HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অন্য-পথের-কন্যারা

লেখকঃ Mrs. Carol. L. Anway M.S. Ed.

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
অন্য পথের কন্যারা

(আমেরিকান তরুণীদের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী)

(DAUGHTERS OF ANOTHER PATH)

CAROL L. ANWAY

M.S. Ed.

(আমেরিকান অমুসলিম তরুণীদের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী)

মোঃ এনামুল হক

অনুদিত

Estd- 149

বাংলাদেশ কো অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ

চট্টগ্রাম-ঢাকা

কভার পেইজ থেকে
ডটার্স অব এনাদার পাথ [আমেরিকান অমুসলিম তরুণীদের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী]

আমেরিকাতে ইসলামের দ্রুত বিস্তার একটি চলমান বাস্তবতা। কেন আমেরিকান কন্যারা পরিত্যাগ করছে তাদের এতদিনকার খৃষ্টীয় পরিবেশ আর পছন্দ করছে ইসলাম ধর্মকে, যে ধর্মে আছে শৃঙ্খলা, আত্মসমর্পণ ও 'ভিন্ন রূপ হওয়ার বিধান?

‘ডটার্স অব এনাদার পাথ’ বা ‘অন্য পথের কন্যারা উদ্ঘাটন করছে এর কিছু কারণ ও চিরন্তন প্রক্রিয়া যা এসব ‘কন্যাকে তাদের আধ্যাত্ম জীবনের দিকে নবযাত্রায় পরিচালিত করছে।

পাঠকবৃন্দ জানতে পারবেন ওদের মাতা-পিতা ও পরিবারের হৃদয়-ব্যথা ও হতাশার কিছু অনুভব যখন তাঁরা বিবৃত করেন তাদের কন্যাদের অন্য পথ পছন্দের কাহিনী।

এ হচ্ছে অমুসলিম উষ্ণ হৃদয় এক মায়ের কথিকা যাতে বিকৃত হয়েছে নিজ কন্যার ইসলামে দীক্ষা গ্রহণের সঙ্গে তার মানিয়ে নেওয়ার এক কাহিনী; তার সঙ্গে আরও ৫৩ জন আমেরিকান রমণীর ইসলাম গ্রহণের কথামালা।

ক্যারল এল, এ্যানওয়ে এম, এস, এড. (গাইডেন্স ও কাউন্সেলিং) স্কুল উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন অনেক বছর। এগার বছর তিনি শিশু, পরিবার ও নারীদরে খৃষ্টীয় শিক্ষা সহায়তাকেন্দ্রীক কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করে প্রবন্ধাদি সম্পাদনা ও রচনা করেছেন । যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ভ্রমণ করে তিনি করেছেন আন্তঃপ্রজন্ম। মাজকীয়, ঋস্টীয় ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন এবং তার পাশাপাশি শিক্ষণ শিবিরে ও শিক্ষাকর্মীদের বিশ্রাম স্থলে যাজকীয় নেতৃত্ব প্রদানের ব্যবস্থা। তার শিক্ষা, রচিত প্রবন্ধাদি ও আধ্যাত্ম জীবনের দায়িত্ববোধ তাকে সাহায্য করেছে নিজ কন্যার ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সমন্বয় সাধনে। "ডটার্স অব এনাদার পাথ’ বা ‘অন্য পথের কন্যারা" গ্রন্থে বিকৃত হয়েছে মিসেস এ্যানওয়ের অভিজ্ঞতাসহ নিজ কন্যা ও অন্যান্য আমেরিকান রমণীর মুসলমান হতে চাওয়ার কাহিনীসমূহ।

বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ

চট্টগ্রাম-ঢাকা

উৎসর্গ
পৃথিবী সারাক্ষণই বদলাচ্ছে এবং বেড়ে উঠছে। সবারই জীবনের অর্থ খুঁজে পাবার একেকটা পথ আছে এবং জীবনে চলার একেকটা রাস্তা থাকে। যদিও আমেরিকা এবং কানাডাতে পৃথিবীর অন্য সবাই কিভাবে জীবন যাপন করছে- তার তথ্য এবং তত্ত্ব অবিরাম বর্ষিত হচ্ছে- যেভাবেই হোক আমরা সে সম্বন্ধে ঠিক অবগত নই। আমরা আমাদের নিজেদের অর্থনৈতিক, ধর্মীয় এবং জাতিগত বিষয়সমূহ নিয়েই ব্যস্ত থাকি- অপসংস্কৃতি বা ধারণার মুখোমুখি হতে চাই না। শিরোনাম এবং প্রাত্যহিক বার্তা সরবরাহই আমাদের জ্ঞানের স্বরূপ নির্ধারণ করে- যা কিনা আমাদের ভয়গুলোকে জিইয়ে রাখে এবং আমাদের গতানুগতিক ধারণাকে আরো শক্তিশালী করে- যেগুলো প্রায়ই ভুল পথে পরিচালিত। এই বই লিখিত ও উৎসর্গিত হয়েছে আপনাদের, পাঠকদের জন্য যারা সময় দিয়েছেন; তারা যা জেনে আসছেন, তার বাইরে দৃষ্টি প্রসারিত করতে। আপনারা আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী যে সমস্ত মেয়েরা ইসলামের পথ বেছে নিয়েছেন, তাদের সম্বন্ধে জানতে চেয়েছেন। এই সমস্ত মুসলিম মেয়েদের একজন আপনার সহপাঠী, সহকর্মী, আপনার প্রতিবেশী, আপনার চাচাতো বোন, আপনার ভাগ্নী, আপনার নাতনী এবং হ্যাঁ, এমনকি আপনার মেয়েও হতে পারে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার
' আমি আমার হৃদয়ের গভীর কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমার মেয়ে JODI ANWAY MOHAMMEDZADEH-কে, যে আমার দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছে এবং পৃথিবীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শিখিয়েছে। আমাদের গোটা পরিবারই তার সাথে সাথে পৃথিবীকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গিয়ে সমৃদ্ধি এবং বিস্তৃতি লাভ করেছে। সম্পাদনা, পুনর্লিখন, নামকরণ এবং সমালোচনা ইত্যাদি সবকিছুতেই তার অবদান, বইখানা লেখা এবং প্রকাশের কাজে দারুণ সহায়তা করেছে।

এই প্রকল্পের প্রথম অনুপ্রেরণা এবং শক্তি সঞ্চয়ের উৎসের অন্যতম FOCA DR. JAMILAH KOLOCOTRONIS JITMOUD 478 SUSAN ELSAYYAD, যারা উভয়ই আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী মুসলিম এবং বর্তমানে KANSAS CITY ISLAMIC SCHOOL-এ শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। তাঁরা আমার এবং আমার মেয়ের সাথে দেখা করে আমাদের প্রকল্পের রূপরেখা তৈরীতে সাহায্য করেছেন এবং তাদের নিজেদের জীবনে এই ধরণের কাজের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করেছেন।

যে ৫৩ জন নারী তাদের ধর্মান্তরিত হবার কাহিনী দিয়ে আমাদের প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছেন, তাদের প্রত্যেকের সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করতে আমার খুবই ভালো লাগবে। প্রত্যেকেই, তারা যা বেছে নিয়েছে, তার প্রেরণা এবং সাক্ষী স্বরূপ- আল্লাহর ইচ্ছায় সমর্পিত একজন মুসলিম নারী।

আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং সম্পাদিকা TALITHA PENNINGTONএর সাথে কাজ করা খুবই আনন্দদায়ক মনে হয়েছে। এই বইখানাকে সুন্দরভাবে এবং সংক্ষেপে আপনাদের সামনে উপহার দেয়ার ব্যাপারে তাকে আমার অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।

এ ছাড়া আমার স্বামী এবং আমার জীবনের ভালোবাসা JOE-কেও ধন্যবাদ আমাদের দাম্পত্য জীবনের বছরগুলোর সমর্থন এবং অনুপ্রেরণার জন্য।

অনুবাদকের ভূমিকা
আমি বইখানা কিনেছিলাম THE MUSLIM CONVERTS' ASSOCIATION OF SINGAPORE থেকে। নিজে পড়ার পর পর এক আমেরিকান সহকর্মীকে দিয়েছিলাম পড়তে। তিনি রুদ্ধশ্বাসে বলতে গেলে পড়ে শেষ করলেন। তার পড়া শেষ হলে তার সাথে বইখানা নিয়ে আমার আলোচনা হলো। শ্বেতাঙ্গ ঐ দ্রলোকের স্ত্রী একজন আর্মেনিয়ান। আর সেই সুবাদে সমুদ্রের এপারের আচারআচরণ সম্বন্ধে তার কিছুটা ধারণা রয়েছে। আলোচনাকালে বইখানার মাঝে মেয়েরা যে শূন্যতার পরিবর্তে জীবনের একটা অর্থ খুঁজে পেতে চেয়েছে, তারা কন্তু পূজা পরিত্যাগ করে মানবিক এবং ঈশ্বরের নির্দেশিত পথ খুঁজতে চেয়েছে, ইত্যাদি নিয়ে আলাপ করতে করতে দেখলাম ভদ্রলোকের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছে। এক মুহূর্তের জন্য আমার দ্রলোকের জন্য খুব মায়া হলো, মনে হলো তার নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে হয়তো তার মনে হচ্ছে, কি অর্থহীনভাবেই না তার জীবনের অনেকাংশ কেটে গিয়েছে। আমাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ ধরনের আরো বইপত্র (ইসলাম সম্বন্ধীয়) কোথায় পাওয়া যাবে। আমি তাকে BARNES & NOBLE-এর নাম বললাম; যা তার দেশে সুপরিচিত।

দেশে ফিরে আমার এক ব্যাংকার ভাইকে বইটি পড়তে দিলাম। তিনি বইখানা ঘেঁটে এক পর্যায়ে বললেন যে, আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য বইখানা অনুবাদ করা প্রয়োজন। তিনি এবং আমি, দু’জনে অনেক আগে থেকেই এ ব্যাপারে একমত যে, সমাজ জীবনে অভূতপূর্ব বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার অত্যন্ত সহজ একটা উপায় হচ্ছে আদর্শ ‘মা’ তৈরির প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করা। এই বইয়ে অনেক মেয়েদের বক্তব্যে ঠিক এ কথাটাই প্রতিফলিত হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (দঃ), হযরত আলী থেকে শুরু করে নেপোলিয়ানসহ পৃথিবীর অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিই এ ধরনের কথা বলে গিয়েছেন। আমি আমার ব্যাংকার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, অনুবাদ না করলেই বা অসুবিধা কোথায়? কারণ, শিক্ষিতা মেয়েরাই এ বইয়ে বেশী আগ্রহী হবার কথা। তিনি আমাকে উত্তর দিলেন যে, শতকরা ৯০% স্নাতকোত্তর মেয়েও এই বইখানা ছুঁয়ে দেখবে না, কেবল এই কারণে যে, তা ইংরেজীতে লেখা। আমার শিক্ষিকা স্ত্রীর সাথে আলাপ করে একই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গেল। আর তা ছাড়া এতো সময়ই বা এখন মানুষের হাতে কোথায়? ‘এ’ থেকে শুরু করে জেড’ পর্যন্ত সব অক্ষর সম্বলিত স্যাটেলাইট চ্যানেলের বদৌলতে মায়ের ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখার সময় নেই, স্ত্রীর স্বামীর দিকে তাকিয়ে দেখার সময় নেই- সেখানে বই তো বেশ শুকনো একটা অধ্যায়, তার উপর আবার ধর্ম সংক্রান্ত বই।

আমার আরেকটা উপমা মনে এলো। ধরা যাক আমরা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবো। রাস্তা চেনা না থাকায় ভুল বশতঃ ময়মনসিংহ রোডে ছুটে চলেছি। আমি যদি পথে দেখি যে, কেউ ময়মনসিংহ পর্যন্ত ভুল করে চলে গিয়েছিল চট্টগ্রাম যাচ্ছে বলে এবং সে ফিরে আসছে ঠিক পথ ধরে চট্টগ্রাম যাবে বলে- তবে আমার সেখান থেকেই যাত্রার মোড় ঘুরিয়ে সঠিক রাস্তা ধরা উচিত। ইংরেজী একটা গান আছে এ বিষয়ে (COUNTRY WESTERN) : THERE IS NO USE RUNNING, WHEN YOU ARE ON THE WRONG ROAD। সভ্যতার যাত্রায় সারা পৃথিবী যাদেরকে আদর্শ করে ছুটে চলেছে, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েরা তথা মানুষজন যদি বুঝতে পারে যে, তারা অর্থহীন এক ভুল পথে যাত্রা করেছিল, তবে আমরা শুধু শুধু আরো শতাব্দীখানেক ভুল পথে চলে তবে ভুল বুঝতে হবে, এমন কোন কথা নেই। আমরা যত শীঘ্র সম্ভব আমাদের পথ পরিবর্তন করতে পারি। ইসলাম আমেরিকায় এখন সবচেয়ে সম্প্রসারণশীল ধর্ম; আর আরো বিশেষভাবে বলতে গেলে শ্বেতাঙ্গ মেয়েদের একটা সংঘবদ্ধ মুসলিম জনসংখ্যা হালে সেখানে গড়ে উঠেছে, যা চোখে পড়ার মতো। সাধারণভাবে আমাদের দেশের আমরা সবাই আর বিশেষভাবে আমাদের দেশের আলোকপ্রাপ্তা মেয়েরা যে জীবনের স্বপ্ন দেখে, ঐ জীবনের সবটুকু পেয়েও এ সমস্ত মেয়েরা সেকেলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে, সমস্ত চাকচিক্য ও বিলাসিতা ত্যাগ করে। ব্যাপারটা ভেবে দেখবার অবকাশ যাদের আছে, তাদের জন্য এ বই অনেক তথ্য উপহার দেবে। তসলিমা নাসরিন আজ যে জরায়ু-স্বাধীনতার কথা বলছেন, তা ঐ দেশে অর্ধ-শতাব্দী আগে বলা হয়েছিল। আর আজ ঐ জরায়ু-স্বাধীনতা ত্যাগ করে ঐ দেশের মেয়েরা নৈতিকতার খোঁজ করছেন, জীবনের উদ্দেশ্যের খোঁজ করছেন।

আমার অনুবাদের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্কউদ্ভূত। আমি পেশাদার লেখক নই। ভুল-ত্রুটিসহ সকল অপূর্ণতার দায়ভার আমার। এই বই পড়ে যদি একজন মেয়েও তার জীবনের পথ পরিবর্তন করে, তবে বুঝবো অনুবাদ-প্রকল্প সার্থক হলো এবং তার কৃতিত্ব আল্লাহ সোবহানাহুতায়ালার।

ভূমিকা
আমি যখন প্রথম FIDDLER ON THE ROOF ছবিটি দেখি তখন TEvYE'র চরিত্র আমাকে বিষন্ন করে দেয়- একজন পিতা যেভাবে তার এক কন্যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে কেবলমাত্র নিজের ঐতিহ্যের জন্য এবং অপর দুই কন্যার সাথেও প্রায় সম্পর্ক শেষ করতেই বসেছিল, কেননা তারা অন্য ঐতিহ্যের ভাবধারা' বেছে নিয়েছিল। আমি ভাবলাম, ঐ মেয়েগুলো ভালো মানুষ এবং তারা। নিশ্চয় সুন্দর জীবন যাপন করবে, যদিবা সে জীবন ধারা তাদের বাবা-মায়ের ঐতিহ্যের চেয়ে ভিন্নও হয়। সুতরাং তাদের নিজেদের মতো চলতে দিলেই হয়?” তারপরেই একজন সন্তান যখন ঐতিহ্যবাহী বা গতানুগতিক জীবন ধারা ত্যাগ করে, তখন যে কি দুঃসহ লাগে আমি তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। TEVYE'র মতোই আমার প্রত্যাখ্যাত লাগতো এবং রাগ ও দুঃখ হতো।

আমাদের মেয়ে, JODI, আমার দিতে চাওয়া একটা ধারণা বেশ ভালো। রপ্ত করেছিল মনে হলো ঃ "MISSOURI-ই পৃথিবীর একমাত্র স্থান নয়; বিচরণ করার জন্য একটা গোটা পৃথিবী পড়ে রয়েছে। ঈশ্বর সব মানুষকেই ভালোবাসেন। সুতরাং আমাদের উচিত অন্যদের কাছে নিজেদের খুলে ধরা এবং জীবন সম্বন্ধে একটা বিশ্বজনীন ধারণা পোষণ করা।” আমি খুশিই হয়েছিলাম যে তার কিছু বিদেশী বন্ধু রয়েছে।

তারপর আমি দেখতে শুরু করলাম REZA, একজন ইরানী যুবক, সম্পর্কে সে বেশ সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে। অল্প সময়ের মাঝেই সে ঘোষণা করলো যে, সে তাকে বিয়ে করতে চায় এবং স্বাভাবিক পরিণতিতেই ইরানে বসবাসও করতে যাচ্ছে। তার সম্বন্ধে জানা আমাদের জন্য আনন্দদায়ক ছিল । কিন্তু সে আমাদের মেয়েকে বিয়ে করবে এবং একটা বাইরের দেশে চলে যাবে... আমি সেই দৃশ্যটা মনে করতে চেষ্টা করলাম যে, TEvYE চেয়ে দেখছে তার দ্বিতীয় কন্যা ট্রেনে উঠছে, সে জানছে যে সম্ভবতঃ আর কখনোই তার সাথে দেখা হবে না।

সময়ের সাথে, যাহোক, এক সময় আমার স্বামী, JOE এবং আমি ধারণাটা এক রকম হজম করলাম। মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও REZA-কে খোলামেলা এবং উদার মনে হতো এবং আমরা ভাবলাম JODI তার খৃস্টান বিশ্বাস ও চার্চের সাথে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ। WARRENSBURG-এর চার্চে তার বিয়েটা অত্যন্ত সুখকর একটা ঘটনা ছিল। যেহেতু REZA এবং JODI তাদের ডিগ্রীর জন্য পড়াশোনা করছিল। আমি নিজেকে বললাম, তাদের ইরান যাবার আগে তো অন্তত কয়েক বছর কেটে যাবে। এমনও হতে পারে যে তারা তাদের মত বদলে ফেলবে।

দুই বছরের মাঝে তাদের ইরান চলে যাবার চেয়ে আরো বেশী ভয়ঙ্কর একটা ভয় আমাকে পেয়ে বসলো- আমার মেয়ের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হবার সিদ্ধান্ত। এটা আমার মাথায় কখনো আসেনি যে, সে স্বেচ্ছায় আমাদের পরিবারের ধর্ম-আচারের বাইরে একটা ভিন্ন ধর্ম বেছে নেবে। কিন্তু সে তাই করলো। এই বইতে রয়েছে আমার গল্প, JODI'র গল্প এবং তার মুসলিম হবার সংকল্পের কারণে আমাদের মাঝের সম্পর্কে যে পরিবর্তন ঘটে, তার গল্প।

এছাড়া রয়েছে ইসলাম গ্রহণ করা, আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী আরো বহু মেয়ের কাহিনী তাদের পারিবারিক প্রেক্ষাপট, তাদের ধর্মান্তরিত হবার কারণ, তারা যেভাবে ইসলামের নীতিমালাকে আকর্ষণীয় মনে করে তা গ্রহণ করলো তার বিব্ররণ এবং তাদের ও তাদের পারিবারিক জীবনে এর প্রভাবের কথা। পশ্চিমা আধুনিক সমাজ, যা তাদেরকে লালন করেছে, ত্যাগ করে তারা নিজেদের ইসলামী মূল্যবোধের দ্বারা পরিচালিত জীবনধারায় উৎসর্গ করেছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবন ধারণা, যাদের সাথে তারা এখন প্রার্থনা করে এবং সহঅবস্থান করে।

আমি আশা করি, এই বইয়ের পাঠক, আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী সেই সব তরুণীদের সম্বন্ধে আরো স্বচ্ছতর ধারণা লাভ করবেন, যারা ইসলাম বেছে নিয়েছে; পাঠক অনুধাবন করবেন কিভাবে এবং কেন তারা ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং এই পথ বেছে নেয়া তাদের কতটুকু শক্তি বা অনুপ্রেরণার যোগান দিয়েছে। এই সমস্ত মেয়েরা, তাদের জীবনে ইসলামিক আদর্শকে বাস্তবায়িত করে জীবন ধারণের যে বর্ণনা দিচ্ছে তা থেকে অমুসলিম পাঠকরা যে কেবল ইসলামিক পথ সম্বন্ধেই জানতে পারবেন তা নয়; বরং সহকর্মী, আত্মীয়া বা বন্ধু হিসাবে এই সমস্ত মুসলিম মেয়েদের সাথে কিভাবে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে তাও আবিষ্কার করবেন।

আমাদের অনেকের জন্যই এরা হচ্ছে আমাদের মেয়েরা, বোনেরা, নাতনীরা, বন্ধুরা বা সহকর্মীরা- যারা ঈশ্বরের বিশ্বাসের এক ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। এই বই যেন, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও, সবকিছু অতিক্রম করে ভিন্ন পথের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং তাদের আত্মনিয়োগকে বুঝবার একটা সুযোগ হিসেবে কাজ করে।

প্রকাশকের কথা
বছর দুয়েক আগে একটি জাতীয় দৈনিকে একটি চমকপ্রদ ঘটনা পড়েছিলাম। ঘটনাটি হলো, একজন মুসলমান তাঁর এক খ্রীস্টান বন্ধুকে পবিত্র কোরআনের এক কপি ইংরেজী অনুবাদ পাঠ করতে দিয়েছিলেন। সপ্তাহ দুয়েক পর পবিত্র কোরআন পড়া শেষ হলে মুসলমান বন্ধুটি প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে খ্রীস্টান বন্ধুটি বলেন, তোমাদের ধর্মীয় গ্রন্থটি আমি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পাঠ করেছি। সমগ্র মানবজাতি তথা সৃষ্টিকূলের জীবন বিধান হিসাবে গ্রন্থটি চমত্তার। এরপর তোমাদের দ্বিতীয় ধর্মীয় গ্রন্থটি আমাকে পড়তে দিও। একথা শুনে মুসলমান বন্ধুটি বলেন, “পবিত্র কোরআনই আমাদের একমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ।”

খ্রীস্টান বন্ধুটি বিস্মিত হয়ে বলেন, “তোমাদের ধর্মীয় গ্রন্থে মানব কল্যাণে প্রতিটি বিষয় যেভাবে বিধৃত হয়েছে তোমাদের প্রাত্যহিক জীবনাচারে অনেকাংশেই অনুপস্থিত। সঙ্গত কারণেই আমার মনে হয়েছে হয়তো তোমাদের আরেকটি ধর্মীয় গ্রন্থ রয়েছ। যা তোমরা তোমাদের প্রাত্যহিক জীবনাচারে অনুসরণ করে থাকো।” এ কথা শুনে মুসলিম বন্দুটি লা-জবাব।

মেঘ যেমন সাময়িকভাবে সূর্যকে আড়াল করে রাখে ঠিক তেমনি আমাদের মুসলিম নামধারীরা আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলামকে অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে আড়াল করে রেখেছে। এর ফলে মুসলমানরা যেমন ইসলামের প্রকৃত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনি বিশ্বের অন্যান্য জাতিকে ইসলামের সুমহান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করছে। শুধু তাই নয়, প্রাত্যহিক জীবনে সর্বোৎকৃষ্ট বিধি-বিধানকে উপেক্ষা করে বিজাতীয় দর্শন অনুসরণের মাধ্যমে বিশ্বে আমরা একটি অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছি। একদিন মুসলমানেরা বিশ্বের মানব জাতিকে সভ্যতা শিখিয়েছে। এখন বিধর্মীয়রা মুসলমানদেরকে সভ্যতা শিখাচ্ছে। একদিন বিধর্মীয়রা ইসলামের মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর বর্তমানে মুসলমানেরা নিজেদের উন্নত আদশ পরিত্যাগ করে বিজাতীয় মানব রচিত ভ্রান্ত মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয় বিভ্রান্তির বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ে নিজ স্বকীয়তা হারাচ্ছে। মুসলমানদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চিরশত্রু ইহুদী-খ্রীস্টানরা ইসলাম ধর্মকে প্রতিপক্ষ করে, এর বিরুদ্ধে সীমাহীন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। লোভ, ভয় ও বিভিন্ন কৌশলে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে পরগাছা জাতিতে পরিণত করার প্রয়াস পাচ্ছে। ইসলামের বিরুদ্ধে বর্তমানে যে সব অপপ্রচার রয়েছে এর মধ্যে তথাকথিত নারী স্বাধীনতা বা নারী অধিকার অন্যতম। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক প্রথাকে ধূলিস্যাৎ করে পাশ্চাত্যের ন্যায় জংলী সমাজ মুসলিম দেশে কায়েম করার জন্য নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামের শত্রুরা।

মানুষের চিরশত্রু শয়তান আজ মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতার সাম্যের সাথে লিঙ্গ স্বাতন্ত্রের বিভাজন রেখাকে গুলিয়ে দিয়ে বিশ্বে বিপর্যয় সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে মেতেছে। সৃষ্টির আদিতে শয়তানের প্ররোচনা ছিলো স্বর্গীয় মানুষের প্রথম বিভ্রান্তি ও বিপর্যয়ের কারণ। আজও শয়তান বিশ্বে ধ্বংস আর অস্থিরতার বীজ বপন এবং তার লালন-বর্ধনে ক্লান্তি নিরন্তর খেলায় মত্ত । চিন্তাশীল ও আন্তরিক মানুষের জন্যে তা অনুধাবন করা মোটেই দুরূহ নয়।

যেমন অনুধাবন করেছেন বর্তমান চিন্তাশীল অনেক আমেরিকানবাসীসহ • বিশ্বের অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা । Mrs. Carol. L. Anway M.S. Ed. প্রণীত Daughter of Another Path গ্রন্থটি থেকে আমেরিকান নারীদের ইসলাম পছন্দের বাস্তব অভিজ্ঞতার উপাখ্যান। ইসলামের বিচ্ছুরিত জ্যোতি তাদের হৃদয়কে আলোকিত করেছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন ধারাকে পাল্টিয়ে দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছে তাদের মন ও মগজকে। স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকান নও মুসলিম মেয়েদের ধর্মান্তরিতপূর্ব এবং ধর্মান্তরিত্তোর জীবনধারা জানতে পাঠক আগ্রহী। এই উপলব্ধি থেকে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এবং ঈমানী দায়িত্ববোধে দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কো অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ জনাব মোঃ এনামুল হক অনূদিত “অন্য পথের কন্যারা" গ্রন্থটি পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী তৃতীয় সংস্করনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্যে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।

পাঠক মহলে বইটির আরও ব্যাপক চাহিদা হওয়ায় আমাদের আয়োজন ও শ্রম সার্থক মনে করছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

এস, এম, রইসউদ্দিন

পরিচালক (প্রকাশনা)

বাংলাদেশ কো অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ

পথের শুরু আমেরিকান পরিবারে খৃস্টান হিসেবে বড় হওয়া
JODI তার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শঙ্কালীন সেমিস্টারে পড়ালেখা ছেড়ে দিল। সে মানসিক এবং আধ্যাত্মিক টানাপোড়েনের এক চরম অবস্থায় ছিল এবং সে তার দাদীর কাছে চলে গেল এই ভেবে যে, আমাদের সাথে থাকলে সে নিজেকে সামলে নিতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত নয়।

ঐ শরৎকালেই আরো পরে একদল তরুণ/তরুণীর সাথে JODI গীর্জা আয়োজিত এক সফরে যায়- যা বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশ ও ঐতিহাসিক গীর্জাসংশ্লিষ্ট স্থানে তাদের নিয়ে যায়। ফিরে এসে সে তার ভাবাবেগের অসুস্থতার আরোগ্যের বর্ণনা দেয়- “মা ও বাবা, আমি এখন বুঝি একজন ঈশ্বর আছে বলতে তোমরা কি বোঝাও- আমার ঈশ্বর সম্পর্কে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি যখন একটা দলের সঙ্গে প্রার্থনায় বসেছিলাম, তখন আত্মায় যেন এক উষ্ণ প্রবাহ বয়ে গেল। এটা ছিল একটা নিশ্চয়তা যে, আসলেই একজন ঈশ্বর রয়েছেন। এটা আমার জন্য আরোগ্য লাত্রে একটা সময় ছিল এবং এখন আমি আবার স্বাভবিক জীবন শুরু করার জন্য প্রস্তুত।”

কিন্তু JODI তখনো বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি ছিল না। তাই আমরা তার জন্য একটা ছোট্ট ভাড়া এপার্টমেন্টের ব্যবস্থা করলাম যাতে সে আমাদের কমিউনিটি কলেজে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে, যেখানে তার বাবাও একজন শিক্ষক।

ঐ সেমিস্টারে JODI ও REZA, একে অপরের সাথে পরিচিত হয়। একই কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র REZA ছিল-গঞ্জ:প্রকতির এবং তার এমন সব নৈতিক বোধ ছিল যা JODI তার জীবনে পেতে চাইতো. এ যেন এমন একজন মানুষ, যে তাকে তাই হতে সাহায্য করবে যা ODY সত্যিই হতে চায় ।

ইস্টারের ছুটিতে আমরা শহরের বাইরে কিছু আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। আমরা JODI REZA-কেও আমাদের সাথে যাবার আমন্ত্রণ জানালাম। ইস্টারের দিন সকালে আমরা যখন গীর্জায় যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন JODI উত্তেজিত ও কাপা স্বরে বললো-“মা, REZA চায় আমি তাকে বিয়ে করি এবং তার সাথে ইরানে বসবাস করতে যাই। কি দারুণ, তাই না?” এটা দারুণ কিছু ছিল না। ইরান এমন একটা দেশ যেখানে জিম্মি সমস্যা চলছিল। না, এটা হবার নয়। ইস্টারের সারাটা অনুষ্ঠানের সময় আমার মুখ বেয়ে চোখের পানি নেমে আসছিল। আমার কেবলই FIDDLER ON THE ROOF-এর সেই দৃশ্যের কথা মনে হচ্ছিল, যখন TEvYA তার মেয়েকে এই জেনে রেল স্টেশনে বিদায় জানাচ্ছিল যে, সে আর কোনদিন তাকে দেখবে না। সেই মেয়েটি তার বাবাকে “বাড়ির চেয়ে অনেক দূরে, আমি ভালোবাসি" গানটি গেয়ে শোনাচ্ছিল। আমি ব্যাপারটা সহ্য করতে পারছিলাম না!

পরের বৃহস্পতিবার REZA আমাদের তার বাসায় নিমন্ত্রণ করলো । আমরা কি যেতে পারি? সেটা বোধহয় ভালই হয়। হ্যা, আমরা যাবো। সময়টা সুন্দর কাটছিল এক সাথে- তারপর REZA আসল কথায় এলো, "JOE এবং CAROL, আমি তোমাদের এখানে আসতে বলেছি কারণ আমি JODI-কে বিয়ে করতে চাই এবং এ ব্যাপারে তোমাদের অনুমোদন চাই।”

“কখন?”

“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এই গ্রীষ্মকালের ভিতরেই, আমরা আশা করি।” সে তাদের অনুভূতি, বন্ধুত্ব এবং মূল্যবোধের একাত্মতার কথা বর্ণনা করলো।

আমরা ঠিক একমত হতে পারলাম না। মেয়েটার তো কলেজ শেষ করতে হবে। এছাড়া তাদের চলবে কি করে? না। না।

কিন্তু সময় গড়িয়ে যেতে থাকলে আমরা বুঝলাম, আমরা অনুমোদন করি আর না করি, তারা তাদের পথেই চলেছে। মে মাসের প্রথম দিন ছিল ওটা। আমি শহরের বাইরে গিয়েছিলাম একটা প্রকল্পের কাজে। সপ্তাহান্তের কর্মশালার প্রস্তুতিতে আমি একটা ভিডিও দেখছিলাম- আমি একটা অংশ দেখছিলাম যেখানে ভারতে একজন মিশনারীর কথা ছিল। মিশনারী বলছিলেন, কিভাবে তিনি গরমের মাঝে দুর্গম পথ অতিক্রম করে সেই গ্রামে পৌছুলেন। তার পায়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি গ্রামে পৌছে একটা গাছের গুড়িতে বসলেন। এক বৃদ্ধা এক গামলা পানি নিয়ে এলো, তার জুতা ও মোজা খুলে নিয়ে তার পা ধুয়ে দিলো। তিনি যখন মহিলার চোখে চেয়ে দেখলেন, তখন তিনি তার চোখে যীশুর জ্যোতি দেখতে পেলেন। আমি গল্পটা শুনে হাঁটু গেড়ে বসলাম। “ঈশ্বর, আমি REZA-র ভিতরে কিছু দেখার চেষ্টা করিনি। আমি শুধু তাকে প্রতিরোধই করেছি। আমি তার চোখে তোমার আলো দেখতে ভাবনার কথা বলেছে। বেশীরভাগই একটা ধর্মীয় পটভূমি থেকে এসেছে এবং তাদের তারুণ্যের দিনগুলোতে জীবনের অর্থ খোঁজার চেষ্টার কথা বলেছে। নীচে মেয়েদের কয়েকজনের জীবনের শুরুর দিকের দিনগুলোতে ধর্ম সম্বন্ধে তাদের ধ্যান-ধারণার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে।

যে সমস্ত পরিবারের কঠোর ধর্মীয় প্রত্যাশা ছিল
আমাদের কন্যাদের কিছু এসেছে এমন পরিবার থেকে, যারা আশা করতো যে মেয়েরা কেবল রবিবারেই নয়, বরং সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও চার্চের বা গীর্জার কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকবে। কঠোর' শব্দটি প্রায়ই পরিবারসমূহের ধর্মীয় প্রত্যাশা বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আমি বড় হয়েছি ক্যাথলিক হিসেবে। রবিবারে আমাকে গীর্জায় এবং রবিবাসরীয় স্কুলে নিয়ে যাওয়া হতো কারণ আমার বাবা চাপ দিতেন এবং আমাকে এবং আমার ভাই-বোনকে যেতে বাধ্য করতেন এবং বলতেন গীর্জায় না গেলে আমরা জাহান্নামে যাবো। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম এবং তাকে খানিকটা ভয়ও পেতাম এবং তাঁর কাছে সাহায্যও চাইতাম। সতের বছর বয়সে আমি গীর্জায় যাওয়া বন্ধ করে দিই এবং তখন বিশ্রী দুঃস্বপ্ন দেখতাম যে শয়তান (DEVIL) এসে আমাকে ছয় মাস বা তারও বেশী সময়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছে।

আমার বাবা ছিলেন একজন UNITED METHODIST যাজক (MINISTER). আমার দাদা ছিলেন একজন BAPTIST যাজক। আমি অত্যন্ত ধর্মীয় একটা পরিবেশে বড় হয়েছি। আমি সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই গীর্জায় যেতাম।

wifi Ty of CHRISTIAN (SEVENTH-DAY ADVENTIST) হিসেবে, চার্চে যাওয়া এবং চার্চ দ্বারা চালিত প্রাইভেট স্কুলের পড়ার মাঝে দিয়ে। আমি কঠোর পরিবেশে বড় হয়েছি : শুক্রবার সূর্যাস্ত থেকে শনিবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন ধর্ম বহির্ভূত কার্যাবলী নয়- অনেক গীর্জা ভিত্তিক কাজকর্ম-খাবার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ (শুধু যে শূকরই নিষেধ ছিল তা নয়, আদি পুস্তকের নিষিদ্ধ অন্যান্য দ্রব্যও নিষেধ ছিল), কোন পান বা ধূমপান নয়, কোন গহনাগাটি নয় ইত্যাদি। হাই স্কুলে থাকাকালীন চার্চ বা গীর্জা সম্বন্ধে আমার মোহভঙ্গ হয়। কারণ আমি এতে অনেক শঠতা দেখতে পাই। আমি চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দেই এবং ১৭ বছর বয়সে হাই স্কুল ছেড়ে দিই।

এই সব পরিবারের প্রয়োজন ছিল যা তারা তাদের মেয়েদের বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে ভালো মনে করতো। মেয়েদের মাঝে প্রায়ই ঈশ্বরের প্রতি গভীর বিশ্বাস জন্ম নিত কিন্তু চার্চে যাওয়া ছিল এমন একটা ব্যাপার যা তাদের করণীয় ছিল- যা থেকে তারা অব্যাহতি পেতো, যখনই তারা চার্চে যাওয়া সম্বন্ধে নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারার মতো বড় হয়ে যেতো।

১০
এমন বাবা-মা, যাদের ধর্মীয় উপদলের প্রতি আস্থা বদলে যাচ্ছিল বা দুর্বল হয়ে পড়ছিল
অনেক বাবা-মায়ের যদিও ধর্মের প্রতি গভীর আস্থা ছিল, তবুও তারা হয় চার্চ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল অথবা তারা অবসর মতো বা স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে চার্চে যেতো। কোন কোন পরিবার তাদের উপদলভিত্তিক আনুগত্যের ব্যাপারে বিভক্ত ছিল। অন্যরা তাদের মেয়ের বড় হবার সময়টাতে উপদল বদল করেছে। কিছু মেয়েরা তাদের ধর্মীয় মূল সম্বন্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে।

আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের পরিবার WORLD WIDE CHURCH OF GOD-এর অনুগত ছিল। কিন্তু আমার ছোট বেলাতেই তারা তা থেকে বেরিয়ে আসে। আমার বাবা মনে করতেন যে, বেশীর ভাগ প্রতিষ্ঠিত চাই দূষিত বা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। কিন্তু তিনি (আমার মতে) খুবই ধর্মপরায়ণ ছিলেন। এভাবে বড় হওয়াতে আমি সব সময়ই এক ধরনের ধর্মীয় পরিপূর্ণতা চাইতাম।

আমি BORN-AGAIN CHRISTIAN ছিলাম- তবে অনুশীলনরত একজন ছিলাম না। আমি চার্চে যেতাম না কারণ চার্চের অতিমাত্রার ধর্মীয় ও ভারী পরিবেশ আমাকে আকর্ষণ করতো না। আমি যখন ৩য় গ্রেডে পড়ি, তখন আমার মা BORN-AGAIN CHRISTIAN হন। এর আগে আমরা CATHOLIC ছিলাম। আমার মনে আছে মা আমাকে হাঁটু গেড়ে TV'র সামনে বসতে বলতো, যখন সে TV-তে JIM BAKKER-কে দেখতো।

আমার ধর্মানুভূতি ছিল অত্যন্ত গভীর। আমার মা-বাবা চার্চে না গেলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং বন্ধুদের সাথে প্রায় দু’বছর বয়স থেকেই আমাকে চার্চে পাঠাতেন। আমার বাবা-মায়ের নৈতিক আদর্শ বেশ উঁচু পর্যায়েরই ছিল এবং এখনো কিছুটা আছে বলা যায়, যা তারা আমাকে আমার তরুণ বয়সে শিক্ষা দিতেন, তাদের চার্চে যাবার খারাপ রেকর্ড সত্ত্বেও আমার মায়ের বাবা একজন PENTECOSTAL PREACHER এবং আমার তাকে সপ্তাহে তিনবার চার্চে যেতে বাধ্য করার জন্য তার বাবার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন।

ছোটবেলায় আমি CHURCH OF GOD-এ যেতাম যা আমার বাবার ধর্মীয় উপদল ছিল। তারপর কিশোরী অবস্থায় আমি মায়ের সাথে EPISCOPAL CHURCH-এ যেতাম। এই চার্চ বদলের কারণ ছিল আমার মা তার EPISCOPAL মূলে ফিরে যেতে চাইছিল। আমি অবশ্য কোনটাতেই সত্যিকার সন্তুষ্ট ছিলাম।

যেমনটি জরিপের কোন কোন সাড়া প্রদানকারীর বেলায় ঘটেছে, ধর্ম নিয়ে পরিবারের ভিতর এক ধরনের অস্থিরতা বা টানাপোড়েন উপস্থিত ছিল। একই সময়ে বিরাজমান দৃষ্টিভঙ্গীও ছিল সংশয়ের এবং সন্দেহের।

১১
যে সমস্ত মেয়েরা ধর্মীয় অভিজ্ঞতার
প্রতি টান অনুভব করেছিল মোহভঙ্গ, সংশয়, উত্তর না পাওয়া প্রশ্নাবলী- এসব অনেক মেয়েদের শুরুর দিকের বা কম বয়সের অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা করে। যাহোক, নৈরাশ্য সত্ত্বেও তাদের কাহিনী থেকে অনুসন্ধান পর্বে' তাদের একাগ্রতার পরিচয় পাওয়া যায় এবং দেখা যায়, তারা ধর্মীয় জীবনে স্থিতিশীলতা খুঁজে বেড়াচ্ছিল।

আমার বাবা ছিলেন PRESBYTERIAN এবং মা CATHOLIC. আমার বাবা কখনোই চার্চে সক্রিয় ছিলেন না কিন্তু মা চেয়েছিলেন আমাদের CATHOLIC হিসেবে বড় করতে। CATHOLIC চার্চে আমাকে BAPTIZED করা হয়েছিল এবং আমি প্রায় ৮ বছর বয়সে আমার FIRST COMMUNION লাভ করি। আমার বয়স যখন দশের মতো, তখন আমি কাছের একটা ছোট PRESBYTERIAN চার্চের খুব সক্রিয় সদস্য হয়ে যাই। নবম গ্রেডে উঠতে উঠতে আমি যাজকের স্ত্রীকে রবিবাসরীয় স্কুলে শিক্ষাদানে সাহায্য করি। হাই স্কুলে আমি আমার চার বন্ধুকে সদস্য বানিয়ে একটা চার্চ গ্রুপের সূচনা করি। এটা একটা ছোট্ট দল ছিল । কিন্তু আমরা এক সাথে বাইবেল পড়ে ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা করে এবং দানের জন্য পয়সা উঠিয়ে বেশ তৃপ্তই ছিলাম।

এই বন্ধুরা এবং আমি এক সাথে বসে আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আলাপ করতাম। আমরা আমাদের মনের ভিতরের নানা প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক করতামঃ "JESUS-এর আগমনের আগে যে সমস্ত মানুষ ছিল তারা কি স্বর্গে যাবে না নরকে যাবে?” কেন কিছু ভালো মানুষও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নরকে যাবে, কারণ তারা JESUS-এ অবিশ্বাসী (আমরা গান্ধীর কথা ভাবতাম এ প্রসঙ্গে)? অপরদিকে আমাদের বন্ধুর বাবার মতো বিশ্রী মেজাজের এবং স্বভাবের মানুষও স্বর্গ লাভ করে পুরস্কৃত হবে কেবল তারা খৃস্টান বলে? একজন স্নেহশীল ঈশ্বরের মানুষের পাপ মোচন করতে কেন রক্ত দানের প্রয়োজন হবে (JESUS)? আদমের আদি পাপের জন্য আমরা কেন দোষী হবো? ঈশ্বরের কথা কেনই বা বৈজ্ঞানিক তথ্যের সঙ্গে বেমানান হবে (BIBLE)? JESUS কিভাবে ঈশ্বর? এক ঈশ্বর কিভাবে তিনটি ভিন্ন জিনিস হতে পারেন (TRINITY) আমরা এ সমস্ত বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতাম, কিন্তু কখনোই কোন সদুত্তর পেতাম না। চার্চ ও আমাদের কোন ভালো। সমাধান দিতে পারতো না, কেবল আমাদের বলতো বিশ্বাস রাখো’।

আমি CATHOLIC হিসেবে বড় হলেও আমি যখন হাই স্কুলে পড়ি তখন আমার মায়ের মোহভঙ্গের কারণে আমাদের চার্চে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। CATHOLIC চার্চের ঐতিহ্যবাহী ব্যাপারগুলো এবং তাদের রক্ষণশীল মূল্যবোেধ আমার ভালো লাগতো। আমার অবশ্য অনেক উত্তর না পাওয়া প্রশ্ন ছিল, এমন কি ছোটবেলায়ও আমি দায়সারা কোন উত্তর গ্রহণ করতে পারতাম। ছোট শিশু হিসেবেও আমি বুঝতাম যে অনির্দিষ্ট ও দায়সারা তথা কুয়াশাচ্ছন্ন। বিশ্বাসের ক্ষেত্রগুলো এবং ধর্ম যাজকদের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের দর্শন ঠিক নয়।

আমি জন্মগতভাবে খৃস্টান ছিলাম। রবিবাসরীয় স্কুল এবং CHURCH আমার পছন্দ ছিল। বিবাহ বিচ্ছেদসহ নানা রকম অশান্তিপূর্ণ পরিবারের মাঝে থেকে আমি স্থিতিশীলতার খোজ করতাম- কেবল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নয়; বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে তা পেতে চাইতাম । ১৮ বছর বয়সের পরে আমি আমার মনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চার্চ থেকে চার্চে ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু তাতে আরো সংশয়পূর্ণ সব বাণী শুনেছি, বিভিন্ন ধর্ম যাজকের কাছ থেকে। আমি আমার সবচেয়ে ভালো বান্ধবীকে বলতাম যে আমি যেন সত্যিকার এক চার্চের সন্ধান পাই। আমার ভেতরে কেমন একটা শূন্যস্থান অনুভব করতাম আমি। আমার বান্ধবী আমাকে সব সময় আশ্বস্ত করতে চাইতো এবং আমাকে রবিবারের দিন চার্চে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতো। কিন্তু আমার বয়স যখন ২২ বছর হয়, ততদিনে আমি মানুষের তৈরি ধর্ম পরিত্যাগ করেছি কিন্তু ঈশ্বরকে ত্যাগ করিনি।

আমি বড় হয়েছি CATHOLIC হিসেবে। আমার মা তার বিশ্বাসের অনুশীলন করতে কিন্তু আমার বাবা নিয়মিত (রবিবার) চার্চে যেতো না। আমি যখন প্রাথমিক স্কুলে পড়ি তখনই শিক্ষিকাদের (নান) এবং বাবা-মায়েদের TRINITY বা ত্রয়ী সম্বন্ধে প্রশ্ন করতাম- আমি কার কাছে প্রার্থনা করবো? JESUS, GOD THE FATHER না HOLY SPIRIT-এর কাছে? আর সাধুদের ব্যাপারস্যাপারই বা কতটুকু কি? আমাকে বলা হতো এসবের কোন ব্যাখ্যা নেই এবং যা যেভাবে রয়েছে সেভাবেই মেনে নিতে হবে। আর জুন ব্যাপারটা খুবই সংশয়পূর্ণ ছিল। আমি CATHOLIC মতবাদ নিয়ে কখন্মেই সন্তুষ্ট ছিলাম না। ১৭ বছর বয়সে আমি চার্চে যাওয়া বন্ধ করি কিন্তু আমি তখনও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, যেমনটি আগেও সব সময় করেছি একেবারে ছোটবেলা থেকেই।

আমি ছিলাম BAPTIST এবং CATHOLIC স্কুলে অধ্যয়নরত। আমি আমার পারিবারিক চার্চের কর্মকান্ডের সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিলাম। কিন্তু আমি একথাও বলতে পারি না যে আমার তাতে কোন দায়বদ্ধতা ছিল, কৈশোরকালে আমি সব সময়ই কোনটা সঠিক- তার খোঁজে থাকতাম।

বহু বছর ধরে আমি এক খৃস্টান চার্চ থেকে আরেক চার্চে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি ওগুলোর কোনটিতেই সন্তুষ্ট ছিলাম না। এক চার্চে যখন কিছু অপছন্দ হতো, তখন আরেকটাতে যেতাম। আমার মনে হতো আর তো কিছু করার নেই। পরিণতিতে এক সময় আমার পুরো ধারণাটার ব্যাপারে মোহভঙ্গ হলো। আমি শুধু কপট ও শঠ ব্যক্তিদেরই সবখানে দেখতে পেতাম- যাহোক, আমি চার্চে যাওয়া একেবারেই ছেড়ে দিলাম। আমি তারপর জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার পর্যায়ে প্রবেশ করলাম। আমি আক্ষরিক অর্থে সমাজের তলদেশে ডুবে গেলাম। এই সমস্ত মেয়েরা চার্চে তাদের প্রাপ্তিতে অতৃপ্ত ছিল এবং তাদের মাঝের আধ্যাত্মিক শূন্যতা পূরণ করতে সব সময় প্রশ্ন ও অনুসন্ধান করে চলতো। যা তাদের ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করবে এমন কিছুকে গ্রহণ করার জন্য তারা এক ধরণের প্রস্তুতি নিয়েই ছিল।

১২
যে সমস্ত মেয়েরা নিবেদিত প্রাণ ছিল
অনেক মেয়ের জন্যই, তাদের বেড়ে ওঠার বছরগুলোর বিশ্বাসের যাত্রার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ধর্ম। তারা চার্চে শিক্ষিকা, পিয়ানো বাদক, গায়িকা এবং উপাসনাকারী হিসেবে সক্রিয় কর্মকান্ডে জড়িত ছিল এবং ঈশ্বর ও জীবনের ধর্মীয় ব্যাপারগুলোর প্রতি নিজেদের গভীরভাবে উৎসর্গিত মনে করতো।

আমি একজন NAZARENE ধর্ম যাজকের মেয়ে হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছিলাম এবং বড় হচ্ছিলাম। চার্চ সঙ্গীতে আমি খুবই সক্রিয় ছিলাম। আমি বহু বছর চার্চের পিয়ানো বাদক ছিলাম এবং স্থানীয় অনেক প্রতিযোগিতায় আমি গান গাইতাম।

আমি বড় হয়েছি BAPTIST হিসেবে, কিন্তু বাড়ি ছাড়ার পর বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমি এমন খৃস্টান পরিবারে বড় হয়েছি, যারা শুধু নাম কা ওয়াস্তেই' খৃস্টান ছিল না, বরং খৃস্টান হিসেবে জীবন যাপনের চেষ্টা করতো।

আমি বড় হয়েছি CATHOLIC হিসেবে। আমার তারুণ্যের বেশীর ভাগ সময় ধরেই আমি একজন নান হতে চেয়েছিলাম। আমি এমন কি জেলার প্রধান ধর্ম যাজকের সাথে সময় ব্যয় করি এবং কনভেন্টের সাথে তথ্যের জন্য যোগাযোগ করি। আমি বলতে পারি যে আমি নিবেদিত প্রাণ CATHOLIC ছিলাম। প্রতিদিনের উপাসনায় ও যাবতীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতাম।

ধর্মান্তরিত হবার আগে আমি খৃস্টান ছিলাম । দু’বছর বয়স থেকে আমি রবিবাসরীয় স্কুলে যেতাম এবং ছ'বছর বয়স থেকে প্রতি রোববার পরিবারের সবার সাথে চার্চে যেতাম। আমি খুবই ধর্মপ্রাণ ছিলাম এবং ৮ বছর বয়সে আমাদের চার্চের ধর্ম যাজকের জিজ্ঞাসাবাদের পর আমাকে BAPTIZED করা হয়। প্রথমে তিনি আমার মতো কম বয়সের কাউকে BAPTIZED করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু আমি যখন তার সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম, তখন তিনি বুঝলেন যে আমি চার্চের একজন বিধিবদ্ধ সদস্য হবার জন্য প্রস্তুত। আমার স্বামীর সাথে দেখা হবার আগে পর্যন্ত আমি চার্চের প্রতি বাধ্য ছিলাম। তারপর আমি ইসলাম সম্বন্ধে পড়ালেখা শুরু করলাম।

১৮ বছর বয়স পর্যন্ত আমি ছিলাম METHODIST। ১৮-তে আমি হয়ে গেলাম CATHOLIC। ঐ পরিবর্তনের আগে আমি সব ‘বিশ্ব ধর্ম সম্বন্ধে পড়েছিলাম। আমি বিভিন্ন চার্চে খুব সক্রিয় ভূমিকা রাখতাম- যে জন্য পুরস্কার, মেডেল, সনদ ইত্যাদি পেয়েছি। আমি নিজেকে খুব সক্রিয় ও ধার্মিক মনে করতাম। আমি একজন নান হতে চেয়েছিলাম। আমি স্থানীয় এক কনভেন্টের অনেক SISTER-দের জানতাম এবং তাদের নান-জীবন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতাম।

এইসব মেয়েদের অনেকের জন্যই ধর্ম ছিল জীবনের একটা স্বাভাবিক পন্থা। চার্চের নেতৃবৃন্দের কাছে তারা যে সমস্ত প্রশ্ন করতো, সে সমস্ত প্রশ্নের যে উত্তর তারা পেতো- তা নিয়ে তারা অতৃপ্তবোধ করতো। তারা জীবনের এমন এক পর্যায়ে ছিল, যখন তারা নিজেদের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করছিল। তারা কে এবং তাদের জীবন কেমন হবে বলে তারা চাইছিল; তারা তখন স্বাধীনভাবে পছন্দ করার বা বেছে নেয়ার পর্যায়ের তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক ছিল। অনুসন্ধানের এমনই এক পর্যায়ে কোন না কোনভাবে তারা ইসলামের সংস্পর্শে আসে।

১৩
পথ পরিবর্তন আমেরিকান মেয়েদের মুসলিম হবার পথ বেছে নেয়া
একজন পারিবারিক বন্ধুর বিয়েতে যাওয়া উপলক্ষে এক গ্রীষ্মকালে আমরা JODI’র সঙ্গে দুইদিন এক সাথে ছিলাম। সে এবং REZA তখন দুবছর যাবত বিবাহিত এবং UNIVERSITY OF ARKANSAS-এ অধ্যয়নরত- যা আমাদের বাড়ি থেকে গাড়িতে আট ঘন্টার রাস্তা ছিল। তাকে একেবারে ভিন্ন ধরনের লাগতো, তবু আমি তার পূর্ণতা লাভ করা চাল-চলন এবং তার দয়াশীলতা পছন্দ করতাম। চুল বাধার জন্য এপয়েন্টমেন্ট করতে গেলে সে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে একজন মহিলা বিউটিশিয়ানের জন্য চাপ দিলো। সময়টা যদিও একটা তপ্ত গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি, তবু সে ফুলহাতা জামা পরে থাকলো । ইসলাম সম্বন্ধে সে কি শিখছে, এ নিয়ে কথাবার্তা হলেই সে তখন বেশ গভীরতার সাথে কথাবার্তা বলতো।

বিয়েতে যাবার পথে আমরা কথা বলছিলাম। JODI তার বাবার সাথে গাড়ির সামনের আসনে ছিল । পিছনে ফিরে, পেছনের আসনে বসে থাকা আমার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “মা JESUS কে ছিলেন বলে তুমি মনে কর?”

“বেশ JODI, তুমি তো জানই । তুমি তোমার সারা জীবন ধরেই চার্চে গিয়েছে” । আমি উত্তর দিলাম ।

“কিন্তু মা, আমি তোমার কাছ থেকে এখন শুনতে চাই।”

আমি তখন তাকে আমার মতে যা খৃস্টান বিশ্বাসের মৌলিক বিষয় তা সম্বন্ধে বললাম- JESUS-এর জন্ম, তার ধর্ম প্রচার, তিনি যে ঈশ্বরের পুত্র এবং আমাদের নাজাতের জন্য তার মৃত্যুবরণ এবং পুনরুত্থান ইত্যাদি।

“তাহলে JESUS ঈশ্বর” JODI জিজ্ঞেস করলো।

“হ্যা, JESUS TRINITY' বা ত্রয়ীর অংশ”, আমি উত্তর দিলাম, “এবং তার সব প্রচারে ও শিক্ষায় তিনি আমাদের ঈশ্বরের দিকে দিক-নির্দেশ করেন।”।

আমি নিরাশ বোধ করলাম। যেভাবেই হোক, তার প্রতিক্রিয়াগুলো আমার মাঝে এক ধরনের অপর্যাপ্ততার অনুভব রেখে গেল। আমি এর চেয়ে ভালো কিছু বলতে পারলাম না কেন? সে যদিও কিছু বলেনি, আমি যেন অনুভব করলাম, যে

সে একটা ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গীর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। “বেশ, তার শেষ পর্যন্ত পৌছানোর কোন সম্ভাবনা নেই”, আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম।

ঝটপটই JODI আবার ফিরে গেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নের জগতে। তার স্বামী REZA'র সাথে আমরা ফোনে যোগাযোগ রাখতাম। প্রতিটি কলেই বুঝতাম যে, আমাদের দূরত্ব বেড়েই চলেছে। স্বভাবগতভাবে সে অন্যদের ভালো অনুকরণ করতে পারতো এবং প্রায়ই তাকে এমন শোনাতো যেন কোন ইরানী ইংরেজী শেখার চেষ্টা করছে, যখন সে তার বন্ধুদের বাচনভঙ্গী অনুকরণ করতো। সে রান্নার গল্প করতো। কিন্তু আমেরিকান খাবারের নয়। বরং ইরানী খাবারের।

সে শুধু তার মুসলিম বন্ধুদের গল্পই বলতো- খৃষ্টান এমনকি আমেরিকান কারো কথাও নয়। আমরা এসবের কোন সংজ্ঞা দিতে পারতাম না, কেবল একটা পরিবর্তন যে হচ্ছে এটুকুই বুঝতাম।

নভেম্বর এলো এবং JODI ও REZA বাড়ি এলো THANKS GIV. ING-এর ছুটিতে। আমরা একটু সন্দিহান ছিলাম, তবু মঙ্গল কামনা করলাম । আমরা সত্যিই তাদের দু'জনকে ভালোবাসতাম এবং তাদের অভাববোধ করতাম। JODI দরজা দিয়ে ঢুকলো। সে তার জিন্স এবং সোয়েটারের ওপরে একটা লম্বা ড্রেস পরেছিল। সে একটা ওড়না হাতে ধরে ছিল এবং তার মাথার চুলগুলো মাথায় বসেছিল (হিজাব পরে থাকার জন্য)। আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম, তারপর বসে কথা বলতে লাগলাম। কিন্তু কথাবার্তাগুলো কেমন ছাড়া ছাড়া। লাগছিল। বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল এবং বিশ্রাম নেবার সময় হয়ে এসেছিল। REZA বাইরে গেল তাদের স্যুটকেস ভেতরে নিয়ে আসতে। আমি যখন উঠতে যাচ্ছিলাম, JODI তখন আমার কাছে এসে বললো, “মা, আমার তোমার সাথে কথা বলা প্রয়োজন।”

আমি পেছন ফিরে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকলাম। আমার চোখ ফেটে জল আসছিল। না, আমি তার সাথে কথা বলতে পারবো না। সে কি বলতে পারে, তার আশঙ্কাটা আমার সহ্য হচ্ছিল না। তার দিকে না তাকিয়েই আমি বললাম, “এখন না।”

পরদিন ছিল THANKSGIVING। আমরা সবাই ওর দাদীর বাড়িতে যাচ্ছিলাম- গাড়িতে ১ ঘন্টার রাস্তা। “মা, আমরা টার্কি বা তাসাথের কিছু খাবো , আমরা শুধু অনুমোদিত মাংসই খেয়ে থাকি।” সে বললো।

ভাবলাম, তো কি হয়েছে! দেখ, আমি আদৌ তোয়াক্কা করি কিনা। আমি ওর দিকে তাকিয়েও দেখবো না। তার জিন্সের ওপরে আবার সেই লম্বা ড্রেসটা চড়ানো এবং বাড়ির দরজা থেকে বেরুতে বেরুতে সে ঐ ওড়না দিয়ে তার মাথা তথা সব চুল ঢেকে ফেললো। আমি সামনের আসনে, চুপসে বসেছিলাম। পরিবারের বাকি সবাই ভালোই ছিল- JODI ও REZA, ওর দুই ভাই এবং ওর বাবা। সে রাতে বাড়ি ফিরে আসার আগ পর্যন্ত আমি ওকে এড়িয়ে চলতে সমর্থ হয়েছিলাম।

- “মা, আমাদের কথা বলা প্রয়োজন।”

- “আমি ওসব শুনতে চাই না।”

- “তোমাকে শুনতে হবে মা, প্লিজ।”

আমি শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিলাম। আমরা বসলাম।

- “মা, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। এই গ্রীষ্মে যখন আসি, আমি তখনও একজন মুসলিম ছিলাম। কিন্তু আমি তখনও তোমাদের বলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমার শক্তি সঞ্চয়ের প্রয়োজন ছিল, তোমাদের বলার আগে।”

এমন আলামত প্রায়ই দেখা যায় যে, আমাদের তরুণরা, আমাদের চাওয়া পথ ছেড়ে অন্য পথে চলছে। তবু আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না যে এ ব্যাপারে কি করা যায়। একই সময়ে আমরা প্রায় ব্যাপারটাকে অবজ্ঞা করি, ভাবি পুরো পরিস্থিতিটাই উবে যাবে এবং আমাদের এটাকে সামলাতে হবে না। তরুণ প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে, আমাদের সন্তানরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে; তারা অনেক নতুন ধারণার সঙ্গে এই পৃথিবীতে পরিচিত হয় এবং তারা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়।

১৪
নতুন পথ সম্বন্ধে কন্যাদের জ্ঞান লাভ
আমার প্রশ্নপত্রে যারা সাড়া দিয়েছিল তাদের ৬৩% ধর্মান্তরিত হবার আগে কোন মুসলিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। বিয়ের সময়ে ইসলামের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী- এক ধরনের ভয় থেকে নিয়ে ভালো মতো নিজেই ইসলাম সম্বন্ধে জানা, এর মাঝে সব ধরনের শ্রেণীভুক্তই ছিল। ২৩% বিয়ের আগেই ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং পরে একজন মুসলিমের সাথে দেখা হয়েছে এবং তাকে বিয়ে করেছে। মেয়েদের ৬% রয়েছে এমন, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে কিন্তু এখনো বিয়ে করেনি। মাত্র একজন, আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ অমুসলিমের স্ত্রী হয়েও ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছে।

মেয়েদের কেউই ইসলাম সম্বন্ধে জানার ব্যাপারে বা ধর্মান্তরিত হবার ব্যাপারে তাদের স্বামীর তরফ থেকে তাদের বাধ্য করা হয়েছে- এমন কোন অনুভবের কথা বলেনি। অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো স্ত্রীর অনুসন্ধানই বরং স্বামীকে তার স্বীয় ধর্মের অনুশীলনে ফিরিয়ে এনেছে। এইসব মুসলিম স্বামীরা (যারা প্রায় ক্ষেত্রেই অনুশীলনরত ছিল না) মনে হয়, তাদের ধর্ম সম্বন্ধে বেশ অবগত ছিল। এটা ঠিক ইসলাম কি, তা না জানার ব্যাপার ছিল না- এটা ছিল নিজের পরিবার এবং দেশ থেকে দূরে একটা স্থানে বসবাসের ব্যাপার। যেখানে ইসলামের অনুশীলন কষ্টকর ছিল। পরিবারের দায়িত্ব এবং একজন অনুসন্ধিৎসু, সমর্থনকারিণী স্ত্রী স্বভাবতই তাদের আবার তাদের বিশ্বাসের অনুশীলনের মাঝে টেনে নিয়ে আসে।

যদিও খুঁটিনাটি বিচারে এই সমস্ত মেয়েদের কাহিনী স্বাতন্ত্র বহন করে। তবু ইসলামের সাথে তাদের পরিচয় ও ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে তাদের ঘটনাবলীর অনেক সাদৃশ্যও রয়েছে। অধিকাংশ মেয়েদের ইসলামের সাথে পরিচয় হয় তাদের স্বামীদের মাধ্যমে। অন্যদের পরিচয় হয় তারা কলেজে যে বিষয় বেছে নিয়েছিল তার মাধ্যমে এবং অল্প সংখ্যক এমন রয়েছে- যাদের ইসলাম সম্বন্ধে জানার সূত্রপাত তাদের মুসলিম পড়শীদের মাধ্যমে অথবা তারা যখন কোন মুসলিম দেশে বেড়াতে গিয়েছিল সেখান থেকে। ইসলাম তাদের হৃদয়ের একটা প্রয়োজনকে ছুঁয়ে গেছে। প্রত্যেকে নিজের মতো করে ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং শাহাদা উচ্চারণ করেছে- যা কিনা নাই কোন ঈশ্বর, আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রসূল” এই ঘোষণা দিয়ে নিজেকে মুসলিম বলে ঘোষণা করা। নীচের ঘটনাগুলোতে তারা যে বিভিন্নভাবে ইসলাম সম্বন্ধে জেনেছে এবং যে সমস্ত অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে তারা ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং ঘোষণা দেয়ার পর্যায়ে এসেছে, সে সম্বন্ধে আমাদের একটা ধারণা তৈরি হবে।

১৫
‘বিশেষ অন্যজন কে দেখা
একজন মুসলিম, যে একজন বিশেষ অন্যজন' হয়ে গেছে জীবনে, তার সঙ্গে সম্পর্কটা আরো গভীর করার আকাঙ্ক্ষা, অনেকের জন্যই ইসলামকে আরো গভীরভাবে খুঁটিয়ে দেখার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।

আমার স্বামীর সাথে আমার দেখা হয় ১৯৮৩ সালে। তার আগে ইসলাম সম্বন্ধে আমার মনে সব গতানুগতিক ধারণাই স্থান পেয়েছিল যে তা মধ্যযুগীয়, মেয়েদের দমিয়ে রাখে এবং দাঙ্গাপ্রবণ। মাস্টার ডিগ্রী লাভের শিক্ষা থাকলেও ইসলাম সম্বন্ধে আমার কোন নির্দিষ্ট বা কেতাবী জ্ঞান ছিল না। ঠিক মতো নামাজ-রোজা না করলেও আমার স্বামী নিশ্চিত ছিল যে, ইসলামই ঈশ্বরের সত্যিকারের ধর্ম । আমি সচেতন ছিলাম যে, আমার ধর্মান্তরিত হবার কোন বাধ্য বাধকতা না থাকলেও আমাদের ছেলেমেয়ে হলে তাদের যে মুসলিম হিসেবে বড় করা হবে। এ ব্যাপারে আমার নিশ্চয়তা না পেলে সে আমাকে বিয়ে করবে না।

আমি অনুভব করলাম তার একটা গভীর মূল্যবোধের কাঠামো রয়েছে এবং কোরআনের সাথে আমার প্রথম পরিচয়, যে কারণেই হোক আমাকে ঠিক CONVINCED করতে পারেনি। কিন্তু বাচ্চাদের মুসলমান হিসেবে বড় করাতে আমি বিরূপ কিছু দেখতে পাইনি।

১৯৮৮ সালে আমাদের প্রথম ছেলের বয়স ছিল ১৮ মাস। নানা কারণে আমাদের বিয়ে বেশ সমস্যার মাঝে ছিল। আমি আমার স্বামীকে বোঝাবার পথ খুঁজে পেতে কোরআনের শরণাপন্ন হলাম। ১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বরে আমাদের দ্বন্দ্ব চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছালো এবং আমি তাকে পৃথকীকরণের কথা বললাম। যদিও তখনও আমি তাকে ভালোবাসতাম। আমার সামনে আর কোন উপায় ছিল না। আমি খুব শান্তভাবে কাজে যাচ্ছিলাম গাড়ি চালিয়ে। আমার হৃদয় ভেঙ্গে একটা তীক্ষ্ণ ব্যাথা যেন বেরিয়ে এলো- আমি চিষ্কার করে আল্লাহকে ডাকলাম আমাকে সাহায্য করতে। ঐ মুহূর্তে আমি আমার মুসলিম হবার আকাক্ষা আবিষ্কার করলাম এবং আমার বিয়ে টিকলো কি ভেঙ্গে গেল তাতে কিছুই আসে যায় না বলে মনে হলো। আমি আমার জন্য মুসলিম হতে চাইলাম।

আমার স্বামীর সাথে আমার দেখা হয় LOUISIANA TECH UNIVERSITY-তে। সে আমার সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়নি। তাই প্রথমেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল- জিজ্ঞেস করেছিল আমি ইসলাম সম্পর্কে পড়তে আর মুসলিম হতে ইচ্ছুক কিনা এবং আমাকে সত্যি সত্যি আমার চুল ঢেকে একটা রুমাল পরতেও বলেছিল।

তার শেষ দুটো অনুরোধে আমি অপমানিত বোধ করি, আর আমার বয়স ছিল ১৮ বছর। আমি নিশ্চিত ছিলাম না আমি বিয়ে করতে চাই কিনা। সে আমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল। আমি বাড়ি যাই এবং নিজে নিজে ইসলাম সম্বন্ধে পড়ি। আমি বদলে যাই এবং তাকে বিয়ে করতে চাই।

একজন চার্চ ত্যাগকারিণীর অবস্থা থেকে, জীবনকে আবার গুছিয়ে নিতে আমার স্বামী আমাকে সাহায্য করছিল। আমি আমার আবেগ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে আবার সেরে উঠছিলাম। আমার ধর্মান্তরিত হবার ব্যাপারে তার ভূমিকা সামান্যই। সে আমাকে ইসলামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় কিন্তু কখনই ধর্মান্তরিত হতে বলেনি। ইসলামের আমাকে ধর্মান্তরিত করার প্রয়োজনও নেই। কিন্তু আমার স্বামী পুরোপুরি তার ধর্মে ফিরে আসে। আমি দেখলাম কিভাবে সে এক ধরনের অভ্যন্তরীণ শান্তি লাভ করলো- আমার হিংসা হতো। এই অভ্যন্তরীণ শান্তি ছিল আমার চাওয়া। তাই আমি ইসলাম সম্বন্ধে বই-পত্ৰ চাইলাম। যত বেশী পড়তে লাগলাম, ততই জানার ইচ্ছে বাড়তে লাগলো। ইসলাম মানে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করা’ বা ‘অভ্যন্তরীণ শান্তি'। আমি বুঝতাম আল্লাহ নিজে আমাকে পথ প্রদর্শন করছেন।

১৬
ইসলাম সম্বন্ধে একটা ইসলামী দেশে অবস্থান সূত্রে জানা
কিছু মেয়েরা সত্যি সত্যি ইসলামী দেশ ঘুরেছিল এবং সেখানকার অধিবাসী ও তাদের ইসলামিক জীবনধারা, এদের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। ইসলামের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সভ্যতায় স্বাভাবিক আচারআচরণ ও জীবন ধারা এরা নিরীক্ষণ করেছিল।

আমার বয়স যখন ১৮, তখন আমি আমার ছেলে-বন্ধুকে বিয়ে করি, কারণ সে ভিয়েতনামে যাচ্ছিল। আমি ঠিক করলাম সেনা মেডিকেল কোর-এ নাম লেখাবো। এ সময় আমি ইহুদীবাদ পড়ছিলাম (যদিও তখন আমি একজন খৃস্টান ছিলাম)। প্রধানতঃ কারণ তারা JESUS-কে সকল পাপ মোচনকারী বলে মানে । কিন্তু আমি বুঝলাম যে আমি JESUS-কে নবী মানি, কিন্তু ইহুদীরা তা মানে । আমি কুমারীর সন্তান প্রসবও মানি, কিন্তু ইহুদীরা তাও মানে না। এছাড়া তাদের প্রায় সব বিশ্বাসই আমার জন্য চলনসই ছিল- খৃস্টান ধর্ম যাজকদের সাথে আমার যে তর্ক-বিতর্ক হতো, তারচেয়ে তো অবশ্যই স্বতন্ত্র। তাই আমি নিজেকে মনে মনে একজন অ-ইহুদী ইহুদী বলে মনে করতাম।

আমি যুদ্ধ ক্ষেত্রের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন নার্স ছিলাম এবং সায়গনের পতনের ঠিক আগের দিনগুলোতে ভিয়েতনামে ছিলাম (হা, প্রকৃত ভিয়েতনাম ফেরত- একটি ব্রোঞ্জ তারকা এবং দুইটি বেগুনি হার্ট প্রাপ্ত)। একটা রিলিফ কার্যক্রমে, জাতিসংঘের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লোকবলের প্রয়োজন হলে, ১৯৭৮ সালে আমাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল- ঐ সময় কলেরার মহামারী সৌদি আরবের দক্ষিণ অঞ্চল, ওমান এবং ইয়েমেন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, আর সে জন্য টিকাদান ও সেবার জরুরী প্রয়োজন পড়ে। বুড়ো মানুষের মতো অনেক শিশুরাও মারা যাচ্ছিল। যখন সময় হতো, আমি বেদুঈনদের নামাজ পড়া চেয়ে দেখতাম, যদিও শুধু একটা শব্দই, ‘আল্লাহ’, আমি বুঝতে পারতাম, তবু তাদের একাগ্রতা আমাকে মুগ্ধ করতো।

১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণে যাই। আমি যখন ইসলাম সম্বন্ধে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম, তার এক পর্যায়ে CAIRO-তে আমার ‘আলোর বাল্ব’ মৃদু থেকে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠলো। আমার বিয়ে ভেঙ্গে যাবার পর্যায়ে ছিল। আর যখন বিবাহ বিচ্ছেদ সত্যি এলো, তখন আমার একটা স্নায়বিক ভাঙ্গন বা মানসিক ধ্বস নামলো। কারণ আমার এবং আমার স্বামীর পরিবার আমাকে ঐ বিপজ্জনক ‘ধর্মীয়তন্ত্রের’ (CULT) হাত থেকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, যার প্রতি আমি মুগ্ধ বোধ করছিলাম। এসবের চাপে আমি দ্বিধা-সংশয়ে ভেঙ্গে পড়ি। কঠিন চিকিৎসার পরে, আমি দক্ষিণে কলেজে ফিরে যাই, আমার অর্ধ। সমাপ্ত ব্যাচেলর ডিগ্রী শেষ করতে। সেখানে আমার সাথে অনেক মুসলিম শিক্ষার্থীর দেখা হয়। যারা তাদের ধর্মে আমার জ্ঞান দেখে অবাক হয়ে যায়। ৬ মাস পরে আমি সার্বক্ষণিক কোরআন পড়ছিলাম এবং ১৯৮৯'র রমজান মাসে আমি আমার শাহাদা’ গ্রহণ করি।

আমার ধর্মান্তরকরণ শুরু হয় যখন আমি PURDUE UNIVERSITY-তে একটা ধর্মের ক্লাস নিই। ইসলামের সাথে প্রথম পরিচয়ই আমার মনে দোলা দেয় এবং আমার জানা সব ধর্মের চেয়ে বেশী অর্থবহ মনে হয়। তারপরে আমি গ্রীষ্মকালীন এক শিক্ষা সফরে মিসরে যাবার সিদ্ধান্ত নেই, যাতে একটা মুসলিম দেশ, মসজিদ এবং মুসলিম সাধারণ মানুষকে সরাসরি দেখতে পারি। এই ভ্রমণ দারুণভাবে আমার মানস চক্ষু খুলে দেয়। মিসর থেকে ফিরে : আমি স্থানীয় মসজিদে যাই এবং মুসলিম বোনেরা আমাকে জীবনের জ্ঞানের পথে যাত্রা শুরু করতে সাহায্য করে। ১৯৯৩ সালে আমি ধর্মান্তরিত হই এবং আমার জীবনের শান্তি খুঁজে পাই। ধর্মান্তরিত হবার আগে আমি ধার্মিক ছিলাম না। আমি মদ খেতাম এবং উচ্ছল জীবন যাপন করতাম। ইসলাম আমাকে শিক্ষা দিয়েছে যে এই জীবন আগামী জীবনের জন্য বিচারক্ষেত্র আর আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাটাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাপার।

AFRICAN AND MIDDLE EASTERN STUDIES-9 fegits মুখ্য বিষয়ের অংশ হিসেবে আমি ইসলাম সম্বন্ধে পড়ি- আমি বিশ্বাস করতাম না যে এ যুগেও সত্যি সত্যি কেউ ইসলাম সম্মতভাবে চলতে পারে।

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমি পশ্চিম আফ্রিকায় যাই এবং সেখানে ৩ মাস অবস্থান করি। ঐ সময়ে আমি সত্যিকার মুসলিমদের দেখা পাই। আজান শুনলে তারা মসজিদে দৌড়ে যেতো। নিজের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে কারো বাড়তি অর্থ থাকলে তারা তা কম সৌভাগ্যবানদের দান করতো। তাদের জিহ্বায় সব সময় আল্লাহর নাম থাকতো। তাদের সাথে থাকাটা আমার যত বেশী হতে লাগলো, আমি ততই বেশী করে ইসলাম গ্রহণ করতে চাইতে লাগলাম।

আমি এক সময় খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম এবং আমাকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন পড়লো (রাজধানীতে)। আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার কেউ ছিল না। আমার সব বন্ধুরাই দূরে ছিল। আমি কেবল প্রার্থনাই করতে পারতাম। প্রায় তিনদিন আমি সারাক্ষণই প্রার্থনা করি। YUSUF ISLAM (CAT STEVENS)-এর ধর্মান্তরিত হবার গল্প আমার মনে পড়ছিল; তিনি তলিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি তার জীবন ঈশ্বরের পথে উৎসর্গ করবেন, যদি ঈশ্বর তাকে তার জীবন ফিরিয়ে দেন। আমিও একই কাজ করলাম। দুইদিনের ভিতর আমি গ্রামে আমার মুসলিম বন্ধুদের কাছে ফিরে গেলাম। কিন্তু তখনও ধর্ম পরিবর্তন প্রতিরোধ করলাম।

যখন আমেরিকায় ফিরে আসলাম, তখন আমার অবস্থা করুণ হয়ে দাঁড়ালো। আমি যা চাইতাম তার চেয়ে দারুণভাবে বিচ্যুত একটা সমাজে বসবাস করা আমার জন্য দুরূহ হয়ে উঠলো। আমার সাথে বেশ কিছু আমেরিকান এবং আরব মুসলমানদের দেখা হয়- যারা খুব ভদ্রভাবে সব ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের অনুপ্রেরণা দিতো। ইসলামের টান প্রতিরোধ করার চেষ্টায় আমি এতোই পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম যে, শেষ পর্যন্ত ২১শে জানুয়ারী, ১৯৮৯ সালে আমি ধর্মান্তরিত হই।

এই সমস্ত মেয়েরা ইসলামিক দেশে যা দেখেছে, তাতে তারা অভিভূত হয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। তারা যা দেখেছে এবং অনুভব করেছে, তাতে তাদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আর তাই তারা যা জেনেছে তার অংশ বিশেষ হয়ে গিয়ে তার প্রতি সাড়া দিয়েছে।

১৭
মুসলিম প্রতিবেশী বা পরিচিতদের দেখা
তরুণীদের কেউ কেউ এদেশে মুসলিমদের সাথে পরিচিত হয়েছেতারপর তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন ও কাজকর্ম দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছে। তারা মুসলিমদের মাঝে এক ধরনের ব্যক্তিগত শক্তির পরিচয় পায়, যা তাদের বিশ্বাস উদ্ভূত বলে মনে হয়। অনেক সময় মুসলমানদের দেখে শেখাটা কেবল মৌখিক ব্যাপার- যখন তারা আগ্রহীদের কোন প্রশ্নের জবাব দিয়েছে, কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় উদাহরণ ছিল তাদের জীবন যাপন ও জীবন ধারণ ।

আমার বয়স যখন ১৫ বছর, তখন আমি ইসলাম সম্বন্ধে জানতে শুরু করি। একটা সৌদি পরিবার আমাদের প্রতিবেশী হয়ে আসে এবং তাদের ব্যবহার, পোশাক আশাক, ভাষা এবং ধর্মে মুগ্ধ হয়ে যাই। বাড়ির বৌ এবং আমি খুব কাছাকাছি চলে আসি, কিন্তু ধর্মান্তরিত হতে আমার ৪ বছর লেগেছিল। তারা আমাকে কখনো কোন কিছুর দিকে ঠেলে দেয়নি; তারা স্রেফ আমার প্রশ্নসমূহের উত্তর দিয়েছে এবং আমার প্রতি তাদের দয়া ও আতিথেয়তা দেখিয়েছে। যদিও আমি মুসলিম ছিলাম না, হাই স্কুলের গোটা সময়টাই আমি সব খারাপ কিছু থেকে দূরে থেকেছি। আমার সৌদি বন্ধুদের প্রভাবেই এমনটি হয়েছে । তাই আমি যখন ধর্ম বদলাই, তখন সত্যিকার অর্থে আমার কেবল বেশ-ভূষা আর অবসর বিনোদনের বিষয় যেমন- গান, সিনেমা, খেলাধূলা- এসবই বদলাতে হয়েছে।

মুসলিম হবার আগে আমি নাস্তিক ছিলাম এবং চার্চ ত্যাগী একজন ছিলাম। যাহোক, আমি ঈশ্বর এবং পৃথিবী সম্বন্ধে দীর্ঘ এবং গভীর আলোচনার দ্বার তাই বলে বন্ধ করে দেইনি। বহু বছরের সন্তোষজনক অথচ পোড় খাওয়া কর্মজীবনের পর আমি দক্ষিণ-মধ্য আমেরিকায় ঘুরতে শুরু করি এবং শেষ পর্যন্ত TEXAS-এ পৌছাই। এক মুসলিম জনসমষ্টি আমাকে স্বাগত জানায় অবস্থান করার জন্য এবং সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং শশাচনীয় অবস্থা থেকে সামলে ওঠার জন্য। আল্লাহর ইচ্ছায়, আমাকে পথ দেখানো হয় মুসলিম হবার লক্ষ্যে পৌছাবার, শাহাদা গ্রহণ করার এবং বিবাহিত হবার। আমি জীবনে নতুন পরিচিতি এবং পরিস্থিতি লাভ করি কিন্তু আমাকে আমার আমি'কে হারাতে হয়নি।

আমার সাথে যখন পরিচয় হয় তখন, আমার স্বামী তার ধর্মের অনুশীলন করতো না, আর তাই বাচ্চাদের নিয়ে আমি যখন চার্চে যেতে চাই, তখন তার কোন আপত্তি ছিল না। একমাত্র ব্যাপার, যা সে আমাকে অনুরোধ করেছিলসেটা ছিল, আমরা শূকরের মাংস খাবো না। আমার বাবার ব্যবসার সূত্রে মিসর থেকে আগত মেহমানরা আমাকে ব্যবহারিক ইসলাম দেখার প্রথম সুযোগ দেয়। কেবল তখনই আমার স্বামী ভাবতে শুরু করলো যে সে ইসলামকে সত্যিকার অর্থে জীবনে স্থান দিতে চায়।

এরপর আমার ফুফু একজন মুসলিমকে বিয়ে করে এবং আমি তাদের কাছে ইসলাম সম্বন্ধে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে অনেক সময় কাটিয়েছি। ১৯৯০ সালে আমি চতুর্থ সন্তানের জন্ম দিই এবং নিজের অজান্তেই নিজের বিশ্বাসের কাছে ধরা দিই। আমি যা সত্যিই বোঝাতে চাই তা হচ্ছে- আমি সত্যিই জানতাম না যে আমি ইসলামে বিশ্বাস করি। কিন্তু এক রাতে আল্লাহ্ সত্যকে আমায় ধাক্কা দিতে বাধ্য করলেন। আমি পাথরের মতো বোধ করলাম নিজেকে এবং আমার প্রভুর প্রার্থনা লেখা প্লেটের দিতে তাকিয়ে আমার তিন সপ্তাহ বয়সের মেয়ের মতো কাঁদতে লাগলাম।

আমি আমার বিশ্বাসকে ২ সপ্তাহের জন্য গোপন রাখলাম, এমনকি আমার স্বামীর কাছ থেকেও। সে যখন একদিন আমার সাথে তার কর্মস্থল থেকে ফোনে কথা বলছিল, আমি তাকে ব্যাপারটা বললাম। সে সাথে সাথে আমাকে জিজ্ঞেস করলো যে কেন আমি এমন করলাম। সে আমাকে বললো যে ব্যাপারটা খুবই গুরুতর এবং আমার হুজুগের মাথায় ঝাপিয়ে পড়া উচিত নয়। একজনের নিশ্চিত হওয়া উচিত, বাধ্য হওয়া নয়। আমার কথায় বাধা দিয়ে সে বললো- “আমি বাড়ি এসে এ সম্বন্ধে কথা বলবো’। পরে সে আমাকে বলেছিল যে, সে ফোন রেখে কেঁদেছিল আর আল্লাহকে শুকরিয়া জানিয়েছিল। সে একটা নতুন জীবন শুরু করার এবং ইসলামের পুরোপুরি অনুশীলন করার প্রতিজ্ঞা করলো। ঐ রাতে সে আমাকে বললো যে, সে আমাদের নবজাতিকার কানে আজানের ধ্বনি পৌছে দিয়েছিল- যা সে আমাদের অন্য বাচ্চাদের বেলায় করেনি।

১৯৮৩ সালে বন্ধুদের মাধ্যমে আমার একজন আরব মহিলার সাথে পরিচয় হয় এবং আমরা সবচেয়ে ভালো বন্ধুতে পরিণত হই। একদিন সে আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমি তার মেয়েদের দেখতে পারবো কিনা এবং আমি তাদের দেখে রাখি। একদিন বাচ্চারা ঘুমুতে যাবার আগে আমাকে তাদের প্রার্থনা শোনায় এবং আমাকেও শিখাতে চায়। পরদিন আমার বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করলোJESUS-কে আমি ঈশ্বরের ছেলে মনে করি কিনা। আমি বললাম, আমার সত্যিই কোন ধর্ম নেই, কিন্তু আমাকে তোমার ধর্ম ইসলাম সম্বন্ধে বলল। ঐ সময়ে থেকে শাহাদা গ্রহণ করতে আমার দুই বছর লেগেছিল।

আমি কিছু সৌদি মহিলাকে পড়াতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে যাই, যারা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজী শিখছিল। আমার কাছে ব্যাপারটা উট ছিল যে, ঐ মহিলারা একজন ছেলে শিক্ষকের কাছে পড়তে রাজী নয়। কিন্তু অনেক খোঁজখবর নিয়ে এবং ইসলামের ওপর স্কুল ও পাবলিক লাইব্রেরী থেকে অনেক বই পড়ে আমি কালোয় আচ্ছাদিত ঐসব রহস্যময় মহিলাদের বুঝতে শুরু করলাম। মেয়েরা আমার সাথে ক্রমেই আরো ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করলো এবং আমাকে তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালো, আর ইসলাম সম্বন্ধে আমার জ্ঞানও ক্রমেই প্রস্ফুটিত হতে লাগলো। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হতে দেখে আমি সত্যিই ধর্মটাকে শ্রদ্ধা করতে লাগলাম।

১৯৮৮ সালের বসন্তে আমি সত্যি সত্যি ধর্ম পালন করতে শুরু করলাম। আমি স্থানীয় ইসলামিক এসোসিয়েশনের সাথে যোগাযোগ করলাম এবং অন্য বোনদের সাথে একটা কোরআন শিক্ষা দলে যোগ দিলাম। ওখানে আমার সাথে এমন সব বোনদের পরিচয় হয় যারা আমার জন্য জলজ্যান্ত উদাহরণ এবং দিকনির্দেশক শক্তি ছিল এবং আজো রয়েছে।

খৃস্টান ধর্মে চার্চ প্রতিষ্ঠার বা ঘটনের যে নীতি- অর্থাৎ বেশীর ভাগ মানুষই কারো প্রভাবে চার্চ এবং CHRIST-কে গ্রহণ করতে একটা চার্চে যেতে শুরু করে। এই মেয়েদের বেলায়, অন্য ধার্মিক এবং উৎসর্গীকৃত প্রাণ মুসলিমদের দেখাটা একই ধরনের প্রভাব তাদের উপর বিস্তার করে। এই মেয়েরা অনুভব করেছিল যে মুসলিম হিসেবে জীবন ধারণ করাতে ঐ সমস্ত মানুষের এক ধরনের আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা ছিল, আর তা দেখে তারা নিজেরাও সত্যিকার মুসলিম হয়ে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করতে চেয়েছিলো।

১৮
কলেজের পরিবেশে ইসলাম সম্বন্ধে জানা
অনেক মেয়েদেরই ইসলামের সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে কলেজের পরিবেশে। হতে পারে কোন ধর্মীয় শিক্ষাক্রম থেকে, অথবা সাধারণ কলেজ ক্লাসের কোন বই থেকে বা মুসলিম ছাত্র বা বন্ধুদের কাছ থেকে। ইসলাম সম্বন্ধে শুনে তারা খুবই আগ্রহ বোধ করে।

ইংরেজী চর্চার একটা কথোপকথন দলের অংশ হিসেবে আমি আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের একটা দলের সাথে দেখা করি। একজন PALESTINIAN লোককে যখন তার জীবন, পরিবার, বিশ্বাস ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে শুনি, তখন আমার ভিতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। আমি ইসলাম সম্বন্ধে যতই জানতে থাকি, ততই আমার নিজের জীবনের একটা সম্ভাবনা হিসেবে, এতে আমি আগ্রহী হয়ে উঠি।

পরবর্তী টার্মেই ঐ গ্রুপ বিলুপ্ত হয়। কিন্তু আমি "INTRODUCTION TO ISLAM" নামক ক্লাসে নাম লেখাই। এই ক্লাস CHRISTIANITY সম্বন্ধে আমার যত উদ্বেগ ছিল, সব আবার জাগিয়ে তোলে। ইসলাম সম্বন্ধে জানতে গিয়ে আমার সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হয়ে যায়। আদমের আদি পাপের জন্য আমরা সবাই শাস্তি পাই না। আদম আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন আর আমাদের স্নেহশীল আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহর কোন রক্ত বিসর্জনের প্রয়োজন নেই, ক্ষমার মূল্য হিসেবে। আমাদের নিষ্ঠার সাথে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং আমাদের পথের পরিবর্তন করা উচিত। JESUS কোন ঈশ্বর ছিলেন না; বরং অন্য সব নবীর মতো একজন নবী ছিলেন। তাঁরা সবাই একই বাণী প্রচার করেছিলেন ঃ কেবল একজন সত্যিকার ঈশ্বরে বিশ্বাস আনো, কেবল এক ঈশ্বরকে উপাস্য কর এবং তার কাছে নিজেকে সমর্পণ কর, আর সত্তাবে জীবন যাপন কর এবং তার পাঠানো দিক-নির্দেশনা মতো।

এয়ী আর JESUS-এর প্রকৃতি (পুরো ঈশ্বর, পুরো মানুষ না কি মিশ্র। কিছু?) সম্বন্ধে আমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি এর মাঝে পেয়ে যাই। আল্লাহ একজন নির্ভুল বিচারক, যিনি আমাদের বিশ্বাস ও সত্ত্বার্যের হিসেবে আমাদের হয় পুরস্কৃত করবেন বা শাস্তি দেবেন। আমি এমন এক শিক্ষা পেলাম যা সবকিছুকে তার সঠিক মূল্যায়নে প্রতিষ্ঠিত করে এবং যে শিক্ষা আমার হৃদয় এবং বুদ্ধিবৃত্তি উভয়ের কাছেই আবেদন রাখে। এটা আমার কাছে স্বাভাবিক লেগেছিল। এটা আমার কাছে সংশয়পূর্ণ ছিল না। আমি অনুসন্ধান করছিলাম। আমার বিশ্বাস স্থাপনের একটা স্থান আমি পেলাম।

কলেজে আমি মনোবিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়তাম। কিন্তু ধর্মে ফিরে যাবার একটা প্রয়োজন অনুভব করতাম। যদিও আমি খৃষ্টধর্মের সাথে অনেক কিছুতেই একমত হতে পারতাম না। বিশেষতঃ যেভাবে ঐ ধর্মকে এর আগে আমার জীবনে উপস্থাপিত করা হয়েছিল। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মতো বিভিন্ন ধর্মের জগতে ঘোরাফেরা করে আমি কলেজে ধর্ম শিক্ষার ক্লাসে নাম লেখাই এবং আদি পুস্তকের সাহিত্য বেছে নিই। একটা ব্যাপার মনে হয়েছিল যে, খৃষ্টধর্মের মূলে যাওয়া যাবে। তখন মনে হয়েছিল খৃষ্টধর্ম চলনসই-ই ছিল। কিন্তু পরে বদলে গিয়েছে, এমন পর্যায়ে যে মেয়েদের সত্যিকার অর্থে গ্রহণ করা হয়নি। এ ছাড়া ধর্মের আরো অনেক কিছুই বদলে গেছে। বিষয়বস্তু পড়তে গিয়ে আমি এমন সব বিষয় জানতে শুরু করি, যা ধর্ম যাজকরা কখনোই চার্চে আলোচনা করেন না। ব্যাপারটা আমাকে কাঁপিয়ে তোলে। আর আমাকে বাধ্য করে বাইবেল সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলতে।

আমার স্বামী বিয়ের উপহার হিসেবে আমাকে একখানা কোরআন দিয়েছিল এবং যে সময় আমি ধর্ম শিক্ষার ক্লাস করছিলাম, সে সময়টা জুড়ে তা সেলফে পড়ে ছিল। এর পরে আমরা sYRIA-তে যাই পরিবারের সাথে দেখা করতে। আমি ভাষাটা জানতাম না, তাই হাতে অনেক অবসর থাকতো। সুতরাং আমি পুরো জিনিসটাই পড়লাম এবং পড়তে গিয়ে যে সমস্ত ব্যাপার আমার খটকা লাগতো বা বেঠিক মনে হতো সে সব খুঁজতে চেষ্টা করলাম। ইংরেজী অনুবাদে এমন জিনিস পেলাম যাতে আমার অস্বস্তি লাগতো- যেমন, "LIGHTLY BEAT YOUR WIFE"। তখন আমার স্বামীকে বলতাম, তুমি এসব কিভাবে বিশ্বাস কর?' তখন সে বলতো, আরবীতে ব্যাপারটা ঠিক এরকম নয়। এবং তারপর মূল থেকে ব্যাখ্যা করতো। আমি পুরো জিনিসটা পড়েছি এবং কোন কিছু অসঙ্গত পাইনি। এবং আমি ভাবলাম, “বেশ, এটা আমার দেখা সবকিছুর চেয়ে শ্রেয়। আমি ১৯৮৮ সালে ধর্মান্তরিত হই।

আমি ছিলাম ROMAN CATHOLIC। সমাজ বিজ্ঞানের একটা ডিগ্রী লাভের শিক্ষার অংশ হিসেবে আমি আফ্রিকান-আমেরিকান বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি। THE AUTOBIOGRAPHY OF MALCOM x পড়ার পর আমি বাধ্য হলাম, হজ্ব করার আর BROTHER MALCOM-এর যে পরিবর্তন এসেছিল, তার পেছনের শক্তিকে বুঝতে- যখন তিনি আমেরিকায় ফিরে এসেছিলেন এবং বলেছিলেন যে বর্ণ বৈষম্যবাদ (সাদাদের বিরুদ্ধে কালোদের, এক্ষেত্রে) ইসলামের অংশ নয়। আমি যখন পড়তে শুরু করি তখন আমার মনে হয়েছিল, অন্য ধর্মকে জানতে চেষ্টা করায় আমার মাথায় নির্ঘাত বজ্রপাত হবে। প্রথম তিন মাস আমি কিছু কিছু পড়াশোনা করি, কিন্তু পরবর্তী তিনমাস গভীরভাবে পড়তে থাকি এবং তার পরে আমি কলেমা পড়ি- ১৯৯৩ সালের ২৯শে মে, প্রথমবারের মতো মসজিদে পা রাখার আগেই। ১৯৯৩-এর ৩০শে মে, আমি মসজিদে সাক্ষীদের সামনে আবার শাহাদা গ্রহণ করি (কলেমা পড়ি)।

পরিবর্তনটা আমার জন্য কিছু বেছে নেয়ার ব্যাপার ছিল না। আমার জন্য এটা ছিল নিজের ঘরে ফিরে যাওয়া। এটা আমাকে এমন সব উত্তর দিল যার প্রশ্ন আমার মনের মাঝে ছিল এবং এমন সব প্রশ্নের জন্ম দিল যা আমি কখনো ভাবিনি। আমি ইসলামকে ভালোবাসি। উম্মার ধারণাটা আমি ভালোবাসি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ যে আমাকে পরীক্ষা করার যোগ্য মনে করেছেন।

১৯
আধ্যাত্মিক শূন্যস্থান পূরণের জন্য অনুসন্ধান।
অনেক সাড়াদানকারী মেয়ে আধ্যাত্মিক জগতের এমন কিছুর খোঁজে ছিল যা তাদের জীবনের শূন্যতাকে ভরে দেবে। এই উন্মুক্ততার মাঝে দিয়েই অনেকেই ইসলামের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে শুরু করে। ধর্মান্তরিত হবার অভিজ্ঞতার যে বর্ণনা মেয়েরা দিয়েছে, তার প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই শূন্যতা পূরণের প্রয়োজনটা প্রতিফলিত হয়। তারা বিভিন্ন অবস্থা থেকে ধর্মান্তরিত হবার মুহূর্তে পৌছায় কিন্তু অধিকাংশ মেয়েই যেন গ্রহণ করার জন্য তৈরি হয়েই ছিল, কারণ তাদের ভিতরের এই প্রয়োজন এবং মুসলমান কোন জনের মার্জিত আহবান বা অন্য কোন সূত্রের তরফ থেকে আহবান, যা তাদের হৃদয় ও আত্মাকে ছুঁয়ে যায় ।

আমি এমন একজনকে বিয়ে করি যে খৃস্টান ছিল না আর আমরা দুজনেই কোন ধর্মীয় আচার-আচরণের ধার ধারতাম না। আমি তখনও নিজেকে একজন খৃস্টানই মনে করতাম। এছাড়া আর কিইবা রয়েছে, আমি ভাবতাম । আমি তখনও ঈশ্বরে এবং তার পৃথিবী সৃষ্টিতে বিশ্বাস ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু বড় হতে হতে শেখা বাকি বিশ্বাসগুলো সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত ছিলাম না।

১৯৯০ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের পর আমি ভাবতে শুরু করলাম যে, আমার আসলে কি প্রয়োজন আর আমার বিশ্বাসই বা কি? ১৯৯১ সালের গোড়ার দিকে আমি লাইব্রেরীতে বই খুঁজতে শুরু করি এবং ইসলাম সম্বন্ধে পড়তে শুরু করিমূলতঃ এই জন্য যে, আমি অন্য যে কোন কিছুর চেয়ে এর প্রতি বেশী কৌতুহল অনুভব করি। আমি ধীরে ধীরে এর উপর বেশ কিছু বই পড়ি, কিন্তু আমি আমার জীবন যেভাবে যাপন করে আসছিলাম সবকিছু তেমনই চলছিল। ১৯৯২ সালের শরৎকালে, আমি ঠিক করলাম যে এ ব্যাপারে আমার কিছু করা উচিত হয় গুরুত্বের সাথে ও গভীরভাবে এ সম্বন্ধে জানা উচিত, নয় বাদ দেয়া উচিত। আমি যে ছোট শহরে থাকতাম, তারচেয়ে কুড়ি মাইল দূরে, MANHATTAN-এ, আমি অনেক আমেরিকান-মুসলিম বোনদের দেখা পেলাম। আমি তাদের সাথে পড়াশোনা করলাম এবং গত দেড় বছর ধরে আমি যে সমস্ত পুঁথিগত বিদ্যা সাত করেছি, তার বাস্তব প্রয়োগ সম্বন্ধে শিখলাম। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি আমার শাহাদা গ্রহণ করি।

আমার সংগ্রাম শুরু হয় বহু বছর আগে, যখন আমি আমার আত্মপরিচিতির খোজে ছিলাম। ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে আমেরিকাতে একজন কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে বড় হওয়াতে, আমি অনেক অর্থপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই। অনেকগুলো বর্ণবাদ ইস্যুতে মিছিল করে আর MISSISIPPI ও TEXASএর শুরুর দিকের আত্মীকরণের চাপ অনুভব করে- একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে জীবনে আমার ভূমিকাকে, আমি প্রশ্ন করতে শুরু করলাম।

পেশায় আমি সফল ব্যক্তিত্ব হলেও, আমার ব্যক্তিগত জীবন একবারে হযবরল অবস্থায় ছিল। খারাপ বিয়ে, বাবা-মা-ভাই-বোনদের সাথে খারাপ সম্পর্ক, চার্চ ও ঈশ্বর নিয়ে অতৃপ্তি- এই সবকিছুই আমাকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন করলো যে, আমি কে? কেন? এবং কিভাবে আমি এই সমস্ত আপনজনের সাথে, তথা সাধারণভাবে সমগ্র পৃথিবীর সাথে আমার সম্পর্কের উন্নয়ন করতে পারি।

আমি কৃষ্ণাঙ্গদের ইতিহাসে গবেষণা শুরু করে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করি। আমি জেনে আশ্চর্য হলাম যে, বেশীরভাগ কৃষ্ণাঙ্গই ইসলামিক দেশসমূহ থেকে এদেশে আসে। আমার কিছু সুন্নী মুসলিমের সাথে পরবর্তীতে দেখা হয়, যাদের স্বর্গ এবং নরকের ধারণা আমার সূফী হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। ঐ সময় আমি WASHINGTON D.c'র একটা CATHOLIC স্কুলে বক্তৃতা ও নাটক সম্বন্ধে শিক্ষা দিতাম।

১৯৭৪ সালে আমি মুসলমান হই। বছর শেষে আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়, কারণ অনেক ছাত্র-ছাত্রীরাও ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়।

ইসলাম আমাকে প্রশান্তি দেয়। খৃস্টান হিসেবে আমি যে সমস্ত অপরাধ বোধ অনুভব করতাম, সে সব ছাড়াই ইসলাম আমাকে ঈশ্বরকে পেতে সাহায্য করে। আমি সব সময়ই ঈশ্বরকে ভালোবাসতাম, আর আমি সরাসরিই (ধর্ম যাজক। ছাড়া) তার সাথে কথা বলতে পারি, এই জ্ঞানটা যেন ছিল এক স্বাগত আপ্যায়ন।

ইসলামের সাথে আমার পরিচয় ঘটে ১৪ বছর বয়সে, কিন্তু পারিবারিক সংঘাতের কারণে আমি শিখতে বা অনুশীলন করতে পারিনি। কলেজে যাবার জন্য বাড়ি ছাড়ার পরে আমার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা লাভ করি। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন আমাকে সাধন করতে হয়েছিল (বেশ-ভূষা ও খাবারের মতো স্পষ্ট ব্যাপারগুলোর বাইরে), তা ছিল আমার ও আমার পরিবার তথা প্রাক্তন বন্ধুদের সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি করা। আমি এটা করেছিলাম, নিজের একটা সংরক্ষণ হিসেবে, যা আমাকে আমার ধর্মে শক্তি সঞ্চয় করতে দেবে- কোন বিচ্যুতি ছাড়া। কিছু হারানোর অনুভূতি আমার সামান্যই ছিল, কারণ নতুন পাওয়া মুসলিম বন্ধু ও পরবর্তীতে আমার স্বামী দ্বারা সে শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যায়।

২০
কোরআনের কর্তৃত্ব অনুভব করে।
মেয়েদের অনেকেই কোরআনের প্রতি তাদের ক্রমবর্ধমান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেছে, যাকে ঈশ্বরের শেষ এবং আক্ষরিক বাণী মনে করা হয়। কিছু মেয়েদের জন্য, কোরআন ছিল তাদের ধর্মান্তরিত হবার অভিজ্ঞতার এক উল্লেখযোগ্য অংশ।

ইসলামে মেয়েদের স্থান নিয়ে এক বিতর্ক অনুষ্ঠানের আগে, একজন মুসলিমের তরফ থেকে কোরআন পড়ার চ্যালেঞ্জ ছিল আমার ধর্ম পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার শুরু। খৃস্টানদের তুলনায় মুসলিম মেয়েরা নিপীড়িত ও অপেক্ষাকৃত খারাপ একটা অবস্থানে থাকে। আমার মনেও, গতানুগতিক এই ধারণা ছিল। আমি CATHOLIC পরিবেশে বড় হওয়া নামমাত্র এক খৃস্টান ছিলাম, কিন্তু ধর্মের অনুশীলন ছিল না, কেবল নিজেকে খৃস্টান হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়োজন ছিলযাতে আমার বৃহত্তর পরিবারের সামনে আমাকে খুব বিদ্রোহী না দেখায় (আমার পরিবারও আসলে নামমাত্রই খৃস্টান ছিল)।

কোরআন এবং নবীর হাদীস পড়াই আমাকে হার মানায়। আমার এক বিশ্রী অভিজ্ঞতা হয়- যখন, যে পুরো সপ্তাহ ধরে আমি কোরআন পড়ি, সে সপ্তাহে আমি ঘুমাতে পারিনি- কেবল এপাশ ওপাশ করেছি এবং জ্বরগ্রস্তের মতো ঘেমেছি। আমি ধর্মীয় ব্যাপারে অদ্ভুত ও বিস্তারিত সব স্বপ্ন দেখি, আর যখন আমি বিছানা ছেড়ে উঠতাম, তখন আমার একমাত্র চাওয়া থাকতো কোরআন পড়া চালিয়ে যাওয়া। এমনকি আমি আমার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য কোন পড়াশোনা করিনি, যা একই সময়ে চলছিল।

আমি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের একটা কোর্স শুরু করি, যা আমাকে পরবর্তীতে ইসলাম সম্বন্ধীয় পড়াশোনার মাঝে নিয়ে যায়। বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচারে, কোরআন কত শক্তিশালী এক হাতিয়ার ছিল তা বোঝাতে আমাদের অধ্যাপক যখন কোরআনের একটা অংশ পড়ে শোনাচ্ছিলেন- আমার হৃদয় তখন অভিভূত হয়ে যায় । আমি জানলাম, আমি সত্যের সন্ধান পেয়েছি। ৮০'র দশকের গোড়া থেকে আমি ঈশ্বরের খোঁজে ছিলাম। ঐ মুহূর্তে আমি বুঝলাম যে,আমি কোন এক দিন মুসলিম হবো। ঐ ক্লাস শেষ হবার পর আমি ইসলাম সম্পর্কে আমার তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকলাম। আমি কোরআনের একখানা ইংরেজী অনুবাদ কিনে আনি এবং প্রতিদিন তা পড়তে থাকি। ঐ সময়ে আমি যেহেতু বাড়ীতে থাকতাম, সেহেতু আমার পরিবারের কাছ থেকে এসবের বেশীর ভাগই লুকিয়ে চলতাম। আমি আমার নতুন বন্ধুদের সাথে প্রায়ই মিলিত হতাম আর আমার জীবনধারাও বদলে যেতে শুরু করলো।

আমার ধর্মান্তরিত হওয়া ছিল একটা লম্বা উপাখ্যান। জুনিয়র হাই স্কুলে থাকা অবস্থায় আমি খৃস্টধর্ম ত্যাগ করি। আমি বড় হয়েছি METHODIST হিসেবে। আমার বাবা এক সময় ধর্ম যাজক ছিলেন এবং তাই বেশ কড়া ছিলেন। আমার বাবা-মা উভয়ে চার্চ ত্যাগ করেন। তারপর মা রেড ইন্ডিয়ান LAKOTA পন্থী হয়ে যান। আমি অন্যান্য সভ্যতাকে বোঝার একটা দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বড় হইযাতে আমি আমার সভ্যতা থেকে বাইরে গিয়ে অন্যদের দেখার চেষ্টা করতে পারি। ইরানী বিপ্লব, আমার মাঝে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। ওদের মানুষ ও সভ্যতা সম্বন্ধে জানার সিদ্ধান্ত নিয়ে, আমি ইরানের ইতিহাস পড়তে শুরু করি, যা আমাকে নিয়ে যায় ইসলামের ইতিহাসে একটা অধ্যায় যা এমনকি স্কুলেও ছুঁয়ে দেখা হয়। এভাবে আমি কোরআন পড়ার পর্যায়ে পৌছি। একজন আরবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক যখন ভেঙ্গে পড়ে, তখন আমি এক ধরনের মানসিক ধ্বসের সম্মুখীন হই এবং কোরআনের দিকে ফিরে তাকাই। মানুষ ছাড়াও অন্য কিছুর উপর নির্ভর করার একটা প্রয়োজন আমি বোধ করি। আমার মা তখন মৃত, আমার পরিবারও তখন অনেক দূরে। আমি বিশ্বাসভরে কার দিকে তাকাতে পারি, আমার জানা ছিল। পবিত্র কোরআন আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মুসলিম মেয়েদের একটা শিক্ষা গ্রুপের সঙ্গে আমি যোগাযোগ স্থাপন করি যারা আমাকে অনেক সমর্থন ও তথ্য প্রদান করে। আমি ইসলামের যুক্তির ভিত্তিকে বিশেষভাবে পছন্দ করলাম। শেষ পর্যন্ত শাহাদা গ্রহণ করতে আমার এক-দেড় বছর লেগেছিল।এই পবিত্র গ্রন্থ, আল-কোরআন, যাকে মুসলিমরা ঈশ্বরের শেষ বাণী ও মানবকুলের দিক-নির্দেশক বলে শ্রদ্ধা করে থাকে। এই মেয়েদের হৃদয়কে এমনভাবে ছুঁয়ে গেছে, যেন এটা বিশ্বাসীদের প্রতি ছুটে আসার ও নিজেদের যা পবিত্র ও ঐশী তার কাছে সমর্পণ করার একটা আহবান ছিল। তারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এবং আবেগের সাথে ইসলামিক ধর্মগ্রন্থের প্রতি সাড়া দেয়।

২১
ইসলামের মাঝে উত্তর খুঁজে পাওয়া
মেয়েদের কেউ কেউ তাদের মুসলিম স্বামীদের কাছে খৃস্টধর্মের যথার্থতা প্রমাণ করতে চেয়েছে। তারা খৃস্টান নেতাদের কাছে সাহায্য চায়, কিন্তু তা করতে গিয়ে তারা নিরাশ হয়। কোন কোন মেয়েরা মুসলিম অনুভূতি নিয়েও খৃষ্ট ধর্ম ত্যাগ না করতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। অনেক ধর্মীয় প্রশ্নই মনে হয়েছে তাদের অস্থিতিশীল করে রেখেছে। অথচ মনে হয়েছে ইসলামের কাছে সে সবের উত্তর রয়েছে'- খৃস্টান ধর্মতত্ত্বে প্রায়ই সংশয় দেখা দিয়েছে। ইসলামে কেবল একজন ঈশ্বরই রয়েছেন, মুসলিমরা তাই প্রশ্ন করে, তাহলে JESUS আবার কিভাবে ঈশ্বর হন?”

বহু খৃস্টানের মতে, ঈশ্বরের আক্ষরিক বাণী যে বাইবেল, তাও এখানে প্রশ্নের সম্মুখীন। মুসলিমরা জোর দিয়ে বলে যে, যে সমস্ত পুস্তক খন্ড নিয়ে বাইবেল গঠিত, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেগুলোতে বহু পরিবর্তন করা হয়েছে। আর বাইবেল লেখা হয়েছে এমন মানুষ দ্বারা যারা অনুপ্রাণিত বোধ’ করেছেন এবং প্রায়ই ঘটনা ঘটার বহু বছর পরে সে সব লেখা হয়েছে। তারা (মুসলিমরা) বাইবেলে বিপরীতধর্মী বক্তব্যসমূহও নির্দিষ্ট করে দেখায়।

মুসলিমরা নিজেদের বিশ্বাস সম্বন্ধে নিশ্চিত ও বিজ্ঞ এবং প্রায়ই ঈশ্বরের উত্তরের ও শান্তির সন্ধানী কোন মানুষের সংশয়ের শূন্যতা পূরণ করতে সমর্থ । মেয়েদের অনেকের গল্পেই তারা যেভাবে খৃস্টান ধর্মতত্ত্ব নিয়ে অসন্তুষ্ট, তা নানা মাত্রায় ফুটে উঠেছে। কিছু সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এয়ী (TRINITY), আদি পাপ অথবা ঈশ্বরের পুত্র JESUS বা ঈশ্বর JESUS। এ ধরনের কিছু ধারণা নিয়ে তাদের নৈরাশ্য, তাদের জন্য নতুন ধর্মীয় অভিব্যক্তির দ্বার উন্মোচন করতে সাহায্য করে।

আমাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পরে,আমি চার্চে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিই। আমি এতই আগ্রহী হয়ে উঠি যে আমি গান গাইতাম, বাইবেল পড়তাম আর আমার স্বামীকে বোঝাতাম- চার্চে যাওয়াটা তারও কত প্রয়োজন। কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে আমার ও আমার মেয়ের সাথে বেশ ক’বার চার্চে যায়।

একদিন সে আমাকে বললো, “আমি আর যেতে পারবো না এবং আমি চাই না, তুমি আমাদের মেয়েকেও আর নিয়ে যাও।” আমাদের মাঝে একটা বড় ঝগড়া হলো এবং আমাদের ছাড়াছাড়ি প্রায় হয় বলে- তখন আমরা ঠিক করলাম যে, আমরা দুজনেই দুটো ধর্মকেই আবার ভেবে দেখবো। আমি যদি তাকে সন্তোষজনকভাবে খৃস্টধর্ম ব্যাখ্যা করতে পারি, তবে সে খৃষ্টান হয়ে যাবে। একই সময়ে আমি আবার ইসলাম নিয়ে চিন্তা করবো। (আমাদের বিয়ের ২ বছর পর আমি ইসলাম গ্রহণ করি, কিন্তু সে ধর্ম পালনে তৎপর না হওয়ায় আমি খুব তাড়াতাড়িই আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।)।

ধর্মযাজক ও ধর্মতাত্ত্বিকসহ এ ব্যাপারে প্রধান যারা, তাদের আমি অনেক প্রশ্ন করতে থাকি- যাতে উত্তর পেয়ে আমি আমার স্বামীর কাছে খৃষ্টধর্ম প্রমাণ করতে পারি। আমি এমন একান্তভাবে ব্যাপারটা চাইতাম যে, এদের অনেকের কাছেই সাহায্য চাইতে গিয়ে আমি কেঁদে ফেলি এবং এদের বেশীরভাগই আমি দুঃখিত। আমি জানি না' অথবা 'আমি তোমাকে লিখে জানাবো’- এ ধরনের উত্তর দিতো। কিন্তু আমি কখনোই তাদের কাছ থেকে কিছু পাইনি। আমি তাকে ধর্মান্তরিত করার জন্য যত চেষ্টা করতে থাকি, ততই আমি ইসলামের কাছে চলে যেতে থাকি, এর মুক্তির জন্য। আর শেষ পর্যন্ত আমি আল্লাহতে বিশ্বাস ও তার একত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করি।

একের পিঠে এক ঘটনা মিলে আমার স্বামী ও আমি এক সময় ধর্ম অনুশীলনকারী (PRACTICING) মুসলিমে পরিণত হই। ইসলাম আমাকে মনের শান্তি দেয়, কারণ আমাকে এয়ী বা ঈশ্বর কিভাবে একের ভিতরে তিন' বা ঈশ্বর কিভাবে ক্রুশে মারা গেলেন এসব বুঝতে হয় না। আমার জন্য ইসলামই এসবের উত্তর।

আমি যখন কলেজে গেলাম, তখন আমি নিজেকে AGNOSTIC বলতাম। আমি মনে করতাম আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি এবং এ সম্বন্ধে আর কিছু করতে চাইতাম না। কয়েক বছর পরে আমি ধার্মিক অবস্থায় ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এর মাঝে লেবানন থেকে একজন মানুষের সাথে আমার দেখা হয়, যে পরবর্তীতে আমার স্বামী হবে। সে এবং আমি উভয়ে ইসলাম সম্বন্ধে জানতে শুরু করি এবং ৬ মাস পরে আমি ধর্মান্তরিত হই। তারও ৬ মাস পরে আমরা বিবাহিত হই। JESUS ঈশ্বরের ছেলে নন, কোন অপরাধবোধ ছাড়া একথাটা বলতে আমার অনেক সময় লাগে। কিন্তু আমি অনুভব করি, বিশ্বাসগুলো (উভয় ধর্মের) বেশ কাছাকাছি। MARY কুমারী ছিলেন এবং JESUS একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী ছিলেন। তফাৎটা ছিল- JESUS-এ ঐশ্বরিক চরিত্রের ব্যাপারে।

“মুহাম্মদ একজন খুনী এবং তরবারী দ্বারা ইসলামের প্রসার ঘটে” এর বাইরে ইসলাম সম্বন্ধে আমি কখনো কিছু জানতাম না। বিয়ের আগে আমি আমার স্বামীর সাথে মেলামেশা করতাম (সে তখনও অনুশীলনকারী মুসলিম ছিল না)। কিন্তু আমরা যখন বিয়ে করলাম এবং শেষ পর্যন্ত সে যখন তার পরিবারকে জানালো, তখন তার বাবা বললেন যে, আমাকে মুসলিম হতে হবে। আমি বললাম যে, একজন পুরুষের জন্য আমি আমার ধর্ম বদলাতে পারবো না। কারণ, আমি সব সময়ই ঈশ্বরের খুব কাছের ছিলাম। কিন্তু আমার কখনো সোজা হাঁটার একটা পথ ছিল না। তারপরে আমি কি বিশ্বাস করি সে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করলাম যে আমি ইসলাম সম্বন্ধে ভেবে দেখবো আর ঈশ্বরকে বললাম আমাকে দিক-নির্দেশনা দিতে। কয়েক মাসের মধ্যে আমি আমার স্বামীর এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে শুরু করলাম, যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং একজন বিনয়ী অনুশীলনরত মুসলিম ছিলেন। আমি তাকে অনেক প্রশ্নই জিজ্ঞেস করি। এই বিষয়টি (ইসলাম সম্বন্ধে প্রশ্নপর্ব) আমি আমার স্বামীর কাছ থেকে আলাদা রাখি কারণ আমি চাইছিলাম যতটুকু সম্ভব নিষ্ঠাবান হতে ও প্রভাবমুক্ত থাকতে। রবিবারের স্কুল বই এবং প্রশিক্ষণে বর্ণিত নরকে পোড়ার দৃশ্যের সেই আগুনঝরা ধারণা থেকে মুক্তি পাওয়া ছিল ছিল আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ব্যাপারের একটা। আমাকে কতবার বলা হয়েছে যে, আমি যদি বিশ্বাস না করি যে, JESUS.আমার পাপের জন্য মারা গিয়েছেন এবং আমার ত্রাণকর্তা ছিলেন তবে চিরকালের জন্য আমি জাহান্নামে যাবে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে পথ দেখিয়েছেন। আমি ইসলাম সম্বন্ধে অনেক বই পড়ছিলাম, আর যা কিছুই পড়ছিলাম- তাই ছিল আমার ভিতরের অনুভূতির কথা। সব প্রশ্নের উত্তরই সেখানে ছিল। আমি সবকিছুই বুঝে না থাকতে পারি, তবে যতটুকু বুঝেছি, তাই অর্থবহ মনে হয়েছে। আমি ইসলাম গ্রহণ করি এবং আমার ছয় মাসের স্বামীর সাথে প্রথম রমজান মাস পালন করি। আমার স্বামীও তখন তার বিশ্বাসের অনুশীলন করছিল।

খৃস্টানরা যে JESUS কে ঈশ্বর মনে করে, এই ধারণাটা কিছু মেয়েদের কাছে বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়নি। মুসলিমরা তাই এই ধারণাকে এই বলে বাতিল করতে সমর্থ হয় যে, যে কোন কিছু বা জনকে ঈশ্বরের সমান পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটা একটা বিরাট পাপ। এই বিষয়টাই সম্ভবতঃ খৃস্টান এবং মুসলিমদের মাঝে সবচেয়ে বড় বিভেদ সৃষ্টিকারী বিশ্বাস। খৃস্টানদের জন্য JESUS কে ত্রয়ীর (TRINITY) অংশ হিসেবে না মানাটা একটা বিরাট পাপ, অথবা মুসলমানদের জন্য JESUS কে (যাকে তারা শ্রদ্ধেয় নবী মনে করে) ঈশ্বরের পর্যায়ের ভাবাটাই সবচেয়ে জঘন্য পাপ বলে গণ্য হবে।

আমি আমার বন্ধুকে বললাম আমার সাথে চার্চের প্রার্থনায় যেতে। সে বললো যে, সে মুসলিম, চার্চে যায় না। একজন মুসলিম কি জিনিস?' আমি জানতে চাইলাম। একদম অনবগত অবস্থায় যে আমার জীবনটা তার উত্তর দিতে শুরু করার সাথে সাথে চিরকালের জন্য বদলে যাবে। প্রথমে আমি মনোেযোগ দিয়ে শুনছিলাম, যখনি সে JESUS কে ঈশ্বরের পুত্র বলে অস্বীকার করার অংশে পৌছালো, এমনকি এও অস্বীকার করলো যে, আমাদের জন্য তিনি ক্রুশে নিজেকে বলিদান করেছেন, আমি আর পারলাম না- ক্ষমা করতে বললাম আমাকেনিজেকে তিরস্কার করতে লাগলাম এতটুকু সময় অপচয় করার জন্য। কেননা আমি তো প্রার্থনার সুযোগ হারিয়েছি। এখন আমাকে স্বীকারোক্তির জন্য যেতে হবে ।

পরে আবার আমরা নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে কথা বলি। আমাদের আরো বেশী বেশী করে অপরকে নিজের বিশ্বাসের মতো বিশ্বাসে বিশ্বাসী মনে হতে লাগলো ঃ স্বর্গ ও নরক, ফেরেশতাসমূহ, মানুষের প্রতি আমাদের কর্তব্য, আসমানী কিতাবসমূহ। কেবল ঐ JESUS ব্যাপারটাই আমাদের যেন দুই বিপরীত মেরুতে নিয়ে যেতো। আমি অবশ্য আরেকটা জটিলতা লক্ষ্য করলাম, সবকিছু সত্ত্বেও আমি তার প্রেমে পড়ে যাচ্ছিলাম।

ইসলাম কোন ইস্যু ছিল না। ইস্যু ছিল খৃস্টধর্ম। আমি সব দিক থেকেই একজন সন্দেহবাদী ছিলাম, আর অপরাধবোেধও ছিল সব কিছু ছাপাননা। আমি এই সন্দেহ-দানবের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য, সম্ভব সব ধরনের পরামর্শ চেয়ে বেড়াতে লাগলাম। তারপর এক সপ্তাহ সময়ের মাঝে তিনটি ঘটনা ঘটলো, যা আমাকে গোটা খৃষ্ট ধর্মকেই ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায়।

প্রথম আমি একজন নান (NUN)-এর কাছে যাই, যাকে আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করতাম এবং তার কাছে আমার হৃদয়ের সব কথা খুলে ধরি। সে খুব সহমর্মিতার সাথে সাড়া দেয়। কিন্তু বিদায় ক্ষণে সে আমার হাতে একখানা কোরআন ধরিয়ে দেয়। আমি খুব সংশয়ে পড়ে গেলাম। তারপর আমি আমার ধর্ম শিক্ষকের কাছে গেলাম। কথা বলতে বলতে আমার সংশয় আরো বেড়েই চললো এবং শেষকালে আমি বলেই ফেললাম- “দেখুন, আমি শুধু চাই যে সন্দেহাতীতভাবে এবং পুরো বিশ্বাস নিয়ে, আপনি আমাকে বলেন যে, JESUS CHRIST ঈশ্বরের পুত্র। তিনি আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন, “আমি তোমাকে তা বলতে পারবো না। এখন আমার রাগও হলো। এ সমস্ত মানুষ জনের হয়েছেটা কি যে, তারা আমি যা জানতে চাইছি তা বলতে অস্বীকার করছে?

শেষ পর্যন্ত আমি ঈশ্বরের শরণাপন্ন হলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, অন্ততঃ তিনি আমার জন্য তখনও রয়েছেন। এবং আমাকে সাহায্য করবেন। আমি প্রার্থনা করলাম যে, তিনি যেন আমার হৃদয়-মন খুলে দেন এবং আমাকে আমার খুঁজে চলা উত্তর দেখিয়ে দেন। আমি একটা পন্থা অবলম্বন করলাম যা আমি আগেও বহুবার করেছি। আমার যাবতীয় প্রার্থনা মনে মনে শেষ করে আমি হঠাৎই অপরিকল্পিতভাবে বাইবেলের একটা পৃষ্ঠা খুলে ধরতাম আর সেখানেই আমার উত্তর খুঁজে পেতাম। আমি বাইবেলে PONTIUS PILATE-এর সামনে JESUS এর বিচারের জায়গাটা খুললাম। PILATE, JESUS কে দিয়ে এমন একটা কিছু। বলাতে চাইছিল, যার ফলশ্রুতিতে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া যায় এবং সে গণমানুষের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে গিয়ে ঐ কাজ করার অপরাধ বোধ থেকে মুক্তি চাইছিল। PILATE তাকে জিজ্ঞেস করছিল, “তুমি কি ঈশ্বরের পুত্র?" আর MATTHEW, MARK, LUKE এবং JOHN সব অধ্যায়েই JESUS এর উত্তর ছিল “এটা তুমি, যে ঐ কথা বলছে"।

আমার বয়স যখন ১৮, তখন আমি স্থানীয় এক খৃস্টান কলেজে যেতাম। ওখানেই আমি প্রথম একজন মুসলিমের সংস্পর্শে আসি। ওখানে ওদের বেশ ক'জনই ছিল এবং একদম অজানা একদল মানুষের ধারণাটাই আমাকে খুব আনন্দ দিতো- “পবিত্র ভূমি থেকে আসা একদল মানুষ। “পৃথিবীর জীবন্তু ধর্মসমূহ" বলে একটা কোর্স গ্রহণ করি আমি, এবং সেই সুবাদে ইসলাম সম্বন্ধে কিছু জানি। আমার সাথে আমার হবু স্বামীর দেখা হয় ওখানেই। যখন। আমার বয়স ছিল ১৯ বছর। ৪ মাস পর আমি তাকে বিয়ে করি।

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আমরা বেশ দূরে স্থানান্তরিত হই। সেখানে আমার সাথে এক আমেরিকান মুসলিম মহিলার দেখা হয়, যিনি হিজাব পরতেন। তিনি আমাকে ইসলামের উপর বই ও প্যালেট দিলেন। আমি সেগুলোর কিছু পড়লাম, আর মুসলিম ও খৃষ্টানদের ভিতর JESUS -এর ঐশ্বরিক ব্যাপার-স্যাপার ও বাইবেলের সূত্রের সত্যতা নিয়ে কিছু বিতর্ক দেখলাম।

তখনই আমি প্রথমবারের মতো পরিষ্কারভাবে শুনলাম যে খৃস্টানরা। (CATHOLIC সহ) মনে করে যে JESUS ঈশ্বর আর বাইবেল মানুষের দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে এবং এর অধিকাংশই মানুষের রচনা, ঈশ্বরের নয়। আমি হতবাক হয়ে যাই। তখনই আমি জানলাম যে আমি আর ওদের একজন নই।

২২
ইসলামের মাঝে পরিচিত কিছু পাওয়া
নবীদের সাথে ইসলামের একাত্মতা, আল্লাহ্ যে খৃস্টান ও ইহুদীদের উপাস্য ঈশ্বরই একথা জোর দিয়ে বলা, JESUS কে একজন বিশেষ নবী এবং শিক্ষক হিসেবে স্বীকার করা, নিজেদের মূল ABRAHAM (ইব্রাহীম) পর্যন্ত চিহ্নিত করা- এই সবকিছুই শেষ কথা' নিয়ে নবী মুহাম্মদের আসার পরিবেশটাকে বেশ পরিচিত করে তোলে বা স্বাভাবিক করে তোলে- তিনি এসেছিলেন সরাসরি ঈশ্বরের বাণী দিয়ে মানুষকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিতে।

এই পরিচিত ভাবটা বা স্বাভাবিক মনে হওয়াটা, এই সব মেয়েদের কারো কারো বেলায় মুসলিম বিশ্বাসের কথা শুনে তাদের সহজে বদলে যেতে সাহায্য করেছে।

আমার স্বামীর সাথে আমার দেখা হবার পর আমরা আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসও ভাগাভাগি করে নিতাম, যা সদৃশ ছিল। JESUS কে ঈশ্বর মনে করার আমার বিশ্বাস নিয়ে, সে যখন প্রশ্ন করলো, তখন আমি আমার ধর্মীয় অনুভূতিগুলোকে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করি। এছাড়া সে আমাকে নবুয়ত ও মুহাম্মদ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দিল। আমি ইসলামের এই সমস্ত ব্যাখ্যার সাথে একমত হই। আগ্রহভরে আমি ইসলাম সম্বন্ধে পড়তে শুরু করি। আমাদের বিয়ের ৬ মাস পরে আমি নামাজ পড়তে শুরু করি আর রমজান মাসে রোজাও রাখি। এই সময়ে আমি বুঝলাম যে ইসলাম আমার নিজের বিশ্বাসই প্রকাশ করে। কেবল কিছু মানুষ কষ্ট পাবে ভেবে, আমি আর আমার বিশ্বাসকে অস্বীকার করতে পারলাম না।

যে মানুষটি পরবর্তীতে আমার স্বামী হবে, আমার যখন তার সাথে দেখা হলো আর আমি জানলাম যে, সে মুসলিম, আমি শঙ্কিতবোধ করলাম এবং যা আমার ভয়ের কারণ ছিল, সে সব নিয়ে সব প্রশ্ন করলাম। ইসলাম ও সামাজিক পরিবর্তন' নামে একটা কোর্সও আমি নিলাম এবং ইসলাম সম্বন্ধে এমনকি আরও বেশী জানলাম। আমি এ কোর্সে যত বেশী জানতে লাগলাম, ততই আমার প্রশ্ন সংখ্যা বাড়তে লাগলো আর ততই আমি ভয় পেতে লাগলাম। এই ভয়টা অবশ্য অজানাকে জানার ভয়ের চেয়ে আলাদা ছিল- এই ভয় ছিল নিজেকে আবিষ্কার করার একটা ভয়। আমি আবিষ্কার করলাম যে, ইসলামের মাধ্যমে শেখানো বিশ্বাসগুলো আমার মাঝে সারা জীবনই ছিল, কেবল আমি তার নাম জানতাম না। ঐ কোর্স, কোরআন এবং আমার স্বামী আমাকে বুঝতে সাহায্য করে যে, বেশ ক'বছর ধরেই নিজের অজান্তেই আমি একটা মুসলিম জীবন যাপন করছিলাম। (ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ সম্বন্ধে জানার আগ পর্যন্ত, আমি মুসলিম হিসেবে সম্পূর্ণ জীবন যাপন বা অনুশীলন শুরু করিনি অবশ্য)। তাই আমাকে যখন কেউ জিজ্ঞেস করে যে, আমি কতদিন যাবত মুসলিম- আমি তাদের বলতে পারি না, কিন্তু আমার মনে হয়, আমি এগারো বছর যাবত একজন মুসলিম। তারা যদি জিজ্ঞেস করে আমি কবে ধর্মান্তরিত হয়েছি, আমি তাদের সহজেই বলতে পারি- ১৯৯২-এ। সত্যি কথা বলতে কি, আমার নিজের আগে আমার স্বামী বুঝতে পারে যে ভিতরে ভিতরে আমি একজন মুসলিম, কিন্তু সে আমাকে বলেনি। সে চেয়েছিল আমি নিজে নিজেই যেন সে সত্য অনুধাবন করি ।

আর এভাবেই এই মেয়েদের বিশ্বাসের যাত্রা শুরু হয় যা তাদের প্রতিবেশকে প্রভাবিত করে- প্রভাবিত করে সেই সব পরিবারকে যেখানে তারা বড় হয়েছিল, তাদের বন্ধুদের, কর্মস্থলে বা স্কুলে তাদের সহকর্মীদের। সবচেয়ে বড় কথা, এটা তাদের নিজেদের জীবনের দিক ও প্রবাহ বদলে দেয়- শুধুমাত্র ধর্মীয় ব্যাপারেই নয়, তাদের অস্তিত্বের প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারেই কথাটা সত্যি।

২৩
পূর্ববর্তী পথ পরিত্যাগ করা আত্মীয়দের প্রতিক্রিয়া
THANKSGIVING DAY'র ঐ বিকালে JODI আর আমি আমাদের পারিবারিক কামরায় বসেছিলাম, শুধু আমরা দু'জন। শেষ পর্যন্ত আমি বুঝলাম আমাকে শুনতেই হবে। আমি নিশ্চিত হতে চাইছিলাম, সে আমাকে বলবে, তা যেন আমি পরে আবার আগাগোড়া ভেবে দেখতে পারি- ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি জানতাম, যুক্তিবাদী হবার জন্য আমি তখন ঠিক তৈরি ছিলাম না- আবেগে এলোমেলো হয়ে ছিলাম, তাই আমি একটা টেপরেকর্ডার চালু করে রাখিআমাদের কথাবার্তা রেকর্ড করতে। নীচের উদ্ধৃতিগুলো JODI’র ও আমার মাঝের সেই কথাবার্তার ধারণকৃত টেপ থেকে।

- সে শুরু করলো ঃ “গত জুলাই মাসে আমি ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেই, প্রথমে তেমন প্রবলভাবে না, তবে গত মাসে আমি মাথা ঢেকে চলার (হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নেই। তাই আমি প্রতিদিনই এটা পরি, আর এটা আমার নিজস্ব পছন্দ। REZA এ ব্যাপারে খুশি হয়েছে, কিন্তু সে আমাকে এটা করতে বলেনি। আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম এবং তোমাকে, তোমার কোন প্রশ্ন থাকলে তাও করতে দিতে চেয়েছিলাম। আমি আমার জন্য এটা বেছে নিয়েছি। আমি তোমাকে সামলে উঠতে সাহায্য করবো, অবশ্য তুমি যদি আদৌ সামলে উঠতে চাও। তোমাকে আমি এটুকুই দিতে পারি। তোমার সমস্ত ঘৃণা মিশ্রিত মতামত আমি নিতে রাজী আছি। কোন কিছুর ভুল দিকে (তোমার মতে) থাকাটা আমার জন্য সহজ হবে না.... যদিও আমি মনে করি না যে আমাদের কেউই (তুমি বা আমি) ভুল দিকে রয়েছি- আমরা শুধু ভিন্ন কিছু পছন্দ করেছি। আমার তোমাকে বলার আরো কিছু আছে, কিন্তু আমি তোমার অভিব্যক্তি শুনতে চাই।”

- আমি সাড়া দিলাম। আমি ব্যাপারটাতে খুব কষ্ট পেয়েছি। এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা আমি তোমাকে করতে বলেছি বা তুমি যেন কর তা চেয়েছি চেয়েছি খৃষ্টধর্ম সম্বন্ধে একটা পরিপক্ক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে জানো এবং শোন, এমন কারো কাছ থেকে যে সত্যিই জানে। আমি মনে করি তুমি তার কোন চেষ্টাই করো নি। তুমি যে আমার কথার কোন আমলই দাওনি, সে জন্য আমি সত্যিই হতাশ। আমার খুব রাগ হচ্ছে এবং বৃহুদিন যাবতই আমার ভিতরে এই রাগের অনুভূতি রয়েছে। গত ক'মাস ধরে আমার মনে হয়েছে তুমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, যেন আমরা সারাক্ষণই বিলাপ করে চলেছি।”

- “মা, এটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত। এটা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করা নয়। আমি তোমাকে ব্যাথা দিতে চাই না, আমি মনে করি এর মাঝে দিয়ে (ইসলামিক আচার-আচরণ) আমার নিজেকে প্রকাশ করা হয়। আমি যা ছিলাম তা থেকে আমি অনেকটা পথ পার হয়ে এসেছি।”

- “মা-বাবা হিসেবে আমাদের কাছ থেকে তুমি কি আশা কর?”

- “আমি যে কিছু চাই, তা মনে করি না। এমনও হতে পারে যে, আমি যে তোমাদের কাছে পিঠে থাকবো না, সেজন্যই এমন মনে হয়। আমি এমনকি, কতদিন বাঁচবো তাও জানি না। এমনও হতে পারে যে এটা একটা স্বপ্ন মাত্র। কিন্তু আমার মনে হতে থাকে যে, ইসলামে আমার নির্দিষ্ট কিছু করণীয় আছে। আমি অন্যদের জিজ্ঞেস করেছি, তাদের এমন লাগে কিনা- তারা বলেছে- না। তাদের আশা এবং স্বপ্ন আছে, কিন্তু আমার যা আছে, তা হচ্ছে একটা অনুভূতি ও যে আমাকে একটা নির্দিষ্ট পথ পার হতে হবে। আমার জীবন কঠিন হতে পারে এবং আমাকে শক্ত হতে হবে, কিন্তু আমি যথেষ্ট শক্ত এবং আমি শেষ পর্যন্ত যেতে পারবো।”

- “তাহলে আমাদের স্থান তোমার জীবনে কোথায়, JODI?” আমি জিজ্ঞেস করি।

- “আমার তোমাদের অনেক দূরে মনে হয়, আর আমি তোমাদের আমাকে বানানোর বিল্ডিং ব্লক বা ইট স্বরূপ দেখি।

- “আমার মনে হচ্ছে তুমি বলতে চাও, তুমি যা পেয়েছে। আমরা তোমাকে যা দিয়েছি- তা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো ছিল না, আর তুমি সে সমস্ত ডাস্টবিনে ফেলে দিতে চাও এবং আমাদের সবকিছুই পরিত্যাগ করতে চাও। তুমি এমনভাবে সব বন্ধন ছিন্ন করে চলেছো যে, তুমি অতীতের কিছুকেই আর ভোয়াক্কা কর না।”

- “মা, আমি প্রথম ওরকম বোধ করেছি, যখন কিশোরী হিসেবে আমাদের চার্চের যুব ক্যাম্পে ছিলাম। তারা বলছিল, কিভাবে শিষ্যরা সবকিছু ত্যাগ করে JESUS-কে অনুসরণ করেছিল, কোন বস্তু তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়নি। তারা এমনকি তাদের পরিবারও ত্যাগ করেছিল। আমি ভাবলাম- এমন কত জিনিস রয়েছে যা আমি ত্যাগ করতে পারবো না। আমি আমার রেকর্ডগুলো ত্যাগ করতে পারতাম না। আমার ওগুলো বাজাতে ভালো লাগে। ঐ সময়ে আমি আত্ম-সন্ধানে ছিলাম। না, আমি অনেক কিছুই ত্যাগ করতে পারতাম না। সবকিছু ত্যাগ করে ঐভাবে JESUS-কে অনুসরণ করতে, নিশ্চয়ই শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। না, আমি তা করতে পারবো না এবং সে জন্য আমার বিষন্ন লেগেছিল। কিন্তু তারপর এমন একটা সময় আসলো, যখন আমি অনুধাবন করলাম যে, জীবনে একবারের জন্য হলেও আমি কোন বস্তু বা জিনিসের তোয়াক্কা করি না। অন্যকিছু আমার কাছে অপেক্ষাকৃত মূল্যবান- আধ্যাত্মিক জীবন এবং সম্পর্ক।”

আমরা কথা বলতে থাকলাম। হিজাব পরার মতো আমূল পরিবর্তন নিয়ে আমি তাকে বেশ শক্ত ভাষায় একটা বক্তৃতা দিলাম। আমি তার ঢিলাঢালা কাপড়চোপড় ও ওড়না নিয়ে বেশ অপমানজনক মন্তব্য করলাম। আমি আমাদের প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাকে উপর্যুপরি দোষী সাব্যস্ত করলাম।

সে আমাকে বার বার আশ্বস্ত করতে চাইলো- “আমি তোমাদের প্রত্যাখ্যান করছি না। আমি শুধু একটা ভিন্ন উপায়ে কাজ করতে চাইছি- তুমি আর বাবা হলে আমার আদর্শ। তোমরা যেভাবে মানুষকে সাহায্য কর এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ, দাও, তা আমি খুবই পছন্দ করি। আমি শুধু একটা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছি। আমি শুধু তোমরা যেন এটাকে মেনে নিতে পারো, সে জন্য চেষ্টা করতে পারি।”

শেষ পর্যন্ত আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। “আমি ভেঙ্গে পড়েছি। আমি কখনো ভাবিনি আমার এরকম প্রতিক্রিয়া হবে। আমি বিশদ ভেবেছি এ নিয়ে যে কিভাবে এ সবকিছুকে মেনে নেয়া যায়। আর এখন দেখছি আমি তা পারছি না মোটেই। গত কটা দিন আমার অনেক ভোগান্তি গেছে। আমি একদম বুঝতে পারছি না, আমি কি করবো। আমি ভাবতে থাকি আমাদের ভুলটা কোথায় ছিল, যদিও তোমার কাজকর্মের কিছু কিছু দারুণ সুন্দর। আমি তোমাকে হারাতে চাই না, অথচ আমি তোমাকে আমার চেয়ে যত দূরে সম্ভব ঠেলে সরাতে চাই। তোমার প্রতি আমার মমতা এতো বেশী যদি না হতো, তাহলে আমি তোমাকে আর কখনোই দেখতে চাইতাম না। আমি এই অবস্থাটাকে ঘৃণা করি। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো একটা উপায় বের করতে।”

আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে থাকলাম এবং অনেকক্ষণ ধরে কাঁদলাম। তারপর JODI যোগ করলো, “REZA সত্যিই তোমাকে এবং বাবাকে ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। আমরা একটু ভিন্ন একটা পথ বেছে নিয়েছি, যেটা আমরা ঠিক মনে করি, কিন্তু আমরা তোমাদেরও ভালো এবং দৃঢ় চরিত্রের মনে করি। আমরা আশা করি, আমাদের বিয়েটা যেন তোমাদের মতো ভালো হয় আর আমরাও যেন তোমাদের মতোই মানুষকে সাহায্য করতে পারি। আমরা আসলে অতি সাধারণ এবং আমাদের স্বাস্থ্য, পড়াশোনা ও কাজের কথা বিবেচনা করলে আমাদের সত্যিই বেশ সগ্রাম করতে হবে- সবকিছুকে এক সঙ্গে ধরে রাখতে চাইলে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করে যেতে চাই।”

শেষ পর্যন্ত আমাদের আর কথা বলার কিছু ছিল না। আমি আমার ঘরে চলে গেলাম এবং রাতের বেশীরভাগই দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাটলো। সময়ের এ পরিসরের মতো জীবনে আর কখনো এতো দুঃখ হয়নি আমার। আমার এতো ব্যথার অনুভূতি হচ্ছিল, যে মনে হচ্ছিল আমার শরীরের একটা অংশ বুঝি খোয়া গেছে। পরের দিন দুপুরের দিকে আমি আমার শশাবার ঘরের জানালার সামনে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করলামঃ খৃষ্টান, মুসলিম এবং মহাবিশ্বের ঈশ্বর, আমি এখন কি করবো? আমিএটা কিভাবে সহ্য করবো?” তারপর আমি যখন সাহায্যের প্রত্যাশায় বসেছিলাম, তখন পাশের ঘর থেকে আমার ছেলেদের বাজানো একটা গানের শব্দ ভেসে আসছিল- Beatles-রা গাইছিল “YESTERDAY, ALL MY TROUBLES SEEMED SO FAR AWAY./ LOVE WAS SUCH A EASY GAME TO PLAY. OH, HOW I LONG FOR YESTERDAY!" Wit প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর আমার ঠিক ঐ অনুভূতিই হচ্ছে। আমি গতকাল’ কামনা করছি, যখন JODI’র সাথে সবকিছুই খুব সহজ ছিল আমার।

তারপর BEATLES-দের আরেকটা গান হচ্ছিল ? HEY JUDE, DON'T BE SAD; TAKE A SAD SONG AND MAKE IT BETTER." ওটা আমাকে নাড়া দিল, কারণ আমি এই দুঃখের গানকে নিয়ে একটা খুশীর গানে পরিবর্তিত করতে চাইছিলাম। একটা ইতিবাচক অনুভব এলো আমার মাঝে। সেরে ওঠার পদ্ধতির যেন সূচনা ঘটছিল। যখন JODI ও REZA, ARKANSASএ যাবার জন্য রওনা হচ্ছিল, আমি তাদের বাহুতে নিয়ে বলতে পারলাম ঃ “আমি ব্যাপারটা সামলে উঠতে চাই। অনুগ্রহ করে আমাকে সাহায্য কর। আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি। আমি, আমার মেয়েকে ফিরে পেতে চাই, আর তোমরা যা বেছে নিয়েছে, আমি তা মেনে নিতে শিখবো।” আমি আমার মেয়ে এবং জামাইকে হারানোর ঝুঁকি নিতে পারলাম না। সম্পর্কের ক্ষত সারিয়ে তুলতে, যা কিছু প্রয়োজন হয় আমি করবো।

পারিবারিক জীবনের তীব্র মানসিক যন্ত্রণার কারণের অন্যতম হচ্ছে ধর্মীয় সিদ্ধান্ত। আবেগের আতিশয্য থাকে, আর ঐ সব সিদ্ধান্তের প্রতি প্রতিক্রিয়া এমন সব পরিবর্তন আনে, যা থেকে পরিবারের ভাঙ্গন ধরে। মেনে নেয়ার পথে যাত্রা, যদি তা আদৌ ঘটে, বেশ দুর্গম এবং সময় সাপেক্ষ হতে পারে।

মা-বাবার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার ব্যক্তিগত কাহিনী, যে সব মেয়েরা বলেছে, তাদের ভিতর সব শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াই আছে ও গ্রহণ থেকে নিয়ে সম্পূর্ণ ছাড়াছাড়ি এবং প্রত্যাখ্যান সবকিছুই। ৪৬% তাদের বাবা-মার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াকে নেতিবাচক ও ক্লান্তিকর বলেছে, ২৩% বলেছে তাদের এক রকম মেনে নেয়া হয়েছে বিশেষ রফা বা বাক-বিতন্ডা ছাড়াই। ১৪% বলেছে তাদের বাবা-মায়েরা খুবই স্বাভাবিকভাবেই সব গ্রহণ করেছে এবং তাদের সমর্থন করেছে। কিছু বলেছে যে এটা বাবা-মায়ের গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করার কোন ব্যাপার ছিল না; তাদের ছেলেমেয়েরা প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে কি করবে, তা তাদের অধিকারভুক্ত কোন ব্যাপার নয়।

সময়ের সাথে, যেখানে প্রয়োজন, বেশীরভাগ পরিবারেই একটা আপোষের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অধিকাংশ মেয়েরাই পরিবারের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে এবং পরিবারের মেনে নেয়ার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য এবং বিরাট উন্নতি দেখতে পেরেছে, যদিও কয়েকজনের বেলায় কোন সম্পর্কই আর থাকেনি- বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। কখনো কায়িক দূরত্বটা বরং সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, কারণ তাদের দৈনন্দিন ওঠা-বসার ক্ষেত্রে সর্বক্ষণ মানিয়ে চলতে হয়নি। অন্যকিছু ক্ষেত্রে অবশ্য দুরন্তু, সম্পর্ককে মান-সম্মানের একটা প্রশ্নে হিমায়িত করে রেখেছে- সমাধানের দিকে কোন গতি ছাড়াই।

মেয়েদের মুসলিম হবার সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়ে, বিভিন্ন পরিবার, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও ধাপের মাঝ দিয়ে অতিক্রান্ত হবার কথা এই সব মেয়েরা বলেছে।

২৪
সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়া
এমন পরিবার রয়েছে যারা মেয়েদের ধর্মান্তরিত হবার সিদ্ধান্তকে মুক্ত মনে এবং মেনে নেয়ার মনোবৃত্তিতে নিয়েছে বিশেষতঃ প্রাথমিক উদ্বেগের অবসান যখন ঘটেছে এবং যখন বাবা-মা বুঝতে পেরেছেন যে তাদের মেয়েরা ভালোই থাকবে।

ধর্মান্তরিত হবার পরে, আমি নিজেকে হিজাব পরিহিত অবস্থায় প্রকাশ করি। আমি তাদের কাছে নিজেকে ব্যাখ্যা করি। আমি কখনো আমার পরিবার নিয়ে বিশেষ দুঃশ্চিন্তা করিনি। আমার জানা ছিল, আমি যাতে সুখী হবে, তা তারা মেনে নেবে। আমার এক ভাই আমাকে ওড়না নিয়ে ক্ষ্যাপাতো এবং তা খুলে ফেলতে বলতো। আমি মনে করি আমার জন্য মুসলিম হওয়াটা সহজই ছিল কারণ আমার পরিবার যে আমাকে পিঠ দেখাবে না, এ ধারণা আমার ছিল। আমি সব ব্যাখ্যা করেছি এবং খোলাখুলিভাবে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমি আমার বাবাকে কোরআন পড়তে দিয়েছি।

আমার মুসলিম হবার সিদ্ধান্ত, আমার পরিবারের সাথে আমার সম্পর্কের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। আমার মা এ মর্মে খুশী যে আমি একজন অধিকতর ধর্মপ্রাণ মানুষ। তিনি আমার জন্য আনন্দিত। মা ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে তেমন একটা জানেন না। কেবল এটুকু জানেন যে, আমি একমাত্র এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করি- তাই তিনি আমার ধর্ম পরিবর্তন মেনে নিয়েছেন। আমি আমার পরিবারের কাছে-পিঠে থাকি না।

আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং আমার মা-বাবাকে বললাম, তখন আমার বাবা আমাকে বুঝতে চেষ্টা করলেন এবং সমর্থন করলেন। আমার মা ভয় পেয়েছিলেন। তাঁর ব্যপারটা নিয়ে ভয় পাওয়ার বেশ কিছু কারণ ছিল ঃ (১) আমার প্রতি তার ভালোবাসা এবং আমার মঙ্গল কামনা (২) ইসলামে মেয়েদের ভূমিকা নিয়ে গতানুগতিক ধারণা (৩) তরুণ বয়সে তাঁর বৈরুত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা (৪) একজন মুসলিম পুরুষের সাথে এককালে তার একটা গভীর সম্পর্ক থাকা। আমার মনে হয় মা চেয়েছিলেন যে ঐ ধর্মের সবদিক সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে আমি যেন আমার সিদ্ধান্ত নিই। বেশীর ভাগ মা-ই তাঁর সন্তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো যা, তাই চান এবং তাদের সুরক্ষা চান- সমাজে ইসলামের প্রতি আজকাল যে দৃষ্টিভঙ্গী প্রচলিত, আমরা সবাই তা জানি। আমি এখানে একটা ব্যাপারে জোর দিয়ে বলতে চাই আমার মা আমাকে একবারের জন্যও সমর্থন করেননি তা কিন্তু নয়- তিনি শুধু তার বিচলিত হবার কথা জানিয়েছেন। আর আমি ঠিক তাই আশা করছিলাম, যখন আমি তাদের ব্যাপারটা জানাই- প্রশ্ন, ভাবনা এবং মন্তব্য।

দুর্ভাগ্যবশত আমরা এখনো sWITZERLAND-এ আমাদের পরিবারের কাছে যেতে পারিনি (যদিও তা আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে)। আমি যখন ধর্মান্তরিত হলাম ও বিয়ে করলাম, তখন তাদের আমেরিকাতে আসতে হয়েছিল। একবার যখন তারা বুঝলো যে, আমি ঠিক আছি এবং আমার স্বামী ভালোবাসার যোগ্য একজন মানুষ, তারা আমার সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করেছে। কিছু প্রশ্ন যদিও থেকে গেছে। আমরা খুব সম্ভবত ভবিষ্যতে অনেক কথা বলবো। আমার প্রার্থনা হচ্ছে- আমার বাবাকে মুসলিম হওয়াতে পারা, কারণ মনের মাঝে তিনি ইতিমধ্যেই একজন মুসলিম।

আমার মূল পরিবার বলতে কিছু নেই, শুধু একজন ভাই ছাড়া, যাকে ধর্মান্তরিত হবার আগেও বহু বছর যাবত আমি দেখিনি। আমার মনে হয়, সে আমার ধর্মান্তরিত হবার খবরে বেশ খুশিই, কারণ সে দেখতে পাবে আমি অপেক্ষাকৃত বাস্তবধর্মী লক্ষ্য স্থির করেছি।

আমার পরিবারের সাথে আমার বড় ধরণের কোন সমস্যা নেই। তারা আমাকে মুসলিম হিসেবে মেনে নিয়েছে, যতক্ষণ তারা জানছে যে এটাই আমার চাওয়া। কেউ কেউ আমাকে অপ্রকৃতিস্থ মনে করে, কারণ আমি হিজাব পরি আর আমার স্বামীর চাল-চলন বরং একজন আমেরিকানের মতো। পরিবারের কারো সাথে অবশ্য আমার কখনো এ নিয়ে ঝগড়া হয়নি। আমরা যতটা সম্ভব নিজেদের মাঝে সময় কাটাই, হয় সামনা-সামনি বা ফোনে (পরিবারের সদস্যদের মধ্যে)।

আমার জন্য আমার পরিবার ঠিকই আছে। এ ব্যাপারে কোন সমস্যা ছিল না, কারণ আমার জীবনধারা বদলানোর পিছনের কারণসমূহ সম্বন্ধে আমি নীরব ছিলাম। আমার বাবা-মা, আমি কলেজে থাকা অবস্থায়, আমার দৃষ্টিভঙ্গীর যে পরিবর্তন ঘটেছে- তা চেয়ে দেখেছে। আমি যখন আফ্রো চুলের ঢং নিয়ে বাড়ি এসেছি- তারা প্রায় মারা যাবার উপক্রম। আমি পরিবারের প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাই- ওটা তাদের না মানার তালিকার শীর্ষে ছিল। যখন তারা বুঝলো যে, আমার নিজস্ব একটা জীবন রয়েছে, তখন তারা আমার জন্য যা সবচেয়ে মঙ্গলজনক তাই চেয়েছে এবং কখনোই আমাকে বা ইসলামকে সমালোচনা করেনি। তারা এটুকুতেই খুশি যে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি এবং আমি ভালো নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে নিজে ধরে রেখেছি ও আমার ছেলেদের মাঝেও তা বিতরণ করেছি।

এই পরিবারগুলো মেয়েদের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে নিজেদের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটিয়েছে- যখন তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে তাদের মেয়ে নিরাপদ রয়েছে এবং কিছুটা হলেও মেয়ের একাত্মতা ও ইচ্ছাকে তারা বুঝতে পেরেছে। সম্ভবতঃ এই পরিবারগুলো এমন ছিল, যারা তাদের মেয়েদের ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিল এবং মেয়েকে নিজস্ব গন্ডির মাঝে একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে জীবন যাপন করতে দিতে প্রস্তুত ছিল- তা মেয়ে মুসলিম হোক বা না হোক। এটার অর্থ এই নয় যে, ভবিষ্যতে কোন সম্পর্ক গড়ে উঠবে না, পারিবারিক সম্পর্ক সব সময়েই বদলায়, বাড়ে এবং পুনর্বিন্যস্ত হয়, সময় এবং জীবনের ধারার সাথে সাথে।

২৫
সতর্কতার সাথে গ্রহণ
মেয়েদের অন্য একটা ধর্ম গ্রহণ করতে দেখে, পরিবারের কিছু সদস্যের এমন একটা অনুভূতি হতে পারে যে, একটা গভীর অথচ অদৃশ্য ফাটল যেন তাদের আলাদা ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। এই বিচ্ছিন্নতার বা বিভক্তির ধারণাটা ভাই, বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী, খালা-ফুফু, মামা-চাচা বা বন্ধু-বান্ধব অনেকেই হয়তো অনুভব করেছে, যদিও মানিয়ে নেয়ার এবং মেনে নেয়ার ব্যাপারে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের মাত্রা বিভিন্ন হতে দেখা যায়। কেউ সাথে সাথেই হয়তো মেনে নিয়েছে, আবার অন্যরা হয়তো আদৌ খোলা মনের হতে পারেনি।

ভাই বোনেরা, নিজেদের জনসমক্ষে বোনের সাথে দেখা যাওয়াটাকে হয়তো বিব্রতকর মনে করেছে। কারণ তাদের বোনের নতুন ধরনের পোশাক-আশাক ও ঢেকে চলা। দাদা-দাদী হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি, তাদের আদরের নাতনীটি কিতাবে এমন একটা ব্যাপার বেছে নিতে পারে, কিন্তু তারাই হয়তো তার সাথে একটা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন যেমন বৃহত্তর পরিবারের আর কেউও তা করে থাকতে পারে।

কিছু পরিবার আশঙ্কা করেছে যে, তাদের মেয়ে JESUS-কে অস্বীকার করার জন্য নরকে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। তারা তাদের মেয়ের জন্য খৃস্টান মতবাদের পরিত্রাণের (SALVATION) বিষয়টি ভেবে দেখেছে এবং তারা এ ব্যাপারে একটা পরিতৃপ্তিকর স্বস্তির জন্য চেষ্টা করে গেছে।

আমার পরিবারের সবাই আমার ধর্মান্তরিত হওয়াকে সহজেই মেনে নিয়েছে, কেবল আমার মা ছাড়া। আজ পর্যন্ত আমার মনে হয় আমি ধর্মান্তরিত হয়েছি বলে তার মাঝে আমার বিরুদ্ধে এক ধরনের আক্রোশ রয়ে গেছে। আমি আশা করি, ইনশাআল্লাহ, একদিন তিনি আমার জীবনধারাকে সম্পূর্ণভাবে মেনে নিতে এবং গ্রহণ করতে পারবেন। গত ৪ঠা জুলাই আমরা বনভোজনে গিয়েছিলাম, যা একটা বিশ্রী পরিণতিতে পৌছায় যখন রাজনীতি এবং WORLD TRADE CENTRE-এর ঘটনা নিয়ে কথা ওঠে এবং তা শেষ পর্যন্ত খৃস্টধর্ম বনাম ইসলামের বিতর্কে পরিণত হয়। আমি ঐ অবস্থার অবসান এভাবে ঘটাই- আমি মাকে বলি, তিনি যদি আমাকে ইসলাম ত্যাগ করার বার্তা পৌছানোর চেষ্টা করে থাকেন, আমি আর কখনো তার সামনে আসবো না। মা স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন, কিন্তু আমার মনে হয় না সেটা তার আসল অভিব্যক্তি ছিল ।

আমার পরিবার খুবই ছোেট, এক বোন কেবল। মায়ের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই- আমার বাবাই আমার বোনকে এবং আমাকে বড় করেছেন। আমার বোন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিতা এবং সে ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছে। তাই সে আমার ধর্মান্তরিত হওয়া এবং এক আরব মুসলিমকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণভাবে মেনে নিয়েছে।

আমার বাবার এসব মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে। আমি যখন চার্চ ছেড়ে দিই তার আগে থেকেই বাবা চার্চে যেতেন না। কিন্তু তিনি চান আমি যেন একজন আমেরিকানের মতো চলাফেরা করি। অন্য সবার মতো করে কাপড়-চোপড় পরি, সবার মতো যেন বড়দিন উদযাপন করি- মোট কথা অন্যদের চেয়ে যেন ভিন্ন না হই। কিন্তু তিনি মুসলিম হিসেবে আমার জীবন যাপনকে এবং মুসলিম হিসেবে আমার মেয়েকে বড় করার ধারণাকে মেনে নিতে শুরু করেছেন।

আমার পরিবার সব সময়ই মনে করতো যে, আমার মাথায় কিছু পাগলামি রয়েছে, তাই আমি যখন তাদের আমার নতুন ধর্ম সম্বন্ধে বললাম, তখন তারা কেবল চেয়ে দেখেছে এবং আমি কখন আমার উৎসাহ হারিয়ে ফেলি, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করেছে। বেশ ক'বছর পরে আমি যে বদলে গিয়েছিলাম, সে নিয়ে আমার মা মন্তব্য করেছে এবং যে ধর্মে আমি বড় হয়েছিলাম (যদিও আমরা কেবল EASTER-এ চার্চে যেতাম), সে ধর্মে আমার না থাকা সম্বন্ধে আক্ষেপ করেছেন। তিনি এবং আমার বাবা এটাকে গ্রহণ করেছেন, তবে আমার মনে হয় মার আকাঙক্ষা, আমি আবার ফিরে যাবো। কাজে যাওয়ার বিপরীতে আমার বাড়িতে থাকাটা তারা বিশেষভাবে অপছন্দ করেন, যদিও বাড়িতে স্কুল চালানোর চেষ্টা তাঁরা সমর্থন করেন। আমার বাবা মা বেশ উদারই বলতে হবে। আমার নামের পরিবর্তন (মুসলিম নাম গ্রহণ) তারা খুব সহজেই নিয়েছেন।

আমার বাবাকেই অবশ্য বেশী গ্রহণেচ্ছ মনে হয়, এমনকি সায় দিচ্ছেন বলেও মনে হয়। বাবা আমার বেশভূষা পছন্দ করেন (মা যদিও ব্ৰিত বোধ করেন) এবং এমনকি আমার কিছু বইও তিনি পড়েছেন।

আমার মা-বাবা যখন প্রথম আমার ধর্ম পরিবর্তনের কথা জানতে পারলেন, তখন তারা খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। আমার মনে হয়, তাঁরা আশা করছিলেন যে, ওটা পরিবর্তনশীল মনের এক দশা’ এবং এটা পার হয়ে আমি এক সময় আবার ঠিক হয়ে যাবো। আমার বাবা গোটা কোরআন পড়েছেন, আর মা তার চার্চে ইসলাম সম্বন্ধে একটা কোর্স নিয়েছিলেন- তাই তারা দু'জনেই এ সম্বন্ধে অনেক জেনেছেন এবং এখন এ নিয়ে আগের চেয়ে বেশী স্বস্তিবোধ করেন। আমি মনে করি না তারা কখনো মুসলিম হবেন, কিন্তু আমি চাই তারা যেন হোন। আমার বোন একজন মৌলবাদী খৃস্টান এবং এ সম্বন্ধে সে কোন কথাই বলতে চায় না। সে বেশ চিন্তিত যে, মারা গেলে আমি তো নরকে যাবো আর সে জন্য সব সময়ই আমার জন্য প্রার্থনা করে। এছাড়া আমাদের সম্পর্ক অবশ্য ভালো, আর এটা আমাদের ভালই জানা আছে- ঝগড়া করতে না চাইলে, আমাদের কেউ কখনো ধর্মের প্রসঙ্গ টানবো না।

আমার বাবা-মার সঙ্গে আমার সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। তারা আমার ধর্মান্তরিত হবার ব্যাপারটা বেশ বোঝেন আর তারা খুব খোলা মনের। আমার নানী আমার মুসলমান হবার ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা খুশী নন। স্থানীয় একটা খবরের কাগজ আমার মুসলিম হবার খবর ছাপালে তিনি তা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেছিলেন যে, এটা একটা ভুল ছিল, আর আমি তাকে বললাম, তা ভুল ছিল না। আমি আশা করি, আমার নানী, কখনো আমার মুসলিম হবার বাসনাকে বুঝতে পারবেন। পরিবারে একমাত্র অস্বস্তিটা আমার তার ব্যাপারেই। আমি তার সাথে আমার বিশ্বাসের ব্যাপারে আরো খোলামেলা হতে চাই। আমার বাবা-মার সাথে আমার কোন অসুবিধা নেই। আমি বাবা-মার কাছে বেড়াতে যেতে পছন্দ করি, এমনকি আমার নানীর সাথে কথা বলাটাও বেশ মজার- যদি ধর্মটাকে আমরা কথোপকথনের-এর বাইরে রাখি।

তাঁরা প্রথমে খুবই বিচলিত হয়ে যান, তবে এখন ধীরে ধীরে না পারতে এক রকমের মেনে নিচ্ছেন। আমার বাবা খুবই রেগে যান, আমার বাহু মুচড়ে দেন এবং হিজাব সম্বন্ধে বলেন, ঐ বস্তুটা খুলে ফেললা, কারণ জনসমক্ষে এভাবে তোমার সাথে আমাকে কেউ দেখুক আমি তা চাই না।'। এটা ছিল ১৯৮৩ সালের কথা।

আমি তাদের কাছাকাছি থাকতে চাই। কিন্তু, আমি মুসলিমরা যেখানে থাকে অর্থাৎ মুসলিম বসতির মাঝেও থাকতে চাই- যা আমাদের অনেক মাইল দূরে পৃথক অবস্থায় রাখবে। আমি জানি, ইসলাম রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার বিরুদ্ধে বলে (কোরআনে কবীরা গুনাহ্ হিসেবে বর্ণিত)। আমি সত্যিই আমার মা-ভাই-বোেনদের ভালোবাসি।

যে মেয়েটি তার বাবা-মায়ের পথ ত্যাগ করেছে এবং যে এখন অতি পরিবর্তিত একজন তার সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার গ্রহণযোগ্য উপায় বের করতে গিয়ে, সম্পর্ককে নানাভাবে খাপ খাওয়ানোতে একটা প্রবল পরিশ্রমের ব্যাপার রয়েছে। বিভক্তিটা বেশ গভীর ও বিস্তৃত। যা সম্পর্কের ব্যাপারে শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক প্রভাব ফেলে। প্রাথমিকভাবে মেয়ের পথ পরিবর্তনকে প্রতিরোধ করতে চাইলেও, ধীরে ধীরে গ্রহণ করার এবং দূরত্ব কমিয়ে আনার ঘটনা দেখা যায়। পরিবারের প্রতি মেয়ের তীব্র ভালোবাসার প্রয়োজন আর মেয়ের প্রতি পরিবারের, তাকে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত করার প্রয়োজন- এসব থেকেই দূরতুটা যে কমে আসে, তা বলাই বাহুল্য।

২৬
গ্রহণযোগ্যতা লাভের জন্য চেষ্টা
যদিও পরিবারসমূহ হয়তো শুরুতে হতবাক ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে থাকবে, তবু তারা তাদের মেয়ের সঙ্গের সম্পর্ককে সারিয়ে তুলতে আগ্রহী ছিল। এই আগ্রহের পেছনে, অনেক সময়ই অন্য কোন একটা পরিস্থিতি কাজ করেছেযেমন মুসলিম দম্পতির ঘরে শিশুর জন্মগ্রহণ। মেনে নেয়ার দিকে অবস্থানের পরিবর্তন, কখনো এসেছে সময়ের সাথে সাথে সম্ভবত মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা অনুধাবন করেছেন যে, তাদের মেয়ে যা বেছে নিয়েছে তা তার জীবনের নিছক এক দশা বা 'PHASE' নয়। কখনো সম্পর্ক মেরামতের সংকল্প এসেছে মেয়ের দিক থেকেই বেশী (পরিবারের চেয়ে)।

জীবন যাপন, ধর্ম, বেশভূষা ও ঐতিহ্যের এই আকস্মিক পরিবর্তন, কিছু পরিবারের ক্ষেত্রে, মেয়েটির স্বামীটিকে মেয়ের সব দোষ বহন করার জন্য একজন সহজ ও স্বাভাবিক দোষী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিছু কিছু মেয়েরা ইসলাম গ্রহণ করে, যখন তারা তখনও তাদের বাবা-মার বাসায় থাকতো। এই সব বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রায় সবক্ষেত্রেই সময়, চেষ্টা এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়েছে, মেয়ে এবং পরিবার দুই পক্ষের তরফ থেকেই- যাতে একটা গ্রহণযোগ্যতার পর্যায়ে পৌছানো যায়। এই সব পরিবার এখনো গ্রহণযোগ্যতার ক্রমোন্নতির জন্য কাজ করে চলেছে।

আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম, আমার পরিবারকে বললাম। তারা অবাক হয়নি। তারা ঐ গ্রীষ্মকালে বাড়িতে থাকা অবস্থায়, আমার কাজকর্ম এবং কথাবার্তা থেকেই এর আগমনী বার্তা পেয়েছিল। তারা আমার সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছিল এবং তারা জানতো যে, আমি বিশ্বস্ত। এর আগেও আমার পরিবার, আমার কাজকর্ম এবং বিশ্বাসকে সব সময়েই মেনে নিয়েছে- যদি বা তারা তা ভাগাভাগি করতে অপারগও হয়ে থাকে।

আমি যখন হিজাব পরতে শুরু করি তখন তারা আর ততটা ভোলা মনের রইলো না। তারা উদ্বিগ্ন ছিল যে, আমি সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে চলেছি- যে আমি বৈষম্যের শিকার হবো, যা আমাকে আমার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে বাধা দেবে। আর লোকে আমার সাথে তাদের দেখবে, এটাও তাদের। জন্য ব্রিতকর। তারা ভাবতো ব্যাপারটা অতিশয় চরমপন্থী। আমার একটা ভিন্ন। ধর্ম বিশ্বাস থাকাতে তাদের আপত্তি ছিল না, কিন্তু বাহ্যত আমার জীবনে এর প্রভাব পড়বে, তা তাদের অপছন্দ ছিল।

তিন বছর হয়ে গেছে আর অনেক কিছু বদলে গেছে। আমার পরিবার বুঝতে পেরেছে যে, আমি নিজেকে ধ্বংস করিনি বা নিজের জীবনকে ধ্বংস করিনি। তারা দেখতে পাচ্ছে ইসলাম আমার জন্য সুখ নিয়ে এসেছে, দুঃখ-কষ্ট নয়। তারা আমার সাফল্য নিয়ে গর্বিত আর তারা দেখতে পাচ্ছে যে আমি সত্যিই সুখে এবং শান্তিতে আছি। আমাদের মাঝের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে এসেছে আর আগামী মাসে, ইনশাআল্লাহ, আমরা তাদের কাছে যাবো, সে অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে তারা।

মুসলিম হয়ে আমি অনুভব করলাম যে, আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে হতাশ হয়েছেন। আমি মুসলিম, একথাটা তাদের বলাটা, তাঁদের মুখে একটা চড় মারার মতো ছিল। ব্যাপারটা এমন ছিল যে, আমি যেন ছেলেবেলায় তাদের শেখানো সবকিছুই প্রত্যাখ্যান করেছি- সবকিছুই, যা তারা তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন। ওসবে যদি তাদের জীবন চলে যেতে পারে, তবে আমার জীবন চললো না কেন? আমার ভাইয়েরা ১৬, ১৪ এবং ১১ বছর বয়সের ছিল, যখন আমি ধর্মান্তরিত হই এবং তারা আমাকে নিয়ে সত্যি চিন্তিত ছিল না। এটা আমার পছন্দ ছিল এবং আমার অধিকার ছিল আমার ইচ্ছামতো চলার। আমার অন্যান্য আত্মীয়রা, টেলিফোনে এখনও আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে। কিন্তু আমার স্বামী এবং আমি যখন সশরীরে তাদের কাছে যাই, তখন তাদের স্নায়বিক চাপ পরিলক্ষিত হয় এবং দূরের মনে হয় তাদের। এমনকি কখনো আমাদের অবজ্ঞা করে নিজেদের মাঝে এমন ভাবে কথা বলতে দেখা যায়, যেন আমরা ওখানে উপস্থিতই নেই। আমার পরিবারের কারো ইসলামের প্রতি কোন আগ্রহ নেই এবং কেউ মুসলিম হতে চায় না।

আমার মা কামনা করতেন যে, আমার স্বামী আমাকে ফেলে রেখে ইরান চলে যাবে। তিনি কল্পনা করতেন যে, আমি তখন ইসলাম ত্যাগ করবো এবং তার পূর্বের সে মেয়েটি হয়ে যাবো আবার। আমাদের বিয়ের চার বছর পর, আমার স্বামী বিদেশে গিয়েছিল এবং ৬ সপ্তাহ পরে আবার ফিরে এসেছিল, আমার মা বুঝলেন সে আমাকে ত্যাগ করবে না। তখন তিনি ধীরে ধীরে আমার ইসলাম গ্রহণকে মেনে নিতে শুরু করলেন।

তারপর আমি আমার বিশ্বাস ও কাজকর্ম নিয়ে তার সাথে কথা বলতাম এবং তিনি আমাকে বিনা শর্তে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি অনুধাবন করলেন যে আমি এমন একটা বিশ্বাস বেছে নিয়েছি, যা আমি জীবনে ধারণ করেছি। মা বলেছিলেন, তিনি এবং বাবা, তাদের পথ বদলানোর জন্য একটু বেশী বয়স্ক হয়ে গিয়েছেন। আমার বিয়ের ১৩ বছর পর তিনি বলেছিলেন যে মাথায় কাপড় দিয়ে আমাকে খুব সুন্দর দেখায়, ঠিক VIRGIN MARY’র মূর্তিগুলোর মতো।

আমার ধর্ম যাজক ভাই যখন আমাকে একটা চিঠিতে বলেছিলেন যে, আমার স্বামী, আমাদের বাচ্চারা এবং আমি, আমাদের বিশ্বাসের জন্য নরকে যাবো, তখন মা তার সাথে একমত হননি। তিনি বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের কাছে যাবার অনেক পথ রয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন এবং তিনি মনে করেন না যে, আমরা নরকে যাবো। এর পাঁচ বছর পর মা মারা যান, (আল্লাহ যেন তার আত্মাকে শান্তি দেন) এবং শেষ আমি যখন তার সাথে কথা বলি তখন তিনি বলেছিলেন যে, তিনি মরতে ভয় পান না। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি আমাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না, কিন্তু আমার সেই খৃস্টান ধর্ম যাজক ভাইসহ আমার তিন ভাইকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। মা হয়তো শেষ পর্যন্ত ইসলামকে সত্য বলে গ্রহণ করে থাকবেন, যদিও তিনি তা পালন করে যেতে পারেননি।

আমার স্বামী এবং আমি একটা বিশেষ অবস্থার মাঝে রয়েছি, কারণ আমরা দুজনেই এখনো আমাদের বাবা-মার বাসায় থাকি। তারা খুবই সংবেদনশীল এবং আমাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে খোলাখুলি কিছু বলেননি। আমার মা সব সময়ই খেয়াল রাখেন এবং আমরা যখন বাইরে খেতে যাই, তখন হয়তো শুধু আমার বাবার জন্য শূকরের মাংস রাধেন। ছুটির দিনগুলো আমরা সাধারণতঃ দাদা-দাদীদের সাথে এক সাথে কাটাই আর তারা আমাদের প্রায়ই নানা কিছু উপহার দেন। আমি যখন JEHOVAH'S WITNESS-এর অনুসারী ছিলাম, তখন থেকে কারো খুশী পন্ড না করার শিক্ষা পেয়েছিলাম (উপহার প্রত্যাখ্যান করে)।

ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে কিছু ঝগড়াঝাটি হয়েছে। যেমন কাপড়ের দৈর্ঘ্য নিয়ে আমার মায়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে, যখন তিনি আমার জন্য কাপড় বানাচ্ছিলেন। তুমি ওগুলো অত অস্বাভাবিক লম্বা চাও কেন?' বলে তিনি তার হতাশা ব্যক্ত করেছেন- যেমন তিনি হতাশ হয়েছেন, যখন আমি তাকে বলেছিলাম যে GELATIN যুক্ত খাবারও, আমাদের খাওয়ার উপযোগী নয় (যেহেতু GELATIN শূকর থেকে প্রস্তুত করা হয় সাধারণতঃ)। মোট কথা, সময়ের সাথে মা অনেক কিছু বুঝতে শিখেছেন, এমনকি আমাদের দেখে তিনি নিজেই অনুধাবন করেছেন যে, আমেরিকান গণমাধ্যমগুলো দূরভিসন্ধি নিয়ে মুসলিমদের খাটো করে দেখায় বা তাদের চরিত্র হনন করে (আমরা সত্যি সত্যি কেমন, তা অনুভব করে)।

আমি আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের বিশ্বাসের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমরা আরো আলাপ করতে পারবো, যা কখনো খুব একটা করা হয়নি। আমি এও আশা করি যে, আমার বাবার সাথে এ সংক্রান্ত আলাপ আরো বেশী করে করতে পারবো, যার কোন ধরণের কোন ধর্মেই আগ্রহ নেই।

আমার ইসলাম গ্রহণ, শুরুতে পরিবারে বেশ বড় কলহের সৃষ্টি করেছিল। তারা আমাকে সমর্থন করেনি এবং মনে করেছে যে, আমাকে আমার স্বামী মগজ ধোলাই করে বিপথগামী করেছে। পরে দুটো কারণে তাদের এই ধারণা পাল্টে যায় ঃ (১) তারা বুঝতে পারে যে, এটা আমার কোন খামখেয়ালীপনা নয় বা আমি একটা ভাবের পর্যায় বা দশা অতিক্রম করছি মাত্র তাও নয়। তারা যদি আমার সাথে কোন যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়, তবে তাদের আমাকে মুসলিম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। (২) একবার যখন আমার ছেলেমেয়েরা জন্মগ্রহণ করলো এবং মুসলিম হিসেবেই বড় হতে থাকলো, তখন ছেলেমেয়েদের প্রতি একই রকম নেতিবাচক আচরণ করাটা, তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে।

আমি চেষ্টা করেছি, আমার পরিবারের সাথে ইসলাম নিয়ে কথা বলতে, এই আশায় যে, আমি তাদের মুসলিম হিসেবে বাঁচতে ও মরতে হয়তো সাহায্য করতে পারি।

আমার বাবা ও মা প্রথমে মর্মাহত হন। আমার বাবা আমার স্বামীকে দোষ দেন। যদিও তারা দু'জন খুব ভালো বন্ধু ছিলেন, কিন্তু আমার ধর্ম পরিবর্তনের পর, প্রায় এক বছর ধরে বাবা আমার স্বামীর সাথে কোন কথাই বলেননি বলতে গেলে। আমার ধর্মান্তরিত হওয়াকে কেন্দ্র করে পরিবারে অনেক খিটিমিটি লেগেছে। পরিবারে আমার মায়ের দিক থেকেই, অসহিষ্ণুতার মাত্রাটা বেশী ছিল। যাহোক, সম্প্রতি এক পারিবারিক সমাবেশে, আমার পদোন্নতি হয়েছে। আমি নাকি এক দিশেহারা খৃস্টান, যার জানা নেই, কিভাবে CHRIST (JESUS)-এর ত্রাণ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আমি তাদের সাথে ধর্ম সংক্রান্ত আলোচনা না করতে শিখেছি।

এখন আমার মা আমাকে বলেন, কোন রং-এর রুমাল আমার মাথায় বেশী ভালো দেখায় আর প্রায়ই আমার প্রশংসা করেন। মা গ্রহণ করতে শিখেছেন। আমি কামনা করি, আমার বাবা- মা কখনো আমাকে জিজ্ঞেস করবেন যে, আমি আসলে কি বিশ্বাস করি আর আমাকে কোরআনের কিছু অংশ পড়ে শোনাতে বলবেন।

আমার মুসলিম হবার সিদ্ধান্ত, আমার পরিবারের সাথে আমার সম্পর্কে বিরাট পরিবর্তন এনেছে- সম্পর্কটা এখন বেশ চাপের সম্মুখীন। আমার মনে হয়, তারা মনে করেন, আমি জীবনের একটা পর্যায় বা দশা অতিক্রম করছি মাত্র। প্রায় চার বছর হয়ে গেছে, তবু সবকিছু এখনো একটু এলোমেলো । আমি একটু প্রত্যাখ্যাত বোধ করি। আমি পছন্দ করতাম, যদি আমার পরিবার আমার সাথে খোলামেলা আলাপ করতো। আমাকে প্রশ্ন করতো- গণমাধ্যম বা অন্য ভুল উৎস থেকে ইসলাম সম্বন্ধে ধারণা করে নেয়ার পরিবর্তে। সবচেয়ে যা আমার অসহ্য লাগে, তা হচ্ছে, আমার ধর্ম পরিবর্তনের জন্য, আমার স্বামীকে তারা দোষ দিয়ে থাকে।

আমি যখন আমার পরিবারকে দেখতে যাই, তখন আমি চাই আমি যেন মুসলিমদের এক সেরা উদাহরণ হই। কিন্তু তারা মুসলিম নয় মনে হতেই আমার খুব বিষন্ন লাগে। আমার মা সব সময়ই আমাকে বলেন, তিনি কামনা করেন, আমার বাকী দু'টি বোন যদি আমার মতো ভালো মা হতে! ভালো মা হওয়াটা, ভালো মুসলিম হবার একটা অংশ।

এই মেয়েরা কত ভাগ্যবতী, যাদের পরিবার অন্ততঃ তাদের বুঝতে চেষ্টা করেছে বা সম্পর্কের উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। প্রায়ই বাবা-মা ভাবেন যে ছেলেমেয়েরা তারুণ্যে যে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, সেগুলো ঝোকের মাথায় নিয়ে থাকে, আবেগতাড়িত হয়ে এবং সিদ্ধান্তগুলো হালকা ধরনের হয়। যদিও ওটাও অনেক সম্ভাবনার একটি, সময় প্রমাণ করেছে যে, তাদের মেয়ের সংকল্প স্থায়ী এবং তার জীবনধারায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা সব সময়ের জন্য।

২৭
গ্রহণযোগ্যতাকে পিঠ প্রদর্শন
কিছু পরিবারকে মনে হয়েছে, এই পরিবর্তন বরদাস্ত করতে অক্ষম। তারা সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন করাকেই নিরাপদ মনে করেছে অথবা ন্যূনতম সম্পর্ক বজায় রেখেছে মেয়েদের সাথে। কিছু ধর্মান্তরিতদের জন্য, তাদের আদি পরিবারের জীবনধারা, তাদের আদর্শ মুসলিম জীবন ধারার চেয়ে এতো ভিন্ন ও বিপরীতমুখী প্রতীয়মান হয়েছে যে, তারা নিজেরাই পরিবার থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। পরিবারের গ্রহণ করার সদিচ্ছার অভাবের পিছনে রয়েছে দুটি কারণ : (১) মেয়েদের সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাব (২) আর এই সিদ্ধান্ত বা বেছে নেয়া বোঝার চেষ্টা করতেও অস্বীকৃতি। পরিবারসমূহ হয়তো উপরে উপরে একটা (লোক দেখানো) মেলামেশা করতে শিখেছে, কিন্তু তারচেয়ে বেশী কিছুর দিকে গড়ালেই অস্বস্তি বোধ করেছে। এসব পরিবারে কোন কার্যকরী আলোচনা চালানো হয়তো মুশকিল এবং ভিতরে ভিতরে একটা দোষারোপের ও আক্রমণের মনোভাব থেকে থাকতে পারে।

আমার শাহাদা গ্রহণ করার পর থেকেই, আমার পরিবারের সাথে আমার সম্পর্কে, ক্রমেই দূরত্ব বেড়েছে। আমি আল্লাহ্ (SWT)কে বলি, তাদের হেদায়েত দিতে ও সেই আশীর্বাদ দিতে, যা তিনি আমাকে দিয়েছেন- পরকালের কাজ করার জন্য একটা ভবিষ্যত জীবন। আমি আশা করি, তারা আমাকে ও আমার ধর্মকে সম্মান করবে। তারা মনে করে ধর্মীয় ব্যাপারটা একটা তান্ত্রিক কিছু (CULT), যা আমি এক সময় কাটিয়ে উঠবো, যতক্ষণ না তারা দেখলো যে এ ব্যাপারে আমি কতটুকু একাগ্র এবং তার পর আমার সম্বন্ধ করে বিয়ে হলো । আমার স্বামীর সাথে আমার বিয়েটা ছিল মনোমালিন্যের একটা প্রধান কারণ। ত কদাচিৎ আমার কাছে আসে। ১২ বছরে তারা তিনবার এসেছে। প্রথম পাঁচ বছর তারা কেবল আমার জন্য সমস্যারই সৃষ্টি করেছে, আর আমার সাথে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

আমি জানতাম আমি বড়সড় পরিবর্তন ও হতাশাব্যঞ্জক অবস্থার দিকে যাচ্ছি। আমার পরিবারই ছিল এক নম্বর । আজ পর্যন্ত আমি সেখানে স্বাগত নই। গত সেপ্টেম্বরে আমি তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম এবং তারা শুধু আমাকে যে নাজেহাল করেছে তাই নয় আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে বা, তাকে তাদের ঘরে ঢুকতে দিতেও অস্বীকার করেছে। সত্যি কথা বলতে কি, পাড়াপড়শী আমাদের তাদের বাড়ীর সামনে দেখতে পাবার আগেই আমাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে। বহু বছর পরে ঐ দিন আমি তাদের প্রথম দেখেছিলাম।

মুসলিম হবার পর থেকে আমার পরিবারের সদস্যদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। এটা আমাকে বিচলিত করে। কিন্তু ব্যাপারটা তাদের ইচ্ছায় ঘটেছে। যাহোক, একটু একটু করে অবস্থার উন্নতি ঘটছে। গত ক'মাসে পরিবারের অনেক সদস্যই আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। তাই এখনো আশা আছে। আমার বাবার প্রধান আপত্তি আমার বিশ্বাসের সবচেয়ে দৃষ্টিগোচর হওয়া বৈশিষ্ট্য বলেই হয়তো আমার হিজাব পরা। তিনি ব্যাপারটা বোঝেনও না আর অনুমোদনও করেন না। সাধারণ নিয়ম হিসেবেই, আমার পরিবার ইসলাম সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানে না বা জানার ইচ্ছাও পোষণ করে না।

প্রথমে আমার বাবা-মা প্রায় উন্মাদই হয়ে গিয়েছিলেন (রাগে)। এর কারণ ছিল, তারা ইসলামকে বুঝতেন না। মুসলিম হবার দেড় বছর পরে, আমি যখন হিজাব পরতে শুরু করি, তখনই সত্যিকার সমস্যা শুরু হয়। আমার বোন এখনও মনে করে আমি অপ্রকৃতিস্থ এবং উন্মাদ, আর তাই আমার সাথে মোটামুটি কোন সম্পর্কই সে বজায় রাখেনি।

আমার পরিবারের সাথে আমি দূরত্ব অনুভব করি। আমি আমার ভাই ও বোনদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ, কিন্তু এখন আমরা আর তত ঘনিষ্ঠ নই। ধর্ম একটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়, যদিও আমি তাদের কিছুটা হলেও বোঝাতে পেরেছি যে, CATHOLIC হিসেবে আমরা যা অনুসরণ করতাম, তার সবকিছুই ঠিক ছিল না। আমি আমার বাবা-মার সাথে আমার অনেক দূরত্ব অনুভব করি। আমার মা বুঝতে রাজি নন যে, যে বইটা (BIBLE) তিনি অনুসরণ করে আসছেন, তা মানুষ বদলে ফেলেছে অথবা ইসলামই সঠিক পথ। তিনি বুঝতে পারেন না, আমি কেন ঢেকে চলি আর কেনই বা শূকরের তৈরি খাবার সামগ্রী খাই না (সব খাবারই যে মাংস দিয়ে হয় তা নয়- অস্থি, মজ্জা, চর্বি মিশিয়ে বহু খাবার হয়)।

আমার পরিবারের বেশীর ভাগই মনে করে, আমি আমার স্বামীর দিকে চেয়ে মুসলিম হয়েছি। তারা এটুকু বুঝতে পারে না যে, আমি আমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে ইসলামে বিশ্বাস করি- এতটুকু বিশ্বাস করি যে, আমি তাদের কাছে ইসলামের সত্য প্রচার করতে চাই- যতক্ষণ না তারা বলে যে তারা তা বিশ্বাস করে এবং শাহাদা গ্রহণ করে।

আমি জানি তারা মনে করে যে, আমার স্বামী জোর করেই আমাকে ইসলাম গ্রহণ করায় এবং এছাড়া অন্য কোন সম্ভাবনা বিশ্বাস করতে তারা অস্বীকার করে । আমি আশা করি আমার মা আমাকে, আমি যেমন তেমন ভাবেই গ্রহণ করবে, আর এ সত্যটাও গ্রহণ করবে যে, পছন্দটা আমার নিজস্ব ছিল এবং আছে।

ইসলাম গ্রহণ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত। তারা এটা স্বীকার করতেও রাজী নয় যে, আমরা এমনকি ঈশ্বরেও বিশ্বাস করি- আর তাই, তারা বিশ্বাস করে যে আমরা নরকে যাবে। তাদের এই গোয়ার্তুমি আমি ঘৃণা করি।

আমার মা, কোন ব্যাপারেই আমার স্বামীর মতামতকে সম্মান করেন না এবং কখনো তার মতামত জিজ্ঞেসও করেন না। সে যখন আমার মায়ের সাথে খোলামেলা আলাপ জুড়তে, খৃষ্টধর্মের প্রসঙ্গ ওঠায়, আমার মা তখন এ নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান- এমনকি তিনি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী ভেবে দেখতেও রাজী নন। কারো সাথে বিতর্কে আমার স্বামী বেশ জোরালোভাবে কথা বলে, কিন্তু সে খুব চায় যে আমার মা, আমাদের দিকটা ভেবে দেখুক- সে কিছুতেই ক্ষান্ত হতে চায় না, এমনকি ব্যাপারটা যদি বা চিষ্কারের প্রতিযোগিতায়ও পরিণত হয়। কিন্তু মা তার মুখে কেউ কথা বলুক- তাতে অভ্যস্ত নন। আমার কথা তো প্রশ্নই ওঠে। আমার স্বামী বোঝে না যে যা তার কাছে এতো জলজ্যান্ত এবং স্পষ্ট তা অন্যের কাছে একই রকম লাগবে না কেন?

আমি একজন মুসলিমকে বিয়ে করাতে তারা সত্যিই বিশেষ মন্তব্য করেনি। আমি যখন প্রথম বিয়ে করলাম, আমার বৃহত্তর পরিবারের কেউ কেউ আপত্তি জানায় বিশেষ করে আমার দাদা- এ জন্যে নয় যে, সে একজন মুসলিম, কিন্তু এ জন্যে যে, সে একজন আমেরিকান নয়। তিনি একজন ‘নিম্নশ্রেণীর বিদেশী’কে পরিবারে চাননি। প্রায় দু'মাস তিনি আমার সাথে কথা বলেননি। কিন্তু তার স্ত্রী মধ্যস্থ হয়ে তাকে বলেন যে, তিনি যা করছিলেন তা ঠিক নয়। সুতরাং হয় তাকে সব ছেড়ে দিয়ে যেভাবে সব চলছে, তা চলতে দিতে হবে শুধু নয়, এক পর্যায়ে আমাকে হারানোর সম্ভাবনা চিন্তা করতে হবে। এক সময় এক চাচাতো বোন, এই আশা ব্যক্ত করেছিল যে, আমার স্বামীই হয়তো ধর্মান্তরিত হয়ে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করবে।

সবকিছু নিয়ে খোলাখুলি কথাবার্তা বলার নিরিখে, আমরা খুব ঘনিষ্ঠ পরিবার নই। কথাবার্তা প্রায়ই মনে হয় ভাসা ভাসা হয়। একবার আমার পাঁচ বছরের ছোট ভাই, আমার স্বামীকে মুসলিমদের বিশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করছিল। বাবা তৎক্ষণাৎ তাকে জানিয়ে দিলেন যে, ওসব আলোচনা করা চলবে না। তাই বেশ আগে থেকেই এটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, ধর্ম আলাপের কোন বিষয় হতে পারবে না। আমি আমার স্বামীকে বললাম যে, এমন যদি না হতো, তাহলেই ভালো ছিল। কিন্তু আমার পরিবারের সাথে আমার তেমন আবেগ আপুত কোন বন্ধন নেই।

আমার বাবা-মাকে পরিবর্তনটা মেনে নিতে হয়। তাদের মুখ চেয়ে আমি খৃষ্টধর্ম বা আমেরিকাবাদে ফিরে যাচ্ছিলাম না কোন অবস্থায়ই। তারা খোলা মনের নন, কিন্তু আমি যোগাযোগ রক্ষা করা ও সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সম্ভাব্য সব করে থাকি। আমাদের জন্য সম্ভাব্য সব পন্থায়।

আমি আশা করি আমার বাবা-মা, আর সাধারণভাবে সব অমুসলিমই ইসলামের ছায়াতলে আসুক। আমি এও বিশ্বাস করি যে, প্রত্যেক মানুষকেই তার নিজের কর্মকান্ডের দায়িত্ব বহন করতে হবে আর আমাকে সে অনুযায়ীই জবাবদিহি করতে হবে।

আমি আমার পরিবারের উপর বা অন্য কারো উপরই কোন ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করতে চাই না। তারা যদি আমাকে উত্যক্ত করে, যা তারা প্রায়ই করে থাকে, তবে আমি শুধু এ ব্যাপারে দোয়া করি আর চেষ্টা করি ব্যাপারটা যেন আমাকে কুরে কুরে না খায়।

পিছনে ফেলে আসা এমন কিছু অধ্যায় আছে, যেগুলো এখনো আমাকে কষ্ট দেয় বা হারানোর অনুভূতি দেয়। যেমন আমার মা, বোনদের এবং বন্ধুদের কার হতে না পারা। আমার দাদীর নৈকট্য লাভ করতে না পারাও আমাকে কষ্ট দেয়- যিনি খুব চেষ্টা করেছেন, আমাকে এবং আমার জীবন ধারাকে বুঝতে এবং মেনে নিতে, কিন্তু এখনো পেরে ওঠেননি।

আমার বাবা-মার সাথে বোঝাপড়া করা হয়নি। এই নভেম্বরে প্রায় তিন বছর হতে চললো- তাদের সাথে আমার শেষ দেখা হবার। আর তারা এ ব্যাপারে আমাদের কারো সঙ্গে, কোন কিছু করতেও ইচ্ছুক নন। আমার ভাইও একই ধরণের অবস্থান নিয়েছে। আমার খালা অবশ্য আমার সাথে কথা বলে, কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছে শয়তানের বিশ্বাস- এমন সব কথা বলে। বাবা-মায়ের সাথে ছুটি কাটানো নিয়ে আমাকে ভাবতে হয় না, কারণ প্রায় তিন বছর ধরে তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

আমার ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত, পরিবারে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। আমার বাবা এবং সত্য (আমার মা মারা গিয়েছেন। এর জন্য আমাকে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করেন। পাঁচ বছর আমাদের মাঝে কোন কথা হয়নি। আমার দাদা-দাদী সব সময় আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোন লুকোচুরি খেলেননি- এ ব্যাপারে তারা যে আমার সাথে একমত নন, তা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন।

এই মেয়েরা নিজের জন্য যে অবস্থা বেছে নিয়েছিল, তাতে হয়তো তাদের পরিবারের সমর্থন পায়নি। কিন্তু তাদের আদি পরিবারে সমর্থন ছাড়াই, সাফল্য পেতে তাদের শক্ত হতে হবে। বছরের পর বছর পার হতে থাকলে, হয়তো সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটতে পারে। পারিবারিক আপদ-বিপদ, হৃদয়ে পরিবর্তন অথবা সব ছাপানো প্রয়োজন ইত্যাদি হচ্ছে সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়নের ইচ্ছার কারণসমূহের কয়েকটি।

২৮
গ্রহণযোগ্যতা কোন পারিবারিক ইস্যু নয়
ধর্মান্তরিত দু’জন মেয়ের মতে, তাদের সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের আদি পরিবারের বলার কিছু ছিল না। তারা অনুভব করেছে যে, এটা তাদের পরিবারের কোন ব্যাপার ছিল না। আর মেয়ের সিদ্ধান্তে যদি তারা বিচলিত হয়েই থাকে, তবে সেটা পরিবারের সমস্যা, মেয়ের নয়।

আমার পরিবারের উপর এসবের প্রভাবের কোন অস্তিত্ব নেই। আমি একজন প্রাপ্তবয়স্কা এবং আমি কি করবো, তা আমিই ঠিক করি। আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবেই আচরণ করি, আর আমাদের জীবন কিভাবে যাপন করবে, তার অনুমতি নিতে যাই না। ধর্ম আমার বাবা-মার জীবনের কোন দৃশ্যমান অংশ নয়। আর কেউ জিজ্ঞেস না করলে, আমরা ধর্ম নিয়ে কথাও বলি না। আমরা যখন বিদেশে চলে যাবো, আমার মনে হয় তারা বুঝবে। কিন্তু যদি তারা না বোঝে, তবে ব্যাপারটা তাদের নিজেদেরই সামলাতে হবে।

আমার পরিবারের সাথে আমার সম্পর্কের উপর আমার মুসলিম হওয়ার কোন প্রভাব নেই। তারা জানতো, তারা আমার ধর্মকে মেনে নিতে পারে অথবা প্রত্যাখ্যান করতে পারে- তাতে কিছুই আসে যায় না। আমার স্বামী (অমুসলিম), আমার পরিবর্তনসমূহ মেনে নিয়েছে। কারণ সে আমাকে সম্মান করে।

আমি আমেরিকার পশ্চিম অংশে থাকি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা পূর্ব অথবা মধ্য-পশ্চিমে থাকে। আমার বোধ হয়, তারা বুঝিবা কখনই পুরোপুরি বুঝবে না। কিন্তু তারা যখন জানলো যে, আমি মুসলিম এবং আমাকে কেউ প্রভাবান্বিত করেনি এই সিদ্ধান্ত নিতে, তারা মেনে নিয়েছে যে আল্লাহ্ (SWT) যাকে ইচ্ছা তাকেই হেদায়েত দেন।

প্রশ্নমালার কোন উত্তরের ক্ষেত্রেই এমন কোন আভাস পাওয়া যায়নি যে, মেয়েরা তাদের বাবা-মাকে বা পরিবারকে রাগাতে বা তাদের উপর কোন প্রতিশোধ নিতে মুসলিম হচ্ছিল। বেশীর ভাগেরই ধারণা ছিল যে, তাদের কাজকর্মে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে আর তাই তারা চেষ্টা করেছে, তাদের ধর্মান্তরিত হবার খবর যেন অপেক্ষাকৃত কোমলভাবে প্রকাশিত হয়, তার উপায় বের করতে। কিন্তু এইসব মেয়েদের জন্য, এই নতুন লাভ করা বিশ্বাসের জন্য, যদি পরিবারকে হারানোই একমাত্র পরিণতি হতো, তবে তারা তার বিনিময়েও তাদের বিশ্বাসকেই মূল্যবান বা আকাক্ষিত মনে করতো। তারা তাদের পথ বেছে নিয়েছিল এবং সেই পথে পাড়ি জমাবার সংকল্পও করেছিল।

২৯
মুসলিম পথে যাত্রা ইসলামিক নিয়মে জীবন যাপন ও অনুশীলন
আমি ভেবেছিলাম ঐ THANKSGIVING-এর সপ্তাহান্তে আমি যে কষ্ট ও ব্যথা পেয়েছিলাম তা বুঝি কখনো মিলিয়ে যাবার বা শেষ হবার মতো নয়। কিন্তু আমরা সবাই ব্যাপারটা কাটিয়ে উঠতে সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। এরপর JODI যখন আবার বেড়াতে আসলো, আমরা এক সাথে সেলাই করে সময় কাটিয়েছি। সে যখন ছোট্টটি ছিল তখন থেকেই আমরা এক সাথে বসে সেলাই করতে ভালো বাসতাম। সেলাই করতে করতে আমরা কথা বললাম। JODI যা বেছে নিয়েছে, তার সম্বন্ধে জানার আমার বহু কিছু ছিল।

“মা, ইসলাম আসলে কি সে সম্বন্ধে তোমার যাতে একটা ধারণা হয় সে জন্য তোমার শোনার জন্য আমি কিছু টেপ (ক্যাসেট) নিয়ে এসেছি। সত্যিই মা, খৃষ্টধর্মের সাথে এর অনেক কিছুরই মিল রয়েছে। আমি তো মনে করি, তোমরা আমাকে যেভাবে জীবন যাপন করার জন্য বড় করেছে, সে ভাবে আগের চেয়ে এখনি (মুসলিম হিসেবে) আমি বরং ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবো।”

হ্যা, ঐ দিকটা সম্বন্ধে সে বোধ হয় ঠিকই বলেছে। কেননা আমাদের চার্চের এমন কিছু প্রত্যাশা ছিল, যা তরুণদের জন্য এই সমাজে বাস করে পালন করা কঠিন ছিল। কিন্তু ইসলাম খৃষ্টধর্মের সদৃশ? বেশ, ওটা আমার কাছে প্রমাণ করতে কষ্ট হবে। ইসলাম রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেক গন্ডগোলের সৃষ্টি করেছে। আর এর অদ্ভুত সব ধারণা রয়েছে। যাহোক, আমি শিখতে উন্মুখ ছিলাম। মেয়ের সাথে একটা সম্পর্ক রাখতে হলে, তাছাড়া আমার আর করারই বা কি ছিল?

JODI কে সত্যি সত্যি গ্রহণ করে নিতে ও সে যে জীবন বেছে নিয়েছে তাতে তাকে সমর্থন করতে এরপরও আমার দেড় বছর সময় লেগে গেছে। আমি তাকে তার ধর্ম পালনে খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ দেখেছি। দেখেছি কিভাবে সে ঈশ্বরের দাসত্ব করছে আর তার চারপাশে যারা আসে তাদের সেবা করছে, দেখেছি সে কতটা মনের জোর নিয়ে, মাথা ঢাকা ঐ অদ্ভুত দেখতে পরিচ্ছদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যাচ্ছে। অথচ তবু সে আমাদের JODI-ই ছিল তখনও, যে আমাদের ভালোবাসতো, যে কথা বলতে ও সবার সাথে মিশতে পছন্দ করতো, যে তার শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে তাল মিলিয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল, সে চেয়েছিল সেবিকা হতে। আর তাই সে হতে যাচ্ছিল।

আমার বন্ধুরা, তাদের মেনে নেয়ার কথা বলে আমাকে সাহায্য করেছে। আমি দেখলাম যে, একটা কবিতা বা প্রবন্ধ পড়ার পরে অথবা JODI'র পুরনো ঘরে কেবল বসে থাকলে বা কাঁদলেও মনটা বেশ সেরে ওঠে। প্রার্থনা করতে গিয়ে আমি তাকে ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ করতাম, আর এটা সন্দেহাতীত যে আমার অনেক প্রার্থনা করার ছিল। আমাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সাহায্য করতে হতো, যারা নিজেদের পরিত্যক্ত ও প্রত্যাখ্যাত মনে করতো (JODI দ্বারা)। আমাদের পরিবারটা এমন ছিল যে, আমরা সংঘাত পছন্দ করতাম না। আমরা ভালোবাসতে ও মেনে নিতেই চেয়েছি। আমরা আমাদের চারপাশের কাছে নিজেদের খুলে ধরতেও চেয়েছি, আর তাই আমাদের মেয়ে যা গ্রহণ করেছে- সে সম্বন্ধে জানতে শুরু করলাম আমরা।

গণমাধ্যমে প্রায়ই সন্ত্রাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত করায় "JIHAD" শব্দটি সম্বন্ধে বহু অমুসলিমের ধারণা রয়েছে বা বহু অমুসলিমই এই শব্দটির সাথে পরিচিত । DR. JAMILAH KOLOCOTRONIS একজন জন্মগত আমেরিকান ও ধর্মান্তরিত মুসলিম, তার Ph.D'র বিষয় হিসেবে এই ইসলামিক ধারণাটি (JIHAD) নিয়ে গবেষণা করেন। জিহাদ একটি আরবী শব্দ যার অর্থ হচ্ছে চেষ্টা করা, সংগ্রাম করা বা পরিশ্রম করা। মুহাম্মদের সময় এই নবীন ধর্ম যখন বেড়ে উঠতে শুরু করে, তখন এই শব্দটি একটি নতুন অর্থ ধারণ করে। DR. KOLO. COTRONIS OTT ISLAMIC JIHAD : AN HISTORICAL PERSPECTIVE বইতে বলেন ।

এখন এর অর্থ দাঁড়ালো “আল্লাহর রাস্তায় পরিশ্রম বা সংগ্রাম করা”। মুহাম্মদের অধ্যায়ের পরে, ইতিহাসবিদরা জিহাদকে "HOLY WAR" বা “পবিত্র যুদ্ধ” (ধর্মীয় যুদ্ধ) হিসেবে অনুবাদ করতে শুরু করেন। কিন্তু এই সংজ্ঞা শব্দটির সম্পূর্ণ অর্থসমূহ প্রকাশ করে না। জিহাদের সংজ্ঞা সব সময়ই হওয়া উচিত “আল্লাহর জন্য পরিশ্রম বা সগ্রাম- কারণ এই সংজ্ঞাই কেবল শব্দটির সফল মর্মার্থকে একত্রে ধরে রাখে।

এইদিক থেকে বিচার করলে ইসলামিক অনুশীলনের সাথে সম্পর্কযুক্ত যে কোন কর্মকান্ডই একটা সগ্রাম বা পরিশ্রম হতে পারে- যেমন যে সকালে উঠতে অভ্যস্ত নয়, সে যখন ফজরের নামাজের জন্য কষ্ট করে উঠছে। চরমপন্থী দলগুলো (যারা অত্যন্ত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে) যত্রতত্র এই শব্দটিকে ব্যবহার করাতে পশ্চিমা জনগোষ্ঠীতে ‘জিহাদ' শব্দটি সম্বন্ধে এক নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।

মুহাম্মদের সময় এই শব্দটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহৃত হতো- বিশেষতঃ প্রথম ক’বছর মুসলিম ধর্মান্তরিতরা যখন একটি ছোট আন্দোলনে শরীক হচ্ছিল আর তাদের পুরনো ঐতিহ্য ও জীবন ধারাকে ত্যাগ করার জন্য সংগ্রাম করে চলেছিল- যদিও তাদের বিশ্বাসের জন্য, পরিবারের পক্ষ থেকে বা অন্যান্য সূত্র থেকে তাদের উপর অত্যাচার নেমে আসতো। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই টিকে থাকাই ছিল জিহাদ, কেননা তারা আল্লাহর রাস্তায় সগ্রাম করছিল। আমেরিকান মেয়েরা, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার নিজেরা ঠিক এই সংগ্রামের মাঝেই রয়েছে যখন তারা তাদের পুরনো ঐতিহ্য ত্যাগ করছে এবং নতুন বিশ্বসসমূহকে জীবনে ধারণ করছে এবং সেই অনুযায়ী জীবন ধারণ করছে।

আমাদের বেশীর ভাগের কাছেই ইসলাম এক অজানা বিষয়। যদিও আমরা হয়তো ইসলামের উপর বা মুসলিমদের সম্বন্ধে এক-আধটা বই পড়ে থাকবো, চার্চের কোন ক্লাসে কিছুটা পড়ে থাকবো অথবা স্কুলে এ সম্বন্ধে কারো হয়তো একটা ইউনিট থেকে থাকতে পারে- ওসবের বিষয়বস্তু খুব একটা অর্থবহ ছিল না বা মনে থাকার মতোও ছিল না। এখন যাহোক কথা বলা ও হেঁটে চলা জলজ্যান্ত প্রিয়জন রয়েছে আমাদের, যে মুসলিম হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের প্রয়োজন সেই বিষয় সম্বন্ধে জানা, যা তার কাছে এতো আবশ্যক মনে হয়েছেপ্রয়োজন তার যাত্রা সম্বন্ধে জানার।

ইসলাম হচ্ছে ঐ ধর্মের নাম। এটা একটা আরবী শব্দ। যার অর্থ “ঈশ্বরকে সবকিছুর ওপরে স্থান দেয়া এবং যা “সেই একমাত্র ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণের আহবান জানায়। এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে শান্তি সৃষ্টিকর্তার সাথে শান্তিতে বসবাস, নিজের মাঝে শান্তি আর অন্যান্য মানুষের সাথে শান্তিতে থাকা।

ইসলামের অনুসারীদের মুসলিম বলা হয়। তাদের কেউ MUHAMMADANS বা ISLAMITES বা ISLAMS বলুক, তা তারা পছন্দ করে না। এই জনগোষ্ঠীকে MUSLIMS বলা হয়।

মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর মুহাম্মদকে জিব্রাইলের কাছ থেকে তাঁর বাণী লাভ করার জন্য মনোনীত করেছিলেন। সময়টা ছিল ৭ম শতাব্দী, আর স্থান ছিল আরবীয় উপদ্বীপের মক্কা। কোরআন হচ্ছে ঐশী বাণীর সংকলন, যা মুহাম্মদের মাধ্যমে ২৩ বছর ধরে প্রেরিত হয়েছিল। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, কোরআন ঈশ্বরের নিজস্ব (আক্ষরিক অর্থে) ও শেষ বাণী (পৃথিবীর কাছে পাঠানো) ধারণ করে। মোট কথা, ধর্ম হচ্ছে ইসলাম, অনুসারীরা মুসলিম, নবী হচ্ছেন মুহাম্মদ আর মুহাম্মদের মাধ্যমে পাঠানো ঐশী বাণীর পবিত্র গ্রন্থ হচ্ছে কোরআন।

৩০
বিশ্বাসের বিষয়সমূহ
তিনটি মূল বিশ্বাস হচ্ছে ইসলামিক বিশ্বাসের ভিত্তি : ঈশ্বরের একত্ব, নবুয়ত ও মৃত্যুর পরের জীবন।

ঈশ্বরের একত্ব হচ্ছে তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিপ্রস্তর । আল্লাহ্ হচ্ছেন সেই এক এবং একমাত্র ঈশ্বর। আল্লাহ্ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে- “কেবল ঈশ্বর” বা “একমাত্র ঈশ্বর” (THE GOD) আর এর কোন পুংলিঙ্গ বা স্ত্রী লিঙ্গ বা বহু বচনও নেই; তাই আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোচ্চ সত্তা। আল্লাহ্ হচ্ছেন সব মানুষের সৃষ্টিকর্তা। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ হচ্ছেন খৃষ্টান, ইহুদী, মুসলিম ও অন্যান্যদের ঈশ্বর। কাউকে বা কোন কিছুকে আল্লাহর সমপর্যায়ের মনে করাকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারণ বলে গণ্য করা হয়। আল্লাহর একতুকে বলা হয় তৌহিদ আর তৌহিদ আত্মাহর বা ঈশ্বরের একত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে। খৃষ্টানদের ত্রয়ী ধারণা- অর্থাৎ পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা (HOLY SPIRIT)-এর ধারণাকে ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে- JESUS-কে কোন ঐশ্বরিক আসন দেয় না ইসলাম। কিন্তু মুসলিমরা JESUS-কে একজন শ্রদ্ধেয় নবী ও ঈশ্বরের বার্তাবহ রসূল মনে করে।

বিশ্বাসের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে আদম, ইব্রাহিম, ISAAC, ইয়াকুব, মূসা, সুলাইমান ও দাউদ- আদি পুস্তকের কিছু নবী আর জন ও JESUS-এর মতো নতুন পুস্তকের নবী তথা সর্বশেষ নবী মুহাম্মদের মাধ্যমে ঈশ্বর জীবন যাপনের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন

-মুহাম্মদ নিয়ে এসেছেন পৃথিবীর কাছে আল্লাহর শেষ বাণী এবং আক্ষরিক বাণী। প্রত্যেক নবীর নাম উচ্চারণ করলে বা লিখলে তারা বলে তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক বা নামের শেষে (Pbuh) অর্থাৎ PEACE BE UPON HIM । তারা খৃস্টান, ইহুদী ও মুসলিমদের ‘আসমানী কিতাব প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী" বলে মনে করে এবং নবীদের মাধ্যমে এদের মাঝে একটা যোগসূত্র ও আত্মীয়তা অনুভব করে।

নবী মুহাম্মদকে ঈশ্বরের বার্তাবহ বলে শ্রদ্ধা করা হয় (কিন্তু ঐশ্বরিক ভেবে পূজা করা হয় না) আর JESUS-কেও ঈশ্বরের বার্তাবহ মনে করা হয়। যদিও মুসলিমরা ও খৃস্টানরা, JESUS-এর ঐশ্বরিক গুণাবলীর ব্যাপারে একমত নয়। কিন্তু নৈতিকতার অনেক বিষয়ে, মৃত্যুর পরের জীবনে, শেষ বিচারের দিনে ইত্যাদিতে তারা একমত। কোরআন শিক্ষা দেয় যে, ব্যাভিচার, খুন, মিথ্যাচার, চুরি এবং প্রতারণা হচ্ছে ভুল কাজ বা পাপকর্ম।

মৃত্যুর পরের জীবন হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় মৌলিক বিশ্বাস। জীবনে বিশ্বাস এবং সে অনুযায়ী কাজ দুইটাই জরুরী। তারা এক বিচারের দিনে বিশ্বাস করে, যে দিন ঈশ্বরের সামনে আমাদের স্বীয় কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। প্রতিটি কাজে সেটা ঈশ্বরের নির্দেশ মোতাবেক হচ্ছে কিনা, তা ভেবে দেখা অত্যন্ত জরুরী।

৩১
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা জরুরী করণীয় বিষয় রয়েছে যা একজন মসলিমের জন্য অবশ্য করণীয় বা পালনীয়। প্রথম স্তম্ভটি হচ্ছে শাহাদা ঘোষণা করা বা উচ্চারণ করা- যা হচ্ছে বলা যায় ধর্মান্তরিত হওয়ার বক্তব্য বা বাণী ঃ “আল্লাহ ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই এবং মুহাম্মদ হচ্ছেন আল্লাহর রসূল।” বাকী চারটি স্তম্ভ হচ্ছে বাস্তবকর্ম এবং অবশ্য করণীয় ও প্রতিদিনের প্রার্থনা (নামাজ), রমজানে উপবাস (রোজা), বাৎসরিক কল্যাণ অর্থ ব্যয়- যা গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া (প্রায়ই রমজানের সময় দেয়া হয়) আর মক্কায় তীর্থ যাত্রা।

ইসলাম গ্রহণ করতে গিয়ে যারা ধর্মান্তরিত হবে তারা প্রথমে শাহাদার ঘোষণা করবে- আরবী এই কথার পুনরাবৃত্তি করবে যে “আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল” এ ব্যাপারে তারা সাক্ষী দিচ্ছে। তারা এমন একটা জীবন ধারা গ্রহণ করে যার অনেক প্রয়োজনীয় এবং অবশ্য করণীয় ব্যাপার রয়েছে- যখন তারা একটা সরল পথে তাদের যাত্রার দিক প্রতিষ্ঠিত করে। বাইরে থেকে যদিও এমন মনে হতে পারে যে, এই ধরণের কর্মকান্ডের জন্য বেশ কষ্ট করতে হবে, কিন্তু সাধারণভাবে আমাদের প্রশ্নপত্রে সাড়া দেয়া মেয়েরা বলেছে যে, তাদের জীবনে এইসব শৃঙ্খলা পালন করতে পেরে তারা নিজেদের ধন্য মনে করেছে। কিছু মেয়েরা উপবাস (রোজা) পালনকে সহজই মনে করেছে, আবার কেউ কেউ এটাকে খুব কঠিন মনে করেছে শুরুতে। অনেক মেয়েরাই নিজেদের দৈনিক পাচ বেলার অবশ্য করণীয় প্রার্থনার (ফরজ নামাজ) ছকে বেঁধে ফেলতে পেরেছে খুব সহজেই- আবার কেউ কেউ বেশ কষ্ট করে নিজেদের ঐ কর্মসূচীতে অভ্যস্ত করেছে। এদের এক অংশের জন্য ওড়না পরাটা (হিজাব) একটা আশীর্বাদ স্বরূপ ছিল এবং এতে কোন সমস্যা ছিল না। আবার কেউ কেউ সব প্রয়োজনীয় অবস্থায় মাথা ঢেকে চলতে কয়েক বছর সময় নিয়েছে।

একটা ইসলামিক জীবন ধারা অনুযায়ী কিভাবে জীবন যাপন করা যায় এ ব্যাপারে শিক্ষা লাভ করতে গিয়ে মেয়েরা বিভিন্ন সূত্র থেকে সহায়তা পেয়েছে। তাদের স্বামীরা ছিল এক সুদৃঢ় সমর্থনের উৎস। তারা তাদের স্ত্রীদের শিক্ষা দিয়েছে এবং তাদের ইসলামের অনুশীলন সম্বন্ধে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে, আর তা করতে গিয়ে স্বামীরা তাদের নিজেদের জীবনেও ইসলামকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। বই, ভিডিও ক্যাসেট ও অডিও ক্যাসেট তাদের বিভিন্ন আচার-আচরণের কায়দা-কানুন ব্যাখ্যা করেছে। অন্য মুসলিম মেয়ে, যারা হয় আমেরিকান ধর্মান্তরিত অথবা জন্মগত মুসলিম- তাদের কাছ থেকেও এদের অনেকেই সাহায্য লাভ করেছে।

আমাকে যেহেতু আমার স্বামীই ইসলামের সাথে পরিচিত করায়, আমার জন্য মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করতে শেখাটা সহজ ছিল। কেননা আমাকে সেজন্য শুধু তার এবং তার কিছু বন্ধু-বান্ধবের দৈনিক কর্মকান্ডের উদাহরণ খেয়াল করতে হতো। নির্দিষ্ট ধর্মীয় করণীয়র কথা বলতে গেলে সে আমাকে কিভাবে নামাজ পড়তে হয়, রোজা রাখতে হয় এবং অজু করতে হয়, ইত্যাদি শেখানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার ননদ, যে আমাদের মরক্কো সফরের সময় আমার বোনের মতো আপন হয়ে গিয়েছিল, আর যে নিজেই তখন মাত্র ক'মাস হয় হিজাব পরতে শুরু করেছিল, সেই আমাকে আমার উপাসনা সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে এবং সেই আমাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করার মনোবল এবং উৎসাহ যোগান দেয়।

প্রথম যখন আমি রোজা রাখি, আমার ভয় হচ্ছিল, কখনো অল্প সময়ের জন্যও উপোস করার অভ্যাসবিহীন আমি বোধহয় ব্যাপারটা সহ্য করতে পারবো। আমার স্বামী রোজার প্রয়োজনীয়তা এবং মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করেছিলো, কিন্তু বলেছিল, আমি যদি একদমই সহ্য করতে না পারি তাহলে আমাকে তা করতে হবে। কারণ আল্লাহ্ কখনোই আমাদের এমন কোন কিছু বহন করতে বলেন না, যা আমরা সহ্য করতে পারি না। তার এই উদারতা আমাকে ব্যাপারটা সামলে উঠতে সাহায্য করেছে। আর তার পর থেকে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, আমি সব সময় রোজা রেখেছি (সব রোজা রেখেছি)।

পাঁচ ওয়াক্তের নামাজটাই বুঝি সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার, কারণ আমাদের আমেরিকান জীবন ধারা প্রায়ই সময় মতো নামাজ আদায় করার কোন অবকাশ দেয় না। কখনো সময় আমার সবচেয়ে মূল্যবান কিছু ছিনিয়ে নেয়, কিন্তু আমি কখনো নামাজ পড়া বন্ধ করি না। এমনকি কখনো যদিবা সময় মতো নামাজ আদায় করা নাও হয়। এটা বিশেষ কিছু মনে নাও হতে পারে, কিন্তু নামাজের এই ছোট্ট কর্মকান্ডটিই সব সময় আল্লাহকে আমার হৃদয়ে এবং মনে ধরে রাখে।

এই জরিপে অংশগ্রহণকারী মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধনকারী নিয়ম-শৃঙ্খলাসমূহ, জীবনে আশীর্বাদ, শান্তি ও তৃপ্তি বহন করে নিয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করেছে- সেই নিয়ম-শৃঙ্খলাসমূহ, যা তাদের কর্মকান্ড ও ইচ্ছাকে আল্লাহর দিকে কেন্দ্রীভূত করার জন্য প্রয়োজন।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয়টি হচ্ছে- দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া। যা প্রতিটি মুসলিমেরই করণীয়। প্রার্থনাগুলো আরবীতে জপ করা হয় এবং তার সাথে কিছু নড়াচড়া ও বিভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করতে হয়। প্রার্থনার পূর্বে নিজেকে পরিষ্কার হতে হয় বা অজু করে নিতে হয়। পানি দিয়ে হাত, মুখ ও পা ধুতে হয়। মেয়েরা প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে নিজেদের ঢেকে নেয়। প্রার্থনায় নিবেদিত ব্যক্তি একটা বিশেষ দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে (মক্কার দিকে), যা মুসলিম একতার প্রতীক।

কখন এই প্রার্থনা করা যাবে, তার নির্দিষ্ট সময়সূচী রয়েছেঃ ভোরে সূৰ্য্য ওঠার আগে, মধ্যাহ্নে, বিকেলে মাঝ বেলাতে, সূর্যাস্তের পর পর, আর তারও প্রায় এক ঘন্টা পর। এই প্রার্থনার সময়কাল প্রতিবার প্রায় ৫ মিনিটের মতো। মাসিক চলাকালে মেয়েদের নামাজ পড়তে হয় না। যদিও নিজের ব্যক্তিগত প্রার্থনা, যে কোন সময়ে যে কোন জায়গায় করার স্বাধীনতা মুসলিমদের রয়েছে তবু অবশ্য করণীয় (ফরজ) নামাজের সময়ের সাথে সেগুলোকে মিলিয়ে নিতে উৎসাহ দেয়া হয় প্রায় বিশ্বজনীন ভাবেই। মুসলিমরা মসজিদ এবং ঘরের বাইরে জুতা রেখে প্রবেশ করে, যাতে কার্পেট ইত্যাদি নামাজের জন্য পরিষ্কার থাকে।

দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করাটা আমার জন্য এক বিরাট সংকল্পের ব্যাপার ছিল । ধর্মান্তরিত হবার কয়েক মিনিট পর আমার স্বামী যখন আমাকে বললো আমাকে নামাজ পড়তে হবে, আমার তা করতে খুব সংকোচ হচ্ছিল। আমি আমার ধর্মকর্মে, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে অভ্যস্ত ছিলাম না। কিন্তু একবার যখন শুরু করলাম, আমি আর বন্ধ করতে চাইনি।

ইসলাম গ্রহণ আমাকে স্থির হতে, স্বচ্ছন্দ হতে এবং মনোযোগ পেতে সাহায্য করেছে। আপনি খুব দূরে যেতে পারবেন না, যখন পরবতী নামাজ আপনাকে টেনে ফেরত নিয়ে আসবে। আমাদের বিয়ে এবং পারিবারিক জীবনে এর সুনির্দিষ্ট ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে, আর নামাজ আমাকে অপেক্ষাকৃত ভালো এবং শান্ত সাথী ও মা হতে সাহায্য করেছে।

অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াটাই আমার জন্য ইসলামের সবচেয়ে অর্থবহ দিকআমার নিজস্ব আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার জন্য, আমার জীবনে নামাজ এবং অন্যান্য পড়াশোনা বা আধ্যাত্মিক ক্রিয়াক্রমের যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামতে সমর্থ হওয়া এবং সবকিছু সমর্পণ করা অর্থাৎ আল্লাহর কাছে হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে একটা প্রধান আশীর্বাদ।

সময় মত নামাজ পড়াটা সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি । আমি এখনও এর সাথে তাল মিলাতে অভ্যস্ত হইনি।

অজু এবং নামাজের নিয়মকানুন শেখাটা সহজই ছিল। আমার স্বামী একটা কাগজে প্রার্থনার (নামাজের) কথাগুলো লিখে দিয়েছিল এবং ছবি এঁকে দাঁড়ানো, রুকু, সেজদা ইত্যাদি বুঝিয়ে দিয়েছিল। আমি একদিনেই নামাজের দোয়া ইত্যাদি মুখস্ত করে ফেলি। কিন্তু আমি যে ঠিক সময়ে ঠিক শারীরিক ভঙ্গিতে যাচ্ছি, তা নিশ্চিত করার মতো আত্মবিশ্বাসে পৌছুতে আমার প্রায় সপ্তাহখানেক অনুশীলন করতে হয়। আমি অজু করতে, আমার নামাজের পরিচ্ছদ গায়ে চড়াতে আর নামাজ পড়াটাকে উপভোগ করি। কারণ আমি অনুভব করি যে, আমি আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে যাচ্ছি। তিনি জীবনে আমাকে যা দিয়েছেন তার জন্য শুকরিয়া ও একাগ্রতা প্রদর্শন করতে চাই।

নামাজে বিভিন্ন দোয়া আরবীতে পড়া হয়ে থাকে, আর প্রত্যেককে আরবী শিখতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে তারা কোরআনের মূল রূপ পড়তে পারে (অনুবাদ নয় কেবল)। ইসলামিক স্কুলে বাচ্চাদের আরবী শিখানো হয়।

আমি এখনো মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করা শিখছি। আমি অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি এবং পড়াশোনা করি। আমার শাশুড়ী নামাজের উপর একটা বই পাঠান, আর আমি নিজে নিজেই আরবী (দোয়া ইত্যাদি) মুখস্ত করেছি। হিজাব পরা এবং নামাজ ও পাক/নাপাক সম্বন্ধে শেখাটা বেশ কঠিন ছিল। আমি অনেক ক'টা ইসলামিক ভিডিও দেখেছি, অনেক জ্ঞাতব্য লিখে নিয়েছি এবং বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছি।

নামাজটাই সবচেয়ে কঠিন অংশ । আমি আরবী উচ্চারণে নামাজে সবকিছু পড়ি, আর সব সময় ভয় হয় আমি বুঝি ভুল করছি ও আমার প্রার্থনা হয়তো সে জন্য গৃহীত হবে না। কিন্তু আমি জানি যে, যতক্ষণ আমার চেষ্টা রয়েছে এবং যতক্ষণ আমার নিয়ত ভালো, আল্লাহ নিশ্চয় ক্ষমা করবেন। আরবীতে নামাজ পড়া, অথচ যেভাবে জানা উচিত, সেভাবে কোরআন ও হাদীস না জানাটা আমার কাছে খুবই দুঃখজনক লাগে।

আমার গবেষণা ও পড়াশোনার মাধ্যমেই মূলতঃ আমি মুসলিম হিসাবে জীবন যাপন করতে শিখেছি। প্রথমে ইংরেজিতে শেখার পরে আমার স্বামী আমার জন্য প্রার্থনাগুলো আরবীতে লিখে দেয়- যা আমি আমি পরবর্তীতে পড়তে থাকি। কোরআনের অংশসমূহ আমি কেবলই আরবীতে শিখতে শুরু করেছি। কিন্তু সুন্দর আরবী নকশাসমূহ আমি পড়তে পারি না। তাই ওগুলো এখনো কাউকে পড়ে দিতে হয়। আমি নিজেকে এখনো মৌলিক ইসলামের শিক্ষার্থী বলে মনে করি।

আমি যে সমস্ত ধর্মীয় আচারকে জরুরী মনে করি, সেগুলোকে ধাতস্থ করতে আসলে বেশ কষ্টই হয়েছে আমার, কিন্তু একবার আয়ত্ত করার পর বেশ তৃপ্তিদায়ক লাগে।

ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ হচ্ছে উপবাস (সিয়াম), আর তা রমজান মাস জুড়ে পালন করা হয়- রমজান হচ্ছে মুসলিম চান্দ্রবর্ষ ক্যালেন্ডারের নবম মাস। এটা মুসলিমদের জন্য একটা পবিত্র মাস এবং এই মাস উপবাস, প্রার্থনা বা নামাজ এবং দান-দক্ষিণাকে একত্রিত করে।

রমজান মাসে উপবাস করা একটা ধমীয় অবশ্য করণীয় বিষয়। এই সময় গোটা মাস ধরেই একজন মুসলিম, ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগে পানাহার করতে পারে, প্রতিদিন ভোর থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, পানাহার অথবা যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকে। এর ব্যতিক্রম হবে বাচ্চাদের বেলায়, বৃদ্ধ, অসুস্থ, মুসাফির, অন্তঃসত্ত্বা নারী, যে সব নারীদের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াতে অসুবিধা হয় এবং ঋতুস্রাবকালীন অবস্থার নারীদের বেলায়। প্রাপ্ত বয়স্কারা, অন্য সময়ে, যখন তাদের অসুবিধা থাকবে না- তখন বাদ দেয়া রোজাসমূহ রাখবে। সূর্যাস্তের পর মুসলিমদের রোজা ভাঙ্গার ব্যাপারটা, প্রায়ই সম্প্রদায়ের অন্যান্য মুসলিমদের সাথে মিলে মিশে সারা হয়।

রমজান শেষ হবার পরের দিনকে ‘ঈদুল ফিতর' বলা হয় এবং এটা একটা প্রধান উৎসবের দিন- উপহার দেয়া নেয়া, বিশেষ খাবার, কার্ড পাঠানো আর প্রার্থনা ইত্যাদি নিয়ে এই উৎসব। আমাদের আলোচ্য কন্যারা রমজানকে ভালোবাসতে শুরু করেছে, যদিও শুরুতে রোজার শুলা কঠিন মনে হয়েছিল। এটা এমনই একটা সময় যখন অন্যান্য মুসলিমদের সাথে সাম্প্রদায়িক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয় এবং একই সঙ্গে ব্যক্তিগত আত্মিক শুদ্ধি লাভও ঘটে। কখনো একটা অমুসলিম দেশে, রোজা রাখাটাতে একটা হতাশাও থাকে।

আমার প্রথম রমজান মনে রাখার মতো ছিল। আমার শাহাদা নেয়ার ৬ মাস হবার ঠিক আগে আগে। আমি যেমন মনে করেছিলাম, তা থেকে ব্যাপারটা সহজতর ছিল- যদিও তবু তা এক ধরণের সংগ্রামই ছিল। সত্যি কথা বলতে কি, আমার প্রথম রোজার দিন আমি তিনবার তা ভেঙ্গেছি, এটা এমন একটা ব্যাপার যার জন্য পূর্ণ ধর্মীয় সংকল্প এবং একটা সুস্থ মন থাকতে হবে।

বছরে একবার একটা সম্পূর্ণ মাসের জন্য রোজা রাখা, শুরুতে কঠিন ছিল। কিন্তু কেন আমরা রোজা রাখছিলাম এবং রোজা আমাদের জন্য কি করছিলএ সম্বন্ধে যত বেশী জেনেছি, ততই ক্রমে রোজা রাখাটা সহজতর হয়ে এসেছে আমার জন্য।

রমজানের পবিত্র মাসে রোজা রাখাটাই আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে শক্ত করণীয়। আমার প্রথম রোজার আগে আমার ভয় ছিল- আমি হয়তো কুলিয়ে উঠতে পারবো না- বুঝি আমি ঐ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হবে। অবশ্যই আমি তা করতে পেরেছিলাম, কেননা আল্লাহর জন্য যখন আপনি উপবাস করেন, তখন তা সহজ হয়ে যায় ।

কয়েকবার আমার গলা দারুণ রকম শুকিয়ে গিয়েছিল অথবা আমার হয়তো মাথা ধরেছিল। আর আমি কোন ওষুধ সেবন করতে চেয়েছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি তা থেকে বিরত থেকেছি। আমি ইমাম হোসেন (PBUH) এবং তার অনুসারীদের কথা ভেবেছি, যারা কারবালার ময়দানে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় শহীদ হয়েছেন। আমি গৃহহীন ও দরিদ্র জনমানুষের কথা ভেবেছি, যারা জানে না কখন এবং আদৌ কখনো তারা আরেকবার খাবার পাবে কিনা।

রোজা একজনকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সাহায্য করে- আধ্যাত্মিক সচেতনতা, দয়া ও অন্যদের প্রতি সহানুভূতি, নম্রতা ও কৃতজ্ঞতা এসবই লাভ করতে সাহায্য করে। আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার সময় বলে আমি প্রতি বছর এই পবিত্র মাসের অপেক্ষায় থাকি। রমজানের শেষ দশ দিন আমার কষ্ট হয় যে, মাসটা সহসাই শেষ হয়ে যাবে।

মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করা আমার জন্য কষ্টকর হয়নি। কারণ নিজের অজান্তেই বেশ ক'বছর ধরেই আমি সে রকম জীবনই (প্রায়) যাপন করছিলাম। আমার স্বামী আমার মুসলিম জীবন যাপনকে সহজতর করতে সাহায্য করে। কারণ সে নিজে একজন মুসলিম, আর একজন সাথী থাকলে কোন কাজ করা সহজতরও হয়। ধর্মীয় আচার-আচরণকে একমাত্র CHIRISTMAS-এর সময়ই আমার দুরূহ মনে হয়- যখন সবকিছু খৃষ্টায়িত (CHRISTIANISED) হয়ে যায়। আর আমাকে ব্যাখ্যা করে বলতে হয়, আমি কেন উদ্যাপন করছি না। আরেকটা সময় হচ্ছে রমজানের সময়, যখন কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি দুপুরের খাবারের জন্য কি চাই, আর আমাকে বলতে হয় যে আমি রোজা রাখছি। মানুষের জন্য এটা বোঝা শক্ত এবং আমি জানি তারা আমাকে এ থেকে বিচার করতে চেষ্টা করবে, কিন্তু আমি আমার বিশ্বাসকে ‘ফাস্ট ফুড’ রেস্তোরার একটা স্যান্ডউইচ-এর জন্য বিসর্জন দেব না।

চতুর্থ ইসলামিক স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত- এটা বাধ্যতামূলক দান বলা যায়- যা সাধারণত রমজানে উপবাস এবং প্রার্থনার পাশাপাশি সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হচ্ছে হজ্ব- যাদের সঙ্গতি আছে তাদের জন্য মক্কায় তীর্থ যাত্রা। তীর্থ যাত্রার সুযোগ বছরে একবার আসে এবং এটা হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মানব সমাবেশ। তখন পৃথিবীর সব মহাদেশ থেকে ২০-২৫ লক্ষ মানুষ এসে জড়ো হয়, এই অবশ্য করণীয় ধর্মীয় ব্যাপারটি সমাধা করতে।

৩২
আমেরিকান সমাজে মুসলিম জীবন ধারা
জীবনের প্রতিটি দিক- ব্যক্তিগত নৈতিকতা, রাজনীতি ও ব্যবসায় বাণিজ্য ইত্যাদি, সবকিছুর ব্যাপারেই ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে- ইসলাম হচ্ছে জীবনের একটা ধরণ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘উম্মার ধারণাটা একটা সম্প্রদায়, যেখানে ইসলামিক নীতিমালা দ্বারা ঘটিত একটা সমাজে কেবল আত্মাহরই ইচ্ছা প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলামের দেয়া জীবন ধারার ভিত্তিতে, বাস্তবে জীবন কেমনভাবে যাপন করতে হবে, তার ব্যাখ্যা করতে অনেক সময় ও আলোচনা ব্যয় হয়। মেয়েরা খুব তাড়াতাড়িই শিখে নেয়- তাদের কি করণীয়আর সেই সমস্ত করণীয়কে জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবে, সে ব্যাপারেও তারা সিদ্ধান্ত নেয়।

একজন মেয়ে যখন মুসলিম হয়ে যায়, তখন তার পোশাকের যে আমূল পরিবর্তন ঘটে, সেটাই পরিবারবর্গ এবং আত্মীয়দের জন্য, মেয়ের পরিবর্তন মেনে নেয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের কাছে মনে হয়, এ যেন তারা যা বেছে নিয়েছে তা প্রকাশের একটা চরম পন্থা। কিছু মেয়েদের বেলায় তারা নিজেরা ঢোলাঢালা কাপড় চোপড় পরা এবং নিজেদের ঢেকে চলার ব্যাপারটা খুব সহজেই গ্রহণ করেছে, এসবকে জীবন যাপনের এক বাস্তব অংশে পরিণত করেছে- অন্য কিছু মেয়েদের বেলায়, তা করা খুব কঠিন ছিল।

কোরআনের যে অংশ এই ঢেকে চলার কথা বলে, তা এরকমঃ

“বিশ্বাসী (পুরুষদের) মানুষদের বলুন, তাদের দৃষ্টি নত করতে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করতে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সম্পূর্ণ অবগত। আর বিশ্বাসী নারীদের বলুন তাদের দৃষ্টি অবনত করতে। আর তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করতে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করতে কেবল যা (স্বাভাবিক) সাধারণভাবে দেখা যায় তা ছাড়া এবং তাদের ওড়না বুকের ওপর টেনে রাখতে আর তাদের সৌন্দর্য, কেবলমাত্র তাদের স্বামী, অথবা তাদের বাবা অথবা স্বামীর বাবা, অথবা তাদের ছেলেসমূহ, বা তাদের স্বামীর ছেলেসমূহ বা তাদের স্ত্রীগণ বা ক্রীতদাসসমূহ যাদের তাদের ডান হাত অধিকার করে, বা ভৃত্যসমূহ যাদের জৈবিক চাহিদা নেই অথবা ছোট বাচ্চারা ছাড়া যেন আর কাউকে প্রদর্শন না করে। আর তারা যেন সজোরে পদাঘাত না করে, যাতে তাদের লুকানো সৌন্দর্য পরিস্ফুটিত হয়। আর আল্লাহর। কাছে সবাই ক্ষমা চাও, হে বিশ্বাসীগণ, যাতে তোমরা সফল হও।” [২৪ঃ৩০-৩১)

কিভাবে ঢেকে চলতে হবে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন ইসলামী দেশের ঐতিহ্য রয়েছে। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে ঢিলেঢালা পরিচ্ছদ (পাতলা স্বচ্ছ কাপড় হবে না এবং দৈহিক কাঠামো প্রস্ফুটিত করবে না) যা হাত এবং মুখমন্ডল ছাড়া বাকী সবই ঢেকে রাখবে। কোন কোন দেশে মুখও ঢেকে রাখা হয়। কেউ ফুল আঁকা ঝলমলে রঙের বা জরির কাজ করা ওড়না বা হিজাব পরে, আবার অন্যরা হয়তো কেবল সাদা, কালো, বাদামী, সবুজ ইত্যাদির গুরুগম্ভীর এক রঙা হিজাব বা ওড়না পরে (অথবা হাল্কা ছাপাও হতে পারে)। যারা এ সম্বন্ধে জ্ঞান রাখে, তারা কেবল একজন মেয়ে কিভাবে নিজেকে ঢেকে রাখে, তা দেখেই বলতে পারবে মেয়েটি কোন দেশের। তবে সব মুসলিম মেয়েই যে একখানা রুমাল দিয়ে মাথার চুল ঢেকে রাখবে তা নয়- কিন্তু বেশীর ভাগই দ্র পোশাক-আশাক পরতে চেষ্টা করে।

হিজাব পরা সহজ ছিল, কিন্তু মানুষজন প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো আমার কোন ধরনের অসুখ রয়েছে কিনা। এটা মনে হতো যে, তারা ধরেই নিচ্ছে- আমি আমার চুল হারিয়েছি এবং আমি আমার চুলবিহীন মাথাকে ঢেকে রাখছি। তারপর আমি যখন ধর্মীয় কারণটা ব্যাখ্যা করলাম, তখন তারা বলে- “তুমি বলতে চাও আমি আর কখনোই তোমার সুন্দর চুল দেখতে পাবো না?” ব্যাপারটা এমন ছিল যে, আমার নিজের ধর্ম পালন করার আমার ব্যক্তিগত মত যেন তাদের একটা সুখ অথবা সুবিধাকে হরণ করছে। আর তারা তা মেনে নিতে চাইছে না। তারা আসল ব্যাপারটাই বুঝতে অক্ষম।

মুসলিম হবার আমার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে, আমি আমার বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বোঝাপড়া করে নিয়েছি। হিজাব বা ইসলামিক পোশাকই ছিল সংঘাতের মূল বিষয়। আমি মনে করি এটা তাদের জন্য একটা সার্বক্ষণিক মনে করিয়ে দেয়ার এবং বিব্রত বোধ করার ব্যাপার। আমি যদি মুসলমান হতাম অথচ না ঢেকে থাকতাম, তাহলে আমার মনে হয় তারা সহজেই মেনে নিতে পারতো। আমি আশা করি তারা ইসলামকে বুঝবে এবং নিজে থেকেই পছন্দ করবে- আমার কথা ভেবে নয়।

একবার কিছুদিনের জন্য পালন করলে ইসলামিক ধর্মীয় আচারআচরণ মেনে চলা আমার জন্য আর কঠিন থাকেনি। হিজাব পরাটাই অভ্যস্ত হতে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছে। আমার জন্য এবং আমার চারপাশে যারা রয়েছে, তাদের জন্যও। আমি খুব ছোট্ট একটা শহরে থাকতাম এবং আমি সেখানে অনেক অচেনা দৃষ্টিতে চেয়ে দেখা অনুভব করতাম, আর অনেক মানুষই আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু আমাদের বৃহত্তর বিশ্ববিদ্যালয়-শহরে বেশীরভাগ মানুষই এ সম্বন্ধে জানে এবং শহরে এখানে সেখানে হিজাব পরিহিত মেয়েদের দেখতে অভ্যস্ত। আমি হিজাব পরতে শুরু করি শীতকালে। তাই গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কোন ঝামেলা ছিল না। শীতে অনেকেই স্কার্ফ বা টুপি পরে থাকে। কিন্তু যখন গ্রীষ্মকাল এলো এবং আমি তখনও রুমাল (স্কার্ফ) পরে রইলাম, আমি জনমানুষের মাঝে আলাদা হয়ে গেলাম। কিন্তু ইসলাম মিশ খাওয়ার কোন ব্যাপার নয়- “যখন আমেরিকায় থাকবে, আমেরিকানদের মতো চলবে” এ ধরনের কোন ব্যাপার ইসলামে নেই। বরং ইসলাম হচ্ছে, তুমি যা বিশ্বাস কর এবং ঠিক মনে কর তার জন্য রুখে দাঁড়ানোর ব্যাপার, এমনকি অন্যরা যদি তা নাও করে, মুসলিম বা অমুসলিম তারা যাই হোক।

ধর্মীয় আচার-আচরণ জীবনে ধারণ করা আমার জন্য সহজই ছিল। নামাজ, রোজা ও মদ ত্যাগ করা, ইত্যাদি মেনে নিতে এবং এসবের সুফল ভোগ করতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। আমার সবচেয়ে বড় সগ্রাম মাথা ঢাকাহিজাব। এ সম্বন্ধে অবশ্য অন্য কেউ জানে না, যেহেতু আমি ব্যাপারটা গ্রহণ করেছি এবং ঢেকে চলার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছি- শালীনতার কারণে।

শাহাদার ছ'মাস পরে আমি আমার প্রথম রমজান উদ্যাপন করি। হিজাবের ব্যাপারটা নিয়ে আমি চিন্তা ভাবনা করে আসছিলাম, কিন্তু ঐ পদক্ষেপ নিতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। আমি ইতোমধ্যেই শালীনতর ভাবে কাপড় পরতে শুরু করেছিলাম এবং সাধারণত কাঁধের ওপর থেকে একটা ওড়না পরে থাকতাম। আমি যখন এক মুসলিম বোনের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তিনি আমাকে বললেন, “তোমাকে শুধু ঐ ওড়নাখানাকে কাঁধের থেকে উঠিয়ে মাথায় টানতে হবে, আর তাহলেই তোমার ইসলাম সম্মতভাবে (কাপড়) পরিধান করা হয়ে গেল। আমি হিজাব পরতে প্রস্তুত, একথা প্রথমে অনুভব করিনি, কেননা আমি আমার বিশ্বাসে শক্তিশালী বোধ করিনি। আমি এর কারণ বুঝতাম, তার সাথে একমতও হতাম আর যে সমস্ত মেয়েরা হিজাব পরতো তাদের ভক্তির চোখে দেখতাম। তাদের এতে ধর্মপ্রাণ ও পবিত্র মনে হতো। কিন্তু আমার মনে হতো, আমি যদি তা করি, মানুষ তাহলে আমাকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে । আর আমি তা সামলানোর জন্য তৈরি বা সমর্থ বলে মনে করলাম না।

রমজান আসার সাথে সাথে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটলো এবং রমজানের প্রথম দিনে আমি ঘুম থেকে উঠে হিজাব পরে ক্লাসে যাই। আলহামদুলিল্লাহ্। এর পর থেকে আমি আর কখনো তা সরাইনি। রমজানের কিছু একটা আমাকে শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করেছে এবং আমাকে মুসলিম হিসেবে গর্ববোধ করতে শিখিয়েছে। আমি অনুভব করলাম, আমি যে কারও প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত।

ঢেকে চলা ছিল একটা খুবই ধীর গতিতে ঘটে চলা পরিবর্তন। প্রথমে জিন্স ছেড়ে লম্বা স্কার্ট এবং ফুলহাতা সার্ট ও ব্লেজার শুরু করি। তারপর যখন আমার প্রথম বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলো আমি ঠিক করলাম আমি লম্বা কাপড়ের সাথে ওড়না পরবো। আমি যেভাবে আমার কর্মস্থলে পোশাক পরতাম (গ্রীষ্মকালে ফুলহাতা ও জ্যাকেট) তাতে যে সব দৃষ্টি ও প্রশ্নের উদ্ভব ঘটতো, সেগুলোকে সামলে চলা খুবই কঠিন ছিল। সেজন্য সম্পূর্ণ ঢেকে চলার পর্যায়ে যাবার আগে আমি সময় নিয়েছি। একবার যখন সম্পূর্ণ ঢেকে চলতে শুরু করলাম তখন খুবই অস্বস্তি লাগতো আর অন্য সবার চেয়ে নিজেকে এতো পৃথক মনে হতো যে, আমি প্রায় হিজাব বাদই দিতে বসেছিলাম। যেন সবার কাছে প্রমাণ করতে (এমনকি অজানা জনদের কাছেও) যে আমি তখনও সেই আগের মানুষটিই ছিলাম। কিন্তু আমি হিজাব বজায় রেখেছি এবং স্বাভাবিকভাবেই তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। এখন কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে বা আমাকে নিয়ে পি করলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়, কিন্তু তাতে আরও বেশী করে ঢেকে চলার ইচ্ছাই হয় আমার। আমার ঢেকে চলার তিন বছর হলো।

"HIJAB DEFINITION AND DISCRIMINATION" ISLAMIC SISTERS INTERNATIONAL CUT CTCT FORTE (JANUARY '94) আলোচ্য বিষয়। কাজের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে হিজাবের জন্য বৈষম্যের শিকার হবার অভিযোগ করেছেন বহু মহিলা। কারো কারো জনসমক্ষে বিদ্রুপ, ঠাট্টা বা নাম ধরে’ (বিদ্রুপাত্মক) ডাকাডাকির ব্যাপার সামলানোর কষ্ট হয়েছে। একজন বলেছেন, তার মতে অমুসলিম মেয়েরাই মাথা ঢাকা দেখলে বেশী ক্ষেপে যায়, অমুসলিম পুরুষদের চেয়ে। এই সমস্ত রচনায় মেয়েরা হিজাবের ব্যবহারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উৎসাহিত করেছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ‘অবশ্য করণীয়' বা 'ফরজ' কথাটাও ব্যবহৃত হয়েছে।

ম্যাগাজিনের সম্পাদিকা, যারা হিজাব পরে তাদের অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করার বা সরিয়ে রাখার যে পেশাগত প্রথা চলে আসছে, তার অবসান ঘটানোর জন্য সব বোনদের আন্দোলনে নামার আহবান জানিয়েছে এবং আমেরিকা বা কানাডায় বসবাস কালে যে সমস্ত অধিকার প্রাপ্য এবং নিশ্চিত বলে ধরা হয়, সেগুলো আদায়ের জন্য কাজ করার ডাক দিয়েছে। একটা তারিখ ঠিক করা হয়, যেদিন বোন হালাল এবং ইসলামিক পোশাক পরে তাদের দৈনন্দিন কাজে যাবেতারপর কোন অপ্রিয় ঘটনা ঘটলে, তা স্থানীয় সিনেটরকে লিখে বা ফোনে জানাবে। অথবা জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ সংস্থাকে লিখে বা ফোনে জানাবে- এভাবে এসবের প্রতিবাদ করা হবে এবং সঠিক স্থানে পিকেটিং এর ব্যবস্থা করা হবে। হিজাব ব্যবহার করা মেয়েরা যে শুধু হিজাব পরার পর তাদের অর্থবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনাই দিয়েছে তা নয়, কখনো কখনো যে নৈরাশ্য তাদের অনুভব করতে হয়, তার কথাও বলেছে। অনেক ধর্মান্তরিত মুসলিম মেয়েরা এই পশ্চিমা পরিবেশেও হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা মুসলিম সংসার প্রতিষ্ঠা করছে আর তারা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন যে, ইসলাম নারী হিসেবে তাদের যে অধিকার দেয়, তা যেন সত্যি সত্যি তাদের জীবনে বাস্তবায়িত হয়। এই ক্ষেত্রে তাদের কিছু কাহিনী এখানে তুলে ধরা হলো।

ইসলামিক অনুশাসনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে হিজাব । আমার একটা অধিকার রয়েছে, একজন নৈতিক নারী হিসেবে গণ্য হবার এক টুকরো মাংস (চোখ দিয়ে গিলে খেতে চাওয়া) হিসেবেই কেবল নয়। মানুষজন আমার সাথে কথা বলার সময় আমার চোখে তাকায়। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, আমাকে ভদ্র মহিলা হিসেবে গণ্য করা হয়। এরকম মানুষ অবশ্য সব সময়ই কিছু থাকে, যারা আমাকে সমালোচনা করতে ঝাপিয়ে পড়ে। ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ, এমন গুটি কয়েক লোক না থাকলে, আমি কাজে যেতে আরো উৎসাহিত বোধ করতাম।

আমরা এমন একটা মুসলিম লোকালয়ে বাস করি, যেখানে সবাই একে অপরের সাথে দৃঢ় এবং নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। আমি শিশু উন্নয়নে ডিগ্রী প্রাপ্ত। আমি অনেক চাকরিই করেছি- সচিব থেকে শুরু করে স্কুলপূর্ব শিক্ষিকার- আমার হিজাব নিয়ে কোন সমস্যা ছাড়াই। আমি আমাদের জনগোষ্ঠীতে কর্মরত এবং এখনো স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করি।

হিজাবের জন্য অনেক বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়। নিশ্চিতভাবে, আমি এমন কোন চাকরি করতে পারবো না যাতে জনসংযোগের ব্যাপার রয়েছে।

মুসলিম নারী হিসেবে, আমার জীবনে, যে সমস্ত বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে, সেগুলো ইসলাম বা মুসলিমদের তরফ থেকে আসেনি- এসেছে সেই সমাজ থেকে যেখানে আমরা বাস করি। আমেরিকায় একজনের মনে হতে পারে যে তার অবস্থা স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে যাওয়া মাছের মতো প্রতিনিয়ত হিজাবের ব্যাখ্যা দেয়া তেমন একটি ব্যাপার। হিজাবের জন্য আমাকে চাকরি দিতে অস্বীকার করা হয়েছে এবং এ ছাড়াও হিজাবের জন্য প্রকাশ্য বৈষম্যের শিকার হয়েছি আমি। সে যাই হোক, আমি হিজাবের জন্য সত্যি সত্যি কৃতজ্ঞ। এটা এমন একটা মুক্তি দান করে নারীকে, যা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলনরত মেয়েরা কখনোই জানবে না। আমি এরকম একটা স্পষ্ট এবং শক্তিশালী উপায়ে ইসলামকে প্রকাশ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করি। কেননা আমি যখনই বাইরে যাই, আমাকে দেখামাত্র বোেঝা যায়, আমি একজন মুসলিম।

আমার নারী জন্মের ধারণাই বদলে গিয়েছে। আমি টাইট প্যান্ট ও মিনি স্কার্টে আর স্বাধীনতা খুঁজে পাই না, যা হিজাব এবং শালীনতার মাঝে পাই। আমি এখন আর মনে করি না যে, সমান অধিকার লাভ মানে নারী ও পুরুষদের এক হয়ে যেতে হবে বরং তাদের এমন ভূমিকা রয়েছে যা নিজ নিজ প্রকৃতির জন্য একান্তভাবে মানানসই। একই সময় আমাদের সবার নিজস্ব ব্যক্তিগত মেধা রয়েছে। (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) এবং তার বিকাশের সুযোগ থাকা প্রয়োজন।

আমি ভাবি, অমুসলিমরা যদি বুঝতে যে হিজাব একজন মুসলিম নারী হবার ব্যাপারে একটা ছোট্ট অধ্যায় মাত্র। এটা খুবই খারাপ যে বেশীর ভাগ মানুষই “মলাট (পোশাক) দেখে বই (নারী) এর বিচার কর” নিয়মে বিশ্বাসী। অর্থাৎ তারা পোশাকের ধরণ দেখে ইসলামকে বিচার করে। যে সমাজ দাবী করে যে, তারা নারীদের জন্য এক অধিকতর স্বাধীন জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেখানে নারীদের প্রতি আমেরিকান পুরুষদের মনোভাব ঠিক তার উল্টোটাই করে মেয়েদের যৌন প্রতীকের বৈশিষ্ট্য দিয়ে অত্যন্ত নীচু অবস্থায় নামিয়ে দেয়া হয়। হিজাব পুরুষ কর্তৃক যৌন অভিলাষের দৃষ্টি দিয়ে নারীদের দেখার সম্ভাবনা দূর করে আর এও দাবি করে যে, একজন নারীকে যেন বস্তু হিসেবে না দেখে ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।

জরিপে মাত্র একজন মেয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, সে নেকাব পরে অর্থাৎ চোখ ছাড়া মুখমন্ডলের বাকি অংশ ঢেকে চলে। বর্তমানে সে একটা মুসলিম দেশে থাকে, কিন্তু সেখানে যাবার আগেও সে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় মুখ ঢেকে চলতো।

আমি মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব ঢেকে চলি- দস্তানা, মোজা, পুরো সরঞ্জাম সামগ্রী। বোরখার নীচে আমি চুল ঢাকার আরেকটি উপাধান পরি। আর মুখ ঢাকার জন্য নেকাব ব্যবহার করি। আমি অনেক সমস্যা আশা করেছিলামতাই বিশ্বাস করতে কষ্টই হয় যে, ব্যাপারটা আমার জন্য এতো সহজ হয়ে গেছে। আমি এমনকি সাড়ে তিন বছর যুক্তরাষ্ট্রে মুখ ঢেকে চলাফেরা করেছি, কোন সমস্যা ছাড়াই। অনেক মানুষই ইসলাম সম্বন্ধে জেনেছে, কারণ তারা নেকাব সম্বন্ধে কৌতূহল বোধ করেছে। একটু গরম লাগে যদিও, কিন্তু তাপমাত্রা যখন joo°F বেশী হয়, তখন তো সবই পরতে গরম লাগে। আমি অন্য যে কোন পরিচ্ছদের চেয়ে এটাকে অনেক বেশী পছন্দ করি। বিশেষতঃ সেই সব মানুষ, যারা নেকাব এবং পরিচ্ছদের কারণটা বোঝেন তারা এ ব্যাপারে সমর্থন ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। আমি যেখানেই যাই, সেখানেই একটা বিশেষ সমাদর লাভ করি, এখানে এবং যুক্তরাষ্ট্রেও। বৃদ্ধা মুসলিম মহিলারা আমার জন্য যে কোন কিছু করতে রাজী, অ্যারোপ্লেনে আমি সব সময় ভালো আসন পাই, মানুষজন লাইনে সব সময় আমাকে সামনে দাঁড়াতে দেন এবং কখনো-সখনো এদেশের দোকানদাররা আমাকে বিনামূল্যে এটা সেটা উপহার দেন।

DAWAH হচ্ছে সেই শব্দ যা খষ্টান অভিধানের "wITNEssING" বা "EVENGELISM" এর স্থলে ব্যবহৃত হয় (বাংলা দাওয়াত, ধর্মের পথে কাউকে আহবান করা)। হিজাব প্রায়ই একজন মহিলার জন্য, ইসলাম সম্বন্ধে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। কেননা একজন পুরুষের চেয়ে তাকেই প্রশ্ন করার সম্ভাবনাটা বেশী। যেমন আমাদের জরিপের একজন মেয়ে লিখেছে- “আপনি আমাদের এক মাইল দূর থেকেও দেখতে পাবেন, কিন্তু একজন পুরুষকে দেখে সত্যিকার অর্থে বোঝা যাবে না সে মুসলিম কিনা।

কি অনুমোদিত আর কি নিষিদ্ধ, তা বাস্তবে প্রয়োগ করা আমি শিখেছি এবং এখনো শিখছি। ঢেকে চলা অভ্যস্ত হওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু এখন আমি একজন গর্বিত মুসলিম এবং সঠিক সময়ে, আমি মনে করি DAWAH বা মানুষকে ধর্মের দিকে আহবান করা হবে আমার জীবনের পন্থা। আমাকে বৈষম্যমূলক মনোভাবকে তুচ্ছ করতে হবে, অথবা সেগুলোকেই উল্টোভাবে আমার বিশ্বাসকে বাস্তবে প্রয়োগ করার কারণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

পোশাক আশাক ছাড়াও গ্রহণযোগ্য সামাজিক আচার-আচরণ যা ইসলামিক সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করবে (বিভিন্ন মুসলিম দেশের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এবং পারিবারিক ও ব্যক্তিগত পছন্দের প্রভাব অনুযায়ী) সে অনুযায়ী জীবন যাপনে উৎসাহিত করা হয়। সাধারণভাবে পুরুষ ও নারীর মাঝে ব্যবহার ও পোশাক আশাকের শালীনতা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ এবং নারী একে অপরের সাথে কথাবার্তায় শালীনতা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়, একে অপরকে প্রলুব্ধ করা বা ব্যক্তিগত ইঙ্গিতবহ কথাবার্তা যাতে না হয় সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রেখে। পূর্বে বর্ণিত কোরআনের অংশ অনুযায়ী যারা নিকট আত্মীয় নয়, এমন পুরুষ এবং নারীরা চেষ্টা করবে যেন দু’জনের তৃতীয় কোন ব্যক্তির উপস্থিতিবিহীন অবস্থায় একত্রে অবস্থান করা হয়।

মুসলিম হবার পর, মেয়েদের অনেকেই, চাকরি করার চেয়ে ঘরে থাকতেই পছন্দ করেছে। বিশেষতঃ তাদের যদি বাচ্চা থেকে থাকে। অন্যরা হয় এখনো কাজ করছে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। প্রত্যেক মেয়েকেই একটা ধারণা লাভ করতে হয়, যে সে তার অবস্থানে কিভাবে নিজেকে একজন মুসলিম নারী হিসেবে প্রকাশিত করবে।

আমি আমার জীবনে যে সমস্ত পরিবর্তন এনেছি, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে পুরুষদের সাথে আমি কিভাবে কথা বলছি, সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। আমাকে প্রজ্ঞার সাথে ব্যাপারটা সামলাতে হয় কোন ব্যক্তিগত ব্যাপারে আলাপ পরিহার করে।

আমি আগের মতো কোন পুরুষ বন্ধুকে সম্ভাষণ জানাতে পারি না অথবা চলতে চলতে দেখা হয়ে গেলে, দু’এক কথা আদান-প্রদানের জন্য থামতে পারি না। এমনকি আমার স্বামীর জন্য তার কর্মস্থলের বাইরে গাড়িতে বসে যখন অপেক্ষা করি, তখন তার বন্ধুদের বা সহকর্মীদের সাথে আলাপ-সালাপও হবার নয়।

ধর্মীয় আচার-আচরণ কঠিন নয়, তবে কিছু পশ্চিমা ধারণা ভাঙ্গাটা কঠিন এবং তা আপনাকে আপনার ধর্মীয় কর্তব্য থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ ঃ একজন মুসলিম অভদ্র হবে না এবং তার বিশ্বাষে,সে দৃঢ় হবে। একজন ভালো মুসলিম হওয়া আমার কাছে কঠিন মনে হয়, যখন আমি কাউকে (যারা অভদ্র) চলে যেতে বলতে চাই। এছাড়া পশ্চিমা টিভিও ইসলামিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হতে পারে। এটাই আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টের।

আমার জীবনের প্রথম রমজান মাসে, আমরা একত্রিত হতাম এবং শাইখ (বয়স্ক জন বা আধ্যাত্মিক মুরুব্বী) তখন নানা বিষয়ে বয়ান করতেন। এই সমস্ত বয়ানগুলো এতো পবিত্র এবং অর্থবই ছিল যে, সেগুলো মানুষের ভিতরের পঙ্কিলতার বিপরীতে, স্পষ্টতঃই আলাদাভাবে জ্বলজ্বল করতো। আর আমি মনে করি, এই বাস্তবতাই আমাদের ইসলামিক অনুশীলনকে সীমাবদ্ধ করে রাখছে। নবী মুহাম্মদ (দঃ)-এর উদাহরণ অনুযায়ী অনুশীলন ও জীবন ধারণ কিভাবে এতো দুরূহ হতে পারে? মনে হয়, আমাকে অনুধাবন করতে হবে যে, আমেরিকান নৈতিকতা ইতোমধ্যেই এতো নীচে নেমে গেছে। আমার নিজের বাবা-মাকে আমার ধন্যবাদ জানানো উচিত আমাকে একটা সুন্দর এবং মৌলিক নীতি আশ্রিত উপায়ে বড় করার জন্য- যেখানে দুর্নীতি ও ঈর্ষা, রাগ ও ঘৃণা, ধৈর্যহীনতা ও অন্যান্য মানবিক কুটিলতা উপস্থিত ছিল না।

আমি যখন মুসলিম হলাম, তখন আমার মাঝে আগে থেকেই যে বিশ্বাসসমূহ সঞ্চিত ছিল, তা প্রকাশের নির্দেশিকা পেলাম। তবু পরিবর্তনগুলো বেশ শক্তই ছিল। ক্লাস বা কাজ থেকে বেরিয়ে নামাজ পড়তে যাওয়া কঠিনই ছিল। যখন আমার পোশাক বদলে গেল (মাথা ঢাকা শুরু করলাম), তখন আমি অনেক বন্ধু হারালাম । এছাড়া পুরুষ বন্ধুদের ব্যাখ্যা করতে হলো যে, আমি আর তাদের সঙ্গে আগের মতো দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবো না। আমাকে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনের শ্যেন দৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়েছে, যারা আমার পরিবারকে বলেছে- আমি নরকের আগুনে পুড়বো।

আমি যত বেশী ধর্মের মাঝে প্রবেশ করেছি, ততই নির্মল এবং মিতবাক হয়েছি। আমি খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছি। মুসলিম হবার আগে আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু পরে আমি বেশ তাড়াতাড়িই স্ত্রী এবং মা হয়েছি।

ইসলাম আমাকে এমন একটা অবস্থা উপহার দিয়েছে, যে অবস্থায় আমি সেই সমস্ত বিশ্বাসসমূহ- যা আমার মাঝে আগে থেকেই ছিল- যেমন শালীনতা, দয়া ও ভালোবাসা প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছে। ইসলাম আমাকে বিয়ে এবং দুইটি সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে সুখী হবার পথও দেখিয়েছে। ইসলামের আগে আমার নিজের সংসার হবে এমন কোন রকম আকাথাই আমার ছিল না। কারণ আমি বাচ্চাদের অপছন্দ করতাম।

যত খারাপ সময়ই আসুক না কেন, এখন আমার একটা অবলম্বন রয়েছে। আমি কখনো নিঃসঙ্গ বা হতাশা বোধ করি না, কারণ আমি জানি আল্লাহ আমার কাছেই আছেন এবং আমি জানি তিনি আমাকে আরো শক্তিশালী করে তোলার জন্য পরীক্ষা করছেন। মুসলিমদের মাঝের ভ্রাতৃত্ববোধ, খারাপ সময়ে আমার জন্য সান্ত্বনা হিসেবে কাজ করেছে।

বাড়িতে মেয়েদের ভূমিকা, ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার, আর বাচ্চাদের গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব ও বাড়ি গুছিয়ে রাখার দায়িত্বকে মুসলিম নারীরা খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে থাকে। প্রায়ই মায়েরা বাচ্চাদের জন্য বাড়িতেই স্কুল খোলে। কিছু ধর্মান্তরিত মেয়েদের বাবা-মায়েরা মেয়েরা বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেনে বিচলিত হন। তারা ভয় পান যে, এর ফলে হয়তো একটা মেয়ের প্রতিভাসমূহের পূর্ণ বিকাশের সুযোগ থাকবে না। এই ভয়টা আরো প্রকট হয়, যেখানে মেয়ের বাবা-মা, তার পড়ালেখার খরচ অতীতে বহন করেছেন।

একজন মুসলিমকে বিয়ের পর (এমনি অনেক ক্ষেত্রে, একজন মুসলিমের সাথে পরিচিত হবার পরই), মেয়েরা খুব তাড়াতাড়িই জেনে যায় যে একজন মুসলিমকে শূকরের মাংস বা শূকর মিশ্রিত কোন খাদ্য দেয়া যাবে না। প্রায়ই দেখা যায়, ধর্মান্তরিত হতে না হতেই মেয়েরা শুধু মাত্র হালাল মাংস এবং খাবার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। হালাল মানে হচ্ছে ইসলামিক নিয়মে জবাই করা। মুসলিম ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় না থাকলে এসব মেনে চলতে, কোন দম্পতির বেশ একাগ্রতা ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়- কেননা হালাল মাংস সবখানে পাওয়া যায় না এবং যখন পাওয়া যায় তা অন্য মাংসের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়। মেয়েরা প্রায়ই তাদের স্বামীদের পছন্দের এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারসমূহ রান্না করতে শেখে।

শুধুমাত্র মুসলিমদের জবাই করা হালাল মাংস খাবার কোরআনিক আদেশ মানা সহজই ছিল। আমি জানতাম বাইবেলও শূকর খেতে নিষেধ করেছে। কিন্তু বুঝতে চেষ্টা করতাম- খৃষ্টানরা কেন ঐ নিয়ম মানে না। আমার স্বামীর নিজ হাতে জবাই করা এবং ইসলাম সম্মত উপায়ে হালাল মাংস খেতে আমার এক ধরনের গর্ববোধ হয়, কারণ সে আল্লাহর আদেশ পালন করছে এবং আল্লাহ এ ব্যাপারে আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। আমরা অন্য মুসলিমদের সাথে মাংস ভাগ করে খেতাম। আর আমার ভালো লাগতো এই ভেবে যে, অন্য মুসলিমদের আল্লাহর নিয়ম মানতে সাহায্য করার সুযোগ পাচ্ছি আমরা।

আমার পরিবারের কাছে বেড়াতে যাবার একটা অস্বস্তি ছিল- কেবল হালাল মাংস খাবার আমাদের সংকল্প। আমরা যেহেতু যে কোন কিছু খেতেই একটু অস্বস্তিবোধ করতাম, আমরা আমাদের খাবার সাথে নিয়ে যেতাম। যদিও তাদের জবাই করার ইসলামিক নিয়ম সম্বন্ধে আমরা ব্যাখ্যা করেছি, তবু আমাদের নিজের খাবার নিয়ে যাওয়াটা তাদের ব্ৰিত করতো। তারা মনে করতো এটাও আরেকটা প্রত্যাখ্যান, বুঝিবা তাদের খাবার আমাদের উপযোগী নয় বা অপরিষ্কার বলে মনে করছি আমরা। যাহোক তারা যখন আমাদের সাথে দেখা করতে আসে, আমি যা রান্না করি- তাই খায় তারা, আর আমাদের সময়টাও অধিকতর খুশী এবং স্বল্প অস্বস্তির মধ্যে অতিবাহিত হয়।

ধর্মান্তরিত মেয়েরা যখন তাদের মুসলিম হিসেবে (ধর্ম) বিশ্বাসের যাত্রায় সামনে এগিয়ে যেতে থাকে এবং উন্নতি লাভ করতে থাকে, তখন তারা নিজ জীবন ধারায় যে সমস্ত পরিবর্তন আনে, এগুলো তার মাত্র কয়েকটি। যাত্রার প্রথম অংশে মনে হয় মেয়েরা একে অপরকে সহায়তা ও সমর্থন করে থাকে। বিভিন্ন মুসলিম উপদলের কাছে, ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহ যদিও এক- কিন্তু কিভাবে এই সমস্ত আচার-আচরণকে দৈনন্দিন জীবনে গ্রহণ করা যায়, সে ব্যাপারে ভিন্নতা রয়েছে। এ সমস্ত ধ্যান-ধারণাকে খুঁটিনাটিসহ কোন পর্যায় পর্যন্ত মানা হবে এবং কিভাবে এসবের ব্যাখ্যা করা হবে তা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এবং সভ্যতা থেকে সভ্যতায় ভিন্নতর হতে পারে।

মিসর এবং সৌদি আরবে অবস্থান আমাকে বেশ প্রবলভাবেই প্রভাবিত করেছে। আর এ থেকে আমি জেনেছি যে, ইসলামিক ধ্যান-ধারণার প্রয়োগ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভিন্ন হয়। কিন্তু সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে, ব্যক্তিগত জীবনে আমরা ধর্মকে কিভাবে ধারণ করছি এবং নিশ্চিত করা যে, সব সময় আমরা ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই ধর্মের পথে এগুবো ।

মুসলিমদের কাছে ‘ঠিক কাজ করাটা খুবই জরুরী, যতক্ষণ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, কোন কাজটি ঠিক। তারা ইসলাম ধর্মকে একটা সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা বলে মনে করে, জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্র নিয়েই যার দিক-নির্দেশনা রয়েছে- ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনসহ। মেয়েরা, তাদের বেছে নেয়া বিশ্বাসের জগতকে ভালোভাবে জানার এবং বোঝার জন্য তথ্য অনুসন্ধান করতে অনেক এবং বিভিন্ন সূত্রের সাহায্য নিয়েছে। এইসব মেয়েরা অন্ধভাবে কিছু মেনে নিয়েছে বলে মনে হয় না, বরং জানতে এবং প্রশ্নের উত্তর পেতে তারা অনেক সময় ব্যয় করেছে, যাতে তারা অধিকতর জ্ঞানসমৃদ্ধ উপায়ে ধর্মের অনুশীলন করতে পারে।

আমি বইয়ের মাধ্যমে এবং অন্য মুসলিমদের কাছ থেকে শিখেছি, কিভাবে মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করতে হয়। ভালো বইসমূহে কি পাওয়া যাবে আর যাবে না, কিভাবে একজন পোশাক পরবে, কি কি বস্তু কারো ঘরে থাকা উচিত নয় ইত্যাদির বর্ণনা থাকে। একজন নতুন মুসলিমকে বই এবং অন্য মুসলিমদের মাধ্যমে এই তথ্যগুলো জেনে নিতে হয়। কারণ কোরআন এবং হাদীস থেকে সবকিছু জানতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমি অবশ্যই কোরআন ও হাদীস পড়েছি, অন্ধভাবে কিছু গ্রহণ করিনি। কেউ আমাকে যখন কিছু বলেছে, কখনো আমি চেয়েছি, নিজেই চিন্তা করে দেখতে যে ব্যাপারটা পড়ে আমিও ঐ একই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছাই কিনা।

কিভাবে মুসলিম হিসেবে জীবন ধারণ করতে হয়, তা আমার সৌদি বান্ধবীই আমাকে শিখিয়েছে। কিভাবে নামাজ পড়তে হয়, কিভাবে অজু করতে হয় এবং কিভাবে অন্য মুসলিমদের সাথে সামাজিকতা রক্ষা করতে হয়। বিয়ে-শাদী ও সন্তান থেকে শুরু হাদীস ও ফিকহ পর্যন্ত আমার সব ইসলামিক প্রশ্নের উত্তরই সে দিয়েছে। সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে কোরআনের একখানা আরবী-ইংরেজী সংস্করণসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইসলামিক বই আমি সংগ্রহ করেছিলাম। জীবনযাত্রা হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করা আমার জন্য সহজই ছিল। কারণ আমার পূর্ববর্তী জীবনও খুব একটা লাগামছাড়া ছিল না। আরবী ভাষাটাই খুব সম্ভবতঃ আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার ছিল। নামাজ পড়া, রোজা রাখা ও হিজাব পরা, এ সবই আমার জীবনে সহজভাবেই এসেছে।

আমাকে সত্যি সত্যি মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করতে শিখতে হয়নি, কারণ আমার জীবন যাত্রা, আগে থেকেই একজন মুসলিমের জীবন যাত্রাই ছিল। আমি নৈতিক বিবেচনায় পোশাক পরতাম, শূকর খেতাম না, মদ্যপান করতাম না আর আমার আশপাশের মানুষের প্রতি আদর্শ যে আচরণ আমার হওয়া উচিত, তাই করতাম। সত্যি কথা বলতে কি আমাকে মুসলিম হতে কেউ সাহায্য করেনি। আমি নিজে থেকেই শিখেছি। আমাকে শুধু আমার ছুটির ও উপাসনার দিন বদলাতে হয়েছে। এটা আমার জন্য সহজই ছিল, কারণ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি, তখন তা আমার জন্য জীবনের বিধান হয়ে যায়। আসলে আমি এই ব্যাপারটা উপভোগ করি যে, ইসলাম একজন অনুশীলনরত মুসলিম হওয়াটাকে কত সহজ করে দেয়।

একজন মুসলিম হিসেবে আমি জীবন যাপন করতে শিখেছি অন্য মুসলিমদের কাছ থেকে। আমরা খুব জ্ঞানী দুই দম্পতির সাক্ষাৎ লাভ করেছিলাম, যারা আমার স্বামীকে এবং আমাকে এমন সব ব্যাপারে শিক্ষা দিয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমের জানা আবশ্যক। ইসলামের বহু ব্যাপার যদিও জটিল নয়, কিন্তু একটা অনৈসলামিক সমাজ সেগুলোকেও জটিল বলে মনে করায়। আমি এও মনে করি যে, এদেশের কোন অংশে কে বাস করছে, তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। বেশীর ভাগ বড় শহরে, বিশেষ করে উত্তরে, বড় আকারের মুসলিম বসতি রয়েছে। এতে হালাল মাংসের মতো জিনিসগুলো পেতে সুবিধা হয়। এসব অঞ্চলে অমুসলিমরাও মুসলিম বেশভূষা এবং কিছু ইসলামিক রীতিনীতি সম্বন্ধে অবগত; আর তাই তারা বোধহয় অপেক্ষাকৃত বেশী সহিষ্ণু এবং আমাদের উপস্থিতিতে কম আতংকিত। আমি দেখি, মুসলিম পরিবারসমূহের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখলে অনেক মুশকিলই আসান হয়ে যায় ।

৩৩
মুসলিম নারীর অধিকার
৭ম শতাব্দীর আরবের পটভূমিতে কন্যা শিশু সন্তানদের হত্যা করা ছিল সাধারণ ব্যাপার- মেয়েদের খুব সামান্যই অধিকার ছিল- আর প্রায়ই তারা নিগৃহীত হতো। কোরআন মেয়েদের সম্পত্তির মালিক হবার অধিকার, উত্তরাধিকারের অধিকার, মোহরের অধিকার, সে কাকে বিয়ে করবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তের অধিকার, স্বামী কর্তৃক ভরণ-পোষণ ও সুরক্ষা লাভ করার অধিকার এবং আরো বহু অধিকার দেয়, যে সবের সংখ্যা তালিকাভুক্তির জন্য বিরাট।

UNIVERSITY OF LOUISVILLE-এর মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদ DR. RIFFAT HASSAN বলেন- “আমার মনে আছে আমি যখন প্রথম মেয়েদের ব্যাপারে ইসলামিক আদর্শ ও মুসলিমদের বাস্তব আচরণের ভিতর স্পষ্ট বিরোধিতা দেখতে পাই, তখন কি রকম হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি মনে করেন অন্যান্য দেশের নারীরা এই পার্থক্য সম্বন্ধে বহুলাংশেই অজ্ঞ। যদিও মুহাম্মদের স্ত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, ইসলামিক ঐতিহ্য মূলতঃ দৃঢ়ভাবে পিতৃতান্ত্রিকই রয়ে গেছে.... যা নারীদের জ্ঞান বিকাশ রোধ করেছে, বিশেষত ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে....।”৪ আর তাই স্বাভাবিক পরিণতিতে মুসলিম নারীরা এ ব্যাপারে সচেতন ছিল না যে, কিভাবে তাদের মানব অধিকার পুরুষ শাসিত এবং পুরুষ কেন্দ্রিক সমাজ কর্তৃক লংঘিত হয়েছে..... (তারা এ ব্যাপারে অজ্ঞ) যে ইসলাম অন্য যে কোন ধর্মীয় ঐতিহ্যের চেয়ে নারীকে বেশী অধিকার প্রদান করেছে।

ইসলামে ধর্মান্তরিত আমেরিকান মেয়েরা অবশ্য নারীবাদী নেতৃত্বের কাছ থেকেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন- যখন তারা কোরআনের মাধ্যমে নারীকে দেয়া অধিকারের ব্যাখ্যা প্রদান করে। আমেরিকান মেয়েরা যারা ইসলামিক সমাজের মাঝে ছিল না, তারা আমেরিকান পটভূমিতে, ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নারী অধিকার ও তার বাস্তব প্রয়োগ দেখার এক অভূতপূর্ব সুযোগ লাভ করে। এই সমস্ত ধারণা প্রভাব বিস্তার করছে এবং আশা করা যায় অন্যান্য স্থানে মুসলিম সমাজে যে সমস্ত ভুল প্রথা প্রচলিত আছে, সেগুলোতে পরিবর্তন আনছে। আমাদের আলোচ্য মেয়েরা, মুসলিম সমাজে অর্থাৎ উম্মায় প্রচলিত প্রথা নিয়ে হতাশা এবং কৃতজ্ঞতা দুই-ই ব্যক্ত করেছে।

কখনো কখনো আমি অনুভব করি যে, মুসলিম সমাজে মেয়েদের নিজেদের মতামত অথবা দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশের সুযোগ দেয়া হয় না। তাদের পিছনে রাখা হয় এবং অনেকটা লুকিয়েই রাখা হয়। আমি যখন কোন বক্তৃতা শুনতে যাই মসজিদ ছাড়া অন্যত্র, আমি সামনের দিকে বসতে পছন্দ করি, যেন আমি বক্তাকে দেখতে এবং শুনতে পারি। আমি ইসলামিক মতে পরিধেয় পরেছি যখন তখন কেন আমি পেছনে বসবো- কেবল এ জন্যই যে কেউ মনে করছে যে পুরুষরা নিজেদের সংযত রাখতে পারবে না? পুরুষদের তাদের কর্মকান্ডের দায়-দায়িত্ব নিজেদেরই বহন করা উচিত। তাদের কুচিন্তা থেকে বিরত রাখতে, মেয়েদের সব সময় লুকিয়ে রাখতে হবে- তা তো হয় না। আমরা পোশাকে আশাকে এবং কাজে কর্মে এমনভাবে চলবো যা থেকে তাদের কুচিন্তার উদ্ভব না ঘটে। কিন্তু একই সময়ে আমি একটা খাচার ভিতরে তালাবদ্ধ অবস্থায় জীবন কাটাবো না অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে পিছনের বেঞ্চেও বসবো না। আমি সম্মান এবং মর্যাদা সহকারে আমার জীবন যাপন করতে পারি এবং একই সময়ে একজন মুসলিম নারী হিসেবেও জীবন ধারণ করতে পারি।

একজন মুসলিম মেয়ে হিসেবে আমি মুসলিম মেয়েদের সমাজে অধিকতর সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে পছন্দ করবো- পশ্চিমা সভ্যতা মুসলিম নারীদের যে এক ধরণের নিশ্ৰুপ ছায়া হিসেবে দেখে, তার পরিবর্তে তারা হবে সোচ্চার। ইসলাম মুসলিম মেয়েদের অনেক অধিকার দিয়েছে। হিজাব প্রথার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, সামাজিক কর্মকান্ডে প্রবেশ করা (অংশগ্রহণ করা)। বাচ্চাদের জন্য আদর্শ হবার ব্যাপারে মুসলিম নারীদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত।

মুসলিম নারীদের অধিকারের স্বীকৃতি আদায় করার প্রচেষ্টা একটা অন্যতম আলোচ্য বিষয়। আর কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীরা এই সমস্ত অধিকারের সদ্ব্যবহার করে চলেছে। তারা বিশ্বাস করে ১৪০০ বছর আগে কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহ মেয়েদের যে অধিকার নির্ধারণ করেছেন- আধ্যাত্মিক, বুদ্ধি বিকাশ (ক্ষেত্রে), রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোথাও কখনো কোন সময়ে তার দ্বিতীয় কোন দৃষ্টান্ত নেই (বা তার সমকক্ষ কিছু নেই)। এসব অধিকারের অংশ বিশেষ নীচের বর্ণনাগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছেভরণপোষণ ও সদয় ব্যবহার, শিক্ষা ও পেশা এবং আল্লাহর সামনে একজন পুরুষের সমান বলে গণ্য হওয়া, কিন্তু দায়িত্বের দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা নিয়ে এই বিষয়গুলো এসেছে আলোচনায়।

অন্য সব মেয়েদের সব অধিকারই আমারও রয়েছে। আমার শিক্ষার এবং পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা রয়েছে- যদি আমি চাই। আমি মনে করি, মুসলিম মেয়েদের অনেক সম্মানের চোখে দেখা হয়। আমার বিয়ে হয়েছে আজ ১১ বছর, কিন্তু আমার স্বামী কখনো আমাকে অসম্মান করেনি অথবা আমার মতামত বা পছন্দের স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা করেনি। আমরা ওসব নিয়ে তর্ক করেছি হয়তো,কিন্তু সে ওসব রোধ করতে চেষ্টা করেনি।

আমার স্বামী আমার প্রতি সদয় ও প্রাণখোলা এবং বাড়িতে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে দিয়ে থাকে। আমি আমার বাড়িকে পরিচ্ছন্ন রাখি এবং আমার মতো করে সাজাই। আমি এটাকে একটা শান্তির ও বিশ্রামের স্থান হিসেবে গড়ে তুলিএকটা স্থান, যেখানে পরিবারের সদস্যরা একটু হাঁফ ছাড়তে পারে এবং তাদের মানসিক যন্ত্রণা প্রশমিত হতে পারে, তারা তাদের বাইরের জগতের দুঃশ্চিন্তা ভুলে থাকতে পারে। আমাদের প্রথম সন্তানের জন্মের আগে, আমি যখন আমার শিক্ষকতার কাজটি ছেড়ে দিতে চাই, সে স্বেচ্ছায় আমার বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে এবং কখনো আমাদের ব্যয়ভার বহন করতে সহায়তা করার জন্য আমাকে কাজ করে যেতে বলেনি।

বিবাহিতা মহিলা হিসেবে, আমার অবস্থানের একটা দিকের জন্য আমি কৃতজ্ঞ বোধ করি- সেটা হচ্ছে যে বড় ও গুরুতর সিদ্ধান্তগুলো অনন্য গ্রহণ করুক, এটাই আমার কাম্য। আমার স্বামী হচ্ছে সংসারের কর্তা, কিন্তু আমি যেমন আমার বাচ্চাদের বলে থাকি, আমি হচ্ছি ভাইস প্রেসিডেন্ট। আর আমাকে যেমন সম্মান দেখানো হয়, তেমনি মর্যাদাও দেয়া হয়। আমার তা ভালো লাগে ।

মুসলিম নারী হিসেবে আমার অধিকার আছে উপাসনা করার, একজন ভালো স্বামী বেছে নেয়ার এবং একটা পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করার। আমার সুরক্ষিত হবার অধিকার রয়েছে এবং নিপীড়িত না হবার অধিকার রয়েছে। যে তার স্ত্রীর কথা প্রথমেই ভাবে, এমন একজন স্বামী পাবার জন্য আমি কৃতজ্ঞ- একজন স্বামী যে আমার মতামত চায় এবং তা সম্মান করে। একজন মুসলিম নারী হিসেবে আমি কোন সত্যিকার অসুবিধা বোধ করি না। বাইরে একটা চাকরি পাওয়াটা হয়তো একমাত্র অসুবিধার হতে পারে। কখনো কাজ পাওয়াটা কঠিন (বিশেষতঃ অমুসলিমদের কাছে)।

পুরুষদের দ্বারা একটা "DATE" বা একান্তে সাক্ষাতের জন্য নাজেহাল হওয়া, অশ্লীল প্রবাদ বাক্য শুনানোর চেষ্টা করা, ইত্যাদি থেকে বেঁচে যাবার অধিকারকে আমি অবশ্যই প্রশংসা করি। পেশা, অর্থ উপার্জন এবং ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে আমার প্রয়োজন অনুযায়ী- অন্যের জন্য নয়- সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকতর স্বাধীনতার স্বাদও পাচ্ছি আমি।

আমার মুসলিম হওয়াটা আমাকে সব অজ্ঞতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার এবং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্বের ভার গ্রহণ করার সাহস যুগিয়েছে। খৃস্টান হিসেবে আমার জীবন সংশয়ের পর সংশয়ে ভরা ছিল- যখন আমি আশা করতাম যে আমার বাবা বা আর কেউ আমাকে উদ্ধার করবে। জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গী, ধর্ম বিশ্বাসের সমান্তরাল ছিল। দুর্ভাগ্যবশতঃ ঐ ধরনের একটা অপরিপক্ক দৃষ্টিভঙ্গী যে শুধু ব্যক্তিগত বেড়ে ওঠাকেই বাধা দেয় তা নয়। বরং তা আত্মবিশ্বাসের জন্যও ক্ষতিকর। নির্ভয়ে এবং কিভাবে সামলাবো সে ব্যাপারে বিচলিত না হয়ে বড় বড় সিদ্ধান্ত নেবার মতো আত্মবিশ্বাস এখন আমার আছে যা ইসলাম আমাকে দিয়েছে।

একজন মুসলিমা (মুসলিম নারী) তার ভরণপোষণের জন্য মোটেই দায়ী নয়। স্বামীকে তার ভরণপোষণের সমস্ত দায়িত্ব বহন করতে হয়- পোশাক পরিচ্ছদ এবং ইসলাম শিক্ষার উপকরণসমূহ সহ। কোন নারী যে অর্থই লাত করুক- তা পূর্ববর্তী বিয়ের সন্তান পালনের জন্য, কাজ থেকে, তার মোহর, উত্তরাধিকার বা ঐ ধরণের যে কোন কিছু থেকেই হোক না কেন- তা সম্পূর্ণ রূপে তার নিজের এবং তার ইচ্ছামতো সে তা জমাতে পারে বা খরচ করতে পারে (যতক্ষণ তা ইসলামী নীতি নির্ধারণী হিসেবে হালালের আওতায় পড়ে। তার স্বামী এর কোন কিছুই ছুঁতে পারে না! নারী যদি কাজ করে, তবে সে ইচ্ছা করলে সংসারের খরচ বহনে অংশগ্রহণ করতে পারে। কারণ সে ঘর থেকে সময় নিয়ে বাইরে কাজ করতে যাচ্ছে। বাকীটুকু কেবল তার এবং তার একার। আমার স্বামী বিয়ের সময় ব্যাপারটা খেয়াল করেনি। আমি যখন তাকে সব ব্যাখ্যা করলাম, সে বললো যে, তাহলে পুরুষরা নিশ্চিতভাবেই লাঠির ছোট মাথাটা ধরে আছে। আর সেটাই সত্যি! আমি যদি কখনো কোনভাবে কয়েকটা ডলার পাই, আমি তা একটা নতুন জামা কিনতে, গয়না কিনতে খরচ করতে পারি আবার জমাতেও পারিকিন্তু আমার স্বামীকে তার নিজের জন্য কিছু খরচ করার আগে সংসারের সমগ্র ব্যয়ভার মিটাতে হবে। পুরুষের এখানে অনেক দায়িত্ব। আমি সংসার নিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু প্রতিমাসে নানা ধরনের বিল পরিশোধ করাটা আমার দায়িত্ব নয়। আমার স্বামী জানে এটা সম্পূর্ণই তার দায়িত্ব।

আমার রয়েছে এমন একটা অধিকার যা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হচ্ছে, আমাকে যে কাজ করতে হয় না এবং আমি আমার মেয়ের কাছে থাকার সুযোগ পাই! সত্যিকার অর্থে না চাইতেই আমার চাহিদার চেয়ে বেশী মাত্রায় আমার স্বামী আমাকে সবকিছু দিয়ে থাকে- এ ব্যাপারটাও খুব সুন্দর। সুন্দর বাড়ি, পোশাক পরিচ্ছদ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং আরো অনেক কিছু। আমি অনুভব করি, বাড়ি হচ্ছে স্ত্রী ও মায়ের জন্য। আর এই ধারণাটা আমার খুব পছন্দের। এই সুযোগ পেয়ে আমি খুব কৃতজ্ঞ। আর বিবাহিত না হলে এমনটি সম্ভব হতো না। মুসলিম নারী হিসেবে এমন কোন ক্ষেত্র নেই, যা আমার জন্য উন্মুক্ত নয়।

৩৪
তারা পিছনে যা ফেলে এসেছে
মুসলিম পথে যাত্রা করতে গিয়ে আমাদের আলোচ্য মেয়েদের অনেক কিছুকে পিছনে ফেলে আসতে হয়েছে, যেসবের সাথে হয়তো তারা বেড়ে উঠেছিল। মেয়েরা এমন কোন আভাস দেয়নি যে, ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে গিয়ে তারা যা পিছনে ফেলে এসেছে, তার জন্য খুব দুঃখিত। বেশীরভাগই শুকরিয়া আদায় করেছে যে, তারা জীবন ধারণের এই পথ খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু কিছু সংখ্যক স্বীকার করেছে যে, নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে তাদের এমন কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে যা আগে তারা উপভোগ করতো।

যে জীবন আমি পিছনে ফেলে এসেছি’ তার জন্য আমার কোন হারানোর অনুভূতি বা কষ্ট হয় না। আমার মনে হয় না আমি কিছু পিছনে ফেলে এসেছি। আমার শুধু মনে হয়, আমি যা হতে চেয়েছিলাম তার দিকে পরিপূর্ণতা লাভ করেছি কেবল। আমি অবশ্য জানি না যে, আগের মতো চলতে থাকলে আমি শেষ পর্যন্ত কি হতাম বা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতাম- কিন্তু আমি সব সময়ই আমার জীবন যেভাবে চলছিল এবং সমাজের যে অবস্থা বিরাজমান ছিল, তার থেকে পরিত্রাণ পাবার দোয়া করতাম।

সবচেয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতা ছিল, যখন আমি শুধুমাত্র হালাল মাংস খেতে শুরু করলাম, পরিবারের সাথে খেতে বসে আসল পদগুলোই খেতে পারতাম। যখন আমি ধর্মান্তরিত হই, তখন শুরুতে আমাদের নিজেদের খাবারের জন্য ভেড়া বা মুরগী কাটা-বাছার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হতো, আর ব্যাপারটা ঝামেলার ছিল।

আমার স্বামীর পূর্বে বা ইসলামের পূর্বে, আমার জীবনে এমন কিছুই ছিল না আমি যার অভাববোধ করি। আমি সব সময়ই আমার ধর্মীয় প্রশ্নাবলীর যুক্তিযুক্ত সমাধান এবং শান্তিতে গবেষণা করার সামর্থ চাইতাম। ধর্ম হচ্ছে অসীমের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও অনুগত হবার প্রতিষ্ঠান। এবং আমি ইসলামে এমন কিছু পেয়েছি যা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে এবং যার অনুভব আমার কাছে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক মনে হয়।

আমার জীবনে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যা আমি পিছনে ফেলে এসেছি বা হারিয়েছি বলে মনে হয় এবং যার জন্য আমি দুঃখ করি। আমার কেবল একটাই আফসোেস- আমার পরিবার যেন ইসলামে আসে।

CHRISTMAS-এর সময়টায় আমার কষ্টের এবং হারানার অনুভূতি হয়- যদিও তা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। আমি ঐ সময় ধর্মীয় গান গাইতে পছন্দ করতাম। আমি সব সময়ই আল্লাহর প্রতি অনুগত ছিলাম (কলেজের সেই ক’টি বছর ছাড়া) এবং আমি এখনো খুব আধ্যাত্মিক।

খৃষ্টধর্মের একটা জিনিসের কথাই আমার পিছনে ফিরে তাকালে মনে পড়ে- CHRISTMAS-এর সাজ-সজ্জা এবং উপহার আদান-প্রদান। ব্যস আর কিছু না।

যে ক্ষেত্রে আমি কিছু হারিয়েছি বলে মনে হয়, তা হচ্ছে সাঁতার কাটাকারণ আমি সাঁতার কাটতে খুবই ভালোবাসি, কিন্তু আমার স্বামী সাঁতার জানে না। আমি চাই আমার ছেলে জানুক। সাঁতার কত মজার একটা ব্যাপার। এখন অবশ্য আমি যে তাকে সাঁতার শেখাবো তার কোন উপায় নেই, কেবল কোন আগন্তুক কর্তৃক শেখানো ছাড়া আর কিছু করার নেই।

আমার চুলের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওয়ার অভাববোধ করি, কারণ আমি এখন হিজাব পরি। কিন্তু আমি নিজেকে শক্ত ঈমান রাখতে বলি এবং এও বলি যে, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আমাকে পুরস্কৃত করবেন।

পিছনে ফেলে আসা কোন কিছুর অভাববোধ করি বলে মনে করতে পারি না আমি। ইসলামের সংস্পর্শে আসার ঠিক আগে, পার্টির দৃশ্যে আমার মন ইতোমধ্যে উঠে গিয়েছিল এবং আমি বিয়ের ও গর্ভধারণের আকাঙ্খ করতাম । আমি স্পষ্ট দেখতে পাই, আমার আগের জীবন নিম্নমুখী ছিল। আমি কিছুটা অকর্মণ্যই ছিলাম, যাহোক হিজাব ধারণ করতে আমার কয়েক বছর লেগে গিয়েছে।

কখনো সখনো একটা শূকরের মাংসের স্যান্ডউইচ খেতে পারলে ভালো লাগতো।

যা পিছনে ফেলে আসতে কষ্ট হয়, তা হচ্ছে খুব ঘনিষ্ঠ এবং অর্থবহ বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

কিছু ফেলে আসতে আমার খারাপ লাগেনি, কেবল মনে হয় সসেজের পিত্যা ছাড়া- কিন্তু তখন থেকেই আমাদের এলাকায় একটা দোকানের সন্ধান পেয়েছি, যারা হালাল গরুর মাংসের সসেজ, পিত্তা বিক্রি করে।

ধর্মান্তরিত হবার পর থেকেই আমি হিজাব পরি। যদিও আমি এর সংরক্ষণের দিকটা বুঝি, তবু সামনের মুদির দোকানে হিজাব ছাড়া ছুটে যাবার ইচ্ছা আমার হয়েছে। সমুদ্র সৈকত, সাঁতার এবং সূর্যস্নান-"এক হারানোর অনুভূতি হয় আমার।

আমার জীবনের সব কিছুকেই আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত করাটাই ইসলামের সবচেয়ে অর্থবহ ব্যাপার মনে হয়। নামাজের শৃঙ্খলা এবং আর বাকী যা কিছু ইসলাম দাবি করে, আমি সবকিছুই ভালোবাসি এবং আমার এই সব কিছুরই প্রয়োজন রয়েছে। আমি এখন হিজাব ভালোবাসি এবং আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাকে আমি যে দিকে যাচ্ছিলাম সে দিক থেকে ফিরিয়ে এনেছেন, যেখানে আমার অনেক বন্ধুই আটকা পড়ে গেছে।

ইসলাম গ্রহণ করা মেয়েটি, পৃথিবীর সাথে বা পারিপার্শ্বিকতার সাথে সব ব্যাপারে নতুনভাবে সম্পর্ক স্থাপন করে। সে এমন সব আচার-আচরণ গ্রহণ করছে যা স্থানভেদে বা সভ্যতা ভেদে পরিবর্তিত হলেও মূলতঃ বিশ্বজনীন। স্বামীর সংস্কৃতির সঙ্গে, ইসলামিক আচার-আচরণের সঙ্গে এবং উম্মার সঙ্গে (যা এখন তার সমর্থনকারী শক্তি) পশ্চিমে বড় হওয়া নিজের ব্যক্তি সত্তাকে মিশিয়ে নেয়া হচ্ছে এখন তার একটি প্রধান কাজ। এসব তো তাকে করতেই হবে, তাছাড়া নিজের আদি পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনও তাকে করতে হবে।

ইসলাম গ্রহণ করা একটি মেয়েকে মুসলিম মেয়েরা যে পরিবেশে রয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেই হোক, ধর্মান্তরিতদের মাঝেই হোক অথবা আমেরিকান অভিবাসনকারীদের মাঝেই হোক- সেই পরিবেশে তাদের প্রাপ্য অধিকারের ব্যাখ্যা দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। নতুন ধর্মান্তরিতদের শিক্ষা দানের ব্যাপারে অথবা নতুন মুসলিম অভিবাসনকারীদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর ব্যাপারে সে অগ্রণী ভূমিকা নেয়। আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী ধর্মান্তরিতদের জন্য, তারা ইসলামের রীতি-নীতি পালন করে যেভাবে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য দেখাতে সংগ্রাম করে, তা জিহাদকে এক ব্যক্তিগত বাস্তবতায় পরিণত করে। >I JAMILAH KOLOCOTRONIS, ISLAMIC JIHAD : AN

HISTORICAL PERSPECTIVE (INDIANAPOLIS : AMERICAN

TRUST PUBLICATION, 1990) RI ISLAMIC SISTERS INTERNATIONAL, VOL 2 NO. 7 DI RIFFAT HASSAN, "THE ISSUE OF WOMAN-MAN EQUALITY

IN ISLAMIC TRADITION", IN WOMEN'S AND MEN'S LIBERATION TESTIMONIES OF SPIRIT ed LEONARD GROB. RIFFAT HASSAN AND HAIM GORDON (NY : GREENWOOD

PRESS1991), P 68 ৪। IBID, P 66 ৫। IBID, P 66

৩৫
কন্যার যাত্রা মেনে নেয়া মেয়ে এবং বাবা-মার (পছন্দের) বেছে নেয়া জীবন যাত্রার মাঝে আপোষ
তখন প্রায় তিন বছর হয়েছে JODI আমাদের তার ইসলাম গ্রহণ সম্বন্ধে বলার। আমাদের গীর্জার ম্যাগাজিনের সম্পাদক, পরিবারের সদস্যদের মাঝে সম্পর্কের পুনর্গঠন সম্বন্ধে লেখার খোজ করছিলেন। আর আমি মনে করলাম, JODI আর আমি আমাদের সম্পর্কের ক্ষত সারিয়ে তুলতে চেষ্টা করলে কি ঘটেছিল- সে সম্বন্ধে লিখতে পারি। আমি কাহিনীটা লিখে JODI’র কাছে পাঠালাম, তার অনুমোদনের জন্য। যাতে তা ম্যাগাজিনে দেয়া যায়। সে মুসলিম হওয়াতে আমরা কি রকম বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলাম এবং কিভাবে আমরা প্রথম দিকের ঐ বছরগুলোতে আমাদের মাঝের বিধ্বস্ত অবস্থাকে সামলে ওঠার জন্য চেষ্টা করেছিলাম- সাধারণভাবে তারই বর্ণনা ছিল আমার লেখায়। আমার গল্পের শেষটা ছিল এমন ঃ

আমার একটা মৌলিক ধারণা রয়েছে যে, ঈশ্বরই সারা বিশ্বের একমাত্র ঈশ্বর। যিনি জনগোষ্ঠীসমূহকে ভালোবাসেন, তাদের জীবনে পদার্পণ করেন এবং তাদের ধর্মীয় অভিব্যক্তির মূল বিষয় তিনি। বিকাশমান এই অভিজ্ঞতার ফলে আমি আমার মেয়েকে বলতে পারি ? “JODI, তুমি যখন ইরান চলে যাবে তখন আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। আমি তোমার অভাব বোধ করবো, কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ যে, এই গত ক'টা বছরে আমরা আমাদের সম্পর্ককে পুনর্গঠন করতে পেরেছি। তোমার জীবনের সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা আমি ত্যাগ করেছি। যদিও আমি অনুধাবন করিনি যে আমি সেরকম চেষ্টা করে আসছিলাম। এখন আমি তোমাকে তোমার সিদ্ধান্তে সমর্থন করি। আমি ঈশ্বরে তোমার দৃঢ় বিশ্বাসের প্রশংসা করি, প্রশংসা করি তোমার অন্যের প্রতি মমত্ববোধকে এবং তুমি যে তোমার জীবনকে মঙ্গলময় কাজের জন্য উৎসর্গ করেছে। তুমি মানুষের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ স্বরূপ হবে, সে তুমি যেখানেই যাও না কেন। সমর্থন এবং ভালোবাসার জন্য তুমি সব সময় আমাদের উপর নির্ভর করতে পারো। তুমি যে আমাদের প্রত্যাখ্যান করছে না, তা বুঝতে সাহায্য করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ- জীবনের প্রতি তোমার কর্তব্য প্রকাশ করার তুমি কেবল একটা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে, এটা বুঝতে সাহায্য করার জন্য। তোমার জীবন গঠনের জন্য আমরা যে একটা শক্ত ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছি, এ ব্যাপারটার জন্য তোমার ভিতরে যে কৃতজ্ঞতা রয়েছে, তার জন্যও তোমাকে ধন্যবাদ। আমাদের ভালোবাসার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি আমাদের কন্যা, আমাদের জানালা স্বরূপ। আমি তোমাকে ভালোবাসি।” (REPRINTED BY PERMISSION, SAINTS HERALD, 132:17, NOVEMBER 1985, PP 18, 19, 24)

আশ্চর্যের ব্যাপার এই ছিল যে, JODI যে শুধু লেখাটা অনুমোদনই করেছে তাই নয়। বরং গল্পের তার দিকের অংশটা তুলে ধরে সক্রিয়ভাবে সাড়া দেয়- কিভাবে সে তার বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হুমকির সম্মুখীন করতে বাধ্য হয়েছিল- সে যা বিশ্বাস করতো তা লালন করতে গিয়ে। নীচে ঐ সময়ে তার বলা গল্পের তার দিককার অংশ তুলে দেয়া হলো।

৩৬
আর JODI MOHAMMADZADEH'র বক্তব্য
REZA এবং আমার বিয়ের আগে আমাদের অনেক আলোচনার শীর্ষে ছিল ধর্ম । আমাদের দুজনের ধর্মদ্বয়ের অত্যন্ত ভিন্ন দুটি নাম ও চেহারা থাকা। সত্ত্বেও আমরা দেখলাম যে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের অনুভব অনেকটাই এক রকম। আমি একজন মানুষ পেলাম, যার কাছে আমি আমার ধর্মীয় ধারণা ও অনুভূতি প্রকাশ করতে পারতাম এবং তার সাথে সে সব নিয়ে আলোচনা করতে পারতাম। যেভাবেই হোক আমার মাঝে সে যে সমস্ত প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছিল, তা আমাকে কেবলই তার নিকটবর্তী করেছে। বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের একটা অনুভূতি আমাদের মাঝে জন্ম নিয়েছিল আর আমরা দুজনই অনুধাবন করলাম যে, আমরা দুজনই দুজনকে সমর্থন করা ও একে অপরের অনুভূতি ভাগ করে নেয়াটা চালিয়ে যেতে চাই।

দুর্ভাগ্যবশতঃ যে সময়টায় আমি REZA-কে একটু একটু করে জানছিলাম, আমার সবচেয়ে ভালো দু'জন বন্ধু তার সম্বন্ধে খুব অল্পই জানতো। আমার মা ও বাবাকে আমি কি ভাবে বলতাম যে, আমি আমার জীবনের সাথীকে খুঁজে পেয়েছিলাম? এ ব্যাপারে তাদের অনুমোদন ও মেনে নেয়াটা আমার প্রয়োজন ছিল, যেমন বেশীরভাগ অন্য ব্যাপারেও তা প্রযোজ্য ছিল। আমি এই দুই প্রিয় ব্যক্তিকে তাদের প্রজ্ঞার জন্য সব সময় নির্ভরযোগ্য মনে করতাম এবং আমি চাইলাম তারা যেন সন্তুষ্ট থাকেন- যেমন আমি সব সময়ই চাইতাম- তারা যেন আমাকে নিয়ে খুশী থাকেন। কিন্তু তারা REZA-কে নামমাত্রই জানতো এবং তাদেরকে আমার মত নিশ্চিত করাতে সময় এবং চেষ্টা দু'টোরই প্রয়োজন হতো।

আমরা যখন বিয়ে করলাম তখন আমরা একমত হয়েছিলাম যে, আমরা একে অপরের ধর্ম সম্বন্ধে পড়াশোনা করবো, যাতে একে অপরের পটভূমি সম্বন্ধে অধিকতর ভালো ধারণা লাভ করতে পারি। আমরা আশা করেছিলাম যে, এসব আমাদের অনুভবকে আরো কাছাকাছি নিয়ে আসবে- আমাদের ধর্ম বিশ্বাসের নামের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও। আমরা আমাদের জ্ঞানার্জন চালিয়ে যেতে থাকলাম। REZA আমাদের পরিবারের সাথে কখনো চার্চে গিয়েছে এবং ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা নিয়ে তাদের সাথে আলাপ করেছে। আমি ইসলামের মৌলিক ধারণা সম্বন্ধে বিভিন্ন লেখা ও প্রাথমিক কিছু বই পড়েছি। আমাদের কেউই অপরকে ধর্মান্তরিত করার প্রয়োজন বোধ করিনি।

আমাদের ARKANSAS-এ চলে যাওয়াটা আমার পরিবারের সাথে। আমাদের দু'জনের দূরত্ব কিছুটা বৃদ্ধি করে। এই সময়ে আমি ইসলামের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ বোধ করি। REZA এবং আমি একত্রে প্রার্থনা করতে শুরু করি এবং আমাদের বিশ্বাস দৃঢ়তা লাভ করতে থাকে। আমার বিশ্বাস যে কেবল প্রসারিত হচ্ছিল তা নয় বরং একটা নির্দিষ্ট আকার ধারণ করছিল। ইসলামে আমার আগ্রহ এমন এক পূর্ণতা লাভ করে, যখন তা আমার একটা অংশে পরিণত হয়।

আমার বাবা-মা এ খবর কিভাবে নেবেন, সে সম্বন্ধে আমার কোন ধারণা ছিল না। তাদের কিভাবে বলা যায় তা নিয়েও আমার কোন পরিকল্পনা ছিল না । আমি বুঝলাম এটা তাদের কষ্ট দেবে, কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে আমি আত্মবিশ্বাস ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করলাম। আমার তাদের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল- অথবা নিদেনপক্ষে তাদের মেনে নেয়াটা- এবং তাদের সুখী হওয়াটা, যেমন আমি সুখী ছিলাম। কিন্তু তারা সুখী হয়নি এবং অনুমোদনও করেনি।

আমি কেবল ইদানিংই বুঝতে শুরু করেছি যে, ঐ সপ্তাহান্তে আমার ঈমান আমাকে কতটুকু শক্তি যোগান দিয়েছিল। এমন একটা সময় ছিল, যখন আমি ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না যে, আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক কি সম্পূর্ণই ছিন্ন করে ফেলেছি না কি কেবল তাদের দারুণ ব্যথা দিয়েছি। মা মুখেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, আর আমি সেটা সামলাতে পেরেছি। গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন থেকে এবং অন্যমনস্ক অবস্থায় বাবা খুব সামান্যই কথা বলেছিলেন। আমি দেখলাম, প্রাথমিক ধাক্কা এবং রাগ কাটিয়ে উঠতে তাদের সময় লাগবে, কিন্তু আমি জানতাম না সেই সময়টা ঠিক কতখানি আর সেই সময় পেরিয়ে আমাদের সম্পর্কটাই বা কি দাঁড়াবে? আমি এটা বুঝেছিলাম যে, আমি আমার নতুন বিশ্বাস বা আমার বাবামাকে (কাউকেই) ত্যাগ করতে ইচ্ছুক নই।

ঐ THANKsGIVING-এর পরে REZA এবং আমি যখন ARKANSAS-এ ফিরে যাই, সপ্তাহান্তের ঘটনার ফলশ্রুতিতে আমি শূন্য এবং অনিশ্চিত বোধ করি। বাড়িতে ফোন করাটা যেন স্বাভাবিক ছিল না। আমার স্বপ্নে পিতামাতার প্রত্যাখ্যান ছিল প্রধান বিষয় এবং আমি প্রচন্ড কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ঘুম থেকে উঠতাম। আমার পিতামাতার মতই আমিও অনুভব করতাম যে, আমার কাছ থেকে কিছু ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। একটা ভাবনা আমাকে নিরাশ হওয়া থেকে বিরত রাখে। যে আল্লাহকে আমি এতো বিশ্বাস করতে ও ভালোবাসতে শিখেছি, আমার বাবা-মা সেই একই ঈশ্বরে বিশ্বাসী- একথাটা জেনে- আমি তাদের জন্য অপেক্ষা করবো- অপেক্ষা করবো, আল্লাহ যেন তাদের সেরে উঠতে সাহায্য করেন।

যখন থেকে আমি আমার পরিবারকে আমার ইসলাম গ্রহণ সম্বন্ধে বলেছি, তখন থেকে আমাদের সম্পর্ক নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, তা আরও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে। আমি খুব সত্তাবে বলতে পারি যে, আমি আমার বাবা-মাকে এখনকার চেয়ে বেশীভাবে কখনোই ভালোবাসিনি। আমাদের এই নতুন সম্পর্কের সাথে আমি অন্য কোন ধরণের সম্পর্কের বিনিময় করবো না।

“মা ও বাবা, আমাকে বোেঝার জন্য তোমরা যেভাবে চেষ্টা করেছে, সে জন্য ধন্যবাদ। তোমাদের প্রজ্ঞা ও সমর্থনের জন্য আমি তোমাদের দিকে চেয়ে থাকা অব্যাহত রাখবে। বন্ধু হিসেবে আমি তোমাদেরও সমর্থন করার চেষ্টা করবো। আমার ভালোবাসা রইলো।”- JODI (REPRINTED BY PERMISSION, SAINTS HERALD, 132:17, Nov. 1985, PP. 18, 19, 24)

সম্পর্কের উন্নয়ন আমাদের উভয়েরই কাম্য ছিল। এর মানে এই ছিল না যে, আমি নিজে ইসলাম গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার মেয়ে এবং তার বন্ধুদের যা হবার জন্য ইসলাম আহবান করেছিল, আমি তাকে সম্মান করতে শিখেছিলাম।

পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্ত বা পছন্দের কারণে আমাদের জীবনে অবধারিতভাবে যে পরিবর্তন নেমে আসে তা ধ্বংসাত্মক হতে পারে এবং সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর্যায়ে যেতে পারে। আমাদের সংশয় দেখা দিতে পারে যে, কিভাবে একে অন্যের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবো এবং আমরা বিমূঢ় এবং হতাশ হয়ে যেতে পারি। এই সবের মাঝে আমার ব্যাপার এটাই যে, এমনকি এই ভগ্ন অবস্থায়ও আমরা যখন আমাদের সম্পর্কের ভাঙ্গা টুকরোগুলো জোড়া দিতে যাই, তখন আমরা এক ধরণের সমঝোতায় পৌছি। নতুন সম্পর্কটা হয়তো একটা ভিন্ন। ধরণের যোগাযোগ বা গ্রহণযোগ্যতা প্রতিফলিত করতে পারে। সমঝোতা অবশ্য একটা দ্বি-পাক্ষিক ব্যাপার যা আমাদেরকে একে অপরের কাছে পৌছানোর সুযোগ করে দেয়। যাতে আমরা আমাদের কষ্ট ও ক্রোধের প্রশমন করতে পারি এবং একটা ভারসাম্য অর্জন করতে নতুন চিন্তাধারার সাথে খাপ খাওয়াতে পারি।

ঠিক যেভাবে মেয়েরা জীবনে তাদের নতুন ভূমিকা পালনের সময় আপ্রাণ চেষ্টা করে তাদের পিতা-মাতার সাথে একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে- একইভাবে পিতা-মাতাও তাদের মেয়ের মুসলিম হবার সিদ্ধান্তের যাত্রাকে মেনে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। জরিপের কাজে যে সব মেয়েরা সাড়া দেয় তাদের পিতামাতার জন্যও তাদেরকে প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছিল (পরিশিষ্ট ‘খ’), যা তারা চাইলে তাদের পিতা-মাতার সাথে ভাগ করে নিতে পারতো। সাতজনের মা-বাবা ঐ সব প্রশ্নপত্রে সাড়া দিয়ে নিজেদের সংগ্রামের এবং খাপ খাওয়ানোর গল্প বলেছেন। মেয়ের এবং মা-বাবার ভাষ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বাবা-মায়ের জীবন ধারার চেয়ে ভিন্ন। জীবন ধারা বেছে নেয়ার (মেয়ের) সিদ্ধান্তই ব্যথার মূল কারণ।

বাবা-মায়ের জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, মেয়েদের ইসলাম গ্রহণ করায় তাদের কি ধরণের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার জন্য তাদের ১ থেকে ১০ পর্যন্ত একটা স্কেল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল (১ হচ্ছে একদম ভেঙ্গে পড়া বা সব শেষ হয়ে গিয়েছে- এমন প্রতিক্রিয়া, আর ১০ হচ্ছে। সবকিছু ঠিকই আছে, কোন অসুবিধা নেই এমন একটা প্রতিক্রিয়া)- তারা প্রথম যখন শোনেন যে তাদের মেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তখন তাদের কেমন লেগেছিল। ঠিক একই স্কেলে এই প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়ার সময় (এখন), তাদের ব্যাপারটা কেমন লাগে তা জানাতে বলা হয়েছিল (এখানেও ১ মানে খুব খারাপ অনুভূতি, আর ১০ মানে সব স্বাভাবিক এমন একটা অনুভূতি)। মেয়েদের ধর্মান্তরিত হওয়া থেকে প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়া পর্যন্ত ব্যক্তিভেদে ৩ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্কেলের সূচকের মান সময়ের সাথে বেড়েছে। যা সম্পর্কের উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। প্রথমে যারা তাদের প্রতিক্রিয়াকে ১ থেকে ২-এর মাঝে বলেছেন, তাদের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ছিল ৫ থেকে ৬-এর মাঝে। শুরুতে যাদের প্রতিক্রিয়া ৫ থেকে ৬ ছিল, পরবর্তীতে তা হয়েছে ৮/৯ এর ঘরে। নীচে গল্পসমূহের মাঝ থেকে তিনটি তুলে দেয়া হলো। যেখানে আমরা দেখবো মাবাবার কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল এবং কিভাবে তারা অবস্থা সামাল দিয়েছেন।

৩৭
১নং গল্প ও উদ্বিগ্ন অবস্থায় মেনে নেয়া
এই ঘটনার কন্যা প্রায় সাড়ে চার বছর যাবত মুসলিম। সে বড় হয়েছে CATHOLIC হিসেবে। কিন্তু কলেজের শেষের দিকে নিজের ধর্মের খোঁজ করতে শুরু করে। সে খুব তাড়াতাড়ি অন্য দুটো খৃষ্টান মত ধরে এবং পরিত্যাগও করে। তার মা, যিনি এই গল্পের বর্ণনাকারী, বলেছেন যে, প্রথমে ধর্মান্তরিত হবার ব্যাপারে তার অনুভূতির সূচক ছিল ১, কিন্তু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় পর্যন্ত তা বেড়ে ৬-এ এসেছে।

আমার মেয়ে আমাদের বাড়ির কাছের একটা দোকানে একজন মুসলিম লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছিল এবং ঐ লোকের ধর্মে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমরা জানি সে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করছিল, কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারটা সে আমাদের কাছে গোপন রাখে, যে পর্যন্ত না ঐ ধর্মের কিছু মেয়েরা তাকে একটি ফুলের তোড়া পাঠায়। আমি আমার বাচ্চাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো নাক গলাইনি, কিন্তু এক্ষেত্রে আমি ঠিক করলাম কার্ডটাতে কি আছে দেখবো- দেখলাম লেখা আছে- “মুসলিম হওয়াতে মোবারকবাদ। আমরা তখন তাকে কিছুই বলিনি। আমি আশা করেছিলাম, সে আমাদের কাছে সব খুলে বলবে। তারপর সে একদিন বললো যে, সে কি একজন মানুষকে আমাদের সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসতে পারে কিনা। লোকটা একটা মুসলিম দেশের ছিল। সে আমাদের মেয়ের সাথে বিয়ের উদ্দেশ্যে দেখা সাক্ষাৎ করতে চায়। সে ব্যাখ্যা করলো যে, বাগদত্তা না হলে তার ধর্ম তাকে আমার মেয়ের সঙ্গে একা হবার অনুমোদন দেয় না। আমরা দুজনেই (আমি ও আমার স্বামী) হতবাক হয়ে যাই। কারণ ৩০ মিনিট আগেও আমরা তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানতাম না। মেয়ের বাবা ঐ লোকের মুখের উপরই তার অসন্তোষ প্রকাশ করলেন এই বলে যে, ঐ সম্প্রদায়ের মেয়েদের ‘নিকৃষ্ট' হিসেবে দেখা হয় এবং জোর করে পুরনো দিনের জোব্বা পরানো হয় অথচ ছেলেরা যা খুশী পরে বেড়ায়। আমি ভদ্র থাকলেও আমার স্বামীর মতই আহত বোধ করছিলাম। আমার ধারণা ছিল, আমার মেয়েরা আমার কাছে তাদের মনের কথা খুলে বলতে ভয় পাবে না, যেমন আমি পেতাম না আমার মায়ের কাছে আর সে জন্য আমার কষ্টটা বেশী হচ্ছিল। সে ইতিমধ্যেই দুটো ধর্ম পার হয়ে এসেছে। আর আমার ভয় হচ্ছিল সে হয়তো বিয়ে করবে এবং তারপর দেখবে, সে এই ধর্মের সাথেও একমত নয়।

তার বিদেশী বিয়ে করার ব্যাপার নিয়ে আমার তেমন রাগ হয়নি। তারা হয়তো তাদের (ছেলের) দেশে গিয়ে থাকবে এবং আমি NOT WITHOUT MY DAUGHTER-এ যে রকম গল্প দেখানো হয়েছে, তেমন ঘটনার কথা শুনেছি। ইসলাম সম্বন্ধে আমি কিছু পড়েছি এবং তাদের বিশ্বস্ততা আমাকে বেশ সপ্রশংস একটা দৃষ্টি দিয়েছে। আমি সব সময়েই জেনেছি ‘আল্লাহ’ এবং আমার স্বর্গীয় পিতা একই। আমি মেয়ের হবু স্বামীকে তাও বললাম। আমর মেয়ে যেহেতু ২৫ বছর বয়স্কা, আমরা অনুমোদন না করে পারি না, আর এই লোকটা যদি তাকে ঠিকমতো আদর যত্ন করে, তবে সে আমার জন্য ঠিকই হবে- যেমন মনে হচ্ছে সে আমার মেয়ের জন্য সঠিক। আমরা সত্যি সত্যি মেয়ের ঐ সময়ের মানসিক অবস্থা নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম, তার জীবনের আরো অনেক ধরণের ব্যবহার এবং অসঙ্গতির জন্য।

সে ছিল আমাদের মেয়ে। আমরা তাকে ভালোবাসতাম এবং চাইতাম অব্যাহতভাবে আমরা যেন তার জীবনের একটা অংশ হয়ে থাকি। আমি বিশ্বাস করতাম, সবারই ঈশ্বরের সাথে নিজের মতো করে সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার রয়েছে এবং রয়েছে নিজের মতো করে নিজের জীবন যাপনের অধিকার। যে পর্যন্ত আমরা মৌলিকভাবে সন্তুষ্ট হয়েছি, সে পর্যন্ত আমরা তর্ক করেছি, চিৎকার করেছি, চিঠি লেখালেখি করেছি। ওটা ছিল আমার জন্য একটা পরীক্ষার সময়। আমার নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, আমার সবচেয়ে বিশ্রী আশঙ্কাগুলো যেন বাস্তবায়িত হলো। আমি একজন ডাক্তারের কাছে গেলাম এবং আমাকে স্নায়ু চিকিৎসার ৬ মাসের ঔষধ দেয়া হলো।

এখন আমাদের মাঝে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমরা কথা বলি, কিন্তু আমার মেয়ে যা বলে এবং করে তার অনেক কিছুর সাথেই আমি একমত হই না। বোরখা পরার মতো প্রথা আমাকে পীড়া দেয়। আমার মনে হয় ইসলামিক পুরুষরা তাদের যৌনতা নিয়ে এতোই ভীত যে নারীদের উপর তাদের সংযমে সাহায্য করার বোঝা অর্পিত হয়। আমার মেয়ের বোনদের একজন তাকে অপহরণ করে আবার নতুন করে তার মগজকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। এক ভাইয়ের তাকে নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই, কিন্তু অন্যটির রয়েছে। তার সব ভাই-বোনই তাকে ভালোবাসে, কিন্তু তারা মনে করে সে মানসিকভাবে অবিন্যস্ত।

ধর্মের পার্থক্যই (JESUS, MUHAMMAD), আমাদের মাঝের প্রধান বিরোধের বিষয়, আর তার সাথে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পার্থক্য। আমরা এক সাথে খেতে বসি না, কারণ সে চাচাতো ভাই বা দুলাভাইদের সাথে একরুমে থাকতে পারে না (Note : এটা অন্য গল্পসমূহের তুলনায় একটা অস্বাভাবিক নিষেধাজ্ঞা বলে মনে হয়)।

কোন কিছু উদ্যাপন বা ছুটির দিনে আমরা তাকে নিমন্ত্রণ করি না কারণ সে আমাদের বিশেষ দিনগুলোকে, এমনকি জন্মদিনকেও স্বীকার করে না। তার জন্মদিনেও সে আমার সাথে বাইরে খেতে যাবে না, কারণ সে চিন্তিত থাকে, তাতে উদযাপন করা হয়ে যায় কিনা। সত্যি কথা বলতে কি, আমি এ ব্যাপারটা একদমই পছন্দ করি না। পাঁচটি ছেলেমেয়ের সকলকে নিয়ে ছবি তুলতে চাইলে সে এমনকি আমাদের বাসায় আসবেও না, কারণ তার বোনের স্বামী সেখানে থাকবে। আমার। মনে হয় এটা একটা নির্বোধ নিয়ম এবং এটা ধর্মীয় ব্যাপারের চেয়ে বরং একটা বিশেষ সামাজিক আচরণ। মেয়ের বাবা ভাবেন, মেয়ের স্বামীরও কিছু বদলানো উচিত, শুধু মেয়েরই সব কিছু করতে হবে, তা হওয়া উচিত নয়। তার স্বামী ও বাবার প্রায়ই তর্ক হয়।

পুরুষ বন্ধু বা আত্মীয় না থাকার ব্যাপারটা কষ্টকর। একবার আমরা ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছিলাম। তার স্বামী ছাড়া বাকী সব পুরুষরা শেষ পর্যন্ত মেয়েদের সাথে বসবার ঘরে একত্রিত হয়। কিন্তু আমি আমাদের মেয়ের সঙ্গ পছন্দ করি এবং আমি সত্যিই ওর স্বামীকে পছন্দ করি, অস্বস্তিকর বিষয়গুলো সত্ত্বেও।

মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রায় সবটাই এসেছে তার যে মানসিক অবস্থা আমি দেখেছি তা থেকে, তার ধর্মান্তরিত হওয়া থেকে নয়। সে আমাদের বলেছে যে, আমরা জাহান্নামে যাবো। আমরা তাকে ভুল বিশ্বাসে (ধর্ম) বড় করেছি, আর তাকে ভুল খাবার খেতে দিয়েছি। তাই আমার মনে হয়, সমস্যার একাংশের উদ্ভব হয়েছে, তার তারুণ্যের জটিলতা থেকে (এটা অবশ্য আমার মত, তার নয়)। সে ডাক্তারদের অবিশ্বাস করতে শুরু করে- ঔষধ, কৃত্রিম ভিটামিন, সুষম দুধ ইত্যাদি সবই অবিশ্বাস করতে শুরু করে। আমরা যার সম্মুখীন হচ্ছিলাম, তা আসলে আমাদের প্রতিক্রিয়া থেকে উদ্ভূত, তার ধর্মান্তরিত হওয়া থেকে নয়। আমার মনে হচ্ছিল সে যৌনতা নিয়ে ভীত, কাজ নিয়ে ভীত, জীবন নিয়ে ভীত এবং সে ইসলামের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিল। আমি এখনও মনে করি, এই ধরণের কিছুর সম্ভাব্যতা খুবই বেশী। কিন্তু তাকে সুখী মনে হয়, মনে হয় সে তার স্বামীকে এবং নিজের জীবন ধারাকে ভালোবাসে।

তাই আমাকে মেনে নিতে হয় এবং আশা করতে হয় যে, সে তার জন্য সম্ভব সবচেয়ে সুন্দর জীবনই যাপন করবে। আমি নিজেদের ব্যাপারে আশা করি যে, আমরা একে অপরকে মেনে নিতে এবং আরো সম্মান করতে শিখবো। আর এও আশা করি যে মেয়ে ও তার বাবার মাঝে একটা বোঝাপড়া ও সমঝোতা হবে।

এই পরিবারকে এমন একটা প্রথা সামলাতে হয়, যা মেয়ের স্বামীর সংস্কৃতির একটা ব্যতিক্রমী দিক- অর্থাৎ স্ত্রী (কন্যা) স্পষ্টতর একই ঘরে নিজের নিকটতম পরিবারবর্গ ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সাথে সহ-অবস্থান করবে না, এমনকি হিজাব পরিহিত অবস্থায়ও। বাবা-মা জীবনের প্রতি মেয়ের অন্যান্য প্রতিক্রিয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন।

৩৮
২নং গল্প ঃ বহুমুখীতা ও পরিবর্তনের প্রতি ভোলা মন
পরবর্তী পরিবারটির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমির বিষয়াদিকে অপেক্ষাকৃত খোলা মনে গ্রহণ করার ইতিহাস রয়েছে এবং তাতে পরিবারের সদস্যদের মাঝে দেয়া নেয়ার ব্যাপারটাও অধিকতর। তাদের কন্যা ৭ বছর যাবত মুসলিম। বাবার ছাত্র পরামর্শের বিষয়ে Ph.D রয়েছে এবং তিনি এক কলেজে চাকরি করেন। মেয়ের মা মারা গিয়েছেন এবং এখন সংসারে সৎ মা রয়েছেন। বাবার তরফ থেকে চারজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে রয়েছে আর মায়ের তরফ থেকেও রয়েছে চারজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে। গল্পের বর্ণকারী হচ্ছেন কন্যার বাবা, যার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল ৬ আর এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে ৯-এ।

আমার মেয়ের কলেজের মুখ্য (MAJOR) বিষয় তাকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে নিয়ে আসে। তার পরিবারের পরিবেশ থেকেই অন্য সভ্যতা বা বিশ্বাস থেকে আসা মানুষের প্রতি তার উঁচু মাত্রার সহনশীলতা ছিল। আমি বিপত্নীক হবার পর একজন ইহুদী মহিলাকে বিয়ে করি।

যখন আমাদের মেয়ে SAUDI ARABIAN EDUCATION MISSION-এর জন্য কাজ করতে যায় তখন মসজিদের নেতৃস্থানীয়দের সাথে তার আলাপের সুযোগ হয়। সে তার ধর্মান্তর সম্বন্ধে জানাতে আমাকে ফোন করে। আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া অবাক হবার ছিল না, বরং সে কিভাবে তার প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে (সমাজের তরফ থেকে) তা সামলাবে, সে ব্যাপারে উদ্বেগের ছিল। সে হিজাবসহ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতে শুরু করে। কিন্তু মনে হয় আজ পর্যন্ত সে যে মাত্রার পক্ষপাতিত্বের সম্মুখীন হয়েছে, তা ভালোভাবেই সামলাতে পেরেছে। আমার মেয়ে যেভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে, তা তাকে নিয়ে নিশ্চিন্ত বোধ করতে সাহায্য করে।

আমাদের মেয়ে প্রথমে মুসলিম হলো, তারপরে পরবর্তীতে বিয়ে করলো। ছেলেটা যে তার চেয়ে ছোট ছিল, আর জীবনে প্রতিষ্ঠিত ছিল না, সেটাই বরং ধর্মীয় ব্যাপারের চেয়ে বেশী চিন্তার কারণ ছিল। মেয়ের জন্য এটা ছিল তার ৩য় বিয়ে। প্রথম বিয়ে বিচ্ছেদে শেষ হয়। দ্বিতীয় বিয়ে ছিল এক মিসরীয় মুসলমানের সাথে, যা মুসলিম নিয়মে সমাপ্ত (তালাক) হয়। এ বিয়েটা ছিল একটা অনাড়ম্বর বিয়ে এবং এটাও মুসলিম নিয়মে হয়।

প্রথমে পরিবারের সদস্যদের সাথে একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয় এবং তার বিয়ে ও স্বামীকে মেনে নিতে কিছুটা সময় লাগে। কিন্তু এই বিষয়টা অন্য দিকে মেয়ের স্বামীর ব্যাপারেও প্রযোজ্য (অর্থাৎ স্বামীরও সহজ হতে সময় লাগে)। আজ সবাই খুব মন খোলা। বোনেরা বেশ অভাবনীয় রকম কাছাকাছি এসেছে একে অপরের, যদিও কখনো কখনো বোনের স্বামীকে নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়।

মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস খুব সামান্যই অসুবিধার কারণ হয়, তবে সব তরফেই সহিষ্ণুতা এবং মেনে নেয়ার মনোভাবের প্রয়োজন হয়। আমাদের মেয়ে তার মুসলিম বিশ্বাস নিয়ে অন্যকে বদলানোর চেষ্টা করে না- সে স্বীকৃতি চায়, ধর্মান্তর নয়। এটা সাহায্য করে (সম্পর্ককে সহজ করে)। আমাদের মাঝে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের সবার ভালো পড়াশোনা রয়েছে এবং আমরা জীবন, রাজনীতি এবং বিশ্বব্যাপী ঘটে চলা ঘটনাবলী নিয়ে মতবিনিময় করতে পছন্দ করি।

আমার ধর্মীয় জ্ঞান বা সংকল্পের উপর এই অভিজ্ঞতার সামান্যই প্রভাব পড়েছে। আমি ধর্ম তত্ত্ব এবং ধর্ম সম্বন্ধে ভালই জ্ঞান রাখি। আমি সব সময়ই সহিষ্ণুতার এবং সহমর্মিতার একটা জীবন যাপন করেছি। আমি অন্যদের বিশ্বাসের ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানতে পছন্দ করি এবং সব সময়ই সক্রিয়ভাবে অবগত হতে চেয়েছি। আমার বর্তমান ধর্মীয় পরিচিতি হচ্ছে একজন একেশ্বরবাদী AGNOSTIC-471 ছুটির দিনসমূহে প্রত্যেকে প্রত্যেকের করণীয় করে। পারিবারিক সমাবেশ ধর্মকেন্দ্রিক হয় না। আমরা জীবন এবং বেঁচে থাকা উদযাপন করি। আমরা এক সাথে খাবার খাই। মুসলিম ও ইহুদীদের খাদ্যাভ্যাস বেশ সদৃশ। তাদের ছুটির দিনগুলোতে আমাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, কিন্তু আমরা তাদের উৎসবকে স্বীকার করি এবং ঐতিহ্যকে সম্মান করি। আমরা এমন বাসায় থাকি, যেখানে জুতা খুলে ঘরে ঢোকা হয়, খাবার সাধারণত নিরামিষ- তবে কিছু মুরগী, মাছ ও ভেড়ার মাংসও থাকে। তাই এসব ব্যাপার স্বাভাবিক। ধর্মীয় বস্তু বা শিল্পকলা (মূর্তি ইত্যাদি) সংসারের সামগ্রীর অংশ নয় এবং এটা যে আমার মেয়ের পরিবার, আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, তা নয়।

আমার দুটি নাতি-নাতনীই চমৎকার। আমরা তাদের সঙ্গ উপভোগ করি এবং তারা সত্যি আনন্দের উৎস।

আমার যে বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে চিন্তা হয়, তা হচ্ছে আমার মেয়ে এবং নাতি-নাতনীরা যে বৈষম্যের স্বীকার হবে, এই ব্যাপারটা। আমার স্ত্রী শৈশবে বৈষম্যের মাঝে জীবন ধারণ করেছে- অ-ইহুদী জগতে, ইহুদী হয়ে। এটা নিষ্ঠুর হতে পারে; অনেক তথাকথিত খৃষ্টান আছে যাদের মাঝে সঞ্চিত রয়েছে প্রচন্ড ঘৃণা এবং তা মানুষকে আহত করে। আমাদের জামাই PALESTINIAN এবং বাবামাসহ তার পরিবারের বেশীরভাগ সদস্যই এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে। আমি সত্যি সত্যি এ ব্যাপারেও খুব চিন্তিত যে, ওদের পরিবার যদি কখনো মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আমার এই জেদী মেয়ে সেটা কিভাবে নেবে।

আমার মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক নিয়ে আমার আশা হচ্ছে, তা আজ যেমন আছে, সব সময় তেমনই থাকবে এবং আমাদের নাতি-নাতনীর সাথে একটা ইতিবাচক এবং গ্রহণীয় সম্পর্ক থাকবে। আমাদের ব্যাপারটা একটা ব্যতিক্রমমুসলিম, ইহুদী এবং একেশ্বরবাদী খৃস্টানের সংমিশ্রণ। আমরা অবশ্যই সহিষ্ণু।

এই গল্পের শক্তিশালী দিক হচ্ছে, পরিবারের বহুমুখীতার প্রতি এবং মেয়ে দ্বারা পরিবারে আমদানীকৃত বাড়তি মাত্রার প্রতি উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গী। এই পরিবার আগে থেকেই ধর্মীয় পার্থক্যকে মেনে নিয়েছিল এবং নিজের সীমানাকে আরো একটি জীবন ধারাকে গ্রহণ করার জন্য খুলে দিতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও মেয়েকে এবং মেয়ের পরিবারকে মেয়ের আদি পরিবারের সাথে খাপ খাওয়াতে পরিশ্রম করতে হয়।

৩৯
৩নং গল্প ও হতাশা থেকে স্বীকৃতি
পরবর্তী পরিবারের মা, তার মেয়ে যা বেছে নিয়েছে, তা সম্বন্ধে হতাশার অনুভূতি থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত উষ্ণ স্বীকৃতির অনুভূতিতে পৌঁছান। কিন্তু তাতে বহু বছর সময় লেগেছে। মেয়েটি আজ ১২ বছর যাবত মুসলিম। মেয়ে মুসলিম হয়েছে, এ ব্যাপারে প্রথম অবগত হলে তার নিজের অনুভূতিকে মা বর্ণনা করছেন (আমাদের পূর্ব বর্ণিত) স্কেলের মাত্রায় ১ বলে, আর বাবার অনুভূতি ৪ বলে। যাহোক, প্রশ্নপত্র হাতে পাবার সময় দু'জনেই তাদের অনুভূতি (প্রতিক্রিয়াকে) ৮ বলে বর্ণনা করেছেন। এখানে মা তার গল্পে বলছেন ।

আমাদের মেয়ে যখন শহরের বাইরে একটা চার্চ চালিত কলেজে গেল, আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত বোধ করলাম যে, মেয়েকে বুঝি আমরা বাড়ির সবচেয়ে সদৃশ একটা পরিবেশে পাঠাচ্ছি। আমরা তার সাথে দেখা করতে গেলে, তার মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বন্ধুর সাথে দেখা হলো এবং আমরা তাকে পছন্দ করলাম। আমরা এমনকি তাকে এক সপ্তাহান্তে আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করলাম। আমরা ভাবিনি এ সম্পর্ক গুরুত্ব দেয়ার মতো কিছুতে পরিণত হবে। আমরা জানতাম ধর্মের ব্যাপারে এই মেয়ে আমাদের চার ছেলেমেয়ের মাঝে সবচেয়ে দৃঢ়। চারমাস পরে সে আমাদের বললো যে, সে আর প্রার্থনা সমাবেশে যাচ্ছে না। এর পরের সেমিস্টারে যখন এই বন্ধু অন্য এক কলেজে বদলি হলো, সেও তখন তাকে অনুসরণ করতে চাইলো- কিন্তু আমরা তাকে তা করতে দিতে অস্বীকার করলাম। আমরা আশা করছিলাম সম্পর্কটা এখানেই শেষ হবে আর সে তার তখনকার দশা থেকে বেরিয়ে আসবে।

পরের গ্রীষ্মকালে, তার ঐ বন্ধু আমাদের শহরে একখানা এপার্টমেন্ট ভাড়া নিলো, আর আমাদের মেয়ে তার দাদীকে নিয়ে সেখানে উঠলো- যেহেতু আমাদের মাঝে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। জুন মাসের শেষ অংশে সে আমাদের জানালো যে, সে ঐ ছেলেকে আগস্টে বিয়ে করবে, আমাদের নিয়েই হোক, আর ছাড়াই হোক। আমরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিকল্পনার সাথে মিশে যাই।আমরা কেউই বিশ্বাস করিনি এই বিয়ে আদৌ কোনোদিন সত্যি সত্যি হবে। কিন্তু আমাদের বাড়িতেই তা ঘটলো এবং সে যেহেতু তখনো মুসলিম হয়নি, ব্যাপারটা এক ধরনের আপোষরফা হলো বলা যায়। তার বাবা-মাকে (ছেলের) বিয়ে সম্বন্ধে বলা হয়নি, আর তাই আমাদের আপত্তিগুলো সমর্থন করার জন্য আমরা তার পরিবারকে পেলাম না।

এর কয়েকমাস পরে সে আমাদের বললো যে সে ইসলাম গ্রহণ করছে। আমি ঐ সংবাদের প্রতিক্রিয়া জানালাম রাগ, কষ্ট এবং ভয় সহকারে। রাগটা মূলতঃ আমার জামাইকে লক্ষ্য করেই ছিল। কারণ আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, আমাদের মেয়ের মগজ ধোলাই না করা হলে, সে কখনোই এমন সিদ্ধান্ত নিতে। এটা আমাদের খুব কষ্ট দিয়েছে। কারণ আমাদের মনে হয়েছে আমাদের মেয়ে কত সহজে JESUS CHRIST-কে ঘিরে আমাদের আজীবনের শিক্ষা ও জীবন ধারাকে ত্যাগ করতে পারলো । সে এই সমস্ত শিক্ষাকে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে প্রত্যাখ্যান করতে পারলো। এই বাস্তবতাটাই ধ্বংসাত্মক ছিল। ভয়টা প্রথমে ছিল যে, আমাদের অন্য সন্তানরা একই জিনিস করতে পারে, কারণ সে সবার বড় এবং অন্যরা তাকে সমীহ করে এবং তার মতামতকে সম্মান করে।

সময়ের সাথে সাথে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের সম্বন্ধে অধিকতর সচেতন হতে লাগলাম এবং ঐ এলাকার সন্ত্রাসবাদীদের সম্বন্ধে খবর এবং সমীক্ষা মনোেযোগ দিয়ে শুনতে লাগলাম। তখন তাকে নিয়ে (মেয়েকে) ভয় হতে লাগলো। যতদিন তার স্বামী কলেজে থাকছে, ততদিন যে তারা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাবে না, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত বোধ করলাম, কিন্তু তার কলেজ শেষ হলে কি হবে, তা আমরা জানতাম না। তাদের প্রথম ছেলের জন্মের পর আমাদের ভয়টা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী বোধ হয়। কারণ তার স্বামী হয়তো তাদের তার দেশে নিয়ে যেতে চাইবে। এই ভয়টা কিছুটা কমে আসে যখন সে আমেরিকার নাগরিক হয়ে যায়। আমরা একটু সহজ হতে ও বিশ্বাস করতে চেষ্টা করলাম। আমরা যে তার জাগতিক জীবন নিয়েই কেবল চিন্তিত ছিলাম তা নয় বরং পরকালে তার কি হবে সে নিয়েও আমাদের দুশ্চিন্তা ছিল।

কিতাবের যে কথাগুলো আমাকে ভূতের মতো তাড়িয়ে বেড়াতো তা হচ্ছে। JOHN 14:6 “আমিই হচ্ছি পথ, এবং সত্য , এবং জীবন; কেউ আমার মাধ্যম ছাড়া পিতার কাছে আসতে পারে না।” আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে কিতাবের এই অংশ যদি আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে থাকে তবে আরো কোন অংশ নিশ্চয়ই আমাকে তা থেকে মুক্তি দেবে। তাই আমি ঐ অধ্যায়টার প্রতিটি শব্দ মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলাম। প্রথম বাক্যেই আমি আমার প্রয়োজনীয় অনুপ্রেরণা পেয়ে গেলাম, “তোমার হৃদয়ে কষ্ট নিও না। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখো এবং আমাতে বিশ্বাস রাখো। আমার পিতার বাড়িতে অনেক আবাসস্থল রয়েছে।” আমি বুঝলাম, যদি অনেক আবাসস্থল থেকেই থাকে তবে তাতে পৌছবার অনেক পথও থেকে থাকবে। JESUS, সেখানে CHRISTIAN-দের জন্য একটা স্থান তৈরি করে রাখছেন আর মুহাম্মদও সেখানে মুসলিমদের জন্য একটা স্থান তৈরি করে রাখছেন। ঈশ্বর, আমাদের মেয়ের জন্য কেবল একটা ভিন্ন অনুসরণীয় পথ বেছে দিয়েছেন এবং সে তা যথাসাধ্য ভালোভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। আর আমরা সকলেই ঠিক এই চেষ্টাটাই করে চলেছি। এই পরিবারের কেউ তার পথে বাধার সৃষ্টি করবে না, যাতে পথটা তার জন্য আরো কষ্টকর হয়ে যায়। আমার নিজেকে খাপ খাওয়ানোর পিছনের এটাই হচ্ছে মূল কাহিনী ।

আমি এখানে আরেকটা ছোট্ট গল্প যোগ করতে চাই যা আমার অন্তদৃষ্টিকেও সমর্থন করবে। একদিন আমার বড় নাতী খুবই জেদ ধরলো যে, আমি যেন আরবী ভাষা শিখে নেই। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম যে, সে কেন ভাবছে আমার শেখা উচিত, তখন তার উত্তর ছিল, “তুমি মারা গেলে ফেরেশতারা এসে তোমাকে আরবীতে কিছু প্রশ্ন করবে এবং তোমাকে ওগুলোর উত্তর দিতে জানতে হবে, নয়তো তুমি দোজখে যাবে।” তার বাচনভঙ্গী দেখেই আমি বুঝলাম যে, আমার উত্তরটা বেশ ভালো হতে হবে। আর যে উত্তরটা আমি দিলাম, তা আমার নিজেকে দেয়া উত্তরও হলো। আমি বললাম, আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ফেরেশতা রয়েছে, যারা ঠিক ঠিক জানে আমাদের হৃদয়ে কি রয়েছে। আমি, আমার ব্যক্তিগত যে ফেরেশতা রয়েছে, তার প্রশ্নের উত্তর দিতে জানবো, আর তেমনি, তুমিও তোমার ফেরেশতার উত্তর দিতে জানবে।” তাকে মনে হলো আশ্বস্ত এবং আমিও আশ্বস্ত হলাম।

আমার কাছে, আমাদের ধর্ম বিশ্বাসের পার্থক্যটা এমনই সহজ। আমাদের মেয়েকে মা হিসেবে দেখা এবং আমাদের অনেক মৌলিক মূল্যবোধ যে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছুবে, এটা জানাটাও বেশ সাহায্য করে (সম্পর্ক উন্নয়নে)। সে খুবই যত্নশীল এবং প্রাণোজ্জ্বল মেয়ে এবং একজন খুব ভালো মা, দুটো ছেলের, যাদের বয়স এখন ১০ ও ৩। আমাদের এখনো একটা স্নেহময় সম্পর্ক রয়েছে, যা আমরা সবাই ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করি। আমাদের একটা ভালো পারিবারিক ভিত্তি রয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে, আগামী বছরগুলোতে আসা যে কোনো মতপার্থক্যই এই ভিত্তি সহ্য করতে পারবে।

আমাদের সৌভাগ্য যে তারা পরিবারের CHRISTMAS-এর উৎসবে অংশ নেয়। তারা ধরে নেয়, এটা ‘ঈদের সময় তারা আমাদের সাথে যে সময়টা কাটাতো, তাই। যখন সত্যি সত্যি ঈদ হয়, তখন সে সময়টা তারা জামাইয়ের পরিবার ও স্বজনদের সাথে কাটায়। আমি জানিনা, এটা সব সময়ের জন্য কিনা, কিন্তু আপাততঃ আমরা এভাবেই উৎসব পর্ব সামাল দিই। তাদের জীবনে ইসলামিক উৎসবের যে মূল্য, তা স্বীকার করতে ও তাকে সম্মান করতে গিয়ে, আমরা সে সব উৎসবে অংশগ্রহণ করি না।।

প্রত্যেক পরিবারের গল্প স্বতন্ত্র। কিন্তু এই তিনটি গল্পতে প্রত্যেকটি পরিবারই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করতে চেয়েছে। যদিও উদ্বেগ বা চিন্তা এখনো বর্তমান, তারা চেষ্টা করছে কিভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। পরিবার হিসেবে আমরা সব সময়ই সম্পর্কযুক্ত, সেটা ইতিবাচকই হোক বা নেতিবাচক হোক, বাবা-মার প্রতারিত হবার, আহত হবার বা ভেঙ্গে পড়ার একটা অনুভূতি থাকতে পারে। বাবা-মার প্রতিক্রিয়া থেকে, মেয়েরও একই ধরণের অনুভূতি হতে পারে। সমঝোতার প্রক্রিয়ায় এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে স্পষ্ট ক্ষতকে কিভাবে সামলাতে হবে এবং কতটুকুতে কেউ আহত বোধ করবে বা করবে না। অনেক সময়, আমরা আমাদের সম্পর্কের বাঁধন সম্বন্ধে বেখেয়াল হয়ে যাই এবং ভুলে যাই আমরা অন্যের প্রতি কি ধরণের ব্যবহার করছি। আমরা নিজেদের প্রতিরক্ষা করতে খুবই দ্রুত পদক্ষেপ নেই, নিজের মাথাটা একটা শক্ত খোলসের ভিতরে লুকিয়ে নিতে আমরা কচ্ছপের মতই ক্ষিপ্র কখনো বা আমাদের চিন্তা শক্তিস্ত্র বাইরে যা কিছু তার প্রতি আমরা দারুণ রক্ষণশীল ও প্রতিরোধী।

৪০
সমঝোতার দিকে পদক্ষেপ
যে তিনটি গল্প বাবা-মারা আমাকে শুনিয়েছেন, তার মাঝে কিছু সদৃশ সূত্র রয়েছে, যা অবস্থাভেদে ভিন্নভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র। এই সমস্ত সাধারণ সূত্র, আমাদের নিজেদের জীবনে সমঝোতার প্রক্রিয়ায়, আমরা কিভাবে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কের উন্নয়ন ও তা বজায় রাখার মধ্য দিয়ে সামনে এগুবো- সে সম্পর্কে আমাদের সাহায্য করতে পারে।

প্রথমতঃ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য একটা স্বতঃস্ফূর্ত আকুতি দেখা যায়। যদিও গভীর ক্ষত ও বিচ্ছেদ হয়তোবা ঘটেছে। প্রথম গল্পে মেয়ের মা বলছেন, “আমরা তাকে ভালোবাসতাম এবং চাইতাম, অব্যাহতভাবে আমরা যেন তার জীবনের একটা অংশ হয়ে থাকি।” সম্পর্ক জোড়া লাগানোর ব্যাপারে আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সম্পর্ক ভালো করার একটা আকাক্ষার। এটা সাথে সাথেই ঘটেনি। আসলে প্রতিরোধের মনোবৃত্তিতে আটকে থাকাটাই হয়তো সহজ ছিল। যেটা ছিল আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। আমি এতো রাগান্বিত ও আহত হয়েছিলাম যে, আমি JODI ও REZA'র কাছ থেকে দূরে চলে যেতে চেয়েছিলামচেয়েছিলাম আমার জীবন থেকে তাদের মুছে ফেলতে, আর কখনো যেন আমার তাদের সাথে উঠাবসা না করতে হয় এবং ঐ সমস্যা নিয়েও যেন আর ভাবতে না হয়। আমার জন্য তাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করতে চাওয়ার দশাটা স্বল্প মেয়াদীই ছিল- একটা রাত বলা যায়। যে অভিজ্ঞতাটা আমাকে ক্ষত সারিয়ে তোলার একটা ইচ্ছার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিল, তার জন্য আমি কতই না কৃতজ্ঞ বোধ করি। তারপরও আহত বোধ হতো এবং দুঃখের অনুভূতি ভুলে স্বাভাবিক হতে মাসের পর মাস লেগে যায়- বহু বছর লেগে যায় স্বীকৃতির একটা স্বস্তিকর পর্যায়ে উঠে আসতে।

আরেকটা সূত্র যা সম্পর্ক পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে, তা হচ্ছে, মেয়ে কি গ্রহণ করছে- তা বুঝতে চাওয়ার একটা ইচ্ছা। মনের ভারাক্রান্ত অবস্থা থেকে মুক্তির গভীর আকাতায়, এক মা কিতাব খুঁজে দেখলেন এবং সেখানে সাহায্য পেলেন, যা গ্রহণ করার রাস্তা খোলা রেখেছিল। এটা হয়তো একটা জোর করে নেয়ার প্রচেষ্টা হতে পারে, প্রাথমিকভাবে হয়তো ইচ্ছাশক্তির একটা ব্যাপার থোলা মনের পরিচায়ক এই পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু যে সব বাবা-মায়ের দৃঢ় মূল্যবোধ রয়েছে, তারা মেয়ের অভিজ্ঞতার কথা শোনার, দেখার এবং অনুভব করার ঝুঁকি নিতে সমর্থ হবার কথা। মেয়ে হয়তো পরিবার থেকে এভো দূরে চলে গিয়েছে যে, এমন ধারণা পোষণ করা হয় যে, সে পরিবারের সীমা লংঘন করেছে এবং পরিবার সত্যিই আহত বোধ করে। প্রত্যেক সদস্যের (পরিবারের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যে সে কিভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে। মেয়ের করা কিছু জিনিস হয়তো পরিবারের গ্রহণ করার বা মেনে নেয়ার ক্ষমতার বাইরে। সে ক্ষেত্রে চুপচাপ গুটিয়ে নেয়াটাই হয়তো সর্বোত্তম।

বুঝতে চাওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে, কেউ পড়ার এবং জানার সামগ্রীর খোজ করতে পারেন, যা তারা পড়তে পারবেন এবং জানতে পারবেন, মেয়ে কি গ্রহণ করেছে। এখানে একটা সাবধান বাণী ঃ যা পড়া হবে, তাতে হয়তো পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গী বা সাংস্কৃতিক বৈষম্য থাকতে পারে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝেও ভিন্ন। ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে, যা সব সময় এক নাও হতে পারে। এই বইয়ের পেছনে যে BIBLIOGRAPHY রয়েছে, সেখান থেকে বই বেছে নেয়া যেতে পারে অথবা মুসলিম কন্যার পরামর্শ মতো বই বেছে নেয়া যেতে পারে। ব্যক্তিগত ধর্মতত্ত্ব ও বিশ্বাসের ব্যবস্থা খুঁটিয়ে দেখার এবং নিজের আধ্যাত্মিক জীবনকে শক্তিশালী করার এটাই মোক্ষম সময়। অনেক সময়ই পরীক্ষা না করেই আমরা নানা বিশ্বাসকে গ্রহণ করেছি, হয়তো আমাদের ধর্ম যাজকের কাছে শোনা, অথবা একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কথাটা বলা হয়েছিল, অথবা ‘দাদীমা ঐ কথাই বিশ্বাস করতেন'।

সমঝোতা করার ইচ্ছা যখন বর্তমান আর বুঝবার মতো ভোলা মনও যখন রয়েছে- একজনের তখন প্রয়োজন বাবা-মা'র দৃষ্টিকোণ থেকে যে সমস্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোকে চিহ্নিত করা এবং তার মুখোমুখি হওয়া, এবং অনুভূতিগুলোকেও চিহ্নিত করা- তা প্রত্যাখ্যাত হবার, হতাশার বা নিয়ন্ত্রণ হারানোর- যাই হোক না কেন। সম্পর্ক পুনর্গঠনকল্পে যাত্রা শুরু করার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করার আগ পর্যন্ত, পরিবারের সদস্যবর্গের উচিত নিজেদের সংযত রাখা- প্রত্যাখ্যান, ক্রোধ এবং বিষন্নতার পর্যায়গুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেয়া। কোন কোন পরিবার/সদস্যের হয়তো ক্রোধ বা দুঃখের অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে বিশেষজ্ঞের (মনোবিজ্ঞানী) পরামর্শ নিতে হতে পারে।

এসব অবস্থায়, একটা প্রতিক্রিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই আসে- সেটা হচ্ছে ক্রোধ, কিন্তু ক্রোধ সঠিকভাবে প্রকাশ করা উচিত, যাতে ক্ষত সেরে ওঠার এবং সমঝোতার পথ খোলা থাকে। এমনকি এই অবস্থায়ও ঈশ্বরের প্রশান্তিময় ভালোবাসা এবং ক্ষমা বর্তমান থাকে এবং পরিবারের সদস্যরা মুক্তি পেতে পারে ও ব্যথা ভুলে সমস্যাটার সমাধানকল্পে একটা অবস্থান নিতে পারে। তা না হলে বুকের ওপর একটা বোঝা চেপে বসার এবং অসুস্থতার একটা অনুভব রয়ে যাবে।

আরেকটা বিষয় উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে- সেটা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করতে আমাদের অপারগতা- তরুণ সন্তানকে হারাতে না চাওয়াঅনেক বাবা-মার জন্যই সন্তানের উপর দাবি ত্যাগ করা খুবই শক্ত ব্যাপার- তা তাদের মেয়ে ইসলাম গ্রহণ করুক বা না করুক। একজন বাবা বা মা হয়তো এমনিতেই সন্তান বড় হয়ে ঘর থেকে চলে যাওয়াতে (যা পশ্চিমা দেশে স্বাভাবিকভাবেই আসে) দুঃশ্চিন্তার, হারানোর অনুভূতির এবং দুঃখের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন। এর পর যখন মেয়ে এমন একটা জীবন বেছে নেয়, যার সম্বন্ধে বাবা-মা একেবারেই অজ্ঞ, তখন ঘটনাটা হয়তো তাদের অবস্থাকে আরো অবনতির দিকে নিয়ে যায়- ভয়, অনিশ্চয়তা এবং অকৃতকার্যতার অনুভূতি এসে যোগ হয়। এ ব্যাপারটা বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ যে, বাবা-মার অভিজ্ঞতার কিছু অনুভূতির হয়তো, মেয়ের ধর্মান্তরিত হবার সাথে সরাসরি সম্পর্ক নেই।

ভেবে দেখার আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মেয়ে হয়তো সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টার জন্যে প্রস্তুত অবস্থায় নেই, আর এভাবে আমাদের আরো বেশী প্রত্যাখ্যাত বোধ করারও একটা সম্ভাবনা রয়েছে। সে হয়তো শক্তি সঞ্চয় করতে চাচ্ছে অথবা সে যে সমস্ত নতুন ভূমিকা বেছে নিয়েছে সে সবে অভ্যস্ত হতে চাইছে, বাবা-মার ক্ষমতার মুখোমুখি হবার আগে। পরিবর্তনের অনেক ক্ষেত্রই হয়তো তাকে একসাথে নানা ঝামেলায় ফেলছে- পড়াশুনা বা কাজ, নতুন ধর্ম, নতুন বিয়ে, নতুন আচার-আচরণের প্রত্যাশা, প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় প্রবেশ ইত্যাদি। জরিপের বেশীরভাগ কন্যাদের ক্ষেত্রেই উপরোক্ত বিষয়সমূহের অনেক ক'টাই বর্তমান ছিল।

চতুর্থ একটা উপাদান হচ্ছে আশা। এই অবস্থাগুলো সহজেই অবসান হয়ে যায় না। সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং বজায় রাখতে অনেক ক'টা পদক্ষেপ সামনের দিকে যেমন নেয়া হবে, তেমনি কিছু হয়তো পেছনের দিকেও নেয়া হবে। এমন সময় হয়তো আসবে, যখন মেয়েকে গুটিয়ে নিতে হবে এবং সে সম্পর্ক উন্নয়নকল্পে কিছু। করে যেতে তৈরি থাকবে না। একইভাবে এমনও সময় আসবে, যখন আমাদেরও ব্যক্তিগত দুঃখ কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং শক্ত হবার জন্য সময় নেয়া উচিত যোগাযোগের রাস্তাগুলো অব্যাহত রেখে। যখন আমাদের একান্তে থাকা উচিত, তখনও, আশার একটা উপলব্ধিই আমাদের মেয়ের ব্যাপারে ধৈর্য্য ধারণ করতে দেয়।

আমাদের শুভাকাঙক্ষী বন্ধুরা এবং আত্মীয়রা হয়তো আমাদের সে আশাকে ক্ষীণ করে তুলবে, যখন তারা নিম্নোক্ত ধরনের মতামত দিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেঃ।

“আহা, তোমার বেচারী মেয়েটা সে নরকে যাবে। আমরা তার জন্য প্রার্থনা করবো।”

“ঐ সব জায়গায়, সব মেয়েদের সাথেই এমন বিশ্রী আচরণ করা হয়।”

“তার স্বামী, যদি তাকে ত্যাগ করে, বাচ্চাগুলোকে নিয়ে দেশে চলে যায়, তাহলে সে কি করবে?

“এর চেয়ে খারাপ জীবনে আর কিছু ঘটতে পারে না।”

এই ধরণের প্রতিক্রিয়া যে কাউকে কষ্ট দিতে ব্যক্ত করা হয় তা নয়, বরং সহানুভূতি জানানোর জন্য এবং আমরা যা ঠিক মনে করছি তার প্রতি সমর্থন জানাতেই তা ব্যক্ত করা হয়। অপরদিকে কিছু মানুষ আছে, যারা শ্রবণকারী হতে পারে, যারা প্রশ্ন করতে পারে এবং সব শুনে নিয়ে আমাদের সমব্যথী হতে পারে। এদের সাথে কথা বলে, আমরা কি অনুভব করছি তা অনুধাবন করা সহজ হয় এবং আমাদের মাঝের সংশয়গুলোকে দূর করাও সহজ হয়।

আমরা যদি এই সমস্ত ধারণার যোগসূত্র বা সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে নিজেদের উন্মক্ত করার মৌলিক পদক্ষেপ সম্বন্ধে অবগত হই- আমরা যদি কাউকে বুঝতে ও মেনে নিতে চেষ্টা করতে রাজি থাকি, আমাদের অনুভূতিগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোর মুখোমুখি হতে তৈরি থাকি এবং যদি আশাবাদী থাকি, তবে আমরা সমঝোতার প্রক্রিয়ার ইতিবাচক অংশে রয়েছি বলে বলা যায়। আমরা তাহলে আমাদের ক্রোধ, ভয় ও দুঃখকে সামলাতে পারবোসময় বয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা উপায়ও খুঁজে পাবো। প্রার্থনা, সহজ হওয়া, শান্ত থাকা এবং অনুধাবন ইত্যাদি কৌশল ব্যবহার করে, দুঃখ এবং হাহাকারের মাঝে ডুবে যাওয়া থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি। আমরা যদি মেয়ের পথে নাও যেতে চাই, তবু আমরা নিজেদের পথে থেকেই তার সহযাত্রী হতে পারবো।

৪১
পথ ধরে বিয়েতে ইসলামে যখন দু’জন এক হয়ে যায়।
JODI ও REZA বিয়ে করতে চায়, একথা বলার মুহুর্ত থেকেই তারা এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছিল যে, তারা চায় তাদের দেশ ইরানে বসবাস করতে। এটা ঐ সময়টা ছিল, যখন আমেরিকান পণবন্দীদের ইরানে আটক করে রাখা হয়েছিল এবং ইরান ও আমেরিকার মাঝের সম্পর্ক ভালো ছিল না। ওটা আমার কাছে ভয়ঙ্কর ছিল। সে যে মুসলিম ছিল (REZA) এটা আমাদের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কারণ আমরা আশা করতাম যে, সে সম্ভবতঃ খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করবে। এছাড়া আমরা এই তরুণকে সত্যি পছন্দ করতাম এবং সম্মান করতাম।

সেই ভয়ংকর দিন শেষ পর্যন্ত এলো। REZA, JODI-কে ইরান নিয়ে যাচ্ছিল বসবাসের জন্য, যেমনটি তারা বাগদানের সময়টায় বলেছিল। তাদের বিবাহিত জীবনের শুরুতে তারা একবার ইরান ঘুরে এসেছে, কিন্তু এখন যখন REZA প্রকৌশলে তার স্নাতক ডিগ্রী এবং শিল্প কৌশলে তার মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেছে এবং JODI তার সেবা তত্ত্বে ডিগ্রী শেষ করেছে। তারা একেবারে যাবার জন্য তৈরি। ইরাক এবং ইরানের মাঝে যুদ্ধাবস্থা তখনও বিরাজমান। ব্যাপারটা মোটেই নিরাপদ মনে হলো না। এতো দূরে চলে যাবে। আমি আর কোনদিনও তাকে (JODI) আবার দেখতে পাবো? FIDDLER ON THE ROOF-এর সেই দৃশ্যটা আবার আমার মনে ভেসে উঠলো- TEvYE তার ২য় কন্যাকে নিয়ে ট্রেন স্টেশনে অপেক্ষা করছে তাকে বিদায় দিতে, মেয়ে তার স্বামীর কাছে থাকতে SIBERIA'য় যাচ্ছে। মেয়েটার গানের কথাগুলো আমার কানে ভেসে উঠলো, "FAR FROM THE HOME I LOVE."

JODI ও রেজা তাদের যা কিছু ছিল তার সবই বিক্রি করে দিলো, কেবল তাদের সাথে নিয়ে যাওয়া চারটা বিরাটাকার স্যুটকেসে যা ধরলো তা ছাড়াইরানে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে যা কাজে লাগবে। শেষ রাতটা তারা আমাদের কাছে ছিল। তারা এতো উত্তেজিত এবং আনন্দিত ছিল! পরদিন সকালে, বিমানবন্দরে তাদের বিদায় দেয়াটা আমার জীবনে আমার দ্বারা সম্পাদিত সবচেয়ে কঠিন কাজটি ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, JODI আমাদের জীবন থেকে চিরতরে বাইরে চলে যাচ্ছে। আমি বিমানবন্দরের মেঝেতে শুয়ে পড়ে, হাত-পা ছুঁড়ে, চিল্কার করে কাঁদতে চাইছিলাম। কিন্তু আমি কোনোমতে নিজেকে ধরে রাখলাম, যতক্ষণ না আমরা গাড়িতে পৌছালাম- যেখানে আমি নিজেকে নিরাপদে ছড়িয়ে দিতে পারলাম। সে চলেই গেল। আমি আর কোনোদিনও তাকে দেখতে পাবো। যেন সে মরেই গিয়েছে। এই বিয়েটা তাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলো- তাকে নিয়ে গেল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এক অচেনা দেশে।

জীবন তবু বয়ে যেতে লাগলো এবং আমি একটা কর্ম সফরে CANADA গিয়েছিলাম। JOE আমাকে ফোনে জানালো, JODI ফোন করেছিল। তেহরানের উপরে একটা পাহাড়ে এক বাঁধ ভেঙে গেলে, তারা যে এলাকায় REZA'র বাবা মায়ের সাথে থাকে, সেখানে পানি নেমে আসে। পানির তোড়ে এবং ভূমি ধ্বসে প্রায় হাজারখানেক লোক মারা গেছে, আর তাদের মাঝে REZA'র বাবাও একজন। তিনি তখন বাড়ির মাটির নীচের অংশে ছিলেন। বাড়ির বেশীরভাগ জিনিসই নষ্ট হয়ে গেছে, কারণ বাড়িটি কয়েক ফুট পানি ও কাদার নীচে চলে যায়। তাদের পরিবার REZA'র বাবার মৃতদেহ উদ্ধার করে, বাড়ি পরিষ্কার করে এবং জিনিসপত্র যতদূর সম্ভব উদ্ধার করে।

আমি গভীর বিষন্নতা বোধ করলাম। হ্যাঁ REZA'র বাবার ব্যাপারে আমি দুঃখিত ছিলাম, কিন্তু তার চেয়ে গভীর আরেকটা দুঃখ আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। JODI তার সাথে করে ইরানে যা কিছু নিয়ে গিয়েছিল, তার সবই যদি নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তার কিভাবে কখনো আর মনে পড়বে যে আমরা কারা ছিলাম অথবা তার বিগত জীবনের কথা? তাকে মনে করিয়ে দেবার মতো কিছুই আর তার কাছে রইলো না। তার সব ছবিই চলে গেছে, তার সব স্মৃতি চিহ্ন, কাগজপত্র সবই গেছে। আমি নিশ্চিত হলাম, সময়ের সাথে সাথে সে ভুলে যাবে আমরা কারা ছিলাম এবং সে নিজেই বা একদিন কে ছিল। এখন তার পরিবার হবে REZA'র পরিবার এবং নিঃসন্দেহে একদিন আমরা যোগাযোগ হারাবো ।

তিনমাস পরে আমরা আরেকটা ফোন পেলাম । JODI ও REZA যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসছিল। যুদ্ধের ফলে ইরানের অর্থনীতি বেশ খারাপ হয়ে পড়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছে যে, ইরানে থাকার সংকল্প গ্রহণের আগে তাদের আরও কিছু সময় ব্যয় করতে হবে, নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য। আমাদের যেন উৎসব লেগে গেলো। তারা ফিরে আসছে। আমরা আমাদের JODI ও REZA-কে আবার ফিরে পাবো।

এখন বহু বছর ধরে আমরা একই মহানগরীর আওতাভুক্ত হয়ে বসবাস করছি। REZA'র প্রতি শুরু থেকে আমাদের যে সম্মান ও ভালোবাসা ছিল, তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পূর্ণতা লাভ করেছে। স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি REZA যে ভূমিকা পালন করতে চায়, তা অনেকটা রক্ষণশীল খৃস্টানদের মতে, যারা পরিবারের কর্তা হবার দায়িত্ব বোধ করেন। সে পরিবারের ঐ নেতৃত্বটা গুরুত্বের সাথে বহন করে এবং একই সময়ে JODI-কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায়, অংশগ্রহণকারী অংশীদার হিসেবে ভূমিকা পালন করতে উৎসাহ দেয়।

আমাদের জামাই, আমাদের কাছে যে হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছে, সে নিরিখে আমরা যদি মুসলিম স্বামীদের বর্ণনা করতে যাই, তাহলে আমরা বলবো- তারা দ্র, দৃঢ়, দয়ালু, বুদ্ধিমান, মার্জিত, সুখী, নির্ভরযোগ্য এবং যত্নশীল। আমরা তার ধর্ম পালনে জ্ঞান এবং সংকল্প দেখে অবাক হয়ে যাই- তার বাসনা যে, তার বাচ্চারা অনুশীলনরত মুসলিম হয়ে বড় হবে এবং টিভি ও ছায়াছবির বাজে ব্যাপারসমূহ থেকে সংরক্ষিত থাকবে। তার দায়িত্বশীলতার অনুভূতি হচ্ছে, নিজের পরিবারের যে যত্ন নেয়া হচ্ছে, সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া এবং নির্ভরযোগ্যতার সাথে অর্থ সম্পদের ব্যবহার করা। তার আদি পরিবারের জন্যও তার গভীর টান রয়েছে এবং সংযুক্ততার অনুভূতি রয়েছে নিজের দেশের সাথে।

ঠিক যেভাবে একটা খৃষ্টান পরিবারে একজন শক্তিশালী আদর্শ পুরুষের মর্যাদাকে মূল্যায়ন করা হয়, একইভাবে এই দৃঢ়তাকে মুসলিম পরিবারেও কাক্ষিত মনে করা হয়। স্বামীকে পরিবারের সুদৃঢ় শক্তি হতে উৎসাহ দেয়া হয়, যাতে সে পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে পারে এবং সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ও ধর্মীয় আচারের ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে পারে।

জরিপের কিছু মেয়ে এমন রয়েছে, যারা মুসলিম হবার ক্ষণে অবিবাহিতা ছিল এবং তারা বলেছে যে, একজন মুসলিমকেই বিয়ে করাটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আবার এমনও হয়ে থাকতে পারে যে, একজন অমুসলিম মেয়ের ইসলামের সাথে পরিচয়ই ঘটে যখন সে একজন মুসলিমকে বিয়ে করে। আরও কিছু ক্ষেত্রে ইসলামের প্রতি অতীত আগ্রহ হয়তো একজন অ-মুসলিম মেয়ের জন্য, একজন মুসলিম পুরুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠার পথ খুলে দিয়েছে।

আমার জরিপের মেয়েদের স্বামীরা আদতে বহু ভিন্ন দেশ থেকে আগতঃ ইরান, ইরাক, সিরিয়া, মিসর, জর্ডান, প্যালেস্টাইন, কুয়েত, ভারত, তুরস্ক, লেবানন, পাকিস্তান, কেনিয়া, আফগানিস্তান, ওমান, তিউনিসিয়া, মরক্কো এবং খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সব পুরুষদের অনেকেই এখন যুক্তরাষ্ট্রের বা কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করেছে এবং তারা উচ্চ শিক্ষিত। কারো কারো পরিবারকে তাদের আদি বাসভূমে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা রয়েছে অথবা তারা ইতিমধ্যেই সেখানে আছে, এমনও কেউ কেউ আছে। অন্যরা যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় থাকাটাই মনস্থ করেছে- উপাসনা ও ছেলেমেয়ে সঠিকভাবে বড় করার মতো উপযুক্ত বড় মুসলিম জনসংখ্যা যেখানে রয়েছে, এমন সব শহরে বসবাস করার আশা নিয়ে।

প্রশ্নপত্রের উত্তর দেবার সময় অবিবাহিতা ছিল, এমন একটি মেয়ে আমাকে লিখে জানিয়েছে যে, সে চমৎকার একজন মিসরীয়কে বিয়ে করেছে, যে তার এবং তার পরিবারের প্রতি যত্ন ও সম্মানের হাত প্রসারিত করেছে।

আপনি হয়তো ভাবছেন, আমি আপনাকে এসব বলছি কেন। আমি কেবল আপনাকে বোঝাতে চাই যে, ইসলামে বিবাহের প্রতিষ্ঠানই আমাকে পরিপূর্ণভাবে আমার ধর্মের আচার-আচরণ পালন করার সুযোেগ করে দিয়েছে। একজন আমেরিকান ধর্মান্তরিত হিসেবে আমি প্রথমে একজন ভালো মুসলিম হওয়াটাকেই বেশ কঠিন মনে করতাম- আমার জীবনে যে সমস্ত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন ছিল, তাও কঠিন ছিল, যদিও আমি পর্যায়ক্রমে তা সম্পন্ন করেছি। এখন আমার স্বামী সহকারে আমি আরও বেশী পরিপূর্ণ বোধ করি। আমার হৃদয় আমাকে বলে যে, আমি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি। আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবতী মনে করি, কারণ আমাকে ইসলাম এবং আমার পরিবারের মাঝ থেকে একটিকে বেছে নিতে হয়নি (কারণ সেক্ষেত্রে ইসলামের জয় হতো), কিন্তু আমি এ জন্যও খুব ভাগ্যবতী যে আল্লাহ আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন। আমি বলছি না যে, আমার কোন সমস্যাই নেই, কিন্তু আমাকে যা করতে হয় তা হচ্ছে আমার নিজের হৃদয়ে চেয়ে দেখতে হয় এবং কোরআন নিয়ে বসতে হয়, আর আমি অনুভব করি যে, সব কিছুই ভালো হয়ে যাচ্ছে (অসুবিধা দূর হয়ে যায়)।

৪২
একজন মুসলিম স্বামী পাওয়া
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যুগলসমূহের সাক্ষাৎ হয়েছে, আমেরিকায় যেমন স্বাভাবিকভাবে হয়- কলেজে, কর্মক্ষেত্রে, সামাজিক কর্মকান্ডে, অথবা বন্ধুদের মাধ্যমে। নীচে ঐ ধরনের সাক্ষাতের কিছু কাহিনীঃ

BINGo (হাউজি) খেলতে গিয়ে আমার সাথে আমার স্বামীর দেখা হয়। আমি আমার এক পারিবারিক বন্ধুর সাথে বসে ছিলাম, আর ঘটনাক্রমে সে (স্বামী) তাকে জানতো। তার হাসি সুন্দর ছিল, আর তার সাথে সহজে কথাও বলা যেত। আমি তখন সবে আমার চেয়ে নয় বছরের বড়, অথচ মানসিক পূর্ণতায় আমার চেয়ে বহু বছরের ছোট, এক অত্যাচারী পুরুষের সাথে আমার ধ্বংসাত্মক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছি। এই পরবর্তী লোকের সাথে আমার যখন সাক্ষাত হয়, তখন আমার মানসিক অবস্থা এমনই বিধ্বস্ত ছিল যে, আমি যে আবার বিয়ের কথা চিন্তা করেছি, সেটাই আশ্চর্য হবার বিষয়। সে যৌনতার বিষয় উঠায়নি বা ইঙ্গিত দেয়নি বা আমার শরীরের অংশ বিশেষ স্পর্শ করেনি বা জনসমক্ষে আমাকে তার বুড়ো দ্রমহিলা' বলেও সম্বোধন করেনি। এই ধরণের ব্যবহার পাওয়াটা উত্যুকর ছিল। একজন সঙ্গী ছাড়া সে কখনো আমাকে একা কোথাও নিয়ে যেত না, যা সাক্ষ্য দিত যে সে একজন দ্রলোক। আমি সম্মানিতবোধ করতাম এবং ব্যাপারটা পছন্দ করতাম।

আমার স্বামীর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ কলেজে। সে খুবই দ্র ছিল (যা আমি প্রথমেই খেয়াল করি) এবং খুবই সুদর্শন। আমাদের যখন দেখা হয়, আমি সত্যিই কারো সন্ধানে ছিলাম না, কিন্তু তার ভিতরে প্রথমেই তার নিজের পরিবারের প্রতি, তার বাবা-মায়ের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বস্ততা ইত্যাদি চোখে পড়ে- যা সব সময়ই আমার তালিকার শীর্ষে ছিল। সে এতো ধৈৰ্য্য সহকারে সব প্রশ্নের উত্তর দিতো।

আমাদের প্রতিবেশের কলেজে আমার স্বামীর সাথে আমার দেখা। আমি সে কলেজে যোগ দিচ্ছিলাম। সে ছিল গ্রীলের বাবুর্চি। আমাদের ভিতর কিছু একটা ঘটে গেল। সে স্নেহময় ছিল এবং তার কথা বলতে ভালো লাগতো। তার নিজের সম্বন্ধে তার একটা ধর্মীয় অনুভূতি ছিল এবং সে নিজের ধারণায় পরিপক্ক ছিল। অবশ্যই, আমার কাছে তাকে সুন্দরও মনে হয়েছিল। তার প্রস্তাবিত পরিবার ভিত্তিক সমাজের জীবন ধারাটাও আমার পছন্দ হয়েছিল। আমি বিশেষ করে মনে করতাম যে আমরা বন্ধু এবং আমরা ধর্মসহ অনেক ব্যাপারেই সহজেই একমত হতাম। আমার নিজের ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে সে ছিল একটা প্রভাবক স্বরূপ।

আমি তাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইংরেজী শিক্ষা দিতাম, সে আমাকে ইসলাম শিক্ষায় সাহায্য করতো, কিন্তু যখন আমি ধর্মান্তরিত হলাম, আমি আর তার সাথে দেখা করতে পারতাম না। একবার মুসলিম হয়ে যাবার পর তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করার আমার সিদ্ধান্তকে সে পরিপূর্ণভাবে সম্মান দেখালো। পরবর্তীতে মসজিদে অন্যরা আমার জন্য একটা নিখুঁত সম্বন্ধ' খুঁজে পেল আর কাকতালীয়ভাবে তা হয়ে দাঁড়ালো সেই একই লোক যাকে আমি ইংরেজী পড়িয়েছি এবং যে আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছে। আমি দেখতে পেলাম, সে বিশ্বস্ত, মার্জিত, দানশীল এবং ধৈৰ্যশীল। আমার জন্য যদি কখনো কোন আত্মার সঙ্গী থেকে থাকতো, তবে সে সেই সঙ্গী। আমার ভিতরে নিঃসঙ্গতাজনিত এবং নিঃশর্ত ভালোবাসার যে অভাব ছিল, তা সে পূর্ণ করেছে, যা আগে কখনো হয়নি। আমার পরিবার প্রথম যেদিন তাকে দেখেছে, সেদিন থেকেই তাকে সম্পূর্ণভাবে মেনে নিয়েছে। তারা তাকে অত্যন্ত ভালোবাসে এবং সে তাদের সবার একজন বন্ধু।

আমার স্বামীর সাথে আমার দেখা হয় যখন আমরা একই রেস্তোরায় কাজ করতাম। আমি ছিলাম পরিবেশনকারিনী আর সে ছিল ডিশ পরিষ্কারক। সে এদেশে নতুন ছিল এবং ইংরেজী বলতে পারতো না। তাকে মনে হতো সৎ, সরল, পরিশ্রমী এবং দানশীল।

কলেজে থাকতে আমি আমার স্বামীর সাক্ষাৎ পাই। আমরা একই মেক্সিকান খাবারের দোকানে কাজ করতাম। আমি তার প্রতি আকর্ষণ বোধ করি কারণ সে ছিল খুবই পরিশ্রমী, চটপটে এবং মার্জিত। আমার এমন একজন মানুষের প্রয়োজন ছিল যে ভাববে আমি চমক্কার। সে আমার সাথে একজন রাণীর মতো ব্যবহার করতো (যদিও আমরা তখন খুবই গরীব ছিলাম), সম্মান ও মর্যাদা সহকারে।

কিছু কিছু মেয়েরা ইসলাম গ্রহণ করার পরও অবিবাহিতা ছিল এবং ভিন্নভাবে তাদের স্বামীদের সাক্ষাৎ পায়। স্বামী বা স্ত্রীর সন্ধান পাবার (পাত্র বা পাত্রী) একটা সাধারণ উপায় ছিল ইসলামিক ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন অথবা একটা মুসলিম সমাজের বিবাহ সংক্রান্ত বুথে বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে দেয়া। এটা খুব বিরল ব্যাপার নয় যে, যখন কেউ নিজেকে বিয়ের জন্য তৈরি মনে করে, তখন সে অন্য মুসলিম বন্ধুদের সে কথা জানায়, যেন তারা তার জন্য মানানসই সাথীর খোজ করতে পারে। নীচের উদ্ধৃতিগুলো মুসলিম-মুসলিম সম্পর্ক এবং বিয়ের ব্যাপারে ভালো একটা ধারণা প্রদান করবে ?

আমার স্বামীর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় মসজিদের ইমামের মাধ্যমে। আমি তাকে গ্রহণ করেছি, কারণ সে ধার্মিক ছিল। আর অন্য কিছুতেই অবশ্য সত্যিই আসতো যেতো না। আমার ধর্মান্তরিত হওয়াতে তার কোন ভূমিকা নেই, কারণ আমি ইতিমধ্যেই একজন মুসলিম ছিলাম। আমার বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল সম্পূর্ণ ইসলামিক। আমি তার সাথে দু'সপ্তাহ কথা বলেছি এবং তার পরে ১৯৯১ সালে রমজানের ২ দিন পূর্বে তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই।

আমার অনুরোধে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে আমার দ্বীন (আমার অবশ্যকরণীয়) শিক্ষার ব্যাপারে আমি সাহায্য (ধর্মীয়) ও সমর্থন পাই। আমি আমার ওয়ালিকে (যিনি বিবাহের ব্যবস্থা করেন) বলি যে মানুষটা যেন একজন ভালো আমলের মুসলিম হয়, যা ছিল তার মোগ্যতার একমাত্র দিক। আমি এমন একজন স্বামী চাইতাম, যে আমাকে ইসলামিক শিক্ষার গভীরে নিয়ে যাবে এবং সব সময় আমাকে আল্লাহ (SWT)র কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। আমি আগে থেকে মুসলিম ছিলাম।

আমার পরিবার তাকে বিয়ের আগে জানতো না। অনুষ্ঠানের দুইদিন আগে, তারা তাকে দেখে এবং বিয়ের আগের দিন আমার মা-বাবার কাছে সে আমাকে বিয়ে করার অনুমতি চায়। তারা তাকে পছন্দ করেনি। এখন তারা কোনমতে তাকে বরদাস্ত করে কেবল।

আমার হবু স্বামী আমাকে এক শুক্রবার রাতে দেখতে আসে আর পরবর্তী রবিবার দুপুরে আমাদের বিয়ে হয়। অনুষ্ঠানে আমরা বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারকে আমন্ত্রণ জানাই। আমাদের বিয়ে ছিল ইসলামিক বিয়ে। আমি একটা ইসলামিক পোশাক পরি, সাদা গাউন নয়। আমরা পৃথক কামরায় ছিলাম। ইমাম এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কবুল (ঐ ব্যক্তিকে) করি কিনা এবং আমার মোহরের জন্য আমি কি চাই। আমি শুনলাম, তিনি বিয়ের গুরুত্ব নিয়ে একটা বক্তৃতা দিচ্ছেন। এই পর্যায়ে আমার মা বেরিয়ে গিয়েছিলেন এই বলে যে, বিয়েটা কি বিরাট একটা প্রহসন ছিল। অবশ্যই আমার কান্না পেয়েছিল এবং আমি আহত বোধ করি, তবু আমরা বিয়ের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাই, অবশ্য একটু দ্রুততর গতিতে।

একটা ইসলামিক ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমার স্বামীর সাথে আমার যোগাযোেগ ঘটে। তার এক বন্ধু একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। সাড়া দিতে আমার একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল (বিজ্ঞাপনদাতার জন্য), কিন্তু ঐ বন্ধু (বিজ্ঞাপনদাতা) আবার চিঠিটা আরেকজনকে দিলেন, যে এখন আমার স্বামী কারণ আমার স্বামীও তখন বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলেন। ৬ সপ্তাহ যাবত আমরা সপ্তাহে ফোনে ১০/১২ ঘন্টা কথা বলতাম তারপর সে বিমানে করে KANSAS-এ আসে। দেখা হবার আগেই আমরা বিয়ে সম্বন্ধে ৯০% নিশ্চিত ছিলাম, কিন্তু তবু দেখা হবার দরকার ছিল, পুরোপুরি নিশ্চিত হতে। ঐ দিনই আমাদের বাগদান সম্পন্ন হয় আর দুদিন পরেই আমরা ইসলামিক নিয়মে বিয়ে (নিকাহ) করি।

আমি এমন কারো খোজে ছিলাম, যে একজন দৃঢ় মুসলিম হবে- তত্ত্বে এবং কর্মে দুটোতেই- যে ইসলামিক নিয়মে জীবন যাপন করতো, তার চারপাশে অন্যরা কিভাবে জীবন ধারণ করছে, তার তোয়াক্কা না করেই। আমি এমন কাউকে চাইতাম, যে তার স্ত্রীর ভরণপোষণ ভালোভাবে বহন করতে সক্ষম, কারণ একটা বিয়েতে পুরুষকেই ভরণপোষণের ভার নিতে হয়, নারীর অর্থ থাকলেও। আমি এমন অনেক গল্প শুনেছিলাম যে অনেক পুরুষ আছে যারা কাজ করতো না, অথবা চাইতো তাদের স্ত্রীরা যাতে টাকা পয়সা যোগান দেয়। তাই আমি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম যে, আমার স্বামী আমাদের জন্য কঠিন পরিশ্রম করবে। তাকে যত বেশী জানতে থাকলাম, ততই তাকে আমার চাহিদা অনুযায়ী যোগ্য মনে হতে লাগলো। একজন দৃঢ় মুসলিম চাওয়ার ব্যাপারে আমার চিঠিতে আমি সোজাসাপটা উল্লেখ করেছিলাম, এছাড়া এও উল্লেখ করেছিলাম যে, একটা বাচ্চা নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে (যদি সে এমন কেউ হয়ে থাকে, যার স্বল্প বয়সী কুমারী মেয়ের বাসনা রয়েছে। এবং আমার একখানা ছবিও এঁটে দিয়েছিলাম। আমি যদিও তৎক্ষণাৎ তার ছবি চাইনি, সে আমাকে একখানা পাঠিয়েছিল। চেহারা গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার নয়। ফোনে সে এবং আমি একে অপরকে খুব ভালোভাবেই জানলাম, আমাদের জীবনের অনেক কিছু নিয়েই কথা বলতে বলতে ইসলাম, সাময়িক প্রসঙ্গ (মুসলিম সংক্রান্ত কিছু প্রসঙ্গসহ) ইত্যাদি। আমি নিশ্চিত করেছিলাম যে, তার পরিবার একজন আমেরিকান স্ত্রীকে মেনে নেবে (সে একটা মুসলিম দেশের ছিল), এমনকি যার আগের বিয়ে থেকে একটা বাচ্চাও রয়েছে। কিন্তু সে আমাকে আশ্বাস দেয় যে, তাতে তাদের কোন আপত্তি থাকবে না এবং তারা সবাই নিজেদের সাথী নিজেরাই পছন্দ করেছে এবং কারো কারো বিদেশী জীবন সঙ্গীও রয়েছে।

ফোনের আলাপচারিতার মাঝে আমরা খুব কাছাকাছি চলে আসি এবং আমি সব সময় তার ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম। আমার যদি একটা খারাপ দিন যেতে, আমি অপেক্ষা করতাম কখন তাকে সে সম্বন্ধে বলতে পারবো এবং আমি হালকা বোধ করবো। এটা পুরনো দিনের প্রাক-বিবাহ চেনা জানার মতো একটা ব্যাপার ছিল। একে অপরকে জানার প্রচেষ্টার মাঝখানে আমাদের আবেগ এসে দাঁড়ায়নি। আমাদের যখন সাক্ষাৎ হয়েছে, আমরা জেনেছি আমরা একে অন্যের জন্য সঠিক সঙ্গী- আর যে বন্ধুত্ব ও মমতা আমরা একে অপরের জন্য বোধ করেছি, তা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। ইসলাম বিয়ের পূর্বে একান্তে দেখা সাক্ষাৎ বা যৌন আচরণ অনুমোদন করে না। এভাবে ইসলাম সম্মতভাবে কাউকে জানা এবং একে অপরের সাথে মানানসই কিনা যাচাই করাটা একটা দারুণ পন্থা। ওটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ- এ ব্যাপারে জানা যে অন্য কেউ আপনার নিজের পর্যায়ের বা মানের কিনা- ইসলামিক দিক থেকে এবং ব্যক্তিগত দিক থেকে। তারা যদি তা হয়, তবে আপনি তাদের ভালোবাসবেন এবং তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।

আমি চাইতাম এমন কেউ যে দ্র এবং স্নেহশীল হবে, আর আমি তেমন কাউকেই পেয়েছি। সে আমার প্রতি হুংকার ছাড়ে না বা আমাকে আঘাতও করে - যেমনটি গতানুগতিক বর্ণনার (প্রচারণায়) আরব পুরুষ করে থাকে। আমাকে স্বীকার করতে হবে আমার ধারণা ছিল যে, সব আরব পুরুষই নিয়ন্ত্রণকারী এবং মারমুখী হয়, কিন্তু তা ঠিক নয়। সে আমাকে বলে যে, সে আমাকে ভালোবাসে এবং এটাও নিশ্চিত করে যে, আমি যেন বুঝতে পারি যে সে আমাকে ভালোবাসে। সে খুবই যত্নশীল এবং মনোযোগী।

৪৩
একটা মুসলিম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া
প্রাক-বিবাহ পরিচিতি পর্বে, যুগলটি যদি পারিবারিক আপত্তি কাটিয়ে উঠতে পারে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার প্রস্তুতি নেয়। অন্য দেশ থেকে আগত একজন মুসলিমকে মেয়ের বিয়ে করাটা, বাবা-মায়ের জন্য প্রায়ই কষ্টের ব্যাপার। তারা পুরুষটির অভিপ্রায় সম্বন্ধে সন্দিহান হতে পারে এবং মেয়ের ব্যাপার তাদের ভীতি প্রকাশ করতে পারে। মেয়ের হবু স্বামী ও পরিবারের প্রথম সাক্ষাৎ অস্বস্তিকর হতে পারে। যাহোক, আলোচ্য মেয়েদের অনেকের বেলায়ই, পরিবারও সময়ের সাথে তাদের স্বামীদের গ্রহণ করেছে এবং তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

আমার বাবা-মা আমার স্বামী সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন না, কারণ যে রাতে আমার বিয়ে হয়, তার আগে তারা তাকে সশরীরে দেখেননি। আমরা ইচ্ছা করেই বিয়ের পরের কয়েকদিন তাদের সাথে কাটাই, যাতে তারা তাকে ভালভাবে জানতে পারেন। তারা তাকে প্রিয়জনের মতো ভালোবাসতে শুরু করেন। আমার পুত্রহীন বাবার চোখে, সত্যি বলতে কি সেই পুত্র। আমার মা স্বীকার করেছেন যে, তিনি এর চেয়ে ভালো কোন স্বামী, আমার জন্য কামনা করতে পারতেন না। আমি কিভাবে আমার স্বামীর দেখা পেয়েছি, সে সম্বন্ধে তাদের যথার্থ আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আমার পরিবার আমার স্বামীকে নিজেদের একজন হিসেবে আপন করে নিয়েছে।

জরিপে আমি ইসলামে ধর্মান্তরিতদের কাছ থেকে ইতিবাচক গল্প চেয়েছিলাম। এটা খারাপ সম্পর্ক থাকার যে খবর পাওয়া যায়, তা অস্বীকারকল্পে নয়। একজন মেয়ে প্রশ্নপত্র পেয়ে আমাকে ফোন করেছিল এবং সে আমাকে তার নামও দেয়নি বা প্রশ্নের উত্তরও দেয়নি, তার কারণ তার অভিজ্ঞতা ইতিবাচক ছিল। সত্যি কথা বলতে কি সে দু'জন ভিন্ন মুসলিমের সাথে বিবাহ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিল, দু'জনই সুশিক্ষিত এবং তাদের একজন ডাক্তার ছিল। দু'জনই তাকে : মারধর করেছে এবং তার সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেছে। সে তার জীবনের ভয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিল।

মুসলিম বিয়েকে মহান করে দেখানো আমার অভীষ্ট নয়, কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে অনুধাবন করি যে, সব মুসলিম বিয়েই প্রলয়ঙ্করী নয়, যেমন আমাদের গণমাধ্যম বিশ্বাস করাতে চায় । আমার এটা লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু ইতিবাচক অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে জানা, যা নেতিবাচক গল্পের বিপরীতে দাঁড়াবে এবং একটা অপেক্ষাকৃত ভারসাম্য সম্বলিত ছবি উপস্থাপন করা যাবে। মুসলিমদের মাঝে ভালো, খারাপ এবং মাঝারি বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে- ঠিক যেমন অন্য ধর্মাবলম্বী এবং অন্য সংস্কৃতির মানুষের মাঝে রয়েছে, আর অত্যাচারপূর্ণ সম্পর্কও হয়তো পাওয়া যাবে। এমনও অনেক বিয়ের ঘটনা ঘটে, যেখানে অন্য দেশ থেকে আগত একজন পুরুষ কেবল একখানা গ্রীন কার্ডের জন্য বিয়ে করে (অনাগরিককে যা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে এবং কাজ করতে দেয়) ঃ

আমি এক খবরের কাগজের পত্রমিতালীর সংঘে যোগ দিই এবং এক আরব কলেজ ছাত্রের কাছ থেকে একখানা চিঠি পাই। সে প্রস্তাব দেয় এবং আমি ধরা পড়ি। সে মূলত বিয়ে করে আমার কুমারীত্ব পাবার জন্য ও তার গ্রীন কার্ড পাবার জন্য। আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদের পরে আমি টেনেসিতে থাকতাম। বন্ধুদের মাধ্যমে আমার আরেকজন মুসলিমের সাথে পরিচয় হয়। সে ছিল সাধারণ একজন ধর্মীয় লোক- আমার সব প্রশ্নের উত্তর সে সঠিক দিয়েছিল, আর আমি চাইছিলাম একজন স্বামী এবং আমার নিজের সন্তান। আমার বাবা-মা আমাদের বিয়ের আগে সন্দেহবাদী হয়েছিলেন, কারণ তারা তাকে আমার প্রথম স্বামীর চেয়ে আলাদা কিছু মনে করেননি, যে একজন মুসলিম ছিল। তাকে এবং আমার ৩ বছর বয়স্ক ছেলেকে তারা এখন মেনে নেয়। ইসলামিক কেন্দ্রে আমাদের একটা অনাড়ম্বর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। তারপর আমরা বাইরে গিয়ে PONDEROSA STEAK HOUSE-এ ই। বিবাহোত্তর সম্বর্ধনা আমার কিছুটা ঝলমলে ছিল, তবে কেবলমাত্র আমাদের কিছু বন্ধুই আমন্ত্রিত ছিল। তার আগে রাত্রে বোনদের (মুসলিম) ডিগ্রী প্রাপ্তি উপলক্ষে পার্টি ছিল- মজার। তা ছিল ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক। এর পরে আমরা দু'সপ্তাহের জন্য মধুচন্দ্রিমা উদযাপন করতে NEW YORK-এ যাই।

আমার আগে এক মুসলিমের সাথে বিয়ে হয়েছিল এবং তা ছিল অত্যন্ত খারাপ একটা বৈবাহিক সম্পর্ক। ৫ বছর ধরে আমি শারীরিক এবং মানসিকভাবে অত্যাচারিত হই। যে কেউ বিয়ে করতে চাইলে, আমার উপদেশ হচ্ছে- প্রথমেই ঐ ভাইদের (ভাই হচ্ছে মুসলিম পুরুষ)- যাদের তারা বিয়ে করতে চায় তাদের সম্বন্ধে খোঁজ নিতে একজন ওয়ালির শরণাপন্ন হওয়া। ঐ বিয়েটা আমার খারাপ ছিল। আমাদের বিয়ের পর সে একবার নামাজ পড়েছিল, তার গ্রীন কার্ড লাভ করেছিল, অন্য মেয়েদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে যাচ্ছিল এবং শেষ পর্যন্ত একজন নাগরিক হয়েছিল। তার একটা রেস্তোরা রয়েছে। সে SINGAPORE থেকে এক মুসলিমাকে বিয়ে করেছে এবং তাকে এদেশে নিয়ে এসেছে- সবকিছুর জন্য অবশ্য ধন্যবাদ আমারই প্রাপ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করায়। আমি এখন আরেকজন মুসলিমের সাথে সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করছি।

জরিপের মেয়েদের জন্য মুসলিম বিয়ে সাধারণভাবে খুবই ইতিবাচক ছিল- অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে, যা প্রায়শই গতানুগতিক পশ্চিমা ধরণ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা ধাঁচের ছিল। কখনো বিয়ের অনুষ্ঠানটাই পরিবারের জন্য ভয় ও আহত বোধ করার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারগুলো স্বপ্ন দেখে, তাদের মেয়েকে তারা চার্চের মানুষজনের মাঝখানের চলার পথ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং ধর্মযাজক তাকে এমন একজন পুরুষের সাথে সংযুক্ত করছে, যাকে তারা অনুমোদন করে। খৃস্টান ঐতিহ্যে চার্চের অনুষ্ঠানের পরে থাকবে সম্বর্ধনা, উপহার ইত্যাদি।

একজন অ-মুসলিমের সাথে একজন মুসলিমের বিয়ের অনুষ্ঠানে অবশ্য নানা ধরনের পার্থক্য এবং বৈচিত্র্যময় অবস্থা রয়েছে। কারো কারো বড় অনুষ্ঠান হয়েছে (প্রায়ই বাবা-মাকে সন্তুষ্ট করার উপর দোষ চাপানো হয়েছে)। কিন্তু বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়েও হয়েছে অথবা ‘শান্তির বিচারকের সামনে ছোট বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে এবং/অথবা মুসলিম অনুষ্ঠানের ঘটনাও আছে।

একজন মুসলিমের একজন অমুসলিমকে বিয়ে করার ব্যাপারে আমাদের একটা বিশেষ ধরনের অনুষ্ঠান হয়েছিল, যাকে বলে নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী বিয়ে (TIME MARRIAGE)। আমাদের নির্দিষ্ট সময়কাল ছিল ৯৯ বছর। এ সময় কেবল আমরা দুজন ছিলাম ও আমাদের দু'জন বন্ধু ছিল। তারপরে আমার পরিবারের জন্য, আমার বাবা মায়ের চার্চে, আমাদের আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়। আমার বাবা কন্যাদানের সময় JESUS-এর নাম বলেননি। আমার স্বামীর দিকটার প্রতি বাবা সম্মান দেখালেন। এই অনুষ্ঠানটা খুব সুন্দর ছিল এবং পরিবার কেন্দ্রিক ছিল। আমি মুসলিম না হওয়াতে এবং আমার স্বামী দৃঢ় ও অনুশীলরত মুসলিম না হওয়াতে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। আমাদের অবশ্য তৃতীয় আরেকটি বিবাহোতসব হয়, যখন আমি মুসলিম হলাম- এটা ছিল দু'জন মুসলিমের বিবাহের উত্সব, যা আমাদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা।

আমার পরিবার আমার স্বামীকে বিয়ে করার ব্যাপারে কখনো কোন আপত্তি দেখায়নি। আমরা ঘনিষ্ঠ ছিলাম না (পরিবারের সাথে)। আমার মা শুধু আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি সুখী কিনা। আমি যখন বললাম- হ্যাঁ, তখন তিনি বললেন যে, তিনিও তাহলে সুখী।

একজন BAPTIST ধর্মযাজক আমাদের বিয়ে পড়ায়। বহু বছর ধরে আমি যেহেতু কোন চার্চভূক্ত ছিলাম না, আমি কোন ধর্ম যাজককে জানতাম না। তাই আমার রুমমেটরা তখন যেতো, এমন একটা চার্চের ধর্মযাজককেই আমরা ঠিক করি। ব্যাপারটা খুব সাধারণ ছিল। আমরা তাকে বিয়ের ঘোষণা আগে পড়ে শোনাতে বলি। আমরা তাকে শুধু একটা পরিবর্তনই করতে বলি- "JESUS-এর নামে” কথাটার পরিবর্তে “ঈশ্বরের নামে” বলতে বলি। সবচেয়ে সুন্দর দিক ছিল, পরবর্তীতে আরব ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গানের পর্ব।

আমাদের বিয়ে পড়িয়েছিলেন একজন "JUSTICE OF THE PEACE" এক কোর্ট ভবনে, যেখানে আমার পরিবার অনুপস্থিত ছিল এবং কেবল কিছু বন্ধু ছিল সাক্ষী হিসেবে। কয়েক মাস পর আমাদের বিয়ে পড়ান একজন শাইখ (মুসলিম ধর্মীয় নেতা), ছোট্ট একটি অনুষ্ঠানে, আরও একজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ।

আমাদের বিয়েতে কোন প্রচলিত আচার অনুষ্ঠান যেমন কেক কাটা বা মাথার উপর চিনি ছড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি ছিল না। আমাদের বিয়ে ছিল একদম মৌলিক একটা ইসলামিক বিয়ে- যেখানে দুজন মানুষ জীবনসঙ্গী হবার প্রয়োজন বোধ করে এবং আল্লাহর সামনে একত্রে সংসার করার ব্যাপারে একমত হয় এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ হয়। বিয়ের ঘোষণা সে আরবীতে পড়ে এবং আমি তাতে মত দিই। আমার মোহর হিসেবে আমার স্বামী আমাকে আমার নিজস্ব আরবী একখানা কোরআন দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা কিছুদিন পরে সে আমাকে দেয়। সে জায়নামাজসহ অন্যান্য কিছু সামগ্রী উপহার দেয় যা প্রার্থনার কাজে লাগে। আমাদের বিয়ের পরে ইসলামী বিধান অনুযায়ী আমরা গ্রাম্য আদালতে যাই এবং একজন বিচারক কর্তৃক আইন অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। (ইসলামে মুসলিমদের উপদেশ দেয়া হয়, তারা যেন যে দেশে বসবাস করে সেই দেশের আইন কানুন মেনে চলে, যতক্ষণ না তা ইসলামিক অনুশাসনের বিরুদ্ধে যায়)।

আমার চার্চে আমার বিয়ের একটা অনুষ্ঠান হয়, যা কোন নির্দিষ্ট ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের দিন এক মসজিদে আমাদের নিকাহ সম্পন্ন হয়।

আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান খুবই সুন্দর ছিল। নিখুঁত, যেমন অন্যরা মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছে। দিনটাও খুব সুন্দর ছিল, রৌদ্রোজ্জ্বল ও ঠান্ডা একটা দিন। একটা STRING QUARTET (যন্ত্র সঙ্গীত), অনুষ্ঠানের জন্য একটা প্রাসাদ আর বাইরের বাবুর্চিদের দ্বারা পরিবেশিত চমৎকার BRUNCH (BREAKFAST+LUNCH) BUFFET (ব্যুফে)। আমি বুঝি, স্বাভাবিকভাবে সম্বর্ধনায় একটা আরবী আবহসঙ্গীত থাকার কথা, কিন্তু আমরা দুজনেই আগে এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম- বেশীরভাগ অতিথি হয়তো আরবী সঙ্গীতে চুপসে যাবে, তাই আমরা তারযন্ত্রের সিদ্ধান্ত নেই। দুটো ব্যাপার ছাড়া আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা পুরোপুরিই ইসলামিক ছিল। যে দুটো ব্যাপার এটাকে সম্পূর্ণ ইসলামিক বলতে দেয় না তা হচ্ছে আমার বাবার কন্যা সম্প্রদান এবং অতিথি সমাগম। আমি আনন্দিত যে খৃষ্টান অতিথিরা অনুষ্ঠানে এসেছিল- তাতে ইসলামকে ঘিরে রহস্যের একাংশ অন্ততঃ দূরীভূত হয়েছে।

৪৪
স্বামীর পরিবারের সাথে সম্পর্ক
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, স্ত্রীর গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে স্বামীর পরিবারের যে ক্ষমতা রয়েছে তা। অবশ্য এটা এমন একটা জিনিস যা বিয়েতে আমাদের সবারই সমাধা করতে হয়। শ্বশুরালয়ের লোকজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন- কিন্তু এই পরিস্থিতি (আমাদের কন্যাদের)-তে সাংস্কৃতিক পার্থক্যের একটা অতিরিক্ত মাত্রা রয়েছে। বেশীর ভাগ (মুসলিম) পুরুষেরই তাদের আদি পরিবারের সঙ্গে এবং তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে দৃঢ় বন্ধন রয়েছে, আর ঐ পরিবার স্ত্রীকে গ্রহণ করার ব্যাপারে কি বোধ করে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কখনো তাদের মতামত বিয়ে ভেঙ্গে যাবার মতো শক্তিশালীও হতে পারে, যদি ঐ পরিবার তা অনুমোদন না করে। কেউ কেউ স্বামীর পরিবারের সাথে খারাপ সম্পর্ক নিয়েই বেঁচে থাকতে শিখে- কিন্তু জরিপে সাড়া দানকারী বেশীরভাগ মেয়েই স্বামীর পরিবারের কাছ থেকে ভালোবাসা ও স্বীকৃতি পেয়েছে এবং স্বামীর পরিবারকে জানাটা তাদের জন্য সুখের বিষয় ছিল। তারা পরিবারসমূহের মাঝে চিঠিতে এবং ফোনে ভালো যোগাযোগের বর্ণনা দিয়েছে এবং স্বামীর মাতৃভূমিতে বেড়াতে যাবার অভিজ্ঞতাও একই ধরণের। কখনো আত্মীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে বা কানাডায় বেড়াতে বা থাকতে এসেছেন।

আমার স্বামীর পরিবারের সাথে আমার দেখা হয়েছে। আমি তাদের সাথে দেখা করতে প্রায় মৃত্যুভয়ে ভীত ছিলাম- আমেরিকান মেয়েদের সম্বন্ধে তাদের বাজে ধারণা ছিল। আমি যে আমার মুখ ঢেকে চলি তা দেখে তারা হতবাক হয়েছে- তারা দৃশ্যতঃ অস্বস্তিই বোধ করছিল এ সম্বন্ধে। উষ্ণ অভ্যর্থনা ছিল না, কিন্তু কেউ আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেনি।

আমার স্বামীর পরিবারের বাড়ীতেই আমরা থাকি (স্বামীর দেশে)। প্রায় এক বছর হলো আমার এখানে এবং আমাকে মেনে নেয়া হয়নি। তাদের গুটিকয়েকই আমাকে মন থেকে স্বাগত জানায়। বেশীরভাগেরই একটা ভয় যে, আমি একদিন চলে যাবো, বাচ্চাদের নিয়ে।

আমার স্বামী এবং আমি সত্যি ভেবেছিলাম যে, আমি অন্যদের (সবার) একজনই হবে। আমি এমনকি কাছের কেউও হতে পারিনি। আমি নিশ্চিত নই যে, জীবনে কখনো আমি সত্যিকার অর্থে পরিবারের একজন সদস্য হতে পারবে কিনা। আমরা যেমন আশঙ্কা করতাম, ইসলামিক আচার-আচরণ মেনে চলতে আমাদের বেশ ঝামেলাই হয়। আমার স্বামীর পরিবার অতিমাত্রায় পশ্চিমা ঘেঁষা। তাদের কাছে থাকার লাভটা হচ্ছে আমার স্বামী ও বাচ্চাদের ব্যাপারে পূর্ণ এবং স্থায়ী সদস্য হবার জন্য, একটা বৃহত্তর পারিবারিক কাঠামো।

আমাদের বিয়ের সময়ে আমার স্বামীর পরিবার উপস্থিত ছিল। তার মা একজন BRAZILIAN এবং তার বিয়ের সময়ে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন তাই তারা কিছু অসুবিধার প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন এবং আমরা যখন একটু বড় বাসা নিতে সক্ষম হবো, তখন হয়তো বছরের কিছুটা সময় তারা আমাদের সাথে থাকবেন। তারা আমাকে এবং বাচ্চাদের আরবীর সাথে সাথে পর্তুগীজ শিখতে সাহায্য করবেন। তাদের নিয়ে যে অসুবিধা হবে সেটা হচ্ছে তাদের বাজে খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের অভ্যাস। আমি সুষম খাবারের পাগল (কেবল চকোলেট ছাড়া) এবং আমার স্বামী তার বাবার উপস্থিতিতে কিছুটা অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে, কিন্তু এটা এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে।

আমরা তাদের অর্থনৈতিক সমর্থন যোগাই এবং তা আমাদের জীবন ধারণকে কিছুটা কঠিনতর করে, কিন্তু তারা '৬৭’র যুদ্ধে সব হারিয়েছিলেন এবং পুনরায় উপসাগর যুদ্ধেও। ঐ সময় তারা কুয়েতে ছিলেন। তারা খুব সাধারণ মনের মানুষ, আর আমরাও তাই।

আমার স্বামীর মা আমার খুব প্রিয় মানুষ আর বিদায়ের সময় এলে আমরা সবাই খুব কান্নাকাটি করি। আমি যখন আমার পরিবারের কাছে বেড়াতে যাই এবং তার পরে বিদায় নেই- এটা ঠিক তেমনই একটা ব্যাপার। আমার মাবাবা ও তার পরিবার, দু'পক্ষই একে অপরের প্রতি যত্নশীল, আর আমার পরিবার, আমরা ওখানে থাকলে আমার স্বামীর পরিবারের জন্য উপহার পাঠায় এবং ফোনে খোজখবর নেয়।

আমার স্বামীর দেশে এক যাত্রায় আমি তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হই। তারা চমৎকার মানুষজন এবং তারা আমাকে সম্পূর্ণরূপে মেনে নিয়েছে যদিও আমি একজন বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া আমেরিকান মেয়ে ছিলাম, বাচ্চা-কাচ্চাসহ, যে তখনও এমনকি মুসলিমও ছিল না। কারণ আমি তাদের ছেলের এবং ভাইয়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম।

কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে খাপ খাওয়ানো আমার জন্য কষ্টকর। আমি এ ব্যাপারটাতে কখনোই অভ্যস্ত হবো না যে, ৩৫ জন বা তারও বেশী সংখ্যক আত্মীয় স্বজন দরজায় টোকা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করবে না এবং মনে করবে যে আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারও তাদের ব্যাপার। আর বড় সমাবেশ হলে কয়েক দিনের জন্য শুধু মহিলাদের মাঝে থাকাটাও আমি ঠিক স্বস্তিকর বোধ করি না। এক পারিবারিক বিয়েতে আমি তাদের দিয়ে আমার জন্য একটা আলাদা কামরার ব্যবস্থা করিয়ে নিয়েছি, যাতে আমি আমার নিজের স্বামী ও বাচ্চাদের সাথে চাইলে একত্রিত হতে পারি- একটু অস্বাভাবিক ব্যাপার অবশ্য, আমি জানি। আমার স্বামী আমার এই সমস্ত আজব বৈশিষ্ট্য বেশির ভাগ সময় ভালোভাবেই মেনে নেয়কিন্তু যখন সে মেনে নিতে চায় না, তখন তার মা তাকে আমার সাথে একটা মাঝামাঝি অবস্থান নিতে তাকে চাপ দেন।

তার পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখার লাভ হচ্ছে এটুকুই যে, তারা সব ভালো এবং মন্দ নিয়ে, সত্যিকার অর্থেই একটা পরিবার- যা আমার নিজের পরিবারে (মা-বাবার পরিবারে) আমি কখনো দেখিনি।

আমার মিসরে যাওয়ার প্রথম কয়েক সপ্তাহের মাঝেই আমার সাথে ডজন ডজন আত্মীয় স্বজনের পরিচয় হয়েছে আর তা ছিল বেশ ধকল পোহাননা অভিজ্ঞতা। এখন আমি বলতে পারি যে, এই পরিবারের সাথে আমার ভালই চলছে, আর আমার স্বামী কাজের খাতিরে সৌদিতে গেলে আমি একা এদের সাথে দু'মাস থাকার পর নিজেকে তাদের একজন মনে করি। তারাও আমাকে মেনে নিয়েছে এবং আমাকে নিয়ে স্বস্তিবোধ করে- আমার মনে হয় এর প্রধান কারণ আমি তাদের সম্মান দেখিয়েছি এবং আমি তাদের ছেলেকে সত্যিই ভালোবাসি। একটা লাভ হচ্ছে, আমি আরবী শিখবো। একটা অসুবিধা হচ্ছে, সাধারণভাবে আমেরিকানদের যে তারা সন্দেহের চোখে দেখে, এই সত্যটা ভুলতে না পারা।

এমনও মেয়েরা রয়েছে, যারা নিজেদের পরিবারের চেয়ে স্বামীর পরিবারেই বেশী আকাক্ষিত। নীচের চিঠিটা একজন মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তার বন্ধুকে লিখেছিল- যখন সে এবং তার স্বামী ইরানে স্বামীর বাবা-মার কাছে বেড়াতে গিয়েছিল।

আমি এখানে এসেছি প্রায় এক সপ্তাহ হয় এবং সবকিছু এতো চমৎকার। আমি আমার শাশুড়িকে আমার মা বলে গ্রহণ করেছি। তিনি খুব ভালো একজন মানুষ। এই প্রথম সপ্তাহ খুব মজায়ই কাটলো, তার পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচিত হতে আর রীতি অনুযায়ী কখন কি করতে হবে তাই মনে রাখার চেষ্টা করতে করতে। এ পর্যন্ত আমার স্বামী বলেছে যে, প্রত্যেকেই বলছে তারা আমাকে ভালোবাসে, আর আমি অনুভব করি আমাকে গ্রহণ করা হয়েছে। তারা আমাকে রাণীর মতো আপ্যায়ন করে। আমার শাশুড়ি আমাকে প্রায়ই চুমা খান এবং সারাক্ষণ আমার প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগ রাখেন। এখানে যখন প্রথম আসি, তখন কি আশা করা যায় তা না জেনে, শুধু শুধুই অনেক দুঃশ্চিন্তা করেছি।

আমার স্বামীর পরিবারের অনেকে বিমানবন্দরে গিয়েছিল আমাদের সঙ্গে মিলিত হতে এবং ওটা ছিল অত্যন্ত হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া একটা মুহূর্ত- যে মুহূর্ত আমি জীবনে কখনো ভুলবো না। মা একজন ফেরেশতার মতো। আমি বিশ্বাস করতে পারি না, তার কাছে আসতে আমরা এতো সময় নিয়েছি। আমি অনেকটা সময়ই এখানকার দৃশ্য দেখে, অশ্রুসজল নয়নে কাটিয়েছি। এখানকার পরিবার পদ্ধতি একেবারে ভিন্ন ধরনের। যেখানে ঘনিষ্ঠতা বা নিকটত্বকে ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। আমার চোখের জলের একাংশ এ জন্য যে, এক সপ্তাহে আমার স্বামীর পরিবারের কাছ থেকে আমি যে স্নেহ-মমতা পেয়েছি, তা আমার নিজের রক্তের চেয়ে অনেক বেশী, যারা এমনকি আমাদের বিদায় জানাবার প্রয়োজনটুকু বোধ করেনি।

৪৫
সংস্কৃতির মিশ্রণ
আমাদের কন্যারা মুসলিম হতে শিখছে এবং একই সময়ে যদি অন্য কোন দেশের একজন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে, তবে হয়তো তারা পরিবারে অনেক নতুন আচার-আচরণের সংমিশ্রণ করে চলেছে। মেয়েরা আমেরিকান সংস্কৃতি, স্বামীর পটভূমির ঐতিহ্য এবং এ সব কিছুকে ইসলামিকভাবে ব্যাখ্যার প্রচেষ্টা- এই তিনটি ব্যাপারের সংমিশ্রণের কথা বলেছে।

অনেক আচার-আচরণ যেমন পোষা প্রাণীর ব্যাপার, যেভাবে আমরা রান্না করি, গোসল করি এবং কথা বলি, আর সৌজন্যমূলক আচরণ, এসবই আমার স্বামীর ঐতিহ্য থেকে এসেছে। এখনকার জীবন ধারা, আমার শৈশবের জীবন ধারার চেয়ে ১০০% ভিন্ন এবং শৈশবের সেই জীবন ধারা, আমাদের আচারআচরণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

কিছু ব্যাপারে আমাদের জীবন মূলতঃ ইরানী ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি দ্বারা চালিত- আমরা যে খাবার খাই এবং যেভাবে তা রান্না করা হয় এবং আমার হিজাব ইত্যাদি। (হিজাব পরারও অনেক ধরণ আছে)। আমি অনেক কিছুই করি, যা ইরানী, কিন্তু আমার শিষ্টাচার ও চিন্তা-ভাবনা এখনো পুরো মাত্রায় আমেরিকান।

একটা মিশ্রণ ঘটেছে- ঘরের ভিতরে কোন জুতা নয়, শৌচকর্ম, ফোন ধরে আসসালামু আলাইকুম (মুসলিমদের মাঝে বিশ্বজনীন সম্ভাষণ)- এসবই ইসলামিক রীতিনীতি। ৭৫% সময়ে আমরা পার্সী খাবার খাই।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইরানী আচার-আচরণ তেমন স্থান পায় না। যদিও কিছুটা আরব আচরণ হয়তো বা থেকে থাকবে। আমাদের বাচ্চারা আরবীতে কিছু খেলা করে যেগুলো আমার স্বামী তার ছোটবেলায় খেলতো। সপ্তাহে দু'বার আমার স্বামী বাচ্চাদের আরবী এবং কোরআন শিক্ষা দেয়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমার স্বামীর দেশের, অর্থাৎ সিরিয়ার আচার-আচরণ প্রধানতঃ লক্ষণীয়। আমার বেশীরভাগ বই বিভিন্ন দেশের (অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের)। তাদের ঐতিহ্যসমূহের প্রভাবও রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আমার স্বামীর মা যখন আমাদের কাছে বেশ অনেকদিনের জন্য বেড়াতে আসেন। তিনি সব সময়েই সিরিয়ার একটা অংশ সাথে করে নিয়ে আসেন। তিনি যখন এখানে থাকেন না, তখন আমাদের জীবন মূলতঃ আমেরিকান মুসলিমের জীবন। এটা হচ্ছে সাংস্কৃতিক এক মিশ্রণ।

আমার স্বামী আমাদের আরবী ভাষা শিখতে উৎসাহ দেয় এবং একইভাবে নিজে সে আমেরিকান শিখতে চেষ্টা করে। যেমন বাচ্চাদের খেলার গান, ছড়া ও প্রবাদ ইত্যাদি। আমরা স্বস্তি সহকারে আমাদের সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটাতে চেষ্টা করি। আর আমরা দু'জনেই আমাদের আশেপাশে অন্য সংস্কৃতি এবং ভাষার মানুষের উপস্থিতিতে অভ্যস্ত।

ইসলামই হচ্ছে একমাত্র সংস্কৃতি। আমি এমনকি চেষ্টা করি, আমেরিকান সংস্কৃতি যাতে অনুসরণ করা না হয়। আমি যা কিছুই করি তাতে ইসলামকেই প্রথমে স্থান দিতে চেষ্টা করি। আমার স্বামীর পরিবার ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে আটকা পড়ে আছে। এই ব্যাপারটা আমরা বেড়াতে গেলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইরানী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত। আর তা হবে নাই বা কেন আমার স্বামী একজন ইরানী। এটার পরিবর্তন কখনো হবে না। সে আমাদের গল্প বলে (ইরানী), আমরা গান গাই এবং অনেক ইরানী খাবার খাই।

আমাদের জীবন সাদামাটা দৈনন্দিন জীবন। আমাদের পরিবারের স্বাতন্ত্র এখানেই যে, আমরা জীবনকে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই এবং আমরা আমাদের বাচ্চাদের কাছে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার মাধ্যমে, ইসলামকে ব্যাখ্যা করি।

আমরা দুজনেই যেহেতু মুসলিম, আমাদের পরিবারের উপর প্রধান প্রভাবই হচ্ছে ইসলাম। অবশ্যই তার সাথে মিশে রয়েছে ওর দেশের খাবার এবং ঘুম থেকে উঠে, গোসলের সময় এবং ঘুমুতে যাবার সময়কার ঘোট ঘোট বক্তব্য (SAYINGs) সমূহ। আমি বোধ করি পরিবারে আমি আমার নিজস্ব ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছি, কেননা আমি সত্যিই চাই যে, আমার পরিবার একটা ইসলামিক পরিবার হোক। আমরা অনেক নতুন আচার -আচরণ গঠন করেছি। আমেরিকায় আমার স্বামী খুবই নিঃসঙ্গ। আঠারো বছর বয়সে ফেলে আসা পরিবারকে সে কখনোই হতে পারে না এবং তাদের অভাব বোধ করে। আমি তার দুঃখ ভরে দিতে চেষ্টা করি- ঘরের আমার ভূমিকাকে গুরুত্ব সহকারে পালন করে এবং ভালোবাসা দিয়ে।

এই জরিপের মেয়েদের প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়ার সময় তাদের বিয়ে নিয়ে অপেক্ষাকৃত সুখী মনে হয়েছে (আমেরিকান মান অনুযায়ী)। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এইসব মুসলিম পুরুষদের প্রতি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে আকৃষ্ট হয়েছে, যা তাদের কাছে পূর্ণতা সম্পন্ন এবং ইতিবাচক মনে হয়েছ। ধর্মান্তরিত হবার সময়ে সব মেয়েরাই কোন মুসলিমকে বিয়ে করেনি- কেউ কেউ ধর্মান্তরিত হবার সময় অবিবাহিতা ছিল এবং পরবর্তীতে তারা চেয়েছে একজন অনুশীলনরত মুসলিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে। যে কোন ধর্মের ব্যাপারেই একটা যুগল যদি ধর্মীয় ব্যাপারে সমমনা হয়, তবে তা তাদের জীবনে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে।

৪৬
অন্য পথে ছেলেমেয়ে বড় করা আমেরিকান সমাজে মুসলিম ছেলেমেয়ে
বার্ষিক পারিবারিক চার্চ ক্যাম্পে, ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার বছরগুলোতে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে চার্চের ক্যাম্প মাঠে হাজির হতাম।JODI-ও এইসব ক্যাম্প মাঠে গিয়েছে, তরুণ ক্যাম্পে যোগ দেয়ার জন্য। শৈশবে এবং তারুণ্যে এই সমস্ত মাঠেই তার অনেক ভালোভালো আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা হয়েছে। ক্যাম্পের অগ্নিস্তুপের পাশে বসে প্রার্থনা সভায়, ক্লাসসমূহে, কিতাব সম্বন্ধে পড়াশোনায় এবং অন্য খৃষ্টান বন্ধুদের সৎসঙ্গে তার জীবনে, ঈশ্বরকে উপাসনা ও অনুসরণ করার সংকল্প এসেছে।

সে যখন ১৫ বছর বয়স্কা, তখন এমনি একটা ক্যাম্পে সে একটা কবিতা লেখে, যা তার কাছে এক অনুপ্রেরণা স্বরূপ এসেছিল বলে সে অনুভব করে। এই কবিতা, তার জীবনকে একটা অত্যন্ত বিশেষ উপায়ে আহবান জানায়।

THE INSPIRATION

Wherever I'm at, it is my home;

The people I'm with, my family.

There'll be different things

Wherever I roam,

Wherever I go, I'll go happily.

Don't worry about me,

I don't walk alone

For God is walking beside me,

And as we walk along

We speak in soft tones;

Together we keep each other company.

I'll go where he wants, wherever I'm led

Though the roads may be long and dreary.

I'll not remember the harsh words that are said,

But the people I've sought to help

Who are weary.

The times I'll remember will be happy ones,

No matter what others will say.

The bad that there is

Will not overcome

For God's with me all the way.

Jodi C. Anway

June, 1978

সপ্তাহান্তের জন্য, আমরা ঐ একই ক্যাম্প-মাঠে যাচ্ছি আবার, কিন্তু এবার সেটা ভিন্ন ছিল- একদল ভিন্ন মানুষের সাথে যাত্রা। JODI ও REZA তাদের ইসলামিক দলের জন্য ঐ ক্যাম্প-মাঠ বেছে নিয়েছে। আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, আর রান্না-বান্নায় একটু সহায়তা করা, মানুষজনকে একটু ঘুরিয়ে দেখানো সবকিছু আর মেয়েকে বাচ্চা সামলাতে সাহায্য করা- সবই বেশ মজার। আমরাই ছিলাম একমাত্র উপস্থিত অমুসলিম এবং আমার যে মাথা ঢাকা ছিল না। কেউ তার তোয়াক্কা করছে বলে মনে হলো না।

মুসলিম মানুষজনের সাথে সপ্তাহান্ত ছিল খুবই স্বস্তিকর। এরা বেশীরভাগই ছিল তরুণ বয়স্ক তাদের বাচ্চা-কাচ্চাসহ। সব মেয়েরই হিজাব দ্বারা মাথা ঢাকা ছিল, পুরুষরা মার্জিত পোশাকে ছিল, আর বাচ্চারা বাইরে ছুটাছুটিতে ব্যস্ত ছিল। সুইমিংপুলটা একটা প্রধান আকর্ষণ ছিল, কিন্তু এই সপ্তাহান্তে সেখানকার নিয়ম কানুন ছিল বিশেষ ধরণের। চারপাশের বেড়ায় কম্বল ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল, যাতে মেয়েরা ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সাঁতার কাটতে পারে। পুরুষরা এবং একটু বড় বালকরা, ভিন্ন সময়ে সেখানে সাঁতার কাটতে যায়।

খাবারের সময়গুলোতে আমরা সবাই এক সঙ্গে খাবার জন্য নির্ধারিত হল ঘরে খাওয়া-দাওয়া করি- আলাপচারিতা চালিয়ে যেতে যেতে। পুরুষরা ও মেয়েরা যখন রান্না ঘরে কাজ করছিলো বাচ্চাদের যত্ন নিচ্ছিল, লেকে মাছ ধরছিলো অথবা হেঁটে বেড়াচ্ছিলো- সব ক্ষেত্রেই একটা বন্ধুত্বের এবং সহযোগিতার পরিবেশ অনুভব করা যাচ্ছিল। সাধারণভাবে সবাই সবার উপস্থিতিটা উপভোগ করছিল। মুসলিম আচরণবিধি পালন করতে গিয়ে পুরুষরা এবং নারীরা উভয়ই একে অপরের প্রতি ব্যবহারে যত্ন ও সম্মান প্রদর্শন করছিল। মুসলিম আচরণ বিধি কিভাবে পালিত হচ্ছে আমি সে ব্যাপারে এমনকি সচেতনও ছিলাম না। কেবল পুরুষরা ও নারীরা দুটি দলে জড়ো হয়ে থাকছে- এটুকুই চোখে পড়ে।

খাবার ঘরে নামাজের সময় আমি তাদের দেখলাম কয়েকবার তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালো- পুরুষরা বড় ছেলেদের নিয়ে একটা দল, মেয়েরা এক সাথে সবাই একটা দল; আর ছোটরা খুশী মনে নিজেদের মতো চলছিল- যদিও তারা কারো প্রার্থনায় অসুবিধার সৃষ্টি করছিল না। এই একই খাবার ঘরে আমি আগেও এসেছিলাম, মহিলাদের অবসর বিনোদন সমাবেশে, এখানে আমি জ্ঞান অর্জন করেছি, প্রার্থনা করেছি এবং অন্যদের সৎসঙ্গ লাভ করেছি। ওরা (মুসলিমরা) ঈশ্বরের লোকজন, ওরা এই সমস্ত মাঠে এসেছে- যা আমার কাছে পবিত্র ছিল এবং তারাও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে, তাদের সংকল্প ব্যক্ত করছে, একটা ভালো জীবন যাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করছে- ঠিক যেভাবে অতীতের বছরগুলোতে আমিও বহুবার করেছি।

এটা আমাকে আশ্বস্ত করলো যে, আমার নাতি-নাতনীরা এমন একটা পরিবারে বড় হচ্ছে, যেখানে ঈশ্বর এবং পরিবারের প্রতি মানুষ নিজেকে উৎসর্গ করে। একদিন আমার মেয়ের বাসায় আমি আমার শিশু নাতনী ফাতেমার কাছে বিছানায় বসেছিলাম। JODI ঐ একই কামরায় আরবীতে তার মধ্যাহ্নকালীন প্রার্থনা করছিল। তার প্রার্থনার বেশ তাড়া ছিল এবং সে এক বিশেষ প্রার্থনার কম্বলের (জায়নামাজ) উপর বসে প্রার্থনা করছিল। আমার নাতি, EMAUN তখন প্রায় চার বছর বয়স হবে, আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। সে তার এই কয়েক বছরের জীবনে প্রতিদিন বাবা ও মাকে কয়েকবার করে আরবীতে প্রার্থনা করতে শুনেছে। EMAUN আমাকে বললো, “নানী, তুমি নামাজ পড়?”

(আমি বললাম) “নামাজ কি? ঐ প্রার্থনাগুলো?”

“হ্যা”। সে উত্তর দিল।

“বেশ, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তবে ভিন্নভাবে।”

“তুমি তখন কি বলো, নানী?”

আমি বললাম যে, আমি তখন আমার নিজের প্রার্থনা রচনা করি। এখন EMAUN বুঝতে পারলো যে, আমি শুধু ইংরেজী ভাষাই জানি- তার বাবার ফার্সিও জানি না বা প্রার্থনার ভাষা আরবীও জানি না। তাই প্রার্থনা সম্বন্ধে আমার উত্তর অর্থাৎ আমি নিজের প্রার্থনা রচনা করি। শুনে EMAUN বললো, “কিন্তু নানী, ঈশ্বর তো ইংরেজী জানেন না। পরে JODI তার সাথে কথা বলে তাকে বুঝালো যে, ঈশ্বর সব ভাষাই জানেন।

একটা নবজাত শিশুর জীবনের প্রথম মুহুর্তগুলোতেই জীবনে ইসলামের সূচনা ঘটে, যখন শিশুর বাবা বা অন্য প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সক্ষম কেউ তার কানে ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ..... আমি সাক্ষ্য দিই আল্লাহ ছাড়া কোন ঈশ্বর নেই..... নামাজের জন্য এসো..... কল্যাণের জন্য এসসা ...... আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ”- এই কথাগুলো শোনায়। একটা শিশুর জন্মের পরের দিনগুলোতে বা প্রথম মাসগুলোতে, কোন এক সময় একটা ভেড়া জবাই করা হয় এবং তার মাংস অভাবগ্রস্তদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়। একটা ভালো নাম পছন্দ করা গুরুত্বপূর্ণ, যেন সেই নাম বাচ্চাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। ছেলেদের খতনা করার উপদেশ দেয়া হয়। নয় বছর বয়সের আগেই বাচ্চাদের নামাজ এবং ঠিকভাবে অজু করতে শেখানোটা বাবা-মায়ের দায়িত্ব। শিশু পালনে সঠিক উপায় অবলম্বন করলে সেজন্য ঈশ্বর মা-বাবাকে অনেক আশীর্বাদ এবং পাপ ক্ষমা করে পুরস্কৃত করবেন বলে মুসলিমরা বিশ্বাস করে।

আমাদের আলোচ্য কন্যাদের, যাদের বাচ্চা রয়েছে, তাদের মতামত থেকে বোঝা যায় যে, তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও করণীয়র মাঝে অন্যতম প্রধান হচ্ছে, একজন দায়িত্বশীল মা হওয়া। ব্যবহার থেকে শুরু করে তাদের একাগ্রতা এবং দৈনন্দিন প্রশিক্ষণ- সবকিছুতেই তারা তাদের বাচ্চাদের এমনভাবে বড় করতে চায়, যেন তারা মুসলিম থাকার ঐতিহ্য বজায় রাখে এবং একাগ্রতার সাথে ঐ সমস্ত বিশ্বাসের অনুশীলন করে। আমাদের নাতির বেলায় ঐ দৈনন্দিন প্রশিক্ষণ এবং আদর্শ স্থাপন, আমি স্পষ্টতঃই দেখতে পাই।

মেয়েরা এই ইঙ্গিতও দিয়েছে যে, স্ত্রী এবং মা হিসেবে তাদের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে শান্তিপূর্ণ এবং শান্তিময় একটা গৃহ পরিবেশ এর ব্যবস্থা করা যেখানে স্বামী ও বাচ্চাদের সুস্থ জীবন বিকাশ লাভ করবে। সে যদি বাইরে কাজ করে, তবে তা যেন তার স্ত্রী ও মা হিসেবে দায়িত্বসমূহের জন্য অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়। তার ভরণপোষণের অধিকার (অর্থাৎ পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব যে এককভাবে স্বামীর) মূলতঃ এ জন্যই প্রাপ্য যে, সে যেন শিশু জন্মদানে, শিশুকে বুকের দুধ দেয়াতে এবং বাচ্চা বড় করতে তার ভূমিকা পালনে মুক্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

বাচ্চা বড় করার ব্যাপারে আমিই হচ্ছি প্রাথমিক তত্ত্বাবধায়ক, যে তাদের সঙ্গে দিনে ২৪ ঘন্টাই থাকে। আমি মূলতঃ শিক্ষা এবং শৃঙ্খলার ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত, যদিও তাদের বাবাও বাচ্চাদের যত্ন ও শিক্ষার ব্যাপারে খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে।

কোরআনের শিক্ষা হচ্ছে ছেলেমেয়েকে অবশ্যই পিতা-মাতার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং তাদের মেনে চলতে হবে, যতক্ষণ না তারা এমন কোন কিছু করতে বলেন, যা কোরআনের (শিক্ষার) পরিপন্থী। ইসলামিক স্কুলে তাদের শিক্ষা দেয়া হয়, তাদের মায়ের প্রতি অনুগত হতে এবং তাকে সম্মান করতে। এমন একটা সময় আসবে যখন আমি বৃদ্ধা হবে এবং তখন তাদের পালা আসবে আমার যত্ন নেয়ার। তাদের মায়ের হাতে চুমু খেতে বলা হয়; কেননা আমিই হচ্ছি তাদের বেহেস্তে প্রবেশ নিশ্চিত করার ব্যক্তি।

৪৭
ইসলামী প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ
বাচ্চা প্রতিপালনের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্বন্ধে মেয়েরা তাদের চিন্তার কথা প্রকাশ করেছে। তারা বিশেষতঃ ইসলামিক সম্প্রদায় এবং ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধসমূহ, তাদের ছেলেমেয়ের কাছে হস্তান্তরিত হোক তা চায়। একটা অমুসলিম দেশে থাকা ব্যাপারটাকে একটু কঠিন করে তোলে এবং তারা অনুভব করে যে, তাদের ছেলেমেয়েকে অবশ্যই যত্ন সহকারে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত।

মুসলিম হবার পর থেকে আমার মেয়ে কি দেখছে এবং শুনছে আর সে সবের প্রভাব তার উপর কতটুকু, এসব নিয়ে আমি বেশী সচেতন থাকি। আমি তাকে এমনভাবে বড় করতে চাই, যাতে সে নিজের জীবনধারা হিসেবে ইসলামকে বেছে নেয়। তার ওপর আমি তা চাপিয়ে দিতে চাই না। অবশ্যই তাকে বড় করতে গিয়ে আমি সেই সিদ্ধান্তই নিচ্ছি যা আমি ঠিক মনে করি। আমি তাকে এমন সব মূল্যবোধ শিক্ষা দিচ্ছি, যা এদেশে আজ কদাচিৎ কাউকে শিক্ষা দেয়া হয়। আমি মনে করি, মা হিসেবে এটা আমার অবশ্যকরণীয় যে, এমনভাবে মুসলিমদের পরবর্তী প্রজন্মকে বড় করতে হবে যাতে তারা ভালো মুসলিম হয়, ভালো ছেলে এবং মেয়ে হয়, ভালো ভাই এবং বোন হয়, ভালো স্বামী এবং স্ত্রী হয় এবং ভালো বাবা ও মা হয়।

আমার স্বামী হচ্ছে আমার মেয়ের জন্য আদর্শ পুরুষের দৃষ্টান্ত। সে তার আপন পিতা নয়, কিন্তু মেয়ে তাকে এমনভাবে ভালোবাসে যে, সেই বুঝি তার পিতা। আর আমার স্বামীও আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের মতোই মেহ করে। আমি অনুভব করি, আমার স্বামী আমার মেয়েকে এবং ইনশাআল্লাহ আমাদের যে সব বাচ্চা হবে তাদের সবাইকে ভালো মূল্যবোধ সহ গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে আমিই তাদের কাছে থাকবো, তাই তারা যা শিখবে তার বেশীরভাগই আসবে আমার কাছ থেকে। আমাদের ছেলেদের বড় করতে আমি চাই আমার স্বামীও সক্রিয় থাকুক। আমি মনে করি, তাদের সক্রিয় মুসলিম পুরুষদৃষ্টান্তেরও প্রয়োজন আছে। আমাদের তাদেরকে ভালোবাসা ও দয়া দেখানো প্রয়োজন এবং কোমলতা সহকারে তাদের গঠনের চেষ্টা করা উচিত, যেন তারা এটুকু বুঝে বড় হয় যে, তারা একটা স্নেহশীল মুসলিম পরিবারের অংশ।

মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত, আমাদের ছেলেমেয়েকে আমাদের জ্ঞানের সবচেয়ে ভালোটুকু এবং তার চেয়ে বেশী কিছু দিয়ে বড় করা ও শিক্ষা দেয়া। ইসলাম আমাদের জ্ঞান অন্বেষণে উৎসাহ দেয়। আমি মা হিসেবে যাই করি

কেন, তাতে ইসলামিক কিছু জড়িয়ে থাকবে : ভালোবাসতে শিখানো, কোরআন, প্রার্থনা, আচার-ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। এসব কিছুই সহজ হয়ে যায়, যখন আপনার হৃদয়ে ইসলাম থাকে। আমি যা বলেছি, বাচ্চা বড় করার ব্যাপারে তার বাইরেও অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু আমার সব কৌশলই আসে ইসলাম থেকে। ৮টা-৫টা কাজ করা একজন পিতার কাছে যা আশা করা যায়, আমার স্বামী সন্তান পালনের ব্যাপারে তারচেয়ে অনেক বড় ভূমিকা নিয়ে থাকে। আমার উচিত আদর্শ উদাহরণ হবার চেয়েও বেশী কিছু করা, যাতে আমি তাদের সর্বোত্তম ধরনের আদর-যত্ন দিতে পারি।

আমার স্বামী এবং আমি আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করি, যাতে ছেলেমেয়েকে ইসলাম সম্মত উপায়ে বড় করতে পারি। একবার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবার বয়সে পৌছালে তা অবশ্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারা এমন সব ব্যাপারের কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, যা, আমরা বরং চাইতাম যেন তারা কম বয়সে না জানুক। যাহোক, আলমহামদুলিল্লাহ। আমাদের দুটি হিজাব পরিহিতা মেয়ে আছে, তাই আমার মনে হয় না আমরা ছেলেমেয়েদের বড় করার ব্যাপারে খুব খারাপ করছি। আমি আশা করি, আমার বাচ্চারা তাদের যে কোন ইসলামিক প্রশ্নের উত্তর পেতে আমার কাছে আসতে কখনোই দ্বিধা বোধ করবে না। তার পরিবর্তে আমি আশা করবো, আমার দেয়া দিক-নির্দেশনা তারা গ্রহণ করবে।

অনেক মেয়েই বলেছে যে, তারা যেভাবে ছেলেমেয়ে বড় করছে, তা তাদের যেভাবে বড় করা হয়েছে তার চেয়ে খুব আলাদা কিছু নয়। শুধু তারা যে ইসলামিক আদর্শ ও প্রশিক্ষণের উপর জোর দিচেছ, এটুকুই নতুন। তাদের ছেলেমেয়ের জীবনের উপর বাইরের প্রভাব সম্বন্ধে তারা খুবই সচেতন এবং তাদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতেও তারা খুবই মনোযোগী। এমনকি যখন তারা তাদের ইসলামিক পথের দিক-নির্দেশনা দিয়ে চলেছে।

আমার বাচ্চারা বড় হচ্ছে অনেকটা আমি যেভাবে বড় হয়েছি, কেবল আলাদা ব্যাপার হচ্ছে আমি আশা করছি তাদের বাড়িতেই স্কুল করাবো। বাচ্চা বয়সে আমি একটা দৃঢ় শৃঙ্খলার পরিবারে বড় হয়েছি, নিয়ন্ত্রিত টিভি, অনেক বই, অনেক ক্যাম্প যাত্রা, নিয়ন্ত্রিত বন্ধু-বান্ধব ও সাহচর্য। রবিবার ছিল কেবল নিজ পরিবারের জন্য। আমার স্বামী সপ্তাহে ৫ থেকে ৬ দিন কাজ করে, দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা করে। তার যখন অবসর থাকে, তখন সে বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করে এবং প্রায়ই আমাকে একটু হাল্কা করতে, আমাদের তিন বছর বয়সীকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যায়। আমি তাদের সাথে ২৪ ঘন্টাই রয়েছি, আর তাই বেশীরভাগ শিক্ষা ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব আমারই। আমাদের অবশ্যই আমাদের ছেলেমেয়েদের এমনভাবে বড় করা উচিত, যাতে তাদের নিজেদের সম্বন্ধে এবং নিজেদের আত্মবিশ্বাস সম্বন্ধে, তারা দৃঢ় ধারণা পোষণ করে। তারা অবশ্যই নীতি, মূল্যবোধ এবং যুক্তির উপর ভিত্তি করে ইসলামকে জানবে- কেবলমাত্র হালাল, হারাম ও ওয়াজিব দিয়ে নয়। জীবনের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজটি খুঁজে পেতে, আমাদের তাদের সাহায্য করা উচিত এবং সেটা লাভ করতে সঠিক রাস্তার উপর তাদের নিয়ে দাঁড় করানো উচিত।

যদিও আমার ছেলেমেয়ে লালন-পালনের কিছুটা আমার পরিবারের ঐতিহ্য এবং আমার শৈশব থেকে এসেছে, এমনকি সেসবও ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত। একটাকে অপরটা থেকে আলাদা করার উপায় নেই। মুসলিম হিসেবে আমাদের যা অবশ্য করণীয়, তা পালন করতে গেলে, আমাদের অবশ্যই আমাদের ছেলে মেয়েদের ইসলামিক পদ্ধতিতে বড় করতে হবে- যেমন : কিভাবে নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে এসব শিক্ষা দিতে হবে। আমার স্বামী খুবই সাহায্য করতে ইচ্ছক (এ ব্যাপারে), কিন্তু অধিকাংশ সময়েই সে বাড়ির বাইরে থাকে। সুতরাং বাচ্চাদের শিক্ষাদানের মূল দায়িত্বটা আমার উপরই ন্যস্ত থাকছে। আমি আশা করি আমার ছেলেমেয়েরা কোরআন যেমন বলে, তেমনভাবে আমাকে সম্মান করবে এবং মান্য করবে।

আমার ছেলেদের বড় করার বেলায় ইসলামই হচ্ছে আমার দিকনির্দেশনা। তারা জন্মগত মুসলিম। তারা ইসলাম জানে, সম্মান করে এবং বাস্তবে চর্চা করে। তারা দিনে ৫ বার নামাজ পড়ে, ঠিক যেমনটা আমি পড়ি। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তারা আমার সাথে ইসলাম সম্বন্ধীয় পড়াশোনা করে। ইসলাম হচ্ছে আমাদের জীবন ধারা। আমার স্বামী হচ্ছে একজন সমান অংশীদার। সে তাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চায় এবং সে তাই। তাদের একটা চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবার সমস্যা নিয়ে কোন বিপদ নেই। আমাদের ছেলেরা সন্ত্রাস এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সময়েও সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাড়িয়ে আছে।

বাবা-মায়েরা (মেয়েরা এবং মেয়েদের স্বামীরা) একটা কড়া ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করার প্রবণতা দেখিয়েছে যেখানে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে সম্মান এবং আনুগত্য আশা করা হয়। শৃঙ্খলা প্রণয়ন করা হয়, তবে সাধারণতঃ একটা স্নেহশীল ও দিক-নির্দেশনাকারী উপায়ে। এইসব মেয়েদের বক্তব্যে কঠিন এবং শাস্তিমূলক শৃঙ্খলা গ্রহণযোগ্য বলেও তারা মনে করে না। নীচের বক্তব্যে, তত্ত্বে ও বাস্তবে শৃঙ্খলাকে একজন মেয়ে কিভাবে ব্যাখ্যা করছে, তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে।

বাবা-মায়ের উচিত ছেলেমেয়েদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু হওয়া। ইসলামে বাচ্চাদের চড়-থাপ্পড় মারা, প্রহার করা, বেত মারা অথবা সজোরে ঝাঁকি দেয়া ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ। এগুলো তিরস্কারের এমন সব উপায়, যা মুসলিম বাবা মায়ের ব্যবহার করা উচিত নয়।

নবী মুহাম্মদ (সঃ) এবং তার পবিত্র পরিবারের এমন অনেক সুন্নাহ রয়েছে, যা আমরা দেখতে পাবো, বাচ্চাদের তিরস্কারের বিপক্ষে। সে জন্যেই আমি যখন দেখেছি বাচ্চারা সঠিক আচরণ করেনি, তখন মুখে বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছি এবং সঠিক আচরণটা কি তা তাদের করে দেখাতে চেষ্টা করেছি। এতো ছোট বাচ্চাদের কাছ থেকে সঠিক আচরণ আশা করা উচিত নয় এবং বেত মেরে কোন ফলও আশা করা যায় না। কারণ তারা ব্যাপারটা বুঝতেই অক্ষম- তারা শুধু এটুকুই বুঝবে যে তাদের আহত করা হচ্ছে। একটা বাচ্চা যদি রাস্তায় চলে যায়, বাচ্চাটাকে হাত দিয়ে ধরুন অথবা উঠিয়ে কোলে নিন। বাচ্চাটাকে একটা অধিকতর নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান আর লক্ষ্য রাখুন সে যেন আবার একই কাজ না করে। বেত মারা বাচ্চাকে কোন কিছু করা থেকে বিরত রাখবে না। এটা কেবলমাত্র তাকে ক্রোধান্বিত করবে এবং এর পরে সে অসহ্য হয়ে উঠবে। সে বাবা-মার চোখের আড়ালে নানা কিছু করতে শিখবে যা বাবা-মা করতে নিষেধ করেন।

আমার স্বামী যে সব ঘটনা কখনো ঘটে যায় সে সব নিয়ে এবং তাতে আমাদের বাচ্চাদের ভূমিকা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। সে তাদের ভুল পরিস্থিতির ভুল মূল্যায়ন চিহ্নিত করে কেননা সে তাদের ভালোবাসে এবং তাদের শেখাতে চায়, একই ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে হলে তাদের কর্তব্য কি হবে। সে চায় তারা শিখুক তারা শুধু তাদের কাজের জন্যই দায়ী নয়, বরং কাজের পরিণতির জন্যও দায়ী। আমিও আমাদের বাচ্চাদের সাথে সমস্যা নিয়ে আলাপ করি- তবে আমরা দুজনে একত্রে মিলে কখনো তাদের দোষ ধরি না। যখন আমাদের একজন এ ধরণের কিছু নিয়ে আলোচনা করি, তখন অপরজন চুপ থাকি- কারণ আমরা আমাদের বাচ্চার বিরুদ্ধে দল পাকাতে চাই না। তারপর আমরা তাকে জড়িয়ে ধরি এবং আশ্বস্ত করি, তাকে বোঝাই যে, তার কাজের যে সমালোচনা আমরা করেছি, তা ভালোবাসা উক্ত- আমরা তাকে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় দেখতে চাই- সে যেন তার ভুল থেকে শিখে এবং একই ধরনের ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি না ঘটায়।

অবশ্যই আমরা আমাদের বাচ্চার ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করি এবং তা নিয়ে বার বার কথা তুলি না। বাবা-মায়ের উচিত সারাক্ষণ ছেলেমেদের পিছনে লেগে না থাকা। বাড়িতে ছেলেমেয়ের নিরাপদ বোধ করা উচিত- সব সময় তারা যাই করছে তা নিয়ে যেন শঙ্কিত বোধ না করে থাকে। কিছু বাচ্চারা হয়তো অন্যদের চেয়ে স্পর্শকাতর এবং সমালোচনাকে ভালোভাবে হজম করতে পারে না। তাদের যে কোন সাফল্যে হয়তো সাধারণের চেয়ে বেশী প্রশংসার প্রয়োজন রয়েছে তাদের নিশ্চিত করতে যে, বাবা-মা তাদের ভালোবাসেন। প্রশংসা তাদের নিজের সম্বন্ধে মূল্যায়নকে সমৃদ্ধ করতে পারে, আর তারপর তারা হয়তো নিজের এবং নিজের কার্যকারিতা সম্বন্ধে অপেক্ষাকৃত বেশী নিশ্চিত হয়ে উঠবে।

মা-বাবা হিসেবে আমাদের একমাত্র চাওয়া হচ্ছে, আমাদের ছেলেমেয়ের যেন আমাদের প্রতি, অন্যদের প্রতি এবং তাদের নিজেদের প্রতি সম্মানবোধ থাকে। যদি একটা বাচ্চা অন্যদের প্রতি অসম্মানবোধ পোষণ করে, তবে সেটা এমন একটা অভ্যাসে পরিণত হতে পারে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর। আমাদের বাচ্চারা অল্পবয়সী, আর তাই প্রাপ্তবয়স্ক সিদ্ধান্ত তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। আমার স্বামী এবং আমি তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, যখন আমার বাচ্চারা জুনিয়র হাই স্কুলে উঠবে, তখন থেকে আমরা তাদের বাসায় পড়াবো- এবং এ ব্যাপারে তাদের কোন সিদ্ধান্তের বা মতামতের অবকাশ ছিল না। তাদের বাবা-মা হিসেবে, আমরা জানি তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো কোনটা। সাধারণ স্কুল পদ্ধতি, আমাদের সন্তানদের সর্বদাই মদ, নেশা, যৌনতা এবং সন্ত্রাস ইত্যাদির কাছে উন্মুক্ত করে রাখে । বাড়িতে তিনমাস পড়ালেখার পর আমাদের মধ্যম সন্তান আমাকে বললো যে, সে বাড়িতে রয়েছে বলে খুশী কারণ তার জনৈক ক্লাসমেটের কাছ থেকে এর আগের বছর দৈনন্দিন ভিত্তিতে সে যে অপদস্থ হতো, তা তার এখনো মনে আছে।

তাদের শারীরিক উৎকর্ষের দিকে খেয়াল রেখে আমরা প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিটের শারীরিক ব্যায়ামের ব্যবস্থা করে থাকি। দুপুরের খাবারের পরে তাদের ৩০ মিনিটের অবসর থাকে- বাস্কেটবল খেলার জন্য, কম্পিউটারে কাজ করার জন্য অথবা পড়ার জন্য। স্কুলের পর তারা বাড়ির পিছনের খালি জায়গায় ফুটবল খেলতে পারে বা আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় সাইকেল চালাতে পারে। কি রকমের নাস্তা তৈরি করা হবে তা তারা ঠিক করে এবং তারপর রান্নাঘর ত্যাগ করার আগে তাদের সব পরিষ্কার করে যেতে হয়। বাচ্চাদের গ্রহণ করা প্রতিটি দায়িত্বই আমাদের এ জন্য খুশী করে যে, তারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল হবার পথে বেড়ে উঠছে।

বাচ্চাদের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব সবকিছুর উপরে, কিন্তু তা একটা সঠিক পরিবেশে হতে হবে। কেউ কেউ বাড়িতেই স্কুল করানোর পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, অন্যদের একটা ইসলামিক স্কুলে পাঠানোর অবকাশ রয়েছে এবং আরেক দল মনে করে যে, বাড়িতে যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয়, তা সমেত সাধারণ স্কুলের পরিবেশে পড়তে যাওয়া গ্রহণযোগ্য। ছোট বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যাপারে ইসলামিক দিক-নির্দেশনা, তাদের ছয় বছর পার হবার আগে পর্যন্ত বইয়ের পড়াশোনা থেকে মুক্ত থাকতে অনুমতি দেয়। কিন্তু জীবনের জন্য অন্যান্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, এই প্রাথমিক বছরগুলোতে চালু থাকা প্রয়োজন।

আমার ছেলেমেয়ে বড় করার কৌশলে রয়েছে বাচ্চাদের ভিতর পারিবারিক মূল্যবোধ ও ইসলামিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা, আর তা করতে গিয়ে যদি একটা আবদ্ধ অবস্থা অবধারিত হয় (সাধারণ স্কুল বর্জিত, প্রতিবেশের বন্ধুবান্ধব বর্জিত), তবে সেটাই অবলম্বন করতে হবে। ৬/৭ বছর বয়স পর্যন্ত মুসলিম ছেলেমেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই অর্থাৎ নিয়মিত কোথাও বসে থাকার ও শিখার ব্যাপার যেখানে রয়েছে, সেটার বাধ্যবাধকতা নেই। আমি তাদের এ ধরনের কোন স্কুলে সে পর্যন্ত (৬/৭ বছর) পাঠাবো না। আবার আচরণ শেখা ও শিক্ষার জন্য পশ্চিমা শিশু-মনস্তত্ত্ব ভিত্তিক যে সমস্ত উপায় রয়েছে, আমি তার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু সে সব ইসলামিক ধ্যান-ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

আমি যখন কাজ করি বা ক্লাসে যাই, তখন আমার স্বামী আমাকে বাচ্চা সামলাতে সাহায্য করে এবং সে তখন বাচ্চাদের সাথে থাকে। ছেলেমেয়ে বড় করার ব্যাপারে তার আগ্রহ রয়েছে, সে খুবই স্নেহশীল এবং দয়ালু। সে অবশ্য কিছুটা কড়াও, আর সেটা ভালোও।

ইসলামিক স্কুলগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল এবং ওগুলোর খরচ চালাতে ছাত্রদের কাছ থেকে বেতন নেয়া হয়। বেতন ছাড়াও স্কুলে যাওয়া-আসার ব্যাপারটাও বাবা-মায়ের একটা ভাবনার কারণ হয়ে দাড়ায় এবং বেশ কয়েক মাইল যাত্রা তার সাথে সম্পৃক্ত হয়। যারা ছেলেমেয়েদের জন্য ইসলামিক স্কুলের ব্যবস্থা করতে পারে, তাদের সে জন্য খুবই পরিতৃপ্ত মনে হয় এবং তারা খুব সমর্থন লাভ করছে, এমন একটা অনুভূতি তাদের হয়। মুসলিম ধর্মীয় ভাষা আরবীর সাথে সাথে এসব স্কুলে শৃঙ্খলা, সহানুভূতি, কোরআন, হিজাব পরিধান এবং অন্যান্য ইসলামিক আচার ও অবশ্যকরণীয় সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়া হয়। মুসলিম স্কুলের ছেলেমেয়েরা, স্কুলে নিজ বয়সী অন্য মুসলিম ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এবং নৈতিক আদর্শের এমন শিক্ষা লাভ করে যার মান সাধারণ স্কুলের চেয়ে ভিন্ন।

নিশ্চয়ই, মুসলিম হওয়া, ছেলেমেয়ে বড় করার পদ্ধতির উপর প্রভাব ফেলেছে। আমার বাচ্চারা ইসলামিক স্কুলে যায়, যদিও আমাকে ১৫ মাইল গাড়ি চালিয়ে তাদের পৌছে দিতে হয়। আমার স্বামী বাড়িতে থাকে বলে সেও সক্রিয়ভাবে বাচ্চাদের লালন-পালনে অংশ নেয়। আমার বাচ্চারা জানে, আমাকে সম্মান দেখানো তাদের অবশ্যকরণীয় এবং মায়ের পায়ের নীচে বেহেস্ত। আমার করণীয় হচ্ছে তাদের যত্ন নেয়া এবং তাদের সবচেয়ে ভালো মুসলিম হিসেবে বড় করা।

আমরা যেহেতু ইসলামিক নীতিমালা অনুসরণ করি, আমাদের সন্তান পালনের কায়দা সম্পূর্ণভাবে ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত। আবারও, আমাদের ইসলামিক স্কুলকে ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ আমরা তাদের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করি । আমার স্বামী সন্তান পালনে খুবই সক্রিয়। সে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে এবং তাতে আমার একটু অবসর পাওয়া হয়। সে আমার সাথেও সময় কাটাতে পছন্দ করে, আর তাই কখনো বাচ্চারা এক ‘বেবী সিটারের কাছে যায় (এক মুসলিম বন্ধু)।

ইসলামিক স্কুলে যাবার একটা বিকল্প হচ্ছে বাড়িতে স্কুল করা। এটা কিছু পরিবারের জন্য খুবই ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে, যেখানে মা সারাক্ষণ বাড়িতে থাকছে। আর সে পড়ানোর ব্যাপারে পারদর্শী ও ধৈর্যশীল। কখনো মায়েরা একে অপরের ছেলেমেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। THE ISLAMIC HOME SCHOOL ASSOCIATION OF NORTH AMERICA (IHSANA), পূর্ণ সময় বা আংশিক সময় বাড়িতে শিক্ষাপ্রাপ্ত মুসলিম শিক্ষার্থীদের বাবা-মা দ্বারা গঠিত এবং বাবা-মাদের জন্য গঠিত একটি সংগঠন- যা নিয়মিত পত্রিকা বের করে বাবা-মা’দের সাহায্য করে।

ছেলেমেয়েকে বড় করা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের একটি। বাচ্চাদের বড় করার প্রক্রিয়া একজনকে খুব ভালোভাবে আল্লাহর নৈকট্য দান করতে পারে। প্রথমেই আসে আপনার বাচ্চাকে সম্মান করার বিষয়টি এবং তার মতামতকে সম্মান করার বিষয়টি, যদিও তা কষ্টকর হতে পারে। আমরা যেহেতু আমাদের সন্তানদের ভালো মুসলিম হিসেবে বড় হওয়াটা চাই, আমরা তাদের যতটুকু সম্ভব খারাপ প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে রাখি। প্রতিযোগিতার চাপ এবং অন্যান্য নেতিবাচক শিক্ষার দরুণ, আমাদের ক্ষেত্রে সাধারণ স্কুলের চিন্তা আমরা করিনি। তার পরিবর্তে বাড়িতেই স্কুল করাই। আমি তাদের (বাচ্চাদের) বন্ধু-বান্ধবের স্বাধীনতা দিতে চাই, তাই তাদের আমেরিকান ছেলেমেয়েদের সাথে (অমুসলিম) মিশতে দিই, কিন্তু নেতিবাচক কিছু চোখে পড়লে তাদের সরিয়ে নেই এবং অন্য কর্মকান্ডে নিয়োজিত করি।

বাচ্চাদের বাবা ছেলেমেয়ের লালন-পালনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সে তাদের শিক্ষা-দীক্ষার সাথে জড়িত- ইসলামিক শিক্ষা, কোরআন, নামাজ, ইসলামিক কাহিনী ইত্যাদি। যে কোন সমাজেই ছেলেমেয়েকে ঠিক মতো বড় করতে হলে বাবা-মার তরফে দায়বদ্ধতার প্রয়োজন হয়।

বাইরের জগতের নেতিবাচক প্রভাবের জন্য আমার স্বামী বাচ্চাদের সাধারণ স্কুলে যাওয়াটা চায়নি। যা আমাকে একটা বিকল্প খুঁজে পেতে বাধ্য করেছে, বাড়ির স্কুলে সেই বিকল্প বর্তমান। ছেলেমেয়ে মানুষ করার প্রক্রিয়ার বেশীরভাগই আমার দায়িত্ব। তাকে (স্বামী) বললে সে সাহায্য করে, তবে শখ করে করে না। প্রয়োজনে করে।

আমার অবশ্যকরণীয় হচ্ছে, তাদের একটা মাত্র আদর্শ সামনে রেখে গড়ে তোলা- নবী মুহাম্মদ আর আমার অধিকার রয়েছে এ ব্যাপারে তাদের আনুগত্য এবং সহযোগিতা আশা করার। তাদের অধিকার হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং শিক্ষা আশা করার; তাদের কর্তব্য হচ্ছে, আমাদের দেবার কাজটিকে একটা সুখকর অভিজ্ঞতায় পরিণত করার এবং তারা যা পাচ্ছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ বোধ করার।

আমার ছেলেমেয়ে মানুষ করার উপায়ের উপর, আমি যে মুসলিম তার গভীর প্রভাব রয়েছে। চারিদিক থেকে কিভাবে শয়তান-উক্ত প্রভাব আসে, সে সম্বন্ধে আমার ভালোই ধারণা রয়েছে, আর সে জন্যেই আজ ছ'মাস ধরে আমাদের কোনো টেলিভিশন নেই। সে (ছেলে) ২য় গ্রেড়ে ওঠার পর থেকে আমি তাকে বাড়িতেই লেখাপড়া করিয়েছি আর আমার পরিকল্পনা হচ্ছে তা চালিয়ে যাবার ।

আমার স্বামী যতটুকু সম্ভব সন্তান মানুষ করার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। সে যখন কর্মস্থলে না যায়, তখন সাহায্য করে। একটা বড় বর্ধিত পরিবারের মাঝে (৭ জন প্রাপ্ত বয়স্ক সমেত) থাকাটাও বেশ সাহায্য করে। আমার বাচ্চা আমাকে মেনে চলবে এবং আল্লাহকে স্মরণ করবে। তার বাড়ির প্রতি কর্তব্য রয়েছে। তার জীবনে স্নেহ, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা এবং খেলাধুলার একটা সঠিক সামঞ্জস্য আমাকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে যতটুকু সম্ভব, খোদাভীরুতা এবং ইসলাম তাকে আমি উপহার দিতে পারি।

আমার দেয়া প্রশ্নপত্রের উত্তরে যদিও দেখা যায় যে, ৪৭% পরিবারের ছেলেমেয়ে সাধারণ স্কুলে পড়ছিল, কিন্তু মাত্র একজন মেয়ে তার বাচ্চার সাধারণ স্কুলে শিক্ষা লাভের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছে। কখনো বা পরিবারের মাত্র একটা বাচ্চাই হয়তো সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করছিল এবং ঐ ছাত্র প্রাথমিক না মাধ্যমিক সাধারণ স্কুলে যেতো তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। এখনও কিছু মেয়েরা রয়েছে, যারা তাদের ছেলেমেয়েদের এমন ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুলে পাঠায় যেগুলো ইসলামিক নয় ।

আমার স্বামী এবং আমি, দুজনেই চেষ্টা করছি আমাদের সন্তানদের ইসলামের ভালো অনুসারী হিসেবে বড় করার জন্য। আমরা আমাদের মেয়েদের তফসীর ক্লাসে নিয়ে যাই এবং মুসলিম বন্ধুদের সাথে নানা কার্যক্রমে যোগ দেই। আমরা বাচ্চাদের জন্য ভালো আদর্শ উপস্থাপন করতে চাই, এই বিশ্বাস নিয়ে যে তাদের আমাদের নিকটবর্তী তথা ঈমানের নিকটবর্তী রাখাটা জরুরী। আমরা বাইরের কর্মকান্ড যেমন স্কুল-পূর্বক প্রশিক্ষণ ও শরীর চর্চা ইত্যাদিতেও উৎসাহ দিয়ে থাকি যাতে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্নবোধ না করে। আমরা তাদের বেড়ে ওঠা।

বছরগুলোব্যাপী তাদের জন্য বিকল্প বিনোদনমূলক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করবো, যাতে আমরা যখন তাদের এমন কোন স্কুল-অনুষ্ঠানে যেতে বারণ করবো, যা মুসলিমদের জন্য ঠিক নয়, তারা যেন কষ্ট না পায় (যেমনঃ CHRISTMAS উপলক্ষে সঙ্গীত, নাচের অনুষ্ঠান, যৌথ পার্টি ইত্যাদি) আমরা বিশ্বাস করি, সাধারণ স্কুলে পড়েও ইসলামের বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে বড় হওয়া যায়। আমরা সরাসরি সাফল্যের অভিজ্ঞতা দেখেই বলছি- তবে প্রবল সমস্যা দেখা দিলে বিকল্প শিক্ষার পথ খুঁজবো।

৪৮
যৌথভাবে অংশগ্রহণকারী বাবা-মা
জরিপে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বাবা ও মা উভয়েই ছেলেমেয়ের যত্ন এবং প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত ছিল। বাবা-মায়ের কাছ থেকে ছেলেমেয়ের প্রাপ্য এবং ছেলেমেয়ের কাছ থেকে বাবা-মাদের প্রাপ্য অধিকার, এসবের উপর ভিত্তি করে ছেলেমেয়ের এবং বাবা-মায়ের অধিকারের প্রসঙ্গ এসেছে। তারা (জরিপের মেয়েরা) মনে করে, হুজুগের মাথায় যা খুশি তাই করাটা সন্তানদের অধিকারভুক্ত নয়। বাচ্চাদের অধিকার রয়েছে নির্দেশিত পথে বাবা-মায়ের ভালো দিক-নির্দেশনা পেয়ে পরিচালিত হবার এবং তাদের অধিকার রয়েছে নিরাপত্তা, যত্ন ও এমন ব্যবহার লাভ করার যা তাদের ভালো মাপের আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে সহায়তা করবে। অপরদিকে বাবা-মায়ের অধিকার রয়েছে সম্মান ও যত্ন লাভ করার। ঐ সমস্ত অধিকারের রূপরেখায় নিহিত রয়েছে সম্মান, কঠিন পরিশ্রম এবং এক ধরনের কর্তৃত্বের ধারণা যা আমাদের এই গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন- যেখানে ছেলেমেয়েরা তারা কি চায়, সে ব্যাপারে তাদের অধিকার অনেক কম বয়সেই দাবী করে বসে।

একটা হাদীস (নবী মুহাম্মদের কথা, কাজ অনুশীলন) বলে, মায়ের কোল হচ্ছে প্রথম বিদ্যালয়। আমার ধর্মান্তরিত হওয়াতে একমাত্র যা পরিবর্তিত হয়েছে তা হচ্ছে, আমার বাচ্চাদের অধিকার সম্বন্ধে আমার সচেতনতা। আগে তাদের চুপ করানোটা সহজ ছিল, কিন্তু (এখন আমি বুঝি) তাদের অধিকার রয়েছে, যেন তাদের বক্তব্য শোনা হয়। আগে তাদের পশ্চাদদেশে দুই ঘা লাগিয়ে দেয়াটা সহজ ছিল, এখন মনে হয় আঘাত করাটা কি যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে কিনা? ভিতরে বা বাইরে আপনি ক্ষতচিহ্ন রাখতে পারেন না। আমাকে অবশ্যই প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার সম্বন্ধে এবং আমার দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হয় তাদের খাওয়ানো, পরানো এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও ধর্মীয় উভয় শিক্ষা দেয়া, একদিন আমাকে এসবের জন্য জবাব দিতে হবে।

আমাদের সন্তান প্রতিপালনের কৌশল রক্ষণশীল ও কঠোর, কিন্তু অনেক ভালোবাসা, বুকে জড়িয়ে ধরা (বাচ্চাদের) ও চুমু সমেত। আমার স্বামী সব সময়ই সন্তান লালনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছে। বাচ্চাদের উপর আমার অধিকার, তাদের উপর আমার স্বামীর অধিকারের চেয়ে হয় বেশী নয় সমান সমান তো বটেই। আমার কর্তব্য হচ্ছে তাদের উপযুক্ত পরিবেশ, নিয়মকানুন ও স্নেহমমতা দেয়া যাতে তারা ঠিক-বেঠিকের পরিচ্ছন্ন দৃষ্টি সম্পন্ন সহানুভূতিশীল ও সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষে পরিণত হতে পারে।

আগে যেমনটি বলা হয়েছে, স্ত্রীর বাইরে কাজ করা বা না করার অথবা তার পড়াশোনার জন্য বাইরে যাবার প্রয়োজন আছে কি নেই তার উপর নির্ভর না করেই স্বামীদের বাচ্চাদের যত্নে সক্রিয় হতে দেখা গেছে প্রায়ই। বাবারা বিশেষতঃ সক্রিয়ভাবে বাচ্চাদের দিক-নির্দেশনা প্রকল্পে জড়িত থাকার প্রয়োজন বোধ করে, যখন তারা এমন একটা দেশে বসবাস করে যার প্রশাসন স্বাভাবিকভাবে ইসলামিক নীতিমালা বাস্তবায়নে সমর্থন প্রদান করে না। বৃহত্তর পরিবার বর্তমান না থাকায়, সক্রিয় অংশগ্রহণ (সন্তান পালনে) আরও প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। মেয়েরা তাদের উত্তরে বাবার সক্রিয় অংশগ্রহণের সঠিক কারণ চিহ্নিত করেনি। তবে তারা তাদের স্বামীর সন্তান পালনে এবং প্রশিক্ষণে সক্রিয় অংশ গ্রহণকে পছন্দ করে বলেই মনে হয়।

আমি যদি মুসলিম না হতাম, তবে আমাদের বাচ্চারা কি শিখছে এবং কে তাদের পড়াচ্ছে, তা নিয়ে যতটুকু চিন্তিত হতাম, এখন তার চেয়ে অনেক বেশী চিন্তিত ও ভাবিত বোধ করি। বাচ্চাদের সাথে বিকালে সময় কাটানো, খেলা করা, তাদের কিছু পড়ে শোনানো এবং বিভিন্ন ব্যাপারে তাদের শিক্ষা দেয়া- এসবের মাধ্যমে আমার স্বামী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। সে তাদের খাওয়াতে এবং শৌচকর্ম প্রশিক্ষণে সহায়তা করে এবং কখনো তাদের গোসলও করায়। কখনো বাইরে যাবার সময় সে আমাদের ছেলেকে সাথে নিয়ে যায়, যাতে তাদের আরও বেশী একত্রে থাকা হয় এবং আমার কিছুটা অবসর হয়। তাদের সব প্রয়োজন মিটাতে প্রায় ৯৫% সময়েই আমি উপস্থিত থাকি। আমি তাদের সাথে যে কোন যুক্তিযুক্ত আচরণ করতে পারি। আমি যেখানেই যাই, সেখানেই তাদের নিয়ে যাবার ব্যাপারে আমার স্বামীর সার্বক্ষণিক অনুমোদন রয়েছে।

প্রথম দিন থেকেই সন্তান পালনের ব্যাপারে আমার স্বামী খুবই সক্রিয় এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। বহু বছর ধরে, আমি যখন বাড়ির বাইরে কাজ করি, তখন সে আমাদের মেয়েকে দেখা শোনা করে। সে কখনোই মেয়েকে আঘাত বা বেত্রাঘাত করেনি এবং প্রায়ই তাকে নিয়ে খেলে। আমার প্রায়ই মনে হয়, তার অনেক প্রত্যাশা- কখনো যুক্তি বহির্ভূত পোশাক-আশাক ইত্যাদির ব্যাপারে। তখন আমরা কথা বলি এবং একটা সমঝোতায় পৌছি।

আমার সন্তান পালনের পদ্ধতি, আমার মুসলিম হওয়া দ্বারা প্রভাবিত নয়। আমি এখন যা করি, তার বেশীর ভাগই ধর্মান্তরিত হবার আগেই করতাম। বাচ্চাদের সামলানোর ব্যাপারে আমার ধৈর্যের মাত্রা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু পদ্ধতিতে আমি কোন পরিবর্তন আনিনি। আমার স্বামী যতটুকু সম্ভব, সন্তান পালনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। সে যখন বাড়িতে থাকে তখন কাজকর্ম আমরা প্রায় আধা-আধি ভাগ করে নেই। একদিন অন্তর সে বাচ্চাদের গোসল করায়, তাদের হাত ধুতে এবং দাঁত মাজতে সাহায্য করে, তাদের ঝগড়া-ঝাটি সামলায়, নাস্তা বানিয়ে দেয় এবং কখনো আমাদের রাত্রিকালীন গল্পের আসরের জন্য পড়ে শোনায়। আমার বাচ্চারা ছোট (৬ এবং ৪ বছর)। আমাদের একের প্রতি অপরের (আমার ও সন্তানদের) কর্তব্য ইত্যাদি এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায়ের।

সন্তান প্রতিপালনে তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে মেয়েরা যা বলেছে, তাতেই তারা এই ভূমিকাকে কতটুকু গুরুত্ব সহকারে বুঝেছে বা অনুধাবন করেছে তা প্রতিফলিত হয়। যে ধরনের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পেলে তাদের সন্তানরা বড় হয়ে নিজেদের আল্লাহর কাছে সমর্পিত করবে এবং অনুশীলনরত ভালো মুসলিম হবে, ঠিক সেই ধরনের প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সন্তানদের জন্য ব্যবস্থা করার একটা আকুলতা রয়েছে এই সব মেয়েদের মাঝে। আমরা যারা আমাদের নিজস্ব ধর্মীয় ঐতিহ্যের মাঝে সন্তানদের বড় করেছি, তারাও কামনা করেছি যে, আমরা যেন সন্তান প্রতিপালনের কাজটি ঠিকমতো করতে পারি, যাতে আমাদের সন্তানরা এমন পথে যায়, যা তাদের ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের (লেখিকার ও মেয়েদের) বাসনা কতই না সদৃশ!

৪৯
ভিন্ন পথকে শ্রদ্ধা করা সম্পর্ক গড়ে তোলা ও বজায় রাখার জন্য একত্রে কাজ করা
শুরুতে JODI’র ভিন্ন জীবনযাত্রা এবং পোশাক-আশাক, আমাদের গোটা পরিবারের জন্যই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। JODI'র মামা যে JODI'র চেয়ে খুব একটা বড় নয় বয়সে, ঠাট্টাচ্ছলে একজন বহিরাগতের সামনে JODI’র স্কার্ফ সম্বন্ধে একটা মন্তব্য করে বসলে JODI সাংঘাতিকভাবে আহত বোধ করে। অথচ এই মামাই স্বপ্নে দেখেছিল যে, JODI বিপদে রয়েছে এবং সেই তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করছে। সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে এক সাথে বড় হওয়া চাচাতো বোন, নতুন জীবন ধারায় JODI'র সাথে কিভাবে ভাবের আদান-প্রদান করবে তাই ভেবে পাচ্ছিল না। তার দাদী মানতে পারছিলেন না এমন সব পরিবর্তন আনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ব্যাপারটা কিন্তু, তিনি যেহেতু মূলতঃ স্নেহপরায়ণ এবং মুক্ত মনের, তিনি অবস্থাটাকে একটা স্নেহশীল উপায়ে সামলে দেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে অস্বস্তিকর অবস্থা ছিল, যা সময়ের সাথে সহজ হয়ে গিয়েছে। সময় এবং কাছাকাছি থাকার যে সুযোগ আমরা পেয়েছিযার ফলে আমাদের মাঝে সম্পর্কের বিভিন্ন পরিবর্তনকে আমরা সঠিকভাবে সামলে উঠতে পেরেছি- তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। JODI ও REZA-ও অবশ্য তাদের করণীয়টুকু নিশ্চিতভাবে পালন করেছে। তাদের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল যে, তারা কোথায় ছাড় দিতে পারবে, তাদের কাছে কি গুরুত্বপূর্ণ আর কিভাবে তারা তাদের ধর্মীয় দায়বদ্ধতা বজায় রেখেও পরিবারের সাথে সম্পর্ক রেখে চলবে।

প্রতিটি ব্যক্তির (এবং প্রতিটি পরিবারের) এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে, সে কে, সে/ তারা কি বিশ্বাস করে এবং কোন মূল্যবোধগুলো তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতি নির্বিশেষে সব মানুষের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার এটা একটা স্বাভাবিক এবং জরুরী অংশবিশেষ। সুতরাং একটা পরিবার, জাতি অথবা একটা ধর্মীয় ব্যবস্থার ভিতরে বিভিন্ন ধরণের বিশ্বাস ও আচার-আচরণ বর্তমান থাকতে পারে।

ইসলামী বিশ্বের মাঝে রয়েছে বিভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি এবং জাতিসত্তার মানুষ। এক অংশের সংস্কৃতিতে যা অতি স্বাভাবিক তা হয়তো অপর একটি ইসলামিক এলাকায় একেবারেই অজানা। ইসলামিক মতে কর্মকান্ডকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায় ? (১) অবশ্যকরণীয় (২) যা করতে উৎসাহ দেয়া হয় (৩) বৈধ বা হালাল (৪) যা করতে নিরুৎসাহিত করা হয় (৫) হারাম বা নিষিদ্ধ। অবশ্যকরণীয় এবং নিষিদ্ধ ব্যাপারগুলো বিশ্বজনীন এবং সব ইসলামিক ভূমিতেই মেনে চলা বাঞ্ছনীয়। অবশ্যকরণীয়ের উদাহরণ স্বরূপ দৈনিক নামাজ ও রমজানের রোজার কথা বলা যায়। নিষিদ্ধ বা হারাম কাজের ভিতর মদ্যপান, প্রতারণা, মিথ্যাচার এবং শূকরের মাংস খাওয়া এসব পড়বে। অন্য তিনটা ব্যাপার ঃ উৎসাহিত (অথবা যা করাটা খুব ভালো), বৈধ বা হালাল (এখানে লেখিকা সম্ভবতঃ বোঝাতে চাচ্ছেন, বৈধ জিনিস থেকে নিজ পছন্দে বেছে নেয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ গরুর মাংস হালাল, তাই ইচ্ছা করলে খাওয়া যায়, কিন্তু খেতে হবেই এমন কোন কথা নেই) অথবা সাবধানতামূলক ব্যক্তিগত পছন্দের পর্যায়ে পড়ে। নফল নামাজ, বিয়ে ও সংসার করা, সৎ কাজ করা অথবা গল্প করার মতো আচরণ সম্বন্ধে সাবধানতা অবলম্বন করা- এ সবই এই শেষোক্ত শ্রেণীভুক্ত। জীবন ধারণের অনেক দিকনির্দেশিকা রয়েছে, যা অনেকাংশে নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট মুসলিম সমষ্টির উপর, কেউ কোন্ চিন্তাধারার বা মাজহাবের অনুসারী তার উপর অথবা মেয়ের স্বামী যে দেশ থেকে আগত সে দেশের আচার-আচরণের উপর।

আমেরিকান ধর্মান্তরিত মেয়েরা তাদের অতীত এবং তাদের অভ্যাস ইত্যাদির সাথে ইসলামিক আচার-আচরণ সংযুক্ত করতে চেষ্টা করছে। এই সব কন্যারা যে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে, তার ফলশ্রুতিতে তাদের আত্মীয়তার সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। মুসলিম এবং অমুসলিমদের সামাজিক অভ্যাস ভিন্নতর, বিশ্বাসসমূহ একে অপরের পরিপন্থী হতে পারে। আর আদি পরিবার ও কন্যারা, উভয় পক্ষকেই নিজেদের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখার নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এমন কিছু দিক-নির্দেশনা আছে, যা আমরা যখন আমাদের কর্মস্থলে, পরিবারে, জনসমক্ষে কোন মুসলিমের সঙ্গে চলাফেরা করি, তখন মনে রাখতে পারি (যা বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত মুসলিমদের বেলায়ও প্রযোজ্য)।

৫০
খাবার এবং পানীয় সংক্রান্ত বিবেচনা
অনুশীলনরত মুসলিমরা শূকরের মাংস সম্বলিত খাবার এবং মদকে হারাম (নিষিদ্ধ) মনে করে থাকে। খাদ্যদ্রব্য কেনার সময় তারা লেবেল দেখে নিশ্চিত হয় যে, খাবারে ঐ ধরণের কোন উপাদান মিশ্রিত নেই।

এ ছাড়া বহু অনুশীলনরত মুসলিম কেবল মাত্র সঠিক উপায়ে জবাই করা হালাল মাংস খেতে চেষ্টা করে। এসব মাংস বিশেষ দোকান থেকে কেনা হয় অথবা একটা পরিবার নিজেরাই পশু জবাই করে মাংসের ব্যবস্থা করে।

কোন মুসলিম পরিবার বেড়াতে এলে কী খেতে দিলে সবচেয়ে ভালো হয়, তা তাদের সাথে আলাপ করে ঠিক করাটাই শ্রেয়। নিরামিষ বা মাছ পরিবেশন একটা বিকল্প উপায় হতে পারে অথবা তারা একটা হালাল খাবার, প্রধান পদ হিসেবে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারে; তার সাথে ঘরে যা তৈরি করা হয়েছে তাও পরিবেশন করা হলো। কিছু মেয়েরা পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলে, সেখানে পরিবেশিত খাবার নিয়ে উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছে।

আমি যখন আমার মা-বাবার সাথে দেখা করতে যাই, তখন সাধারণতঃ অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। আমরা যেহেতু শুধুমাত্র মুসলিম উপায়ে জবাই করা হালাল মাংস খাই, অন্যকিছু খেতে আমরা অনিচ্ছুক, তাই সাধারণত আমরা নিজেদের খাবার সঙ্গে নিয়ে যাই। আমরা যদিও ইসলামিক মতে জবাই করার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছি, তবু আমাদের খাবার নিয়ে যাওয়াটা তাদের কাছে অস্বস্তিকর। তারা ভাবলেন এটাও আরেকটা প্রত্যাখ্যান, বুঝি বা তাদের খাবার আমাদের উপযোগী নয় অথবা তা অপরিষ্কার বলে মনে করা হচ্ছে। যাহোক, তার যখন আমার বাসায় আসেন, তখন আমি যা রান্না করি তাই তারা খেয়ে থাকেন এবং আমাদের সময়টা যেন অনেক বেশী সুখকর এবং কম অস্বস্তিকরভাবে কেটে যায়।

আমি কখনো আমার বাচ্চাকে আমার মা-বাবার কাছে রাখতে যাবো । ঐ বাড়িতে শূকরের মাংসের খুব বেশী ছড়াছড়ি।

নিজের পরিবারকে দেখতে যাওয়ার সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে খাওয়া-দাওয়া। তারা কি খাচ্ছেন সেদিকে তাদের কোন ঐক্ষেপ নেই। আমার বাবা-মা কখনো রেগে আগুন হয়ে যান, যখন আমি তাদের বলি যে, তারা যা খাচ্ছেন আমি তা খেতে পারবো না।

আমি আমার ছেলেমেয়েকে আমার পরিবারের কাছে রাখি না। আমি মুসলিম হবার পরে কখনো তাদের কাছে দু'ঘন্টার বেশী সময়ের জন্য যাইনি। এভাবে আমি একটা সম্ভাব্য সমস্যা এড়িয়ে চলি- হালাল খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যে সমস্যা হয়। আমার মা-বাবা হালাল/হারাম এর ধারণাটা বুঝতে বা মানতে চান না। আমরা এই ইস্যুটা এড়িয়ে চলি এবং তাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করি না।

অধিকাংশ মুসলিমের জন্যই মদ জাতীয় পানীয় আপত্তিকর এবং তাদের উপস্থিতিতে তা পরিবেশন (অন্য কাউকেও) না করলেই তারা স্বস্তিবোধ করে। তারা এমনকি সে সব রেস্তোরাও এড়িয়ে চলতে পারে, যেখানে বার রয়েছে বা মদ বিক্রি করা হয়। তারা প্রায়ই হয়তো ব্যবসা ভিত্তিক বা কোম্পানির ভোজসভা এড়িয়ে যেতে চাইবে, যদি তাতে মদ জাতীয় পানীয় দ্বারা আপ্যায়নের আয়োজন থাকে।

৫১
পোশাকের শালীনতা এবং সামাজিক সম্পর্ক
অনেক মুসলিমই এমন স্থান বা মাধ্যম এড়িয়ে চলতে চায় যেখানে পোশাকের স্বল্পতা বা অশোভন আচরণের প্রদর্শনী হয়- যা তারা আপত্তিকর মনে করে। এমনকি পারিবারিক সুইমিংপুলও এমন একটা স্থান বলে গণ্য হতে পারে। বাবা, স্বামী ও ভাই ছাড়া বাকিদের সামনে মেয়েরা হয়তো সাধারণ নিয়ম হিসেবেই হিজাব পরে এবং মাথা ঢেকে থাকতে পারে। পরিবারের সাথে থাকা অবস্থায় বাইরের কোন পুরুষ এসে হাজির হলে পরিবার যদি তাকে মাথা ঢেকে নেয়ার অবকাশ দেয়, তবে সে স্বস্তিবোধ করবে।

মুসলিম বাচ্চাদের উপস্থিতিতে কি ধরনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখা হচ্ছে, সে সম্পর্কে সচেতন থাকাটাও জরুরী। বাচ্চাদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু অনুষ্ঠান, যা আমেরিকান বাচ্চারা দেখে থাকে, সেগুলোও মুসলিম বাবা-মাদের কাছে তাদের ছেলেমেয়ের জন্য অনুপযোগী মনে হতে পারে। বাচ্চাদের উপস্থিতিতে তাই অমুসলিমদের জেনে নেয়া উচিত, কতটুকু অনুমোদিত। এমনকি অনেক মুসলিম প্রাপ্তবয়স্কও নিজেদের সব অনুষ্ঠান দেখাটা অনুমোদন করেন না। যে সমস্ত দৃশ্যে প্রেমিক-প্রেমিকার একান্তে অবস্থান দেখানো হয়, নাচ অথবা নামমাত্র পরিচ্ছদ পরা দৃশ্য ইত্যাদি সাধারণতঃ এড়িয়ে চলা হয়।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বাচ্চাদের বিজ্ঞাপনী অনুষ্ঠান, নাচ, র্যাপ সঙ্গীত, ডেটিং দৃশ্য, খোলামেলা দৃশ্য এ সমস্ত দেখাটা পছন্দ করি না। দুমিনিট টিভি চালিয়ে রাখলেই যা কিছু চোখে পড়ে। আমি চাই না, তারা ঐ সমস্ত সঙ্গীতে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক, যেগুলোতে প্রাপ্ত বয়স্ক "ROCK AND ROLL" তাল রয়েছে, যদিও বা ওসবে বাচ্চাদের উপযোগী কথা থেকে থাকতে পারে। আমার বাবা-মা এসব এড়িয়ে চলার ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন।

নারী/ পুরুষের সম্পর্কেরও অবশ্য দিক-নির্দেশনা রয়েছে। পুরুষরা নারীদের সাথে করমর্দন করে না এবং প্রায়ই সরাসরি তাদের চেয়ে দেখে না। পুরুষরা কোন মুসলিম নারীকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা উচিত এবং খোলাখুলিভাবে কৌতুহলী ও বন্ধুত্বপূর্ণ ভাব দেখানো থেকেও বিরত থাকা উচিত। একজনের কথাবার্তায় সংযত হওয়া উচিত, তথাপি আচার-ব্যবহারে দ্র হওয়া উচিত। সাধারণতঃ সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে পুরুষদের কেবল পুরুষদের সাথে আলাপ করা এবং মেয়েদের কেবল মেয়েদের সাথে। মেয়েরা প্রায়ই দেখা যাবে অন্য মেয়েদের গালে গাল ঠেকিয়ে সম্ভাষণ জানায়।

৫২
ছুটি উদ্যাপন এবং উপহার আদান-প্রদান
সাধারণভাবে মুসলিমদের জন্য, আর বিশেষভাবে ধর্মান্তরিত মেয়েদের আদি পরিবারের জন্য আমেরিকান ছুটির দিনগুলো অত্যন্ত ঝামেলার হতে পারে । মদ সমেত অফিস পার্টি, নাচ এবং ঢলাঢলির পরিবেশ; মদ, শূকরের মাংস বা টার্কির মতো উপহার দেয়া; জাতীয় বা খৃস্টান ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সাজসজ্জাএসবই মুসলিমদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ব্যবসায়িক জগতে উৎসব উদ্যাপনের ব্যাপারটা এড়িয়ে চলাই হয়তো মুসলিমদের জন্য স্বাভাবিক আচরণ হতে পারে।

পরিবারগুলো ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে তাদের উৎসবের সময়গুলোকে মোকাবেলা করেছে। কিছু কিছু মেয়েরা গতানুগতিক পশ্চিমা উৎসবের অংশ হতে মোটেই রাজি নয়। অন্যরা উদযাপন রীতির পরিবর্তন করেছে, যাতে সে সময়টায় পরিবারের সাথে থাকতে পারে। কেউ কেউ অবশ্য প্রায় আগের মতোই সবকিছুতে অংশগ্রহণ করে।

আমার বাচ্চারা দুই ধর্মেরই সবচেয়ে ভালোটুকু পেয়ে থাকে। আমার বাবা-মা ও শ্বশুর বাড়ি CHRISTMAS নিয়ে খুবই মাতামাতি করে থাকে। আমরা তাদের উপহার গ্রহণ করি এবং ছেলেদের কাছে এর অন্তর্নিহিত ধারণা ব্যাখ্যা করি। তারা আমাদের শূকরের মাংস বা মদ পরিবেশন করে না। আমার পরিবার হচ্ছে আমার জীবন। কোন সমস্যা নেই। অনেক স্নেহ-ভালোবাসা চারিদিকেযেমন সব সময়ই ছিল। THANKSGIVING মনে হচ্ছে এমন একটা উৎসব যা সহজেই সামাল দেয়া যায়- যদি হালাল মাংস বা বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা করা হয়। কোন দম্পতির সন্তান লাভের সাথে সাথে মনোবৃত্তির পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং মুসলিমরা এখন যে উৎসব উদযাপন করছে, তা থেকে তখন নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারেবিশেষতঃ সেগুলো যদি অমুসলিম ধর্মীয় উৎসব, এমনকি জাতীয় উৎসবও হয়। অমুসলিমদের মতো করে জন্মদিন উদ্যাপিত নাও হতে পারে এবং কার্যকলাপে কিছু আপোষ করারও প্রয়োজন হতে পারে।

মুসলিম উৎসবগুলো মুসলিমদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা পূর্ণ একাগ্রতার সাথে সেগুলো উদযাপন করে থাকে। ঈদুল ফিতর বা রমজান মাসের পরের প্রথম দিন হচ্ছে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এ সময় উপহার আদান-প্রদান হয়, কার্ড পাঠানো হয় এবং সম্মতি সাপেক্ষে (আদি পরিবারের) ও সুবিধাজনক হলে মেয়েদের আদি পরিবারকে উৎসবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই অন্তর্ভুক্তি মনে হয় একটা ব্যতিক্রম, কেননা প্রায়শঃই ঈদ অন্যান্য মুসলিমদের সাথে একত্রে উদযাপন করা হয়ে থাকে। খৃষ্টান এবং জাতীয় উৎসবের ব্যাপারে মেয়েরা নিজেদের আদি পরিবারকে নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছে এবং তাদের এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়েছে যে, ঐ সমস্ত সময়গুলোতে তারা তাদের পরিবারের সাথে কোন পর্যায় পর্যন্ত এক সাথে থাকতে চায়।

আমি ‘উৎসব বা ছুটির দিন' নিয়ে কথা বলাটা এড়িয়ে চলি। আমার ভাই এবং বোন বোঝে যে, আমি ওগুলো উদযাপন করি না এবং তারা সেজন্য আমাকে সম্মান দেখায়। কিন্তু আমার বাবা-মা তা বুঝতে রাজি নন এবং প্রতি বছরই, বার বার আমি ছুটিতে আসছি কিনা জিজ্ঞেস করতে থাকেন এবং আমার, আমার স্বামীর ও আমাদের বাচ্চাদের জন্য কেনা উপহারগুলো কি করবেন তা জানতে চেয়ে থাকেন।

আমার বাবার মা, আমার বাবার ছেলেবেলায় খুব অসুস্থ ছিলেন আর তার বাবা ছিলেন মদ্যপ। আমার মায়ের জন্মদাত্রী মা, তাকে ২ বছর বয়সে ত্যাগ করে চলে যান। তাই আমার বাবা-মা, উৎসবসমূহের সময়ে আমার ভাই ও আমার জন্য বিশেষ কিছু করতে চাইতেন (তাদের পরিবার শুধু আমাদের নিয়েই, এমন একটা বোধ ছিল তাদের)। আমি যে এখন আর CHRISTMAS উদযাপন করি, এ ব্যাপারটা তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। তাদের তরফ থেকে খুবই আপোষকামী মনোভাব থাকাতে আমরা তাদের অনেক অনুভূতিকে সম্মান করতে চেষ্টা করি। তারা আমাদের বাচ্চাদের জন্য CHRISTMAS উপহার পাঠাতে পারেন এবং ওগুলো বাচ্চারা কেবল তখনই খুলে দেখতে পারে, যখন আমরা কোরআন নিয়ে বসে JESUS-এর জন্ম এবং MARY সম্বন্ধে বলা কথাগুলো এবং তাদের সম্বন্ধে কতটুকু কি বিশ্বাস্য বলে কোরআনে বলা হয়েছে তা পড়ে শেষ করি।

THANKSGIVING, শূকরের মাংস বাদ দিয়ে মুসলিম উপায়ে জবাই করা হালাল TURKEY দিয়ে উদ্যাপন করা হয়। আমরা এটাকে এক সাথে খাবার একটা অজুহাত বানিয়ে নিয়েছি। আমার বাবা-মা তাতে রাজী হন, সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। এটা পারিবারিক বন্ধন ও স্মৃতি রক্ষা করতে সাহায্য করে।

আমার মা, বাবা ও ভাই ঈদের উপহারের জন্য অধীর হয়ে ওঠে, যা এখন CHRISTMAS-এর উপহারের স্থান দখল করেছে। আমি আমার বাচ্চাদের জন্য ইসলামিক উৎসবের উপর গুরুত্ব আরোপ এতে সত্যি সত্যি চেষ্টা করি। আমি আমার মা ও CHRISTMAS-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হই, তাই আমাকে অন্য সবকিছু ছাড়িয়ে ইসলামিক উৎসবসমূহের উপর বেশী গুরুত্ব দিতে হয়।

আমার পরিবার সত্যিকার অর্থে CHRISTMAS-কে খৃষ্ট ধর্মীয় উৎসব হিসেবে দেখে না (JESUS CHRIST-এর জন্মদিন হিসেবে নয়)। কিন্তু সবাই যেহেতু CHRISTMAS উপলক্ষে স্বাভাবিকভাবে ছুটি পেয়ে থাকে এবং অনেক ভাই-বোনদের এমন পরিবারে বিয়ে হয়েছে, যারা খৃষ্ট ধর্ম মানে, আমাদের এখন একটা পারিবারিক ভোজের ব্যবস্থা হয় এবং কিছু উপহার আদান-প্রদান হয়।

আমি আমার পরিবারকে বেশী বেশী করে আমাদের ইসলামিক উৎসবসমূহে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, কিন্তু অনেক সময়ই এর অর্থ হবে ২/৩ ঘন্টার পথ অতিক্রম করে যেখানে অন্যান্য মুসলিমরা একত্রিত হয় সেখানে যাওয়া। তেমন সুযোগ খুব বেশী একটা হয়নি। প্রায়ই উদযাপনের প্রধান অংশ হচ্ছে বিশেষ নামাজের জামাত, যাতে তারা অংশগ্রহণ করবে না, কারণ তারা মুসলমান নয়।

আমি আমার ভাই-বোনের ছেলেমেয়েদের ঈদ কার্ড এবং চকোলেট পাঠিয়ে থাকি।

গত ঈদে আমি প্রথমবারের মতো CHRISTMAS-এর সময় আমাকে দেয়া তাদের উপহারের বিনিময়ে আমার পরিবারকে উপহার সামগ্রী দিই।

আমার ইসলামিক উৎসব উপলক্ষে অর্থাৎ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমি আমার মাকে গৃহে প্রস্তুত ঈদ কার্ড পাঠিয়ে থাকি। আমি তাতে হাদীসের মতো বিভিন্ন কথা, যেমন ঃ মায়ের পায়ের তলায় বেহেস্ত ইত্যাদি লিখে দিই। ইসলামিক উৎসবে, পার্কে বা মসজিদে তাদের খেতে ডাকি। আমার মা এবং বোন কি হচ্ছে তা দেখতে আসে।

আমার পরিবার যেহেতু অন্য একটা অঙ্গরাজ্যে থাকে, তারা কখনোই আমাদের ইসলামিক কোন উৎসবে শরীক হয়নি। তারা দূরত্ব বজায় রাখে, আর আমরা উভয় পক্ষই একে অপরকে নিজের মতো থাকতে দেই। কিছু আত্মীয় স্বজনকে আমি ফোন করি এবং CHRISTMAS বা THANKSGIVING উপলক্ষে চিঠি অথবা কার্ড পাঠাই। কখনো CHRISTMAS-এ যোগাযোগ করতে

পারলে, জানুয়ারির প্রথম দিনে আমি তাদের ফোন করে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।

আমাদের বিয়ের পরে প্রথম দিকে আমরা CHRISTMAS-এ যেতাম এবং উপহার আদান-প্রদান করতাম। কিন্তু এ বছর আমাদের একটা বাচ্চা রয়েছে। এবং আমাদের উচিত বাচ্চাদের এ ব্যাপারে অভ্যস্ত করে ভোলা যে, আমরা CHRISTMAS- এর কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নই। আমার বাবা-মা এ বছর আমাদের উপহার পাঠিয়েছেন এবং আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি, কিন্তু তাদের আমরা কিছু দেইনি। আমরা কোন কার্ডও পাঠাইনি। আমরা ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা করছি এবং আমরা কি করছি তা ব্যাখ্যা করে তাদের একখানা কার্ড পাঠাবো। আমাদের মেয়ে বড় হতে হতে আশা করি এটা আর কোন ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে না। আমি চাই, সে আমার পরিবারের সাথে পরিচিত হোক, তাই সেটা কিভাবে সম্ভব তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

আমার আদি পরিবারের সাথে অস্বস্তির সবচেয়ে প্রধান কারণ ছিল CHRISTMAS– আমাদের উপহার দেয়া ঠিক কিনা, খেতে যাওয়া ঠিক কিনা ইত্যাদি। CHRISTMAS-এর ব্যাপারে একটা সমঝোতায় পৌছাতে অনেক কথাবার্তা ও সময় ব্যয় করতে হয়েছে, কেননা আমি আমার আদি পরিবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না। আমার স্বামী এবং আমি পরিবারের সাথে খেতে গিয়েছি এবং এই ধারণা মনে রেখে তাদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করেছি যে, এটা একটা উৎসব যা আমরা উদযাপন করি না এবং আমরা উপহার বিনিময়ে যাবো না। আমরা বরং এর প্রতি সাড়া দিতে গিয়ে আমাদের ইসলামিক উৎসবে তাদের ডাকবো। সবাই এই ধারণায় একমত হয় এবং মৌসুমের আনন্দ মাটি হয়ে যায়নি।

আমার পরিবার আমাদের ইসলামিক উৎসবে কোন আগ্রহ দেখায় না। এসব উৎসব সম্বন্ধে আমি তাদের কয়েক সপ্তাহ বা মাসখানেক আগেই বলে রাখি, কিন্তু তারা তার তোয়াক্কা করে বলে মনে হয় না এবং আমার মনে হয়, ঐ সময় তারা আমাদের এড়িয়ে চলে।

উৎসবসমূহে এবং জন্মদিনে সাধারণতঃ উপহার দেয়া-নেয়া হয়। এই সব উপলক্ষগুলো কিভাবে পালন করা যেতে পারে, সে সম্বন্ধে খোলাখুলি আলাপ করে নিলে, পরিবারে বা অফিসে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার উপায় অব্যাহত থাকে। একে অপরের অনুভূতিকে সম্মান করতে গিয়ে কিছু নতুন ধরণের আয়োজন করলে হয়তো কোন উৎসব আগের চেয়ে অনেক বেশী বিশেষ হয়ে উঠতে পারে।

বাবা-মা বা আত্মীয় স্বজন, অমুসলিম উৎসব উপলক্ষে মুসলিমদের উপহার না দিলেই ভালো করবেন তার চেয়ে বরং অন্য একটা সময় এর জন্য বেছে নিতে পারেন- তা তাদের একটা উৎসব অথবা উপহার দেয়ার জন্যই কেবল অন্য একটা দিনও হতে পারে। কেউ চাইলে, ঈদ কবে তা জেনে নিতে পারেন এবং ঐ সময় উপহার পাঠানোর কথা বলে রাখতে পারেন- খোজ নিতে পারেন কি ধরণের উপহার দেয়াটা সঠিক হবে। BATMAN, TURTLES, POWER RANGER বা BARBIE ও KEN-এর মত আমেরিকান খেলনা হয়তো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হতে পারে। এমনকি THOMAS THE TANK ENGINE-এর ছবি সমেত কাপড় বা BARNEY সম্বলিত বিছানার চাদরও অগ্রহণযোগ্য হতে পারে। মেয়ের সাথে আলাপ করে নিলে, বাবা-মা হয়তো জানতে পারবেন যে, তার মনে আরো ভালো কোন ধারণা থেকে থাকতে পারে।

তারপর বাবা-মা উপহার দিতে চাইলে, তারা মেয়ের সাথে আলাপে একমত হওয়া কোন সামগ্রী বেছে নিলে তা আনন্দময় হবে।

তারা জানেন যে, আমরা মুসলিম এবং আমরা তাদের মত করে CHRISTIAN উৎসবসমূহ উদযাপন করি না। কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই আমার মা কখনো বাচ্চাদের জন্য উপহার পাঠিয়ে থাকেন- যখন এমন কোন জিনিস তার চোখে পড়ে, যা বাচ্চারা পছন্দ করবে। মা অবশ্য CHRISTMAS-এর সময়েও উপহার পাঠিয়ে থাকেন। আমরা সেগুলোকে নববর্ষের উপহার হিসেবে গ্রহণ করি। আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে নবী JESUS-এর জন্মক্ষণ উদযাপন করি, তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

আমার আদি পরিবার আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে থাকে আর ইসলাম ও ঈদ উৎসব সম্বন্ধে তাদের ধারণাও অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত আমাদের ইসলামী উৎসব উদযাপনে তারা অন্তর্ভুক্ত হননি, কিন্তু তারা যদি কাছে পিঠে থাকতেন, তবে তাদের যতখানি ইচ্ছা, তারা আমাদের উৎসবে ততখানি অন্তর্ভুক্ত হতে পারতেন।

আমরা যে খৃষ্টান উৎসব উদযাপন করি না সে সম্বন্ধে আমার বোন এবং বাবা-মা (বাবা এবং সৎ মা) সচেতন। ঐ সমস্ত উত্সবের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোন উপহার দেয়ার আগে বা কিছু করার আগে তারা সব সময় জিজ্ঞেস করে নেন। তারা আমাদের উৎসবসমূহকে সম্মান দেখান। তাদের কাছে বাচ্চারা থাকলে আমার কোন দুঃশ্চিন্তা হয় না। খৃস্টান, ইহুদী, বৌদ্ধ এবং মুসলিম সম্বলিত বহু বিশ্বাসের পরিবার হওয়াতে ব্যাপারটা অনেকটা সহজ হয়। এটা একটা অলিখিত পারিবারিক নিয়ম যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজের বা অন্য কারো ক্ষতি সাধন করছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার বিশ্বাসকে সবাই সম্মান করে চলবে। আমার বাবা এবং মা, দু’জনের আদি পরিবারও এই নিয়ম মেনে চলে।

বাচ্চাদের অন্যের কাছে রাখতে দেয়া সচরাচর না হলেও, কিছু মুসলিম পিতা-মাতা হয়তো তাদের বাচ্চাদের কয়েক ঘন্টা বা রাতের জন্য, নানা-নানী বা অন্যদের কাছে রাখতে রাজী হতে পারে। মুসলিম পিতা-মাতা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে খুবই সচেতন এবং তাদের বাচ্চাদের পরিবেশের এতো কিছু তারা নিয়ন্ত্রিত করতে চান যে, মুসলিম পরিবারের বাইরের যে কাউকে রীতিমতো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এটা বর্ধিত পরিবার বা অমুসলিম প্রতিবেশী বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্য মুসলিমদের প্রযত্নে বাচ্চাদের রেখে যাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক বিবেচনা করা হয়।

সবচেয়ে ভালো হচ্ছে বাবা-মার উদ্বেগের কারণগুলো জেনে নেয়া এবং সে অনুযায়ী নিয়ম মানার চেষ্টা করা। বাথরুমের কাজকর্মের মত সাধারণ বিষয়সমূহের বেলায়ও অমুসলিমদের ভিন্ন কিছু শেখার রয়েছে। বাচ্চাদের সাথে মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে মানানসই আচরণ এবং তার পরিপন্থী কোন কিছু এড়িয়ে চলাটা, বাবা-মার কাছে খুবই স্বস্তিকর ব্যাপার বলে গণ্য হবে। মুসলিম বাচ্চাদের উপস্থিতিতে, কি ধরনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান চলছে বা কেমন গান বাজনা হচ্ছে, সে সম্বন্ধে খেয়াল রাখতে হবে। ঠিক খাবার দেয়া এবং নিষিদ্ধ খাবার পরিহার করাও জরুরী ব্যাপার।

আমার বাবা-মা প্রায়ই বাচ্চাদের রাতে তাদের কাছে থাকতে বলেন। বাচ্চারা বা অন্যরাও এটা খেয়াল করেছে যে, মা তাদের জিজ্ঞেস করেন, শুতে যাবার আগে তারা প্রার্থনা করেছে কিনা এবং তা করতে তাদের তাগিদও দিয়ে থাকেন। (ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা করে থাকলে ঠিকই আছে!) আমার উদ্বেগের প্রধান কারণ হচ্ছে আমার ১০ বছর বয়স্কা মেয়ে। আমার মা মনে করেন,

দ্র পোশাক নিয়ে ভাবার জন্য আমার মেয়ে এখনো খুবই ছোট আর তাই তাকে তিনি মিনি স্কার্ট কিনে দেন- যা আমি তাড়াতাড়ি লুকিয়ে রাখি। আমার মেয়ে এখনো হিজাব পরে না, কিন্তু সে ইতিমধ্যেই ধারণাটা গ্রহণ করতে শুরু করেছে এবং সে এ ব্যাপারে খুবই নিশ্চিন্ত। ঘরের বাইরে সে শালীন পোশাক পরে থাকেবেশীর ভাগ সময়েই ফুলহাতা সুতী জামা এবং ঢিলাঢালা প্যান্ট বা লম্বা স্কার্ট।

আমি নিয়মিত আমার পরিবারের কাছে বেড়াতে যাই। আমি তিন-চার ঘন্টার জন্য আমার মাকে বাচ্চাদের দায়িত্বে থাকতে দেই। কিন্তু আমার মায়ের অন্য নাতি-নাতনীরা সে বাড়িতে থাকলে তাদের ছেড়ে আসাটা আমার পক্ষে কঠিন হয়। আমার বাচ্চাদের অনৈসলামিক আচার-আচরণ শিখার ব্যাপারে, আমি বড়দের চেয়ে অন্য বাচ্চাদের নিয়েই বেশী চিন্তিত (যেমন আমার ভাতিজীরা যখন BARBIE নিয়ে খেলা করে, তখন BARBIE’র ছেলে বন্ধু KEN-এর সাথে। BARBIE’র একান্তে অবস্থানের মহড়া হয়ে থাকে)। মামাতো, খালাতো ভাইবোনদের স্কুলে ছেলে বা মেয়ে বন্ধু রয়েছে, যা নিয়ে তারা গল্প করে থাকে।

আমার বাচ্চারা আমার বাপের বাড়িতে সব সময়ই স্বাগত আর আমার মা বাচ্চাদের সামলানোর ব্যাপারে চমক্কার।

আমি এখন যেমন, আমাকে গ্রহণ করতে তাদের নিজেদের বদলাতে হবে না, একথাটা আমার পরিবারের সদস্যরা জানে। আমার বাচ্চাকে অন্য বাচ্চাদের চেয়ে আলাদা করে দেখা হয় না, কেবল বিয়ার, শূকরের মাংস বা অন্য যে সব খাবার আমরা অনুমোদন করি না- সেগুলো তাকে দেয়া যাবে না, সেটা তারা মনে রাখে।

গরমের ছুটিতে আমার ভাইয়েরা সব সময় তাদের ছেলেমেয়েদের ২১ সপ্তাহের জন্য আমার মা-বাবার কাছে থাকতে পাঠায়, কিন্তু আমাদের বাচ্চারা কখনো আমার স্বামী বা আমাকে ছাড়া তাদের নানা-নানীর কাছে বেড়াতে যায়নি। তারাও কখনো আমাদের জোর করেননি এ ব্যাপারে, কারণ তারা জানেন, আমাদের বাচ্চারা তাদের খাবার খেতে পারবে না।

আমি জানি, আমাদের ছোট্ট মেয়ে একটু বড় হলে, তাকে যদি আমার মার কাছে রাখি, তবে তিনি তাকে খৃষ্টধর্মে দীক্ষা দিতে চেষ্টা করবেন আর আমি সেটা কিছুতেই হতে দিতে পারি না। আমি যে আমার মাকে বিশ্বাস করতে পারি , এই বাস্তবতাটা আমাকে ভীষণ দুঃখ দেয়- যার গভীরতা আমার স্বামীও বোঝে । আমার মায়ের একগুঁয়েমির জন্যই আমি তাকে ত্যাগ করতে বাধ্য। কিন্তু আমি যে তা কেবল আমার বিয়ে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি তা নয়, বরং আমার নিজের মঙ্গলের জন্যও করছি।

আমার বাচ্চাকে তাদের কাছে ছেড়ে দেয়াটা কঠিন এ জন্য যে তারা তাকে অতিমাত্রায় আজেবাজে খাবার (চিপস্, চকোলেট) দিয়ে নষ্ট করে ফেলবেন, যা আমি জানি নানা-নানীদের জন্য একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে সে যেন হালাল মাংস ছাড়া কিছু না খায় সেটা- তাই বাচ্চা যখন কেবল মাছ ও সজি খেয়ে থাকে, তারা তাতে মন খারাপ করেন।

আমার মা-বাবা আমাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে,আল্লাহ্ না করুন, আমার স্বামী বা আমার যদি কিছু হয়, তারা নিশ্চিত করবেন যে আমাদের বাচ্চারা যেন মুসলিম হিসেবে বড় হয় এবং তাদের আমার স্বামীর পরিবারের কাছে রাখা হয়। আমার স্বামীর এবং আমার বাবা-মার পরিবার একে অপরকে যথার্থ সম্মান দেখিয়ে থাকে ।

৫৩
দৈনিক প্রার্থনা (বা নামাজ)
স্কুলের আবেগময় প্রার্থনা সংক্রান্ত আলোচনাতে, প্রায়ই খৃষ্টান ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপারে কোন বিবেচনা করা হয় না। মুসলিম তরুণরা দৈনিক ৫ বেলা নামাজ পড়ার প্রশিক্ষণ পেয়ে বড় হয়, যার অন্ততঃ দু'বেলার সময় তাদের স্কুলের সময়ের অন্তর্ভুক্ত। তা সত্ত্বেও তাদের প্রার্থনার জন্য একটা স্থান বা সময় বরাদ্দের ব্যাপারটা সম্ভবতঃ স্কুলের প্রার্থনা সংক্রান্ত অধিকাংশ আলোচনাতেই এড়িয়ে যাওয়া হয়।

এ ব্যাপারটা কার্যক্ষেত্রে অবস্থানরত মুসলিমদের বেলায়ও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, যাদের স্থান এবং সময়ের একটা বরাদ্দের প্রয়োজন হয়, যাতে দিনে সম্ভবতঃ দু'বার একান্তে তারা কয়েক মিনিট সময় অবসর পেতে পারে এবং তাদের অবশ্যকরণীয় নামাজ আদায় করতে পারে। আমাদের কাছে বেড়াতে এলে JODI ও REZA তাদের নামাজের সময় নিঃসঙ্কোচে বাড়ির অন্য একটা খালি ঘর বেছে নেয়। অমুসলিম বাবা-মায়েরা যদি এই বিষয়টা নিয়ে অস্বস্তিবোধ করেন, তবে আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে একটা ঐকমত্যে পৌছাতে হবে।

আমার মা-বাবা আমাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে খুবই সুবিবেচক। আমাদের তাদের ঘরে নামাজ পড়া নিয়ে, তাদের কোন সমস্যা নেই। আমাদের তারা কি খেতে দিচ্ছেন তা নিয়েও তারা খুবই সতর্ক এবং তারা চেষ্টা করেন, আমাদের খারাপ লাগাবার মত কোন কথা বলা থেকে বিরত থাকতে।

JESUS CHRIST-এর নামে প্রার্থনা করা হলে মুসলিমরা খুবই অস্বস্তি বোধ করতে পারে, আর তাই তারা হয়তো ঐ সমস্ত উপলক্ষ এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করতে পারে।

JESUS-এর উদ্দেশ্যে কোন প্রার্থনা করা হলে আমরা যে অপমানিত বোধ করবো এ বিষয়টা আমার মা-বাবা বোঝেন এবং আমি সেজন্য কৃতজ্ঞ। তারা তাদের প্রার্থনার শেষে সতর্কতার সাথে আমাদের নিজ নিজ ঈশ্বরের নামে, আমিন” বলে থাকেন।

ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক আলোচনা আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি যে, মুসলিমরা যা বিশ্বাস করে সে সম্বন্ধে তারা খুবই নিশ্চিত বোধ করে। তারা বোধ করে, তাদের কাছে সত্য রয়েছে, আর তারা বুঝতে পারে না, কেন অ-মুসলিমরা তা দেখতে বা বুঝতে পারছে না। যেমন সব জনগোষ্ঠীতেই থাকে, তেমনি মুসলিমদের মাঝে ভিন্ন মতামত ও ব্যাখ্যা রয়েছে এবং রাজনৈতিক আলোচনার পরিণতি হিসেবে অবস্থা বেশ উত্তেজনাকর হয়ে উঠতে পারে- তা সে আলোচনা মুসলিমদের নিজেদের মাঝেও হতে পারে অথবা মুসলিম ও অ-মুসলিমের মাঝেও হতে পারে।

একদিন REZA ও JODI’র সাথে একটা রাজনৈতিক বা ধর্মীয় আলোচনার শেষে আমি কাঁদতে শুরু করেছিলাম। আমার জন্য, আমার সহ্য শক্তির জন্য ব্যাপারটা বোধ হয় একটু বেশীই হয়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, “JODI, আমরা এ বিষয় নিয়ে আর কথা চালিয়ে যেতে পারি না। আমাকে এটা খুবই কষ্ট দিচ্ছে।”

JODI বললো, “ওহ মা, আমরা তা করতে পারি না, আমাদের কথা বলা উচিত।” তখন REZA আমাদেরকে জ্ঞানের কথা বললো, “কখননা, আমার নিজের পরিবারেও আমি দেখেছি, এমন কিছু বিষয় থাকে যা নিয়ে কথা বলা চলে না, কিন্তু তবুও আমাদের একত্রে থাকতে হবে, কারণ আমরা সবাই একে অপরকে ভালোবাসি।”

তার ঐ উপদেশ অনেক সময় আমাদের খুব কাজে লেগেছে। আমরা কথা বলতে চেষ্টা করি, আর JODI ও REZA এখন জেনে গেছে, আমার মন খারাপ করতে না চাইলে কতটুকু পর্যন্ত বলা যাবে। তার পর তারা থেমে যায়। তাদের বিশ্বাস তাদের কাছে এতো অর্থবহ যে, তারা তা অন্যের সাথে ভাগ করতে চায় এবং প্রায়ই তা পরিবার বা পরিচিতের জন্য একটা বিস্ফোরক অবস্থার জন্ম দেয়।

আমি আমার বাবা-মাকে খুবই ভালোবাসি এবং গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। আমি শুধু আশা করি একটিবার যদি তারা আমাকে জিজ্ঞেস করতো যে, আমি কি বিশ্বাস করি অথবা কেবল খানিকটা কোরআন যদি পড়ে দেখতো। আমি, তাদের ইসলাম গ্রহণ করা, অবশ্যই দেখতে চাইবো, কিন্তু এই মুহূর্তে অথবা নিকট ভবিষ্যতেও তা সম্ভাব্য মনে হয় না।

আমার পরিবারের কাছ বেড়াতে গেলে আমার মনে হয়, আমি বুঝি মূর্তিসমূহ দ্বারা পরিবেষ্টিত, কিন্তু যেহেতু তারা আমার ইসলামকে মেনে নিয়েছে, আমিও তাদের বিশ্বাসকে বরদাস্ত করি।

সবকিছু যেভাবে চলছে আমি সেভাবেই চালিয়ে যেতে চাই এবং আমার বাবা-মার সাথে একটা যোগাযোগ রক্ষা করতে চাই, বিশেষতঃ এখন যখন আমাদের একটা বাচ্চা হয়েছে। তারা আমার বাবা-মা এবং আমার উচিত তাদের খোজ খবর নেয়া। আমার পরিবারের সাথে সবকিছুতেই কেন যেন একটা অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া, আমরা কোন গাড়ি কেনার কথা ভাবছি অথবা আগামী গ্রীষ্মের ছুটি কিভাবে কাটাবো- এ ধরনের বিষয় ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে কথা বলাটাও দুঃসাধ্য।

আমার দেয়া প্রশ্নপত্রে সাড়া দিয়ে মেয়েরা যা লিখে পাঠিয়েছে, তাতে বোঝা যায় যে, আদি পরিবারের সাথে একটা সমঝোতায় পৌছানোর বিভিন্ন ধরণের উপায় রয়েছে। এমন কিছু পরিবার রয়েছে, যারা অন্যদের মত খোলা মনের নয়। কেউ কতটুকু খোলা মনের হবে এবং কতটুকু পর্যন্ত ছাড় দিতে প্রস্তুত, তাতে ভিন্নতা রয়েছে। জরিপের প্রশ্নগুলো যদিও কর্মক্ষেত্রকে উদ্দেশ্য করে ছিল না, তবুও মুসলিমদের সাথে আমার নিজস্ব কথাবার্তায় আমি বুঝেছি যে, সামাজিক সম্পর্ক, উৎসব, ছুটির দিন, ভুল বোঝাবুঝির এবং তাদের প্রতি বৈষম্যের অনুভূতি নিয়ে তারা বেশ নিরাশায় ভোগে ।

মেয়েদের বর্ণনায় অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয় যে, পরিবার বা পরিচিতরা মেয়েদের প্রতি যত বেশী সহযোগিতা ও সমর্থন দেখিয়েছে, মেয়েরা তত কম করে রক্ষণশীল হবার প্রয়োজন বোধ করেছে। একটা কট্টর মনোভাব হয়তো বা সমর্থনের ও আস্থার অভাববোধের কারণে আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে।

৫৪
মেয়েদের বক্তব্য মুসলিম ধর্মান্তরিতরা আমাদের কি জানাতে চায়
JODI মুসলিম হবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ১২ বছর পার হয়ে গিয়েছে। ক্ষত সারতে বছরের পর বছর লেগেছে, কিন্তু JODI-কে মুসলিম জেনেও আমি নিজেকে এক সময় স্বাভাবিক অবস্থায়ই দেখেছি। কখনো কোন সময়ে যখন দেখেছি যে, তার সেই সিদ্ধান্ত আমরা একত্রে করতে পারি এমন কিছু কাজে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে- তা মা ও মেয়ে হিসেবে একত্রে করা যায় এমন কিছু ব্যাপার হতে পারে অথবা আমার নাতি নাতনীদের সাথে একত্রে উপভোগ করার কিছুও হতে পারে- তখন আমার যে কিছুটা আফসোস হয়নি তা নয়। কিন্তু তার প্রতি এবং তার জীবন যা কিছুকে ভালো ও সমুন্নত হিসেবে প্রকাশ করে তার সবকিছুর প্রতিই আমার শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।

আমি দেখেছি, অন্য যে সব মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে, তাদের সম্বন্ধে আমার জানার আগ্রহ রয়েছে। তাদের পরিবার তাদের ধর্মান্তরকে কিভাবে গ্রহণ করেছে? যে পরিবারে তারা জন্মগ্রহণ করেছিল, সে পরিবারের সাথে কন্যারা কি একটা সমঝোতায় পৌছাতে পেরেছে? আমার নিজের কাহিনী কি তাদের ক্ষত সেরে ওঠার ব্যাপারে কোন কাজে লাগতে পারে? আমি সত্যিই সেই সমস্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত বাবা-মাকে সাহায্য করতে চেয়েছি, যারা তাদের কন্যাদের এবং তাদের বেছে নেয়া পথকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করে চলেছে। আমার মেয়ে এবং তার মুসলিম বন্ধুদের জীবনধারার ভিতর আমি যে শক্তি ও মঙ্গলময়তা দেখতে পেয়েছি, মূলত তাই, এক রবিবার সকালে আমি যখন তখনও বিছানায় শুয়ে ছিলাম, আমাকে এই সিদ্ধান্তে পৌছে দেয় যে, আমার অভিজ্ঞতা আমি অন্যদের কাছে প্রকাশ করবো। আমার মনে আছে, ঐ দিন এবং ঐক্ষণে বিছানা থেকে পা বাড়িয়ে আমি যখন মেঝেতে পা রাখলাম এবং উঠে দাঁড়ালাম- তা ছিল যেন এক নতুন এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ প্রকল্পের দিকে আমার প্রথম পদক্ষেপ।

আমি JODI'র সাথে আমার ধারণা নিয়ে কথা বললাম। সে নার্সিং-এ M.s ডিগ্রীর শুরুতে ছিল, তার দুটো বাচ্চা ছিল এবং তাকে দিনের আংশিক সময়ের জন্য কাজ করতে হতো। আমি নিশ্চিত, অন্য কোন দায়িত্ব নিতে. সে আগ্রহী ছিল না, কিন্তু তার বাড়িতে, বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করতে, কিছু আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী মুসলিম মেয়েদের আমন্ত্রণ জানাতে সে রাজী হলো। ঠিক হলো ঐ সমস্ত মেয়েরা যদি মনে করে যে এটা জরুরী, তবে আমি প্রকল্প হাতে নেবো এবং তার কাজে এগিয়ে যাব।

মাত্র দু’জন মেয়ে এসেছিল আমাদের সাথে দেখা করতে, কিন্তু তাদের সমর্থন, উৎসাহ এবং সামনে চলার দিক-নির্দেশনা, আমাকে প্রয়োজনীয় সংকল্পের এবং আগ্রহের বোধ যুগিয়েছে, প্রায় ৩ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেঅন্যান্য আমেরিকান মুসলিম মেয়েদের তথ্য সগ্রহ করতে, আমার নিজের কাহিনী লিখতে এবং তারপর তা অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে নেবার একটা উপায় বের করতে। এই প্রথম সাক্ষাতে মুসলিম ধর্মান্তরিতরা তাদের পরিবারকে তারা কী বেছে নিয়েছে, তা বুঝতে সাহায্য করাটা প্রথমে তাদের জন্য কত জরুরী ছিল, তা নিয়ে আলাপ করে- কিভাবে তারা কি করছিল, আর তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের গ্রহণ করাটাও, তাদের কাছে কতখানি কাক্ষিত ছিল। তাদের মুসলিম হওয়াটা তাদের কাছে কতটুকু অর্থবহ, সেটাও তারা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে চাইছিল ।

এই সমস্ত মেয়েদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু জেনেছি। প্রশ্নপত্রের উত্তরের মাধ্যমে তারা যে আমার সাথে তাদের জীবনের বাস্তবতা ভাগাভাগি করেছে, সে জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই প্রকল্প এমন সব ক্ষতচিহ্ন সারিয়ে তুলেছে, যা আছে বলে আমার জানাও ছিল না। DAUGHTERS OF ANOTHER PATH আমার নিজের আরোগ্যের কাজেও লেগেছে। আর এই সমস্ত মেয়েদের আমি সালাম জানাই, যাদের এমন একটা পথে চলার সাহস এবং শক্তি রয়েছে। আমাদের মাঝে খুব বেশী সংখ্যক এমন পারবে বলে মনে হয় না।

প্রশ্নপত্রের উত্তর দিতে গিয়ে মেয়েরা তাদের ধর্মান্তর, মুসলিম আচারআচরণ পালন করতে গিয়ে তাদের আনন্দ ও সগ্রাম এবং কিভাবে তারা তাদের আদি পরিবারের সাথে, স্বামী ও স্বামীর পরিবারের সাথে, বাচ্চাদের সাথে এবং কর্মজগতের সাথে সম্পর্কযুক্ত, সে সবের বর্ণনা দিয়েছে। প্রশ্নপত্রের শেষ প্রশ্নটি ছিল ঃ “আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি, আপনার সম্পর্কে এমন কোন বিষয়টি আপনি আমেরিকান জনসাধারণকে জানাতে চাইবেন?” তাদের উত্তর কি ছিল? তাদের উত্তর ছিল নিম্নরূপ- চলুন তাদের কাছ থেকে শুনি।

৫৫
আমরা কারা
আমি চাই, আমেরিকান জনসাধারণ বুঝুক যে, আমরা ঠিক তাদের মতই কিছু মানুষজন। আমাদের বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয় (আমাদের সবার তেল সম্পদ নেই), আমরা আগামীকাল নিয়ে চিন্তিত হই, আমরা শান্তি চাই। আমাদের কেবল সুদৃঢ় ধর্মীয় দায়িত্ববোধ রয়েছে, আর আমরা চেষ্টা করি এমন জীবন যাপন করতে যা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। আমার স্বামী আমাকে এভাবে পোশাক পরায়নি আর আমি নিপীড়িতও নই। আমি মুক্ত- কাপড় চোপড়, চুল, জুতা এবং ঐ ধরনের যাবতীয় ফ্যাশনের বন্ধন থেকে আমি মুক্ত। দায় পরিশোধের পর, আমার এবং আমার বাচ্চাদের জন্য উত্তরাধিকার নিশ্চিত। আমি আমেরিকা বা আমেরিকানদের ঘৃণা করি না। আমি এখনো JESUS-কে ভালোবাসি এবং তার উল্লেখ করা একই ঈশ্বরে উপাসনা করি। আমি ইহুদীদের বা ইসরায়েলকে ঘৃণা করি না। সত্যি বলতে কি, আমার ওখানে (ISRAEL) থাকতে খুব ভালো লাগবে, যদি আমি বুঝতাম যে ওখানে আমি নির্যাতিত হবো না। আমি যা ঘৃণা করি তা হচ্ছে অবিচার, মিথ্যাচার, ঈশ্বর বিরোধিতা, বৈষম্য, গর্ভপাত, শরীরের অপবিত্রতা এবং ঈশ্বরের যে কোন আদেশ মান্য করতে যে কোন ধরনের অস্বীকৃতি- কারণ আমি ঈশ্বরকে ভালোবাসি।

, আমি পছন্দ করি বলেই এই পথ বেছে নিয়েছি। এমন কোন কিছুই আমি ত্যাগ করিনি, যা আমি ত্যাগ করতে চাইনি। আমার মগজ ধোলাইও করা হয়নি। আমি পূর্ণ চিন্তাশক্তি সম্পন্ন একজন শিক্ষিতা। আমি আমার দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতক নই, কিন্তু আমি গোটা পৃথিবীর ওকালতি করি। আমি সব সময়ই মুসলিম থাকবো, তা আমার স্বামীকে নিয়েই হোক আর তাকে ছাড়াই হোক। আমি, আমার স্বামীকে ভালোবাসি' বলে মুসলিম হইনি। আমি চাই আমার বাচ্চারা মুসলিম হিসেবে বড় হবে। আমি আশা করি তারা মুসলিম হবে এবং আমার মেয়ে হিজাব পরবে। সবাই আমাকে এসব প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে থাকে। আমি আমার বাচ্চাদের অনৈসলামিক পরিবেশে নয়, ইসলামিক পরিবেশে রাখবো, আর তারপর তাদের বলবো মুসলিম হতে।

সাধারণ মুসলিম শান্তি চায়। কেউ সচরাচর যে সব খবর শুনে থাকে, সেগুলো হচ্ছে চরমপন্থী এবং রাজনৈতিক বিপ্লবী মুসলিমদের গল্প। এরা হচ্ছে সংখ্যালঘু। অধিকাংশ (কথা প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আরবরা মুসলিম জনসংখ্যার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ) শান্তিপ্রিয়। INDONESEAN-দের কথাই ধরুন, যাদের সম্বন্ধে আমরা কিছু শুনি না, অথচ তাদের সংখ্যা আরবদের চেয়ে অনেক বেশী।

আমি তাদের সাথে যোগাযোেগ স্থাপন করতে এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছুক, যদি তারা আমার মতামত এবং বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।

আমি, আমার আপন মুক্ত ইচ্ছায় মুসলিম হয়েছি। আমি, আমার নিজস্ব মন সম্বলিত একজন ব্যক্তি। কোন কিছুর প্রতি নিজেকে দায়বদ্ধ করার আগে আমি সে সম্বন্ধে পড়াশোনা করি এবং জানি।

ইসলাম হচ্ছে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত। একজন মুসলিম নারী। হিসেবে পরিচিত হতে পেরে আমি সুখী। এমন একটা বড় এবং আমূল পরিবর্তনের পরে আপনার পরিবারের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা খুবই কঠিন।

যারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছে, আমি তাদের বাবা-মাদের এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতে চাই যে, তারা যেন সন্তানদের জিজ্ঞেস করে দেখেন তারা কেন পরিবর্তন আনলো জীবনে এবং তাদের যেন তারা বুঝতে চেষ্টা করেন। মুসলিম হবার পরে এই সমাজে বাস করা সহজ নয়। আপনি সবকিছুকে এবং মানুষজনকে ভিন্নভাবে দেখবেন, আর তারাও আপনাকে ভিন্নভাবে দেখবে। আপনার পরিবার যদি আপনার সাথে অন্ততঃ এ সম্বন্ধে কথা বলে এবং যদি অনুধাবন করতে চেষ্টা করে যে আপনি কিসের ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন এবং এই পরিবর্তন আপনার জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা অনেকখানি সহায়তা করে। আমরা ভালোর জন্য পরিবর্তিত হচ্ছি, আল্লাহর জন্য কেবল।

আমেরিকানদের আমি একমাত্র যা জানাতে চাই, তা হচ্ছে যে কোন ব্যক্তি বা মেয়ে যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তার মানে এই নয় যে, আমাদের জোর করে তা করানো হয়েছে। কেউ অন্য কাউকে নামাজ পড়তে, আরবী শিখতে, লম্বা হাতা জামা পরতে, মাথা ঢাকতে বা মুসলিমদের অন্য কোন অবশ্যকরণীয় করতে জোর করতে পারে না। অন্য যে কারো মতই আমাদের অধিকার রয়েছে কাজ করার এবং আমরা যা বিশ্বাস করি তা সমর্থন করার।

আমি আমেরিকান জনসাধারণকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমিও ঠিক তাদের মতই একজন মানুষ। আমাকে নিয়ে পি করা হোক, আমি তা পছন্দ করি না। আমি যা পরি তা নিয়ে ঠাট্টা করলে আমার বিষন্ন লাগে। আপনি কি একজন খৃষ্টান নানকে তার পরিচ্ছদের জন্য ঠাট্টা করবেন? অথবা একজন AMISH বা MENONITE মহিলাকে তার মাথা ঢাকার জন্য বিদ্রুপ করবেন?

আমার স্বামী আমার মগজ ধোলাই করেনি। আমি একজন বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি, যে মুসলিম হওয়াটা স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছে। ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরাজুরি নেই, এই ধারণার উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত আপনি আপনার বিশ্বাস নিয়ে থাকুন, আর আমার প্রয়োজন আমার বিশ্বাসের।

কিছু মানুষ, যারা ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায়, তারা বলতে চায় যে, ইসলাম মেয়েদের পুরুষদের চেয়ে নিকৃষ্ট হিসেবে দেখে বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক সুলভ ব্যবহার করে তাদের প্রতি। তারা বলে যে মুসলিম মেয়েরা, স্বামী এবং বাচ্চাদের আহারের পর যা বেঁচে থাকে তাই খায়। এটা সত্যের এক সার্বিক অপলাপ। হ্যা, মেয়েরা কখনো অন্যদের পরে খেয়ে থাকে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা একটা শাস্তি বা দন্ড, যা মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। একজন মেয়ে যখন অন্যদের আগে খাওয়ায়, সে তার স্নেহ বা যত্নের বোধ থেকে তা করে থাকে। সে জানে বাচ্চাদের প্রায়ই খেতে হবে সুস্বাস্থ্য-সম্পন্ন থাকতে এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে। সে বোঝে যে, পুরুষদের খেতে হবে, তারা যেন কাজে বা স্কুলে যাবার জন্য উপযুক্ত প্রাণশক্তি লাভ করতে পারে। সে নিশ্চিত করে যে, পরিবারে কোন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা থাকলে, তারা যেন দুধ, পর্যাপ্ত ফল এবং তরিতরকারি ইত্যাদি খেয়ে থাকে এবং ঠিকমতো তাদের ভিটামিন গ্রহণ করে। সে অনুভব করে যে, অন্যদের কোন প্রয়োজন এড়িয়ে সে নিজের ক্ষুধাকে পরিতৃপ্ত করতে পারে না।

মুসলিমরা CHRISTMAS উদ্যাপন করে না, কিন্তু আমাদের খৃষ্টান আত্মীয়, প্রতিবেশী বা সহকর্মীদের উৎসবের সময়টা যেন সুন্দর হয়, তা আমরা কামনা করি। আমরা CHRISTMAS TREE বা অন্য সাজসজ্জা দিয়ে ঘর সাজাই বলে এমন মনে করার কোন কারণ নেই যে, আমাদের বাচ্চারা বঞ্চিত। আমাদের অন্য উৎসব রয়েছে, যা আপনাদের জানা নেই এবং আমরা মনে করি, আমাদের বাচ্চারা সুখী এবং খুব সুন্দর ভাবেই বড় হচ্ছে।

আমি নির্যাতিত নই, আর সঠিক পরিচ্ছদ পরাটা অবমূল্যায়নকর নয়। আমি তাদের জানাতে চাই যে, আমার স্বামী কাপড়-চোপড় ধোয়, পরিষ্কারের কাজে সহায়তা করে (এমনকি শৌচাগার পরিষ্কারেও) এবং আমি যেন বাইরে যেতে পারি, সেজন্য বাচ্চাদেরও দেখাশোনা করে। তথাকথিত মুক্তি প্রাপ্ত মেয়েদের খবর কি? মুসলিম মেয়েরা বিয়ের সাথে সাথে তাদের নাম পরিবর্তন করে না। আমাদের স্বামীর নামের শেষাংশ ধারণ করার প্রয়োজন নেই। ইনশাআল্লাহ আমার মেয়ের যখন বিয়ে হবে, তার নাম তেমনই থাকবে যেন তাকে একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে চেনা যায়- একজন সমান মানুষ হিসেবে। কোন হাইফেনের প্রয়োজন নেই।

আমেরিকার সব মুসলিমই যে হয় বিদেশী বা আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ, তা নয়। এদেশে অনেক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান মুসলিম রয়েছে। অনেক মানুষজনেরই এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, আপনি একজন শ্বেতাঙ্গ এবং আমেরিকান হয়েও, একই সাথে একজন মুসলিমও হতে পারেন। খৃষ্টান মেয়েদের চেয়ে বা অন্য যে কোন মেয়েদের চেয়ে আমাদের অনেক বেশী অধিকার রয়েছে।

আপনি বুঝবেন যে, আমি একটু স্বতন্ত্র, কারণ আমি মনে করি দৈনন্দিন “কি করা যাবে বা কি খাওয়া যাবে এ সমস্ত সমস্যার চেয়ে সম্ভবতঃ আমার বিশ্বাসের আত্মিক দিকটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস খুবই সজীব এবং তা কখনোই ম্লান হবে না। আমার সম্বন্ধে আরেকটা জ্ঞাতব্য হচ্ছে, প্রায় ছ'বছর আগে আমার NON-HODGKIN'S LYMPHOMA ধরা পড়ে। আমি এক রাউন্ড কেমোথরাপি নেই এবং গত পাঁচ বছরে আর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়নি। আমার দুটো বাচ্চাই (৫ বছর এবং ১৫ মাস বয়স্ক) হয়েছে আমার ক্যান্সার হবার পর। আমার জীবন খুবই বৈচিত্র্যময় এবং এই বাড়তি সমস্যার জন্য কঠিনও বটে। আল্লাহতে আমার বিশ্বাস, আমাকে এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে খুব সাহায্য করেছে এবং আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস যে আমার ক্যান্সার আল্লাহ্র ইচ্ছায় হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ কারণ এটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এখন বাঁচতে, নিজেকে ভালোবাসতে, পরিবারকে ভালোবাসতে এবং কেবল বড় সমস্যা নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে- "DON'T SWEAT THE SMALL STUFF"- এটা আমাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যেখানে আমি আগের চেয়ে অনেক বেশী স্পষ্টবাদী এবং স্পষ্টভাষী। কিন্তু সেটা অবশ্য সম্পূর্ণ আলাদা একটা অধ্যায়।

কতিপয় মুসলিম, যারা ইসলামের নামে অনৈসলামিক কাজ-কর্ম করে থাকে, তাদের দিয়ে আমাকে বিচার করবেন না। আমাকে জানুন, আমার সাথে কথা বলুন, আমাকে আপনাদের স্কুল বা গীর্জায় আমন্ত্রণ জানান এবং চলুন আমরা একে অপরের ধর্ম নিয়ে আলাপ-আলোচনা করি। ইসলামকে নিয়ে ভীত হবেন না। আমাকে জানার চেষ্টা করুন। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের' লেখা ইসলাম বিরোধী বই বা খবরের কাগজ না পড়ে, আমাদের জিজ্ঞেস করুন কোন বইগুলো ইসলামকে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে। আমার পোশক আমাকে অবদমিত করে রেখেছে এমনটি ভাববেন না। আমার দিকে যখন তাকিয়ে দেখবেন, তখন ABRAHAM-এর স্ত্রী এবং JESUS-এর মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখুন এবং দেখুন তারা কিভাবে আচ্ছাদিত ছিলেন। এটা নতুন কিছু নয়। এটা আপনার ঐতিহ্যেরও অংশ।

আমার অনুভূতি মিশ্র। আমি ইসলাম নিয়ে জনসমক্ষে বক্তব্য রাখি। আমি মানুষজনকে বলি, আমি ঠিক তাদেরই মতো। আমাদের স্বপ্ন এবং অভীষ্ট রয়েছে এবং আমরা আমাদের পরিবারকে ভালোবাসি, কিন্তু সমস্যা সমাধানে আমাদের কিছু দৃষ্টিভঙ্গী কেবল আলাদা। আমরা কেবল আমাদের নিজেদের দ্বারাই নির্যাতিত বা অবদমিত, আমাদের বিশ্বাস দ্বারা নই। আমরা অন্যসব জনগোষ্ঠীর মতই ভালো এবং মন্দ মিলিয়ে। আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের সাবধান হওয়া উচিত, কারণ ঐ সমস্ত সরকারের এমন কর্মসূচী রয়েছে যা নিশ্চিতভাবে মুসলিম বিরোধী (আমাদের নিজেদের কংগ্রেসই ৮০'র দশকের মাঝামাঝি, ইসলামকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ চিহ্নিত করে এক প্রস্তাব পাস করেছে)। তাদের উচিত তাদের যা বলা হয় তা পরখ করে দেখা এবং সত্যের সন্ধান করা।

আমাদের মুসলিমদেরও উচিত লুকোচুরি এবং অজুহাত দেখানো বন্ধ করে, নিজেদের কথা প্রকাশ করা। একভাবে চিন্তা করলে, আমরা মুসলিমরা, এই আমেরিকান জাতি যে সমস্ত ইতিবাচক এবং প্রায়শঃই কল্পনা-প্রসূত মূল্যবোেধর উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল, সেগুলোর প্রতিনিধিত্ব করি। কিন্তু অত্যন্ত স্পষ্ট কিছু ব্যতিক্রম সহকারে। অন্যের দরজায় কড়া নেড়ে কোন নীতিকথা সম্বন্ধে বলার আগে, মুসলিম হিসেবে আমরা নিজেদের ঘর ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিই এবং পরীক্ষা করে দেখি ইসলামের নামে আমরা কি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছি।

এই বক্তব্য টিনএজ' (১৩-১৯ বছর বয়স্ক) মেয়ের মা, ৪০-এর কোঠার একাকী (বিধবা বা বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া) এক নতুন ধর্মান্তরিত মহিলার মুসলিম হওয়াটা, আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং কঠিনতম ব্যাপার। এটা সব প্রশ্নের উত্তর এবং সব কাজের হাতিয়ার। ১৯৯৪ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। OHIO CIVIL RIGHTS COMMISSION-এ আমি ক্ষতিপূরণ দাবী করে কাগজপত্র জমা দিচ্ছি, কারণ আমি মনে করি আমার ইসলামে প্রত্যাবর্তনের (এই মহিলার মতে, তার ইসলাম গ্রহণটা হচ্ছে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের মত একটা স্বাভাবিক পরিণতি) কারণে আমার চাকরি গেছে। যত মুশকিল, তত আসান। কোরআন হচ্ছে উত্তর, পরামর্শ এবং সতর্কবাণীর এক অফুরন্ত উৎস। এসব প্রতিকূলতার জন্যও আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, যদিও একজন দুর্বল মানুষ হিসেবে আমি বলা যায় ৮০% সময় উৎফুল্ল থাকলেও, ২০% সময় অপেক্ষাকৃত কম ইতিবাচক অনুভূতি নিয়ে থাকি। আমার মাঝে আল্লাহর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদসমূহের মাঝে রয়েছে আল্লাহর উপর আমার নির্ভরতা, আমার বদমেজাজের অবসান, ধৈর্য ধারণের শিক্ষা এবং আমার মুসলিম নাম দ্বারা প্রতিফলিত শান্তি এবং নীরবতা, যে নামের অর্থ হচ্ছে, আমাদের সবার জন্যআল্লাহ রয়েছেন, আল্লাহ রয়েছেন। সবচেয়ে ঝামেলার ব্যাপার হচ্ছে আমার জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করার পুরনো অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা- এ সত্যটা বোঝার এবং গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা যে, ইসলাম নিখুঁত হলেও সব মুসলিমরা তা নয়।

আমি একজন বিদেশী নই। আমি একজন অনাহুতও নই। আমি চাই তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে আমাদের প্রাপ্য সম্মান সহকারে দেখুক। একটা মুসলিম পরিবার, ধার-কর্জ বা সরকারের দান-দক্ষিণার মাঝে না গিয়ে বাঁচতে পারার মতো একটা জীবনের মানের ব্যবস্থা, এদেশের সরকারের এবং সমাজ ব্যবস্থার থাকবে- এটাই আমার কাম্য।

আমি চাই সবাই জানুক যে ঃ আমি গরুর পূজা করি না, ইসলামের কারণে আমি নিপীড়িত নই, ইসলাম নারীকে মুক্তি দেয়, আমি ঐ একই ঈশ্বরের উপাসনা করি- যার উপাসনা খৃষ্টান ও ইহুদীরা করে থাকে এবং মুসলিমরা সন্ত্রাসী নয়! আমি আশা করি, মানুষজন মুক্ত মনের হবে এবং তাদের অজ্ঞতার অবসান ঘটবে। যে সব মেয়েরা হিজাব পরে, তাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা এবং তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা থেকে সবাই বিরত থাকবে! এটা তাদের অধিকার এবং তাদের স্বামী বা পিতারা তাদের হিজাব পরতে বলপ্রয়োগ করছে না। আমাদের আমেরিকান হিসেবে মেনে নাও, নিজে বাঁচো এবং আমাদের বাঁচতে দাও!

আমরা নির্বোধ নই, আর আমরা জন্মগ্রহণ করেছি আল্লাহ্ (swT দাসত্ব করতে, আমাদের পুরুষদের দাসত্ব করতে নয়। এভাবে জীবন যাপনটা হচ্ছে আমাদের কর্তব্য এবং আমরা আমাদের বেছে নেয়া জীবন নিয়ে পরিতৃপ্ত।

আমি কেবল আমার মাথা ঢেকে চলবার জন্য একজন অপ্রকৃতিস্থ, মৌলবাদী, নিপীড়িত বা দুর্বল নারী হয়ে যাই না। আমি এ ব্যাপারটা ঘৃণা করি যে, আমি যেখানেই যাই, মানুষজন হাঁ করে তাকিয়ে থাকে (কখনো খুব নীচ দৃষ্টি সহকারে)। আমি চাই আমাকে আমার মত থাকতে দেয়া হোক এবং আমি আমার জীবন যেভাবে কাটাতে চাই, সেভাবে বাঁচতে দেয়া হোক।

সবচেয়ে বড় ভুল ধারণাগুলোর একটি হচ্ছে, সব মুসলিমরাই হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অথবা মধ্যপ্রাচ্যের কারো সাথে বিবাহিত। কিন্তু ব্যাপারটা তো তা নয়। এমন হাজারো আমেরিকান মুসলিম রয়েছে, যারা অন্য আমেরিকানদের কাছ থেকে ইসলাম সম্বন্ধে জেনেছে। আমার স্বামী এবং আমি হচ্ছি এই বাস্তবতার উদাহরণ।

আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা হচ্ছে আমার মুসলিম হওয়া। আমার ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা অনেক আমেরিকানদের চেয়ে ভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিন্তু আমি আশা করবো ‘ভিন্ন’ আর ‘খারাপ' যে সব সময় এক নয়, এটুকু বুঝতে পারার মতো মুক্তমনা তারা হতে পারবে। মুসলিম নারীরা (যাদের ইসলামের দেয়া নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। তাদের ঘরে শৃঙ্খলাবদ্ধ নয় বা নিয়মিতভাবে নিগৃহীতও নয়। আমরা সমাজের অংশ এবং আমাদের উপর এক অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব অর্পিত রয়েছে। ইমাম আলী যেমন বলেছেন, “মায়ের কোলে জাতিসমূহ বেড়ে ওঠে”। আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে। আমি আশা করবো, আমেরিকান জনগণ আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজকে খাটো করে দেখবেন ।

৫৬
ইসলাম আসলে কি
আমেরিকানদের বোঝা দরকার, মুসলিমরা এমনভাবে জীবন যাপন করছে, যেভাবে তারা মনে করে যে, আল্লাহ্ (SWT) তাদের জীবন যাপন করাটা চান। আমরা, খুব ভুল বোঝা হয় এমন একটা ধর্ম। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা ধর্মও। আগামী দশ বছরে ইনশাআল্লাহ্, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হবো। আমেরিকানরা কেন খৃষ্টধর্ম থেকে ইসলামের দিকে ফিরছে? আমেরিকানদের উচিত ইসলামের যে গতানুগতিক ধারণা তাদের দেয়া হয়ে থাকে তা অতিক্রম করে সত্যিকার ইসলামের দিকে তাকিয়ে দেখা, বা শাস্তির ইসলামযে ইসলাম প্রতিদিন নতুন নতুন অনুসারী লাভ করছে। আমার কাছে একটা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা মানেই চরমপন্থী বা যুদ্ধবাজ হয়ে যাওয়া নয়। এর অর্থ হচ্ছে এমন একটা সমাজ গঠন করা, যেখানে তার সদস্যরা, আল্লাহ আমাদের যে সব নৈতিক বাছ-বিচার দিয়েছেন, তা মেনে চলবে এবং একই সাথে ধর্মীয় দায়দায়িত্ব পালন করবে ও সামাজিক আইন-কানুন মেনে চলবে। ইসলাম আমাদের সমগ্র জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। এটা সব সময়ের জন্য এবং সব মানুষের জন্য। আমেরিকানরা যদি ইসলামকে খেয়াল করে দেখে এবং এই ব্যাপারটা উপলব্ধি করে, তবেই বোঝা যাবে তারা শেষ পর্যন্ত ইসলামকে জেনেছে।

আমেরিকার বহু বছরের প্রচলিত ধারণার মতো ইসলাম মেয়েদের জন্য কোন জেলখানা নয়! যে কোন সুন্দর সমাজের মতোই এর রয়েছে বিবেকসম্পন্ন দিক-নির্দেশনা এবং আইন-কানুন, কিন্তু ইসলাম নমনীয়, যেখানে অন্য কিছু রয়েছে যেগুলো ‘পাথরে লেখা এবং কিছুতেই বদলানো যায় না ।

আমি চাই আমেরিকান জনসাধারণ বুক যে, মুসলিম মেয়েরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক নয়। আমরা আমাদের স্বামীদের পেছনে হাঁটি না এবং আমাদের অলংঘনীয় অধিকারসমূহ রয়েছে। ইসলাম কোন চরমপন্থী ধর্ম নয়। ইসলাম চরমপন্থায় বিশ্বাস করে না। ইসলাম সব সময় মধ্য পন্থাকে সমর্থন করে। ইসলাম কোন আরব বা আফ্রিকান-আমেরিকান ব্যাপার নয়; এটা সব জাতির সব মানুষের জন্য একটা ধর্ম। ইসলাম একটা কালজয়ী বা কালোত্তীর্ণ ধর্ম যা সব কালের এবং সব স্থানের জন্যই উপযোগী। ইসলামের ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্যের কোন সীমারেখা নেই। সারমর্ম হচ্ছে, ইসলাম শান্তি ও সুখের ধর্ম।

আপনি যদি সত্যিই কখনো দেখতেন যে ইসলাম কি, তাহলে আপনি সাথে সাথে তাকে শ্রদ্ধা করতেন। এখন পর্যন্ত এটা কেবল আমাদের মনে লালন করা একটা আদর্শ!

বিবাহ সম্পর্ক ইসলামে সংরক্ষিত এবং যৌনতার বিকাশ ঘটে পর্দার আড়ালে! রাস্তাঘাট তখন নিরাপদ থাকবে। আপনার ছেলেমেয়ে যৌনতার বা মাদক দ্রব্যের আওতার বাইরে থাকবে। তারা মূল্যবোধের এবং বাস্তব দক্ষতার শিক্ষা লাভ করবে।

আপনার স্বামীর আয়ই পরিবারের ব্যয়ভার বহন করার জন্য যথেষ্ট হবে যা আপনাকে মুক্ত রাখবে কাজ করতে অথবা যত খুশী সন্তান ধারণ করতে অথবা পড়াশোনা করে অন্যভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে।

মানুষজন তখন বেকারত্বের ভয়ের ভিতর অথবা বন্ধকের ফলস্বরূপ বাজেয়াপ্ত হবার ভয়ের মাঝে জীবন যাপন করবে না। ছোট স্থানীয় ব্যবসায় এবং সুদ মুক্ত ব্যাংকিং হবে অর্থনীতির ভিত্তি। জীবন আবার বহনযোগ্য হয়ে উঠবে।

এসব কেবল শুরু। আপনি যদি কখনো একটা সুন্দর প্রশস্ত মসজিদে ঢোকেন এবং সর্বোচ্চ আল্লাহর কাছে সত্যিকার প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন, আপনি সত্যিকার অর্থে পরিতৃপ্ত ও সম্মানিত বোধ করবেন। আল্লাহ্র দয়ায়, কোনদিন, এসবই আমাদের হবে।

ইসলাম একটা জীবনযাত্রা। জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রের জন্য এতে উত্তর রয়েছে। আমি দৃঢ় বিশ্বাস থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছি- কারো জোরাজুরিতে নয় বা আমার স্বামীর জন্যও নয়। আমি আমার ইসলামকে ভালোবাসি এবং আমি অনুভব। করি আমার জন্মের সময় আমি একজন মুসলিম ছিলাম এবং আমাকে খৃষ্টান হিসেবে বড় করা হয়েছে। এখন আমি প্রত্যাবর্তিত হয়েছি- ধর্মান্তরিত হয়ে সত্যিকার এবং সোজা পথে। আমি সাফল্য লাভ করেছি। আমি ইসলামে ফিরে এসেছি! আল্লাহ যেন আমার হৃদয়কে সব সময় পবিত্র রাখেন এবং আমাকে সোজা পথের উপর রাখেন।

একজন মুসলিম নারী হিসেবে আমি বলতে চাই যে, ইসলাম আমাকে অনেকভাবে মুক্তি দিয়েছে। বেশীরভাগ আমেরিকানই মুসলিম নারীদের নির্যাতিত সমষ্টি হিসেবে দেখে, কিন্তু আমি তাদের জানাতে চাই যে, যদি মুসলিম মেয়েরা কখনো নির্যাতিত হয়, তাহলে তা এ জন্য যে তারা সত্যিকার ইসলামকে ভুলে গিয়ে তাদের দেশের আচার-আচরণ অনুসরণ করে থাকে। যে সমস্ত আবর্জনাসম নিয়ম-কানুন মেয়েদের দমিয়ে রাখে, ইসলাম সেগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে তাদের আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসের মর্যাদায় উন্নীত করে।

বেশীরভাগ আমেরিকান মেয়েরা মনে করে যে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে মুক্ত নারীগোষ্ঠি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তারা নিপীড়নের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত নয়। প্রত্যাখ্যাত হবার ভয়ে যার নিখুঁত শরীরের প্রয়োজন, তথাকথিত ‘মনোযোগ’ পাবার জন্য যার শরীরকে প্রস্ফুটিত করতে হয়, যে একই ধরণের কাজ করেও একজন পুরুষ কর্মীর চেয়ে কম উপার্জন করে- উপরোক্ত এই শ্রেণীসমূহের অন্তর্ভুক্ত যে কেউ এখনো নির্যাতিতা এবং এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে বন্দীদশার শৃঙ্খল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তাদের জীবনে আল্লাহ ও ইসলামকে গ্রহণ করা।

আমেরিকান মুসলিম মহিলারা নির্যাতিতা নয় আর পর্দা আমাদের কোন শাস্তি নয় বরং অধিকার। আমরা মনে করি পশ্চিমা জীবনধারা, আমাদের চেয়ে এক ধাপ পিছিয়ে রয়েছে, এগিয়ে নেই। মধ্যপ্রাচ্যের মেয়েরা আমেরিকান পশ্চিমা জীবন ধারার মাঝে তথাকথিত সৌন্দর্য দেখে থাকতে পারে, কারণ তাদের দেশ প্রচলিত আচার-আচরণ অনুসরণ করে থাকে- ইসলাম নয়। আমার পূর্বাঞ্চলীয় বোনদের দেশে যদি সত্যি সত্যি ইসলামের অনুশীলন করা হতো, তাহলে পশ্চিমা মেয়েরা তা দেখে ইসলামিক অধিকার লাভের আন্দোলনে নামতো।

সবচেয়ে জরুরী যে বিষয়টি নিয়ে আমি শুধু মাত্র আমেরিকান জনগণ নয়, এমনকি অনেক মুসলিমের কাছেও বক্তব্য রাখতে চাই, তা হচ্ছে এই যে, ইসলামকে তার গুণাগুণ দিয়ে বিচার করা উচিত, কোন মুসলিম কিভাবে আচরণ করলো তা দিয়ে নয়। ইসলাম একটা পূর্ণ ব্যবস্থা, কারণ এটা আমাদের মতই, আল্লাহর সৃষ্টি। আমাদের অবশ্য পূর্ণ করে তৈরি করা হয়নি। আমাদের মুক্ত ইচ্ছা রয়েছে এবং আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিয়ে থাকি; কখনো সেগুলো সঠিক সিদ্ধান্ত হয়, আবার কখনো তা হয় না। তাছাড়া আমি এও আশা করি যে, অমুসলিমরা কোনদিন এ ব্যাপারটা বুঝবে যে, প্রতিটি মুসলিমই অর্থাৎ সত্যিকার মুসলিম যারা আল্লাহর আইন অনুযায়ী জীবন যাপন করে- একেকজন ‘মৌলবাদী এবং অমুসলিমরা এ শব্দটার আসল অর্থ বুঝবে। নবী মোহাম্মদের মাধ্যমে, আল্লাহ মানুষকে তার নির্দেশাবলী প্রদান করার ১৪০০ বছর অতিবাহিত হয়ে থাকলেও, ইসলামের কোন পরিবর্তন হয়নি। আসলে আল্লাহ আদমকে তৈরি করার পর থেকে আল্লাহর আইন কখনো বদলায়নি। আল্লাহ তো আর এখন আগের চেয়ে ভিন্ন মানুষ তৈরি করছেন না। আমরা সকলেই আল্লাহর তৈরি মানুষ। আমরা যখন জন্মগ্রহণ করি, আমাদের সবারই তখন স্নেহ, ভালোবাসা, খাবার, নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় এবং সবারই নিজের থেকে শ্রেষ্ঠতর কারো উপাসনা করার প্রয়োজন হয়। আমরা যখন বড় হতে থাকি এবং আমাদের পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে গঠিত হতে থাকি, তখন এই প্রয়োজনগুলো বদলে যায়, তবুও সেগুলো মানবিক প্রয়োজনই থাকে। পরিবর্তন অবশ্য কখনোই দেশ বা নেতা কর্তৃক সূচিত হয় না। তার শুরু হয় বাড়িতে, বাচ্চাদের মাঝে, যেখানে মেয়েদের সার্বিক কর্তৃত্ব। যখনই মুসলিম নারীরা এটুকু অনুধাবন করতে পারবে, মঙ্গলের জন্য পরিবর্তনের সূচনা তখনই ঘটতে শুরু করবে।

৫৭
মুসলিম হিসেবে আমেরিকা সম্বন্ধে আমাদের অভিজ্ঞতা কি
আমেরিকানদের কোন কিছু সম্বন্ধে একটা ঢালাও ধারণা পোষণ করার প্রবণতা রয়েছে। আমাদের তারা ওড়নায় ঢাকা দেখে এবং সাথে সাথেই মনে করে যে, আমাদের স্বামীরা আমাদের শাসন করে এবং আমরা রক্ষণশীল।

এই দেশের প্রতি আমি যে তিক্ততা অনুভব করি, তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমার এই মন্তব্য কঠিনতম মন্তব্যের একটা হবে। "THE LAND OF THE FREE, HOME OF THE BRAVE..." বলতে কিছুর অস্তিত্ব নেই। (আমেরিকানরা নিজেদের দেশকে যা বলে আখ্যায়িত করতে ভালোবাসে) এবং সরকারের শঠতা দেখলে আমার গা জ্বলে যায়। পৃথিবীতে মেয়েদের অধিকার মানবাধিকার, বাচ্চাদের অধিকার এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার এই সমাজ এবং সভ্যতাতেই সবচেয়ে বেশী বলে দাবি করার যে একগুঁয়েমি দেখানো হয় তা সত্যি বিরক্তিকর। আমার উপরে মানুষজন যখন তাদের শ্রেষ্ঠত্ব চাপিয়ে দিতে চায় তখন আমি যা বলি তা হচ্ছে, “এটা হচ্ছে আমেরিকা, যেখানে প্রত্যেকেরই তারা কি বিশ্বাস করবে তা বেছে নেয়ার অধিকার রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি যে, আমেরিকান পরীক্ষা ফলপ্রসূ হচ্ছে। সমাজ থেকে সব মূল্যবোধ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং খৃষ্টান গীর্জাগুলো মানুষকে সব পাপই ক্ষমা করা হবে এবং যা করতে ভালো লাগে তাই কর- এই দর্শন দিয়ে বাইবেলকে একদম শিকায় তুলে রেখেছে। আমি জানি কোন সমাজই নিখুঁত নয়, কিন্তু আমি আমার বাচ্চাদের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়াতে চাই, তাদের এক-সাংস্কৃতিক সমাজের একটা পরিবেশে রেখে- এমন সংস্কৃতি এবং সমাজ যেখানে সেই সমস্ত মূল্যবোধ থাকবে, যেগুলোকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি যে সমাজে গ্রহণযোগ্য আচার-ব্যবহারের ধরণ সীমিত। আমাদের বাচ্চাদের যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধবিহীন সংস্কৃতির বিষ প্রয়োগ করেও আমার স্বামী এবং আমি তাদের জন্য পশ্চিমের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারি।

গবেষণা এবং জ্ঞানের মাধ্যমে আমেরিকান মেয়েরা ইসলাম বেছে নিয়েছে বা গ্রহণ করেছে তাদের স্বামীদের প্রভাবে বা জোরাজুরিতে নয়। কোথাও এমন একটা গল্প শোনা গিয়েছে যে, এক অস্বাভাবিক ইরানী তার পরিবারকে নিপীড়ন করেছে, যদি ধরে নেই তা সত্যি, তবু কেবলমাত্র এ জন্যই পুরো দেশটাই ওরকম হয়ে যাবে তেমন কোন কথা নেই। আমি মানুষজনকে আহবান করবো ভেবে দেখতে যে, এদেশে প্রতি মুহূর্তে কি ধরনের অত্যাচার ও নিপীড়ন ঘটছে। আমি আহবান করবো আমেরিকান মানুষরা যেন তাদের খোদা-প্রদত্ত মগজের ব্যবহার করে এবং গোটা জীবনটা ঘুমিয়েই কাটিয়ে না দেয়।

এটা জেনে আমার খুব কষ্ট লাগে যে, অধিকাংশ আমেরিকানই মুসলিমদের এবং ইসলামকে কি সাংঘাতিকভাবে ভুল বোঝে- যা থেকে ঘৃণা, কটাক্ষ এবং নিষ্ঠুর মন্তব্যের উৎপত্তি হয়- যা আমেরিকান হিসেবে মুক্তভাবে আমাদের ধর্ম পালনের অধিকারকে ব্যাহত করে। এই দেশটা ধর্মপ্রাণ একদল মানুষ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যারা এমন একটা দেশ চেয়েছিল, যেখানে মানুষ।

তার ধর্ম-বিশ্বাসের জন্য অত্যাচারিত হবে না। আমরা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক মিশ্র একটা অবস্থায় রয়েছি, এবং আমরা যদি একটা জাতি হিসেবে সাফল্য অর্জন করতে চাই অথবা আমাদের সংবিধানের আদর্শকে জীবন্ত রাখতে চাই, তবে আমাদের একের অপরকে বুঝতে হবে, মেনে নিতে হবে এবং সম্মান করতে হবে- ধর্ম, প্রথা বা পোশাক-আশাকের ধরণ নির্বিশেষে। আমি আমেরিকানদের উপদেশ দিতে চাই যে, তারা যখন লম্বা ও শালীন পোশাক পরিহিতা একজন মেয়েকে তার হাত ও মুখমন্ডল ছাড়া সমগ্র শরীর ঢেকে চলতে দেখে, তখন তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে না থেকে বা তার জন্য দুঃখিত বোধ না করে, যেন হাসিমুখে তার শান্তি কামনা করে একটু জেনে যে ঐ মেয়েটা দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ, যে তার ঈশ্বর এবং আপনার ঈশ্বরের সম্ভাব্য সবচেয়ে উত্তম উপাসনার চেষ্টায় রত। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক যেখানে আমাদের স্বাধীনতা থাকার কথা- ইচ্ছামতো উপাসনা করার। চলুন, আমরা একসাথে কাজ করি যাতে সেরকম একটা অবস্থা বজায় থাকে।

৫৮
শেষ কথা
JODI যখন ঐ THANKSGIVING-এর দিন বেড়াতে বাড়ি এসেছিল এবং আমাদের তার ইসলামে ধর্মান্তরিত হবার খবর জানিয়েছিল, আমাদের মনে হয়েছিল সে যেন আমাদের ছুরিকাহত করলো। আমাদের মিষ্টি মেয়েটা এমন একটা পাগলামি কি করে করতে পারলো? আমার স্বামী JOE এবং আমি দুজনেই গভীরভাবে আহত বোধ করেছিলাম। নিশ্চিতভাবেই JODI আমাদের আঘাত দিতে চায়নি। কিন্তু সে দিয়েছে। আর আমরা বুঝতে অক্ষম ছিলাম সে আসলে কি করেছে। আমরা কেমন যেন অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের রাগও হচ্ছিল এবং আমরা আমাদের মেয়েকে পরিবারের একটা অংশ হিসেবে আর চাই কিনা, সেটাও সঠিক বুঝতে পারছিলাম না। একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। আমরা কি ধরে নেবো যে, সে আর আমাদের বাড়িতে স্বাগত নয় এবং তার সাথে এমন আচরণ করবো যে সে মৃত।

বাবা-মার ঐতিহ্যের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাদের হতাশ করার ব্যাপারে JODI-ই সর্বপ্রথম মেয়ে নয়। সত্যি বলতে কি, ছেলেমেয়েরা কদাচিৎই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, যেগুলো বাবা-মার আকাঙ্খর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আমরা আবিষ্কার করেছি যে, প্রায়ই বাবা-মার প্রতিক্রিয়া “বেরিয়ে যাও, আর কখনো ফিরে এসো না, আমাদের পরিবারের জন্য তুমি মৃত”- এই ধরণের হয়ে থাকে। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে, আমরা এ ধরণের একটা কিছু বলার তাড়নাটা চেপে যেতে পেরেছিলাম। একটা সমাধান খুঁজে বের করা গিয়েছিল। পরিবার হিসেবে আমরা বোঝার চেষ্টা করলাম, আর সে চেষ্টা করতে গিয়ে আমরাও একটা ভিন্ন পথে যাত্রা করেছি এবং এমন একটা জীবনযাত্রা আবিষ্কার করেছি যা, আমেরিকানদের কাছে অজানা হলেও অনেক মানুষ যারা মুসলিম হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের জন্য পরিপূর্ণ জীবন যাত্রা এবং তৃপ্তিদায়কও বটে।

আমাদের ঐ আবিষ্কারের একটা অংশ ছিল এই যে, গণমাধ্যমগুলো, ইসলামকে যেভাবে উপস্থাপন করে থাকে, যা সাধারণতঃ নেতিবাচক, তাতে ইতিবাচক ঘটনাবলী একদমই জানা হয় না। আর নেতিবাচক বিষয়বস্তুর কাটতিও প্রচুর। তাই প্রায়ই যে দৃষ্টিভঙ্গীর প্রকাশ প্রচার মাধ্যমে ঘটে থাকে তা, আমি এই প্রকল্পের আওতায় যে সমস্ত চমৎকার, দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী মেয়েদের সাক্ষাৎ পেয়েছিযারা নিছক ব্যক্তিগত লালসা ও তাৎক্ষণিক তৃপ্তির পথকে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের কথা একদমই বিবেচনা করে না।

আমেরিকায় ইসলাম গ্রহণ করাটা কোন সহজ পথ নয়। বেশীর ভাগ আমেরিকানরাই মুসলিমদের আগন্তুক ভেবে থাকে। ওড়না পরা, সামাজিক অনুষ্ঠানে মদ্যপান না করা, জুয়া না খেলা, আমেরিকা বা কানাডার প্রতি দেশপ্রেম

থাকা- এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য বন্ধু লাভের উপায় নয়। কেউ কেউ যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে, তাদের চালাক-চতুর বা বুদ্ধিমান নয়' বলে নাকচ করে থাকে। এদেশের মুসলিমদের নিয়ে গবেষণা করলে তাদের মাঝে নিঃসন্দেহে খুব বেশী সংখ্যার পেশাজীবী পাওয়া যাবে- ডাক্তার, প্রকৌশলী, সেবিকা, অধ্যাপক, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা- তার সাথে কর্মজীবী, ছাত্র ও নির্মাণকার্যে নিয়োজিত মানুষজনও রয়েছে।

আমেরিকানদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে এই যে, মুসলিমরা সন্ত্রাসবাদী এবং যখনই কোথাও কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটে, তখনই তড়িঘড়ি করে তাদের দোষারোপ করা হয়। ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসে OKLAHOMA CITY-তে বোমা বিস্ফোরণের পরে এই প্রচলিত বদ্ধমূল ধারণার কারণে মুসলিমরা অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্ত হয়েছে- গণমাধ্যমগুলো যেভাবে তড়িঘড়ি করে মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের দোষারোপ করেছিল, তাতে সারা দেশ জুড়ে মুসলিমরা হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। এমন আচরণ যদিও বা বেশীর ভাগ আমেরিকানদের প্রতিনিধিত্ব না করেও থাকে, তবুও এটা দেশের এক ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট বৈষম্যমূলক আচরণ প্রকাশ করে।

আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এমন ব্যক্তিত্বদের দ্বারা, যারা মুক্তভাবে এবং নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী উপাসনা করার সুযোেগ চেয়েছিলেন। আমরা যারা আজ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, তারা সব সময়ই আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গর্ববোধ করে এসেছি। আমরা ঐ স্বাধীনতাকে সমানভাবে ভাগ করে নিতে চাই কি না, তা পরীক্ষা হবে যখন ইসলাম এবং অন্যান্য প্রাচ্যের ধর্মসমূহের বিস্তৃতি ঘটবে এবং তারা আমাদের এই সমাজে তাদের স্থান করে নেবে। উত্তর আমেরিকা মহাদেশে ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা ধর্মের একটি। আর এই মানুষগুলো, যারা আমাদের মাঝে জীবন ধারণ করতে এবং সুখী হতে চায়, তাদের জানা এবং বোঝাটা জরুরী।

কখনো আমরা যাদের ভালোবাসি, তারা এমন সিদ্ধান্ত নেয়; যা আমাদের মাঝে গৃহ-ভাঙ্গা থেকে শুরু করে হৃদয়গ্রাহী পর্যন্ত সব স্তরের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। কোন কোন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য সহ্য করা কষ্টকর হতে পারে, আর আমরা FIDDLER ON THE ROOF-এর TEvYA যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তেমন একটা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি- যেখানে তার তৃতীয় কন্যার বিয়েতে সে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, তার আর কোন উপায় ছিল না, কারণ সে যদি আর নমনীয় হতে চায় (মেয়ে যা করেছে বা যাকে বিয়ে করেছে সে সব মেনে নিতে), তবে সে ভেঙ্গে যাবে। অপরদিকে আমাদের মেয়েদের (এবং ছেলেদের) নেয়া কিছু সিদ্ধান্ত, আমাদের জন্য, আমাদের চারপাশের জগতের দ্বার খুলে দিতে পারে, যদি আমরা নতুন আবিষ্কারের প্রেরণা নিয়ে, আমাদের এই নতুন পথকে জানার চেষ্টা করতে দিতে রাজি হই। ইসলাম অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে JODI, আমার স্বামী ও আমার জন্য, এমনই এক যাত্রার সূচনা করেছিল।

আমাদের যাত্রায় আমরা বই চমৎকার মানুষের সন্ধান পেয়েছি, যারা সাধারণ গতানুগতিক আচার-আচরণ ত্যাগ করে এবং তাদের সন্তানদের ঈশ্বরের প্রতি ও অন্যের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন শিক্ষা দিয়ে বড় করার চেষ্টার মাধ্যমে, পরিপূর্ণ জীবন যাপনের চেষ্টা করে চলেছে। আমাদের নির্বাচনের সুযোগ ছিল, হয় মেনে নেয়া নয় প্রত্যাখ্যান করা এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমরা মেনে নেয়ার বা গ্রহণ করার রাস্তা বেছে নিয়েছিলাম। এইসব অন্য পথের কন্যাদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে জানতে পেরে এবং সে সবের সাথে সহমর্মিতা বোধ করে, আমাদের সেই যাত্রা এক আনন্দময় ও তৃপ্তিদায়ক যাত্রা হয়েছে।

৫৯
পরিশিষ্ট- ক Appendix A: Letter and Questionnaire :
American-Born Women Converted to Islam

(Collected from September 1993 through July 1994)

TO: American-born women who have converted to Islam

FROM: Carol Anway, a parent whose daughter, Jodi, converted to Islam and Jodi Tahireh Mohammadzadeh, the daughter who converted

RE: A research project to foster understanding of the choice to convert to Islam and the effect of that choice on one's life September 1993

DATE: September 1993

Twelve years ago our daughter, Jodi, married a young man from Iran and about two years later converted to Islam. Although we were very accepting of our new son-in-law, it was a struggle to accept this change of religion which Jodi chose. We are so grateful that they lived close enough so that we had time to work through our relationship with her and Reza regarding their lifestyle and traditions that were so new to us. That relationship has been enriched even more by the coming of two grandchildren. Friends and acquaintances are familiar with the book and movie, Not Without My Daughter, and other articles that are very negative. They do not understand the strength and quality of life Jodi and her other American Muslim sisters have in their Islamic commitment. We want to share a more realistic image by gathering and sharing some of your stories through a descriptive research and possible articles or book. Carol, the director of the research project, has a master's degree in education, counseling Jodi is working on her master's degree in nursing. We will be assisted by a small group of American-born women who have converted to Islam and are professional educators.

This is a cross-sectional study of women in major urban areas of the United States and Canada. The study is based on those American-born women who have converted to Islam and wear the covering (hijab) whether married or unmmarried. Our intent is to gather stories of women from a wide geographical area of the United States and Canada by their completing this questionnaire.

The purpose of this study is to explore and describe the effect that coversion to Islam has had on the lives of American-born women and their families. We want to emphasize the positive aspects as well as acknowledge stresses that have occurred. We hope, through the writings that will result from this study, to encourage the families of origin of American Muslim women to work through their struggle to understand and accept this choice to convert to Islam.

The data in the attached questionnaire contains both objective and subjective questions to answer. This will assist you in describing your experiences as a Muslim woman. The questionnaire collection period has been extended from May 15 to June 15 but we would like for you to send your completed questionnaire to us as soon as possible. We want to reinforce the confidentiality of this project. Carol will be the only one who will know what name goes with what data and will be very careful to keep what you share separate from your name. However the data gathered will be used in articles and possibly a book to reflect the data and stories collected. If you have any questions about the study, please call Carol at 816/252-7541 in the Kansas City area.

Sincerely,

Carol Anway and Jodi Tahireh Mohammadzadeh

P.O. Box 27

Lee's Summit, MO 64063

৬০
AMERICAN-BORN WOMEN CONVERTED TO ISLAM QUESTIONNAIRE
By

Carol Anderson Anway

and

Jodi Tahireh Mohammadzadeh

Directions : Thank you for your willingness to respond to this questionnaire. There are two parts to it. The first and last pages are easy- just collecting information. The rest of the pages present questions for you to respond by writing down your own experiences.

After filling out page one, respond about your own personal experiences using the questions in small print to guide your responses where appropriate. You may write in the spaces on the questionnaire or on separate sheets of paper.

Please feel free to make copies of this questionnaire and introductory letter to give to other American-born women who have converted to Islam. Encourage them to fill it out and return it within 6 weeks after receiving the questionnaire.

1. STATISTICAL DATE

Age

Vocation

Work Status

Education (Circle highest achieved) Grade School High School AA BA/BS MA/ MS Doctorate Other –

Education at time of conversion :.

Marital Status _-_Never Married __ Married Divorced Widowed

If married, nationality of husband Years Married Number of children - Ages_ If school age, are they in Islamic public school_hone school

How many years have you been Muslim?

Check the areas of Islam which you practice :

- Wear cover (Hijab) –

daily prayers –

fasting during Ramadan –

eat only approved meats –

on-going study of Qur'an and Islamic teachings

Name Phone(__)Address.

৬১
II. YOUR CONVERSION TO ISLAM
Describe the process of your conversion to Islam. What was your religious commitment prior to converting to Islam and the extent of that commitment? Describe the changes that you needed to make in your life as a result of your conversion and practice of Islam. Were there areas left behind that caused you grief and loss? How has this change helped you be what you wanted to be? What has been (or is) the most meaningful part of Islam for you?

৬২
III. LEARNING TO LIVE AND PRACTICE AS A MUSLIM
How did you learn to live as a Muslim? Who was most helpful to you? What was most helpful to you To what extent has it been easy or difficult for you to take on the religious practices?

৬৩
IV. YOUR FAMILY OF ORIGIN
What effect has your choice to be Muslim had on your relationship with your parents and other family members? What do you hope for in regard to your relationship with parents or family?

What were or are the main points or events of stress (if any) with your family of origin?

How do you manage the celebration of traditional holiday times? How do you include your family of origin in your Islamic celebrations? What are the difficulties or pleasures for you when you visit your family or leave your children with them?

৬৪
V. YOUR HUSBAND
How did you meet your husband? What were the characteristics that attracted you to him? What needs did you have in your life that this man seemed to fill for you? What part did he have in your conversion? How did your family of origin accept your husband?

1. before marriage as your friend

2. as your fiancee

3. as your husband Tell about your marriage ceremony. What elements of Islam were in the ceremony?

৬৫
VI. THE HOMELAND OF ORIGIN OF YOUR HUSBAND
To what extent does your daily life include the traditions and culture of your husband's country? What are your goals in regard to living in your husband's country or U.S./ Canada? What citizenship does your husband now hold?

৬৬
VII. YOUR HUSBAND'S FAMILY
Have you met your husband's immediate family? If so, tell about the experience. How have you been accepted by his family? If you move to the area where his family is, how do you expect to fit in? What benefits or problems do you anticipate in relating to your husband's family?

৬৭
VIII. YOUR POSITION AS A WOMAN
What are the rights you are experiencing as a Muslim woman?

What are some areas you are grateful for or are apprehensive about in your position as a woman in your marriage? What are some areas you feel are not open to you in your position as a Muslim woman?

X. CHILD REARING (If you have children) How are your child rearing techniques influenced by being Muslim? To what extent is your husband involved in child care? What are your rights and obligations with the children? What are their rights and obligations to you?

৬৮
X. YOUR CHANCE TO EXPRESS OTHER VIEWS AND THOUGHTS
What would you like the American public to know about you that has not yet been asked?

৬৯
পরিশিষ্ট- খ
Appendix B:

Questionnaire : Parents of American-Born

Women Converted to Islam

(Questionnaires for the parents were sent to most of the women when they responded to the original questionnaire. It was their choice whether or not to send this one on to the parents. A letter was enclosed with the parent questionnaire that was similar to the letter sent with the questionnaire to the women.)

৭০
PARENT QUESTIONNAIRE
1. STATISTICAL DATA

Name :

Phone:

Address :

Daughter's Name :

Years Muslim :

Level Ed.:

Level Ed. of Spouse :

Vocation :

Spouse's Vocation :

No. of Children You Have

On a scale of 1 to 10 rate how you felt about your daughter's conversion to Islam in the first few days your received the news. May indicate both mom and dad.

৭১
Rate how you presently feel about your daughter's conversion
1. Tel about your daughter's conversion to Islam.

2.Tell about the effect your daughter's conversion and commitment to Islam has had on the family.

3. What do you hope for in regard to your relationship with your daughter in the future?

4. What were or are the main points or event of stress with your daughter (and husband and grandchildren if applicable)?

5. How do you manage the celebration of traditional holiday times?

6. How are you included in their Islamic celebration or how do you wish to be included?

7. What are the difficulties or pleasure for you when your daughter (and her family, if any) visits in your home or you visit with them?

8. If your daughter is married to a Muslim, tell about the experience of that event for you.

9. At the present time, what are your greatest concerns regarding your daughter and her conversion?

10. What effect, if any, has this experience had on your theology and religious commitment?

৭২
পরিশিষ্ট ‘গ’ একজন মেয়ের তরফ থেকে সম্পূর্ণ প্রশ্নপত্রের উত্তর
অনেক মেয়েরাই প্রশ্নপত্রের উত্তর দিতে গিয়ে তার সাথে ছোট আকারে নিজেদের ব্যক্তিগত মন্তব্যও লিখে দিয়েছে, যাতে তারা তাদের অভিজ্ঞতা অন্যদের জানাতে পারার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে অথবা অন্যরা কি উত্তর দিচ্ছে তা জানার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। নীচের জবাবটি পুরোপুরি তুলে দেয়া হলো, যাতে কোন একজন মেয়ের সম্পূর্ণ কাহিনীর একটা উদাহরণ দেয়া যায়। সে একটা মন্তব্যে উল্লেখ করেছে, “এটা লেখাটা একটা মজার অভিজ্ঞতা ছিল একটা বাঁধ ভেঙ্গে পানি মুক্ত হবার সাথে যার তুলনা চলে”।

এই মেয়ের বয়স ৩৫ বছর, ৩ সন্তানের জননী, দিনের আংশিক সময় কাজ করে থাকে সে, একটা ব্যাচেলর ডিগ্রী রয়েছে তার এবং সে ১৪ বছর যাবত মুসলিম।

৭৩
আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে বলুন
আমার ইসলাম গ্রহণ করার প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ এবং পর্যায়ক্রমিক। আমি একটা খুষ্টান সংস্কৃতির পরিবেশপূর্ণ বাড়ীতে বড় হয়েছিলাম, যেখানে প্রধান উৎসবগুলো উদ্যাপন করা হতো কিন্তু গভীরতর অর্থের সন্ধান করা হতো না। এটা আমার বাবা-মা ইচ্ছা করেই করতেন, কারণ তারা মনে করতেন যে, সুসংগঠিত ধর্মের নামে পৃথিবীর প্রতি অনেক ঘৃণা ও হিংসা দেখানো হয়েছে। দাদা-দাদীদের জেদের কারণে আমাদের BAPTIZE করা হয়েছিল এবং রবিবাসরীয় স্কুলে কিছু প্রাথমিক প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছিল। আমার মা-বাবা আমাদের বলেছিলেন যে, আমরা বড় হয়ে চাইলে আমাদের নিজ ধর্ম বেছে নিতে পারি।

আমি যেটুকু ধর্মীয় প্রশিক্ষণ পেয়েছিলাম, সেটুকু আমার ভিতরে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করে (তা না হলে কেউ আর কিভাবে, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের মাঝের অদ্ভুত সব যোগ-সংযোগ এবং নিপুণ সব হিসাব-নিকাশের ব্যাখ্যা করবে?), কিন্তু কোন ধর্মীয় ব্যবস্থাতে কোন বিশ্বাস আমার ছিল না। আমি নিজেকে একজন খৃষ্টানই মনে করতাম, তবে ব্যাপক অর্থে ঃ ঈশ্বরে বিশ্বাস, নবী হিসেবে JESUS-এ বিশ্বাস, চারিত্রিক এবং নৈতিক শিক্ষাসমূহে বিশ্বাস ইত্যাদি আমার ছিল। যাহোক, আমি যেভাবে বড় হয়েছিলাম তাতে, আমার ভিতর সন্দেহ প্রবণতা এবং সবকিছুর মাঝে দোষ ধরার একটা প্রবণতা প্রবলভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল, আর সেই সুবাদে আমি গীর্জার মতবাদের সব কটি দিক নিয়েই প্রশ্ন তুললাম। শেষ পর্যন্ত আমি সিদ্ধান্তে পৌছলাম যে, আমি সংগঠিত ধর্মে বিশ্বাস করি না কারণ, তা অযৌক্তিক, অত্যন্তরীণভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, আর শঠতাপূর্ণ (যা ঈশ্বরের নামে অনেক নীতিবিবর্জিত এবং নৈতিকতা বিরোধী কাজ অনুমোদন করে)।

আমার একটা ভাসা ভাসা ও অস্পষ্ট ধারণা ছিল যে, ধর্ম ছাড়া যেন জীবনে অত্যাবশ্যকীয় কিছু একটার অভাব থেকেই যাচ্ছে। কোন বৃহত্তর উদ্দেশ্য ছাড়া বেঁচে থাকাটা যেন সর্বদা পরিবর্তনশীল বাসনার পিছনে ছুটে চলার এক অন্তঃসারশূন্য তাড়না। তাই আমি বলা যায় এ রকম অর্ধমগ্ন হৃদয়ে এবং এলোমেলোভাবে আমার আধ্যাত্মিক' ‘নিজকে খুঁজতে শুরু করি।

বিভিন্ন ধর্মে আমি যে আধ্যাত্মিকতার খোজে ছিলাম, তার ঝলক দেখতে পেলাম, তবে সেগুলোর সবকটিতেই যেন কিছু অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের অভাব রয়েছে- এমন মনে হলো আমার। একটা ধর্মে হয়তো শান্তি এবং সহিষ্ণুতার একটা সুন্দর ভাব রয়েছে, কিন্তু এরই মাঝে তা হয়তো তার নৈতিক এবং নীতিগত দিকটা হারিয়ে বসেছে। আবার আরেকটাতে হয়তো অন্যের প্রতি দায়িত্বের এবং আচরণের সুদৃঢ় নিয়ম রয়েছে। কিন্তু যুক্তিভিত্তিক কোন প্রশ্নকে চেপে যেতে বাধ্য করা হয়। আরো কোনটির হয়তো দৃঢ় ধর্মীয় বন্ধন রয়েছে। কিন্তু দ্বার হয়তো বহিরাগতদের জন্য রুদ্ধ। আবার এমনও ধর্ম হয়তো আছে যা ঈশ্বরকে ঘিরে থাকা রহস্য, সৌন্দর্য এবং শান্তি সম্বন্ধে অবগত। কিন্তু দৈনন্দিন বিষয়সমূহের ব্যাপারে অবাস্তব ধারণা পোষণ করে এবং আমাদের চারপাশে মানুষদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে উদাসীন। এরকম একটা সময়ে আমার সাথে সেই মানুষটির সাক্ষাৎ ঘটে, যে পরবর্তীতে আমার স্বামী হয়েছিল এবং তাকে ও তার সংস্কৃতিকে বুঝতে গিয়ে আমি ইসলামের সাথে পরিচিত হই। ইসলামের ধ্যান-ধারণা এবং শিক্ষাসমূহ তাৎক্ষণিকভাবেই আমাকে আকৃষ্ট করে। সেগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, সেগুলো যুক্তিপূর্ণ ছিল, সেগুলো মধ্যপন্থী ছিল এবং সেগুলো ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্ব ও সমষ্টিগত কর্মকান্ডের মাঝে ভারসাম্য রক্ষার পক্ষে ছিল। ইসলামের ধ্যান-ধারণা হচ্ছে সর্বজনীন অথচ সুদূরপ্রসারী। ঈশ্বর ছিলেন সর্বশক্তিমান অথচ ন্যায়বিচারক, ঈশ্বর ছিলেন দয়ালু অথচ সঠিক নির্ধারক। আমার স্বামী এবং আমি যেদিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই, সেদিন আমি শাহাদা গ্রহণ করি।

শুরুতে মনে হয়েছিল, ইসলাম গ্রহণ করাতে আমার জীবনে কোন রকম পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। আমার স্বামী বেশ ক'বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে থাকাতে আর আমার এখানেই বড় হওয়াতে, আমরা এখানকার আচার-আচরণই অনুসরণ করছিলাম এবং আমাদের ধর্মীয় জীবনকে আমাদের ধর্ম-নিরপেক্ষ জীবন থেকে আলাদা করে রাখছিলাম। প্রথম পরিবর্তনসমূহ (আমাদের চারপাশের মানুষজনের যা চোখে পড়ে) ঘটে যখন আমরা একটা পরিবার হিসেবে বেড়ে উঠছিলাম এবং এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম যেগুলো আমাদের বাচ্চার এবং আমাদের জীবনকে একই সাথে প্রভাবিত করছিলো। ঈশ্বরের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার যদি সুস্পষ্ট কোন মোড় থেকে থাকে আমাদের জীবনের পথে, তবে তা এসেছিল, আমাদের বড় সন্তানের বয়স যখন তিন বছর। আমার একজন ভালো বন্ধু ছিল, যে একজন অনুশীলনকারী মুসলিম ছিল এবং তার সাথে অনেকটা সময়ই আমি একত্রে কাটাতাম। আমার ছেলে বেশ মনোযোগী দর্শক ছিল এবং তার বয়স অনুপাতে যথেষ্ট স্পষ্টভাষী ছিল। CHRISTMAS-এর কাছাকাছি কোন একদিনে সে আমাকে প্রশ্ন করে বসলো যে, আমরা যদি মুসলিমরা যা যা করে থাকে, তার কোন কিছুই করি, তবে কেন আমাদের মুসলিম বলে থাকি? সে জানতে চাচ্ছিল, আমাদের ঘরে CHRISTMAS TREE কেন রয়েছে? সে জানতে চাচ্ছিল আমি কেন হিজাব পরি না?

তার প্রশ্নাবলীর খুব ভালো কোন উত্তর আমার জানা ছিল না, আর তাই তার প্রশ্নাবলী আমাদের জীবনে ধর্মের ভূমিকার একটা আগাগোড়া পুনর্মূল্যায়নের পরিবেশ সৃষ্টি করলো। একটা সুদৃঢ় ধর্মীয় পরিচিতি সহকারে অথবা তা ছাড়া ছেলেমেয়ে বড় করার সুফলাফল নিয়ে, আমার স্বামী এবং আমি বেশ তর্ক করলাম এবং পরীক্ষা করে দেখলাম যে, আমরা আমাদের জন্য ধর্মকে কতটুকু জরুরী মনে করি। শেষ পর্যন্ত আমরা অনুভব করলাম যে, আমাদের বাচ্চাদের)র জন্য একটা ধর্মীয় চেতনা আবশ্যক, আর তাই তা আমাদের জন্যও প্রয়োজনীয়।

পরবর্তী পাচ বছরের মতো সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের জীবন ধারাকে ইসলামিক মূল্যবোধের আওতাভুক্ত করার জন্য পরিবর্তিত করি। পর্যায়ক্রমে আমরা শুধু হালাল খাবার খেতে শুরু করি এবং ঐ সমস্ত সামাজিক অবস্থা এড়িয়ে চলতে শুরু করি যেখানে কেউ মদ্যপান করে। আমরা রোজা রাখতে শুরু করি, আমাদের সব নামাজ আদায় করতে শুরু করি, কোরআন শিক্ষা শুরু করি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে আরো বেশী মিশতে শুরু করি। সাধারণভাবে ইসলাম সম্বন্ধে বেশী সচেতন হবার অর্থ ছিল, নিজেদের এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের সার্বক্ষণিক পুনর্মূল্যায়ন। সার্বক্ষণিক এই মূল্যায়ন, কখনো কখনো একটা বাধা-বন্ধনের অনুভূতি জাগাতে এবং আমরা আমাদের অতীতের ঝামেলাহীন জীবনের আকাভা করতাম, যেখানে জীবন কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়া যাপন করা হয়। যাহোক, এমন সময়ের সংখ্যা খুব নগণ্যই ছিল, আর আমরা ইসলামে জীবন যাপন করে যা লাভ করেছি, তা ত্যাগ করার কথা কখনোই ভাবতে পারতাম না।

একজন অনুশীলনরত মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করাটা আমার জীবনে একটা উদ্দেশ্যের অনুভূতি দিয়েছে। জীবনের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে এটা জানার মাঝে, শান্তির একটা পূর্ণ অনুভূতি রয়েছে। আমি অনুভব করি যে, আমি আগের চেয়ে অনেক ভালো একটা মানুষ হয়ে গেছি বেশী দয়াপরায়ণ, বেশী মধ্যপন্থী, বেশী গভীর-চিন্তাশীল। আমার জীবনে একটা ঐশ্বৰ্য্য এবং স্থিতিশীলতার ভাব এসেছে, যা অনুশীলনরত মুসলিম হবার আগে ছিল না। এক কথায় বলতে গেলে, জীবন সুন্দর এবং কারুকার্যপূর্ণ এক পূর্ণতায় পরিণত হয়েছে।

৭৪
আমি কিভাবে মুসলিম হিসেবে জীবন ধারণ এবং অনুশীলন শিখলাম
আমি প্রাথমিকভাবে কোরআন পড়ে এবং অন্য জ্ঞানী মুসলিমদের প্রশ্ন করে মুসলিম হিসেবে জীবন ধারণ করতে শিখেছি। এছাড়া আমার আশপাশের মুসলিমদের দেখেছি এবং শিখেছি।

নতুন মুসলিমদের নামাজ শিক্ষার একটা বই দেখে,আমি নামাজ কিভাবে পড়তে হয় সেটা শিখেছি। অন্য কোন প্রশ্ন এলে সেটা আমি অন্য মুসলিমদের জিজ্ঞেস করেছি। আমি আমার স্বামীর পরিবারের কাছ থেকেও সহায়তা নিয়েছি। আমার স্বামীর তরফের আত্মীয়-স্বজন, যারা বাইরে থাকেন তারা আমাকে প্রয়োজন অনুযায়ী বই-পত্র পাঠিয়ে সাহায্য করেছেন এবং বিশেষভাবে আমার শাশুড়ি ও শ্বশুর খুবই সহায়ক ছিলেন।

একটা ইসলামিক নিয়ম পালন করা সহজ না কঠিন, আমার জন্য তা নিক্স করেছে, ঐ বিষয়ের সাথে আমি ইতিমধ্যে ইসলাম সম্বন্ধে যা জানতাম, তা কিভাবে সম্পর্কযুক্ত সেটা বুঝতে পারার উপর। ইসলামের পূর্ণ । কোন কিছুর সামঞ্জস্য বুঝতে না পারলে অথবা তার সম্পর্ক দেখতে না পারলে ঐ নিয়ম-নীতিকে জীবনের সাথে একাকার করে নেয়াটা আমার জন্য কষ্টকর হতো। যখন আমি পর্যাপ্ত পড়াশোনা করেছি, পর্যাপ্ত প্রশ্ন করেছি, পর্যাপ্ত আলাপ-আলোচনা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত কোন বিষয়কে বুঝতে পেরেছি, তখন সেটাকে জীবনের অন্য কর্মকান্ডের সাথে যোগ করে নেয়াটা আমার জন্য সমস্যার হয়নি।

৭৫
আমার আদি পরিবার (Family of Origin)
একজন ‘অনুশীলনকারী মুসলিম হওয়াটা আমার বাবা-মার সাথে আমার সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। ইসলামের প্রতি আমার বাবা-মার ধারণা বেশ নেতিবাচক এবং তারা এটাকে একটা অত্যাচারী এবং গোঁড়া ধর্ম বলে মনে করেন। সাধারণভাবে তারা কোন ধর্মকেই মহান কিছু মনে করেন না, আর বিশেষভাবে তারা ইসলামকে নারীদের প্রতি খুবই অত্যাচারী বলে মনে করেন। তবুও আমার একমাত্র সহোদরা বোন আমার সিদ্ধান্তকে বেশ সমর্থন করে থাকে।

আমি আশা করি, ভবিষ্যতে কখনো আমি হয়তো আমার বাবা-মার সাথে একত্রে বসে ইসলাম এবং আমার জীবনে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। আমরা অনেক পরেই এই আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি, কিন্তু তাতে খুব সামান্যই অগ্রগতি লাভ করতে পেরেছি। মুসলিম হওয়াটা যে আমাকে প্রশান্তি ও আনন্দ দিয়েছে এবং আমার জীবনকে অনির্ণেয় এক গভীরতা দিয়েছে- এটা বুঝতে তারা অক্ষম বলে মনে হয়। আমি যা, তা থেকে ইসলাম কোন কিছু কেড়ে নেয়নি, বরং তার সাথে শুধু নতুন মাত্রা যোগই করেছে। আমার এই সিদ্ধান্তকে আমার মাবাবা কেবল তাদের ও আমার ঐতিহ্যের প্রত্যাখ্যান বলে মনে করে থাকেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, আমি এক ধরণের সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ত্যাগ করেছি এবং সে জন্য তারা নিজেদের দোষ দেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, আমার ব্যাপারে তারা ব্যর্থ হয়েছেন- ব্যর্থ হয়েছেন আমাকে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দিতে এবং ব্যর্থ হয়েছেন আমাকে। নিজ সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণ আবদ্ধ রাখতে। আমি আশা করি, একদিন তারা আমার সিদ্ধান্তকে মেনে নেবেন- হয়তো বা তা তারা অনুধাবন করবেন না, কিন্তু অন্ততঃ তা মেনে নেবেন।

ইসলাম নিয়ে আমার এবং আমার মা-বাবার মাঝে অস্বস্তিকর অনেক বিষয় রয়েছে। যা কিছু বাহ্যত আমাকে (বা আমার সন্তানদের) ভিন্নরূপে (মুসলিম) প্রকাশ করে, তার সবকিছুই তাদের অপছন্দ। আমাকে বা আমার মেয়েদের নিয়ে জনসমক্ষে যেতে তারা অস্বস্তিবোধ করেন, কারণ আমরা হিজাব (আমি) পরি অথবা শালীন পোশাক পরি (আমার মেয়েরা তাদের পোশাকের সাথে লম্বা প্যান্ট পরে থাকে)। আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে মদ্যপান না করতে বলাতে তারা মনঃক্ষুন্ন হয়েছিলেন। তারা ইতিপূর্বে তাদের সাথে মদ নিয়ে আসতেন। আমার মাথায় ওড়না থাকলে তারা চেষ্টা করতেন আমার ছবি না তুলতে। আমাদের বাচ্চাদের মুসলিম নাম তারা পছন্দ করেন না এবং আমাদের প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর এ নিয়ে তারা আমার সাথে প্রচুর বাক-বিতন্ডা করেছেন। আমার স্বামী এবং আমি যে জোর দিয়ে বলি, পরিবারের অগ্রাধিকার সবচেয়ে বেশী, তাতে তারা অসন্তুষ্ট বোধ করেন। তারা মনে করেন বাড়ি বসে থেকে (যদিও আমি পার্ট-টাইম কাজ করি। আর পরিবারমুখী হয়ে, আমি নিজেকে এক রকম সস্তায় বিক্রি করে দিয়েছি। তারা আমার একটা পেশাগত সমৃদ্ধি বা CAREER আশা করতেন। বিশ্বের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তারা অস্বস্তিবোধ করেন এবং সেটাকে তারা অবাস্তব ও আদর্শবাদী বলে মনে করেন। আমাদের খুব রক্ষণশীল মনে করলেও, আমরা রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই সঠিক বলে তারা মনে করেন। সত্যি বলতে কি, বেশীরভাগ সময়েই আমি নিশ্চিত হতে পারি না যে, তারা আমাকে কি ভাবছেন। কারণ তারা কখনই তা খোলাখুলি প্রকাশ করেন না। আমাদের মাঝে যে সমস্ত অস্বস্তিকর, বিস্ফোরক আর মতপার্থক্যসূচক আলাপ-আলোচনা হয়েছে তা থেকে আমি বুঝতে পারি যে, তারা আমার সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করেন না এবং জীবনের জন্য আমি যা কিছু বেছে নিয়েছি তা নিয়ে তারা হতাশ। যদিও কখনই তারা মনে হয় আমাকে বলতে পারেন না যে, কেন? আমি মনে করি তার কারণ হচ্ছে যে, আদর্শভিত্তিক, নৈতিক, শ্লীল এবং যুক্তিযুক্ত কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে তর্ক করতে তারা অপারগ- এবং এটা এমনই একটা বিষয়, যা ছোটবেলা থেকেই তারা আমাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন কেবল সেটাকে তারা ইসলাম নামে ডাকেননি)।

উৎসব উদযাপনের ব্যাপারে আমরা আমাদের প্রথম সন্তানের বেলায় চেষ্টা করেছি, বাবা-মার সাথে CHRISTMAS উদযাপন করা চালিয়ে যেতে। আমরা ব্যাপারটাকে নানা-নানীকে তাদের উৎসব পালনে সাহায্য করা' বলে ব্যাখ্যা করতাম এবং ইসলামে নবী JESUS (Pbuh)-এর গুরুত্ব নিয়েও এ উপলক্ষে আলাপ করতাম। এটা অবশ্য অনেক কারণেই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেনি। আমাদের বাচ্চা সত্যি সত্যি কোন কিছুর পার্থক্য বোঝার জন্য খুবই কম বয়সী ছিল তখন, অন্য সব CHRISTMAS উদযাপনকারীর মতো হবার স্বাভাবিক শিশুসুলভ বাসনা তাকে CHRISTMAS-এর প্রচলিত জনপ্রিয় ধারণার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। ‘আমরা বনাম ওরা’ ধরণের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং ওর ভিতরে এক ধরনের বিভ্রান্তি ও চাপ সৃষ্টি করে আমার মা-বাবা আমার ছেলের ভিতরে আমেরিকান আচার-আচরণ ঢোকানোর চেষ্টা করতেন। আমাদের পরবর্তী সন্তানদের জন্মগ্রহণের পর্বে আমরা বুঝতে পারলাম যে, তাদের বেলায় ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের কাম্য নয়, আর তাই আমরা পর্যায়ক্রমে CHRISTMAS-এর জন্য আমার বাবা-মার কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত ছিল যা আমার বাবা-মাকে হতাশ এবং রাগান্বিত, দুটোই করেছিল। এখন তারা আমার বোনের স্বামী-সন্তানদের সাথে CHRISTMAS উদযাপন করেন।

আমরা, আমার বোন, বাবা-মা এবং তাদের বাবা-মায়ের মাঝে যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে CHRISTMAS কার্ড পাঠাই, নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই এবং CHRISTMAS-এর দিন ফোন করে থাকি। রমজানের শেষে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষেও আমরা আমার পরিবারকে চিঠি বা কার্ড পাঠাই। আমার পরিবার CHRISTMAS-এ আমাদের কার্ড পাঠায়। আর আমার বোন রমজানে অনেকবার ফোন করে খবর নিয়ে থাকে। আমরা কেমন সময় কাটাচ্ছি। অন্য খৃস্টান উৎসবগুলো অবশ্য (যেমন EASTER) আগেও আমাদের পরিবারে উদ্যাপন করা হতো না, সুতরাং সেগুলো এখন কোন সমস্যা নয়। আমার মা HALLOWEEN উপলক্ষে (যা আমরা উদযাপন করি না, কিন্তু আমার মা-বাবার কথা ভেবে আমরা এটাকে এক ধরণের না দেখার চেষ্টা করি) VALENTINE'S DAY উপলক্ষে এবং ওদের জন্মদিন উপলক্ষে, তার নাতি-নাতনীদের কার্ড পাঠিয়ে থাকেন। আমরা আমাদের ইসলামিক উৎসবসমূহে আমার মা-বাবাকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে খুবই ভালো লাগতো, কিন্তু তারা এই ধারণায় খুব স্বস্তি বোধ করেন না। তারা যখন আমাদের এখানে বেড়াতে আসেন, তখন আমরা যদি মুসলিম বন্ধুদের কোন সমাবেশে যেতে চাই, তবে তারা সেখানে যেতে চান না, আর তাই আমার বাবামাকে সম্মান দেখাতে ঐ সময় আমরা সাধারণতঃ বাড়িতেই থাকি, যদি না কোন কর্মকান্ডকে এড়িয়ে যাওয়া নিতান্ত অসম্ভব হয়।

আমরা যখন আমার বাবা-মার কাছে বেড়াতে যাই তখনও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়, বেশীর ভাগের উৎসই হচ্ছে আমাদের জীবনধারাকে তাদের অনুমোদন না করা। বিশ্ব সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী একেবারে আলাদা- রাজনীতি থেকে শুরু করে জীবনে স্বাধীনতা ও বস্তুবাদের ভূমিকা ইত্যাদি সবকিছুর ক্ষেত্রেই। আমাদের অবশ্য বাবা-মায়ের সাথে অনেক সুন্দর সময়ও কাটে এবং আমরা তাদের সাথে একটা ঘনিষ্ঠ ও পরস্পরকে সম্মান-দেখানো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।

আমার স্বামী উভয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে আমার স্বামীর সাথে আমার পরিচয় ঘটে, যখন আমি কলেজে ছিলাম। তার যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য আমাকে সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করেছিল সেগুলো ছিল তার উদ্যম, সততা, দয়াপরায়ণতা, বিশ্বস্ততা, বুদ্ধিমত্তা আর সার্বিকভাবে তার চরিত্রের দৃঢ়তা। সে কে এবং কি ছিল তা সে জানতো, তবু সে বিনয়ী ছিল। তার চরিত্রের দৃঢ়তা এবং অন্যের প্রতি তার দয়া ও দানশীলতাকে আমি বিশেষ প্রশংসার চোখে দেখতাম। সে খুবই সহনশীল এবং দ্র ছিল, আর তথাপি তার ভিতরে শক্তি ও দৃঢ়তা ছিল।

আমার ইসলাম গ্রহণে আমার স্বামীর একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে, কারণ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে সে সমর্থ ছিল, আর আমাকে ইসলাম এবং তার সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সে অনেক সময় ব্যয় করেছিল। তার সব ইসলামিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সে আমাকে সর্বদাই অন্তর্ভুক্ত করতো এবং ভাষা ও সংস্কৃতি এ দুটোরই ব্যাখ্যাকারী হিসেবে কাজ করতো। সে ইসলামকে আমার জন্য উন্মুক্ত করেছিল এবং ইসলামে আমার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভে আমাকে সাহায্য করেছিল। সে কখনই কোন পর্যায়ে আমাকে ধর্মান্তরিত হতে চাপ দেয়নি। সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণভাবে আমার নিজস্ব।

আমার পরিবার তাকে আমার বন্ধু হিসেবে খুব একটা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি, তবে আমাদের বাগদানের পরে সব ঠিক হয়ে যায়। মানুষ হিসেবে তাকে তারা খুবই পছন্দ করে, তবে আমার মুসলিম হবার ব্যাপারে আমার মগজধোলাই করার জন্য তাকে তারা দোষারোপ করে থাকে। খুব সহজে প্রভাবিত হবার জন্য আমাকেও তারা দোষারোপ করে। আমরা অনুশীলনকারী মুসলিম হবার আগে পর্যন্ত আমার বাবা-মার সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিল। আমাদের ছোট শহরের আদালত ভবনে এক নাগরিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ইরানে আমাদের অনুপস্থিতিতে প্রতিনিধির মাধ্যমে (আত্মীয়দের মাঝে যারা ধর্মীয় মুরুব্বী’ তারা যাতে আমাদের হয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারেন। আমাদের বিবাহ কার্য সম্পন্ন হয়েছিল। আমাদের নাগরিক আনুষ্ঠানিকতায় কোন ইসলামিক উপাদান ছিল না আর আমাদের ইসলামিক অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই মৌলিক ও বিবাহের চুক্তিপত্র, মতদান (ইচ্ছার ঘোষণা) এবং জনসমক্ষে আমাদের বিবাহের ঘোষণা।

আমার স্বামীর দেশ আমরা চেষ্টা করি ইসলামিক আদর্শ অনুযায়ী সংসার চালাতে এবং ইরানী সংস্কৃতি যেহেতু মূলতঃ ইসলামিক সংস্কৃতি, আমাদের সংসারে তার প্রতিফলন ঘটে। বাড়িতে আমরা ফাসেিত কথা বলি এবং প্রায়ই ইরানী খাবার খেয়ে থাকি যদিও TAC0, SPACHETTI এবং STIR-FRY-ও খুবই প্রিয় (ROAST ও HAMBURGER সহকারে)। ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য আমরা আপাততঃ যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চাই, আর তাছাড়া আমাদের এদেশে শোধ করতে হবে এমন শিক্ষার্থী-ঋণও রয়েছে। আমরা অনুভব করি যে, আমরা আমাদের এখানকার দায়দেনা ভুলে যেতে পারি না, আর আমরা যদি ইরানে থাকতাম, তবে জীবন ধারণ করা এবং দেনা শোধ করা একসঙ্গে দুটো চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হতো। আমরা অবশ্য অপর একটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যাবার কথাও ভেবেছি। আমার স্বামী একজন ইরানী নাগরিক।

আমার স্বামীর পরিবার আমার স্বামীর পরিবারের সব সদস্যের সাথেই আমার দেখা হয়েছে এবং তার (বিরাট) বর্ধিত পরিবারের কিছু সদস্যের সাথেও আমার দেখা হয়েছে। এক গ্রীষ্মে যখন তারা যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে আসেন, তখন আমাদের বিয়ের আগেই আমার শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথে আমার পরিচয় হয়। তারা আমাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিলেন, যদিও তা তাদের জন্য কষ্টকরই হবার কথা, কারণ তারা খুবই ঐতিহ্যবাহী মুসলিম ছিলেন, অথচ আমি ছিলাম আপনার ২০ বছর বয়স্কা কোএডুকেশন কলেজের মেয়েরা স্বাভাবিকভাবে যা হয় তা। আমাকে আমার শ্বশুরকূল কর্তৃক চমষ্কারভাবে গ্রহণ করা হয়েছে, যদিও তারা আমাদের অনেক কাজের পন্থা সম্বন্ধে মতানৈক্য দেখিয়েছেন- যেমন গ্র্যাজুয়েট হবার আগেই বিয়ে করা এবং আমার স্বামী গ্র্যাজুয়েট স্কুলে থাকতে থাকতেই আমাদের তিনটি সন্তান লাভ করা। যাহোক, তারা কখনোই তাদের উদ্বেগ ফলাও করে প্রকাশ করেননি। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমাদের সাথে প্রায় এক বছর থেকেছে এবং পরবর্তী বছরের জন্য একই গলির অপর একটি বাসায় থেকেছে। এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল, যদিও তাতে চড়াই-উত্রাই দুটোই ছিল। আমি আশা করি, আমরা যদি ইরানে যাই তবে আমি তাদের মাঝে সঠিক ও মানানসই হবো এবং তাদের বর্ধিত পরিবার আমাকে সুন্দরভাবে ও সম্মান সহকারে গ্রহণ করবে। আমার অবশ্য ইরানী সংস্কৃতি বা আচার-আচরণ নিয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে, বিশেষতঃ ঐসব ক্ষেত্রে, যেগুলো ইসলামের মাপকাঠি থেকে বিচ্যুত। বর্ধিত পরিবারের তরফ থেকে কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে, তা হয়তো আমার স্বাধীনতা এবং আত্মনির্ভরশীলতা উদ্ভূত হবে।

শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তারা তাদের বাচ্চাদের সাথে এক অদ্ভুত সুন্দর উপায়ে ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন- যা অন্যদের সম্মান করতে শেখায় এবং নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে। একটা বাচ্চা-কেন্দ্রিক ও ধর্ম-কেন্দ্রিক সংস্কৃতি কিভাবে কাজ করে, তা দেখতে পারাটা সত্যিই আনন্দদায়ক। আমেরিকান সংস্কৃতির বিপরীত চরিত্রের গুণে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমার মাঝে আমেরিকান সভ্যতার কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্যও আমাকে দারুণ রকম প্রশংসা করেছেন। ইরানী ও আমেরিকান সভ্যতার সব রকম তুলনা ও বৈপরীত্যের পর্যবেক্ষণের পরে আমি বুঝতে পেরেছি যে, ইসলাম যে সবকিছুতে মধ্যপন্থাকে ঠিক পথ মনে করে থাকে, তা সত্যিই সঠিক।

নারী হিসেবে আমার স্থান একজন মুসলিম নারী হিসেবে, আল্লাহ্ মানবকূলের একজন সদস্য হিসেবে আমাকে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন, আমি তার পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করি। আমি কিভাবে আমার জীবন যাপন করি এবং আমার কর্তব্য কত ভালোভাবে পালন করতে পারি, সে জন্য আমি কেবল আল্লাহর কাছেই দায়ী থাকবো। একজন মুসলিম নারী হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অধিকারটি আমি ভোগ করি, তা হচ্ছে আল্লাহর সামনে সমতার অধিকার। ইসলামে নারীকে দেয়া অন্যান্য অধিকারের মাঝে রয়েছেঃ উপার্জন করার এবং আমাদের নিজের অর্থ নিজের কাছে রাখার অধিকার, নিজের সম্পত্তি ধরে রাখার বা ত্যাগ করার অধিকার, উত্তরাধিকারের অধিকার, তালাক চাওয়ার ও দেয়ার অধিকার, নিজের সাথী নির্বাচনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের অধিকার এবং বাচ্চাদের অভিভাবকত্বের অধিকার।

যাহোক, ইসলাম যেহেতু একটি সঠিক এবং সুবিচারক ধর্ম, তাই আমার অধিকারসমূহের সাথে সাথে আমার কর্তব্য ও দায়িত্বসমূহও আসে। ইসলামিক সমাজের সব স্তরে- ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে স্বামী/ স্ত্রীর সম্পর্ক, পিতা-মাতা/ সন্তানের সম্পর্ক, কর্তা/ কর্মচারীর সম্পর্ক এবং সমাজ। সমাজের সদস্যের মাঝে সম্পর্ক- এ সবই অধিকার ও কর্তব্যের বন্ধনে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ। সংশ্লিষ্ট কর্তব্য বা দায়িত্ব ছাড়া কোন অধিকার এর অস্তিত্ব নেই; তেমনি সংশ্লিষ্ট অধিকার ছাড়াও কোন দায়িত্বের অস্তিত্ব নেই। একটা উদাহরণ ঃ স্ত্রী হিসেবে আমার একটা অধিকার হচ্ছে আমার স্বামীর কাছ থেকে অর্থনৈতিক সমর্থন লাভ করা- যা হচ্ছে আমার স্বামীর কর্তব্য। তেমনি, আমার কর্তব্য হচ্ছে তার অর্থনৈতিক সঙ্গতির মাঝে জীবন যাপন করা- অভিযোেগ বা লোভ ছাড়া এবং তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পদসমূহের যত্ন নেয়া। আমার স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে আমার প্রতি সৌজন্য ও সম্মানসূচক ব্যবহার করা এবং একইভাবে তার প্রতিও সম্মানসূচক আচরণ করা আমার কর্তব্য। সমাজের একজন সদস্য হিসেবে একই সমাজের আরেকজন সদস্যকে সাহায্য করাটা আমার কর্তব্য এবং সমাজের অন্যান্য সদস্য তথা সমাজের প্রশাসনও একইভাবে আমার প্রয়োজনের সময় আমাকে সাহায্য করতে বাধিত। অধিকার ও দায়িত্বের এই সম্পূরক সম্পর্ক নিয়ে অমুসলিমদের মাঝে (এবং কিছু মুসলিমদের মাঝেও) বিরাট ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে- অধিকার ও দায়িত্ব এক সাথে একটি একক হিসেবে আসে এবং তাদের আবশ্যক গুণাবলী নষ্ট না করে একের থেকে অপরকে আলাদা করা যায় না।

আমার বিয়েতে একজন মুসলিম নারী হিসেবে আমার উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলে আমার কোন অনুভব হয় না। ব্যক্তিগত বা সামাজিক পর্যায়ের কোন ক্ষেত্র আমার জন্য রুদ্ধ বলেও আমি অনুভব করি না। ইসলামের শিক্ষা সম্বন্ধে অজ্ঞতা বা ভুল ধারণা রয়েছে এমন সমাজে অজ্ঞতা ও ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে এমন বিয়ে হয় যেগুলোতে কিছু মেয়েদের অবস্থান/মর্যাদা সম্বন্ধে আমি উদ্বিগ্ন বোধ করি। এমন অনেক মুসলিম সমাজ রয়েছে, যেখানে মেয়েদের মর্যাদা ও ভূমিকা সংক্রান্ত ইসলামিক মানদন্ড থেকে বিচ্যুতির ফলে (এবং অন্যান্য ব্যাপারের বেলায়ও বিচ্যুতির ফলে), মেয়েদের ভূমিকা অনেকাংশেই চাপা পড়ে গিয়েছে। সাংস্কৃতিক ইসলাম' বা প্রচলিত ইসলাম প্রায়শঃই ইসলাম থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ওহী নাজিল হবার পটভূমি থেকে অথবা বর্ণনার পটভূমি থেকে যথাক্রমে কোরআনের আয়াত ও হাদীসকে আলাদা করে নিয়ে, সেগুলোকে পিতৃতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীকে সমর্থন করতে ব্যবহার করা হয়। অশিক্ষিত পুরুষ এবং নারীরা প্রায়ই ইসলামের বিধি-নিষেধ বুঝতে অক্ষম, ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের সমাজের প্রচলিত আচার-আচরণকে অনুসরণ করে থাকে।

৭৬
সন্তান প্রতিপালন
আমার সন্তান প্রতিপালনের কলা-কৌশল, আমার মুসলিম হওয়া দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত । ইসলাম আমার জীবনের প্রতিটি দিককেই স্পর্শ করে, আর সে জন্য আমি আমার সন্তানদের সম্ভাব্য সবচেয়ে ইসলামিক উপায়ে বড় করতে চাই। আমার সন্তানরা মুসলিম হিসেবে, নিস্পাপ অবস্থায় এবং আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পিত হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে। এটা আমাদের বিরাট একটা দায়িত্ব, অবশ্যই আল্লাহর তরফ থেকে একই সঙ্গে একটা আমানত এবং পরীক্ষা দুটোই, যে আমার স্বামী এবং আমি যেন তাদের এমনভাবে বড় করি, যাতে তারা মুসলিম থাকে।

সন্তান লালন-পালনে সবচেয়ে সহজ যে ইসলামিক প্রভাবসমূহ প্রয়োগ করা যায়, সেগুলোর মাঝে রয়েছে বাচ্চাদের আমাদের সাথে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা, তাদের কোরআনের আয়াতসমূহ শিক্ষা দেয়া, মুসলিম ঐতিহ্যবাহী সম্ভাষণ ও দৈনন্দিন প্রবাদসমূহ ব্যবহার করা যেমন, ইনশাআল্লাহ্, মাশাআল্লাহ ইত্যাদি, শালীন পোশাক-পরিচ্ছদে তাদের উৎসাহ দেয়া এবং দয়া-মায়াপূর্ণ আচারব্যবহার করতে শেখানো। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপনকে এবং মৌখিক উৎসাহ ও স্মরণ করিয়ে দেয়াকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করি, কিন্তু বাচ্চাদের জোর করে কোন নির্দিষ্ট কর্মকান্ডে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় না, কারণ ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে যে, ধর্মের ব্যাপারে জোরাজুরি নেই। আমাদের কোন নির্দিষ্ট কর্মের সময়ে বাচ্চারা উপস্থিত থাকুক, এমন ব্যাপারে কখনো প্রয়োজনে আমরা চাপ দেই, যাতে তারা অন্ততঃ ঐ কাজের সাথে পরিচিত হয় এবং তারা যেন বোঝে যে, নূ্যনতম কিছু পারিবারিক মান ও মাপকাঠি রয়েছে, যেগুলোকে তাদের অবশ্য সম্মান করতে হবে। আমরা এ ধরনের মান বা মাপকাঠি নির্ধারণ করতে গিয়ে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকি, যাতে তাদের মাঝে সরাসরি বিদ্রোহভাব জাগ্রত না হয়।

যে প্রধান উপায়ে ইসলাম আমার সন্তান পালন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে তা হচ্ছে, আমি সবসময়ে মনে রাখতে চেষ্টা করি যে, আমি সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহর দৃষ্টির আওতায় রয়েছি। মানুষের জন্য আল্লাহ ব্যক্তিগত আচরণের উঁচু মানদন্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন, কেননা তিনি জানেন যে আমরা ঐ পর্যায়ে পৌছাতে সক্ষম সেজন্য, এ জন্য নয় যে, তিনি মানুষকে কষ্ট দিতে চান। আমি সব সময় এ ব্যাপারেও সচেতন থাকি যে আমার কর্ম লিপিবদ্ধকারী দুই ফেরেশতাও সার্বক্ষণিকভাবে তৎপর। আমি ধৈর্য ধারণ করতে চেষ্টা (যদিও এ ব্যাপারটা খুবই কঠিন হতে পারে!) করি, দ্রতা ও সম্মানসূচক আচরণ করতে চেষ্টা করি এবং তাদের প্রতি (বাচ্চাদের) স্নেহ, বিশ্বস্ততা ও সহানুভূতি সূচক ব্যবহার করতে চেষ্টা করি। আমি তাদের শিক্ষার মর্মার্থ বুঝতে উৎসাহিত করি এবং শিক্ষাকে ‘স্কুল সময়’ বা ‘স্কুল-বিষয়সূচী’তে সীমাবদ্ধ না ভেবে বরং সারা জীবনের একটা সাধনা হিসেবে দেখতে উৎসাহিত করি। স্কুলে এবং অন্যত্র তারা যাতে তাদের পক্ষে সবচেয়ে ভালো যতটুকু করা সম্ভব সেটুকু করে; তারা যেন অন্যদের সহায়তাকারী হয় এবং দয়ালু হয়; যেন মিথ্যা না বলে বা প্রতারণা না করে; আল্লাহকে (তথা ইসলামকে), তাদের পরিবারকে এবং তাদের সমাজের মানুষদের যেন তারা সঠিক মর্যাদা দেয়; তারা যা বিশ্বাস করে তার পক্ষে যেন শক্ত অবস্থান নিতে পারে, ব্যক্তিগত ধর্মপরায়ণতাকে তারা যেন বাইরের কাজ-কর্মের মাঝে প্রতিফলিত করতে পারে; তারা যেন বিশ্বস্ত ও সরল হয় এবং চিন্তায় ও কাজে দুটোতেই যেন প্রাণখোলা ও দানশীল হয়- এসব কিছুর উপরই আমরা প্রচুর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা এটাও চেষ্টা করি যে, প্রতিটি বাচ্চাকেই যেন একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়, তাদের যেন তাদের জন্মের ক্রমের বাইরে দেখা হয়, তাদের যেন অন্য সহোদরদের সাথে বা আমাদের সাথে তুলনা না করা হয় এবং আমরা চেষ্টা করি, সেই সমস্ত বৈশিষ্ট্য যেগুলো তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ অথচ যা আমাদের কাছে বিরক্তিকর, সেগুলোকে মেনে নিতে বা মর্যাদা দিতে।

ইনশাআল্লাহ্ আমাদের বাচ্চারা সহমর্মী এবং কর্মঠ মুসলিম হিসেবে বড় হবে। সে দিকে খেয়াল রেখে আমরা আমাদের অগ্রগতি এবং সন্তান পালনের কৌশলসমূহ সব সময় পর্যালোচনা করে থাকি । আমরা সব সময় নির্দিষ্ট ইসলামিক অনুশাসন অনুসরণের চেষ্টা করি এবং আইন মেনে চলার শিক্ষা দিয়ে থাকি।

সন্তান লালন-পালনের কর্মকান্ডে আমার স্বামী খুবই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। আমি দিনের আংশিক সময়ের জন্য কাজ করে থাকি এবং আমি যখন কাজে থাকি তখন সে একাই তাদের দেখাশোনা করে থাকে। আমি যখন কোন সভায় বা স্টাডি গ্রুপের সঙ্গে থাকি, তখন সে বাচ্চাদের দেখাশোনা করে থাকে। সে বাচ্চাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, বাইরে বেড়াতে নিয়ে যায়, চিড়িয়াখানায় নিয়ে যায়, তাদের সাথে সুইমিংপুলে যায় এবং এ ধরণের অন্য যে কোন কর্মকান্ডে তাদের সঙ্গ দিয়ে থাকে।

বাচ্চাদের উপর আমার অধিকার ও তাদের প্রতি আমার কর্তব্য? যখন কেউ ইসলাম/ মা/ মায়ের অধিকার ইত্যাদি নিয়ে কথা বলে, তখন তারা। সাধারণতঃ বিবাহ-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বাচ্চাদের কাছে রাখার অধিকার বুঝিয়ে থাকে। আমার স্বামী এবং আমি উভয়ে একমত যে, বাচ্চাদের বাবা-মার মাঝে, যে তাদের ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করতে সক্ষম, তার কাছেই থাকা উচিত। অবশ্যই ইসলামে বিবাহ-বিচ্ছেদ অনুমোদিত, তবে একক পরিবারকে একত্রে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা আগে করতে হবে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানসিকভাবে মা'ই বাচ্চাদের লালন পালনের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশী উপযুক্ত হয়ে থাকে। যতক্ষণ না পরিস্থিতি বিরূপ কিছু বলে প্রতীয়মান না হয়, বাবা-মায়ের মাঝে যার কাছে বাচ্চারা থাকছে না, তার অধিকার থাকে ঘন ঘন বাচ্চাদের সাক্ষাৎ পাবার। প্রয়োজনবোধে বাচ্চাদের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত মা/ বাবাকে অর্থনৈতিক সহায়তা দান করা উচিত । সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী উপযুক্ত বিচারক সম্বলিত, ইসলামী পারিবারিক আদালতে সব বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করা উচিত।

আমার বাচ্চাদের প্রতি আমার দায়িত্ব হচ্ছে, তাদের ভালোবাসা, তাদের সম্মান করা এবং পরিণত মুসলিম হয়ে বড় হয়ে উঠতে তাদের সাহায্য করা। এই দায় আমাকে বাচ্চাদের তথা আল্লাহর কাছে একইভাবে দায়বদ্ধ করে রাখে, যিনি এই বাচ্চাদের আমার প্রযত্নে এ রকম আমানত হিসেবে রেখেছেন। আমি মনে রাখতে বাধিত যে, আমার সন্তানরা আসলে আল্লাহর, আমার নয়- এবং আমার তাদের সাথে সেরকম আচরণই করা উচিত।

কোরআনে যেমনটি নির্দিষ্ট করে বলা রয়েছে, আমার সন্তানদের কর্তব্য হচ্ছে আমাকে সম্মান করা (কিন্তু আমাকে সম্মানের উপযুক্ত হতে হবে), আমাকে মান্য করা (যতক্ষণ আমার আদেশ/ অনুরোধ ইসলামের সীমারেখার মাঝে অবস্থিত) এবং বৃদ্ধ বয়সে আমার দেখাশোনা করা। তাদের অধিকার রয়েছে আমার কাছ থেকে ভালোবাসা, শারীরিক যত্ন এবং দিক-নির্দেশনা লাভ করার। আমার যেমন রয়েছে, তাদেরও তেমনি মর্যাদা ও সম্মানসূচক ব্যবহার পাবার অধিকার রয়েছে।

৭৭
অন্যদের আমি কি জানাতে চাইবো
আমি আমেরিকান জনসাধারণকে জানাতে চাই যে, আমি আমার নিজের পছন্দে মুসলিম। আমি পুরোপুরি পরিণত, বুদ্ধিমান মানুষ এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। ইসলাম গ্রহণ করার আমার সিদ্ধান্ত, আমার স্বামীর সংস্কৃতির বা তার পরিবারের উপযুক্ত হবার কোন প্রয়াস নয়, এটা ক্ষীণ আত্মবিশ্বাসের ফলাফল নয়; আর এটা আমার স্বামীর চাপ প্রয়োগের কোন পরিণতিও নয়। আমি চাই সবাই জানুক যে, ইসলাম মেয়েদের অবদমিত করে রাখে না, তা সন্ত্রাসবাদকে মেনে নেয় না এবং তা মোটামুটিভাবে ইহুদী-খৃস্টান ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমি চাই মানুষ অনুধাবন করুক যে, ইসলাম মধ্যপন্থা ও ভদ্রুঅর পক্ষে এবং প্রচলিত ইসলামের আচার-আচরণের সাথে ইসলামের অনুশাসনের অনেক ক্ষেত্রেই বিরাট পার্থক্য রয়েছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন