মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বাচ্চা প্রতিপালনের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্বন্ধে মেয়েরা তাদের চিন্তার কথা প্রকাশ করেছে। তারা বিশেষতঃ ইসলামিক সম্প্রদায় এবং ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধসমূহ, তাদের ছেলেমেয়ের কাছে হস্তান্তরিত হোক তা চায়। একটা অমুসলিম দেশে থাকা ব্যাপারটাকে একটু কঠিন করে তোলে এবং তারা অনুভব করে যে, তাদের ছেলেমেয়েকে অবশ্যই যত্ন সহকারে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত।
মুসলিম হবার পর থেকে আমার মেয়ে কি দেখছে এবং শুনছে আর সে সবের প্রভাব তার উপর কতটুকু, এসব নিয়ে আমি বেশী সচেতন থাকি। আমি তাকে এমনভাবে বড় করতে চাই, যাতে সে নিজের জীবনধারা হিসেবে ইসলামকে বেছে নেয়। তার ওপর আমি তা চাপিয়ে দিতে চাই না। অবশ্যই তাকে বড় করতে গিয়ে আমি সেই সিদ্ধান্তই নিচ্ছি যা আমি ঠিক মনে করি। আমি তাকে এমন সব মূল্যবোধ শিক্ষা দিচ্ছি, যা এদেশে আজ কদাচিৎ কাউকে শিক্ষা দেয়া হয়। আমি মনে করি, মা হিসেবে এটা আমার অবশ্যকরণীয় যে, এমনভাবে মুসলিমদের পরবর্তী প্রজন্মকে বড় করতে হবে যাতে তারা ভালো মুসলিম হয়, ভালো ছেলে এবং মেয়ে হয়, ভালো ভাই এবং বোন হয়, ভালো স্বামী এবং স্ত্রী হয় এবং ভালো বাবা ও মা হয়।
আমার স্বামী হচ্ছে আমার মেয়ের জন্য আদর্শ পুরুষের দৃষ্টান্ত। সে তার আপন পিতা নয়, কিন্তু মেয়ে তাকে এমনভাবে ভালোবাসে যে, সেই বুঝি তার পিতা। আর আমার স্বামীও আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের মতোই মেহ করে। আমি অনুভব করি, আমার স্বামী আমার মেয়েকে এবং ইনশাআল্লাহ আমাদের যে সব বাচ্চা হবে তাদের সবাইকে ভালো মূল্যবোধ সহ গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে আমিই তাদের কাছে থাকবো, তাই তারা যা শিখবে তার বেশীরভাগই আসবে আমার কাছ থেকে। আমাদের ছেলেদের বড় করতে আমি চাই আমার স্বামীও সক্রিয় থাকুক। আমি মনে করি, তাদের সক্রিয় মুসলিম পুরুষদৃষ্টান্তেরও প্রয়োজন আছে। আমাদের তাদেরকে ভালোবাসা ও দয়া দেখানো প্রয়োজন এবং কোমলতা সহকারে তাদের গঠনের চেষ্টা করা উচিত, যেন তারা এটুকু বুঝে বড় হয় যে, তারা একটা স্নেহশীল মুসলিম পরিবারের অংশ।
মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত, আমাদের ছেলেমেয়েকে আমাদের জ্ঞানের সবচেয়ে ভালোটুকু এবং তার চেয়ে বেশী কিছু দিয়ে বড় করা ও শিক্ষা দেয়া। ইসলাম আমাদের জ্ঞান অন্বেষণে উৎসাহ দেয়। আমি মা হিসেবে যাই করি
কেন, তাতে ইসলামিক কিছু জড়িয়ে থাকবে : ভালোবাসতে শিখানো, কোরআন, প্রার্থনা, আচার-ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। এসব কিছুই সহজ হয়ে যায়, যখন আপনার হৃদয়ে ইসলাম থাকে। আমি যা বলেছি, বাচ্চা বড় করার ব্যাপারে তার বাইরেও অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু আমার সব কৌশলই আসে ইসলাম থেকে। ৮টা-৫টা কাজ করা একজন পিতার কাছে যা আশা করা যায়, আমার স্বামী সন্তান পালনের ব্যাপারে তারচেয়ে অনেক বড় ভূমিকা নিয়ে থাকে। আমার উচিত আদর্শ উদাহরণ হবার চেয়েও বেশী কিছু করা, যাতে আমি তাদের সর্বোত্তম ধরনের আদর-যত্ন দিতে পারি।
আমার স্বামী এবং আমি আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করি, যাতে ছেলেমেয়েকে ইসলাম সম্মত উপায়ে বড় করতে পারি। একবার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবার বয়সে পৌছালে তা অবশ্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারা এমন সব ব্যাপারের কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, যা, আমরা বরং চাইতাম যেন তারা কম বয়সে না জানুক। যাহোক, আলমহামদুলিল্লাহ। আমাদের দুটি হিজাব পরিহিতা মেয়ে আছে, তাই আমার মনে হয় না আমরা ছেলেমেয়েদের বড় করার ব্যাপারে খুব খারাপ করছি। আমি আশা করি, আমার বাচ্চারা তাদের যে কোন ইসলামিক প্রশ্নের উত্তর পেতে আমার কাছে আসতে কখনোই দ্বিধা বোধ করবে না। তার পরিবর্তে আমি আশা করবো, আমার দেয়া দিক-নির্দেশনা তারা গ্রহণ করবে।
অনেক মেয়েই বলেছে যে, তারা যেভাবে ছেলেমেয়ে বড় করছে, তা তাদের যেভাবে বড় করা হয়েছে তার চেয়ে খুব আলাদা কিছু নয়। শুধু তারা যে ইসলামিক আদর্শ ও প্রশিক্ষণের উপর জোর দিচেছ, এটুকুই নতুন। তাদের ছেলেমেয়ের জীবনের উপর বাইরের প্রভাব সম্বন্ধে তারা খুবই সচেতন এবং তাদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতেও তারা খুবই মনোযোগী। এমনকি যখন তারা তাদের ইসলামিক পথের দিক-নির্দেশনা দিয়ে চলেছে।
আমার বাচ্চারা বড় হচ্ছে অনেকটা আমি যেভাবে বড় হয়েছি, কেবল আলাদা ব্যাপার হচ্ছে আমি আশা করছি তাদের বাড়িতেই স্কুল করাবো। বাচ্চা বয়সে আমি একটা দৃঢ় শৃঙ্খলার পরিবারে বড় হয়েছি, নিয়ন্ত্রিত টিভি, অনেক বই, অনেক ক্যাম্প যাত্রা, নিয়ন্ত্রিত বন্ধু-বান্ধব ও সাহচর্য। রবিবার ছিল কেবল নিজ পরিবারের জন্য। আমার স্বামী সপ্তাহে ৫ থেকে ৬ দিন কাজ করে, দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা করে। তার যখন অবসর থাকে, তখন সে বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করে এবং প্রায়ই আমাকে একটু হাল্কা করতে, আমাদের তিন বছর বয়সীকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যায়। আমি তাদের সাথে ২৪ ঘন্টাই রয়েছি, আর তাই বেশীরভাগ শিক্ষা ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব আমারই। আমাদের অবশ্যই আমাদের ছেলেমেয়েদের এমনভাবে বড় করা উচিত, যাতে তাদের নিজেদের সম্বন্ধে এবং নিজেদের আত্মবিশ্বাস সম্বন্ধে, তারা দৃঢ় ধারণা পোষণ করে। তারা অবশ্যই নীতি, মূল্যবোধ এবং যুক্তির উপর ভিত্তি করে ইসলামকে জানবে- কেবলমাত্র হালাল, হারাম ও ওয়াজিব দিয়ে নয়। জীবনের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজটি খুঁজে পেতে, আমাদের তাদের সাহায্য করা উচিত এবং সেটা লাভ করতে সঠিক রাস্তার উপর তাদের নিয়ে দাঁড় করানো উচিত।
যদিও আমার ছেলেমেয়ে লালন-পালনের কিছুটা আমার পরিবারের ঐতিহ্য এবং আমার শৈশব থেকে এসেছে, এমনকি সেসবও ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত। একটাকে অপরটা থেকে আলাদা করার উপায় নেই। মুসলিম হিসেবে আমাদের যা অবশ্য করণীয়, তা পালন করতে গেলে, আমাদের অবশ্যই আমাদের ছেলে মেয়েদের ইসলামিক পদ্ধতিতে বড় করতে হবে- যেমন : কিভাবে নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে এসব শিক্ষা দিতে হবে। আমার স্বামী খুবই সাহায্য করতে ইচ্ছক (এ ব্যাপারে), কিন্তু অধিকাংশ সময়েই সে বাড়ির বাইরে থাকে। সুতরাং বাচ্চাদের শিক্ষাদানের মূল দায়িত্বটা আমার উপরই ন্যস্ত থাকছে। আমি আশা করি আমার ছেলেমেয়েরা কোরআন যেমন বলে, তেমনভাবে আমাকে সম্মান করবে এবং মান্য করবে।
আমার ছেলেদের বড় করার বেলায় ইসলামই হচ্ছে আমার দিকনির্দেশনা। তারা জন্মগত মুসলিম। তারা ইসলাম জানে, সম্মান করে এবং বাস্তবে চর্চা করে। তারা দিনে ৫ বার নামাজ পড়ে, ঠিক যেমনটা আমি পড়ি। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তারা আমার সাথে ইসলাম সম্বন্ধীয় পড়াশোনা করে। ইসলাম হচ্ছে আমাদের জীবন ধারা। আমার স্বামী হচ্ছে একজন সমান অংশীদার। সে তাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চায় এবং সে তাই। তাদের একটা চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবার সমস্যা নিয়ে কোন বিপদ নেই। আমাদের ছেলেরা সন্ত্রাস এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সময়েও সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাড়িয়ে আছে।
বাবা-মায়েরা (মেয়েরা এবং মেয়েদের স্বামীরা) একটা কড়া ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করার প্রবণতা দেখিয়েছে যেখানে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে সম্মান এবং আনুগত্য আশা করা হয়। শৃঙ্খলা প্রণয়ন করা হয়, তবে সাধারণতঃ একটা স্নেহশীল ও দিক-নির্দেশনাকারী উপায়ে। এইসব মেয়েদের বক্তব্যে কঠিন এবং শাস্তিমূলক শৃঙ্খলা গ্রহণযোগ্য বলেও তারা মনে করে না। নীচের বক্তব্যে, তত্ত্বে ও বাস্তবে শৃঙ্খলাকে একজন মেয়ে কিভাবে ব্যাখ্যা করছে, তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
বাবা-মায়ের উচিত ছেলেমেয়েদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু হওয়া। ইসলামে বাচ্চাদের চড়-থাপ্পড় মারা, প্রহার করা, বেত মারা অথবা সজোরে ঝাঁকি দেয়া ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ। এগুলো তিরস্কারের এমন সব উপায়, যা মুসলিম বাবা মায়ের ব্যবহার করা উচিত নয়।
নবী মুহাম্মদ (সঃ) এবং তার পবিত্র পরিবারের এমন অনেক সুন্নাহ রয়েছে, যা আমরা দেখতে পাবো, বাচ্চাদের তিরস্কারের বিপক্ষে। সে জন্যেই আমি যখন দেখেছি বাচ্চারা সঠিক আচরণ করেনি, তখন মুখে বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছি এবং সঠিক আচরণটা কি তা তাদের করে দেখাতে চেষ্টা করেছি। এতো ছোট বাচ্চাদের কাছ থেকে সঠিক আচরণ আশা করা উচিত নয় এবং বেত মেরে কোন ফলও আশা করা যায় না। কারণ তারা ব্যাপারটা বুঝতেই অক্ষম- তারা শুধু এটুকুই বুঝবে যে তাদের আহত করা হচ্ছে। একটা বাচ্চা যদি রাস্তায় চলে যায়, বাচ্চাটাকে হাত দিয়ে ধরুন অথবা উঠিয়ে কোলে নিন। বাচ্চাটাকে একটা অধিকতর নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান আর লক্ষ্য রাখুন সে যেন আবার একই কাজ না করে। বেত মারা বাচ্চাকে কোন কিছু করা থেকে বিরত রাখবে না। এটা কেবলমাত্র তাকে ক্রোধান্বিত করবে এবং এর পরে সে অসহ্য হয়ে উঠবে। সে বাবা-মার চোখের আড়ালে নানা কিছু করতে শিখবে যা বাবা-মা করতে নিষেধ করেন।
আমার স্বামী যে সব ঘটনা কখনো ঘটে যায় সে সব নিয়ে এবং তাতে আমাদের বাচ্চাদের ভূমিকা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। সে তাদের ভুল পরিস্থিতির ভুল মূল্যায়ন চিহ্নিত করে কেননা সে তাদের ভালোবাসে এবং তাদের শেখাতে চায়, একই ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে হলে তাদের কর্তব্য কি হবে। সে চায় তারা শিখুক তারা শুধু তাদের কাজের জন্যই দায়ী নয়, বরং কাজের পরিণতির জন্যও দায়ী। আমিও আমাদের বাচ্চাদের সাথে সমস্যা নিয়ে আলাপ করি- তবে আমরা দুজনে একত্রে মিলে কখনো তাদের দোষ ধরি না। যখন আমাদের একজন এ ধরণের কিছু নিয়ে আলোচনা করি, তখন অপরজন চুপ থাকি- কারণ আমরা আমাদের বাচ্চার বিরুদ্ধে দল পাকাতে চাই না। তারপর আমরা তাকে জড়িয়ে ধরি এবং আশ্বস্ত করি, তাকে বোঝাই যে, তার কাজের যে সমালোচনা আমরা করেছি, তা ভালোবাসা উক্ত- আমরা তাকে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় দেখতে চাই- সে যেন তার ভুল থেকে শিখে এবং একই ধরনের ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি না ঘটায়।
অবশ্যই আমরা আমাদের বাচ্চার ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করি এবং তা নিয়ে বার বার কথা তুলি না। বাবা-মায়ের উচিত সারাক্ষণ ছেলেমেদের পিছনে লেগে না থাকা। বাড়িতে ছেলেমেয়ের নিরাপদ বোধ করা উচিত- সব সময় তারা যাই করছে তা নিয়ে যেন শঙ্কিত বোধ না করে থাকে। কিছু বাচ্চারা হয়তো অন্যদের চেয়ে স্পর্শকাতর এবং সমালোচনাকে ভালোভাবে হজম করতে পারে না। তাদের যে কোন সাফল্যে হয়তো সাধারণের চেয়ে বেশী প্রশংসার প্রয়োজন রয়েছে তাদের নিশ্চিত করতে যে, বাবা-মা তাদের ভালোবাসেন। প্রশংসা তাদের নিজের সম্বন্ধে মূল্যায়নকে সমৃদ্ধ করতে পারে, আর তারপর তারা হয়তো নিজের এবং নিজের কার্যকারিতা সম্বন্ধে অপেক্ষাকৃত বেশী নিশ্চিত হয়ে উঠবে।
মা-বাবা হিসেবে আমাদের একমাত্র চাওয়া হচ্ছে, আমাদের ছেলেমেয়ের যেন আমাদের প্রতি, অন্যদের প্রতি এবং তাদের নিজেদের প্রতি সম্মানবোধ থাকে। যদি একটা বাচ্চা অন্যদের প্রতি অসম্মানবোধ পোষণ করে, তবে সেটা এমন একটা অভ্যাসে পরিণত হতে পারে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর। আমাদের বাচ্চারা অল্পবয়সী, আর তাই প্রাপ্তবয়স্ক সিদ্ধান্ত তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। আমার স্বামী এবং আমি তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, যখন আমার বাচ্চারা জুনিয়র হাই স্কুলে উঠবে, তখন থেকে আমরা তাদের বাসায় পড়াবো- এবং এ ব্যাপারে তাদের কোন সিদ্ধান্তের বা মতামতের অবকাশ ছিল না। তাদের বাবা-মা হিসেবে, আমরা জানি তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো কোনটা। সাধারণ স্কুল পদ্ধতি, আমাদের সন্তানদের সর্বদাই মদ, নেশা, যৌনতা এবং সন্ত্রাস ইত্যাদির কাছে উন্মুক্ত করে রাখে । বাড়িতে তিনমাস পড়ালেখার পর আমাদের মধ্যম সন্তান আমাকে বললো যে, সে বাড়িতে রয়েছে বলে খুশী কারণ তার জনৈক ক্লাসমেটের কাছ থেকে এর আগের বছর দৈনন্দিন ভিত্তিতে সে যে অপদস্থ হতো, তা তার এখনো মনে আছে।
তাদের শারীরিক উৎকর্ষের দিকে খেয়াল রেখে আমরা প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিটের শারীরিক ব্যায়ামের ব্যবস্থা করে থাকি। দুপুরের খাবারের পরে তাদের ৩০ মিনিটের অবসর থাকে- বাস্কেটবল খেলার জন্য, কম্পিউটারে কাজ করার জন্য অথবা পড়ার জন্য। স্কুলের পর তারা বাড়ির পিছনের খালি জায়গায় ফুটবল খেলতে পারে বা আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় সাইকেল চালাতে পারে। কি রকমের নাস্তা তৈরি করা হবে তা তারা ঠিক করে এবং তারপর রান্নাঘর ত্যাগ করার আগে তাদের সব পরিষ্কার করে যেতে হয়। বাচ্চাদের গ্রহণ করা প্রতিটি দায়িত্বই আমাদের এ জন্য খুশী করে যে, তারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল হবার পথে বেড়ে উঠছে।
বাচ্চাদের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব সবকিছুর উপরে, কিন্তু তা একটা সঠিক পরিবেশে হতে হবে। কেউ কেউ বাড়িতেই স্কুল করানোর পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, অন্যদের একটা ইসলামিক স্কুলে পাঠানোর অবকাশ রয়েছে এবং আরেক দল মনে করে যে, বাড়িতে যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয়, তা সমেত সাধারণ স্কুলের পরিবেশে পড়তে যাওয়া গ্রহণযোগ্য। ছোট বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যাপারে ইসলামিক দিক-নির্দেশনা, তাদের ছয় বছর পার হবার আগে পর্যন্ত বইয়ের পড়াশোনা থেকে মুক্ত থাকতে অনুমতি দেয়। কিন্তু জীবনের জন্য অন্যান্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, এই প্রাথমিক বছরগুলোতে চালু থাকা প্রয়োজন।
আমার ছেলেমেয়ে বড় করার কৌশলে রয়েছে বাচ্চাদের ভিতর পারিবারিক মূল্যবোধ ও ইসলামিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা, আর তা করতে গিয়ে যদি একটা আবদ্ধ অবস্থা অবধারিত হয় (সাধারণ স্কুল বর্জিত, প্রতিবেশের বন্ধুবান্ধব বর্জিত), তবে সেটাই অবলম্বন করতে হবে। ৬/৭ বছর বয়স পর্যন্ত মুসলিম ছেলেমেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই অর্থাৎ নিয়মিত কোথাও বসে থাকার ও শিখার ব্যাপার যেখানে রয়েছে, সেটার বাধ্যবাধকতা নেই। আমি তাদের এ ধরনের কোন স্কুলে সে পর্যন্ত (৬/৭ বছর) পাঠাবো না। আবার আচরণ শেখা ও শিক্ষার জন্য পশ্চিমা শিশু-মনস্তত্ত্ব ভিত্তিক যে সমস্ত উপায় রয়েছে, আমি তার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু সে সব ইসলামিক ধ্যান-ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
আমি যখন কাজ করি বা ক্লাসে যাই, তখন আমার স্বামী আমাকে বাচ্চা সামলাতে সাহায্য করে এবং সে তখন বাচ্চাদের সাথে থাকে। ছেলেমেয়ে বড় করার ব্যাপারে তার আগ্রহ রয়েছে, সে খুবই স্নেহশীল এবং দয়ালু। সে অবশ্য কিছুটা কড়াও, আর সেটা ভালোও।
ইসলামিক স্কুলগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল এবং ওগুলোর খরচ চালাতে ছাত্রদের কাছ থেকে বেতন নেয়া হয়। বেতন ছাড়াও স্কুলে যাওয়া-আসার ব্যাপারটাও বাবা-মায়ের একটা ভাবনার কারণ হয়ে দাড়ায় এবং বেশ কয়েক মাইল যাত্রা তার সাথে সম্পৃক্ত হয়। যারা ছেলেমেয়েদের জন্য ইসলামিক স্কুলের ব্যবস্থা করতে পারে, তাদের সে জন্য খুবই পরিতৃপ্ত মনে হয় এবং তারা খুব সমর্থন লাভ করছে, এমন একটা অনুভূতি তাদের হয়। মুসলিম ধর্মীয় ভাষা আরবীর সাথে সাথে এসব স্কুলে শৃঙ্খলা, সহানুভূতি, কোরআন, হিজাব পরিধান এবং অন্যান্য ইসলামিক আচার ও অবশ্যকরণীয় সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়া হয়। মুসলিম স্কুলের ছেলেমেয়েরা, স্কুলে নিজ বয়সী অন্য মুসলিম ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এবং নৈতিক আদর্শের এমন শিক্ষা লাভ করে যার মান সাধারণ স্কুলের চেয়ে ভিন্ন।
নিশ্চয়ই, মুসলিম হওয়া, ছেলেমেয়ে বড় করার পদ্ধতির উপর প্রভাব ফেলেছে। আমার বাচ্চারা ইসলামিক স্কুলে যায়, যদিও আমাকে ১৫ মাইল গাড়ি চালিয়ে তাদের পৌছে দিতে হয়। আমার স্বামী বাড়িতে থাকে বলে সেও সক্রিয়ভাবে বাচ্চাদের লালন-পালনে অংশ নেয়। আমার বাচ্চারা জানে, আমাকে সম্মান দেখানো তাদের অবশ্যকরণীয় এবং মায়ের পায়ের নীচে বেহেস্ত। আমার করণীয় হচ্ছে তাদের যত্ন নেয়া এবং তাদের সবচেয়ে ভালো মুসলিম হিসেবে বড় করা।
আমরা যেহেতু ইসলামিক নীতিমালা অনুসরণ করি, আমাদের সন্তান পালনের কায়দা সম্পূর্ণভাবে ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত। আবারও, আমাদের ইসলামিক স্কুলকে ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ আমরা তাদের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করি । আমার স্বামী সন্তান পালনে খুবই সক্রিয়। সে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে এবং তাতে আমার একটু অবসর পাওয়া হয়। সে আমার সাথেও সময় কাটাতে পছন্দ করে, আর তাই কখনো বাচ্চারা এক ‘বেবী সিটারের কাছে যায় (এক মুসলিম বন্ধু)।
ইসলামিক স্কুলে যাবার একটা বিকল্প হচ্ছে বাড়িতে স্কুল করা। এটা কিছু পরিবারের জন্য খুবই ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে, যেখানে মা সারাক্ষণ বাড়িতে থাকছে। আর সে পড়ানোর ব্যাপারে পারদর্শী ও ধৈর্যশীল। কখনো মায়েরা একে অপরের ছেলেমেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। THE ISLAMIC HOME SCHOOL ASSOCIATION OF NORTH AMERICA (IHSANA), পূর্ণ সময় বা আংশিক সময় বাড়িতে শিক্ষাপ্রাপ্ত মুসলিম শিক্ষার্থীদের বাবা-মা দ্বারা গঠিত এবং বাবা-মাদের জন্য গঠিত একটি সংগঠন- যা নিয়মিত পত্রিকা বের করে বাবা-মা’দের সাহায্য করে।
ছেলেমেয়েকে বড় করা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের একটি। বাচ্চাদের বড় করার প্রক্রিয়া একজনকে খুব ভালোভাবে আল্লাহর নৈকট্য দান করতে পারে। প্রথমেই আসে আপনার বাচ্চাকে সম্মান করার বিষয়টি এবং তার মতামতকে সম্মান করার বিষয়টি, যদিও তা কষ্টকর হতে পারে। আমরা যেহেতু আমাদের সন্তানদের ভালো মুসলিম হিসেবে বড় হওয়াটা চাই, আমরা তাদের যতটুকু সম্ভব খারাপ প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে রাখি। প্রতিযোগিতার চাপ এবং অন্যান্য নেতিবাচক শিক্ষার দরুণ, আমাদের ক্ষেত্রে সাধারণ স্কুলের চিন্তা আমরা করিনি। তার পরিবর্তে বাড়িতেই স্কুল করাই। আমি তাদের (বাচ্চাদের) বন্ধু-বান্ধবের স্বাধীনতা দিতে চাই, তাই তাদের আমেরিকান ছেলেমেয়েদের সাথে (অমুসলিম) মিশতে দিই, কিন্তু নেতিবাচক কিছু চোখে পড়লে তাদের সরিয়ে নেই এবং অন্য কর্মকান্ডে নিয়োজিত করি।
বাচ্চাদের বাবা ছেলেমেয়ের লালন-পালনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সে তাদের শিক্ষা-দীক্ষার সাথে জড়িত- ইসলামিক শিক্ষা, কোরআন, নামাজ, ইসলামিক কাহিনী ইত্যাদি। যে কোন সমাজেই ছেলেমেয়েকে ঠিক মতো বড় করতে হলে বাবা-মার তরফে দায়বদ্ধতার প্রয়োজন হয়।
বাইরের জগতের নেতিবাচক প্রভাবের জন্য আমার স্বামী বাচ্চাদের সাধারণ স্কুলে যাওয়াটা চায়নি। যা আমাকে একটা বিকল্প খুঁজে পেতে বাধ্য করেছে, বাড়ির স্কুলে সেই বিকল্প বর্তমান। ছেলেমেয়ে মানুষ করার প্রক্রিয়ার বেশীরভাগই আমার দায়িত্ব। তাকে (স্বামী) বললে সে সাহায্য করে, তবে শখ করে করে না। প্রয়োজনে করে।
আমার অবশ্যকরণীয় হচ্ছে, তাদের একটা মাত্র আদর্শ সামনে রেখে গড়ে তোলা- নবী মুহাম্মদ আর আমার অধিকার রয়েছে এ ব্যাপারে তাদের আনুগত্য এবং সহযোগিতা আশা করার। তাদের অধিকার হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং শিক্ষা আশা করার; তাদের কর্তব্য হচ্ছে, আমাদের দেবার কাজটিকে একটা সুখকর অভিজ্ঞতায় পরিণত করার এবং তারা যা পাচ্ছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ বোধ করার।
আমার ছেলেমেয়ে মানুষ করার উপায়ের উপর, আমি যে মুসলিম তার গভীর প্রভাব রয়েছে। চারিদিক থেকে কিভাবে শয়তান-উক্ত প্রভাব আসে, সে সম্বন্ধে আমার ভালোই ধারণা রয়েছে, আর সে জন্যেই আজ ছ'মাস ধরে আমাদের কোনো টেলিভিশন নেই। সে (ছেলে) ২য় গ্রেড়ে ওঠার পর থেকে আমি তাকে বাড়িতেই লেখাপড়া করিয়েছি আর আমার পরিকল্পনা হচ্ছে তা চালিয়ে যাবার ।
আমার স্বামী যতটুকু সম্ভব সন্তান মানুষ করার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। সে যখন কর্মস্থলে না যায়, তখন সাহায্য করে। একটা বড় বর্ধিত পরিবারের মাঝে (৭ জন প্রাপ্ত বয়স্ক সমেত) থাকাটাও বেশ সাহায্য করে। আমার বাচ্চা আমাকে মেনে চলবে এবং আল্লাহকে স্মরণ করবে। তার বাড়ির প্রতি কর্তব্য রয়েছে। তার জীবনে স্নেহ, খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা এবং খেলাধুলার একটা সঠিক সামঞ্জস্য আমাকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে যতটুকু সম্ভব, খোদাভীরুতা এবং ইসলাম তাকে আমি উপহার দিতে পারি।
আমার দেয়া প্রশ্নপত্রের উত্তরে যদিও দেখা যায় যে, ৪৭% পরিবারের ছেলেমেয়ে সাধারণ স্কুলে পড়ছিল, কিন্তু মাত্র একজন মেয়ে তার বাচ্চার সাধারণ স্কুলে শিক্ষা লাভের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছে। কখনো বা পরিবারের মাত্র একটা বাচ্চাই হয়তো সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করছিল এবং ঐ ছাত্র প্রাথমিক না মাধ্যমিক সাধারণ স্কুলে যেতো তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। এখনও কিছু মেয়েরা রয়েছে, যারা তাদের ছেলেমেয়েদের এমন ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুলে পাঠায় যেগুলো ইসলামিক নয় ।
আমার স্বামী এবং আমি, দুজনেই চেষ্টা করছি আমাদের সন্তানদের ইসলামের ভালো অনুসারী হিসেবে বড় করার জন্য। আমরা আমাদের মেয়েদের তফসীর ক্লাসে নিয়ে যাই এবং মুসলিম বন্ধুদের সাথে নানা কার্যক্রমে যোগ দেই। আমরা বাচ্চাদের জন্য ভালো আদর্শ উপস্থাপন করতে চাই, এই বিশ্বাস নিয়ে যে তাদের আমাদের নিকটবর্তী তথা ঈমানের নিকটবর্তী রাখাটা জরুরী। আমরা বাইরের কর্মকান্ড যেমন স্কুল-পূর্বক প্রশিক্ষণ ও শরীর চর্চা ইত্যাদিতেও উৎসাহ দিয়ে থাকি যাতে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্নবোধ না করে। আমরা তাদের বেড়ে ওঠা।
বছরগুলোব্যাপী তাদের জন্য বিকল্প বিনোদনমূলক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা করবো, যাতে আমরা যখন তাদের এমন কোন স্কুল-অনুষ্ঠানে যেতে বারণ করবো, যা মুসলিমদের জন্য ঠিক নয়, তারা যেন কষ্ট না পায় (যেমনঃ CHRISTMAS উপলক্ষে সঙ্গীত, নাচের অনুষ্ঠান, যৌথ পার্টি ইত্যাদি) আমরা বিশ্বাস করি, সাধারণ স্কুলে পড়েও ইসলামের বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে বড় হওয়া যায়। আমরা সরাসরি সাফল্যের অভিজ্ঞতা দেখেই বলছি- তবে প্রবল সমস্যা দেখা দিলে বিকল্প শিক্ষার পথ খুঁজবো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/633/47
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।