেস্ক শহরের একটি স্কুলে পরাশোনা করেন। তিনি হাদীসের মুদ্রিত গ্রন্থাবলী ও দুর্লভ পান্ডুলিপি অধ্যয়নের জন্য দামেশকের সুপ্রাচীন যাহেরিয়া লাইব্রেরীতে প্রত্যেক দিন ৬/৮ ঘণ্টা নিয়মিত পড়াশুনা করতেন। কখনো কখনো ১২ ঘণ্টা অবধি চলত নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা। অনেক সময় লাইব্রেরীর সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধ্যয়নে কেটে যেত। কর্তৃপক্ষ তাঁর পড়ার জন্য লাইব্রেরীর একটি কক্ষ বরাদ্দ করেন এবং সার্বক্ষণিক উপকৃত হওয়ার জন্য লাইব্রেরীর একটি চাবি তাঁকে প্রদান করেন। তিনি ইবনু আবিদ দুনয়ার ‘যাম্বুল মালাহী’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপির বিনষ্ট হয়ে যাওয়া একটি পৃষ্ঠা উদ্ধারের জন্য উক্ত লাইব্রেরীর প্রায় ১০ হাজার পান্ডুলিপি অধ্যয়ন করেন। (মুহাম্মদ বাইয়ূমী, ইমাম আলবানী হায়াতুহু দাওয়াতুহু ওয়া জুহৃদুহু ফী খিদমাতিস সুন্নাহ ২৩-২৫ পৃঃ)।
আল্লামাহ রাশীদ রেজার “আল মানার” ম্যাগাজিনে ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত, গযালীর ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন গ্রন্থের জাল যঈফ হাদীস পড়ে তিনি সর্বপ্রথম হাদীস যাচাই-বাছাই-এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন এবং হাদীস গবেষণার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। আল্লাহ তাঁর জন্য কুরআন-হাদীসের ইলমের ভাণ্ডার খুলে দেন। হাজার বছরেরও বেশী কাল ধরে হাদীস শাস্ত্রের যে খিদমত হয়নি, তিনি বিংশ শতাব্দীতে তা করার তাওফীক লাভ করেন। সুনান আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাতুল মাছবীহ ও আল জা-মিউছ সাগীরসহ বহু হাদীসগ্রন্থ গবেষণা করে তার সহীহ হাদীস এবং যঈফ ও মাওযু হাদীস চিহ্নি করেছেন। এমনকি সুনান আরবাআহ (পূর্বোক্ত চারখানা কিতাব), আল-জামিউস সাগীর ও আল-আদাবুল মুফরাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থকে সহীহ যঈফ দু'ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন। সহীহ হাদীসগুলো আলাদা খণ্ডে এবং যঈফ হাদীসগুলো আলাদা খণ্ডে।
এছাড়াও সহীহ হাদীস এবং যঈফ মাওযু হাদীসের ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব সংকলনও রয়েছে। সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা এ যাবৎ তার ৮ খণ্ড বাজারে বেরিয়েছে এবং সিলসিলাতুল আহাদীসি যা’ঈফাহ অ-মাওযূআহ- যার এযাবৎ ৭ খণ্ড বাজারে বেরিয়েছে। বিভিন্ন ফিক্বহ ও গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী গ্রন্থের ভিতর উদ্ধৃত হাদীসগুলো তাহক্বীক (যাচাই) ও তাখরীজ (উদ্ধৃতি উৎস উল্লেখ) করেছেন। তাঁর লিখিত, সংকলিত, গবেষণা ও সম্পাদনাকৃত এবং মুদ্রিত অমুদ্রিত পুস্তক সংখ্যা ২১৫ খানা ।
শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ.) পৃথিবীর বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি এবং অর্গানাইজেশন থেকে বড় বড় পদের জন্য সাড়া পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি তা গ্রহন করেননি। তিনি ১৩৮১ হিঃ প্রথম দিক থেকে তিন বছর মদীনা ইউনিভার্সিটিতে রসূলুল্লাহ আs এর হাদীস শাস্ত্রের উপর অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন। সায়েন্স অফ হাদীস নিয়ে তিনি গবেষনা করেন এবং তার অসংখ্য ছাত্র তৈরী হয় ।
তাঁর ছাত্রদের মধ্যে বর্তমান দিনের অনেক বিশিষ্ট শায়খ রয়েছেন যেমনঃ শায়খ হামদী আবদুল মজিদ, শায়খ মুহাম্মদ ঈদের আব্বাসী, ড. ওমর সুলায়মান আল আসকার, শায়খ মুহাম্মদ ইবরাহীম শাকর, শায়খ ইবনে মুকবিল হাদী আলওয়াদী, শায়খ আলী খুন, শায়খ মুহাম্মদ বিন জামীল জায়নু, শায়খ আব্দুর রহমান আব্দুস সামাদের, শায়খ আলী হাসান আবদুল হামিদ আল হালাবী, শায়খ সেলিম আল হিলালী, শেখ আব্দুর রহমান আবদুল খালিক ।
এছাড়াও সহীহ হাদীস এবং যঈফ মাওযু হাদীসের ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব সংকলনও রয়েছে। সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা এ যাবৎ তার ৮ খণ্ড বাজারে বেরিয়েছে এবং সিলসিলাতুল আহাদীসি যা’ঈফাহ অ-মাওযূআহ- যার এযাবৎ ৭ খণ্ড বাজারে বেরিয়েছে। বিভিন্ন ফিক্বহ ও গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী গ্রন্থের ভিতর উদ্ধৃত হাদীসগুলো তাহক্বীক (যাচাই) ও তাখরীজ (উদ্ধৃতি উৎস উল্লেখ) করেছেন। তাঁর লিখিত, সংকলিত, গবেষণা ও সম্পাদনাকৃত এবং মুদ্রিত অমুদ্রিত পুস্তক সংখ্যা ২১৫ খানা ।
শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ.) পৃথিবীর বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি এবং অর্গানাইজেশন থেকে বড় বড় পদের জন্য সাড়া পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি তা গ্রহন করেননি। তিনি ১৩৮১ হিঃ প্রথম দিক থেকে তিন বছর মদীনা ইউনিভার্সিটিতে রসূলুল্লাহ আs এর হাদীস শাস্ত্রের উপর অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন। সায়েন্স অফ হাদীস নিয়ে তিনি গবেষনা করেন এবং তার অসংখ্য ছাত্র তৈরী হয় ।
তাঁর ছাত্রদের মধ্যে বর্তমান দিনের অনেক বিশিষ্ট শায়খ রয়েছেন যেমনঃ শায়খ হামদী আবদুল মজিদ, শায়খ মুহাম্মদ ঈদের আব্বাসী, ড. ওমর সুলায়মান আল আসকার, শায়খ মুহাম্মদ ইবরাহীম শাকর, শায়খ ইবনে মুকবিল হাদী আলওয়াদী, শায়খ আলী খুন, শায়খ মুহাম্মদ বিন জামীল জায়নু, শায়খ আব্দুর রহমান আব্দুস সামাদের, শায়খ আলী হাসান আবদুল হামিদ আল হালাবী, শায়খ সেলিম আল হিলালী, শেখ আব্দুর রহমান আবদুল খালিক ।
শায়খ আলবানী কট্টর হানাফী পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন আলবেনীয় ও সার্বীয় আলেমদের মধ্যে হানাফী ফিকহ সম্পর্কে সবচেয়ে বিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য আলেম। তাঁর নিকটে সবাই ফৎওয়া নিতে আসত। কিন্তু শায়খ আলবানী শুরু থেকেই ছিলেন ভিন্ন মানসিকতার। বিশেষতঃ কুরআনহাদীসের গভীরভাবে অধ্যয়ন করার পর তাঁর নিকটে সমকালীন বিভ্রান্তি ও ভুলক্রটিসমূহ স্পষ্ট হয়ে উঠে। খুঁজে পান কুরআন-হাদীসের সাথে বহু মাসআলা মাসায়েলের যোজন যোজন দূরের ব্যবধান। বিভিন্ন মসজিদে তখন হানাফী এবং শাফিঈদের দু’টি করে জামাআত হত। হানাফী জামাআতের পর শাফিঈদের জামাআত হত। কিন্তু সময়ের আবর্তনে সিরিয়ায় একজন শাফিঈ শাসক ক্ষমতাসীন হন এবং তিনি হানাফীদের পূর্বে শাফিঈদের সলাত আদায় করার নির্দেশ জারী করেন। এমতাবস্থায় শায়খ আলবানী দ্বিতীয় জামা'আতে সলাত আদায়ের কোন দলীল না পেয়ে শাফেঈদের সাথে আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় করা শুরু করলেন।
একদিন হানাফীদের ইমাম শায়খ বুরহানী হাজ্জের সফরে গমনের কারণে শায়খ আলবানীর পিতাকে ইমামতির দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। পরিস্থিতি এমন হ’ল যে, শায়খ আলবানী প্রথম জামাআতে সলাত আদায় করছেন, আর তাঁর পিতা দ্বিতীয় জামা'আতে ইমামতি করছেন। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ল, যেদিন তাঁর পিতা তার ব্যক্তিগত সফরে যাওয়ার কারণে উপলক্ষে আলবানীকে দ্বিতীয় জামাআতে ইমামতি করার নির্দেশ দিলেন। স্পষ্টভাষী আলবানী স্বীয় পিতাকে বললেন, এ বিষয়ে আপনি আমার মতামত জানেন যে, আমি প্রথম জামা'আতে সলাত আদায় করি । এমতাবস্থায় স্বীয় মত বিরোধী কাজ করা আমার জন্য খুবই কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধ তীব্রতর হ’ল । অতঃপর একদিন পিতা তাকে গৃহকোণে ডেকে বললেন, তাহলে এটাই কি সত্য যে, তুমি তোমার মাযহাব পরিত্যাগ করেছ? ক্রোধান্বিত পিতার কণ্ঠ উঁচু হতে লাগল। একপর্যায়ে বললেন, হয় তোমাকে একমত হতে হবে, অন্যথায় পৃথক হতে হবে। শায়খ আলবানী পিতার নিকট থেকে তিনদিন সময় চেয়ে নিলেন। অবশেষে মাত্র ২৫ সিরীয় লিরা হাতে নিয়ে পিতৃগৃহ থেকে বিদায় নিলেন পরবর্তীকালের বিশ্ববিশ্রুত এই মুহাদ্দিস। তখন তাঁর বয়স সবেমাত্র বিশ অতিক্রম করেছিল। সেই বয়সেই তিনি (arbi) নামক একটি তাখরীজ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। যদিও তা অদ্যাবধি প্রকাশিত হয়নি (ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আহদাছুন মুছীরাহ মিন হায়াতিল ইমাম আলবানী)।
একদিন হানাফীদের ইমাম শায়খ বুরহানী হাজ্জের সফরে গমনের কারণে শায়খ আলবানীর পিতাকে ইমামতির দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। পরিস্থিতি এমন হ’ল যে, শায়খ আলবানী প্রথম জামাআতে সলাত আদায় করছেন, আর তাঁর পিতা দ্বিতীয় জামা'আতে ইমামতি করছেন। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ল, যেদিন তাঁর পিতা তার ব্যক্তিগত সফরে যাওয়ার কারণে উপলক্ষে আলবানীকে দ্বিতীয় জামাআতে ইমামতি করার নির্দেশ দিলেন। স্পষ্টভাষী আলবানী স্বীয় পিতাকে বললেন, এ বিষয়ে আপনি আমার মতামত জানেন যে, আমি প্রথম জামা'আতে সলাত আদায় করি । এমতাবস্থায় স্বীয় মত বিরোধী কাজ করা আমার জন্য খুবই কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধ তীব্রতর হ’ল । অতঃপর একদিন পিতা তাকে গৃহকোণে ডেকে বললেন, তাহলে এটাই কি সত্য যে, তুমি তোমার মাযহাব পরিত্যাগ করেছ? ক্রোধান্বিত পিতার কণ্ঠ উঁচু হতে লাগল। একপর্যায়ে বললেন, হয় তোমাকে একমত হতে হবে, অন্যথায় পৃথক হতে হবে। শায়খ আলবানী পিতার নিকট থেকে তিনদিন সময় চেয়ে নিলেন। অবশেষে মাত্র ২৫ সিরীয় লিরা হাতে নিয়ে পিতৃগৃহ থেকে বিদায় নিলেন পরবর্তীকালের বিশ্ববিশ্রুত এই মুহাদ্দিস। তখন তাঁর বয়স সবেমাত্র বিশ অতিক্রম করেছিল। সেই বয়সেই তিনি (arbi) নামক একটি তাখরীজ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। যদিও তা অদ্যাবধি প্রকাশিত হয়নি (ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আহদাছুন মুছীরাহ মিন হায়াতিল ইমাম আলবানী)।
শায়খ আলবানীর পিতা জীবিকা নির্বাহের জন্য ঘড়ি মেরামত করতেন। আলবানী পিতার দোকানে কাজ করেই একাজে দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি বলতেন, ঘড়ি মেরামতের কাজই আমাকে সূক্ষ্মতা শিখিয়েছে। পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর পড়াশুনার পাশাপাশি কর্মজীবনের শুরুতে দু’বছর কাঠমিস্ত্রির কাজও করেন। অতঃপর কাজটি কষ্টসাধ্য হওয়ায় তিনি পুরাতন গৃহ সংস্কারের পেশা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি আবার ঘড়ি মেরামতের পেশায়। ফিরে গেলেন। তাঁর নিজস্ব ঘড়ির দোকান ছিল। তিনি বলতেন, আল্লাহ অশেষ রহমত যে, তিনি আমাকে প্রথম যৌবনেই ঘড়ি মেরামতের কাজ শেখার তাওফীক্ব দান করেছিলেন। এটা এমন একটি স্বাধীন পেশা, যা ইলমে হাদীসে বুৎপত্তি অর্জনে আমার জন্য বাধা হত না। আমি মঙ্গলবার ও শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টা এর পিছনে ব্যয় করি। এই পরিমাণ কাজ করাই আমার ও আমার পরিবারের প্রয়োজনীয় জীবিকা অর্জনের জন্য যথেষ্ট ছিল। অর্থাৎ এর বেশী আর প্রয়োজন নেই। কেননা রসূল (ﷺ) এ দু'আই করতেন যে, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবারের জন্য এমন রিযিক দান কর যা পরিমিত। অর্থাৎ প্রয়োজনের কম নয় বা বেশীও নয় । (ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আহদাছুন। মুছীরাহ মিন হায়াতিল ইমাম আলবানী)।
প্রথম জীবনে শায়খ আলবানীকে চরম দারিদ্রের মুকাবিলা করতে হয়েছিল। শায়খ মাশহুর হাসান বলেন, শায়খ আলবানী আমাকে সিলসিলা যঈফাহ ছাপাখানায় যাওয়ার পূর্বে এর সম্পাদনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি তাঁর নিকট থেকে পঞ্চম খন্ডের পান্ডুলিপি গ্রহণ করে যখন ব্যাগ থেকে বের করলাম, দেখলাম তিনি পঞ্চম খন্ডটি চিনি, চাল প্রভৃতির প্যাকেটসহ মানুষের ফেলে দেয়া লাল রঙের পরিত্যক্ত কাগজে লিখেছেন! অবস্থা দেখে আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে ফেললাম। শায়খ আমার ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু আমি কথা বলতে পারছিলাম না। আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন, দেখ আমার কাছে তখন ভাল কাগজ ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না (ইসতামে ইলাইহে মিন কালামিশ শায়খ আবী ওবায়দা, অডিও রেকর্ড থেকে সংগৃহীত)। তার আরেক ছাত্র আবু মুআবিয়া বৈরূতীর ভাষায় তিনি দারিদ্রের কারণে কাগজ ক্রয় করতে না পেরে রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজ কুড়িয়ে নিতেন এবং তাতেই তাঁর অমূল্য লেখনীর প্রকাশ ঘটাতেন। একদিন তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘সস্তা হওয়ার কারণে আমি পরিত্যক্ত কাগজ কেজি দরে ক্রয় করতাম’ (শায়বানী, হায়াতুল আলবানী ১/৪৩)।
দুই শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসের সাক্ষাত হাজ্জের মওসুম । শায়খ আলবানী হাজ্জে গিয়েছেন। এদিকে মিশকাতের প্রসিদ্ধ আরবী ভাষ্য ‘মির'আতুল মাফাতীহ'-এর লেখক স্বনামধন্য সালাফী বিদ্বান ভারতগুরু শায়খ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীও হাজ্জে গিয়েছেন। ইন্ডিয়ার আহলে হাদীস নেতা শায়খ মুখতার আহমাদ নাদভী মিনাতে শায়খ আলবানীর তাঁবুতে আল্লামা মুবারকপুরীকে নিয়ে গেলেন। কেবল নামটি বলার অপেক্ষা। আর যাবেন কোথায়! শায়খ আলবানী বুকে জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। যেন কতদিনের স্বপ্ন আজ স্বার্থক হ’ল। শায়খ মুখতার বলেন, ইসলামী দুনিয়ার দুই শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসের সেই মহামিলন দৃশ্য দেখে উপস্থিত সকলের সেদিন আনন্দে চোখে পানি এসে গিয়েছিল ।
দুই শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসের সাক্ষাত হাজ্জের মওসুম । শায়খ আলবানী হাজ্জে গিয়েছেন। এদিকে মিশকাতের প্রসিদ্ধ আরবী ভাষ্য ‘মির'আতুল মাফাতীহ'-এর লেখক স্বনামধন্য সালাফী বিদ্বান ভারতগুরু শায়খ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীও হাজ্জে গিয়েছেন। ইন্ডিয়ার আহলে হাদীস নেতা শায়খ মুখতার আহমাদ নাদভী মিনাতে শায়খ আলবানীর তাঁবুতে আল্লামা মুবারকপুরীকে নিয়ে গেলেন। কেবল নামটি বলার অপেক্ষা। আর যাবেন কোথায়! শায়খ আলবানী বুকে জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। যেন কতদিনের স্বপ্ন আজ স্বার্থক হ’ল। শায়খ মুখতার বলেন, ইসলামী দুনিয়ার দুই শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসের সেই মহামিলন দৃশ্য দেখে উপস্থিত সকলের সেদিন আনন্দে চোখে পানি এসে গিয়েছিল ।
শায়খ আলবানীর প্রিয় ছাত্র শায়খ আলী হালাবী বলেন, একদিন আমি শায়খকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনার মৃত্যুর পর আমরা ইলমে হাদীসে কার উপর নির্ভর করব? তিনি বললেন, তোমরা নিজেদের উপরেই নির্ভরশীল হও। আমি কামনা করি তোমরা আলবানীর চেয়েও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে । মিসরীয় আলেম শায়খ আবু ইসহাক আল-হুওয়াইনী তাঁর উস্তাদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ভুলতে পারি না সেদিনের কথা যেদিন আমি উস্তাদ আলবানীকে আমার তাখরীজকৃত ইমাম আবুদাউদ রচিত (arbi) নামক বইটি উপহার দিলাম। তিনি যখন বইয়ের কভারে (arbi) লেখা দেখলেন, তখন বিস্মিত হয়ে (arbi) শব্দের দিকে ইশারা করে বললেন, এটা কেন? আমি কারণ পেশ করে বললাম, শায়খ! এটা আমার কাজ নয় বরং প্রকাশকের ভুল । কিন্তু তিনি আমার কারণ গ্রহণ করলেন না। আল্লাহর কসম! আমি মোটেও কষ্ট পাইনি। বরং এরপর থেকে আমি তাঁকে ভিন্ন মাত্রায় শ্রদ্ধা করতে লাগলাম এবং আমার হৃদয়ে তিনি যেন একটি বিশেষ স্থানে আসীন। হলেন। কারণ হাদীস শাস্ত্রের অবিসংবাদিত ইমাম হিসেবে যাঁর খ্যাতি বিশ্বজোড়া, তিনি যে নিজেই স্বীয় গ্রন্থে কেবল নাম ব্যতীত কিছুই লিখতেন না! (আবু ইসহাক আল-হুওয়াইনী, বালুল ইহসান বিতাকরীবি সুনান নাসাঈ)। শায়খ আবু ইসহাক আল-হুওয়াইনী বলেন, একদিন আমরা কয়েকজন তাঁর বাড়িতে গেলে তিনি নিজেই দরজা খুললেন এবং সহাস্যবদনে আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানালেন। আমরা সবাই তাঁর বাড়ীর বাগানে গিয়ে বসলাম। অতঃপর তিনি আমাদেরকে তাঁর সাথে নাশতা করতে বাধ্য করলেন। তিনি নিজে হাতে খাবার এনে আমাদের খাওয়াচ্ছিলেন। আমি উঠে তাঁকে সাহায্য করতে চাইলাম। কিন্তু তিনি ধমক দিয়ে আমাকে বসিয়ে দিলেন। আমি বিব্রতভাবে বললাম, শায়খ! আমি বসে থাকব আর আপনি আমার খেদমত করবেন, এটা তো আমার জন্য খুবই অভদ্রতার পরিচয়। উত্তরে শায়খ আলবানী মনে রাখার মত যে কথাটি বললেন, “দেখ, ‘রসূল (ﷺ) -এর অনুসরণ করাই হ’ল ভদ্রতা। বরং ভদ্রতার চাইতেও উত্তম’ (বাদরুত তামাম ফী তারজামাতিশ শায়খ আল-ইমাম)।
একদিন জনৈক ছাত্র শায়খ আলবানীর একটি ভুল ধরিয়ে দিলে তিনি তার জন্য দু'আ করে বললেন, এর জন্য আল্লাহ তোমাকে উত্তম জাযা দান করুন এবং আমাদের পারস্পরিক মহববতকে এমন মহববতে পরিণত করুন, যা পরস্পরকে উপদেশ প্রদান এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হয়। কেননা অনেক মানুষ অপরকে বলে থাকে যে, আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। কিন্তু যখনই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সে কোন দোষ-ত্রুটি করে ফেলে, তখন তাকে দূরে ঠেলে দেয় ও তার মর্যাদাহানি করে। এটা কখনোই আল্লাহর জন্য ভালোবাসার নিদর্শন নয়। বরং যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরকে উপদেশ দেয়া হবে। তখনই তা প্রকৃত ভ্রাতৃত্ব বলে গণ্য হবে। সুতরাং যখন তুমি আমার কোন ভুলত্রুটি দেখবে, তখন অবশ্যই আমাকে সংশোধন করে দিবে (সিলসিলাতুল হুদা। ওয়ান নূর, আলবানীর বক্তব্যের অডিও রেকর্ড ৮২/৩:৭)। তিনি বলতেন, সৌভাগ্যবান সেই যে অন্যের দ্বারা পরামর্শ প্রাপ্ত হয় ।
শায়খ আলবানী জীবনের শেষ হাজ্জ পালনকালে মিনায় অবস্থান করছেন। সেখানে তিনিসহ আরো রয়েছেন শায়খ বিন বায এবং শায়খ উছায়মীন। তাদের উপস্থিতিতে বিরাট মজলিসে প্রশ্নোত্তর বৈঠক শুরু হ’ল। সভাপতি হিসেবে শায়খ বিন বায প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য হাদীস সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর শায়খ আলবানীকে, ফিক্বহী প্রশ্নের উত্তর শায়খ উছায়মীনকে এবং আক্বীদাগত প্রশ্নের উত্তর প্রদানের দায়িত্ব নিজেই নিলেন। অতঃপর যোহরের সময় হ’ল। শায়খ বিন বায শায়খ আলবানীকে বললেন, হে আবু আব্দুর রহমান! আজ আপনি। সলাতে আমাদের ইমামতি করবেন, আপনি আমাদের ইমাম। শায়খ আলবানী অস্বীকৃতি জানিয়ে বললেন, না না শায়খ, বরং আপনাকেই ইমামতি করতে হবে, আপনি আমাদের শায়খ । শায়খ বিন বায বললেন, আমরা কুরআনের ক্ষেত্রে সকলেই সমান হতে পারি। কিন্তু রসূল (ﷺ) -এর হাদীসের ক্ষেত্রে আপনি আমাদের মাঝে সর্বাধিক অবগত। সুতরাং আপনিই ইমামতি করুন। অবশেষে শায়খ আলবানী ইমামতির জন্য এগিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে শায়খ! আমি কি রসূল (ﷺ) -এর ন্যায় সলাত আদায় করব, না সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করব? শায়খ বিন বায বললেন, রসূল (ﷺ) -এর অনুরূপ সলাত আদায় করুন এবং আমাদেরকে শিখিয়ে দিন কিভাবে রসূল (ﷺ) সলাত আদায় করতেন।
শায়খ আব্দুল্লাহ বিন ছালেহ (মৃত্যু ১৪৩২হিঃ) বলেন, মদীনায় অনেক বিখ্যাত আলেম-ওলামার সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল। তাঁদের মধ্যে শায়খ আলবানী ছিলেন আমার সবচেয়ে অন্তরঙ্গ বন্ধু । আমরা একত্রে বহুবার সফর করেছি। তিনি একাধারে আমার উস্তাদ এবং বন্ধু ছিলেন। যে বিষয়েই তাঁর সাথে কথা বলা হোক না কেন, তিনি হাদীস দিয়ে কথা বলতেন এবং সনদের শুদ্ধাশুদ্ধি উল্লেখ করতেন। কুরআন থেকে তিনি এমনভাবে দলীল দিতেন যেন কুরআন তাঁর চোখের সামনে ভাসছে। একবার মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে আমরা মাঠে নামলাম। ছাত্ররা ফুটবল খেলছিল। শায়খ আলবানীও নিজের পোষাক পরিহিত অবস্থাতেই মাঝে মাঝে তাদের সাথে খেলছিলেন। আমি বললাম, আপনি করছেন কি? আপনি ফুটবল খেলছেন, অথচ আপনি আলবানী! উত্তরে তিনি বললেন, এর দ্বারা আমি আল্লাহর আনুগত্যে শক্তি অর্জন করছি। আর এটি আমাকে আমার প্রভুর স্মরণ থেকে উদাসীন করছে না।
শায়খ আলবানী ইলমে হাদীসে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নির্মাণেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যেমন
(১) অধ্যাপক মাহমূদ রেযা বলেন, একবার শায়খ আলবানী আমাকে তাঁর গৃহের ছাদে নিয়ে গিয়ে স্বীয় উদ্ভাবিত একটি যন্ত্র দেখালেন, যা সূর্যের কিরণে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গরম হত। সালফার, আলকাতরা ইত্যাদি পদার্থের মিশ্রণে নির্মিত এই জটিল বৈজ্ঞানিক যন্ত্রটি শীতকালে তাঁর ঘরের উষ্ণতা ধরে রাখত (মুহাম্মদ রেযা মুরাদ, মাসিক আদ-দাওয়াহ, ১৮১৮ সংখ্যা, শাবান ১৪২০ হিঃ)।
(২) তিনি সূর্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত সলাতের সঠিক সময় নির্ণয়কারী একটি ঘড়ি নির্মাণ করেন। তবে তাঁর বাড়িতে ভ্রমণকারীরা সবচেয়ে বিস্মিত হত তাঁর স্বনির্মিত লিফটটি দেখে, যার মাধ্যমে তিনি উপর তলায় উঠতেন। স্কুল স্বাস্থ্যের কারণে উপরে পায়ে হেঁটে উঠতে তাঁর কষ্ট হত। তাঁর এই লিফটটির সাথে একটি ডায়নামা সদৃশ যন্ত্র যুক্ত করা ছিল। সুইচ টিপ দিলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠা-নামা করত। এছাড়া তিনি বই-পত্র রাখার জন্য একটি ঘূর্ণায়মান র্যাক তৈরী করেছিলেন, যেখানে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় বইসমূহ রাখতেন। বিশেষতঃ জারাহ-তাদীল এবং রিজাল শাস্ত্রের বইগুলো তিনি এই র্যাকে রাখতেন। তিনি চিকিৎসাবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন। এমনকি স্বীয় সন্তান মুহাম্মাদের প্রসবকার্যে তিনি একাই স্ত্রীকে সাহায্য করেছিলেন (ইছাম হাদী, আলবানী কামা ‘আরাফতুহু ১০৪ পৃঃ)।
(৩) বৈদ্যুতিক কাজসহ গাড়ি মেরামতেও তাঁর দক্ষতা ছিল আশ্চর্য ধরনের। একাধিক দাওয়াতী সফরে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে তাঁকে নিজেই তা মেরামত করতে দেখা গেছে। তাঁর ছাত্র শায়খ আদনান স্বীয় অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, একবার তিনি শায়খ আলবানীর সাথে রেডিও কিনতে গিয়েছিলেন। আলবানী দোকানীকে রেডিও সম্পর্কে দক্ষ বিশেষজ্ঞের মত প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে লাগলেন। যেমন, রেডিও তরঙ্গ কয়টি? কয়টি ব্যাটারী প্রয়োজন হয়? পাওয়ার কত? কোন দেশে তৈরী ইত্যাদি। তিনি শায়খকে বললেন, এগুলিতো রেডিওর খুব সূক্ষ্ম বিষয়, আপনি বোঝেন কিভাবে? আলবানী বললেন, তুমি কি মনে করেছ, আমাদেরকে কেবল ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রেই সূক্ষ্মতা অবলম্বন করতে হবে? না, বরং সর্বক্ষেত্রেই এ নীতি প্রযোজ্য। আমরা কেবল দ্বীনের ক্ষেত্রেই তাক্বলীদকে অস্বীকার করি না। বরং যে কোন বিষয়েই অন্যের তাক্বলীদকে অস্বীকার করি ।
(৪) অনুরূপভাবে ইয়ারমূক বিশ্ববিদ্যালয়ের উছুলে ফিক্হ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ফারূক সামেরাঈ স্মৃতিচারণ করে বলেন, শায়খ আলবানীর সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনি বাড়িতে হাঁস-মুরগী, কবুতর ইত্যাদি পালন করতেন। একবার তিনি সপরিবারে ওমরা করতে যাবেন। দুই সপ্তাহ বাড়ি খালি থাকবে। কিন্তু এসব প্রাণীর খাদ্য-পানীয়ের সংস্থান কিভাবে হবে?
তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। তারপর যথারীতি নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে তিনি একটি চমৎকার যন্ত্র বানিয়ে ফেললেন, যা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য এবং পানীয় প্রত্যেক খাঁচায় ঢেলে দেবে। এভাবে পরিকল্পিত উপায়ে সবকিছু ঠিকঠাক চলতে লাগল । সফর থেকে ফিরে এসে দেখলেন সব পশু-পাখি সুন্দরভাবে খেয়ে-দেয়ে বেঁচে আছে। কোন সমস্যা হয়নি। তিনি যেমনটি চেয়েছিলেন, তেমনটিই হয়েছে।
(৫) ড. আব্দুল আযীয সাদহান লিখেছেন, শায়খ আলবানীর বাসায় অনেক পাখি ছিল। পাখিদের বাসা ছিল তাঁর বারান্দা থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে। তাই প্রতিদিন পাখির খাবার ব্যবস্থা করতে তিনি বারান্দা থেকে একটি পাইপ লাগিয়ে দেন। যার অপর মুখটি ছিল পাখির বাসা পর্যন্ত দীর্ঘ। তিনি প্রতিদিন ঐ পাইপটি পাখিদের খাবার দিয়ে ভরে রাখতেন। ফলে অপর মুখ থেকে পাখিরা যখনই কিছু খাবার খেত, তখনই পাইপের মুখে বাকি খাবার অল্প অল্প করে নেমে আসত। ফলে বার বার খাবার দেয়ার পরিশ্রম করতে হত না। এভাবে তাঁর সবকিছুতেই ছিল সৃষ্টিশীলতার ছাপ (ইমাম আলবানী দুরূস ওয়া। মাওয়াকেফ ওয়া ইবার ১১১ পৃঃ)।
(১) অধ্যাপক মাহমূদ রেযা বলেন, একবার শায়খ আলবানী আমাকে তাঁর গৃহের ছাদে নিয়ে গিয়ে স্বীয় উদ্ভাবিত একটি যন্ত্র দেখালেন, যা সূর্যের কিরণে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গরম হত। সালফার, আলকাতরা ইত্যাদি পদার্থের মিশ্রণে নির্মিত এই জটিল বৈজ্ঞানিক যন্ত্রটি শীতকালে তাঁর ঘরের উষ্ণতা ধরে রাখত (মুহাম্মদ রেযা মুরাদ, মাসিক আদ-দাওয়াহ, ১৮১৮ সংখ্যা, শাবান ১৪২০ হিঃ)।
(২) তিনি সূর্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত সলাতের সঠিক সময় নির্ণয়কারী একটি ঘড়ি নির্মাণ করেন। তবে তাঁর বাড়িতে ভ্রমণকারীরা সবচেয়ে বিস্মিত হত তাঁর স্বনির্মিত লিফটটি দেখে, যার মাধ্যমে তিনি উপর তলায় উঠতেন। স্কুল স্বাস্থ্যের কারণে উপরে পায়ে হেঁটে উঠতে তাঁর কষ্ট হত। তাঁর এই লিফটটির সাথে একটি ডায়নামা সদৃশ যন্ত্র যুক্ত করা ছিল। সুইচ টিপ দিলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠা-নামা করত। এছাড়া তিনি বই-পত্র রাখার জন্য একটি ঘূর্ণায়মান র্যাক তৈরী করেছিলেন, যেখানে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় বইসমূহ রাখতেন। বিশেষতঃ জারাহ-তাদীল এবং রিজাল শাস্ত্রের বইগুলো তিনি এই র্যাকে রাখতেন। তিনি চিকিৎসাবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন। এমনকি স্বীয় সন্তান মুহাম্মাদের প্রসবকার্যে তিনি একাই স্ত্রীকে সাহায্য করেছিলেন (ইছাম হাদী, আলবানী কামা ‘আরাফতুহু ১০৪ পৃঃ)।
(৩) বৈদ্যুতিক কাজসহ গাড়ি মেরামতেও তাঁর দক্ষতা ছিল আশ্চর্য ধরনের। একাধিক দাওয়াতী সফরে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে তাঁকে নিজেই তা মেরামত করতে দেখা গেছে। তাঁর ছাত্র শায়খ আদনান স্বীয় অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, একবার তিনি শায়খ আলবানীর সাথে রেডিও কিনতে গিয়েছিলেন। আলবানী দোকানীকে রেডিও সম্পর্কে দক্ষ বিশেষজ্ঞের মত প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে লাগলেন। যেমন, রেডিও তরঙ্গ কয়টি? কয়টি ব্যাটারী প্রয়োজন হয়? পাওয়ার কত? কোন দেশে তৈরী ইত্যাদি। তিনি শায়খকে বললেন, এগুলিতো রেডিওর খুব সূক্ষ্ম বিষয়, আপনি বোঝেন কিভাবে? আলবানী বললেন, তুমি কি মনে করেছ, আমাদেরকে কেবল ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রেই সূক্ষ্মতা অবলম্বন করতে হবে? না, বরং সর্বক্ষেত্রেই এ নীতি প্রযোজ্য। আমরা কেবল দ্বীনের ক্ষেত্রেই তাক্বলীদকে অস্বীকার করি না। বরং যে কোন বিষয়েই অন্যের তাক্বলীদকে অস্বীকার করি ।
(৪) অনুরূপভাবে ইয়ারমূক বিশ্ববিদ্যালয়ের উছুলে ফিক্হ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ফারূক সামেরাঈ স্মৃতিচারণ করে বলেন, শায়খ আলবানীর সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনি বাড়িতে হাঁস-মুরগী, কবুতর ইত্যাদি পালন করতেন। একবার তিনি সপরিবারে ওমরা করতে যাবেন। দুই সপ্তাহ বাড়ি খালি থাকবে। কিন্তু এসব প্রাণীর খাদ্য-পানীয়ের সংস্থান কিভাবে হবে?
তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। তারপর যথারীতি নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে তিনি একটি চমৎকার যন্ত্র বানিয়ে ফেললেন, যা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য এবং পানীয় প্রত্যেক খাঁচায় ঢেলে দেবে। এভাবে পরিকল্পিত উপায়ে সবকিছু ঠিকঠাক চলতে লাগল । সফর থেকে ফিরে এসে দেখলেন সব পশু-পাখি সুন্দরভাবে খেয়ে-দেয়ে বেঁচে আছে। কোন সমস্যা হয়নি। তিনি যেমনটি চেয়েছিলেন, তেমনটিই হয়েছে।
(৫) ড. আব্দুল আযীয সাদহান লিখেছেন, শায়খ আলবানীর বাসায় অনেক পাখি ছিল। পাখিদের বাসা ছিল তাঁর বারান্দা থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে। তাই প্রতিদিন পাখির খাবার ব্যবস্থা করতে তিনি বারান্দা থেকে একটি পাইপ লাগিয়ে দেন। যার অপর মুখটি ছিল পাখির বাসা পর্যন্ত দীর্ঘ। তিনি প্রতিদিন ঐ পাইপটি পাখিদের খাবার দিয়ে ভরে রাখতেন। ফলে অপর মুখ থেকে পাখিরা যখনই কিছু খাবার খেত, তখনই পাইপের মুখে বাকি খাবার অল্প অল্প করে নেমে আসত। ফলে বার বার খাবার দেয়ার পরিশ্রম করতে হত না। এভাবে তাঁর সবকিছুতেই ছিল সৃষ্টিশীলতার ছাপ (ইমাম আলবানী দুরূস ওয়া। মাওয়াকেফ ওয়া ইবার ১১১ পৃঃ)।
একদিন শায়খ সামআনী শায়খ আলবানীকে তাবলীগ জামাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি চমৎকার এক উদাহরণ পেশ করে বললেন, এই জামাআতের মত ইখলাছপূর্ণ এবং আমলসমৃদ্ধ কোন জামাআত আজ পর্যন্ত আমার নযরে পড়েনি। কিন্তু তাদের অবস্থা হ’ল ঐ অতি উৎসাহী কুর্দী ব্যক্তির মত, যে ইসলাম প্রচারের জন্য বের হয়েছে। অতঃপর সামনে একজন ইহুদীকে। পেয়ে খঞ্জর উঁচিয়ে বলল, তোমার জন্য ধবংস, তমি ইসলাম গ্রহণ কর। সে আতসমর্পণ করে বলল, ঠিক আছে ইসলাম গ্রহণ করব। এখন বল, কি বলে আমি ইসলাম গ্রহণ করব? কিংকর্তব্যবিমূঢ় কুর্দী তখন বলল, হায় হায় এটা তো আমার জানা নেই! (অর্থাৎ তারা দ্বীনের তাবলীগ করে বটে; কিন্তু দ্বীন সম্পর্কে তাদের সঠিক জ্ঞান নেই)।
১৯৮৪ সালে সউদী আরব সফরকালে তাঁর এক সউদী সাথী তাঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালেন এবং এটাও বললেন, আপনার আগমনে সেখানে ত্রিশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি হবে ইনশাআল্লাহ। একথা শুনে আলবানী বেঁকে বসলেন এবং বারংবার নিবেদন সত্ত্বেও কোনক্রমে রাযী হলেন না। বাসায়। ফিরে আসলে তার এক সাথী দাওয়াত কবুল না করার কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বললেন, আমি আমার উপর ফিতনার আশংকা করছি (অর্থাৎ এতে আমার মধ্যে আত্মগর্বের সৃষ্টি হতে পারে)। একবার তিনি গাড়িতে বসেছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি তাকে চিনতে পেরে ছুটে এসে বলল, আপনিই কি শায়খ আলবানী? একথা শুনে আলবানী কেঁদে ফেললেন। পরে তাঁকে কাঁদার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক মানুষেরই উচিৎ আত্মপরিশুদ্ধির জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা এবং তার প্রতি মানুষের আগ্রহ ও কৌতুহলের কারণে আত্মপ্রবঞ্চিত না হওয়া (ড. আব্দুল আযীয সাদহান, ইমাম আলবানী দুরূস মাওয়াকেফ ওয়া ইবার ১২৬ পৃঃ)। আধুনিক যুগের ইলমে হাদীসের এই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের বৈচিত্রময় কর্মকান্ড সত্যিই বিস্ময়কর বৈকি!
শায়খ আলবানীকে বিনা অপরাধে সন্দেহের বশে কয়েকজন আলেমের সাথে কারান্তরীণ হতে হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাঈল যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালে তিনি সিরিয়ার বিখ্যাত কেল’আ কারাগারে কয়েকমাসের জন্য বন্দী ছিলেন। এই কারাগারেই একসময় বন্দী জীবন কাটিয়েছিলেন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (১২৬৩-১৩২৮ইং)। আলবানী বাইরের ন্যায় কারাভ্যন্তরেও দ্বীনের দাওয়াত দেন এবং তাকলীদ থেকে মুক্ত হয়ে বিশুদ্ধ ঈমান ও আমলের প্রতি সকলকে দাওয়াত দেন। তিনি ইবনে তায়মিয়া (রহ.)-এর পরে সর্বপ্রথম কেল’আ কারাগারে একত্রে জুম'আর সলাত চালু করেন। মুক্তির কিছুদিন পরই তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন এবং প্রায় আট মাস কারাবাস করেন। এসময় তিনি মুনয়েরী কর্তৃক সংকলিত মুখতাছার সহীহ মুসলিমের তাহকীক সম্পন্ন করেন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন